❏ ফরজ ও সুন্নাতের মাঝে দোয়া দ্বারা পার্থক্য করতে হবে
ইমাম আবু দাউদ, ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম তাবারানী, ইমাম হাকেম (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন, -“একদা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সাহাবীদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। প্রিয় নবীজি (ﷺ) যখন ছালাম ফিরালেন তখন এক ব্যক্তি দোয়া না করে সুন্নাত নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যায়।
হাদিসের এবারতটি নি¤œরূপ:
فَقَامَ الرَّجُلُ الَّذِي أَدْرَكَ مَعَهُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى مِنَ الصَّلَاةِ يَشْفَعُ، فَوَثَبَ إِلَيْهِ عُمَرُ، فَأَخَذَ بِمَنْكِبِهِ فَهَزَّهُ، ثُمَّ قَالَ: اجْلِسْ فَإِنَّهُ لَمْ يُهْلِكْ أَهْلَ الْكِتَابِ، إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ بَيْنَ صَلَوَاتِهِمْ فَصْلٌ،
-“প্রথম তাকবীরে শরিক হয়েছিল এমন একজন লোক সুন্নাত পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। ইহা দেখে হযরত উমর (رضي الله عنه) ঝট করে দাঁড়লেন ও তার বাহুমুলে নাড়া দিয়ে বললেন, বস! আহ্লে কিতাবগণ এজন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের ফরজ ও সুন্নাতের মাঝে কোন দোয়া দ্বারা পার্থক্য করতেন না।”
(সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ১০০৭; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ২০৮৮; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ৭২৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, আদিস নং ৯৯৬; ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৩০৪৬; মেসকাত শরীফ, ৮৯ পৃঃ হাদিস নং ৯৭২; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪৬ পৃঃ; আশিয়াতুল লুময়াত;)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকেম নিছাপুরী (رحمة الله عليه) বলেন,
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ مُسْلِمٍ -
“এই হাদিস ইমাম মুসলীম (رحمة الله عليه) এর শর্তানুসারে সহীহ্।”
হাদিসের সনদটি হচ্ছে:
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ نَجْدَةَ، حَدَّثَنَا أَشْعَثُ بْنُ شُعْبَةَ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ خَلِيفَةَ، عَنِ الْأَزْرَقِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ:
এই হাদিসের সনদে ‘আযরাক ইবনে কায়েছ’ সহীহ্ বুখারীর রাবী ও বিশ্বস্ত। বর্ণনাকারী ‘মিনহাল ইবনে খালিফা’ সম্পর্কে ইমামদের কেউ কেউ সমালোচনা করলেও ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله عليه) বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইমাম ইয়াহইয়া (رحمة الله عليه) তাকে صالح গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৭৫৪;)
ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله عليه) তাকে صالح নেক বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله عليه) তাকে جائز الحديث জায়িযুল হাদিস বলেছেন।(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬২০৯;)
বর্ণনাকারী ‘আশয়াব ইবনে শুবা’ সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله عليه) ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।(ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৫৬২;)
ইমাম আহমদ, ইমাম ইবনে মাঈন, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আজলী, ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله عليه) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৫২৫;)
বর্ণনাকারী ‘আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবনে নাজদাহ’ কে ইমাম ইবনে কানে’ (رحمة الله عليه) ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।(ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৪১২;)
ইমাম আবু বকর ইবনে আবী আছেম, ইমাম ইয়াকুব ইবনে শাইবাহ ও ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله عليه) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৬০৭;)
ইমাম যাহাবী (رحمة الله عليه) তাকে صَدُوقٌ সত্যবাদী বলেছেন:(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২৬৮;)
অতএব, সার্বিক বিচারে হাদিসটি হাছান অথবা সহীহ্, কিন্তু কোন মতেই ইহা দ্বায়িফ হবেনা। কারণ এর কোন রাবী একচ্ছত্রভাবে দ্বায়িফ নয় বরং সকল রাবীকেই ইমামগণ ছিক্বাহ, ছালেহ, ছাদুক ও জায়েযুল হাদিস বলেছেন। সুতরাং, ফরজ নামাজের ছালাম ফিরানোর পর দোয়া না করে সুন্নাতের জন্য দাঁড়ানো মূল সুন্নাতের খেলাফ। এমনকি ফরজের ছালাম ফিরানোর পর দোয়া-ইস্তেগফার না করে সুন্নাত পড়া ইহুদী-নাছারাদের স্বভাব আর এ কারণেই তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই রাসূলে পাক (ﷺ)’র সুন্নাত অনুযায়ী আমল হল, ফরজ নামাজের পর দোয়া করে তারপর সুন্নাত নামাজ আদায় করা।