কিতাবঃ আত্মহত্যার প্রতিকার 

(BANGLA) KHUD KHUSI KA ILAJ 

(সংশােধিত)


আলোকিতকবরসমূহ 

কুফরী বাক্যের ১৬টি উদাহরণ 

সবুজ গম্বুদের ধ্যানের পদ্ধতি

ধৈর্যকে সহজ করার উপায় 

হায়! বেচারা সম্পদশালী 

পায়ে হাঁটার উপকারীতা

৭টি রুহানী চিকিৎসা 


শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী دَامَتۡ بَرَكَاتُهُمُ الۡعَالِيَه


টেক্সট রেডি: মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী


اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ الۡمُرۡسَلِيۡنَ اَمَّابَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيۡطٰنِ الرَّجِیۡم ط 

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡم ط 


কিতাব পাঠ করার দোয়া


ধর্মীয় কিতাবাদি বা ইসলামী পাঠ পড়ার শুরুতে নিম্নে প্রদত্ত দোয়াটি পড়ে নিন। 

اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ যা কিছু পড়বেন, স্বরণে থাকবে। 

দোয়াটি হল, 

اَللّٰهُمَّ افۡتَحۡ عَلَيۡنَا حِكۡمَتَكَ وَانۡشُرۡ عَلَيۡنَا رَحۡمَتَكَ يَا ذَالۡجَلَالِ وَالۡاِكۡرَام 

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য জ্ঞান ও হিকমতের দরজা খুলে দাও এবং আমাদের উপর তােমার বিশেষ অনুগ্রহ নাযিল কর! হে চির মহান ও হে চির মহিমান্বিত। (আল মুস্তাতারাফ, ১ম খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকির, বৈরুত)। (দোয়াটি পাঠ করার আগে ও পরে একবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করুন)।



কিয়ামতের দিনে আফসােস 


ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم “কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী আফসােস করবে, যে দুনিয়াতে জ্ঞান অর্জন করার সুযােগ পেল কিন্তু জ্ঞান অর্জন করল না এবং ঐ ব্যক্তি আফসােস করবে, যে জ্ঞান অর্জন করল আর অন্যরা তার থেকে শুনে উপকার গ্রহণ করল অথচ সে নিজে গ্রহণ করল না (অর্থাৎ সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করল না)।” | (তারিখে দামেশক লিইবনে আসাকির, ৫১তম খন্ড, ১৩৭ পৃষ্ঠা, দারূল ফিকির। 


দৃষ্টি আকর্ষণ


কিতাবের মুদ্রনে সমস্যা হােক বা পৃষ্ঠা কম হােক বা যদি বাইন্ডিংয়ে আগে পরে হয়ে যায় তবে মাকতাবাতুল মদীনা থেকে পরিবর্তন করে নিন। 


এই রিসালাটি শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী دَامَتۡ بَرَكَاتُهُمُ الۡعَالِيَه উর্দু ভাষায় লিখেছেন। দাওয়াতে ইসলামীর অনুবাদ মজলিশ এই রিসালাটিকে বাংলাতে অনুবাদ করেছে। যদি অনুবাদ, কম্পােজ বা প্রিন্টিং এ কোন প্রকারের ভুলত্রুটি আপনার দৃষ্টিগােচর হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে মজলিশকে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রচুর সাওয়াব হাসিল করুন। 

(মৌখিকভাবে বলার চেয়ে লিখিতভাবে জানালে বেশি উপকার হয়)।


এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন


দাওয়াতে ইসলামী (অনুবাদ মজলিশ) মাকতাবাতুল মদীনা এর বিভিন্ন শাখা ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, 

জনপথ মােড়, সায়দাবাদ, ঢাকা। 

ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, নিয়ামতপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী।

কে.এম.ভবন, দ্বিতীয় তলা ১১ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। 


e-mail : bdmaktabatulmadina26@gmail.com, bdtarajim@gmail.com web www.dawateislami.net 


এই রিসালাটি পড়ে অন্যকে দিয়ে দিন


বিয়ের অনুষ্ঠান, ইজতিমা সমূহ, মিলাদ মাহফিল, ওরস শরীফ এবং জুলুসে মীলাদ ইত্যাদিতে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা সমূহ বন্টন করে সাওয়াব অর্জন করুন, গ্রাহককে সাওয়াবের নিয়্যতে উপহার স্বরূপ দেওয়ার জন্য নিজের দোকানে রিসালা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হকার বা বাচ্চাদের দিয়ে নিজের এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে সুন্নাতে ভরা রিসালা পৌঁছিয়ে নেকীর দাওয়াত প্রসার করুন এবং প্রচুর সাওয়াব অর্জন করুন। 


اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ الۡمُرۡسَلِيۡنَ اَمَّابَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيۡطٰنِ الرَّجِیۡم ط 

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡم ط


আত্মহত্যার প্রতিকার 


(হয়তাে নফস ও শয়তান আপনাকে বাধা দিবে কিন্তু আপনি এ রিসালাটি সম্পূর্ণ পাঠ করে নিজের পরকালের কল্যাণ সাধিত করুন।)


দরূদ শরীফের ফযীলত


 হযরত উবাই বিন কা'ব رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ আরজ করলেন: আমি (সমস্ত ওযীফা, যিকির, দোয়া সমূহ বর্জন করব এবং) নিজের পুরাে সময় দরূদ পাঠে ব্যয় করব। তখন হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “এটা (তােমার এ কাজ) তােমার দুশ্চিন্তা সমূহ দূর করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তােমার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”(সুনানে তিরমিজী, ৪র্থ খন্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪৬৫)।


 “লায়েঙ্গে মেরী কবর মে তাশরীফে মুস্তফা, 

আদত বানা রাহা হোঁ দরূদ ও সালাম কী।” 


এ বয়ানটি আমীরে আহলে সুন্নাত তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিন ব্যাপী সুন্নাতে ভরা ইজতিমা : (৯,১০,১১শে শাবান ১৪২৫ হিঃ, মদীনাতুল আউলিয়া মুলতান) এর মধ্যে রবিবার রাতে প্রদান করেছেন। প্রয়ােজনীয় কিছু পরিবর্তনের পর লিখিত আকারে পেশ করা হল। 

--- মাকতাবাতুল মদীনা মজলিশ 



বীর যােদ্ধা


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: রাসুলে করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর সাথে আমরা (হুনাইনের) যুদ্ধে হাজির ছিলাম, তখন আল্লাহ্ প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইসলামের দাবীদার একজন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ করলেন: “সে জাহান্নামী! অতঃপর আমরা যুদ্ধ করছিলাম সে ব্যক্তি ও তীব্রতার সাথে যুদ্ধ করছিল হঠাৎ সে আঘাত প্রাপ্ত হল।” কেউ আরয করল: ইয়া : রাসুলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم! যে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগে জাহান্নামী বলে ঘােষণা দিয়েছেন, সে তাে আজ প্রচন্ড যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করেছে। তখন নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “সে জাহান্নামে পৌঁছেছে।” কিছু লােক সন্দেহে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এমন সময় কেউ এসে বলল: সে মৃত্যুবরণ করেনি বরং সে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল। যখন রাত হল, সে আঘাতের তীব্র কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে ফেলেছে। অতঃপর যখন প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে এ সংবাদ দেওয়া হল তখন হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন:“আল্লাহু আকবর! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহ্ তাআলার বান্দা ও তাঁর রাসূল।” অতঃপর তিনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم হযরত বিলাল رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ কে নির্দেশ দিলেন, তখন হযরত বিলাল رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ মানুষের সামনে ঘােষণা দিলেন: “জান্নাতে শুধুমাত্র মুসলমানরাই প্রবেশ করবে, আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলা এই দ্বীনের সাহায্য কোন জঘণ্য পাপী ব্যক্তি দ্বারাও করিয়ে থাকেন।” (সহীহ মুসলিম, ৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৮। সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩০৬২)। 


ঐ যােদ্ধার জাহান্নামী হওয়ার দুটি কারণ


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলার প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কাফিরদের সাথে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তীব্র যুদ্ধ পরিচালনা কারী উক্ত যােদ্ধাকে জাহান্নামী সাব্যস্ত করার দু’টি কারণ হতে পারে। (১) আত্মহত্যা করা: এ অবস্থায় সে তার পাপের শাস্তি ভােগ করে পরবর্তীতে জান্নাতে যাবে। (২) মুনাফিক হওয়া: যেমন: সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক হযরত সায়্যিদুনা মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ খতীব বােগদাদী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর বরাত দিয়ে বলেন: “আত্মহত্যাকারী সে ব্যক্তি মুনাফিক ছিল” 

(শরহে মুসলিম লিন্‌ নবী, ১ম খন্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা) 

এমতাবস্থায় সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। 


মুফতী শরীফুল হক সাহেবের ব্যাখ্যা


বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক হযরত আল্লামা শরীফুল হক আমজাদী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ “নুজহাতুল ক্বারী” ৪র্থ খন্ডের ১৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন: ঐ লােকটি মূলত কি কাফির ছিল না মুসলমান তার সমাধান দেয়া খুবই কঠিন। কিন্তু হাদীসের শুরুতে বলা হয়েছে: 

 لِرَجُلٍ يَدَّعِی الۡاِسۡلَام (অর্থাৎ এক ব্যক্তি যে ইসলামের দাবীদার) এবং শেষাংশে ঘােষণা করা হয়েছে তা দ্বারা প্রকাশ্যে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ঐ ব্যক্তি মূলত মুসলমান ছিল না এবং পরিশেষে ইরশাদ করলেন:

নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলা এ দ্বীনের সহায়তা কোন জঘন্য পাপী ব্যক্তি দ্বারাও করান। ঐ পাপী শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থের বিচারে ও এটা প্রতীয়মান হয়, প্রকৃতপক্ষে সে মুসলমান ছিল কেননা পরিভাষায় ফাজের (পাপী) শব্দটি গুনাহগার মুসলমান কে ও বুঝায়। তবে তা অকাট্য নয়। 


কুরআন মজীদে রয়েছে اِنَّ الۡفُجَّارَ لَفِیۡ جَحِیۡمٍ (অর্থাৎ নিশ্চয় পাপীরা তাে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। (পারা: ৩০, সূরা: ইনফিতার, আয়াত: ১৪) এবং আরাে ইরশাদ হচ্ছে: اِنَّ کِتٰبَ الۡفُجَّارِ لَفِیۡ سِجِّیۡنٍ (অর্থাৎ : নিশ্চয় কাফিরদের আমলনামা সবচেয়ে নিম্নস্থান ‘সিজ্জিন’-এ রয়েছে।(পারা: ৩০, সূরা আল মুতাফফিফিন, আয়াত: ৭) জালালাইন শরীফে উভয় আয়াতের ব্যাখ্যা কাফের শব্দ দ্বারা করা হয়েছে। সুতরাং আলােচ্য হাদীসে ও فَاجِر শব্দ দ্বারা কাফের কে বুঝানাে হলে কোন ভূল হবে না। (নুযহাতুল ক্বারী, ৪র্থ খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা)


কবুলিয়তের মানদন্ড শেষ পরিণতির উপর


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রমাণিত হল! বাহ্যিক ভাবে যতই ইবাদত ও রিয়াজত করুক যত বড়ই খেদমতকারী হােক না কেন,মূলত যদি তার অন্তরে মুনাফেকী স্বভাব ও মাদানী আক্কা, প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর প্রতি শত্রুতা থাকে তাহলে তার শত সৎকাজের কোন মূল্য নেই। এটাও জানা গেল, কোন ব্যক্তির কৃত কর্মের পুরষ্কার বা তিরষ্কার পাওয়াটা তার শেষ পরিণতির উপর নির্ভর করে। যেমন “মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল” এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে اِنَّمَاا لۡاَعۡمَالُ بِالۡخَوَاتِیۡم অর্থাৎ- সকল কাজের ফলাফল শেষ পরিণতির উপর নির্ভরশীল। (মুসনদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৮ম খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২২৮৯৮) 


জান্নাত হারাম হয়ে গেল 


নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “তােমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এক ব্যক্তির শরীর থেকে ফোঁড়া বের হয়েছিল। 

সে ব্যক্তি যখন সে ফোঁড়ায় অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করল তখন তার ধারালাে তীর দ্বারা ফোঁড়াতে আঘাত করে ফোঁড়াটি ছিড়ে ফেলল, ফলে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। যে রক্তের ধারা কে বন্ধ করা সম্ভব হল না। পরিশেষে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার কারণে সে মৃত্যুবরণ করল।” আমাদের মালিক (আল্লাহ্ তাআলা) ইরশাদ করেন: “আমি তার উপর জান্নাত কে হারাম করে দিলাম।” (সহীহ মুসলিম, ৭১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮০)।


উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা কারক হযরত আল্লামা নববী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: আলােচ্য হাদীস থেকে এ ফলাফল বের করা হবে যে, উক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিদ্রুত মৃত্যুবরণ করার জন্য (আত্মহত্যা) অথবা অন্য কোন কারণে এমন কাজ করেছে (যে কারণে তার উপর জান্নাত হারাম বলা হয়েছে)। নতুবা নিশ্চিত ধারণার ভিত্তিতে চিকিৎসা ও প্রতিষেধক স্বরূপ ফোঁড়াকে অপারেশন করা হারাম নয়। (শরহে মুসলিম লি নববী, ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা) 


আত্মহত্যার অর্থ


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আত্মহত্যার অর্থ হল: নিজেকে নিজে ধ্বংস করে দেওয়া। আত্মহত্যা করা কবীরা গুনাহ, হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। আল্লাহ্ তাআলা ৫ম পারার সূরাতুন নিসার ২৯-৩০ নং আয়াতে ইরশাদ করেন: 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹﴾ 

وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ عُدۡوَانًا وَّ ظُلۡمًا فَسَوۡفَ نُصۡلِیۡہِ نَارًا ؕ وَ کَانَ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰہِ یَسِیۡرًا ﴿۳۰﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! পরস্পরের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করােনা; কিন্তু এযে, কোন ব্যবসা তােমাদের পরস্পরিক সন্তুষ্টিতে হয় এবং নিজেদের প্রাণগুলােকে হত্যা করােনা। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তােমাদের প্রতি দয়াবান। এবং যে অত্যাচার ও সীমালংঘন করে এমন করবে, তবে অনতিবিলম্বে আমি তাকে আগুনে প্রবিষ্ট করবাে এবং এটা আল্লাহু তাআলার পক্ষে সহজসাধ্য। 


 وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ

 উপরােক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে হযরত আল্লামা নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ “খাযাইনুল ইরফান” এর মধ্যে বলেন: মাসয়ালা: উপরােক্ত আয়াত দ্বারা আত্মহত্যা হারাম হওয়াটা প্রমানীত। সূরা বাকারার, ১৯৫ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:

 وَ اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّہۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَ اَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۹۵ এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করাে। এবং নিজেদের হাতে ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়ােনা এবং সর্মপরায়ণ হয়ে যাও। নিশ্চয় সকর্মপরায়ণগণ আল্লাহর প্রিয়। (পারা- ২, সূরা বাকারা, আয়াত- ১৯৫) 


উপরােক্ত আয়াতে করীমার ব্যাখ্যা “খাযাইনুল ইরফানে” এভাবে করা হয়েছে: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় না করা যেভাবে ধ্বংসের কারণ ঠিক তেমনি অপাত্রে অপব্যয় করাটাও। তাই যে সকল বস্তু মানুষকে ধ্বংস ও বিপদের দিকে নিয়ে যায় বা ধাবিত করে সে সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার বিধান রয়েছে। এমন কি হাতিয়ার বা যুদ্ধের সরঞ্জামাদি ব্যতীত যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর সামনে গিয়ে হত্যার শিকার হওয়া, বিষপান করা অথবা অন্য কোন উপায়ে আত্মহত্যা করা।(এ সবই আত্মহত্যার মধ্যে শামিল।)


আত্মহত্যার সংখ্যা ও হিসাব


আফসােস! আজকাল দিনদিন আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে। একটি পত্রিকার রিপাের্টে আছে: জিনাহ পােষ্ট গ্রেজোয়েট মেডিকেল সেন্টারের ঘােষিত সংখ্যানুযায়ী ১৯৮৫ সালে ৩৫ জন লােক আত্মহত্যা করেছে। আর এর সংখ্যা পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে এতটুকুতে পৌঁছল যে, ২০০৩ সালে ৯৩০ জন লােক আত্মহত্যা করেছে। আরাে দুঃখজনক কথা হল, সে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৬ হতে ৩০ বছরের মাঝামাঝি। “হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান” এর রিপাের্ট অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে

অর্থাৎ জানুয়ারী থেকে জুন ২০০৪ এর মধ্যবর্তী সময়ে ১১০৩ জন লােক আত্মহত্যার সফল ও বিফল চেষ্টা করে। তন্মধ্যে ছােট বাচ্চাদের সংখ্যা ছিল ৪৬.৫%। যার অর্ধেক প্রায় শিশু। ঐ সকল অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা আত্মহত্যার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা হল: ২১ জন বিষাক্ত ভরি খেয়েছে, ১১ জন বিষপান করেছে, ৮ জন ফাঁসিতে ঝুলেছে, ২ জন নিজেকে আগুনে নিক্ষেপ করেছে,একজন নদীতে ডুবেছে, ৯ জন নিজের গুলিতে, ২ জন তীজাব নামক বিষাক্ত দ্রব্য পান করেছে এবং একজন গর্দানের রগ কেটে নিয়েছে। এ হিসাব তাে তাই, যা প্রশাসনের এবং সাংবাদিকদের দৃষ্টি গােচর হয়েছে, এছাড়া ও আরাে অনেক ঘটনা ঘটেছে যা প্রকাশিত হয়নি গােপন রয়ে গেছে। 


আত্মহত্যার কিছু কারণ 


সাধারণত! ঘরােয়া ঝামেলা, অভাব, ঋনগ্রস্থতা, রােগাক্রান্ত হওয়া, বিপদে সম্মুখীন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির হতাশা এবং নিজ পছন্দের পাত্রী কে বিবাহ করতে বাধা অথবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ইত্যাদি কারণ গুলাে থেকে সৃষ্ট মানসিক দুশ্চিন্তার (TENSION) কারণে কতিপয় অতীব বদমেজাজী ও আবেগী দূর্ভাগা ব্যক্তিরাই আত্মহত্যা করে থাকে। 


“সুনলাে নুকসান হি হােতাহে বিল আখের উনকো, 

নফস কি ওয়াস্তে গুসসা জু কিয়া করতে হে।”


 আত্মহত্যার পাঁচটি হৃদয়বিদারক ঘটনা 


কোন কোন ঘটনা তাে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করে এরকম আত্মহত্যার পাঁচটি সংবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি: (১) দৈনিক “জানবাজ” পত্রিকা, করাচি (৫ই আগস্ট ২০০৫ রােজ : বৃহস্পতিবার) মা ছেলেকে বর বানিয়ে বরযাত্রিদের বিদায় দিয়েছেন। বরযাত্রীরা তাকে সাথে নিতে শত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর ঘরের সকল তালা খুলে স্বর্ণ, রৌপ্য অপরের কাছে সৌপর্দ করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে এবং দু'দিন পর লাশ পাওয়া যায়। 

(২) দৈনিক “জুরাত” পত্রিকার (১০ই আগস্ট ২০০৪) সংবাদ। ছয় মাস আগে বিয়ে হয়। স্ত্রী অসন্তুষ্ট হয়ে বাপের বাড়ীতে চলে যায়। স্ত্রীর বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পেরে স্বামী নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করে। (৩) দৈনিক “ইনতিখাব” পত্রিকার (২৮শে আগস্ট ২০০৪)। সংবাদ, এক পিতা নিজের মেয়ে, দুই ছেলে এবং তাদের মাকে সহ হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে। দৈনিক "নওয়ায়ে ওয়াক্ত” করাচী (৫ই আগস্ট ২০০৪) এর দুটি সংবাদ: (৪) “ডিগরী” (সিন্ধ) এর মধ্যে অভিভাবক বিবাহ না করানাের কারণে যুবক ফাঁসীতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। (৫) পিতা নিজের ১৪ বছরের সন্তানকে থাপ্পড় মারার কারণে সন্তান অভিমান করে বাথরুম বন্ধ করে শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে। কয়েক মাস পূর্বে একই এলাকার অন্য একজন ছেলে উঁচু দালান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। 


সংবাদগুলােতে নাম প্রকাশ না করার হিকমত 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মুসলমানদের মৃত্যুর পর সুনামের সাথে স্বরণ করার বিধান হাদীসে পাকের মধ্যে বর্ণিত আছে। এ কারণে আমি সংবাদে (আত্মহত্যাকারীদের নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকি। কেননা পরিচিতির সাথে মুসলমানের আত্মহত্যার শরয়ী প্রয়ােজন ছাড়া আলােচনা করা তার দোষত্রুটি অন্বেষণের নামান্তর, যা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে। একজন অজ্ঞ ব্যক্তিও এটা অনুমান করতে পারে যে, নাম প্রকাশের সাথে আত্মহত্যার সংবাদ হাইলাইটস করে প্রচার করাটা তার দোষত্রুটি প্রকাশের সাথে সাথে তার পরিবারবর্গের দূর্নাম ও মনােকষ্টের কারণ হয়। আহ! আমাদের মুসলমান সাংবাদিক ভাইয়েরা এই বড় গুনাহের কাজ থেকে তাওবা করে আগামীতে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। কখনাে আপনার এলাকার অথবা বংশে ও যদি (আল্লাহর পানাহ) কেউ আত্মহত্যা করে বসে তাহলে শরয়ী অনুমতি ছাড়া কাউকে বলবেন না ।যদি কখনাে এই গুনাহ করে বসেন, তবে শরয়ীভাবে তাওবা করে নিন। হ্যাঁ! পরিচিতি বলা ছাড়া আত্মহত্যাকারীর এমনভাবে আলােচনা করা জায়েয, যাতে সম্বােধিত ব্যক্তি চিনতে না পারে। 


“মুজরিম হাে দিল ছে খওফে কিয়ামত নিকাল দো, 

পর্দা গুনাহগার কি আয়বাে পে ঢালদো।” 


প্রতি দু'মিনিটে আত্মহত্যার তিন ঘটনা 


গুনাহের ব্যাপকতা এবং পরকালের অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আফসােস, আমাদের প্রিয় দেশে আত্মহত্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। একটি দৈনিক পত্রিকার রিপাের্ট অনুযায়ী আগস্ট ২০০৪ সালে আত্মহত্যার ৬৮ ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে বাবুল মদীনা করাচি এক নম্বরে ছিল, আর মুলতান দুই নম্বরে এসেছে। ঐ পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যার একটি ঘটনা ঘটে থাকে। 


আত্মহত্যার দ্বারা কি মুক্তি লাভ করা যায়? 


আত্মহত্যাকারী হয়তাে এ ধারণা করে, আত্মহত্যার মাধ্যমে সে মুক্তি লাভ করবে। অথচ তার মুক্তি তাে দূরের কথা, তার প্রতি আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি এমন পর্যায়ে পৌঁছে, সে অত্যন্ত শােচনীয় ভাবে আযাবের ফাঁদে ফেসে যায়। আল্লাহর শপথ! আত্মহত্যার শাস্তি কখনাে সে সহ্য করতে পারবে না। 


আগুনের মধ্যে আযাব


হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে: যে ব্যক্তি যে বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে, তাকে জাহান্নামের আগুনে সে বস্তু দ্বারা আযাব দেওয়া হবে।” 

(সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ২৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৬৫২) 


সে হাতিয়ার দ্বারা আযাব


হযরত সায়্যিদুনা ছাবিত বিন দাহ্হাক رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি লােহার অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে উক্ত অস্ত্র দ্বারা আযাব দেওয়া হবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, হাদীস নং- ১৩৬৩) ।


গলায় ফাঁস লাগানাের শাস্তি 


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে নিজের গলায় ফাঁস লাগানাে থাকবে এবং যে নিজেকে নিজে বল্লম মেরে (আত্মহত্যা করেছে) জাহান্নামের আগুনে ও সে নিজেকে বল্লম মারতে থাকবে।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৪৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩৬৫) 


আঘাত ও বিষের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত; আল্লাহর প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে ও (উপর থেকে) পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে ও সর্বদা বিষপান করতে থাকবে। যে ব্যক্তি লৌহার হাতুড়ী দ্বারা আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে সে হাতুড়ী তার হাতে থাকবে আর তা দ্বারা নিজেকে আঘাত করতে থাকবে।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৭৭৮) 


আত্মহত্যাকে বৈধ মনে করা কুফরী 


উক্ত হাদীসে আত্মহত্যাকারীর ব্যাপারে ইরশাদ করা হয়েছে যে, সে (আত্মহত্যাকারী) সর্বদা শাস্তি পেতে থাকবে। এর ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক হযরত মুহিউদ্দীন ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ কিছু মত পেশ করেন: (১) যে ব্যক্তি আত্মহত্যাকে বৈধ মনে করেছে অথচ আত্মহত্যা হারাম হওয়া সম্পর্কিত জ্ঞান তার কাছে ছিল। তবে সে কাফির হয়ে যাবে এবং সর্বদা শাস্তি ভােগ করতে থাকবে। (নিয়ম হল: যে ব্যক্তি কোন হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম মানবে সে কাফির হয়ে যাবে। আর এটি ঐ অবস্থায় হবে, যদি তা স্বয়ং হারাম হয়। যদি সে হালাল বা হারাম হওয়ার বিষয়টি অকাট্য প্রমাণাদির আলােকে প্রমাণীত হয়।) (ফতােওয়ায়ে র্যবীয়া, ১৪তম খন্ড, ১৪৭ পৃষ্ঠা) 

যেমন: মদপান করা অকাট্য ভাবে হারাম। কোন ব্যক্তি অবগত আছে, মদ হারাম তারপর ও সেটিকে হালাল মনে করে পান করলে, তাহলে কাফের হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে (যেনা) ব্যভিচার অকাট্য ভাবে হারাম। তারপর ও যদি কেউ হালাল মনে করে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে কাফির হয়ে যাবে। 

(২) সর্বদা আযাবে থাকবে একথাটি অন্য একটি অর্থ হল: দীর্ঘদিন আযাবের শিকার হবে। (অতএব, যদি কোন মুসলমানের ব্যাপারে এটা বলা হয়, সে সর্বদা আযাবে থাকবে তাহলে এক্ষেত্রে এ অর্থ গ্রহণ করা হবে, দীর্ঘ দিন পর্যন্ত আযাব ভােগ করবে। 

যেমন- প্রবাদ বাক্য বলা হয়: একবার এ জিনিস ক্রয় করে নিন,তাহলে সর্বদা আরামে থাকবেন। সর্বদা আরামে থাকা সম্ভব নয়, তাই এখানে সর্বদা আরামে থাকবেন কথাটির মর্মার্থ হবে, দীর্ঘদিন আরামে থাকবেন। অনুরূপ দোয়া হিসেবে বলা হয়: خَلَّد اللّٰهُ مُلۡكَ السُّلۡطَانِ (অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা বাদশাহের রাজত্ব সর্বদা নিরাপদ রাখুন।) এখানেও মর্মার্থ হল দীর্ঘদিন নিরাপত্তা বিদ্যমান রাখুন। আমাদের এখানে বুযুর্গানে দ্বীনদের জন্য এ দোয়ার বাণী প্রচলিত আছে যে: ; আল্লাহ তাআলা আপনার ছায়া আমরা গুনাহগারদের উপর সর্বদা বহাল রাখুন। এখানে ও সর্বদা বলতে দীর্ঘদিন কে বুঝাবে। কিন্তু সাধারণ লােক “ , , ” এর শব্দাবলী বলে থাকে, কিন্তু এটি সর্বসাধারণের ভুল, , বলা সত্ত্বেও "" বলাটা বিশুদ্ধ নয়, এটি ভুল। (৩) তৃতীয় মত হল, আত্মহত্যার শাস্তি তাে এটাই, তবে আল্লাহ্ তাআলা মুমিনদের উপর দয়া করেছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন, যে ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করবে সে সর্বদা দোযখে থাকবেনা। (অর্থাৎ আল্লাহর পানাহ! যদি কোন গুনাহগার মুসলমান জাহান্নামেও যায় তাহলে কিছুদিন শাস্তি পাওয়ার পর অবশেষে জাহান্নাম থেকে বের করে চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করানাে হবে।)। 

(শরহে মুসলিম লিন নববী, ১ম খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা) 


এক সেকেন্ডের কোটিতম অংশের শাস্তি 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর পানাহ! কেউ যাতে এরূপ বলে না দেয়, চল! অসুবিধা নেই। পাপ যাই হােক করে ফেলি। কিছুদিনের আযাব সহ্য করব আর কি? এমন কথা বলা কুফরী। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রদত্ত আযাব এমন কঠোর ও ভয়ানক হবে, সে আযাব কিছু দিন তাে দূরের কথা, আল্লাহর শপথ! এক সেকেন্ডের কোটিতম অংশের আযাব তথা (সামান্যতম সময়ও) কেউ সহ্য করতে পারবে না। 


মুমিনের কারাগার 


নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ, আর এটির জন্য লােমহর্ষক আযাব রয়েছে। আল্লাহর পানাহ! কারাে মধ্যে যদি আত্মহত্যা করার প্ররােচনা চলে আসে তখন তার উচিত, বর্ণিত শাস্তি সমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং শয়তানের প্ররােচনাকে নিষ্ফল করে দেওয়া। যদি কোন ধরণের পেরেশানি বা দুশ্চিন্তা চলে আসে ধৈর্য ও সন্তুষ্টিমূলক আচরণের মাধ্যমে বীর পুরুষের মত পরিস্থিতির মােকাবিলা করুন এবং মনে রাখবেন! হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে । 

 اَلدُّنۡیَا سِجۡنُ الۡمُؤۡمِنِ وَجَنَّةُ الۡكَافِر 

 অর্থাৎ: দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফিরদের জন্য বেহেশত।)। 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আর একথা প্রকাশ্য সত্য যে,কারাগারে তাে কষ্ট হয়ে থাকে। দুশ্চিন্তাতাে সেখানে থাকবেই। 


হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: 


হাস্ত দুনিয়া জান্নাত আঁকুফফার রা, 

আহলে জুলমাে ফিসকে আঁআশরার রা। 

বাহরে মুমিন হাস্তে জিন্দাহ ঈঁ-মকাম, 

নাস্তে জিন্দাহ্ জায়ে আইশো ইহতিশাম। 


অর্থাৎ- কাফির, অত্যাচারী,পাপাচারী ও দুষ্টদের জন্য এ দুনিয়া হল বেহেশত এবং ঈমানদারদের জন্য এ দুনিয়া কারাগার স্বরূপ, আর কারাগার কখনও সুখ-শান্তির জায়গা হতে পারে না।) । 


আল্লাহ্ তাআলা পরীক্ষা নেন 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করে তাদের কৃত গুনাহগুলােকে ক্ষমা করে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি বিপদ, দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করে সফলতা অর্জন করে সে আল্লাহ তাআলার রহমতের ছায়ায় চলে আসে। যেমন- দ্বিতীয় পারার সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে: 

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ  

الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡهُمۡ مُّصِیۡبَةٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡهِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ

اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ رَحۡمَةٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ 

এবং অবশ্যই আমি তােমাদেরকে পরীক্ষা করবাে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ঘাটতি দ্বারা। এবং সুসংবাদ শুনান ঐসব সবরকারীদেরকে। যারা হচ্ছে (এমনসব লােক যে,) যখন তাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন বলে, আমরাতাে আল্লাহরই মালিকানাধীন এবং আমাদেরকে , তাঁরই প্রতি ফিরে যেতে হবে। এসব লােক হচ্ছে তারাই, যাদের উপর তাদের প্রতিপালকের দরূদসমূহ এবং রহমত বর্ষিত হয়। আর এসব লােকই সঠিক পথের। উপর প্রতিষ্ঠিত। 


দুর দুনিয়া কে হাে জায়ে রনজ ওয়া আলম, মুজকো মিল জায়ে মীঠে মদীনে কা গ্বম। 

হাে করম হাে করম ইয়া খােদা হাে করম, 

ওয়াসেতা উছ কা জু শাহে আবরার হে।



অধৈর্য হওয়ার দ্বারা বিপদ দূরিভূত হয়না 


আপনি লক্ষ্য করেছেন, আল্লাহ তাআলা বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন, অতএব যে তাতে অধৈর্য ভাব প্রকাশ করে, আত্ম চিৎকার শুরু করে, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশক শব্দাবলী মুখে বলে বা 

অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর পানাহ! আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিল সে এই পরীক্ষায় খুব মন্দভাবে অকৃতকার্য হয়ে আগে থেকে কোটি কোটি গুণ বেশি মুসিবতের শিকার হয়ে গেল। অধৈর্য হওয়ার দ্বারা বিপদ তাে বিদূরিত হয় না বরং উল্টো ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত মহান সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। যা স্বয়ং আরেকটি বড় আপদ।


 

বিপদ থেকে বড় বিপদ


হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন মােবারক رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: মুসিবত (প্রথমত) একটি থাকে কিন্তু যখন বিপদগ্রস্থ লােক (অধৈর্য প্রকাশ ও আত্মচিৎকার) করে তখন মুসিবত একটির জায়গায় দুটি হয়ে যায়। (১) একটি তাে ঐ মুসিবত, যা বাকী থাকে আর অপরটি (২) মুসিবতের (ধৈর্য ধারণ করার কারণে অর্জিত) প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়া আর এই (প্রতিদান নষ্ট হয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় মুসিবত প্রথম মুসিবত থেকে বড় মুসিবত)। (তানবিহুল গাফেলীন, ১৪৩ পৃষ্ঠা) 

অর্থাৎ প্রথমত প্রথম মুসিবতের ক্ষতি শুধু দুনিয়াবীই ছিল কিন্তু ধৈর্য ধারণ করা অবস্থায় অর্জিত মহান প্রতিদান অধৈর্য প্রকাশের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া ঐ মুসিবত থেকে বড় মুসিবত, তাতে আখিরাতের অনেক বড় ক্ষতি রয়েছে। 


রােনা মুসিবত কা তু মত রু, আলে নবী কে দিওয়ানে

 কারবও বালা ওয়ালে শাহ্জাদো, পর ভি তুনে ধেয়ান কিয়া? 


তিনশত মর্যাদা বৃদ্ধি


হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: “যে ব্যক্তি বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করল, এমনকি ঐ মুসিবতকে উত্তম ধৈর্য দ্বারা মােকাবিলা করল, আল্লাহ তাআলা তার জন্য তিনশত মর্যাদা লিপিবদ্ধ করবেন। প্রত্যেক মর্যাদার মাঝখানের দূরত্ব আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান হবে।” (আল জামেউস সগীর লিস সুয়ূতী, ৩১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস-৫১৩৭, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া) ।



আঘাত প্রাপ্ত হওয়াতেই হাসতে লাগলেন 


আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ رَحِمَهُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی তাে মুসিবতের কারণে অর্জিত সাওয়াবের কল্পনায় এমন বিভাের থাকতেন যে, তাদের বিপদের কোন পারােয়ায় থাকত না। যেমন- কথিত আছে, হযরত সায়্যিদুনা ফাতাহ মাওছেলী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর স্ত্রী সাহেবা رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَیۡهَا একবার জোরে (উপর থেকে) নিচে পড়ে যান, যার ফলে তাঁর নখ মােবারক ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ব্যথার কারণে আত্মচিকার এবং ‘হায়’ “উফ’ ইত্যাদি করার পরিবর্তে তিনি হাসতে লাগলেন! কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করল; আপনার কি ব্যথা অনুভব হচ্ছে না? তিনি বললেন:ধৈর্যের বিনিময়ে অর্জিত সাওয়াবের খুশিতে আমার আঘাতের (ব্যথার) খেয়ালই আসতে পারেনি। (কীমিয়ায়ে সাআদাত, ২য় খন্ড, ৭৮২ পৃষ্ঠা) 


হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: যদি তুমি বাস্তবে আল্লাহ্ তাআলাকে মহা মর্যাদাবান মনে কর, তবে এটির পরিচয় হল, অসুস্থ অবস্থায় অভিযােগের শব্দ মুখে না বলা এবং মুসিবত এসে পড়লে তা অপরের নিকট প্রকাশ হতে না দেয়া। 


(কেননা অনর্থক এটি প্রকাশ করা অধৈর্যের আলামত যেমন আজকাল সামান্য সর্দি বা কাশি বা মাথা ব্যথা হলে তবে লােকেরা শুধুশুধু সবাইকে বলে বেড়ায়)। (প্রাগুক্ত)। 


ছর পর টুটে গে কুহে বলা সবর কর, 

আয় মুসলমাঁ না তু দগমদা ছবর কর

 লবপে হরফে শিকায়াত না লা সবর কর, 

কেহ্ এহি সুন্নাতে শাহে আবরার হে।


বিপদের কথা গােপন রাখার মধ্যে অনেক ফযীলত রয়েছে। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: রাসুলে আকরাম, নূরে মুজাসসম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যার জান অথবা সম্পদে বিপদ চলে আসে, অতঃপর সে তা গােপন রাখল এবং লােকদের সামনে প্রকাশ করলনা তবে আল্লাহ তাআলার উপর (বদান্যতার) দায়িত্ব (হক) হচ্ছে তাকে ক্ষমা করে দেয়া।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০ম খন্ড, ৪৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৮৭২)। 


ছুপ কর ছী তা মুতী মিল সন, সবর করে তা হিরে, পাগলাঁ ওয়ানগু রুলা পাভে না মুতি না হিরে। 


হায়! আমি বিপদগ্রস্থ হতাম


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের উচিত, যতই বিপদ আসুক না কেন! এটির কষ্ট ও বড় হওয়ার প্রতি দৃষ্টি দেয়ার পরিবর্তে তা থেকে প্রাপ্ত আখিরাতের সাওয়াবের প্রতি মনােনিবেশ করা। اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ এভাবে ধৈর্যধারণ করাটা খুবই সহজ হবে। যদি আমরা ধৈর্যধারণ করাতে সফল হতে পারি তবে কিয়ামতের দিন আমরা তার মহান সাওয়াবের হকদার হতে পারব, যা দেখে অন্যান্যরাও ঈর্ষা করবে। 


যেমন- আল্লাহর প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যখন কিয়ামতের ময়দানে (দুনিয়ার) বিপদগ্রস্থ ও রােগাক্রান্ত লােকদের সাওয়াব দান করা হবে, তখন (বিপদের সম্মুখীন না হওয়া ও সুস্থ) সবল মানুষেরা আকাংখা করবে, হায়! আমাদের চামড়াও যদি কাঁচি দ্বারা কাটা হত! (অর্থাৎ আমরাও যদি বিপদগ্রস্থ হয়ে ধৈর্যধারণ করতাম।)”। 

(সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪১০, দারুল ফিকির, বৈরুত) । 


প্রখ্যাত মুফাসসীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ উক্ত হাদীসের শব্দ “হায়! যদি দুনিয়ায় আমাদের চামড়াও কাঁচি দ্বারা কাটা হত!”এর প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ আকাংখা করবে, দুনিয়ায় যদি আমরাও এমন রােগের শিকার হতাম।

যাতে অপারেশনের মাধ্যমে চামড়া কাটা হত, তাহলে আমরাও আজ ঐ সাওয়াব অর্জন করতে পারতাম, যে সাওয়াব আজ বিপদগ্রস্থ ও রােগাক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাগ্যে জুটেছে। (মিরকাত, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা) 


মাল ও দৌলত কি মুঝকো কছরত না দে, 

তাজো তখতে শাহী আওর হুকুমত না দে 

মুজকো দুনিয়া মে বেশক তু শুহরত না দে 

তুজ ছে আত্তার তেরা তলবগার হে। 


আলোকিত কবর সমূহ


বর্ণিত আছে; কোন বুজুর্গ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ হযরত সায়্যিদুনা হাসান ইবনে যাকওয়ান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ কে তার ওফাতের এক বছর পর স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: কোন কবরগুলাে অধিক আলােকিত? : বললেন: দুনিয়ায় যারা বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, তাদের কবর সমূহ।” (তাম্বীহুল মুগরীন, ১৬৬ পৃষ্ঠা, দারুল মারেফাত, বৈরুত) 

 

কিয়া করাে লে কি খুশীয়ু কি সামান কো 

বছু তেরে গম মে রুতা, রহাে জার জার। 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! ঘাের অন্ধকার ঐ কবর, যা দুনিয়ার কোন বৈদ্যুতিক বাল্ব আলােকিত করতে পারেনা, اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর নূরের ওসীলায় দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থদের কবর সমূহ নূরে আলােকিত হয়ে যাবে। 


খাওয়াব মে ভী এইছা আন্দেরা কভী দেখা না তাহ!

জেসা আন্দেরা হামারি কবর মে ছরকার হে। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আ’কর কবর রওশন কিজিয়ে, 

যাত বে শক আপকি তু মাম্বায়ে আনওয়ার হে। 


জান্নাত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আবৃত (লুকায়িত) 


اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ

 বিপদগ্রস্থদের কবর আলােকিত হবে এবং তাদের জন্য জান্নাতে আবাস ঘরও বরাদ্দ থাকবে। জান্নাতের প্রত্যশীগণ! ঐ হাদীসে পাকটিকে বুকে ভাল করে ধারণ করে নিন, যে হাদীসে তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “জাহান্নাম কুপ্রবৃত্তির মধ্যে আবৃত (লুকায়িত) এবং জান্নাত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আবৃত।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ২৪৮৭ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, বৈরুত) । 


প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ। ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ আলােচ্য পবিত্র হাদীসের শব্দাবলী “জাহান্নাম কু-প্রবত্তির মধ্যে আবৃত” প্রসঙ্গে বলেন: দোযখ স্বয়ং খুবই ভয়ানক । কিন্তু তার রাস্তায় অনেক নকল ফুল ও বাগান সজ্জিত আছে। দুনিয়াবী গুনাহ, কুকর্ম, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে খুবই চাকচিক্যময় দেখায়। আর এটাই জাহান্নামের রাস্তা। আর “জান্নাত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আবৃত”! 

প্রসঙ্গে বলেন: জান্নাত হচ্ছে একটি অত্যন্ত সুপ্রশস্ত বাগান, কিন্তু তার রাস্তাটি কাটাযুক্ত। যা অতিক্রম করা নফসের জন্য খুবই কষ্টকর। নামায,রােযা, হজ্ব, যাকাত, জিহাদ, শাহাদাত জান্নাতেরই রাস্তা। ইবাদতে একাগ্রতা, কামভাব বর্জন বাস্তবেই (নফসের জন্য) কষ্টকর বিষয়। 

স্মরণ রাখুন! এখানে কামভাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল হারাম কার্যাদি, যেমন- মদ্যপান, ব্যভিচার, ধোঁকাবাজি, গান-বাজনা উদ্দেশ্য। তাতে বৈধ কামভাব অন্তর্ভূক্ত নয়। কষ্ট দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবাদত সম্পাদনের কষ্ট সমূহ। সুতরাং তাতে আত্মহত্যা ও সম্পদ নষ্ট করা অন্তর্ভুক্ত নয়। (মিরাতুল মানাজীহ, ৭ম খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, যিয়াউল কুরআন)। 



গুনাহের কারণে ও বিপদ আসে 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বিপদের সম্মুখীন হলে অন্তরকে আল্লাহ তাআলার ভয় প্রদর্শন করা, ধৈর্যের উপর অটল থাকা এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে নিজেকে বাঁচানাের জন্য তাওবা ও ইস্তিগফার করতে গিয়ে এ মানসিকতা সৃষ্টি করুন যে, আমাদের উপর যে সকল বিপদ আসে তা আমাদের কৃতকর্মেরই ফল। যেমন- কুরআনুল করীমের ২৫ পারার সূরায়ে শুরার ৩০ নং আয়াতে করীমায় ইরশাদ হচ্ছে: 

وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ ﴿ؕ۳۰﴾ 


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তােমাদেরকে যে মুসীবত স্পর্শ করেছে তা তারই কারণে, যা তােমাদের হাতগুলাে উপার্জন করেছে এবং বাহু কিছুতাে তিনি ক্ষমা করে দেন। 


দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হওয়াটাও গুনাহের কাফফারা 


উপরােক্ত আয়াতে করীমা প্রসঙ্গে সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ নঈমউদ্দীন মুরাদাবাদী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ খাযায়েনুল ইরফানে বলেন: এ আয়াত দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞান সম্পন্ন ঐ মুসলমানদেরকে সম্বােধন করা হয়েছে, যাদের থেকে গুনাহ সংঘটিত হয়। মর্মার্থ হল; দুনিয়ায় যত দুঃখ-কষ্ট মুমিনদেরকে স্পর্শ করে অধিকাংশেই তার কারণ তাদের গুনাহই হয়ে থাকে। তাদের কাছে পতিত দুঃখ-কষ্টকে আল্লাহ্ তাআলা তাদের গুনাহের কাফফারা হিসেবে পরিগণিত করে দেন। আবার কখনাে কখনাে মু'মিনদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্যও বিপদের সম্মুখীন করা হয়। 


বর কর জিসম জু বীমার হে তাশওয়ীশ না কর, ইয়ে মরজ তেরে গুনাহোঁ কো মিঠা জাতা হে। 


আমি তাে কারাে কোন ক্ষতি করিনি


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখনই বিপদ আসে তখন আমাদেরকে ভীত হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে মনােযােগী হয়ে তাওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত। আল্লাহর পানাহ! শুধুমাত্র মুখ তাে দূরের কথা কখনাে যেন অন্তরেও এমন ধারণা না আসে, আমি তাে কারাে কোনাে ক্ষতি করিনি, আমিতাে সকলের সাথে ভাল আচরণ করি, তার পরও কোন ভূল আমার দ্বারা হয়েছে, আমাকে যেটার শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।” এমন মূর্খতা সূলভ ধারণা বাদ দিয়ে নম্রতাপূর্ণ মাদানী মানসিকতা তৈরী করুন। নিজেকে আপাদমস্তক গুনাহে ভরপুর মনে করে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শােকরিয়া আদায় করুন যে, আমিতাে একজন বড় গুনাহগার হওয়ার কারণে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত। 

আমার উপর আগত বিপদ যদি আমার গুনাহের শাস্তি স্বরূপ হয়, তাহলে তাে তা (সে বিপদ) খুবই হালকা ভাবে মুক্তি পাচ্ছি। নতুবা দুনিয়ার এ শাস্তির (বিপদের) পরিবর্তে যদি আখিরাতের জাহান্নামের শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। 


মেরে আমাল কা বদলা তাে জাহান্নাম হি তাহ্ ম্যা তাে জাতা মুজে ছরকার নে জানে না দিয়া। 

(সামানে বখশিশ)। 


আগুনের পরিবর্তে মাটি


একদা এক বুযুর্গ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর মাথার উপর কোন এক ব্যক্তি পাত্র ভর্তি মাটি ঢেলে দেয়। তিনি رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ নিজের কাপড় পরিস্কার করলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার শােকরিয়া আদায় করলেন। লােকেরা জিজ্ঞাসা করল: আপনি কোন বিষয়ের শােকরীয়া আদায় করেছেন? বললেন: যে ব্যক্তি আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার উপযুক্ত (অর্থাৎ যার মাথার উপর আগুন ঢালা উচিত) যদি তার মাথার উপর শুধু মাটি ঢেলে দেওয়া হয়। তাহলে কি তা শােকরীয়া আদায় করার ক্ষেত্র নয়?(কীমিয়ায়ে সাআদাত, ২য় খন্ড, ৮০৫ পৃষ্ঠা)


যব ভী মুছীবত আয়ে নযর আখেরাত পে হাে, ছরকার! মাদানী যেহেন দো মাদানী খেয়াল দো। 


ধৈর্য ধারণ করার পদ্ধতি


ধৈর্য ধারণ করার সুন্দর একটি পদ্ধতি হল, বিপদের সময় আম্বীয়ায়ে কেরামদের عَلَیۡهِمُ السَّلَام বিশেষ করে আমাদের প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর উপর সংঘটিত বিপদ গুলােকে স্মরণ করা। 

যেমন- তায়েফের ময়দানে আঘাত প্রাপ্ত হওয়া মজলুম নিস্পাপ আক্বা, প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কোন বিপদের সম্মুখীন হয়, তার উচিত নিজের বিপদ মােকাবিলায় আমার বিপদের কথা স্মরণ করা। নিঃসন্দেহে আমার উপর সংঘটিত বিপদই হল সবচেয়ে বড় বিপদ। 

(আল-জামেউল কবীর লিস সুয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২১৩৪৬, দারুল ফিকির, বৈরুত) 


দুখ দরদ কি মারুকো গ্বম ইয়াদ নেহি রেহতে, যব সামনে আকোঁ কি ছরকার নযর আয়ে। 


কষ্ট বেশি হলে সাওয়াবও বেশি 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বিপদ যতই ক্ষুদ্র হােকনা কেন কিন্তু তা অনেক বড় ভাবে অনুভব হয়। যেমন- সর্দি খুবই সামান্য এক রােগ কিন্তু যার এ রােগ হয়, সে মনে করে বিপদের একটি পাহাড় তার উপর চলে এসেছে। আর যার ক্যান্সার রােগ হয় সে বেচারা তাে একেবারেই হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ সকলেরই সাহস রাখা উচিত। সর্দির রােগী হােক আর ক্যান্সার রােগী সবাইকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। অন্ধকার কবরে নামতে হবে ও কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতির মােকাবিলা করতে হবে। দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট যত বেশি হবে সাওয়াবও তত বেশি হবে। আল্লাহর প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেনঃ “অধিক সাওয়াব বড় বড় বিপদ সমূহের মধ্যে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ তাআলা যখন কোন গােত্রকে ভালবাসেন তখন তাদের পরীক্ষায় নিপতিত করেন অতঃপর যে পরীক্ষায় (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি এবং যে (বিপদে) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তার জন্য আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি রয়েছে।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৩৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৩১, দারুল মারেফাত, বৈরুত)

 

বেহরে মুরশিদ গমে উলফত কা খযীনা দে দো, 

ছাক দিল ছাক জিগর ছুজিশে সিনা দে দো।


নিজের চেয়েও বড় বিপদের সম্মুখিন ব্যক্তির দিকে দেখুন 


ধৈর্যের মন-মানসিকতা তৈরীর অন্যতম একটি পদ্ধতী হল, নিজের চেয়ে ও বেশি বিপদের সম্মুখীন ব্যক্তি সম্পর্কে চিন্তা করুন। তা দ্বারা নিজের বিপদ অনেকাংশে হালকা অনুভব হবে এবং ধৈর্য ধারণ করা সহজ হয়ে যাবে। হযরত সায়্যিদুনা শা’বী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলতেন: যদি নিজের উপর আগত বিপদকে মানুষ তার থেকে বড় বিপদের সাথে পারস্পরিক তুলনা করত, তবে অবশ্যই অনেক সহজ ও নিরাপদ মনে করত। (তাম্বীহুল মুগতাররীন, ১৭৭ পৃষ্ঠা, দারুল মারেফা, বৈরুত) 


ভালকাজের প্রতিযােগিতা করুন


ইমামুছ ছাবেরীন, রাহমাতুল্লীল আলামীন, রাসুলে আমীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “দুইটি অভ্যাস এমন রয়েছে, যে ব্যক্তির মধ্যে এ দুটো (অভ্যাস)থাকবে সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নিকট কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল হিসেবে পরিগণিত হবে। তন্মধ্যে একটি হল: দ্বীনের ব্যাপারে (অর্থাৎ ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে) নিজের চেয়ে উত্তম (বেশি নেক্কার) ব্যক্তিকে দেখবে অতঃপর তার অনুসরণ করবে।আর অপরটি হল দুনিয়াবী ব্যাপারে নিজের চেয়ে নিম্নস্তরের ব্যক্তিকে দেখবে অতঃপর আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করবে, তবেই আল্লাহ্ তাআলা তাকে কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল হিসেবে লিপিবদ্ধ করবেন। আর যে (ব্যক্তি) দ্বীনের ব্যাপারে নিজের চেয়ে নিম্নস্তরের ব্যক্তির দিকে দেখবে এবং দুনিয়াবী ব্যাপারে নিজের চেয়ে উচ্চস্তরের দিকে দেখবে, তবে সে সর্বদা না পাওয়ার শােকে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকবে,আল্লাহ্ তাআলা তাকে কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দা হিসেবে লিপিবদ্ধ করবেন না।” (সুনানে তিরমিজী, ৪র্থ খন্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫২০, দারুল ফিকর, বৈরুত) 

প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ “মিরাতুল মানাজীহ” ৭ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় বলেন: “যে (ব্যক্তি) দ্বীনের ব্যাপারে নিজের চেয়ে উচ্চ স্তরের ব্যক্তির দিকে দেখবে এবং তার অনুসরণ করবে” প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ যদি তুমি সৎকাজ কর তাহলে তাতে গর্ব করােনা বরং ঐ সম্মাণিত ব্যক্তিদেরকে দেখো যারা তােমার চেয়ে বেশি সৎকাজ করে, হােক সে জীবিত বা মৃত। অতএব, সকল মুসলমানেরা হযরত সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইতদের عَلَيۡهِمُ الرِّضۡوَان আমলের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করুন। তারা কতইনা নেককাজ সম্পাদন করেছেন যেন তাতে কোনাে গর্ব, অহংকার সৃষ্টি না হয়, আর অধিক সাওয়াবের কাজ করার চেষ্টা করে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করবেন এবং যখন এ সকল ব্যক্তিরা এ সকল বুজুর্গদের সমপরিমাণ আমল করতে সামর্থ্য হবে না তখন আফসােস করবে। এ আফসােসই তাদের জন্য ধৈর্য হিসেবে পরিগণিত হবে। আমরা সাহাবায়ে কেরামদের عَلَيۡهِمُ الرِّضۡوَان দেখে এ বলে আফসােস করবাে, সে যুগে আমরা ছিলাম না, যদি থাকতাম তাহলে প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী, হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর নূরানী চেহারার সৌন্দর্য দেখে চক্ষুকে শীতল করতাম, তাঁর নূরানী কদম মােবারকে প্রাণ উৎসর্গ করতাম। এটাও ধৈর্য। 


যু হামভী ওয়াঁ হুতে খাকে গুলশান লেপট কি কদমাে কি লেতে ওতরন, 

মগর করে কিয়া নছীব মে তাে ইয়ে না মুরাদী কে দিন লিখে থে। 


প্রখ্যাত মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ। | ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ “মিরাতুল মানাজিহ” ৭ম খন্ডের ৭৬-৭৭ পৃষ্ঠায় “এবং দুনিয়ার নিজের চেয়ে নিম্নোস্তরের ব্যক্তির দিকে দেখবে ; 

এবং আল্লাহ তাআলার শােকর আদায় করবে এ বলে যে, আল্লাহ্ তাআলা আমাকে অমুক ব্যক্তির চেয়ে সম্মানিত করেছেন।” প্রসঙ্গে বলেন: এ বিষয়ে খুব ভালভাবে অনুধাবনের দ্বারা তার উপর অনেক বড় বিপদাপদ খুবই সহজ হয়ে যাবে এবং সে আল্লাহ্ তাআলার শােকরিয়া আদায় করবে, আমার থেকে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। কারাে যুবক সন্তান মৃত্যুবরণ করার দরুণ তার যদি ধৈর্য না আসে তাহলে সে ; হযরত আলী আকবর رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর শাহাদাতের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করবে। اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ তাৎক্ষণিক ভাবে ধৈর্য নসীব হবে। বরং নিজের শান্তির উপর শােকরিয়া আদায় করবে। মুফতি সাহেব পবিত্র হাদীসের বাকী অংশের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন: বরং এমন লােকদের জীবন হিংসা, বিদ্বেষ, অধৈর্য ও অন্তরের বিষন্নতায় অতিবাহিত হবে। ধনীদের দেখে জ্বলে পুড়ে বলবে : হায়! আমার কাছে তাে সম্পদ খুবই কম। এবং নিজের ইবাদতের উপর গর্ব করবে, অমুখ ব্যক্তি বেনামাযী কিন্তু আমি নামাযী। আমি তার চেয়ে উত্তম। এটাই হল তার অহংকার। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: لِّکَیۡلَا تَاۡسَوۡا عَلٰی مَا فَاتَکُمۡ وَ لَا تَفۡرَحُوۡا بِمَاۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ

 (পারা- ২৭, সূরা আল হাদীদ, আয়াত- ২৩) কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এ জন্য যে, দুঃখ না করাে সেটার উপর, যা হাতছাড়া হয় এবং খুশী না হও সেটার উপর, যা তােমাদেরকে প্রদান করেছেন। প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বল্পতার উপর ব্যথিত হবে, সে জাহান্নাম থেকে এক হাজার বছরের রাস্তার নিকটবর্তী হয়ে যাবে। 

আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় অপূর্ণতার উপর আফসােস করবে সে জান্নাত থেকে এক হাজার বছরের রাস্তার নিকটবর্তী হয়ে যাবে। (আল-জামেউস সগীর লিসসুয়ুতী, ৫১৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৪৩২) 

একথা জেনে রাখা উচিত, দুনিয়াতে উন্নতি সাধনের চেষ্টা নিষিদ্ধ নয় বরং ধনীদের সম্পদের উপর ঈর্ষা করা নিষেধ। 


কে কার দিকে দেখবে?


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে সৎকাজ সম্পাদনে দূর্বল সে সৎকাজ সম্পাদনে অগ্রগামী ব্যক্তিদের প্রতি ঈর্ষান্বীত হয়ে তাদের ন্যায় সৎকাজ সম্পাদনে আগ্রহী হবে। রােগাক্রান্ত ব্যক্তি তার চেয়ে ও মারাত্মক রােগে আক্রান্ত ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে এই বলে শােকরীয়া আদায় করবে, অমুক ব্যক্তির চেয়ে তুলনা মূলক আমার কষ্ট কম। যেমন- হাড়েঁর ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তি পেটের ব্যথায় কাতর ব্যক্তির দিকে তাকাবে এবং বলবে সে আমার চেয়েও বেশি কষ্টে জর্জরীত। T.B. রােগে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্যান্সার রােগীর দিকে তাকাবে, সে বেচারা আমার চেয়ে ও অধিক কষ্টে রয়েছে। যার এক হাত কেটে গেছে, সে ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাবে যার দুটি হাতই কাটা। যার এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে সে একেবারে অন্ধ ব্যক্তির দিকে তাকাবে। কম বেতন সম্পন্ন লােক বেকার লােকের দিকে, ফ্ল্যাটে বসবাস কারী ব্যক্তি বাংলােতে বসবাস কারীদের দিকে তাকানাের পরিবর্তে কুড়েঁ ঘর এমনকি ফুটফাটে রাত্রি যাপন কারীদের দিকে তাকাবে। হয়তাে কেউ কেউ চিন্তা করছেন, অন্ধ ও ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন দিকে দেখবে? তারা ও তাদের চেয়ে আরাে মারাত্মক কষ্টে জর্জরিত ব্যক্তিদের দিকে তাকাবে। যেমন- অন্ধ ব্যক্তি এটা চিন্তা করবে, যে অন্ধ হওয়ার সাথে লেংড়া হওয়ার দরুণ হাঁটা চলাতে ও অক্ষম তার কষ্ট তাে আমার চেয়ে বেশি। 

ক্যান্সার রােগী চিন্তা করবে, অমুক ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তাে প্যারালাইস রােগে ও আক্রান্ত। মােটকথা! দুনিয়ার মধ্যে প্রত্যেক বিপদের চেয়েও বড় বিপদ আছে। একজন মুসলমানের জন্য সব চেয়ে বড় বিপদ হল গুনাহে লিপ্ত হওয়া। আল্লাহর শপথ! এর চেয়ে ও অনেক বড় ভয়ানক বিপদ হল কুফরী। প্রত্যেক মুসলমান সে যত বড় রােগে আক্রান্ত হােক না কেন যত বিপদগ্রস্থ হােক না কেন, তার উচিত সর্বাবস্থায় শােকরীয়া আদায় করা এ জন্য যে,আল্লাহ তাআলা তাকে ঈমান নামক মহা নিয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন এবং কুফরীর মত মহা বিপদ থেকে নিরাপদ রেখেছেন। 


আছল বরবাদ কুন আমরায গুনাহুঁ কে হে 

কিয়ুঁ তাে ইয়ে বাত ফরামুশ কিয়া জাতাহে। 


ধৈর্যকে সহজ করার উপায়


বিপদে ধৈর্যকে আয়ত্বে আনার সহজ উপায় হল, এরূপ মানসিকতা তৈরি করুন, এই বিপদ যা এসেছে তা খুব অল্প সময়ে হালকা ভাবে নিঃশেষ হয়ে যাবে। ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত সাওয়াব কখনাে নিঃশেষ হবে না। অতএব, ধৈর্যের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।


এক বুজুর্গ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: যখন প্রথমে বিপদ আসে, তখন তা বড় দেখায় তবে তা ধীরে ধীরে ছােট হয়ে যায়, তার অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। যেমন- যখন কোন টেনশন আসে, তখন মানুষ পানাহার ছেড়ে দেয়, চোখের ঘুম চলে যায়। অতঃপর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এটাকে এই উদাহরণ দ্বারা বুঝার চেষ্টা করুন! যেমন- কোন ব্যক্তি T.V. তে বেহুদা সিনেমা দেখছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ তার দু'টো চোখের জ্যোতি চলে গেলে, নিঃসন্দেহে সে করুণ ভাবে আহাজারী করবে। অথচ যে শুরু থেকে অন্ধ (জন্মান্ধ), সে হাঁসি তামাশা সব করছে কেন? এ জন্যে যে, সে অন্ধ হওয়াটা হলাে পূরানাে বিষয়। তার চেয়ে 

আরাে স্পষ্ট উদাহরণ হল: যেটা সবার সাথে সম্পর্কীত, ঘরে কারাে মৃত্যু হলে তখন কান্না-আহাজারীর শুরু হয়ে যায়। অতঃপর ধীরে ধীরে সকল কান্না-আহাজারী ব্যথা-বেদনা ভূলে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে এমনকি বিয়ের ধারাবাহিকতাও শুরু হয়ে যায়। 


ওমর ভর কোন কিছে ইয়াদ করতা হে, 

ওয়াক্ত কে সাত খিয়ালাত বদল জাতে হে।


যদি এরূপ করতাম তাহলে এরূপ হত! 


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “শক্তিশালী মু'মিন দূর্বল মু'মিন থেকে উত্তম এবং আল্লাহ তাআলার অধিক প্রিয়। উভয়ের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। যে কাজ তােমাকে উপকার দেয় তার আকাংখা কর, আল্লাহ্ তাআলার কাছে সাহায্য চাও। ক্লান্ত হয়ে বসিওনা এবং যদি তুমি কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হও এরূপ বলাে না

যে, “যদি আমি এরূপ করতাম তাহলে এরূপ হতাে।” বরং এটা : বল: قَدَّرَا للّٰهُ وَمَا شَاءَ فَعَلَ অর্থাৎ- “আল্লাহ্ তাআলা এটাই ভাগ্যে লিখেছেন। তিনি যা ইচ্ছা করেছেন তাই করেছেন। কেননা “যদি” শব্দটা দিয়ে শয়তানের কাজ শুরু করে। (সহীহ মুসলিম, ১৪৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৬৬৪, দার ইবনে হাযম, বৈরুত) 


প্রখ্যাত মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ উপরােক্ত হাদীসের শব্দাবলী “তুমি যদি কোন ক্ষতির সম্মুখীন হও, তখন এটা বলাে না, এরূপ করতাম তাে এরূপ হতাে” প্রসঙ্গে বলেন: কেননা এরূপ বলার দ্বারা অন্তর অনেক পেরাশান হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাআলা ও অসন্তুষ্টি হন। যদি (উদাহরণ স্বরূপ) আমি আমার পণ্য অমুক সময় বিক্রি করতাম, তবে বেশি ভাল হত, কিন্তু আমি ভূল করেছি, এখন বিক্রি করে দিয়েছি। হায়! আমি বড় ভুল করেছি। তবে দ্বীনি ব্যাপারে এরূপ কথাবার্তা উত্তম। এখানে দুনিয়াবী ক্ষতি উদ্দেশ্য এবং “যদি শব্দের দ্বারা শয়তানের কাজ শুরু হয়” প্রসঙ্গে বলেন: এরূপ “যদি হয়তাে” শব্দ বলার দ্বারা মানুষের ভরসা আল্লাহ্ তাআলার উপর থাকে না। নিজের উপর বা বিভিন্ন মাধ্যমের উপর ভরসা হয়ে যায়। মনে রাখবেন! এটা পার্থিব (দুনিয়াবী) ব্যাপারে। দ্বীনি বা ধর্মীয় ব্যাপারে “হয়তাে যদি” ইত্যাদি বলে আফসােস করা উত্তম বিষয়। যদি এতটুকু জীবন আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে কাটাতে পারতাম, তাহলে মুত্তাকী হতে পারতাম। কিন্তু আমি গুনাহতে অতিবাহিত করেছি। হায়! আফসােস! এটা (অর্থাৎ এরূপ, এভাবে) যদি শব্দের উচ্চারণ ইবাদত ও বটে। (স্বয়ং বলা) যদি প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর পবিত্র যুগে থাকতাম। তাহলে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم পবিত্র নূরানী কদমে প্রাণ উৎসর্গ করতাম। কিন্তু আমি এতদিন পর জন্ম গ্রহণ করলাম। হায়! আফসােস! এটা (মুহাব্বতপূর্ণ কথা) ইবাদত। 

আ’লা হযরত رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: 

জু হামভি ওয়াঁ হুতে খাকে গুলশান লিপট কে কদমুছে লেতে উতরন, মগর করে কিয়া নছীব মে তাে ইয়ে নামুরাদী কে দিন লেখখি তী।(মিরাত, ৭ম খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা)


এরূপ কেন হল?


হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: দুনিয়াবী কোন জিনিসের ব্যাপারে আমার এটা বলা “কেন এমন হল?” এর চেয়ে আমি আমার মুখের উপর একটি আগুনের 

টুকরা রাখাকে উত্তম মনে করি। 


আয় মুকাদ্দর কি রুটি হায়াও সুনাে! 

হালে দিল পর না ইয়ু মুসকারাও সুনাে, আন্দেয়ােগরদিশাে তুম ভীহ্ আও সুনাে! মুস্তফা মেরে হামি ও গমখার হে 


খুবই নাজুক ব্যাপার


অভাব, রােগ, বিষন্নতা ও প্রিয়জনের মৃত্যু বরণের ফলে দুঃখ ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কিছু লােকেরা (আল্লাহর পানাহ) কুফরী বাক্য ও বলে ফেলে। মনে রাখবেন! আল্লাহ তাআলার উপর কোন আপত্তি উত্থাপন করা, তাঁকে জালিম, অভাবী, মুখাপেক্ষী বা অক্ষম মনে করা বা বলা, এ সবই কুফরী। আর এটাও মনে রাখবেন! শরয়ী কোন অপারগতা ছাড়া পূর্ণ সুস্থ বিবেক সম্পন্ন অবস্থায় সু-স্পষ্ট কুফরী বাক্য উচ্চারণকারী, সমর্থনকারী, সহযােগীতাকারীও কাফের হিসাবে গণ্য হয়ে যায়। বিবাহিত হলে তার বিবাহ ভেঙ্গে যাবে। কারাে মুরীদ হলে বাইয়াত বিছিন্ন হয়ে যাবে, জীবনের কৃত সকল নেকী ধ্বংস হয়ে যাবে। হজ্ব করে থাকলে তাও নষ্ট হয়ে যাবে। এখন নতুন ভাবে ঈমান আনয়ন করে নতুন মুসলমান হিসেবে পরিগণিত হওয়ার পর সামর্থবান হলে নতুনভাবে হজ ফরজ হবে। বিপদগ্রস্থ অবস্থায় বলা হয় এমন কুফরী বাক্যের উদাহরণও শুনন: কুফরী বাক্যের ১৬টি উদাহরণ | (১) যে বলে: “সর্বদা সব কাজ আল্লাহর উপর ভরসা করে ছেড়ে দিয়ে দেখলাম তাে কিছুই হল না।” এটা কুফরী। (২) যে ব্যক্তি বিপদের সম্মুখিন হয়ে বলল: “হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্পদ নিয়ে নিয়েছ’ অমুক জিনিস নিয়ে নিয়েছ, এখন আর কি করার বাকী আছে? অথবা তুমি এখন কি চাও? অথবা এখন আর কি অবশিষ্ট রয়েছে?” এটা কুফরী বাক্য। (বাহারে শরীয়াত, ৯ম খন্ড, ১৭২ পৃষ্ঠা, বেরেলী শরীফ) 

(৩) যে বলে: “যদি আল্লাহ তাআলা আমার অসুস্থতা সত্ত্বেও আমাকে আযাব দেন, তাহলে তিনি আমার উপর বড় জুলুম করেছেন।” এরূপ বলাও কুফরী। (বাহারুর বায়েক, ৫ম খন্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা) (৪) যে বলে: “আল্লাহ্ তাআলা দুঃখিদের আরাে পেরেশান করেছেন।” এটা কুফরী। (৫) যে বলে: “হে আল্লাহ! আমাকে রিযিক দান কর। আমার উপর অভাব অনটন চাপিয়ে দিয়ে জুলুম করাে না।” এরূপ বলা কুফরী। (ফতােওয়ায়ে আলমগিরী, ২য় খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা) 

(৬) দরিদ্রতার কারণে কাফিরদের কাছে চাকরীর জন্য, অথবা কোন শরয়ী কারণ ছাড়া রাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ভিসা ফরমে অথবা কোন ভাবে টাকা ইত্যাদি মওকুপের জন্য দরখাস্তে যদি নিজেকে মিছামিছি খ্রীষ্টান, ইহুদী, কাদিয়ানী কিংবা যে কোন কাফের সম্প্রদায়ের লােক লিখে অথবা লিখানাে হয়, তার উপর কুফরীর হুকুম বর্তাবে। (৭) কারাে কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন কালে এরূপ বলা বা লিখা: “যদি আপনি কাজ করে না দেন,তাহলে আমি কাদিয়ানী বা খ্রীষ্টান হয়ে যাবাে।” এরূপ উক্তিকারী তৎক্ষণাৎ কাফের হয়ে যাবে এমন কি কেউ যদি বলে, “আমি ১০০ বছর পর কাফের হয়ে যাব” তাহলে সেও এখন থেকে কাফের হয়ে গেছে। (৮) যে বলে: “আল্লাহ্ তাআলা যখন দুনিয়ায় আমাকে কিছু দিলেন না, তাহলে আমাকে সৃষ্টিই কেন করলেন।” এরূপ বলা কুফরী। (ফতওয়ায়ে আলমগিরী, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা) (৯) কোন দরিদ্র ব্যক্তি নিজের অভাব দেখে এরূপ বলল: “হে আল্লাহ্! অমুকও তােমার বান্দা, তাকে তুমি কতই না নেয়ামত দিয়ে ধন্য করেছ, আর আমিও তােমার বান্দা কিন্তু আমাকে কতইনা দুঃখে কষ্টে রেখেছ, এটা কেমন বিচার।” এরূপ বলা কুফরী। (বাহারে শরীয়াত, ৯ম খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা, মদীনাতুল মুরশিদ বেরেলী শরীফ)। 

(১০) “কাফের আর সম্পদ শালীদের ভাগ্যে সুখ-শান্তি আর অসহায়দের উপর দুর্দশা, ব্যস! আল্লাহ্ তাআলার ঘরের সকল নিয়মনীতি উল্টো।” এমন বলা কুফরী। (১১) কারাে মৃত্যু হল, তার উপর অন্যজন বললাে: আল্লাহ্ তাআলার এরূপ করা উচিত হয়নি।” এটাও কুফরী বাক্য। (১২) কারাে ছেলে মারা গেল, সে বলল: “আল্লাহ্ তাআলার কাছে এর প্রয়ােজন ছিল।” এ বাক্যটিও বলা কুফরী কেননা এরূপ উক্তিকারী আল্লাহ্ তাআলাকে মুখাপেক্ষী সাব্যস্ত করেছে। (ফতওয়ায়ে রযবীয়া আলা হামিশিল ফতােওয়ায়ে আল হিন্দিয়া, ২য় খন্ড, ৩৪৯ পৃষ্ঠা) (১৩) কারাে মৃত্যু হলে সাধারনত মানুষ বলে থাকে: “জানিনা আল্লাহ্ তাআলার নিকট তার কি প্রয়ােজন হয়ে গেছে যে, তাকে এত তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলেন।” আরাে বলে: “আল্লাহ তাআলার নিকট নেকবান্দাদের প্রয়ােজন হয়। এ জন্যে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নেন।” । 

(এরূপ বাক্য শুনে অনুধাবন করার সত্ত্বেও সাধারণত লােকেরা হ্যাঁ বলে অথবা এর সমর্থনে মাথা নাড়ে। তাে এরূপ উক্তিকারী সাথে সাথে ঐ সকল (সমর্থনকারী) মানুষের উপর ও কুফরীর হুকুম আরােপিত হবে। (১৪) কারাে মৃত্যুতে বলল: “হে আল্লাহ্! তার ছােট ছােট নিস্পাপ বাচ্চাদের উপর ও কি তােমার কোন দয়া হল না।” 

এরূপ বলা কুফরী। (১৫) কোন যুবকের মৃত্যু হওয়ায় বলল: “হে আল্লাহ্: তার ভরা যৌবনের প্রতি হলেও দয়া করতে, নিতে যদি হতাে তবে অমুক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিয়ে নিতে।” এরূপ বলা কুফরী। (১৬)। “হে আল্লাহ্! তােমার কাছে তার এমন কি প্রয়ােজন হয়েছে যে, এই মুহুর্তে (এত আগেভাগেই) তাকে ফিরিয়ে নিয়েছ।” এরূপ বলা কুফরী।। 


এ বিষয়ে আরাে বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা থেকে হাদিয়া সহকারে “২৮টি কুফরী বাক্য”- (ঈমান নবায়ন ও বিয়ে নবায়ন পদ্ধতি সম্বলিত) নামক রিসালা অধ্যয়ন করুন। আর আরাে অধিক সংখ্যক ক্রয় করে মুসলমানদের মাঝে বন্টন করুন। 

নির্ভরযােগ্য সংবাদপত্র বাহক (হকার) কে দিয়ে দিন। সে সংবাদপত্রের সাথে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। তাকে বুঝিয়ে দিন যে, সংবাদপত্র নিক্ষেপ করার পরিবর্তে হাতে হাতে দিয়ে দিন। প্রায় সংবাদ পত্রে আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর পবিত্র নাম ও ধর্মীয় বিষয়াবলী থাকে। বিয়ের কার্ডে ইত্যাদিতেও একটি করে রিসালা দেওয়া যায়। যদি কেউ কুফরী বাক্য উচ্চারণ করে থাকে, আর আপনার দেওয়া রিসালা পাঠ করে সে তাওবা করে নেয় তবে  

اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ

 আপনিও সে সাওয়াবের হকদার হবেন। আমাকে ভারতের একজন ইসলামী ভাই ফোন করে জানিয়েছে: খাজা গরীবে নেওয়াজ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর ওরছ শরীফে (১৪২৬ হিজরী) আজমীর শরীফে যাতায়াতের ট্রেনে হিন্দি ভাষায় অনুদিত রিসালা “২৮টি কুফরী বাক্য” খুব বেশি বন্টন করেছেন। তা পাঠ করে অনেকে তাওবা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। 


গুম্বদে হাদ্বরা কি টান্ডি টান্ডি চাঁও মে মেরা, খাতেমা বিল খায়ের হাে বাহরে নবী পরওয়ার দিগার।


দুঃখ সহ্য করার মানসিকতা তৈরী করুন 


মুছীবতের উপর ধৈর্য ধারণ করার আরেকটি পন্থা হল, বড় বড় মুছীবতের কথা আগে থেকেই কল্পনা করে ধৈর্য ধারণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবব্ধ হোন। যেমন- এ কল্পনা করুন, আমার ঘরে যে কারাে মৃত্যু হলে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ আমি ধৈর্য ধারণ করব, যদি চাকরিচ্যুত হয় অথবা ইন্টারভিউতে ফেল হই অথবা আমার শরীরে কোন শারিরীক সমস্যা দেখা গেলে, যেমন লেংড়া, অন্ধ অথবা কেউ অসদাচরণ করলে, কেউ আমাকে কষ্ট দিলে, তবে সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করে সাওয়াব অর্জন করব। তবে যদি বাস্তবে বিপদ এসেও যায়, তবে নিজের দৃঢ় সংকল্পের উপর অটল থাকা যায়। আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনগণ رَحِمَهُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی বলেন: যার ধৈর্য ধারণ আসে না, তবে সে যাতে কষ্ট করে ধৈর্য ধারণ করে। 

স্বয়ং প্রিয় নবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে কষ্ট করে ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করবেন। আর কাউকে ধৈর্যের চেয়ে বড় কোন কল্যাণ জনক বস্তু প্রদান করা হয়নি। (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা) 

যেমন- ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা লাভ করার জন্য ধৈর্য ধারণের ফযীলত ও অধৈর্যের ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতিসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। নিজেকে ইবাদতে ব্যস্ত রাখুন, এভাবে অনুশীলনের দ্বারা মুসীবতের দিক থেকে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ মনােযােগ সরে যাবে এবং ধৈর্য ধারণ করাটা ও সহজ হবে। 


অযথা দুশ্চিন্তা করার ক্ষতি 


কিছু মনীষীরা বলেছেন: তিনটি বিষয়ে চিন্তা করাে না (১) নিজের দরিদ্রতা, অভাবগ্রস্থতা (মুসীবত) এর উপর। কেননা এটি চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা লােভ-লালসা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। (২) : 

তােমার উপর জুলুম কারীর জুলুমের উপর ও চিন্তা করাে না। কেননা এর দ্বারা তােমার অন্তরের বিদ্ধেষ বাড়বে এবং রাগ ও বহাল থাকবে। ! (৩) দুনিয়ার বেশি দিন বেঁচে থাকার ব্যাপারে চিন্তা করাে না। এর দ্বারা তুমি সম্পদ সঞ্চয় করার মধ্যে নিজের বয়সকে শেষ করে দিবে, আর আমলের ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি হবে। সুতরাং আমাদের উচিত দুনিয়াবী ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তা করার পরিবর্তে আখিরাতের কাজের প্রতি মনােনিবেশ করা। যেমন- আমাদের বুযুর্গদের رَحِمَهُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی মনােনিবেশ করার মাদানী ধরণ যেমন ছিল: 



কি অবস্থা?


হযরত সায়্যিদুনা মালেক বিন দীনার رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ থেকে কেউ জিজ্ঞাসা করল: কি অবস্থা? বললেন: ঐ ব্যক্তির আবার কি অবস্থা হবে, যে এক ঘর (দুনিয়া) থেকে অন্য ঘর (আখিরাত) এর দিকে রওয়ানা হওয়ার চিন্তার মগ্ন অথচ সে আদৌ জানেনা, জান্নাতে যেতে হবে, না জাহান্নামে। । 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গরা رَحِمَهُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی আখিরাতের ধ্যানে কতইনা বিভাের ছিলেন। যতই অভাব ও দারিদ্রতার সম্মুখীন হােক না কেন বিন্দুমাত্রও তার কোন পরােয়া করতেন না। কেননা এ সকল পবিত্র আত্মার বুযুর্গরা তাদের মন-মানসিকতা এভাবেই গড়ে তুলেছেন, দুনিয়ায় যত মুসিবত আসুক না কেন, দুনিয়ার কষ্ট যে কোন ভাবেই অতিক্রম হয়ে যাবে কিন্তু আল্লাহর পানাহ! করব ও আখিরাতে যদি কষ্ট ও মুসিবতের সম্মুখীন হতে হয় তবে মারাত্মক ভাবে ফেঁসে যাবে। এর দ্বারা আমাদের ঐ ইসলামী ভাইয়ের শিক্ষার্জন করা উচিত, যে দুনিয়াতে দরিদ্রতার জন্য তাে চিন্তিত হয়ে যায় কিন্তু আখিরাতের বিপদাপদ থেকে মুক্তির প্রতি কোন মনােযােগ থাকে না! অথচ (দুনিয়াবী) দরিদ্রতা দ্বারা যে চিন্তাগ্রস্থ সে ধৈর্য ধারণ করলে আখিরাতে তার জন্য মুক্তির পাথেয় হবে। 

বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টের উপর ধৈর্য ধারণ করার মানসিকতা সৃষ্টির জন্য আশিকানে রাসুলদের সাথে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার সফর করার খুবই চমৎকার সৌভাগ্য অর্জন করুন। উৎসাহ প্রদানের জন্য মাদানী কাফেলার একটি বাহার লক্ষ্য করুন: যেমন- একটি ঘটনা আমার মত করে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি। 


উৎসাহী মুবাল্লিগ


আশিকানে রাসুলদের একটি মাদানী কাফেলা জাহলাম (পাঞ্জাবের) একটি গ্রামে ১২ দিনের সুন্নাত প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে পৌছল। যে মসজিদে মাদানী কাফেলা অবস্থান করেছিল এটির সামনা-সামনি অবস্থিত ঘরের অধিবাসী এক যুবকের উপর এক আশিকে রাসুল ইনফিরাদী কৌশিশ করে মাদানী কাফেলায় সফরের উৎসাহ প্রদান করেন। ঐ যুবক শুধুমাত্র ২ দিন সাথে থাকার জন্য সম্মত হল এবং মাদানী কাফেলার শুরাকাদের সাথে সুন্নাত শিখা-শিখানােতে ব্যস্ত হয়ে যায়। শুধুমাত্র দুইদিন মাদানী কাফেলায় অবস্থানের বরকতে আপন ঘরে সবাইকে নামাযের উপদেশ দেয়। যেহেতু সে ঘরের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ প্রায় সকলে নামায পড়া আরম্ভ করে দেয়, সামনে অবস্থিত মামার ঘরে গিয়ে নেকীর দাওয়াত পেশ করে। ঘরের অধিবাসীদেরকে টিভির ধ্বংসলীলা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তাআলার আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করে। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ সকলের সম্মতিক্রমে ঘর থেকে T.V. বের করে দেয়া হয়। পরের দিন ঘরে সকালে কাপড় স্ত্রি করার সময়, হঠাৎ ইলেকট্রিক শর্ট লাগে এবং ঘরের সদস্যদের বর্ণনাযায়ী (মূমূর্ষ অবস্থায়) তার মুখে لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰه 

صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم


ধ্বনি জারী ছিল। এ কলেমা পাঠ করতে করতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করুন। । মরহুম যুবক সৌভাগ্যবান ছিলেন, কেননা মৃত্যুর সময় কলেমা নসীব হল। প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন:“যার শেষ বাক্য لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩১১৬) 


কুয়ি আয়া পা কে চলা গিয়া কুয়ি ওমর ভর ভি না পাসকা, 

মেরে মাওলা তুঝ ছে গিলা নেহি ইয়ে তাে আপনা আপনা নসীব হে। 


صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب

صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অভাবগ্রস্ত,প্যারালাইস ইত্যাদিতে অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেওয়া আল্লাহ্ তাআলার শপথ! চরম ভুল কাজ। আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য 

সন্তুষ্টচিত্তে সকল দুঃখ কষ্ট দূর্ভোগের উপর ধৈর্য ধারণ করতে হবে।যদি করতে হয় তাহলে আত্মহত্যা নয় কু-প্রবৃত্তি (নফসকে) হত্যা করুন। আহ! অভিশপ্ত শয়তান আমাদের কু-প্রবৃত্তির ফাঁদে ফেলে কতই না মন্দ কাজে লিপ্ত করে রেখেছে। যদি আমরা নফসকে তথা কু-প্রবৃত্তিকে হত্যায় এমন ব্যস্ত হয়ে যায় যে, বুযুর্গদের উক্ত পবিত্র বাণী: 

مُوۡتُوۡا قَبۡلَ اَنۡ تَمُوۡتُوۡا

 অর্থাৎ- মরার পূর্বে তােমরা মরে যাও। (কাশফুল! খিফা, ২য় খন্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা) 


এর পূর্ণ আমলকারী হয়ে যান। সম্পদ অন্বেষণ থেকে অমুখাপেক্ষী ও দরিদ্রতার দুঃশ্চিন্তা থেকে নিশ্চিতও হয়ে যান। এবং বিশ্বাস করুন যে, সম্পদশালীদের তুলনায়, দরিদ্র ও অর্থহীনরা উপকারে রয়েছে। যেমন -


হায়! বেচারা সম্পদশালী!!


মদীনার তাজেদার, রাসুলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন গরীবরা ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৫৭) । 

অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে; ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলা সন্তান-সন্তুতি সম্পন্ন এমন গরীব মুসলমানকে ভালবাসেন, যে ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪১২১) 


মুহাব্বত মে আপনি গুমা ইয়া ইলাহি, 

না পাও মাঁয় আপনা পার্থ ইয়া ইলাহি। 


আত্মহত্যার একটি কারণ হচ্ছে অবৈধ প্রেম 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দৈনিক সংবাদপত্রে এরূপ সংবাদ প্রায় পাওয়া যায়, অমুক পুরুষ বা নারী তার পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে বিবাহ করার মধ্যে পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ানাের কারণে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছে। বাস্তব কিছু প্রমান নিম্নে পেশ করা হল: “দৈনিক নাওয়ায়ে ওয়াক্ত” (করাচী, ৪ আগস্ট ২০০৪) (১) নিজের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে না পারায় এক যুবক বিষপান করেছে। (২) প্রেমে ব্যর্থতার কারণে (সিন্ধু প্রদেশের) এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। এ ধরণের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। উলঙ্গপনা, নির্লজ্জতা, সহ শিক্ষা, পর্দাহীনতা, অশ্লীল ছবি প্রদর্শন, উপন্যাস, সংবাদপত্রের অশ্লীলতাপূর্ণ প্রবন্ধ অধ্যয়নে ইত্যাদি অবৈধ প্রেমের অন্যতম কারণ। অপ্রাপ্ত বয়সে, এক সাথে খেলা-ধুলায় অংশ গ্রহণকারী ছেলে-মেয়েদের বাল্য-বন্ধুত্বের কারণে এ গর্হিত কাজে লিপ্ত হতে পারে। তাই পিতা মাতা যদি শুরু থেকেই নিজের বাচ্চাদেরকে অন্যান্যদের বরং নিকটতম আত্মীয়দের বরং আপন ভাই বােনদের বাচ্চাদেরকে এবং মুন্নীদেরকে এইভাবে অন্যান্যদের মুন্নাদের সাথে খেলাধূলা করা থেকে বিরত রাখতে সফল হয়ে যায় এবং উপরে বর্ণিত কারণগুলাের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে তবে এ অবৈধ প্রেমের শিকার হওয়া থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। ছেলে-মেয়েদেরকে শুরু থেকেই আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর মুহাব্বতের শিক্ষা দিতে থাকুন। যদি কারাে অন্তরে বাস্তবিক পক্ষে রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর মুহাব্বত স্থান লাভ করে তবে অন্তর

اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ দুনিয়ার অবৈধ প্রেম থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

 

মুহাব্বত গাইর কি দিল ছে নিকালাে ইয়া রাসুলাল্লাহ মুঝে আপনাহি দিওয়ানা বানালাে ইয়া রাসুলাল্লাহ। 


আত্মহত্যার আরেকটি কারণ হল বেকারত্ব 


বেকারত্ব ও ঋণগ্রস্থতায় অতীষ্ট হয়ে কিছু লােক আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। উচ্চাভিলাষী, ভাল ভাল খাবার, বিয়ে ইত্যাদিতে অপব্যয়, ঘরের অভ্যন্তরীন সাজসজ্জা গাড়ি-বাড়ি ইত্যাদির মালিক হওয়ার জন্য বেশি সম্পদের অন্বেষণে এবং বড় জমিদার ও সম্পদশালী হওয়ার কল্পনায় স্বপ্নে বিভাের হওয়াও তার একমাত্র কারণ। যদি থাকা-খাওয়া, খাবার-দাবার ইত্যাদি বিষয়ে নিজের জীবনকে বাস্তবে সাধাসিধে করার লক্ষ্যে মাদানী মন-মানসিকতা তৈরী করতে পারেন । তাহলে আপনার অল্প আয়ে জীবন সুন্দর ভাবে সুখে শান্তিতে পরিচালনা করা সহজতর হয়ে যাবে। আর এ কারণে হয়ত কোন মুসলমান আত্মহত্যার মত জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ করবে না।

মূলত ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে থাকার কারণেই এমনটা হয়।আপনি কোথাও শুনবেন না, অমুক আলিম, অমুক পেশ ইমাম সাহেব। 

আত্মহত্যা করেছেন। অথচ দ্বীনি শিক্ষার অধিকারী অনেক আলিমই অল্প উপার্জন করেই সংসার জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। 


দওলতে ফেরাওয়ানী হে মাঙ্গনা নাদানী 

আক্বা কি মুহাব্বত হি দর আছল খযীনা হে।


সকলকে রিযিক প্রদান করা আল্লাহ তাআলার বদান্যতার দায়িত্ব


উপার্জনের ব্যাপারগুলােতে আল্লাহ্ তাআলার উপর সত্যিকার অর্থে ভরসা রাখুন। নিঃসন্দেহে তিনিই পিঁপড়াকে সামান্য এবং হাতিকে মণ পরিমাণ রিযিক প্রদান করেন। নিঃসন্দেহে, নিঃসন্দেহে, অবশ্যই প্রত্যেক প্রাণীকে রিযিক প্রদান করা তাঁর বদান্যতার দায়িত্বে রয়েছে। যেমন- ১২তম পারার শুরুতে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

 وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰہِ رِزۡقُہَا 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কেউ এমন নেই, যার জীবিকা আল্লাহর করুণার দায়িত্বে নয়। (পারা: ১২, সূরা হুদ, আয়াত: ৬) 


পশু পাখিকে রিযিক দান করার দৃষ্টান্ত


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চিন্তার বিষয় হল, আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেককে রিযিক প্রদান করাটা তাে নিজের দয়ায় দায়ীত্বে নিয়ে নিয়েছেন কিন্তু প্রত্যেককে ক্ষমা করার দায়ীত্ব নিজ দয়ার দায়িত্বে নেননি। ঐ মুসলমান কতই না মূর্খ। যে রিযিক বৃদ্ধির জন্য এদিক সেদিক দোড়াদোড়ি করে কিন্তু মাগফিরাতের চিন্তায় তার অন্তর জ্বলে। তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইজ্জত, হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যদি আল্লাহ্ তাআলার উপর এমন তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর, যেভাবে তার উপর তাওয়াক্কুল করা দরকার। তবে তােমাদেরকে এমনভাবে রিযিক দান করা হবে, যেমনিভাবে পশুপাখিদের রিযিক দেওয়া হয় যে, তারা (পশু-পাখি) সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বেরিয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় পেট ভর্তি অবস্থায় ফিরে আসে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর, বৈরুত) । 


মুঝকো দুনিয়া কি দওলত কি কছরত না দে, চাহে ছরওয়াত না দে, কুয়ী শুহরত না দে। : 

ফানি দুনিয়া কি মুঝ কো হুকুমত না দে, তুঝ ছে আত্তার তেরা তলবগার হে।। 


আত্মহত্যার আরেকটি কারণ ঘরােয়া মনােমালিন্য 


আত্মহত্যার অন্যতম একটি কারণ হল ঘরােয়া মনােমালিন্য। যেমন- দৈনিক নাওয়ায়ে ওয়াকত (৫ই আগস্ট ২০০৪) এর সংবাদ। এক যুবক ঘরের সাংসারিক ব্যাপারে অতিষ্ট হয়ে আত্মহত্যা করে। 

আহ! অভিশপ্ত শয়তান, প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর সুন্নাত থেকে দূরে রেখে আমাদের ঘরের সুখ-শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। আমাদের জীবনধারা উলট-পালট করে দিয়েছে। ঘরােয়া জীবনধারার ইসলামী ও চারিত্রিক মূল্যবােধ বিলিন হয়ে গেছে। ধর্মীয় জ্ঞান বিমুখতা ও সুন্নাত অনুযায়ী জীবন পরিচালিত না হওয়ার কারণে অধিকাংশ ঘরের সদস্যরা একে অপরকে ঘৃণা করে। এরূপ পারিবারিক কলহের সুত্র ধরে কখনাে স্ত্রী আত্মহত্যা করে কখনাে স্বামী আবার কখনাে ছেলে,কখনাে মেয়ে, কখনাে মা, কখনাে পিতা আত্মহত্যা করে বসে। পরিবারিক এ কলহ অশান্তিকে দূর করার অন্যতম মাধ্যম আপনার ঘরে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত মাদানী মুযাকারা বা সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনা অথবা সুন্নাতে ভরা V.C.D দেখা এবং ঘরে “ফয়যানে সুন্নাত” এর প্রতিদিন দরস চালু করা এবং আপনার ঘরে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ সৃষ্টি করা। যে পরিবারের প্রতিটি সদস্য নামাযী ও সুন্নাতের অনুসারী হবে এমন দাঁড়ি, বাবরী চুল ও পাগড়ী সজ্জিত আশিকে রাসুলদের পর্দানশীন ঘরের সদস্যদের থেকে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ কখনাে আত্মহত্যার মত গর্হিত সংবাদ শুনবেন না। আত্মহত্যার এ বিপদ বেনামাযী, ফ্যাশনপূজারী, অশ্লীল ফ্লিম দর্শনকারী, গান-বাজনাতে লিপ্ত ব্যক্তিরা, শুধু দুনিয়াবী জ্ঞানকে সবকিছু ধারণাকারী, ধর্মীয় জ্ঞান বিমুখ আমলহীন জীবন অতিবাহিতকারী ব্যক্তিরাই আত্মহত্যার শিকার হয়ে থাকে। আল্লাহর শপথ! আত্মহত্যার দিকে ধাবিত প্রত্যেক মুসলমানদের প্রতি আমার মায়া হয়। লােকেরা হয়তাে তাদের ঘৃণা করে কিন্তু তাদের প্রতি আমার স্নেহ ও দয়া-মায়া রয়েছে, সেজন্যই আমি আত্মহত্যার প্রতিকার সম্পর্কিত আলােচনা করছি। বিশ্বাস করুন! যদি প্রত্যেক মুসলমান দা'ওয়াতে ইসলামী ওয়ালা হয়ে যায়, তবে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর দয়ায় মুসলমান আত্মহত্যার মত জঘন্য পাপের পরিসমাপ্তি দেখবে। 


দাওয়াতে ইসলামী কি কাইয়ুম সারে জাহাঁ মে মচ জায়ে ধুম,

 উছু পে ফিদা হাে বাচ্চা বাচ্চা, ইয়া আল্লাহ! মেরে জুলি ভরদে।


আত্মহত্যাকারীর জানাযা ও ইছালে সাওয়াব

 

আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাযও আদায় করা যাবে এবং ইছালে সাওয়াব করা বৈধ। যেমন- দুররে মুখতার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে: যে আত্মহত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃত হােক বা অনিচ্ছাকৃত। তাকে গােসল দেওয়া যাবে এবং তার (জানাযার) নামায ও পড়া যাবে। এটার উপর ফতােয়া। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা, দারুল মারেফা, বৈরুত)। 

এমনকি ঐ ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করাও জায়িয। 


কাফেরদের জাহান্নামে লাফ দেয়া 


মনে রাখবেন! মুসলমানদের তুলনায় কাফেরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এমনকি তাদের কাছে এ কাজের প্রতি সহায়তা দানকারী অনেক ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলােকে বলছি: তাদের কাছে এমন কতগুলাে মিউজিক্যাল প্রেম কাব্য আছে, যা মূর্খ কাফিরদের আত্মহত্যার প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করে জাহান্নামে লাফ দিয়ে থাকে। এ কাফেররা যদিও বা দুনিয়ায় অনেক উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সকল কাফেররাই বােকাদের সরদার। আল্লাহর শপথ! ঐ ব্যক্তিই বিবেকবান, বুদ্ধিমান,যার বিবেক দামানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মাথা ঝুকিয়ে দিয়েছে। 


দামানে মুস্তফা ছে লেপটা ইয়াগানা হাে গেয়া জিসকি হুযুর হাে গেয়ী উস কো যমানা হু গেয়া

 

কুরআনের আলােকে কাফেররা নির্বোধ 


আমি সকল কাফেরদের বােকা বলছি এটা শুধু আমার কথা নয়। কুরআনুল করীমের ৯ম পারার সূরাতুল আনফালে ২২নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:

 اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰہِ الصُّمُّ الۡبُکۡمُ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۲﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সমস্ত জীবের মধ্যে নিকৃষ্টতম তারাই,যারা বধির, বােবা, যাদের বিবেক নেই। 


প্রখ্যাত মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: এ আয়াতে করীমাটি আবদু-দ্বার ইবনে কুসাই সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। যে বলত, যা কিছু হুজুর এনেছেন আমরা সে বিষয়ে বােবা ও অন্ধ। এর থেকে জানা গেল, যে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم থেকে উপকার লাভ করতে পারেনা সে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। দেখুন হযরত নূহ عَلَیۡهِ السَّلَام এর প্রতি নির্দেশ ছিল,নৌকায় পশুদেরকে ও তুলে নাও কিন্তু কাফেরদের তুলবে না। এটা ও বুঝা গেল, যার মুখ, চোখ, কান, বিবেক দ্বারা হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর পরিচিতি লাভ করতে পারবে না। তার সে মুখ বােবা মুখ। তার চোখ হল অন্ধ, বধির ও ঐ আকল বিবেক হীন। আবদু-দ্বার এর গােত্রের সকলেই উহুদ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মধ্যে শুধু দু'জন ঈমান আনে তারা হলেন: মুসয়ার বিন উমাইর এবং সুয়াইবিত বিন হারমালা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا (নুরুল ইরফান, ২৮৫ পৃষ্ঠা) 


আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হল হতাশা 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হল,টেনশন বা হতাশা (DEPRESSION) যার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যায়। মাদানী মানসিকতা না থাকার কারণে সে শয়তানের প্রতারণার শিকার হয়ে ধারণা করে, টেনশন ও হতাশা থেকে আমি মুক্তি পাব এবং আমার শান্তি লাভ হবে আর এভাবে আত্মহত্যা করে নিজের জন্য ভয়ংকর অশান্তি ডেকে আনে। 


ছরকারে নামদার এহি আরজু হে কেহ, 

গম মে তােমহারে কাশ! রহাে বে করার মে। 


অযু ও রােযার বিস্ময়কর উপকারীতা 


টেনশন ও হতাশার একটি রূহানী চিকিৎসা হল: অযু ও রােযা। এখন তাে এই বাস্তব বিষয়টাকে কাফেররাও স্বীকার করে নিয়েছে। যেমন- একজন কাফের ডাক্তার তার লিখিত প্রবন্ধে এ বিষ্ময়কর সত্যটি এভাবে প্রকাশ করেছে: আমি হতাশার রােগে আক্রান্ত কিছু রােগীকে প্রতিদিন পাঁচবার মুখ ধৌত করিয়েছি। কিছু দিন পর তাদের এ রােগ কমে যায়। অতঃপর এ ধরণের আরাে কিছু রােগীকে প্রতিদিন হাতমুখ ধৌত করিয়েছি ফলে তারা আরােগ্য লাভ করে। উক্ত ডাক্তার তার প্রবন্ধের শেষাংশে গিয়ে স্বীকার করেছে মুসলমানদের মধ্যে হতাশাগ্রস্থতার রােগীর সংখ্যা কম পাওয়া যায়। কারণ তারা দৈনিক কয়েকবার হাত মুখ ধৌত করে (অযু করে)। অপর একজন ইংরেজ অভিজ্ঞ ডাক্তার সেগমিন্ড ফ্রাইড (SEGMEND FRIDE) 

রােযার উপকারীতা স্বীকার পূর্বক বলেন: রােযার দ্বারা শারীরিক, মানসিক জটিলতা, হতাশাগ্রস্থতা কু-প্রবৃত্তি রােগের পরিসমাপ্তি ঘটে। 


পাগড়ী পরিধান করাও হতাশাগ্রস্থতার চিকিৎসা


প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর বরকতময় সুন্নাত ইমামা শরীফ (পাগড়ী) বাঁধা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি লাভ এবং নিজের মধ্যে সহনশীলতা বৃদ্ধির সর্বোত্তম মাধ্যম। 

যেমন- হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: “তােমরা পাগড়ী পরিধান করাে, এর দ্বারা তােমাদের সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। (আল-মুস্তাদারক লি-হাকিম, ৫ম খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭৪৮৮)। 


পাগড়ী ও বিজ্ঞান


আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ইমামা (পাগড়ী) শরীফ মাথায় সজ্জিত কারী সৌভাগ্যবান ব্যক্তি অর্ধাঙ্গ ও রক্ত থেকে সৃষ্ট অনেক রােগ থেকে সুরক্ষিত থাকে। কেননা পাগড়ী সজ্জিত করার বরকতে মস্তিষ্কের দিকে চলাচলকারী বড় বড় রগের মধ্যে রক্তের চাপ

শুধু মাত্র প্রয়ােজন অনুপাতে থাকে অপ্রয়ােজনীয় রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে না। এ কারণে আমেরীকায় অর্ধাঙ্গ রােগের প্রতীকারের জন্য পাগড়ী সাদৃশ মাস্ক (MASK) তৈরী করা হয়েছে। 


উন কা দিওয়ানা ইমামা আওর জুলফো রেশ মে 

ওয়াহ দেখাে তাে সহি লাগতাহে কিতনা শানদার। 


নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দুশ্চিন্তার চিকিৎসা 


টেনশন মানসিক চাপ কমানাের জন্য নিঃশ্বাসের ব্যয়াম খুবই ফলদায়ক। এর জন্য ফজরের সময়টা উত্তম। কেননা ঐ সময়ে সাধারণত ধোঁয়া এবং শােরগােল থাকে না। এ ব্যায়ামটি আপনি বাতাস চলাচল করে এমন কম আলােকিত কক্ষে করুন। ইসলামী ভাইয়েরা বারান্দায় এমন ভাবে দাঁড়াবেন যাতে কারাে ঘরের প্রতি দৃষ্টি না পড়ে। আর ইসলামী বােনেরা ও এমন ভাবে দূরে দাড়াঁবেন যেন কোন পরপুরুষ না দেখে এমনকি তার দৃষ্টিও যেন কোন পরপুরুষের উপর না পড়ে। তার পদ্ধতি খুবই সহজ। প্রথমে নিজের আঙ্গুল নাকের বাম ছিদ্রের নিকটে রেখে সামান্যতম চাপ দিন এবং নাকের ডান পার্শ্ব থেকে শ্বাস গ্রহণ করুন এখন ডান দিক থেকে চাপ দিবেন এবং বাম দিকে শ্বাস বাহির করুন। এভাবে কমপক্ষে ৩০ বার এ আমল করুন। যদি এর চেয়ে বেশিও করেন, তাহলে কোন ক্ষতি নেই। এ আমল দ্বারা اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ আপনি দুশ্চিন্তায় কমতি এবং উৎফুল্লতা অনুভব করবেন। 


পেরেশানী থেকে মনােযােগ ফিরিয়ে নিন। 


আরাে একটি প্রতিকার হল: নিজের পেরেশানী নিয়ে দুশ্চিন্তা করা পরিত্যাগ করুন। যদি ভাবতে থাকেন, আমি খুব রােগাক্রান্ত, চিন্তিত, আমার চতুর্দিকে বিপদ, তবে আপনার দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাবে আর যা দ্বারা আপনি নিজে নিজেই যন্ত্রণার শিকার হবেন। হযরত সায়্যিদুনা আমীরুল মু'মিনীন আলী মুরতাজা كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِ বলেন: আমি হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “ مَنۡ كَثُرَ هَمَّهٗ سَقِمَ بَدَنُهٗ" অর্থাৎ- যার দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, তার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭৪৩৯)


দিল কো সুকু চমন মেহে না লালাহ যার মে, 

সুজও গুদায তু হে ফাকাত কুয়ে ইয়ার মে। 


সবুজ গুম্বদের ধ্যানের পদ্ধতি 


আসুন! নিজের মানসিকতাকে সতেজ বরং সতেজতর করার জন্য তৃতীয় মাদানী পদ্ধতিটা ও শুনে নিন। আর তা হল: দিনের যে কোন সময় বাতাস চলাচলকারী কম আলােকিত এবং শান্ত জায়গায় শুয়ে সর্বোত্তম বরকতময় জায়গার ধ্যান করুন। আর এ ধ্যান যেন বাস্তব থেকেও বেশি নিকটবর্তী হয়। মদীনা শরীফে زَادَها للّٰهُ شَرَفًا وَّتَعۡظِیۡمًا অবস্থিত সবুজ গম্বুদের সুন্দর দৃশ্য মারহাবা! এ দৃশ্যটি দুনিয়ার সকল সুন্দর দৃশ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের অধিকারী। সবুজ গুম্বদের ধ্যান করুন। মাকতাবাতুল মদীনা থেকে ‘তাসাওরে মদীনা' নামক ক্যাসেট হাদিয়াসহ সংগ্রহ করে এর মাধ্যমে ভালভাবে মদীনার ধ্যান করতে পারবেন। 


কিয়া সবজে সবজে গুম্বদ কা খােব হে নাযারা, 

হে কিছ কদর সুহানা কেইসা হে পেয়ারা পেয়ারা। 


এটাই হল সবুজ গুম্বদ!


আপনি হয়ত অনেকবার সবুজ গুম্বদ দেখেছেন। আর যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি বাস্তবে দেখেছেন। তার জন্য ধ্যান করা অনেক সহজ। প্রথমে হালকা প্রতিচ্ছবি অনুভব হবে অতঃপর ধীরে ধীরে বাস্তবে নিকটবর্তী করার চেষ্টা করুন। যদি সত্যিকার আগ্রহ থাকে । তবে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ আপনি হঠাৎ ডাক দিয়ে বলে উঠবেন, এটাই হল সবুজ গুম্বদ শরীফ। অতঃপর খেয়াল করুন, ভােরের সােনালী সময় শীতল বাতাস আন্দলিত হয়ে সবুজ সবুজ গুম্বদকে চুমু খেয়ে এটির আশেপাশে ঘুরে এসে আমাকে বরকত সমূহ বন্টন করছে, আমাকে স্পর্শ করছে, যার ফলে আমার পরিপূর্ণ শীতলতা অনুভব হচ্ছে অতঃপর এটাও ধ্যান করুন যে, সবুজ গুম্বদ শরীফের উপর হালকা হালকা বৃষ্টি কণা কুরবান হয়ে যাচ্ছে এবং তা থেকে বরকত নিয়ে বিন্দু বিন্দু ফোঁটা আমার উপর এসে পড়ছে। কিছুক্ষণের জন্য হৃদয় স্পর্শকারী চমকার ধ্যানে নিজেকে হারিয়ে ফেলুন। 

দরে মুস্তফা কি তালাশ তিহ্ মে, 

পােহছ গেয়া হাে খেয়াল মে, 

না তাহকন কি চেহেরে পে হে আছর, 

না সফর কি পাও মে দুল হে। 

সম্ভব হলে আপনি প্রতিদিন এভাবে ধ্যান করুন, তার রহমত দূর কোথায়, সত্যি সত্যি যদি পর্দা উঠে যায় এবং আশিকানে রাসূল বাস্তবে সবুজ গুম্বদের জলওয়া দেখে নেয়। প্রতিদিন কম পক্ষে সাত মিনিট এরূপ করতে থাকুন اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ আপনার মানসিক চাপ তথা দুশ্চিন্তা কমে যাবে। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা করে দেখুন। 


গুম্বদে হাদ্বরা খােদা তুজকো সালামত রাখে, 

দেখ লেতে হে তুজে পিয়াস বুজা লেতে হে। 


পায়ে হাঁটার উপকারীতা


মানসিক চাপ ও মনের দুশ্চিন্তা কমানাের জন্য মানসিক ব্যায়াম ছাড়াও প্রতিদিন পৌনে এক ঘন্টা বিরতীহীন ভাবে পায়ে হাঁটা উচিত। ১৫ মিনিট মধ্যম গতিতে, মাঝখানের ১৫ মিনিট তুলনামূলক তাড়াতাড়ি কদম ফেলবেন এবং শেষের ১৫ মিনিট অনুরূপ মধ্যম গতিতে চলবেন। আর এই সময়ের মধ্যে দরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকুন। বিরতিহীনভাবে হাঁটতে থাকুন। চলার সময় এ চেষ্টা করবেন, পায়ের পাঞ্জার উপর যাতে শরীরের চাপ পড়তে থাকে। পায়ে হেটে চলার জন্য সময়টি উত্তম। কেননা এ সময়ে সাধারণত গাড়ির ধোঁয়া, ধূলাবালি থেকে মুক্ত থাকেও চতুর্দিকে পরিচ্ছন্নতা এবং চমৎকার স্বাস্থ্যকর বাতাস থাকে। এক বর্ণনা মােতাবেক জান্নাতে সর্বদা ঐ সময়ের (সকালের) অনুরূপ পরিবেশ হবে। اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ আপনার হজম শক্তি ঠিক থাকবে। আপনার প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভালভাবে কাজ করবে। রক্ত দ্রুতবেগে চলাচল করবে। রক্ত চলাচল দ্রুতবেগ হওয়ার দ্বারা শরীর থেকে এক বিশেষ ধরণের বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। যার বৈশিষ্ট্য আফিনের সাথে সামঞ্জস্য রাখে। যা বের না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের ব্যথা এবং কষ্ট বৃদ্ধি পেতে থাকে, উল্লেখিত পদ্ধতিতে নিয়মিত পায়ে হাঁটার অনুশীলনের মাধ্যমে আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের হতে থাকবে যা দ্বারা শারীরিক রােগ ব্যাধি থেকে। 

পরিত্রাণের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করবেন। সাথে সাথে মানসিক চাপও কমে যাবে। আর আপনার রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে গেলে, তাও বের হয়ে যাবে। মস্তিষ্ক ও সদা সতেজ ও ফুরফুরে মেজাজের থাকবে। আর মানসিক অবস্থা যখন সতেজ থাকবে তখন আত্মহত্যার ধারণা ও কাছে। আসবে না اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ


আয় বেকসুকে হামদম দুনিয়া কি দূর হাে গ্বম।

বস্ জায়ে দিল মে কা'বা সিনা বনে মদীনা। 


অসুস্থ বাদশাহ্ 


প্রতিবেশী রাজ্যের দু’জন বাদশার মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল। তন্মধ্যে একজন বাদশাহ প্রায় সময় বিভিন্ন প্রকার দুশ্চিন্তা ও রােগে আক্রান্ত হতেন। অপর দিকে অন্য বাদশাহ সবল ও স্বাস্থ্যবান ছিলেন। একবার অসুস্থ বাদশাহ সুস্থ-সবল বাদশাহকে বললেন: আমি অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা করানাের পরও সুস্থতা অর্জনে ব্যর্থ। আপনি কোন ডাক্তারের চিকিৎসা নেন? সুস্থ বাদশাহ মুচকি হেঁসে বললেন: আমার নিকট দু’জন ডাক্তার আছে। অসুস্থ বাদশাহ বললেন: দয়া করে 

ঐ দু’জন ডাক্তারের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিন। যদি তারা আমার চিকিৎসা করে তাহলে হয়তাে আমি ও সুস্থ হয়ে উঠবাে। বিনিময়ে আমি তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে পূর্ণ করে দিব। সুস্থ বাদশাহ্ 

মুচকি হেসে বললেন: আমার ডাক্তার তাে আমাকে একেবারে ফ্রি চিকিৎসা করে। আর ঐ দুই ডাক্তার হল আমার দুটি পা। চিকিৎসা পদ্ধতি হল: তাদের সাহায্যে আমি খুব বেশি পায়ে হেঁটে চলি। তাই আমার শরীর সুস্থ ও সবল থাকে। হয়তাে আপনি বেশি বসে থাকেন। পায়ে হেঁটে চলতে অলসতা করেন। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই বাহন ব্যবহার করেন। এজন্য আপনি সর্বদা অসুস্থ ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। 


আপনি কি আত্মহত্যা করতে চান? থামুন ......! 


যখন কোন রােগাক্রান্ত, বেকার, ঋণগ্রস্থ, কঠিন চিন্তার শিকার বা কোন রাগান্বিত ও আবেগী মানুষ বা কোন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়াতে ভৎসনা থেকে ভীত অথবা পছন্দের পাত্র-পাত্রী বিবাহ করতে ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন শয়তান দরদী হয়ে আসে এবং প্রতারণা দেয় যে, তুমি এত দুশ্চিন্তায় থাকার পরও আত্মহত্যা কেন করছ না? এরূপ ঝামেলা থেকে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে মুক্ত হয়ে যাও। আবেগী পুরুষ-মহিলাদের বিবেক এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে শয়তানর অনুসরণ করে বসে। আর আত্মহত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। সুতরাং শয়তান যখন কু-মন্ত্রণা দেয় তখন আপনি খুব ঠান্ডা মাথায় শয়তানের এ কু-মন্ত্রণা প্রতিহত করুন। আর আত্মহত্যার ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতি গুলাে বারবার এভাবে স্মরণ করুন, প্রথমত একাজ আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে অসন্তুষ্ট করে এবং আত্মীয় স্বজন কে ব্যথিত করে অপরদিকে শয়তান ও শয়তানের অনুগত কাফেরদের খুশি করে। দ্বিতীয়ত তা দ্বারা কোন সমস্যার সমাধান তাে হয় না। বরং আত্মহত্যা কারীর আত্মীয় স্বজন কে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখিন করে। 

তৃতীয়ত: আত্মহত্যার দ্বারা প্রাণে বাঁচা যায় না বরং উল্টো কঠিনভাবে ফেঁসে যায়। তবে ঐ ব্যক্তির জন্য কি পরিমাণ ক্ষতি এবং হতাশাজনক বিষয় হবে, শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে আত্মহত্যা করে নিজেকে কবর 

ও হাশরের শাস্তি এবং জাহান্নামের হকদার করে নেয়। আর এটা কেমন ব্যক্তিত্বহীন আচরণ, নিজে আত্মহত্যা করে নিকটাত্মীয়দের গলায় দূর্নামের ও লজ্জার মালা পড়িয়ে নিজে বিদায় নেয়। এমনকি নিজে শত্রুদেরকেও খুশি করা। অতএব, আপনি মাদানী কল্পনা তৈরির মাধ্যমে অভিশপ্ত শয়তানকে একেবারে নিরাশ করে দিন। নিজের ঈমান আক্বিদার উপর অটল থাকার দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে অভিশপ্ত শয়তানকে এ বলে মুখ ফিরিয়ে দিন যে, আমি কেন আত্মহত্যা করব? আত্মহত্যা করলে আমার বিপদ। 

আমার প্রতিপালকের উপর তাে আমার ভরসা, ভরসা, পূর্ণ ভরসা রয়েছে। আত্মহত্যাতাে সে ব্যক্তিই করবে যে আল্লাহ্ তাআলার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়। আল্লাহ্ তাআলার রহমত অনেক বড়। তিনি আমার সকল কষ্ট দূর করবেন। আমি গুনাহগার কে তিনিই একমাত্র কোন হিসাব-নিকাশ ছাড়া ক্ষমা করবেন। এরপরও প্রকাশ্যভাবে যদি মনের ব্যথা দূরীভূত না হয়, তারপরও আমি আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির উপর সন্তুষ্ট আছি। আত্মহত্যা করে নিজের আখিরাত বরবাদ করে, হে অভিশপ্ত শয়তান! তােকে আমি কখনাে খুশী করব না। 


৭টি রুহানী চিকিৎসা


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দুশ্চিন্তার সম্পর্ক কলবও রুহের সাথে। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে এবং কলবের প্রশান্তির জন্য কিছু রূহানী চিকিৎসা জেনে নিন: 

(১) দুশ্চিন্তার চিকিৎসা 

لَا حَوۡلَ وَلَا قُوَّةَ اِلِّا بِا للّٰهِ الۡعَلِیِّ الۡعَظِیۡم 

 প্রতিদিন ৬০ বার পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে পান করুন। اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ সকল প্রকার দুশ্চিন্তা দূর হবে। মনের ভীতির জন্য এ আমল খুবই উপকারী। 


(২) রিযিকে বরকতের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপত্র 


যদি আপনি বেকারত্বের শিকার হয়ে হতাশ হয়ে থাকেন, নিম্নে প্রদত্ত আমল করুন: যেমন- হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন সা’দ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বর্ণনা করেন: এক ব্যক্তি হুযুর পুরনুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর নিকট অভাব অনটনের অভিযােগ করে। তিনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন তুমি ঘরে প্রবেশ কর এমতাবস্থায় ঘরে কেউ অবস্থান করলে সালাম দিয়ে প্রবেশ কর। 

অতঃপর আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করাে এবং একবার “ قُلۡ هُوَاللّٰهُُ শরীফ” পাঠ করাে। ঐ ব্যক্তি উক্ত আমল করল আর আল্লাহ্ তাআলা তাকে এমন সম্পদশালী করলেন যে, তিনি বিভিন্নভাবে প্রতিবেশীদেরকেও আর্থিক সহযােগীতা করতে লাগলেন। (আল-জামেউ লি আহকামিল কুরআন লিল-কুরতুবী, ১০তম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর) 


(৩) ঘরের সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আমল। 


আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: ঘরের সকল সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য জুমার নামাযের পর “লাহােরী লবণে” এক হাজার এক বার یَا وَدُوۡدُ পাঠ করে শুরু ও শেষে দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করুন, তখন থেকে লবণের পাত্রটি মাটিতে রাখবেন না। আদবের সাথে আলমিরা, টেবিল ইত্যাদিতে উঁচু জায়গায় রাখবেন উক্ত লবণ সাত দিন পর্যন্ত ঘরের সকল রান্নাকৃত তরকারীতে দিবেন। সবাই খাবেন। আল্লাহ তাআলা সকলের মধ্যে একতা সৃষ্টি করবেন। প্রত্যেক শুক্রবার সাত দিনের জন্য পাঠ করে নিবেন। (ফতােওয়ায়ে রবিয়া, ২৬তম খন্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা) 


(৪) কষ্টের পর সুখ 


হযরত আল্লামা ইমাম শা’রানী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ “তবকাতে কুবরা” এর মধ্যে হুজুর গাউছে আযম رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ নিম্নোক্ত পবিত্র বানী বর্ণনা করেন: প্রাথমিক অবস্থায় আমি খুবই কষ্টের শিকার হয়েছিলাম। যখন কষ্ট সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছত তখন অক্ষম হয়ে মাঠিতে লুঠিয়ে পড়তাম এবং আমার মুখ থেকে কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত দু'টি পবিত্র আয়াত জারী হয়ে যেত।


فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ۙ﴿۵﴾

اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا ؕ﴿۶﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। 

(পারা: ৩০, সূরা: আলামনাশরাহ্, আয়াত: ৫,৬) 

 اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ

উক্ত প্রবিত্র আয়াতের বরকতে আমার সকল দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেত। (আত্তবিকাতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকির বৈরুত) 


বিপদগ্রস্থ ও রােগাক্রান্ত রােগীর উচিত, ছরকারে গাউছে আযম رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর উক্ত আমলকে স্মরণ করে অস্থির হলে জমীনে শুয়ে যাবে এবং সূরা আলাম নাশরাহ এর উল্লেখিত ৫ ও ৬নং আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ্ তাআলা চাইলে হুজুর গাউছে আযম رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর উসীলায় মুশকিল আসান হয়ে যাবে। 


মেরে মুশকীলাে কো তু আছান করলে, 

মেরে গাউছ কা ওয়াসেতা ইয়া ইলাহী।


(৫) অবৈধ প্রেম থেকে মুক্তি পাওয়ার আমল 

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡم ط لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنۡتَ سُبۡحٰنَك

اِنِّیۡ كُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ۞ اَللّٰهُ نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ  

لَا تَاۡخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوۡمٌ۞ 

অযু সহকারে উক্ত আয়াতে করীমাটি তিনবার (শুরু ও শেষে একবার দরূদ শরীফ সহ) পাঠ করে পানিতে ফুক দিয়ে পান করবেন। এ আমল ৪০ দিন পর্যন্ত করবেন। নামাযের ধারাবাহিকতা অবশ্যই জরুরী।

মাদানী ফুল: যদি কেউ অবৈধ প্রেমে ফেঁসে যায়। তখন তার ধৈর্য ধারণ করা উচিত। বিবাহের পূর্বে সাক্ষাৎ বরং শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ, চিঠি প্রেরণ, পরস্পর কথােপকথন, মােবাইলে আলাপ ইত্যাদি সকল শরীয়াত বিরােধী কাজ যা অবৈধ প্রেমের কারণে সংঘঠিত হয়, তা হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। নিজের অবৈধ প্রেমের জন্য আল্লাহর পানাহ! হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ও জুলাইখা এর ঘটনাকে দলীল বানানাে চরম অজ্ঞতা ও হারাম। মনে রাখবেন! প্রেম জুলাইখার পক্ষ থেকে ছিল,হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর সত্তা তা থেকে সম্পূর্ণ পূতঃপবিত্র ছিল। প্রত্যেক নবী নিস্পাপ। অবৈধ প্রেম সম্পর্কিত শিক্ষনীয় অভাবনীয় তথ্য জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১৯২ পৃষ্ঠার কিতাব “পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর” অধ্যয়ন করুন। 

(৬) ঋণ থেকে মুক্তির ওযীফা 

اَللّٰهُمَّ ا كۡفِنِیۡ بِحَلَالِكَ عَنۡ حَرَامِكَ وَاَغۡنِنِیۡ بِفَضۡلِكَ عَمَّنۡ سِوَاكَ ۞

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে শুধুমাত্র হালালের সাথে থাকার এবং নিজ দয়া, অনুগ্রহে তুমি ছাড়া অন্য কারাে অমুখাপেক্ষী করে দাও।') উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের পর ১১ বার এবং সকাল-সন্ধ্যা ১০০ বার। প্রতিদিন ১০০ বার (শুরু ও শেষে একবার দরূদ শরীফ) পাঠ করুন। উক্ত দোয়া সম্পর্কে হযরত সায়্যিদুনা আলীউল মুরতাদ্বা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: তােমাদের যদি পাহাড় পরিমাণ কর্জ থাকে তবে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ (এই দোয়ার বরকতে) কর্জ পরিশােধ হয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৫৭৪)। 


সকাল সন্ধ্যার পরিচয়


অর্ধ রাত থেকে সূর্যের প্রথম কিরণ আলােকিত হওয়া পর্যন্ত সময় হচ্ছে সকাল। আর জোহরের ওয়াক্ত শুরু হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়কে সন্ধ্যা বলা হয়। (আল ওযীফাতুল করীমা, ৯ পৃষ্ঠা)। 


(৭) রিযিক ও কর্জ পরিশােধের জন্য (দুটি ওযীফা)। 

(ক) یَا مُسَبِّبَ الۡاَسۡبَاب :- ৫০০ বার (শুরু ও শেষে ১১ বার দরূদ শরীফ) এ আমল নামাযী ইসলামী ভাই ও বােনেরা ইশার নামাজের পর খােলা মাথায় খােলা আসমানের নীচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাঠ করবে। (এমন স্থানে আমল করবে যেখানে গাইরে মুহরিম ও কারাে ঘরে দৃষ্টি না পড়ে) 

(খ) یَا بَاسِطُ :- প্রতিদিন ফযরের নামাযের দোয়ার পর দশবার (শুরু ও শেষে একবার দরূদ শরীফ) পাঠ করে উভয় হাতে (ফুক) দিয়ে উভয় হাত মুখে বুলিয়ে নিবেন। 

মাদানী মুকতা: আহ! যদি রিযিক বৃদ্ধির মুহাব্বতের পরিবর্তে সৎকাজের বরকত লাভের ব্যাপারে আফসােস করত। আর তার জন্য ও কিছু আমল করত। 

মাদানী পরামর্শ: ওযীফা শুরু করার পূর্বে কোন সুন্নী আলিম অথবা ক্বারী সাহেব কে শুনিয়ে নিবেন। 

মাদানী আবেদন: এ রিছালাটিতে বর্ণনা কৃত যে কোন ওযীফা যদি পাঠ করতে চান। তাহলে শুরু করার পূর্বে ছরকারে গাউছে আযম رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর প্রতি ইছালে সাওয়াবের নিয়্যতে ১১ টাকা অথবা ১১১ 

টাকা এবং কাজ সমাধা হওয়ার পর ছরকারে আলা হযরত ইমাম আহমদ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর ইছালে সাওয়াবের জন্য (কোন সুন্নী আলিমের পরামর্শে) ২৫ অথবা ১২৫ টাকার ধর্মীয় কিতাব বন্টন করুন। (টাকার কম বেশি করাতে কোন সমস্যা নেই।)। 


اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ الۡمُرۡسَلِيۡنَ اَمَّابَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيۡطٰنِ الرَّجِیۡم ط 

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡم ط



"আত্মহত্যার প্রতিকারের মাদানী বাহার

ভয়ংকর দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল


১৪২৫ হিজরীতে সংঘটিত আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার (সাহরায়ে মদীনা,মদীনাতুল আউলিয়া মুলতান) কিছু দিন পর আমীরে আহলে সুন্নাত , এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এক ব্যক্তি পাঞ্জাব থেকে বাবুল মনীনা করাচী আসে, তার বর্ণনার সারাংশ

কিছুটা এই রকম: আমি একজন A.C. কোচের ড্রাইভার। বিভিন্না দুশ্চিন্তা আমার অবস্থাকে খুবই শােচনীয় করে দিয়েছিল। শয়তান আমাকে মাতাল করে আমার এই মনমানসিকতা বানিয়ে নিয়েছিল যে, দুনিয়াবাসী সবাই নাফরমান ও অকৃতজ্ঞ। আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে কিন্তু একা নয় বরং অনেককে সাথে নিয়ে মরতে হবে। এজন্য আমি এটা ঠিক করলাম যাত্রীভর্তি কোচকে অতিদ্রুত বেগে চালিয়ে গভীর গর্তে ফেলে সকল যাত্রী সহ নিজেকে শেষ করে দিব।

এমন পরিস্থিতিতে যাত্রী নিয়ে ইজতিমা (সাহারায়ে মদীনা, মুলতান শরীফ) আসার সৌভাগ্য নসীব হল। যেন আমার জন্যই "আত্মহত্যার প্রতিকার" নামাক বয়ান হয়েছিল। শুনে আমি আল্লাহ তাআলার ভয়ে কেঁপে উঠলাম। আমি ভালভাবে বুঝলাম, আত্মহত্যা করার দ্বারা প্রাণে বাঁচা যায় না বরং ফেসে যায়। আমি সত্য অন্তরে তাওবা করি, বয়ানকারীর নাম ও ঠিকানা নিয়ে এখন আপনার নিকট দোআ নেওয়ার জন্য হাজির হয়েছি। এমনকি সে দোআ করিয়ে নেয় এবং নামাযের পাবন্দি, সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ, মাদানী কাফেলা সমূহে সফর ইত্যাদি ইত্যাদি ভাল ভাল নিয়্যত করে কান্নারত অবস্থায় ফিরে যায়।


এই বয়ান "আত্মহত্যার প্রতিকার" এর ক্যাসেট মাকতাবাতুল মদীনা থেকে সংগ্রহ করুন এবং সকল ঘরের সদস্যদেরকে শুনান এবং বিপদগ্রস্থ লোকদেরকে শুনার জন্য পেশ করুন।

 اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ

 এই বয়ানকে প্রয়ােজন অনুসারে পরিবর্তন সহকারে রিসালা আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে। অধিক সংখ্যক ক্রয় করে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ, দুখী এবং রােগাক্রান্ত বরং

সকল মুসলমানদের মাঝে বন্টন করুন। যদি এই রিসালা পাঠ করে কোন একজন মুসলমানও আত্মহত্যা করার ইচ্ছা ত্যাগ করে এবং আত্মহত্যা করা থেকে বিরত থাকে, তবে

اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلّ আপনার উভয় জাহানে কামিয়াবী অর্জিত হবে। (মাকতাবাতুল মদীনা মজলিশ)


মাকতাবাতুল মদীনার বিভিন্ন শাখা


ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, জনপথ মােড়, সায়দাবাদ, ঢাকা। মােবাইল: ০১৯২০০৭৮৫১৭


কে, এম, ডবন, দ্বিতীয় তলা, ১১ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। মােবাইল: ০১৮১৩৬৭১৫৭২, ০১৮৪৫৪০৩৫৮৯


ফাযানে মদীনা জামে মসজিদ, নিয়ামতপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী। মােবাইল: ০১৭১২৬৭১৪৪৬


E-mail: bdmaktabatulmadina26@gmail.com


bdtarajim@gmail.com, Web: www.dawateislami.net

Top