বই পরিচিতি


সেলফির ৩০টি শিক্ষণীয় ঘটনা

লেখক

আমীরে আহলে সুন্নাত দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবু বিলাল

মুহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদরী রযবী (মা.জি.আ.)


প্রকাশনায়

মাকতাবাতুল মদীনা  

ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, জনপথ মোড়, সায়েদাবাদ, ঢাকা। 

ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, নিয়ামতপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী। 

কে.এম.ভবন, দ্বিতীয় তলা ১১ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।


যোগাযোগ:

bdmaktabatulmadina26@gmail.com, 

bdtarajim@gmail.com     web : www.dawateislami.net


টেক্সট 

তানভীর বিন শাবির

 www.facebook.com/Tanvir2K1




এই রিসালার মধ্যে বর্ণিত সেলফি সম্পর্কিত অধিকাংশ ঘটনাবলী ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 


(১) চোর কিভাবে গ্রেফতার হলো? 

ফ্রান্সের শহর রুশফোর্টে ২২ বছর বয়সী এক যুবক মোবাইল চোর, সেলফি তোলার আসক্তির কারণে গ্রেফতার হলো। একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অপরাধী জুলাই মাসে এই শহর থেকে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন চুরি করেছিল। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ঐ (চোর) শহরে ঘোরাঘুরি করার সময় ঐ মোবাইলে নিজের একটি সেলফি তোলে। কিন্তু তার এটা জানা ছিলো না যে, এই স্মার্ট ফোনের মালিক ফোনের সেটিং (setting) এরূপ করে রেখেছিল যে এটার মাধ্যমে তোলা সব ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ শহুরে ব্যক্তির ঘরের কম্পিটারে চলে যেতো। এই চোরটি যখন নিজের একটি সেলফি তুললো, সেলফিটি দ্রুত ফোনের মালিকের কম্পিউটারে পৌছে যায়! আর সে তৎক্ষণাৎ দেরী না করে ছবিটি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়। যার ফলে পুলিশ সেলফিতে দৃশ্যমান স্থানে পৌছে যায় এবং চোরকে গ্রেফতার করে ফেললো।


জেনেশুনে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হারাম প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সেলফির (অর্থ্যাৎ নিজের ছবি নিজে তোলার) আসক্তি বর্তমানে চরম পযার্য়ে পৌঁছেছে। অথচ কয়েক বছর পূর্বে সেলফি শব্দটা ইংরেজি অভিধানে ছিলো না। ২০১৩ সালে এই শব্দটিকে না শুধু অভিধানে স্থান দেয়া হয়েছে বরং শব্দটিকে এ সালের “খুবই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ” হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করে পছন্দ ও অপছন্দেরঅভিমতও চাওয়া হয়। অতিকম সময়ে অধিক প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য, প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব, সুউচ্চ দালান, ঝর্ণা সমূহ, বরং বাঘ, সিংহ এবং কুমিরের মত ভয়ংকর জানোয়ার সমূহ, হাঙ্গরের মত ভয়ংকর মাছ, এমনকি চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তোলার আসক্তির কারণে নিজের জীবনকে বিপদে ফেলার মতো এমন লোকও যথেষ্ট পরিমাণে পৃথিবীতে পাওয়া যায়। স্মরণ রাখবেন! শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া জেনে-বুঝে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া গুনাহ্ ও হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং নিজেদের হাতে ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়ো না। (পারা: ২, সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৫)


সেলফির ক্ষতি সমূহ 


সেলফির কি উপকারিতা রয়েছে, সেটা তার প্রতি আসক্ত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসা করুন! হতে পারে তারা স্মরণীয়, বিস্ময় এবং মনোরম আকর্ষণীয় দৃশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সেলফিকে উপকারী সাব্যস্ত করবে। কিন্তু বিভিন্ন অবস্থায় সেলফির ক্ষতির তালিকা এর উপকারিতা থেকেও অনেক বেশি দীর্ঘ। যেমন- 

* সেলফির শখ পূরণ করতে গিয়ে মতো মহামূল্যবান জিনিস সময়ের নষ্ট করতে হয়, 

* টাকা খরচ হয়ে থাকে, শরীর-স্বাস্থের ক্ষতি হয়, ভয়ংকর ও আশ্চর্যজনক সেলফি তোলার শখ প্রাণও নিতেপারে, “নো সেলফি জোন” এ সেলফি তোলার কারণে আইন ভঙ্গের অপরাধে শাস্তি হতে পারে, অনর্থক সেলফি তোলার কারণে লজ্জাহীনতা ছড়িয়ে পড়ে,  কিছু অপদার্থ মেয়ে নিজের সেলফি সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দেয়। নোংরা মানসিকতার লোকেরা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঐ ছবিগুলোর অশ্লীল দৃশ্যাবলী তৈরী করে তাদের সম্মান মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে, মোবাইল ফোন বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া এবং সেলফিতে ব্যস্ত থাকা লোক পরিবারকে সময় দিতে ব্যর্থ হয়ে বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহে লিপ্ত হওয়ার পাশাপাশি ঘরে ঝগড়ার কারণও হতে পারে। 


সময় বিনষ্টকারী শখ 


এই শখটি সময়কে কেড়ে নেয়। কেননা, সেলফি তোলার জন্য বিস্ময়কর স্থান নিবার্চন করা, অনেক ঘন্টা ব্যয় করে সে স্থানে পৌঁছা, অতঃপর সেই সেলফিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করা এবং এরপর এটার ফিডব্যাক (ঋববফনধপশ) চেক করা যে, কতজন লোক লাইক (খরশব) করেছে আর কতজন ডিসলাইক (উরংষরশব) করেছে। এই সমস্ত কাজে যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়ে যায়। মনে রাখবেন! সময়, প্রতিটা মুহুর্ত হলো অমূল্য হীরা। এটার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদের প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা ইরশাদ ফরমান,

অনুবাদ: দু’টি নিয়ামত রয়েছে, যার ব্যাপারে অধিকাংশ লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। 

(১) সু-স্বাস্থ্য, (২) অবসর।” (বুখারী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ২২২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬৪১২) 

চিন্তা করুন! প্রত্যেক আগত সকাল ডাবল ১২ (২৪) ঘন্টা সাথে নিয়ে আসে। এভাবে ধনী হোক বা গরীব, নারী হোক বা পুরুষ, বৃদ্ধ হোক বা শিশু, শিক্ষক হোক বা শিক্ষার্থী জীবনের শতার্নুসারে সে প্রতি দিনে ও রাতে ১৪৪০ মিনিটের সম্পদ বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যায়। ইংরেজি সাল অনুযায়ী এসব মিনিটকে একত্রিত করলে ৩৬৫ দিনে ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৪০ মিনিট অথবা ৮ হাজার ৭ শত ৮৪ ঘন্টা হয়। এই সম্পদকে মানুষ ইচ্ছা করলে নষ্ট করে দিতে পারে আর ইচ্ছা করলে এর থেকে উপকার লাভ করতে পারেসময় এমন সম্পদ, যা জমা করে রাখা যায় না। আপনি এটা থেকে উপকার গ্রহণ না করলেও সেটা অতিবাহিত হয়ে যায়। যেমন- বরফ, তা ব্যবহার না করলেও সেটা গলে শেষ হয়ে যায়। আপনি এবার সত্যিকারভাবে বলুন, যে সময় ভাল ও নেক কাজে অতিবাহিত করে পরকালের কল্যাণ অর্জনে ব্যবহৃত হতে পারে, সে সময়কে সেলফি এবং অনর্থক কাজে ব্যয় করা ক্ষতির ব্যবসা নয় কি? 


সম্পদ বিনষ্টকারী শখ 


 সেলফি (ঝবষভরব)’র শখ ফ্রিতে পূর্ণ হয় না বরং উন্নত থেকে উন্নত মানের মোবাইল অথবা ক্যামেরা কিনতে হয়। ইন্টারনেটের ফিও পকেট থেকে দিতে হয়। হাতে মোবাইল নিয়ে সেলফি তোলার যুগ এখন অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এখনতো সেলফি তোলার জন্য বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জামাদি সর্বসাধারণের মাঝে চলে আসছে, আর এটা স্পষ্ট যে, এগুলো টাকার বিনিময়েই ক্রয় করা হয়ে থাকে। 


(২) সাপের সাথে সেলফি তোলাতে চরম মূল্য হলো 


একজন আমেরিকান ব্যক্তির সাপের সাথে সেলফি তোলার শখ হলো। সে যখন সাপের সাথে সেলফি তুলছিল, তখন সাপ সুযোগ পেয়ে তার বাহুতে ছোবল দিলো আর ঝোপের ভিতর পালিয়ে গেলো। সাপের বিষ দ্রুততার সথে তার প্রভাব দেখাতে শুরু করলো আমেরিকান লোকটির মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে লাগলো, আর ব্যথার যন্ত্রণায় ভীষণ কাতরাতে লাগলো। তাকে ডাক্তার চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো, সেখানে বিষ নিষ্ক্রিয় করার জন্য তাকে বিশেষ চিকিৎসা দেয়া হলো এবং কয়েকটি ইনজেকশনও দেয়া হলো। সুস্থ হওয়ার পর যখন ঐ আমেরিকান লোকটিকে হাসপাতাল কতর্ৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিল পেশ করা হলো, তখন তার চোখ কপালে উঠে গেলো। কেননা, তার সেলফি তোলার শখ হাসপাতালের বিল ১ লক্ষ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা) এর চেয়েও বেশি বানিয়ে দিয়ে ছিলো। ঐ আমেরিকান লোকটির কাছে ১ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের আরও একটি সাপ ছিলো। কিন্তু এই ঘটনায় সে এতো বেশি ভীতসন্ত্রস্থ হয়েছিলো যে, ঐ সাপটিকেও জঙ্গলে নিয়ে ছেড়ে দিলো। 


(৩) অপারেশন চলাকালিন সেলফি নেয়া ডাক্তার 


চীনের উত্তর-পশ্চিমের “শানচি” প্রদেশের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তারদের মাথায় সেলফি তোলার এমন ভূত সাওয়ার হলো যে, তারা অপারেশন চলাকালিন সেলফি তোলাতে ব্যস্ত থাকে। কেউ বিজয়ের (ঠ) চিহ্নের পোজ দিলো, আবার কেউ হাসির পোজ। ছবি জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কর্তব্যে অবহেলার কারণে তিনজন সিনিয়র ডাক্তারকে বরখাস্থ করেন। সাথে সাথে ছবিতে দৃশ্যমান অন্যান্য কর্মকতার্দের তিরস্কার করা হলো এবং তাদের তিনমাসের বেতন আটকে দেয়া হলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনসাধারণ থেকে ক্ষমা চেয়ে বলেন: এই অপারেশন থিয়েটারে এটা সর্বশেষ অপারেশন ছিলো, তাই ডাক্তারদের পক্ষ থেকে এরূপ কর্মকান্ড প্রকাশ পেয়েছিলো। 


স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর শখ 


ওহায়ু ইউনিভার্সিটি কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত অসংখ্য ব্যক্তির উপর জরিপ চালানো হয়েছে। যাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, যেসব লোক অতিরিক্ত সেলফি প্রকাশ করে তার মধ্যে মানসিক রোগের আশংকা এবং ব্রেইনের রোগ ব্যাধির সম্ভাবনাও খুব বেশি হয়ে থাকে। লন্ডনের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সেলফি তোলা কেবল চেহারার স্কিনে প্রভাব ফেলে না বরং এর দ্বারা চেহারায় ফাটলও ধরে। গবেষকদের মতে, স্মার্ট ফোন থেকে নির্গত আলো ও ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন চেহারার চামড়ায়  ক্ষতি সাধন করে। যার ফলে দ্রুত বাধর্যক্য চলে আসে এবং চেহারার ফাটল স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। 


প্রাণনাশক শখ 


সেলফির শখ প্রাণ বিনাশকারীও সাব্যস্ত হতে পারে। সেলফি আসক্তরা জনগণের চলাচল স্থলে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করে বসে যে, নিজের এবং অপরের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। যার ফলাফল হাসপাতালের বিছানা বা মৃত্যুর বিছানা হয়ে থাকে। একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত সেলফি তোলার উন্মাদনায় প্রায় ৪৯টি মৃত্যুর ঘটনা সংঘটিত হয়। নিহতদের অধিকাংশের বয়স ছিলো ২১ বছর এবং যার ৭৫% ছিলো পুরুষ। সেলফি তোলার জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা হলো উঁচুস্থান অথবা পানি। ১৬ জন অতি উঁচু স্থান থেকে কিংবা ছাদ থেকে পড়ে, ১৪ জন পানিতে ডুবে এবং ৮ জন ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেয়ে মারা যায়। ৪ জন গুলি চলাতে, ২ জন গ্রেনেডে, ২ জন বিমানের সাথে ধাক্কা খেয়ে, ২ জন প্রাইভেট কার (গাড়ি)র সাথে ধাক্কায় আর একজন হিংস্র প্রাণীর আক্রমনে মৃত্যুবরণ করে। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ভারতে ঘটেছে। এজন্য ভারতের ১৬টি স্থানে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২য় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। সেলফি তোলা জনিত মৃত্যুতে পাকিস্তান দশম স্থানে রয়েছে। শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে কতিপয় নিবার্চিত ঘটনা লক্ষ্য করুন: 


(৪) হাত-বোমার সাথে সেলফি 


রাশিয়ায় পাহাড়ের চূড়ায় দুইজন তরুণ ঐ সময় মৃত্যুবরণ করে যখন তারা ১টি হাত বোমার পিন বের করে নেয়ার সময় এটার সাথে সেলফি তোলার চেষ্টা করে। 


(৫) তাজমহলের সিঁড়ি থেকে পড়ে মৃত্যু 


জাপানের এক পর্যটক প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ভবন তাজমহলে (আগ্রা, ভারত) ‘রয়েল গেইট’ এর সিঁড়িতে উঠার সময় সেলফি নিতে গিয়ে ছিঁটকে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। 


(৬) মা-বাবা ও কন্যা পানিতে ভেসে গেলো 


খায়বার পাখতুনখাঁ (পাকিস্তান) এর একটি গ্রাম “বিসিয়া” এর নিকটবর্তী কুনহার নদীর তীরে ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে সেলফি তুলছিলো। হঠাৎ সে পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়। মা তার কন্যাকে বাঁচাতে নদীতে লাফ দিলে মাও পানিতে ভেসে যায়। মা-মেয়েকে পানিতে ডুবতে দেখে মেয়ের বাবাও পানিতে লাফ দেয় আর সে বেচারাও পানিতে ডুবে যায়। মেয়েটির পিতা-মাতা পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা ছিলো। আর তারা দু’জনই ডাক্তার ছিলো। আর তারা ছুটিতে আনন্দ ভ্রমণের উদ্দেশ্য সেখানে গিয়েছিলো।তাদের ৯ বছরের একটি মেয়ে ও ৬ বছরের একটি ছেলেও ছিলো, যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো। হায়! সেলফির শখ (আসক্তি) এই দুই জীবিত বেঁচে যাওয়া শিশু থেকে তাদের বড় বোন ও মা-বাবাকে কেড়ে নিয়ে তাদের এতিম এবং অসহায় করে দিলো। 


(৭) ১৭ তলা থেকে নিচে পড়ে গেলো 


১২ বছরের রাশিয়ান বালিকা সেলফি তোলার সময় বেলকনি থেকে নিচে পড়ে মারা যায়। বিস্তারিত ভাবে জানা যায়, সে ১৭ তলায় অবস্থিত নিজের ফ্ল্যাটের রেলিংয়ে বসে সেলফি তোলার সময় নিজের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি আর সে নিচে পড়ে যায়। সে তার মাকে এটা বলে গিয়েছিল যে, “বাতাস খাওয়ার জন্য ছাদে যাচ্ছি”, কিন্তু সে ছাদে না গিয়ে বেলকনিতে পৌঁছে যায়। পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী সেই মেয়েটি এই ছবিটি তার এক বান্ধবীকে পাঠায়। বান্ধবীটি মনে করলো যে, এই ছবিটি খুব বিপদজ্জনক স্থানে তোলা হয়েছে। তাই সে দ্রুত তাকে ফোন করে, কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না, অতঃপর ঐ বান্ধবীটি ছবিটি তার মাকে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এরই মাঝে মেয়ে নিচে পড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফেলে। এক পথচারী পুলিশকে মেয়েটির লাশের ব্যাপারে সংবাদ দেয়।


(৮) সাতাঁর কাটার সময় সেলফি তোলা প্রাণ বিনাশকারী সাব্যস্ত হলো 


শামসাবাদ এলাকার কোতোয়ালগৌড়া, হায়দারাবাদ (ভারত) দুই যুবক সাতাঁর কাটার সময় সেলফি নিতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায়। বিস্তারিত বর্ণনা মোতাবেক, হায়দারাবাদের (ভারত) ১৪ জন যুবক সাতাঁর কাটার জন্য কোতোয়ালগৌড়া আসে। তাদের মধ্যে কেউ ভালভাবে সাতাঁর জানতো না। তাদের মধ্যে ২ জন যুবক যাদের বয়স ধারাবাহিকভাবে ১৭ ও ১৮ ছিলো, তারা সেলফি তুলছিলো, হঠাৎ পা পিছলে তারা একটি গর্তে পড়ে যায় আর ডুবে মারা যায়। 


(৯) সাদা সিংহের মুখে গ্রাস হয়ে গেলো 


দিল্লির (ভারত) একটি চিড়িয়াখানায় একজন যুবক সেলফি তোলার জন্য চমৎকার জায়গার খোঁজ করতে করতে সাদা সিংহের খাঁচার নিকট পৌছে যায়। আর যখনি সে সেলফি তোলার জন্য প্রস্তুত হলো, তখনি সিংহ তাকে থাবা মারে আর সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। 


(১০) সেলফি নিতে গিয়ে পিস্তল চালিয়ে দিলো 


মারকাযুল আউলিয়া (লাহোর) এর ২২ বছর বয়সী এক যুবক ২০১৬ সালে সেলফি তোলার পাগলামীতে সম্ভবত প্রথম শিকার হয়। পুলিশের ভাষ্য মতে, যুবকটি তার বন্ধুদের সঙ্গে নিজের বুকে আসল পিস্তল রেখে সেলফি তুলছিলো। হঠাৎ -- ভূলক্রমে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ পড়ে যায়। তাকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সে আর প্রাণ ফিরে পায়নি। 


(১১) ট্রেনের ধাক্কা 


২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে একজন তরুণ রেললাইনে দাঁড়িয়ে চলন্ত ট্রেনের সাথে সেলফি নেয়ার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগার কারণে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। 


(১২) মহিলা ট্রেন থেকে নিচে পড়ে গেলো 


কলম্বোতে ২৫ বছরের চীনা মহিলা তখনই ট্রেন থেকে বাইরে গিয়ে পড়ে যায়, যখন সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের ফুট বোর্ডে সেলফি তুলছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু গুরুতর আঘাতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে। 


(১৩) খেলনার পিস্তলের সাথে সেলফি তোলা মৃত্যুর কারণ হলো 


স্কুলের দু’জন শিক্ষার্থী খেলনার পিস্তলের সাথে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট দেয়ার শখে পড়ে পুলিশের আসল পিস্তলের নিশানা হয়ে গেলো।তারা উভয়ে পার্কে দাঁড়িয়ে খেলনার পিস্তলের সাথে সেলফি তুলছিল, এমন সময় স্থানীয় পুলিশ ডাকাত ভেবে তাদের উপর গুলি চালালো। ফলে একজন ছাত্র গুরুতর আহত হয় আর হাসপাতালে সে মৃত্যুবরণ করে। এই দুঃখজনক ঘটনাটি ২০১৫ সালে পাকিস্তানের শহর সরদারাবাদে (ফয়সালাবাদে) সংঘটিত হয়। 


(১৪) বিরল সেলফি মৃত্যুর ঘুম পাড়িয়ে দিলো 

 

২০১৫ সালের মে মাসে রোমানিয়ান ১৮ বছর বয়সী এক মেয়ে তার বান্ধবীর সাথে রেলষ্টেশনে পৌঁছে যায়। যাতে সে একটি আশ্চার্যজনক সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোষ্ট করতে পারে। কিন্তু ট্রেনের ছাদে উঠে বিদ্যুতের তারে তার হাত লেগে যায়। আর দেখতে দেখতে ২৭০০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ তাকে মৃত্যুর ঘুম পাড়িয়ে দেয়। 


(১৫) সেলফি আসক্ত ছাত্রী পুল থেকে পড়ে যায়, আর... 


২০১৪ সালে নার্সিং বিভাগের ২৩ বছর বয়সী এক ছাত্রী দক্ষিণ স্পেনে অবস্থিত একটি পুলের উপর সেলফি তোলার সময় নিজের শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি এবং ১৫ ফুট নিচে কংকর দিয়ে তৈরি স্ট্রাকচার  এ গিয়ে পড়ে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু গুরুতর আঘাতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে সে মারা যায়।


(১৬) সেলফি ধারণকারীনির যখন তীব্রভাবে বিদ্যুতের ঝাঁকুনি লাগে 


রাশিয়ার শহর “সেন্ট পিটার্সবার্গ” এর রেলওয়ে পুলের সুউচ্চস্থানে ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ে সেলফি তোলার আশায় ছিলো, আর শেষ পর্যন্ত সে সেলফি তোলার প্রচেষ্টা কালিন সময় ১৫০০ বোল্টের চলমান বিদ্যুতের তারের সাথে তার ধাক্কা লেগে যায়। আর বিদ্যুতের ঝাঁকুনি তাকে পুল থেকে ৩০ ফুট নিচে ফেলে দেয়, যার ফলে তার মৃত্যু ঘটে। 


(১৭) সেলফির শখ সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলো 


ফিলিপাইনে ১৮ বছর বয়সী এক মেয়ে তার বান্ধবীর জন্মদিনে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে গ্রুপ সেলফি তোলার সময় পানিতে ডুবে মারা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ঐ ছাত্রীকে সমুদ্রের ঢেউ তখন ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যখন সে তার বান্ধবীদের সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলো। 


(১৮) স্বামী-স্ত্রী পাহাড় থেকে পড়ে মৃত্যু 


২০১৪ সালের আগষ্ট মাসে পতুর্গালের কাবু ডা রোকা নামের পাহাড়ের চূড়ায় এক পাশে দাঁড়িয়ে স্বামী-স্ত্রী তাদের বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সেলফি তোলার চেষ্টা করছিল এমন সময় পা পিছলে তারা উভয়ে নিচে পড়ে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে। বাচ্চারা নিজেদের চোখের সামনে নিজের মা-বাবাকে মুত্যুর মুখে পতিত হতে দেখলো। 


(১৯) পুলের সাথে ঝুলে সেলফি 


২০১৬ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর বয়সী এক ছাত্র ঐ সময় মৃত্যুবরণ করে, যখন “মাসকু” এর একটি পুলের সাথে ঝুলে সেলফি তুলছিল। ইতোপূর্বে সে রাশিয়ার শহর “বলুগাড়া”য় সুউচ্চ ছাদের উপর নিজের অনেক ছবি তুলে নিয়ে ছিলো।


 (২০) ১৬৪০ ফুট গভীর ঝণার্য় পতিত হলো

 

সেলফি তোলার সময় ২৮ বছরের কোরিয়ান পর্যটক আমাজন জঙ্গলের গভীর ঝণার্য় পড়ে গিয়ে মৃত্যুর শিকার হয়। লোকটি সেলফি তোলার সময় আপন শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি এবং পা পিছলে ১৬৪০ ফুট গভীর ঝণার্য় পতিত হয়। লোকটির লাশ ভেসে ভেসে ৭ মিটার গভীর হ্রদে এসে পৌছে। সেখান থেকে উদ্ধারকারী সংস্থার সাঁতারু কর্মীরা তার লাশ বের করে নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেয়।


(২১) দুইজন নিকটাত্মীয় নদীতে ডুবে যায় 


সেলফির পাগলামি খায়বার পাখতুনখাঁ (পাকিস্তান) এর “ওয়াদি কা ঘান”এ শনিবারে ১জন পুরুষ ও ১জন মহিলার প্রাণ কেড়ে নেয়। ঘটনা কিছুটা এরকম ছিলো যে, কুনহার নদীর পাড়ে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ২৯ বছরের যুবক সেলফি তুলছিলো। হঠাৎ তার পা পিছলে সে কুনহার নদীতে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে তার নিকটতম আত্মীয়ও পানিতে লাফ দিলো, আর দু’জনই ডুবে গেলো। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান; যুবকটি পাথরের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলো, আর আমি তাকে নিষেধ করতে চাচ্ছিলাম, আর তখনই তার পা পিছলে যায়, আর সে নদীতে পড়ে যায়। 


(২২) সাপ দংশন করলো 


সারায়ে আলমগীর (পাঞ্জাব, পাকিস্তান), সাপের সাথে সেলফি ধারণকারী ২৬ বছর বয়সী যুবক সাপের দংশনে মৃত্যুবরণ করে। ঐ যুবকটি “বান্নু”এর অধিবাসী ছিলো আর সে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে সারায়ে আলমগীর এসেছিলো। (জঙ্গ পত্রিকা অল লাইন, ১২ই অক্টোবর, ২০১৬)


(২৩) সেলফি তোলার সময় পাহাড়ী নালায় পড়ে যায় আর... 


মারকাযুল আউলিয়া (লাহোর) এর অধিবাসী এক ব্যক্তি “নিলম” উপত্যকার মনোরম স্থানের কুটানে ‘জাগরান নদীর’ পুলের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল। হঠাৎ পা পিছলে সে নদীতে গিয়ে পড়ে। তার অন্যান্য বন্ধুরা আহত অবস্থায় ভেসে যাওয়া যুবককে তুলে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সে আর জীবিত হলো না। মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনের জন্য তার পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হয়। (প্রাগুক্ত, ১২ই জুলাই) 


(২৪) দুই যুবক ডুবে গেলো যখন... 


“হালা”তে (সিন্ধু প্রদেশে) সেলফি তোলার সময় ২ জন যুবক নদীতে ডুবে যায়। তৃতীয়জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়। যুবক তিনজন সিন্ধু নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল। হঠাৎ পা পিছলে তারা নদীতে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাবিকরা একজনকে জীবিত উদ্ধার করে। বাকী দু’জন ডুবে যায়। (প্রাগুক্ত, ১২ই জুলাই)


(২৫) বন্দুক ধরে সেলফি ধারণকারীর প্রাণ গেলো 

 

গুজরা ওয়ালা (পাঞ্জাব)এ বন্দুক ধরে সেলফি ধারণকারী যুবকের হাত হঠাৎ ট্রিগারে চলে আসায় গুলি লেগে সে মারা যায়। চেমন শাহ্ রোডের এক যুবক রমযানুল মোবারকের তারাবীহর নামায আদায় করতে স্থানীয় মসজিদে গিয়েছিলো।যেখানে সে সিকিউরিটি গার্ড থেকে বন্দুক নিয়ে সেলফি তোলার জেদ করে বসে। হঠাৎ ট্রিগারে তার হাত চলে যায় এবং গুলি পেটে গিয়ে লাগে, যার ফলে সে গুরুতর আহত হয়। দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। এরপর তাকে লাহোরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু গুরুতর আহত হওয়ার কারণে সে মারা যায়। (জঙ্গ পত্রিকা, ২৪শে জুন, ২০১৬) 


(২৬) গুলিতে ৪৩ বছর বয়স্ক লোকের মৃত্যু 


বিভিন্নভাবে আশ্চার্যজনক ও বিস্ময়কর সেলফি তোলার সময় জীবন বাজীতে হেরে যাওয়ার বিষয়টি এটা এখন আর কোন নতুন কথা নয়। আমেরিকাতে এক ব্যক্তি তার বন্ধুর সাথে পিস্তল হাতে সেলফি তুলছিলো হঠাৎ পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে গেলো আর লোকটি ঘটনাস্থলে মারা গেলো। পুলিশের সূত্র মতে, সেলফি তোলার সময় ঐ লোকটি কয়েকবার পিস্তলে গুলি ভর্তি করে, পুনরায় খালি করে। এভাবে করতে করতে শেষবারে পিস্তল থেকে গুলি বের করার সময় পিস্তলে একটি গুলি অবশিষ্ট থেকে যায়। আর তার বন্ধু ভাবল যে, পিস্তলে এখন আর কোন গুলি নেই। আর তাই সে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিল এবং গুলি বের হয়ে গেলো আর সে ঘটনাস্থলেই মারা গেলো। (প্রাগুক্ত, ৪ঠা মার্চ)


(২৭) সেলফি তোলা কন্যাকে উচ্চমূল্য দিতে হলো! 


আজকাল মানুষের মাথায় সেলফি নেওয়ার ভূত সাওয়ার হয়েছে। অধিকাংশ সময় সেলফি তুলতে গিয়ে মানুষ নানারকম বিপদের সম্মুখীন হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তুর্কির এক নারীরও সেলফির কারণে খুবই কড়ামূল্য দিতে হয়। তুর্কির সেমসান শহরের সমুদ্রের উপকূলে এক নারী তার মোবাইলে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ পা পিছলে যায় আর সে কেঁপে উঠে। কম্পনে প্রথমে তার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়, এরপর সে নিজেও দু’টি পাথরের মাঝখানে আটকে পড়ে। দুই ঘন্টার ঘাম ঝরানো চেষ্টার পর মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। (জঙ্গ পত্রিকা, ৭ই মে, ২০১৬) 


(২৮) ১৫ বছরের কিশোর গুরুতর আহত 


ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে ১৫ বছরের বালক সেলফি তোলার সময় মাথায় গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়। এই দুর্ঘটনাটি তখনই ঘটে, যখন বালকটি তার পিতার পিস্তল নিয়ে সেলফি তুলতে চেষ্টা করছিলো, আর হঠাৎ গুলি লেগে যায়। (প্রাগুক্ত, ২রা মে)


(২৯) সেলফি নিতে গিয়ে কূপে পড়ে গেলো


জুনাগঢ় (গুজরাট, ভারত)এ একজন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক নিজের সেলফি তুলতে গিয়ে হঠাৎ কূপের মধ্যে পড়ে বিপদে ফেঁসে যায়। তার চিৎকারের আওয়াজ শুনে লোকজন ছুটে এসে তাকে কূপ থেকে উদ্ধার করে, তার জীবন রক্ষা করে। 


(৩০) বাচ্চা ডলফিনের মৃত্যু 


সেলফি প্রেমিকরা সেলফি ধারণ করার জন্য একটি ছোট ডলফিনকে সমুদ্র থেকে তুলে আনে। পানি থেকে আলাদা করার কারণে ডলফিনটি মারা যায়। যার কারণে ওয়াল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞ ও মানুষের মধ্যে অসন্তুষ্টতা দেখা যায়। ফ্রেন্সকা নামের এই ধরণের ডলফিন আকারের দিক দিয়ে সবচেয়ে ছোট ডলফিন। এই ধরণের ডলফিন শুধু আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও উরুগুয়েতে পাওয়া যায়। 


হজ্ব ও ওমরা এবং সেলফি 


হজ্ব ও ওমরার সফরের সময়েও সেলফি প্রেমিকরা তাদের শখ পূরণ করেই চলেতে দেখা যায়। তাদের যে দৃশ্য সুন্দর লাগে তৎক্ষণাৎ সেলফি তুলে নেয় এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রচার করে দেয়। হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেওয়ার সময়, সাঈ এবং তাওয়াফ করার সময়ও সেলফি তোলা হচ্ছে। যার ফলে তাওয়াফ ও সাঈ করা লোকদের কাজে বিঘ্ন ঘটে। লোকজন একে অপরের উপর ঢলে পড়ে বা একে অপরের সাথে ধাক্কা লাগে, যার কারণে তাদের কষ্ট হয়। এমনটি সেলফি ধারণকারীদের ইবাদতের আগ্রহেও এর প্রভাব পড়ে। সোনালী জালির পাশে মুয়াজাহা শরীফের সামনে হাজেরীর সময়ও সেলফি ধারণকারী পাওয়া যায়। এই কাজের উদ্দেশ্যে অনেকে নিজের পিঠ মুয়াজাহা শরীফের দিকে করে নেয়। 


হায়! আফসোস! আমাদের মনমানসিকতা যদি এমন হয়ে যায় যে, হারামাইন শরীফাইনের উদ্দেশ্যে সফর সেলফি তোলার জন্য নয় বরং সাওয়াব অর্জনের জন্য।  আগে দোয়ার আবেদন করতো, এখন সেলফির অনুরোধ  আগেকার দিনে যখন কোন দ্বীনি ব্যক্তিত্ব, উদাহরণস্বরূপ পীর সাহেব, মুফতি সাহেব প্রমুখ কারো ঘরে তাশরীফ আনলে বা রাস্তায় সাক্ষাত হলে সাধারণত তার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে তাকে দোয়া করার অনুরোধ করা হতো। আর বর্তমানে অবস্থা এমন যে, যখন কোন বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের সাথে দেখা হয়ে যায়, তখন দোয়ার আবেদন করার পরিবর্তে অধিকাংশের চেষ্টা এটাই হয় যে, তার সাথে কিভাবে একটি সেলফি নেয়া যায়।


ইসলামের সৌন্দর্য্য 

 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অপ্রয়োজনীয় সেলফির অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে যান, أن شاء الله عز وجل - অযথা কাজ থেকে বেঁচে যান। প্রিয় আক্বা মাদিনী মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন, অর্থাৎ: মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য্য সমূহের মধ্যে একটি সৌন্দর্য্য হলো যে, সে যেন অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যহীন কাজ পরিহার করে। (তিরমিযি, ৪র্থ খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা, নম্বর: ২৩৪৪)

প্রখ্যাত মুফাসসির মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (রহমাতুল্লাহ আলাইহি) লিখেন: অর্থাৎ পরিপূর্ণ মুসলমান হলো সেই, যে এমন কথাবার্তা, কাজ ও চালচলন থেকে বিরত থাকে যা তার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য উপকার প্রদানকারী নয়। এমন কথা ও কাজ করে যা তার দুনিয়া বা আখিরাতের জন্য উপকারী।  এই দু’টি বাক্যে উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (মিরআতুল মানাজিহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)


ইয়া রব্বে মুস্তফা! আমাদেরকে নিজেদের সময়কে উভয় জাহানে কল্যাণ দানকারী কাজে ব্যয় করার তাওফীক দান করো।

امين بجاه النبي الامين صلى الله عليه وآله اجمعين

صَلُّوْ عَلَيْ الْحَبِيْب صَلَّي الله عَلَيْ مُحَمَّد  ْ-


Top