হযরত সালিহ (عليه السلام)-এর বর্ণনা


ছামূদ একটি ইতিহাসপ্রসিদ্ধ জাতি। তাদের পূর্ব-পুরুষ ‘ছামূদ’ এর নামানুসারে এ জাতির নামকরণ করা হয়েছে। ছামূদ-এর আর এক ভাই ছিল জুদায়স। তারা উভয়ে ‘আবির ইবন ইরাম ইবন সাম ইবন নূহ’-এর পুত্র। এরা ছিল আরবে আরিবা তথা আদি আরব সম্প্রদায়ের লোক। হিজায ও তবূকের মধ্যবর্তী ‘হিজর’ নামক স্থানে তারা বসবাস করত। তবুক যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই পথ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন— এর বর্ণনা পরে আসছে। আদ জাতির পর ছামূদ জাতির অভ্যুদয় ঘটে। তাদের মত এরাও মূর্তি পূজা করত। এদেরই মধ্য থেকে আল্লাহ তাঁর এক বান্দা সালিহ্ (عليه السلام)-কে রাসূলরূপে প্রেরণ করেন। তাঁর বংশ লতিকা হচ্ছেঃ সালিহ্ ইবন অবদ ইবন মাসিহ্ ইবন উবায়দ ইবন হাজির ইবন ছামূদ ইবন আবির ইবন ইরাম ইবন সাম ইবন নূহ (عليه السلام)। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করতে, তার সাথে কাউকে শরীক না করতে এবং মূর্তিপূজা ও শিরক বর্জনের নির্দেশ দেন। ফলে কিছু সংখ্যক লোক তাঁর প্রতি ঈমান আনে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই কুফরীতে লিপ্ত থাকে এবং কথায়-কাজে তাকে কষ্ট দেয় এমনকি এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। তারা নবীর সেই উটনীটিকে হত্যা করে ফেলে যাকে আল্লাহ তা’আলা নবুওতের প্রমাণস্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন। তখন আল্লাহ তাদেরকে শক্তভাবে পাকড়াও করেন। এ প্রসঙ্গে সূরা আরাফে আল্লাহ বলেনঃ


(وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ * وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ الْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ * قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُرْسَلٌ مِنْ رَبِّهِ ۚ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ * قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ * فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ * فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ * فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَٰكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ) [Surat Al-A'raf ৭৩ - ৭৯]


অর্থাৎ, ছামূদ জাতির নিকট তাদের স্ব-গোত্রীয় সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, 'হে আমার। সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে চরে খেতে দাও এবং একে কোন ক্লেশ দিও না। দিলে তোমাদের উপর মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হবে। স্মরণ কর, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন, তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে বাস-গৃহ নির্মাণ করছ। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না।


তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা সেই সম্প্রদায়ের ঈমানদার, যাদের দুর্বল মনে করা হত। তাদের বলল, তোমরা কি জান যে, সালিহ্ আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত? তারা বলল, তার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হয়েছে আমরা তাতে বিশ্বাসী। দাম্ভিকেরা বলল, তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। তখন তারা সেই উটনীটি বধ করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, 'হে সালিহ্! তুমি রাসূল হলে আমাদের যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো।' তারপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে তাদের প্রভাত হল নিজ গৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়। তারপর সে তাদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, হে আমার সম্প্রদায়। আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছিলাম এবং তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা তো হিতাকাঙ্ক্ষীদেরকে পছন্দ কর না।' (সূরা আ'রাফ, ৭৩-৭৯)


সূরা হূদে আল্লাহ বলেনঃ


(وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ هُوَ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا فَاسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ * قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَٰذَا ۖ أَتَنْهَانَا أَنْ نَعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ * قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَآتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَنْصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ ۖ فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ * وَيَا قَوْمِ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيبٌ * فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ۖ ذَٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ * فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ ۗ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ * وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ * كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۗ أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِثَمُودَ)


[Surat Hud ৬১ - ৬৮]


অর্থাৎ, ছামূদ জাতির নিকট তাদের স্বগোত্রীয় সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি তোমাদেরকে ভূমি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তাতেই তিনি তোমাদেরকে বসবাস করিয়েছেন। সুতরাং তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তার দিকেই প্রত্যাবর্তন কর। আমার প্রতিপালক নিকটেই, তিনি আহ্বানে সাড়া দেন।’ তারা বলল, ‘হে সালিহ! এর পূর্বে তুমি ছিলে আমাদের আশা-স্থল। তুমি কি আমাদেরকে নিষেধ করছ ইবাদত করতে তাদের, যাদের ইবাদত করত আমাদের পিতৃ-পুরুষরা? আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহ পোষণ করি সে বিষয়ে, যার প্রতি তুমি আমাদেরকে আহ্বান করছ।’ সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তার নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে, আমি যদি তার অবাধ্যতা করি? সুতরাং তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছ।


হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। একে আল্লাহর যমীনে চরে খেতে দাও। একে কোন ক্লেশ দিও না, ক্লেশ দিলে আশু শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে।’ কিন্তু তারা ওকে বধ করল। তারপর সে বলল, ‘তোমরা তোমাদের ঘরে তিনদিন জীবন উপভোগ করে লও। এই একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যা হবার নয়।’ এবং যখন আমার নির্দেশ আসল, তখন আমি সালিহ ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং রক্ষা করলাম সে দিনের লাঞ্ছনা হতে। তোমার প্রতিপালক তো শক্তিমান, পরাক্রমশালী। তারপর যারা সীমালংঘন করেছিল মহা নাদ তাদেরকে আঘাত করল, ফলে ওরা নিজ নিজ ঘরে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল। যেন তারা সেথায় কখনও বসবাস করেনি। জেনে রেখ! ছামূদ জাতি তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। জেনে রেখ! ধ্বংসই হল ছামূদ জাতির পরিণাম (সূরা হূদঃ ৬১-৬৮)


সূরা হিজরে আল্লাহ বলেনঃ


(وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ * وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ * وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ * فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ * فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ)


[Surat Al-Hijr ৮০ - ৮৪]


অর্থাৎ, হিজরবাসিগণও রাসূলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল। তারা পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করত নিরাপদ বাসের জন্যে। তারপর প্রভাতকালে এক মহা নাদ তাদেরকে আঘাত করল। সুতরাং তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের কোন কাজে আসেনি। (সূরা হিজরঃ ৮০-৮৪)


সূরা ইসরায় আল্লাহ বলেনঃ


(وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآيَاتِ إِلَّا أَنْ كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ ۚ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا ۚ وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا) [Surat Al-Isra' ৫৯]


অর্থাৎ, পূর্ববর্তিগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে বিরত রাখে। আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ ছামূদ জাতিকে উটনী দিয়েছিলাম, অতঃপর তারা ওর প্রতি জুলম করেছিল। আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যেই নিদর্শন প্রেরণ করি। (সূরা ইসরাঃ ৫৯)


সূরা শু’আরায় আল্লাহ বলেনঃ


(كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ * إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ * إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ * فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ * وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ * أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا آمِنِينَ * فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ * وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ * وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ * فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ * وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ * الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ * قَالُوا إِنَّمَا أَنْتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ * مَا أَنْتَ إِلَّا بَشَرٌ مِثْلُنَا فَأْتِ بِآيَةٍ إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ * قَالَ هَٰذِهِ نَاقَةٌ لَهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَعْلُومٍ * وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ * فَعَقَرُوهَا فَأَصْبَحُوا نَادِمِينَ * فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ * وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ) [Surat Ash-Shu'ara ১৪১ - ১৫৯]


অর্থাৎ, ছামূদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। যখন ওদের স্বগোত্রীয় সালিহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর, আমি তোমাদের নিকট এর জন্যে কোন প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটেই আছে। তোমাদেরকে কি নিরাপদে ছেড়ে রাখা হবে, যা এখানে আছে তাতে—উদ্যানে, প্রস্রবণে ও শস্যক্ষেত্রে এবং সুকোমল গুচ্ছবিশিষ্ট খেজুর বাগানে? তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে ঘর তৈরি করছ। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না।


যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, শান্তি স্থাপন করে না তারা বলল, তুমি তো জাদুগ্রস্তদের অন্যতম। তুমি তো আমাদের মত একজন মানুষ, কাজেই তুমি যদি সত্যবাদী হও একটি নিদর্শন উপস্থিত কর। সালিহ্ বলল, এই যে উটনী, এর জন্যে আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্যে আছে পানি পানের পালা, নির্ধারিত এক এক দিনে; এবং এর কোন অনিষ্ট সাধন করো না; করলে মহা দিবসের শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে। কিন্তু ওরা ওকে বধ করল, পরিণামে ওরা অনুতপ্ত হল। তারপর শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল। এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মু’মিন নয়। তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (সূরা শু'আরাঃ ১৪১-১৫৯)


সূরা নামলে আল্লাহ বলেনঃ


(وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ فَإِذَا هُمْ فَرِيقَانِ يَخْتَصِمُونَ * قَالَ يَا قَوْمِ لِمَ تَسْتَعْجِلُونَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ ۖ لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ * قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَنْ مَعَكَ ۚ قَالَ طَائِرُكُمْ عِنْدَ اللَّهِ ۖ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُونَ * وَكَانَ فِي الْمَدِينَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ * قَالُوا تَقَاسَمُوا بِاللَّهِ لَنُبَيِّتَنَّهُ وَأَهْلَهُ ثُمَّ لَنَقُولَنَّ لِوَلِيِّهِ مَا شَهِدْنَا مَهْلِكَ أَهْلِهِ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ * وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ * فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِينَ * فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ * وَأَنْجَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ) [Surat An-Naml ৪৫ - ৫৩]


অর্থাৎ, আমি অবশ্যই ছামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের স্বগোত্রীয় সালিহুকে পাঠিয়েছিলাম এ আদেশসহ, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কিন্তু ওরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছ? কেন তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার? তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।' সালিহ বলল, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর ইখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।'


আর সে শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সৎকর্ম করত না। তারা বলল, তোমরা আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ কর, আমরা রাতের বেলা তাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করব, তারপর তার অভিভাবককে নিশ্চয় বলব, তার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি; আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।' তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি। অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে-আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি। এই তো ওদের ঘরবাড়ি— সীমালংঘনের কারণে যা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে; এতে জ্ঞানী-সম্প্রদায়ের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে এবং যারা মু’মিন ও মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামলঃ ৪৫-৫৩)


সূরা হা-মীম-আস-সাজদায় আল্লাহর বাণীঃ


(وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمَىٰ عَلَى الْهُدَىٰ فَأَخَذَتْهُمْ صَاعِقَةُ الْعَذَابِ الْهُونِ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ * وَنَجَّيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ) [Surat Fussilat ১৭ - ১৮]


অর্থাৎ, আর ছামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি তাদেরকে পথ-নির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে ভ্রান্তপথ অবলম্বন করেছিল। তারপর তাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আঘাত হানল তাদের কৃতকর্মের পরিণামস্বরূপ। আমি উদ্ধার করলাম তাদেরকে যারা ঈমান এনেছিল এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। (সূরা হা-মীম-আস্-সাজদাঃ ১৭-১৮)


সূরা কামারে আল্লাহ বলেনঃ


(كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِالنُّذُرِ * فَقَالُوا أَبَشَرًا مِنَّا وَاحِدًا نَتَّبِعُهُ إِنَّا إِذًا لَفِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ * أَأُلْقِيَ الذِّكْرُ عَلَيْهِ مِنْ بَيْنِنَا بَلْ هُوَ كَذَّابٌ أَشِرٌ * سَيَعْلَمُونَ غَدًا مَنِ الْكَذَّابُ الْأَشِرُ * إِنَّا مُرْسِلُو النَّاقَةِ فِتْنَةً لَهُمْ فَارْتَقِبْهُمْ وَاصْطَبِرْ * وَنَبِّئْهُمْ أَنَّ الْمَاءَ قِسْمَةٌ بَيْنَهُمْ ۖ كُلُّ شِرْبٍ مُحْتَضَرٌ * فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطَىٰ فَعَقَرَ * فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ * إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ صَيْحَةً وَاحِدَةً فَكَانُوا كَهَشِيمِ الْمُحْتَظِرِ * وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ) [Surat Al-Qamar ২৩ - ৩২]


অর্থাৎ, ছামূদ সম্প্রদায় সতর্ককারিগণকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। তারা বলেছিল, আমরা কি আমাদেরই এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী এবং উন্মাদরূপে গণ্য হব। আমাদের মধ্যে কি ওরই প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে? না, সে তো একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক। আগামীকাল তারা জানবে, কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক। আমি তাদের পরীক্ষার জন্যে পাঠিয়েছি এক উটনী। অতএব, তুমি ওদের আচরণ লক্ষ্য কর এবং ধৈর্যশীল হও। এবং ওদেরকে জানিয়ে দাও যে, ওদের মধ্যে পানি বণ্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের জন্যে প্রত্যেকে উপস্থিত হবে পালাক্রমে। তারপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করল, সে ওকে ধরে হত্যা করল। কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী! আমি ওদেরকে আঘাত হেনেছিলাম এক মহানাদ দ্বারা; ফলে ওরা হয়ে গেল খোয়াড় প্রস্তুতকারীর বিখণ্ডিত শুকনো শাখা-প্রশাখার মত। আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্যে; অতএব, উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা কামারঃ ২৩-৩২)


(كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَاهَا * إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا * فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ نَاقَةَ اللَّهِ وَسُقْيَاهَا * فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا * وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا)


[Surat Ash-Shams ১১ - ১৫]


অর্থাৎ, ছামূদ সম্প্রদায় অবাধ্যতাবশত অস্বীকার করেছিল। তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগ্য, সে যখন তৎপর হয়ে উঠল, তখন আল্লাহর রাসূল তাদেরকে বলল, আল্লাহর উটনী এবং ওকে পানি পান করাবার ব্যাপারে সাবধান হও। কিন্তু তারা রাসূলকে অস্বীকার করে এবং ওকে কেটে ফেলে। তাদের পাপের জন্যে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে একাকার করে দিলেন এবং এর পরিণামের জন্যে আল্লাহর আশংকা করার কিছু নেই। (সূরা শাম্সঃ ১১-১৫)


আল্লাহ্ কুরআনের বহু স্থানে আদ ও ছামূদ জাতির উল্লেখ একসাথে পাশাপাশি করেছেন। যেমন সূরা বারাআত, সূরা ইবরাহীম, সূরা ফুরকান, সূরা সাদ, সূরা কাফ, সূরা নাজম ও সূরা ফজর। বলা হয়ে থাকে যে, এই দুটি জাতি সম্পর্কে আহলিকিতাবরা কিছুই জানতো না এবং তাদের তাওরাত কিতাবেও এ সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। কিন্তু পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হযরত মূসা (عليه السلام) এ দুই জাতি সম্পর্কে তাঁর সম্প্রদায়কে অবগত করেছিলেন। যেমন সূরা ইবরাহীমে আছেঃ


وَقَالَ مُوسَىٰ إِنْ تَكْفُرُوا أَنْتُمْ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ * أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ ۛ وَالَّذِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ ۛ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا اللَّهُ ۚ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ [Surat Ibrahim ৮ - ৯]


অর্থাৎ, মূসা বলেছিল, তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ হও, তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং প্রশংসাৰ্হ। তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের নূহের সম্প্রদায়ের, আদের ও ছামূদদের এবং তাদের পরবর্তীদের তাদের বিষয় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল এসেছিল (সূরা ইবরাহীমঃ ৮-৯)


এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে সবগুলো কথাই মূসা (عليه السلام)-এর যা তিনি নিজের জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন। কিন্তু আদ ও ছামূদ সম্প্রদায় দুটি যেহেতু আরব জাতির অন্তর্ভুক্ত, তাই বনী ইসরাঈলরা এদের ইতিহাস ভালভাবে সংরক্ষণ করেনি এবং গুরুত্বসহকারে স্মরণও রাখেনি; যদিও মূসা (عليه السلام)-এর সময়ে বনী ইসরাঈলদের মধ্যে তাদের ঘটনা মশহুর ছিল। আমার তাফসীর গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহর।


এখন ছামূদ জাতির অবস্থা ও তাদের ঘটনা বর্ণনা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাঁর নবী হযরত সালিহ (عليه السلام)-কে ও যারা তার উপর ঈমান এনেছিল তাদেরকে কিভাবে আযাব থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, আর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারী, অত্যাচারী কাফিরদেরকে কিভাবে নির্মূল করেছিলেন এখন তা বর্ণনা করা হবে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, ছামূদ সম্প্রদায় জাতিতে ছিল আরব। আদ সম্প্রদায়ের ধ্বংস হবার পর ছামূদ সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হয়। তারা তাদের অবস্থা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি। এ কারণেই তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেনঃ


يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ * وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ الْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ) [Surat Al-A'raf ৭৩ - ৭৪]


অর্থাৎ, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এই উটনী তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। একে আল্লাহর জমিতে চরে খেতে দাও এবং একে কোন ক্লেশ দিও না, দিলে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে। স্মরণ কর, আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন, তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছ। সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না। (সূরা আ'রাফঃ ৭৩-৭৪)


অর্থাৎ আদ জাতিকে ধ্বংস করে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করার উদ্দেশ্য এই যে, তাদের ঘটনা থেকে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে এবং তারা যে সব অন্যায় আচরণ করত তোমরা তা করবে না। এ যমীন তোমাদের আয়ত্তাধীন করে দেয়া হয়েছে। এর সমভূমিতে তোমরা অট্টালিকা নির্মাণ করছ আর পাহাড় কেটে সুনিপুণভাবে তাতে ঘরবাড়ি তৈরি করছ। অতএব, এর অনিবার্য দাবি হিসেবে এসব নিয়ামতের শোকর আদায় কর, সৎকর্মে তৎপর থাক, একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর বন্দেগী কর যার কোন শরীক নেই। তাঁর নাফরমানী ও দাসত্ব থেকে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাক। কেননা, এর পরিণতি খুবই জঘন্য।


এ উদ্দেশ্যে নবী এ বাণী দ্বারা উপদেশ দিচ্ছেনঃ


(أَتُتْرَكُونَ فِي مَا هَاهُنَا آمِنِينَ * فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ * وَزُرُوعٍ وَنَخْلٍ طَلْعُهَا هَضِيمٌ)


[Surat Ash-Shu'ara ১৪৬ - ১৪৮]


অর্থাৎ, তোমাদেরকে কি এ জগতের ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিরাপদে রেখে দেয়া হবে? উদ্যানসমূহের মধ্যে ও ঝরনাসমূহের মধ্যে? শস্যক্ষেত্রের মধ্যে ও মঞ্জরিত খেজুর বাগানের মধ্যে? (সূরা শুআরাঃ ১৪৬-১৪৮)


(وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ * فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ * وَلَا تُطِيعُوا أَمْرَ الْمُسْرِفِينَ * الَّذِينَ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ) [Surat Ash-Shu'ara ১৪৯ - ১৫২]


অর্থাৎ, তোমরা পাহাড় কেটে জাকজমকের ঘরবাড়ি নির্মাণ করছ। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর এবং সীমালংঘনকারীদের আদেশ মান্য করো না—যারা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে এবং শান্তি স্থাপন করে না। (সূরা শুআরাঃ ১৪৯-১৫২)


নবী তাদেরকে আরও বললেনঃ


অর্থ, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই তোমাদেরকে যমীন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মধ্যেই বসবাস করার সুবিধা দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যমীন থেকে উদ্ভাবন করেছেন। তারপর তোমাদেরকেই যমীনের আবাদকারী বানিয়েছেন। অর্থাৎ পৃথিবীর যাবতীয় শস্য এবং ফল-ফলাদি তোমাদেরকে প্রদান করেছেন। এভাবে তিনিই তোমাদের সৃষ্টিকারী ও রিযিকদাতা। সুতরাং ইবাদত পাওয়ার হকদার একমাত্র তিনিই, অন্য কেউ নয়। فاستغفروه ثم تويوا اليه অতএব, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তওবা কর। অর্থাৎ তোমাদের বর্তমান কর্মনীতি পরিহার করে তাঁর ইবাদতের দিকে ধাবিত হও; তোমাদের ইবাদত ইসতিগফার কবুল করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।


إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ * قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنْتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَٰذَا


[Surat Hud ৬১ - ৬২]


অর্থাৎ, আমার প্রতিপালক নিকটেই আছেন, তিনি তওবা কবুল করবেন—এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা বলল, হে সালিহ! ইতিপূর্বে তোমার উপর আমাদের বড় আশা ছিল।' অর্থাৎ তোমার এই জাতীয় কথাবার্তা বলার পূর্বে আমাদের আশা ছিল যে, তুমি একজন প্রজ্ঞাবান লোক হবে। কিন্তু আমাদের সে আশা ভূ-লুষ্ঠিত হল-এখন তুমি আমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত করতে, আমরা যে দেবতাদের পূজা করছি সেগুলো বর্জন করতে ও বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করতে বলছ। এ জন্যেই তারা বললঃ


أَتَنْهَانَا أَنْ نَعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ * قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَآتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَنْ يَنْصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ ۖ فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ) [Surat Hud ৬২ - ৬৩]


অর্থাৎ, আমাদের বাপ-দাদারা যাদের পূজা করত, তুমি কি আমাদেরকে তাদের পূজা করতে নিষেধ করছে? তুমি আমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছ, সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহ পোষণ করি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছো আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি, আর তিনি যদি আমাকে তার নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, তারপর আমি যদি তাঁর অবাধ্যতা করি, তবে তার শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে? তোমরা তো কেবল আমার ক্ষতিই বাড়িয়ে দিচ্ছো। (সূরা হূদঃ ৬২-৬৩)


এ হচ্ছে হযরত সালিহ (عليه السلام)-এর কোমল ভাষার প্রয়োগ ও সৌজন্যমূলক আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে কল্যাণের পথে আহ্বান। অর্থাৎ তোমাদের কী ধারণা—যদি আমি তোমাদেরকে যেদিকে আহ্বান জানাচ্ছি তা প্রকৃতপক্ষে সত্য হয়ে থাকে তবে আল্লাহর নিকট তোমাদের কি ওজর থাকবে এবং তখন তোমাদেরকে কিসে মুক্তি দেবে? অথচ তোমরা আমাকে আল্লাহর দিকে দাওয়াতের কাজ পরিহার করতে বলছ আর তা কোনক্রমেই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, এটি আমার অপরিহার্য কর্তব্য। আমি যদি তা ত্যাগ করি, তবে তার পাকড়াও থেকে না তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারবে; না অন্য কেউ, না কেউ আমাকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে। সুতরাং তোমাদের ও আমার মধ্যে আল্লাহর ফয়সালা আসার পূর্ব পর্যন্ত আমি লা-শরীক এক আল্লাহর দিকে আহ্বানের কাজ চালিয়ে যেতে থাকব।


সালিহ্ (عليه السلام)-কে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকজন আরো বলেছিলঃ انما انت من المسحرين (তুমি তো একজন জাদুগ্রস্ত লোক) অর্থাৎ তোমার উপর জাদুর প্রভাব পড়েছে, তাই সকল দেবতাকে বাদ দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে তুমি যে আমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছ তাতে তুমি কী বলছো তা তুমি নিজেই বুঝতে পারছে না।


অধিকাংশ আলিমই এই অর্থ করেছেনঃ مسحرين অর্থ مسحورين কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন যে, তোমার কাছে জাদু আছে, অর্থাৎ তুমি জাদুকর( ممن له سحر)। তারা এ কথা বলছে যে, তুমি একজন মানুষ, তোমার জাদু জানা আছে। তবে প্রথম অর্থই অধিকতর স্পষ্ট। যেহেতু পরেই তাদের কথা আসছে যে, তারা বলেছেঃ ما انت الا بشر مثلنا তুমি তো আমাদের মতই মানুষ। فأت باية ان كنت من الصادقسن (তুমি কোন একটা নিদর্শন নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক।) তারা নবীর কাছে দাবি জানায়, যে কোন একটা অলৌকিক জিনিস দেখিয়ে তিনি যেন নিজের দাবির সত্যতার পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপিত করেন।


(قَالَ هَٰذِهِ نَاقَةٌ لَهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَعْلُومٍ * وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَظِيمٍ) [Surat Ash-Shu'ara ১৫৫ - ১৫৬]


সালিহ্ বলল, এই উটনী, এর জন্যে আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্যে আছে পানি পানের পালা—নির্দিষ্ট এক এক দিনের। তোমরা একে কোন কষ্ট দিও না, তাহলে তোমাদেরকে মহা দিবসের আযাব পাকড়াও করবে। (সূরা শু'আরাঃ ১৫৫-১৫৬)


আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ


قَدْ جَاءَتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ) [Surat Al-A'raf ৭৩]


অর্থাৎ, তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে। আল্লাহর এ উটনী তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। অতএব, একে আল্লাহর যমীনে চরে খেতে দাও। একে কোন ক্লেশ দিও না, দিলে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হবে। (সূরা আ'রাফঃ ৭৩)


আল্লাহর বাণীঃ


وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا


[Surat Al-Isra' ৫৯]


অর্থাৎ, আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ ছামূদ জাতিকে উটনী দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তার প্রতি জুলুম করেছিল। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৫৯)


মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের লোকেরা একবার এক স্থানে সমবেত হয়। ঐ সমাবেশে আল্লাহর নবী হযরত সালিহ (عليه السلام) আগমন করেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান, উপদেশ দান করেন, ভীতি প্রদর্শন করেন, নসীহত করেন এবং তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দেন। উপস্থিত লোকজন তাকে বলল, ঐ যে একটা পাথর দেখা যায়, ওর মধ্য থেকে যদি অমুক অমুক গুণসম্পন্ন একটি দীর্ঘকায় দশ মাসের গর্ভবতী উটনী বের করে দেখাতে পার, তবে দেখাও। সালিহ (عليه السلام) বললেনঃ তোমাদের বর্ণিত গুণসম্পন্ন উটনী যদি আমি বের করে দেই তাহলে কি তোমরা আমার আনীত দীন ও আমার নবুওতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে? তারা সবাই বললঃ হ্যাঁ, বিশ্বাস করব। তখন তিনি এ কথার উপর তাদের থেকে অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। এরপর সালিহ্ (عليه السلام) সালাত আদায়ের জন্যে দাঁড়িয়ে যান এবং সালাত শেষে আল্লাহর নিকট তাদের আবদার পূরণ করার প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্ ঐ পাথরকে কেটে গিয়ে অনুরূপ গুণসম্পন্ন একটি উটনী বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন। যখন তারা স্বচক্ষে এরূপ উটনী দেখতে পেল, তখন তারা সত্যি সত্যি এক বিস্ময়কর বিষয়, ভীতিপ্রদ দৃশ্য, সুস্পষ্ট কুদরত ও চূড়ান্ত প্রমাণই প্রত্যক্ষ করল। এ দৃশ্য দেখার পর উপস্থিত বহু লোক ঈমান আনে বটে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তাদের কুফরী, গুমরাহী ও বৈরিতার উপর অটল হয়ে থাকল।


এ জন্যেই কুরআনে বলা হয়েছেঃ فظلموا بها (তারা তার সাথে জুলুম করল) অর্থাৎ তাদের অধিকাংশই মানতে অস্বীকার করল এবং সত্যকে গ্রহণ করল না। যারা ঈমান এনেছিল তাদের প্রধান ছিল জান্দা ইবন আমর ইবন মুহাল্লাত ইবন লবীদ ইবন জুওয়াস। এ ছিল ছামূদ সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। সম্প্রদায়ের অবশিষ্ট শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গও ইসলাম গ্রহণে উদ্যত হয়, কিন্তু তিন ব্যক্তি তাদেরকে তা থেকে বিরত রাখে। তারা হলঃ যাওয়াব ইবন উমর ইবন লবীদ ও খাব্বাব—এ দুইজন ছিল তাদের ধর্মগুরু এবং রাবাব ইবন সামআর ইবন জালমাস। জানদা ইসলাম গ্রহণ করার পর আপন চাচাত ভাই শিহাব ইবন খলীফাকে ঈমান আনার জন্যে আহ্বান জানায়। সেও ছিল সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোক এবং ইসলাম গ্রহণ করার জন্যে সেও উদ্যত হয়। কিন্তু ঐ ব্যক্তিরা তাকে বাধা দিলে সে তাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মিহরাশ ইবন গানামা ইবন যুমায়ল নামক জনৈক মুসলমান কবি তাঁর কবিতায় বলেনঃ


“আমর পরিবারের একদল লোক শিহাবকে নবীর দীন কবূল করার জন্যে আহ্বান জানায়। এরা সকলেই ছামূদ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট লোক। শিহাবও সে আহ্বানে সাড়া দিতে উদ্যত হয়। যদি সে সাড়া দিত তাহলে নবী সালিহ (عليه السلام) আমাদের মাঝে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যেত। জুওয়াব তার সঙ্গীর সাথে সুবিচার করেনি। বরং হিজর উপত্যকার কতিপয় নির্বোধ লোক আলোর পথ দেখার পরেও মুখ ফিরিয়ে থাকে।”


এ কারণে হযরত সালিহ (عليه السلام) তাদেরকে বললেনঃ هذه ناقة الله لكم اية (এটি আল্লাহর উটনী, তোমাদের জন্যে নিদর্শন) আল্লাহর উটনী শব্দটি বলা হয়েছে উটনীটির মর্যাদা নির্দেশের উদ্দেশ্যে। যেমন বলা হয় بيت الله আল্লাহর ঘর; وعبد الله আল্লাহর বান্দা। ولكم اية তোমাদের জন্যে নিদর্শন। অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে যে দাওয়াত নিয়ে এসেছি এটা তার সত্যতার প্রমাণ।


فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ)


[Surat Al-A'raf ৭৩]


অর্থাৎ, ‘একে আল্লাহর যমীনে চরে খেয়ে বেড়াতে দাও এবং এর অনিষ্ট সাধন করো না। অন্যথায় এক নিকটবর্তী আযাব তোমাদেরকে পাকড়াও করবে।’ তারপর অবস্থা এই দাঁড়াল যে, এ উটনীটি তাদের মধ্যে স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছা চরে বেড়াত, একদিন পর পর পানির ঘাটে অবতরণ করত। যেদিন সে পানি পান করত সেদিন কূপের সমস্ত পানি নিঃশেষ করে ফেলত। তাই সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের পালার দিনে পরের দিনের জন্যে প্রয়োজনীয় পানি উত্তোলন করে রাখত। কথিত আছে যে, সম্প্রদায়ের লোকজন ঐ উটনীটির দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ পান করত। ( لَهَا شِرْبٌ وَلَكُمْ شِرْبُ يَوْمٍ مَعْلُومٍ)


[Surat Ash-Shu'ara ১৫৫] (এ উটনীটির জন্যে রয়েছে পানি পানের নির্দিষ্ট দিন এবং তোমাদের জন্যেও রয়েছে পানি পানের নির্দিষ্ট দিন) আল্লাহ্ বলেনঃ


(إِنَّا مُرْسِلُو النَّاقَةِ فِتْنَةً لَهُمْ)


[Surat Al-Qamar ২৭]


(আমি এ উটনী পাঠিয়েছি তাদের পরীক্ষার জন্যে) পরীক্ষা এই যে, তারা কি এতে ঈমান আনে, না কি কুফরী করে। আর প্রকৃত অবস্থা এই যে, তারা কি কৰে তা আল্লাহ ভাল জানেন। فار تقبهم (অতএব, তুমি তাদের আচরণে প্রতি লক্ষ্য রাখ) এবং প্রতীক্ষায় থাক واصبر (এবং ধৈর্য ধারণ কর) আর তাদের থেকে যে কষ্ট আসে তা সহ্য কর। অচিরেই তোমার নিকট সুস্পষ্ট খবর এসে পড়বে।


(وَنَبِّئْهُمْ أَنَّ الْمَاءَ قِسْمَةٌ بَيْنَهُمْ )


[Surat Al-Qamar ২৮]


(এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানি বণ্টন নির্ধারিত এবং পানির অংশের অনন্য প্রত্যেকে উপস্থিত হতে পালাক্রমে। (সূরা কামারঃ ২৭-২৮)


দীর্ঘ দিন যাবত এ অবস্থা চলতে থাকায় সম্প্রদায়ের লোকেরা অধৈর্য হয়ে পড়ে। এর থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্যে তারা একদা সমবেত হয় ও পরামর্শ করে। তারা সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত করে যে, উটনীটিকে হত্যা করতে হবে। এর ফলে তারা উটনীটির কবল থেকে নিষ্কৃতি পাবে এবং সমস্ত পানির উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব তাদের প্রতিষ্ঠিত হবে। শয়তান তাদেরকে এ কাজের যুক্তি ও সুফল প্রদর্শন করল। আল্লাহর বাণীঃ


(فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ)


[Surat Al-A'raf ৭৭]


অতঃপর তারা সেই উটনীটি বধ করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, হে সালিহ্! তুমি রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো। (সূরা আ'রাফঃ ৭৭)


যে লোক উটনী হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করে তার নাম কিদার ইবন সালিফ ইবন জানদা—সে ছিল সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা। সে ছিল গৌরবর্ণ, নীল চোখ ও পিঙ্গল চুল বিশিষ্ট। কথিত মতে, সে ছিল সালিফ-এর যারজ সন্তান। সায়বান নামক এক ব্যক্তির ঔরসে তার জন্ম হয়। কিদার একা হত্যা করলেও যেহেতু সম্প্রদায়ের সকলের ঐকমত্যে করেছিল তাই হত্যা করার দায়িত্ব সবার প্রতি আরোপিত হয়েছে।


ইবন জারীর (رحمة الله) প্রমুখ মুফাসসির লিখেছেনঃ ছামূদ সম্প্রদায়ের দুই মহিলা- একজনের নাম সাদূক। সে মাহয়া ইবন যুহায়র ইবন মুখতারের কন্যা এবং প্রচুর ধন-সম্পদ ও বংশীয় গৌরবের অধিকারী। তার স্বামী ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে স্ত্রী তাকে ত্যাগ করে এবং নিজের চাচাত ভাই মিসরা ইবন মিহরাজ ইবন মাহয়াকে বলে, যদি তুমি উটনীটি হত্যা করতে পার, তবে তোমাকে আমি বিবাহ করব। অপর মহিলাটি ছিল উনায়যা বিনত গুনায়ম ইবন মিজলায, তাকে উম্মে উছমান বলে ডাকা হতো। মহিলাটি ছিল বৃদ্ধা এবং কাফির। তার স্বামী ছিল সম্প্রদায়ের অন্যতম সর্দার যুওয়াব ইবন আমর। এই স্বামীর ঔরসে তার চারটি কন্যা ছিল।


মহিলাটি কিদার ইবন সালিফকে প্রস্তাব দেয় যে, সে যদি উটনীটি হত্যা করতে পারে তবে তার এ চার কন্যার মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারবে। তখন ঐ যুবকদ্বয় উটনী হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং সম্প্রদায়ের লোকদের সমর্থন লাভের চেষ্টা চালায়। সে মতে, অপর সাত ব্যক্তি তাদের ডাকে সাড়া দেয়। এভাবে তারা নয়জন ঐক্যবদ্ধ হয়। কুরআনে সে কথাই বলা হয়েছেঃ


(وَكَانَ فِي الْمَدِينَةِ تِسْعَةُ رَهْطٍ يُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ وَلَا يُصْلِحُونَ)


[Surat An-Naml ৪৮]


আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং কোন সৎকর্ম করত না। (সূরা নামলঃ ৪৮)


তারপর এই নয়জন গোটা সম্প্রদায়ের কাছে যায় এবং উটনী হত্যার উদ্যোগের কথা জানায়। এ ব্যাপারে সকলেই তাদেরকে সমর্থন করে ও সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এরপর তারা উটনীর সন্ধানে বের হয়। যখন তারা দেখতে পেল যে, উটনীটি পানির ঘাট থেকে ফিরে আসছে, তখন তাদের মধ্যকার মিসরা নামক ব্যক্তিটি যে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে বসে ছিল সে একটি তীর তার দিকে খুঁড়ে মারে, তীরটি উটনীটির পায়ের গোছা ভেদ করে চলে যায়। এদিকে মহিলারা তাদের মুখমণ্ডল অবারিত করে গোটা কবিতার মধ্যে উটনী হত্যার কথা ছড়িয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করতে থাকে। কিদার ইবন সালিফ অগ্রসর হয়ে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে উটনীটির পায়ের গোছার রগ কেটে দেয়। সাথে সাথে উটনীটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং বিকট শব্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে। চিৎকারের মাধ্যমে সে তার পেটের বাচ্চাকে সতর্ক করে। কিদার পুনরায় বর্শা দিয়ে উটনীটির বুকে আঘাত করে এবং তাকে হত্যা করে। ওদিকে বাচ্চাটি একটি দুর্গম পাহাড়ে আরোহণ করে তিনবার ডাক দেয়।


আবদুর রজ্জাক (رحمة الله) হাসান (رحمة الله) থেকে বর্ণিতঃ উটনীটির বাচ্চার ডাক ছিল এইঃ


يا رب اين امي


হে আমার রব! আমার মা কোথায়? এরপর সে একটি পাথরের মধ্যে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। কারো কারো মতে, লোকজন ঐ বাচ্চার পশ্চাদ্ধাবন করে তাকেও হত্যা করেছিল।


আল্লাহ বলেনঃ


(فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطَىٰ فَعَقَرَ * فَكَيْفَ كَانَ عَذَابِي وَنُذُرِ)


[Surat Al-Qamar ২৯ - ৩০]


অর্থাৎ, অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করল এবং সে এসে উটনীটিকে ধরে হত্যা করল। দেখ, কি কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী (সূরা কামারঃ ২৯-৩০)


অন্যত্র আল্লাহ্ বলেনঃ


(إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا * فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ نَاقَةَ اللَّهِ وَسُقْيَاهَا)


[Surat Ash-Shams ১২ - ১৩]


অর্থাৎ, ‘ওদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগ্য সে যখন তৎপর হয়ে উঠলো, তখন আল্লাহর রাসূল বলল, আল্লাহর উটনী ও তার পানি পান করার বিষয়ে সাবধান হও।' অর্থাৎ তোমরা একে ভয় করিও। কিন্তু তারা রাসূলকে অস্বীকার করল এবং উটনীটিকেও হত্যা করে ফেললো।


( فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُمْ بِذَنْبِهِمْ فَسَوَّاهَا * وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا)


[Surat Ash-Shams ১৪ - ১৫]


অর্থাৎ, তাদের পাপের জন্যে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে একাকার করে দিলেন এবং এর পরিণামের জন্য আল্লাহর আশঙ্কা করার কিছু নেই। (সূরা শামস্ঃ ১৪-১৫)


ইমাম আহমদ (رحمة الله) আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র (رحمة الله) সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন যাম'আ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার ভাষণ দিতে গিয়ে উটনী ও তার হত্যাকারীর প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেনঃ


(إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا)


[Surat Ash-Shams ১২]


(তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগা সে যখন তৎপর হয়ে উঠল) যে লোকটি তৎপর হয়েছিল সে অত্যন্ত কঠিন, রূঢ় ও কওমের সর্দার। আবু যাম'আর ন্যায় মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক লিখেছেন, ইয়াযীদ ইবন মুহাম্মদ আম্মার ইবন ইয়াসির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ হে আলী! আমি কি তোমাকে মানব গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় দুই হতভাগার কথা শুনাব? আলী (رضي الله عنه) বললেন, বলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ একজন হল ছামূদ সম্প্রদায়ের সেই গৌরবর্ণ লোকটি, যে উটনী হত্যা করেছিল; আর দ্বিতীয়জন হল সেই ব্যক্তি যে তোমার এই স্থানে (অর্থাৎ মস্তকের পার্শ্বে) আঘাত করবে, যার ফলে এটা অর্থাৎ দাড়ি ভিজে যাবে। ইবন আবু হাতিম (رحمة الله) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ


(فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ)


[Surat Al-A'raf ৭৭]


অর্থাৎ, অতঃপর তারা সেই উটনী বধ করে এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং বলে, হে সালিহ্! তুমি রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর। (সূরা আ'রাফঃ ৭৭)


এই উক্তির মধ্যে তারা কয়েকটি জঘন্য কুফরী কথা বলেছে যথাঃ (১) আল্লাহ যে উটনী তাদের জন্যে নিদর্শন রূপে পাঠিয়ে তাকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন, তারা তাকে হত্যা করে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে। (২) আযাব আনয়নের জন্যে তারা বেশি রকম তাড়াহুড়া করে। দুই কারণে তারা সে আযাবে গ্রেফতার হয়, (এক) তাদের উপর আরোপিত শর্ত-


( وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ)


[Surat Al-A'raf ৭৩]


(একে কোনরূপ কষ্ট দিও না, অন্যথায় অতি শীঘ্রই আযাব তোমাদেরকে পাকড়াও করবে।) অন্য এক আয়াতে আছে - عذاب عظيم (ভয়াবহ আযাব), অপর এক আয়াতে আছে - عذاب اليم (পীড়াদায়ক আযাব)। এর প্রতিটিই যথার্থরূপে দেখা দেয়। (দুই) আযাব তাড়াতাড়ি এনে দেয়ার জন্যে তাদের পীড়াপীড়ি করা। (৩) তারা তাদের নিকট প্রেরিত রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অথচ তিনি তাঁর নবুওতের দাবির সত্যতার পক্ষে চূড়ান্ত প্রমাণ উপস্থিত করেছিলেন এবং তারাও তা নিশ্চিতরূপে জানতো। কিন্তু সত্যকে এড়িয়ে চলার মানসিকতা ও আযাবে গ্রেফতার হওয়ার যোগ্যতাই তাদেরকে ভ্রান্ত কুফরী পথে যেতে ও বিদ্বেষী হয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেনঃ


(فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ۖ ذَٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ)


[Surat Hud ৬৫]


অর্থাৎ, কিন্তু ওরা তাকে বধ করল। ফলে সালিহ বলল, তোমরা তোমাদের বাড়িতে তিনদিন জীবন উপভোগ করে নাও। এ এমন একটি ওয়াদা যা মিথ্যা হবার নয়। (সূরা হূদ - ৬৫)


মুফাসসিরগণ লিখেছেন, উটনীটির উপর প্রথম যে ব্যক্তি হামলা করে তার নাম কিদার ইবন সালিফ (তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।) প্রথম আঘাতেই উটনীটির পায়ের গোছা কেটে যায় এবং সে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর অন্যরা দৌড়ে গিয়ে তরবারি দ্বারা কেটে উটনীটির দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে। উটনীটির সদ্য প্রসূত বাচ্চা এ অবস্থা দেখে দৌড়ে নিকটবর্তী এক পাহাড়ে গিয়ে ওঠে এবং তিনবার আওয়াজ দেয়। এজন্যে সালিহ (عليه السلام) তাদেরকে বললেনঃ


( تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍٍ)


[Surat Hud ৬৫]


অর্থাৎ তোমরা তিনদিন পর্যন্ত তোমাদের ঘরবাড়িতে জীবন উপভোগ কর। অর্থাৎ ঘটনার ঐ দিন বাদ দিয়ে পরবর্তী তিনদিন। কিন্তু এত কঠোর সতর্কবাণী শুনানো সত্ত্বেও তারা এ কথা বিশ্বাস করল না। বরং ঐ রাত্রেই নবীকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র পাকায় এবং উটনীটির মত তাকেও খতম করার পরিকল্পনা করে।


(قَالُوا تَقَاسَمُوا بِاللَّهِ لَنُبَيِّتَنَّهُ وَأَهْلَهُ)


[Surat An-Naml ৪৯]


তারা পরস্পরে বলল, আল্লাহর নামে কসম কর যে, আমরা সালিহ ও তার পরিবারসহ লোকদের উপর রাত্রিবেলায় আক্রমণ চালাব। অর্থাৎ আমরা তার বাড়িতে হামলা করে সালিহকে তার পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করব এবং পরে তার অভিভাবকরা যদি রক্তপণ চায় তবে আমরা হত্যা করার কথা অস্বীকার করব। এ কথাই কুরআনে বলা হয়েছেঃ


( ثُمَّ لَنَقُولَنَّ لِوَلِيِّهِ مَا شَهِدْنَا مَهْلِكَ أَهْلِهِ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ)


[Surat An-Naml ৪৯]


অর্থাৎ, পরে তার অভিভাবককে বলব, আমরা তার পরিবারের হত্যা প্রত্যক্ষ করিনি। (সূরা নামলঃ ৪৯)


আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ


(وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ * فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِينَ * فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ * وَأَنْجَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ) [Surat An-Naml ৫০ - ৫৩]


অর্থাৎ, তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি। অতএব দেখ, ওদের চক্রান্তের পরিণতি কি হয়েছে! আমি অবশ্যই ওদের এবং ওদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি। এই তো ওদের ঘরবাড়ি — সীমালংঘন করার কারণে যা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। আর যারা মুমিন-মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামলঃ ৫০-৫৩)


ছামূদ জাতির ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়েছিল নিম্নরূপেঃ যে কয় ব্যক্তি হযরত সালিহ (عليه السلام)-কে হত্যা করতে সংকল্পবদ্ধ হয়, আল্লাহ প্রথমে তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেন। পরে গোটা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন। যে তিনদিন তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল তার প্রথমদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন আসার সাথে সাথে সম্প্রদায়ের সকলের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। যখন সন্ধ্যা হল তখন পরস্পর বলাবলি করল, “জেনে রেখ, নির্ধারিত সময়ের প্রথম দিন শেষ হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন শুক্রবারে সকলের চেহারা লাল রঙ ধারণ করে। সন্ধ্যাকালে তারা বলাবলি করে যে, শুনে রেখ, নির্ধারিত সময়ের দুইদিন কেটে গেছে। তৃতীয় দিন শনিবারে সকলের চেহারা কাল রঙ ধারণ করে। সন্ধ্যাবেলা তারা বলাবলি করে যে, জেনে নাও, নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। রবিবার সকালে তারা খোশবু লাগিয়ে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষায় থাকল— কি শাস্তি ও আযাব-গযব নাযিল হয় তা দেখার জন্যে। তাদের কোনই ধারণা ছিল না যে, তাদেরকে কি করা হবে এবং কোন দিক থেকে আযাব আসবে। কিছু সময় পর সূর্য যখন উপরে এসে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, তখন আসমানের দিক থেকে বিকট আওয়াজ এলো এবং নিচের দিক থেকে প্রবল ভূকম্পন শুরু হল। সাথে সাথে তাদের প্রাণবায়ু উড়ে গেল, সকল নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল, শোরগোল স্তব্ধ হল এবং যা সত্য তাই বাস্তবে ঘটে গেল। ফলে সবাই লাশ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।


ইতিহাসবেত্তাগণ লিখেছেন, ছামূদ সম্প্রদায়ের এ আযাব থেকে একজন মাত্র মহিলা ছাড়া আর কেউই মুক্তি পায়নি। মহিলাটির নাম কালবা বিনত সালাকা, ডাকনাম যারীআ। সে ছিল কার কাফির ও হযরত সালিহ্ (عليه السلام)-এর চরম দুশমন। আযাব আসতে দেখেই সে দ্রুত বের হয়ে দৌড়ে এক আরব গোত্রে গিয়ে উঠল এবং তার সম্প্রদায়ের উপর পতিত যে আযাব সে প্রত্যক্ষ করে এসেছে—তার বর্ণনা দিল। পিপাসায় কাতর হয়ে সে পানি পান করতে চাইল। কিন্তু পানি পান করার সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।


আল্লাহর বাণীঃ كان لم يغنوا (যেন সেখানে তারা কোন দিন বসবাস করে নাই)


আল্লাহ বলেনঃ


( أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِثَمُودَ)


[Surat Hud ৬৮]


অর্থাৎ, জেনে রেখ, ছামূদ সম্প্রদায় তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। জেনে রেখ, ধ্বংসই হল ছামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম। (সূরা হূদঃ ৬৮)। এটাই ছিল তাদের অদৃষ্ট লিখন।


ইমাম আহমদ (رحمة الله), আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার হিজর উপত্যকা দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলেনঃ তোমরা আল্লাহর নিদর্শন অর্থাৎ মুজিযা দেখার আবদার করো না। সালিহ (عليه السلام)-এর সম্প্রদায় এরূপ আবদার জানিয়েছিল। সেই নিদর্শনের উটনী এই গিরিপথ দিয়ে পানি পান করার জন্যে যেত এবং পান করার পর এই পথ দিয়েই উঠে আসত (فَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ فَأَخَذَتْهُمُ )


[Surat Adh-Dhariyat ৪৪] (তারা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হল ও উটনীটিকে বধ করল)


উটনী একদিন তাদের পানি পান করত এবং তারা একদিন উটনীর দুধ পান করত। পরে তারা উটনীটিকে বধ করে। ফলে এক বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করে। এতে ছামূদ সম্প্রদায়ের শুধু একজন লোক ব্যতীত আসমানের নিচে তাদের যত লোক ছিল সবাইকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেন। সেই লোকটি হারম শরীফে অবস্থান করছিল। সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করল, কে সেই লোকটি ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তার নাম আবু রাগাল। পরে হারম শরীফ থেকে বের হবার পর ঐ আযাব তাকে ধ্বংস করে, যে আযাব তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিল। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সংগৃহীত; কিন্তু হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয়টি কিতাবের কোনটিতেই এর কোন উল্লেখ নেই। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।


আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) ইসমাঈল ইবন উমাইয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, একদা নবী করীম (ﷺ) আবু রাগালের কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান, এই কবরবাসী কে? তারা বলল, আল্লাহ ও তার রাসূলই সম্যক জানেন। তিনি বললেন, এটা আবু রাগালের কবর, সে ছামূদ সম্প্রদায়ের লোক। আল্লাহর হারমে সে অবস্থান করছিল। সুতরাং আল্লাহর হারম আল্লাহর আযাব থেকে দূরে রাখে। পরে হারম থেকে সে বেরিয়ে আসলে সেই আযাব তাকে ধ্বংস করে, যে আযাব তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিল। তারপর এখানে তাকে দাফন করা হয় এবং তার সাথে স্বর্ণনির্মিত একটি ডালও দাফন করা হয়। এ কথা শুনে কাফেলার সবাই বাহন থেকে নেমে এসে তরবারি দ্বারা কবর খুঁড়ে স্বর্ণের ডাল বের করে নিয়ে আসে।


আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবু রাগালের অপর নাম আবূ ছাকীফ। বর্ণনার এই সূত্রটি মুরসাল। এ হাদীস মুত্তাসিল সনদেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (رحمة الله) তার সীরাত গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন আমর (رضي الله عنه) প্রমুখাৎ থেকে বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তাইফ গমনের সময় আমরাও সাথে ছিলাম। একটি কবর অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, এটি আবু রাগালের কবর— যাকে আবূ ছাকীফও বলা হয়। সে ছামূদ সম্প্রদায়ের লোক। হারমে অবস্থান করায় তার উপর তাৎক্ষণিকভাবে আযাব আসেনি। পরে যখন হারম থেকে বেরিয়ে এই স্থানে আসে, তখন সেই আযাব তার উপর পতিত হয়, যে আযাব তার সম্প্রদায়ের উপর পতিত হয়েছিল। এখানেই তাকে দাফন করা হয়। এর প্রমাণ এই যে, তার সাথে স্বর্ণের একটি ডালও দাফন করা হয়েছিল। তোমরা তার কবর খুঁড়লে সাথে ঐ ডালটিও পাবে। তখনই লোকজন কবরটি খুঁড়ে ডালটি বের করে আনে। আবূ দাউদ (رحمة الله) মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (رحمة الله) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাফিজ আবুল হাজ্জাজ মাযযী একে হাসান ও আযীয পর্যায়ের হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন।


আমার মতে, এ হাদীসটি বুজায়র ইবন আবু বুজায়র একাই বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীসের বর্ণনাকারী হিসেবে তাকে দেখা যায় না। এছাড়া ইসমাঈল ইবন উমাইয়া ব্যতীত অন্য কেউ এটা বর্ণনা করেননি। শায়খ আবুল হাজ্জাজ বলেছেন, এ হাদীসকে মারফু বলা অমূলক, এটা আসলে আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমরেরই একটি উক্তি। তবে পূর্বে বর্ণিত মুরসাল ও জাবিরের হাদীসে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহর বাণীঃ


(فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَٰكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ)


[Surat Al-A'raf ৭৯]


অর্থাৎ, অতঃপর সালিহ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছিলাম এবং তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তো হিতাকাঙ্ক্ষীদেয়কে পছন্দ কর না। (সূরা আ'রাফঃ ৭৯)


সম্প্রদায়ের ধ্বংসের পর হযরত সালিহ (عليه السلام) জাদেরকে উদ্দেশ করে যে কথা বলেছিলেন, এখানে তা জানান হয়েছে। তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের এলাকা থেকে অন্যত্র যাওয়ার সময় বলেছিলেনঃ


( يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمَْ)


[Surat Al-A'raf ৭৯]


(হে আমার সম্প্রদায়। আমার মনে পয়গাম আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছিলাম এবং তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছিলাম) অর্থাৎ তোমাদের হিদায়াতের জন্যে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম। কথায়, কাজে ও সদিচ্ছা দিয়ে তা একান্তভাবে কামনা করেছিলাম


( وَلَٰكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ)


[Surat Al-A'raf ৭৯]


(কিন্তু হিতাকাঙ্ক্ষীদেরকে তোমরা পছন্দ কর না) অর্থাৎ সত্য তোমরা কবুল করনি আর না কবুল করতে প্রস্তুত ছিলে। এ কারণেই আজ তোমরা চিরস্থায়ী আযাবের মধ্যে পড়ে রয়েছ। এখন আমার আর করার কিছুই নেই। তোমাদের থেকে আযাব দূর করার কোন শক্তি আমার আদৌ নেই। আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া ও উপদেশ দেয়ার দায়িত্বই আমার উপর ন্যস্ত ছিল। সে দায়িত্ব আমি পালন করেছি। কিন্তু কার্যত সেটাই হয় যেটা আল্লাহ চান।


শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)ও অনুরূপভাবে বদর প্রান্তরে অবস্থিত কূপে নিক্ষিপ্ত নিহত কাফির সর্দারদের লাশগুলো সমোধন করে ভাষণ দিয়েছিলেন। বদর যুদ্ধে নিহত কুরায়শ সর্দারকে বদরের কূপে নিক্ষেপ করা হয়। তিনদিন পর শেষরাতে ময়দান ত্যাগ করার সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উক্ত কূপের নিকট দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘হে কূপবাসীরা! তোমাদের সাথে তোমাদের প্রভু যে ওয়াদা করেছিলেন তার সত্যতা দেখতে পেয়েছে তো? আমার সাথে আমার প্রভুর যে ওয়াদা ছিল তা আমি পুরোপুরি সত্যরূপে পেয়েছি।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেন, ‘তোমরা হচ্ছ নবীর নিকৃষ্ট পরিজন। তোমরা তো তোমাদের নবীকে মিথুক প্রতিপন্ন করছ। কিন্তু অন্য লোকেরা আমাকে সত্য বলে স্বীকার করেছে। তোমরা আমাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছ। অন্যরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। তোমরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে, পক্ষান্তরে অন্যরা আমাকে সাহায্য করেছে—তোমরা তোমাদের নবীর কত জঘন্য পরিজন ছিলে?’


হযরত উমর (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এমন একদল লোকের সাথে কথা বলছেন, যারা লাশ হয়ে পড়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘যে মহান সত্তার হাতে আমার জীবন, তার শপথ করে বলছি, আমি যেসব কথাবার্তা বলছি তা ওদের চেয়ে তোমরা মোটেই বেশি শুনছ না; কিন্তু তারা উত্তর দিচ্ছে না এই যা।’


ما انتم باسمع لما اقول منهم ولكن هم لايجيبون.


পরে যথাস্থানে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আসবে ইনশাআল্লাহ। কথিত আছে, হযরত সালিহ (عليه السلام) এ ঘটনার পর হারম শরীফে চলে যান এবং তার ইন্তিকাল পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন।


ইমাম আহমদ, ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, বিদায় হজ্জের প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন উসফান উপত্যকা অতিক্রম করেন তখন জিজ্ঞেস করেন, হে আবু বকর! এটা কোন উপত্যকা? আবু বকর (رضي الله عنه) বলেন, এটা উসফান উপত্যকা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এই স্থান দিয়ে হূদ ও সালিহ (عليه السلام) নবীদ্বয় অতিক্রম করেছিলেন। তাদের বাহন ছিল উটনী, লাগাম ছিল খেজুর গাছের ছাল দ্বারা তৈরি রশি, পরনে ছিল জোব্বা এবং গায়ে ছিল চাদর। হজ্জের উদ্দেশ্যে তালবিয়া পড়তে পড়তে তারা আল্লাহর ঘর তওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসের সনদ হাসান পর্যায়ের। হযরত নূহ নবীর আলোচনায় তাবারানী থেকে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করা হয়েছে সেখানে নূহ, হূদ ও ইবরাহীম (عليه السلام)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

Top