❏ পরিচ্ছেদ
আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَوَ﴿۲﴾هُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴿۳﴾ وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
[Surat Ar-Ra'd ২ - ৪]
অর্থাৎ - আল্লাহই উর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত তোমরা তা দেখতে পাও। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করেন, প্রত্যেক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করতে পার।
তিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখণ্ড তাতে আঙ্গুর বাগান, শস্য ক্ষেত্র, একাধিক শিরবিশিষ্ট অথবা এক শিরবিশিষ্ট খেজুর গাছ- সিঞ্চিত একই পানিতে এবং ফল হিসেবে এগুলোর কতক কতকের উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (১৩ঃ ২-৪)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنْزَلَ لَكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنْبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُنْبِتُوا شَجَرَهَا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ. أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ.
অর্থাৎ- বরং তিনি যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি; তারপর আমি তা দিয়ে মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, তার গাছপালা উদগত করবার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তবুও তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা সত্য-বিচ্যুত হয়।
বরং তিনি, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং তার মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দু’ সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়, আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তবুও তাদের অনেকেই জানে না। (২৭ঃ ৬০-৬১)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَكُمْ مِنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ. يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ. وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ.
অর্থাৎ—তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তোমাদের জন্য তিনি তা দিয়ে জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর সব ধরনের ফল-ফলারি। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিন, সূর্য এবং চন্দ্র আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তারই বিধানে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (১৬ঃ ১০-১২)।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, যেমনঃ পাহাড়-পর্বত, গাছ-গাছড়া, ফলমূল, নরম ও শক্ত ভূমি এবং জলে-স্থলে সৃষ্ট নানা প্রকার জড়পদার্থ ও প্রাণীকুল, যা তার মাহাত্ম্য ও কুদরত, হিকমত ও রহমতের প্রমাণ বহন করে, আবার সাথে সাথে সৃষ্টি করেছেন ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল প্রাণীর জীবিকা। দিনে রাতে, শীতে গ্রীষ্মে ও সকাল সন্ধ্যায় তারা যার মুখাপেক্ষী।
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ.
অর্থাৎ- ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবই আছে। (১১ঃ ৬)
হাফিজ আবু ইয়ালা বর্ণনা করেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,
خلق الله ألف أمة منها ستمأة في البحر واربعمأة في البر وأول شيئ يهلك من هذه الأمم الجراد فإذا هلك تتابعت مثل النطام اذ قطع سلكه.
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এক হাজারটি প্রজাতি সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে ছ’শ হলো জলভাগে আর চারশ স্থল ভাগে। আর এ প্রজাতিসমূহের যেটি সর্বপ্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তা হলো পঙ্গপাল। পঙ্গপাল ধ্বংস হয়ে গেলে অপরাপর প্রজাতি মালার সূতা ছিড়ে গেলে দানাগুলো যেভাবে পর পর পড়তে থাকে ঠিক সেভাবে একের পর এক ধ্বংস হতে শুরু করবে।
এ হাদীসের সনদে উল্লেখিত একজন রাবী অত্যন্ত দুর্বল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ ۚ مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ.
ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই অথবা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোন পাখি উড়ে না, যা তোমাদের মত একটি উম্মত নয়। কিতাবে কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি; তারপর তাদের প্রতিপালকের দিকে তাদের সকলকেই একত্র করা হবে। (৬ঃ ৩৮)