শরিয়াতের দৃষ্টিতে ঈসালে সওয়াব ও চল্লিশা যিয়াফতের বৈধতা এবং বিরোদ্ধবাদীদের জবাব
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রচনা ও সংকলনেঃ মুফ্তী মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী
রচনা ও সংকলনে
মুফ্তী মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী
গ্রন্থনা ও সংকলন,
মুফ্তী মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী, সুন্নী, আল-হানাফী।
মোবাইল : +৮৮০ ১৭২৩৫১১২৫৩
সম্পাদনা পরিষদ
সুলতানুল মুনাজেরীন, আল্লামা মুফ্তী আবু নাছের জেহাদী ছাহেব।
আলহাজ্ব মাওলানা তাজুল ইসলাম চাঁদপুরী ছাহেব, চাঁদপুর।
বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, মুফ্তী মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুর, কুমিল্লা।
নামকরণে: মুফ্তী মাওলানা আসাদুজ্জামান, ঝিনাইদহ ও মাওলানা মনিরুজ্জামান, বি-বাড়িয়া।
কৃতজ্ঞতায়: মাওলানা মুরসালিন ইসলাম, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-মামুন, আব্দুল আওয়াল ও মাও: মাহবুবুর রহমান মাওয়া।
প্রথম প্রকাশ: সেপ্টেম্বর- ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ, জিলক্বদ- ১৪৩৫ হিজরী, আশ্বিন- ১৪২১ বাংলা
দ্বিতীয় প্রকাশ: ১০ অক্টোবর- ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ, সফর- ১৪৪১ হিজরী।
স্বত্ব: সংকলক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সার্বিক সহযোগীতায় : মো: মুজিবুর রহমান, প্রো: মেসার্স এম এস প্লাস্টিক ইন্ডাষ্ট্রি, মধ্য মমিনবাগ, রোড নং ৫, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
প্রচ্ছদ: শেখ সরওয়ার হুসাইন।
পরিবেশনায়: জিহাদী সাইবার টিম, বাংলাদেশ (একটি মানবিক সংগঠন)।
শুভেচ্ছা হাদিয়া ৮০/= টাকা
যোগাযোগ : দেশ-বিদেশের যে কোনো স্থানে বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে কিতাবটি সংগ্রহ করতে মোবাইল: ০১৭২৩-৫১১২৫৩
❏ উৎসর্গ
আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল, মুজাদ্দেদে জামান, বিশ্বওলী, আমার দয়াল পীর, দস্তগীর, খাজাবাবা শাহ্সূফী হযরত মাওলানা ফরিদপুরী নকশ্বন্দী মুজাদ্দেদী (কু: ছে: আ:) ছাহেবের-দন্ত মোবারকে।
❏ ভূমিকা
সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ তা’লার জন্য যিনি সমস্থ ভূ-মন্ডলে মালিক ও মহান স্রষ্টা। সালাত ও সালাম প্রিয় নবীজি রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি যিনি আল্লাহ তা’লার একান্ত বন্ধু এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের রহমত ও শেষনবী। এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, খোলাফায়ে রাশেদীন, উম্মাহাতুল মু’মেনীন, শোহাদায়ে কেরাম তামামের প্রতিও।
প্রিয় মুসলীম ভাই ও বোনেরা! ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং আমরা শান্তিকামী মুসলীম জনতা। এই শান্তি প্রিয় মুসলীম সমাজে বিভ্রান্তির ও অশান্তির উদ্দেশ্যে তথাকথিত এক শ্রেণির নামধারী কথিত উলামারা মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত ও ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আয়োজিত বিভিন্ন ফাতেহা কুলখানী বা চল্লিশা যিয়াফতের বিরোদ্ধে বিদয়াত নাজায়েয এমনকি হারাম বানানোর জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছেন। অথচ পবিত্র কোরআন ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ’র মধ্যে ঈসালে সওয়াব, চল্লিশা যিয়াফতের দালায়েলের অভাব নেই। পাশাপাশি অসংখ্য ফকিহ্, মুজাদ্দিদ, মুজ্তাহিদ, আউলিয়ায়ে কেরাম ও ইমামগণ ঈসালে সওয়াব, চল্লিশা যিয়াফতের আমল করেছেন এবং এরপক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন।
তাই সরলমনা সুন্নী মুসলমানদের ঈমান রক্ষার সহযোগী হিসেবে আমি ছহীহ্, সঠিক ও বিশুদ্ধ বর্ণনা সহকারে ঈসালে সওয়াব, চল্লিশা যিয়াফতের পক্ষে এই বইখানা লিখলাম। এর নাম রাখলাম “ঈসালে সওয়াব ও চল্লিশা যিয়াফত ”।
মুদ্রণের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব নির্ভূল করার চেষ্টা করেছি। এরপরও ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। মহৎ পাঠকগণ ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ইহাই আশা করি। কোন ভুল-ত্রুটি কারো দৃষ্টি গোচর হলে আমাকে জানালে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করব ইনশা আল্লাহ। সকলের মঙ্গল কামনায়, ইতি:- মুফ্তী মো: আলাউদ্দিন।
❏ সূচীপত্র
এ বিষয়ের একটু কথা
মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা ক্ষমা প্রার্থনা করা
মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করা
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা
মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্ব সম্পাদন করা
মৃতদের জন্য ফেরেস্তাদের তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে উপকার লাভ
উত্তম কাজ আবিস্কারের মাধ্যমে কবর থেকে সওয়াব লাভ করা
উত্তম কাজ আবিস্কারের মাধ্যমে কবর থেকে সওয়াব লাভ করা
জিবীত বা মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজ আদায় করা
মৃতদের জন্য নামাজ, রোজা ও সদকা করা
মৃতদের জন্য দোয়া, সদকায়ে জারিয়া ও উপকারী ইলিম
মৃতদের জন্য পানাহার করানো
মৃত ব্যক্তির প্রশংসার দ্বারা উপকার
ফোকাহাদের দৃষ্টিতে ইছালে সওয়াব
হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের অভিমত:
ইছালে সওয়াবের ব্যাপারে উম্মতের ইজমা
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ছানআনী (رحمة الله) এর অভিমত,
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর অভিমত
হানাফী ফোকাহাদের অভিমত,
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এর অভিমত,
কবরস্থানে তেলাওয়াত করে সওয়াব রেছানী করা
কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর অভিমত
কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর অবস্থান
হানাফী মাজহাবের অভিমত
কবর যিয়ারতের সময় হাঁত উঠিয়ে দোয়া
মৃত ব্যক্তির ফাতেহা উপলক্ষে যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা
হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিতে মৃতের জন্য যিয়াফত করা
চল্লিশা বা চেহলাম পালন সম্পর্কে
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
যে যতটুকু আমল করবে ততটুকুই পাবে!
সম্মিলীতভাবে সওয়াব রেছানী ও দোয়া করা যাবেনা!
দিন তারিখ ঠিক করে অনুষ্ঠান করা যাবেনা!
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে একত্রিত হওয়া ও যিয়াফত করা যাবেনা!
النِّيَاحَة নিয়াহাতের কারণে কবরে আযাব হয়।
❏ এ বিষয়ের একটু কথা
মুসলমান যে কোন নেক আমল করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়াকে বলা হয় ‘সওয়াব রেছানী’। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানকে বলা হয় ‘ফাতেহা অনুষ্ঠান’। নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত, সদকা ইত্যাদি আমলের সওয়াব মৃতগণের রুহে বকশানো যায়। এরূপ সওয়াব রেছানীর নিয়ম নবী পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকেই চালু রয়েছে। অথবা কবরস্থানে অধিক ফজিলতপূর্ণ সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, এক ব্যক্তির নামাজ অথবা রোজা অন্যব্যক্তি আদায় করার কোন নিয়ম শরিয়তে নেই। শুধু মাত্র স্বীয় আমলের সওয়াব মৃত অথবা জিবীত ব্যক্তির রুহে রেছানী করা যায় এবং জিবীতদের ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়। এ সম্পর্কীত বিষয়ে দলিল-আদিল্লাহ নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হল।
❏ মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা ক্ষমা প্রার্থনা করা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দৃষ্টিতে জিবীত লোকের দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিরা উপকৃত হয়। এ কারণেই মহান শ্রষ্টা আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। যেমনঃ
❍ এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে,
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
-“হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা করে দিন এবং অন্য সকল মুসলমানকেও ক্ষমা করে দেন যেদিন হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে।” (সূরা ইব্রাহিম: ৪১ নং আয়াত)
এই আয়াত দ্বারা সু-স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সন্তানের দোয়ার মাধ্যমে তার পিতা-মাতা ও এক মুসলমানের দোয়ায় অন্য মুসলমান কবর জগৎ থেকেও উপকৃত হবে।
❍ এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আরেকটি আয়াতে উল্লেখ আছে,
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
-“আর যে সকল লোকেরা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের ঐসব ভাইদেরকেও ক্ষমা করুন যাঁরা ঈমানের সাথে চলে গেছেন।” (সূরা হাশর: ১০ নং আয়াত)
❍ পবিত্র কোরআনের আরেক জায়গায় পিতা-মাতার প্রতি দোয়া স্বয়ং শ্রষ্টা শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন লক্ষ্য করুন,
وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُما كَما رَبَّيانِي صَغِيراً -
“আর বল, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের (পিতা-মাতার) প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা বনী ইসরাইল: ২৪ নং আয়াত)
এই আয়াতে পিতা-মাতা জিবীত বা মৃত সর্ব অবস্থায় তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশনা রয়েছে। আর আল্লাহর নির্দেশনা কখনো অমূলক হতে পারেনা। অবশ্যই সেই দোয়ার দ্বারা মৃত পিতা-মাতা উপকৃত হন। সুতরাং উল্লেখিত আয়াতদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জীবিত লোকের দোয়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিরা কবর জগৎ থেকেও উপকৃত হবে। তাই এই বিষয়টাকে অস্বীকার করবে তারা পবিত্র কোরআনকে অস্বীকার করার কারণে কাফির হিসাবে গন্য হবে।
❏ মৃত ব্যক্তির জন্য সদকা করা
আমাদের দয়াল নবী হযরত রাসূলে করীম (ﷺ) এর হাদিস সমূহ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, জিবীতরা মৃতদের জন্য নেক আমল করে তাদের রুহে বকশালে মৃতরা ইহার দ্বারা উপকৃত হয়। এ মর্মে বহু সংখ্যক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। যেমনঃ
❍ নিচের হাদিস গুলো ধারাবাহিক লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَجَلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي افْتُتِلَتْ نَفْسُهَا، وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ
-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন, তিনি কোন অছিয়ত করতে পারেননি। আমার প্রবল ধারণা যে, তিনি কথা বলার সুযোগ পেলে সদকা করতেন। অতএব আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাহলে এর সওয়াব কি তিনি পাবেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হ্যাঁ পাবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুয়াত্তা মালেক, হাদিস নং ৫৩
・ছহীহ্ বুখারী তাঁর কিতাবুজ জানায়েয-এ হাদিস নং ১৩৮৮ এবং মুসলীম তাঁর কিতাবুল ওছিয়াত-এ, হাদিস নং ২৩৭৩ ও ৪৩০৮
・সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৮১৮
・আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং ২৮৮১
・নাসাঈ শরীফ, হাদিস নং ৩৬৪৯
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৭০৩
・ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ, হাদিস নং ১৬৯০
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে ছাগীর, হাদিস নং ২৩৩২
・মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৪৪৩৪
・ছহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং ২৪৯৯
・ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩৩৫৩
・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ১৬৩৪৩
・মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, ১২০৭৭
・তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ২১৩ পৃ:
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
・তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৬ পৃ:
ইহা ছহীহ্ বুখারী ও মুয়াত্তা মালেকের হাদিস। দেখুন! স্বয়ং আল্লাহর নবী রাসূলে করীম (ﷺ) বললেন যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষে সদকা তথা কোন নেক আমল করলে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তি পায়। তাই দান-সদকা করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) সমর্থিত ও সুন্নাতে সাহাবা।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، أَخْبَرَنَا مَخْلَدُ بْنُ يَزِيدَ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي يَعْلَى، أَنَّهُ سَمِعَ عِكْرِمَةَ، يَقُولُ: أَخْبَرَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ، أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا فَهَلْ يَنْفَعُهَا إِنْ تَصَدَّقْتُ بِشَيْءٍ عَنْهَا؟ فَقَالَ: نَعَمْ، فَقَالَ: أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطَ الْمِخْرَافِ صَدَقَةٌ عَنْهَا
❍ “হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হযরত সাদ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) এর অনপুস্থিতিতে তাঁর মা ইন্তেকাল করেন। এরপর তিনি রাসূল (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার অনপুস্থিতিতে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে তার উপকারে আসবে কি? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হ্যাঁ। তখন সাদ (رضي الله عنه) বললেন: আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার বাগানটি তার পক্ষ থেকে সদকা করলাম।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ২৭৫৬
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৩৫০৮
・মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৩০৮০
・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ১৬৩৩৭
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু কুবরা, হাদিস নং ১২৬৩১
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
এই হাদিসটির দিকে নজর করুন! মৃত ব্যক্তির পক্ষে বাগান সদকা করলে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তি পায়, ইহা স্বয়ং নবী পাক (ﷺ) কর্তৃক অনুমোদিত ও সাহাবীগণ কর্তৃক আমলকৃত। তাই কোন বস্তু দান বা সদকা করে মৃত ব্যক্তির রুহে ইহার সওয়াব রেছানী করা জায়েয তো বটেই বরং ইহা সুন্নাত। এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে আছে,
أَخْبَرَنَا أَبُو عَلِيٍّ الرُّوذْبَارِيُّ، نا أَبُو مُحَمَّدٍ عَبْدُ اللهِ بْنُ شَوْذَبٍ، إِمْلَاءً بِوَاسِطَ، نا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي الْعَوَّامِ، نا مَنْصُورُ بْنُ صُقَيْرٍ، نا مُوسَى بْنُ أَعْيَنَ الْحَرَّانِيُّ، عَنْ عَبَّادِ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي: إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَتَصَدَّقَ صَدَقَةً فَاجْعَلْهَا عَنْ أَبَوَيْكَ، فَإِنَّهُ يَلْحَقُهُمَا، وَلَا يُنْتَقَصُ مِنْ أَجْرِكَ شَيْئًا
❍ “হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (رضي الله عنه) তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমার পিতাকে বললেন: “যখন তোমাদের মাঝে কেউ নফল দান খয়রাত কর তখন উচিৎ যে, তা নিজের মা-বাবার পক্ষ থেকে করা, যেন ইহার সওয়ার তাঁরা পেয়ে যায় এবং তার (সওয়াব দানকারীর) সওয়াবের মধ্যে কোন কমতিও হবেনা।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৯০ পৃ: হাদিস নং- ৭৯১১ ও ৭৫৩৩
・দায়লামী শরীফ
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:
・তাবারানী, ইবনে উমর রা: হতে
এই হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, নফল দান-খয়রাত এর সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছানো জায়েয। এতে সওয়াব বকশিস করনে ওয়ালার সওয়াবের কোন কমতি হবেনা।
❍ এবার এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ أَسْلَمَ الصَّدَفِيُّ، نا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْمُنْكَدِرِيُّ، نا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي فُدَيْكٍ قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا مُحَمَّدٍ الشَّامِيَّ، يُحَدِّثُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَذْكُرُ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَا مِنْ أَهْلِ بَيْتٍ يَمُوتُ مِنْهُمْ مَيِّتٌ فَيَتَصَدَّقُونَ عَنْهُ بَعْدَ مَوْتِهِ، إِلَّا أَهْدَاهَا إِلَيْهِ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى طَبَقٍ مِنْ نُورٍ، ثُمَّ يَقِفُ عَلَى شَفِيرِ الْقَبْرِ، فَيَقُولُ: يَا صَاحِبَ الْقَبْرِ الْعَمِيقِ، هَذِهِ هَدِيَّةٌ أَهْدَاهَا إِلَيْكَ أَهْلُكَ فَاقْبَلْهَا، فَيَدْخُلُ عَلَيْهِ، فَيَفُرَحُ بِهَا وَيَسْتَبْشِرُ، وَيَحْزَنُ جِيرَانُهُ الَّذِينَ لَا يُهْدَى إِلَيْهِمْ بِشَيْءٍ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: বাড়ীর কোন ব্যক্তি ইন্তেকাল করেন এরপর তার পক্ষ থেকে কোন সদকা করলে, ইহাকে জিব্রাইল (عليه السلام) নূরের একটি করে টুপি এনে মৃত ব্যক্তি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন: হে গভীর কবরের অধিবাসী! এটি তোমার হাদিয়া! যা তোমার পরিবারের লোকেরা পাঠিয়েছে। তুমি এটা গ্রহণ কর। তারপর মৃত ব্যক্তি তা গ্রহণ করে কবরে প্রবেশ করে এবং এতে সে বড় আনন্দিত হয়। কিন্তু তার কবরের প্রতিবেশীরা বড়ই দু:খিত হয়, যাদের পরিবারের লোকেরা তাদের জন্য কোন হাদিয়া প্রেরণ করেনি।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৬৫০৪
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
দেখুন! ঈসালে সওয়াব তথা সওয়াব রেছানীর পক্ষে ইহা এই হাদিস কত সুন্দর দলিল। ঈসালে সওয়াব করলে মৃত ব্যক্তির কতইনা উপকৃত ও আনন্দিত হয়!
❏ মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানী করলে ইহার সওয়ার মৃতের আমল নামায় যোগ হবে। এই মর্মে রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে হাদিস বর্ণিত রয়েছে। যেমনঃ
❍ একটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ حَنَشٍ، قَالَ: رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ
-“হযরত খানাশ (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় হযরত আলী (رضي الله عنه) কে দু’টি কবস কোরবানী করতে দেখেছি। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে তিঁনার জন্য কোরবানী করার অছিয়াত করেছেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ২৭৯০
・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৯১৮৮
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৪৬২
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৪৬২ নং হাদিস
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ:
𓈃 এই হাদিসের রাবী حنش ‘খানাশ’ যার সম্পূর্ণ নাম حنش بن المعتمر ‘খানাশ ইবনে মুতামির’। তিনি একজন তাবেঈ ছিলেন। ইমামদের কেউ কেউ তার উপর নির্ভর না করলেও ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৫৫৬)
𓈃 হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেছেন: وقوّاه بعضهم. -“অনেকে তাকে শক্তিশালী বলেছেন।” (ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা, রাবী নং ২১১৯)
𓈃 ইমাম ইজলী (رحمة الله) তাকেثِقَة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম ইজলী: কিতাবুস সিক্বাত, রাবী নং ৩৭৩)
𓈃 ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) বলেন: هو عندي صالح. -“সে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম আবু হাতিম: জারহু ওয়া তাদিল, রাবী নং ১২৯৭)
𓈃 ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ ابْنُ عدي وغيره: لا بَأْسَ بِهِ. -“ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) ও অন্যান্য ইমামগণ বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২১)
𓈃 অতএব, এই রাবীর বর্ণিত হাদিস হাছান পর্যায়ের হবে। এই হাদিসের আরেকজন রাবী أَبُو الْحَسْنَاءِ ‘আবুল হাছনা’ রয়েছে। যার সম্পূর্ণ নাম হল الْحَسَن بن الحكم النخعي، أَبُو الْحَسَنِ الكوفي. ‘হাছান ইবনে হাকাম নাখয়ী আবুল হাছান কূফী’। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।
(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১২১৮)
𓈃 ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) বলেছেন: صالح الْحَدِيث -“সে ছালেহুল হাদিস বা হাদিস বর্ণনায় গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১২১৮)
𓈃 ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ ও ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله) সকলেই তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
𓈃 ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (আবুল মাআতী নূরী: মওছুয়াতু আকওয়ালী ইমামু আহমদ বিন হাম্বল, রাবী নং ৫১৪ ইমাম ইবনে শাহিন: তারিখু আসমা ওয়াস সিফাত, রাবী নং ১৯৫)
𓈃 অতএব, আবুল হাছনা মাজহুল রাবী নয় বরং বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী। আফসোস! তুহফাতুল আহওয়াজীর লেখক আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলে দিলেন, قُلْتُ وَأَبُو الْحَسْنَاءِ شَيْخُ عَبْدِ اللَّهِ مَجْهُولٌ
-“আমি (মুবারকপুরী) বলি: আব্দুল্লাহ এর শায়েখ ‘আবুল হাছনা মাজহুল।” (আবুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৫ম খন্ড, ৬৫ পৃ: ১৪৯৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) কতবড় মিথ্যাচারিতা! (নাউজুবিল্লাহ)
𓈃 এই হাদিসের আরেকজন রাবী রয়েছে। যার নাম (شَرِيكُ) শারিক, তিনার সম্পূর্ণ নাম হল,
أَبُو عَبْدِ اللَّهِ شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ النَّخَعِيُّ الْكُوفِيُّ
(আবু আব্দিল্লাহ শারিক ইবনে আব্দিল্লাহ নাখয়ী কূফী) সম্পর্কে লা-মাজহাবীরা অযোক্তিক সমালোচনা করার অপচেস্টা করেছে। অথচ ইমামগণের কাছে সে একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী।
𓈃 যেমন ইমামগণের বক্তব্য গুলো লক্ষ্য করুন:-
وَقَالَ النَّسَائِيُّ: لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ. -
“ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেনে: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১২৯)
𓈃 ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন,
قُلْتُ: اسْتَشْهَدَ بِهِ الْبُخَارِيُّ، وَخَرَّجَ لَهُ مُسْلِمٌ مُتَابَعَةً، وَاحْتَجَّ بِهِ النسائي وغيره.
-“আমি (যাহাবী) বলি: ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) ও অন্যান্যরা তার উপর নির্ভর করেছেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১২৯)
قال أحمد بن صالح العجلي وهو: صدوق ثقة -
𓈃 “ইমাম আহমদ ইবনে ছালেহ ইজলী (رحمة الله) বলেন: সে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وقال أبو إسحاق الحربي في تاريخه: كان ثقة. -“ইমাম আবু 𓈃 ইসহাক্ব হারাবী (رحمة الله) তার ‘তারিখে’ বলেন: সে বিশ্বস্ত।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وقال الحاكم في تاريخ بلده: وشريك أحد أركان الفقه والحديث،
𓈃 -“ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার ‘তারিখে বালদাহ’ গ্রন্থে বলেছেন: শারিক হাদিস ও ফিকাহ্ শাস্ত্রে খুটি।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وذكره ابن شاهين في الثقات. -
𓈃 “ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وفي كتاب المنتجالي: كان صدوقا ثبتا صحيحا -
𓈃 “কিতাবুল মুন্তাজালি এর মধ্যে রয়েছে: সে সত্যবাদী, প্রমাণিত ও বিশুদ্ধ।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وَقَال يزيد بْن الهيثم البادا: سمعت يحيى بْن مَعِين يَقُول: شَرِيك ثقة،
𓈃 -“ইয়াজিদ ইবনে হায়ছাম বাদা বলেন: আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি: শারিক বিশ্বস্ত।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৭৩৬)
লক্ষ্য করুন, এতজন ইমাম বর্ণনাকারী ‘শারিক’ সম্পর্কে বিশ্বস্ত, সত্যবাদী বলার পরেও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তার ‘তুহফাতুল আহওয়াজী’ গ্রন্থে বলেছেন শুধুমাত্র ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন! বড়ই আশ্চর্যজনক!! এতজন ইমামের কথা তিনি স্বীকারই করলেন না!! লা-মাজহাবীরা এভাবেই মিথ্যাচারিতা করে থাকে ও সত্যকে গোপন করে।
অতএব, এই হাদিস ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য। এই হাদিস সাক্ষ্য দিচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) অছিয়াত করেছেন তাঁর জন্য কোরবানী করার জন্য। তাই এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরবানী অন্য ব্যক্তির পক্ষ থেকেও করা যায়। সুতরাং মৃত ব্যক্তির নামে বা পক্ষে কোরবানী করলে ইহার দ্বারা মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছায় ও মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয়। এ ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম দলিল হচ্ছে:
❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ) কোরবানীর সময় একটি ছাগল সামনে রেখে বলে ছিলেন:
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي رُبَيْحُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحَّى بِكَبْشٍ أَقْرَنَ، وَقَالَ: هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي
-“হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দুইটি লম্বা শিং ওয়ালা বকরা কোরবানী করেছেন। কোরবানীর সময় বলেছেন:
اللَّهُمَّ هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ من أمتِي
-“হে আল্লাহ! ইহা আমার ও আমার ঐ সকল উম্মতের পক্ষে যারা কুরবানী করেনি।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১১০৫১
・ইমাম তাহাবী: শরহে মাআনীল আছার, হাদিস নং ৬২৩০
𓈃 ইহার সনদ ছহীহ্। হাদিসটি ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) প্রমূখ হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের সনদটি এভাবে:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ يَعْنِي الْإِسْكَنْدَرَانِيَّ، عَنْ عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ:
-“কুতাইবাহ ইবনে সাঈদ হাদিস বর্ণনা করেছেন ইয়াকুব ইস্কানদারানী থেকে, তিনি আমর থেকে, তিনি মুত্তালিব থেকে, তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে। তিনি বলেছেন:...।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৪৮৩৭
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ২৮১০
・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১৫২১
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ১৯১৮৩
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৩২৩৫।
(সনদ যায়্যেদ বা অতিউত্তম।)
দেখুন! আল্লাহর নবী (ﷺ) উম্মতের পক্ষ থেকে ছাগল কোরবানী করেছেন অর্থাৎ, এই ছাগল কোরবানীর সওয়াব স্বীয় উম্মতের আমল নামায় রেছানীর মাধ্যমে যোগ হবে। এই হাদিস সওয়াব রেছানীর অন্যতম দলিল।
❏ মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্ব সম্পাদন করা
মৃত ব্যক্তির জন্য হজ্ব আদায় করেও ইহার সওয়ার মৃত ব্যক্তি পাবে। এ মর্মে একাধিক ছহীহ্ হাদিসে বর্ণিত আছে।
❍ যেমন লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، أنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ، يُحَدِّثُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَتَى رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنَّ أُخْتِي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ، وَإِنَّهَا مَاتَتْ يَعْنِي وَلَمْ تَحُجَّ قَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ، أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟ قَالَ: نَعَمْ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন: আমার এক বোন মান্নত করে ছিল হজ্ব আদায় করার, কিন্তু সে মারা গেছে। প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: সে যদি ঋণগ্রস্থ থাকত তাহলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সে বলল: হ্যাঁ।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬৬৯৯
・মুসনাদে ইবনে জা’দ, ১৭১০
・ইমাম তাবারানী: মু’জামুল কবীর, হাদিস নং ১১৬০১
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩২৯৫
・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১৫৪৪
・মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৫২৩০
・ইমাম তাহাবী: শরহে মুশকিলুল আছার, হাদিস নং ২১৪৭
・ইমাম তাহাবী: শরহে মাআনীল আছার, হাদিস নং ৪৮১৯
・ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ, হাদিস নং ১৮৫৫
・মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ২৪৪৩
・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, ১৫৮৭১
・তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৭ পৃ:
এই হাদিসটিও ঈসালে সওয়াবের কথা প্রমাণ করে। কারণ মৃত বোনের পক্ষে মান্নতকৃত হজ্ব আদায় করে ইহার সওয়াব তার বোনের রুহে পৌছানো ঋণ পরিশোধের ন্যায় এবং ইহা রাসূলে করিম (ﷺ) কর্তৃক অনুমোদিত।
❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا الْعَبَّاسُ بْنُ الْفَضْلِ الْأَسْفَاطِيُّ قَالَ: نا هُرَيْمُ بْنُ عُثْمَانَ الرَّاسِبِيُّ قَالَ: نا سُوَيْدٌ أَبُو حَاتِمٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوسَى بْنِ سَلَمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ امْرَأَةً جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَحُجُّ عَنْ أُمِّي، فَقَدْ مَاتَتْ؟ قَالَ: أَرَأَيْتِ إِنْ كَانَ عَلَيْهَا دَيْنٌ فَقَضَيْتِيهِ، أَلَيْسَ قَدْ كَانَ مَقْبُولًا مِنْكِ؟ قَالَتْ: بَلَى فَأَمَرَهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا
-“হযরত উকবা ইবনে আমের (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একবার একজন মহিলা রাসূল (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার মা ইন্তিকাল করেছেন, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারি? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: তোমার মায়ের যদি ঋণের বোঝা থাকত আর ইহা তুমি আদায় করলে কি আদায় হতনা? সে বলল: হ্যাঁ। এরপর রাসূল (ﷺ) তাকে হজ্ব পালন করার নির্দেশ দিলেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম তাবারানী: মু’জামুল আওছাত, হাদিস নং ৪২১৯
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৪৪
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে ছাগীর, হাদিস নং ১৩৭৫
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু কুবরা, হাদিস নং ৮২২৮
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
𓈃 এই সনদে ‘সুয়াইদ আবু হাতিম’ নামক রাবী আছে যার মূল নাম
سويد بن حجير بن بيان الباهلي (সুয়াইদ ইবনে হুজাইর ইবনে বায়ান বাহেলী)। লা-মাজহাবীরা তার ব্যাপারে সমালোচনার চেস্টা করে। অথচ তার ব্যাপারে ইমামগণের অভিমত লক্ষ্য করুন:-
قال أبو طالب عن أحمد من الثقات وقال ابن المديني وأبو داود والنسائي ثقة وقال أبو حاتم صالح وذكره ابن حبان في الثقات قلت وقال العجلي بصري تابعي ثقة وقال أبو بكر البزار في السنن له ليس به بأس
-“আবু তালেব ইমাম আহমদ (رحمة الله) থেকে বলেন: সে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত। ইমাম আলী ইবনে মাদানী, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসাঈ বলেছেন: সে বিশ্বস্ত। ইমাম আবু হাতেম বলেন: সে গ্রহণযোগ্য। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ইমাম ইজলী বলেন: সে তাবেঈ বিশ্বস্ত। ইমাম আবু বকর বাজ্জার তার ‘সুনানে’ বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৪৭৯)
ذكره ابن خلفون في الثقات وخرج أبو عوانة حديثه في صحيحه، وكذلك الحاكم النيسابوري
𓈃 -“ইবনে খালিফুন তাকে বিশ্বস্তদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু আওয়ানাহ তার ছহীহ্ গ্রন্থে তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ ইমাম হাকেম (رحمة الله) ছহীহ্ রূপে বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২২৯২)
অতএব, এই হাদিস ছহীহ্। দেখুন! মৃত মায়ের অছিয়তকৃত হজ্ব আদায় করে ইহার সওয়ার মায়ের রুহে বকশিয়ে দেওয়া মায়ের ঋণ আদায়ের তুল্য (সুবহানাল্লাহ)।
❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، نا أَبُو عُثْمَانَ عَمْرُو بْنُ عَبْدِ اللهِ الْبَصْرِيُّ، نا أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، أنا أَحْمَدُ بْنُ يَزِيدَ بْنِ دِينَارٍ، بِالسُّقْيَا أَبُو الْعَوَّامِ، نا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ يَعْنِي الْحَارِثِيَّ، عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ السَّدُوسِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ عَنْ وَالِدَيْهِ بَعْدَ وَفَاتِهِمَا كُتِبَ لَهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ، وَكَانَ لِلْمَحْجُوجِ عَنْهُمَا أَجْرُ حَجَّةٍ تَامَّةٍ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْقَصَ مِنْ أُجُورِهِمَا شَيْئٌ
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পরে তাদের পক্ষ থেকে হজ্ব পালন করে, আল্লাহ তা’লা তাদের জন্য দোজখ থেকে মুক্তির সনদ লিপিবদ্ধ করেন এবং তাদের জন্য পূর্ণ হজ্বের সওয়াব দান করেন অথচ হজ্ব পালনকারীর সওয়াব থেকে একটুও সওয়াব কম করা হয়না।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ৭৫৩৪
・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ১২৩৩৯
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
❍ সামান্য ব্যবধানে তাবারানী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
দেখুন! কোন আমল করে স্বীয় পিতা-মাতা বা মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দিলে এতে মৃত ব্যক্তিও সওয়াব পাবে এবং আমল কারীরও কোন সওয়াব কমতি হয়না।
❏ মৃতদের জন্য ফেরেস্তাদের তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে উপকার লাভ
মৃতদের জন্য ফেরেস্তাদের তাসবীহ পাঠ করে ইহার সওয়াব রেছানী করলে ইহার দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা কবরে উপকৃত হয়।
❍ যেমন হাদিস শরীফ বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْغِطْرِيفِيُّ ثنا الْقَاسِمُ بْنُ يَحْيَى بْنِ نَصْرٍ، ح وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ مَعْدَانَ، قَالَا: ثنا سَعْدَانُ بْنُ نَصْرٍ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ يَحْيَى، ثنا مِسْعَرٌ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا قَبَضَ اللهُ رَوْحَ عَبْدِهِ الْمُؤْمِنِ صَعِدَ مَلَكَاهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَا: يَا رَبَّنَا وَكَّلْتَنَا بعَبْدِكَ الْمُؤْمِنِ نَكْتُبُ عَمَلَهُ وَقَدْ قَبْضَتَهُ إِلَيْكَ فَائْذَنْ لَنَا نَسْكُنَ السَّمَاءَ فَقَالَ: سَمَائِي مَمْلُوءَةٌ مِنْ مَلَائِكَتِي يُسَبِّحُونَنِي فَيَقُولَانِ: فَائْذَنْ لَنَا نَسْكُنَ الْأَرْضَ فَيَقُولُ: أَرْضِي مَمْلُوءَةٌ مِنْ خَلْقِي يُسَبِّحُونَنِي وَلَكِنْ قُومَا عَلَى قَبْرِ عَبْدِي فَسَبِّحَانِي وَهَلِّلَانِي وَكَبِّرَانِي إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَاكْتُبَاهُ لِعَبْدِي
“হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তা’লা যখন তাঁর মুমিন বান্দার রুহ কবজ করেন তখন দু’জন ফেরেস্থা ইহা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন এবং আল্লাহ তা’লার নিকট আবেদন করেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে মুমিন বান্দার আমল লিপিবদ্ধ করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। এখন আপনি তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছেন। অতএব আপনি আমাদেরকে পৃথিবীতে বসবাস করার অনুমতি প্রদান করুন। তখন আল্লাহ তা’লা বললেন: পৃথিবীত আমার মাখলুখ দ্বারা পরিপূর্ণ, যারা আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তোমরা দু’জন বরং তার কবরের নিকট অবস্থান কর এবং কিয়ামত পর্যন্ত পাঠ করতে থাক ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’। অত:পর তার সওয়াব আমার ঐ বান্দার আমল নামায় লিখতে থাক।
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খন্ড, ২৫৩ পৃ:
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:
দেখুন! ফেরেস্তাদের আমলের সওয়াব মুমিন বান্দার আমল নামায় যোগ হচ্ছে (সুবহানাল্লাহ)। ফেরেস্তাদের তাসবীহ দ্বারা যদি উপকার লাভ করা সম্ভব হয় তাহলে জিবীতদের তাসবীহ পাঠ দ্বারাও উপকার লাভ সম্ভব। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, স্বয়ং আল্লাহ তা’লা নিজেই ঈসালে সওয়াবের পক্ষে।
❏ উত্তম কাজ আবিস্কারের মাধ্যমে কবর থেকে সওয়াব লাভ করা
কোন উত্তম কাজ আবিস্কার করে গেলে ঐ উত্তম কাজ পরবর্তীতে যতজন করবে ততজনের আমলের সমান নেকী আল্লাহ পাক আবিস্কারক মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছে দিবেন। (সুবহানাল্লাহ)
❍ নিচে এ ব্যাপারে ছহীহ্ রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنِ الْمُنْذِرِ بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، كَانَ لَهُ أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ،
-“হযরত মুনজির ইবনে জরীর (رضي الله عنه) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন ভাল রীতি উদ্ভাবন করে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান যারা তার পরে ইহা আমল করবেন তাদের থেকে।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ১০১৭-৬৯ ও ১০১৭-১৫
・হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, ৩য় জি: ৫৮৪ পৃ:
・সুনানু ইবনে মাজাহ, ১৮ পৃ:
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ২৩৭২ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ:
・মেসকাত ইলিম অধ্যায়, হাদিস নং ২১০
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮২ পৃ:
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৯১৫৬
・মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ২৯৬৩
・নাসাঈ শরীফ, হাদিস নং ২৫৫৪
・ইমাম তাহাবী: শরহে মুশকিলুল আছার, ২৪৩
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ৮৯৪৬
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২৩৭২
・ইমাম বাইহাক্বী: এ’তেকাদ, ১ম খন্ড, ২৩০ পৃ:
・ইমাম বাগভী: শরহে সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬০ পৃ:
・মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:
দেখুন! উত্তম রীতি উদ্ভাবণ কারীর আমল নামায় অন্যান্য আমলকারীদের সওয়াবের একটি অংশ কেয়ামত পর্যন্ত জমা হতেই থাকবে। এই হাদিস ঈসালে সওয়াবের অন্যতম দলিল।
❏ জিবীত বা মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজ আদায় করা
জিবীত ব্যক্তির নামাজের দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা কিংবা জিবীত ব্যক্তিরাও উপকৃত হয়। সওয়াব রেছানী করলে ইহার সওয়াব মৃতের আমল নামা যোগ হবে। এ ব্যাপারেও হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে। যেমনঃ
❍ নিচে লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ صَالِحِ بْنِ دِرْهَمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، يَقُولُ:، انْطَلَقْنَا حَاجِّينَ، فَإِذَا رَجُلٌ، فَقَالَ لَنَا: إِلَى جَنْبِكُمْ قَرْيَةٌ يُقَالُ لَهَا: الْأُبُلَّةُ؟ قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: مَنْ يَضْمَنُ لِي مِنْكُمْ أَنْ يُصَلِّيَ لِي فِي مَسْجِدِ الْعَشَّارِ رَكْعَتَيْنِ، أَوْ أَرْبَعًا، وَيَقُولَ هَذِهِ لِأَبِي هُرَيْرَةَ
“ইব্রাহিম ইবনে সালেহ ইবনে দিরহাম (رحمة الله) বলেন, একবার আমরা কতিপয় লোক হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি (আবু হুরায়রা (রা.) এর সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাদেরকে বললেন: তোমাদের পাশে ‘উবুল্লাহ’ নামে কোন জনপদ আছে কি? আমরা বললাম: হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন: তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে, আমার জন্য ‘আশয়ার’ নামক মসজিদে ২ রাকাত কিংবা ৪ রাকাত নামাজ পড়বে ও বলবে: ইহার সওয়াব আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর জন্য।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৪৩০৮
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৪৩৪
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ৬৯ পৃ:
・বজলুল মাজহুদ ফি হল্লে আবী দাউদ, ১৭তম জি: ১১৩ পৃ:
𓈃 এই হাদিসের সনদে إِبْرَاهِيمُ بْنُ صَالِحِ بْنِ دِرْهَمٍ ‘ইব্রাহিম ইবনে ছালেহ্ ইবনে দিরহাম’ নামক রাবী রয়েছে, তার ব্যাপারে দারে কুতনী ও উকাইলী সমালোচনা করলেও ইমাম ইবনে হিব্বান الثِّقَات বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। (ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ২২৮)
অতএব, এই হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমাণিত হয়, সবচেয়ে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) স্বীয় আমল নামায় নামাজের সওয়াব বকশানোর জন্য অন্যান্য তাবেঈগণকে অনুরুধ করছেন। সুতরাং বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নামাজ আদায় করে ইহার সওয়াব অন্য মুসলমানের আমল নামায় বা রুহে রেছানী করা বা বকশিয়ে দেওয়া সাহাবীগণের সুন্নাত।
𓈃 এই হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত দেওবন্দী আলিম, আল্লামা খলিল আহমদ ছাহারানপুরী বলেন:
وفي الحديث دلالة ان الطاعات البدنية توصل الى الغير اجرها
-“শারিরিক আমল করে ইহার সওয়াব অন্যের রুহে বকশানোর দলিল হচ্ছে এই হাদিস।” (খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ ফি হল্লে আবী দাউদ, ১৭তম জি: ১১৩ পৃ:)
❏ মৃতদের জন্য নামাজ, রোজা ও সদকা করা
মৃত ব্যক্তিদের জন্য নামাজ, রোজা ও সদকা আদায় করলে ইহার সওয়াব মৃতদের রুহে বকশিয়ে দিলে ইহার দ্বারা মৃতরা উপকৃত হবে।
❍ এ বিষয়ে একাধিক ছহীহ্ হাদিস বর্ণিত আছে। যেমন লক্ষ্য করুন,
أَخْرَجَهُ الدَّارَقُطْنِيُّ مِنْ حَدِيثِ جَابِرٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إنَّهُ كَانَ لِي أَبَوَانِ أَبَرُّهُمَا فِي حَالِ حَيَاتِهِمَا فَكَيْفَ لِي بِبِرِّهِمَا بَعْدَ مَوْتِهِمَا فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنَ الْبِرِّ بَعْدَ الْبِرِّ أَنْ تُصَلِّيَ لِأَبَوَيْكَ مَعَ صَلَاتِكَ، وَتَصُومَ لَهُمَا مَعَ صَوْمِكَ
-“ইমাম দারে কুতনী হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর হাদিস বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় এক ব্যক্তি নবী পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতাম, কিন্তু তাদের ইন্তেকালের পরে কিভাবে তাদের প্রতি সৎ-ব্যবহার করব? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলছেন: নিশ্চয় মৃত্যুর পরে সৎ-ব্যবহার হচ্ছে তোমার নামাজের সাথে তাদের জন্য নামাজ পড়বে, তোমার রোজার সাথে তাদের জন্য রোজা রাখবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুবুলুস সালাম, ২য় খন্ড, ৫৩১ পৃ:
・ছহীহ্ মুসলীম, ১ম খন্ড, ১৬ পৃ: ‘بَابُ في أَنَّ الْإِسْنَادَ مِنَ الدِّينِ’ অনুচ্ছেদ ৩৪ নং হাদিসে
・তুহফাতুল আহওয়াজী, ৬৭০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ৪র্থ খন্ড, ১১৩ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ২০৩৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ২১৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৬৭০ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ:
❍ হাদিসটি মুরছাল রুপে এভাবে বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، ثنا ابْنُ رَوَّادٍ، ثنا شَرِيكٌ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ دِينَارٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ الْبِرِّ بَعْدَ الْبِرِّ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَيْهِمَا مَعَ صَلَاتِكَ، وَأَنْ تَصُومَ عَنْهُمَا مَعَ صِيَامِكَ، وَأَنْ تَصَدَّقَ عَنْهُمَا مَعَ صَدَقَتِكَ
-“প্রসিদ্ধ বিশ্বস্ত তাবেঈ হাজ্জায ইবনে দিনার (رحمة الله) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় পিতা-মাতার সাথে সৎ-ব্যবহার হচ্ছে তোমার নামাজের সাথে তাদের জন্য নামাজ পড়বে, তোমার রোজার সাথে তাদের জন্য রোজা রাখবে, যখন সদকা করবে তখন তাদের জন্য তোমার সদকার সাথে সদকা করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১২০৮৪
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজ পড়া ও রোজা আদায় করে ইহার সওয়াব তাদের রুহে বকশিয়ে দেওয়া যায়। ইহা শুধু জায়েয’ই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) এর পবিত্র নির্দেশ।
❏ মৃতদের জন্য দোয়া, সদকায়ে জারিয়া ও উপকারী ইলিম
মৃতদের জন্য সদকায়ে জারিয়া, নেক সন্তানের দোয়া ও উপকারী ইলিম তথা যে ইলিম দ্বারা লোকেরা উপকৃত হয়েছে কিংবা এলমে বাতেন, এগুলোর দ্বারাও মৃত ব্যক্তিরা উপকার লাভ করেন। যেমন নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ، أَخْبَرَنِي الْعَلَاءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যখন কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৩ টি আমল ব্যতীত: ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলিম যা দ্বারা লোকেরা উপকার লাভ করে, ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ৪৩১০
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৮৪৪
・সুনানে দারেমী, হাদিস নং ৫৭৮
・মেসকাত শরীফ, হাদিস ২০৩
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:
ইমাম আহমদ (رحمة الله) হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, সাদকায়ে জারিয়া ও ইলিম যদিও মানুষের চেষ্টার ফসল, কিন্তু মৃত ব্যক্তির জন্য তার সন্তানের দোয়া তার নিজস্ব আমল নয়। অথচ মৃতের পক্ষে যে তার দোয়া উপকার হয় তা এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
❍ এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে আরো উল্লেখ আছে,
أَخْبَرَنَا أَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْأُشْنَانِيُّ، أنا أَبُو عَلِيٍّ الْحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحَافِظُ، نا الْفَضْلُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ سُلَيْمَانَ الْأَنْطَاكِيُّ، نا مُحَمَّدُ بْنُ جَابِرِ بْنِ أَبِي عَيَّاشٍ الْمِصِّيصِيُّ، نا عَبْدُ اللهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، نا يَعْقُوبُ بْنُ الْقَعْقَاعِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا الْمَيِّتُ فِي الْقَبْرِ إِلَّا كَالْغَرِيقِ الْمُتَغَوِّثِ، يَنْتَظِرُ دَعْوَةً تَلْحَقُهُ مِنْ أَبٍ أَوْ أُمٍّ أَوْ أَخٍ أَوْ صَدِيقٍ، فَإِذَا لَحِقَتْهُ كَانَتْ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيُدْخِلُ عَلَى أَهْلِ الْقُبُورِ مِنْ دُعَاءِ أَهْلِ الْأَرْضِ أَمْثَالَ الْجِبَالِ، وَإِنَّ هَدِيَّةَ الْأَحْيَاءِ إِلَى الْأَمْوَاتِ الِاسْتِغْفَارُ لَهُمْ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: কবরে মৃত ব্যক্তির অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায়। সে একান্ত প্রতিক্ষায় থাকে যে, পিতা-মাতা, ভাই অথবা কোন বন্ধুর দোয়া তার কাছে পৌছে। আর যখন তার নিকট কোন দোয়া পৌছে, তখন ইহা তার নিকট দুনিয়া ও ইহার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছুর চেয়ে উৎকৃষ্ট হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’লা কবরের বাসিন্দাদেরকে তাদের জীবিত আত্বীয়-স্বজনদের থেকে পেশকৃত সওয়াবকে পাহাড় সমপরিমান আকার দান করেন। মৃতদের জন্য জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া বা তোহফা হচ্ছে ‘ক্ষমা প্রার্থনা করা’।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬৮৮ পৃ: হাদিস নং ৭৫২৭
・দায়লামী শরীফ মাজহারী শরীফ, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তিদের জন্য আমরা কোন নেক আমল করে তাদের রুহে সওয়াব রেছানী করলে তারা কত খুশি হয় ও তারা কত উপকৃত হয়। এই দোয়া ও সদকার দ্বারা কবরে থাকার পরেও তাদের ক্ষমা প্রাপ্তিলাভ হবে এবং গোনাহ মুক্ত হয়ে কেয়ামতের মাঠে উঠবে (সুবহানাল্লাহ)।
❍ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ طَاهِرٍ قَالَ: نا جَدِّي حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى قَالَ: نا حَمَّادُ بْنُ زِيَادٍ الْبَصْرِيُّ قَالَ: نا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، وَكَانَ جَارًا لَنَا قَالَ: سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أُمَّتِي أُمَّةٌ مَرْحُومَةٌ، مُتَابٌ عَلَيْهَا، تَدْخُلُ قُبُورَهَا بِذُنُوبِهَا، وَتَخْرُجُ مِنْ قُبُورِهَا لَا ذُنُوبَ عَلَيْهَا،
“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: আমার উম্মত অনুগ্রহপ্রাপ্ত উম্মত, তারা গুনাহ সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করবে কিন্তু গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে কবর থেকে উঠবে। (মুমিনগণ তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে তারা পবিত্র হয়ে কবর থেকে উঠবে।)
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ১৮৭৯
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:
・মুসনাদু ফিরদৌস, হাদিস নং ১৬৬৩ হযরত মুয়াজ রা: থেকে
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর বাসীর জন্য সওয়াব রেছানী করে দোয়া করার মাধ্যমে তারা প্রচুর উপকার লাভ করবে। এমনকি তারা গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করবে। হাশরের ময়দানে তারা গোনাহ থেকে পবিত্র হয়ে উঠবে। হাদিসটি সনদগতভাবে সমালোচিত হলেও অন্যান্য হাদিসের মাআনা দ্বারা ইহার সমর্থন পাওয়া যায় বিধায় এর মাআনা গ্রহণযোগ্য।
❏ মৃতদের জন্য পানাহার করানো
মৃতদের জন্য যদি জিবীতরা মানুষকে পানাহারের ব্যবস্থা করেন তাহলে কবরে মৃতরা ইহার দ্বারা উপকার লাভ করেন।
❍ এ বিষয়ে নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ، فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟، قَالَ: الْمَاءُ، قَالَ: فَحَفَرَ بِئْرًا، وَقَالَ: هَذِهِ لِأُمِّ سَعْدٍ
“হযরত সাঈদ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সাঈদের মাতা ইন্তেকাল করেছেন, তার জন্যে কোন ধরণের সদকা উত্তম হবে? আল্লাহর নবী (ﷺ) বললেন: ‘পানি’। তারপর ‘বাতরা’ নামক কূপ খনন করলেন ও বললেন: ইহা সা’দের মায়ের জন্য সদকা করা হল।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ৩৬৬৪-৬৬
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ১৬৮১
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৯১২
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৩ পৃ:
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২২৪৫৯ ও ২৩৮৪৫
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
・তাফছিরে কুরতবী, ১৭তম জি: ৯০ পৃ:
𓈃 তাবারানী ছহীহ্ সূত্রে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর আরেকটি সনদ আছে:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَضْرَمِيُّ، ثنا أَبُو كُرَيْبٍ، ثنا وَكِيعٌ، عَنْ هِشَامٍ الدَّسْتُوَائِيِّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ
-“মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ হাদ্বরামী হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু কুরাইব থেকে, তিনি ওয়াকী থেকে, তিনি হিশাম দাসতুয়ায়ী থেকে, তিনি কাতাদা থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে মুসাইব থেকে, তিনি সাদ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) থেকে।”
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৫৩৭৯)
𓈃 ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর সনদটি এভাবে,
حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ، قَالَ: سَمِعْتُ شُعْبَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ الْحَسَنَ، يُحَدِّثُ عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ:
-“হাজ্জায (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন আমি শুবা (رحمة الله) থেকে শুনেছি- তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে- তিনি বলেন আমি হাছান বছরী (رحمة الله) থেকে শুনেছি- তিনি হযরত সা’দ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন-...।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৩৮৪৫)
𓈃 হযরত সা’দ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) থেকে তিনটি সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত। সুনানে আবু দাউদের তাহকিকে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটিকে حسن ‘হাছান’ বলেছেন। সেখানে তিনি বলেন,
قلت: وهذا إسناد رجاله ثقات رجال الشيخين؛ غير الرجل الذي لم يسم،
-“আমি (আলবানী) বলি: এই সনদের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত ও বুখারী-মুসলীমের বর্ণনাকারী, শুধুমাত্র নাম উল্লেখ বিহীন একজন রাবী ব্যতীত।” (ছহীহ্ আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪৭৬)
𓈃 সুনানু আবী দাউদের সনদে তাবেঈ এর নাম উল্লেখ না থাকলেও মুসনাদু আহমদ ও তাবারানীর সনদে তাবেঈ এর নাম ‘হাছান বছরী ও সাঈদ ইবনে মুছাইব (رحمة الله) এর নাম রয়েছে। অতএব, হাদিসটি বুখারী-মুসলীমের মতই ছহীহ্।
অতএব, এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য যেকোন সদকা করে ইহার সওয়াব তার আত্বার মাগফিরাতের জন্য দান করা রাসূলে পাক (ﷺ) কর্তৃক অনুমোদিত। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, মৃত ব্যক্তির আত্মার মাগফেরাতের জন্য যদি পানি সদকা করলে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয়, তাহলে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সদকা করলে নিশ্চয় তারা আরও বেশী উপকৃত হবেন।
এমনকি স্বয়ং রাসূলে করিম (ﷺ) মৃতের বাড়িতে গিয়েছেন ও খাবার পরিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (ﷺ) সমর্থন করেছেন। যেমনঃ
❍ ছহীহ্ হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى
“জনৈক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ) কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুরছিল তাদের বলেন: পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখোন থেকে ফিরার পর জনৈক মহিলার আহবানকারী নবী পাক (ﷺ) কে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে গেলেন ও তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী করিম (ﷺ) খেতে শুরু করলে অন্যরাও খেতে শুরু করেন। তখন আমাদের মুরুব্বিরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূল (ﷺ) এক লোকমা মুখে দিয়ে তা শুধু চিবাচ্ছেন কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ গোস্ত এমন এক বকরীর যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য বাকী নামক বাজারে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয় মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, এ গোস্ত বন্দিদের খাইয়ে দাও।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩৩৩২ بَابٌ فِي اجْتِنَابِ الشُّبُهَاتِ, ই: ফা: হাদিস নং ৩২৯৯
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮২৫ بَابُ كَرَاهِيَةِ مُبَايَعَةِ مَنْ أَكْثَرُ مَالِهِ مِنَ الرِّبَا أَوْ ثَمَنِ الْمُحَرَّمِ
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৯৪২
・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ২৪৩৪
・ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ:
・ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবীর, ২য় খন্ড, ২৯৬ পৃ:
𓈃 এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে ইমাম যায়লায়ী (رحمة الله) বলেছেন,
وَهَذَا سَنَدُ الصَّحِيحِ، -“এই সনদ ছহীহ্।” (ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ:)
𓈃 হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) এই সনদ সম্পর্কে বলেন, إسْنَادُهُ صَحِيحٌ -“ইহার সনদ ছহীহ্।” (ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবীর, ২য় খন্ড, ২৯৬ পৃ:)
𓈃 হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনু মুলাক্কিন (رحمة الله) বলেছেন, إسْنَادُهُ صَحِيحٌ
-“ইহার সনদ ছহীহ্।” (ইবনু মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৫ম খন্ড, ২৯৬ পৃ:)
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন,
وهذا سند صحيح كما قال الحافظ فى التلخيص -
“এই সনদ ছহীহ্ যেমনটি হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার ‘তালখিছ’ গ্রন্থে বলেছেন।” (আলবানী: ইরইয়াউল গালিল, ৩য় খন্ড, ১৯৬ পৃ:)
এই হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমাণিত হয়, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিজেই মৃত ব্যক্তির আহল-বর্গের নিকট থেকে খাবার গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবীরাসহ লোকেরা ইহা খাবার গ্রহণ করেছেন এতে রাসূলে পাক (ﷺ) নিষেধ করেননি। এই হাদিস দ্বারা আরো প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফতের দাওয়াত গ্রহণ করা রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাত এবং ঐ যিয়াফতে খাবার গ্রহণ করাও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত। সুতরাং ‘ফেলে রাসূল’ তথা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর পবিত্র কর্ম দ্বারাই যিয়াফত গ্রহণ করা প্রমাণিত হল। এ বিষয়ে আরেকটি আছার/হাদিস উল্লেখ করা যায়।
❍ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ مَالِكٍ، ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ، ثنا أَبِي، ثنا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، ثنا الْأَشْجَعِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، قَالَ: قَالَ طَاوُسٌ: إِنَّ الْمَوْتَى يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ سَبْعًا، فَكَانُوا يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يُطْعَمَ عَنْهُمْ تِلْكَ الْأَيَّامِ
“হরত সুফিয়ান ছাওরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত তাঊস (رحمة الله) বলেছেন, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তি দাফনের পর ৭দিন মসিবতে থাকেন। সাহাবায়ে কেরাম এই ৭দিন মৃতদের জন্য লোকদের খাওয়ানো উত্তম মনে করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৪র্থ খন্ড, ১১ পৃ:
・ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২১৬ পৃ:
・ইমাম ছিয়তী: আদ দিয়াযু আলা ছহীহ্ মুসলীম, ২য় খন্ড, ৪৯১ পৃ:
・ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৫ম খন্ড, ৩৮ পৃ:
・ইমাম আসকালানী: মাতালিবুল আলিয়া, ৫ম খন্ড, ৩৩০ পৃ: হাদিস নং ৮৩৪
এই রেওয়ায়েতের সনদ ছহীহ্।
𓈃 এই হাদিস উল্লেখ করে হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) বলেছেন,
إِسْنَاده صَحِيح وَله حكم الرّفْع -“ইহার সনদ ছহীহ এবং ইহার হুকুম মারফূ।” (ইমাম ছিয়তী: আদ দিয়াযু আলা ছহীহ্ মুসলীম, ২য় খন্ড, ৪৯১ পৃ:)
𓈃 হযরত তাঊস (رحمة الله) একজন প্রখ্যাত তাবেঈ, যিনি ৫০০ সাহাবীকে দেখেছেন। তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, মৃতদের জন্য খাবার খাওয়ানো সাহাবীগণ পছন্দ করতেন। ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) হাদিসের হুকুম মারফূ বলেছেন।
𓈃 হাফিজুল হাদিস ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) আরো বলেছেন,
وَأَخْرَجَهَا ابْنُ جُرَيْجٍ فِي مُصَنَّفِهِ بِالْإِسْنَادِ إِلَى عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، وَهُوَ أَكْبَرُ مِنْ طَاوُسٍ فِي التَّابِعِينَ، بَلْ قِيلَ: إِنَّهُ صَحَابِيٌّ،
-“ইমাম ইবনু যুরাইজ (رحمة الله) তার মুছান্নাফ গ্রন্থে ‘উবাইদ ইবনু উমাইর’ থেকে ইহা বর্ণনা করেছেন। আর তিনি তাবেঈ তাউস (رحمة الله) থেকেও বড়, বরং কেউ কেউ বলেছেন: সে সাহাবী।” (ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২১৫ পৃ:)
𓈃 ‘উবাইদ ইবনু ইমাইর’ সম্পর্কে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন,
وذكر البخاريّ أنّ عبيد بن عمير رأى النبيّ صلّى اللَّه عليه وآله وسلّم. وقال مسلّم: ولد على عهد النبي صلّى اللَّه عليه وآله وسلّم.
-“ইমাম বুখারী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয় ‘উবাইদ ইবনু উমাইর’ রাসূলে আকরাম (ﷺ) কে দেখেছেন। ইমাম মুসলীম (رحمة الله) বলেছেন, সে নবী করিম (ﷺ) এর যুগেই জন্মগ্রহণ করেছে।” (ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা, রাবী নং ৬২৫৮)
𓈃 ইমাম মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন,
وفي كتاب الصحابة لأبي موسى المديني: يقال رأى النبي صلى الله عليه وسلم وقيل: ولد في زمانه، قاله أبو أحمد الحافظ.
-“ইমাম আবু মূসা মাদিনী (رحمة الله) এর ‘কিতাবুস সাহাবা’ গ্রন্থে রয়েছে, বলা হয় সে রাসূলে পাক (ﷺ) কে দেখেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সে রাসূলে পাক (ﷺ) এর যুগেই জন্মগ্রহণ করেছে। ইমাম আবু আহমদ হাফিজ (رحمة الله) অনররূপ বলেছেন।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ৩৫৩১)
𓈃 ইমাম মিযযী (رحمة الله) বলেছেন,
قال مُسْلِم بْن الْحَجَّاج: ولد فِي زمان النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم. وَقَال غيره: رأى النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ.
-“ইমাম মুসলীম ইবনু হাজ্জায (رحمة الله) বলেছেন, সে রাসূলে পাক (ﷺ) এর জামানায় জন্মগ্রহণ করেছে। ইমাম মুসলীম ব্যতীত অন্যরা বলেছেন, সে রাসূলে পাক (ﷺ) কে দেখেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৭৩০)
সুতরাং ‘উবাইদ ইবনু উমাইর’ সাহাবী হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ আমিরুল মু’মিনীন ফিল হাদিস ইমাম বুখারী (رحمة الله) নিজেই বলেছেন, সে রাসূলে পাক (ﷺ) কে দেখেছেন। অতএব, সাহাবী ও তাবেঈর আমল থেকে প্রমাণিত হল, এরুপ আমল করা মুস্তাহাব-সুন্নাহ। যেমনটা
𓈃 ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) বলেছেন,
وَهُوَ اسْتِحْبَابُ الْإِطْعَامِ عَنِ الْمَوْتَى مُدَّةَ سَبْعَةِ أَيَّامٍ، -“মৃত ব্যক্তির জন্য সাতদিন খাবার পরিবেশন করা মুস্তাহাব।” (ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২২৩ পৃ:)
𓈃 শারিহে বুখারী ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقد روى عن مجاهد: أن الموتى كانوا يفتنون في قبورهم سبعا فكانوا يستحبون أن يطعم عنهم تلك الأيام.
-“নিশ্চয় হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) হতে বর্ণত, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তি দাফনের পর ৭ দিন মসিবতে থাকেন। সাহাবায়ে কেরাম এই ৭ দিন মৃতদের জন্য লোকদের খাওয়ানো উত্তম মনে করতেন।” (ইবনে রজব হাম্বলী: আহওয়ালুল কুবুর, ১ম খন্ড, ১৬ পৃ:)
মৃতদের জন্য খাবার খাওয়ানো সাহাবীগণ পছন্দ করত। অতএব, মৃত ব্যক্তির জন্য ৭ দিন খাবার পরিবেশন করা সুন্নাতে সাহাবা ও মুস্তাহাব।
❏ মৃত ব্যক্তির প্রশংসার দ্বারা উপকার
জানাযার পূর্বে অথবা পরে মৃত ব্যক্তির ভাল গুণ গুলো আলোচনা করা তথা মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা উচিৎ। এতে মৃত ব্যক্তির অনেক উপকার সাধিত হয়।যেমনঃ
❍ ছহীহ্ হাদিসে আছে:
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ قَالَ: أَخْبَرَنَا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مُرَّ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِجَنَازَةٍ، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَجَبَتْ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ) এর কাছ দিয়ে এক জানাযা (লাশ) নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা তাঁর ভাল গুণের প্রশংসা করছিল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন: তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। এরপর তিনি বললেন: তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ বুখারী, ১ম জি: হাদিস নং ২৬৪২
・তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: হাদিস নং ১০৫৮
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (رحمة الله) বলেছেন:
حَدِيثُ أَنَسٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ-
“হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিস হাছান-ছহীহ্।”
❍ এ বিষয়ে হযরত উমর (رضي الله عنه), কাব ইবনে উজরা (رضي الله عنه) ও আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকেও হাদিস বর্ণিত আছে। হযরত উমর (رضي الله عنه) বর্ণিত অপর একটি ছহীহ্ হাদিসে আছে:
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُوسَى، وَهَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ البَزَّازُ، قَالَا: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الطَّيَالِسِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي الفُرَاتِ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِي الأَسْوَدِ الدِّيلِيِّ، قَالَ: قَدِمْتُ المَدِينَةَ فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ، فَمَرُّوا بِجَنَازَةٍ، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ: وَجَبَتْ، فَقُلْتُ لِعُمَرَ وَمَا وَجَبَتْ؟ قَالَ: أَقُولُ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ لَهُ ثَلَاثَةٌ إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ، قَالَ: قُلْنَا: وَاثْنَانِ؟ قَالَ: وَاثْنَانِ، قَالَ: وَلَمْ نَسْأَلْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوَاحِدِ
“আবীল আসওয়াদ দাইলী বলেন, আমি মদিনায় উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) এর কাছে গেলাম, তখন তিনারা এক জানাযার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন ও মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করছিলেন। তখন হযরত উমর (رضي الله عنه) বললেন: তার জন্য জান্নাত আবশ্যক হয়ে গেছে। আমি বললাম কি আবশ্যক হয়েছে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: কোন মুসলীম সম্পর্কে যদি ৩ জনও ভাল সাক্ষ্য দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন: আমরা জিজ্ঞাসা করলাম: যদি দুই জনে সাক্ষ্য দেয়? প্রিয় নবীজি বললেন: দুই জন সাক্ষ্য দিলেও। হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন: আমরা রাসূল (ﷺ) কে একজন সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি।”
তথ্যসূত্রঃ
・তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: হাদিস নং ১০৫৯
・ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১০৯১৯
・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪২৭১০
𓈃 ইমাম আবু ঈসা তিরমিজি (رحمة الله) হাদিসটিকে حَسَنٌ صَحِيحٌ হাছান-ছহীহ্ বলেছেন। (তিরমিজি শরীফ, ১ম জি: হাদিস নং ১০৫৯)
𓈃 নাছিরুদ্দিন আলবানী তার ছহীহ্ জামেউছ ছাগীর ওয়া যিয়াদা গ্রন্থের ৫৭৫৯ নং হাদিসের তাহকিকে ইহাকে صَحِيحٌ ছহীহ্ বলেছেন।
❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ، صَاحِبُ الزِّيَادِيِّ، عَنْ شَيْخٍ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ، قَالَ مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ، يَشْهَدُ لَهُ ثَلَاثَةُ أَبْيَاتٍ مِنْ جِيرَانِهِ الْأَدْنَيْنَ بِخَيْرٍ، إِلَّا قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: قَدْ قَبِلْتُ شَهَادَةَ عِبَادِي عَلَى مَا عَلِمُوا، وَغَفَرْتُ لَهُ مَا أَعْلَمُ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক বলেছেন: যখন কোন মুসলমান মারা যায় এবং ৩ জন লোক তার ভাল হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী দেয় তখন স্বয়ং আল্লাহ বলেন, আমি তাদের সাক্ষী গ্রহণ করি যা তারা আমল করেছে এবং আমি মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেই যা আমি জানি।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৯৮৯
・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৪২৭৪৫
❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ يَعْقُوبَ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ إِسْحَقَ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا مَنْصُورُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أُمِّهِ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَالِكٌ بِسُوءٍ فَقَالَ: لَا تَذْكُرُوا هَلْكَاكُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ
“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী পাক (ﷺ) এর সামনে এক মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে মন্দ মন্তব্য করা হলে তিনি বললেন: তোমরা মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে ভাল মন্তব্য ছাড়া মন্দ মন্তব্য করবে না।”
তথ্যসূত্রঃ
・নাসাঈ শরীফ, ১ম জি: হাদিস নং ১৯৩৫
・ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ২০৭৩
・ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১৩৪০৫
𓈃 ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ (رحمة الله) তদীয় কিতাবে এই হাদিস সম্পর্কে উল্লেখ করেন,
وقال الحافظ العراقي: إسناده جيد.
“হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) বলেছেন: ইহার সনদ অতি-উত্তম।”
(আত তানভীর শারহে জাইেছ ছাগির, ৯৭৪৬)
𓈃 লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী তার ‘ছহীহ্ জামেউছ ছাগীর ওয়া যিয়াদা’ গ্রন্থের ৭২৭১ নং হাদিসের তাহকিকে হাদিসটিকে صَحِيحٌ ছহীহ্ বলেছেন।
❍ এর সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে:
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ قَالَ: حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ أَنَسٍ المَكِّيِّ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكُفُّوا عَنْ مَسَاوِئِهِمْ
“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তোমরা তোমাদের মৃতদের ভাল দিক গুলো আলোচনা করবে এবং মন্দ আলোচনা থেকে দূরে থাকবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানে আবী দাউদ, হাদিসনং ৪৯০০
・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১০১৯
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৬৭৮
𓈃 এই হাদিসের রাবী عِمْرَان بْن أَنَسٍ المَكِّيِّ (ইমরান ইবনে আনাস মক্কী) সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও উকাইলী (رحمة الله) মুনকার বলেছেন, অপরদিকে ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে الثقات বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। দেখুন: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ২১৪।
𓈃 আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছালেহ ছানআনী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটিকে صح ছহীহ্ বলেছেন। (আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৮৯৯)
কেননা একাধিক ছহীহ রেওয়ায়েত দ্বারা এর শাওয়াহিদ বা সমর্থন পাওয়া যায় বিধায় এই রেওয়ায়েত ছহীহ্ লি’গাইরিহী হবে। যেমনঃ
❍ এ বিষয়ে অন্য রেওয়ায়েতে আছে,
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ مَنْصُورِ بْنِ صَفِيَّةَ، عَنْ أُمِّهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: لَا تَذْكُرُوا مَوْتَاكُمْ إِلَّا بِخَيْرِ
-“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, তোমরা তোমাদের মৃতদের ভাল দিক ছাড়া অন্য বিষয়ে আলোচনা করোনা।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১১৯৮৯
・মুছাবীউল আখলাক লিল খারাইতী, হাদিস নং ৯০
・ইমাম তাবারানী: আদ দোয়া, হাদিস নং ২০৬৫ মারফূ রূপে
・মুসনাদে আবী দাউদ ত্বায়ালিছী, হাদিস নং ১৫৯৭ মারফূ সূত্রে
・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ৬০৪২)
𓈃 এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) বলেন:
وَإِسْنَاده جيد. -“এই হাদিসের সনদ অতি উত্তম।” (তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, হাদিস নং ৬)
সুতরাং কোন মুসলমান মারা গেলে তার ভাল দিক গুলো আলোচনা করা উচিৎ, মন্দ গুলো নয়। এতে মৃত ব্যক্তির অনেক ফায়দা হয় ও তার গুনাহ মাফ হয়। তাই জানাযার পূর্বে অথবা পরে সকল মুসল্লী কর্তৃক মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করা অতীব উত্তম কাজ এবং ছহীহ্ হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। তাই জিবীতদের প্রশংসার দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়, এটাই এই হাদিস গুলোর সারমর্ম।
❏ ফোকাহাদের দৃষ্টিতে ইছালে সওয়াব
মৃত ব্যক্তিদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা সকল আইম্মায়ে কেরামের ঐক্যমতে জায়েয। শুধুমাত্র শাফেয়ী মাজহাবের কিয়দাংশ উলামাগণই ইহার বিপরীত ফাতওয়া প্রদান করেছেন। তবে শাফেয়ী মাজহাবের আরেক জামাত আইম্মায়ে কেরাম ইহাকে জায়েয বলেছেন। নিচে বিস্তারিত দলিলসহ আলোচনা করা হল।
❍ হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের অভিমত: ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর অভিমতের খেলাফে মুজতাহিদ ফিশ শারিয়ার অন্তর্গত ৩ জন ইমাম ও জমহুর তথা অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম যা বলেছেন তাহলো:
وقال ابو حنيفة ومالك واحمد وجمهور الخلف والسلف بخلاف ذلك
-“ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) , ইমাম মালেক (رضي الله عنه) , ইমাম আহমদ (رضي الله عنه) ও অধিকাংশ নেকবান্দাগণ ইমাম শাফেয়ী এর বিরুধিতা করেছেন অর্থাৎ তাঁরা বলেছেন জীবিতদের আমলের সওয়াব মৃতদের রুহে পৌছে।” (তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০২ পৃ:)
❍ এ সম্পর্কে হাফিজ আহমদ ইবনে তাইমিয়া বলেন,
وَأَمَّا الصِّيَامُ عَنْهُ وَصَلَاةُ التَّطَوُّعِ عَنْهُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ عَنْهُ فَهَذَا فِيهِ قَوْلَانِ لِلْعُلَمَاءِ: أَحَدُهُمَا: يَنْتَفِعُ بِهِ وَهُوَ مَذْهَبُ أَحْمَد وَأَبِي حَنِيفَةَ وَغَيْرِهِمَا، وَبَعْضِ أَصْحَابِ الشَّافِعِيِّ وَغَيْرِهِمْ.
“মৃত ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করলে উপকৃত হবে কিনা, এ সম্পর্কে দু’টি মত রয়েছে। একটি হচ্ছে: ইমাম আহমদ (رحمة الله) ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ও শাফেয়ী মাজহাবের অনেক মাশাইখ এবং অন্যান্যদের মতে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে।” (ইবনে তাইমিয়া: মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া, ২৪তম জি: ১৭৭ পৃ:)
সুতরাং ৩ মাজহাবের ইমামগণ ও অধিকাংশ উলামাগণের অভিমত হচ্ছে মৃত ব্যক্তির রুহে জীবিতদের সওয়াব পৌছানো যাবে। আর ইহার উপর ইজমাও সংগঠিত হয়েছে। নিচে এ ব্যাপারে দালায়েল উল্লেখ করা হয়েছে।
❍ বিশ্ব বিখ্যাত মুফাচ্ছির আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী হানাফী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
وذهب أحمد بن حنبل وجماعة من العلماء ومن أصحاب الشافعي إلى أنه تصل، فالاختيار أن يقول القارئ بعد فراغه اللهم أوصل ثواب ما قرأته إلى فلان،
“ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও শাফেয়ী মাজহাবের একদল উলামা ইহা গ্রহণ করেছেন যে, নিশ্চয় ইহা মৃতদের রুহে পৌছে। তাই ক্বারী সাহেব কোরআন পাঠ থেকে বের হওয়ার পর এরূপ বলতে পারবে যে, হে আল্লাহ! আমি যা পাঠ করলাম ইহার সওয়াব ‘অমুক’ ব্যক্তির রুহে পৌছে দাও।” (তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৮ পৃ:)
অতএব, হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের তথা জমহুরের অভিমত হল জিবীতদের নেক আমলের সওয়াব মৃতদের আমল নামায় পৌছায় এবং ইহার দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়।
❏ ইছালে সওয়াবের ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত
❍ হিজরী ৯ম শতাব্দির মুজাদ্দিদ ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন:
قال السيوطي وقد نقل غير واحد الإجماع على ان الدعاء ينفع الميت
-“ইমাম ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন: দোয়া যে মৃত ব্যক্তির পক্ষে উপকারী বহু আলিম এ বিষয়ের উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।” (তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:)
❍ এ বিষয়ে হাফিজ ইবনে তাইমিয়া এর অভিমত হচ্ছে:-
أَمَّا الصَّدَقَةُ عَنْ الْمَيِّتِ فَإِنَّهُ يَنْتَفِعُ بِهَا بِاتِّفَاقِ الْمُسْلِمِينَ وَقَدْ وَرَدَتْ بِذَلِكَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَادِيثُ صَحِيحَةٌ.
-“মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা করলে সকল মুসলমানের ঐক্যমতে ইহা দ্বারা সে উপকৃত হবে। আর এ বিষয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে একাধিক ছহীহ্ হাদিস রয়েছে।” (মজমুয়ায়ে ফাতুয়া, ২৪তম জি: ১৭৭ পৃ:)
ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) ও হাফিজ ইবনে তাইমিয়া এর বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে কোন নেক আমল করে দোয়া করলে ও সওয়াব রেছানী করলে ইহা দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং তার কবরের আযাব লাগব হয়। আর ব্যাপারে সকল মুসলমানদের ইজমায়ে উম্মত সংগঠিত হয়েছে।
❍ এর সম্পর্কে আল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী তথা ছাহেবে খাজেন (رحمة الله) বলেন:-
وفي الحديثين الآخرين دليل على أن الصدقة عن الميت تنفع الميت ويصله ثوابها. وهو إجماع العلماء.
-“এ সম্পর্কে অনেক হাদিসে দলিল আছে যে, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির পক্ষে সদকা করলে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং ইহার সওয়াবও তার কাছে পৌছে। আর ইহার উপর উলামাগণের ইজমা বা ঐক্যমত হয়েছে।” (তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ২১৩ পৃ:)
অতএব, মৃত ব্যক্তিদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা বৈধ, এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত হয়েছে। ইহার বিপরীতে প্রকাশ্য গোমরাহী বা কুফূরী।
❏ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ছানআনী (رحمة الله) এর অভিমত
বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ছানআনী (رحمة الله) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
وَذَهَبَ جَمَاعَةٌ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْحَنَفِيَّةِ إلَى أَنَّ لِلْإِنْسَانِ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ صَلَاةً كَانَ أَوْ صَوْمًا أَوْ حَجًّا أَوْ صَدَقَةً أَوْ قِرَاءَةَ قُرْآنٍ أَوْ ذِكْرًا أَوْ أَيَّ أَنْوَاعِ الْقُرَبِ وَهَذَا هُوَ الْقَوْلُ الْأَرْجَحُ
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হানাফিরা বৈধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন যে, লোকেরা যদি অন্যের জন্য সওয়াব নির্ধারণ করে যেমন নামাজ অথবা রোজা অথবা হজ্ব অথবা সদকা অথবা কোরআন তেলাওয়াত অথবা জিকির অথবা যেকোন নৈকট্যশীল আমল। আর এই বক্তব্য হল অধিক গ্রহণযোগ্য।” (সুবুলুছ ছালাম শরহে বুলুগুল মারাম, ১ম খন্ড, ৫০৯ পৃ:)
সুতরাং জিবীতদের নেক আমলের সওয়াব রেছানীর দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা কবর থেকে উপকৃত হয়।
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর অভিমত
❍ এ সম্পর্কে ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দেদ, হানাফী মাজহাবের উজ্জল নক্ষত্র আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) বলেন:
وَقَالَ عُلَمَاؤُنَا: الْأَصْلُ فِي الْحَجِّ عَنِ الْغَيْرِ أَنَّ الْإِنْسَانَ لَهُ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ مِنَ الْأَمْوَاتِ وَالْأَحْيَاءِ، حَجًّا أَوْ صَلَاةً، أَوْ صَوْمًا أَوْ صَدَقَةً، أَوْ غَيْرَهَا كَتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ وَالْأَذْكَارِ، فَإِذَا فَعَلَ شَيْئًا مِنْ هَذَا، وَجَعَلَ ثَوَابَهُ لِغَيْرِهِ جَازَ، وَيَصِلُ إِلَيْهِ عِنْدَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.
-“আমাদের উলামাগণ বলেছেন: মূলত হজ্ব অন্যের পক্ষ থেকে আদায় করা যায়, নিশ্চয় লোকেরা তাদের নিজেদের মৃত ব্যক্তি ও জীবিতদের জন্য সওয়াব নির্ধারণ করতে পারবে, হজ্ব, নামাজ, রোজা, সদকা ও অন্যান্য কিছু যেমন কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার এগুলোর। যখন সে এরূপ কোন আমল করবে ও অন্যদের জন্য ইহার সওয়াব নির্ধারণ করবে ও তাদের প্রতি ইহা পৌছিয়ে দিবে, তাহলে এরূপ কাজ করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে জায়েয হবে।” (ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ৬৯ পৃ:)
অতএব, জিবীতদের যাবতীয় নেক আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা উপকার লাভ করে। আর এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অবস্থান।
❏ হানাফী ফোকাহাদের অভিমত
❍ ছাহেবে হেদায়া আল্লামা মুরগেনানী (رحمة الله), আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী (رحمة الله) ইমাম তাহতাভী (رحمة الله) বলেছেন,
الإنسان له أن يجعل ثواب عمله لغيره صلاة او صوما او صدقة او غيرها عند اهل السنة والجماعة
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে নিশ্চয় লোকেরা তাদের নিজেদের জন্য অন্য লোকের আমলকৃত নামাজ, রোজা, সদকা ও অন্যান্য আমলের সওয়াব নির্ধারণ করতে পারবে।” (হেদায়া রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:)
সুতরাং ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ তথা জান্নাতী দলের আকিদা হল, জীবিত মুসলমানগণ তাদের মৃতদের আত্বার শান্তির জন্য কিংবা অন্য জীবিতদের আমল নামায়ও তাদের আমলের সওয়াব রেছানী বা বকশিস করতে পারবে। উল্লেখ্য যে, কোন নেক আমল করার জন্য একটি জয়ীফ হাদিসই যথেষ্ঠ। কোন ফকিহ্ এর ফাতওয়া আমল করতে গিয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিসকে বাদ দেওয়া যাবেনা।
❍ কেননা ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর মাজহাব হচ্ছে,
قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.
-“আবু মুহাম্মদ ইবনে হাজম বলেছেন: সকল হানাফীরা ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মাজহাব হল: নিশ্চয় জয়ীফ হাদিস তার কাছে কিয়াস ও ইজতেহাদী রায় হতেও উত্তম।”
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৩য় খন্ড, ৯৯০ পৃ: ৪৪৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়)
অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিসকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে, এটাই হক্বপন্থি উলামায়ে কেরাম অভিমত।
❏ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এর অভিমত
বিখ্যাত হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তদীয় ফাতওয়ার কিতাবে এলছেন,
وَفِي شَرْحِ اللُّبَابِ وَيَقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ مَا تَيَسَّرَ لَهُ مِنْ الْفَاتِحَةِ وَأَوَّلِ الْبَقَرَةِ إلَى الْمُفْلِحُونَ وَآيَةِ الْكُرْسِيِّ وَآمَنَ الرَّسُولُ وَسُورَةِ يس وَتَبَارَكَ الْمُلْكُ وَسُورَةِ التَّكَاثُرِ وَالْإِخْلَاصِ اثْنَيْ عَشَرَ مَرَّةً أَوْ إحْدَى عَشَرَ أَوْ سَبْعًا أَوْ ثَلَاثًا، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ أَوْصِلْ ثَوَابَ مَا قَرَأْنَاهُ إلَى فُلَانٍ أَوْ إلَيْهِمْ.
-“শরহে লুভাব গ্রন্থে আছে, আর কোরআন থেকে যতটুকু ইচ্ছা তেলাওয়াত করবে, সূরা ফাতেহা থেকে সূরা বাকারার ‘মুফলিহুন’ পর্যন্ত ও আয়াতুল কুরছী, আমানার রাসূল, সূরা ইয়াছিন, তাবারাকাল মুল্ক, সূরা তাকাছুর, সূরা ইখলাছ ১২ বার অথবা ১০ বার, অথবা ৭ বার, অথবা ৩ বার। তারপর বলবে: হে আল্লাহ আমি যা কিছু পাঠ করলাম ইহা সওয়াব ‘অমুক’ ব্যক্তি বা ‘অমুক ব্যক্তিদের’ রুহে পৌছিয়ে দাও।” (শরহে লুভাব ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৫১ পৃ:)
এই দলিল দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, যে কোন সূরা বা আয়াত তেলাওয়াত করে ইহা মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি মৃত ব্যক্তি এক বা একাধিক হলেও অসুবিধা নেই।
কবরস্থানে তেলাওয়াত করে সওয়াব রেছানী করা
কবরস্থানে কোরআন পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রুহে পৌছানোর ব্যাপারে একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। নিচে রেওয়ায়েত গুাে সনদসহ উল্লেখ করা হল।
❍ ইমাম আবু মুহাম্মদ হাছান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাছান বাগদাদী খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৪৩৯ হিজরী তদীয় কিতাবে হাদিস উল্লেখ করেন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ شَاذَانَ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَامِرٍ الطَّائِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي، ثنا عَلِيُّ بْنُ مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، مُوسَى عَنْ أَبِيهِ، جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَلِيٍّ، عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَرَّ عَلَى الْمَقَابِرِ وَقَرَأَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ إِحْدَى عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ وَهْبَ أَجْرَهُ لِلْأَمْوَاتِ أُعْطِيَ مِنَ الْأَجْرِ بِعَدَدِ الْأَمْوَاتِ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করল এবং ১০ বার সূরা এখলাছ পাঠ করে মৃতদের রুহে দান করল, তাতে মৃতদের সংখ্যা অনুসারে সওয়াব প্রদান করা হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・ফাদ্বাইলে সুরাতিল ইখলাছ, হাদিস নং ৫৪
・ইহা “আবূ মুহাম্মদ সমরকান্দী র:” বর্ণনা করেছেন তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ:
・সুনানে দারে কুতনী, আনাস রা: হতে
・তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:
・ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩য় খন্ড, ১১৮ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৭১৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যা
・তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
・ইমাম আবু বকর নাজ্জার তদীয় সুনানে
❍ এর আরেকটি সনদ আল্লামা আবুল কাশেম রাফেয়ী ফাজুনী (رحمة الله) ওফাত ৬২৩ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
ثنا داؤد بْنُ سُلَيْمَانَ الْغَازِيُّ أَنْبَأَ عَلِيُّ بْنُ مُوسَى الرِّضَا حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ جَعْفَرَ بْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ:
(তাদবীর ফি আখইয়ারে কাজবীন, ২য় খন্ড, ২৯৭ পৃ:)
এই হাদিস কবর যিয়ারতের সময় সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে সওয়াব রেছানী করার উত্তম দলিল। সুতরাং কবর যিয়ারতকালে সূরা ইখলাছ পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
❍ এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أَخْرَجَ أَبُو الْقَاسِمِ سَعْدُ بْنُ عَلِيٍّ الزَّنْجَانِيُّ فِي فَوَائِدِهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ ثُمَّ قَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ وَقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَأَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ثُمَّ قَالَ إِنِّي جَعَلْتُ ثَوَابَ مَا قَرَأْتُ مِنْ كَلَامِكَ لِأَهْلِ الْمَقَابِرِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ كَانُوا شُفَعَاءَ لَهُ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى
“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ফাতেহা, সূরা ইখলাছ ও সূরা তাকাছুর পাঠ করে বলবে: আমি যা পাঠ করলাম তা মুমিন কবর বাসীদের দান করলাম, তবে তারা সকলেই আল্লাহর দরবারে তার জন্য সুপারিশ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・আবুল কাশিম সাদ ইবনে আলী র: স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・আল ইস্তেজকার, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ:
・আত তামহিদ, ২০তম খন্ড, ২৪১ পৃ:
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৭১৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・মাসালিক শরহে মুয়াত্তা, ২য় খন্ড, ৯৭ পৃ:
・আব্দুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
এই হাদিসেও কবর যিয়ারতের সময় সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে মৃতদের আত্বায় সওয়াব বকশিস করার সুন্দর দলিল। অথচ ওহাবীরা এগুলো চোখ থাকতেও দেখেনা।
❍ এবার আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
وأخبرني الحسين بن محمد الثقفي قال: حدّثنا الفضل بن الفضل الكندي قال: حدّثنا حمزة بن الحسين بن عمر البغدادي قال: حدّثنا محمد بن أحمد الرياحي قال: حدّثنا أبي قال: حدّثنا أيوب بن مدرك عن أبي عبيدة عن الحسن عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ فَقَرَأَ سُورَةَ يس خَفَّفَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَكَانَ لَهُ بِعَدَدِ مَنْ فِيهَا حَسَنَاتٌ
“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যদি কেউ কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াছিন পাঠ করলে আল্লাহ তা’লা এর ফলে কবর বাসীদের শাস্তি হালকা করে দেন। এবং ঐ ব্যক্তিকে নেকী দান করবেন কবরবাসীদের সংখ্যানুসারে।”
তথ্যসূত্রঃ
・তাফছিরে ছা’লাভী, ৮ম খন্ড, ১১৯ পৃ:
・আব্দুল আজিজ তাঁর ‘খিলাল’ গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে বর্ণনা করেছেন
・ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・ফতোয়ায়ে বাহরুর রায়েক্ব, ২য় খন্ড, ৩৪৩ পৃ:
・ইমাম কুরতুবী: আত তাজকিরা, ১ম খন্ড, ৮৪ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ, ৬২১ পৃ:
・আল আমরু বিল মারুফ ওয়াননাহি আনিল মুনকার লিল খিলাল, ১ম খন্ড, ৯০ পৃ:
・ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩য় খন্ড, ১১৮ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ১২২৮ পৃ:
・মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর যিয়ারতের সময় সূরা ইয়াছিন পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া অনেক নেকীর কাজও বটে।
❍ এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন, ফকিহ তবকার তাবেঈ হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) বলেছেন,
أَخْبَرَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ هَاشِمٍ الْبَغَوِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سِنَانٍ الْمَرْوَزِيُّ أَبُو مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى السِّينَانِيُّ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: لَا بَأْسَ بِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ فِي الْمَقَابِرِ
-“হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) বলেছেন: কবরস্থানে ক্বেরাত পাঠে কোন অসুবিধা নেই।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম আবু বকর ইবনে খিলাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:
・ইমাম আবু বকর খাল্লাল বাগদাদী: আমরি বিল মারুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:
❍ প্রখ্যাত ফকিহ তাবেঈ হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) স্পষ্ট বলেছেন, কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা বৈধ। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ نَافِعِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ مَسْعُودِ بْنِ الْحَكَمِ، عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عِنْدَ الْقَبْرِ ثُمَّ جَلَسَ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কবরের কাছে দাঁড়াতেন অত:পর বসতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৩১৪)
❍ উল্লেখিত হাদিস সমূহ সম্পর্কে মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তদীয় কিতাবে বলেন:
وَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً فَمَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لِذَلِكَ أَصْلًا
-“এই হাদিস গুলো যদিও জয়ীফ তথাপিও একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে দলিল হয়ে ভিত্তি প্রমাণিত হয়।” (আব্দুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ: ৬৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
এই হাদিস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর যিয়ারতের সময় সূরা ইয়াছিন পাঠ তথা কোরআন পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া অনেক নেকীর কাজও বটে। অনেকে বলে থাকেন, কবর যিয়ারতকালে সূরা ইয়াছিন, সূরা ইখলাছ, সূরা তাকাছুর, ইত্যাদি পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশানোর হাদিস গুলো জয়ীফ। তাদেরকে বলতে চাই, কবর যিয়ারত একটি নেক আমল, আর সকল ইমামের মতে আমলের ক্ষেত্রে জয়ীফ হাদিস গ্রহণযোগ্য।
❏ কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর অভিমত
হাফিজুল হাদিস ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফয়ী (رحمة الله) কবস্থানে কোরআন পাঠে বিষয়ে স্পষ্ট ফাতওয়া প্রদান করেছেন। যেমন
❍ ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৩১১ হিজরী তদীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন,
أَخْبَرَنِي رَوْحُ بْنُ الْفَرَجِ، قَالَ: سَمِعْتُ الْحَسَنَ بْنَ الصَّبَّاحِ الزَّعْفَرَانِيَّ، يَقُولُ: سَأَلْتُ الشَّافِعِيَّ عَنِ الْقِرَاءَةِ عِنْدَ الْقَبْرِ فَقَالَ: لَا بَأْسَ بِهِ
“হাছান ইবনে ছাব্বাহ জাফারানী বলেন আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে কবরের কাছে কোরআন পাঠের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম আবু বকর খিলাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:)
লক্ষ্য করুন, ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) দৃষ্টিকে কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা বৈধ তথা জায়েয ও কোন অসুবিধা নেই।
❏ কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর অবস্থান
হাফিজুল হাদিস অথবা হাকিম, ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা সমর্থন করতেন। যেমনঃ
❍ ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৩১১ হিজরী তদীয় কিতাবে আরো বর্ণনা করেছেন,
أَخْبَرَنِي الْحَسَنُ بْنُ الْهَيْثَمِ الْبَزَّازُ، قَالَ: رَأَيْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يُصَلِّي خَلْفَ رَجُلٍ ضَرِيرٍ يَقْرَأُ عَلَى الْقُبُورِ
-“হাছান ইবনে হায়ছাম বাজ্জায বলেন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) কে দেখলাম তিনি অনটনে একজন ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করলেন ও কবরের কাছে কোরআন পাঠ করলেন।”
(ইমাম আবু বকর খাল্লাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:)
সুতরাং ইমাম আহম বিন হাম্বল (رحمة الله) নিজেই কবরস্থানে কোরআন পাঠ করেছেন। অতএব, এরুপ আমল করা মুস্তাহাব।
❏ হানাফী মাজহাবের অভিমত
হানাফী ফোকাহাদের অনেকে কবরের কাছে কোরআন পাঠের বিষয়ে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেছেন। তবে হানাফী ফোকাহাদের অনেকে ইহার পক্ষে ইতিবাচক ফাতওয়া প্রদান করেছেন। যেমনঃ
❍ হানাফী মাযহাবের একটি ফাতওয়া হল, ইমাম আবু বকর ইবনে আলী যুবাইদী হানাফী (رحمة الله) ওফাত ৮০০ হিজরী বলেছেন,
وَيُسْتَحَبُّ إذَا دُفِنَ الْمَيِّتُ أَنْ يَجْلِسُوا سَاعَةً عِنْدَ الْقَبْرِ بَعْدَ الْفَرَاغِ بِقَدْرِ مَا يُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقَسَّمُ لَحْمُهَا يَتْلُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ لِلْمَيِّتِ.
-“মুস্তাহাব হল, যখন মায়্যেতের দাফন শেষ হবে তখন তার কাছে সামান্য অবস্থান করবে, যতটুকু সময় কোরবানী করে ইহার গোস্ত ভাগ করে বিতরন করতে সময় লাগে। সেই সময়টা কোরআন পাঠ করবে ও মৃতের জন্য দোয়া করবে।”
(জাওহারাতুন নাইয়ারা, ১ম খন্ড, ১১০ পৃ: ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
❍ হানাফী মাজহাবের আরেকটি ফাতওয়া উল্লেখ করেছেন আল্লামা মোল্লা নিজামুদ্দিন বালখী (رحمة الله) তদয়ী ফাতওয়ার কিতাবে এভাবে,
قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقُبُورِ عِنْدَ مُحَمَّدٍ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى لَا تُكْرَهُ وَمَشَايِخُنَا رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى أَخَذُوا بِقَوْلِهِ وَهَلْ يَنْتَفِعُ وَالْمُخْتَارُ أَنَّهُ يَنْتَفِعُ، هَكَذَا فِي الْمُضْمَرَاتِ.
-“ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর কাছে কবরের কাছে কোরআন পাঠ করা মাকরুহ নয়। আমাদের মাশায়েখরা ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর মত গ্রহণ করেছেন। ইহার দ্বারা কি মৃতরা উপকৃত হন? বিশুদ্ধ মত হল উপকৃত হন, যেমনটি মুজমিরাত কিতাবে আছে।” (ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
এ বিষয়ে একাধিক সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। উছূলে হাদিসের আইন মোতাবেক, একই বিষয়ে একাধিক জয়ীফ সনদ থাকলে সব মিলে ইহা আরো ক্বাবী বা শক্তিশালী ‘হাছান লি’গাইরিহী’ হয়ে যায়। এ বিষয়ে মোট ৩ জন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমল করাতে কোন বাধা নেই। সর্বোপরি হানাফী মাজহাবের আইম্মায়ে কেরাম এই আমলের ফাতওয়াকে গ্রহণ করেছেন।
❏ মৃতের নিকট কোরআন তেলাওয়াত করা
সময় সুযোগ হলে মৃত ব্যক্তি নিকটে বসে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা বিশেষ করে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করা উচিৎ। এতে মৃত ব্যক্তির অনেক আছান বা উপকার হয় এবং তেলাওয়াতকারী সওয়াব পাবে। যেমন হানাফী মাজহাবের ফতোয়া:
وَحُضُورُ أَهْلِ الْخَيْرِ وَالصَّلَاحِ مَرْغُوبٌ فِيهِ وَيُسْتَحَبُّ قِرَاءَةُ سُورَةِ يس عِنْدَهُ، كَذَا فِي شَرْحِ مُنْيَةِ الْمُصَلِّي لِابْنِ أَمِيرٍ الْحَاجِّ، وَيُحْضَرُ عِنْدَهُ مِنْ الطِّيبِ، كَذَا فِي الزَّاهِدِيِّ،
-“মৃত ব্যক্তির নিকট নেক বান্দাহ ও পুণ্যবান লোক হাজির থাকবে এবং তার নিকট বসে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব। ইহা শরহে মুনিয়াতুল মুছাল্লি কিতাবে উল্লেখ আছে- যা আমিরুল হাজ্ব কর্তৃক লিখা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নিকট খোশবু রাখা উচিৎ, ইহা যাহেদী কিতাবে আছে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৭৩ পৃ:)
মৃত ব্যক্তির নিকট কোরআন পাঠের বিষয়টি মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিস থেকেই প্রমাণিত। যেমন
❍ এ সম্পর্কে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ شَقِيقٍ، عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، وَلَيْسَ بِالنَّهْدِيِّ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اقْرَءُوهَا عِنْدَ مَوْتَاكُمْ، يَعْنِي يس
-“হজরত মাকিল ইবনে ইয়াছার (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তোমরা তোমাদের মৃত লোকদের কাছে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত কর।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, ১০৫ পৃ: হাদিস নং ১৪৪৮
・আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং ২১৩১
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২০৩০১
・ইমাম বায়হাক্বী: মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদিস নং ৭৩০৯
・ইমাম হাকেম: আল মুস্তাদরাক, হাদিস নং ২০৭৪
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৬৬০০
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ২২৩০
・মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১০৮৫৩
・খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪ তম জি: ৫৮ পৃ:
・ইমাম নিমাভী: আছারুছ ছুনান, ৩২৩ পৃ:
・ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮৪৬
এই হাদিসের সনদে أَبِي عُثْمَانَ ‘আবী উছমান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, যার সম্পর্কে লা-মাজহাবীরা বলে থাকেন যে, তিনি مجهول বা অপরিচিত রাবী। কিন্তু তাদের এ দাবী সঠিক নয়।
𓈃 কারণ হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন:
اسمه سعد. وقال أبو داود: هو أبو عثمان السَّلِّي. -
“তার নাম হচ্ছে: ‘সাদ’। ইমাম আজরী ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন: তিনি হলেন আবু উছমান আস সাল্লী।”
(হাফিজ ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহে ওয়া তা’দিল, রাবী নং ২২১৮ ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৫০৬ খলিল আহজমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:)
وذكره ابن حبان في الثقات.
𓈃 “ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”
(হাফিজ ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহে ওয়া তা’দিল, রাবী নং ২২১৮ ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৫০৬ খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ: হাফিজ ইবনু হাজার: তাহজিবুত তাহজিব, ৮ম খন্ড, ২৮৪ পৃ:)
𓈃 হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাকে مقبول মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য রাবী বলেছেন।
(হাফিজ ইবনে হাজার: তাকরীবুত তাহজিব, রাবী নং ৮২৪০)
এ কারণেই ইমাম মাকদেছী (رحمة الله) হাদিসটিকে হাছান বলেছেন। (ছিলছিলায়ে আহাদিসুদ দায়িফা, ৫৪৬১ হাদিসের ব্যাখ্যায়)
দেখুন! যাকে ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) চিনেন, ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাঁকে চিনেন ও বিশ্বস্ত বলেছেন। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার নাম উল্লেখ করে مقبول মাকবুল বলেছেন।
অথচ লা-মাজহাবীরা বলে দিলেন তাকে আমরা চিনিনা!! বড়ই আশ্চর্য ব্যাপার! তাই লা-মাজহাবীদের প্রপাগন্ডা আর মিথ্যাচার শুনে নিজেদের আমল নস্ট করার কোন ইস্যু নেই।
❍ বিষয়টি বুঝার সুবিধার্থে আরো কয়েকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করছি:-
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَبْدَانَ، أَخْبَرَنا أَحْمَدُ بْنُ عُبَيْدٍ الصَّفَّارُ، حدثنا أَبُو مُسْلِمٍ إِبْرَاهِيمُ بْنُ عَبْدِ اللهِ، حدثنا أَبُو عُمَرَ الضَّرِيرُ، حدثنا الْمُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ قَرَأَ يس ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ فَاقْرَءُوهَا عِنْدَ مَوْتَاكُمْ
-“হজরত মাকিল ইবনে ইয়াছার (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তার চেহাড়া উজ্জল করবে এবং তার অতীতের সকল গোনাহ্ মাফ করবেন। তোমরা সূরা ইয়াছিন মৃতের কাছে তেলাওয়াত করো।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ২২৩১
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ৬৪ পৃ:
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ২১৭৮
❍ ইমাম আব্দুর রঊফ আল-মানাভী (رحمة الله) তার ‘আত তাইছির’ গ্রন্থে হাদিসটিকে জয়ীফ বলেছেন, যা আমলের বেলায় যথেষ্ঠ। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
وَأَخْرَجَ ابْنُ أَبِي الدُّنْيَا وَالدَّيْلَمِيُّ حَدَّثَنَا الْقَاضِي مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ ,ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ بُنْدَارٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ أَبِي عُمَرَ، ثنا عَبْدُ الْمَجِيدِ بْنُ أَبِي رَوَّادٍ، عَنْ مَرْوَانَ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ شُرَيْحٍ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ مَيِّتٍ يَمُوتُ فَيُقْرَأُ عِنْدَهُ يس إِلَّا هَوِّنَ اللَّهُ عَلَيْهِ
“হজরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তি মাথার নিকটে সূরা ইয়াছিন পাঠ করা হয় যেন তার জন্য সব কিছু সহজ করে দিবেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・তারিখে ইসবাহান, ১ম খন্ড, ২২৯ পৃ:
・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ১৩৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আবী দুনিয়া, দায়লামী শরীফ
・খলিল আহমদ: বজলুল মাজহুদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৬২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
وَأخرج أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن ماجة وَمُحَمّد بن نصر وَابْن حبَان وَالطَّبَرَانِيّ وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الإِيمان أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَن معقل بن يسَار أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: أَيْضًا يس قَلْبُ الْقُرْآنِ، لَا يَقْرَؤُهَا عَبْدٌ يُرِيدُ الدَّارَ الْآخِرَةَ إِلَّا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ فَاقْرَءُوهَا عَلَى مَوْتَاكُمْ
“ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাছর, ইমাম ইবনে হিব্বান, ইমাম তাবারানী, ইমাম হাকেম ও ইমাম বায়হাক্বী তার শুয়াবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন: হযরত মাকিল ইবনে ইয়াছার (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: এমনিভাবে সূরা ইয়াছিন কোরআনের ক্বাল্ব। আখেরাতের ধারপ্রান্তে এসে বান্দার কাছে ইহা পাঠ করা হয় একমাত্র আল্লাহর ক্ষমা লাভের আশায়, যেন তার পূর্বের সকল গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তোমরা মৃত ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াছিন পাঠ করো।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২০৩০০
・ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮৪৭
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৫১১
・হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস নং ১০০৮৫
・ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১০৮১৬
・ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দুর্রে মানছুর, ৭ম খন্ড, ৩৭ পৃ: সূরা ইয়াছিনের শুরুতে
・কাজী শাওকানী: তাফছিরে ফাতহুল কাদীর, ৪র্থ খন্ড, ৪১১ পৃ:
・বজলুল মাজহুদ ফি হল্লে আবী দাউদ, ১৪তম জি: ৫৯ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৬২২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ১৩৬৯
・ইমাম মারুজী: মুখতাছারু কিয়ামু লাইলী ওয়া কিয়ামু রমাদ্বান, ১ম খন্ড, ১৬৮ পৃ:
অতএব, মৃতের কাছে পবিত্র কোরআন তথা সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করা সুন্নাহ সমর্থিত ও মুস্তাহাব, যা একাধিক রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত।
❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ ثنا الْعَبَّاسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: سَأَلْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِينٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ عِنْدَ الْقَبْرِ فَقَالَ: حَدَّثَنَا مُبَشِّرُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْحَلَبِيُّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ قَالَ لِبَنِيهِ:ৃ وَاقْرَءُوا عِنْدَ رَأْسِي أَوَّلَ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتَهَا فَإِنِّي رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ يَسْتَحِبُّ ذَلِكَ
“আব্বাস ইবনে মুহাম্মদ বলেন আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে কবরের কাছে কোরআন পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন আমার কাছে মুবাশ্বির ইবনে ইসমাঈন হালাবী হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ হতে, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি কার সন্তানদেরকে বলতেন:... তোমরা আমার (মৃত্যুর পরে) মাথার কাছে কোরআন পাঠ করবে সূরা বাকারার প্রথম ও শেষ অংশ পড়বে। নিশ্চয় আমি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) কে দেখেছি এরুপ করা পছন্দ করেছেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু কুবরা, হাদিস নং ৭০৬৮
・ইমাম বায়হাক্বী: দাওয়াতুল কবীর, হাদিস নং ৬৩৮
𓈃 ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলেন:
هذا موقوف حسن -“এই হাদিস মাওকুফ ও হাছান।” (ইমাম বায়হাক্বী: দাওয়াতুল কবীর, হাদিস নং ৬৩৮)
𓈃 এই রেওয়ায়েতে আব্দুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ এর পিতা العلاء بن اللجلاج
‘আলা ইবনু লাজলাজ’ একজন تابعي، ثقة. বিশ্বস্ত তাবেঈ। তিনি নিজেই মৃত্যুর পর কোরআন তেলাওয়াত করা পছন্দ করতেন এবং সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর রেফারেন্স দিয়ে ইহার উপর নির্দেশনা দিয়েছেন।
অতএব, মৃত ব্যক্তির লাশ গোসল দেওয়ার পরে তার কাছে বসে পবিত্র অবস্থায় কোরআন পাঠ করা একট অতি-উত্তম কাজ। এতে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবে ও কোরআন পাঠকারী সওয়াবের ভাগীদার হবেন।
❏ কবর যিয়ারতের সময় হাঁত উঠিয়ে দোয়া
আমাদের সমাজে কিছু লোকের ধারণা হচ্ছে, কবর যিয়ারত করা যাবে শুধু সালামের মাধ্যমে কোন হাঁত উঠিয়ে দোয়া করা যাবেনা। তাই এ বিষয়টি আমি একটু আলোচনা করব। রাসূলে পাক (ﷺ) কবর যিয়ারতের সময় কি হাঁত মোবারক উঠিয়ে দোয়া করেছেন নাকি করেননি।
❍ নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন:-
قالت عائشة: ألا أحدثكم عني وعن رسول الله صلى الله عليه وسلم قلنا: بلى، قَالَ قَالَتْ: لَمَّا كَانَتْ لَيْلَتِي الَّتِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهَا عِنْدِي، انْقَلَبَ فَوَضَعَ رِدَاءَهُ، وَخَلَعَ نَعْلَيْهِ،.... حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ فَأَطَالَ الْقِيَامَ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ انْحَرَفَ فانحرفت،
“হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূল (ﷺ) থেকে হাদিস শুনাব? সাহাবীরা বলল: হ্যাঁ। রাবী বলেন, মা আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন: সেই রাত যেই রাতে প্রিয় নবীজি (ﷺ) আমার কাছে ছিলেন, রাতে তিনি ঘর থেকে বের হলেন ও পায়ের জুতা মোবারক খুললেন।...... এমনকি জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানে আসলেন এবং দাঁড়ালেন। অত:পর তাঁর দুই হাঁত মোবারক উঠিয়ে দোয়া করলেন তিন বার। অত:পর তিনি ফিরে আসলেন এবং আমিও ফিরে আসলাম।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ৯৭৪
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৫৮৫৫
・সুনানে কুবরা লিন-নাসাঈ, হাদিস নং ৮৮৬১
・নাসাঈ শরীফ, হাদিস নং ২০৩৭ ও ৩৯৬৩
・ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৭১১০
・আদ্-দোয়া লিত তাবারানী, হাদিস নং ১২৪৬
・জামেউল উছুল, হাদিস নং ৮৬৭০
・জামেউল ফাওয়াইদ, হাদিস নং ২৬৬০
・মুসনাদে জামে, হাদিস নং ১৬৩৯৫
・আলবানী: আহকামুজ জানাইজ, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃ:
লক্ষ্য করুন! আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কবর যিয়ারত করার সময় হাঁত উঠিয়ে দোয়া করেছেন। তাই কবর যিয়ারতের সময় মৃত ব্যক্তির জন্য হাঁত উঠিয়ে দোয়া করা স্বয়ং রাসূলে করিম (ﷺ) এর সুন্নাত। ইহা ছহীহ্ মুসলীমের রেওয়ায়েত যা সকল উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে ছহীহ্। তাই এ বিষয়ে আর দলিল উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করছিনা।
❏ মৃত ব্যক্তির ফাতেহা উপলক্ষে যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা
ফাতেহা করা তথা মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব রেছানী করার আমল নবী করিম (ﷺ) এর হাদিস, সাহাবীগণের আমল ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর আইম্মায়ে কেরামের সমর্থন দ্বারা প্রমানিত হয়েছে। যেমন: কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবীহ-তাহলীল, নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি আমল করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে আনুষ্ঠানিক ভাবে বকশিয়ে দেওয়া। অথবা এরূপ করা যে, গরীব-মিসকীন ও এতিম তথা মুমিন-মুসলমানের জন্য খাবার পরিবেশন করার মাধ্যমে দোয়া লাভ করা। এরূপ অনুষ্ঠানকে ‘যিয়াফত’ বলা হয়। মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) এর সুন্নাত। যেমনঃ
❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত (এখানে فَلْيُكْرِمْ শব্দের ভাবার্থ বুঝানোর জন্যই যিয়াফত অর্থ করা হয়েছে। কারণ উরফী দৃষ্টিকে মেহমানকে সম্মান করা হয় মূলত তার প্রতি উত্তম আচরন ও উত্তম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে। যাকে বলা হয় আতিথেয়তা বা আপ্যায়ন। আর এই আতিথেয়তা বা আপ্যায়নকেই যিয়াফত বলা হয়ে থাকে, যা মূলত মেহমানের উদ্দেশ্য সম্মান।) করে।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬১৩৬ ও মুসলীম
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৪২৪৩ বাবুয যিয়াফাত
এই হাদিস থেকে মত্বলকান সব সময়ই যিয়াফতের বৈধতার কথা পাওয়া যায়। বস্তুত অনাহারীকে আহার দেওয়া অনেক উত্তম কাজ।
❍ মৃত ব্যক্তি আত্বার মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে যিয়াফত করার ব্যাপারে পবিত্র হাদিস শরীফে আরো উল্লেখ আছে:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى
“জনৈক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ) কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুরছিল তাদের বলেন: পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখোন থেকে ফিরার পর জনৈক মহিলার আহবানকারী নবী পাক (ﷺ) কে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে গেলেন ও তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী করিম (ﷺ) খেতে শুরু করলে অন্যরাও খেতে শুরু করেন। তখন আমাদের মুরুব্বিরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূল (ﷺ) এক লোকমা মুখে দিয়ে তা শুধু চিবাচ্ছেন কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ গোস্ত এমন এক বকরীর যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য বাকী নামক বাজারে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয় মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, এ গোস্ত বন্দিদের খাইয়ে দাও।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩৩৩২ بَابٌ فِي اجْتِنَابِ الشُّبُهَاتِ, ই: ফা: হাদিস নং ৩২৯৯
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮২৫ بَابُ كَرَاهِيَةِ مُبَايَعَةِ مَنْ أَكْثَرُ مَالِهِ مِنَ الرِّبَا أَوْ ثَمَنِ الْمُحَرَّمِ
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৯৪২
・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ২৪৩৪
・ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ,
・ফতোয়ায়ে শামী
সকল ইমামের মতে হাদিসখানা ছহীহ্। এমনকি লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী আবু দাউদ ও মেসকাতের তাহকিকে হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, আল্লাহর নবী (ﷺ) নিজেই ও সাহাবায়ে কেরাম মৃত ব্যক্তির বাড়িতে (মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে) আয়োজিত যিয়াফতের খাবার গ্রহণ করেছেন এবং হালাল খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি করেননি।
❍ এই সম্পর্কে আল্লামা আহমদ ইবনে ইসমাঈল তাহতাবী হানাফী (رحمة الله) বলেন:
فهذا يدل على إباحة صنع أهل الميت الطعام والدعوة إليه بل ذكر في البزازية أيضا من كتاب الاستحسان وإن اتخذ طعاما للفقراء كان حسنا اهـ وفي استحسان الخانية وإن اتخذو لي الميت طعاما للفقراء كان حسنا إلا أن يكون في الورثة صغير فلا يتخذ ذلك من التركة
-“মৃত ব্যক্তি পরিবার থেকে হাওয়াত ও খাবার গ্রহণ করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে এই হাদিস উত্তম দলিল। বাজ্জাযিয়ার ‘কিতাবুল ইস্তেহছান’ এর মধ্যে অনুরুপ উল্লেখ করেছেন যে, যদি দরিদ্রদের জন্য খাবার চাওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম। খানিয়া কিতাবের ইস্তহছান অধ্যায়ে আছে, যদি মায়্যেতের জন্য দরিদ্র লোকদের খাবার গ্রহণ করানো হয় তাহলে উত্তম, তবে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ ছোট হয় তাহলে এরুপ গ্রহণ করবেনা এবং অনরূপ পরিত্যাগ করবে।” (তাহ্তাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ:)
❏ মৃত ব্যক্তির আত্বার মাগফিরাতের জন্য মুসলমানদেরকে কোন খাদ্য দান করলে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছে যায়
মৃত ব্যক্তির আত্বার মাগফিরাতের জন্য মুসলমানদেরকে কোন খাদ্য দান করলে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছে যায়। যেমনঃ
❍ হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ، فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟، قَالَ: الْمَاءُ، قَالَ: فَحَفَرَ بِئْرًا، وَقَالَ: هَذِهِ لِأُمِّ سَعْدٍ
“হযরত সাঈদ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সাঈদের মাতা ইন্তেকাল করেছেন, তার জন্যে কোন ধরণের সদকা উত্তম হবে? আল্লাহর নবী (ﷺ) বললেন: ‘পানি’। তারপর ‘বাতরা’ নামক কূপ খনন করলেন ও বললেন: ইহা সাঈদের মায়ের জন্য সদকা।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ৩৬৬৪-৬৬
・সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬৮১
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৯১২
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৩ পৃ:
・হাফিজ ইবনে কাছির: জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস নং ৩১৮২
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৪ পৃ:
・তাফছিরে কুরতবী, ১৭তম জি: ৯০ পৃ:
𓈃 তাবারানী ছহীহ্ সূত্রে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর আরেকটি সনদ হচ্ছে,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَضْرَمِيُّ، ثنا أَبُو كُرَيْبٍ، ثنا وَكِيعٌ، عَنْ هِشَامٍ الدَّسْتُوَائِيِّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ
-“মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ হাদ্বরামী হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু কুরাইব থেকে- তিনি ওয়াকী থেকে- তিনি হুশাইম দাসতুয়াঈ থেকে- তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে- তিনি সাঈদ ইবনে মুসাঈব (رحمة الله) থেকে- তিনি সাঈদ ইবনে ইবাদা (رضي الله عنه) থেকে...।” (ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৫৩৭৯)
𓈃 ইমাম তাবারানীর এই সনদটি সম্পূর্ণ ছহীহ্। তবে সুনানে আবু দাউদের তাহকিকে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানীও হাদিসটিকে ‘হাছান’ বলেছেন। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য লোকদেরকে পানি পান করালেই মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং ইহার সওয়াব তার আত্বায় পৌছে যাবে। এখন প্রশ্ন হল, যদি পানি পান করালে মৃত ব্যক্তির উপকার হয়, তাহলে গরীব-মিসকীনকে অথবা মুসলমানদেরকে পানি ও হালাল খাদ্য পানাহার করালে কি মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবেনা? অবশ্যই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে আরেকটি আছার উল্লেখ করা যায়।
❍ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ مَالِكٍ، ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ، ثنا أَبِي، ثنا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ، ثنا الْأَشْجَعِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، قَالَ: قَالَ طَاوُسٌ: إِنَّ الْمَوْتَى يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ سَبْعًا، فَكَانُوا يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يُطْعَمَ عَنْهُمْ تِلْكَ الْأَيَّامِ
“হরত সুফিয়ান ছাওরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত তাঊস (رحمة الله) বলেছেন, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তি দাফনের পর ৭দিন মসিবতে থাকেন। সাহাবায়ে কেরাম এই ৭দিন মৃতদের জন্য লোকদের খাওয়ানো উত্তম মনে করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৪র্থ খন্ড, ১১ পৃ: ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২১৬ পৃ:)
𓈃 এই রেওয়ায়েতের সনদ ছহীহ্। এই হাদিস উল্লেখ করে হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) বলেছেন,
إِسْنَاده صَحِيح وَله حكم الرّفْع -“ইহার সনদ ছহীহ এবং ইহার হুকুম মারফূ।” (ইমাম ছিয়তী: আদ দিয়াযু আলা ছহীহ্ মুসলীম, ২য় খন্ড, ৪৯১ পৃ:)
𓈃 হযরত তাঊস (رحمة الله) একজন প্রখ্যাত তাবেঈ, যিনি ৫০০ সাহাবীকে দেখেছেন। তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, মৃতদের জন্য খাবার খাওয়ানো সাহাবীগণ পছন্দ করতেন। অর্থাৎ এরুপ আমল করা মুস্তাহাব। যেমনটা
❍ ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) বলেছেন,
وَهُوَ اسْتِحْبَابُ الْإِطْعَامِ عَنِ الْمَوْتَى مُدَّةَ سَبْعَةِ أَيَّامٍ، -“মৃত ব্যক্তির জন্য সাতদিন খাবার পরিবেশন করা মুস্তাহাব।” (ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২২৩ পৃ:)
অতএব, মৃত ব্যক্তি পরিবারবর্গের সুবিধামত সময়ে মায়্যেতের উপকারের জন্য সামর্থ অনুযায়ী যিয়াফত করা জায়েয ও মুস্তাহাব।
❍ শারিহে বুখারী ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقد روى عن مجاهد: أن الموتى كانوا يفتنون في قبورهم سبعا فكانوا يستحبون أن يطعم عنهم تلك الأيام.
-“নিশ্চয় হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) হতে বর্ণত, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তি দাফনের পর ৭ দিন মসিবতে থাকেন। সাহাবায়ে কেরাম এই ৭ দিন মৃতদের জন্য লোকদের খাওয়ানো উত্তম মনে করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইবনে রজব হাম্বলী: আহওয়ালুল কুবুর, ১ম খন্ড, ১৬ পৃ:)
মৃতদের জন্য খাবার খাওয়ানো সাহাবীগণ পছন্দ করত। অতএব, মৃত ব্যক্তির জন্য ৭ দিন খাবার পরিবেশন করা সুন্নাতে সাহাবা ও মুস্তাহাব।
❏ হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিতে মৃতের জন্য যিয়াফত করা
মৃত ব্যক্তি পরিবার-পরিজন থেকে যিয়াফত গ্রহণ করার ব্যাপারে হানাফী ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত নিম্নরুপ:-
❍ ভারতবর্ষের প্রষিদ্ধ ফাতওয়ার কিতাব ‘ফাতওয়ায়ে আলমগিরী’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
وَلَا يُبَاحُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ عِنْدَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، كَذَا فِي التَّتَارْخَانِيَّة
-“মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে ৩ দিনের ভিতর যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। এরূপ তাতারখানিয়া কিতাবে রয়েছে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)
❍ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
وَذَكَرَ فِي الْخُلَاصَةِ: أَنَّهُ لَا يُبَاحُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ عِنْدَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ،
-“খুলাছা কিতাবে আছে, মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে ৩ দিনের ভিতর যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫৯৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
উক্ত ফাতওয়া দ্বারা দুইটি বিষয় প্রকাশিত হয়: যেমন:-
১. মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে যিয়াফতের অনুষ্ঠান চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। কিন্তু ৩ দিনের পরে হলে জায়েয হবে। অর্থাৎ, ৪ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন ইত্যাদি যে কোন দিনে হলে নিষেধ নয়। এখানে ৩ দিনের শর্ত আসার পিছনে কারণ হচ্ছে ঐ ৩ দিন হচ্ছে মৃত ব্যক্তি আহলবর্গের শোক প্রকাশ বা শোক পালনের দিন।
২. মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থেকে লোকেরা যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তি পরিবার-পরিজন যদি স্ব-ইচ্ছায় যিয়াফতের দাওয়াত দেয় তাহলে নিষেধ নয়।
❍ হানাফী মাজহাবের মশহুর কয়েকটি কিতাবে আছে:-
وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ مِنْ الطَّعَامِ مِنْ أَهْلِ الْمَيِّتِ لِأَنَّهُ شُرِعَ فِي السُّرُورِ لَا فِي الشُّرُورِ،
-“মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে খাবারের যিয়াফত চেয়ে নেওয়া মাকরুহ। কেননা ইহা খুশির সময় করা হয়, শোকের সময় নয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ: ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ: মারাকিল ফালাহ্)
উল্লেখিত ফাতওয়া দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রকাশিত হয়। যথা:-
১. মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থেকে খাবারের যিয়াফত চেয়ে নেওয়া মাকরুহ, তবে ইচ্ছাকৃত খাবার খাওয়ালে মাকরুহ নয়।
২. খাবারের যিয়াফত শোকের সময় করা জায়েয নয়, অন্যথায় শোকের সময়ের পরে হলে জায়েয হবে। আর হাদিস শরীফে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তি শোক পালন হচ্ছে ৩ দিন। সুতরাং বিষয়টি সহজেই অনুমেয় হয় যে, ৩ দিনের শোকের পরে মায়্যেতের আত্মার মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে সাধ্য অনুযায়ী গরীব-মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো নিষেধ নয়।
❍ এ দিকে লক্ষ্য করেই আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) ও ছাহেবে বাজ্জাজিয়া বলেন:
وَإِنْ اتَّخَذَ طَعَامًا لِلْفُقَرَاءِ كَانَ حَسَنًا -
“যদি গরীব লোকদের জন্য খাবার চাওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ: ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫৯৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
❍ হানাফী মাজহাবের তৃতীয় তবকার ফাতওয়ার কিতাব, ফাতওয়ায়ে কাজীখাঁন-এ আছে:-
وان اتخاذو لي الميت طعاما للفقراء كام حسنا الا ان يكون في الورثة صغير
-“যদি ফকির লোকদেরকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে খাবার দেওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম হবে, তবে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছ ছোট হলে ইহা গ্রহণ করবে না।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে কাজী খাঁন তাহতাবী শরীফ, ৬১৮ পৃ:)
❍ ছাহেবে বাজ্জাজিয়া (رحمة الله) বলেন:
وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الطَّعَامِ فِي الْيَوْمِ الْأَوَّلِ وَالثَّالِثِ -
“মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার প্রথম দিন ও তৃতীয় দিন খাবার চাওয়া মাকরুহ।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ:)
একই ভাবে এই ফাতওয়া দ্বারাও প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে যিয়াফত করা মাকরুহ, তবে ৩ দিনের পরে হলে জায়েয। এই ৩ দিন মাকরুহ হওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে নবী পাক (ﷺ) এর হাদিস “৩দিন শোক প্রকাশের”। এরূপ কারণ দর্শানো ব্যতীত অন্য কোন ফাতওয়া আমলযোগ্য হবেনা। সর্বোপরি মানুষের মেহমানদারী করা প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর একটি উত্তম সুন্নাত। তাই এই ফাতওয়া ৪ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন বিবিধ দিনে সাধ্য অনুযায়ী যিয়াফতকে নিষেধ করেনা।
❏ চল্লিশা বা চেহলাম পালন সম্পর্কে
প্রথমত: যে কোন আমল করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া যে উত্তম কাজ এতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর কারো কোন দ্বিমত নেই। দ্বিতীয়ত: মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিন পর থেকে যেকোন দিন গরীব-মিসকীন ও মুমিন মুসলমানদেরকে খাবার খাওয়ানো উত্তম কাজ হিসেবে হানাফী-সুন্নী মুসলমান তথা সকলের কাছেই ইহা স্বীকৃত। মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৪০ দিনের সময় ছাড়াও যে কোন দিন সওয়াব রেছানীর মাহফিল ও যিয়াফত করা যেতে পারে। তবে ৪০ দিনের সময় মিলাদ মাহফিল করা, কোরআন খতম করা, দান-সদকা করা ইত্যাদি আমল শেষে গরীব-মিসকীন ও মুসলমানদের মাঝে সাধ্য অনুযায়ী খাবার বিতরন করার পিছনে কিছু মাহাত্ব্য রয়েছে। যেমন:- হযরত আদম (عليه السلام) কে ৪০ বছর পর্যন্ত খামির অবস্থায় রাখা হয়েছিল। অত:পর ৪০ বছরে এটা শুকিয়ে ছিল। মায়ের পেটে শিশু প্রথম ৪০ দিন বীর্য অবস্থায় থাকে, অত:পর ৪০ দিন জমাট বাধা রক্ত অবস্থায়, অত:পর ৪০ দিন মাংশপিন্ড অবস্থায় থাকে। ৪০ দিন পর্যন্ত মায়ের নেফাছ থাকে। ৪০ বছর বয়সে মানুষের বয়স পরিপক্ব হয়। অধিকাংশ নবীগণ (عليه السلام) এর নবুয়াত প্রচারের দ্বায়িত্ব ৪০ বছর বয়সে দেওয়া হয়েছে। হযরত মূসা (عليه السلام) কে তূর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থান করেছিলেন। নবীগণের পবিত্র রুহসমূহ সক্রিয়ভাবে তাঁদের কবর শরীফে ৪০ দিন থাকে (বায়হাক্বী) ইত্যাদি (আল্লাহর নবীগণ স্ব স্ব মাজার পাকে স্বশরীরে জিবীত এটাই ছহীহ্ হাদিস মোতাবেক প্রসিদ্ধ। তবে অন্য হাদিসে আছে কেহ সালাম দিলে রুহ মুবারক ফিরিয়ে দেন তথা সালামের উত্তর প্রদানের জন্য রুহ মুবারক কে দুনিয়া মুখি করে দেন। ফলে সালামের উত্তর প্রদান করেন। এই দৃষ্টিকোন থেকে বায়হাক্বীর হাদিসটি গ্রহণযোগ্য।)। যেমনঃ
❍ হাদিস শরীফে আছে,
وَأَخْرَجَ ابْنُ حِبَّانَ فِي تَارِيخِهِ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وأبو نعيم فِي الْحِلْيَةِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ نَبِيٍّ يَمُوتُ فَيُقِيمُ فِي قَبْرِهِ إِلَّا أَرْبَعِينَ صَبَاحًا
“হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: এমন কোন নবী ইন্তেকাল করেননি, যিনি ইন্তিকালের পরে স্বীয় মাজারে ৪০ দিন অবস্থান করেননি।”
অর্থাৎ আল্লাহর নবীগণ (عليه السلام) ইন্তেকালের পরেও ৪০ তিনাদের স্ব স্ব মাজার শরীফে ৪০ দিন সক্রিয়ভাবে অবস্থান করেন। (আল্লাহই সর্বোজ্ঞ)
❍ এখানে ৪০ দিনের একটা গুরুত্ব পাওয়া যায়। এবার সাধারণ মানুষের কবরে ৪০ দিন ফেতনার বিষয়ে ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رحمة الله) হাদিস উল্লেখ করেন,
ذَكَرَ الرِّوَايَةَ الْمُسْنَدَةَ عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ: قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ فِي مُصَنَّفِهِ، عَنِ الحارث بن أبي الحارث، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ قَالَ: يُفْتَنُ رَجُلَانِ مُؤْمِنٌ وَمُنَافِقٌ، فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيُفْتَنُ سَبْعًا، وَأَمَّا الْمُنَافِقُ فَيُفْتَنُ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا.
-“উবাইদ ইবনে উমাইর (رضي الله عنه) বলেন, দুই শ্রেণীর লোক কবরে ফেতনায় পড়ে। মু’মীন ও মুনাফিক। মু’মীনদেরকে ৭ দিন ফেতনায় থাকে আর মুনাফেক ৪০ দিন ফেতনায় থাকে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২১৬ পৃ:)
এই হাদিসে মুনাফেকের কবরের ফেতনার সময় বলা হয়েছে ৪০ দিন। সাধারণত আমাদের মৃতদের মুনাফেক মনে করা হয়না, তবে তারা গোনাহগার এই ভেবে সতর্কতামূলক ৪০ দিনের সময় যিয়াফত করা হয়।
উপরে উল্লেখিত মাহাত্ব্যের কারণে ৪০ দিনের মাথায় ফাতেহা ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা হয়। পৃথিবীর এমন কোন কিতাব নেই যেখানে দলিলে ক্বাতয়ীর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য ৪০ দিনের সময় ফাতেহা ও যিয়াফত করা নিষেধ করেছেন। তবে ৪০ দিনের মাথায় করতেই হবে এরূপ মনে করাও ঠিক না, বরং সকলের সুবিধামত সময়ে এরূপ আয়োজন করতে হবে।
আমাদের বক্তব্য হল, ৪০ দিনেই হোক আর ৩৫ দিনেই হোক অথবা মৃত ব্যক্তির আহল বর্গের সুবিধামত যেকোন দিনেই হোক মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব ও মাগফেরাত অনুষ্ঠান করাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজ পড়ে, রোজা রেখে, কোরআন পাঠ করে, জিকির-আজকার করে, বিভিন্ন আমল করে তাদের রুহে বকশিয়ে দেওয়া স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে গরীব-মিসকীন ও মুসলমানদেরকে যিয়াফত করে খাবার পরিবেশন করা প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ও হানাফী ফকিহ্গণের কাছে স্বীকৃত।
❍ আর মত্বলকান এ যিয়াফতের ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত (এখানে فَلْيُكْرِمْ শব্দের ভাবার্থ বুঝানোর জন্যই যিয়াফত অর্থ করা হয়েছে। কারণ উরফী দৃষ্টিকে মেহমানকে সম্মান করা হয় মূলত তার প্রতি উত্তম আচরন ও উত্তম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে। যাকে বলা হয় আতিথেয়তা বা আপ্যায়ন। আর এই আতিথেয়তা বা আপ্যায়নকেই যিয়াফত বলা হয়ে থাকে, যা মূলত মেহমানের উদ্দেশ্য সম্মান।) করে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬১৩৬ ও মুসলীম মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৪২৪৩ বাবুয যিয়াফাত)
এই হাদিসে মত্বলকান বা শর্তহীনভাবে মানুষকে যিয়াফত করার অনুমতি রয়েছে।
❏ যে যতটুকু আমল করবে ততটুকুই পাবে! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: পবিত্র কোরআনে আছে: لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلاَّ مَا سَعى মানুষের জন্য অন্য কিছুই নেই তবে যা সে অর্জন করে। (সূরা নাজম: ৩৯ নং আয়াত)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, কেউ সওয়াব রেছানী করলে মৃত ব্যক্তির কোন লাভ হবেনা।
উত্তর: আপনার উক্ত আয়াতের যা বুঝছেন এই আয়াতে তা বলেনি। উক্ত আয়াতেلِلْإِنْسانِ এর لام টি মূলধন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ সওয়াব রেছানী করুক আর নাই করুক এতে মৃত ব্যক্তির অর্জিত মূল আমলের কমতি হবেনা। সর্বোপরি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এই আয়াত হচ্ছে ‘মানছুখ’ বা রহিত। যেমনঃ
𓈃 হাফিজুল হাদিস ও মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ عِكْرِمَةُ: كَانَ ذَلِكَ لِقَوْمِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى-
“হযরত ইকরিমা (رضي الله عنه) বলেন: ইহা হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) ও হযরত মূসা (عليه السلام) এর শরিয়তের জন্য প্রযোজ্য ছিল, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য প্রযোজ্য নয়।”
(ইমাম বাগভী: তাফছিরে মায়ালিমুত্তানজিল, ৫ম খন্ড, ১৫৮ পৃ:)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ -
𓈃 “যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী। আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দিব।”
(সূরা তুর: ২১ নং আয়াত)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দ্বারা আপনাদের উল্লেখিত আয়াতকে রহিত করা হয়েছে। যেমন
𓈃 বিভিন্ন তাফছিরের কিতাবে বর্ণিত আছে, রইছুল মুফাচ্ছেরীন ও ফকিহ্ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন,
رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهَا مَنْسُوخَةٌ بِقَوْلِهِ تَعَالَى: وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন: এই আয়াত মানছুখ বা রহিত হয়েছে আল্লাহ তা’লার এই বাণী দ্বারা,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
-“যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী। আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দিব।”
(তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০২ পৃ: তাফছিরে কুরতবী, ১৭তম জি: ৯০ পৃ: তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ২১৩ পৃ: তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৭ পৃ: তাফছিরে মায়ালেমুত্তানজিল, ৫ম খন্ড, ১৫৮ পৃ:)
𓈃 ইমাম আবু জাফর ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) ওফাত ৩১০ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:
وَذُكِرَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَالَ: هَذِهِ الْآيَةُ مَنْسُوخَةٌ -“ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন: এই আয়াত মানছুখ বা রহিত।” (তাফছিরে তাবারী, ২২তম খন্ড, ৮০ পৃ:)
𓈃 ইমাম আবু জাফর তাবারী (رحمة الله) সনদসহ এভাবে উল্লেখ করেছেন,
)أخرج أَبُو دَاوُد والنحاس كِلَاهُمَا فِي النَّاسِخ وَابْن جرير وَابْن الْمُنْذر وَابْن مرْدَوَيْه (حَدَّثَنِي عَلِيٌّ قَالَ: ثَنَا أَبُو صَالِحٍ قَالَ: ثَنِي مُعَاوِيَةُ، عَنْ عَلِيٍّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَوْلَهُ {وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى} قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ بَعْدَ هَذَا (وَالَّذِينَ آمَنُوا وَأَتْبَعْنَاهُمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ) فَأَدْخَلَ الْأَبْنَاءَ بِصَلَاحِ الْآبَاءِ الْجَنَّةَ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, মহান আল্লাহ তা’লার বাণী: {وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى} তিনি বলেনে, অত:পর আল্লাহ তা’লা এই আয়াত নাজিল করেন:
(وَالَّذِينَ آمَنُوا وَأَتْبَعْنَاهُمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ)
(সূরা তূর: ২১)
ফলে পিতার বদান্যতায় সন্তানগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(তাফছিরে তাবারী, ২২তম খন্ড, ৮০ পৃ: তাফছিরে দুর্বে মানছুর, ৭ম খন্ড, ৬৬২ পৃ: ইমাম বায়হাক্বী: আল এ’তেকাদ, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
সুতরাং এই আয়াত হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) ও হযরত মূসা (عليه السلام) এর শরিয়তের জন্য প্রযোজ্য ছিল, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ইহা প্রযোজ্য নয়। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এই আয়াত মানছুখ বা রহিত। তাই মানছুখ বা রহিত আয়াত দ্বারা দলিল দেওয়া মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। অতএব, একজন মু’মীনের নেক আমলের উছিলায় (সওয়াব রেছানীর মাধ্যমে।) আরেকজন মু’মীন উপকৃত হবে।
❏ সম্মিলীতভাবে সওয়াব রেছানী ও দোয়া করা যাবেনা! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির জন্য বিভিন্ন আমল করে সওয়াব রেছানী করার কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কিন্তু এরুপ আমল করে সম্মলিতভাবে ঈসালে সওয়াব ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা হয় কেন?
উত্তর: ইহা এ কারণেই করা হয় যে, অনেক লোক একত্রিত হয়ে দোয়া করলে ঐ দোয়ায় কবুল হওয়ার গ্যারান্টি রয়েছে। আর মু’মীনরা সব সময়ই চায় তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হোক। যেমন
❍ এ বিষয়ে হাদিস শরীফে আছে,
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ مُجَاهِدٍ الْبَصْرِيُّ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا شَدَّادٌ أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
-“হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যখন কোন সম্প্রদায় তাদের হাঁতের অগ্রভাগ আল্লাহর দরবারে কোন কিছু প্রার্থনার জন্য উচু করে, তখন আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে, যা প্রার্থনা করে তা দেওয়া।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬১৪২
・ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগির, হাদিস নং ১১৮৫৪
・ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২০০৮০
・ইমাম মানাভী: আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:
・মুখলেছিয়্যাত, হাদিস নং ২৮১৫
・ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১
・আত্ তানভির শরহে জামেউছ ছাগির, ৯ম খন্ড, ৩৯৬ পৃ:
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেছেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. -“ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন এবং ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।” (মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১)
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম মানাভী (رحمة الله) বলেন:
عَن سلمَان الْفَارِسِي وَرِجَاله رجال الصَّحِيح -“হযরত ছালমান ফারছী (رضي الله عنه) হতে, এর সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।” (আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:)
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে কুখ্যাত তাহকিক কারী নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেন: قلت: وهذا إسناد رجاله ثقات رجال (الصحيح) -“আমি (আলবানী) বলি: এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।” (ছিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৫৯৪৮)
সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়।
❍ ইমাম হাকেম ও ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন,
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُوسَى، ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ، ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، حَدَّثَنِي ابْنُ هُبَيْرَةَ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ، وَكَانَ مُجَابَ الدَّعْوَةِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ، وَيُؤَمِّنُ الْبَعْضُ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ
-“হযরত হাবীব ইবনে মাছলামাহ ফিহরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: একটি দল যখন একত্রিত হয়ে দোয়া করে এবং কতিপয় ব্যক্তি আমিন বলে, তখন নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৫৪৭৮
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৩৫৩৬ ইমাম মুনজেরী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১ম খন্ড, ২০৯ পৃ:
・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৩৬৭
・ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খন্ড, ২০০ পৃ:
・ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ২২৬ পৃ:
・ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪৭
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেন,
وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ -“এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ শুধু ‘ইবনে লাহিয়া’ ব্যতীত, আর সে হাছানুল হাদিস।” (মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস ন ১৭৩৪৭)
❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
يُوسُف بْن راشد، حدَّثنا أَحْمَد بْن عَبد اللهِ، قَالَ: حدَّثنا عِمران، يَعني ابن زَيد التَّغلِبي، قَالَ: حدَّثنا خَطّاب بْن عُمر، عَنِ الْحَسَن، عَنْ أَنس بْن مالك: خَرَجتُ مَعَ النَّبيِّ صَلى اللَّهُ عَلَيه وسَلم، مِنَ البَيتِ إِلَى المَسجِدِ، وقَومٌ فِي المَسجِدِ، رافِعُو أَيدِيهِم يَدعُونَ، قَالَ: تَرَى بِأَيدِيهِم ما أَرَى؟ فَقلتُ: وما بِأَيدِيهِم؟ قَالَ: بِأَيدِيهِم نُورٌ، قلتُ: ادعُوا اللَّه أَن يُرِينِيهِ، فَدَعا، فَأَرانِيهِ، فَأَسرَعَ، فَرَفَعنا أَيدِيَنا.
-“হযরত আনাস ইবনে আলেক (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে আমি ঘর থেকে মসজিদে গেলাম। সেখানে দেখলাম একদল লোক দুই হাত উত্তোলন করে দোয়া করছেন। রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, তোমরা কি দেখ তাদের হাতের মধ্যে কি যা আমি দেখছি? আনাস (رضي الله عنه) বলেন: তাদের হাতের মাঝে কি? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেন: তাদের হাতের মাঝে নূর। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য দোয়া করেন যেন আমরা ঐ নূর দেখতে পারি। অত:পর তিঁনি দোয়া করলেন ও আমরা নূর দেখলাম। ফলে আমরা হাত তোলে তাদের সাথে দোয়া করলাম।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম বুখারী: তারিখুল কাবীর, ৬৯২ নং রাবীর ব্যাখ্যায়)
এই হাদিস গুলো থেকে বুঝা যায়, অনেক লোক একত্রিত হয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া নিশ্চিৎ কবুল হয়।
❍ এ বিষয়ে শারিহে মুসলীম ইমাম নববী (رحمة الله) অপর হাদিসে উল্লেখ করেন,
عن قَتادَة التابعيّ الجليل الإِمام صاحب أنس رضي الله عنه، قال: كان أنسُ بن مالك رضي الله عنه إذا ختم القرآن جمع أهله ودعا.
-“জলীল কদর তাবেঈ ইমাম ও আনাস (رضي الله عنه) এর সঙ্গী হযরত কাতাদা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) যখন কোরআন খতম করতেন তখন পরিবার-পরিজনদের একত্রিত করতেন ও দোয়া করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম নববী: আল আযকার, ১০৭ পৃ:)
❍ ইমাম দারেমী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে সনদসহ এভাবে হাদিসখানা উল্লেখ করেন,
حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ، قَالَ: كَانَ أَنَسٌ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ، جَمَعَ وَلَدَهُ وَأَهْلَ بَيْتِهِ فَدَعَا لَهُمْ
-“হযরত ছাবেত (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করেন, হযরত আনাস (رضي الله عنه) যখন কোরআন খতম করতেন তখন তার সন্তান ও পরিবার বর্গকে একত্রিত করলেন এবং দোয়া করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানে দারেমী, হাদিস নং ৩৫১৭
・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭
・তাফছিরে সাঈদ ইবনে মানছুর, হাদিস নং ২৭
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬৭৪
・ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৭১৩
𓈃 ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন:
هَذَا هُوَ الصَّحِيحُ مَوْقُوفٌ -
“এই হাদিস মাওকুফ ও ছহীহ্।” (ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭)
𓈃 ইমাম নুরুদ্দিন হায়ছামী (رحمة الله) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ. -
“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন এবং এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত।” (ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৭১৩)
𓈃 লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন: إسناده صحيح. -“এর সনদ ছহীহ।” (ছিলছিলাতু আহাদিছি ছাহিহা, হাদিস নং ১৪২)
❍ এ বিষয়ে আরেক হাদিসে আছে:
وروى بإسناده الصحيح، عن مُجاهد قال: كانوا يجتمعون عند ختم القرآن يقولون: إن الرحمة تنزيل عند القرآن.
-“ছহীহ্ সনদে বর্ণিত আছে, হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন: লোকেরা কোরআন খতমের সময় একত্রিত হতেন এবং বলতেন এই সময় রহমত নাজিল হয়।” (ইমাম নববী: আল আযকার, ১০৭ পৃ:)
❍ এ বিষয়ে প্রিয় নবীজি (رحمة الله) এর আমল লক্ষ্য করুন,
أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ خُشَيْشٍ الْمُقْرِئُ بِالْكُوفَةِ، حدثنا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ الْقَطَّانُ الْبَلْخِيُّ، حدثنا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ أَبُو عَمْرٍو الْحَافِظُ الْعَبْدِيُّ الْبَغْدَادِيُّ بِالرَّمْلَةِ، حدثنا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، بِعَسْكَرِ مُكْرَمٍ، حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى الدُّولَابِيُّ، حدثنا أَبُو نُعَيْمٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) যখন কোরআন খতম করতেন তখন তাঁর আহলে বাইতকে একত্রিত করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৮)
দেখুন! আমলের শেষে প্রিয় নবীজি (ﷺ) , সাহাবী ও তাবেঈগণ দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া করতেন এবং ঐ দোয়া আল্লাহর হাবীব (ﷺ) কবুলের গ্যারান্টি দিয়েছেন। তাই যেহেতু একত্রিত হয়ে ও সমষ্ঠিগতভাবে দোয়া করলে কবুল হওয়ার গ্যারান্টি আছে সেহেতু অনেক লোক একত্রিত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোয়া করা হয়। অপরদিকে লোকেরা একত্রিত হলে তাদের মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) এর সুন্নাত। যেমনঃ
❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত করে।
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৮)
সুতরাং মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে ফাতেহা অনুষ্ঠান করা, দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হওয়া ও সামর্থ অনুযায়ী লোকদেরকে যিয়াফত করা তথা খাবার পরিবেশন করা সবই রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
❏ দিন তারিখ ঠিক করে অনুষ্ঠান করা যাবেনা! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: নির্দিষ্ট দিন তারিখ করে কোন ফাতেহা বা দোয়া অনুষ্ঠান করা ইহা কতটুকু সঠিক।
উত্তর: দিন তারিখ ঠিক করে কোন ভাল কাজের আয়োজন করা অবশ্যই বৈধ। বিয়ের সময় কি বলা হয়েছিল যে, কোন নির্দিষ্ট দিনে বিয়ে নয় বরং যেকোন দিন বিয়ে হবে? মাদ্রাসায় নির্দিষ্ট দিন তারিখ করেই সভা-সমাবেশ করা হয়, নির্দিষ্ট দিন তারিখ করেই পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট দিনেই পরিক্ষার ফলাফল ঘোষনা করা হয়। নির্দিষ্ট দিনেই হাদিসের দরছ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দিনে চাকরীতে জয়েন্ট করা হয় ও নির্দিষ্ট দিনে বেতন পাওয়া হয়। তাহলে কি নির্দিষ্ট দিনকে বাদ দিয়ে যে কোন দিনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে? প্রিয় নবীজি (ﷺ) সোমবার ও বৃহ:বার কে নির্দিষ্ট করেই রোজা রাখতেন, হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বৃহ:বারকে নির্দিষ্ট করেই ওয়াজ নছিহত করতেন। প্রতি বছরের শুরুর দিনকে নির্দিষ্ট করে প্রিয় নবীজি (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম উহুদ যুদ্ধের শদিহদের মাজার যিয়ারত করতেন।
❍ যেমন হাদিসটি লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا الْمُثَنَّى، قَالَ: ثنا سُوَيْدٌ، قَالَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ رَأْسِ الْحَوْلِ، فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ. قَالَ: وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ يَفْعَلُونَ ذَلِكَ
“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী (رحمة الله) বলেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন। অত:পর বলতেন: “আস-সালামু আলাইকুম বিমা ছাবারতুম ফানি’মা উকবা দারে”। তিনি বলেন: হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) , উমর (رضي الله عنه) ও উছমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・তাফছিরে তাবারী, হাদিস নং ২০৩৪৫,
・সূরা রা’দ এর ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফছিরে ছা’লাভী, ৫ম খন্ড, ২৮৭ পৃ:
・তাফছিরে নিছাপুরী, ২য় খন্ড, ২২৭ পৃ:
・তাফছিরে কুরতবী, ৯ম খন্ড, ৩১২ পৃ:
・তাফছিরে আবু ছাউদ, ৫ম খন্ড, ১৮ পৃ:
・মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩য় খন্ড, হাদিস নং ৬৭১৬
・তাখরিজু আহাদিছুল কাশ্শাফ, হাদিস নং ৬৫১
𓈃 এই হাদিসের রাবী مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ {মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত-তায়মী (رحمة الله)} একজন নির্ভরযোগ্য রাবী বা বর্ণনাকারী এবং বিখ্যাত তাবেঈ। যেমন, তাঁর ব্যাপারে নিচের বর্ণনা গুলো লক্ষ্য করুন:
𓈃 ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন,
مُحَمَّد بن إِبْرَاهِيم التَّيْمِيّ من ثِقَات التَّابِعين -“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তায়মী (رحمة الله)” বিশ্বস্ত তাবেঈগণের একজন।” (ইমাম যাহাবী: আল মুগনী ফিদ-দোয়াফা, রাবী নং ৫২০৩)
𓈃 আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (رحمة الله) বলেন,
قلت: وثقة الناس واحتج به الشيخان -“আমি (ইবনে হাজার আস্কালানী) বলছি: লোকেরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন।” (ইমাম আসকালানী: লিছানুল মিযান, ৫ম খন্ড, ২০ পৃ:)
𓈃 ইমাম ইজলী (رحمة الله) {ওফাত ২৬১ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,
محمد بن إبراهيم التيمي: مدني ثقة. -“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী মাদানী’ বিশ্বস্ত রাবী।” (ইমাম ইজলী: আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১৪৩২)
𓈃 সুতরাং ‘মুহাম্মদ ইব্রাহিম আত্ তায়মী (رحمة الله)’ এর রেওয়ায়েত ছহীহ্ হিসেবে স্বীকৃত। আর এই ছহীহ্ রেওয়ায়েত হতে জানা যায় যে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতেন, এমনকি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) , হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উছমান (رضي الله عنه) এরূপ আমল করেছেন।
আল্লাহর নবী (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামগণের এতকিছু নির্দিষ্ট দিনে করা স্বত্ত্বেও তারা কিভাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ করাকে আপত্বিজনক মনে করেন? নির্দিষ্ট একটি তারিখ না করলে কিভাবে লোকেরা এক জায়গায় একত্রিত হবে? ইহাত কোন লঙ্গরখানা নয় যে সারা বছর খাবার পরিবেশন করা হবে, লোকেরা যখনই আসবেন তখনই খাবার পরিবেশন করবেন! অতএব, নির্দিষ্ট দিন তারিখ করে কোন ভাল কাজের আয়োজন করা অবশ্যই জায়েয বা বৈধ।
❏ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে একত্রিত হওয়া ও যিয়াফত করা যাবেনা! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: মৃতের বাড়িতে লোকজন জমায়েত না হওয়ার ব্যাপারে ছহীহ্ হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ بَابٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ، قَالَ: كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَاحَةِ
-“হযরত জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মৃতের দাফনের পরে মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠানোকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভূক্ত করতাম।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬৯০৫ সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬১২ ই: ফা:)
দেখুন! মৃত ব্যক্তি বাড়িতে একত্রিত হওয়া ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা সাহাবীগণ বিলাপের সাথে তুলনা দিয়েছেন ও অন্তর্ভূক্ত করেছেন, আর বিলাপ শরিয়েতে নিষেধ। তাহলে যিয়াফত বা চল্লিশা করা জায়েয হয় কিভাবে?
জবাব: প্রথমত মুসনাদু আহমদের সনদটি নিম্নমানের জয়ীফ যা হুজ্জত বা দলিল হওয়া উপযুক্ত নয়। কারণ এর সনদে
نَصْر بْن باب، أبو سَهْل الخُراسانيّ
(নাছর ইবনে বাব আবু সাহল খুরাছানী) নামক রাবী রয়েছে সে চরম পর্যায়ের সমালোচিত। যেমন এই রাবীর ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য লক্ষ্য করুন,
وَقَالَ ابْنُ مَعِينٍ: لَيْسَ بِشَيْءٍ. وَقَالَ ابْنُ حِبّان: لا يُحْتَجّ بِهِ. وقال الْبُخَارِيّ: يرمونه بالكذب. وقال غير واحد: متروك.
-“ইমাম ইবনে মাঈন বলেন: সে কিছুই নয়। ইমাম ইবনে হিব্বান বলেছেন: তার উপরে নির্ভর করা যায়না। ইমাম বুখারী বলেন: সে মিথ্যা দ্বারা প্রভাবিত হত। একাধিক ইমামরা বলেছেন: সে পরিত্যাজ্য।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩২৮)
𓈃 হাফিজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাছির (رحمة الله) এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقال ابن معين: ليس بثقة. وقال مَرَّةً: ليس بشيء. وقال مَرَّةً: كذَّاب خبيثٌ وقال البخاري: يَرْمُونه بالكذب. وقال مَرَّةً: تَكَلَّمُوا فيه. وقال أبو زرعة: لا ينبغي أن يُحَدَّث عنه. وقال أبو حاتم والنسائي: متروك. وقال ابن حبان: بَطُل الاحتجاج به. وقال الدارقطني: ضعيف. وقال ابن عدي: وله غير ما ذكرتُ، وهو مع ضَعْفِه يُكْتَبُ حديثه.
𓈃 “ইমাম ইবনে মাঈন বলেছেন: সে বিশ্বস্ত নয়। আরেকবার বলেছেন: সে কিছুই নয়। আরেকবার বলেছেন: সে মিথ্যাবাদী খবিছ।
𓈃 ইমাম বুখারী বলেছেন: সে মিথ্যা দ্বারা প্রভাবিত হত, আরেকবার বলেছেন: তার ব্যাপারে সমালোচনা আছে।
𓈃 ইমাম আবু যুরাআ বলেছেন: তার থেকে হাদিস বর্ণনা করা উচিৎ নয়।
𓈃 ইমাম আবু হাতিম ও নাসাঈ বলেছেন: সে পরিত্যাজ্য।
𓈃 ইবনে হিব্বান বলেছেন: তার উপর নির্ভর করা বাতিল।
𓈃 ইমাম দারে কুতনী বলেছেন: সে দুর্বল।
𓈃 ইমাম ইবনে আদী বলেছেন: তার কথা দুর্বল ভাবে তার হাদিস লিখেছি।”
(ইবনে কাছির: তাকমিল ফি জারহে ওয়া তাদিল, রাবী নং ৫৬৯)
দ্বিতীয়ত, ইহার সনদে আরেকজন রাবী বা বর্ণনাকারী আছে যার নাম إِسْمَاعِيْلُ بنُ أَبِي خَالِدٍ (ইসমাঈল ইবনে আবী খালিদ) যার ব্যাপারে ইমাম ছিয়তী (رحمة الله) তার ‘আসমাউল মুদাল্লিছীন’ কিতাবে এবং ইমাম আসকালানী তার ‘তাবাকাতুল মুদাল্লেছীন’ কিতাবে মুদাল্লিছ রাবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সে মূলত চতুর্থ তবকার মুদাল্লিছ রাবী। তিনারা স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেন:
ذكره النسائي وغيره بالتدليس.
𓈃 “ইমাম নাসাঈ ও অন্যান্য ইমামরা তাকে মুদাল্লিছ রাবীর অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”
𓈃 সুনানু ইবনে মাজাহ এর বর্ণনাকারী هُشَيْمُ بنُ بَشِيْرِ بنِ أَبِي خَازِمٍ (হুশাইম ইবনে বাশির ইবনে আবী খাজেম) বিশ্বস্ত তবে ইমামদের কাছে সে মুদাল্লিছ রাবী।
𓈃 যেমন,
أنَّهُ صَاحِبُ تَدْلِيسٍ كَثِيْرٍ -
“নিশ্চয় তিনি প্রচুর তাদলিছ করার একজন” বলে উল্লেখ করেছেন।
এই দৃষ্টিতে হাদিসটি আপত্তিমুক্ত নয়। আর সকলেই অবগত আছেন, মুদাল্লিছ রাবীর عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণিত হাদিস হুজ্জত হয়না, যতক্ষন না এর সমর্থনে অন্য রেওয়ায়েত না পাওয়া যায়। এখানে হুশাইম ও ইসমাঈল দুই জনেই হাদিসটি عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণনা করেছেন। দেখুন
𓈃 সনদটি:
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ بَابٍ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ قَيْسٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ،
অতএব, মুদাল্লিছ রাবীর عَنْعَنْ আন আন করে বর্ণিত হাদিস হুজ্জত বা দলিল হয়না।
দ্বিতীয়ত: এই হাদিসটি ৪দিন, ৫দিন, ৪০ দিন বা ৩দিনের পরে যিয়াফত অনুষ্ঠানকে নিষেধ করেনা। কেননা এই হাদিসটি মূলত দাফন করার পর পর খাবার পরিবেশনের নিষেধাজ্ঞা করেছে। যেমন
❍ উক্ত হাদিসটিতেই উল্লেখ রয়েছে,
كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنِيعَةَ الطَّعَامِ بَعْدَ دَفْنِهِ مِنَ النِّيَاحَةِ
-“মৃতের দাফনের পরে মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠানোকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভূক্ত করতাম।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬৯০৫)
সুতরাং এই হাদিস মূলত মৃতের লাশ দাফন করার পর পর এরুপ করা অপছন্দনীয়। ৪দিন, ৪০ দিনের সময় যিয়াফত নিষেধ করেনা।
তৃতীয়ত: এই হাদিস ছহীহ্ মারফূ হাদিসের মুখালেফ বা বিপরীত। কেননা প্রিয় নবীজি (ﷺ) মৃতের বাড়িতে খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে আদেশ প্রদান করেছেন।
❍ যেমন ছহীহ্ হাদিসটি লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ: لَمَّا جَاءَ نَعْيُ جَعْفَرٍ حِينَ قُتِلَ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اصْنَعُوا لِآلِ جَعْفَرٍ طَعَامًا، فَقَدْ أَتَاهُمْ أمْرٌ يَشْغَلُهُمْ أَوْ أتَاهُمْ مَا يَشْغَلُهُمْ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (رضي الله عنه) বলেন, যখন জাফর ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) এর শহিদ হওয়ার সংবাদ আসল, তখন রাসূলে করিম (ﷺ) বললেন: তোমরা জাফরের পরিবারের প্রতি খাবার পরিবেশন কর। কেননা তাদের উপর শোকের মছিবত এসেছে।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬১০
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস, হাদিস নং ৩১৩২
・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৩৭৭
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৭৫১
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৭০৯৬
・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৯৯৮
・মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৬৮০১
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানু ছাগীর, হাদিস নং ১১৩৯
・মুসনাদু বাজ্জার, হাদিস নং ২২৪৫
・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২০৪
・মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৬৬৫
・মুসনাদে ইসহাক্ব ইবনে রাহবিয়া, হাদিস নং ২১৪৪
・মুসনাদে হুমাইদী, হাদিস নং ৫৪৭
・সুনানু দারে কুতনী, হাদিস নং ১৮৫০
・ইমাম বাগভী: শারহু সুন্নাহ, হাদিস নং ১৫৫২
এই হাদিসে স্পষ্ট মৃতের পরিবারের প্রতি খাবার পরিবেশন করা নিষেধ তো দূরের কথা বরং এরূপ করা দয়াল নবীর আদেশ। এমনকি স্বয়ং রাসূলে করিম (ﷺ) মৃতের বাড়িতে গিয়েছেন ও খাবার পরিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (ﷺ) সমর্থন করেছেন।
❍ যেমন ছহীহ্ হাদিসে আছে,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى
-“জনৈক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ) কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুরছিল তাদের বলেন: পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখোন থেকে ফিরার পর জনৈক মহিলার আহবানকারী নবী পাক (ﷺ) কে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে গেলেন ও তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী করিম (ﷺ) খেতে শুরু করলে অন্যরাও খেতে শুরু করেন। তখন আমাদের মুরুব্বিরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূল (ﷺ) এক লোকমা মুখে দিয়ে তা শুধু চিবাচ্ছেন কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ গোস্ত এমন এক বকরীর যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য বাকী নামক বাজারে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয় মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেন, এ গোস্ত বন্দিদের খাইয়ে দাও।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩৩৩২ بَابٌ فِي اجْتِنَابِ الشُّبُهَاتِ, ই: ফা: হাদিস নং ৩২৯৯
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮২৫ بَابُ كَرَاهِيَةِ مُبَايَعَةِ مَنْ أَكْثَرُ مَالِهِ مِنَ الرِّبَا أَوْ ثَمَنِ الْمُحَرَّمِ
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৯৪২
・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ২৪৩৪
・ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ:
𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানীও বলেছেন,
وهذا سند صحيح كما قال الحافظ فى التلخيص -“এই সনদ ছহীহ্ যেমনটি হাফিজ ইবনু হাজার তার ‘তালখিছ’ গ্রন্থে বলেছেন।” (ইরইয়াউল গালিল, ৩য় খন্ড, ১৯৬ পৃ:)
এই হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমাণিত হয়, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিজেই মৃত ব্যক্তির আহল-বর্গের নিকট থেকে খাবার গ্রহণ করেছেন এবং সাহাবীরাসহ লোকেরা ইহা খাবার গ্রহণ করেছেন এতে রাসূলে পাক (ﷺ) নিষেধ করেননি। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফতের দাওয়াত গ্রহণ করা রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাত এবং ঐ যিয়াফতে খাবার গ্রহণ করাও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত। সুতরাং ‘ফেলে রাসূল’ তথা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর কর্ম দ্বারা যিয়াফত গ্রহণ করা প্রমাণিত হল।
বলুন! উসূল মোতাবেক দুর্বল ও সমালোচিত সূত্রে বর্ণিত জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর বক্তব্য অগ্রগন্য নাকি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর আদেশ, আমল ও সমর্থন অগ্রগন্য? রাসূলে পাক (ﷺ) এর কোন আমল কি কোন সাহাবীর বক্তব্য দ্বারা রহিত করা যায়? সাহাবায়ে কেরাম যিয়াফতের খাবার আহার করছেন অথচ প্রিয় নবীজি (ﷺ) নিষেধ করলেন না, এতে কি প্রমাণ হয়না যিয়াফতের গ্রহণ করা জায়েয? স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) নিজেই মৃত ব্যক্তির পরিবার থেকে যিয়াফতের খাবার আহার করলেন, এতে কি প্রমাণ হয়না যে যিয়াফত গ্রহণ করা জায়েয? তাই ‘জরীর ইবনে আব্দুল্লাহ’ এর থেকে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হাদিস রাসূলে পাক (ﷺ) ও অন্যান্য সাহাবীগণের আমলে বিপরীত হওয়ার কারণে আমল যোগ্য হবেনা।
❏ নিয়াহাতের কারণে কবরে আযাব হয়! ইহার ব্যাখ্যা
النِّيَاحَة নিয়াহাতের কারণে কবরে আযাব হয়! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: হাদিস শরীফে আছে, المَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ
-“মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা-যিয়াফত করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।” (ছহীহ্ বুখারী)
এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা-যিয়াফত করলে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষতি ও আমাদের জন্য নাজায়েয।
উত্তর: এই হাদিসে বলা হয়েছে মৃত ব্যক্তির জন্য النِّيَاحَة (নিয়াহাত) করলে আযাব দেওয়া হবে। এখন জানা উচিৎ এই النِّيَاحَة (নিয়াহাত) অর্থ কি? আরবী-বাংলা ডিকশনারী খুলে দেখুন النِّيَاحَة (নিয়াহাত) এর অর্থ হচ্ছে ‘বিলাপ করা, উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা ইত্যাদি’। চল্লিশা-যিয়াফতের কথা এখানে বলা হয়নি। এই হাদিসে النِّيَاحَة (নিয়াহাত) এর অর্থ যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা তা এই হাদিসের শেষে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে।
❍ যেমন ছহীহ্ বুখারীর সম্পূর্ণ হাদিসটি লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: المَيِّتُ يُعَذَّبُ فِي قَبْرِهِ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ تَابَعَهُ عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، وَقَالَ آدَمُ: عَنْ شُعْبَةَ: المَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الحَيِّ عَلَيْهِ
“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) তদীয় পিতা উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য কৃত বিলাপের বিষয়ের উপর কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। আব্দুল আলা (رحمة الله) বলেন... কাতাদা (رحمة الله) হতে বর্ণনায় আব্দান (رحمة الله) এর অনুস্বরণ করেছেন। আদম (رحمة الله) শুবা (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য জিবীতদের কান্নার কারণে আযাব দেওয়া হয়।”
তথ্যসূত্রঃ
・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ১২৯২ তাওহীদ ফা:
・ছহীহুল বুখারী হাদিস নং ১২৯২ ই: ফা:
・ছহীহ্ বুখারী হাদিস নং ১২১৫, আধুনিক প্রকাশনী, ১২০৭
একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে।
❍ যেমন লক্ষ্য করুন:
وَحَدَّثَنَا أَبُو الْحَسَنِ الْعَلَوِيُّ، ثنا أَبُو حَامِدٍ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ الْحَافِظُ ثنا أَحْمَدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الدُّولَابِيُّ، ثنا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، ثنا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَفْصٍ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ
“আবু বকর ইবনে হাফছ বলেন আমি ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে শুনেছি তিনি উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৭১৬৫ ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ২১৯৫)
❍ একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ
“হযরত ইবনে উমর তদীয় পিতা উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীত পরিবারের (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ১৮৪৮ জামে তিরমিজি, হাদিস নং ১০০২)
❍ একই হাদিস হযরত উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ أَنَّ عُمَرَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ
-“হযরত সাঈদ ইবনে মুসাঈব হতে বর্ণিত, নিশ্চয় উমর (رضي الله عنه) বলেছেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীত পরিবারের (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৩১৫)
❍ একই হাদিস হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে স্পষ্ট উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَخِيهِ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ৬১৮২ ছহীহ্ মুসলীম, হাদিস নং ২১৯৫)
❍ একই হাদিস হযরত আবু মূসা আশয়ারী (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، عَنْ أَسِيدِ بْنِ أَبِي أَسِيدٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ عَلَيْهِ
-“মূসা ইবনে আবী মূসা আশয়ারী তদীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৯৭১৬ সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৯৪)
❍ একই হাদিস হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ صُبَيْحٍ قَالَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ سِيرِينَ قَالَ: ذَكَرُوا عِنْدَ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ فَقَالُوا: كَيْفَ يُعَذَّبُ الْمَيِّتُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ؟ فَقَالَ عِمْرَانُ: قَدْ قَالَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-“আব্দুল্লাহ ইবনে ছুবাইহ বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন কে বলতে শুনেছি, হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন (رضي الله عنه) এর সামনে বলা হল: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে। লোকেরা তখন বলল: কিভাবে জিবীতদের কান্নায় আযাব দেওয়া হবে? তখন ইমরান (رضي الله عنه) বললেন: ইহা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৯৯১৮ সুনানু নাসাঈ, হাদিস নং ১৮৪৯ মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১২১১৬)
❍ একই হাদিস হযরত ছামুরা (رضي الله عنه) থেকে অন্য জায়গায় বর্ণিত আছে সেখানে উচ্চস্বরে কান্নার কথাই উল্লেখ আছে। যেমন লক্ষ্য করুন:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ صَالِحِ بْنِ الْوَلِيدِ النَّرْسِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو خَلِيفَةَ، وَزَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ، قَالَا: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَا: ثنا عَبْدُ الصَّمَدِ بْنُ عَبْدِ الْوَارِثِ، ثنا عُمَرُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمَيِّتُ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَيِّ
-“হযরত ছামুরা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তির জন্য জিবীতরা (উচ্চস্বরে) কাঁদলে করলে তার কবরে ইহার কারণে আযাব দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬৮৯৬)
অতএব, প্রমাণিত হল এই হাদিস চল্লিশা-যিয়াফতের কথা বলা হয়নি বরং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করার কথা বলা হয়েছে যাকে বিলাপ বলা হয়। এ কারণেই মৃতের জন্য বিলাপ করলে কবরে আযাব দেওয়া হয়।