মাদানী ব্যাখ্যা
মাদানী ইনআমাতের বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং সুযোগের ব্যাপারে প্রশ্নোত্তরের জন্য তানযীমী ধারায় চারটি নিয়ম সাব্যস্ত করা হয়েছে।
নিয়মাবলী
১. কিছু মাদানী ইনআমাত এমন রয়েছে, যা কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিত। যেমনঃ তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবীন বিশিষ্ট মাদানী ইনআম। এ মাদানী ইনআমে চারটি অংশ রয়েছে। তাই এ রকম মাদানী ইনআমতগুলোর ক্ষেত্রে অধিকাংশের উপর আমল হলে তানযীমী নিয়মানুযায়ী আমল হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে। (অধিকাংশ বলতে অর্ধেকের চেয়ে বেশিকে বুঝায়। যেমনঃ ১০০ এর মধ্যে ৫১ কে অধিকাংশ বলা হয়)
২. কিছু মাদানী ইনআমাত এমন রয়েছে, যার উপর কোন একদিন আমল না হওয়ার ক্ষেত্রে তানযীমীভাবে পরবর্তী দিন আমল করার সুযোগ থাকে। যেমনঃ কেউ চার পৃষ্ঠা ফয়যানে সুন্নাত পাঠ,৩১৩ বার দরুদ শরীফ পাঠ বা কানযুল ঈমান শরীফ হতে কমপক্ষে ৩ আয়াত (অনুবাদ ও তাফসীর সহ) তিলাওয়াত করা থেকে বঞ্চিত রইলেন, এ অবস্থায় যতদিন আমল হয়নি অর্থাৎ শূন্যতা রয়েছে। পরবর্তী দিন সমুহে বিগত দিনের রয়ে যাওয়া আমলগুলো হিসাব করে ততবার আমল করে নিলে আমল হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে।
৩. কিছু মাদানী ইনআমাত এমন রয়েছে, যার উপর আমল করার অভ্যাস গড়তে সময়ের প্রয়োজন। যেমনঃ অটঠাসি দেয়া, তুই-তুমি করে কথা বলা থেকে বাঁচা এবং দৃষ্টি নত রেখে চলার অভ্যাস গড়ার মাদানী ইনআমাত, এই সব মাদানী ইনআমাতের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের চেষ্টায় থাকাকালীন সময়ে আমল হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে। (পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালু আছে, এটা তখনই বুঝা যাবে যখন দৈনিক কমপক্ষে ৩ বার আমল পাওয়া যাবে।)
৪. এমন কিছু মাদানী ইনআমাত রয়েছে, যার উপর বিশুদ্ধ ওজর (অর্থাৎ বাস্তবীক অপরাগতা) থাকার কারনে আমল করার কোম সুযোগ হয় না অথবা ঐ সময়ে অন্য মাদানী কাজের ব্যস্ততা থাকে। যেমনঃ যিম্মাদার অন্যান্য মাদানী কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে মাদানী ইনআম যেমনঃ মাদরাসাতুল মাদীনা বালেগানে (অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসায়) অংশগ্রহন করতে পারেননি অথবা মা বাবার মৃত্যুর কারণে কিংবা তাঁদের বসবাস ভিন্ন শহরে হওয়াতে তাঁদের হাত চুম্বন করা থেকে এবং অশিক্ষিত হওয়ার কারণে লিখে কথাবার্তা বলা থেকে বঞ্চিত হলেন। তবুও তানযীমী ধারানুযায়ী আমল হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে।
দৈনিক ৫০টি মাদানী ইনআমাত
প্রথম পর্যায়ের ১৭ টি মাদানী ইনআমাত
১. আপনি কি আজ কিছু না কিছু জায়িয কাজের পূর্বে ভাল ভাল নিয়্যত করে নিয়েছেন? এছাড়া কমপক্ষে দু'জনকে এই ব্যাপারে তারগীব (উৎসাহ) দিয়েছেন কি?
২. আপনি কি আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে মসজিদের ১ম কাতারে, ১ম তাকবীরের সাথে আদায় করেছেন? প্রত্যেকবার যে কোন একজন ইসলামী ভাইকে আপনার সাথে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন কি?
৩. আপনি কি আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও শোয়ার পূর্বে কমপক্ষে একবার করে আয়াতুল কুরসী, সুরা ইখলাস এবং তাসবীহে ফাতিমা رَضِىَ اللّٰهُ تَغَالىٰ غَنْهَا পাঠ করেছেন? এবং রাতে সুরা মুলক পড়ে বা শুনে নিয়েছেন?
৪. আপনি কি আজ কথাবার্তা, চলাফেরা, উঠা, নামা, ফোনে কথাবার্তা, মোটর সাইকেল, কার চালানো ইত্যাদি সকল প্রকারের কাজকর্ম স্থগিত রেখে আযান ও ইকামাতের জবাব দিয়েছেন(যদি পূর্ব থেকে পানাহার রত থাকেন আর এদিকে আযান শুরু হয়ে যায়, তবে পানাহার চালু রাখতে পারবেন।)
৫. আপনি কি আজ নিজ সিলসিলার শাজরা হতে কিছু ওয়াযীফা এবং কমপক্ষে ৩১৩ বার দরুদ শরীফ পড়ে নিয়েছেন?
৬. আপনি কি আজ ঘর, অফিস, বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে আসা যাওয়ার সময় এবং গলি দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় রাস্তায় দাঁড়ানো বা বসে থাকা মুসলমানদের সালাম দিয়েছেন?
৭. আপনি কি আজ (ঘরে ও বাইরে) প্রত্যেক ছোট ও বড় এমনকি মা ( যদি নিজ সন্তান থাকে, তবে তাদেরকে এবং তাদের মাকেও) 'তুই' বলে নাকি 'আপনি' বলে সম্বোধন করেছেন? প্রত্যেকের সাথে কথাবার্তা বলার সময় 'হ্যাঁ' করে নাকি 'জ্বী' করে কথা বলেছেন? ( 'আপনি' করে বলা এবং 'জ্বী' করে উত্তর দেয়াটা মার্জিত ও সঠিক জবাব।)
৮. اِنْ شَآءَ اللّٰه عَزَّوَخَلَّ এর অর্থ হলঃ আল্লাহ তা'আলা যদি চান। আর হাদীসে এটি বলার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আপনি দৃঢ় সংকল্পের সাথে প্রত্যেক জায়েয কথার উপর নিয়্যত করার সময়
اِنْ شَآءَ اللّٰه عَزَّوَخَل এর পবিত্র বাক্য বলছেন কিনা? আর কারো পক্ষ থেকে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলে অভিযোগ করার পরিবর্তে اَلْهَمْدُللّٰهِ عَلٰى كَلِّ حَال (অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা'আলার কৃতজ্ঞতা) এবং কোন নেয়ামত দেখে مَا شَآءَاللّٰه عَزَّوَخَلَّ (অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলার যা মর্জি) বলেছেন কি?
৯. আপনি কি আজকে সালামের জবাব এবং হাঁচি দাতার
اَلْهَمْدُ لِلّٰه বলার সাথে সাথে জবাবে এতটুকু আওয়াজে
يَرْهَمُكَ اللّٰه বলেছেন যে তারা উভয়ে শুনে নিয়েছেন?
১০. আপনি কি আজকে কথা-বার্তার চলাকালীন কিছু না কিছু দা'ওয়াতে ইসলামীর পরিভাষা ব্যবহার করেছেন? আর উচ্চারন বিশুদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করেছেন?
১১. আপনি কি আজ সুন্নাত অনুযায়ী বসে পর্দার উপর পর্দা সহকারে পানাহারের সময় মাটির বাসন ব্যবহার করেছেন? সাথে সাথে পেটের কুফলে মদীনা লাগানোর (অর্থাৎ ক্ষুধা হতে কম খাওয়ার চেষ্টা করেছেন কি? (সৌভাগ্যের বিষয় হবে যদি প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ মিনিট পেটে পাথর বাঁধার সৌভাগ্য অর্জন হত।)
১২. আপনি কি আজকে ফয়যানে সুন্নাত থেকে কমপক্ষে দুইটি দরস ( মসজিদ, ঘর, দোকান ইত্যাদি) যেখানে সুবিধা হয় দিয়েছেন বা শুনেছেন? (দুটি দরস হতে ঘরে একটি দরস দেয়া জরুরী)
১৩. আপনি কি আজ মাদরাসাতুল মদীনায় (প্রাপ্ত বয়স্কদের) পড়েছেন বা পড়িয়েছেন? এমনকি মহল্লার মসজিদের ইশার নামাযের জামাআতের সময় হতে দু'ঘন্টার মধ্যে ঘরে পৌছে গিয়েছেন?
১৪. আপনি কি আজ ১২ মিনিট মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত যে কোন 'সংশোধনমূলক কিতাব' এবং ফয়যানে সুন্নাত হতে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ৪ পৃষ্ঠা (দরস ব্যতীত) পড়ে বা শূনে নিয়েছেন?
১৫. আপনি কি আজ একাগ্রতার সাথে কমপক্ষে ১২ মিনিট ফিকরে মদীনা (অর্থাৎ নিজ আমলের হিসাব) করতে গিয়ে যে সব মাদানী ইনআমাতের উপর আমল হয়েছে রিসালায় সেগুলোর ঘর পূরন করেছেন?
১৬. আপনি কি আজ কমপক্ষে একবার সালাতুত তাওবা (উত্তম এটাই যে ঘুমানোর পূর্বে) আদায় করে সারাদিনের বরং অতিতে সংঘটিত সকল গুনাহ হতে তাওবা করেছেন? এমনকি আল্লাহ না করুন গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করে ভবিষ্যতে ঐ গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছেন তো?
১৭. আপনি কি কাজ (প্লাষ্টিকের নয়) খেজুর পাতার চাটাইতে অথবা না থাকা অবস্থায় মাটিতে শোয়ার সময় শিয়রে ( এমনকি সফরেও) সুন্নাত অনুযায়ী আয়না, সুরমা, চিরুনী, সুঁই, সুতা, মিসওয়াক,তেলের বোতল এবং কাঁচি সাথে রেখেছেন। এছাড়াও ঘুম থেকে উঠার পর বিছানা এবং শরীর থেকে খুলে রাখার পর পোশাক গুছিয়ে রেখেছেন কি?
দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭ মাদানী ইনআমাত
১৮. আপনি কি আজ ফজর, যোহর, আছর ও ইশার পূর্বের সুন্নতগুলো (জামাআত শুরু হওয়ার পূর্বে) আদায় করেছেন? এছাড়া ফরযগুলোর পবের নফল নামায সমূহ আদায় করেছেন? (নফল নামাযগুলো দরস ও বয়ানের পরও আদায় করতে পারবেন।)
১৯. আপনি কি আজ তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও চাশত এবং আওয়াবীনের নামায আদায় করেছেন?
২০. আপনি কি আজ কমপক্ষে একবার করে তাহিয়্যাতুল অযু ও তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায আদায় করেছেন?
২১. আপনি কি আজ কানযুল ঈমান থেকে কমপক্ষে তিন আয়াত (অনুবাদ ও তাফসীর সহ) তিলাওয়াত করা বা শুনার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন?
২২. আপনি কি আজ কমপক্ষে দু'জন ইসলামী ভাইকে ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে মাদানী কাফেলা এবং মাদানী
ইনআমাত এবং অন্যান্য মাদানী কাজের প্রতি তারগীব (উৎসাহ) দিয়েছেন?
২৩. আপনি কি আজ দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ সমূহ, যেমনঃ ইনফিরাদী কৌশিশ, দরস, বয়ান, মাদরাসাতুল মদীনা বালেগান (প্রাপ্তবয়স্কদে) ইত্যাদিতে কমপক্ষে দু'ঘন্টা ব্যয় করেছেন?
২৪. আপনি কি আজ মারকাযী মজলিসে শুরা, কাবীনাতে মুশাওয়ারাত এবং অন্যান্য মজলিস সমূহ যার অধীনে আপনি রয়েছেন (শরীয়তের সীমার মধ্য থেকে) তাদের আনুগত্য করেছেন?
২৫. আজকে আপনি অন্যের কাছ থেকে চেয়ে কোন জিনিস (যেমনঃ চাদর, ফোন, গাড়ী ইত্যাদি) ব্যবহার তো করেন নি? (অপরের কাছ থেকে চাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রয়োজনীয় বস্তু চিহ্নিত করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।)
২৬. কোন যিম্মাদার (বা সাধারন ইসলামী ভাই) হতে যদি দোষ ত্রুটি প্রকাশ পেয়ে যায়, আর সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, লিখিতভাবে অথবা তার সাথে সরাসরি সাক্ষাত করে (উভয় অবস্থায় বিনয়ের সাথে) তা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, নাকি আল্লাহর পানাহ শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া অন্য কারো নিকট তা প্রকাশ করে গীবতের মত কবীরা গুনাহ করে বসেছেন?
২৭. আপনি কি আজ (ঘরে এবং বাইরে) পর্দার মধ্যে পর্দা করেছেন এছাড়া বসার সময় কিবলার দিকে মুখ করে বসার চেষ্টা করেছেন?
২৮. আজকে আপনি (ঘরে কিংবা বাইরে) কারো উপর রাগ আসা অবস্থায় চুপচাপ থেকে রাগের চিকিৎসা করেছেন, নাকি কিছু বলে উঠেছেন? এছাড়া তাকে ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন নাকি বদলা নেয়ার সুযোগ খুঁজেছেন?
২৯. আজকে আপনি কারো কাছে এমন অপ্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাবলীতো জিজ্ঞাসা করেননি যেগুলোর মাধ্যমে মুসলমানরা অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলার মত কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়? (যেমনঃ অনর্থক প্রশ্ন করা, আপনার কি আমাদের খাবার পছন্দ হয়েছে? ইত্যাদি)
৩০. আজকে আপনি না মাহরাম আত্মীয়া (অর্থাৎ এমন মহীলা যাদের সাথে বিবাহ বৈধ না) এমন মাহরাম প্রতিবেশীনী, এমনকি আল্লাহর পানার ভাবীর সাথে নিঃসঙ্কোচে হেসে হেসে কথাবার্তা বলার মত নিষিদ্ধ কাজতো করেন নি? তাদের সামনে আসতে সংকোঁবোধ এবং তাদের সাথে শরয়ী পর্দা করেছেন তো?
৩১. আপনি কি আজ ঘরে কিংবা বাইরে T.V., V.C.R বা INTERNET ইত্যাদিতে সিনেমা, নাটক ও গান বাজনা ইত্যাদি দেখা বা শুনা থেকে বেঁচেছেন? এমনকি চোখের হিফাজতের অভ্যাস গড়তে ঘুমানোর সময়গুলো ব্যতীত কমপক্ষে ১২ মিনিট চোখ বন্ধ রেখেছেন কি?
৩২. আপনি কি আজ ঘরে মাদানী পরিবেশ তৈরীর জন্য ১৯টি মাদানী ফুল অনুযায়ী অনুকুল অবস্থায় আমল করেছেন?
('মাদানী ফুল' রিসালার শেষে দেখুন)
৩৩. আজকে আপনি (ঘরে কিংবা বাইরে) কারো বিরুদ্ধে অপবাদতো দেন নি? কারো নামতো বিকৃত করেন নি? কাউকে গালি গালাজ তো দেন নি? (কাউকে শুকর, গাধা, চোর, লম্বা, খাটো ইত্যাদি বলবেন না।)
৩৪. আজকে আপনি অন্যের কথা নীরবে (মন দিয়ে) শুনার পরিবর্তে তার কথাকে কেটে নিজের কথাতো শুরু করে দেননি? এমনকি কথা বুঝে আসার পরও শুধু শুধু 'হ্যা' 'জ্বী' অথবা 'কী' ইত্যাদি বলে কিংবা ভ্রু বা চেহারার ইশারায় অন্যদেরকে অযথা তার কথা পুনরায় বলার কষ্টতো দেননি?
তৃতীয় পর্যায়ে ১৬টি মাদানী ইনআমাত
৩৫. আপনি কি আজ 'সদায়ে মদীনা' দিয়েছেন? (দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে ফযরের নামাযের জন্য মুসলমানদের জাগানোকে 'সদায়ে মদীনা' বলা হয়?
৩৬. আপনি কি আজ রাস্তায় চলার সময় ও গাড়িতে সফর করার সময় চোখের কুফলে মদীনা লাগানো অবস্থায় যথাসাধ্য দৃষ্টিকে নত রেখেছেন? এছাড়া বিনা প্রয়োজনে (ঘরে ও বাইরে) এদিক সেদিম দেখা, সাইনবোর্ড ইত্যাদির উপর দৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছেন কি?
৩৭. আপনি কি আজ নিজ ঘরের বারান্দা হতে (অপ্রয়োজনে) বাইরে এমনকি অন্য কারো দরজা ইত্যাদি দিয়ে তাদের ঘরের ভিতর উঁকি মারা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছেন?
৩৮. আপনি কি আজ মিথ্যা, গীবত, চুগলখোরী, হিংসা, অহংকার এবং ওয়াদাভঙ্গ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন?
৩৯. আপনি কি আজ দিনের অধিকাংশ সময় অযু অবস্থায় ছিলেন?
৪০. আজকে আপনি কারো সাথে কথা বলার সময় দৃষ্টিকে নত রেখেছেন? নাকি যার সাথে কথা হচ্ছে তার চেহারার দিকে দৃষ্টি দিতে থাকেন? (দৃষ্টি নিচের দিকে রাখার অভ্যাস গড়ার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ মিনিট কুফলে মদীনার চশমা ব্যবহার করুন।
৪১. আজকে আপনি ঋন হয়ে যাওয়া অবস্থায় (সামর্থ থাকা সত্ত্বেও) ঋনদাতার অনুমতি ব্যতীত ঋন আদায়ে দেরিতো করেননি? এছাড়া কারো কাছ থেকে ধার স্বরুপ (সাময়িকভাবে) কোন জিনিস নিয়ে থাকলে তা প্রয়োজন পূরণের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছেন কি?
৪২. আজকে আপনি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তা গোপন রেখেছেন নাকি (শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া) তার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে দিয়েছেন? এছাড়াও কারো গোপন ভেদ (তার অনুমতি ছাড়া) অপরজনকে বলে দিয়ে খিয়ানত তো করেননি?
৪৩. আপনি কি (শরীয়াতের অনুমোদন ছাড়া) কোন একজন অথবা কয়েকজনের সাথে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়েছেন নাকি প্রত্যেকের সাথে একই ধরনের সম্পর্করেখেছেন? (ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব ও গ্রুপিং সাধারনত সাংগঠনিক কাজের উন্নতির বাধা হয়ে দাঁড়ায়।)
৪৪. আপনি কি আজ নামায ও দুয়ার মধ্যে খুসো ও খুযো (খুসো অর্থাৎ শরীরের বিনয়তা ও খুযো অর্থ অন্তরের বিনয়ীভাব) সৃষ্টি করেছেন? এমনকি দুয়া'র মধ্যে হাত উঠানোর আদবের প্রতি খেয়াল করেছেন?
৪৫. আজকে আপনি বীনয়ের এমন শব্দাবলী (যা অন্তর সমর্থন করে না) বলে কপটতা ও রীয়াকারী ইত্যাদি ভাগীদারত হন নি?
যেমন এইভাবে বলল যে, আমি নগন্য, অধম ইত্যাদি। অথচ অন্তরে নিজেকে অধম মনে করে না।
৪৬. আপনি কি আজ মুখের কুফলে মদীনা লাগিয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বাঁচার অভ্যাস গড়ার জন্য কিছু না কিছু ইশারায় এবং কমপক্ষে চারবার লিখে কথা বলেছেন?
৪৭. আপনি কি আজ একাকী বা ক্যাসেট ইজতীমাতে কমপক্ষে একটি বয়ান অথবা মাদানী মুযাকারার একটি অডিও/ভিডিও ক্যাসেট বসে শুনেছেন বা দেখেছেন কিংবা মাদানী চ্যানেল কমপক্ষে ১ ঘন্টা ১২ মিনিটের অনুষ্ঠান দেখেছেন?
৪৮. আপনি কি আজ (ঘরে কিংবা বাইরে) হাসি, তামাসা, কৌতুক, বিদ্রুপ, ভৎসনা ও অন্যের মনে কষ্ট দেয়া হা হা করে হাসা থেকে যথাসাধ্য বাঁচার চেষ্টা করেছেন কি? (মনে রাখবেন! কোনো মুসলমানের অন্তরে কষ্ট দিয়া কবীরা গুনাহ)
৪৯. আপনি কি আজ প্রয়োজনীয় কথাবার্তাও খুব কম শব্দের মধ্যে গুছিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন কি? এমন কি অপ্রয়োজনীয় কথা মুখ থেকে বের হয়ে যাওয়া অবস্থায় সাথে সাথে লজ্জিত হয়ে দরুদ শরীফ পড়ে নিয়েছেন?
৫০. আপনি কি আজ সারাদিন (চাকুরী বা দোকান ইত্যাদিতে এমনকি ঘরের মধ্যেও) ইমামা শরীফ (এবং তৈল ব্যবহার করা অবস্থায় সারবন্দও, অর্থাৎ পাগরীর নিচে মাথায় বাধার কাপড়) বাবরী চুল, (যদি লম্বা হয়ে থাকে তবে) এক মুষ্টি পরিমাণ দাঁড়ি, সুন্নাত অনুযায়ী পায়ের অর্ধ গোছা পর্যন্ত (সাদা) জামা, সামনের পকেটে সুস্পষ্ট মিসওয়াক এবং টাখনুর উপরে পায়জামা পড়ার অভ্যাস ছিল?
সাপ্তাহিক ৮টি মাদানী ইন'আমাত
৫১. আপনি কি এই সপ্তাহে ইজতিমার শুরু থেকে অংশগ্রহন করে (যতটুকু সময় বসতে পারেন ততক্ষণ সময় পর্যন্ত) দু'জানু হয়ে বসে যথাসম্ভব দৃষ্টিকে নত রেখে, প্রতিটি বয়ান, যিকির ও দো'আ এবং দাঁড়িয়ে সালাত ও সালামে অংশগ্রহন এবং মসজিদে (হালকার সাথে তাহাজ্জুদ, ফযর, ইশরাক ও চাশতের নামায আদায় করে) সারারাত ইতিকাফ করেছেন?
৫২. আপনি কি এ সপ্তাহে ইজতিমা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সামনে অগ্রসর হয়ে ইনফিরাদী কৌশিশ করা অবস্থায় নবাগত ইসলামী ভাইদের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জন করে তাদের নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন? (কমপক্ষে ৪ জনের সাথে সাক্ষাত এবং কমপক্ষে ১ জনের ঠিকানা ইত্যাদি অবশ্যই নিন। পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগও রাখুন।
৫৩. আপনি কি এ সপ্তাহে কমপক্ষে একজন রোগী বা অসহায় ব্যক্তির ঘরে বা হাসপাতালে গিয়ে সুন্নাত অনুযায়ী সহানুভুতি জানিয়েছেন? এবং তাকে উপহার (চাই তা মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত কোন রিসালা বা লিফলেট হোক) দেয়ার সাথে সাথে তাবীযাতে আত্তারীয়া ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন কি?
৫৪. আপনি কি এ সপ্তাহে কমপক্ষে একবার এলাকায় দাওরা বারায়ে নেকীর দাওয়াতে অংশগ্রহন করেছেন?
৫৫. আপনি কি র সপ্তাহে এমন একজন ইসলামী ভাইকে (যিনি পূর্বে মাদানী পরিবেশের ছিলেন কিন্তু এখন আসেন না) খুঁজে বের করে তাকে মাদানী পরিবেশের সাথে পুনরায় সম্পৃক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন? (কিন্তু যার উপর সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাকে উত্তেজিত করবেন না।)
৫৬. আপনি কি এ সপ্তাহে এলাকা ভিত্তিক মসজিদ ইজতিমাতে কমপক্ষে একজন নতুন ইসলামী ভাইকে সাথে নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহন করেছেন?
৫৭. আপনি কি এ সপ্তাহে কমপক্ষে একজন ইসলামী ভাইকে চিঠি প্রেরণ করেছেন? (চিঠিতে মাদানী কাফেলা এবং মাদানী ইন'আমাতের ব্যাপারে উৎসাহ দিন)
৫৮. আপনি কি এ সপ্তাহে পবিত্র সোমবার দিন (বাদ পড়লে যে কোন দিন) রোযা রেখেছেন? এমনকি এ সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন খাবারের মধ্যে জব শরীফের রুটি খেয়েছেন?
মাসিক ৬টি মাদানী ইন'আমাত
৫৯. আপনি কি গত মাদানী মাসের মাদানী ইন'আমাতের রিসালা পূরণ করে নিজ যেলী নিগরানকে জমা করিয়েছেন?
৬০. আপনি কি এ মাসের প্রথম সোমবার শরীফে "নিশ্চুপ শাহজাদা" নামক রিসালাটি পড়ে, অহেতুক কথাবার্তা থেকে বাঁচার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ২৫ ঘন্টার "কুফলে মদীনা" লাগিয়েছেন? এ ছাড়া আপনি এ মাসে জাদওয়াল অনুযায়ী কমপক্ষে তিন দিনের মাদানী কাফেলায় সফর করেছেন?
৬১. এই মাসে আপনার ইনফিরাদী কৌশিশে কমপক্ষে একজন ইসলামী ভাই মাদানী কাফিলাতে সফর করেছেন কি? এবং কমপক্ষে একজন মাদানী ইন'আমাতের রিসালা জমা করিয়েছেন কি?
৬২. আপনি কি এ মাসে কোন সুন্নী আলিম (বা মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম) কে ১১২ টাকা অথবা কমপক্ষে ১২ টাকা তুহফা দিয়েছেন? (অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চারা ব্যক্তিগত টাকা দিতে পারবে না)
৬৩. আপনি কি প্রাপ্তবয়স্কদের এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক বালিকার জানাযার দো'আ, ছয় কালিমা, ঈমানে মুফাসসাল, ঈমানে মুজমাল, তাকবীরে তাশরীফ ও তালবীয়া (অর্থাৎ লাব্বায়ক) এসব অনুবাদ সহ মুখস্থ করে নিয়েছেন? এমনকি এই মাসের প্রথম সোমবার শরীফে (বাদ পড়লে অন্য যে জোন দিন) পড়ে নিয়েছেন তো?
৬৪. আপনি কি আযান ও এরপরের দো'আ, কুরআন শরীফের শেষ দশখানা সুরা, দো'আয়ে কুনুত, আত্তাহিয়্যাত, দরুদে ইব্রাহীম এবং যে কোন একটি দো'আয়ে মাসুরা মাখারিজের সাথে বিশুদ্ধ ভাবে আদায় করে মুখস্থ করে নিয়েছেন? এমনকি তা এই মাসের প্রথম সোমবার শরীফে (বাদ পড়লে অন্য যে কোন দিন) পড়ে নিয়েছেন কি?
বার্ষিক ৮টি মাদানী ইন'আমাত
৬৫. আপনি কি এ বছর কমপক্ষে একবার (আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ এর) সকল মাদানী রিসালা (যা আপনার জানা আছে) পড়ে বা শুনে নিয়েছেন?
৬৬. আপনি কি এ বছর কমপক্ষে একবার মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত মাদানী ফুলের লিপলেট (যা আপনার জানা আছে) পড়ে বা শুনে নিয়েছেন?
৬৭. আপনি কি এ বছর জাদওয়াল অনুযায়ী একসাথে ৩০ দিনের মাদানী কাফেলায় সফর করেছেন? (যদি একাধারে ১২ মাস মাদানী কাফিলায় সফর না করে থাকেন তবে জীবনে কমপক্ষে একবার সফরের নিয়্যত করে নিন)
৬৮. আপনি কি এ বছর কমপক্ষে একবার ইমাম গাজ্জালী رَهْمَتُ اللّٰهِ تَعَلٰى عَلَيْهِ এর সর্বশেষ কিতাব 'মিনহাজুল আবেদীন' থেকে তাওবা, ইখলাস, তাকওয়া, ভয় ও আশা, আত্মম্ভরিতা ও রিয়া এবং চোখ, কান, জিহবা, অন্তর ও পেটের হিফাজতের বর্ণনা পড়ে বা শুনে নিয়েছেন কি?
৬৯. আপনি কি এ বছর কমপক্ষে একবার 'বাহারে শরীয়াত' ৯ম খন্ড হতে মুরতাদের বর্ণনা, ১৬ তম খন্ড হতে ক্রয়-বিক্রয়ের বর্ণনা, মা-বাবার হক সমূহের বর্ণনা, (যদি বিবাহিত হন, তাহলে) ৭ম খন্ড হতে মাহরামদের (অর্থাৎ যাদের সাথে বিবাহ হারাম এমন মহিলাদের) বর্ণনা ও স্বামী-স্ত্রীর হক্ব সমূহের বর্ণনা, ৮ম খন্ড হতে সন্তানদের প্রতিপালকের বর্ণনা, তালাকের বর্ণনা, যিহারের বর্ণনা এবং তালাকে কিনায়া ইত্যাদি বয়ান সমূহ পড়ে বা শুনে নিয়েছেন কি?
৭০. আপনি কি মাখারিজের সাথে হরফসমূহ বিশুদ্ধভাবে আদায় করে কমপক্ষে একবার কুরআনে পাক দেখে দেখে খতম করে নিয়েছেন? আর এ বছর পুনরায় তা পাঠ করে নিয়েছেন কি?
৭১. আপনি কি আলা হযরত رَهْمَتُ اللّٰهِ تَعَلٰى عَلَيْهِ এর কিতাব 'তামহীদুল ঈমান' ও 'হুসসামুল হারামাইন' অথবা মকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব 'কুফরিয়া কালিমাত কে বারে মে সোয়াল জাওয়াব' ও 'চাঁদার সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর' পড়ে বা শুনে নিয়েছেন?
৭২. আপনি কি বাহারে শরীয়াতে অথবা নামাযের আহকাম থেকে নিজে পড়ে বা শুনে নিজের অযু, গোসল এবং নামায বিশুদ্ধ করে শিখে কোন সুন্নী আলিম অথবা যিম্মাদার মুবাল্লিগকে শুনিয়েছেন?
আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিমূলক কাজ আত্তারের দোস্তঃ আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ বলেনঃ যে নিম্নে প্রদত্ত ১২টি মাদানী ইন'আমাতের উপর নিয়মিত আমল করে, সে আমার দোস্ত।
মদীনা-১) (অন্যান্য ফরয ও ওয়াজীব সমূহের উপর আমল করার পাশাপাশি) প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদের ১ম কাতারে প্রথম তাকবীরের সাথে জামাআত সহকারে আদায় করুন। প্রতিবার কমপক্ষে একজনকে নিজের সাথে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
মদীনা-২) প্রতিদিন ফয়যানে সুন্নাত হতে কমপক্ষে দুটি দরস (মসজিদ, দরস, দোকান ইত্যাদি স্থানে যেখানে আপনার সুবিধা হয়) দিন অথবা শুনুন।
মদীনা-৩) প্রতিদিন (প্রাপ্ত বয়স্কদের) মাদরাসাতুল মদীনায় নিজে পড়া বা অন্যকে পড়ানো সহ এলাকার মসজিদের ইশার
জামাআতের সময় হতে শুরু করে দুই ঘন্টার মধ্যে ঘরে পৌঁছে যাবেন।
মদীনা-৪) প্রতিদিন কমপক্ষে দুইজন ইসলামী ভাইকে ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে মাদানী কাফেলা ও মাদানী ইন'আমাত এবং অন্যান্য মাদানী কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন।
মদীনা-৫) দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ সমূহ (যেমনঃ ইনফিরাদী কৌশিশ, দরস ও বয়ান মাদানী মাশওয়ারা ইত্যাদিতে) প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করুন।
মদীনা-৬) প্রতিদিন 'সদায়ে মদীনা' দিন।
মদীনা-৭) সাপ্তাহীক ইজতিমা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহন করে রাতে ইতিকাফ সহ ফজর, ইশরাক ও চাশতের নামায আদায় করুন।
মদীনা-৮) সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন এলাকায়ী দাওরা বরায়ে নেকীর দাওয়াতে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহন করুন। (ব্যবসায়ী এলাকায় বুধবার যোহরের নামাযের পূর্বে আর আবাসিক এলাকায় ছুটির দিন আসর হতে মাগরীব এর মধ্যকার সময়ে)
মদীনা-৯) সপ্তাহে কমপক্ষে এমন একজন ইসলামী ভাইকে (যিনি পূর্বে মাদানী পরিবেশে ছিলেন কিন্তু এখন আর আসেন না) খুঁজে বের করে তাকে পুনরায় মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন। (এখানে ঐ ইসলামী ভাই উদ্দেশ্য নই, যার উপর সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।)
মদীনা-১০) প্রতিদিন কমপক্ষে একটি বয়ান বা মাদানী মুযাকারার ক্যাসেট শুনুন অথবা মাদানী চ্যানেলে কমপক্ষে ১ ঘন্টা ১২ মিনিট অনুষ্ঠান দেখুন। (আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ তার প্রতি খুবই খুশী হন।)
মদীনা-১১) প্রতিদিন ফিকরে মদীনা সময় মাদানী ইন'আমাতের রিসালা পূরন করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার মাদানী ইন'আমাত মকতবে জমা করিয়ে দিন।
মদীনা-১২) প্রতি মাসে জাদওয়াল অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ দিন মাদানী কাফিলাতে সফর করুন। সারা জীবনে একটানা ১২ মাস এবং প্রতি ১২ মাসে ৩০ দিন মাদানী কাফিলাতে সফরের নিয়্যত করে নিন। (দাওয়াতে ইসলামী পরিচালিত জামেআতুল মদীনাগুলোর ছাত্ররা মজলিস কর্তৃক দেয়া জাদওয়াল অনুযায়ী সফর করুন।
আত্তারের পিয়ারাঃ আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ বলেন, যে ব্যাক্তি উল্লেখিত ১২ টি মাদানী ইন'আমাতের উপর আমল করার পাশাপাশি ৭২টির মধ্যে কমপক্ষে ৬৩ টির উপর আর জামেয়াতুল মদীনা ও মাদরাসাতুল মদীনার ছাত্ররা ৯২ টির মধ্যে কমপক্ষে ৮২ টি মাদানী ইন'আমাতের উপর আমল করে সে আমার পিয়ারা।
আত্তারের মানযুরে নজরঃ আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ বলেন, যে ব্যক্তি উপরোল্লোখিত সকল কাজ সম্পাদন করে আমার দোস্ত ও পিয়ারা হবার সৌভাগ্য অর্জন করার পাশাপাশি নিম্নে দেয়া ৫ টি মাদানী কাজ নিয়মিতভাবে পালন করে সে আমার 'মানযুরে নজর'।
১) প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ বার লিখে কথা বলা।
২) প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ বার ইশারায় কথা বলা।
৩) প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ মিনিট কুফলে মদীনার চশমা ব্যবহার করা।
৪) (জরুরি কথা বলার সুযোগ হলে) প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ বার যার সাথে কথা বলবেন তার চেহেরার প্রতি দৃষ্টি দেয়া ব্যতীত কথাবার্তা বলা।
৫) সপ্তাহে কমপক্ষে একটি রিসালা পড়ুন। (যে ব্যক্তি প্রতিদিন কমপক্ষে একটি রিসালা পড়ার অভ্যাস গড়ে নেয় তার প্রতি আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ খুব বেশি খুশি হন।)
আত্তারের মাহবুবঃ
আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ الْعَالِيَهْ এর দয়াপূর্ণ বাণী হচ্ছেঃ যে ব্যক্তি উপরোল্লেখিত সকল মাদানী কাজ করার সাথে সাথে পরিপূর্ণভাবে ৭২টি এবং মাদরাসা ও জামেয়ার ছাত্ররা পরিপূর্ণ ৯২ টি মাদানী ইন'আমাতের উপর পূর্ণ আমলদার হবে সে আমার 'মাহবুব'।
আত্তারের ইচ্ছাঃ
আহ! আহ!আহ! আমার অন্তর এ বিষয়ে খুবই ভীত সন্ত্রস্ত যে, জানিনা আমার ব্যাপারে আল্লাহর গোপন ব্যবস্থাপনা কী রয়েছে! তবে আমার অন্তরের বাস্তবিক একান্ত ইচ্ছা এটাই যে, তাযেদারে মদীনা হুজুর صلّى اللّٰهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّم এর ওসিলায় যদি আমার উপর বিশেষ দয়া হয়ে যায়, তাহলে اِنْ شَآءَ اللّٰه عَزَّوَخَل আমার প্রত্যেক দোস্ত, পিয়ারা, মানযুরে নজর ও মাহবুবকে আমার সাথে জান্নাতুল ফিরদৌসে নিয়ে যাব।
আত্তার কার উপর অসন্তুষ্টঃ
যে ইসলামি ভাই শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া মানুষের সামনে মারকাযী মজলিসে শুরা, ইনতিযামী কাবিনা সমূহ এবং মজলিস সমূহ ইত্যাদির বিরোধিতা করে সে না আমার দোস্ত, না আমার পিয়ারা, না মানযুরে নজর আর না মাহবুব বরং আত্তারের অন্তর তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট।
আত্তারের দো'আঃ
ইয়া আল্লাহ! যে ব্যক্তি প্রতিদিন উপরোউল্লেখিত মাদানী কাজগুলো করে নে, ঐ আত্তারের দোস্ত, পিয়ারাকে এমনকি আত্তারের মনযুরে নজর ও মাহবুবকে আত্তার সহ জান্নাতুল ফিরদাওসে আপন মাদানী মাহবুব صلّى اللّٰهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّم এর প্রতিবেশী বানিয়ে নাও।
اَمِين بِخاهِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّى اللَّهُ تَعَالٰى عَلَيهِ وَاٰلِهِ وَسَلَّم
মারকাযী মাজলিশে শুরা
"ঘরে মাদানী পরিবেশ তৈরির ১৯ টি মাদানী ফুল"
১) ঘরে আসা যাওয়ার সময় এবং উচ্চস্বরে সালাম প্রদান করুন।
২) মা অথবা বাবাকে আসতে দেখলে, সম্মানপূর্বক দাঁড়িয়ে যান।
৩) দিনে কমপক্ষে একবার ইসলামী ভাই নিজ পিতার এবং ইসলামী বোনেরা আপন মায়ের হাত ও পায়ে চুমু দিন।
৪) মা-বাবার সামনে আওয়াজকে সর্বদা নিচু রাখুন, তাদের চোখে কখনো চোখ রেখে কথা বলবেন না। দৃষ্টিকে নত রেখে তাদের সাথে কথাবার্তা বলুন।
৫) তাদের দেয়া প্রতিটি কাজ যা শরীয়াত বিরোধী নয় দ্রুত করে ফেলুন।
৬) গাম্ভীর্যতা অবলম্বন করুন। ঘরে তুই-তুমি শব্দের ব্যবহার, কর্কশ শব্দে কথা বলা, গালি দেয়া এবং হাসি তামাশা করা, কথায় কথায় রাগ করা, খাবারের দোষ-ত্রুটি বের করা, ছোট ভাই বোনদের বকাঝকা করা, মার দেয়া, ঘরের বড়দের সাথে কথা কাটাকাটি করা, ঝগড়া করা তর্কবিতর্ক করা যদি আপনার স্বভাব হয়ে থাকে তবে এ ধরনের মন্দ স্বভাবগুলোকে পরিবির্তন করে ফেলুন এবং প্রত্যেকের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিন।
৭) ঘরে বাইরে প্রতিটি স্থানে আপনি ভদ্র, গম্ভীর হয়ে যান, ঘরের মধ্যেও অবশ্যই এর বরকত দেখতে পাবেন।
৮) মা বরং আপনার বাচ্চার মাকেও এমনকি ঘরে (ও বাইরে) একদিনের শিশুকেও "আপনি" বলে সম্বোধন করুন।
৯) নিজ এলাকার মসজিদের ইশার জামাআমাতের সময় হতে শুরু করে দুই ঘন্টার মধ্যেই শুয়ে পড়ুন। আহ! যদি তাহাজ্জুদের নামাযের সময়ে চোখ দুটি খুলে যেত, আর না হয় কমপক্ষে ফযরের নামাযতো খুব সহজেই (মসজিদে প্রথম কাতারে
জামাআত সহকারে) আদায় করার সুযোগ হয়ে যেত। আর এভাবে কাজে কর্মেও কোন প্রকারের অলসতা আসত না।
১০) ঘরের সদস্যদের মাঝে যদি নামাযে অলসতা, পর্দাহীনতা, সিনেমা, নাটক দেখা এবং গান বাজনা শোনা ইত্যাদি ইত্যাদি গুনাহের অভ্যাস থাকে আর আপনি যদি ঘরের কর্তা না হন এবং দৃঢ় বিশ্বাস যে, আপনি তাদের বারন করলে তারা আপনার কথা শুনবেনা তবে বারবার তর্ক না করে সবাইকে নম্রভাবে বুঝিয়ে মাকতাবাতুল মদীনা হতে জারীকৃত সুন্নাতে ভরা বয়ানের অডিও/ভিডিও ক্যাসেট শুনান, মাদানী চ্যানেল দেখলে
اِنْ شَآءَ اللّٰه عَزَّوَخَل মাদানী সুফল আসবেই
১১) ঘরে আপনাকে জতই বকাঝকা করুক। এমনকি যদি মারেও তবুও আপনি রাগ না করে ধৈর্যের উপর ধৈর্য ধরুন। যদি আপনি তাদের প্রতিবাদে নিজ জিহবাকে ব্যবহার করেন তবে মাদানী পরিবেশ তৈরীর আর কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। বরং এর বিপরীত ঘটবে যে, অধিক কঠোরতা বা প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় শয়তান মানুষকে খুবই রাগী বানিয়ে দেয়।
১২) ঘরে মাদানী পরিবেশ তৈরীর একটি খুবই উত্তম মাধ্যম হলঃ ঘরে প্রতিদিন অবশ্যই অবশ্যই 'ফয়যানে সুন্নাত' হতে দরস দিন।
১৩) আপনার পরিবারের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য খুবই আন্তরিকতার সাথে দো'আ করতে থাকুন। কেননা রাসুলে করীম صلّى اللّٰهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّم ইরশান করেছেন, اَلرُّعَآءَ سِلَاحُ الُمُوءُمِنِ "অর্থাৎ দো'আ হল মুমিনের হাতিয়ার" (আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬২, হাদীস নং-১৮৫৫)
১৪) বীবাহিতা ইসলামী বোনেরা যারা শশুড় বাড়িতে থাকেন তারা শশুড় বাড়িকে নিজ বাড়ি এবং শশুড়- শাশুড়িকে নিজের পিতা-মাতা মনে করে সম্মান করুন। যদি কোনো শরয়ী বাধা না থাকে।
১৫) মাসায়িলুলু কুরআন পৃষ্ঠা-২৯০ এর মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক নামাযের পর নিম্নে দুয়া টি শুরু ও শেষে দরুদ শরীফ সহকারে একবার পড়ে নিলে اِنْ شَآءَ اللّٰه عَزَّوَخَل সন্তান-সন্ততি সুন্নাতের অনুসারি হবে এবং মাদানী পরিবেশ তৈরি
(اللّٰهُمَّ) زَبَّنَاهَبْ لَنَامِنْ اَذْوَاخِنَاوَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاخْعَلْنَالِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাদেরকে দান করো আমাদের স্ত্রীগণ এবং সন্তান-সন্ততি হতে চক্ষু সমূহের প্রশান্তি দান করো এবং আমাদের পরহেযগারদের আদর্শ করুন। (পারা-১৯, সুরা- ফোরকান, আয়াত-৭৪)
(বিঃদ্রঃ এখানে (اللّٰهُمَّ) শব্দটি কুরআনের আয়াতের অংশ নয়)
১৬) অবাধ্য সন্তান চাই ছোট হোক কিংবা বড় যখন ঘুমাবে তখন তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে নিম্নে দোয়া টি শুরু ও শেষে একবার দরুদ শরীফ পড়ে শুধুমাত্র একবার এতটুকু আওয়াজে পড়ুন যেন সন্তানের ঘুম ভেঙ্গে না যায়।
بسم الله الرحمن الرحيم . بل هوقران مخيد (١٢) فى لوح محفوظ (٢٢)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ বরং তা পূর্ণ মর্যাদা সম্পন্ন কোরআন লওহে মাহফুযের মধ্যে। (পারা-৩, সুরা-বুরুজ, আয়াত নং-২১,২২)
মনে রাখবেন, বয়সে বড় কিংবা বয়স্ক ব্যক্তি যদি অবাধ্য হয় তবে শুয়ে শুয়ে শিয়রে অযীফা পড়তে গেলে তার জেগে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত এটা তখন হয় যখন তার ঘুম গভীর হয় না, আর এটা বুঝা খুবই কঠিন যে, শুধু ঘুমিয়ে আছে নাকি চোখ বন্ধ করে আছে। তাই যেখানে ফিতনার আসংখ্যা আছে সেখানে এই আমলটা করবেন না। বিশেষ করে তার স্বামীর উপর এই আমল করবেন না।
১৭) এমনি অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য বানানোর জন্য উদ্দেশ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ফযরের নামাযের পর আকাশের দিকে মুখ করে শুরু ও শেষে একবার দরুদ শরীফ পড়ে يَاشَهِيْدُ ২১ বার পড়ুন।
১৮) মাদানী ইন'আমাত অনুযায়ী আমলের অভ্যাস গড়ুন আর ঘরের সদস্যদের মধ্যে যার ভিতর বেশি নম্রতা লক্ষ করবেন তার উপর যেমন আপনি যদি পিতা হন তবে সন্তানদের মাঝে অতি নম্রতা ও প্রজ্ঞার সাথে মাদানী ইন'আমাতের আমল শুরু করান। আল্লাহ তা'আলার দয়ায় ঘরে মাদানী পরিবর্তন এসে যাবে।
১৯) নিয়মিতভাবে প্রতিমাসে কমপক্ষে তিনদিন মাদানী কাফিলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করে ঘরের অধিবাসীদের মধ্যে মাদানী পরিবেশ তৈরীর অনেক মাদানী বাহার শুনা যায়।