❏ হযরত উমর (رضي الله عنه) এর জানাযার পর দোয়া


বিশিষ্ঠ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছালাম (رضي الله عنه) ও অন্যান্য সাহাবীগণ জানাযার পর দোয়া করতেন। এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে, 


মালাকুল উলামা ইমাম আলাউদ্দিন কাছানী ও ইমাম ছারাখছী (رحمة الله عليه) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ أَنَّهُ فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ،    

-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছালাম (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জানাযার নামাজ তাঁর ছুটে যায়। যখন তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন তখন সাহাবীদের ডেকে বললেন: তোমরা নামাজের ব্যাপারে আমার অগ্রগামী হয়েছ, কিন্তু দোয়ার ব্যাপারে অগ্রগামী হয়োনা।”

(ইমাম ছারাখছী: কিতাবুল মাবছুত, ২য় খন্ড, ৬৭ পৃঃ; ইমাম কাছানী: কিতাবুল বাদাউছ ছানায়ে, ২য় খন্ড, ৪৮ পৃঃ;) 


এই হাদিসটি সহীহ্ বুখারীর একটি হাদিসের সাথে মিল রয়েছে,

حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ سَعِيدٍ عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ: وُضِعَ عُمَرُ عَلَى سَرِيرِهِ فَتَكَنَّفَهُ النَّاسُ، يَدْعُونَ وَيُصَلُّونَ قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ وَأَنَا فِيهِمْ،

-“হযরত ইবনে আবী মুলাইকা (رحمة الله عليه) বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জানাযার খাটিয়া তোলে নেওয়ার পূর্বে লোকেরা ঘেড়াও করে দাঁড়িয়ে দোয়া করছিলেন ও দুরুদ পাঠ করছিলেন আর আমি তখন সেখানে ছিলাম।”(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬৮৫;) 


এই হাদিস থেকে দাফনের পূর্বে দোয়া করার কথা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জানাযার নামাজের পরে দোয়া হয়েছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে ছালাম (رضي الله عنه) ছিলেন প্রবীণ সাহাবী এবং তাওরাত কিতাবের বড় পন্ডিত ছিলেন। তিনি নিজে এবং ঐ নামাজে উপস্থিত সকল সাহাবীরা জানাযার পরে দোয়া করেছেন। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে ছালাম (رضي الله عنه) বললেন: “তোমরা সালাতের ব্যাপারে আমার চেয়ে অগ্রগামী হয়েছে অর্থাৎ আমাকে ছেড়ে সালাত পড়ে ফেলেছ, কিন্তু দোয়া আমাকে ছেড়ে করোনা”। 

কোন কোন জাহিলরা সহীহ্ বুখারীর এই হাদিসের অপব্যাখ্যা করে বুঝাতে চায়। তারা বলে বেড়ায় এখানে জানাযার পরে দোয়া কথা বলা হয়নি! বরং লাশ গোসলের জন্য খাটিয়ার উপরে রাখার পরে দোয়া কথা বলা হয়েছে। আসলে এটা তাদের স্পষ্ট জেহালতী বা মূর্খতা। কারণ ঐ হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, يَدْعُونَ وَيُصَلُّونَ قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ -“লোকেরা দোয়া করেছেন ও সালাত আদায় করেছেন যতক্ষণ না খাটিয়া তুলে নিলেন।” অর্থাৎ, লোকেরা গোসলের সময় সেখানে জড়ো হয়েছে এবং খাটিয়া তুলে নেওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করেছেন। সেটা জানাযার পূর্বেই হোক আর পরেই হোক। যেমন:


ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) গোসলের সময় লোকেরা জড়ো হওয়ার সম্পর্কে বলেছেন,

وَالْمَعْنَى أَنَّهُ وَضْعُ عُمَرَ يَوْمَ مَاتَ عَلَى سَرِيرِهِ لِلْغُسْلِ وَحَضَرَهُ جَمْعٌ مِنْ أَصْحَابِهِ

-“ইহার অর্থ হল, সেদিন উমর (رضي الله عنه)কে খাটিয়ার উপর গোসলের জন্য রাখা হয়েছে অত:পর সাহাবায়ে কেরাম তাঁর কাছে সবাই একত্রিত হয়েছে।”(মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৫৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 


এরপরে তিনি দোয়া করার সময় সম্পর্কে বলেছেন,

وَأَنَّهُ وَضَعَ عُمَرَ عَلَى سَرِيرِهِ فَتَكَنَّفَهُ النَّاسُ؛ يَدْعُونَ وَيُثْنُونَ وَيُصَلُّونَ عَلَيْهِ قَبْلَ أَنْ يُرْفَعَ. وَأَنَا فِيهِمْ،

-“নিশ্চয় হযরত উমর (رضي الله عنه) কে খটিয়ার উপর রাখা হলে লোকেরা সেখানে চতুর্দিকে জড়ো হল, তাঁর জন্য দোয়া করল ও তাঁর প্রসংশা করল অত:পর সালাত আদায় করল, যতক্ষণ না খাটিয়া জমীন থেকে তুলে না নিল। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আমিও সেখানে ছিলাম।”

(মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৫৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;)


এখানে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله عليه) স্পষ্ট বলেছেন, খাটিয়া তুলে নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাহাবীগণ দোয়া, প্রসংশা ও সালাত আদায় করেছেন। শারিহুল বুখারী ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله عليه) আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন, 

يدعون له ويصلون عليه قبل أن يرفع من الأرض

-“তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং তাঁর উপর সালাত আদায় করলেন, ইহা খাটিয়া জমীন থেকে তুলে নেওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত করেছেন।” (ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১০১ পৃঃ ৩৬৮৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;) 


শারিহুল বুখারী আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (رحمة الله عليه) বলেছেন,

(فَتَكَنَّفَهُ النَّاسُ يَدْعُون ويُصَلُّونَ)، ولعلَّهم كان من سُنَنِهِمْ الدعاءُ والصلاةُ عند حضورهم على ميِّتٍ.

-“লোকেরা জড়ো হল, দোয়া করলেন ও সালাত আদায় করলেন’। সম্ভবত সাহাবীদের সুন্নাত ছিল মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হওয়ার পর তার জন্য দোয়া করা ও সালাত আদায় করা।” (মাওলানা কাশ্মিরী: ফায়জুল বারী শরহে বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪৭৪ পৃঃ ৩৬৮৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যা;) 


অতএব প্রমাণিত হল, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর গোসলের সময় সকল সাহাবীগণ তিনার কাছে একত্রিত হয়েছেন এবং তিনার খাটিয়া তুলে নেওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত সাহাবীগণ দোয়া ও সালাত আদায় করেছেন। এই দোয়া জানাযার পূর্বে যেমনিভাবে বুঝায় তেমনিভাবে জানাযার পরে খাটিয়া তুলে নেওয়ার পর্বক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করা বুঝায়।

 

যেমন অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ইমাম আব্দ ইবনু হুমাইদ (رحمة الله عليه) নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، ثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، قَالَ: ذَكَرَ سَلَمَةُ بْنُ نُبَيْطٍ، عَنْ نُعَيْمِ بْنِ أَبِي هِنْدَ، عَنْ نُبَيْطِ بْنِ شَرِيطٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ: مَرِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ৃفَقَالُوا: يَا صَاحِبَ رَسُولِ اللَّهِ أَنُصَلِّي عَلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالُوا: كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْهِ؟ قَالَ: يَدْخُلُ قَوْمٌ فَيُكَبِّرُونَ وَيُصَلُّونَ وَيَدْعُونَ، ثُمَّ يَخْرُجُونَ، ثُمَّ يَدْخُلُ غَيْرُهُمْ حَتَّى يَفْرُغُوا،

-“ছালিম ইবনু উবাইদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) অসুস্থ হলেন।... লোকেরা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূলের সাহাবী (আবু বকর) আমরা কি রাসূল (ﷺ)’র উপর সালাত পড়বনা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকেরা বলল, আমরা কিভাবে রাসূল (ﷺ)’র উপর সালাত পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা একদল হুজরা মুবারকে প্রবেশ করো এবং তাকবীর পাঠ করো অত:পর সালাত আদায় করো অত:পর দোয়া করো তারপরে সেখান থেকে বের হয়ে আসবে। তারপরে অন্যরা প্রবেশ করবে এবং বের হয়ে আসবে।”(মুসনাদু আব্দ ইবনে হুমাইদ, হাদিস নং ৩৬৫;)


এই হাদিসে সালাতের পরে দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন লক্ষ্য করুন, وَيُصَلُّونَ وَيَدْعُونَ، -“তাঁরা সালাত আদায় করল এবং দোয়া করল।” সুতরাং জানাযার পূর্বে অথবা জানাযার পরে খাটিয়া তুলার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা জায়েয।

Top