❏ পুত্রের প্রতি নূহ (عليه السلام)-এর উপদেশ
ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবন আমর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময়ে রেশমের ঘুণ্ডিযুক্ত পাড়বিশিষ্ট (অর্থাৎ অতি উন্নতমানের) জুব্বা পরিহিত এক বেদুঈন তথায় আগমন করে। এসে সে বলল, ‘তোমাদের সঙ্গীটি অশ্বারোহীর পুত্র অশ্বারোহীদেরকে (অর্থাৎ বংশগত সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে) হীন করেছে আর রাখালের বাচ্চা রাখালদেরকে (অর্থাৎ বংশগত নীচ লোকরেদকে) উপরে তুলে দিয়েছে।’
বর্ণনাকারী বলেনঃ একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জুব্বা চেপে ধরে বললেন, ‘তোমার গায়ে তো আমি নির্বোধের পোশাক দেখছি না!’ তারপর তিনি বললেন, ওফাতের সময় আল্লাহর নবী নূহ (عليه السلام) তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি। তোমাকে আমি দু’টি কাজ করার আদেশ দিচ্ছি এবং দুটি কাজ করতে নিষেধ করছি। তোমাকে আমি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর আদেশ দিচ্ছি। কারণ, সাত আসমান ও সাত যমীনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে সাত আসমান ও সাত যমীনের চাইতে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লাটি ভারী হবে। আর যদি সাত আসমান ও সাত যমীন একটি খোলা মুখ আংটা হয় আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী’ সে খোলা মুখ চাপ প্রয়োগে বন্ধ করতে চায় তবে সে তা পারবে, কারণ সবকিছুর সংযুক্তি এর দ্বারাই হয়ে থাকে এবং এর উসিলায়ই সৃষ্টি জগতের সকলের জীবিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। আর আমি তোমাকে শিরক ও অহঙ্কার থেকে বারণ করছি।’
বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আমি বা অন্য কেউ একজন বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! শিরক কি তাতো আমরা জানি। কিন্তু অহংকার জিনিসটা কি? এই যে আমাদের কারো সুন্দর ফিতা যুগল বিশিষ্ট সুন্দর এক জোড়া জুতা থাকা কি অহংকার?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘না। বলেন, ‘তাহলে কি উন্নতমানের পোশাক পরিধান করা অহংকার?’ আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘না।’ প্রশ্নকারী বললেন, ‘তাহলে কি আরোহণের পশু থাকা?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘না।’ প্রশ্নকারী আবার বললেন, ‘তা হলে কারো একাধিক সঙ্গী-সাথী থাকা, যারা তার নিকট এসে বসে?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘না।’ অবশেষে আমি বললাম কিংবা বলা হলো, ‘তাহলে অহংকার কি, হে আল্লাহর রাসূল!’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ سفه الحق وغمض الناس অর্থাৎ সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা।
এ হাদীসটির সনদ যদিও সহীহ্, সিহাহ্ সিত্তার সংকলকগণ তা বর্ণনা করেননি।
আবুল কাসিম তাবারানী (رحمة الله) আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর (رضي الله عنه) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ পুত্রের প্রতি নূহ (عليه السلام)-এর উপদেশের মধ্যে এও ছিল যে, আমি তোমাকে দুটি স্বভাব অবলম্বন করার আদেশ দিচ্ছি এবং দু’টি স্বভাব থেকে তোমাকে বারণ করছি .....।
আবু বকর, বাযযার ও আবদুল্লাহ ইবন উমর ইবন খাত্তাব (رضي الله عنه)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে হাদীসটি হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবন 'আমর ইবন আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। যেমন আহমদ তাবারানী (رحمة الله) তা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আহলে কিতাবগণ মনে করেন যে, নূহ (عليه السلام) যখন নৌকায় আরোহণ করেন; তখন তাঁর বয়স ছিল ছ'শ বছর। ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে পূর্বে আমরা এরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছি। তারপর তিনি তিনশ পঞ্চাশ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এ বক্তব্যে আপত্তি রয়েছে। তাছাড়া এ অভিমত ও কুরআনের প্রতিপাদ্যের মাঝে যদি সমন্বয় সাধন করা সম্ভব না হয়; তাহলে আহলে কিতাবদের অভিমতটি স্পষ্টতই ভ্রান্ত। কেননা কুরআন প্রমাণ করে যে, নূহ (عليه السلام) তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে নবুওতের পর ও প্লাবনের পূর্বে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। তারপর প্লাবন তাদেরকে পাপাচারী হিসাবে গ্রাস করে। তারপর তিনি কতকাল বেঁচেছিলেন তা আল্লাহই ভালো জানেন। নবুওত প্রাপ্তির সময় তার বয়স ছিল চার শ’ আশি বছর এবং প্লাবনের পর তিনি তিনশ’ পঞ্চাশ বছর বেঁচেছিলেন। এ মর্মে ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তথ্যটি যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে বলা যায় যে, তিনি এক হাজার সাতশ’ আশি বছর আয়ু পেয়েছিলেন।
এদিকে নূহ (عليه السلام)-এর কবর সম্পর্কে ইবন জারীর ও আযরাকী আবদুর রহমান ইবন সাবিত থেকে বা অন্য কোন তাবেয়ী সূত্রে মুরসালরূপে বর্ণনা করেন যে, নূহ (عليه السلام)-এর কবর হলো মসজিদুল হারামে। এ অভিমতটি সে অভিমত অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী ও সুপ্রমাণিত যা পরবর্তী যুগের বেশ কিছু আলিম উল্লেখ করেন যাতে বলা হয়ে থাকে যে, নূহ (عليه السلام)-এর কবর সে ভূখণ্ডে অবস্থিত বর্তমানে যা ‘কারক-ই-নূহ' নামে পরিচিত এবং সেখানে তার কবরকে কেন্দ্র করেই একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।