কিতাবঃ মন্দ মৃত্যুর কারণ
প্রকাশনায়ঃ দাওয়াতে ইসলামী
টেক্সট রেডী:মোহাম্মদ মারুফ,মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন আত্তারী,মোহাম্মদ সাকিব মাহমুদ আত্তারী
দরূদ শরীফ না পড়ার শাস্তি
বর্ণিত আছে: এক ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর কেউ স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির মাথায় অগ্নিপূজারীদের টুপি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পেল। তখন সে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলো, মৃত ব্যক্তি জবাব দিলো: যখন কোথাও প্রিয় নবী, মুহাম্মদ মুস্তফা ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর নাম মোবারক আসত, তখন আমি দরূদ শরীফ পড়তাম না। এ গুনাহের কারণে আমার কাছ থেকে মারেফত ও ঈমান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। (সবয়ে’ সানাবিল, ৩৫ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে নূরিয়া রযবীয়া,সক্কর)
এ বয়ানটি ২৩ রবিউল আখির ১৪১৯ হিজরি, শারজা থেকে আন্তজার্তিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা, বাবুল মদীনা করাচীতে সম্প্রচারিত হয়েছিল। প্রয়োজনীয় সংশোধন সহকারে লিখিত আকারে উপস্থাপন করা হলো।
স্বপ্নের ভিত্তিতে কাউকে কাফির বলা যাবে না
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেন তো? গুনাহের ভয়াবহতা কিরূপ ভয়ানক যে, এর কারণে মৃত্যুর সময় ঈমান বরবাদ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এখানে এ জরুরী মাসআলা হৃদয়ে গেঁথে নিন যে, কারো ব্যাপারে খারাপ স্বপ্ন দেখা নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার বিষয়। তথাপি নবী ছাড়া অন্য কারো স্বপ্ন শরীয়াতে দলীল নয়। আর শুধুমাত্র স্বপ্নের ভিত্তিতে কোন মুসলমানকে কাফির বলা যাবে না। এছাড়া স্বপ্নে মৃত মুসলমানের মধ্যে কোন কুফরের আলামত দেখলে কিংবা স্বয়ং মৃত মুসলমান স্বপ্নে নিজের ঈমান বরবাদ হয়ে যাওয়ার খবর দিলেও তাকে কাফির বলা যাবে না।
দরূদের স্থলে (দঃ, সঃ) লিখা না-জায়িয
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ِﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: জীবনে একবার দরূদ শরীফ পাঠ করা ফরয আর যিকরের জলসায় (যেখানে প্রিয় নবী ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর আলোচনা হচ্ছে সেখানে) দরূদ শরীফ একবার পড়া ওয়াজিব। চাই নিজে পবিত্র নাম নিক কিংবা অন্যের (মুখ) থেকে শুনে থাকুক। যদি এক মজলিসে একশ’বার (তাঁর পবিত্র নামের) আলোচনা আসে তখন প্রতিবার দরূদ শরীফ পড়া উচিত। যদি পবিত্র নাম নিলো কিংবা শুনল কিন্তু ঐ সময় দরূদ শরীফ পড়লো না, তবে অন্য কোন সময় তার বদলা স্বরূপ পড়ে নিবে।পবিত্র নাম লিখলে তখন দরূদ শরীফ অবশ্যই লিখবে। কেননা, অনেক ওলামায়ে কিরামের মতে ঐ সময় দরূদ শরীফ লিখা ওয়াজিব। আজকাল অধিকাংশ মানুষ দরূদ শরীফ (অথার্ৎ পরিপূর্ণ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ লিখার) পরিবর্তে বাংলায় দঃ, সঃ, সাঃ লিখে থাকে, এরকম লিখা নাজায়িয ও অকাট্য হারাম। অনুরূপভাবে َ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ও ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর স্থলে রঃ, রাঃ লিখে থাকে এটাও উচিত নয়। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ১০১-১০২ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা করাচী) আল্লাহ্ তায়ালার মোবারক নাম লিখে তাতে “জ্বীম” লিখবেন না। ﻋﺰﻭﺟﻞ বা ﺟﻞ ﺟﻼﻟﻪ পূর্ণভাবে লিখুন।
হারদম মেরী যবা পে দুরূদো সালাম হো,
মেরী ফুযুল গোয়ী কি আদত নিকালদো।
সুযোগকে কাজে লাগান
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এখন আপনারা যে ঘটনা শুনলেন, তাতে আল্লাহর রাসূল ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর পবিত্র নাম শুনে দরূদ শরীফ পাঠ না করা ব্যক্তির পরিণতির ব্যাপারে দেখা দুশ্চিন্তাজনক স্বপ্নের বর্ণনা রয়েছে। আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার অমুখাপেক্ষীতা ও তাঁর গোপন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভয় করা উচিত এবং দরূদ শরীফ পড়তে অলসতা না করা উচিত। আজকের পূর্বে হয়তো অনেক বার এমন হয়েছে যে, আমরা আমাদের প্রিয় নবী, হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ পবিত্র নাম শুনে বা শুনার পর ভুলে গিয়ে দরূদ শরীফ পড়িনি।যেহেতু এ সুযোগ দেয়া হয়েছে যে, যদি ঐ সময় দরূদ শরীফ না পড়ে থাকে তবে পরেও পড়ে নিতে পারবে। সুতরাং এখন পড়ে নিন এবং আগামীতে চেষ্টা করে তৎক্ষণাৎ পড়ে নিবেন অন্যথায় পরে পড়ে নেবেন।
উহ সালামত রহা কিয়ামত মে,
পড়লিয়ে জিসনে দিল সে চার সালাম।
মন্দ মৃত্যুর চারটি কারণ
শরহুস সুদূর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে: কতিপয় ওলামায়ে কিরাম ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: মন্দ মৃত্যুর কারণ হলো চারটি: (১) নামাযে অলসতা, (২) মদ্যপান, (৩) মাতা-পিতার অবাধ্যতা, (৪) মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া। (শরহুস সুদূর, ২৭ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
যে সব ইসলামী ভাই ﻣﻌﺎﺫﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ (আল্লাহর পানাহ!) নামায আদায় করে না কিংবা কাযা করে আদায় করে, ফজরের (নামাযের) জন্য উঠে না অথবা শরীয়াত সম্মত অপারগতা ছাড়া মসজিদে জামাআ’ত সহকারে (নামায) আদায় করার পরিবর্তে ঘরেই নামায আদায় করে নেন, তাদের জন্য (এতে) চিন্তার বিষয় রয়েছে। নামাযে অলসতা যেন মন্দ মৃত্যুর কারণ না হয়। অনুরূপভাবে মদ্যপানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য ও মুসলমানদেরকে নিজের মুখ অথবা হাত ইত্যাদি দ্বারা কষ্ট প্রদানকারীরা সত্যিকারের তাওবা করে নিন।সদরুল আফাযিল আল্লামা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: তাওবার মূল বিষয় হচ্ছে; আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। এটার তিনটি ভিত্তি রয়েছে। এক, অপরাধ স্বীকার করা। দুই, অনুতপ্ত হওয়া। তিন, পরিত্যাগের ইচ্ছা (অথার্ৎ- এ গুনাহ্ ত্যাগ করার পাকাপোক্ত ইচ্ছা)। যদি গুনাহ্ ক্ষতিপূরণ উপযুক্ত হয় তবে সেটার ক্ষতিপূরণ দেয়াও আবশ্যক। যেমন- বেনামাযীর তাওবার জন্য পূর্ববর্তী নামায সমূহের কাযা আদায় করাও জরুরী। (খাযাইনুল ইরফান, ১২ পৃষ্ঠা, বোম্বাই) যদি বান্দার হক নষ্ট করে থাকে, তাহলে তাওবা করার সাথে সাথে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ আবশ্যক। যেমন- মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী অথবা বন্ধু কিংবা অন্যান্যদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে, তাহলে তার কাছ থেকে এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যেন সে ক্ষমা করে দেয়। শুধুমাত্র মুচকি হেসে sorry বলে দেয়া প্রত্যেক বিষয়ে যথেষ্ট নয়!
নফস ইয়ে কিয়া জুলুম হে হার ওয়াক্ত তাজা জুরম হে,
নাতুয়া কে সর পে ইতনা বুঝ ভারী ওয়াহ ওয়াহ।
তিনটি অপরাধের ভয়াবহতার ঘটনা
“মিনহাজুল আবিদীন”-এ বর্ণিত রয়েছে: হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল বিন আ’য়ায ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নিজের এক ছাত্রের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলেন আর তার নিকট বসে সূরা ইয়াসিন শরীফ পড়তে লাগলেন। তখন ঐ ছাত্রটি বললো! “সূরা ইয়াসিন পড়া বন্ধ করুন।”এরপর তিনি তাকে কলেমা শরীফের তালকীন(১) (শিক্ষা) দিলেন। সে বললো, আমি কখনো এ কলেমা পড়বো না, “আমি এটার প্রতি অসন্তুষ্ট।” আর একথার উপরই তার মৃত্যু ঘটল। হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নিজের ছাত্রের মন্দ মৃত্যুতে খুবই আঘাত পেলেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজ ঘরে বসে কাঁদতে রইলেন। চল্লিশ দিন পর তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, ফিরিশতাগণ ঐ ছাত্রটিকে জাহান্নামে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কারণে আল্লাহ্ তোমার মরেফাত ছিনিয়ে নিয়েছেন? আমার ছাত্রদের মধ্যে তোমার স্থানতো অনেক উর্ধ্বে ছিলো! সে জবাব দিলো! তিনটি অপরাধের কারণে, (১) চোগলখুরী, আমি আমার বন্ধুদের একটা বলতাম আর আপনাকে আরেকটা বলতাম। (২) হিংসা, আমি আমার বন্ধুদের হিংসা করতাম। (৩) মদ্যপান, একটি রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে প্রতি বছর ১ গ্লাস মদ পান করতাম। (মিনহাজুল আবিদিন, ১৬৫ পৃষ্ঠা, মুয়াসিসাতুস্াসায়রুওয়ান, বৈরুত)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর ভয়ে কেঁপে উঠুন! এবং ভীত হয়ে নিজের সত্যিকারের প্রতিপালককে খুশি করার জন্য তাঁর নিরাশ্রয়দের আশ্রয়স্থল দরবারে ঝুকে পড়ুন।
(১) মুমুষুর্ ব্যক্তিকে “কলেমা পড়” এমন কথা বলবেন না, বরং তালকীনের শুদ্ধ পদ্ধতি এরূপ; মুমুষুর্ ব্যক্তির নিকটে উঁচু আওয়াজে কলেমা শরীফের যিকির করবে যেন তারও স্মরণ এসে যায়।আহ! চোগলখুরী, হিংসা ও মদ্যপানের কারণে অলিয়ে কামিলের শিষ্য কুফরী বাক্য উচ্চারণ করে মারা গেলো। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: মৃত্যুর সময় all (আল্লাহ্র পানাহ!) তার মুখ থেকে কুফরী বাক্য বের হয়, তবে কুফরের হুকুম দেয়া যাবে না। কেননা সম্ভবত মৃত্যুর কষ্টে আকল (জ্ঞান) চলে গেছে আর বেহুশ অবস্থায় এ বাক্য (মুখ থেকে) বের হয়ে গেছে। (বাহারে শরীয়াত, ৭ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা করাচী, দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা, দারুল মারেফা, বৈরুত)
কুকুরের আকৃতিতে হাশর
আফসোস! আজকাল চোগলখোরী (পরোক্ষ দুনার্ম) এরূপ ছড়িয়ে পড়েছে যে, অধিকাংশ মানুষ সম্ভবত বুঝতেই পারে না যে, আমি চোগলখোরী করছি। চোগলখোরী আখিরাতের জন্য মারাত্মক বিনষ্টকারী। যেমন- মদীনার তাজেদার, হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ইরশাদ করেন: “গীবত, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, চোগলখোরী ও নিদোর্ষ মানুষের দোষ অন্বেষণ কারীদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) কুকুরের আকৃতিতে উঠাবেন। (আত্তারগীব ওয়াত্তরহীব, ৩য় খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত) অন্য এক হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। (সহীহুল বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬০৫৬, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
চোগলখোরীর সংজ্ঞা
ধ্বংসকারী গুনাহ্ সমূহ থেকে বাঁচা জরুরী এবং এগুলো থেকে বাঁচার জন্য প্রায়ই এগুলোর পরিচয় লাভ করাও জরুরী। এখানে চোগলখোরীর সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হচ্ছে। আল্লামা আইনী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ইমাম নববী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ থেকে উদ্ধৃত করেন: কারো কথা ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে অন্যকে বলে দেয়া হচ্ছে চোগলখোরী। (উ’মদাতুল ক্বারী, ২য় খন্ড, ৫৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১৬, দারুল ফিকির, বৈরুত)
আমরা কি চোগলখোরী থেকে বেঁচে থাকি?
আফসোস! অধিকাংশ মানুষের কথা-বাতার্য় আজকাল গীবত ও চোগলখোরীর ব্যাপারটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্ধুদের বৈঠক হোক কিংবা ধমর্ীয় সমাবেশের পরে আলাপের বৈঠক, বিয়ের অনুষ্ঠান হোক কিংবা শোকের অনুষ্ঠান, কারো সাথে সাক্ষাৎ হোক কিংবা ফোনে কথা বাতার্, কয়েক মিনিটও যদি কারো সাথে কথাবাতার্ বলার সুযোগ হয় আর দ্বীনী বিষয়ে জ্ঞানী কোন বিচক্ষণ আলিম যদি (আমাদেরকে) ঐ কথাবাতার্র (ভাল-মন্দ দিক) “পরিচয়” করে দেন তাহলে সম্ভবত প্রায় মজলিসে (বৈঠক) অন্যান্য গুনাহ্রে বাক্য সমূহের সাথে সাথে তিনি ডজন খানেক “চোগলখোরীও” প্রমাণ করে দেবেন। হায়! হায়! আমাদের কি হবে! পুনরায় একবার এ হাদীস শরীফের ব্যাপারে ভেবে দেখুন, “চোগলখোর জান্নাতে যাবে না।” হায়! এমন যদি হতো।সত্যিকার অর্থে আমাদের মুখের কুফ্লে মদীনা(১) অর্জিত হয়ে যেতো। হায়! এমন যদি হতো, প্রয়োজন ছাড়া কোন শব্দ মুখ থেকে বের না হতো। অধিক কথোপকথনকারী এবং দুনিয়াদার বন্ধুদের মধ্যে অবস্থানকারীর জন্য গীবত ও বিশেষত চোগলখোরী থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার। আহ! আহ! আহ! হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “যে ব্যক্তির কথাবাতার্ অধিক হয়, তার ভুল ত্রুটিও বেশি হয়ে থাকে। আর যার ভুল ত্রুটি বেশি হয়, তার গুনাহ্ বেশি হয়ে থাকে এবং যার গুনাহ্ বেশি হয়, সে জাহান্নামের অধিক উপযুক্ত।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ৮৭-৮৮ পৃষ্ঠা, ৩২৭৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম, হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ইরশাদ করেন: “ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে অতিরিক্ত কথাবাতার্কে থামিয়ে রাখে আর সম্পদ থেকে অতিরিক্তটুকু খরচ করে।” (আল মু’জামুল কবীর, লিত্তাবরানী, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭১,৭২, দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরবী, বৈরুত) এক সাহাবী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন: কোন ব্যক্তি অনেক সময় আমাকে এমন কথা বলে ফেলে যে, তার জবাব দেয়া আমার এত পছন্দ হয় যে, পিপাসার্ত ব্যক্তির নিকট ঠান্ডা পানিও হয়তো এরূপ পছন্দ হয় না। কিন্তু আমি এ বিষয়ে ভীত হয়ে জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকি যে, আবার যেন এটা অনর্থক কথায় পরিণত হয়ে না যায়। (এতহাফুস সাদাতুল মুত্তাক্বীন, ৯ম খন্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
(১) অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বাঁচার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে মুখে (মাদানী তালা) লাগানোকে কুফ্লে মদীনা বলা হয়।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঐ সাহাবী তো অনর্থক কথার ভয়ে বৈধ জবাব দেয়া থেকেও বিরত রইলেন আর আমরা যখন কারো কথার বিস্তারিত বর্ণনা দিই, তখন না গীবত ত্যাগ করি, না চোগলখোরী, না দোষ বর্ণনা থেকে বিরত থাকি, না অপবাদ আরোপ থেকে। হায়! হায়! আমাদের কি হবে! হে আল্লাহ্! আমাদেরকে যথার্থ জ্ঞান দাও এবং গুনাহযুক্ত কথাবাতার্ থেকে বিরত না থাকা (আমাদের মত)লোকদেরকে সত্যিকার অর্থে মুখের কুফ্লে মদীনা নসীব করো।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণনাকৃত ঘটনায় হিংসার অমঙ্গলেরও আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে। আফসোস! হিংসার রোগও খুব বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে, “হিংসা নেকীসমূহকে এভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়ীকে খেয়ে ফেলে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪২১০, দারুল মারিফা, বৈরুত)
হিংসার সংজ্ঞা
হিংসাকারীকে হিংসুক আর যাকে হিংসা করা হয়, তাকে হিংসাকৃত বলা হয়। “লিসানুল আরব”-এর ৩য় খন্ডের ১৬৬নং পৃষ্ঠায় হিংসার সংজ্ঞা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: ﺍﻟﺤﺴﺪ ﺍﻥ ﺗﺘﻤﻨﻰ ﺯﻭﺍﻝ ﻧﻌﻤﺔ
ﺍﻟﻤﺤﺴﻮﺩ ﺍﻟﻴﻚ অথার্ৎ হিংসা হলো, তুমি ইচ্ছা করো যে, হিংসাকৃতের নেয়ামত তার কাছ থেকে বিনষ্ট হয়ে তোমার অর্জিত হোক।
সহজ ভাষায় হিংসার সংজ্ঞার সারাংশ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণনাকৃত সংজ্ঞা থেকে জানা গেলো, কারো কাছে কোন নেয়ামত দেখে ইচ্ছা করা যে, হায়! যদি এমন হতো তার কাছ থেকে এ নেয়ামত দূর হয়ে আমি তা পেয়ে যেতাম। যেমন- কারো খ্যাতি ও সম্মানের প্রতি ঘৃণার মনমানসিকতা নিয়ে ইচ্ছা করা যে, এ ব্যক্তি কোন প্রকারে অপদস্ত হয়ে যাক আর তার জায়গায় আমার সম্মানের স্থান অর্জিত হোক। এছাড়া কোন ধনীর প্রতি জ্বলে পুড়ে এরূপ আশা করা যে, এ ব্যক্তির কোন উপায়ে যেন ক্ষতি সাধিত হয় আর সে যেন গরীব হয়ে যায় এবং আমি যেন তার জায়গায় ধনী হয়ে যাই। এ ধরনের আকাংখা করা হলো হিংসা। আর আল্লাহ্র পানাহ! এ মহামারী রোগ যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকাল অন্যের ব্যবসা বিনষ্ট করার জন্য খুবই চেষ্টা করা হয়। ঐ ব্যক্তির মালের শুধু শুধু দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে ঐ দোকানদারের প্রতি নানা অপবাদ দেয়া হয় আর এভাবে হিংসার কারণে মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, সম্মানহানী এবং জানি না আরো কি কি গুনাহ করে বসে। আহ্! এখন অধিকাংশ মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হতে চলেছে। পূর্ববর্তী মুসলমানরা কিরূপ ভালো মানুষ ছিলেন তা এ ঘটনা থেকে উপলব্ধি করুন।
সায়্যিদী কুতবে মদীনার ঘটনা
খলীফায়ে আ’লা হযরত, শায়খুল ফযীলত, সায়্যিদুনা ওয়া মাওলানা ওয়া মুরশিদুনা যিয়াউদ্দীন আহমদ কাদেরী রযবী মাদানী প্রকাশ কুত্বে মদীনা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তুকর্ীদের “শাসনামল” থেকেই মদীনা শরীফে ﺯﺍﺩﻫﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﺷﺮ ﻓﺎﻭﺗﻌﻈﻴﻤﺎ বসতী স্থাপন করেন। প্রায় সাতাত্তর (৭৭) বছর সেখানে অবস্থান করেন আর এখন জান্নাতুল বাক্বীতে তঁার মাযার রয়েছে। তঁার কাছে কেউ আরয করলেন, ইয়া সায়্যিদী! পূর্বের (সম্ভবত তুকর্ীদের সময়ের) মদীনাবাসীকে আপনি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কিরূপ পেয়েছেন? বললেন: একজন সম্পদশালী হাজী সাহেব গরীবদের মাঝে কাপড় বিতরনের উদ্দেশ্যে ক্রয় করার জন্য একজন কাপড় বিক্রেতার দোকানে গেলেন আর কাংখিত কাপড় বেশি পরিমাণে চাইলেন। দোকানদার বলল: আমি আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবো কিন্তু আবেদন হচ্ছে, আপনি পাশের দোকান থেকে তা খরিদ করুন। কারণ, ﺍﻟﺤﻤﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ আজকে আমার ভালো বিক্রি হয়েছে। ঐ বেচারা (আমার) প্রতিবেশী দোকানদারের বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। হযরত সায়্যিদী কুত্বে মদীনা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বললেন: পূর্বের মদীনাবাসী এরূপ ছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। দিল ছে দুনিয়া কি উলফত নিকালো!
ইস তাবাহী সে মওলা বাঁচালো, মুঝ কো দিওয়ানা আপনা বানালো, ইয়া নবী তাজদারে মদীনা।
সুদর্শন বালকের প্রতি আসক্ত দুজন মুয়ায্যিনের ধ্বংস
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন আহমদ মুয়ায্যিন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: আমি কাবা শরীফের তাওয়াফরত ছিলাম। এক ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি পড়লো, যে কাবা শরীফের গিলাফের সাথে জড়িয়ে একটি দোয়া বারবার করছিল। “হে আল্লাহ্ আমাকে দুনিয়া থেকে মুসলমান হিসেবেই বিদায় দিও।” আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: এ দোয়া ছাড়া অন্য কোন দোয়া কেন করছো না? সে বললো, আমার দুই ভাই ছিলো। বড় ভাই চল্লিশ বছর যাবৎ মসজিদে বিনা পারিশ্রমিকে আযান দিতে থাকেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলো তখন সে কুরআন শরীফ চাইলো। আমরা তাকে দিলাম, যাতে তা থেকে বরকত লাভ করে। কিন্তু কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে সে বলতে লাগলো: “তোমরা সকলে সাক্ষী হয়ে যাও, আমি কুরআনের সকল বিশ্বাস ও হুকুম সমূহের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি এবং খ্রীষ্টান ধর্ম অবলম্বন করছি। এরপর সে মারা গেলো। অপর ভাইটি ত্রিশ বৎসর যাবৎ মসজিদে বিনা পারিশ্রমিকে আযান দিলো। কিন্তু সেও শেষ পর্যন্ত খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করলো এবং মারা গেলো। তাই আমি নিজের মৃত্যুর ব্যাপারে ভীষণ চিন্তিত এবং সর্বদা উত্তম মৃত্যুর জন্য দোয়া করতে থাকি। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন আহমদ মুয়ায্যিন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার দুই ভাই শেষ পর্যন্ত এমন কি গুনাহ্ করতো?(যার কারণে তাদের ঈমান হারা হয়ে মৃত্যু হয়েছে) সে বললো: “তারা পরনারীর প্রতি আসক্ত ছিল এবং সুদর্শন বালকের (অথার্ৎ দাড়ি মোচ গজায়নি এমন ছেলেদের) যৌন উত্তেজনা সহকারে দেখতো।” (আর্রাওযুল ফায়িক্ব, ১৭ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়ের পর্দা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বিপদ হয়ে গেল! এখনও কি পরনারীদের থেকে পদার্হীনতা ও নিসঙ্কোচে মেলামেশা থেকে বিরত থাকবেন না? এখনও কি পরনারী এমনকি নিজের ভাবী, চাচী, জেঠী, মামী (তারাও শরীয়াত অনুযায়ী পরনারী) তাদের কাছ থেকে নিজের দৃষ্টিকে হিফাযত করবেন না? অনুরূপভাবে চাচাত, জেঠাত, মামাত, ফুফাত ও খালাত, এছাড়া শ্যালিকা ও ভগ্নিপতি পরস্পরের মধ্যে পদার্র বিধান রয়েছে। না-মুহরিম (যার সাথে বিবাহ বৈধ) পীর ও মুরীদনীর (মহিলা মুরীদ) মধ্যেও পদার্ রয়েছে। মুরীদনী না-মুহরিম পীরের হাত চুম্বন করতে পারবে না।
সুদর্শন বালককে যৌন উত্তেজনা সহকারে দেখা হারাম
সাবধান! সুদর্শন বালকতো আগুন, আগুন! সুদর্শন বালকের নৈকট্য, তার সাথে বন্ধুত্ব, তার সাথে ঠাট্টা-মশকরা করা, পরস্পর কুস্তি ধরা, টানাটানি করা ও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়ানো জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারে। সুদর্শন বালক থেকে দূরে থাকাতেই নিরাপত্তা নিহিত। যদিও ঐ বেচারার (সুদর্শন বালকের) কোন দোষ নেই।
সুদর্শন বালক হওয়ার কারণে তার মনে কষ্টও দিবেন না। তবে তার কাছ থেকে নিজেকে নিজে বাঁচানো অত্যন্ত জরুরী। কখনো সুদর্শন বালককে মোটর সাইকেলে নিজের পেছনে বসাবেন না। নিজেও তার পেছনে বসবেন না। কেননা আগুন সামনে হোক কিংবা পিছনে হোক সেটার তাপ সবার্বস্থায় পৌঁছবপ। উত্তেজনা না থাকলে তবুও সুদর্শন বালকের সাথে কোলাকুলি করা হচ্ছে ফিতনার স্থান। আর উত্তেজনারসহিত কোলাকুলি করা এমনকি করমর্দন করা (হাত মিলানো) বরং ফোকাহায়ে কিরাম ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: সুদর্শন বালকের প্রতি উত্তেজনা সহকারে দেখাও হারাম। (তাফসীরাতে আহমদিয়া, ৫৫৯ পৃষ্ঠা, পেশাওয়ার) তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এমনকি পোষাক-পরিচ্ছদ থেকেও দৃষ্টিকে হিফাযত করুন। তার ভাবনায় যদি উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তাহলে তা থেকেও বাঁচুন। তার লেখা কিংবা অন্য কোন বস্তুর মাধ্যমে যদি উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তবে তার সাথে সম্পর্কিত সকল বস্তু থেকে দৃষ্টিকে হিফাযত করুন। এমনকি তার ঘরের প্রতিও দেখবেন না। যদি তার পিতা বা বড় ভাই ইত্যাদিকে দেখলে তার (সুদর্শন বালকের) ভাবনা আসে এবং উত্তেজনা এসে পড়ে তাহলে তাদেরকেও দেখবেন না।
সুদর্শন বালকের সাথে ৭০ জন শয়তান
সুদর্শন বালকের মাধ্যমে ধোঁকাবাজ ও প্রতারক শয়তানের কৃত ধ্বংসাত্বক হামলা থেকে সাবধান করে আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন:বর্ণিত আছে; নারীর সাথে দুজন শয়তান থাকে আর সুদর্শন বালকের সাথে ৭০ জন (শয়তান থাকে)। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৭২১ পৃষ্ঠা) যাহোক পরনারী (অথার্ৎ যার সাথে বিবাহ বৈধ)
তার কাছ থেকে ও সুদর্শন বালক থেকে নিজের চক্ষুদ্বয় ও নিজের সত্ত্বাকে দূরে রাখা খুবই জরুরী, অন্যথায় এইমাত্র আপনি ঐ দু’ভাইয়ের মৃত্যুর বেদনাদায়ক পরিণামের সম্পর্কে শুনলেন যারা বাহ্যিকভাবে নেককার ছিল। দয়া করে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক মুদ্রিত সংক্ষিপ্ত রিসালা (লূত সম্প্রদায়ের ধ্বংসলীলা) পাঠ করুন।
নফস বে লাগাম তো গুনাহো পে উকসাতা হে,
তওবা তওবা করনে কি ভী আদত হোনী চাহিয়ে।
হজ্ব আদায় না করা মন্দ মৃত্যুর কারণ
আমাদের প্রিয় নবী, হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ইরশাদ করেছেন: যার হজ্ব করার ক্ষেত্রে প্রকাশ্য কোন ধরণের প্রয়োজনীয়তা বাঁধা হয়নি, কোন যালেম বাদশাহর পক্ষ থেকেও বাঁধা নেই, না তার এমন কোন রোগ রয়েছে যা তাকে হজ্ব আদায় করা থেকে বঁাধা প্রদান করে। এমতাবস্থায় সে হজ্ব আদায় করা ছাড়া মৃত্যুবরণ করল, তাহলে সে হয়ত ইহুদী হয়ে মরল নতুবা খ্রীষ্টান হয়ে মরল। (সুনানুদ্দারিমী, ২য় খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৭৮৫, বাবুল মদীনা, করাচী) জানা গেল, হজ্ব ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে অবহেলা করল এবং হজ্ব আদায় না করে মৃত্যুবরণ করল, তবে তার মন্দ মৃত্যু হওয়ার খুবই আশংকা রয়েছে।
আযানের সময় কথাবাতার্য় লিপ্ত ব্যক্তির মন্দ মৃত্যুর ভয়
সদরুশ শরীয়া বদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফের বরাতে উদ্ধৃত করেন: যে ব্যক্তি আযানের সময় কথাবাতার্য় লিপ্ত থাকে, তার (আল্লাহর পানাহ) মন্দ মৃত্যু হওয়ার ভয় রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)
আযানের উত্তর প্রদানকারী জান্নাতী হয়ে গেল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখন আযান শুরু হয় তখন কথাবাতার্ ও অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ রেখে আযানের উত্তর দেয়া উচিত। তবে যদি মসজিদের দিকে গমনরত কিংবা ওযূ করা অবস্থায় থাকে তবে চলাকালেও ওযু করার সময় উত্তর দেয়া যাবে। যখন একের পর এক আযানের আওয়াজ আসে তখন প্রথম আযানের উত্তর দেয়াটা যথেষ্ট। যদি সবগুলো আযানের উত্তর দেয়া হয় তবে উত্তম। আযানের উত্তর দাতারও অপূর্ব মযার্দা রয়েছে।
যেমন- তারীখে দামেস্কের ৪০তম খন্ডের ৪১২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন: এক ব্যক্তি যার বাহ্যিক বড় কোন নেক আমল ছিলোনা, তিনি মৃত্যু বরণ করলেন। তখন হুযুর পুরনূর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ সাহাবায়ে কিরাম ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর উপস্থিতিতে ইরশাদ করলেন: তোমরা কি জানো! আল্লাহ্ তায়ালা একে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন! এতে লোকেরা আশ্চর্য্য হলেন। (কেননা, বাস্তবিক তার কোন বড় নেক আমল ছিল না।) তাই এক সাহাবী তাঁর ঘরে গেলেন এবং তাঁর বিধবা বিবিকে জিজ্ঞাসা করলেন: তার কোন বিশেষ আমলের কথা আমাদেরকে বলুন। তখন তিনি জবাব দিলেন, (তার) আরতো কোন বিশেষ বড় আমল সম্পর্কে আমি জানি না। শুধু এতটুকুই জানি যে, দিন হোক কিংবা রাত, যখনই তিনি আযান শুনতেন তখন (আযানের) উত্তর অবশ্যই দিতেন। (তারীখে দামেস্ক লি ইবনে আসাকির, ৪০তম খন্ড, ৪১২-৪১৩ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত, দারুল ফিকির, বৈরুত)
আল্লাহ্ তায়ালার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের মাগফিরাত হোক। আযান ও আযানের উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আহকাম জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক মুদ্রিত রিসালা ফয়যানে আযান অবশ্যই পাঠ করবেন।
গুনাহে গদা কা হিসাব কিয়া উহ আগর ছে লাখ ছে হে ছিওয়া,
মগর আই আফু’ তেরে আফউ কা তো হিছাব হে না শুমার হে।
আগুন লাফিয়ে উঠে
হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন দিনার ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এক রোগীর শিয়রে উপস্থিত হলেন, যে মৃত্যুপথযাত্রী ছিলো। তাকে অনেকবার কলেমা শরীফের তালকীন করলেন। কিন্তু সে “দশ-এগার, দশ-এগার” বলতে লাগল! যখন তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো তখন সে বলল: আমার সামনে আগুনের পাহাড় বিদ্যমান,
যখন আমি কলেমা শরীফ পড়ার চেষ্টা করি তখন এ আগুন আমাকে জ্বালানোর জন্য লাফিয়ে উঠে। এরপর তিনি (মালিক বিন দিনার ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ) লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি কি কাজ করতো? তারা বললো: এ ব্যক্তি সুদখোর ছিলো এবং ওজনে কম দিতো। (তাযকিরাতুল আউলিয়া, ৫২-৫৩ পৃষ্ঠা, ইন্তিশারাতে গাঞ্জীনা, তেহরান)
ওজনে কম দেয়ার শাস্তি
আহ্! সুদখোর ও ওজনে কম দানকারীদের ধ্বংস! সামান্য টাকার জন্য নিজেই নিজেকে জাহান্নামের আগুনে অর্পন করার সাহস কারীরা? শুনুন! শুনুন! রূহুল বয়ানে বর্ণনা করা হয়েছে: যে ব্যক্তি ওজনে খিয়ানত করে, কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের গভীরে নিক্ষেপ করা হবে এবং দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বসিয়ে নির্দেশ দেয়া হবে, “এ পাহাড়গুলোকে ওজন করো।” যখন ওজন করতে শুরু করবে তখন আগুন তাকে জ্বালিয়ে দিবে। (রূহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৩৬৪ পৃষ্ঠা, কোয়েটা)
গর উন কে ফযল পে তুম ইতিমাদ করলেতে,
খোদা গাওয়াহ কে হাসিলে মুরাদ করলেতে।
একজন শায়খের মন্দ মৃত্যু
হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান ছাওরী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪও হযরত সায়্যিদুনা শায়বান রাঈ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ উভয়ে এক জায়গায় একত্রিত হলেন।সায়্যিদুনা সুফিয়ান ছাওরী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ সারারাত কাঁদতে রইলেন। সায়্যিদুনা শায়বান রাঈ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কঁাদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সুফিয়ান ছাওরী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বললেন: আমাকে মন্দ মৃত্যুর ভয় কাঁদাচ্ছে। আহ্! আমি একজন শায়খ থেকে চল্লিশ বৎসর যাবৎ ইলম অর্জন করেছি। তিনি ষাট বৎসর পর্যন্ত মসজিদুল হারামে ইবাদত করেছেন কিন্তু তার মৃত্যু কুফরের উপর হয়েছে। সায়্যিদুনা শায়বান রাঈ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বললেন: হে সুফিয়ান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তা তার গুনাহসমূহের বিপদ ছিলো। আপনি আল্লাহ্ তায়ালার নাফরমানী কখনো করবেন না। (সাবয়ে’ সানাবিল, ৩৪ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে নূরিয়্যা রযবীয়া, সক্কর)
ছুড়া জঙ্গ দিল কা ছুড়া দিরে দিরে,
হিজাবাতে জুলমত হটা দিরে দিরে।
কর আহিস্তা আহিস্তা যিকরে ইলাহী,
হো ফের মিদহাতে মুস্তফা দিরে দিরে।
ফিরিশতাদের সাবেক উস্তাদ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালা হচ্ছেন অমুখাপেক্ষী। তাঁর গোপন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কেউ জানেনা। কারো পক্ষে নিজের জ্ঞান কিংবা ইবাদতের উপর গর্ব করা উচিত নয়। শয়তান হাজার বৎসর ইবাদত করেছে। নিজের কঠোর সাধনা ও জ্ঞানের কারণে মুআল্লিমুল মালাকূত অথার্ৎ ফিরিশতাগণের শিক্ষক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঐ দূভার্গাকে অহংকার ডুবিয়েছে আর সে কাফির হয়ে গেল। এখন বান্দাদের পথভ্রষ্ট করার জন্য সে পূর্ণ চেষ্টা চালাচ্ছে। জীবন ভরতো কুমন্ত্রণা দিতেই থাকে, কিন্তু মৃত্যুর সময় পূর্ণ শক্তি ব্যয় করে যে, কিভাবে বান্দার মন্দ মৃত্যু হয় । যেমনিভাবে-
মাতা-পিতার আকৃতিতে শয়তান
বর্ণিত আছে: যখন মানুষের মৃত্যুর যন্ত্রণা চলতে থাকে, তখন দুজন শয়তান তার ডানে বামে এসে বসে পড়ে। ডান দিকের শয়তান তার পিতার আকৃতি ধরে বলে, বৎস! দেখো আমি তোমার মেহেরবান ও প্রিয় পিতা। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করো। কেননা, সেটাই সবচেয়ে উত্তম ধর্ম। বাম দিকের শয়তান মৃত্যুবরণকারীর মায়ের আকৃতিতে আসে আর বলে: আমার প্রিয় পুত্র! আমি তোকে নিজের পেটে রেখেছি, নিজের দুধ পান করিয়েছি এবং নিজের কোলে লালন-পালন করেছি। প্রিয় বৎস! আমি উপদেশ দিচ্ছি, ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করো। কেননা, এটাই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। (আত্ তাযকিরা লিল কুরতূবী, ৩৮ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
মৃত্যু কষ্টের এক বিন্দু
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যিই খুবই দুশ্চিন্তাজনক ব্যাপার। বান্দা যখন জ্বর কিংবা মাথা ব্যথা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয় তখন তার জন্য কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ মৃত্যুর সময়ের কষ্টতো খুবই বেশি হয়ে থাকে। “শরহুস সূদূর”-এ বর্ণিত রয়েছে: যদি মৃত্যু কষ্টের এক বিন্দু সমগ্র আসমান ও যমীনে বসবাসকারীদের উপর ফেলা হয় তবে সকলে মারা যাবে। (শরহুস সুদূর, ৩২ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত)
তাহলে এমন স্পর্শকাতর অবস্থায় যখন মা-বাবার আকৃতিতে শয়তানেরা ধোকা দিবে, তখন ইসলামের উপর মানুষ স্থির থাকা কিরূপ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।” কিমিয়ায়ে সা‘আদাত”-এ রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা আবূ দারদা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলতেন: খোদার শপথ! কেউ এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে না যে, মৃত্যুর সময় তার ঈমান অবশিষ্ট থাকবে কি থাকবে না! (কিমিয়ায়ে সা‘আদাত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৮২৫, ইনতিশারাতে গাঞ্জীনা, তেহরান)
ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাহা থা মরতে দম,
কবর মে পোঁহোচা দেখা আপ হে।
বন্ধুদের আকৃতিতে শয়তান
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: মৃত্যুর সময় শয়তান নিজের চেলাদেরকে মৃত্যু পথযাত্রীর বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের আকৃতিতে নিয়ে পৌঁছে। তারা সবাই বলে, ভাই! আমরা তোমার পূর্বে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছি। মৃত্যুর পর যা কিছু রয়েছে তা সম্পর্কে আমরা ভালভাবে অবগত রয়েছি। এখন তোমার পালা। আমরা তোমাকে সহানুভূতিশীল পরামর্শ দিচ্ছি যে, তুমি ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে নাও, কারণ এ ধর্মই আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে গ্রহণযোগ্য। যদি মৃত্যুপথযাত্রী তাদের কথা না মানে তবে অনুরূপভাবে অন্যান্য শয়তানরা বন্ধুদের আকৃতিতে এসে বলে, তুই খ্রীষ্টানদের ধর্ম গ্রহণ করে নাও, কারণ এ ধর্মই হযরত মূসা ﻋﻞﮦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭ ﺍﻟﺴﻼﻡ এর ধর্মকে রহিত করেছিলো।এভাবেই নিকট আত্মীয়দের আকৃতিতে দলগুলো এসে বিভিন্ন ভ্রান্ত দলগুলোকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়। সুতরাং যার ভাগ্যে সত্য থেকে ফিরে যাওয়া লিখা থাকে, সে ঐ সময় টলমল অবস্থায় পড়ে যায় আর ভ্রান্ত ধর্ম অবলম্বন করে নেয়। (আদ্ দুর্রাতুল ফাখিরা ফী কাশফে উ’লূমুল আখিরা, ৫১১ পৃষ্ঠা, মাজমূআ’তু রাসায়িলিল ইমাম আল গাযালী, দারুল ফিকির, বৈরুত)
কিসি আওর সে হামে কিয়া গরজ, কিসি আওর সে হামে কিয়া তলব,
হামে আপনে আক্বা সে কাম হে, না ইদর গিয়ে না উদর গিয়ে।
আমাদের কি হবে?
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের করুন অবস্থার প্রতি দয়া করুক। মৃত্যু যন্ত্রনার সময় জানিনা আমাদের কি হবে! আহ্! আমরা অনেক গুনাহ্ করেছি, নেকীর নাম মাত্র নেই। আমরা দোয়া করছি: হে আল্লাহ্! মৃত্যুর যন্ত্রনার সময় আমাদের নিকট শয়তান যেন না আসে, বরং রহমাতুল্লিল আলামিন, হুযুর পুরনূর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ যেন দয়া করেন।
নাযা’ কে ওয়াক্ত মুঝে জলওয়ায়ে মাহবুব দিখা,
তেরা কিয়া জায়েগা মে’ শাদ মরোঙ্গা ইয়া রব।
জিহ্বা আয়ত্বে রাখুন!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালার অমুখাপেক্ষীতা ও তাঁর গোপন ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলমান কম্পিত ও ভীত থাকা উচিত।জানিনা কোন নাফরমানী আল্লাহ্ তায়ালা এর অসন্তুষ্টি ও গযবকে উত্তেজিত করে দেয়। আর ঈমানের জন্য বিপদ তৈরী হয়ে যায়। তাই সর্বদা নিজের প্রতিপালকের সম্মুখে বিনয় প্রকাশ করতে থাকুন। জিহ্বাকে আয়ত্বে রাখুন। কারণ, বেশি কথা বলাতেও অনেক সময় মুখ থেকে কুফরী বাক্য বের হয়ে যায় এবং খবর থাকে না। সর্বদা ঈমান হিফাযতের চিন্তা করতে থাকা জরুরী। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: ওলামায়ে কিরাম ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: যার (জীবনে) ঈমান হারানোর ভয় থাকে না, মৃত্যুর সময় তার ঈমান হারা হয়ে যাওয়ার খুবই আশংকা রয়েছে। (আল মালফুয, ৪র্থ খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা, হামিদ এন্ড কোম্পানী, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর)
ইলাহী! উন কি মুহাব্বত কা গাও বাকী রহে,
দারোনে দিল ইয়ে সুলাগতা আলাও বাকী রহে।
গুনাহ কা বার কিয়ামত কা বাহরে পুর আসুভ,
ইলাহী! উন কি শাফায়াত কি নাও বাকী রহে।
উত্তম (নেক) মৃত্যুর জন্য মাদানী ফুল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দুশ্চিন্তা..... দুশ্চিন্তা..... খুবই কঠিন দুশ্চিন্তার বিষয়। আমরা জানিনা যে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালার গোপন ব্যবস্থাপনা কি, জানিনা আমাদের মৃত্যু কিরূপ হবে! হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বলেন: যদি মন্দ মৃত্যু থেকে নিরাপত্তা চাও, তবে সারা জীবন আল্লাহ্ তায়ালার আনুগত্যের মাঝে অতিবাহিত করো।আর প্রতিটি গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকো। আবশ্যক যে, তোমার মাঝে যেন ‘আরিফীনদের’ (খোদা প্রেমিক) ন্যায় ভয়-ভীতির আধিক্য থাকে। এমনকি এর কারণে তোমার কান্নাকাটি যেন দীঘার্য়িত হয়ে যায় এবং তুমি যেন সর্বদা চিন্তাগ্রস্থ থাকো। আগে গিয়ে (ইমাম গাযালী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ )আরো বলেন, তোমার উত্তম মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে মশগুল থাকা উচিত। সর্বদা আল্লাহর যিকরে লেগে থাকো, অন্তর থেকে দুনিয়ার ভালবাসা বের করে দাও। গুনাহ্ থেকে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি অন্তরেরও হিফাযত করো। যতটুকু সম্ভব মন্দ লোকদেরকে দেখা থেকেও বেঁচে থাকো। কারণ এতেও অন্তরে প্রভাব পড়ে এবং তোমার মন-মানসিকতা সেদিকে আকর্ষিত হতে পারে। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৪র্থ খন্ড, ২১৯-২২১ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত, দারুস সাদির, বৈরুত)
মুসলমান হে আত্তার তেরী আতা ছে
হো ঈমান পর খাতিমা ইয়া ইলাহী।
ঈমান সহকারে মৃত্যুর জন্য চারটি ওযীফা
এক ব্যক্তি আ’লা হযরত ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ঈমান সহকারে মৃত্যুবরণ করার জন্য দোয়া চাইলেন। তখন তিনি তার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন:
(১) (প্রতিদিন) সকালে ৪১বার ﻳﺎﺣﻰ ﻳﺎ ﻓﻴﻮﻡ ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻧﺖ
(হে চিরঞ্জীবী! হে চিরস্থায়ী! তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।এরপর কথাবাতার্ বলবেন না। তবে যদি প্রয়োজন হয় তবে কথা বলার পর পুনরায় সূরা কাফিরূন তিলাওয়াত করে নিবেন, যেন শেষ এর উপরই হয়।ﺍﻥ ﺷﺎءﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ ঈমান সহকারে মৃত্যু হবে।)
শুরু ও শেষে (একবার করে) দরূদ শরীফ সহকারে পড়বেন।
(২) শোয়ার সময় নিজের সকল ওযীফা আদায়ের পর সূরা কাফিরূন প্রতিদিন পড়ে নিবেন।
(৩) তিনবার সকালে ও তিনবার সন্ধ্যায় এ দোয়াটি পাঠ করবেন: ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﺎﻧﻌﻮ ﺫﺑﻚ ﻣﻦ ﺍﻥ ﻧﺸﺮ ﻙ
ﺑﻚ ﺷﻴﺌﺎ ﻧﻌﻠﻤﻪ ﻭﻧﺴﺘﻐﻔﺮ ﻙ ﻟﻤﺎ ﻻ
ﻧﻌﻠﻤﻪ (¹) (আল মালফুয, ২য় অংশ, পৃষ্ঠা ২৩৪, হামিদ এন্ড কোম্পানী, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর)
(৪) (ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺩﻳﻨﻰ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻰ ﻭﻭﻟﺪ ﻯ ﻭﺍﻫﻠﻰ
ﻭﻣﺎﻟﻰ (²)
সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করুন। দ্বীন, ঈমান, জান, মাল, সন্তান সবকিছু নিরাপদ থাকবে। (শাজারা-এ-কাদেরীয়া, রযবীয়া, ২৬ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)
(সূর্য অস্ত যাওয়া থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত রাত ও অর্ধ রাত ঢলে পড়া থেকে সূর্যের প্রথম কিরণ চমকানো পর্যন্তকে সকাল বলা হয়)
আগুনের সিন্দু
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে কোন দুভার্গার মৃত্যু কুফরের উপর হবে, তাকে কবর এমন জোরে চাপ দিবে যে, তার এ দিকের পাঁজর অন্য দিকে আর অন্য দিকেরটা এদিকে হয়ে যাবে। কাফিরের জন্য এরূপ আরো বেদনাদায়ক শাস্তি হবে।
(¹) হে আল্লাহ্! আমরা তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঐ বস্তুর সাথে তোমাকে অংশীদার করা থেকে এবং যা আমরা জানি না তা থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। (²) আল্লাহ্ তায়ালার নামের বরকতে আমার প্রাণ, দ্বীন, সন্তান এবং পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে থাকুক।কিয়ামতের পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমতুল্য দিন কঠিনতর ভয়ানক অবস্থায় অতিবাহিত হবে। অতঃপর তাকে উপুড় অবস্থায় টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যেসব গুনাহগার মুসলমান জাহান্নামে প্রবেশ করেছিলো, যখন তাদেরকে বের করা হবে তখন দোযখে শুধুমাত্র ঐসব লোক থাকবে যাদের মৃত্যু কুফরের উপর হয়েছিল। এরপর অবশেষে কাফিরের জন্য এরূপ হবে যে, তার দেহ সম আগুনের সিন্দুকে তাকে বন্ধ করা হবে। অতঃপর তাতে আগুন প্রজ্জলিত করা হবে আর আগুনের তালা লাগিয়ে দেয়া হবে। এরপর এ সিন্দুকটি আগুনের অন্য একটি সিন্দুকে রাখা হবে আর এ দুইটির মাঝখানে আগুন জ্বালানো হবে এবং এতেও আগুনের তালা লাগিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর অনুরূপভাবে সেটাকে অন্য আর একটি সিন্দুকে রেখে আগুনের তালা লাগিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে এবং মৃত্যুকে একটি ভেড়ার ন্যায় জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এনে জবাই করে দেয়া হবে। এখন আর কারো মৃত্যু আসবে না। প্রত্যেক জান্নাতী চিরস্থায়ী জান্নাতে ও প্রত্যেক জাহান্নামী চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামেই থাকবে। জান্নাতীদের জন্য আনন্দ আর আনন্দ হবে আর জাহান্নামীদের জন্য বেদনা আর আফসোস হবে। (বাহারে শরীয়া’ত, ১ম খন্ড, ৭৭,৯১,৯২ পৃষ্ঠা সংক্ষেপিত, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা করাচী)
ইয়া রব্বে মুস্তফা ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ আমরা তোমার কাছে ক্ষমার সাথে মদীনাতে শাহাদাত, জান্নাতুল বাক্বীতে দাফন ও জান্নাতুল ফিরদাওসে মাদানী মাহবূব হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর প্রতিবেশী হওয়ার আবেদন করছি।
পায়া হে উহ আলতাফ ও করম আপ কে দরপর,
মরনে কি দোয়া করতে হে হাম আপ কে দরপর।
সব আরজ ও বয়া খতম হে খামুশ খাড়া হে,
আসকতা হে বদর আখ হে নম আপ কে দরপর।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হবেন না। আপনি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করতে থাকুন তবে ﺍﻥ ﺷﺎءﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ ঈমান হিফাযতের মন-মানসিকতা তৈরী হতে থাকবে। যখন মন-মানসিকতা তৈরী হবে তখন অনুভূতিও সৃষ্টি হবে। ভাবাবেগ অর্জিত হবে। দোয়ার জন্য হাত উঠবে। অতঃপর ﺍﻥ ﺷﺎءﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ প্রিয় নবী ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর দরবারে এরূপ আরয করবো:
তু নে ইসলাম দিয়া তু নে জামাআত মে লিয়া,
তু করিম আব কোয়ী ফিরতা হে ইতিয়্যা তেরা।
নবী করীম ّﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢএর কান্নাকাটি
একটু স্পন্দিত হৃদয়ে হাত রেখে শুনুন! আল্লাহর প্রিয় মাহ্বূব ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর আমরা গুনাহগারদের ঈমান হেফাজত থাকার ব্যাপারে কেমন চিন্তা রয়েছে!। যেমন রূহুল বায়ানের ১০ম খন্ডের ৩১৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: একদা হুযুর ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এর পবিত্র দরবারে ধোঁকাবাজ শয়তান আকৃতি পরিবর্তন করে হাতে পানির বোতল নিয়ে হাযির হলো আর বলল:
আমি লোকদের নিকট মৃত্যু যন্ত্রনার সময় এ বোতল ঈমানের পরিবর্তে বিক্রয় করি। এ কথা শুনে নবী করিম ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ এতই কাঁদলেন যে, আহলে বায়তে আত্হার (পবিত্র পরিবার-পরিজন) ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺮ ﺿﻮﺍﻥ ও কাঁদতে লাগলেন। আল্লাহ্ তায়ালা ওহী পাঠালেন: হে আমার মাহ্বূব ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ আপনি চিন্তা করবেন না! আমি মৃত্যুর সময় আমার বান্দাদেরকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচিয়ে থাকি। (রূহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা)
হার উম্মতী কি ফিকর মে আক্বা হে মুজতরিব,
গমখায়ারে ওয়ালিদায়ন সে বড় কর হুযূর হে।
আম্মাজানের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো
আশিকানে রাসূলের মাদানী সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক এলাকা গুলশানে বাগদাদ বাবুল মদীনা, করাচীর একজন ইসলামী বোনের বর্ণনার সারাংশ হলো; আম্মাজান (বয়স প্রায় ৬০ বৎসর) সকালে যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন চোখ খোলা সত্বেও তিনি কিছু দেখছিলেন না। আমরা ভয় পেয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম যে, হাই ব্লাড প্রেসারের ফলে তার চোখের আলো নিভে গেছে। তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গেলাম কিন্তু সবাই নিরাশ করলেন।
তাবীবো নে মরিজে লা দাওয়া কে কে টালা হে, বনা না কাম উন কা ইনদিয়া দো ইয়া রাসূলাল্লাহ।
আম্মাজান প্রচন্ড বিশ্বাসের সাথে বললেন: আমাকে মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনায় অনুষ্ঠিতব্য ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নিয়ে যাও। ﺍﻥ ﺷﺎءﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ সেখানে আমি দৃষ্টিশক্তি লাভ করব। সুতরাং মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনায়, রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে আমরা দু'বোন আম্মাজানের হাত ধরে নিয়ে গেলাম। ইজতিমার ভাবাবেগপূর্ণ দোয়া আমাদেরকে খুব কাঁদালো। আম্মাজান খুব বেশি কেঁদেছিলেন। হঠাৎ তার চোখে বিজলীর ন্যায় উজ্জ্বল আলো এসে গেলো আর মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনার মেঝ পরিস্কার ভাবে দৃষ্টি গোচর হতে লাগলো। অতঃপর দেখতে দেখতেই চক্ষুদ্বয় পরিপূর্ণ আলোকিত হয়ে গেলো।
সুন্নাত কি বাহার আয়ী ফয়যানে মদীনা মে,
রহমত কি গটা ছায়ী ফয়যানে মদীনা মে।
নাকিস হে জু সুনওয়ায়ী, কমজোর হে বিনায়ী,
মাঙ্গ আকে দোয়া ভায়ী ফয়যানে মদীনা মে।
আপত মেপ গেরা হে গর, বিমার পড়া হে গর,
আকর লে দোয়া ভায়ী ফয়য়ানে মদীনা মে।