❏ মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্ব সম্পাদন করা


মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্ব আদায় করেও ইহার সওয়ার মৃত ব্যক্তি পাবে। এ মর্মে একাধিক ছহীহ্ হাদিসে বর্ণিত আছে।


❍ যেমন লক্ষ্য করুন,

حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، أنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ، يُحَدِّثُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنَّ أُخْتِي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ، وَإِنَّهَا مَاتَتْ يَعْنِي وَلَمْ تَحُجَّ قَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ، أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟ قَالَ: نَعَمْ

-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)  বলেন, নবী করিম (ﷺ)  এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন: আমার এক বোন মান্নত করে ছিল হজ্ব আদায় করার, কিন্তু সে মারা গেছে। প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বললেন: সে যদি ঋণগ্রস্থ থাকত তাহলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সে বলল: হ্যাঁ।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬৬৯৯ 

・মুসনাদে ইবনে জা’দ, ১৭১০ 

・ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ১১৬০১ 

・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩২৯৫ 

・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১৫৪৪ 

・মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৫২৩০ 

・ইমাম তাহাবী: শরহে মুশকিলুল আছার, হাদিস নং ২১৪৭ 

・ইমাম তাহাবী: শরহে মাআনীল আছার, হাদিস নং ৪৮১৯ 

・ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ, হাদিস নং ১৮৫৫ 

・মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ২৪৪৩ 

・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, ১৫৮৭১ 

・তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৭ পৃ:


এই হাদিসটিও ঈসালে সওয়াবের কথা প্রমাণ করে। কারণ মৃত বোনের পক্ষে মান্নতকৃত হজ্ব আদায় করে ইহার সওয়াব তার বোনের রুহে পৌছানো ঋণ পরিশোধের ন্যায় এবং ইহা রাসূলে করিম (ﷺ)  কর্তৃক অনুমোদিত। 


❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,


حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ الْفَضْلِ الْأَسْفَاطِيُّ قَالَ: نا هُرَيْمُ بْنُ عُثْمَانَ الرَّاسِبِيُّ قَالَ: نا سُوَيْدٌ أَبُو حَاتِمٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوسَى بْنِ سَلَمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ امْرَأَةً جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَحُجُّ عَنْ أُمِّي، فَقَدْ مَاتَتْ؟ قَالَ: أَرَأَيْتِ إِنْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ فَقَضَيْتِيهِ، أَلَيْسَ قَدْ كَانَ مَقْبُولًا مِنْكِ؟ قَالَتْ: بَلَى فَأَمَرَهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا


-“হযরত উকবা ইবনে আমের (رضي الله عنه)  বর্ণনা করেন, একবার একজন মহিলা রাসূল (ﷺ)  এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার মা ইন্তিকাল করেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারি? প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বললেন: তোমার মায়ের যদি ঋণের বোঝা থাকত আর ইহা তুমি আদায় করলে কি আদায় হতনা? সে বলল: হ্যাঁ। এরপর রাসূল (ﷺ)  তাকে হজ্ব পালন করার নির্দেশ দিলেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ইমাম তাবারানী: মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ৪২১৯ 

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৪৪ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে ছাগীর, হাদিস নং ১৩৭৫ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু কুবরা, হাদিস নং ৮২২৮ 

・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:


𓈃 এই সনদে ‘সুয়াইদ আবু হাতিম’ নামক রাবী আছে যার মূল নাম

سويد بن حجير بن بيان الباهلي (সুয়াইদ ইবনে হুজাইর ইবনে বায়ান বাহেলী)। লা-মাজহাবীরা তার ব্যাপারে সমালোচনার চেস্টা করে। অথচ তার ব্যাপারে ইমামগণের অভিমত লক্ষ্য করুন:-


قال أبو طالب عن أحمد من الثقات وقال ابن المديني وأبو داود والنسائي ثقة وقال أبو حاتم صالح وذكره ابن حبان في الثقات قلت وقال العجلي بصري تابعي ثقة وقال أبو بكر البزار في السنن له ليس به بأس


-“আবু তালেব ইমাম আহমদ (رحمة الله) থেকে বলেন: সে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত। ইমাম আলী ইবনে মাদানী, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসাঈ বলেছেন: সে বিশ্বস্ত। ইমাম আবু হাতেম বলেন: সে গ্রহণযোগ্য। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইমাম ইজলী বলেন: সে তাবেঈ বিশ্বস্ত। ইমাম আবু বকর বাজ্জার তার ‘সুনানে’ বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৪৭৯) 


ذكره ابن خلفون في الثقات وخرج أبو عوانة حديثه في صحيحه، وكذلك الحاكم النيسابوري

𓈃 -“ইবনে খালিফুন তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু আওয়ানাহ তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ ইমাম হাকেম (رحمة الله) ছহীহ্ রূপে বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৯২)


অতএব, এই হাদিস ছহীহ্। দেখুন! মৃত মায়ের অছিয়তকৃত হজ্ব আদায় করে ইহার সওয়ার মায়ের রুহে বকশিয়ে দেওয়া মায়ের ঋণ আদায়ের তুল্য (সুবহানাল্লাহ)। 


❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,


أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، نا أَبُو عُثْمَانَ عَمْرُو بْنُ عَبْدِ اللهِ الْبَصْرِيُّ، نا أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، أنا أَحْمَدُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ دِينَارٍ، بِالسُّقْيَا أَبُو الْعَوَّامِ، نا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ يَعْنِي الْحَارِثِيَّ، عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ السَّدُوسِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ  قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ عَنْ وَالِدَيْهِ بَعْدَ وَفَاتِهِمَا كُتِبَ لَهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لِلْمَحْجُوجِ عَنْهُمَا أَجْرُ حَجَّةٍ تَامَّةٍ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْقَصَ مِنْ أُجُورِهِمَا شَيْئٌ 


-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه)  বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরে তাদের পক্ষ থেকে হজ্ব পালন করে, আল্লাহ তা’লা তাদের জন্য দোজখ থেকে মুক্তির সনদ লিপিবদ্ধ করেন এবং তাদের জন্য পূর্ণ হজ্বের সওয়াব দান করেন অথচ হজ্ব পালনকারীর সওয়াব থেকে একটুও সওয়াব কম করা হয়না।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ৭৫৩৪ 

・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১২৩৩৯ 

・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:


❍ সামান্য ব্যবধানে তাবারানী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)  থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। 


দেখুন! কোন আমল করে স্বীয় পিতা-মাতা বা মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দিলে এতে মৃত ব্যক্তিও সওয়াব পাবে এবং আমল কারীরও কোন সওয়াব কমতি হয়না।


Top