❏ ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ


ফরজ নামাজের পরে পবিত্র কুরআন থেকে আয়াতুল কুরসি পাঠের বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস রয়েছে, ইমাম নাসাঈ, ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,

أَخْبَرَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ بِشْرٍ، بِطَرَسُوسَ، كَتَبْنَا عَنْهُ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حِمْيَرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ 

-“হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করবে তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ব্যতীত কিছুই বাধা থাকবে না।”

(ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৯৮৪৮; ইমাম আবু নুয়াইম: আখবারু ইছবাহান, হাদিস নং ১৩৬৫; ইমাম নাসাঈ: আমালু ইয়াওমি ওয়া লাইলাতি, হাদিস নং ১০০; ইমাম ইবনু সুন্নী: আমালু ইয়াওমি ওয়া লাইলাতি, হাদিস নং ১২৪; মেসকাত শরীফ, ৮৯ পৃঃ হাদিস নং ৯৭৪; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪৮ পৃঃ; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ৪৫৮ পৃঃ; ইমাম তাবারানী: আদ-দোয়া, হাদিস নং ৬৭৪; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ২৭৩৩; ইমাম মুনজেরী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১ম খন্ড, ৬৪১ পৃঃ; আবু উমামা (রাদ্বিঃ)’র সনদটি সহীহ্।) 


এ বিষয়ে আরেকজন সাহাবী থেকেও হাদিস বর্ণিত রয়েছে। যেমন ইমাম আবু বকর বায়হাক্বী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,

أَخْبَرَنَا عَلِيٌّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَبْدَانَ حدثنا أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدٍ، حدثنا أَبُو عُمَارَةَ الْمُسْتَمْلِي، حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ الضَّوْءِ يَعْنِي ابْنَ الصَّلْصَالِ بْنِ الدَّلْهَمَسِ، حدثنا أَبِي، أَنَّ أَبَاهُ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ لَمْ يَكُنْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ، فَإِذَا مَاتَ دَخَلَ الْجَنَّةَ

-“মুহাম্মদ ইবনু দ্বাউই (رحمة الله عليه) তিনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনার পিতা সাহাবী হযরত ছালছাল ইবনু দালহামাশ (رضي الله عنه) হাদিস বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, সে এবং জান্নাতের মাঝে মৃত্যু ব্যতীত কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা। যখন সে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”  (ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ২১৬৭;)


হাদিসটি হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত রয়েছে। যেমন ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,

أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي الْقَاسِمُ بْنُ غَانِمِ بْنِ حَمُّويَهِ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ مُعَاذٍ، حدثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ الصَّبَّاحِ، حدثنا أَبِي، حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو الْقُرَشِيُّ، عَنْ نَهْشَلِ بْنِ سَعِيدٍ الضَّبِّيِّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيِّ، عَنْ حَبَّةَ الْعُرَنِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَعْوَادِ الْمِنْبَرِ يَقُولُ: مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِهِ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمَوْتُ،

-“হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে মিম্বরের উপরে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, সে এবং জান্নাতের মাঝে মৃত্যু ব্যতীত কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা।”(ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ২১৭৪;) 


তবে আলী (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েত সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله عليه) বলেছেন, যা খতিবে তিবরিজী (رحمة الله عليه) উল্লেখ করেছেন,

رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان وَقَالَ إِسْنَاده ضَعِيف 

-“ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله عليه) আলী (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন ইহা সনদ দ্বায়িফ।”(মেসকাত শরীফ;) 


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله عليه) হযরত আলী (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েত সম্পর্কে বলেছেন, اعْلَمْ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ -

“জেনে রাখুন এই হাদিস দ্বায়িফ, যা ফাজাইলে আমলের ক্ষেত্রে ইহা আমল করা যাবে।”(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪৮ পৃঃ;) 


তবে এ বিষয়ে হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েতটি সহীহ্। যেমন ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) উল্লেখ করেছেন,

وَقَالَ الْحَافِظُ الْمُنْذِرِيُّ: وَرَوَاهُ النَّسَائِيُّ، وَالطَّبَرَانِيُّ بِأَسَانِيدَ أَحَدُهَا صَحِيحَةٌ 

-“হাফিজ মুনজিরী (رحمة الله عليه) বলেন, ইমাম নাসাঈ ও তাবারানী একাধিক সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন, এর একটি সনদ সহীহ।”(মেরকাত, ৩য় খন্ড, ৪৮ পৃঃ;) 


আল্লামা হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله عليه) হযরত আলী (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েত প্রসঙ্গে বলেন, قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: لَكِنْ لَهُ شَاهِدٌ صَحِيحٌ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، -

“হাফিজ ইবনে হাজার (رحمة الله عليه) বলেন: কিন্তু ইহার সাক্ষ্য হিসেবে হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে সহীহ্ রেওয়ায়েত রয়েছে।”  (ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪৮ পৃঃ;)


হাদিসটি হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকেও ভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে। যেমন লক্ষ্য করুন, ইমাম তাবারানী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ هَاشِمٍ الْبَغَوِيُّ، ثنا كَثِيرُ بْنُ يَحْيَى، ثنا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ الرَّقَاشِيُّ، ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ حَسَنِ بْنِ حَسَنٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ كَانَ فِي ذِمَّةِ اللهِ إِلَى الصَّلَاةِ الْأُخْرَى

-“আব্দুল্লাহ ইবনু হুসাইন ইবনে হুসাইন (رضي الله عنه) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে অপর নামাজের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর যিম্মায় থাকবে।”(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২৭৩৩; ইমাম তাবারানী: আদ দোয়া, হাদিস নং ৬৭৪;)


সুবহানাল্লাহ! ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠের কি মহান ফজিলত। আফছুছ!! ওহাবীরা সরলমনা মুসলমানদের ধোকা দিয়ে বলছে ‘ফরজ নামাজের পর কোন কিছুই নেই’। অতএব, ফরজ নামাজের পর দোয়া করা জায়েয’তো বটেই বরং সুন্নাতে রাসূল। তবে অনেকের প্রশ্ন হল, দোয়া করা জায়েয বটে কিন্তু ঐ দোয়া কি হাত উঠিয়ে করতে হবে নাকি হাত না উঠিয়ে করা যাবে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।


যে সকল সাহাবী থেকে ফরজ নামাজের পর দোয়ার হাদিস বর্ণিত হয়েছে ঐ সকল সাহাবীগণের নামের তালিকা নিচে দেওয়া হল:-

  • হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه),

  • আবু হুরায়রা (رضي الله عنه),

  • মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه),

  • ইবনে উমর (رضي الله عنه),

  • ছাওবান (رضي الله عنه),

  • উকবা ইবনে আমের (رضي الله عنه),

  • আব্দুল্লহ ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه),

  • আলী ইবনে আবু তালেব (رضي الله عنه),

  • মুগিরা ইবনে শুবা (رضي الله عنه),

  • আবু আইয়ুব আনছারী (رضي الله عنه),

  • ইবনে মুসলীম ইবনে হারেছ ইবনে মুসলীম (رضي الله عنه),

  • ছালছাল ইবনু দালহামাশ (رضي الله عنه)

  • আবু রেমছা (رضي الله عنه) ও 

  • তাবেঈ জাফর ইবনে মুহাম্মদ ছাদিক (رضي الله عنه)

Top