- প্রশ্ন: ইকামতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন? (Download PDF)
- কৃতঃ মুফতি মুহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ (বিএ (অনার্স),এমএ (মাস্টার্স), চবি)
কেউ কেউ ইকামতের পূর্বেই দাঁড়িয়ে যায় কেউ বা "হাইয়্যা য়া'লা চ্ছালাহ্" বলার পরে দাঁড়াতে দেখা যায়; কোনটি সঠিক প্রদ্ধতি?
হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম [ﷺ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ
عن أبى قتادة قال قال رسول الله [ﷺ] إزا أقيمت الصلاة فلا تقوموا حتى ترونى.
"নামাযের ইকামত দেওয়া শুরু হলে তোমরা আমাকে (হুজরা শরীফ থেকে বের হতে) দেখার পূর্বে দাঁড়াবে না।"
হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতিয়মান হয়ঃ
(১) প্রিয় নবীজী [ﷺ] ইকামত শুরু হওয়ার পর হুজরা মোবারক থেকে বের হতেন।
(২) হুজুর [ﷺ] বেরিয়ে আসার পূর্বে মুসল্লিদের দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।
(৩) ইকামতে দাঁড়ানোর বিষয়টি ইমামের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রকাশ থাকে যে, প্রিয় নবীজী [ﷺ]'র হুজরা মোবারক মসজিদে নববী'র মেহরাবের অতি নিকটবর্তী ছিল। অতি সামান্য ব্যবধানেই তিনি মেহরাবে তাশরীফ নিতেন।
- [(ক) আবূ দাউদ; খন্ড-০১, পৃ.১৪৮, হাদীস: ৫৩৯, ৫৪০;
- (খ) তিরমিযী; খন্ড-০২, পৃ.৪৮৭, হাদীস: ৫৯২;
- (গ) নাসাঈ; খন্ড-২, হাদীস: ৬৮৭;
- (ঘ) সহীহ ইবনু হিব্বান; খন্ড-৫, পৃ.৬০১, হাদীস:২২২৩
- (ঙ) শুয়াবুল ঈমান; খন্ড-২, পৃ.২০, হাদীস: ২১২০;
- (চ) সহীহ মুসলিম; খন্ড-০১, পৃ.৪২২, হাদীস: ৬০৪]
রাসূলাল্লাহ [ﷺ] হুজরা শরীফ থেকে ইকামতের কোন মুহূর্তে মেহরাবে আসতেনঃ
এ ব্যাপারে মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) "মিরকাতুল মাফাতীহ" গ্রন্থে লিখেনঃ
لعله عليه الصلاة والسلام كان يخرج منا الحجرة بعد شروع المؤزن في الاقامة ويدخل في محرب المسجد عند قوله حي على الصلاة .
"আর সম্ভবত নবী করিম [ﷺ] হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করার পর এবং 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলার সময় তিঁনি মেহরাবে প্রবেশ করতেন।" [মিরকাতুল মাফাতীহ লিল মোল্লা আলী ক্বারী]
নবী করিম [ﷺ] ইকামত বলা শুরু করার পরই হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন এবং তাঁকে দেখার পূর্বে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং হাদীসের মাধ্যমে বুঝা গেল ইকামতের পূর্বে দাঁড়ানো নিষেধ।
ইকামতের পূর্বে না পরে কাতার সোজা করবেনঃ
[ عن انس بن مالك رضى الله عنه قال: اقيمت الصلاة فاقبل علينا رسول الله بوجهه فقال: وأقيموا صفوفكم وتراصوا فإنى أراكم من وراء ظهرئ. ]
অর্থাৎঃ খাদেমে রাসূল হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "নামাযের ইকামত হয়ে গেছে। অতঃপর প্রিয় রাসূল [ﷺ] আমাদের দিকে সামনা-সামনি হয়ে ফিরে গেলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কাতার বা লাইনসমূহ সোজা কর এবং একে অন্যের সাথে লাগিয়ে মিলিয়ে দাঁড়াও। কেননা নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।" [বুখারী শরীফ; ১ম খন্ড, পৃ.১০০, হাদীস: ৭১৯]
বর্ণিত হাদিস থেকে বুঝা গেল, ইকামত বলার পূর্বে না দাঁড়ানো, তাকবীরে তাহরীমা'র পূর্বে (ইকামতের পূর্বে নয়) কাতার সোজা করা, এবং পিছনের দিক থেকেও অদৃশ্যে জ্ঞানের বদৌলতে মুসল্লিগণের রুকু, সিজদা এমনকি অন্তরের অবস্থা পর্যন্ত প্রিয় নবী [ﷺ] দেখতেন। আমরা কিন্তু দেখিনা তাহলে বুঝা গেল নবী আমাদের মত না। [বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ২৬৩ পৃষ্ঠার ৮টি হাদিস, মিশকাত শরীফ, ১১১ পৃ. এবং ১৭৯ পৃ.]
সুতরাং প্রমাণিত হয়ে গেল, ইকামত শুরু করার পূর্বে কাতার সোজা করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে যাওয়া খেলাফে সুন্নাত। বরং ইকামত দেওয়ার পর কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে।
আবূ দাউদ শরীফের ১ম খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
[ عن النعمان بن بشير رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسوئ صفوفنا اذا قمنا للصلاة فاذا استوينا كبر. ]
অর্থাৎঃ হযরত নু'মান বিন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম, তখন প্রিয় রাসূল [ﷺ] আমাদের (নামাযের) কাতার সোজা করতেন। কাতার যখন সম্পূর্ণ সোজা হয়ে যেত তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। [মিশকাত শরীফ; পৃ. ৯৮, হাদীসঃ ১০২৭]
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায়, প্রিয় নবীজী [ﷺ] কাতার সোজা করতেন ইকামতের পরে। দেখুন! রাসূলে করীম [ﷺ] মুসল্লিদের কাতার সোজা করার পরপরই তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলে নিয়ত করতেন কারণ পূর্বেই ইকামত দেওয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে।
জামাআতের সময় ইমাম ও মুসল্লীগণ কখন দাঁড়াবেন?
বাংলাদেশের কোন কোন মসজিদের ইমাম ও ময়াজ্জিনকে ইকামতের পূর্বে এই ঘোষণা দিতে শুনা যায়- আপনারা দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করুন। মুক্তাদীগণকে দাঁড় করিয়ে তারপর ইকামত শুরু করা হয়। হানাফী মাযহাব মতে কখন দাঁড়াতে হবে তা অনেক ইমাম এবং মুয়াজ্জিন জানেন না। শুধু দেখাদেখি আমল করেন। এটা ঠিক নয়। ইকামতের সময় কখন ইমাম ও মুসল্লীগণের দাঁড়ানো সুন্নত- সে সম্পর্কে নিন্মে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিকাহ ও ফতোয়ার ইবারত পেশ করা হলো। আল্লাহ সঠিক আমল করার তৌফিক দিন।
দলীল সমূহ-
১। আইনী শরহে বুখারীতে (৪র্থ খন্ডের ৩৫৭ পৃষ্টায়) উল্লেখ আছে-
[ قال ابو حنيفة ومحمد يقومون فى الصف ازا قال حى علي الصلوة . ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] ও তার শাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ [ رحمه الله عليه ] বলেছেন - যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
২। ফতহুল বারী শরহে বুখারীতে (২য় খন্ডের ১৪০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-
[ عن ابى حنيفة يقومون ازا قال حى علي الفلاح. ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] হতে বর্ণিত আছে যে- যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলবে তখন মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন।
৩। আল্লামা নববী [ رحمه الله عليه ] শরহে মুসলিমের মধ্যে (১ম খন্ডের ২২১ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন-
[ قال ابو حنيفة رضى الله عنه والكوفيون - يقومون فى الصف ازا قال حى علي الصلوة. ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [رضي الله عنه এবং কুফার ফকিহগণ বলেছেন- যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাছ ছালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
৪। আউনুল মা'বুদ শরহে আবু দাউদ -এ (২য় খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-
[ عن ابى حنيفة يقومون ازا قال حى علي الفلاح. ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] হতে বর্ণিত, যখন মুয়াজ্জিন 'হাইয়্যা আলাল ফালাহ' বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
বিঃ দ্রঃ উপরের দুইটি প্রদ্ধতি ইমাম আবু হানিফা [ رحمه الله عليه ] থেকে বর্ণিত হয়েছে। দুইটি বর্ণ