কিতাব: ২৮ টি কুফরী বাক্য
টেক্সট রেডি: মুহাম্মদ সাকিব মাহমুদ আত্তারী,মুহাম্মদ জোবায়েদ হোসাইন আত্তারী 
দরূদ শরীফের ফযিলত
মদীনার তাজেদার, রাসুলদের সরদার, মাহবুবে গাফ্ফার, হুযুর(صلى الله عليه وسلم )রহমতপূর্ণ বাণী হচ্ছে: “হে লোকেরা! কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং হিসাব নিকাশ থেকে  মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেই হবে, যে তোমাদের মধ্য থেকে  উপর দুনিয়াতে অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ করেছে।”(আল ফিরদৌস বিমাচুরিল খাত্তাব, ৫ম খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮১৭৫)
অভাব-অনটন, রোগ-শোক, মানসিক কষ্ট এবং আপন জনের মৃত্যুতে অনেক লোক আঘাতের আতিশয্যে কিংবা উত্তেজনায় এসে  আল্লাহর পানাহ্! কুফরী বাক্য বলে থাকে। আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে আপত্তি করা, তাঁকে অত্যাচারী, অভাবী, পর-মুখাপেক্ষী অথবা অপারগ মনে করা কিংবা বলা, এসবই প্রকাশ্য কুফরী বাক্য। স্মরণ রাখবেন!শরীয়ত অনুমতি ছাড়া জেনে বুঝে যে প্রকাশ্য কুফরী বাক্য বলে এবং অর্থ জানা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তাতে হঁ্যা বলে বরং এর পক্ষে যে ব্যক্তি মাথা নেড়ে সায় দেয়, সেও কাফির হয়ে যায়। এর বিবাহ-বন্ধন ও বাইয়াত ভঙ্গ হয়ে যায় এবং জীবনের সমস্ত নেক আমল ধ্বংস হয়ে যায়। যদি হজ্ব আদায় করে থাকে, তবে তাও নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান নবায়নের পর (অর্থাৎ পুনরায় নতুন ভাবে মুসলমান  পর) সামর্থ্যবান হওয়া সাপেক্ষে নতুন সূত্রে হজ্ব ফরয হবে। 
বিপদের সময় বলা হয়,  কতিপয় কুফরী বাক্যের উদাহরণ
১- আপত্তি করে বলা: ঐ ব্যক্তি লোকদের সাথে যা কিছুই , আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য পূর্ণ (ঋটখখ) স্বাধীনতা রয়েছে।
২- এইভাবে আপত্তি করে বলা: কখনো আমরা অমুকের  সামান্য কিছু করলে আল্লাহ তৎক্ষনাৎ আমাদের পাকড়াও করে ফেলেন।
 ৩- আল্লাহ সর্বদা আমার শত্রুদের সহায়তা করেছেন।
 ৪-  সর্বদা সবকিছু আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করেও দেখেছি, কিছুই হয়না।
 ৫-  আল্লাহ তাআলা আমার ভাগ্যকে এখনো পর্যন্ত সামান্য ভাল করলেন না। 
৬-  হয়তো তাঁর ভান্ডারে আমার জন্য কিছুই নেই। আমার পার্থিব আশা-আকাঙ্খা কখনো পূর্ণ হলো না। জীবনে আমার কোন দোআ কবুল হলো না। যাকে চেয়েছি সে দূরে চলে গেলো। আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। সব ইচ্ছাই অপূর্ণ রয়ে গেলো। এখন  আপনিই বলুন, আমি আল্লাহর উপর কীভাবে ঈমান আনব? 
৭- এক  ব্যক্তি আমাদেরকে অত্যাচারে অতিষ্ট করে রেখেছে। মজার কথা  হচ্ছে, আল্লাহও এমন লোকদের সহায়তা করে থাকেন।
 ৮- যে ব্যক্তি বিপদে পড়ে বলে: হে আল্লাহ! তুমি সম্পদ কেড়ে নিয়েছ। অমুক জিনিস কেড়ে নিয়েছ। এখন কি করবে? অথবা, এখন কি করতে চাও? কিংবা, এখন কি করার বাকী রয়েছে?- তার এ কথা কুফরী 
 ৯- যে বলে: আল্লাহ তাআলা আমার অসুস্থতা ও ছেলের কষ্টের সত্ত্বেও যদি আমাকে শাস্তি দিয়ে থাকেন, তবে তিনি আমার উপর জুলুম করলেন।- এটা বলা কুফরী। (আল-বাহরুর রায়িক, ৫ম খন্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা) 
১০- আল্লাহ তাআলা সর্বদা দুষ্ট লোকদের সহায়তা করেছেন। 
১১- আল্লাহ তাআলা অসহায়দের আরও পেরেশান করেছেন।

অভাব অনটনের কারণে উচ্চারিত কতিপয় কুফরী বাক্যের উদাহরণ
 ১২- যে বলে: হে আল্লাহ! আমাকে রিযিক দাও আর আমার উপর অভাব অনটন চাপিয়ে দিয়ে অত্যাচার করো না।এমন বলা কুফরী। (ফতোওয়ায়ে কাজী খান, ৩য় খন্ড, ৪৬৭ পৃষ্ঠা)
 ১৩- অনেক লোক কর্জ ও ধন সম্পদ অর্জনের জন্য, অভাব- অনটন, কাফিরদের সান্নিধ্যে চাকুরীর জন্য ভিসা-ফরমে, অথবা কোন ভাবে টাকা ইত্যাদি মওকুফের জন্য দরখাস্তে যদি নিজেকে খ্রীষ্টান, ইয়াহুদী, কাদিয়ানী কিংবা যে কোন ধরণের কাফির ও মুরতাদ সম্প্রদায়ের লোক লিখে অথবা লিখানো হয় তার উপর কুফুরীর বিধান বর্তাবে।
১৪-  কারো নিকট আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন কালে বলা বা লিখা: আপনি  যদি কাজ করে না দেন, তবে আমি কাদিয়ানী বা খ্রীষ্টান হয়ে যাব।- এমন উক্তিকারী তৎক্ষনাৎ কাফির হয়ে গেছে। এমনকি কেউ যদি বলে যে, আমি ১০০ বছর পর কাফির হয়ে যাব।- সে এখন থেকেই  কাফির হয়ে গেছে।
 ১৫- “কেউ পরামর্শ দিল: তুমি কাফির হয়ে যাও।” এমতাবস্থায়, সে কাফির হোক বা না হোক,পরামর্শদাতার  উপর কুফরী বিধান বর্তাবে। এমনকি কেউ কুফুরী বাক্য উচ্চারণ  করল, এর প্রতি সন্তুষ্ট ব্যক্তির উপরও কুফুরীর বিধান বর্তাবে। কেননা  কুফরী পছন্দ করাও কুফরী 
 ১৬-  বাস্তবিক পক্ষে যদি আল্লাহ থাকত, তবে অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করত, ঋণগ্রস্তদের সহায় হত।
অভিযোগ ও আপত্তির সময় উচ্চারিত কতিপয় কুফরী বাক্যের উদাহরণ
 ১৭- আমি জানি না আল্লাহ তাআলা যখন আমাকে দুনিয়াতে  কিছু দিলেন না, তবে আমাকে সৃষ্টিই বা কেন করলেন?- এ উক্তিটি কুফরী। (মিনাহুর রউয, ৫২১ পৃষ্ঠা)
 ১৮- কোন অভাবগ্রস্ত লোক নিজের অভাব-অনটন দেখে বলল: হে আল্লাহ! অমুকও তোমার বান্দা, তুমি তাকে কত নিয়ামতই দিয়ে রেখেছ এবং আমিও তোমার আরেক বান্দা, আমাকে কত দুঃখ-কষ্ট দিচ্ছ। এটা কি ন্যায় বিচার?(আলমগিরী, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা) 
১৯- কথিত আছে: আল্লাহ তাআলা ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন, আমি বলছি এসব প্রলাপ মাত্র।
২০- যেসব লোককে আমি ভালবাসি তারা পেরেশানীতে থাকে, আর যারা আমার শত্রু, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রাখেন।
২১- কাফির ও সম্পদশালীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য আর গরীবও অভাবগ্রস্তদের জন্য দুর্দশা। ব্যস! আল্লাহর ঘরের তো সমস্ত রীতিই উল্টো।
 ২২- যদি কেউ অসুস্থতা, রোজগারহীনতা, অভাব-অনটন অথবা কোন বিপদ- আপদের কারণে আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে আপত্তি করে বলে: হে  আমার রব! তুমি কেন আমার উপর অত্যাচার করছ? অথচ আমি তো কোন গুনাহ্ই করিনি।- তবে সে ব্যক্তি কাফির।
আপনজনের মৃত্যুতে উচ্চারিত কুফরী বাক্যের উদাহরণ সমূহ 
২৩- কারো মৃত্যু হল, একে কেন্দ্র করে অন্যজন বলল: আল্লাহ তাআলার এমনটি করা উচিত হয়নি।
 ২৪- কারো পুত্রের মৃত্যু হল, সে বলল: আল্লাহ তাআলার কাছে এর প্রয়োজন ছিল।- এই উক্তিটি কুফরী। কারণ উক্তিকারী আল্লাহ তাআলাকে মুখাপেক্ষী সাব্যস্ত করেছে। (ফতোওয়ায়ে বাযাযিয়া সম্বলিত আলমগিরী, ৬ষ্ঠ খন্ড,৩৪৯ পৃষ্ঠা) 
২৫- কারো মৃত্যুতে সাধারণত বলে থাকে: না জানি আল্লাহ তাআলার কাছে তার কী প্রয়োজন হয়ে গেল যে, এত তাড়াতাড়ি আহবান করলেন? অথবা বলে থাকে: আল্লাহ তাআলার নিকটও নেক্কার লোকদের প্রয়োজন হয়, একারণে শীঘ্রই উঠিয়ে নেন। (এমন উক্তি শুনে মর্ম বুঝা সত্ত্বে সাধারণত লোকেরা হঁ্যা!-র সাথে হঁ্যা! মিলিয়ে থাকে, অথবা এর  সমর্থনে মাথা নেড়ে থাকে। এদের সবার উপর কুফরী বিধান আরোপিত হবে)।
 ২৬-  কারো মৃত্যুতে বলল: হে আল্লাহ! তার ছোট ছোট সন্তানদের প্রতিও কি তোমার করুণা হল না! 
২৭- কোন যুবকের মৃত্যুতে বলল: হে আল্লাহ! এর ভরা যৌবনের প্রতি হলেও করুণা করতে! নিতেই যদি হতো, তবে অমুক বৃদ্ধ কিংবা অমুক বৃদ্ধাকে নিয়ে যেতে।
 ২৮- হে আল্লাহ! তোমার কাছে তার এমন কি প্রয়োজন পড়ে গেল যে, এ মুহুর্তেই (এত আগে ভাগেই) তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে।
ঈমান নবায়নের (অর্থাৎ নতুন ভাবে মুসলমান হওয়ার) নিয়ম 
 কুফরী থেকে তাওবা ঐ সময় গ্রহণযোগ্য হবে যখন সে ব্যক্তি কুফরকে কুফর হিসাবে মেনে নিবে, আর অন্তরে ঐ কুফরের প্রতি ঘৃণা  ও অসন্তুষ্ট হবে। যে কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, তাওবা কালে তার আলোচনাও হবে। উদাহরণ স্বরূপ: যে ব্যক্তি ভিসা ফরমে নিজেকে  খ্রীষ্টান লিখে দিয়েছে, সে এভাবে বলবে: “হে আল্লাহ! আমি যে ভিসা ফরমে নিজেকে খ্রীষ্টান বলে প্রকাশ করেছি, সে কুফরী থেকে তাওবা করছি।”
তাওবার পরে পড়ুন
لا اله الاالله محمد رسول الله صلى الله عليه وسل
(অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই, মুহাম্মদ صلى الله عليه وسلم আল্লাহর রাসুল) এমনিভাবে সুনির্দ্দিষ্ট কুফরী র তাওবাও হয়ে গেল এবং ঈমান নবায়নও (অর্থাৎ নতুন ভাবে মুসলমান হওয়া) ও হয়ে গেল। যদি একাধিক কুফরী বাক্য উচ্চারণ করে থাকে, এবং স্মরণ না থাকে যে, কি কি বলেছে, তবে এভাবে বলবে: হে আল্লাহ! আমার থেকে যে যে কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, আমি তা থেকে তাওবা করছি। অতঃপর কালিমা শরীফ পাঠ করে নিবেন। (যদি কালিমা শরীফের অনুবাদ জানা থাকে, তবে মুখে পূণরায় অনুবাদ বলার প্রয়োজন নেই) যদি এটা জানাই না থাকে, কুফরী বাক্য উচ্চারণ করেছিল নাকি করেনি তবুও যদি সে সাবধানতা মূলক তাওবা করতে চায়, তবে এভাবে বলবে: “হে আল্লাহ! যদি আমার থেকে কোন কুফরী হয়ে থাকে, তবে আমি তা থেকে তাওবা করছি।” এটা বলার পর কালিমা শরীফ পাঠ করে নিবেন। (সবাই প্রতিদিন সময়ে সময়ে কুফরী থেকে সাবধানতামূলক তাওবা করতে থাকা উচিত)
 বিবাহ নবায়নের পদ্ধতি
 বিবাহ নবায়নের অর্থ হচ্ছে: নতুন মোহর নির্ধারণ করে নতুন ভাবে বিবাহ করা। এজন্য লোকজন একত্রিত করার প্রয়োজন নেই।  ইজাব ও কবুলের নামই হচ্ছে বিবাহ। তবে বিবাহ সম্পাদন কালে স্বাক্ষী স্বরূপ কমপক্ষে দুইজন মুসলমান পুরুষ অথবা একজন মুসলমান পুরুষ ও দুইজন মুসলমান মহিলার উপস্থিত হওয়া আবশ্যক। বিবাহের খুতবা শর্ত নয় বরং তা মুস্তাহাব। খুতবা স্মরণ না  থাকলে  اعوذ با الله  এবংبسم الله  শরীফের পর সূরা ফাতিহাও পড়া যায়। কমপক্ষে ১০ দিরহাম অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা রৌপ্য (বর্তমান ওজনের হিসাবে ৩০ গ্রাম ৬১৮ মিলি গ্রাম রৌপ্য) অথবা এর সমপরিমাণ টাকা মোহর হিসাবে ওয়াজিবউদাহরণ স্বরূপ: আপনি ৭৮৬ টাকা বাকীতে মোহরের নিয়্যত করে নিলেন। (কিন্তু এটা দেখে নিবেন যে, মোহর নির্ধারণ করার  সময় উক্ত রৌপ্যের মূল্য ৭৮৬ টাকার বেশী যেন না হয়)- তবে এমতাবস্থায় উল্লেখিত স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে আপনি ‘ইজাব’ করবেন। অর্থাৎ মহিলাকে বলবেন: “আমি ৭৮৬ টাকা মোহরের বিনিময়ে আপনাকে বিবাহ করলাম।” মহিলা বলবে: “আমি কবুল করলাম।” বিবাহ হয়ে গেল (তিন বার ইজাব ও কবুল বলা আবশ্যক নয়, যদি করে তবে উত্তম) এমনও হতে পারে, মহিলা নিজেই খুৎবা  কিংবা সূরা ফাতিহা পাঠ করতঃ ‘ইজাব’ করবে। আর পুরুষ বলবে: “আমি কবুল করলাম।” বিবাহ হয়ে গেল। বিবাহের পর স্ত্রী যদি চায়, তবে মোহর ক্ষমাও করে দিতে পারে। কিন্তু শরীয়াতের প্রয়োজন ছাড়া পুরুষ স্ত্রীর নিকট মোহর ক্ষমা করার আবেদন করবে না।
 মাদানী ফুল: যেসব অবস্থায় বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। যেমন: প্রকাশ্য কুফরী বাক্য উচ্চারণ করল এবং মুরতাদ হয়ে গেল, তখন বিবাহ নবায়ন কালে মোহর নির্ধারণ করা ওয়াজিব। অবশ্য, সাবধানতামূলক বিবাহ নবায়নকালে মোহরের প্রয়োজন নেই। সাবধানতা: মুরতাদ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা এবং ঈমান নবায়নের পূর্বে যে ব্যক্তি বিবাহ করল, তার বিবাহই হয়নি।
ফুযুলী বিবাহের পদ্ধতি
 মহিলা জানেই না, আর কোন ব্যক্তি পুরুষের সাথে উপরোল্লেখিত স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে মহিলার পক্ষে ‘ইজাব’ করে নিল। যেমন; বলল: আমি ৭৮৬ টাকা বাকী দেন-মোহরের পরিবর্তে  অমুক বিনতে অমুক বিন অমুককে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম। পুরুষ  বলল: ‘আমি কবুল করলাম।’ এটা ফুযুলী বিবাহ হয়ে গেল। অতঃপর মহিলাকে খবর দেওয়া হল কিংবা বর নিজেই বলল। আর সে কবুল করে নিল, তবে বিবাহ হয়ে গেল। পুরুষও ‘ইজাব’ করতে পারে। ‘ফুযুলী বিবাহ’ হানাফীদের মতে জায়েয। কিন্তু ‘খিলাফে আওলা’ অবশ্য শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীদের মতে ‘বাতিল’ (অগ্রাহ্য)। জাহান্নামের শাস্তির স্বরূপ  যে ব্যক্তির معاذ الله عزوجل  কুফরী প্রকাশ হয়ে গেছে, তার উচিত দলিলাদিতে ফেঁসে যাবার চেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে তাওবা করে নেওয়া। যার শেষ পরিণতি কুফরের উপর হবে, সে সব সময়ের জন্য জাহান্নামে থাকবে। যদিও দুনিয়ার মধ্যে সে প্রকাশ্যে নেক্কার, নামাযী ও তাহাজ্জুদ আদায়কারী পরহেযগার হয়ে থাকুক না কেন। আল্লাহর কসম! জাহান্নামের শাস্তি কেউ সহ্য করতে পারবে না। কুফরের মৃত্যুতে মৃত্যুবরণকারীদেরকে ফিরিশতারা লোহার  এমন ভারী হাতুড়ী দ্বারা আঘাত করবে যদি কোন হাতুড়ী পৃথিবীতে রেখে দেওয়া হয়, তবে সমগ্র মানব ও দানব একত্রিত হয়েও তা উঠাতে পারবে না। “বুখতী উট” (অর্থাৎ এমন এক প্রজাতির উট যা সাধারণত অন্যান্য উটদের তুলনায় বড় হয়ে থাকে) এর গর্দান বরাবর বিচ্ছু, আর আল্লাহ তাআলা জানেন কত বড় বড় সাপ, যদি একবার দংশন করে তবে তার জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যথা ও অস্থিরতা ৪০ বৎসর পর্যন্ত থাকবে। মাথায় গরম পানি বইয়ে দেওয়া হবে।জাহান্নামীদের শরীর থেকে যে পুজঁ প্রবাহিত হবে, তা (তাদের) পান করানো হবে। খাওয়ার জন্য কাঁটা যুক্ত যাক্কুম (গাছের) ফল, দেওয়া হবে। তা এমন হবে যে, এর সামান্য এক ফোঁটা যদি পৃথিবীতে এসে পড়ে, তবে তার জ্বালা-যন্ত্রণা ও দুর্গন্ধ সমগ্র দুনিয়াবাসীর জীবনকে দুর্বিসহ করে দিবে। আর তা গলদেশে গিয়ে ফাঁস সৃষ্টি করবে। তা অপসারণের জন্য পানি খুজঁবে। তখন এদেরকে তেলের গাদের ন্যায় অসহনীয় ফুটন্ত গরম পানি দেওয়া হবে। যা মুখের নিকটে আসতেই মুখের সমগ্র চামড়া বিগলিত হয়ে তাতে খসে পড়বে এবং পেটে যেতেই আঁতগুলোকে ছিন্ন  বিছিন্ন করে দিবে। আর তা ঝোলের ন্যায় প্রবাহিত হয়ে পা গুলোর দিকে বের হয়ে আসবে।
ঈমান হিফাযতের ওয়াজিফা
بسم الله على دينى بسم الله على نفسى وولد ى واهلى وما لى
সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করলে দ্বীন ও ঈমান, জান-মাল, সন্তান-সন্তুতি সবই নিরাপদ থাকবে। (অর্ধরজনী অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে সূর্যের প্রথম কিরণ প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত সময়কে সকাল এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়কে সন্ধ্যা বলা হয়।)
 নোট: এ রিসালায় আপনি সংক্ষেপে ২৮টি কুফরী বাক্যের  উদাহরণ লক্ষ্য করেছেন। আরো বিস্তারিত কুফ্রী বাক্য সম্পর্কে জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতর্ৃক প্রকাশিত ৬৯২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “কুফরীয়া কালেমাত কে বারে মে সুওয়াল জাওয়াব”অধ্যায়ন করুন।
জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে যায়
 হাদীস শরীফে রয়েছে: ‘যে ব্যক্তি ভালভাবে ওজু করল, অতঃপর আসমানের দিকে মুখ উঠিয়ে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করল, সে ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। যেটি দিয়েই ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (সুনানে দারেমী, ১ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস : ৭১৬)
 দৃষ্টিশক্তি কখনও দুর্বল হবে না
 যে ব্যক্তি ওজু করার পর আসমানের দিকে মুখ করে সূরা কদর পাঠ করে নিবে,ا ن شاءالله عزوجل তার দৃষ্টিশক্তি কখনও দুর্বল হবে না। (মাসায়িলুল কুরআন, ২৯১ পৃষ্ঠা)
 ওজুর পর তিন বার সূরা কদর পাঠ করার ফযিলত
 হাদীস শরীফে রয়েছে, যে ব্যক্তি ওজু করার পর এক বার সূরা কদর পাঠ করে, সে ব্যক্তি সিদ্দীকিনদের পর্যায়ভূক্ত । আর যে ব্যক্তি দুই বার পাঠ করে, সে ব্যক্তি শহীদদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি তিন বার পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলা সে ব্যক্তিকে হাশরের ময়দানে নবীগণের সাথে রাখবেন। (ইমাম সুয়ূতী কৃত জমউল জাওয়ামে, ৭ম খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২২৮১৭)
ওজুর পরে পাঠ করার দোআ (আগে ও পরে দরূদ শরীফ পড়ে নিন)
 যে ব্যক্তি ওজু করার পর নিচের দোআটি পাঠ করবেন তবে(অর্থাৎ দোআটি পড়লে) এটিতে মোহর মেরে আরশের নিচে রেখে দেওয়া হবে এবং কিয়ামতের দিন এটির পাঠককে দিয়ে দেওয়া হবে।
سبحنكاللهم وبحمد ك اشهد ان لا اله لا انت استغفر ك واتوب اليك
অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ্! তুমি পবিত্র। আর তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতিত আর কোন মাবুদ নেই। আমি তোমার কাছে গুনাহ মাফ চাই। আর তোমার দরবারে তাওবা  করছি।’ (শুআবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২১ পৃষ্ঠা, হাদীস : ২৭৫৪)  
ওজুর পরে এই দোআটিও পড়ে নিন (আগে ও পরে দরূদ শরীফ সহকারে)
اللهم اجعلنى من التوابين واجعلنى من المتطهرين
অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ্! আমাকে তুমি বেশি বেশি তাওবাকারীদের  অন্তভূক্ত করে নাও। আর আমাকে সর্বদা পবিত্র অবস্থান কারীদের দলভূক্ত করে দাও।’ (সুনানে তিরমিযি , ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৫)



Top