অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান 


হযরত আব্বাসের গুপ্তধন 

❏ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মােত্তালিব বদর যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়ে মদীনায় আনিত হন। বন্দীদের উপর মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হলে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)'র খেদমতে আরজ করলেন, মুক্তিপণের নির্ধারিত অর্থ আমার কাছে নেই। সুতরাং তা আদায় করতে আমি অক্ষম। একথা শুনে রাসূল আর বললেন- হে চাচা! আপনার সেই সম্পদ কি হল? যা আপনি বদর যুদ্ধে আসার পূর্বে মাটির নীচে রেখে চাচী উম্মুল ফজলকে বলে আসলেন যে, এই যুদ্ধে যদি আমি মৃত্যুবরণ করি, এ সম্পদ আমার সন্তানরা পাবে। 
রাসূল (ﷺ) এর অদৃশ্য বাণী শুনে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) অবাক হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একমাত্র আমি ও উম্মুল ফজল ছাড়া এ মালের খবর অন্য কেউ জানত না। সুতরাং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল, এই বলে তিনি কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান।

প্রেরিত চিঠি

❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে এবং হযরত যােবায়ের ও হযরত মিকদাদ (رضي الله عنه) কে আদেশ করলেন যে, তােমরা খাখ’ নামক স্থানে যাও, সেখানে তােমরা একজন মহিলার সাক্ষাৎ পাবে। তার কাছে একটি চিঠি আছে। তােমরা তার কাছ থেকে এটি চিনিয়ে আনবে। হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল এর নির্দেশ পাওয়া মাত্র আমরা তিনজন দ্রুতবেগে গিয়ে যথাস্থানে কথিত মহিলাকে পেয়ে চিঠির কথা জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করল। আমরা বললাম রাসূলাল্লাহর কথা মিথ্যা হতে পারে না। আমরা তাকে বললাম তুমি স্বেচ্চায় না দিলে আমরা তােমাকে উলঙ্গ করে তল্লাশী করবাে। ফলে সে তার চুলের ভেতর থেকে একটি চিঠি বের করে দিল। আমরা তা নিয়ে রাসূলুল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলাম। পত্রটি হযরত হাতিব ইবনে আবি বালতা (رضي الله عنه) ঐ মহিলা মারফত মক্কার কাফেরদের নিকট পাঠাচ্ছিলেন। এ চিঠিতে রাসূল কর্তৃক মক্কার কাফেরদের বিরােদ্ধে যুদ্ধের গােপনীয় পরিকল্পনা ফাঁস করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন হাতে। চিঠি উদ্ধারের পর রাসূলুল্লাহ তাকে হাতেব কে ডেকে ঐ চিঠি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আরজ করলেন- আমার সন্তানদেরকে আমি মক্কায় ফেলে এসেছি। সেখানে তাদের দেখা-শুনা ও সাহায্য করার মত আমার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। বর্তমানে তারা মক্কায় একেবারে অসহায়। সুতরাং আমি মনে করলাম, এ পরিস্থিতে যদি মক্কার কুরাইশদের কোন উপকার করি তবে হয়তাে তারা আমার সন্তানদের কোন ক্ষতি করবেনা। শুধু এই উদ্দেশ্যেই আমি কাজটা করেছি। এছাড়া আমার অন্য কোন উদ্দেশ্যে নেই। হযরত হাতিবের বক্তব্য শুনে হযরত ওমর (رضي الله عنه) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলাল্লাহ ও তাঁকে বারণ করে বললেন, হে ওমর থাম! বদরী সাহাবীদের উপর আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। তাদের সকল অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। ●৪২৩
_____________________________
৪২৩.[মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী, (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৪২২, হাদিস নং ২৭৯৯]


নাজ্জাশীর মৃত্যু সংবাদ


❏ হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী যেদিন মৃত্যুবরণ করেন, ঠিক সেদিনই রাসূল (ﷺ) তার মৃত্যু সংবাদ সাবাইকে বলে দেন। অথচ আবিসিনিয়া মদীনা শরীফ থেকে বহুদূরে অবস্থিত। রাসূল সাহাবাগণকে নিয়ে ঈদগাহে গিয়ে চার তাকবীরের সাথে নাজ্জাশীর গায়েবানা নামাজে জানাযা আদায় করেন। ●৪২৪
_____________________________
৪২৪. ইমাম বুখারী (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, পৃ:৫৪৮ হাদিস নং ৩৬০০, আবু নঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) (৪৩০হি.), দালায়েলুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:৪৯৭]


মিশর দখল 

❏ হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- খুব শীঘ্রই তােমরা (মুসলমানরা) মিশর ভূখন্ড অধিকার করবে। মিশরের মুদ্রার নাম “কিরাত”। মিশর দখলের সময় সেখানকার জনসাধারণের ভাল ব্যবহার করবে। কেননা, তাদের সাথে আমাদের মৈত্রী চুক্তি এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। হে আবু যর! যখন দেখবে যে, সেখানে দু’ব্যক্তি এক ইট পরিমাণ স্থান দিয়ে বিবাদ করছে, তখন তথা হতে চলে আসবে। 
সে যুগে মিশরে প্রচলিত মুদ্রার নাম ছিল কিরাত। মিশরের পরিচিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সেখানকার মুদ্রার নামও বলে দেয়া হয়েছিল। হযরত ওমর (رضي الله عنه)'র শাসনামলে মিশর মুসলমানদের দখলে আসে। হযরত আবু যর (رضي الله عنه) বলেন- শুরাহবিল ইবনে হাসানাহ ও তার ভাই রবীয়াহ কে ইট পরিমাণ জায়গা নিয়ে বিবাদ করতে দেখে আমি মিশর ত্যাগ করলাম। ●৪২৫
_____________________________
৪২৫. [ইমাম মুসলিম (رحمة الله) (২৬১হি.), মুসলিম শরীফ, আরবী, পৃ:।

জান্নাতের সুসংবাদ 

❏ হযরত আবু মুসা আশয়ারী (رضي الله عنه) বলেন, আমি মদীনার একটি বাগানে রাসূল ওর সাথে ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজায় আঘাত করল। রাসূল (ﷺ) বললেন দরজা খুলে দাও এবং আগত ব্যক্তিদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। হযরত আবু মুসা আশয়ারী বলেন, আমি বাগানের ফটক খুলে প্রথমে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) কে দেখতে পেলাম। তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবার পর তিনি আল্লাহ’র প্রসংশা করলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত ওমর (رضي الله عنه) এলেন। আমি তাঁকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিলে তিনিও আল্লাহর প্রসংশা করেন। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি এসে বাগানের ফটকে শব্দ করলে রাসূল 
শার বললেন, হে আবু মুসা! দরজা খুলে দাও এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা সাপেক্ষে তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি দরজা খুলে দেখলাম- হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এসেছেন। আমি তাঁকে জান্নাতের সু সংবাদ ও পরীক্ষা সম্পর্কে জানালে তিনি জান্নাতের সু সংবাদে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করলেন। ●৪২৬
_____________________________
৪২৬. ইমাম বুখারী (২৫৬হি.), বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫২২]

চুক্তিপত্র

❏ রাসূল (ﷺ) এর চাচা হযরত আবু তালেবের সমর্থনের কারণে মক্কার কুরাইশগণ রাসূল 
কে স্তব্ধ করতে অক্ষম হয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, বনী হাশেম ও বনী আব্দুল মােত্তালিব’র সাথে ভবিষ্যতে তারা কোন সম্পর্ক রাখবে না এমনকি তাদের সাথে কথা-বার্তা, বেচা-কেনা সবকিছু বয়কট করবে। এ ব্যাপারে একটি চুক্তিনামা এক টুকরাে কাপড়ে লিখে মােহরাঙ্খিত করে বায়তুল্লাহ’র দেওয়ালে লটকিয়ে রাখে। অতঃপর বাধ্য হয়ে আবু তালেব বনী হাশেম বনী আব্দুল মােত্তালিবের সকলকে নিয়ে শিয়াবে আবি তালেব নামক দুই পাহাড়ের মধ্যখানে দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ মানবেতর জীবন-যাপন করেন। এদিকে আল্লাহ তায়ালা ঐ চুক্তিপত্রে উই পােকা সৃষ্টি করে দেন এবং উই পােকা আল্লাহর নাম ব্যতীত বাকী সব লেখাসহ চুক্তিপত্র খেয়ে চুড় করে ফেলে। রাসূল এ ব্যাপারে চাচা আবু তালেবকে অবহিত করেন। আবু তালেব কুরাইশদের নিকট গিয়ে বলেন- আমি তােমাদের কাছে এমন বিষয়ে কথা বলতে এসেছি আশা করি তােমরা এবার ইনসাফ প্রদর্শন করবে। 
তিনি বললেন- মুহাম্মদ শাহ আমাকে বলেছেন যে, তােমাদের এই চুক্তিপত্রে আল্লাহর নাম ব্যতীত বাকী অংশ কীট-পতঙ্গ খেয়ে ফেলেছে। আর আমি তাঁকে কোন দিন মিথ্যা বলতে শুনিনি। চুক্তিপত্রটি খুলে দেখ। যদি কথা সত্য হয় তবে খােদাকে ভয় কর আর এই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাক। আর যদি তা মিথ্যা হয়ে থাকে তবে তাকে তােমাদেরকে সােপর্দ করে দেবাে আমি আর তার সাহায্যে এগিয়ে আসবাে না। তখন তােমরা তাকে যা ইচ্ছে করতে পারবে। আবু তালেবের কথায় কুরাইশ সম্মতি হল এবং একজনকে ঐ চুক্তিনামা আনতে পাঠায়। যখন চুক্তিপত্র খােলা হল দেখা গেল শুধু ~ ছাড়া বাকী কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা। তখন হযরত আবু তালেব তাদের ভৎর্সনা করেন এবং তারা সকলই লজ্জিত হল আর বয়কট বিলুপ্ত হল। ●৪২৭
_____________________________
 ৪২৭. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:১০৬ 


শাহাদতের সংবাদ 


❏ ৮ম হিজরীতে তিন হাজার সৈন্য সিরিয়ার নিকটতম মুতা’য় যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করেন। এ যুদ্ধে হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (رضي الله عنه) কে সেনাপতির দায়িত্ব দিয়ে বলেন- যদি সে শহীদ হয়ে যায় তবে জাফর ইবনে আবি তালেব সেনাপতি নিয়ােগ হবে। যদি সেও শহীদ হয় তবে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা সেনাপতির দায়িত্ব পালন করবে। অতঃপর সেও যদি শাহাদত বরণ করে তবে মুসলিম সৈনিকদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সেনাপতি নিয়ােগ হবে। 
এরপর তিনি মদীনা শরীফে মিম্বরে বসে এরশাদ করেন- যুদ্ধ পতাকা যায়েদের হাতে আর সে শহীদ হয়েছে। এরপর জাফর হাতে নিয়েছে এবং শহীদ হয়েছে অতঃপর ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধরেছে সেও শহীদ হয়েছে। এখন খালেদ বিন ওয়ালিদ সেনাপতি নিয়োেগ হয়েছে। তার হাতেই বিজয় অর্জিত হয়েছে। এরপর বললেন- হে আল্লাহ! নিশ্চয় খালেদ তেমার তরবারী সমূহের একটি তরবারী, সুতরাং তুমি তাঁকে সাহায্য কর। সেদিন থেকে তার নাম সাইফুল্লাহ তথা আল্লাহর তরবারী রাখা হয়েছে। 

এরপর মুতা যুদ্ধের খবর নিয়ে হযরত ইয়ালা ইবনে মুনাব্বাহ রাসূল এর খেদমতে এসে বিস্তারিত ঘটনা বলতে চাইলে রাসূল কি বলেন- হে ইয়ালা! মুতা যুদ্ধের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আমি তােমাকে বলবাে, না তুমি আমাকে বলবে? ইয়ালা বললেন- হুযূর! আপনিই বলুন। হুযুর (ﷺ) পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঘটনা বর্ণনা করলে ইয়ালা বলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমি ঐ খােদার শপথ করে বলছি যিনি আপনাকে সাদেক ও মসদুক বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। আপনি মুতা যুদ্ধ সম্পর্কে অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলেছেন। তারপর রাসূল এরশাদ করেন- আল্লাহ তায়ালা মুতা ভূমিকে আমার চোখের সামনে এনে দিয়েছেন ফলে আমি যুদ্ধের যাবতীয় অবস্থা অবলােকন করেছি। ●৪২৮
_____________________________
৪২৮. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:১৬১]


হারিয়ে যাওয়া উঠের সংবাদ 


❏ তাবুক যুদ্ধে এক জায়গায় হুযূর (ﷺ)’র উঠনী হারিয়ে গেলে মুনাফিকদের এক মুনাফিক বলতে লাগল যে, মুহাম্মদ (ﷺ) নবী বলে দাবী করে, তােমাদেরকে আসমানের সংবাদ প্রদান করে অথচ নিজের হারিয়ে যাওয়া উঠনীর খবর নেই। 
হযরতের কাছে এই সমালােচনার কথা পৌঁছলে তিনি বলেন- আল্লাহ আমাকে প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে অবহিত করে রেখেছেন। এক্ষুনি আমাকে অবহিত করা হল যে, উঠনী অমুক স্থানে আছে এবং অমুক গাছের সাথে আটকে আছে। সাহাবায়ে কেরাম সেখানে গেলে ঠিক সেভাবেই উঠনী পেলেন যেভাবে রাসূল (ﷺ) বলেছেন। ●৪২৯
_____________________________
৪২৯.[আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:১৭০]


মৃত্যুর সংবাদ


❏ হযরত মুয়ায ইবনে যাবাল (رضي الله عنه)কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করেন রাসূল (ﷺ) এ সময় অনেক দীর্ঘ অসিয়ত করেন তাঁকে। সাথে একথাও বললেন- হে মুয়ায! যদি অমার সাথে তােমার দ্বিতীয়বার সাক্ষাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতাে তবে অসিয়ত সংক্ষিপ্ত করতাম। কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আমরা পরস্পর আর একত্রিত হতে পারবাে না। অতএব, মুয়ায় ইয়েমেনে ইন্তেকাল করেন। ●৪৩০
_____________________________
৪৩০. আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:১৮৬

হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)’র মৃত্যুর সংবাদ 


❏ রাসূল (ﷺ) অসুস্থ অবস্থায় হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه)কে ডেকে কানে কানে কিছু কথা বললেন, এতে হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) কাঁদতে লাগলেন। তিনি পুনরায় হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)কে ডেকে চুপে চুপে কিছু কথা বললেন। এতে ফাতেমা (رضي الله عنه) হাসতে লাগলেন। রাসূল (ﷺ)'র বিবিগণের মধ্যে একজন তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি এই গােপনীয়তা প্রকাশ করতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। 
রাসূল (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করলে হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) বলেন- রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইতিপূর্বে প্রতি বছর হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) একবার কুরআন নিয়ে আসতেন কিন্তু এ বছর দু’বার নিয়ে এসেছেন। এতে আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। ফলে আমি কাঁদতে আরম্ভ করি। দ্বিতীয়বার তিনি আমাকে ডেকে বললেন- তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি হবে এই উম্মতের সায়্যিদাহ? আর সর্বপ্রথম যে মহিলা জান্নাতে যাবে সে হবে তুমি। একথা শুনে আমি হাসতে আরম্ভ করলাম। ●৪৩১
_____________________________
৪৩১. [আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.), শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, পৃ:১৮৬]

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বুখারী শরীফে বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه) কে হাসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন- নবী করিম (ﷺ) আমাকে চুপে চুপে অবহিত করলেন যে, তিনি এরােগে ওফাত লাভ করবেন। এতে আমি কেঁদে ছিলাম। তারপর আবার আমাকে চুপে চুপে জানালেন যে, আমি তাঁর পরিবার পরিজনের প্রথম ব্যক্তি যে তাঁর সাথে (কবরে) মিলিত হবে। এতে আমি হেসে ছিলাম। ●৪৩২
_____________________________
৪৩২.ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫৩২ 

জান্নাতের সুসংবাদ

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেতেন, হারিসা (رضي الله عنه) একজন নওজোয়ান লােক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করার পর তার আম্মা নবী করিম (ﷺ)'র নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) হারিসা আমার কত আদরের আপনি তা অবশ্যই জানেন। (বলুন) সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট পুণ্যের আশা পােষণ করব। আর যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে আপনি তাে দেখতেই পাচ্ছেন, আমি তার জন্য যা করছি। তখন তিনি বললেন, তােমার কি হল, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে? বেহেশত কি একটি? (না-----না) বেহেশত অনেকগুলি, সে তাে জান্নাতুল ফেরদাউসে অবস্থান করছে। ●৪৩৩
_____________________________
৪৩৩. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ:৫৬৭, হদিস নং ৩৬৯৩ 


গোপন সম্পদের সংবাদ


❏ ইবনে সা’দ ও বায়হাকী (رحمة الله) আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে নওফল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, বদর যুদ্ধে যখন নওফল মুসলমানদের হাতে গ্রেফতার হয় তখন রাসূল পাক তাকে বললেন- হে নওফল! তুমি ফিদইয়াহ’ দিয়ে মুক্তিলাভ কর। সে বলল, আমার মুক্তিপণের জন্য দেওয়ার মত কিছুই আমার কাছে নেই। তখন রাসূল তে বললেন- 
- مالك من اوزنفسك
بجدة الذى অর্থ: তুমি তােমার ঐ সম্পদ দ্বারা ফিদইয়াহ দাও যা জিদ্দায় আছে। নওফল বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। এরপর সে ঐ সম্পদ থেকে ফিদইয়াহ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিল। ●৪৩৪
_____________________________
৪৩৪. সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৪২ 

❏ আবু নঈম (رحمة الله) হযরত মুছা ইবনে উকবা ও উরওয়া ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তারা উভয়ই বলেন, মুশরিকদের প্রতিনিধি দল যখন মক্কায় ফিরে আসল তখন সংবাদ পেয়ে উমাইর ইবনে ওহাব আল জাহমী এসে হাজব’ নামক স্থানে উমাইয়্যার পুত্র সাফওয়ান’র পাশে বসল। সাফওয়ানের পিতা উমাইয়্যা বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। সাফওয়ান বলল, বদর যুদ্ধে নিহতদের দুঃখে আমার জীবন দুর্বিষয় হয়ে পড়েছে। উমাইর তার কথা শুনে বলল, ঠিক বলেছেন, খােদার কসম! তাদের নিহত হওয়ায় জীবনের স্বাধ চলে গেছে। যদি আমার উপর এমন কর্জ না থাকত যা আমি পরিশােদ করতে পারিনা এবং আমার এমন পরিবার-পরিজন থাকত যাদের ভরণ-পােষাণের প্রয়ােজন হতনা তবে আমি নিশ্চিত মুহাম্মদের কাছে গিয়ে তাকে হত্যা করতাম। যদি তাঁর পক্ষ থেকে ভয়ের কোন আশংকা দেখা দেয় তবে আমার কাছে বাঁচার জন্য একটি কৌশল আছে আর তা হল আমি বলব যে, আমি আপনার কাছে বন্দী হওয়া আমার সন্তানের কাছে তাদেরকে দেখতে এসেছি।
সাফওয়ান উমাইরের এই কথা শুনে অত্যন্ত খুশী এবং তার পিতার প্রতিশােধ গ্রহণের সুবর্ণ সুযােগ মনে করল। সে উমাইরকে বলল, তােমার যাবতীয় কর্জ আমার দায়িত্বে নিয়ে নিলাম আর তােমার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পােষণ তাই হবে যা আমার পরিবার-পরিজনে জন্য হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আমি আমার সাধ্যমত তাদের জন্য ব্যয় করতে কুণ্ঠাবােধ করবােনা। 
এরপর সাফওয়ান উমাইরের জন্য বাহন ও সফরের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিল এবং একটি বিষ মাখা উন্নত মানের তলােয়ার দিল। উমাইর সাফওয়ান কে বলল, আমি ফিরে আসা পর্যন্ত এই গােপন চুক্তি যেন ফাঁস না হয় এবং গােপনীয়তা যেন রক্ষা হয়। 
অতঃপর উমাইর রওয়ানা হল এবং মদীনা গিয়ে মসজিদের নববীর দরজার পাশে নেমে সওয়ারী বেঁধে তলােয়ার নিয়ে রাসূল ’র দিকে যেতে লাগল। ইত্যবসরে হযরত ওমর (رضي الله عنه) ও এসে গেলেন। তারা উভয়ই এক সাথে প্রবেশ করলেন। নবী করিম হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে বললেন, ওমর! এসাে, বস, তারপর উমাইর কে উদ্দেশ্য করে বললেন, 

অর্থ: হে উমাইর! কি উদ্দেশ্যে এসেছ? উত্তরে সে বলল, আমার যে সব ব্যক্তি আপনার কাছে বন্দী আছে আমি তাদের কাছে এসেছি। তিনি বললেন, উমাইর সত্যি করে বল কেন এসেছ? সে বলল, আমার বন্দী লােকদের ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসিনি। তখন নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন, তুমি সাফওয়ানের সাথে হাজর’ নামক স্থানে কি শর্তে চুক্তি করেছিলে? উমাইর ভয় পেয়ে গেল এবং বলল, আমি সাফওয়ানের সাথে কি চুক্তি করেছি? তিনি বললেন, কেন সাফওয়ান তােমাকে এই শর্তের ভিত্তিতে পাঠায়নি যে, তুমি আমাকে হত্যা করবে আর সে তােমার যাবতীয় কর্জ পরিশােদ করবে এবং তােমার পরিবার-পরিজনের অভিভাবক হবে। 
উমাইর অবাক চিত্তে বলে উঠল االله رسول انك اشهد আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। সাফওয়ান ও আমার মধ্যে অতি গােপনীয়তার সহিত এই শর্তারােপ করা হয়েছিল। সে ও আমি ছাড়া একথা আর কেউ জানেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করেছেন। সুতরাং আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছি। 
এরপর উমাইর মক্কায় ফিরে গিয়ে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং অনেক লােক তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ●৪৩৫
_____________________________
৪৩৫.[সুয়ুতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৩৪৪]
Top