❏ মৃত ব্যক্তির ফাতেহা উপলক্ষে যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা


ফাতেহা করা তথা মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব রেছানী করার আমল নবী করিম (ﷺ)  এর হাদিস, সাহাবীগণের আমল ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর আইম্মায়ে কেরামের সমর্থন দ্বারা প্রমানিত হয়েছে। যেমন: কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবীহ-তাহলীল, নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি আমল করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে আনুষ্ঠানিক ভাবে বকশিয়ে দেওয়া। অথবা এরূপ করা যে, গরীব-মিসকীন ও এতিম তথা মুমিন-মুসলমানের জন্য খাবার পরিবেশন করার মাধ্যমে দোয়া লাভ করা। এরূপ অনুষ্ঠানকে ‘যিয়াফত’ বলা হয়। মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ)  এর সুন্নাত। যেমনঃ 


❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন:


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ 


-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত (এখানে فَلْيُكْرِمْ শব্দের ভাবার্থ বুঝানোর জন্যই যিয়াফত অর্থ করা হয়েছে। কারণ উরফী দৃষ্টিকে মেহমানকে সম্মান করা হয় মূলত তার প্রতি উত্তম আচরন ও উত্তম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে। যাকে বলা হয় আতিথেয়তা বা আপ্যায়ন। আর এই আতিথেয়তা বা আপ্যায়নকেই যিয়াফত বলা হয়ে থাকে, যা মূলত মেহমানের উদ্দেশ্য সম্মান।) করে।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ছহীহ্ বুখারী, হাদিস নং ৬১৩৬ ও মুসলীম 

・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৪২৪৩ বাবুয যিয়াফাত


এই হাদিস থেকে মত্বলকান সব সময়ই যিয়াফতের বৈধতার কথা পাওয়া যায়। বস্তুত অনাহারীকে আহার দেওয়া অনেক উত্তম কাজ। 


❍ মৃত ব্যক্তি আত্বার মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে যিয়াফত করার ব্যাপারে পবিত্র হাদিস শরীফে আরো উল্লেখ আছে:


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ إِدْرِيسَ، أَخْبَرَنَا عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ رَجُلٍ، مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى الْقَبْرِ يُوصِي الْحَافِرَ: أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رِجْلَيْهِ، أَوْسِعْ مِنْ قِبَلِ رَأْسِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ اسْتَقْبَلَهُ دَاعِي امْرَأَةٍ فَجَاءَ وَجِيءَ بِالطَّعَامِ فَوَضَعَ يَدَهُ، ثُمَّ وَضَعَ الْقَوْمُ، فَأَكَلُوا، فَنَظَرَ آبَاؤُنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلُوكُ لُقْمَةً فِي فَمِهِ، ثُمَّ قَالَ: أَجِدُ لَحْمَ شَاةٍ أُخِذَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ أَهْلِهَا، فَأَرْسَلَتِ الْمَرْأَةُ، قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَرْسَلْتُ إِلَى الْبَقِيعِ يَشْتَرِي لِي شَاةً، فَلَمْ أَجِدْ فَأَرْسَلْتُ إِلَى جَارٍ لِي قَدِ اشْتَرَى شَاةً، أَنْ أَرْسِلْ إِلَيَّ بِهَا بِثَمَنِهَا، فَلَمْ يُوجَدْ، فَأَرْسَلْتُ إِلَى امْرَأَتِهِ فَأَرْسَلَتْ إِلَيَّ بِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمِيهِ الْأُسَارَى


“জনৈক আনসার সাহাবী (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা রাসূলে পাক (ﷺ)  এর সাথে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ)  কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুরছিল তাদের বলেন: পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখোন থেকে ফিরার পর জনৈক মহিলার আহবানকারী নবী পাক (ﷺ)  কে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে গেলেন ও তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী করিম (ﷺ)  খেতে শুরু করলে অন্যরাও খেতে শুরু করেন। তখন আমাদের মুরুব্বিরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূল (ﷺ)  এক লোকমা মুখে দিয়ে তা শুধু চিবাচ্ছেন কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, এ গোস্ত এমন এক বকরীর যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য বাকী নামক বাজারে পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে বকরী পাওয়া যায়নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয় মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ি পাওয়া যায়নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেন, এ গোস্ত বন্দিদের খাইয়ে দাও।” 


তথ্যসূত্রঃ

・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ৩৩৩২ بَابٌ فِي اجْتِنَابِ الشُّبُهَاتِ, ই: ফা: হাদিস নং ৩২৯৯ 

・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০৮২৫ بَابُ كَرَاهِيَةِ مُبَايَعَةِ مَنْ أَكْثَرُ مَالِهِ مِنَ الرِّبَا أَوْ ثَمَنِ الْمُحَرَّمِ 

・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৯৪২ 

・কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, হাদিস নং ২৪৩৪ 

・ইমাম যায়লায়ী: নাছবুর রায়া, ৪র্থ খন্ড, ১৬৮ পৃ: 

・তাহতাবী শরীফ, 

・ফতোয়ায়ে শামী


সকল ইমামের মতে হাদিসখানা ছহীহ্। এমনকি লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী আবু দাউদ ও মেসকাতের তাহকিকে হাদিসটিকে ছহীহ্ বলেছেন। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, আল্লাহর নবী (ﷺ)  নিজেই ও সাহাবায়ে কেরাম মৃত ব্যক্তির বাড়িতে (মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে) আয়োজিত যিয়াফতের খাবার গ্রহণ করেছেন এবং হালাল খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি করেননি। 


❍ এই সম্পর্কে আল্লামা আহমদ ইবনে ইসমাঈল তাহতাবী হানাফী (رحمة الله) বলেন: 

فهذا يدل على إباحة صنع أهل الميت الطعام والدعوة إليه بل ذكر في البزازية أيضا من كتاب الاستحسان وإن اتخذ طعاما للفقراء كان حسنا اهـ وفي استحسان الخانية وإن اتخذو لي الميت طعاما للفقراء كان حسنا إلا أن يكون في الورثة صغير فلا يتخذ ذلك من التركة

-“মৃত ব্যক্তি পরিবার থেকে হাওয়াত ও খাবার গ্রহণ করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে এই হাদিস উত্তম দলিল। বাজ্জাযিয়ার ‘কিতাবুল ইস্তেহছান’ এর মধ্যে অনুরুপ উল্লেখ করেছেন যে, যদি দরিদ্রদের জন্য খাবার চাওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম। খানিয়া কিতাবের ইস্তহছান অধ্যায়ে আছে, যদি মায়্যেতের জন্য দরিদ্র লোকদের খাবার গ্রহণ করানো হয় তাহলে উত্তম, তবে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ ছোট হয় তাহলে এরুপ গ্রহণ করবেনা এবং অনরূপ পরিত্যাগ করবে।” (তাহ্তাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ:)


Top