অল্পে সন্তুষ্টিতে সম্মান রয়েছে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে সাদা-সিধে পথ অবলম্বন করে সাধারণ খাবার ও পোষাকে তুষ্ট থাকে, তার দৌলতের প্রয়োজন হয় না ধনী ব্যক্তির প্রয়োজন হয় না। সম্পদের লোভ করা ঠিক নয়। এতে করে সব সময় তার সম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্য চেপে বসে। যে এতে আক্রান্ত হয় সে কখনো পরিতৃপ্ত হয় না। সর্বদা ধন অর্জনের ধ্যান তার ঘাড়ে চেপে বসে থাকে। অবশেষে তার মৃত্যু এসে পড়ো যেমন হযরত মাওলায়ে কায়িনাত, আলী মুরতাজা শেরে খোদা আলী (رضي الله عنه) বলেন: عزمن قنع وذل من طمع অর্থাৎ- “যে অল্পে তুষ্ট হল, সে সম্মান লাভ করল আর যে লোভ লালসা করল, সে অপমানিত হল।” (রূহানী হিকায়াত, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, রূমী পাবলিকেশন্স, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর)
দুনিয়াকে ত্যাগ করো
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) এর বর্ণনা হচ্ছে, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) আমাকে ইরশাদ করেছেন: “হে আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) যখন তোমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে তখন একটি রুটি ও এক পেয়ালা পানি দিয়ে জীবন যাপন করো আর বলে দাও যে, আমি দুনিয়া ও দুনিয়াবাসীকে ত্যাগ করছি।”(আল কামিল ফী দোয়াফাইর রিজাল, ৮ম খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা।
অন্যের সম্পদ থেকে বিমুখ হয়ে যাও
হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক গ্রাম্য ব্যক্তি তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর সামনে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত অসিয়ত করুন! ইরশাদ করলেন: “যখন নামায পড় তখন জীবনের শেষ নামায (মনে করে) পড় ও কখনো এমন কথা বলো না, যার জন্য কালকে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয় এবং মানুষের নিকট যা কিছু আছে তা থেকে বিমুখ হয়ে যাও।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪১৭১)
কারো কিছু না নেয়াই উত্তম
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অন্যের সম্পদের আশায় থাকা। যেমন সে আমাকে খুব ভালবাসে। নিজেই আমাকে প্রস্তাব দেয় যে, যখনই কিছু প্রয়োজন হয়, বলে দিও। এজন্য কখনো কিছু প্রয়োজন হলে তার কাছ থেকে চেয়ে নেব, সে কখনো না বলবে না ইত্যাদি আশা সবই মূল্যহীন। কারণ মানুষের মন পরিবর্তন হতে থাকে। মনে রাখবেন! “দাতা” গ্রহীতা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অবশ্যই যদি কেউ কিছু দিতে চায় আর আপনি গ্রহণ না করেন তবে অবশ্যই আকৃষ্ট হবে। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, “আরাম-আয়েশ কয়েক মুহুর্তের, যা অতিবাহিত হয়ে যাবে। আর কিছুদিনের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে। নিজের জীবনে অল্পে তুষ্টির পথ অবলম্বন কর, সন্তুষ্ট থাকবে। আর নিজের আশা-আকাঙ্খা পরিত্যাগ কর, স্বাধীনভাবে জীবন কাটবে। অনেক সময় স্বর্ণ বা ইয়াকুত ও মুক্তার কারণে মৃত্যু (ডাকাত দ্বারা) আসে।” (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
কারো মুখাপেক্ষী হয়ো না
হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ওয়াসি (رحمة الله) শুকনো রুটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে খেতেন আর বলতেন, “যে ব্যক্তি এর উপর সন্তুষ্ট থাকে, সে কারো মুখাপেক্ষী হয় না।” (প্রাগুক্ত, ২৯৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
পেটতো এক বিঘত পরিমাণই
হযরত সায়্যিদুনা সামীত বিন আজলান (رحمة الله)م বলেন: হে মানব! তোমার পেট খুব ছোট। অর্থাৎ-শুধুমাত্র এক বিঘত পরিমাণ দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, অতএব সেটা তোমাকে কেন দোযখে নিয়ে যাবে? কোন জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সম্পদ কী? তিনি জবাব দিলেন, বাহিক্যভাবে ভাল অবস্থায় থাকা, আভ্যন্তরীনভাবে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ও যা কিছু মানুষের কাছে আছে তা থেকে নিরাশ হওয়া।” (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৯৮)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, তখন তার দু’টি অভ্যাস জোয়ান (যুবক) হয়ে যায় (আর তা হল) সম্পদের লোভ ও বয়সের লোভ।” (সহীহ মুসলিম, ৫২১ পৃষ্ঠা, হাদীস-১০৪৭)
শুধুমাত্র কবরের মাটি দিয়েই পেট ভর্তি হবে
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম -(ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যদি মানুষের জন্য সম্পদের দুইটি উপত্যকা হয় তবে তারা তৃতীয় উপত্যকার আশা করবে, আর মানুষের পেটকেতো শুধুমাত্র মাটিই ভরে দিতে পারে। আর যে ব্যক্তি তাওবা করে, আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করেন।” (সহীহ মুসলিম, ৫২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১০৫০)
সেট জী কো ফিকর থী এক্ এক্ কে দশ দশ কীজিয়ে,
মওত আ-পৌহছি কেহ মিস্টার জান ওয়াপিছ কীজিয়ে।
(৭৯) একশত রুটি হাফিযুল হাদীস
হযরত সায়্যিদুনা হাজ্জাজ বাগদাদী (رحمة الله)م যখন ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের জন্য সফরে বের হচ্ছিলেন তখন তাঁর সম্মানিতা মাতা (رحمة الله)م একশত নানরুটি একটি মাটির পাত্রে ভর্তি করে তাঁর সাথে দিলেন। তিনি মহান মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা শাবাবা (رحمة الله) এর বরকতময় দরবারে হাযির হয়ে ইলমে হাদীস পড়ায় ব্যস্ত হলেন। রুটিতো আম্মীজান দিয়েই দিয়েছিলেন। তিনি (رحمة الله)م তরকারীর-ব্যবস্থা নিজেই করলেন আর ঐ তরকারীও এমন, যা শত শত বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পরও সর্বদা তাজাই তাজা। আর বরকত এমন যে, কখনো এতে কমতিও হল না। ঐ আশ্চর্যজনক তরকারী কী? দজলা নদীর পানি। প্রতিদিন একটি নান রুটি দজলা নদীর পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নিতেন, আর দিন-রাত অত্যন্ত চেষ্টার সাথে সবক পড়তে থাকেন। যখন ঐ একশত নানরুটি শেষ হয়ে গেল তখন অপারগ হয়ে সম্মানিত উস্তাদ থেকে বিদায় নিতে হল।” (তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ২য় খন্ড, ১০০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আগের যুগে আমাদের উলামায়ে কিরাম رحمهم الله تعالى দ্বীনি জ্ঞানার্জন করার জন্য কিরূপ ত্যাগ স্বীকার করতেন। আহ! আজকের যুগ যে, থাকা-খাওয়ার সুবিধা সহকারে দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়, তবুও মানুষ পড়ার জন্য প্রস্তুত নেই। দ্বীনি জ্ঞানার্জন করাতে নিশ্চয় উভয় জগতের অনেক কল্যাণ রয়েছে। মনে করুন, যদি কোন মাদ্রাসা বা জামিয়াতে স্থায়ীভাবে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা না হয় তবে দা’ওয়াতে ইসলামীর যে কোন মাদানী তরবিয়্যাত গাহতে কমপক্ষে ৬৩ দিনের মাদানী তরবিয়্যাতী কোর্স হলেও করে নিন। মাদানী তরবিয়্যাতী কোর্সেও কি চমৎকার বাহার। যেমন-
(৮০) এলার্জি ঠিক হয়ে গেল
এক ইসলামী ভাইয়ের অনেকটা এরকম বর্ণনা হচ্ছে, “আমার শরীরে এলার্জি ছিল। রোগ ও ঠান্ডায় ভীষণ কষ্ট হত। এছাড়া যখন বৃষ্টি হত তখন আমি ব্যথার তীব্রতায় পানি ছাড়া মাছের ন্যায় ছপফট করতাম। আমাকে এক আশিকে রাসুল দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে থেকে তারবিয়্যাতী কোর্স করার পরামর্শ দিলেন। তাই দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায বাবুল মদীনা করাচীর ফয়যানে মদীনাতে ২০০৪ সালের ১৯ নভেম্বরে শুরু হওয়া ৬৩ দিন ব্যাপী তারবিয়্যতী কোর্সে ভর্তি হলাম। আমি অবাক হলাম যে, অনেক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো ও অনেক টাকা-পয়সা খরচ করার পরও এলার্জির যে বিষাক্ত রোগ অনেক দিন থেকে শেষ হওয়ার কোন নাম গন্ধও নেই, তা আশিকানে রাসুলদের সংস্পর্শে থেকে ৬৩ দিনের তরবিয়্যাতী কোর্স করার বরকতে দূর হয়ে গেল।
দা’ওয়াতে ইসলামী কি কায়্যুম, দো-নো জাহা মে মচ্ যা-য়ে ধূম, ইছপে ফিদা হো বাচ্চা বাচ্চা ইয়া আল্লাহ্ মেরি ঝুলি ভরদে।
তরবিয়্যাতী কোর্স কি?
الحمد لله عز وجلআশিকানে রাসুলদের সংস্পর্শে ৬৩ দিনের তরবিয়্যাতী কোর্স আখিরাতের জন্য এরূপ লাভজনক যে, এতে যা কিছু শিক্ষা পাওয়া যায় সেটার ব্যাপারে বিস্তারিত জানার পর সম্ভবত দ্বীনের প্রতি অনুরাগী প্রতিটি মুসলমান এটা আকাঙ্খা করবে যে, হায়! এমন যদি হত! আমারও ৬৩ দিনের তরবিয়্যাতী কোর্স করার সৌভাগ্য অর্জন হত।
বাবুল মদীনা ছাড়াও অন্যান্য দেশে ও শহরে তরবিয়্যাতী কোর্সের ধারাবাহিকতা চালু রয়েছে। এতে ঐ ধরনের অনেক জ্ঞান অর্জিত হয় যা শিখা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক বোধসম্পন্ন মুসলমানের জন্য ফরয। দ্বীনি জ্ঞানার্জনের অগণিত ফযীলত রয়েছে। যেমন তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে (দ্বীনের) জ্ঞানার্জন করল, এটা তার পূর্বের গুনাহ্সমূহের কাফ্ফারা হয়ে যায়।” (জামি তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬৫৭) কাফন ও দাফন, জানাযার নামায ও দুই ঈদের নামাযের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাদানী কায়িদার মাধ্যমে মাখরাজ সহকারে শুদ্ধভাবে কুরআনে করীম শিক্ষা দেয়া হয় ও কুরআনে কারীমের শেষ ২০টি সূরা মুখস্ত ও সুরাতুল মূলকের অনুশীলন করানো হয়। আর কুরআনে কারীম শিখার ফযীলত সম্পর্কে কী বলব! যেমন-
বাচ্চাকে নাযারা কুরআন পড়ানোর ফযীলত
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ)ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি নিজের সন্তানকে কুরআনে কারীম তিলাওয়াত শেখায়, এর কারণে তার আগে পরে সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়াহয়।” (মাজমাউয্যাওয়ায়িদ, ৭ম খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১২৭১) তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত(ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি যৌবনে কুরআন শিক্ষা করে, কুরআন তার মাংস ও রক্তে মিশে যায় আর যে এটা বৃদ্ধ বয়সে শিখে সে কুরআন বারবার ভুলে যায় এবং তা সত্ত্বেও সে এটা ত্যাগ করে না তবে তার জন্য দুইটি সাওয়াব।” (কানযুল উম্মাল, ১ম খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৩৭৮)
তরবিয়্যাতী কোর্সে চরিত্রের প্রশিক্ষণ
তরবিয়্যাতী কোর্সে চারিত্রিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে এসব বিষয়েরপ্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া হয়। (১) সত্যবাদিতা, (২)সহনশীলতা, (৩) ধৈর্য, (৪) নম্রতা, (৫) ক্ষমা প্রদর্শন, (৬) কথা-বার্তা বলার ধরণ, (৭) গীবতের ধ্বংসলীলা ও (৮) ঘরে মাদানী পরিবেশ সৃষ্টির নিয়ম ইত্যাদি। মাদানী কাফেলার জাদওয়াল (রুটিন)-এর উপর আমল করিয়ে মাদানী কাফেলা প্রস্তুত করার নিয়ম, দরস, বয়ান, এলাকায়ি দাওরা বারায়ে নেকীর দাওয়াত এছাড়া বিশেষতঃ দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের জান “ইন্ফিরাদী কৌশিশ” এর ধরণ, মাদানী ইনআমাতের কার্যবিধি, নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়। তরবিয়্যাতী কোর্সের সময় কিছুদিন পরপর তিন দিনের জন্য এবং কোর্স শেষ হওয়ার পূর্বে ১২ দিনের জন্য আশিকানে রাসুলদের মাদানী কাফেলায় সফর করার সৌভাগ্যও লাভ হয়। ১২ দিনের মাদানী কাফেলা থেকে ফেরার পর একদিন পরীক্ষার প্রস্তুতি, দ্বিতীয় দিন পরীক্ষা ও তৃতীয় দিন বিদায়ী দোয়াএবং সালাত ও সালামের সাথে ৬৩ দিনের তরবিয়্যাতী কোর্স শেষ হয়ে যায়। তরবিয়্যতী কোর্সের যে বিষয়গুলো বর্ণনা করা হয়েছে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কিছুর শিক্ষা পাওয়া যায়। আর আশিকানে রসুলের সংস্পর্শের নেয়ামত পাওয়া যায়। তরবিয়্যাতী কোর্সের কল্যাণে অনেক বিপথগামী মানুষ নামাযী ও সত্যিকার মুসলমান হয়ে বিদায় নেন এবং সমাজে মর্যাদা লাভ করেন। সুতরাং যার সুযোগ হয়, তার অবশ্যই তরবিয়্যাতী কোর্সের মাধ্যমে দ্বীনি জ্ঞানার্জন করে নেয়া উচিত। আল্লাহ্ তাআলার প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর শিক্ষণীয় বাণী হচ্ছে, “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি আফসোস হবে তার, যে দুনিয়াতে (দ্বীনি) জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেল কিন্তু সে অর্জন করল না এবং ঐ ব্যক্তির হবে, যে জ্ঞানার্জন করল আর তার থেকে শুনে অন্যরা (তা আমল করে) লাভবান হল কিন্তু সে নিজে (তার জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে) লাভবান হল না। (আল জামিউস সগীর, ৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১০৫৮) যারা পরিপূর্ণ ৬৩ দিন সময় দিতে পারবেন না, তার মাদানী মরকয-এ যোগাযোগ করুন। তাদের জন্য অল্পদিনেরও ব্যবস্থা হতে পারে।
(৮১) একের বিনিময়ে দশ
হযরত সায়্যিদুনা আবূ জাফর বিন খাত্তাব (رضي الله عنه) বলেন: আমার দরজায় এক ভিক্ষুক এসে কিছু চাইল, আমি স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম: “তোমার কাছে কিছু আছে?” জবাব দিল, “৪টি ডিম আছে।” বললাম: “ভিক্ষুককে দিয়ে দাও।” সে দিয়ে ফেলল। ভিক্ষুক ডিম পেয়ে চলে গেল। এর কিছু সময় পর, আমার এক বন্ধু খাঁচা ভর্তি ডিম পাঠাল। আমি তাকে (স্ত্রীকে) জিজ্ঞাসা করলাম: “তাতে কতগুলো ডিম আছে?” তিনি বললেন: “ত্রিশটি”। আমি বললাম: “তুমি তো ফকিরকে ৪টি ডিম দিয়েছিলে, এ ত্রিশটি কোন হিসাবে আসল! বলল: “ত্রিশটি ঠিক আছে আর দশটি ভাঙ্গা।” হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আল্লামা ইয়াফিঈ ইয়ামানী (رحمة الله)م বলেন: অনেক হযরত এ ঘটনা সম্পর্কে এটা বর্ণনা করেন যে, ভিক্ষুককে যে ডিম দেয়া হয়েছিল তাতে তিনটি ডিম ঠিক ও একটি ভাঙ্গা ছিল। আল্লাহ্ তাআলা প্রতিটি ডিমের বিনিময়ে দশটি করে দান করেছেন। ভাল বিনিময়ে ভাল ও ভাঙ্গার বিনিময়ে ভাঙ্গা। (রাওযুর রিয়াহীন, ১৫১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার রহমতের প্রতি উৎসর্গ হোন! তিনি মুসলমানদেরকে পরকালেতো প্রতিদান দেবেনই, কখনো দুনিয়াতেও দান করেন আর অনেক সময় কাউকে খোলা চোখে দেখান আর এতে তার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। যেমন- এইমাত্র উপরোল্লিখিত ঘটনায় আপনারা লক্ষ্য করলেন, হাতোহাত একের বিনিময়ে দশগুন ডিম পাওয়া গেল। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন! من جآء با لجسنت فله عشر امثالها
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:যে ব্যক্তি একটা সৎকর্ম করবে, তবে তার জন্য তদানুরূপ দশগুণ রয়েছে। (পারা-৮, সূরা-আনআম, আয়াত-১৬০)
এ আয়াতে মুবারাকার ভিত্তিতে সাদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رضي الله عنه) বলেন: অর্থাৎ যে একটি সৎকাজ করবে তাকে দশটা সৎকাজের প্রতিদান দেয়া হবে আর এটা চূড়ান্ত সীমা নির্ধারণের পদ্ধতি অনুসারে নয়; বরং আল্লাহ্ তাআলা যাকে যত দিতে চান তাকে ততই তার সৎকর্মে প্রতিদান বৃদ্ধি করবেন,১ এর বদলা ৭০০ দিবেন অথবা হিসাব ছাড়া দান করবেন। মূল কথা হচ্ছে, সৎকর্ম সমূহের প্রতিদান শুধু দয়াই। (খাযাইনুল ইরফান, পৃষ্ঠা ২৪১)
(৮২) উপকারের বিনিময়
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবূ বকর শিবলী (رضي الله عنه) একদিন নিজের ৪০জন মুরীদের কাফেলার সঙ্গে বাগদাদ শহর থেকে বাইরেগেলেন। এক জায়গায় পৌঁছে তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “হে লোকেরা! আল্লাহ্ তাআলা নিজের বান্দাদের রিযিকের যিম্মাদার। অতঃপর তিনি ২৮ নং পারার সূরা তালাকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতে কারীমার এ অংশটুকু তিলাওয়াত করলেন: ومن يتّقّ الله يجعل لّه مخرجا () وّيرزقه من حيث لا يحتسب
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
এবং যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে সেখান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা করে, তবে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।”
(পারা-২৮, সূরা-তালাক, আয়াত-২, ৩) এটা বলার পর মুরীদদের সেখানেই রেখে তিনি (رضي الله عنه) কোথাও চলে গেলেন। সমস্ত মুরীদ তিনদিন পর্যন্ত সেখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় পড়ে রইলেন।
চতুর্থ দিন হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবূ বকর শিবলী (رحمة الله) আসলেন আর বললেন: “হে লোকেরা! আল্লাহ্ তাআলা বান্দাদের জন্য রিযক তালাশের অনুমতি দিয়েছেন।
যেমন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন
: هو الّذى جعل لكم الارض ذلو لا فا مشوا فى مكبها و كلوا من رّزقه
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তিনিই হন, যিনি তোমাদের জন্য ভূ-পৃষ্ঠাকে সুগম করে দিয়েছেন, সুতরাং সেটার রাস্তাগুলো দিয়ে চলো এবং আল্লাহ্ তাআলার জীবিকাগুলো থেকে আহার করো।” (পারা-২৯, সূরা-মুলক, আয়াত-১৫)
এজন্য তোমরা নিজেদের মধ্য থেকে কাউকে পাঠিয়ে দাও। আশা করি সে কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসবে। মুরীদেরা এক নিঃস্ব ব্যক্তিকে বাগদাদ শহরে পাঠালেন। অলি-গলিতে ঘুরতে থাকলেন কিন্তু রুজি পাওয়ার কোন পথ বের হল না। ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে গেলেন। কাছেই এক খ্রীষ্টান ডাক্তারের চেম্বার ছিল। সে ডাক্তার খুব অভিজ্ঞ নাব্বায (অর্থাৎ-নাড়ী টিপে যে চিকিৎসক অনুভব করতে পারে) ছিলেন। শুধুমাত্র নাড়ী দেখে রোগীর অবস্থা নিজেই বলে দিতেন। সবাই চলে গেলে তিনি এ দরবেশকেও রোগী মনে করে ডাকলেন আর নাড়ী দেখার পর রুটি,তরকারী ও হালুয়া আনালেন এবং তা দিয়ে বললেন: আপনার রোগের এটাই ঔষধ। দরবেশ ডাক্তারকে বললেন: “এ ধরনের আরো ৪০ জন রোগী আছে।” ডাক্তার কর্মচারীদের মাধ্যমে ৪০ জন লোকের জন্য এ ধরনের খাবার আনিয়ে দরবেশের সাথে পাঠিয়ে দিলেন আর নিজেও চুপে চুপে পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন। খাবার যখন সায়্যিদুনা শায়খ আবু বকর শিবলী (رحمة الله) এর সামনে হাযির করা হল তখন তিনি(رحمة الله) খাবারে হাত লাগিয়ে বললেন: “দরবেশ! এ খাবারে আশ্চর্য রহস্য গোপন রয়েছে।”
খাবার আনয়নকারী দরবেশ সম্পূর্ণ ঘটনা বললেন। শায়খ বললেন: “এ খ্রীষ্টান আমাদের সাথে এরূপ উত্তম আচরণ করেছেন। আমরা কি এটার কোন প্রতিদান না দিয়ে এমনি খাবার খেয়ে নেব?” মুরীদেরা আরয করলেন: “আলীজাহ! আমরা নিঃস্ব লোক তাকে কি দিতে পারি!” হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু বকর শিবলী (رحمة الله) বললেন: “খাবার খাওয়ার আগে তার জন্য দোয়াতো করতে পারি।” তাই দোয়া করা হল। সাথে সাথে দোয়ার বরকত প্রকাশ হল আর তা হল এরূপ যে, “খ্রীষ্টান ডাক্তার যিনি সমস্ত কথা লুকিয়ে শুনছিলেন তার মনে মাদানী পরিবর্তন সাধিত হল! তিনি তৎক্ষণাৎ নিজেকে সায়্যিদুনা শায়খ শিবলী(رحمة الله) দরবারে পেশ করে দিলেন, তাওবা করে কলেমায়ে শাহাদাৎ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন এবং শায়খের মুরীদদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে উচ্চ মর্যাদা লাভ করলেন। (রাওযুর রিয়াহীন, ৮১ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
ওলীর খিদমত দামী বানিয়ে দেয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আউলিয়ায়েٰ কিরাম رحمهم الله تعالى এর নেকীর দাওয়াতের ধরন কিরূপ অসাধারণ হয়ে থাকে! তাঁদের খিদমতকারী কখনও খালি ফিরে না। এটা জানা গেল, যখন কেউ উত্তম ব্যবহার করে তখন তার জন্য দোয়া করা উচিত। এছাড়া যদি কোন কাফিরও উপকার করে তবে তার জন্য হিদায়াতের দোয়া করা উচিত। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবূ বকর শিবলী(رحمة الله) মুরীদদের হিদায়াতের দোয়া কাজে এসে গেল।الحمد لله عز وجل তাদের খিদমতকারী খ্রীষ্টান ডাক্তার ঈমানের দৌলত লাভ করল। দুআয়ে ওলীমে উও তা’ছীর দেখি, বদলতি হাজারো কি তকদীর দেখি।
এক লোকমার বিনিময়ে তিন ব্যক্তি জান্নাতী
ঐ খ্রীষ্টান ডাক্তার মিসকিন মনে করে খাবার পেশ করলেন আর ঈমানের নেয়ামত লাভে সৌভাগ্যশালী হলেন। তাহলে যদি কোন মুসলমানও মিসকিনকে খাবার খাওয়ায় তবে সেও জান্নাতের হকদার সাব্যস্ত হবেন। যেমন ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “এক লোকমা রুটি ও এক মুষ্টি খুরমা (অর্থাৎ-খেজুর, শুকনো খেজুর ও তদানুরূপ অন্য কোন বস্তু, যা দ্বারা মিসকীন উপকৃত হয়। সেগুলোর কারণে আল্লাহ্ তাআলা তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান, একজন হচ্ছেন ঘরের মালিক যিনি নির্দেশ দিয়েছেন, দ্বিতীয় হচ্ছেন স্ত্রী, যে তা প্রস্তুত করেন, তৃতীয় হচ্ছেন খাদিম, যে মিসকীনকে দিয়ে আসেন। অতঃপর নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করলেন: প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার জন্য, যিনি আমাদের খাদিমদেরও বাদ দেননি।” (আল মুআয্যামূল আওসাত লিত তাবারানী, ৪র্থ খন্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৩০৯)
অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানোর ফযীলত সম্পর্কিত আরো ৫টি হাদীস শরীফ শুনুন:
(১) তোমাদের মধ্যে উত্তম সে, যে খাবার খাওয়ায়। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৯ম খন্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৯৮৪)
(২) ক্ষমা প্রাপ্তিতে ওয়াজিবকারী কাজসমূহের মধ্যে খাবার খাওয়ানো ও সালামকে ব্যাপক করা রয়েছে। (মাকারিমূল আখলাক লিত তাবারানী, ৩৭১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৫৮)
(৩) যতক্ষণ বান্দার দস্তরখানা বিছানো থাকে, ফিরিশতাগণ তাঁর উপর রহমত অবতীর্ণ করতে থাকেন। (শুউবুল ঈমান, ৭ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯৬২৬)
(৪) যে নিজের ইসলামী ভাইয়ের ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা করে ও তাকে খাবার খাওয়ায়, এমনকি সে পরিতৃপ্ত হয়ে যায় তবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৭১৯)
(৫) যে ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ালো আল্লাহ্ তাআলা তাকে আরশের ছায়াতলে জায়গা দান করবেন। (মাকারিমূল আখলাক লিত তাবারানী, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)
الحمد لله عز وجلতবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে খাবার খাওয়ানোর সুন্নাতগুলো শিখার আগ্রহ মিলে ও প্রচুর দ্বীনি জ্ঞান অর্জন হয়। এছাড়া আশিকানে রাসুলদের বরকতে অনেক সময় কাফির ইসলাম লাভে ধন্য হয়ে থাকে। যেমন-এক ঈমান তাজাকারী ঘটনা লক্ষ্য করুন।
(৮৩) মাদানী কাফেলার অসাধারণ মুসাফির
বান্দারাহ, বোম্বাই, ভারতের এক ইসলামী ভাইয়ের অনেকটা এরকম বর্ণনা হচ্ছে, “আমি পথ চলার সময় রাস্তার ধারে কিছু মানুষকে একত্রে দাঁড়ানোবস্থায় দেখলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম কোন এক যুবক একটি কিতাব থেকে যাতে স্পষ্ট অক্ষরে ফয়যানে সুন্নাত লেখা ছিল, পড়ে পড়ে কিছু একটা শুনাচ্ছিলেন। আমীর দাঁড়িয়ে গেলাম। তার কথাগুলো আমার খুবই ভাল লাগল। শেষে তাদের মধ্য থেকে একজন নিজে এগিয়ে আমার সাথে অত্যন্ত মুহাব্বত সহকারে সাক্ষাত করলেন এবং ইন্ফিরাদী কৌশিশ করে অনুরোধ করে আমাকে তিনদিনের মাদানী কাফেলায় সফরের দাওয়াত দিলেন। দরসের শব্দগুলো এখনো আমার কানে সুন্দরভাবে আসছিল, তাই আমি হঠাৎ করে হ্যঁা বলে ফেললাম এবং সত্যি সত্যি দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসুলদের সাথে তিনদিনের জন্য মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম। মাদানী কাফেলায় আমার ঐ অবস্থা ও প্রশান্তি অর্জিত হল যে, বলার মত নয়। অবশেষে সাহস করে একজন মুবাল্লিগের সামনে আমি আমার গোপন রহস্য ফাঁস করেই দিলাম, আমি অমুসলিম, এতদিন পর্যন্ত কুফরের অন্ধকারে পথহারা হয়ে চলেছি। আপনাদের দরস ইন্ফিরাদী কৌশিশ ও মাদানী কাফেলায় উত্তম চরিত্রের ভরপুর প্রদর্শনী আমার অন্তর মোহিত করল। মেহেরবানী করে আমাকে মুসলমান করে নিজেদের করে নিন। الحمد لله عز وجل তাওবা করে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। এটা ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের ঘটনা। এই ঘটনা লবর্ণনা দেয়ার সময় অর্থাৎ ২০০৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট ৪ মাসে আমি দাঁড়ি বাড়ানো শুরু করে দিয়েছি,
মাথায় সর্বদা সবুজ ইমামার তাজ সাজিয়ে রাখার অভ্যাস করে নিয়েছি এবং এ সময় দা’ওয়াতে ইসলামী ওয়ালা আশিকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় ৬৩ দিনের জন্য মুসাফির হয়ে গেলাম।
আও আয় আশিকে, মিলকে তবলীগে দ্বী, কাফিরো কো করে, কাফিলে মে চলো। সুন্নাতে আ-ম হো, আ-ম নেক কাম হো। ছব করে কৌশিশেঁ, কাফিলে মে চলো।
(৮৪) বাগদাদের ব্যবসায়ী
বাগদাদ শরীফের এক ব্যবসায়ী আউলিয়ায়ে কিরাম رحمهم الله تعالى এর প্রতি খুবই ঘৃণাপোষণ করত। একদিন হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) জুমার নামায পড়ে তাড়াতাড়ি বের হতে দেখে মনে মনে বলতে লাগল যে, দেখোতো! এটা ওলী হয়ে ঘুরে! এটা নাকি ওলী! অথচ মসজিদে তার মন বসে না, তাইতো নামায পড়ে সাথে সাথে বাইরে বেরিয়ে গেল। ঐ ব্যবসায়ী এসব কিছু ভেবে ও বলে তার পিছনে চলতে লাগল। হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) এক রুটিওয়ালা থেকে রুটি কিনে শহরের বাইরের দিকে চললেন। ব্যবসায়ী এটা দেখে আরো রাগান্বিত হল ও বলল: এ ব্যক্তি শুধুমাত্র রুটির জন্য মসজিদ থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসেছে আর এখন শহরের বাইরে কোন সবুজ প্রান্তরে বসে খাবে। ব্যবসায়ী পিছু পিছু চলাতে লাগল আর এমন মন-মানসিকতা তৈরী করল যে, যেমাত্র বসে সে রুটি খেতে শুরু করবে, আমি জিজ্ঞাসা করব যে, ওলী কি এরূপ হয়ে থাকে যে রুটির খাতিরে মসজিদ থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে আসে! তাই ব্যবসায়ী পিছু নিল, শেষ পর্যন্ত হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) কান একটি গ্রামে গিয়ে একটি মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে একজন অসুস্থ ব্যক্তি শোয়াবস্থায় ছিল।
হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله)ঐ রোগীর মাথার সামনে তাকে নিজ হাতে রুটি খাওয়ালেন। ব্যবসায়ী এ ঘটনা দেখে অবাক হল। অতঃপর গ্রাম দেখার জন্য বাইরে আসল। কিছুক্ষণ পর যখন পুনরায়মসজিদে আসল তখন দেখল যে, রোগী সেখানে শোয়াবস্থায় আছে কিন্তু হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) সখানে নেই। সে রোগীকে জিজ্ঞাসা করল, “তিনি কোথায় গেলেন?” সে বলল, “তিনিতো বাগদাদ শরীফ চলে গেছেন।” ব্যবসায়ী জিজ্ঞাসা করল, “বাগদাদ এখান থেকে কতদূর?” সে বলল: “চল্লিশ মাইল।” ব্যবসায়ী ভাবতে লাগল যে, “আমি বড় মুশকিলে ফেঁসে গেছি যে, তাঁর পিছনে এত দূরে চলে আসলাম আর আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, আসার সময় কিছু বুঝতেই পারিনি কিন্তু এখন কিভাবে ফেরা যাবে? এরপর সে জিজ্ঞাসা করল যে, “তিনি আবার কখন এখানে আসবেন?” বলল: “আগামী জুমাতে। ব্যবসায়ী সেখানে থেকে গেল। যখন জুমা আসল তখন হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله)নিজের সময়মত আসলেন ও রোগীকে রুটি খাওয়ালেন। তিনি (رحمة الله)এ ব্যবসায়ীকে বললেন: “আপনি আমার পিছনে কেন এসেছেন?” ব্যবসায়ী বিনয়ের সাথে আরয করল, “হুযুর! আমার ভুল হয়েছে!” বললেন: “উঠুন আর আমার পিছনে পিছনে চলে আসুন।সুতরাং, সে হযরত বিশর হাফী (رحمة الله)এর পিছনে পিছনে চলতে লাগল আর একটু পরেই বাগদাদ শরীফ পৌঁছে গেল। হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) এর জীবন্ত কারামত দেখে বাগদাদের ব্যবসায়ী আওলিয়ায়ে কিরামের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা থেকে তাওবা করল এবং এরপর থেকে এসব পবিত্র মানুষদের প্রতি আন্তরিক ভাবে বিশ্বাসী হয়ে গেল। (রাওযুর রিয়াহীন, ১১৮ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
খারাপ ধারণা অপবিত্র মন থেকে আসে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মুসলমানের ব্যাপারে খারাপ ধারণা করা হারাম। আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বর্ণনা করেন, “খারাপ ধারণা অপবিত্র মন থেকে সৃষ্টি হয়।” (ফতোওয়া রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা) বিশেষতঃ আল্লাহ্ ওয়ালাদেরকে কখনো ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। এসব পবিত্র মানুষের কাজ-কর্মে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি, আন্তরিকতা ও তাঁদের অন্তরে খোদার সৃষ্টির প্রতি মায়া থাকে আর এসব পবিত্র মানুষ একদিনের সফর এক পলকে অতিক্রম করতে পারেন। অনেক সময় খারাপ ধারণার শাস্তি দুনিয়াতে সাথে সাথেই মিলে যায়। যেমন-
(৮৫) খারাপ ধারণার শাস্তি
একবার হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায় হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবুল হুসাইন নূরী (رحمة الله) এর খাদিমা (সেবিকা) যায়তূনা, দুধ ও রুটি নিয়ে হাযির হল। ঐ সময় হাত শুকানোর জন্য পাশে কয়লা রাখা ছিল, যা তিনি (رحمة الله)ওলট-পালট করছিলেন। কয়লার কালো রং হাতে লাগা ছিল আর তিনি (رحمة الله)খাওয়া শুরু করে দিলেন। ইতিমধ্যে কয়লায় আগুন বেড়ে গেল। দুধ তাঁর ٰ(رحمة الله)হাতের উপর পড়তে লাগল। সে মনে মনে ধারণা করল, ইনি কেমন ওলী,পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা তাঁর মধ্যে নেই! এরপর যখন কোন কাজে হযরতের ঘর থেকে সে বের হল তখন হঠাৎ এক মহিলা তার সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ল আর বলতে লাগল তুমিই আমার কাপড়ের পুটলী চুরি করেছ এবং তাকে টেনে হেঁচড়ে নগর-রক্ষকের কাছে নিয়ে গেল। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ নূরী (رحمة الله) জানতে পেরে কোতোয়ালীতে (থানায়) সুপারিশ করার জন্য গেলেন। নগর-রক্ষক বললেন: “আমি তাকে কিভাবে ছাড়ব, তার প্রতি চুরির অভিযোগ হয়েছে! এরই মধ্যে এক বাদী সেখানে কাপড়ের পুটলী নিয়ে আসল, আর হযরত কাপড় তার মালিকাকে দিলেন এবং যায়তুনাকে বললেন: “ভবিষ্যতে খারাপ ধারণা করবে যে, ওলীআল্লাহ্ কিভাবে অপরিস্কার হয়?” যায়তুনা বলল: “আমি কু-ধারণার শিক্ষা পেয়ে গেছি, ভবিষ্যতের জন্য আমি তাওবা করছি। (রাওজুর রিয়াহীন, ১৩৬ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। খারাপ ধারণা করা হারাম প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেন তো! সাথে সাথে খারাপ ধারণার শিক্ষা লাভ হল। যদি দুনিয়াতে শাস্তি নাও মিলে তবুও আমাদেরকে আল্লাহ্ কে ভয় করা উচিত, কারণ মুসলমানের প্রতি খারাপ ধারণা করা হারাম। আমার আকা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বর্ণনা করেন; “খারাপ ধারণা অপবিত্র মনে সৃষ্টি হয়।” (ফতোওয়া রযবীয়্যাহ,২২তম খন্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা, রযা ফাউন্ডেশন, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর)
আল্লাহ্ তাআলার ইরশাদ হচ্ছে
:ولاتقف ماليس لك به علم ان السمع و البصر و الفؤ اد كل اسءك كا ن ع عنه مسءو لا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:এবং ঐ কথায় পেছনে পড়ো না, যেটা সম্বন্ধে তোমার জ্ঞান নেই। নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয়- এ গুলোর প্রত্যেকটা সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (পারা- ১৫, সুরা-বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩৬)
আল্লাহ্ তাআলার ইরশাদ হচ্ছে: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
يايها الذ ين امنوا اجتنبو كثيرا من الظن ان بعض الظن اثم
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নানা রকম অনুমান থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ হয়ে যায়। (পারা-২৬, সূরা-হুজুরাত, আয়াত-১২)
এক সময় তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত কোন বিষয়ে ইরশাদ করেছেন: তুমি কি তার অন্তর ছিঁড়ে দেখেছ যে, তোমার জানা হত!” (আবু দাঊদ, ৩য় খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬৪৩)
খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) আরো ইরশাদ করেন: “খারাপ ধারণা থেকে বাঁচো, কেননা ধারণা করা হচ্ছে সবচেয়ে মিথ্যা বিষয়।”
(সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫১৪৩)
(৮৬) ক্রন্দনকারীকে দেখে তুমিও কাঁদো
হযরত সায়্যিদুনা মাকহুল দামেস্কী (رحمة الله) বলেন: “যখন কাউকে কাঁদতে দেখো, তখন তুমিও তার সাথে কান্না করো। খারাপ ধারণা করো না, ইনি রিয়া করছে। একবার এক ক্রন্দনকারী মুসলমানের ব্যাপারে আমি কু-ধারণা করেছিলাম, তখন সেটার শাস্তি স্বরূপ এক বৎসর পর্যন্ত আমি কাঁদা থেকে বঞ্চিত রইলাম।” (তাম্বীহুল মুগতারিয়্যীন, ১২২ পৃষ্ঠা)
(৮৭) ৯ জন কাফিরের ইসলাম গ্রহণ
الحمد لله عز وجل তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলারও খুব (বাহার) সুন্দর ঘটনা রয়েছে। সেগুলোর কারণে বিগড়ে যাওয়া মুসলমানদের সংশোধনের ব্যবস্থা হয়, অনেক সময় কাফিরদেরও ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য নসীব হয়। যেমন-এক মুবাল্লিগের বর্ণনা হচ্ছে, আমি প্রায় ৫ বছর আগে আমার কলেজের সহপাঠী এক অমুসলিম ও তার বন্ধুদেরকে মাকতাবাতুল মদীনা থেকে সূরা ইয়াসীন শরীফ, কানযুল ঈমানের অনুবাদসহ ক্যাসেট ও সুন্নাতে ভরা বয়ানের কয়েকটি ক্যাসেট এছাড়া কিছু রিসালা ইত্যাদি উপহার স্বরূপ দিয়েছিলাম। ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারী আমি সুন্নাত প্রশিক্ষণের আশিকানে রাসুলদের এক মাদানী কাফেলায় সাকরান্ড বাবুল মদীনা, করাচীতে সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করি।
সেখানে ঐ অমুসলিম সহপাঠীর সাথে সাক্ষাত হল। তার পূর্ণদল তার সাথেই ছিল আর তারা সর্বমোট ১৫ জন। আমি তার কাছে ক্যাসেটগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল, সূরা ইয়াসীন শরীফের তিলাওয়াত ও অনুবাদ শুনে আমি এতই শান্তি পেলাম যে, এর আগে জীবনে কখনো পাইনি। এরপর থেকে প্রতি রমযানুল মুবারকে মসজিদের বাইরে বসে স্পীকারের মাধ্যমে তারাবীতে আদায়কৃত তিলাওয়াত শুনা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আমি বয়ানের ক্যাসেটগুলো শুনেছি ও রিসালা গুলো পড়েছি, এতে আমার অন্তরে গভীর রেখাপাত হয়েছে। মুবাল্লিগের বক্তব্য হচ্ছে, আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলাম। সে ইসলামের প্রতি প্রভাবিত হয়েছিল বটে কিন্তু মুসলমান হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তার ও তার বন্ধুদের উপর ইন্ফিরাদী কৌশিশ করতে থাকি। অবশেষে সফলতা লাভ হয়ে গেল। الحمد لله عز وجل সাথে সাথে ৯ জন কাফির ইসলাম কবুল করে নিল। অন্যান্যরা বলল: আমরা চিন্তা-ভাবনা করে দেখব। আ-ও ওলামায়ে দ্বী, বাহরে তবলীগে দ্বী,মিলকে সা-রে চলে, কাফিলে মে চলো। দূর তা-রেকিয়া, কুফর কি হো মিয়া। আ-ও কোশিশ করে, কাফিলে মে চলো।
(৮৮) সারীদ ও সুস্বাদু মাংস
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আল্লামা ইয়াফিঈ ইয়ামেনী (رحمة الله) বলেন: সফরের সময় একদিন আমাদের কাফেলা এক গ্রামে পৌঁছল। এক ব্যক্তি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চেয়ে একটি ডেক্সি (পাত্র) আনল আর তাতে হালুয়া রান্না করল এবং সবাই মিলে খেল। কাফেলার এক ব্যক্তি উপস্থিত না থাকায় খেতে পারেনি। তার নিকট সামান্য আটা ছিল। আটা নিয়ে সে গোটা গ্রাম ঘুরল কিন্তু রান্না করার মত কাউকে পাওয়া গেল না।
এরই মধ্যে পথে সে এক অন্ধ বৃদ্ধকে পেল। সে সাওয়াবের নিয়্যাতে ঐ আটা তাকে দিয়ে দিল। (এ অবস্থাকে গোপন সৌন্দর্যের ধারণা করা উচিত, মূলতঃ যেন আল্লাহ্ তাআলার হিকমতে তাকে অদৃশ্য থেকে বলছে যে, এ আটা হচ্ছে ঐ বৃদ্ধের রিযিক। অপরদিকে তোমার রিযিক্ব আমি নিজের দয়া ভান্ডার থেকে দেব) আল্লাহ্ তাআলার রহমতের প্রতি কতাওবান! কিছুক্ষণ পরেই এক ব্যক্তি এসে কাফেলার সমস্ত লোক থেকে শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তিকে ডাকল এবং তার ঘরে নিয়ে সারীদ ও সুস্বাদু মাংস খাওয়ালো। (রাওযুর রিয়াহীন, পৃষ্ঠা ১৫৩ থেকে সংকলিত) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। জানা গেল,আল্লাহ্ তাআলার পথে খাবার খাওয়ানো কখনো বৃথা যায় না। অনেক সময় দুনিয়াতেও সাথে সাথে প্রতিদান মিলে যায়, আর আখিরাতে সাওয়াবের অধিকারও অবশিষ্ট থাকে।
(৮৯) মাংস ও হালুয়া
এক বুযুর্গ (رحمة الله) বলেন: আমি এক মসজিদে দেখলাম, সেখানে একজন ধনী ব্যবসায়ী বসা আছে আর নিকটেই এক ফকীর হাত তুলে দোয়া করছে, আল্লাহ! মাংস ও হালুয়া খাওয়াও! ঐ ব্যবসায়ী শুনে বলতে লাগল, “এ ফকীর মূলত আমাকে শুনাচ্ছে, খোদার কসম! যদি আমার কাছে চাইত তবে আমি তাকে খাওয়াতাম কিন্তু এখন খাওয়াব না।” কিছুক্ষণ পর ঐ ফকীর শুয়ে গেল। এরই মধ্যে কোন এক ব্যক্তি বড় থালা (ঢাকা অবস্থায়) নিয়ে এসে আমাদের সকলের দিকে দৃষ্টি বুলানোর পর ঐ ঘুমন্ত ফকীরকে দেখে থালা নীচে রেখে তার পাশে বসে গেল এবং তাকে জাগিয়ে শত বিনয়ের সাথে আরয করল, “মাংস ও হালুয়া” হাযির রয়েছে খেয়ে নিন! ফকীর তা থেকে কিছুটা খেয়ে থালাটি ফিরিয়ে দিল।
ঐ ব্যবসায়ী আশ্চর্য হয়ে খাবার আনয়ণকারীকে জিজ্ঞাসা করল, “এটা কিরূপ ঘটনা?” সে বলল: “আমি একজন কুলি! অনেকদিন থেকে পরিবারের লোকদের মাংস ও হালুয়া খাওয়ার আকাঙ্খা ছিল কিন্তু দারিদ্রতার কারণে খেতে পারছিল না। আজ অনেক দিন পর কুলি কাজে একটি মিসকাল (অর্থাৎ সাড়ে চার মাশা) স্বর্ণ পেলাম, তাতে মাংস ও হালুয়া তৈরী করা হল। আমি কিছু সময়ের জন্য শুয়ে পড়লাম। এর মধ্যে আমার নসীব জেগে উঠল! আমার স্বপ্নে তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর যিয়ারত নসীব হল। আমি ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর মুগ্ধকর দৃশ্যে হারিয়ে গেলাম, তাঁর ঠোঁট মোবারক নড়ে উঠল, যেন রহমতের ফুল ঝরতে লাগল আর ভাষা অনেকটা এরূপ, বিন্যস্ত হল, “তোমাদের মসজিদে এক ওলী বিদ্যমান রয়েছে, যিনি মাংস ও হালুয়া চাচ্ছে। তুমি এ মাংস ও হালুয়া প্রথমে তাকে খাওয়াও। তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী খেয়ে ফিরিয়ে দিলে অবশিষ্টগুলোতে আল্লাহ্ তাআলা বরকত দান করবেন। এর বিনিময়ে আমি তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাব।” তাই আমি তৎক্ষণাৎ এ খাবার নিয়ে এখানে হাযির হলাম। একথা শুনে ব্যবসায়ী বলল: “এখাবারে তোমার কি পরিমাণ খরচ হয়েছে?” বললেন: “এক মিসকাল স্বর্ণ।” ব্যবসায়ী বলল: “আমার কাছ থেকে ১০ মিসকাল স্বর্ণ নিয়ে নাও এবং তোমার এ উত্তম আমলের এক কিরাত অংশের অংশীদার আমাকে করে নাও।” সে বলল: “কখনো না।”ব্যবসায়ী বলল: “২০ মিসকাল স্বর্ণ নাও।” সে বলল: “না।” ব্যবসায়ী বলল: “৫০ মিসকাল স্বর্ণ নাও।” সে বলল: “সারা দুনিয়ার ধনভান্ডারও যদি দিয়ে দাও তবু রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সাথে কৃত সওদায় তোমাকে শরীক করব না। তোমার ভাগ্যে যদি এ বস্তু থাকত তবে তুমি আমার পূর্বেই এরূপ করতে পারতে? কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা নিজের রহমতের সাথে যাকে চান তাকে নির্ধারিত করেন। (রাওযুর রিয়াহীন, ১৫৩ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ ওয়ালাদের এ শান যে, তাঁরা আল্লাহর মর্জিতে চলে, আর আল্লাহ্ তাঁদের আশা পূরণ করে দেন। আর এটাও জানা গেল, নিজের ধবংসশীল দৌলতের নেশায় মত্ত থেকে আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকানো ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর দয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। এছাড়া এটাও জানা গেল, প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) আপন আল্লাহর দয়াতে গায়েবের সংবাদ দাতা। তাইতো ফকীরের ব্যাপারে জানালেন এবং নিজের এক গোলামের ভাগ্য জাগ্রত করে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে খিদমতের জন্য পাঠিয়ে দিলেন।
ছ-রে আরশ পর হে তেরে গুজার, দিলে ফরশ পর হে তেরি নযর।
মালাকোত ও মুল্ক মে কুয়ি শায় নেহী উও জু তুঝ পে ঈয়া নেহী।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটাও জানা গেল, কোন মুসলমানের প্রতি কু-ধারণা অনেক সময় দুনিয়াতেও অনুশোচনার কারণ হয় এবং শরীয়াতের দৃষ্টিতেও মুসলমানের প্রতি খারাপ ধারণা করা হারাম।
(৯০) প্রতিবন্ধী ছেলে চলতে লাগল!
ডাকাতের একটি দল লুটপাট করার জন্য বের হল। পথিমধ্যে রাতে এক মুসাফির খানাতে অবস্থান করল আর সেখানে একথা প্রকাশ করল যে, আমরা আল্লাহর রাস্তার মুসাফির ও জিহাদ করার জন্য বের হয়েছি। মুসাফিরখানার মালিক নেককার লোক ছিলেন, তিনি আল্লাহরসন্তুষ্টি লাভের নিয়্যতে তাদের খুবই খিদমত করলেন। সকালে ঐসবডাকাত কোন একদিকে রওয়ানা হয়ে গেল, আর লুটতরাজ করে সন্ধ্যায় আবার সেখানেই ফিরে আসল।
গতরাতে মুসাফিরখানার মালিকের যে ছেলেকে তারা চলাফেরা করতে অক্ষম দেখেছিল সে আজকে স্বাভাবিক চলাফেরা করছিল। তারা আশ্চর্য হয়ে মুসাফির খানার মালিককে জিজ্ঞাসা করল: “এটা কি কালকের দেখা প্রতিবন্ধী ছেলেটি?” তিনি খুবই সম্মানের সাথে জবাব দিলেন, “জ্বী হ্যাঁ”। এটা ঐ ছেলে। জিজ্ঞাসা করল, “এটা কিভাবে সুস্থ হয়ে গেল?” জবাব দিলেন, এসব কিছু আপনাদের ন্যায় আল্লাহর পথের মুসাফিরদের বরকত।” কথা হচ্ছে, আপনারা যা খেয়েছিলেন তা থেকে কিছু অবশিষ্ট ছিল। আমি আপনাদের খাবারের অবশিষ্ট অংশ শিফার নিয়্যতে আমার প্রতিবন্ধী বাচ্চাকে খাওয়ালাম ও উচ্ছিষ্ট পানি তার শরীরে মালিশ করলাম। আল্লাহ্ আপনাদের মত নেক বান্দাদের খাবারের অবশিষ্টাংশ ও পানির বরকতে আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে আরোগ্য দান করেছেন। যখন ডাকাতেরা একথা শুনল তখন তাদের চোখ থেকে অশ্রু বের হতে লাগল। ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল: “এসব কিছু আপনার সুধারণার ফসল, নয়তো আমরাতো বড়ই গুনাহগার। শুনুন আমরা আল্লাহর পথের মুসাফির নয় বরং ডাকাত। আল্লাহ্ তাআলার এ দয়া প্রদর্শন আমাদের মনের দুনিয়াকে উলট-পালট করে দিয়েছে। আমরা আপনাকে সাক্ষী রেখে তাওবা করছি। সুতরাং তারা তাওবাকারী হয়ে নেকীর পথ ধরল এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাওবার উপর অটল রইলেন। (কিতাবুল ক্বালইঊবী, ২০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। মুসলমানদের খাবারের অবশিষ্টাংশে শিফা রয়েছে প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহররহমতের কিরূপ বাহার! এটাও জানা গেল, মুসলমানের প্রতি সু-ধারণারও বরকত রয়েছে। এটা জানা গেল, মুসলমানদের খাবারের অবশিষ্টাংশে শিফা রয়েছে। এটাও জানা গেল, দয়া পাওয়ার জন্য বিশ্বাসও পাকাপোক্ত হওয়া উচিত। দূর্বল বিশ্বাসী না হওয়া উচিত।
যেমন- ভাবতে থাকে যে, অমুক বুযুর্গ বা অমুক ওলী আল্লাহর মাযারে যাওয়াতে জানিনা ফায়দা হবে কি হবে না ইত্যাদি। এ ধরনের মানুষ দয়া পাবে না। এছাড়া ফয়েয পাওয়ার জন্য সময়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, নিজ নিজ ভাগ্য অনুযায়ী কেউ তাড়াতাড়ি ফয়েয পেয়ে যান আর কারো অনেক বছর পর্যন্ত কাজ হয় না। কাজ হোক কিংবা না হোক “অর্থাৎ-এক দরজা ধরো আর শক্তভাবে ধরো।” এর সত্যায়নে পড়ে থাকা উচিত। কো-য়ি আয়া পা-কে চলা গিয়া কো-য়ি ওমর ভর ভী না পা-ছাকা, মেরে মাওলা তুঝছে গিলা নেহী ইয়ে তু আপনা আপনা নসীব হে।
(৯১) প্যারালাইসিস রোগীর সাথে সাথে আরোগ্য লাভ
الحمد لله عز وجل তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে রমযানুল মুবারকের শেষ দশদিনে মসজিদে সম্মিলিত ইতিকাফের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে ইতিকাফকারীদেরকে সুন্নাতে ভরা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সমাজের অনেক পথভ্রষ্ট মানুষ ইতিকাফের সময় গুনাহ থেকে তাওবাকারী হয়ে নতুন পবিত্র জীবন শুরু করে। অনেক সময় রব্বে কায়িনাত এর দানে ঈমান তাজাকারী নিদর্শনও প্রকাশ পায়। যেমন- ১৪২৫ হিঃ রমযানুল মুবারকের সম্মিলিত ইতিকাফে দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচীতে যেখানে কম-বেশী ২০০০ ইতিকাফকারী ছিলেন। তাতে জেলা চাকওয়াল, পাঞ্জাব, এর ৭৭ বছর বয়সী প্রবীণ হাফিয মুহাম্মদ আশরাফ সাহেবও ইতিকাফকারী হলেন। কিবলা হাফিয সাহিবের হাত ও জিহ্বা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ছিল ও শ্রবণ শক্তিও কম ছিল। তিনি খুবই সুবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি একবার ইফতার খাওয়ার সময় সুধারণার কারণে এক মুবাল্লিগ থেকে খাবারের অবশিষ্টাংশ নিয়ে খেলেন। তার কাছ থেকে ফুঁকও গ্রহণ করলেন। ব্যাস, তাঁর সুধারণা কাজ করে দেখাল। আল্লাহর রহমতে জোয়ার এলো। আল্লাহ্ তাঁকে শিফা দান করলেন। الحمد لله عز وجل তাঁর প্যারালাইসিস দূর হয়ে গেল।
তিনি হাজার হাজার ইসলামী ভাইদের উপস্থিতিতে ফয়যানে মদীনার মঞ্চে উঠে অপরিসীম বিশ্বাসে নিজের শরীর সুস্থতার দিকে যাওয়ার সুসংবাদ শুনালেন। এ প্রাণবন্ত সুসংবাদ শুনে চতুর্দিকে আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ্ তাআলার ভাবাবেগপূর্ণ যিকির শুরু হল। এদিন গুলোতে কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা এ আনন্দদায়ক খবরটি ছাপায়। দা’ওয়াতে ইসলামী কি কায়্যুম, দো-নো জাহা মে মাচ্ যা-য়ে ধূম, ইছপে ফিদা হো বাচ্চা বাচ্চা ইয়া আল্লাহ্ মেরি ঝূলি ভরদে।সায়্যিদ বংশীয়কে কর্মচারী হিসেবে রাখা কেমন? প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, আশিকানে রাসুলদের সংস্পর্শও বরকতময় এবং তাদের খাবারের অবশিষ্ট অংশও শিফা ও সুস্থতার মাধ্যম। আমার আকা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله)সায়্যিদ বংশীয়দের সম্মান ও মুসলমানদের খাবারের অবশিষ্টাংশ খাওয়ার কল্যাণের ব্যাপারে বলেন: “সায়্যিদজাদার মাধ্যমে অপমানজনক কাজ করানো জায়িয নেই” ও এমন কাজের জন্য তাঁকে কর্মচারী হিসেবে রাখাও জায়িয নেই।” তবে যে কাজ অপমানজনক নয় তাতে কর্মচারী হিসেবে রাখা যায়। সায়্যিদজাদাকে মারা থেকে শিক্ষক যেন পরিপূর্ণভাবে বিরত থাকেন। বাকী রইল মুসলমানের খাবারের অবশিষ্টাংশ, তা খাওয়া কোনরূপ অপমানজনক নয়। হাদীসে পাকে সেটাকে শিফা বলেছেন। (কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ৩৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৪০৩)
তা যদি সায়্যিদজাদা চান তবে তাঁকে ঐ (অর্থাৎ- মুসলমানের খাবারের অবশিষ্টাংশে শিফা রয়েছে) নিয়্যতে যেন দেয়া হয়। নিজের খাবারের অবশিষ্টাংশ দিচ্ছি, এ নিয়্যতে যেন দেয়া না হয়। (ইফাদাতঃ ফতোওয়া রযবীয়্যাহ, ২২য় খন্ড, ৫৬৮ পৃষ্ঠা)
(৯২) রাখে আল্লাহ্ মারে কে?
হযরত সায়্যিদুনা আলী বিন হারব (رحمة الله) বলেন: আমি ও কয়েকজন যুবক নদীতে একটি নৌকায় চড়ে যাচ্ছিলাম। নৌকা যখন নদীর মাঝখানে গিয়ে পৌঁছল তখন একটি মাছ নদী থেকে লাফিয়ে নৌকায় এসে পড়ল। পরস্পর পরামর্শ করে ভুনে খাওয়ার জন্য নৌকা যখন এক কিনারায় নিয়ে গেলাম আর আগুন জ্বালানোর জন্য লাকড়ী জমা করছিলাম, এরই মধ্যে আমরা নির্জন জায়গায় এক ভয়ংকর দৃশ্য দেখলাম, দেখতে পেলাম যে, পুরানো জীর্ণ শীর্ণ ও পুরানো ঘর-বাড়ীর নিদর্শন বিদ্যমান ও সেখানে এক ব্যক্তি শোয়াবস্থায় রয়েছে, যার দু’হাত পিছন দিকে বাঁধা আর সেখানেই অন্য এক ব্যক্তি জবাইকৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া কাছেই মাল বোঝাই একটি খচ্চর দাঁড়ানো রয়েছে। আমরা বাধা ব্যক্তির নিকট ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল: “আমি এ জবাইকৃত ব্যক্তির খচ্চরটি ভাড়ায় নিয়েছিলাম। সে আমাকে পথ ভুলিয়ে এখানে নিয়ে আসে ও আমার হাতগুলো বেঁধে বলল, আমি তোকে হত্যা করব। আমি তাকে আল্লাহ্ তাআলার দোহাই দিয়ে বললাম: আমায় হত্যা করে গুনাহের বোঝা ঘাঁড়ে নিওনা, বরং এসব মাল-পত্র তুমি নিয়ে নাও, আমি এসব কিছু তোমার জন্য বৈধ করে দিলাম। আমি এ ব্যাপারে কাউকে কোন অভিযোগ করব না। কিন্তু সে তার উদ্দেশ্যে অনঢ় রইল। আর সে আমাকে হত্যা করার জন্য স্বীয় কোমরে বাঁধা ছুরি টান দিল কিন্তু সেটা বের হল না। সে যখন সেটার উপর অতিশয় শক্তি প্রয়োগ করল তখন সে ছুরিটি বের হয়ে হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে তার কণ্ঠনালীতে গিয়ে পড়ল ও এভাবে সে নিজে নিজেই জবাই হয়ে লাফাতে লাফাতে মরে গেল। একথা শুনার পর আমরা তার বাঁধন খুলে দিলে সে খচ্চর ও মাল-পত্র নিয়ে নিজের ঘরের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। এরপর আমরা যখন নৌকাতে এসে ভুনার জন্য মাছ বের করছিলাম তখন সেটা লাফ দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ল। (রাওযুর রিয়াহীন, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় যাকে আল্লাহ্ রাখে তাকে আবার মারে কে? আল্লাহ্ তাআলার অমুখাপেক্ষী শান ও অনুগ্রহ প্রদর্শনও কি যে চমৎকার! অত্যচারী লুণ্ঠনকারী নিজেই নিজের হাতে জবাই হয়ে তার শাস্তি ভোগ করল আর বাধা ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য নদী থেকে লাফিয়ে মাছ নৌকার গিয়ে পড়ল আর ভুনে খাওয়ার আকাঙ্খায় কাফেলার লোকগুলো নদীর পারে নামল কিন্তু মাছ খাওয়া তাদের ভাগ্যে কোথায়! সেটাতো বন্দি মাজলুম বান্দার সাহায্যে আসা, তাকে বন্ধনমুক্ত করার সাওয়াব অর্জন ও কুদরতের নিদর্শনের ঢংকা বাজানোর বাহানা ছিল।
জলওয়ে তেরি গুলশান গুলশান,
সাতাওয়াত তেরি সাহরা সাহরা।
রহমত তেরি দরয়া দরয়া, سبحان الله سبحان الله
(৯৩) রুজির মাধ্যম
মসজিদুল হারাম শরীফে (মক্কায়ে মুকাররামা) এক আবিদ (অর্থাৎ-ইবাদতকারী) সারারাত ইবাদাতে ব্যস্ত থাকতেন, দিনে রোযা রাখতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি তাঁকে দুইটি রুটি দিয়ে যেতেন, তা দিয়ে তিনি ইফতার করে নিতেন। এরপর দ্বিতীয় দিনের জন্য ইবদাতে মগ্ন হতেন। একদিন তাঁর মনে এ খেয়াল আসল যে, এটা কেমন তাওয়াক্কুল যে, আমিতো একজন মানুষের দেয়া রুটির উপর ভরসা করে বসে আছি! অথচ সৃষ্টিজগতের রিযক দাতা আল্লাহ্ তাআলার উপর ভরসা করিনি। রুটি আনয়নকারী যখন সন্ধ্যায় আসল তখন আবিদ সেগুলো ফিরিয়ে দিলেন। এভাবে তিনদিন কাটিয়ে দিল। যখন ক্ষুধা বৃদ্ধি পেল তখন আল্লাহ্ তাআলার নিকট ফরিয়াদ জানালেন, রাতে স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে হাযির আর আল্লাহ্ তাআলা বলছেন, আমি আমার বান্দার মাধ্যমে যা কিছু পাঠাতাম, তুমি তা কেন ফিরিয়ে দিলে? আবিদ আরয করল, “মাওলা! আমার মনে এ ধারণা হল যে, তুমি ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা করে বসে আছি। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “ঐ রুটি কে পাঠাত?” আবিদ জবাব দিলেন, হে আল্লাহ্ তুমিই তা প্রেরণকারী। নির্দেশ হল! “এখন থেকে আমি পাঠালে ফিরিয়ে দেবে না।” ঐ স্বপ্নের মাঝে এটাও দেখলেন যে, রুটি আনয়নকারী ঐ ব্যক্তি রব্বুল আলামীন এর দরবারে হাযির আছেন। আল্লাহ্ তাআলা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি এ আবিদকে রুটি দেয়া কেন বন্ধ করে দিলে?” তিনি আরয করলেন: “হে মালিক ও মাওলা! সেটা তুমি খুব ভালভাবে জান।” এরপর জিজ্ঞাসা করলেন: “হে বান্দা! ঐ রুটি তুমি কাকে দিতে?” আরয করলেন: “আমিতো তোমাকে (অর্থাৎ-তোমারই পথে দিতাম)। ইরশাদ হল, “তুমি তোমার আমল জারী রাখো, আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য এটার বিনিময় জান্নাত রয়েছে।” (রাওযুর রিয়াহীন, ৬৭ পৃষ্ঠা)
না চাওয়ার পরও পেলে, তবে.....প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ ওয়ালাদের ধরনও খুবই চমৎকার হয়ে থাকে! আল্লাহ্ তাআলা ইবাদতকারী বান্দাদের প্রতি খুবই অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন ও তাঁদের জন্য অদৃশ্য থেকে প্রদান করেন। যখন অন্যের সম্পদের প্রতি লোভ ও আকাঙ্খা না থাকে, দাতা উপকার করে খোঁটা না দেয়, যার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে যদি তার মনে তুষ্ট করার আকাংখা থাকে, যে দিলো তার মনে যদি গ্রহণকারীর সম্মান হ্রাস পাওয়ার আশংকা না থাকে, নেয়া অবস্থায় দাতা অথবা প্রত্যক্ষদর্শীর দৃষ্টিতে যদি কোন ধরনের অবমাননার ধারণা না থাকে, মোটকথা যদি কোন ধরনের শারয়ী নিষেধাজ্ঞা না থাকে তবে না চাওয়ার পরও যা পাওয়া যায় তা গ্রহণ করা উচিত। যেমন হযরত সায়্যিদুনা খালিদ বিন আদী জুহান্নী(رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আমি ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যে তার ভাইয়ের মাধ্যমে কোন বস্তু চাওয়া ব্যতীত ও লোভ করা ব্যতীত পায়, তবে তা গ্রহণ করা উচিত ও ফিরিয়ে দেয়া অনুচিত। কারণ তাতো রিযিক, যা তাকে আল্লাহ্ (অন্যের মাধ্যমে) প্রেরণ করেছেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭৯৫৮)
জানা গেল, চাওয়া ব্যতীত পাওয়া বস্তু নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। যদি ঐ বস্তুর প্রতি তার লোভ ও আকাঙ্খা না থাকে। তবে যদি গ্রহীতা ধনী হয় ও দাতার মন খুশী করার নিয়্যাতে নিলেন কিন্তু নেয়ার পর যদি সে বস্তুর প্রয়োজনীয়তা তার না থাকে তবে অন্য কাউকে উপহার স্বরূপ দিয়ে দিতে অথবা দান করে দিতে পারেন। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আইদ বিন আমর (رضي الله عنه) বর্ণিত, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত(ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে রিযিক থেকে চাওয়া ব্যতীত বা লোভ করা ব্যতীত কিছু অংশ পায়, তবে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তা গ্রহণ করা উচিত আর যদি (সে) ধনী হয় তবে (গ্রহণ করে) যেন নিজের চেয়ে অধিক অভাবী ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া উচিত।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৭ম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬৭৩)
উপহার নাকি ঘুষ প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এতে কোন সন্দেহ নেই, উপহার গ্রহণ করা সুন্নাত। কিন্তু মনে রাখবেন যে, উপহার আদান-প্রদানের অনেক অবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক প্রকারের উপহার গ্রহণ করা সুন্নাত নয়। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী(رحمة الله) নিজ গ্রন্থ “সহীহ বুখারী” শরীফে বিশেষ ভাবে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার নাম হচ্ছে: باب من لّم يقبل الھديّت لعلّت অর্থাৎ- ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে অধ্যায়, যে কোন কারণে উপহার গ্রহণ করেনি। এ অধ্যায়ে সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله) তা’লীক (অর্থাৎ-সনদের শুরু থেকে বর্ণনকারীকে বাদ দিয়ে হাদীস বর্ণনা করা) করেছেন, হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আবদুল আযীয (رضي الله عنه)বলেছেন, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর পার্থিব পবিত্র জীবনে উপহারতো উপহারই ছিল কিন্তু আজকাল হল ঘুষ।” (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা)
(৯৪) আপেলের বড় থালা
এ বর্ণনার ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) হযরত সায়্যিদুনা ফুরাত বিন মুসলিম (رحمة الله) এর সনদে বর্ণনা করেন, একবার হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আবদুল আযিয (رضي الله عنه)এর আপেল খাওয়ার ইচ্ছা হল কিন্তু ঘরে এমন কোন বস্তু পেলেন না, যা দিয়ে আপেল কিনতে পারেন। তাই আমরা তাঁর সাথে আরোহী হয়ে বের হলাম। গ্রামের দিকে গিয়ে কিছু ছেলে পেলাম যারা আপেলের বড় থালা (উপহার দেয়ার জন্য) নিয়ে আসছিল। সায়্যিদুনা ওমর বিন আবদুল আযিয(رضي الله عنه) একটি থালা নিয়ে ঘ্রাণ নিলেন ও অতঃপর ফিরিয়ে দিলেন। আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেবললেন: “আমার এটার প্রয়োজন নেই। ”
আমি বললাম: “রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক ও সায়্যিদুনা উমর-ফারুকে আযম (رضي الله عنه)ما কি উপহার গ্রহণ করতেন না?” ইরশাদ করলেন: “নিঃসন্দেহে এটা তাঁদের জন্য উপহারই ছিল কিন্তু তাঁদের পরবর্তী উম্মাল শাসক বা তাদের প্রতিনিধিদের জন্য হল ঘুষ।” (উমদাতুল ক্বারী, ৯ম খন্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা)
কে কার উপহার গ্রহণ করবে না প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয (رضي الله عنه) উপহারের আপেল গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। কেননা তিনি (رضي الله عنه)জানতেন, এ উপহার যুগের খলীফা হওয়ার কারণে দেয়া হচ্ছে। যদি আমি খলীফা না হতাম তবে কেউ দিত না? আর একথা প্রত্যেক জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারবেন, মন্ত্রীবর্গ, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ কিংবা অন্যান্য সরকারী অফিসারবৃন্দ ও তাদের অধীনস্থ প্রতিনিধিবর্গ এছাড়া জজ সাহেবদের এমনকি পুলিশ ইত্যাদিকে লোকেরা কেন উপহার দিয়ে থাকেন! অবশ্যই হয়তো কাজ করানো উদ্দেশ্য থাকে নয়তো এ মন-মানসিকতা থাকে যে, ভবিষ্যতে তাকে প্রয়োজন পড়লে সহজে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ উভয় অজুহাতের ভিত্তিতে এ সমস্ত মানুষকে উপহার দেয়া ও তাদেরকে বিশেষভাবে দাওয়াত করা ঘুষের পর্যায়ে পড়বে আর ঘুষ দাতাও গ্রহীতা উভয়ে জাহান্নামের অধিকারী। এসব অবস্থায় ঈদের বখশিশ বা উপহার মিষ্টি, চা-পানি অথবা খুশী মনে দিচ্ছি, মুহাব্বত করে দিচ্ছি ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর কথাগুলো ঘুষের গুনাহ্ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। যদিও সত্যিই আন্তরিকতার সাথে দেয়া হয় ও ঘুষ হওয়ার কোন কারণ না হয় তবুও এ সকল ব্যক্তিবর্গের জন্য নিজের অধীনস্থদের উপহার বা বিশেষ দাওয়াত গ্রহণ করা “মাযিন্নায়ে তুহমাত” অর্থাৎ-অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান হওয়া। তাই নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ)ইরশাদ করেছেন: “যে আল্লাহ্ তাআলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান না হয়।"
আমি বললাম: “রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক ও সায়্যিদুনা উমর-ফারুকে আযম (رضي الله عنه)ما কি উপহার গ্রহণ করতেন না?” ইরশাদ করলেন: “নিঃসন্দেহে এটা তাঁদের জন্য উপহারই ছিল কিন্তু তাঁদের পরবর্তী উম্মাল শাসক বা তাদের প্রতিনিধিদের জন্য হল ঘুষ।” (উমদাতুল ক্বারী, ৯ম খন্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা)
কে কার উপহার গ্রহণ করবে না প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয (رضي الله عنه) উপহারের আপেল গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। কেননা তিনি (رضي الله عنه)জানতেন, এ উপহার যুগের খলীফা হওয়ার কারণে দেয়া হচ্ছে। যদি আমি খলীফা না হতাম তবে কেউ দিত না? আর একথা প্রত্যেক জ্ঞানী মাত্রই বুঝতে পারবেন, মন্ত্রীবর্গ, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ কিংবা অন্যান্য সরকারী অফিসারবৃন্দ ও তাদের অধীনস্থ প্রতিনিধিবর্গ এছাড়া জজ সাহেবদের এমনকি পুলিশ ইত্যাদিকে লোকেরা কেন উপহার দিয়ে থাকেন! অবশ্যই হয়তো কাজ করানো উদ্দেশ্য থাকে নয়তো এ মন-মানসিকতা থাকে যে, ভবিষ্যতে তাকে প্রয়োজন পড়লে সহজে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ উভয় অজুহাতের ভিত্তিতে এ সমস্ত মানুষকে উপহার দেয়া ও তাদেরকে বিশেষভাবে দাওয়াত করা ঘুষের পর্যায়ে পড়বে আর ঘুষ দাতাও গ্রহীতা উভয়ে জাহান্নামের অধিকারী। এসব অবস্থায় ঈদের বখশিশ বা উপহার মিষ্টি, চা-পানি অথবা খুশী মনে দিচ্ছি, মুহাব্বত করে দিচ্ছি ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর কথাগুলো ঘুষের গুনাহ্ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। যদিও সত্যিই আন্তরিকতার সাথে দেয়া হয় ও ঘুষ হওয়ার কোন কারণ না হয় তবুও এ সকল ব্যক্তিবর্গের জন্য নিজের অধীনস্থদের উপহার বা বিশেষ দাওয়াত গ্রহণ করা “মাযিন্নায়ে তুহমাত” অর্থাৎ-অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান হওয়া। তাই নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ)ইরশাদ করেছেন: “যে আল্লাহ্ তাআলা ওআখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান না হয় (কাশফুল খিফা, ২য় খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪৯৯)
তাই এসব বিষয়ে অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান হওয়া থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব। তাই তা দেয়াও না জায়িয নেয়াও না-জায়িয। তবে যদি পদ-মর্যাদা লাভের পূর্ব থেকেই পরস্পর উপহার লেনদেন ও বিশেষ দাওয়াতের তারকীব (ব্যবস্থা) ছিল তবে এখন হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু পূর্বে কম ছিল আর এখন পরিমাণ বৃদ্ধি করা হল, তবে অতিরিক্ত অংশ না-জায়িয হয়ে যাবে। যদি (উপহার) দাতা পূর্বের চেয়ে এখন আরো ধনী হয়ে গেল আর সে এ কারণে বৃদ্ধি করল তাহলে নেয়াতে ক্ষতি নেই। অনুরূপভাবে পূর্বের চেয়ে এখন তাড়াতাড়ি বিশেষ দাওয়াত হচ্ছে তাহলেও না-জায়িয। যদি দাতা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হয় তবে আদান-প্রদানে কোন অসুবিধা নেই। (মাতা-পিতা, ভাই-বোন, নানা-নানী, দাদা-দাদী, ছেলে-মেয়ে, চাচা, মামা, খালা, ফুফু, ইত্যাদি মুহরিম (যাদের সাথে বিয়ে অবৈধ) হয় অপরদিকে, ফুফা, ভগ্নিপতি, চাচী, বড় মা, মামী, ভাবী, চাচাত, ফুফাত, খালাত, মামাত ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গরা মুহরিম আত্মীয় বহিভর্ূত) যেমন ছেলে কিংবা ভাতিজা জজ, তাকে পিতা বা চাচা উপহার দিলেন অথবা বিশেষ দাওয়াত দিলেন তবে গ্রহণ করা জায়িয। তবে মনে করুন, পিতার মামলা জর্জ ছেলের কাছে চলছে তাহলে এ অবস্থায় অপবাদের জায়গা দন্ডায়মান হওয়ার কারণে না-জায়িয। বর্ণনাকৃত নির্দেশাবলী শুধুমাত্র সরকারী ব্যক্তিবর্গের জন্যই নয়, প্রতিটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতার জন্যও। এমনকি দা’ওয়াতে ইসলামীর সকল সাংগঠনিক মজলিস ও সকল নিগরান উপহার বা বিশেষ দাওয়াত গ্রহণ করতে পারবেন না। নিম্নস্তরের যিম্মাদার নিজের উপরস্থ যিম্মাদার থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন- দা’ওয়াতে ইসলামীর মারকাযী মজলিশে শূরার রোকন, নিগরানে শূরা থেকে গ্রহণ করতে পারবেন কিন্তু অন্যান্য দা’ওয়াতে ইসলামী ওয়ালাদের কাছ থেকে গ্রহণ করতে পারবেন না।” আর নিগরানে শূরা নিজের কোন অধীনস্থ দা’ওয়াতে ইসলামী ওয়ালার উপহার নিতে পারবেন না। শিক্ষক নিজের ছাত্রদের বা তাদের অভিভাবকদের দেয়া উপহার শারয়ী অনুমতি ছাড়া নিতে পারবেন না। তবে শিক্ষা শেষ হওয়ার পর যদি ছাত্র উপহার বা বিশেষ দাওয়াত দেন তবে গ্রহণ করতে পারবেন।
ঐ সকল উলামা ও মাশায়িখ যাঁেদরকে লোকেরা ইলম ও খোদার অনুগ্রহ প্রাপ্তির সম্মানার্থে নযরানা পেশ করেন ও তাঁরা গ্রহণও করেন এবং লোকেরা তাঁদের প্রতি ঘুষের অপবাদও দেয় না সুতরাং এসকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের জন্য উপহার গ্রহণ করা অপবাদের জায়গায় দন্ডায়মান হওয়া বহিভর্ূত হওয়ার কারণে জায়িয। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উপহার ও ঘুষ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর উপস্থাপন করা হচ্ছে। সম্ভব হলে এগুলো কমপক্ষে তিনবার মনোযোগ সহকারে পড়ে বা শুনে নিন। প্রশ্ন: উপহার গ্রহণ করা কি সুন্নাত? উত্তর: নিশ্চয় উপহার গ্রহণ করা সুন্নাত। কিন্তু এর বিভিন্ন অবস্থা রয়েছে। যেমন- হযরত আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) বলেন: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত(ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “পরস্পরের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করো, মুহাব্বত বৃদ্ধি পাবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬০, হাদীস নং-৬৭১৬)
তার জন্য জায়িয যাকে মুসলমানদের উপর ক্ষমতাসীন করা হয়নি আর যাকে মুসলমানদের উপর ক্ষমতাসীন করা হয়েছে, যেমন বিচারক বা শাসক। তবে এ অবস্থায় তার জন্য উপহার গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী। বিশেষতঃ যাকে পূর্বে উপহার দেয়া হতো না তার জন্য বাঁচা জরুরী। কারণ তার জন্য এখন এ উপহার ঘুষ ও অপবিত্রতার পর্যায়ভুক্ত।” (আল বিনায়া শরহুল হিদায়া, ৮ম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
অস্থায়ীভাবে মোটর সাইকেল নেয়া প্রশ্ন: ক্ষমতাসীন ব্যক্তি তার অধীনস্থদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে কোনটাকা-পয়সা বা অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য কার, মোটর সাইকেল ইত্যাদি নিতে পারবেন কি পারবেন না? এছাড়া এটাও বর্ণনা করুন, নিজের অধীনস্থ থেকে কোন বস্তু কোন অজুহাতে কম দামে ক্রয় করতে পারবেন কি পারবেন না?
উত্তর: ক্ষমতাসীন ব্যক্তি নিজের অধীনস্থ ব্যক্তি থেকে ঋণ নিতে পারেন না, প্রচলিত নিয়মের বাইরে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন না, অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য কোন বস্তু নিতে পারেন না। অধীনস্থ ব্যক্তি যদি নিজে প্রস্তাব দেয় তবুও নিতে পারবেন না। যেমনঃ
হযরত আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন: “ক্ষমতাসীন ব্যক্তির জন্য যাদের উপহার গ্রহণ করা হারাম, তার থেকে ঋণ নেয়া ও কোন বস্তু ধার স্বরূপ চাওয়া (অর্থাৎ-কিছু সময়ের জন্য কোন বস্তু চাওয়াও হারাম।”) (রদ্দুল মুহতার আলাদ দুররুল মুখতার, ৮ম খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: উপহারের ব্যাপারে কি আ’লা হযরত (رحمة الله) ও কোন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন? উত্তর: আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله)বলেন: “আমি বলছি, তাদের উদাহরণ গ্রাম্য ও পেশাজীবি ও অন্যান্যদের চৌধুরীদের ন্যায়, যাদের নিজেদের অধীনস্থদের উপর একচ্ছত্র শাসন ও শ্রেষ্ঠত্ব থাকে।” কেননা ঐসব চৌধুরীদের ক্ষতির ভয় কিংবা প্রচলিত নিয়মের কারণে তারা হাদিয়া (অর্থাৎ-উপহার) পেয়ে থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ১৯তম খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা)
জানা গেল, উপহার গ্রহণ করার নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র সরকারী পদধারীদের জন্যই নয়, ঐ সকল প্রতিটি মানুষের জন্যও, যে নিজের পদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে মানুষের লাভ-ক্ষতি করার সামর্থ রাখে। দাওয়াত দু’প্রকার প্রশ্ন: “বিশেষ দাওয়াত ” কাকে বলা হয়? উত্তর: বিশেষ দাওয়াত অর্থাৎ-ঐ দাওয়াত যা কোন বিশেষ ব্যক্তির জন্য আয়োজন করা হয়, যদি আসতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন, তবে সেদাওয়াতের আয়োজন না হয়। প্রশ্ন: আর “সাধারণ দাওয়াত” এর ব্যাপারেও বর্ণনা করুন। উত্তর: সাধারণ দাওয়াত অর্থাৎ-ঐ দাওয়াত, যা কোন এমন বিশেষ ব্যক্তির জন্য না হয়, অমুক না আসলে ঐ দাওয়াতের আয়োজনই হবে না।
প্রশ্ন:- যদি অধীনস্থ ব্যক্তি ক্ষমতাশীল ব্যক্তিকে বিশেষ দাওয়াত দেয় আর গিয়ারভী শরীফের নিয়্যত করে নেয় তবুও কি নাজায়িয হবে? উত্তর: জ্বী হ্যঁা, কারণ উপরস্ত ব্যক্তি যদি অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী না হন তবে গিয়ারভী শরীফের নিয়ায (তাবাররুক) প্রস্তুত করা হবে না। তবে যদি নিয়াযের ব্যবস্থা করা হয় ও তাতে পদস্ত ব্যক্তিকেও দাওয়াত দেয়া হয় আর এটা সিদ্ধান্ত করা হয়েছে, তিনি আসুক বা না আসুক নিয়াযের ব্যবস্থা ঠিক থাকবে তাহলে এরূপ দাওয়াত জায়িয। কেননা এটাকে “সাধারণ দাওয়াত” বলা হয়। তবে সাধারণ দাওয়াতের যদি পদস্ত ব্যক্তিকে অন্যান্যদের বিপরীতে ভাল খাবার দেয়া হয় তবে তা নাজায়িয হবে। যেমন - সাধারণ মেহমানদেরকে নানরুটি ও গরুর মাংসের তরকারী দেয়া হল কিন্তু পদস্ত ব্যক্তিকে ময়দার খামির দ্বারা প্রস্তুত স্যাতস্যঁাতে নরম রুটি ও ছাগলের কোর্মা দেয়া হয় তাহলে এরূপ করা না-জায়িয হবে।
প্রশ্ন: অফিসার থেকে তাঁর অধীনস্থ ব্যক্তি উপহার গ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না? উত্তর: গ্রহণ করতে পারবে। আমার আকা আ’লা হযরত, ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) এর জারীকৃত এ মোবারক ফতোওয়াটি যদি কমপক্ষে তিনবার মনোযোগ সহকারে পড়ে বা শুনে নেয়া হয় তাহলেان شاء الله عز وجل উপহার ও ঘুষের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বুঝে আসবে যে, কে কার কার থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারবে ও কার কার থেকে পারবে না। যেমন- আমার আক্বা আ’লা হযরত (رحمة الله) বলেন "যে ব্যক্তি নিজে, চাই শাসকের পক্ষ থেকে কোন ধরনের শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হোক, যে কারণে মানুষের উপর তার কিছুটা ক্ষমতা থাকে, যদিও সে নিজের জন্য তাদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে না, চাপ প্রয়োগ করে না যদিও সে কোন অকাট্য সিদ্ধান্ত বরং অকাট্য নয়, এমন সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যাপারে পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী নন।
যেমন-দারোগা, জল্লাদ, ওসি, জমিদার বা গ্রামবাসীদের জন্য নিযুক্ত জমিদার, গ্রামে কাউন্সিলর, (চেয়ারম্যান) পাটোয়ারী (গ্রাম সরকার) এমনকি পঞ্চায়েত বা সার্বজনীন গোত্র বা পেশার লোকদের জন্য তাদের চৌধুরী, এসব লোকের জন্য কোন ধরনের উপহার নেয়া বা বিশেষ দাওয়াত (অর্থাৎ বিশেষ দাওয়াত, তাঁর জন্যই আয়োজন করা হয়েছে আর যদি তিনি অংশগ্রহণ না করেন তবে দাওয়াতই হবে না) গ্রহণ করা সম্পূর্ণভাবে অনুমতি নেই। কিন্তু তিন অবস্থায় অনুমতি রয়েছে। প্রথমত: অফিসার (অর্থাৎ-নিজের উপরস্ত ব্যক্তি) থেকে, যার উপর তাঁর চাপ নেই। না সেখানে এটা খেয়াল করা হয় যে, তার পক্ষ থেকে এ হাদিয়া (উপহার) ও দাওয়াত নিজের ব্যাপারে ছাড় নেয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত: এমন ব্যক্তি থেকে যে তার পদ লাভের পূর্বেও তাকে উপহার দিত ও দাওয়াত করত। তবে শর্ত হল, এখনও ঐ পরিমাণ হতে হবে, অন্যথায় অতিরিক্ত হলে জায়িয হবে না। যেমন-পূর্বে উপহার ও দাওয়াতে যে দামের বস্তু থাকত এখন তার চেয়ে দামী লৌকিকতা সম্পন্ন হয়ে থাকে অথবা সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে গেল কিংবা তাড়াতাড়ি হতে লাগল। এসব অবস্থায় অতিরিক্ত মওজুদ ও জায়িয হওয়ার কোন অবস্থা নেই। কিন্তু যখন এ ব্যক্তির সম্পদ পূর্বের চেয়ে অতিরিক্তের উপযোগী বৃদ্ধি পেল (অর্থাৎ-দাতা এখন আরো ধনী হয়ে গেল) যা থেকে বুঝা যাবে, এ অতিরিক্তটুকু ঐ ব্যক্তির পদের কারণে নয় বরং নিজের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হয়েছে। তৃতীয়ত: নিজের নিকটতম মুহরিম থেকে। যেমনঃ-মাতা-পিতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, (কিন্তু) চাচা, মামা, খালা, ফুফুর ছেলে নয়, কারণ এরা মুহরিম নয়। যদিও প্রচলিত নিয়মে এদেরকে ভাই বলা হয়। আরো বলেন:“অতঃপর যেখানে যেখানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেটার ভিত্তি শুধুমাত্র ছাড়ের অপবাদ ও আশংকার উপর, সত্যিকার অর্থে ছাড়ের অস্তিত্ব আবশ্যক নয়। কারণ তার নিজের আমল কিছু রদবদল না করা বা তার আন্তরিকতাপূর্ণ অভ্যাস সম্পর্কে জানা জায়িয হওয়ার জন্য ফলদায়ক হতে পারে।
দুনিয়ার কাজ ইচ্ছার উপরই চলে। যখন এ দাওয়াত ও উপহার গ্রহণ করবে তখন অবশ্যই খেয়াল যাবে, সম্ভবত এবারে কোন রূপ প্রভাব পড়বে, বিনামূল্যে মাল দেয়ার প্রভাব হচ্ছে পরীক্ষিত ও চোখ দেখা। ঐবার হয়নি এবার হবে। এবার হয়নি এরপর কখনো হবে। আর এ বাহানা করা, তার জন্য উপহার ও দাওয়াত মানবতার ভিত্তিতে ক্ষমতাশীল হওয়ার কারণে নয়।
এটার প্রতি উত্তর স্বয়ং খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ)ইরশাদ করেছেন: “যখন এক ব্যক্তিকে যাকাত সংগ্রহ করার জন্য নির্ধারণ করে পাঠালেন, তিনি যাকাতের মাল হাযির করে কিছু মাল আলাদা করে রাখলেন, এটা আমি পেয়েছি। ইরশাদ করেছেন: “তোমার মায়ের ঘরে বসে দেখ, এখন কত উপহার পাওয়া যায়! অর্থাৎ-এ উপহার হচ্ছে শুধুমাত্র এ পদের ভিত্তিতে, যদি ঘরে বসে থাকতে তবে কে এসে দিয়ে যেত?” (সহীহ মুসলিম, পৃষ্ঠা ১০১৯, হাদীস নং-১৮৩২, ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৮তম খন্ড, ১৭০,১৭১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি ছাত্র তার শিক্ষককে উপহার পেশ করে তাহলে গ্রহণ করবেন কি করবেন না?
উত্তর: কুরআনে পাক অথবা দরসে নিযামী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে দেয়া উপহার সমূহ গ্রহণ করাতে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কেননা শিক্ষকও অনেক মুসলমান (যথা-ছাত্র) এর ব্যাপারে “অভিভাবক” (অর্থাৎ- শাসনকর্তা) হয়ে থাকেন। ক্ষমতাসীনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হযরত আল্লামা শামী (رحمة الله) বলেন: “ক্ষমতাসীনের মধ্যে বাজার ও শহরের পদস্থ ব্যক্তি, ওয়াকফ এষ্টেটের কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তি, ও ঐসকল ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত যারা এ ধরনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন হন, যা মুসলমানদের সাথে সম্পৃক্ত।”(রদ্দুল মুখতার, ৮ম খন্ড, ৫০ পৃষ্ঠা)
উপরোল্লিখিত উদ্ধৃতির আলোকে শিক্ষকও এক ধরনের ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, কেননা মাদ্রাসায় ছাত্রদের ভর্তি বহাল থাকা প্রায়ই শিক্ষকেরই দয়া-মায়ার উপর নির্ভরশীল।
শিক্ষক ছাত্রের নিয়ম বহির্ভুত কাজের জন্য ক্লাস থেকে বের করে দিতে পারেন। অথবা বিহিস্কার করার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। এভাবে পরীক্ষায় কৃত প্রশ্নপত্র সময়ের পূর্বে প্রকাশ করা, পরীক্ষার ফলাফলে ভাল নম্বর দেয়া বা ফেল করে দেয়াও শিক্ষকের হাতে থাকে। অনেক ছাত্র এমনও রয়েছে যাদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের আগ্রহ কম থাকে অপরদিকে তারা দুষ্টামী ও নিয়ম বহির্ভুত কাজে আগে আগে থাকে। যেহেতু নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বারা শিক্ষককে সন্তুষ্ট করতে পারে না তাই কখনো কখনো উপহার পেশ করে ও দাওয়াত খাওয়ায়, যাতে তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বের করা না হয়, আর ফেল করানো না হয়। তাই শিক্ষকদের উচিত এ ধরনের ছাত্রদের উপহার সমূহ ও দাওয়াত গ্রহণ না করা। আর যদি জানতে পারেন, এ উপহার ও দাওয়াত বিশেষভাবে এজন্যই করা হয়েছে, আলোচ্য শ্রেণীর ছাত্রদের যেন কাজ হয়। আর ইনি সত্যিই তাদের কাজ করতে পারেন বা কাজ সম্পাদনের মাধ্যম হতে পারেন তাহলে এ অবস্থায় গ্রহণ করা হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। “শামী”গ্রন্থে রয়েছে,“এভাবে যখন আলিমকে সুপারিশ বা জুলুম দূর করার জন্য উপহার দেয়া হয় তাহলে তা ঘুষ। শিক্ষকের যে হুকুম বর্ণিত হল, তা প্রত্যেক ব্যবস্থাপকেরই জন্য, চাই কোন প্রতিষ্ঠানের হোক কিংবা দলের, চাই বিশুদ্ধ ধর্মীয় গোষ্ঠী হোক বা রাজনৈতিক। কারণ কোন না কোন ভাবে এগুলোও মুসলমানদের অনেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাসীন হয়ে থাকে আর এদের কলমের ঝাঁকুনি বা মুখ চালানোতে অনেক মানুষের লাভ-ক্ষতি হতে পারে তাই তাদেরকে উপহার ও দাওয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।”(রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৬০৭ পৃষ্ঠা)
উপহার ফিরিয়ে দেয়ার দু’টি ঘটনা হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা শক্বীক বলখী (رحمة الله) বলেন: আমি হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) কে উপহার স্বরূপ কাপড় পেশ করলাম, তখন তিনি আমাকে তা ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরয করলাম:“ইয়া সায়্যিদী! আমি আপনার ছাত্র নই। বললেন: “আমি জানি কিন্তু আপনার ভাইতো আমার কাছ থেকে হাদীসে পাক শুনেছেন, আমার ভয় হচ্ছে আবার যেন আমার অন্তর আপনার ভাইয়ের জন্য অন্যের তুলনায় অধিক নরম হয়ে না যায়। (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৭ম খন্ড, ৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৯৩০২ )
একবার হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) এর বন্ধুর ছেলে হাযির হয়ে কিছু নযরানা পেশ করলে তিনি গ্রহণ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তাকে ডেকে পাঠালেন এবং অনেক চেষ্টা করে তাকে ঐ উপহার ফিরিয়ে দিলেন। এটা এজন্য করেছেন, তার বন্ধুত্ব আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ছিল। তাই (رحمة الله) তাঁর মধ্যে ভয় হল, এ উপহার আবার যেন আল্লাহ্ তাআলার খাতিরে বন্ধুত্বের বিনিময় হয়ে না যায়। তাঁর (رحمة الله) শাহজাদা সায়্যিদুনা (رحمة الله) মোবারক বলেন: আমি আরয করলাম: “বাবাজান! আপনার কি হল! আপনি যখন নিয়েই নিয়েছিলেন তাহলে আমাদের খাতিরে রেখেই দিতেন।” বললেন: “হে মোবারক! তোমরাতো আনন্দের সাথে এসব ব্যবহার করবে কিন্তু কিয়ামতের দিন প্রশ্ন আমাকে করা হবে।”(ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে যদি কোন অধীনস্থ ব্যক্তি মদীনা শরীফের খেজুর অথবা যমযম শরীফের পানি পেশ করে তবে নেবে কি নেবে না? উত্তর: গ্রহণ করে নিবেন, কারণ তাতে ঘুষের অপবাদের আশংকা নেই। এছাড়া রিসালা, বয়ানের ক্যাসেট, দ্বীন প্রচার সম্পর্কিত জিনিস-পত্র ইত্যাদি বা নালাইন পাকের কার্ড, খুবই অল্প মূল্যের তাসবীহ বা কমমূল্যের।
যেমন- দুই তিন টাকা মূল্যের কলম ইত্যাদি গ্রহণ করাতে অসুবিধা নেই। কেননা এটা এ ধরনের উপহার নয়, যা অপবাদের কারণ হয়। এছাড়া হজ্জ বা মদীনার সফর কিংবা বিয়ে বা বাচ্চা জন্মগ্রহণের
সময় উপহার দেয়ার প্রচলন রয়েছে। এ ধরনের উপহারও ক্ষমতাসীন ব্যক্তি তার অধীনস্থ ব্যক্তি থেকে নিতে পারেন। তবে যদি প্রচলিত নিয়মের অধিক উপহার দেয় তাহলে নিতে পারবেন না।যেমন-১০০ টাকার প্রচলন রয়েছে আর ৫০০ বা ১২০০ টাকার উপহার দিল তা নেয়া যাবে। কিন্তু এ পরিমাণ নোটের মালা পরিধান করাল তাহলে অপবাদের আশংকার কারণে না-জায়িয হয়ে যাবে। (এসব বিধি-বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনার থেকে প্রকাশিত মাদানী মুযাকারার ৭১-৭৪ নম্বর ক্যাসেট শুনুন। মজলিশে মাকতাবাতুল মদীনা) প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপি অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে ও সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সফরের সৌভাগ্য অর্জন করতে থাকলে ان شاء الله عز وجل এর বরকতে শরীয়াতের বিধি-বিধান শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকবেন। মাদানী কাফেলায় সফরের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য একটি মাদানী কাফেলার মাদানী বাহার (ঘটনা) শুনুন। যেমন-
(৯৫) জীবন্ত কবরস্ত হয়ে গেলাম
এক ইসলামী ভাইয়ের অনেকটা এরকম বর্ণনা হচ্ছে, দাথওয়াতে ইসলামীর ১২ জন আশিকে রাসুলের সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলা কাশ্মীরের একটি জেলা “বাগ" এলাকার নিন্দরাইর জামে মসজিদে নিন্দরাই-এ অবস্থান করছিল। ১৪২৬ হিজরীর ৩রা রমযানুল মুবারকে জাদওয়াল (রুটিন) অনুযায়ী সকালে সংক্ষিপ্ত আরামের বিরতির পর “মাদানী মাশওয়ারা"-এর সময় হয়ে গিয়েছিল। আমীরে কাফেলার নির্দেশে ৮ জন ইসলামী ভাই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
অপরদিকে আমি সহ ৪ জন ইসলামী ভাই অলসতার কারণে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসায় তখনও শুয়ে ছিলাম ও আমাদের ধাক্কা লাগল। আমরা অস্থির হয়ে হঠাৎ উঠে বসলাম। সব দরজা ও দেয়াল দোলছিল। আমরা তৎক্ষণাৎ দৌঁড় দিলাম কিন্তু হায়! হঠাৎ জমিন ফেটে গেল আর আমরা বিকট শব্দে উপুড় হয়ে পড়ে গেলাম। তখনও সামলিয়ে উঠতে পারিনি এক বিস্ফোরণ সহকারে ছাদও দেয়ালগুলো আমাদের উপর এসে পড়ল। চতুর্দিকে গভীর অন্ধকার ছেঁয়ে গেল। বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে গেল।
আহ! হায়! হায়! আমরা চারজন একত্রে জীবন্ত কবরস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা আতঙ্কিত অবস্থায় উচ্চ স্বরে কলেমা শরীফ পাঠ করতে ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। বাহ্যিকভাবে বাঁচার কোন আশা রইল না, ছটফট করতে করতে ও অস্থির হয়ে হাত-পা মারতে মারতে এক ইসলামী ভাইয়ের পায়ের ধাক্কায় হঠাৎ একটি পাথর সরে পড়লে আলোকিত হয়ে গেলالحمد لله عز وجل ঐ গর্ত দিয়ে একজন একজন করে আমরা বাইরে বের হতে সক্ষম হলাম। আমীরে কাফেলার তাৎক্ষণিক আনুগত্যের বরকতে মাদানী কাফেলার আটজন আশিকানে রাসুল আমাদের আগে সহজে নিরাপদ অবস্থায় মসজিদ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। জলজলে সে আমা, দেগা রব্বে জাহা, ছব দোয়ায়ে করে, কাফিলে মে চলো।হো বাপা জলজলে, গর ছে আন্দি চলে, ছবর করতে রাহে, কাফিলে মে চলো। আনুগত্য না করার পরিণাম এ থেকে এটাও জানা গেল, মাদানী কাফেলার জাদওয়ালের উপর আমল করার কল্যাণে ঐ আটজন ইসলামী ভাইয়ের কোন কষ্ট হল না। তারা সহজে বের হয়ে গেলেন আর ঐ চারজন যারা অলসতার কারণে শুয়ে রইল তারা কিছু সময়ের জন্য সম্মিলিত কবরে জীবন্ত দাফন হয়ে গেলেন তবে অবশেষে তারাও মাদানী কাফেলার বরকতে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেন। আল্লাহ্ তাআলা এভাবে নিদর্শনাবলী দেখান, কেউতো মৃত্যু মুখে পৌঁছেও পরিস্কার বেঁচে আসে অপরদিকে কেউ হাজার কেল্লায় লুকিয়ে থাকুক কিন্তু মৃত্যু এসে তাকে পাকড়াও করে।” মৃত্যু থেকে কেউ পালাতে পারে না। যেমন আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ
قل ان المو ت الذ ي تفر ون منه فانه ملقيکم
আপনি বলুন,ঐ মৃত্যু, যা থেকে তোমরা পলায়ন করো, তাতো অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাত করবে। (পারা-২৮, সূরা-জুমা, আয়াত-৮)"
(৯৬) জ্ঞানী বাদশাহ্
একদিন মিসরের জ্ঞানী বাদশাহ্ আহমদ ইবনে তুলুন কোন এক নির্জনস্থানে তাঁর সহচরদেরকে নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন। তখন তাঁর দৃষ্টি ছেঁড়া পুরানো কাপড় পরিহিত এক ফকীরের উপর পড়ল। বাদশাহ্ একটি রুটি, একটি ভুনা মুরগী, একটি মাংসের টুকরা ও ফালূদা গোলামের মাধ্যমে তার নিকট পাঠালেন। গোলাম ফিরে এসে বলল:“আলীজাহ্! খাবার পেয়ে সে খুশী হয়নি।”এটা শুনে বাদশাহ্ তাকে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন। যখন সে আসল তখন তাকে কিছু প্রশ্ন করলেন: যেগুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিলে, তাঁর উপর শাহী শান-শওকতের কোন প্রভাব পড়লনা। জ্ঞানী বাদশাহ্ হঠাৎ বললেন: তোমাকে গুপ্তচর মনে হচ্ছে! একথা বলে বাদশাহ্ চাবুক মারার লোককে ডাবলেন। তাকে দেখতেই ঐ ফকীর তৎক্ষণাৎ স্বীকার করল, সত্যি আমি গুপ্তচর। এ অবস্থা দেখে কেউ বাদশাহ্কে বলল:“আলীজাহ্! আপনি মূলতঃ যেন যাদু করলেন! জ্ঞানী বাদশাহ্ বললেন:“কোন যাদু করিনি। আমি তাকে আমার অনুমান দ্বারা পাকড়াও করেছি।”কারণ খাবার এমন উৎকৃষ্ট ছিল, যে পেট ভরে খেয়ে নিয়েছে তার মুখেও তা দেখে পানি চলে আসবে ও সে সেটার প্রতি আসক্ত হয়ে যাবে কিন্তু বাহ্যিক দুরাবস্থা সত্ত্বেও সে এ খাবারের প্রতি কোন মনোযোগ দিল না। তাছাড়া সাধারণ মানুষ শাহী শান-শওকত দেখে কেঁপে উঠে কিন্তু সে সাহসের সাথে কথা বলছিল। এজন্য ধারণা হল, সে গুপ্তচর। (কারণ গুপ্তচরকে নির্দিষ্ট গন্ডিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।) (হায়াতুল হাইওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৪৫৯ পৃষ্ঠা)
(৯৭) কবরে ইবনে তুলুনের অবস্থা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আহমদ ইবনে তুলুন সীমাহীন জ্ঞানী, ন্যায় বিচারক, সাহসী, নম্র, চরিত্রবান, শিক্ষানুরাগী ও দানশীল বাদশাহ ছিলেন। তিনি হাফিযে কুরআন ছিলেন ও অত্যন্ত সুমধুর কণ্ঠে তিলাওয়াত করতেন কিন্তু প্রথম পর্যায়ের অত্যাচারীও ছিলেন। তাঁর তলোয়ার খুনাখুনি করার জন্য সর্বদা খাপের বাইরে থাকত। কথিত আছে, তিনি যাদেরকে হত্যা করেছেন ও যারা তার কাছে বন্দীবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের সংখ্যা ছিল আঠার হাজারের কাছাকাছি। তাঁর ইন্তিকালের পর এক ব্যক্তি প্রতিদিন তাঁর কবরে তিলাওয়াত করতেন। একদিন বাদশাহ আহমদ ইবনে তুলুন তার স্বপ্নে এসে বললেন:“আমার কবরের পাশে কুরআন তিলাওয়াত করো না।”সে জিজ্ঞাসা করল,“কেন? ”ইবনে তুলুন জবাব দিলেন, “যখনই কোন আয়াত আমার বিষয়ে আসে তখন আমার মাথায় আঘাত করে জিজ্ঞাসা করা হয়,“তুই কি এ আয়াত শুনিসনি?(হায়াতুল হাইওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৪৬০ পৃষ্ঠা)
হায়! হায়! হায়! অত্যাচারের পরিণতি কি ভয়ানক! শাসক শ্রেণীর ব্যক্তিদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর। সুতরাং সরকারী ও মন্ত্রীত্বের আকর্ষণীয় পদ ইত্যাদি থেকে বিশেষতঃ বর্তমান যুগে দূরে থাকাতেই নিরাপত্তা রয়েছে।এটাও জানা গেল, হাফিযে কুরআনের উচিত কুরআনে পাকে বিধি-বিধানের উপর আমলও করা। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে ও কবরের আযাবে আক্রান্ত গুনাহগার মুসলমানদের এবং সকল উম্মতকে ক্ষমা করুন।
(৯৮) অন্যের গুনাহ ক্ষমা প্রার্থনাকারীর নিজ গুনাহ ক্ষমা হয়ে গেল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের উচিত, সকল মুসলমানদের গুনাহ্ ক্ষমা দোয়া করতে থাকা। এতে আমাদেরও কল্যাণ নিহিত রয়েছে, যত মুসলমানের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করব, তত পরিমাণ নেকী আমরা লাভ করব। যেমন-
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) বলেছেন, “যে কেউ সকল মুমিন নারী-পুরুষের জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করে,আল্লাহ্ তার জন্য প্রতিটি মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীর বিনিময়ে একটি করে নেকী লিখে দেন।”(আল জামিউস সগীর, ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদীস নং-৮৪১৯)
যাহোক অপরের কল্যাণ দোয়া করলে ان شاء الله عز وجل আমাদের প্রতিও কল্যাণ দান করা হবে। যেমন-
হযরত আল্লামা আব্দুর রহমান সাফফুরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, এক বুযুর্গ (رحمة الله) এর ইন্তিকালের পর কেউ স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল, অর্থাৎ-আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন” তিনি বললেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ও অমুক ব্যক্তির মহল পরিমাণ আমাকে মহল দান করেছেন,অথচ আমি তাঁর চেয়ে অধিক ইবাদতকারী ছিলাম তবে তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলেন এজন্য, তাঁর মধ্যে একটি বিশেষ গুণ ছিল, যা আমার মাঝে ছিল না। আর তা হল, তিনি দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মুসলমানদেরকে ক্ষমা করে দিন।” (নুযহাতুল মাযালিস, ২য় খন্ড, ৩য় পৃষ্ঠা)
ইলাহী ওয়াসেতা পেয়ারে কা ছব কি মাগফিরাত ফরমা, আযাবে না-র ছে হামকো খোদায়া খওফ আ-তা হো।
(৯৯) ৭০ দিনের পুরানো লাশ
الحمد لله عز وجل তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে মুসলমানদের পেরেশানী দুর করার আগ্রহ ও দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ অর্জনের সুযোগ লাভ হয়। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে লখো বিপদগামী মানুষের পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে দাও’য়াতে ইসলামী আহলে হক (সত্য পথের অনুসারীবৃন্দ) এর অনন্য মাদানী সংগঠন। আসুন ঈমান তাজা করার উদ্দেশ্যে আপনাদেরকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের কল্যাণের মহান বাহার (ঘটনা) শুনাচ্ছি। ১৪২৬ হিজরীর ৩রা রমযানুল মোবারক (০৮/১০/০৫) রোজ শনিবার পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়ানক ভূমিকম্প এসেছিল যাতে লখো মানুষ নিহত হয়েছে। তার মধ্যে মুযাফ্ফারাবাদ (কাশ্মীর) এলাকার “মীর আতসুলিয়া” বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী নাসরীন আত্তারীয়্যা বিনতে গোলাম মুরসালীন, যিনি দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করতেন, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। মরহুমার পিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ৮ যুলক্বাদাতুল হারাম ১৪২৬ হিজরী (১০/১২/০৫) সোমবার রাতে (রবিবার দিবাগতরাত) আনুমানিক ১০ টার সময় কোন কারণে কবর খুলে ফেলল। হঠাৎ আসা খুশবুতে নাকের উৎসস্থল পর্যন্ত সুগন্ধিময় হয়ে গেল। শাহাদাতের ৭০ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও নাসরীন আত্তারীয়্যার কাফন নিরাপদ ও শরীর একেবারে তরতাজা ছিল। আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। আতায়ে হাবীবে খোদা মাদানী মাহল, হে ফয়যানে গউছো রযা মাদানী মাহল। সালামত রহে ইয়া খোদা মাদানী মাহল, বাঁচে নজরে বদছে ছাদা মাদানী মাহল। আয় ইসলামী বেহনো! তোমহারে লিয়ে ভী, ছুনো! হে বহুত কাম কা মাদানী মাহল। তুমহি সুন্নাতু আওর পরদে কে আহকাম, ইয়ে তা’লীম ফরমায়েগা মাদানী মাহল। সানাওয়র জায়েগী আখেরাত, তুম আপনায়ে রাখো সদা মাদানী মাহল।
ইয়া রব্বে মুস্তফা عز وجل و(ﷺ) আমাদেরকে প্রিয় মুস্তফা(ﷺ) আম্বিয়ায়ে কিরাম সাহাবায়ে কিরাম عليھم الصلوة السلم
আহলে বাইতে আতহার عليھم الرضوانও আউলিয়ায়ে কিরামعليھم الصلوة السلم গনের সত্যিকারের মুহাব্বত দান কর। তাঁদের পথে চালান ও তাঁদের ফয়যান দ্বারা আমাদের ঈমানের নিরাপত্তা ও উভয় জাহানে শান্তি ও নিরাপত্তা দান কর। আমাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদৌস বিনা হিসাবে প্রবেশ করার এবং সেখানে তোমার প্রিয় হাবীব(ﷺ)এর প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য দান কর।মদীনার ভালবাসা, জান্নাতুল বাক্বী, ক্ষমা ও বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রিয় আক্বা (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়ার প্রত্যাশী। ২২ মুহাররামুল হারাম, ১৪২৭ হি:امين بجاه النبي الامين (ﷺ)
প্রশ্নোত্তর এই পৃষ্ঠাগুলো আহারকারী ও রান্নাকারী অর্থাৎ- সবার জন্য সমানভাবে উপকারী। তাই শয়তান লক্ষ অলসতা প্রদান করলেও আপনি তা সম্পূর্ণ পড়ে নিন। মসজিদ ও ঘর ইত্যাদিতে এটা থেকে দরস দিয়ে সাওয়াবের ভান্ডার অর্জন করুন।
দরূদ শরীফের ফযীলত
নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:“যে কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, তবে যতদিন আমার নাম ঐ কিতাবে থাকবে ফিরিস্তারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে।(মু’জম আউসাত, ১ম খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮৩৫)
১৪২৩ হিজরী ১৯ রবিউন নূর শরীফ জুমাবার ও শনিবার মধ্যবর্তী রাত দা’ওয়াতে ইসলামীর সকল মাদ্রাসা ও জামেয়ার (বাবুল মদীনা করাচী) বাবুর্চী ও অধ্যক্ষদের মাদানী মাশওয়ারা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক ছাত্রও এতে অংশগ্রহণ করে নিয়মানুসারে তিলাওয়াত ও না’ত শরীফের পর আমীরে আহলে সুন্নাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আবূ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদিরী রযবী دامت برکتهم العاليه অনেক মাদানী ফুল পেশ করেন এবং নিয়মানুসারে সময়ে সময়ে صلوا على الحبيب এর মনোমুগ্ধকর আহ্বান জানিয়ে শ্রোতাদের দরূদ শরীফ পড়ার সৌভাগ্য দান করতে থাকেন।
তিনি সকলকে মসজিদের প্রথম কাতারে তাকবীরে উলার সাথে প্রত্যেক নামায জামাআত সহকারে আদায় করা, সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ, প্রতিমাসে মাদানী কাফেলায় তিনদিন সফর এবং প্রতি মাসে মাদানী ইনআমাতের কার্ড জমা করানোর তাগিদ দিয়েছেন।
প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন: খাবার অপচয় হওয়া থেকে রক্ষা করার উপায় কি?
উত্তর: খাবার মেপে রান্না করবেন ও মেপেই বণ্টন করবেন। যেমন-৯২জন ছাত্রের জন্য বিরিয়ানী তৈরী করতে হবে, যেহেতু এক কেজি চাউলে প্রায় ৮ জন মানুষ খেতে পারেন, তাই ১২ কেজি চাউলের বিরিয়ানী প্রস্তুত করুন। সবাইকে থালায় এতটুকু পরিমাণ করে খাবার দিন যেন পরিতৃপ্ত হয়ে যায় এবং অবশিষ্টও থেকে না যায়। এভাবে ان شاء الله عز وجل খুব সহজ হবে আর খাবারও অপচয় কম হবে। সঠিকভাবে অনুমান না করে রান্না করাতে হয়তো কম পড়ে নয়তো প্রচুর পরিমাণে অবশিষ্ট থেকে যায়। অবশিষ্ট থাকা বিরিয়ানী পুনরায় গরম করে খেলে, তাতে স্বাদ কমে যায়। ছয় লক্ষ কয়েদী!
প্রশ্ন: কখন থেকে খাবার নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে?
উত্তর: বনী ইসরাঈলের সময় থেকে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ঘটনা আরয করছি, ফিরআউন নীলনদে ডুবে মরার পর আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশে হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালীমূল্লাহعلى نبينا وعليه الصلاه والسلام ছয় লক্ষ বনী ইসরাইলকে নিয়ে আমালাকাহ গোত্রের সাথে জিহাদ করার জন্য বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে রওয়ানা হলেন। যখন নিকটবর্তী হলেন তখন তাঁর গোত্র অবাধ্যতা প্রদর্শন করল ও যুদ্ধ করতে অস্বীকার করে এটা পর্যন্ত বলে দিল, আপনি ও আপনার রব তায়ালা এ শক্তিশালী গোত্রের সাথে যুদ্ধ করুন।
হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলীমূল্লাহ্على نبينا وعليه الصلاة والسلام এতে অসন্তুষ্ট হলেন। এ ছয় লক্ষ মানুষকে চল্লিশ বৎসরের জন্য ২৭ হাজার গজ প্রস্থ ও ৩০ মাইল দৈর্ঘ্যের ময়দানে বন্দী করা হল। তারা সারাদিন হাঁটত আর সন্ধ্যায় সেখানেই চলে আসত যেখান থেকে পথ চলা শুরু করেছে। এ জঙ্গলের নাম হল তীহ। তীহ অর্থাৎ “পথহারার ন্যায় ঘুরাফেরা করার জায়গা।” (তাফসীরে নঈমী, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা ৩৩৬ থেকে ৩৫১ থেকে সংগৃহীত)
মান্না ও সালওয়া তাফসীরে রূহুল বয়ানে রয়েছে, যখন হযরত সায়্যিদুনা মূসা على نبينا وعليه الصلاة والسلام বনী ইসরাঈলের ছয় লক্ষ মানুষের সাথে তীহ ময়দানে অবস্থান করছিলেন তখন আল্লাহ্ তাআলা ঐ সমস্ত মানুষের খাওয়ার জন্য আসমান থেকে দুই ধরনের খাবার প্রেরণ করেন। একটির নাম ছিল “মান্না” অপরটির নাম “সালওয়া”। মান্না একেবারে সাদা মধুর মত হালুয়া ছিল অথবা সাদা রংয়ের মধুই ছিল, যা প্রতিদিন আসমান থেকে বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিত হত আর সালওয়া রান্নাকৃত ছোট পাখী ছিল, যা দক্ষিণে বাতাসের সাথে আসমান থেকে অবতীর্ণ হত। খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ মান্না ও সালওয়ার ব্যাপারে হযরত সায়্যিদুনা মুসাعلى نبينا وعليه الصلاة والسلام এর প্রতি নির্দেশ ছিল, আপনারা এসব প্রতিদিন খেয়ে ফেলবেন ও আগামীকালের জন্য কখনোই জমা করে রাখবেন না। কিন্তু দুর্বল বিশ্বাসের লোকদের এ ভয় আসতে লাগল, যদি কোন দিন মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ না হয় তবে আমরা এ পানি ও ঘাসহীন ধু-ধু মরুভূমিতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যাব। সুতরাং তারা কিছু গোপনে আগামীকালের জন্য রেখে দিল। অতএব নবী على نبينا وعليه الصلاة والسلام এর অবাধ্যতার কারণে এমন অমঙ্গল ছড়িয়ে পড়ল, যা কিছু আগামীদিনের জন্য জমা রেখেছিল ঐসব গুলো পঁচে গেল এবং ভবিষ্যতের জন্য তা অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। (তাফসীরে রূহুল বয়ান, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪২)
এজন্য মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “বনী ইসরাঈল না হলে, কখনো খাবার খারাপ হত না, এবং মাংসও নষ্ট হত না।” (সহীহ মুসলিম, ৭৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৪৭০)
জানা গেল, ঐ তারিখ থেকেই খাবার ও মাংস নষ্ট হওয়া শুরু হয়। না হলে এর আগে কখনও খাবার ও মাংস নষ্ট হত না । ১২ টি ঝর্ণা প্রবাহিত হল আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলা নবী على نبينا وعليه الصلاة والسلام এর অবাধ্যতায় বনী ইসরাঈলকে কি রকম ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিলেন! তীহ ময়দানে বন্দী হওয়ার সময় যাদের বয়স ২০ বছরের বেশি ছিল তারা সবাই এ সময়ের মধ্যে সেখানেই মৃত্যুবরণ করল। হযরত সায়্যিদুনা মূসা কালীমূল্লাহ্ على نبينا وعليه الصلاة والسلام ও সেখানে ছিলেন, তাই তাঁর বরকতে মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ হল। তিনি على نبينا وعليه الصلاة والسلام পাথরের উপর তাঁর পবিত্র লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তা থেকে ১২ টি ঝর্ণা বের হল, যা থেকে বনী ইসরাঈল পানি পান করত ও গোসল করত। এ বন্দী অবস্থার যেসব পোষাক তাদের শরীরে ছিল, তা ময়লাযুক্ত হত না, পুরাতন হত না এবং ছিঁড়ত না। তাদের নখ ও চুল বৃদ্ধিপেত না, তাই ক্ষৌরকর্মের প্রয়োজনও হত না। রাতে একটি স্তম্ভ প্রকাশ পেত যা থেকে আলো বের হত। মনে করুন, তা “টিউবলাইটের” মত আলো দিত। দিনে হালকা মেঘ তাদের উপর ছায়া দিত। তাদের যে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করত, তার উপর কুদরতীভাবে নখের পোষাক থাকত, যা সে বড় হওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকতো। এ বন্দী অবস্থায় এসব নেয়ামত আল্লাহ্ তাআলার নবী হযরত সায়্যিদুনা মূসা কালীমূল্লাহ্ على نبينا وعليه الصلاة والسلام এর বরকতে তারা লাভ করেছিল। (রূহুল মাআনী ফী তাফসীরিল কুরআনি ওয়াস সাবয়িল মাসানী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত)
কর্মচারীর জন্য নফল নামায পড়া কেমন?
কুরআন শরীফের এ ঘটনা থেকে এটাও জানা গেল, গুনাহ ও নাফরমানীর কারণে দুনিয়াতেও দুঃখ-কষ্ট আসে। দয়া করে! বাবুর্চী ইসলামী ভাইয়েরাও নিজের দায়িত্ব যেন পরিপূর্ণভাবে আদায় করবেন। আজকাল অনেক কর্মচারী মাদানী যেহেন না থাকার কারণে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে না। নির্ধারিত কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্পূন্ন রাখে অথচ বেতন পরিপূর্ণ নিয়ে নেয় আর এভাবে নিজের রুজি নষ্ট করে বসে। মনে রাখবেন! কর্মচারী দায়িত্বের সময় মালিকের অনুমতি ছাড়া নফল নামায, তাসবীহ ইত্যাদি আদায় করতে পারবে না। যদি দূর্বল তার পড়ার কারণে কাজে ঘাটতি হয়, তবে অনুমতি ছাড়া নফল রোযাও রাখতে পারবে না। (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা)
তবে জামাআত সহকারে ফরয নামায ও রমাযানুল মুবারকের রোযা আদায়ের ক্ষেত্রে মালিকের বাধাঁ দেয়ার অধিকার নেন। সে বাধা প্রদান করুক বা না করুক, কিন্তুু কর্মচারীকে আদায় করতে হবে। আপনি হলেন প্রতিটি দানার আমানতদার।
প্রশ্ন: জামিআতুল মদীনার রান্নাঘরের বাবুর্চী কি আমানতদার?
উত্তর: জ্বী হ্যাঁ। যদি জেনে বুঝে খাদ্যের একটি দানাও অহেতুক অপচয় করেন, তবে আখিরাতে জবাব দিতে হবে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে প্রত্যেক প্রকারের আমানত রক্ষা করার সৌভাগ্য দান করুক এবং খিয়ানত করা থেকে নিরাপদ রাখুন। খিয়ানতের শাস্তি খুবই ভয়ানক। যেমন-হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) “মুকাশাফাতুল কুলুব” গ্রন্থে বর্ণনা করেন, খিয়ানতের ভয়ানক শাস্তি কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে পেশ করা হবে। ইরশাদ হবে, তুমি কি অমুকের আমানত ফিরিয়ে দিয়েছিলে? আরয করবে,“না”।
নির্দেশ পেয়ে ফিরিশতাগণ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবেন। সেখানে সে জাহান্নামের গভীরে ঐ “আমানত” রাখাবস্থায় দেখবে আর সে ব্যক্তি ঐ আমানতের দিকে পড়তে থাকবে অবশেষে ৭০ বছর পর সেখানে গিয়ে পৌঁছবে ও ঐ আমানত উঠিয়ে উপরের দিকে আরোহন করবে। যখন জাহান্নামের কিনারায় পৌঁছবে তখন পা পিছলে যাবে অতঃপর জাহান্নামের গভীরে গিয়ে পড়বে। এভাবে সে পড়তে ও উঠতে থাকবে অবশেষে মদীনার তাজেদার হুযুর (ﷺ) এর সুপারিশে সে আল্লাহ্ তাআলার রহমত লাভ করবে এবং আমানতের মালিক তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। (মুকাশাফাতুল কুলুব, ৪৪,৪৫ পৃষ্ঠা)
মাদ্রাসায় খাবার অপচয় হওয়ার কারণ তিনি অর্থাৎ-আমীরে আহলে সুন্নাত دامت برکتهم العاليه বাবুর্চী ইসলামী ভাইদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “বলুন! হোটেলে বেশি খাবার অপচয় হয় নাকি মাদরাসায়?” উত্তর দিলেন, “মাদরাসায়”। এতে তিনি বললেন: “আসলে কথা হচ্ছে, হোটেলে মালিকের নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ হয়, তাকে আয়ও করতে হয়। সুতরাং তিনি খাবারের রান্নার ব্যাপারে কঠোরভাবে দৃষ্টি রাখেন ও হিসাব করে কাজ করেন। আর মাদ্রাসা, এগুলো যেহেতু মানুষের চাঁদা দিয়ে চলে, পরিচালকবেৃন্দর পকেট থেকে টাকা যায় না, বাবুর্চীর পকেট থেকেও যায় না। সুতরাং অসতর্কতা বেড়ে যায়। অনেক সময়তো সদকার আসা জবেহকৃত সম্পূর্ণ ছাগল অসাবধানতায় এদিক-সেদিক পড়ে থাকে। নষ্ট হয়ে যায় ও শেষ পর্যন্ত ফেলে দেয়া হয়। আহ! আহ! আহ! মুসলমানদের চাঁদা এরূপ অন্যায় ভাবে নষ্ট করার কারণে আবার যেন আখিরাতে ফেঁসে না যায়। মাদরাসা, জামিয়া ও সকল ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গরা মনে রাখবেন! কিয়ামতের দিন প্রতিটি অণু পরিমাণ বিষয়ের হিসাব হবে। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন,
৪৫২ / فمن يعمل مثقال ذرة خيرا يره ()ومن يعمل مثقال ذرة شرا يره()
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং যে অণু পরিমাণ সৎ কাজ করবে, সে তা দেখতে পাবে এবং যে অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করবে, সে তাও দেখতে পাবে। (পারা-৩০, সূরা-যিলযাল, আয়াত-৭,৮)
ফ্রীজে খাবার রাখার নিয়ম প্রশ্ন: মাংস ও খাবার সংরক্ষণের কিছু মাদানী ফুল পেশ করুন। উত্তর: এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন যে “ডিপ ফ্রিজ” সঠিকভাবে কাজ করছে কি না। অনেক সময় গরমের দিনে বোল্ডটেজ কমে যাওয়ায় শীতলতা (Cooling) কম হয়ে যায় ও খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এ অবস্থায় খাবারের বস্তুগুলো বিছিয়ে খোলা বাতাসের নীচে রাখা যায়। মাংসকে দেয়াল ইত্যাদিতে ঠেস লাগানো ব্যতীত খোলা বাতাসে লটকিয়ে দেয়াতে অনেকক্ষণ তাজা থাকতে পারে। যখনই রান্নাকৃত খাবার, তরকারী ফ্রীজে রাখবেন তখন পাত্রের ঢাকনা অবশ্যই খুলে রাখবেন, যাতে শীতলতা ভিতরে পৌঁছতে পারে। ছোট পাত্র, থালা বা প্লাষ্টিকের ছোট থলেতে রাখা ভাল। খাবার ভর্তি বড় পাত্রের ভিতরে শীতলতা না পৌঁছার কারণে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। বিশেষতঃ খিচুড়ী ও রান্না করা ডালের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। অন্যথায় এগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে ঐ সমস্ত খাবার, যাতে টমেটো কিংবা টক জাতীয় বস্তু বেশি পরিমাণ হয়, তাও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাঁচা মাংস অনেকদিন পর্যন্ত নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন: কাঁচা মাংস অনেকদিন পর্যন্ত নষ্ট না হওয়ার কোন নিয়ম বলে দিন।
উত্তর: যদি কাঁচা মাংস বড় ডেক্সী কিংবা ঝুড়িতে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখা তাহলে ভিতরের অংশে শীতলতা কম পৌঁছার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে। তাই এটা সংরক্ষণের নিয়ম ভালভাবে বুঝে নিন, প্রথমে বাঁশের ঝুড়ির তলায় বরফ বিছান, এরপর মাংস রাখুন এবার ড্রিপ ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে করলে নীচে, উপরে ও ভিতরে চারিদিকে ঠান্ডাই ঠান্ডা থাকবে এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন: খাবার নষ্ট হওয়ার লক্ষণ কি?
উত্তর: খাবার ও তরকারী নষ্ট হওয়ার লক্ষণ এই যে, টক দুর্গন্ধ বের হবে, ঝোল বিশিষ্ট খাবার হলে উপরে ফেনাও তৈরী হবে। যদি পোলাও ও বিরিয়ানী কিংবা কোর্মা নষ্ট হতে শুরু হয় তবে প্রথমবস্থায় তাতে টক ও নরম বস্তু দুর্গন্ধ হতে থাকে তাই মাংসের টুকরোগুলো বাছাই করে ধুঁয়ে ব্যবহার করুন। যেটার মাংস এখনও দূর্গন্ধ হয়নি এরূপ তরকারী ও পোলাও জেনে বুঝে ফেলে দিবেন না। দুর্গন্ধযুক্ত মাংস খাওয়া হারাম প্রশ্ন: মাংস দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেলে কি করতে হবে? উত্তর: তা ফেলে দিন। সদরুস শরিয়া মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আজমী رحمة الله تعالى عليه বলেন: যে মাংস নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ বের হয় তা খাওয়া হারাম যদিও তা অপবিত্র নয়। (বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ১০১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: ফেঁটে যাওয়া দুধ কিভাবে ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর: ফেঁটে যাওয়া দুধ ব্যবহার করাতো খুবই সহজ। মধু বা চিনি দিয়ে চুলায় তুলে দিলে সেটার পানি শুকিযে যায় এবং দুধের ছানা থেকে যায়, যা অত্যন্ত সুস্বাদু ও মজাদার হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: ভেজিটেবল ঘি খাওয়া যায় কি?
উত্তর: এটা খাওয়া জায়িয কিন্তু অধিকাংশ ভেজাল হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আজকাল প্রায় মানুষের পেট খারাপ থাকে, এটার একটি কারণ নিম্নমানের ভেজিটেবল ঘিও রয়েছে। যদি বিশুদ্ধ ঘিপাওয়া না যায় তবে রান্নার তেল ব্যবহার করুন। অয়েল বা ভুট্টার তেল তা থেকে উত্তম এবং যায়তুন শরীফের তেল সর্বোৎকৃষ্ট। বৃদ্ধ বয়সে ভাল থাকার জন্য।
প্রশ্ন: ঘি, তেল ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি যেন না হয়, এ ব্যাপারে কোন উপকারী সাবধানতা সম্পর্কে ইরশাদ করুন।
উত্তর: ঘি, তেল ও প্রত্যেক প্রকারের চর্বি জাতীয় বস্তু হজম হতে দেরী হয় এবং অধিক পরিমাণে ব্যবহারে রোগ-ব্যাধি ও মেদ বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে। সুতরাং যৌবন থেকেই ঘি, তেল, ময়দা ও চিনির ব্যবহার কমিয়ে দিন। তবে বেঁচে থাকলে ان شاء الله عزوخل বৃদ্ধ বয়সেও স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। আমার মাদানী পরামর্শ হচ্ছে, আপনি খাবার রান্না করার সময় যতটুকু তেল, মসল্লা, লবণ, মরিচ ইত্যাদি দেন, র্নিদ্ধায় এর পরিমাণ অর্ধেক করে দিন। ان شاء الله عزوخل এটার উপকারীতা নিজেই দেখতে পাবেন। তবে রোগীর জন্য উচিত হবে, তিনি যেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন।
প্রশ্ন: তেল, ঘি ছাড়াও কি খাবার তৈরী করা যাবে?
উত্তর: কেন যাবে না। কিছু খাবার তেল, ঘি ছাড়াও রান্না করা যায়। যেমন-ভাত, খিচুড়ি, কড়হী, (দধি ও বেসনের তৈরী খাদ্য বিশেষ, যা কেবল একবারই উতলায়) ডাল ইত্যাদি। মোটা তাজা ছাগল ও গরুর পা রান্না করতে তেল দেয়ার প্রয়োজনই নেই। কারণ তাতে থাকা চর্বি গলে তেলের কাজ করে।
বরং প্রত্যেক প্রকারের তরকারী তেল, ঘি ছাড়া রান্না করা যায়। এর নিয়ম হচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে সবুজ মসল্লা পিষে নিন, চাই নিজের পছন্দনীয় সবজীও এক সাথেই পিষে নিন। এখন এটার গাঢ় তরলতায় তরকারী রান্না করুন। প্রয়োজন অনুপাতে পানি, দই, মরিচ ও গরম মসল্লাও দিন। কয়েকবার রান্নার পর এমনিতেই অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। নালা-নর্দমা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন প্রশ্ন: বাবুর্চী খানার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কিছু মাদানী ফুল পেশ করুন: উত্তর: বাবুর্চী খানার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরী। মেঝ ও দেয়ালের দাগসমূহ পরিস্কার করে দিন। খাদ্য কণা এদিক সেদিক বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকে। থাকতে থাকতে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে রোগ-জীবাণু বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং নিয়মিতভাবে জীবাণু নাশক ঔষধসমূহ ছিটানো উচিত। এ বিষয়টি সর্বদা মনে রাখবেনযে, ঝোল, হাড্ডি ও কোন ধরনের চর্বি নালায় যেন না যায়, নয়তো নালা ভরে যেতে পারে। তাই থালা-বাসন ধোয়ার আগে তাতে লেগে থাকা মসল্লা ও চর্বি নারিকেলের খোশা ভুষে ইত্যাদি দিয়ে মুছে আলাদা পাত্রে ফেলে দিন। কঙ্কর ও লাল পামরী পোকা।
প্রশ্ন: চাউলের সাথে অনেক সময় লাল পামরী পোকা এবং কঙ্করও রান্না হয়ে যায়। যদি এসব ভুলে খেয়ে নেয়া হয় তবে কি হবে?
উত্তর: রান্না করার আগে চাউল ও ডাল ইত্যাদি থেকে মাটি কঙ্কর ও লাল পামরী পোকা পরিস্কার করে নিন। উল্লেখ্য যে, শরীরে ক্ষতি করে সেই পরিমান মাটি খাওয়া হারাম ও যদি জেনেশুনে একটি লাল পামরী পোকাও খাওয়া হয় তবে তা হারাম ও গুনাহ। যদি লাল পামরী পোকা খাবারের সাথে রান্না হয়ে যায় তবে তা বের করে ফেলে দিন এবং এবার খাবার খেয়ে নিন।
যদি রান্না করার সময় উদাসীনতার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কঙ্কর ইত্যাদি রেখে দেন, যার কারণে আহারকারীদের কষ্ট হয় তবে যাদের উপর এসব পরিস্কার করার দায়িত্ব রয়েছে ঐসব বাবুর্চী গুনাহ্গার হবে। সমপূর্ণ হৃদপিণ্ড তরকারীতে দেবেন না।
প্রশ্ন: পশু জবেহ করার সময় বের হওয়া রক্তের বিধান কি? এছাড়া সম্পূর্ণ হৃদপিন্ড কি তরকারীর সাথে রান্না করা উচিত?
উত্তর: মাংস রান্না করার সময় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। জবেহ করার সময় বের হওয়া রক্ত নাপাক ও তা খাওয়া হারাম। তাই মাংস ভালভাবে ধঁুয়ে নিন, যদি এ ধরনের রক্ত থাকে তাহলে যেন পরিস্কার হয়ে যায় এবং এর চিহ্ন দুর হয়ে যায়। সম্পূর্ণ গুর্দা তরকারীতে দেবেন না। এটাকে কেটে টুকরো করে ভালভাবে ধুঁয়ে নিন।
প্রশ্ন: প্লীহা ও হৃদপিন্ড খাওয়া কেমন?
উত্তর: জায়িয আছে। তবে তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এ দুটো বস্তু খাওয়া পছন্দ করতেন না। যেমন দু’টি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে:
(১) প্রিয় আক্বা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) হৃদপিন্ড (খাওয়া) অপছন্দ করতেন। কেননা তা প্রস্রাবের (স্থানের) নিকটবর্তী হয়ে থাকে। (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮২১২ থেকে সংকলিত)
(২) ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ)এর নিকট প্লীহা (খাওয়ার প্রতি) ঘৃণা ছিল, তবে এটাকে হারাম সাব্যস্ত করেননি। (আততাহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, ৮ম খন্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)
প্রশ্ন: তবে কি আমাদের প্লীহা ও হৃদপিন্ড না খাওয়া উচিত?
উত্তর: নবী প্রেমের দাবীতো এটা যে, না খাওয়া, তবে যে এগুলো খায়।
যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)ما থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: দুটো মৃত জানোয়ার ও দুটো রক্ত হালাল। দুটো মৃত হচ্ছে মাছ ও টিড্ডি আর দুটো রক্ত হচ্ছে কলিজা ও প্লীহা। (মুসনাদে ইমামে আহমদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৫, হাদীস নং-৫৭২৭)
প্রশ্ন: কোনও ধরনের মাছ কি হারাম নয়?
উত্তর: শিকার করা ব্যতীত যদি মাছ নিজে থেকেই মরে পানির উপর উল্টে যায়, তবে তা হারাম। মাছ শিকার করা হল আর তা মরে উল্টো হয়ে গেল, তবে তা হারাম নয়। (দুররুল মুখতার, মাআরাদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)
শূণ্যের মাছ মাছ সম্পর্কে একটি চমৎকার ঘটনা শুনুনঃ
ان شاء الله عز وجل এতে করে আপনার জ্ঞানে নতুন বিষয় সংযোজন হবে। যেমন একবার খলীফা হারুনুর রশীদ তাঁর শিকারী বাজ পাখীকে শূন্যে উড়িয়ে দিলেন। উড়তে উড়তে সেটা দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল আর কিছুক্ষণ পর নিজের পায়ে একটি শূন্যের মাছ চেপে ধরে নেমে এল। খলীফা খুবই অবাক হলেন। তিনি বিখ্যাত আলিম হযরত সায়্যিদুনা মুকাতিল (رحمة الله) নিকট এর-ফতোওয়া জিজ্ঞাসা করলেন: তিনি বললেন: “আপনার পরদাদা হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: “শূন্যে নানা ধরনের সৃষ্টি জগৎ অবস্থান করে, যার মধ্যে কিছু সাদা রংয়ের জন্তুও থাকে, যা মাছের ন্যায় বাচ্চা প্রসব করে। এগুলোর ডানা থাকে কিন্তু পালক থাকে না।” এরপর হযরত সায়্যিদুনা মুকাতিল (رحمة الله) তা খাওয়ার অনুমতি দিলে সে জন্তুটিকে সম্মান প্রদর্শন করা হল। (হায়াতুল হায়ওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)
মাছ পরিমাণে কম খাওয়া উচিত হযরত ইমাম বুরহানুদ্দীন ইব্রাহীম যারনূজী (رحمة الله) বলেন হাকীম জালিনূসের মন্তব্য হল, ডালিমে এর মধ্যে অনেক উপকারীতা রয়েছে, অপরদিকে মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি রয়েছে। কিন্তু অল্প মাছ খাওয়া প্রচুর পরিমাণে ডালিম খাওয়া থেকেও উত্তম। (তালিমুল মুতাআল্লিম তরীকু তাআল্লুম, ৪২ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- জালিনূস কে ছিলেন?
উত্তর:- জালিনূসের প্রকৃত নাম “ক্যালাটেসন গ্যালেন” ছিল। তিনি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এর আবির্ভাবেরও আগের যুগে ছিলেন। ১৩১ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ও ২০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। গ্রীসেরপ্রাচীন ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যন্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি সকল ইউনানী চিকিৎসককে অতিক্রম করে গিয়েছিলেন। বিশ্বে ইউনানী চিকিৎসার প্রসিদ্ধি রয়েছে। তিনি এমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক ছিলেন যে, আজ আঠার শত বছর পরও দুনিয়াতে তাঁর সুনাম বিদ্যমান রয়েছে। পশুর ২২টি হারাম অংশ।
প্রশ্ন:- জবেহকৃত পশুর ঐসব অংশ গুলো কি কি যা খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর:- এই ধরনের একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমার আকা আলা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন:
হালাল পশুর সব অংশই হালাল কিন্তু কিছু অংশ আছে যা খাওয়া হারাম অথবামাকরূহ হওয়ার কারণে নিষেধ। সেগুলো হল :
(১) রগের রক্ত, (২) পিত্ত, (৩) মূত্রথলি,
(৪, ৫) পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ, (৬) অন্ডকোষ,
(৭) জোড়া, শরীরের গাঁট, (৮) হারাম মজ্জা,
(৯) ঘাড়ের দো পাট্টা যা কাঁধ পর্যন্ত টানা থাকে,
(১০) কলিজার রক্ত, (১১) তিলির রক্ত,
(১২) মাংসের রক্ত যা যবেহ করার পর মাংস থেকে বের হয়,
(১৩) হৃদপিন্ডের রক্ত, (১৪) পিত্ত অর্থাৎ ঐ হলদে পানি যা পিত্তের মধ্যে থাকে,
(১৫) নাকের আর্দ্রতা যা ভেড়া মধ্যে অধিক হারে হয়ে থাকে,
(১৬) পায়খানার স্থান, (১৭) পাকস্থলি, (১৮) নাড়িভূড়ি,
(১৯) বীর্য, (২০) ঐ বীর্য যা রক্ত হয়ে গেছে,
(২১) বীর্য যা মাংসের টুকরা হয়ে গেছে,
(২২) ঐ বীর্য যা পূর্ণ জানোয়ার হয়ে গেছে এবং মৃত অবস্থায় বের হয়েছে অথবা জবেহ করা ছাড়া মারা গেছে।
(ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ২০তম খন্ড, ২৪০, ২৪১ পৃষ্ঠা)
বুদ্ধিমান জ্ঞানী কসাইরা এসব হারাম বস্তু বের করে ফেলে দিয়ে থাকে কিন্তু অনেকের তা জানা থাকে না কিংবা অসাবধানতাবশত এরকম করে থাকে। তাই আজকাল প্রায় অজ্ঞতাবশতঃ যেসব বস্তু তরকারীর সাথে রান্না করা হয়, সেগুলোর পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছি। রক্ত" জবেহ করার সময় যে রক্ত বের হয় সেটাকে “দমে মাসফূহ” বলা হয়। এটা অপবিত্র, তা খাওয়া হারাম, জবেহ করার পর যে রক্ত মাংসের মধ্যে থেকে যায়, যেমন ঘাড়ের কাটা অংশ, হৃদপিন্ডের ভিতর, কলিজা, প্লীহার ও মাংসের ভিতরে ছোট ছোট রগের মধ্যে, এসব যদিও নাপাক নয় তবু এসব রক্ত খাওয়া হারাম। তাই রান্না করার আগে এগুলো পরিস্কার করে নিন। মাংসের মধ্যে কিছু জায়গায় ছোট ছোট রগে রক্ত থাকে তা চোখে পড়া খুবই কঠিন। রান্নার পর ঐ রগগুলো কালো রেখার মত হয়ে যায়। বিশেষতঃ মগজ, মাথা, পা ও মুরগীর রান ও ডানার মাংস ইত্যাদির মধ্যে হালকা কালো রেখা দেখা যায়, খাওয়ার সময় তা বের করে ফেলে দিন। মুরগীর হৃদপিন্ডও সম্পূর্ণ রান্না করবেন না, লম্বাতে চার টুকরো করে প্রথমে সেটার রক্ত ভালভাবে পরিস্কার করে নিন। হারাম মজ্জা এটা সাদা রেখার মত হয়ে থাকে। মগজ থেকে শুরু করে ঘাড়ের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ মেরুদন্ডের হাড্ডির শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। অভিজ্ঞ কসাই ঘাড় ও মেরুদন্ডের হাড্ডির মধ্যখান থেকে ভেঙ্গে দু টুকরো করে হারাম মজ্জা বের করে ফেলে দেন। কিন্তু অনেক সময় অসাবধানতাবশতঃ সামান্য পরিমাণে থেকে যায় ও তরকারী বা বিরিয়ানী ইত্যাদির সাথে রান্নাও হয়ে যায়। সুতরাং ঘাড়, বক্ষ কিংবা পাঁজরের মাংস ও কোমরের মাংস ধোয়ার সময় হারাম মজ্জা খুঁজে বের করে ফেলে দিন।
এটা মুরগী এবং অন্যান্য পাখির ঘাড়ে ও মেরুদন্ডের হাড়েও থাকে তবে তা বের করা খুবই কঠিন। তাই খাবারের সময় বের করে ফেলা উচিত। পাট্টা ঘাড় মজবুত থাকার জন্য ঘাড়ের দু দিকে (হালকা) হলদে রংয়ের দুটি লম্বা লম্বা পাট্টা থাকে, যা কাঁধ পর্যন্ত টানা অবস্থায় থাকে। এ পাট্টাগুলো খাওয়া হারাম। গরু ও ছাগলের পাট্টাগুলো সহজে দেখা যায়। কিন্তু মুরগী ও পাখির ঘাড়ের পাট্টা সহজে দেখা যায় না। খাবারের সময় খুঁজে বা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে জিজ্ঞাসা করে তা বের করে ফেলুন। শরীরের গাঁট ঘাড়ে, কণ্ঠনালীতে ও কিছু জায়গায় চর্বি ইত্যাদিতে ছোট বড় কোথাও লাল আবার কোথাও মাটি রংয়ের গোল গোল গাঁট থাকে। সেগুলোকে আরবীতে গদ্দাহ ও উদর্ূতে গুদূদ বলা হয়। এগুলো খাওয়া হারাম। রান্না করার আগে খুঁজে এগুলো ফেলে দেয়া উচিত। যদি রান্নাকৃত মাংসেও দেখা যায় তবে ফেলে দিন। অন্ডকোষ অন্ডকোষকে খুসইয়া, ফাওতাহ বা বায়দাহও বলা হয়। এগুলো খাওয়া মাকরূহে তাহরীমি। এগুলো গরু, ছাগল ইত্যাদি নরের মধ্যে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। মোরগের পেট খুলে ভূড়ি সরালে পিঠের ভিতরের উপরিভাগে ডিমের ন্যায় সাদা দুটো ছোট ছোট বিচির মত দেখা যাবে এগুলোই হচ্ছে অন্ডকোষ। এগুলো বের করে ফেলুন। আফসোস! মুসলমানদের অনেক হোটেলে হৃদপিন্ড, কলিজা ছাড়া গরু ছাগলের অন্ডকোষও তাবায় ভুনে পরিবেশন করা হয়। সম্ভবত হোটেলের ভাষায় এ ডিসকে “কাটাকাট” বলা হয়। সম্ভবত এটাকে কাটাকাট এজন্য বলা হয়, গ্রাহকের সামনেই হৃদপিন্ড বা অন্ডকোষ ইত্যাদি ঢেলে তীব্র আওয়াজ সহকারে তাবার উপর কাটে ও ভুনে, এতে কাটাকাটের আওয়াজ হয়।
নাড়িভূড়ি নাড়িভূড়ির ভেতর আবর্জনা ভরা থাকে, এটাও খাওয়া মাকরূহে তাহরীমী। কিন্তু মুসলমানদের একাংশ রয়েছে, যারা আজকাল এটা আগ্রহ ভরে খান।
হারাম বস্তু সমূহ কিভাবে চেনা যায়?
প্রশ্ন:- বর্ণনাকৃত হারাম অঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত কিভাবে জানা যাবে? উত্তর:- প্রত্যেক বাবুর্চী বরং সকল ইসলামী ভাইদের উচিত, তারা যেন জবেহকৃত পশুর হারাম বস্তু সমূহ সম্পর্কে জানার জন্য ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যার ২০ তম খন্ডের ২৩৪ থেকে ২৪১ নং পৃষ্ঠা অবশ্যই পড়ে নেয়। বুঝে না আসলে উলামায়ে কিরামদের থেকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন। এরপর কোন মাংস বিক্রেতার সাথে সাক্ষাত করে ঐসব হারাম বস্তু চিনে নিতে পারেন। নিশ্চয় এগুলো সম্পর্কে পড়লে উপকার হবে। তবে সাথে সাথে যদি বাস্তব অভিজ্ঞতাও হয়ে যায় তবে সোনায় সোহাগা। বেনামাযীর হাতের রুটি খাওয়া কেমন?
প্রশ্ন:- কিছু মানুষ বেনামাযীর হাতের রুটি খায় না। আমাদের কিছু বাবুর্চী কোন কোন সময় নামাযে অলসতা করে বসেন, তাদেরকে উপদেশ প্রদান করুন। উত্তর:- বেনামাযীর হাতে তৈরি করা রুটি খাওয়া জায়িয। তবে যদি পরহেযগার মানুষ বেনামাযীর সংশোধনের জন্য ভীতিপ্রদর্শন স্বরূপ তার হাতের রুটি না খায় তবে কোন অসুবিধা নেই। বাকী রইল এখানে যে সকল বাবুর্চী ইসলামী ভাই একত্রিত হয়েছেন, তাদের সম্পর্কতো মাদ্রাসার সাথে রয়েছে। অধিকাংশ ইসলামী মাদ্রাসাও মসজিদ সংলগ্ন রয়েছে। এসকল বাবুর্চীদের তো ফরযের সাথে সাথে আওয়াবীন, তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও চাশতের নফল নামাযও ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
কেননা আমাদের এখানে ডিউটির সময় এসব নফল নামায পড়তে কোন বাঁধা নেই। মনে রাখবেন! ফরয নামায বাবুর্চীর জন্য, তার সহযোগীর জন্য এবং রুটি প্রস্তুতকারীর জন্যও মাফ নেই। যখনই আযানের আগে দরূদ শরীফের আওয়াজ শুনেন, (তাদের জন্য) নির্দেশ হচ্ছে; সাথে সাথে চুলা বন্ধ করে দেয়া এবং তাকবীরে উলার সাথে জামাআত সহকারে নামায আদায় করার জন্য মসজিদের প্রথম কাতারের দিকে অগ্রসর হবেন। খাইর খোয়া (নোট★) (সেবক) ইসলামী ভাইদের প্রতি অনুরোধ হচ্ছে, তারা যেভাবে অন্যান্য ছাত্রদেরকে নামাযের জন্য ঘুম থেকে উঠান ও মসজিদে পৌঁছান, তেমনিভাবে বাবুর্চী খানায় গিয়ে চুলা বন্ধ করিয়ে তাদেরকেও নামাযের জন্য পাঠিয়ে দিবেন। দ্বীনি জ্ঞানার্জনকারী ছাত্রদের সেবা করা সৌভাগ্যের বিষয়।
(★নোট) নামাযের জন্য ছাত্রদেরকে মসজিদের কাতারে পৌঁছানো, বয়ান ও দরসের সময় লোকদেরকে মুবাল্লিগের নিকটবর্তী করে বসানোর সেবায় নিয়োজিত ইসলামী ভাইদেরকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে “খাইর খোয়া” বলা হয়।
প্রশ্ন:- বাবুর্চী সাহেবগণ কি সৌভাগ্যবান নয়, তারা দ্বীনি জ্ঞানার্জনকারী ছাত্রদের সেবা করার সৌভাগ্য অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন?
উত্তর:- কেন নয়, সত্যিই প্রিয় বাবুর্চীগণ! আপনারা খুবই সৌভাগ্যবান,হিফযে কুরআন ও ইলমে দ্বীন অর্জনে রত থাকা ঐ ছাত্র আপনাদের হাতের খাবার খেয়ে থাকে, যাদের উপর অফুরন্ত রহমত বর্ষিত হয়। ইলমে দ্বীন শিক্ষার্থীদের স্থান অনেক উর্ধ্বে এবং মর্যাদাপূর্ণ। হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা (رضي الله عنه) যখন কোন ইলমে দ্বীন অর্জনকারীকে দেখতেন তখন “মারহাবা খোশ আমদেদ” বলে এ কথা বলতেন: “রাসুলুল্লাহ্ صلى الله تعالى عليه وعلى اله وسلم তোমাদের ব্যাপারে (ভাল আচরণ করার) বিশেষ ওসিয়ত করেছেন। (সুনানে দারিমী, ১ম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৪৮)
নিশ্চয় যুবক শিক্ষার্থীরা অতি সৌভাগ্যবান, এ বয়সে সাধারণত তাদের খেলাধুলায় মগ্ন থাকার কথা কিন্তু তারা নিজেদের যৌবনের সময়গুলো ইলমে দ্বীনের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন। হে আল্লাহ! শিক্ষার্থীদের সদকায় আমাকে ক্ষমা কর প্রশ্ন:- জামেয়াতুল মদীনার শিক্ষার্থীর ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কি?উত্তর:- আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর জামেয়া ও মাদরাসা সমূহের শিক্ষার্থীদেরকে খুবই ভালবাসি আর তাদের ওসীলা নিয়ে নিজেরক্ষমার জন্য দোয়া করি। যদিও তাদের মধ্যে অনেকে দুষ্টও থাকে কিন্তু বাচ্চা বাচ্চাই! বাচ্চা যেমনই দুষ্ট হোক না কেন মা-বাবার প্রিয়ভাজন হয়ে থাকে। কিছু ছাত্র দুষ্টামী করাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী খারাপ হয়ে যায় না الحمد لله عز وجل আমাদের ছাত্ররা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছাড়াও অন্যান্য নফলও আদায় করে থাকেন। الحمد لله عز وجلআমাদের অসংখ্য ছাত্র মিলে সালাতুত তাওবা, তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও চাশতের নামাযের আদায় করেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে জমা করেন। অসংখ্য শিক্ষার্থী মাদানী কাফেলায় সফর করেন। অনেকে এমনও রয়েছেন, যারা মাদ্রাসা ও জামেয়ার আশে পাশে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করার যিম্মাদার, الحمد لله عز وجلতারা অগণিত মসজিদের খিদমত করছেন এবং আবাদও করেছেন। اللهم زډ فزډ ثم زډ [ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! বৃদ্ধি করো, আরো বৃদ্ধি করো অতঃপর বৃদ্ধি করো।)
অভিযোগ করার নিয়মঃ
প্রশ্ন:- বাবুর্চী ইসলামী ভাই শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয় না? উত্তর:- দেখুন! বাবুর্চীরও আত্মসম্মান রয়েছে। যার যেমন ইচ্ছা, সে যদি সময়ে অসময়ে বাবুর্চীর কান ভার করে তুলে তবে তারও অপছন্দনীয় হতে পারে। প্রকাশ্য থাকে যে, এক বা দু’জন বাবুর্চীর পক্ষে একটি জামেয়া বা মাদ্রাসার সমস্ত ছাত্রদেরকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা! আপনারাও মনে রাখবেন, বার বার অভিযোগ করতে থাকলে অভিযোগকারীর সম্মান হানি হয় এবং প্রভাব শেষ হয়ে যায়। সুতরাং অভিযোগ একবারই করা হোক। তবে তা নম্রভাবে ও সম্পূর্ণ নিয়ম অনুযায়ী হওয়া উচিত বরং লিখিতভাবে হলে খুব ভাল। এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞতা এটাই রয়েছে, “বলার” বিপরীতে “লেখা” অধিক ফলদায়ক হয়ে থাকে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের কথা অপরিপক্ক হয়ে থাকে, তাই তারা সঠিকভাবে কাজ সমাধান করার পরিবর্তে কাজকে বিগড়ে দেন। তাই কোন শিক্ষার্থী যেন বাবুর্চীর নিকট অভিযোগ নিয়ে না যান। যার অভিযোগ থাকে তিনি যেন লিখিতভাবে তার জামেয়াতুল মদীনা বা মাদ্রাসাতুল মদীনার বাবুর্চীখানার যিম্মাদার ইসলামী ভাইকে পেশ করেন। (আমীরে আহলে সুন্নাত ? دامت بركاتهم العليه এর এ কথায় বাবুর্চীরা খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।)
প্রশ্ন:- যদি বাবুর্চী খাবার পুড়ে ফেলে তবে তার জন্য কি এটা মাফ?
উত্তর:- না, বাবুর্চী যেহেতু বেতন নিয়ে রান্না করছেন, তাই সে এটার যিম্মাদার। ফুকাহায়ে কিরাম رحمهم الله تعالى বলেন: “বাবুর্চী খাবার নষ্ট করে ফেলল বা পুড়ে ফেলল কিংবা খাবার কাঁচা থাকতে নামিয়ে ফেলল তবে তাকে খাবারের (অর্থাৎ- যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা) ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। (দুররে মুখতার মাআ রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ২২ পৃষ্ঠা)
এখানে যিম্মাদারগণ মনযোগ দিন যদি বাবুর্চি ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে মানুষের চাঁদার ব্যাপারে আপনারা চোখ-কান বেঁধে রাখতে পাবেন না। যদি আপনাদের নিজস্ব সম্পদ হত তবে সম্ভবত এক এক পয়সা উসূল করে নিতেন। সুতরাং এ ওয়াকফকৃত সম্পদের ক্ষতিপূরণ অবশ্যই দিতে হবে। অর্থাৎ খাবার নষ্ট হওয়ায় যত টাকা ক্ষতি হয়েছে তা আদায় করতে হবে। “ঠিক আছে ভবিষ্যতে দেখা যাবে” এরূপ বলে দেয়াতে মুক্তি পেতে পারেন না, অতীতের সমস্ত হিসাবও দিতে হবে।
প্রশ্ন:- নান রুটিতে অনেক সময় খাওয়ার সোডার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, এটা কি ক্ষতিকারক নয়?
উত্তর:- প্রতিটি বস্তুতে মধ্যমপন্থা জরুরী। স্পষ্ট যে, যদি রুটিতে সোডার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে রুটির স্বাদ চলে যায় আর সোডা বেশি ব্যবহার করলে তা শরীরকে দূর্বল করে দেয়। প্রশ্ন:- চনা বুট সিদ্ধ করার নিয়ম কি রূপ? উত্তর:- চনা বুট সিদ্ধ করতে হলে উত্তম হচ্ছে, আনুমানিক ৮ ঘন্টার জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তবে তা নরম করা ও তাড়াতাড়ি রান্নাকরার জন্য খাওয়ার সোডাও দিতে পারেন।
প্রশ্ন:- বয়স্ক পশুর মাংস গলানোর নিয়ম কি?
উত্তর:- বয়স্ক পশুর শক্ত মাংস রান্না করার সময় যদি কাঁচা পেঁপে সাথে দেয়া হয় তাহলে তা তাড়াতাড়ি গলে যায়। শিকে সেঁকা মাংসেরমসল্লার সাথেও কাঁচা পেঁপে দেয়া যায়। হোটেলে লোকেরা যে মজা করে করে নিহারী খায়, তাতে প্রায় উট বা বয়স্ক গাভী বা ঐ সমস্ত মহিষীর মাংস (যেটা দুধ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে) অথবা কলুর বলদ ও ক্ষেতে কাজ থেকে অবসর প্রাপ্ত (RETIRED) অর্থাৎ- বয়স্ক বলদের মাংস) দেয়া হয়ে থাকে। পেঁপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সেটাকে মোমের ন্যায় নরম করে খাওয়ার উপযোগী করে দেওয়া। এছাড়াচিনি, পুদিনার ঢাল ও সুপারীও মাংস গলানোর কাজে আসে। অনেকক্ষণ ধরে চুলায় রাখাতেও মাংস গলে যায়। যখন তরকারী কিংবা পোলাও ইত্যাদি রান্না করবেন তখন মুরগী ইত্যাদির মাংসকে ছোট করে দিন, যাতে ভিতরেও সিদ্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বড় কড়াই বা ডেক্সীতে বড় টুকরো রান্না করা হলে আর প্রয়োজন মত তাপলাগলে সিদ্ধ হয়ে যাবে।
আমার মাদানী পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিটি তরকারীতে তাবাররুক স্বরূপ অল্প পরিমাণ কদু শরীফ দেয়ার অভ্যাস করুন। মাংসে সবজী দেয়ার একটি উপকার এটাও রয়েছে, এতে মাংসের কিছু বিপরীত প্রভাব দূর হয়ে যায়।
প্রশ্ন:- যে মাংস কোন অবস্থাতেই সিদ্ধ হয় না তার প্রতিকার কি?
উত্তর:- এটার কোন প্রতিকার নেই। আমার আকা আ’লা হযরত ইমামআহমদ রযা খান (رحمة الله)বলেন: হিজড়া যাতে নর-মাদী উভয়ের আলামত থাকে, উভয় (স্থান) থেকে একই রকম প্রস্রাব আসে, কোন প্রাধান্যের কারণ নেই, সেটার মাংস যেভাবেই রান্না করা হোক, রান্না হয় না। এমনিতে শরয়ী জবেহর মাধ্যমে এটাহালাল হয়ে যাবে। যদি কেউ কাঁচা মাংস খেতে চান তবে খেতেপারেন। সেটার কতাওবানী জায়িয নেই। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, নতুন সংস্করণ, ২০তম খন্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)
প্রশ্ন:- ভাল মাংস চেনার উপায় কি?
উত্তর:- বয়স্ক পশুর মাংস লাল থাকে। অপরদিকে অল্প বয়স্ক পশুর মাংস খাকী বা লালিমা মিশ্রিত কালো রঙ্গের হয়ে থাকে, আর তাতে প্রায় চর্বিও কম থাকে। খাকী রংয়ের মাংস খুবই উত্তম। ঘরের জন্য শেষে অবশিষ্ট থাকা মাংস খরিদ করা লাভজনক হতে পারে, কারণ বিক্রেতা তাড়াতাড়ি চর্বি ও হাড্ডি মেপে চালিয়ে দেয় আর এভাবে শেষে যা অবশিষ্ট থাকে তাতে মাংসের পরিমাণ বেশি থাকে! সবজী ও ফলের ব্যাপারটা এর বিপরীত, তাজা ও ভালগুলো তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যায় আর সবশেষে পঁচা গুলো অবশিষ্ট থাকে। এ অর্থে এ প্রবাদ বাক্য সঠিক, “সবজী ও ফল শুরুতে ও মাংস শেষে ক্রয় কর।”
প্রশ্ন:- কোন সাহাবী কি মাংসের কাজ করতেন?
উত্তর:- জ্বি হ্যাঁ, হযরত সায়্যিদুনা আমর ইবনে আস ও হযরত সায়্যিদুনা যুবাইর (رضي الله عنه)মাংসের কাজ করতেন। আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক মাংস বিক্রেতাকে তাঁদের অনুসরণ করার সৌভাগ্য দান করুন। আজকাল এ পেশায় ব্যবসায়ীরা প্রচুর গুনাহের ভাগীদার হচ্ছে। মাংস ব্যবসায় লাভের জন্য পালিত বাকহীন পশু প্রায়ই শুরু থেকে অত্যাচার সহ্য করতে করতে জবেহর স্থলে পৌঁছে। নিশ্চয়ই জবেহ করা জায়িয, কিন্তু আজকাল এ জায়িয কাজ করার সময় অসহায় পশুদেরকে এরূপ অহেতুক কষ্ট প্রদান করা হয়, যা দেখে অন্তরে ভয় আসে।
প্রশ্ন:- পশু জবেহ করার সময় ঐ সাবধানতা বর্ণনা করুন, যাতে সেটার কম কষ্ট হয়।
উত্তর:- গরু ইত্যাদি মাটিতে ফেলার আগেই কিবলার দিক নির্ধারণ করে নেয়া চাই। শোয়ানোর পর বিশেষতঃ পাথুরে জমিনে টানা হেঁচড়া করে কিবলার দিকে করা বাকহীন পশুর জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জবেহ করার সময় চারটি রগ যেন কাটা হয় কিংবা কমপক্ষে তিনটি রগ যেন কেটে যায়। এর চেয়ে বেশি কাটবেন না, কারণগর্দানের মোহর পর্যন্ত ছুরি পৌঁছলে এটা তাদের অনর্থক কষ্ট দেয়ার শামিল। অতঃপর যতক্ষণ পর্যন্ত পশু পরিপূর্ণভাবে ঠান্ডা না হয়ে যায়, ততক্ষণ সেটার পা কাটবেন না, চামড়া উঠাবেন না। যাহোক জবেহ করার পর যতক্ষণ রূহ বের না হয়, ততক্ষণ ছুরি অথবা কাটা ঘাড়ে হাত দিয়ে একবারও স্পর্শ করবেন না। চিন্তা করুন! যদি আপনার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কেউ হাত কিংবা আঙ্গুল দেয় তবে আপনার কষ্ট হবে কি হবে না? অনেকে গরুকে তাড়াতাড়ি “ঠান্ডা” করার জন্যজবেহ করার পর ঘাড়ের চামড়া উঠিয়ে ছুরি ঢুকিয়ে হৃদপিন্ডের রগগুলো কেটে দেয়।
অনুরূপভাবে ছাগল জবেহ করার পর পরই অসহায় ছাগলের ঘাড় মুচড়িয়ে পৃথক করে দেয়। বাকহীন পশুকে নির্যাতন করা উচিত নয়। যার পক্ষে সম্ভব হয় তার জন্য জরুরী, পশুকে বিনা কারণে কষ্ট প্রদানকারীদেরকে বাঁধা দেয়া। বাহারে শরীয়াতের ১৬তম খন্ডের২৫৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: “পশুর উপর অত্যাচার করা বন্দী কাফির (বর্তমানে দুনিয়াতে সকল কাফির হচ্ছে হারবী)- এর উপর অত্যাচার করা থেকে নিকৃষ্ট আর বন্দীর উপর অত্যাচার করা মুসলমানের উপর অত্যাচার করা থেকেও নিকৃষ্ট। কারণ আল্লাহ্ তাআলা ছাড়া পশুর কোন সহযোগী ও সাহায্যকারী নেই, এই অসহায়কে এ অত্যাচারথেকে কে রক্ষা করবে!”
প্রশ্ন:- জবেহ করার সময় পশুর তামাশা দেখা কেমন?
উত্তর:- বাকহীন পশুর জবেহকে তামাশায় পরিনত করার পরিবর্তে তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা উচিত। আর চিন্তা করা উচিত, যদি এটার স্থানে আমাকে জবেহ করা হতো তবে আমার কি অবস্থা হতো!জবেহ করার সময় পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা সাওয়াবের কাজ।যেমন একজন সাহাবী (رضي الله عنه) তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর দরবারে আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ)“ছাগল জবেহ করার সময় আমার দয়া আসে। বললেন: “যদি সেটার প্রতি দয়া করোতাহলে আল্লাহ্ তাআলাও তোমার প্রতি দয়া করবেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ৫ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৬৩৬)
এ হাদীসে পাকে তো জায়িয পন্থায় জবেহ করার সময় দয়া প্রদর্শনের আলোচনা রয়েছে। তাহলে যখন বাকহীন পশুর প্রতি অত্যাচার করা হয়, যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করাহয়েছে, সেটাকে তামাশায় পরিণত করা কেমন? যদি সম্ভব হয় তবে অত্যাচারীকে বুঝান ও অত্যাচার থেকে বিরত রাখুন। যদি এটা করতে না পারেন তবে মনে মনে এটাকে খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যান। বরং যখন পশু জবেহ করা হচ্ছে তখন অপ্রয়োজনে সেটার দিকে দেখা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
সেটাকে ঘিরে রাখা, সেটার চিৎকার লাফা লাফিতে আনন্দিত হওয়া, হাসা, অট্টহাসি দেয়া ও সেটাকে তামাশায় পরিণত করা সম্পূর্ণভাবে উদাসীনতার লক্ষণ। ছাগলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত, কারণ হাদীসে পাকে রয়েছে, “ছাগলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর ও তার (শরীর) থেকে মাটি ঝেড়ে ফেল, কেননা সেটা জান্নাতী পশু।” (আল জামেউস সগীর, ১ম খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৪২১)
প্রশ্ন:- আজকাল উটকে তিন দিক দিয়ে জবেহ করা হয়, এটা কতটুকু সঠিক?
উত্তর:- উটকে তিন দিক দিয়ে জবেহ করা অনর্থক। এক দিকেই যথেষ্ট বরং উটকে নহর করা সুন্নাত। কণ্ঠনালীর শেষ প্রান্তে বর্শা (অথবা লম্বা ছুরি ইত্যাদি) প্রবেশ করিয়ে রগ কেটে দেয়াকে নহর বলা হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১৫তম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, মদীনাতুল মুর্শিদ বেরেলী শরীফ)
নহর করার পর এখন আর গলায় ছুরি চালানোর অর্থাৎ পুনরায় জবেহ করার প্রয়োজন নেই। উটের মাথায় লোহার লাঠি দ্বারা আঘাত করা! আল্লাহ্ তাআলা বারবার আমাদের সবাইকে হজ্জ ও দীদারে মদীনা নসীব করুক এবং মিনা শরীফে কতাওবানীর (হজ্জের কতাওবানী মিনা শরীফে করা সুন্নাত। কিন্তু আজকাল “কতাওবানীর স্থান” মুযদালিফাতে রয়েছে) সৌভাগ্য দান করুক। আহ! (১৪২২ হিজরীর) হজ্জের সময় সেখানে কম্পন সৃষ্টিকারী দৃশ্য দেখা গেল, দয়ালু ব্যক্তির অন্তর কেপে উঠবে। আহ! অসহায় নিঃস্ব উটের প্রতি অত্যাচার! একজন লম্বাকৃতির কালো হাবসী লোহার ভারী লাঠি দু’হাতে ধরে খুবই আনন্দের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা উটের মাথায় স্বজোরে আঘাত করছিল, যাতে ঐ অসহায় উট চিৎকার দিয়ে ঘুরে পড়ে যায়, অতঃপর কয়েকজন কসাইঅস্থির হয়ে সেটাকে তিন দিক দিয়ে জবেহ করে দেয়। কোথাও কোথাও এটাও দেখা গেছে, প্রথমে দাঁড়ানো উটকে নহর করে দেয়।
রক্তের ফোয়ারা প্রবাহিত হলে, সেটা ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তার মাথায় লোহার লাঠি দিয়ে স্বজোরে আঘাত করা হয়, যাতে ঐ অসহায় উট ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তিন দিক থেকে জবেহ করে দেয়। এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য আমি নিজে দেখিনি। ১৪২২ হিজরীর চল্ মদীনার কাফেলার পক্ষ থেকে কতাওবানী করার জন্য “কতাওবানী স্থলে” যাওয়া ইসলামী ভাইয়েরা আমাকে চোখে দেখা অবস্থার কথা শুনিয়েছেন।
প্রশ্ন:- মাংস বিক্রেতাদের জন্য কিছু মাদানী ফুল বর্ণনা করুন।
উত্তর:- আজকাল অধিকাংশ মাংস বিক্রেতা প্রচুর পরিমাণে ভুলত্রট্টটি করে গুনাহ্ অর্জন করছেন ও নিজের রুজি হারাম করে ফেলছেন। মোট কথা বরফখানা থেকে বের করা বাঁসী মাংসকে তাজা বলে বিক্রয় করা, বয়স্ক গরুর বা বয়স্কা মহিষী বা বয়স্ক মহিষের মাংসকে অল্প বয়স্ক গরুর মাংস বলে বিক্রি করা, অথবা বয়স্কা গাভী বা বাছুরের রানে অন্য কোন মাদী বাছুরের ছোট ছোট স্তন লাগিয়ে ধোঁকা দিয়ে বিক্রি করা, যেসব হাড্ডি ও ছ্যাচড়াকে বা কিছু মাংসের উপরের অপ্রয়োজনীয় অংশ যা ফেলে দেয়ার প্রচলন রয়েছে সেগুলো ধেঁাকার মাধ্যমে মাপের মধ্যে চালিয়ে দেয়া, মাংস কিংবা কীমাকে ওজন না দিয়ে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে ওজনের নামে দিয়ে দেয়া, (যেমন-কেউ আধা পোয়া কিমা চাইলো তখন মুষ্ঠিতে নিয়ে ওজন করা ব্যতীতই আধা পোয়া হিসাবে দিয়ে দিল) ইত্যাদি কাজ গুনাহ্ ও হারাম এবং জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ।
অনুমান করে ওজন করা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা।
প্রশ্ন:- এই মাত্র আপনি কীমা অনুমান করে ওজন দেয়ার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বললেন। এতে তো সন্দেহের ব্যাপার রয়েছে। কেননা অনেক বস্তু আজকাল অনুমান করেই ওজন করে দেয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে কি গ্রহীতাও গুনাহগার হবেন?
উত্তর:- জ্বী হ্যাঁ। যদি ওজনের নামে অনুমান করে ক্রয় করেন তবে গ্রহীতাও গুনাহগার হবেন। এ থেকে বাঁচার একটি নিয়ম এটাযে, যে বস্তু ওজনের নামে ওজন করা ব্যতীত আজকাল দেয়া হয় তা আপনি ওজনের নামে চাইবেন না বরং সেটার দাম বলে দিন। যেমন-আমাকে ৫ টাকার দই দিন বা ১২ টাকার কীমা দিন। এখন সে যেভাবেই দিক, উভয়ে গুনাহ্ থেকে বেঁচে যাবেন। কীমা দিয়ে তৈরী বাজারের চমুচা।
প্রশ্ন:- না ধুঁয়ে কীমা খাওয়া যাবে কি?
উত্তর:- যতক্ষণ অপবিত্রতা সম্পর্কে জানা না যায়, না ধুঁয়ে খাওয়াতে অসুবিধা নেই। কিন্তু সাবধানতা হল, ধঁুয়ে নেয়া। বাজার ও দা’ওয়াতে মজাদার চমুচা আহারকারীরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণকরুন। সাধারণতঃ চমুচা তৈরীর কীমা ধোয়া হয় না। তাদের ভাষায় কীমা ধোঁয়ে নিলে চমুচার স্বাদে প্রভাব পড়ে? কীমাতে অনেক সময় কি কি হয় তাও শুনে নিন। গরুর নাড়িভূড়ির খোশা তুলে সেটার “টুকরো” এর সাথে প্লীহা বরং কোন সময়তো জমাট বাধা রক্ত দিয়ে মেশিনে পিষা হয়। এভাবে করাতে সাদা রংয়ের নাড়িভূড়ির টুকরোগুলোসহ কীমার রং মাংসের ন্যায় গোলাপী হয়ে যায়। অনেক সময় কাবাব চমুচা বিক্রেতা তাতে প্রয়োজন অনুপাতে আদা-রসুন ইত্যাদিও সাথে দিয়ে পিষিয়ে নেয়, এ অবস্থায় কীমা ধোয়ার প্রশ্নই আসে না। ঐ কীমাতে মরিচ মসল্লা দিয়ে ভূনে সেটার চমুচা তৈরী করে বিক্রি করে। হোটেলেও এ ধরনের কীমার তরকারী রান্নার আশংকা থাকে। দুষ্ট প্রকৃতির কাবাব চমুচা বিক্রেতা থেকে বেগুনী পিঁয়াজুও না কেনা উচিত, কারণ কড়াইও একটি আর তেলও ঐ পঁচাকীমার। তবে আমি এটা বলছিনা যে, তবে আমি এটা বলছিনা-আল্লাহর পানাহ! প্রত্যেক মাংস বিক্রেতা এ ধরনের করে থাকে বা খোদা না করুন প্রত্যেক কাবাব চমুচা বিক্রেতা অপবিত্র কীমাই ব্যবহার করে। নিশ্চয় খঁাটি মাংসের কীমাও পাওয়া যায়।
আরয করার ইচ্ছা এই যে, কীমা কিংবা কাবাব চমুচা বিশ্বস্ত মুসলমানের কাছ থেকে ক্রয় করা উচিত। আর যে সকল মুসলমান এ ধরনের হীন কাজ করে, তাদের তাওবা করে নেয়া উচিত। মৃত মুরগী আজকাল অসততার যুগ। কথিত আছে, যখন মুরগীর মধ্যে রোগ দেখা দেয় তখন খারাপ চিন্তায় ব্যস্ত লোকেরা মৃত মুরগীর মাংস ও শিখ কাবাব বিক্রেতা এবং হোটেলওয়ালাদের নিকট ধোকা দিয়ে সরবরাহ করে দেয়।
প্রশ্ন:- মূমুর্ষ ছাগল জবেহ করার বিধান কি?
যদি রোগাক্রান্ত ছাগল মৃত্যুর নিকটবর্তী পৌঁছে যায়, তবে কি সেটা জবেহ করা যাবে?
উত্তর:- হ্যাঁ। তবে এ ব্যাপারে কিছু কথা খেয়াল রাখবেন। যখন রোগাক্রান্ত ছাগল জবেহ করলেন, আর শুধুমাত্র সেটার মুখ নড়াচড়াকরল এবং সে নড়াচড়া এমন যে, যদি মুখ খুলে দেয় তাহলে হারাম আর বন্ধ করে নিলে হালাল। যদি চোখ খুলে দেয় তবে হারাম ও বন্ধ করে নেয় তবে হালাল। পা-গুলো প্রসারিত করলে হারাম আর সংকুচিত করে নিলে হালাল। পশম খাড়া না হলে হারাম আর খাড়া হলে হালাল। অর্থাৎ যদি সঠিকভাবে সেটা জীবিত থাকার ব্যাপারে জানা না যায় তবে এসব আলামত দ্বারা বুঝে নেবেন। আর যদি নিশ্চিতভাবে জীবিত থাকার ব্যাপারে জানা থাকে তবে এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল করা হবে না। তবে পশু হালাল মনে করা হবে। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২৮৬ পৃষ্ঠা)
প্রশ্নঃ জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিতে ভুলে গেলে বিধান কি?
প্রশ্নঃ- بسم الله الرحمن الرحيم বলে কোন মুসলমান (পশু, পাখি) জবেহ করলে, তবে কি হালাল হয়ে গেল? যদি আল্লাহ্ তাআলার নাম নিতেই ভুলে গেল, তবে এর বিধান কি?
উত্তর:- জ্বী হ্যাঁ। হালাল হয়ে গেল। জবেহ করার সময় আল্লাহ্ তাআলারনাম নেয়া জরুরী। তবে উত্তম হচ্ছে, بسم الله الله اكبر বলা। “আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায়ও যদি আল্লাহ্ তাআলার নাম নেয়া হয়, তখনও পশু হালাল হয়ে যাবে।” (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২৮৬ পৃষ্ঠা)
যদি জবেহ করার সময় আল্লাহ্ তাআলার নাম নিতে ভুলে যায় তখনও পশু হালাল হবে। তবে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না নেয় তাহলে হারামহয়ে যাবে। বিস্তারিত বিধি-বিধান বাহারে শরীয়াত ১৫ তম খন্ডে দেখুন।
প্রশ্ন:- জবেহকৃত পশুর হাড্ডি খাওয়া যাবে কি?
উত্তর:- জ্বী হ্যঁা। সায়্যিদী আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন: “জবেহকৃত হালাল পশুর হাড্ডি খাওয়া কোনভাবে নিষেধ নয়। যদি খাওয়াতে কোন ক্ষতি না হয়।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, নতুন সংস্করণ, ২০তম খন্ড, ৩৪০ পৃষ্ঠা)
বিশেষতঃ সাদা হাড্ডি যা প্লাষ্টিকের মত বাকা করা যায় তা প্রায়ই নরম ও সুস্বাদু হয়ে থাকে। চতুস্পদ জন্তুর পেটের পর্দার নিকটবর্তী নরম হাড্ডির পাঁজর, হাতের চেপ্টা হাড্ডির পার্শ্বস্ত সাদা প্রশস্ত হাড্ডিও নরম থাকে। শ্বাসনালী যেটাকে আরবীতে “হালকূম” উর্দূতে “নর্খরা” বলা হয় আর তা ফুসফুসের সাথে গিয়ে মিলেছে, সেটাকে দৈর্ঘ্যে (লম্বা করে) কেটে পরিস্কার করে নেয়া উচিত। বক্ষের মাংস রান্না করার পর এর মধ্য যে সাধা হাড্ডি থাকে তাও খাওয়া যায়। এছাড়াও কালো হাড্ডি থাকে যা খাস্তা (কামড় দিলে সহজে গুড়িয়ে যায়) তা সুস্বাদু ও খাদ্য উপদানেও ভরপুর থাকে। প্রায় কম বয়সী পশুর কালো হাড্ডি নরম থাকে তা খুব ভালভাবে চাবিয়ে শেষে মুখের ভেতর যেসব শুকনোগুড়ো থেকে যায় সেগুলো ফেলে দিন। যেসব হাড্ডি খাওয়া বা চাবানো যায়না সেসবের ভাঙ্গা টুকরোকে চুষলেও মজাও পাওয়া যায়, আর তা খাদ্য উপাদানও।
সুতরাং যতক্ষণ স্বাদ বের হয় ততক্ষণ আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত থেকে উপকার লাভ করুন। এরপর দস্তরখানায় রেখে দিন।
প্রশ্ন:- কাঁচা মাংসে কালো হাড্ডিতো কখনো দেখিনি!
উত্তর:- কাঁচা মাংসে যেসব হাড্ডি একদম লাল থাকে তাই রান্না করার পর কালো হয়ে যায় বরং রক্তও যখন খুব ভালভাবে রান্না হয়ে যায় তখন কালো হয়ে যায়। হাড্ডি দ্বারা চিকিৎসার মাদানী ফুল।
প্রশ্ন:- হাড্ডির কিছু উপকারীতাও বর্ণনা করে দিন।
উত্তর:- হাড্ডিও আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত আর তাতেও খাদ্য উপাদান রাখা হয়েছে। যারা ঘরে রান্নার জন্য হাড্ডি ছাড়া মাংস কিনে, তারা নিজেকে ও সাথে সাথে তার পরিবারকেও আল্লাহ্ তাআলার একটি নেয়ামত বঞ্চিত করছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা কোন বস্তু অহেতুক সৃষ্টি করেননি। হাড্ডি খাদ্য হওয়ার সাথে সাথে ঔষধের কাজও দেয়। চিকিৎসকরা অনেক রোগীকে হাড্ডির ঝোল বা সুপ পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বরং আপনাদের অনেকে হয়তো পানও করেছেন। তবে খাঁটি (শুধুমাত্র) মাংসের সুপ কেউই হয়তো পান করেননি! হাড্ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী হাড্ডি থেকে নেয়া নির্যাসের ইঞ্জেকশানও রোগীদেরকে দেয়া হয়। গাভীর শিং পিষে খাবারের সাথে মিশিয়ে চাওথিয়া ওয়ালা (অর্থাৎ- যার চারদিন পর পর জ্বর আসে) কে খাওয়ালে আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছায় শিফা লাভ হয়। গাভীর পশম পুড়ে পানিতে মিশিয়ে পান করাতে দাঁতের ব্যথা দূরীভূত হয়। (হায়াতুল হাইওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা)
কবুতর জতীয় হালাল পাখীর হাড্ডি পুড়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে লাগালে আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ঠিক হয়ে যায়। (আ’জাইবুল হাইওয়ানাত, ১৪৭ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- মুরগীর মাংসের কিছু উপকারীতা সম্পর্কে বর্ণনা করুন।
উত্তর:- মুরগীর মাংস খাওয়াতে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এটা পেটের ব্যথার জন্যও উপকারী। দেশী মুরগী খাওয়া উত্তম। দেশী মুরগী ক্রয় করা এখন সহজ নয় কারণ আজকাল পোল্ট্রি ফার্মের ছোট সাইজের মুরগীকে ও ছোট ডিমকে রং লাগিয়ে “দেশী” বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশী মুরগী চেনার উপায় এযে, হালকা-পাতলা গড়নের হয় ও সেটার পেট ছোট থাকে। অপরদিকে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগীগুলো মোটা-তাজা ও মাংসে পূর্ণ হয়।
প্রশ্ন:- মুরগীর হাড্ডি খাওয়া কি জায়িয?
উত্তর:- জ্বী হ্যঁা। আমার জানা আছে যে, প্রায় ছোটবেলা থেকে যখনই মুরগী খাই তখন সেটার সাদা নরম হাড্ডিও খেয়ে নেই। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা রয়েছে, মুরগীর হাড্ডি খাওয়া ক্ষতিকর। আমি যিনি খাদ্যের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছেন, এমন একজন খাদ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট মুরগীর হাড্ডির ক্ষতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ জবাবই দিলেন, তা খাওয়াতে কোন ধরনের ক্ষতি নেই।
والله ورسوله اعلم عزوجل وصلی الله تعالى عليه واله وسلم
প্রশ্ন:- মাছের কঁাটা খাওয়া যাবে কিনা?
উত্তর:- খাওয়া যায়। মাছের কাঁটা প্রায় শক্ত হয়ে থাকে ও খাওয়া যায় না। তবে কিছু নরম ও মসৃণ থাকে। যেমন-সমুদ্রের পাপ্লেট ও সুরমা মাছ ইত্যাদির হাড্ডি নরম ও সুস্বাদু হয়ে থাকে, এগুলো খুব ভালভাবেচিবিয়ে যদি গিলা না যায় তবে ভালভাবে চুষে অবশিষ্ট গুড়া ফেলে দিন।
প্রশ্ন: মাছের চামড়া খাওয়া যায় কিনা?
উত্তর:-খেতে পারেন। প্রায় মানুষ মাছের চামড়া আগ থেকেই কিংবা রান্না হওয়ার পর তুলে ফেলে দেন। এরূপ করা উচিত নয়। যদি কোন অপারগতা না থাকে তবে মাছের চামড়াও খেয়ে নেয়া উচিত। কিছু মাছের চামড়াতো খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। কাকড়া খাওয়া ও বিক্রয় করা প্রশ্ন:- কাকড়া খাওয়া কেমন? উত্তর:- হারাম। মাছ ব্যতীত সমুদ্রের অন্যান্য জন্তু খাওয়া হারাম। কাকড়া বিক্রয় করাও না-জায়িয। ফুকাহায়ে কিরাম رحمهم الله تعالیবলেন: “মাছ ব্যতীত পানির সকল প্রকার জন্তু, ব্যাঙ, কাকড়া ইত্যাদি ও হাশরাতুল আরদ (অর্থাৎ জমিন থেকে উত্থিত কীট পতঙ্গ যেমন-মাছি, পিঁপড়া) ইঁদুর, ছুঁচো (ইঁদুর বিশেষ), টিকটিকি, কাললাস, গুইসাপ, সাপ, বিচ্ছু বিক্রি করা না জায়িয।” (ফাতহুল কাদির, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি তরকারী জ্বলে যায় তবে এটার প্রতিকার কি?
উত্তর: উপরিভাগ থেকে মাংস ও মসল্লা বের করে নিন। অন্যপাত্রে তেল দিয়ে পিঁয়াজ লাল করার পর এসব মাংস ও মসল্লা ইত্যাদি দিয়ে আধা কাপ দুধ দিয়ে দিন। দুধের মাধ্যমে ان شاء الله عز وجل পোড়া গন্ধ দূরীভূত হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: হজমশক্তি ঠিক হওয়ার উপায় কি?
উত্তর: পানাহারে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সর্বদা পানাহারে লিপ্ত থাকাতে পাকস্থলী খারাপ ও হজমশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। যতক্ষণ ক্ষুধা না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া সুন্নাত নয়। যখনই খাবেন ক্ষুধাকে তিনভাগ করে নিন। একভাগ খাবার, একভাগ পানি ও এক ভাগ বাতাস। খাওয়ার পর দেড় দু’ঘন্টা পর্যন্ত শোবেন না। মাংস কম ও শাক-সবজী এবং ফলমূল বেশি খাবেন। যথাসম্ভব প্রতিদিন এক ঘন্টা নয়তো কমপক্ষে আধঘন্টা পায়ে হাঁটুন। রাতের খাবার খাওয়ার পর ১৫০ কদম হাঁটুন। বদহজমের ঐ সমস্ত রোগ, যা কোন ঔষধে কাজ হয় না, তা ان شاء الله عز وجل ঠিক হয়ে যাবে। ان شاء الله عز وجل আপনি ৮০% রোগ থেকে বাঁচতে সক্ষম হবেন, যার মধ্যে হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস ও মুখের অর্ধাঁঙ্গ, মস্তিস্কের রোগ, হাত-পা ও শরীরের ব্যথা, মুখ ও গলার রোগ, মুখের ফোস্কা, বক্ষ ও ফুসফুসের রোগ, বুকের জ্বালা-পোড়া, সুগার, হাই ব্লাড প্রেসার, কলিজা ও যকৃতের রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
বদ হজমের দু’টি মাদানী চিকিৎসা
(১) যার বদহজম হয়েছে, যদি এ আয়াতে কারীমা পাঠ করে নিজের হাতে ফুঁক দিয়ে তা তার পেটে মালিশ করায় এবং খাবার ইত্যাদিতে ফুঁক দিয়ে তা খান, তবে ان شاء الله عز وجل বদহজম দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
:كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ()إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنينَ()
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আহার করো ও পান করো তৃপ্ত হয়ে আপন কর্মসমূহের প্রতিদান। নিশ্চয় সৎকর্ম পরায়ণদেরকে আমি এমনই পুরস্কার দিয়ে থাকি। (পারা-২৯, সূরা-মুরসালাত, আয়াত-৪৩, ৪৪)
(২) ইমাম কামালুদ্দীন দামাইরী (رضي الله عنه) কিছু উলামায়ে কিরাম رحمہم الله تعالی থেকে বর্ণনা করেন, যে খাবার বেশি পরিমাণে খেলেন ও বদহজম হওয়ার ভয় রয়েছে, তিনি যেন তার পেটে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে করতে এটা তিনবার বলেন:
৪৭৮" الليلة ليلة عيډ ۍيا کرشی ورضی الله عن سیدی ابی عبد الله القرشی
অনুবাদ: হে আমার পাকস্থলী! আজকের রাত আমার ঈদের রাত। আর আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সর্দার হযরত আবু আবদুল্লাহ কুরাইশী (رضي الله عنه) এর প্রতি সন্তুষ্ট হোন। (আর যদি দিনের সময় হয় তাহলে। الليلة الليلة عيدی এরস্থলে اليوم يوم عيدیবলবেন।) কোষ্ট কাঠিন্যের কবিরাজি চিকিৎসা বদ হজমের অনেক চিকিৎসা রয়েছে।
মোট কথা এযে,
(১) কোষ্টকাঠিন্য হলে তখন দু’এক ওয়াক্ত উপবাস থাকুন ان شاء الله عز وجل পেটের বোঝা কমে যাবে ও পাকস্থলী শান্তি ও লাভ করবে।
(২) প্রয়োজন অনুপাতে পেঁপে খেয়ে নিন।
(৩) ইসিবগুলের ভূষি মুখে নিয়ে এক বা তিন চামচ পানি দিয়ে খেয়ে নিন।যদি তাতে না হয় তাহলে প্রয়োজন অনুপাতে সেটার পরিমাণ বৃদ্ধি করে নিন। যদি প্রায় সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তবে সপ্তাহে দু’একবার এভাবে খান
(৪) পিষা হাড (এক প্রকার ঔষধি গাছ) চা চামচের আধা চামচ শোয়ার সময় পানি দিয়ে খান। সম্ভব হলে কমপক্ষে চারমাস পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যবহার করুন ان شاء الله عز وجل কোষ্টকাঠিন্যের সাথে সাথে অনেক রোগ-ব্যাধি দূর হবে বরং স্মরওণ শক্তিরও বৃদ্ধি হবে।
প্রশ্নঃ শিক্ষার্থীরা খাবার না ফেলার ব্যবস্থা কি?
প্রশ্ন: ছাত্ররা প্রায়ই খাবার খাওয়ার সময় যথেষ্ট পরিমাণ খাবার ফেলে দেয়, এটার প্রতিকার সম্পর্কে বলুন। ১ সায়্যিদি আবু আবদুল্লাহ্ কুরাইশীদের অন্তর্ভুক্ত। গওছে পাক (رضي الله عنه) এর যুগের ১৬, ১৭ বছরের ছিলেন। ৮ যুলহিজ্জাতে বাইতুল মুকাদ্দাসে ইন্তেকাল করেন। (ফতোওয়ায়ে আফ্রিকা, ১৭৭ পৃষ্ঠা)
উত্তর: শুধুমাত্র ছাত্ররাই নয় বরং এ বিপদ আজকাল সর্বত্র রয়েছে। হাজার নয় লাখের মধ্যে খুজেঁ দুই একজন সৌভাগ্যবান মুসলমান পাওয়া যাবে, যিনি খাদ্যাংশ নষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকেন! খাবার সময় ছাত্রদের এ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, যেন কোন খাদ্য অংশও নষ্ট না হয়।পরিচালকগণেরও এ মন-মানসিকতা রাখা উচিত, মাদরাসা সমূহ ওয়াকফের টাকায় চলে। খাদ্যের প্রতিটি অংশ যেন ছাত্রদের পেটে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। খাবারের সময় কিছু ছাত্র হেঁটে হেঁটে নিয়মানুসারে খাইর খোয়াহি করতে থাকুন। (দা’ওয়াতে ইসলামীর জামেয়া ও মাদরাসাগুলোতে এ ধরনের কাজের জন্য মজলিসের ব্যবস্থা রয়েছে) ছাত্রদেরকে পানাহারের সময় খাওয়ার সুন্নাতসমূহ আলোকিত দিনে (তথা জুমার দিন) আমার উপর বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়, কেননা তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়।” বলতে থাকুন: খাওয়ার নিয়্যতগুলোও করান, খাওয়ার দোয়াসমূহও পাঠ করান, ভাত ও রুটির যেসব অংশ দস্তরখানায় পতিত হয় তা নম্রভাবে তাদের হাতে উঠিয়ে তাদেরকে খাওয়ান। রুটি-ছেঁড়ার নিয়ম প্রশ্ন: রুটি ছেঁড়ার নিয়ম সম্পর্কে বলুন। উত্তর: রুটি বাম হাতে নিয়ে ডান হাতে ছেঁড়া সুন্নাত। রুটির ক্ষুদ্র অংশ যেন দস্তরখানায় না পড়ে এর নিয়ম হচ্ছে, বড় থালা কিংবা তরকারীর পাত্রের উপর হাতকে মধ্যখানে নিয়ে রুটি ও পাউরুটি ছেঁড়ার অভ্যাস গড়–ন। এভাবে করাতে সমস্ত খাদ্যকণা পাত্রের মধ্যেই পড়বে। অনুরূপ চমুচা, প্যাটিস, বিস্কুট, নাখতাঈ (এক প্রকার মিষ্টি বিস্কুট)ও এ সমস্ত প্রতিটি খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন যেগুলো ছেঁড়া বা ভাঙ্গার সময় ক্ষুদ্র অংশ বা টুকরা নিচে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। উত্তম হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি রুটির টুকরা খাওয়া শেষ না হয় ততক্ষণ অন্যটি যেন ছেঁড়া না হয়।
প্রশ্ন: যেসব রুটি বা সেগুলোর টুকরা অবশিষ্ট থেকে যায়, সেগুলো কি করব?
উত্তর: মাদ্রাসার জন্য তোলা চাঁদার টাকা -পয়সা মাদ্রাসারই বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা উচিত। তাই অবশিষ্ট রুটি ও সেগুলোর টুকরা গুলো শরয়ী অনুমোদন ব্যতীত অন্য কোন খাতে ব্যয় করা উচিত নয়।সেগুলো ফ্রিজে রেখে দিন অথবা খোলা বাতাসে ছড়িয়ে রাখুন ও দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন তরকারীর সাথে রান্না করে নিন। ان شاء الله عز وجل খুবই সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত হয়ে যাবে। খাবারের সময় অল্প অল্প করে বণ্টন করে দিন। ان شاء الله عز وجل ছাত্ররা আগ্রহ ভরে খাবে।
প্রশ্ন: দস্তরখানায় পতিত দানা ইত্যাদি কি করব?
উত্তর: সেগুলোকে তুলে খেয়ে নিন। ঘরে খাওয়ার পর অবশিষ্ট থেকে যাওয়া খাওয়ার ফেলে দেয়ার পরিবর্তে, গরু-ছাগল, পাখি, মুরগী বা বিড়ালকে খাইয়ে বে-আদবী ও অপচয়ের অপরাধ থেকে বাঁচতে পারেন।
খাওয়ার নিয়্যত কিভাবে করব?
প্রশ্ন: আপনি খাওয়ার নিয়্যত সম্পর্কে বলেছেন, তাহলে খাওয়ার নিয়্যত কিভাবে করা হয়? উত্তর: প্রতিটি মুবাহ (বৈধ) কাজে মুসলমানদের উচিত ভাল ভাল নিয়্যত করে নেয়া। ان شاء الله عز وجل প্রতিটি ভাল নিয়্যত করাতে সাওয়াব অর্জিত হবে।অনুরূপভাবে খাওয়ার জন্য এ নিয়্যত যেন অন্তরে থাকে যে, আমি ইবাদতে শক্তি অর্জনের জন্য খাবার খাচ্ছি। তবে এ নিয়্যত ঐ অবস্থায় যথার্থ হবে, যখন ক্ষুধা থেকে কম খাওয়া হবে। পেট ভরে খাওয়াতে ইবাদতে শক্তি অর্জন হওয়াতো দূরের কথা বরং আরো অলসতা এসে পড়ে। (খাবারের অন্যান্য নিয়্যতের সূচীপত্র ফয়যানে সুন্নাতের ১৩৮ পৃষ্ঠায় দেখুন)
প্রশ্ন: চায়ের ব্যাপারে সাবধানতা সম্পর্কে বলুন।
উত্তর: চা কিডনি ও প্রস্রাবের রোগীর জন্য ক্ষতিকর। চা খুব কম পান করা উচিত। চা তৈরির অনেক পদ্ধতি রয়েছে, সে অনুযায়ী না করলে চা ভালভাবে প্রস্তুত সম্ভব নয়। এজন্য উন্নত দুধ ও উৎকৃষ্ট চা পাতারপ্রয়োজন। চা পাতা, চিনি, চায়ের কাপ, চালনি ইত্যাদি বাবুর্চীখানা-রান্নাঘর থেকে এতটুকু দূরে রাখা উচিত, রান্নার ধেঁায়াও যেন ওগুলোর নিকটে না পৌঁছে। একবার যে পাত্রে চা রান্না করা হয়, পুনরায় যদি হঠাৎ করে তাতে রান্না করতে হয় তাহলে ধুঁয়ে রান্না করুন। চায়ের পাত্রও অন্যসব পাত্র থেকে আলাদাভাবে ধোঁয়া চাই। চা পাতার পাত্র ভালভাবে বন্ধ করে রাখবেন অন্যথায় সেটার সুগন্ধদূর হতে শুরু করবে। চা রান্না করার পর শীঘ্রই পান করে নেয়া উচিত। দ্বিতীয়বার গরম করাতে সেটার স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়। চায়ের উপর যে স্তর জমাট বাঁধে তা ফেলে দেয়া উচিত। কথিত আছে, “যদি ১০০ কাপ পরিমাণ চায়ের জমাট বাঁধা উপরের স্তর বিড়ালকে খাওয়ানো হয় তবে সেটা বিষক্রিয়ায় মারা যাবে।”
প্রশ্ন: চা পাকানোর নিয়ম বলে দিন।
উত্তর: “স্পেশাল” চা পান করতে চাইলে দুধকে খুবভালভাবে গরম করুন। এরই মধ্যে চিনিও দিয়ে দিন। এখন সিদ্ধ হওয়া দুধে এতটুকু পরিমাণ পাতা দিন যে, জাফরানী রং ধারণ করে। দুই তিনবার দুধ উপছে পড়ার সীমায় পৌঁছলে চামচ দিয়ে নড়াচড়া করুন। এরপর নামিয়ে ফেলুন ও ছেঁকে ব্যবহার করুন। যদি পানিদিয়ে চা তৈরী করতে চান তখনও পানির সাথে প্রয়োজন অনুপাতে দুধ ও চিনি পূর্ব থেকেই দিয়ে ভালভাবে পাক করুন এরপর চা পাতা দিয়ে আলোচ্য নিয়ম অনুসরণ করুন। যদি আপনার পছন্দ হয় তবে ছোট এলাচীও সাথে দিতে পারেন।
প্রশ্ন: চায়ে মধু দেয়া যায় কি?
উত্তর: দেয়া যেতে পারে বরং যার সামর্থ্য থাকে তিনি চিনির পরিবর্তে মধুই দিন। সাধারণতঃ লোকেরা প্রচুর পরিমাণে চিনি দিয়ে অত্যন্ত মিষ্টি চা পান করে থাকেন। এধরনের চা বেশি পরিমাণে পান করা খুবই ক্ষতিকর আর তাতে রক্তে সুগার বৃদ্ধি পাওয়ার রোগ হওয়ার আশংকা থাকে। ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রীমের সৌখিন লোকেরাওসাধারণতঃ ডায়াবেটিস রোগীতে পরিণত হন। একটি ঠান্ডা পানীয় বোতলের মধ্যে প্রায় সাত চামচ চিনি থাকে। অপরদিকে আইসক্রীমতো এক বিশেষ “মিষ্টি বোমা” (আল্লাহ্ তাআলা ও তার রাসুলই এ ব্যাপারে অধিক ভাল জানেন।) আপনি যদি চায়ে মধু দিতে না পারেন তবে নিয়মের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ চিনি দিন।
প্রশ্ন: চা পান করাতে দাঁত হলদে হয়ে যায়, এটার কোন প্রতিকার আছে কি?
উত্তর: চা পান করার কয়েক মিনিট পর কাপে অল্প পানি ঢেলে ভালভাবে নাড়াচড়া করে তা মুখে নিন, মুখে কিছু সময় ঝাঁকুনি দিয়ে তা পান করে নিন। এভাবে দুই তিনবার করুন। শেষ পর্যন্ত যেন কাপ থেকে চায়ের চিহ্ন দুরীভূত হয়ে যায়। এটা এজন্য করা যে, চায়ের কোন বিন্দুও যেন বিনষ্ট না হয়, কাপও ধৌত হয়ে যাবে এবং দাঁত ও যেন হলদে না হয়। যদি মুখে নেয়া পানি পান করতে না চান তবে ফেলে দিন। কয়েক মিনিট পরে করার কথা এ জন্য বললাম যে, গরম চায়ের পরপরই ঠান্ডা পানি ব্যবহার দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। চায়ের পরপরই কাপ ধোঁয়া যে পানি পান করবেন তা অল্প পরিমাণ হওয়া উচিত। যদি প্রতিটি খাবার খাওয়ার পর একাজটা করেন তবে ان شاء الله عز وجل পরিচ্ছন্নতাও হবে এবং মাড়ির রোগ থেকে নিরাপত্তাও লাভ হবে। আজকাল দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়ারব্যাপারে অনেকেই বলেন।
এটার একটি কারণ এওযে, খাদ্যকণা মাড়ির অভ্যন্তরে জমা হয়ে পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে যায়। আর এরপর মিসওয়াক করা, খাবার খাওয়া ও চিবানো ইত্যাদিতে রক্ত বের হতে থাকে। যদি প্রত্যেক খাবার খাওয়ার পর মুখে পানি ঘুরানোর কাজটা করে নেন তাহলেان شاء الله عز وجل পরিচ্ছন্নতার সাথে সাথে দাঁতের রক্ত পড়ার অভিযোগ ইত্যাদি রোগ থেকেও নিরাপত্তা অর্জিত হবে। সাধারণত খুব পেট ভর্তি করে খাওয়াতে পেট খারাপ হয় ও নানা রোগ-ব্যাধির সাথে সাথে অনেকের মাড়িতে রক্ত আসাও শুরু হয়ে যায়। যদি আপনি আপনার খাবার মধ্য পন্থায় নিয়ে আসেন তবে ان شاء الله عز وجل বিস্ময়করভাবে অনেক পুরানো রোগসমূহ দূর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মাড়িতে রক্ত আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যথায় এ অভিজ্ঞতা সকলের রয়েছে, ঔষধে শুধুমাত্র অস্থায়ীভাবে ফায়দা হয়, আর এরপর রোগ পুনরায় ফিরে আসে!
প্রশ্ন: যার দাঁত হলদে হয়ে গেছে তিনি কি করবেন?
উত্তর: খুব ভালভাবে মিসওয়াক করতে থাকুন। লবণ ও খাবার সোডা সমপরিমাণ নিয়ে মিশিয়ে নিন ও দাঁতের এরূপ সাবধানতার সাথে মালিশ করুন যেন মাড়িতে না লাগে। ان شاء الله عز وجل বিস্ময়করভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে। তবে এ কাজটা একাধারে বেশি দিন করবেন না। যাদের মাড়ি দূর্বল ও দাঁতে রক্ত আসে, তারা এ কাজটা করবেন না।
আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তবে প্রত্যেক খাবারে, তরকারীতে তেল মসল্লা নিয়মের চেয়ে অর্ধেকপরিমাণ ও চায়ে চিনিও অর্ধেক দেয়ার তাগিদ রয়েছে। ان شاء الله عز وجلএতে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং ইসলামী শিক্ষা জ্ঞানার্জনের মাদানী উদ্দেশ্য পূরণ করা সহজ হবে। দা’ওয়াতে ইসলামীর জামেয়াতুল মদীনার ছাত্রদের প্রতি দিনের খাবারের রুটিন। রুটিন শব্দাবলী সম্পর্কে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণবার সকাল দুপুর রাতশুক্রবার চা, বিস্কুট ডাল, মাংস ও রুটি ডাল, পালং শাক,রুটি ও চা শনিবার কাবুলী চনা, চা-রুটি ভাত/মাংস পোলাও, মিশ্রিত সবজী, (আলু, কদু ও মিষ্টি কুমড়া, শালগম) রবিবার কাবুলী চনা, চা-রুটি কদু শরীফ, ডাল-রুটি সবজী, রুটি ও চা পবিত্র সোমবার কাবুলী চনা,চা রুটি ডাল ও রুটি বিরিয়ানী ও চা মঙ্গলবার চা, বিস্কুট/চা-রুটি মিশ্রিত সবজী ও রুটি কদু শরীফ, ডাল ও চা বুধবার কাবুলী চনা, চা-রুটি কড়হী (দই ও বেসনের তৈরী এক প্রকার খাদ্য বিশেষ) ও ডাল-ভাত কদু শরীফ, আলু, রুটি, চা বৃহস্পতিবার আলু তরকারী রুটি জব শরীফের শিরনী বা পিন্নী/আলু-মাংস লোবিয়া (এক প্রকার তরকারীর বিচি)
রুটি ও চা আত্তারের চিঠি শাহ্জাদায়ে আত্তারের প্রতি এটা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাদানী ফুলের ঐ সৌন্দর্যপূর্ণ পুষ্পধারা, এটা অনুযায়ী আমলকারী ان شاء الله عز وجل চিকিৎসকের মুখাপেক্ষী হবেন না। উপস্থাপনায়মাকতূবাত ও তা’ভীযাতে আত্তারিয়্যা মাজলিস অন্তর আনন্দে ভরে যায় হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন: আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) যখন আমি আপনাকে দেখি তখন আমার অন্তর ভীষণ আনন্দে ভরে যায় ও চোখ শীতল হয়। (ওহে আকা (ﷺ) আমাকে প্রতিটি বস্তুর জ্ঞান দান করুন। ইরশাদ হল, “প্রতিটি বস্তু পানি থেকে সৃষ্টি” আমি আরয করলাম: “ঐ বস্তু সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। যা গ্রহণ করলে আমি জান্নাত লাভ করব।” বললেন: “খাবার খাওয়াও আর সালামকে ব্যাপক কর, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর এবং রাতে (নফল) নামায আদায় কর যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। তবে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪, হাদীস নং-৭৯১৯)
" بسم الله الرحمن الرحيم সগে মদীনা মুহাম্মদ ইল্ইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী دامك بركاتهم العا ليه এর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগে দা’ওয়াতে ইসলামী আমার প্রাণ প্রিয় সন্তান আল হাজ্ব আবূ উসাইদ আহমদ উবাইদ রযা আত্তারী মাদানী دامك بركاتهم العا ليه এর নিকট কারবালায়ে মুআল্লার গলিসমূহ ঘুরে আসা, ইমামে আলী মকাম (رضي الله عنه) এর মাযার শরীফের গম্বুজ ও মিনারকে চুমু দিয়ে হেলে দুলে আসা মুহাররামুল হারামের কল্যাণে প্রাচুর্য্যপূর্ণ আনন্দে ভরা সুগন্ধিময় সালাম: السلام عليكم ورحمه الله وبركاته,الحمد لله رب العالمين على كل حال
হাদীসে পাকে রয়েছে; হযরত সায়্যিদুনা জারীর বিন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه)বলেন: “আমি হুযুর খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) এর নিকট এ কথার উপর বাইআত গ্রহণ করেছি যে, নামায কায়েম করব, যাকাত আদায় করব ও সকল মুসলমানদের কল্যাণ চাইব। (সহীহ মুসলিম, পৃষ্ঠা ৪৮, হাদীস নং-৯৭)
الحمد لله عز وجلনিজেকে মুসলমানদের কল্যাণে নিয়োজিত করা ও সাওয়াব অর্জনের পবিত্র আগ্রহের ভিত্তিতে দোয়ার সাথে সাথে সুস্থ থাকার জন্য কিছু মাদানী ফুল উপস্থাপন করলাম। যদি শুধুমাত্র দুনিয়ার জাঁকজমকপূর্ণ নেয়ামত থেকে আমোদ উপভোগ করার জন্য সুস্থ থাকার আকাঙ্খা থাকে তবে এ চিঠি পড়া এখানেই বন্ধ করে দিন আর যদি সুস্বাস্থ্যের মাধ্যমে ইবাদত ও সুন্নাতের খিদমত করতে শক্তি অর্জনের মন-মানসিকতা থাকে তাহলে সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ভালভাল নিয়্যত করে দরূদ শরীফ পাঠ করে সামনে অগ্রসর হোন এবং এ চিঠি পরিপূর্ণ পাঠ করুন।
আল্লাহ্ আমার, আপনার, বংশের সকলের ও সকল উম্মতের গুনাহ ক্ষমা করুন। আমাদের সকলকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে অটল রাখুক দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে লেগে থেকে ইসলামের খিদমতে দৃঢ়তা প্রদান করুন। আল্লাহ্ আমাদের শারীরিক রোগ-ব্যাধি দূর করে আমাদের বীমারে মদীনা বানিয়ে দিন।
امين بجاه النبي الامين صلى الله تعا لی عليه واله وسلم
দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজসমূহের জন্য আপনাকে আমার প্রয়োজন রয়েছে। দয়া করে! স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অবহেলা করবেন না, কারণ অনেক সময় সামান্য পরিমাণ চুলকানীও বাড়তে বাড়তে বড় ধরণের রক্ত ক্ষরণ হওয়া ক্ষতে পরিণত হয়ে অবশেষে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেখা গেছে যে, যেখানে ঔষধে কাজ হয়না সেখানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিস্ময়কর ফলাফল বের হয়ে আসে! যদি নতুন কাপড় একবারও ধৌত করা হয়, তবে এরপর সেটা পূর্বের ন্যায় চাকচিক্যময় এবং এর মূল্য অবশিষ্ট থাকে না। ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করানোতে সুস্থতা লাভের পর মানুষের শরীর মূলতঃ “ধোঁয়া কাপড়ের” মত হয়ে যায়। সুতরাং সম্ভব হলে ঔষধের পরিবর্তে খাদ্যের মাধ্যমে চিকিৎসা করা, তাছাড়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাজ সারানোতেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। কেননা ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। না ছমজ বিমার কো আমরাত ভী জহর আমেজ হে, সাচ ইয়েহী হে সো দাওয়া কি ইক দাওয়া পরহিজ হে।খাবারের ব্যাপারে প্রত্যেকের জন্য পরামর্শ প্রত্যেক খাবারে তেল, লবণ, মরিচ ও গরম মসল্লার পরিমাণ অনুমান করে নয় বরং মেপে নিজ ঘরের নিয়ম থেকে অর্ধেক পরিমাণ করে নিন। খাবারের মধ্যে সবজীর ব্যবহার বৃদ্ধি করুন। মাংস যেন সপ্তাহে দু’বার হয় আর তাও অল্প পরিমাণে খাবেন। যদি ঘরে প্রায় দিন মাংস রান্না করা হয় তবে যথাসম্ভব শুধুমাত্র এক টুকরা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
যতক্ষণ পর্যন্ত খুব ভালভাবে ক্ষুধা না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত খাবেন না। ভালভাবে চিবিয়ে খাবেন ও দাঁতের কাজ নাড়ি দ্বারা করাবেন না আর কিছুটা ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকতে হাত গুটিয়ে নিবেন। পেট ভরে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। চিনিযুক্ত ফ্রুট, জুস খাবেন না। ময়দা, চর্বি জাতীয় ও চিনিযুক্ত খাদ্য খুব অল্প পরিমাণে খাবেন। আইসক্রীম, ঠান্ডা পানীয়, তেলে ভাজা খাবার, বড় ডেক্সি ও বাজারের রান্নাঘরে রান্নাকৃত খাবার, টফি, কোকো চকলেট, ধূমপান, পান, সুপারী, গুটকা, সুগন্ধি সুপারী, তামাক, মাইনপূচী, পান পরাগ ইত্যাদি খাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। চা পান করতে চাইলে রাত-দিনে দুই বা তিনবার আধা কাপ ও এতে চিনির পরিবর্তে মধু দিন। চিনি প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক দিন। মিষ্টি খাবার সমূহ মধু দিয়ে প্রস্তুত করুন। যদি সেটার সামর্থ না থাকে তবে চিনি ঘরের নিয়ম থেকে শুধুমাত্র চার ভাগের এক ভাগ দিন। প্রচুর মিষ্টি চা, অত্যাধিক মিষ্টি খাবার ও ঠান্ডা পানীয়ের সৌখিন লোকদের ডায়াবেটিস রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সীমাহীন কঠিন ব্যাপার। (সুগার B.P এর উচ্চ নিম্ন হওয়া বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসকের উপদেশ অনুযায়ী কাজ করবেন।) প্রতিদিন এক ঘন্টা না হয় কমপক্ষে আধ ঘন্টা পায়ে হাঁঠুন ان شاء الله عز وجلআপনার LIPID PROFILE নরমেল হওয়ার সাথে সাথে শরীরের ওজনও মাঝামাঝি থাকবে। পেট বের হবে না। পাকস্থলী ঠিক হয়ে যাবে, অনেক রোগ দূরে থাকবে এবং যা শরীরে থাকবে তা থেকে অধীকাংশان شاء الله عز وجل নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। ان شاء الله عز وجلআপনি ইবাদত ও দ্বীনি খিদমতের মাদানী কাজে আনন্দ অনুভব করবেন। যদিও এসব বিষয় নফসের জন্য ভারী বোঝা হয় কিন্তু অভ্যাস হয়ে গেলে ان شاء الله عز وجلসহজ হয়ে যাবে। একথা মনে রাখবেন! খাবারের স্বাদ শুধুমাত্র কণ্ঠনালীর মূল পর্যন্ত থাকে, যেমাত্র গ্রাস নীচের দিকে নেমে পড়ল তখন জব শরীফের শুকনো রুটি ও ঘিয়ে তৈরী বিরিয়ানী সবকিছু এক হয়ে গেল। এখন জব শরীফের শুকনো রুটি জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে আর ঘি মিশ্রিত বিরিয়ানী ডাক্তারদের নিকট ধাক্কা খাওয়াবে!
(মেদ বহুল হওয়া অবস্থায় যখন ওজন কমতে শুরু করে তখন অনেকের অস্থায়ীভাবে টজওঈ অঈওউ বাড়তে শুরু করে। অবশেষে আপনা আপনিই স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবুও সাবধানতা স্বরূপ, ঐ দিনগুলোতে প্রতি দেড়মাস পর পর তা টেষ্ট করাবেন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে অপ্রয়োজনীয় টজওঈ অঈওউ বের হতে থাকে।)
দিনে দুই বার খাবেন সম্ভব হলে দিনে তিনবারের পরিবর্তে খাবার দুই বার খাবেন। সাওয়াবের নিয়্যতে পেটের কুফ্লে মদীনা লাগিয়ে উভয়বার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগলেই খাবেন ও ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকতে হাত গুটিয়ে নেবেন। এ দুই বেলার মধ্যবর্তী সময়ে কোন প্রকারের বাজারের খাবার খাবেন না। ক্ষুধা পেলে তখন একটি আপেল বা অল্প ফল খেয়ে নেবেন। যদিও অধিকাংশ ফল শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে তবে সেগুলোর ফায়দাও অপরিসীম। তবে যার রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি তিনি মিষ্টি ফল, শুকনো ফল ও মাটি থেকে উৎপন্ন সবজী; যেমন- গাজর, মূলা, আলু, মিষ্টি আলু, বিটকপি ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়া থেকে বেঁচে থাকুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। সৌভাগ্যের বিষয় হবে! যদি সাওমে দাউদী (অর্থাৎ একদিন পর একদিন রোযা) রাখার অভ্যাস আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়ে যায়, তাহলে মোটামুটি ভাবে পানাহারের অনেক সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। রক্ত পরীক্ষা করান যদিও মানুষের শরীরের জন্য সীমিত পরিমাণে নিম্নোক্ত বস্তু প্রয়োজন তবে এসবের আধিক্য খুবই ক্ষতিকর। তাই সকল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনদের জন্য রক্তের এসব পরীক্ষা করানো ভাল।
(১) Serum Cholesterol
(২) Glucose (খালি পেটে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তখন ভরা পেটেও করাবেন) (৩) Uric Acid (৪) Serum Creatinine (এতে গুর্দায় যদি কোন ধরনের অসুবিধা বা ফেল হওয়ার আশংকা শুরু হয় তবে তা জানা যাবে ও সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা হতে পারে। এর প্রতি দৃষ্টি দেয়া খুবই জরুরী। আজকাল আমাদের দেশে গুর্দা নষ্ট হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।)
আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোযা রেখে আসরের নামাযের পর আলোচ্য সবকটি ঞঊঝঞ করাতে পারেন। অন্যথায় রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন এবং সকালে নাস্তার পূর্বে এই টেষ্টগুলো করিয়ে নিন। নোট: রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখাবেন। সুস্থ ব্যক্তিকে প্রতি ৬ মাস পর ও রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এসব টেস্ট ও এসব ছাড়াও যেসবের পরামর্শ ডাক্তার দিয়ে থাকেন সেগুলো অবশ্যই অবশ্যই করানো উচিত। এটা মনে করে টেস্ট না করানো যে, যদি কোন কিছু বের হয় তবে চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের পেরেশানী বহন করতে হবে এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে বেপরোয়া হওয়া সমস্যার সমাধান নয়। মনে রাখবেন! বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুস্থ মনে হওয়া যুবকেরা হার্ট ফেলের কারণে ইন্তিকাল করেন, এর একটা বড় কারণ হল “লিপিড প্রোপ্রাইল” বৃদ্ধি পাওয়া।
কোলেস্ট্রোল রোগী এসব খাবার থেকে বাঁচুনঃ (১) প্রত্যেক প্রকারের চর্বি (২) ঘি ও নারিকেল তেলে প্রস্তুতকৃত বস্তু (৩) ডিমের কুসুম (৪) নিমকি ও (৫) বেকারীর প্রায় সব দ্রব্য (৬) গরুর মাংস (৭) পিজ্জা (৮) পরাটা (৯) তেলে ভাজা খাবার যেমন- ডিমের আমলেট, কাবাব, চমুচা, পিঁয়াজু বেগুনী ইত্যাদি (১০) দুধের সব খাবার (১১) মাখন (১২) আইসক্রীম ইত্যাদি।
(কোলেষ্ট্রোলের আধিক্য সরাসরি হৃদপিন্ডের ক্ষতি সাধন করে সুতরাং ডাক্তারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে আরো পরামর্শ নিন।)
মুরগী বা মাছ তাছাড়া অল্প পরিমাণে কারেণ অয়েল খাওয়াতে অসুবিধা নেই। যদি ডাক্তার পরামর্শ দেন তবে চর্বি বাদ দিয়ে ছাগলের মাংসও খেতে পারেন। এক ডাক্তারী গবেষণা অনুযায়ী যায়তূন শরীফের তেল কোলেষ্ট্রল রোগীর জন্য উপকারী, কারণ তা অতিরিক্ত খারাপ কোলেষ্ট্রল রক্ত থেকে বের করে দেয়। রক্তে Triglycerides ট্রাইগ্লিস রাইডস অতিরিক্ত হলে আলোচ্য খাবার থেকে বেঁচে থাকা ছাড়াও মিষ্টিদ্রব্য ও চিংড়ী মাছ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। ইউরিক এসিড Uric Acid মাঝামাঝি থেকে বেশি হলে তখন চর্মরোগ ও জোড়া ব্যথা ছাড়া গুর্দা ও মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি অনেকদিন পরে গিয়ে আল্লাহর পানাহ কলিজার ক্যান্সারও হতে পারে। এক ডাক্তারী গবেষণা অনুযায়ী রক্তে ইউরিক এসিড ঐসব খাবার থেকে বৃদ্ধি পায় যাতে Puric এর পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া মোটা হওয়াটাও টজওঈ অঈওউ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ। ইউরিক আক্রান্ত রোগীর জন্য সতর্কতা সকল প্রকারের মাংস ও তা দ্বারা প্রস্তুত দ্রব্যাধি, মাংসের সুপ, মাছ, চিংড়ী মাছ, মসর ও মসরের ডাল, হলদে মটর, পালং শাক, ফুলকপি, বাধাকপি, শালগম ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকুন। কারণ এসবে পিয়োরিন এর পরিমাণ বেশি থাকে। কম পিয়োরিনযুক্ত খাবার: দুধ ও দুধের তৈরী বস্তুসমূহ, ডিম, চিনি, গম ও সেটার তৈরী জিনিষাদি, এ্যারারোট, সাগুদানা, ঘি, মারজিরীন (মাখনের ন্যায় বস্তুসমূহ), ফল ও ফলের রস, কতক সালাদ ব্যতীত সবধরনের সবজী, টমেটো, ঠান্ডা পানীয় ইত্যাদি। কতিপয় ডাক্তারের ভাষ্যমতে (ইউরিক এসিড আক্রাস্ত রোগীর জন্য গরুর মাংস অধিক ক্ষতিকর, অতঃপর তা থেকে কম ছাগল ও এর চেয়ে কম মুরগী ও তার চেয়ে কম মাছ।)
পানির মাধ্যমে ইউরিক এসিডের চিকিৎসা একদিন একরাতে ৪০ গ্লাস পানি পান করে নিন। যদিও পানি গলা পর্যন্ত এসে যায় ও পেট খুব ভালভাবে ভর্তি হয়ে যায় তবুও ভয় পাবেন না। শীঘ্রই প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে ও ان شاء الله عز وجل একই দিনে ফায়দা হয়ে যাবে।যেমন ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক রেঞ্জ ৩ থেকে ৭ হয় আর তা আপনার বৃদ্ধি পেয়ে ৮ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তবে পূর্ণ একদিন একরাতে ৪০ গ্রাস পানি পান করাতে ان شاء الله عز وجل ৭ হয়ে যাবে। আরো এক বা দু’দিন পান করলে তখন প্রত্যেহ “১” করে ان شاء الله عز وجل হ্রাস পেতে থাকবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে অস্থায়ীভাবে প্রস্রাব বেশি হবে। এতে পাকস্থলী নাড়ি ও গুর্দা, মূত্রথলি ইত্যাদি খুব ভালভাবে পরিস্কার হয়ে যাবে ও ان شاء الله عز وجلমোটামুটিভাবে অনেক ধবংসকারী বস্তু বের হয়ে যাবে। পানির মাধ্যমে চিকিৎসা করার দিন খাবার ইত্যাদি খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ মূলনীতি মনে রাখবেন যে, খাওয়ার পরপরই পানি পান করাতে শরীর মোটা হয়ে যায়। তাই খাবারের এক বা দুই ঘন্টা পর পানি পান করা উচিত। (এ ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন)
মাদানী পরামর্শ: নিজের ডায়েরীতে এ পাতাগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন। নিজ পরিবার-পরিজন ও অন্যান্য ইসলামী ভাইদেরকে একত্রিত করে এ চিঠি পাঠ করে শুনান, আলোচ্য টেষ্ট গুলো করানোর জন্য পরামর্শ দিন। এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে এ চিঠির কপি প্রদান পূর্বক সাওয়াব অর্জন করুন। যদি পড়ে নেন তবুও সকল ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোন আরো একবার ফয়যানে সুন্নাতের অ্যধায় “ক্ষুধার ফযীলত” এর ৬৮ থেকে ১১৬ পাঠ করুন। السلام عليكم
হাজী মুশতাক আত্তারী দরূদ শরীফের ফযীলত রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার প্রতি এক শত বার দুরূদে পাক পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন যখন সে আসবে, তখন তার সাথে এমন একটি নূর থাবে যে, যদি সেটা সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়, তবে সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৮ম খন্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৩৪১)
ছানাখানে রাসুলে মকবুল, বুলবুলে রওযায়ে রাসুল, আত্তারের বাগানের সুগন্ধিময় ফুল, মুবাল্লিগে দা’ওয়াতে ইসলামী আলহাজ্ব আবু উবাইদ কারী মুহাম্মদ মুশতাক আহমদ আত্তারী رحمة الله تعالی عليه ইবনে মাওলানা আখলাক আহমদ আনুমানিক রোজ রবিবার ১৮ই রমযানুল মোবারক ১৩৮৬ হিজরী (মোতাবেক ১-১-১৯৬৭ ইংরেজীতে বান্নো সারহদ, পাকিস্তান -এ জন্মগ্রহণ করেন। কিছুদিন পর সর্দারাবাদ (ফয়সালাবাদ) পাকিস্তান-এ থাকা শুরু করেন ও পরে বাবুল মদীনা করাচীর স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান।
(১) মদীনা মসজিদ (আত্তারঙ্গী টাউন, বাবুল মদীনা) তে অনেক বৎসর ইমামতি করেন।
(২) ১৯৯৫ থেকে ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত কানযুল ঈমান জামে মসজিদে (বাবরী চউক, বাবুল মদীনা, করাচী)-তে ইমাম ও খতীব পদে আসীন ছিলেন।
(৩) কুরআনে পাকের ৮ পারা মুখস্ত ছিল। (৪) খুব ভাল ক্বারী ছিলেন। (৫) দরসে নিযামীর চার দরজা (ক্লাশ) পড়েছিলেন কিন্তু দ্বীনি জ্ঞান কোন ভাল আলিম থেকে কম ছিল না। (৬) একাউন্স ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র অডিটর হিসাবে অনেক বৎসর সরকারী চাকুরীরত ছিল। (৭) জামেয়াতুল মদীনা (সবজ মার্কেট, বাবুল মদীনা, করাচী)-তে ইংরেজী ক্লাসও করতেন। (৮) الہمد الله عز وجل তাঁর চারবার হজ্জ ও মদীনায়ে মুনাওয়ারার যিয়ারতের সৌভাগ্যও অর্জিত হয়। আগরছে দৌলতে দুনিয়া মেরি ছব চেইন লীযায়ে, মেরে দিলছে না হারগিজ ইয়া নবী তেরি বিলা নিকলে। মাদানী পরিবেশে হাজী মুশতাক আত্তারী দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে আগমন করার আগেও হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর মধ্যে الہمد الله عز وجل দ্বীনি মন মানসিকতা ছিল। দাঁড়ি সম্পন্ন যুবক ও সুকণ্ঠের না’ত খাঁ ছিলেন। দা’ওয়াতে ইসলামীতে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা তিনি আমাকে (অর্থাৎ-সগে মদীনা (লিখক) অনেকটা এরকম বলেছিলেন, “প্রথমবার সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় উপস্থিত হওয়ার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রথম মারকায গুলজারে হাবীব জামে মসজিদে আসলাম। ইজতিমার পর সবাই যখন এদিক-সেদিক চলে যাচ্ছিলেন তখন আমি চলে যাচ্ছিলাম, এরই মধ্যে একজন দাঁড়ি ও ইমামাধারী ইসলামী ভাই নিজে সামনে এসে আমার সাথে মোসাফাহা করলেন। তাঁর সাক্ষাতের ধরণ খুব ভাল লাগল। খুবই আন্তরিকতার সাথে ইনফিরাদী কৌশিশ করাবস্থায় তিনি আমাকে আপনার (সগে মদীনা (লিখক) সাথে সাক্ষাত করিয়ে দিলেন। আমি খুবই প্রভাবিত হলাম এবং الہمد الله عز وجل দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম।
হাজী মুশতাক নিগরানে শূরা হয়ে গেলেন
হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه কে আল্লাহ্ তাআলা অত্যন্ত সুকন্ঠের অধিকারী করেছিলেন। বড় বড় যিকর ও না’ত এর ইজতিমা সমূহে মাদানী মুস্তফা (ﷺ) এর না’ত শুনাতেন ও আশিকানে রাসুলকে অস্থির করে তুলতেন। খুব ভাল মুবাল্লিগও ছিলেন। মাদানী কাজের খুব আগ্রহ ছিল। আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে খুবই উন্নতী দান করেছেন। ২০০০ সালের জানুয়ারীতে শহরের সকল নিগরানের অনুমোদন ক্রমে বাবুল মদীনা, করাচীর নিগরান হলেন এবং ঐ বছরই অক্টোবরে দা’ওয়াতে ইসলামীর মারকাযী মজলিসে শূরার নিগরান পদে অধিষ্টিত হয়ে গেলেন। রেযা পর রব কি রাযী হে তুমহারে হাম ভীকারি হে, হামারি আ-খিরাত বেহতর বানাদো ইয়া রাসুলাল্লাহ। প্রিয় আক্বা (ﷺ) প্রিয় মুশতাক رحمة الله تعالی عليه কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন হাজী মুহাম্মদ মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর ওফাতের কয়েক মাস আগে আমার নিকট (সাগে মদীনা (লিখক) কোন এক ইসলামী ভাই একটি চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন। তাতে তিনি শপথ করে নিজের ঘটনা অনেকটা এরকম লিখেছিলেন: “আমি স্বপ্নে নিজেকে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার,হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর রওজার সোনালী জালির সামনে পেলাম। জালি মোবারকে নির্মিত তিনটি ছিদ্র থেকে একটি ছিদ্র দিয়ে যখন উঁকি মেরে দেখলাম তখন এক মনোরম দৃশ্য দেখলাম। কি দেখছি, সরকারে মদীনা হুযুর (ﷺ) উপবিষ্ট আছেন আর সাথেই শাইখানে কারীমাইন অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা আবূ বকর সিদ্দীক ও হযরত সায়্যিদুনা উমরে ফারুকে আযম (رضي الله عنه) ও উপস্থিত রয়েছেন। এরই মধ্যে হাজী মুহাম্মদ মুশতাক আত্তারী رحمة الله تعالی عليه তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে হাযির হলেন।
খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন,রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) হাজী মুশতাক আত্তারী رحمة الله تعالی عليه কে পবিত্র বুকে জড়িয়ে ধরলেন ও এরপর কিছু ইরশাদ করেছেন: তবে তা আমার মনে নেই।অতঃপর ঘুম ভেঙ্গে গেল। আ-প কে কদমো ছে লাগ্ কর্ মওত কি ইয়া মুস্তফা আ-রযু কব আয়েগী বরবেকস ও মজবুর কি নবী করিম (ﷺ) এর দরবারে হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর জন্য অপেক্ষা হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه ঐ দিনগুলোতে খুবই অসুস্থ ছিলেন। আমি তার সম্পর্কে দেখা ঈমান তাজাকারী স্বপ্ন বর্ণিত চিঠি তার মন খুশী করার জন্য পেশ করলাম। আমার এটা সু-ধারণা হল যে, হাজী মুশতাক আত্তারী رحمة الله تعالی عليه এর উপর তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর বিশেষ দয়া ছিল। এমনকি এক ইসলামী ভাই চিঠিতে আমাকে কিছুটা এরকম লিখলেন যে الحمد لله عز وجل সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী রাতে আমি এ ঈমান তাজাকারী স্বপ্ন দেখেছি যে, মসজিদে নববী শরীফে নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর (ﷺ) সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে বসে আছেন ও আশে-পাশে আম্বিয়ায়ে কিরাম علیہما الصلوة السلام খোলাফায়ে রাশিদীন, হাসানাইনে কারীমাইন ও অসংখ্য আওলিয়ায়ে কিরাম رحمة الله تعالی عليه উপস্থিত রয়েছেন। চারিদিকে নীরবতা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর পুরনূর (ﷺ) হযরত সায়্যিদুনা আবূ বক্কর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর প্রতি পবিত্র দৃষ্টি দিলেন এবং ঠোঁট মোবারক নড়ে উঠল, রহমতের ফুল ঝরতে লাগল আর কথাগুলো অনেকটা এরকম বিন্যস্ত হল, “(হে আবু বকর!) মুহাম্মদ মুশতাক আত্তারী আসার পথে, আমি তাঁর সাথে মুসাফাহা করব।
তুমিও মুসাফাহা করবে, তিনি এখানে এসে আমাদেরকে না’ত শুনাবেন।” অতঃপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। যখন সকাল হল তখন খবর আসল যে, আজ ২৯ শা’বানুল মুআয্যাম ১৩২৩হিজরী (মোতাবিক ৫,১১,২০০২) সকাল সোয়া ৮টা ও সাড়ে ৮টার মাঝামাঝি হাজী মুশতাক আত্তারী رحمة الله تعالی عليه ইন্তিকাল করেছেন।লব পর নাতে নবী কা নাগমা কাল ভী থা আওর আজ ভী হে, পেয়ারে নবী ছে মেরা রিশতা কাল ভী থা আওর আজ ভী হে। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঈমান তাজাকারী স্বপ্ন থেকে এসুধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, মরহুম হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ)এর দরবারে গ্রহণযোগ্য নাতখাঁ(প্রশংসাকারী) ছিলেন। তাইতো ওফাতের কয়েক ঘন্টা আগে তাঁর আগমনের জন্য অপেক্ষা করা ও না’ত শুনার সুসংবাদ শুনানো হল। ইয়েহী আ-রজু হো জু ছুরখরু, মিলে দো-জাহা কি আ-বরু, মে কহো গোলাম হো আ-প কা, উও কহে কে হামকো কবুল হে। হাজী মুশতাকের জানাযা নিস্তার পার্ক (বাবুল মদীনা করাচী) তে মরহুমের জানাযার নামায আদায় করা হয়। আশিক কা জানাযা হে জারা ধূম ছে নিকলে, মাহবূব কি গলিয়ূ ছে জারা ঘূম ছে নিকলে। আমি عفی عنه বড় বড়আলিমদের জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এর আগে কোন জানাযায় এত লোকের সমাগম দেখিনি যা হাজী মুহাম্মদ মুশতাক আত্তারীর জানাযায় হয়েছিল। চারিদিকে মনোরম দৃশ্য। মুশতাক আত্তারীর শোকে দিওয়ানারা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতেছিল। অশ্রু ভরা চোখ, শোকের চিৎকার ও হিচকানির কলিজা ফাটা আওয়াজ ও আশিকদের কান্নার মধ্য দিয়ে সাহরায়ে মদীনাতে (টুল প্লাজা, বাবুল মদীনা, করাচী) মরহুমকে দাফন করা হয়।
শাহা আত্তার কা পিয়ারা হে ইয়ে মুশতাক আত্তারী, ইয়েহী মুসর্দা উছে তুম ভী ছুনাদো ইয়া রাসুলাল্লাহ্। ঈসালে সাওয়াবের ভান্ডার দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তজার্তিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা বাবুল মদীনা করাচীতে মরহুমের (তিযা) ৩য় দিবস পালন করা হয়। যেখানে অসংখ্য ইসলামী ভাই অংশগ্রহণ করে। হাজী মুহাম্মদ মুশতাক আত্তারীর رحمة الله تعالی عليه তিযা শরীফে বিভিন্ন শহর থেকে ঈসালে সাওয়াবের যে উপহার আসে তার তালিকার একটি নমুনা এখানে দেয়া হল। (১) কুরআনে পাক ১৩৯১৯, (২) কুরআন শরীফের বিভিন্ন পারা ৫৬১৩, (৩) সূরা ইয়াসিন শরীফ ১০৩৮, (৪) সূরা মূলক শরীফ ১১৪০, (৫) সূরা রহমান ১৬৫, (৬) সূরা মুযাম্মিল শরীফ ১০, (৭) আয়াতুল কুরসী ৩৩৫৯২, (৮) বিভিন্ন সূরা ৯৩১৮৬, (৯) দরূদ শরীফ ১৩৮৮৮০৮৭, (১০) কলেমায়ে তায়্যিবা ৩৪৮৪০০, (১১) বিভিন্ন তাসবীহ ৩৫৭২০০।
ইলাহী মওত আ-য়ে গুম্বদে খাজরাকে ছায়ে মে, মদীনে মে জানাযা ধূম ছে আত্তার কা নিকলে হাজী মুশতাকের চরিত্রের ঝলক এক ইসলামী ভাই তার বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং তার দৃষ্টির আলোকে আলহাজ্জ আবু উবাইদ মুহাম্মদ মুশতাক আত্তারী رحمة الله تعالی عليهএর ব্যাপারে লিখিতভাবে তার অভিমত পেশ করেন, যা কিছুটা এরকম-
(১) যে সময় হাজী মুশতাক আত্তারী আওরঙ্গি টাউন বাবুল মদীনা করাচীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর আলাকায়ী নিগরান ছিলেন, সে সময় আমি ছয় বছর সেখানে অবস্থান করেছিলাম।
(২) আমি তাকে কখনো গীবত করতে এবং রাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে কিছু বলতে দেখিনি। (৩) বড় থেকে বড় যতই সাংগঠনিক সমস্যা তার সামনে আসত তিনি তা বুদ্ধিমত্তার সাথে হেসে সমাধান করে দিতেন। (৪) অনেক এমন কথা যা কষ্টে হৃদয় ভেঙ্গে ফেলে এত কিছু শুনার পরও তিনি কখনো রাগান্বিত হতেন না এবং রাগের চিহ্নটুকুও পর্যন্ত কপালের মধ্যে দেখা যেত না। (৫) কাউকে যদি কখনো সময় (ওয়াদা) দিতেন তাহলে সে সময়ের আনুগত্য করতেন। (৬) অনেকবার দেখেছি যখন ইজতিমায়ী যিকির ও না’ত মাহফিলের মধ্যে নাত পড়ার জন্য অথবা কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে বিবাহ পড়ানোর জন্যে উনাকে গাড়ি ভাড়া দিতে চাইতেন তখন তিনি বলতেন আমার নিকট মোটর সাইকেল আছে। ان شاء الله عز وجل আমি সময়মত পৌঁছে যাব। আমাকে শুধু ঠিকানাটা দিয়ে দিন। (৭) আসা যাওয়ার গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি চাওয়াতো দূরের কথা যদি কেউ খুশী হয়ে কিছু দিতে চাইতেন তবুও মুচকি হাসি দিয়ে তা নেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। (৮) ১৯.১২ .১৯৯৬ আমার বিবাহের দিন ছিল। আমার অনুরোধের কারণে রাতে লান্ডি কায়েদাবাদ তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং বিবাহ পড়ালেন। ফিরার সময় ঘরের সদস্যরা বার বার অনুরোধ করে বললেন: বরের গাড়ি করে আপনাকে পৌছে দেয়া হবে অথবা টেক্সী ভাড়া করে দেয়া হবে কিন্তু তিনি তা মানলেন না। তিনি খুব বিনয়ের সাথে তাদেরকে বলে লান্ডি কায়েদাবাদ থেকে আওরঙ্গী টাউন এর মত দীর্ঘ সফর বাসে করে সমাপ্ত করলেন। হযরতে মুশতাক আত্তারী ছে হামকো পিয়ার হে, ان شاء الله দো জাহা মে আপনা বেড়া পার হে। মুশতাক আত্তারীর মাজারে গেলে মনের আশা পূরণ হয় الہمد الله عز وجل সাহরায়ে মদীনা বাবুল মদীনা করাচীতে হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর মাজার। ইসলামী ভাইয়েরা দূর দূরান্ত থেকে এখানে আসে এবং তার ফয়েজ নিয়ে ধন্য হয়।
যেমন- এক ইসলামী ভাই এভাবে লিখে পাঠিয়েছেন, আমরা ঘরে সন্তান লাভের অপেক্ষায় ছিলাম; মেডিকেল রিপোর্ট মতে মেয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার আশা ছিল একটি ছেলে সন্তানের। কেননা একটি মেয়ে সন্তান আগেই ছিল। আমি সাহরায়ে মদীনাতে এসে হাজী মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর দরবারে হাজির হলাম এবং আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলাম। মেডিকেল রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হল। الہمد الله عز وجل আমার ঘরে চাঁদের মত এক মাদানী মুন্না (ছেলে) জন্ম নিল। মুস্তফা কা হে জুভী দিওয়ানা, উছপে রহমত মুদাম হোতি হে। খারাপ প্রভাব দূর হয়ে গেল এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা- আমার শরীরের উপর খুব একটা খারাপ প্রভাব ছিল। আমার হালকার এক ইসলামী ভাইয়ের সাথে সাহরায়ে মদীনায় মুশতাক رحمة الله تعالی عليه এর দরবারে উপস্থিত হলাম এবং দোয়া করলাম। তখন আমার এমন মনে হল যে, কেউ আমাকে যেন আকড়ে ধরলেন। কিছুক্ষণ পরে আমার মধ্যে এমন অবস্থা দেখা গেল, আমার শরীরের অবস্থা ভালো হয়ে গেল। ছুনলো হার এক নেক শাখছিয়্যাত, কাবিলে ইহতিরাম হোতি হে। ইয়া রব্বে মুস্তফাعزوجل وصلی الله تعالى عليه واله وسلم আমাকে, হাজী মুশতাক আত্তারী, দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রত্যেক ইসলামী ভাই ইসলামী বোনের ও সকল উম্মতে মুসলিমাকে ক্ষমা করুন। امين بجاه النبي الامين صلى الله تعا لی عليه واله وسلمমদীনার ভালবাসা, জান্নাতুল বাক্বী, ক্ষমা ও বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রিয় আক্বা (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়ার প্রত্যাশী।
২৩ মুহাররামুল হারাম, ১৪২৭ হিঃ