কুকুরকে পানি পানকারীনি ক্ষমা প্রাপ্ত হলো
রহমত প্রার্থীগণ! যখন আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতে চান তখন নেকী বাহ্যিকভাবে যতই ছোট হোক না কেন, তিনি সেই কারণেই অনুগ্রহ প্রদান করেন। যেমনটি এক মহিলাকে শুধুমাত্র একারণেই ক্ষমা করা হয়েছে যে, সে এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ছিলো। (বুখারী, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩২১) এক হাদীসে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর মহান বাণী হচ্ছে: "এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে একটি গাছ এজন্যই সরিয়ে দিয়েছে, যেন লোকেরা এর জন্য কষ্ট না পায়। আল্লাহ তায়ালা খুশী হয়ে তাকে


রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "তোমরা যেখানেই থাকো আমার উপর দরূদে পাক পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী)

ক্ষমা করে দিলেন।” (মুসলিম, ১৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৯১৪) অপর এক সহীহ হাদীসে ঋণ আদায়ে নম্রতা অবলম্বনকারী এক ব্যক্তিকে মুক্তি প্রদানের ঘটনাও এসেছে। (বুখারী, ২য় খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৭৮) আল্লাহ তায়ালার রহমতের ঘটনাবলী সংকলন করতে গেলে তা এতো বেশি হবে যে, একত্রিত করা অসম্ভব হয়ে যাবে।

মুছদা বাদ এ্যয় 'আ'ছিয়ো! শাফে'য়ে শাহে আবরার হে, তাহনিয়াত এ্যয় মুজরিমো। জা'তে খোদা গাফ্ফার হে।

(হাদায়িকে বখশিশ, ১৭৬ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد

تُوبُوا إِلَى اللهِ اسْتَغْفِرُ الله

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد

আযাব থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখন আল্লাহ তায়ালা দয়া করতে চান তখন এমনও কারণ বানায় যে, যেকোন একটি আমলকে নিজের দরবারে কবুলিয়্যতের মর্যাদা প্রদান করেন, অতঃপর এরই ভিত্তিতে তার প্রতি রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন। সুতরাং এখন একটি হাদীসে মোবারাকা পেশ করা হচ্ছে, যাতে এমন অসংখ্য লোকের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা কোন না কোন নেকীর কারণে আল্লাহ তায়ালার পাকড়াও থেকে বেঁচে গেছে আর আল্লাহ তায়ালার রহমত তাদেরকে আবৃত করে নিয়েছে। যেমনটি হযরত সায়্যিদুনা আব্দুর রহমান বিন সামুরা رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; একদা হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম, শাহে বনী আদম صَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم তাশরীফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন: "আজ রাতে আমি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেছি যে,

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেলো, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেলো।" (তাবারানী)

(১) এক ব্যক্তির রুহ কবয করার জন্য মালাকুল মওত )عَلَيْهِ الضَّلُوةُ وَالسَّلام( আসলো, কিন্তু তার মাতা পিতার আনুগত্য সামনে এসে গেলো এবং সে বেঁচে গেলো।

(২) এক ব্যক্তিকে কবরের আযাব ঘিরে ফেললো, কিন্তু তার ওযু (রূপী নেকী) তাকে রক্ষা করলো।

(৩) এক ব্যক্তিকে শয়তান ঘিরে ফেললো, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার যিকির (করার নেকী) তাকে বাঁচিয়ে নিলো।

(৪) এক ব্যক্তিকে আযাবের ফিরিশতারা ঘিরে নিলো, কিন্তু তাকে (তার) নামায রক্ষা করলো।

(৫) এক ব্যক্তিকে দেখলাম যে, প্রচন্ড পিপাসায় জিহ্বা বের হয়ে ছিলো আর একটি হাওযে পানি পান করার জন্য যেতো, কিন্তু তাকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো, এর মধ্যে তার রোযা এসে গেলো (আর এ নেকী) তাকে পরিতৃপ্ত করে দিলো।

(৬) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যেখানে আম্বিয়ায়ে কিরাম ( عَلَيْهِمُ الضَّلُوةُ وَالسَّلام) বৃত্তাকারে বসে ছিলেন, সেখানে তাঁদের নিকট যেতে চাচ্ছিলো, কিন্তু তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো, এর মধ্যে তার ফরয গোসল (করা) এলো আর (তার এ নেকী) তাকে আমার নিকটে বসিয়ে দিলো।

(৭) এক ব্যক্তিকে দেখলাম যে, তার সামনে পেছনে, ডানে বামে, উপরে নিচে অন্ধকারই অন্ধকার এবং সে অন্ধকারে হতভম্ব ও পেরেশান, তখন তার হজ্ব ও ওমরা এসে গেলো আর (এ নেকী) তাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে পৌঁছিয়ে দিলো।

(৮) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে মুসলমানদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলো, কিন্তু কেউ তার সাথে কথা বলছিলো না, তখন আত্মীয়তার বন্ধন (অর্থাৎ

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।" (মুসলিম শরীফ)

আত্মীয়দের প্রতি সদ্ব্যবহার করা নেকী) মু'মিনদেরকে বললো: তোমরা তার সাথে কথাবার্তা বলো। সুতরাং মুসলমানরা তার সাথে কথা বলতে শুরু করলো।

(৯) এক ব্যক্তির শরীর ও চেহারার দিকে আগুন এগিয়ে আসছিলো আর সে তার হাত দ্বারা তা দূর করছিলো, তখন তার সদকা এসে গেলো এবং তার সামনে ঢাল হয়ে গেলো আর তার মাথার উপর ছায়া হয়ে গেলো।

(১০) এক ব্যক্তিকে 'যাবানিয়্যা' (অর্থাৎ আযাবের বিশেষ ফিরিশতারা) চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেললো কিন্তু তার أَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ وَنَهُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ (অর্থাৎ সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎকাজে বাধা প্রদান) এর নেকী এসে উপস্থিত হলো এবং তা তাকে রক্ষা করলো এবং রহমতের ফিরিশতাদের হাতে সোপর্দ করে দিলো।

(১১) এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যে হাঁটুর উপর ভর করে বসা ছিলো, কিন্তু তার এবং আল্লাহ তায়ালার মধ্যভাগে পর্দা রয়েছে, অতঃপর তার সৎচরিত্র আসলো, এই (নেকী) তাকে রক্ষা করে নিলো এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে মিলিয়ে দিলো।

(১২) এক ব্যক্তিকে তার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হচ্ছিলো, তখন তার খোদাভীতি এসে গেলো এবং (এই মহান নেকীর বরকতে) তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হলো।

(১৩) এক ব্যক্তির নেকীর ওজন হালকা হচ্ছিলো, কিন্তু তার দানশীলতা এসে গেলো এবং নেকীর ওজন ভারী হয়ে গেলো।

(১৪) এক ব্যক্তি জাহান্নামের কিনারায় দাঁড়ানো ছিলো; কিন্তু তার খোদাভীতি এসে গেলো এবং সে বেঁচে গেলো।

(১৫) এক ব্যক্তি জাহান্নামে পতিত হলো; কিন্তু তার খোদাভীতিতে পতিত অশ্রু এসে গেলো আর (এ অশ্রুর বরকতে) সে বেঁচে গেলো।


রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করো, নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জন্য পবিত্রতা।" (আবু ইয়ালা)

(১৬) এক ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে ছিলো এবং গাছের ডালের মতো কাঁপছিলো; কিন্তু তার আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভাল ধারণা এসে গেলো, এবং (এই নেকী) তাকে রক্ষা করলো আর সে পুলসিরাত অতিক্রম করে নিলো।

(১৭) এক ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে চলছিলো, তখন তার নিকট আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা এসে গেলো এবং (এই নেকী) তাকে দাঁড় করিয়ে পুলসিরাত পার করিয়ে দিলো।

(১৮) আমার উম্মতের এক ব্যক্তি জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছলো, তখন তা তার জন্য বন্ধ ছিলো, তখন তার رَائِ إِلَّا الله মর্মে সাক্ষ্য দেয়া এসে গেলো এবং তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হলো আর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। চোগলখোরীর কষ্টদায়ক শাস্তি

(১৯) কিছু মানুষের ঠোঁট কাটা হচ্ছিলো, আমি জিব্রাইল عَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلام জিজ্ঞাসা করলাম: এরা কারা? তখন তিনি বললেন: এরা মানুষের মাঝে চোগলখোরী করতো।

গুনাহের অপবাদের ভয়ঙ্কর শাস্তি
(২০) কিছু মানুষকে তাদের জিহবার সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো, আমি জিব্রাইল )عليه الصَّلُوةُ وَالسَّلام( কে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন: এরা মানুষের বিরুদ্ধে গুনাহের অপবাদ দিতো।"

(শরহুস সূদূর, ১৮২-১৮৩ পৃষ্ঠা)

কোন নেকীই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! পিতামাতার আনুগত্য, ওযু, নামায, আল্লাহ তায়ালার যিকির, হজ্ব ও ওমরা, আত্মীয়তার বন্ধন,

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।" (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল)

اَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ )সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান), সদকা, সৎচরিত্র, দানশীলতা, খোদাভীতিতে কান্না করা, তদুপরি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভাল ধারণা ইত্যাদি নেকীর কারণে আল্লাহ তায়ালা আপন বান্দাদের প্রতি দয়া করেন এবং কষ্ট ও আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে এটা হচ্ছে তাঁর অনুগ্রহ ও বদান্যতার ব্যাপার, তিনি মালিক ও মুখতার, যাকে চান ক্ষমা করে দেন, যাকে চান শাস্তি দেন, এসবই তাঁর ন্যায় বিচার। যেভাবে তিনি কোন নেকীর প্রতি খুশী হয়ে আপন দয়ায় ক্ষমা করে দেন, সেভাবেই কোন গুনাহের কারণে যখন তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে যান তখন তাঁর কহর ও গযবে জোশ চলে আসে, অতঃপর তাঁর পাকড়াও খুবই কঠোর হয়ে থাকে। যেমনটি এখন উল্লেখিত দীর্ঘ হাদীসের শেষভাগে চুগলখোরদের এবং অন্যদের প্রতি গুনাহের অপবাদ প্রদানকারীর পরিণতি কিরূপ হলো। সুতরাং বুদ্ধিমান হচ্ছে সে-ই, যে বাহ্যিকভাবে কোন ছোট নেকী হলেও তা বর্জন করে না, কেননা হতে পারে এই নেকীই মুক্তির উপায় হয়ে যায়, পক্ষান্তরে বাহ্যিকভাবে গুনাহ যতোই সামান্য হোক না কেন, তা কখনোই করে না।

صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد

صَلُّوا عَلَى الْحَبِيْب

আসসালামু আলাইকুম। 
ডাউনলোড করুন ইসলামী বিশ্বকোষ ও আল-হাদিসঃ https://play.google.com/store/apps/details?id=com.srizwan.bookhozur500
Top