৪টি ঘটনা

(১) কবরে আগুন জ্বলে উঠলো! 

হযরত সায়্যিদুনা আমর ইবনে শুরাহবীল  رضى الله تعالى عنه বলেন: এমন একজন লোকের ইনতিকাল হলো, যাকে লোকেরা মুত্তাকী মনে করত। যখন তাকে দাফন করে দেয়া হলো, তখন তার কবরে আযাবের ফেরেশতারা আসল, আর বলতে লাগল: “আমরা তোমাকে আল্লাহ্ তাআলার আযাবের একশ চাবুক মারব।” সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বললো: “আমাকে কেন মারবেন? আমি তো পরহিযগার লোক ছিলাম।” তখন তারা বললো: “আচ্ছা চলো, পঞ্চাশটাই মারব।” কিন্তু সে অব্যাহতভাবে তর্ক করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত ফেরেশতারা ‘এক চাবুকে’ নেমে আসলেন। সুতরাং তাঁরা একটা চাবুক মেরে দিলেন। যার ফলে সম্পূর্ণ কবরে আগুন জ্বলে উঠল। আর ওই লোকটা জ্বলে ছাই হয়ে গেল। তারপর তাকে জীবিত করা হল। তখন সে ব্যথায় কাতর হয়ে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করলো, “শেষ পর্যন্ত আমাকে এ চাবুকটা কেন মারা হলো?” তখন তাঁরা বললেন: “একদিন তুমি অযু ছাড়া নামায পড়েছিলে। আরেকদিন এক মযলুম (অত্যচারিত) তোমার নিকট সাহায্য চেয়েছিল, তুমি তাকে সাহায্য করোনি।” (শরহুস সুদূর, ১৬৫ পৃষ্ঠা)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলা নারায হলে তিনি নেককার ও পরহিযগার লোককেও পাকড়াও করেন এবং সেও কবরের শাস্তিতে পাকড়াও হয়ে যায়। ইয়া আল্লাহ্! আমাদের শোচনীয় অবস্থার উপর দয়া করো!  


(২) ওজনের সময় অসতর্ক হওয়ার কারণে শাস্তি 

হযরত সায়্যিদুনা হারিস মুহাসিবী رضى الله تعالى عنه বলেন: “একজন ফসল পরিমাপকারী ওই কাজ ছেড়ে দিলো এবং আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে মশগুল হয়ে গেলো।সে যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন তার এক বন্ধু তাকে স্বপ্নে দেখল এবং বলল: “অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করলেন? সে বলল: “আমার ওই পাল্লা, যা দিয়ে আমি ফসল ইত্যাদির ওজন করতাম, তাতে আমার অসাবধানতার কারণে কিছু মাটির মতো জিনিষ লেগে গিয়েছিল, যার আমি পরোয়াই করিনি ও পরিস্কার করিনি। ফলে প্রতিবার মাপার সময় ওই মাটির পরিমাণ মাল কম হতে যাচ্ছিল। এ অপরাধের শাস্তিতে আমি গ্রেফতার হয়েছি। (আখলাকুস সালেহীন, ৫৬ পৃষ্ঠা) 


(৩) কবর থেকে চিৎকারের শব্দ 

এমনি আরেক ব্যক্তিও তার দাঁড়ি-পাল্লা থেকে মাটি ইত্যাদি পরিস্কার করত না এবং এমনিতেই মাল মেপে দিয়ে দিত। যখন সে মরে গেলো, তখন তার কবরেও আযাব শুরু হয়ে গেল। এমনকি লোকজন তার কবর থেকে শোর- চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেতো। কিছু নেককার বান্দা رحمة الله عليه কবর থেকে শোর-চিৎকারের আওয়াজ শুনে দয়াপরবশ হলেন। আর ওই লোকটির জন্য মাগফিরাতের দোয়া করলেন। তখন সে দোয়ার বরকতে আল্লাহ্ তাআলা তার আযাবকে দূর করে দিলেন। (আখলাকুস সালেহীন, ৬৫ পৃষ্ঠা)


হারাম উপার্জন কোথায় যায়?

এ ভয়ানক ঘটনা থেকে ওইসব লোক যেনো অবশ্যই শিক্ষা অর্জন করে, যারা ওজনে কারচুপি করে কম দেয়। ওহে মুসলমানরা! ওজনে কারচুপি করে মাপলে বাহ্যিকভাবে এমন লাভ দিয়ে কী করবে? দুনিয়ায়তো এ ধরণের অর্থ-সম্পদ ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। হতে পারে ডাক্তারদের ফিস, রোগের ঔষধ, পকেটমার, চোর কিংবা ঘুষখোরদের হাতে এসব টাকা চলে যাবে। আল্লাহর পানাহ্! তারপর আখিরাতের কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হবে। করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী, কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কড়ী।


আগুনের দুটি পাহাড়

তাফসীরে রুহুল বয়ানে বর্ণিত আছে: যে ব্যক্তি ওজনে কম দেয়, কিয়ামতের দিন তাকে দোযখের গভীরে নিক্ষেপ করা হবে। আর আগুনের দুটি পাহাড়ের মাঝখানে বসিয়ে নির্দেশ দেয়া হবে এ পাহাড় দুটি ওজন করো। যখন ওজন করতে থাকবে, তখন আগুন তাকে জ্বালিয়ে দিবে। (তাফসীরে রূহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৩৬৪ পৃষ্ঠা) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গভীরভাবে মনোযোগ দিন! একটু চিন্তা করুন তো! সংক্ষিপ্ত জীবনে কয়েকটা ধ্বংসশীল টাকা উপার্জনের জন্য যদি ওজনে কারচুপি করেন, তাহলে কেমন কঠিন শাস্তির হুমকি এসেছে? আজ সামান্যতম গরম সহ্য হচ্ছে না, আর জাহান্নামের আগুনের পাহাড়ের উত্তাপ কিভাবে সহ্য হবে। আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে, নিজের অবস্থার প্রতি দয়া করে সম্পদের লোভ থেকে দূরে সরে পড়–ন! অন্যথায় অবৈধ মাল উভয় জাহানে শাস্তিরই মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে।


(৪) খড়কুটার বোঝা

হযরত সায়্যিদুনা ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ رضى الله تعالى عنه বলেন: বনী ইসরাঈলের এক যুবক সকল গুনাহ থেকে তাওবা করল। অতঃপর সত্তর বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে ইবাদতে মশগুল রইল। দিনের বেলায় রোযা রাখত, রাত জেগে ইবাদত করত। তার তাকওয়ার এ অবস্থা ছিলো যে, কোন ছায়ায় বিশ্রাম নিত না, কোন ভাল খাবার খেত না। যখন তার মৃত্যু হল, এক বন্ধু তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল: আল্লাহ্ তাআলা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করলেন? সে বললো: “আল্লাহ্ তাআলা আমার হিসাব নিলেন। তারপর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। কিন্তু আফসোস! একটা খড়কুটা, যা আমি সেটার মালিকের অনুমতি ছাড়া নিয়ে ছিলাম এবং তা দ্বারা দাঁত খিলাল করেছিলাম। ওই খড়কুটার মালিক থেকে ক্ষমা চাওয়া বাকী ছিলো। আফসোস! শত আফসোস!! সেটার কারণে আমাকে এখনো পর্যন্ত জান্নাত থেকে বিরত রাখা হয়েছে।” (তাম্বীহুল মুগতাররীন, ৫১ পৃষ্ঠা)


পাপ শুধু পাপই 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভয়ে কেঁপে উঠুন! যখন পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাআলার জালালিয়তের ঢেউ খেলে, তখন এমন গুনাহের জন্য পাকড়াও করা হয়, যাকে সামান্য মনে হয়। যেমন এখন যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, একজন আবিদ ও দুনিয়া ত্যাগী, নেক বান্দাকে শুধু এবং শুধু এ জন্য জান্নাত থেকে বিরত রাখা হয়েছে, সে একটা নগণ্য খড়কুটা মালিকের অনুমতি ছাড়া তা দ্বারা খিলাল করেছিল। আর মাফ করানো ছাড়াই তার ইনতিকাল হয়ে গেছে এবং আটকা পড়েছে। আসুন, আমরাও একটু চিন্তা করি! গভীরভাবে দৃষ্টি দিই! একটা খড়ের টুকরা কি জিনিষ? আজকালতো জানিনা, লোকেরা কত মূল্যবান আমানত খিয়ানত করে যাচ্ছে এতে সামান্য দ্বিধাও করছে না।


বিনা কারণে ঋণ পরিশোধে দেরী করা গুনাহ্ 

ওহে মুসলিম সমাজ! ভয় করো! বান্দাদের হক বা প্রাপ্যের বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন। আমরা যদি কোন বান্দার হক আত্মসাৎ করে নিই, কিংবা তাকে গালি দিই, চোখ রাঙ্গিয়ে ভয় দেখাই, ধমক দিই, রাগ দেখাই ও শাঁসিয়ে দিই, যার কারণে তার মনে দুঃখ পায়। মোট কথা, যেকোনভাবেই হোক না কেন শরীয়াত সম্মত অনুমতি ছাড়া কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি কিংবা শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করি, এ সবই বান্দার হক বা প্রাপ্য বিনষ্ট করা। মনে রাখবেন! যদি আপনি কারো নিকট থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন এবং পরিশোধ করার জন্য আপনার নিকট টাকা না থাকে, কিন্তু ঘরের আসবাবপত্র ইত্যাদি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করা যেতে পারে, তাহলে তাও করতে হবে। ঋণ পরিশোধ করার সম্ভাব্য উপায় থাকা সত্ত্বেও, ঋণদাতার নিকট থেকে সময় চেয়ে নেয়া ছাড়াই আপনি ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত বিলম্ব করতে থাকবেন, ততক্ষণ গুনাহগার হবেন।এখন চাই আপনি জেগে থাকুন কিংবা ঘুমন্ত, একেকটা মুহুর্তে গুনাহ্ লিপিবদ্ধ করা হবে। এ বিষয়টা এভাবে বুঝুন! যেমন- ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত আপনার গুনাহের মিটার ঘুরতে থাকবে। হে নিরাপত্তা দাতা ও রক্ষাকারী! তোমারই পানাহ্ চাচ্ছি! যখন ঋণ পরিশোধ করায় বিলম্বের এমন শাস্তি তখন যে সম্পূর্ণ ঋণই আত্মসাৎ করে বসে তার কি অবস্থা হবে?


তিন পয়সার শাস্তি 


আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه ঋণ পরিশোধে অলসতাকারী, মিথ্যা বাহানা উপস্থাপনকারী ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি رحمة الله عليه বলেন: যায়েদ পাপী, কবীরা গুনাহ সম্পাদনকারী, জালিম, মিথ্যুক এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তার জন্য এর চেয়ে বেশি আর কি (খারাপ) উপাধী হতে পারে। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায় এবং মানুষের ঋণ তার উপর বাকী থাকে, তবে তার (যায়েদ) সমস্ত নেকী কর্জদাতাকে কর্জের বিনিময় স্বরূপ দিয়ে দেওয়া হবে। কিভাবে দেওয়া হবে, এটাও শুনে নিন। অর্থাৎ প্রায় তিন পয়সার কর্জের বিনিময়ে সাতশত জামাআত সহকারে আদায়কৃত নামায দিয়ে দিতে হবে। যখন এই ঋণ আত্মসাৎকারীর কোন নেকী বাকী থাকবে না, ঋণদাতার গুনাহকে ঋণ গ্রহীতার মাথার উপর বোঝাই করে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৫তম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা) 


মত দবা করযা কেছী কা না বাকার, 

রোয়ী গা দোযখ মে ওয়ার ন যার যার 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে কোন অবস্থাতেই, দুনিয়ায় কারো দায়িত্বে অণু পরিমাণ যুলুমকারী, যতক্ষণ পর্যন্ত মযলুমকে মেনে করে নিবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মুক্তিলাভ করা অসম্ভব। অবশ্য, আল্লাহ্ যদি চান, তবে নিজের অনুগ্রহ ও দয়ায় কিয়ামতের দিন যালিম ও মযলুমের মধ্যে সন্ধি করিয়ে দিবেন। অন্যথায়, ওই মযলুমকে যালিমের নেকী গুলো অর্পণ করা হবে। যদি তাতেও মযলুম কিংবা মযলুমদের প্রাপ্য পরিশোধ না হয়, তবে মযলুমদের গুনাহ যালিমের মাথার উপর রেখে দেয়া হবে। আর এভাবে ওই যালিম যদিও দুনিয়ায় নেককার ও পরহিযগার হয়ে বড় বড় নেকী নিয়ে কিয়ামতে এসে থাকে, তবে বান্দাদের হকগুলো বিনষ্ট করার কারণে একেবারে অসহায় হয়ে যাবে। আর এ কারণে তাকে জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।(আল্লাহ্ তাআলার পানাহ!) 


কিয়ামতে সহায়-সম্বলহীন কে?

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صلى الله عليه وسلم সাহাবায়ে কিরাম رضى الله تعالى عنه কে জিজ্ঞাসা করে ইরশাদ করেছেন: “তোমরা কি জানো, গরীব কে? সাহাবা কিরাম رضى الله تعالى عنه আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم আমাদের মধ্যে গরীব তো সে-ই, যার নিকট দিরহাম (টাকা-পয়সা) ও পার্থিব মাল-সামগ্রী নেই।” তখন হুযুর صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করলেন: “আমার উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গরীব হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা, যাকাত নিয়ে আসবে, কিন্তু সাথে সাথে এটাও আসবে, সে কাউকে গালিও দিয়েছে, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করেছে, কাউকে খুন করেছে, কাউকে মেরেছে, তারপর ওইসব গুনাহের পরিবর্তে তার নেকীগুলো নিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর, যখন তার নেকীগুলো শেষ হয়ে যাবে, অথচ প্রাপক আরো প্রাপ্য পাবে, তখন ওইসব মযলুমের গুনাহ্ নিয়ে বিনিময় হিসেবে তাকে অর্থাৎ যালিমকে অর্পণ করা হবে। তারপর ওই যালিম লোকটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহীহ মুসলিম, ১৩৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৫৮১)


‘যালিম’ দ্বারা উদ্দেশ্য কে? 

মনে রাখবেন! এখানে ‘যালিম’ মানে শুধু খুনী, ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসীরাই নয়, বরং যে ব্যক্তি কারো সামান্য হকও বিনষ্ট করেছে, যেমন: কারো এক পয়সা খেয়ে ফেলেছে, শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া কাউকে ধমক দিয়েছে, অথবা ঠাট্টা করেছে, রাগ করে তাকিয়েছে ইত্যাদি তবুও সে যালিম আর যার উপর যুলম করা হয়েছে সে মযলূম। এখন এটা অন্য কথা, এ মযলূমও যদি ঐ ‘যালিমে’র কোন হক বিনষ্ট করে থাকে, এমতাবস্থায় উভয়ে একে অপরের হকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ‘যালিম’ও, ‘মযলূম’। এমনই কিছু লোক হবে, যারা কারো হকের বেলায় ‘যালিম’ এবং কারো হকের বেলায় ‘মযলূম’ হবে। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ আনিস رضى الله تعالى عنه বলেন: কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করবেন: “কোন দোযখী দোযখে এবং কোন জান্নাতী জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বান্দার হকের বিনিময় দিবে না।” অর্থাৎ যে কারো হকই যে কেউ গ্রাস করেছে সেটার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কেউ জাহান্নাম কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আখলাকুস সালিহীন, ৫৫ পৃষ্ঠা) (বান্দার হক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কতৃর্ক প্রকাশিত ‘জুলুমের পরিণতি’ নামক রিসালাটি অবশ্যই পড়ে নিন। ইয়া আল্লাহ্! আমাদের সকল মুসলমানকে একে অপরের হক বিনষ্ট করা থেকে রক্ষা করো! আর এ বিষয়ে যেসব ভুলত্রুটি হয়ে গেছে, তা পরস্পর ক্ষমা করিয়ে নেয়ার তওফীক দান করো! 


রমযান মাসে মৃত্যুবরণ করার ফযীলত

যেই সৌভাগ্যবান মুসলমান রমযান মাসে মৃত্যুবরণ করে, সে কবরের প্রশ্নাবলী থেকে রেহাই পেয়ে যায়। আর সে কবরের আযাব থেকেও বেঁচে যায়। তদুপরি, তাকে জান্নাতের উপযোগী সাব্যস্ত করা হয়।সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ رحمة الله عليه এর অভিমত হচ্ছে: “যে মু’মিন এ মাসে মৃত্যুবরণ করে, সে সোজা জান্নাতে প্রবেশ করে। এমনকি তার জন্য দোযখের দরজা বন্ধ।” (আনীসুল ওয়াইযীন, ২৫ পৃষ্ঠা)


তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাতের সুসংবাদ

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ  رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “রমযানের শেষ মুহূর্তে যার মৃত্যু আসে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।যার মৃত্যু আরাফার দিন (অর্থাৎ ৯ই যিলহাজ্জ) শেষ হবার মুহুর্তে আসে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যার মৃত্যু, সদকা দেয়া অবস্থায় এসেছে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৬১৮৭) 


কিয়ামত পর্যন্ত রোযার সাওয়াব 

উম্মূল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যার রোযা পালন অবস্থায় মৃত্যু হয়, আল্লাহ্ তাআলা তাকে কিয়ামত পর্যন্ত রোযার সাওয়াব দান করবেন।” (আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ৩য় খন্ড, ৫০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৫৫৭)


 سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযাদার কেমনই সৌভাগ্যবান! যদি রোযা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে কিয়ামত পর্যন্ত রোযা রাখার সাওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে। হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رضى الله تعالى عنه বলেন: আমি মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “এই রমযান তোমাদের কাছে এসেছে, এতে জান্নাতের দরজা সমূহ্ খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে বন্দী করে ফেলা হয়।ঐ লোকই বঞ্চিত, যে রমযানকে পেয়েও ক্ষমা করিয়ে নিতে পারেনি। কেননা যখন তার রমযানে ক্ষমা হয়নি তখন আবার কখন হবে?” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা৩৪৫, হাদীস নং-৪৭৮৮)


জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যায়

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযান মাস আসলে তো রহমত ও জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামে তালা পড়ে যায় আর শয়তানদেরকে বন্দি করে দেয়া হয়। যেমন: হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رضى الله تعالى عنه বলেন: নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم সাহাবায়ে কিরাম رضى الله تعالى عنه কে সুসংবাদ শুনিয়ে ইরশাদ করলেন: “রমযান মাস এসে গেছে, যা খুবই বরকতময়! আল্লাহ্ তাআলা এটার রোযাগুলো তোমাদের উপর ফরয করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর অবাধ্য শয়তানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। এতে আল্লাহ্ তাআলার একটা রাত হচ্ছে ‘শবে ক্বদর’, যা হাজার মাসের চেয়েও বেশী মর্যাদাবান। যে ব্যক্তি সেটার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে-ই বঞ্চিত। (সুনানে নাসায়ী, ৪র্থ খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা)


শয়তানকে শিকলে বন্দী করা হয় 

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه বলেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৬২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮৯৯) অন্য এক বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, শয়তানকে শিকলে বন্দী করা হয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম, ৫৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১০৭৯)


শয়তান বন্দী হওয়া সত্ত্বেও গুনাহ্ কিভাবে সংগঠিত হয়? 

প্রসিদ্ধ মুফাস্সির হাকিমূল উম্মত, হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رحمة الله عليه বলেন: সত্য কথা হল, রমযান মাসে আসমানের দরজাও খুলে দেয়া হয় যার দ্বারা আল্লাহ্ তাআলার বিশেষ রহমত পৃথিবীতে বর্ষিত হয়, এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় যার কারণে জান্নাতে অবস্থানকারী হুর গিলমানদের জানা হয়ে যায় যে, পৃথিবীতে রমযান মাস আগমন করেছে আর তারা রোজাদারদের জন্য দোয়াতে মশগুল হয়ে যায়। রমযান মাসে বাস্তবিকই জাহান্নামের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে এই মাসে শুধু গুনাহগার নয় বরং কাফিরদের কবরেও দোযখের গরম পৌঁছে না। মুসলিম সমাজে যে কথার প্রচলন রয়েছে, রমযান মাসে কবর আযাব হয় না, তঁার উদ্দেশ্য এটাই; আর বাস্তবেই ইবলিশ শয়তান তার সমস্ত বংশধরকেসহ বন্দী করা হয়। এই মাসে যারা গুনাহ্ করে থাকে তারা নিজের নফসে আম্মারার ধোঁকার কারণেই করে থাকে। শয়তানের ধোঁকার কারণে নয়। (মিরাতুল মানাজীহ, ৩য় খন্ড, ১৩৩ পৃষ্ঠা) 


গুনাহতো হ্রাস পেতেই থাকে

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে কোন অবস্থায় সাধারণত: এটাই দেখা যায়, রমযান মাসে আমাদের মসজিদগুলো অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশী জমজমাট হয়ে যায়। নেকীর কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা থাকে। এতটুকু তো অবশ্যই থাকে, রমযান মাসে পাপ কার্যাদির ধারাবাহিকতা কিছুটা হলেও কমে যায়। 


যখনই শয়তান মুক্তি পায় 

রমযান মাস বিদায় নিতেই শয়তান মুক্ত হয়ে যায়। ফলে গুনাহের জোর খুব বেড়ে যায়। ঈদের দিনে গুনাহ তো এতো বেশী পরিমাণে সম্পন্ন হয় যে, যেই সিনেমা হলগুলো গোটা বছরে কখনো পূর্ণ হয়নি, সেগুলোতেও ‘হাউজ ফুল’ এর বোর্ড লটকিয়ে দেয়া হয়। গোটা বছরে যেসব তামাশার মেলা বসেনি সেগুলোও ঈদের দিন অবশ্যই বসে যায়।এমনি যেনো এক মাসের বন্দির কারণে শয়তান সীমাহীন ক্ষিপ্ত ছিলো, আর মাহে রমযানের সমস্ত অপরাগতার প্রতিকার সে ঈদের দিনেই করে নিতে চাচ্ছে! সমস্ত বিনোদন কেন্দ্র বে-পর্দা নারী ও পুরুষদের দ্বারা ভর্তি হয়ে যায়। সমস্ত নাট্যালয়ে প্রচন্ড ভিড় জমে যায়; বরং ঈদের জন্য নতুন নতুন ফিল্ম ও নতুন নতুন নাটক লাগানো হয়। আহা! শয়তানের হাতে মুসলমান খেলনায় পরিণত হয়ে যায়! কিন্তু কিছু সংখ্যক সৌভাগ্যবান মুসলমান এমনও আছেন, যারা আল্লাহ্ তাআলার স্মরণ থেকে উদাসীন হয় না, শয়তানের ধেঁাকার শিকার হয় না। এখন মাহে রমযানের প্রতি গুরুত্ব প্রদানকারী একজন অগ্নিপূজারীর ঈমান উদ্দীপক ঘটনা পেশ করা হচ্ছে:


অগ্নিপূজারীর উপর দয়া 

বোখারা শহরে এক অগ্নিপূজারী বাস করতো। একবার রমযান শরীফে সে তার ছেলেকে সাথে নিয়ে মুসলমানদের বাজার অতিক্রম করছিলো। তার ছেলে কোন খাবার প্রকাশ্যভাবে খাওয়া শুরু করে দিলো। অগ্নিপূজারী যখন এটা দেখলো, তখন তার ছেলেকে একটা থাপ্পড় দিল আর কঠোরভাবে শাঁসিয়ে দিয়ে বললো: “রমযান মাসে মুসলমানদের বাজারে প্রকাশ্যভাবে খাবার খেতে তোর লজ্জা হচ্ছে না?” ছেলেটি জবাবে বললো: “আব্বাজান! আপনিও তো রমযান মাসে খাবার খান!” পিতা বললো: “আমি গোপনে আমার ঘরে খাবার খাই।” মুসলমানদের সামনে খাইনা। আর এ বরকতময় মাসের অসম্মান করিনা।” কিছু দিন পর ওই লোকের মৃত্যু হলো। একজন লোক তাকে স্বপ্নে দেখলো-সে জান্নাতে ঘোরাফেরা করছে। এটা দেখে সে খুবই অবাক হলো আর জিজ্ঞাসার সুরে বললো: “তুমিতো অগ্নিপূজারী ছিলে! জান্নাতে কিভাবে আসলে?” সে বলতে লাগলো, “বাস্তবিকই আমি অগ্নিপূজারী ছিলাম। কিন্তু যখন আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলো; তখন আল্লাহ রমযানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারণে আমাকে ঈমানের মহা সম্পদ দিয়ে এবং মৃত্যুর পর জান্নাত দান করে ধন্য করেছেন।” (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা)

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তার সদকায় আমাদের গুনাহ ক্ষমা হোক।



রমযান মাসে প্রকাশ্যে পানাহারের দুনিয়ার শাস্তি 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! রমযান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারণে একজন অগ্নিপূজারীকে আল্লাহ্ তাআলা না শুধু ঈমানরূপী সম্পদ দান করেছেন বরং তাকে জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামতরাজি দ্বারাও ধন্য করেছেন। এ ঘটনা থেকে আমাদের বিশেষ করে ওইসব উদাসীন ইসলামী ভাইদের শিক্ষা গ্রহণ করা চাই, যারা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও রমযানুল মোবারকের প্রতি মোটেই সম্মান প্রদর্শন করে না। প্রথমত তারা রোযা রাখেনা, তদুপরি, আরো দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- রোযাদারদের সামনেই তারা সিগারেট পান করে, পান চিবুয়, এমনকি কেউ কেউ তো এতোই দুঃসাহসী ও নির্লজ্জ যে, প্রকাশ্যে পানি পান করে বরং খাবার খেতেও লজ্জাবোধ করে না। মনে রাখবেন! সম্মানিত ফকীহগণ رحمة الله عليه বলেন: “যে ব্যক্তি রমযানুল মোবারকে কোনরূপ বাধ্যবাধকতা ছাড়াই প্রকাশ্যভাবে জেনে বুঝে পানাহার করে তাকে (ইসলামী বাদশাহর পক্ষ থেকে) হত্যা করা হবে।” (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)


আপনি কি মরবেন না? 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চিন্তা করুন! গভীরভাবে চিন্তা করুন! যখন রোযা না রাখার দুনিয়াতেই এমন কঠিন শাস্তি সাব্যস্ত হয়েছে (এ শাস্তি অবশ্য ইসলামী শাসকই দিতে পারেন) তখন আখিরাতের শাস্তি কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক হবে? মুসলমানরা! হুঁশে আসুন! কবে নাগাদ এ দুনিয়ায় উদাসীন থাকবেন? আপনারা কি মরবেন না? এ দুনিয়ায় কি আপনারা সব সময় এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘুরতে থাকবেন? মনে রাখবেন! একদিন অবশ্যই মৃত্যু আসবে। আপনাদের জীবনের বাঁধনগুলো ছিন্ন করে নরম ও আরামদায়ক বিছানা থেকে উঠিয়ে মাটির উপর শায়িত করে ছাড়বে। উত্তম হাওয়া শীতল শীতল ও প্রত্যেক প্রকারের বাদ্যযন্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত কক্ষ গুলো থেকে বের করে অন্ধকার কবরে পৌঁছিয়ে দিবে।

এরপর অনুশোচনা করলে কোন কাজে আসবেনা। এখনো সময় আছে। গুনাহ থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করে নিন। আর রোযা-নামাযের অনুসারী হয়ে যায়। 


করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী,

কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কাড়ী। 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গুনাহে ভরা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে কল্যাণ নছিব হবে। আপনাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য একটি অত্যন্ত সুন্দর মাদানী বাহার পেশ করছি।


সুন্নাতে ভরা বয়ানের বরকত

পাকিস্তানের এক ইসলামী ভাই এর বয়ানের সারসংক্ষেপ এই! “আমি ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ১টি রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। সম্প্রতি সংগঠিত ফিৎনা-ফ্যাসাদ থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে পরিবারের লোকেরা পাকিস্তানের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অতঃপর ০৩/১১/১৯৯০ ইং তারিখে আমি ওমান দেশের মসকটে অবস্থিত একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী নিলাম। ১৯৯২ সালে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত একজন ইসলামী ভাই কাজের জন্য আমাদের ফ্যাক্টরীতে যোগ দিল। তাঁর ইনফিরাদী কৌশিশে اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل আমি নামাযী হয়ে গেলাম। ফ্যাক্টরীর পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ ছিল। শুধু আমাদের বিভাগই ধরুন। যেখানে ৮/৯টি টেপ রেকর্ডার ছিল। যেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় যেমন উদর্ূ, পাঞ্জাবী, পুস্তু, হিন্দী এবং বাংলা ইত্যাদি ভাষায় উচুঁ আওয়াজে গান বাজনা চালানো হত। দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকে রাসূল ইসলামী ভাইয়ের সংস্পর্শের বরকতে! এরপর অনুশোচনা করলে কোন কাজে আসবেনা। এখনো সময় আছে। গুনাহ থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করে নিন। আর রোযা-নামাযের অনুসারী হয়ে যায়। করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী, কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কাড়ী। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গুনাহে ভরা জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে কল্যাণ নছিব হবে। আপনাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য একটি অত্যন্ত সুন্দর মাদানী বাহার পেশ করছি। সুন্নাতে ভরা বয়ানের বরকত পাকিস্তানের এক ইসলামী ভাই এর বয়ানের সারসংক্ষেপ এই! “আমি ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ১টি রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। সম্প্রতি সংগঠিত ফিৎনা-ফ্যাসাদ থেকে অসন্তুষ্ট হয়ে পরিবারের লোকেরা পাকিস্তানের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অতঃপর ০৩/১১/১৯৯০ ইং তারিখে আমি ওমান দেশের মসকটে অবস্থিত একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী নিলাম। ১৯৯২ সালে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত একজন ইসলামী ভাই কাজের জন্য আমাদের ফ্যাক্টরীতে যোগ দিল। তাঁর ইনফিরাদী কৌশিশে اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل আমি নামাযী হয়ে গেলাম। ফ্যাক্টরীর পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ ছিল। শুধু আমাদের বিভাগই ধরুন। যেখানে ৮/৯টি টেপ রেকর্ডার ছিল। যেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় যেমন উদর্ূ, পাঞ্জাবী, পুস্তু, হিন্দী এবং বাংলা ইত্যাদি ভাষায় উচুঁ আওয়াজে গান বাজনা চালানো হত। দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকে রাসূল ইসলামী ভাইয়ের সংস্পর্শের বরকতে  اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل আমি গান বাজনা থেকে মুক্ত হই। আমি গান বাজনা থেকে মুক্ত হই।উভয়ের পরামর্শক্রমে আমরা দুই জনে মাকতাবাতুল মদীনা হতে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট সমূহ চালাতে আরম্ভ করে দিলাম। শুরুতে কিছু কিছু লোক আমাদের বিরোধীতাও করেছিল, কিন্তু আমরা সাহস হারাইনি। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট চালানোর বরকতে আমার নিজের উপরও এর প্রভাব প্রতিফলিত হতে লাগল। বিশেষত: (১) কবরের প্রথম রাত (২) রঙ্গিন দুনিয়া (৩) হতভাগা দুলহা (৪) কবরের চিৎকার (৫) ৩টি কবর ইত্যাদি নামের বয়ানের ক্যাসেট আমাকে প্রভাবিত করেছিল। (এই সমস্ত বয়ানের ক্যাসেট নিজ নিজ দেশের মাকতাবাতুল মদীনা থেকে হাদিয়ে দিয়ে সংগ্রহ করুন।) আখিরাতের প্রস্তুতির মাদানী বাসনার সন্ধান পাওয়া গেল এবং আমার অন্তর গুনাহকে ঘৃণা করতে লাগল। এ সময় আরো কিছু ভাই সুন্নাতে ভরা বয়ানে প্রভাবিত হয়ে কাছে এসে বন্ধু হয়ে গেল। যার প্রচেষ্টায় আমাদের মাদানী পরিবর্তন হল সেই আশিকে রাসূল (ইসলামী ভাই) চাকুরী ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে গেল। আমরা পাকিস্তান থেকে সুন্নাতে ভরা বয়ানের ৯০টি ক্যাসেট চেয়ে আনালাম। প্রথমে আমাদের ফ্যাক্টরীতে ৫০/৬০ জন ভাই নামাযী ছিল। বয়ান শুনে শুনে নামাযীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل থেকে ২৫০ তে পৌছল। আমরা ৪০০ ওয়ার্ড এর মূল্যবান সাউন্ডবক্স কিনে আমাদের ঘরের দেয়ালে বসিয়ে দিলাম এবং ধুমধাম করে ক্যাসেটসমূহ চালাতে লাগলাম। প্রতিদিন সকাল ৭টা হতে ৮টা পর্যন্ত কুরআনে পাকের তিলাওয়াত, ৮টা হতে ৯টা পর্যন্ত না'তে মুস্তফা এবং ৯টা হতে ১০টা পর্যন্ত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট চালানোর নিয়ম করে নিলাম। ধীরে ধীরে আমাদের নিকট ৫০০টি ক্যাসেট জমা হয়ে গেল। আমি সহ ৫ জন ইসলামী ভাই দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে গেলাম। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل মসজিদ দরস দেয়ার কেন্দ্রে পরিণত হল। অতঃপর ধীরে ধীরে আমাদের ফ্যাক্টরীতে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শুরু হয়ে গেল। ইজতিমায় কমবেশী ২৫০ জন ইসলামী ভাই অংশগ্রহণ করত। মাদরাসাতুল মদীনাও প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল। চারিদিকে সুন্নাতের বাহার আসতে লাগল। অনেক ইসলামী ভাই নিজেদের মুখে মাদানী আক্বা, হুযুর صلى الله عليه وسلم এর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন দঁাড়ি মোবারক রেখে দিল। ২০/২৫ জন ইসলামী ভাইয়ের মাথায় পাগড়ী তাজ শোভা পাচ্ছিল। আমাদের ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার প্রথম প্রথম ক্যাসেট চালানোর ব্যাপারে নিষেধ করত। কিন্তু বয়ানের ক্যাসেটের শব্দ তার কানে মধু বর্ষণ করল এবং اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل অবশেষে তিনিও প্রভাবিত হলেন শুধু প্রভাবিত নয় বরং নামাযীও হয়ে গেলেন এবং এক মুষ্টি (সুন্নাত) মোতাবেক দাঁড়িও রেখে দিলেন। ঐ ইসলামী ভাই আরো বয়ান করেন, বর্তমানে আমি পাকিস্তানে চলে এসেছি এবং এই ঘটনা বর্ণনা করার সময় বাবুল মদীনা করাচীর ডিভিশন মুশাওয়ারাতের নিগরান হিসাবে সুন্নাতের খিদমতে নিয়োজিত রয়েছি। যেহেতু মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট সমূহ আমার ভাগ্যকাশের মাদানী পরিবর্তনের চাঁদ উদয় করে দিল এজন্য আমার আশা হচ্ছে প্রত্যেক ইসলামী ভাই বোন কমপক্ষে দৈনিক একটি সুন্নাতে ভরা বয়ানের বা মাদানী মুযাকারার ক্যাসেট শুনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাহলে দেখবেন اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَل সেই বরকত মিলবে যে উভয় জগতে বিপদমুক্ত হয়ে যাবেন।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত বয়ানের ক্যাসেট শুনারও কি পরিমাণে বরকত রয়েছে। এসব ভাগ্যবানদেরই সম্ভব, অন্যথায় অনেক লোককে এমনও দেখা যায় যারা অনেক বছর ধরে সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় উপস্থিত হয়, কিন্তু তারা মাদানী রঙ্গে রঙ্গীন হয় না। সম্ভবতঃ তার একটি বড় কারণ এটাও হতে পারে, সে বসে গভীর ভাবে বয়ান শুনেনা। বেপরওয়া ভাবে এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকিয়ে বা কথাবার্তা বলতে বলতে শুনলে বয়ানের বরকত কিভাবে মিলবে? অলসতা সহকারে নছীহত শোনা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। মুসলমানদের এই স্বভাব থেকে বেঁচে থাকা জরুরী। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন:ﻣَﺎ ﻳَﺄْﺗِﻴﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﺫِﻛْﺮٍ ﻣَّﻦ ﺭَّﺑِّﻬِﻢ ﻣُّﺤْﺪَﺙٍ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﺳْﺘَﻤَﻌُﻮﻩُ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻠْﻌَﺒُﻮﻥَ () ﻟَﺎﻫِﻴَﺔً ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: যখন তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তাদের নিকট কোন নতুন উপদেশ আসে, তখন সেটা তারা শুনেনা, কিন্তু খেলা কৌতুকচ্ছলে। তাদের অন্তর খেলাধূলায় পড়ে রয়েছে। (পারা-১৭, সূরা আম্বিয়া, আয়াত-২,৩)

এজন্য একনিষ্টতার সাথে সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনার অভ্যাস গড়ে নিন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আপনাদের সেই বরকত অর্জন হবে যাতে আপনারা আশ্চর্য্য হয়ে যাবেন। সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেটের বরকতের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে (বয়ানের ক্যাসেটের কারিশমা) নামক রিসালা (৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত) মাকতাবাতুল মদীনা থেকে হাদীয়া দিয়ে সংগ্রহ করে পড়ে নিন। (মজলিসে মাকতাবাতুল মদীনা) 


সারা বছরের নেকী সমূহ বরবাদ

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় জান্নাতকে মাহে রমযানের জন্য বছরের শুরু থেকে অন্য বছর পর্যন্ত সাজানো হয়। অতঃপর যখন রমযান আসে তখন জান্নাত বলে: “ইয়া আল্লাহ্! আমাকে এ মাসে তোমার বান্দাদের থেকে (আমার মধ্যে বসবাসকারী) দান করো!” আর ‘হুরেরা’ বলে: “হে আল্লাহ! এ মাসে আমাদেরকে আপনার বান্দাদের থেকে স্বামী দান করো!” তারপর খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করেছে, কোন নেশার বস্তু পান করেনি, কোন মু’মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়নি, এ মাসে কোন গুনাহের কাজ করেনি, তবে আল্লাহ্ তাআলা প্রতিটি রাতের বিনিময়ে একশ’ হুরের সাথে তার বিয়ে করিয়ে দিবেন।আর তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণ, রূপা, পদ্মারাগ ও পান্নার এমন মহল তৈরী করবেন, যদি সমগ্র দুনিয়া একত্রিত হয়ে এ মহলের মধ্যে এসে যায়, তাহলে ওই মহলের এতটুকু জায়গা দখল করবে, যতটুকু জায়গা দুনিয়ায় ছাগলের বেষ্টনী-বেড়া ঘিরে থাকে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নেশার বস্তু পান করে কিংবা কোন মু’মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়, অথবা এ মাসে কোন গুনাহের কাজ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার এক বছরের আমল (নেকী) বিনষ্ট করে দিবেন। সুতরাং তোমরা রমযানের বেলায় অলসতা করতে ভয় করো। কেননা, এটা আল্লাহ্ তাআলার মাস। আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য ১১ মাস (সৃষ্টি) করেছেন। যাতে তোমরা সেগুলোতে নেয়ামত গুলোর স্বাদ গ্রহণ করতে পারো, আর নিজের জন্য একটা মাত্র মাসকে বিশেষভাগে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং তোমরা রমযান মাসের বেলায় ভয় করো।” (মুজামূল আওসাত, ২য় খন্ড, ৪১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৬৮৮)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো, যেখানে মাহে রমযানুল মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারীদের জন্য পরকালীন পুরস্কার ও সম্মানের সুসংবাদ দিয়েছেন, সেখানে বরকতময় মাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারী তাতে গুনাহের কাজ সম্পন্নকারীদের জন্য শাস্তির হুমকিও এসেছে। এ হাদীসে পাকে নেশাদায়ক বস্তু পান করা ও মু’মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে রাখবেন! মদ হচ্ছে সব-ধরণের অপকর্মের মূল। মদ পান করা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। 


হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে জিনিষ বেশী পরিমাণে নেশার উদ্রেক করে সেটি সামান্যতম পরিমাণও হারাম।” (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৬৮১)



দোযখীদের রক্ত ও পুঁজ

মু’মিনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হারাম এবং জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। 


হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি কোন মু’মিন সম্পর্কে এমন কথা বলল, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ্ তাআলা ওই (অপবাদদাতা)-কে ততক্ষণ পর্যন্ত ‘রাদগাতুল খাবাল’-এ রাখবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তার শাস্তি পূর্ণ না হয়।” (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৫৯৭) 


রাদগাতুল খাবাল হচ্ছে জাহান্নামের ওই স্থান, যেখানে দোযখীদের রক্ত ও পুঁজ জমা হয়। (মিরাতুল মানাজিহ, ৫ম খন্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠা) 


এই হাদীসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رحمة الله عليه বলেন: “এমনকি সে নিজের কথিত কথা থেকে বের হয়ে আসবে।” অর্থাৎ সেই গুনাহ্ থেকে তাওবার মাধ্যমে কিংবা যেই শাস্তির সে হকদার হয়েছিল তা ভোগ করার পর সে পবিত্র হবে। (আশিয়্যাতুল লুমআত, ৩য় খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা) 


রমযানে পাপাচারী 

সায়্যিদাতুনা উম্মে হানী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “আমার উম্মত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মাহে রমযানের প্রতি কর্তব্য পালন করতে থাকবে।” আরয করা হলো: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم রমযানের প্রতি কর্তব্য পালন না করলে তাদের অপমানিত হওয়া কি?” হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “ওই মাসের মধ্যে তাদের হারাম কাজ করা।” তারপর ইরশাদ করলেন: “যে ব্যক্তি এ মাসে যিনা করেছে কিংবা মদ পান করেছে, আগামী রমযান পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলা ও যত সংখ্যক আসমানী ফেরেশতা রয়েছে সবাই তার উপর লানত করে। সুতরাং ওই ব্যক্তি যদি পরবর্তী রমযান মাস আসার পূর্বে মারা যায়, তবে তার নিকট এমন কোন নেকী থাকবেনা, যা তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাতে পারে। সুতরাং তোমরা মাহে রমযানের ব্যাপারে ভয় করো। কেননা, যেভাবে এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় নেকী (সাওয়াব) বৃদ্ধি করে দেয়া হয় তেমনি গুনাহগুলোর বিষয়ও।” (তাবারানী কৃত মুজামে সগীর, ৯ম খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৪৮৮)


ওহে (যারা গুরুত্ব দিচ্ছো না) তোমরা সাবধান! 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভয়ে কেঁপে উঠুন! মাহে রমযানের গুরুত্ব না দেয়ার মতো জঘন্য কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করো! এ বরকতময় মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় যে ভাবে নেকী বৃদ্ধি করা হয়, তেমনিভাবে অন্যান্য মাসের তুলনায় গুনাহ্ সমূহের ধবংসাত্মক প্রভাবও বৃদ্ধি করা হয়। মাহে রমযানে মদ্যপায়ী ও ব্যভিচারীতো এতোই হতভাগ্য যে, আগামী রমযানের পূর্বে মৃত্যু মুখে পতিত হলে তখন তার নিকট এমন কোন নেকী থাকবে না, যা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে। মনে রাখবেন! চোখের যিনা হচ্ছে কুদৃষ্টি, হাতের যিনা হচ্ছে- পরনারীকে কিংবা যৌন প্রবৃত্তিসহকারে ‘আমরাদ’ (দঁাড়ি গজায়নি এমন বালক)-কে স্পর্শ করা। সুতরাং খবরদার! সাবধান! বিশেষ করে, মাহে রমযানে নিজেকে নিজে কুদৃষ্টি ও বালকের প্রতি যৌন-প্রবৃত্তি সহকারে দৃষ্টিপাত থেকে বিরত রাখুন! যথাসম্ভব চক্ষুদ্বয়কে কুফ্লে মদীনা লাগিয়ে নিন অর্থাৎ দৃষ্টিকে নত রাখার পূর্ণাঙ্গ চেষ্টা চালান। আফসোস! শত কোটি আফসোস! কখনো কখনো নামাযী এবং রোযাদারও মাহে রমযানের অসম্মান করে পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাআলার ক্রোধের শিকার হয়ে দোযখের আযাবে গ্রেফতার হয়ে যায়।


কলবের উপর কালো দাগ পড়ে যায়

হাদীস মোবারকে এসেছে যে, “যখন কোন মানুষ গুনাহ্ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। দ্বিতীয়বার গুনাহ করলে ২য় বার কালো দাগ পড়ে, এমনিভাবে তার অন্তর (দাগে দাগে) কালো হয়ে যায়। তখন ভাল কথাও তার অন্তরে কোন প্রভাব বিস্তার করে না।” (দুররে মনছুর, ৮ম খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা) 


এখন স্পষ্ট যে, যার অন্তর কালো হয়ে গেছে তার অন্তরে ভালো কথা, উপদেশ কোথায় প্রভাব ফেলবে?রমযান মাস হোক কিংবা রমযান ব্যতীত অন্য মাস হোক এ ধরনের মানুষের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তার অন্তর নেকীর দিকে ঝুঁকেই না। যদিও সে নেকীর দিকে এসেও যায় তাহলে প্রায় তার অন্তর সে ময়লার কারণে নেকীর সাথে ভালভাবে লাগতে পারে না এবং সে সুন্নাতে ভরা মাদানী পরিবেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বাহানা বের করার চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। তার অন্তর তাকে লম্বা আশার স্বপ্ন দেখায়, অলসতা তাকে ঘিরে রাখে, আর সেই দুর্ভাগা সুন্নাতে ভরা মাদানী পরিবেশ থেকে দূরে ছিটকে পড়ে। রমযান মাসের মোবারক সময়গুলো মাঝে মধ্যে সম্পূর্ণ রাত এ সমস্ত লোকেরা খেলাধুলা, গান বাজনা, তাস, দাবা, গল্প ইত্যাদিতে নষ্ট করে দেয়। 


কলবের কালো দাগের চিকিৎসা

এই কালো অন্তরের (কলবের) চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরী। এই চিকিৎসার একটি কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে পীরে কামেল। অর্থাৎ কোন বুযুর্গ ব্যক্তির হাতে হাত রেখে বায়আত গ্রহণ করা, যিনি পরহিযগার ও সুন্নাতের অনুসারী। যার সাক্ষাত আল্লাহ ও রাসুল صلى الله عليه وسلم এর স্মরণ করিয়ে দেয়। যার কথা নামায ও সুন্নাতের প্রতি ধাবিত করে। যার সংস্পর্শ মৃত্যু ও আখিরাতের প্রস্তুতির প্রেরণা বৃদ্ধি করে। যদি সৌভাগ্যবশত এ ধরনের পীরে কামেল মিলে যায় তাহলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কলবের কালো দাগের চিকিৎসা অবশ্যই হয়ে যাবে। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট পাপী মুসলমানকে এই কথা বলার অনুমতি নেই যে, “তার অন্তরে মোহর অঙ্কিত হয়েছে” বা তার কলব কালো হয়ে গেছে” তাই নেকীর দা’ওয়াত তাকে প্রভাবিত করছে না। অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলা এ কথার উপর ক্ষমতা রাখেন যে, তাকে তাওবার তাওফিক দিতে পারেন, যাতে সে সঠিক পথে আসতেও পারে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের অন্তরের কালিমা দূর করুন!একটা শিক্ষামূলক ঘটনা পেশ করছি; তা শুনুন এবং আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে কেঁপে উঠুন! বিশেষ করে ওইসব লোক এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন, যারা রোযা পালন করা সত্ত্বেও তাশ, দাবা, লুডু, ভিডিও-গেমস, ফিল্ম, নাটক, গান-বাজনা ইত্যাদি মন্দ কাজের মধ্যে রাত দিন মগ্ন থাকেন। বর্ণিত আছে:


কবরের ভয়ানক দৃশ্য

একদা হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা رضى الله تعالى عنه কবর যিয়ারত করার জন্য কূফার কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে যান। সেখানে একটা নতুন কবরের উপর তার দৃষ্টি পড়লো। তিনি رضى الله تعالى عنه এর মনে তার (কবরের মৃত) অবস্থাদি জানার কৌতুহল সৃষ্টি হলো। মহামহিম আল্লাহ্ তাআলার মহান দরবারে আরয করলেন: “হে মহামহিম আল্লাহ! এ মৃতের অবস্থা আমার সামনে প্রকাশ করে দাও!” তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহ্ তাআলার মহান দরবারে তাঁর ফরিয়াদ মঞ্জুর হলো। আর দেখতে দেখতেই তাঁর ও ওই মৃতের মধ্যবর্তী যতো পর্দা ছিলো সবই তুলে ফেলা হলো। তখন এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য তাঁর সামনে আসল। কী দেখলেন? দেখলেন, মৃত লোকটি আগুনের লেলিহানের মধ্যে ডুবে রয়েছে। আর কেঁদে কেঁদে তার দরবারে ফরিয়াদ করছিলো:يا على ! انا غر يق فى النا روحر يق فى النار

অর্থাৎ- “হে আলী رضى الله تعالى عنه আমি আগুনে ডুবে গেলাম এবং আগুনে জ্বলছি।” কবরের ভয়ানক দৃশ্য ও মৃতের আর্ত-চিৎকার ও কষ্টদায়ক ফরিয়াদ হায়দারে কাররার হযরত আলী رضى الله تعالى عنه কে অস্থির করে তুললো। তিনি আপন দয়াবান প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ তাআলার দরবারে হাত উঠালেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ওই মৃতের ক্ষমার জন্য দরখাস্ত পেশ করলেন। অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসলো: “হে আলী رضى الله تعالى عنه আপনি তার পক্ষে সুপারিশ করবেন না। কেননা, রোযা রাখা সত্ত্বেও লোকটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকতো না।দিনের বেলায় রোযা তো রেখে নিতো, কিন্তু রাতে পাপাচারে লিপ্ত থাকতো।” মাওলায়ে কায়েনাত, মাওলা আলী رضى الله تعالى عنه এ কথা শুনে আরো দুঃখিত হলেন এবং সিজদায় পড়ে কেঁদে কেঁদে আরয করতে লাগলেন, “ইয়া আল্লাহ্! আমার মান সম্মান তোমার কুদরতের হাতে! এ বান্দা বড় আশা নিয়ে আমার কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে। আমার মালিক! তুমি আমাকে তার সামনে অপমানিত করো না! তার অসহায়ত্বের উপর দয়াবান হও এবং এ বেচারাকে ক্ষমা করে দাও!” হযরত আলী رضى الله تعالى عنه কেঁদে কেঁদে মুনাজাত করছিলেন। আল্লাহ্ তাআলার রহমতের সাগরে ঢেউ উঠল আর আহ্বান আসলো, “ওহে আলী رضى الله تعالى عنه আমি তোমার আন্তরিক দোয়ার কারণে তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” সুতরাং এ মৃতের উপর থেকে আযাব তুলে নেয়া হলো।” (আনীসুল ওয়ায়েযীন, ২৫ পৃষ্ঠা) 

কিউ নাহ্ মুশকিল কুশা কহোঁ তোম কো!

তোম নে বিগড়ী মেরী বানায়ী হে। 


মৃতদের সাথে কথোপকথন 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মাওলা আলী رضى الله تعالى عنه এর মহত্ব ও উচ্চ মর্যাদার কথা কী বলবো? আল্লাহ্ তাআলার দানক্রমে, তিনি رضى الله تعالى عنه কবরবাসীদের সাথেও কথা বলতেন। এখানে আরো একটি ঘটনা পেশ করা হচ্ছে: যেমন- হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী শাফিয়ী رحمة الله عليه বর্ণনা করেন: “হযরত সায়্যিদুনা সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব رضى الله تعالى عنه বলেন: “আমরা আমীরুল মু’মিনীন হযরত মাওলা আলী رضى الله تعالى عنه এর সাথে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হযরত আলী رضى الله تعالى عنه বললেন: السلام عليكم يا اهل القبور و رحمة الله وبركاته

অর্থাৎ- তোমাদের উপর সালাম ওহে কবরবাসী! এবং আল্লাহ্ তাআলার রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক!তোমরা কি আমাদেরকে তোমাদের অবস্থাদি সম্পর্কে জানাবে? না আমরা তোমাদেরকে আমাদের খবরাখবর জানাব? বর্ণনাকারী বলেন: আমরা একটা কবরের ভিতর থেকে আওয়াজ শুনলাম: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

অর্থাৎ- হে আমীরুল মুমিনীন رضى الله تعالى عنه আপনাদের উপর সালাম, আল্লাহ্ তাআলার রহমত ও বরকতসমূহ বর্ষিত হোক। আপনি আমাদেরকে বলুন, আমাদের পর দুনিয়ার মধ্যে কি ঘটেছে? তদুত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের বিবিগণ নতুন বিয়ে করেছে, তোমাদের ধন-সম্পদ বণ্টন হয়ে গেছে, তোমাদের ছেলেমেয়েরা এতিমদের দলভুক্ত হয়ে গেছে, ওই ঘর, যা তোমরা তৈরী করেছিলে, সেগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বসবাস করছে। এখন শোনাও তোমাদের নিজেদের অবস্থা!” তদুত্তরে এক কবর থেকে আওয়াজ আসলো: “কাফন ফেটে গেছে, চুলগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, চামড়াগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, চোখগুলো চেহারাগুলোর উপর থেকে বের হয়ে গেছে এবং নাকের ছিদ্রগুলো পূঁজে ভর্তি হয়ে গেছে, যেমন কাজ করেছি, তেমনি ফল পাচ্ছি। যা ছেড়ে এসেছি তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আর এখন কৃতকর্মগুলোর বিনিময়ে আযাবে বন্দী হয়ে আছি।” (অর্থাৎ যার কৃতকর্ম ভালো হবে, সে আখিরাতে আরাম পাবে, আর মন্দ কাজ সম্পন্নকারী আপন কৃতকর্মের কুফল ভোগ করবে।) (শরহুস সুদূর, ২০৯ পৃষ্ঠা) 


রমযানের রাতগুলোতে খেলাধুলা 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপরোল্লেখিত ঘটনা দুটিতে আমাদের শিক্ষার জন্য অগণিত মাদানী ফুল রয়েছে। জীবিত মানুষ খুব হেলেদুলে চলে; কিন্তু মৃত্যুর শিকার হয়ে যখন কবরে নামিয়ে দেয়া হয়, তখন চোখগুলো বন্ধ হবার পরিবর্তে বাস্তবিক পক্ষে খুলেই যায়। সৎকার্যাদি ও আল্লাহ রাস্তায় প্রদত্ত সম্পদ তো কাজে আসে; কিন্তু যা কিছু সম্পদ রেখে যায় তাতে মঙ্গলের সম্ভাবনা খুব কমই থাকে।কারণ, ওয়ারিশগণের দিক থেকে এ আশা খুব কমই করা হয় যে, তারা তাদের মরহুম প্রিয়জনের আখিরাতের মঙ্গলের জন্য বেশি মাল খরচ করবে, বরং মৃত্যুবরণকারী যদি হারাম ও অবৈধ মাল, যেমন-গুনাহের উপকরণাদি-বাদ্যযন্ত্র, ভিডিও গেমসের দোকান, মিউজিক সেন্টার, হারাম মিশ্রিত মালের ব্যবসা ইত্যাদি রেখে যায়, তবে তার জন্য মৃত্যুর পর কঠিন ও করুণ শাস্তি অবধারিত। ‘কবরের ভয়ানক দৃশ্য’ নামক ঘটনায় রমযানুল মোবারকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনকারীর ভয়ানক পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। আফসোস! শত আফসোস!! রমযানুল মোবারকের পবিত্র রাতগুলোতে আমাদের কিছু সংখ্যক যুবক ইসলামী ভাই মহল্লায় ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলায় মশগুল থাকে, খুব শোর-চিৎকার করে। অনুরূপভাবে, এসব হতভাগা লোক নিজেরা তো ইবাদত থেকে বঞ্চিত থাকে, এবং অন্যান্য লোকের জন্যও সীমাহীন পেরেশানীর কারণ হয়ে যায়। না নিজেরা ইবাদত করে, না অন্যান্য লোককে ইবাদত করতে দেয়। এ ধরণের খেলাধুলা আল্লাহ্ তাআলার স্মরণ থেকে উদাসীনকারী। নেককার লোকেরা সর্বদা এসব খেলাধুলা থেকে দূরে থাকেন। নিজেদের খেলাতো দূরের কথা, এমন খেলা তামাশা দেখেনও না; বরং এ ধরণের খেলাধূলার কথাবার্তা ও শুনেন না। সুতরাং আমাদেরও এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষ করে রমযানুল মোবারকের বরকতময় মুহুর্তগুলোকে এভাবে কখনো বিনষ্ট করা উচিৎ নয়।


রমযান মাসে সময় অতিবাহিত করার জন্য...... 

এছাড়া এ ধরণের বহু মূর্খলোকও দেখা যায়, তারা যদিও রোযা রেখে নেয়, কিন্তু ওইসব বেচারার সময় কাটে না। সুতরাং তারাও রমযানের মর্যাদাকে একদিকে রেখে দিয়ে হারাম ও নাজায়িয কাজের আশ্রয় নিয়ে সময় ‘কাটায়’। আর এভাবে রমযান শরীফে দাবা, তাস, লুডু, গান-বাদ্য, ইত্যাদিতে কিছু লোক বেশি মাত্রায় জড়িয়ে পড়ে।মনে রাখবেন, যদিও দাবা ও তাস ইত্যাদির উপর কোন ধরণের বাজি কিংবা শর্ত না লাগানো হয় তবুও এ খেলা অবৈধ; বরং তাসের মধ্যে যেহেতু প্রাণীর ছবিও থাকে, সেহেতু আ’লা হযরত رحمة الله عليه জুয়া ছাড়া তাস খেলাকেও হারাম লিখেছেন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪তম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা) 


উত্তম ইবাদত কোনটি?

হে জান্নাতপ্রার্থী রোযাদার ইসলামী ভাইয়েরা! রমযানুল মোবারকের পবিত্র মুহুর্তগুলোকে অনর্থক কথাবার্তা ও কার্যাদির মধ্যে বিনষ্ট হওয়া থেকে বাঁচান। জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। সেটাকে অমূল্য সম্পদ মনে করুন। তাস খেলা ও ফিল্মের গানগুলোর মাধ্যমে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে কুরআন তিলাওয়াত এবং যিকির ও দরূদের মধ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করো! ক্ষুধা-পিপাসার কঠোরতা যতোই বেশি অনুভুত হবে ততোই ধৈর্যধারণের জন্য اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ সাওয়াবও বেশি পাবেন। যেমন, বর্ণিত আছে: افضل العباد ات احمزها অর্থাৎ- সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদত হচ্ছে তাই, যাতে কষ্ট বেশি হয়।” (কাশফুল খিফা ও মুযীলুল আলবাস, ১ম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৫৯) 


ইমাম শরফুদ্দীন নববী رحمة الله عليه বলেন: “যে ইবাদতের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম ও টাকা বেশি খরচ হয় এতে সাওয়াব ও ফযীলত বেশি হয়।” (শরহে সহীহ মুসলিম লিন নববী, ১ম খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা) 


ওলীয়ে কামিল হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম ইবনে আদহাম رحمة الله عليه বলেন: “দুনিয়ার মধ্যে যেই সৎকর্ম যতো কঠিন হবে, কিয়ামতের দিন নেকীগুলোর পাল্লাও ততো বেশি ভারী হবে।” (তাযকিরাতুল আওলিয়া, ৯৫ পৃষ্ঠা) 


এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলো, আমাদের জন্য রোযা রাখা যতো কঠিন। পাপীষ্ট, নফস প্রবৃত্তির জন্য যতো অসহনীয় হবে। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কিয়ামতের দিন আমলের পাল্লায় ততো বেশি ভারী হবে।


রোযা পালনকালে বেশি ঘুমানো

হুজ্জাতুল ইসলাম সায়্যিদুনা ইমাম গাযালী رحمة الله عليه ‘কীমিয়ায়ে সা‘আদাত’ কিতাবে লিখেছেন: “রোযাদারের জন্য সুন্নাত হচ্ছে দিনের বেলায় বেশিক্ষণ না ঘুমানো; বরং জাগ্রত থাকা, যাতে ক্ষুধা ও দূর্বলতার প্রভাব অনূভব হয়।” (কীমিয়ায়ে সা‘আদাত, ১৮৫ পৃষ্ঠা) (যদিও কম শোয়া উত্তম তারপরও প্রয়োজনীয় ইবাদত করার পর কোন ব্যক্তি শুয়ে থাকলে এতে সে গুনাহগার হবে না।) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, যে ব্যক্তি রোযা পালনকালে দিনভর ঘুমে সময় অতিবাহিত করে দেয়, সে রোযার মর্যাদা বা কিভাবে পাবে? একটু চিন্তা করুন তো! ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رحمة الله عليه তো বেশি ঘুমাতেও নিষেধ করেছেন। কারণ তাতে অনর্থক সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। সুতরাং যারা খেল তামাশা ও হারাম কাজে সময় নষ্ট করে তারা কতোই বঞ্চিত ও হতভাগা! এ বরকতময় মাসের প্রতি যত্নবান হোন! এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন! এতে খুশী মনে রোযা রাখুন! আর আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করুন! 

হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ! রমযানের কল্যাণের স্রোতধারা থেকে প্রতিটি মুসলমানকে উপকৃত ও ধন্য করো! এ বরকতময় মাসের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার সৌভাগ্য আমাদেরকে দান করো! এর প্রতি অশালীনতা প্রদর্শন করা থেকে আমাদেরকে বিরত রাখো! 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযান মাসের সম্মান লাভের জন্য ও অন্তরের আগ্রহকে বাড়াতে বরকত লাভ করা ও নেকী অর্জন এবং নিজেকে গুনাহ্ থেকে বাঁচাতে তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশকে আপন করে নিন এবং আশিকানে রাসূলদের সাথে মাদানী কাফেলায় সুন্নাতে ভরা সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ সেই সফলতা পাবেন যা দেখে আপনি আশ্চর্য হবেন। এক আশিকে রাসূল এর চমৎকার ঘটনা শুনুন ও আন্দোলিত হোন:


প্রতিদিন ফিকরে মদীনা করার পুরস্কার 

এক ইসলামী ভাই এর বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ মাদানী ইনআমাত আমার প্রিয় এবং দৈনন্দিন “ফিকরে মদীনা” করা প্রায় আমার অভ্যাস। একবার আমি তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতের তরবীয়্যতের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুবায়ে বেলুচিস্তান সফরে ছিলাম। সে সময় আমি গুনাহগারের জন্য দয়ার দরজা খুলে গেল। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ যখন আমি ঘুমালাম তখন আমার ভাগ্য চমকে উঠল। স্বপ্নে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم তাশরীফ আনলেন। তখন ঘর আলোকজ্জল হয়ে উঠল আর খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صلى الله عليه وسلم ঠেঁাট মোবারক নড়াচড়া করলেন, রহমতের ফুল বর্ষণ হলো। তার বর্ণিত শব্দগুলো কিছুটা এরকম: “যারা মাদানী কাফেলায় দৈনন্দিন ‘ফিকরে মদীনা’ করে আমি তাদেরকে আমার সাথে জান্নাতে নিয়ে যাবো।”


শুকরিয়া কিউ কর আদা হো আপ কা ইয়া মুস্তফা 

কে পড়–ছি খুলদ্ মে আপনা বানায়া শুকরিয়া



ফিকরে মদীনা কি? 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাত কল্যাণময় করার জন্য প্রশ্নাকারে ইসলামী ভাইদের জন্য ৭২টি, ইসলামী বোনদের জন্য ৬৩টি, জামেয়ার ছাত্রদের জন্য ৯২টি, জামেয়ার ছাত্রীদের জন্য ৮৩টি, মাদানী মুন্না (বাচ্চা) দের জন্য ৪০টি মাদানী ইনআমাত পেশ করা হয়েছে। মাদানী ইনআমাতের রিসালা মাকতাবাতুল মদীনায় পাওয়া যায়। দৈনিক ফিক্রে মদীনার মাধ্যমে তা পূর্ণ করে মাদানী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আপনার এলাকার দা’ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারের নিকট জমা করতে হয়।

নিজের আমলের ব্যাপারে হিসাব করা, কবর ও হাশরের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা এবং নিজের ভাল-মন্দ কাজের হিসাব নেয়ার নিয়্যতে মাদানী ইনআমাত রিসালা পূর্ণ করাকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে ফিক্রে মদীনা বলা হয়। আপনিও রিসালা সংগ্রহ করুন। এখন থেকে যদি পূরণ করতে ইচ্ছা না হয় তবে না করুন। অন্তত এটা করুন যে, ওলীয়ে কামিল, আশিকে রাসূল, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه এর ২৫ তারিখ ওরছ শরীফের নিছবতে দৈনন্দিন ২৫ সেকেন্ড মাদানী ইনআমাত রিসালা দেখুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দেখতে দেখতে পড়ার, পড়তে পড়তে ফিকরে মদীনা করার এবং ঐ রিসালা পূরণ করার মন-মানসিকতা তৈরী হবে। আর যদি মাদানী ইনআমাত রিসালা পূরণ করার অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকত নিজ চোখে দেখতে পাবেন।


মাদানী ইন্আমাত পর করতা হ্যায় জো কুয়ি আমল, 

মাগফিরাত কর বেহিসাব উছকি খোদায়ে লাম ইয়া ঝাল। 


ইলম অর্জনের মাধ্যমে গুনাহ ঝড়ে যায়

প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি ইলম তালাশে জুতা অথবা মৌজা বা কাপড় পরিধান করে, (সে) আপন ঘরের চৌকাঠ থেকে বের হতেই তার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (আল মু’জামুল আওসাত, ৪র্থ খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৭২২)



রোযার আহকাম (হানাফী) ১ 

দরূদ শরীফের ফযীলত 

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ ইবনে মনসুর رحمة الله عليه যখন ওফাত প্রাপ্ত হন, তখন একজন শীরাযবাসী লোক তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন- তিনি শীরাযের জামে মসজিদের মেহরাবে দাঁড়ানো। আর তাঁর পরনে ছিলো উন্নতমানের পোশাক। মাথার উপর মুক্তা খচিত তাজ শোভা পাচ্ছিলো। স্বপ্নে স্বপ্নদ্রষ্টা বলল: “হযরত কেমন আছেন?” তিনি বললেন: “আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমার উপর দয়া করেছেন। আমাকে তাজ পরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” লোকটি বললো: “কি কারণে?” বললেন: اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل 

আমি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم এর উপর বেশি পরিমাণে দরূদে পাক পড়তাম, বস্তুত: এই আমলটা কাজে এসেছে।” (আল কাউলূল বদী, ২৫৪ পৃষ্ঠা) 


[Note-১:ফয়যানে সুন্নাতে সব জায়গায় মাসআলা মাসায়েল হানাফী মাযহাব অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য শাফেয়ী, মালেকী হাম্বলী মাযহাবের ইসলামী ভাইয়েরা ফিকহী মাসআলার ক্ষেত্রে নিজ নিজ মাযহাবের ওলামায়ে কিরামের মতামত গ্রহণ করবেন।]


আল্লাহ্ তাআলার কত বড় দয়া! তিনি আমাদের মাহে রমযানুল মোবারকের রোযা ফরয করে আমাদের জন্য তাকওয়া ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

 ﻳٰٓـﺎَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳۡﻦَ ﺍٰﻣَﻨُﻮۡﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﮑُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﮐَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳۡﻦَ ﻣِﻦۡ ﻗَﺒۡﻠِﮑُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮۡﻥ () ﺍَﻳَّﺎﻣًﺎ ﻣَّﻌۡﺪُﻭۡﺩٰﺕٍؕ ﻓَﻤَﻦۡ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻨۡﻜُﻢۡ ﻣَّﺮِﻳۡﻀًﺎ ﺍَﻭۡ ﻋَﻠٰﻰ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻌِﺪَّﺓٌ ﻣِّﻦۡ ﺍَﻳَّﺎﻡٍ ﺍُﺧَﺮَ​ؕ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳۡﻦَ ﻳُﻄِﻴۡﻘُﻮۡﻧَﻪٗ ﻓِﺪۡﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴۡﻜِﻴۡﻦٍؕ ﻓَﻤَﻦۡ ﺗَﻄَﻮَّﻉَ ﺧَﻴۡﺮًﺍ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﻴۡﺮٌ ﻟَّﻪٗؕ  ﻭَﺍَﻥۡ ﺗَﺼُﻮۡﻣُﻮۡﺍ ﺧَﻴۡﺮٌ ﻟَّـﮑُﻢۡ ﺍِﻥۡ ﻛُﻨۡﺘُﻢۡ ﺗَﻌۡﻠَﻤُﻮۡﻥَ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিলো, যাতে তোমরা পরহিযগারী লাভ করো, গণনার দিনসমূহ! সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে, তবে ততসংখ্যক রোযা অন্যান্য দিনগুলোতে, আর যারা তা পালন করার শক্তি রাখে না, তবে বিনিময়ে একজন মিসকীনের খাবার, অতঃপর যে স্বত:স্ফূর্তভাবে নেকী বেশী পরিমাণে করে, তবে তা তার জন্য উত্তম, আর রোযা রাখা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো। (পারা-২, সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩-১৮৪) 


রোযা কার উপর ফরয?

তাওহীদ ও রিসালাতকে বিশ্বাস করা ও দ্বীনের সব জরুরী বিষয়ের উপর ঈমান আনার পর যেভাবে প্রত্যেক মুসলমানের উপর নামায ফরয বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে, অনুরূপভাবে রমযান শরীফের রোযাও প্রত্যেক মুসলমান (নর ও নারী) বিবেকসম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্কের উপর ফরয। ‘দুররে মুখতার’ এর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, রোযা ২য় হিজরীর ১০ই শা’বানুল মুআয্যামে ফরয হয়েছে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা) 


রোযা ফরয হবার কারণ 

ইসলামে বেশিরভাগ কাজ কোন না কোন মহান ব্যক্তির ঘটনাকে জীবিত রাখার জন্য নির্ধারিত হয়েছে। যেমন: সাফা ও মারওয়ার মধ্যখানে হাজীদের ‘সাঈ’ হযরত সায়্যিদাতুনা হাজেরা رضى الله تعالى عنه এর স্মৃতিময়ী। তিনি رضى الله تعالى عنه তাঁর কলিজার টুকরো হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল জবীহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم এর জন্য পানি তালাশ করতে গিয়ে এ দুটি পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার প্রদক্ষিণ করেছেন ও দৌঁড়ায়েছেন। আল্লাহ্ তাআলার নিকট হযরত সায়্যিদাতুনা হাজেরা رضى الله تعالى عنه এর এ কাজটা অত্যন্ত পছন্দ হয়েছে। তাই এই ‘সুন্নাতে হাজেরা’ رضى الله تعالى عنه কে আল্লাহ্ তাআলা স্থায়ীত্ব দানের জন্য হাজীগণ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’র সাঈকে (প্রদক্ষিণ করাকে) ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে, রমযানের দিনগুলোতে কিছুদিন রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم হেরা পর্বতের গুহায় অতিবাহিত করেছিলেন। তখন হুযুর صلى الله عليه وسلم দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকতেন, আর রাতে আল্লাহ্ তাআলার যিকরে মশগুল থাকতেন। তাই আল্লাহ্ তাআলা ওই দিন গুলোর স্মরণকে তাজা করার জন্য রোযা ফরয করেছেন; যাতে তাঁর মাহবুব صلى الله عليه وسلم এর সুন্নাতও স্থায়ী হয়ে যায়।


 সম্মানিত নবীগণ এর রোযা 

রোযা পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যেও ছিলো। তবে তাদের রোযার ধরণ আমাদের চেয়ে ভিন্ন ছিলো। বর্ণনাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, 


হযরত সায়্যিদুনা আদম সফিয়্যুল্লাহ على نبينا وعليه الصلوة والسلام (প্রত্যেক মাসের) ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল, ৮ম খন্ড, ২৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪১৮৮) 


হযরত সায়্যিদুনা নূহ على نبينا وعليه الصلوة والسلام (দুই ঈদ ছাড়া) সব সময় রোযা পালন করতেন। (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭১৪) 


হযরত ঈসা على نبينا وعليه الصلوة والسلام সব সময় রোযা রাখতেন কখনো ছাড়তেন না। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪৬২৪) 


হযরত সায়্যিদুনা দাঊদ على نبينا وعليه الصلوة والسلام একদিন পর পর একদিন রোযা রাখতেন। (মুসলিম শরীফ, ৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৮৯) 


হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান على نبينا وعليه الصلوة والسلام মাসের শুরুতে তিন দিন, মাসের মধ্যভাগে তিন দিন এবং মাসের শেষভাগে তিন দিন (অথার্ৎ মাসে ৯ দিন) রোযা রাখতেন। (কানযুল ওম্মাল, ৮ম খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪৬২৪) 


রোযাদারের ঈমান কতোই পাকাপোক্ত

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রচন্ড গরম, পিপাসায় কণ্ঠনালী শুকিয়ে যাচ্ছে, ওষ্ঠদ্বয় শুকিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু পানি থাকা সত্ত্বেও রোযাদার সেদিকে দেখছেও না। খাদ্য মওজুদ আছে; ক্ষুধার প্রচন্ডতার অবস্থা খুবই শোচনীয়! কিন্তু খাবারের দিকে হাত বাড়াচ্ছে না। আপনি অনুমান করুন। ওই ব্যক্তির ঈমান পরম করুনাময় আল্লাহ্ তাআলার উপর কতই পাকাপোক্ত। কেননা, সে জানে, তার কার্যকলাপ সমগ্র দুনিয়া থেকে তো গোপন থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার নিকট গোপন থাকতে পারে না। আল্লাহ্ তাআলার উপর তার পূর্ণ বিশ্বাসই হচ্ছে রোযা পালনের কারণ। কেননা, অন্যান্য ইবাদত কোন না কোন প্রকাশ্য কাজ দ্বারা সম্পন্ন করা হয়, কিন্তু রোযার সম্পর্ক হচ্ছে হৃদয়ের সাথে। তার অবস্থা মূলত: আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। যদি সে গোপনে পানাহার করে ফেলে, তবুও লোকজন একথাই মনে করবে যে, সে রোযাদার। কিন্তু সে একমাত্র ‘আল্লাহ্ তাআলার ভয়’-এর কারণে পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখছে।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সম্ভব হলে নিজের ছেলেমেয়েদেরকে তাড়াতাড়ি রোযা রাখতে অভ্যস্ত করে তুলুন যাতে তারা যখন বালিগ হবে তখন রোযা পালনে কষ্ট অনুভব না হয়। যেমন সম্মানিত ফকীহগণ رحمة الله عليه বলেন: “সন্তানের বয়স যখন দশ বছর হয়ে যায় এবং তার মধ্যে রোযা রাখার শক্তি হয়, তখন তার দ্বারা রমযানুল মোবারকে রোযা পালন করাবেন। যদি পূর্ণ শক্তি হওয়া সত্ত্বেও রোযা না রাখে, তবে মারধর করে রাখাবেন। যদি রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে কাযার নির্দেশ দিবেন না; কিন্তু নামায শুরু করে ভেঙ্গে ফেললে পুনরায় পড়াবেন।” (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা) 


রোযা রাখলে কি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে?

সাধারণ লোকদের মধ্যে এ ধারণা পাওয়া যায় যে, রোযা রাখলে মানুষ নাকি দূর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে; অথচ এমন নয়। এ প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রযা খান رحمة الله عليه এর ঈমান তাজাকারী ঘটনা পেশ করা হচ্ছে-সুতরাং ‘আল মালফুয, ২য় খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে: তিনি رحمة الله عليه বলেন: “এক বছর রমযানুল মোবারক থেকে কিছু পূর্বে মরহুম পিতা ইসলামী তর্কশাস্ত্রের মহান ইমাম সায়্যিদুনা মাওলানা নকী আলী খান رحمة الله عليه স্বপ্নে তাশরীফ আনলেন। আর বললেন: “পুত্র! আগামী রমযান শরীফে তুমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়বে, কিন্তু মনে রেখো! কোন রোযা যেনো কাযা না হয়ে যায়। সুতরাং পিতা মহোদয়ের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বাস্তবিকই রমযানুল মোবারকে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম, কিন্তু اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কোন রোযা ছুটেনি। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযার বরকতে আল্লাহ্ আমাকে সুস্থতা দান করলেন। সুস্থতা পাবো না কেন?তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: صو موا تصحوا অর্থাৎ- তোমরা রোযা রাখো সুস্থতা লাভ করো!) অর্থাৎ রোযা রাখলে সুস্থ হয়ে যাবে। (দুররে মনসুর, ১ম খন্ড)


রোযা রাখলে সুস্বাস্থ্য পাওয়া যায় 

এ প্রসঙ্গে আমীরুল মু’মিনীন হযরত মাওলায়ে কায়িনাত, আলী মুরতাজা, শেরে খোদা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর সুস্থতা প্রদানকারী বাণী: নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা বনী ইস্রাইলের এক নবী على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন, “আপনি আপনার সম্প্রদায়কে খবর দিন, যে বান্দা আমার সন্তুষ্টির জন্য এক দিনের রোযা রাখে, আমি তার শরীরকে সুস্থতা দান করবো, তাকে মহা প্রতিদানও দিবো।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৯২৩) 


পাকস্থলীর ফুলা 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মহামহিম আল্লাহ্ তাআলারই জন্য সমস্ত প্রশংসা! বরকতময় হাদীস শরীফ সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, রোযা সাওয়াব ও প্রতিদানের সাথে সাথে সুস্বাস্থ্য অর্জন করারও মাধ্যম। এখনতো চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও তাঁদের গবেষণায় এ বাস্তবতাটুকু মেনে নিতে শুরু করেছে। যেমন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মূর প্যালিড বলেন: “আমি ইসলামী বিষয়াদি পড়ছিলাম। যখন রোযা সম্পর্কে পড়লাম তখন খুশিতে মেতে উঠলাম। ইসলাম তো সেটার অনুসারীদেরকে এক মহান ব্যবস্থাপনা দিয়েছে! আমার মধ্যে আগ্রহ জন্মালো। সুতরাং আমিও মুসলমানদের মতো রোযা রাখতে শুরু করে দিলাম। দীর্ঘ দিন যাবত আমার পাকস্থলীতে ফুলা ছিলো। কিছু দিনের ব্যবধানে আমার কষ্ট কম অনুভুত হলো। আমি রোযা রাখতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে আমার রোগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো।”


চাঞ্চল্যকর রহস্য উদ্ঘাটন

হল্যান্ডের পাদ্রী ‘এ্যলফ গাল’ বলেন: “আমি সুগার (ডায়াবেটিক), হৃদরোগ ও পাকস্থলীর রোগীকে নিয়মিতভাবে ত্রিশ দিন রোযা পালন করালাম। ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিক রোগীদের ‘সুগার’ নিয়ন্ত্রণে এসে গেল, হৃদ-রোগীদের আশংকা ও হৃদযন্ত্রের ফুলা দূরীকরণে এবং পাকস্থলীর রোগীদের সর্বাপেক্ষা বেশি উপকার হয়েছে। একজন ইংরেজ মানসিক রোগ-বিশেষজ্ঞ ‘সিগম্যান্ড ফ্রাইড’ এর বর্ণনা, “রোযার ফলে দেহের খিচুঁনী, মানসিক চাপ (অস্থিরতা) এবং মানসিক অন্যান্য রোগ দূর হয়ে যায়।” 


চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান টিম

পত্রিকার এক রিপোর্ট অনুযায়ী জার্মানী, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞদের এক পরীক্ষা-টিম রমযানুল মোবারকে পাকিস্তান আসলে তারা ‘বাবুল মদীনা’ করাচী, ‘মারকাযুল আউলিয়া’ লাহোর এবং ‘মুহাদ্দিসে আযম رحمة الله عليه এর নগরী ‘সরদার আবাদ’ (ফয়সালাবাদ) কে বেছে নিলেন। গবেষণা করার পর তারা যে রিপোর্ট পেশ করলেন। রিপোর্টটা এরূপ ছিলো: “যেহেতু মুসলমান নামায পড়ে ও রমযানুল মোবারকে সেটার প্রতি বেশি যত্নবান হয়, সেহেতু অযু করার ফলে নাক- কান-গলার রোগগুলো কমে যায়। তাছাড়া, মুসলমান রোযার কারণে কম আহার করে। ফলে পাকস্থলী, কলিজা, হৃদয় ও শরীরের জোড়াগুলোর রোগে কম আক্রান্ত হয়।” 


খুব বেশি আহার করলে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার সত্তায় কোনরূপ রোগই নেই, বরং সেহেরী ও ইফতারের বেলায় অসতর্কতার কারণে, তাছাড়া, উভয় ওয়াক্তে বেশি পরিমাণে তেল-চর্বিযুক্ত খাদ্য খেলে এবং রাতের বেলায় কিছুক্ষণ পর পর খাবার খেতে থাকার কারণে রোযাদার অসুস্থ হয়ে পড়ে।সুতরাং সেহেরী ও ইফতারের সময় পানাহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। রাতের বেলায় পেটের মধ্যে খাদ্যের এতো বেশী ভান্ডার তৈরী করে নেয়া উচিত নয় যেনো সারা দিন ঢেকুরই উঠতে থাকে আর রোযা পালনকালে ক্ষুধা ও পিপাসা অনুভুবই না হয়। কেননা, যদি ক্ষুধা-পিপাসা অনুভবই না হয়, তাহলে রোযার তৃপ্তিই বা কি রইলো? রোযার মজাই তো এতে যে, তীব্র গরম হবে, পিপাসার চোটে ঠোট দুটি শুকিয়ে যাবে এবং ক্ষুধায় অত্যন্ত কাতর হয়ে যাবে। আর এমনি অবস্থায় আহা! যদি মদীনা মুনাওয়ারার প্রিয় প্রিয় তাপ ও মিষ্টি মিষ্টি রোদের স্মরণ হয়ে যায়! আহা! কারবালার উত্তপ্ত ময়দান এবং সেখানে নুবুয়তের বাগানের সুবাসিত নব-প্রষ্ফুটিত ফুলগুলোর তিন দিনের ক্ষুধা-পিপাসার কারণে অস্থিরতার কথা, মদীনার প্রকৃত মাদানী মুন্নীগণ ও মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم এর ক্ষুধা পীড়িত, পিপাসার্ত ও নির্যাতিত শাহযাদাদের স্মরণ কষ্ট দিতে থাকে, আর যখন ক্ষুধা ও পিপাসা কিছুটা বেশী কষ্ট দেয়, তখন নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم এর পবিত্রতম পেটে বাঁধা পাথরও স্মরণে এসে যায়, তবে তখন বলার আর কী থাকবে? সুতরাং প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তবিকপক্ষে রোযা এমনি হওয়া চাই যে, আমরা আমাদের আক্বা ও ইমামগণের সুন্দর সুন্দর স্মরণে হারিয়ে যাবো। 


কেইসে আক্বাও কা হো বান্দা রযা, 

বোল বালে মেরি সারকারো কে।

(হাদায়িখে বখশিশ) 


বিনা অপারেশনে জন্ম হয়ে গেল 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার নুরানিয়্যাত ও রূহানিয়্যাত লাভ করার জন্য এবং মাদানী মন মানসিকতা তৈরী করার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যান এবং সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরের সৌভাগ্য অর্জন করুন।

اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহ এবং মাদানী কাফেলারও কি সুন্দর বাহার ও বরকত রয়েছে। যেমন- হায়দারাবাদের (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশের) এক ইসলামী ভাই এর বয়ানের সারাংশ: সম্ভবতঃ ১৯৯৮ সালের ঘটনা। আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছিল। সময় পূর্ণ হয়ে গেল। ডাক্তার বলেছিল, সম্ভবত অপারেশন করতে হবে। তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক তিন দিনের সুন্নাতে ভরা ইজতিমা (সাহরায়ে মদীনা মুলতান) সন্নিকটে ছিল। ইজতিমার পর সুন্নাতের প্রশিক্ষণের ৩০ দিনের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সফর করার আমার নিয়্যত ছিল। ইজতিমায় রওয়ানা হওয়ার সময় কাফেলার সামগ্রী নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছলাম। যেহেতু আমার পরিবারের অন্যান্য লোকেরা হাসপাতালে সাহায্য সহযোগীতার জন্য উপস্থিত ছিল। আমার স্ত্রী অশ্রুসিক্ত নয়নে আমাকে সুন্নাতে ভরা ইজতিমার (মূলতানের) জন্য বিদায় জানাল। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম আমাকেতো এখন আন্তর্জাতিক সুন্নাতের ভরা ইজতিমায় এরপর সেখান থেকে ৩০ দিন মাদানী কাফেলা অবশ্যই সফর করতে হবে। আহ! এর বরকতে (আমার স্ত্রীর) নিরাপদে যেন সন্তান প্রসব হয়ে যায় আমি গরীবের কাছে তো অপারেশনের খরচও নেই। সর্বোপরী আমি মদীনাতুল আউলিয়া মূলতান শরীফে উপস্থিত হয়ে সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় খুব দোয়া করলাম ইজতিমার শেষে অশ্রু সজল দোয়ার পর ঘরে ফোন করলাম। তখন আমার আম্মাজান বললেন: “মোবারক হোক! গত রাতে আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে বিনা অপারেশনে একটি চাঁদের মত মাদানী মুন্নী দান করেছেন। আমি খুশী হয়ে বললাম: “আম্মাজান! আমার জন্য কি নির্দেশ?” আমি কি এসে যাব নাকি ৩০ দিনের জন্য মাদানী কাফেলার মুসাফির হব? আম্মাজান বললেন: “বেটা! বিনা দ্বিধায় মাদানী কাফেলায় সফর কর।” নিজের মাদানী মুন্নীকে দেখার ইচ্ছাকে অন্তরে চেপে রেখে ? اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি ৩০ দিনের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে রওয়ানা হয়ে গেলাম।মাদানী কাফেলায় সফরের নিয়্যতের বরকতে আমার সমস্যা সমাধান হয়ে গেল। মাদানী কাফেলার বরকতের কারণে পরিবারের সকলের খুব মাদানী মন মানসিকতা সৃষ্টি হল। এমনকি আমার বাচ্চার মা বলতে লাগল, আপনি যখন মাদানী কাফেলায় মুসাফির হন তখন আমি আমার বাচ্চাসহ নিজেদের নিরাপদ মনে করি। 


অপারেশান না হো কোয়ি উলজান না হো,

গমকে ছায়ে ঢলি, কাফেলে মে চলো।

 বিবি বাচ্চে সভী খুব পায়ে খুশী, 

খায়রাত ছে রহে কাফিলে মে চলো। 


পূর্ববর্তী গুনাহের কাফ্ফারা

হযরত সায়্যিদুনা আবূ সাঈদ খুদরী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রেখেছে, সেটার সীমারেখা চিনেছে এবং যা থেকে বিরত থাকা চাই, তা থেকে বিরত থেকেছে, তবে সে (যেসব গুনাহ্) ইতোপূর্বে করেছে, সেগুলোর কাফ্ফারা হয়ে গেল।” (আল ইহসান বিতরতীবে সহীহ ইবনে হাব্বান, ৫ম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪২৪) 


রোযার প্রতিদান

হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “মানুষের প্রতিটি সৎকর্মের বিনিময় (সাওয়াব) দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত দান করা হয়। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: 

الا اصوم فانه لى وانا اجزى به

(অর্থাৎ- কিন্তু রোযা এর ব্যতিক্রম; সেটা আমার জন্য। আমিই তার প্রতিদান দিবো)।


আল্লাহ্ তাআলা আরো ইরশাদ করেন: “বান্দা তার ইচ্ছা ও আহার শুধু আমারই কারণে ছেড়ে দেয়। রোযাদারের জন্য দুটি খুশী একটা ইফতারের সময়, অন্যটা আল্লাহ্ তাআলার সাথে সাক্ষাতের সময়। রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্ তাআলার নিকট মুশক (এক প্রকার উন্নত মানের সুগন্ধি) অপেক্ষাও বেশি উত্তম।” (সহীহ মুসলিম, ৫৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৫১) 


আরো ইরশাদ করেছেন: “রোযা হচ্ছে ঢাল। আর যখন কারো রোযার দিন আসে তখন সে না অনর্থক কথা বলে, না শোর-চিৎকার করে। অতঃপর যদি কেউ তাকে গালি গালাজ করে, কিংবা ঝগড়া-বিবাদ করতে উদ্যত হয়, তখন সে যেনো এ কথা বলে দেয়, “আমি রোযাদার।” (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮৯৪) 


রোযার বিশেষ পুরস্কার

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপরোল্লেখিত বরকতময় হাদীস শরীফ গুলোতে রোযার কয়েকটি বিশেষত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। কতোই প্রিয় সুসংবাদ ঐ রোযাদারের জন্য, যে তেমনভাবে রোযা রেখেছে, যেমন রোযা রাখা কর্তব্য। অর্থাৎ পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে নিজের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও গুনাহের কাজগুলো থেকে বিরত রেখেছে। এমন রোযা, আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ ও দয়ায় রোযাদারদের জন্য সমস্ত গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যায়। তাছাড়া, হাদীসে মোবারকের এ বাণীতো বিশেষভাবে দেখার মতোই, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم আপন মহান প্রতিপালকের সুগন্ধময় বাণী শুনাচ্ছেন: فانه لى وانا اجزى به 

অর্থাৎ- ‘রোযা আমার জন্য আর সেটার প্রতিদান আমি নিজেই দিবো।’ 


হাদীসে কুদসীর এ ইরশাদে পাককে কোন কোন সম্মানিত মুহাদ্দিস رحمة الله عليه ও পড়েছেন। যেমন তাফসীরে নঈমী ইত্যাদিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এর অর্থ দাঁড়ায় “রোযার প্রতিদান আমি নিজেই হব।”

 سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযা রেখে রোযাদার খোদ আল্লাহ্ তাআলাকে পেয়ে যায়।


সৎকাজের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কুরআনে করীমের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা এসেছে, যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে, সে জান্নাত পাবে। যেমন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

 ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺎﺕِ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢْ ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﺒَﺮِﻳَّﺔِ () ﺟَﺰَﺍﺅُﻫُﻢْ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕُ ﻋَﺪْﻥٍ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦ ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ ﺧَﺎﻟِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﺭَّﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻭَﺭَﺿُﻮﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦْ ﺧَﺸِﻲَ ﺭَﺑَّﻪ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সেরা। তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে, বসবাসের বাগানসমূহ, যেগুলোর নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান। সেগুলোর মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ্ তাআলা তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে আপন রবকে ভয় করে। (পারা-৩, সূরা-বায়্যিনা, আয়াত-৭,৮) 


সাহাবা ব্যতীত অন্য কারো জন্য (رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ) বলা কেমন? 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ কথাটি সম্পূর্ণ ভুল, যে رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ শুধু সাহাবীর নামের সাথে নির্ধারিত। বা উল্লেখিত আয়াতের শেষাংশ:-

رضى الله عنهم ورضواعنه. ذلك لمن خشى ربه

(অর্থাৎ- আল্লাহ্ তাআলা তাদের উপর সন্তুষ্ট আর তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট)। এটা তার জন্য, যে আপন মহামহিম আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করে।)

ওই সাধারণ লোকদের ভুল ধারণার মূলোৎপাটন করে দিয়েছে। আল্লাহ্ তাআলার ভয় রাখেন এমন প্রতিটি মু’মিনের জন্য এ মহা সুসংবাদ অবতীর্ণ হয়েছে। যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, সে رضى الله عنهم ورضواعنه এর অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে সাহাবী ও সাহাবী নয় এমন কারো কথা বিশেষ করে বলা হয়নি। প্রত্যেক সাহাবী ও প্রত্যেক ওলীর জন্য رحمة الله عليه লিখা ও বলা একেবারে সঠিক ও বৈধ। যিনি ঈমান সহকারে হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর প্রকাশ্য জীবদ্দশায় একটা মুহুর্তের সঙ্গও লাভ করেছেন, কিংবা দেখেছেন, আর ঐ ঈমানের উপর ইন্তেকাল করেছেন, তিনিই সাহাবী। বড় থেকে বড়তর ওলীও সাহাবীর মর্যাদা পেতে পারেন না। প্রতিটি সাহাবী ন্যায়পরায়ণ ও অকাট্যভাবে জান্নাতী। তাঁদের নামের সাথে যখন رضى الله تعالى عنه লিখা হবে, তখন অর্থ হবে ‘আল্লাহ্ তাআলা তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর যখন সাহাবী নন এমন কারো জন্য লিখা কিংবা বলা হবে, তখন দোয়া সূচক অর্থ হবে। অর্থাৎ “আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন!” رضى الله تعالى عنه এর কথাতে প্রাসঙ্গিকভাবে এসে গেলো, আসলে এটা বলার উদ্দেশ্য ছিলো যে, নামায, হজ্ব, যাকাত, গরীবদের সাহায্য, রোগীদের দেখা-শোনা, মিসকীনদের খবরাখবর নেয়া ইত্যাদি সবই সৎকাজ। এগুলোর বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যায়, কিন্তু রোযা এমন এক ইবাদত যার বিনিময়ে জান্নাতের মহান স্রষ্টা অর্থাৎ খোদ্ প্রকৃত মালিক আল্লাহ্কেই পাওয়া যায়। যেমন বলা হয়- 


আমার মুক্তার মালিককেই দরকার

একবার সুলতান মাহমুদ গযনবী رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কিছু মূল্যবান মণিমুক্তা তাঁর মন্ত্রিদের সামনে ছুঁড়ে মারলেন। আর বললেন: “কুঁড়িয়ে নিন!” একথা বলে তিনি সামনের দিকে চলে গেলেন। কিছুদূর যাবার পর ফিরে দেখলেন, “আয়ায ঘোড়ায় চড়ে তাঁর পিছনে পিছনে চলে আসছে। বললেন, “আয়াজ! তোমার কি মণি-মুক্তার দরকার নেই?” আয়াজ বললো: “আলীজাহ্! যারা মণিমুক্তার প্রার্থী ছিলো, তারাতো নিয়েছে, আমারতো মনিমুক্তার মালিককেই দরকার।” 


আর জান্নাত হচ্ছে রাসূলূল্লাহএর 

এ ধারাবাহিকতায় একটি বরকতময় হাদীসও শুনুন! হযরত সায়্যিদুনা রাবী‘আ ইবনে কা‘আব আসলামী رضى الله تعالى عنه বলেন: “একবার আমি হুযুর صلى الله عليه وسلم কে অযু করালাম। তখন রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর صلى الله عليه وسلم খুশী হয়ে ইরশাদ করলেন: سل ربيعة (তুমি কি চাও, চেয়ে নাও!) হযরত রবীয়া رضى الله تعالى عنه আরয করলেন: 

اسءلك مر افقتك فى الجنة 

অর্থাৎ ইয়া রাসুলাল্লাহ صلى الله عليه وسلم জান্নাতে আপনার সঙ্গে আপনার প্রতিবেশী হয়ে থাকতে চাই।” প্রকৃত পক্ষে তিনি যেন আরয করছিলেন:


তুঝ্ ছে তুঝী কো মাঙ্গ লোঁ তো ছব কুছ মিল জায়ে,

সও সুওয়া-লোঁ ছে ইয়েহী এক সাওয়াল আচ্ছা হে। 


রহমতের সাগরে আরো বেশি পরিমাণে ঢেউ উঠল! হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: ! او غير ذلك ! (অর্থাৎ আরো কিছু চাওয়ার আছে কি?) আমি আরয করলাম: “ব্যস্! শুধু এতটুকুই!” অর্থাৎ: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم জান্নাতুল ফিরদাউসে আপনার প্রতিবেশীত্ব চাওয়ার পর এখন দুনিয়া ও আখিরাতের আর কোন্ নেয়ামতই বাকী রইলো, যা আমি প্রার্থনা করবো?”


তুঝ ছে তুঝি কো মাঙ্গকর মাঙ্গলী ছারি কায়েনাত,

মুঝ ছা কোয়ী গদা নেহী, 

তুম ছা কোয়ী ছখী নেহী। 


যখন হযরত সায়্যিদুনা রবী‘আ ইবনে কা‘আব আসলামী رضى الله تعالى عنه জান্নাতে সঙ্গ প্রতিবেশীত্ব চাইলেন, আর অন্য কিছু চাইতে অস্বীকার করলেন, তখন এর উপর হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: فا عنى على نفسك بكثرة السجود অর্থাৎ- নিজের সত্তার উপর বেশি পরিমাণে নফল নামায দ্বারা আমাকে সাহায্য করো! (মুসলিম, ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৯) 


অর্থাৎ আমি তোমাকে জান্নাত তো দান করেই দিয়েছি এখন তুমিও এর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বেশি পরিমাণে নফল ইবাদত করতে থাকো!


যা চাওয়ার, চেয়ে নাও

سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ!سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ!سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّএ বরকতময় হাদীস তো ঈমানই সতেজ করে দিলো। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীصلى الله عليه وسلم বলেন: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم যেহেতু কোনরূপ শর্তারোপ ও বিশেষীকরণ ব্যতিরেকেই, নিঃশর্তভাবে বলেছেন, চাও কি চাওয়ার আছে? সেহেতু তা একথাই সুস্পষ্ট করে দেয় যে, সমগ্র বিষয়টিই হুযুর  صلى الله عليه وسلمএর নূরানী হাতে রয়েছে। যা চায়, যাকেই চায়, আপন মহামহিম আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশে দান করে দেন। 


আল্লামা বুছীরী رحمة الله عليه কসীদায়ে বোরদা শরীফে বলেন:

فان من جودك الد نيا و ضر تها 

ومن علو مك علم اللوح و القلم

অর্থাৎ- ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم দুনিয়া ও আখিরাত আপনারই দানের অংশ মাত্র। আর লওহ ও কলমের জ্ঞান তো আপনার জ্ঞান মোবারকের একটা অংশ মাত্র। (আশআতুল লুমআত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা৪২৪-৪২৫) 


আগর খাইরিয়্যতে দুনিয়া ও ওকবা আঅযু দারী, 

বদরগাহ্শ্ বইয়াদে হার ছেহ্ ‘মান’ খাহী তামান্নাকুন্।

অর্থ: যদি দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল চাও তবে এ আরশরূপী আস্তানায় এসো! আর যা চাওয়ার আছে চেয়ে নাও!

খালিকে কুলনে আপকো মালিকে কুল বানা দিয়া, 

দোনো জাঁহা দে দিয়ে কবযা ও ইখতিয়ার মে।


 জান্নাতী দরজা

হযরত সায়্যিদুনা সাহল ইবনে আবদুল্লাহ رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় জান্নাতে একটা দরজা আছে, যাকে ‘রাইয়ান” বলা হয়। এটা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোযাদাররাই প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করবে না। বলা হবে: ‘রোযাদারগণ কোথায়?’ অতঃপর এসব লোক দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত অন্য কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। যখন রোযাদাররা প্রবেশ করবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর ওই দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭৯৬)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযাদাররা বড়ই সৌভাগ্যবান। কিয়ামতের দিনে তাদেরকে বিশেষভাবে সম্মান করা হবে। অন্যান্য সৌভাগ্যবানগণও দলে দলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে, কিন্তু রোযাদারগণ বিশেষভাবে ‘বাবুর রাইয়ান’ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। 


একটা রোযার ফযীলত 

হযরত সায়্যিদুনা সালমা ইবনে কায়সার رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একদিনের রোযা পালন করেছে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে এতো দূরে রাখবেন যেমন একটা কাক, যা সেটার শৈশব থেকে উড়তে আরম্ভ করে, শেষ পর্যন্ত বুড়ো হয়ে মরে যায়।” (মুসনাদে আবী ইয়ালা, ১ম খন্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯১৭)


কাকের বয়স 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কাক দীর্ঘায়ুসম্পন্ন পাখী, ‘গুনিয়াতুত তালেবীন’ এর মধ্যে রয়েছে, “কথিত আছে যে, কাকের বয়স পাঁচশ বছর পর্যন্ত হয়।”


লাল পদ্মরাগ মণির প্রাসাদ

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: নবীয়ে করীম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি মাহে রমযানের একটা মাত্র রোযাও নীরবতা এবং শান্তভাবে রেখেছে, তার জন্য জান্নাতে একটা ঘর লাল পদ্মরাগ-মণি কিংবা সবুজ পান্না দিয়ে তৈরী করা হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৭৯২) 


শরীরের যাকাত

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি বস্তুর জন্য যাকাত রয়েছে, শরীরের যাকাত হচ্ছে রোযা। আর রোযা হচ্ছে ধৈর্যের অর্ধেক।” (ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭৪৫)


ঘুমানোও ইবাদত 

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আওফা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “রোযাদারের ঘুমানো ইবাদত, তার নীরবতা হল তাসবীহ পাঠ করা, তার দোয়া কবুল এবং তার আমল মকবুল।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৯৩৮) 


سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযাদার কি পরিমাণ সৌভাগ্যবান! তার ঘুমানো ইবাদত, তার নীরবতা মানে তাসবীহ পাঠ করা, দোয়া ও নেক আমলসমূহ আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মকবুল।

তেরে করম ছে আয় করীম! কোন ছি শাই মিলি নেহী 

ঝুলি হামারি তঙ্গ হ্যায়, তেরে ইহা কমী নেহী।


 অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাসবীহ পড়ে 

উম্মূল মু’মিনীন সায়্যিদাতুনা আয়েশা رضى الله تعالى عنه বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূরصلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে বান্দা রোযা পালনরত অবস্থায় ভোরে জাগ্রত হয়, তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাসবীহ পড়ে এবং প্রথম আসমানের অবস্থানকারী ফেরেশতা তার জন্য সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করে, যদি সে এক অথবা দুই রাকআত নামায পড়ে তবে আসমানে তার জন্য আলো উদ্ভাসিত হয়ে যায়। আর হুরদের মধ্য থেকে তার স্ত্রীরা বলে, “হে আল্লাহ! তাকে আমাদের নিকট পাঠিয়ে দাও! আমরা তার সাক্ষাতের জন্য খুবই আগ্রহী।” আর যদি সে لا اله الا الله কিংবা سُبۡحٰنَ الله অথবা اللهُ اَکۡبَر পড়ে, তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাওয়াব সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত লিখতে থাকে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৫৯১) 


سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ! سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ! سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ রোযাদারের জন্য তো মহা সৌভাগ্যই! তার জন্য আসমানের দরজা খুলে যায়, তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ্ তাআলার তাসবীহ পাঠ করে, প্রথম আসমানের অবস্থানকারী ফেরেশতারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন। নামায পড়লে তার জন্য আসমানে আলো উদ্ভাসিত হয়। হুরেরা, যারা তার জন্য নির্ধারিত হয়েছে, তারা জান্নাতে তার আগমনের অপেক্ষা করে। لا اله الا الله কিংবা سُبۡحٰنَ الله অথবা اللهُ اَکۡبَر বললে সত্তর হাজার ফেরেশতা সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার সাওয়াব লিখতে থাকেন। 


জান্নাতী ফল 

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা رضى الله تعالى عنه হতে বর্ণিত: খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: 

“যাকে রোযা পানাহার থেকে বিরত রেখেছে, যার প্রতি মনের আগ্রহ ছিলো, আল্লাহ্ তাআলা তাকে জান্নাতী ফলমূল আহার করাবেন আর জান্নাতী পানীয় পান করাবেন।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৯১৭) 


স্বর্ণের দস্তরখানা 

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য স্বর্ণের একটা দস্তরখাবার রাখা হবে, অথচ লোকজন (হিসাব নিকাশের জন্য) অপেক্ষমান থাকবে।” (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৬৪) 


সাত প্রকারের আমল

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: নবী করীম, রউফুর রহীম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলার নিকট ‘কাজসমূহ’ সাত প্রকার। দু‘টি ওয়াজিবকারী, দু‘টির প্রতিদান (সেগুলোর) মতোই, একটা আমলের প্রতিদান সেটার দশগুণ বেশি। একটা আমলের প্রতিদান সাতশত গুণ পর্যন্ত, আরেক আমলের প্রতিদান তেমন, যেটার সাওয়াব আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।” যে দু‘টি ‘আমল’ কাজ ওয়াজিবকারী। সে দু‘টি হচ্ছে: (১) ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহ্ তাআলার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করেছে যে, আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত নিষ্ঠার সাথে করেছে এবং কাউকে তাঁর সাথে শরীক করেনি, অতএব তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে। (২) যে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত এমতাবস্থায় করেছে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করেছে। তার জন্য দোযখ ওয়াজিব হয়েছে। (৩) আর যে ব্যক্তি একটা গুনাহ করেছে, সেটার সমসংখ্যক (অর্থাৎ একটি গুনাহের) শাস্তি পাবে। (৪) আর যে ব্যক্তি শুধু সৎকাজের ইচ্ছা করেছে, তাহলে একটা নেকীর সাওয়াব পাবে আর (৫) যে ব্যক্তি নেকীর কাজটি করে নিয়েছে, তাহলে সে দশ (নেকীর সাওয়াব) পাবে।(৬) তাছাড়া, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় আপন সম্পদ ব্যয় করেছে, তখন তার ব্যয়কৃত একটা মাত্র দিরহামকে সাতশ দিরহামে, এক দিনারকে সাতশ’ দিনারে বর্ধিত করা হবে। (৭) রোযা আল্লাহ্ তাআলার জন্য। তা পালনকারীর সাওয়াব আল্লাহ্ তাআলার নিকট। তা পালনকারীর সাওয়াব আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।” (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৬১৬) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যার ইন্তিকাল ঈমানের উপর হবে সে হয়তো আল্লাহ্ তাআলার রহমতে হিসাব ছাড়া, অথবা আল্লাহ্ তাআলারই পানাহ! গুনাহ সমূহের শাস্তি হলেও শেষ পর্যন্ত নিশ্চয় জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ যার মৃত্যু কুফরের উপর হয়, সে সর্বদা দোযখেই থাকবে। যে ব্যক্তি একটা গুনাহ্ করেছে, সে একটা গুনাহরই শাস্তি পাবে। আল্লাহ্ তাআলার রহমতের প্রতি কুরবান হয়ে যাই! শুধু নেকীর নিয়্যত করলেই একটা নেকীর সাওয়াব পাওয়া যায়। আর নেকী সম্পন্ন করে নিলেতো সাওয়াব দশগুণ, আল্লাহ্ তাআলার পথে ব্যয়কারীকে সাতশ’ গুণ এবং রোযাদারের কতো বড়ো মর্যাদা যে, তার সাওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।


অসংখ্য প্রতিদান 

হযরত সায়্যিদুনা কা’আবুল আহবার رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “কিয়ামতের দিন একজন আহ্বানকারী এ বলে আহবান করবে, “প্রতিটি আমলকারী কে তার আমল এর সমান সাওয়াব দেয়া হবে, কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানীগণ ও রোযাদারগণ ব্যতীত। তাদেরকে অফুরন্ত ও হিসাব ছাড়া সাওয়াব দান করা হবে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪১৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৯২৮) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দুনিয়ায় যেমন চাষ করবেন, তেমনি ফসল পাবেন। সম্মানিত আলিমগণ رحمة الله عليه এবং রোযাদারগণ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। কিয়ামতের দিন তাদেরকে অসংখ্য প্রতিদান দান করা হবে।


জন্ডিস ভাল হয়ে গেল

রোযার বরকত পেতে এবং নিজের অভ্যন্তরে ইলমে দ্বীন দ্বারা আলোকিত করার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশকে আপন করে নিন। নিজের সংশোধনের জন্য মাকতাবাতুল মদীনা হতে মাদানী ইনআমাতের রিসালা সংগ্রহ করে তা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আপনার এলাকার দা’ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারের নিকট জমা দিন এবং সুন্নাতের প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করুন। মাদানী কাফেলার কি চমৎকার বাহার রয়েছে! যেমন- হায়দারাবাদ বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশের এক ইসলামী ভাইয়ের কিছু বয়ান এই রকম ছিল যে, সম্ভবতঃ ১৯৯৪ সালের কথা। আমার বাচ্চার মায়ের জন্ডিস খুব বেড়ে গিয়েছিল। সে বাবুল মদীনা করাচীতে নিজের বাপের বাড়ীতে চিকিৎসারত ছিল। আমি ৬৩ দিনের মাদানী কাফেলায় সফরে ছিলাম, আর এরই মধ্যে বাবুল মদীনা করাচীতে উপস্থিত হয়ে ফোনে যোগাযোগ করলাম অবস্থা খুবই দুশ্চিন্তাজনক ছিল। BILROBIN বিপদজনক অবস্থায় পৌঁছল। প্রায় ২৫টি গ্লুকোজের স্যালাইন দেয়া সত্ত্বেও কোন উল্লেখযোগ্য উপকার হয়নি। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি মাদানী কাফেলার একজন মুসাফির। আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শে আছি اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ভাল হয়ে যাবে। এরপর আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখলাম। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দিন দিন রোগ ভাল হতে লাগল। ৫ম দিন বাবুল মদীনা করাচী থেকে দূরে সফর ছিল। আমি যখন ফোন করলাম, তখন আমি এই আনন্দময় সংবাদ শুনতে পেলাম। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ জন্ডিস টেস্টের রিপোর্ট একেবারে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে এবং ডাক্তার স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ্ তাআলার শোকর আদায় করতে করতে আমি খুশিমনে আশিকানে রাসূলদের সাথে মাদানী কাফেলায় রওয়ানা হয়ে গেলাম।


জাওযা বীমার হায় করজ কা বার হ্যায়, 

আ-ও ছব গম মিঠে কাফিলে মে চলো।

কালা ইরকান হ্যায় কিউ পেরিশান,

পায়েগা ছিহ্যাতে কাফিলে মে চলো। 


জাহান্নাম থেকে দূরে

হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার পথে একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ্ তাআলা তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ২য় খন্ড, ২৬৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৮৪০)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যেখানে রোযা রাখার অগণিত ফযীলত রয়েছে, সেখানে কোন বিশুদ্ধ কারণ ছাড়া রমযানুল মোবারকের রোযা না রাখার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির হুমকিও এসেছে। রমযান শরীফের একটা রোযা, যে কোন শরীয়াতসম্মত ওযর ছাড়াই জেনে বুঝে ছেড়ে দেয়, তবে যদি সারা বছরও রোযা রাখে তবুও এ-ই ছেড়ে দেয়া একটা রোযার ফযীলত পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।


একটা রোযা না রাখার ক্ষতি

হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি রমযানের এক দিনের রোযা শরীয়াতের অনুমতি ও রোগাক্রান্ত হওয়া ছাড়া ভেঙ্গেছে (অর্থাৎ রাখেনি) তাহলে, সমগ্র মহাকাল যাবৎ রোযা রাখলেও সেটার ‘কাযা’ আদায় হবে না। যদিও পরবর্তীতে রেখেও নেয়।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৩৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯৩৪) 


(অর্থাৎ ওই ফযীলত, যা রমযানুল মোবারকে রোযা রাখার বিনিময়ে নির্ধারিত ছিলো, এখন সেটা কোন মতেই পেতে পারে না। আমাদের কখনোই অলসতার শিকার হয়ে রমযানের রোযার মতো মহান নেয়ামত ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। যেসব লোক রোযা রেখে কোন বিশুদ্ধ বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ভঙ্গ করে বসে, তারা যেনো আল্লাহ্ তাআলার কহর ও গযবকে ভয় করে। যেমন- 


উপুড় করে লটকানো মানুষ 

হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা বাহেলী رضى الله تعالى عنه বলেন: আমি মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم কে এ কথা ইরশাদ করতে শুনেছি: “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন স্বপ্নে দুজন লোক আমার নিকট আসলো। আর আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ের উপর নিয়ে গেলো। আমি যখন পাহাড়ের মাঝামাঝি পৌঁছলাম, তখন খুব ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম।” আমি বললাম: “এসব কিসের আওয়াজ?” তখন আমাকে বলা হলো, “এটা জাহান্নামীদের আওয়াজ।” তারপর আমাকে আরো সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন আমি এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের রগদ্বারা গোড়ালীতে বেঁধে উপুড় করে লটকানো হয়েছে, আর ওইসব লোকের চিবুকগুলো চিরে ফেলা হয়েছে। ফলে সেগুলো থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিলো। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এরা কারা? তদুত্তরে, আমাকে বলা হলো: “এসব লোক রোযা ভঙ্গ করতো-এরই পূর্বে যখন রোযার ইফতার করা হালাল।” (অর্থাৎ ইফতারের পূর্বে রোযা ভঙ্গ করে ফেলত) 

(সহীহ ইবনে হাব্বান, ৯ম খন্ড, ২৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৪৪৮) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযানের রোযা শরীয়াতসম্মত অনুমতি ছাড়া, না রাখা কবীরা গুনাহ্ (মহাপাপ, যা তাওবা ছাড়া ক্ষমা হয় না)। আর রোযা রেখে শরীয়াত সম্মত অপারগতা ছাড়া ভঙ্গ করাও জঘন্য গুনাহ। সময় হবার পূর্বে ইফতার করার অর্থ হচ্ছে রোযাতো রেখে নিয়েছে, কিন্তু সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে জেনে বুঝে কোন বিশুদ্ধ অপারগতা ছাড়াই ভঙ্গ করে ফেললো।


এ হাদীসে পাকে যে আযাবের কথা বর্ণিত হয়েছে, তা রোযা রেখে ভঙ্গ করে ফেলার ব্যাপারে। আর যে ব্যক্তি কোন শরীয়াত সম্মত ওযর ছাড়া রমযানের রোযা ছেড়ে দেয়, তারও এ শাস্তির হুমকিতে ভীত হওয়া চাই। নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم এর ওসীলায় আমাদেরকে কহর ও গযব (ক্রোধ) থেকে রক্ষা করো!



তিনজন হতভাগা 

হযরত সায়্যিদুনা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি রমযান মাস পেয়েছে আর সেটার রোযা রাখেনি, সেই ব্যক্তি হতভাগা। যে ব্যক্তি আপন মাতাপিতাকে কিংবা উভয়ের একজনকে পেয়েছে কিন্তু তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করেনি, সেও হতভাগা, আর যার নিকট আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেনি, সেও হতভাগা।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খন্ড, ৩৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৭৭৩) 


নাক মাটিতে মিশে যাক 

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বণিত: রাসূলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, যার নিকট আমার নাম নেয়া হয়েছে, কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়েনি এবং ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক, যে রমযানের মাস পেয়েছে, অতঃপর তার মাগফিরাত হওয়ার পূর্বে সেটা অতিবাহিত হয়ে গেছে। আর ওই ব্যক্তির নাক ধুলোয় মলিন হোক, যার নিকট তার পিতামাতা বার্ধক্যে পৌঁছেছে এবং তার পিতামাতা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি। (অর্থাৎ বৃদ্ধ মাতাপিতার খিদমত করে জান্নাত অর্জন করতে পারেনি।) (মুসনাদে আহমদ, ৩য় খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭৪৫৫)



 রোযার তিনটি স্তর

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার জন্য প্রকাশ্য শর্ত যদিও এটাই যে, রোযাদার ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকবে, তবুও রোযার জন্য কিছু অভ্যন্তরীন নিয়মাবলীও রয়েছে। যেগুলো জানা জরুরী, যাতে প্রকৃত অর্থে আমরা রোযার বরকতসমূহ লাভ করতে পারি। যেমন- ১/ সাধারণ লোকদের রোযা, ২/ বিশেষ লোকদের রোযা এবং ৩/ বিশেষতম লোকদের রোযা। 


১. সাধারণ লোকদের রোযা 

‘সওম’ বা রোযার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। সুতরাং শরীয়াতের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলে। এটাই হচ্ছে সাধারণ মানুষের রোযা। 

২. বিশেষ লোকদের রোযা 

পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বিশেষ লোকদের রোযা। 

৩. বিশেষতম লোকদের রোযা 

নিজেদেরকে সমস্ত বিষয় থেকে বিরত রেখে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার দিকে মনোনিবেশ করা। এটাই হচ্ছে বিশেষতম লোকদের রোযা। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রয়োজন হচ্ছে-পানাহার ইত্যাদি থেকে “বিরত থাকার” সাথে সাথে নিজের শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকেও রোযার আওতাভুক্ত রাখা।


হযরত দাতা হুযুর رحمة الله عليه এর বাণী

হযরত সায়্যিদুনা দাতা গঞ্জে বখ্শ আলী হাজবেরী رحمة الله عليه বলেন: রোযার বাস্তবতা হচ্ছে-‘বিরত থাকা’। আর বিরত থাকারও অনেক পূর্বশর্ত রয়েছে। যেমন, পাকস্থলীকে পানাহার থেকে বিরত রাখা, চোখকে কু-প্রবৃত্তির দৃষ্টি থেকে বিরত রাখা, কানকে গীবত শোনা থেকে, জিহ্বাকে অনর্থক কথাবার্তা ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কথাবার্তা বলা থেকে এবং শরীরকে আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশের বিরোধীতা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে রোযা। যখন বান্দা এসব পূর্বশর্তের অনুসরণ করবে, তখনই সে প্রকৃতপক্ষে রোযাদার হবে। (কাশফুল মাহজুব, ৩৫৩-৩৫৪ পৃষ্ঠা)


আফসোস! শত কোটি আফসোস! আমাদের অনেক ইসলামী ভাই রোযার নিয়মাবলীর একেবারে ধার ধারে না। তারা শুধু ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকাকেই বড় বাহাদুরী মনে করে। রোযা রেখে এমন অনেক কাজ করে বসে, যেগুলো শরীয়াত বিরোধী। এভাবে ফিকহ শাস্ত্র অনুসারে রোযাতো হয়ে যাবে, কিন্তু এমন রোযা রাখলে আত্মার অবস্থার পরিবর্তন ও প্রশান্তি অর্জিত হতে পারে না।


রোযা রেখেও গুনাহ! তাওবা!! তাওবা!!!

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে শোচনীয় অবস্থার জন্য ভীত হোন! গভীরভাবে চিন্তা করুন, যে রোযাদার এ মাসে দিনের বেলায় পানাহার ছেড়ে দেয়, অথচ এ পানাহার রমযান শরীফের মাসটির পূর্ববর্তী দিনটিতেও করা একেবারে বৈধ ছিলো; কিন্তু রমযান মাসে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তারপর নিজেই চিন্তা করে নিন যে, যে সব জিনিষ রমযান শরীফের পূর্বে হালাল ছিলো, তা যখন এ বরকতময় মাসের পবিত্র দিন গুলোতে হারাম করা হয়েছে, তখন যেসব বস্তু রমযান মোবারকের পূর্বেও হারাম ছিলো,যেমন- মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ, দঁাড়ি মুন্ডানো, মাতাপিতাকে কষ্ট দেয়া, শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত মানুষের মনে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি এই রমযান মাসে কেন আরো কঠোরভাবে হারাম হবে না? অর্থাৎ রোযাদার যখন রমযান শরীফের মাসে হালাল ও পবিত্র খাদ্য ও পানীয় ছেড়ে দেয়, তখন সে মিথ্যা, চুগলখোরী, গালি-গালাজ, দঁাড়ি মুন্ডানো ইত্যাদি হারাম কাজ কেন ছাড়বে না? এখন বলুন! যে ব্যক্তি পাক ও হালাল খাদ্য-পানীয় ছেড়ে দেয়, কিন্তু হারাম ও নাপাক কথাবার্তা ছাড়ে না, যেমন-মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, ওয়াদাভঙ্গ করা, গান-বাজনা শোনা, কুদৃষ্টি দেয়া, গালি-গালাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, দাঁড়ি মুন্ডানো ইত্যাদি পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রাখে, সে কি ধরণের রোযাদার? 


আল্লাহ্ তাআলার কোন কিছুর প্রয়োজন নেই 

মনে রাখবেন! নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি খারাপ কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ কর্ম পরিহার করবে না, আল্লাহর তাআলার নিকট তার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার কোন প্রয়োজন আল্লাহ্ তাআলার কাছে নেই।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯০৩) 


অন্য এক স্থানে ইরশাদ করেছেন: “শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোযা নয়, বরং রোযা হচ্ছে, অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।” (হাকিম কৃত মুস্তাদরাক, ২য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৬১১) 


আমি রোযাদার

রোযাদারের উচিত হচ্ছে- সে রোযা পালনকালে যেখানে পানাহার ছেড়ে দেয়, সেখানে মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা, ঝগড়া-বিবাদ ও গালি- গালাজ, ইত্যাদির গুনাহও ছেড়ে দিবে। এক জায়গায় নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “তোমাদের সাথে যদি কেউ ঝগড়া করে গালি দেয়, তবে তোমরা তাকে বলে দাও, “আমি রোযাদার।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১ম খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১)


রোযার ইফতার তোকে দিয়েই করবো! 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকাল তো উল্টো ঘটনা নজরে পড়ছে বরং এখনতো বাস্তবিক অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, যখন কেউ কারো সাথে ঝগড়া করে বসে, তখন গর্জে ওঠে এমনি বলে ফেলে, “চুপ হয়ে যা! নতুবা মনে রাখিশ! আমি রোযাদার। আর এ রোযার ইফতার তোকে দিয়েই করবো।” অর্থাৎ তোকে খেয়ে ফেলবো। আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! তাওবা!! তাওবা!!! এ ধরণের কথা কখনো মুখ থেকে বের না হওয়া চাই; বরং বিনয়ই প্রকাশ করা চাই। এসব বিপদ থেকে আমরা শুধু তখনই বাঁচতে পারবো, যখন নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়মিতভাবে রোযা পালনের চেষ্টা করাবো। 


অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযার সংজ্ঞা

সুতরাং এখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোযা অর্থাৎ দেহের সমস্ত অঙ্গকে গুনাহ্ থেকে রক্ষা করা’ এটা শুধু রোযার জন্য নির্দিষ্ট নয়, বরং সারা জীবনই ওইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহ্ থেকে বিরত রাখা জরুরী। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন আমাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ্ তাআলার ভয় পাকাপোক্ত হয়ে যাবে। আহ! কিয়ামতের ওই বেহুঁশকারী দৃশ্য স্মরণ করুন, যখন চতুর্দিকে নফসী নফসী’ এর অবস্থা হবে, সূর্য-আগুন বর্ষণ করবে, জিহ্বাগুলো পিপাসার তীব্রতার কারণে মুখ থেকে বের হয়ে পড়বে, স্ত্রী স্বামী থেকে, মা তার কলিজার টুকরা সন্তান থেকে, পিতা আপন পুত্র, আপন চোখের মণি থেকে পালাবে, অপরাধী-পাপীদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, তাদের মুখের উপর মোহর চেপে দেয়া হবে এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের গুনাহসমুহের তালিকা শুনাতে থাকবে, যা কুরআন পাকের সূরা ‘ইয়াসীন’-এ এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আজ আমি তাদের মুখগুলোর উপর মোহর করে দিবো। আর তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পাগুলো তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে। (পারা-২৩, ইয়াসিন, আয়াত-৬৫) 

হায়! দূর্বল ও অক্ষম মানুষ! কিয়ামতের ওই কঠিন সময় সম্পর্কে নিজের হৃদয়কে সজাগ করুন। সর্বদা নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টায় অব্যাহত রাখুন। এখন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গের রোযার বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করা হচ্ছে- 


চোখের রোযা 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চোখের রোযা এভাবে রাখতে হবে যে, চোখ যখনই দৃষ্টিপাত করবে তখন শুধু বৈধ বিষয়াদির প্রতি করবে। চোখ দ্বারা মসজিদ দেখুন! কুরআন মজীদ দেখুন! আউলিয়া কিরাম رحمة الله عليه এর মাযারগুলোর যিয়ারত করো! সম্মানিত ওলিগণ (আল্লাহ্ তাআলা তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুন) ও নেকবান্দাদের দীদার করো! (আল্লাহ দেখালে) কা’বা-ই- মুআয্যামার زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا আলোকময় মহল দেখুন! মক্কা মুকাররমার زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا সুবাসিত গলিগুলো ও সেখানকার উপত্যকা এবং পাহাড়গুলো দেখুন! সোনালী জালিগুলোর আলোর ছড়াছড়ি দেখুন! জান্নাতের প্রিয় বাগানের বাহার দেখুন! খুশবুদার মদীনার ঘরবাড়ী ও দেয়ালগুলো দেখুন! সবুজ সবুজ গম্বুজ ও মিনারগুলো দেখুন! প্রিয় মদীনার ময়দান ও বাগান দেখুন! হুযুর মুফতীয়ে আযমে হিন্দ সায়্যিদুনা মুস্তফা রযা খান رحمة الله عليه আল্লাহ্ তাআলার মহান দরবারে আরয করেন:


 কুছ এয়সা করদে মেরে কিরদিগার আঁখো মে,

হামীশাহ্ নকশ রহে রুয়ে ইয়ার আঁখো মে।

উনহী না দেখা তো কিছ্ কাম কী হ্যায় ইয়েহ আখেঁ?

কেহ্ দেখ্নে কী হ্যায় সারী বাহার আখোঁ মে।

(ছামানে বখশিশ শরীফ) 


প্রিয় রোযাদাররা! চোখের রোযা রাখুন! অবশ্যই রাখুন! বরং রোযাতো চব্বিশ ঘন্টা, ত্রিশ দিন ও বার মাসই রাখা চাই। আল্লাহ্ তাআলার প্রদত্ত পবিত্র চোখগুলো দিয়ে কখনোই ফিল্ম দেখবেন না, নাটক দেখবেন না, না-মুহরিম নারী (পরনারী)দের দিকে তাকাবেন না। যৌন প্রবৃত্তি সহকারে ‘আমরাদ’ অর্থাৎ দাঁড়ি গজায়নি এমন বালকদের দিকে তাকাবেন না। কারো বিবস্ত্র লজ্জাস্থানের দিকে দেখবেন না। আল্লাহ্ তাআলার স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেয় এমন খেলাধুলা ও তামাশা, যেমন- প্রতিযোগীতা, বানরের নাচ ইত্যাদি দেখবেন না। (সেগুলোকে নাচানো ও নাচ দেখা উভয়ই অবৈধ)। ক্রিকেট , কাবাডী, ফুটবল, হকি, তাস, দাবা, ভিডিও গেমস, টেবিল-টেনিস, ইত্যাদি খেলা দেখবেন না। (যখন দেখারই অনুমতি নেই তখন খেলার কিভাবে অনুমতি থাকবে?) তাছাড়া, ওগুলোর মধ্যে কিছু খেলাতো এমনই রয়েছে, যা যৎসামান্য কাপড় কিংবা হাফ পেন্ট পরে খেলা হয়। যার ফলে হাঁটু, বরং (আল্লাহ্ তাআলার পানাহ্!) রান পর্যন্ত খোলা থাকে। বস্তুত: এভাবে অপরের সামনে রান ও হাঁটু খোলা রাখা গুনাহ্! অন্য কাউকে এমতাবস্থায় দেখাও গুনাহ্! কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে উঁকি মেরে দেখা, কারো চিঠি (উভয় পক্ষের অনুমতি ব্যতীত) দেখবেন না। কারো ডায়েরীর লিখা অনুমতি ছাড়া দেখবেন না। আর মনে রাখবেন! 


হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের চিঠি বিনা অনুমতিতে দেখে, সে যেনো আগুনই দেখে।” (হাকিম কৃত মুস্তাদরাক, ৫ম খন্ড, ৩৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭৭৭৯) 


উঠে না অাঁখ কভী ভী গুনাহ কি জানিব,

আতা করম ছে হো এইছি হামে হায়া ইয়া রব! 

কেছি কি খামিয়া দেখে না মেরি আঁখে আওর,

সুনে না কান ভী আয়বু কা তাযকিরা ইয়া রব! 

দেখাদে এক ঝলক ছবজ ছবজ গুম্বদ কি,

বস্ উনকে জালওয়ো মে আ-যায়ে ফের কাযা ইয়া রব!


কানের রোযা 

কানের রোযা হচ্ছে, শুধু আর শুধু বৈধ কথাবার্তা শুনবেন। যেমন- কান দ্বারা তিলাওয়াত ও না’তগুলো শুনবেন। সুন্নাতে ভরা বয়ান শুনবেন। আযান ও ইকামত শুনবেন ও জবাব দিবেন। কিরাত শুনবেন। ভালো ভালো কথা শুনবেন। গান-বাজনাদি, অনর্থক কিংবা অশ্লীল গল্প শুনবেন না। কারো গীবত (পরনিন্দা) চুগলখোরী শুনবেন না। কারো দোষচর্চা কখনো শুনবেন না। দু‘জন লোক পৃথক হয়ে গোপনে আলাপ করছে, সেগুলো কান লাগিয়ে শুনবেন না। 


তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم এর বাণী হচ্ছে: “যে ব্যক্তি কোন দলের কথা কান লাগিয়ে শুনে এবং ঐ দল তা অপছন্দ করে তবে কিয়ামতের দিনে তার কানে গলিত গরম শিশা ঢেলে দেয়া হবে।” (আল মুজামুল কবীর, ১১তম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা) 


সুনে না ফাহশ কালামী না গীবত ও চুগলী

তেরি পছন্দ কি বা-তে ফকত শুনা ইয়া রব! 

আন্ধিরে কবর কা দিল ছে নেহি নিকালতা ডর 

করোগা কিয়া জো তু নারাজ হো গেয়া ইয়া রব! 

রসুলে পাক আগর মছকুরাতে আ-যায়ে

তো গোরে তীরা মে হোযায়ে চান্দনা ইয়া রব! 


জিহ্বার রোযা 

জিহ্বার রোযা হচ্ছে জিহ্বা শুধু ভালো ও বৈধ কথা বার্তার জন্যই নড়াচড়া করবে। যেমন-জিহ্বা দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত করুন। যিকর ও দরূদ পড়–ন, না’ত শরীফ পড়–ন, দরস দিন, সুন্নাতে ভরা বয়ান করো! নেকীর দা’ওয়াত দিন! ভালো ভালো ও প্রিয় প্রিয় ধর্মীয় কথাবার্তা বলুন! খবরদার! গালি-গালাজ, মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, অনর্থক বক বক ইত্যাদি দ্বারা যেনো মুখ নাপাক না হয়। চামচ যদি আবর্জ্জনায় ফেলে দেয়া হয়, তাহলে দু/এক গ্লাস পানি দ্বারা ধুয়ে নিলে পবিত্র হয়ে যাবে; কিন্তু জিহ্বা অশ্লীলতা দ্বারা নাপাক হয়ে গেলে সাত-সমুদ্রের পানি দ্বারাও পবিত্র করতে পারবে না।


জিহ্বাকে হিফাযত না করার ক্ষতি


হযরত সায়্যিদুনা আনাস صلى الله عليه وسلم থেকে বর্ণিত: নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم সাহাবায়ে কিরাম رضى الله تعالى عنه কে একদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, আর ইরশাদ করলেন: “যতক্ষণ আমি তোমাদেরকে অনুমতি না দেই, ততক্ষণ পর্যন্ত ইফতার করবে না।” সাহাবায়ে কিরাম رضى الله تعالى عنه রোযা রাখলেন যখন সন্ধ্যা হলো, তখন সমস্ত সম্মানিত সাহাবী একেকজন করে মহান বরকতময় দরবারে হাযির হয়ে আরয করতে থাকেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم আমি রোযা রেখেছি। এখন আমাকে ইফতার করার অনুমতি দিন!” হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم তাঁকে অনুমতি দিতেন। একজন সাহাবী رضى الله تعالى عنه হাযির হয়ে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم ! আমার পরিবারে দু‘জন যুবতী কন্যাও রয়েছে, যারা রোযা রেখেছে এবং আপনার صلى الله عليه وسلم মহান দরবারে আসতে লজ্জাবোধ করছে। তাদেরকে ইফতার করার অনুমতি দিন, যাতে তারাও ইফতার করতে পারে। খাতামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর صلى الله عليه وسلم তাঁর দিক থেকে নূরানী চেহারা ফিরিয়ে নিলেন। সাহাবী দ্বিতীয়বার আরয করলেন। হুযুর পুনরায় চেহারায়ে আনওয়ার ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর সাহাবী তৃতীয়বার যখন কথাটার পুনরাবৃত্তি করলেন, তখন অদৃশ্যের সংবাদদাতা রাসূল তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “ওই কন্যাদ্বয় রোযা রাখেনি। তারা কেমন রোযাদার? তারা সারা দিন মানুষের মাংস খেয়েছে। যাও! তাদের দুজনকে নির্দেশ দাও, তারা যদি রোযা রাখে তবে যেনো বমি করে দেয়।” ওই সাহাবী رضى الله تعالى عنه তাদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صلى الله عليه وسلم এর বাণী শুনালেন। তারা উভয়ে বমি করলো। বমি থেকে রক্ত ও মাংসের টুকরা বের হলো। ওই সাহাবী رضى الله تعالى عنه হুযুর  صلى الله عليه وسلم এর বরকতময় দরবারে ফিরে আসলেন এবং সে অবস্থা আরয করলেন।ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “ওই সত্তার শপথ! যাঁর কুদরতের হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ, যদি এতটুকু এদের পেটের মধ্যে থেকে যেতো, তাহলে তারা উভয়কে আগুন গ্রাস করতো।” (কেননা তারা গীবত করেছিলো।) (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ৩য় খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৫)


অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে: যখন তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ওই সাহাবী رضى الله تعالى عنه থেকে চেহারা মোবারক ফিরিয়ে দিলেন, তখন তিনি সামনে আসলেন এবং আরয করলেন, “হে রাসূলাল্লাহ صلى الله عليه وسلم তারা উভয়ে মারা গেছে।” কিংবা বললেন, “তারা উভয়ে মুমূর্ষ অবস্থায়।” তখন রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “তাঁদের দুজনকে আমার নিকট নিয়ে আস! তারা উভয়ে হাযির হলো। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم একটা পাত্র আনালেন। আর তাদের একজনকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করলেন: “এর মধ্যে বমি করো!” সে রক্ত ও পুঁজ বমি করলো, শেষ পর্যন্ত পাত্রটি ভরে গেলো। তারপর হুযুর صلى الله عليه وسلم  অপর জনকে নির্দেশ দিলেন। তুমিও এর মধ্যে বমি করো।” সেও এভাবে বমি করলো। মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “এরা উভয়ে আল্লাহ্ তাআলার হালাল কৃত বস্তুগুলো (অর্থাৎ খাদ্য ও পানীয় ইত্যাদি) থেকে রোযা (বিরত) ছিল, কিন্তু যেসব কাজকে আল্লাহ্ তাআলা রোযা ছাড়া অন্য সময়েও হারাম করেছেন ওইসব হারাম বস্তু দ্বারা রোযা ভঙ্গ করে ফেলেছে। ফলে এমনি হয়েছে যে, এক জন অপর জনের সাথে বসে, উভয়ে মিলে মানুষের মাংস খেতে আরম্ভ করেছে।” (অর্থাৎ লোকজনের গীবতে লিপ্ত হয়েছে।) (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠ, হাদীস নং- ৮)


হুযুর মুস্তফা জানে রহমতএর ইলমে গায়েব (অদৃশ্য জ্ঞান)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট হলো, আল্লাহ্ তাআলার দানক্রমে আমাদের প্রিয় আক্বা নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم  আপন গোলামদের (উম্মত) সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে জানেন। এ কারণেই তো ওই কন্যা দুটি সম্পর্কে মসজিদ শরীফে বসে বসে অদৃশ্যের সংবাদগুলো বলে দিলেন। এ ঘটনা থেকে একথাও জানা গেলো যে, গীবত ও অন্যান্য গুনাহ্ সম্পন্ন করলে সরাসরি সেটার প্রভাব রোযার উপরও পড়তে পারে। যার কারণে রোযার কষ্ট বৃথা যেতে পারে। যে কোন অবস্থায়, রোযা হোক কিংবা না-ই হোক উভয় অবস্থায় জিহ্বাকে আয়ত্বে রাখতে হবে। যদি এই তিন মূলনীতিকে সামনে রাখা হয়, তবে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বড় উপকার হবে। (১) মন্দ কথা বলা সর্বাবস্থায়ই মন্দ, (২) অনর্থক কথার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম এবং (৩) ভাল কথা নিশ্চুপ থাকা অপেক্ষা উত্তম। এক পাঞ্জাবী কবি অতি প্রিয় কথাই বলেছেন।

মেরি যবান পে কুফ্লে মদীনা লাগ যায়ে,

ফুযুলে গুয়ি ছে বাঁচতা রহো ছাদা ইয়া রব! 

করে না তঙ্গ খিয়ালাতে বদ কভী করদে,

শুউর ও ফিকির কো পাকিজগী আতা ইয়া রব!

বাওয়াক্তে নাযা সালামত রহে মেরা ঈমান মুঝে নসীব হো কালিমা হায় ইলতিজা ইয়া রব!


দু’হাতের রোযা

হাতের রোযা হচ্ছে- যখনই হাত ওঠবে, তখন যেন সৎকার্যাদির জন্য ওঠে। যেমন হাতে কুরআন মজীদ স্পর্শ করবেন। সৎ লোকদের সাথে করমর্দন (মুসাফাহ) করবেন। 


রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম على نبينا وعليه الصلوة والسلام ইরশাদ করেছেন:“আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালবাসা পোষণকারী যখন একত্রিত হয়, মুসাফাহা করে এবং নবী صلى الله عليه وسلم এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করে, তবে তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৯৫১) 


সম্ভব হলে কোন এতিমের মাথায় স্নেহভরে হাত বুলিয়ে দিবেন। ফলে, হাতের নিচে যতো চুল আছে প্রত্যেক চুলের পরিবর্তে একেকটা নেকী পাওয়া যাবে। (ছেলে কিংবা মেয়ে) তখন পর্যন্ত এতিম থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না-বালেগ থাকে, যখনই বালেগ হয়ে যায়, তখন থেকে এতিম থাকবে না। ছেলে ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বালেগ আর মেয়ে নয় বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বালেগা হয়।) খবরদার! কারো উপর যেনো জুলুমবশত: হাত না ওঠে। ঘুষ লেনদেন করার জন্য হাত উঠাবেন না। কারো মাল চুরি করবেন না, তাস খেলবেন না, কোন পর নারীর সাথে করমর্দন করবেন না। (বরং কামভাবের আশংকা থাকলে ‘আমরাদ’ (দাঁড়ি গজায়নি এমন বালক) এর সাথে হাত মিলাবেন না। তারা যাতে মনে কষ্ট না পায়, সেভাবে সুকৌশলে তাদের থেকে পাশ কাটিয়ে চলবেন।) 

হামীশা হাত ভালায়ি কে ওয়াসেতে উঠে,

বাঁচানা যুলমো ছিতমছে মুঝে সদা ইয়া রব! 

কহি কা মুঝকো গুনাহো নে আব নেহি ছোড়া

আযাবে নার ছে বাহরে নবী বাঁচা ইয়া রব!

ইলাহী একভী নেকী নেহি হ্যায় নামে মে

ফকত হ্যায় তেরিহি রহমত কা আছেরা ইয়া রব!


পায়ের রোযা 

পায়ের রোযা হচ্ছে-পা ওঠালে শুধু নেক কাজের জন্যই ওঠাবেন। যেমন পা চালালে মসজিদের দিকে চালাবেন। আউলিয়া কিরামের رحمة الله عليه মাযারগুলোর দিকে চালাবেন। সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দিকে চালাবেন।নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য মাদানী কাফেলাগুলোতে সফর করার জন্য চালাবেন। নেক লোকদের সঙ্গের দিকে চলবেন। কারো সাহায্যের জন্য যাবেন। আহ! সম্ভব হলে মক্কায়ে মুকার্রামা زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا ও মদীনা মুনাওয়ারার زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا দিকে যাবেন। মিনা, আরাফাত ও মুযদালিফার দিকে যাবেন। তাওয়াফ ও সাঈতে চলবেন। কখনো সিনেমা হলের দিকে যাবেন না। দাবা, লুডু, তাস, ক্রিকেট, ফুটবল, ভিডিও গেমস ও টেবিল- টেনিস ইত্যাদি খেলাধুলার দিকে যাবেন না। আহ! পা যদি কখনো এমনিভাবেও চলতো যে, ব্যস, মুখে মদীনা-ই-মদীনা হবে, আর সফরও হবে মদীনা শরীফের দিকে।


রহে ভালায়ি কি রাহো মে গামজন হারদম,

করে না রুখ মেরে পা-ও গুনাহ কা ইয়া রব!

মদীনে যায়ে ফের আ-য়ে দো-বারা ফের যায়ে,

ইছি মে উমর গুজার যায়ে ইয়া খোদা ইয়া রব! 

বাক্বীয়ে পাক মে মাদফন নসীব হো যায়ে,

বরায়ে গাউছো রযা মুর্শিদি যিয়া ইয়া রব।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তবিকই রোযার বরকত সেই সময়ই পাওযা যাবে যখন আমরা শরীরের সমস্ত অঙ্গের রোযা পালন করবো। অন্যথায় ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কিছু অর্জন হবে না। যেমন- 


হযরত আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত যে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “অনেক রোযাদার এমন আছে যে, তাদেরকে তাদের রোযা ক্ষুধা তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কিছুই দেয়না এবং অনেক দাঁড়ানো (তাহাজ্জুদ গুজার) ব্যক্তি এমন যে, তাকে তার এই জাগরণ দাঁড়ানো ছাড়া অন্যকিছুই দেয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৬৯০) 

অর্থাৎ কিছু কিছু লোক আছে যারা রোযা রাখে কিন্তু নিজ অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে যেহেতু মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাই তারা রোযার নূরানিয়্যাত ও তার মূল স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকে। সাথে সাথে যে সমস্ত লোক শুধু শুধু গল্প গুজব করে রাত অতিবাহিত করে, তাদের সময় নষ্ট ও আখিরাতের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হয় না।


K.E.S.C তে চাকুরী হয়ে গেল

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার জ্যোতি ও রূহানী শক্তি পাওয়া ও মাদানী যেহেন বানানোর জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হোন এবং সুন্নাতের প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলাতে আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরের সৌভাগ্য অর্জন করুন। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহ এবং মাদানী কাফেলা সমূহের অসংখ্য মাদানী বাহার ও বরকত রয়েছে তা শুনুন! যেমন আউরঙ্গী টাউন (বাবুল মদীনা করাচীর) এক যিম্মাদার ইসলামী ভাই মাদানী পরিবেশে আসার ও রুজীর সন্ধানের ধারা ঠিক করতে পারার ঘটনা এভাবে বয়ান করেছে। ১৯/৬/০৩ তারিখে এক ভাই দাওয়াত দেওয়াতে তিনি দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার প্রতি আগ্রহী হলেও তা স্থায়ী হয়নি। বেকারত্বের কারণে পেরেশান ছিল। “এক ইসলামী ভাই এর “ইনফিরাদী কৌশিশ” এর ফলে মাদানী কাফেলা কোর্সের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মারকায ফয়যানে মদীনায় অংশগ্রহণ করলাম। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শের বরকতে আমি গুনাহগারের উপর মাদানী রং ধরে গেল এবং বাঁচার পথ শিখিয়ে দিল। মাদানী কাফেলা কোর্স সম্পূর্ণ করার ২য় বা ৩য় দিন কোন এক ইসলামী ভাই বললেন যে K.E.S.C এর কাজের লোকের প্রয়োজন। আমি দরখাস্ত জমা দিয়েছি আপনিও দরখাস্ত জমা দিন। আমি বললাম আজকাল দরখাস্তে চাকুরী কোথায় হচ্ছে? সুপারিশ বরং আত্মীয়তার কারণেই চাকুরী পাওয়া যায়। আমার কাছে তো এর কিছুই নেই। অবশেষে তার জোরাজুরিতে আমি দরখাস্ত জমা দিলাম। প্রথমে লিখিত পরীক্ষা হল। এরপর মৌখিক পরীক্ষা এরপর মেডিকেল টেষ্ট হল। অসংখ্য প্রভাববিস্তারকারীর দরখাস্ত থাকা সত্ত্বেও আমি সব জায়গায় উত্তীর্ণ হলাম। ফাইনাল ইন্টারভিউর দিন আমার স্ত্রী জোর দিয়ে বলল যে প্যান্টশার্ট পরে যান। কিন্তু اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি আশিকানে রাসূলদের সংস্পর্শের বরকতে ইংরেজী পোশাক বাদ দিয়েছিলাম।এজন্য সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে (ইন্টারভিউর জন্য) পৌঁছে গেলাম। অফিসার আমার মাদানী লেবাশ দেখে আমাকে কিছু ইসলাম সম্পর্কীত প্রশ্ন করলেন। যেগুলোর উত্তর আমি খুব সহজভাবেই দিয়ে দিলাম। কেননা اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি এগুলো সব মাদানী কাফেলা কোর্সেই শিখেছিলাম। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কোন সুপারিশ ও ঘুষ ছাড়া আমার চাকুরী হয়ে গেল। আমার স্ত্রী মাদানী কাফেলা কোর্স ও মাদানী পরিবেশের বরকত দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল এবং اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রেমিক হয়ে গেল। এই বর্ণনা দেয়া অবস্থায় اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর এলাকায়ী মুশাওওয়ারাত এর খাদিম নিগরান হিসেবে নিজের এলাকায় সুন্নাতের ঢংকা বাজাচ্ছি এবং মাদানী ইন্আমাত ও মাদানী কাফেলার সাড়া জাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।


নওকরি চাহিয়ে, আয়ে আয়ে কাফেলে মে চলে, কাফেলে মে চলো। 

তঙ্গদস্তি মিঠে, দাওরে আফত হঠে লেনে কো বরকতে কাফেলে মে চলো। 


রোযার নিয়্যত

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার জন্যও এমনিভাবে নিয়্যত করা পূর্বশর্ত যেভাবে নামায ও যাকাত ইত্যাদির জন্য পূর্বশর্ত। সুতরাং যদি কোন ইসলামী ভাই কিংবা বোন রোযার নিয়্যত ছাড়া সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একেবারে পানাহার বর্জন করে থাকে, তবে তাদের রোযা হবে না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩১ পৃষ্ঠা) 


রমযান শরীফের রোযা হোক কিংবা নফল অথবা নির্দিষ্ট কোন মান্নতের রোযা অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনের রোযার মান্নত করে, যেমন- 


নিজের কানে শুনতে পায় এমন আওয়াজে বলে, “আমার উপর এ বছর আল্লাহ্ তাআলার জন্য রবিউন নূর (রবিউল আউয়াল) শরীফের প্রত্যেক সোমবারের রোযা ওয়াজিব।” তখন এটা ‘নির্ধারিত মান্নত’ হলো। আর এ মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে গেলো। এ তিন ধরণের রোযার জন্য সূর্যাস্ত থেকে পরদিন ‘শরীয়াতসম্মত অর্ধ দিবস’ (যাকে দ্বাহওয়ায়ে কুবরা বলা হয়) এর পূর্ব পর্যন্ত সময়-সীমার মধ্যে নিয়ত করে নিলে রোযা হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা)


শরীয়াতসম্মত অর্ধ দিবস সম্পর্কে জানার পদ্ধতি

হয়তো আপনার মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ‘শরীয়াত সম্মত অর্ধ দিবস’ এই সময় কোনটি? এর জবাব হচ্ছে, যদি ‘শরীয়াত সম্মত অর্ধ দিবস’ সম্পর্কে জানতে চান, তবে ওই দিন সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকুর পরিমাণ ঠিক করে নিন। আর ওই পূর্ণ সময়-সীমাকে সমান দু’ভাগ করে নিন। প্রথমার্ধ শেষ হতেই ‘শরীয়াত সম্মত অর্ধ দিবস’ এর সময় শুরু হলো। যেমন-আজ সুবহে সাদিক হয়েছে ঠিক পাঁচটার সময়। আর সূর্যাস্ত হলো ঠিক ছয়টার সময়। সুতরাং উভয়ের মধ্যকার সময় হলো সর্বমোট ১৩ ঘন্টা। এটাকে দু’ভাগ করুন। তাহলে উভয় অংশে হয় সাড়ে ছয় ঘন্টা। এখন সুবহে সাদিকের ৫ টার পরবর্তী প্রাথমিক সাড়ে ছয় ঘন্টা যোগ করুন। তখন এভাবে ওই দিনের সাড়ে এগারটার সময় ‘শরীয়াত সম্মত অর্ধ দিবস’ শুরু হয়ে গেলো। সুতরাং এখন ওই তিন ধরনের রোযার নিয়্যত বিশুদ্ধ হতে পারে না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৪১ পৃষ্ঠা) 


উপরোল্লেখিত তিন ধরণের রোযা ব্যতীত ওই অন্যান্য যত ধরণের রোযা হবে ওই সবের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে- অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়-সীমায় নিয়্যত করে নিবেন। যদি সুবহে সাদিক হয়ে যায়, তখন তার নিয়্যত হবে না। যেমন রমযানের কাযা রোযা, কাফ্ফারার রোযা, নফল রোযার কাযা, (নফল রোযা আরম্ভ করলে ওয়াজিব হয়ে যায়।) এমনকি শরীয়াত সম্মত কোন ওযর ছাড়া ভঙ্গ করা গুনাহ্। যদি যে কোন ভাবে তা ভেঙ্গে যায় চাই ওযরের কারণে ভঙ্গ হোক, চাই বিনা ওযরে হোক, যে কোন অবস্থায়ই সেটার কাযা করে দেয়া ওয়াজিব। ‘অনির্ধারিত মান্নতের রোযা’ (অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার জন্য রোযার মান্নত করলো, কিন্তু দিন নির্ধারণ করেনি।) তবে তা পূরণ করাও ওয়াজিব। আর আল্লাহ্ তাআলার জন্য কৃত প্রতিটি বৈধ মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব। যখন এ কথা মুখ থেকে এতটুকু আওয়াজে বলে থাকে, যা নিজে শুনতে পায়। যেমন এভাবে বললো: “আল্লাহ্ তাআলার জন্য আমি একটি রোযা রাখব।”এখন যেহেতু এতে দিন নির্ধারণ করেন নি, কোন দিন রাখবেন, সেহেতু জীবনে যখনই মান্নতের নিয়্যত দ্বারা রোযা রেখে নিবেন, মান্নত পূরণ হয়ে যাবে। মান্নতের জন্য মুখে বলা পূর্বশর্ত। এটাও পূর্বশর্ত যে, কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজে বলবেন যেন নিজে শুনতে পান। মান্নতের শব্দাবলী এতটুকু আওয়াজেতো বলেছেন যে, নিজে শুনতে পান, কিন্তু বধিরতা কিংবা কোন ধরনের শোরগোল ইত্যাদির কারণে শুনতে পাননি, তবুও মান্নত বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। তা পূরণ করাও ওয়াজিব। এসব রোযার নিয়্যত রাতেই করে নেয়া জরুরী। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা)


রোযার নিয়্যতের বিশটি মাদানী ফুল 

(১) রমযানের রোযা ও ‘নির্ধারিত মান্নত ও নফল রোযার জন্য নিয়্যতের সময়সীমা হচ্ছে-সূর্যাস্তের পর থেকে পরদিন ‘দ্বাহওয়ায়ে কুবরা’ অর্থাৎ ‘শরীয়াত সম্মত অর্ধ দিবস’ এর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত। এ পূর্ণ- সময়ের মধ্যে আপনি যখনই নিয়্যত করে নিবেন, এ রোযাগুলো বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা)

(২) ‘নিয়্যত’ মনের ইচ্ছার নাম। মুখে বলা পূর্বশর্ত নয়। কিন্তু মুখে বলা মুস্তাহাব। যদি রাতে রমযানের রোযার নিয়্যত করেন, তাহলে এভাবে বলবেন: ﻧﻮﻳﺖ ﺍﻥ ﺍﺻﻮﻡ ﻏﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎ ﻟﻰ ﻣﻦ ﻓﺮﺽ ﺭ مضاﻥ অর্থাৎ- আমি নিয়্যত করলাম, আল্লাহ্ তাআলার জন্য কাল এ রমযানের ফরয রোযা রাখবো।

(৩) যদি দিনের বেলায় নিয়্যত করেন তাহলে এভাবে বলবেন: نويت ان اصوم هذ االيم الله تعا لى من فرض رمضان অর্থাৎ- আমি আল্লাহ্ তাআলার জন্য আজ রমযানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা)

(৪) আরবীতে নিয়্যতের বাক্যগুলো দ্বারা নিয়্যত করলে তা নিয়্যত বলে তখনই গণ্য হবে, যখন সেগুলোর অর্থও জানা থাকে। আর একথাও স্মরণ রাখবেন যে, মুখে নিয়্যত করা চাই, যে কোন ভাষায় হোক, এটা তখনই কাজে আসবে, যখন অন্তরেও নিয়্যত উপস্থিত থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা)

(৫) নিয়্যত নিজের মাতৃভাষায়ও করা যেতে পারে। আরবী কিংবা অন্য কোন ভাষায় নিয়্যত করার সময় অন্তরে ইচ্ছা থাকতে হবে। অন্যথায় খামখেয়ালীবশত: শুধু মুখে বাক্যগুলো বললে নিয়্যত বিশুদ্ধ হবে না। হ্যাঁ মনে করো! যদি মুখে নিয়্যতের বাক্যগুলো বললেন কিন্তু পরবর্তীতে নিয়্যতের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অন্তরেও নিয়্যত করে নিয়েছেন, তাহলে এখন নিয়্যত শুদ্ধ হলো। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা)

(৬) যদি দিনের বেলায় নিয়্যত করলেন, তবে জরুরী হচ্ছে এ নিয়্যত করবে যে, ‘আমি ভোর থেকে রোযাদার’। যদি এভাবে নিয়্যত করেন, ‘আমি এখন থেকে রোযাদার, ভোর থেকে নয় তাহলে রোযা হবে না।” (আল জাওহারাতুন্নাইয়েরাহ, ১ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা) 

(৭) দিনের বেলায় কৃত ওই নিয়্যতই বিশুদ্ধ যে, “সুবহে সাদিক থেকে নিয়্যত করার সময় পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করে এমন কোন কাজ পাওয়া না যায়।” অবশ্যই যদি সুবহে সাদিকের পর ভুলবশত: পানাহার করে বসেছে কিংবা স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছে, তবুও নিয়্যত বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ, ভুলবশত: যদি কেউ তৃপ্তি সহকারে পানাহারও করে, তবুও রোযা ভঙ্গ হয় না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা)

(৮) আপনি যদি এভাবে নিয়্যত করে নেন, “আগামীকাল কোথাও দাওয়াত থাকলে রোযা রাখবো না। অন্যথায় রোযা রাখবো।” এ নিয়্যতও বিশুদ্ধ নয়। মোটকথা এমতাবস্থায় আপনি রোযাদার হলেন না। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা) 

(৯) মাহে রমযানের দিনে রোযার নিয়্যত করলেন না, এমনও না যে, আপনি রোযাদার না, যদিও জানা আছে যে, এটা বরকতময় রমযানের মাস। তাহলে রোযা হবে না। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা)

(১০) সূর্যাস্তের পর থেকে আরম্ভ করে রাতের কোন এক সময়ে নিয়্যত করলেন। এরপর আবার রাতের বেলায় পানাহার করলেন, তাহলে নিয়্যত ভঙ্গ হয়নি। ওই প্রথম নিয়্যতই যথেষ্ট, নতুনভাবে নিয়্যত করা জরুরী না। (আল জাওহারাতুল নাইয়েরাহ, ১ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা) 

(১১) আপনি রাতে রোযার নিয়্যত তো করে নিলেন, অতঃপর রাতেই পাক্কা ইচ্ছা করে নিলেন যে, রোযা রাখবেন না, তাহলে আপনার পূর্ববর্তীতে নিয়্যত ভঙ্গ হয়ে গেছে। যদি নতুনভাবে নিয়্যত না করেন, আর দিনভর রোযাদারদের মতো ক্ষুধার্ত পিপাসার্ত রয়ে গেলেন, তবুও রোযা হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)

(১২) নামাযের মধ্যভাগে কথা বলার নিয়্যত (বা ইচ্ছা) করলেন, কিন্তু কথাবার্তা বলেন নি, তাহলে নামায ভঙ্গ হয়নি। এভাবে রোযা পালনকালে রোযা ভঙ্গ করার শুধু নিয়্যত করে নিলে রোযা ভঙ্গ হয়না, যতক্ষণ না রোযা ভঙ্গকারী কোন কাজ করে নিবেন। (আল জাওহারাতুন্নাইয়েরা, ১ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা) অর্থাৎ শুধু এ নিয়্যত করে নিয়েছেন, ‘ব্যাস! এক্ষুনি আমি রোযা ভঙ্গ করে নিচ্ছি। তাহলে এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ হবে না, যতক্ষণ না কণ্ঠনালী ভেদ করে কোন জিনিস নিচের দিকে নামানো হয়, কিংবা না এমন কোন কাজ করবে, যার কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়।

(১৩) সেহেরী খাওয়াও নিয়্যতের শামিল, চাই রমযানের রোযার জন্য হোক, চাই অন্য কোন রোযার জন্য হোক। অবশ্য, সেহেরী খাওয়ার সময় যদি এ ইচ্ছা থাকে যে, ভোরে রোযা রাখবে না, তবে এ সেহেরী খাওয়া নিয়্যত নয়। (আল জাওহারাতুন নাইয়েরাহ, ১ম খন্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা) 

(১৪) রমযানুল মোবারকের প্রতিটি রোযার জন্য নতুন করে নিয়্যত করা জরুরী। প্রথম তারিখে কিংবা অন্য কোন তারিখে যদি পূর্ণ রমযান মাসের রোযার নিয়্যতও করে নেয়া হয়, তবুও এ নিয়্যত শুধু ওই এক দিনের জন্য নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে; অবশিষ্ট দিন গুলোর জন্য হবে না। (আল-জাওয়াহারাতুন নাইয়েরাহ, ১ম খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা)

(১৫) রমযান, ‘নির্ধারিত মান্নত’ এবং নফল রোযা পালন ব্যতীত অবশিষ্ট রোযাগুলো, যেমন, রমযানের রোযার কাযা, অনির্ধারিত মান্নত ও নফল রোযার কাযা (অর্থাৎ নফলী রোযা রেখে ভঙ্গ করে ফেললে সেটার কাযা) আর নির্ধারিত মান্নতের রোযার কাযা ও কাফ্ফারার রোযা এবং হজ্জে ‘তামাত্তু’১ এর রোযা-এ সব ক্ষেত্রে সুবহে সাদিকের আলো চমকিত হবার সময় কিংবা রাতে নিয়্যত করা জরুরী। আর এটাও জরুরী যে, যেই রোযা রাখবে বিশেষ করে ওই রোযারই নিয়্যত করবে। যদি ওই রোযাগুলোর নিয়্যত দিনের বেলায় (অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে আরম্ভ করে ‘দ্বাহওয়া-ই- কুবরার’ পূর্বক্ষণ পর্যন্ত) করে নেয়, তবে নফল হলো। তবুও সেগুলো পূরণ করা জরুরী। ভঙ্গ করলে কাযা ওয়াজিব হবে। যদিও একথা আপনার জানা থাকে যে, আপনার যেই রোযা রাখার ইচ্ছা ছিলো এটা ওই রোযা নয়, বরং নফলই। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা) 

(১৬) আপনি এটা মনে করে রোযা রাখলেন যে, আপনার দায়িত্বে রোযার কাযা রয়েছে, এখন রেখে দেয়ার পর জানতে পারলেন যে, ধারণা ভুল ছিলো। যদি তাৎক্ষণিকভাবে ভঙ্গ করে নেন, তবে কোন ক্ষতি নেই। 

১) হজ্জ তিন প্রকার: (১) ক্বিরান, (২) তামাত্তু, (৩) ইফরাদ। হজ্জে কিরান ও তামাত্তু করার পর শোকরিয়া স্বরূপ হজ্জের কোরবানী করা ওয়াজিব; কিন্তু ইফরাদকারীর জন্য মুস্তাহাব। যদি ক্বিরান ও তামাত্তুকারী খুব বেশী মিসকীন ও অভাবী হয়, কিন্তু কিরান বা তামাত্তুর নিয়্যত করে নিয়েছে, এখন তার নিকট কোরবানীর উপযোগী পশুও নেই, টাকাও নেই এবং এমন কোন সামগ্রীও নেই, যা বিক্রি করে কোরবানীর ব্যবস্থা করতে পারে, এমতাবস্থায় কোরবানীর পরিবর্তে দশটা রোযা রাখা ওয়াজিব হবে, তিনটা রোযা হজ্জের মাসগুলোতে, অর্থাৎ ১ম শাওয়াল-ই-মুকাররাম থেকে ৯ই যিলহজ্জ পর্যন্ত ইহরাম বাঁধার পর ওই হজ্জে যখনই চায়, রেখে দিবে। ধারাবাহিকভাবে রাখা জরুরী নয়। মাঝখানে বাদ দিয়েও রাখতে পারে। এতে ৭, ৮, ও ৯ ই যিলহজ্জ রাখা ভালো। তারপর ১৩ই যিলহজ্জের পর অবশিষ্ট ৭টা রোযা যখনই চায় রাখতে পারে। ঘরে ফিরে গিয়ে রাখাই উত্তম।

অবশ্য উত্তম হচ্ছে পূর্ণ করে নেয়া, যদি জানতে পারার পর তাৎক্ষণিকভাবে ভঙ্গ না করেন, তবে এখন রোযা অপরিহার্য হয়ে গেলো। সেটা ভঙ্গ করতে পারবেন না। যদি ভঙ্গ করেন তবে কাযা ওয়াজিব হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা)

(১৭) রাতে আপনি কাযা রোযার নিয়্যত করলেন। এখন ভোর আরম্ভ হয়ে যাবার পর সেটাকে নফল রোযা হিসেবে রাখতে চাইলে রাখতে পারবেন না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)

(১৮) নামাযের মধ্যভাগেও যদি রোযার নিয়্যত করেন; তবে এ নিয়্যত বিশুদ্ধ। (দুররে মুখতার , রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)

(১৯) কয়েকটা রোযা কাযা হয়ে গেলে নিয়্যতের মধ্যে এটা থাকা চাই’ এ রমযানের প্রথম রোযার কাযা, দ্বিতীয় রোযার কাযা।’ আর যদি কিছু এ বছরের কাযা হয়ে যায়, কিছু পূ্র্ববর্তী বছরের বাকী থাকে, তবে এ নিয়্যত এভাবে হওয়া চাই’ এ রমযানের কাযা, ওই রমযানের কাযা।’ আর যদি দিন নির্ধারণ না করেন, তবুও বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা) 

(২০) আল্লাহর পানাহ! আপনি রমযানের রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে (অর্থাৎ জেনে বুঝে) ভেঙ্গে ফেলেছেন। এমতাবস্থায় আপনার উপর ওই রোযার কাযা এবং (যদি কাফ্ফারার শর্তাবলী পাওয়া যায়) কাফ্ফারার ষাটটা (৬০) রোযাও। এখন আপনি একষট্টিটা (৬১) রোযা রেখে দিলেন। কাযার দিন নির্দিষ্ট করলেন না। এমতাবস্থায় কাযা ও কাফ্ফারার উভয়টি সম্পন্ন হয়ে যাবে। ( আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা) 


দাঁড়িওয়ালী কন্যা! 

রোযা ও অন্যান্য আমলের নিয়্যত শিখার উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতের প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলগণের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করুন এবং উভয় জগতের বরকত লাভ করুন।আপনাদের উৎসাহের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ও সুগন্ধময় মাদানী বাহার পেশ করছি। যেমন- নিচুড়লাইন বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাই এর বয়ানের সারমর্ম এই যে, একবার আশিকানে রাসূলদের তিন দিনের মাদানী কাফেলায় প্রায় ২৬ বছরের এক ইসলামী ভাইও সফরে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দোয়াতে অত্যন্ত অস্থির হয়ে কান্নাকাটি করছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে বলেন: আমার একটি মাত্র মাদানী মুন্নী (মেয়ে) আছে যার মুখমন্ডলে দাঁড়ি গজাতে শুরু করেছে, এজন্য আমি অত্যন্ত চিন্তিত। এক্সরে বা টেষ্টের মাধ্যমে এর কারণ ধরা পড়ছেনা এবং কোন চিকিৎসা কাজে আসছেনা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাদানী কাফেলার অংশগ্রহণকারীরা তার মাদানী মুন্নীর (মেয়ের) জন্য দোয়া করেন। সফর সম্পূর্ণ হওয়ার পর যখন দ্বিতীয় দিন সেই দুঃখী ইসলামী ভাই এর সাক্ষাত হল তখন তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে এই সুসংবাদ শুনালেন যে, বাচ্চার মা বলল যে, আপনি মাদানী কাফেলায় সফর করার ২য় দিনই  اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَل আশ্চর্যজনকভাবে মেয়ের দাঁড়ি এমনভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল যে যেন আগে কখনো ছিলই না। 


হোগা লুতফে খোদা, আ-ও ভাঈ দোয়া,

 মিলকে ছারে করে কাফিলে মে চলো,

গমছে রোতে হুয়ি, জান খুতে হুয়ে, 

মারহাবা! হাছ পড়ে! কাফিলে মে চলো।


দুধপানকারী শিশুদের জন্য ১৬টি মাদানী ফুল 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলার কি বাহার রয়েছে। বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচানোর জন্য প্রথমেই যে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় তা যথেষ্ট। এই মর্মে এখানে ১৬টি মাদানী ফুল দেখুন। 

(১) ছেলে বা মেয়ে জন্ম হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত يِا بَزُّ সাতবার (প্রথমে ও শেষে একবার করে দরূদ শরীফ) পড়ে যদি বাচ্চাকে ফুঁক দেয়া হয় তাহলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বালিগ হওয়া পর্যন্ত বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।

(২) জন্ম হওয়ার পর বাচ্চাকে প্রথমে নিমপাতার সাথে লবণ মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে গোসল দিন, এরপর শুধু পানি দ্বারা গোসল দিন। তাহলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বাচ্চা ঘা, বিচি, ফোড়া ইত্যাদি চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাকবে।

(৩) লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে কিছুদিন বাচ্চাদের গোসল করাতে থাকুন যা বাচ্চাদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

(৪) গোসলের পর সরিষার তেল মালিশ করা বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য উত্তম।

(৫) বাচ্চাদের প্রত্যেকদিন দুধ পান করানোর পূর্বে দৈনিক ২/৩ বার এক আঙ্গুল মধু মুখে দেয়া যথেষ্ট উপকারী। 

(৬) দোলনায় দোল দেওয়ার সময় বা বিছানায় শোয়ার সময় অথবা কোলে নিয়ে খেলাধুলার সময় সর্বদা বাচ্চার মাথা উপরের দিকে রাখুন। মাথা নিচু ও পা উচু হতে দিবেন না, তা ক্ষতিকর।

(৭) বাচ্চাকে জন্ম হওয়ার পর বেশি গরম আলোকিত স্থানে রাখলে বাচ্চার দৃষ্টি শক্তি দূর্বল হয়ে যায়। 

(৮) যখন শিশুর দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়ে যায় এবং দাঁত বের হবার উপক্রম হয় তখন দাঁতে মোরগের চর্বি লাগিয়ে দিন।

(৯) দৈনিক ২/১ বার মাড়িতে মধু লাগান এবং বাচ্চার মাথা, ঘাঁড়ে তেল মালিশ করা উপকারী। 

(১০) যখন দুধ ছাড়ানোর সময় আসবে এবং বাচ্চা খাবার খেতে শুরু করে তবে খুব সাবধান! তাকে কোন শক্ত কিছু চিবাতে দিবেন না। খুব নরম ও দ্রুত হজম হয় এমন খাবার খাওয়ান। 

(১১) গরু ছাগলের দুধ পান করাতে থাকুন। 

(১২) চাহিদা মোতাবেক এই বয়সে বাচ্চাদের ভাল খাবার দিন, যাতে এই বয়সে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। বাচ্চা যদি জীবিত থাকে তবে তা اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ সারা জীবন কাজে আসবে।

(১৩) বাচ্চাদের বারবার খাবার না দেয়া উচিত। যতক্ষণ প্রথম খাবার হজম না হয় দ্বিতীয়বার খাবার কখনো দিবেন না।

(১৪) টক, মিষ্টি ও ঝালের অভ্যাস থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করা খুব প্রয়োজন এই জিনিষগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 

(১৫) বাচ্চাকে শুকনো ও তরতাজা ফল খাওয়ানো খুবই ভাল।

(১৬) যত ছোট বয়সে খতনা করা যায় তত উত্তম। কষ্টও কম হয় এবং আঘাত দ্রুত শুকিয়ে যায়। 


গর্ভবর্তী মা ও বাচ্চার হিফাজতের রূহানী ব্যবস্থাপত্র 

لااله الا الله এটা কোন একটি কাগজে ৫৫ বার লিখে বা লিখিয়ে নিয়ে প্রয়োজন মত তাবিজের ন্যায় ভাঁজ করে মোম বা প্লাষ্টিক দিয়ে জাম করে কাপড়, রেক্সিন বা চামড়া দিয়ে সেলাই করে গর্ভবর্তী মহিলারা গলায় ঝুলাবে বা বাহুতে বাঁধবে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ গর্ভও ঠিক থাকবে এবং বাচ্চাও বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে। যদি لااله الا الله ৫৫ বার (শুরু ও শেষে একবার দরূদ শরীফ) পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে রেখে দিন এবং বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চার মুখে লাগিয়ে দিন তবে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বাচ্চা মেধাবী হবে এবং রোগ মুক্ত থাকবে। যদি তা পড়ে যাইতুন শরীফের তেলে ফুঁক দিয়ে বাচ্চার শরীরে হালকাভাবে মালিশ করে দেয়া যায় তাহলে তা খুবই উপকারী হয়। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কীট পতঙ্গ ও অন্যান্য বিষাক্ত, পোকা মাকড় বাচ্চা থেকে দূরে থাকবে। এইভাবে পড়া যাইতুন তৈল বড়দের শারীরিক ব্যথার মালিশের জন্য কাজে আসে।


সেহেরী খাওয়া সুন্নাত 

আল্লাহ্ তাআলার কোটি কোটি দয়া যে, তিনি আমাদেরকে রোযার মতো মহান নেয়ামত দান করেছেন। আর সাথে সাথে শক্তি অর্জনের জন্য সেহেরীর শুধু অনুমতি দেন নি, বরং এতে আমাদের জন্য সাওয়াব রেখে দিয়েছেন। নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর صلى الله عليه وسلم  যদিও আমাদের মতো পানাহারের মুখাপেক্ষী নন,তবুও আমাদের প্রিয় আক্বা صلى الله عليه وسلم আমরা গোলামদের খাতিরে সেহেরী করতেন, যাতে প্রিয় গোলামগণ তাদের দয়ালু মুনিব, সৃষ্টিকুলের বাদশাহ্ صلى الله عليه وسلم এর সুন্নাত মনে করে সেহেরী করে নেয়। অনুরূপভাবে তারা দিনের বেলায় রোযা পালনে শক্তির সাথে সাথে সুন্নাতের উপর আমল করার সাওয়াবও পেয়ে যায়। কোন কোন ইসলামী ভাইকে দেখা যায় যে, কখনো কখনো তাঁরা সেহেরী করেন না। তখন সকালে নানা ধরনের কথা রচনা করে আর এভাবে বলে বেড়াতে শোনা যায়, “আমরা তো সেহেরী ছাড়াই রোযা রেখে ফেলেছি।” তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم এর আশিকরা! সেহেরী ছাড়া রোযা রাখার মধ্যে গর্বের কিছুই নেই, যার উপর গর্ব করা হচ্ছে বরং সেহেরীর সুন্নাত হাতছাড়া হয়ে যাবার জন্য লজ্জিত হওয়া চাই। আফসোস করা চাই। কারণ, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم  এর এক মহা সুন্নাত হাতছাড়া হয়ে গেছে। 


হাজার বছরের ইবাদত অপেক্ষাও উত্তম

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শরফুদ্দীন ওরফে বাবা বুলবুল শাহ্ رحمة الله عليه বলেন: “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা আমাকে তাঁর রহমত দ্বারা এতো বেশি শক্তি দান করেছেন যে, আমি পানাহার এবং কোন আসবাবপত্র ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারি। কিন্তু যেহেতু এসব বিষয় বর্জন করা আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ صلى الله عليه وسلم এর সুন্নাত নয়, সেহেতু আমি এগুলো থেকে বিরত থাকিনা। আমার নিকট সুন্নাতের অনুসরণ হাজার বছরের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।” মোট কথা সমস্ত কর্মের সৌন্দর্য তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم  এর সুন্নাতের অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।


ঘুমানোর পর সেহেরীর অনুমতি ছিলো না 

প্রাথমিক অবস্থায় রাতে ঘুম থেকে ওঠে সেহেরী করার অনুমতি ছিলো না। রোযা পালনকারীর জন্য সূর্যাস্তের পর শুধু ওই সময় পর্যন্ত পানাহার করার অনুমতি ছিলো, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে না পড়ে। যদি ঘুমিয়ে পড়ে তবে পুনরায় জাগ্রত হয়ে পানাহার করা নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আপন প্রিয় বান্দাদের উপর মহা অনুগ্রহ করেছেন- সেহেরীর অনুমতি দান করেছেন। তার কারণ এটা এমনই ছিলো, যেমন ‘কানযুল ঈমান’ শরীফের তফসীর ‘খাযাইনুল ইরফানে’ হযরত সদরুল আফাযিল মাওলানা সায়্যিদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رحمة الله عليه উল্লেখ করেছেন:


সেহেরীর অনুমতির ঘটনা

হযরত সায়্যিদুনা সারমাহ্ ইবনে কায়স رضى الله تعالى عنه পরিশ্রমী লোক ছিলেন। একদিন রোযা পালনকালে আপন জমিতে সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় ঘরে আসলেন। তার সম্মানিতা স্ত্রী رضى الله تعالى عنه এর নিকট খাবার চাইলেন তখন তার স্ত্রী রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। চোখে ঘুম এসে গেলো। খাবার তৈরী করে যখন তাঁকে জাগ্রত করলেন, তখন তিনি আহার করতে অস্বীকার করলেন। কেননা, তখনকার সময় (সূর্যাস্তের পর) ঘুমিয়ে পড়ে এমন লোকের জন্য পানাহার নিষিদ্ধ ছিল। তাই তিনি পানাহার ছাড়াই পরদিনও রোযা রেখে দিলেন। ফলে তিনি দূর্বল হয়ে বেহুশ হয়ে পড়লেন। সুতরাং তাঁর প্রসঙ্গে এ আয়াত শরীফ অবর্তীণ হলো:ﻭَﻛُﻠُﻮۡﺍ ﻭَﺍﺷۡﺮَﺑُﻮۡﺍ ﺣَﺘّٰﻰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَـﻜُﻢُ ﺍﻟۡﺨَـﻴۡﻂُ ﺍﻟۡﺎَﺑۡﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟۡﺨَـﻴۡﻂِ ﺍﻟۡﺎَﺳۡﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟۡﻔَﺠۡﺮِ​ؕ ﺛُﻢَّ ﺍَﺗِﻤُّﻮﺍ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺍِﻟَﻰ ﺍﻟَّﻴۡﻞ

 কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং আহার করো ও পান করো, যতক্ষণ না তোমাদের জন্য প্রকাশ পেয়ে যায় সাদা রেখা কালো রেখা থেকে ফজর হয়ে। অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূরণ করো। (পারা-২, সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৭)

 এ পবিত্র আয়াতে রাতকে কালো রেখা ও সোবহে সাদিককে সাদা রেখার সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের জন্য রমযানুল মোবারকের রাতগুলোতে পানাহার করা মুবাহ্। (অর্থাৎ বৈধ সাব্যস্ত হলো।) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ থেকে একথাও জানা গেলো যে, ফজরের আযানের সাথে রোযার সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ ফযরের আযান চলাকালে পানাহার করার কোন বৈধতাই নেই। আযান হোক কিংবা না-ই হোক, আপনার কানে, আওয়াজ আসুক কিংবা না-ই আসুক! সোবহে সাদিক শুরু হতেই আপনার পানাহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। 


সেহেরীর ফযীলত সম্পর্কে ৯টা বরকতময় হাদীস 

(১) “সেহেরী খাও! কারণ সেহেরীতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারী, ৬৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯২৩)

(২) “আমাদের ও কিতাবী সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেহেরী খাওয়া।” (আল ইহসান বিতরতীবে সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৫৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১০৯৬)

(৩) “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সেহেরী আহারকারীদের উপর রহমত নাযিল করেন।” (সহীহ ইবনে হাব্বান, ৫ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৪৫৮) 

(৪) নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم নিজের সাথে যখন কোন সাহাবী رضى الله تعالى عنه কে সেহেরী খাওয়ার জন্য ডাকতেন, তখন ইরশাদ করতেন, “এসো! বরকতের খাবার খেয়ে যাও!” (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ৪৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৪৪) 

(৫) “রোযা রাখার জন্য সেহেরী খেয়ে শক্তি অর্জন করো, আর দিনে (অর্থাৎ দুপুরে) আরাম (অর্থাৎ দুপুরে বিশ্রাম) করে রাতে ইবাদত করার জন্য শক্তি অর্জন কর!” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৬৯৩)

(৬) “সেহেরী বরকতের বস্তু, যা আল্লাহ্ তাআলা তোমাদেরকে দান করেছেন। এটা কখনো ছাড়বে না।” (নাসায়ী আস্সুনানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪৭২)

(৭) “তিনজন লোক যতটুকু খেয়ে নিবে, اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তাদের কোন হিসাব নিকাশ হবে না। এ শর্তে যে, খাদ্য যদি হালাল হয়। তারা হলো; “(১) রোযাদার, (২) সেহেরী আহারকারী ও (৩) মুজাহিদ, যে আল্লাহ্ তাআলার পথে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা-রক্ষীর কাজ করে।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-০৯)

(৮) “সেহেরী হচ্ছে সম্পূর্ণটাই বরকত। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো না। চাই এমনই অবস্থা হয় যে, তোমরা এক ঢোক পানি পান করে নিবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতাগণ সেহেরী আহারকারীদের উপর রহমত প্রেরণ করেন।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৪র্থ খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৩৯৬)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صلى الله عليه وسلم এর এসব বাণী থেকে আমরা এ শিক্ষা পাই যে, সেহেরী আমাদের জন্য একটা বড় নেয়ামত, যা দ্বারা অগণিত দৈহিক ও আত্মিক উপকার পাওয়া যায়। এ কারণে হুযুর صلى الله عليه وسلم সেটাকে বরকতময় খাবার বলেছেন। যেমন-

(৯) হযরত সায়্যিদুনা ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ رضى الله تعالى عنه বর্ণনা করেছেন, একবার রমযানুল মোবারকে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم আমাকে নিজের সাথে সেহেরী খাওয়ার জন্য ডাকলেন। আর ইরশাদ করলেন: “এসো! মোবারক খাবারের জন্য।” (সুনানে আবু দাউদ, খন্ড ২য়, ৪৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৪৪) 


রোযার জন্য কি সেহেরী পূর্বশর্ত?

কারো মনে যেন এ ভুল ধারণা না আসে যে, সেহেরী রোযার জন্য পূর্বশর্ত। বাস্তবে এমন নয়, বরং সেহেরী ছাড়াও রোযা শুদ্ধ হবে। কিন্তু জেনে বুঝে সেহেরী না করা উচিত নয়। কারণ, এটা একটা মহান সুন্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া। এটাও যেনো মনে থাকে যে, সেহেরীতে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া জরুরী নয়। কয়েকটা খেজুর ও পানিই যদি সেহেরীর নিয়্যতে খেয়ে নেয়া হয় তবেও যথেষ্ট বরং খেজুর ও পানি দ্বারা সেহেরী করা তো সুন্নাতই।


খেজুর ও পানি দ্বারা সেহেরী খাওয়া সুন্নাত

যেমন, হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رضى الله تعالى عنه বলেন: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم সেহেরীর সময় আমাকে ইরশাদ করতেন: “আমি রোযা রাখতে চাই, আমাকে কিছু আহার করাও।” সুতরাং আমি কিছু খেজুর এবং একটা পাত্রে পানি পেশ করতাম।” (নাসাঈকৃত আস্সুনানুল কোবরা, ২য় খন্ড, ৮০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪৭৭) 


খেজুর হচ্ছে সর্বোত্তম সেহেরী

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো যে, রোযাদারের জন্য একেতো সেহেরী করা সুন্নাত দ্বিতীয়ত: খেজুর ও পানি দিয়ে সেহেরী করা সুন্নাত; বরং খেজুর দিয়ে সেহেরী করার জন্য তো তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم আমাদের উৎসাহিত করেছেন। যেমনঃ 


সায়্যিদুনা সা-ইব ইবনে ইয়াযীদ رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, তাজদারে মদীনা, সুরুরে কলবো সীনা খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: نعم السحور التمر (অর্থাৎ খেজুর হচ্ছে সর্বোত্তম সেহেরী।)” (আত্তারহীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১২) 


অন্যত্র ইরশাদ করেছেন: “ نعم السحور المو من التمر (অর্থাৎ- খেজুর হচ্ছে মু’মিনের সর্বোত্তম সেহেরী।)” (সুনানে আবু দাঊদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা৪৪৩, হাদীস নং-২৩৪৫) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খেজুর ও পানি একত্রে খাওয়াও সেহেরীর জন্য পূর্বশর্ত নয়। সামান্য পানিও যদি সেহেরীর নিয়্যতে পান করা হয়, তবে তা দ্বারাও সেহেরীর সুন্নাত পালন হয়ে যাবে।


সেহেরীর সময় কখন হয়?

আরবী ভাষায় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘কামূস’ (অভিধান) এর মধ্যে ‘সাহার’ সম্পর্কে লিখা হয়েছে, “সাহার” ওই খাবারকে বলে, যা ভোর বেলায় খাওয়া হয়।” হানাফী মাযহাবের মহান পেশাওয়া হযরত মাওলানা মোল্লা আলী ক্বারী رحمة الله عليه বলেন: “কারো কারো মতে সেহেরীর সময় অর্ধরাত থেকে শুরু হয়।” (মিরকাতুল মাফাতীহ, শরহে মিশকাতিল মাসাবীহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৭৭ পৃষ্ঠা) 


সেহেরী দেরীতে খাওয়া উত্তম 

যেমন হাদীসে মোবারকে ইরশাদ হয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা ইয়া’লা ইবনে মুর্রাহ্ رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “তিনটি জিনিসকে আল্লাহ্ তাআলা পছন্দ করেন: ১. ইফতারে তাড়াতাড়ি করা, ২. সেহেরীতে দেরী করা ৩. নামাযে দাঁড়ানোর সময় হাতের উপর হাত রাখা।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-০৪) ‘


সেহেরীতে দেরী’ বলতে কোন সময়টিকে বুঝায়?

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সেহেরীতে দেরী করা মুস্তাহাব। দেরীতে সেহেরী করলে বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। এখানে মনে এ প্রশ্নও জাগতে পারে যে, ‘দেরী’ বলতে কোন সময়ের কথা বুঝায়। হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী رحمة الله عليه তাফসীরে নঈমীতে লিখেছেন, “এটা দ্বারা রাতের ষষ্ঠ অংশ বুঝায়।” তার পরও মনে প্রশ্ন থেকে যায়- “রাতের ষষ্ঠ অংশ কীভাবে বুঝা যায়?” এর জবাব হচ্ছে, ‘সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়সীমাকে রাত বলে।’ যেমন- কোন দিন সন্ধ্যা সাতটার সময় সূর্য অস্ত গেলো। তারপর চারটার সময় সোবহে সাদিক হলো। এভাবে সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে যে নয় ঘন্টার বিরতি অতিবাহিত হলো সেটাকেই রাত বলে।এখন রাতের এ ৯ ঘন্টাকে সমান ছয়ভাগে ভাগ করো! প্রতিটি ভাগ দেড় ঘন্টারই হয়ে থাকে। এখন রাতে শেষ দেড় ঘন্টা (রাত আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত) এর মধ্যে সুবহে সাদিকের পূর্বে যখনই সেহেরী করবেন, তা-ই দেরীতে সেহেরী করা হলো। সেহেরী ও ইফতারের সময় সাধারণত: প্রত্যেকদিন পরিবর্তিত হতেই থাকে। বর্ণিত নিয়মানুসারে যখনই চান রাতের ষষ্ঠ অংশ বের করতে পারেন। যদি রাতে সাহরী করে নেন, আর রোযার নিয়্যতও করে ফেলে থাকেন, বরং সাধারণ লোকের পরিভাষায় ‘রোযাবন্ধ’ও করে ফেলে থাকেন, তবুও রাতের বাকী অংশ সুবহে সাদিক শেষ হওয়া পর্যন্ত যখনই চান পানাহার করতে পারেন। নতুনভাবে নিয়্যত করার দরকার নেই। 


ফজরের আযান নামাযের জন্যই,

সেহেরীখাওয়া বন্ধ করার জন্য নয়

সেহেরীতে এতো বিলম্বও করবেন না যে, সোবহে সাদিক হয়ে গেলো কিনা সন্দেহ হয়ে যায়। যেমন, কেউ কেউ সুবহে সাদিকের পর ফজরের আযান হচ্ছে, এদিকে সে কিন্তু পানাহার করতেই থাকে। যদি আহার না করে, তবে পানি পান করে হলেও অবশ্যই তখন সেহেরী খাওয়া শেষ করে থাকে। আহা! বেচারাগণ এভাবে সেহরী খাওয়া তো করে, কিন্তু রোযাকে এভাবে তারা একেবারে খোলা অবস্থায়ই ছেড়ে দেয়। বস্তুত: এভাবে হবেই না। সারা দিন ক্ষুধা-পিপাসা ছাড়া কিছুই তার হস্তগত হয় না। সেহেরী খাওয়ার শেষ সময়ের সম্পর্ক আযানের সাথে নয়, সুবহে সাদিকের আগেভাগেই পানাহার বন্ধ করা জরুরী। যেমন- ইতোপূর্বে উল্লেখিত পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় গত হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক মুসলমানকে ‘সুস্থ বিবেক’ দান করো! আর সঠিক সময়ের জ্ঞান অর্জন করে রোযা-নামায ইত্যাদি ইবাদত বিশুদ্ধভাবে পালন করার তওফীক দান করুন।  


পানাহার বন্ধ করে দিন 

আজকাল ইলমে দ্বীন থেকে দূরে থাকার কারণে সাধারণ মানুষের নিকট এ নিয়ম প্রচলিত আছে যে, তারা আযান বা সাইরেন এর উপর সেহেরী ও ইফতারের সময় ঠিক করে। বরং কিছু লোক এমন আছে যারা ফজরের আযান দেয়া অবস্থায় সেহরী খাওয়া শেষ করে। এই সাধারণ ভুলকে দূর করার জন্য কতইনা উত্তম হত যে, যদি রমযানুল মোবারক মাসে প্রত্যেকদিন সুবহে সাদিকের ৩ মিনিট পূর্বে প্রত্যেক মসজিদে উঁচু আওয়াজে এইভাবে ৩ বার ঘোষণা করে দেয়া। “রোযাদারগণ! আজ সেহেরীর শেষ সময় (যেমন) ৪টা ১২ মিনিটে। সময় শেষ হয়ে এসেছে। দ্রুত পানাহার বন্ধ করে দিন। অবশ্যই আযানের জন্য অপেক্ষা করবেন না। (সেহেরী খাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেলে) আযান ফযরের নামাযের জন্য দেয়া হবে।” প্রত্যেকেই এই কথা বুঝা দরকার যে ফযরের আযান অবশ্যই অবশ্যই সুবহে সাদিকের পরই হতে হবে। এবং তা সেহরী খাওয়া বন্ধ করার জন্য নয়। বরং শুধুমাত্র ফযরের নামাযের জন্যই দেয়া হয়। 


মাদানী কাফেলার নিয়্যত করার সাথে সাথেই সমস্যার সমাধান 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করতে থাকুন। اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দুনিয়া আখিরাতের অসংখ্য কল্যাণ লাভ হবে। আপনাদের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য মাদানী বাহারের একটি ফুল আপনাদের কাছে উপস্থাপন করছি: যেমন- লান্ডি, বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা নিজস্বভাবে উপস্থাপন করছি।“আমার বড় ভাই এর বিবাহের দিন নিকটবর্তী হচ্ছে, খরচের ব্যবস্থা ছিল না। আমি অত্যন্ত চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে গেলাম। ঋণ নেয়ার জন্যও মন চাইছে না। যদি শোধ করতে দেরী হয় তাহলে আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাদানী সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর বদনাম হবে। একদিন খুব চিন্তিত অবস্থায় যোহরের নামায আদায় করলাম এবং মনে মনে নিয়্যত করলাম, যদি টাকার ব্যবস্থা হয় তবে মাদানী কাফেলায় সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করব। নামায শেষ করার পর এখনো নামাযীদের সাথে মোলাকাত, মোসাফাহা ও ইনফিরাদী কৌশিশেই ব্যস্ত ছিলাম, ইতোমধ্যে ইমাম সাহেব যিনি আমার জ্যাঠা হন এবং আমার এই পেরেশানী সম্পর্কেও অবগত। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ চাওয়া ব্যতীত তিনি নিজে নিজে আমাকে টাকা দেওয়ার ওয়াদা করলেন। আমি ২য় দিনই মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম। صلى الله عليه وسلمমাদানী কাফেলায় সফরের নিয়্যতের বরকতে আমার চিন্তা দূর হয়ে গেল। বিয়ের তারিখ সন্নিকটে হতেই আমি কর্জের মধ্যে ছিলাম কিন্তু اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বড় ভাইজানের বিবাহও হয়ে গেল এবং ঋণও শোধ হয়ে গেল। 


কলবভী শাদ হো, ঘরভী আবাদ হো, 

শাদীয়াভী রচে কাফিলো মে চলো, 

করজ উতর যায়েগা যখম ভর যায়েগা,

 ছব বালায়ে ঠলে কাফিলে মে চলো। 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! ছোট ভাই এর মাদানী কাফেলা সফরের নিয়্যতের বরকতে ঋণ আদায় করার ব্যবস্থা, টাকার ব্যবস্থা ও বড় ভাই এর বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল। ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার আমল প্রত্যেক নামাযের পর শুরুতে ও শেষে একবার করে দরূদ শরীফ সহ সাতবার সূরায়ে কুরাইশ পড়ে দোয়া করুন। পাহাড় সমান ঋণ হলেও اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আদায় হয়ে যাবে। এই আমল উদ্দেশ্য সফল হওয়া পর্যন্ত জারী রাখুন।


ঋণ পরিশোধের অযীফা 

اللهم اكفنى بحلا لك عن حر امك واغننى بفضلك عمن سواك

অর্থ: “ইয়া আল্লাহ্! আমাকে হালাল রিযিক দিয়ে হারাম থেকে বাঁচাও। আর তোমার দয়া আর মেহেরবানীতে তুমি ছাড়া অন্য কারো কাছে অমুখাপেক্ষী বানাও।” উল্লেখিত দোয়া উদ্দেশ্য সফল হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক নামাযের পর ১১ বার করে এবং সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার (শুরুতে ও শেষে একবার করে দরূদ শরীফসহ) দৈনিক পাঠ করুন। বর্ণিত আছে যে, এক দরিদ্র গোলাম হযরত আলী মুরতাজা শেরে খোদা رضى الله تعالى عنه এর দরবারে আরয করলেন, “আমি নিজেকে আযাদ করার যে চুক্তি করেছি সে মত টাকা দিতে অপারগ। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি رضى الله تعالى عنه বলেন: “আমি তোমাকে কিছু কালিমা শিখাব যা হুযুর صلى الله عليه وسلم আমাকে শিখিয়েছেন। যদি তোমার উপর সীর পাহাড় সমান ঋণ থাকে তবুও আল্লাহ্ তাআলা তোমার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন। তুমি এটা বল:-

 اللهم اكفنى بحلا لك عن حر امك واغننى بفضلك عمن سواك 

অর্থ: “ইয়া আল্লাহ্! আমাকে হালাল রিযিক দিয়ে হারাম থেকে বাঁচাও। আর তোমার দয়া ও মেহেরবানীতে তুমি ছাড়া অন্য কারো কাছে অমুখাপেক্ষী বানাও।” (জামে তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৫৭৪)


মাদানী আবেদন: এই আমল শুরু করার পূর্বে হুযুর গউছে পাক رحمة الله عليه ইছালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ১১ টাকা নজর নিয়াজ (ফাতিহা) দিন, আর কাজ হয়ে গেলে কমপক্ষে ২৫ টাকার নজর নিয়াজ হযরত ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه এর ইছালে সাওয়াব উদ্দেশ্যে বণ্টন করে দিন। (উল্লেখিত টাকার পরিমাণ রিসালা, কিতাবও বণ্টন করা যেতে পারে।)


 সকাল ও সন্ধ্যার পরিচয়

অর্ধরাতের পর থেকে সূর্যের প্রথম আলো চইশানো পর্যন্ত সকাল। আর যোহরের সময় থেকে আরম্ভ করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কে সন্ধ্যা বলা হয়। মাদানী পরামর্শ: পেরেশানগ্রস্থ ইসলামী ভাইদের উচিত যে দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করে সেখানে দোয়া করা। আর যদি নিজে অপারগ যেমন যদি ইসলামী বোন হয়, তাহলে ঘর থেকে অন্য কাউকে সফরে পাঠিয়ে দেয়া।


ইফতারের বর্ণনা 

যখন সূর্যাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন ইফতার করতে দেরী করা উচিত নয়; না সাইরেনের অপেক্ষা করবেন, না আযানের। তাৎক্ষণিকভাবে কোন কিছু পানাহার করে নিবেন। কিন্তু খেজুর অথবা খোরমা অথবা পানি দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর খেয়ে অথবা পানি পান করার পর এই দোয়াটি পড়বেন।১


ইফতারের দোয়া 

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍِﻧِّﻰ ﻟَﻚَ ﺻُﻤْﺖُ ﻭَﺑِﻚَ ﺍﻣﻨْﺖُ ‏[ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺗَﻮَﻛَّﻠْﺖُ ‏] ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺭِﺯْﻗِﻚَ ﺍَﻓْﻄَﺮْﺕُ 

অর্থ: ইয়া আল্লাহ্ তাআলা! নিশ্চয় আমি রোযা রেখেছি, আমি তোমারই উপর ঈমান এনেছি, তোমারই উপর ভরসা করছি এবং তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করেছি। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০০ পৃষ্ঠা) 

১ ইফতারের দোয়া সাধারণত: ইফতারের পূর্বে পড়ার প্রচলন আছে, কিন্তু ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ আহমদ রযা খান رحمة الله عليه তার ফাতাওয়ায়ে রযবীয়া, ৩য় খন্ড, ৬০১ পৃষ্ঠা তাঁর গবেষণালব্দ মাসআলা এটাই পেশ করেছেন যে, দোয়া ইফতারের পরে পড়া হবে।


ইফতারের জন্য আযান শর্ত নয়

ইফতারের জন্য আযান শর্ত নয়। না হলে ঐ সমস্ত এলাকায় রোযা কেমনে খুলবে যেখানে মসজিদ নেই বা আযানের শব্দ আসে না। মূলতঃ মাগরিবের আযান দেয়া হয় মাগরিবের নামাযের জন্য। যেখানে মসজিদ আছে সেখানে-ই এ নিয়ম চালু করা যাবে। যখনই সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হোন তখন উঁচু আওয়াজে صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! বলার পর এইভাবে তিন বার ঘোষণা করে দেয়া যেতে পারে, “রোযাদারগণ! ইফতার করে নিন।” 


ইফতারের ১১টি ফযীলত 

(১) হযরত সায়্যিদুনা সাহল ইবনে সা‘দ رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত; খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “মানুষ সব সময় মঙ্গল সহকারে থাকবে যতদিন তারা ইফতারে তাড়াতাড়ি করবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৪৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৯৫৭) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখনই সূর্যাস্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, তখনই দেরী না করে খেজুর অথবা পানি ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করে নিন এবং দোয়াও ইফতার করেই করুন, যাতে ইফতারে কোন রকম দেরী না হয়। 

(২) রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: “আমার উম্মত আমার সুন্নাতের উপর থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইফতারের সময় আক্বাশে তারকা উদিত হবার জন্য অপেক্ষা করবে না।” (আল ইহসান বিতরতীবে সহীহ ইবনে হাব্বান, ৫ম খন্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৫০১) 

(৩) হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, হুযুর পূরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, “আমার বান্দাদের মধ্যে বেশি প্রিয় হচ্ছে সে-ই, যে ইফতারে তাড়াতাড়ি করে।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭০০)


سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ প্রিয় হতে চাইলে ইফতারের সময় কোন প্রকারের ব্যস্ততা রাখবেন না। ব্যাস! তাৎক্ষণিকভাবে ইফতার করে নিন! 

(৪) হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رضى الله تعالى عنه বলেন: নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صلى الله عليه وسلم কে এভাবে দেখিনি যে, তিনি صلى الله عليه وسلم ইফতারের পূর্বে মাগরিবের নামায আদায় করেছেন বরং এক ঢোক পানি হলেও (যথাসময়ে) পান করে নিয়েছেন। অথচ ইফতার করে নিতেন। (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯১) 

(৫) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “এ দ্বীন ততদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন পর্যন্ত লোকেরা ইফতার তাড়াতাড়ি করতে থাকবে। কারণ, ইহুদী ও খৃষ্টানরাই দেরীতে (ইফতার) করে থাকে।” (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৫৩) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ পবিত্র হাদীসেও ইফতার তাড়াতাড়ি করার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। ইফতারে দেরী করা যেহেতু ইহুদী ও খৃষ্টানদের কাজ, সেহেতু তাদের মতো কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

(৬) হযরত সায়্যিদুনা যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন:

 من جهز غا ز يا او حا جا او خلفه فى اهله او فطر صا ءما كان له مثل اجره من غير ان ينقص من اجور هم شىء 

অর্থ: যে ব্যক্তি কোন ধর্মীয় যোদ্ধা কিংবা হাজীকে সামগ্রী (পাথেয়) যোগান দিয়েছে, কিংবা তার পিছনে তার পরিবার-পরিজনের দেখাশুনা করেছে, অথবা কোন রোযাদারকে ইফতার করিয়েছে, সেও তার সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে- তাদের সাওয়াবে কোনরূপ কম করা হবে না। (নাসায়ীকৃত আস্সুনানুল কুবরা, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৬, হাদীস নং-৩৩৩০)


سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কতোই প্রিয় সুসংবাদ! গাজী (ধর্মীয় যোদ্ধা) কে জিহাদের সামগ্রী যোগান দাতাকে গাজীরই মতো, হজ্জ যাত্রীকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য হজ্জের আর ইফতারের ব্যবস্থাকারীকে রোযাদারের মতো সাওয়াব দেয়া হবে। দয়ার উপর দয়া হচ্ছে এ যে, ওইসব লোকের সাওয়াবের মধ্যেও কোনরূপ কম করা হবে না। এটাতো আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ। তবে উল্লেখ্য যে, হজ্জ ও ওমরার জন্য ভিক্ষা করা হারাম। এ ভিক্ষাকারীকে ভিক্ষা দেয়াও গুনাহ্। 


ইফতার করানোর মহা ফযীলত

(৭) হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত; তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য কিংবা পানীয় দ্বারা (কোন মুসলমান) কে রোযার ইফতার করালো, ফেরেশতাগণ মাহে রমযানের সময়গুলোতে তার জন্য ইস্তিগফার করেন। আর (হযরত) জিব্রাঈল عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم শবে ক্বদরে তার জন্য ইস্তিগফার করেন।” (তাবরানী আল-মু‘জামূল কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬১৬২)

 سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ! 

কোরবান হোন আল্লাহ্ তাআলার রহমতের উপর! কোন ইসলামী ভাই মাহে রমযানে যদি কোন রোযাদার ইসলামী ভাইকে এক আধটা খেজুর দ্বারা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করান, তবে তার জন্য আল্লাহ্ তাআলার নিষ্পাপ ফেরেশতাগণ রমযানুল মোবারকের সময়গুলোতে আর ফেরেশতাদের সরদার হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم শবে ক্বদরে মাগফিরাতের দোয়া করেন। (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলারই অনুগ্রহের জন্য)।


জিব্রাইল কর্তৃক মুসাফাহার নমুনা

(৮) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে রমযানে রোযার ইফতার করায়, রমযানের সমস্ত রাতে ফেরেশতাগণ তার উপর দরূদ (রহমত) প্রেরণ করেন,আর শবে ক্বদরে জিব্রাঈল عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم তার সাথে মোসাফাহা করেন। বস্তুতঃ যার সাথে হযরত জিব্রাঈল عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم মোসাফাহা করেন, তার চোখ দুটি আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় এবং তার হৃদয় গলে যায়। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৬৫৩) 


রোযাদারকে পানি পান করানোর ফযীলত

(৯) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি রোযাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে আমার ‘হাওয’ থেকে পান করাবেন। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত কখনো পিপাসার্ত হবে না।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৩য় খন্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮৮৭) 

(১০) হযরত সায়্যিদুনা সালমান ইবনে আমের رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রোযার ইফতার করে, তবে সে যেনো খেজুর কিংবা খোরমা দিয়ে ইফতার করে। কারণ, তা হচ্ছে বরকত। আর তা না হলে পানি দ্বারা করবে, তাতো পবিত্রকারী।” (জামে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৯৫) 

এ হাদীসে পাকে এ উৎসাহ দেয়া হয়েছে যে, সম্ভব হলে খেজুর কিংবা খোরমা দিয়ে যেনো ইফতার করানো হয়। কারণ, এটা সুন্নাত। আর যদি খেজুর পাওয়া না যায়, তবে যেনো পানি দিয়ে ইফতার করে নেয়া হয়। এটাও পবিত্রকারী।

(১১) হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صلى الله عليه وسلم নামাযের পূর্বে তাজা-ভেজা খেজুর সমূহ দ্বারা ইফতার করতেন। এটা না থাকলে কয়েকটা খোরমা দিয়ে আর তাও না থাকলে কয়েক (গ্লাস) পানি দ্বারা ইফতার করে নিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৭, হাদীস নং-২৩৫৬)


এ হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে: খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صلى الله عليه وسلم প্রথমত: তাজা-ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করতেন, যদি তা না থাকতো তবে শুকনা খেজুর (খোরমা) দিয়ে, তাও না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। সুতরাং আমাদের প্রচেষ্টাও এটাই থাকা উচিত। আমরাও ইফতারের জন্য মিষ্ট মিষ্ট খেজুর পাওয়া গেলে, যা নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর প্রিয় সুন্নাত, তা দিয়ে; এটা পাওয়া না গেলে, খোরমা দিয়ে, আর তাও পাওয়া না গেলে পানি দ্বারা ইফতার করে নিবো! 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বরকতময় হাদীস সমুহে সেহেরী ও ইফতারের ক্ষেত্রে খেজুর ব্যবহারের প্রতি যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। খেজুর খাওয়া, খেজুর ভিজিয়ে সেটার পানি পান করা, তা দ্বারা চিকিৎসাপত্র নির্ণয় করা-এ সবই সুন্নাত। মোটকথা, এতে অসংখ্য বরকত রয়েছে। এতে অগণিত রোগের চিকিৎসা রয়েছে। যেমন- 


খেজুরের ২৫ টি মাদানী ফুল

(১) আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “উন্নতমানের ‘আজওয়াহ’ (মদীনা মুনাওয়ারার সর্বাপেক্ষা মূল্যবান খেজুরের নাম) এর মধ্যে প্রতিটি রোগের আরোগ্য রয়েছে।” আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী رحمة الله عليه এর বর্ণনা অনুসারে, “সাতদিন যাবত প্রতিদিন সাতটি করে ‘আজওয়াহ’ খেজুর খেলে ‘কুষ্ঠরোগ’ (সাদারোগ) দূরীভূত হয়।” (ওমদাতুল কারী, ১৪ খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৭৬৮)

(২) তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “আজওয়া খেজুর জান্নাত থেকে।” এটা বিষ-আক্রান্তকে আরোগ্য দান করে।” (তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২০৭৩) 

বুখারী শরীফের বর্ণনানুসারে, যে ব্যক্তি সকালে ৭টা ‘আজওয়া’ খেজুর খেয়ে নেয়, ওই দিন যাদু এবং বিষ তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৪৪৫)

(৩) সায়্যিদুনা আবু হুুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, খেজুর খেলে ‘কুলাজ’ রোগ (কুলাজকে ইংরেজীতে APPENDIX বলা হয়) হয় না।” (কানযুল ওম্মাল, ১০ম খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪১৯১)

(৪) তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “সকালে নাস্তা রূপে খেজুর খাও! এর ফলে পেটের ক্রিমি মরে যায়।” (জামেউস সগীর, ৩৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৩৯৪)

(৫) হযরত সায়্যিদুনা রবী ইবনে হাসীম رضى الله تعالى عنه বলেন: “আমার মতে গর্ভবতী নারীর জন্য খেজুর অপেক্ষা, আর অন্যান্য রোগীর মধু অপেক্ষা উত্তম অন্য কোন বস্তুর মধ্যে শেফা (আরোগ্য) নেই।” (দুররে মানসুর, ৫ম খন্ড, ৫০৫ পৃষ্ঠা) 

(৬) সায়্যিদী মুহাম্মদ আহমদ যাহবী رضى الله تعالى عنه বলেন: “গর্ভবর্তীকে খেজুর আহার করানো হলে-

 اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ 

পুত্রসন্তান প্রসব করবে, যে সুশ্রী, ধৈর্য এবং পরম স্বভাবের হবে।” 

(৭) যে ব্যক্তি উপবাসের কারণে দুর্বল হয়ে গেছে, তার জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী, কেননা, এটার মধ্যে খাদ্যপ্রাণ (খাদ্যের উপাদান) ভরপুর রয়েছে। তা আহার করলে তাড়াতাড়ি শক্তি ফিরে আসে। সুতরাং খেজুর দ্বারা ইফতার করার মধ্যে এ রহস্যও রয়েছে। 

(৮) রোযায় তাৎক্ষণিকভাবে বরফের ঠান্ডা পানি পান করে নিলে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে পাকস্থলী ও কলিজা ফুলে যাবার আশংকা বেশি থাকে। খেজুর খেয়ে ঠান্ডা পানি পান করলে ক্ষতির আশংকা মুক্ত হওয়া যায়। অবশ্য, খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান করা যে কোন সময়েই ক্ষতিকর। 

(৯) খেজুর ও খিরা অথবা শসা অনুরূপভাবে খেজুর ও তরমুজ একসাথে খাওয়া সুন্নাত। এতে ও হিকমতের মাদানী ফুল রয়েছে। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমাদের পালনের জন্য এ সুন্নাতটাই যথেষ্ট। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, “এতে জৈবিক ও দৈহিক দূর্বলতা দূর হয়ে যায়। মাখনের সাথে খেজুর খাওয়াও সুন্নাত। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪র্থ খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, হাদীন নং-৩৩৩৪)


এক সাথে পুরাতন ও তাজা খেজুর আহার করাও সুন্নাত। ‘ইবনে মাজাহ’ শরীফে আছে-যখন শয়তান কাউকে এমন করতে দেখে তখন এ বলে (আফসোস করে) “পুরাতনের সাথে নতুন খেজুর খেয়ে মানুষ মজবুত দেহ বিশিষ্ট হয়ে গেলো।” (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩৩০) 


(১০) খেজুর খেলে পুরাতন ‘কোষ্টকাঠিন্য’ দূর হয়ে যায়। 

(১১) হৃদরোগ এবং যকৃত মুত্রথলী, প্লীহা ও অন্ত্রের রোগ-ব্যাধির জন্য খেজুর উপকারী। এটা কফ বের করে দেয়। মুখের শুষ্কতা দূর করে। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রস্রাব সহজে বের হতে সাহায্য করে।

(১২) হৃদরোগ ও চক্ষুর কালো ছানি রোগের জন্য খেজুরকে দানা সহকারে পিষে খেলে উপকার পাওয়া যায়। 

(১৩) খেজুরকে ভিজিয়ে সেটার পানি পান করে নিলে, কলিজার রোগ- ব্যাধি দূর হয়ে যায়। আমাশয় রোগের জন্যও এ পানি উপকারী। (রাতে ভিজিয়ে ভোরের নাস্তায় ওই পানি পান করবেন, কিন্তু ভেজানোর জন্য ফ্রিজের মধ্যে রাখবেন না।) 

(১৪) খেজুরকে দুধের সাথে গরম করে খাওয়া সর্বোত্তম শক্তিশালী খাদ্য। এ খাদ্য রোগের পরবর্তী দূর্বলতা দূর করার জন্য খুবই উপকারী।

(১৫) খেজুর আহার করলে আঘাত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যায়।

(১৬) প্লীহা রোগীর জন্য খেজুর উত্তম ঔষধ। 

(১৭) তাজা-পাকা খেজুর ‘হলদে’ (যা বমির সাথে তিক্ত পানি বের হয়) ‘এসিডিঢী’ শেষ করে।

(১৮) খেজুরের বিচিগুলোকে আগুনে পুড়ে সেগুলো দিয়ে মাজন তৈরী করে নিন। এটা দাঁতগুলোকে উজ্জল করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। 

(১৯) খেজুরের পোড়া বিচির ছাই লাগালে আঘাতের রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং আঘাত তাড়াতাড়ি বরে ওঠে। 

(২০) খেজুর বিচিকে আগুনে ফেলে ধেঁায়া নিলে অর্শ্বরোগের ক্ষতগুলো শুকিয়ে যায়।

(২১)খেজুর গাছের শিকড়গুলো কিংবা পাতাগুলোর পোড়া ছাই দ্বারা মাজন তৈরী করে দাঁত মাজলে দাঁতের ব্যথা দূর হয়। শিকড় ও পাতাগুলো সিদ্ধ করে তা দ্বারা কুলি করলেও দাঁতের ব্যথা দূর হয়। 

(২২) যে ব্যক্তির খেজুর খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া SIDE EFFECT দেখা দেয়, সে আনারের রস কিংবা পোস্তা-দানা অথবা কালো মরিচের সাথে খেলে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ উপকার পাওয়া যাবে। 

(২৩) আধ-পাকা ও পুরাতন খেজুর একসাথে খেলে ক্ষতি করে। অনুরূপভাবে, খেজুরের সাথে আঙ্গুর কিংবা কিসমিস বা মুনাক্কা মিলিয়ে খাওয়া, খেজুর ও ডুমুর ফল একসাথে খাওয়া, রোগ উপশম হবার সাথে সাথেই দূর্বলতার সময় বেশী খেজুর খাওয়া এবং চোখের রোগে খেজুর খাওয়া ক্ষতিকর। একই সময়ে পাঁচ তোলা (অর্থাৎ- প্রায় ৬০ গ্রাম) অপেক্ষা বেশী খেজুর খাবেন না। পুরাতন খেজুর খাওয়ার সময় ছিড়ে ভিতরে দেখে নেয়া সুন্নাত। কেননা, তাতে কখনো কখনো ছোট ছোট লাল বর্ণের পোকা থাকে। সুতরাং পরিস্কার করে খাবেন। যেই খেজুরের ভিতর পোকা হওয়ার সম্ভাবনা হয় তা পরিস্কার ছাড়া খাওয়া মাকরূহ। (আউনুল মাবুদ, ১০ম খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা) 


বিক্রেতা খেজুরকে উজ্জল করার জন্য বেশীরভাগ সময় সরিষার তেল লাগায়। সুতরাং উত্তম হচ্ছে খেজুরকে কয়েক মিনিট পানিয়ে চুবিয়ে রাখা। যাতে মাছির আবর্জনা ও ধুলি-বালি আলাদা হয়ে যায়। গাছ- পাকা খেজুর বেশী উপকারী। 

(২৫) মদীনা মুনাওয়ারার খেজুরের বিচি এদিক-সেদিক ফেলবেন না। কোন আদব সম্পন্ন জায়গায় অথবা সমুদ্রে ফেলবেন কিংবা বপন করে দিবেন। অথবা যাঁতাকল দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে ডিব্বায় ভরে রেখে দিবেন এবং সুপারীর স্থলে ব্যবহার করে সেগুলোর বরকত লুফে নিবেন। ‘মদীনা মুনাওয়ারা ’ হয়ে আসা যে কোন জিনিস চাই তা দুনিয়ার যে কোন ভূখন্ডের হোক না কেন, মদীনা পাকের আকাশের নিচে প্রবেশ করতেই সেটা মদীনার হয়ে যায়। সুতরাং আশেকগণ সেটার প্রতি আদব করেন।


ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযাদার কতোই সৌভাগ্যবান যে, সে সব সময় আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে থাকে। এমনকি যখন ইফতারের সময় আসে তখন সে যে কোন দোয়াই করুক, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর অনুগ্রহ ও বদান্যতায় তা কবুল করে নেন। যেমন, 


সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত; রহমাতুল্লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: ان للصاءم عند فطره لد عوة ما ترد অর্থ: নিশ্চয় রোযাদারের জন্য ইফতারের সময় এমন একটি দোয়া থাকে, যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৯) 


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণিত, খাতামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না: (১) রোযাদারের, (ইফতারের সময়), (২) ন্যায় বিচারক বাদশাহের এবং (৩) মযলুমের। এ তিন জনের দোয়া আল্লাহ্ তাআলা মেঘ থেকে ও অনেক উচুঁ তুলে নেন এবং আসমানের দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয় এবং আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “আমি আমার সম্মানের শপথ করছি! আমি অবশ্যই তোমার সাহায্য করবো, যদিও কিছু দেরিতে হয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৪৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭৫২)


আমরা পানাহারে লিপ্ত থেকে যাই 

প্রিয় রোযাদার! আপনাকে ধন্যবাদ! আপনার জন্য এ সুসংবাদ রয়েছে যে, ইফতারের সময় যে দোয়াই করেন কবুল হবার মর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কিন্তু আফসোস! আজকাল আমাদের অবস্থা কিছুটা এমনই আশ্চর্যজনক হয়ে গেছে যে, দোয়ার সময় দোয়া করবেন না। ইফতারের সময় আমাদের ‘নফস’ বড়ই পরীক্ষায় পড়ে যায়।

কেননা, সাধারণতঃ ইফতারের সময় আমাদের সামনে নানা প্রকার ফলমূল, কাবাব, সামুসা, পেয়াজু-বুট ইত্যাদির সাথে সাথে, গরমের মৌসুম হলে তো ঠান্ডা ঠান্ডা শরবতের গ্লাস মওজুদ থাকে। ক্ষুধা-পিপাসার তীব্রতার কারণে আমরা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত তো হয়ে থাকি। ব্যাস! সূর্য অস্ত যেতেই খাদ্য ও শরবতের উপর এমনিভাবে ঝাপিয়ে পড়ি যে, দোয়ার কথাও মনে থাকে না; দোয়া দোয়াই থেকে যায়। আমাদের অগণিত ইসলামী ভাই ইফতারের সময় পানাহারে এতো বেশি মগ্ন হয়ে যায় যে, তাঁরা মাগরিবের নামাযও পুরোপুরি পান না; বরং আল্লাহর পানাহ! কেউ কেউ তো এতো বেশি অলসতা করে যে, ঘরে ইফতার করে সেখানেই জামাআত ছাড়া নামায পড়ে নেয়। তাওবা! তাওবা!! ওহে জান্নাত প্রাথর্ীরা! এতটুকু অলসতা করবেন না! জামাআত সহকারে নামায পড়ার কঠিন তাকীদ এসেছে। আর সর্বদা মনে রাখবেন! কোন শরীয়াতের বাধ্যবাধকতা ছাড়া মসজিদে নামাযের জামাআত ছেড়ে দেয়া গুনাহ্।


ইফতারের সতর্কতা সমুহ 

উত্তম হচ্ছে এই যে, ১টি বা অর্ধেক খেজুর দ্বারা ইফতার করে দ্রুত মুখ পরিস্কার করে নিবেন এবং জামাআতে শরীক হবেন। আজকাল মানুষ মসজিদে ফলমুল খেয়ে মুখ ভালভাবে পরিস্কার না করে দ্রুত জামাআতে শরীক হয়ে যায়। অথচ খাবারের সামান্য অংশ কিংবা স্বাদ মুখে না থাকা চাই। যেহেতু তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “কিরামান কাতেবীনের (তথা আমল লিপিবদ্ধকারী দুজন সম্মানিত ফেরেশতা) নিকট এর চেয়ে কোন অসহ্য কিছু নেই, তারা যার নিকট নির্দিষ্ট থাকে তিনি এমন অবস্থায় নামায পড়তে দেখেন, তার দাঁতের ভিতর কিছু (খাদ্য কণা) লেগে থাকে।” (তাবরানী কবীর, ৪র্থ খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৬১) 


আমার আক্বা আ’লা হযরত رحمة الله عليه বর্ণনা করেন: অনেক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে: বান্দা যখন নামাযে দাঁড়ায় ফেরেশতা তার মুখের সাথে নিজের মুখ রাখে,বান্দা যা পড়ে তা তার মুখ থেকে ফেরেশতার মুখে প্রবেশ করে, সে সময় যদি কোন খাদ্য কণা তার মুখে থাকে তাহলে তাতে ফেরেশতার এত কষ্ট হয় যে, যা অন্য কোন কিছুতে এত কষ্ট হয় না। 


রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রাতে নামাযের জন্য দাঁড়ায় তাহলে সে যেন মিসওয়াক করে নেয়। কেননা সে যখন নিজ নামাযে কিরাত পড়ে তখন ফেরেশতা তার মুখ ঐ বান্দার মুখের সাথে রাখে এবং যা ঐ বান্দার মুখ থেকে বের হয় তা ঐ ফেরেশতার মুখে প্রবেশ করে।” (কানযুল উম্মাল, ৯ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা) 


আর ইমাম তাবরানী কবীরের মধ্যে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী رضى الله تعالى عنه থেকে বর্ণনা করেন, দুই ফেরেশতার নিকট এর চেয়ে বেশি কঠিন কোন বস্তু নেই যে তারা নিজ সাথীকে নামায পড়তে দেখে, যে অবস্থায় তার দাঁতের ভিতর খাদ্যের অংশ থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা) 


মসজিদে ইফতারকারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখ পরিস্কার করতে কষ্টকর হয়। ভালভাবে পরিস্কার করতে গেলে জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য পরামর্শ রইলো যে শুধুমাত্র এক বা অর্ধেক খেজুর খেয়ে পানি পান করে নিন। পানি মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে কুলি করে নিবেন। যাতে খেজুরের মিষ্টি স্বাদ ও অংশ দাঁত থেকে ছুটে পানির সাথে পেটের ভিতর চলে যায়। প্রয়োজন হলে দাঁতে খিলালও করে নিবেন। যদি মুখ পরিস্কার করার সুযোগ না থাকে তখন সহজ ব্যবস্থা হল শুধু পানি দিয়ে ইফতার করে নিন। ঐ সমস্ত রোযাদার আমার নিকট খুব প্রিয়, যারা রকমারী ইফতারীর থালা ফেলে সূর্য ডোবার পূর্বে মসজিদের প্রথম কাতারে খেজুর পানি নিয়ে বসে যায়। এভাবে ইফতার দ্রুত শেষ হয়। মুখ পরিস্কার করাও সহজ এবং প্রথম কাতারে প্রথম তাকবীরের সাথে জামাআতের সাথে নামায আদায় করাও নছীব হয়।


ইফতারের দোয়া 

এক-আধটা খেজুর ইত্যাদি দিয়ে রোযার ইফতার করে নিন! তারপর দোয়া অবশ্যই করে নিবেন। কমপক্ষে এক/দুইটি দোয়া মাসূরা পড়ে নিন। প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صلى الله عليه وسلم বিভিন্ন সময় যেসব পৃথক পৃথক দোয়া করেছেন, তন্মধ্যে কমপক্ষে একটা দোয়া তো মুখস্থ করে নেয়া চাই। আর সেটা পড়ে নেয়া চাই। ইফতারের পরবর্তী একটা প্রসিদ্ধ দোয়া (পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্য একটা বর্ণনা দেখুন! যেমন- আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় এসেছে, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلم ইফতারের সময় এ দোয়া পড়তেন:

 اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت 

অর্থ: “ইয়া আল্লাহ্! তোমারই জন্য আমি রোযা রাখলাম এবং তোমারই প্রদত্ত রিযিকের মাধ্যমে ইফতার করলাম।” (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ৪৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৫৮) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপরোল্লেখিত বরকতময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইফতারের সময় দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। কোন কোন সময় দোয়া কবূল হওয়াও তা প্রকাশ পাবার উপর প্রভাব ফেলে। এ ভিত্তিতে আমাদের ইসলামী ভাইদের মনে একথা আসে যে, দোয়া শেষ পর্যন্ত কবুল হয় না কেন? হাদীসে মোবারকে তো দোয়া কবুল হবার সুসংবাদ এসেছে?

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রকাশ্যতঃ বিলম্বের কারণে ভয় পাবেন না। সায়্যিদী আ’লা হযরত رحمة الله عليه এর সম্মানিত পিতা ইসলামী দর্শন শাস্ত্রের ইমাম সায়্যিদুনা নকী আলী খান رحمة الله عليه আহসানুল বিআ লি আদাবিদ্দুআ’ নামক কিতাবের ৭ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন:


দোয়ার তিনটি উপকারিতা 

তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: বান্দার দোয়ার তিনটা অবস্থার যে কোন একটা অবশ্যই হয়: 

(১) তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়, 

(২) তার উপকার করে এবং 

(৩) তার জন্য আখিরাতে কল্যাণ সঞ্চয় করা হয়। সুতরাং বান্দা যখন আখিরাতে তার দোয়া গুলোর সাওয়াব দেখবে, যেগুলো দুনিয়ায় প্রতিদান পেয়েছিল, তখন এ কামনাই করবে, ‘আহ! দুনিয়ায় যদি আমার কোন দোয়ারই প্রতিদান দেয়া না হতো, আর সবই এখানকার (অর্থাৎ আখিরাতের) জন্য থেকে যেতো!” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা) 


দোয়ার মধ্যে পাঁচটা সৌভাগ্য

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! দোয়া বিনষ্ট তো হয়ই না। দুনিয়ায় সেটার প্রকাশ যদি নাও পায়, তবুও আখিরাতে সাওয়াব ও প্রতিদান তো পাওয়া যাবেই। সুতরাং দোয়ার মধ্যে অলসতা করা উচিত নয়। 


পাঁচটি মাদানী ফুল 

(১) প্রথম উপকার হচ্ছে-আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ পালন করা হয়। তাঁর নির্দেশ হচ্ছে: “আমার নিকট দোয়া করতেই থাকো। যেমন- কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “আমার নিকট চাও! আমি কবুল করবো। (পারা-২৪, মুমিন, আয়াত-৬০)

 اد عو نى استجب لكم

(২) দোয়া প্রার্থনা করা সুন্নাত। কারণ, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم বেশির ভাগ সময় দোয়া করতেন। তাই দোয়া করার মধ্যে ‘সুন্নাতকে জীবিত করার সৌভাগ্যও লাভ হবে।

(৩) দোয়া করার মধ্যে নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান صلى الله عليه وسلم এর আনুগত্যও পাওয়া যায়। কারণ, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, হুযুর صلى الله عليه وسلم আপন গোলামদেরকে দোয়া করার তাকীদ দিতে থাকেন। 

(৪) দোয়াকারী ইবাদতপরায়ণ লোকদের দলভুক্ত হয়ে যায়। কারণ, দোয়া নিজেই একটি ইবাদত বরং ইবাদতের মগজই। যেমন- নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন  صلى الله عليه وسلم এর মহান বাণী: অর্থ: দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মগজ। (তিরমিযী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৩, হাদীস নং-৩৩৮২)

 الد عا ء مخ العبا دة

(৫) দোয়া প্রার্থনা করলে হয়তো তার গুনাহ্ ক্ষমা হয়, কিংবা দুনিয়াতেই তার সমস্যাদির সমাধান তারপর ওই দোয়া তার জন্য আখিরাতে ভান্ডার হয়ে যায়।


জানিনা কোন গুনাহ্ হয়ে গেলো 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! দোয়া করার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা এবং তার প্রিয় হাবীব, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর আনুগত্যও রয়েছে, দোয়া করা সুন্নাতও। দোয়া করলে ইবাদতের সাওয়াবও পাওয়া যায়। তাছাড়া, দুনিয়া ও আখিরাতের বহু উপকারও অর্জিত হয়। কোন কোন লোককে দেখা গেছে যে, তারা দোয়া কবুল হবার জন্য খুব তাড়াহুড়া করে; বরং আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! একথা বলে যে, ‘আমরা তো এত দীর্ঘদিন যাবৎ দোয়া করে আসছি, বুযুর্গদের দ্বারাও দোয়া করালাম, কোন পীর ফকীর বাদ দিলাম না? এসব ওযীফাও পড়ি, ওই সব দৈনিন্দন ওযীফাদি পড়ি, অমুক অমুক মাযারেও গেলাম, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আমার চাহিদা পূরণই করেন না।’ বরং কেউ কেউ একথাও বলে বেড়াতে শুনা যায়, “জানিনা এমন কোন্ গুনাহ্ হয়ে গেলো, যার শাস্তি পাওয়া যাচ্ছে?”




Top