❏ হানাফী মাজহাবের দৃষ্টিতে মৃতের জন্য যিয়াফত করা
মৃত ব্যক্তি পরিবার-পরিজন থেকে যিয়াফত গ্রহণ করার ব্যাপারে হানাফী ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত নিম্নরুপ:-
❍ ভারতবর্ষের প্রষিদ্ধ ফাতওয়ার কিতাব ‘ফাতওয়ায়ে আলমগিরী’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
وَلَا يُبَاحُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ عِنْدَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، كَذَا فِي التَّتَارْخَانِيَّة
-“মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে ৩ দিনের ভিতর যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। এরূপ তাতারখানিয়া কিতাবে রয়েছে।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)
❍ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
وَذَكَرَ فِي الْخُلَاصَةِ: أَنَّهُ لَا يُبَاحُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ عِنْدَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ،
-“খুলাছা কিতাবে আছে, মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে ৩ দিনের ভিতর যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫৯৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
উক্ত ফাতওয়া দ্বারা দুইটি বিষয় প্রকাশিত হয়: যেমন:-
১. মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে যিয়াফতের অনুষ্ঠান চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। কিন্তু ৩ দিনের পরে হলে জায়েয হবে। অর্থাৎ, ৪ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন ইত্যাদি যে কোন দিনে হলে নিষেধ নয়। এখানে ৩ দিনের শর্ত আসার পিছনে কারণ হচ্ছে ঐ ৩ দিন হচ্ছে মৃত ব্যক্তি আহলবর্গের শোক প্রকাশ বা শোক পালনের দিন।
২. মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থেকে লোকেরা যিয়াফত চেয়ে নেওয়া জায়েয নয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তি পরিবার-পরিজন যদি স্ব-ইচ্ছায় যিয়াফতের দাওয়াত দেয় তাহলে নিষেধ নয়।
❍ হানাফী মাজহাবের মশহুর কয়েকটি কিতাবে আছে:-
وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ مِنْ الطَّعَامِ مِنْ أَهْلِ الْمَيِّتِ لِأَنَّهُ شُرِعَ فِي السُّرُورِ لَا فِي الشُّرُورِ،
-“মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে খাবারের যিয়াফত চেয়ে নেওয়া মাকরুহ। কেননা ইহা খুশির সময় করা হয়, শোকের সময় নয়।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতহুল কাদির, ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ: ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ: মারাকিল ফালাহ্)
উল্লেখিত ফাতওয়া দ্বারা কয়েকটি বিষয় প্রকাশিত হয়। যথা:-
১. মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন থেকে খাবারের যিয়াফত চেয়ে নেওয়া মাকরুহ, তবে ইচ্ছাকৃত খাবার খাওয়ালে মাকরুহ নয়।
২. খাবারের যিয়াফত শোকের সময় করা জায়েয নয়, অন্যথায় শোকের সময়ের পরে হলে জায়েয হবে। আর হাদিস শরীফে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: মৃত ব্যক্তি শোক পালন হচ্ছে ৩ দিন। সুতরাং বিষয়টি সহজেই অনুমেয় হয় যে, ৩ দিনের শোকের পরে মায়্যেতের আত্মার মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে সাধ্য অনুযায়ী গরীব-মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো নিষেধ নয়।
❍ এ দিকে লক্ষ্য করেই আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) ও ছাহেবে বাজ্জাজিয়া বলেন:
وَإِنْ اتَّخَذَ طَعَامًا لِلْفُقَرَاءِ كَانَ حَسَنًا -
“যদি গরীব লোকদের জন্য খাবার চাওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬১৭ পৃ: ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫৯৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
❍ হানাফী মাজহাবের তৃতীয় তবকার ফাতওয়ার কিতাব, ফাতওয়ায়ে কাজীখাঁন-এ আছে:-
وان اتخاذو لي الميت طعاما للفقراء كام حسنا الا ان يكون في الورثة صغير
-“যদি ফকির লোকদেরকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে খাবার দেওয়া হয় তাহলে ইহা উত্তম হবে, তবে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছ ছোট হলে ইহা গ্রহণ করবে না।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে কাজী খাঁন তাহতাবী শরীফ, ৬১৮ পৃ:)
❍ ছাহেবে বাজ্জাজিয়া (رحمة الله) বলেন:
وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الطَّعَامِ فِي الْيَوْمِ الْأَوَّلِ وَالثَّالِثِ -
“মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার প্রথম দিন ও তৃতীয় দিন খাবার চাওয়া মাকরুহ।”
তথ্যসূত্রঃ
(ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃ:)
একই ভাবে এই ফাতওয়া দ্বারাও প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে যিয়াফত করা মাকরুহ, তবে ৩ দিনের পরে হলে জায়েয। এই ৩ দিন মাকরুহ হওয়ার পিছনে কারণ হচ্ছে নবী পাক (ﷺ) এর হাদিস “৩দিন শোক প্রকাশের”। এরূপ কারণ দর্শানো ব্যতীত অন্য কোন ফাতওয়া আমলযোগ্য হবেনা। সর্বোপরি মানুষের মেহমানদারী করা প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর একটি উত্তম সুন্নাত। তাই এই ফাতওয়া ৪ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন বিবিধ দিনে সাধ্য অনুযায়ী যিয়াফতকে নিষেধ করেনা।