❏ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে একত্রিত হওয়া ও যিয়াফত করা যাবেনা! ইহার ব্যাখ্যা


প্রশ্ন: মৃতের বাড়িতে লোকজন জমায়েত না হওয়ার ব্যাপারে ছহীহ্ হাদিসে আছে,

حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ بَابٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ، قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَاحَةِ 

-“হযরত জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মৃতের দাফনের পরে মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠানোকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভূক্ত করতাম।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬৯০৫ সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬১২ ই: ফা:)


দেখুন! মৃত ব্যক্তি বাড়িতে একত্রিত হওয়া ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা সাহাবীগণ বিলাপের সাথে তুলনা দিয়েছেন ও অন্তর্ভূক্ত করেছেন, আর বিলাপ শরিয়েতে নিষেধ। তাহলে যিয়াফত বা চল্লিশা করা জায়েয হয় কিভাবে?


জবাব: প্রথমত মুসনাদু আহমদের সনদটি নিম্নমানের জয়ীফ যা হুজ্জত বা দলিল হওয়া উপযুক্ত নয়। কারণ এর সনদে 

نَصْر بْن باب، أبو سَهْل الخُراسانيّ 

(নাছর ইবনে বাব আবু সাহল খুরাছানী) নামক রাবী রয়েছে সে চরম পর্যায়ের সমালোচিত। যেমন এই রাবীর ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য লক্ষ্য করুন,

وَقَالَ ابْنُ مَعِينٍ: لَيْسَ بِشَيْءٍ. وَقَالَ ابْنُ حِبّان: لا يُحْتَجّ بِهِ. وقال الْبُخَارِيّ: يرمونه بالكذب. وقال غير واحد: متروك.

-“ইমাম ইবনে মাঈন বলেন: সে কিছুই নয়। ইমাম ইবনে হিব্বান বলেছেন: তার উপরে নির্ভর করা যায়না। ইমাম বুখারী বলেন: সে মিথ্যা দ্বারা প্রভাবিত হত। একাধিক ইমামরা বলেছেন: সে পরিত্যাজ্য।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩২৮) 


𓈃 হাফিজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাছির (رحمة الله) এভাবে উল্লেখ করেছেন,

وقال ابن معين: ليس بثقة. وقال مَرَّةً: ليس بشيء. وقال مَرَّةً: كذَّاب خبيثٌ وقال البخاري: يَرْمُونه بالكذب. وقال مَرَّةً: تَكَلَّمُوا فيه. وقال أبو زرعة: لا ينبغي أن يُحَدَّث عنه. وقال أبو حاتم والنسائي: متروك. وقال ابن حبان: بَطُل الاحتجاج به. وقال الدارقطني: ضعيف. وقال ابن عدي: وله غير ما ذكرتُ، وهو مع ضَعْفِه يُكْتَبُ حديثه.

𓈃 “ইমাম ইবনে মাঈন বলেছেন: সে বিশ্বস্ত নয়। আরেকবার বলেছেন: সে কিছুই নয়। আরেকবার বলেছেন: সে মিথ্যাবাদী খবিছ। 

𓈃 ইমাম বুখারী বলেছেন: সে মিথ্যা দ্বারা প্রভাবিত হত, আরেকবার বলেছেন: তার ব্যাপারে সমালোচনা আছে। 

𓈃 ইমাম আবু যুরাআ বলেছেন: তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিৎ নয়। 

𓈃 ইমাম আবু হাতিম ও নাসাঈ বলেছেন: সে পরিত্যাজ্য। 

𓈃 ইবনে হিব্বান বলেছেন: তার উপর নির্ভর করা বাতিল। 

𓈃 ইমাম দারে কুতনী বলেছেন: সে দুর্বল। 

𓈃 ইমাম ইবনে আদী বলেছেন: তার কথা দুর্বল ভাবে তার হাদিস লিখেছি।” 

(ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহে ওয়া তাদিল, রাবী নং ৫৬৯)


দ্বিতীয়ত, ইহার সনদে আরেকজন রাবী বা বর্ণনাকারী আছে যার নাম إِسْمَاعِيْلُ بنُ أَبِي خَالِدٍ (ইসমাঈল ইবনে আবী খালিদ) যার ব্যাপারে ইমাম ছিয়তী (رحمة الله) তার ‘আসমাউল মুদাল্লিছীন’ কিতাবে এবং ইমাম আসকালানী তার ‘তাবাকাতুল মুদাল্লেছীন’ কিতাবে মুদাল্লিছ রাবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সে মূলত চতুর্থ তবকার মুদাল্লিছ রাবী। তিনারা স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেন: 

ذكره النسائي وغيره بالتدليس. 

𓈃 “ইমাম নাসাঈ ও অন্যান্য ইমামরা তাকে মুদাল্লিছ রাবীর অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” 

𓈃 সুনানু ইবনে মাজাহ এর বর্ণনাকারী هُشَيْمُ بنُ بَشِيْرِ بنِ أَبِي خَازِمٍ (হুশাইম ইবনে বাশির ইবনে আবী খাজেম) বিশ্বস্ত তবে ইমামদের কাছে সে মুদাল্লিছ রাবী। 

𓈃 যেমন, 

أنَّهُ صَاحِبُ تَدْلِيسٍ كَثِيْرٍ -

“নিশ্চয় তিনি প্রচুর তাদলিছ করার একজন” বলে উল্লেখ করেছেন। 


এই দৃষ্টিতে হাদিসটি আপত্তিমুক্ত নয়। আর সকলেই অবগত আছেন, মুদাল্লিছ রাবীর عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণিত হাদিস হুজ্জত হয়না, যতক্ষন না এর সমর্থনে অন্য রেওয়ায়েত না পাওয়া যায়। এখানে হুশাইম ও ইসমাঈল দুই জনেই হাদিসটি عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণনা করেছেন। দেখুন 

𓈃 সনদটি: 

حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ بَابٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ،

অতএব, মুদাল্লিছ রাবীর عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণিত হাদিস হুজ্জত বা দলিল হয়না।


দ্বিতীয়ত: এই হাদিসটি ৪দিন, ৫দিন, ৪০ দিন বা ৩দিনের পরে যিয়াফত অনুষ্ঠানকে নিষেধ করেনা। কেননা এই হাদিসটি মূলত দাফন করার পর পর খাবার পরিবেশনের নিষেধাজ্ঞা করেছে। যেমন 


❍ উক্ত হাদিসটিতেই উল্লেখ রয়েছে,

كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَاحَةِ 

-“মৃতের দাফনের পরে মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠানোকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভূক্ত করতাম।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬৯০৫) 


সুতরাং এই হাদিস মূলত মৃতের লাশ দাফন করার পর পর এরুপ করা অপছন্দনীয়। ৪দিন, ৪০ দিনের সময় যিয়াফত নিষেধ করেনা।


তৃতীয়ত: এই হাদিস ছহীহ্ মারফূ হাদিসের মুখালেফ বা বিপরীত। কেননা প্রিয় নবীজি (ﷺ)  মৃতের বাড়িতে খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে আদেশ প্রদান করেছেন। 


❍ যেমন ছহীহ্ হাদিসটি লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ: لَمَّا جَاءَ نَعْيُ جَعْفَرٍ حِينَ قُتِلَ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اصْنَعُوا لِآلِ جَعْفَرٍ طَعَامًا، فَقَدْ أَتَاهُمْ أمْرٌ يَشْغَلُهُمْ أَوْ أتَاهُمْ مَا يَشْغَلُهُمْ

-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (رضي الله عنه)  বলেন, যখন জাফর ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه)  এর শহিদ হওয়ার সংবাদ আসল, তখন রাসূলে করিম (ﷺ)  বললেন: তোমরা জাফরের পরিবারের প্রতি খাবার পরিবেশন কর। কেননা তাদের উপর শোকের মছিবত এসেছে।” 


তথ্যসূত্রঃ

・সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬১০ 

・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস, হাদিস নং ৩১৩২ 

・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৩৭৭ 

・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৭৫১ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৭০৯৬ 

・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৯৯৮ 

・মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৬৮০১ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু ছাগীর, হাদিস নং ১১৩৯ 

・মুসনাদু বাজ্জার, হাদিস নং ২২৪৫ 

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২০৪ 

・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৬৬৫ 

・মুসনাদে ইসহাক্ব ইবনে রাহবিয়া, হাদিস নং ২১৪৪ 

・মুসনাদে হুমাইদী, হাদিস নং ৫৪৭ 

・সুনানু দারে কুতনী, হাদিস নং ১৮৫০ 

・ইমাম বাগভী: শারহু সুন্নাহ, হাদিস নং ১৫৫২


এই হাদিসে স্পষ্ট মৃতের পরিবারের প্রতি খাবার পরিবেশন করা নিষেধ তো দূরের কথা বরং এরূপ করা দয়াল নবীর আদেশ। এমনকি স্বয়ং রাসূলে করিম (ﷺ)  মৃতের বাড়িতে গিয়েছেন ও খাবার পরিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (ﷺ)  সমর্থন করেছেন। 


❍ যেমন ছহীহ্ হাদিসে আছে,


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى


-“জনৈক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূলে পাক (ﷺ)  এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ)  কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুরছিল তাদের বলেন: পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখোন থেকে ফিরার পর জনৈক মহিলার আহবানকারী নবী পাক (ﷺ)  কে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে গেলেন ও তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী করিম (ﷺ)  খেতে শুরু করলে অন্যরাও খেতে শুরু করেন। তখন আমাদের মুরুব্বিরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূল (ﷺ)  এক লোকমা মুখে দিয়ে তা শুধু চিবাচ্ছেন কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ গোস্ত এমন এক বকরীর যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য বাকী নামক বাজারে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয় মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেন, এ গোস্ত বন্দিদের খাইয়ে দাও।” 


তথ্যসূত্রঃ

・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩৩৩২ بَابٌ فِي اجْتِنَابِ الشُّبُهَاتِ, ই: ফা: হাদিস নং ৩২৯৯ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮২৫ بَابُ كَرَاهِيَةِ مُبَايَعَةِ مَنْ أَكْثَرُ مَالِهِ مِنَ الرِّبَا أَوْ ثَمَنِ الْمُحَرَّمِ 

・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৯৪২ 

・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ২৪৩৪ 

・ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ: 

・তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ:


𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানীও বলেছেন,

وهذا سند صحيح كما قال الحافظ فى التلخيص -“এই সনদ ছহীহ্ যেমনটি হাফিজ ইবনু হাজার তার ‘তালখিছ’ গ্রন্থে বলেছেন।” (ইরইয়াউল গালিল, ৩য় খন্ড, ১৯৬ পৃ:) 


এই হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমাণিত হয়, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  নিজেই মৃত ব্যক্তির আহল-বর্গের নিকট থেকে খাবার গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবীরাসহ লোকেরা ইহা খাবার গ্রহণ করেছেন এতে রাসূলে পাক (ﷺ)  নিষেধ করেননি। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফতের দাওয়াত গ্রহণ করা রাসূল (ﷺ)  এর সুন্নাত এবং ঐ যিয়াফতে খাবার গ্রহণ করাও আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত। সুতরাং ‘ফেলে রাসূল’ তথা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  এর কর্ম দ্বারা যিয়াফত গ্রহণ করা প্রমাণিত হল। 

বলুন! উসূল মোতাবেক দুর্বল ও সমালোচিত সূত্রে বর্ণিত জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)  এর বক্তব্য অগ্রগন্য নাকি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  এর আদেশ, আমল ও সমর্থন অগ্রগন্য? রাসূলে পাক (ﷺ)  এর কোন আমল কি কোন সাহাবীর বক্তব্য দ্বারা রহিত করা যায়? সাহাবায়ে কেরাম যিয়াফতের খাবার আহার করছেন অথচ প্রিয় নবীজি (ﷺ)  নিষেধ করলেন না, এতে কি প্রমাণ হয়না যিয়াফতের গ্রহণ করা জায়েয? স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ)  নিজেই মৃত ব্যক্তির পরিবার থেকে যিয়াফতের খাবার আহার করলেন, এতে কি প্রমাণ হয়না যে যিয়াফত গ্রহণ করা জায়েয? তাই ‘জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ’ এর থেকে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হাদিস রাসূলে পাক (ﷺ)  ও অন্যান্য সাহাবীগণের আমলে বিপরীত হওয়ার কারণে আমল যোগ্য হবেনা।

❏ নিয়াহাতের কারণে কবরে আযাব হয়! ইহার ব্যাখ্যা

النِّيَاحَة নিয়াহাতের কারণে কবরে আযাব হয়! ইহার ব্যাখ্যা

প্রশ্ন: হাদিস শরীফে আছে, المَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ 

-“মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা-যিয়াফত করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” (ছহীহ্ বুখারী)

এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা-যিয়াফত করলে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষতি ও আমাদের জন্য নাজায়েয।

উত্তর: এই হাদিসে বলা হয়েছে মৃত ব্যক্তির জন্য النِّيَاحَة (নিয়াহাত) করলে আযাব দেওয়া হবে। এখন জানা উচিৎ এই النِّيَاحَة (নিয়াহাত) অর্থ কি? আরবী-বাংলা ডিকশনারী খুলে দেখুন النِّيَاحَة (নিয়াহাত) এর অর্থ হচ্ছে ‘বিলাপ করা, উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা ইত্যাদি’। চল্লিশা-যিয়াফতের কথা এখানে বলা হয়নি। এই হাদিসে النِّيَاحَة (নিয়াহাত) এর অর্থ যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা তা এই হাদিসের শেষে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। 


❍ যেমন ছহীহ্ বুখারীর সম্পূর্ণ হাদিসটি লক্ষ্য করুন:


حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: المَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ تَابَعَهُ عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، وَقَالَ آدَمُ: عَنْ شُعْبَةَ: المَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الحَيِّ عَلَيْهِ


“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)  তদীয় পিতা উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। আব্দুল আলা (رحمة الله) বলেন... কাতাদা (رحمة الله) হতে বর্ণনায় আব্দান (رحمة الله) এর অনুস্বরণ করেছেন। আদম (رحمة الله) শুবা (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জিবীতদের কান্নার কারণে আযাব দেওয়া হয়।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ১২৯২ তাওহীদ ফা: 

・ছহীহুল বুখারী হাদিস নং ১২৯২ ই: ফা: 

・ছহীহ্ বুখারী হাদিস নং ১২১৫, আধুনিক প্রকাশনী, ১২০৭


একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে।


❍ যেমন লক্ষ্য করুন:


وَحَدَّثَنَا أَبُو الْحَسَنِ الْعَلَوِيُّ، ثنا أَبُو حَامِدٍ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ الْحَافِظُ ثنا أَحْمَدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الدُّولَابِيُّ، ثنا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، ثنا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَفْصٍ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ


“আবু বকর ইবনে হাফছ বলেন আমি ইবনে উমর (رضي الله عنه)  থেকে শুনেছি তিনি উমর (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৭১৬৫ ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ২১৯৫)


❍ একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:


أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ


“হযরত ইবনে উমর তদীয় পিতা উমর (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী পাক (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীত পরিবারের (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ১৮৪৮ জামে তিরমিজি, হাদিস নং ১০০২)


❍ একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ أَنَّ عُمَرَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ

-“হযরত সাঈদ ইবনে মুসাঈব হতে বর্ণিত, নিশ্চয় উমর (رضي الله عنه)  বলেছেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীত পরিবারের (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৩১৫) 


❍ একই হাদিস হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে স্পষ্ট উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَخِيهِ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ 

-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬১৮২ ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ২১৯৫)


❍ একই হাদিস হযরত আবু মূসা আশয়ারী (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، عَنْ أَسِيدِ بْنِ أَبِي أَسِيدٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ عَلَيْهِ

-“মূসা ইবনে আবী মূসা আশয়ারী তদীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৯৭১৬ সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৯৪)


❍ একই হাদিস হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ صُبَيْحٍ قَالَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ سِيرِينَ قَالَ: ذَكَرُوا عِنْدَ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ فَقَالُوا: كَيْفَ يُعَذَّبُ الْمَيِّتُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ؟ فَقَالَ عِمْرَانُ: قَدْ قَالَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

-“আব্দুল্লাহ ইবনে ছুবাইহ বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন কে বলতে শুনেছি, হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه)  এর সামনে বলা হল: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে। লোকেরা তখন বলল: কিভাবে জিবীতদের কান্নায় আযাব দেওয়া হবে? তখন ইমরান (رضي الله عنه)  বললেন: ইহা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)  বলেছেন।” 

তথ্যসূত্রঃ

(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৯৯১৮ সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ১৮৪৯ মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১২১১৬)


❍ একই হাদিস হযরত ছামুরা (رضي الله عنه)  থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ صَالِحِ بْنِ الْوَلِيدِ النَّرْسِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو خَلِيفَةَ، وَزَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ، قَالَا: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَا: ثنا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ، ثنا عُمَرُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ

-“হযরত ছামুরা (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬৮৯৬)


অতএব, প্রমাণিত হল এই হাদিস চল্লিশা-যিয়াফতের কথা বলা হয়নি বরং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করার কথা বলা হয়েছে যাকে বিলাপ বলা হয়। এ কারণেই মৃতের জন্য বিলাপ করলে কবরে আযাব দেওয়া হয়।  


Top