হযরত ঈসা (عليه السلام)'র আসমানে উত্তোলন


❏ মুফতি আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) তাফসীরে খাযেন, রূহুল মায়ানী ও রূহুল বয়ান ইত্যাদি গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে আব্বাস (رحمة الله)’র সূত্রে বলেন- ইবেন আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, বনী ইসরাঈল হযরত ঈসা (عليه السلام)'র মােকাবেলায় অক্ষম হয়ে তাঁর ও তাঁর মায়ের বিরােদ্ধে অপবাদ ও অশালীন কথা বলে কষ্ট দেওয়া অরম্ভ করল। একদা তিনি শহরের জনপদ দিয়ে যাওয়ার সময় লােকেরা তাঁকে অতীষ্ট করে তুলে। তিনি অসহ্য হয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন- হে আল্লাহ! এদেরকে শুকর বানিয়ে দিন। তাঁর মুখ থেকে একথা বের হতে না হতে তারা সবাই শুকর হয়ে গেল। এতে লােকেরা অত্যন্ত দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ল। কারণ এরূপ হতে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের বেলায়ও ঘটতে পারে। তাই তারা তৎকালীন বাদশাকে তাঁর বিরােদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলল এবং বলল, এভাবে হয়ত একদিন আপনার অবস্থাও এরূপ করে দেবে। 

অতঃপর তারা তাইয়ানুস নামক একজন মুনাফিক ব্যক্তিকে ঠিক করল যে বাহ্যিকভাবে ঈসা (عليه السلام)'র প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করত। কিন্তু মূলত ইহুদীদের দোসর ছিল। তিনি তাদের ষড়যন্ত্রের কথা অনুভব করে তাঁর হাওয়ারীদেরকে বললেন, আজ সকালের আগেই জনৈক ব্যক্তি মাত্র কয়েক দেরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দেবে। সর্বদা ফুলের সাথে কাঁটাও থাকে আর মুখলিসের সাথে মুনাফিকও থাকে। অতঃপর তাইয়ানুস কে ইহুদীদের পক্ষ থেকে ত্রিশ দেরহাম তথা সাড়ে সাত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল, ঈসা (عليه السلام)কে শহীদ করার শর্তে। তাইয়ানুস ইহুদীদের একটি দল নিয়ে রাতের বেলায় ঈসা (عليه السلام)'র ঘরের দিকে গিয়ে সঙ্গীদেরকে ঘরের বাইরে রেখে সে নিজে ঘরের ভিতর প্রবেশ করল। সে ঘরে গিয়ে দেখল যে, ঈসা (عليه السلام) জানালা দিয়ে আসমানে চলে গেলেন। বাইরে অপেক্ষমান লােকেরা মনে করেছিল, সে হয়ত ঈসা (عليه السلام)'র সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে ফলে বের হতে বিলম্ব হচ্ছে। ইত্যবসরে আল্লাহ পাক তাইয়ানুস কে ঈসা (عليه السلام)'র আকৃতি করে দেন। অতঃপর সে ঘরের বাইরে আসা মাত্র লােকেরা তাকে ঈসা (عليه السلام) মনে করে ধরে শুলির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে তাদেরকে শত চেষ্টা করেও বুঝতে পারেনি যে, সে মূলত ঈসা (عليه السلام) নয়। বরং উল্টো তারা বলতে লাগল, তুমি আমাদের লােককে হত্যা করেছ যে তােমাকে হত্যা করতে গিয়েছিল এখন আমাদের সাথে প্রতারণা করতেছ, এই বলে তারা তাদের লােককে শুলিতে লটকিয়ে হত্যা করল। আজ পর্যন্ত খৃষ্টানরা মনে করে যে, ঈসা (عليه السلام) শুলিতে হত্যা করা হয়েছে তাই তারা খুলিকে নিজেদের গুনাহের কাফফারা মনে করে। 

অতঃপর হযরত মরিয়ম যখন শুনলেন যে, ঈসা (عليه السلام) শুলিতে তুলে হত্যা করা হয়েছে তখন তিনি অপর এক মহিলাকে নিয়ে সেই গুলিতে লটকানাে লাশের সামনে বসে বসে কান্না-কাটি করতে লাগলেন। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর সপ্তমদিনে ঈসা (عليه السلام) কে আল্লাহ আদেশ দিলেন যে, তুমি গিয়ে তােমার মাকে সান্তনা দিয়ে এসাে। তখন তিনি একটি পাহাড়ে রাতের বেলায় অবতীর্ণ হয়ে তাঁর মা ও তাঁর হাওয়ারীগণ কে ডেকেছেন। তাঁর মা তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে লাগলেন, হে ঈসা! তুমি কোথায় আছ? উত্তরে বললেন, মা, আমি খুব ভাল আছি। যাকে খুলিতে দেওয়া হয়েছে সে অন্য ব্যক্তি আমি নই। আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। আর হাওয়ারীগণকে দ্বীনি দাওয়াতের দায়িত্ব দেন এবং কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন তাও বন্টন করে উপরের দিকে চলে যেতে লাগলেন। মরিয়ম বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? বললেন আল্লাহর কাছে যাচ্ছি। মরিয়ম বললেন, আবার কখন সাক্ষাৎ হবে? বললেন, কিয়ামত দিবসে- এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। 
তেত্রিশ বছর বয়সে হযরত ঈসা (عليه السلام) কে রমযান মাসের সাতাশ তারিখে তথা কদরের রাতে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছিল। তিনি পুনরায় কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে আগমণ করবেন এবং আরাে চল্লিশ বছর জীবন-যাপন করে ইন্তেকাল করেবেন। এভাবে তাঁর মােট বয়স হবে ৭২ বছর। মদীনা শরীফে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র পাশে দাফন হবেন। ●৪০৭
_____________________________
৪০৭.[মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله) (১৩৯১হি.), তাফসীরে নঈমী, উর্দু, দিল্লী, খণ্ড:৩য়, পারা:৩য়, পৃ:৫৩৫]

❏ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 
তারা (ইহুদীরা ঈসা (عليه السلام)’র বিরােদ্ধে) নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও গােপন কৌশল করেছিল আল্লাহও সুক্ষ্ম গােপন কৌশল অবলম্বন করেন। অর্থাৎ তাদেরই একজনকে ঈসা (عليه السلام)'র আকৃতি দিয়ে তাদের দ্বারা হত্যা হয় আর আল্লাহ ঈসা (عليه السلام) কে জীবিত আসমানে তুলে নেন। আর স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ বলেছিলেন, হে ঈসা! আমি তােমার হায়াত পূর্ণ করবাে এবং তােমাকে আমার দিকে তুলে নেবাে আর কাফেরদের থেকে তােমাকে পবিত্র করে দেবাে। 
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৫৪ ও ৫৫]

❏ আল্লাহ পাক আরাে বলেন, অর্থ: তারা তাঁকে না হত্যা করেছে, না শুলীতে চড়িয়েছে বরং তারা এরূপ ধাধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া এ বিষয়ে তাদের কোন নিশ্চিত জ্ঞান নেই। নিশ্চয় তারা তাকে হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। 
[সূরা আন নিসা, আয়াত নং ১৫৭ ও ১৫৮]
Top