কিতাবঃ দুনিয়া আমাদের কি দিয়েছে?
29-March-2018
সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার
সুন্নাতে ভরা বয়ান
(Bangla) (For Islamic Brothers)
টেক্সট রেডি: মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
প্রত্যেক মুবাল্লিগা বয়ান করার পূর্বে কমপক্ষে তিনবার পাঠ করুন
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ الۡمُرۡسَلِيۡنَ اَمَّابَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيۡطٰنِ الرَّجِیۡم ط
بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡم ط
اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَیۡكَ یَا رَسُوۡلَ اللّٰه
وَعَلٰى اٰلِكَ وَاَصۡحٰبِكَ يَا حَبِيۡبَ اللّٰه
اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَیۡكَ یَا نَبِیَّ اللّٰه
وَعَلٰى اٰلِكَ وَاَصۡحٰبِكَ يَا نُوۡرَ اللّٰه
দরূদ শরীফের ফযীলত
নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আজ জিব্রাঈল আমিন عَلَیۡهِ السَّلَام আমার নিকট এসে সংবাদ দিলাে যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم যে কেউ আপনার প্রতি একবার দরূদ পাক পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশবার রহমত প্রেরণ করেন, দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন আর যে কেউ আপনার প্রতি সালাম প্রেরণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দশবার সালাম প্রেরণ করেন। (মুসনাদে আহমদ, ৫/৫০৯, হাদীস নং-১৬৩৫২)
উন পর দুরূদ জিন কো কসেঁ বে কাসাঁ কাহিঁ উন পর সালাম জিন কে খবর বে খবর কি হে
(হাদায়িকে বখশীশ, ২০৯ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে বয়ান শ্রবণ করার পূর্বে কিছু ভালাে ভাল নিয়্যত করে নিই।
প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "نِیَّةُ الۡمُؤۡمِنِ خَیۡرٌ مِّنۡ عَمَلِهٖ" মুসলমানের নিয়্যত তার আমল অপেক্ষা উত্তম।(মু'জামুল কাবীর, সাহাল বিন সা'আদ, ৬/১৮৫, হাদীস: ৫৯৪২)।
দুটি মাদানী ফুলঃ
(১) ভালাে নিয়্যত ছাড়া কোন উত্তম কাজের সাওয়াব পাওয়া যায় না।
(২) ভালাে নিয়্যত যত বেশি হবে, সাওয়াবও তত বেশি পাওয়া যাবে।
বয়ান শ্রবণ করার নিয়্যত সমূহ
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়্যতের মাঝে পরিবর্তন করা যেতে পারে।
* দৃষ্টিকে নত রেখে গভীর মনােযােগ সহকারে বয়ান শ্রবণ করবাে।
* হেলান দিয়ে বসার পরিবর্তে ইলমে দ্বীনের সম্মানার্থে যতক্ষণ সম্ভব দু’যানু হয়ে বসবাে।
* প্রয়ােজনে সামনে এগিয়ে অন্য ইসলামী বােনদের জন্য জায়গা প্রসারিত করবাে।
* ধাক্কা ইত্যাদি লাগলে ধৈর্যধারণ করবাে, ধমকানাে, ঝগড়া করা বা বিশৃংখলা করা থেকে বেঁচে থাকবাে।* تُوۡبُوۡا اِلَی اللّٰه, , اُذۡكُرُ اللّٰه, صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب ইত্যাদি শুনে সাওয়াব অর্জন এবং আওয়াজ প্রদানকারীনীর মনতুষ্টির জন্য নিম্নস্বরে উত্তর প্রদান করবাে।
* বয়ানের পর নিজেই আগে এসে সালাম ও মুসাফাহা এবং ইনফিরাদী কৌশিশ করবাে।
* বয়ানের সময় অযথা মােবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবাে।
* বয়ান রেকর্ড করবাে না এবং এমন
কোন প্রকার আওয়াজ করবাে না যার অনুমতি নেই। যা কিছু শুনবাে, তা শুনে এবং বুঝে এর উপর আমল করবাে আর তা পরে অপরের নিকট পৌঁছিয়ে নেকীর দাওয়াতকে প্রসার করবাে।
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
দুনিয়ার প্রতি ভালবাসার পরিনাম
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৫১০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “আল্লাহ ওয়ালাে কি বাঁতে” ৪র্থ খন্ডের ৮৫ নম্বর পৃষ্ঠায়
রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বা رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর গমন এমন এক লােকালয় (Colony) এর পাশ দিয়ে হলাে, যেখানকার সকল মানুষ ও জ্বিন, পশু পাখি, সকল চতুষ্পদ প্রাণী এবং পােকা মাকড় মরে গেছে, তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন, অতঃপর নিজের হওয়ারীদের (অনুসারিদের) দিকে ফিরলেন এবং বললেন: এরা সবাই আল্লাহ তায়ালার আযাবের কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে, যদি এরূপ না হতাে, তবে একত্রে সবাই মরতাে না। অতঃপর তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام সেই মৃতদের আহ্বান করলেন: হে লােকালয়ের অধিবাসিরা! তাদের মধ্যে একজন উত্তর দিলাে: লাব্বাইক হে রুহুল্লাহ! অর্থাৎ হে রুহুল্লাহ! আমি উপস্থিত। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের গুনাহ কিরূপ ছিলাে? সে বললাে: আমরা শয়তানের উপাসনা এবং দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষন করতাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের শয়তানের উপাসনা কিরূপ ছিলাে? সে বললাে: আমরা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতার অনুসরন করতাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেনঃ তােমাদের দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা কেমন ছিলাে? সে বললাে: এরূপ, যেমন শিশু তার মাকে ভালবাসে, যখন দুনিয়া আমাদের নিকট আসে তখন আমরা খুশি হতাম এবং যখন চলে যেতাে তখন আমরা দুঃখিত হতাম। পাশাপাশি আমরা দীর্ঘ আশায় মেতে ছিলাম এবং আল্লাহ তায়ালা আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টির প্রতি পরিচালিত ছিলাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের এই অবস্থা কিভাবে হলাে? সে বললাে: আমরা রাত ভালভাবেই অতিবাহিত করলাম এবং সকালে হাবিয়ায়। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: হাবিয়া কি? সে বললাে: সিজ্জিন। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: সিজ্জিন কি? সে বললাে: পুরাে দুনিয়ার ন্যায় আগুনের একটি কয়লা, এতেই আমাদের সকলের রূহ দাফন করে দেয়া হলাে। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমার সাথীরা কেন কথা বলছে না? সে বললাে: তার কথা বলার শক্তি নেই। বললেন: এর কারণ কি? সে বললাে: তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি ; عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তবে তুমি আমার সাথে কিভাবে কথা বলছাে অথচ তুমিও তাে তাদের দলে? সে বললাে: নিশ্চয় আমি তাদের দলে, তবে তারা যে অবস্থায় ছিলাে, আমি
সেই অবস্থায় ছিলাম না, যখন বিপদ আসলাে তখন তাদের সাথে আমাকেও ঘিরে নিলাে এবং এখন আমি হাবিয়ায় একটি চুলের সাথে ঝুলে আছি, আমি জানি না যে, আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, নাকি আমি মুক্তি পাবাে। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام তাঁর অনুসারীদের বললেন: আমি সত্য বলছি, যবের রুটি খাওয়া, পরিস্কার পরিছন্ন পানি পান করা এবং আবর্জনার স্তুপে কুকুরের সাথে ঘুমানাে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য নিঃসন্দেহে যথেষ্ট। (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ওয়াহাব বিন মুনাব্বাহ, ৪/৬৪, নম্বর-৪৭৬২)
মওত আ'কর হি রাহে গী ইয়াদ রাখ!
জান জা কর হি রাহেগি ইয়াদ রাখ!
গর জাহাঁ মে সাে বরস তু জি ভি লে!
কবর মে তনহা কিয়ামত তক রহে।
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৭১১ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা!
বর্ণনাকৃত বিভিষীকাময় ঘটনায় দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষণকারীদের জন্য নসিহত ও শিক্ষার অসংখ্য মাদানী ফুল বিদ্যমান। যাকেই দেখি সে-ই দুনিয়ার পেছনে চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছে, প্রচুর সম্পদ, অঢেল জমিজমা, ফ্যক্টরী, হােটেল, পেট্রোল পাম্প, শপিং মল, মার্কেট, ফ্লাট বাড়ি, বাংলাে এবং আলিশান গাড়ি থাকার পরও মানুষের লিপ্সা (Greed) শেষ হওয়ার নামও নেয় না। আমরা একটি ভাবি যে, আমরা দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষণকারীদের শিক্ষনীয় পরিনতি থেকে উদাসিন হয়ে যায়নি তাে? আমরা কি সর্বদা এই দুনিয়াতেই থাকবাে? আমরা কি মাগফিরাতের বার্তা পেয়ে গেছি? আমরা কি পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর আগত আযাবকে ভূলে গেছি? আমাদের কি রােজ মৃত্যু বরণ করা মানুষ থেকে শিক্ষা অর্জিত হয় না? আমরা কি অসুস্থতার কারণে বিছানায় ছটফটকারীদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করিনা? আমরা অন্তিম সময়ের কঠোরতা সহ্য করতে পারবাে? আমরা কি সংকীর্ণ ও অন্ধকার কবরকে ভূলে গেছি? আমরা কি কবরের সাপ, বিচ্ছূ এবং পােকা মাকড় থেকে মুক্তির উপলক্ষ্য করে নিয়েছি? আমরা কি মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছি? কিয়ামতের দিনের হিসাব নিকাশের প্রস্তুতি কি আমরা নিয়ে নিয়েছি? যাইহােক নিরাপত্তা এতেই নিহিত যে, আমরা যতদিন দুনিয়ায় থাকবাে, ততদিন দুনিয়ার জন্য এবং যতদিন কবর ও আখিরাতে থাকবাে ততদিন কবর ও আখিরাতের প্রস্তুতিতে যেনাে ব্যস্ত থাকি, হাসিখুশি মানুষ হঠাৎ মৃত্যুর শিকার হয়ে দেখতে দেখতেই অন্ধকার কবরে পৌঁছে যায়, এমনিভাবে আমাদেরও মরতে হবে, অন্ধকার কবরে নামতে হবে এবং নিজেদের কর্মফল ভােগ করতে হবে।
দৌলতে দুনিয়া কে পীছে তু না জা
আখিরাত মে মাল কা হে কাম কিয়া?
মালে দুনিয়া দোজাহাঁ মে হে ওবাল
কাম আয়ে গা না পেশে যুল জালাল
(ওয়াসায়িল বখশীশ, ৭০৯-৭১০ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
শয়তানের ফাঁদ
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়ার ভালবাসা শয়তানের এমন একটি ফাঁদ,যাতে আটকা পরে মানুষ নেক কাজ সমূহ থেকে দূরে হয়ে যায়, যেমন; প্রথমত মুস্তাহাব সমূহ থেকে দূরত্ব, অতঃপর সুন্নাত থেকে উদাসিনতা, এরপর ফরয ও ওয়াজিব সমূহ বর্জন করার অভ্যাস এবং ধীরে ধীরে হারাম কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। নামায বর্জন করার অভ্যাস হয়ে যায়, মিথ্যা বলা, গীবত করা, অপরের মনে কষ্ট দেয়া, গান বাজনা শুনা এবং বিভিন্ন হারাম এবং নাজায়িয কাজে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। তাছাড়াও দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা আপনজনদেরকে ভূলে যায়, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা অকৃত্রিম বন্ধুদের থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা গরীবদের নিকৃষ্ট এবং নগন্য মনে করতে থাকে, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা কৃপণ (Miser) হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা অহঙ্কারের আপদে লিপ্ত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিদের প্রতি নসিহত প্রভাব বিস্তার করে না, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা হালাল ও হারামের পার্থক্য করতে পারে না, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা হুকুকুল্লাহ (আল্লাহ তায়ালার হক) এর পাশাপাশি হুকুকল ইবাদ (বান্দার হক) থেকে উদাসিন হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা চুরি, লুটতরাজ এবং ডাকাতির সম্মুখিন হয়ে যায়। মােটকথা দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিপদাপদে লিপ্ত হয়ে যায়। দুনিয়ার প্রতি প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা ব্যক্তিরা যদি দুনিয়ার আসল রূপ সম্পর্কে জানতাে তবে কখনাে এর প্রতি মন লাগাতাে না। কোরআনে করীমের বিভিন্ন আয়াতে মুকাদ্দাসায় দুনিয়ার আসল রূপ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি ২৭তম পারার সূরা হাদীদের ২০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
اِعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا لَعِبٌ وَّ لَہۡوٌ وَّ زِیۡنَۃٌ وَّ تَفَاخُرٌۢ بَیۡنَکُمۡ وَ تَکَاثُرٌ فِی الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَوۡلَادِ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: জেনে রাখো, দুনিয়ার যিন্দেগী তাে নয়, কিন্তু খেলাধুলা, সাজসজ্জা, তােমাদের পরস্পরের মধ্যে গর্ব প্রদর্শন করা এবং সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে একে অপরের চেয়ে অধিক চাওয়া মাত্র। (পারা ২৭, সুরা হাদীদ, আয়াত ২০)
বর্ণনাকৃত আয়াতে মুবারাকার আলােকে সিরাতুল জিনানে লিখা হয়েছে: এই আয়াতে দুনিয়ার আসল রূপ বর্ণনা করা হচ্ছে, যেনাে মুসলমান এর দিকে ঝুঁকে না পরে, কেননা দুনিয়া খুবই কম উপকার প্রদানকারী এবং দ্রুত ধ্বংসশীল। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া সম্পর্কে পাঁচটি বিষয় বর্ণনা করেছেন, (১ ও ২) দুনিয়ার জীবন তাে শুধু খেলাধুলা মাত্র, যা কিনা শিশুদের কাজ এবং শুধুমাত্র তা অর্জনে পরিশ্রম করতে থাকা সময় ক্ষেপন করা ছাড়া আর কিছু নয়। (৩) দুনিয়ার জীবন হচ্ছে সৌন্দৰ্য্য এবং আরাম আয়েশের নাম, যা কিনা মহিলাদের শােভা। (৪ ও ৫) দুনিয়ার জীবন হচ্ছে পরস্পর অহঙ্কার ও গর্ব করা এবং সম্পদ ও সন্তানে একে অপরের চেয়ে আধিক্য চাওয়ার নাম এবং যেখানে দুনিয়ার এই অবস্থা এবং এতে এরূপ মন্দকাজ সমূহ বিদ্যমান, তবে এতে মন লাগানাে এবং তা অর্জন করার চেষ্টা করতে থাকার পরিবর্তে ঐসকল কাজে লিপ্ত হওয়া উচিৎ, যাদ্বারা পরকালিন জীবন সজ্জিত হয়ে যায়। (সীরাতুল জিনান, ৯/৭৪০)
আসুন! এবার দুনিয়ার আসল রূপ সম্পর্কে বুযুর্গানে দ্বীনদের رَحِمَهُمُ اللّٰهُ الۡمُبِیۡن কয়েকটি বাণী শ্রবণ করি:
শয়তানের মেয়ে
হযরত সায়্যিদুনা আলী খাওয়াস رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: দুনিয়া হচ্ছে অভিশপ্ত শয়তানের মেয়ে এবং দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষনকারী প্রত্যেক ব্যক্তি তার মেয়ের স্বামী (অর্থাৎ জামাতা), ইবলিশ তার মেয়ের কারণে ঐ দুনিয়াদার ব্যক্তির নিকট আসা যাওয়া করতে থাকে, সুতরাং আমার ভাইয়েরা! যদি তুমি শয়তান থেকে নিরাপদে থাকতে চাও, তবে তার মেয়ের (অর্থাৎ দুনিয়ার) সাথে সম্পর্ক (Relationship) করােনা। (আল হাদীকাতুন নাদীয়া, ১/১৯)
নীল চক্ষুবিশিষ্ট কুৎসিত বৃদ্ধা
হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল বিন আয়ায رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন, হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا বলেন: কিয়ামতের দিন একজন নীল চক্ষুবিশিষ্ট খুবই কুৎসিত বৃদ্ধা, যার দাঁর সামনের দিকে বের হওয়া থাকবে, মানুষের সামনে প্রকাশিত হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে: একে চিনাে? মানুষরা বলবে: আমরা তার পরিচয় পাওয়া থেকে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বলা হবে: এ হলাে সেই দুনিয়া, যার জন্য তােমরা গর্ব করতে, এর কারণেই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে, এরই কারণে একে অপরের প্রতি হিংসা এবং শত্রুতা করতে। অতঃপর তাকে (বৃদ্ধার আকৃতিতে দুনিয়া) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সে বলবে: হে পরওয়ারদিগার! আমাকে অনুসরনকারীরা এবং আমার দল কোথায়? আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: তাদেরকেও এর সাথী বানিয়ে দাও। (যম্মুদ দুনিয়া মাআ মওসুআতিল ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া, ৫/৭২, নম্বর-১২৩)
দুনিয়া কো তু কিয়া জানে ইয়ে বিস কি গাঁট হে হাররাফা
সুরাত দেখো যালিম কি তু কেয়সি ভােলি ভালি হে
মেহেদ দেখায়ে যেহের পিলায়ে, কাতিল, ডায়িন, শােহর কুশ
ইস মুরদার পে কিয়া লালছায়া দুনিয়া দেখি ভালি হে
(হাদায়িকে বখশীশ, ১৮৬ পৃষ্ঠা) ।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
(১) এই দুনিয়া প্রকাশ্যভাবে তােমার হাবাগােবা এবং সাধাসিধে মনে হয়, তুমি জাননা যে, এই জালিম দুনিয়া কিরূপ ধােকাবাজ এবং বিষাক্ততার গর্ত, সে বড় বড় ব্যক্তিত্বদের ঘর ধ্বংস এবং তরী ডুবিয়ে দিয়েছে।
(২) এই দুনিয়া জালিম ও ধােকাবাজ, মধু দেখিয়ে বিষ পান করিয়ে দেয়,তবে এরূপ মৃত দুনিয়ার প্রতি কেনইবা উৎসর্গিত হতে হবে, হাজারাে লােক একে পরীক্ষা করে নিয়েছে এবং পরীক্ষিত জিনিষকে কেনইবা আবার পরীক্ষা করতে হবে?
দুনিয়ার বাস্তবতা
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “মালফুযাতে আলা হযরত” কিতাবে আমার আক্বা আলা হযরত رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ দুনিয়ার নিন্দাবাদ সম্পর্কে লিখেছেন: হাদীস শরীফে রয়েছে: “দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি মশার ডানার সমতুল্যও হতাে, তবে এর থেকে পানির একটি বিন্দুও কাফিরদেরকে দান করতেন না।” (তিরমিযী, ৪/১৪৪, হাদীস নং-২৩২৭)
(দুনিয়াটা) নিকৃষ্ট, তাই এটি নিকৃষ্টদেরকে দান করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা যখন থেকে এই দুনিয়াকে সৃষ্টি করেন, তখন থেকে কখনও এটির দিকে তাকাননি। দুনিয়াটা আসমান ও জমিনের মাঝখানে শূণ্যেই (ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে, আর কান্নাকাটি করে করে বলছে: হে আমার রব! তুমি আমার উপর কেন অসন্তুষ্ট? (অতঃপর আ’লা হযরত বললেন) স্বর্ণ ও রৌপ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার শত্রু। যেসব লােক দুনিয়ায় স্বর্ণ রৌপ্যের প্রতি ভালবাসা রাখে, তাদেরকে কিয়ামতের দিন এভাবে আহ্বান করা হবে, কোথায় সেসব লােকেরা, যারা আল্লাহর শত্রুকে ভালবাসে! আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াকে আপন প্রিয় বান্দাদের থেকে এতই দূরে রাখেন যে, কোন মা যেমন তার অসুস্থ সন্তানকে ক্ষতিকর বস্তু হতে দূরে সরিয়ে রাখেন। (নেকীর দাওয়াত, ২১৭ পৃষ্ঠা)।
হুব্বে দুনিয়া মে দিল ফাঁস গিয়া হে
নফসে বদকার হাফি হুয়া হে
হায় শয়তাঁ ভি পীচে পড়া হে
ইয়া খােদা তুঝ সে মেরী দোয়া হে
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ১৩৪ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ বুযুর্গানে দ্বীনদের আচার আচরন আমাদের জন্য চলার পথের পাথেয়, এই ব্যক্তিত্বরা দুনিয়ার আসল রূপ সম্পর্কে ভালভাবে জানতেন। দুনিয়া তাদের দিকে আসতাে, কিন্তু তারা দুনিয়ার পরিবর্তে সর্বদা পরকালকে প্রাধান্য দিতেন। আসুন! উৎসাহ গ্রহনার্থে একটি ঈমাননাদ্দীপক ঘটনা শ্রবণ করি।
দুনিয়ার প্রতি উদাসিন খলিফা
আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ যখন খলিফা নিযুক্ত হলেন, তখন দুনিয়ার প্রতি উদাসিনতাকে অবলম্বন করে নিলেন,আরাম ও আয়েশকে ছুঁড়ে দিলেন, সুস্বাদু আহার ছেড়ে দিলেন এবং খুবই সাধারণ খাবার খেতে শুরু করলেন।
নুআঈম বিন সালামত رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন যে, আমি আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর নিকট গেলে দেখলাম যে, যয়তুনের তেল দিয়ে রুটি আহার করছেন। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮০ পৃষ্ঠা)
ইউনুস বিন শায়াব رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বর্ণনা করেন যে, আমি আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ কে খেলাফত লাভের পর এই অবস্থায় দেখলাম যে, যদি আমি চাই তবে না ছুঁয়েই তার পাজরের হাঁড়গুলাে গুনে নিতে পারতাম। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮১ পৃষ্ঠা) তাঁর গােলাম বলেন যে, একদিন আমি আমার মুনিব আমীরুল মুমিনিনের নিকট এলাম, তখন তিনি رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ মসুরের ডাল আহার করছিলেন, আমি বললাম: كُلَّ یَوۡمٍ عَدَسٌ অর্থাৎ রােজ রােজ ডাল! তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী বললেন: هَذَا طَعَامُ مَولَاكَ اَمِیۡرِ الۡمُؤۡمِنِیۡن অর্থাৎ তােমার মুনিব আমীরুল মুমিনিন رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর এটিই খাবার। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮১ পৃষ্ঠা)
বাহ! “মসুর ডাল” এর কি বরকতা!
سُبۡحٰنَ اللّٰه عَزَّ وَجَلَّ
উৎসর্গীত হয়ে যান! আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর দুনিয়ার প্রতি উদাসিনতার উপর! যিনি এতাে বড় সম্রাজ্যের খলিফা হয়েও সাধারন খাবার খেতেন, তাই আমাদেরও উচিৎ যে,আমরাও যেনাে আল্লাহ ওয়ালাদের পদাঙ্ক অনুসরন করে সাধাসিধে জীবন অতিবাহিত করি এবং ডাল সবজিও আনন্দ চিত্তে খেয়ে নিই। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ মসুরের ডালের কিরূপ শান যে, হাদীসে পাকে একে বরকতময় বস্তু বলে ঘােষণা করা হয়েছে, যেমনটি রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: তােমরা মসুরের ডাল অবশ্যই খাও, কেননা এটি বরকতময় বস্তু। যা অন্তরকে কোমল এবং অশ্রুকে বৃদ্ধি করে। এতে ৭০জন আম্বিয়ায়ে কিরামের বরকত অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের মধ্যে হযরত ঈসা عَلَیۡهِ السَّلَام অন্তর্ভূক্ত। (ফিরদাউসুল আখবার, ২/৬৭, হাদীস নং-৩৮৭৬)
ইমাম শিবলী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন যে, হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ একদিন যয়তুন, একদিন মাংস এবং একদিন মসুরের ডাল রুটি দিয়ে আহার করতেন। এক বুযুর্গ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: মসুরের ডাল এবং যয়তুন নেককারদের আহার, মুসরের ডাল শরীরের মেদ কমায় আর মেদহীন শরীর ইবাদতে সাহায্য করে, মসুরের ডাল এমন কামভাব জাগ্রত করে না, যা মাংস খাওয়াতে জাগ্রত হয়। (তাফসীরে কুরতুবী, ১/৩৪৬)।
মে কম খানা খা'নে কি আ'দত বানাওঁ
খােদা করম! ইস্তেকামত ভি পা'ও
দুনিয়া ও আখিরাত
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! এটি একটি সত্যিকার বাস্তবতা যে, অবিনশ্বর আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া অনেক দ্রুত ধ্বংসশীল, দুনিয়ার আকাঙক্ষীরা প্রকাশ্য এই দুনিয়াকে অর্জনের জন্য অনেক বেশি খুশি হয়, এর সাথে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা জুড়ে নেয়,এর রঙ তামাশায় মত্ত হয়ে যায় কিন্তু যখন হুঁশে ফিরে তখন আফসােস করতে থাকে। দুনিয়ায় অবস্থান করে যারা আখিরাতের উন্নতির চেষ্টা করে, তার দুনিয়াও উত্তম হয়ে যায় এবং আখিরাতও সজ্জিত হয়ে যায় আর দুনিয়ায় অবস্থান করে শুধুমাত্র ধন সম্পদ উপার্জনকারী আখিরাতের উপকারীতা ও প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। দুনিয়া রঙ তামাশায় মত্তরা শয়তানের প্রিয়ভাজন হয়ে থাকে, আর
আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহনকারীরা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হয়ে যায়। দুনিয়ার পথ সাধারনত কামনা ও দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার কারণে সহজ মনে হয়, কিন্তু এর পরিনতি অনেক খারাপ, আখিরাতের পথ প্রকাশ্যভাবে কঠিন মনে হয় কিন্তু এর গন্তব্য জান্নাতের সুন্দর এবং স্থায়ী স্থান। যেহেতু দুনিয়া আখিরাতে তুলনায় আমাদের অনেক নিকটবর্তী, তাই এর প্রতি মন দ্রুত আকৃষ্ট হয়ে যায় আর আখিরাত হলাে দুনিয়ার পর, তাই এর প্রতি উদাসিনতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মনে রাখবেন! দুনিয়াকে দুনিয়া বলার কারণও এটি যে, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় আমাদের বেশি নিকটবর্তী।
দুনিয়াকে দুনিয়া বলা হয় কেন?
শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রবী যিয়ায়ী دَامَتۡ بَرَكَاتُهُمُ الۡعَالِيَه তাঁর রচনা “নেকীর দাওয়াত” এর ২১২ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করেন: ‘দুনিয়া' শব্দের আভিধানিক অর্থ 'নিকটবর্তী' এবং দুনিয়াকে এ কারণেই দুনিয়া বলা হয় যে,এটি আখিরাতের তুলনায় মানুষের অতিশয় নিকটবর্তী কিংবা এ কারণে বলা হয়ে থাকে যে, নিজের স্বাদ ও কু-প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের কারণে হৃদয়ের অধিকতর নিকটবর্তী। (হাদীকতুন নদিয়া, ১/১৭)
দুনিয়া কী?
হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘উমদাতুল ক্বারী’র ১ম খন্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় লিখেন: আখিরাতের পূর্বে সমস্ত সৃষ্টিই দুনিয়া। (উমদাতুল কারী, ১ম খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা)
সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং এগুলাে দিয়ে ক্রয় করা যায় এমন সব প্রয়ােজনীয় ও অপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি বলতেই দুনিয়া বুঝায়। (হাদিকাতুন নদিয়া, ১/১৭)।
কোন প্রকারের দুনিয়া ভাল, কোন প্রকারের দুনিয়া নিন্দনীয়?
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়াবী দ্রব্যাদি তিন ধরনের: (১) সেই দুনিয়াবী দ্রব্যসামগ্রী যা আখিরাতে সহযােগীতা করে আর যেগুলাের উপকারিতা মৃত্যুর পরেও পাওয়া যায়, এ ধরনের দ্রব্য কেবলই দুইটি: ১. ইলম ও ২. আমল। আমল বলতে একনিষ্টতা সহকারে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা। (২) সেসব দ্রব্যসামগ্রী যেগুলাের উপকারিতা কেবল দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে; আখিরাতে সেসবের কিছুই অর্জিত হয়না, যেমন; গুনাহ করার মাধ্যমে স্বাদ ভােগ করা, বৈধ দ্রব্য থেকে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত উপকার গ্রহণ করা। যেমন; জায়গা-জমি, সােনা-রূপা, উন্নত পােষাক, উন্নত মানের খাবার ইত্যাদি এবং এই প্রকারটি নিন্দনীয় প্রকারের অর্ন্তভূক্ত। (৩) সেসব দ্রব্যাদি যেগুলাে নেক কাজে সহযােগিতা করে, যেমন; প্রয়ােজনীয় খাবার ও পােষাক ইত্যাদি। এই প্রকারটিও প্রশংসনীয় কিন্তু এগুলাে দ্বারা যদি দুনিয়ার সাময়িক উপকারিতা ও স্বাদ গ্রহণ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে এই দুনিয়ার দ্রব্যাদিকেও নিন্দনীয় বলা হবে। (ইহইয়াউল উলুম, ৩/২৭০-২৭১)।
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়া হচ্ছে একটি মুসাফিরখানার মতােই, যেখানে মুসাফিররা এসে অবস্থান করে এবং কয়েকদিন অবস্থান করে সেখান থেকে চলে যায়, মুসাফিরখানায় এসে কয়েকদিন অবস্থানকারীরা কখনােই সেখানে থাকাবস্থায় দীর্ঘস্থায়ীত্বের আশা করেনা এবং এর পরিবেশে মন লাগায় না। তাই আমাদেরও উচিৎ যে, আমরাও এই অস্থায়ী ঘর অর্থাৎ দুনিয়ারই হয়ে না যাই, কেননা আমাদেরতে একদিন এখান থেকে চলে যেতে হবে, আমাদের গন্তব্য এটা নয় বরং জান্নাত। আসুন নিজের অন্তরে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি বৃদ্ধি করতে এবং আখিরাতের ভাবনা উদ্ধোলিত করতে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর তিনটি বাণী শ্রবণ করি এবং নসিহতের মাদানী ফুল কুঁড়িয়ে নিই: (১) ইরশাদ হচ্ছে: যে ব্যক্তি সর্বদা দুনিয়ার চিন্তায় লিপ্ত থাকে (এবং দ্বীনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না) তবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল কাজ কঠিন করে দিবেন এবং তার দারিদ্রতা সর্বদা তার সামনেই থাকবে আর তার দুনিয়া ততটুকুই অর্জিত হবে যতটুকু তার নিয়তিতে লিখা ছিলাে এবং যার নিয়্যত আখিরাতের দিকে থাকবে তবে আল্লাহ তায়ালা তার একাগ্রতার জন্য তার কাজকে সঠিক করে দেন এবং তার অন্তরে দুনিয়ার প্রতি অগ্রাহ্যতা প্রদান করে দেন আর দুনিয়া তার নিকট সয়ংক্রিয় ভাবে এসে যায়।
(ইবনে মাজাহ, কিতাবুয যুহদ, ৪/৪২৪, হাদীস নং-৪১০৫)
(২) ইরশাদ হচ্ছে: দুনিয়া হচ্ছে তার ঘর, যার (আখিরাতে) কোন ঘর নেই এবং দুনিয়া তার জন্য সম্পদ, যার অন্য কোন সম্পদ নেই আর দুনিয়ার জন্য সেই ব্যক্তি সঞ্চয় করে, যার নিকট জ্ঞান নেই।
(শুয়াবুল ঈমান, ফসলু ফি মা বাল্লিগনা আন সাহাবাতি... ৭/৩৭৫, হাদীস নং-১০৬৩৮)।
(৩) ইরশাদ হচ্ছে: যে দুনিয়াকে ভালবাসলাে, সে নিজের আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করলাে এবং যে নিজের আখিরাতকে ভালবাসলাে, সে নিজের দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করলাে, ব্যস! তােমরা ধ্বংসশীল দুনিয়ার উপর স্থায়ী আখিরাতকে প্রাধান্য দাও।
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসনাদুল কাউফিইয়িন, হাদীস আবী মুসা আল আশআরি, ৭/১৬৫, হাদীস নং- ১৯৭১৭)
বর্ণনাকৃত হাদীসে পাকের আলােকে হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: এই মহান বাণী থেকে জানা গেলাে যে, দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের ভালবাসা একত্রে মনের মাঝে থাকতে পারে না, দুনিয়া আখিরাতের পরিপন্থি। ইমাম গাযালী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: জ্ঞান ও ঈমানের সবচেয়ে নিম্নস্তর হলাে, মানুষের জেনে নেয়া যে, দুনিয়া নশ্বর (ধ্বংসশীল) এবং আখিরাত অবিনশ্বর (স্থায়ী), এর প্রতিফল এরূপ যে, দুনিয়ায় অবস্থান করে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহন করা, দুনিয়ায় মগ্ন হয়ে না যাওয়া। (মিরাতুল মানাজি, ৭/১৮)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
দুনিয়া হচ্ছে বালির ন্যায়!
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! আপনারা শুনলেন তাে! বর্ণনাকৃত হাদীসে মুবারাকায়।দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষনকারীদের কিরূপ নিন্দা (Condemnation) বর্ণনা করা হয়েছে, সুতরাং আমাদের উচিৎ যে, শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যই যেনাে অস্থির না হই, আখিরাতের জন্যও নেকীর ভান্ডার জমা করুন, কেননা দুনিয়ার উদাহরন হলাে বালির ন্যায়, বালি দ্বারা মুষ্টি যতই বড় করে ভরে নিন না কেন, তা ধীরে ধীরে কণা কণা মুষ্টি থেকে বের হয়ে যায় এবং অবশেষে মুষ্টি খালি হয়ে যায়। এমনই অবস্থা এই ধোকাবাজ দুনিয়ার।
টাকা উপার্জন করা অতঃপর তা অসুস্থতায় ব্যয় করা
মানুষ সারা জীবন দুনিয়ার আনুগত্য করে, দুনিয়া অর্জনের টানে দিনরাত এক করে দেয়, পার্ট টাইম চাকুরী করে, ২০ ঘন্টা পর্যন্তও কাজ কর্ম করে, শুধুমাত্র
এই কারণেই যে, টাকা উপার্জন করতে হবে, মােটকথা দিন অতিবাহিত হয় এই ভেবে যে, টাকা উপার্জন করতে হবে এবং কদম বাড়ায় এই চিন্তায় যে, টাকা উপার্জন করতে হবে। কিন্তু আহ! সেই টাকা, যার জন্য নিজের শরীরের তােয়াক্কা করেনি, সেই দুনিয়া, যার জন্য দিনরাত এক করেছিলাে, সেই সম্পদ, যা পাওয়ার সংগ্রামে ওভারটাইম (Overtime) করেছিলাে, সেই ধন, যা অর্জনের জন্য হালাল হারামের তােয়াক্কা করেনি, সেই টাকা, যা পাওয়ার জন্য নিজের জীবনের মূল্যবান মাস ও বছর সমূহ নষ্ট করে দিয়েছিলাে, সেই টাকা পয়সাই কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থতায় ব্যয় হয়ে যায়। জি হ্যাঁ! বান্দা যখন বার্ধক্যে উপনিত হয় তখন বিভিন্ন রােগ বালাই স্বাগত জানানাের জন্য প্রস্তুত থাকে, এবার না সে দুনিয়ার থাকে, না আখিরাতের জন্য কিছু করতে পারে।
মৃত্যুকে ভূলােনা
দুনিয়ার ফিতনা থেকে সাবধান করে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এক বুযুর্গ এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেন: হে লােকেরা! এই অবসর সময়ে নেক আমল করে নাও এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাকো। আশায় বুক ভাসিয়াে না এবং নিজের মৃত্যুকে ভূলে যেওনা। দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পরাে না, নিশ্চয় সে ধােকাবাজ এবং ধােকা দিয়ে সঙ সেজে তােমার সামনে আসবে এবং নিজের কামনার মাধ্যমে তােমাকে ফিতনায় ফেলে দিবে, দুনিয়া তার অনুসারীদের জন্য এমনভাবে সাজে, যেমনটি নববধু সাজে। দুনিয়া তার কত যে প্রেমিককে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং যারাই এর থেকে প্রশান্তি অর্জন করতে চায়, তাকে অপদস্থ ও অপমানিত করে দেয়, সুতরাং এতে বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখাে, কেননা তা বিপদ সংকুল স্থান, এর সৃষ্টিকর্তা এর নিন্দা করেছেন, এর নতুনগুলাে পুরােনাে হয়ে যায় এবং এর আকাঙ্ক্ষীরাও মরে যায়। আল্লাহ তায়ালা তােমাদের উপর দয়া করুক, উদাসিনতা থেকে জাগ্রত হয়ে যাও এবং এর পূর্বেই ঘুম থেকে চোখ খুলে নাও যে,এভাবে ঘােষনা করা হবে: অমুক ব্যক্তি অসুস্থ এবং এর অসুস্থতা প্রবল আকার ধারণ করে নিয়েছে, কোন ঔষধ আছে কি? এবার তােমাদের জন্য ডাক্তারদেরকে ডাকা হয়েছে, কিন্তু আরােগ্যের আশা শেষ হয়ে গেছে। অতঃপর বলা হবে: অমুক অসিয়ত (Will) করেছে এবং নিজের সম্পদের হিসাব করেছে। অতঃপর বলা হবে: এবার তার কণ্ঠ ভারি হয়ে গেছে, এখন সে তার ভাইদের সাথে কথা বলবে না এবং প্রতিবেশিদেরকে চিনবে না, এবার তােমাদের কপালে ঘাম এসে গেছে, কান্নার আওয়াজ আসতে থাকবে এবং তােমার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেছে, তােমার চোখের পলক বন্ধ হতেই মৃত্যুর ধারণা সত্যে রূপান্তরিত হয়ে গেছে, তােমার বােন ভাই কান্না করছে, তােমাকে বলা হবে যে, এটা তােমার অমুক সন্তান, এটা অমুক ভাই, কিন্তু তােমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, অতএব তুমি কিছু বলতে পারবে না, তােমার মুখে মােহর মেরে দেয়া হয়েছে, যার কারণে আওয়াজ বের হচ্ছে না, অতঃপর তােমাদের মৃত্যু এসে গেলে এবং তােমার রূহ অঙ্গ থেকে পুরােপুরি বের হয়ে গেলাে, অতঃপর তাকে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলাে, সেই সময় তােমার ভাইয়েরা এসে জমা হয়ে গেছে, অতঃপর তােমার কাফন আনা হয় আর তােমাকে গােসল দিয়ে কাফন পড়ানাে হয়। এবার তােমার শুশ্রুষাকারীরা চুপ করে বসে যায় এবং তােমাকে হিংসাকারীরাও শান্তি পায়, পরিবারের লােকেরা তােমার সম্পদের দিকে মনােযােগী হয়ে যায় আর তােমার আমল সমূহ বন্ধক হয়ে যায়। (ইহইয়াউল উলুম, কিতাবু যমুদ দুনিয়া, ৩/৬২০)
দিল সে দুনিয়া কি মুহাব্বত দূর কর
আশক মত দুনিয়া কে গম মে তু বাহা
দিল নবী কে ইশক সে মামুর কর
হাঁ নবী কে গম মে খুব আঁসু বাহা
(ওয়াসামিলে বখশীশ, ৭১০ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
৮টি মাদানী কাজের মধ্যে একটি হলাে “প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনা”
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়ার ভালবাসা থেকে পিছু ছাড়াতে, আখিরাতে চিন্তার প্রেরণা বৃদ্ধি করতে এবং নেকীর প্রতি স্থায়ীত্ব পেতে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন এবং ৮টি মাদানী কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহন করুন। যেলী হালকার ৮টি মাদানী কাজের মধ্যে প্রতিদিন একটি মাদানী কাজ হচ্ছে “প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনা"য় পড়ানাে বা পড়া। প্রত্যেক যেলী হালকায় কমপক্ষে একটি প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনার ব্যবস্থা করুন, মাদরাসাতুল মদীনায় পাঠরতদের লক্ষ্য কমপক্ষে ১২জন ইসলামী বােন, (সময়সীমা সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা ১২ মিনিট) সকাল ৮টা থেকে আসরের আযান পর্যন্ত যখনই সময় হয় (পর্দা সহকারে) ব্যবস্থা করা যায়, সঠিক কোরআনে পাক পড়া শিখানাের পাশাপাশি গােসল, ওযু, নামায, সুন্নাত, দোয়া তাছাড়াও মহিলাদের শরীয়তের মাসআলা ইত্যাদি মুখস্ত বরং মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত কিতাব “ইসলামী বােনদের নামায” থেকে দেখে দেখে শেখান, প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনার “মাদানী ফুল” অনুযায়ী পরিচালনা করুন। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনায় উপস্থিতির বরকতে উত্তম সহচর্য অর্জিত হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনা এর বরকতে কোরআনে করীম পড়ার ও মুনার সৌভাগ্য অর্জিত হয়। প্রাপ্ত বয়স্কাদের মাদরাসাতুল মদীনা এর বরকতে মাদানী ইনআমাতের উপর আমল করার প্রেরণা নসীব হয়। প্রাপ্ত বয়স্কাদের মাদরাসাতুল মদীনা ইলমে দ্বীন শিখা ও শিখানােরও খুবই প্রভাবময় মাধ্যম এবং দ্বীনের বিষয় শিখার ফযীলত সম্পর্কে কি বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত সায়্যিদুনা মূসা কলিমুল্লাহ عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন: কল্যাণের বিষয় নিজেও শিখাে এবং অপরকেও শিখাও, আমি কল্যাণ শিক্ষা গ্রহনকারী এবং শিক্ষা প্রদানকারীর কবরকে আলােকিত করে থাকি, যেনাে তাদের কোন ধরনের ভয়ভীতি না হয়। (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/৬, হাদীস নং-৭৬২২)
আসুন! উৎসাহ গ্ৰহনার্থে একটি মাদানী বাহার শ্রবণ করি।
গুনাহের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি
বাবুল মদীনার (করাচী) এক ইসলামী বােন দাওয়াতে ইসলামীর সুবাশিত মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে সিনেমা নাটক দেখা, গান বাজনা
শুনার আগ্রহী ছিলাে, তাছাড়া ফ্যাশন এবং বেপর্দার ভয়াবহতায় গ্রেফতার ছিলাে। তার সংশােধনের কারণ কিছুটা এভাবে হলাে যে, একবার দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত একজন ইসলামী বােন তাকে ইনফিরাদী কৌশিশ করে দাওয়াতে ইসলামীর অধীনে প্রতিষ্ঠিত প্রাপ্ত বয়স্কাদের মাদরাসাতুল মদীনায় পড়া উৎসাহ দিলে তার পড়ার জন্য মানসিকতা তৈরি হয়ে গেলাে এবং সেই ইনফিরাদী কৌশিশের বরকতে কিছুদিনের মধ্যেই প্রাপ্ত বয়স্কাদের মাদরাসাতুল মদীনায় পড়া ব্যবস্থাও হয়ে গেলাে, যতই সময় অতিবাহিত হচ্ছিলাে তার মাখারিজ ধীরে ধীরে সঠিক হচ্ছিলাে, ইসলামী বােনদের মায়া মমতার বরকতে দাওয়াতে ইসলামীর প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি তার মনে গেঁথে গেলাে, সুতরাং সে গুনাহ থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করলাে এবং সুন্নাতে ভরা জীবন অতিবাহিত করতে দাওয়াতে ইসলামীর সুবাশিত মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাে। এখন সে اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ বয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনা পড়ানাের পাশাপাশি যেলী মুশাওয়ারাতের যিম্মাদার হিসেবে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। (আনােখি কামাই, ২৪ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
নেক আমলের গুরুত্ব
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! আফসােস! আমরা আখিরাতের চিন্তা করার পরিবর্তে দুনিয়ার রঙ তামাশায় মগ্ন রয়েছি, উন্নত মানে বাড়ি বানানােতে ব্যস্ত (Busy), আমরা আমাদের বাড়ি ঘর খুবই আলিশান ভাবে সাজাই। নিজের জীবনকে অর্থের ছড়াছড়ি, উন্নত ও উচ্চ দামি গাড়ির চমক, সুন্দর ও আলিশান অট্টালিকার আশেপাশে অতিবাহিত করতে চাই, একটু ভাবুন তাে, এই জিনিষগুলাে কতক্ষন আমাদের কাজে আসবে? এসব কি কবরে সাথে নিয়ে যেতে পারবে? আখিরাতে কি এই জিনিষগুলাের বিপরীতে নেকী অর্জিত হবে? কখনােই নয়! এই ব্যাংক ব্যালেন্স, ধন সম্পদ এবং জায়গা সম্পত্তি সবই এই দুনিয়ায় রয়ে যাবে, কবরে কিছুই কাজে আসবে না, সেখানে যদি কাজে আসে তবে তা শুধুমাত্র নেক আমলই কাজে আসবে, মুনকার নকীরের প্রশ্নাবলীতে সফলতা দিবে নেক আমলই, কবর ও হাশরে সান্তনা নেক আমলই প্রদান করবে, কবরের সংকীর্নতাকেও নেক আমলই প্রশস্ততায় পরিবর্তন করে দিবে, কবরের অন্ধকারে নেক আমলই জ্বলমল করবে, কবরের আযাবের মাঝে নেক আমলই প্রতিবন্ধক হবে এবং শুধুমাত্র কবর কেন কবরের পর হাশরের ময়দানের গরম এবং এর পিপাসা থেকে, পুলসিরাতে সফলতার সহিত অতিক্রম, হিসাব নিকাশ এবং জাহান্নামের আযাব থেকেও আমাদেরকে নেক আমলই মুক্তি প্রদান করবে, তাই নেক আমলের চিন্তা করুন।
তিন ধরনের বন্ধু
রাসূলে খােদা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: মৃত ব্যক্তির সাথে তিনটি জিনিস যায়: (১) তার পরিবারের লােকেরা (২) তার সম্পদ এবং (৩) তার আমল। অতঃপর দুটি জিনিস ফিরে আসে আর একটি তার সাথে রয়ে যায়। পরিবারের লােকেরা এবং সম্পদ ফিরে আসে আর তার আমল তার সাথে যায়। (বুখারী, কিতাবুর রিকাক, বাবু সাকারাতিল মউত, ৪/২৫০, হাদীস নং-৬৫১৪)
আর হযরত আবু হুরায়রা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত: যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন ফিরিশতারা বলে: مَا قَدَّمَ অর্থাৎ সে পূর্বে কি পাঠিয়েছে? এবং লােকে জিজ্ঞাসা করে: مَا خَلَّفَ : অর্থাৎ সে কি রেখে গেছে? (শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফিয যুহুদ ও কসর আল আমল, হাদীস নং-১০৪৭৫, ৭/৩২৮) অর্থাৎ মৃত্যুর সময় ওয়ারিশরা রেখে যাওয়া সম্পদের চিন্তায় থাকে যে, কি রেখে যাচ্ছে? এবং যে ফিরিশতা রূহ কবয করার জন্য আসে, সে আমল ও আক্বীদার হিসাব করে। (মিরাতুল মানাজি, ৭/৪৯)।
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! বুদ্ধিমত্তার চাহিদা যে, আমরা যেনাে দুনিয়া এবং এর মধ্যকার জিনিসের চিন্তা ছেড়ে দিই এবং নেক আমল অর্জনে লিপ্ত হয়ে যাই। যেই ধন সম্পদ উপার্জনের জন্য আমরা জীবন শেষ করে দিচ্ছি, এর মধ্য থেকে শুধুমাত্র এতটুকুই আমাদের, যা ব্যয় করে দিয়েছে। যা অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা আমাদের নয়, বরং ওয়ারিশদের। তাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হলাে যে, ধন সম্পদ এবং দুনিয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ছেড়ে দেয়া এবং পরিনাম সাজানাের প্রতি মনােযােগ দেয়া। এই অর্থ কারাে বিশ্বস্ততা করেনি, এটা আসলেই হাতের ময়লা, মনে করুন! যদি জীবনে কোটি কোটি টাকা জমাও করে নেয়া হয়, তবুও আমরা ততটুকুই ব্যবহার করতে পারবাে যতটুকু আমরা করতে পারি। এভাবে বুঝে নিন, যেমন কোন ব্যক্তির ক্ষুধা (Hunger) লেগেছে, সামনে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে, বিরিয়ানির সুগন্ধি মন ও মননকে মুগ্ধ করে দিচ্ছে, মন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে, মুখে পানি এসে যাচ্ছে, মন চাচ্ছে যে পুরাে পাতিলই খেয়ে নিই কিন্তু আসলে এর থেকে কতটুকুই বা খেতে পারবে। এক প্লেট বিরিয়ানিই যথেষ্ট, খুব বেশি খেলে দুই বা তিন প্লেট খাওয়ার পর আর খাওয়ার সুযােগই নেই। অনেক সময় এমন হয় যে, পেট ভরে যায় কিন্তু মন ভরেনা, ইচ্ছে করে যে, আরাে খাই, খুবই সুস্বাদু হয়েছে কিন্তু খায়না, এই কারণেই যে, খাওয়ার উপায়ও তাে নাই, পেট ভরে গেছে, আর কিভাবে খাবে, ঠিক অনুরূপভাবে আমরা যতই উপার্জন করিনা কেন, কোটি কোটি টাকা জমা করে নিইনা কেন কিন্তু এর থেকে এতটুকুই খাবাে, যতটুকুতে পেট ভরে। অনুরূপভাবে কাপড়ও ততটুকুই ব্যবহার করা হবে যতটুকু দ্বারা একটি পােষাক হয়ে, মােটকথা দুনিয়াবী সম্পদের ভান্ডার জমা নেয়া হলেও ব্যবহার ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু নিজের জন্য সম্ভব, অবশিষ্ট সবই দুনিয়ায় রয়ে যাবে। যেমনটি হাদীসে পাকে রয়েছে: নবীয়ে আকরাম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: বান্দা আমার সম্পদ আমার সম্পদ করতে থাকে, অথচ তার সম্পদ শুধুমাত্র তিনটি অংশ: প্রথমতঃ তা, যা খেয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয়তঃ তা, যা পরিধান করে ময়লা করে দেয়া হয়েছে এবং তৃতীয়তঃ তা, যা কাউকে (আল্লাহর পথে) দিয়ে দেয়া হয়েছে আর জমা করে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া যাকিছু রয়েছে সবই নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং তা অপরের জন্য রেখে যেতে হবে। (মুসলিম, কিতাবুয যুহদ ওয়ার রিকাক, ১২১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭৪২৫০)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
মহিলা ব্যবসায়ী মজলিশ!
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! এটাই বাস্তবতা যে, যা আমরা দুনিয়ায় জমা করে রেখেছি তা এখানেই রয়ে যাবে, তাই নিজের মন থেকে দুনিয়া ভালবাসা বের করতে এবং হালাল রিযিকে বরকত পেতে সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা ও খয়রাত করার অভ্যাস গড়ন, اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ এর বরকতে ধন সম্পদের ভালবাসা মন থেকে বের হয়ে যাবে। তাছাড়া অধিক উপার্জনের লালসায় হালাল ও হারামের পার্থক্য ভূলে হারাম পদ্ধতিতে উপার্জনকৃত সম্পদ দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের কারণও হতে পারে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে ব্যবসার প্রকাশ বিধান প্রদান করেছে, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে ইলমে দ্বীন থেকে দূরত্ব এবং দুনিয়ার চাকচিক্য বর্তমান সময়ের মুসলমানদের সুন্দর বিধানাবলীর প্রতি আমল করা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাই আশিকানে রাসুলের মাদানী সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর অধীনে “মহিলা ব্যবসায়ী মজলিশ” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যার কাজ ব্যবসায়ী মহলের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী বােনদের ব্যবসা সম্পৰ্কীত ইসলামী শিক্ষার আলােকে আলােকিত করা, তাদের মাঝে দাওয়াতে
ইসলামীর বার্তাকে প্রসার করা এবং তাদেরকে দাওয়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত করে এই মাদানী উদ্দেশ্য “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করতে হবে اِنۡ شَاءَ اللّٰه عَزّ وَجَلَّ” এই অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার মাদানী মানসিকতা বানানাে।
আল্লাহর দয়া হয় যেনাে এই ধরাতে হে দাওয়াতে ইসলামী তােমার সাড়া পড়ে যাক!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তর থেকে দুনিয়ার ভালবাসা দূর করে দিন এবং তাঁর এবং তাঁর প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর ভালবাসা দান করুন।
اٰمِيۡن بِجَا هِ النَّبِيِّ الۡاَمين صَلَّى اللّٰهُ عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! আজকের বয়ানে আমরা শুনলাম যে,
* দুনিয়ার ভালবাসা হঠাৎ মুত্যুর কারণ হয়ে থাকে।
* দুনিয়ার ভালবাসা গুনাহে লিপ্ত করে দেয়।
* দুনিয়া হচ্ছে অভিশপ্ত শয়তানের মেয়ে।
* দুনিয়ার ভালবাসা মৃত্যু, কবর ও আখিরাতের প্রস্তুতি থেকে উদাসিন করে দেয়। * দুনিয়ার ভালবাসা উন্নত পােষাক, উত্তম খাবার এবং আলিশান বাড়ির
আকাঙ্ক্ষার কারণ হয়।
* দুনিয়ার ভালবাসা ধন সম্পদ অর্জন করার লােভ সৃষ্টি হয়।
* দুনিয়ার ভালবাসা মনের মাঝে ঘর করা যেনাে শয়তানের ফাঁদে ফেঁসে যাওয়া।
* দুনিয়ার ভালবাসা পােষনকারীদেরকে আখিরাতে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
* দুনিয়ার ভালবাসা থেকে আল্লাহ ওয়ালারা সর্বদা দূরত্ব বজায় রাখে।
করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ি
কবর মে ওয়ার না সাজা হােগী কড়ী
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৭১২ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! বয়ান শেষ করার পূর্বে সুন্নাতের ফযীলত এবং কতিপয় “সুন্নাত ও আদব” বয়ান করার সৌভাগ্য অর্জন করছি। মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসলাে সে (মূলত) আমাকে ভালবাসলাে আর যে আমাকে ভালবাসলাে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (মিশকাতুল মাসাবীহ, ২য় খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৭৫)
হালাল উপার্জনের মাদানী ফুল
প্রিয় ইসলামী বােনেরা! আসুন! হালাল রিযিক উপার্জন সম্পর্কীত কয়েকটি মাদানী ফুল শ্রবণ করার সৌভাগ্য অর্জন করি। প্রথমে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর দু’টি বাণী প্রত্যক্ষ করুন: (১) পবিত্র রিযিক উপার্জনকারীর জন্য জান্নাত রয়েছে। (মু'জামু আওসাত, ৫/৭২, হাদীস নং- ৪৬১৬)
(২) হালাল রিযিক অন্বেষণ করা ফরয সমূহ আদায় করার পরের একটি ফরয। (মু'জামু আওসাত, ১০/৭৪, হাদীস নং- ৯৯৯৩)
* মালিক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য প্রয়ােজন অনুযায়ী ইজারা (চুক্তি) সংক্রান্ত শরীয়তের মাসআলাগুলাে শিখা ফরয, না শিখলে, গুনাহগার হবে। (হালাল পন্থায় উপার্জনের ৫০টি মাদানী ফুল, ৬ পৃষ্ঠা)
* কর্মচারী রাখার সময় চাকুরীর সময়সীমা, দায়িত্ব পালনের সময়সূচী এবং বেতন ইত্যাদি প্রথমেই চূড়ান্ত ও নির্ধারিত হওয়া জরুরী। (প্রাগুক্ত, ৬ পৃষ্ঠা)
* কর্মচারী অফিসে কিংবা দোকান ইত্যাদিতে রেজিস্টার খাতায় আসা ও যাওয়ার সঠিক সময় লিখবে। কেউ যদি মিথ্যা সময় লিখে এবং ডিউটি কম করা সত্ত্বেও পূর্ণ বেতন গ্রহণ করে, তবে সে গুনাহগার হবে এবং জাহান্নামের আযাবের হকদার হবে। (প্রাগুক্ত, ৯ পৃষ্ঠা)।
* বেতন বাড়ানাের জন্য এবং প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে নিজের পদোন্নতির জন্য নকল সার্টিফিকেট নেওয়া নাজায়েয ও গুনাহ। (প্রাগুক্ত, ১০ পৃষ্ঠা)
* কর্মচারীদের উচিৎ ডিউটি কালীন সময়ে কাজের প্রতি সজাগ থাকা। অলসতা সৃষ্টিকারী কাজ থেকে বেঁচে থাকা। যেমন; রাতে দেরীতে শয়ন করা ইত্যাদি। (প্রাগুক্ত, ১০ পৃষ্ঠা)
* যেই ব্যক্তি ইজারা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, যেমন মুদাররিস, কিন্তু শুদ্ধভাবে পড়াতে পারে না, তবে তার উচিৎ তৎক্ষণাৎ (যার সাথে ইজারা করেছে তাকে) অবহিত করা। (প্রাগুক্ত, ১৩ পৃষ্ঠা)
* যদি নির্দিষ্ট সময়সীমা যেমন; ১২ মাসের জন্য চাকরীর চুক্তি হয়, তবে এখন উভয় পক্ষের সন্তুষ্টি ছাড়া চুক্তি ভঙ্গ হবে না, মালিকের অযথা ধমক দেওয়া যে, বিদায় করে দিব বা কর্মচারীর ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দেয়া সঠিক নয়, তবে হ্যা, শরয়ী অপরাগতার কারণে উভয়ের মধ্য থেকে যে কেউ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে চুক্তি শেষ করে দিতে পারবে। (প্রাগুক্ত, ১৪ পৃষ্ঠা)
* মুসলমানের জন্য অমুসলিমের নিকট এমন চাকরী করা নাজায়িয, যাকে মুসলমান অপমানিত হয়, যেমন: তার ঘর পরিস্কার করা, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা, গাড়ি পরিস্কার করা ইত্যাদি, তবে যেসকল কাজে
মুসলমানের অপমান হয় না, তা করতে পারবে। (প্রাগুক্ত, ১৫ পৃষ্ঠা)
* চৌকিদার, গার্ড বা পুলিশ ইত্যাদি যাদের কাজ জাগ্রত থেকে পাহারা দেওয়া, ডিউটির সময় যদি ইচ্ছাকৃত ঘুমিয়ে পড়ে, তবে গুনাহগার হবে আর যতটুকু সময় ঘুমিয়েছে কিংবা অলসতা করেছে, সেই পরিমাণ বেতন কর্তন করাতে হবে। (প্রাগুক্ত, ২২ পৃষ্ঠা)।
বিভিন্ন সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনার ২টি রিসালা, ২৪ পৃষ্ঠা { সম্বলিত “১০১ মাদানী ফুল” এবং ৪৩ পৃষ্ঠা সম্বলিত “১৬৩ মাদানী ফুল” উপযুক্ত মূল্যে সংগ্রহ করে পাঠ করুন।