কিতাবঃ হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ)

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ আবদুল হালিম

মমতাজুল মুহাদ্দিসীন (এম.এম) জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া চট্টগ্রাম হতে

বি.এ অনার্স, এম.এ (এরাবিক), পি-এইচ.ডি. (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

টেক্সট রেডীঃ

ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি

ফাতেমাতুজ জোহরা শাকিলা

আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন

ই. মু. ফা. গবেষণা-০০৩

ই. মু. ফা. প্রকাশনা-২০১৪/৩

প্রথম প্রকাশ :

রজব - ১৪৩৫ হি.

মে - ২০১৪ ইং

দ্বিতীয় প্রকাশ :

আগষ্ট - ২০১৪ইং

তৃতীয় প্রকাশ :

১২রবিউল আওয়াল - ১৪৩৭ হি.

২৫ডিসেম্বর - ২০১৫ ইং

গ্রন্থ স্বত্ত্ব : গ্রন্থকার কর্তৃক সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রকাশক : 

আলহাজ্ব মোহাম্মদ নুরন্নবী

পরিচালক, প্রকাশনা বিভাগ, 

আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন

হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ

সহযোগিতায় : 

আলহাজ্ব জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর

নামকরণ: মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আলম নুরুল্লাহ

প্রচ্ছদ : ডা. মুহাম্মদ আখতার আমীন চেধুরী

হাদিয়া : ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) টাকা মাত্র

প্রাপ্তিস্থান : রেজভী কুতুবখানা, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

মুহাম্মদী কুতুবখানা, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।

কম্পিউটার কম্পোজ :

সাদী কম্পিউটার এন্ড প্রিন্টার্স ,আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। ০১৮১৫-১৩১৬৪০

                        উৎসর্গ

মুজাদ্দেদে দ্বীন ও মিল্লাত, ইমামে আহলে সুন্নাত

পীরে ত্বরীকত, শামসুল মুনাযিরীন, তাজুল ‘উলামা

বদরুল ফুদ্বালা, ‘আশেক্বে রাসূল (ﷺ), হযরতুল আল্লামা গাজী সৈয়দ মুহাম্মদ আযীযুল হক শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা ‘আলাইহি এর করকমলে অর্পন করলাম।



                         সূচীপত্র


১. হযরতুল আল্লামা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দীক ফারুক্বী (ম.জি.আ.)-এর অভিমত 

২. শায়খুল হাদীস হাফেয মুহাম্মদ সুলায়মান আনছারী (ম.জি.আ.)-এর অভিমত 

৩. ভাইস-চেয়ারম্যান-এর কথা 

৪. প্রকাশকের বক্তব্য

৫. মুখবন্ধ 

৬. হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ)

৭. নবী করীম (ﷺ)-এর চেহরা মোবারক

৮. নবী করীম (ﷺ)-এর রং মোবারক 

৯. নবী করীম (ﷺ)-এর চোখ মোবারক

১০. নবী করীম (ﷺ)-এর মুখ মোবারক

১১. নবী করীম (ﷺ)-এর নাক মোবারক

১২. নবী করীম (ﷺ)-এর ওষ্ঠ ও দাঁত মোবারক

১৩. নবী করীম (ﷺ)-এর জিহ্বা মোবারক

১৪. নবী করীম (ﷺ)-এর দাড়ি ও চুল মোবারক 

১৫. নবী করীম (ﷺ)-এর গর্দান/স্কন্ধ ও পৃষ্ঠ 

মোবারক এবং মোহরে নবুয়্যত

১৬. নবী করীম (ﷺ)-এর বগল মোবারক

১৭. নবী করীম (ﷺ)-এর হাত ও বাহু মোবারক

১৮. নবী করীম (ﷺ)-এর বক্ষ ও ক্বলব 

মোবারক

১৯. নবী করীম (ﷺ)-এর পেট মোবারক

২০. নবী করীম (ﷺ)-এর চরণ মোবারক

২১. নবী করীম (ﷺ)-এর পোষাক মোবারক 

২২. উপসংহার

২৩. গ্রন্থপঞ্জি



আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন-এর উপদেষ্টামন্ডলীর সম্মানিত সভাপতি, পীরে কামিল, মুরশিদে বরহক্ব হযরতুল আল্লামা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ফারুকী (ম.জি.আ.)-এর 


                          অভিমত



الحمد لله رب العلمين والصلوة والسلام على سيّد الأنبيا  والمرسلين وعلى اٰله واصحابه أجمعين. أمّا بعد- 

আরশ, কুরছি, লাওহ, কলম, চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্রসহ আঠার হাজার মাখলুকাত আল্লাহর হাবীব (ﷺ) এর এক কতরা ঝলক মাত্র। আল্লাহ তাআলা নিজেকে প্রকাশের জন্য তাঁরই প্রিয় হাবিবকে নির্বাচন করেছেন। আল্লাহ ছিলেন গােপন ভান্ডার তাঁরই মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছেন। আল্লাহ কেমন সুন্দর তার বর্ণনা বিরল। তাঁর সৌন্দর্যের সাক্ষী নবী করীম (ﷺ)। কেন নয়? নবী করীম স্বয়ং আল্লাহর দর্শনে মত্ত থাকেন। কবি কতই না সুন্দর বলেছেন 


اور کوئی غیب کیا تم سے نہان ہو بھلا + جب نہ خداہی چھپا تم پہ کروڑں درود 

“আর কি অদৃশ্য আপনার থাকতে পারে যখন স্বয়ং আল্লাহই আপনার অদৃশ্য নয়, আপনার প্রতি কোটি কোটি দরূদ 

কিন্তু আল্লাহর হাবীবকে এমন অতুলনীয়, উপমাবিহীনভাবে সৃষ্টি করে আল্লাহর সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আল্লাহ অদ্বিতীয় একক মহান সত্ত্বা যার কোন তুলনা নেই। স্বীয় হাবীবকে এমন রূপ সৌন্দর্য দান করেছেন যার সৌন্দর্যে বিমােহিত হয়ে সাহাবীগণ (رضي الله عنه) নিজেদের ধন-দৌলত ও জান-প্রাণ কুরবান করেছেন অকাতরে। তাইতাে সৈয়্যেদিনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেছেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দিকে চেয়ে থাকা আপনার সামনে বসে থাকা আপনার জন্য অকাতরে সম্পদ ব্যয় করাই হলাে আমরা নিকট খুবই প্রিয়” 


ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেছেন “নবী করীম (ﷺ) -এর পূর্ণরূপ ও সৌন্দর্য আমাদের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। যদি তাঁর পূর্ণরূপ ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা হতাে তাহলে আমাদের চক্ষু তাঁকে দেখতে সক্ষম হতাে না।” 

    সাহাবীগণ (رضي الله عنه) তাঁকে চন্দ্র ও সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ পৃথিবীতে এ দুটির চেয়ে অধিক সুন্দর তৃতীয় কোন বস্তু নেই। তা নাহলে কোথায় চন্দ্র সূর্য আর কোথায় আমার নবী (ﷺ)। আমার নবীর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর থেকে ফুয়ুজাত গ্রহন করে সাহাবীগণ (رضي الله عنه) এক একজন অতিউজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছেন। 

   আমার হেধন্য বিশিষ্ট গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম নবী করীম (ﷺ) এর নুরানী অবয়ব মােবারকের কিঞ্চিৎ বর্ণনা তুলে ধরেছেন অত্র “হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ) " গ্রন্থে। যা পাঠ করলে আমার নবী সম্পর্কে সামান্য ধারনা লাভ করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সাথে সাথে নবীর প্রতি আরিক মুহাব্বত ও পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য প্রকাশ পাবে এবং একথা জানা যাবে যে, আমরা এমন নবীর উম্মত যিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট সর্বগুণে গুনান্বিত, রহমতের ভান্ডার, উম্মতের কান্ডারী, ইহকালিন সুখ-শাড়ি ও পরকালিন মুক্তিদাতা আল্লাহর হাবীব (ﷺ)। 

   আমি লেখকের কল্যাণ কামনা করি। যাতে তিনি আল্লাহ তাআলা ও তাঁর হাবীব (ﷺ) এর কাছে গৃহীত হন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের খেদমতকে কবুল করন। আমীন। 


(মাওলানা মােহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক ফারুক্বী)


এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া আলীয়ার শায়খুল হাদীস এবং ও.এ.সি. বাংলাদেশের সম্মানিত চেয়ারম্যান, উস্তাতাযুল উলামা হযরতুল আল্লামা, আলহাজ্ব মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ সােলায়মান আনছারী (মা.জি.আ.)-এর 


                           অভিমত


الحمد لله رب العلمين و الصلوة و السلام على اشرف الانبيا    و المرسلین قائد الغر المحجلين الذي شرح الفرقان باحاديثه و بيانه القويم و كشف عن اسراره غوامضه لهداية الناس اجمعين و انقذنا بحسن سيرته من الظلمات والضلال المبين و على اله الطيبين واصحابه الطاهرين الذين باشاعة الدين المتين وعلى ازواجه الطاهرات امهات المؤمنين وعلى جميع الأئمة التابعين من المفسرين والمحدثين المخلصين الكاملين الى يوم الدين! 

        اما بعد!

আল্লাহ তা'আলা অতি সুন্দর, তিনি সুন্দরকেই ভালবাসেন। তাই তিনি এ বিশ্ব ভ্রাম্মন্ডকে অতি চমৎকারভাবে সাজিয়েছেন। বিশ্ব জগতের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী চিন্তাশীল মননে রেখাপাত করে। সৃষ্টি জগতের প্রাণ স্পন্দন, কুলকায়েনাতের রূহ হলেন তাঁরই প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)। আল্লাহর সৌন্দর্যের বহিপ্রকাশ ঘটেছে ‘জামালে মােস্তাফা' (ﷺ) এর মধ্যে। তিনি তাঁকে এমন সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন যাঁর তুলনা বিরল। অতুলনীয়, অনিন্দ্য সুন্দর ও অতি আকর্ষণীয় মনােহর বর্ণের এ মহানবী (ﷺ) স্বয়ং এরশাদ করেছেন “أنا مرأة جمال الحق” আমি আল্লাহ তা'আলার সৌন্দর্যের আয়না স্বরূপ। 

ড. ইকবাল (رحمة الله) কতই না সুন্দর বলেছেন 


مصطف آئینہ روئے خداست + منعکس دروے ہمہ خوئے خداست  

মােস্তুফা (ﷺ) খােদা দর্শনের দর্পণ, তিনি আল্লাহর সমুদয় চরিত্রের/গুণাবলীর প্রতিচ্ছবি। 

    নবী করীম (ﷺ) এর চেহরা মােবারক যেন পূর্ণিমার চন্দ্র, চলমান সূর্যের ন্যায় আলােক উজ্জ্বল, যাঁর আলােকচ্ছটা রাতের অন্ধকারে বিচ্ছুরিত হতাে। তিনি আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি। নূরানী এ মহামানবের শারীরিক গঠন ও তাঁর অতি আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যাবলী মানুষের হৃদয় আকর্ষণ করে। মানুষ তাঁর রূপ-সৌন্দর্য দেখে এমনভাবে বিমােহিত হয়ে পড়ে যে, নিজেদের প্রাণ দিতেও দ্বিধাবােধ করেন না। তাইতাে তাঁরা নিজেদের সব কিছুই নবীর জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। নবী করীম রউফুর রাহীম (ﷺ) এর শারীরিক সৌন্দর্য ও এর অতি আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্যাবলীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সম্বলিত অত্র “হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ)” পুস্তকটি আমার স্নেহাস্পদ মাওলানা ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম রচনা করেছেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের নির্ভরযােগ্য সূত্রে নবী করীম (ﷺ) এর কিঞ্চিত সৌন্দর্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। যাকে “জামালে মােস্তফা” বলা হয়। যদিও নবীজীর রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া কোন সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। 

কবি শেখ সা'আদী (رحمة الله) যথার্থই বলেছেন-


لا یمکن الثناء كما كان حقہ +  بعد از خدا بزرگ توئی قصہ مختصر 

“অসম্ভব বয়ান করা আপনার শান 

বলা যায় শুধু আল্লাহর পরই আপনার স্থান।। 


    পাঠক অত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করে নবী করীম (ﷺ) এর সৌন্দর্য সম্পর্কে যৎসামান্য ধারণা লাভ করতে পারলেই লেখকের কষ্ট স্বার্থক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আল্লাহ লেখককে হায়াতে তৈয়্যবা দান করুন আমিন। আমি এ পুস্তিকাটির বহুল প্রচার কামনা করি।  


(আলহাজ্ব হাফেয মুহাম্মদ সােলায়মান আনছারী) 


               ভাইস-চেয়ারম্যানের কথা 


রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) হলেন মুমিনের ঈমান, আর ঈমানের মূলদাবী হলাে নবী করীম (ﷺ) কে ভালবাসা। নবীকে ভালবাসা অর্থ হলাে আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাসা। মুসলমানদের এটা মৌলিক ‘আক্বিদা বিশ্বাস। সৃষ্টি জগতের প্রাণ স্পন্দন হলেন নবী করীম (ﷺ)। নিজ কুদরতী হাতে অনিন্দ্য সুন্দর ও অতুলনীয় উপমাবিহীনভাবে মহান আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেই নিজের তুলনা। সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) তাঁর চারিত্রিক মাধুৰ্য্যতা ও সৌন্দর্যে বিমােহিত হয়ে নিজেদের জান-মাল কুরবান করেছেন অকাতরে। পৃথিবীর ইতিহাসে যার কোন নবীর নেই। তিনিও (ﷺ) নিজ করুনা-স্নেহ, মায়া-মমতায়, তাদেরকে আপন করে নিয়েছেন। দোযখী থেকে বেহেস্তী বানিয়েছেন। বর্বর অশিক্ষিত একটি জাতিকে সাফল্য ও সমৃদ্ধির চরম শিখরে আরােহন করিয়েছেন। তাঁদেরকে সভ্যতার মহাকাশে জ্যোতির্ময় উজ্জ্বল নক্ষত্র বানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যাকেই অনুসরণ করা হউক না কেন মুক্তি নিশ্চিত হবে।। আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক, বিখ্যাত ‘ইমাম মুসলিম (رحمة الله): জীবন ও কর্ম এবং ‘নূর তত্ত্ব গ্রন্থদ্বয়ের লেখক মাওলানা ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম নবী করীম (ﷺ) -এর নূরানী বশরী অবয়বের একটি ধারণা সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর মুখনিঃসৃত বর্ণনা থেকে উপস্থাপন করার প্রয়াস পেয়েছেন। তা-ই পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। মুমিনের ঈমান জাগরক করার জন্য বইখানি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি । আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলের খেদমত কবুল করন। 

আমিন ! 


মুহাম্মদ আলমগীর 

ভাইস-চেয়ারম্যান 

আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন 


                    প্রকাশকের বক্তব্য 


সমগ্র প্রশংসা মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তা'আলার জন্য, যিনি স্বীয় হাবীব (ﷺ)কে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম, অনন্য উপমাবিহীনভাবে সৃজন করেছেন। যাকে সর্বশেষ নবী ও সৃষ্টি জগতের প্রাণ স্পন্দন, করণার আধার ও উম্মতের কান্ডারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যার রূপ-সৌন্দযের বর্ণনা বিরল। যিনি চলমান সূর্যের ন্যায় দ্যদীপ্যমান। পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় অতি উজ্জ্বল মনােহর বর্ণের ছিলেন বলে সাহাবীদের (رضي الله عنه) মূখনিঃসৃত বাণী থেকে প্রতিয়মান হয়। 

আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ তথ্য ও নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ পর্যালােচনা পুর্বক নবী করীম রউফুর রহীম (ﷺ) এর নূরানী শরীর মােবারকের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। যা মূমিন-বিশ্বাসীকে ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। গবেষণা ও সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন মুসলিম সমাজে অত্র গ্রন্থের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করতঃ প্রকাশের এক যুগাঙ্কারী সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছেন। 

    গ্রন্থে ব্যবহৃত তথ্য-উপাথ্য ও দলীল-প্রমাণ খুবই নির্ভর যােগ্য। গ্রন্থটির উপস্থাপনা দেখে এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়ার সম্মানিত শায়খুল হাদীস এবং ও.এ.সি. বাংলাদেশের সম্মানিত চেয়ারম্যান হযরতুল আল্লামা হাফিয মুহাম্মদ সােলায়মান আনছারী মা.জি.আ. সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর গুরত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 

অত্র প্রকাশনায় মুদ্রণ প্রমাদও থাকা অস্বাভাবিক নয়। আশা করি কোন ভুল ভ্ৰান্তি নযরে আসার পর আমাদের জানালে পরবর্তী সংস্করণে সংশােধন করা হবে। ইনশা-আল্লাহ। 

  যাঁদের সহযােগিতা ও মহানুভবতায় গ্রন্থটি পাঠকদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলের নবীপ্রেম ও মুহাব্বত কবুল করুন। আমিন । 


মােহাম্মদ নুরুন্নবী 

পরিচালক, প্রকাশনা বিভাগ 

আল-ইমাম মুসলিম (رحمة الله) ফাউন্ডেশন 


                            মুখবন্ধ 


نحمده ونصلی ونسلم على رسوله الكريم وعلى اله واصحابه اجمعين اما بعد

আমি আমার নই। আল্লাহ রাসূল (ﷺ)র। বৈচিত্রে ভরপুর সৃষ্টির রূপায়নে আল্লাহ তা'আলার বিস্ময়কর কলাকৌশল চিন্তাশীল মননে গভীর রেখাপাত করে। সৃষ্টি জগতের প্রাণ, করণার আধার আল্লাহ তাআলার প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর নুর মােবারক আল্লাহ তা'আলার প্রথম সৃষ্টি। সে নূর মােবারক হতে অনড় অসীম দয়ালু প্রভু তাঁর পরিকল্পনা বায়ন করেছেন সুনিপুনভাবে যাতে কোন ধরণের খুঁত নেই। হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)কে বাশরীয়তের অবয়বে সমগ্র সৃষ্টির নবী ও রাসূল রূপে প্রেরণ করে সৃষ্টি জগতের প্রতি তিনি বড়ই ইহসান করেছেন। যার কোন তুলনা উপমা নেই। যার পদতলে ধরণীতল, যার সৌন্দর্য ও ভালবাসায় বিমুগ্ধ হয়ে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, আশরাফুল মাখলুকাত, মানুষ নিজেদের জীবন, ধন-দৌলত অকাতরে বিলিন করে ইহকালীন সুখ-সমৃদ্ধি ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করেছেন। মিসরের রমনীকুল হযরত ইউসুফ (عليه السلام)-এর রূপ-লাবন্য দেখে নিজেদের আঙ্গুল কুরবানী করেছে। কিন্তু আমাদের আক্বা-মনিব নবী করীম (ﷺ) এর সৌন্দর্যে বিমােহিত হয়ে সাহাবীগণ (رضي الله عنه) নিজেদের জান কুরবান করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নযীর বিরল। 

নবী করীম রউফুর রহীম (ﷺ) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন আমরা তা বিশ্বাস করি। তাঁর হুকুম পালন করি, তার কথা মানি, তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করি। কিন্তু তিনি (ﷺ) কেমন ছিলেন তা জানার জন্য আমরা উদগ্রীব থাকি। সালাতু সালামের তােহফা যখন তাঁর সমীপে পেশ করি তখন তাঁর একটি মানবীয় রূপ হৃদয়ে ভেসে উঠে। মূলত যা কল্পনা-স্মরণ করি তার চেয়ে তিনি অনেক বেশী সুন্দর ও আকর্ষণীয়। তার তুলনা তিনি নিজেই। কোন সৃষ্টি তাঁর সাথে তুলনীয় নয়। শয়নে-স্বপনে কামনা করি কখন কামলি ওয়ালা নবী নিজ গুণে আমাদের দেখা দেবেন সে জন্য শতত চেষ্টিত ও চিন্তিত থাকি। যাঁরা সৌভাগ্যবান তাঁর (ﷺ) দেখা পেয়ে তাঁরা ধন্য হয়েছেন। কিন্তু তাঁর সৌন্দর্য অনির্বচনীয়। তথাপি আল্লাহর হাবীব (ﷺ) কেমন ছিলেন তার একটি বর্ণনা সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর মুখনিঃসৃত বর্ণনা থেকে তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস হল এই “হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ)”। 

     বিশ্বের ভাষা সমূহের মধ্যে সবচেয়ে অলংকার সমৃদ্ধ ভাষা হল আরবী ভাষা। যা আল-কুরআনের ভাষা ও সাথে সাথে জান্নাতের বাসিন্দাদের ভাষাও। নবী করীম (ﷺ) এর সৌন্দর্য যথাযথভাবে বর্ণনা করা অসম্ভব, শিল্পীর তুলি তাঁর জ্যোতির্ময় চিত্র অংকনে অক্ষম, কবির কাব্যমালা, লেখকের লিখনী তাঁর সৌন্দর্য বিকাশে অপারগ। তথাপি তাঁর প্রেমে মত্ত সাহাবীগণ (رضي الله عنه) সাধ্যানুযায়ী বর্ণনা করেছেন। আর সাহাবীগণ (رضي الله عنه) ইলমে শরী'আত ও মারিফাতের পাশাপাশি তাঁর সৌন্দর্যের বর্ণনাও বিশ্ববাসীর নিকট পৌঁছিয়ে দিয়ে গেছেন। (আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন)। রহমতের নবী নিজ গুণে আমাদেরকে দেখা দেবেন, পরকালে শাফাআত করবেন, লেওয়া-এ-হামদে আশ্রয় দেবেন, হাউদ্বে-কাওসারের পানি পান করাবেন, মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা লাঘব করবেন, মৃত্যুর সময় কলেমার তালকীন দান করবেন, নূরানী চেহরা মােবারক দেখাবেন, মনের বাসনা পূর্ণ করবেন। 

আমাদের আক্বীদা-বিশ্বাস মতে নবী করীম (ﷺ)  স্বয়ং হাযির-নাযির, আমাদের আমল সমূহ প্রত্যক্ষ করেন এবং আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন, কিন্তু আমরা ঐ স্তরে পৌঁছিনি যাতে তাঁকে দেখতে পারি। এটা আমাদের ঈমানী দূর্বলতা। এমন অনেক মহামনীষী রয়েছে যাঁরা জাগ্রত অবস্থায় তাঁকে ((ﷺ) দেখেছেন। এটা আশেক্ব-মাশুকের স্তর। অনেক ভাগ্যবানদের তিনি স্বপনে সাক্ষাৎ দিয়ে ধন্য করেছেন। এমন অজস্র বর্ণনা বিদ্যমান আছে। যা রহমাতুল্লিল ‘আলামীনের বিশেষ মেহেরবানী ও নেগাহে করম। 

শােকরিয়া জ্ঞাপন করছি মরক্কো হাসান সানী ইউনিভার্সিটির পি এইচ.ডি গবেষক সাঈদ আহমদ সাইফ [Saeed Ahmad Al-Tunaiji, Sharjah] ও হাটহাজারী জামেয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসার পরম শ্রদ্ধাভাজন অধ্যক্ষ হযরতুল আল্লামা মােহাম্মদ ছৈয়দ হােসাইন সাহেবের প্রতি যাঁরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, সাহায্য-সহযােগিতা করেছেন, আল্লাহ তাঁদেরকে মহা পুরস্কারে ভূষিত করুন। আরাে শুকরিয়া ও মােবারকবাদ জানাচ্ছি এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদীয়া সুন্নিয়া আলিয়ার শায়খুল হাদীস হযরতুল আল্লামা উস্তাযুল ‘উলামা হাফেয মুহাম্মদ সােলায়মান আনছারী (মা.জি.আ) শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও অত্র গ্রন্থটি মূল্যায়ন পূর্বক সুচিন্তিতি অভিমত দিয়েছেন। 

যাঁদের বই থেকে তথ্য-উপাথ্য সংগ্রহ করেছি আমি তাঁদের প্রতি চির ঋণী। 

    পরিশেষে ওহে আল্লাহ ! আমাদের সকলকে নবী প্রেমে উদ্বুদ্ধ করুন, নব চেতনায় উজ্জীবিত করুন, উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করন, লােভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ভুলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমিন। 


وما توفيقي الا بالله العلى العظيم 


নিবেদক 

ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম 

মে ২০১৪খৃ. 

নেয়ামত আলী ম্যানশন 

হেদায়ত আলীর বাড়ী 

নাঙ্গলমােড়া, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। 


          হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ) 


আল্লাহ তা'আলার অনুপম ও সর্বোত্তম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)। আল্লাহ স্বীয় নূর হতে তাঁকে কুদরতের হাতে বেনযীর বেমেসাল তুলনাবিহীনভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর অপরাপর সৃষ্টি প্রিয় হাবীবের নূর হতে সৃজন করেছেন। সর্বোচ্চ ‘হাবীব’-এর মাকামে অধিষ্ঠিত তিনি। ছায়া বিহীন কায়া বিশিষ্ট এ নূরী মহা মানব মুমিনের ধ্যানের ছবি, নূরের রবি। তাঁর শরীর মােবারক অতি পবিত্র, বরকতময় ও সুগন্ধি বিশিষ্ট। তাঁর শরীর মােবারক স্পর্শিত কবরের ধুলা-বালি ‘আরশে ‘আযীমের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও ফযীলত ওয়ালা। তাঁর নূরানী প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মােবারকে আল্লাহ তা'আলার কুদরত ও নবী (ﷺ) -এর মুজিযা প্রস্ফুটিত। তাঁর ব্যবহার্য সব কিছুই অতি মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতমন্ডিত। এমন নূরানী নবীকে মুমিন যখন স্মরণ করেন, সালাতু সালাম পাঠ করেন তখন হৃদয়ের মণিকোঠায় এক ঐশ্বিরিক অবয়ব গঠন করে তৃপ্তি লাভ করার চেষ্টা করেন। শয়নে স্বপনে যা কল্পনা করা হয় তার চেয়ে কোটি গুণ সুন্দর তিনি। সকলে আল্লাহর হাবীবকে দেখতে চায়। কেননা যেহেতু তিনি সৃষ্টি জগতের প্রাণ স্পন্দন, সকল সৃষ্টির চাওয়া পাওয়া। তাঁরই ধ্যানে ব্যাকুল সৃষ্টি জগত। মূমিন যখন নবীজীকে স্মরণ করেন তখন সাহবীদের (رضي الله عنه) মুখনিঃসৃত বক্তব্য মূলে তাঁকে কল্পনা ও স্মরণ করা যায়। আর যারা ভাগ্যবান নবীজী স্বয়ং তাঁদের দেখা দিয়ে ধন্য করেন। নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি উম্মত ভালবাসায় মত্ত থাকেন। নবীর ভালবাসা ও মমত্ববােধ উম্মতের প্রতি চিরস্তা। উম্মতের মায়ায় নবী সব সময় চিন্তিত থাকেন। উম্মতের ব্যথায় তিনি ব্যথিত হন। এমন দয়া ও রহমতের সাগর নবীকে একটু ধ্যান-স্মরণ করে নিই 

➖➖➖➖➖➖➖➖➖



        নবী করীম (ﷺ) এর চেহরা মােবারক 


❏বিশিষ্ট সাহাবী হযরত বারা ইবনে ‘আযিব (رضي الله عنه) বলেন, 


كان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم أحسن الناس وجهّا ، و أحسنه خلقا، لیس بالطویل الذاب٫ ولا بالقصر-


নবী করীম (ﷺ) এর চেহরা মােবারক ও চরিত্র সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম ছিল। হাঁটার সময় তাঁকে না লম্বা না বেঁটে মনে হতাে। ১

১. ইমাম বায়হাক্বী : দালাইলুন নবুয়্যত, খ. ১, পৃ. ১৯৪; ইমাম বুখারী : আল-জামি', কিতাবুল মানাকিব-বাবু সিফাতিন নবী (ﷺ) ; ইমাম মুসলিম : আল-জামি কিতাবুল ফাদ্বায়িল বাবু সিফাতিন নবী (ﷺ)। 


❏ হযরত বারা (رضي الله عنه) কে কেউ প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) -এর চেহরা মােবারক কি তরবারীর মত চকচকে ছিল? তিনি উত্তর দিলেন, না, বরং চন্দ্রের মত উজ্জ্বল ছিলেন। ২

২. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ১৯৫; ইমাম বুখারী : প্রাগুক্ত, কিতাবিল মানাকিব-বাবু সিফাতিন নবী (ﷺ) , ফতহুল বারী : খ. ৬, পৃ. ৫৬৫; ইমাম তিরমিযী : শামায়েল (বঙ্গানুবাদ : মাওলানা মতিউর রহমান), পৃ. ১৬। 


❏ হযরত জাবির ইবন সামুরা (رضي الله عنه) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, নবী করীম (ﷺ) এর চেহরা মােবারক কি তরবারীর মত চকচকে ছিল? তিনি বললেন, না, বরং চলমান সূর্য ও চন্দ্রের মত। ৩

৩. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত , খ. ১, পৃ. ১৯৫। 


❏ হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) -এর চেহরা মােবারক সকল মানুষ অপেক্ষা সুন্দরতম এবং তাঁর রং ছিল সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল । যিনিই তাঁর সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন, তিনি তাঁকে পূর্ণিমার চন্দ্রের সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর চেহরা মােবারকে ঘর্মবিন্দু মনে হতাে যেন উজ্জ্বল মুক্তা। ৪

৪. আল্লামা যারক্বানী : শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়া, খ, ৪, পৃ. ২২৫। 


❏ হযরত কা'ব ইবন মালিক (رضي الله عنه)-এর দৃষ্টিতে নবী করীম (ﷺ) -এর চেহরা মােবারক যেন চন্দ্রের টুকরা। তিনি বলেন, আমরা তাঁকে এরূপই চিনি। ৫

৫. ইমাম বুখারী : প্রাগুক্ত, কিতাবুল মানাক্বি, বাবু সিফাতিন নবী (ﷺ)।


❏ হযরত আবু ইসহাক্ব (رضي الله عنه) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, নবী করীম (ﷺ) এর তুলনা কী রূপ? তিনি (ﷺ) পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায় সুন্দর। তাঁর মত সুন্দর এর আগে বা পরে আর কাউকে দেখিনি। ৬

৬. আল-মীযান, খ. ৪, পৃ. ৪৮৫। 


❏ নবী করীম (ﷺ)  যখন আনন্দিত হতেন তখন তাঁর চেহরা মােবারক আয়নার মত হয়ে যেত, যাতে বস্তু সমূহের ছবি দেখা যেত এবং দেওয়াল সমূহ তাঁর চেহরা মােবারকে দৃষ্টি গােচর হতাে। ৭

৭. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৮০। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) অপেক্ষা সুন্দর আমি কাউকে দেখিনি। তাঁর চেহরা মােবারকে যেন সূর্য চলছে।” ৮

৮. মিশকাতুল মাছবীহ, পৃ. ৫১৮; ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ২০৬; ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৯৪৪। 


❏ হযরত হাসান ইবন সাবিত (رضي الله عنه) কতইনা সুন্দর গেয়েছেন—

متى يبد في الليل البهيم جبينه + بلج مثل مصباح الدجى الموقد 

যখন অন্ধকার রাত্রে তাঁর কপাল মােবারক প্রকাশিত হতাে, তখন অন্ধকার উজ্জ্বল প্রদীপের মত আলােকিত হয়ে উঠতাে। ৯

৯. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৯১। 


❏ আল্লাহর রাসূলের বিশিষ্ট খাদেম হযরত আনাস ইবন মালিক (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) এর রং উজ্জ্বল ফর্সা। পবিত্র চেহরা মােবারকে ঘর্মবিন্দু মুক্তার মত দেখাতাে।” ১০

১০. মিশকাতুল মাছবীহ, ৫১৬; ইমাম মুসলিম : প্রাগুক্ত, কিতাবুল ফাদ্বায়িল হাদীস নং ৮২/২৩৩০; ‘আল্লামা ইউসুফ নাবহানী : মাজমু আরবাইনাত,পৃ.১২৪।


    হযরত ‘আম্মার (رضي الله عنه)-এর নাতী আবু উবাইদা (رضي الله عنه) মহিলা সাহাবী হযরত রূবাই বিনতে মুআভভিয (رضي الله عنه) কে বললেন নবীজীর দৈহিক গঠন বর্ণনা করন, ১১ তখন তিনি বলেন, তুমি যদি তাঁকে দেখতে তাহলে মনে করতে যে, উদয়মান সূর্য। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, ১২


عن انس رضی اللّٰه تعالى عنه ، ما بعث اللّٰه نبيّا قط الا بعثه حسن الوجه ، حسن الصوت ، حتى بعث نبيكم صلى اللّٰه عليه و سلم فبعثه حسن الوجه ، حسن الصوت - 

আল্লাহ তা'আলা কখনাে কোন নবী প্রেরণ করেননি, তবে হ্যাঁ প্রেরণ করেছেন সুন্দর চেহরা বিশিষ্ট এবং সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট, এমনকি তােমাদের নবী (ﷺ)কেও প্রেরণ করেছেন সুন্দর চেহরা ও সুন্দর আওয়াজ বিশিষ্ট করে । 

১১, মাজমাউস যাওয়ায়িদ, খ.৮, পৃ. ২৮০; ইমাম দারেমী : আস-সুনান, হাদীস নং ৬০; ইমাম ত্বাবানী : আল-মু'জামুল কবীর, হাদীস নং ৬৯৬; ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২০০। 


১২. ইবন আসাকির : তারিখু মদিনাতি দামেশক্ব, খ, ৪ পৃ. ৫-৬; আল্লামা | ইউসুফ নাবহানী : মাজমূ' আরবাইনাত, পৃ. ১১২। 


❏ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেন, 

عن ابی بکر رضی اللّٰه تعالی عنه ، كان وجه رسول اللّٰه صلى الله عليه و سلم كدارة القمر - 

নবী করীম (ﷺ) এর চেহরা মােবারক চন্দ্রের মত গােলাকৃতি। ১৩

১৩. ‘আল্লামা ইউসুফ নাবহানী : মাজমূ' আরবাইনাত, পৃ. ১০৮। 


❏ হযরত জাবির ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) বলেন, একদা পূর্ণিমার রাত্রে নবী করীম (ﷺ) লাল রঙের চাদর আবৃত করে শুয়েছিলেন। আমি একবার চন্দ্রের প্রতি তাকাই আরেকবার তাঁর চেহরা মােবারকের দিকে তাকাই, শেষ পর্যন্ত আমার মনে হয়েছে, নবী করীম সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চন্দ্র অপেক্ষা সুন্দর। ১৪

১৪. ইমাম তিরমিযী : কিতাবুল আদাব, বাবু মা জাআ ফীর রােখসাতে।


❏ ‘আল্লামা কুরতবী (رحمة الله) বলেন, 


لم يظهر لنا تمام حسنه صلى اللّٰه عليه وسلم لانه لو ظهر لنا تمام حسنه لما اطاقت اعيننا رؤيته صلى اللّٰه عليه وسلم ، 

নবী করীম (ﷺ) এর পূর্ণরূপ ও সৌন্দর্য আমাদের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। যদি তাঁর পূর্ণরূপ ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা হতাে, তাহলে আমাদের চক্ষু তাঁকে দেখতে সক্ষম হতাে না। ১৫

১৫. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৭১; ইমাম তিরমিযী : শামায়েল (বঙ্গানুবাদ : মাওলানা মতিউর রহমান), পৃ. ৫। 



          নবী করীম (ﷺ) এর রং মােবারক 



নবী করীম রউফুর রহীম (ﷺ) এর শরীর মােবারকের রং কি ধরনের ছিল তার তুলনা বিরল, এর পরেও তাঁর নক্ষত্র তুল্য সাহাবীগণ (رضي الله عنه) যে বর্ণনা দিয়েছেন তার মাধ্যমে আমরা তাঁকে স্মরণ করতে পারি। 


❏ আল্লাহর রাসূলের খাদেম হযরত আনাস (رضي الله عنه)-এর মুখে তাঁর রং মােবারকের বর্ণনা শুনি- তিনি বলেন, 

নবী করীম (ﷺ) নয় লম্বা নয় বেটে বরং মধ্যম গড়নের ছিলেন। উজ্জ্বল মনােহর বর্ণের যা অস্বাভাবিক সাদার মধ্যে লালচে ধরনের। শুধু সাদাও না তামাটে বর্ণেরও নয়। তাঁর চুল মােবারক কোঁকড়ানাে পরিপাটি করানাে নয় আবার ঝুলড় ও নয় বরং উভয়ের মাঝামাঝি ধরনের। ১৬

১৬. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ২০১; ইমাম বুখারী : প্রাগুক্ত, কিতাবুল মানাকিব, বাবু সিফাতিন নবী; ফতহুল বারী : খ. ৬, পৃ. ৫৬৪; ইমাম মুসলিম : প্রাগুক্ত, কিতাবুল ফাদ্বায়িল, বাবু সিফাতিন নবী। 


❏ জোরাইরী (رحمة الله) বলেন,

قال كنت أنا وابو الطفيل نطوف البيت ، فقال أبو الطفيل : ما بقي أحد رأى رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم غيري ، قال : قلت وما كانت صفته؟ قال : كان ابيض مليحا مقصدا 

আমি এবং হযরত আবূত্ব ত্বোফাইল (رضي الله عنه) বায়তু্ল্লাহ্ তাওয়াফ করতেছিলাম, আবূত্ব তত্বাফাইল (رضي الله عنه) বলেন, আমি ছাড়া রাসূলকে দেখেছে এমন কেউ অবশিষ্ট নেই, রাবী বলেন, আমি বললাম আপনি কি তাঁকে দেখেছেন, তিনি (رضي الله عنه) বললেন, হ্যাঁ, আমি বললাম তাঁর কিছু বর্ণনা করন, তিনি বলেন, তিনি (ﷺ) ছিলেন, লাবন্যময় সাদা। তিনি ছিলেন নয় মােটা নয় লম্বা বরং মধ্যম গড়নের। ১৭

১৭. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২০৪; ইমাম মুসলিম : প্রাগুক্ত, কিতাবুল ফাদ্বায়িল, হাদীস নং ৯৮/২৩৪০; ইমাম বুখারী : কিতাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ৭৯০। 


❏ হযরত মুহাম্মদ ইবনে ‘আলী (ক.) থেকে বর্ণিত তিনি তাঁর পিতা হযরত আলী (ক.) থেকে বর্ণনা করেন, 

كان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم ازهر اللون - 

নবী করীম (ﷺ) ছিলেন উজ্জ্বল মনােহর বর্ণের। 

হযরত মুহাররিশ আল-কাবী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) জি'ইরিনা থেকে ‘উমরার জন্য ইহরাম পরিধান করলেন আমি তাঁর (ﷺ) পিঠের দিকে তাকালাম, ইহা যেন রৌপ্যের পিন্ড। ১৮ 

১৮. ইমাম নাসাঈ : আস-সুনান, কিতাবুল হজ্জ, বাবু দুখুলি মক্কা; ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ, খ, ৩, পৃ. ৪২৬। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, 

ما رأيت شيئا احسن من النبي صلى اللّٰه عليه وسلم ، كأن الشمس تجرى في وجهه ، و ما رأيت احد أسرع في مشية منه ، كأن الارض تطوى له ، إنا لنجتهد ، وانه غير مكثرت. 

আমি নবী করীম (ﷺ) এর চেয়ে সুন্দর অন্য কিছু দেখিনি। যেন তাঁর চেহরা মােবারকে সূর্য চলছে। আমি তাঁর চেয়ে অধিক দ্রতগামী অপর কাউকে দেখিনি, পৃথিবী যেন তাঁর জন্য সংকোচিত, নিশ্চয় আমরা চেষ্টা করি, তিনি এ বিষয়ে অনাগ্রহী। 

১৯. ইমাম তিরমিযী : আল-জামি', কিতাবুল মানাকিব, বাবু ফী সিফাতিন নবী; ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ, খ. ২, পৃ. ২৫৮। 



         নবী করীম (ﷺ) এর চোখ মােবারক 



নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র ও নূরানী চক্ষুদ্বয় অত্যন্ত সুন্দর ও খুবই আকর্ষণীয় ছিল। 


❏ হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) বলেন,  

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ضليع الفم ، اشكل العينين - 

নবী করীম (ﷺ) বড় মুখ, বড় চোখ পায়ের গােড়ালী কোমল ও সুশ্রী ছিল। 

২০. ইমাম মুসলিম : আল-জামি', কিতাবুল ফাদ্বায়িল-বাবু সিফাতি ফামিন নবী; ইমাম তিরমিযী : আল-জামি', কিতাবুল মানাকিব-বাবু ফী সিফাতিন নবী।


❏ অপর এক বর্ণনায় হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) বলেন, 

عن جابر بن سمرة ، عن رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم قال : كنت اذا نظرت اليه قلت : اكحل العينين ، و ليس باكحل ، وكان 

في ساقی رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم حموشة و كان لايضحك الا تبسما-

আপনি যখন তাঁর (ﷺ) এর প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন, দেখতে পাবেন তাঁর চোখ মােবারকে সুরমা লাগানাে, অথচ তিনি সুরমা ব্যবহার করেননি। তাঁর পায়ের গােড়ালী কোমল ও সুশ্রী তিনি মুচকী হাসি ছাড়া অট্ট হাসি দিতেন না। ২১

২১. ইমাম তিরমিযী : কিতাবুল মানাক্বি-বাবু ফী সিফাতিন নবী।  


❏ হযরত মুহাম্মদ ইবন আলী (ক.) তাঁর পিতা হযরত আলী থেকে বর্ণনা করেন। 


كان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم عظيم العينين ، و أهدب الاشفار ، مشرب العین بحمرة

নবী করীম (ﷺ) এর চোখ বড় ছিল, এর পাতা ছিল লম্বা, চোখের সাদা অংশের মধ্যে কিছুটা লালছে ছিল। ২২

২২. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২১২; ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ, হাদীস নং ৬৪৮। 


❏ অপর এক বর্ণনায় হযরত আলী (ক.) বলেন, 

তাঁর (ﷺ) -এর চোখের পুতলী মােবারক ছিল কালাে বর্ণের। নবী করীম (ﷺ) এর চোখ মােবারকের এমন অতি আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যা দিয়ে স্বয়ং প্রভুকে অবলােকন করেছেন, খােদার খােদায়ী দেখেছেন। ২৩

২৩. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২১২-২১৩।


❏ হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) বলেন٫ 


قال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم رأيت ربي عز وجل في احسن صورة-

নবী করীম (ﷺ)  বলেন, আমি আমার প্রভুকে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি। ২৪

২৪. মিশকাতুল মাছাবীহ : পৃ. ৬৯। 


❏ হযরত ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় নিশ্চয় নবী করীম (ﷺ) স্বীয় প্রভুকে দু'বার দেখেছেন। একবার কপালের চক্ষু দ্বারা আরেকবার অন্তরের চক্ষু দ্বারা। 

তিনি আরাে বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা ইবরাহীম (عليه السلام) কে বন্ধুত্ব, মুসা (عليه السلام) কে আলাপ এবং হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সাক্ষাত দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।  ২৫

২৫. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৬, পৃ. ১১৭; জালালুদ্দিন সুয়ুত্বী : আল খাসায়িসুল কুবরা, খ, ১, পৃ. ১৬১


কেউ কেউ বলেছেন, তিনি (ﷺ) স্বীয় প্রভুকে অনেকবার দেখেছেন। 


❏ হযরত সাওবান (رضي الله عنه) বলেন, 

নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্যে যমীনকে জড় করলেন। অর্থাৎ জড় করে হাতের তালুর মত করে দিলেন, এমনকি আমি সমগ্র যমীন এবং পূর্ব-পশ্চিম দেখে নিলাম। ২৬

২৬. ইমাম মুসলিম : আল-জামি' খ. ২, পৃ. ৩৯০। 


❏ হযরত আব্দুল্লাহ  ইবন উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, 

নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা'আলা আমার জন্য দুনিয়ার পর্দা সমূহ তুলে দিয়েছেন, সুতরাং আমি দুনিয়া এবং তাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবার সব কিছু এরূপ দেখেছি যেমন আমার এ হাতের তালুকে দেখছি। ২৭

২৭. “আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৭, পৃ. ২০৪। 


❏ হজরত ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, ২৮

নবী করীম (ﷺ) দিনের আলােতে যেরূপ দেখতেন রাতের অন্ধকারেও সেরূপ দেখতেন।

২৮. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬০; ‘আল্লামা যারক্বানী ; প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৮৩। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, ২৯

নবী করীম (ﷺ) -এরশাদ করেন, নিশ্চয় আমি আমার পিছনে সেরূপ দেখি, যেরূপ আমার সম্মুখে দেখি। 

২৯. আবু আইম ইস্পাহানী : দালাইলুন নবুয়্যত, পৃ. ৩৭৭; জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬১; আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৪, পৃ. ৮২। 


❏ তিনি আরাে বলেন, ৩০ 

নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, তােমরা আমার মুখ শুধু কিবলার দিকেই দেখছ? আল্লাহর শপথ! আমার কাছে না তােমাদের রকু লুকায়িত না তােমাদের বিনয়-নম্রতা। নিশ্চয় আমি তােমাদেরকে আমার পিছন হতেও দেখি। 

৩০. ইমাম বুখারী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ১৫২। 


❏ হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) বলেন, ৩১ 

নবী করীম  (ﷺ)  বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি তা দেখি যা তােমরা দেখনা। 

৩১. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৪৫৭।


মােদ্দা কথা : উজ্জ্বল দিন ও অন্ধকার রাতে নবী করীম (ﷺ) -এর অবলােকনে কোন তারতম্য নেই। কেননা যখন আল্লাহ তা'আলা তাঁকে প্রচ্ছন্ন বিষয়ের অবগতি এবং অজ্ঞস্থ বিষয়াবলীর পূর্ণ উপলদ্ধি দান করেছেন, অনুরূপভাবে তাঁর চক্ষু মােবারকেও প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব বিষয়ের উপলদ্ধি দান করেছেন। ৩২

৩২. “আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৮২; ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : যিক্র-এ-জামীল, (বঙ্গানুবাদ : মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দীন) পৃ. ৮৪। 



         নবী করীম (ﷺ) এর মুখ মােবারক


❏ নবী করীম (ﷺ) এর মুখ মােবারক প্রশস্ত গন্ডদেশ মসৃণ, সর্বাপেক্ষা সুদর্শন ও মধুর কণ্ঠ ছিল। মধুর কণ্ঠ ছাড়াও তাঁর কণ্ঠস্বর এত উঁচু ছিল যে, যতদূর আওয়াজ পৌঁছত অন্য কারাে আওয়াজ পৌঁছত না। হাজার হাজার লােকের সমাবেশে যে ব্যক্তি সবার আগে থাকত সে যেরূপ তাঁর আওয়াজ শুনতাে, সবার পিছনে যে ব্যক্তি থাকতাে সেও অনুরূপ শুনতে পেতাে। ৩৩

৩৩. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৬। 


নবী করীম (ﷺ) এর মুখ মােবারক হল এমন মুখ যার মাধ্যমে আল্লাহর বাণী বের হতাে। যা দিয়ে কখনাে প্রবৃত্তি প্রসূত কোন কথা বের হয়নি। 

❏ আল্লাহ তা'আলা বলেন, ৩৪


وَمَا يَنطِقُ عَنِ الهَوٰى - إِن هُوَ إِلَّا یُّوحٰي

“তিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না, এতাে ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়”। 

৩৪. সূরা নাজম : আয়াত নং ৩-৪। 


❏ হযরত আব্দুল্লাহ  ইবন আমর (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) থেকে আমি যা কিছু শুনতাম তা লিখে রাখতাম, কুরাইশরা আমাকে বলল, তাঁর (ﷺ) প্রত্যেক কথা লিখা উচিৎ নয়। কেননা মানবীয় দূর্বলতা বশত ক্রোধ ও রাগের সময় এমন কথা বের হতে পারে যা লিখার যােগ্য নয়। 

অতঃপর আমি লিখা হতে বিরত রইলাম এবং এ কথা নবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে আরয করলাম। নবী করীম (ﷺ) বললেন, তুমি অবশ্যই লিখবে, আর আঙ্গুল দিয়ে তাঁর মুখে ইঙ্গিত করে বললেন, ৩৫


                         فوالذي نفسي بيده مايخرج منه الا حق     

আল্লাহর কসম ! যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ রয়েছে, এ মুখ থেকে সর্বাবস্থায় সত্য ব্যতীত অন্য কিছু বের হয় না। 

হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه) বলেন, ৩৬ হুদায়বিয়ার দিন নবী করীম (ﷺ)  হুদায়বিয়ার কূপ সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন প্রায় চৌদ্দশত সাহাবা (رضي الله عنه)। সহাবাগণ (رضي الله عنه) হুদায়বিয়ার কূপের সমস্ত পানি বের করে ফেললেন। এ সংবাদ যখন নবী করীম (ﷺ)

-এর নিকট পৌঁছাল তখন তিনি ঐ কূপে তাশরীফ আনলেন এবং তাঁর কিনারায় বসে এক পাত্র পানি আনতে বললেন, অতঃপর ওযু করলেন এবং মুখে পানি দিয়ে কুলি করে তা কূপে নিক্ষেপ করতঃ দুআ করলেন, আর বললেন, কিছুক্ষণ তাকে এ অবস্থায় ছেড়ে দাও। অতঃপর ঐ কূপে এ পরিমাণ পানি জমা হয়ে যায় যে, সকল সাহাবা ও তাঁদের বাহন প্রায় বিশ দিন যাবত পরিতৃপ্ত সহকারে পানি পান করেছেন। 

৩৫. ইমাম আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুল ইলম।

৩৬. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫১৩। 


❏ হযরত জাবির (رضي الله عنه) খন্দক যুদ্ধের সময় সামান্য খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং নবী করীম (ﷺ) এর দরবারে এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সামান্য খাবার আছে আপনি কয়েকজন সাহাবী সঙ্গে নিয়ে আসুন। তিনি (ﷺ) বললেন, তুমি যাও ! তােমার স্ত্রীকে বলে দিবে আমি না আসা পর্যন্ত হাড়ি যেন চুলা থেকে না নামায় এবং রুটি তৈরি না করে। আর উচ্চ স্বরে ঘােষণা দিয়ে ফরমালেন, হে পরিখা খননে লিপ্ত সাহাবীগণ ! জাবির আমাদেরকে দাওয়াত করেছেন, সবাই চলাে। হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, এ ঘােষণা শুনে আমি তাড়াতাড়ি ঘরে চলে গেলাম এবং বিবিকে বললাম, হে সৌভাগ্যবতী ! নবী করীম (ﷺ) সকল মুহাজির, আনসার ও অপরাপর সাথীদের নিয়ে তাশরীফ আনছেন। জাবিরের স্ত্রী বলল, আপনি কি ওটা বলেননি যে, খাবারের আয়ােজন খুব সংক্ষেপ? জাবির বললেন, হ্যাঁ ! সে বলল, তা হলে চিন্তার কোন কারণ নেই। নবী করীম (ﷺ) তাশরীফ আনলেন, অতঃপর আমি ঠাসা করা আটা তাঁর সম্মুখে আনলাম। তিনি (ﷺ) ওতে তাঁর মুখের থুথু মােবারক নিক্ষেপ করলেন এবং বরকতের দুআ করলেন, অতঃপর হাঁড়ির দিকে অগ্রসর হলেন, তাতেও তাঁর থুথু মােবারক নিক্ষেপ করলেন, এবং বরকতের জন্য দু'আ করলেন, খাবার যখন তৈরি হলাে তখন বিতরণ শুরু করলেন। হযরত জাবির (رضي الله عنه) শপথ করে বলেন, সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করেছেন। কিন্তু তারপরও খাবার সেরূপ থেকে যায় যেন কেউ আহারই করেনি। ৩৭


❏ হযরত হােবাইবের পিতা হযরত ফোদাইক (رضي الله عنه)-এর চক্ষুদ্বয় সর্পের ডিমের উপর পা রাখার কারণে জ্যোতিহীন হয়ে যায়। উভয় চক্ষু দ্বারা কিছুই দেখতেন না। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) তার চক্ষুদ্বয়ে থুথু মােবারক দিলেন। তখন তিনি দৃষ্টিমান হয়ে গেলেন এবং সবকিছু দেখতে লাগলেন। একলন বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, আশি বৎসর বয়সেও তিনি সূচের মধ্যে সূতা ঢুকাতেন। ৩৮


❏ হযরত সাহল ইবন সা'দ (رضي الله عنه) বলেন, খায়বার যুদ্ধে হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর চোখে আঘাত পেয়েছিলেন, নবী করীম (ﷺ)  তাঁকে ডাকলেন আর নিজ মুখের থুথু মােবারক তাঁর চক্ষুদ্বয়ে নিক্ষেপ করলেন এবং দুআ করলেন, অতঃপর তিনি তৎক্ষনাৎ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন কোন সময় তাঁর চোখে আঘাত ছিল না। ৩৯


❏ ইমাম আ'যম কতই সুন্দর গেয়েছেন— ৪০


وعلى من رمد به داويته + في خيبر فشفی بطيب لماك 

খায়বার যুদ্ধে যখন ‘আলী (رضي الله عنه)-এর চক্ষুদ্বয় আঘাত প্রাপ্ত হয়, আপনার থুথু মােবারক লাগানাের ফলে তখনই সুস্থ হয়ে উঠেছিল। 


❏ হযরত রিফআ (رضي الله عنه) বলেছেন, 

বদরের দিন আমার চোখে তীরের আঘাত লেগেছিল ফলে তা বিদীর্ণ হয়ে যায়। নবী করীম (ﷺ) তাতে তাঁর থুথু মােবারক নিক্ষেপ করলেন এবং দু'আ করলেন। অতঃপর 

তীরাঘাতের সামান্যতম কষ্টও আমার থাকেনি এবং চোখ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। ৪১


৩৭. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : আল-খাসায়িসুল কুবরা, খ, ১, পৃ. ২২৭। 

৩৮. ‘আল্লামা যারক্বানী : শরহুল মাওয়াহিব, খ, ৫, পৃ. ১৮৮; জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : আল-খাসায়িসুল কুবরা, খ, ২, পৃ. ৬৯। 

৩৯. ইমাম বুখারী : আল-জামি' , পৃ. ৬০৬। 

৪০. কাসীদায়ে নােমান। 


❏ এভাবে হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه)-এর চেহরার আঘাত, হযরত সালমা ইবনে আকওয়া (رضي الله عنه)-এর পায়ের গােড়ালীর আঘাত, হযরত কলুসুম ইবুন হােসাইনের বক্ষের আঘাত, হযরত মুআয ইবুন আফরা (رضي الله عنه)-এর হাতের আঘাত, হযরত আলী ইবন হাফস (رضي الله عنه) এর পায়ের গােছার আঘাত হযরত হাবীব ইবন ইয়াফাস (رضي الله عنه)-এর কাঁধের আঘাত নবী করীম (ﷺ) এর থুথু মােবারকের উছিলায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। ৪২


৪১. জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : প্রাগুক্ত, খ. ১ পৃ. ২০৫। 

৪২, ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ১৪০-১৪৬। 



        নবী করীম (ﷺ) এর নাক মােবারক 


❏ নবী করীম (ﷺ) -এর নাক মােবারক ছিল সুউচ্চ, লম্বা ও খুবই আকর্ষণীয়। যেমন ইমাম হাসান (رضي الله عنه) তাঁর খালাে থেকে বর্ণনা করেন, ৪৩ 


كان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم ، واسع الجبين ، ازج الحواجب ، سوابغ في غير قرن ، بينها عرق يدره الغضب ، اقني العرنين ، له نور يعلوه يحسبه من لم يتأمله اشم ، سهل الخدين ، ضليع الفم اشنب ، مفلج الأسنان - 

নবী করীম (ﷺ) ছিলেন, প্রশস্ত কপাল, আকর্ষণীয় সুদীর্ঘ চোখের ভ্রু, যা যুক্ত ছিল না, রাগান্বিত হলে উভয়ের মধ্যখানে মুক্তার ন্যায় উজ্জ্বল সুগন্ধময় ঘর্ম বের হতাে। সুউচ্চ, লম্বা চমৎকার জ্যোতির্ময় নাসিকা মােবারক নরম কুসুম কোমল গাল মােবারক, বড় মুখ এবং উজ্জ্বল দাঁত মােবারক বিশিষ্ট ছিলেন। 

৪৩. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২১৪; ইমাম তিরমিযী : শামায়েল, প্রাগুক্ত পৃ.১৮ 



     নবী করীম (ﷺ) এর ওষ্ঠ ও দাঁত মােবারক 


নবী করীম (ﷺ) এর ওষ্ঠ মােবারক অত্যন্ত সুন্দর ছিল এবং সামান্য লাল দেখাতাে। দাঁত মােবারক উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান ছিল এবং অত্যন্ত চকচকে ও পরিস্কার ছিল। তিনি (ﷺ) যখন কথা বলতেন সম্মুখ ভাগের দাঁত থেকে নূর বের হতাে। তিনি যখন মুসকি হাসতেন দেওয়াল সমূহ আলােকিত হয়ে উঠতাে। 


❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, ৪৪


كان رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم افلج الثنيتين اذا تكلم رأي کالنور يخرج من بين ثناياه - 

নবী করীম (ﷺ) এর সামনের দাঁত মােবারক প্রশস্ত ছিল । যখন তিনি কথা বলতেন, তখন দাঁত সমূহ থেকে আলােকচ্ছটা বের হতাে। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, ৪৫


أن النبي صلى اللّٰه عليه وسلم اذا ضحك يتلأ لأفي الجدر. 

নবী করীম (ﷺ) যখন হাসতেন, তখন দাঁত সমূহ থেকে নূরের কিরণ বের হতাে, যা থেকে দেওয়াল সমূহ আলােকিত হয়ে উঠতাে। 

প্রায় সময় তিনি (ﷺ) মুসকি হাসতেন তবে কখনাে এ পরিমাণ হাসতেন যে, তাঁর দাঁত মােবারক প্রকাশ পেয়ে যেতাে। তিনি প্রায় সময় মিসওয়াক করতেন। তিনি মিসওয়াক না করে কোন নামায পড়তেন না। 


❏ তিনি (ﷺ) বলেন, ৪৬ সর্বদা মিসওয়াক কর, কেননা তা হলাে মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং আল্লাহর 


৪৪. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫১৮। ৪৫. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : আল-খাসায়িসুল কুবরা, খ.১,পৃ.৮৪; ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ২৭৫ 

৪৬. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৬। 


সন্তুষ্টির কারণ। তিনি আরাে বলেছেন, দু'রাকা'আত নামায মিসওয়াক করে পড়া তা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকআত অপেক্ষা উত্তম। 



        নবী করীম (ﷺ) এর জিহ্বা মােবারক 


❏ নবী করীম (ﷺ) এর জিহবা মােবারক অত্যন্ত পবিত্র, জ্ঞান ও সাহিত্যের, ভাষার সাবলীলতা ও অলংকারিত্বের, হক্ব ও সত্যতার, বিনয় ও ভালবাসার প্রস্রবণ ও বিকাশস্থল ছিল। তাঁর (ﷺ) এর কথা মধুর মত মিষ্ট ছিল। হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী, উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট এবং যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত অর্থাৎ সীমালংঘন, সীমাহ্রাস, মিথ্যা, গীবত, দূর্ব্যবহার ও অশীল বাক্যালাপ ইত্যাদি থেকে মুক্ত ও পবিত্র ছিল। তাঁর কথামালা যেন মুক্তার ন্যায় ঝড়ে পড়ছে। ৪৭


❏ আল্লাহ তা'আলা তাঁকে (ﷺ) এমন জ্ঞান দান করেছেন যাতে প্রত্যেক ভাষার পারিভাষিক বৈশিষ্ট্য সহকারে তিনি কথা বলতে পারতেন। যখন তিনি অন্য ভাষায় কথা বলতেন তখন সে ভাষার ব্যাকরণ বৈশিষ্ট্য ও অলংকার অনুযায়ী বলতেন যা শুনে ভাষাবিদগণ অবাক হয়ে যেতাে। কোন ব্যক্তি যখন নিজ দেশের ভাষায় কথা বলতেন নবী করীম (ﷺ)ও তাঁর দেশের ভাষায় কথা বলতেন। এটা ছিল তাঁর জিহবা মােবারকে আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তি ও ক্ষমতা। ৪৮


৪৭. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৯৯। 

৪৮. কাজী ‘ইয়া : আশ-শিফা, খ. ১, পৃ. ৪৪। 


❏ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) তাঁর জীবন বৃত্তান্ত নবী করীম (ﷺ)কে শুনালেন এক ইয়াহুদী দোভাষীর মাধ্যমে, হযরত সালমান ফারসী নবী করীম (ﷺ) -এর প্রশংসা করলেন এবং ঐ সমস্ত লােকদের দূর্নাম করলেন যারা তাঁকে তাঁর (ﷺ) নিকট আসতে বারণ করেছিল। দোভাষী মনে মনে বলল, নবী করীম (ﷺ) তাে ফার্সী জানেন না, তাই সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলল, হে মুহাম্মদ ! সালমান তাে আপনাকে মন্দ বলেছে। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন সে তাে আমার প্রশংসা করেছে। এবং ঐ কাফিরদের দুর্নাম করেছে যারা মানুষকে আমার কাছে আগমন করতে বারণ করে। এ কথা শুনে ইয়াহুদী বললেন, 


فقال اليهودی یامحمد قد كنت قبل هذا اتهمك والان تحقق عندی انك رسول اللّٰه واشهد ان لا اله الا اللّٰه وأشهد انك رسول اللّٰه - 

হে মুহাম্মদ ! নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে আমি আপনাকে মন্দ জানতাম, এখন আমার কাছে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল। অতএব, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আরাে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। ৪৯ 


❏ প্রত্যেক জীব-জন্তুর ভাষা নবী করীম (ﷺ) বুঝতেন এবং তাদের সাথে কথা বলতেন, যেমন বনের হরিণী সাক্ষ্য দিল 


اشهد ان لااله الا اللّٰه وانك رسول اللّٰه . 

নবী করীম (ﷺ) এর অনুরােধে বেদুইন হরিণীকে ছেড়ে দিল, অতঃপর হরিণী মুক্ত হতেই অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে খুব দ্রুত পদে লাপিয়ে লাপিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেল এবং এটা বলছিল আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই আর আপনি আল্লাহর রাসূল। ৫০


❏ সেদিকে ইঙ্গিত করে ইমাম আযম (رحمة الله) বলেন, ৫১


(১) و الذئب جاءك و الغزالة قد اتت + بك تستجيرو تحتمي بحماك

(2) وكذا الوحوشى اتت اليك و سلمت + و شكا البعير اليك حين راك 

(৩) ودعوت اشجارا اتتك مطيعة + و سعت اليك مجيبة لنداك

(8) و عليك ظللت الغمام في الوری + و الجزع حن الى كريم لقاك 

১. নেকড়ে বাঘ আপনার কাছে এসে আপনার সত্যায়ন করেছে, হরিণী বন্দী অবস্থায় আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং সে আপনার সুপারিশে মুক্তি পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিল। 

২. অনুরূপভাবে বন্য পশুরা এসে আপনাকে সালাম করেছে এবং উট যখন আপনাকে দেখেছে, তখন আপনার সমীপে আর দূরাবস্থার অভিযােগ করেছে। 

৩. আপনি বৃক্ষরাজিকে ডেকেছেন, তখন সে গুলাে আদেশ পালন করতঃ আপনার সমীপে দৌড়ে উপস্থিত হয়ে যায়। 

৪. আর মেঘমালা আপনাকে ছায়া দিয়েছে এবং উস্ক্রনে হান্নানা আপনার বিরহে কেঁদেছে। 


❏ ইমাম সুয়ূত্বী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন যে, ৫২ নবী করীম (ﷺ) ছয়জন সাহাবীকে একই দিনে বিভিন্ন দেশের বাদশাহদের দরবারে পাঠালেন, অতঃপর তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকে না পড়ে না শিখে সেদশের ভাষায় কথা বলতে শুর করলেন। 


أن النبي صلى اللّٰه عليه وسلم لما وجه رسله الى الملوك فخرج ستة نفر منهم فی یوم واحد فاصبح کل رجل       منهم يتكلم بلسان القوم الذين بعثه اليهم - 

তাঁর (ﷺ) এর জিহ্বা মােবারকের এমনই প্রভাব ছিল যে, তিনি যা বলতেন তা-ই হয়ে যেত। তাঁর কথার ব্যত্যয় ঘটত না। জনৈক ওহি লেখক পরে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল, নবী করীম (ﷺ) তার ব্যাপারে বললেন, ان الارض لا تقبله এ মাটি তাকে গ্রহণ করবে না। 


তার মৃত্যুর পর দেখা গেল তাকে দাফন করার পর মাটি তাকে উপরে তুলে দিয়েছে। ৫৩

❏ এক ব্যক্তি অহংকার বশতঃ বাম হাতে খাবার খাচ্ছিল নবী করীম (ﷺ) বললেন, ডান হাতে খাও। সে বলল, ডান হাতে খেতে পারি না। তিনি (ﷺ) বললেন, এ রূপ হয়ে যাও। ফলে তার ডান হাত নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। ৫৪


❏ এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) হজ্ব কি প্রত্যেক বৎসর ফরয ? নবী করীম (ﷺ) ফরমালেন, قال لا ولو قلت نعم لوجبت - না, আর আমি যদি হ্যাঁ বলে দিতাম তাহলে প্রত্যেক বৎসর ফরয হয়ে যেতাে। ৫৫


৪৯. হালবী : সিরাতুল হালবিয়া, খ. ১, পৃ. ১৮২। 

৫০. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৫, পৃ. ১৫০; আবু নুআইম ইস্পাহানী ; দালাইলুন নবুয়্যত, পৃ. ৩২০। 

৫১. ইমাম আ'যম : কৃাসীদায়ে নােমান। 

৫২. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ২।  

৫৩. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫৩৫। ৫৪, মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫৩৬। ৫৫. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ২২০-২২১। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, ৫৬

এক সফরে আমরা নবী করীম (ﷺ) এর সাথে ছিলাম। চলার সময় তিনি ইমাম হাসান ও হােসাইন (رضي الله عنه)-এর ক্রন্দনের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ছেলেরা কাঁদছে কেন ? তিনি (رضي الله عنه) বললেন, পিপাসার কারণে। তিনি (ﷺ) সকলকে আওয়াজ দিয়ে ফরমালেন, কারাে কাছে পানি আছে? কিন্তু কারাে নিকট পানি ছিল না। তিনি  হযরত (ﷺ) ফাতেমাকে বললেন, এক জনকে আমার কাছে দাও। তিনি দিলেন, তিনি (ﷺ) তাকে নিয়ে তাঁর বুক মােবারকে জড়িয়ে ধরলেন। বাচ্চাটি সে সময় খুবই ক্রন্দন করছিল। তখন তিনি (ﷺ) নিজ জিহবা মােবারক বের করে মুখে দিলেন। তিনি চুষতে থাকেন যতক্ষণ না তিনি শাড় হয়ে যান। আর ক্রন্দন করেননি। আর দ্বিতীয়জন যথারীতি ক্রন্দন করছিলেন। তিনি (ﷺ) বললেন, তাঁকেও আমার কাছে দাও। তিনি (رضي الله عنه) দিলেন, তিনি (ﷺ) তাঁর সাথেও ঐ রূপ করলেন, অতঃপর তাঁরা উভয়ে শাড় হয়ে গেলেন। এরপর তাঁদের ক্রন্দনের আওয়াজ শুনেনি। ৫৭ 


৫৬. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬২।

৫৭. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৬২


তিনি (ﷺ) সকল সৃষ্টির ভাষা জানতেন। সকল সৃষ্টি অপেক্ষা অধিক সাবলীল ভাষী ও অলংকার পূর্ণ বাগ্মী ছিলেন। তাঁর (ﷺ) জিহ্বা মােবারক দিয়ে যা বের হতাে সবই ওহী এবং তাঁর (ﷺ) জিহ্বা দিয়ে যা বের হতাে তা হয়ে যেতাে আর তা আল্লাহরই আইনে পরিণত হতাে। 




     নবী করীম (ﷺ) এর দাঁড়ি ও চুল মােবারক


নবী করীম (ﷺ) এর দাড়ি মােবারক ঘন, অত্যড় সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছিল। তিনি (ﷺ) দাড়ি মােবারকে তৈল ব্যবহার করতেন চিরনীও ব্যবহার করতেন। তিনি কখনাে কলপ ইত্যাদি ব্যবহার করেননি। কেননা তাঁর দাড়ি ও মাথা মােবারকের মধ্যে বিশটির অধিক সাদা চুল ছিল না। 


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) কে ইবনে সীরীন প্রশ্ন করে বলেন, ৫৮


هل كان رسول الله صلى الله عليه وسلم خضب ؟ فقال لم يبلغ الخضاب كان في لحيته شعرات بيض 

নবী করীম (ﷺ) কি কলপ ব্যবহার করতেন ? হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, তাঁর (ﷺ) কলপ ব্যবহারের প্রয়ােজনই দেখা দেয়নি। তাঁর দাড়িতে দশখানা কেশ সাদা ছিল।


৫৮. ইমাম মুসলিম : আল-জামি', খ. ২, পৃ. ২৫৮। 


❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, ৫৯


كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ضخم الرأس واللحية . 

নবী করীম (ﷺ) এর মাথা ও দাড়ি মােবারক বড় ছিল। 


❏ হযরত সাঈদ ইবন মুসায়্যিব (رضي الله عنه) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, ৬০


كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اسود اللحية ، حسن الثغر . 

নবী করীম (ﷺ) দাঁড়ি মােবারক কালাে ও সুন্দর ভাবে খাঁজ কাটা ছিল। 

নবী করীম (ﷺ) এর চুল মােবারক খুবই সরু ও কালাে ছিল যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। কোকড়ানাে নয়, পুরাপুরি সােজাও নয় আবার বাঁকাও নয়। এ চুল মােবারক প্রায় সময় কানের লতি পর্যন্ত ঝুলে থাকতাে। কখনাে কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হতাে। 


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ৬১ 


كان شعره بين الشعرين لا سبط ولا جعد بين أذنيه و عاتقه . 

নবী করীম (ﷺ) এর চুল মােবারক ঝুলন্ত নয়। কোঁকড়ানাে পরিপাটি করাও নয়। দু’কানের লতি পর্যন্ত লম্বা থাকতাে, কখনাে স্কন্ধ পর্যন্ত লম্বা থাকতাে। বর্ণিত আছে যে, তাঁর মাথা ও দাড়ি মােবারকে মােট দশ থেকে সতেরটি চুল সাদা ছিল। ৬২


৫৯, ইমাম তিরমিযী : আল-জামে', কিতাবুল মানাকিব, বাবু- মা জা ফী সিফাতিন নবী (ﷺ)। 

৬০. ইমাম বায়হাক্বী : দালাইলুন নবুয়্যত, খ. ১, পৃ. ২১৭ 

৬১. ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ২১৯

৬২. আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৪, পৃ. ২০৭; “আল্লামাি শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬০। 



নবী করীম (ﷺ) এর গর্দান/স্কন্ধ ও পৃষ্ঠ মােবারক এবং মােহরে নবুয়্যত 


❏ নবী করীম (ﷺ) -এর গর্দান মােবারক অত্যন্ত সুন্দর, দীর্ঘ রূপার মত সাদা উজ্জ্বল এবং সমতল ছিল।৬৩


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, ৬৪

নবী করীম (ﷺ) এর স্কন্ধ মােবারক যখন কোন সময় বস্ত্রহীন হয়ে যেতাে তখন মনে হতাে ইহা যেন রৌপ্যের পিন্ডের মত। 


❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, ৬৫

মক্কা বিজয়ের দিন নবী করীম (ﷺ) মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাকে তাঁর কাঁধে তুলে নিলেন। তাঁর (ﷺ) কাঁধ মােবারকের শক্তির অবস্থা ছিল। 

اني لو شئت نلت افق السماء . 

যদি আমি ইচ্ছা করতাম তা হলে আসমানের কিনারা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারতাম। 


❏ হযরত জাবের ইবন সামুরা (رضي الله عنه) বলেন, ৬৬ 


رأيت الخاتم عند كتفه مثل بيضة الحمامة يشبه جسده . 

আমি মােহরে নবুয়্যতকে তাঁর (ﷺ) স্কন্ধের পার্শ্বে কবুতরের ডিমের মত দেখেছি। রঙের দিক দিয়ে ওটা তাঁর শরীর মােবারক সদৃশ ছিল । 


❏ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) বলেন, ৬৭

আমি নবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হলাম, তিনি (ﷺ) তাঁর চাদর মােবারক আমার প্রতি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, তােমাকে যে বিষয়ে হুকুম দেয়া হয়েছে তা দেখ। তখন আমি তাঁর মােহরে নবুয়্যতকে উভয় স্কন্ধের মাঝখানে কবুতরের ডিমের মত দেখলাম। 

হযরত জালহামা ইন আরফাতা (رضي الله عنه) বলেন, একবার আমি মক্কায় এলাম। তখন মক্কাবাসীরা দূর্ভিক্ষের কঠিন বিপদে জর্জরিত ছিল। কুরাইশ বংশের লােকেরা সমবেত হয়ে হযরত আবু তালেবের কাছে এসে বলল, হে আবু তালেব! মানুষ কঠিন বিপদে পতিত হয়েছে। বের হউন এবং আল্লাহর কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করুন। 

     অতঃপর আবু তালেব বের হলেন, তাঁর সাথে এমন একটি নূরানী শিশু ছিল যেন একটি সূর্য, যা কালাে ঘনঘটা থেকে বের হয়েছে এবং তাঁর চার পাশে ছিল আরাে ক’জন শিশু, আল্লাহর ঘরে পৌঁছে আবু তালেব ঐ নূরানী শিশুর পৃষ্ঠদেশ, কা'বার দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলেন। নূরানী শিশুটি আঙ্গুল দ্বারা আকাশের দিকে ইশারা করলেন সে সময় আকাশে কোন মেঘ খন্ড ছিল না। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিতে চর্তুদিক হতে মেঘ মালা এসে যায় এবং এত বেশী বৃষ্টিপাত হলাে যে, জঙ্গল থেকে পানির ফোয়ারা ছুটলাে, পরিতৃপ্ত হয়ে গেল শহর ও গ্রামবাসী। দূর্ভিক্ষের বিপদও দূরীভূত হয়ে যায়। 


৬৩, জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৭৫ 

৬৪. ইমাম নাসাঈ : আস-সুনান, কিতাবুল হজ্জ, বাবু দুখুলি মক্কা। 

৬৫, জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ২৬৪। 

৬৬. ইমাম মুসলিম : আল-জামি', খ. ২, পৃ. ২৫৯। 

৬৭. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৫৯। 



❏ আবু তালিব সে দিকে ইঙ্গিত করে কতই না সুন্দর বলেছেন, ৬৮


وابيض يستسقى الغمام بوجهه + ثمال اليتمي عصمة للارامل 

يلوذ به الهلاك من آل هاشم + فهم عنده في نعمة وفواضل 


১. সে ফর্সা রং বিশিষ্ট-যার নূরানী চেহরা মােবারকের অবদানে মেঘের পানি প্রার্থনা করা যায়। তিনি এতিমদের আশ্রয়স্থল এবং বিধবাদের রক্ষাকারী। 

২. বনু হাশেমের মত উচ্চমনা লােক ধ্বংস ও বিনাশের সময় তাঁর কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করে এবং তারা তাঁর সান্নিধ্যে এসে মহান নি'আমত লাভ করে। 


৬৮. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ১৯০; জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৮৬। 



        নবী করীম (ﷺ) এর বগল মােবারক


❏ নবী করীম (ﷺ) এর বগল মােবারকদ্বয় অত্যন্ত পবিত্র, পরিষ্কার ও সুগন্ধময় ছিল। তাঁর বগলের রং বিবর্ণ হতাে না এবং তাঁর বগলে লােমও ছিল না।৬৯ 


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, ৭০


رأيت رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم يرفع يديه في الدعاء حتى یری بیاض ابطیه

আমি নবী করীম (ﷺ)  কে বৃষ্টির প্রার্থনার দুআয় এ পরিমাণ উপরে হাত তুলতে দেখেছি যে, তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। 


❏ হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, ৭১


كان النبي صلى اللّٰه عليه وسلم إذا سجد ، یری بیاض ابطيه . 

নবী করীম (ﷺ) যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা যেতাে। 


❏ এক সাহাবী (رضي الله عنه) বলেন, ৭২

নবী করীম (ﷺ) যখন হযরত মায়েয ইবনে মালিক (رضي الله عنه) কে তাঁর যিনার স্বীকারােক্তির প্রেক্ষিতে প্রন্ত নিক্ষেপের মৃত্যুদন্ড প্রদানের হুকুম দিলেন তখন তাঁর শরীরের উপর পাথরের বর্ষন দেখে আমি দাড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলি- আমি পড়ে যাবার উপক্রম হলাে। তখন নবী করীম (ﷺ)  আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, সে সময় তাঁর 

বগলের ঘর্ম আমার উপর ফোটা ফোটা হয়ে পড়ছিল, যা থেকে কস্তুরীর মত সুগন্ধ আসছিল। 


৬৯. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৪, পৃ. ১৮৬; জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬৩

৭০. ইমাম বুখারী : আল-জামি', খ. ২, পৃ. ৯৩৮। 

৭১. জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬৩। 

৭২, “আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ১৮৭; জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৬৭। 


     নবী করীম (ﷺ) এর হাত ও বাহু মােবারক


❏ নবী করীম (ﷺ) এর হাতের তালু ও বাহু মােবারক ছিল মাংসপূর্ণ, রেশম অপেক্ষা কোমল ও অত্যন্ত সুগন্ধময়। যে ব্যক্তির সাথে তিনি মুসাফাহা করতেন সে সারা দিন হস্তয় থেকে সুগন্ধি পেতাে। ৭৩


❏ হযরত জাবির ইবন সামুরা (رضي الله عنه) বলেন, ৭৪

একদা আমি নবী করীম (ﷺ) এর সাথে যােহরের সালাত আদায় করলাম। যখন তিনি মসজিদ থেকে বাইরে আসলেন তখন আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। শিশুরা তাঁর সামনে এলাে, তিনি (ﷺ) তাদের প্রত্যেকের গন্ডদেশে তাঁর হাত মােবারক বুলাতে থাকেন। আমার গন্ডদেশও তিনি হাত বুলিয়ে দেন। 


فوجدت ليده بردًا و ريحًا كانما اخرجها من جونة عطار . 

আমি তাঁর হাত মােবারকের শীতলতা ও সুগন্ধি এরূপ পেলাম যেন তিনি তাঁর হাত আতরের পাত্র থেকে বের করেছেন। 


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, ৭৫

আমি নবী করীম (ﷺ) এর হাতের তালু অপেক্ষা কোমল কোন রেশম ও মখমলকেও পাইনি এবং তাঁর সুগন্ধি অপেক্ষা অধিক সুবাসিত কোন মেশক আম্বর ইত্যাদিও পাইনি। আর এটাই সে নূরানী হাত যাতে সৃষ্টিকুলের নি'আমতরাজী লুকায়িত এবং সমুদয় বরকত এতে গুপ্ত রয়েছে। যেমন 


৭৩, ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯৭। 

৭৪. ইমাম মুসলিম : আল-জামি', খ. ২, পৃ. ২৫৬। 

৭৫. ইমাম বুখারী : আল-জামি', খ, ১, পৃ. ২৬৪। 


❏ হযরত উক্ববা (رضي الله عنه) বলেন,৭৬ নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, 


اني اعطيت مفاتيح خزائن الأرض أو مفاتیح الأرض - 

নিশ্চয়ই আমাকে পৃথিবীর সমুদয় ভান্ডারের চাবিসমূহ দান করা হয়েছে। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,৭৭ নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমাকে পৃথিবীর সম ভান্ডার দান করা হয়েছে এবং তা আমার দুহাতে রেখে দেয়া হয়েছে। 


❏ হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন,৭৮

নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমাকে সমগ্র পৃথিবীর চাবিসমূহ দান করা হয়েছে। হযরত জিব্রাইল (আঃ) ঐ গুলাে সাদা কালাে রং বিশিষ্ট একটি অশ্বপৃষ্ঠে রেখে আমার কাছে আনেন এবং চাবিগুলাে রেশমী চাদরে ঢাকা ছিল। 


❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর (رضي الله عنه) বলেন, ৭৯

নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমাকে প্রত্যেক বস্তুর চাবিসমূহ দান করা হয়েছে। 

আর এটা যে নূরানী হাত- যাকে আল্লাহ তা'আলা নিজের কুদরতী হাত বলেছেন এবং সে পবিত্র হাতে বায়াত গ্রহণকারীদেরকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহ তা'আলা বলেন, ৮০

ید اللّٰه فوق ایدیهم

 তাঁদের হাতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে। 

এ বরকতময় হাতের ইশারায় ডুবন্ত সূর্য পুনরায় উদিত হয়, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়, রােগী আরােগ্য লাভ করে, মুষ্টিবদ্ধ কংকর কথা বলে, নবী বলে সাক্ষ্য দেয়, কারাে মুখে সে নূরানী হাত বুলিয়ে দিলে সে চেহরা এত উজ্জ্বল হয় যে, তাঁর চেহরায় বস্তু সমূহের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। সে নূরানী হাত হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর বক্ষে মারলে তাঁর বিচারিক শক্তি বেড়ে যায়। অজ্ঞ চক্ষু খুলে যায়। এমন হাত মােবারক যা হযরত মা ফাতেমার গলার নীচে রাখলে কষ্ট চলে যায়। যে হাত মােবারক হযরত মদক ফরাযী (رضي الله عنه)-এর মাথায় বুলিয়ে দিলে তার মাথার চুল কালাে থেকে যায়। হযরত উসমান ইবুন আবুল আস (رضي الله عنه)-এর বক্ষে সে নূরানী হাত মারলে তার থেকে খিনার নামক শয়তান দূর হয়ে যায়। বদর যুদ্ধে হযরত আমাশা ইন মিহসানের তরবারী ভেঙ্গে গেলে তাকে একখানা শুস্ক কাঠ দিয়ে বললেন, যাও এটা দিয়ে যুদ্ধ কর। সে কাঠটি নূরানী হাতের বরকতে তলােয়ার হয়ে যায়। অনুরূপভাবে উহুদ যুদ্ধে হযরত ‘আব্দুল্লাহ  ইবন জাহাশের তরবারী ভেঙ্গে গেলে তিনি (ﷺ) তাঁকে খেজুর গাছের এক খানা ডাল দান করলেন। তা মূহুর্তের মধ্যে চকচকে তরবারী হয়ে গেল। 


❏ হযরত কাতাদাহ ইন নূমান (رضي الله عنه) অন্ধকার রজনীতে চলার জন্য নবীজী (ﷺ) তাঁকে এক খানা খেজুর গাছের ডাল দিলেন। মূহুর্তের মধ্যে তা আলাে দিতে শুর করল। তার এ নূরানী হাতের স্পর্শে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হয়। মুষ্ঠিমেয় খেজুরের উপর হাত রাখতেই তা বরকতে ভরপুর হয়ে গেল। মূলতঃ তাঁর হাত মােবারকের অসংখ্য মু'জিযাত প্রকাশিত হয়েছে যা বর্ণনার বাইরে।৮১


৭৬. ইমাম বুখারী : আল-জামি', খ, ২, পৃ. ৫৫৮; ইমাম মুসলিম : আল-জামি', খ, ২, পৃ. ২৫০। 

৭৭. ইমাম বুখারী : প্রাগুক্ত, খ.২, পৃ.১০৪২; ইমাম মুসলিম : প্রাগুক্ত, খ.২, পৃ. ২৪৪। 

৭৮. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : আল-খাসায়িসুল কুবরা, খ, ২, পৃ. ১৯৫; আল্লামা যারক্বানী : শরহুল মাওয়াহিব, খ. ৫, পৃ. ২৬০। 

৭৯. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১৯৫। 

৮০. সূরা আল-ফাতহ, আয়াত নং -১০। 

৮১. “আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৬-২৩০। 



     নবী করীম (ﷺ) এর বক্ষ ও ক্বলব মােবারক 


নবী করীম (ﷺ) এর পেট ও বক্ষ মােবারক সমান ও সমতল ছিল। বক্ষ মােবারক সামান্য উত্থিত ও প্রশস্ত ছিল। বক্ষ মােবারকের মধ্যখানে কেশপুঞ্জের একটি পাতলা রেখা, যা নাভী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ছিল। বক্ষ মােবারকের উপরিভাগের উভয় পার্শ্বে কেশ ছিল না। সে নূরানী বক্ষ ও ক্বলব মােবারকের প্রশস্ততার বর্ণনাদান মানবীয় শক্তি বহির্ভূত। 


❏ তাঁর বক্ষ মােবারকের প্রশস্ততা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন। ৮২


الم نشرح لك صدرك - 

হে প্রিয় হাবীব (ﷺ)! আমি কি আপনার বক্ষ প্রশস্ত করে দিইনি। 


❏ ‘শরহু সদর শব্দের অর্থ বক্ষ প্রশস্ত করে দেয়া। এটা হেদায়তের শেষ ধাপ। এ ধাপে পৌঁছলে জড় জগত, আধ্যাত্মিক জগত, লাহুত ও জাবরূত জগতের বাস্তবতা সমূহ উম্মুক্ত হয়ে যায়। জিহ্বা অদৃশ্য রহস্যাবলীর চাবিকাঠি এবং অল্প তার ভান্ডারে পরিণত হয়। অতঃপর তিনি যা বলেন, অদৃশ্য জগতে প্রত্যক্ষ করেই বলেন, বক্ষ প্রসারণের প্রভাব এ ছিল যে, দুনিয়া ও তার মধ্যস্থিত সব কিছু তাঁর কাছে মাছির ডানার সমানও গুরত্ব রাখত না। ৮৩


নবী করীম (ﷺ) এর বক্ষ ও ক্বলব মােবারকের উপমা আল-কুরআনে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে সূরা আন-নূর-এর ৩৫ নং আয়াতে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ আলাে আসমান ও যমীনের। তাঁর আলাের উপমা এমনই।যেমন- একটা দীপাধার, যার মধ্যে রয়েছে প্রদীপ, ঐ প্রদীপ একটা ফানুসের মধ্যে স্থাপিত। ঐ ফানুস যেন একটি নক্ষত্র, মুক্তার মত উজ্জ্বল হয় বরকতময় বৃক্ষ যায়তুন দ্বারা, যা না প্রাচ্যের, না প্রতীচ্যের; এর নিকটবর্তী যে সেটার তৈল প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠবে যদিও আগুন সেটাকে স্পর্শ না করে আলাের উপর আলাে। আল্লাহ আপন আলাের প্রতি পথ নির্দেশনা দান করেন যাকে ইচ্ছা করেন এবং আল্লাহ উপমা সমূহ বর্ণনা করেন মানুষের জন্য, এবং আল্লাহ সব কিছু জানেন।' 


৮২. সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত নং -১। 

৮৩. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৯। 


❏ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হযরত কা'ব আল- আহবার (رضي الله عنه)-এর নিকট আসলেন, অতঃপর বললেন, আমাকে আল্লাহ তা'আলার উক্ত বাণী সম্পর্কে বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, উক্ত আয়াত হলাে নূরী মুহাম্মদ (ﷺ) -এর উদাহরণ। আল্লাহর বাণী : کمشکواة (দীপাধারের মত) দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর মুখ মােবারক উদ্দেশ্য। তাঁর বাণী فیها مصباح (এতে প্রদীপ রয়েছে) দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র ক্বলব তথা অলঙ্করণ উদ্দেশ্য। তাঁর বাণী فی زجاجة (কাঁচের পাত্র) দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্ৰ বক্ষ মােবারক উদ্দেশ্য, তাঁর বাণী کانها کوکب دری (ঐ ফানুস যেন একটি নক্ষত্র, মুক্তার মত উজ্জ্বল হয়) দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র বক্ষ মােবারক থেকে মুক্তার ন্যায় চর্তুদিকে যে জ্যোতি বিকরণ হতাে তা উদ্দেশ্য। তাঁর বাণী- المصباح (প্রদীপ) দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর ক্বলব মােবারক উদ্দেশ্য। তাঁর বাণী توقد من   شجرة مبارکة زیتونة (বরকতময় বৃক্ষ যায়তুনের তৈল দ্বারা প্রজ্বলিত হয়ে উঠবে) বরকতময় বৃক্ষের তৈল দ্বারা প্রজ্বলন করেছে। তাঁর বাণী- یکاد زیتها یضٸ (এর নিকটবর্তী যে, সেটার তৈল প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠবে) নবী করীম (ﷺ) পবিত্র মুখ মােবারকে না বললেও মানুষের নিকট স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তিনি নবী যেরূপ তৈল প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আলােকিত হয়। ৮৪


নবী করীম (ﷺ) এর নূরানী বক্ষ মােবারক সে পূতপবিত্র বক্ষ যার মধ্যে আল্লাহ তা'আলার রহস্যাবলী, মা'রিফাত সমূহ এবং অসংখ্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের অসীম ও কিনারাহীন মহাসাগর তরঙ্গায়িত হচ্ছে। প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে মহান আলাহ তা'আলা যা কিছু হবে, হচ্ছে এবং হয়েছে সব কিছুর ‘ইলম দান করেছেন। আর তিনিও অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ দানে কৃপন নন।


৮৪. জালালুদ্দীন সুয়ুত্বী : আদ-দুররল মনসূর, খ, ১১, পৃ. ৬৪-৬৫। 


 

❏ যেমন: আল্লাহ তা'আলা বলেন, ৮৫

وما هو علی الغیب بضنین

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে খাযিন বলেন,৮৬ 


يقول انه ياتيه علم الغيب و لايبخل به عليكم و يخبركم به - 

আল্লাহ তা'আলা বলেন, এ মহান নবী (ﷺ) এর নিকট ইলমে গায়ব আসে অতঃপর তিনি তাঁর সংবাদ দানে কার্পন্য করেন না এবং তােমাদেরকে তার সংবাদ প্রদান করেন। 


আর মহান আল্লাহ স্বীয় হাবীবকে যে কিতাব দান করেছেন তাতে সব কিছুর বর্ণনা রয়েছে। কোন কিছুই বাদ যায়নি। যেমনঃ


❏ আল্লাহ তা'আলা বলেন,৮৭ ما فرطنا فی الکتاب من شٸ আমি কিতাবে কোন কিছুই বাদ দিইনি। এ মহান কিতাব প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। 

❏ যেমন তিনি বলেন,৮৮ ونزلنا علیك الکتاب تبیانا لکل شٸ আমি আপনার প্রতি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা স্বরূপ কিতাব অবতীর্ণ করেছি। 

পঞ্চ জ্ঞান সম্পর্কেও নবী করীম (ﷺ) অবগত আছেন। অর্থাৎ কিয়ামত কখন হবে ? কবে কোথায় ও কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবে ? জলবায়ুতে কি আছে ? আগামী কল্য কি হবে ? এবং কার মৃত্যু কোথায় ঘটবে? এ পঞ্চ জ্ঞান সম্পর্কেও তিনি (ﷺ) সম্মক অবগত আছেন। 


❏ ‘আল্লামা আহমদ ইবন মুহাম্মদ সাভী (رحمة الله) বলেন,৮৯


الحق انه لم يخرج نبينا صلى الله عليه وسلم من الدنيا حتى اطلعه على تلك الخمس ولكنه امر بكتمها . 


৮৫. সূরা তাকভীর : আয়াত নং- ২৪। ৮৬. তাফসীরে খানি : উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্র. 

৮৭. সূরা আনআম : আয়াত নং- ৩৮। 

৮৮. সূরা নাহল : আয়াত নং- ৮৯। 

৮৯. তাফসীরে সাভী : খ, ৩, পৃ. ২৪৪। 


প্রকৃত বিষয় হলাে এই যে, আমাদের নবী করীম (ﷺ) দুনিয়া থেকে তাশরীফ নিয়ে যাননি যতক্ষণ না ঐ পঞ্চ জ্ঞান সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তাঁকে সে গুলাে গােপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 


❏ ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শারানী (رضي الله عنه) বলেন, ৯০


واوتی علم كل شئ حتى الروح والخمس التي في اية أن اللّٰه عنده علم الساعة -

এবং নবী করীম (ﷺ)কে প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান দান করা হয়েছে এমনকি রূহ এবং ঐ পঞ্চ জ্ঞানেরও যে গুলাের বর্ণনা আয়াতে রয়েছে। 

নবী করীম (ﷺ) এর ক্বলব মােবারকের অবস্থা এমন যে, তাঁর দু'চোখ মােবারক ঘুমায় কিন্তু তাঁর ক্বলব মােবারক ঘুমায় না। এক মুহুর্তের জন্যও তিনি আল্লাহর যিকির থেকে বিরত থাকেন না। 



         নবী করীম (ﷺ) এর পেট মােবারক


❏ হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) বলেন, নবী করীম (ﷺ) কখনােই পেটভরে আহার করেননি এবং কোন সময় দারিদ্রের অভিযোগও কারাে নিকট করেননি।৯১


তাঁর এ দারিদ্র্য ছিল ইচ্ছাধীন, যা নবী করীম (ﷺ) এর নিকট ঐশ্বর্য অপেক্ষা প্রিয়তর ছিল। নচেৎ তাঁর হস্ত মােবারকে কি যে ছিল না ? পৃথিবীর ভান্ডার সমূহের চাবিকাঠি, আল্লাহর সমস্ত নি'আমতরাজি এবং সৃষ্টিকুলের সমুদয় বরকত বিদ্যমান ছিল তাঁর অনুপম হাত মােবারকে। 


৯০, কাশফুল গােম্মা : খ, ২, পৃ. ৭৭। 

৯১. “আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৩১১। 


❏ নবী করীম (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে বলেছেন, যদি আপনি চান তা হলে আমি মক্কার 

প্রসস্তময় ভূমিকে আপনার জন্যে স্বর্ণ বানিয়ে দেব, আমি আরয করলাম, হে আমার প্রভু! না, বরং আমি এটাই চাই যে, 

اشبع يوما واجوع يوما فاذا جعت تضرعت اليك و ذكرتك فاذا شبعت شكرتك وحمدتك . 

একদিন পরিতৃপ্ত থাকব, এবং একদিন ক্ষুধার্ত থাকব। যখন ভুখা থাকব, তােমার সমীপে ক্রন্দন ও মিনতি করব এবং মনে প্রাণে তােমাকে স্মরণ করব আর যখন পরিতৃপ্ত থাকব, তােমার কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা করব। ৯২


তাঁর দারিদ্র্যের অবস্থা এ ছিল যে, পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক রাত্রি অনবরত উপবাস থাকতেন এবং প্রায় তাঁদের রুটি হতাে যবের রুটি। তিনি (ﷺ) কখনাে পাতলা রুটি আহার করেননি লাগাতার দু’দিন পেটভরে যবের রুটি আহার করেননি। 


❏ হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) বলেন, আমি যখন কোন সময় পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করি তখন নবী করীম (ﷺ) এর দারিদ্র্যের কথা স্মরণ হয়ে যায়। তখন আমার কান্না আসে। আমি তাঁর ক্ষুধার আবস্থা দেখে কেঁদে উঠতাম এবং আমার হাত তাঁর পেট মােবারকে বুলিয়ে বলতাম, ক্ষুধার কারণে কেমন চাপা পড়ে গেছে। ৯৩


৯২. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৪, পৃ. ৩২২। 

৯৩, ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ২৮৮-২৮৯। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, একদা আমি নবী করীম (ﷺ) এর খেদমতে হাযির হলাম এবং দেখলাম তিনি বসেই নামায পড়ছেন। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (ﷺ) বললেন, ক্ষুধার কারণে। আমি অভিভূত হয়ে কাঁদতে শুরু করি। তিনি (ﷺ) বললেন, কেঁদো না। যে ব্যক্তি প্রতিদান ও সাওয়াবের নিয়তে ক্ষুধার্ত থাকে, সে কিয়ামত দিবসের কঠিন বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।৯৪


❏ নবী করীম (ﷺ) প্রায় সময় ইফতার ও সাহরী বিহীন সাওমে ভিছাল রাখতেন।৯৫

❏ তিনি এমন নূরানী মহা মানব ছিলেন তাঁর মল-মূত্র ও দেহ পরিত্যক্ত সকল দ্রব্য পূতপবিত্র ছিল।৯৬

❏ হযরত উম্মে আয়মন বরকত (رضي الله عنه) নামক একজন দাসী নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র পেশাব মােবারক পান করে ছিলেন। তাঁকে তিনি (ﷺ) বেহেস্তের সুসংবাদ দিয়ে ছিলেন।৯৭

❏ হযরত আব্দুল্লাহ  ইবনে যুবায়র (رضي الله عنه) নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র রক্ত মােবারক পান করেছিলেন, ফলে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।৯৮

❏ উহুদের যুদ্ধে নবী করীম (ﷺ) এর দন্দ মােবারক শহীদ হয়েছে, ওষ্ঠ মােবারকও বিক্ষত হয়ে যায়, যা থেকে রক্ত ঝরা শুরু হয়, হযরত মালেক ইবন সিনান (رضي الله عنه) তাঁর ওষ্ঠ মােবারক চুষতে শুরু করলেন। যখন তিনি চুষছিলেন নবী করীম (ﷺ) বললেন, তা ফেলে দাও, তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আপনার রক্ত মােবারক মাটিতে নিক্ষেপ করব না এবং খেতেই থাকেন, তখন নবী করীম (ﷺ) বলেন,৯৯


فقال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم ، من اراد ان ينظر الى رجل من اهل الجنة فلينظر إلى هذا ۔ 

যে বক্তি কোন বেহেশতী মানুষকে দেখতে চায় সে যেন এ ব্যক্তি (মালিক ইবন সিনান) কে দেখে নেয়। নবী করীম (ﷺ) থেকে যা কিছু নির্গত হয় তা খুবই সুগন্ধময়। 


❏ কাজী ইয়াদ্ব ও ‘আল্লামা যারক্বানী (رحمة الله) বলেন,১০০

যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা করার ইচ্ছা করতেন তখন মাটি বিদীর্ণ হয়ে যেতাে এবং তাঁর পায়খানা ও পেশাব মােবারক গিলে ফেলতাে। ওখান থেকে প্রকৃষ্ট ও পবিত্র সুবাস ছড়াতাে। 


❏ ইমাম বুয়ুসরী (رحمة الله) বলেন,১০১


جائت لدعوته الاشجار ساجدة + تمشي اليه على ساق بلا قدم 

যখন আপনি বৃক্ষরাজিকে আহবান করেন তখন সেগুলাে নিজেদের শাখা-পল্লব ঝুকিয়ে সিজদাকারীর মত চরণবিহীন কান্ডভরে আপনার ডাকে হাজির হয়েছে। 

তিনি (ﷺ) দু’জাহানের বাদশাহ হয়েও দরিদ্রের মত জীবন যাপন করেছেন। তিনি আমাদের মত বাহ্যিক পানাহারের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তাঁর পানাহার ছিল উম্মতের জন্য শিক্ষার নিমিত্তে। তাঁর পরিত্যক্ত সবকিছু পূত-পবিত্র ও বরকতময়। 


৯৪. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৩১৯। 

৯৫. ইমাম বুখারী : আল-জামি', কিতাবুস সাওম। 

৯৬. আবু নুআইম ইস্পাহানী : দালাইলুন নবুয়্যত, পৃ. ৩৮০। 

৯৭. জালালুদ্দীন সুয়ূত্নী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৭১। 

৯৮. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী : প্রাগুক্ত, খ, ১, পৃ. ৬৮।

৯৯. “আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ২৩০। 

১০০. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ২২৭। 

১০১. কাসিদায়ে বােরদা। 



         নবী করীম (ﷺ) এর চরণ মােবারক 


নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র গােড়ালীদ্বয় ও বরকতময় চরণ যুগল কোমল ছিল। এমন সুন্দর ছিল যার তুলনা বিরল। যখন হাঁটতেন পা মােবারক গাম্ভীর্য ও নম্রতা সহকারে তুলতেন। 



❏ হযরত জাবির ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) বলেন,১০২ کان فی ساقی رسول اللّٰه صلی اللّٰه علیه وسلم حموشة নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র গােড়ালীদ্বয় কোমল ও সুশ্রী ছিল। 

❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন,১০৩

ولم یری مقدمًا کبتیه بین یدی جلیس له

নবী করীম (ﷺ)কে কখনই মানুষের সম্মুখে তাঁর পা দিয়ে কিংবা মানুষের দিকে পা প্রসারিত করে বসতে দেখা যায়নি। 

❏ হযরত আব্দুল্লাহ  ইবন বােরায়দা (رضي الله عنه) বলেন,১০৪ নবী করীম (ﷺ) চরণ মােবারক সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম ছিল। 

❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,১০৫ 

আমি নবী করীম (ﷺ) অপেক্ষা দ্রুত চলতে কাউকে দেখিনি। যখন তিনি (ﷺ) হাঁটতেন তখন মনে হতাে যেন যমীন তাঁর জন্য সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা তাঁর সঙ্গে দৌড়তাম এবং দ্রুত চলতে চেষ্টা করতাম আর তিনি সহজভাবে নিয়মিত চলতেন, তারপরও তিনি সবার আগে থাকতেন।

❏ নবী করীম (ﷺ) যখন পাথরের উপর চলতেন তখন তাতে তাঁর পা মােবারকের চিহ্ন বসে যেতাে। অর্থাৎ পাথর নরম হয়ে যেতাে।১০৬ 

এটা হলাে এমন পা মােবারক যার আঘাতে উহুদ পর্বত স্থীর হয়ে যায়, এবং বললেন, থেমে যাও, তােমার উপর একজন নবী একজন সিদ্দিক ও দু’জন শহীদ রয়েছে। আর এটা এমন চরণ মােবারক যা কোন ধীরগামী ও দূর্বল প্রাণীর উপর পতিত হতাে তখন তা দ্রতগামীও চালাক হয়ে যেতাে। 


১০২. মিশকাতুল মাছবীহ ; পৃ. ৫১৮। 

১০৩. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫২০। 

১০৪. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ, ৪, পৃ. ১৯৮। 

১০৫. মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫১৮। ১০৬. ‘আল্লামা যারক্বানী : প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ১৯৭। 


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,১০৭ এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ) এর দরবারে এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার এ উষ্ট্রী অত্যন্ত অলস ও ধীরগামী, তখন নবী করীম (ﷺ) তাঁর পা মােবারক দ্বারা ঠোকা দিলেন, হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) শপথ করে বলেন, ঐ উষ্ট্রী এত দ্রতগামী হয়ে যায় যে, কাউকে তার আগে যেতে দিতাে না। 

❏ একবার হযরত আলী (رضي الله عنه) অসুস্থ্য হয়ে যান, তখন নবী করীম (ﷺ) বলেন, হে আল্লাহ্! তাঁকে আরােগ্য দান করন এবং তাঁর পা মােবারক দিয়ে হযরত আলীকে ঠোকা দিলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) সাথে সাথে সুস্থ্য হয়ে গেলেন।১০৮

❏ এটা এমন পদযুগল যার বরকতে মক্কা ও মদীনা মােনাওয়ারা লাভ করেছে অতিরিক্ত সম্মান। এ হলাে এমন পদযুগল যা সাহাবাগণ (رضي الله عنه) চুম্বন করতেন ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে।১০৯



       নবী করীম (ﷺ) এর পােষাক মােবারক 


নবী করীম (ﷺ) এর পােষাক মােবারক ছিল সাধারণতঃ পাগড়ী, চাদর, জামা ও লুঙি। একদা মিনা বাজার থেকে পায়জামা ক্রয় করেছেন, তবে পরিধান করেছেন কিনা তার প্রমাণ নেই। প্রায় সময় সাদা পাগড়ী পরিধান করতেন। কোন কোন সময় সবুজ ও কাল পাগড়ী ব্যবহার করেছেন। পাগড়ীর প্রান্ত মােবারক কখনাে খােলা রাখতেন আবার কখনাে রাখতেন না। পাগড়ীর পান্ত প্রায়ই উভয় স্কন্ধের মাঝখানে এবং কখনাে কখনাে 


১০৭. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ৩১২-৩১৩। 

১০৮. আবু নুআইম ইস্পাহানী : দালাইলুন নবুয়্যত, পৃ. ৩৮০। 

১০৯. আবু নুআইম ইস্পাহানী : প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩২।



❏ পৃষ্ঠ মােবারকের উপর রাখতেন। পাগড়ীর নিচে মাথা মােবারকের সাথে জড়ানাে টুপি থাকত।১১০ 

❏ তিনি (ﷺ) বলেছেন,১১১

فرق ما بيننا وبين المشركين العمائم على القلانس - 

আমাদের এবং মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হলাে এই যে, আমাদের পাগড়ী টুপীর উপর থাকে। 

❏ তিনি (ﷺ) প্রায় সময় জামা পরিধান করতেন এবং সব সময় লুঙি ব্যবহার করতেন, শামী জুব্বাও পরিধান করেছেন যার হাতা এ পরিমাণ সংকীর্ণ ছিল যে, অযুর সময় উপরে তােলা যেত না। বরং হাত মােবারক তা থেকে বের করতে হতাে। ইরানী জোব্বাও তিনি পরিধান করেছেন যার পকেট ও হাতাদ্বয়ে রেশমের আঁচল ছিল। ইয়ামানের ডােরাকাটা চাদর তিনি খুবই পছন্দ করতেন। তিনি বিভিন্ন রঙের যেমন-সাদা, সবুজ ও জাফরানী ইত্যাদি রঙের কাপড় পরিধান করেছেন। কিন্তু সাদা রং তাঁর অত্যন্ত পছন্দনীয় ছিল। লাল চাদরও পরিধান করেছেন যা রেখাযুক্ত ছিল। সম্পূর্ণ লাল রঙের পােষাক তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁর (ﷺ) পাদুকা মােবারক ছিল খড়মের আকৃতির, প্রত্যেকটার দুটো করে দু’ভাজ বিশিষ্ট ফিতা ছিল। একটা ফিতা বৃদ্ধাঙ্গুল ও তৎসংলগ্ন আঙ্গুলের মাঝখানে এবং দ্বিতীয়টা অনামিকার মাঝখানে থাকত।১১২

নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র পােষাক মােবারকের অনেক ফযীলত ও মর্যাদা রয়েছে। যার বর্ণনা স্বল্প পরিসরে দেয়া সম্ভব নয়। 



                         উপসংহার 


১১০. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৬। 

১১১. আবু দাউদ : আস-সুনান, কিতাবুল লিবাস। 

১১২. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৭-৩৩৮। 

 


নবী করীম (ﷺ) না অত্যাধিক লম্বা ছিলেন না বেঁটে বরং মাঝারী কায়া বিশিষ্ট ছিলেন, কিন্তু যখন মানুষের সম্মুখে হতেন তখন সবার উপরে ও স্বতন্ত্র থাকতেন। মূলতঃ এটা ছিল তাঁর মু'জিযা। যখন আলাদা থাকতেন তখন মাঝারী কায়া বিশিষ্ট সামান্য লম্বা হতেন এবং যখন অন্যান্যদের সাথে চলতেন বা বসতেন তখন সবার উপরে দেখা যেতাে। হযরত ‘আলী (رضي الله عنه) নবী করীম (ﷺ) এর গঠন মােবারকের অতি উচ্চ পর্যায়ের বর্ণনা দিয়েছেন। 


❏ হযরত ‘আলীর (رضي الله عنه) মুখেই আমরা শুনি।১১৩


لم يكن بالطويل الممغط ولا بالقصير المتردد وكان ربعة من القوم ولم يكن بالجعد القطط ولا بالسبط كان جعدا رجلا ولم يكن بالمطهم ولا بالمكلثم وكان في الوجه تدویرا ابيض مشرب أدعج العينين أهدب الأشفار جلیل المشاش والكتد اجرد ذو مسربة شتن الكفين والقدمين اذا مشى تقلع كانما يمشي في صبب واذا التفت التقت معا بين كتفيه خاتم النبوة و هو خاتم النبيين أجود الناس صدرا واصدق الناس لهجة والينهم عريكة واكرمهم عشيرة من راه بديهة هابه ومن خالطه معرفة احبه يقول ناعته لم ارقبله والابعده مثله صلى الله عليه و سلم - 

তাঁর কায়া না লম্বা ছিল এবং না বেটে বরং তিনি ছিলেন মধ্যমদেহী। তাঁর চুল না অধিক কুঞ্চিত ছিল, না একেবারে সােজা, বরং সামান্য কোঁকড়ানাে। তাঁর গােলগাল চেহারা না পাতলা ছিল, না মােটা। রং সম্পূর্ণ শুভ্র ছিল না বরং তাঁর শুভ্রতায় ছিল রক্তিমাভ। তাঁর চক্ষুদ্বয় কালাে ও চোখের পাতা ছিল দীর্ঘ। তাঁর অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জোড়া সবল এবং স্কন্ধ ছিল বলিষ্ঠ। তাঁর শরীর কেশ ছিল না, কেবল কেশ পুঞ্জের একটি রেখা ছিল নাভী থেকে বক্ষ পর্যন্ত। যেন তা একটি বৃক্ষের শাখা। হাত ও পা ছিল বলিষ্ঠ, সবল ও মাংসপূর্ণ। যখন চলতেন 


১১৩, মিশকাতুল মাছবীহ : পৃ. ৫১৭; ইমাম বায়হাক্বী : প্রাগুক্ত, খ. ১পৃ. ২২৯; ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান, কিতাবুল মানাক্বি, হাদীস নং ৩৬৩৮; শামায়েল, প্রাগুক্ত পৃ. ১০ 



শক্তি ও গাম্ভীর্য সহকারে চলতেন যেন তিনি ঢালু ভূমি অবরােহণ করছেন। এদিক ওদিকে তাকালে পূর্ণ শরীর সহকারে ফিরে তাকাতেন। উভয় স্কন্ধের মধ্যখানে ছিল মােহরে নবুয়্যাত এবং তিনি। ছিলেন শেষ নবী। মানুষের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা দানশীল ও উদার, কথায় সর্বাপেক্ষা সত্যবাদী, স্বভাবে সর্বাপেক্ষা কোমল, বংশ মর্যাদায় সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। যে কেউ তাঁকে হঠাৎ দেখত, তার উপর ভয়-ভীতি ছেয়ে যেতাে এবং যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কথা বলত ও মেলামেশা করত, তার অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি হতাে। মােটকথা তাঁর মত না তাঁর পূর্বে (কাউকে) দেখেছি, না তাঁর পরে। তাঁর প্রতি আল্লাহর দরূদ ও সালাম হােক। 

নবী করীম (ﷺ) আপাদমস্তক নূর, আবার তিনি অনুপম মানুষও। তাঁর পবিত্রতম সত্ত্বা ছিল রূপ ও সৌন্দর্যের প্রতিকৃতি এবং এক একটা অঙ্গ ছিল আল্লার কুদরতের বিকাশস্থল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে অতুলনীয়, অনুপম, অপরূপ ও অনন্যগুণে সৃষ্টি করেছেন। 


❏ আ'লা হযরত (رحمة الله) কতইনা সুন্দর বলেছেন,১১৪


اللّٰہ کی سر تا بقدم شان ہیں ہے + ان سا نھیں انسان وہ انسان ہیں یہ 

قران تو کہتا ہے کہ ایمان ہیں یہ + اور ایمان یہ رکھتا ہے مری جان ہیں یہ 

“প্রিয় নবীর আপাদমস্তক আল্লাহরই মাহাত্মের বহি:প্রকাশ।। তিনি মানব অথচ তাঁর মত দ্বিতীয় কোন মানব নেই। কুরআন তাে বলছে- ইনি হলেন ঈমান আর ঈমান বলছে- ইনি আমার প্রাণ। 


❏ আশেকে রসূল (ﷺ), ইমাম শেরে বাংলা (رحمة الله)- এর মন্তব্যটি এখানে প্রনিধানযােগ্য-১১৫


محمد گر چه از جنس بشر ہست + نظیرش در جہاں لیکن محال ست 


১১৪ . ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী: প্রাগুপ্ত, পৃ. ৩৫৯। 

১১৫. ইমাম শেরে বাংলা : দিওয়ান-ই-আযীয (বঙ্গানুবাদ: মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান) পৃ. ৩৫ 



“হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) যদিও মানব জাতির অন্তর্ভূক্ত, কিন্তু তাঁর উপমা গােটা বিশ্বেও পাওয়া অসম্ভব। 


وجود او که از نور خدا هست + زنور او ہمہ عالم ہو یدہ است 

‘তাঁর সৃষ্টি হলাে আল্লাহর পবিত্র নূর থেকে, তাঁরই নূর থেকে গােটা বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে'। 


وما علينا الا البلاغ

وصلى اللّٰه على حبيبه الكريم وعلى اله واصحابه اجمعين 


আহকার 

ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম 

১৯ রজব ১৪৩৫ হি.



                       পরিশিষ্ট -১ 

আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির গূঢ় রহস্য কেবল চক্ষুস্মান ব্যক্তিরাই হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম 

১. আল্লাহ তা'আলা সর্ব প্রথম হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর মহান নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন। সে দূর থেকে সমস্তু মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য প্রতিটি সৃষ্টির অনু-পরমানুতে নূরের ঝলক বিদ্যমান। 


২. আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (عليه السلام)কে সৃষ্টি করেছেন মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন এ চার উপাদান দিয়ে। অতঃপর তাঁর মধ্যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) স্থাপন করা হয়। 


৩. হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত শীষ (عليه السلام)-এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর মােবারক নিষ্কলুস, বিশ্বাসী মুমিন মূমিনাতের মাধ্যমে হযরত আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)-এর কপাল মােবারকে অত:পর মা আমেনা (رضي الله عنه)-এর রেহেম মােবারকে স্থানারিত হয়েছে এবং তিনি (ﷺ) ৫৭০ খৃ. সালে এ পৃথিবীতে তশরীফ এনেছেন। 


৪. আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম (عليه السلام)-এর বাম পাজরের হাড় থেকে স্বীয় স্ত্রী হযরত হাওয়া (عليه السلام)কে সৃষ্টি করেছেন। 


৫. আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসা (عليه السلام)কে স্বীয় কুদরতে পিতাবিহীন সৃষ্টি করেছেন। 


৬. আল্লাহ তাআলা অপরাপর সকল মানুষকে মা-বাবার ভালবাসার নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন।


অতএব, আল্লাহ তা'আলা বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন নিয়মে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য আল্লাহর হাবীব, নবী করীম (ﷺ)কে মাটির মানুষ বলা, রক্ত-মাংসে, দোষে-গুণে আমাদের মত সাধারণ মানুষ মনে করা চরম বেয়াদবী। আল্লাহ তা'আলা তাঁর হাবীবকে নবুওয়াত ও রেসালত দান করার মাধ্যমে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করেছেন। সুতরাং তাঁর শান-মান, ফযীলত ও মর্যাদা বুঝার আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন। 


পরিশেষে বলা যায়, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) নূরের তৈরী, ছায়াবিহীন কায়াবিশিষ্ট, নিষ্কলুস-নিষ্পাপ, সর্বশ্রেষ্ট, সর্বোত্তম, সর্বগুণে গুনান্বিত, মানবীয় দুর্বলতামুক্ত একজন পরিপূর্ণ মহামানব। ওহে আল্লাহ! তাঁর প্রতি অসংখ্য দরূদ ও সালাম প্রেরণ করুন। 


               অধম 

ড. মােহাম্মদ আবদুল হালিম 

আগষ্ট - ২০১৪খৃ. 


                          গ্রন্থপঞ্জি 

১. আল-কুরআনুল করীম। 

২. ইমাম বুখারী। : আল-জামি আস-সহীহ 

৩. ইবন হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী 

৪. ইমাম মুসলিম। : আল-জামি আস-সহীহ 

৫. ইমাম তিরমিযী : আল-জামি' 

                             : শামায়েল (বাঙ্গানুবাদ) 

                               মাওলানা মতিউর রহামন 

৬. ইমাম বায়হাকী : দালাইলুন নবুয়্যত ওয়া মা'রিফাতু আহওয়ালি সাহিবিশ শরী'আত। 

৭. ইমাম নাসাঈ : আস-সুনান। 

৮. ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ 

৯. আবু নুআইম ইস্পাহানী : দালাইলুন নবুয়্যত 

১০. ইমাম আবু দাউদ : আস-সুনান। 

১১. ইমাম আযম। : কাসীদা। 

১২. কাজী ‘ইয়া : আশ-শিফা। 

১৩. ইমাম সুয়ূত্বী। : আদ-দুররল মনসূর ও আল-খাসায়িসুল কুবরা। 

১৪. ইমাম খানি : তাফসীরে খাযিন। 

১৫. যারক্বানী : শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নীয়া 

১৬. ওলি উদ্দীন আল-খতীব : মিশকাতুল মাসাবীহ 

১৭. ‘আল্লামা শফি উকাড়ভী : যিকর-এ-জামীল (বঙ্গানুবাদ মাওলানা মুহাম্মদ মহি উদ্দীন) 

১৮. হালবী : সিরাতে হালাবীয়্যা 

১৯. আহমদ ইবন মুহাম্মদ সাভী : তাফসীরে সাভী 

২০. আবদুল ওহ্হাব শা'রানী : কাশফুল গােম্মা। 

২১. ইবনে আসাকির : তারিখু মাদীনাতি দামেশক্ব 

২২. সৈয়দ মুহাম্মদ আযীযুল হক শেরে বাংলা আল-ক্বাদেরী : দিওয়ান-ই-আযীয (বঙ্গানুবাদ:  মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান) 

২৩. “আল্লামা ইউসুফ নাবহানী : মাজমু আরবাইনাত 



পরম শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত পাঠকের নিকট আকুল আবেদন! 

আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করুন, মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন, কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করুন, সালাত প্রতিষ্ঠা করুন, নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে সালাতু সালামের হাদিয়া পেশ করতে থাকুন, মাতা-পিতার খেদমত করুন, মরহুম মাতা-পিতার কবর যিয়ারত করুন,আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখুন, ইয়াতীম-মিসকিনের প্রতি সদয় ব্যবহার করুন, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন, ঘুষ-সুদ গ্রহণ ও প্রদান থেকে বিরত থাকুন, দ্বীনি ইলম অর্জন করুন, হক্কানী আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধা করুন, ছেলে মেয়েদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করুন, আল্লাহর মহান ওলিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন,সুযােগ হলে লেখকের বিখ্যাত ইমাম মুসলিম (رحمة الله): জীবন ও কর্ম এবং নূর তত্ত্ব গ্রন্থ দুটি মনযােগ সহকারে অধ্যয়ন করুন, শরীয়ত মতে জীবন যাপন করুন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে আমলে ছালেহ করার তৌফিক দান করুন। আমীন। 

নবী করীম (ﷺ) এর অতীব বরকত মন্ডিত, সুগন্ধময়, জ্যোর্তিময়, পূতপবিত্র, শরীর মােবারকের অসাধারণ, আকর্ষণ ও অপরূপ সৌন্দর্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিয়ে রচিত অত্র গ্রন্থটি সুধী সমাজে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি করেছে। ফলে অল্প দিনেই প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায়। তাই বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও ধর্মানুরাগী জনাব জহির উদ্দিন মােহাম্মদ বাবর তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবুল কাশেম ও মাতা মরহুমা আয়েশা খানম-এর রূহের মাগফেরাতের জন্য ‘‘হৃদয়ের আয়নায় নবী করীম (ﷺ)” গ্রন্থটির এক হাজার কপি নিজ বন্যতায় প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে উভয় জাহানের কামিয়াবী দান করন। আমীন। 


رَبَّنَا اغُفِرلِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلمُؤمِنِينَ يَومَ يَقُومُ الحِسَابِ . 

رَبَّنَا تَقَبَّل مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ وَتُب عَلَينَا إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ بِوَسِيلَةِ سَيِّدِ المُرسَلِینَ ﷺ


ইতি-

প্রকাশক





Top