❏ দলবদ্ধভাবে দোয়া করার দলিল
দলবদ্ধভাবে দোয়া বা মুনাজাত করার বিষয়ে একধিক সহীহ্ হাদিসে আছে। এরুপ আমল করা সুন্নাতে রাসূল (رحمة الله عليه) ও সুন্নাতে সাহাবা। যেমন নিচের হাদিস গুলো লক্ষ্য করুন, ইমাম বুখারী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
قَالَ أَيُّوبُ بْنُ سُلَيْمَانَ: حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بِلاَلٍ، قَالَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ مِنْ أَهْلِ البَدْوِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ المَاشِيَةُ، هَلَكَ العِيَالُ هَلَكَ النَّاسُ، فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، يَدْعُو، وَرَفَعَ النَّاسُ أَيْدِيَهُمْ مَعَهُ يَدْعُونَ
-“হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) বলেন, জুময়ার দিন বাদউ গোত্রের একজন আরাবী লোক আল্লাহর রাসূল (ﷺ)’র কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! পশু গুলো ধ্বংস হচ্ছে, পরিবার পরিজন শেষ হয়ে যাচ্ছে, লোকেরাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অত:পর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দুই হাত মোবারক উঠালেন ও দোয়া করতে লাগলেন এবং লোকেরাও নবীপাক (ﷺ)’র সাথে হাত উঠালেন ও দোয়া করলেন।”(সহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ১০২৯; কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ১৩৫২;)
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট সম্মিলিত দোয়া করা সুন্নাত প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে অপর হাদিসে লক্ষ্য করুন, ইমাম তাবারানী, ইমাম ইবনু শাহিন (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ مُجَاهِدٍ الْبَصْرِيُّ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا شَدَّادٌ أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
-“হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যখন কোন সম্প্রদায় তাদের হাঁতের অগ্রভাগ আল্লাহর দরবারে কোন কিছু প্রার্থনার জন্য উচু করে, তখন আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে, যা প্রার্থনা করে তা দেওয়া।”
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীরে, হাদিস নং ৬১৪২; ইমাম ইবনে শাহিন: আত্তারগীব ফি ফাদ্বাইলিল আমাল, হাদিস নং ১৪৪; ইমাম সুয়ূতী: জামেউছ ছাগির, হাদিস নং ১১৮৫৪; ইমাম সুয়ূতী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২০০৮০; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩১৪৫; আল্লামা মানাভী: আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃঃ; মুখলেছিয়্যাত, হাদিস নং ২৮১৫; ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১; আত্ তানভির শরহে জামেউছ ছাগির, ৯ম খন্ড, ৩৯৬ পৃঃ;)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله عليه) বলেছেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. -
“ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন এবং ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।”(ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১;)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী (رحمة الله عليه) বলেন:
عَن سلمَان الْفَارِسِي وَرِجَاله رجال الصَّحِيح
-“হযরত ছালমান ফারছী (رضي الله عنه) হতে, এর সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।” (আল্লামা মানাভী: আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃঃ;)
এই হাদিস সম্পর্কে স্বয়ং নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেন:
قلت: وهذا إسناد رجاله ثقات رجال (الصحيح) -
“আমি (আলবানী) বলি: এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।”(আলবানী: ছিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৫৯৪৮;)
‘ইয়াকুব ইবনে মুজাহিদ বাছরী’ ছাড়াও ভিন্ন আরেকটি সনদে আরেকটি সূত্রে হাদিসটি ইমাম আবুল হাফছ উমর ইবনে আহমদ ইবনে উছমান (رحمة الله عليه) (ওফাত ৩৮৫ হিজরী) যিনি ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله عليه) নামে প্রসিদ্ধ তিনি তার কিতাবে এভাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন:-
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ صَاعِدٍ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، شَدَّادُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
-“ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ হাদিস বর্ণনা করেছেন মুনজির ইবনে ওয়ালিদ জারুদী থেকে- তিনি তার পিতা থেকে- তিনি আবু তালহা রাছিউ থেকে- তিনি সাদ্দাদ ইবনে সাঈীদ থেকে- তিনি জুরাইরী থেকে- তিনি আবী উছমান থেকে- তিনি সালমান ফারছী (رضي الله عنه) থেকে..।”
(ইমাম ইবনে শাহিন: আত্তারগীব ফি ফাদ্বাইলিল আমাল, হাদিস নং ১৪৪;)
এই সনদের সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ। সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়, ইমাম হাকেম, ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُوسَى، ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ، ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، حَدَّثَنِي ابْنُ هُبَيْرَةَ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ، وَكَانَ مُجَاب الدَّعْوَةِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ، وَيُؤَمِّنُ الْبَعْضُ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ
-“হযরত হাবীব ইবনে মাছলামা ফিহরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: একটি দল যখন একত্রিত হয়ে দোয়া করে এবং কতিপয় ব্যক্তি আমিন বলে, তখন নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।”
(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৫৪৭৮; ইমাম তাবারানী তাঁর কবীরে, হাদিস নং ৩৫৩৬; ইমাম মুনজেরী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১ম খন্ড, ২০৯ পৃঃ; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৩৬৭; ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খন্ড, ২০০ পৃঃ; ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ২২৬ পৃঃ; ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪৭;)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله عليه) বলেন,
وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ -“এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ শুধু ‘ইবনে লাহিয়া’ ব্যতীত, আর সে হাছানুল হাদিস।”(ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস ন ১৭৩৪৭;)
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়, ইমাম বুখারী (رحمة الله عليه) তদীয় তারিখের মধ্যে বর্ণনা করেছেন,
يُوسُف بْن راشد، حدَّثنا أَحْمَد بْن عَبد اللهِ، قَالَ: حدَّثنا عِمران، يَعني ابن زَيد التَّغلِبي، قَالَ: حدَّثنا خَطّاب بْن عُمر، عَنِ الْحَسَن، عَنْ أَنس بْن مالك: خَرَجتُ مَعَ النَّبيِّ صَلى اللَّهُ عَلَيه وسَلم، مِنَ البَيتِ إِلَى المَسجِدِ، وقَومٌ فِي المَسجِدِ، رافِعُو أَيدِيهِم يَدعُونَ، قَالَ: تَرَى بِأَيدِيهِم ما أَرَى؟ فَقلتُ: وما بِأَيدِيهِم؟ قَالَ: بِأَيدِيهِم نُورٌ، قلتُ: ادعُوا اللَّه أَن يُرِينِيهِ، فَدَعا، فَأَرانِيهِ، فَأَسرَعَ، فَرَفَعنا أَيدِيَنا.
-“হযরত আনাস ইবনে আলেক (রা:) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে আমি ঘর থেকে মসজিদে গেলাম। সেখানে দেখলাম একদল লোক দুই হাত উত্তোলন করে দোয়া করছেন। রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, তোমরা কি দেখ তাদের হাতের মধ্যে কি যা আমি দেখছি? আনাস (রা:) বলেন: তাদের হাতের মাঝে কি? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেন: তাদের হাতের মাঝে নূর। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য দোয়া করেন যেন আমরা ঐ নূর দেখতে পারি। অত:পর তিঁনি দোয়া করলেন ও আমরা নূর দেখলাম। ফলে আমরা তাদের সাথে হাত তুলে দোয়া করলাম।”(ইমাম বুখারী: তারিখুল কাবীর, ৬৯২ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;)
অতএব, এই হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নামাজের পরে কিংবা যেকোন সময় সম্মিলিত ভাবে দোয়া করলে দোয়া ১০০ শত ভাগ কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা লাভ করে। তাই ফরজ নামাজের পর দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ পাক ঐ দোয়া নিশ্চিত কবুল করবেন কারণ ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুলের গ্যারান্টি আছে। পাশাপাশি দলবদ্ধ ভাবে দোয়া করলে এরূপ দোয়া কবুল হওয়ার ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে। এ সম্পর্কে নিচের হাদিসটি উল্লেখযোগ্য:-
সহীহ্ হাদিসে উল্লেখ আছে আল্লাহর নবী হযরত মূসা (عَلَيْهَا السَّلَامُ) দোয়া করতেন এবং হযরত হারুন (عَلَيْهَا السَّلَامُ) ঐ দোয়ায় ‘আমিন’ বলতেন। যেমন নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন, ইমাম ইবনু খুজাইমা ও ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,
نا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ الْقَيْسِيُّ، نا أَبُو عَامِرٍ، وَثنا مُحَمَّدُ بْنُ مَعْمَرٍ أَيْضًا ثنا حَرَمِيُّ بْنُ عُمَارَةَ، عَنْ زَرْبِيٍّ مَوْلًى لِآلِ الْمُهَلَّبِ عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:... وَأَعْطَانِي التَّأْمِينَ وَلَمْ يُعْطِهِ أَحَدًا مِنَ النَّبِيِّينَ قَبْلُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ اللَّهُ أَعْطَى هَارُونَ، يَدْعُو مُوسَى وَيُؤَمِّنُ هَارُونُ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বলেছেন:.... আল্লাহ তা’লা আমাকে ‘আমিন’ দান করেছেন যা ইতিপূর্বে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি, তবে হযরত হারুন (عَلَيْهَا السَّلَامُ) ব্যতীত। হযরত মূসা (عَلَيْهَا السَّلَامُ) দোয়া করতেন আর হারুন (عَلَيْهَا السَّلَامُ) ‘আমিন’ বলতেন।”
(সহীহ্ ইবনে খুজাইমা, ২য় খন্ড, ৬৭৬ পৃঃ হাদিস নং ১৫৮৬; ইমাম বায়হাক্বী: দাওয়াতুল কবীর, হাদিস নং ৬৫৯; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ২৭০৮;)
এই হাদিস প্রমাণ করে যে, একজন দোয়া করবেন আর বাকী সকলে ‘আমিন’ বলবেন এরূপ দোয়া তথা সম্মিলিত দোয়া করা হযরত মূসা (عَلَيْهَا السَّلَامُ) ও হযরত হারুন (عَلَيْهَا السَّلَامُ) এর সুন্নাত।