تذكرة النفوس القدسية فى سلاسل اولياء الله


তায্কেরাতুন্-নুফুসুল কুদ্সিয়্যাহ ফি সালাসিলে আউলিয়াইল্লাহ্ (সিল্সিলাভূক্ত পূণ্যাত্মা অলিগণের জীবন চরিত্র) [দ্বিতীয় খন্ড]

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (رحمة الله)


প্রকাশনায়ঃ আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশতীয়া বাংলাদেশ

টেক্সট রেডীঃ ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি


গ্রন্থ স্বত্ব:

লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


প্রকাশকাল:

১ লা জুন ২০১৩ ঈসায়ী


অনুবাদ:

শাহজাদা মাওলানা আবুল ফছিহ মুহাম্মদ আলাউদ্দীন

মুহাদ্দিস: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা


হাদীয়া:

২২০ [ দুইশত বিশ টাকা ]  মাত্র।



সূচীপত্র 



প্রথম অধ্যায় .


নং বিষয়



ভূমিকা


অনুবাদকের কথা


হুজুর সৈয়্যদুল কাউনাইন (ﷺ)কে সর্বপ্রথম আল্লাহপাক অলৌকিক আধ্যাত্মিকতা দান করেছেন


সপ্ত গোষ্ঠি


ক্বাদিরিয়া পরিবার


সিলসীলায়ে চিশতিয়া


সিলসিলায়ে নকশে বন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া


সিলসিলায়ে নকশে বন্দিয়া আবুল ‘উলাইয়া


হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেস থেকে সিলসীলার বর্ণনা


সিলসীলা এ নকশে বন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়া হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)


সরওয়ার্দীয়া তরীক্বাহ


এই ১৭ (সতের) শ্রেণীর নাম করণের কারণ


ক্বাদেরিয়া রাজ্জাক্বিয়া সিলসীলাহ


ক্বাদেরীয়া রাজ্জাক্বীয়া সীলসীলার আরেক পদ্ধতি


সিলসীলায়ে খাজা মুঈন উদ্দীন চিশতী


কলন্দরীয়া সিলসীলাহ


সিলসীলায়ে মাদারীয়া


সিলসীলায়ে রেফাঈয়াহ


সিলসীলায়ে নেয়ামতউল্লাহ শাহী


সিলসীলায়ে ছাবেরিয়া চিশতীয়া


মাখদুমিয়া তরীক্বাহ


হাজী এমদাদ উল্লাহ মুহাজির মক্কি (رحمة الله) এর সিলসীলাহ


সিলসীলায়ে চিশতীয়া নেজামিয়া


হযরত মাওলানা ‘আব্দুর রহমান জামি (رحمة الله) এর সিলসীলা


সিলসীলায়ে সৈয়দ ‘আলি হুজুভীরী দাতা গঞ্জেবখ


হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি (رحمة الله) এর পরম্পরা


হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাজ্জালী তুছি (رحمة الله)


হযরত মুহাম্মদ সেলিম চিশতি (رحمة الله)


হযরত শাহ র্গিদিজ মুলতানি (رحمة الله)


তাজুল আরেফিন হযরত শাহ আবু বক্কর ওয়াররাক (رحمة الله)


অলি আল্লাহদের মৃত্যুও জিবিতদের ন্যায়


হযরত শেখ সাদী সিরাজী (رحمة الله)


সুলতানুল অলদ বিন মাওলানা রুমী (رحمة الله)


হযরত শেখ রোজবাহান বাকলি সিরাজী (رحمة الله)


হযরত শাহ আবুল ম‘আলি (رحمة الله)


হযরত শায়খ বাহাউদ্দীন (رحمة الله)


হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রোদলভী (رحمة الله)


হযরত শায়খ আবদুল কুদ্দুছ (رحمة الله)


হযরত মিরা সাইয়িদ শাহ ভিকা (رحمة الله)


হযরত সুলতান বাহু (رحمة الله)


হযরত সেরমদ শহীদ (رحمة الله)


হযরত সৈয়্যদ দোস্ত মুহাম্মদ (رحمة الله)


পূর্ববর্তী কয়েকজন বিখ্যাত অলি


* সিলসিলা হযরত খাজা আবুল বারাকাত (رحمة الله)


* হযরত খাজা শেখ আবু তালেব মক্কী (رحمة الله)


* হযরত শেখ আবুল হোসাইন বছরী (رحمة الله)


* হযরত শেয়খ আবু বকর ফররাজ (رحمة الله)


* হযরত শেখ ইবনে ফারেজ আল- মিশরী (رحمة الله)


* হযরত শেখ ওয়াহিদ উদ্দিন আল- কিরমানী (رحمة الله)



দ্বিতীয় অধ্যায় .


রাসূলে কারীম (ﷺ)এর পক্ষ হতে হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)কে খেলাফতে কুব্রার ইঙ্গিত


চৌদ্দ তরীকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা


দ্বিতীয় পর্যায়ে চলি­শটি সিলসীলাহ এই চৌদ্দ সিলসীলা থেকে নির্গত


বার সিলসীলার বর্ণনা


বার গোত্রের মধ্যে বাকী যে দুই গোত্র রয়েছে তা পথভ্রষ্ট ও বিতাড়িত


সিলসিলায়ে কাদেরীয়া


সিলসিলায়ে চিশ্তীয়া শরীফ


নক্শে বন্দিয়া ত্বরিকা বা সিলসিলা


ছরওয়ার্দীয়া সিলসিলা


কুব্রুবীয়া সিলসিলা


কাদেরীয়া তরিকার মূল


বর্তমান যুগের পীর-মাশায়েখ


হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর ফজিলত ও মর্তবা


গাউছে পাক সম্পর্কে পূর্ববর্তী মনিষীদের ভবিষ্যতবানী


সময়কালিন উলে­খযোগ্য কতগুলো সিলসিলাহ


সিলসিলায়ে সরওয়ার্দীয়া


সিলসিলায়ে ছাবেরীয়া


সিলসিলায়ে নিজামিয়ায়ে আউয়াল বা প্রথম


সিলসিলায়ে নিজামিয়া ছানী বা দ্বিতীয়


সিলসিলায়ে নিজামিয়ায়ে ছালেচ বা তৃতীয়


সিলসিলায়ে ক্বাদেরীয়ায়ে আউয়াল বা প্রথম


সিলসিলয়ায়ে ক্বাদেরীয়া ছানী বা দ্বিতীয়


সিলসিলায়ে কলন্দরিয়া


সিলসিলায়ে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদিয়া হযরত শাহ আবদুল আজিজ (رحمة الله)


সিলসিলায়ে ক্বাদেরীয়া শাহ আবদুল আজিজ  (رحمة الله)

হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ কালপুরী (رحمة الله) এর অবস্থান


হযরত বিল্লাহ শাহ (رحمة الله) এর অবস্থান বা জীবনালোচনা


হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله)


হযরত শেখ আবু সাঈদ (কাদ্দিছা র্সিরুহুল আজীজ)


হযরত মুসা পাক শহীদ (رحمة الله)


হযরত শাহ আলী (رحمة الله)


হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)


শাজারায়ে ছাবেরীয়া তথা গ্রন্থকারের শাজারাহ সহ


* হযরত শায়খুল মাশায়েখ ওয়াল আউলিয়া মাখদুম আলাউদ্দিন আলী আহমদ ছাবের (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ)


* হযরত শায়খুল মাশায়েখ, শেখ শামসুদ্দিন তুরক পানি পতি (رحمة الله)


* হযরত শেখ মাখদুম জালাল উদ্দিন কবিরুল আউলিয়া পানি পতি (رحمة الله)


* হযরত শায়খুল মাশায়েখ আহমদ আবদুল হক রোদলভী (رحمة الله)


* হযরত শেখ আরেফ চিশতী (رحمة الله)


* হযরত শেখ মুহাম্মদ ইবনে আরেফ চিশতী (رحمة الله)


* হযরত শায়খুল মাশায়েখ সৈয়্যদুনা আবদুল কুদ্দুস গাঙ্গুগুহী নোমানী (رحمة الله)


* হযরত শেখ জালাল উদ্দিন তাহনিছরী (رحمة الله)


* হযরত নিজামউদ্দিন বলখী (رحمة الله)


* শায়খুল মাশায়েখ ছাবেরী নোমানী (رحمة الله)


* হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله)


* হযরত শেখ দাউদ ইবনে খাজা মুহাম্মদ ছাদেক (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ)


* হযরত শাহ আবুল ময়ালী (رحمة الله)


* হযরত সৈয়্যদ শাহ মীরাবেগ (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ)


* হযরত খাজা মুহাম্মদ সালেম (رحمة الله)


* হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ হাসানী রুপড়ী (رحمة الله)


* হযরত হাফেজ মুসা চিশতী ছাবেরী মালেক পুরী (رحمة الله)


* হযরত শাহ সৈয়্যদ মাওলানা আমানত আলী আমরূহী (رحمة الله)


গাজ্জালিয়ে জমান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (رحمة الله) এর সংক্ষিপ্ত বংশিয় সিলসীলার পরিচয়


হাকির ফকির লেখকের খেলাফত ও ইজাজতের বর্ণনা


গ্রন্থকারের সিলসিলা সমূহের শজরা বর্ণনা


সিলসিলায়ে চিশতীয়া নিজামিয়া সাঈদীয়া


সিলসিলায়ে চিশতীয়া গীসুদরাজিয়া


সিলসিলায়ে নেজামিয়া কুদ্দুসিয়া সাঈদীয়া


ফকির গ্রন্থকারের দ্বিতীয় ত্বরিকায়ে কাদেরীয়া আলীয়া বরকাতিয়া রেজভীয়া মুস্তাফাভীয়া


লেখকের বংশ তালিকা


আউলিয়ায়ে কামেলিনদের কর্মকান্ড জীবন-মরণ এর মধ্যে একই অবস্থা










ভূমিকা



بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ


اَلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَلَمِيْن وَالصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ عَلى سَيّدالاَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْن وَعلٰى آلـهٖ وَاصْحَابِـهٖ اَجْمَعِيْن ، اَمَّا بَعْد !


আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন মানবজাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে নাজাত ও মুক্তির পথ সুগম করার জন্য যুগে যুগে হযরাত আন্বিয়া আলাইহিমুস্সালামকে পৃথিবীর বুকে ঐশীগ্রন্থ সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী যথাযথভাবে সকলের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে মানুষ সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে পরকালে নাজাতের পথ লাভে ধন্য হয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম খলিফা হযরত বাপ আদম আলাইহিস্ সালাম হতে আরম্ভ করে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন অসংখ্য নবী-রাসূল, এই পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, যার উসিলায় আল্লাহপাক সমস্ত কায়েনাত সৃষ্টি করেছেন; যিনি হলেন সৈয়্যদুল আন্বিয়া, খাতেমুন্নবীয়িন রাহ্মাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যার পরে আর কোন নবী-রাসূলের আগমন হবে না। 

তবে রাসূলের বাণী العلماء ورثة الانبياء (সত্যিকার আলেমগণ নবীগণের উত্তরসুরী) হিসেবে মানুষদের নিকট তাওহীদ ও রেসালতের মর্মবাণী পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আলেম-ওলামা ও আউলিয়ায়ে কেরামরা পালন করে চলেছেন।

আমি অত্র পুস্তিকায় আল্লাহর নৈকট্যবান উলে­খযোগ্য কয়েকজন সম্মানিত পূণ্যবান আত্মার জীবন-চরিত সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। যাদের জীবনী পাঠ করলে সাধারণত: মানুষের অন্তরে আল্লাহ ও রাসূলের কথা স্মরণ হবে এবং আল্লাহর ভয় অন্তরে স্থান পাবে, সাথে সাথে আল্লাহর পথে তাদের অকৃত্রিম ও কঠোর সাধনার কথা জানা যাবে।

পুস্তিকাটি تذكرة النفوس القدسيه فى سلاسل اولياء الله নামে নামকরণ করেছি।

পরিশেষে পুস্তিকাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং সকল পাঠকদেরকে আল্লাহপাক উভয় জগতে কামিয়াবি নসিব করুন। আমিন।


গ্রন্থকার

মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী










অনুবাদকের কথা


বিছমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম


نَحْمَدُه وَنُصَلِّى وَنُسَلِّمُ عَلٰى رَسُوْلِـه الْكَرِيْم


বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন, লিখক ও গবেষক, বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, মুফাক্কেরে ইসলাম, শাইখে তরিক্বত, পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত হযরত আল্লামা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) লিখিত- সম্মানিত মহা-মণীষীদের জীবনীগ্রন্থ “তাযকিরাতুন নুফুসুল কুদ্সিয়া ফি-সালাসিলে আউলিয়াইল্লাহ্” নামক পুস্তিকাটি সর্বসাধারণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আউলিয়ায়ে কেরামদের জীবনী সম্বলিত অসংখ্য গ্রন্থ সর্বত্র বিদ্যমান। কিন্তু অত্র গ্রন্থটি এর ব্যতিক্রম। কেননা এতে শজরাহ সহকারে বর্ণনা করাতে এটি রূহানী উন্নতি ও মা’রফতের উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার অন্যতম একটি দিক-দর্শন বলা যায়। 

বিশেষত: তরিক্বত পন্থীদের জন্য অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এতে লিখক মহোদয় তরিক্বতের আদব সম্পর্কে খুবই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন, মূলত: যেটি তরিক্বতের মূল শিক্ষা। হুজুর উক্ত গ্রন্থটি উর্দু ভাষাতে রচনা করেছেন। সর্বসাধারণের সুবিধার্তে আমি অধম বাংলা ভাষায় অনুবাদ করি। মূল কিতাবের ভাবার্থ যথাযথ ভাবে অনুবাদের ক্ষেত্রে চেষ্টায় ত্রুটি করিনি। তারপরও পাঠক সমাজের নিকট অনুরোধ যদি কোন প্রকার ভূল-ত্রুটি গোচরিভূত হলে অত্র প্রকাশনা সংস্থাকে অবহিত করলে পরবর্তী সংস্কারে তা সংশোধন করা হবে। 

অত্র গ্রন্থটি অনুবাদ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন তাদেরকে যথাযথ বদলা দান করুন। আমিন। ছুম্মা আমিন।


অনুবাদক


শাহজাদা আবুল ফছিহ মুহাম্মদ আলাউদ্দীন



ইমাম আজম আবু হানিফাহ (রাঃ) বলেছেন-


أحبُّ الصالحين ليست منهم+ لعلّ الله يرزقنى صلحًا


খান্দানে নকশে বন্দিয়া


 (নকশে বন্দিয়া পরিবার)


এই সিলসীলাটি হযরত মুহাম্মদ কাছেম বিন মুহাম্মদ বিন হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে আরম্ভ হয়েছে। এই সিলসীলার দরবেশগণকে বলা যায় সিদ্ধপুরূষ এবং প্রভুর উপসনায় তাদের খ্যাতি চতুর্থদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই শ্রেনীর বুজুর্গদেরকে নকশেবন্দিয়া বা নকশে বন্দিয়ায়ে মুযাদ্দেদিয়া কিংবা আবুল ওলাইয়া এই তিন নামে নামকরন করা হয়েছে। অতঃপর তাদের মধ্যে মুরশেদের মিত্রতায় শিষ্যত্য সৃষ্টি হয়।


হুজুর সৈয়দুল কাউনাইন (ﷺ) কে সর্বপ্রথম আল্লাহ পাক অলৌকিক আধ্যাত্মিকতা দান করেছেন


হুজুর সৈয়দুল কাউনাইন (ﷺ)কে সর্বপ্রথম আল্লাহ পাক অলৌকিক আধ্যাত্মিকতা দান করেছেন। আর তিনি হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) কে তাতে অনুগ্রহ করেছেন। 


তাই সিলসীলার চার পীর এবং সপ্ত গোষ্ঠী ও চৌদ্দ দরবেশ গণের পরম্পরা হযরত আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) থেকে আরম্ভ হয়েছে।


তিনি (হযরত আলী ) চার পীর কে নির্ণয় করেছেন :-


প্রথমত: পীর হযরত ইমাম হাসান (রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু)।


দ্বিতীয়ত: হযরত ইমাম হোসাইন শহীদে কারবালা (রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু)।


তৃতীয়ত: খাজা কামিল বিন যিয়াদ (رحمة الله) ।


চতুর্থত: হযরত খাজা হাসান বছরী (رحمة الله)।


কিছু কিছু হযরাতগন চার পীরের বিবরণ এভাবে দিয়েছেন।


১। হযরত খাজা হাসন বছরী (رحمة الله)


২। হযরত খাজা কামিল বিন যিয়াদ (رحمة الله)


৩। হযরত খাজা ওয়াইছুল করনি (রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু)


৪। হযরত খাজা হাসন সিররে সাকতি (রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু)


আবার অন্য কিছু হযরাত চার পীরের ইঙ্গিত এভাবে দিয়েছেন ।


১। হযরত খাজা হাসন বছরী (رحمة الله)


২। হযরত খাজা কামিল বিন যিয়াদ (رحمة الله)


৩। হযরত আব্দুল্লাহ মক্কি (رحمة الله)


৪। হযরত আব্দুল্লাহ বাহরী (رحمة الله) ।


কিন্তু অধিকাংশের মত হল প্রথমটি শুদ্ধ অর্থাৎ জামহুরের মতে প্রথম চার পীরকে হযরত আলী (রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) নির্ণয় করেছেন।


সপ্ত গোষ্ঠি


সপ্ত গোষ্ঠি যা মূলত হযরত মাওলা আলী (রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) থেকে প্রচলিত হয়েছে যথা :-


 ১। কামিলিয়া: যা হযরত কামিল বিন যিয়াদ (رحمة الله) থেকে প্রচলিত। 


২। বছরীয়া: যা হযরত হাসন বছরী (رحمة الله) থেকে প্রচলিত। 


৩। ওয়াইছিয়া: যা হযরত খাজা ওয়াইছুল করনি (رحمة الله) থেকে প্রচলিত। 


৪। কালন্দরীয়া: যা হযরত বদায়ুনি কালন্দর (رحمة الله) থেকে প্রচলিত ।


৫। সালমানিয়া : যা হযরত সলমান ফারসী (رحمة الله) থেকে প্রচলিত ।


৬। নকশে বন্দিয়া: যা হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদ বিন আবি বক্কর (رحمة الله) থেকে প্রচলিত 


৭। র্সিরীয়া: যা হযরত খাজা হাসান সিররে সাকতি (رحمة الله) থেকে প্রচলিত।


এই গোষ্ঠীগুলি থেকে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান ও বাংলার মধ্যে চাঁর গোষ্ঠীর ফকির দরবেশ বি¯ৃ—ত রয়েছে। অন্যান্যগুলি বিভিন্ন রাষ্ট্রে রয়েছে, যা সামনে সংক্ষেপে অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হবে। 


চৌদ্দ খানদান বা পরম্পরার বর্ণনা : যেগুলি মূলত হযরত মাওলা ‘আলী (রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) থেকে চলিত এবং হযরত খাজা হাসান বছরী (رحمة الله) এর মাধ্যমে প্রচলিত হয়েছে। উনার কয়েকজন প্রতিনিধি ছিল তৎমধ্যে-

১। হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়েদ (رحمة الله)।


২। হযরত খাজা হাবিবে আজমী (رحمة الله) উলে­খযোগ্য।


অতএব, হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ (رحمة الله) থেকে পাঁচটি পরম্পরা শুরু হয়েছে মূলত যাদেরকে চিশতী বলা হয় আর তা -


১। যায়দিয়া ২। আয়াযীয়া ৩। আদহামিয়াহ ৪। হাবাইরিয়া ৫। চিশতীয়াহ।


হযরত খাজা হাবিবে আজমী (رحمة الله) থেকে নয় (৯) টি পরম্পরা চালু হয়েছে; সাধারণত তাদেরকে কাদেরিয়া বলা হয়। আর তা হল- ১। হাবিবিয়াহ ২। তায়ফুরিয়া ৩। কারখিয়া ৪। সাকতিয়াহ ৫। জুনাইদিয়া  ৬। গাযরোভিয়াহ ৭। তুছিয়াহ ৮। ফেরদৌসিয়াহ ৯। সরওয়ারদিয়াহ।


ক্বাদিরিয়া পরিবার


এই পরিবার হযরত সৈয়দুনা শেখ মহ্উিদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) থেকে শুরু হয়েছে। উনার পিতামহের আরেকটি প্রসিদ্ধ সিলসীলাহ এইভাবে সম্পৃত্ত হয়েছে; যথা: তিনি মুরিদ হলেন সৈয়দ আবু ছালেহ (رحمة الله) এর এবং  তিনি মুরিদ হযরত সৈয়দ মুছা জঙ দোস্ত (رحمة الله) এর এবং তিনি মুরিদ সৈয়দ আব্দুল্লাহ (رحمة الله) এর এবং তিনি মুরিদ ছিলেন হযরত গনী যাহেদ (رحمة الله) এর; তিনি মুরিদ হযরত সৈয়দ দাউদ (رحمة الله) এর তিনি, মুরিদ হযরত সৈয়দ মুছা আলজুন (رحمة الله) এর; তিনি মুরিদ হযরত সৈয়দ আব্দুল্লাহ মহয (رحمة الله) এর; তিনি মুরিদ হলেন হযরত সৈয়দুনা ইমাম হাসান (رحمة الله) এর। গাউসে পাক (رحمة الله) এর ওফাত শরীফ ৮ই রবিউস সানি ৫৬১ হিজরীতে রোজ সোমবার এশার নামাজের পরে হয়েছে।


সিলসীলায়ে এ চিশতিয়া


অথাৎ হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ (رحمة الله) থেকে যে পাঁচ পরিবার চলিত হয়েছে তা হল -


১। যায়দিয়াহ: এটি হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়েদ (رحمة الله) এর থেকে, যিনি হযরত খাজা হাসান বসরী (رحمة الله) এর প্রতিনিধি, ওফাত -২৭ সফর- ১৮৭ হি: বসরায় যার মাজার শরীফ। এই সম্মানিত হযরত আরো উপকার প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত শেখ আবি গিয়াছ মানছুর বিন ‘ওমর সলমী কুফি (رحمة الله) থেকে, তিনি আরো প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত হাসান বাসরী (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন।


২। ‘আয়াযীয়াহ: হযরত খাজা ফুদ্বাঈল বিন ‘আয়ায (رحمة الله) থেকে চালু হয়েছে। তিনি হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়েদ (رحمة الله) এর খলিফা ছিলেন,ওফাত- ১৮৭ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে। মাজার শরীফ মক্কায়ে মুজ্জেমার মধ্যে। তিনি শেখ আবি ‘এমরান মুছা আর রাঈ থেকেও ধন্য হয়েছিলেন এবং তিনি হযরত খাজা ওয়াইছ করনী (رحمة الله) এর উপর ভক্তির মাধ্যমেও ফয়েজাপ্ত হয়েছেন।


৩। আদহামীয়া: এই সিলসীলাহ হযরত খাজা সূলতান ইব্রাহীম বিন আদহাম বলখি (رحمة الله) থেকে চালু হয়েছে, তিনি হযরত খাজা ফুদ্বাইল (رحمة الله) এর খলিফা ছিলেন । ওফাত ২৬ জমাদিউল আওয়াল-২৬১ হিজরীতে হয়েছে। বাগদাদ শরীফে তার মাজার শরীফ অবস্থিত ।


৪। হাবাইরিয়া: এটি হযরত হাবাইরাতুল বাছরি (رحمة الله) থেকে আরম্ভ  হয়েছে । উনাকে হযরত খাজা খুযাইফাতুল মার‘আসি (رحمة الله) খেলাফত প্রদান করেছেন। তিনি খলিফা হলেন হযরত খাজা ঈব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ৭ই শাওয়াল ২৫২ হিজরীতে । অন্যদিকে তিনি হযরত খাজা জুনাইদ বগদাদি (رحمة الله) থেকেও ফায়েজাপ্ত হয়েছিলেন।


৫। ইছহাকীয়াহ: এই পরম্পরা সিলসীলাহ হযরত আবু ইছহাক চিশতী (কদ্দাছাল্লাহু ) থেকে আরম্ভ হয়। তিনি হযরত খাজা মিমশাদ আলভী দিনুরী (رحمة الله)এর খলিফা ছিলেন এবং তিনি হযরত হাবাইরাতুল বাছরি (رحمة الله) থেকেও খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ১৪ই রব্উিস সানি ৩২৯ হিজরীতে। ওফাত হয়েছেন, হারাতে কুছবা নামক স্থানের চিশতের মধ্যে মাজার শরীফ বিদ্যমান।


সিলসিলায়ে নকশে বন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া


এই সিলসিলার মধ্যে নকশে বন্দিয়া শব্দটির সাথে (مجدديہ) মুজাদ্দেদিয়া শব্দটি হযরত ইমামে রব্বানি মুজাদ্দেদে আলফে ছানি শেখ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দি (رحمة الله)এর পরে বর্ধিত হয়েছে। 


তার ওফাত সন ১০৩৫ হিঃ রোজ শনিবার সকালে । 


মুজাদ্দেদিয়া খান্দানে হযরত আব্দুল্লাহ (رحمة الله) যিনি গোলাম আলি শাহ্ দেহলভী (আলাইহি রহমাত) হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং তিনি নিজ সময়কার কুতুব ছিলেন এবং উপমাহীন শেখ বা মুরশেদ হয়েছিলেন।


তাঁর সিলসীলা এ নকশে বন্দিয়ায়ে মুজাদ্দেদিয়া এভাবে আরম্ভ হয়েছে যথা- হযরত আব্দুল্লাহ শাহ গোলাম আলি দেহলভী (رحمة الله), তিনি হযরত মির্জা মজহারে জানে-জাঁ দেহলভী (رحمة الله) এর আসনে সমাসীন অর্থাৎ সাজ্জাদাহ নসীন ছিলেন। হযরত মির্জা মজহারে জানে-জাঁ (رحمة الله) -ওফাত ১১৫৫ হিজরীতে । 


তিনি হযরত মির্জা সৈয়দ নুর মোহাম্মদ বদায়ুনি (رحمة الله) এর শিষ্য ছিলেন। 


তিনি হযরত শেখ সাইফুদ্দীন (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা মাছুম (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত ইমাম রাব্বানি শেখ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দি মুজাদ্দেদে আলফে সানি (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা বাকি বিল্লাহ (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা মুহাম্মদ আমকুনগী (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত মাওলানা দরবেশ মুহাম্মদ (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত মাওলানা জাহেদ অলি (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত মাওলানা ইয়াকুব চরখি (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা আলাউদ্দীন আত্মার (رحمة الله) এর শিষ্য।


তিনি হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশে বন্দি (رحمة الله) “ওফাত শরীফ ৭৯১ হিজরীর মধ্যে” এর মুরিদ বা শিষ্য ছিল, আর তিনি ছিলেন হযরত সৈয়দ আমির কাললা (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা বাবা সেমাসি (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা আজিজ আলি রাহাইতানি (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর,


তিনি হযরত মাহমুদুল খায়ের ফাগনবী (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত আরেফ রিউগুরী (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা আব্দুল খালেক গজদাওয়ানি (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা আবু ইউছুফ হামদানি (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা আবু আলি ফারমদি (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত আবুল হাসন খেরকানি (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত খাজা বায়েজিদ বোস্তামী (رحمة الله) এর,


তিনি ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله) এর,


তিনি হযরত কাসেম বিন মুহম্মদ বিন হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রাদিআল্লাহু তালা আনহু) এর,


তিনি হযরত সালমান ফারসী (রাদিআল্লাহু তালা আনহু) এর,


তিনি আমিরুল মুমেনিন হযরত মাওলা আলি বিন আবি তালেব আসাদুল্লাহিল গালেব (রাদিআল্লাহু তা’য়ালা আনহু) এর,


তিনি হযরত খাতেমুল আম্বিয়া সৈয়দেনা মুহাম্মদর রাসূলল্লাহ (ﷺ) এর।


সিলসিলায়ে নকশে বন্দিয়া আবুল ‘উলাইয়া


এই সিলসিলাটি হযরত আবুল ‘উলা নকশে বন্দি আকবর আবাদি (رحمة الله) থেকে সঞ্চালিত হয়েছে। তিনি যুগের প্রসিদ্ধ অলি ছিলেন। তাঁর ওফাত শরীফ ৯ই সফর ১০২১ হিজরীতে রোজ সোমবার। এই সিলসীলার অনুসারিদের মধ্যে হযরত শেখ শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী এবং খাজা আবুল বারকাত (رحمة الله) এর মত উলে­খযোগ্য সম্মানিত ব্যক্তিগণ ও রয়েছেন। 


হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেস থেকে সিলসীলার বর্ণনা


হযরত শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) যিনি মুরিদ হলেন 


হযরত শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত আবুল কাসেম (رحمة الله)  এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত মুল্লা ওয়ালি মুহাম্মদ (رحمة الله) এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত সৈয়দ আবুল ‘উলা আকবর আবাদি (رحمة الله)  এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত খাজা আমীর আব্দুল্লাহ (رحمة الله)  এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত খাজা ইয়াহ্ইয়া (رحمة الله) এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত খাজা আব্দুল হক্ব (رحمة الله)  এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত এহরার (رحمة الله) এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত মাওলানা ইয়া’কুব ছারখী (رحمة الله)  এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত খাজা ‘আলাউদ্দীন আত্তার (رحمة الله) এর 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্শে বন্দি (رحمة الله)  এর   


সিলসীলা এ নকশে বন্দিয়া মুজাদ্দেদিয়া হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله):


হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) থেকে সিলসীলা এ নকশে বন্দিয়া প্রচলিত হয়েছে। যথা: তিনি সম্মানিত পিতা হযরত শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর মুরিদ ছিলেন, আর তিনি হযরত শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত সৈয়দ আব্দুলল্লাহ (رحمة الله) এর, তিনি শিষ্য বা মুরিদ ছিলেন সৈয়দ হযরত আদম বেনুরী (رحمة الله) এর এবং তিনি খাজা বাক্বি বিল্লাহ (رحمة الله) এর মুরিদ ছিলেন।                                             


সরওয়ার্দীয়া তরীক্বাহ


এই সিলসীলাহ দু’ পদ্ধতিতে বর্ণনা করা হয়েছে। যথা:


১। প্রথমত: এই সিলসীলাহটি হযরত শেখ শিহাবুউদ্দীন সারওয়ার্দী (رحمة الله) থেকে চালু হয়েছে। 


তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত শেখ জিয়াউদ্দীন (رحمة الله) থেকে তিনি খেলাফত / প্রতিনিধিত্ব অর্জন করেছেন হযরত শেখ আবু নজিব ওমরি (رحمة الله) থেকে এবং তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত শেখ জুনায়েদ বগদাদী (رحمة الله) থেকে ।


২। দ্বিতীয়ত: হযরত শেখ শিহাবুউদ্দীন সারওর্য়াদী (رحمة الله) খলিফা বা প্রতিনিধি হলেন হযরত শেখ পীরানে  পীর (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হলেন হযরত পীরানে পীর শেখুল ইসলাম আবু সাঈদ মোবারক মাখজুমী (رحمة الله) এর। 


খানদানে সারওয়াদীয়া থেকে ১৭টি পরম্পরা সিলসীলাহ উদ্ভাবিত হয়েছে, অর্থাৎ সারওয়ার্দীয়াদের মধ্য থেকে ১৭টি সিলসিলা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তা হচ্ছে। যথাক্রমে- ১। সুফিয়া স¤প্রদায়  ২। জালালিয়া ৩। লাল শাহবাজিয়া ৪। মাখজুমিয়া ৫। করম আলি জাহলি ৬। মুছা শাহি ৭। রাসূল শাহি ৮। মিরা শাহি ৯। আব্দুল্লাহ রোভছিয়া ১০। কাসেম শাহি ১১। রাজ্জাক শাহি ১২। দোলা শাহি ১৩। সৈয়দ শাহি ১৪। ঈসম্ঈাল শাহি  ১৫। হাবিব শাহি ১৬। মুর্তযা শাহি ১৭। নাতহ শাহি। 



এই ১৭ (সতের) শ্রেণীর নাম করণের কারণ


১। সুফিয়া: এটি হযরত ক্বাযি হামিদ উদ্দীন সুফি (رحمة الله) থেকে শুরু হয়েছে, তিনি হযরত শেখ সাহাবউদ্দীন  সারওর্য়াদী (رحمة الله) এর খলিফা।


২। জালালিয়া: এটি হযরত সৈয়দ জালাল উদ্দীন বোখারী (رحمة الله) থেকে চালু  হয়েছে। তিনি হযরত বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মুলতানি সারওয়ার্দী (رحمة الله) এর খলিফা । 


৩। শাহবাজিয়া: এটি হযরত সৈয়দ লাল শাহবাজি (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়েছে। তিনি হযরত খাজা শেখ জাকারিয়া মুলতানি সারওর্য়াদী (رحمة الله) এর খলিফা।


৪। মাখজুমীয়া: এটি হযরত মীর সৈয়দ জালাল উদ্দীন মাখজুমী জাহানিয়া (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়েছে। তিনি হযরত শেখ ছদরউদ্দীন মুহাম্মদ গাউছ (رحمة الله) এর খলিফা। 


৫। করম আলি জাহালি: এটি হযরত করম আলি জাহালি (رحمة الله) থেকে শুরু হয়েছে। তিনি হযরত শেখ মুহাম্মদ কাশমীরি (رحمة الله)  এর খলিফা।


৬। মুছা শাহি:  এদেরকে সীদা সাহাগও বলে থাকে। হরযত শাহ মুছা (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়; তিনি হযরত সৈয়দ জালাল ছুরখ (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা। 


৭ । রাসুল শাহি: এটি হযরত সৈয়দ রাসূল শাহ আলওয়ারি থেকে আরম্ভ হয়। তিনি হযরত শাহ দাউদ (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা। 


৮। মীরাহ শাহ: এটি হযরত শাহ মীরা মওজ হরী বন্দেগী (رحمة الله) থেকে শুরু হয়। তিনি সৈয়দ জালাল সুরখ (رحمة الله) এর পরিবার থেকে মুরিদ ও খলিফা হয়েছেন ।


৯। আব্দুল্লাহ রোসিয়া: এটি হযরত সৈয়দ আব্দুল্লাহ মালেকী আব্দু রুসী (رحمة الله) থেকে চালু হয়। তিনি হযরত শেখ আবু বক্কর (رحمة الله) এর খলিফা ।


১০। কাসেম শাহি: এটি হযরত হাজী কাশেম শাহী (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়। তিনি হযরত শেখ মুহাম্মদ কাশমীরি (رحمة الله) এর খলিফা।


১১। রাজ্জাক শাহি: এটি হযরত শাহ আব্দুর রাজ্জাক শাহি (رحمة الله) থেকে চালু হয়েছে। তিনি হযরত শাহ মুহাম্মদ মিরা বন্দেগী (رحمة الله) এর খলিফা।


১২। দোলা শাহি: এটি হযরত শাহ দোলা রব্বানী (رحمة الله) থেকে চালু হয়। তিনি হযরত সৈয়দুনা সের মস্ত (رحمة الله) এর খলিফা।


১৩। সৈয়দ শাহি: এটি হযরত সৈয়দ সাদাত খান বোখারী (رحمة الله) থেকে শুরু হয়। তিনি হযরত সের মস্ত (رحمة الله) এর খলিফা।


১৪। ইসমাঈল শাহি: এটি হযরত শাহ ইসমাঈল (رحمة الله) থেকে প্রারম্ভ হয়। তিনি হযরত শেখ আব্দুল কারিম (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা।


১৫। হাবিব শাহি: এটি হযরত শাহ হাবিব মুলতানি (رحمة الله) থেকে সূচনা হয়েছ। তিনি হযরত শেখ আব্দুল কারিম (رحمة الله) এর খলিফা।


১৬। মুর্তযা শাহি: এটি হযরত আনন্দ বোখারী (رحمة الله) অথবা আন্ন্দ চুরখি ওয়ালা থেকে চালু হয়। তিনি হযরত শেখ আব্দুল কারিম (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা।


১৭। নাত্হ শাহি: এই শ্রেনীর অবস্থা যতাযত জানা যায়নি কিন্তু কিছু কিছু পুস্তিকার মধ্যে লেখা হয়েছে এঁরাও ওঁদের ন্যায়, যেখানে পাচঁটি পরস্পর সাদৃশ্য যুক্ত যে পাচঁটি হল হাবিব শাহি, রাসূল শাহি, ইসমাঈল শাহি, মুর্তযা শাহি, নাত্হ শাহি।


আর সৈয়দ শাহি, দোলা শাহি, কাশেম শাহি, মুছা শাহি এবং করম আলি জহুলী ইত্যাদি এই সকল  এক শ্রেনির অন্তর্ভূক্ত, তাই এরা পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত। আর সৈয়দ লাল বাহার মুশাবাহাজ এর সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে- আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।


ক্বাদেরিয়া রাজ্জাক্বিয়া সিলসীলাহ


এটি আরম্ভ হয়েছে সৈয়দুস সা‘য়াদাত সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক্ব গিলানী (رحمة الله) থেকে, তিনি পীরানে পীর শেখ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর সুযোগ্য সন্তান এবং খলিফা। ওফাত শরীফ ৫ই জমাদিউস সানি ৬৪২ হিজরীতে। বাগদাদ শরীফের মধ্যে পবিত্র মাজার।


রাজ্জাক্বিয়ার মধ্যে এক প্রকার প্রথম পর্যায়ে বলা যায় যা হযরত মাওলানা হাফেয আব্দুল আজিজ (رحمة الله) দেহলভী; যিনি আখন্দ মবরোর হিসাবে পরিচিত। 


হযরত হাফেয আখওয়ান্দ (رحمة الله) হযরত শাহ মুহাম্মদ গাউছ (رحمة الله) এর খলিফা।


তিনি সৈয়দ শাহ আলে আহমদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ হামজাহ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ শাহ আলে মুহাম্মদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শাহ বরকতুল্লাহ (رحمة الله) এর খলিফা,  তিনি হযরত শাহ ফজলুল্লাহ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ আহমদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি মীর সৈয়দ মুহাম্মদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত মীর শেখ মাখদুম জামালুল আউলিয়া (رحمة الله) এর খলিফা,  তিনি হযরত শেখ জিয়াউদ্দীন কাযি খা (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত মুহাম্মদ বিকারী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ ইব্রাহীম (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শেখ বাহাউদ্দীন (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ আহমদ জিলানী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত মুছা (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ আলি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত ‘আলি মহিউদ্দীন আবি নছর (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ আবু সালেহ (رحمة الله) এর খলিফা এবং তিনি হযরত সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক্ব (رحمة الله) এর শাগরেদ ও খলিফা ছিলেন।


ক্বাদেরীয়া রাজ্জাক্বীয়া সীলসীলার আরেক পদ্ধতি যথাঃ


হযরত মাওলানা সৈয়দ গাউস ‘আলি শাহ ক্বাদেরী (رحمة الله), তিনি হযরত মাওলানা সৈয়দ আজম আলি শাহ বাবরি (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা। তিনি হযরত সৈয়দ ‘আব্দুল লতিফ বরি (رحمة الله) এর খলিফা,  তিনি হযরত সৈয়দ আমির বালা পীর (رحمة الله) এর খলিফা। তিনি হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ মুকিম মুহকামুউদ্দীন (رحمة الله) এর খলিফা (যার থেকে মুক্বিম শাহি সীলসীলাহ চালু হয়েছে), তিনি সৈয়দ আবুল মালি ক্বাদেরী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত বাহাউল শের কালন্দর (رحمة الله) এর খলিফা । তিনি হযরত ‘আব্দুল জালাল (رحمة الله) এর খলিফা,  তিনি হযরত শাহ মাহমুদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ নূর মোহাম্মদ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত জালাল উদ্দীন (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ শামশুুদ্দীন (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ শাহাবুদ্দীন (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দ শাহ আহমাদ আওলা (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আবু ছালেহ (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত সৈয়দুস্ সাদাত সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক্ব (رحمة الله) এর শাগরেদ ও খলিফা, তিনি হুজুর সৈয়দুনা গাউছে ছামদানি কুতুবে রাব্বানি শেখ সৈয়দ আবু মুহাম্মদ আব্দুল ক্বাদের জিলানী (رحمة الله)এর শাগরিদ ও খলিফ। তিনি হযরত শেখ আবু সা‘ঈদ মোবারক মাখজুমী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শেখ আবুল হাসান হানকারী (رحمة الله) থেকে বায়াত এবং তাঁর খলিফা ।  তিনি হযরত শেখ আবুল ফরাহ তুছি (رحمة الله) থেকে বায়াত এবং তাঁর খলিফা, তিনি শেখ আব্দুল ওয়াহেদ তামীমি আজিজ ইয়ামনি (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা। তারঁ ওফাত শরীফ জামাদিউল আখের ৪২৫ হিজরীতে। তিনি হযরত শেখ শীবলি (رحمة الله) এর পরিপূর্ণ শিষ্য ও খলিফা উনার ওফাত শরীফ জুমার রাত্রে ২৭ শে জিলহজ্ব ৩৩৪ হিজরীতে হয়েছে,


তিনি সৈয়দুত তোয়েফাহ হযরত শেখ জুনায়েদ বাগদাদি (رحمة الله) এর খলিফা, উনার ওফাত শরীফ সোমবার সকালে- ২৭শে রজব ২৯৭ হিজরীতে। কেহ কেহ ২৯৯ হিজরীতে বলেছেন। প্রথম উক্তিটি অধিক বিশুদ্ধ হিসেবে অভিমত রয়েছে (তারিখে ইয়াফি ও ছফিনাতুল আওলিয়া), 


তিনি হযরত সৈয়দুনা শেখ ছিররী বিন আল মুফলেছ আছ ছাকাতি (رحمة الله)এর মুরিদ ও খলিফা এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পত্র  ছিলেন, তিনি হযরত সৈয়দুনা মারুফ কারখী (رحمة الله) এর শাগেরেদ ও খলিফা, তার ওফাত শরীক ৩রা রমজান রোজ মঙ্গলবার সকাল বেলায় ২৫০ হিজরীতে, তিনি হযরত দাউদ তালায়ী (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত  হাবিবে আজমি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত হাসান বছরী (رحمة الله)এর খলিফা।


উলে­খ্য যে;  শেখ হাবিবে ‘আজমি (رحمة الله)  হযরত সৈয়দুনা সালমান ফার্সী (رحمة الله) এর শাগরিদ ও খলিফা, হযরত হাবিব (رحمة الله) ইমাম হাসান বছরী (رحمة الله) ও হযরত সালমান ফার্সী (رحمة الله) উভয়ের খলিফা এবং সাথে সাথে খাজা ওয়াইছ করনি (رحمة الله) এর থেকেও ফয়েজাপ্ত হয়েছিলেন। তাই দুই দিক দিয়েই অভিজাত বা নজিবুত তারফাইন খলিফাহ, হযরত সোলেমান র্ফাসী (رحمة الله) শাহে বেলায়ত মুশকিল কোশা আলি ইল মর্তুজা (র্কারামাল্লাহুল আজিজ) এর,  তিনি ইমামিল মাশারেক ওয়াল মাগারেব শাহীন শাহে বেলায়ত সুলতানুল কাউনাইন সৈয়দুল মুরছালিন খাতেমূল আম্বিয়া ওয়াল মুরছালীন সৈয়দুনা মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খলিফা এবং বেলায়েত কুবরার অধিকারী আর তিনি হচ্ছেন খলিফাতুল্লাহে ছামদ জাল্লা জাল্লালুহুর ।


সিলসীলায়ে খাজা মুঈন উদ্দীন চিশতী (رحمة الله)


হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মুঈন উদ্দীন চিশতী (رحمة الله), তিনি হযরত খাজা ওসমান হারুনি (رحمة الله) এর মুরিদও খলিফা, তিনি হযরত খাজা আবু ইহছাক চিশতি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা মিমশাদ আলভী দিনুরী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা হুবাইরাতুল বাছরী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা খোজাইফাতুল মারআশি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা ইব্রাহীম বিন আদহাম (رحمة الله) এর খলিফা (হযরত ইব্রাহীম ৭ই শাওয়ালুল মুর্কারম ২৫২ হিজরীতে ওফাত হয়েছিলেন) 


তিনি হযরত ফুযাইল বিন আয়ায (رحمة الله) এর খলিফা (ওফাত শরীফ ২৬ জমাদিউল উলা ১৮৭ হিজরীতে হয়েছে) তিনি হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়েদ (رحمة الله) এর খলিফা (ওফাত পহেলা রবিউল আউয়াল ১৮৭ই হিজরীতে), তিনি হযরত খাজা হাসান বাছরী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শাহে বেলায়ত ‘আলি ইল মুর্তদা (রাদিআল্লাহু তালা আনহু) এর খলিফা, তিনি শাহেন শাহে বেলায়ত সুলতানুল কাউনাইন তাজেদারে নবুয়ত সৈয়দুল মুরছালিন হুজুর মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর খলিফা। প্রকাশ থাকে যে, হযরত আলি (রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু) খোলফায়ে রাশেদিনদের মধ্যে বেলায়েতে কুবরার অধিকারি ছিলেন ।


আকা-ই মাওলা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) হলেন খলিফাতুল্লাহ এবং বিশ্ব জগতের মালিক বা সারাংশ ও সকল উপস্থিতির ভিত্তিদাতা মুখাপেক্ষীহীন প্রভুর সকল সমৃদ্ধির উৎস।


কলন্দরীয়া সিলসীলাহ


এই সীলসীলাটি চিশতীয়া পরিবার থেকে বের হয়েছে হযরত শরফউদ্দীন বোআলি ক্বালন্দর পানিপতি (رحمة الله) থেকে চলিত হয়েছে, তিনি হযরত শেখ শাহাবুউদ্দীন আশেক খোদা (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শেখ ইমামউদ্দীন আবদাল (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত এবং তিনি হযরত বদর উদ্দীন গজনভী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি হযরত খাজা কুতুবল আকতাব খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হুজুর সৈয়দুনা খাজায়ে খাজেগান খাজা মুঈনউদ্দীন চিশতি (رحمة الله) এর খলিফায়ে আজম এবং তিনি হযরত খাজা ‘ওসমান হারুনি (رحمة الله)  থেকে খেলাফত প্রাপ্ত ও খলিফায়ে আজম, তিনি হযরত খাজা আবু ইহসাক চিশতী (رحمة الله) এর খলিফা এবং তিনি হযরত খাজা মিমশাদ আলভী দিনুরী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত এবং তিনি হযরত খাজা হুবাইরাতুল বছরী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন।


সিলসীলায়ে এ মাদারীয়া


এটি হযরত মীর্জা রুওশন বখত গুর গানি (رحمة الله) থেকে চলিত হয়েছে, তিনি হযরত মীর মুহাম্মদী দেহলভী (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি তার মামা সৈয়দ ফতেহ আলি শাহ দেহলভী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত (ওফাত তারিখ ২২৩ হিজরীতে হয়েছে), তিনি সৈয়দ ওইয়ুজ খান শহিদ (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি সৈয়দ আব্দুল করিম (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি সৈয়দ তাজউদ্দীন (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি সৈয়দ শরফউদ্দীন (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত,  তিনি হযরত শাহ মোস্তফা ছুফি (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি শাহ দাউদ আরেফ (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি বন্দেগী শাহ পায়রোনে সুলতান (رحمة الله)থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি হযরত শেখ হামেদ মনজহন গোশানশীন (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি খাজা ইহসাক মুহাদ্দেস গোশানশীন (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি হযরত দাওদ (رحمة الله) থেকে তিনি সৈয়দ ছদরউদ্দীন (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি মাখদুম জাহানিয়া জাহাগস্ত (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি বদিউদ্দীন শাহ মদার (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি হযরত খাজা তাইফুর শাহী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত, তিনি হযরত খাজা হাবিবে আজমী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত এবং তিনি হযরত খাজা কমিল বিন যিয়াদ (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত,  তিনি শেরে খোদা মাওলা ‘আলি (কররামাল্লাহ ওয়াজহাহু) থেকে খেলাফত ও নে‘য়ামত প্রাপ্ত হয়েছেন।                                      


সিলসীলায়ে রেফাঈয়াহ


এ সিলসীলাটি হযরত মাখদুম জাহানিয়া (رحمة الله) থেকে আরম্ভ। হযরত মাখদুম জাহানিয়া (رحمة الله) কে হযরত শামশুউদ্দীন (رحمة الله) আধ্যাত্মিকভাবে খেলাফত প্রদান করেছেন, তিনি সৈয়দ ইসমাঈল বিন ইব্রাহিম জিরী (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ ছাবায়ি (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি শেখ বুরহানউদ্দীন আলভী (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন,  তিনি শেখ শরিফুল হাসান ছমরকন্দি (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ হাসান রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ আহমদ রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ মুহাম্মদ রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ নজমউদ্দীন রেফাঈ (رحمة الله)  থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ কুতুবউদ্দীন আবি হাসন আলি রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ মহিউদ্দীন ইব্রাহীম আলি রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি শেখ মাহযাব উদ্দীন রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি সৈয়দ সাইফুউদ্দীন রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন এবং  তিনি শেখুল আরেফিন হযরত সৈয়দ আহমদ কবির রেফাঈ (رحمة الله) থেকে প্রাপ্ত হয়েছে। 


সিলসীলায়ে নেয়ামতউল্লাহ শাহী


এ সিলসিলাটি হযরত শাহ নেয়মত উল্লাহ (رحمة الله) থেকে চলিত তার বংশিয় ও আধ্যাতিক তরিক্বার পরস্পরা এই ভাবে চালু হয়েছে। যেমন উনার সিলসিলাটি বংশানুক্রমে সনদে হস্তগত হয়েছে। হযরত শাহ নিয়াম উল্লাহ (رحمة الله)।


তিনি পুত্র সৈয়দ জাফর (رحمة الله) এর। 


তিনি পুত্র সৈয়দ বাহাউদ্দীন (رحمة الله) এর। 


তিনি পুত্র সৈয়দ দাউদ (رحمة الله)এর 


তিনি পুত্র সৈয়দ আবুল আব্বাস আহমদ (رحمة الله) এর


তিনি  পুত্র সৈয়দ হাসন (رحمة الله) এর 


তিনি পুত্র সৈয়দ মুসা (رحمة الله) এর 


তিনি পুত্র সৈয়দ আলি মুহাম্মদ (رحمة الله) এর 


তিনি পুত্র সৈয়দ মুত্তাকি (رحمة الله) এর 


তিনি  পুত্র সৈয়দ সালেহ (رحمة الله) এর 


তিনি পুত্র সৈয়দ আবি ছালেহ (رحمة الله) এর পুত্র 


তিনি  সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) এর 


তিনি পুত্র হযরত পীরানে পীর দস্তগীর রওসন জমির শেখ মহিউদ্দীন আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর।                       


সিলসীলায়ে এ ছাবেরিয়া চিশতীয়া


এই সিলসীলাটি হযরত মাখদুম ‘আলাউদ্দীন ‘আলি আহমদ ছাবের (কুদ্দাছিরুহুল আজিজ) থেকে চলিত হয়েছে, তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন শেখুস শুয়খ খাজা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জে শেখর (رحمة الله) থেকে এবং তিনি কুতুবুল আকতাব খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকি আওশি (رحمة الله)এর খলিফায়ে আজম,  তিনি অতি পূন্যবান সম্মানিত খাজা মুঈন উদ্দীন চিশতী (কদ্দাছারাহুল আজিজ) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন।


ছাবের কালীয়ারি (رحمة الله)এর ওফাত শরীফ ১৩ই রাবিউল আওয়াল ৬০৯ হিজরীতে হয়েছে মাজার শরীফ রঠকিল মলক্কব বেপিরান কলিয়ার নামক স্থানের মধ্যে।


এই সীলসিলার মধ্যে দু’জন প্রসিদ্ধ ফকির তথা সম্মানিত দরবেশ অতিবাহিত হয়েছিলেন; যারা হল পীরজি সৈয়দ আব্দুল্লাহ দেহলভী এবং শাহজাদা র্মিজা কায়েমুল মুলক চিশতি ছাবেরি। তাঁরা উভয় হযরত হাফেজ মুহাম্মদ হোসাইন ছাহেব (رحمة الله)এর শিষ্য ও খলিফা ছিলেন, 


তিনি হযরত মুছা মাঙ্গে (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি সৈয়দ আজম রোপেঠি (رحمة الله)এর শিষ্য ও খলিফা, তিনি সৈয়দ মোহাম্মদ আলেম (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা, তিনি সৈয়দ মিরা বিগ (رحمة الله)এর খলিফা,  তিনি হযরত শাহ আবুল ময়ালি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত শাহ দাউদ গানগুহি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি শাহ আবু সাঈদ (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি শেখ নেজাম উদ্দীন বলখি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি শেখ মুহাম্মদ তাহনিছুরী (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আব্দুল কুদ্দুছ গানগুহি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত শেখ আরেফ রোদলভী (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত মাখদুম জালালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া পানিপতি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আলাউদ্দীন ছাবের পাক (رحمة الله)  এর শিষ্য ও খলিফা।


মাখদুমিয়া তরীক্বাহ


এই সিলসীলাটি চিশতীয়া তরীক্বাহ থেকে প্রচলিত হয়েছে। যা হযরত মাখদুম জলালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া পানিপতি (رحمة الله)  থেকে চলিত হয়েছে। তিনি হযরত মাখদুম শামশু দ্বীন তুর্ক পানিপতি (رحمة الله) এর খলিফায়ে আজম ছিলেন এবং তিনি খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত মাখদুম আলি আহমদ ছাবের (رحمة الله)  থেকে । হযরত জালালা উদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) থেকে ২০ বিশ জন খলিফা খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন,উনার অনেক কারামত ছিল। 


হাজী এমদাদ উল্লাহ মুহাজেরী মক্কি (رحمة الله) এর সিলসীলাহ


হযরত হাজী এমদাদ উল্লাহ মুহাজেরী মক্কি (رحمة الله) চিশতী ছাবেরী তরীক্বায় ছিলেন।


তার সিলসীলাহ হচ্ছে যথা- তিনি হযরত মিয়াজি শাহ নূর মোহাম্মদ জাহানজানুভী (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা, তিনি হযরত হাজী আব্দুর রহিম শহিদ ভেলাইয়াতি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি সৈয়দ আব্দুল বারি আমরুহি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি শাহ আযুদ দ্বীন বিন শেখ হামেদ মক্কি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত শাহ মুহাম্মাদী (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা, তিনি শেখ মহিব্বুল্লাহ এলাহবাদী (رحمة الله)  মুরিদ ও খলিফা এবং তিনি হযরত শাহ আবু সাঈদ ছাহেব গাঙ্গুহী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা।


সিলসীলায়ে চিশতীয়া নেজামিয়া


এই সিলসীলাটি হযরত মাহবুবে এলাহী  সুলতানুল মাশায়েখ খাজা নেজাম উদ্দিন আউলিয়া যেরজুরি যের বখশ দেহলভী (কদ্দাছিরুহুল আজিজ) থেকে শুরু হয়েছে, তিনি হযরত শেখ ফরিদ উদ্দীন গঞ্জে শেকর কদ্দাছিররুহু এর খলিফা এবং স্থলবিষত্ব ছিল, ১৭ই রবিউস্সানি ৭২৫ হিজরী রোজ বুধবার ওফাত হন নতুন দিল্লীর শাহজাহান আবাদ এর মধ্যে নেজাম উদ্দীন আউলিয়া দরগাহ প্রসিদ্ধ।


হযরত মাওলানা ‘আব্দুর রহমান জামি (رحمة الله)  এর সিলসীলাঃ


তাঁর সিলসীলা নকশে বন্দিয়া তরিকার সাথে সম্পৃক্ত উনার পীর মুরশীদ হল হযরত শেখ সাঁদ উদ্দীন (رحمة الله)  যার সিলসীলা দুই দিক থেকে হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশে বন্দি (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।


হযরত মাওলানা ‘আব্দুর রহমান জামি (رحمة الله)  এর মাজার শরীফ হারাত নামক স্থানে যা আফগানিস্থানে অবস্থিত, তাঁর জন্ম ২৩ শাবান ৮১৭ হিজরীতে ওফাত শরীফ- জুমাবার ১৭ই মহরম ৮৯৮ হিজরীতে হয়েছে। 


সিলসীলায়ে সৈয়দ ‘আলি হুজুভীরী দাতা গঞ্জেবখস


তিনি সিলসীলা এ আলিয়া জুনাইদিয়ার মধ্যে আবুল ফজল মুহাম্মদ বিন খাতলির হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। যিনি সাম দেশে অবস্থান করতেন এবং স্বিয় সময়কালের প্রসিদ্ধ তরীকতের ইমাম ছিলেন। তাঁর তরীকার পরম্পরা নিম্নের পদ্ধতিতে হয়েছে। যথা 


তিনি মুরিদ হলেন হযরত আবুল ফজল মুহাম্মদ বিন হাসন হাতলি (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হলেন হযরত শেখ আবুল হাসন আলি হাছরি (رحمة الله)এর; তিনি মুরিদ হলেন শেখ আবু বক্কর শিবলী (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হযরত জুনাইদ বগদাদি (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হলেন ছিরের সিকতি (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হলেন হযরত মারুফ কারখি (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হলেন দাউদ তায়ী (رحمة الله) এর, তিনি মুরিদ হলেন হযরত হাবিবে আজমী (رحمة الله) এর; তিনি মুরিদ হযরত খাজা হাছন বছরী (رحمة الله) এর তিনি মুরিদ হযরত শেরে খোদা আলি মর্তুজা (رحمة الله) এর।


হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি (رحمة الله) এর পরম্পরা


জালাল উদ্দীন তাঁর উপাদি প্রকৃত নাম হল মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন হোসাইন।


বংশিয় পরম্পরা-প্রথম খলিফা সৈয়দুনা আবু বক্কর ছিদ্দীক (رحمة الله) এর সাথে সংযুক্ত তার পিতামহ উচ্চ পর্যায়ের ছুফি এবং উম্মদনার অধিকারি ছিলেন এবং বাদশাহ মুহাম্মদ খাওয়ারেজম, যিনি খেরাসন থেকে ইরাক পর্যন্ত সবকটি দেশের তৎকালীন সবচেয়ে বড় রাজ্য প্রধান ছিলেন। তিনি নিজ কন্যাকে জনাব সুফি সাহেবের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। 


মাওলানা রুমির সম্মানিত পিতা বাহাউদ্দীন মুহাম্মদ বাদশার সেই কন্যার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন অতএব বাদশাহ মুহাম্মদ খাওয়ারেজম এর দৌহিত্র হল মাওলানা রুমি।


মাওলানা, বলখি নামক স্থানে ৬০৪ হিজরীতে জম্মগ্রহণ করেন পৈতৃক জন্মভূমি বলখি নামক স্থানে। কিন্তু তাঁর পিতা নিজ সম্মানিত শিষ্যদের আনুমানিক ৩০০ জনকে নিয়ে হিজরত করেন। ৬১০ হিজরীতে নিশাপুর তাশরিফ নিয়ে আসলেন। সে সময় হযরত খাজা ফরিদ উদ্দীন আক্তার (رحمة الله) তাঁদের সাথে সাক্ষাতের জন্য আসছিলেন। আর হযরত খাজা ফরিদ উদ্দীন আক্তার (رحمة الله) হযরত বাহাউদ্দীন মুহাম্মদ (رحمة الله)কে বললেন, আপনার এই তাৎর্পযমন্ডিত ছেলের প্রতি যেন অবেহেলা না হয় অর্থাৎ তাকে ভাল করে দেখাশুনা করবেন। সে সময় মাওলানার বয়স হয়েছিল ছয় বৎসর কিন্তু সৌভাগ্যের নক্ষত্র কপালে চমকিত লাগল। আর এটি দেখেই বললেন এই নৈপুন্য যেন অবহেলিত না হয়। হযরত বাহাউদ্দীন (رحمة الله) নিশাপুর থেকে বাগদাদ পৌঁছলেন; এরপর সেখান থেকে হাজায নামক স্থানে অত:পর এ থেকে শাম হয়ে যনজান তাশরীফ নিলেন এবং সেই শহর হয়ে কাউলিয়া পৌঁছে তথায় অবস্থান করলেন। শেখ বাহাউদ্দীন (رحمة الله) ১৭ই রবিউস শানি ৬২৮ হিজরী রোজ জুমাবার ওফাত প্রাপ্ত হন। মাওলানা রুমি বিভিন্ন বিষয়ের পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের জন্য শামে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করলেন, যখন তার বয়স হয়েছিল পচিঁশ বৎসর। সেখানে মাদ্রাসা এ জালাভিয়ার হোষ্টেলে অবস্থান নিলেন। এতে যখন বিভিন্ন বিষয়াদির উপর পরিপূর্ণ পান্ডিত্ব অর্জিত হলে দীর্ঘ দিন পর একদা সৈয়দ বুরহান উদ্দীন (رحمة الله) কাউলিয়া আসলেন; তখন পরস্পর আলিঙ্গন, তখন সৌজন্যতা শেষ করলেন মাওলানা বুরহান উদ্দীন পরীক্ষা মুলক কিছু জিজ্ঞেসা করলেন। যখন ফনুনাত সহ বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্য হিসেবে তাঁকে পেল তখন বলল সব বিদ্যায় পরিপূর্ণতা অর্জন করেছ; শুধুমাত্র বাতেনি জ্ঞান বা আধ্যাত্মিক বিদ্যা রয়ে গেছে। প্রকাশ থাকে যে, মাওলানা বুরহান উদ্দীন (رحمة الله) শেখ বাহাউদ্দীন (رحمة الله)এর (যিনি মাওলানার পিতা) শিষ্যদের মধ্যে অনেক বড় জ্ঞানী ও সুসভ্য ব্যাক্তি ছিল। মাওলানা প্রথম প্রথম অধিকাংশ সময় ওনার থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিতেন। 


অত:পর সে বলল, আস দেখি এটি নাও আর এটি হল আপনার সম্মানিত পিতার আমানত (আধ্যাত্মিকতা) যা আমার নিকট ছিল। এখন আমি আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি সে সময় পর্যন্ত মাওলানার নিকট জাহেরী ইলম/প্রকাশ্য জ্ঞানের রূপ অনেক বেশি ছিল। ওয়াজ নছিহত করতেন, পাঠদান দিতেন, ফতওয়া লিখতেন। এই বর্ণনা থেকে জানা গেল মাওলানা তরীক্বাতের সিলসীলাহ নিজ সম্মানিত পিতার থেকেই প্রমাণিত। এটি তার প্রথম যুগ।


মাওলানার জীবনের দ্বিতীয় কাল, মূলত যা হযরত শামশু তবরিজ (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়েছিল। শামশু তবরিজ (رحمة الله) এর পিতার নাম আলাউদ্দীন (رحمة الله)। যিনি তবরিজ শহরে এলমে জাহেরীর পরিপূর্ণতা করেছিলেন অত:পর বাবা কামালউদ্দীন খুজনদি (رحمة الله) এর মুরিদ হয়েছিলেন।


হযরত শামশু তবরিজ (رحمة الله) একদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন হে আল্লাহ আমাকে এমন একজন উত্তম ব্যক্তি যোজনা করে দাও যে আমার মিত্রতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে অতঃপর এরশাদ হল রোম ততা এশিয়া চলে যাও তখন চলা আরম্ভ করল। অতএব যখন কাউনিয়া পৌঁছল এদিকে মাওলানার কাছে উনার আগমনের কথা অবহিত করা হল, তাই উনার সাক্ষাতের জন্য মাওলানা রওনা হলেন, ঘরের দরজায় গিয়ে পৌঁছার সাথে সাথে শামশু তবরিজ (رحمة الله) বুঝে নিলেন এটি সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে সুসংবাদ হয়েছিল, এই দুই বুজুর্গ পরস্পর দেখা সাক্ষাতের পর হযরত শামশু তবরিজ (رحمة الله) মাওলানাকে জিজ্ঞাস করলেন হযরত বায়েজিদ (رحمة الله)এর দুইটি ঘটনার সমন্বয় সাধন কিভাবে হবে? যার প্রথমটি হল তিনি পুরো জীবন কোন দিন তরমুজ জাতীয় ফল আহার করে নি। যার কারণ ছিল এটি হুজুর নবী করিম (ﷺ) কি ভাবে আহার করেছে তা তিনি জানতেন না তাই এর ব্যতিক্রম হয়ে যাওয়ার আসংখ্যায় অর্থাৎ নবী করিম (ﷺ) যেভাবে খেয়েছেন সেভাবে আদায় হচ্ছে কিনা এ ভয়ে। 


দ্বিতীয় হল- তিনি আবার নিজের প্রতি সম্বোধন করে বলত-


سبحانى ما أعظم شانى


অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমার শান কি পরিমান বাড়িয়েছে?


অথচ রাসুল কারিম (ﷺ) এর এত উচ্চ মর্যাদার অধিকারীর সত্বেও তিনি বলতেন আমি প্রত্যেহ সত্তর (৭০) বার ক্ষমা প্রর্থনা করি।


(একটি ঘটনায় বুঝা যায় তিনি নবী করীম (ﷺ)এর আর্দশের উপর অবিচল থাকার আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছে, অন্যটি থেকে বুঝা যায় নবী (ﷺ) এর আর্দশের প্রতি হীন লক্ষ্য) শামশু তাবরিজের এমন প্রশ্নে মাওলানা উত্তর করলেন বায়েজিদ বোস্তামি (رحمة الله) যদিও একজন উচ্চ পযার্য়ের বুজুর্গ ব্যাক্তি ছিল কিন্তু বেলায়তের মকামে তিনি একটি নির্দিষ্ট স্তরে আটকা পড়ে দন্ডয় ছিলেন। যা আখাঁ মাওলা মোস্তফা (ﷺ) এর বিপরীত।  যেহেতু তিনি নৈকট্যের স্তর সমুহ একে একে প্রদক্ষিণ করতেছিলেন আর যখন উচ্চ স্তরে পৌঁছতে লাগলেন তখন প্রদক্ষিণকৃত নিম্মস্তর সমুহ এমন ক্ষুদ্র বিবেচ্য হত যা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।


মাওলানা ও শামশু তাবরিজ (رحمة الله) কয়েক মাস যাবত চিল্লা স্বরূপ খাওয়া দাওয়া স্ব-ইচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন।


বি:দ্র: প্রকাশ থাকে যে আউলিয়াদের মধ্যে আরেকজনের নামও শামশু তাবরিজ ছিল, যিনি ৫৪০ হিজরীর মধ্যে ইরানের প্রসিদ্ধ শহর সবজওয়ারের মধ্যে জন্মলাভ করেন। তাঁর সম্মানিত পিতা সৈয়দ সলাহউদ্দীন মুহাম্মদ নুর বখস (رحمة الله) নিজেই শামশুদ্দীন নাম রেখেছেন; তাঁর বংশীয় পরম্পরা সবজওয়ারের সৈয়দ বংশের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু সেই শামশুদ্দীন মাওলানা রুমি (رحمة الله) এর পীর মুরশিদ ছিলেন না। কেননা এই শামশুদ্দীন এর পিতার নাম সৈয়দ সালাহউদ্দীন মুহাম্মদ যিনি ইসমাঈলীয়া জমাতের যোগ্য পরিচালকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং বাদশাহ মুরাক্কোর পুত্র ছিলেন।


তাবরিজ ইরানের প্রাচিনতম প্রদেশ আজর-বাঈজানের একটি প্রসিদ্ধ শহরের নাম এবং এ শহরটি তখনকার জ্ঞান, বিজ্ঞান, চর্চা ও জনবহুল হিসাবেও প্রসিদ্ধ। 


এটাকে বাগদাদের খলিফা হারুনুর রশিদ আব্বাস এর বিবি মূলকে জুবাইদাহ খাতুনই বাসযোগ্য করেছে।


সম্ভবত এই শামশুদ্বীন এর মাজার মুলতানের মধ্যে আর যেটি বর্তমানে শিয়া স¤প্রদায়ের আয়িত্বে। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।


আর যেই শামশু তাবরিজ হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ বালখি সিদ্দিকি রুমি (ওফাত ৬৭২ হিজরীতে) এর পীর মুরশেদ ছিলেন তিনি এলমে জাহের তথা শরীয়তের যাবতিয় বিধি বিধানের উপর পান্ডিত্ব অর্জনের পর বাবা কামাল খজাইজির মুরিদ হলেন মাওলানা রুমি (رحمة الله)এর ছেলে বা কোন মুরিদ হিংসার বশবর্তী হয়ে শামশু তাবরিজ কে শহিদ করেছেন। অথবা সে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে তাতে পূর্বের সন্দেহসমূহ বন্ধ হয়ে গেছে। 


মাওলানার অবস্থায় বৃহত পরিবর্তন পরির্বদন সৃষ্টি হয়েছে। পুরো শহরজুড়ে এক ভিন্ন আলোড়ন হতে লাগল যে এক পূর্ণ পাগলে মাওলানাকে এমন জাদু করেছে সে কোন কাজে মনোনিবেশ করতেছে না এতে শামশু তাবরিজ (رحمة الله) ভয় পেয়ে গেল এই বিশৃঙ্খলা কতদূর গিয়ে পৌঁছে। তাই তিনি নি:শব্দে ঘর থেকে বাহির হয়ে দামেস্কের দিকে রওনা হলেন। এদিকে শামশু তাবরিজ (رحمة الله) অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর মাওলানার কাছে তার পৃথকী এমন মনোবেদনা হল যে, যার কারণে সে সব প্রকারের মানুষের সাথে সম্পর্কচ্যুত করে একাকী নির্জনে পেরেশান অবস্থায় ছিলেন। সেই সময় কিন্তু মাওলানা অত্যন্ত নাত (গুণ-কীর্তন) প্রতিযোগী ছিলেন এবং পরিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ছন্দ আবৃত্তি করতেন।


শেষ পর্যায়ে যারা শামশু তাবরিজ (رحمة الله) এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা খুব বেশি লজ্জিত হলেন এবং সবাই এসে মাওলানার কাছে সে ঘৃণ্য কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। অবশেষে কিছু লোক পুনরায় হযরত শামশু তাবরিজ (رحمة الله) এর সন্ধান নিতে আরম্ভ করলেন। মাওলানার সন্তান রশিদ সুলতান ধলপতি হলেন এবং সে মাওলানার পক্ষ থেকে একটি সমবেদনাশীল ছন্দে গ্রথিত চিঠি নিয়ে রওনা হলেন দামেস্কের মধ্যে অনেক কষ্ট সাধ্যের মাধ্যমে শামশু তাবরিজ (رحمة الله) এর সন্ধান পেলেন এবং মাওলানার চিঠি এক হাজার দিনার স্বর্ণ-মুদ্রা সহকারে তাঁর নিকট উপস্থাপন করলেন। শামশু তাবরিজ (رحمة الله) মৃদু হাসি দিয়ে বললেন এই হাদিয়ার প্রয়োজন কিসের মাওলানার বার্তায়ই যতেষ্ট। অত:পর কিছু দিন পর সে শামশু তাবরিজ (رحمة الله)কে নিয়ে কাউনিয়ায় তাশরিফ নিলেন। যখন এই সংবাদ মাওলানার নিকট পৌঁছল যে হযরত শামশু তাবরিজ তাশরিফ আনতেছেন তখন তিনি ভক্ত অনুরক্তদের সাথে নিয়ে স্বাগতম জানালেন । এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত অনেক আনন্দ উৎসাহের সহিত ছিলেন। ইতোমধ্যে আবার হিংসুকগণ সমালোচনা আরম্ভ করল যেখানে স্বয়ং মাওলানার একজন ছেলে পর্যন্ত সমালোচকদের অন্তর্ভূক্ত এবং তাতে নেতৃত্ব দিতেন, যার নাম ছিল আলাউদ্দীন ছিলঝি। তাদের বিরোধ আচরনের তীব্রতায় অবশেষে শামশুদদ্বীন (رحمة الله) সংকল্প করলেন এবার চলে যাওয়ার পর আর আসবেন না। তাই হঠাৎ তিনি অদৃশ্য হয়ে চলে গেলেন অনেক খোঁজা খুঁজি করার পরেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।


অধিকাংশ তাজকেরার মধ্যে লিখেছেন, মাওলানার কোন এক মুরিদই হিংসাবশত: তাকে হত্যা করেছে।


নুফখাতুল ইনছ গ্রন্থকার লিখেছেন মাওলানার ছেলে আলাউদ্দীন ছিলঝি এই কাজটি করেছে। 


নুফখাতুল ইনছ এর মধ্যে হযরত শামশুদদ্বীন (رحمة الله) এর শাহাদাতের সন ৬৪৫ হিজরীতে লিখেছেন । মাওলানা রুমি (رحمة الله) শামশুদ্বীন (رحمة الله) এর দুই বৎসর পর্যন্ত সংশ্রবে ছিল। মাওলানা শামশুদদ্বীন আত্ম বিনাশন ও সাধনায় অদ্বীতিয় ছিলেন। নামাজের মধ্যে অত্যন্ত নিমগ্ন হয়ে যেতেন। প্রায় সময় এশারের প্রথমাংশে নিয়্যত বেঁধে ফেলতেন এবং পরে দু’রাকাত নামাজে ফজর করে ফেলতেন।


রাজন্য বর্গ বিত্তশালী এবং বিভিন্ন ব্যক্তিগন প্রত্যেক প্রকারের হাদিয়া পাঠাতেন কিন্তু মাওলানা নিজের জন্য কিছু রাখতেন না যা কিছু আসে সব অন্যদেরকে বণ্টন করে দিতেন।


একদা বিভিন্ন দিক থেকে ছেলেরা এসে হাত চম্বুন করতে লাগলেন। একজন ছেলে বলল মাওলানা একটু দাঁড়ান আমি কাজ সেরে নিই, তিনি ওইখানে দাঁড়িয়ে রইলেন যতক্ষন ছেলেটি মুক্ত হয়ে আসেনি ততক্ষণ সময় পর্যন্ত, পরে ছেলেটি এসে মাওলানার হাত চুম্বনের আভিজাত্য অর্জন করলেন। 


এক রাত্রে তিনি আল্লাহ তায়ালার দরবারে মুনাজাত করতে লাগলেন হে আল্লাহ আমাকে তোমার কোন প্রিয় বান্দার নিকট পৌঁছে দাও। অদৃশ্য থেকে আওয়াজ শুনতে পেলেন এর বিনিময় হাদিয়া স্বরূপ কি দিবেন। তিনি আরজ করলেন হে প্রভু মস্তক দিয়ে দিতে প্রস্তুত। এরপর তার সাথে মাওলানা রুমের সাক্ষাৎ ঘটল এবং উনার সানিধ্যে একত্ব অর্জন বিলয় হয়েছে। কেহ কেহ এর উপর কিয়াছ করে বলেছেন খাজা শামশুউদ্দীন মাওলানা রুমেরে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে কিন্তু মাওলানার রচনা থেকে এটি গৃহিত হচ্ছে না কেননা  মাওলানা নিজে স্বয়ং নিজেকে খাজা শামশুদদ্বীনের নগন্য শাগরীদ ও মুরিদ গন্য করেছেন। উনার ভক্তি এই কথার উপর বুঝায়-


مولانا رومى نشد صاحب كلمال + تاغلام شمس تبريزى نشد


অর্থাৎ- মাওলানা রুমি কখনো উৎকর্ষতায় পৌঁছতে পারতো না যতক্ষন না সে শামশু তবরিজের গোলাম না হত। এ ছাড়া তাবরিজের প্রশংসা করতে গিয়ে নিজ মসনবী ১ম খন্ডে বলেছেন-


شمس تبريزى كہ نور مطلق مت + آفتاب است وزارحق است


র্অথাৎ আমার সম্মানিত শামশু তাবরিজি যিনি জ্যোতিময় সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। আর তিনি পুন্যতার জ্যোতি এবং প্রভু দীপ্তি। সাওয়ানায়ে মাওলানা রুমি শিবলী নোমানি ও মিফতাহুল উলুম।


খাজা শামশুদ্বীন তাবরিজী যিনি বেলায়েতের শাহিন শাহ ও হেদায়েতের গুপ্তধন মাওলানা শামশুদ্বীন মুহাম্মদ বিন আলি বিন খালিক দাউদ আত্তাবরিজী। তিনি শেখ আবু বক্কর জনবিল ইয়াফ তাবরিজী এর শিষ্য, কেহ কেহ বলেছেন শেখ রুকন উদ্দীন সনজাস এর শিষ্য শেখ ওয়াহিদ উদ্দীন কেরমানিও তার শিষ্য কেহ কেহ বলেছেন বাবা কামাল জুনাইদীর শিষ্য এই সময় টুকু শেখুল ইসলাম শেখ বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মুলতানির সময় কাল ছিল।


৬৪২ হিজরীতে সফর অবস্থায় পৌঁছিলেন মাওলানা সে সময় অধ্যাপনায় ব্যাস্ত ছিলেন। ৬৪৫ হিজরীতে মাওলানা শামশুদ দ্বীন শহিদ হয়েছেন অর্থাৎ হত্যা করা হয়েছে। মাওলানা রুমী (رحمة الله)এর জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না, কেহ কেহ বলেছেন মাওলানা শামশুদ দ্বীন হযরত মাওলানা বাহাউদ্দীন যিনি উস্তাদ ছিলেন মাওলানার পাশে তার দাফন করা হয়েছে। 


কেহ কেহ বলেছেন হত্যাকারীগন তার শরীর মোবারক কে কূপের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন এক রাত্রে সুলতানু ওয়ালদ যিনি মাওলানার পুন স্বপনে দেখলেন যে শেখ শামশুদদ্বীন ইঙ্গিত দিলেন যে আমি অমুক কূপের মধ্যে শুয়ে আছি। তখনই সম্মানিত বন্ধুদেরকে একত্রিত করলেন মাওলানা যে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সে মাদ্রাসার আমির বদরউদ্দীন এর পাশে দাপন করেছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহই অধিক  জ্ঞাত।


হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাজ্জালী তুছি (رحمة الله)


 এক কুনিয়ত আবু হামেদ লকব জয়নুউদ্দীন নাম শেখেশ শুয়ুখ ফজল বিন মুহাম্মদ খেরেছানী। তিনি আবু আলি ফারমুদি (رحمة الله) এর শিষ্য তিনি হযরত শেখ আবুল কাশেম খেরকানি তুউছি (رحمة الله) এর শিষ্য। 


হযরত মুহাম্মদ সেলিম চিশতি (رحمة الله): হযরত মুহাম্মদ সেলিম চিশতী (رحمة الله)। এই নামে চিশতীয়াদের মধ্যে তিন জন প্রসিদ্ধ বুর্জগের নাম উলে­খযোগ্য যথা-


১। হযরত মুহাম্মদ সেলিম চিশতি: ওফাত ৩রা জিলহজ্ব ১১৫১ হিজরী অনুযায়ী ৩রা মার্চ ১৭৩৮ সালে তিনি খলিফা ছিলেন শেখ মুহাম্মদ চিশ্তী লাহুরী (رحمة الله) এর।


২। হযরত মুহাম্মদ সেলিম চিশ্তী: তিনিও লাহুরে অবস্থান কারী ছিলেন উনার সিলসীলার সর্ম্পক বা সংযুক্ত চিশতিয়া ছাবেরীয়ার সাথে ছিল। তিনি হযরত শাহ ছরওয়ানি (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। হযরত মাওলানা জামী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যা ও রচনা তার খুব বেশি পছন্দনীয় ছিল। নুরউদ্দীন জাহাঙ্গীর বাদশার সময় কালে লাহুরে ওফাত হয়েছেন। আর তা ২৭শে রমজানুল মোবারক ১০৩০ হিজরী এবং ১৯শে অক্টোবর ১৬১২ সালে। মাজার শরীফ লাহুর এর মধ্যে। কেহ বলেছেন ১০০৩ হিজরীতে বাদশা আকবরের সময়কালে তার ওফাত এবং মাজার শরীফ ময়দানে জিন-খা নামক স্থানে।


৩। হযরত শেখ সেলিম চিশতী (رحمة الله): জন্ম- দিল্লী এলাকার আলাউদ্দীন জীন্দা পীরের পার্শ্বের গ্রামে। ৮৮৪ হিজরী অথবা ৮৯৭ হিজরীতে জন্ম গ্রহন করেছেন। ওফাত -২৯শে রমজানুল মোবারকে ৯৭৯ হিজরীতে ওফাত প্রাপ্ত হয়েছেন। হিন্দুস্তানের পতেপুর সিকরী নামক স্থানে মাজার শরীফ। তিনি অনেক বুজুর্গ ও দরবেশদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন ও ফয়েজ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি হযরত ইব্রাহিম চিশতী (رحمة الله) এর হাত মোবারকে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি হযরত শেখুল মাশায়েখ বাবা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ গাঞ্জে শেখর (رحمة الله)এর বংশের সন্তান তাঁর পূর্বপুরুষ অর্থাৎ বাপদাদা আজোদহন (পাক পাটন) থেকে হিজরত করে লদহিয়ানা এসেছে কিছু কাল লদহিয়ানায় অবস্থানেরপর দিল্লীর মধ্যে অবস্থানের মনস্থ করলেন তাঁর পিতা দিল্লী ছেড়ে পতেপুর সিকরী নামক স্থানে বাসস্থান তৈরী করলেন। তার মাতার নাম বিবি ওহদ এবং পিতার নাম বাহাউদ্দীন। হযরত শেখ মুছা তার বড় ভাই। বংশীয় সূত্র হল: শেখ সেলিম বিন বাহাউদ্দীন বিন শেখ সূলতান বিন শেখ আদম বিন শেখ মুছা বিন শেখ মাওদুদ বিন শেখ বদরউদ্দীন বিন শেখ ফরিদ উদ্দীন গেঞ্জে শেকের। এই নছব দিয়ে তিনি বাবা ফরিদ উদ্দীন (رحمة الله) এর বংশ। তার নাম শেখ সেলিম। লকব শেখুল হিন্দ, যা বলে তাকে সম্বোধন করা হত। তিনি জন্ম হওয়ার সাথে সাথে সিজদাহ করেছিলেন। তার কপালের মধ্যে ধান্য একটি দানা বিস্তৃত হয়ে গেছে যা পুরো জীবন ছিল। ছোট কালে তাঁর পিতার ছায়া থেকে বঞ্চিত হন অর্থাৎ পিতা হীন হয়ে পড়েন। তাঁর বড় ভাই শেখ মুছা তার লালন পালনে যথেষ্ট মনযোগী ছিলেন, যেহেতু তাঁর কোন ছেলে সন্তান ছিল না, তাই নিজ ভাই হযরত সেলিমকে সন্তানের মত আদর স্নেহ করতেন শেখ সেলিম (رحمة الله) একদিন নিজ বড় ভাই শেখ মুছাকে বললেন নিরাশ হয়ো না আপনার একটি ছেলে সন্তান হবে। এটি বলার মাত্র নয় মাস পর শেখ মুছার ঘরে একজন ছেলে সন্তান জন্ম নিল, তখনই তিনি বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ফতেপুর সিকরী থেকে সেরহিন্দ তাশরীফ নিয়ে গেলেন, আলেমকুল শীরমনি শেখ মুজাদ্দে উদ্দীন থেকে এলমে জাহেরের পরিপূর্ণতা অর্জন করলেন। ৯৩১ হিজরীতে হেরামাইন শরীফাইন জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সুবাদে মক্কায়ে মুয়াজ্জমায় অবস্থান নিলেন অতঃপর মদিনায়ে মোনাওয়ারায় পৌঁছে দরবারে মোস্তফা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মধ্যে থাকা আরম্ভ করলেন হজ্জে বায়তুল্লাহ ও জিয়ারতে মোস্তফা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেরে হিন্দুস্তানে রাওনা হলেন পতেহপুর সিকরীর মধ্যে নির্জনতায় এবাদাত রিয়াজাতের মধ্যে আত্মনিয়োগ করে দিলেন। খানকা তৈরী করলেন বাগিচা করলেন কূপ খনন করালেন। আমীর ওমার তথা রাজা বাদশাহ সকলেই তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। বিশেষ করে সরকারী আমলারা তার প্রতি যথেষ্ট ভক্তি রাখতেন, যেমন হওয়াচ পান ইত্যাদি বাদশাদের মধ্যে শির শাহ, সেলিম শাহ এবং আকবর ও ভাল করে জানতেন তার তিন জন ছেলে সন্তান ছিল ছোট ছেলে তাজউদ্দীন দের বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন, শেখ বদরউদ্দীন তাঁর ইন্তেকালের পর সাজ্জাদানশীন হয়েছেন। আরেকজন কুতুব উদ্দীন বাদশাহ জাহাঙ্গীরের সময়কালে উচ্চ পদে অধিষ্টিত থেকে সরকারী চাকুরী করতেন। আরবে অবস্থানকালে অনেক বুর্জুগ ব্যাক্তিকে খেলাফতের মাধ্যমে সম্মানি করেছেন। যাঁরা হলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ওয়ালি (رحمة الله); শেখ মাহমুদ (رحمة الله) শেখ রজব আলি (رحمة الله) তাঁদের ব্যতীত আরো কতেকগুলি খলিফা ছিলেন। তারা হলেন শেখ আব্দুল ওয়াহেদ (رحمة الله), শেখ ইমাম সেরহিন্দী (رحمة الله), ইমাম সৈয়দ হোসাইন (رحمة الله), হযরত শেখ রুকন উদ্দীন (رحمة الله), হযরত শেখ ইয়াকুব (رحمة الله), হযরত শেখ হাম্মাদ (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ গুরী (رحمة الله), হযরত শেখ কবীর (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ বোখারী (رحمة الله), হযরত শেখ কামাল উদ্দীন (رحمة الله) এবং হযরত শেখ ফতে উল্লাহ (رحمة الله) ইত্যাদি। 


হযরত শেখ সেলিম চিশতী (رحمة الله) শরীয়ত ও ত্বরীকত পরিপূর্ণতায় একজন উচ্চস্তরের বুজুর্গ ছিলেন এবং ছাহেবে এলম ও ফজল ছিলেন। শাহিন শাহ আকবরের কোন সন্তান ছিল না তাই তার নিকট দোয়ার জন্য আবেদন করলেন। তিনি মোরাকাবা করার পর বললেন আপসোস আপনার তাকদিরের মধ্যে কোন ছেলে সন্তান নাই। বাদশাহ আরজ করলেন যেহেতু আমার তাকদিরের মধ্যে কোন সন্তান নাই সেহেতু আপনার নিকট এসেছি বাদশাহ আকবরের উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হলেন। পুণরাই কিছুক্ষন মোরাকাবা করার পর বললেন এই দেশে রাজপুত্রের হুকুমত আরো দীর্ঘ দিন পর্যন্ত থাকবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী কাল বাদশাহর স্ত্রীকে নিয়ে আসিও দ্বিতীয় দিন বাদশাহর স্ত্রী যখন তার নিকট আসলেন তখন তিনি নিজ স্ত্রীকে বাদশাহর স্ত্রীর পৃষ্টের সাথে মিলিয়ে বসার নির্দেশ দিলেন, তাঁর স্ত্রী সাহেবার সাথে বাদশাহর স্ত্রীর পৃষ্ট মিলিয়ে বসার পর তিনি তাঁর গায়ের ছাদরটি ওরা দু’জনের উপর ঢেকে দিলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বললেন আপনার থেকে সম্ভবনাময় হওয়ার সন্তানটি বাদশাহর স্ত্রীকে দিয়ে দাও, অতঃপর কিছুদিন পর যখন বাদশাহর স্ত্রীর ছেলে সন্তান জন্ম হল তখন এর নাম ওনার নামানুসারেই রাখা হল “সেলিম” তাই শাহজাদা সেলিম তাকে শেখু বাবা বলতেন। শাহজাদা সেলিম নিজ পিতা শাহেন শাহ আকবরের ইন্তেকালের পর সিংহাসনের মালিক হয়েছিলেন এবং  পরে জাহাঙ্গীর নামে প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন। এইভাবে অনেক ঘটনা রয়েছে। সংক্ষিপ্ততার কারনে শেষ করা হল।


হযরত শাহ র্গিদিজ মুলতানি (رحمة الله) :


তিনি হযরত শেখ সাহাবউদ্দীন সরওর্য়াদী (رحمة الله)এর শিষ্য ছিলেন এবং সদা উম্মাদনা হালতের অধিকারি ও প্রভুর প্রেম সাগরে ডুবন্ত বর্জুগদের অন্যতম একজন ছিলেন এবং তিনি এমন পর্যায়ে জ্যোতি আহরনে নিমজ্জিত থাকতেন (হাল তারি) যখন তিনি কোন হালতের ম্য থাকেন তখন তাঁর নিকট প্রতীয়মান হতনা যে রাত না দিন। উনার নাম ছিল ইউছুফ এবং তিনি ছিলেন নবী বংশের হযরত ইমাম হাছান (رحمة الله)এর বংশ থেকে তাঁর জন্ম র্গিদিজ নামক ছোট একটি শহরে যা গজনি এলাকার মধ্যে অবস্থিত। তাঁর দাদা শাহ ‘আলি খছুর (رحمة الله) বাগদাদ শরীফ থেকে হিজরত করে র্গিদিজের এই ছোট্ট শহরে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনিও অনেক কারামতের অধিকারি একজন বজুর্গ ছিলেন। তিনি স্বীয় নাতি হযরত শাহ র্গিদিজ মুলতানিকে রূহানিয়াতের সমস্ত স্তর পদায়ন করাইছিলেন এবং তার সম্মানিত মাতা ছাহেবান নিজ বিশেষ দৃষ্টি দ্বারা তাকে মজবুত করে পাকাপোক্ত করেছিলেন। সেই সময়ে বুজুর্গদের রুহানি ফয়েজ অর্জন করে তিনি তীর্থ যাত্রা বা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বাগিয়ে ছিলেন। তিনি ইরান, তুরস্ক এবং রোম ও সাম ভ্রমন করলেন। ভ্রমনকালে তিনি বিভিন্ন আরেফ ও ছালেকদের থেকে ফয়েজ, বরকত অর্জন করেছিলেন। এই ভাবে তিনি জাহেরী বাতেনী ক্ষমতার অধিকারী মৌলিক ও তুরি সৌন্দর্যের অধিকারি এবং সাথে সাথে কুতুবে জমান, সময়ের অদ্বিতীয় সাধক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজ সম্মানিত পিতার ওফাতের সংবাদ শুনে তীর্থ ভ্রমন ত্যাগ করে স্বীয় পিতামহের অনুচরনায় আত্মনিয়োগ হয়ে নির্জনতায় বসবাস করতে লাগলেন একাকীত্ব ও এবাদত বন্দেগীর মধ্যে তৃপ্তি অনুভব করতেন। কিন্তু যখন একাকীত্ব থেকে জনসম্মুখে আসতেন তখন তাঁর থেকে আকল বা বিবেক হতবাক কেরামত প্রকাশ পেত। বর্ণিত রয়েছে, একদা তার দাদার ভক্তবৃন্দ তাদের এলাকার এক অসুস্থ ছেলের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু তিনি ঐ ছেলের জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রে নিরব রইলেন এবং তার স্বজনদেরকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর ভরসা করার ও ধর্য্যধারন করার পরামর্শ দিলেন। অত:পর সেই ছেলেটি আল্লাহর ইচ্ছায় মৃত্যবরণ করলেন। স্বজনদের মধ্যে তার মৃত্যূতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসল। এমনকি তাদের মধ্যে ছোট খাট মহাপ্রলয়ের ন্যায় সৃষ্টি হল। তাঁরা আহাজারীর মাধ্যমে ও মৃত্যুশোকে কাতর প্রায়। এই লোকদের আহাজারী ও যন্ত্রণা দেখে হযরত শাহ ইউছুফ (শাহ গিরর্্িদজ) (رحمة الله) এর নিকট অধিক প্রভাব সৃষ্টি হল। তাই তিনি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার দরবারে হাত উঠালেন এবং দোয়া করলেন এতে করে সাথে সাথে মৃত্যু ছেলেটি জীবিত হয়ে পড়ল। ঘটনাটি শুনে তার দাদাজান খুব অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং তার নিজের কাছ থেকে হযরত শাহ ইউছুফ (رحمة الله)কে প্রত্যাখ্যান করলেন। অত:পর সে আবার ভ্রমন করতে করতে মুলতান চলে গেলেন এবং এতে স্থায়ী বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিলেন।


অনেক বুর্জুগ সম্মানিত অলিদের ন্যায় তিনিও বাঘের উপর সাওয়ার হয়ে এদিক ওদিক যেতেন অর্থাৎ বাঘকে ঘোড়ার পরিবর্তে ব্যবহার করতেন। কিন্তু এটি তাঁর সামান্যতম কারামত।


তিনি মুলতান তাশরিফ এনেছিলেন সম্ভবত ৪৮১ হিজরীতে। বর্তমান যে মুলতান বিস্তৃতি সেটি তিনিই সমৃদ্ধ করেছিলেন। মুলতান ও আশেপাশে এলাকার লোকদেরকে নিজ আধ্যাত্মিক ফয়েজ বরকতের মাধ্যমে উপকৃত করেছিলেন। পরিশেষে ৮১ বৎসর বয়সে ইহজগৎ ত্যাগ করে স্থায়ী জগতে চলে যান ইন্নালিল্লাহ...।


যে স্থানে তিনি সদা র্সবদা এবাদত ও কঠোর রেয়াযত করতেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে।


তার ওফাত শরীফের পর একজন ব্যাক্তি অনেক দুর থেকে তাঁর হাতে বায়াত গ্রহন করা নিয়্যতে এসেছিলেন। যখন এসে দেখতে পেলেন হুজুরের ওফাত হয়ে গেছে, তাই সে কবর শরীফের পার্শে¦ বসে কান্না করতে লাগল (আর সে এভাবে বলতে লাগল আমার ভাগ্যে হুজুরের হাতে বায়াত হওয়ার সুযোগ হল না) সাথে সাথে কবর শরীফ থেকে হাত বাহির হয়ে পড়ল। ব্যক্তিটি হাত মোবারক ছুয়ে বায়াত গ্রহণ করলেন এবং সে অতি আনন্দ উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে ফিরে গেল এবং সেই হাত মোবারকটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় অবস্থায় ছিল এবং যে কেহ বায়াত হওয়ার ইচ্ছায় এটি ছুয়ে থাকেন, সাথে সাথে প্রতেকে এই কথা বলতে বাধ্য হন যে হযরত মৃত্যুর পরেও জীবিত।


কবর শরীফ থেকে হাত বাহির করে দেওয়ার নিয়ম প্রায় হযরত শেখুল ইসলাম ছদর উদ্দীন আরেফ (رحمة الله)এর সময়কাল পর্যন্ত বহাল ছিল। হযরত ছদর উদ্দীন (رحمة الله) যেহেতু শরীয়তের বিধি বিধান পালনে যতেষ্ট সচেতন ছিলেন, তাই তিনি পছন্দ করলেন না যে পরকালের (আলমে বরজখ) অবস্থা মানুষের মধ্যে প্রকাশ হয়ে যাক। সেজন্য তিনি হযরত শাহ ইউছুফ র্গিদিজ (رحمة الله) এর কবর শরীফের মধ্যে গিয়ে বলতে লাগলেন হে ইউছুফ! মোস্তফা (ﷺ) এর শরীয়তের তথা বিধানের বিপরীত যাতে কিছু না হয়, আপনার হাতটি যেন কবর শরীফের মধ্যে ডুকে পড়ে যেহেতু এটি সরাসরি অতি রঞ্জিত। আর হযরত শেখুল ইসলাম (رحمة الله)এর একথা  বলার পর তিনি হাত ঢোকিয়ে নিলেন এবং সে প্রথমটি বন্ধ করেলেন।


তাঁর রওজা শরীফ মুলতান শহরের মধ্যে অতি সোন্দর্য্য মন্ডিতভাবে অবস্থিত সম্মুখে প্রসস্থ ময়দান ওনার অন্যান্য বংশাদির কবরও এর মধ্যে। (আউলিয়ায়ে মুলতান নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত)              


তাজুল আরেফিন হযরত শাহ আবু বক্কর ওয়াররাক (رحمة الله): হযরত খাজা আবু বক্কর ওয়াররাক (رحمة الله)  চিশ্তিয়া পরিবারের উজ্জল নক্ষত্র, তিনি হযরত সুলতানুল হিন্দ নায়েবে মোস্তফা খাজায়ে খাজেগা হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী (رحمة الله) এর পীর ভাই ছিলেন অর্থাৎ হযরত খাজা ওসমান হারুনী (رحمة الله)  এর শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। স্বীয় পীর মুরশিদের নির্দেশে দ্বীনের প্রসার প্রচার কাজে আত্মনিয়োজিত হলেন। প্রথমে আজমিরের নিকট বর্তি একটি ছোট্ট শহর তারাগাঠ নামক স্থানে অবস্থান করেছিলেন। 


তার এক মুরিদ কাফিরদের ফাদে আটকা পড়ে গেলে সাহায্যের জন্য তার নাম নিয়ে আহবান করতে লাগলেন। হযরত শাহ আবু বক্কর ওয়াররাক (رحمة الله) অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে অবগত হওয়ার পর নীল রং বিশিষ্ট একটি ঘোড়ার উপর আরোহন হয়ে কাফেদের সাথে জিহাদ করার জন্য রওনা দিলেন এবং সেই সত্যের পক্ষে তিনি যুদ্ধের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধের ময়দান থেকে আর্শ্চয্য ও অবাক প্রকৃতিতে বাহির হলেন। অর্থাৎ তিনি সেখানে শহীদ বরণ করলেন শহীদ হওয়ার পর তার মাথাটি যুদ্ধের ময়দানে পড়ে আছে আর শরীর ঘোড়ার উপর আরোহিত অবস্থায় মুলতানের দিকে রওনা হলেন। মুলতানের নিকটবর্তী একটি শহর দহল্লু নামক স্থানে একজন প্রসিদ্ধ সম্মানিত ব্যক্তি যার নাম ইমাম উদ্দীন তার বাড়ির সামনে গিয়ে ঘোড়া দাড়াইলেন এবং সেই লাশ অর্থাৎ শরীরটি থেকে আওয়াজ করতে লাগলেন, ইমাম উদ্দীন ইমাম উদ্দীন করে। (রাত্রের বেলা) তখন ইমাম উদ্দীন বাহির হলেন এবং ঘোড়ার উপর আরোহিত মাথা বিহীন শরিরটি দেখে সে আতংকিত হয়ে পড়ল এবং ভয় পেয়ে গেল। মাথা বিহীন সেই শরীরটি থেকে অত:পর আওয়াজ আসল, ইমাম উদ্দীন! তুমি ভয় পেওনা অমুক স্থানে (যুদ্ধের স্থানে) আমার মাথা পড়ে আছে কিন্তু দেখবে সেই যুদ্ধের ময়দানে আরো অনেকের মাথা পড়ে আছে তবে আমার মাথার পার্শ্বে একটি প্রদীপ প্রজ্জলন করতে দেখা যাবে আর তাতে তুমি বুঝে নিবে সেটি আমার মস্তক এবং সেটি তুলে নিয়ে আসবে। এই খেদমতের বদলা তোমাকে আল্লাহ জল্লা শানহু সন্তান দান করবে। (তার সন্তান ছিল না) ইমাম উদ্দীন তাঁর নির্দেশকে মেনে নিলেন এবং হযরতের আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাবে সে খুব সহসাত যুদ্ধের ময়দান থেকে মস্তক উঠাই নিলেন এবং এনে শরীর ও মাথা একই স্থানে দাপন করলেন অর্থাৎ যেখানে ঘোড়া এসে দণ্ডয়মান হলেন, বাবা ইমাম উদ্দীন অত্যন্ত বৃদ্ধা ও দূবর্লাবস্থার ব্যক্তি ছিলেন;  প্রকৃতপক্ষে যখন কোন ছেলে সন্তানের সম্ভাবনা নাই অথচ আল্লাহ পাক হযরতের দোয়ার বরকতেও এই নির্দেশ পালন করার উছিলায় তাকে অনেক সন্তান দান করেছেন; তাদের মধ্যে থেকে হযরতের মাজারের জিম্মাদারী বা আনজাম দেওয়া হচ্ছে। মহিউদ্দীন মুহাম্মদ আওরঙ্গেজেব আলমগীর বাদশাহ উনার উপর বিশেষ ভক্তি রাখতেন তাই বাদশাহ সাহেব তাঁর মাজার শরীফ তৈরী করে দিয়েছেন মাজার শরীফ মুলতানে অবস্থিত।             


তিনি “ওয়াররাক” উপাদিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন আর তার কারন ছিল তাঁর পীর মুরশিদ প্রত্যেহ একটি পৃষ্ঠায় কিছু লেখে নদীর মধ্যে ফেলে দেওয়ার জন্য তাকে বলতেন। নদী থেকে যা পাওয়া যায় তা তার জন্য নিয়ে আসার জন্য বলতেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে এ কাজ করার মধ্যে নিয়োজিত ছিলেন এবং সে পৃষ্ঠাটি দেখার অনুমতি ছিল না, এই আবশ্যকতা এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এক দিন নিজ পীর মুরশিদ তাকে ওয়াররাক বলে আহবান করলেন। সেই থেকে ওয়াররাক নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। 


অলি আল্লাহদের মৃত্যু ও জিবিতদের ন্যায়


উলে­খ্য যে, আরেফিনদের তাসারুফাত জীবিতবস্থা ও ওফাত প্রাপ্তের পরেও অবশিষ্ট থাকে। যেমন উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় এবং তারা মানুষের উদ্দেশ্য হাছেলের জন্য দোয়া করে থাকেন। কখনো আরেফিনগণ মানুষের বিভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্য কবর শরীফ থেকে বাহির হয়ে দোয়া করে থাকেন। যথা - তানভীর নামক কিতাবে বলা হয়েছে- ’’ويحرج الولى من قبره‘‘  অলি কখনো কবর থেকে বাহির হয়ে উদ্দেশ্য পূরণ করান। আরেফিনদের এই ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রদত্ত। আর তারা মৃত্যুর পরেও যে জীবিত অবস্থার ন্যায় এ ঘটনাটি তার একটি বড় প্রমান। যে ক্ষমতা অসংখ্য অলির বেলায় প্রমানিত রয়েছে। অত:পর মহিমান্বীত আত্মার মৃত্যূ ও বিলয় নাই বরং স্থানান্তরিত হয় অর্থাৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রত্যাবর্তন মাত্র, তাই বলা হয়েছে-


الأولياء لايموتون بل ينقلون من دار إلى دار-


অর্থ: আল্লাহর অলিগন মূর্দা হয় না অর্থাৎ কর্মহীন হয় না এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যায় মাত্র। হা তবে নেজামে মোস্তফা (ﷺ) এর বিধান সঠিক রাখার জন্য মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ ও লাশের পোশাক পরিধান করেন। কিন্তু আধ্যাত্মিক জীবন ও ভ্রমন অবশিষ্ট থাকে। বরং এগুলি আরো বৃদ্ধি হয়ে যায় এই প্রাপ্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের ফলাফল এবং আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির কোন সীমা থাকে না, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককে বুঝার তৌফিক দান করুন।


হযরত শেখ সাদী সিরাজী (رحمة الله)


হযরত শেখ শরফউদ্দীন সিরাজী (رحمة الله) তিনি বিখ্যাত আলেম ও অদ্বিতীয় আশেক ছিলেন এবং তেজস্বী হালতের অধিকারী পরিপূর্ণ বর্জুগ ছিলেন। অপ্রকাশ্য জ্ঞানের ও মরমীবাদের মধ্যে অনেক দক্ষতা অর্জনকারী ছিলেন। তিনি হযরত আবু আবদুল্লাহ খফিফ (رحمة الله) এর রওজা মোবারকের শিষ্য ছিলেন। তিনি হযরত শেখ সাহাবউদ্দীন সরওর্য়াদী (رحمة الله) এর মুরিদ ছিলেন এবং তিনি শেখ ফরিদউদ্দীন আত্ত্বার (رحمة الله) এর সাক্ষাতের জন্য নিশাপুর পর্যন্ত সফর করেছেন।


সুলতানুল অলদ বিন মাওলানা রুমী (رحمة الله)


সুলতানুল অলদ বিন মাওলানা রুম (رحمة الله) তিনি ত্বরীক্বতের পথপ্রর্দশক ছিলেন। প্রকৃত তত্তে¡র ভেদ প্রকাশকারী, কামেল বুজুর্গ। নাম- বাহাউদ্দীন অলদ এবং উপাধী সুলতানুল অলদ ছিল। তিনি হযরত মাওলানা রুমী (رحمة الله) এর স্নেহ পরায়ন পুত্র। ত্বরীকতের মধ্যে তার গ্রহনযোগ্যতা ত্বরীক্বতের পথ প্রদর্শকগনের মধ্যে অন্যতম।


একদা মাওলানা রুমী (رحمة الله) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন; হে বাহাউদ্দীন! এই দৃশ্যপটে আমার আসার হয়ত উদ্দেশ্যই ছিল তোমার আবির্ভাব হওয়ার জন্য এবং এই সমস্ত কথাবার্তা আমার ব্যাখ্যা, আর তুমি আমার কর্ম।


তিনি বুরহান উদ্দীন মুহাক্কেক ও খাজা শামশুউদ্দীন তিবরীজি (رحمة الله) দ্বয়ের অনেক খেদমত করেছেন।


হযরত শেখ রোজবাহান বাকলি সিরাজী (رحمة الله)


হযরত শেখ রোজবাহান বাকলি সিরাজী (رحمة الله) তিনি পরিপূর্ণ আরেফ ও অঠল নীতি পরায়ন কুতুব ছিলেন। তাঁর উপাধি আবু মুহাম্মদ বিন আবি নছর বাকলি এবং তাঁর জন্ম ফছুছ নামক স্থানে হয়েছে এবং সিরাজ নামক স্থানে বসবাস করতেন; বাকলি গ্রামটিও সিরাজ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। যেখানে তার পিতা-মাতা স্থানী বাসিন্দা হিসাবে থাকতেন। তিনি সুলতানুল আরেফিন বোরহানুল উলমা এবং আশেকদের নয়নমনি ছিলেন (নুফহাতুল ইনছ) তিনি ইরাক, হুজ্জাজ এবং সামে ভ্রমন করেছেন।


হযরত শেখ আবু নজিব সরওর্য়াদী (رحمة الله) এর কাছে থেকে ইছকান্দরীয়ায় ছহী বোখারী শরীফের দরছ নিয়েছেন, এরপর ত্বরীক্বতের মধ্যে পা বাড়ালেন। মুরিদ হয়ে খেলাফত প্রাপ্ত হন হযরত শেখ সিরাজউদ্দীন মাহমুদ বিন খলিফা বিন আব্দুছ ছালাম বিন আহমদ বিন আবুল হাছন থেকে। যিনি হযরত শেখ আবু ছালমা ফুছুছ (رحمة الله) এর খলিফাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি হযরত আবু আলি রুরবালি (رحمة الله) থেকে এবং তিনি সৈয়দুত তোয়েফা হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর খলিফার মধ্যে থেকে।


হযরত শাহ আবুল ম‘আলি (রহমাতুল্লাহে আলাইহি)


তাঁর সিলসীলাহ ২৭ মধ্যস্থতায় হযরত মুছা বিন হযরত ইমাম মুহাম্মদ তক্বী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এবং তাঁর পূর্বপুরুষগণ সৈয়দ বংশ থেকে তার দাদার দাদা সৈয়দ ফয়েজ উল্লাহ নিজ সন্তান সৈয়দ মোবারক কেরমানী হামরাহকে নিয়ে কেরমান থেকে ৭৯৬ হিজরী সালে হিন্দুস্তানের আওছ শরীফে অবস্থান করতে লাগলেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে মুলতানের নিকটবর্তীতে অবস্থান আরম্ভ করলেন অতঃপর কিছুদিন পর সেখান থেকে ছেন্গুরা গিয়ে উপস্থিত হলেন, সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর সিরগোড়ের মধ্যে বসবাসের জন্য মনস্থীর করে নিলেন। সেখানে হযরত আবুল ম‘আলি ১০ জিলহজ্ব ৯২০ হিজরী সনে সিরগোড় এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর লক্বব ছিল আছাদুদ্বীন এবং শাহ খাইরুদ্দীন।


সত্যের সন্ধানে তাঁর যখন বাতেনী জ্ঞান অর্জন করার আগ্রহ সৃষ্টি হল; তখন ওয়াইছি পদ্ধতিতে গাউছে আজম মহিউদ্দীন হযরত সৈয়দ আবদুল ক্বাদের জিলানী (رحمة الله) এর সাথে এশক মুহাব্বত সৃষ্টি হল। শহর কে ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে থাকাকে বেছে নিলেন, কয়েক বৎসর বিভিন্ন জঙ্গলের মধ্যে ঘুরা ফেরায় ছিলেন।


৯৮০ হিজরীতে তিনি দিল্লী পৌঁছলেন। দিল্লী অবস্থানের সময় একদিন তিনি এক মজযুব দরবেশের সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং সেই মজযুব তাকে দেখে মুসখি হাসি দিলেন এবং বললেন-


عالميا امروز برائے كسب سلوك طريقت وحصول دولت بردرداؤدمى روند


অর্থাৎ আজকাল লোকেরা ত্বরীক্বতের রীতিনীতি এবং ধৌলত অর্জন বা নেয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বাবা শেখ দাউদ (رحمة الله) এর নিকট যাতায়াত করেন। আর এ ওয়াইছি নেয়ামত কে ঘরের মধ্যে রেখে বাহির হলেন। তাই তিনি এমন ইশারাহ পেয়ে দিল্লী থেকে শির ঘোটে ছুটে  গেলেন। শির ঘোটে পৌঁছে তিনি হযরত দাউদ এর খেদমতে উপস্থিত হলেন; হযরত দাউদ তাকে দেখা মাত্রই এমন উপাধীর সাথে সম্বোধন করলেন যে, মাআলী এসেছে, মাআলী এসেছে আস! আস! অতঃপর জিজ্ঞাস করলেন- বল দেখি তুমি যেই মাযজুবকে দেখছ সেই মায্জুব তোমাকে কি বলেছে? এবং তুমি কি শুনেছ? তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন হযরত দাউদ (رحمة الله) কে। আর হযরত দাউদ (رحمة الله) তাকে বললেন, সদা সর্বদা আমার নিকটে থাকবে, যাতে করে তোমার নিকট সেই নি‘য়ামত অর্জিত হয়ে যায়। যা অন্য জায়গায় সারা জীবন অর্জিত হয় নায় ও হবে না। তিনি হযরত দাউদ (رحمة الله) এর মুুরিদ ও শ্রেষ্ঠ খলিফা হলেন (লাহুরে অবস্থানরত)।


লাহুর এর মধ্যে অবস্থান:- ১১১০ হিজরীর মধ্যে যখন নিজ পীর মুরশিদের ওফাত শরীফের পর লাহুর এসে অবস্থান করে সৃষ্টি জীবকে সত্য পথের সন্ধান দিতে লাগল। কিছুকাল পর ১২ই রবিউল আউয়াল ১১২৪ হিজরী মোতাবেক লাহুরের মধ্যে ওফাত হয়েছিল অর্থাৎ প্রকৃত বন্ধুর সাক্ষাতে চলে গেল। তাঁর মাজার শরীফ লাহুরের মধ্যে, যা ফয়েজ বারকাত প্রকাশের কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থিত।


তিনি অনেক কারামতের অধিকারী ছিলেন। হযরত গাউছে আজম (رحمة الله) এর সত্যিকার আশেক্ব-পাগল ছিলেন এবং তিনি ফানা ফিশ্শায়খ এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি কয়েকটি কিতাব লেখেছেন। যেমন- “তুহফাতুল কাদেরী” “বাগে আরম” ইত্যাদি তাঁর লিখিত কিতাব।  


হযরত শায়খ বাহাউদ্দীন রহমাতুল্লাহে আলাইহে


হযরত শায়খ বাহাউদ্দীন ক্বাদেরী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তরিক্বতের একজন বড় বুযুর্গ ছিলেন। শাত্তারী মশরবের (ছিলছিলার) অনুসারী ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল ইবরাহীম। তিনি ‘আতাউল্লাহ আনছারীর সাহেবজাদা ছিলেন। তাঁর জন্মস্থান ছিল ‘জুনায়েদ’ নামক স্থানে। 


বায়‘আত এবং খিলাফত : তিনি কাদেরী ছিলছিলায় বায়‘আত ছিলেন। ক্বাদেরীয়া ছিলছিলার সাথে তাঁর যে সম্পৃক্ততা তা নিয়ে তিনি গর্ববোধ করতেন। ক্বাদেরীয়া ছিলছিলার সাথে (নিসবত) সম্পৃক্ততাকে তিনি এভাবে বর্ণনা করেন যে, শায়খুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি অর্থাৎ আসমান এবং জমিনের শায়খ হযরত শায়খ মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহে খিলাফত দান করেন তাঁর নিজ সন্তান শায়খ আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) কে, শায়খ আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) খিলাফত দান করেন শায়খুল মাশায়েখ তথা আমার পীর-মুর্শিদ সাইয়িদ আহমদ জীলি আলক্বাদেরী শাফেয়ী (رحمة الله) কে। আর আমার পীর মুর্শিদ আমাকে কাবার হেরেম শরীফে সমস্ত জিকির আজকারের এবং ক্বাদেরীয়া ত্বরীক্বার খিরকা বা খেলাফত প্রদান করেন। আর আমাকে মুত্বলাক (সাধারন) ইজাযত প্রদান করেন। আমি তাকেই ইজাযত প্রদান করি, যে আমার কাছে ইজাযতের অনুমতি চায়। আর জিকির আজকার শিক্ষা দিই এবং খিরকা পরিধান করিয়ে থাকি, যে আমার কাছ থেকে তালক্বীন (শিক্ষাদান) চায়। তিনি ৯২১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি খুশবু (আতর বা সুগন্ধি) ব্যবহারের প্রতি উৎসাহি ছিলেন এবং তিনি একজন ‘আলেমে বা ‘আমল ছিলেন। তিনি শাত্তারী মশরবের (তরিকার) অনুসারী ছিলেন। শাত্তারী এর উসুল বা বিধান দশটি। খোদা তায়ালা পর্যন্ত পৌঁছার তিনটি নীতি বা পদ্ধতি বিখ্যাত এবং পরিচিত। প্রথম তরিকা বা পদ্ধতি হল আখইয়ার বা উত্তম লোকদের, দ্বিতীয় তরিকা বা পদ্ধতি হল বন্ধুভাবাপন্ন এবং রিয়াযত (সাধনা) পন্থীদের, তৃতীয় ত্বরিক্বা বা পদ্ধতি হল শাত্তারীয়া পন্থীদের। এই রাস্তা দিয়ে গমনকারীর সংখ্যা প্রথম দিকে অনেক বেশি ছিল অন্য রাস্তা দিয়ে গমণকারীদের তুলনায়, শেষের দিকে ‘আকইয়ার’ দের ত্বরিক্বা বা পদ্ধতি আরও জোরদার হলো, রোজা, নামাজ, কুরআনের তিলওয়াত, হজ্জ এবং জেহাদ ইত্যাদির যথাযথ আদায়ের মাধ্যমে এ রাস্তায় বা ত্বরিক্বায় চলাচলকারীগণ লম্বা সময়ে অল্প মকছুদ অর্জন করেন।  অনেক সময় অল্প মকছুদ অর্জন করেন। দ্বিতীয়ত: বদচরিত্রের পরিবর্তন ঘটানো, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, অন্তর পবিত্রকরন এবং রূহের নির্জনতা এ রাস্তা দিয়ে গমনকারীদের একটু বেশী।


হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রোদলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি


হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রোদলভী (رحمة الله) তাওহীদের সমুদ্রে নিমগ্ন ছিলেন। তাঁর বংশ পরিক্রমা আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। তাঁর দাদা শায়খ দাউদ রাহমাতুল্লাহে আলাইহে “বলখে” থাকিতেন, যখন হালাকু খান দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যান এবং চতুরদিকে বিশৃংখলা আরম্ভ হয় তখন তিনি তাঁর বংশের কিছু লোকজনকে নিয়ে সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীর আমলে “বলখ” থেকে হিন্দুস্থানের দিকে আসেন। সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী “উধ” নামক স্থানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তিনি রোদলভে বাস করতে লাগলেন। তিনি হযরত শায়খ নাসিরউদ্দীন চেরাগ দেহলভী রাহমাতুল্লাহে আলাইহি এর মুরিদ ছিলেন। তাঁর আব্বাজানের নাম ‘ওমর। তাঁর বড় ভাই শায়খ তক্বীউদ্দীন একজন উপযুক্ত আলেম ছিলেন যিনি দিলি­তে থাকিতেন। তিনি রোদলভে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম মোবারক আহমদ। তিনি আবদুল হক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর এই অভ্যাস ছিল যে, উঠা-বসা, খানা-পিনার সময়, কথা-বার্তা বলার সময় উচ্চস্বরে হক্ব (- حق حق) শব্দটি তিনবার বলিতেন। এইজন্য তাঁর পীর মুর্শিদ তাঁকে প্রভুর নির্দেশে “আবদুল হক” উপাধীতে ভূষিত করেন। (তাজকিরায়ে আউলিয়ায়ে হিন্দওয়াপাক) সাত বছর বয়স থেকে তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ খুবই গুরুত্বসহকারে পড়তেন। তাঁর আম্মাজানের অজান্তে রাতে উঠে তিনি চুপে চুপে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন, যখন তাঁর আম্মাজানের এটা জানা হল যে, সে রাতে সবসময় উঠে গোপনে নামাজ পড়ে থাকেন, তখন তাঁর আম্মা তাঁকে নিষেধ করলেন, এই নিষেধ তাঁর অপছন্দ হল। মনে মনে তিনি বলতে লাগলেন, তিনি কোন ধরনের মা, যিনি আমাকে আল্লাহর ‘ইবাদত থেকে বাঁধা প্রদান করতেছেন? তিনি নিজ দেশ ছেড়ে দিল্লীর দিকে রওয়ানা হলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল বার বছর। দিল্লীতে তাঁর বড় ভাই শায়খ তক্বীউদ্দীন (رحمة الله) এর নিকট থাকতে লাগলেন এবং তাঁর কাছ থেকে ইলমে জাহেরী পড়তে থাকেন। তাঁর বড় ভাই তাকে একজন বিখ্যাত আলেমের নিকট নিয়ে গেলেন। যখন তাঁকে “মিজানুচ্ছরফ” নামক কিতাব পড়াতে আরম্ভ করলেন এবং যখনই দ্বারাবা দ্বারাবান (ضرب ضربًا) এর স্থানে আসলেন এবং এর অর্থ তাঁর শিক্ষক বললেন, তখন তিনি তাঁর শিক্ষককে বললেন তাঁর এই প্রকার ইলম বা জ্ঞান অর্জন করাটা মনপুত হয়নি। 


তিনি এমন ইলম বা জ্ঞান অর্জন করতে চায় যা দ্বারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায়। তাঁর বড় ভাই তাঁর এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে গেলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন কি করা যায়, ভেবে চিন্তে মনস্থ করলেন, যদি তাঁকে বিবাহ করিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তাঁর মধ্যে হয়ত কিছুটা পরিবর্তন আসবে। যখন তাঁকে বিবাহ করানোর কথা বললেন। তিনি বিবাহ করতে অস্বীকৃতী জানালেন এবং বললেন যে, তিনি এখনও বিবাহের উপযুক্ত হন নি।


সত্যের সন্ধানে : দিল্লী থেকে এসে সত্যের অনুসন্ধানে বের হলেন। হযরত নুর কুতুব ‘আলমের খেদমতে উপস্থিত হয়ে। সেখান থেকে বিহারে আসেন এবং সেখানে শায়খ ‘আলাউদ্দীন  (رحمة الله) নামক একজন বুজুর্গ ব্যক্তির সাক্ষাত পান, যাঁকে অল্পভাষী বলে থাকেন এবং তা প্রসিদ্ধ। এই অল্প ভাষীর সংস্পর্শটা (সংশ্রবটা) তাঁর কিছুটা ভাল লাগল এবং অধিক তত্ত্বানুসন্ধানে ব্রত হলেন। সেখান থেকে তিনি “উধ” নামক জায়গায় আসলেন। সেখানে শায়খ ফতেহ উল্লাহ উধি (رحمة الله) এর সাক্ষাত লাভ করেন। সেখানে তাঁর মন বসল না। নিরাশ হয়ে মনে মনে বললেন যে, জীবিতদের কাছ থেকে নিজ উদ্দেশ্য যখন অর্জন হচ্ছে না এখন মৃতদের সংস্পর্শ  অবলম্বন করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে তিনি শহরের কবরস্থান এবং আশেপাশের জংগলে এয়া হাদি এয়া হাদি (ياهادى ياهادى) বলে ঘুরতে লাগলেন। এইভাবে কয়েক বছর ঘুরতে থাকলেন কিন্তু উদ্দেশ্য অর্জন হচ্ছে না । তারপর তিনি মনে মনে বললেন যে, মরে যাব জীবিত কবরস্থান হয়ে যাব। তারপর তিনি নিজ হাতে একটি কবর খুড়ঁলেন এবং ছয়মাস পর্যন্ত এতে আল্লাহর স্বরনে মগ্ন রইলেন। এই রিয়াজত, মুজাহাদা তথা সাধনা দ্বারাও তিনি প্রশান্তি লাভ করতে পারেননি। একদিন তাঁর কাছে অদৃশ্য থেকে বলা হল যে, তাড়াতাড়ি পানিপথ নামক স্থানে চলে যাও, সেখানে গিয়ে হযরত শায়খ জালাল উদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) নিকট উপস্থিত হও। এ সংবাদ পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং পানি পথের দিকে রওয়ানা হলেন। এদিকে কাশফ দ্বারা তাঁর আগমনের খবর তিনি (শায়খ জালাল উদ্দীন) জেনে গেলেন। তাকে তাঁর আক্বীদা সম্পর্কে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য কিছু ঘোড়া ‘খানকাহ’ এর দরজায় খাড়া করে দিলেন এবং খানকাহ এর ভিতরে দস্তরখানা বিছিয়ে তার উপর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রাখলেন। যখন তিনি (শায়খ আহমদ আবদুল হক) খানকাহ এর দরজায় আসলেন তখন দেখলেন কিছু ঘোড়া সেখানে দাঁড়ানো এবং যখন খানকাহ এর ভিতর প্রবেশ করলেন সেখানে দেখতে পেলেন দস্তরখানা বিছানো এবং তার উপর বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সাজানো অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা দেখে তিনি মনে মনে বললেন, যে ব্যক্তি এই রকম রাজকীয় জীবন-যাপন করেন আল্লাহর সাথে তার কিরূপ প্রেম ভালবাসা থাকতে পারে? খানকাহ থেকে বের হয়ে তিনি পথ চলতে চলতে অনেক দূরে চলে গেলেন। সারাদিন পথ চলতে চলতে সন্ধ্যায় একটি জায়গায় পৌঁছে যান যে জায়গার নাম জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কোন জায়গা। তিনি জানতে পারলেন যে জায়গাটির নাম সেই পানি পথ, তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। রাত্রি শহরের বাইরে গিয়ে পথ অতিবাহিত করতে লাগলেন। পরদিন সকালে তিনি পুনরায় রওয়ানা হলেন কিছুদুর গিয়ে রাস্তা ভুলে গেলেন। সেখানেই একটি শুষ্ক গাছের উপরে একজন টুপি পরিহিত লোক বসা দেখলেন। তাঁর নিকট রাস্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বললেন, শায়খ জালালউদ্দীন (رحمة الله) এর দরজার সম্মুখ দিয়ে এই রাস্তা চলে গেছে, আর আপনি তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করবেন, আর যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে সামনে যে দুইজন লোক আসতেছে তাদের কাছে জিজ্ঞেসা করে দেখুন। কিছু দূর গিয়ে তিনি দুইজন লোকের সাক্ষাত পেলেন তাঁদের কাছে রাস্তার ব্যাপারে জিজ্ঞেসা করলে তারাও অনুরূপ জবাব দিলেন। ইহা শুনে তিনি ভাবলেন যে, আল্লাহ তায়ালারই হুকুম যে হযরত জালালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) এর নিকট যাওয়া এবং তাঁর কাছে বায়‘আত গ্রহন করা না হয় আমি ঘুরে ঘুরে তার সামনের রাস্তায় যেন পৌঁছে যায়। তারপর তিনি হযরত জালালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله)এর খানকায় গিয়ে পৌঁছলেন। পথে তার অন্তরে এই আশাটা প্রস্ফুটিত হল যে, কতই ভাল হতো যদি হযরত জালালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) বায়‘আত করার সময় নিজ টুপিটা তার নিজ পীর-মুরশিদ হযরত খাজা শামসুদ্দিন তুরক (রহমাতুল-াহে আলাইহি) এর মাজার স্পর্শ করে তার মাথায় দিয়ে দিতেন এবং রুটি ও হালুয়া প্রদান করতেন। অত:পর তিনি যখন খানকায় পৌঁছেন, তখন হযরত জালালউদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) নিজ মাথা থেকে টুপি নিয়ে তাঁর নিজ পীর মুরশিদের মাজার স্পর্শ করে তার মাথায় রাখলেন। এমতবস্থায় একজন লোক রুটি এবং হালুয়া নিয়ে উপস্থিত হলেন। হযরত জালাল উদ্দীন কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) তাঁকে তা প্রদান করেন এবং বললেন যে, এটাই হল তোমার বাসনা বা আশা। তারপর হযরত কবিরুল আউলিয়া (رحمة الله) তাঁকে খিলাফত প্রদান করেন। 


তিনি রুদলী শরীফ গিয়ে আল্লাহর স্মরনে মশগুল হয়ে গেলেন এবং তিনি তথায় বিবাহ করেন। তাঁর তিনজন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। বড় ছেলের নাম শায়খ আজিজ। দ্বিতীয় ছেলে জন্মের কিছু দিন পর মারা যান। তৃতীয় ছেলে হলেন শায়খ ‘আরেফ (رحمة الله)। তাঁর মাধ্যমেই এই ছিলছিলাটি জারি থাকে। হযরত আহমদ আবদুল হক ৮৩৭ হিজরীর ১৫ই জমাদিউচ্ছানী ইন্তেকাল করেন। 


তাঁর ছোট ছেলে তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্থলভিষিক্ত হন এবং তিনি তাঁর পিতা শায়খ আহমদ আবদুল হকের ছিলছিলা জারি রাখেন। যাকে ছিলছিলায়ে আহমদ চিশতীয়া বলা হয়। তিনি সংসার বিমুখ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী অনুগ্রহশীল বুযুর্গ ছিলেন। রিয়াজত, ‘ইবাদত এবং সাধনায় তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। যা কিছু মুখে বলতেন তা হয়ে যেত। তিনি আল্লাহর প্রেমে বিভুর এমন একজন আলেম ছিলেন অর্থাৎ প্রভুর প্রেম সাগরের মধ্যে ডুবন্ত থাকতেন। তাই অন্য কিছুর প্রতি জ্ঞানহীন থাকতেন। যখন তাঁর কানে হক্ব হক্ব শব্দ বলা হত, তখন তিনি হুঁশ তথা অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে যেতেন। তিনি সবার আগে জামে মসজিদে যেতেন এবং ঝাড়ু দিতেন। প্রায় পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত জামে মসজিদে গেছেন কিন্তু রাস্তা চিনতেন না। তাঁর মুরিদ থেকে যে কেউ হক্ব হক্ব হক্ব বলতেন আর তিনি সেদিকে যেতেন। তিনি দুনিয়ার দিকে তেমন দৃষ্টিপাত করে দেখেন নি অর্থাৎ তিনি দুনিয়া বিমুখ ছিলেন। (তাজকিরায়ে আউলিয়ায়ে হিন্দওয়া পাক)


জাতে পাক বা পবিত্র সত্ত্বা: তিনি বলেন হক তথা আল্লাহর পবিত্র সত্ত্বা অপরিচিত। কিন্তু যদি এই পবিত্র সত্ত্বার (আল্লাহর) নাম সমূহ থেকে কোন নাম জাতে পাক তথা পবিত্র সত্ত্বার (আল্লাহর) সাথে প্রয়োগ করে তাহলে তা ‘হক’ নাম থেকে উত্তম ও মর্যাদাবান হবে না। 


‘হক’ নামের অর্থ: সমস্ত কায়েনাত তথা বিশ্বজগতের প্রমান্যদলিল হলেন আল্লাহ তায়ালা। অতএব আল্লাহ তায়ালার উপর হক নামটার প্রয়োগ পরিপূর্ণতার পরিচায়ক।


সরকারে দো’আলম (দঃ) এর সংশ্রব: তিনি বলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সংশ্রব লাভ করেছিলেন। অনুরূপভাবে আল্লাহর প্রেমিকগণ ও নবীর আশেকগণ এখনো সরকারে দো‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সংশ্রব প্রাপ্ত হয়ে থাকেন।


মনছুর হাল্লাজ: মনছুর শিশু থাকাবস্থায় হতে কোন কিছু গোপন রাখার শক্তি রাখতেন না। বরং গোপন বিষয়াদি প্রকাশ করে দিয়েছেন। এমন কিছু আল্লাহর বান্দা আছেন যারা সমুদ্রের পানি পান করে উধগিরন করে ফেলে, তাদের ইন্তেকালের পরেও অনেক কারামত প্রকাশ হয়ে থাকে। প্রকাশ থাকে যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজে তাঁর নামে হাদিয়া পেশ করে, তাহলে সে কাজে কামিয়াব হবে। বলা হয়ে থাকে যে, তাঁর নাম মোবারকের তাসবীহ উদ্দেশ্য পূরনে পরীক্ষীত। যদি কোন ব্যক্তি ওজু সহকারে এক বৈঠকে দৈনিক ৩৬০ বার أغثنى وأمددنى يا شيخ أحمد عبد الحق পাঠ করে তাহলে তার উদ্দেশ্য পূরন হবে। (সিয়ারুল আকতাব)                  


হযরত শায়খ আবদুল কুদ্দুছ রহমাতুল্লাহে আলাইহে


হযরত শায়খ আবদুল কুদ্দুছ রহমাতুল্লাহে আলাইহে আল্লাহর একজন মাকবুল বান্দা ছিলেন। তাঁর বংশ পরিক্রমা হযরত ইমামে আজম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহে আলাইহে এর সাথে সম্পৃক্ত। (সূফিনাতুল আউলিয়া) 


তাঁর দাদা হযরত শায়খ ছফি উদ্দীন (رحمة الله) রুদলীতে বাস করতেন। আর তিনি হযরত মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সামনানী রহমাতুল্লাহে আলাইহের মুরিদ ছিলেন। তাঁর পিতার নাম শায়খ ইসমাঈল। (সিয়ারুল আকতাব) 


তিনি ৮৬১ হিজরীতে রুদলীতে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর নাম আবদুল কুদ্দুছ। তিনি বেশিদিন লেখাপড়া করেন নি। তিনি ইলমে বাতেনী অর্জনে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। তিনি যখন একটু বড় হন, তখন তিনি হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রহমাতুল্লাহে আলাইহের  মাজারে ঝাড়ু দেওয়া আরম্ভ করেন। একদিন একটি কিতাব তাঁর হাতে নিয়েছিলেন। এমতবস্থায় মাজার থেকে হক হক (حق حق) আওয়াজের শব্দ শুনতে পেলেন। ঐদিন থেকে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিলেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক কাজে আপাদমস্তক নত করে দিলেন এবং তিনি হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রহমাতুল্লাহে আলাইহের রুহানীয়্যত তথা আধ্যাত্মিকতা থেকে ফয়েজ প্রাপ্ত হন।


বায়‘আত এবং খিলাফত :তিনি হযরত শায়খ মুহাম্মদ বিন হযরত শায়খ আরেফ (رحمة الله) এর হাতে বায়আত হন এবং তাঁর কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন। তিনি হযরত দরবেশ কাসেম উধী রহমাতুল্লাহে আলাইহের মুুরিদ এবং খলিফা ছিলেন। (আনওয়ারুল আরেফীন) 


কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রুদলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহের রূহানীয়্যত তথা আধ্যাত্মিকতা থেকে লাভবান এবং উপকৃত হয়েছেন ও তার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। (সফিনাতুল আউলিয়া) তিনি ওয়াইসি ত্বরিক্বায় হযরত শায়খ আবদুল হক রুদলভী (رحمة الله) থেকে ফয়েজ প্রাপ্ত হন। তিনি  অতিদ্রুত সুলুকিয়্যাতের সোপান অতিক্রম করে তাকমীল তথা পরিপূর্ণতা এবং মাক্বামে ইরশাদ তথা পথপ্রদর্শনের স্তরে পৌঁছে যান। একদা তাঁকে হযরত শায়খ আহমদ আবদুল হক রহমাতুল্লাহে আলাইহি এ শুভ সংবাদ প্রদান করেন যে, তোমাকে উচুঁ স্তরের বেলায়ত দান করা হয়েছে। আর আমি তোমাকে এ উচুঁ স্তরের বেলায়ত দান করেছি। 


শাহ ‘আবাদে অবস্থান: ‘ওমর খান কাশি যিনি সুলতান সেকান্দর উধীর মন্ত্রীদের অন্তর্ভূক্ত (সম্ভ্রান্ত শ্রেনীর লোক) ও তাঁর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। তাঁর অনুরোধে তিনি তাঁর সকল পরিবার বর্গকে সঙ্গে নিয়ে উধ নামক স্থান থেকে শাহ ‘আবাদে-যা দিল্লীর পাশে অবস্থিত-সেখানে চলে আসেন।  সেখানে ত্রিশ বৎসরের অধিক সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন।


গংগুহ নামক স্থানে অবস্থান: শাহ ‘আবাদ কে পাঠানদের বড় কেন্দ্রস্থল বলা হয়ে থাকে। যেখানে প্রচুর আফগানী ছিলেন। যখন সম্রাট বাবর হিন্দুস্তান জয় করেন, তখন আফগানীদের বিস্তৃত করার উদ্দেশ্য শাহ আবাদকে বিধ্বস্ত করেন। তিনি এই বিধ্বস্ততাকে দেখেননি, তিনি এর আগেই সেখান থেকে বাসস্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন। অতএব তিনি নিজ পরিবারের সকলকে নিয়ে গংগুহে চলে যান এবং ওখানে বসবাস করতে লাগলেন।


বিবাহ এবং সন্তান সন্ততি: তাঁর সাতজন ছেলে ছিলেন। তন্মধ্যে শায়খ হামিদ উদ্দীন শায়খুল কবির রহমাতুল্লাহে আলাইহি এবং শায়খ রুকনউদ্দীন রহমাতুল্লাহে আলাইহে বিখ্যাত আলেম ধার্মিক ছিলেন। (সিয়ারুল আকতাব) 


তাঁর খলিফাগন:তাঁর মশহুর খলিফাগন হলেন শায়খ আবদুল কবির (رحمة الله), শায়খ জালাল উদ্দীন খানেশ্বরী (رحمة الله), শায়খ আবদুল গফুর আজমপুরী (رحمة الله), শায়খ বাহু (رحمة الله) এবং শায়খ আবদুল আহাদ (رحمة الله)।


গুনাবলী:তিনি কাশফ এবং কারামতের অধিকারী ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সুন্নতের পাবন্দ ছিলেন। পরিপূর্ণ খোদাভিরু এবং আরেফ ছিলেন। যা কিছু মুখে বলতেন তা ঘটে যেত। তিনি কৃষিকাজ করতেন। ছেমার প্রতি উৎসাহী ছিলেন। (সিয়ারুল আকতাব)


ইলমের প্রতি অনুরাগ বা রুচি:তিনি কয়েকটি কিতাব লিখেন। যেমন - আনওয়ারুল উয়ুন, মকতুবাহ ইত্যাদি। কাব্য চর্চার প্রতিও তাঁর অনুরাগ বা উৎসাহ ছিল। তিনি বলতেন ক্ষুধা উগ্রতাকে (কাশিফকে) নমনীয়তা (লতিফ) পর্যন্ত পৌঁছায়। আর মুকায়্যাদকে (বন্দীত্বকে) মুতলাকের (মুক্তির) ঠিকানা দেয়। ইনসানিয়্যাতকে (মানবতা) রহমানিয়্যাতের দিকে নিয়ে যায়। কেননা ক্ষুধা দ্বারা মানুষ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।


ক্ষুধার মাক্বাম বা স্তর:ক্ষুধার মাক্বাম (স্তর) তিনটি-


(১) প্রথম স্তরকে ক্ষুধার আগুন বলে। যার খাদ্য হল পানি, খাবার রুটি ইত্যাদি।


(২) দ্বিতীয় স্তরকে বেদনা, প্রেম ও ভালবাসার আগুন বলে। তার খাদ্য হল কলিজার রক্ত, আবর্জনা ইত্যাদি।


(৩) তৃতীয় স্তরকে মাহবুবের (প্রমিকের) আগুন বলে। তার খাদ্য হল, সৌন্দর্য, মনোরম এবং পরিপূর্ণ গুনাবলী।


তিনি বলেন- বাশারীয়্যাতের (মনুষ্যত্বের) ঘর থেকে বের হয়ে আহদিয়্যাতের (একত্ববাদের) শহরের দিকে হিজরত করা প্রয়োজন এবং মুখাপেক্ষিহীনতার (সামদিয়্যাতের) আকাঙ্খী হওয়া উচিত। তিনি বলেন একজন পীর সময়ের হেফাজতকারী হয়ে থাকে।


ওফাত: তিনি ৯৪৪ হিজরীর ৩০ শে জমাদিউল উখরা ইন্তেকাল করেন। কেউ কেউ তাঁর ওফাতের তারিখ ৯৪৫ হিজরী বলেছেন- তাঁর মাজার শরীফ গংগুহে অবস্থিত। (তাজকিরায়ে আউলিয়ায়ে হিন্দওপাক) 


হযরত মিরা সাইয়িদ শাহ ভিকা রহমাতুল্লাহে আলাইহি


হযরত মিরা সাইয়্যিদ শাহ ভিকা রহমাতুল্লাহে আলাইহি যুগের একজন বুযুর্গ এবং কুতুবে যমান ছিলেন। তিনি পিতার দিক দিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন রদিয়াল্লাহু আনহু এর বংশধর ছিলেন। তাই তিনি ছিলেন হোসাইনী (আনওয়ারুল আরেফীন)। তিনি মাতার দিকদিয়ে সাইয়্যিদ জায়েদ লশ্কর (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত।


বংশীয় অবস্থা: ‘হুজুর সাইয়িদুল মুরসালিন মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম’ হযরত জায়েদ (رحمة الله)কে (যিনি হযরত মিরা সাইয়িদ শাহ ভিকা রহমাতুল্লাহে আলাইহের পূর্ব পুরুষ ছিলেন) হিন্দুস্থানে যাওয়ার সুসংবাদ প্রদান করেন। 


সুসংবাদ পেয়ে হযরত জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর সন্তান সন্ততি তিরমিজ থেকে হিন্দুস্থানে আসেন এবং ‘সিয়ানা’ নামক স্থানে অবস্থান করেন। ‘সিয়ানা’ নামক স্থানটি এক ব্রাহ্মন সর্দার নিজ নামে আবাদ করেছিলেন এবং তিনি এই শহরের প্রশাসক ছিলেন। হযরত জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধক্ষেত্রে ওফাত প্রাপ্ত হন। তাঁর ওফাতের পর সাইয়িদ সোলায়মান সিয়ানায় আক্রমন করেন। ‘সিয়ানা’ নামক স্থানটি বিজয় করার  পর এর নামকরণ করা হয় সিওয়ানা (আনওয়ারুল আরেফিন)। তাঁর পিতার নাম ছিল ইউছুফ। তিনি সাইয়িদ কুতুবউদ্দীনের সাহেবজাদা ছিলেন। তাঁর মাতার নাম ছিল বিবি মালাকু।


জন্ম: তিনি ১০৪৬ হিজরীর ৭ই রজব জন্মগ্রহন করেন (বস্তানে মারেফত)। তাঁর নাম হল মুহাম্মদ সা‘ঈদ। কুনিয়ত বা উপনাম হল মিরা সাইয়িদ শাহ ভিকা। আর তিনি এই উপনামেই অধিক পরিচিত। তাঁর বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁর আব্বা শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর আব্বার ইন্তেকালের পর বংশীয় দ্ব›েদ্বর এবং বংশীয় লোকদের হিংসার কারনে তাঁর আম্মাজান তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ‘সিওয়ানা’ থেকে হিজরত করে ‘কুহরাম’ নামক স্থানে চলে আসেন এবং কুহরামে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর আম্মা কুহরামে  এসে তাঁকে একটি মকতবে ভর্তি করান। সে অবস্থায় এক হিন্দু ছেলের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। পরবর্তীতে এটা নিয়ে মকতবে সমালোচনা হতে লাগলেন। একদিন মকতবের ছেলেরা ঐ হিন্দু ছেলেকে তিরস্কার করলেন এবং বললেন যে, দরিদ্রের (ভিখারীর) ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করাটা উপযোগী নহে। যখন তিনি কথাটি জানতে পারলেন তখন তাদের এই কথাটা তাঁর অপছন্দনীয় হলো। তিনি তাদের মধ্যে যে দলপতি ছিল তাকে এমনভাবে থাপ্পড় মারলেন যে, তার চোয়াল ভেঙ্গে যায়। 


অভিযোগ এবং শাস্তি: শিক্ষকের নিকট তার এই নালিশটা গেলেন। শিক্ষক তাঁকে মকতব থেকে বের করে দিলেন। মকতব থেকে নাম কেটে দেওয়ার পর তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দেন। দিনভর ছেলেদের সাথে গলিতে গলিতে মহল্লায় মহল্লায় খেলাধূলা করতেন।


গায়েবী সাহায্য: তিনি এভাবে পাড়া মহল্লায় খেলাধুলা করতেন। একদিন হযরত শাহজালাল (رحمة الله) (যিনি শাহ ফাজেল মাজযুবের ভাই ছিলেন) মুরিদদের শিক্ষাদান এবং উপদেশ দানের জন্য কুহরামে তাশরীফ আনেন। তিনি শাহ জালাল (رحمة الله) তাঁকে দেখে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে, সে সাইয়িদ ইউছুফের ছেলে। তখন তাঁর প্রতি হযরত শাহ জালাল (رحمة الله) সহানুভূতিশীল হলেন। অত্যন্ত মুহাব্বাত সহকারে তাঁর সামনে আসেন। তিনি (শাহজালাল রহমাতুল্লাহে আলাইহি) তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, হে বৎস এই সময়টা খেলাধূলার সময় নয়, এই সময়টা হলো লেখাপড়ার সময়। তখন তিনি উত্তর দিলেন, আগে লেখাপড়া করতাম। এখন আর কি করব শিক্ষক মহোদয় আমাকে মকতব থেকে বের করে দিয়েছেন। হযরত শাহজালাল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইহা শুনে তাঁকে সান্তনা দেন এবং তাঁকে বললেন যে, চিন্তার কোন কারণ নেই, তিনি সবকিছু সহজের জন্য চেষ্টা করবেন। আর শিক্ষককেও তাঁকে শিক্ষাদানের ব্যাপারে বলবেন, তাঁকে দেখাশুনার ব্যাপারে যেন গাফলতি না করেন সেটিও বলবে।  সেই রাত্রে তাঁর চারজন মুরিদকে বুঝালেন যেন এর প্রতি কোন অবেহলো না হয় এবং খানাপিনা, থাকাসহ যাবতীয় খরচ যাতে তারা বহন করেন। তাঁকে ডেকে হযরত শাহ জালাল (رحمة الله) নিজের সাথে খানা খাওয়ালেন এবং সামান্য খাবার তার আম্মাকে দেওয়ার জন্য তাকে প্রদান করলেন। এই সময় সে হযরত শাহ জালাল (رحمة الله)কে বললেন। তার রিযিকদাতা হলেন আল্লাহ তায়ালা অত:পর সে মায়ের কাছে ফিরে গেলেন। কিছু দিন পর হযরত শাহ জালাল (رحمة الله) মিষ্টি, কাগজ, কাপড় নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। সে ঘুমন্ত ছিলেন। তাঁকে ঘুম থেকে জাগালেন। কাপড় পরিধান করিয়ে তাকে শিক্ষকের মকতবে নিয়ে গেলেন। শিক্ষককে বললেন যে, আপনার কাছে একটি সুপারিশ নিয়ে এসেছি। শিক্ষক বুঝে গেলেন যে, কিসের সুপারিশ নিয়ে এসেছেন। শিক্ষক হযরত শাহ জালাল (رحمة الله)কে বললেন, যা কিছু আপনি বলবেন আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করব। কিন্তু সাইয়িদ শাহ ভিকার ব্যাপারে কোন সুপারিশ করবেন না। ইহা শুনে হযরত শাহ জালাল রাগান্বিত হয়ে গেলেন এবং তিনি শিক্ষককে বললেন, তুমি মারদুদ (বিতাড়িত)। তুমি পীরের নির্দেশের অমান্য করতেছ। তখন শিক্ষক তাঁর নিকট ক্ষমা চাইলেন এবং হযরত শাহ জালাল (رحمة الله) এর নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। হযরত শাহ জালাল (رحمة الله) শিক্ষককে জোর দিয়ে বললেন ইনি তোমার নিকট কুরআন মজিদ, গুলিস্তা, বুস্তা পড়িবে এবং কিছু দিনের মধ্যে মকতবের প্রতিনিধি হয়ে যাবে। শিক্ষকের কানে কানে নিম্ন আওয়াজে বললেন, তুমি জান না? তিনি সাইয়িদ বংশের লোক এবং জমানার কুতুব (কুতুবে জমান)। তোমার উচিত যে, ভালভাবে তাঁর খেদমত করা এবং তাঁর শিক্ষাদানের ব্যাপারে কোন রকমের গাফলতি না করা। এইদিন থেকে শিক্ষক মহোদয় তাঁকে শিক্ষাদানের ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দেন। তিনি ছয় মাসের মধ্যে কুরআন মজিদ, গুঁলিস্তা, বোঁস্তা, শেষ করে মকতবের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর কুহরামে চলে গেলেন। সেখানে কিছু দিন শিক্ষকতা করলেন। তারপরে ‘মিলওয়া’ নামক স্থানে বসবাস আরম্ভ করলেন। সেখানে এক অসহায় দরবেশ শাহ কাসেমের সাথে সাক্ষাত করেন। ওখানে এক বছর সময় অতিবাহিত করলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল পাহাড় থেকে লাকড়ি এনে জমা করা। বে নওয়া শাহ অর্থাৎ অসহায় দরবেশ একটি ছনের চাল বানিয়েছেন ঘরের ছাদ দেওয়ার জন্য। অতঃপর তিনি মুরিদদের বললেন এই চালটি উঠানোর জন্য সবাই অক্ষম হয়ে ফিরে আসেন, কিন্তু সে একাই উঠিয়ে দেওয়ালের উপর রেখে দেন। ঐ চালটি কিছুটা ছোটখাট ছিল তাঁর হাতের পরশে (স্পর্শে) সেটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই কথাটা বা বিষয়টা বেনওয়া শাহ বা অসহায় দরবেশের মুরিদদের অপছন্দনীয় হলো এবং তারা সকলে অভিযোগ করল যে, তারা এতদিন পর্যন্ত তাঁর খেদমতে থাকা সত্তে¡ও কোন কিছু অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু এই লোকটিকে কম সময়ে বা অল্পদিনে ছাহেবে তাসাররূফ করে দিয়েছেন। হযরত শাহ কাসেম (رحمة الله) ঐ লোকদেরকে বললেন যে, হে লোকেরা ক্বাসেমে হাকিকি বা প্রকৃত কাসেম হলেন আল্লাহ তা‘য়ালা। লোকটি স্বয়ং সৈয়দ জাদা তাঁর বাপদাদারা ছিলেন পরহেজগার মুত্তাক্বী, এই লোকটি সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা ছিল না। ঘটনাক্রমে সেখানে বেনওয়া শাহের পীর-মুরশীদও দন্ডায়মান ছিলেন। তিনি বেনওয়া শাহ ক্বাসেম  (رحمة الله) কে বললেন যে, আমি আর তুমি ছোট হাওজ বা কূপের মত আর মিরান শাহ হলেন বড় সাগরের মত আমাদের দ্বারা তাঁর তৃপ্তি মিটবেনা তাঁকে বিদায় জানাও। বে নওয়া শাহ তাঁর নিজ পীর-মুর্শিদের ইঙ্গিতে বা কথায় তাঁকে বিদায় জানাইলেন। এরপর তিনি চিন্তা করলেন যে, কোথায় যাবেন। তাঁকে শাহ ভাউল বলেছিলেন যে, হযরত শাহ আবুল মা‘য়ালী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে যাওয়ার জন্য, তিনি হযরত ভাউল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর পরামর্শ গ্রহন করলেন। তিনি এবং শাহ ভাউল উভয়ে আইন্ডাহর দিকে রওয়ানা হলেন, যেখানে হযরত শাহ আবুল মা‘আলী (رحمة الله) থাকতেন। যখন আইন্ডাহ নামক স্থানের নিকটে পৌঁছলেন তখন তিনি একটি স্থানে বসে হুক্কা টানতে লাগলেন। আর শাহ ভাউল তাঁর আগেই হযরত শাহ আবুল মা‘য়ালী রহমাতুল্লাহি আলাইহির খেদমতে উপস্থিত হয়ে গেলেন। হযরত শাহ আবুল মা‘য়ালী (رحمة الله) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বন্ধুকে কোথায় রেখে আসলেন। কিছুক্ষন পর শাহ ভাউল তাকে নিয়ে আসার জন্য ওখান থেকে উঠে রাস্তায় বাহির হয়ে পড়লেন এবং তার সাথে মিলিত হলেন। উভয়ে কথা বলতে বলতে হযরত শাহ আবুল মায়ালী (رحمة الله) দিকে রওয়ানা হলেন। তাকে হযরত শাহ ভাউল (رحمة الله) রাস্তায় বা পথে বললেন, হযরত শাহ আবুল মায়ালী (رحمة الله) সামনে ঘাটে বসা আছেন। একটু পরে তাঁরা উভয় যখন হযরত শাহ আবুল মায়ালীর (رحمة الله) খেদমতে গিয়ে উপস্থিত হন। তখন তিনি তাঁকে (মিরান শাহ) দেখে বললেন;


ببا ميران من رفيق كجاست يعنى حُقّه


অর্থাৎ আস আমার মিরা তোমার বন্ধু কোথায় অর্থাৎ হুক্কা কোথায়? তিনি বললেন যে, আমি তা ছেড়ে দিয়েছি তখন থেকে তিনি হুক্কা পান করা ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরে হযরত শাহ আবুল মা‘য়ালী (رحمة الله) তাকে মুরিদ করলেন। তাঁকে ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা দেন এবং জিকির শিক্ষা দিয়ে তার পীর ছাহেব তাকে বিদায় জানান। তারপর তিনি ওখান থেকে রওয়ানা হয়ে ‘মিলওয়া’ নামক স্থানে পৌঁছেন এবং সেখানে তিন দিন যাবত বেহুঁশ অবস্থায় ছিলেন। মুখ থেকে কফ বের হতে লাগল। তিনদিন পর তাঁর হুঁশ হয়, এর পর ওখান থেকে ‘কেহরাম’ নামক স্থানে চলে গেলেন। সেখানে মুহাম্মদ ফাদকানুন এর মসজিদে কিছু সময় অবস্থায় করেন। তারপর সেখান থেকে অন্য একটি মসজিদে অবস্থান করতে থাকেন। যাহা তাঁর মাজারের পাশে। তিনি এক ব্যক্তিকে খাবারের জন্য বললেন। তিনি প্রত্যেকদিন তার জন্য খাবার নিয়ে আসতেন। কিন্তু তিনি ছয় সাতদিন পর একটি রুটি পানিতে ভিজিয়ে খেতেন। 


কাশফ:একদিন কাশফের মাধ্যমে তিনি জানতে পারলেন যে, তাঁর মুর্শিদ হযরত শাহ আবুল মায়ালী রহমাতুল্লাহে আলাইহের দাঁড়ি থেকে একটি দাঁড়ি চাটাইয়ের (মাদুর) উপর পড়ে গেছে। তিনি এই দাঁড়িটি উঠানোর জন্য আইন্ডাহ নগরীতে চলে আসেন। এই দাড়িটি তিনি চাটাই থেকে খোঁজ করে নিয়ে নিজের পাশে রাখলেন। তাঁর এই কথা বা কর্ম দ্বারা তাঁর মুর্শিদের এমন খেয়ালটি সৃষ্টি হল যে, কোথাও যেন এমন কিছু না হয় যাতে করে, এই ধরনের মকশুফাতে (প্রকাশিত কাশফ) ফেঁসে যায়। অগ্রে উন্নতিতে বাধা না হয় এবং মকছুদে হাক্বিকি আল্লাহ তায়ালা থেকে দূরে থাকে। অতএব তাঁর মুর্শিদ তাকে বললেন, মিরা এটা দরবেশী নহে। দরবেশী হল অন্য বিষয়। ছাহেবে কাশফ অর্থাৎ আউলিয়া কেরামগন ইহা দ্বারা উপদেশ গ্রহন করা আবশ্যক। তাঁর মুর্শিদ তাঁকে একটি মোরগ ভুনা করে তিনদিন পর্যন্ত খাওয়ান। তা খেয়ে তাঁর অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। অতঃপর তিনি তাঁকে বিদায় জানান এবং তাঁকে আল্লাহর স্মরণে রত থাকার জন্য বললেন। এরপর তিনি কুহরামে আসেন এবং আল্লাহর স্মরণে রত হয়ে যান। কিছুদিন পর মুর্শিদ তাঁকে একটি চিঠি দেন এবং তাঁকে আইন্ডাহ নগরীতে আসার জন্য বলেছেন। অত্যাধিক (মোজাহেদা ) সাধনা এবং কম খাওয়া ও কম ঘুমানোর কারনে তিনি এমন দূর্বল হয়ে গিয়েছিলেন যে, সফর করা তারপক্ষে কঠিন ছিল। তাই তিনি তার মুর্শিদকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন যে, দূর্বলতার কারনে সফর করা তারপক্ষে সম্ভব নহে। তবে অতিসত্তর তাঁর খেদমতে হাজির হবেন। তার ঘটনাবলীর উত্তর নিয়ে যখন লোকটি রওয়ানা হয়ে গেলেন, তখন তাঁর মনে এমন খেয়াল আসল যে, মুর্শিদের আহবানে অতিসত্তর যাওয়া উচিত। মনে আসার সাথে সাথে তিনি লোকটির পিছনে আন্ডাইর দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং সূর্য ডুবার কিছুক্ষন পূর্বে তিনি আইন্ডাহয় পৌঁছে তাঁর মুরশেদকে কদমবুচি করলেন। তাঁর মুর্শিদ তাঁকে জিজ্ঞেসা করলেন যে, কুহরাম থেকে কখন রওয়ানা দিয়েছিলে। তিনি সমস্ত বিষয় তাকে জানালেন এবং বললেন যে, আজ দুপুরের সময় কুহরাম থেকে রওয়ানা হয়েছি। এরপর মুরশিদ জিজ্ঞেসা করলেন, বলত সমুদ্র কিভাবে পার হয়েছ। তিনি উত্তর দিলেন পানির উপর দিয়ে চলে এসেছি এবং পা পানিতে ভিজেনি। মুরশিদ তাঁকে বিদায় দিলেন এবং তাকে বললেন যে, মোস্তাফা (ﷺ) এর অনুসরণে মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরী। (এই সকল ঘটনাবলী আনোয়ারুল আরেফীনের বরাতে তাজকেরায়ে আউলিয়ায়ে হিন্দ ও পাক এর মধ্যে উলে­খ রয়েছে)।


স্মরণ রাখা আবশ্যক! ইহাকে আসল মাক্বছুদ জেনে ঐ স্তর এবং কাশ্ফের স্তরের মধ্যে সুলুকের রাস্তায় অনেক ব্যক্তি মাক্বছুদে হাক্বীকি অর্থাৎ প্রকৃত মাকছুদ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল অর্থ্যাৎ গোমরাহ হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য ছুফিয়ায়ে কেরাম বলেছেন যে, কাশফ এবং কারামতের স্তরটা সুলুকের রাস্তা অনুসরণকারী ব্যক্তি অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরামদের মহা পরীক্ষার স্তর। যার মধ্য থেকে অনেকেই গোমরাহ হয়ে যায়। (আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান থেকে হেফাজত করুক আমীন (الله حافظ الله ناصر) আল্লাহ হেফাজতকারী এবং মদদকারী। তিনি আইন্ডাহ থেকে কুহরামে ফিরেছেন নৌকা যোগে সমুদ্র পার হয়ে। আর এর পর থেকে তিনি ইবাদত ও রেয়াজতে মগ্ন হয়ে যান।


খিরকা (খিলাফত) লাভ : তাঁর মুর্শিদ তাকে বিদায় জানানোর সময় বলেছেন যে, সে যেন আইন্ডাহই না আসেন। যখনই প্রয়োজন হবে মুর্শিদ স্বয়ং কুহরামে আসবেন। কিছুদিন পর পীর সাহেব কুহরামে গমন করলেন এবং তাঁকে জোব্বা, টুপি, পোষাক এবং ছাদর দান করলেন। তিনি বিনয় সুরে বললেন, আমি এই পোষাক পরিধান করার যোগ্য নই। মুর্শিদ (পীর) সাহেব বললেন, আমি বলতেছি আর তুমি ওজর পেশ করতেছ কেন। মুর্শিদের নির্দেশক্রমে তিনি ওই পোষাক পরিধান করলেন। এরপর তাঁর মুর্শিদ তাঁকে খিলাফত প্রদান করেন। 


খলিফাগন : তাঁর বিয়ালি­শ (৪২) জন খলিফা ছিল। খলিফাদের মধ্যে উলে­খযোগ্য হলেন-হযরত শাহ মুহাম্মদ বাকের ( রহমাতুল্লাহে আলাইহে), হযরত শাহ নেজাম উদ্দীন (رحمة الله), সাইয়িদ ফাজেল (رحمة الله), সাইয়িদ আবদুল মুমেন (رحمة الله), হযরত শায়খ নেয়ামত উল্লাহ (رحمة الله), মিয়া শাহ আওরঙ্গ (رحمة الله), খাজা মোজাফ্ফর (رحمة الله), গোলাম মুহাম্মদ (رحمة الله), মিয়া আফজাল (رحمة الله), শাহ লুতফুল্লাহ জালকরী (رحمة الله), সাইয়িদ মুহাম্মদ সালেম (رحمة الله), তরমজি রওপড়ি (رحمة الله) প্রমুখ। তিনি স্বীয় যুগের কুতুব ছিলেন। ইবাদত রেয়াজত এবং সাধনায় রত থাকতেন। কাশ্ফ ও কারামতের দিক দিয়ে তিনি বিখ্যাত ছিলেন। 


অভ্যাস :যা কিছু নযরানা আসত তা থেকে খাদেমদের জন্য ব্যয় করতেন অবশিষ্ট যা থাকত তাঁর মুর্শিদকে দিয়ে দিতেন। 


বানী : তিনি তাঁর মুরিদদেরকে অর্ধ রাত্রির বেশি ঘুমানোর অনুমতি দিতেন না এবং এও বলতেন যে, পীরের উচিত মুরিদদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। 


ওজিফা : তিনি তাঁর মুরিদদেরকে উচ্চস্বরে আল্লাহর জিকির করার জন্য বলতেন, আমার নিজেরই উচিত যে, একলাখ বার আল্লাহর জিকির করা। প্রত্যেক দিন কমপক্ষে চার হাজার বার জিকির করা উচিত। নয়তো দরবেশী লোকমা (গ্রাস) হারাম। 


মৃত্যু : তিনি ১১৩১ হিজরীর রমজান মাসের ৫ তারিখ ইন্তেকাল করেন। তাঁর মাজার কুহরামে অবস্থিত। 


হযরত সুলতান বাহু (رحمة الله)


হযরত সুলতান বাহু (رحمة الله) আল্লাহ তায়ালার মাকবুল ও শুভ দৃষ্টির স্থল ছিল। ক্বাবিলায়ে আওয়ান থেকে ২৯তম স্তরের মাধ্যমে তিনি ইমামুল আউলিয়া হযরত শেরে খোদা আলি মর্তুজা (رحمة الله) এর সাথে স¤পৃক্ত হয়েছেন। তাঁর পিতার নাম বায়েজিদ মুহাম্মদ ছিল, যিনি বাদশাহ শাহজান এর পক্ষ থেকে গোহস্তানে অবস্থানকারী ছিলেন ও তিনি হাফেজে কোরআন ছিলেন এবং একজন যোগ্য আলেমে বা আমল, আপোষহীন শরীয়তের অনুসারী ছিলেন। 


বাহু (রহ.) এর সম্মানিত পিতার ইন্তেকাল ও সফরঃ


 হযরত বায়েজিদ মুহাম্মদ, গোহস্তান থেকে মুলতানে গিয়ে স্থায়ী বসবাস আরম্ভ করলেন। অতঃপর দ্বিতীয় বার পুনরায় তাঁর উপর গোহস্তানে প্রত্যার্বতনের আদেশ প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু তিনি এতে ওজর  পেশ করলেন এবং মুলতান থেকে শোউরকট তাশরীফ নিলেন এবং সেথাই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং পরবর্তীতে সেখানে ওফাত হন। 


হযরত বাহু (رحمة الله) এর সম্মানি মাতা ছাহেবা: 


তার সম্মানিত মাতা ছাহেবার নাম বিবি রাছতী তিনি নিজ তাকওয়া পরহেজগারীতে সে সময় প্রসিদ্ধ একজন মহিলা ছিলেন। 


জন্ম: তিনি শওরকটের মধ্যে ১০৩৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 


নাম: তাঁর নাম বাহু, তিনি নিজ নামের উপর গৌরব করতেন এবং আনন্দ উল্লাস করতেন, যেহেতু তার নামের মধ্যে “হু” এসেছে তিনি নিজ নামের মধ্যে গৌরব করে বলতেন আমার মায়ের উপর আল্লাহর করুণা হয়েছে, তিনি আমার নাম বাহু রেখেছেন, যার মধ্যে “হু” অক্ষরটি রয়েছে এবং বা অক্ষরের নিচে আরেকটি নুকতা বৃদ্ধি করলে ইয়া হু হবে (ياهو) (মনাকেবে সুলতানী) 


বাল্যকাল: বাল্যকাল থেকে তাঁর থেকে কারামত প্রকাশ পাওয়া আরম্ভ হয়। দুগ্ধ শিশুকালে রমজানের রোজার সময় দুধ পান করতেন না অর্থাৎ দিনের বেলায় দুধ পান করতেন না। যা প্রকৃত দিনে রোজা রাখার মত             (তাজকেরাতুল আউলিয়া হিন্দপাক)


শিক্ষা দিক্ষা: তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর সম্মানিত মায়ের তত্ববধানে হয়েছিল। 


প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরের ঘটনা: একদিন ইমামুল আউলিয়া হযরত আলী “কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু” তাকে দরবারে মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর মধ্যে উপস্থাপন করলেন।


বায়াত ও জিয়ারতে হাবীবে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম): 


হুজুর সৈয়দুল কাউনাইন মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে গায়েবী ভাবে তাকে মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বায়‘আত করানোর মাধ্যমে অতি ভাগ্যবান ও সম্মানিত করেছিলেন। তিনি নিজেই এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, যেহেতু এর থেকে তিনি এমন উচ্চ মর্যাদা অর্জন করেছেন যা বলা অপেক্ষা রাখেনা, অতঃপর গাউছে আজম মির মহিউদ্দীন আবদুল কাঁদের শেখ জিলানী (رحمة الله) এর নিকট সোপর্দ করলেন। (তাজকেরাতু মানাকেবে সুলতানী)


সত্য রাস্তার সন্ধানে: এই ঘটনার পর থেকে তার মধ্যে একটি বিশেষ পরিবর্তন সৃষ্টি হল। প্রতিটি সময়ে উম্মাদনায় থাকতে লাগলেন, জাতে বারি তায়ালার পর্যবেক্ষনে নিমগ্ন এবং জাতে বারি তায়ালার সৌর্ন্দযে নিমজ্জন হওয়ার দৃষ্টি পাওয়া যায়। এই অবস্থা দেখে তাঁর সম্মানিত মা তাকে কোন সম্মানিত কামেল শেয়খের কাছে বায়‘আত হওয়ার তাকীদ দিলেন। তখন তিনি নিজ মাতাকে আরজ করলেন, বায়‘আত এর কি প্রয়োজন? যেহেতু হুজুর সায়্যেদুল আলম  (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বায়‘আতের মাধ্যমে যে ভাগ্যবান হয়েছে, তাঁর আর কোন বায়াত হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাঁর সম্মানিত মাতা ছাহেবা বললেন এই জগৎ এটি আলমে আছবাব, তাই এই দুনিয়ার মধ্যে কোন কামেল শেয়খের হাতে বায়‘আত হওয়া আবশ্যক। এটি শুনে তিনি তাঁর মাকে বললেন, তাহলে আপনিই আমার জন্য মুরশেদ হিসেবে যথেষ্ট, তখন তার মা তাকে বললেন: মহিলাদের নিকট অনুমতি নাই কাউকে বায়‘আত করানোর। তখন সে বলল অতঃপর মুরশেদ কোথাই খুজে পাওয়া যাবে এবং কিভাবে কিভাবে। এ পর্যায়ে তাঁর সম্মানিত মাতা ছাহেবা তাকে পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। তিনি তাঁর ঘর ত্যাগ করে মুরশেদের সন্ধানে বাহির হলেন, এর মধ্যে হযরত শাহ হাবিব উল্লাহ (رحمة الله) এর প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কামালাত ও জ্ঞানের প্রকার এবং খ্যাতি শুনে তার খেদমতে উপস্থিত হলেন, তিনি যখন হযরত শাহ হাবীব উল্লাহ (رحمة الله)কে নিজ উদ্দেশ্যর কথা প্রকাশ করলেন। তখন তিনি তাকে বললেন প্রভুর সত্য সন্ধানকারীগণদের এটি অবশ্যই প্রয়োজন যে তাদের কে নির্জনতা একাগ্রতার ভিত্তিতে এক দিক অর্জন করা, যদি দুই দিকে দৃষ্টি করা হয় তাহলে উদ্দেশ্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রে জটিলতা হয়। তাই প্রভুর অন্বেষণকারীকে সর্বপ্রথম ধন-সম্পদ থেকে মুক্ত হওয়ার পর সে রাস্তায় কদম বা প্রদার্পন করা উচিৎ। এটি শ্রবন করে তাঁর মধ্যে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া হল। বাড়িতে ফিরে ধন সম্পদ ব্যবসা সব কিছু থেকে স্বাধীন হয়ে পড়লেন অতঃপর হযরত হাবীব উল্লার নিকট পুনরাই সাক্ষাতান্তে সে বুঝতে পারলেন বাহু একজন সত্যিকার খোদা প্রেমীক বা প্রভুর অন্বেষণকারী এক দিন তাকে হযরত শাহ হাবীব উল্লাহ (رحمة الله) বললেন, যে নেয়ামতের তুমি যোগ্য। সেই নেয়ামত আমার নিকট নাই। হে! তবে আমি তোমাকে তোমার উদ্দেশ্য পুরনের রাস্তা অবহিত করে দিচ্ছি, তুমি দেরি না করে সেথায় গিয়ে উদ্দেশ্য পুরনের একটি সুযোগ গ্রহণ করতে পার। আর তা হচ্ছে তুমি চলে যাও আমার পীর মুরশিদ হযরত আব্দুর রহমান কাদেরী (رحمة الله) এর দরবারে এবং তাঁর ছায়া গ্রহণ কর। তাঁর দামান আখড়াই নাও। এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। 


দিল্লীতে আসা: হযরত শাহ হাবীব উল্লাহ (رحمة الله) এর পরামর্শ মোতাবেক তিনি দিল্লী তাশরীফ নিলেন এদিকে হযরত সৈয়দ আব্দুর রহমান কাদেরী (رحمة الله) কাশফের মাধ্যমে জানতে পারলেন তাঁর আসা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে। তাই তিনি একজন ব্যক্তিকে প্রেরন করলেন তাকে যথাযথ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সেই ব্যক্তিটি তাকে হযরত আব্দুর রহমান কাদেরী (رحمة الله) এর নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি তাকে নির্জনতার মধ্যে নিয়ে গেলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে রীতিনীতি সমস্ত স্তর অতিক্রম করাই দিলেন অতঃপর বায়‘আত করাইয়া সম্মানিত করেছেন।  


খেলাফত প্রাপ্ত: তাকে সেখানে খেলাফত প্রদান করে উচ্চ স্তরের অধিকারী করলেন এবং তাঁর নিকট সেই নিয়ামত এসে গেছে যার অন্বেষণে দীর্ঘকাল তিনি বিভোর ছিলেন। 


নির্দিষ্ট নে‘য়ামত কে সাধারণ করে দেওয়া: এরপর থেকে তাঁর একটি নিয়ম ছিল দিল্লীর হাট বাজারে ঘুরাফেরা করতেন এবং যার প্রতি দৃষ্টি দিতেন তাঁকে অল্প সময়ের মধ্যে আল্লাহ ওয়ালা করে দিতেন, তাঁর ফয়েজ অসংখ্য ছিল। দিল্লীর মধ্যে এর আলোচনা চলতে লাগল কেহ একজন গিয়ে এই সংবাদ তার পীর মুরশেদকে বললেন তখনই পীর মুরশেদ তাকে ডাক পাঠালেন, যখন তিনি উপস্থিত হলেন তখন তার পীর মুরশেদ তাকে বললেন আমি তোমাকে নির্দিষ্ট নিয়ামত দিয়েছি তুমি একে সব সাধারণের নিকট বিলিন করতেছ কেন। তিনি উত্তর করলেন হযরতের নিকট থেকে যেই নেয়ামত আমার অর্জিত হয়েছে তার দৃশ্যপট যাচাই করা অর্থাৎ কি পরিমান নেয়ামত আমার অর্জিত হয়েছে এবং এর আসল বা মূল কোথায়? 


সর্বোচ্চ নে‘য়ামত: তার পীর মুরশেদ সেই উত্তরে অনেক আনন্দিত হয়েছেন তাই দয়া করুনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ নেয়ামতের অধিকারী করে স্বয়ং সম্পূর্ন করে দিলেন। 


প্রত্যাবর্তন: তিনি দিল্লী থেকে শোরকোট তাশরীফ নিলেন এবং শিক্ষা দিক্ষা মননিবেশন করলেন। 


স্ত্রী-ছেলে সন্তান: তাঁর চারটি স্ত্রী ছিল। সে  চার জন থেকে আটজন সন্তান জন্ম নিল। সর্ব কনিষ্ট ছাহেব জাদাহ সুলতান হায়াত মুহাম্মদ (رحمة الله) ছোট বেলায় ইন্তেকাল করেছেন। অন্যান্য ছাহেব জাদাহদের নাম, সুলতান নুর মুহাম্মদ, সুলতান ওলি মুহাম্মদ, সুলতান লতিফ মুহাম্মদ, সুলতান ছালেহ মুহাম্মদ, সুলতান ইছহাক মুহাম্মদ, সুলতান ফতেহ মুহাম্মদ, সুলতান শরীফ মুহাম্মদ। 


ওফাত: ১ জমাদিউস সানির ১১০৬ হিজরীতে রহমতে ভান্ডারে প্রবেশ করলেন তাঁর মাজার শরীফ শোরকোটে অবস্থিত। 


প্রসিদ্ধ খলিফাগণ:  হযরত নুর (رحمة الله) হযরত মোল্লা মানি বেলিচুস্তানী ( রহমাতুল্লাহে আলাইহে) হযরত মুমেন শাহ গিলানী (رحمة الله) এই সব খলিফাদের মাধ্যমে তার সিলসীলা প্রসার হয়েছে। 


ত্বরীকার নাম: ক্বাদেরীয়া মাছরোরীয়াহ। তিনি মায়ের গর্ভ থেকে ওলি ছিলেন তিনি প্রভুর ধ্যানে উৎফুল্য ছিলেন এবং আল্লাহর নুরের তাজল্লীর মধ্যে অধিকাংশ সময় নিমজ্জিত থাকতেন। তিনি জীবিকার প্রতি তেমন কোন দৃষ্টি রাখতেন না অর্থাৎ জীবিকা নিবারনের ব্যাপারে তার ধন সম্পত্তির কোন চিন্তা ছিলনা। তাওয়াক্কুল এর উপর জীবনাতীপাত করতেন।


জ্ঞানের দক্ষতা: লেখাপড়া তেমন বেশি করার সুযোগ ছিল না। কিন্তু এর পরেও তিনি যেভাবে কিতাব রচনা করেছেন তাতে বিস্ময় লাগে যেহেতু তাঁর কিতাব সমূহ গবেষণা করলে বুঝা যায় তিনি প্রত্যেক অবস্থায় অদৃশ্য জ্ঞান ভান্ডারে  প্রভাবিত হতেন এবং কোন এক পর্যায়ের দক্ষতা ও কামালিয়তের অধিকারী ছিলেন (আল্লাহু আকবর সুবহানাল্লাহে ওয়া বেহামদিহি)। তাঁর কিতাবের দৃষ্টান্ত নিজ কিতাব গুলিই যথেষ্ট। তিনি হুজুর সৈয়দুনা গাউসে পাক (رحمة الله) এর কেমন পর্যায়ের প্রসংশাকারী ও আশেক্ব ছিলেন তা তাঁর দেওয়ানে বাহু ও কথা বার্তা থেকে বুঝা যায়। যেমন তার দেওয়ান এর মধ্যে উক্তি সমূহ থেকে একটি উক্তি হচ্ছে-


اصل جيلانى زباطن مصطفے + اين مراتب قادرى قدرت الہ 


شعر مريد ازجان باهو باليقين + خاكپائے شاه ميران راه دين


তাঁর বয়ান থেকে একটি: আমার নিকট অনুশোচনা হয় ঐ সমস্ত লোকদের বেলায়। অর্থাৎ যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলতেছেন। হে লোকেরা আল্লাহর দিকে আস। কিন্তু তারা আল্লাহর দিকে আসার কি অর্থ বুঝেছে? তারা এর থেকে বিমুখ হয়ে যায়। যদিও তাদের মধ্যে মারেফতে ইলাহির কিরন পড়ে না কিন্তু তারা নিজেকে ‘আরেফ এবং ছাহেবে হুজুর জানে, অথচ প্রকৃত মারেফত থেকে খালি এবং মাক্বামে হুজুর থেকে খালি এবং স্বীয় কাশফ, কারামত, এছতাদরাজ ইত্যাদির মধ্যে গর্ববোধ করে। দুনিয়াবী ধন-দৌলত এবং সোনা, চান্দি, দিনার ও দেরহাম ইত্যাদি অর্জনে রাত দিন মনগড়া ফাসাদ এবং দুচিন্তায় লিপ্ত থাকে। 


মুরশেদের প্রকারভেদঃ মুরশেদ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমত: মুরশেদে কামেল, যিনি প্রকৃত, পীর অন্বেষণকারীর জন্য রহমত স্বরূপ। দ্বিতীয়ত: মুরশেদে নাক্বেছ, যার জন্য (পীরের) মুরিদগন রহমত স্বরূপ। তৃতীয়ত: এমন মুরশেদ যিনি দুনিয়াবী শান মর্যাদা পদবী অর্জন করার জন্য চেষ্টায় থাকেন। তারা নিজ এই উন্নতি থেকে ফেরআউনী অহংকারে পৌঁছায়ে দেয় এবং যে মুরশেদ দুনিয়াবী শান মর্যাদা অর্জন করে না এবং মা‘রেফাতের স্তর অতিক্রম করে না, তারা দু’নো জগতে অপমান ও অসম্মান নিজ মাথার উপর নিয়ে নেয়। তিনি বললেন, দরবেশদের দু’নো মাক্বাম অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে হবে এবং একাগ্রতার মাধ্যমে নিশ্চিন্ততা অর্জন করে। যাতে তার থেকে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে উপকারীতা পৌছে এবং অন্যায় অবিচার ও অন্ধকার থেকে বিরত থাকে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি গান সঙ্গীত শ্রবন করে তার অন্তর মৃত্যু হয়ে যায় এবং আত্মা জিন্দাহ হয়। অবশ্যই আল্লাহর জিকির এমন ভাবে প্রবাহিত হতে হবে। যেভাবে যে কোন রান্ন্া করা খাওয়ার পান করার ক্ষেত্রে তার মধ্যে দেওয়া লবণের রূপ বা আকৃতি বিনষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায় অর্থাৎ প্রকাশ্যে দেখা যায় না কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তার অস্তিত্ব খাওয়া ও পান করার মধ্যে যথেষ্ট অনুভব হয়। তেমনি প্রকাশ্যে আল্লাহর জিকিরের মধ্যে মশগুল হতে না দেখলেও প্রকৃত পক্ষে এর মধ্যেই থাকতে হবে। 


হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ ও অনুকরণ: 


তিনি বলেছেন যে ব্যক্তি রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ অনুকরণ ব্যতীত শেখ এবং শেখ পুত্রের ভরসা এবং অনুসরন,অনুকরন করে সে নিজে পথভ্রষ্ট হয়েছেন এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিয়ে যাবে, যদি তার একটি কর্মও শরীয়তে মুহাম্মাদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর বিপরীত হয় তাহলে সে ছুফি নয় বরং শয়তান, তার থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বদান্যতা করার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির হক্ব আদায় হয়। বদান্যতা ও বকশিশ এমন গুন যা আল্লাহ তায়ালার সাথে মিলায়ে দেয়। যে পীর-মুরশেদ অদৃশ্য শক্তি রাখে না এবং প্রত্যেক সময় মুরিদের খোঁজ-খবর রাখে না এবং মুরিদদেরকে গুনাহের কাজ থেকে নিষেধ করে না এবং মুরিদের মৃত্যুর কঠিন সময়ে আল্লাহ তায়ালা এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর থেকে দোয়া ও আরজি না করে সেই শেষ পর্যায়ের কঠিন সময়ে ছহিছলামতে পৌঁছাতে না পারে, তাকে পীর মুরশেদ না বলা চাই।


পীর-মুরিদ কোন সামান্য ব্যাপার নয়, এটি একপ্রকার দু’জনের মধ্যে গোপন রহস্য ও গোপন ভেদের বন্ধন । লোভ লালসা ও হিংসা বিদ্বেষের পরিনাম অসম্মানি অপদস্ত ছাড়া আর কিছু নয়। দুনিয়া বাজ ব্যক্তিগণ, দুনিয়া সোনা চান্দি, দিনার , দেরহাম ইত্যাদির গোলাম আর এদিকে দুনিয়া মাল দৌলত ইত্যাদি ‘আরেফদের গোলাম। 


তাঁর একটি কারামতের বর্ণনাঃ তাঁর (সুলতান বাহু) ওফাতের ৭০ বৎসর পর হঠাৎ সাগর উত্তালে প্লাবন এসেছিল তখন তাঁর তাবুত (লাশ) কবর থেকে বাহির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সবাই অবাক ও আশ্চার্য্য হয়ে পড়েছিল তার শরীর মোবারক এত দীর্ঘ সময়ের পরেও অক্ষত ও ছহীহ-ছালামত অবস্থায় রয়েছে। অপর একটি কারামত, জীবিতবস্থায় এক ব্যক্তি কিছু পাওয়ার আকঙ্খা নিয়ে তাঁর নিকট এসেছিল কিন্তু তাকে নাঙল দিয়ে হাল চলাতে দেখে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি তাকে আওয়াজ দিয়ে বললেন, দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করে এসেছ। কিন্তু কিছু না বলে সাক্ষাৎ না করে চলে যাচ্ছ, এটি কেমন কথা? যখন ব্যক্তিটি নিকট আসল তখন তাকে হাল চালানোর অনুরোধ করে তিনি প্রস্রাব করার জন্য গেলেন। ফিরে এসে যেই ঢিল দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করেছেন তা জমিনের মধ্যে মাটিতে নিক্ষেপ করলেন এতে ওই জমিন স্বর্ণ-মুদ্রায় পরিনত হয়ে পড়েছে। তিনি সেই ব্যক্তিটিকে বললেন যত স্বর্ণ চাও বা প্রয়োজন হয় তা নিয়ে নাও ব্যক্তিটি অনেক স্বর্ন নিয়ে কামিয়াব হয়ে ফিরে আসলেন। (আউলিয়ায়ে পাক হিন্দ)।


হযরত সেরমদ শহীদ ( রহমাতুল্লাহে আলাইহি)


হযরত সেরমদ শহীদ (رحمة الله) যুগের অতুল্য ও সময়ের অনন্য ব্যক্তি ছিলেন। দ্বীন ধর্ম ও মাজহাবে কালের পরিবর্তনে তিনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। ছেরমদ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। কিছু সংখ্যক কিতাবে তাঁকে সাঈদায়ী ছেরমদ নামেই আহব্বান করতেন। শিক্ষা-দ্বীক্ষা তাঁর লিখিত কাগজ পত্র ও পান্ডুলিপি থেকে পাওয়া যায়। তিনি জ্ঞান গরীমায় উচ্চ মর্যাদা রাখতেন ফার্সী ভাষায় গভীর দক্ষতা রাখতেন এবং আরবী ভাষায়েও অভিজ্ঞতা কম ছিল না। 


পেশা: পেশাই তিনি ব্যবসা করতেন। সে সময় হিন্দুস্তানের মধ্যে ইরানের তৈরী আসবাপত্রাদির অনেক মূল্যায়ন ছিল এবং দামও ভাল পাওয়া যেত হযরত ছেরমদ ইরানী পন্য সামগ্রী নিয়ে হিন্দুস্তানে রাওনা হতেন। তার ধারণা ছিল যে ইরানী পূর্ণ সামগ্রী ক্রয় করে হিন্দুস্তানে বিক্রি করা হবে আর হিন্দুস্তান থেকে দামি ¯¦র্ণ-অলংকার ক্রয় করে ইরানে বিক্রি করবে। সে সময় ইরান থেকে সিমর কন্দ হয়ে হিন্দুস্তানে আসা হত তিনিও সেই পথ দিয়ে আসতেন। একদা আসার সময় করাচীর নিকটবর্তী পৌঁছার পর তিনি এক হিন্দু ছেলের উপর আসক্ত হয়ে পড়লেন। এমন আসক্ত হলেন যে নিজের ব্যবসা বানিজ্যের পর্যন্ত কোন জ্ঞান অনুভূতি ছিল না। মোয়াররীখিনদের মধ্যে মত বিরোধ দেখা যায় এই ঘটনা কোথাই হয়েছে?  


আলি কালি খান দাগিস্তানি (رحمة الله) এই ঘটনা বছরত নামক স্থানে হয়েছে বলে লেখেছেন। (রিয়াজুল শোয়ারাহ)


আজাদ বিলগ্রেরামী লিখেছেন এই ঘটনা আজিমাবাদ পাটনার নামক স্থানে হয়েছে। শির-খান লুদহী “মেরাহুল খিয়াল” কিতাবে লিখেছেন                                                                 অর্থাৎ আসনায়ে ব্যবসার মধ্যে তত্তা শহরের মধ্যে হয়েছে। 


জীবনের স্বভাব ইত্যাদির সম্পূর্ন পরিবর্তন: এশক্বে তাঁর জীবনকে অমূল পরিবর্তন এবং ব্যবসার মাল বা পন্য সামগ্রীর প্রতি তাঁর কোন ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা কিছুই আর রইল না। অন্তরকে দুনিয়ার সবকিছু থেকে বিমুখ করে দিলেন। শান্তি ও আরমের ধারণা পর্যন্ত অন্তর থেকে চলে যেত লাগল। 


দিল্লীর মধ্যে আসা: এই অবস্থায় তিনি দিল্লী তাশরীফ নিলেন। শাহজাদাহ “দারে শেখওয়াহ” ছুফি ও ফকিরদের ভালবাসতেন তাই তাঁর নিকট সে দিল্লী আসার অবস্থা পৌঁছে গেলেন। তাই তিনি অনেক শানদার ভাবে ওনার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য আসলেন এবং যখন কাছাকাছি দেখলেন তখন তার রূহানী শক্তির মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী হয়েছে। তাই তাঁকে অনেক সম্মান ও তাজিম করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে শাহজাদাহ দারে শেকোওয়াহ তাঁর প্রতি অধিক বিশ্বাসী হয়ে পড়লেন শাহী দরবারের মধ্যে তার যথেষ্ট সম্বন্ধ হল। 


রাষ্ট্রীয় হুকুমতে পরিবর্তন: আওরঙ্গে জেভ দারে শেকোওয়াহ কে বিদায় বা পরাজিত করলেন এবং শাহজাহানের পরিবর্তে নিজেই রাষ্ট্র ভার নিয়ে নিলেন। দারে শেকোওয়াহ মরুভূমি, মরুভূমি বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় ঘুরতে লাগলেন। দারে শেকোওয়াহ সহপাঠী,সাথীদের এবং প্রিয়দের নিয়ে সঙ্কট ও কঠিন সময় পার করতে লাগলেন। এদের মধ্যে হযরত সেরমদ (رحمة الله) ও ছিল হযরত সেরমদ (رحمة الله) বাগিয়ে চলে যাওয়াকে পছন্দ করেনী কেননা তিনি জানতেন দিল্লীতেই তার দাফন স্থল হবে। 


তার উপর অপবাদ লাগানো: তার প্রতি এক প্রকার অন্যায়ের অপবাদ দিয়েছিলেন যা ছিল রাজনৈতিক কারসাজীর এক পর্যায়।


১। প্রথম অপবাদ তিনি তার ছন্দআর্ভীতির মধ্যে স্বশরীরে মেরাজের অস্বিকার কারী ছিল যে ছন্দগুলির মধ্যে একটি ছন্দ এভাবে ছিল-


ملاگويد كہ برفلك شد أحمد + سر مدگويد فلك بہ أحمد درشد


২। দ্বিতীয় অপবাদ তিনি দারে শেকওয়াহর সহানুভূতিশীল এবং হিতাকাঙ্খী ছিল।


৩। তৃতীয় অপবাদ তিনি সদা উলঙ্গ থাকতেন যেটা শরীয়তের পরীপন্থি।


৪। চতুর্থ অপবাদ তিনি কালেমা শরীফ পুরাপুরি পাঠ করত না তিনি পড়তেন (لااله) লা ইলাহা থেকে বাড়তি পড়ত না। মতে বর্ণনা- আওরঙ্গজেব প্রধান বিচার পতি মল্লাকভী কে তাঁর নিকট প্রেরন করলেন উলঙ্গ থাকার কারণ জানার জন্য। তাই সে এসে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ছন্দ পাঠ করতে লাগলেন যেখানে শেষ উক্তিটি হল-


اودر بغل من است زمن درطلبس + وزردے  عجمے برهنے كرده است مرا


উলামায়ে কেরামগণ তাকে ডাকলেন আর জানতে চাইলেন সর্বপ্রথম- জানতে চাইলেন দারে শেকওয়াকে আপনি কোন খোশ খবর দিয়েছেন? তিনি উত্তর দিলেন তাকে স্থায়ী হুকুমতের তাজ প্রদান করা হবে, তখন বলা হল তাহলে ইতিপূর্বে আওরঙ্গজেব তাকে পরাজিত করে বিতাড়িত করল যে, সে বলল দুনিয়ার হুকুমত ক্ষণস্থায়ী।


অতঃপর আওরঙ্গজেব ওলামাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন তাঁকে (সেরমতকে) কালেমায়ে তৈয়ব পাঠ করতে বল, যেহেতু তাকে কতল করানোর জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। তখন ওলামাগণ তাকে কলেমা তৈয়ব পাঠ করতে বললে তিনি তার স্বভাব মতে লা-ইলাহা পাঠ করলেন। যখন আলেমগণ এই বাক্য যা শুধু নফি (নাবোধেকের)’র মধ্যে তা শুনে খুব বেশাবেশি রাগান্বিত হয়ে পড়লেন, তাতে তিনি উত্তর স্বরূপ বলতে লাগলেন। এখনোত “নফির’’ মধ্যে উম্মদনায় লিপ্ত কি করে এসবাতের (হাবোধেকের) স্তরে পৌঁছতে পারি? আর ঐ স্তরে না পৌঁছে যদি ইল্লাল্লাহু বলি তাহলে এটি মিথ্যা হবে।


ওলামাগণ বললেন প্রকাশ্য দৃষ্টিতে এটি কুফুর তাই তাওবা আবশ্যক হবে, কিন্তু তিনি তাও গ্রহণ করল না, অতঃপর আওরঙ্গজেবের ইঙ্গিতে ওলামাগণ ফতোয়া দিলেন কতল জায়েয হবে। পরদিন তাঁকে নেওয়া হল কতলের নির্ধারীত স্থানে, জাল্লাদ তলোয়ার নিয়ে সামনে আসা মাত্রই তিনি মুসকি হাসি দিতে লাগলেন এবং এই বাক্যগুলি বলতে লাগলেন-


...


অর্থাৎ আমি তোমার জন্য কোরবান আস, আস তুমি যে ছুরতে আসনা কেন আমি তোমাকে ভাল করে ছিনতে পারি। এরপর তিনি কাব্য আবৃতি করতে করতে মাতা নত করে দিলেন। অতঃপর তাঁকে আমিরের ইঙ্গিতে শহিদ করে দিলেন।


তাঁর মাজার শরীফ দিলি­ শাহি জামে মসজিদের নিচে ফয়েজ বরকতের কেন্দ্র, তিনি প্রকৃত মাযজুব ছিলেন। জ্ঞান গরিমায় অতুলনীয়। অনেক লোক তাঁর ভক্ত ছিল।


উলে­খ্য যে, শাহাদাৎ বরণের পর তাঁর মুখ দিয়ে তিনবার ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুর’’ ধ্বনি উচ্চস্বরে শুনাইলেন তার মাতা থেকে শুধু কালিমা নয় বরং অনেক্ষণ পর্যন্ত প্রভুর প্রসংশায় লিপ্ত ছিলেন।


আওরঙ্গেজেব তাঁর শাহাদতের পর অনেক দিন রাজত্বে ছিলেন কিন্তু কোন দিন শান্তি শৃংখলা পাইনি প্রায় যুদ্ধে যুদ্ধে জীবনতিপাত করে পরে মৃত্যুবরণ করল।


হযরত শাহ্ ছারমাদ (রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি) এর শজরাহ জানা নাই আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।


হযরত সৈয়্যদ দোস্ত মুহাম্মদ (রহমতুল্লাহি আলাইহে)


তিনি নকসবন্দীয়া আবুল ওলাইয়াহ সিলসিলার মধ্যে অন্যতম শেখ। তিনি প্রসিদ্ধ আউলিয়াদের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত ছিলেন।        


জন্ম: তিনি  ৯৯৬ হিজরী সনে বিশ্বজগতকে আলোকিত করে জন্ম গ্রহণ করেন। 


শিক্ষা: তিনি দিল্লীর মধ্যে লেখাপড়া সমাপ্ত করেন, ইলমে জাহের- তথা প্রকাশ্য জ্ঞান অর্জন শেষ করে, তিনি বাতেনী  জ্ঞান অর্জনে বিভিন্ন শহরে ঘুরতে লাগলেন।


বাংলায় অবস্থান: এভাবে খোঁজতে খোঁজতে তিনি বাংলাদেশে এসে পৌছেন এবং নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত বাংলায় অবস্থান করেন। কিন্তু উদ্দেশ্য পূর্ণ হলো না। একদিন তাঁর সাথে একজন অপরিচিতলোকের সাক্ষাত হলো, ্ঐ ব্যক্তি তাঁকে বললেন, “আগ্রার” আকবরাহ বাদে হযরত সৈয়্যদ আমীর আবুল ওলাই নামক একজন উচ্চমাপের সম্মানিত মুরশেদ সঠিক পথের সন্ধান দানে রত আছেন। যেই ব্যক্তি তাঁর সান্নিধ্যে আসেন তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়।


“আগ্রায়” আগমন : তার জন্য এটুকু যথেষ্ট ছিল। বাংলা হতে আগ্রার দিকে রওনা হলেন। আগ্রায় পৌঁছে কিছু মিসরীসহ ধারনা বশত হযরত আমীর আবুল ওলাই রহমতুল্লাহি আলাইহের খানকার মধ্যে প্রবেশ করলেন। তার এটা সৌভাগ্য ছিল যে, তাহাকে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, হযরত সৈয়্যদ আমীর আবুল ওলাইয়্যাহ জোহরের নামাজ থেকে পৃথক হয়ে মসজিদের আঙ্গীনায় মুরীদ ও ভক্তবৃন্দদের নিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন। তিনি হযরত সৈয়্যদ সাহেব কেবলার নিকটে পৌছে কদম বুসি করে মিছরীগুলি উপস্থাপন করে দোজানু হয়ে স্বীয় উদ্দেশ্য পেশ করলেন এবং এক পার্শ্বে বসে পড়লেন। হযরত সৈয়্যদ সাহেব (رحمة الله) তার প্রার্থনা কবুল করলেন। অত:পর তার থেকে নাম, ঠিকানা, পরিচয়, জিজ্ঞাস করলেন। তিনি আরজ করলেন আমার নাম দোস্ত মুহাম্মদ। বাংলাদেশ হতে আপনার খোঁজে এখানে এসেছি। তাওহিদের শারাবের পিপাসায় পিপাসিত।হযরত সৈয়্যদ সাহেব (رحمة الله) এটা শুনে মুসকি হাসলেন মিসরী হতে কিছু তিনি নিজে খায়লেন এবং বাকীগুলো উপস্থিত সকলকে বন্টন করলেন। অত:পর তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন দোস্ত মুহাম্মদ তুমি আমার মুখ মিষ্টি করেছ বিধায় তোমার মুখ মিষ্টি করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এসো সামনে এসো আমার দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিলাও, দৃষ্টি মিলানোর দেরী তিনি অচেতন (বেহুশ) হয়ে গেলেন , মূহুর্তে সকল পর্দা দূর হয়ে গেল। ততক্ষণ আছরের আজান হল। উপস্থিত সকলই তাকে সতর্ক করতে উদ্যোত হল কিন্তু হযরত সৈয়্যদ সাহেব তাদেরকে নিষেধ করলেন এবং বললেন না না এভাবে থাকতে দিন। এ সময়ে দোস্ত মুহাম্মদ, لاتقربو الصلوٰة وانتم سكارىٰ


এ আয়াতের হুকুমের অর্ন্তভুক্ত। ইশার নামাজের সময় তিনি বাস্তবতায় ফিরে আসল। আছর-মাগরিবের যে নামাজ উনার ক্বযা হয়েছিল তা আদায় করলেন। ইশার নামাজ জামাত সহকারে আদায় করলেন, এ রাত তিনি মসজিদে অবস্থান করলেন। দ্বিতীয় দিন ফজরের নামাজের পর হযরত সৈয়্যদ আবুল উলা (رحمة الله) তাহাকে বাইয়াতের মাধ্যমে সম্মানিত করলেন।


খেলাফত: আর সে দিনেই খেলাফতের খেরবগ, বায়াতের ইজাজত,  তরিক্বতের শাজরা দ্বারা তাঁকে ধন্য করলেন। 


পীরের হুকুম: তার পীর ও মুরশেদ তাকে বোরহানপুর অবস্থানের আদেশ দিলেন কিন্তু তিনি কিছুদিন পীর ও মুরশেদের সান্নিন্ধ্যে থাকার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। হযরত সৈয়্যদুনা আবুল উলা (رحمة الله) তাঁর আবেদন কবুল করলেন, এক বৎসর যাবৎ তিনি স্বীয় মুরশেদের নিকট অবস্থান করতে ছিলেন এবং বাতেনী ফয়েজ অর্জন করতে লাগলেন। এক বছর পর তিনি বোরহান পুর তাশরিফ নিয়ে গেলেন। তথায় গিয়ে সত্য পথ প্রদর্শনকারী হিসেবে মানুষদেরকে সত্য পথে আহবান করতে লাগলেন।


ওফাত : তিনি ২৬শে রবিউসসানী মোতাবেক ১০৯০ হিজরী সনে দুনিয়া হতে পর্দা করলেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হযেছিল ৯৪ বছর। তাঁর মাজার শরীফ আওরঙ্গাবাদ এলাকায় যা সকল মানুষের মিলন কেন্দ্র।


খলিফাগন : হযরত মুসাফের শাহ (رحمة الله) হযরত মাহমুদ শাহ (রহমতুল্লাহি আলাইহে) হযরত মুহাম্মদ ফরহাদ শাহ (রহমতুল্লাহি আলাইহে)। তিনি ছাহেবে কামাল, উচ্চ মর্যাদা, ছাহেবে তাখলিক ও তাছদীক সম্পন্ন বুযর্গ ছিলেন। যখন তাঁর মধ্যে জজব গালেব হত তখন তিনি জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে যেতেন। তাঁর উচ্চ ধ্বনিতে পশু - পাখি দিক বেদিক ছুটাছুটি করত। তিনি স্বীয় পীরের বিচ্ছেদের কিছু কবিতা লিখেছেন।


কেরামত : তিনি যখন জজবা অবস্থায় জঙ্গলে উচ্চ ধ্বনি দিতেন তখন তার উচ্চ ধ্বনিতে জঙ্গলে আগুন লেগে যেত (আসরারে আবুল উলা ১৪৪০) 


নোট: হযরত আবুল উলা আকবরাবাদী (رحمة الله) আবুল উলাইয়াহ নকশবন্দী হতে আবুল উলাইয়াহ তরিকার সূচনা হয়। তাঁর সময় সমাপ্তি ৯ই সফর ১০৬১ হিজরী সনে রোজ রবিবার তিনি ইন্তিকাল করেন (ইন্না.....রাজিউন)। তাঁর মাজার শরীফ, আকবরাবাদে। এ তরিকার মধ্যে হযরত শেখ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহমতুল্লাহি আলাইহে) এবং খাজা আবুল বারাকাতের (رحمة الله) ন্যায় উচ্চ মর্যাদার বুজুর্গগণ আছেন। হযরত শাহ ছাহেব (رحمة الله) এর সিলসিলার ধারাবাহিকতা এভাবে শুরু হয়েছে। যথাঃ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রহমতুল্লাহি আলাইহে)।  


হযরত শাহ আবদুর রহীম মুহাদ্দেস দেহলভী হতে, তিনি হযরত শাহ আবুল কাশেম (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত মোল্লা ওয়ালি মুহাম্মদ (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা আমীর আব্দুল্লাহ (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা ইয়াহিয়া (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা আব্দুল হক্ব (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা আহরার (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত মাওলানা ইয়াকুব চেরখী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা আলাউদ্দিন আত্তার (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (رحمة الله) হতে মুুরিদ হন।


পূর্ববর্তী কয়েকজন বিখ্যাত অলি 


সিলসিলা হযরত খাজা আবুল বারাকাত (رحمة الله)


হযরত খাজা আবুল বারাকাত (رحمة الله)এর সিলসিলা নিম্নরূপ:


হযরত খাজা আবুল বারাকাত (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা বোরহান উদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত ফরহাদ উদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা দোস্ত মোহাম্মদ (رحمة الله) হতে এবং তিনি শামসুল আরেফীন, কুদওয়াতুস- সালেকিন ,হযরত সৈয়্যদ আবুল উলা আকবরবাদী (কঃ আঃ) হতে মুরীদ হন।


হযরত খাজা শেখ আবু তালেব মক্কী (رحمة الله)


তাঁর নাম মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আতিয়্যাহ আল হারেতী। জন্মস্থান মক্কায়ে ময়াজ্জামাহ। শেখ আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনে আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে সালেমুল বছরী (رحمة الله) এর মুরীদ। তাঁর মৃত্যু জমাদিউল উখরার ৩৮৬ হিজরী সনে। তাঁর একটি প্রসিদ্ধ এবং দলিল নির্ভর, গ্রহণ যোগ্য কিতাব হল- (قوت القلوب) কুতওয়াতুল কুলুব। 


হযরত শেখ আবুল হোসাইন বছরী (رحمة الله)


তাঁর নাম আলী ইবনে ইবরাহীম। বছরায় অবস্থান কারী,বাগদাদে বসতী স্থাপন করেছিলেন, হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। হযরত শেখ আবু বকর শিবলী (رحمة الله) এর মুরীদ ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, সূর্য আমার অনুমতি ব্যতিত উদিত হয় না। তিনি নিজেই বলেছেন যে, আমি প্রভাতেই খোদার নিকট আবেদন করেছি যে, ইয়া আল্লাহ আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট? আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট। অদৃশ্য  থেকে আওয়াজ আসল “হে মিথ্যুক” যদি তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হতে তাহলে তুমি আমাকে কখনো অন্বেষণ করতে না। তাঁর মুত্যু জ্বিলহজ্ব মাসের ৩৭১ হিজরী সনে। (সফিনাতুল আউলিয়া)। 


হযরত শেয়খ আবু বকর ফররাজ (رحمة الله)


তাঁর নাম হামদুনুল ক্বোরবা, নিশাপুরের শেয়খদের সর্দার। আবু আলী চক্বফী, আবদুল্লাহ মোতানাজেলী, আবু বকর শিবলী (রহমতুল্লাহি আলাইহে), আবু তাহের হারুরী (রহমতুল্লাহি আলাইহে) এবং মুরতাস এর সান্নিধ্যে ছিলেন। শেখ আ’মু (রহমতুল্লাহি আলাইহে) বলেছেন যে, যদি আমার সাথে আবু বকর ফররাজের (রহমতুল্লাহি আলাইহে) সাক্ষাত না হতো, তাহলে আমি কখনো সুফী হতে পারতাম না। তাঁর মৃত্যু ৩৮০ হিজরী সনে (সফিনাতুল আউলিয়া)


হযরত শেখ ইবনে ফারেজ আল- মিশরী (رحمة الله)


তাঁর ডাক নাম আবু হাফস, উপাধি শরফুদ্দিন, নাম ওমর ইবনে ফারেজ আল হামুয়ী। তাঁর জন্ম এবং বাসস্থান মিশরে বনি সা’দ গোত্রের মধ্যে। “ক্বছিদায়ে নাসিয়া ফারেজিয়া” তাঁর লিখিত। তিনি যখন এ ক্বছিদা পূর্ণ করেন, রাতে হুজুর সৈয়্যদুল কাওনাইন (ﷺ) স্বপ্নে ইরশাদ করেছেন তুমি তোমার ক্বছিদার নাম নজমুস সুলুক রাখ। হুজুর (ﷺ) এর ফরমান মোতাবেক তিনি এর নাম তাই রেখেছেন। তার মৃত্যু ২রা জমাদিউল আউয়াল ৬৩৬ হিজরী সনে।


হযরত শেখ ওয়াহিদ উদ্দিন আল- কিরমানী (رحمة الله)


তিনি হযরত শেখ রুকনুদ্দিন সানজামী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ কুতুবুদ্দিন আবরী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ আবুন নজিব আব্দুল ক্বাদের সহরওয়ারদী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শায়েখ মহিউদ্দিন আরবী (رحمة الله) এর সংস্পর্শে থাকতেন। তাঁরা প্রকাশ্য সৌন্দর্যের দিকে বেশী আগ্রহ ছিল। মাওলানা শেখ শামসু্িদ্দন (رحمة الله) বলেছেন যে, শেখ ওয়াহিদ উদ্দিন কিরমানি আশেক মেজাজ কিন্তু পাক বা পাক দামান বিশিষ্ট ছিলেন। তাঁর মৃত্যু ৬৩৫ হিজরী সনে।



দ্বিতীয় অধ্যায়



রাসূলে কারীম (ﷺ) এর পক্ষ হতে হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)কে খেলাফতে কুবরার ইঙ্গিতঃ


জ্ঞাত হাওয়া যায় যে, হযরত মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গিরী ছামনানী (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ কিতাব “লতায়েফে আশরাফী” এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, এই কথার উপর সকল মাশায়েখ কেরাম ঐক্যমত যে, হযরত সৈয়দুনা জীব্রাইল (আলাইহি রাহমাত) অমুখাপেক্ষী প্রভুর কাছ থেকে একটি কাপড় গ্রহণ করেছিলেন এবং এটি সৈয়দুল কাউনাইন হযরত মোস্তফা (ﷺ)কে প্রদান করলেন। হুজুর (ﷺ) এটিকে চার ভাগে ভাগ করে এক টুকরা হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)কে এবং এক টুকরা হযরত ‘ওমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)কে, এক টুকরো হযরত সৈয়দুনা ‘ওসমান (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু )কে এবং এক টুকরো হযরত মাওলা ‘আলী (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)কে ভাগ করে দিলেন এবং বললেন এটি যত্ন হকারে রাখ। যখন প্রয়োজন হবে তখন নিয়ে আসবে। একদা রাসূলে কারীম (ﷺ) ওই কাপড়গুলি উলে­খিত ছাহাবায়ে কেরামদের কাছ থেকে অনুসন্ধান করলেন, এদের মধ্যে তিনজনেই কাপড়ের টুকরা গুলি উপস্থিত করতে অপারগ হয়ে পড়লেন। আর হযরত সৈয়দুনা আলি (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) চার খন্ড অর্থাৎ কাপড়ের চারো টুকরা নিয়ে  মোস্তফা (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত হলেন, তখন মোস্তফা (ﷺ) এরশাদ করলেন ধন্যবাদ, কল্যাণ হোক তোমার এই কাপড়গুলি নিজে পরিধান কর এবং অপরদেরকেও পরিধান করাও।


হযরত শেখ মোহাম্মদ মিনা চিশতী (رحمة الله), মীর সৈয়দ মুহাম্মদ গীছুদরাজ (رحمة الله) এর চয়নকৃত কিতাব “জামিউল কালিম” থেকে বর্ণনা করেছেন, হুজুর সৈয়দুল কাউনাইন (ﷺ) থেকে দু প্রকারের খেলাফত প্রদান করা হয়েছে। যথা:  (১) কুবরা এবং (২) ছোগরা।


খেলাফতে কোবরা হল বাতেন বা অপ্রকাশ্য আর খেলাফত ছোগরা হল জাহের বা প্রকাশ্য এবং এজমায়ে উম্মত বা উম্মতে মুহাম্মাদি (ﷺ) ঐক্যমত পোষন করেছেন যে খেলাফতে কোবরা হযরত আলি (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর জন্য নিদিষ্ট অর্থাৎ তাঁর জিম্মায়। আর খেলাফতে ছোগরা এর ব্যাপারে উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে. যথা  আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাতের মতে; আমীরুল মুমেনীন হযরত ছিদ্দীকে আকবর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর মধ্যে অধিষ্ঠিত। আর শিয়া ও রাফেজী জমাতের মতে এটিও হযরত আলি (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর মধ্যে।


“রাওজাতুল আহবাবের” মধ্যে মীর সৈয়দ জামাল উদ্দীন মুহাদ্দেস (رحمة الله) “ছহীহুল বোখারী ও মুসলিম শরীফ” থেকে নকল করেছেন। যখন হযরত সৈয়দুল আলম (ﷺ) হুজ্জাতুল বেদা আদায় করে মদীনায়ে মুনাওরায় প্রত্যাবর্তন করার সময় রাস্তার মধ্যে গাদীরে খুম এর মঞ্জীলের মধ্যে যা জুহফার কাছাকাছি, সেখানে পৌঁছে আসরের নামাজ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে নিলেন এবং এর পর স্বীয় ছাহাবায়ে কেরামদের কে উদ্দেশ্য করে বলেন,


اَلَسْتُ اولى بالمؤمنين من انفسهم-


অর্থ: কেন আমি মুমেনদের নিকট তাদের স্বীয় আত্মার চেয়েও কি অধিক প্রিয় নই?। হুজুর (ﷺ) এটাও বলেছেন যে, নিত্যতা জীবনের জগতে আমাকে অšে¦ষণ করা হয়েছে এবং আমিও গ্রহন করে নিয়ে ফেলেছি। তাই আমি চলে যাব। জেনে রাখ! আমি দুইটি আমানত রেখে যাচ্ছি দুটি একটি আরেকটির পৃথক নয়  দুইটি সমপর্যায়ে অতি সম্মানিত অর্থাৎ এ দুটির মধ্যে একটি হচ্ছে কোরআনে পাক অপরটি হল আমার আহলে বায়াত (নবী পরিবার)। তোমরা এগুলি গ্রহণ কর ও বরণ করে নাও এগুলিকে একটি আরেকটি থেকে কখনও পৃথক ভেবোনা। আর এতে করে তোমরা হাওজে কাউছার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবে। এরপর নবী করীম (ﷺ) হযরত আলি (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর হাত মোবারক নিজ হাত মোবারকে নিয়ে বললেন- مِنْ كنتُ مَوْلَاهُ فَعَلِىُّ مَوْلَاهُ  অর্থাৎ যাদের আমি মাওলা হই, আলীও তাদের মাওলা। বর্ণিত রয়েছে, হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন যে, হে আলী তুমি আজ সকাল থেকে সকল মুমেন পুরুষের মাওলা ও সকল মুমেন মহিলারও মাওলা বনে গেছ।


প্রকাশ থাকে যে-হযরত আলী  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে চারজন খেলাফত প্রাপ্ত হন যাদের বেলায় চারপীর বলা হয়। আর তারা হচ্ছেন। 


১। হযরত ইমাম হাসান  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)


২। হযরত ইমাম হোসাইন  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)


৩। হযরত খাজা হাসন বাছরী  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) 


৪। হযরত খাজা কামিল বিন জিয়াদ  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) 


কোন কোন পুস্তিুকায় এমন লিখেছেন যে, হযরত আলী  (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে শুধু হযরত হাসন বাছরী (رحمة الله) খেলাফত প্রাপ্ত হন এবং এর থেকে চারটি পরম্পরা সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বর্ণনাটি অতি দূর্বল। যেহেতু হযরত ইমাম হাছান (আলাইহি রাহমাত) কে খেলাফত ও ইমামত দেওয়ার ব্যাপারটি অনেক অনেক প্রসিদ্ধ গ্রহনযোগ্য কিতাব থেকে প্রমান রয়েছে।


“নুফখাতুল ইনছ” এর মধ্যে ইমাম মজাদ্দেদ উদ্দীন (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (رحمة الله) এর খেলাফত দু’ব্যাক্তি পেয়েছেন-


১। হযরত খাজা হাসন বাছরী (رحمة الله) 


২। হযরত খাজা কামিল বিন জিয়াদ (رحمة الله)


* এই বর্ণনার সাথে সকলে ঐক্যমত পোষণ করেন নি। 


“তাজকেরাতু আউলিয়া হিন্দ” গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে, অধিকাংশ মাশায়েখ এই কথার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, হযরত ‘আলি মর্তুজা মুশকিল কোশা (কোররামাল্লাহ) এর খেলাফত চারজন সম্মানিত ব্যাক্তি পেয়েছেন, যারা হলঃ


১। হযর সৈয়দুনা ইমাম হাসান (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)  


২। হযরত সৈয়দুনা ইমাম হোসাইন (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)


৩। হযরত খাজা হাসন বাছরী (رحمة الله) 


৪। হযরত খাজা কামিল বিন জিয়াদ (رحمة الله) 


কিন্তু “লতায়েফে আশরাফিয়ার” মধ্যে লিখেছেন, হযরত সৈয়দুনা হাসান বাছরী (رحمة الله) এর বায়াত সর্ম্পকে মতবিরোধ রয়েছে। তাঁরা বলেছেন হযরত সৈয়দুনা হাছন বাছরী (رحمة الله) বায়াত গ্রহণ করেছিলেন হযরত সৈয়দুনা ইমাম হাসন (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে। আবার কেহ কেহ বলেছেন তার বায়াত হযরত খাজা কামিল বিন জিয়াদ (رحمة الله) থেকে । তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে তার খেলাফত যথানিয়মে হযরত সৈয়দুনা আলি মুশকিল কোশা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে।


হযরত মাওলা আলী (رحمة الله) এর গ্রহনযোগ্যেতার কারণেই অর্থাৎ তাঁর সাথে সম্পর্কের কারণেই হযরত খাজা হাসান বাছরী (رحمة الله)কে উলে­খযোগ্য পথ প্রদর্শক হিসেবে গন্য করা হয়। যেহেতু অধিকাংশ সিলসিলাহ্ তার মাধ্যেমেই হযরত আলি র্কারামাল্লাহ পর্যন্ত মিলিত হয়েছে।


চার তরীকা মূল: চার তরীকাহ্ সব তরীকার আসল। আর বাকি সব এইগুলির শাখা, আর এর থেকে। প্রকাশ্য যে একজন থেকে চার পীর, চার পীরের চার তরীকাহ চার তরীকাহ থেকে চৌদ্দ তরীকাহ চৌদ্দ তরীকাহ থেকে চলি­শ তরীকাহ।


চৌদ্দ তরীকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা


১। প্রথম তরীকাহ বা পরম্পরা:- “জায়েদী” যা হযরত হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহেদ বিন জিয়াদ (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি হযরত খাজা হাসন বাছরী (رحمة الله) এর শিষ্য এবং হযরত খাজা কামিল বিন জিয়াদ (رحمة الله) এর খেদমতে থেকে শিক্ষা অর্জন করে খেলাফত প্রাপ্ত হন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আউফ (رحمة الله) এর বংশের মধ্যে থেকে। অনেক সম্মানিত ব্যাক্তিরা এসে হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহেদ বিন জিয়াদ থেকে বায়াত গ্রহন করতে লাগল এমন কি শহরে মদিনা থেকেও লোক আসতে লাগল সে সময়ে এই সিলসীলাটি প্রসিদ্ধ হয়েছিল।


২। দ্বিতীয় পরম্পরা:- “আয়াজিয়া” যা হযরত খাজা ফুজায়েল বিন আয়াজ (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত । যিনি হযরত খাজা আব্দুল ওয়াহেদ বিন জায়েদ (رحمة الله) এর শিষ্য এবং সে সময়কার অনেক মাশায়েখ থেকেও তিনি ফয়েজ অর্জন করেছিলেন, যে কেহ তার দরবারে আসত সে নিজ পরিবার, বাড়ি-ঘর  এলাকা ছেড়ে তারই হয়ে যেত, নিজেকে স্বয়ং তারই সাথে সম্পৃক্ত করে দিত, ওই সময় থেকে এই সিলসীলার প্রকাশ-প্রসার ঘটেছিল।


৩। তৃতীয় পরম্পরা:- “আদহামী” যা হযরত ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত।


হযরত ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) তিনজন সম্মানিত বুর্জুগ থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন। তিনি এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত হযরত খাজা হিজর (আলাইহি রাহমাত) এর সান্নিধ্যে থেকে তার থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর হযরত খাজা ফুজাঈল বিন আয়াজ থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর হযরত ইমাম বাকের (رحمة الله) এর খেলাফত থেকে উপকৃত হন। তিনি এই পথে অনেক উচ্চস্তর অতিত্র“ম করেছেন। যে ব্যাক্তি তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করতেন সে সব কিছুর সাথে সর্স্পক ছিন্ন করে চলতেন এবং তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও ভক্তি রেখেই থাকতেন।


৪। চর্তুথ পরম্পরা:-“পুবাইরিয়া” যা হযরত খাজা আবু পুবাইরাহ আমিন উদ্দীন বাছরী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি হযরত খাজা খোজাইফা মারআশি (رحمة الله) এর খলিফা ও মুরিদ ছিলেন এবং তিনি হযরত ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা ছিলেন। যিনি তার মুরিদ হতেন সে নিজেকে পুবাইরিয়া বলে পরিচয় দিতেন। সে সময় থেকে এই পরম্পরা প্রকাশ পেল। “পুবাইরী” ত্বরীক্বার অধিকাংশ লোকেরা শহর ও গ্রামে-গঞ্জে থাকত না বরং দিন রাত ওজু সহকারে জঙ্গলে থাকতেন। তিন চার দিন পর জঙ্গলের বিভিন্ন ফলমূল ও বৃক্ষ লতার রস খেয়ে ইফতার করতেন।


৫। পঞ্চম পরম্পরা:- চিশতিয়া যা হযরত খাজা আলি দিনুরি (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর সাথে মিলিত। তিনি হযরত আবু পুবাইরাহ আমিন উদ্দীন বাছরী (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা ছিল এবং তিনি হযরত খাজা খোজাইফা মারআশি (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা ছিল এবং তিনি হযরত খাজা ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিল। 


জেনে রাখা উচিৎ হযরত সৈয়দুনা ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর নিকট যে অনুগ্রহ ও দান, আমানত, হযরত খাজা হিযর (আলাইহি রাহমাত) প্রদান করেছিলেন এবং সাথে সাথে হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের বিন ইমাম জয়নুল আবেদীন বিন হযরত ইমাম মুহাম্মদ হোসাইন (رحمة الله) যে অনুগ্রহ এবং হযরত ফুজাঈল বিন আইয়াজ’দের মত বিখ্যাত অলিগণ যে ফয়েজ ও অনুগ্রহ প্রদান করেছেন। শেষ বয়সে তিনি সব নেয়ামত, অনুগ্রহ ফয়েজ হযরত খাজা খোজাইফা মারআশী কে দান করে দায়িত্বভার দিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর থেকে এখনো পর্যন্ত এই আমানত বিশুদ্ধভাবে একই পন্থায় সেই সিলসীলায় বিদ্যমান রয়েছে।


বস্তুত চিশতিয়া পরম্পরা হযরত খাজা আবু ইসহাক শামী (رحمة الله) থেকে আরম্ভ হয়েছে। তিনি হযরত খাজা আলি দিনুরী (رحمة الله) এর খেদমতে মুরিদ হওয়ার নিয়্যতে শাম থেকে বাগদাদে উপস্থিত হয়েছিল। উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে হযরত খাজা ‘আলি দিনুরী (رحمة الله) বললেন কি নাম আপনার? বলা হল আবু ইহসাক শামী। হযরত খাজা বললেন আজ থেকে তুমি চিশতী বলবে তুমি খাজা চিশতী হয়ে যাবে। তোমার মাধ্যমে চিশতীয়ার নাম প্রসিদ্ধি লাভ করবে যে ব্যাক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে, কিয়ামত পর্যন্ত সেও চিশতীয়া বলবে, অত:পর তাকে মুরিদ করলেন এবং উপদেশ দিয়ে দীক্ষিত করেছিলেন। অত:পর খেলাফত প্রদান করলেন এবং চিশতীয়া শহরে প্রেরন করলেন। খাজা আবু আহমাদ চিশতী যিনি চিশতীয়ার সর্দার ও সম্মানিত ছিলেন তিনিও তাঁর শিষ্য হলেন। এরপর সেই শহরের প্রায় লোক তাঁর প্রতি ধাবিত হয়ে পড়ল। তিনি আবদালদের ন্যায় জীবনাতিপাত করতেন, যখন শেষ সময় এসে পড়ল তখন খেলাফতের জিম্মা হযরত খাজা আবু আহমাদ আবদাল (رحمة الله)কে প্রদান করে স্বীয় স্থলাভিসিক্তি নির্ধারিত করলেন, এর মাধ্যমে খেলাফতের জিম্মা হযরত খাজা মুহাম্মদ চিশতী (رحمة الله) পর্যন্ত পৌঁছল এর থেকে হযরত খাজা আবু ইউছুফ চিশতী (رحمة الله) পর্যন্ত এর থেকে হযরত খাজা মওদুদ চিশতী (رحمة الله) পর্যন্ত পৌঁছল এবং এরা চিশতীয়া ত্বরীকার পন্জতন (পাঁচ ব্যাক্তি)। এইভাবে তাদের খলিফাদের মধ্য থেকে হিন্দুস্থানের মধ্যেও পন্জতন রয়েছে যারা হল, 


১। হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি )              


২। হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী চিশতী (رحمة الله)


৩। হযরত খাজা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জে শেখর চিশতী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি )


৪। হযরত খাজা নেজাম উদ্দীন চিশতী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি )


৫। হযরত খাজা নাছির উদ্দীন মাহমুদ চেরাগ দেহলী চিশতী (رحمة الله)


যে ব্যক্তির শজরাহ এই পাঁচ জনের সাথে মিলিত হবে তাদেরকেও চিশতী বলা হয়। যে পাঞ্জেতন থেকে এই সিলসীলা প্রকাশ হয়েছে; তারা কিন্তু খুব বেশি সাধনা ও পরিশ্রম করতেন, ধর্ম সঙ্গীতে সেমায় স্বাধ বোধ করতেন এবং ধর্মীয় সঙ্গীত গোষ্ঠীকে বন্ধুর ন্যায় গ্রহণ করতেন এবং গুরুজনদের অথাৎ জ্ঞানী দরবেশদের ওরশ করতেনএবং দরীদ্রদেরকে অভিজাতবর্গদের থেকে প্রাধান্য দিতেন এবং গ্রাম শহরে বসবাস করতেন প্রত্যেক শ্রেনির মানুষের সাথে ভদ্রাতার সহিত উপস্থিত হতেন।


“লতায়েফে আশরাফির” মধ্যে বর্ণিত হয়েছে চিশত নামক স্থান দুইটি, যথা- 


১। এক শহর যা খোরাসানের হারাতের আশপাশ এলাকায় অবস্থিত। 


২। হিন্দুস্তানের একটি অঞ্চলে যা মুলতান ও রুয এর মধ্যখানে অবস্থিত।


আমাদের চিশতীগন খোরাসান অঞ্চলের সাথে সর্ম্পকযুক্ত। মীর সৈয়দ আলাউদ্দীন চিশতী (رحمة الله) এই স্থানে সংবাদ দিয়েছেন।


লতায়েফের মধ্যে আরো বর্ণনা দিয়েছেন যে- সম্মানিত এই পরম্পরা বা প্রবিন ত্বরীকার গুরুদের অর্থাৎ চিশতীয়া পরিবারদেরকে যারা ভালবেসে অনুসারীর দাবী করে। তাদের মধ্যে এই দুই গুণ থাকা আবশ্যক


১। পরিত্যাগ ও অপরকে নিজ হইতে শ্রেষ্ঠতর বলিয়া ভাবন করা


২। প্রেম ও বিনয় যে ব্যক্তির নিকট হবে না তাকে চিশতীয়া সিলসীলার কোন অংশই দেওয়া হবে না এবং বেহেস্তের স¤প্রদায় থেকেও কিছু মিলবে না।


৬। ষষ্ঠ পরম্পরা: “আজমীও” যা হযরত খাজা হাবিব আজমী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর সাথে সম্পৃক্ত এবং তিনি মুরিদ ও খলিফায়ে আজম হলেন হযরত খাজা হাসন বাছরী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর, যে ব্যক্তি তাঁর মুরিদ হতেন সে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে যেতেন, সে সময় থেকে এই সিলসীলার প্রকাশ পেয়েছে।


‘আজমী ত্বরীকার অধিকাংশ লোকেরা পাহাড়ে থাকতেন এবং প্রায় একাকী থাকতেন এবং মানুষের উপহার,উপটৌকন,তোহফা গ্রহণ করতেন না। তারা শুধু এতটুকু কাপড় পরিধান করতেন যা দিয়ে লজ্জা স্থান ঢাকা যায় এবং সাত দিন পর একটি বা তিনটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন এবং জঙ্গলের বিভিন্ন প্রানি ও পাখি তাদের প্রতি আন্তরিক হতেন ও ভালবাসতেন।


৭। সপ্তম পরম্পরা:- “তাইপুরিয়া” যা সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর সাথে সম্পৃক্ত, যার নাম ছিল তাইপুর এবং যিনি ১১৬ (একশত ষোল) (মাশায়েক) সস্মানি বুজুর্গ এর সংস্পর্শ অর্জন করেছেন এবং বার বৎসর পর্যন্ত হযরত ইমাম জা‘ফর ছাদেক (رحمة الله)এর পরিচর্যার দায়িত্বে থেকে খেলাফত অর্জন করেছেন।


কিন্তু মীর সৈয়দ শরীফ জুরজানি (رحمة الله) এবং অন্য কয়েক ঐতিহাসিকদের এমন ধারনা যে, তিনি হযরত ইমাম জা‘ফর ছাদেক (رحمة الله) এর থেকে প্রকাশ্য সানিধ্য পান নি বরং অপ্রকাশ্য তার আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে সে (বায়েজিদ) উপদেশ অর্জন করেছেন। এই দু’নো পন্থাই গ্রহনযোগ্য। সে হযরত হাবীবে ‘আজমী (رحمة الله) থেকেও খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন।


বস্তুত হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (رحمة الله) সুলুক (পথ) পরিপূর্ণ করেন। আদেশ প্রদানের শীর্ষস্থানে (মসনদে এরশাদে) বসেছেন। তখন হযরত শেখ মাছউদ, হযরত শেখ মাহমুদ, হযরত শেখ ইব্রাহিম এবং হযরত শেখ আহম্মদ (রাহামাহুম) এই চার হযরত তাঁর কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন সে সময় থেকে এই সিলসীলাহ প্রসিদ্ধ হতে লাগল। 


৮। অষ্টম পরম্পরা:- “কারখিয়্যাহ” যা হযরত মারুফ কারখী (رحمة الله) থেকে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি প্রথম সারির গুনিজনদের মধ্য থেকে পদবীযুক্ত, যার আসল নাম হল আবু মাহফুজ এবং তাঁর পিতার নাম ফিরোজ অন্য এক বর্ণনা মতে ‘আলি। হযরত ইমাম ‘আলি মুছা রেজা (رحمة الله) এর গোলামদের মধ্যে একজন এবং তার হাতেই মুসলমান হয়েছে হযরত মারুফ কারখি (رحمة الله) কয়েক বৎসর হযরত ইমাম ‘আলি মুছা রেজা (رحمة الله) এর নির্দিষ্ট হুজরার দ্বার রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছে এবং তার থেকে আধ্যাত্মিক উপদেশ অর্জন করেছেন। তাঁর আন্তরিকতার কারণেই এমন উন্নতি অর্জন করেছেন এবং যিনি হযরত ইমাম মুছা রেজা (رحمة الله) থেকে খেলাফতের দায়িত্ব পেয়ে সম্মানিত হয়েছে এবং তাঁর (ইমাম মুছা রেজার) প্রতিনিধিত্বের ভার নিয়ে কারখির মধ্যে (বাগদাদের একটি শহর) আদেশ প্রদানের শির্ষস্থানে (মসনদে এরশাদে) কৃতর্কায হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জমানার এমন একজন পথ প্রদর্শক ও প্রধান ব্যক্তিত্ব বানিয়েছেন তাতে সাত জন মাশায়েখের পরম্পরা তার মাধ্যমে চালু অর্থাৎ তার মাধ্যমে হযরত ইমাম ‘আলি মুছা রেজা (رحمة الله) পর্যন্ত পৌঁছিয়া তা হযরত ‘আলি মর্তুজা (رحمة الله) পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে।


এক বর্ণনার মধ্যে রয়েছে; হযরত দাউদ তাঈ (رحمة الله)  যিনি মুরিদ ও খলিফা হযরত হাবিবে ‘আজমী (رحمة الله) এর তিনিও হযরত মারুফ কারখী (رحمة الله)কে খেলাফত প্রদান করেছেন। তাই তাঁর সিলসীলার মধ্যে যে আসে সে নিজেকে কারখী সম্বোধন করে নিতেন। সে সময় থেকে এই সিলসীলার প্রকাশ পেয়েছে। কারখী সিলসীলার লোকেরা অধিক সময় নির্জনতা থাকতে পছন্দ করতেন। কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারে লিপ্ত থাকতেন। আল্লাহ তায়ালার ভয়ে অধিক কান্নাকাটি করতেন এবং নিজেকে সর্বদিক থেকে দূবর্ল মনে করেন।


৯। নবম পরম্পরা: “ছিকতিয়ো” যা হযরত ছিররে ছিকতী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি হযরত মারুফ কারখি (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। সাধনা ও কঠোর এবাদতের মধ্যে অতুল্য। প্রথম প্রথম বাদশাহর ছেলেদের থেকে তিন জন ব্যক্তি এসে বায়াত গ্রহন করলেন। তারা পরিপূর্ণ ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে নিজেকে পীরের সাথে সম্পৃক্ত করে রেখেছিলেন; সে সময় থেকে এই সিলসীলা প্রসিদ্ধ হতে লাগল। ছিকতী সিলসীলার লোকেরা (ছায়েমে দাহার) প্রায় সময় রোজা রাখতেন এবং (কায়েমে লাইল) রাত্রের বেলায় জাগ্রত থাকতেন। মানুষের বেশা বেশী উপহার গ্রহণ করতেন না, তিন দিন পর র্নিজনতা থেকে বাহির হতেন সন্ধার সময় কিছু হাদিয়া গ্রহণ করে পীর ভাইদেরকে নিয়ে ইফতার করতেন।


১০। দশম পরম্পরা: “জুনাইদিয়ো” যা সৈয়দুত ত্বোয়েফা হযরত খাজা জোনায়েদ বগদাদি (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি হযরত খাজা ছিররে ছিকতী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন একদা কোন এক বুর্জুগ হযরত ছিররে ছিকতী (رحمة الله) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন মুরিদ কি পীর থেকে অধিক কামেল হয়ে থাকে? তিনি বললেন হ্যাঁ! যেভাবে আমার থেকে জুনায়েদ বগদাদী।


বস্তুত তার উৎর্কষতাকে এর উপর ধারনা করা উচিত যে তিনি নি:সন্দেহে মাশায়েকদের পথ প্রদর্শক ছিলেন। যে সমস্ত দরবেশ এদিক সেদিক ঘুরে সর্বস্তরে বিচরন রত থাকেন তাদের অধিকাংশই তার সিলসীলার মধ্যে প্রবেশ হয়ে তার সাথে সম্বোধন যুক্ত হতেন।


الشيخ فى قومه كا لنبىّ فى أمته    অর্থ শেখ স্বীয় স¤প্রদায়ের উপর এমন হয়ে থাকেন, যেমন নবীগণ স্বীয় উম্মতের উপর। 


শুধু তাঁর মাহাত্মের মধ্যে সমাগম হয় মূলত সে সময় থেকে এই সিলসীলাহ প্রসার ঘটল। জুনাইদি সিলসীলার লোকেরা বিশ্বাসের উপর অটল থাকতেন যা কিছু অদৃশ্য থেকে মিলত তা দিয়ে ইফতার করতেন।


১১। একাদশ পরম্পরা:- “ঘাজরোনিউ” যা হযরত খাজা আবু ইছহাক ঘাজরোনী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত তিনি ঘাজুন নামক শহরের বাদশাহ ছিলেন। এই অবস্থা থেকে বিরত হয়ে যখন খাজা আবু আব্দুল্লাহ হাফিফ (رحمة الله) এর মুরিদ হয়েছেন তখন তিনি বলেছিলেন তোমাকে দুনিয়াও দিয়েছি এবং দ্বীনও দিয়েছি তুমি দু’নোটির ঝান্ডা, দামামা ও নিশান উড্ডয়ন কর। হযরত খাজা আবু ইছহাক (رحمة الله) এর প্রকৃত ও মূলত্ব মরমীবাদ এবং রূপক ও মৌলিক পরিপূর্ণতা অর্থাৎ প্রকাশ্য অপ্রকাশ্যের অধিকারী অধিকাংশ কিতাবে পাওয়া যায়। বস্তুত তার পরম্পরা হল তিনি মুরিদ ও খলিফা হচ্ছেন হযরত আবু আব্দুল্লাহ খাফিফ (رحمة الله) এর এবং তিনি হল হযরত খাজা রুয়েম (رحمة الله) এর এবং তিনি হযরত সৈয়দুত ত্বোয়েফা হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর, যখন থেকে লোকেরা অধিক হারে তার কাছে মুরিদ হতে লাগল সে থেকে এই সিলসীলা প্রসিদ্ধ হতে আরম্ভ করল। 


বি:দ্র: হযরত খাজা আবু আব্দুল্লাহ খাফিফ (رحمة الله) সে সময়ের বা জমানার কুতুব ছিলেন চতুর্থ স্তরের সাথে সর্ম্পক রাখতেন এবং তার নাম খাফিফ ছিল। তার পিতা সীরাজের এবং মাতা নিশাপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি সে সময়ের শাইখুল মাশায়েখ, শাইখুল ইসলাম ছিলেন, তিনি অসংখ্য কিতাব রচনা করেছেন।


১২। দ্বাদশ পরম্পরা:- “তোছিয়ো” যা শেখ ‘আলাউদ্দীন তোছিয়ো (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। তিনি তোছিদের মহানুভব ব্যাক্তি ছিলেন এবং অপর একজন শেখ নজম উদ্দীন কোবরা (رحمة الله) যিনি ফেরদৈাসীদের মহানুভব ব্যাক্তি ছিলেন। দুনো হজরাত পরস্পর দ্বীনি ভাই। তাই দু’নোজন একত্রিত হয়ে হযরত শেখ আবু নজিব সরওয়ারী (رحمة الله) এর খেদমতে উপস্থিত হন এবং তাকে বললেন বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। হযরত শেখ আবু নজিব বললেন আমিও সেই বেদনায় জড়িত। নিশ্চয় আল্লাহর কোন প্রেমিক বন্দার আঁচল যতক্ষন আকড়াই ধরা না হয় ততক্ষন সফলতা সম্ভব নয়। অত:পর তিন হযরাত মিলে হযরত শেখ খাজা ওয়াজি উদ্দীন আবু হাফছ (رحمة الله) এর দরবারে উপস্থিত হন। সেথায় অবস্থানের পর তিনি শেখ ‘আলাউদ্দীন (رحمة الله) এবং শেখ আবু নজিব (رحمة الله) কে মুরিদ করে নিলেন এবং শিক্ষা প্রদান করলেন। অত:পর খেলাফত প্রদান করে বিদায় দিলেন এবং বললেন, যাও তোমরা দু’জন নিজ নিজ স্থানে গিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি জীবকে হেদায়ত প্রদান কর। এদিকে শেখ নজিমউদ্দীন কোবরা (رحمة الله) কে হযরত শেখ আবু নজিব (رحمة الله) এর জিম্মায় দিলেন। যাতে তাকে উপদেশ দিয়ে দিক্ষিত করতে থাকেন সে সরওয়ার চলে গেলেন।


শেখ ‘আলাউদ্দীন তোছি (رحمة الله) গিয়ে মসনদে এরশাদে (হুকুম বিস্তৃতের আসনে) আসিন হলেন, প্রায় সকল সৃষ্টিজীব তাঁর নাম অনুসরন করতে লাগলেন; যে কেহ তার মুরিদ হাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন সে তাঁর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিতেন। এরপর থেকে এই সিলসীলাহ প্রসিদ্ধ লাভ করতে থাকে। তোছিয়া ও ফেরদৈাসী ত্বরীক্বার লোকেরা প্রায় একই পন্থায় চলতেন। ছেমার মাহফিল আয়োজন করতেন সঙ্গীত সহকারে নাচ ও উম্মদনা করতেন এবং উচ্চস্বরে অনেক জিকির-আজকার করতেন, যেখান থেকে যা কিছু আসে তা ভক্ষন করতেন কোন আওয়াজ করতেন না। তাদের খাওয়ার মজলিসে যদি কোন কাফেরও বসে তবে সমান তালেই বণ্টন করতেন অর্থাৎ মুমেন, কাফের, ধনি গরীব সবার জন্য একই নিয়মে বন্টন করতেন। সাধনায় কিন্তু অনেক কঠোর হতেন, সিলসীলায়ে তোছিয়া ছয় স্তরের মধ্যস্থতায় হযরত জুনায়েদ বগদাদী (رحمة الله) সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।


১৩। ত্রয়োদশ পরম্পরা:-“সরওর্য়াদীয়ো” যা হযরত শেখ জিয়াউদ্দীন আবু নজিব সরওর্য়াদী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত তিনি হযরত শেখ ওয়াজি উদ্দীন আবু হাফছ (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। 


হযরত শেখ ওয়াজি উদ্দীন আবু হাফছ (رحمة الله) এবং সৈয়দুত ত্বোয়ায়েফা হযরত জুনায়েদ বগদাদী (رحمة الله) এর মধ্যকার চার স্তরের মধ্যস্থতায় সংযোজন হয়েছে। আবু নজিব সরওর্য়াদী (رحمة الله) এর নিকট। শেখ আহমাদ (رحمة الله) থেকেও খেলাফত অর্জিত হয়েছে। যিনি হযরত জুনায়েদ বগদাদীর সাথে পাঁচ স্থর মধ্যস্থতায় সম্পৃক্ত।


হযরত শেখ আবু নজিব (رحمة الله) শিষ্যত্ব অর্জনের পূর্বে দশ বৎসর কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োজিত ছিলেন এবং বায়‘আত গ্রহণ ও খেলাফত প্রাপ্ত হওয়ার পর ত্রিশ বৎসর সাধনায় নিযুক্ত ছিলেন। যে ব্যক্তি তাঁর সান্নিধ্যে আসবে সে আরশ থেকে পরশ পর্যন্ত কোন কিছুই দৃষ্টি থেকে দূরীভূত হবে না।


তাই যেভাবে এই সিলসীলায় লোক অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন, সে রকম আর কোন সিলসীলায় দেখা যায় না।


সমস্ত মুরিদগন তার সাথে সম্বোধন যুক্ত হয়ে পড়তেন। সে সময় থেকে সিলসীলার প্রসিদ্ধ লাভ করতে লাগল।


১৪। চর্তুদশ পরম্পরা:- “ফেরদৈছিয়ো” যা হযরত শেখ নজিম উদ্দীন কোবরা (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত। হযরত শেখ ওয়াজি উদ্দীন আবু হাফছ (رحمة الله) এর ইঙ্গিতে হযরত শেখ আবু নজিব সারওর্য়াদী (رحمة الله) এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করে খেলাফত প্রাপ্ত হন।


তার শেখ হযরত তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি ফেরদৌসীয়া ত্বরীক্বার শাইখ হবে। সে দিন থেকে এ সিলসীলার ব্যাপক প্রচার আরম্ভ হল। হযরত নজিম উদ্দীন কোবরা (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) হযরত ‘আম্মার বিন ইয়াসের থেকেও ফয়েজ প্রাপ্ত হন; যিনি শেখ আবু নজিব সরওর্য়াদী (رحمة الله) এর প্রধান খলিফা ছিল। 


বস্তুত: ফেরদৈাসীয়া, সারওয়ার্দিয়া, তোছিয়া এবং গাজরোনি এই চারটি সিলসীলা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত এবং তার মাধ্যমে হযরত ছিরের ছিকতি (رحمة الله) এর সাথে এবং তার মাধ্যমে হযরত মারুফ কারখী (رحمة الله) এর সাথে ঘিয়ে মিলিত আর তারা সবার সিলসীলা হযরত ইমাম মুছা রেজা (رحمة الله) এর থেকে বিস্তৃত। আর তিনি হলেন স্বীয় পিতা হযরত ইমাম মুছা কাজেম (رحمة الله) এর, আর তিনি তাঁর পিতা হযরত ইমাম জা‘ফর ছাদেক (رحمة الله) এর, তিনি তাঁর পিতা হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله) এর, তিনি তাঁর পিতা হযরত জয়নুল ‘আবেদিন (رحمة الله) এর, তিনি তাঁর পিতা হযরত ইমাম হোসাইন বিন আলি (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর সাথে গিয়ে সম্পৃক্ত হয়েছে।


কিন্তু হযরত শাহ শেখ বাহাউদ্দীন মুলতানি (رحمة الله) এর সিলসীলার মধ্যে হযরত ইমাম হোসেন (আলাইহি রাহমাত)এর পর হযরত ইমাম হাসন (আলাইহি রাহমাত) এর নাম এসেছে এর পর হযরত ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর নাম এসেছে । তাই এখানে সে ব্যাপারে অতিরিক্ত লেখা লেখি না করে অন্য কিতাব গবেষনার অনুরোধ রইল। 


“নুফখাতুল ইনছ” এর প্রবনেতা বলেছেন; শেখ নজিম উদ্দীন কোবরা কামিল বিন জিয়াদ (رحمة الله) এর ত্বরীকা থেকেও খেলাফত ও ফয়েজ প্রাপ্ত হয়েছেন; যা এভাবে বর্ণিত যথা:- শেখ নজিম উদ্দীন কোবরা (رحمة الله)। 


হযরত শেখ ঈসমা‘ঈল মিছরী (رحمة الله) এর সংস্পর্শে এসে তাঁর থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন। 


তিনি শেখ মুহাম্মদ বিন মাঈকিল (رحمة الله) থেকে, তিনি শেখ মুহাম্মদ বিন দাউদ আল মারুফ খাদেমুল ফোকরা (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত আব্দুল আব্বাস বিন ইদ্রিছ (رحمة الله) থেকে, তিনি আব্দুল কাছেম বিন রমজান (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত আবু ইয়াকুব তোবরা (رحمة الله) থেকে, তিনি আবু আবদুল্লাহ ওসমান মক্কি (رحمة الله) থেকে, তিনি আবু ইয়াকুব নাপুর জুরি (رحمة الله) থেকে, তিনি ইয়াকুব আছ ছুচি (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত আব্দুল ওয়াহেদ বিন যায়েদ (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত কামিল বিন জিয়াদ থেকে অর্জনকৃত আর যিনি হচ্ছেন হযরত মাওলা ‘আলি (رحمة الله) এর চার খলিফার একজন।  


আল্লাহ তায়ালা হযরত নজিম উদ্দীন কোবরা (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) কে উচ্চ কামালিয়তের অধিকারী করেছেন তিনি যেভাবে মুরিদকে ঢেকে রাখতেন। তাতে তার ক্ষমতা ও বেলায়তের উচ্চতা প্রমান পেত তার মুরিদরা দুই প্রকারে বিভক্ত ছিল; এক গোত্র হল ফেরদৌসীয়া, অপরটি হল কবরিয়া দু’টি কিন্তু একই গাছের ফুল।


চার পীর ও চৌদ্দ সিলসীলার বর্ণনা এইখানে শেষ হল । 


দ্বিতীয় পর্যায়ে চলি­শটি সিলসীলাহ এই চৌদ্দ সিলসীলা থেকে নির্গিত হয়েছে। 


এ চলি­শটির বিশদ বর্ণনা অনেক দির্ঘায়ীত হওয়ার ভয়ে, তৎমধ্যে অধিক প্রসিদ্ধ ও উত্তম বারটির বর্ণনা এখানে উলে­খ করা হল। বস্তুত এই চলি­শটি ঐ চৌদ্দটির সাথে গিয়ে সম্পৃক্ত আর সেই চৌদ্দটি ঐ চারটির সাথে গিয়ে সম্পৃক্ত আর সেই চারটি ঐ একটির সাথে গিয়ে মিলিত। যেভাবে ছুফিয়ানে কেরাম বলেছেন আমি এবং ‘আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একই নুর থেকে انا وعلى من نور واحد (আল আখের ) 


বার সিলসীলার বর্ণনা


১। সিলসীলায়ে এ কাদেরীয়া গাউছিয়া :- এটি হযরত গাউছে আজম মহিউদ্দীন শেখ ‘আব্দুল ক্বাদের জিলানী (رحمة الله) এর সাথে মিলিত। যিনি হযরত শেখ আবু সাঈদ মাখজুমী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা। 


তিনি হযরত শেখ আবুল হাসন আল কুরশী (رحمة الله) এর খলিফা। তিনি হযরত আবুল ফরাহ তরতুছি (رحمة الله) এর খলিফা। তিনি শেখ আবুল ফজল আব্দুল ওয়াহেদ ইয়ামনি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি শেখ আবু বক্কর শিবলী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি সৈয়দুত ত্বোয়েফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত। গাউছে পাকের দ্বিতীয় সিলসীলা বংশিয় ত্বরীক্বায় যা ইমাম হাসান রেজা (رحمة الله)এর সাথে মিলিত। সিলসীলায়ে এ কাদেরীয়ার মধ্যে অধিকাংশ যা উলে­খ করেছেন তা এভাবে, যথা- হযরত শেখ মহিউদ্দীন আব্দুল কাদের (رحمة الله), তিনি হযরত শাহ আবু ছালেহ মুছা (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত শাহ আব্দুল্লাহ ওলি (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত শাহ ইয়াহিয়া জাহেদ (رحمة الله) থেকে, তিনি শাহ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত শাহ মুছা (رحمة الله) থেকে, তিনি শাহ আব্দুল্লাহ মহয (رحمة الله) অর্থাৎ হাসানুল হোসাইন থেকে, তিনি শাহ হাসান মাশনা বিন ইমাম হাসান (رحمة الله) থেকে এবং হযরত ইমাম হোসাইন বিন হযরত আলি মর্তুজা (র্করামূল্লাহু) থেকে। 


আল্লাহ তায়ালা হযরত শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله)কে অনেক উচ্চ কামালিয়তের বুজুর্গী দান করেছেন। সমস্ত সৃষ্টি জীব তার উৎকর্ষতার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তিনি গাওছিয়ত, কুতুবিয়ত ও ফরদানিয়ত থেকে উন্নতি স্বাধন করে মকামে মাহবুবিয়ত পর্যন্ত পৌঁছেছেন।


২। সিলসীলায়ে ইছভিয়া:- এই সিলসীলার প্রবর্তক হযরত খাজা আহমদ ইছভি (رحمة الله) যিনি র্তুকিস্থানের শেখ ছিলেন। তিনি হযরত খাজা ইউসুফ হামদানী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা, তিনি হযরত খাজা আলি ফারমদি (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আবুল কাশেম গেরকায়ী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আবু ওসমান মিছরী (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা আবু আলি কাতেব (رحمة الله) এর, তিনি হযরত খাজা আবু আলি রুদবারি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর।


এরপরটি প্রসিদ্ধ। হযরত খাজা আহমাদ ইছভি (رحمة الله) তার সম্মানিত হযরত পীর-মুরশেদের ইঙ্গীতে তুর্কীস্থানে গিয়ে কুতুবে এরশাদের আসনে বসলেন। তার বংশীয় পরম্পরা কয়েকজনের মাধ্যমে হযরত হানাফিয়া বিন হযরত ‘আলি (رحمة الله)এর সাথে সম্পৃক্ত।


৩। সিলসীলায়ে নকশে বন্দিয়া: এই সিলসীলার প্রবর্তক হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশে বন্দি ও তাঁর অনুচরগন থেকে প্রকাশ, তিনি হযরত আমীর সৈয়দ আলি কালালি (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। 


তিনি হযরত খাজা মুহাম্মদ ছেমাসী (رحمة الله) এর, তিনি খাজা আলী রামনানী (رحمة الله) এর, তিনি খাজা মাহমুদ আবুল খায়ের ফাগনুবী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত খাজা আরেফ রিয়োগীরি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত খাজা আব্দুল খালেক গজদাওয়ানী (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা ইউসুফ হামদানী (رحمة الله) এর, তিনি খাজা আলি ফারমদী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত খাজা আবুল কাশেম গেরখানি (رحمة الله) এর, তিনি তিন ওয়াসেতার মাধ্যমে সৈয়দুত ত্বোয়েফা হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله)এর শিষ্য ও খলিফা।


ছুফিয়ায়ে কেরামদের মতে হযরত খাজা আবুল কাশেম গেরখানী (رحمة الله) আধ্যাত্মিক ভাবেও এক প্রকার খেলাফত প্রাপ্ত হন। যা হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (رحمة الله) এর সিলসীলা থেকে হযরত আবুল কাশেম গেরখানী যিনি অদৃশ্য ভাবে প্রাপ্ত হন, হযরত খাজা আবুল হাসন খেরকানি (رحمة الله) এর আধ্যাত্মিকতা থেকে। 


তিনি প্রাপ্ত হন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (رحمة الله) এর আধ্যাত্মিকতা থেকে, তিনি প্রাপ্ত হন হযরত ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله) এর আধ্যাত্মিকতা থেকে, বর্ণিত রয়েছে যে, ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله) এর নিকট দুই দিক থেকে কামালিয়ত সংযোগ হয়েছে। এক নিজ পিতা ইমাম মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله) থেকে যা সর্বদিক প্রসিদ্ধ। দ্বিতীয়টি হল হযরত কাশেম বিন মুহাম্মদ বিন আবু বক্কর ছিদ্দিক (رحمة الله) থেকে, হযরত কাশেম হযরত জাফর ছাদেক (رحمة الله)  এর সম্মানিত মাতা ছাহেবার পিতা ছিলেন, হযরত কাশেম বিন মুহাম্মদ আবু বক্কর (رحمة الله) এর বায়াত ও খেলাফত হযরত সোলেমান ফারসী (رحمة الله) থেকে। যিনি হুজুর সৈয়দুল আলম (ﷺ) এর সহচর হওয়ার মর্যাদার সাথে সাথে হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (رحمة الله) এর থেকেও ফয়েজ প্রাপ্ত হন। 


উলে­খ্য যে হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশে বন্দি (رحمة الله) প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের মধ্যে উচ্চ মাপের মর্যদা রাখতেন। লোকদেরকে নিম্নতর জগৎ থেকে উচ্চ স্তরের জগতে পৌঁছিয়ে দিতেন । তাই এই সিলসীলায় অধিকাংশ পরিপূর্ণ কামালিয়তের অধিকারী অলিগণ আল্লাহর কুদরাতের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।


খাজা বাহাউদ্দীন নক্বশে বন্দির নিকট খাজা আব্দুল খালেক গাজদাওয়ানি  থেকেও অদৃশ্য ভাবে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। ( অর্থাৎ সেই ত্বরীক্বা থেকে)


৪। চর্তুথ পরম্পরা: “নুরীয়া” এই সিলসীলা হযরত শেখ আবুল হাসন নুরি (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত, উনার পবিত্র নাম হল আহমদ বিন মুহাম্মদ তবে কিন্তু বাগবুরি নামে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত ছিল অধিক, যেহেতু তার পিতা বাগবুর নামক স্থানের বাসিন্দা ছিল। তিনি বাগদাদে জম্ম গ্রহন করেন এবং হযরত সিররে সিক্তি (رحمة الله) থেকে খেলাফত প্রাপ্ত হন যিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর পীর মুরশীদ ছিলেন। প্রকাশ থাকে যে হযরত আবুল হাসান নুরী (رحمة الله) মুহাম্মদ আলি কাছাব জুন নুন মিছরী (رحمة الله)কে দেখেছেন।


৫। পঞ্চম পরম্পরা:- “হুজুরভিয়া” এই সিলসীলাহ হযরত খাজা আহমাদ হুজুরভিয়া (رحمة الله) এর থেকে আরম্ভ। তিনি হযরত খাজা খাতেম আছেম (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা, তিনি হযরত মাশকিক বালখি (رحمة الله)এর খলিফা, তিনি হযরত খাজা ইব্রাহিম বিন আদহাম (رحمة الله) এর খলিফা, তিনি হযরত ইমাম বাকের (رحمة الله) এর, তিনি হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (رحمة الله) এর, তিনি হযরত ইমাম হোসাইন শহীদে কারবালা (رحمة الله) এর, তিনি শেরে খোদা হযরত ‘আলি মর্তুজা (র্কারামাল্লাহু ওয়াজ্হাহুল কারীম) এর। 


উলে­াখ্য যে, একদা হযরত খাজা আবু হাফস (رحمة الله)এর থেকে লোকেরা জিজ্ঞেসা করল, এই দুই যুগে আপনি কাকে বুর্জুগ হিসেবে দেখতেছেন? তিনি উত্তর দিলেন, আহমদ হুজুরভী থেকে অধিক বুর্জুগ আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তাই বুঝা যায়, আধ্যাত্মিক দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিকট তিনি অনেক বড় মাপের বুর্জুগ ও তেজস্বী উম্মাদনার অধিকারী ছিলেন। 


৬। ষষ্ঠ পরম্পরা: “সাতারিয়া এশকিয়া” হিন্দুস্তানে এই সিলসীলা হযরত আব্দুল্লাহ সাতারী (رحمة الله) থেকে আরম্ভ। তিনি হযরত খাজা শেখ ‘আরেফ (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন  তিনি হযরত শেখ মুহাম্মদ আল আশকি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ খোদা কালি মাওরান নাহার (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ আবুল হাসন আশকি খেরকানী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ আবিল মুজাফফর মাওলানা তুরক তাউছি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত বাজিদিল আশকী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ মুহাম্মদ মাগ্জুলী (رحمة الله) এর, তিনি সুলতানুল আরেফিন হযরত খাজা বায়েজিদ বোস্তামী (رحمة الله)এর  তিনি হযরত ইমাম জাফর ছাদেক বিন হযরত ইমাম বাকের (رحمة الله) এর, (এরপর প্রসিদ্ধ)। 


সর্বপ্রথম এই সিলসীলার যে বুজুর্গ হিন্দুস্তানে এসেছিলেন  তিনি হযরত শেখ আব্দুল্লাহ সাতারী (رحمة الله)। নিজ পীর মুরশিদের আদেশক্রমে জৈনপুর শহরে ঝান্ডা বাজিয়ে ঘোষনা দিলেন। যদি কেহ আল্লাহ তায়ালার স্বানিধ্য অর্জন করতে চাও তাহলে এসে যাও, আমি আল্লাহ তায়ালার সাথে সর্ম্পক স্থাপন করে দিব। তাই জৈনপুর এলাকায় অনেক লোক তার কাছ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ অর্জন করেছেন। তিনি অনেক বড় বুজুর্গ পবিত্র ব্যাক্তি ছিলেন এই শহরে এখনোও সেই সিলসীলা চলমান রয়েছে।


৭। সপ্তম পরম্পরা: “হাসানিয়া বোখারীয়া” এই সিলসীলা মূলত সাঁদাত কেরামের (নবি বংশের) সাথে সম্পৃক্ত। ‘লতায়েফে আশরাফী’ নামক কিতাবে উলে­খ রয়েছে, সমস্ত পরম্পরা বা ত্বরীক্বা হযরত আমেরুল মুমেনীন ইমামুল মাশারেক ওয়াল মাগারেব হযরত ‘আলি মর্তুজা র্কারামাল্লাহু থেকে নির্গত অর্থাৎ ত্বরীক্বার মূল ভিত্তি উনার থেকে। বিশেষত: সিলসীলায়ে সাদাত আশরাফু শোহাদা আমেরুল মুমেনীন হযরত ইমাম হোসাইন (رحمة الله) উলুমে এলাহী অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত  জ্ঞান ভান্ডার ও অশেষ রাজ ভেদ হযরত মাওলা ‘আলি মর্তুজা মুশকিল কোশা থেকে অর্জন করেছেন। সেই পরিপুর্ণ কামালাত তাঁরই মাধ্যমে হযরত সৈয়দুনা ইমাম জয়নুল আবেদীন (رحمة الله) অর্জন করেছেন। তাঁর থেকে হযরত ইমাম বাকের (رحمة الله) অর্জন করেছেন। তাঁর থেকে ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله) অর্জন করেছেন। তাঁর থেকে হযরত ইমাম মূছা কাজেম (رحمة الله) অর্জন করেছেন তাঁর থেকে হযরত ইমাম আলি রেজা (رحمة الله) অর্জন করেছেন তাঁর থেকে হযরত ইমাম মুহাম্মদ তক্বি (رحمة الله) অর্জন করেন, তাঁর থেকে হযরত ইমাম আলি নক্বি (رحمة الله) এর অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ আলি আশকার (رحمة الله) অর্জিত হয়েছেন। তাঁর থেকে হযরত ইমাম সৈয়দ আব্দুল্লাহ (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ আহমদ (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ মাহমুদ বোখারী (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ জাফর বোখারী (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ আলি আবুল মুআইয়াদ বোখারী (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত সৈয়দ জালালে আজম বোখারী  (رحمة الله) অর্জিত, তাঁর থেকে হযরত আহম্মদ কবিরুল হক বোখারী (رحمة الله) অর্জিত তাঁর থেকে সৈয়দুল মুতা আখেরীন ওয়া মুরশেদুল আলামীন হযরত সৈয়দ জালাল উদ্দীন মাখদুম জাহানীয়া (رحمة الله) অর্জিত হয়েছিলেন। 


হযরত মাখদুম জাহানীয়া (رحمة الله) বোখারীয়া সাদাতের মধ্যে মজবুত উচ্চস্থানের অধিকারী ছিলেন এবং যেভাবে সূ²তা ও যে পরিমান সূ² রাজ ভেদের পারদর্শিতা এবং বিবেক নড়ানো মূলভিত্তিতে কারামত প্রকাশ পাওয়া যেত, শেষ যুগের কোন সম্মানিত পবিত্র সত্তা থেকে সেরকম প্রকাশ পাওয়া যায় নি, অর্থাৎ তিনি আশ্চার্য্য ও বিস্ময় গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন মূলক শানদার কারামতের অধিকারী ছিলেন। সে সময়ে দুনিয়ার মধ্যে এমন কোন দরবেশ ছিল না। যাঁর কাছ থেকে তিনি ফয়েজ বরকত অর্জন করেন নাই। তিনি একশত চলি­শ জনের মত মাশায়েখ থেকে খেলাফত বা এজাজত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এর পরেও পরিপূর্ণ তারবিয়ত শিক্ষা-দিক্ষা হযরত শেখ সেহাবউদ্দীন সারওর্য়াদী মূলতানি  (رحمة الله) এবং হযরত শেখ নাছির উদ্দীন ছেরাগ দেহলী (رحمة الله) থেকে অর্জন করেছেন। তাঁর থেকে সিলসীলায়ে সাদাত ব্যতীত আরো দু’টি সিলসীলাহ তথা সারওর্য়াদীয়া ও চিশতীয়া এই দুটিও চলিত হয়েছে। তাঁর পরবর্তিতে এই কামালিয়ত তাঁরই মাধ্যমে এবং বিভিন্ন বুজুর্গদের মধ্যস্ততায় হযরত মির সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীরী ছামনানী (رحمة الله) পর্যন্ত পৌঁছে ছিল।


৮। অষ্টম পরম্পরা: যা হযরত খাজা বদর উদ্দীন জাহেদ (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) থেকে আরম্ভ হয়েছে। 


তিনি খাজা ফখজ উদ্দীন জাহেদ (রাহমতুল্লাহে আলাইহি ) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন তিনি হযরত খাজা ছদর উদ্দীন (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা আব্দুছ ছালাম (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা আব্দুল কারীম (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন আব্দুল মাজিদ (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা আবু ইহসাক গাজরোনী (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা হোসাইন বাজইয়ার হারুভী (رحمة الله) এর তিনি হযরত খাজা আবু মুহাম্মদ রুয়েম (رحمة الله) এর যিনি সৈয়দুত্ তোয়ায়েফা হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর খলিফায়ে আজম ছিলেন। এই সিলাসীলাহ পাহাড়ী এলাকায় অধিক গ্রহণযোগ্য ছিল এবং জৈনপুর এলাকায় এই সিলসীলাহর অনুসারী ছিল।       


৯। নবম পরম্পরা:“আনছারীয়া” এই সিলসীলাটি হযরত শেখুল ইসলাম খাজা আব্দুল্লাহ আনছারী (رحمة الله) থেকে চলিত হয়েছে। 


উনাকে পীরে হারাতও বলা হয় এবং হযরত খাজা আবুল হাসন খেরকানী (رحمة الله) এর মত যোগ্য ব্যক্তি পীরে হারাত (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। যিনি অদৃশ্য শিক্ষা ও তরবীয়ত হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (رحمة الله) এর আধ্যাত্মিকতা থেকে ওবাইছি রীতিতে প্রাপ্ত হন। প্রকাশ্য পদ্ধতিতে খেলাফত ও এজাজত প্রাপ্ত হন হযরত শেখ আবুল আব্বাস কাছাব (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত শেখ আবু মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ তাবরী (رحمة الله) থেকে তিনি শেখ আবু মুহাম্মদ জরিরি (رحمة الله) থেকে যিনি আজিমুশ শান উৎকর্ষতা ও কারামতের অধিকারী ছিলেন এবং সময়ের সঠিক পথ প্রদর্শক এবং গাউছে জমান ছিলেন, তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদি (رحمة الله) এর প্রথম সারির সম্মানিত খলিফাদের অন্যতম এবং হযরত খাজা জুনায়েদ বাগদাদি (رحمة الله) এর মহিমান্নিত কুতুবিয়তের আসনে সমাসীন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। এই সিলসীলাহ হারাত ও খোরাসান এলাকার মধ্যে অনেক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে এবং তিনি সেই এলাকার আকাঙ্খাকারীদের মূখ্য ছিল ও সময়ের শাইখুল ইসলাম ও যুগের গাউছ ছিলেন। 


১০। দশম পরম্পরা: যা হযরত শেখ ছফি উদ্দীন ইছহাক এরবিলি (رحمة الله) থেকে। তিনি হযরত শেখ জাহেদ ইব্রাহিম গিলানি (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। তিনি হযরত মীর সৈয়দ জামাল উদ্দীন তিবরিজী (رحمة الله) এর।  তিনি শেখ সাহাব উদ্দীন আল মাগরেবী (رحمة الله) এর। তিনি হযরত শেখ রুকনউদ্দীন বোখারী (رحمة الله) এর এবং তিনি শেখ কুতুবউদ্দীন আবহারী (رحمة الله) এর। তিনি হযরত শেখ আবু নজিব সারওয়ার্দী (رحمة الله) এর খলিফা প্রধানদের মধ্যে অন্যতম। 


ধারাবাহিক এই সিলসীলাহ শেষপর্যন্ত হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর মাধ্যমে সম্মানিত আহলে বায়েতদের তথা ইমামদের মাধ্যমে হযরত সৈয়দুল মুরছালিন (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিলিত হয়েছে। এই সিলাসীলাহ ‘ইরাক ও খোরাসান এলাকার মধ্যে খুব বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করে। হযরত শেখ ছফিউদ্দীন (رحمة الله) এর সমসাময়কি অধিকাংশ লোক এই সিলসীলার ফয়েজ প্রাপ্ত হন।


১১। একাদশ পরম্পরা: “ঈদরুছিয়া” এই সিলসীলাহ হযরত মীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মক্কি ঈদরুছি (رحمة الله) থেকে আরম্ভ। 


তিনি শেখ আবু বক্কর (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা ছিলেন। তিনি শেখ আব্দুর রহমান (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ আলি (رحمة الله) এর, তিনি শেখ ওলভী (رحمة الله) এর, তিনি শেখ মুহাম্মদ বিন আলি আল মুকাদ্দম (رحمة الله) এর, তিনি শেখ আবু মুহাম্মদ মদিন (رحمة الله) এর, যিনি কয়েক পন্থায় সৈয়দুত তোয়েফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর শিষ্য ও খলিফা। 


প্রকাশ থাকে যে হযরত সৈয়দ আব্দুল্লাহ ঈদরুছি (رحمة الله) সারওয়াদীয়া সিলসীলাহ থেকেও খেলাফত ও এজাজত প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং এই সীলসীলার শেষাংশ হযরত ইমাম যাফর ছাদেক (رحمة الله) পর্যন্ত মিলিত হয়েছে। তিনি অনেক উচ্চ মর্তবার অধিকারী ও উপমাহীন বুজুর্গ ছিলেন। তাঁর সিলসীলাহ গোজরাত, আহমদাবাদ সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রসার ঘটেছিল এবং শেখ বাহাউদ্দীন খোরাসানী (رحمة الله)ও এই সিলসীলার অনুসারী ছিল।


১২। দ্বাদশ পরম্পরা:“কলন্দরীয়া” যা বিভিন্ন সিলসীলার সাথে সম্পর্ক রাখে এমন অনেক সম্মানিত ব্যক্তিগণ নিজ নিজকে কলন্দর হিসেবে সম্বোধন করে থাকেন, যেমন মুহাম্মদ কালান্দর এবং মুরিদদের মধ্যে একাংশ ছিল যাদের অনেকেই কালান্দর হিসেবেই চলত, এরা ব্যথিত শাহ হিদ কালান্দর (رحمة الله), শাহ হোসাইন বালখি (رحمة الله) এবং তাঁদের মুরিদগণ এবং স্বয়ং শেখ শামশুদ্দীন তাবরিজী (رحمة الله), মাওলানা রুম (رحمة الله) এবং তাঁদের সহচর ও অন্যান্য আল্লাহ প্রেমীকগণ। যেমন: শেখ ফকরউদ্দীন ইরাকী। খাজা ইছহাক মাগরবী (رحمة الله) এবং খাজা হাফেজ সীরাজী (رحمة الله) সহ ইত্যাদি। হাফেজ সীরাজির পূর্ণ নাম শামশুদ্দীন মুহাম্মদ হাফেজ সীরাজী (رحمة الله)।


‘নুফখাতুল ইনস’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে। হাফেজ সীরাজী ( রহমাতুল্লাহে আলাইহি) কোন শাইখের মুরিদ হয়েছেন কিনা তা জানা নাই, কোন শাইখের হাতে হাত দিয়েছে কিনা তাও জানা নাই। তাঁর ওফাত শরীফ ৭৯২ হিজরীর মধ্যে। এই সিলসীলায়ে কালান্দরের মধ্যে অন্যান্য ত্বরীক্বাহ্ থেকে অনেক সাহবাজ ছিল এবং অধিকাংশ আবদাল কালান্দরীয়ার সাথে সম্পর্কে সম্পৃক্ত এবং সদা অপ্রকাশ্য সংশোধনে নিয়োজিত ছিল।


মাওলানা জামী (رحمة الله) “নুফখাতুল ইনস” নামক গ্রন্থে বলেছেন, মাওলানা রুমী (رحمة الله)কে কিছু লোকেরা ইমামতির জন্য আবেদন করলেন, সে মজলিসে শেখ ছদরউদ্দীন (رحمة الله) ও উপস্থিত ছিল। মাওলানা তখন উত্তর করেছিল; আমি আবদাল লোক আমি প্রত্যেক স্থানে পৌঁছে যাই। বিভিন্ন স্থানে বসে খাওয়া-দাওয়া করে থাকি; ইমামতির জন্য কোন স্থানের অধিকারী হতে হবে অর্থাৎ যা বড়ত্ব অবস্থা থেকে প্রভাবিত, না হয় তাকে অধিনস্থ আবুল হাল বলা হয়। আর এর বিপরীতে যে বড়ত্ব অবস্থা থেকে অধিনস্থ হয়ে যায়, তাকে আহলে তালবিন বা ইবনুল হাল বলা হয়। অত:পর মাওলানা রুমী (رحمة الله) হযরত শেখ ছদরউদ্দীন (رحمة الله) এর প্রতি ঈঙ্গিত করলেন এবং সেই ইমামতি করলেন,


‘আখবারুল আখিয়ার’ নামক গ্রন্থে শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) বলেছেন হিন্দুস্তানের মধ্যে কালান্দরীয়া স¤প্রদায়ের ব্যাপকতা শাহ রুমী (رحمة الله) থেকে হয়েছে। তিনি বাদশাহ শামশুদ্দীন আল তামাস এর জমানায় কালান্দরী বেশে দিলি­র মধ্যে হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন আওশী (رحمة الله) এর খেদমতে এসে মুরিদ হয়েছেন। হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন (رحمة الله) শিক্ষা দিক্ষা প্রদানের পর খেলাফতের জিম্মাদারী তাঁর উপর ন্যাস্ত করলেন এবং তাঁকে নিজের কাছ থেকে বিদায় দিলেন। কিন্তু কালান্দরী পোষাক অপরিবর্তন রাখলেন। হযরত শাহ রুমী (رحمة الله) বড় দৌলতের অধিকারী অর্থাৎ আজিমুশশান বুজুর্গ ছিলেন। তাঁর থেকে অনেক কারামত প্রকাশ পেয়েছিল। যখন জৈনপুর এলাকায় উপস্থিত হলেন তখন নজমউদ্দীন কালান্দর তার হাতে মুরিদ হলেন এবং শিক্ষা দিক্ষার পর খেলাফতের দায়িত্ব পেলেন। এরপর রুম এর মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে তাঁর সীলসিলাহ শাহ কুতুব (رحمة الله) এর মাধ্যমে হিন্দুস্তানের মধ্যে প্রচলিত করলেন। শেখ মাহমুদ কালান্দর লকনভী (رحمة الله) এবং শেখ আব্দুর রহমান লাহুরভী (رحمة الله) এই সীলসীলার অন্তর্ভক্ত ছিল; আর সেই সিলসীলাকে চিশতীয়া কালান্দরীয়া বলা হয়।


হযরত শেখ শরফুদ্দীন বু আলী কালান্দর জৈনপুর (رحمة الله) খাজা কুতুব উদ্দীন বাকী আওশী (رحمة الله) এর আধ্যাত্মিকতা থেকে ফয়েজ-বরকত অর্জন করে সম্মানিত হয়েছেন, তিনিও সেই স¤প্রদায়ের ছিলেন অর্থাৎ কালান্দরীদের মধ্যে। হযরত শেখ ফরিদ উদ্দীন মাসউদ গেঞ্জেশেকর (رحمة الله) এর খলিফাদের মধ্যে হযরত শেখ আলি আহমদ ছাবের (رحمة الله) এবং তাঁর একনিষ্ট খলিফা হযরত শেখ সামশুউদ্দীন তুর্ক পানিপথি (رحمة الله) কালান্দরী আউশী হিসেবে থাকতেন এবং মীর সৈয়দ মুহাম্মদ গিছুদরাজ (رحمة الله) এও সেই বেশে জীবনতীপাত করতেন। 


সৈয়দ মুহাম্মদ গিছুদরাজ (رحمة الله) বলেছেন, 


زمين وآسمان ہردو شريف اندنہ قلندر رادريں ہر دونيست


زميں وآسمان ہر دوكهلے هي ليكن قلندركى لئے ان دونوں ميں جگہ نہيں


نظر درديده جانا قص فتاده  + وكرنہ يا من از كس نهانست


آنكهوں ميں نظر كمزورهى ورنه ميرادوست كسى سے ہرشيده نہيں


আর এইগুলি لاتدركه الأبصار এবং نحن أقرب إليه من حبل الوريد আয়াতদ্বয়ের প্রতি ইঙ্গিত।                         


মীর সৈয়দ মুহাম্মদ মক্কি (رحمة الله) যিনি হযরত শেখ নাছির উদ্দীন মাহমুদ ছেরাগ দেহলি (رحمة الله) এর শিষ্য খলিফাদের মধ্যে অন্যতম, তিনিও কালান্দরীয়া বেশে ছিলেন। তাই তিনি এ কয়েকটা ছন্দ বলেছেন এবং খাজা মাসউদ বিগ যিনি শেখ রুকনউদ্দীন বিন ইমাম সুলতানুল মাশায়েখ শেখ সাহাব উদ্দীন (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা ছিল। তিনিও কালান্দরী বেশে ছিলেন। তিনি বড় পুতঃপবিত্র বুজুর্গ ছিলেন। চিশতীয়া সিলসীলার মধ্যে তাঁর ন্যায় এভাবে কেউ রাজ ভেদের উম্মদনা সদৃশ কথাবার্তা বা কালাম করতেন না। 


এক ছন্দের মধ্যে বলেছেন-                       


الے قلندر دين ودنيا دونوں سے آزاد ہوجاكہ راه حقيقت ازيں دوبرتر+

كيونكہ راه حقيقت ان دونون سى اعلى وبرترہے


অর্থাৎ হে কালান্দরী দ্বীন ও দুনিয়া দুনোটি থেকে স্বাধীন হয়ে যাও; যেহেতু খাকীকতের রাস্তা এই দু’টি থেকে উপরে এবং উত্তম।


মাখদুম হযরত কুতুবে আবদাল শেখ আহমদ আব্দুল হক্ব রদলুভী (رحمة الله) এও সেই উচ্চ মর্যাদার বেশে অর্থ্যাৎ কালান্দরী হিসাবে ছিলেন। হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওলি (رحمة الله) কালান্দরীয়া রেছালার (পুস্তিকার) মধ্যে বলেছেন, ছুফি যখন শেষ স্তরে পৌঁছে যায় তখন কালান্দর হয়ে যায় অর্থাৎ ছালেকীনদের তিনটি স্তর হয়ে থাকে। 


১। মুবতাদী- অর্থাৎ প্রথম অবস্থা  ২। মুতাওস্সাত্ব- অর্থাৎ মধ্যখানের অবস্থা ৩। আখেরী- অর্থাৎ শেষ উত্তম অবস্থা।


প্রথম অবস্থায় এবাদত উপসনার জিন্দেগী।


মধ্যকানের অবস্থা ফানা অর্থ্যাৎ নিজেকে ক্ষনস্থায়ী করে তোলা। 


শেষ অবস্থা বকা অর্থাৎ অমরত্ব স্থায়িত্বের স্থরে পৌঁছে যাওয়া, যাকে প্রভুর দাসত্ব বা ‘আবদিয়্যতও বলা হয়। কিন্তু ‘আবদিয়্যতের পর একে এক শ্রেষ্ঠ ‘আবদিয়্যত বলা হয়, তাই সেই সময়টাকে পরিপূর্ণ সময় বলা যায়। যে কারনে শেষ বয়সে অধিকাংশ হজারাত বিভূতির মাধ্যমে মহিমার অধিকারী হয়ে যায় এবং মহিত ও উম্মদনার মাধ্যমে তাওহিদের মহা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে যায়। কালান্দরদের আলোচনা সত্য যা থেকে সমগ্র জগতে ফায়দা অর্জিত হয়ে থাকে। কালান্দরদের সংক্ষিপ্ত সিলসীলাহ এখানে এতটুকুই আলোচনা করা হয়েছে। 


সূফিয়ায়ে কেরামের বার গোত্র


‘কাশফুল মাহজুব’ প্রনেতা হযরত দাতাগাঞ্জে বাখস (رحمة الله) বলেছেন সমস্ত সূফি স¤প্রদায়ের মধ্যে বারটি গোত্র রয়েছে যারা স্ব স্ব মাশরবে বিশ্বাসী। প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মতবাদ রয়েছে। সেই বার গোত্রের মধ্যে দশটি গোত্র সর্বাদিক গ্রহনযোগ্য।


১। প্রথম গোত্র মহাছেবাদের-যা আবি আব্দুল্লাহ মহাছেবী (رحمة الله) এর সাথে সম্পৃক্ত।


২। দ্বিতীয় গোত্র কাছারিয়াদের-যা আবি হামদুন আল কাছার (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত।


৩। তৃতীয় গোত্র তাইফুরীয়াদের-যা আবি ইয়াজিদ তাইফুরল বোস্তামী (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। 


৪। চতুর্থ গোত্র জুনাইদিয়া - যা আবিল ক্বাছেম জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত।


৫। পঞ্চম গোত্র “নুরিয়াদের” যা হযরত আবিল হাসন নুরী ( রহমাতুল্লাহে আলাইহি) এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত।


৬। ষষ্ঠ গোত্র ছুহাইলিয়া - যা হযরত ছুহাইল আব্দুল্লাহ তাছতারী (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত।


৭। সপ্তম গোত্র হাকিমীয়া- যা আবি আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আলি হাকিম আত- তবমীজি (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক।


৮। অষ্টম গোত্র খারাজিয়া- যা আবি সাঈদ খারাজ (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। 


৯। নবম গোত্র খাফিফিয়া - যা হযরত আবি আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন খাফিফ ( রহমাতুল্লাহে আলাইহি) এর সাথে সম্পর্কীত। 


১০। দশম গোত্র “ছিয়ারিয়া” যা হযরত আবিল আব্বাস সিয়ারী (رحمة الله) এর সাথে সম্পর্ক।


এ সব মুহাক্কেক্বীন আহলে সুন্নাত ওয়া জমাতের অনুসারী এবং এ দশটির মধ্যে প্রত্যেকটি গোত্র পূন্যবান ও আদর্শবান হয়ে থাকেন এবং উপমাহীন সাধনায় এক বিশেষ দরজার মধ্যে নিমজ্জিত শিষ্টাচারিতার অধিকারী হয়ে থাকেন। যদিও তাদের কাজকর্ম ও দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরের থেকে ভিন্ন কিন্তু আসল বা মূলের মধ্যে এবং প্রভুর একত্ববাদের মধ্যে এক-অভিন্ন। প্রকৃত পক্ষে এ ধারাবাহিকতা রাসূলে করীম (ﷺ) এর সময়কাল থেকে এখন পর্যন্ত এবং হযরত সৈয়দুনা ‘ঈসা (আলাইহিস্সালাম) ও ইমাম মাহদি (আলাইহিস্ সালাম) প্রকাশিত হবেন উলে­খিত গোত্রের মধ্যে থেকেই এবং প্রকৃত খেলাফত হচ্ছে প্রথমে পেয়ে থাকে। যদি পীর-মুরশিদ আজে-বাজে (অযোগ্য) না হয়।


বার গোত্রের মধ্যে বাকী যে দুই গোত্র রয়েছে তা পথভ্রষ্ট ও বিতাড়িতঃ


১১। প্রথম হচ্ছে বিচারকদের মধ্যে থেকে অর্থ্যাৎ দার্শনিকদের মধ্যে যারা বিষন্নতার মধ্যে তথা মলুল আক্বীদাহ পোষণ করে তারা। মলুল আক্বীদা বলতে উদ্দেশ্য হল বিশ্বজগতে আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে বিষন্ন, যেমন পানির মধ্যে চিনি অথচ এ আক্বীদা ইসলামের পরিপন্থি। যেহেতু দু’টিকে আবশ্যক করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অস্তৃত্ব এক অর্থাৎ ওয়াজিবুল ওয়াজুদ।


১২। দ্বিতীয় গোত্র হালাজিয়ুদের; যা শরীয়ত নিয়ে তর্ক করে এবং ধর্মদ্রোহীতা বেদ্বীনদের সাথে সম্পর্ক রাখে। তবে হোসাইন বিন মনছুর হাল্লাজ ব্যতীত এবং তাঁর সহচরগণ ব্যতীত। মৌলভী খাইরু দ্বীন ‘কাশফুল মাহজুব’ এর ব্যাখ্যা ও অর্থ করতে গিয়ে বলেছেন, খলুলীয়া গোত্রের মধ্যে দুই প্রকার। এক প্রকার আবু সলেমান দামেস্কীর সাথে সম্পর্ক বা ভক্তি রাখে, আর এক প্রকার নিজের কথা বার্তায় ফার্সী অর্থাৎ হোসাইন বিন মনছুর এর সাথে সম্পর্কের দাবিদার অর্থাৎ তার মাজহাবভূক্ত অথচ তিনি ব্যতীত এক সঙ্গে উপবেশনকারী হোসাইনিদের মধ্যে কেহ এই মাজহাবের নয়। যেহেতু আমি আবু জাফর ‘ঈদলানকে এবং চার হাজার ব্যক্তি যারা ইরাকের মধ্যে প্রথম তার অনুসারী তাদেরকে আমি দেখেছি। যারা সবাই খাল্লাজী ছিল। সে সব ফার্সী হোসাইন ফার্সীকে এ উক্তির উপর লালত করতেন এবং হোসাইন বিন মনছুর খাল্লাজের কিতাবেও যা তিনি লিখেছেন। এ ব্যাপারে গভীর চিন্তা ও গবেষণা ছাড়া আর কিছু করার নেই এবং ‘আলি বিন ‘ওসমান হাল্লাজী হিজরভী (দাতা গঞ্জেবাখ্স) বলেছেন, আমি জানিনা ফার্সী ও সোলেমান কোন এবং তারা কি বলতেছেন। হযরত শেখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর লিখিত ‘আখবারুল আখীয়ারের’ মধ্যে বলেছেন: হযরত নেজামউদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله) এর কাছে কোন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেসা করলেন মনছুর হাল্লাজ সম্পর্কে তিনি বললেন। সে ব্যক্তিটি আসলে খিজ নাছাজ এর মুরিদ ছিল। যাঁর প্রতি আত্মবিশ্বাসের মুখ ফিরিয়ে হযরত শেখ জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) এর নিকট বায়াত গ্রহন করতে চেয়ে ছিলেন। তখন শেখ জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) বলেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তুমি খিজ নেহাজের মুরিদ তোমার দ্বিতীয়বার বায়াত গ্রহনের প্রয়োজন নেই। যেহেতু শেখ জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) স্বীয় সময়ের মধ্যে সবার অগ্রগামী ও ইমাম ছিলেন। তাই তিনি যখন হযরত মনছুর খাল্লাজ’কে বায়াত করানো থেকে অস্বীকৃতি দিলেন তখন অন্যান্য মাশায়েখগনও তাকে বায়াত করতে অস্বীকৃতি জানালেন। হযরত শেখ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) বলেছেন মনছুর খাল্লাজ (رحمة الله) সম্পর্কে কাহিনী অনেক প্রসিদ্ধ, প্রকৃত অবস্থা আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। কিন্তু হযরত মাহবুবে সুবহানী শেখ আব্দুল কাদের জীলানি (رحمة الله) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন মনছুর খাল্লাজ মূলত অলি আল্লাহ ছিলেন অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যবান বান্দা ছিলেন। কিন্তু একটু ছুটে পড়েছিল সে সময়ের এমন কেহ ছিল না যে তাকে সহায়তা করবে। যদি সে আমার (গাউছে পাক) সময়কালে হত তাহলে আমি তার হাত টেনে ধরতাম অর্থাৎ পথ প্রদর্শন করতাম। গাউছেপাক (رحمة الله) একদা বলেছিলেন, কেহ এমন হয় যে, যাঁরা নিজ পীর মুরশিদের উপর যথেষ্ট হিসেবে থাকেন না এবং অন্য পীরের হাতে বায়াত হয়ে খেলাফতের ভার নেন। কিন্তু আমার নিকট এ খেলাফত বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, কারণ প্রকৃত বায়াত তো ওহাই, যা প্রথমে হয়েছিল। হযরত মাহবুবে সুবহানী (رحمة الله) এক বার বলেছিলেন, যদি কোন মুরিদ নিজ শায়খের কাছে আবেদন করে যে, আমি আপনার মুরিদ হই এবং পীর সাহেব যদি বলেন যে, তুমি আমার মুরিদ নয়, সে অবস্থায় কিন্তু ব্যক্তিটিকে মুরিদ হিসেবে গন্য করা যাবে। অতঃপর যদি কোন পীর কোন ব্যক্তিকে বলে যে, তুমি আমার মুরিদ আর মুরিদ যদি বলে আমি আপনার মুরিদ নই। তখন সে অবস্থায় ব্যক্তিটিকে সত্যি মুরিদ হিসেবে গন্য করা যাবে না, তাই অবশ্যই বুঝে নিতে হবে ইচ্ছা পোষন, চাহিদা এবং বিশ্বাস স্থাপন মূলত মুরিদের কাজ, শায়খের বা মুরশিদের কাজ নয়।   


كرچہ ايزد هد پر اهت ديں  + بنده را اجتهاد بايد كرد


যাদের হিদায়েতের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দেয়ার পরও কিন্তু মানুষকে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।


“নুফখাতুল ইনছ” এর মধ্যে  মাওলানা জামী (رحمة الله) বলেছেন, যেদিন হযরত মনুছর হাল্লাজ কে হত্যা করা হয়েছে সে দিন রাত্রে তিনি পাঁচশত রাকাত নামাজ পড়েছিলেন।


ইবনে মনুছর কে শায়খুল ইসলামও বলা হত। তিনি এ দাবী করার পরেও প্রত্যেক রাতদিন হাজার রাকাত নামাজ পড়তেন। তাকে এলহামী মাছালার কারনে হত্যা করা হয়েছে। 


হযরত আবু বক্কর শিবলী (رحمة الله) তার সুলির নিচে দাড়িয়ে বললেন; اَوَلَمْ نَهَيْتُكَ على العامين কেন আমি কি তোমাকে লোকের মধ্যে বলা থেকে বাধা দেই নাই?


একদা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী ( রহমাতুল্লাহে আলাইহি) এর দরজায় গিয়ে কারাঘাত করতে লাগলেন, তখন তিনি বললেন, কে তুমি? বলল: আমি খোদা, তিনি বললেন খোদা নয় বরং খোদার সাথে। মলূত যে দুর্ভাগ্য তার উপর পড়েছিল; সেটি মূলত তাঁর উস্তাদ ‘ওমর বিন ‘ওসমানের দোয়ার কারনে পড়েছিল। 


অর্থাৎ: যিনি তাওহিদ এবং ছুফিয়ায়ে কেরামদের এলেমের উপর একটি পুস্তিকা লেখেছিলেন, যাকে তিনি লুকায়িত রেখেছিলেন। আর সে এটিকে প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং লোকদের কে দেখাতে লাগলেন কিন্তু       পুস্তিকাটির ভাব অত্যন্ত সুক্ষ ছিল। লোকেরা বুঝতে পারে নাই। যাদ্বরূন সবাই এর উপর অস্বীকৃতি দিতে লাগল এবং একে প্রত্যাখ্যান করল। তাই তিনি খাল্লাজ এর উপর ভর্ৎসনা করলেন। আর বললেন, হে প্রভু এই ব্যক্তিকে এমন একটি কাজের জন্য নির্ধারণ কর, যার হাত পা কেটে দেওয়া হয় এবং চক্ষু বের করে দেওয়া হয় এবং সুলিতে তোলা হয়। তাই তাঁর উপর যা কিছু ঘটেছিল সব কিছু নিজ উস্তাদের দোয়ার ফসল। যা ঘটেছিল তাঁর উপর, তা সবাই জ্ঞাত। (নুফখাতুল ইনছ)


কয়েকজন ছুফি অর্থাৎ হযরত আবুল ‘আব্বাস (رحمة الله) শিবলী (رحمة الله) শেখ আবু ‘আব্দুল্লাহ খাফিফ   (رحمة الله) শেখ আবুল কাসেম নাছির আওজি (رحمة الله) এবং হযরত আবুল ‘আব্বাস সারিজ (رحمة الله) প্রমূখগণ তাঁর হত্যার উপর সম্মতি ছিলেন না এবং ফতোওয়ার উপর    দস্তখতও করেন নাই; তারা বলত আমরা জানি না সে কি বলতেছে।


ইবনে ‘আরবী বলেছেন, মনুছর হাল্লাজের মধ্যে যখন আল্লাহ তায়ালার জাতের তাজাল্লী অবতীর্ণ হত তখন সে মক্বামে ফারদানিয়্যত এর মধ্যে চলে যেত। ইবনে ‘আরবী আরো বলেছেন, মনুছর হাল্লাজ যখন বারি তা’য়ালার তাজল্লী পেয়ে থাকেন তখন সদা সর্বদা “আনাল হক্ক” না বলে এবং আনা সুবহান না বলে, নারা বা চিৎকার দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কেননা আল্লাহ তায়ালার তাজাল্লীর মধ্যে বিশেষ প্রকারের মোহিনী শক্তি অর্জিত হত এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর জাতের দৃষ্টি ও অভিভূত হয়ে যায় তার বুঝার কি উপায় থাকে? আমি কে এবং কোথায়? ওই অবস্থায় তিনি আনাল হক্ক বা সুবহানী না বলে কি করবে যেহেতু যার নিকট আল্লাহ তায়ালার মারেফত অর্জিত হয়ে যায় তখন তার জবান আল্লাহর তাজাল্লীর মধ্যে অভিভূত হয়ে পড়ে তাজাল্লীর গুনানিত অবস্থায় জবান খেল করে তখন সে অবস্থায় সে স্বীয় কাজ কর্ম এবং ভেদকে নিজ জবানে বর্ণনা করে ফেলেন।


সিলসিলায়ে কাদেরীয়া


বর্তমান মশহুর সিলসিলা, যা পরবর্তী মাশায়েখে কেরামগণ এর সাথে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে সিলসিলায়ে কাদেরীয়া অন্যতম।


এই সিলসিলার সম্পৃক্ততা তথা প্রবর্তক উস্তাজুল আ’রেফা, শায়খে ওয়াছেলা, সুলতানে তরিক্বত, বুরহানে শরীয়ত, বাহ্রে হাকীকত, গন্জে মা’রেফাত, আল্লাহ ওয়ালাদের পদ প্রদর্শক, পেশোয়ায়ে আউলিয়া, মুক্তাদায়ে আত্কিয়া, কাদ্মী হাজেহী আ’লা রাকাবাতি আউলিয়াল্লাহ ঘোষণাকারী, মাশায়েখে কেরামদের সম্রাট, ইমামুল আয়িম্ম্যাহ, খাল্ফে সৈয়্যদুল আনাম মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, শায়খুল ইসলাম, হুজ্জাতুল মোসলেমীন, কুত্বে গাউছে সামাদানী, গাউসুচ্ছাকালাইন আবু মুহাম্মদ হযরত শাহ মুহিউদ্দীন স্যৈদ আবদুল কাদের জিলানী আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী রাদ্বিআল্লাহু আনহু’র সাথে সম্পৃক্ত। এই পবিত্র ও বরকতময় সিসিলার অনুসারীকে কাদেরীয়া বলা হয়।


সিলসিলায়ে চিশ্তীয়া শরীফ


চিশ্তীয়া নামে মশহুর সিলসিলাটির প্রবর্তক হচ্ছেন হিন্দুস্তানের খোশেদয়া ও পদপ্রদর্শক শায়খে তরিক্বত, রুমুজে হাকীকতের অধিকারী ও সুসংবাদ প্রাপ্ত, নায়েবে মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সুলতানুল হিন্দ মুঈনুল হক্ব ওয়াদ্বীন হযরত খাজা মূঈনুদ্দীন হাসান সাঞ্জারী চিশ্তী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে সম্পর্ক। এই সিলসিলার লোকদেরকে চিশ্তী বলা হয়।


নক্শে বন্দিয়া ত্বরিকা বা সিলসিলা


নক্শে বন্দিয়া সিলসিলার সম্পৃক্ততা তথা প্রবর্তক হচ্ছে- উস্তাদ আনাম জয়নুল ইসলাম, তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক হযরত শাহ বাহাউদ্দীন নক্শে বন্দি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)। এই সিলসিলাভূক্ত পীরদেরকে নক্শে বন্দিয়া বলা হয়।


ছরওয়ার্দীয়া সিলসিলা


ছরওয়ার্দীয়া সিলসিলার প্রবর্তক হচ্ছেন- শায়খুল মাশায়েখ, মালিকে কুলব, ত্রুটি ধ্বংসকারী, প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, উস্তাযুল আ’রেফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ শায়খ মাহাবুদ্দীন ছরওয়ার্দী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এই সিলসিলার অনুসারীদেরকে ছরওয়ার্দী বলা হয়।


কুব্রুবীয়া সিলসিলা


কুবরুযীয়া সিলসিলার প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন- আফ্তাবে হেদায়ত, রয়ীসুল আউলিয়া, মুক্তাদায়ে আহলে ছফা হযরত খাজা নজমুদ্দীন কুব্রা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। এই সিলসিলার পীরগণকে কুব্রুযী বলা হয়।


উলে­খ্য যে, হযরত গাউছুচ্ছাকালাইন রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহু এর পরবর্তী মাশায়েখে কেরাম, বিশেষতঃ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসন সাঞ্জারী চিশ্তী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশেবন্দি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), হযরত শায়খ শাহাব উদ্দীন ওমর ছহ্রাওয়ার্দী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), হযরত শায়খ নাযমুদ্দীন কুব্রা কাদ্দাছাল্লাহু র্ছিরাহুম প্রমূখ হযরাতগণ খুবই সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিল। এ জন্যই তাঁদের সিলসিলা সমূহ নিজ নিজ নামের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।



কাদেরীয়া তরিকার মূল


জ্ঞাতব্য যে, কাদেরীয়া তরিকার মূল হচ্ছে যুনাইদী। চিশতীয়া হচ্ছে আদহামী, নকশেবন্দী হচ্ছে তাইফুরী তাছাড়া যুনাইদীদের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছে।


ছরওয়ার্দী হচ্ছে খাফীফিয়া তাছাড়া যুনাইদীদের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছে।


উপরোলি­খিত সকল সম্মানিত বুজুর্গগণ মুসলমানের নিকট গ্রহণযোগ্য তথা মকবুল। সর্বসাধারণ ও নির্দিষ্ট তথা আম-খাসদের মধ্যে এমন কোন লোক নাই যিনি কোন না কোন সিলসিলার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এমনকি উচ্চ মর্যাদাবান প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ তাঁদের খেদমতে নিজকে আত্ম সমর্পন করেছে এবং তাঁদের মুরীদ হওয়া ছাড়া কোন পথ ছিল না।


বর্তমান যুগের পীর-মাশায়েখ


বর্তমান যুগের সকল মাশায়েখে কেরামও উপরোলি­খিত সিলসিলার বাইরে নয়।


উলে­খ্য যে, উপরোলি­খিত সিলসিলার সম্মানিত মাশায়েখগণ সকলই কামেল আ’রেফ ও সঠিক পথের দিক নির্দেশক ছিলেন এবং মনোবাঞ্চনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথার্থভাবে জ্ঞাত ছিলেন। যেমন বর্তমান যুগের বিভিন্ন মাশায়েখে কেরাম নিজ পীর ও শায়খের দিকে সম্পৃক্ত করে বলে থাকে- মাইজভান্ডারীয়া, রেজভীয়া, বরকাতীয়া, মোস্তাফাবীয়া, সাঈদীয়া ইত্যাদি। এরা প্রত্যকই নিজ নিজ সিলসিলার মাশায়েখদের সাথে সম্পৃক্ত। উপরোক্ত তরিকা ব্যতীত আরো যে সকল তরিকা রয়েছে সকলই তাদের পীরের নামের সাথে সম্পৃক্ত করেছে।


জানা আবশ্যক যে, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ও তা’আলা হযরাত আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালাম এবং আউলিয়ায়ে কেরাম রাহমাহুমুল্লাহ এর মধ্যে কতককে কতকের উপর মর্যাদা ও ফজিলত দিয়েছেন। যেমন কালামে মজীদে আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমায়েছেন- 


فَضَّلْنَا بَعْضُهُمْ عَلىٰ بَعْضٍ (سورة البقرة)


অর্থাৎ: কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দান করেছেন।


আল্লাহ তা’আলা আরো এরশাদ করেছেন-


ان الفضل بيد الله يؤتيه من يشاءُ (سورة ال عمران)


অর্থাৎ: ফজল তথা মর্যাদা ও ফজিলত আল্লাহর কুদরতি হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন।


হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানীর ফজিলত ও মর্তবা


যার উচ্চ মর্তবা ও ফজিলত এবং বুজুর্গী নসিব হবে এবং যার ওপর ছরওয়ারে দো’আলম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শুভ দৃষ্টি তথা নজরে করমের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি হবে সেই ব্যক্তিই উত্তম এবং বুজুর্গ হবে। তিনি সকলের চেয়ে উত্তম ও বুজুর্গ পদ মর্যাদার অধিকারী। আর তারা হচ্ছেন সিলসিলায়ে কাদেরীয়ার মাশায়েখে কেরাম। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা উক্ত সিলসিলার শায়খ এবং উক্তি সিলসিলার প্রবর্তক হযরত গাউচুচ্ছাক্বালাইন শাহ সৈয়দ মুহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিআল্লাহু আনহুর সাথে সম্পৃক্ত সকলকে ফজিলত দান করেছেন এবং গাউছে পাক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)কে এই কথা বলার নির্দেশ ফরমায়েছেন-


قدمى هدهٖ على رقبة كل ولى الله


অর্থাৎ: আমার এই কদম সকল অলীদের গরদানের ওপর। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমি অধমের লিখিত ‘‘কালামুল আউলিয়া ফী শানে ইমামিল আউলিয়া” পুস্তিকাটি পাঠ করুন।


আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন হযরত শায়খ আবদুল কাদের (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) এর অন্তরে তাঁর (আল্লাহর) তাজাল্লী তথা গোপন রহস্যের বিকাশ ফরমায়েছেন এবং হযরত সৈয়্যদ কাওন ওয়া মাকান মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালায়ে কাতুল মকাররাবীন এবং আউলিয়ায়ে মুতাকাদ্দেমীন তথা পূর্ববর্তী অলীগণ যারা জীবিত ছিল শারীরিকভাবে এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছে তারা রূহানীভাবে বিদ্যমান ছিল মজলিসে নিজ হাত মোবারক দ্বারা হযরত মাহবুবে সোবহানীকে অনন্য কেলাফতের তাজ পরিধান করান, ফেরেশতাগণ অদৃশ্য অবস্থায় এই মজলিসের চতুপার্শ্বে জমায়েত লি, সকল অলী এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ঘাড় ঝুকিয়ে দেন।


হযরত ইমাম আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে আরো ব্যাপকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।


গাউছে পাক সম্পর্কে পূর্ববর্তী মনিষীদের ভবিষ্যতবানী


হযরত শায়খ জামালুল্ আরেফীন বলেন- আমি হযরত খাজা খিজির আলাইহিচ্ছালাম এর নিকট হযরত গাউছুচ্ছাকালাইন (রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি) সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আল্লাহ পাক সুবহানাহু তা’আলা কোন অলী আল্লাহকে তার পদ পর্যাদার স্তরে পৌঁছান নি, অর্থাৎ গাউছে পাক আবদুল কাদের জিলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)কে যেরকম উচ্চ পদমর্যাদা দান করেছেন এবং আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্য অর্জন করেছেন। তেমনটি অন্য কাউকে দেওয়া হয়নি। আবদুল কাদের জিলানী গাউসুল আযম পদ মর্যাদায় একক ও অদ্বিতীয় এবং সকল যুগের কুতুবুল আউলিয়া।


হযরত শায়খ আবুল ওফা বলেন- আমার প্রভূর শপথ! আমি শায়খ আবদুল কাদের এর মাথার ওপর এমন আলোকরশ্মি দেখতেছি যার আলোকরশ্মি পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। হযরত গাউছুচ্ছাকালাইন এর দিকে মূখ করে বলেন- হে আবদুল কাদের জিলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)! এখন আমাদের সময় ও যুগ এবং অতিসত্তর আপনার সময় ও যুগ আরম্ভ হবে।


প্রত্যেকের একটি গানের পাখী তথা শুর পাখী জয়গান গায় এবং তা আযাব বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু হযরত গাউছে পাকের শুর পাখী কিয়ামত পর্যন্ত জয়গান গাইতেই থাকবে তা কখনো বন্ধ হবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকের গুন কীর্তন ও পদ মর্যাদা ক্ষনস্থায়ী, কিন্তু হযরত গাউছে পাকের গুন কীর্তন ও পদ মর্যাদার বর্ণনা কিয়ামত পর্যন্ত হতেই থাকবে, তা কনো বন্ধ হবে না। আর এটিই হচ্ছে মহান আল্লাহ জাল্লা মাযদুহুর অশেষ ও অফুরন্ত দয়া ও মেহেরবানী।


ذَالكَ فَضْلِ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ (سوره حديد, پاره-২৮)


অর্থাৎ: এটি আল্লাহর ফদ্বল তথা মহাদান, যাকে ইচ্ছা দান করে থাকেন আর আল্লাহ তা’আলা সর্বোচ্চ দয়া ও মেহেরবানীর মালিক।


কতেক মাশায়েখে আ’রেফীন বলেন যে- একজন অনারবী তথা আ’জমীর কদম (পা) সকল অলীগণের গরদানের ওপর হবে। একশ বছর পূর্বেই কতেক আউলিয়ায়ে কেরাম যেমন- শায়খ আবু বকর শিবলী হযরত বায়জীদ বোস্তামী এবং শায়খ আবু মুহাম্মদ শান্যকী প্রমূখ অলীগণ। হযরত গাউছে পাক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর বুজুর্গী ও শরাফতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।


যখন হযরত আবদুল্লাহ তাস্তারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো যে, শায়খ আবদুল কাদের কোন বুজুর্গ?


তখন তিনি বলেন- হযরত আবদুল কাদের জিলানী একজন আ’জমী তথা অনারবী এবং তিনি বাগদাদবাসী হবে, তার প্রকাশ পাঁচশত হিজরীর মধ্যে হবে। তার কদম তথা পা সকল অলীগণের গরদানের ওপর হবে।


হযরত শায়খ আবু মুহাম্মদ শাব্কী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন- শায়খ আবদুল কাদের এমন একজন মর্যাদাবান বুজুর্গ হবে মানব জাতি, জ্বিন জাতি তথা প্রতিটি স্তরের মানুষ তার অনুসারী হবে এবং হক সুবহানাহু তা’আলা তার বরকতের বদৌলতে অসংখ্য সৃষ্টিকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করাবেন।


হযরত শায়খ আকীল ছখী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর সম্মুখে কেউ একজন বর্ণনা করেছে যে, এক আ’জমী তথা অনারবী যুবক শায়খ আবদুল কাদের বাগদাদের মধ্যে খুবই প্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত। তা শ্রবণ করে হযরত শায়খ আকীল ছখী বলেন- নিঃসন্দেহে সেই (আবদুল কাদের জিলানী) জমীনের চেয়েও আসমানে আরো অধীক মাশহুর হবে। 


অনুরূপ আরো অসংখ্য মাশায়েখে কেরাম থেকে গাউছেপাকের বুজুর্গীর কথা বর্ণিত হয়েছে।


হুজুর সৈয়্যদুনা গাউচুচ্ছাকালাইন রাদ্বিআল্লাহু আনহু স্বয়ং নিজেই এরশাদ ফরমায়েছেন- প্রত্যেক অলী আল্লাহ পয়গাম্বরদের কদমের ওপর হয়ে থাকে। আর আমি আমার সম্মানিত নানাজান মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আইলাহি ওয়াসাল্লামের কদমের ওপর। যেই কদম মোবারক আমার সম্মানিত নানাজাল উত্তোলন করেন আমি সেখানে আমার কদম রাখি। কিন্তু নবুয়তের কদমের মধ্যে আমার কদম রাখার কোন সুযোগ ও ক্ষমতা নাই, কেননা তা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো জায়গা মিলবে না।


অতএব একথা প্রমাণিত হয়েছে ছরকারে আউছুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) রাফি আল্লাহু তাআলা আনহু রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর পরিপূর্ণ অনুসারী ও অনুগত অনুসারী ও অনুগত ছিলেন, একথা থেকেই ইংগিত করেছেন গাউছে পাক (رحمة الله)।


সূফীনাতুল আউলিয়া গ্রন্থের লিখক বলেন- আমার গবেষণা ও বিশ্লেষণ মোতাবেক নকশের বন্দীয়া, চিশ্তীয়া, ছরওয়ার্দীয়া এবং কব্রুবীয়া, তরিকার সকল মাশায়েখে কেরাম হযরত গাউচুচ্ছাকালাইন এর সাথে সম্পৃক্ত এবং প্রতিটি সিলসিলার বুজুর্গগণের মধ্যে কেউ না কেউ হযরত গাউছে পাকের ফয়েজ ও নৈকট্য দ্বারা ধন্য হয়েছেন। 


সময়কালিন উলে­খযোগ্য কতগুলো সিলসিলাহ


সিলসিলায়ে মাদারীয়া তবকাতীয়াহ, সিলসিলায়ে সহরয়ার্দীয়া, সিলসিলায়ে ছাবেরীয়া, সিলসিলায়ে নেজামিয়া আউয়াল, সিলসিলায়ে নিজামিয়ায়ে ছানী, সিলসিলায়ে নেজামিয়ায়ে ছালেছ, সিলসিলায়ে ক্বাদেরীয়ায়ে আউয়াল ও ছানী, সিলসিলায়ে কলন্দরীয়া। 


সিলসিলায়ে মাদারীয়া তবকাতীয়াহ যা- হযরত আবদুল্লাহ শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) হতে, যে বংশধারা মোজাদ্দেদিয়ার মধ্যে প্রসিদ্ধ তা হতে প্রচলিত হয়েছে। মোটকথা তাদের সিলসিলা এ মাদারিয়া তবক্বাতীয়া, যার সিলসিলাহ এভাবে প্রসিদ্ধ হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) 


তিনি হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে,  তিনি হযরত মুহাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ আবদুল আহাদ আল মারুফ বিহ শাহ গোল (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) ফরজন্দী সানী দ্বিতীয় সন্তান হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী (رحمة الله) এর তাই তিনি স্বীয় পিতা হযরত ইমামে রব্বানী শেখ আহমদ সেরহেন্দী মজাদ্দেদে আলফে সানী (رحمة الله) হতে, তিনি স্বীয় পিতা খাজা আব্দুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ দরবেশ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত সৈয়্যদ বড়হন বড়ায়ুচী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত আজমল বড়ায়ুচী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শামসুল আরেফীন বদিউদ্দিন কুতুবুল মাদার (ক:সি:) হতে, তিনি হযরত তাইফুর শামী বায়জিদ বোস্তামী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত আইন উদ্দিন শামী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত আবদুল্লাহ আলমবরদার (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত মশকিল  কোশা শেরে খোদা আলী মরতুজা (কররামাল্লাহু ওয়াজহুল করিম) হতে বাই‘য়াত গ্রহন করেন।


সিলসিলায়ে সহরয়ার্দীয়া


হযরত আব্দুল্লাহ শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله)  তিনি মুরিদ ও খেলাফত প্রাপ্ত হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আব্দুল আহাদ আল মারুফ বিহ শাহ গুল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত ইমাম রব্বানী শেখ আহমদ সেরহেন্দী মুজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আব্দুল আহাদ (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত শেখ রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ দরবেশ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত বড়্হান বড়ায়ুচী (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত সৈয়্যদ আজমল বড়ায়ুচী (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন বোখারী (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত খাজা শেখ ছদর উদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ বাহা উদ্দিন জাকারিয়া মুলতানি (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত শেখ শিহাব উদ্দিন সহরয়ার্দি (رحمة الله) হতে।


সিলসিলায়ে ছাবেরীয়া


হযরত গোলাম আলী শাহ দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত সৈয়্যদ নুর মুহাম্মদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ সাইফুদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি মুুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ মাছুম (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত ইমাম রব্বানী শেখ আহমদ মুজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ মাখদুম আব্দুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মাওলানা রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আরেফ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আহমদ রদলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত জালাল উদ্দিন কবিরুল আউলিয়া পানিপতি (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শাহে বেলায়ত, তুরক শামসুদ্দিন পানিপতি (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হন হযরত মাখদুমুল আউলিয়া খাজা আলাউদ্দিন আলী আহমদ ছাবের কলায়রী (رحمة الله) এর।


সিলসিলায়ে নিজামিয়ায়ে আউয়াল বা প্রথম


হযরত শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) তিনি মুরিদ হন হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ ম্হুাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মাওলানা রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মাওলানা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ দরবেশ মুহাম্মদ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সাঁদ উল্লাহ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ ফতেহ উল্লাহ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ তৈয়্যব (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হন হযরত সুলতানুল মাশায়েখ, মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া দেহলভী (رحمة الله) হতে।


সিলসিলায়ে নিজামিয়া ছানী বা দ্বিতীয়


হযরত শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) হতে তিনি মুরিদ হন হযরত মির্জা মাজহারে জানে জানা (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মুজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাওলানা রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, 


তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ দরবেশ মুহাম্মদ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ ছদর উদ্দিন আওদাহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীসুদরাস দেহলভী (রহমতুল্লাহি আলাইহে) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাখদুম নাছির উদ্দিন চেরাগ দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ সুলতানুল মাশায়েখ মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (رحمة الله) হতে।


সিলসিলায়ে নিজামিয়ায়ে ছালেচ বা তৃতীয়


হযরত শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হন হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ নুর মুহাম্মদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ সাইফুদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ মাছুম (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত শেখ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাওলানা শেখ রুকনুদ্দিন গাংগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ দরবেশ মুহাম্মদ ইবনে কাসেম দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ বড়হান বড়ায়ুসী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ আজমল বড়ায়ুসী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাখদুম জাহানীয়া জাহাগস্ত (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাখদুম  নাছির উদ্দিন চেরাগে দেহলভী (رحمة الله) হতে। তিনি মুরিদ ও খলিফা সুলতানুল মাশায়েখ মাহবুবে এলাহী হযরত খাজা নেজাম উদ্দীন আউলিয়া (রা:) এর।


সিলসিলায়ে ক্বাদেরীয়ায়ে আউয়াল বা প্রথম


হযরত শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হন হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাখদুম শেখ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা শেখ আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত ইবরাহীম হাসানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত আহমদ হালভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ মুসা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ আবদুল ক্বাদের (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ হাসান (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত আবুন নাছের (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত আবু ছালেহ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত কুতুবে রব্বানী, মাহবুবে সোবাহানী শেয়খ সৈয়্যদ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) হতে।


সিলসিলয়ায়ে ক্বাদেরীয়া ছানী বা দ্বিতীয়


হযরত শাহ গোলাম আলী দেহলভী (رحمة الله) তিনি মুরিদ হন হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত খাজা মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মোজাদ্দেদে আলফেসানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সেকান্দর (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ শাহ কামাল কতহীলি (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ ফুজাইল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ শাহ গদা রহমানে ছানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ শামসুদ্দিন আরেফ (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ আবু ফজল (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত সৈয়্যদ গদা রহমান আউয়াল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ শামসুদ্দিন ছাখরায়ী (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ আকিল (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ বাহাউদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ আবদুল  ওহহাব (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শরফউদ্দিন ক্বিতাল (رحمة الله) হতে,তিনি মুরিদ সৈয়্যদুল আফাক সৈয়্যদ আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হলেন হযরত পীরানা পীর দস্তগীর শেখ সৈয়্যদ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) হতে।


সিলসিলায়ে কলন্দরিয়া


হযরত গোলাম আলী শাহ দেহলভী (رحمة الله) হতে প্রচলিত তিনি মুরিদ হযরত মির্জা মাজহারে জানে জা (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত  শেখ মুহাম্মদ আবেদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ রুকনুদ্দিন গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুস সালাম শাহ আলী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ মুহাম্মদ ইবনে কুতুবুদ্দিন জৈন পুরী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত কুতুবুদ্দিন নবিয়াল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ নজমুদ্দিন কলন্দরী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ খিজির রুমী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত আবদুল আজিজ মক্কী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ মুহাম্মদ ইবনে আরেফ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শায়খুল মাশায়েখ আরেফ চিশতী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আহমদ আবদুল হক্ব তওশা রোদলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাখদুম শেখ জালালুদ্দিন কবিরুল আউলিয়া পানিপতি (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ শামসুদ্দিন তুরক পানিপতি (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হলেন হযরত শায়খুল মাশায়েখ মাখদুম আলাউদ্দিন আলী আহমদ ছাবের কলয়রী (رحمة الله) হতে।


সিলসিলায়ে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদিয়া হযরত শাহ আবদুল আজিজ (رحمة الله)


হযরত শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দেছে দেহলভী (رحمة الله) এর সিলসিলায়ে নকশবন্দীয়ার সাজরা নিম্নে বর্ণিত হিসাবে পাওয়া যায়, তিনি মুরিদ হলেন স্বীয় পিতা হযরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেছে দেহলভী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত মাওলানা শাহ আবদুর রহীম মুহাদ্দেছ দেহলভী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা তিনি মুরিদ শাহ সৈয়্যদ আবদুল্লাহ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত সৈয়্যদ আদম বানুরী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত ইমাম রব্বানি মুজাদ্দেদে আলফে সানী শেখ আহমদ সেরহেন্দী (رحمة الله) হতে, তিনি হযরত খাজা বাকী-বিল্লাহ দেহলভী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা।



সিলসিলায়ে ক্বাদেরীয়া শাহ আবদুল আজিজ (رحمة الله)


তিনি মুরিদ হন হযরত ইমাম রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফে সানী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শেখ আবদুল আহাদ (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ কামাল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ ফুজাইল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সৈয়্যদ শামসুদ্দিন ছাখরায়ী (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সৈয়্যদ আকিল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সৈয়্যদ বাহা উদ্দিন (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সৈয়্যদ আবদুল ওহহাব (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ শরফুদ্দিন ক্বিতাল (رحمة الله) হতে, তিনি মুরিদ হযরত শাহ সৈয়্যদুত সাদাত হযরত সৈয়্যদ আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) হতে, তিনি পীরানাপীর দস্তগীর মাহবুবে ছোবহানী কুতুবে রাব্বানী শেখ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর মুরিদ ও খলিফা।


হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ কালপুরী (রহমতুল্লাহি আলাইহে) এর অবস্থান


হযরত মীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ কালপুরী (رحمة الله) আবুল উলাইয়া সিলসিলার একজন উচ্চ মর্যাদার বুজুর্গ ছিলেন। 


বংশীয় অবস্থান: তিনি তিরমিজের সম্ভ্রান্ত সম্মানিতদের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। 


শিক্ষা: তিনি মাওলানা ওমর জাজমূয়ী (رحمة الله) র নিকট বিভিন্ন বিষয়ের কিতাবের উপর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এর পর হযরত জামাল যিনি কামালিয়তের অধিকারী তার দরসগাহে অংশগ্রহণ করেন এবং শিক্ষার পরিপূর্ণস্তর সমাপ্ত করেন। প্রকাশ্য জ্ঞানে তিনি উঁচু স্তরে পৌঁছে ছিলেন। 


সুসংবাদ: একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, হযরত খাজা নকশবন্দী (رحمة الله) তাকে বলতেছেন আমার সৈয়্যদ মুহাম্মদ এ সময়ের একজন শায়খ। স্বীয় সিলসিলার মধ্যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আগ্রায় এমন ফয়েজ প্রাপ্ত আলেম, কয়েকশ বছরের মধ্যে জন্ম হয় নাই। এখন তুমি আগ্রায় যাও, সেই সিলসিলা কেও অর্জন কর। হযরত খাজা নকশবন্দী (رحمة الله) কিন্তু সেই সিলসিলার বুজুর্গদের নাম উলে­খ করেন নি। তিনি স্বপ্ন হতে জাগ্রত হয়ে আগ্রায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন এবং রাওনা হয়ে যখন আগ্রায় পৌঁছলেন তখন জানতে পারলেন, আগ্রার মধ্যে সময়ের দুজন বুজুর্গ আছেন, যাদের থেকে সৃষ্টি জীব উপকৃত হচ্ছে। একজন বুজুর্গের নাম মীর নোমান যিনি হযরত শেখ আহমদ সেরহেন্দী (رحمة الله) এর খলিফা, দ্বিতীয় বুজুর্গের নাম যিনি সে সময় আগ্রার মধ্যে হিদায়েতের আলো চড়াচ্ছিলেন তাঁর নাম হচ্ছে আমির আবুল উলা। আগ্রায় পৌছে তিনি হযরত মীর নোমান (رحمة الله) এর খানকায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, পাল্কিতে আরোহন হয়ে রওনা হলেন এবং বায়রাদের কে হযরত নোমান (رحمة الله) এর খানকায় যাওয়ার জন্য তাগিত দিলেন।


বলাবহুল্য, তাকে হযরত নোমান (رحمة الله) এর খানকায় নেয়ার পরিবর্তে হযরত আমির আবুল উলা (رحمة الله)র খানকায় নিয়ে গেলেন । তার যখন জানা হল যে, এটা আবুল উলার খানকাহ, তখন তিনি পাল্কি হতে নামলেন না এবং বসে বসে বায়রাদের কে বলতে লাগলেন যে, হযরত নোমান (رحمة الله)এর খানকার দিকে পাল্কি ফিরে নিয়ে যাও। কোথায় রওনা হলেন কিন্তু ইহার পরিবর্তে এখানে কেন? অর্থাৎ হযরত নোমান (رحمة الله) এর খানকায় পৌঁছার পরিবর্তে পুনরাই হযরত আমির উলার (رحمة الله) খানকায় পৌঁছলেন। পাল্কি পুন: রওনা হলেন, এভাবে কয়েক বার হল। এখন তিনি পাল্কি হতে অবতরণ করলেন, তিনি চিন্তা করলেন, নিশ্চয় এটাই আল্লাহ তায়ালার মরজী, ওখানে পাল্কি হতে নেমে তিনি খানকার মধ্যে প্রবেশ করলেন, হযরত আমির আবুল উলা (রহমতুল্লাহি আলাইহে) সে সময় খানকার সম্মুখে বসা ছিলেন। হযরত আমির আবুল উলা (رحمة الله) তাকে দেখেই একটা “নারা” দিলেন, এ “নারা” দ্বারা তাঁর শরীরে কোন অনুভূতি সৃষ্টি হলনা। এরপর হযরত আমির আবুল উলা (رحمة الله) তাহার হাত ধরলেন এবং আরেকটা “নাড়া” দিলেন, এ সময় তাঁর মধ্যে পরিবর্তণ হয়ে শরীরের মধ্যে কম্পন, হাত অস্থির এবং ক্বলবের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি হল। ক্বলবের এ প্রভাবের সাথে সাথে তাঁর মধ্যে হযরত আমির আবুল উলার (رحمة الله) প্রতি ভক্তি এসে গেল। তিনি কয়েখ মাস হযরত আমির আবুল উলা (رحمة الله) এর সান্নিধ্যে অবস্থান করলেন, বাইয়াত দ্বারা ধন্য হলেন এবং খিলাফতের পোষাক দ্বারা গৌরবংন্নিত হয়ে অর্থাৎ খেলাফতের মুকুট অর্জন করলেন। এর আগে তিনি হযরত মাওলানা ওমর জামূয়ী (رحمة الله)এর হাত মোবারকে বাইয়াত গ্রহণ করে ছিলেন এবং চিশত বংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলেন। তিনি হযরত আবুল উলা (رحمة الله) হতে খেলাফতের তাজ পেয়ে এবং তরিক্বায়ে আলিয়া নকশন্দীয়া আবুল উলাইয়া পরিপূর্ণতা অর্জন করলেন। তাঁর পীর মোরশেদ হযরত সৈয়্যদ আমির আবুল উলা (رحمة الله) তাকে পরিপূর্ণ অনুমতি  প্রদান করার পর চলে যাওয়ার সময় হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (رحمة الله)এর একটি তাসবি তাঁকে দান করলেন। কালপির মধ্যে এসে তৎক্ষনাৎ তিনি মসনদে হেদায়ত ও মসনদে ইরশাদাতের মধ্যে আসিন হলেন।


ওফাত: তার ওফাত শরীফ ২৬শে শাবান ১০৭১ হিজরী সনে হয়েছে কালপির মধ্যে তার মাজার শরীফ অবস্থিত। তাঁর ছেলে হযরত সৈয়্যদ আহমদ (رحمة الله) তার খলিফা ও সাজ্জাদানশীন এবং তার দ্বিতীয় খলিফা শেখ মুহাম্মদ আফজাল (رحمة الله) ওলিয়ে কামেল ছিলেন। তিনি চার তরিকার বাতেনী ফয়েজ দ্বারা উপকৃত। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য জ্ঞান দ্বারা ভরপুর ছিলেন, তিনি শরীয়তের জামে ছিলেন। (তাজকেরাহ হিন্দও পাক)


হযরত বিল্লাহ শাহ (রহমতুল্লাহি আলাইহে) এর অবস্থান বা জীবনালোচনা


হযরত বিল্লাহ শাহ (رحمة الله) পরিপূর্ণ ঐশি শক্তির অধিকারী ছিলেন। তার পিতা সৈয়্যদ সখী দরবেশ মুহাম্মদ (رحمة الله) “উচ” এর মধ্যে থাকতেন। “উচ” থেকে বাসস্থান ছেড়ে মেকওয়াল এর মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। অত:পর মেকওয়াল থেকে “পান্তু”র মধ্যে গিয়ে বসতি স্থাপন করে বাকী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।


তার নাম আবদুল্লাহ শাহ ডাক নাম বিল্লাহ শাহ এবং তিনি ডাক নামে অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁর পিতা সে সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন, আরবী, ফার্সী ভাষায় তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করেন। অতপর “কছুর” পৌঁছে হাফেজ মরতাকির (رحمة الله) খেদমতে উপস্থিত হন। তার থেকে তিনি বাকী জ্ঞান অর্জন করেন। জাহেরী জ্ঞান অর্জন তিনি অতি তাড়াতাড়ি শেষ করেছেন, অতপর বাতেনী জ্ঞান অর্জনে তার আগ্রহ দেখা দিল। আর বাতেনী জ্ঞান মুরশেদে কামেল ব্যতিত অর্জন সম্ভব নয়, তাই তিনি এ চিন্তায় ব্যস্ত। একদিন সে একটি গাছের নিচে বসতে বসতে তন্দ্রা এসে গেল, এতে স্বপ্নের মধ্যে তিনি স্বীয় দাদা হযরত আবদুল হাকিম (رحمة الله) যিনি তাঁর দাদা সম্পর্কিয় ছিল। তিনি একটি আসনের উপর বসে বাতাসের মধ্যে উড়তে লাগলেন। তাঁর এ আসন যখন নিচে নামল তিনি তাঁকে (বিল্লাহ শাহকে) দেখেই জিজ্ঞাস করলেন। তুমি কে? তিনি (বিল্লাহ শাহ) বললেন, আমি হলাম সৈয়্যদ। একথা বলার পর তিনি তার থেকে বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। বিল্লাহ শাহ (رحمة الله) নিজের এবং নিজ পিতার নাম তাকে খুলে বললেন। তিনি তাকে বললেন যে, আমার পিপাসা লেগেছে, তিনি তাকে দুধ পেশ করলেন, তিনি দুধের পিয়ালা নিয়ে সামান্য নিজে পান করলেন এবং অবশিষ্ট তাকে দিয়ে দিলেন, তিনি অবশিষ্ট দুধ পান করে নিলেন। দুধ পান করতেই তিনি (বিল্লাহ শাহ) নিজেই অন্য রকম হয়ে গেছেন, তার বক্ষ উজ্জল হয়ে গেল। বিদায় নেয়ার সময় হযরত সৈয়্যদ আবদুল হাকিম (رحمة الله)  তাকে বললেন, আমার নিকট তোমার যে আমানত ছিল আজ আমি তা তোমাকে অর্পন করলাম। আজ হতে তোমার দশ টাকা মিললে, তখন তোমার জন্য আবশ্যক যে. তুমি মুরশেদে কামেল অন্বেষণে কর, যাতে তাহার মাধ্যমে তুমি তাড়াতাড়ি মারফত এবং “সুলুকের” অবস্থান অতিক্রম করতে পার। ঘরে এসে নিজের স্বপ্নের কথা স্বীয় পিতাকে বর্ণনা করলেন, তার পিতা বললেন যে, এরকম বুজুর্গ হতে বলানো চাই, যাতে তিনি বাইয়াত করে নেন। তিনি স্বীয় পিতার থেকে জিজ্ঞাস করলেন, এখন তাঁকে কোথায় খুঁজতে হবে, তার পিতা ধ্যান করে অর্থাৎ মোরাকাবা করে তাকে বললেন যে, সেই বুজুর্গ “সান্দাহ” নামক স্থানে অবস্থান করতেছে। তিনি তৎক্ষনাৎ “সান্দাহ” এর উ্েদ্দশ্যে রওনা হলেন, সান্দাহ পৌঁছে হযরত সৈয়্যদ আবদুল হাকিম (رحمة الله) এর সাথে সাক্ষাত করে ধন্য হলেন এবং তাহার নিকট নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, যা তোমার আমানত আমার নিকট ছিল, আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি, তোমর অবশিষ্ট অংশ যা তোমার পাওনা তা হযরত শাহ এনায়েত উল্লাহ ক্বাদেরী (رحمة الله) র নিকট রক্ষিত, তাহার নিকট চলে যাও এবং নিজের অংশ নিয়ে নাও। তিনি বাড়িতে ফিরে আসলেন এবং পিতাকে সব ঘটনা শুনালেন এবং হযরত এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) এর হতে বাইয়াতের অনুমতি চাইলেন। তাঁর পিতা খুশিমনে তাকে অনুমতি দিয়ে দিলেন। কিছু টাকা এবং পাগড়ী তাকে দিলেন হযরত এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله)এর খেদমতে পেশ করতে। 


লাহোর পৌঁছে তিনি হযরত এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) এর খেদমতে উপস্থিত হলেন এবং বাইয়াত গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, হযরত এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) তাকে বললেন, বাইয়াত এইশর্তের উপর করতে পারি, প্রথমে পাচঁশত টাকা নগদ, পাঁচশত টাকার একটা ঘোড়া এবং পাঁচশত টাকা স্বর্ণের কংকনের জোড়া এবং পাঁচশত টাকার একটি পোষাক নিয়ে আস। এ শর্ত শুনে তার আশায় পানি পড়ে গেল, চিন্তা করল যে, শর্ত পূর্ণ করা অসম্ভব ও কঠিন ব্যাপার, আশাহত হয়ে সমুদ্রের দিকে চলে গেলেন, বসে বসে চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন, শেষ পর্যন্ত চিন্তা করলেন যে, সমুদ্রে ডুবে মরে যাব। এখনও সে চিন্তার মধ্যে, চিন্তা শেষ হয় নাই এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি পর্দা ঢাকা অবস্থায় ঘোড়ার উপর আরোহন হয়ে তথায় পৌঁছলেন। আরোহনকারী বললেন, মিয়া সাহেব এককাজ কর, আমি সমুদ্রে গোসল করতে চাই যতক্ষন পর্যন্ত আমি গোসল করব ততক্ষন আমার ঘোড়া ধরে রাখ এবং আমার জিনিষ পত্র গুলো হেফাজত কর। তিনি তা করার জন্য রাজি হয়ে গেলেন, সে ব্যক্তিটির একটি থলে যার মধ্যে পাঁচশত টাকা ছিল এবং স্বর্ণের গহনা কংকনের জোড়া এবং পোষাক ও ঘোড়া সহ তাকে অর্পন করলেন এবং নিজেই সমুদ্রে গোসল করার জন্য চলে গেলেন। তিনি ঐ ব্যক্তির জন্য অনেকক্ষন অপেক্ষা করে বসে রইলেন, যখন সে ব্যক্তি সমুদ্র হতে বের হয়ে আসতেছে না, তখন তিনি চিন্তা করলেন যে,ঐ ব্যক্তি সমুদ্রের মধ্যে ডুবে গিয়েছে, তাই তিনি ওখান হতে শহরের দিকে রওনা হলেন, যখন শহরের মধ্যে প্রবেশ করলেন তখন লোকেরা পোষাক এবং ঘোড়া দেখে একে অপরকে বলতে লাগলেন, এ পোষাক এবং ঘোড়া তো হযরত শাহ এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) এর। তিনি খুশি মনে সেই মালপত্র নিয়ে হযরত শাহ এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) এর খেদমতের মধ্যে উপস্থিত হলেন, হযরত শাহ এনায়েত উল্লাহ কাদেরী (رحمة الله) তাকে দেখে মুসকি হাসি দিলেন এবং তাকে বাইয়াত দ্বারা ধন্য করলেন এবং খেলাফতের পোষাক (খেরক) দান করলেন। কিছু সময়কাল স্বীয় মুরশেদের খেদমতে থেকে ফয়েজ বরকত দ্বারা উপকৃত হয়ে হযরতের পাশে থাকতে লাগলেন এবং ইবাদত ও মোশাহেদার মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। “কচুরের” মধ্যে বসতি স্থাপন করে শিক্ষা-দিক্ষা ও সত্যের প্রচারের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এবং লোকদেরকে সত্য পথ দেখাইতে লাগলেন। তার মুরশেদ থেকে কোন কথার উপর রেগে গেলেন তখন তিনি তার থেকে বেলায়ত চিনিয়ে নিলেন। অত:পর তিনি ঘাওয়ালিয়ায় চলে গেলেন হযরত শেখ মুহাম্মদ গাউছ ঘাওয়ালিয়ারী (رحمة الله) এর মাজার শরীফে উপস্থিত হলেন এবং রূহানী ফয়েজ অর্জন করলেন। কিছুদিন পর তার পীর-মুরশেদ তাঁর উপর খুশি হয়ে গেলেন এবং তাকে পুনরাই বেলায়ত ফিরিয়ে দিলেন।


হযরত শেখ দাউদ (رحمة الله)


তিনি হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (রহমতুল্লাহি আলাইহে)'র সন্তন ছিলেন এবং সে সময় মসনদে ইরশাদে স্থলাবিষিক্ত হয়ে প্রকৃত অর্থে স্বীয় বুজুর্গ পিতা ও মুরশেদের স্থলবিষিক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্বীয় পিতা হযরত মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله) হতে খেলাফত ও অনুমতি দ্বারা উপকৃত হয়ে ছিলেন। আল্লাহ পাক জাল্লাশানুহু তাঁর বরকত মন্ডিত সত্তাকে পিতা ও দাদার স্থানে উপবিষ্ট রাখুন। 


হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله)


তিনি হযরত শেখ আবু সাঈদ (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) এর চাচাত ভাই, খলিফা এবং স্থলাবিষিক্ত ছিলেন। তিনি আহলে ছেমা এবং সুজে ইশকের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন। বড় উচ্চ হিকমত এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি যথেষ্ট মসনদে ইরশাদ ও দীক্ষার উপর বসে মুরিদের শিক্ষা দানে ব্যস্ত ছিলেন।


হযরত শেখ আবু সাঈদ (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ)


তিনি শেখ হযরত শাহ সৈয়্যদ কুতুবুল আলম সৈয়্যাদেনা খাজা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله) এর দৌহিত্র এবং তারই গুপ্ত রহস্যের অধিকারী ছিলেন। তার সম্মানিত মাতা ছাহেবা হযরত শেখ জালাল উদ্দিন তাহানেচুরী (رحمة الله) এর কন্যা ছিলেন। তিনি কিছু সময় নিজের বেলায়ত কে সইচ্ছাই গোপন রেখেছেন। কিন্তু যখন ইশক প্রধান্য পেল তখন নিজের সবকিছু ছেড়ে হযরত শেখ জালালউদ্দিন (رحمة الله) এর সান্নিধ্যে চলে আসলেন, যখন হযরত শেখ জালাল উদ্দিন (رحمة الله) দুর্বল অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তখন তার যাবতীয় কাজ কর্ম হযরত শেয়খ নিজামউদ্দিন বলখী (رحمة الله) কে অর্পন করেছিলেন। অতএব রিয়াজত, মুজাহেদা করার পর তিনি (শেখ সাঈদ) খেলাফতের খিরকা হযরত শেখ সৈয়্যদ নিজামউদ্দিন বলখী (رحمة الله) হতে অর্জন করেন। কিছু দিন পর সে সময়ের কুতুব হযরত শেখ খাজা হামিদ (রহমতুল্লাহি আলাইহে) ও তাকে খেলাফত দান করেন এবং নুরের উপর নুর মিলে গেল। এরপর তিনি “গাংগুহে” ফিরে আসলেন এবং স্বীয় দাদা হযরত খাজা কুতুবুল আলম শেখ আবদুল কুদ্দুস (رحمة الله) এর মসনদে ইরশাদে আধিষ্ট হয়ে মুরিদদের দিক্ষায় লিপ্ত হয়ে গেলেন। তাঁর ফয়েজ ও সান্নিধ্য অর্জন দ্বারা অনেক লোক মসনদে ইরশাদের স্তরে উন্নিত হয়েছেন। (মেরআতুল আসরার)


হযরত মুসা পাক শহীদ (رحمة الله)


তাঁর পূর্ণ নাম সৈয়্যদ আবুল হোসাইন কিন্তু এ বিশ্বমন্ডলের মধ্যে সৈয়্যদ মুসা পাক শহীদ নামে প্রসিদ্ধ। তিনি দশম হিজরী শতাব্দীর মধ্যে প্রসিদ্ধ শহর “উচ্চ” শরীফের মধ্যে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা হযরত সৈয়্যদ হামেদ গঞ্জ বখশ গীলানী উচিঁ (رحمة الله) জ্ঞান, মর্যাদায় অদ্বিতীয় এবং প্রভুর সন্তুষ্টি অন্বেষণে ব্যস্ত ছিলেন। হযরত ম্সুা পাক শহিদ (رحمة الله) এর পূর্ব পুরুষ আলা হযরত শেখ মুহাম্মদ গাউছ জিলানী (رحمة الله) যিনি হযরত গাউছুল আজম শেয়খ আব্দুল কাদের (رحمة الله) এর সন্তান। রোম সম্রারাজ্য হতে খোরাসানের রাস্তা “উচ্চ” শরীফে বসতি স্থাপন করেন। তার বুজুর্গী, শরাফত এবং জাহেদ ও খোদাভীতি কশফ- কারামত এবং রূহানী ফয়েজের পরিচিতি দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। হযরত সৈয়্যদ মুসা পাক শহীদ (رحمة الله)কে খোদার পক্ষ থেকে পাহাড় সমপরিমান অনেক উচ্চ গুনে গুনান্বিত করা হয়েছে। অতএব তিনি সমস্ত আক্ষরিক এবং কোরআন ও হাদিস শরীফের মধ্যে বাল্যকাল হতে অতি অল্প সময়ে পান্ডিত্ব অর্জন করেছিলেন। এরপর ইলমে বাতেনীর মধ্যে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে লাগলেন। পিতা যখন দেখলেন তাঁর উজ্জল দৃষ্টি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শিক্ষা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তখন হযরতকে জামাল উদ্দিন আবুল হোসেন দ্বারা সম্বোধিত করলেন। তাঁর পিতা তাঁর প্রতি অগাধ ভালবাসা রাখতেন, নিজের জীবধশ্যায়ই তাঁর মসনদ ও মসল্লার উত্তরাধিকারী করে দেন। তাঁর বড় ভাই সাজ্জাদানশীনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যাপারে হয়েছিলো। তাঁর সান্নিধ্যে সে সময়ের বড় বড় ওলামা, ফুজলা এবং আরেফগণ এসে বসতেন এবং তিনি জটিল জটিল সমস্যা এবং সু² মাসলার অতি সু² দৃষ্টিতে সমাধান করে দিতেন। যে সমস্ত বুজুর্গগণ তার নিকট বাইয়াত হয়েছেন তাদের মধ্যে হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله)এর নাম উলে­খযোগ্য। হযরত মুসা পাক শহীদ (রহমতুল্লাহি আলাইহে)কে হুজুর সৈয়্যদেনা গাউছে পাক (رحمة الله) এর উপর অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল, সব সময় তাঁর স্মরনের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। তাঁর সাথে অনেক বার নিদ্রায় বা জাগ্রতবস্থায় হুজুর সৈয়্যদুল কাওনাইন  রাসূল (ﷺ) এর দিদার নচিব হয়েছে। তার সময়কাল বড় ফেতনা ফসাদের যুগ ছিল, সবদিকে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, দেশের মধ্যে অভাবের সময় অতিবাহিত হচ্ছিল, সন্ত্রাস ও ডাকাত দেশের মধ্যে রাজ্য কায়েম করেছিল। এ সন্ত্রাসিদের একদল হযরত মুসা পাক শহীদ (رحمة الله)এর মুরিদদের বস্তিতে আক্রমন করতে লাগল। এ সংবাদ যখন তাঁর নিকট পৌঁছল তখন তিনি তাদের ধ্বংসের বদদোয়া করলেন এবং সন্ত্রাস ও ডাকাতদের আক্রমনের জবাব দেওয়ার জন্য তিনি একাকি রওনা হলেন। যখন তার আসার খবর শুনল তখন সন্ত্রাসিরা পালিয়ে গেল, কিন্তু একজন বদ বখত নিকৃষ্ট যিনি লংগা গোত্রের সাথে সম্পর্ক রাখতেন হযরতের হাটুর উপর তীর নিক্ষেপ করল, যার কারণে সেখানেই হযরতের রূহ চলে গেল অর্থাৎ শহীদ হলেন। অতএব তিনি ৫৮ বছর বয়সে ২৩ শে শাবান ১০১০ হিজরী সনে শহীদ হলেন এবং তার পিতার কদমের পাশে পরকাল জীবনের স্থান পেল অর্থাৎ দফন করা হয়েছে। কিন্তু তার পিতার পক্ষ থেকে তার ছেলেদেরকে স্বপ্নের মধ্যে বলা হল যে, তোমরা একজন কুতুবে ইরশাদ কে আমার কদমের মধ্যে দফন করে দিয়েছ এবং তোমাদের এ কাজের দ্বারা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তাকে তার শাহজাদাগন মুলতানে মনগা স্থানের পাশে দফন করেলেন এবং তারাও মুলতানে অবস্থান করতে লাগলেন। এ ঘটনার পনের ষোল বছর পর তাঁর এক শাহাজাদা সৈয়্যদ হামেদ গঞ্জ বখশ তাঁর কবরের “তাবুত” দ্বিতীয় দফা মুলতানে পরিবর্তন করলেন, এতে দীর্ঘ সময় অতিক্রম করার পরেও তাঁর লাশ মোবারক অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল - সুবাহানাল্লাহ।


হযরত শাহ আলী (رحمة الله)


তাঁর নাম মোবারক শাহ আলী মুহাম্মদ, উপাধি শের শাহ, দশ শতাব্দী হিজরী সনের মাঝামাঝি সময়ে নিজদেশ হতে মুলতানে তাশরীফ এনেছেন এবং সিলসিলার উদ্দেশ্যে “উচ্চ” শরীফে আস্তানা স্থাপন করেন। হযরত মুহাম্মদ গাউছ বন্দেগী গিলানী (রহমতুল্লাহি আলাইহে) এর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন এবং মুরশেদের হুকুম অনুযায়ী সমুদ্রের পাশে প্রায় বার বছর যাবৎ রিয়াজত ও মুজাহেদা করেছেন, যে স্থানের উপর হযরত চিল্লা করেছেন  তা এখনো পর্যন্ত চাহে চিল্লা ওয়ালা নামে প্রসিদ্ধ। তার থেকে অনেক খাওয়রেক ও কেরামত প্রকাশ পেয়েছে। অসংখ্যা কেরামত প্রকাশ হওয়ার কারণে লাখো মানুষ তার মুরিদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে খোদার সৃষ্টির খেদমতে পাগল হয়েছিলেন। দরিদ্র-অসহায় যারা খাদ্যের অন্বেষণে জায়গায় জায়গায় কাজ-কর্ম করেন এবং এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে, তাদের সেবা করেন। স্বভাব অনুযায়ী তার এমন পর্যন্ত সেবার অভ্যাস ছিল যে, প্রত্যেক রাতে কর্মসূচি অনুযায়ী চলি­শ জন ফকিরের পা টিপতেন। একরাতে একত্রে চলি­শ জন ফকির হতে একজন কম হল, তিনি স্বীয় কাজের অভ্যাস অনুযায়ী সংখ্যা পূর্ণের জন্য একটি কুকুরের যা এদিক সেদিক খাদ্য অন্বেষণে ঘুরাফেরা করে সেটির পা টিপতে শুরু করে দিলেন। এর থেকে পৃথক হয়ে নিজের বিছানায় আসলেন তখন এক ব্যক্তি অদৃশ্য হতে প্রকাশ হলেন, যার হাতে ভাতের একটি থালা এবং পানির একটি গ্লাস ছিল। এ দুটি জিনিষ তাকে প্রদান করে, এমন সুসংবাদ দিলেন তাঁর চিল্লা আল্লাহর দরবারে গ্রহন যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এ খানাপিনা বেহেশত হতে আনা হয়েছে। এবং এগুলি খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলেন। হযরত শাহ আলী (رحمة الله) তাবাবরুক হতে কয়েক লোকমা খেয়ে শুকরের সিজদা আদায় করলেন। এরপর তাকে কিছু স্বর্ণ মুদ্রা দিলেন, তিনি বললেন আমার দুনিয়ার কোন সোনা রূপার চাওয়া পাওয়া নেই। যখন ঐ অদৃশ্য ব্যক্তি বেশী বেশী জোর করতে লাগলেন, তিনি পনেরটি মুদ্রা গ্রহন করলেন। অতপর ওই ব্যক্তি এটা বলে অদৃশ্য হয়ে গেলেন যে, আপনার পরবর্তী বংশধর এ মুদ্রা প্রত্যেক দিন পেতে থাকবে। রূহানী ও ধর্মীয় সম্পদ ছাড়াও আল্লাহপাক তাকে সন্তানের সম্পদ দ্বারা ধন্য করেছেন। কবর শরীফ সমুদ্রের পার্শ্বে শের শাহ স্থানে অবস্থিত। সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে তার কবর ভেঁঙ্গে গিয়ে ছিল, তখন তাবুত হতে লাশ মোবারক চাহচিল্লায় স্থানে দফন করে দিলেন। দ্বিতীয় বার দফনের সময় অনেক লোক যিয়ারত করে ছিলেন এবং  লাশ মোবারক সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। (আউলিয়ায়ে মুলতানে)


হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)


হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) হযরত শেখ সাইফুদ্দিন (رحمة الله) র বংশধর ছিলেন। তিনি মুহাররামুল হারাম মাসে ৯৫৮ হিজরী অনুযায়ী ১৫৫১ খ্রিষ্টব্দে দিল্লীতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা, লালন-পালন এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের মধ্যে তাঁর পিতার নির্দিষ্ট ভূমিকা অগ্রগন্য। তার পিতার পীর ও মুরশেদ ছিলেন হযরত শেখ আমান উল্লাহ পানিপতি (رحمة الله)। শেখ মুহাক্কেক দেহলভী (رحمة الله) প্রত্যেক বিষয়ে অর্থাৎ মাকুলাত ও মনকুলাতে পরিপূর্ণ দক্ষতা ও পান্ডিত্ত অর্জণ করেছেন। সারা জীবন তিনি একহাতে শরীয়ত এবং অন্য হাতে হাকিকতের পতাকা উড্ডয়ন করেছিলেন। হযরত শেখ মুহাক্কেক (رحمة الله)এর মাশায়েখে ইজাম বুুযুর্গানে কেরামদের প্রতি অসীম ভালবাসা রাখতেন এবং তাঁদের সান্নিধ্যে বসে রূহানী ও ইলমী ফয়েজ ও বরকত দ্বারা উপকৃত ও পরিপূর্ণ হতে অনেক উৎসাহী ছিলেন। অতএব তিনি রূহানী স্বাদ পরিপূর্ণ করার জন্য হযরত সৈয়্যদুনা মুসা পাক শহীদ মুলতানী (رحمة الله) এর দামান ধরলেন। হযরত মুসা পাক শহীদ (رحمة الله) হযরত শেখ দেহলভী (رحمة الله) কে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন। শেখ আবদুল হক দেহলভী (رحمة الله) ৯৪ বছর বয়সে ১০৫২ হিজরী সনে মৃত্যুবরণ করেন। মাজার শরীফ দেহলভীর মধ্যে। অন্য কোন কিতাবে তাঁর জীবনী লেখা হবে ইনশা আল্লাহ।


শাজারায়ে ছাবেরীয়া তথা গ্রন্থকারের শাজারাহ সহ


১। হযরত শায়খুল মাশায়েখ ওয়াল আউলিয়া মাখদুম আলাউদ্দিন আলী আহমদ ছাবের (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) ওফাত শরীফ ১৩ই রবিউস্সানী ৬৯০ হিজরী সনে। মাজার শরীফ মাহারানপুর রদলু নামক স্থানে। তিনি পীরানে কলয়র নামে প্রসিদ্ধ। তাঁর খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ শেখ শামসুদ্দিন তুর্ক পানিপতি (رحمة الله)।


২। হযরত শায়খুল মাশায়েখ, শেখ শামসুদ্দিন তুরক পানি পতি (রাহমতুল্লাহি আলাইহে) তার ওফাত ১৯শে, শাবানুল মুয়াজ্জাম ৭০৫ হিজরী সনে, পানিপতি নামক স্থানে তাঁর মাজার শরীফ, তার খলিফা হযরত মাখদুম শেখ কবিরুল আউলিয়া পানি পতি (রাহমতুলল্লাহি আলাইহে)।


৩। হযরত শেখ মাখদুম জালাল উদ্দিন কবিরুল আউলিয়া পানি পতি (رحمة الله) ১৩ই রবিউল আউয়াল শরীফে ৭৬৫ হিজরী সনে ওফাত হয়েছিলেন। পানিপথের মধ্যে তাঁর মাজার শরীফ। তাঁর খলিফাদের মধ্যে হলো শায়খুল মাশায়েখ হযরত খাজা আবদুল কুদ্দুস আল কাদেরী (রাহমতুল্লাহি আলাইহে) হযরত খাজা ইবরাহীম (رحمة الله), হযরত খাজা শিবলী (رحمة الله) সাজ্জাদানশীন, হযরত খাজা করিম উদ্দিন (রাহমতুল্লাহি আলাইহে), হযরত খাজা  আবদুল ওয়াহেদ (رحمة الله), পীরান হযরত শেখ আহমদ আবদুল হক তোশা রদলভী (رحمة الله), হযরত শেখ বাহরাম চিশতী (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ মাহমুদ (رحمة الله), হযরত শেখ আহমদ কলন্দর (رحمة الله), হযরত শেখ শিহাব উদ্দিন (রাহমতুল্লাহি আলাইহে), হযরত সৈয়্যদ মুসা বাহারী (رحمة الله), হযরত কাজী মুহাম্মদ আউলিয়া (رحمة الله), হযরত শেখ হাসান ভরনাপুরী, হযরত শেখ শোয়াইব (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুছ ছমদ ছানামী  (رحمة الله), হযরত শেখ সিরাজুদ্দিন (رحمة الله), হযরত শেখ পীর গিহসা (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ মাহমুদ সানী (رحمة الله), হযরত পীর সেমা উদ্দিন কিরানোভী (رحمة الله)।


৪। হযরত শায়খুল মাশায়েখ আহমদ আবদুল হক রদলভী (رحمة الله) ওফাত ১৫ই জমাদিউস সানী ৮৩৭ হিজরী অথবা ৮৩০ হিজরী সনে। মাজার পাক রদলভীর মধ্যে। হযরত শেখ আরেফ, হযরত শেখ আবুল ফাতাহ, হযরত খাজা আজিজ (رحمة الله) তাহার শাহাজাদা মিরা ফরিদ হযরত শেখ বখতিয়ার (رحمة الله) ইত্যাদি তাঁর খলিফা।


৫। হযরত শেখ আরেফ চিশতী (رحمة الله) তাহার ওফাত ২১শে শাবান আল মোয়াজ্জমের ৮৫৯ হিজরী সনে। মাজার পাক রদলভীর মধ্যে। হযরত শেখ মুহাম্মদ (رحمة الله) এবং তাঁর শাহাজাদাগণও প্রত্যেকের মতে তাঁর খলিফা।


৬। হযরত শেখ মুহাম্মদ ইবনে আরেফ চিশতী (رحمة الله) তার ওফাত১৮ই ছফরুল মোবারক ৮৯৮ হিজরীর মধ্যে। মাজার পাক রদলভীর মধ্যে। হযরত মাওলানা আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী (رحمة الله) তাঁর খলিফা।


৭। হযরত শায়খুল মাশায়েখ সৈয়্যদুনা আবদুল কুদ্দুস গাঙগুহী নোমানী (رحمة الله) ইমাম আজম আবু হানিফা (رحمة الله) এর বংশদরদের থেকে, এ জন্য তাঁকে নোমানী বলা হয়। তার ওফাত ২৩শে জমাদিউল উখরা ৯৪৫ হিজরী সনে। তার পবিত্র মাজার গাংগুহ নামক স্থানের মাহারানপুরের অর্ন্তভুক্ত। তার শাহাজাদা গন হলো শেখ ওমর (رحمة الله) হযরত শেখ আবদুল গফুর আজম পুরী (رحمة الله), হযরত শেখ বাহুর (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুল কাবির যিনি প্রসিদ্ধ বালাপীর (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুন নবী (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ জালাল তাহানছুরী (رحمة الله), হযরত শেখ রুকনউদ্দিন (رحمة الله) এরা সবাই তাহার শাহাজাদা, হুমায়ুন বাদশাহ তাঁর খলিফা।


৮। হযরত শেখ জালাল উদ্দিন তাহনছুরী (رحمة الله) তাঁর ওফাত ৪-৩-১৪ই জ্বিলহজ্ব ৭৮৯ অথবা ৯০৯ হিজরী সনে জুমার দিন। মাজার শরীফ তাহানোচুরের মধ্যে। হযরত শায়খুল মাশায়েখ নিজাম উদ্দিন বলখী  (رحمة الله) হলেন তাহার খলিফা।


৯। হযরত নিজামউদ্দিন বলখী (رحمة الله)  তাঁর ওফাত ৫ অথবা ৮ই রজবুল মোরাজ্জব১০৬২ হিজরী সনে অথবা ১০৬৫ হিজরী সনে। মাজার শরীফ বলখের মধ্যে তার খলিফাগন হলো- হযরত শেখ আহমদ সাঈদ গাংগুহী (رحمة الله), হযরত মুহাম্মদ সাঈদ (رحمة الله), হযরত শেখ হাসান (رحمة الله), হযরত অলি মুহাম্মদ নারনুলী (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদুল্লাহ বখশ (رحمة الله), শেখ আবদুল করিম বন্দেগী (رحمة الله), শেখ আল্লাহ দাদ (رحمة الله), শেখ দোস্ত মুহাম্মদ আবদুল ফাতাহ (رحمة الله), হযরত আবদুর রহমান কাশমীরি (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ কাসেম (رحمة الله), হযরত হাজী আবদুল হক আউয়াল (رحمة الله), কাজী সালেম (رحمة الله), হযরত শেখ ছাদেক (رحمة الله), হযরত শেখ জানউল্লাহ (رحمة الله), আবদুল হক সানী (رحمة الله), হযরত শেখ ইসমাঈল (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) এ সকল হযরাত তার সম্মানিত খলিফা।


১০। শায়খুল মাশায়েখ ছাবেরী নোমানী (رحمة الله) তিনিও হযরত ইমাম আজম (رحمة الله) এর সন্তানদের অর্থাৎ বংশের মধ্য হতে। ওফাত ১লা রবিউস সানী ১০৫৯ হিজরী সনে। তার মাজার শরীফও গাংগুহায়। তার খলিফাগণ হলেন- হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله), হযরত শেখ মুহিবুল্লাহ (رحمة الله), হযরত শেখ হাবিবুল্লাহ (رحمة الله), হযরত শেখ খাজা পানি পতি (رحمة الله), হযরত শেখ ইব্রাহিম সাহারানপুরী (رحمة الله), হযরত শেখ ইবরাহীম রামপুরী (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ রামপুরী (رحمة الله), তার খলিফা হযরত শেখ মুহাম্মদ দেহলভী (رحمة الله), তার খলিফা শাহ নাছির (رحمة الله), তোকা জিকরুল্লাহ শাহ (رحمة الله), হযরত শাহ গোলাম সাদাত ছাবেরী আলী উরফে মিয়া ছাবের বখশ দেহলভী (رحمة الله) তাঁর খলিফা পীরজি সৈয়্যদ আবদুল্লাহ দেহলভী (رحمة الله)।


১১। হযরত শেখ মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله) তাঁর ওফাত ১৮ই মুর্হারামুল হারাম ১০৫৮ হিজরী সনে, তার মাজার শরীফ গাংগুহায়। তাঁর খলিফাদের মধ্যে হযরত শেখ দাউদ (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুল হক (رحمة الله), হযরত শেখ গাংগুহী (رحمة الله), হযরত শেখ ইবরাহীম (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুস সোবহান (رحمة الله), হযরত শেখ ইউচুফ ইলা (رحمة الله), হযরত আবদুল জলিল (رحمة الله), হযরত শাহ জামাল (رحمة الله), হযরত শেখ মোবারক (رحمة الله) সবই তাঁর খলিফা।


১২। হযরত শেখ দাউদ ইবনে খাজা মুহাম্মদ ছাদেক (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) তাঁর ওফাত ৫ই রমজানুল মোবারক ১০৯৫ হিজরী সনে। তার মাজার শরীফ গাংগুহায়। হযরত শাহ আবুল মায়ালী (رحمة الله), হযরত শেখ সুন্দাহা (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ গরিবুল্লাহ (رحمة الله), হযরত শেখ আবদুল কাদের (رحمة الله), হযরত শেখ বালক্বী (رحمة الله),  ইত্যাদি, এরা সবাই তাঁর খলিফা।


১৩। হযরত শাহ আবুল ময়ালী (رحمة الله), তাঁর ওফাত ৮ই রবিউল আউয়াল ১১১৬ হিজরী সনে। তার মাজার শরীফ আনটিয়ার মধ্যে। হযরত শাহ মীরাবেগ (رحمة الله) তাঁর খলিফা।


১৪। হযরত সৈয়্যদ শাহ মীরাবেগ (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) তাঁর আসল নাম সৈয়্যদ আবদুর রহমান, ওফাত ১০ই রমজানুল মোবারক ১১৩১ হিজরী সনে। তাঁর মাজার শরীফ কচবা গিরামে। তার খলিফাগণ হলেন- হযরত সৈয়্যদ ছালেম (رحمة الله), হযরত শাহ মুহাম্মদ বাকের (رحمة الله), হযরত শাহ ইমাম উদ্দিন (رحمة الله), হযরত শাহ নিজাম উদ্দিন (رحمة الله), হযরত শাহ মুহাম্মদ হায়াত (رحمة الله), হযরত শাহ আবেদ (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ আবদুল মোমিন (رحمة الله), হযরত শাহ নিয়ামত উল্লাহ (رحمة الله), হযরত শাহ নুরঙ্গ (رحمة الله), হযরত পীর শাহ শেখ জিওয়ান (رحمة الله), হযরত শেখ আমান উল্লাহ (رحمة الله), হযরত খাজা মোজাফ্ফর নাওয়াব রওশন দৌলা (رحمة الله), হযরত নাওয়াব বাহকারী খাঁন (رحمة الله), হযরত জুফর খাঁন মিয়া (رحمة الله), হযরত বান্দাহ সৈয়্যদ মুহাম্মদ মুকিম (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ তক্বি গীরদীরি (رحمة الله),  হযরত সৈয়্যদ গোলামুল্লাহ (رحمة الله), হযরত মিয়া মুহাম্মদ শাহ (رحمة الله), হযরত মুহাম্মদ মুরাদ (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ গোলাম মুহাম্মদ (رحمة الله), ছায়েমুদ দাহার হযরত শাহ বাহাউল (رحمة الله), হযরত হাজী বায়তুল্লাহ (رحمة الله), হযরত মিয়া করম আলী (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ হায়াত (رحمة الله), হযরত শাহ আবদুর রহমান (رحمة الله), হযরত শাহ এনায়ত (رحمة الله), হযরত মিয়া মুসা খাঁন (رحمة الله), হযরত মৌলভী গোলাম হোসাইন (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ ছানী (رحمة الله), হযরত মুহাম্মদ আফজল (رحمة الله), হযরত মিয়া মুহাম্মদ আফজল (رحمة الله), হযরত শেখ চাহজু (رحمة الله), হযরত মুহাম্মদ জাহের (রহমতুল্লাহি আলাইহে), মিয়া মুহাম্মদ আফজল খাঁন (رحمة الله), হযরত শেখ মুহাম্মদ শের (رحمة الله), হযরত জাফর আলী খাঁন (رحمة الله), হযরত মিয়া ইলাহ বখশ (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ আলিমুল্লাহ (رحمة الله), ইত্যাদি বুজুর্গগণ তাঁর খলিফা।


১৫। হযরত খাজা মুহাম্মদ সালেম (رحمة الله) তাঁর ওফাত ১০৫১ হিজরী সনে। মাজার মোবারক রুপড় এর মধ্যে।  হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ আজম হাসনী রুপড়ী (رحمة الله) তার খলিফা। 


১৬। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ হাসানী রুপড়ী (رحمة الله) তাঁর ওফাত ১৯শে রবিউল আউয়াল শরীফ ১২৩৭ হিজরী সনে, তার মাজার শরীফও রুপড় এলাকার মধ্যে। হাফেজ মুহাম্মদ মুসা মালেক পুরী (رحمة الله) তাঁর খলিফা।


১৭। হযরত হাফেজ মুসা চিশতী ছাবেরী মালেক পুরী (رحمة الله), তাঁর ওফাত ১৬ই রমজানুল মোবারক ১২৪৭ হিজরী সনে রোজ সোমবার মালেক পুরে তাঁর মাজার শরীফ। তাঁর খলিফাগণ হলো পীর শাহ ছাহেব সাজ্জাদাহ হযরত গোলাম মঈনুদ্দিন মারুপ বিহী শাহ খামুশ (رحمة الله), হযরত হাফেজ হাসন (رحمة الله), প্রসিদ্ধ নাম ছিল হাফেজ বাংক, হযরত মীর আমানত আলী আমরুহী (رحمة الله), হযরত খাজা মুহাম্মদ বখশ সাহাগে ওয়ালে মুহাম্মদ শাহ (رحمة الله) তার সম্মানিত খলিফা।


১৮। হযরত শাহ সৈয়্যদ মাওলানা আমানত আলী আমরূহী (رحمة الله), তাঁর ওফাত ১৯শে জ্বিলক্বদা ১২৮০ হিজরী সনে, মাজার শরীফ আমরুহা মুরাদাবাদে। তার খলিফা হযরত শাহ গোলাম হাইদর আমরুহী (رحمة الله), তার ওফাত শরীফ ২১শে জুমাদিউল উখরা ১২৯৮ হিজরী সনে, মাজার শরীফ আমরুহায় মুরাদাবাদে, তার খলিফা শায়খুল মাশায়েখ হযরত শাহ সৈয়্যদ মাওলানা মোখতার আহমদ (رحمة الله), তার ওফাত ৩রা জ্বিলহজ্ব ১৩৪৫ হিজরী সনে, মাজার শরীফ আমরুহায় মুরাদাবাদে। তার খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ সনদুল আরেফীন সৈয়্যদেনা মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ খলিল কাজেমী (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) তাঁর ওফাত ২৮শে রমজানুল মোবারক, মাজার শরীফ আমরুহা মুরাদাবাদে। তার সুযোগ্য খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ রইসুল মুফাচ্ছেরীন সনদুল মুহাক্কেকীন শামসুল আরেফীন সৈয়্যদেনা মাওলানা মুরশেদুনা সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী আমরুহী মুলতানী (رحمة الله) তার ওফাত শরীফ ২৬শে রমজানুল মোবারক ১৪০৬হিজরী সনে মাগরীব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে।


▪গাজ্জালিয়ে জমান আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (رحمة الله) এর সংক্ষিপ্ত বংশিয় সিলসীলার পরিচয়:


সংক্ষেপে তার বংশিয় সিলসীলা হল এই, তিনি বংশিয় সূত্রে গিয়ে হযরত সৈয়্যদেনা ইমাম মুসা কাজেম (رحمة الله) পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তাঁর শুভজন্ম ১৯১৩খ্রিঃ আমরুহার মুরাদাবাদের সৈয়্যদেনা মুহাম্মদ মুখতার  কাজেমী (রা:)’র ঘরে। পিতার ভালবাসা হতে তিনি ছোট বেলায় বঞ্চিত হন অর্থাৎ এতিম হন সমস্ত শিক্ষা ও লালন-পালন স্বীয় সম্মানিত বড় ভাই মুহাদ্দেসে জলিল হযরত মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ খলিল কাজেমী (رحمة الله) হতে অর্জন করেন, এদিকে তিনি মাদরাসায়ে বাহরুল উলুম শাহজানপুর এর মুদাররিস ছিলেন এবং ছোট ভাই হযরত আল্লামা কাজেমী (رحمة الله)কে সর্বদা নিজের সাথে রাখতেন। হযরত আল্লামা কাজেমী (رحمة الله) পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের পর তার থেকে হাদিসের সনদ অর্জন করেন এবং তার হাতেই বাইয়াত গ্রহন করেন এবং তরীকতের অনুমতি ও খেলাফত প্রাপ্ত হয়ে ধন্য হন। তিনি ছাড়াও শায়খুল ইসলাম বদরুল আনাম হযরত মুফতি আজম হিন্দ মাওলানা আল্লামা মোস্তফা রেজা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) ইবনে মুজাদ্দেদুল উম্মাহ কাশেফুল গুম্মাহ সৈয়্যদুনা আল্লামা ইমাম শাহ আহমদ রেজা খাঁন (رحمة الله) হতেও তিনি তরিকায়ে কাদেরীয়া রাজ্জাকিয়া রেজভীয়া বরকতিয়া নুরীয়ার খেলাফত ও ইজাজত অর্জন করেন। রহমতুল্লাহি তায়ালাালাইহিম আজমাইন- (তাজকেরায়ে আবরারে মিল্লাত)


হাকির ফকির লেখকের খেলাফত ও ইজাজতের বর্ণনা


লেখক, ফকিরকে গজ্জালিয়ে জমান, রাজিয়ে দওরান, মুহাদ্দেসে আজম, সনদুল মুহাদ্দেসীন, শামসুল আরেফীন, আল্লামা মাওলানা মুরশেদুনা,    ওস্তাজুনা শাহ সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) হতে চার তরিকা তথা কাদেরীয়া, চিশতীয়া, সরওয়ার্দিয়া, নকশবন্দীয়ায় বাই‘য়াত ও ইজাজত প্রদান করেন। আল্লাহর দয়া মেহেরবানীতে আর তা হচ্ছে ২৫শে শাওয়ালুল মোর্কারম ১৩৮৬ হিজরী সনে। এ ছাড়াও লেখককে আক্বায়ে নেয়ামত হুজ্জাতুল ইসলাম, দলিলুল আরেফীন, হযরত আল্লামা মুফতি আজম হিন্দ মোস্তফা রেজা খাঁন বেরলভী কাদেরী বরকতি নুরী (رحمة الله) হতেও খেলাফত, ত্বরিক্বায়ে রেজভীয়া মোস্তফীয়া অর্জিত হয়েছে ২৩শে রবিউল আখের ১৩৮৯ হিজরী সনে। হুজুর সৈয়্যদুনা মুফতি আজম হিন্দ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহে) এর ওফাত শরীফ ১৪ই মুহাররামুল হারামের রাতে অর্থাৎ ১১ই নভেম্বর রাত ১টা ৪০মিনিট ১৯৮১ খ্রিঃ বুধবার ১৪০০ হিজরী সনে।


গ্রন্থকারের সিলসিলা সমূহের শজরা বর্ণনা


গ্রন্থকারের তরিকায়ে সরওয়ার্দিয়া কুদ্দুসিয়া সাঈদীয়া যার বর্ণনা হচ্ছে- মুহাম্মদ আজিজুল হক তিনি ইজাজত প্রাপ্ত খলিফা হলেন- হযরত সৈয়্যদেনা, মোরশেদুনা, মাওলানা ওয়াসিলাতুনা ইলাল্লাহেছ ছমদ সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (কাদ্দাছা র্ছিরুহুল আজিজ) হতে, তিনি খলিফা হলেন হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ খলিল কাজেমী আমরুহী (رحمة الله) এর হতে, তিনি খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা সৈয়্যদ মোখতার আহমদ কাজেমী (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ গোলাম হাইদার আমরুহী (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ মাওলানা আমানত আলী শাহ ছাহেব (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ হাফেজ মুসা মাঙ্গপুরী (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আজম রুপুড়ী (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা হযরত শাহ সালেম রুপড়ী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ বেগমীরা টুছকুভী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শাহ আবুল মায়ালী অম্বেটুভী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ দাউদ গাঙগুহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ ছাদেক গাঙগুহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শাহ আবু সাঈদ গাঙগুহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত খাজা নিজাম উদ্দিন বলখী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত মাওলানা জালাল উদ্দিন তাহনুসুরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত খাজা কুতুবুল আলম শেখ আবদুল কুদ্দুস নোমানী গাঙগুহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ দরবেশ ইবনে মুহাম্মদ কাসেম আওদাহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ বদহন বড়াউচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আজমল বড়ায়ুচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত মাখদুম জাহানিয়া জাহাগস্ত (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন বোখারী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ রুকনুদ্দিন আবুল ফাতাহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ ছদর উদ্দিন (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ বাহাউদ্দিন জাকরিয়া মুলতানি (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত ইমামুত তরিকত শেখ শেহাবউদ্দিন সহরয়ার্দি (رحمة الله)  এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ জিয়াউদ্দিন আবুন নজিব সরওয়ার্দি (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ ওয়াজিহ উদ্দিন আবদুল কাদের (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবু মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আহমদ দ্বীনুরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ উলু মমশাদ দীনুরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুত্ তোয়েফা জোনাঈদ বোগদাদী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ র্সিরে সকতি (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ মারুফে করখী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ দাউদ তায়ী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ খাজা হাবিব আজমী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত খাজা হাসান বছরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা আমিরুল মোমেনীন হযরত শেরে খোদা আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহুল করিম (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা সৈয়্যদুল মোরসালিন খাতেমুন নবীয়িন মুহাম্মদ মোস্তাফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়ালা আলেহী ওয়াছহাবী ওয়াসাল্লালাম এর।


গ্রন্থকারের সিলসিলায়ে কাদেরীয়া কুদ্দুসীয়া সাঈদীয়া


হযরত শায়খুল মাশায়েখ কুতুবুল আলম শেখ আবদুল কুদ্দুস নোমানী গাংগুহী (رحمة الله), (উলে­খ্য যে শেখ আব্দুল কদ্দুছ (رحمة الله) এর থেকে লেখক পর্যন্ত পূর্বের শজরার ন্যায় থাকবে এখানে শেখ আব্দুল কদ্দুছ (رحمة الله) এর থেকে উপরে কাদেরীয়া শায়খদের বর্ণনা) তিনি খলিফা  হযরত শেখ দরবেশ ইবনে মুহাম্মদ কাসেম আওদাহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা সৈয়্যদ বদহন বড়ায়ুচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আহমদ বড়ায়ুচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ মাখদুম জাহানীয়া জাহগস্ত (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন বোখারী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ ওবাইদ ইবনে ঈসা (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুল মোকাররম ফাজেল (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ শামসুদ্দিন আবুল গাইব (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ শামসুদ্দিন আলী আফলাহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ শামসুদ্দিন হাদ্দাদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত ইমামুল আউলিয়া শেখ সৈয়্যদ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত আবু ছালেহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত মুসা জঙ্গী দোস্ত (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আবদুল্লাহ জিলী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইয়াহিয়া জাহেদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ মুসা মাওরেছ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ দাউদ মাওরেছ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ মুসা আল জোন (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আবদুল্লাহ মহজ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত ইমাম হাসান মুসান্না (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত ইমাম হাসান (আলাইহি রাহমাত) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা আমিরুল মোমেনীন শেরে খোদা আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা শফিউল মোজনেবিন মুহাম্মদ মোস্তাফা আহমদ মোজতবা সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর, তিনি হযরত সৈয়্যদুনা জিবরাইল (আঃ) এর, তিনি মাবুদে কায়েনাত খালেক কুল কৌন ও মকান ওয়াহদাহু লা-শরীকে এর।


গ্রন্থকারের সিলসিলায়ে কাদেরীয়া ইব্রাহীমিয়া সাঈদীয়া


হযরত শায়খুল মাশায়েখ কুতুবুল আলম খাজা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী নোমানী (رحمة الله), তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদেনা ইব্রাহীম হাসানী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শাহ মুসা (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আহমদ জিলী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবদুল কাদের (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ মুহাম্মদ হাসান (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুন নছর (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবু ছালেহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা ইমামুল আউলিয়া হযরত সৈয়্যদেনা শায়েক সৈয়্যদ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী হাসানী হুসাইনী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবু সাঈদ মাখজুমী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুল হাসান করশী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ আবুল ফরাহ তরতুসী (رحمة الله)  এর, তিনি হযরত শেখ আবদুল ওয়াহেদ ইবনে আবদুল আজিজ তামীমি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ আবু বকর শিবলী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ সৈয়্যদুত্ ত্বায়েফা জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ সিররে সকতি (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ মারুফ কারখী (رحمة الله) এর, তিনি হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ ইমাম মুসা কাজেম (رحمة الله) এর, তিনি হযরত ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله) এর, তিনি হযরত শেখ ইমাম মুহাম্মদ বাক্বের (رحمة الله) এর, তিনি হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুশ শোহাদা সৈয়্যদুনা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর, তিনি হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা আমিরুল মোমেনীন ও খলিফাতুল মুসলেমিন আলী মক্বাম সৈয়্যদুনা আলী মরতুজা (رحمة الله) এর, তিনি হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা শফিয়েনা রহমতুলি­ল আলামিন মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর, তিনি মাবুদে কায়েনাত রাব্বুল ইজ্জাত জল্লা মাজদুহু এর খলিফায়ে আজম।


সিলসিলায়ে চিশতীয়া নিজামিয়া সাঈদীয়া


হযরত সুলতানুল মাশায়েখ খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (رحمة الله) তাঁর খলিফা হযরত শেখ ছদরউদ্দিন তৈয়্যব দিলহা (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত শেখ আফলাহ (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত শেখ সাদ উল্লাহ (رحمة الله) এর, তাঁর খলিফা শেখ দরবেশ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত শায়খুল মাশায়েখ খাজা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله) এর থেকে লেখক পর্যন্ত পূর্বের ন্যায় চালিত হবে।


সিলসিলায়ে চিশতীয়া গীসুদরাজিয়া


হযরত সুলতানুল মাশায়েখ খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (رحمة الله), তাহার খলিফা হযরত খাজা নাছির উদ্দিন রওশন চেরাগ দেহলী (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীসুদরাজ (رحمة الله), তাঁর খলিফা সৈয়্যদ ছদর উদ্দিন (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত মিয়া হাকিম আওদাহী (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত শেখ দরবেশ ইবনে কাসেম আওদাহী (رحمة الله), তাঁর খলিফা হযরত খাজা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله)।


সিলসিলায়ে নেজামিয়া কুদ্দুসিয়া সাঈদীয়া


হযরত সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন বোখারী (رحمة الله), তিনি খলিফা হযরত খাজা নাছির উদ্দিন রওশন চেরাগ দেহলী (رحمة الله) এর এবং  দ্বিতীয় ত্বরিকা হতে হযরত শেখ হুমাইদুদ্দিন সমরকন্দি (رحمة الله) হতেও, তিনি খলিফা হযরত শেখ শামসুদ্দিন ইবনে আবু মুহাম্মদ ইবনে মাহমুদ ইবনে ইব্রাহীম আদহাম (رحمة الله) এর। 


হযরত সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন (رحمة الله) তাঁর খলিফা মাখদুম জাহানিয়া জাহা গস্ত (رحمة الله),তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আজমল বড়ায়ুচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ বদন বড়ায়ুচী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ দরবেশ ইবনে মুহাম্মদ কাসেম আওদাহী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত খাজা আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (رحمة الله) এর।



ফকির গ্রন্থকারের দ্বিতীয় ত্বরিকায়ে কাদেরীয়া আলীয়া  বরকাতিয়া রেজভীয়া মুস্তাফাভীয়া


মুহাম্মদ আজিজুল হক খলিফা ও ইজাজত প্রাপ্ত হলেন- আক্বায়ে নেয়ামত মুফতি আজম হিন্দ বোরহানুল আউলিয়া, নুরে শসমে ওলামা, হযরত মুফতি মোস্তাফা রেজা খান বেরলভী আল কাদেরী (رحمة الله) হতে, তিনি খলিফা  ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দেদে মিয়াতুল হাজেরাহ মুয়াইয়েদে মিল্লাতে তাহেরাহ হযরত শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী আল কাদেরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা সিরাজুস সালেকিন নুরুল আরেফীন সৈয়্যদ আবুল হোসাইন আহমদ নুরী মারহালভী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুল করিম শাহ আলে রাসুল আহমদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ শাহ আবুল ফজল শামসুল মিল্লাতে ওয়াদ দ্বীন আলে আহমদ আচ্চে মিয়া (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ শাহ হামজা (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ শাহ আলে মুহাম্মদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ শাহ বরকতুল্লাহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ফজলুল্লাহ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আহমদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ জামালুল আউলিয়া (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত কাজী জিয়া উদ্দিন আল মারুফ শেখ জিয়া (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ মুহাম্মদ বেহকারী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ ইব্রাহীম আল ইরজী (رحمة الله)  এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ বাহাউদ্দিন (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আহমদ জিলানী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ হাসান (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ মুসা (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আলী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ মহিউদ্দিন আবু নছর (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আবু ছালেহ নছর (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ আবু বকর তাজুল মিল্লাত-ওয়াদ দ্বীন আবদুর রাজ্জাক (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুল করিম গাউছুচ ছাক্বালাইন ওয়া গাউছুল কাওনাইন আল ইমাম আবু মুহাম্মদ শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী আল্ হাসানী ওয়াল হুসাইনী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবু সাঈদ মাখজুমী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুল হাসান আলী আল করশী আল বিকাহরী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুল ফরাহ তরতুসী (رحمة الله) এর, তিনি খলিফা হযরত শেখ আবুল ফজল আবদুল ওয়াহেদ তামীমি (رحمة الله) এর, তাহার ওফাত ২৬শে জমাদিউল উখরা ৪২৫ হিজরী সনে। তিনি খলিফা ও ইজাজত প্রাপ্ত হন হযরত শেখ আবু বকর শিবলী (رحمة الله)  এর, তাহার ওফাত ২৮শে জ্বিলহজ্ব, মাজার পাক বাগদাদ শরীফে, তিনি ইজাজত প্রাপ্ত খলিফা, হযরত সৈয়্যদুত্ ত্বোয়েফা শেখ জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) এর, তাহার ওফাত ২৭শে রজবুল মোরাজ্জব ২৯৭ অথবা ২৯৮ হিজরী, মাজার শরীফ বাগদাদ শরীফে তিনি ইজাজত প্রাপ্ত খলিফা, হযরত শেখ মারুফ করখী (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ২রা মুর্হারমুল হারাম ২০০ হিজরী সনে, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ২১শে রমজানুল মোবারক ২০৩ হিজরী সনে। তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইমাম (رحمة الله) এর, তিনি মুসা ইবনে জাফর কাজেম (رحمة الله) এর, তাহার ওফাত ১৫ই রজবুল মোরজ্জবে ১৮৩ হিজরী সনে, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ ছাদেক (رحمة الله) এর, তাহার ওফাত শরীফ ১৫ই রজবুল মোরজ্জব ১৪৮ হিজরী, মাজার শরীফ মদিনায়ে মনোয়ারা। তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী আল বাক্বের (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ৭ই জিলহজ্ব ১১৪ হিজরী, মাজার শরীফ মদিনা শরীফ। তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদ ইমাম আলী ইবনে হুসাইন জয়নুল আবেদীন (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ১৮ই মুর্হারমুল হারাম ৯৪ হিজরী সনে, মাজার শরীফ মদিনায়ে মনোয়ারা তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (رحمة الله) এর, তাঁর ওফাত ১০শে মুহাররামুল হারাম ৬১ হিজরী সনে। মাজার শরীফ কারবালায়, তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুুল করিম শেরে খোদা আলী আল্-মরতুজা র্করামাল্লাহু ওয়াজহুল করিম আলাইহি ওয়া- এর, তাঁর ওফাত ২১শে রমজানুল মোবারক ৪০ হিজরী সনে, মাজার শরীফ নজফ আশরফ। তিনি খলিফা হযরত সৈয়্যদুনা মাওলানা মা’দানিল জুদে ওয়াল করম মানবায়েল ইলমে ওয়াল হেলমে ওয়াল হিকম মাহবুবে রাব্বিল আলামিন মুহাম্মদ মোস্তাফা (সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আজমায়িন এর। বেচাল শরীফ ১২ই রবিউল আউয়াল ১১ হিজরী সনে। 


লেখকের বংশ তালিকা


উলে­খিত শাহ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী ইবনে শাহছূফী ইলিয়াছ মিয়া ইবনে হযরত শাহছুফী লাল মিয়া যিনি শাহ মুহাম্মদের বংশধর। 


মাতা ছাহেবা কাজী মোস্তাফা খাতুন বিনতে কাজী মুহাম্মদ আবদুল কাদের, ইনি কাজী রকিবউদ্দিন মারুফ শাহ যার প্রসিদ্ধী ছিল  মারুফ ফকির, তারই বংশধর। গ্রাম- কাজির খীল, ছিপাতলী ।


ফকির লেখকের তিন ছেলে-


১। আবুল ফতাহ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন


২। আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদউদ্দিন


৩। আবুল ফছিহ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন


আরও অন্যান্য বন্ধু-বান্ধব ওলামা, ফুজলা আল্লাহপাক সকলকে দয়া করুণা ও মেহেরবানী দান করুন।


সংযুক্তি:


আউলিয়ায়ে কামেলিনদের কর্মকান্ড জীবন-মরণ 


এর মধ্যে একই অবস্থা


কতেক হযরতগণ বর্ণনা করেছেন যে, আউলিয়াল্লাহর কর্মকান্ড কবরের মধ্যে চলি­শ বছর পর শেষ হয়ে যায়। কেননা বেলায়তে চুরি থেকে বেলায়তে মানবী পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অতএব উচ্চ স্থান হতে নিম্মের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন না। কেননা ছাহেবে নুফহাতুল ইনস আল্লামা আবদুর রহমান জামী (رحمة الله) লেখেন যে, চারজন আউলিয়া কবরের মধ্যে জীবিতের  ন্যায় কর্মকান্ড করে থাকেন।              


১. হযরত শেখ মারুফে করখী (رحمة الله)।


২. হযরত শেখ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله)।


৩. হযরত শেখ আকিল মিখী (رحمة الله)।


৪. হযরত শেখ হায়াত হায়বানী (رحمة الله) ।


“তাকম্মেলায়” শহীদদের জীবনীর মধ্যে লেখেছেন যে, কবরের মধ্যে জীবিতের ন্যায় কর্ম করে থাকেন। মীর সৈয়্যদ আশরাফ জাহাঙ্গির সাময়ানী (رحمة الله), লতায়েফে আশরাফীর মধ্যে বর্ণনা করেছে যে, বেলায়তের কক্ষে অনেক বুযর্গ ওফাতের পর কর্ম করে থাকেন। যেমন- খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী আজমিরী (কাদ্দিছা র্ছিরুহুল আজিজ) 


হযরত খাজা কুতুবুল আকতাব বখতিয়ার কাকী আওশী (رحمة الله), হযরত খাজা শেখ ফরিদ উদ্দিন গঞ্জ শকর (رحمة الله), হযরত সুলতানুল মাশায়েখ শেখ নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (رحمة الله) ইত্যাদি স্বীয় কবরের মধ্যে বসে বসে কর্ম করতেছেন। ইহা হতে জানা গেল যে অধিকাংশ আউলিয়া কেরাম ছাহেবে তার্ছারুফ। কতেক আউলিয়ায়ে কেরামের কাজ-কর্ম ইহ জগতের ন্যায় একই রকম। অতএব হযরত শেখ আহমদ আবদুল হক রদলভী (رحمة الله) এর কাজ কর্ম মৃত্যুর পর কোন পরিবর্তন সাধিত হলোনা। হযরত শেখ আবদুল কুদ্দুস নোমানী গাংগুহী (رحمة الله), হযরত শেখ আহমদ আবদুল হক রদলভী (رحمة الله) এর মৃত্যুর পঁচিশ বছর পর তাঁর থেকে রূহানী শিক্ষা অর্জন করে পরিপূর্ণতায় পৌঁছেছেন। এ অধম লেখক, হযরত গাজ্জালীয়ে জমান আল্লামা শাহ সৈয়্যদ আহমদ সাঈদ কাজেমী (رحمة الله) এর রূহানীয়ত থেকে শিক্ষা-দিক্ষা অর্জিত এবং যা আজ পর্যন্ত কোন কথা বা মাসয়ালার মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে আমার হযরত স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় সাহায্য করে থাকেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য ছাহেবে মাজারও।


বিশেষত: তাঁদের কামালাত ও কর্ম অন্যান্য উপরস্থ আউলিয়ায়ে কেরামের কর্মকান্ডের শক্তি সমর্থের গন্ডির বাইরে। আল্লামা শেখ সালামত আল গেরামী (رحمة الله) স্বীয় কিতাব “তানভীরুল কুলুব” এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন-


ظهور الكرامات على الا ولياء جائزٌ عقلًا و واقع نقلًا امّا جوالراه عقلًا فلاه ليس بمستحيل فى قدرة الله تعالٰى بل هو من قبيل الممكنات كظهور المعجزات الانبياء ولا يلزم من جوازها ووقوعها لحال وكل ماهذ شانه فهو جائز الوقوع وهى مابتته لهم فى الحياه وبعد الموت كما ذهب اليه جمهور اهل السنة وليس فى مذهب. المذهب الاربعة قول بنفيها بعد الموت بل ظهور ماحينئذ اولٰى لان النفس حينئذ صافيه من الاكدار ولزاقيل من لم تظهر كرامته بعد موته كما كانت فى حياته فليس بصاءق – قال بعض المشائخ ان الله يوكل بغير الولى لمكا يقض الحوائج وتارة يخرج الولى من قبره ويقضبها بنفسه-


অর্থাৎ আউলিয়ায়ে কেরাম হতে কেরামত তথা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হওয়া বিবেক ও যুক্তি গ্রাহ্যও বৈধ। বরং সংঘটিতও হয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কুদরতের মধ্যে এটি সম্ভব, অসম্ভব নয়। যেমন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম হতে মোজেজা তথা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ তাদের ধারাবাহিকতা নিয়ম এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। আউলিয়া কেরামদের কেরামত অবৈধ ও সংঘটিত হওয়া অসম্ভব তা আবশ্যক হয় না। বরং আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের নবুয়তের ছায়ার ফয়েজ ও বরকতের প্রভাব দ্বারা যারা ধন্য হয়েছেন, তাদের থেকে এভাবে কেরামত অবৈধ নয়, সংঘটিতই হয়েছে এবং এটা (কেরামত) তাদের জিবদ্বশায় এবং মৃত্যুর পরও সংঘটিত হয়। জমহুর ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের এ সিদ্ধান্ত। চার মাজহাবের ওলামাদের থেকেও মৃত্যুর পর সংঘটিত হওয়ার প্রমানিত, কারো নিকট হতে না হওয়া প্রমানিত নাই বরং জীবিত অবস্থার মধ্যে যার থেকে যে কেরামত সংঘটিত হয়, মৃত্যুর পরও তাহার থেকে কেরামত সংঘটিত হওয়া বিশ্বস্ত হুকুম। কেননা মৃত্যুর পর বেলায়ত অলি হতে চলে যায় না এটা চার ইমামের ঐক্যমত সিদ্ধান্ত। বরং মৃত্যুর পর কেরামত প্রকাশ হওয়া অধিকতর গ্রহনযোগ্য এ জন্য যে, মৃত্যু দ্বারা পবিত্র আত্মা অর্জিত হয়। কদুরত ও নফসানিয়ত শেষ হয়ে নুরানিয়ত তথা উজ্জলতা এসে যায়। এজন্য বলা হয়েছে যে, যেই অলি হতে মৃত্যুর পর কেরামত প্রকাশ না হয় যেভাবে জিবদশায় প্রকাশ হয়নি তিনি বেলায়তের মধ্যে সঠিক নয়, বরং বেলায়তে মিথ্যুক ছিল বরং জিবীত হতে অধিক কেরামত মৃত্যুর পর প্রকাশ ও সংঘটিত হওয়া প্রমাণিত। 


যেমনিভাবে অধিকাংশ আউলিয়ায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন, অনেক সময় আউলিয়ায়ে কেরামের কবরের উপর আল্লাহ পাক একজন ফেরেশতা নির্ধারিত করে দেন যাতে তার যিয়ারতকারীদের সমস্যা ও প্রয়োজন পূর্ণ করান এবং অনেক সময় ছাহেবে মাজার নিজেই কবর হতে যিয়ারতকারীদের প্রয়োজন পূর্ণ করেন। এ সব কিছু খোদার কুদরতি শক্তিতে, না হয় সৃষ্টির মাঝে শুধুমাত্র গ্রহনযোগ্য বান্দাই আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ স্থল।




সমাপ্ত






Top