১) কবর আগুনে ভরে গেলো!
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দাকে কবরে একশ'বার চাবুক মারার আদেশ দেয়া হলো, সে আল্লাহ তায়ালার প্রতি দোয়া করতে রইলো এমনকি এক চাবুকে নেমে এলো, যখন একবার চাবুক মারা হলো, তখন তার কবর আগুনে ভরে গেলো, যখন আগুন দূর হয়ে গেলো এবং সেই বান্দা সুস্থ্য হলো তখন সে (ফিরিশতাদের) জিজ্ঞাসা করলো: আমাকে কেন এই চাবুক মারা হলো? তখন তারা উত্তর দিলো: একদিন তুমি অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ ওযু বিহীন) নামায পড়ে নিয়েছিলে এবং এক মজলুমের পাশ দিয়ে তোমার গমন হয়েছিলো কিন্তু তুমি তাকে সাহায্য করোনি।
(শরহে মাশকিলুল আ'সার লিত তাবারানি, ৮ম খন্ড, ২১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩১৮৫। আয যাওয়াজির, ২য় খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।" (আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব)
(২) ওজনে অসতর্ক হওয়ার কারণে শাস্তি
হযরত সায়্যিদুনা হারিস মুহাসিবী رحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: একজন ফসল পরিমাপকারী এই কাজ ছেড়ে দিলো এবং আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে লিপ্ত হয়ে গেলো। যখন সে মৃত্যুবরণ করলো, তখন তার কিছু বন্ধু তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলো: مَا فَعَلَ الله يك؟ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? সে বললো: "আমার ওই দাড়িপাল্লা, যা দিয়ে আমি ফসল ইত্যাদি ওজন করতাম, তাতে আমার অসাবধানতার কারণে কিছু মাটি লেগে গিয়েছিলো, আমি তা পরিস্কার করাতে অলসতা করেছি, ফলে প্রতিবার মাপার সময় ওই মাটির সমপরিমাণ মাল কম হয়ে যেতো। আমি এই অপরাধের কারণেই শাস্তিতে গ্রেফতার হয়েছি। (তাম্বীহুল গা'ফিলিন, ৫১ পৃষ্ঠা)
(৩) কবর থেকে চিৎকারের শব্দ
এরূপ আরেক ব্যক্তিও তার দাঁড়িপাল্লা থেকে মাটি ইত্যাদি পরিস্কার করতো না এবং এভাবেই মাল মেপে দিয়ে দিতো। যখন সে মারা গেলো, তখন তার কবরে আযাব শুরু হয়ে গেলো, এমনকি লোকেরা তার কবর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনতো। কিছু নেককার বান্দার رَحِمَهُمُ الله تعالى কবর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে দয়া হলো এবং তারা সেই লোকটির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করলো, আর সেই দোয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা তার আযাব দূর করে দিলেন। (প্রাগুক্ত)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।" (মাতালিউল মুসাব্রাত)
হারাম উপার্জন কোথায় যায়?
আলোচিত দু'টি ভয়ানক ঘটনা থেকে ওইসব লোকেরা অবশ্যই শিক্ষা অর্জন করুন, যারা ওজনে কারচুপি করে কম দেয়। মুসলমানরা! ওজনে কারচুপি করলে অনেক সময় বাহ্যিকভাবে মালে কিছুটা লাভ দেখাও যায় কিন্তু এমন লাভকী কাজের! অনেক সময় দুনিয়াতেও এ ধরণের সম্পদ ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। হতে পারে ডাক্তারের ফিসের মাধ্যমে, রোগের ঔষধের মাধ্যমে, পকেটমারের মাধ্যমে, চোর কিংবা ঘুষখোরদের হাতে এসব টাকা চলে যায়! এবং পাশাপাশি আল্লাহর পানাহ! আখিরাতের কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হবে।
করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী, কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কড়ী। (ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৮১২ পৃষ্ঠা)
আগুনের দু'টি পাহাড়
তাফসীরে রুহুল বয়ানে বর্ণিত রয়েছে: “যে ব্যক্তি ওজনে খেয়ানত করে, কিয়ামতের দিন তাকে দোযখের গভীরে নিক্ষেপ করা হবে এবং আগুনের দু'টি পাহাড়ের মাঝখানে বসিয়ে নির্দেশ দেয়া হবে: এ পাহাড় দু'টি ওজন করো! যখন ওজন করতে থাকবে, তখন আগুন তাকে জ্বালিয়ে দেবে।"
(তাফসীরে রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৩৬৪ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গভীরভাবে ভাবুন! সংক্ষিপ্ত জীবনে কয়েকটি
সামান্য টাকা উপার্জনের জন্য যদি ওজনে কারচুপি করেন, তাহলে কেমন কঠিন শাস্তির হুমকি এসেছে। আজ সামান্যতম গরমও সহ্য হয় না, তবে জাহান্নামে আগুনের পাহাড়ের উত্তাপ কিভাবে সহ্য হবে! আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে! নিজের অবস্থার প্রতি দয়া করে সম্পদের লোভ থেকে দূরে থাকুন, অন্যথায় অবৈধ মাল উভয় জাহানে শাস্তিরই মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করবো।" (আল কওলুল বদী)
(৪) খড়-খুটোর বোঝা
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা ওহাব বিন মুনাব্বিহ رَضِيَ اللَّه تعالى عنه বলেন: “বনী ইসরাঈলের এক যুবক গুনাহ থেকে তাওবা করলো, অতঃপর ৭০ বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে ইবাদতে লিপ্ত রইলো, রাতে জাগতো এবং দিনে রোযা রাখতো, কোন ছায়ায় বিশ্রাম নিতো না, কোন ভাল খাবার খেতো না। যখন তার মৃত্যু হলো, তখন তার কিছু বন্ধু তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলো: مَا فَعَلَ اللَّهُ يك ؟ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? সে বললো: "আল্লাহ তায়ালা আমার হিসাব নিলেন, তারপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন, কিন্ত একটি খড়, যা দ্বারা আমি এর মালিকের বিনা অনুমতিতে দাঁত খিলাল করেছিলাম (আর এই বিষয়টি বান্দার হকের অন্তর্ভুক্ত ছিলো) এবং তা ক্ষমা করিয়ে নেয়নি, এই কারণে আমাকে এখনো পর্যন্ত জান্নাত থেকে আটকে রাখা হয়েছে।"
(তাম্বীহুল মুগতাররীন, ৫১ পৃষ্ঠা)
পাপ শুধু পাপই
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভয়ে কেঁপে উঠুন! একজন আবিদ ও যাহিদ (ইবাতদকারী) এবং নেককার বান্দাকে শুধুমাত্র একারণেই জান্নাত থেকে আটকে রাখা হয়েছে যে, সে একটি নগণ্য খড়ের মালিকের অনুমতি ছাড়া তা দ্বারা দাঁত খিলাল করেছিলো অতঃপর ক্ষমা না করিয়েই মৃত্যুবরণ করে নিয়েছে। ভাবুন তো একটু! গভীরভাবে চিন্তা করুন!! একটি খড়ের টুকরো কি জিনিস! আজকালতো লোকেরা কতযে মূল্যবান আমানত আত্মসাৎ করে যাচ্ছে এবং সামান্যতম দ্বিধাও করছে না।
تُوبُوا إِلَى اللهِ اسْتَغْفِرُ الله
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যখন তোমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তখন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ো إن شاء الله عزوجل স্মরণে এসে যাবে।" (সা'য়াদাতুদ দা'রাঈন)
ঋণ পরিশোধে অবকাশ না নিয়ে দেরী করা গুনাহ
ওহে মুসলিমগণ! ভয় করো! হুকুকুল ইবাদ (অর্থাৎ বান্দাদের হক) এর ব্যাপারটি খুবই কঠিন, যদি কোন বান্দার সম্পদ আত্মসাৎ করে নিই, বা তাকে গালি দিই, চোখ রাঙ্গিয়ে ভয় দেখাই, ধমক দিই, শাঁসিয়ে দিই যার কারণে তার মনে কষ্ট পায়। মোটকথা, যেকোনভাবেই হোক না কেন শরীয়াত সম্মত অনুমতি ছাড়া কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি কিংবা শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া ঋণ আত্মসাৎ করি বরং ঋণদাতার বিনা অনুমতিতে বা বিশেষ অপারগতা ছাড়া ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করি, এ সবই বান্দার হক বা প্রাপ্য বিনষ্ট করা। ঋণের বিষয়টি আসলো যখন তবে এটাও বলি যে, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ "কিমিয়ায়ে সা'আদাত" এ উদ্ধৃত করেন: "যে ব্যক্তি ঋণ নেয় এবং এই নিয়্যত করে যে, আমি সঠিকভাবে আদায় করবো, তবে আল্লাহ তায়ালা তার নিরাপত্তার জন্য কিছু ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন আর তারা দোয়া করে যে, এর ঋণ শোধ হয়ে যাক।" (ইত্তিহাফুস সা'আদাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা) আর যদি ঋণগ্রহিতা ঋণ আদায় করতে পারে তবে ঋণদাতার অনুমতি ছাড়া যদি এক মুহুর্তও বিলম্ব করে তবে গুনাহগার ও অত্যাচারী সাব্যস্ত হবে। সে রোযাবস্থায় হোক বা ঘুমানো অবস্থায় হোক আর তার উপর আল্লাহ তায়ালার লানত বর্ষিত হয়। এই গুনাহ তো এমন যে, ঘুমন্ত অবস্থায়ও তার সাথেই থাকে। যদি নিজের সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায় করা যায় তবে তাও করতে হবে, যদি এরূপ না করে তবে গুনাহগার হবে। তার এই কাজ কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু লোকেরা একে নগন্য মনে করে থাকে।" (কিমিয়ায়ে সা'আদাত, ১ম খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيبِ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "ঐ ব্যক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যার নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লো না।" (হাকিম)
তিন পয়সার শাস্তি
আমার আক্বা, আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ এর নিকট ঋণ পরিশোধে অলসতা এবং মিথ্যা বাহানা ও দলীল উপস্থাপনকারী ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ বলেন: “যায়েদ ফাসিক ও গুনাহগার, কবীরা গুনাহ সম্পাদনকারী, অত্যাচারী, মিথ্যুক, শাস্তির যোগ্য, এর চেয়ে বেশি আর কি (খারাপ) উপাধী সে নিজের জন্য চায়! যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় এবং মানুষের ঋণ তার উপর থেকে থাকে, তবে তার সমস্ত নেকী তার (ঋণদাতার) চাওয়া অনুযায়ী দিয়ে দেওয়া হবে এবং কিভাবে দেওয়া হবে (অর্থাৎ কিভাবে দেয়া হবে তাও শুনে নিন) প্রায় তিন পয়সা ঋণের বিনিময়ে সাতশত জামাআত সহকারে আদায়কৃত নামায (দিয়ে দিতে হবে)। যখন তার (ঋণ আত্মসাৎকারীর) নিকট নেকী অবশিষ্ট থাকবে না তখন ঐ ব্যক্তির (ঋণদাতার) গুনাহ তার (ঋণ গ্রহীতার) মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে এবং আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।" (ফতোওয়ায়ে রষবীয়া, ২৫তম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
মত দাবা করযা কিসি কা না বাকার,
রোয়ে গা দোযখ মে ওয়ারনা যার যার।
تُوبُوا إِلَى اللَّهِ اسْتَغْفِرُ الله
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দুনিয়ায় কারো দায়িত্বে অণু পরিমাণ অত্যাচারীও যতক্ষণ পর্যন্ত মজলুমকে মানিয়ে নিবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মুক্তিলাভ করা অসম্ভব। অবশ্য, আল্লাহ তায়ালা যদি চান, তবে আপন অনুগ্রহ ও বদান্যতায় কিয়ামতের দিন অত্যাচারী ও অত্যাচারিতের মাঝে মীমাংসা করিয়ে দিবেন, অন্যথায় সেই অত্যাচারিতকে অত্যাচারীর নেকী দিয়ে দেয়া হবে, যদি তাতেও অত্যাচারিত কিংবা অত্যাচারিতদের প্রাপ্য পরিশোধ না হয়, তবে অত্যাচারিতদের গুনাহ অত্যাচারীর মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে আর তাকে জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। وَالْعِيَاذُ بِاللَّهِ تَعَالَى
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলোচনা হলো এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লো না, সে জুলুম করলো।" (আব্দুর রাজ্জাক)
কিয়ামতে নিঃস্ব কে?
রহমতে আলম, হুযুর পুরনূর صلى الله تعالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরামদের عَلَيْهِمُ الرَّضْوَان জিজ্ঞাসা করলেন: "তোমরা কি জানো যে, নিঃস্ব কে?" সাহাবা কিরাম عَلَيْهِمُ الرَّضْوَان আরয করলেন: "ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব তো সে-ই, যার নিকট দিরহাম (টাকা-পয়সা) ও পার্থিব সম্পদ নেই।" তখন হুযুর صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: "আমার উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা, যাকাত নিয়ে আসবে, কিন্তু পাশাপাশি সে কাউকে গালিও দিয়েছে, কারো প্রতি অপবাদও লাগিয়েছে, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করেছে, একে খুন করেছে, তাকে মেরেছে, আর এসব গুনাহের পরিবর্তে তার নেকীগুলো নিয়ে নেয়া হবে, অতঃপর যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায় আর আরো পাওনাদার অবশিষ্ট থাকে, তখন তাদের (অত্যাচারিতদের) গুনাহ নিয়ে তাকে (অর্থাৎ অত্যাচারীকে) অর্পণ করা হবে, অতঃপর সেই (অত্যাচারী) লোকটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।"
(মুসলিম, ১৩৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫৮১)
'অত্যাচারী' দ্বারা উদ্দেশ্য কারা?
মনে রাখবেন! এখানে 'অত্যাচারী' দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু খুনী, ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসীরাই নয়, বরং যে ব্যক্তি কারো সামান্য হকও বিনষ্ট করেছে, যেমন: কারো এক আধ পয়সা আত্মসাৎ করেছে, ঠাট্টা করেছে বা শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে কাউকে ধমক দিয়েছে অথবা রাগাহ্নিত হয়ে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে কষ্ট দিয়েছে, তারাও অত্যাচারী। এখন এটা অন্য বিষয় যে, যার প্রতি এরূপ অত্যাচার করা হয়েছে সেই 'মজলুম'ও যদি ঐ 'অত্যাচারীর'র কোন হক বিনষ্ট করে থাকে, এমতাবস্থায় উভয়ে একে অপরের হকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে 'অত্যাচারী'ও এবং 'মযলূম'ও।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।" (ইবনে আ'দী)
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ উনাইস رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ইরশাদ করবেন: "কোন দোযখী দোযখে এবং কোন জান্নাতী জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বান্দার হকের বিনিময় আদায় করবে না।" অর্থাৎ যে কারো হকই যে কেউ গ্রাস করেছে, তার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কেউ জাহান্নাম কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তাম্বীহুল মুগভারীন, ৫১ পৃষ্ঠা) হুকুকুল ইবাদ (অর্থাৎ বান্দার হক) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত 'জুলুমের পরিণতি' নামক রিসালাটি অবশ্যই পড়ে নিন।
হে আল্লাহ! আমাদের সকল মুসলমানকে একে অপরের হক বিনষ্ট করা থেকে রক্ষা করো! আর এ বিষয়ে যেসব ভুলত্রুটি হয়ে গেছে, তা থেকে সত্যিকার তাওবা করার এবং তা পরস্পর ক্ষমা করিয়ে নেয়ার তাওফীক দান করো!
امين بجاءِ النَّبِي الْآمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
রমযান মাসে মৃত্যুবরণ করার ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর জান্নাতরূপী বাণী হচ্ছে: “যে রমযানের সময় মৃত্যুবরণ করেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যার মৃত্যু আরাফা দিবসের সময় (অর্থাৎ ৯ যুলহিজ্জাতুল হারাম) হলো, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যার মৃত্যু সদকা দেয়াবস্থায় হলো, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬১৮৭) হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, রমযান মাসে মৃত্যু
বরণকারীদের থেকে কবরের আযাবকে উঠিয়ে নেয়া হয়। (সরহুস সুদুর, ১৮৭ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (কানযুল উম্মাল)
কিয়ামত পর্যন্ত রোযার সাওয়াব
উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضى الله تعالى عنها থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম صلّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "রোযাবস্থায় যার মৃত্যু হলো, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত রোযার সাওয়াব দান করবেন।" (আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ৩য় খন্ড, ৫০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৫৫৭)
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
রমযানে ক্ষমা না হলে তবে কখন হবে!
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رضی اللہ تعالٰی عنه বলেন: আমি রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাসসাম, শাহে বণী আদম صلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: "এই রমযান তোমাদের নিকট এসেছে, এতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে বন্দী করে দেয়া হয়। বঞ্চিত ঐ লোকেরাই, যে রমযানকে পেলো এবং তার ক্ষমা হলো না, যখন তার রমযানে ক্ষমা হয়নি তবে কখন হবে!"
(মু'জামুল আওসাত, ৫ম খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৬২৮)
জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যায়
হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِ اللَّهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: রাসূলে আকরাম, রহমতে আলম, হুযুর صلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "রমযান এসে গেছে, যা বরকতময় মাস, আল্লাহ তায়ালা এর রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন, এতে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর এতে অবাধ্য শয়তানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়, এতে একটি রাত রয়েছে, হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে একেবারেই বঞ্চিত থাকলো।” (নাসায়ী, ৩৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২১০৩)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করবো।" (কানযুল উম্মাল)
শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: যখন রমযান আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮৯৯) অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। (প্রাগুক্ত, ৩৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৭৭) এক বর্ণনায় রয়েছে: রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। (মুসলিম, ৫৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১০৭৯)
গুনাহতো হ্রাস পেয়েই থাকে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে কোন অবস্থায় সাধারণতঃ এটাই দেখা যায় যে, রমযানুল মোবারকে আমাদের মসজিদগুলো অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি জমজমাট হয়ে যায়, নেকীর কাজ করার ক্ষেত্রে সহজতা থাকে এবং এতটুকু তো অবশ্যই থাকে যে, রমযান মাসে গুনাহের ধারাবাহিকতা কিছুটা হলেও কমে যায়।
যখনই অবাধ্য শয়তানরা মুক্তি পায়!
রমযানুল মোবারক বিদায় নিতেই অবাধ্য শয়তানরা মুক্ত হয়ে যায় এবং আফসোস! গুনাহের জোর খুব বেড়ে যায়। বিশেষকরে ঈদের দিন গুনাহের খুবই আধিক্য হয়ে যায়, যেন এক মাসের বন্দিত্বের কারণে শয়তানরা সীমাহীন ক্ষিপ্ত ছিলো আর রমযানুল মোবারক মাসের সকল অপূর্ণতা সে ঈদের দিনেই পূর্ণ করে নিতে চায়, বিনোদন কেন্দ্রগুলো বে-পর্দা নারী ও পুরুষে ভর্তি হয়ে যায়, ঈদের জন্য নতুন নতুন সিনেমা এবং নতুন নাটক লাগানো হয়, আহা! শয়তানের হাতে অসংখ্য মুসলমান খেলনায় পরিণত হয়ে যায়, কিন্তু এমন সৌভাগ্যবানও আছে, যারা আল্লাহ পাকের স্মরণ থেকে উদাসীন হয় না এবং শয়তানের প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ করো, নিশ্চয় আমার প্রতি তোমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তোমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।" (জামে সগীর)
অগ্নিপূজারী রমযান মাসের সম্মান করলো তাই....(ঘটনা)
বুখারা শহরে এক অগ্নিপূজারী বাস করতো, একবার রমযান শরীফে সে তার ছেলেকে সাথে নিয়ে মুসলমানদের বাজার অতিক্রম করছিলো, তার ছেলে প্রকাশ্যভাবে কিছু খাওয়া শুরু করে দিলো, অগ্নিপূজারী তা দেখেই তার ছেলেকে একটি থাপ্পড় মেরে দিলো এবং ধমক দিয়ে বললো: তোমার রমযানুল মোবারক মাসে মুসলমানদের বাজারে প্রকাশ্যভাবে খেতে লজ্জা করে না! ছেলেটি বললো: আব্বাজান! আপনিও তো রমযান শরীফে খান। পিতা বললো: আমি মুসলমানদের সামনে খাইনা, আমার ঘরের ভেতর লুকিয়ে খাই, এ বরকতময় মাসের অসম্মান করিনা। কিছু দিন পর ওই লোকের মৃত্যু হয়ে গেলো। কেউ তাকে স্বপ্নে জান্নাতে ঘুরাফেরা করতে দেখে খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো: তুমিতো অগ্নিপূজারী ছিলে, জান্নাতে কিভাবে এসে গেলে? সে বলতে লাগলো: "আসলেই আমি অগ্নিপূজারী ছিলাম, কিন্তু যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলো তখন আল্লাহ তায়ালা রমযানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বরকতে আমাকে ঈমানের মহান সম্পদ এবং মৃত্যুর পর জান্নাত দান করে ধন্য করেছেন।"
(নুষহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা)
রমযানে প্রকাশ্যে পানাহারের দুনিয়াবী শাস্তি
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো? রমযানুল মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারণে একজন অগ্নিপূজারীকে আল্লাহ তায়ালা ঈমানরূপী সম্পদ দান করে জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামতরাজি দ্বারা ধন্য করেছেন। এ ঘটনা থেকে আমাদের বিশেষ করে সেইসব উদাসীনদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ, যারা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও রমযানুল মোবারকে প্রথমত তারা রোযা তো রাখেনা, তদুপরি চোরের মায়ের বড় গলা যে, রোযাদারের সামনেই সিগারেট টানতে থাকে, পান চিবুতে থাকে, এমনকি অনেকে তো এতোই দুঃসাহসী ও নির্লজ্জ যে, প্রকাশ্যে পানি পান করে বরং খাবার খেতেও লজ্জাবোধ করে না। এমন লোকদের জন্য কিতাবগুলোতে কঠোর শাস্তির আদেশ রয়েছে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
আপনি কি মরবেন না?
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চিন্তা করুন! গভীরভাবে ভাবুন!! যখন রোযা না রাখার দুনিয়াতেই এমন কঠিন শাস্তি সাব্যস্ত হয়েছে (এ শাস্তি অবশ্য ইসলামী শাসকই দিতে পারেন) তখন আখিরাতের শাস্তি কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর হবে! মুসলমানরা! হুঁশে ফিরে আসুন! কতদিন এ দুনিয়ায় উদাসীন হয়ে থাকবেন? আপনি কি মরবেন না? দুনিয়ায় কি সর্বদা এভাবে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াবেন? মনে রাখবেন! একদিন না একদিন অবশ্যই মৃত্যু আসবে এবং আপনার জীবনের বাঁধন ছিন্ন করে নরম ও আরামদায়ক বিছানা থেকে উঠিয়ে মাটির উপর শায়িত করে দেবে, প্রত্যেক প্রকারের প্রশান্তিদায়ক আসবাব দ্বারা সু-সজ্জিত কক্ষ থেকে বের করে অন্ধকার কবরে পৌঁছিয়ে দেবে, এরপর অনুশোচনা করা ছাড়া আর কিছুই কাজে আসবেনা, এখনো সময় আছে, গুনাহ থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করে নিন আর রোযা-নামাযের অনুসারী হয়ে যান।
করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী, কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কড়ী।
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৭১২ পৃষ্ঠা)
সুন্নাতে ভরা বয়ানের বরকত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গুনাহে ভরা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আশিকানে রাসূলের মাদানী সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। اِن شاء الله عزوجل দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে কল্যাণ নসীব হবে। আপনাদের উৎসাহের জন্য একটি অত্যন্ত সুন্দর মাদানী বাহার আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি, যেমনটি এক ইসলামী ভাই ১৯৮৭ইং থেকে ১৯৯০ইং পর্যন্ত ১টি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলো। প্রতিদিনের ঝগড়া-ফ্যাসাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অতঃপর ০৩/১১/১৯৯০ইং তারিখে তাকে ওমানের রাজধানী মসকটের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরীতে পাঠিয়ে দিলো। ১৯৯২ সালে দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী)
একজন ইসলামী ভাই কাজের জন্য তারই ফ্যাক্টরীতে যোগ দিলো। তার ইনফিরাদী কৌশিশে الحمد الله عزوجل সে নামাযী হয়ে গেলো। ফ্যাক্টরীর পরিবেশ খুবই খারাপ ছিলো, শুধু তাদের বিভাগটাই ধরুন, যেখানে ৮/৯টি টেপ রেকর্ডার ছিলো, যেগুলোতে বিভিন্ন ভাষায় যেমন উর্দু, পাঞ্জাবী, পুশতু, হিন্দী এবং বাংলা ইত্যাদি ভাষায় উচ্চ আওয়াজে গান চালাতে থাকতো। দা'ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসূলের সংস্পর্শের বরকতে الحمد الله عزوجل তার গান বাজনার প্রতি ঘৃণা জন্মে গেলো। উভয়ের পরামর্শক্রমে তারা দু'জন মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট চালাতে শুরু করে দিলো। শুরুতে অনেকে বিরোধীতাও করেছিলো, কিন্তু তারা সাহস হারায়নি। الحمد الله عزوجل সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট চালানোর বরকত স্বয়ং তাদের উপরই প্রতিফলিত হতে লাগলো। বিশেষত: কবরের প্রথম রাত, রঙ্গিন দুনিয়া, হতভাগা দুলহা, কবরের চিৎকার এবং ৩টি কবর নামক বয়ান সমূহ তাদেরকে প্রভাবিত করলো, আখিরাতের প্রস্তুতির মাদানী ভাবনা অর্জিত হলো এবং তাদের অন্তর গুনাহকে ঘৃণা করতে লাগলো। এ সময় আরো কিছু লোক সুন্নাতে ভরা বয়ানে প্রভাবিত হয়ে বন্ধু হয়ে গেলো। যে তাদের মাদানী কাজে লাগিয়ে ছিলো সেই আশিকে রাসূল চাকরী ছেড়ে দেশে ফিরে গেলো। তারা দেশ থেকে সুন্নাতে ভরা বয়ানের ৯০টি ক্যাসেট চেয়ে আনলো। প্রথমদিকে তাদের ফ্যাক্টরীতে ৫০/৬০ জন নামাযী ছিলো, বয়ান শুনে শুনে নামাযীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে الحمد لله عزوجل ২০০ থেকে ২৫০ তে পৌছলো। তারা ৪০০ ওয়ার্ড এর দামী সাউন্ডবক্স কিনে তাদের ভবনের দেয়ালে লাগিয়ে দিলো এবং ধুমধাম করে ক্যাসেট চালাতে লাগলো, কোরআনে পাকের তিলাওয়াত, নাত শরীফ এবং সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট চালানোর নিয়ম বানিয়ে নিলো। ধীরে ধীরে তাদের নিকট ৫০০টি ক্যাসেট জমা হয়ে গেলো। তার বর্ণনা হলো যে, আমি সহ ৫ জন ইসলামী ভাই নিজেকে দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নিলাম। الحَمْدُ للهِ عزوجل মসজিদ দরস শুরু হয়ে গেলো, অতঃপর কিছুদিন পর ধীরে ধীরে তাদের ফ্যাক্টরীতে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শুরু হয়ে গেলো, ইজতিমায় প্রায় ২৫০ জন ইসলামী ভাই অংশগ্রহণ করতো, প্রাপ্তবয়স্কদের মাদরাসাতুল মদীনাও প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলো। চারিদিকে সুন্নাতের বসন্ত আসতে লাগলো, অসংখ্য ইসলামী ভাই নিজেদের মুখে মাদানী আক্বা হুযুর صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন দাঁড়ি মোবারক সাজিয়ে নিলো, ২০/২৫ জন ইসলামী ভাইয়ের মাথায় পাগড়ীর মুকুট শোভা পাচ্ছিলো। আমাদের ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার প্রথমদিকে ক্যাসেট চালানোর ব্যাপারে নিষেধ করতো, কিন্তু বয়ানের ক্যাসেটের শব্দ তার কানে মধু বর্ষণ করলো এবং الحمدُ اللَّهِ عَزَّوجل অবশেষে সেও প্রভাবিত হয়ে গেলো, শুধু প্রভাবিত নয় বরং নামাযীও হয়ে গেলো এবং এক মুষ্টি দাঁড়িও সাজিয়ে নিলো।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "তোমরা যেখানেই থাকো আমার উপর দরূদে পাক পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী)
ঐ ইসলামী ভাই দেশে ফিরে এসেছে এবং তার বাবুল মদীনা করাচীর ডিভিশন মুশাওয়ারাতের নিগরান হিসাবে সুন্নাতের খিদমতের সৌভাগ্যও অর্জিত হয়েছে। الْحَمْدُ لِلَّهِ عَزَّوَجَنَ মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট সমূহই সংশোধনের মাধ্যম হলো। প্রত্যেক ইসলামী ভাই এবং ইসলামী বোনের উচিৎ যে, তারা যেন সুন্নাতে ভরা বয়ান বা মাদানী মুযাকারার কমপক্ষে একটি ক্যাসেট প্রতিদিন শুনার অভ্যাস গড়ে তোলে, إِن شَاء الله عزوجل এমন বরকত অর্জিত হবে যে, উভয় জগতের তরী পার হয়ে যাবে। (১)
উদাসীনভাবে নেকীর দাওয়াত শ্রবন করা কাফেরের বৈশিষ্ট্য
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত বয়ানের ক্যাসেট শুনারও কি পরিমাণে বরকত রয়েছে। (২) এসব ভাগ্যবানদেরই জন্য, অন্যথায় অনেক লোককে এমনও দেখা যায় যারা অনেক দিন ধরে সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় উপস্থিত হয়, কিন্তু তারা মাদানী রঙ্গে রঙ্গীন হতে পারে না। সম্ভবত এর একটি বড় কারণ এটাও হতে পারে যে, তারা বসে
১. সুন্নাতে ভরা বয়ানের বরকতের বিস্তারিত জানার জন্য "বয়ানাত কি ক্যাসেটো কারিশমাত" নামক রিসালা মাকতাবাতুল মদীনা থেকে উপযুক্ত মূল্যে সংগ্রহ করে নিন।
মাকতাবাতুল মদীনা মজলিশ
২. ভাবাবেশ পূর্ণ বয়ানের ক্যাসেট এবং মেমোরী কার্ড মাকাতাবাতুল মদীনা থেকে উপযুক্ত মূল্যে সংগ্রহ করুন।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেলো, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেলো।" (তাবারানী)
মনোযোগ সহকারে বয়ান শ্রবন করে না, অন্য মনষ্ক হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকিয়ে বা মোবাইল ফোন অথবা কথাবার্তা বলতে বলতে শুনলে বয়ানের বরকত কিভাবে অর্জিত হবে! মনে রাখবেন! উদাসীন ভাবে উপদেশ শ্রবণ করা কাফেরের বৈশিষ্ট্য, মুসলমানদের এই স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক, যেমনটি ১৭ পারার সূরা আম্বিয়া এর ২ ও ৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:
مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ ذِكْرٍ مِنْ رَّبِّهِمْ تُحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ
(পারা ১৭, সূরা আম্বিয়া, আয়াত ২ ও ৩)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: যখন তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন সেটা তারা খেলা কৌতুকচ্ছলে শুনে থাকে। তাদের অন্তর খেলাধূলায় পড়ে রয়েছে।
সারা বছরের নেকী নষ্ট
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضى الله تعالى عنهما থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَوسلم ইরশাদ করেন: "নিশ্চয় জান্নাতকে মাহে রমযানের জন্য এক বছর থেকে অপর বছর পর্যন্ত সাজানো হয়, অতঃপর যখন রমযান মাস আসে তখন জান্নাত বলে: “হে আল্লাহ! আমাকে এই মাসে তোমার বান্দাদের থেকে (আমার মাঝে) বসবাসকারী দান করো!" আর বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট হুরেরা বলে: “হে আল্লাহ! এ মাসে আমাদেরকে তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে স্বামী দান করো।" অতঃপর রহমতে আলম হুযুর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করেছে যে, না কোন নেশা জাতীয় বস্তু পান করেছে, না কোন মু'মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছে এবং না কোন গুনাহ করেছে তবে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি রাতের বিনিময়ে একশ' হুরের সাথে তার বিয়ে করিয়ে দিবেন আর তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণ, রূপা, পদ্মারাগ ও পান্নার এমন অট্টালিকা তৈরী করবেন যে, যদি সমগ্র দুনিয়া একত্রিত হয়ে যায় তবুও এবং এ অট্টালিকায় এসে যায়, তবুও সেই অট্টালিকার এতটুকু জায়গা দখল করবে, যতটুকু ছাগলের বেষ্টনী-বেড়া দুনিয়ার জায়গা ঘিরে থাকে আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নেশা জাতীয় বস্তু পান করলো কিংবা কোন মু'মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দিলো অথবা এ মাসে কোন গুনাহের কাজ করলো তবে আল্লাহ তায়ালা তার এক বছরের আমল (নেকী) বরবাদ করে দিবেন। সুতরাং তোমরা রমযান মাসের বেলায় অলসতা করাকে ভয় করো, কেননা এটা আল্লাহ তায়ালার মাস। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য ১১ মাস সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাতে নেয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করো আর নিজের জন্য একটি মাসকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করে নিয়েছেন। সুতরাং তোমরা রমযান মাসের বেলায় ভয় করো।" (মুজামূল আওসাত, ২য় খন্ড, ৪১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৬৮৮)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।" (মুসলিম শরীফ)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো, যেখানে মাহে রমযানুল মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারীদের জন্য পরকালীন পুরস্কার ও সম্মানের সুসংবাদ রয়েছে, সেখানে এই বরকতময় মাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে এতে গুনাহ সম্পাদনকারীর জন্য শাস্তির ঘোষণাও এসেছে। এ হাদীসে পাকে নেশা জাতীয় বস্তু পান করা ও মু'মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মনে রাখবেন! মদ হচ্ছে সকল পাপের মূল, তা পান করা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। হযরত সায়্যিদুনা জাবির رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "যে জিনিস বেশি পরিমাণে নেশার উদ্রেক করে, তা সামান্য পরিমাণও হারাম।” (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৬৮১)
দোযখীদের রক্ত এবং পুঁজ
মু'মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হারাম এবং জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ, হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “যে ব্যক্তি কোন মু'মিন সম্পর্কে এমন কথা বললো, যা তার মাঝে নেই, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে অপবাদদাতাকে ততক্ষণ পর্যন্ত 'রাদগাতুল খাবাল' এ রাখবেন, এমনকি সে তার কথিত কথা থেকে বের হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৫৯৭) রাদগাতুল খাবাল হচ্ছে জাহান্নামের ওই স্থান, যেখানে দোযখীদের রক্ত এবং পুঁজ জমা হয়। (মিরাতুল মানাজিহ, ৫ম খন্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠা) প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ হাদীসে পাকের এই অংশ “এমনকি সে তার কথিত কথা থেকে বের হয়ে যাবে" এর আলোকে বলেন: "এদ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সে যেই শাস্তির অধিকারী হয়েছিলো তা ভোগ করার পর পবিত্র হয়ে না যাবে।"
(আশিয়্যাতুল লুমআত, ৩য় খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করো, নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জন্য পবিত্রতা।" (আবু ইয়ালা)
রমযানে পাপাচারী
সায়্যিদাতুনা উম্মে হানী رضى اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا থেকে বর্ণিত; আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, হুযুর পুরনূর صلى الله تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর শিক্ষণীয় বাণী হচ্ছে: "আমার উম্মত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মাহে রমযানের হক আদায় করতে থাকবে।" আরয করা হলো: "ইয়া রাসূলাল্লাহ صلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم! রমযানের হক আদায় না করাতে তাদের অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়া কি?" হুযুর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "এই মাসে সেসব হারাম কাজ করা।" তারপর ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি এ মাসে যেনা করলো বা মদ পান করলো, তবে আগামী রমযান পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ও যত সংখ্যক আসমানী ফিরিশতা রয়েছে সবাই তার উপর অভিশাপ করতে থাকবে, সুতরাং সেই ব্যক্তি যদি পরবর্তী রমযান মাস আসার পূর্বেই মারা যায়, তবে তার নিকট এমন কোন নেকী থাকবেনা, যা তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাতে পারে। সুতরাং তোমরা মাহে রমযানের ব্যাপারে ভয় করো, কেননা যেভাবে এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় নেকী বৃদ্ধি করে দেয়া হয় তেমনি গুনাহের বিষয়ও।”
(মু'জামু সগীর, ১ম খন্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
تُوبُوا إِلَى اللهِ اسْتَغْفِرُ الله
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।" (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল)
অন্তরের কালো বিন্দু
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভয়ে কেঁপে উঠুন! মাহে রমযানের গুরুত্ব না দেয়ার মতো কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করুন। এই বরকতময় মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় যেমনিভাবে নেকী বৃদ্ধি হয়ে যায়, তেমনিভাবে অন্যান্য মাসের তুলনায় গুনাহের ধ্বংসাত্মক প্রভাবও বৃদ্ধি হয়ে যায়। রমযান শরীফ ছাড়াও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা চাই। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর মহান বাণী হচ্ছে: “যখন বান্দা কোন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু সৃষ্টি হয়, যখন এই গুনাহ থেকে বিরত হয় এবং তাওবা ও ইস্তিগফার করে নেয় তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায় এবং যদি আবারো গুনাহ করে তবে সেই বিন্দু বৃদ্ধি পেতে থাকে, এমনকি সম্পূর্ণ অন্তর কালো হয়ে যায়, এবং এটিই সেই রঙ যার আলোচনা আল্লাহ তায়ালা এভাবে করেছেন:
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ ) (পারা ৩০, সূরা মুতাফফিফিন, আয়াত ১৪)
কখনোই নয়; বরং তাদের অন্তরগুলোর উপর মরিচা লেপন করে দিয়েছে তাদের কৃত কর্মগুলো।
(তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ২২০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩৪৫)
অন্তরের কালো বিন্দুর চিকিৎসা
এই কালো অন্তরের (কলবের) চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরী এবং এই চিকিৎসার একটি কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে কোন শরীয়াতের পরিপূর্ণ অনুসারী কামিল পীর সাহেবের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, সুতরাং এমন কোন মুর্শিদের মুরীদ হয়ে যান, যিনি পরহেযগার এবং সুন্নাতের অনুসারী, যার সাক্ষাত আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় রাসূল صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর স্মরণ করিয়ে দেয়, যার কথা নামায ও সুন্নাতের প্রতি ধাবিত করে, যার সংস্পর্শ কবর ও আখিরাতের প্রস্তুতির প্রেরণা বৃদ্ধি করে। যদি সৌভাগ্যবশত এ ধরনের পীরে কামেল মিলে যায় তবে إِنْ شَاءَ اللهُ عَزَّوَجَنَّ সত্যিকার তাওবা করার সৌভাগ্য নসীব হবে এবং আল্লাহ পাকের দয়ায় অন্তরের কালো বিন্দুর চিকিৎসা হয়ে যাবে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।" (আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব)
গুনাহ ক্ষমা করানোর জন্য ৮টি আমল
দা'ওয়াতে ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৯১১ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব "ইহইয়াউল উলুম" অনুদিত ৪র্থ খন্ড এর ১৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, গুনাহ করার পর যখন ৮টি নেক আমল করা হয় তখন এর (গুনাহের) ক্ষমার আশা করা যায়। চারটি আমলের সম্পর্ক অন্তরের সাথে: (১) তাওবা বা তাওবার প্রতিজ্ঞা (২) গুনাহ থেকে বিরত থাকার কামনা (৩) আযাবের ভয় (৪) ক্ষমা পাওয়ার আশা। চারটি আমলের সম্পর্ক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে: (১) দুই রাকাত (তাওবার) নামায আদায় করা (২) ৭০বার ইস্তিগফার পাঠ করা এবং ১০০বার سُبْحُنَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ পাঠ করা (৩) সদকা করা (৪) রোযা রাখা।
তু সাচ্চি তাওবা কি তৌফিক দেয় দেয়,
পায়ে তাজেদারে হারাম ইয়া ইলাহী!
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ১১০ পৃষ্ঠা)
صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب !
কবরের ভয়ানক দৃশ্য!
বর্ণিত রয়েছে: আমীরুল মুমিনিন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত, আলীউল মুরতাদ্বা گرم الله تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ একদা কবর যিয়ারত করার জন্য কূফার কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে গেলেন, সেখানে একটি নতুন কবরের প্রতি দৃষ্টি পড়লো, তখন মনে মনে তার অবস্থা সম্পর্কে জানার কৌতুহল সৃষ্টি হলো, সুতরাং আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে আরয করলেন: "হে আল্লাহ! এই মৃতের অবস্থা আমার নিকট প্রকাশ করে দাও!" আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাঁর ফরিয়াদ তাৎক্ষণিকভাবে মঞ্জুর হলো এবং দেখতে দেখতেই তাঁর ও মৃতের মধ্যবর্তী যত পর্দা ছিলো সবই তুলে দেয়া হলো! তখন একটি কবরের ভয়ঙ্কর দৃশ্য তাঁর সামনে আসলো! দেখলেন যে, মৃত লোকটি আগুনের মাঝে ডুবে আছে এবং কেঁদে কেঁদে তাঁর নিকট এভাবে ফরিয়াদ করছিলো:
يَا عَلِيُّ أَنَا غَرِيقٌ فِي النَّارِ وَحَرِيقٌ فِي النَّارِ
অর্থাৎ “হে আলী (رضي الله تعالى عنه) ! আমি আগুনে ডুবে রয়েছি এবং আগুনে জ্বলছি।" কবরের ভয়ানক দৃশ্য ও মৃতের আর্ত-চিৎকার হায়দারে কাররার হযরত আলী كَرَّمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ ما كَرَّمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ আপন দয়ালু প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত উঠিয়ে দিলেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ওই মৃতের ক্ষমার জন্য আবেদন পেশ করলেন। অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসলো: "হে আলী (كَزَمَ اللهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيم)! এর পক্ষে সুপারিশ করবেন না। কেননা সে রমযানুল মোবারককে অসম্মান করতো, রমযানুল মোবারকেও গুনাহ থেকে বিরত থাকতো না, দিনের বেলায় রোযা তো রেখে নিতো কিন্তু রাতে পাপাচারে লিপ্ত থাকতো।" মাওলায়ে কায়েনাত, আলীউল মুরতাদ্বা, শেরে খোদা كَزَّمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ এ কথা শুনে আরো দুঃখিত হয়ে গেলেন এবং সিজদায় পড়ে কেঁদে কেঁদে আরয করতে লাগলেন: “হে আল্লাহ! আমার মান সম্মান তোমার হাতে, এ বান্দা বড় আশা নিয়ে আমাকে ডেকেছে, হে আমার মালিক! তুমি আমাকে তার সামনে অপমানিত করোনা, তার অসহায়ত্বের প্রতি দয়া করো এবং এ বেচারাকে ক্ষমা করে দাও!" হযরত আলী كَزَّمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الكَرِيم কেঁদে কেঁদে মুনাজাত করছিলেন। আল্লাহ তায়ালার রহমতের সাগরে ঢেউ উঠলো এবং আওয়াজ আসলো "হে আলী (كَوْمَ اللهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيم) ! আমি তোমার ভগ্ন হৃদয়ের কারণে তাকে ক্ষমা করে দিলাম।" সুতরাং সেই মৃতের উপর থেকে আযাব তুলে নেয়া হলো। (আনীসুল ওয়ায়েযীন, ২৫,২৬ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।" (মাতালিউল মুসাররাত)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করবো।" (আল কওলুল বদী)
কিউ না মুশকিল কোশা কহোঁ তুম কো! তুম নে বিগড়ী মেরী বানায়ী হে।
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
মৃতদের সাথে কথোপকথন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমীরুল মুমিনিন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত, আলীউল মুরতাদ্বা, শেরে খোদা كَوْمَ اللهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ এর মহত্ব ও উচ্চ মর্যাদার কথা কী বলবো! আল্লাহ তায়ালার দানক্রমে, তিনি رضى اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কবরবাসীদের সাথে কথা বলতেন। আরো একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হচ্ছে: যেমনটি প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়ার رضى الله تعالى عنه বলেন: একবার আমরা আমীরুল মুমিনিন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত, আলীউল মুরতাদ্বা, শেরে খোদা گزمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ এর সাথে মদীনায়ে মুনাওয়ারার কবরস্থানে গেলাম। হযরত মাওলা আলী كَزَّمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيم কবরবাসীদেরকে সালাম করলেন এবং বললেন: হে কবরবাসীরা! তোমরা তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে বলবে নাকি আমিই তোমাদের বলবো? হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ বিন মুসাইয়াব رَضِيَ اللهُ تَعالٰی عنه বললেন: আমরা কবর থেকে "وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ" এর আওয়াজ শুনলাম এবং কেউ বলছিলো: হে আমীরুল মুমিনিন! আপনিই বলুন যে, আমাদের মৃত্যুর পর কি ঘটেছে? হযরত মাওলা আলী گزمَ اللهُ تَعَالٰى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ বললেন: শুনো! তোমাদের সম্পদ বণ্টন হয়ে গেছে, তোমাদের স্ত্রীরা পূনরায় বিয়ে করেছে, তোমাদের ছেলেমেয়েরা এতিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে, যেই ঘর তোমরা খুবই মজবুত করে তৈরী করেছিলে, সেগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বসবাস করছে। এবার তোমরা তোমাদের অবস্থা শোনাও। একথা শুনে একটি কবর থেকে আওয়াজ আসলো: হে আমীরুল মুমিনিন! আমাদের কাফন ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, আমাদের চুলগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, আমাদের চামড়াগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, আমাদের চোখগুলো চেহারার উপর এসে গেছে এবং আমাদের নাকের ছিদ্রগুলো থেকে পুঁজ বয়ে যাচ্ছে আর আমরা যা কিছু পূর্বে প্রেরন করেছি (অর্থাৎ যেমন আমল করেছি) তেমনি ফল পাচ্ছি, যা কিছু রেখে এসেছি তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।
(শরহুস সূদূর, ২০৯ পৃষ্ঠা। ইবনে আসাকির, ২৭তম খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যখন তোমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তখন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ো إن شاء الله عزوجل স্মরণে এসে যাবে।" (সা'য়াদাতুদ দা'রাঈন)
রমযানের রাতে খেলাধুলা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপরোল্লেখিত ঘটনা দু'টিতে আমাদের জন্য শিক্ষার অসংখ্য মাদানী ফুল রয়েছে। জীবিত মানুষ খুবই লাফালাফি করে; কিন্তু যখন মৃত্যুর শিকার হয়ে কবরে নামিয়ে দেয়া হয়, তখন চোখ বন্ধ হবার পরিবর্তে বাস্তবিক পক্ষে খুলেই যায়। সৎকার্যাদি ও আল্লাহ তায়ালার পথে প্রদত্ত সম্পদ তো কাজে আসে; কিন্তু যে সম্পদ রেখে যায় তাতে মঙ্গলের সম্ভাবনা খুবই কম, ওয়ারিশগণের পক্ষ থেকে এ আশা খুবই কম থাকে যে, তারা তাদের মরহুম প্রিয়জনের আখিরাতের মঙ্গলের জন্য অধিকহারে সম্পদ ব্যয় করবে, বরং মৃত্যুবরণকারী যদি হারাম ও অবৈধ সম্পদ, উদাহরণ স্বরূপ; গুনাহের উপকরণাদি যেমন বাদ্যযন্ত্র, ভিডিও গেমসের দোকান, মিউজিক সেন্টার, সিনেমা হল, মদের বার, জুয়ার আড্ডা, ভেজাল মিশ্রিত মালের ব্যবসা ইত্যাদি রেখে যায়, তবে সেই মৃতের জন্য মৃত্যুর পর কঠিন ও অকল্পনীয় ক্ষতিই রয়েছে। কবরের ভয়ানক দৃশ্য নামক ঘটনায় রমযানুল মোবারকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারীর ভয়ানক পরিণতির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। আহ! আফসোস! শত আফসোস!! রমযানুল মোবারকের পবিত্র রাতে অনেক যুবক মহল্লায় ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলে থাকে, অনেক চিৎকার চেচামেচি করে এবং এভাবে এসব হতভাগারা নিজেরা তো ইবাদত থেকে বঞ্চিত থাকে, অন্যান্যদের জন্যও বিপদের কারণ হয়ে যায়, না তো নিজেরা ইবাদত করে, না অন্যকে ইবাদত করতে দেয়। এ ধরণের খেলাধুলা আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে উদাসীনকারী। নেককার লোকেরা তো এসব খেলাধুলা থেকে সর্বদা দূরে থাকে, নিজেরা খেলাতো দূরের কথা, এমন খেলা তামাশা দেখেনও না; বরং এ ধরণের খেলাধূলার ধারাভাষ্যও (Commentary) শুনেন না।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "ঐ ব্যক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যার নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লো না।" (হাকিম)
রমযান মাসে সময় কাটানোর জন্য....
অনেক মূর্খ এমনও রয়েছে, যারা রোযা তো রাখে, কিন্তু সেই বেচারাদের সময় কাটে না! সুতরাং তারাও রমযান শরীফের মর্যাদাকে পাশ কাটিয়ে নাজায়িয কাজের আশ্রয় নিয়ে সময় 'কাটায়' আর এভাবে রমযান শরীফে দাবা, তাস, লুডু, গান-বাজনা এবং স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক প্রোগ্রাম ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়ে যায়। মনে রাখবেন! দাবা ও তাস ইত্যাদিতে কোন ধরণের বাজি কিংবা শর্ত না লাগালেও এ খেলা নাজায়িয। বরং তাসে যেহেতু প্রাণীর ছবির প্রতি সম্মান করা হয়ে থাকে, সেহেতু আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ সাধারণত তাস খেলাকেও হারাম লিখেছেন। যেমনটি তিনি বলেন: গানজিফাহ (পাতা দ্বারা এক প্রকার খেলার নাম এবং) তাস সাধারনত হারাম, কেননা এতে ক্রিয়া কৌতুক ছাড়াও ছবির সম্মান রয়েছে। (ফতোওয়ায়ে রষবীয়া, ২৪তম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা)
ফিকরে মদীনা কি?
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতকে কল্যাণময় করার জন্য প্রশ্নাকারে ইসলামী ভাইদের জন্য ৭২টি, ইসলামী বোনদের জন্য ৬৩টি, দ্বীনি ছাত্রদের জন্য ৯২টি এবং দ্বীনি ছাত্রীদের জন্য ৮৩টি আর মাদানী মুন্নাদের জন্য ৪০টি তাছাড়া বিশেষ ইসলামী ভাই অর্থাৎ বোবা বধিরদের জন্য ২৫টি মাদানী ইনআমাত পেশ করা হয়েছে। মাদানী ইনআমাতের রিসালা মাকতাবাতুল মদীনা থেকে উপযুক্ত মূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে এতে দেয়া খালি ঘর পূরণ করে প্রতি মাদানী মাসের ১ম তারিখেই আপনার এলাকার দা'ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারের নিকট জমা করিয়ে দিন। নিজের গুনাহের হিসাব করা, কবর ও হাশরের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা এবং নিজের ভাল-মন্দ কাজের পরিসংখ্যান করে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করাকে দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে ফিকরে মদীনা করা বলা হয়। আপনিও রিসালা সংগ্রহ করুন, যদি এখনই পূরণ করতে না চান তবে করবেন না, অন্তত এতটুকু তো করুন যে, ওলীয়ে কামিল, আশিকে রাসূল, আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ এর ২৫ তারিখ ওরশ শরীফের সাথে সম্পর্ক রেখে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ সেকেন্ডের জন্য পৃষ্ঠা গুলোতে দৃষ্টি প্রদান করুন। إن شاء الله عزوج দেখতে দেখতে পড়ার, পড়তে পড়তে ফিকরে মদীনা করার এবং এই রিসালার খালি ঘর পূরণ করার মন-মানসিকতা তৈরী হবে আর যদি খালি ঘর পূরণ করার অভ্যাস হয়ে যায়, তবে إِنْ شَاءَ اللَّهُ عَزَّوَجَنَّ এর বরকত আপনি নিজ চোখে দেখতে পাবেন।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (কানযুল উম্মাল)
মাদানী ইনআমাত পর করতা হে জু কোয়ী আমল, মাগফিরাত কর বেহিসাব উসকি খোদায়ে লাম ইয়াযাল।
أمين بجاهِ النَّبِيِّ الأَمِينَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করবো।" (কানযুল উম্মাল)
রোযার আহকাম
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ أَمَّا بَعْدُ فَأَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রোযার আহকাম (১)
দরূদ শরীফের ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ বিন মনসুর رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যখন ওফাত গ্রহণ করেন, তখন শীরায বাসীদের মধ্যে কেউ স্বপ্নে দেখলো যে, মাথায় মুক্তোর মুকুট সজ্জিত, উন্নতমানের পোশাক (জান্নাতী পোশাক) পরিহিত অবস্থায় তিনি শীরাযের জামে মসজিদের মেহরাবে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বপ্নদ্রষ্টা তাঁর অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বললেন: "আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, দয়া করেছেন এবং আমাকে মুকুট পরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” জিজ্ঞাসা করলো: কি কারণে? বললেন: "আমি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, নবী করীম صَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর প্রতি অধিকহারে দরূদে পাক পাঠ করতাম, এই আমলটিই কাজে এসে গেছে।" (আল কওলুল বদী, ২৫৪ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
আল্লাহ তায়ালার কত বড় দয়া যে, তিনি আমাদেরকে রমযানুল মোবারক মাসের রোযা ফরয করে আমাদের জন্য তাকওয়া লাভের মাধ্যম করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ২য় পারার সূরা বাকারার ১৮৩-১৮৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
১. ফয়যানে সুন্নাতের সব জায়গায় মাসয়ালা সমূহ হানাফী মাযহাব অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং শাফেয়ী, মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের ইসলামী ভাইয়েরা ফিকহী মাসয়ালার ক্ষেত্রে নিজ নিজ মাযহাবের ওলামায়ে কিরামের মতামত গ্রহণ করুন।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ করো, নিশ্চয় আমার প্রতি তোমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তোমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।" (জামে সগীর)
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ أَيَّامًا مَعْدُودَةٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ b يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ تَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ )
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তীদের উপর ফরয হয়েছিল, যাতে তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়; নির্দিষ্ট দিন সমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ রুগ্ন হও কিংবা সফরে থাকো, অতঃপর ততো সংখ্যক রোযা অন্যান্য দিন-সমূহে। আর যাদের মধ্যে এর সামর্থ্য না থাকে তারা এর বিনিময়ে একজন মিসকীনের খাবার। অতঃপর যে ব্যক্তি নিজ থেকে সৎকর্ম অধিক করবে তবে তা তার জন্য উত্তম এবং রোযা রাখা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর যদি তোমরা জানো।
রোযা অনেক পুরোনো ইবাদত
আয়াতে করীমার প্রাথমিক অংশের আলোকে "তাফসীরে খাযিন" এ বর্ণিত রয়েছে: তোমাদের পূর্ববর্তী লোক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: হযরত সায়্যিদুনা আদম সফিউল্লাহ عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسّلام থেকে শুরু করে হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلَيْهِمُ الصَّلوة و السلام পর্যন্ত যত আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلَامِ তাশরীফ নিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের উম্মত এসেছে তাদের সবার উপর রোযা ফরয হয়ে আসছিলো (কিন্তু সেগুলোর বিধান আমাদের রোযার চেয়ে ভিন্ন ছিলো)। উদ্দেশ্য হলো যে, রোযা হলো অনেক পুরোনো ইবাদত এবং পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এমন কোন উম্মত ছিলো না যাদের উপর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ন্যায় রোযা ফরয করেনি। (তাফসীরে খাযিন, ১ম খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা) এবং "তাফসীরে আযীযি"তে বর্ণিত রয়েছে: হযরত সায়্যিদুনা আদম সফিউল্লাহ عَلَى نَبِيْنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلَامِ এর প্রতি মাসে আইয়ামে বীয (অর্থাৎ চন্দ্র মাসে ১৩,১৪,১৫ তারিখ) এর তিনটি রোযা ফরয ছিলো, এবং ইহুদীদের (অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা মূসা কলীমুল্লাহ عَلَى نَبِيْنَا وَعَلَيْهِ الصَّلوة والسلام এর সম্প্রদায়) উপর আশুরার দিন (অর্থাৎ ১০ মুহাররামুল হারামের) এবং প্রতি সপ্তাহে শনিবারের (Saturday) এবং আরো কিছু দিনের রোযা ফরয ছিলো আর নাসারার (অর্থাৎ খ্রীষ্টান) উপর রমযান মাসের রোযা ফরয ছিলো। (তাফসীরে আযীযি, ১ম খন্ড, ৭৭১ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
রোযার উদ্দেশ্য
মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত "তাফসীরে সীরাতুল জিনান" ১ম খন্ডের ২৯০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: "আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া ও পরহেযগারীতা অর্জন। রোযায় যেহেতু নফসের সাথে কঠোরতা প্রদর্শন করা হয় এবং খাওয়া দাওয়ার হালাল বস্তু থেকে বিরত রাখা হয়, তখন তাদ্বারা নিজের প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রনের অনুশীলন (Practice) হয়, যার কারণে নফসের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে বাঁচার প্রতি সক্ষমতা অর্জিত হয় আর এই নফসকে আয়ত্ত করা এবং প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণই সেই মূল বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষ গুনাহ থেকে বিরত থাকে।"
রোযা কার উপর ফরয?
তাওহীদ ও রিসালাতকে স্বীকার করা ও দ্বীনের সব প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর ঈমান আনার পর যেভাবে প্রত্যেক মুসলমানের উপর নামায ফরয করে দেয়া হয়েছে, অনুরূপভাবে রমযান শরীফের রোযাও প্রত্যেক মুসলমান (নর ও নারী) বিবেকসম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্কের উপর ফরয। 'দুররে মুখতার' এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে: রোযা ২য় হিজরীর ১০ শা'বানুল মুআয্যামে ফরয হয়েছে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দূররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী)
রোযা ফরয হওয়ার কারণ
ইসলামে অধিকাংশ আমলই কোন না কোন হৃদয় মাতানো ঘটনার স্মরণকে সতেজ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন; সাফা ও মারওয়ার মধ্যখানে হাজীদের 'সাঈ' হযরত সায়্যিদাতুনা হাজেরা رضى اللهُ تَعَالٰى عَنها এর স্মৃতি বহনকারী। তিনি رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا তাঁর কলিজার টুকরো হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল যবীহুল্লাহ عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الضَّلُوةُ وَالسَّلَامِ এর জন্য পানির সন্ধানে এ দু'টি পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার প্রদক্ষিণ করেছেন ও দৌঁড়িয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার নিকট হযরত সায়্যিদাতুনা হাজেরা رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا এর এ কাজটি খুবই পছন্দ হয়েছে। তাই এই 'সুন্নাতে হাজেরা' رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهَا কে আল্লাহ তায়ালা স্থায়ীত্ব দানের জন্য হজ্জ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য 'সাফা ও 'মারওয়া'র সাঈকে (প্রদক্ষিণ করাকে) ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে রমযানুল মোবারকে কিছুদিন আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم হেরা পর্বতের গুহায় অতিবাহিত করেছিলেন, তখন হুযুর পুরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকতেন, আর রাতে আল্লাহ তায়ালার যিকরে লিপ্ত থাকতেন, তাই আল্লাহ তায়ালা ওই দিন গুলোর স্মরণকে সতেজ রাখার জন্য রোযা ফরয করেছেন, যেন তাঁর প্রিয় মাহবুব صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুন্নাত স্থায়ী হয়ে যায়।
আম্বিয়ায়ে কিরামের عَلَيْهِمُ السَّلَام রোযা সম্পর্কীত প্রিয় নবী এর ৩টি বাণী
(১) (হযরত) আদম সফিউল্লাহ )عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلام) চন্দ্র মাসের( ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোযা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল, ৮ম খন্ড, ২৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪১৮৮)
(২) صَامَ نُوْحُ الدَّهْرَ إِلَّا يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى হযরত নূহ নাজিউল্লাহ علَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الضَّلُوةُ وَالسَّلَامِ) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ছাড়া সর্বদা রোযা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭১৪)
(৩) (হযরত) দাউদ )عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الضَّلُوةُ وَالسَّلَامِ( একদিন পর একদিন রোযা রাখতেন। (মুসলিম শরীফ, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৫৯) আর (হযরত) সুলায়মান )عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلام মাসের শুরুতে তিন দিন, তিনদিন মধ্যভাগে এবং তিনদিন শেষভাগে (অর্থাৎ এভাবে মাসে ৯ দিন) রোযা রাখতেন। আর হযরত ঈসা রুহুল্লাহ )عَلَى نَبِيِّنَا وَعَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلَام( সর্বদা রোযা রাখতেন কখনো ছাড়তেন না। (ইবনে আসাকির, ২৪তম খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "তোমরা যেখানেই থাকো আমার উপর দরূদে পাক পড়ো। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী)
রোযাদারের ঈমান কতটা পাকাপোক্ত!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রচন্ড গরম, পিপাসায় কণ্ঠনালী শুকিয়ে যাচ্ছে, ওষ্ঠদ্বয় শুকিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পানি থাকা সত্ত্বেও রোযাদার সেদিকে তাকাচ্ছেও না, খাবার বিদ্যমান, ক্ষুধার প্রচন্ডতার অবস্থা খুবই শোচনীয়, কিন্তু খাবারের দিকে হাত পর্যন্ত বাড়াচ্ছে না। আপনি অনুমান করুন! সেই মুসলমানের আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান কতই পাকাপোক্ত, কেননা সে জানে যে, তার কার্যকলাপ সমগ্র দুনিয়া থেকে তো গোপন থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নিকট গোপন থাকতে পারে না। আল্লাহ তায়ালার প্রতি তার পূর্ণ বিশ্বাসই হচ্ছে, রোযা পালনের আমলী নমুনা, কেননা অন্যান্য ইবাদত কোন না কোন প্রকাশ্য কাজ দ্বারা সম্পন্ন করা হয়, কিন্তু রোযার সম্পর্ক হচ্ছে আধ্যাত্মীক, তার অবস্থা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ জানে না, যদি সে গোপনে পানাহার করেও নেয় তবুও লোকজন এটাই মনে করবে যে, সে রোযাদার, কিন্তু সে একমাত্র খোদাভীরুতার কারণেই নিজেকে পানাহার থেকে বিরত রাখছে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেলো, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেলো।" (তাবারানী)
সন্তানদের কখন রোযা রাখাবেন?
আমার আক্বা, আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ বলেন: “সন্তান যখনই আট বছরে পা দেবে (তার) অভিভাবকের উপর আবশ্যক যে, তাকে নামাযের আদেশ দেয়া এবং যখন ১১তম বছর শুরু হবে তখন অভিভাবকের উপর ওয়াজিব যে, রোযা ও নামাযের জন্য (নামায না পড়লে এবং রোযা না রাখলে) মারা, তবে শর্ত হলো যে, তার মধ্যে যেন রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা এবং রোযা দ্বারা ক্ষতি না হওয়া।" (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)
ফুকাহায়ে কিরামগণ رحِمَهُمُ اللهُ السَّلَامِ বলেন: সন্তানের বয়স দশ বছর হয়ে গেলো এবং (১১তম বছরে পা রাখে এবং) তার রোযা রাখার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রোযা না রাখে তবে মারধর করে রাখাবেন, যদি রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেলে, তবে কাযার নির্দেশ দিবেন না এবং নামায ভঙ্গ করলে পুনরায় পড়াবেন। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪৪২ পৃষ্ঠা)
আ'লা হযরতকে তাঁর পিতা স্বপ্নে বললেন (ঘটনা)
"মলফুযাতে আ'লা হযরত” এর ২০৬ পৃষ্ঠায় আমার, আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ তাঁর স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন: "কয়েক বছর পূর্বে রজব মাসে আব্বাজান رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ স্বপ্নে তাশরীফ আনলেন এবং বললেন: "এবার রমযানে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়বে, রোযা ছেড়ো না।" তেমনই হলো এবং প্রত্যেক চিকিৎসকরাই বলেছিলো (কিন্তু) আমি بِحَمْدُ لِلَّهِ রোযা ছাড়িনি এবং এরই বরকতে আল্লাহ তায়ালা দয়া করে আরোগ্য দিলেন, কেননা হাদীসে পাকে ইরশাদ হচ্ছে: صُوْمُوا تَصِحُوا অর্থাৎ রোযা রাখো সুস্থতা লাভ করবে।
(মু'জাম আওসাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৮৩১২)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।" (মুসলিম শরীফ)
রোযায় সুস্বাস্থ্য অর্জিত হয়
আমীরুল মুমিনীন হযরত মাওলায়ে কায়িনাত, আলীউল মুরতাদ্বা, শেরে খোদা گزمَ اللَّهُ تَعَالَى وَجْهَهُ الْكَرِيمِ থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর সুস্থতা প্রদানকারী বাণী হচ্ছে: "নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বনী ইস্রাঈলের এক নবী عَلَيْهِ الصَّلُوةُ وَالسَّلَام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, আপনি আপনার সম্প্রদায়কে জানিয়ে দিন, যে বান্দা আমার সন্তুষ্টির জন্য এক দিনের রোযা রাখবে তবে আমি তার শরীরে সুস্থতা দান করবো এবং তাকে মহান প্রতিদানও দিবো।" (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৯২৩)
পাকস্থলীর ফুলা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! الحمد الله عزوجل হাদীসে মোবারাকা থেকে বুঝা যায় যে, রোযা সাওয়াব ও প্রতিদানের পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য অর্জন করারও মাধ্যম। এখনতো বিজ্ঞানীরাও তাদের গবেষণায় এ বাস্তবতাটুকু মেনে নিতে শুরু করেছে। যেমন; অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মূর প্যালিড (MOORE PALID) বলেন: "আমি ইসলামী বিষয়াদি পড়ছিলাম, যখন রোযা সম্পর্কে পড়লাম তখন খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম, কারণ ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এক মহান ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে! আমারও আগ্রহ জন্মালো, সুতরাং আমিও মুসলমানদের মতো রোযা রাখতে শুরু করে দিলাম। দীর্ঘ দিন যাবত আমার পাকস্থলীতে ফুলা ছিলো, কিছু দিনের মধ্যেই আমার কষ্ট কম অনুভুত হলো, আমি রোযা রাখতেই থাকলাম, অবশেষে এক মাসের মধ্যে আমার রোগ সম্পূর্ণ ভাল হয়ে গেলো!"
চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটন
হল্যান্ডের পাদ্রী এ্যলফ গাল (ALF GAAL) বলেন: "আমি সুগার (ডায়াবেটিক), হৃদরোগী ও পাকস্থলীর রোগীদের নিয়মিতভাবে ত্রিশ দিন রোযা রাখালাম, ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিক রোগীদের 'সুগার' নিয়ন্ত্রণে এসে গেলো, হৃদরোগীদের আতঙ্ক ও নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কমে গেলো এবং পাকস্থলীর রোগীদের সর্বাপেক্ষা বেশি উপকার হয়েছে। একজন ইংরেজ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ সিগম্যান্ড ফ্রাউড (Sigmund Freud) এর বর্ণনা হলো: রোযার ফলে দেহের খিচুনী, মানসিক চাপ এবং মানসিক অন্যান্য রোগ দূর হয়ে যায়।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করো, নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জন্য পবিত্রতা।" (আবু ইয়ালা)
চিকিৎসকদের অনুসন্ধানী টিম
একটি পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী জার্মানী, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার চিকিৎসকদের একটি অনুসন্ধানী টিম রমযানুল মোবারকে পাকিস্তান আসলো এবং তারা বাবুল মদীনা করাচী, মারকাযুল আউলিয়া লাহোর এবং মুহাদ্দিসে আযম رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ এর নগরী সরদারাবাদ (ফয়সালাবাদ) কে নির্বাচন করলো। জরিপ (Survey) করার পর তারা এই রিপোর্ট পেশ করলো: যেহেতু মুসলমানরা নামায পড়ে ও রমযানুল মোবারকের প্রতি বেশি যত্নবান হয়, সেহেতু ওযু করার ফলে নাক-কান-গলার রোগগুলো কমে যায়, তাছাড়া মুসলমানরা রোযার কারণে কম আহার করে, ফলে পাকস্থলী, কলিজা, হৃদয় ও শরীরের জোড়াগুলোর রোগে কম আক্রান্ত হয়।
খুব বেশি আহার করলে রোগ-বালাই জন্ম নেয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযায় কোনরূপ রোগ-বালাই হয় না, বরং সেহেরী ও ইফতারে অসতর্কতার কারণে, তাছাড়া উভয় সময়ে বেশি পরিমাণে তেল-চর্বিযুক্ত এবং ভাজা পোড়া খাবার ব্যবহার আর রাতভর কিছুক্ষণ পর পর খাবার খেতে থাকলে রোযাদার অসুস্থ হয়ে পড়ে, সুতরাং সেহেরী ও ইফতারের সময় পানাহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই, রাতের বেলায় পেটকে খাদ্যের এতো বেশি ভান্ডার তৈরী করে নেয়া উচিত নয় যেন সারা দিন ঢেকুরই আসতে থাকে এবং রোযা পালনকালে ক্ষুধা ও পিপাসা অনুভুবই না হয়, যদি ক্ষুধা-পিপাসা অনুভবই না হয়, তবে রোযার তৃপ্তিই বা কি রইলো! দেখা গেলো রোযার মজাই তো এতে যে, তীব্র গরম হবে, পিপাসার তিব্রতায় ঠোঁট শুকিয়ে যাবে এবং ক্ষুধায় একেবারে কাতর হয়ে যাবে, এমনি অবস্থায় আহ! মদীনা মুনাওয়ারার زادَهَا اللهُ شَرَفًا وَ تَعْظِيمًا মধুময় গরম ও শীতল রোদের স্মরণ হয়ে যায় আর আহ! কারবালার উত্তপ্ত মরুভুমি এবং নবুয়তের বাগানের সুবাসিত নব-প্রস্ফুটিত ফুলগুলো, তিন দিনের ক্ষুধা-পিপাসায় অস্থিরতা, "প্রকৃত মাদানী মুন্নারা" ও মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর ক্ষুধার্ত পিপাসার্ত নির্যাতিত শাহযাদাদের স্মরণ কষ্ট দিতে থাকে, আর যখন ক্ষুধা ও পিপাসা কিছুটা বেশি কষ্ট দেয়, তখন নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর পবিত্রতম পেটে বাঁধা সৌভাগ্যশালী পাথরও স্মরনে এসে যায়, তবে বলার আর কী থাকবে! সুতরাং প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আসলে তো রোযা এমনি হওয়া চাই যে, আমরা আমাদের প্রিয় আক্বা صلّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ও ইমামগণের সুন্দর স্মরনে হারিয়ে যাবো।
কেইসে আক্বাওঁ কা হোঁ বান্দা রষা, বোল বালে মেরি সারকারোঁ কে। (হাদায়িকে বখশীশ, ৩৬০ পৃষ্ঠা)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।" (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল)
বিনা অপারেশনে জন্ম হয়ে গেলো
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার নুরানিয়ত ও রূহানিয়ত পেতে এবং মাদানী মানসিকতা তৈরী করতে আশিকানে রাসূলের মাদানী সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যান এবং সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরের সৌভাগ্য অর্জন করুন। سُبْحْقِ اللَّهِ عَزوَجَنَّ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, সুন্নাতে ভরা ইজতিমা এবং মাদানী কাফেলারও কি সুন্দর বাহার ও বরকত রয়েছে! সম্ভবতঃ ১৯৯৮ সালের ঘটনা, হায়দারাবাদের (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশ) এই ইসলামী ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিল, সময়ও "পূর্ণ” হয়ে গিয়েছিলো, ডাক্তাররা বলছিলো যে সম্ভবত অপারেশন করতে হবে। আশিকানে রাসূলের মাদানী সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক তিন দিনের সুন্নাতে ভরা ইজতিমাও (সাহরায়ে মদীনা, মুলতান) সন্নিকটে ছিলো। ইজতিমার পর সেই ইসলামী ভাইয়ের সুন্নাত প্রশিক্ষণের এক মাসের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলের সাথে সফরের নিয়্যত ছিলো। ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার জন্য যাওয়ার সময় কাফেলার সামগ্রী নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছলো, যেহেতু পরিবারের অন্যান্য লোকেরা সাহায্য করার জন্য উপস্থিত ছিলো, স্ত্রী অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে সুন্নাতে ভরা ইজতিমার (মূলতান) জন্য বিদায় জানালো। তার এরূপ চিন্তা ছিলো যে, এখন আন্তর্জাতিক সুন্নাতের ভরা ইজতিমায় এরপর সেখান থেকে এক মাসের মাদানী কাফেলা অবশ্যই সফর করতে হবে, আহ! এর বরকতে নিরাপদে যেন সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে যায়। বেচারা গরীব ছিলো, তার নিকট তো অপারেশনের খরচও নেই! সর্বোপরি সে মদীনাতুল আউলিয়া মূলতান শরীফে উপস্থিত হয়ে গেলো। সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় খুব দোয়া করলো। ইজতিমার শেষে মনজুড়ানো দোয়ার পর ঘরে ফোন করলে তার আম্মাজান বললো: মোবারক হোক! গত রাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বিনা অপারেশনে একটি চাঁদের মত মাদানী মুন্নী দান করেছেন। সে খুশী হয়ে বললো: আম্মাজান! আমার জন্য কি হুকুম? আমি কি এসে যাব নাকি এক মাসের জন্য মাদানী কাফেলার মুসাফির হবো? আম্মাজান বললো: "বৎস! নিশ্চিন্ত হয়ে মাদানী কাফেলায় সফর করো।" নিজের মাদানী মুন্নীকে দেখার ইচ্ছাকে অন্তরে চেপে রেখে الْحَمْدُ لِلَّهِ عَزَوَجَنَّ সে এক মাসের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলের সাথে রওয়ানা হয়ে গেলো। الحمدُ لله عزوعة মাদানী কাফেলায় সফরের নিয়্যতের বরকতে তার সমস্যা সমাধান হয়ে গেলো।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।" (আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।" (মাতালিউল মুসাররাত)
মাদানী কাফেলার মাদানী বাহারের বরকতের কারণে পরিবারের সকলের মাদানী মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে গেলো, সেই ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা হলো যে, আমার সন্তানের মা বলতে লাগলো: আপনি যখন মাদানী কাফেলায় মুসাফির হন তখন আমি আমার সন্তানসহ নিজেদের নিরাপদ মনে করি।
যাচ্ছা কি খাইর হো, বাচ্চা বিলখাইর হো, উঠিয়ে হিম্মত করে, কাফেলে মে চলো।
বিবি বাচ্ছে সভী, খুব পায়ে খুশি, খাইরিয়ত সে রাহে, কাফেলে মে চলো। (ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৬৭৪,৬৭৫ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب ! صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
রোযার প্রতিদান
হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা رضى اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّى اللَّهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "মানুষের প্রতিটি সৎকর্মের প্রতিদান দশ থেকে সাত'শ গুণ পর্যন্ত দান করা হয়, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِئُ بِهِ অর্থাৎ রোযা ব্যতিত যে, রোযা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি স্বয়ং দিবো। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন: বান্দা তার প্রবৃত্তি ও আহার শুধুমাত্র আমারই কারণে ত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দুটি খুশী রয়েছে, একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আপন প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের সময়, রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মুশক (এক প্রকার উন্নত মানের সুগন্ধি) অপেক্ষাও বেশি পবিত্র।" (মুসলিম, ৫৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৫১)
আরো ইরশাদ করেন: রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ আর যখন কারো রোযার দিন আসে তখন সে না অনর্থক কথা বলে, না চিৎকার চেচামেচি করে, অতঃপর যদি কেউ তাকে গালি গালাজ করে কিংবা ঝগড়া-বিবাদ করতে উদ্যত হয়, তখন সে যেন বলে দেয়, "আমি রোযাদার।” (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮৯৪)
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করবো।" (আল কওলুল বদী)
রোযার বিশেষ পুরস্কার
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণনাকৃত হাদীসে মোবারাকা গুলোতে রোযার কয়েকটি বিশেষত্ব ইরশাদ করা হয়েছে। কতোই প্রিয় সুসংবাদ ঐ রোযাদারের জন্য, যে এমনিভাবে রোযা রেখেছে, যেমনিভাবে রোযা রাখা দরকার। অর্থাৎ পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও গুনাহ থেকে বিরত রেখেছে, তবে সেই রোযা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও দয়ায় তার জন্য পূর্ববর্তী সকল গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে গেলো। আর হাদীসে মোবারকের এ মহান বাণীতো বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করার মতোই, যেমনটি রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم আপন প্রতিপালকের সুগন্ধময় বানী শুনাচ্ছেন : “ وَلَ لِي وَأَنَا أَجْزِئُ بِهِ" অর্থাৎ রোযা আমার জন্য আর এর প্রতিদান আমি নিজেই দিবো। হাদীসে কুদসীর এ ইরশাদে পাককে অনেক ওলামায়ে কিরাম أَنَا أَجْزَى بِهِ رَحِمَهُمُ اللَّهُ السَّلَامِ"ও পড়েছেন, যেমনটি মীরাতুল মানাজিহ ইত্যাদিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায় "রোযার প্রতিদান আমি নিজেই।" سُبْحْنَ اللَّهِ عَزَّوَجَنَّ রোযা রেখে রোযাদার স্বয়ং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালাকেই পেয়ে যায়।
নেক আমলের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কোরআনে করীমের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে, যে ভালো কাজ করবে, সে জান্নাত পাবে। যেমনটি আল্লাহ পাক ৩০তম পারার সূরা বাইয়েনাতের ৭ ও ৮নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَتِ أُولَبِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ : جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنْتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ خَلِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ )
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সেরা। তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে, বসবাসের বাগান সমূহ, যেগুলোর নিম্নদেশে নহর সমূহ প্রবাহমান। সেগুলোর মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে আপন রবকে ভয় করে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "যখন তোমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তখন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ো إن شاء الله عروج স্মরণে এসে যাবে।" (সা'য়াদাতুদ দা'রাঈন)
সাহাবা ব্যতীত অন্য কারো জন্য رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলা কেমন?
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ কথাটি সম্পূর্ণ ভুল যে, "رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলা বা লিখা শুধু সাহাবীর নামের জন্যই নির্দিষ্ট। উল্লেখিত আয়াতের এই শেষাংশ ( رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهِ) কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে আপন রবকে ভয় করে।) সাধারণের ভুল ধারণার মূলোৎপাটন করে দিয়েছে! খোদাভীরু প্রত্যেক মুমিন, হোক তিনি সাহাবী বা সাহাবী নন সবার জন্য এই সুসংবাদ ইরশাদ করা হয়েছে, যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, সে رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عنه এর অন্তর্ভুক্ত, নিঃসন্দেহে প্রত্যেক সাহাবী ও ওলীর জন্য رضى الله تعالٰی عله লিখা ও বলা একেবারে সঠিক ও জায়িয। যিনি ঈমান সহকারে হুযুর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর প্রকাশ্য জীবদ্দশায় হুযুর صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর এক মুহুর্তের সঙ্গও লাভকরেছেন কিংবা দেখেছেন আর তার ঈমানের উপর ইন্তেকাল হয়েছে, তিনি সাহাবী। বড় থেকে বড় ওলীও সাহাবীর মর্যাদা পেতে পারেন না, প্রত্যেক সাহাবী ন্যায়পরায়ণ ও জান্নাতী।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "ঐ ব্যক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যার নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লো না।” (হাকিম)
আমি মুক্তার মালিককেই চাই
رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ الْحَمْدُ لِلَّهِ عَزَّوَجَنَّ এর বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকভাবে এসে গেলো, এবার আসল বিষয়ে আসি: নামায, হজ্ব, যাকাত, গরীবের সাহায্য, রোগীর শুশ্রূষা, মিসকীনদের খবরাখবর নেয়া ইত্যাদি সকল সৎকাজের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যায়, কিন্তু রোযা এমন এক ইবাদত যার বিনিময়ে জান্নাতের মালিক অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাকেই পাওয়া যায়। বলা হয়: একবার মাহমুদ গযনবী رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ এর কিছু মূল্যবান মুক্তা তাঁর মন্ত্রিদের সামনে পড়ে গেলো, তিনি বললেন: "কুঁড়িয়ে নিন!" এবং নিজে সামনের দিকে চলে গেলেন। কিছুদূর যাবার পর ফিরে দেখলেন আয়াজ ঘোড়ায় চড়ে পেছনে পেছনে চলে আসছে। জিজ্ঞাসা করলেন: আয়াজ! তুমি কি মুক্তা চাও না? আয়াজ আরয করলো: "আমার মুনিব! যারা মুক্তার প্রার্থী তারা মুক্তা কুঁড়াচ্ছে, আমি তো মুক্তা নয়, বরং মুক্তার মালিককেই চাই।" (বুস্তানে সা'দী, ১১০ পৃষ্ঠা)
আমরা রাসূলূল্লাহ এর আর জান্নাতও রাসূলুল্লাহ এর
এরই ধারাবাহিকতায় একটি হাদীসে মোবারাকাও লক্ষ্য করুন: হযরত সায়্যিদুনা রাবী'আ বিন কা'আব আসলামী رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: আমি একবার হুযুর পূরনূর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর খেদমতে কাটিয়েছিলাম, তখন আমি হুযুর صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর নিকট ওযুর পানি এবং তাঁর প্রয়োজনীয় বস্তু (যেমন মিসওয়াক) নিয়ে উপস্থিত হলাম, তখন হুযুর পুরনূর صَلَّى اللهُ تَعَالٰى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: অর্থাৎ চাও, কি চাওয়ার চেয়ে নাও? আমি আরয করলাম: صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم GR S T اسْتَلُكَ مُرَا فَقَتَكَ فِي الْجَنَّة আপনার প্রতিবেশীত্ব চাই। (যেন তিনি আরয করছিলেন:)
তুঝ সে তুঝী কো মাঙ্গ লোঁ তো সব কুছ মিল জা'য়ে,
স সুওয়া'লোঁ সে ইয়েহী ইক সাওয়াল আচ্ছা হে।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলোচনা হলো এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়লো না, সে জুলুম করলো।" (আব্দুর রাজ্জাক)
(রহমতের সাগরে আরো জোশে এলো) এবং ইরশাদ করলেন: "أَوَغَيْرَ ذَلِكَ؟ অর্থাৎ আরো কিছু চাওয়ার আছে?" আমি আরয করলাম: "ব্যস! শুধু এতটুকুই!"
তুঝ সে তুঝি কো মাঙ্গকর মাঙ্গ লী সারি কায়েনাত, মুঝ সা কো'য়ী গাদা নেহী, তুম সা কো'য়ী সখী নেহী।
(যখন হযরত সায়্যিদুনা রবী'আ বিন কা'আব আসলামী رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জান্নাতে প্রতিবেশীত্ব চেয়ে নিলেন আর অন্য কিছু প্রার্থনা করতে অস্বীকার করলেন) তখন এর فَاعِنِي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُود " : صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم অর্থাৎ নিজের সত্তার প্রতি অধিকহারে সিজদা (নফল নামায) দ্বারা আমাকে সাহায্য করো! (মুসলিম, ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৯)
صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَى مُحَمَّد
صَلُّوا عَلَى الْحَبِيب !
যা চাওয়ার, চেয়ে নাও!
شیحْنَ اللَّهِ سُبْحْنَ اللَّهِا سُبْحْنَ اللَّهِا এই হাদীসে মোবারাকা তো ঈমানই সতেজ করে দিলো। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী رَحْمَةُ اللَّهِ تَعَالَى عَلَيْهِ বলেন: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব صلَّى اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর কোনরূপ শর্তারোপ ও বিশেষীকরণ ব্যতিতই সাধারণভাবে ইরশাদ করা: অর্থাৎ চাও, কি চাওয়ার চেয়ে নাও? এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে যে, সকল বিষয় কায়েনাতের সরদার, হুযুরে পরওয়ারদিগার صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم এর মোবারক হাতেই রয়েছে, যা ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা, আপন প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে দান করে দেন। আল্লামা বু'ছীরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ কসীদায়ে বুরদা শরীফে বলেন:
فَإِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا وَمِنْ عُلُومِكَ عِلْمَ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم! দুনিয়া ও আখিরাত আপনারই উদারতার অংশ আর লওহ ও কলমের জ্ঞান তো আপনারই মোবারক জ্ঞানেরই একটি অংশ।
🌿রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করো, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।" (ইবনে আ'দী)
আগর খাইরিয়্যতে দুনিয়া ও ওকবা আ'রযু দারী, বদরগাহাশ বইয়াদে হার ছে মান খোয়াহী তামান্না কুন।
অর্থাৎ যদি দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চাও তবে এই আরশরূপী আস্তানায় এসো আর যা চাওয়ার চেয়ে নাও! (আশআতুল লুমআত, ১ম খন্ড, ৪২৪-৪২৫ পৃষ্ঠা)
খালিকে কুল নে আ'পকো মালিকে কুল বানা দিয়া, দোনো জাঁহা দেয় দিয়ে কবযা ও ইখতিয়ার মে।