ইমাম হোসাইন (রা.) এর কারামত
🖋আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী
এ রিসালা পাঠ করার ২১টি নিয়্যত
নবী করীম نِيَّةُ المُؤْمِنِ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِه অর্থাৎ “মুসলমানের নিয়্যত তার আমলের চেয়ে উত্তম।” (তাবারানী, মুজামে কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
দুইটি মাদানী ফুল
ভাল নিয়্যত ব্যতীত কোন ভাল কাজের সাওয়াব অর্জিত হয় না। ভাল নিয়্যত যত বেশি হবে, সাওয়াবও তত বেশি হবে।
(১) প্রত্যেকবার হামদ,
(২) দরূদ শরীফ,
(৩) তা’আউয়ূজ ও
(৪) তাসমিয়্যাহ দ্বারা রিসালাটি পাঠ করা শুরু করব। (এ পৃষ্ঠার উপরে প্রদত্ত আরবী ইবারতটুকু পাঠ করলে এ চারটি নিয়্যতের উপরই আমল হয়ে যাবে।)
(৫) আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রিসালাটি শুরু থেকে শেষ পযন্ত সম্পূর্ণ পাঠ করব,
(৬) সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভব হলে ওযু সহকারে এবং,
(৭) কিবলামুখী হয়েই পাঠ করব,
(৮) কুরআনের আয়াত এবং
(৯) হাদীসে মোবারাকা মূল কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখব।
(১০) যেখানেই আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র নাম আসবে সেখানেই عَزَّوَجَلّ এবং
(১১) যেখানেই ছরকারে দো-আলম, নূরে মুজাস্সম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাম মোবারক আসবে সেখানেই صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পাঠ করব,
(১২) এই রেওয়ায়াত عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِيْنَ تَنَزَّلُ الرَحْمَةُ অর্থাৎ “নেক লোকদের আলোচনার সময় (আল্লাহ্ তাআলার) রহমত নাযিল হয়।” (হিলয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১০৭৫০) এর উপর আমল করে এ রিসালায় প্রদত্ত ইমামে আলী মকাম এবং অন্যান্য বুযুর্গানে দ্বীন عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان এর ঘটনাবলী অন্যদের নিকট আলোচনা করে ‘যিক্রে সালেহীন’ এর বরকত অর্জন করব,
(১৩) নিজের ব্যক্তিগত কপিতে প্রয়োজনে বিশেষ স্থানে আন্ডার লাইন করে নেব,
(১৪) অন্যদেরকে এ রিসালা পাঠ করার উৎসাহ প্রদান করব,
(১৫) এ হাদীসে পাক تَهَادَوْا تَحَابُّوْا অর্থাৎ “একে অপরকে হাদিয়া দাও, পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, ২য় খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৩১) এর উপর আমল করে ১০ই মুহাররামুল হারাম এর সাথে সম্পর্ক রেখে কমপক্ষে দশটি কপি অথবা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী) এ রিসালা ক্রয় করে অন্যদেরকে তোহ্ফা দিব,
(১৬) এ রিসালা পাঠ করে সাওয়াব সকল উম্মতের রূহে পৌঁছিয়ে দিব,
(১৭) এ রিসালাতে শরয়ী কোন ভূলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে, তা লিখিতভাবে প্রকাশকদেরকে অবহিত করব, (শুধু মৌখিকভাবে প্রকাশকদেরকে এর ভুল-ত্রুটি জানিয়ে দিলে বিশেষ কোন উপকার হয় না।)
(১৮) সুযোগ হলে এ রিসালা থেকে দরস প্রদান করব,
(১৯) প্রতি বছর মুহাররামুল হারাম মাসে এ রিসালা পাঠ করে নিব,
(২০) এ রিসালার যা বুঝে আসবে না, আল্লাহ্ তাআলার বানী: فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “হে লোকেরা তোমরা যদি না জান, তবে জ্ঞানীদের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পারা-১৪, সূরা-আন নাহল, আয়াত নং- ৪৩) এর উপর আমল করে আলিমদের কাছ থেকে তা জেনে নিব,
(২১) আর যা বুঝতে কষ্ট হয় তা বারবার পাঠ করতে থাকব।
কারামত পূর্ণ জন্ম
হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাঁধ মোবারকে আরোহনকারী, হযরত আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কলিজার টুকরা, মা ফাতেমার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا নয়ন মণি, সুলতানে কারবালা, সায়্যিদুশ শোহাদা, ইমামে আলী মকাম, ইমামে আরশে মকাম, ইমামে হুমাম, ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর আপাদমস্তক কারামতে ভরপুর ছিল। এমনকি তাঁর শুভ জন্মগ্রহণও কারামতে ভরপুর ছিল। হযরত সায়্যিদি আরিফ বিল্লাহ্ নূর উদ্দীন আবদুর রহমান জামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “শাওয়াহেদুন নুবুওয়াত” কিতাবে বলেছেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ৪ঠা শাবানুল মুআজ্জাম ৪র্থ হিজরী রোজ মঙ্গলবার মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণিত আছে, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মাত্র ছয় মাস পর্যন্ত তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন। হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহিয়া عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام ও ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ব্যতীত গর্ভের ছয় মাসের কোন বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর জীবিত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, পৃষ্ঠা ২২৮, মাকতাবাতুল হাকীকত, তুর্কী)
মারহাবা সারওয়ারে আলম কে পেসর আয়ে হেঁ,
সায়্যিদা ফাতেমা কে লখতে জিগর আয়ে হেঁ।
ওয়াহ্ কিস্মত কে ছেরাগে হারামাঈন আয়ে হেঁ,
এ্যয় মুসলমানো! মোবারক কে হুসাইন আয়ে হেঁ।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
চেহারাতে নূরের ঝলক
হযরত আল্লামা জামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো বলেন: “হযরত ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শান এমন ছিল যে, যখন তিনি অন্ধকার রাতে কোথাও যেতেন, তখন তাঁর পবিত্র ললাট ও উভয় পবিত্র গন্ডদেশ থেকে নূরের ঝলক বের হতো। যার ফলে তাঁর চতুর্দিকে আলোকিত হয়ে যেতো।” (প্রাগুক্ত, ২২৮ পৃষ্ঠা)
তেরি নছলে পাক মে হে বাচ্চা বাচ্চা নূর কা,
তো হে আইনে নূর তেরা ছব গরানা নূর কা
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কূপের পানি উপচে পড়ল
একদা সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মদীনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কা মুকাররামাতে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে হযরত সায়্যিদুনা ইবনে মুতী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। ইবনে মুতী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁকে আরয করলেন: “হুযুর! আমার কূপটার পানি একেবারে কমে গেছে, দয়া করে আমার কূপের পানি বৃদ্ধির জন্য একটু দোয়া করুন। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কূপটার পানি নিয়ে আসার জন্য বললেন। যখন পাত্রে করে পানি নিয়ে আসা হলো, তখন তিনি মুখ লাগিয়ে তা থেকে কিছু পানি পান করলেন এবং কুলি করলেন আর পাত্রের অবশিষ্ট পানি কূপে ঢেলে দিলেন। তখন কূপের পানি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেল এবং আগের চেয়েও সুমিষ্ট এবং সুস্বাদু হয়ে গেল। (আত্ তাবকাতুল কুবরা, ৫ম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
বাগে জান্নাত কে হে বাহরে মাদ্হা খানে আহলে বাইত
তুম কো মুজ্দা নার কা এ্যয় দুশমনানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ঘোড়া বেয়াদবকে আগুনে নিক্ষেপ করল
ইমামে আলী মকাম, ইমামে আরশে মকাম, ইমামে হুমাম, ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ১০ ই মুহাররামুল হারাম, শুক্রবার, ৬১ হিজরীতে ইয়াজিদ বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে যখন কারবালা প্রান্তরে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর মজলুম কাফিলার তাবু সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে খননকৃত খন্দকে প্রজ্জলিত আগুনের দিকে ইঙ্গিত করে (মালিক বিন উরওয়াহ নামক) এক বেয়াদব ইয়াজিদী বেপরোয়াভাবে বকাবকি করতে লাগল: “হে হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ! তুমি জাহান্নামের আগুনের পূর্বে এখানেই আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ।” তার কথার জবাবে হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: كَذَّبْتَ يَا عَدُوَّ الله অর্থাৎ- “হে আল্লাহর দুশমন! তুই মিথ্যুক।” তোর কি ধারণা, ) আল্লাহর পানাহ) আমি দোযখে যাব?” ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কাফিলার একজন নিবেদিত প্রাণ যুবক হযরত সায়্যিদুনা মুসলিম বিন আওসাজা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সেই নরাধম ইয়াজিদীর মুখে তীর নিক্ষেপের জন্য হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁকে তীর নিক্ষেপের অনুমতি না দিয়ে বললেন: “আমি আমাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা করতে চাই না।” অতঃপর ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হাত উত্তোলন করে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “হে রব্বে কাহ্হার! তুমি এ পাপিষ্ঠকে পরকালে দোযখের আগুনের শাস্তি দেয়ার পূর্বে ইহকালেও আগুনের শাস্তি প্রদান করো।” হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দোয়া সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেল। সে নরাধমের ঘোড়ার পা মাটির একটি গর্তে পতিত হয়ে ঘোড়াটি প্রচন্ড বেগে ধাক্কা খেল। ফলে সে নরাধম বেয়াদব ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে ধরাশায়ী হলো, তার পা দুটি ঘোড়ার রেকাবের সাথে আটকে গেলো। ঘোড়া তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সে খন্দকের লেলিহান আগুনে নিক্ষেপ করল। আর সে নরপিশাচ আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তার এ করুন পরিণতি দেখে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সিজদায়ে শোকর আদায় করলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করে বললেন: “হে আল্লাহ্! তোমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তুমি আমার চোখের সামনে রাসূল পরিবারের একজন দুশমনকে শাস্তি দিয়েছ।” (সাওয়ানেহে কারবালা, ৮৮ পৃষ্ঠা)
আহলে বাইত পাক ছে বে বাকীয়াঁ গুস্তাখিয়াঁ
لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْكُمْ
দুশমনানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কালো বিচ্ছু দংশন করল
রাসূল পরিবারের সদস্যদের সাথে বেপরোয়া ও বেয়াদবীপূর্ণ আচরণের করুণ ও মর্মান্তিক পরিণতি তৎক্ষণাৎ দেখার পরও বেয়াদব ইয়াজিদ বাহিনী তা থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ না করে বারবার এটাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে থাকে। এক বেয়াদব ইয়াজিদী বলল: “হে হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ! আল্লাহর রাসূলের صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাথে আপনার সম্পর্ক কী?” এটা শুনে ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মনে খুবই কষ্ট পেলেন। তাই তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “হে রব্বে জব্বার! তুমি এ বেয়াদবকেও শাস্তি দাও। সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাঁর দোয়া কবুল হয়ে গেল। আল্লাহর আযাবের প্রচন্ড আঘাতে সে হতভাগা ধরাশায়ী হলো। হঠাৎ তার পায়খানার হাজত হলো। পায়খানার বেগ সামলাতে না পেরে সে তাড়াতাড়ি ঘোড়া থেকে নেমে একদিকে দৌঁড়ে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে বসে পড়ল। হঠাৎ একটি কালো বিচ্ছু এসে তাকে দংশন করল। বিচ্ছুর বিষাক্ত ছোবলে সে ময়লা যুক্ত অবস্থায় ছটফট করতে লাগল। অতঃপর তার বাহিনীর সামনে করুণ ভাবে লাঞ্চিত হয়ে সে বেয়াদব প্রাণ হারাল। তারা এবারও এ ঘটনাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিল। (প্রাগুক্ত, ৮৯ পৃষ্ঠা)
আলী কে পিয়ারে খাতুনে কিয়ামত কে জিগর পারে
জমি ছে আসমাঁ তক ধুম হে উন কি ছিয়াদত কি।
হোসাইন বিদ্বেষীর তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু
মুজনী বংশোদ্ভূত ইয়াজিদ বাহিনীর এক পাষাণ ব্যক্তি ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সামনে এসে এভাবে বকাবকি করতে লাগল: “দেখ! ফোরাত নদীর স্বচ্ছ পানি কিভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। খোদার কসম! তোমাকে এটির এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেবনা, তুমি এভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।” ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “اَللّٰهُمَّ اَمِتْهُ عَطْشَانًا“অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্!তুমি তাকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু দাও।” ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দোয়া করার সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেল। সে নরাধম মুজনীর ঘোড়া লাগাম ছিঁড়ে দৌড় দিল। ঘোড়াকে ধরার জন্য সেও ঘোড়ার পিছনে ছুটল। দৌড়াতে দৌড়াতে সে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তীব্র পিপাসায় সে হায় পিপাসা! হায় পিপাসা! করে চিৎকার করতে লাগল। তার মুখের নিকট পানি নিয়ে পান করার জন্য বারবার চেষ্টা করার পরও সে এক ফোঁটা পানিও পান করতে পারল না। অবশেষে তীব্র পিপাসায় ছটফট করতে করতে সে মৃত্যুর মুখে পতিত হল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
হাঁ মুঝ কো রাখহো ইয়াদ মে হায়দর কা পেসর হোঁ
আওর বাগে নবুওয়্যত কে শজর কা মে চমর হোঁ
মে দিদায়ে হিম্মত কে লিয়ে নূরে নজর হোঁ
পিয়াছা হো মগর ছাকীয়ে কাওছার কা পেসর হোঁ
কারামতগুলো সত্যতা প্রমাণ করার একটি মাধ্যম ছিল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ একজন কত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জানা গেলো, তাঁর সাথে বেয়াদবী করা আল্লাহ্ তাআলা একেবারে পছন্দ করেন না, তাঁর সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধাচারীরা উভয় জাহানে ঘৃণিত ও লাঞ্চিত। হোসাইন বিদ্বেষীদের দুনিয়াতেও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হয়। তাই এতে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর বিরুদ্ধাচারী কতিপয় দুর্বৃত্তের তৎক্ষণাৎ শোচনীয় পরিণতির করুণ কাহিনী বর্ণনা করার পর লিখেছেন: আওলাদে রাসূল জগত বাসীকে এ কথাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি আল্লাহর একজন মকবুল বান্দা এবং আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের ব্যাপারে যেভাবে কুরআন হাদীসের অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে, তাঁর অসংখ্য কারামত ও অলৌকিক ঘটনাবলীও আরেকটি সাক্ষ্য বহন করে। তাই তিনি তাঁর এ কৃতিত্ব ও মহত্ত্বের বাস্তব প্রমাণ দেখিয়ে বিরুদ্ধাচারীদের সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন: “হে সমালোচনাকারীরা! তোমাদের যদি চোখ থাকে, তাহলে ভালভাবে দেখে নাও, যার দোয়া আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুহূর্তের মধ্যে কবুল হয়ে যায়, তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে আসা অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর সাথে লড়তে আসার মত। তাই এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বিরত থাকো। কিন্তু সে নরপিশাচরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করল না। এ অস্থায়ী দুনিয়ার লোভ লালসার ভূত তাদের ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে তাদেরকে অন্ধই বানিয়ে দিয়েছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
নূরের স্তম্ভ ও সাদা সাদা পাখি
ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শাহাদাতের পর তাঁর শির মোবারক থেকে অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছিল। আহলে বাইতের কাফিলার অবশিষ্ট সদস্যরা ১১ই মুহাররামুল হারাম কুফায় পৌঁছে ছিলেন। এর আগেই শোহাদায়ে কারবালার মস্তক মোবারকগুলো সেখানে পৌঁছানো হয়েছিল। ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক যুগের কলঙ্ক, নরপিশাচ ইয়াজিদী খাওলী বিন ইয়াজিদের কাছে ছিল। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক নিয়ে সে হতভাগা রাতের বেলায় কুফায় পৌঁছেছিল। কিন্তু রাজ প্রাসাদের দরজা বন্ধ থাকায় সে মস্তক মোবারক নিয়ে তার বাড়ীতে চলে এলো। সে হতভাগা নূরানী মস্তককে বেয়াদবীর সাথে মাটিতে রেখে একটি বড় পাত্র দ্বারা ঢেকে রাখল এবং তার স্ত্রী নওয়ারকে গিয়ে বলল: আমি তোমার জন্য আজীবনের ধনদৌলত নিয়ে এসেছি। তুমি গিয়ে দেখো, হোসাইন বিন আলীর মস্তক তোমার ঘরে পড়ে আছে। সে ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠল: “হে পাপীষ্ঠ! তোর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক, তুই চিরতরে ধ্বংস হয়ে যা। মানুষেরা তো স্বর্ণ-রৌপ্য, মনি-মাণিক্য নিয়ে আসে, আর তুই আমার জন্য নূর নবীর দৌহিত্রেরই পবিত্র মস্তক নিয়ে আসলি। দূর হও! আমার কাছ থেকে, তুই দূর হও! খোদার কসম! আমি আর কখনো তোর সাথে থাকব না।” এ বলে নওয়ার তার শয্যা থেকে উঠে দাঁড়াল এবং যেখানেই সে নুরানী মস্তক মোবারক রাখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে বসল। নওয়ারের বর্ণনা: “খোদার কসম! আমি দেখতে পেলাম, আসমান থেকে সে বরতন পর্যন্ত একটি নূরের স্তম্ভ ঝলমল করছিল এবং সে বরতনের চারদিকে সাদা সাদা পাখি উড়ছিল। যখন সকাল হলো খাওলী বিন ইয়াজিদ সে নূরানী মস্তক ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেলো। (আল কামিল ফিত তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)
বাহারোঁ পর হে আজ আরায়িশিঁ গুলজারে জান্নাত কি
ছুওয়ারি আনে ওয়ালি হে, শুহদানে মুহাব্বত কি।
খাওলী বিন ইয়াজিদের নির্মম পরিণতি
দুনিয়ার ভালবাসা ও ধনসম্পদের মোহ মানুষকে চিরতরে অন্ধ করে ফেলে। কিন্তু তাকে যে একদিন নির্মম পরিণতির শিকার হতে হবে তা সে ভুলে যায়। হতভাগা খাওলী বিন ইয়াজিদ দুনিয়ার লোভ লালসায় মোহিত হয়ে মজলুমে কারবালা হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক তাঁর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। কিন্তু বেশি দিন অতিবাহিত হয়নি, সে নরাধমকে অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংসভাবে এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিতে হয়েছিল। তার নির্মম পরিণতির কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে, অন্তর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শাহাদাতের কয়েক বছর পর মুখতার সখফী হযরত ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যাকারীদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যে অভিযান পরিচালনা করে, তার বর্ণনা দিয়ে সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: মুখতার আদেশ জারি করল, কারবালাতে যারা ইয়াজিদের সেনাপতি আমর বিন সাআদ এর বাহিনীতে ছিল তাদেরকে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে হত্যা করো।
মুখতারের এ আদেশ শুনে কুফার সাদ বাহিনীর বর্বর ও অত্যাচারী সৈন্যরা বসরার দিকে পালাতে শুরু করল। মুখতারের সৈন্যরাও তাদের পিছু নিলো। তারা যাকে যেখানে পেলে সেখানে হত্যা করল, তাদের মৃত দেহগুলো আগুনে পুড়ে ফেলা হল এবং তাদের ঘর-বাড়ি লুণ্ঠন করা হল। খাওলী বিন ইয়াজিদ যে হযরত ইমামে আলী মকাম, সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক তাঁর দেহ মোবারক থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, সে নরাধমও মুখতারের বাহিনীর হাতে ধরা পড়ল। তাকে গ্রেফতার করে মুখতারের নিকট আনা হলো। মুখতারের নির্দেশে তার হাত পা কেটে ফেলা হলো, তাকে শূলে চড়ানো হলো, অবশেষে তার মৃত দেহ আগুনে নিক্ষেপ করা হলো এভাবে ইবনে সাআদ এর বাহিনীর সকল সৈন্যকে বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হলো। ছয় হাজার কুফাবাসী যারা হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যায় অংশ নিয়েছিল সকলকে মুখতার বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করে ছিলো। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১২২ পৃষ্ঠা)
আয় তিসনাগানে খুনে জাওয়ানানে আহলে বাইত,
দেখা কেহ তুম কো জুলম কি কেইছি সাজা মিলি।
কুত্তোঁ কি তরেহ লাশে তোমহারে ছাড়া কিয়ে,
ঘুর পে বি নহ ঘুর তোমহারে জাঁ মিলি।
রসওয়ায়ে খলক হো গেয়ে বরবাদ হো গেয়ে,
মরদুদো তুম জিল্লত হার দো-সরা মিলি।
তুম মে উজাড়া হযরত জাহরা কা বুস্তান,
তুম খোদ উজড় গেয়ে তুমহিঁ ইয়ে বদ্ দোয়া মিলি।
দুন্য়া পরসতো দিন ছে মুহ মুড় কর তুমহে,
দুন্ইয়া মিলি নহ আইশ তরব কি হাওয়া মিলি।
আখের দেখায়া রংগ শহিদো কি খুন নে,
ছর কাট গেয়ে আমা নহ তুমহে এক জারা মিলি।
পায়ি হে কেয়া নঈম উনহোঁ নে আবি ছাজা,
বর্শা বিদ্ধ মস্তক মোবারকের কুরআন তিলাওয়াত
হযরত সায়্যিদুনা যায়েদ বিন আরকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: যখন ইয়াজিদীরা হযরত ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে কুফার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে আনন্দ করছিল তখন আমি আমার ঘরের বালাখানাতে ছিলাম। যখন মস্তক মোবারক আমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আমি শুনতে পেয়েছিলাম, মস্তক মোবারক সূরা আল্ কাহাফের ৯ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করছেন:
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:“আপনি কি অবগত হয়েছেন যে, পাহাড়ের গুহা এবং অরণ্যের পাশে অবস্থানকারীরা আমার এক বিস্ময়কর নিদর্শন ছিলো।” (সূরা- কাহাফ, পারা- ১৫, আয়াত- ৯) (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, ২৩১ পৃষ্ঠা)
অপর এক বুযুর্গ বর্ণনা করেন: যখন ইয়াজিদীরা মস্তক মোবারক বর্শা থেকে নামিয়ে হতভাগা ইবনে যিয়াদের শাহী মহলে ঢুকল, তখন তাঁর পবিত্র ওষ্ঠদ্বয় নড়তে দেখা গেল এবং তাঁর পবিত্র জবান মোবারক দ্বারা সূরায়ে ইব্রাহীমের ৪২ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করতে শুনা গেল:
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:“এবং নিশ্চয় আল্লাহকে অনবহিত মনে করো না, যালিমদের কার্যকলাপ সম্পর্কে।” (সূরা ইব্রাহিম,পারা-১৩, আয়াত-৪২) (রাওজাতুশ শোহদা মুতারজাম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৫)
ইবাদত হো তো এইছি হো, তিলাওয়াত হো তো এইছি হো
ছরে সাব্বির তো নে-জে পে বি কুরআঁ ছুনাথা হে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মিনহাল বিন আমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: খোদার কসম! আমি স্বচক্ষে দেখেছি, যখন লোকেরা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি দামেস্কে ছিলাম। শির মোবারকের সামনে এক ব্যক্তি সুরাতুল কাহাফ তিলাওয়াত করছিল। যখন সে সূরা কাহাফের ১৫ পারার ৯নং আয়াতে পৌঁছল;
أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: পাহাড়ের গুহা এবং অরণ্যের পাশে অবস্থানকারীরা আমার এক বিস্ময়কর নিদর্শন ছিলো। (সূরা- কাহাফ, পারা- ১৫, আয়াত- ৯)
তখন আল্লাহ্ তাআলা সে মস্তক মোবারককে কথা বলার শক্তি প্রদান করলেন। মস্তক মোবারক বলতে লাগল:
اَعْجَبُ مِنْ اَصْحَابِ الكَهْفِ قَتْلِى وَحَمْلِى
অর্থাৎ- “আসহাবে কাহাফের হত্যার ঘটনার চেয়েও আমার হত্যা ও আমার মস্তক নিয়ে ঘোরাফেরা করা আরো অধিক বিস্ময়কর।” (শরহুস সুদূর, ২১২ পৃষ্ঠা)
ছর শহীদানে মহব্বত কি হে, নাইজোঁ পর বুলন্দ
আউর উছে কি খোদা নে ইজ্জ শানে আহলে বাইত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সদরুল আফাযিল মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত “সাওয়ানেহে কারবালা” গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ করে বলেন: “মূল কথা হল, আসহাবে কাহাফদের উপর কাফিররা অত্যাচার করেছিল। আর হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে তাঁর নানাজানের উম্মতেরা মেহমান হিসাবে কুফাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অতঃপর তারা বিশ্বাস ঘাতকতা করে পানি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সামনেই তাঁর পরিবার পরিজন ও সঙ্গীদের নৃশংসভাবে শহীদ করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে নর পিশাচরা স্বয়ং হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে শহীদ করে দেয়। আহলে বাইত্দের বন্দী করে নিয়ে এসেছিল, শির মোবারককে বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে শহরে শহরে পরিভ্রমণ করেছিল। আসহাবে কাহাফরা শত শত বছর নিদ্রা মগ্ন থাকার পর কথা বলেছিল, এটা অবশ্যই আশ্চর্যজনক। কিন্তু শির মোবারক দেহ মোবারক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই কথা বলা আরো অধিক বিস্ময়কর ছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১১৮ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
রক্ত দিয়ে লিখা কবিতা
কুলাঙ্গার ইয়াজিদের নরপিশাচ সৈন্যরা কারবালার শহীদদের মস্তক মোবারক সমূহ নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা এক স্থানে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়েছিল। হযরত সায়্যিদুনা শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেছেন: বিশ্রাম নিয়ে তারা খেজুরের শরবত পান করছিল। অন্য এক বর্ণনাতে এসেছে, তখন তারা মদ পান করছিল। এ মুহুর্তে একটি লোহার কলম আবির্ভূত হয়ে রক্ত দিয়ে নিম্ন প্রদত্ত ছন্দটি লিখে দিল:
اَتَرْجُوْ اُمَّةٌ قَتَلَتْ حُسَيْنًا شَفَاعَةَ جَدِّهٖ يَوْمَ الْحِسَابِ
অর্থাৎ- ইমাম হোসাইন এর হত্যাকারীরা কি কখনো এ আশা পোষণ করতে পারে যে, কিয়ামতের দিন তাঁর নানাজান তাদের পক্ষে সুপারিশ করবেন? অপর বর্ণনায় আছে: হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আবির্ভাবের ৩০০ বছর পূর্বেই এ ছন্দটি একটি পাথরে লিখিত পাওয়া গিয়েছিল। (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৪ পৃষ্ঠা)
মস্তক মোবারকের কারামত দেখে পাদ্রীর ইসলাম গ্রহণ
এক খ্রীষ্টান পাদ্রী তার গীর্জা থেকে ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মস্তক মোবারক নিয়ে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করল: “এটা কার মস্তক?” তারা বলল: “এটা হোসাইনেরই মস্তক।” পাদ্রী বলল: “তোমরা খুবই নিকৃষ্ট লোক। দশ হাজার আশরাফির বিনিময়ে এ মস্তক মোবারক আমার নিকট এক রাতের জন্য রাখতে তোমরা কি রাজী আছ?” সে লোভীরা তাতে রাজী হয়ে গেল এবং দশহাজার আশরাফী নিয়ে পাদ্রীকে এক রাতের জন্য মস্তক মোবারক দিয়ে দিল। পাদ্রী তাদের নিকট থেকে মস্তক মোবারক নিয়ে ভালভাবে ধৌত করল। এতে সুগন্ধি লাগাল এবং সারারাত তা কোলে নিয়ে জাগ্রত রইল। রাতে সে মস্তক মোবারকের এক বিস্ময়কর কারামত দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে দেখতে পেল, একটি নূরের জ্যোতি মস্তক মোবারক থেকে আসমান পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠল। পাদ্রী এ অলৌকিক ঘটনা দেখে সারারাত কান্নারত অবস্থায় অতিবাহিত করল। যখন সকাল হল, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। সে গীর্জা, ধন-সম্পদ সবকিছু পরিত্যাগ করে তার বাকী জীবন আহলে বাইতের খিদমতে উৎসর্গ করে দিল। (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
দওলতে দিদার পায়ি পাক জানে বেছ কর
কারবালা মে খোভী ছমকী দুঃখানে আহলে বাইত
দিরহাম-দিনার কংকর হয়ে গেল
ইয়াজিদীরা ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সৈন্যদের এবং তাদের তাবুগুলো লুণ্ঠন করে যে দিরহাম-দিনার লাভ করেছিল এবং পাদ্রী থেকে যে আশরাফী নিয়েছিল তা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার জন্য যখন থলের মুখ খুলল, তখন দেখতে পেল সব দিরহাম-দিনার কংকরে পরিণত হয়ে গেছে এবং তার এক প্রান্তে ১৩ পারার সুরা ইব্রাহীমের ৪২ নং আয়াত:
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এবং নিশ্চয় আল্লাহকে অনবহিত মনে করো না, যালিমদের কার্যকলাপ সম্পর্কে।” (সূরা-ইব্রাহিম, পারা-১৩, আয়াত- ৪২)
এবং অপর প্রান্তে ১৯ পারার সূরা আশ শুআরা ২২৭ নং আয়াত লিখা ছিল:
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এখন যালিমগণ জানতে চায় যে, কোন্ পার্শ্বের উপর তারা পলট খাবে।” (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
তুনে উজাড়া হযরত জাহরা কা বুসতান,
তু খোদ উজড় গেয়ে তুমহে ইয়ে বদ-দোয়া মিলি।
রুসওয়ায়ে খালক হো গেয়ি বরবাদ হো গেয়ে,
মরদুদোঁ তুম কো জিল্লতে হার দো-ছরা মিলি।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটি কুদরতী ভাবে একটি বাস্তব শিক্ষণীয় বিষয় ছিল যে, হে হতভাগারা! তোমরা এ ক্ষণস্থায়ী জগতের লোভ লালসায় মত্ত হয়ে দ্বীন-ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছিলে এবং রাসূলের পরিবার পরিজনের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলে। তোমরা স্মরণ রাখো! ধর্ম হতে তোমরা একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলে এবং যে নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার লোভ লালসায় মোহিত হয়ে তোমরা ইতিহাসের এ নিষ্ঠুর বর্বরতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলে, দুনিয়াও তোমাদের হস্তগত হবে না এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছিল।
দুনিয়া পুরুস্তো দ্বিন ছে মুহ মুড় কর তোম হে,
দুনিয়া মিলি নহ আইশ তরফ কি হাওয়া মিলি।
ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানেরা যখনই দ্বীন ধর্মের পরিবর্তে এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছিল, তখনই তারা এ বেওফা দুনিয়া থেকে হাত ধুয়ে বসেছিল। আর যারা এ দুনিয়াকে লাথি মারতে পেরেছিল কুরআন ও সুন্নাহর বিধি বিধানের উপর অটল ছিল এবং দ্বীন ও ঈমান থেকে বিমূখ হয়ে পড়েনি বরং নিজের চরিত্র ও আমল দ্বারা সর্বদাই এটা প্রমাণ করে গিয়েছিল যে,
ছর কাটে কুম্ভা মেরে ছব কুছ লুটে,
দামানে আহমদ নাহ হাতো ছে ছুটে।
তবে দুনিয়াও হাত বেঁধে তার পিছনে পিছনে চলতে থাকবে এবং তারাই উভয় জগতে সফলকাম হতে পেরেছিল।আমার আক্বা আ’লা হযরত খুবই সুন্দর বলেছেন:
ওহ্ কেহ ইছ কা দরকা হুয়া খলকে খোদা উছ কি হুয়ী,
ওহ্ কেহ্ ইছ দর ছে ফিরা আল্লাহ্ উছ ছে ফির গেয়া।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
সে নূরানী মস্তক কোথায় সমাহিত করা হয়েছিল?
ইমামে আলী মকাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সে নূরানী মস্তক কোথায় সমাহিত করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। আল্লামা কুরতুবী ও হযরত সায়্যিদুনা শাহ্ আবদুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِما বলেন: ইয়াজিদ কারবালার বন্দীদের এবং ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সে নূরানী মস্তক মদীনা মুনাওয়ারাতে পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং মদীনা মুনাওয়ারাতে কাফন দিয়ে জান্নাতুল বাক্বীতে হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমা যাহরা বা হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সমাধির পাশেই সে নূরানী মস্তক সমাহিত করা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন: কারবালার বন্দীরা চল্লিশ দিন পর কারবালা প্রান্তরে এসে সে মস্তক মোবারক দেহ মোবারক সহ কারবালাতে সমাহিত করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন: হতভাগা ইয়াজিদ নির্দেশ দিয়েছিল যে, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে বিভিন্ন শহরের অলিগলিতে পরিভ্রমণ করার জন্য। পরিভ্রমণকারীরা এ পবিত্র মস্তক নিয়ে যখন আসকলান পৌঁছল, তখন সেখানকার তৎকালীন আমীর তাদের কাছ থেকে সে মস্তক মোবারক নিয়ে তথায় দাফন করেছিলেন। যখন আসকলানে ফিরিঙ্গী সম্প্রদায় জয়লাভ করল, তলায়েঈ বিন রিয্যিক নামক জনৈক ব্যক্তি (যাকে সালেহ বলা হতো), ফিরীঙ্গীদের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার দিনারের বিনিময়ে সে নূরানী মস্তক নিয়ে নিলেন। তিনি তাঁর সৈন্য সামন্ত, চাকর-বাকর সহ ৮ই জমাদিউল আখির ৫৪৮ হিজরী, রোজ রবিবার খালিপায়ে সে মস্তক মোবারক নিয়ে আসকলান থেকে মিসর চলে আসলেন। তখনও সে মস্তক মোবারকের রক্ত তাজা ছিল এবং তা থেকে মেশকের ন্যায় সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তিনি সবুজ রেশমের একটি থলেতে সে মস্তক মোবারক ভরে আবনুস কাঠের তৈরী একটি কুরসীর উপর রেখে এর নিচে ও চার পার্শ্বে এর সমপরিমাণ মেশকে-আম্বর ও সুগন্ধি রেখে তা সমাহিত করলেন এবং এর উপর “মাসহাদে হোসাইনী” নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করলেন। যা “খানে খলিলীর” নিকটবর্তী “মাসহাদে হোসাইনী” নামে আজও প্রসিদ্ধ। (শামে কারবালা, ২৪৬ পৃষ্ঠা)
কিছ শকী কি হে হুকুমত হায় কিয়া আন্ধীর হে
দিন দোহাড়ে লুট রাহাহে কারওয়ানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ফাত্তাহ্ বিন আবু বকর বিন আহমদ শাফেয়ী খালুতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত ‘নূরুল আইন’ রিসালাতে বর্ণনা করেন: শায়খুল ইসলাম শামসুদ্দিন লক্কানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যিনি তৎকালীন যুগে মালেকী মাযহাবের শিক্ষাগুরু ছিলেন,সর্বদা মাসহাদে হোসাইনীতে মস্তক মোবারকের যিয়ারতের জন্য গমন করতেন। তিনি বলতেন: হযরত ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানে অবস্থিত। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আমি ‘মাসহাদে হোসাইনী’ যিয়ারত করেছিলাম, কিন্তু আমার সন্দেহ জাগল সেখানে মস্তক মোবারক আছে কিনা? হঠাৎ আমার চোখে ঘুম চলে এল, আমি স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি নকিবের আকৃতিতে মস্তক মোবারকের কাছ থেকে বের হয়ে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর হুজরা মোবারকে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!আহমদ বিন খালবী ও আবদুল ওয়াহ্হাব আপনার শাহজাদা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত করেছেন। তখন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “ اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْهُمَا وَاغْفِرْ لَهُمَا” অর্থাৎ- হে আল্লাহ্! তুমি তাঁরা উভয়ের যিয়ারত কবুল করো এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও।”
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন; সেদিন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানেই বিদ্যমান আছেন। অতঃপর আমি মৃত্যু পর্যন্ত সে মস্তক মোবারকের যিয়ারত করা ত্যাগ করিনি। (শামে কারবালা, ২৪৭ পৃষ্ঠা)
উন কি পাকী কা খোদায়ী পাক করতা হে বয়ান
আয়ায়ে তাথহীর ছে জাহের হে শানে আহলে বাইত।
মস্তক মোবারকের সালামের জবাব
হযরত সায়্যিদুনা শেখ খলিল আবুল হাসান তমারসী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ মস্তক মোবারকের যিয়ারতের জন্য যখন মাসহাদে হোসাইনীতে উপস্থিত হতেন, তখন তিনি বলতেন: اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا اِبْنَ رَسُوْلِ الله অর্থ: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নয়নমনি! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। সাথে সাথে কবর থেকে জবাব আসত: وَعَلَيْكَ السَّلَام يَا اَبَا الْحَسَن অর্থ: হে আবুল হাসান! তোমার উপরও শান্তি বষির্ত হোক। একদিন তিনি সালামের জবাব না পেয়ে খুবই অস্থির হয়ে পড়লেন এবং যিয়ারত শেষ করে তিনি বাড়িতে চলে এলেন। পরদিন তিনি পুনরায় সেখানে গিয়ে সালাম জানালেন এবং কবর থেকে যথারীতি সালামের জবাবও শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “ইয়া সায়্যিদি! গতকাল আপনার সমধুর জবাব থেকে বঞ্চিত ছিলাম। কারণ কি?” বললেন: “হে আবুল হাসান! গতকাল এ সময় আমি আমার নানাজান, নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খিদমতে উপস্থিত হয়েছিলাম এবং তাঁর সাথে আলাপরত ছিলাম (তাই জবাব দিতে পারিনি)।” (শামে কারবালা, ২৪৭ পৃষ্ঠা)
জুদা হোতি হে জানে জিছিম ছে জানা ছে মিলতে হে,
হোয়ি হে কারবালা মে গরম মজলিসে ওয়াসাল ওফুরকত কি।
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শা’রানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: সুফী সাধকদের মতে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নূরানী মস্তক মাসহাদে হোসাইনীতে অবস্থিত। শায়খ করিম উদ্দীন খালুতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: আমি হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে মাসহাদে হোসাইনীতে মস্তক মোবারকের যিয়ারত করেছিলাম। (শামে কারবালা, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
ইছি মন্জর পে হার জানিব ছে লাখো কি নিগাহে হেঁ,
ইছে আলম কো আখিঁ তক রহি হে ছারে খলকত কি।
মস্তক মোবারকের আশ্চর্যজনক বরকত
বর্ণিত আছে; মিসরের অধিপতি সম্রাট নাসিরকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানানো হলো যে, সে শাহী মহলের কোন্ স্থানে গুপ্তধন আছে তা জানে, কিন্তু কাউকে বলে না। সম্রাট তার কাছ থেকে গুপ্তধন সম্পর্কে তথ্য বের করার জন্য তাকে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দিলেন। যাকে শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল, সে তাকে গ্রেফতার করল এবং তার মাথার উপর কয়েকটি গোবরে পোকা এবং এর উপর কয়েকটি লাক্ষা পোকা রেখে কাপড় দ্বারা মাথা বেঁধে দিল। এটা এমন এক ধরনের শাস্তি যা কোন মানুষ এক মিনিটও সহ্য করতে পারে না। যাকে এধরনের শাস্তি প্রদান করা হয় তার মস্তিষ্কের চামড়া বিদীর্ণ হতে থাকে। ফলে তীব্র যন্ত্রণায় সে গোপন তথ্য তাড়াতাড়ি বলে দেয়। আর যদি না বলে, তাহলে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে, তাকে এ শাস্তি কয়েকবার দেওয়ার পরও তার মধ্যে এর কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না এবং তাকে বিন্দুমাত্রও ঘায়েল করতে পারল না বরং প্রতিবারে পোকাগুলোই মারা গেল। লোকেরা তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, যখন হযরত ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মস্তক মোবারক মিশরে আনা হয়েছিল, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি ভক্তি সহকারে, শ্রদ্ধাভরে তা আমার মাথার উপর রেখেছিলাম। সে পবিত্রাত্মার মস্তক মোবারকের বরকত ও কারামতের কারণে আমার মধ্যে শাস্তির কোন ক্রিয়া অনুভূত হল না। (শামে কারবালা, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
ফুল জখমো কি খিলায়ি হে হাওয়ায়ে দোস্ত নে,
খুন ছে ছিঁনচা গেয়া হে গুলিস্তানে আহলে বাইত।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
বিষাক্ত কীটসমূহের পরিচিতি
জানা গেল, বরকতময় বস্তু শ্রদ্ধাভরে মাথার উপর রাখলে উভয় জগতে সফলতা লাভ করা যায়। বর্ণিত কাহিনীতে গোপন তথ্য বের করার জন্য শাস্তির উপকরণ হিসাবে মাথার উপর যে দুটি পোকা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আপনাদের সম্মুখে পেশ করা হলো।
خَنَافِس এটা خُنْفَسَا এর বহুবচন। ইহা এমন এক ধরনের পোকা যা গোবর ও আবর্জনাময় স্থানে জন্ম নিয়ে থাকে, এর রং সচরাচর কালো এবং এর দুটি শিং থাকে। উর্দূতে একে “গোবরিলা” এবং বাংলায় গোবরে পোকা বলা হয়। কিরমিয ছোট চনার সমপরিমাণ লাল রঙের রেশমের মত এক ধরনের পোকাকে বলা হয়। যা সাধারণত বর্ষাকালে বন জঙ্গলে জন্ম নিয়ে থাকে। একে শুকিয়ে রেশম রাঙানোর জন্য লাল রং তৈরী করা হয়। এর দ্বারা ঔষধও তৈরী করা হয় এবং এর তৈলও পাওয়া যায়। উর্দূতে একে “বিরবহুটি” এবং বাংলায় ‘লাক্ষা পোকা’ বলা হয়। তৎকালীন যুগে অপরাধের স্বীকারোক্তির জন্য অপরাধীকে এ ধরনের শাস্তি প্রদান করা হতো। মাথার উপর প্রথমে গোবরে পোকা রেখে তারপর এর উপর লাক্ষা পোকা রেখে কাপড় দ্বারা অপরাধীর মাথায় বেঁধে দেয়া হতো। গোবরে পোকা মাথার খোল কেটে কেটে তাতে ছিদ্র করে দিতো। আর সে ছিদ্রগুলোতে লাক্ষা পোকার টুকরা ও গলিত পানি প্রবেশ করে মস্তিষ্কের পর্দা ও রগসমূহ ফেটে যেত। এটা এমনই এক অসহনীয় শাস্তি ছিল, যার তীব্র যন্ত্রণায় অপরাধী তাড়াতাড়ি অপরাধ স্বীকার করে ফেলত। এ লোমহর্ষক শাস্তির কথা শুনলে মানুষের গা শিউরে ওঠে। ফলে এর আলোচনার মাঝে এর চেয়েও কঠিন ও ভয়ানক পরকালের শাস্তির কথা মনে পড়ছে। হায়! সে বিষাক্ত কীট পতঙ্গগুলোর দংশন যখন আমাদের কেউ এক সেকেন্ডের জন্যও সহ্য করতে পারছেনা, তাহলে কিভাবে কবর ও জাহান্নামে অগণিত সাপ বিচ্ছুর দংশনকে সহ্য করতে পারবে? আল্লাহ্ না করুক; যদি একটি সামান্য গুনাহের কারণেও আমরা গ্রেফতার হই এবং একটি মাত্র বিচ্ছুও আমাদের মাথার উপর তুলে দেয়া হয়, তখন আমাদের কি অবস্থা হবে?
দন্গ মচ্ছর কা বিহ্ মুজ ছে তো ছাহা জাতা নিহি,
কবর মে বিচ্ছু কে দন্গ কেইছে ছহোনগা ইয়া রব।
আফওয়া কর আওর ছদা কে লিয়ে রাজি হো জা,
ইয়ে কারম হো গা তো জান্নাত মে রহোনগা ইয়া রব।
মস্তক মোবারকের ঝলক
এক বর্ণনাতে এটাও রয়েছে; ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক পাপাত্মা ইয়াজিদের রাজ কোষাগারেই সংরক্ষিত ছিল। উমাইয়া শাসক সুলাইমান বিন আবদুল মালিকের শাসনামলে (৯৬-৯৯ হিঃ) তিনি জানতে পারলেন যে, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক তাঁর রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই সংরক্ষিত আছে। তাই তিনি সে মস্তক মোবারকের যিয়ারত দ্বারা ধন্য হলেন। তখনও পর্যন্ত সে মস্তক মোবারকের হাড়গুলো সাদা রূপার ন্যায় চকচক করছিল। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সে মস্তক মোবারক নিয়ে তাতে সুগন্ধি লাগালেন এবং কাফন পরিয়ে মুসলমানদের কবরস্থানে তা সমাহিত করলেন। (তাহজীবুত তাহজীব, ২য় খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকির, বৈরুত)
ছেহরে মে আফতাব নবুওয়্যত কা নুর থা,
আখোঁ মে শানে ছওলতে ছরকার বো তুরাব।
প্রিয় নবী এর সন্তুষ্টি লাভের রহস্য
হযরত আল্লামা ইবনে হাজর হায়তমী মক্কী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: এক রাতে উমাইয়া শাসক সুলাইমান বিন আবদুল মালিক স্বপ্নযোগে জনাবে রিসালাতে মাআব, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দীদার লাভে ধন্য হলেন। তিনি দেখলেন: শাহিনশাহে রিসালাত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁকে খুবই স্নে মমতা করছিলেন। সকালে তিনি হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট এ স্বপ্নের তাবীর (ব্যাখ্যা) জানতে চাইলেন। হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: “সম্ভবত আপনি রাসূল পরিবার পরিজনের সাথে কোন মুহাব্বতপূর্ণ ও সৌহার্দমূলক আচরণ করেছেন।” তিনি বললেন: “হ্যাঁ, আমি হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক ইয়াজিদের রাজকোষাগারে পেয়েছিলাম। আমি একে পাঁচটি কাফন পরিধান করিয়ে আমার অনুচর বর্গসহ এর জানাযার নামায আদায় করে সমাহিত করেছিলাম।” হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “আপনার এ মহৎ কাজই আল্লাহর মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সন্তুষ্টি লাভের একমাত্র কারণ।” (আস সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
মুস্তফা ইজ্জত বড়হানে কে লিয়ে তাজিম দে,
হে বুলন্দ ইকবাল তেরা দুদ মানে আহলে বাইত।
মস্তক মোবারকের সমাধিস্থল সম্পর্কে মতানৈক্যের সমাধান
খতিবে পাকিস্তান ওয়ায়েজে শিরী বয়ান, হযরত মাওলানা আলহাজ্ব, আল্ হাফেজ মুহাম্মদ শফি উকাড়বী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত ‘শামে কারবালা’ গ্রন্থে লিখেছেন: মস্তক মোবারকের সমাধিস্থল সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে এবং বিভিন্ন বর্ণনাতে বিভিন্ন স্থানে সে মস্তক মোবারক সমাহিত করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এসব বর্ণনার সমাধান ও মতানৈক্যের নিরসনকল্পে বলা যায়, মূলতঃ ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক বিভিন্ন স্থানে সমাহিত করা হয়নি, বরং কারবালার বিভিন্ন শহীদদের মস্তক মোবারক বিভিন্ন স্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। কেননা কারবালার ঘটনার পর ইয়াজিদের নিকট আহলে বাইতের সকল শহীদদের মস্তক মোবারক প্রেরণ করা হয়েছিল এবং একেক জনের মস্তক মোবারক একেক স্থানে দাফন করা হয়েছিল, কিন্তু কার মস্তক কোথায় দাফন করা হয়েছিল তা সঠিক জানা নেই। তাই একান্ত ভক্তি, শ্রদ্ধা ও অগাধ বিশ্বাসের কারণে বা অন্য কোন কারণে সকল সমাধিস্থলের সম্পর্ক ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর প্রতি করা হয়ে থাকে। (শামে কারবালা, ২৪৯ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ক্ষমা প্রাপ্তি থেকে নৈরাশ্যতার এক হৃদয় বিদারক কাহিনী
হযরত সায়্যিদুনা আবু মুহাম্মদ সুলাইমান আ’মশ কুফী তাবেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: “একদা আমি বাইতুল্লাহ্ শরীফে হজ্জ করতে গিয়েছিলাম। তাওয়াফকালে আমি এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, সে কাবা শরীফের গিলাফ জড়িয়ে বলতে লাগল: “হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না।” আমি তার এ আশ্চর্য দোয়াতে হতবাক হয়ে গেলাম। সে এমন কোন গুনাহ করল, যার ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা পর্যন্তও সে করতে পারছেনা। কিন্তু আমি তাওয়াফে ব্যস্ত থাকার কারণে তাকে তার এ নৈরাশ্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। তাওয়াফের দ্বিতীয় চক্করেও আমি তাকে অনুরূপ দোয়া করতে শুনলাম। তখন আমার অবাক হওয়া আরো বেড়ে গেল। আমি তাওয়াফ শেষ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: “তুমি এমন এক মহান পূণ্যভূমিতে রয়েছ, যেখানে বড় বড় গুনাহ্ও ক্ষমা হয়ে যায়। তুমি যদি আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করতে থাকো, তাহলে ক্ষমাপ্রাপ্তির আশাও পোষণ করো। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময়।” সে বলল: “হে আল্লাহর বান্দা! আপনি কে? আমি বললাম: “আমি সুলাইমান আ’মশ”। সে আমার হাত ধরে আমাকে এক দিকে নিয়ে গেল এবং বলল: “আমার গুনাহ অনেক বড়।” আমি বললাম: “তোমার গুনাহ কি আসমান জমিন, পাহাড়পর্বত, আরশের চেয়েও বড়?” সে বলল: “হ্যাঁ, আমার গুনাহ খুবই বড়। আফসোস! হে সোলাইমান! আমি সে সত্তরজন হতভাগার একজন, যারা হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক পাপাত্মা ইয়াজিদের নিকট এনেছিল। পাপাত্মা ইয়াজিদ সে শির মোবারক শহরের বাইরে ঝুলিয়ে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। আবার তারই নির্দেশে সে শির মোবারক নামিয়ে স্বর্ণের একটি রেকাবীতে তার শয়নকক্ষে রাখা হয়েছিল। অর্ধরাতে পাপাত্মা ইয়াজিদের স্ত্রী ঘুম থেকে জেগে দেখল, ইমামে আলী মকাম এর মস্তক মোবারক থেকে আসমান পর্যন্ত একটি নূরের দ্যুতি ঝকমক করছিল। এ অলৌকিক দৃশ্য দেখে সে খুবই ভীত হয়ে পড়ল এবং পাপাত্মা ইয়াজিদকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলল: “ওরে! ওঠে দেখ, আমি একটি আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখছি। ইয়াজিদও সে নূরের দ্যুতি দেখতে পেল এবং স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলল। যখন সকাল হল, সে শির মোবারক তার কক্ষ থেকে বের করে একটি সবুজ কাপড়ের তাঁবুতে রাখল এবং এর পাহারায় সত্তর জন লোক সেখানে নিয়োগ করল। সে (নিরাশ ব্যক্তি) বলল: আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। অতঃপর আমাদেরকে খাবার খেয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হল। যখন সূর্য অস্ত গেল এবং রাত অনেক হয়ে গেলো। আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ আমার চোখ খুলে গেলো। আমি দেখতে পেলাম, বিশাল এক মেঘ এসে আকাশ ছেয়ে ফেলল এবং তাতে প্রচন্ড গর্জন ও বিকট আওয়াজও শুনা গেল। অতঃপর সে মেঘখন্ড ক্রমান্বয়ে জমিনের নিকটবর্তী হয়ে জমিনের সাথে মিলে গেল এবং তা থেকে একজন ব্যক্তি বেরিয়ে এলো যার পরনে জান্নাতের দুইটি পোশাক ছিল, আর তার হাতে একটি বিছানা ও কয়েকটি কুরসী ছিল। তিনি মাটিতে বিছানাটি বিছিয়ে তাতে কুরসীগুলো রাখলেন এবং ডাকতে লাগলেন: “হে আবুল বশর! হে আদি পিতা আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام! তাশরীফ আনুন।” অতঃপর একজন খুবই সুদর্শন বুযুর্গ তাশরীফ আনলেন এবং শির মোবারকের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন: “আপনার উপর সালাম, হে আল্লাহর বন্ধু! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হে সালেহীনদের উত্তরসূরী! আপনি সফল হয়ে জীবিত থাকুন, কেননা আপনি নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন, খুবই পিপাসার্ত ছিলেন, অবশেষে আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে আমাদের সাথে মিলিত করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা আপনার উপর সদয় হোন, আর আপনার হত্যাকারীদের ক্ষমা না করুন। আপনার হত্যাকারীদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের বিভীষিকাময় শাস্তি রয়েছে।” এ বলে সে পুন্যাত্মা বুযুর্গ সেখান থেকে সরে দাঁড়ালেন এবং সে কুরসী সমূহের একটিতে গিয়ে বসে পড়লেন। অতঃপর কিছুক্ষণ পর আসমান থেকে আরেকটি মেঘ এসে জমিনের সাথে মিলে গেল। আমি শুনলাম, একজন আহ্বানকারী আহ্বান করল: “হে আল্লাহর নবী! হে নূহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তাশরীফ আনুন।” হঠাৎ একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, সামান্য হলুদ বর্ণের অবয়ব বিশিষ্ট বুযুর্গ দুটি জান্নাতি পোশাক পরিধান করে তাশরীফ আনলেন এবং তিনিও প্রথম জনের মত শির মোবারককে সম্ভাষণ করে একটি কুরসীতে বসে পড়লেন। অতঃপর আরেকটি মেঘ এসে জমিনের সাথে মিলে গেল এবং তা থেকে হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আবির্ভূত হলেন। তিনিও অনুরূপ সম্ভাষণ করে একটি চেয়ারে বসে পড়লেন। অনুরূপ হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام ও হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহও عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তাশরীফ আনলেন। তাঁরাও অনুরূপ সম্ভাষণ জানিয়ে কুরসীতে বসে পড়লেন। অতঃপর আরেকটি বিশাল মেঘখন্ড এসে জমিনের সাথে মিলে গেল এবং সেটি থেকে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم, হযরত সায়্যিদাতুনা বিবি ফাতেমা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا ,হযরত সায়্যিদুনা হাসান মুজতবা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْه ও ফিরিশতারা তাশরীফ আনলেন।
প্রথমে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মস্তক মোবারকের নিকট তাশরীফ নিলেন। তিনি শির মোবারককে বুকে জড়িয়ে ধরে খুবই কাঁদলেন। তারপর সায়্যিদাতুনা বিবি ফাতেমা যাহরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কে মস্তক মোবারক দিলেন। তিনিও শির মোবারক বুকে জড়িয়ে ধরে খুবই কান্না করলেন। অতঃপর হযরত সায়্যিদুনা আদম ছফিউল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام রহমাতুলল্লি আলামীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট এসে তাঁকে এভাবে শান্তনা জানালেন:
اَلسّلَامُ عَلَى الْوَلَدِ الطَّيِّب اَلسّلَامُ عَلَى الْخَلْقِ الطَّيِّب
اَعْظَمَ اللهُ اَجْرَكَ وَاَحْسَنَ عَذَاءَكَ فِى ابْنِكَ الْحُسَيْن
অর্থাৎ- “আপনার উপর সালাম হে পূণ্যাত্মার পূতঃ পবিত্র সন্তান! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে সৃষ্টিকুল শ্রেষ্ঠ দুলাল! আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে অধিক সাওয়াব দান করুক, আরো আপনার আদরের দুলাল হোসাইনের এ ঈমানী পরীক্ষায় সর্বোত্তম ধৈর্য ধারণের শক্তি ও মনোবল দান করুক ।”
অনুরূপ হযরত সায়্যিদুনা নুহ, হযরত সায়্যিদুনা খলিলুল্লাহ ইব্রাহীম,হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ্, হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیْهِمُ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তাঁকে শান্তনা ও সমবেদনা জানালেন। অতঃপর রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কয়েকটি বাক্য বললেন।
একজন ফিরিশতা নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিকট এসে আরজ করলেন: “হে আবুল কাসেম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক ঘটনাতে আমরাও মর্মাহত ও শোকাহত। এ ঘটনায় আমাদের অন্তর বিদীর্ণ হয়ে গেছে, আমাদের কলিজা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। আমি দুনিয়া সংলগ্ন আসমানের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। আল্লাহ্ তাআলা আমাকে আপনার আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি আমাকে আদেশ দেন, তাহলে আমি সে জালিমদের উপর আসমান নিপতিত করে তাদেরকে নিঃশেষ করে দেব।” অতঃপর আরেকজন ফিরিশতা এসে আরজ করলেন: হে আবুল কাসেম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমি সমূদ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। আল্লাহ্ তাআলা আমাকে আপনার আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি আমাকে আদেশ দেন তাহলে আমি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় দিয়ে তাদেরকে নিমিষের মধ্যে তছনছ করে দেব।” তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হে ফিরিশতারা! এরূপ করা থেকে বিরত থাকুন।” হযরত সায়্যিদুনা হাসান মুজতবা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ঘুমন্ত প্রহরীদের দিকে ইঙ্গিত করে বারগাহে রিসালাতে আরজ করলেন: “নানাজান! এ ঘুমন্ত লোকেরাই আমার ভাই হোসাইনের মস্তক মোবারক কারবালা প্রান্তর থেকে নরাধম ইয়াজিদের কাছে নিয়ে এসেছিল এবং তার আজ্ঞাবহ হয়ে সে শির মোবারকের পাহারায় এখনও নিয়োজিত আছে।” তখন নবীয়ে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হে আমার প্রতিপালকের ফিরিশতারা! আমার সন্তানের হত্যার প্রতিশোধে সে নরপিশাচদেরও হত্যা করো।” সে (নিরাশ ব্যক্তি) বলল: খোদার কসম! আমি দেখলাম, নিমিষের মধ্যেই আমার সকল সঙ্গীদেরকে জবাই করে দেয়া হলো। অতঃপর একজন ফিরিশতা আমাকে জবাই করার জন্য প্রস্তুত হলেন। তখন আমি চিৎকার দিয়ে ডাকলাম: “হে আবু কাসেম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!আমাকে বাঁচান, আমার উপর সদয় হোন, আল্লাহ্ তাআলা আপনার উপর সদয় হোক।” তখন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ফিরিশতাকে লক্ষ্য করে বললেন: “হে ফিরিশতা! তাকে জবাই না করে জীবিত রেখে দাও।” অতঃপর নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার নিকট এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমিও কি সে সত্তর জনের মধ্যে ছিলে, যারা মস্তক মোবারক এনেছিল?” আমি বললাম: “হ্যাঁ, আমিও ছিলাম।” অতঃপর নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর হাত মোবারক দ্বারা আমার ঘাড় চেপে ধরে আমাকে উপুড় করে ফেললেন এবং ইরশাদ করলেন: “আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে না দয়া করুক, না ক্ষমা করুক। আল্লাহ্ তাআলা তোমার হাড়গুলো দোযখের আগুনে দগ্ধ করুক।”
ভাই এ কারণেই আমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়েছি। হযরত সায়্যিদুনা আ’মশ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তার নিকট এ কাহিনী শুনে বললেন: “ওহে হতভাগা! আমার কাছ থেকে তাড়াতাড়ি দূর হও। নতুবা তোমার কারণে আমার উপরও আযাব নাযিল হবে।” (শামে কারবালা, ২৬৭-২৭০ পৃষ্ঠা)
বাগে জান্নাত ছুড় কর আয়ি হে মাহবুবে খোদা
আয় জেহে কিসমত তোমহারি খুশতগানে আহলে বাইত
ধন-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মোহ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ধন সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির মোহ মানুষের জীবনে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। আমার প্রিয় আক্বা, মদীনে ওয়ালে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “দুইটি ক্ষুধার্ত নেকড়েকে ছাগলের পালে ছেড়ে দিলে, যতটুকু বিপজ্জনক হবে না, ধন-সম্পদ ও মানমর্যাদার মোহ মানুষের ধর্মের জন্য তার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৩৮৩)
পাপাত্মা ইয়াজিদ ধন সম্পদ, সাম্রাজ্য ও আধিপত্যের মোহে মোহিত হয়ে ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও বর্বরতম কারবালার মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক হত্যাকান্ডের জন্ম দিয়েছিল। সে সর্বদা ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কর্তৃক ক্ষমতা দখলের ভয়ে শঙ্কিত ছিল। তাই সে নিজ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করনের হীন উদ্দেশ্যে নিরাপরাধ আহলে বাইতদের গলায় ছুরি চালানোর জন্য তার নরপিশাচ হায়েনাদের কারবালা প্রান্তরে লেলিয়ে দিয়েছিল। তারা হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়ে কারবালা প্রান্তরে রক্তের স্রোত বইয়েছিল এবং ফোরাত নদীতে রক্তস্রোত প্রবাহিত করেছিল। অথচ এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নেতৃত্ব ও আধিপত্যের প্রতি সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর যে বিন্দুমাত্রও লোভ লালসা ছিলনা, তা সে নরপিশাচ ইয়াজিদ একেবারে ভুলে গিয়েছিল। আর ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ক্ষমতার মসনদে আসীন না হয়েও মুসলিম জাতির হৃদয়ের মনিকোঠায় ইহকাল ও পরকালে একজন স্বনামধন্য রাজাধিরাজ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি হলেন মুসলিম উম্মাহর অন্তরের প্রশান্তি। আমাদের অন্তরে অতীতেও ছিলেন, আজও আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন।
নহী শিমার কা ওয়হ শিতম রাহা, না ইয়াজিদ কি ওহ জাফা রহে
জু রাহা তো নামে হোসাইন কা জিছে জিন্দা রাখতি হে কারবালা
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইয়াজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু
হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ থেকে মুরসাল ভাবে বর্ণিত আছে: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيْئَةٍ অর্থাৎ দুনিয়ার ভালবাসাই সকল পাপের মূল। (আল জামেউস সাগীর লিস সুয়ূতী, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৬৬২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
পাপাত্মা ইয়াজিদের মন সর্বদাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভালবাসায় মত্ত ছিল। তাই সে দুনিয়ার লোভ লালসায় উন্মাদ হয়ে রাজত্ব, আধিপত্য, যশ-খ্যাতীর ফাঁদে আটকা পড়েছিল। সে নিজের করুন পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ও তাঁর সঙ্গীদের নির্দয়ভাবে হত্যা করে তাঁদের রক্ত দ্বারা নিজের হাত রঞ্জিত করেছিল। যে নেতৃত্ব ও আধিপত্যের জন্য সে কারবালাতে জুলুম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়েছিল, সে নেতৃত্ব আধিপত্যও বেশিদিন তার কাছে স্থায়ী হয়নি। বদ নসীব ইয়াজিদ মাত্র তিন বৎসর ছয়মাস ক্ষমতার আসনে বসে শাসনের নামে লাম্পট্য ও বদমায়েশি করে অবশেষে রবিউন নূর শরীফ, ৬৪ হিজরীতে শাম রাজ্যের হামস শহরে হুওয়ারিন অঞ্চলে ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। (আল কামেল ফিত্ তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
পাপাত্মা ইয়াজিদের মৃত্যুর একটি কারণ এটাও বলা হয়ে থাকে, সে একজন রোমান বংশোদ্ভূত যুবতী মহিলার প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিল। কিন্তু সে মহিলা তাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করত। একদিন আমোদ-প্রমোদের বাহানা করে সে মহিলা ইয়াজিদকে একাকী সুদূর এক মরুভূমিতে নিয়ে গেল। সে মরুভূমির ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া ইয়াজিদকে ক্লান্ত ও অবসন্ন করে ফেলল। তাই সে মাতালের মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর মহিলাও এ সুযোগ হাতছাড়া করল না। “যে পাপীষ্ট নিমক হারাম তার নবীর প্রিয় দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয়নি, সে আমার প্রতি কতটুকু ওফাদার হতে পারে।” এ বলে সে যুবতী মহিলা তার ধারালো ছুরি দ্বারা ইয়াজিদের অপবিত্র শরীর টুকরো টুকরো করে তা মরুভূমিতে ফেলে চলে আসল। কয়েকদিন যাবৎ তার মৃতদেহ চিল কাকের খোরাকে পরিণত ছিলো। অবশেষে খবর পেয়ে তার অনুচরেরা সেখানে পৌঁছে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসল। (আওরাকে গম, ৫৫০ পৃষ্ঠা)
ওহ তখত হে কিছ কবর মে ওহ তাজ কাঁহা হে
আয় খাক বাতা জুরে ইয়াজিদ আজ কাঁহা হে?
ইবনে যিয়াদের করুণ পরিণতি
হতভাগা ইয়াজিদের পদলেহী কুকুর চাটুকার ইবনে যিয়াদ, যে কারবালার প্রান্তরে গুলশানে রিসালাতের মাদানী পুষ্পদের ধূলামলিন ও রক্তরঞ্জিত করেছিল, তারও করুন পরিণতি হয়েছিল। পাপাত্মা ইয়াজিদের পরে সবচেয়ে বেশি অপরাধি ছিল, কুফার সে নিষ্ঠুর বর্বর, স্বেচ্ছাচারী শাসনকর্তা ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ। সে নরাধমেরই নির্দেশে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ও তাঁর আহলে বাইতদেরকে জুলুম নির্যাতনের নির্মম শিকারে পরিণত করা হয়েছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন সে নরাধমকেও রেহাই দিল না। যুগের বিবর্তনের করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে সে নরাধমও ধ্বংসের অতল গভীরে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। মুখতার সাখফীর নির্দেশে তার সেনাপতি ইব্রাহীম বিন মালিক আসতারের বাহিনীর হাতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ঘটনার মাত্র ৬ বৎসর পর ১০ই মুহাররামুল হারাম ৬৭ হিজরীতে সে নরাধম ইবনে যিয়াদ নির্মমভাবে নিহত হল। সৈন্যরা তার মস্তক কেটে ইব্রাহীমের নিকট নিয়ে এল, আর ইব্রাহীম সে মস্তক কুফায় মুখতারের নিকট পাঠিয়ে দিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১২৩ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত)
জব সরে মাহশর ওহ পুছেনগে বুলা কে সামনে
কিয়া জাওয়াবে জুরুম দৌগে তুম খোদা কে সামনে
ইবনে যিয়াদের নাকে সাপ
কুফার শাহী প্রাসাদ সজ্জিত করা হল এবং যেখানে ৬ বৎসর পূর্বে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক রাখা হয়েছিল সেখানেই ইবনে যিয়াদের অপবিত্র মস্তক রাখা হল। সে হতভাগা পাষন্ডের জন্য কান্নাকাটি করার মত কেউ ছিল না। বরং তার মৃত্যুতে সবাই আনন্দ উৎসব করছিল। সহীহ হাদীসে ইমারাহ্ বিন উমাইর থেকে বর্ণিত: “যখন উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদের মস্তক তার সাথীদের মস্তকের সাথে রাখা হয়েছিল তখন আমি সে মস্তক গুলো দেখার জন্য গিয়েছিলাম। হঠাৎ শোরগোল ও হৈ চৈ পড়ে গেল, ‘এল এল’। আমি দেখলাম একটি ভয়ঙ্কর সাপ এসে মাথাগুলোর মাঝখানে অবস্থিত ইবনে যিয়াদের মস্তকের নাকের ছিদ্রে ঢুকে গেল এবং সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে বের হয়ে সাপটি অদৃশ্য হয়ে গেল। অতঃপর আবার শোরগোল পড়ে গেলো, “এল এল” দুই তিনবার এরূপ ঘটনা ঘটল।” (সুনানে তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৮০৫, দারুল ফিক্র, বৈরুত)
ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা’দ, সীমার, কায়েস বিন আসআছ, কন্দী, খাওলী বিন ইয়াজিদ, সিনান বিন আনাস নখয়ী, আবদুল্লাহ্ বিন কায়েস, ইয়াজিদ বিন মালেক প্রমুখ হতভাগারা যারা হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যায় অংশ নিয়েছিল এবং যারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল, তাদেরকে বিভিন্ন রকমের শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের লাশগুলো ঘোড়ার পা দ্বারা পদদলিত করা হয়েছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১৫৮ পৃষ্ঠা)
কব তলক তুম হুকুমত পে ইতরাও গি, কব তলক আখের গরীবোঁকো তড়পাও গে।
জালেমো বাদ মরনে কি পছতাও গে, তুম জাহান্নাম কি হকদার হো জাও গে।
সত্য প্রমাণিত হল “মন্দের পরিণতি মন্দই”
মুখতার সাখফী তন্ন তন্ন করে ইয়াজিদীদের খুঁজে বের করে তাদের নিধন করে এ দুনিয়াকে ইয়াজিদীর কালো অধ্যায় থেকে মুক্ত করল। সে জালিমদের জানা ছিল না যে, শহীদদের রক্ত একদিন তাজা হয়ে উঠবে এবং ইয়াজিদীদের ক্ষমতার মসনদ নড়বড়ে করে তুলবে। জুলুম নির্যাতনের সে তখতে তাউস শহীদানের রক্তের প্রবল জোয়ারে ভেসে যাবে। যারা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যায় অংশ নিয়েছিল তাদের জানা ছিল না যে, তারাও একদিন নির্মম পরিণতির শিকার হয়ে ধ্বংসের অতল গভীরে নিক্ষিপ্ত হবে। একদিন যে সে ফোরাতেরই তীর তাদের বধ্যভূমি হবে এবং সে ফোরাতেরই তীরে সে আশুরারই দিনে মুখতারের দুর্ধর্ষ ঘোড়া তাদের দলিত করবে, সে জালিমদের তা জানা ছিল না। তাদের দলের সংখ্যাধিক্যতা যে তাদের কোন কাজে আসবে না, একদিন যে তাদের হাত-পা কর্তিত হবে, তাদের ঘরগুলো লুণ্ঠিত হবে, তাদেরকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে, তাদের লাশগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে, দুনিয়ার সকল মানুষ তাদের প্রতি থুথু নিক্ষেপ করে তাদের ধ্বংসে আনন্দ মিছিল বের করবে, তা তাদের মোটেই জানা ছিল না। যুদ্ধের ময়দানে যদিও তাদের সৈন্য সামন্ত হাজারে পৌঁছতে পারে কিন্তু তারা যে প্রাণভয়ে কাপুরুষের মত পালাতে থাকবে এবং পলাতক ইঁদুর এবং কুকুরের মত তাদের জান রক্ষা করা তাদের কঠিন হয়ে পড়বে, যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে সেখানেই তাদের হত্যা করা হবে, ইহকাল ও পরকালে তাদের উপর যে নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড় বর্ষিত হবে (ক্ষমতা ও ঐশ্বর্যের নেশায় মত্ত সে জালিমদের তা মোটেই জানা ছিল না)। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১২৫ পৃষ্ঠা)
দেখে হে ইয়ে দ্বিন আপনে হী হাতো কি বদৌলত
ছচ হে কে বুরে কাম কা আনজাম বুরা হোতা হে
মুখতার নবুওয়াতের দাবী করে বসল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিজের ব্যাপারে আল্লাহর গোপন রহস্য কি তা কেউ জানেনা। ‘মুখতার সাখফী’ যে ইমাম হোসাইনের হত্যাকারীদের তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে হত্যা করে হোসাইন প্রেমিকদের মনে তৃপ্তি ও প্রশান্তি দান করেছিল, সে বীর পুরুষের ঘাড়েও নবুওয়াতের দাবি করার সে শয়তানী কুপ্রবৃত্তির ভূত সাওয়ার হয়ে বসল। নিয়তির নির্মম পরিহাসে সে বীর পুরুষ নিজেকে একদিন নবী দাবী করে বসে এবং তার নিকট ওহী আসার ঘোষণা দিয়ে ইয়াজিদী নিধনের যাবতীয় কার্যকলাপ চিরতরে নিঃশেষ করে দিল। (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৮ পৃষ্ঠা)
কুমন্ত্রণা
মানুষের মনে কুমন্ত্রণা আসতে পারে, এতবড় মজবুত আহলে বাইতের প্রেমিক কিভাবে গোমরাহ হয়ে মুরতাদ হয়ে যেতে পারে? একজন ভন্ড নবীর পক্ষেও কি এরূপ মহৎ কাজ সম্পাদন করা সম্ভব?
কুমন্ত্রণার চিকিৎসা
আল্লাহ্ তাআলা কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর গোপন রহস্য সম্পর্কে আমরা সকলের ভয় করা উচিৎ। আমরা জানিনা, আমাদের ভাগ্যে কি লিখা আছে? দেখুন শয়তানও একজন বড় আলিম, ফাজেল, জাহেদ ও আবিদ ছিল। সে হাজার বছর ইবাদত করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছিল এবং “মুয়াল্লিমুল মালায়িকার” উপাধিতে ভূষিত হয়েছিল কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসের ফলে আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে সিজদা করার আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সে চিরতরে কাফির ও অভিশপ্তে পরিণত হল। বলঅম বিন বাঊরাও একজন খ্যাতনামা আলিম, আবেদ, জাহেদ ও মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিল। তার নিকট ইসমে আজমের জ্ঞান থাকায় আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় সে আপন স্থানে বসে আরশে আজিম পর্যন্ত দেখতেও সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেও বেঈমান হয়ে মৃত্যু বরণ করল এবং কিয়ামতের দিন কুকুরের আকৃতিতে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনুরূপ ইবনে সাকাও একজন মেধাবী আলিম ও তার্কিক ছিল। কিন্তু সেও তৎকালীন যুগের গাউসের সাথে বেয়াদবী করার কারণে এক খ্রীষ্টান শাহজাদীর প্রেমে আসক্ত হয়ে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে ঈমান হারাল এবং বেঈমান হয়ে মৃত্যু বরণ করল। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে, আমি ইয়াহিয়া বিন যাকারিয়া عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর হত্যার প্রতিশোধে সত্তর হাজার লোককে হত্যা করেছিলাম। আর আপনার দৌহিত্রের হত্যার প্রতিশোধে আমি তার দ্বিগুণ লোককে হত্যা করব। (আল মুস্তাদরিক লিল হাকিম, ৩য় খন্ড, ৪৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪২০৮)
ইতিহাস সাক্ষী, হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহিয়া বিন যাকারিয়া عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে অন্যায়ভাবে হত্যার বদলা নেয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলা বুখতে নসরের মত খোদা দাবীকারী জালিম শাসককে মোতায়েন করেছিলেন। অনুরূপ হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে অন্যায়ভাবে হত্যার বদলা নেয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলা মুখতার সাখফীর মত একজন মিথ্যুক ও ভন্ডকে নিয়োজিত করে ছিলেন। তাই এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। (শামে কারবালা, ২৮৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি নিজেই ভাল জানেন। তিনি তাঁর ইচ্ছায় জালিমদের দ্বারাই জালিমদের ধ্বংস ও পরাভূত করে থাকেন। তিনি ৮ম পারার সুরাতুল আনআমের ১২৯ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَكَذَٰلِكَ نُوَلِّي بَعْضَ الظَّالِمِينَ بَعْضًا بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এবং এভবে আমি যালিমদের এক দলকে অন্য দলের উপর আধিপত্য দিয়ে থাকি তাদের কৃতকর্মের বদলা স্বরূপ।” (পারা- ০৮, সূরা- আল আনআম, আয়াত নং- ১২৯)
হুযুর পুরনূর ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ফাসিক দ্বারাও এ দ্বীনে ইসলামের সাহায্য করিয়ে থাকেন।” (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩২৮, হাদীস নং- ৩০৬২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
আল্লাহর গোপন রহস্যকে ভয় করা উচিৎ
আমাদের সর্বদা আল্লাহর গোপন রহস্য সম্পর্কে ভয় করা উচিৎ। নিজের বিদ্যা-বুদ্ধি, শান-শওকত ও শারীরিক শৌর্যবীর্যের অহংকার, লাগামহীন কথাবার্তা, ফাজলামি, বাকবিতন্ডা, দাম্ভিকতা প্রদর্শন ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। কেননা আমাদের জানা নেই, আল্লাহর ইলমে আমাদের স্থান কোথায়? তাই আমাদের চালচলন ও আচার আচরণ যেন কখনও এরূপ না হয়, যাতে আমাদের ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়। ঈমান হেফাজতের দৃঢ় মনোবল সৃষ্টি করার জন্য রাসূল عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতদের একান্ত ভালবাসা অর্জনের জন্য, ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য, নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখার জন্য, নেকী অর্জনের জন্য এবং অধিক সাওয়াব অর্জনের জন্য সকল ইসলামী ভাইদের উচিৎ, প্রতি মাসে কমপক্ষে তিনদিন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরে অংশগ্রহণ করা এবং প্রত্যেক ইসলামী ভাই প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে ৭২টি এবং সকল ইসলামী বোন ৬৩টি মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে তা আপন যিম্মাদারের নিকট জমা দেয়া। হে মালিক! শাহে খায়রুল আনাম, সাহাবায়ে কিরাম, মজলুম শহীদ ইমামে আলী মকাম এবং কারবালার সমস্ত শহীদগণ ও বন্দীদের ওসিলায় আমাদের ঈমান হিফাযত রাখো। কবর ও হাশরে আমাদেরকে নিরাপত্তা দান করো এবং আমাদের বেহিসাব মাগফিরাত দান করো। হে আল্লাহ্! সবুজ গুম্বজের ছায়াতলে প্রিয় মাহবুব এর জলওয়াতে ঈমান ও ক্ষমার সাথে আমাদের শাহাদাত নসীব করো। জান্নাতুল বাক্বীতে দাফন হওয়ার এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তোমার প্রিয় হাবীব এর প্রতিবেশিত্ব লাভের সৌভাগ্য নসীব করো।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
মুশকিলে হাল কর্ শাহে মুশকিল কুশাকে ওয়াসেতে,
কর্ বালায়ে রাদ শাহীদে কারবালাকে ওয়াসেতে।