বেরেলী থেকে মাদীনা
টেক্সট রেডী: মিজানুর রহমান আত্তারী,মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন আত্তারী,মোহাম্মদ সাকিব মাহমুদ আত্তারী
দুরূদ শরীফের ফযীলত
হযরত উবাই বিন কাব আরয করল যে, আমি (সমস্ত তাসবীহ, ওয়াজিফা ছেড়ে দিয়ে) নিজের সব সময় দুরূদ পড়তে ব্যয় করব। তখন তাজেদারে মাদীনা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ইরশাদ করলেন, এটা তোমার চিন্তা সমূহ দূর করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী, খন্ড-৪, পৃ-২০৭, হাদীস-২৪৬৫, দারুল ফিকির, বৈরুত)
এটা ঐ সময়ের কথা যখন আমি বাবুল মাদীনা করাচীর একটি এলাকা খারাদরে অবস্থিত হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ শাহ দুলহা বুখারী সব্জওয়ারী (رحمة الله) এর মাযার শরীফ সংলগ্ন হায়দরী মসজিদে হুজুর মুফতীয়ে আজম হিন্দ, হযরত মাওলানা মুস্তফা রেযা খান (رحمة الله) এর বরকতময় আমামা (পাগড়ী) শরীফ মাথায় শোভামন্ডিতকরে ফযরের নামায পড়াতাম।ْ একজন ওলীয়েকামিলের আমামা শরীফের স্পর্শ বহুবার আমার হাত ও মাথায় লেগেছে।আমার হাত ও মাথাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। আসল কথা হচ্ছে, উল্লেখিত হায়দরী মসজিদে আলা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) এর খলীফা মাদ্দাহুল হাবীব, হযরত মাওলানা জামিলুর রহমান কাদিরী রযবী (رحمة الله) এর সুযোগ্য সন্তান হযরত আল্লামা মাওলানা হামীদুর রহমান কাদিরী রযবী ইমামতি করতেন যেহেতু মসজিদ থেকে তাঁর ঘর প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল, তাই ফযরের নামাযের ইমামতি করার সৌভাগ্য আমার নসীব হত এবং তাঁর নিকট সংরক্ষিত মুফতীয়ে আজম হিন্দ (رحمة الله) এর আমামা শরীফও আমার ভাগ্যে নসীব হত।তা থেকে আমি বরকত হাসিল করতাম। একবার হযরত মাওলানা হামীদুর রহমান (رحمة الله) আলা হযরত (رحمة الله) এর মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে আমাকে বলেন, “আমি তখন ছোট্ট শিশু ছিলাম।আমার এখনো ভালভাবে মনে আছে যে, আলা হযরত (رحمة الله) আমার সাথেও এবং অন্যান্য সকল ছোট শিশুদের সাথে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে কথাবার্তা বলতেন। বকা দেয়া, তিরস্কার করা, ধমক দেয়া এবং তুই তুই পূর্ণ শব্দ বলা তাঁর বরকতময় স্বভাবে ছিল না। এক বৃহস্পতিবার আমি বেরেলী শরীফে আলা হযরত এর রহমতপূর্ণ বাসস্থানে উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁর সাথে দেখা করতে আসল, আর তা সাধারণত সাক্ষাতের সময় ছিল না।কিন্তু লোকটি দেখা করার জন্য চেষ্টা করছিল।তাই আমি আলা হযরত (رحمة الله) এর খাস কামরায় এই খবরটি দেয়ার জন্য চলে গেলাম। কিন্তু শুধু কামরাতে নয় বরং গোটা বাড়ীতে কোথাও আলা হযরত (رحمة الله) কে খোঁজে পেলাম না। আমি অবাক হয়ে গেলাম এ ভেবে যে, তিনি কোথায় গেলেন? এরূপ চিন্তা- ভাবনায় আমরা দাঁড়িয়েই রইলাম। হঠাৎ দেখলাম যে, আলা হযরত (رحمة الله) আপন খাস কামরা থেকে বের হয়ে আসলেন। আমরা সবাই অবাক। জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা যখন আপনাকে খোঁজ করছিলাম তখন কোথাও আপনাকে পায়নি কিন্তু এখন আপনি আপনার কামরা থেকেই বের হয়ে আসলেন, এর রহস্য কি? লোকদের বারবার জিজ্ঞাসার ফলে তিনি (رحمة الله) ইরশাদ করলেন,আমি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার এই সময়ে আমার এই কামরা, বেরেলী থেকে মাদীনায়ে মুনাওয়ারায় হাযির হয়ে থাকি।
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
“হারাম হে উছে সাহাতে হার দু’আলম,
জু দিল হো চুকা হে শিকারে মাদীনা।”
(যওকে নাত)
ইমামে আহলে সুন্নাত জবরদস্ত আশিকে রসূল ছিলেন। তাঁর উপর তাজেদারে মাদীনা (ﷺ) এর বিশেষ দয়া ছিল।বেরেলী শরীফ থেকে মাদীনায়ে মুনাওয়ারাতে হাযির হওয়ার আরেকটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন:
কুতবে মাদীনা (رحمة الله) এর সাক্ষ্য
আমীরে আহলে সুন্নাত এর এক পীর ভাই আলহাজ্ব মুহাম্মদ আরিফ যিয়াঈ (رحمة الله) যিনি দীর্ঘদিন মাদীনায় অবস্থান করছেন,
তিনি এ ঘটনাটি আমীরে আহলে সুন্নাতকে মাদীনা শরীফে শুনিয়েছেন- একবার হুজুর কুতবে মাদীনা, সায়্যিদী মুর্শিদী যিয়াউদ্দীন আহমদ কাদিরী রযবী (رحمة الله) আমার উদ্দেশ্যে বললেন, “এটা ঐ সময়ের কথা যখন আলা হযরত (رحمة الله) জীবিত ছিলেন। আমি একদা হুযুর (ﷺ) এর নূরানী মাযার শরীফে উপস্থিত হলাম। সালাত ও সালাম আরজ করার পর “বাবুস সালাম” পৌঁছলাম। সেখান থেকে হঠাৎ আমার দৃষ্টি সোনালী জালির দিকে গেল। এ কি দেখলাম! দেখি আলা হযরত (رحمة الله) নবী করীম এর ‘মুয়াজাহা’ শরীফের সামনে হাত বেঁধেসবিনয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি খুবই আশ্চর্যান্বিত হলাম যে, আলা হযরত (رحمة الله) মাদীনায়ে তৈয়বায় হাযির হয়েছেন অথচ আমি একটুও জানলাম না। তাই আমি সেখান থেকে “মুয়াজাহা” শরীফে হাযির হলাম কিন্তু আলা হযরত (رحمة الله) আমার দৃষ্টিতে পড়ল না। আমি সেখান থেকে পুনরায় “বাবুস সালাম” এর দিকে আসলাম। আর যখন সোনালী জালির দিকে তাকালাম তখন দেখলাম আলা হযরত ঠিকই “মুয়াজাহা” শরীফে উপস্থিত ছিলেন।
সুতরাং আমি পুনরায় সোনালী জালির সামনেই হাজির হলাম। তখন আলা হযরত (رحمة الله) আমার দৃষ্টির অন্তরালে ছিলেন। তৃতীয় বারেও একই ধরনের ঘটনা ঘটল। আমি বুঝতে পারলাম, এটা প্রেমিক ও প্রেমাস্পদের প্রেমের ব্যাপার, এর মাঝখানে আমার হস্তক্ষেপ না করাটাই উচিত।” আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রতি দয়া করুন এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ) সাগে মাদীনা এর মুর্শিদে করীম ‘কুতবে মাদীনা’ এর সাক্ষ্য মিলে গেল যে, আলা হযরত (رحمة الله) বাতিনী ভাবে মাদীনাতুল মুর্শিদ বেরেলী শরীফ থেকে মাদীনা শরীফে হাযির হয়েছিলেন।
“গমে মুস্তফা জিছকে সিনে মে হে,
গো কাহি বি রহে ওহ মদীনে মে হে।”
মুফতীয়ে আজম হিন্দ বেরেলী থেকে মাদীনায়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেন তো, সুন্নীদের ইমাম আলা হযরত এর উপর আমাদের প্রিয় আকা হুযুর এর কত বড়ই মেহেরবানী ছিল যে, প্রকাশ্য কোন ধরনের যানবাহন ছাড়া বেরেলী শরীফ থেকে মাদীনা শরীফে ডেকে নিতেন।আলা হযরত এর উপমাতো আলা হযরত নিজেই।
আলা হযরত এর শাহাজাদার উপরও হুযুর দয়া কম ছিল না। যেমন- তাজদারে আহলে সুন্নাত, শাহাজাদায়ে আলা হযরত, হুজুর মুফতীয়ে আজম হিন্দ মুস্তফা রেযা খান এর এক মুরীদ ও দা’ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদার আমাকে তাজপুর শরীফ (নাগপুর, ভারত) থেকে একটি চিঠির ফটোকপি প্রেরণ করেন, যাতে দা’ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদার এক মুবালি−গের কিছু ঘটনাও ছিল যে, ১৪০৯ হিজরীতে আমার পিতা-মাতা, বড় ভাইজান ও ভাবী সাহেবা সকলের হজ্জ্ব করার সৌভাগ্য নসীব হয়েছে। তাঁরা মাদীনা শরীফের দুটি অত্যন্ত ঈমান তাজাকারী দৃশ্য দেখতে পান।
১. আমার সম্মানিত পিতা নূরানী রওযা মুবারকের নিকটেই এই চমৎকার দৃশ্য দেখতে পান যে, মুফতীয়ে আজম হিন্দ মাওলানা মুস্তফা রেযা খান তাঁর স্বাভাবিক নিয়মানুসারে মাথা মুবারকে আমামা (পাগড়ী) শরীফ সাজিয়ে চাঁদের মত চেহারা চমকিয়ে তাঁর বিশেষ মাদানী কাফিলার সাথে অবস্থান করছেন। খুবই আশ্চর্যান্বিত হলেন যে, হুজুর মুফতিয়ে আজম হিন্দ এর ইন্তিকাল হয়েছে আজ প্রায় আট বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। তিনি এখানে কিভাবে তাশরীফ আনলেন? বিস্ময় ও আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি তখন তাঁর বড় ছেলে (অর্থাৎ আমার বড় ভাই) এ সংবাদ দেয়ার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। যখন বড় ছেলের সাথে সাক্ষাত হল তখন অবগত হলেন যে, তিনিও পিতা মহোদয়কে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কারণ তিনিও একই দৃশ্য দেখেছেন। তাই তাঁরা উভয়ে দ্বিতীয়বার ঐ স্থানে আসলেন। ততক্ষণে হুজুর মুফতীয়ে আজম হিন্দ (رحمة الله) মাদানী কাফিলা সহ সেখান থেকে চলে গিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রতি দয়া করুন এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
২. দ্বিতীয় ঈর্ষণীয় দৃশ্য এটা দেখলেন যে, এক লম্বা স্বাস্থ্যবান যুবক মাদীনার তাজেদার, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর রওজা শরীফে হাযির ছিলেন আর উভয় কদম মুবারকের দিকে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে দুআ করছিলেন, হঠাৎ যুবকটি পড়ে গেলেন এবং হুযুর এর কদম মুবারকের নিকট ইন্তেকাল করলেন। সেখানে মানুষের ভিড় জমে গেল। বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসলমানেরা আপন আপন ভাষায় ঐ সৌভাগ্যবান যুবকের ঈমান তাজাকারী মৃত্যুর উপর ঈর্ষা প্রকাশ করছিলেন।
“ইউ মুজ কো মওত আয়ে তো কিয়া পুছনা মেরা,
মে খাক পর নিগাহ দরে ইয়ার কি তরফ।” (যওকে নাত)
ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে নিজ ঘরে
আলা হযরত, ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) এর এক মুরীদ ‘আমজাদ আলী খান কাদিরী রযবী’ (رحمة الله) শিকার করার জন্য বের হলেন। তিনি যখন শিকারের উপর গুলি চালালেন তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোন এক পথচারীর গায়ে গুলি লাগল। ফলে সে মৃত্যুবরণ করল। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল। কোর্টে হত্যা প্রমাণিত হল এবং ফাঁসির রায় দেয়া হল। পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষাতের জন্য পৌঁছল। তখন আমজাদ আলী সাহেব বলতে লাগলেন, আপনারা সবাই নিশ্চিন্তে থাকুন, আমার ফাঁসি হতে পারে না। কারণ আমার পীর ও মুর্শিদ সায়্যিদী আলা হযরত (رحمة الله) স্বপ্নে এসে আমাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, “আমি আপনাকে মুক্তি দিলাম।” কান্নাকাটি করে লোকেরা চলে গেল। ফাঁসির তারিখে পুত্র শোকে স্নেহ ময়ী মা কাঁদতে কাঁদতে আপন স্নেহের পুত্রের শেষ সাক্ষাতের জন্য আসলেন।الحمد الله عز و جل আপন মুর্শিদের উপর এমনই দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে এমনিই হওয়া চাই। মাকেও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আরজ করলেন, “মা আপনি চিন্তিত হবেন না, ঘরে চলে যান। ا ن شا ء الله عزو جل আজকের নাশতা আমি ঘরে এসেই করব।” মা চলে যাওয়ার পর আমজাদ আলীকে ফাঁসির কাষ্ঠে হাযির করা হল। গলায় ফাঁসির রশি পরানোর আগে নিয়মানুসারে যখন তাঁর শেষ ইচ্ছা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল তখন তিনি বলতে লাগলেন, “জিজ্ঞাসা করে কি লাভ হবে? এখনোতো আমার সময় আসেনি।” তারা মনে করল, মৃত্যুর ভয়ে তাঁর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই ফাঁসি দাতা ফাঁসির রশি তাঁর গলায় পরিয়ে দিল। এমনি মুহুর্তে তারযোগে বার্তা এসে গেল যে, “মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মুকুট পরিধানের খুশিতে এতজন হত্যাকারী ও এতজন কয়েদীকে ছেড়ে দেয়া হোক।” তাৎক্ষণিকভাবে রশি খুলে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামিয়ে মুক্তি দেয়া হল। এদিকে ঘরে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। সবাই লাশ আনার ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত ছিল। আর তখনই আমজাদ আলী সাহেব ফাঁসির মঞ্চ থেকে সোজা নিজ ঘরে পৌঁছল এবং বলতে লাগল, “আমার জন্য নাস্তা আনুন! আমি বলে দিয়েছিলাম যে,ان شاء الله عزوجل নাস্তা ঘরে এসেই করব। (তাজালি−য়াতে ইমাম আহমদ রযা, পৃ-১০০, বরকাতি পাবলিশার্জ, বাবুল মাদীনা)
“আহে দিলে আছির ছে লব তক ন আয়ি থি,
আওর আপ দৌড়ে আয়ে গ্রেফতার কি তরফ।”
(যওকে নাত)
হযরত আলী رَ ضِيَ اللهُ عَنْهُ এর দীদার
কিছু ইসলামী ভাইকে বাবুল মাদীনা করাচীর এক বয়স্ক কাতিব (আর্টিষ্ট) আব্দুল মাজিদ বিন আবদুল মালিক পীলীভিতী এই ঈমান তাজাকারী ঘটনাটি শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বয়স তখন তেরবছর ছিল, আমার সৎ মায়ের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।তাঁকে শিকলে বেঁধে কোন মতে পীলীভিতী থেকে বেরেলী শরীফ নিয়ে আসলাম। সম্মানিতা মা অনবরত গালিগালাজ করে যাচ্ছিলেন। আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) কে দেখা মাত্রই গর্জে উঠে বললেন, “আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন? তিনি (رحمة الله) অত্যন্ত নম্র ভাষায় বললেন, “মুহতারামা! আপনার উপকারের জন্য এসেছি।” মা দস্তুরমত গর্জে উঠে বললেন, “হ্যা, খুব ভাল,
উপকার করতে এসেছেন? যেই উপকার চাইব তা-ই করতে পারবেন? তিনি (رحمة الله) বললেন, কি চান?। মা বললেন, “হযরত আলী رَ ضِيَ اللهُ عَنْهُ এর দীদার করিয়ে দিন।” এটা শুনতেই আলা হযরত (رحمة الله) আপন কাঁধ মুবারক থেকে চাদর শরীফ নামিয়ে নিজ চেহারা মুবারকের উপর রেখে দিলেন এবং দ্রুত তা সরিয়ে ফেললেন। এখন আমাদের চোখের সামনে আলা হযরত (رحمة الله) নেই বরং হযরত আলী رَ ضِيَ اللهُ عَنْهُ আপন নূরানী চেহারায় জ্যোতি ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের বৃদ্ধা মাতা অত্যন্ত ভদ্র, নম্রভাবে সেই নূরানী পরিবেশের আলো দেখাতে ব্যস্ত ছিলেন। আমি ও আমার পিতা মহোদয় জাগ্রত খোলা চোখেই মনভরে হযরত আলী رَ ضِيَ اللهُ عَنْهُ এর যিয়ারত করলাম। অতঃপর যখন হযরত আলী رَ ضِيَ اللهُ عَنْهُ নিজ চাদর মুবারক আপন চেহারার উপর রেখে দিয়ে সরিয়ে নিলেন তখন আলা হযরত (رحمة الله) আমাদের সামনে মুচকি হাস্যরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর আলা হযরত (رحمة الله) একটি শিশিতে করে ঔষধ দিলেন আর বললেন, “দুই মাত্রা ঔষধ দিলাম। এক মাত্রা রোগীনীকে সেবন করাবেন, প্রয়োজন না হলে দ্বিতীয় মাত্রা ঔষধ দিবেন না।”الحمد الله عزوجل আমাদের সম্মানিতা মাতা শুধু এক মাত্রা ঔষধ সেবনে পূর্ণ আরোগ্য লাভ করলেন। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তাঁর মস্তিষ্ক বিকৃত হয়নি।” আল্লাহ তাআলার দয়া তাঁদের প্রতি বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
“কিসমত মে লাখ পিছ হো সো বাল হাজার গজ,
ইয়ে সারি গুতহি এক তেরী সীদি নজর কি হে।”
(হাদায়েখে বখশিশ শরীফ)
বরকতময় পয়সা
একবার হাজীদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আলা হযরত (رحمة الله)এর বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। প্রস্তাবিত যানবাহন আসতে দেরী হওয়ায় গোলাম নবী নামের এক শুভাকাঙ্খী জিজ্ঞাসা করা ব্যতীত টাঙ্গা (ঘোড়ারগাড়ী) আনার জন্য চলে গেলেন। যখন টাঙ্গা নিয়ে ফিরছিলেন তখন দূর থেকে দেখলেন যে, ঐ যানবাহনটি এসে গেছে। কাজেই তিনি টাঙ্গা ওয়ালাকে একটা সিকি (২৫ পয়সা) দিয়ে বিদায় করে দিলেন। এ ঘটনা সম্পর্কে কেউ অবগত ছিল না। চারদিন পর মিস্ত্রি সাহেব আলা হযরত (رحمة الله) এর দরবারে হাযির হলেন। তখন আলা হযরত (رحمة الله) তাঁকে একটা সিকি দান করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কিসের?” বললেন, “ঐদিন টাঙ্গা ওয়ালাকে আপনি যা দিয়েছিলেন।” মিঞা সাহেব অবাক হয়ে গেলেন যে, আমিতো একথা কাউকে কখনো বলিনি, তবুও আলা হযরত (رحمة الله) এর জানা হয়ে গেল! তাঁকে এভাবে চিন্তা ভাবনায় মগ্ন দেখে উপস্থিত সকলে বলল, “মিঞা! পয়সার সিকি কেন হাত ছাড়া করছ? তাবাররুক হিসেবে রেখে দাও।” মিঞা তা রেখে দিলেন। যতদিন পর্যন্ত ঐ সিকি তাঁর নিকট ছিল, ততদিন পর্যন্ত তার টাকা পয়সার অভাব হয়নি। (হায়াতে আলা হযরত, খন্ড-৩য়, পৃ-২৬০, মাকতাবাতুল মাদীনা, বাবুল মাদীনা, করাচী)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
“হাত উঠা কর এক টুকরা আয় করিম
হে সখি কে মাল মে হকদার হাম।”
(হাদায়েখে বখশিশ শরীফ)
ٰ
বন্দীশালা থেকে ছাড়াতো পেলেন
এক বুড়ি যিনি আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) এর মহিলা মুরিদ ছিলেন। তাঁর স্বামীর উপর হত্যার অভিযোগে শাস্তির হুকুম হয়ে গিয়েছিল যে, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং বার বছরের কারাদন্ড। আপিল দায়ের করা হল। যখন থেকে আপিল করা হয়েছিল তাঁর (ঐ মহিলার) বর্ণনা হল, আমি প্রতিদিন আলা হযরত (رحمة الله) এর খেদমতে উপস্থিত হতাম। ফয়সালার তারিখের কয়েকদিন আগে বুড়ি নিজেকে যথাযথভাবে পর্দাবৃত করে আলা হযরত (رحمة الله) এর দরবারে ফরিয়াদ নিয়ে উপস্থিত হলেন। বললেন,“বেশী পরিমাণে حَسْبُنَا اللهُ وَ نِعْمَ الْوَ كِيْلُ পড়তে থাকুন। মহিলাটি চলে গেলেন। অবশ্য মধ্যবর্তী সময়ে আরো কয়েকবার হাযির হলেন। তিনি (رحمة الله) একই দুআ পড়তে বললেন। শেষ পর্যন্ত ফয়সালার তারিখ আসল। হাযির হয়ে আরয করল, “হুজুর! আজ চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কথা বললেন, “ঐ দুআ-ই পড়তে থাকুন। বুড়ি ঐ পুরানো উত্তর শুনে একটু অসন্তুষ্ট হলেন আর বকতে বকতে ফিরে যাচ্ছিলেন যে, যখন আপন পীরই কিছু শুনতে চাচ্ছেন না তখন অন্য কেউ কি শুনবে? আলা হযরত (رحمة الله) বুড়ির এই অবস্থা দেখে দ্রুত উঁচু আওয়াজে বুড়িকে ডাকলেন, আর বললেন, “পান খেয়ে নিন। বুড়ি বললেন, “আমার মুখে পান আছে।হুজুর বারবার বললেন, কিন্তু বুড়ি কিছুটা অসন্তুষ্টই ছিলেন।
অতঃপর তিনি (رحمة الله)নিজ হাত মুবারকে পান বানিয়ে দিতে দিতে বললেন, “ছাড়াতো পেয়ে গেলেন, এখন পানটা খেয়ে নিন।” তখন বুড়ি খুশি হয়ে পান খেয়ে নিলেন এবং ঘরের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ঘরের নিকটে পৌঁছতেই ছেলেরা দৌঁড়ে এসে বলতে লাগল, এতক্ষণ আপনি কোথায় ছিলেন? তার বার্তা বাহক আপনাকে খুঁজছিলেন। খুশি হয়ে ঘরে গেলেন এবং তার বার্তাটি নিয়ে পড়ালেন। তখন জানতে পারলেন যে, তাঁর স্বামী মুক্তি পেয়েছেন। (হায়াতে আলা হযরত, খন্ড-৩য়, পৃ-২০২, মাকতাবায়ে নববীয়্যা, মরকযুল আউলিয়া, লাহোর)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
“তামান্না হে ফরমায়ে রোজে মাহশর,
ইয়ে তেরী রিহায়ী কি চিট্টি মিলি হে।”
(হাদায়েখে বখশিশ শরীফ)
সৌভাগ্যবান রোগী
সায়্যিদ কানাআত আলী শাহ সাহেব খুবই নরম হৃদয়ের লোক ছিলেন। একবার এক রোগীর বিপজ্জনক অপারেশনের বিস্তারিত বিবরণ শুনে হৃদয়ে আঘাত পেলেন এবং বেহুশ হয়ে গেলেন। অনেক সেবা যত্ন করা সত্ত্বেও তাঁর হুশ ফিরে আসল না। আলা হযরত ইমামআহমদ রেযা খান (رحمة الله) এর খিদমতে এ ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন করা হল। তিনি সায়্যিদজাদার মাথার পাশে তশরীফ আনলেন এবং অত্যন্ত স্নেহ ভরে তাঁর মাথা আপন কোলে তুলে নিলেন। আর আপন রুমাল মুবারকটি তাঁর চেহারার উপর বিছিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাত তাঁর জ্ঞান ফিরে আসল। দু’ চোখ খুললেন, যুগশ্রেষ্ঠ ওলীর কোলে নিজের মাথা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন এবং সম্মানের জন্য দাঁড়াতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু শারীরিক দূর্বলতার কারণে উঠতে পারলেন না। আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
“সরে বালি উন্হি রহমত কি আদা লায়ি হে,
হাল বিগড়া হে তো বিমার কি বন আয়ি হে।”
(যওকে নাত)
মনের কথা জেনে ফেললেন
মাদীনাতুল মুর্শিদ বেরেলী শরীফে এক ব্যক্তি ছিল, যে বুজুর্গানে দ্বীনের প্রতি কোন গুরুত্ব দিত না। ‘পীর-মুরিদীকে পেটের ধান্দা বলে সমালোচনা করত। তার বংশের কিছু লোক আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) এর হাতে বায়আত গ্রহণ করে।তারা একদিন তাকে কৌশলে আলা হযরত (رحمة الله)এর সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তায় এক মিষ্টির দোকানে গরম গরম আমৃতি (জিলাপীতুল্য মিষ্টি) তৈরী করা হচ্ছিল, তা দেখে ঐ লোকটির মুখে পানি এসে গেল। সে বলল, “এটা খাওয়ালে আমি তোমাদের সাথে যাব।” তারা বলল, “ফেরার পথে খাওয়াব, আগে চল।” শেষ পর্যন্ত আলা হযরত (رحمة الله) এর দরবারে হাযির হল। ইত্যবসরে এক ভদ্রলোক গরম গরম আমৃতির পাত্র নিয়ে দরবারে হাযির হলেন। ফাতিহা খানির পর তা সকলের মাঝে বিতরণ করা হয়। আলা হযরত (رحمة الله) এর দরবারের নিয়ম ছিল যে, সম্মানিত সায়্যিদগণ ও দাড়িওয়ালাদের দ্বিগুণ দেয়া হত। যেহেতু ঐ আগত লোকটির দাড়ি ছিল না সেহেতু তাকে একটি আমৃতি দেয়া হল। আলা হযরত (رحمة الله)বললেন, “তাকে দুটি দিন।” বন্টনকারী আরয করল, “হুজুর! তার মুখেতো দাড়ি নেই।” তিনি (رحمة الله) মুচকি হেসে বললেন, “তার মন চাচ্ছে, তাকে আরো একটি দিয়ে দিন।” এ কারামত দেখে সে আলা হযরত (رحمة الله) এর মুরীদ হয়ে গেল এবং বুজুর্গানে দ্বীনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে লাগল। (তাজালি−য়াতে ইমাম আহমদ রযা, পৃ-১০১)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
বৃষ্টি বর্ষণ হতে লাগল
একদা এক জ্যেতির্বিদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله)এর দরবারে হাযির হল। তিনি তাকে বললেন, “বলুনতো, আপনার হিসাব মতে বৃষ্টি কবে আসতে পারে?” সে গণনা করে বললো, “এ মাসে বৃষ্টি হবে না, আগামী মাসে হবে।” আলা হযরত(رحمة الله) বললেন, "আল্লাহ তয়ালা তাআলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনি চাইলে আজই বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারেন। আপনি তারা গুলোকে দেখছেন আর আমি তারাগুলোর সাথে সাথে তারাগুলোর সৃষ্টিকর্তার কুদরতও দেখছি।” দেয়ালের উপর ঘড়ি ঝুলানো ছিল। তিনি (رحمة الله)ঐ জ্যোতির্বিদকে বললেন, “এখন কয়টা বেজেছে?” আরয করল,“সোয়া এগারটা।” তিনি বললেন, “বারোটা বাজতে আর কত দেরী? আরয করল, “পৌনে এক ঘন্টা।” তিনি বললেন, “পৌনে এক ঘন্টার পূর্বে বারোটা বাজা সম্ভব কি?” আরয করল, “অসম্ভব।” এটা শুনে আলা হযরত (رحمة الله) উঠে দাঁড়ালেন এবং ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিলেন আর তৎক্ষণাৎ টন টন শব্দ করে বারোটা বাজতে লাগল।তিনি জ্যোতির্বিদকে বললেন, “আপনি তো বললেন, পৌনে এক ঘন্টার পূর্বে বারোটা বাজতে পারে না, এখন কিভাবে বাজল? আরয করল, “আপনি কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন, তাই। নতুবা আপন গতিতে চললেতো পৌঁনে এক ঘন্টা পরই বারোটা বাজত।” আলা হযরত (رحمة الله) বললেন, “আল্লাহ একক, সর্ব শক্তিমান। তিনি তারকাকে যেখানে চান পৌঁছে দিতে পারেন। আর আমার পালনকর্তা ইচ্ছা করলে আজ এবং এখনই বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারেন।”আলা হযরত (رحمة الله) এর মুখ মোবারক থেকে এতটুকু বের হতে না হতেই চতুর্দিকে মেঘে ছেয়ে গেল আর রিমঝিম করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। (আনওয়ারে রযা, পৃ-৩৭৫, যিয়াউল কুরআন পাবলিকেশন্স, মরকযুল আউলিযা, লাহোর)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আমিন বিজাহিন্নাবিয়্যল আমীন (ﷺ)
“মওত নযদিক গুনাহো কি তাহি মাইলকে হোল
আ বরছ জা কে নাহা ধোলে ইয়ে পিয়াসা তেরা।” (হাদায়েখে বখশিশ শরীফ)
মজুর শাহজাদা
মাদীনাতুল মুর্শিদ বেরেলী শরীফের এক মহল্লায় আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله)কে দা’ওয়াত দেয়া হল। দা’ওয়াত দাতা মুরীদগণ তাঁকে আনার জন্য পালকির ব্যবস্থা করলেন। তিনি (رحمة الله) পালকিতে আরোহণ করলেন আরচারজন বেয়ারা পালকি কাঁধে নিয়ে যাত্রাশুরু“ করল। কিছু দূর যেতে না যেতেই ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) হঠাৎ পালকির ভিতর থেকে আওয়াজ দিলেন, “পালকি নামাও।” পালকি নামান হল। তিনি(رحمة الله) দ্রুত পালকি থেকে বাইরে নেমে এলেন। আবেগময় স্বরে বেয়ারাদের উদ্দেশ্যে
বললেন, “সত্য করে বলুন, আপনাদের মধ্যে সায়্যিদজাদা কে? কারণ, আমি আমার ঈমানের অনুভূতি শক্তিতে সরকারে মদীনা হুজুর(ﷺ) এর সুগন্ধ পাচ্ছি।” এক পালকি বাহকসামনে অগ্রসর হয়ে আরয করল, “হুজুর! আমি সায়্যিদ।” তখনও তাঁর কথা শেষ হয়নি, ইসলামী জগতের মহা সম্মানিত ইমাম, আপন যুগের মহান মুজাদ্দিদ নিজ আমামা (পাগড়ি) শরীফ ঐ সায়্যিদজাদার কদমের উপর রেখে দিলেন। ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) এর চোখ মুবারক হতে টপটপ করে অশ্রু ঝরছিল আর হাত জোড় করে আরয করছিলেন, “সম্মানিত শাহাজাদা! আমার অপরাধ মাফ করে দিন। অজানা বশতঃ আমার ভুল হয়ে গেছে। হায়, আফসোস! একি ঘটল? যাঁর পবিত্র জুতা মোবারকে আমার সম্মানের মুকুট হওয়া উচিত,
তাঁরই কাধে আমি আরোহী হয়ে গেলাম।যদি কিয়ামতের দিন তাজদারেরিসালাত নবী করীম (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আহমদ রযা! আমার বংশের সন্তানের নরম কাঁধ কি এজন্যই ছিল যে, তা তোমার আরোহণের বোঝা বহণ করবে?তখন আমি কি উত্তর দিব! তখন হাশরের ময়দানে আমার ইশকের কতই না অবমাননা হবে?” কয়েকবার শাহজাদার মুখে ক্ষমারস্বীকারোক্তি নেয়ার পর ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) শেষ এই অনুরোধটুকু জানালেন, “সম্মানিত শাহজাদা! এ অজানা বশতঃ হয়ে যাওয়া ভুলের কাফ্ফারা তখনই পরিশোধ হবে যখন আপনিপালকিতে উঠে বসবেন আর আমি আমার কাঁধে পালকিটি বহন করব।”এ অনুরোধ শুনে উপস্থিত লোকজনের চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগল। কারো কারোতো কান্নার আওয়াজও শোনা গেল। হাজারো অস্বীকৃতির পরও শেষ পর্যন্ত শাহজাদাকে পালকিতে আরোহণ করতেই হল। এ দৃশ্যটি কতই হৃদয় বিদারক। আহলে সুন্নাতের মহা সম্মানিত ইমাম মজুরের কাতারে শামিল হয়ে আপন খোদা প্রদত্ত জ্ঞান ও বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতির সম্পূর্ণ সম্মানকে আল্লাহর মাহবুব (ﷺ) এর সন্তুষ্টি অর্জনার্থে অপরিচিতঅখ্যাত কুলী শাহাজাদার কদমে উৎসর্গ করছেন। (আনওয়ারে রযা, পৃ-৪১৫)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমিন (ﷺ)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আওলাদে রসূলের
প্রতি যার ভালবাসার এমনই অবস্থা, তাঁর
ইশকে রাসূলের অনুমান কে করতে পারে?
“তেরে নচ্লে পাক মে হে বাচ্চা বাচ্চা নূর কা,
তু হে আইনে নূর তেরা সব গারানা নূর কা।”
(হাদায়েখে বখশিশ শরীফ)
ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) যেখানে একজন আশিকে রাসূল ও কারামত সম্পন্ন একজন ওলী ছিলেন। এমনকি একজন জবরদস্ত আলিমে দ্বীনও ছিলেন। কমবেশি ৫০টি বিষয়ের উপর তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। দ্বীনি জ্ঞান সমূহের বরকতে দুনিয়াবী জ্ঞানও আপনা আপনি এগিয়ে এসে তাঁর পদচুম্বন করেছিল। এ প্রসঙ্গে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা পড়ুন এবং আনন্দিত হোন।
দুনিয়াবী জ্ঞানের দক্ষতার এক আশ্চর্যজনক ঘটনা
আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ স্যার যিয়াউদ্দিন ইউরোপে শিক্ষার্জন করেন। আর তিনি উপমহাদেশের প্রথম সারির গণিতবিদদের অন্তভূক্ত ছিলেন। ঘটনাক্রমে গণিতের একটি সমাধানের জন্য তিনি সমস্যায় পড়েন। আপ্রাণ চেষ্টার পরও সমাধান পেলেন না।
তাই জার্মানে গিয়ে ঐ গণিতের সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিলেন।হযরত আল্লামা সায়্যিদ সুলাইমান আশরাফ সাহিব কাদিরী রযবী (رحمة الله) তদানিন্তন যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি ডক্টর সাহেবকে পরামর্শ দিলেন এবং বারংবার জোর দিচ্ছিলেন যে, “আপনি জার্মানে যাবার কষ্ট ভোগ করার পরিবর্তে এখান থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টার সফর করে বেরেলী শরীফ গিয়ে ইমামে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله) থেকে এ সমস্যার সমাধান নিয়ে নিন।”
ডক্টর সাহেব অবাক হয়ে বললেন, “আপনি এ কি বলছেন, এ গণিতের সমাধানও কি এমনই একজন মাওলানা দিতে পারেন যিনি কখনো কলেজের মুখ পর্যন্ত দেখেননি? না বাবা! আমি বেরেলী শরীফে গিয়ে আমার সময় নষ্ট করতে পারব না।” কিন্তু সায়্যিদ সুলাইমান শাহ সাহিব (رحمة الله) এর বারবার অনুরোধের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর সাথে মাদীনাতুল মুর্শিদ বেরেলী শরীফ উপস্থিত হলেন এবং ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) এর দরবারে হাযির হলেন। তিনি (رحمة الله) এর শারীরিক অবস্থাও তখন ভাল ছিল না। কাজেই ডক্টর সাহেব আরয করলেন, “মাওলানা! আমার মাসআলা খুবই জটিল। হঠাৎ জিজ্ঞাসা করার মত সমস্যা নয়। একটু শান্ত পরিবেশ পেলে আরয করব। তিনি (رحمة الله) বললেন: “আপনি বলুন,“ডক্টর সাহেব সমস্যা পেশ করলেন। ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) তাৎক্ষণিকভাবেই সেটার সমাধান বলে দিলেন।জবাব শুনে ডক্টর সাহেব অবাক। নিজে নিজে বলে উঠলেন, “ইতিপূর্বে ইলমে লাদ্দুন্নীর কথা লোকমুখে শুনে আসলেও আজ কিন্তু নিজ চোখে দেখলাম। আমিতো এ মাসআলার সমাধানের জন্য জার্মান যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলাম। কিন্তু মাওলানা সায়্যিদ সুলাইমান আশরাফ কাদিরী রযবী সাহিব (رحمة الله) আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন।”
ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله) তাঁর স্বহস্তে লিখিত একটি রিসালা আনালেন। তাতে অধিকাংশ ত্রিভুজ ও বৃত্তই অঙ্কিত (জ্যামিতিক সমাধান) ছিল। এটা দেখে ডক্টর সাহেব বিস্ময় সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। আর বলতে লাগলেন, “আমিতো এ জ্ঞানার্জনের জন্য দেশ বিদেশে সফর করেছি, বিরাট অংকের টাকা পয়সা ব্যয় করেছি, ইউরোপীয় ওস্তাদ মন্ডলীর জুতা পর্যন্ত সোজা করেছি, এর ফলে সামান্য কিছু অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আপনার জ্ঞানের সামনে আমিতো নিছক একজন ‘মক্তবের শিশু’। মেহেরবানী করে এটা বলবেন কি, এ বিষয়ে আপনার শিক্ষক কে?” বললেন, “কোন ওস্তাদ নেই। আমার সম্মানিত পিতার নিকট থেকে চারটি নিয়ম যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ এজন্যই শিখেছিলাম যে, এগুলো সম্পত্তির হিসাবে প্রয়োজন হয়। ‘শরহে চুগমীনী’ মাত্র শুর“ করেছিলাম তখন পিতা মহোদয় (رحمة الله) বললেন, “কেন অযথা সময় নষ্ট করছ, তাজেদারে মাদীনা নবী করীম (ﷺ) এর দরবার থেকে এই জ্ঞান তোমাকে এমনিতেই শিখিয়ে দেয়া হবে।” তাই এসব যা কিছু আপনি দেখছেন তা সবই প্রিয় নবী (ﷺ) এরই দয়া।”
“মাসায়েল জিসত কে জিতনে বি থেহ পেছিদা পেছিদা,
নবী কে ইশক নে হাল কর দিয়ে পুশিদা পুশিদা।”
ডক্টর যিয়াউদ্দীন সাহেবের উপর ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله)এর জ্ঞানগত মহত্ব ও চরিত্র মাধুর্যের এমন প্রভাব পড়েছিল যে, তিনি তখন থেকে নামায ও রোযা নিয়মিতভাবে পালন করা শুর“ করে দেন। আর চেহারায় দাড়ি মুবারকও সাজিয়ে নিলেন। (হায়াতে আলা হযরত,
খন্ড-১, পৃ-২২২, ২২৯)
তাঁদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
“নিগাহে ওলী মে ওহ তাছির দেখি,
বদলতী হাজারো কি তকদীর দেখি।
”আলা হযরত (رحمة الله) এর শানে মানকাবাত
তুনে বাতিল কো মিটায়া এ ইমাম আহমদ রযা,
দ্বীন কা ঢঙ্কা বাজায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
দাওরে বাতিল আওর জালালত হিন্দ মে থা জিস গড়ি,
তু মুজাদ্দিদ বন কে আয়া এ ইমাম আহমদ রযা।
আহলে সুন্নাত কা চমন সর সব্জ শাদাব থা,
আওর রঙ্গ তুম নে ছড়ায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
তুনে বাতিল কো মিটাকর দ্বীন কো বখশী জিলা,
সুন্নাতো কো ফির জিলায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
এ ইমামে আহলে সুন্নাত! নায়েবে শাহে উমাম,
কিজিয়ে হাম পর বি ছায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
ইলম কা চশমা হোয়া হে মাওজ জান তেহরীর মে,
জব কলম তুনে উঠায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
হাশর তক জারী রাহে গা ফয়য কিউ কে তুম নে হে,
ফয়য কা দরিয়া বাহায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
হে বদরগাহে খোদা আত্তারে আজিজ কি দুআ,
তুম পে হো রহমত কা ছায়া এ ইমাম আহমদ রযা।
না