❏ ফোকাহাদের দৃষ্টিতে ইস্তেস্কা ছাড়াও অন্যান্য দোয়ায় হাত তোলা


তাই সম্মিলিত দোয়ার বিষয়ে হাফিজুল হাদিস ইমাম নববী (رحمة الله عليه) এর ফাতওয়া ও ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله عليه) এর সমর্থন লক্ষ্য করুন,

وَقَالَ النَّوَوِيّ قَالَ جمَاعَة من أَصْحَابنَا وَغَيرهم السّنة فِي كل دُعَاء لدفع بلَاء كالقحط أَن يرفع يَدَيْهِ وَيجْعَل ظهر كفيه إِلَى السَّمَاء فَإِذا دَعَا لسؤال شَيْء وتحصله جعل بطُون كفيه إِلَى السَّمَاء

-“ইমাম নববী বলেন, আমাদের ফোকাহা সাথীরা ও অন্যান্য উলামাগণ বলেছেন: বালা-মছিবতকে দূরিভ‚ত করার জন্য দুর্ভিক্ষের ন্যায় প্রত্যেক দোয়ায় দুই হাত তোলা সুন্নাত। হাতের সম্মুস্থ অগ্রভাগকে আকাশের দিকে রাখবে। যখন কোন কোন কিছু প্রার্থনার জন্য ও হাছিল করার জন্য দোয়া করবে তখন হাতের পেটের অগ্রভাগ আকাসের দিকে রাখবে।”

(ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৭ম খন্ড, ৫২ পৃঃبَاب رفع النَّاس أَيْديهم مَعَ الإِمَام فِي الاسْتِسْقَاء) 


শারিহে মুসলীম ইমাম শরফুদ্দিন নববী (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন,

كَانَ لا يرفع يده في شئ من الدعاء الا عند الاستقاء وَقَدْ ثَبَتَتْ أَحَادِيثُ كَثِيرَةٌ فِي الصَّحِيحَيْنِ وَفِي أَحَدُهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَفْعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ وَهِيَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلَاثِينَ حَدِيثًا

-“তিনি ইস্তেস্কার দোয়া ব্যতীত কোথাও হাত উঠাতেন না। অবশ্যই প্রচুর পরিমান হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে আল্লাহর নবী (ﷺ) দোয়া সময় হাঁত উঠাতেন। আর এগুলো প্রায় ৩০টির কাছাকাছি হাদিস হবে।”

(ইমাম নববী: আল মাজমুউ শরহে মুহায্যাব, ৫ম খন্ড, ৮২ পৃঃ;) 


শারিহে বুখারী ইমাম শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (رحمة الله عليه) বলেছেন,

وهل ترفع في غيره من الأدعية أم لا؟ الصحيح الاستحباب في سائر الأدعية. 

-“অন্যান্য দোয়ায় কি হাত উঠানো জায়েয? উত্তর: বিশুদ্ধ হল প্রত্যেক দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব।”

(ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃঃ ১০২৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 


শারিহুল বুখারী ইমাম শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (رحمة الله عليه) আরো বলেন:

فقال أصحابنا الشافعية وغيرهم: السنة في دعاء القحط، ونحوه من رفع بلاء، 

-“আমাদের শাফেয়ী সাথীরা ও অন্যান্য উলামাগণ বলেছেন: অনাবৃষ্টির সময়ে দোয়া এবং বালা মুছিবত থেকে রক্ষার জন্য দোয়ায় হাত তোলা সুন্নাত।”

(ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ২য় খন্ড, ২৫১ পৃঃ;) 


অতএব, ইস্তেসকা ছাড়াও অন্যান্য দোয়ায় হাত উঠানো সুন্নাত। যেমন হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) {ওফাত ১০১৪ হিজরী} উল্লেখ করেন: 

أَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي كُلِّ دُعَاءٍ 

-“নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) প্রত্যেক দোয়া দুই হাঁত উঠিয়ে করতেন।”(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১৩২ পৃঃ ২২৫৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;)  


অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ)’র হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় দোয়ার সময় দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করতে হবে। সুতরাং দোয়ার সময় দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব-সুন্নাত, কারণ দোয়ার সাথে হাঁত উঠানোর সম্পর্ক রয়েছে। যেমন: 


রইছুল মুফাচ্ছেরীন হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন:

وعن بن عباس أن هذه صفة الدعاء -

“অবশ্যই দোয়ার ছিফাত বা গুণ হল হাঁত উঠানো।(ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খন্ড, ১৫৬ পৃঃ;)


এ ব্যাপারে হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত ফকিহ্, আল্লামা কামালুদ্দিন ইবনে হুমাম (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন:  لِأَنَّ رَفْعَهَا عِنْدَ الدُّعَاءِ مُسْتَحَبٌّ-

“দোয়ার সময় দুই হাঁত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব।”(ইবনুল হুমাম: ফাতহুল কাদির, ১ম খন্ড, ৪৫১ পৃঃ; এনায়া শরহে হেদায়া;) 


দোয়ার সময় হাত উঠানো সম্পর্কে আল্লামা বুরহান উদ্দিন হানাফী (رحمة الله عليه) ও ইমাম বদরুদ্দিন আইনী হানাফী (رحمة الله عليه) বলেন, 

لأن رفع اليدين في الدعاء سنّة جاء في الحديث 

-“কেননা দোয়ার সময় দুই হাত উঠানো সুন্নাত, (এ বিষয়ে) হাদিস এসেছে।”(মুহিতুল বুরহানী, ২য় খন্ড, ১৪০; আল-বেনায়া, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃঃ;) 

সুতরাং ইস্তেস্কার নামাজ ছাড়াও অন্যান্য দোয়ার মধ্যে হাত তোলা সহীহ্ হাদিস নির্ভর ও সুন্নাত। যা প্রিয় নবীজি (ﷺ)’র আমল ও ফোকাহাদের ফাতওয়া দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।

Top