যেমন- এক ইসলামী ভাই এভাবে লিখে পাঠিয়েছেন, আমরা ঘরে সন্তান লাভের অপেক্ষায় ছিলাম; মেডিকেল রিপোর্ট মতে মেয়ে হওয়ার কথা ছিলকিন্তু আমার আশা ছিল একটি ছেলে সন্তানেরকেননা একটি মেয়ে সন্তান আগেই ছিলআমি সাহরায়ে মদীনাতে এসে হাজী মুশতাক رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর দরবারে হাজির হলাম এবং আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলামমেডিকেল রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হলاَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ আমার ঘরে চাঁদের মত এক মাদানী মুন্না (ছেলে) জন্ম নিল 


মুস্তফা কা হে জুভী দিওয়ানা,

 উছপে রহমত মুদাম হোতি হে।


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


খারাপ প্রভাব দূর হয়ে গেল 

 এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা- আমার শরীরের উপর খুব একটা খারাপ প্রভাব ছিলআমার হালকার এক ইসলামী ভাইয়ের সাথে সাহরায়ে মদীনায় মুশতাক رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর দরবারে উপস্থিত হলাম এবং দোয়া করলামতখন আমার এমন মনে হল যে, কেউ আমাকে যেন আকড়ে ধরলেনকিছুক্ষণ পরে আমার মধ্যে এমন অবস্থা দেখা গেল, আমার শরীরের অবস্থা ভালো হয়ে গেল 


ছুনলো হার এক নেক শাখছিয়্যাত, 

কাবিলে ইহতিরাম হোতি হে। 


ইয়া রব্বে মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমাকে, হাজী মুশতাক আত্তারী, দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রত্যেক ইসলামী ভাই ইসলামী বোনের সকল উম্মতে মুসলিমাকে ক্ষমা করুন

 امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

মদীনার ভালবাসা, জান্নাতুল বাক্বী, ক্ষমা ও বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রিয় আক্বা صلى الله عليه وسلم এর প্রতিবেশী হওয়ার প্রত্যাশী। 

২৩ মুহাররামুল হারাম, ১৪২৭ হিঃ


খাওয়ার ৪০টি নিয়্যত 

 (১,২) খাবারের প্রথমে ও শেষে অযু করব, (অর্থাৎ-হাত-মুখের অগ্রভাগ ধৌত করব এবং কুলিও করব), (৩) ইবাদত, (৪) তিলাওয়াত, (৫) মাতা-পিতার সেবা, (৬) ইলমে দ্বীন অর্জন, (৭) সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর (৮) নেকীর দাওয়াতের আলাকায়ী দাওরাতে অংশগ্রহণ, (৯) আখিরাতের কাজ ও (১০) প্রয়োজনীয় হালাল রুজির চেষ্টার জন্য শক্তি অর্জন করব নিয়্যতগুলো ঐ সময় ফলপ্রসু হবে যখন ক্ষুধা থেকে কম আহার করা হবে খুব বেশী করে খাওয়ার ফলে ইবাদতে অলসতা সৃষ্টি হয়গুনাহের দিকে আসক্ত হবে এবং পেট খারাপ হয়ে যায় (১১) মাটির উপর (১২) দস্তারখানা বিছানোর সুন্নাত আদায় করে, (১৩) সুন্নাত মুতাবেক বসে, (১৪) খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং (১৫) অন্যান্য দোয়াসমূহ পড়ে, (১৬) তিন আঙ্গুলের মাধ্যমে, (১৭) ছোট ছোট লোকমা বানিয়ে, (১৮) ভালভাবে চিবিয়ে খাব, (১৯) প্রত্যেক দুই এক লোকমার পর পর یاواجيد পড়ব, (২০) যে দানা ইত্যাদি পড়ে যাবে তা তুলে খেয়ে নেব, (২১) রুটির প্রত্যেক লোকমা তরকারির পাত্রের উপর ছিড়ব ফলে রুটির টুকরা (গুড়া অংশ) পাত্রের মধ্যে পড়ে, (২২) হাড্ডি ও গরম মসলা ইত্যাদি ভালভাবে পরিস্কার করে এবং চাটার পর ফেলে দিব, (২৩) ক্ষুধা থেকে কম খাব, (২৪) শেষে সুন্নাত আদায়ের নিয়্যতে প্লেট এবং (২৫) তিনবার আঙ্গুল সমূহ চেটে নিব, (২৬) খাবারের পাত্রকে ধৌয়ে তা পান করে এক গোলাম আযাদ করার সাওয়াবের ভাগী হব, (২৭) যখন পর্যন্ত দস্তরখানা উঠানো হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত বিনা কারণে উঠব না (এটাও সুন্নাত) (২৮) খাওয়ার পর দোয়া সমূহ পাঠ করব, (২৯) খিলাল করব,

মিলে-মিশে খাওয়ার আরও নিয়্যত সমূহ 

(৩০) দস্তরখানায় যদি কোন আলিম বা বুযুর্গ উপস্থিত থাকে তবে উনাদের আগে খাওয়া শুরু করব না, (৩১) মুসলমানের নৈকট্যের বরকত সমূহ অর্জন করব, (৩২) উনাদের মাংসের টুকরা, কদু শরীফ, খোরচান এবং পানি ইত্যাদি পেশ করে উনাদের মন খুশী করব, (৩৩) তাদের সামনে মুচকী হেসে সদকার সাওয়াব হাসিল করব, (৩৪) খাবারের নিয়্যত সমূহ এবং (৩৫) সুন্নাত সমূহ বলব, (৩৬) সুযোগ হলে খাবারের শুরুর এবং (৩৭) শেষের দোয়া পড়াব, (৩৮) খাবারের উত্তম জিনিস যেমন মাংসের টুকরা ইত্যাদি লোভ থেকে বেঁচে অন্যান্যদের খাতিরে ছেড়ে দিব, (৩৯) উনাদেরকে খিলালের উপহার পেশ করব, (৪০) খাবারের প্রতি এক দুই লোকমায় যদি সম্ভব হয় তবে এই নিয়্যত সহকারে উচ্চ আওয়াজে یاواجيد বলব যাতে অন্যান্যদেরও স্মরণে এসে যায়

امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 


সৎকর্মশীলদের মত কে রয়েছে?

 মদীনার সরদার, দোজাহানের মালিক মুখতার, শাহানশাহে আবরার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: ﺍﻥ ﺍلدﺍﻝ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺨﻴﺮ كفا ﻋﻠﻪ অর্থাৎ নিঃসন্দেহে সৎকাজে আহ্বানকারী সৎকর্ম সম্পাদনকারীর ন্যায়ই।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৭৯) প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “সৎকাজ যে করে, যে করায়, যে শিখায় আর যে পরামর্শ দেয় সবাই সাওয়াবের অধিকারী।” (মিরআতুল মানাজীহ্, ১ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা)


পেটের কুফলে মদীনা 

    শয়তান বাধা সৃষ্টির জন্য পূর্ণ চেষ্টা করবে কিন্তু আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সামর্থানুযায়ী আমল করে শয়তানকে পরাজিত করে দিন। 


পেটের কুফলে মদীনা কি? 

 নিজের পেটকে হারাম খাবার থেকে বাঁচানো এবং হালাল খাবারও ক্ষুধার তুলনায় কম খাওয়াকে “পেটের কুফলে মদীনা” বলেপেটের কুফলে মদীনা (অর্থাৎ- মাদানী তালা) লাগানোর আগ্রহীদের জন্য হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর সুস্থ থাকার বাণীটি উত্তম নির্দেশনামূলকযেমন-তিনি বলেন: “খাওয়ার আগে ক্ষুধা থাকা আবশ্যকযে খাবার শুরু করার সময়েও ক্ষুধার্ত ছিল এবং ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় হাত গুটিয়ে নিল, সে কখনো ডাক্তারের মুখাপেক্ষী হবে না। (ইহইয়াউল উলূম, ২য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা)

ইয়া ইলাহী! পেট কা কুফলে মদীনা কর আতা, 

আয পায়ে গউছো রযা কর ভূখ কা গাওহর আতা। 


ইচ্ছাকৃত ক্ষুধা 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পেট ভরে খাওয়া মুবাহ্ অর্থাৎ জায়িযতবে “পেটের কুফলে মদীনা” লাগিয়ে অর্থাৎ নিজ পেটকে হারাম সন্দেহযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বাঁচিয়ে হালাল খাবারও ক্ষুধা থেকে কম খাওয়াতে দ্বীন দুনিয়ার অগণিত উপকার রয়েছেখাবার না থাকা অবস্থায় বাধ্য হয়ে ক্ষুধার্ত থাকার মধ্যে কোন বাহাদুরী নেই, বরং ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকা সত্ত্বেও কেবল আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ক্ষুধা সহ্য করাটাই বাস্তবিক পক্ষে একটি প্রশংসনীয় কাজযেমন-বর্ণিত আছে, প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধা সহ্য করতেন।” (শুয়াবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৬৪০) 


লুটলে রহমত, লাগা কুফলে মদীনা পেট কা, 

পায়ে গা জান্নাত, লাগা কুফলে মদীনা পেট কা। 


জান্নাতে প্রিয় নবী ﷺ  এর প্রতিবেশী 

 জানা গেল, ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধা সহ্য করা ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খুবই প্রিয় সুন্নাতআর সুন্নাতের মহত্ত্বের কথা কি বলব! স্বয়ং নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসল সে আমাকে ভালবাসল, আর যে আমাকে ভালবাসল সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।” (মিশকাত শরীফ, ৩০ পৃষ্ঠা)


আল্লাহ্ তাআলার শিক্ষামূলক বাণী হচ্ছে:

اَذۡهَبۡتُمۡ طَيِّبٰـتِكُمۡ فِىۡ حَيَاتِكُمُ الدُّنۡيَا وَاسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِهَا ‌ۚ فَالۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا كُنۡـتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ فِى 

الۡاَرۡضِ بِغَيۡرِ الۡحَقِّ وَبِمَا كُنۡتُمۡ تَفۡسُقُوۡنَ ﴿۲۰﴾

 কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ‘তোমরা আপন অংশের পবিত্র বস্তুু সমূহ আপন পার্থিব জীবনেই নিশ্চিহ্ন করে বসেছো এবং সেগুলো ভোগ করেছো। সুতরাং আজ তোমাদেরকে লাঞ্ছনার শাস্তিই বিনিময়ে দেয়া হবে। (পারা- ২৬, সুরা- আহকাফ, আয়াত- ২০)


প্রিয় নবী এর ক্ষুধা শরীফ

খলীফায়ে আলা হযরত, মুফাসসিরে কুরআন, হযরত সাদরুল আফাযিল আল্লামা মওলানা মুফতী সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ “খাযাইনুল ইরফানে” এ আয়াতে মোবারাকার ব্যাখ্যায় বলেন: আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়াবী স্বাদ গ্রহণের কারণে কাফিরদেরকে তিরস্কার করেছেনতাই নবী করীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হুজুরের সাহাবাগণ علهم الر ضوان দুনিয়াবী স্বাদ গ্রহণ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতেনবুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে পাকে রয়েছে, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পার্থিব জীবনে হুযূরের আহলে বাই্তে আতহার علهم الر ضوان (পরিবারবর্গ) কখনো জবের রুটিও একাধারে দু’দিন খাননিএটাও হাদীসে পাকে রয়েছে যে, সম্পূর্ণ মাস চলে যেত, দওলতে সারা-য়ে আক্বদাসের (অর্থাৎ- উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র ঘরের) চুলাতে আগুন পর্যন্ত জ্বলতনা সামান্য খেজুর পানির মাধ্যমে দিন অতিবাহিত করতেনহযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হে লোকেরা! আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের চেয়ে ভাল খাবার খেতে পারতাম, আর তোমাদের চেয়ে উত্তম পোষাক পরিধান করতে পারতাম, কিন্তু আমি আমার ভোগ-বিলাস আরাম-আয়েশ আখিরাতের জন্য অবশিষ্ট রাখতে চাই। (খাযাইনুল ইরফান, ৯০৭ পৃষ্ঠা)


খানা-তো দেখো জাও কি রুটি, 

বে-চনা আটা রুটি ভি মুটি,

উও ভি শেকম ভর রৌজ না খানা ﷺ 

কওনো মকাকে আ-ক্বা হো কর, 

দোনো জাহাকে দা-তা হো কর, 

ফাকে ছে হে ছারকারে দো আলম ﷺ   


অনেক রাত উপবাস

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا বলেন: “খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  কয়েক রাত একাধারে উপবাস থাকতেনপ্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্র ঘরের বাসিন্দাদের নানে-শাবীনা (অর্থাৎ- রাতের রুটি) খাওয়ার সুযোগ হতো না এবং অধিকাংশ সময় জবের রুটি খেতেন। (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং - ২৩৬৭)

           

আহলে বাইত عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان এর খাবার

হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ  বলেন: "রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم জবের পরিবর্তে নিজের লৌহ বর্ম বন্ধক রাখেনআর আমি জবের রুটি ও তরল চর্বি নিয়ে তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহত্বপূর্ণ দরবারে উপস্থিত হলামতখন আমি রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে এটা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পরিবারের না কখনো সকালে এক সা’ পরিমাণ (অর্থাৎ- প্রায় পৌনে তিন কেজি) খাবার লাভ হয়েছে না সন্ধ্যায়।” আর, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পরিবারবর্গ নয়টি ঘরে অন্তর্ভুক্ত ছিল। (সহীহ্ বুখারী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৮, হাদীস নং - ২৫০৮) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটা ঐ আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্রতম অবস্থা, যাঁর মোবারক হাতে উভয় জাহানের ভান্ডারের চাবিসমূহ প্রদান করা হয়েছেমদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দারিদ্র্যতাপূর্ণ অবস্থা অবলম্বন স্বেচ্ছায় ছিলঅন্যথায় আল্লাহর কসম! (সৃষ্টি জগতে) যে যা-ই লাভ করে তা প্রিয় রাসুল, রাসুলে মাকবুল, হুযুর    صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সদকাতেই লাভ করে, আর সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তুর নিকট নূরে মুস্তাফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ফয়য পৌঁছে থাকেযেমন

 

 এক অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তির ঘটনা 

একজন আল্লাহর ওলী এক টুকরো রুটি খাওয়ার জন্য হাতে নিলেনঅতঃপর তাতে যখন তিনি রূহানিয়্যাতের দৃষ্টি দিয়ে গভীরভাবে দেখলেন, তখন তিনি ঐ টুকরর সাথে একটি নূরের তার দেখতে পেলেনযখন নূরের তার ধরে দৃষ্টিকে উপরের দিকে উঠালেন, তখন দেখতে পেলেন, নূরের তারটি বিশ্বজগতের সৃষ্টির মূল, নূরে মুজাসসাম, শাহে বনী আদম, রাসুলে পাক صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরের একটি রশ্মির সাথে সংযুক্তপ্রথমতো ঐ একটি রশ্মিই দেখা গেল, এরপর গভীরভাবে দেখাতে জানা গেল, হুযূর  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরের রশ্মি সমূহ দুনিয়ার প্রতিটি নেয়ামতে পৌঁছে যাচ্ছে। (আল্ আবরীয, ২২৯ পৃষ্ঠা) 


কিয়া নুরে আহমদী কা চমন মে জুহূর হে  

হার গুল মে হার শজর মে মুহাম্মদকা নূর হে। 

    

পেটের উপর দু’টি পাথর 

হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালহা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: "নবীকুল সুলতান, সরকারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে ক্ষুধার ব্যাপারে অভিযোগ করলাম, আর নিজেদের পেটে একটি করে পাথর বাঁধা দেখালামআর তখন প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজের পবিত্র পেটের উপর থেকে কাপড় মোবারক সরালেন, তখন দেখা গেল তাতে দু'টি পাথর বাঁধা রয়েছেহযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম তিরমিযী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: " পাথর ক্ষুধার যন্ত্রনা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে পেটে বাঁধা হতো।" (শামায়িলে তিরমিযী, ১৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭২)


আ-প ভূকে রহে আওর পেট পে পাত্তর বান্ধে, 

হাম গোলামু কো মিলে খাওয়ান মদীনে ওয়ালে ﷺ 


সম্মানের সামগ্রী

হযরত আবূ বুজাইর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, একদা নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খুবই ক্ষুধা পেল, তখন তিনি একটি পাথর নিয়ে পবিত্র পেটে বেঁধে নিলেন আর বললেন: সাবধান! অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা দুনিয়াতে ভাল খাবার গ্রহনকারী আর আনন্দময় জীবনযাপনকারী, কিন্তু কিয়ামতের দিন (তারাই) ক্ষুধার্ত উলঙ্গ হবেসাবধান অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা নিজেকে সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় রয়েছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা অপমানের সামগ্রীই তৈরী করছেসাবধান অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা নিজেকে লোকের দৃষ্টিতে অপদস্ত রাখে, কিন্তু আসলে এটা তাদের জন্য সম্মানের সামগ্রী। (আল্ মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়্যাহ্, ২য় খন্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা) 


প্রেমময় আবেগ 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর শান মর্যাদার উপর আমাদের জান কোরবান হোক! রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ক্ষুধাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেনআর হায়! আমাদের মধ্যে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রেমের দাবীদার কিছু এমনও রয়েছি যে, যদি খাবার তৈরী হতে সামান্য দেরী হয় অথবা খাবার যদি আমাদের স্বাদ গ্রহনকারী নফসের পছন্দ না হয়, তবে পরিবারের লোকদের উপর বিরক্ত হয়ে যাই

হায়! এমন যদি হত! আমাদেরও ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধার্ত থাকার এবং ক্ষুধার তীব্রতার কারণেই সুন্নাতের নিয়্যতে কোন কোন সময় নিজেদের পেটে পাথর বাঁধার সৌভাগ্য নসীব হতো! হায়!এমন যদি হত! শত কোটি আফসোস! সগে মদীনা (লেখক) মানুষ না হয়ে যদি নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর গলির কোন পাথর হতাম, আর আল্লাহর রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সে গলি অতিক্রম করতেন! সৌভাগ্যের বিষয় হতো, যদি কোন কোন সময় বরকতময় কদমগুলোর পবিত্র তালুগুলো চুমু দেয়ার সুযোগ পেতাম আমার সাধ্যে এমন সাহসতো নেই যে, পবিত্র পেটে বাধার জন্য আশা করবো, কিন্তু আকাঙ্খা! শত কোটি আকাঙ্খা! কখনো যদি এমনও হয়ে যেত যে, “ক্ষুধার ব্যাকুলতাকে” অনুমতি প্রদান করে আমি গরীবের সাথে মিলিত কোন সৌভাগ্যশালী পাথরকে পবিত্র পেটের বিশেষ নৈকট্য প্রদানের ইচ্ছায় তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেটার প্রতি নিজের নূরানী হাত বাড়াতেন, আর সে অবস্থায় আমাকে হুজুরের পবিত্র হাত মোবারকে চুমু দেয়ার সৌভাগ্য দান করতেন ........। আহা! আহা! আহা! ........ 


মাই কাহা আওর কাহা উনকা উজুদে মাসঊদ, 

মেরি আওকাত হী কিয়া উনপে হো ছো লাখ দরূদ। 

 


হযরত মূসা عَلَیۡہِ السَّلاَم এর ক্ষুধা

হযরত সাইয়্যিদুনা মূসা عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم যখন ‘মাদ্ইয়ান’ (মাদায়েন) এর কূপের নিকট আগমণ করলেন, তখন দুর্বলতার কারণে সবজীর তরকারী তাঁর মোবারক পেটের বাইরে থেকে দৃষ্টিগোচর হতো।(শামায়িলে রাসূল, অনুদিত ১২১ পৃষ্ঠা) আর যে চল্লিশ দিন আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তিনি عَلَیۡہِ السَّلاَم কিছু আহার করেননি। (ইহইয়াউল্ উলুম, ৩য় খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা)


হযরত দাউদ عَلَیۡہِ السَّلاَم এর পবিত্র ক্ষুধা

হযরত সাইয়্যিদুনা কাযী আয়ায رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: "হযরত সাইয়্যিদুনা দাউদ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم এর পোষাক পশম দ্বারা এবং বিছানা লোম দ্বারা তৈরী ছিল, পবিত্র জবের রুটি লবণ দিয়ে আহার করতেন। (শামায়িলে রাসূল, অনুদিত, ১২১ পৃষ্ঠা) 


হযরত ঈসা عَلَیۡہِ السَّلاَم এর পবিত্র ক্ষুধা

হযরত সাইয়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم নিজের জন্য কোন ঘর তৈরী করেননি। যেখানে ঘুম এসে পবিত্র কদমে চুমু দিত সেখানে আরাম করে নিতেন। লোম দিয়ে তৈরী পোষাক পরিধান করতেন আর গাছের পাতা আহার করতেন। (প্রাগুক্ত)

  

হযরত ইয়াহ্ইয়া عَلَیۡہِ السَّلاَم এর পবিত্র ক্ষুধা

হযরত সাইয়্যিদুনা ইয়াহ্ইয়া عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم এর খাবার ছিল ভেজা ঘাসআল্লাহর ভয়ে এরূপ কাঁদতেন যে, পবিত্র চেহারায় চোখের পানির দাগ বসে গিয়েছিল (প্রাগুক্ত) 


ফাক্বায়ে আম্বিয়া কে সদকে মে, 

লজ্জতে নফস ছে বাঁচা ইয়া রব! 


নবী করিম ﷺ এর ক্ষুধার কথা স্মরণ করে বিবি আয়েশা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর কান্না      

 হযরত সাইয়্যিদুনা মাসরূক رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: আমি উম্মুল মুমীনীন হযরত সাইয়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি আমার জন্য খাবার আনালেন আর বলতে লাগলেন, “আমি যখন কখনো পেট ভরে খাবার খাই তখন আমার মন কেঁদে উঠে, আর আমি অঝোড়ে কাঁদতে থাকি।” আমি বললাম: কেন? বললেন: আমার সারতাজ, সাহিবে মি’রাজ, হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ঐ অবস্থার কথা মনে পড়ে যায়,যে অবস্থায় (তিনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) আমার থেকে আলাদা হয়েছেন। (ঐ অবস্থাটি হল) কখনো দিনে দু’বার রুটি অথবা মাংস দিয়ে পেট ভরে খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়নি।” (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৬৩) 


আয়েশা সিদ্দিকা রোতি থি নবীকি ভূক পর, 

হায়! ভরতে হে গিজায়ে হাম শেকম মে ঠূস কর। 

 

আশিকগণ ভেবে দেখুন

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! একদিকে উম্মুল মুমীনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَاএর ইশকে রাসূল এমন ছিল, যদি কখনো পেট ভরে খাবার খেয়েও নিতেন, তবে খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ভালবাসায় কান্না করতে থাকতেন আর হায়! অন্য দিকে আমরা গুনাহ্গারদের অবস্থা এ যে, কন্ঠনালী পর্যন্ত খুব ভালভাবে পেট ভরে খেয়ে নেয়ার পরও কিন্তু মন ভরে না। মনে রাখবেন! যখনই আল্লাহ্ ওয়ালাগণের পেট ভরে খাওয়ার বর্ণনা সমূহ পাবেন, তখন এ থেকে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবার খাওয়াই বুঝাবেন। আমাদের পেট ভরে খাওয়া আর তাঁদের পেট ভরে খাবার খাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। 

           কারে পা কা-রা কিয়াস আয খূদ মাগীর। 

অর্থাৎ- বুযুর্গানে দ্বীনের কার্যাবলীকে নিজের কাজের মত মনে করিও না। 

আমাদের ইসলামী বোনদেরও উম্মুল মুমীনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর "গমে মুস্তফা  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم " (অর্থাৎ- প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জন্য ভালোবাসা) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। যদি ইসলামী বোনেরা দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যান, আর নিজ এলাকার দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক ইজতিমায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন এবং মাদানী ইনআমাত এর উপর আমল করে ফিকরে মদীনার মাধ্যমে প্রতিদিন (মাদানী ইন্আমাতের) রিসালা পূরণ করে নিজেদের যিম্মাদার ইসলামী বোনকে জমা দিতে থাকেন, তবে  اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ অবশ্যই সফলতা অর্জন করবেন। দা’ওয়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত এক ইসলামী বোনের আবেগপূর্ণ ঘটনা শুনুন, যেমন-


ইসলামী বোনের ঘটনা 

সানগাড় বাবুল ইসলাম, সিন্ধু প্রদেশের এক ইসলামী ভাইয়ের শপথমূলক বর্ণনা যে, আমার বোন বিনতে আবদুল গাফ্ফার আত্তারীয়্যা কষ্টদায়ক রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। আর আস্তে আস্তে তার অবস্থার অবনতি ঘটতে লাগল। ডাক্তারদের পরামর্শে অপারেশন করানো হলে শারীরিক অবস্থার তখনকার মত কিছুটা উন্নতি ঘটল, কিন্তু প্রায় এক বৎসর ভাল থাকার পর পুনরায় রোগ প্রচন্ডভাবে বেড়ে গেলে সাথে সাথে রাজপুতানাহ্ হাসপাতালে (হায়দ্রাবাদ, বাবুল ইসলাম, সিন্ধ-এ) ভর্তি করে দেয়া হল। এক সপ্তাহ হাসপাতালে রইলো কিন্তু অবস্থার উন্নতির পরিবর্তে আরো অবনতি ঘটল। এমতাবস্থায় হঠাৎ একদিন তিনি উচ্চ স্বরে কালিমায়ে তায়্যিবা পড়া শুরু করলেন। কখনো কখনো মাঝখানে اَلصَّلٰوةُ وَالسَّلاَمُ عَلَیۡکَ یَارَسُوۡلَ اللّٰه وَعَلٰی اٰلِکَ وَاَصۡحٰبِکَ یَا حَبِیۡبَ اللّٰه ও পাঠ করছিলেন। উচ্চ স্বরে لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ এর ওয়াযীফা পাঠ করতে থাকলে পুরো কামরা মধুর আওয়াজে মুখোরিত হয়ে যেত। ঈমান তাজাকারী অদ্ভুত ছিল এই দৃশ্য। যে তাঁকে দেখতে আসত, ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে তাঁর সাথে আল্লাহ্ তাআলার যিকির শুরু করে দিত। ডাক্তার ও হাসপাতালের কর্মচারীরা এ দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল, তাদের ধারণা হল এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মক্ববুল বান্দী হবেন! কেননা আমরাতো আজ পর্যন্ত রোগীদের চিৎকারই শুনে আসছি, কিন্তু এ রোগী দেখছি অভিযোগ, আপত্তির পরিবর্তে একাধারে আল্লাহ্ তাআলার যিকিরের মধ্যে মশগুল রয়েছেন। আনুমানিক বার ঘন্টা পর্যন্ত এ অবস্থা স্থায়ী ছিল।

মাগরিবের আযানের সময় এভাবে উচ্চস্বরে কালিমায়ে তায়্যিবা পাঠ করতে করতে তাঁর রূহ দেহ পিঞ্জর থেকে উড়ে গেল। আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদেরও ক্ষমা হোক।  امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততা মরহুমার কাজে এসে গেল। তাঁর উদ্দেশ্য সফল হল। আল্লাহর শপথ! ঐ ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান, যে এ দুনিয়া থেকে কালিমা পাঠ করতে করতে বিদায় নিতে পারে। রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: "যার শেষ বাক্য  لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ (অর্থাৎ-কালিমায়ে তায়্যিবা) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (আবূ দাঊদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩১১৬)


দু'দিনে একবার খাওয়াকে পছন্দ করার বহিঃপ্রকাশ 

তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্র ক্ষুধাকে গ্রহণ ইচ্ছাকৃত ছিল। যেমন- রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসূলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতিপালক আমার জন্য এটা পেশ করলেন যে, আমার জন্য মক্কা শরীফের পাহাড় গুলোকে স্বর্ণ বানিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি আরয করলাম: ইয়া আল্লাহ্! আমার নিকটতো এটাই পছন্দনীয় যে, যদি একদিন খাই তো অন্যদিন ক্ষুধার্ত থাকব, যখন ক্ষুধার্ত থাকব তখন তোমার নিকট কান্না-কাটি করব এবং তোমাকে স্মরণ করব, আর যখন খাব তখন তোমার কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা করব।” (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৫৪) 


সালাম উন পর শেকম ভর কর কভী খানা না খা-তে থে, 

সালাম উন পর গমে উম্মত মে জু আছু বাহাতে তে।


দিনে একবার খাওয়া

দিনে একবার খাওয়া সুন্নাত। যেমন- হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ সাঈদ খুদরী رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ  থেকে বর্ণিত: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবীবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যেদিন সকালে খাবার খেতেন, তখন সন্ধ্যায় খাবার খেতেন না। আর যদি সন্ধ্যায় খেয়ে নিতেন তবে সকালে খাবার খেতেন না। (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮১৭৩) 

 

দিনে তিনবার খাওয়া কেমন? 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের এখানে প্রায়ই দিনে তিনবার খাবার খাওয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। যদিও এটা গুনাহ্ নয় কিন্তু আবার তা সুন্নাতও নয়। পানাহারের আগ্রহেই এ নিয়ম প্রচলন করেছে। একথা হৃদয়ে গেঁথে নিন যে, যে যত বেশি খাবে কিয়ামতের দিন হিসাবও তার দায়িত্বে তত বেশি হবে। প্রতিদিন একবার মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুন্নাতে আ-দিয়্যাহ্ (অভ্যাসগত সুন্নাত)। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ এ সুন্নাতের উপর আমল করতে গিয়ে অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی দিনে শুধুমাত্র একবার খাওয়ার অভ্যাস ছিল। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ এ সুন্নাতের উপর আমল না করে তবে তাকে তিরস্কার করা যাবে না। ঐ সব আশিকানে রাসূল যারা সুন্নাতের প্রতি খুবই আন্তরিকতা পোষণ করেন আর পদে পদে সুন্নাতের কথা বলে থাকেন, তাদের জন্য এতে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যারা দিনে চার বা পাঁচবার খাবার খান তাদের জন্য অবশ্যই এটা আফসোসের বিষয়। এ ধরনের মানুষের কমপক্ষে পার্থিব জীবনে এ ক্ষতি অবশ্যই হয়ে থাকে যে, তারা প্রায়ই পেটের সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ করে থাকে। উম্মুল মুমীনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا বলেন: নবীকুল সুলতান, সরকারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দুনিয়াবী জীবনের পরিসমাপ্তির পর সর্ব প্রথম যে বিদআত সৃষ্টি হয়েছে তা হল পেট ভরে খাবার খাওয়া।যখন মানুষের পেট ভরে যায় তখন তাদের নফ্স দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। (এ বাণীর মধ্যে বিদআত বলতে ‘বিদআতে মুবা-হা’ অর্থাৎ বৈধ বিদআত বুঝানো হয়েছে)। (কূতুল কুলূব, ২য় খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা) 

      

কুমন্ত্রণা: একদিকে রয়েছে একবার খাওয়া সুন্নাত আর অপরদিকে বলা হয়েছে সাহারী এবং ইফতারও সুন্নাত। এক্ষেত্রে তো দু’ওয়াক্ত খেতে হয়। এর সমাধান কি? 

কুমন্ত্রণার প্রতিকার: নিশ্চয় সাহারী ও ইফতার করা সুন্নাত। “ইফতার” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “রোযা খোলা”। সুতরাং যদি কেউ একটি বুটও খেয়ে নেয় তবে তার ইফতার হয়ে গেল। কিন্তু এ দুই সময়ে পেট ভর্তিই করে খাওয়া সুন্নাত নয়। দুই একটি খেজুর কিংবা এক ঢোক পানির মাধ্যমেও সাহারী ও ইফতার করা যায়। যে খাদ্যকে প্রচলিত নিয়মানুসারে “খাবার” বলা হয় তা হল, রুটি (বা ভাত) এর সাথে তরকারী মিলিয়ে খাওয়া। এ ধরনের খাবার যদি কেউ দিনে একবার খেয়ে নেয় আর ঐ দিনেই আরো তিনবার একটি করে খেজুরও খেয়ে নেয় অথবা এককাপ করে চা পান করে নেয় তাহলে তার ব্যাপারে কেউ এটা বলবে না, সে চারবার খাবার খেয়েছে বরং এটাই বলবে যে, সে শুধুমাত্র একবার খাবার খেয়েছে। তাই ইফতার এক বা আধা খেজুর অথবা পানির মাধ্যমে সম্পন্ন করে আর সাহারীতে প্রচলিত নিয়মানুসারে খাবার খেয়ে সাহারী ও ইফতারের সুন্নাত আদায় করে নেয় তাহলে এ উপায়ে উক্ত সুন্নাত পালনের সাথে সাথে দিনে একবার খাওয়ার সুন্নাতও আদায় করে নেয়া যেতে পারে। “ইফতার” এ লোকেরা যাতে পেট ভর্তি করে “ফল-মুল, বুট ভাজি, পিঁয়াজু ও বেগুনী” ইত্যাদি খেতে পারে সেজন্য আজ-কাল রমযানুল মোবারক মাসে প্রায় মসজিদে মাগরিবের নামাযের জামাআত দেরীতে হয়ে থাকে। তাই যদি কেউ ইফতারে কয়েকটি খেজুর, ফল-মুল, পিঁয়াজু বা বেগুনী ইত্যাদি খেয়ে নেয় তাহলে তা তার জন্য এক ওয়াক্তের খাওয়া হয়ে গেল। কারণ খাবার শুধু কোরমা, রুটি, পোলাও ভাত খেলে যে খাবার হয় তা নয়,প্রয়োজন পরিমাণ ফলমূল খেয়ে নিলে এই অবস্থায়ও খাবার খাওয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া। এখন যদি সাহরীতে প্রয়োজন পরিমাণ খাবার খাওয়া হয় তবে দু’ওয়াক্ত খাবার খাওয়া হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। আমার আকা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর সাহারী ও ইফতারের নিয়ম লক্ষ করুন। যেমন- 

 

রোযায় এক ওয়াক্ত খাওয়া 

হযরত মওলানা মুহাম্মদ হুসাইন মীরাটী সাহিব رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন যে, আমি রমযানুল মোবারকের বিশ তারিখ থেকে ইতিকাফ গ্রহণ করি। আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সেদিন মসজিদে উপস্থিত হয়ে বললেন: “ইচ্ছা হয়, আমিও ইতিকাফ করি। কিন্তু (দ্বীনি কাজে ব্যস্ততার কারণে) অবসর পাওয়া যাচ্ছে না।” অবশেষে রমযানুল মোবারকের ২৬ তারিখ তিনি বললেন: “আজ থেকে আমিও মু’তাকিফ অর্থাৎ ইতিকাফকারী হয়ে যাচ্ছি।” মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন মীরাটী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “সন্ধ্যায় (খেজুর ইত্যাদির মাধ্যমে রোযার ইফতার তো করে নিতেন কিন্তু) আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে খাবার খেতে আমি কোন দিন দেখিনি। সাহারীতে শুধু একটি ছোট্ট পেয়ালায় এক পেয়ালা ফিরনী আর একটি পেয়ালায় চাটনী আসত, তাই তিনি খেয়ে নিতেন।” একদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হুযূর! ফিরনী ও চাটনী একত্রে খাওয়ার কারণ কি?” তিনি বললেন: “লবণ দ্বারা খাওয়া শুরু করা এবং লবণ দ্বারাই শেষ করা সুন্নাত, এজন্য চাটনী আসে। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা) سُبۡحٰنَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ সুন্নাতের অনুসারী, সায়্যিদী আ'লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ মিষ্টি ফিরনীর আগে ও পরে এজন্য লবণাক্ত চাটনী ব্যবহার করতেন, যেন খাওয়ার শুরু ও শেষে লবণ ব্যবহারের সুন্নাত আদায় হয়ে যায়। খাবার আগে ও পরে লবণ (অথবা লবণাক্ত কোন খাবার) খেলে اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ ৭০টি রোগ দূরীভূত হয়।


ইয়া ইলাহী! মুঝ কো ভী কর ভূক কি নেয়ামত আতা,

আয তোফায়েলে সায়্যিদি ও মুর্শিদী আহমদ রেযা।


রোযার মধ্যে একবার খাওয়া বাছাইকৃত হাদীস শরীফ সমূহের সমষ্টি “রিয়াযুস সা-লিহীন”-এর রচয়িতা হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহিউদ্দীন আবূ যাকারিয়্যা ইয়াহ্ইয়া শারাফুন্ নাওয়াভী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সর্বদা রোযা রাখতেন। তিনি শুধুমাত্র 

একবার অর্থাৎ ইশার নামাযের পর খাবার খেতেন এবং শুধু পানি পান করে সাহারী করে নিতেন আর রাত্রে শুধুমাত্র কিছুক্ষণ আরাম করতেন। 

(রিয়াযুসসালিহীন’র ভূমিকা, অনুদিত ১২ পৃষ্ঠা) 


খুব বেশি পরিমাণে রোযা রাখুন 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যদি দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়, মাতা-পিতা ইত্যাদিও অসন্তুষ্ট না হন, তবে আমাদের খুব বেশি পরিমাণে নফল রোযা রাখা উচিত। কেননা অধিকাংশ বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی এরূপ করেছেন। এমনটি করলে প্রতিটি মূহুর্ত اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত হবে আর সারাদিন পানাহার করা থেকেও বেঁচে থাকবেন এবং পেটে কুফলে মদীনা লাগানোও খুব সহজ হবে। তবে সাহারী ও ইফতারে কম খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। নিজের মধ্যে নফল রোযার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ফয়যানে রমযান হতে “নফল রোযার ফযীলত” নামক অধ্যায়টি পড়ে নিন অথবা শুনে নিন। কেননা গুনাহ্ থেকে বাঁচার জন্য, এর শাস্তি ও নেক আমলের মন-মানসিকতা সৃষ্টির জন্য এগুলোর ফযীলত সম্পর্কে জানা খুবই উপকারী। এখন রোযার একটি ফযীলত শুনুন আর আন্দোলিত হোন।    

 

জমি পরিমাণ স্বর্ণ 

প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যদি কেউ একদিন নফল রোযা রাখে আর জমিন পরিমাণ স্বর্ণ তাকে দেয়া হয়, তবু সেটার সাওয়াব পূর্ণ হবে না। সেটার সাওয়াবতো কিয়ামতের দিনই পাবে।” (মুসনাদে আবী ইয়া’লা, ৫ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা)


স্বর্ণের দস্তরখানা

হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ দারদা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর বাণী হচ্ছে, “কিয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য আ’রশে’র নীচে স্বর্ণের দস্তরখানা বিছানো হবে। যাতে মণি-মুক্তা ও হীরা-জহরত খচিত থাকবে। তাতে জান্নাতী ফল-মুল, জান্নাতী পানীয় ও বিভিন্ন প্রকারের খাবার বাছাইকৃত থাকবে। রোযাদারগণ (সেগুলো) খাবেন আর স্বাদ উপভোগ করবেন, যখন অন্য সব মানুষ কঠিন হিসাব-নিকাশ দিতে ব্যস্ত থাকবে। (আল বুদুরুসসা-ফিরাহ্, পৃষ্ঠা ২৬০) 


ফযলে রবছে রাহাতু কা হাশর মে ছামান হে, 

রোযাদারো কেলিয়ে সাওনে কা দস্তরখান হে।

 

সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


প্রতিদিন তিনবার খাদ্য গ্রহণকারীর নিন্দা 

হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ্ তুশতারী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর নিকট কেউ জিজ্ঞাসা করল, “দিনে একবার খাওয়া কেমন?” বললেন: “এটা সিদ্দিকীনদের (যাঁরা আওলিয়ায়ে কিরামের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম শ্রেণীর তাঁদের) খাবার।” আরয করল: “দিনে দু’বার খাওয়া কেমন?” তিনি বললেন: “এটা মুমীনগণের খাবার।” আরয করল: “যদি কেউ দিনে তিনবার খায় তাহলে কেমন?” বললেন: “এ ধরণের লোকের পরিবারের সদস্যগণের উচিত, তাকে নিয়ে পশুশালায় রেখে দেয়। (যেখানে জীব-জন্তুর ন্যায় সর্বদা পানাহারে রত থাকতে পারবে!) (রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ্, ১৪২ পৃষ্ঠা)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ্ তুশতারী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সিদ্দিকীন আওলিয়াগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি কোন কোন সময় বিশদিন পর্যন্ত একাধারে না খেয়ে থাকতেন। কিন্তু সাধারণ মুসলমানের জন্য দু’ওয়াক্ত খাবার খাওয়াকে তিনি দোষ সাব্যস্ত করেননি। কারণ শুধু একবার খেয়ে সারা দিন কাটানো, কাজ-কর্ম ও পরিশ্রম এবং কষ্টের কাজ করা প্রত্যেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দিনে তিনবার খাওয়া তাঁর কাছে খুবই অপছন্দনীয় ছিল, যা তাঁর বাণীতে প্রকাশ পেয়েছে। 


মুঝ কো ভূক ও পিয়াছ ছেহনে কি খোদা তওফিক দে, 

গুম তেরি ইয়াদো মে রেহনে কি ছাদা তওফিক দে। 


খেজুর ও পানি খেয়ে দিন কাটানো 

হযরত সায়্যিদুনা উরওয়াহ্ رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ   উম্মুল মুমীনীন সাইয়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলতেন, “ওহে ভাগিনা! আমরা এক চাঁদের পর অন্য চাঁদ দেখতাম। দু’মাসে তিনটি চাঁদ দেখতাম আর নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর (পবিত্র) ঘরে আগুন জ্বলত না।" হযরত উরওয়াহ্ رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: আমি আরয করলাম: "ওহে খালাজান رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا! আপনার দিনগুলো তখন কিভাবে কাটত?” বললেন: “আমাদের দিনগুলো কাটত দুইটি কালো বস্তু অর্থাৎ খেজুর ও পানির মাধ্যমে। এটা ছাড়া কিছু আনসার علهم الر ضوان    প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিবেশী ছিলেন। তাঁরা কিছু দুগ্ধবর্তী উষ্ট্রী (বা ছাগল) আল্লাহর রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জন্য বিশেষভাবে আলাদা করে রেখেছিলেন এবং তাঁরা এগুলোর দুধ ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে পাঠিয়ে দিতেন। আর নবী করিম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঐ দুধ আমাদের পান করতে দিতেন।" (সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৬৪৫৯)

তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জন্য বিশেষভাবে আলাদা করে রেখেছিলেন এবং তাঁরা এগুলোর দুধ হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দরবারে পাঠিয়ে দিতেন৷ আর খাতেমুল মুরসালীন, শফিউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঐ দুধ আমাদের পান করিয়ে দিতেন।" (সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৬৪৫৯)


সারারাতের ইবাদত থেকে উত্তম

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন, হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ সুলাইমান رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “আমার নিকট রাতের খাবার থেকে এক লোকমা কম খাওয়া সারা রাতের ইবাদতের চেয়ে থেকে অধিক প্রিয়। তিনি আরো বলেন: “ক্ষুধা আল্লাহর ভান্ডার সমূহের মধ্য হতে একটি ভান্ডার, আর এটা শুধু নিজের পছন্দনীয় বান্দাদেরকেই তিনি দান করেন।” (ইহইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা) 


দো‘আ হে কুছ না কুছ লুকমে খোদা কে ওয়াসেতে ছোড়ো, 

রেযায়ে হক কি খাতির লজ্জতে দুনিয়া ছে মুহ মুড়ো। 


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হায় এমন যদি হত! আমাদেরও “ইচ্ছাধীন ক্ষুধা” অর্থাৎ স্বেচ্ছায় কম খাওয়ার মাদানী ভান্ডার ও পেটের কুফলে মদীনা নসীব হত! سُبۡحٰنَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ! আল্লাহ্ ওয়ালাগণের নিকট ক্ষুধা রহমতের ভান্ডার স্বরূপ। আর এ ভান্ডার শুধু মাত্র নেক বান্দাদের অর্জিত হয়। আর যার তা অর্জিত হয় তিনি ঐ ভান্ডার লাভের শোকর আদায়ার্থে কি করেন, তা নিম্নের ঘটনা থেকে উপলব্ধি করুন। যেমন- 


ক্ষুধার ভান্ডার ও সেটার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ 

   হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলখের একজন বাদশাহ ছিলেন। তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এরকম আরামের বাদশাহী ছেড়ে ফকীরী জীবন অবলম্বন করে নিয়েছিলেন। একদা তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ খাওয়ার জন্য কিছুই পেলেন না।তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর শোকর আদায়ার্থে চারশত রাকআত নফল নামায আদায় করলেন। দ্বিতীয় দিনও খাবার পেলেন না। তখন অনুরূপভাবে চারশত রাকআত কৃতজ্ঞতার নামায আদায় করলেন। সাত দিন পর্যন্ত এরূপ চলল। শারীরিক দুর্বলতা যখন বৃদ্ধি পেল তখন একদা আল্লাহরদরবারে আরয করলেন: “ইয়া আল্লাহ্! তোমার ইবাদত করার শক্তি লাভের জন্য কিছু খাবার প্রদান করলে তোমার বড়ই দয়া হবে। ঐ সময় এক যুবক উপস্থিত হয়ে বলল: “হুযূর! আমাদের ঘরে আপনার দাওয়াত, আপনার পবিত্র পা রেখে আমাদেরকে ধন্য করুন। তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং তার সাথে তার বাড়িতে গেলেন। যখন সেই যুবক তাঁকে رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ভালভাবে দৃষ্টি দিয়ে দেখল, তাঁকে চিনতে পেরে হঠাৎ বলে উঠল, "হুযূর! আমি আপনার رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ পলাতক গোলাম। বর্তমানে যা কিছু আমার কাছে আছে, আজ থেকে তা সবই আপনার। তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বললেন: আমি তোমাকে আমার গোলামী থেকে মুক্তি দিলাম, আর যা কিছু তোমার নিকট রয়েছে ঐ সবকিছু তোমাকে দান করলাম। তার অনুমতি নিয়ে তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সেখান থেকে বিদায় নিলেন আর আল্লাহর দরবারে আরয করলেন: ইয়া আল্লাহ্! আমি এখন তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাইবনা, কারণ আমিতো তোমার 

নিকট শুধু রুটির টুকরাই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি এত বড় দুনিয়া আমার সামনে রেখে দিলে! (তায্কিরাতুল আওলিয়া, ৯৬ পৃষ্ঠা) 


কসরতে দৌলত কি আ-ফত ছে বাঁচানা ইয়া খোদা, 

দে মুঝে ইশকে মুহাম্মদ কা খাজানা ইয়া খোদা। 


একটি মন্দ লোকমার ধ্বংসলীলা 

যা হাতে আসে তা যাচাই বাছাই না করে চিন্তা-ভাবনা ছাড়া পেটে ভর্তি করে নিলে তা দুঃশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এমনকি হযরত 

সায়্যিদুনা মা’রূফ কারখী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন, শুধু একটি মন্দ লোকমা অনেক সময় অন্তরের অবস্থাকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয় যে, এরপর সারাজীবনের তরে অন্তর আর সঠিক পথে আসেনা এবংঅনেক সময় এমনও হয়, ঐ খারাপ লোকমাটিই সারা বছর পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাযের মত অতি মূল্যবান নেয়ামত থেকে ঐ মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। এছাড়া অনেক সময় একবার কুদৃষ্টি প্রদানকারী অনেক দিন পর্যন্ত কুরআনে পাকের তিলাওয়াতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।” (মিনহাজুল আবেদীন, ১৫৭ পৃষ্ঠা)


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

       

     

চল্লিশ দিনের নামায কবুল হয় না 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যাদের ইবাদতে তিলাওয়াতে মন না বসার, না’ত শরীফ ও দোয়াতে মনোযোগ ও ভাবাবেগের সৃষ্টি না হওয়ার এবং হাজার রকমের চেষ্টা করা সত্ত্বেও তাহাজ্জুদের সময় চোখ না খোলার মত অভিযোগ রয়েছে, তাদের জন্য হযরত সায়্যিদুনা মা’রূফ কারখী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বর্ণনাতে শিক্ষা গ্রহণের অনেক মাদানী ফুল রয়েছে। হারাম রিযিক থেকে প্রত্যেকের বেঁচে থাকা একান্ত উচিত, অন্যথায় তা দ্বারা ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছু লাভ হবে না। রহমতে আলম, নূরে 

মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: যে হারামের একটি মাত্র লোকমা খেল, তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করা হবে না এবং তার দোয়া চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবুল হবেনা। (ফিরদাওসুল্ আখবার, ৪র্থ খন্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬২৬৩)


হারাম লোকমার শাস্তি 

কথিত আছে, মানুষের পেটে যখন হারামের লোকমা পড়ে তখন যমীন ও আসমানের প্রত্যেক ফেরেশতা তার উপর ঐ সময় পর্যন্ত অভিশাপ করে যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ হারাম খাবার তার পেটে বিদ্যমান থাকে। আর যদি সে ঐ হারাম খাবার পেটে থাকাবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (মুকাশাফাতুল কুলূব, ১০ পৃষ্ঠা)


নূর দ্বারা পরিপূর্ণ বক্ষ

তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: "যখন বান্দা নিজের খাবার কম করে, তখন তার সীনা বা বক্ষকে নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়।" (আল জামি'উস সগীর, ৩৫পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৪৬৯)


চারটি উপদেশ

হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: "আমি লেবাননের পাহাড়ে অনেক আওলিয়ায়ে কেরাম رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی এর সংস্পর্শে ছিলাম। তাঁদের প্রত্যেকেই আমাকে ওসিয়ত করেছেন যে, যখন৷ মানুষের মাঝে যাবে তখন এ চারটি উপদেশ দেবে। (১) যে পেট ভরে খাবে, তার ইবাদতের স্বাদ অর্জিত হবে না। (২) যে বেশি ঘুমাবে তার বয়সের মধ্যে বরকত হবে না। (৩) যে শুধু মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাইবে, সে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি থেকে নিরাশ হয়ে যাবে। (৪) যে গীবত বা পরনিন্দা ও অনর্থক কথা বেশি বলবে, সে ইসলাম ধর্মের উপর মৃত্যুবরণ করবে না। (মিনহাযুল আবেদীন ১০৭ পৃষ্ঠা)


ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুর ভয়

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটা বাস্তব যে, বেশি খেলে পেট ভারি হয়ে যায়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল ও শরীর অলস হয়ে যায় এবং ইবাদতে মন বসানোর সৌভাগ্য নসীব হয় না। এটার অভিজ্ঞতা রমযানুল মোবারকের তারাবীতে অনেকেরই অর্জিত হয়ে থাকে। কারণ বর্তমান সময় হল " ফুড কালচার এর যুগ"। দশ রকমের খাদ্য ঠাসাঠাসি করে পেটে ভরে দেয়া হয়, ফলে কাবাব, সমুচা, বুটভাজি, পিয়াজু ও বেগুনী ইত্যাদি একসাথে মিলে পেটে গোলমাল শুরু করে দেয়। অধিক ঠান্ডা পানি, মজাদার শরবত ও টক জাতীয় বস্তু অতি মাত্রায় ব্যবহারের কারণে কাঁশি, গলা পরিষ্কার করার শব্দ ও ঢেকুর তোলার শব্দ আজকাল মসজিদে প্রতিধ্বনিতে হতে থাকে।এছাড়া যদি কোন এক জনের কাঁশি আসে তখন অনেক সময় মানসিক কারণে অন্যেরও কাঁশি আসা শুরু হয়ে যায়, আর এভাবে কাঁশির আওয়াজ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে! হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আদহাম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর চতুর্থ বাণীও সীমাহীন চিন্তামূলক, “যে ব্যক্তি গীবত ও অনর্থক কথা অধিকহারে বলবে, সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবেনা।” আহ! হয়তো জরিপ চালালে দেখা যাবে লাখো মানুষের মধ্যে কোন একজনই এমন হবে যার আজ গীবত ও অনর্থক কথা বলা থেকে বেঁচে থাকার মন-মানসিকতা রয়েছে। ইয়া আল্লাহ্! আমাদের ঈমান সালামত রেখো। امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 


মুসলমা হে আত্তার তেরি আতা ছে, 

হো ঈমান পর খাতিমা ইয়া ইলাহী। 


দ্বীনের গিলাফ 

হযরত সায়্যিদুনা হামিদ লাফ্ফাফ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর নিকট এক ব্যক্তি উপদেশ চাইল। তখন তিনি বললেন: “দ্বীনের হিফাযতের জন্য কুরআনে পাকের মত গিলাফ তৈরী কর।” আরয করল: “দ্বীনের গিলাফ কি?” বললেন: “প্রয়োজনের অধিক কথা বলা থেকে বেঁচে থাকা, মানুষের সাথে অপ্রয়োজনীয় মেলা-মেশা না রাখা এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খাওয়া।” আরো ইরশাদ ফরমালেন, “যদি তোমরা জানতে যে, আল্লাহর কাছে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ও সাহাবায়ে কিরাম  علهم الر صوان এর সাথে ঈমানদারদের জান্নাতে কিরূপ মেহমান দারী হবে, তবে তোমরা দুনিয়ার অল্প দিনের জীবনে কখনো পেট ভরে খাবার খেতে না।” (তায্কিরাতুল ওয়ায়েযীন, ২৩৪ পৃষ্ঠা) 


ইবাদতের মিষ্টতা

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “পেট ভরে খাওয়াতে ইবাদতের মিষ্টতা বা স্বাদ 

দূরীভূত হয়ে যায়।”আমীরুল মুমীনীন সাইয়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “যখন থেকে মুসলমান হয়েছি, কখনো পেট ভরে খাইনি, যাতে ইবাদতের মিষ্টতা লাভ করতে পারি এবং যখন থেকে মুসলমান হয়েছি, তখন থেকে দীদারে ইলাহীর শরবত পান করার আশায় কখনো পূর্ণ তৃপ্তি সহকারে পানি ইত্যাদি পান করিনি।” (মিনহাজুল আবেদীন, ১৯৩ পৃষ্ঠা) 


ভূক কি আওর পিয়াস কি মওলা মুঝে সাওগাত দে, 

ইয়া ইলাহী! হাশর মে দীদার কি খায়রাত দে। 


হযরত সায়্যিদুনা সুফইয়ান সাওরী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বাণী হচ্ছে, “ইবাদত একটি কৌশল বিদ্যা যা শিক্ষা করার স্থান হচ্ছে নির্জনতা আর 

সেটার উপকরণ/ হাতিয়ার হচ্ছে ক্ষুধা। (প্রাগুক্ত)


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


কিয়ামতে কে ক্ষুধার্ত হবে?

      হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ বুজাইর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বর্ণিত, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবীবে লবীব, রাসুলুল্লাহ  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  ইরশাদ করেছেন: “অনেক লোক দুনিয়াতে উত্তম খাবার গ্রহণকারী ও পরিতৃপ্ত জীবন যাপনকারী রয়েছে, কিন্তু কিয়ামতের দিন তারাই ক্ষুধার্ত ও উলঙ্গ হবে। (শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৪৬১) 


ভূক কি নে‘মত ভি দে আওর সবর কি তওফিক দে, 

ইয়া খোদা হার হাল মে তু শুকর কি তওফিক দে।


হযরত সায়্যিদুনা আ’বদুল্লাহ্ বিন উমর  رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এক ব্যক্তির ঢেকুরের শব্দ শুনে ইরশাদ করলেন: “নিজের ঢেকুর তোলা কমাও, এজন্য যে কিয়ামতের দিন সবচেয়ে অধিক ক্ষুধার্ত সেই হবে, যে দুনিয়াতে অধিক পরিমাণে পেটকে ভর্তি করে।” (তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪৮৬)হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ তালিবুল মক্কী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যিনি ঢেকুর তুলেছিলেন ঐ সাহাবী (অর্থাৎ-আবূ জুহাইফা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ) বলেন: আল্লাহর কসম! যেদিন হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে একথা ইরশাদ করেছিলেন, ঐ দিন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত আমি কখনো পেট ভরে খাবার খাইনি। আর আল্লাহর নিকট আমি আশা পোষণ করছি যে, আমাকে আগামীতেও পেট ভরে খাবার খাওয়া থেকে তিনি যেন রক্ষা করেন।” (কূতুল কুলূব, ২য় খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা) 


মুঝে ভূক কি দে সাআদাত ইলাহী, 

পায়ে গউস দে ইস্তিকামত ইলাহী। 


সবুজ চামড়াধারী বুযুর্গ 

হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালিবুল মক্কী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আপন যুগের অনেক বড় আলিম, মুহাদ্দিস ও মুফাক্কির এবং খুব বড় ধরনের ওলিআল্লাহ ও তাসাউফ-এর মহান ইমাম ছিলেন। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তাসাওউফ-এর উপর লিখিত তাঁর কিতাব কূতুল কুলূব থেকে খুবই উপকৃত হয়েছেন। তাঁর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তাকওয়ার অবস্থা এরূপ ছিল, দীর্ঘ দিন পর্যন্ত খাবার খাওয়াই ত্যাগ করেছিলেন। শুধুমাত্র মুবাহ্ বস্তু ঘাস (অর্থাৎ কুদরতী ভাবে মাটি থেকে ওঠা ঘাস) খেয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন তিনি সবুজ ঘাস খেতেন, তাই তাঁর শরীরের চামড়া সবুজ হয়ে গিয়েছিল! জানাযাতে চিনি ও বাদাম বিতরণ করা হয়েছে ইন্তিকালের পূর্ব মূর্হুতে কেউ হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালিবুল মক্কী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর মহান খিদমতে আরয করলো, হুযূর আমাকে কিছু অসিয়ত করুন। তিনি বললেন: “যদি আমার মৃত্যু ঈমানের সাথে হয়ে যায়, তবে আমার জানাযাতে বাদাম ও চিনি বিতরণ করবে।” সে জিজ্ঞাসা করল, “আমি তা কিভাবে বুঝব?” বললেন: “আমার নিকট বসে থাকো আর তোমার হাত আমার হাতের মুঠোর মধ্যে দিয়ে দাও।যদি আমি তোমার হাত শেষ মূহুর্তে শক্তি সহকারে চেপে ধরি, তবে তুমি বুঝে নেবে যে, আমার মৃত্যু ঈমানের সাথে হয়েছে।” সুতরাং কথামত সে ওনার হাতের মধ্যে নিজের হাত রেখে দিল। যখন বিদায়ের সময় নিকটবর্তী হল, তখন তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তার হাতে স্বজোড়ে চাপ দিলেন আর এরপরই তাঁর পবিত্র রূহ, দেহ পিঞ্জর থেকে বের হয়ে গেল। যখন পবিত্র জানাযা উঠানো হল তখন তাতে চিনি ও বাদাম বিতরণ করা হল। তাঁর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ওরসের দিন হল, ৬ই জুমাদিউস ছানি, ৩৮৬ হিজরী। বাগদাদে শরীফে “মালিকিয়্যাহ্ কবরস্থানে” তাঁর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ মাযার শরীফ সাধারণ ও বিশেষ শ্রেণীর সকল মানুষের যিয়ারাতের স্থানে পরিণত হয়ে আছে। 


আশিক কা জানাযা হে জরা ধুম ছে নিকলে, 

মাহবুব কি গলিয়ু ছে জরা ঘুম কে নিকলে। 


সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে। 


দুনিয়ার চাবি 

        হযরত সায়্যিদুনা আবূ সুলাইমান দারানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “দুনিয়ার চাবি হচ্ছে পেট ভরে খাওয়া, আর আখিরাতের চাবি হচ্ছে ক্ষুধা।” (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) 


কিয়ামতে কার পেট ভর্তি হবে? 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সর্বদা মজাদার বস্তু ভক্ষণকারী ও একটু ক্ষুধা না লাগতেই তাড়াহুড়া করে খাবার ভক্ষণকারীদের জন্য চিন্তার বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর শপথ! ক্বিয়ামতের দিনের ক্ষুধা এত অধিক হবে যে,যা সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার হবে। কিয়ামতে পরিতৃপ্ত থাকার জন্য উত্তম আমল হল দুনিয়াতে ক্ষুধার্ত থাকা। যেমন- প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বাস্তবরূপী বাণী হচ্ছে, “যে দুনিয়াতে ক্ষুধাকে গ্রহণ করে, সে কিয়ামতের দিন পরিতৃপ্ত হবে।” (ইত্হাফুসসাদাতুল মুত্তাক্বীন, ৯ম খন্ড, ১৭ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “(কিয়ামতের দিন) হিসাবের কঠোরতা ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির উপর হবে না, যে দুনিয়াতে উপবাস ও ক্ষুধায় ধৈর্যধারণ করেছে।” (আলবুদূরুসসাফিরাহ্, ২১২ পৃষ্ঠা) 


ইয়া ইলাহী! যব যবানে বাহের আয়ে পিয়াছ ছে, 

সাকীয়ে কাউসার শাহে জু দো আতা কা ছাথ হো। 


কিয়ামতের কঠিন রোদ 

 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভেবেতো দেখুন কিয়ামতের অবস্থা কিরূপ কঠিন হবে? দুনিয়াতে শুধু কয়েক মিনিট নফসের স্বাদ উপভোগের জন্য অতিমাত্রায় পেট ভর্তি করে পানাহারকারীদের জন্য কিরূপ কঠোর পরীক্ষা অপেক্ষা করছে? আহ! আহ! আহ! একদিকে ক্বিয়ামতের দগ্ধকারী রোদ, অপরদিকে যমীনও তামার, তদুপরি খালি পা, এছাড়া ক্ষুধা-পিপাসার তীব্রতা! (আল্লাহ্ রক্ষা করুন) নফসের অনুসরণে ধ্বংসই ধ্বংস রয়েছে। যেমন-


 নফস জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দিল 

  হযরত সায়্যিদুনা আবুল হাসান রাযী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তাঁর পিতার মৃত্যুর দু’বৎসর পর স্বপ্নে তাকে আলকাতরা মিশ্রিত পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: “এটা কি আপনাকে জাহান্নামীদের পোষাকে কেন দেখছি?” তাঁর পিতা জবাব দিল, “প্রিয় বৎস আমার নফস আমাকে জাহান্নামে নিয়ে গেছে, তুমি নফসের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকো।” (মুকাশাফাতুল কুলূব, ২০ পৃষ্ঠা)


ছরওয়ারে দি লিজে আপনে না-তুয়ানো কি খবর, 

নফছো শয়তা সায়্যিদা! কব তক দাবাতে যায়ে গে। 

(হাদায়িকে বখশিশ শরীফ) 


ইয়া আল্লাহ্! আমাদেরকে নফসের অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর। আর শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য “পেটের কুফলে মদীনা” লাগিয়ে ক্ষুধা ও  পিপাসা সহ্য করার জযবা ও স্পৃহা দান কর এবং আমাদেরকে কিয়ামতের প্রচন্ড ক্ষুধা, পিপাসা ও সব ধরনের ভয়াবহতা আর জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা দান কর। امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم


ইয়া ইলাহী! খুব ঢাট কর খানা পিনা ছোঁড় দো, 

কর করম কে নফসে আম্মারা ছে রিশতা তোড় দো। 


    ক্ষুধার দশটি উপকার 

      (১) অন্তরের পরিচ্ছন্নতা। (২) অন্তরের ভাবাবেগের সৃষ্টি। (৩) মিসকীনদের ক্ষুধার অনুভূতি। (৪) আখিরাতের ক্ষুধা-পিপাসার কথা স্মরণ। (৫) গুনাহের প্রতি কম আগ্রহ। (৬) কম ঘুম। (৭) ইবাদতে সহজতা। (৮) সামান্য রুজিতে তুষ্টি। (৯) সুস্থতা ও (১০) অবশিষ্ট সম্পদ দান খয়রাত করার আগ্রহ। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯১-৯৬ পৃষ্ঠা হতে সংক্ষিপ্ত) হুজ্জাতুল 

ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: বুযূর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی বলেছেন: الجوع راس ما لنا অর্থাৎ- “ক্ষুধা আমাদের উত্তম মূলধন। এ কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের যে আরাম, নিরাপত্তা, ইবাদতে মিষ্টতা ও উপকারী ই’লম (জ্ঞান) অর্জন হয়, এগুলো আল্লাহ্ তাআলার জন্য ক্ষুধার্ত থাকা ও এর জন্য ধৈর্যধারণ করার কারণে অর্জিত 

হয়।” (মিনহাজুল আবেদীন, ১০৮ পৃষ্ঠা) 


ভূক ছরমায়া বনে মেরা খোদায়ে যুলযালাল, 

আয তোফাইলে মুস্তফা কর ভূক ছে মুঝ কো নেহাল।


কিয়ামতের দিন মেহমানদারী! 

   প্রসিদ্ধ তাবিঈ হযরত সায়্যিদুনা কা’বুল আহবার رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “কিয়ামতের দিন একজন আহবানকারী আহবান করবেন, ওহে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ক্ষুধার্ত-পিপাসার্ত থাকা লোকেরা, উঠো। এ কথা শুনে ক্ষুধা সহ্যকারীরা এসে বিছানো দস্তর খানায় বসে যাবেন, অন্যদের তখন হিসাব-নিকাশ চলতে থাকবে। (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা) 


গদা ভী মুনতাযির হে খুলদ মে নে-কো কি দাওয়াত কা, 

খোদা দিন খায়র ছে লায়ে ছখী কে ঘর যিয়াফত কা। 

(হাদায়িকে বখশিশ শরীফ) 


জান্নাত ও দোযখের দরজা 

 হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “পেট ও লজ্জাস্থান হল জাহান্নামের দরজাগুলোর মধ্যে একটি দরজা, আর এর মূল হচ্ছে পেট ভরে খাওয়া। বিনয় ও নম্রতা জান্নাতের দরজাগুলোর মধ্যে একটি দরজা, আর এর মূল বা ভিত্তি হল ক্ষুধা। নিজের জন্য জাহান্নামের দরজা বন্ধকারী নিঃসন্দেহে নিজের জন্য জান্নাতের দরজা কে উন্মুক্ত করে নেয়। কেননা এ দু’টো বিষয়ের মধ্যে একের সাথে অন্যের পূর্ব ও পশ্চিমের ন্যায় ব্যবধান রয়েছে। সুতরাং এগুলোর মধ্যে একটি দরজার নিকটবর্তী হওয়ার অর্থ হচ্ছে নিঃসন্দেহে অন্যটি থেকে দূরে সরে যাওয়া। অর্থাৎ যে ক্ষুধার মাধ্যমে বিনয়কে গ্রহণ করে জান্নাতের নিকটবর্তী হল সে জাহান্নাম হতে দূরবর্তী হল। আর যে অতিভোজন করার মাধ্যমে পেট ও লজ্জাস্থানের বিপদে লিপ্ত হল, সে জাহান্নামের নিকটবর্তী হয়ে জান্নাত থেকে দূরে সরে পড়ল। (ইহইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা) 


দূর আ-ফত হো ঢাটকে খানে কি, 

কাশ! ছুরত হো, খুলদ পানে কি


শরীরের সুস্থতা 

আমীরুল মুমিনীন, হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “তোমরা পেট ভরে পানাহার করা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা তা শরীরকে নষ্ট করে দেয়, রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করে ও নামাযে অলসতা আনে। আর তোমাদের পানাহারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা আবশ্যক। কারণ এতে শরীরের সংশোধন হয় এবং অনর্থক খরচ থেকে মুক্তি লাভ হয়।” (কানযুল উম্মাল, ১৫ খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪১৭০৬) 


পেট ভরে খাওয়ার ছয়টি বিপদ 

 হযরত সায়্যিদুনা আবূ সুলাইমান দারানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہ পেট ভরে খাওয়াতে ছয়টি বিপদ রয়েছে। (১) আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করা 

থেকে বঞ্চিত হওয়া। (২) ইলম ও হিকমত রক্ষার্থে জটিলতা। (৩) সৃষ্টি কুলের উপর দয়া করা থেকে দূরে সরে পড়া, কেননা পেট ভর্তি করে ভক্ষণকারী মনে করে যে, সকলের পেট পূর্ণ রয়েছে। এভাবে মিসকীন ও ক্ষুধার্ত লোকদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়। (৪) ইবাদতকে বোঝা অনুভূত হতে শুরু হয়। (৫) কামনা-বাসনা বেড়ে যায়। (৬) নামাযী যখন মসজিদের দিকে যেতে থাকে আর অধিক আহারকারী শৌচাগারের দিকে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। (ইহইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা) 


শুকনো রুটি ও লবণ 

 হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ওয়াসি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ শুকনো রুটি লবণ দিয়ে খেতেন। আর বলতেন, “যে দুনিয়াতে এতটুকুর মধ্যে সন্তুষ্ট হয়ে যায়, সে কারো মুখাপেক্ষী থাকেনা। (মুকাশাফাতুল ক্বুলূব, ১২২ পৃষ্ঠা) 


খাবার বিবেককে শেষ করে দেয় 

ইবনে নাজীহ্ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: ইমামে আযম আবূ হানিফা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ আমাকে বলেছেন; যখন দুনিয়ার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ

 সামনে আসে তখন তা পূর্ণ করার আগে খাবার খাবেনা, কারণ فان الا كل يغير العقل অর্থাৎ- খাবার বিবেককে নিঃশেষ করে দেয়। (মানাক্বিবে আবী হানীফা, লিল্ কুরদী, ৩৫১ পৃষ্ঠা)


অন্তরের কঠোরতার কারণ 

 হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান সাওরী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: অন্তরের কঠোরতা দু’টি কারণে হয়। (১) পেট ভরে খাবার খাওয়া। (২) অধিক কথা বলা।


ইয়া উও গোঈ কি, ঢাটকে খানে কি, 

দূর আদত হো ইয়া খোদা ইয়া রব! 


সাতটি গ্রাস 

আমীরুল মুমীনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর  ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ সাতটি কিংবা নয়টি গ্রাসের চেয়ে (লোকমার চেয়ে) বেশি খাবার খেতেন না। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা) 


পেট পূর্ণ করার দূরাবস্থা 

 পেট পূর্ণ করে খাওয়ার বিপদ সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মাদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: (পেট পূর্ণ করে আহারকারীর চোখে) অধিকাংশ সময় নিদ্রা পূর্ণমাত্রায় থাকে। অতঃপর যদি এ অবস্থায় তাহাজ্জুদ আদায় করেও নেয় তবুও ইবাদাতের স্বাদ লাভ হয়না। এছাড়া অবিবাহিত ব্যক্তি যখন পেট ভরে খেয়ে ঘুমায়, তখন তার স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। এখন যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হয় তবে এটাও কষ্টদায়ক ব্যাপার। আর যদি “বিতর” নামায তাহাজ্জুদ নামাযের পর পড়ার জন্য না পড়ে থাকে তবে তাহাজ্জুদ নামাযতো গেল, “বিতরও” পড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৯৪ পৃষ্ঠা)


স্বপ্নদোষের একটি কারণ 

 হযরত সায়্যিদুনা আবূ সুলাইমান দারানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: "স্বপ্নদোষ একটা মুসিবত।" আর তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এটা এ কারণে বলেছেন: অসময়ে গোসল করার সমস্যাবলীর কারণে অনেক ইবাদত হাত ছাড়া হয়ে যায়। এছাড়া নিদ্রা মুসিবতের কারণ।পেট ভরে খাওয়ার কারণে এসব মুসিবতে পড়তে হয় আর ক্ষুধার্ত থাকা এসব মুসিবতকে অতিক্রম করার প্রধান উপায়। (প্রাগুক্ত) 


শয়তান রক্তের মধ্যে ঘুরতে থাকে 

এক হাদীসে মুরসালে রয়েছে, নিশ্চয় শয়তান মানুষের শরীরের মধ্যে রক্তের ন্যায় ঘুরতে থাকে। তাই ক্ষুধা ও পিপাসার সময় ধৈর্যধারণের মাধ্যমে তার রাস্তা সংকীর্ণ করে দাও।(আতহাফুসসাদাতুল্ মুত্তাকীন, ৯ম খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণনার মধ্যে হাদীসে মুরসালের আলোচনা রয়েছে। হাদীসে মুরসাল ঐ হাদীসকে বলা হয়, “যেটাতে তাবিঈ সরাসরি প্রিয় নবী  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم থেকে বর্ণনা করেন আর সাহাবী رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ কে বাদ দিয়ে দেন। " (নুযহাতুন নাযর ফীতাওদ্বীহি নুখবাতুল ফিকর, ৬৩ পৃষ্ঠা) 


দু’টি নহর 

সালফে সালিহীনগণ رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی বলেন: “পেট ভরে খাওয়া এটা নফসের একটি নহর, যেখানে শয়তান পৌঁছে আর ক্ষুধা হচ্ছে রূহের একটি নহর, যা ফিরিশতাগণের বিচরণ স্থান।” (সাবয়ে সানাবিল, অনুদিত, ২৪১ পৃষ্ঠা) 


হামে বারে খোদা ইয়া পেট কা কুফলে মদীনা দে, 

ওসীলা মুস্তফা কা পেট কা কুফলে মদীনা দে।

 

চল্লিশ দিনের উপবাস 

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی ক্ষুধা ও পিপাসার মাধ্যমে শয়তানের রাস্তা সংকীর্ণ করে দিতেন। হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ্ তুসতারী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ চল্লিশ দিন উপবাস থাকতেন, তারপর কিছু খেতেন। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) তাঁর সারা বছর খাওয়ার জন্য শুধুমাত্র একটি দিরহামই যথেষ্ট হত! (আর্ রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ্, ৪০১ পৃষ্ঠা)


ছয়টি মাদানী ফুল

হযরত সাইয়্যিদুনা সাহল বিন আব্দুল্লাহ্ তুসতারী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ছয়টি বাণী লক্ষ্য করুন। (১) কিয়ামতের দিন কোন আমল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া ত্যাগ করা থেকে উত্তম হবে না, কেননা এটা নবীর সুন্নাত (২) জ্ঞানী ব্যক্তিরা দ্বীন ও দুনিয়াতে ক্ষুধাকে খুব বেশি উপকারী সাব্যস্ত করেন। (৩) আখিরাতে ভাল পুরস্কার প্রত্যাশীদের জন্য খাবার থেকে অধিক ক্ষতিকারক অন্য কোন বস্তুকে আমি মনে করিনা। (৪) ইলম ও হিকমতকে ক্ষুধার মধ্যে, আর গুনাহ্ ও মুর্খতাকে পেট পূর্ণ করে খাওয়ার মধ্যে রাখা হয়েছে। (৫) যে নিজ নফসকে ক্ষুধার্ত রাখে, তার অন্তর থেকে কুমন্ত্রণা সমূহ নিঃশেষ হয়ে যায়। (৬) বান্দা যখন ক্ষুধার্ত, অসুস্থ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, সে সময় আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর প্রতি ধেয়ে আসে, তবে যাকে আল্লাহ্ চান। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯১ পৃষ্ঠা) 


 ইয়া ইলাহী ভুক কি দৌলত ছে মালামাল কর দো জাহা মে আপনি রহমত ছে মুজে খূশহাল কর। 


সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীরর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


পেটুক ব্যক্তি অপদস্ত 

কূতুল কুলূব এ রয়েছে, “ক্ষুধা হল বাদশাহ স্বরূপ, আর পেট ভরে খাওয়া হল গোলাম স্বরূপ। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি সম্মানিত, আর (অধিক) 

পেট পূর্ণ ব্যক্তি অপদস্ত।” এছাড়া এটাও বলা হয়েছে, “ক্ষুধা সম্পূর্ণই সম্মান, অপরদিকে পেট ভর্তি করা একেবারে অপমান।”  আর অনেক পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی থেকে বর্ণিত রয়েছে, “ক্ষুধা আখিরাতের চাবি এবং যুহদ (তথা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি) এর দরজা। অন্য দিকে পেট ভর্তি করা দুনিয়ার চাবি আর দুনিয়ার প্রতি আসক্তির দরজা। (কূতুল্ কুলূব, ২য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা) 


ক্ষুধার্ত থাকার তাগিদ কেন? 

হযরত সায়্যিদুনা বায়েযীদ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হল, “আপনি ক্ষুধার্ত থাকার প্রতি এত তাগিদ দেন কেন?” তিনি বললেন: “যদি ফিরআউন ক্ষুধার্ত থাকত, তবে কখনো নিজেকে খোদা দাবী করতনা। আর যদি ক্বারূন ক্ষুধার্ত থাকত, তবে কখনো বিদ্রোহ করত না।” (উদ্দেশ্য এই যে, এদের কাছে সম্পদের আধিক্য হওয়াতে এরা অবাধ্য হয়েছে । (কাশফুল মাহ্জুব, অনুদিত, ৬৪৭ পৃষ্ঠা) 


আল্লাহ্ তাআলার গোপন তদবীরের ব্যাপারে য়হীন হওয়া কবীরা গুনাহ 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যিই সুস্থতার নেয়ামত ও সম্পদের আধিক্য অধিকাংশ সময় মানুষকে গুনাহের প্রতি আসক্ত করে দেয়। অতএব যে খুবই স্বাস্থ্যবান ও ধনবান অথবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ক্ষমতাবান তার জন্য আল্লাহ্ তাআলার গোপন রহস্যের ব্যাপারে অনেক বেশি ভয় করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “যাকে আল্লাহ্ দুনিয়াতে রুজিতে প্রাচুর্য্য, বাধ্য সন্তানের ন্যায় নেয়ামত, মাল-সম্পদ, উত্তম স্বাস্থ্য, ইজ্জত-সম্মানের পদ, মন্ত্রী বা রাষ্ট্র প্রধানের পদ অথবা শাসন ক্ষমতা ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পদশালী করেন, কিন্তু তার মাঝে যদি এই ভয় না হয়, আরাম-আয়েশ আল্লাহর গোপন রহস্য। তবে বুঝতে হবে এ ধরণের ব্যক্তি আল্লাহর গোপন রহস্য থেকে উদাসীন।” (তামবীহুল মুগতাররীন, ৫৪ পৃষ্ঠা)হযরত সাইয়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন আহমদ যাহবী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কর্তৃক রচিত “কিতাবুল কাবাইর”-এর মধ্যে আল্লাহর গোপন রহস্যের ব্যাপারে ভয় না করাকে কবীরা গুনাহ্ সমূহের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। সুতরাং ধনবান ও অন্যান্যদের সাথে গরীব, অসুস্থ ও বিপদগ্রস্থদেরও আল্লাহর গোপন তদবীর সম্পর্কে ভয় করা জরুরী। কারণ, হতে পারে এসব মুসিবতের মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়েছে। তাই সকলের মনে এ ভয় থাকা উচিত, না-জায়িয অভিযোগ, শরীয়ত বিরোধী ধৈর্যহীনতা ও অসচ্ছলতা এবং মুসিবতকে হারাম পদ্ধতির মাধ্যমে নিঃশেষ করার চেষ্টা করা, এসব অখিরাতে ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুখ-শান্তিতে জীবন-যাপনকারীদেরও আল্লাহ্ তাআলার গোপন রহস্যের ব্যাপারে ভয় করা ওয়াজিব। কারণ আবার যেন এমন না হয়, দুনিয়াবী নেয়ামত লাভ হওয়ার কারণে অহংকার, অবাধ্যতা ও নানা ধরণের গুনাহের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এ কারণে সুন্দর স্লিম ফিগার ও ধন-সম্পদ জাহান্নামের ইন্ধন হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফ ও আল্লাহ্ তাআলার বাণী শুনুন, আর আল্লাহর গোপন রহস্যের ব্যাপারে প্রকম্পিত হোন। 


আল্লাহর পক্ষ থেকে অবকাশ 

হযরত সায়্যিদুনা উকবাহ্ বিন আমির رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যখন তোমরা কোন বান্দাকে দেখো যে, আল্লাহ্ তাকে (নেয়ামতসমূহ) দান করেছেন আর সে গুনাহের উপর প্রতিষ্ঠিত, তবে (বুঝবে) এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবকাশ বা সুযোগ প্রদান। অতঃপর এ আয়াতে কারীমা তিলাওয়াত ফরমালেন:

فَلَمَّانَسُوۡا مَا ذُكِّرُوۡا بِهٖ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ اَبۡوَابَ كُلِّ شَىۡءٍ ؕ حَتّٰٓى اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰهُمۡ بَغۡتَةً فَاِذَا هُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ‏ ﴿۴۴﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর যখন তারা বিস্মৃত হল সেসব উপদেশ যেগুলো তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তখন আমি তাদের জন্য প্রতিটি বস্তুর দ্বারগুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছি, এমনকি যখন তারা আনন্দিত হল  সেটার উপর, যা তারা পেয়েছিলো তখন আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম, এখন তারা নিরাশ হয়ে রয়ে গেলো। (পারা-৭ম, সূরা- আল আন্‘আম, আয়াত নং- ৪৪) (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৩১৩) 


গুনাহ্কে ভাল মনে করা কুফর 

প্রখ্যাত মুফাসসির মুফ্তি আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আয়াতে কারীমার ভিত্তিতে বলেন: “জানা গেল, সকল আযাবের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আযাব হল অন্তরের কঠোরতা। কারণ যেটার কারণে প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর শিক্ষার প্রভাব হৃদয়ে বিস্তার করতে পারে না। এ আয়াতে করীমা হতে এটাও জানা গেল, গুনাহ্ ও অবাধ্যতা সত্ত্বেও দুনিয়াবী প্রকাশ্য আরাম-আয়েশ অর্জিত হওয়ার অন্তরালে রয়েছে আল্লাহর গযব ও আযাব। কেননা এর কারণে মানুষ আরো বেশি উদাসীন হয়ে গুনাহের প্রতি সাহসী হয়ে উঠে। বরং অনেক সময় এমনও মনে করে যে, গুনাহ্ ভাল বস্তু, অন্যথায় আমার এসব নেয়ামত অর্জিত হতো না, এরকম মনে করাটা কুফর। (অর্থাৎ- গুনাহকে গুনাহ্ হিসাবে মেনে নেয়া ফরয, এটাকে জেনে বুঝে ভাল বলা অথবা উত্তম মনে করা কুফরি) এটাও জানা গেল, নেক্কারদের উপর প্রকাশ্য মুসিবত আসাটা আল্লাহ্ তাআলার রহমতের মাধ্যম রয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে সালিহ (অর্থাৎ- নেককার) এর পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।(নূরুল ইরফান, ২১০ পৃষ্ঠ)


নবী করীম ﷺ এর দোয়া

ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসূলদের সর্দার  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم প্রায়ই দোয়া করতেন: يا ﻣﻘﻠﺒﺎﻟﻘﻠﻮﺏ ﺛﺒﺖ ﻗﻠﺒﻰ ﻋﻠﻰ ﺩﻳﻨﻚ অর্থাৎ- ওহে অন্তরসমূহকে প্রত্যাবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৪র্থ খন্ড, ৫১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৩৬৯৭)


ইয়া খোদা তু মেরা ঈমান সালামত রাখ না, 

আয পায়ে গউছো রযা ছায়ায়ে রহমত রাখ না। 


চল্লিশ হাজারের মধ্যে চারটি 

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন মোবারক رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: এক হাকীম চল্লিশ হাজার কথা থেকে চারটি কথা বাছাই করে নিয়েছেন। (১) প্রত্যেক মহিলার উপর প্রতিটি ব্যাপারে ভরসা বা বিশ্বাস কর না। (২) কখনো নিজের সম্পদের উপর ভরসা করনা। (৩) নিজের পাকস্থলীর উপর সামর্থ্যের অধিক বোঝা চাপাবেনা। (অর্থাৎ-অতিভোজন করবে না) (৪) এমন ই’লম (অর্থাৎ - জ্ঞান ও খবর ইত্যাদি) এর পিছু নিওনা, যা থেকে তুমি উপকার লাভ করতে সক্ষম হবেনা। (আলমুনাব্বিহাত, কৃতঃ হযরত আসকালানী, ৪৭ পৃষ্ঠা) 


সাতটি আঁত 

নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মুমীন একটি আঁত (নাড়ি) দিয়ে খায় আর কাফির বা মুনাফিক সাতটি আঁত (নাড়ি) দিয়ে খায়।” (সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং - ৫৩৯৪)


সাতটি আঁতের উদ্দেশ্য 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ হাদীসে পাক থেকে এটা উদ্দেশ্য নয় যে, মুসলমানের একটি আঁত আর কাফিরের সাতটি আঁত রয়েছে। প্রত্যেকেরই সাতটি আঁত থাকে। এখানে এ কথার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া এটা কাফিরের কাজ। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এ হাদীসে মোবারাকার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: অর্থাৎ- মুমীনের মোকাবিলায় মুনাফিক সাতগুণ বেশি খাবার খায় অথবা মুনাফিকের দুনিয়াবী ইচ্ছা, মুমীনের ইচ্ছা বা ইচ্ছা থেকে সাতগুণ বেশি হয়ে থাকে। আঁতের আলোচনা এখানে কামনার রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ কামনা খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষকে এভাবে উদ্বুদ্ধ করে যেভাবে আঁত করে থাকে। এ থেকে এটা বুঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, মুনাফিকের আঁত মুমীনের আঁত থেকে অধিক রয়েছে।(ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা) 


মুমিন ও মুনাফিকের খাবারের মধ্যে পার্থক্য 

     হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “মুমিন একটি ছোট্ট ছাগলের ন্যায়, যার নিকট এক মুষ্টি শুকনো খেজুর, এক মুষ্টি জব ও এক ঢোক পানিই যথেষ্ট। আর মুনাফিক একটি হিংস্র জন্তুর ন্যায়, চাবানো ব্যতীত গো-গ্রাসে গিলে ফেলে। তার পেট নিজের প্রতিবেশীর জন্য সংকুচিত হয় না এবং নিজের ভাইকে স্বীয় কোন বস্তু “ঈসার” করেনা। (ঈসার হচ্ছে অন্যকে নিজের উপর প্রধান্য দিয়ে কিছু দান করা) (কূতুল্ কুলূব, ২য় খন্ড, ৩২৪ পৃষ্ঠা) 


আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খাবার

    ইমামে আহলে সুন্নাত,  মওলানা শাহ্ আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ খুবই কম খাবার খেতেন। যেমন- হযরত সায়্যিদ আইয়ূব আলী শাহ্ সাহিব رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:"আ'লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খাবার খুব বেশি হলে এক পেয়ালা ছাগলের মাংসের ঝোল, তাও আবার মরিচ ছাড়া এবং এক বা দেড় টুকরা পরিমাণ সুজির (তৈরী) বিস্কুট। আবার তাও প্রতিদিন নয়। অনেক সময় এই স্বল্প খাবারও দৈনন্দিন রুটিন থেকে বাদ পড়ে যেত। (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ২৭ পৃষ্ঠা) 


কর আতা আহমদ রযায়ে আহমদে মুরসাল হামে, 

মেরে মাওলা হযরতে আহমদ রযাকে ওয়াসেতে। 


সাতটি মাদানী ফুল 

      হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস  رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا বলেন: জ্ঞানী ব্যক্তির উচিত, সাতটি বিষয়কে যেন সাতটি বিষয়ের উপর প্রধান্য দেয়। (১) অসচ্ছলতাকে সম্পদ প্রাপ্তির উপর (২) অপমানকে সম্মানের উপর (৩) বিনয়কে নিজের পছন্দের উপর (৪) ক্ষুধাকে পেট ভরে খাওয়ার উপর (৫) শোককে আনন্দের উপর (৬) গরীব নেককারদেরকে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন দুনিয়াদার লোকদের উপর এবং (৭) মৃত্যুকে জীবনের উপর। (আল্ মুনাব্বিহাত, কৃতঃ হযরতে আসকালানী, ৮৫ পৃষ্ঠা) 


বার দিনে একবার অযূ 

     হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ওয়াহ্হাব শা’রানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: " আমি অনেক আল্লাহওয়ালা رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی কে ক্ষুধার মধ্যে কঠোরভাবে অটল থাকতে দেখেছি। এমনকি তাঁদের মধ্যে কিছু তো সপ্তাহে শুধু একবার শৌচকর্মের জন্য যেতেন। কারণ তাঁরা বারংবার শৌচাগারে গিয়ে উলঙ্গ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলাকে লজ্জাবোধ করতেন। সায়্যিদী শায়্খ তাজুদ্দীন যাকির رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তো এ ব্যাপারে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে, তাঁর শুধুমাত্র বার দিনে একবার অযু করার প্রয়োজন হতো।” (তামবীহুল মুগতাররীন, ৩৬ পৃষ্ঠা)


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد



মাদানী কাফেলার এক মুসাফির 

     প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে কম খাওয়াতে পিপাসাও কম লাগে, আর পানি কম পান করাতে ঘুমও কম আসে অর্থাৎ কম ঘুমই শরীরের প্রয়োজন মিটাতে যথেষ্ট হয়ে যায় এবং এতেই ঐ ব্যক্তি সতেজ থাকে। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রাথমিক অবস্থায় একদা আমাদের মাদানী কাফেলা (বাবুল মদীনা, করাচী) থেকে পাঞ্জাব সফর ছিল। কাফেলায় অংশগ্রহণকারী একজন সাদা দাড়িওয়ালা বুযুর্গ সফররত অবস্থায় আমাকে (অর্থাৎ লিখককে) বললেন:- اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ হয়ে গেছে আমার অযু এখনো আছে। আর তাঁর মরহুম পীর ও মুরশিদের ব্যাপারে বললেন: তাঁর (পীরের) পনের দিন পর্যন্ত অযূ থাকত! এসব কিছু পেটের কুফলে মদীনা লাগানো অর্থাৎ কম খাওয়ার বরকত। কেননা এতে করে শৌচকর্মের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায় আর এভাবে ইবাদত ও দ্বীনি কাজ করার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়। 


মে কম বলু কম ছুয়ো কম খাও ইয়া রব! 

তেরি বন্দেগী কা মযা পা-ও ইয়া রব! 


তিন দিনের উপবাস 

      হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, খাতূনে জান্নাত, সাইয়্যিদাতুন নিসা, ফাতেমাতুয্ যাহরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا একদিন রুটির একটি টুকরা নিয়ে হুযুর পুরনূর  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মহান দরবারে হাজির হলেন। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  জিজ্ঞাসা করলেন: এ টুকরা কোত্থেকে আরয করলেন: আমিই এ রুটি তৈরী করেছি। আপনাকে صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ছাড়া খাওয়াটা পছন্দ করলাম না, তাই এ টুকরাটা নিয়ে এসেছি। আল্লাহর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “তিন দিন পর এটাই প্রথম খাবার, যা তোমার পিতার (পবিত্র) মুখে প্রবেশ করলো।” (আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্তাবারানী, ১ম খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৫০)


দুনো জাহাকে দাতা হো কর,

 কওনো মকা কে আকা হো কর, 

ফাকা ছে হে ছরকারে দোআলম ﷺ  


উভয় জাহানের ভান্ডার যাঁর হাতে রয়েছে, তাঁর দুনিয়ার প্রতি এরূপ অনাসক্তি! এটা খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم শরীফ ইচ্ছাধীন ক্ষুধা ছিল। অন্যথায় তিনি অন্যদেরকে ঝুলি ভরে ভরে দান করতেন। যেমন-


এক পেয়ালা দুধ ও সত্তরজন সাহাবা 

   হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ ঐ আল্লাহর শপথ যিনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। আমি ক্ষুধার কারণে কখনো কখনো নিজের পেট যমীনের উপর চেপে রাখতাম আবার কখনো কখনো ক্ষুধার কারণে পেটে পাথর বাঁধতাম। এমনি অবস্থার স্বীকার হয়ে একদিন আমি ঐ রাস্তায় বসে গেলাম, যেটা দিয়ে লোকেরা বাইরে যেত। রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন আর আমার চেহারা দেখে আমার অবস্থা বুঝে গেলেন। ইরশাদ করলেন: “ওহে আবূ হুরাইরা!” আমি বললাম: “লাব্বায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ্"  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ফরমালেন, “আমার সাথে এসো।” আমি, খুশী হয়ে তাঁর পিছনে পিছনে যেতে লাগলাম। যখন তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজের মোবারক ঘরে তাশরীফ রাখলেন, তখন আমিও অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একটি পেয়ালায় দুধ দেখে বললেন: “এ দুধ কোথা হতে এসেছে?” ঘরের কেউ বললেন: “অমুক সাহাবা বা সাহাবিয়্যা আপনার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم জন্য হাদিয়া স্বরূপ পাঠিয়েছেন।” ইরশাদ করলেন: “আবূ হুরাইরা!” আমি আরয করলাম: “লাব্বায়্কা ইয়া রাসূলাল্লাহ্” صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! 

ইরশাদ করলেন: “যাও আহলে সুফ্ফাদের সকলকে ডেকে নিয়ে আস।” হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন যে, “আহলে সুফ্ফাগণ হলেন ইসলামের মেহমান। তাঁদের না ঘর-বাড়ির প্রতি আসক্তি আছে, না ধন-দৌলতের প্রতি, আর না তাঁরা কারো সাহায্য গ্রহণ করেন। যখন আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট সাদকার মাল আসত, তখন রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঐ মাল তাঁদের (অর্থাৎ- আসহাবে সুফ্ফা علهم الر صوان গণের) নিকট পাঠিয়ে দিতেন এবং তিনি নিজে তা থেকে কিছু নিতেন না। আর যখন প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছে কোন হাদিয়া আসত, তখন তা থেকে তিনি নিজেও নিতেন আর তাঁদেরও তাতে শরীক করতেন। আমার কাছে এ কথাটা আশ্চর্য মনে হল, আর মনে এ ধরণের খেয়াল আসল যে, এতজন আহলে সুফ্ফা علهم الر صوان গণের এ সামান্য দুধ দিয়ে কি হবে! ক্ষুধার অবস্থার বিচারে আমিই তো এটার অধিক হকদার। এ দুধ থেকে কয়েক ঢোক আমি পান করতে পারলে তাতে কিছু শক্তি অর্জন করতে পারতাম। যখন আসহাবে সুফ্ফা علهم الر صوان আসবেন, তখন মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকেই ইরশাদ করলেন যে: “এদেরকে দুধ পেশ কর।” এ অবস্থায় কয়েক চুমুক দুধ আমার পাওয়া খুবই মুশকিল হবে। কিন্তু আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল এর আনুগত্য করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। আমি আসহাবে সুফ্ফাহ علهم الر صوان  গণের কাছে গেলাম এবং তাঁদেরকে ডেকে নিয়ে আনলাম। তাঁরা দরবারে উপস্থিত হয়ে প্রিয় রাসুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অনুমতি প্রার্থনা করলেন। প্রিয় নবী, রাসূলে আরাবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন, তখন তাঁরা ঘরে প্রবেশ করে বসে গেলেন। নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “আবূ হুরাইরা!” আমি আরয করলাম: “লাব্বায়্কা ইয়া রাসূলাল্লাহ্ " صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!

ইরশাদ করলেন: “পেয়ালা নাও, আর এদেরকে এক এক করে সকলকে দুধ পান করাও।” হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: হুকুম পেয়ে আমি পেয়ালা হাতে নিলাম। আমি ঐ পেয়ালা একজনকে দিতাম আর তিনি পরিতৃপ্ত হয়ে দুধ পান করতেন, তারপর পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিতেন। এমননিভাবে (দুধ) পান করাতে করাতে সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করার পর নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পর্যন্ত পৌঁছলাম। এমতাবস্থায় সমস্ত লোক পরিপূর্ণরূপে পান করেছিল। আল্লাহর হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পেয়ালাটি নিয়ে নিজের পবিত্র হাতে রাখলেন। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন আর বললেন: আবূ হুরাইরা! আমি আরয করলাম: “লাব্বায়্কা ইয়া রাসূলাল্লাহ্”  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “এখন শুধু আমি ও তুমি রয়ে গেছি।” আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপনি সত্য বলেছেন। ইরশাদ করলেন: “বসো এবং পান কর।” আমি বসে গেলাম এবং দুধ পান করতে লাগলাম। রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “পান কর”! আমি পান করলাম। রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একাধারে ইরশাদ করতে লাগলেন, “পান কর”! এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি আরয করতে বাধ্য হলাম, “না।” ঐ মহান সত্ত্বার শপথ! যিনি আপনাকে صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, এখন আর (পেটে) জায়গা নেই। বললেন: “পেয়ালাটি আমাকে দেখাও।” আমি পেয়ালাটি পেশ করে দিলাম। রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আল্লাহ্ তাআলাররররর প্রশংসা করলেন, এরপর "بِسْمِ اللهِ" পাঠ করে অবশিষ্ট দুধ পান করে নিলেন।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৪৫২) اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ এটা প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহান মু’জিযা যে, সকল অর্থাৎ সত্তরজন আহলে সুফ্ফা علهم الر صوان মিলেও এক পেয়ালা দুধ সম্পূর্ণ পান করতে পারলেন না।আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এ ঈমান উদ্দীপক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেই আরয গুযার করেছেন: 


কিউ জনাবে বু হুরাইরা! থা উও কেইছা জাম শীর, 

যিসছে সত্তর সা-হিবো কা দুধ ছে মু’ ফির গেয়া। 


মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী 

     হযরত সায়্যিদুনা আবূ ইয়াহ্ইয়া মালিক বিন  দীনার رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “আমি হযরত সায়্যিদুনা আবূ আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন ওয়াসি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে বললাম: ওহে আবূ আবদুল্লাহ্! ঐ ব্যক্তি সৌভাগ্যবান, যার কাছে সামান্য খাদ্য থাকে আর তা তার জন্য যথেষ্ট হয় আর এভাবে সে মানুষের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকে। এটা শুনে তিনি আমাকে বললেন: ওহে আবূ ইয়াহ্ইয়া! ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে সকাল-সন্ধ্যা ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকে আর আল্লাহ্ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা) 


উপদেশ প্রভাবহীন 

বর্ণিত আছে: “পেট ভরে আহারকারী ব্যক্তির উপদেশ লোকের কাছে প্রভাবহীন হয়ে থাকে আর যখন তাকে উপদেশ দেয়া হয় তখন তার হৃদয় তা গ্রহণ করে না।” (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা) 


মৃত্যুর সময় দুর্গন্ধ 

       আমীরুল মুমীনিন হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “নিজেকে পেট ভরে খাওয়া থেকে রক্ষা কর। কারণ পেট ভরে খাওয়াটা জীবনে বোঝা স্বরূপ ও মৃত্যুর সময় এটা হবে দুর্গন্ধ।” (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা)


খাবার বেশি হলে, আয়ও বেশি প্রয়োজন 

  প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যি বলেছেন সাইয়্যিদুনা উমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ সত্যিই “পেটের কুফলে মদীনা” না লাগানো এবং খুব বেশি পরিমাণে পেট ভর্তি করে খাওয়াতে তা জীবনের উপর বোঝা হয়ে থাকে। কারণ খাবার বেশি খেতে হলে, এজন্য আয়ও বেশি করতে হয়। খানার আয়োজনও বেশি করতে হয়। তাই খুব পরিশ্রম করে রান্না করতে হয়। অতঃপর খেতেও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকক্ষণ ধরে পেটে এটার বোঝাও বহন করতে হয়। অতিরিক্ত খাবার খাওয়াতে হজম শক্তিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এর ফলে কোষ্টকাঠিন্য, গ্যাষ্টিক জানিনা আরও কত রকমের পেটের কষ্ট সহ্য করতে হয়। মোট কথা, অধিক খাওয়াতে মাল-পত্র কেনাতেও খরচ অধিক করতে হয়। জিহ্বার অল্প সময়ের স্বাদ গ্রহণের পর কন্ঠনালীর নীচে যেতেই মজা লাভের পরিসমাপ্তি ঘটে আর দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত পেটের “গন্ডগোল”-এর যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। এছাড়া শরীরের মেদ বেড়ে যাওয়াতে ডাক্তার ও ঔষধ ইত্যাদি খরচের বোঝা বহন করতে হয়। তাই এভাবে এসব কিছু বোঝা, বোঝা আর শুধু বোঝাই হয়। এমন যদি হত! অল্প ক্ষণের স্বাদের জন্য সারাজীবন বোঝা বহন ও মৃত্যুর সময়ের দুর্গন্ধের মত বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষার মানসিকতা তৈরীতে আমরা সফল হয়ে যেতাম! 


ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত 

     বর্ণিত আছে, যদি তুমি পেট ভরে খাওয়ায় অভ্যস্ত হও, তবে ইবাদতের স্বাদ লাভের আশা পোষণ করনা। আর ইবাদত ছাড়া অন্তরে নূর কিভাবে সৃষ্টি হবে? আর যদি ইবাদতই স্বাদহীন হয়, তবে ঐ ধরনের ইবাদতের মাধ্যমে কিভাবে অন্তরে নূর আসবে? (মিনহাজুল আবেদীন, ১০৭ পৃষ্ঠা)


ক্ষুধার কারণে বেহুঁশ

হযরত সাইয়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “আমার ক্ষুধার কারণে এমন হত যে, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্র মিম্বর ও উম্মুল মুমীনীন হযরত সাইয়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর পবিত্র হুজরার মধ্যখানে বেহুশ হয়ে পড়ে যেতাম। কোন লোক এসে আর আমার গর্দানের উপর পা রেখে দিত। সে মনে করত যে, আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে, অথচ আমার মস্তিষ্ক বিকৃতি হতোনা। এ অবস্থা ক্ষুধার কারণে হতো।” (সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৮ম খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৩২৪) 


বখশ দে মেরি হার খাতা ইয়া রব!

 ফাকা মস্তু কা ওয়াসেতা ইয়া রব! 


      প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর নিকট ইলম বা জ্ঞান অর্জনের খুব বেশি আগ্রহ ছিল। তাই সবকিছু ত্যাগ করে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র কদমে পড়ে থাকতেন। ক্ষুধার পর ক্ষুধা সহ্য করতেন আর জ্ঞানের পর জ্ঞান অর্জন করতেন। আর তাঁরই رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এ সম্মান লাভ হয়েছে যে, সবচেয়ে বেশি হাদিসে মোবারাকা তাঁর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত 

হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে পেট ভরে খাওয়া, প্রসিদ্ধি লাভের কামনা, লোভ-লালসা ও উচ্চ পদের মায়া এগুলোর সবই অমঙ্গল। এ অমঙ্গল মিশ্রণের কারণে শিক্ষার্জনে রূহানিয়্যাত (আধ্যাত্মিকতা) অন্বেষণকারীদের গন্তব্যে পৌঁছা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ইলমে দ্বীন অর্জনে আপাদ-মস্তক ইখলাস বা আন্তরিকতার নমুনা হয়ে যান আর এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাআলার রহমত বেশি পরিমাণে অর্জন করুন। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামী’র সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলার মাধ্যমেও জ্ঞানার্জন হয় এবং অগণিত বরকত নসীব হয়। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার একটি বাহার লক্ষ্য করুন:



অজানা ব্যথা 

       পাঞ্জাব প্রদেশের এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা, “আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা বাবুল মদীনা, করাচীতে “তারবিয়্যাতী কোর্স” করার জন্য এসেছি এরই মধ্যে একদিন বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ৪টার সময় পেটের বাম পাশে হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হল। ব্যথা এতই প্রচন্ড ছিল, পর পর সাতটি ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে, এরপর কোন রকমে শাস্তি এলো। নিয়মানুযায়ী বৃহস্পতিবার অনুষ্টিতব্য সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার জন্য (মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনাতে) সন্ধ্যায় উপস্থিত হলাম। রাত দশটায় আবার ব্যথা শুরু হল, কিন্তু ইজতিমায় সম্মিলিত দোয়ার সময় ভাল হয়ে গেল। এক ঘন্টা পর পুনরায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হল। তখন ডাক্তার তিনটি ইঞ্জেকশন দিলেন অতঃপর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হল। এখন অবস্থা এমন হল যে, যখনই খাবার খেতাম তখনই ব্যথা শুরু হয়ে যেত। প্রতিদিন তিনটি, চারটি ইঞ্জেকশন দেয়া হত। শেষপর্যন্ত স্যালাইনও দেয়া হল, আলট্রাসাউন্ডও করিয়েছি কিন্তু ডাক্তারদের ব্যথার কারণ কোন রকমে বুঝে আসল না। নিরুপায় হয়ে এই অবস্থায় আমি হাসপাতালে পড়ে রইলাম। সেখানে আমার কাছে খবর এল যে, আমার বন্ধু ইসলামী ভাইয়েরা ১২ দিনের জন্য সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলাতে সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডাক্তার সফরে বের হতে সম্পূর্ণ নিষেধ করল, কিন্তু আমি থাকতে পারলাম না। আমি ঢেরাহ্ বুগটী বেলুচিস্তান প্রদেশ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম। ঢেরাহ্ বুগটী যাওয়ার সময় পথিমধ্যে সামান্য ব্যথা অনুভব হল। কিন্তু তা পরক্ষণেই সেরে গেল। ভালভাবেই ঢেরাহ্ বুগটী পৌঁছে গেলাম। অতঃপর আমরা সেখান থেকে “সূঈ” এসে বৃহস্পতিবারের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করলাম এবং এরপর ঢেরাহ্ বুগটী ফিরে আসলাম।আর اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ আজও পর্যন্ত কখনো পুনরায় আমার ব্যথার কষ্ট হয়নি এবং সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য এটা অর্জিত হল যে, মাদানী কাফেলাতে স্বপ্নের মাঝে আমার তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দীদার হয়ে গেল। 


লুটনে রহমতে কাফিলে মে চলো, 

সিখনে সুন্নাতে কাফিলে মে চলো। 

দরদে ছর হো আগর দুখ রাহী হো কোমর, 

পাওগে সিহ্যাতে কাফিলে মে চলো। 

হে তলব দিদ কি, দিদ কি ঈদ কি, 

কিয়া আজব উহ দেখে কাফিলে মে চলো। 


      সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসকতা সৃষ্টি হবে।


যদি ক্ষুধা কিনতে পাওয়া যেত! 

      হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহ্ইয়া বিন মু‘আয رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ “ক্ষুধা” কেনার কথা বলছেন, অথচ বোকা লোকদের মধ্যে রীতিমত অধিক খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। যে সবচেয়ে বেশি খাবার খেতে পারে তাকে অনেক বড় বাহাদুর মনে করা হচ্ছে!আফসোস! শত কোটি আফসোস! আজকাল টাকা-পয়সার বিনিময়ে লোকেরা বাজারের পণ্য সামগ্রী ও সেগুলোর সাথে বিভিন্ন প্রকারের “রোগ” কেনাতে ব্যস্ত রয়েছে। চতুর্দিকে পানাহারের বস্তু কেনার জুলুশ শুরু হয়ে গেছে কারণ এখন চলছে ‘ফুড কালচারের’ যুগ। এক একটি এলাকায় নানা জাতীয় কয়েকটি করে খাবারের হোটেল বা রেস্তোরা খোলা হয়েছে। চতুর্দিকে হোটেলগুলো অসংখ্য বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হয়ে আছে। চতুর্দিকে কাবাব, চমুচার স্তুপ, দই ও চনাবুট ভাজা ইত্যাদি লোভনীয় খানায় ভর্তি সাজানো থালা যেন হাসছে। চারিদিকে বোঁ বোঁ করে শিখ কাবাব ও চিকেন টিক্কার খুশবু ছড়িয়ে আছে। আইসক্রীম ও সোডা লেমন বা পানীয় সামগ্রীর বোতল বিক্রির দোকানের খুবই রমরমা অবস্থা। যার প্রয়োজন এমন ক্রেতার সাথে সাথে অনেক লোক শুধুমাত্র নফসের তৃপ্তির জন্য পানাহারের বস্তুগুলোর প্রতি ব্যাকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। যা হাতে আসে তা-ই মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যা সামনে পাচ্ছে তা-ই গিলে ফেলছে। না কারো দুনিয়াবী ক্ষতির চিন্তা রয়েছে, না রোগের পরওয়া করছে আর না আখিরাতের হিসাব নিকাশের চিন্তা করছে। প্রত্যেকেরই আকাঙ্খা হচ্ছে খাও আর খাও শুধু খেয়েই যাও চতুর্দিক থেকে যেন এরূপ আওয়াজ উঠছে। 


খাও, পান কর, জান বানাও! 

     হায়! এমন যদি হত! প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরাম ও শহীদানে কারবালা علهم الر صوان ও আওলিয়া কেরাম رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی এর মোবারক ক্ষুধার কথা আমাদের মনে থাকত। হায়! হায়! আমরা শুধু “খাও, খাও” এর স্লোগান দিচ্ছি আর এসকল পবিত্রাত্মা মনীষীদের পক্ষ থেকে “ক্ষুধা ক্ষুধা” এর পয়গাম আসছে। আমরা যদিওবা সর্বদা পানাহারে রয়েছি কিন্তু তবুও কথা থেকে যায়, সকল আম্বিয়া علهم الر صوان, সাহাবা ও আওলিয়া رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی এর পক্ষ থেকে কম খাওয়ার শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে।


  শওক খানে কা বড় চালা ইয়া রব!

 নফস কা দা-ও চল গেয়া ইয়া রব! 

 খুব খানে কি খু মিঠা ইয়া রব! 

 নেক বন্দা মুঝে বানা ইয়া রব!



বেশি খাওয়া কাফিরদের বৈশিষ্ট্য 

    প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শুধুমাত্র নফসের স্বাদ লাভের জন্য কোন কিছু খাওয়া উচিত নয়। সাদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত আ’ল্লামা মওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “কুরআনে কারীমে কাফিরদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এটা বলা হয়েছে যে, তাদের খাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে - শুধুমাত্র আমোদ-প্রমোদ ও স্বাদ লাভ করা। আর হাদীসে পাকে অধিক খাওয়াকে কাফিরদের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত) 


“খাও খাও” কি খু নিকাল যায়ে, 

নকলে কুফ্ফার ছে বাঁচা ইয়া রব। 


ক্ষুধার মধ্যে শক্তি 

       হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ্ رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর অবস্থা এরূপ ছিল, যখন তিনি ক্ষুধার্ত থাকতেন তখন তিনি শক্তিমান হতেন। কিন্তু যখন কিছু খেয়ে নিতেন তখন দুর্বল হয়ে যেতেন! (রিসালাতুল্ কুশাইরিয়্যাহ্, ১৪২ পৃষ্ঠা) কোন ফার্সী কবি কতইনা সুন্দর বলেছেন: 


আগর লজ্জতে তরকে লজ্জতে বাদানি, 

দিগর লজ্জতে নফসে,লজ্জতে নাখানি। 

অনুবাদ: যদি তুমি স্বাদগুলো ছেড়ে দেওয়ার স্বাদ জেনে নাও। 

তাহলে নফসের স্বাদকে কখনও স্বাদ মনে হবে না। 


তাসাওউফ অর্জন 

     হযরত সায়্যিদুনা জুনাইদে বাগদাদী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “আমি তাসাওউফকে তর্ক বিতর্ক করে নয় বরং ক্ষুধা, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও নফসের স্বাদকে বর্জন করে অর্জন করেছি।” (সাবয়ে সানাবিল, অনুদিত, ২৪১ পৃষ্ঠা)


আমি সবচেয়ে মন্দ

     হযরত সাইয়্যিদুনা ওসমানে গণী رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “নেক বান্দার পাঁচটি আলামত রয়েছে: (১) উত্তম সংস্পর্শে থাকেন (২) জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করেন (৩) দুনিয়ার নেয়ামতকে বোঝা ও দ্বীনী নেয়ামতকে আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ মনে করেন (৪) হালাল খাবারও এ ভয়ে পেট ভরে খাননা যে, এতে যদি আবার হারাম খাবার মিশ্রিত থাকে (৫) নিজেকে ছাড়া প্রতিটি মুসলমানকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্ত মনে করেন এবং নিজেকে গুনাহ্গার মনে করে নিজ ধ্বংসের ভয় অনুভব করেন।” (আল্ মুনাব্বিহাতুলিল আসকালানী, বাবুল খামাসী, ৫৯ পৃষ্ঠা) 


হায় হুসনে আমল নেহী পাল্লে,

হাশর মে হোগা কিয়া মেরা ইয়া রব! 

খওফে আ-তা হায় নারে দোযখ ছে,

হো করম বাহরে মুস্তফা ইয়া রব! 


ক্ষুধার কারণে পড়ে যেতেন 

     হযরত সায়্যিদুনা ফাজালাহ্ বিন উবাইদ رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন যে, খাতেমুল মুরসালীন, 

শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন নামায পড়াতেন তখন কিছু সাহাবী নামাযের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় ক্ষুধার তীব্রতায় পড়ে যেতেন আর তাঁরা ছিলেন আসহাবে সুফ্ফা। এমনকি গ্রাম্য লোক এ অবস্থা দেখে বলে ফেলত যে, “এসব মানুষ মনে হয় পাগল।” যখন রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামায থেকে অবসর হতেন তখন তাঁদের প্রতি লক্ষ্য করে ইরশাদ করতেন, “যদি তোমরা জানতে যে, তোমাদের জন্য আল্লাহ্ তাআলার নিকট কি প্রতিদান ও সাওয়াব রয়েছে, তবে তোমরা এ বিষয়কে পছন্দ করতে যে, তোমাদের উপবাস ও অভাব যেন আরো বৃদ্ধি পায়।” (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৩৭৫)


ফাকা মস্তি কি ধুন মিলে ইয়া রব, দিল কা মুরঝায়া গুলে খিলে ইয়া রব!


অনেক দিনের উপবাস

      সাহাবায়ে কিরাম علهم الر صوان ও আওলিয়ায়ে ইযাম رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی এর মধ্যে অনেকে কয়েকদিন পর্যন্ত খাবার খেতেন না যেমন- হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ ছয়দিন পর্যন্ত কিছু খেতেন না, হযরত সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন যূবাইর رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ সাতদিন পর্যন্ত খেতেন না, হযরত সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا হতে শিক্ষা প্রাপ্ত শিষ্য হযরত আবূ জাওযা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ সাতদিন পর্যন্ত উপবাস করতেন। হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহিম বিন আদহাম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ও হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান সাওরী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ প্রতি তিনদিন পর খানা খেতেন। এ সকল মহান ব্যক্তিত্বগণ ক্ষুধার মাধ্যমে আখিরাতের পথ চলার সাহায্য গ্রহণ করতেন। (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) 


ফাকা মাসতো কা ওয়াসিতা মওলা,

 বখশ দে মেরী হার খতা মওলা। 


সারা বছর উপবাস 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অনেক দিন পর্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকা প্রত্যেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ঐ সকল পূর্ণাত্মাদের বৈশিষ্ট্য ও কারামত ছিল। বাস্তবিক পক্ষে তাঁদের রূহানীভাবে খাদ্য অর্জিত হত। আল্লাহর দানকৃত ক্ষমতায় অনেক আওলিয়ায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَم চল্লিশ দিন পর্যন্ত না খেয়ে থাকতেন বরং আমাদের গাউসুল আযম رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ অনেক সময় এক বছর পর্যন্ত কিছু পানাহার ব্যতীত কাটিয়েছেন। শাহানশাহ্ বাগদাদ আমাদের গাউসে পাক رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আল্লাহ পাক নিজেই পানাহার করাতেন। যেমন- আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর একখানা মোবারক কবিতার ছন্দ রয়েছে: 


কসমে দে দে কে খিলাতা হায় পিলাতা হায় তুঝে, 

 পিয়ারা আল্লাহ্ তেরা চাহনে ওয়ালা তেরা। (হাদায়িকে বখশিশ)


পানাহার করা ব্যতীত মানুষ কতদিন জীবিত থাকতে পারে ? 

     দীর্ঘদিন পর্যন্ত পানাহার করা ব্যতীত জীবিত থাকা এবং জীবন প্রণালীর মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন সাধিত না হওয়ার ব্যাপারটা “বিশেষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের” কাজ। তাঁদের রূহানী খাদ্য অর্জিত হয়ে থাকে। “সাধারণ লোক” এরূপ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুধার্ত থাকার ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করতে পারবে না। যদি কেউ আবেগ আপ্লুত হয়ে উপবাস থাকা শুরু করেও দেয়, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই দূর্বল হয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এবং হতে পারে আগামীতে এ ব্যাপারে পুনরায় সাহস করতেও পারবে না। এক ডাক্তারের গবেষণা অনুযায়ী কোন কিছু না খেয়ে ১৮ দিন, বেশি শক্তিশালী হলে বেশি থেকে বেশি ২৫ দিন, পানি পান করা ব্যতীত তিনদিন ও অক্সিজেন ছাড়া এক মিনিট থেকে শুরু করে বেশি হলে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত মানুষ জীবিত থাকতে পারবে।


সাধারণ মানুষ কি পরিমাণ খাবে? 

    সাধারণ মানুষের জন্য এটাই উত্তম যে, যদি বেশি খেতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে “পেটের কুফলে মদীনা” লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে কমাতে কমাতে পেটের এক তৃতীয়াংশ যাতে ভরে যায় এতটুকু খাবারকে যথেষ্ট মনে করে আমলে আনার অভ্যাস করে নিবেন। এর ফলে ক্ষুধার বরকতও অর্জিত হবে আর দুর্বলতাও আসবেনা এবং আশ্চর্যজনকভাবে স্বাস্থ্যও উন্নত হয়ে যাবে এছাড়া ডাক্তারদের মোটা অংকের ফিস দেয়া ও ঔষধ কেনার খরচ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি কারো বিশ্বাস না হয়, তাহলে তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ 


মেরি ডাটকে খানে কি আদত মিঠাদে, 

মুঝে মুত্তাকী তু বানা ইয়া ইলাহী


অসুস্থ হৃদয়ের ঔষধ

     হযরত সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ আনতাকী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: অসুস্থ হৃদয়ের পাঁচটি ঔষধ রয়েছে- (১) নেককারদের সংস্পর্শ (২) কুরআনে পাকের তিলাওয়াত (৩) কম খাওয়া (৪) তাহাজ্জুদ নামায নিয়মিত আদায় করা (৫) রাতের শেষাংশে কান্নাকাটি করা। (আল্ মুনাব্বিহাতু লিল্ আসকালানী, বাবুল খামাসী, ৬০ পৃষ্ঠা) 


এক হাজার বছর যাবত জীবিত পাখি 

    প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আফসোস শত কোটি আফসোস! অনেক মানুষ এত বেশি খাবার খেয়ে বসেন যে, পেটও সস্তি লাভের জন্য আহবান করে থাকে এবং সাথে সাথে (শরীরে) অলসতা চলে আসে। চলা-ফেরা করাতো দূরের কথা বসা থেকে, উঠাও মুশকিল হয়ে পড়ে। এখানে সম্ভবত শকুনের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কারণ শকুন যখন কোন মৃত জন্তু খাওয়ার জন্য গাছ থেকে নেমে আসে তখন তার দাপটে অন্য কোন পাখী নিকটেও আসতে পারেনা কিন্তু সেটা এত অধিক খেয়ে বসে যে, তার জন্য তখন উড়াও মুশকিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যদি এ অবস্থায় সেটাকে কোন দুর্বল ব্যক্তি (বরং বাচ্চাও) ধরে ফেলতে চায় তবে সহজে ধরে ফেলতে পারবে! আপনারা দেখলেন তো! পেটের কুফলে মদীনা না লাগানো অর্থাৎ খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে নেয়া মৃত জন্তু ভক্ষণকারী শকুনের অবস্থা। শকুন এক হাজার বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। দুর্গন্ধ খুবই পছন্দ করে আর সুগন্ধ বস্তুকে খুবই ঘৃণা করে। যদি কোন কারণে সুগন্ধ বস্তুর ঘ্রাণ একবার নিয়ে ফেলে তখন সেটা মরে যায়। হযরত সায়্যিদুনা ইমামে হাসান رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: শকুন যখন (নিজের ভাষায়) কথা বলে, তখন বলে যে, “ওহে মানব সন্তান! যত ইচ্ছা দম নিতে থাক, অবশেষে একদিন মৃত্যু আসবেই”। (হায়াতুল হায়্ওয়ানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৪৭৪ পৃষ্ঠা) 


কবর মে মায়্যিত উতারনি হায় জরুর, 

যেইছি করনি ওয়াইছি ভরনি হায় জরুর।


সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


মশা উটকে হত্যা করে ফেলে 

     প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! স্বাদ গ্রহণের লোভ-লালসা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মশা মানুষের রক্তের প্রতি লোভী হয়ে থাকে। এটা রক্ত প্রবাহের রগের উপরিভাগের চামড়ায়, যেটা তুলনামূলকভাবে নরম হয়ে থাকে, তাতে বসে নিজ শুড় ঢুকিয়ে রক্ত পানে ব্যস্ত হয়ে যায়।  অনেক সময় এত বেশি পরিমাণে পান করে নেয় যে, উড়তে অক্ষম হয়ে যায় অথবা পেট ফেঁটে মরে যায়। মশার মধ্যে আল্লাহ্ পাক এরূপ ক্ষমতা দিয়েছেন, অনেক সময় উটকে পর্যন্ত হত্যা করে ফেলতে পারে। শুধু উট নয় বরং প্রতিটি চতুস্পদ প্রাণীকে হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। মশার কামরে যে প্রাণীর মৃত্যু হয়, তা যে পশু-পাখী খাবে সেটাও তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করবে। প্রাচীন কালে ইরাকের বাদশাহের নিকট মৃত্যুদন্ড দেয়ার ভীষণ কষ্টদায়ক নিয়ম প্রচলিত ছিল আর তা হল, অপরাধীকে উলঙ্গাবস্থায় বেঁধে মশার নালার নিকট ফেলে রাখা হত আর সে মশার বারংবার কামড় এর কারণে ছটফট করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ত। (নমরূদকেও এই মশাই হত্যা করেছিল) (হায়াতুল হায়ওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা) 


মোটা মশা 

      হযরত সায়্যিদুনা রবী বিন আনাস رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “মশা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত জীবিত থাকে আর যখন রক্তপান করে পরিতৃপ্ত হয়ে যায়, তখন মোটা হয়ে যায়, আর যখন মোটা হয়ে যায় তখন মারা যায়, এ অবস্থা মানুষেরও। যখন সে দুনিয়ার নেয়ামত সমূহ অধিক হারে লাভ করে ধনবান হয়ে যায় তখন তার অন্তর মরে যায়”। (তামবীহুল মুগতারবীন, ৫৪ পৃষ্ঠা)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মশা মোটা হতেই মৃত্যুর ঘাঁটি অতিক্রম করে, আর মাটির সাথে মিশে যায়, কিন্তু হায়! মানুষ যখন স্বাস্থ্যবান হয়ে যায় তখন অনেক সময় দুনিয়াতেই নানা ধরণের বিপদাপদের সম্মুখীন হয়ে থাকে। আর বিভিন্ন ধরণের গুনাহের মধ্যে লিপ্ত হয়ে আল্লাহ্ তাআলা ও রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অসন্তুষ্টি অর্জন করে মৃত্যুবরণ করে। তখন মৃত্যু, কবর ও হাশরের ভয়াবহতা এবং জাহান্নামের কষ্টদায়ক আযাবে জড়িয়ে পড়ে। যেমন-


 স্বাস্থ্যবান শরীরের বিপদ 

     হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহ্ইয়া মুআয রাযী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন - যে পেট ভরে খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে যায়, তার শরীরে মাংস বেড়ে যায়। আর যার শরীরে মাংস বেড়ে যায় সে কামভাবের পূজারী হয়ে যায়। আর যে কামভাবের পূজারী হয়ে যায় তার গুনাহ্ বেড়ে যায়, আর যার গুনাহ্ বৃদ্ধি পায় তার অন্তর শক্ত হয়ে যায়। আর যার অন্তর শক্ত হয়ে যায়, সে দুনিয়ার বিপদাপদে ও বিলাসীতায় ডুবে যায়। (আল্ মুনাব্বিহাতুলিল আসকালানী, বাবুল খামাসী, ৫৯ পৃষ্ঠা)


খানে কি হির্স ছে তু ইয়া রব নাযাত দে দে, 

আচ্ছা বানা দে মুঝ কো আচ্ছি সিফাত দে দে। 


পেটুকের উপর গুনাহের আক্রমণ 

   প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর শপথ, দুশ্চিন্তা এবং খুবই দুশ্চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে, পেট ভরে খাবার খাওয়া, মানুষকে গুনাহের মধ্যে ডুবিয়ে দেয়। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “অধিক পরিমাণে খাবার খাওয়াতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় আর ফ্যাসাদ করা ও অহেতুক কাজ-কর্ম করে জীবন যাপন করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কেননা, যখন মানুষ পেট ভরে খায় তখন তার শরীরে অহংকার ও চোখে কু-দৃষ্টি দেয়ার ইচ্ছা জন্ম নেয়। কান খারাপ কথা শুনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে, জিহ্বা মন্দ কথা বলতে উৎসাহী হয়ে যায়,লজ্জাস্থান কামভাবের ইচ্ছা পোষণ করে, পা গুলো অবৈধ পথের দিকে চলার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে। অপরদিকে যদি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে তবে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে শান্তি বজায় থাকে। তখন সেগুলো কোন মন্দ কাজের আগ্রহও প্রকাশ করেনা, মন্দ বিষয় দেখে সন্তুষ্ট হয়না। উস্তাদ আবূ জাফর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর পবিত্র বাণী হচ্ছে, “যদি পেট ক্ষুধার্ত থাকে তবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো দূর্বল থাকার কারণে শান্তিতে থাকে, কোন জিনিসের দাবি করে না। যদি পেট ভরা হয়, তখন অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলি বিভিন্ন মন্দ কাজের প্রতি ধাবিত হয়।” (মিনহাজুল আবেদীন, ৯২ পৃষ্ঠা) 


হালকা পাতলা শরীরের ফযীলত 

    হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস  رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় ঐ বান্দা, যে কম আহারকারী ও হালকা-পাতলা শরীরের অধিকারী।” (আল্ জামিউসসাগীর, ২০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২২১) 


নারী পুরুষের ওজন কতটুকু হওয়া উচিত 

   অধিক খাওয়ার একটি প্রধান বিপদ হচ্ছে, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া। আর পেট বের হওয়া তো আছেই। আজকাল অনেক লোক এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। ওজনের পরিমাণ নিজ নিজ শারীরিক উচ্চতা অনুযায়ী হয়ে থাকে। মধ্যম আকৃতির (সাড়ে পাঁচ ফুট অর্থাৎ ৬৬ ইঞ্চি লম্বা) পুরুষের ওজন ১৫০ পাউন্ড (৬৮ কেজি) ও মধ্যম আকৃতির (সোয়া পাঁচ ফুট, অর্থাৎ- ৬৩ ইঞ্চি লম্বা) মহিলার ওজন ১৩০ পাউন্ড (অর্থাৎ- ৫৯ কেজি) থেকে কখনো বেড়ে যাওয়া উচিত নয়। নিজের শারীরিক উচ্চতা মেপে উপরে দেয়া পরিমাপ অনুসারে যে কেউ ইচ্ছা করলে নিজের ওজনের হিসাব করে নিতে পারেন।


সায়্যিদুনা ইউসুফ عَلَیۡہِ السَّلاَم এর ওজন

   যে যতটুকু দীর্ঘাকৃতির হবে, সে হিসাবে তার ওজনও বেশি হওয়া স্বাভাবিক। সৃষ্টির শুরুতে মানুষের শারীরিক আকৃতি অনেক বড় হত। এ হিসাবে ওজনও অধিক হত। যেমন- প্রখ্যাত মুফাসসির মুফ্তি আহমদ ইয়ার খান নঈমী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: আযীযে মিশর, মিশরের বাজার থেকে সাইয়্যিদুনা ইউসুফ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم কে এভাবে ক্র‍য় করেছেন যে, তাঁর عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم ওজনের সম পরিমাণ স্বর্ণ, ঐ পরিমাণ রূপা, তাতারী মেশক, মণি-মুক্তা ও রেশমী কাপড় দিলেন। ঐ সময় তাঁর عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم ওজন চারশত রাতাল (এক রাত্বালের পরিমাণ আধা সেরের সমান, এ হিসাবে) পাঁচ মণ ছিল। আর তখন তাঁর পবিত্র বয়স ছিল ১২ বছর। তিনি عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم সুটাম ও সীমাহীন সুন্দর ছিলেন। আর তিনি عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم নিজের ওজন অনুসারে নিশ্চয় দীঘার্কৃতিরই অধিকারী ছিলেন। (নুরুল ইরফান, ৩৭৮ পৃষ্ঠা) 


মোটা হওয়ার কারণ সমূহ 

     মনে রাখবেন! যে বেচারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাকে দেখে হাসা, ঠাট্টা করা, অথবা শরীয়াত অনুমোদন ব্যতীত যে কোন ভাবে তার মনে কষ্ট দেয়া হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। এছাড়া এটাও আবশ্যক নয় যে, শুধু অধিক পানাহারের কারণে পেট বের হয়ে যায়! অনেক পেট ভরে খাওয়া ব্যক্তিও হালকা-পাতলা গড়নের হয়ে থাকে। যা হোক বসে বসে দীর্ঘক্ষণ লেখা-পড়া করার কারণে বা অফিসিয়াল কাজ করাতে, হেঁটে চলার পরিবর্তে শুধু মোটর সাইকেল বা কার ইত্যাদি যানবাহনের মাধ্যমে সফর করাতে, চার যানু হয়ে বসে খাবার খাওয়াতে, চেয়ার টেবিলে পা ঝুলিয়ে খাবার খাওয়াতে, প্রচন্ড গরম খাবার খাওয়াতে, শরীরের ওজন প্রায় সময় বাম দিকে রাখাতে, যেমন- বসাবস্থায় অথবা খাবার খাওয়াবস্থায় বাম হাতে মাটিতে ভর দিয়ে,

দেয়াল ইত্যাদিতে বাম পার্শ্ব দিয়ে হেলান দেয়ার অভ্যাস ইত্যাদির কারণেও পেট ও শারীরিক ওজন বাড়তে পারে। যে পেটের কুফলে মদীনার উপর আমল করে না অর্থাৎ খুব ভালভাবে পেট ভর্তি করে খায়, PIZZA পরাটা ও নানা প্রকারের তেল ও ঘিয়ে ভরা খাদ্য অনবরত গিলতে থাকে, আইসক্রীম ও ঠান্ডা পানীয়ও পেটে ভরতে থাকে আর তার ওজনও বেশি এবং পেটও বের হয়ে আসে। তবে তার এটা বুঝা উচিত, আমি নিজেই আমার ওজন বাড়িয়েছি। লোকেরা সম্ভবত ঠান্ডা পানীয় সামগ্রীকে ক্ষতিকারক নয় মনে করে, অথচ ২৫০ মিলি লিটারের একটি (ঠান্ডা পানিয়’র) বোতলে প্রায় সাত চামচ চিনি থাকে। আর আইসক্রীম তো একটি “চিনি বোমা”। ভারী শরীরধারী ব্যক্তিকে তো ঠান্ডা পানীয় বোতল আইসক্রীমের দিকে দৃষ্টি দেয়াও অনুচিত। কারণ এটা তার জন্য একটি মিষ্টি বিষ! বিশেষতঃ তিনটি বস্তু শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। (১) ময়দা (২) চর্বি জাতীয় জিনিস (৩) মিষ্টি জাতীয় জিনিস। আমাদের প্রায় প্রতিটি খাদ্যে এ তিনটি বস্তু পাওয়া যায়। মানুষের শরীরের জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে হওয়াও আবশ্যক। কারো রক্তে সুগার বেড়ে গেলে যেমন অসুস্থ হয়ে থাকে আবার যার প্রয়োজনের চেয়ে সুগার কম হয়ে যায় সেও অসুস্থ হয়ে যায়। তাই যে পেট ভরে আহারকারী হবে, তার পেটে এ তিনটি বস্তুর পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রবেশ করবে। যার ফলে তার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর একারণে অনেক রোগ-ব্যাধিও হওয়া শুরু করবে। অনেকের জন্মগত ভাবে শারীরিক গঠন এরূপ হয়ে থাকে যে, তারা যতই আহার করুক না কেন শরীর বৃদ্ধি পায় না। হালকা-পাতলাই থেকে যায়। মানে নিশ্চয় এটা নয় যে, তাদের কোন রূপ ক্ষতিসাধন করেনা। এসব লোকেরা অধিক খাবার খাওয়াতে পেটের গন্ডগোল ও হৃদরোগ ইত্যাদি হতে পারে। হৃদরোগের কারণ যদিও অধিক খাবার খাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণেও হৃদরোগ হতে পারে এবং এতে মানুষ হার্ট-ফেলও করতে পারে। যদি যৌবনেই ময়দা, চর্বি জাতীয় দ্রব্য ও মিষ্টি জাতীয় বস্তু খাওয়া কমিয়ে দেয়, তবে বৃদ্ধ বয়সে তা উপকারে আসতে পারে।


যৌবনের সংজ্ঞা 

     অভিধান অনুযায়ী (প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া থেকে নিয়ে) ৩০ থেকে ৪০ বৎসর বয়স পর্যন্ত মানুষ যুবক অবস্থায় থাকে। ৪০ থেকে ৫০ বৎসর বয়স পর্যন্ত যৌবন ও বৃদ্ধকালের মধ্যবর্তী সময় অর্থাৎ- প্রৌঢ় বা মধ্য বয়সী আর এরপর বৃদ্ধ কাল এসে যায়। উত্তমতো এটাই যে, একদিনের শিশুর খাদ্যেও সতর্কতা অবলম্বন করা। তাছাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক হতেই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি মনযোগ বৃদ্ধি করা। যদি ৩০ বৎসর বয়সী হওয়ার পরও যা-ই হাতের কাছে আসে তা-ই খেতে শুরু করে, তবে এর প্রতিক্রিয়া নিজেই দেখতে পাবে। আর যতই বয়স বাড়তে থাকবে রোগ-ব্যাধি প্রকট আকার ধারণ করা শুরু করবে। যদি কেউ ৫০ বৎসর বয়সী হয়ে যাওয়ার পরও সবকিছু খেতে তবে মূলত যেন তিনি বলছেন, “আয় ষাঁড়, আমায় মার” এ ধরণের মানুষের সুগার, কোলেষ্টেরল ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ৩০ বৎসর বয়সের পর প্রায়ই রক্তের মাঝে রোগ-ব্যাধি জন্ম নিতে শুরু করে। সুতরাং ছয়মাস পর পর বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা করানো উত্তম। আর যদি কোন রোগ পাওয়া যায় তবে চিকিৎসা করানোর সাথে সাথে প্রতি দেড় মাস পর পর টেষ্ট করানো উচিত। কোন রোগ ধরা পড়লে টেনশেন শুরু হবে এটা ভেবে টেষ্ট না করানো মারাত্মক ভুল। এটা মনে রাখবেন, রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে উদাসীন হওয়াটা রোগের প্রতিকার নয়। উদাসীনতা ভবিষ্যতে ভীষণ ক্ষতির কারণ হতে পারে। যারা ডাক্তারী পরিক্ষাগুলো করেনা এমন অনেক বেচারার হঠাৎ হার্টএট্যাক হয়ে যায়। মুখের অর্ধাঙ্গ ও প্যারালাইসিস রোগের অভিযোগও শুনা যায়। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন এবং আমাদেরকে যেন পরীক্ষার সম্মুখীন না করেন।

امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 


PIZZA এর ক্ষতি সমূহ

 PIZZA ও তৈল, ঘি দ্বারা প্রস্তুত বাজারের বিভিন্ন খাবার (FAST FOOD) খুব দ্রুত শরীরে মেদ সৃষ্টি করে। তা স্বাস্থ্যের জন্য সীমাহীন ক্ষতিকারক বাজারের খাবারে প্রায়ই নিম্নমানের ও অনেকদিনের পঁচা বস্তু ব্যবহার করা হয়। বিশেষতঃ গ্রীষ্মকালে (FUNGUS) নামক জীবাণু বিস্তার লাভ করে। যে কারণে ফুড পয়জনের শিকার হয়ে রোগাক্রান্ত বা মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরব আমিরাত (অর্থাৎ- মধ্য প্রাচ্যে) যেখানে হোটেলের খাবারের মান খুবই উন্নত মনে করা হয়, সেখানকার ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা “খালীজ টাইমজ” এর ২০০৪ সালের ৪ই আগষ্ট সংখ্যার একটি সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সংযুক্ত আরব আমীরাতের রাজধানী আবূধাবীর হোটেলগুলোর ফাষ্ট ফুড অর্থাৎ তৈল, ঘি দ্বারা প্রস্তুত খাবার ও বিশেষতঃ PIZZA এর ব্যাপারে সীমাহীন নিন্দা করা হয়েছে। পত্রিকার ভাষ্যমতে আবূধাবীর প্রায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সপ্তাহে তিন থেকে চারজন রোগী এমনই আসছে যারা PIZZA ইত্যাদি খাওয়ার কারণে ‘ফুড পয়জনে’ আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের রোগের মধ্যে বমি, ডায়রিয়া, বদহজম, জ্বর, দুর্বলতা ও বিষন্নতা ইত্যাদি রয়েছে। এক ডাক্তার বলেন: আগের সপ্তাহে আমার নিকট তিনজন রোগী এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই PIZZA খেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন দু’দিন পর্যন্ত ক্লিনিকে ছিল। এ রিপোর্টে আরো অনেক ডাক্তারের বক্তব্য ছিল। প্রত্যেকের অভিমতের মূল কথা এটাই ছিল, বাজারজাতকৃত খাদ্য ও PIZZA ইত্যাদি খাওয়া মানে রোগ-ব্যাধিকে তৎক্ষণাৎ আলিঙ্গন করা। 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! PIZZA, ফাষ্ট ফুড ও ঘিয়ে ভাজা খাবার খাওয়াতে রক্তের মধ্যে কোলেষ্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।কোলেষ্টেরলের প্রভাব রক্তের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রগগুলোকে শক্ত ও সংকীর্ণ করে ফেলে। যার কারণে সর্বদা সরাসরি হৃদপিন্ডের ক্ষতি সাধিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যদি ঐ রোগীর ডায়াবেটিক রোগও থাকে এবং তিনি যদি ধূমপানেও অভ্যস্ত হন, তবে STROKE করার বেশি আশংকা থাকে। শারীরিক সুস্থতার জন্য নির্ভেজাল ও টাটকা খাবার আর ওজনের সাদৃশ্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ এতে মেদ বৃদ্ধি ও অপ্রয়োজনীয় কোলেষ্ট্রল আয়ত্বে রাখতে সহজ হয়। 


এক PIZZA আহারকারীর ঘটনা

    এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা হচ্ছে, আমি হালকা-পাতলা ছিলাম। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকত লাভের পূর্বে মডার্ণ প্রকৃতির বন্ধুদের সংস্পর্শে ছিলাম। আমাদের বন্ধুমহলে খাবারের প্রতিযোগীতা চলত। আর আমি প্রায়ই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে খাবার খেয়ে বিজয়ী হতাম। কিন্তু এরপরও শরীর পাতলাই ছিল। শেষ পর্যন্ত কেউ আমাকে PIZZA এবং পেপসি কোলায় অভ্যস্ত করে দিল। আমি প্রথমবার যখন PIZZA খেলাম তখন সম্ভবত আমার ওজন ৬০ থেকে ৬২ কেজি ছিল। শুরুতে মাসে-দুই মাসে একবার খেতাম। এরপর যখন লালসা বেড়ে গেল তখন সপ্তাহে একবার কখনো দুই বার খেয়ে নিতাম। এর সাথে পেপসি অথবা যে কোন কোলা অর্থাৎ কালো রংয়ের পানীয়, যেমন কোকা-কোলা ইত্যাদি ও MAYONNAISE (অর্থাৎ এক ধরণের বিশেষ চর্বিযুক্ত) চাটনীর মজাও উপভোগ করতাম। পর্যায়ক্রমে আমার ওজন বাড়তে লাগল আমি এ সুধারণা পোষণ করতে লাগলাম যে, “বাহ! আমারতো দারুন স্বাস্থ্য গঠন হচ্ছে!” আমার কি জানা ছিল, স্বাস্থ্য গঠনের পরিবর্তে ধ্বংসই হতে চলেছি। আমার কি এটা উপলব্ধি ছিল, এসব বাজারের PIZZA রক্তের মধ্যে COLESTROL মিশ্রণ করতে করতে আমার হৃদপিন্ডের ক্ষতি সাধন করছে। আর আহ! ৬০ কেজি হতে বাড়তে বাড়তে আমার ওজন ৯৫ কেজিতে গিয়ে দাঁড়াল। আমি মোটা হয়ে গেলাম আর আমার পেট বড় হয়ে গেল। রক্তের মধ্যে কোলেষ্ট্রল বৃদ্ধি পেল আর অনেক রোগ স্থায়ীভাবে আমার পিছু নিল।اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَ ভাগ্যক্রমে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকতে পেটের কুফলে মদীনার উপর আমলের ফযীলত শুনে আমার এর উপর আমলের মন-মানসিকতার সৃষ্টি হল, আর আমি কম খাওয়া শুরু করলাম।  اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ কিছু দিনের মধ্যেই (বর্ণনার সময় পর্যন্ত) আমার ৫ কেজি ওজন কমে গেছে। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ আমি নিজের মধ্যে সজীবতা ও হালকাভাব অনুভব করছি। আমাকে অনেক জায়গায় সফর করতে হয়। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। যেহেতু পেটের কুফলে মদীনা পাকস্থলীকে আশ্চর্যজনকভাবে সঠিক করে কোষ্ঠকাঠিণ্য ইত্যাদি সমূলে বিনাশ করে ফেলে, সুতরাং সবচেয়ে বড় উপকার এটা হয়েছে যে, সর্বদা অযু অবস্থায় থাকার “মাদানী ইন্আম” এর উপর আমল শুরু হয়ে গেছে। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ আমাদের ঘরে জব শরীফের রুটি বানানোরও ব্যবস্থা হয়ে গেছে। দোয়া করবেন যেন আমি এ মাদানী পরিবেশে সারাজীবন থাকতে পারি আর যেন প্রত্যেক মুসলমানের পেটের কুফলে মদীনা সম্পর্কে জ্ঞান এসে যায়। এখন PIZZA ইত্যাদির ব্যাপারে আমার অভিমত হচ্ছে, “কাউকে PIZZA, পেপসি, কোলা ও কোকাকোলা ইত্যাদি পান করার অভ্যাস করানো মানে বন্ধুত্বের অন্তরালে শত্রুতা”। 

মোটা স্বাস্থ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় 

   আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে খাবার কম খাওয়ার অভ্যাস করাতে ওজন বৃদ্ধি ও অনেক রোগ ব্যাধি হতে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ শুনে সতর্কতা অবলম্বনের পরিবর্তে কতইনা উত্তম হত, যদি রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর এ নির্দেশের আলোকে আমরা এখন থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা আরম্ভ করতাম! কেননা রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মানুষ নিজের পেট থেকে অধিক মন্দ (অন্য কোন) থালা পূর্ণ করেনা,মানুষের জন্য কয়েক গ্রাস খাবার যথেষ্ট, যা তার পিটকে সোজা রাখবে। যদি এরূপ করতে না পারে তবে এক তৃতীয়াংশ (১/৩) খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ বাতাসের জন্য হওয়া চাই। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, ৪র্থ খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩৪৯) 

সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন 

    যাদের ওজন বেশি, তাদের প্রতি পরামর্শমূলক আরয করছি, কোন ল্যাবরেট্ররীতে গিয়ে হৃদরোগ সংক্ষান্ত চারটি রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন, যেটাকে LIPID PROFILE (লিপিড প্রোফাইল) বলা হয়। এতে কোলেষ্ট্রলের টেষ্টও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। চৌদ্দ ঘন্টা খালি পেটে থাকার পর কোলেষ্ট্রলের টেষ্ট করালে এর ফলাফল সঠিক থাকে। সুগার টেষ্ট করিয়ে নিন। সৌভাগ্যের বিষয় হবে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোযা রেখে সূযার্স্তের পূর্বে এ চারটি টেষ্ট করে নেয়া যায়। এরপর ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ওজন কমানোর ব্যাপারে চেষ্টা করুন। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিরও প্রতি ছয়মাস পরপর এ পরীক্ষাগুলো করিয়ে নেয়া উচিৎ। যাতে রোগ বিস্তৃতি লাভ করার আগেই প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া যায়।


মেদ বিশিষ্ট শরীরের চিকিৎসা 

    ওজন কমানোর জন্য সবজি (ঐ সবজিগুলো ব্যতীত যা রোগ সৃষ্টিকারী, যেমন- আলু ইত্যাদি) উত্তম নেয়ামত। তবে যেন শুধুমাত্র পানি দিয়ে সিদ্ধ করা হয় অথবা একজনের জন্য যেন শুধু এক চা চামচ পরিমাণ হিসাব করে যায়তূন শরীফের তেল (অলিভ অয়েল) দিয়ে রান্না করা হয়।হলুদ, মরিচ মসলা দিতে পারবেন। প্রতিদিন এক গ্রাম (অর্থাৎ-এক চিমটি) পরিমাণ হলুদ প্রত্যেকের খাওয়া উচিত। এতে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ ক্যান্সার হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। প্রত্যেক বেলার খাবারে উপরোল্লিখিত নিয়মানুযায়ী রান্নাকৃত সবজি কমপক্ষে পূর্ণ এক বাসন খাবেন। যদি রুটি ও ভাত ইত্যাদি খাওয়ার প্রয়োজন হয় তবে শুধুমাত্র অর্ধেক চাপাতি, শুধু আধা কাপ সাদা ভাত, ছোট্ট একখানা মাংসের টুকরা, আম খেতে ইচ্ছে হলে, তবে সারা দিনে শুধু অর্ধেক আম, চা পান করতে চাইলে, তবে “ইস্কিমঢ মিল্ক” এর তিক্ত চা পান করে নিন। যদি তা পান করতে না পারেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এক কাপ চায়ের মধ্যে Canderel (কেন্ডিরিল) এর একটি বড়ি মিশান। যদি ডায়াবেটিক রোগ থাকে, তবে চিনির পরিবর্তে চায়ে পরিমাণ মত মধু দিতে পারেন। সালাদ, কাকড়ি (শশা জাতীয়), ক্ষীরা, ইত্যাদিও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করুন। সব ধরণের খাবার ও তরকারী যায়তূন শরীফের তেল (অলিভ অয়েল) ব্যবহারই উত্তম হবে। অন্যথায় CORN OIL (ভুট্টার তেল), তাও সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করুন। খাবারের পূর্বে তরকারীর পেয়ালার উপর থেকে চামচ দিয়ে তেল, ঘি এমনভাবে নিয়ে ফেলুন যাতে এক ফোঁটাও অবশিষ্ট না থাকে। তবে শরয়ী অনুমোদন ছাড়া এ তেল, ঘি ফেলে দেয়া অপচয় ও গুনাহ। এগুলো পুনরায় রান্নার কাজে ব্যবহার করুন। ভাত, গরু-ছাগলের মাংস, ঘি, মাখন, ডিমের জর্দা, কেক, পেষ্টি, কোকো চকলেট ও টফি, বেকারীর তেলে ভাজা খাদ্যসামগ্রী, ক্রীম লাগানো অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার, মিষ্টি, আইসক্রীম, ঠান্ডা পানীয়, বেগুনী বা বেসন মিশিয়ে তৈরী খাবার, কাবাব, চমুচা ইত্যাদি ঐ ধরণের প্রতিটি বস্তু যাতে ময়দা, চর্বি বা মিষ্টতা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, তা থেকে বেঁচে থাকুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ ওজন কমতে পারে আর আপনি اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ স্মার্ট হয়ে যাবেন। ডাক্তারদের নিকট “খাদ্য তালিকা” পাওয়া যায়, এর মাধ্যমেও ওজনের সাদৃশ্য ঠিক রাখতে পারেন। নিজের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওজন কমানো খুবই উত্তম পন্থা।যথাসম্ভব এক ডাক্তারের কাছ থেকেই সর্বদা চিকিৎসা করানো উচিত। এতে এ উপকার হবে যে, ডাক্তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে যাবেন। চিকিৎসা উত্তম পন্থায় করা সম্ভব হবে। আর যদি ডাক্তার বদলাতে থাকেন, তাহলে প্রতিটি নতুন ডাক্তার প্রথম থেকে চিকিৎসা করা শুরু করবেন আর আপনি বারবার প্রত্যেকের নিজ স্বার্থ সিদ্ধির বস্তুতে পরিণত হবেন।  


কোষ্ঠকাঠিন্যের ৪টি চিকিৎসা 

     কূতুল কুলূব এর ২য় খন্ডের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত রয়েছে, ছয় ঘন্টার পূর্বেই যদি খাবার বের হয়ে আসে (অর্থাৎ পায়খানা হয়ে যায়) তবে বুঝতে হবে পাকস্থলী অসুস্থ। আর যদি চব্বিশ ঘন্টা সময় ধরে পায়খানা না হয় তবেও বুঝে নেবেন যে, পাকস্থলী অসুস্থ হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জোড়ার ব্যথা, পেটের বায়ু বের না হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। খালের প্রবাহমান পানি বন্ধ করে দেয়া হলে, যেভাবে খালের দু’পার্শ্বের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং দু’পার্শ্ব ভেঙ্গে পানি প্রবাহিত হয়। অনুরূপভাবে প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ করে রাখাতে শরীরের ক্ষতি হয়ে থাকে। নিজের হজম শক্তি ঠিক রাখুন। অন্যথায় মেদ বৃদ্ধির চিকিৎসা করা কঠিন হবে।  শাক-সবজি ও ফল-মূল খাবেন। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তবে (১) চার, পাঁচটি পাঁকা পেয়ারা বীচিসহ অথবা (২) যতটুকু সম্ভব পেঁপে খাবেন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ পেট পরিস্কার হয়ে যাবে। (৩) প্রতি চার দিন পরপর চার চামচ ‘ইসবগোলের ভূষি’ বা এক চামচ যেকোন হজমচূর্ণ পানির সাথে মিশিয়ে পান করে নিন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ পেট পরিস্কার হতে থাকবে। প্রতিদিন যদি ইসবগোল বা হজমচূর্ণ ব্যবহার করেন তবে প্রায়ই এটার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। (৪) যদি আপনার ডাক্তার অনুমতি দেন, তাহলে দু’তিন মাস পর পর পাঁচদিন পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা একটি করে ৪০০ মিলিগ্রামের GRAMEX (গ্রমিক্স) 400 M.G (METRO NIDAJOLE) ব্যবহার করুন।কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজমী ইত্যাদি রোগ ও পেটের সুস্থতার জন্য اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এটাকে উত্তম ঔষধ হিসেবে পাবেন। কিন্তু যখনই এ টেবলেট খাওয়া শুরু করবেন, তখন একাধারে পাঁচদিন পূর্ণ করা জরুরী। খালি পেটেও খেতে পারেন। বদহজমীর সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা হচ্ছে পেটের কুফলে মদীনা।


অসময়ে নিদ্রা আসার প্রতিকার 

   এক গ্লাস পানিতে (কুসুম গরম হওয়া উত্তম) এক চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেটে (অর্থাৎ সকালে কিছু খাওয়ার পূর্বে) ও রোযাবস্থায় ইফতারের সময় নিয়মিত ব্যবহার করুন। মেদ বৃদ্ধিসহ অনেক রোগ বিশেষ করে পেটের রোগ হতে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ রক্ষা পাবেন। এর সাথে এক বা আধা টুকরা লেবুর রসও মিশিয়ে নেয়াটা উত্তম। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এতে উপকার আরো বৃদ্ধি পাবে। যদি পড়তে পড়তে কিংবা ইজতিমা ইত্যাদিতে বসে বসে অসময়ে ঘুম আসে, তবে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ থেকে মুক্তি লাভ হবে। 


মেদ বহুল শরীরের সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা 

   সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা- আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “ক্ষুধাকে তিন ভাগ করে নেয়া যায়। এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি ও এক ভাগ বাতাস (দ্বারা পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা উচিত)।” যদি খাবারের মধ্যে এ নিয়ম পালন করা হয়, তাহলে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ কখনো শরীর (অতিরিক্ত) মোটা হবে না এবং কখনো বায়ু, বাত, পেটের গন্ডগোল, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগও হবে না। কিন্তু হায়! স্বাদ গ্রহণকারী নফসের টাল-বাহানাইতো মুক্তির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 


আ-ইনে নও ছে ডরনা তরনা তরযে কুহান পে আড়না, 

মনযিল ইয়েহী কঠিন হায় কওমু কি জিন্দেগী মে।


বেশি খাওয়াতে যে সকল রোগের সৃষ্টি হয় 

    প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পেটের কুফলে মদীনা লাগানোর পরিবর্তে বেশি খাবার খাওয়াতে পেট খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। প্রবাদ রয়েছে, অর্থাৎ-কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ-ব্যাধির মা।” ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ৮০ শতাংশ রোগ পেট খারাপ হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এ সব রোগের মধ্যে ১২ প্রকার হচ্ছে এগুলো (১) মস্তিষ্কের রোগ (২) চোখের রোগ (৩) জিহ্বা ও গলার রোগ (৪) বক্ষ ও ফুসফুসের রোগ (৫) অর্ধাঙ্গ ও মুখের অধার্ঙ্গ (৬) শরীরের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া (৭) ডায়াবেটিক (৮) উচ্চ রক্ত চাপ (৯) মাথার মগজের রগ ফেঁটে যাওয়া (১০) মানসিক রোগ (অর্থাৎ- পাগল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) (১১) কলিজা ও পিত্তের রোগ (১২) হতাশাজনিত রোগ। 


সুস্থ থাকার উপায় 

   হযরত সায়্যিদুনা ইবনে সালিম رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যদি কেউ গমের তৈরী শুকনো রুটি আদব অনুযায়ী খায়, তাহলে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন রোগ তার কাছে আসতে পারবেনা, অর্থাৎ-কখনো সে রোগাক্রান্ত হবে না। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আদব কিরূপ? বললেন: ক্ষুধা লাগলে খাবেন আর পরিতৃপ্ত হওয়ার পূর্বে হাত গুটিয়ে নেবেন। (ইহ্ইয়াউল ঊলূম, ৩য় খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা) 


না ছমজ বীমার কো আমরত ভি যহর আ-মীয হে, 

সছ ইয়েহী হে সো দাওয়া কি এক দাওয়া পর হিয হে। 


ক্ষুধার পরিচয় 

     সুন্নাত এটাই যে, যতক্ষণ ক্ষুধা না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত খাবার না খাওয়া। শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হলে খাবার খেয়ে নেয়া অথবা ক্ষুধা না লাগা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে আবশ্যিকভাবে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়।বরং ক্ষুধার পরিচয় দিতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “ক্ষুধার আলামত হল শুধু রুটি হাতে আসতেই তরকারী ব্যতীত আগ্রহ সহকারে খাবার শুরু করে দেয়া। মোট কথা; যখনই রুটি হাতে এসে যায় তা আগ্রহভরে খেয়ে নেয়া আর যদি নফস শুধু রুটি নয়, বরং রুটির সাথেবতরকারীও বায়না ধরে তবে মনে করবেন, এখনো ভালভাবে ক্ষুধা লাগেনি। (ইহ্ইয়াউল ঊলূম, ৩য় খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা) 


ক্ষুধার চেয়ে বেশি খাওয়া 

     ক্ষুধার চেয়ে বেশি খাওয়া হারাম। বেশি অর্থ এযে, এতটুকু খেয়ে নেয়া যে, পেট খারাপ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। যেমন- ডায়রিয়া হয়ে যাবে এবং শরীর খারাপ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা) প্রত্যেকের খাদ্যের পরিমাণ এক রকম হয় না কাউকে বেশি খেতে দেখে তাকে নিকৃষ্ট মনে করা কিংবা তার সম্পর্কে কু-ধারণা পোষণ করা জায়িয নেই। কারণ প্রথমত পেট ভরে খাওয়া কোন গুনাহের কাজ নয় আর এটাও হতে পারে যে, তার শরীরের চাহিদা বেশি, তাই তার খাবারের পরিমাণও বেশি। কথাটা শুনে আপনি আশ্চর্য হলেন! জ্বী! হ্যাঁ! যেভাবে প্রত্যেকের ঘুম এক রকম নয়, অর্থাৎ কেউ দু’ঘন্টা আরাম করে নেয়াতে সারাদিনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায় আর কেউ যদি দশ ঘন্টাও ঘুমিয়ে নেয় তারপরও অলসতাই অলসতা থেকে যায়। অনুরূপভাবে খাদ্যের ব্যাপারেও অর্থাৎ কারো শুধুমাত্র একটি রুটিতে পেট ভরে যায় আর কেউ চার বা পাঁচটি রুটি খাওয়ার পরও পরিতৃপ্ত হয় না। তাই এখন যদি পাঁচটি রুটি আহারকারী তিনটি রুটি খায় তবে নিশ্চয় সে ক্ষুধা থেকে কম খেল। আর একটি রুটি আহারকারীর তুলনায় কোরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে সে এগিয়ে রয়েছে। যা হোক, অন্যের ব্যাপারে অনুসন্ধান করার পরিবর্তে নিজের আ’মলের বিচার বিশ্লেষণ করাতেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ রয়েছে।কারণ যখন কারো দিকে একটি আঙ্গুল ইশারা করা হয় তখন তিনটি আঙ্গুলের মুখ এমনিতেই নিজের দিকে হয়ে যায়। মূলত এ থেকে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, অন্যের সমালোচনা করার পরিবর্তে নিজের দিকে দৃষ্টি দাও।


হিরস্ খানে কি দূর কর ইয়া রব! 

কলব কো নূর নূর কর ইয়া রব! 

বদ গুমানী কি খু নিকাল যায়ে, 

দূর দিল ছে গুরুর কর ইয়া রব! 


অধিক আহারকারীর মনে কষ্ট দেয়া হারাম 

    অধিক আহারকারী কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে শরীয়ত অনুমোদন ছাড়া তিরস্কার করে তার মনে কষ্ট দেয়া কাবীরা গুনাহ্ এবং জাহান্নামে 

নিক্ষেপকারী কাজ। অনেক সময় বেশি পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজনের তাগিদেও হয়ে থাকে। যেমন- ‘গাভীর ন্যায় ক্ষুধা’ নামক রোগীর এত বেশি ক্ষুধা লাগে যে, যতই খাবার খায় না কেন তবুও ক্ষুধার অনুভূতি শেষ হয় না! মন চায়না তবুও বারংবার খেতে হয়। অনুরূপভাবে পাকস্থলীতে আলসার হয়ে পেট খালি থাকলে কষ্ট হয়, সুতরাং তার কিছু না কিছু খেতে হয়। যা হোক যদি কেউ বেশী খায়, তার ব্যাপারেও ভাল ধারণা পোষণ করা জরুরী। কেননা কম খাওয়া মুস্তাহাব। অপরদিকে মুসলমানের প্রতি কুধারণা পোষণ করা হারাম। 

 সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।  


পেট পূর্ণ করে পানি পান করা 

    প্রচন্ড গরমের দিনে, রোযা অবস্থায়, প্রচন্ড পিপাসায় এবং ইফতারের সময় পিপাসা নিবারণের জন্য ঠান্ডা পানি ও মিষ্টি মধুর শরবতও যদি মওজুদ থাকে তবুও এমন অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শরবত বাদ দিয়ে পানিও এতটুকু কম পান করা যেন পিপাসা নিবারণ না হয়, এটা খুবই উত্তম আমল ও তাক্বওয়াবানদের নিয়ম আর যদি কেউ এতটুকু পানি পান করে নেয় যে, পিপাসা নিবারণ হয়ে যায় তবে এতে কোনরূপ গুনাহ্ নেই। গুর্দা পাথর ইত্যাদির চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হয়। আর এমনিতেই পরিতৃপ্ত (অর্থাৎ এতটুকু পানি পান করা যে, পিপাসা নিবারণ হয়ে যায়) হওয়ার পর জোর করে আরো পানি পান করে নেয়া তার জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়। যমযম শরীফের পানির ব্যাপারটাইতো অন্য রকম। “এ পানি ইবাদাতের নিয়্যাতে দেখলে এক বৎসরের ইবাদাতের সাওয়াব লাভ হয়। তা পান করে যে দু’আই করা হয় তা কবূল হয়।” (আল্ মাসলাকুল মুতাকাসসিতুল মারূফ মানাসিকুল মুল্লা আলী ক্বারী, ৪৯৫ পৃষ্ঠা) সাওয়াব অর্জনের নিয়্যাতে তা পেট পূর্ণ করে পান করা উচিত। মুহ্সিনে আহলে সুন্নাত, সাদরুশ শরীআ, বাদরুত তরীকা হযরত আল্লামা মওলানা মুফ্তি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: সেখানে যখন পান করবেন, পেট ভরে পান করবেন। হাদীসে পাকে রয়েছে, আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য এযে, তারা যমযম শরীফের পানি পেট ভরে পান করে না। (বাহারে শরীয়াত, খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা - ৪৭, আল মুসতাদরিক লিল হাকিম খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৪৬, হাদীস নং-১৭৩৮) 


ইয়ে জমজম উছ লিয়ে হায় জিস লিয়ে উস্ কো পিয়ে কো-য়ি, 

ইছি জমজম মে জান্নাত হায় ইছি জমজম মে কাউছার হে। 


পায়ে হাঁটুন 

     ফিজিওথেরাপিষ্টের সাথে পরামর্শ করে নিজের বয়স অনুসারে প্রতিদিন হালকা পাতলা ব্যায়াম করা উচিত। এছাড়া রাতে খাওয়ার পর ডাক্তারের মতে কমপক্ষে একশত পঞ্চাশ কদম পায়ে হাঁটা উচিত।আমার মাদানী মাশ্ওয়ারা (পরামর্শ) হচ্ছে, হাঁটতে হাঁটতে কমপক্ষে চল্লিশ বার صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد এ দরূদ শরীফ পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ একশত পঞ্চাশের চেয়ে অধিক কদম হাঁটা হয়ে যাবে। প্রত্যেককেই প্রতিদিন এক ঘন্টা পায়ে হাঁটা উচিত। যার একেবারে অভ্যাস নেই, সে প্রথমদিকে শুধু বার মিনিট যেন হাঁটে অথবা হাঁটতে হাঁটতে صَلَّی  اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد ৩১৩ বার যেন পাঠ করে এবং শুরু ও শেষে একবার وَعَلٰی اٰلِہٖ وَاَصۡحٰبِہٖ وَبَارِک وَسَلَّم পাঠ করে নেয়। একটু ধীর স্থির ভাবে পাঠ করাতে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এক কিলোমিটার হাঁটা হয়ে যাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়াতে বাড়াতে ৩০ দিনের মধ্যেই প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটার ব্যবস্থা করে নিন। ইসলামী বোনেরা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই হাঁটতে থাকুন। নিজের ওয়াযীফা গুলো বসে বসে পড়ার পরিবর্তে হাঁটা-চলায় পড়ার অভ্যাস করে নিন। আমার অনুরোধ গ্রহণ করে পায়ে হাঁটুন, অন্যথায় খোদা না করুন, ডাক্তারের কথায় যেন আবার অনুশোচনা ও টেনশনের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে হাঁটার পরিবর্তে দৌড়াতে না হয়।


সাধ্যের চেয়ে বেশি বোঝা 

তৃতীয় পারার সূরাতুল বাকারার সর্বশেষ আয়াতে কারীমার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার রহমতপূর্ণ বাণী: لَا يُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ কোন আত্নার উপর বোঝা অপর্ণ করেন না, কিন্তু তার সাধ্য পরিমাণ। (পারা-৩, সূরা- বাক্বারা, আয়াত-২৮৬)

 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় আল্লাহ্ কারো উপর তার শক্তির অধিক বোঝা চাপিয়ে দেননা। কিন্তু আফসোস শত কোটি আফসোস! ঐ লোভী ব্যক্তির জন্য, যে নফসের স্বাদের জন্য একেতো খাবার পেট ভর্তি করে খায়, অপরদিকে শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত শুধুমাত্র স্বাদ গ্রহণের জন্য রাত-দিনের বিভিন্ন সময়েও এটা সেটা বিভিন্ন কিছু খেয়ে নিজের পাকস্থলীর উপর সেটার শক্তির অধিক বোঝা চাপিয়ে দিতে থাকে।

উদারণস্বরূপ বলা যায়, যে ব্যক্তি এক মণ নিতে পারবে তাকে যদি আড়াই মণ তুলে দেয়া হয় তবে সে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাবে। অনুরূপভাবে পাকস্থলীর কাজেরও একটি সীমা আছে। যদি ভালভাবে চিবানো ছাড়া অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য এতে দেয়া হয় তবে বেচারা অবশেষে বস্তুগুলো কিভাবে হজম করতে পারবে? ফলে হজমের ব্যবস্থাপনায় ওলট-পালট অবস্থা হয়ে যাবে। পাকস্থলী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে আর এরপর সমস্ত শরীরকে রোগ-ব্যাধি সরবরাহ করা শুরু করবে। যেমন- মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “পাকস্থলী হচ্ছে শরীরের মাঝে হাওজ বা কুয়ার ন্যায়, আর শরীরের) নলগুলো (রগ) পাকস্থলীর দিকে ধাবিত রয়েছে। যদি পাকস্থলী সুস্থ থাকে তাহলে রগগুলো (পাকস্থলী হতে) সুস্থতা নিয়ে ফিরে যায় আর যদি পাকস্থলী খারাপ হয় তাহলে রগ রোগ নিয়ে ফিরে যায়। (শুয়াবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৭৯৬) 


মরজে ইছইয়া কি তরক্কি ছে হুয়া হো জা বালাব, 

মুঝ্ কো আচ্ছা কীজিয়ে হালত মেরী আচ্ছি নেহী। 


আমি খাবার খুব কম খাই 

      অনেক ইসলামী ভাই এমন রয়েছেন, যারা হয়তো মেদবহুল হয়ে থাকেন কিংবা পেটের রোগে আক্রান্ত। তাদেরকে বলতে শুনা যায়, “আমি খাবার খুব কম খাই”। তাদের মধ্যে অনেকেতো কঠিন হৃদয়ের কারণে মিথ্যা বলাতে নির্ভীক হয়ে থাকে আর কিছু সংখ্যক ভুল ধারণার বশীভূত হয়ে এমন বলে ফেলেন। কিন্তু তাদের সারাদিনের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি দৃষ্টি দিলে জানা যাবে যে, তারা যেটাকে “কম খানা” বলছেন, তাতে নাস্তায় ডিম পরাটা, মাখন লাগানো বন দুধের সরসহ হালুয়া, চনাপুরি।  অতঃপর সারাদিনের অন্যান্য খাদ্য দু’ একটি ঠান্ডা পানীয়ের বোতল, এক আধটা আইসক্রীম, তিন চারবার চা-বিস্কিট, বার্গার, কেক পিস, সামান্য মিষ্টি ইত্যাদিও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে আর এভাবে পাকস্থলীর ধ্বংস প্রক্রিয়া, ওজন বৃদ্ধি অথবা রোগ-ব্যাধির গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

যদি সত্যিই কারো পেট অল্প খাওয়াতে ভর্তি হয়ে যায়, তবে তারও উচিত, আরো খাবার কম করে নেয়া, যেন ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকে। যেমন- পিঁপড়া নিজের (খাওয়ার) “অভ্যাস” থেকে কম করে এবং হাতি নিজের “মণ” (পরিমাণ খাওয়া) থেকে কম করে।


খোদা হামকো সাছ বোলনে কি দে তওফিক, 

তু মুহ সৌছ কর খুলনে কি দে তওফিক। 


কম আহার করার সতর্কতা 

    (১) বাবা কিংবা মা যদি নির্দেশ দেন যে, পেট ভরে খেয়ে নাও। তবে তাঁদের আনুগত্য করুন। (২) যদি কারো চাকরী করেন আর সেখানে কম খেতে চান, এমতাবস্থায় যদি কম খাওয়াতে শরীরে দুর্বলতা আসে যার কারণে ভালভাবে কাজ করতে অপারগ হন তাহলে কম খাওয়ার জন্য মালিকের অনুমতি নেওয়া জরুরী। (৩) অনুরূপভাবে ইসলামী শিক্ষা প্রদান ও শিক্ষা গ্রহণে যদি কম-খাওয়ার কারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তাহলে প্রয়োজন অনুসারে খেয়ে নিন। (৪) আপনার মেহমান আপনার সাথে খেতে বসেছেন আর আপনার কম খাওয়ার কারণে এ আশংকা রয়েছে যে, লজ্জায় তিনিও হাত গুটিয়ে নেবেন, তবে সেদিকে লক্ষ্য করে চলুন। (৫) যদি মেযবান (যার ঘরে খাবার খাচ্ছেন) অনুরোধ করেন এবং কোন অপারগতা না থাকে, তাহলে ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকাবস্থায় আরো কিছু পরিমাণ খেয়ে নিন কারণ এটা হল ভদ্রতা। তদুপরি মুসলমানের অন্তর খুশী করা সাওয়াবের কাজ। প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল  صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি মুসলমানের পরিবার-পরিজনদেরকে খুশী করে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাত নির্ধারণ ছাড়া অন্য কিছু পছন্দ করেন না। (তাবারানী সাগীর, ২য় খন্ড, ৫১ পৃষ্ঠা)


কম খাওয়া উত্তম কিন্তু মিথ্যা বলা হারাম 

   দাওয়াতে যখন মেযবান বলেন: আর অল্প নিন! তখন যদি আপনি খাবার শেষ করে নেন এবং ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকা সত্ত্বেও আর খাওয়ার আগ্রহ না থাকে তবে খুব সাবধানে জবাব দেবেন। যেমন- এভাবে বলুন, আল্লাহ্ বরকত দান করুন, আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমি আমার হিসাব মত খেয়ে নিয়েছি ইত্যাদি। কখনো মিথ্যা বাক্যাবলী বলবেন না। কম খাওয়া সত্ত্বেও প্রচলিত মিথ্যা বাক্য সমূহের উদাহরণ হচ্ছে, আমি পেট ভরে খেয়ে নিয়েছি, আমার পেট পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। না না, পেটে আর তিল ধারণের জায়গা নেই। সত্যি বলছি একেবারে ক্ষুধা অবশিষ্ট নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে রাখবেন! মিথ্যা বলা কাবীরা গুনাহ্, হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। তাকওয়ার পথে খুবই সতর্কতার সাথে অগ্রসর হবেন। যেন আবার এমন না হয়, ক্ষুধা থেকে কম খাওয়ার মুস্তাহাব ও উত্তম আমল করতে গেলেন আর নফস আপনাকে সেখান থেকে উঠিয়ে রিয়াকারী, মিথ্যা, অহংকার, মা-বাবার অবাধ্যতা ও মুসলমানকে তুচ্ছ মনে করা ও খারাপ ধারণা পোষণ ইত্যাদি হারাম কাজে লিপ্ত করে জাহান্নামী হওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। কারণ নফস বা কু-প্রবৃত্তির কাজই হচ্ছে মন্দ কাজের প্রতি প্ররোচিত করা। যেমন- কুরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে: اِنَّالنَّفۡسَ لَاَمَّارَةٌۢ بِالسُّوۡٓءِ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় রিপুতো মন্দ কাজের বড় নির্দেশদাতা,(পারা- ১৩, সূরা্- ইঊসুফ, আয়াত- ৫৩)


নফস কি চালছে বাঁচা ইয়া রব, 

ইছকে জঞ্জালছে বাঁচা ইয়া রব। 


    ‘নফসকে’ মেরে ফেলার পরিপূর্ণ চেষ্টা করা উচিত। কেননা যে নফসকে মারতে পেরেছে অথবা সেটাকে মন্দ আকাংখা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে, তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। যেমন-খোদায়ে রহমান এর জান্নাতরূপী বাণী হচ্ছে: 

وَاَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَ نَهَى النَّفۡسَ عَنِ الۡهَوٰىۙ‏ ﴿۴۰﴾  فَاِنَّ الۡجَـنَّةَ هِىَ الۡمَاۡوٰىؕ‏ ﴿۴۱﴾

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর সেই ব্যক্তি, যে আপন প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবার ভয় করেছে এবং নফসকে (মন) কু-প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছে, তবে, নিশ্চয় জান্নাতই তার ঠিকানা। (পারা- ৩০, সূরা- আন্নাযি‘আত, আয়াত-৪০,৪১) 


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


নফস কাকে বলে ? 

    যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য “পেটের কুফলে মদীনা” লাগিয়ে ক্ষুধার্ত থাকার বরকতসমূহ লাভ করার জন্য আপনার মন- মানসিকতা তৈরী হয়, তাহলে এটা স্মরণ রাখবেন, নফসের সাথে প্রচন্ড লড়াই করতে হবে। নফস সহজেই আয়ত্বে আসার মত নয়। হযরত সায়িদ্যুনা বায়েজীদ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “নফস এমন একটি বস্তু, খারাপ কাজ ছাড়া যেটার শান্তিই আসে না।” হযরত সায়্যিদুনা সুলাইমান দারানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: নফসের বিরোধিতা করা খুবই উত্তম আমল। (কাশফুল মাহ্জূব, ৩৯৫-৩৯৬ পৃষ্ঠা) 


আল্লাহ,আল্লাহকে নবী ছে,

 ফরিয়াদ হে নফস কি বদী ছে। 

ঈমা পে বেহতর মওত ঊ নফস,

 তেরি না পাক জিন্দেগী ছে। 


নফসের জন্য এক বৎসরের ইবাদত থেকে উত্তম 

    হযরত সায়্যিদুনা আবূ সুলাইমান দারানী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “নফসের ইচ্ছা গুলো থেকে কোন একটি ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করা নফসের জন্য এক বৎসরের রোযা ও এক বৎসরের রাতের ইবাদত থেকেও অধিক উত্তম।” (জাযবুল কুলূব, ২য় খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


শিয়ালের বাচ্চার আকৃতিতে নফস

বুযূর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللّٰهُ تَعَالٰی অনেক সময় নফসকে বিশেষ আকৃতিতে দেখেছেন এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- হযরত সাইয়্যিদুনা মুহাম্মদ আলইয়ান নসবী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: প্রাথমিক অবস্থায় যখন আমি নফসের ধ্বংস প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম তখন সেটার সাথে আমার ভীষণ শত্রুতা হয়ে গেল। একদা দেখলাম, শিয়ালের বাচ্চার মত একটি প্রাণী আমার কণ্ঠনালী হতে হঠাৎ করে বের হয়ে গেল! আল্লাহ্ তাআলা আমাকে সেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আর বুঝে গেলাম, এটা আমার নফস! আমি সাথে সাথে প্রবল আক্রোশে সেটার উপর ঝাপিয়ে পড়লাম এবং সমস্ত ঘৃণাকে একত্রিত করে নিজ পায়ে সেটাকে পিষতে লাগলাম। কিন্তু কী আশ্চর্য ব্যাপার! আমি যতই সেটাকে পিষতে থাকি ততই সেটা লম্বা হতে থাকে! আমি বিরক্ত হয়ে বললাম: ওহে নফস! প্রতিটি বস্তু কষ্ট ও আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় অথচ তুই এর বিপরীত বাড়তে শুরু করেছিস। সেটা জবাব দিল, “আমার ব্যাপারটাই উল্টা। যে বিষয়ে অন্য বস্তু গুলোর কষ্ট হয়, সেগুলো দ্বারা আমি শান্তি লাভ করি, আর যে সব বিষয়ে অন্যদের শান্তি লাভ হয়, আমার সেগুলো দ্বারা কষ্ট হয়!” (কাশফুল মাহ্জূব  অনুদিত, মুজাহিদাতে নফস অধ্যায়, ৪০৭ পৃষ্ঠা)


নিহাঙ্গ ও আঝদাহা মা-রা আগর ছে শেরে নার মা-রা 

বড়ে মূজি কো মা-রা নফসে আম্মারা কো গর মা-রা। 


খাওয়ার জন্য বাঁচা 

     প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! নফসকে হত্যা করা খুবই কঠিন কাজ। তাই বলে তাকে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকলে চলবেনা। যে কোনভাবেই এটাকে আয়ত্বে নিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত। আর এর একটি উপায় এটাও যে, নফস যা বলে তার বিপরীত কাজ করা। যেমন সেটা ভাল ভাল খাবার, মজাদার খাবারের স্বাদ গ্রহণে যখন পরামর্শ দেয় বা পেট ভরে খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে, তখন তার কথা মানবেন না। শুধু প্রয়োজন অনুপাতে খাবেন।হুযূর দাতা সাহিব رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “ক্ষুধা সিদ্দীক্বীনদের খাবার ও মুরীদদের সুলূক (রীতি-নীতি) এর পথ। আগেকার যুগে লোকেরা জীবিত থাকার জন্য খেতেন অথচ তোমরা খাওয়ার জন্য জীবিত রয়েছ।” (কাশফুল মাহ্জূব অনুদিত, ৬০৫ পৃষ্ঠা) 

 সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


স্বয়ং রোগী ডাক্তার হলেন 

     কথিত আছে, হযরত সায়্যিদুনা শায়খ খাজা মাহবূবে ইলাহী নিযামুদ্দীন আওলিয়া رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ খুবই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন।  মুরীদরা আরয করল: “হুযূর! এখানে একজন পন্ডিত “ঝাড়-ফুঁকের” কাজ করেন তার চিকিৎসা খুবই প্রসিদ্ধ। যদি অনুমতি দেন তবে তার কাছে আপনাকে নিয়ে যাই।” তিনি বললেন: “আমি চিকিৎসার জন্য কাফিরের নিকট যাব না।” রোগ আরো বৃদ্ধি পেল এবং  তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বেহুশ হয়ে গেলেন। মুরীদরা তাঁকে তুলে ঐ “পন্ডিতের” নিকট নিয়ে গেল। সে যখন ফুঁক মারল তখন তাঁর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হুশ ফিরে আসল আর তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। তিনি সুস্থবোধ করলেন। পন্ডিতকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: “চিকিৎসায় তোমার এ যোগ্যতা কিভাবে অর্জিত হল?” সে বলল: “আমার উস্তাদ আমার কাছ থেকে শপথ নিয়েছেন, নফস যা কিছু বলে, এর বিপরীত করবে। তাই আমার যখন ঠান্ডা পানি পান করার ইচ্ছা হয় তখন গরম পানি পান করি। নফস ভাত খেতে চাইলে রুটি খেয়ে নিই। এভাবে নফসের কথার বিপরীত করতে করতে আমার মাঝে এ শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বললেন: “এটা বল তো, তোমার নফস তোমাকে মুসলমান হওয়ার জন্য বলে নাকি বলে না?”সে বলল: “আমাকে নিষেধ করে,” তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বললেন: “এটা মুসলমান হতে নিষেধ করছে, তাই তোমার মূলনীতি অনুযায়ী সেটার কথার বিপরীত কাজ করে তোমার উচিত মুসলমান হয়ে যাওয়া।” একথা তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কিছুটা এরূপ হৃদয়গ্রাহী নিয়মে বললেন: সেটা প্রভাব সৃষ্টিকারী তীর হয়ে তার হৃদয়ে বিদ্ধ হয়ে গেল আর সে হঠাৎ বলে উঠল, “আমি আমার কুফর থেকে তাওবা করে মুসলমান হয়ে যাচ্ছি এবং সে পাঠ করতে লাগল: 


لَآ اِلٰهَ اِلَّااللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللہِ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم


سُبۡحٰنَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ! সে পন্ডিত হযরত খাজা নিযামুদ্দীন رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বাহ্যিক রোগের চিকিৎসা করল আর তিনি رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তার সে উপকারের বিনিময়ে তার আভ্যন্তরীণ রোগের চিকিৎসা করে দিলেন। সে তাঁর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ শরীরের চিকিৎসা করলেন, তিনি তার রূহের চিকিৎসা করে দিলেন। সে বাহ্যিক রোগ দূর করল, তিনি তার আভ্যন্তরীন অর্থাৎ কুফরের রোগ দূর করে দিলেন। 


নেগাহে ওলী মে উও তাছির দেখি, 

বদলতী হাজারো কী তাকদীর দেখি। 


দাঁতের মাড়ির ক্যান্সার 

    চা, পান খাওয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি খাবারের সাথে সাথে চা ও পান খাওয়ার পরিমাণ কমানোর মন-মানসিকতা তৈরী করুন। এমন যেন না হয়, আপনি খাবার কমাবেন আর ধোঁকাবাজ নফস আপনাকে ক্ষুধা নিবারণের আশা দিয়ে চা ও পান চিবানোর হার বাড়ানোর বিপদে লিপ্ত করে দিবে। চা গুর্দার জন্য ক্ষতিকারক আর পান খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করার মধ্যেই ফায়দা রয়েছে। যারা এগুলো বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে তাদের মাড়ি, মুখ ও গলার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশি পান খাওয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদের মুখ ভেতরে লাল লাল হয়ে যায়।যদি মাড়িতে রক্ত কিংবা পুঁজ জমে যায় তখন তা ঐ কারণে দেখা যায় না আর ওগুলো নিজের অজান্তে পেটে প্রবেশ করতে থাকে। হয়তো তাদের ঐ সময়ই জানা হবে, আল্লাহ্ না করুন কোন মারাত্মক রোগ শিকড় গেড়ে বসবে। আর তা তাকে যন্ত্রণা দিতে থাকবে। 


নকল খয়েরের ধ্বংসযজ্ঞতা 

পাকিস্তানে সম্ভবত পানের খয়ের উৎপন্ন হয় না। সুতরাং সম্পদ লোভী ব্যক্তিবর্গ, যাদের দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে কোন চিন্তা-ভাবনা থাকে না ঐ সব লোকেরা মাটির সাথে চামড়ার রং মিশিয়ে “খয়ের” এর মত একটা বস্তু বানিয়ে বিক্রি করে! আর এভাবে বেচারা পান ভক্ষণকারী বিভিন্ন ধরণের রোগের শিকার হয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতে থাকে। খাবার স্বাদ শুধুমাত্র কন্ঠনালী পর্যন্ত অনুভব হয়ে থাকে জবের শুকনো রুটি হোক কিংবা ঘিয়ে ভাজা পরাটা, পেটে যাওয়ার সাথে সাথে সবই একাকার হয়ে যায় । যে মাত্র খাবার কন্ঠনালী থেকে নীচে আসে, তখনই তার স্বাদ নিঃশেষ হয়ে যায়। যা-ই হাতে আসে তা-ই পেটে নিক্ষেপ করা ও চেপে চেপে পেট ভর্তি করে খাওয়াতে শুধুমাত্র জিহ্বারই স্বাদ গ্রহণ হয়ে থাকে। আর স্বাদ গ্রহণ শুধুমাত্র কিছুক্ষণের জন্যই। কিন্তু এ দ্বারা দ্বীনী ও দুনিয়াবী ক্ষতিসমূহ হয়ে থাকে দীর্ঘস্থায়ী। যদি কেউ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে তবে তার সামনে এ বিষয় প্রকাশ পাবে, দু’মিনিটের স্বাদ লাভের জন্য আখিরাতের দীর্ঘ হিসাব-নিকাশের বোঝা মাথায় নেয়া, এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বরং কবর পর্যন্ত পিছু ধাওয়াকারী রোগ-ব্যাধিকে আলিঙ্গন করে নেয়া কখনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই “পেটের কুফলে মদীনা” লাগিয়ে কম খাওয়াতেই নিরাপত্তা বিদ্যমান রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা আবূ দারদা رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “মুহুর্তের জন্য কামনা-বাসনার আনুগত্য করা, দীর্ঘস্থায়ী পেরেশানীর কারণ হয়ে থাকে।” 


ইয়াউও গোয়ী, ডাট কে খানা খোব সোনা ছুট জায়ে, 

দুনিয়াবী লাজ্জাত ছে দিল কাশ মেরা টুট জায়ে।


মজাদার লোকমার অদ্ভুত বাস্তবতা 

   ভেবে দেখুন! জিহ্বাকে স্বাদদানকারী সুগন্ধে ভরা, ঘিয়ে ভাজা, খুবই মজাদার পরিপাটি খাবার অত্যন্ত আগ্রহ ভরে যদি কেউ মুখে দেয় আর চপ চপ করে চিবিয়ে যেমাত্র কন্ঠনালীর নীচে নেমে যায়, তখনই তার সব স্বাদ শেষ হয়ে যায়। এরপর যদি ঐ মজাদার খাবারই বমিরূপে বের হয়ে আসে, তখন সেটার দিকে তাকাতেও ঘৃণার সৃষ্টি হবে। এটাই হল ঐ স্বাদপূর্ণ খাবারের বাস্তবতা। এছাড়া এ মজাদার খাবারের মর্যাদা কতটুকু তা এ ঘটনা থেকে বুঝার চেষ্টা করুন। 


হৃদয় বিগলিত ঘটনা 

    একটি মহল্লায় পায়খানা পরিস্কার করা হচ্ছিল, যে কারণে চারিদিকে মল-মূত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। লোকেরা দুর্গন্ধ এড়ানোর জন্য নাকে রুমাল দিয়ে দ্রুতবেগে সে জায়গা অতিক্রম করে যাচ্ছিল, এমন সময় ঐ মল-মূত্র গুলো তাদেরকে ডাক দিয়ে (আপন অবস্থার ভাষায়) বলতে লাগল: “ওহে পলায়নকারীগণ একটু থামো! আমাদেরকে চিনে নাও, আমরা কারা? আমরা সেই বস্তু যাদেরকে তোমরা খুবই কষ্টে অর্জন করেছ, অনেক পরিশ্রম করে রান্না করেছ আর খুব মজা করে গো-গ্রাসে খেয়েছ এবং তা দিয়ে নিজের পাকস্থলী ভর্তি করেছ। আফসোস! তোমাদের সাথে মূহুর্তের সংস্পর্শ আমাদের এ অবস্থা করে দিয়েছে! আমাদের কাছ থেকে তোমরা কেন পালাচ্ছ! আমরাতো তোমাদের মজাদার বিরিয়ানী, ............ ঘিয়ে ভাজা পরাটা, ............... এবং পরিপাটি কোরমা। 


দেখো মুঝে জু দীদায়ে ইবরত নিগাহ হো। 


নিজের অবস্থা সম্পর্কে স্মরণদানকারী চাবুক 

    প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শুধু নসিহতই নসিহত। খাবার যত উত্তম হবে সেটার পরিণাম ততই মন্দ হবে।মানুষ যত মজাদার ও মসলাযু্ক্ত তেলে ভরা খাবার খায় সেটার পায়খানাও তত বেশি ভীষণ দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। অথচ ঘাস ও তৃণলতা ভক্ষণকারী পশুর গোবর মানুষের পায়খানার তুলনায় একেবারে কম দুর্গন্ধযুক্ত হয়। হয়তো একথা গুলো পড়ে বা শুনে কারো মনে খারাপ লাগতে পারে এবং নফসও তাকে রাগান্বিত করার জন্য কুমন্ত্রণা দিতে পারে। তাই তাদের সামনে আমার বিনীত আরয, আপনার অসন্তুষ্ট হওয়াটা একটু চিন্তা করে দেখলেই বুঝতে পারবেন, একেবারে অহেতুক। আপনার এ অসন্তুষ্ট হওয়াটাও সরাসরি একটি শিক্ষা। ভেবে দেখুন যে, আমাদের মত গুনাহগার মানুষ খুব অহংকার ও গর্ব করে থাকি। অথচ এটা একবারও ভাবি না, আমার মযার্দাইবা কি! আমিতো এমন অকর্মণ্য যে, উত্তম খাবারও আমার সংস্পর্শে কিছুক্ষণ থাকার পর এমনভাবে বিলীন ও বিকৃত হয়ে যায়, এখন তা দেখতেতো চাইবই না, এমনকি সেটার আলোচনা শুনাও আমার নিকট অপছন্দীয়। হযরত সায়্যিদুনা তাউস رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এক ব্যক্তিকে গর্ব ভরে চলতে দেখে বললেন: এটা (গর্ব ভরে চলা) ঐ ব্যক্তির চালচলন বা কাজ নয়, যার পেটে দুর্গন্ধ বস্তু ভর্তি রয়েছে! হযরত সায়্যিদুনা মুতাররিফ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হাজ্জাজ বিন ইঊসূফের ফৌজের সেনাপতি মুহাল্লাবকে রেশমী কাপড়ের পোষাক পরিহিত অবস্থায় গর্ব ভরে হাঁটতে দেখে যখন তাকে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখিয়ে দিলেন, তখন সে বলতে লাগল, “আমাকে চেন না, আমি কে!” তিনি বললেন: “আমি তোকে খুব ভাল ভাবে জানি, পূর্বে তুই একটি নাপাক পানির ফোঁটা ছিলি আর অবশেষে পঁচা একটি লাশ হবি এবং এটাতো সকলেই জানে যে, তুই পেটের মধ্যে নাপাক বস্তু বহন করে চলা-ফেরা করিস।” এরূপ কড়া কথা শুনে সে লজ্জিত হয়ে গর্ব সহকারে চলা থেকে বিরত রইল। হযরত সায়্যিদুনা মুসআব বিন যুবাইর رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “অদ্ভুদ ব্যাপার, মানুষ অহংকার করে অথচ সে দু’বার প্রস্রাবের স্থান দিয়ে বের হয়েছে!”


আপনি কি কম খাওয়ার অভ্যাস গড়তে চান? 

    যদি আপনি পেটের কুফলে মদীনা লাগাতে চান অর্থাৎ কম খাওয়ার অভ্যাস গড়তে ও এতে অটল থাকতে মনস্থ করেন তবে আমার এ মাদানী মাশওয়ারা (পরামর্শ) গুলোর উপর আমল করুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ অনেক উপকার হবে। নিজের মন-মানসিকতা এভাবে তৈরী করুন, যেভাবে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “পেট ভরে খাবার খাওয়াটাও আখিরাতের হিসাব-নিকাশের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর সময় ভীষণ কষ্টের একটি কারণ।” হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আরো বলেন: “অধিক খাবার খাওয়া আখিরাতের সাওয়াবকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং তোমরা যে পরিমাণ স্বাদ দুনিয়াতে অর্জন করবে, সে পরিমাণ আখিরাতে কম হয়ে যাবে।” (মিনহাজুল আবেদীন, ৯৪ পৃষ্ঠা)


ডাটকে খানে কি মহ্ববত কলব ছে মেরে নিকাল, 

নাযআ মে দে মুঝ কো রাহাত আয় খোদায়ে যুলযালাল। 


জাহান্নামীদের খাবার 

     প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জিহ্বার কয়েক মিনিটের স্বাদ গ্রহণের জন্য বর্ণিত ভয়ানক বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল না করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে অল্প খাওয়াতেই নিরাপত্তা রয়েছে। পেট ভর্তি করা কিংবা মজাদার বস্তু খাওয়া ও ঠান্ডা পানীয় পান করার প্রতি মনে লালসা হলে তখন হৃদয় কাঁপানো জাহান্নামের কষ্টদায়ক পানাহারের  কথা স্মরণ করুন। যেগুলো কাফিরদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। জাহান্নামীদের খাবারের হৃদয় বিদারক পরিণাম সম্বন্ধে আলোচনা করে আল্লাহ্ তাআলা সূরা দুখানেরা আয়াত নম্বর ৪৩-৪৬ এর মধ্যে ইরশাদ করেন: 

اِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّوۡمِۙ‏ ﴿۴۳﴾  طَعَامُ الۡاَثِيۡمِ ۛۚ   ۖ‏ ﴿۴۴﴾  كَالۡمُهۡلِ ۛۚ يَغۡلِىۡ فِى الۡبُطُوۡنِۙ‏ ﴿۴۵﴾  كَغَلۡىِ الۡحَمِيۡمِ‏ ﴿۴۶﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় যাককুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য, গলিত তাম্রের ন্যায় পেটগুলোর মধ্যে ফুটতে থাকবে, যেমন উত্তপ্ত পানি ফুটে থাকে। (পারা- ২৫, সূরা-আদ্ দুখান, আয়াত- ৪৩-৪৬) জাহান্নামীদের ধ্বংসকারী পানীয় সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলার ইরশাদ হচ্ছে: وَسُقُوۡا مَآءً حَمِيۡمًا فَقَطَّعَ اَمۡعَآءَهُمۡ‏

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাড়ি-ভূড়িকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। (পারা- ২৬, সূরা- মুহাম্মদ, আয়াত- ১৫)


সাপের বিষের পেয়ালা

    মুগীস বিন সামী رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: “যখন কাউকে দোযখে নেয়া হবে, তখন তাকে বলা হবে, অপেক্ষা কর আমি তোমাকে একটি উপহার দিচ্ছি। অতঃপর সাপের বিষ ভর্তি একটি পেয়ালা তাকে দেয়া হবে। যখন সেটা সে নিজের মুখের নিকটবর্তী করবে তখন তার চেহারার মাংস ও হাঁড়গুলো খসে পড়বে।”(আলবুদূরুসসা-ফিরাহ্, ৪৪২ পৃষ্ঠা)


করম আয্ পায়ে মুস্তফা ইয়া ইলাহী, 

জাহান্নাম ছে মুঝ কো বাঁচা ইয়া ইলাহী। 


     সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।

اِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّوۡمِۙ‏ ﴿۴۳﴾  طَعَامُ الۡاَثِيۡمِ ۛۚ   ۖ‏ ﴿۴۴﴾  كَالۡمُهۡلِ ۛۚ يَغۡلِىۡ فِى الۡبُطُوۡنِۙ‏ ﴿۴۵﴾  كَغَلۡىِ الۡحَمِيۡمِ‏ ﴿۴۶﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় যাককুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য, গলিত তাম্রের ন্যায় পেটগুলোর মধ্যে ফুটতে থাকবে, যেমন উত্তপ্ত পানি ফুটে থাকে। (পারা- ২৫, সূরা-আদ্ দুখান, আয়াত- ৪৩-৪৬)

  বড় ধরণের নেয়ামতের হিসাবও বড় হবে 

  ঘরের সবাই যদি ঐক্যমত হয় তবে খাবার, তরকারী ইত্যাদিতে যে পরিমাণ তেল, মসলা ব্যবহার করেন তার চেয়ে পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসুন। এর ফলে খাবারের স্বাদ কমে যাবে। যখন স্বাদ কমে যাবে তখন খাবারের প্রতি আগ্রহও কমে যাবে। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ পেটের কুফলে মদীনা লাগানো অর্থাৎ অল্প খাওয়া তখন সহজ হয়ে যাবে। রুটির ছোট্ট টুকরা যা দ্বারা কোন রকমে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা হয়েছে, সেটার হিসাব কিয়ামতে হবে না। অন্যথায় মনে রাখবেন! দুনিয়াতে খাবার যত উত্তম ও মজাদার খাবেন কিয়ামতের হিসাবও তদনুযায়ী কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। যদি কারো বিরিয়ানী পছন্দনীয় খাদ্য, তার জন্য তুলনামূলকভাবে খিচুড়ীর হিসাব সহজ হবে। কিয়ামতে বিচার ব্যবস্থাও এমন হবে যে, যার যে বস্তু অধিক পছন্দনীয় হবে, সেটা তার জন্য বড় ধরণের নেয়ামত হিসাবে গণ্য করা হবে। যেমন-যার কাছে বিরিয়ানীর তুলনায় খিচুড়ি অধিক পছন্দনীয় তার জন্য খিচুড়ীই হবে বড় নেয়ামত। এরকম ক্ষেত্রে বিরিয়ানীর তুলনায় খিচুড়ীর হিসাবই হবে কঠিন। সাধারণ পানির তুলনায় ঠান্ডা পানির, সাধারণ খাবারের তুলনায় মজাদার খাবারের হিসাব অধিক কঠিনভাবে নেয়া হবে। পোলাও, কোরমা, রুটি ইত্যাদি গরম গরম হলে তখন হিসাব হবে কঠিন আর যদি একেবারে ঠান্ডা ও স্বাদহীন হয়ে যায় তখন হিসাবও হবে সহজ। কারণ যেহেতু নফসের এ ধরণের খাবার পছন্দনীয় হয় না। আহ! প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে।


প্রতিটি নেয়ামতের ব্যাপারে তিনটি প্রশ্ন 

   হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “কিয়ামতের দিন প্রতিটি বস্তুর ব্যাপারে এ তিনটি প্রশ্ন করা হবে! (১) তুমি এ বস্তুটি কিভাবে অর্জন করেছ? (২) এটা কোথায় খরচ করেছ? (৩) কোন নিয়্যতে খরচ করেছ?” (মিনহাজুল আবেদীন, ১০০ পৃষ্ঠা)আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: ثُمَّ لَـتُسۡـَٔـلُنَّ يَوۡمَٮِٕذٍ عَنِ النَّعِيۡمِ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর নিশ্চয় নিশ্চয় সেদিন তোমাদেরকে নেয়ামাত সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (পারা-৩০, সূরা- তাকাছুর, আয়াত- ৮)

    

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর শপথ! দুনিয়ার জাঁকজমকের মধ্যে বিত্তশালী ও ক্ষমতার অধিকারীদের তুলনায় সুন্নাতের অনুসারী গরীব ও নিঃস্ব ব্যক্তিরা হবে সেদিন অধিক ভাগ্যবান। তারাই আখিরাতে সফলকাম হবে যারা রোগ-ব্যাধি ও বিপদাপদে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আনুগত্য করেছে। একটি শিক্ষণীয় বর্ণনা শুনুন এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। যেমন-


জাহান্নামে ডুব দেয়া 

    হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত, "তিনি বলেন যে, নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন কাফিরদের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তিকে আনা হবে, যে দুনিয়াতে অনেক বেশী নেয়ামত দ্বারা ধনবান ছিল।” বলা হবে, “এ ব্যক্তিকে আগুনে ডুবিয়ে দাও।” তাকে আগুনে ডুবিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, “ওহে অমুক! কখনো কি তুমি নেয়ামত দ্বারা ধনবান হয়েছিলে? তখন সে বলবে, “না, আমি কখনো কোন নেয়ামত লাভ করিনি।” এরপর মুসলমানদের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তিকে আনা হবে, যে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি মুসিবতগ্রস্ত ও খারাপ অবস্থায় ছিল। বলা হবে, “এ ব্যক্তিকে জান্নাতে একবার ঘুরিয়ে আন।” তাকে জান্নাতে একবার ঘুরিয়ে আনা হবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, “ওহে অমুক! তুমি কখনো কঠোরতা দেখেছ, তুমি কি কখনো মুসিবতের সম্মুখীন হয়েছ? তখন সে বলবে, না, আমি কখনো কঠোরতা দেখিনি আর না কখনোই আমি মুসিবতে আক্রান্ত হয়েছি।” (ইবনে মাজাহ্, ৪র্থ খন্ড, ৫৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৩২১)জানা গেল, জাহান্নামের আগুন এরূপ ভয়ানক যে, তাতে শুধু একটু প্রবেশ করাটা দুনিয়ার সকল জাঁকজমক বিলাসীতা ও শান্তি লাভের কথাকে ভুলিয়ে দেবে আর তার এমন মনে হবে যে, আমিতো সর্বদা পেরেশানিতেই ছিলাম। এছাড়া জান্নাতের মধ্যে একটু প্রবেশ করাটা এরূপ আনন্দদায়ক হবে যে দুনিয়াতে নিঃস্ব ও বিভিন্ন ধরনের মুসিবতের কারণে খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন কারী শুধুমাত্র জান্নাতে একবার প্রবেশ করার কারণে সকল কষ্ট ভুলে যাবে এবং তার এ মন-মানসিকতা তৈরী হবে যে, আমিতো কখনো কষ্টই দেখিনি যে, তা কিরূপ হয়ে থাকে! 


মিযাঁ পে ছব খাড়ে হে, আমাল তুল রহে হেঁ, 

রাখলো ভরম আল্লাহরা আত্তারে কাদেরী কা। 


অল্প খাওয়ার অভ্যাস গড়ার নিয়ম 

     অধিক খাওয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে যদি আবেগের বশীভূত হয়ে হঠাৎ খাবার কমিয়ে দেয়, তাহলে প্রবল আশংকা রয়েছে যে, সে দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়বে আর তার ইবাদতে উৎসাহও কমে যেতে শুরু করবে। এজন্য সামান্য সামান্য করে কমান। যেমন- কেউ একদিনে ১২টি রুটি খায় সে নিজেকে ৬টি রুটি খাওয়ায় অভ্যস্ত করাতে চায় তাহলে ঐ ১২টি রুটিকে ৬০ভাগ করে নিতে হবে আর প্রতিদিন এক টুকর করে কমাতে থাকবে অর্থাৎ প্রথম দিন ৫৯ টুকর খাবে, দ্বিতীয় দিন ৫৮ টুকর, এভাবে একমাসে ৩০ টুকর অর্থাৎ ৬টিতে এসে পৌঁছবে। আর اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এ উপায়ে দুর্বলতা ইত্যাদিও অনুভুত হবে না। যদি শুধু ভাত খাওয়ার অভ্যাস থাকে তবে সেটা কমানোর ব্যবস্থা এভাবে করা যায়। যেমন- প্রতিদিন এক লোকমা করে কমাতে থাকবে আর এভাবে যে পরিমাণ কম খাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে সে পরিমাণে চলে আসবে।এ উপায়ে অগ্রসর হতে চাইলে প্রথমে অন্তরকে শক্ত রাখতে হবে। আবার যেন এমন না হয়, মজাদার খাবার সামনে এসে গেলে অথবা দাওয়াত খেতে গেলে নফস বলে উঠল, আজকে একটু বেশি করে খেয়ে নাও, আগামী কাল পুনরায় পূর্বের নিয়মে ফিরে যেও।তখন যদি নফসের কথা শুনে নেয়া হয় তবে এতে স্থির থাকা কঠিন হয়ে যাবে। যত মজাদার খাবারই সামনে আসুক না কেন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের নিয়মের মধ্যে স্থায়ী থাকার দৃঢ় ইচ্ছা যার থাকে, সেই সফলতা লাভ করতে পারবে। তবে যখন কম খাওয়ায় পাকাপোক্তভাবে অভ্যস্থ হয়ে যাবে, তখন যদি কখনো দাওয়াত ইত্যাদিতে নির্ধারিত নিয়মের বাইরে সামান্য একটু বেশিও খেয়ে নেয়, اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ তবে আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেনা। 


ভাইয়ো বেহনো সভী আদত বানাও ভুক কি 

পাওগে রহমত যরা জহমত উঠাও ভুক কি।

 

খাবারের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নিন 

  নিজের জন্য খাবারের পরিমাণ (যেমন- অর্ধেক রুটি, এক চামচ ভাত, সাত টুকরো কদু (লাউ) শরীফ, বড় হলে একটি অন্যথায় দু’টি মাংসের টুকরা, এক টুকরা আলু, তিন চামচ ঝোল ইত্যাদি) নির্দিষ্ট করে নিন। এতটুকু পরিমাণ খাওয়ার পর চাই যতই ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকুক না কেন আর একটুও বাড়িয়ে খাবেন না। যখনই খেতে বসবেন তখন সম্ভাব্য অবস্থায় সিদ্ধান্তকৃত পরিমাণ খাবার পূর্ব থেকে নিজের প্লেটে আলাদা করে রেখে দিন। পেটের কুফলে মদীনা লাগানোর আগ্রহীদের জন্য সম্ভবত এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি আর নেই। তবে যদি নফস নিজের প্লেটে বেশি পরিমাণ নেয়ার ব্যবস্থাও করিয়ে নেয়, তবে আপনি কমিয়ে নিন। একবার নিয়ে নেয়ার পর চাই লক্ষবার ইচ্ছা জাগুক তবুও আর খাবার নেবেন না। অন্যথায় নফস ক্রমাগত তার দাবী বাড়াতে থাকবে! কখনো বলবে আরো এক চামচ ভাত তুলে নাও, আরো এক টুকরো মাংস নাও। কখনো বলবে, আলু নাও, আরো এক চামচ ডাল নিয়ে নাও ইত্যাদি নফসের এ দাবীকে একেবারে গুরুত্ব দেবেন না। দাওয়াতেও কম খাওয়ার এ নিয়ম বজায় রাখুন।কেননা “পেটের কুফলে মদীনা” লাগানো অর্থাৎ- ক্ষুধা থেকে কম খাওয়ার অভ্যাস এখনোও পর্যন্ত যার গড়ে উঠেনি সে যদি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বড় থালা বা পেয়ালা থেকে বারংবার অল্প অল্প করে নিতে থাকে তাহলে এ বিষয়ের আশংকা রয়েছে যে, নফস তাকে সে কথা ভুলিয়ে দিয়ে অধিক খাবার খাইয়ে দেবে। যদি এক থালায় সবাই মিলে-মিশে খান, আর নিজস্ব পরিবেশ হয় যেমন- সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলা হয় কিংবা দা’ওয়াতে ইসলামী’র জামিআতুল মদীনার পরিবেশ হয়, তাহলে যে ইসলামী ভাই বা মাদরাসার ছাত্র “পেটের কুফলে মদীনা” লাগাতে ইচ্ছা করেছেন, তিনি “মাদানী ইনআমাত” অনুসারে নিজের মাটির বাসনে প্রয়োজন পরিমাণ খাবার নিয়ে খেতে পারেন তবে বড় বাসনের নিকটে বসেই একসাথে খাবার খাবেন। এ অবস্থায় যদি সাথীদের এটা পছন্দ না হয় তবে সবার সাথে বসে একত্রে বড় থালা থেকেই খেয়ে নিন। এ অবস্থায় সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হল এটা যে, খাবারের লোকমাকে নির্দিষ্ট করে নিন যেমন ১২ লোকমা যদি অভ্যাস করে থাকেন তাহলে সবার সাথে একত্রে খাওয়ার সময়ও গুণে গুণে ১২ লোকমাই খেয়ে নিন তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না। 


ভুক কা ইয়া ইলাহী করিনা মিলে 

পেট কা মুজ কো কুফলে মদীনা মিলে 

ইসতিকামাত কা মাদানী খাজিনা মিলে 

হিরসে লাজ্জাতে দুনিয়া কভী না মিলে। 


মিশিয়েও খাবার খেতে পারেন 

  যদি ঘরে কয়েক রকমের খাবার রান্না করা হয়, যেমন-রুটি, ভাত, তরকারী, সমুচা, মিষ্টি দ্রব্য ইত্যাদি, তবে এরকমও করতে পারেন যে, প্রয়োজন অনুসারে সবকিছু থেকে অল্প অল্প করে এক বাসনেই নিয়ে নিন এবং সবগুলোকে একত্রে মিশিয়ে নিন। যদি এরূপ করাতে মজা কমে যায় তবে অসুবিধা নেই। এতে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ নফস কিছুটা দমে যাবে। কিন্তু সাধারণ দাওয়াতে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করবেন।যদি মাদানী পরিবেশের মধ্যেই দাওয়াত হয় এবং আপনার জানা আছে, এভাবে করলে দাওয়াতকারী খারাপ মনে করবেনা, আর রিয়াকারীতে পরিণত হওয়ারও আশংকা নেই তাহলে খাবার একত্রে মিশিয়ে নেয়াতে অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হচ্ছে, কোন একজন ইসলামী ভাই দাওয়াতকারীকে একথা বলে দিবেন, “যে যেভাবে খেতে চায়, তাকে সেভাবে খাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিন।” এখন যদি তিনি ঠিক আছে বলে দেন, তাহলে সবার জন্য অনুমতি হয়ে গেল এক ব্যক্তি সগে মদীনা عفی عنہ (লিখক)-কে বলেছিলেন যে, আমি এক ভদ্রলোককে দেখেছি, যখন দস্তর খানায় নানা ধরণের খাবার আনা হল তখন তিনি সবকিছু থেকে একটু একটু নিয়ে নিজের বাসনে সবগুলো মিশিয়ে নিলেন। কেউ অবাক হয়ে এর কারণ জানতে চাইলে, তিনি তার জবাবে বললেন: “পেটে গিয়েতো সব খাবার একসাথে মিশেই যায়, আমি না হয় একটু পূর্ব থেকেই মিশিয়ে নিলাম।” 


নফস কি চাল্ মে না আয়ে কাশ! 

ডাটকে খানা কভী না খায়ে কাশ! 


অন্যের উপস্থিতিতে কম খাওয়ার উপায় 

  অন্যের উপস্থিতিতে রিয়া থেকে বাঁচার জন্য ও মেযবান (দাওয়াতকারী) এর অনুরোধ হতে বাঁচার জন্য একটি নিয়ম এটাও হতে পারে যে, তিন আঙ্গুল দ্বারা ছোট ছোট লোকমা নিয়ে খুব ভালভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে থাকুন আর সর্বদা খাবারের সকল সুন্নাতের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। বিশেষতঃ দাওয়াতের মধ্যে প্রায় লোকেরা তাড়াতাড়ি খাবার খায়, হয়তো খাবারে মগ্ন থাকায় তারা আপনার প্রতি অমনোযোগী থাকতে পারে। তারপরও যদি আপনি নিজেকে তাড়াতাড়ি অবসর হয়ে যাচ্ছেন মনে করেন তাহলে আস্তে আস্তে হাড্ডি চুষতে থাকুন। আশা করি এভাবে করলে আপনিও সবার সাথে একত্রে খাবার শেষ করতে পারবেন। সবার সামনে তাড়াতাড়ি হাত গুটিয়ে নেয়া যদি রিয়া (অর্থাৎ লোক দেখানো) হয়, যেমন আপনার মনে এই খেয়াল আসল যে,

লোকেরা আমাকে নেক্কার লোক মনে করবে, তবে এরকম করা হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ ঐ আমলকে গ্রহণ করেন না যাতে এক অনু পরিমাণও রিয়া (অর্থাৎ- লোক দেখানোভাব) থাকে।” (আততারগীব্ ওয়াততারহীব, ১ম খন্ড, ৮৭ পৃষ্ঠা) যদি কেউ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে বা শিক্ষক নিজের ছাত্রদের, পীর নিজের মুরীদদের উৎসাহ প্রদানের জন্য নিজের আমল প্রকাশ করে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। তবে এ অবস্থায় ভালভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে যে, সত্যিই কি এ মূহুর্তে নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কিংবা উৎসাহ প্রদানের উদ্দ্যেশ্য আছে কিনা। যদি অন্তরের অন্তঃস্থলেও নিজের পুণ্যের প্রসিদ্ধি লাভের বিন্দু মাত্র নিয়্যত লুকায়িত থাকে তাহলে তা হবে রিয়াকারী ও জাহান্নামের ভাগীদার হওয়ার উপযোগী কাজ। 


 সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।


ইখলাস ইবাদত কবুল হওয়ার চাবিকাঠি

   নিশ্চয় সারাজীবন পেট ভরে খেলেও গুনাহগার হবে না। আর কারো দ্বারা যদি জীবনে একবারও রিয়াকারী হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার মত কাজ সম্পন্ন হয় তাহলে সে গুনাহগার ও জাহান্নামের শাস্তির উপযোগী হবে। ইসলামী ভাইদের সামনেতো নিজেকে সামলিয়ে সামান্য পরিমাণে খেল, যাতে লোকেরা প্রভাবান্বিত হয়ে পরস্পর বলা-বলি করে সাবাস ভাই! এতো দেখি পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়েছে।অতঃপর “খাও খাও” করতে করতে ঘরে গেল আর ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ল। এ ধরণের মানুষ পরিপক্ক রিয়াকার ও জাহান্নামের উপযোগী এতে কোন সন্দেহ নাই। নিশ্চয় ঐ ইসলামী ভাই খুবই বুদ্ধিমান, যে অন্যদের সামনে এভাবে খাবার খায় যে, তার কম খাওয়াটা যেন কেউ উপলব্ধি করতে না পারে আর ঘরে খুব ভালভাবে পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে রাখে। আমল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। কারণ ইখলাস হচ্ছে ইবাদত কবুল হওয়ার চাবি-কাঠি। 


রিয়াকারীয়ো সে বাঁচা ইয়া ইলাহী, 

কর ইখলাছ মুজ কো আতা ইয়া ইলাহী। 


কম আহারকারীদের পরীক্ষা 

   প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে পেটের কুফলে মদীনা লাগানো অর্থাৎ কম খাওয়ার অভ্যাস করার জন্য রিয়াযত (সাধনা) করা শুরু করে, তার পরীক্ষা এভাবেও হতে পারে যে, প্রাথমিকভাবে দুর্বলতা অনুভব হবে, মেজাজ খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যাবে, অনেক আপনজনেরাও বুঝতে চাইবে না, দুর্বলতা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করবে আর এভাবে তখন মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর কম খাওয়ার বরকতে, হজম ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হওয়ার কারণে হয়তো খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যাবে আর তাড়াতাড়ি ক্ষুধা পেয়ে বসবে। আর এভাবে খাবারের প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া যখনই কোথাও খাবার রান্না হবে তখন সেটার সুগন্ধে নাক পর্যন্ত সুগন্ধময় হয়ে যাবে এবং মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়বে। মন চাইবে, “বসো, আজকে একটু পেট ভরে খেয়েই নাও।” অনুরূপভাবে ঘরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার, সেগুলোর সুগন্ধ বিশেষ করে রমযানুল মোবারকে ইফতারের সময় প্রচন্ড ক্ষুধা পিপাসা আর সামনে সুস্বাদু খাবারের বড় থালা এবং কোরবানীর ঈদে মাংসের স্তুপ, শিকের মধ্যে গাঁথা মাংসের ভুনা টুকরাগুলো, ক্ষুধা বৃদ্ধিকারী সুগন্ধে ভরা ধোঁয়া ও নানা ধরনের মসলাযুক্ত তেলে সিক্ত খাবার আপনার পরীক্ষা গ্রহণ করতে থাকবে। কিন্তু আপনি সাহস হারবেন না।আল্লাহর হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর এ বাণীটি স্মরণ করতে থাকবেন: افضل العباﺩات احمزہا অর্থাৎ- “ইবাদত সমূহের মধ্যে উত্তম ইবাদত হচ্ছে সেটা, যাতে কষ্ট বেশি হয়।” (কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা) 


একেধারে ৪০ দিন পর্যন্ত কম আহার করুন 

  এমনও হতে পারে যে, কয়েকদিন পেটের কুফলে মদীনা লাগানো রইল অতঃপর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল আর ভালভাবে পানাহারের পূর্বের নিয়ম শুরু হয়ে গেল। কিন্তু আপনি তবুও সাহস হারাবেন না। চেষ্টা চালিয়ে যান। বারংবার নতুন করে চেষ্টা করতে থাকুন। যেমন- কখনো এরূপ নিয়্যাত করে নিন যে, (বিসমিল্লাহ্) এর সাতটি অক্ষরের সম্পর্ক অনুসারে সাত দিন পর্যন্ত পেটের কুফলে মদীনা লাগাব। এভাবে রবিউন্ নূর শরীফের ১২ দিন, শা’বানুল মুআ’যযাম এর ১৫ দিন। রমযানুল মোবারকের শেষ ১০দিন পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে নিন। চেষ্টা করবেন যেন কখনো একাধারে ৪০ দিন পর্যন্ত কম আহারের সৌভাগ্য নসীব হয়ে যায়। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে দৃঢ়তাও অর্জিত হবে। যেমন- হযরত সাইয়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ্ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “মানুষ যখন কোন বস্তুকে ৪০ দিন পর্যন্ত নজিরে অভ্যাসে পরিণত করে নেয়, তখন আল্লাহ্ তাবারাক ওয়া তাআলা সেটাকে (অর্থাৎ ঐ বস্তুকে) তার অভ্যাসে

পরিণত করে দেন। (রসিালাতুল্ ক্বুশাইরয়্যিাহ্, ২৪৩ পৃষ্ঠা) 


মে কম খানা খানে কি আদত বানা-উ,

খোদায়া করম! ইস্তিকামাত ভি পা-উ। 


কম খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার উপায় 

   পেটের কুফলে মদীনা অর্জনের জন্য এবং ক্ষুধার চেয়ে কম খাওয়ার যেন অভ্যাস গড়ে উঠে এ নিয়্যতে কখনো কখনো দুই রাকআত ‘সালাতুল হাজাত’ আদায় করুন, আবার কখনো একই ধারাবাহিকতায় পেটের কুফলে মদীনার মধ্যে দৃঢ়তা অর্জনের জন্য ও খাবারের প্রতি লোভ লালসা এবং আগ্রহ দূরীভূত হওয়ার জন্য দোয়া করুন।এছাড়া ফয়যানে সুন্নাতের এ অধ্যায় অর্থাৎ “পেটের কুফলে মদীনা” প্রতি মাসে অথবা যখন খাবার লোভ পুনরায় বাড়তে থাকে তখন কমপক্ষে একবার পড়ে বা শুনে নিন। এছাড়া ইহ্ইয়াউল উলূম এর তৃতীয় খন্ড থেকেও পেট ভর্তি করে খাওয়ার মুসিবত সম্পর্কিত অধ্যায়গুলো পাঠ করে নিন, اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ অনেক উপকার হবে। আর এ কথা ভালভাবে অন্তরে গেঁথে নিন যে, পেটের কুফলে মদীনা অর্থাৎ ক্ষুধার চেয়ে কম খাওয়াটা শুধু কয়েকদিন কঠিন মনে হবে। তাও বেশি হলে ঐ সময় পর্যন্ত, যতক্ষণ দস্তরখানার কাছে বসা থাকবেন। দস্তরখানা উঠিয়ে নেয়ার পর اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ মনোযোগ সরে পড়বে। এরপর পেটের কুফলে মদীনার অভ্যাস হয়ে যাবে এবং সেটার বরকত গুলো নিজেই দেখতে পাবেন। তখন এমনিতেই اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ বেশি খেতে মনও চাইবে না। আপনি সাহস করুন اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ কষ্টের পর স্বস্তি অর্জন হবেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ يُسۡرًا ۙ اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ يُسۡرًا 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: (৫) সুতরাং নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (৬) নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (পারা- ৩০, সূরা- আলাম নাশরাহ, আয়াত- ৫-৬)


তিক্ত উপদেশ 

    যদি কারো ক্ষুধা থেকে কম খাওয়ার এখনও পর্যন্ত কোন মন-মানসিকতা সৃষ্টি না হয়ে থাকে তবে সে যেন তা অর্জন করার চেষ্টা করে। আর এরই মধ্যে যার মাদানী মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে, সে নিজে اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ কুফলে মদীনার ব্যবস্থা করে নেবে এবং পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে নেবে আর যদি এটার উপর অটল থাকার দৃঢ় সংকল্প করে নেয়, তবে এটার নিয়ম নীতিও সে নিজে বের করে নেবে। আর যে বেচারা “কুকুরের ন্যায় ক্ষুধা” এর রোগে আক্রান্ত ও অধিক খাওয়ার প্রতি লোভী, তার জন্য অগণিত লেখা ও অসংখ্য বয়ানও যথেষ্ট হবে না। হয়তো এই লেখাও তার মাথায় ঢুকবে না, শুনেও না শুনার ভান করবে।এ নিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করার যে কষ্টটুকু হবে তা করাটাও তার মনঃপূত হবেনা। বরং যথাসম্ভব আল্লাহর পানাহ্ সে-“পেটের কুফলে মদীনা” লাগানোর ব্যাপারে সমালোচনা করা শুরু করবে। এ ধরণের মানুষের ব্যাপারে এক বুযুর্গ رَحۡمَۃُ للّٰهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ একেবারে ঠিকই বলেছেন: “পেট ভরে আহারকারীকে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তার অন্তর তা গ্রহণই করেনা।” (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা) তাই এমন ব্যক্তি নফস ও শয়তানের পরামর্শ অনুযায়ী নিত্য-নতুন স্বাদ গ্রহণের জন্য রাস্তা বের করতে থাকবে আর নানা ধরনের খাবার তৈরী করার নিয়ম জানার জন্য বাজার থেকে বই সংগ্রহ করবে এবং বিভিন্ন তাল-বাহানা করে মজাদার খাবার আনিয়ে বার বার খেতে থাকবে, আর এর বদৌলতে শৌচাগারে বারংবার যাতায়াত করতে থাকে। শরীরে চর্বি জমিয়ে, স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে, ডাক্তারদের নিজের বিধ্বস্ত পেট দেখায় আর চিকিৎসার জন্য পানির মত টাকা পয়সা ব্যয় করতে থাকে। অথচ সে বুঝতে পারছেনা যে, তার রোগের চিকিৎসা স্বয়ং তার কাছেই রয়েছে। যদি পেটের কুফলে মদীনা লাগিয়ে নিত তাহলে রোগ-ব্যাধি ও চিকিৎসা এবং ডাক্তারদের পিছনে পানির মত টাকা খরচ করা থেকে মুক্তি পেত। কিন্তু যে নিজ জীবনের মূল নীতি হিসেবে “বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া” এর স্থলে “খানার জন্য বেঁচে থাকা” - কে গ্রহণ করে নিয়েছে, ঐ নির্বোধ আরামদায়ক রোগমুক্ত জীবন যাপনই করতে পারবে না।


ফুল কি পাত্তি সে কাট সেক্তা হে হিরে কা জিগর 

মরদে নাদা পর কালামে নরমো ও নাযুক বে আছর। 


ইয়া রব্বে মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তোমাকে আমার প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মোবারক ক্ষুধা ও সেটার কারণে পবিত্র পেটে বাঁধা নূরানী পাথরের দোহাই দিচ্ছি, আমাদেরকে কম খাওয়া, কম ঘুমানো ও কম কথা বলার নেয়ামতগুলো দ্বারা ধন্য কর। সাহাবায়ে কিরাম علهم الر ضوان ও আওলিয়ায়ে ই’যামের পবিত্র ক্ষুধার সাদ্কায় আমাদের প্রত্যেককে পূণ্যময় ক্ষুধা ও পেটের কুফলে মদীনা লাগানোর সৌভাগ্য দান কর।


ইলাহী! পেট কা কুফলে মদীনা কর আতা হামকো, 

করম ছে ইস্তিকামাত কা খজীনা কর আতা হামকো।

امين بجاه النبى الا مين صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

   সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম তারিখে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। اِنۡشَآءَ اللّٰه عَزَّوَجَلَّ এর বরকতে ঈমানের হিফাযত, গুনাহের প্রতি ঘৃণা, সুন্নাতের অনুসরণের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে। 

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

تُوْبُوْا اِلَی الله! اَسْتَغْفِرُ الله 

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


৫২ টি ঘটনা 

   (১) সায়্যিদুনা জাবির رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ এর ঘরে দাওয়াত প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সাইয়্যিদুনা জাবির رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ বলেন: খন্দক যুদ্ধের সময় আমরা খন্দক (গর্ত) খনন করছিলাম।এমতাবস্থায় একটি শক্ত পাথর সামনে পড়ল। সাহাবায়ে কিরাম علهم الر ضوان প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন: গর্তের মধ্যে একটি শক্ত পাথর পড়েছে।” বললেন: “আমি নেমে আসছি”। অতঃপর রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم উঠলেন এবং (তখন) রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্র পেটে পাথর বাঁধা অবস্থায় ছিল আর আমরাও তিন দিন থেকে কিছু খায়ননি।ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কোদাল হাতে নিলেন এবং সেই পাথরের উপর আঘাত করতেই পাথরটি ভেঙ্গে চুড়ে মাটির স্তুপে পরিণত হয়ে গেল। আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে ঘরে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করুন।” অনুমতি পেয়ে ঘরে এসে আমি আমার বিবি رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا কে  বললাম: “আমি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে এ অবস্থায় দেখেছি, আমি সহ্য করতে পারছিনা। আপনার নিকট কি কোন খাবারের বস্তু আছে?” জবাব দিলেন, “জব ও একটি ছাগল আছে।” আমি ছাগলটি যবেহ (জবাই) করলাম ও জবগুলো পিষে নিলাম। এমনকি আমরা উভয়ে মিলে মাংস হাড়ির মধ্যে ঢেলে (রান্নার জন্য) চুলায় দিলাম। আমি হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছে উপস্থিত হলাম। ঐ সময় আটা নরম হয়ে রুটি প্রস্তুত করার উপযোগী হয়ে গেছে ও হাড়ির মাংস চুলার উপর প্রায় রান্না হয়ে গেছে। (আমি আরয করলাম) ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার নিকট অতি সামান্য খাবার আছে। আপনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাশরীফ নিয়ে চলুন আর এক বা দু’ব্যক্তিকে সাথে নিন। বললেন: “খাবার কতটুকু”? আমি যখন পরিমাণ বললাম: তখন বললেন: “খাবার অনেক আছে ও উত্তম রয়েছে”। ঘরে গিয়ে (তাকে ) বলবে, যেন আমি আসার পূর্বে চুলা থেকে হাড়ি না নামায়, তান্দুর (কাঁচা মাটি দ্বারা প্রস্তুত রুটি পাকানোর চুলা) থেকে রুটি বের না করে।” (অতঃপর) হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم (সাহাবায়ে কিরাম  علهم الر ضوان কে) বললেন: “উঠো!” তখন মুহাজির ও আনসারগণ علهم الر ضوان উঠে দাঁড়ালেন। (সাইয়্যিদুনা জাবির رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ)  বলেন আমি "আমার বিবি" رَضِیَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর নিকট গিয়ে বললাম: তোমার কল্যাণ হোক, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মুহাজির ও আনসারগণ علهم الر ضوان ও যে সকল লোকেরা তাঁর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাথে ছিলেন তারা সকলে তাশরীফ এনেছেন।তিনি বললেন: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কি আপনাকে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?” আমি বললাম: “জ্বী।” এরই মধ্যে খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم (সাহাবায়ে কিরাম علهم الر ضوان কে) বললেন: “ভেতরে প্রবেশ কর, ভীড় কর না।” রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم (স্বীয় মোবারক হাতে) রুটি টুকর করে সেটার উপর মাংস রাখতে আরম্ভ করলেন। যখন রাসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রুটি ও মাংস বের করে নিতেন তখন- হাড়ি ও তান্দুরকে ঢেকে দিতেন। আর খাবার সাহাবায়ে কিরাম علهم الر ضوان কে প্রদান করতেন এবং এরপর ঢাকনা খুলতেন। হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এভাবে রুটি টুকরা করতে আর হাড়ি থেকে মাংস বের করতে থাকেন। অবশেষে সকল সাহাবায়ে কিরাম علهم الرضوان খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন অথচ তারপরও খাবার বেঁচে গেল। তখন হুযুর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم (তাঁদেরকে) বললেন: “তোমরা নিজেরাও খাও এবং মানুষকে উপহার স্বরূপ দাও, কেননা লোকেরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে।” (সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪১০১) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ মাদানী ঘটনা থেকে এই শিক্ষা লাভ হল যে, আমাদের খাতেমুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামিন صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ক্ষুধার্ত থাকাটা ছিল নিজের ইচ্ছাধীন। এটাই বর্ণিত ঘটনাটি বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে যে, যেখানে তিনি ক্ষুধার কারণে পেটে পাথর বেঁধে রেখেছেন ঐ সময়ে একটি মাত্র হাড়ি থেকে অসংখ্য সাহাবায়ে কিরাম علهم الرضوان কে পরিতৃপ্তভাবে আহার করিয়েছেন। এ মু’জিযার মধ্যে রহস্যের হাজার হাজার মাদানী ফুল রয়েছে।এটাও একটি মাদানী ফুল যে, আমাদের নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অক্ষম ও অসহায় নন। নিজের পরওয়ারদিগার এর রহমতে উভয় জাহানের ভান্ডার সমূহের মালিক ও মুখতার (ক্ষমতাধর)। এ মাদানী ঘটনা থেকে এ শিক্ষাও অর্জিত হল যে, রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ও সাহাবায়ে কিরাম علهم الرضوان খুবই ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করেছেন, ক্ষুধার্ত থেকেও নিজেদের পবিত্র পেটে পাথর বেঁধে নেকীর দাওয়াত চতুর্দিকে প্রসার করেছেন। আর হায় আফসোস! একটু লক্ষ্য করুন; একদিকে আমাদের মত এমন লোকও রয়েছি যে, যারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তাআলার পথে সামান্যটুকু কষ্টও সহ্য করতে রাজী নই। নিশ্চয় এখন আর কোন নবী আসবেন না। মুসলমানদেরকেই নেকীর দাওয়াতের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহর শপথ! আজ মুসলমানদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মসজিদ গুলোর উজাড় অবস্থা (অর্থাৎ মুসল্লী শূন্যতা) দেখে অন্তর কেঁদে উঠে। একটি শিক্ষনীয় ঘটনা শুনুন: 


(২) মাদানী কাফেলা মসজিদ আবাদ করল 

    এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা, সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রসূলের ১২ দিনের মাদানী কাফেলা বাবুল মদীনা করাচী থেকে পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহর ‘সূহা-ওয়া’ এর একটি মসজিদে গিয়ে পৌঁছল। পেলো মসজিদের দরজায় তালা লাগানো ছিল। তৎক্ষণাৎ চাবি সংগ্রহ করা হল। যখন দরজা খোলা হল তখন দেখা গেল, সবকিছুর উপর ধুলা-বালি জমে আছে। অবস্থা দেখে বুঝা গেল, দীর্ঘদিন থেকে মসজিদটি বন্ধ রয়েছে। اَلْحَمْدُ اللّهِ عَزَّوَجَلَّ আমরা সবাই মিলে-মিশে তা পরিস্কার করে নিলাম। এলাকায়ী দাওরা করে শহরের লোকদেরকে নেকীর দাওয়াত পেশ করে মসজিদে আসার জন্য অনুরোধ করা হল। আফসোস! আমাদের ইখলাসের মধ্যে ঘাটতি থাকার কারণে একজন মানুষও আমাদের সাথে আসলনা। কিন্তু আমরা সাহস হারায়নি।




Top