❏ ফোকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে নামাজের পর দোয়া


নামাজের পর দোয়া বিষয়ে আইম্মায়ে কেরাম অত্যান্ত চমৎকার বক্তব্য দিয়েছেন। যেমন শারিহুল বুখারী ইমাম বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله عليه) {ওফাত ৮৫৫ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,

فضل الذّكر عقيب الصَّلَوَات لِأَنَّهَا أَوْقَات فاضلة ترتجي فِيهَا إِجَابَة الدُّعَاء. 

-“পাচ ওয়াক্ত নামাজের পরে জিকিরের ফজিলত রয়েছে কেননা ইহা ফজিলত লাভ ও দোয়া কবুলের সময়।”

(ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৩২ পৃঃ;) 


‘ফাদ্বল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র হাদিসের ব্যাখ্যায় হিজরী ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله عليه) বলেন:

إِذَا فَرَغْتَ مِنْهَا فَسَلِّمْ، ثُمَّ ارْفَعْ يَدَيْكَ سَائِلًا حَاجَتَكَ، -“যখন নামাজ থেকে বের হবেন তখন ছালাম দিবেন তারপর আপনার হাঁত ভিক্ষুকের মত হাজত পূরণের আশায় উপরের দিকে উঠাবেন।”(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ২য় খন্ড, ৪৮৪ পৃঃ;) 


ইমাম বুখারী (رحمة الله عليه) এর প্রায় সম-পর্যায়ের একজন মুহাদ্দিছ আল্লামা ইমাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুজাইমা (رحمة الله عليه) {ওফাত ৩১১ হি.} এই হাদিস সম্পর্কে বলেন: 

وَهَذَا دَالٌّ عَلَى أَنَّهُ إِنَّمَا أَمَرَهُ بِرَفْعِ الْيَدَيْنِ، وَالدُّعَاءِ، وَالْمَسْأَلَةِ بَعْدَ التَّسْلِيمِ 

-“এই হাদিস দলিল হচ্ছে যে, নিশ্চয় আদেশ দেওয়া হয়েছে দুই হাঁত উচু করার ও দোয়া করতে, আর এই মাছায়ালা হল ছালামের পরের।”(সহীহ্ ইবনে খুজাইমা, ১ম খন্ড, ৫২০ পৃঃ;) 


উল্লেখিত দলিলগুলো থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, পূর্বসূরী ইমামগণ ফরজ নামাজের পর দোয়া করার পক্ষেই ফাতওয়া প্রদান করেছেন। শুধু তাই নয়, শারিহে মুসলীম ইমাম নববী (رحمة الله عليه) {ওফাত ৬৭৬ হিজরী} বলেন,

قَدْ ذَكَرْنَا اسْتِحْبَابَ الذِّكْرِ وَالدُّعَاءِ لِلْإِمَامِ وَالْمَأْمُومِ وَالْمُنْفَرِدِ وَهُوَ مُسْتَحَبٌّ عَقِبَ كُلِّ الصَّلَوَاتِ بِلَا خلاف

-“অবশ্যই আমরা উল্লেখ করেছি যে, ইমাম ও মুছল্লীর জন্যে অথবা এককভাবে জিকির ও দোয়া মুস্তাহাব। আর কোন রকম বিতর্ক ছাড়া প্রত্যেক নামাজের পরে জিকির ও দোয়া করা মুস্তাহাব।”(ইমাম নববী: আল-মাজমুউ শরহে মুহায্যাব, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃঃ;) 


এ সম্পর্কে শারিহে মুসলীম ইমাম নববী (رحمة الله عليه) এর বক্তব্য ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

وقال النووي رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وقد ثبت أنه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رفع يديه في الدعاء، ذكرت من ذلك نحو عشرين حديثاً في شرح المهذب

-“ইমাম নববী (رحمة الله عليه) বলেন: অবশ্যই প্রমাণিত আছে যে, আল্লাহর নবী (ﷺ) দোয়ার সময় হাঁত তুলেছেন। আমি এ বিষয়ে ২০টি হাদিস ‘শরহে মুহাজ্জাব’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি। (ইমাম আইনী: আল-বেনায়া, ৪র্থ খন্ড, ২০৪ পৃঃ;) 


এ ব্যাপারে হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত ফকিহ্, আল্লামা কামালুদ্দিন ইবনে হুমাম (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন:  لِأَنَّ رَفْعَهَا عِنْدَ الدُّعَاءِ مُسْتَحَبٌّ-“দোয়ার সময় দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব।”

(ইবনুল হুমাম: ফাতহুল কাদির, ১ম খন্ড, ৪৫১ পৃঃ; এনায়া শরহে হেদায়া;) 


দোয়ার সময় হাত উঠানো সম্পর্কে আল্লামা বুরহান উদ্দিন হানাফী (رحمة الله عليه) ও ইমাম বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله عليه) বলেন, 

لأن رفع اليدين في الدعاء سنّة جاء في الحديث -

“কেননা দোয়ার সময় দুই হাত উঠানো সুন্নাত, (এ বিষয়ে) হাদিস এসেছে।”

(মুহিতুল বুরহানী, ২য় খন্ড, ১৪০; আল-বেনায়া, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃঃ;) 


অতএব, ফরজ নামাজের পরে দোয়া করার বিষয়টি ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের তথা অকাট্য দলিলের দ্বারা প্রমাণিত আছে। তাই مُطْلَقًا মত্বলকান বা শর্তহীন ফরজ নামাজের পরে দোয়া অস্বীকার করলে কুফূরী হবে। তবে ফরজ নামাজের পরে দোয়ায় হাত তোলে দোয়া করা ‘হাদিসে মশহুর’ দ্বারা প্রমাণিত, যা অস্বীকার করলে পথভ্রষ্ট বলে বিবেচিত হবে। আইম্মায়ে কেরাম প্রায় সকলেই বলেছেন দোয়া সময় হাত তোলা সুন্নাত ও মুস্তাহাব। রাসূলে পাক (ﷺ)’র একাধিক রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় প্রিয় নবীজি (ﷺ) দোয়ার সময় হাঁত উঠিয়ে দোয়া করেছেন। যেমনঃ


হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) উল্লেখ করেন:

أَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي كُلِّ دُعَاءٍ -

“নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) প্রত্যেক দোয়া দুই হাঁত উঠিয়ে করতেন।”(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১৩২ পৃঃ ২২৫৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 


সুতরাং রাসূলে পাক (ﷺ)’র হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, দোয়ার সময় দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করতে হবে। তাই আসুন ফেতনাবাজদের পথ পরিহার করে রাসূলে পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম ও ছালফে-ছালেহীনের পথ অনুসরণ করি, তবেই ত্রাণ তবেই শান্তি ও মুক্তি।

Top