❏ মৃতদের জন্য দোয়া, সদকায়ে জারিয়া ও উপকারী ইলিম


মৃতদের জন্য সদকায়ে জারিয়া, নেক সন্তানের দোয়া ও উপকারী ইলিম তথা যে ইলিম দ্বারা লোকেরা উপকৃত হয়েছে কিংবা এলমে বাতেন, এগুলোর দ্বারাও মৃত ব্যক্তিরা উপকার লাভ করেন। যেমন নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন,


حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ، أَخْبَرَنِي الْعَلَاءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ


“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যখন কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩ টি আমল ব্যতীত: ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলিম যা দ্বারা লোকেরা উপকার লাভ করে, ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ৪৩১০ 

・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৮৪৪ 

・সুনানে দারেমী, হাদিস নং ৫৭৮ 

・মেসকাত শরীফ, হাদিস ২০৩ 

・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:


ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)  থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, সাদকায়ে জারিয়া ও ইলিম যদিও মানুষের চেষ্টার ফসল, কিন্তু মৃত ব্যক্তির জন্য তার সন্তানের দোয়া তার নিজস্ব আমল নয়। অথচ মৃতের পক্ষে যে তার দোয়া উপকার হয় তা এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। 


❍ এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে আরো উল্লেখ আছে,


أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْأُشْنَانِيُّ، أنا أَبُو عَلِيٍّ الْحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، نا الْفَضْلُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ سُلَيْمَانَ الْأَنْطَاكِيُّ، نا مُحَمَّدُ بْنُ جَابِرِ بْنِ أَبِي عَيَّاشٍ الْمِصِّيصِيُّ، نا عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، نا يَعْقُوبُ بْنُ الْقَعْقَاعِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا الْمَيِّتُ فِي الْقَبْرِ إِلَّا كَالْغَرِيقِ الْمُتَغَوِّثِ، يَنْتَظِرُ دَعْوَةً تَلْحَقُهُ مِنْ أَبٍ أَوْ أُمٍّ أَوْ أَخٍ أَوْ صَدِيقٍ، فَإِذَا لَحِقَتْهُ كَانَتْ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيُدْخِلُ عَلَى أَهْلِ الْقُبُورِ مِنْ دُعَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ أَمْثَالَ الْجِبَالِ، وَإِنَّ هَدِيَّةَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ الِاسْتِغْفَارُ لَهُمْ


-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: কবরে মৃত ব্যক্তির অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায়। সে একান্ত প্রতিক্ষায় থাকে যে, পিতা-মাতা, ভাই অথবা কোন বন্ধুর দোয়া তার কাছে পৌছে। আর যখন তার নিকট কোন দোয়া পৌছে, তখন ইহা তার নিকট দুনিয়া ও ইহার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়ে উৎকৃষ্ট হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’লা কবরের বাসিন্দাদেরকে তাদের জীবিত আত্বীয়-স্বজনদের থেকে পেশকৃত সওয়াবকে পাহাড় সমপরিমান আকার দান করেন। মৃতদের জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া বা তোহফা হচ্ছে ‘ক্ষমা প্রার্থনা করা’।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৮৮ পৃ: হাদিস নং ৭৫২৭ 

・দায়লামী শরীফ মাজহারী শরীফ, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:


এই হাদিস দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তিদের জন্য আমরা কোন নেক আমল করে তাদের রুহে সওয়াব রেছানী করলে তারা কত খুশি হয় ও তারা কত উপকৃত হয়। এই দোয়া ও সদকার দ্বারা কবরে থাকার পরেও তাদের ক্ষমা প্রাপ্তিলাভ হবে এবং গোনাহ মুক্ত হয়ে কেয়ামতের মাঠে উঠবে (সুবহানাল্লাহ)। 


❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ طَاهِرٍ قَالَ: نا جَدِّي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: نا حَمَّادُ بْنُ زِيَادٍ الْبَصْرِيُّ قَالَ: نا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، وَكَانَ جَارًا لَنَا قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أُمَّتِي أُمَّةٌ مَرْحُومَةٌ، مُتَابٌ عَلَيْهَا، تَدْخُلُ قُبُورَهَا بِذُنُوبِهَا، وَتَخْرُجُ مِنْ قُبُورِهَا لَا ذُنُوبَ عَلَيْهَا، 


“হযরত আনাস (رضي الله عنه)  বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ)  কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: আমার উম্মত অনুগ্রহপ্রাপ্ত উম্মত, তারা গুনাহ সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করবে কিন্তু গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে কবর থেকে উঠবে। (মুমিনগণ তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে তারা পবিত্র হয়ে কবর থেকে উঠবে।)


তথ্যসূত্রঃ

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ১৮৭৯ 

・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ: 

・মুসনাদু ফিরদৌস, হাদিস নং ১৬৬৩ হযরত মুয়াজ রা: থেকে


এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর বাসীর জন্য সওয়াব রেছানী করে দোয়া করার মাধ্যমে তারা প্রচুর উপকার লাভ করবে। এমনকি তারা গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করবে। হাশরের ময়দানে তারা গোনাহ থেকে পবিত্র হয়ে উঠবে। হাদিসটি সনদগতভাবে সমালোচিত হলেও অন্যান্য হাদিসের মাআনা দ্বারা ইহার সমর্থন পাওয়া যায় বিধায় এর মাআনা গ্রহণযোগ্য।

Top