❏ ইলিয়াস (عليه السلام)
মূসা ও হারূন (عليه السلام)-এর ঘটনা বর্ণনার পর আল্লাহ তাআলা সূরা আসসাফ্‌ফাতে ইরশাদ করেনঃ

(وَإِنَّ إِلۡیَاسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ۝ إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦۤ أَلَا تَتَّقُونَ ۝ أَتَدۡعُونَ بَعۡلࣰا وَتَذَرُونَ أَحۡسَنَ ٱلۡخَـٰلِقِینَ ۝ ٱللَّهَ رَبَّكُمۡ وَرَبَّ ءَابَاۤىِٕكُمُ ٱلۡأَوَّلِینَ ۝ فَكَذَّبُوهُ فَإِنَّهُمۡ لَمُحۡضَرُونَ ۝ إِلَّا عِبَادَ ٱللَّهِ ٱلۡمُخۡلَصِینَ ۝ وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِ فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ ۝ سَلَـٰمٌ عَلَىٰۤ إِلۡ یَاسِینَ ۝ إِنَّا كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُحۡسِنِینَ ۝ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِینَ)[Surat As-Saaffat ১২৩ - ১৩২]

অর্থাৎ, ইলিয়াসও ছিল রাসূলদের একজন। স্মরণ কর, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না? তোমরা কি বা’আলকে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে সেই শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা আল্লাহকে, যিনি প্রতিপালক তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের পূর্ব পুরুষদের। কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, কাজেই তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে। তবে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাদের কথা স্বতন্ত্র। আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ইলিয়াসের (ইলিয়াস ও তার অনুসারীদের) ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে আমি সকর্ম পরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। সে ছিল আমার মুমিন বান্দাদের অন্যতম। (সূরা সাফ্‌ফাত ১২৩-১৩২)

বংশ পরিচয় বিশারদগণ বলেন, তিনি ছিলেন ইলিয়াস তাশাবী। আবার বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন ইবন ইয়াসীন ইবন ফিনহাস ইবন আল ঈযার ইবন হারূন (عليه السلام)। আবার কেউ কেউ বলেন, তিনি ছিলেন ইলিয়াস ইবন আল আযির ইবনুল ঈযার, ইবন হারূন, ইবন ইমরান (عليه السلام)। আবার কথিত আছে, তাঁকে দামেশকের পশ্চিমস্থ বা’লাবাক৮৮[এটি লেবাননের সুপরিচিত এলাকা।] -এর অধিবাসীদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল।

তিনি তাদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি আহ্বান করলেন এবং তাদের দেব মূর্তি বা‘ল-এর ইবাদত করতে তাদেরকে বারণ করলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, বা‘ল ছিল একটি মহিলার নাম। তবে প্রথমোক্ত অভিমতটিই শুদ্ধ। এজন্যই ইলিয়াস (عليه السلام) তাদেরকে বলেছিলেন।

أَلَا تَتَّقُونَ ۝ أَتَدۡعُونَ بَعۡلࣰا وَتَذَرُونَ أَحۡسَنَ ٱلۡخَـٰلِقِینَ ۝ ٱللَّهَ رَبَّكُمۡ وَرَبَّ ءَابَاۤىِٕكُمُ ٱلۡأَوَّلِینَ

অর্থাৎ— “তোমরা কি সাবধান হবে না? তোমরা কি বা‘লকে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা আল্লাহ্ তা‘আলাকে, যিনি তোমাদের প্রতিপালক ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিপালক?”

তারপর তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, তার বিরোধিতা করেছিল এবং তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। কথিত আছে যে, তিনি তাদের থেকে পলায়ন করে আত্মগোপন করেছিলেন। আবূ ইয়াকূব আযরাঈ (رحمة الله) কা’ব আহবার (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইলিয়াস (عليه السلام) নিজ সম্প্রদায়ের বাদশার ভয়ে দম পাহাড়ের নিচে গুহার মধ্যে দীর্ঘ দশ বছর আত্মগোপন করেছিলেন। ঐ বাদশাহর মৃত্যু হলে পরবর্তী বাদশাহর নিকট ফিরে এসে তিনি তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দশ হাজার লোক ছাড়া তাঁর সম্প্রদায়ের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন। বাদশাহর নির্দেশে ঐ দশহাজার লোককে হত্যা করা হয়।

ইবন আবিদ দুনিয়া (رحمة الله) দামেশকের জনৈক শায়খের বরাতে বর্ণনা করেন, ইলিয়াস (عليه السلام) তার সম্প্রদায় থেকে পলায়ন করে এক পাহাড়ের গুহায় বিশ দিন কিংবা চল্লিশ দিন যাবত আত্মগোপন করেছিলেন। কা‘বের দল তার খাবার নিয়ে আসত।

ওয়াকেদীর সচিব মুহাম্মদ ইবন সাদ (رحمة الله) মুহাম্মদ ইবন সায়িব কালবী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেনঃ সর্বপ্রথম প্রেরিত নবী হচ্ছেন ইদরীস (عليه السلام), এরপর নূহ (عليه السلام), এরপর ইবরাহীম (عليه السلام), এরপর ইসমাঈল (عليه السلام) ও ইসহাক (عليه السلام), এরপর ইয়াকূব (عليه السلام), এরপর ইউসুফ (عليه السلام), এরপর লুত (عليه السلام), এরপর হূদ (عليه السلام), এরপর সালিহ (عليه السلام), এরপর শু‘আয়ব (عليه السلام), এরপর ইমরানের পুত্রদ্বয় মূসা ও হারূন (عليه السلام), এরপর ইলিয়াস তাশাবী ইবন কাহিস, ইবন লাওয়ী, ইবন ইয়াকূব (عليه السلام), ইবন ইসহাক (عليه السلام), ইবন ইবরাহীম (عليه السلام)। নবীদের উপরোক্ত বিন্যাস সন্দেহমুক্ত নয়।

মাকহুল (رحمة الله) কা’ব (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, চারজন নবী জীবিত রয়েছেন, দু’জন যমীনে যথা ইলিয়াস ও খিযির (عليه السلام) এবং দু’জন আকাশে যথা ইদরীস (عليه السلام) ও ঈসা (عليه السلام)।

পূর্বেই ঐসব ব্যক্তির উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে। যারা বলে থাকেন, ইলিয়াস (عليه السلام) ও খিযির (عليه السلام) প্রতি বছর রমযান মাসে বায়তুল মুকাদ্দাসে একত্রিত হন। প্রতি বছর একত্রে হজ্জ করেন এবং তারা দু’জনই যমযম কুয়ার পানি এমন পরিমাণে পান করেন যে, পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাঁদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে যায়। এরূপ হাদীসও আমরা উদ্ধৃত করে এসেছি; যাতে বলা হয়েছে, “তারা দু’জন প্রতি বছর আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হন। আবার এই কথাটিও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এগুলোর কোন একটিও শুদ্ধ নয়। বরং দলীল-প্রমাণে বোঝা যায় যে, খিযির (عليه السلام) ও ইলিয়াস (عليه السلام) ইনতিকাল করেছেন।

ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ ও অন্যরা বর্ণনা করেন, যখন ইলিয়াস (عليه السلام)-কে তার সম্প্রদায় মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করল ও তাকে কষ্ট দিতে লাগল, তখন তাঁর রূহ কবয করার জন্য তিনি তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তাঁর কাছে একটি চতুষ্পদ জন্তু আসল যার রঙ ছিল আগুনের মতো। তিনি তার ওপর সওয়ার হলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে মূল্যবান নূরের পোশাক পরিধান করালেন, তাঁর পানাহারের স্বাদ তিরোহিত করলেন এবং তিনি একাধারে মানবীয়, ফেরেশতাসুলভ আসমানী ও যমীনী সত্তায় পরিণত হলেন। তিনি ইয়াসা ইবন আখতুব (عليه السلام)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন। এই বর্ণনাটি সন্দেহযুক্ত। এটা ইসরাঈলী বর্ণনা— যেগুলোকে সত্য বা মিথ্যা কোনটাই বলা যায় না। বরং এটার সত্যতা সুদূর পরাহত। আল্লাহ তাআলাই সম্যক পরিজ্ঞাত।

হাফিজ আবু বকর বায়হাকী (رحمة الله) আনাস ইব্‌ন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে একটি সফরে ছিলাম। অতঃপর আমরা একটি মনযিলে অবতরণ করলাম ও উপত্যকায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম।

তিনি দু’আ পড়ছেনঃ

اللهم اجعلني من أمة محمد صلى الله عليه وسلم المرحومة المغفورة المتاب لها.

অর্থাৎ—হে আল্লাহ! আমাকে রহমত প্রাপ্ত, ক্ষমাপ্রাপ্ত ও তাওবা কবুলকৃত উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভুক্ত করুন!

আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি উপত্যকার দিকে অগ্রসর হলাম এবং এমন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম যার উচ্চতা তিনশ’ হাতের অধিক। তিনি আমাকে বললেন- ‘তুমি কে হে?’ উত্তরে আমি বললাম, ‘আমি মালিকের পুত্র আনাস, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খাদিম।’ তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোথায়?’ আমি বললাম, “তিনি আপনার কথা শুনছেন।’ তিনি বললেন, “তুমি তার কাছে যাও এবং তাঁর কাছে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দাও এবং বল, আপনার ভাই ইলিয়াস আপনাকে সালাম দিচ্ছেন।’ আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসলাম ও তাকে এ সম্বন্ধে সংবাদ দিলাম। তিনি তার কাছে এসে তার সাথে মুলাকাত করলেন, তাঁকে আলিঙ্গন করলেন ও সালাম করলেন। অতঃপর দুজনে বসে কথোপকথন করতে লাগলেন। ইলিয়াস (عليه السلام) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি বছরে একবার খাবার খাই। আজকে আমার সেই খাওয়ার দিন। আপনিও চলুন, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি।’ বর্ণনাকারী আনাস (رضي الله عنه) বলেন, তখন আসমান থেকে দু’জনের জন্যে একটি দস্তরখান অবতীর্ণ হল। তার মধ্যে ছিল রুটি, মাছ ও স্যালারী শাক। তাঁরা উভয়ে খেলেন ও আমাকে খেতে দিলেন। এরপর উভয়ে আসরের সালাত আদায় করেন। তারপর ইলিয়াস (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) থেকে বিদায় নিয়ে মেঘমালার মধ্য দিয়ে আসমানের দিকে চলে গেলেন।

বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদীসটি দুর্বল বলে যে মন্তব্য করেছেন তাই যথেষ্ট। তাজ্জব ব্যাপার হচ্ছে এই যে, হাকিম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরী (رحمة الله) তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। যা মুস্তাদরাক গ্রন্থটিকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এই হাদীসটি জাল এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে অন্যান্য সহীহ হাদীসের পরিপন্থী। প্রথমত এই হাদীসের বক্তব্যই শুদ্ধ নয়।

কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা আদম (عليه السلام)-কে আসমানে সৃষ্টি করেছেন, যার উচ্চতা ছিল ষাট হাত–এরপর সৃষ্টিকুলের উচ্চতা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমান আকারে এসে পৌঁছেছে।

দ্বিতীয়ত, হাদীসটিতে রয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসেননি, বরং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। আর এটাও শুদ্ধ হতে পারে না। কেননা, তার পক্ষে এটাই অধিক শোভনীয় ছিল যে, তিনি নিজেই খাতিমুন্নাবীয়ীন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে এগিয়ে আসবেন।

তৃতীয়ত, হাদীসটিতে বলা হয়েছে যে, তিনি বছরে একবার পানাহার করেন অথচ অন্যত্র ওহাব ইব্‌ন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তার থেকে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পানাহারের স্বাদ রহিত করে দিয়েছিলেন।

চতুর্থত, বর্ণনাকারীদের কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি যমযম কুয়া থেকে প্রতি বছর এমনভাবে একবার পানি পান করতেন যা তাঁর পরবর্তী বছর পর্যন্ত যথেষ্ট হত।

এরূপে হাদীসে বিভিন্ন ধরনের বিপরীতধর্মী ও বাতিল তথ্যাদি পরিবেশন করা হয়েছে, যার কোনটাই সঠিক নয়। ইবন আসাকির (رحمة الله)ও এ হাদীসটি অন্য সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং তার কিছু অংশের দুর্বলতা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, তিনি এই হাদীসটি সম্বন্ধে বিরূপ সমালোচনা করলেন। অথচ তিনি নিজেই অন্য সূত্রে সবিস্তারে এটি বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে যে, এ ঘটনাটি তাবুকের যুদ্ধের সময় ঘটেছিল! আর তার কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আনাস ইব্‌ন মালিক (رضي الله عنه) ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه)-কে পাঠিয়ে ছিলেন। তারা দু’জন বলেন, তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের চাইতে দুই-তিন হাত অধিক উচ্চতাসম্পন্ন এবং উটগুলি পালিয়ে যাবার আশঙ্কার কারণে তিনি স্বয়ং মুলাকাত করতে অক্ষম বলে ওজর পেশ করেছিলেন। আবার এতে আরো রয়েছে, যখন তার সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুলাকাত করেন তখন তারা দু’জন মিলে জান্নাতী খাবার খান। তখন ইলিয়াস (عليه السلام) বলেন, আমি চল্লিশ দিনে একবার এক লোকমা খাবার খেয়ে থাকি। আর অন্যদিকে দস্তরখানে ছিল রুটি, ডালিম, আঙ্গুর, কলা, খেজুর, অন্যান্য শাক-সবজি-- তবে তাতে পিঁয়াজ-রসুন জাতীয় কিছু ছিল না। এতে আরো রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে খিযির (عليه السلام)-এর সম্বন্ধে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, আমার সাথে তাঁর সাক্ষাত করার কথা বছরের প্রথমে। তাই তিনি আমাকে বলেছেন, “তুমি আমার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তুমি আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম দিবে।” এতে বোঝা যায় যে, খিযির (عليه السلام) ও ইলিয়াস (عليه السلام) যদি বেঁচেও থাকেন এবং এ হাদীসটি যদি শুদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে নবম হিজরী পর্যন্ত সাক্ষাৎ করেননি। আর এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কাজেই এই হাদীসটিও জাল। ইবন আসাকির (رحمة الله) বিভিন্ন সূত্রে ইলিয়াস (عليه السلام)-এর সাক্ষাৎ লাভকারী বিভিন্ন ব্যক্তির বর্ণনা দিয়েছেন কিন্তু এসব বর্ণনায় দুর্বলতা ও বর্ণনাকারীরা অজ্ঞাত পরিচয় হওয়ায় তিনি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এ বর্ণনাসমূহের সর্বোত্তমটি হচ্ছে যা আবু বকর ইবন আবীদ দুনিয়া (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। তিনি ছাবিত (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মুস‘আব ইবন যুবায়র (رحمة الله)-এর সাথে কূফার শহরতলিতে অবস্থান করছিলাম। আমি একটি বাগানে প্রবেশ করলাম। সেখানে দুই রাকাত সালাত আদায় করছিলাম। আমি শুরু করলাম।

(بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ حمۤ ۝ تَنزِیلُ ٱلۡكِتَـٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلۡعَزِیزِ ٱلۡعَلِیمِ ۝ غَافِرِ ٱلذَّنۢبِ وَقَابِلِ ٱلتَّوۡبِ شَدِیدِ ٱلۡعِقَابِ ذِی ٱلطَّوۡلِۖ لَا)[Surat Ghafir ১-৩]

অর্থাৎ- হা-মীম, এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার নিকট হতে যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তিদানে কঠোর শক্তিশালী। (সূরা মু’মিনঃ ১-৩)

আমার পেছনে ছিলেন এক ব্যক্তি তিনি ধূসর বর্ণের এক খচ্চরের পিঠে সওয়ার ছিলেন। তার গায়ে ছিল ইয়ামানী চাদর! তিনি আমাকে বললেন, যখন তুমি বল غافر الذنب তখন তুমি বলবে ياغافر الذنب اغفرلي ذنبي - হে ক্ষমাকারী! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও; যখন তুমি বলবে قابل التوب তখন তুমি বলবে- يا فابل التوب تقبل توبتي হে তওবা কবুলকারী! আমার তওবা কবূল কর; যখন তুমি বলবে شد يد العقاب তখন তুমি বলবে ياشد يد العقاب لا تعاقبنى- অর্থাৎ হে শাস্তিদানে কঠোর সত্তা! আমাকে শাস্তি দিও না; যখন তুমি বলবে ذى الطول তখন তুমি বলবে- يا ذاالطول تطول علي برحمة অর্থাৎ হে শক্তিশালী প্রভু! তুমি আমার জন্য রহমতকে বাড়িয়ে দাও। তখন আমি পেছনের দিকে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না! বের হয়ে গেলাম। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ধূসর রংয়ের খচ্চরের উপর সওয়ার হয়ে ইয়ামানী চাদর গায়ে কেউ কি তোমাদের পাশ দিয়ে গিয়েছেন? তারা বলল, না আমাদের এদিক দিয়ে কেউ অতিক্রম করেনি। তখন তারা সকলে ধারণা করলেন যে, তিনি ইলিয়াস (عليه السلام)-ই হবেন।

সূরায়ে সাফ্‌ফাতে ইরশাদ হয়েছে فَکَذَّبُوۡہُ فَاِنَّہُمۡ لَمُحۡضَرُوۡنَ ﴿۱۲۷﴾ۙ এর অর্থ হচ্ছে, তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। কাজেই তাদের অবশ্যই শাস্তির জন্য উপস্থিত করা হবে। (সূরা সাফ্‌ফাতঃ ১২৭)

অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে কিংবা শুধু আখিরাতে। তাফসীরকার ও ঐতিহাসিকগণের অভিমত অনুযায়ী প্রথম অর্থটিই স্পষ্টতর। আল্লাহর বাণী الا عباد الله المخلصين -এর অর্থ হচ্ছে, তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনয়ন করেছে ও একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে গণ্য হয়েছে। আয়াতে উল্লেখিত (وَتَرَكۡنَا عَلَیۡهِ فِی ٱلۡـَٔاخِرِینَ) এর অর্থ হচ্ছে—তারপরে জগতে পরবর্তীদের মধ্যে তাঁর সুখ্যাতি অব্যাহত রেখেছি। তারা তাঁর সুনামই করে থাকে। আর এজন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ سَلٰمٌ عَلٰۤی اِلۡ یَاسِیۡنَ অর্থাৎ ইলিয়াস (عليه السلام)-এর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা সাফ্‌ফাতঃ ১৩০)

আরবগণ অধিকাংশ নামের সাথে নূনকে যুক্ত করে এবং শেষ অক্ষরকে পরিবর্তন করে পাঠ করে। যেমন তারা اسماعيل শব্দটিকে اسماعين, اسرائيل শব্দটিকে اسررئيل , اياس শব্দটিকে الياسين রূপে পাঠ করে। আর যারা سلام علي ال ياسين পড়ে থাকেন। তাদের উদ্দিষ্ট থাকে, শান্তি বর্ষিত হোক মুহাম্মদ (ﷺ)-এর পরিবার পরিজনের প্রতি।

ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) ও অন্যরা পাঠ করেনঃ سلام على ادريس ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, الياس হচ্ছেন - ادريس (অ)। এটি যাহহাক, কাতাদা ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (رحمة الله)-এর অভিমত। তবে বিশুদ্ধ মতামত হচ্ছে ادريس ও الياس ভিন্ন ভিন্ন দু’জন নবী—যেমন পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলাই সম্যক জ্ঞাত।

আল্লাহর শোকর—আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থের প্রথম খণ্ড সমাপ্ত হল। এর অব্যবহিত পরেই আসছে এর দ্বিতীয় খণ্ড, যার শুরুতে থাকবে মূসা (عليه السلام)-এর পরবর্তী বনী ইসরাঈলের নবীগণের বর্ণনা।

ইফাবা–২০০৬-২০০৭ প্র/৯৮৮৩ (উ)–৩,২৫০

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
Top