❏ ফরজ নামাজের পর প্রিয় নবীজি (ﷺ) দোয়া করেছেন


প্রিয় রাসূল পাক (ﷺ) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর দোয়া করেছেন ও দোয়া করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন:


এ বিষয়ে সহীহ্ রেওয়ায়েতে আছে, ইমাম বুখারী, ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম বাজ্জার (رحمة الله عليه) প্রমূখ বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا الْمُقْرِئُ، حَدَّثَنَا حَيْوَةُ قَالَ: سَمِعْتُ عُقْبَةَ بْنَ مُسْلِمٍ التُّجِيبِيَّ يَقُولُ: حَدَّثَنِي أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيُّ، عَنْ الصُّنَابِحِيّ عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِهِ يَوْمًا، ثُمَّ قَالَ: يَا مُعَاذُ إِنِّي لَأُحِبُّكَ. فَقَالَ لَهُ مُعَاذٌ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَنَا أُحِبُّكَ. قَالَ: أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ أَنْ تَقُولَ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ 

-“হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) একদিন আমার হাত ধরলেন ও বললেন: হে মুয়াজ! নিশ্চয় আমি তোমাকে ভালবাসি। ফলে মুয়াজ (رضي الله عنه) প্রিয় নবীজি (ﷺ) কে বললেন: আমার আব্বা ও আম্মা আপনার কদমে কুরবানী হোক, আমিও আপনাকে ভালবাসি। অত:পর প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে মুয়াজ! তোমাকে অছিয়ত করছি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে দোয়া করবে এভাবে: “আল্লাহুম্মা আ’ইন্নী আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুছনী ইবাদিকা।”

(মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২২১১৯; ইমাম বুখারী: আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৬৯০; সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ১৫২২; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ২৬৬১; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১২২৭; নাসাঈ শরীফ, হাদিস ১৩০৩; সহীহ্ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং ৭৫১; সহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস ২০২১; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ১১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১০১০; মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ২য় খন্ড, ১৬৯ পৃঃ;) 


এ বিষয়ে অপর হাদিসে উল্লেখ আছে, ইমাম বুখারী ও মুসলীম, ইমাম তিরমিজি, ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله عليه) প্রমূখ বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ المَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ وَرَّادٍ، كَاتِبِ المُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ: أَمْلَى عَلَيَّ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ فِي كِتَابٍ إِلَى مُعَاوِيَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ 

-“হযরত মুগিরা ইবনে শুবা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী করিম (ﷺ) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর বলতেন: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লে শায়ইন কাদির, আল্লাহুম্মা লা মানেয়া লিমা আতায়তা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানায়াতা ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।”

(সহীহ্ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃঃ হাদিস নং ৮৪৪; সহীহ্ মুসলীম, ১ম খন্ড, ২১৮ পৃঃ; আবু দাউদ; তিরমিজি, ১ম জি: ৬৬ পৃঃ; সুনানে নাসাঈ, ১ম জি: ১৫০ পৃঃ; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৬৬ পৃঃ; মেসকাত শরীফ, ৮৮ পৃঃ; মুসনাদে আহমদ, ৩য় খন্ড, ১৭ পৃঃ; সুনানে দারেমী, ১ম খন্ড, ৩৫৯ পৃঃ; ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৩৫ পৃঃ;) 


এই হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, আল্লাহর হাবীব (ﷺ) ফরজ নামাজের পর দোয়া করতেন। অথচ ওহাবীরা এই হাদিস গুলো চোখে দেখেনা। অতএব, ফরজ নামাজের পর দোয়া নেই এরূপ কথা বলার কোন অবকাশ নেই।


এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম বুখারী, ইমাম বাজ্জার, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমদ (رحمة الله عليه) প্রমূখ বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ الْقَزَّازُ، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّلْتِ، ثَنَا عُمَرُ بْنُ مِسْكِينٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ: مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا سَمِعْتُهُ حِينَ يَنْصَرِفُ مِنْ صَلَاتِهِ يَقُولُ: اللَّهُمُ اغْفِرْ لِي أَخْطَائِي وَذُنُوبِي كُلَّهَا أَنْعِمْنِي وَأَحْيِينِي وَارْزُقْنِي، وَاهْدِنِي لِصَالِحِ الْأَعْمَالِ وَالْأَخْلَاقِ، فَإِنَّهُ لَا يَهْدِي لِصَالِحِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَلَا يَصْرِفُ عَنْ سَيِّئِهَا إِلَّا أَنْتَ 

-“হযরত আবু আউব আনছারী (رضي الله عنه) বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)’র পিছনে এমন কোন নামাজ আদায় করিনি যে নামাজের শেষে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহুমাগফিরলী আখতাঈ ওয়া জুনুবী কুল্লুহা আনইমনী ওয়া আহইনী ওয়ারজুকনী ওয়াহদিনী লি’ছালেহলি আমালে ওয়াখলাকী ফা ইন্নাহু লাইয়াহদি লি’ছালেহিহী ইল্লা আন্তা অলা ইয়াছরিফু আন ছায়্যিইহা ইল্লা আন্তা।”

(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৫৯৪২; মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ২য় খন্ড, ১৭০ পৃঃ;) 


হাদিসটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত আছে, যেমন ইমাম বাজ্জার বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثنا أَبُو الصباح مُحَمد بن الليث، حَدَّثنا مُحَمد بن الصلت، حَدَّثنا عُمَر بْنُ مِسْكِينٍ، عَن نافعٍ، عَن ابْنِ عُمَر قَالَ: مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ نِبِيِّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم إلاَّ سَمِعْتُهُ يَقُولُ حِينَ انْصَرَفَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَايَايَ وَعَمْدِي اللَّهُمَّ اهْدِنِي لِصَالِحِ الأَعْمَالِ وَالأَخْلَاقِ إِنَّهُ لا يَهْدِي لِصَالِحِهَا، ولاَ يَصْرِفُ سِيِّئَهَا إلاَّ أَنْتَ.

-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি নবী করিম (ﷺ)’র পিছনে এমন কোন নামাজ আদায় করিনি যে নামাজের শেষে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহুমাগফিরলী আখতাঈ ওয়া জুনুবী কুল্লুহা আনইমনী ওয়া আহ্-ইনী ওয়ারজুকনী ওয়াহদিনী লি’ছালেহলি আমালে ওয়াখলাকী ফা ইন্নাহু লাইয়াহদি লি’ছালেহিহী ইল্লা আন্তা অলা ইয়াছরিফু আন ছায়্যিইহা ইল্লা আন্তা।”

(মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৫৯৯৭; মুখলেছিয়্যাত, হাদিস নং ১৮৬৮;) 


প্রিয় নবীজি (ﷺ)’র পিছনে সাহাবায়ে কেরাম ফরজ নামাজই জামাতে আদায় করতেন। ফলে ঐ ফরজ নামাজের পরে রাসূল (ﷺ) যে দোয়া পাঠ করতেন ইহা তাঁরা শুনতেন। উল্লেখ্য যে, ঐ দোয়া রাসূল (ﷺ) উচু আওয়াজে পাঠ করতেন আর এ কারণেই সাহাবীরা পিছন থেকে ইহা শুনেছেন এবং মুখস্থ করেছেন। 


এ বিষয়ে অপর আরেকটি হাদিসে আছে ইমাম ইবনু হিব্বান, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমদ (رحمة الله عليه) প্রমূখ বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ عَبْدِ رَبِّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حَسَّانَ الْكِنَانِيِّ، عَنْ مُسْلِمِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ مُسْلِمٍ التَّمِيمِيِّ: أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ لِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّيْتَ الصُّبْحَ فَقُلْ قَبْلَ أَنْ تَتَكَلَّمَ اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ سَبْعَ مَرَّاتٍ

-“হযরত মুসলীম ইবনে হারেছ ইবনে মুসলীম আত-তামেমী (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় তিনি তাঁর পিতার সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন, আমাকে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: যখন ফজরের নামাজ আদায় করবে তখন কোন কথা বলার পূর্বে ৭ বার বলবে: ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’।”

(সহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ২০২২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৮০৫৪; সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ৫০৭৯; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৯৮৫৯; ইমাম তাবারানী: আদ-দোয়া, হাদিস নং ৬৬৫; ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ১০৫১; ইমাম বায়হাক্বী: দাওয়াতুল কবীর, হাদিস নং ১২৪; মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ২য় খন্ড, ১৭০ পৃঃ;) 


এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, ফরজ নামাজের পরে দোয়া করা স্বয়ং আল্লাহর রাসুর (ﷺ)’র আদেশ। তাই যারা ফরজ নামাজের পর দোয়াকে বিদয়াত বলে বেড়ায় তারা মূলত রাসূল (ﷺ)’র দলের অন্তর্ভূক্ত নয়, বরং তারা ইহুদী-নাছারাদের দালাল বৈ কিছুই নয়। 


অপর হাদিসে আওলাদে রাসূল তথা নবী বংশের অন্যতম উজ্জল প্রদিপ এবং ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله عليه) এর পীর, হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ ছাদিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ইমাম ইবনু জারির আত তাবারী (رحمة الله عليه) বর্ণনা করেছেন,

وَأَخْرَجَ الطَّبَرِيُّ مِنْ رِوَايَةِ عن جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ الصَّادِقِ قَالَ الدُّعَاءُ بَعْدَ الْمَكْتُوبَةِ أَفْضَلُ مِنَ الدُّعَاءِ بَعْدَ النَّافِلَةِ كَفَضْلِ الْمَكْتُوبَةِ عَلَى النَّافِلَةِ

-“ইমাম তাবারী (رحمة الله عليه) রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ ছাদিক (رحمة الله عليه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নফল নামাজের পরের দোয়ার চেয়ে ফরজ নামাজের পরের দোয়া অধিক উত্তম, যেমনটি নফল নামাজের চেয়ে ফরজ নামাজ উত্তম।”

(ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪র্থ খন্ড, ১৫২ পৃঃ; ইবনে বাত্তাল: শরহে বুখারী, ১০ম খন্ড, ৯৪ পৃঃ; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৮ম খন্ড, ১৭১ পৃঃ; ইমাম ইবনে হাজার: ফাতহুল বারী, الدُّعَاءِ بَعْدَ الصَّلاَةِ অধ্যায়ে ৬৩২৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়, ১১তম খন্ড, ১৩৪ পৃঃ; তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩০০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 


হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ ছাদিক (رضي الله عنه) ছিলেন ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه)’র শায়েখ ও বিশিষ্ট তাবেঈ এবং নবী বংশের লোক। সুতরাং নফল নামাজ পরে যদি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করা যায়, তাহলে ফরজ নামাজের পরে আরো বেশী দোয়া করা যাবে, যেহেতু ফরজ নামাজের পরের দোয়া নফল নামাজের পরের দোয়ার চেয়ে অধিক উত্তম। প্রিয় নবীজি (ﷺ) যে ফরজ নামাজের পর দোয়া করেছেন এ ব্যাপারে আরো অনেক প্রমাণ রয়েছে।

Top