❏ সম্মিলীতভাবে সওয়াব রেছানী ও দোয়া করা যাবেনা! ইহার ব্যাখ্যা


প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির জন্য বিভিন্ন আমল করে সওয়াব রেছানী করার কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কিন্তু এরুপ আমল করে সম্মলিতভাবে ঈসালে সওয়াব ও যিয়াফতের অনুষ্ঠান করা হয় কেন?

উত্তর: ইহা এ কারণেই করা হয় যে, অনেক লোক একত্রিত হয়ে দোয়া করলে ঐ দোয়ায় কবুল হওয়ার গ্যারান্টি রয়েছে। আর মু’মীনরা সব সময়ই চায় তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হোক। যেমন 


❍ এ বিষয়ে হাদিস শরীফে আছে,


حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ مُجَاهِدٍ الْبَصْرِيُّ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا شَدَّادٌ أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا


-“হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যখন কোন সম্প্রদায় তাদের হাঁতের অগ্রভাগ আল্লাহর দরবারে কোন কিছু প্রার্থনার জন্য উচু করে, তখন আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে, যা প্রার্থনা করে তা দেওয়া।” 


তথ্যসূত্রঃ

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬১৪২ 

・ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগির, হাদিস নং ১১৮৫৪ 

・ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২০০৮০ 

・ইমাম মানাভী: আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ: 

・মুখলেছিয়্যাত, হাদিস নং ২৮১৫ 

・ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১ 

・আত্ তানভির শরহে জামেউছ ছাগির, ৯ম খন্ড, ৩৯৬ পৃ:


𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেছেন, 

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. -“ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন এবং ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।” (মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪১)


𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম মানাভী (رحمة الله) বলেন:

عَن سلمَان الْفَارِسِي وَرِجَاله رجال الصَّحِيح -“হযরত ছালমান ফারছী (رضي الله عنه)  হতে, এর সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।” (আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:)


𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে কুখ্যাত তাহকিক কারী নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেন: قلت: وهذا إسناد رجاله ثقات رجال (الصحيح) -“আমি (আলবানী) বলি: এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ।” (ছিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৫৯৪৮) 


সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়। 


❍ ইমাম হাকেম ও ইমাম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন,

حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُوسَى، ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ، ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، حَدَّثَنِي ابْنُ هُبَيْرَةَ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ، وَكَانَ مُجَابَ الدَّعْوَةِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ، وَيُؤَمِّنُ الْبَعْضُ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ

-“হযরত হাবীব ইবনে মাছলামাহ ফিহরী (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ)  কে বলতে শুনেছি: একটি দল যখন একত্রিত হয়ে দোয়া করে এবং কতিপয় ব্যক্তি আমিন বলে, তখন নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ৫৪৭৮ 

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৩৫৩৬ ইমাম মুনজেরী: আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১ম খন্ড, ২০৯ পৃ: 

・ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৩৬৭ 

・ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খন্ড, ২০০ পৃ: 

・ইমাম কাস্তালানী: এরশাদুছ ছারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ২২৬ পৃ: 

・ইমাম হায়ছামী: মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১৭৩৪৭


𓈃 এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) বলেন,

وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ -“এই হাদিসের সকল বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ শুধু ‘ইবনে লাহিয়া’ ব্যতীত, আর সে হাছানুল হাদিস।” (মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস ন ১৭৩৪৭) 


❍ এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,


يُوسُف بْن راشد، حدَّثنا أَحْمَد بْن عَبد اللهِ، قَالَ: حدَّثنا عِمران، يَعني ابن زَيد التَّغلِبي، قَالَ: حدَّثنا خَطّاب بْن عُمر، عَنِ الْحَسَن، عَنْ أَنس بْن مالك: خَرَجتُ مَعَ النَّبيِّ صَلى اللَّهُ عَلَيه وسَلم، مِنَ البَيتِ إِلَى المَسجِدِ، وقَومٌ فِي المَسجِدِ، رافِعُو أَيدِيهِم يَدعُونَ، قَالَ: تَرَى بِأَيدِيهِم ما أَرَى؟ فَقلتُ: وما بِأَيدِيهِم؟ قَالَ: بِأَيدِيهِم نُورٌ، قلتُ: ادعُوا اللَّه أَن يُرِينِيهِ، فَدَعا، فَأَرانِيهِ، فَأَسرَعَ، فَرَفَعنا أَيدِيَنا.


-“হযরত আনাস ইবনে আলেক (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  এর সাথে আমি ঘর থেকে মসজিদে গেলাম। সেখানে দেখলাম একদল লোক দুই হাত উত্তোলন করে দোয়া করছেন। রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেন, তোমরা কি দেখ তাদের হাতের মধ্যে কি যা আমি দেখছি? আনাস (رضي الله عنه)  বলেন: তাদের হাতের মাঝে কি? প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেন: তাদের হাতের মাঝে নূর। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য দোয়া করেন যেন আমরা ঐ নূর দেখতে পারি। অত:পর তিঁনি দোয়া করলেন ও আমরা নূর দেখলাম। ফলে আমরা হাত তোলে তাদের সাথে দোয়া করলাম।” 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম বুখারী: তারিখুল কাবীর, ৬৯২ নং রাবীর ব্যাখ্যায়)


এই হাদিস গুলো থেকে বুঝা যায়, অনেক লোক একত্রিত হয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া নিশ্চিৎ কবুল হয়। 


❍ এ বিষয়ে শারিহে মুসলীম ইমাম নববী (رحمة الله) অপর হাদিসে উল্লেখ করেন,

عن قَتادَة التابعيّ الجليل الإِمام صاحب أنس رضي الله عنه، قال: كان أنسُ بن مالك رضي الله عنه إذا ختم القرآن جمع أهله ودعا.

-“জলীল কদর তাবেঈ ইমাম ও আনাস (رضي الله عنه)  এর সঙ্গী হযরত কাতাদা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)  যখন কোরআন খতম করতেন তখন পরিবার-পরিজনদের একত্রিত করতেন ও দোয়া করতেন।” 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম নববী: আল আযকার, ১০৭ পৃ:) 


❍ ইমাম দারেমী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে সনদসহ এভাবে হাদিসখানা উল্লেখ করেন,

حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا ثَابِتٌ، قَالَ: كَانَ أَنَسٌ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ، جَمَعَ وَلَدَهُ وَأَهْلَ بَيْتِهِ فَدَعَا لَهُمْ 

-“হযরত ছাবেত (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করেন, হযরত আনাস (رضي الله عنه)  যখন কোরআন খতম করতেন তখন তার সন্তান ও পরিবার বর্গকে একত্রিত করলেন এবং দোয়া করতেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

・সুনানে দারেমী, হাদিস নং ৩৫১৭ 

・ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭ 

・তাফছিরে সাঈদ ইবনে মানছুর, হাদিস নং ২৭ 

・ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৬৭৪ 

・ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৭১৩


𓈃 ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন: 

هَذَا هُوَ الصَّحِيحُ مَوْقُوفٌ -

“এই হাদিস মাওকুফ ও ছহীহ্।” (ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৭)


𓈃 ইমাম নুরুদ্দিন হায়ছামী (رحمة الله) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন, 

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ. -

“ইমাম তাবারানী ইহা বর্ণনা করেছেন এবং এর সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত।” (ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ১১৭১৩)


𓈃 লা-মাজহাবী নাছিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন: إسناده صحيح. -“এর সনদ ছহীহ।” (ছিলছিলাতু আহাদিছি ছাহিহা, হাদিস নং ১৪২) 


❍ এ বিষয়ে আরেক হাদিসে আছে:

وروى بإسناده الصحيح، عن مُجاهد قال: كانوا يجتمعون عند ختم القرآن يقولون: إن الرحمة تنزيل عند القرآن.

-“ছহীহ্ সনদে বর্ণিত আছে, হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন: লোকেরা কোরআন খতমের সময় একত্রিত হতেন এবং বলতেন এই সময় রহমত নাজিল হয়।” (ইমাম নববী: আল আযকার, ১০৭ পৃ:) 


❍ এ বিষয়ে প্রিয় নবীজি (رحمة الله) এর আমল লক্ষ্য করুন,

أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ خُشَيْشٍ الْمُقْرِئُ بِالْكُوفَةِ، حدثنا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ الْحَسَنِ الْقَطَّانُ الْبَلْخِيُّ، حدثنا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ أَبُو عَمْرٍو الْحَافِظُ الْعَبْدِيُّ الْبَغْدَادِيُّ بِالرَّمْلَةِ، حدثنا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، بِعَسْكَرِ مُكْرَمٍ، حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى الدُّولَابِيُّ، حدثنا أَبُو نُعَيْمٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَتَمَ الْقُرْآنَ جَمَعَ أَهْلَهُ

-“হযরত আনাস (رضي الله عنه)  হতে বর্ণিত, রিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ)  যখন কোরআন খতম করতেন তখন তাঁর আহলে বাইতকে একত্রিত করতেন।”

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৮) 


দেখুন! আমলের শেষে প্রিয় নবীজি (ﷺ) , সাহাবী ও তাবেঈগণ দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হয়ে দোয়া করতেন এবং ঐ দোয়া আল্লাহর হাবীব (ﷺ)  কবুলের গ্যারান্টি দিয়েছেন। তাই যেহেতু একত্রিত হয়ে ও সমষ্ঠিগতভাবে দোয়া করলে কবুল হওয়ার গ্যারান্টি আছে সেহেতু অনেক লোক একত্রিত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোয়া করা হয়। অপরদিকে লোকেরা একত্রিত হলে তাদের মেহমানদারী তথা যিয়াফত করা স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ)  এর সুন্নাত। যেমনঃ 


❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ)  বলেছেন:


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي حَصِينٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ 


“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)  বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের যিয়াফত করে। 

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং ১৯০৮)


সুতরাং মৃত ব্যক্তির রুহে সওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে ফাতেহা অনুষ্ঠান করা, দোয়ার সময় সকলে একত্রিত হওয়া ও সামর্থ অনুযায়ী লোকদেরকে যিয়াফত করা তথা খাবার পরিবেশন করা সবই রাসূলে পাক (ﷺ)  এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

Top