بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم


কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ (২২২ হাদিস)

গ্রন্থনায়ঃ ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি 

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━


  1. কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ [🖋️লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ ড. মাসুম বিল্লাহ সানি]
  2. দরূদ পাঠে অন্তর নিফাক মুক্ত হয়
  3. আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায়
  4. একটি বালিকার ঘটনা
  5. মুসা (عليه السلام) এর উম্মতের নাযাত
  6. মধু তিক্ত থেকে মিষ্টি হয়, দরূদ পাঠে রোগ মুক্তি
  7. বিকৃত চেহারা চাঁদের মত উজ্বল
  8. হযরত শিবলী (رحمة الله) এর ঘটনা
  9. মাটিগুলো মুক্তায় পরিণত
  10. তিন হাজার দিনার কর্জ পরিশোধ
  11. আসমানের মধ্যে ফেরেশতাদের ইমামতি
  12. ইমাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত
  13. দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়
  14. দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈ (রা.) এর বর্ণনা
  15. চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা
  16. আযাব থেকে মুক্তি ও নিরাপদে পুলসিরাত পার
  17. কানে শব্দ হবার সময় ও স্মৃতিশক্তির জন্য দুরূদ পাঠ
  18. দুরূদ না পড়লে অযু পূর্ণাঙ্গ হবে না
  19. ৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন
  20. ৪০০ জিহাদের সওয়াব আর প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের বরাবর
  21. মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সওয়াব অর্জন
  22. দুরূদ পাঠে জান্নাত লাভ
  23. কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ
  24. আরশের ছায়াতলে অবস্থান
  25. মিজানের পাল্লা ভারী হয়
  26. কল্যাণ ও পবিত্রতা অর্জন, অভাব ও বিপাপদ দূরীভূত হয়
  27. দুরূদ পাঠকারীর আশি বছরের গুনাহ্ মাফ
  28. উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা
  29. কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহার সৌভাগ্য অর্জন
  30. দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে
  31. দুরূদ পাঠকারী কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী থাকবে ও শাফায়াত লাভ করবে
  32. ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা
  33. দুরূদ পাঠে রহমত নাজিল হয়
  34. সাক্ষাত, বিদায় ও কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ
  35. কিছু ফজিলতপূর্ণ দুরূদ শরীফ পাঠের সওয়াব
  36. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়
  37. ৭০ হাজার ফিরিশতা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা
  38. জীবনের গোনাহ মাফ ও হাজার দিনের নেকী অর্জনের দুরূদ
  39. হাদিসে পাকে বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠের প্রমাণ
  40. তালবীয়াহ পাঠ, সাফা-মারওয়ার মাঝে ও রওজা শরীফ জিয়ারতের সময় দুরূদ পাঠ
  41. ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ
  42. মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ
  43. মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ
  44. নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েলঃ
  45. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দুরূদ পাঠ
  46. ইকামাতের পূর্বে দুরূদ
  47. আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম
  48. আযানের পর দুরূদ ও সালাম
  49. ফেরেশতাদের মাধ্যমে দুরূদ পেশ করা হয়
  50. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুরূদ পাঠকারীকে চিনেন এবং জবাব প্রদান করেন
  51. হায়াতুন্নবী (ﷺ) 'র নিকট পাঠকৃত দুরূদ সরাসরি পৌঁছায়
  52. দুরূদ প্রেরণের জন্য ফেরেশতা নিয়ােগ
  53. উম্মতের পাঠকৃত দুরুদ ও আমলসমূহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পেশ করা হয়
  54. আল্লাহর আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর দুরূদ প্রেরণ
  55. দুরূদের মাধ্যমে হযরত মূসা (عليه السلام) এর কল্যাণ লাভ
  56. হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (আ.) এর ঘটনা
  57.  আম্বিয়া (আ.) সম্পর্কিত ফাযায়েল
  58. তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে পাঠকৃত দুরূদ থেকে ফেরেশতা সৃষ্টি


কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ (২২২ হাদিস)

লেখক, সংকলক, অনুবাদকঃ

ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি 

প্রথম প্রকাশকালঃ ২৪.০১.২০২০

কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।

প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম




সম্পাদনাঃ মুফতী সৈয়দ সাইফুল ইসলাম বারী।




উৎসর্গঃ


প্রিয় নবী (ﷺ), তাঁর আহলে বাইত ও শোহাদায়ে কারবালা





লেখক পরিচিতিঃ 



তরুণ লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সানি, ২০১২ সাল থেকে মেডিক্যালে অধ্যয়নরত অবস্থায় ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জ্ঞানচর্চা শুরু করে। সেই উদ্দীপনায় ২০১৫ সালে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট হিসেবে ইসলামী-বিশ্বকোষ নামক ব্লগ পরিচালনা শুরু করে। যা ইতিমধ্যেই ব্যাপক জ্ঞান তথ্যভান্ডারে পরিনত হয়েছে। দ্বীনের সঠিক আকিদা প্রচারে তরুণ মুসলিম ভাইদের নিয়ে কাজ করেছেন।

লেখকের লিখিত ইসলামিক কিতাবের মধ্যে রয়েছেঃ

১.মানাকিবে আহলে বাইত,

২.কদম্বুচি শিরক নয় সুন্নাহ,

৩.আন নাবী আল উম্মী,

৪.ফাযায়েলে দুরূদ,

৫.ইলমে দ্বীন অর্জনের ফজিলত,

৬.ইবাদত কবুলে আকিদার বিশুদ্ধতার গুরুত্ব,

৭.আল-বিদআতঃ বিদআতে সাইয়্যা ও বিদআতে হাসানা,

৮.শব্দ ব্যবহারের শিষ্টাচার,

৯.সৃষ্টিতত্ত্ব ও নূরতত্ত্ব। যেগুলো এখনও অপ্রকাশিত।


মসলকে আ'লা হযরতের অনুসারী। ২০১৫ সালের দিকে পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করে তরিকায়ে কাদরীয়াতে দাখিল হন।





সূচীপত্রঃ




১ম অধ্যায়ঃ দুরূদ পাঠের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল।

❏সালাম ব্যতিত দুরূদ পাঠ মাকরূহ

❏হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত কিছু আদব।

❏যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দুরূদ পড়া নিষিদ্ধ এবং বৈধ।

❏বাহারে শরীয়তে দোয়া-দুরূদ বিষয়ক কিছু মাসায়েল।


২য় অধ্যায়ঃ কুরআন হাদিসে দুরূদ পাঠের নির্দেশ।

❏ আল-কুরআনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত।

● আয়াত ১-৫

❏ আল-হাদিসের বর্ণনায় দুরূদ-সালামের ফজিলত

● হাদিস ১-২


৩য় অধ্যায়ঃ দুরূদ শরীফ না পড়ার ক্ষতি।

● হাদিস ১-১৪: 

➥আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত

➥জাহান্নামে প্রবেশ করবে

➥জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল

➥জান্নাতের পথের প্রতি উদাসীন

➥সে আমার প্রতি জুলুম করল

➥ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধূসরিত হােক

➥তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে

➥সে ব্যক্তি দুর্ভাগা

➥দুরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপণ।


৪র্থ অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও জুম্মা।

● হাদিস ১-১৫

❏ জুমআ'র দিবা-রাত্রি অধিক হারে দুরূদ পাঠ।

❏ জুমআ'র দিনে নির্দিষ্ট করে দুরূদ পড়া জায়েজ।


৫ম অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও ফেরেশতা।

● হাদিস ১-৫

রওজা মুবারক ঘিরে ৭০ হাজার ফেরেশতার দিবা-রাত্রি দুরূদ পাঠ

❏ তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে পাঠকৃত দুরূদ থেকে ফেরেশতার সৃষ্টি। 

❏ বিরাটকার ফেরেশতার ঝাড়া দেয়া ডানা থেকে পরা প্রতিটি ফোঁটা থেকে ১জন ফেরেশতার সৃজন।

❏ ৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট পাখি সৃজন।


৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) সম্পর্কিত ফাযায়েলে দুরূদ। 

● হাদিস ১-৬

❏ হযরত আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায়।

❏ হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) এর ঘটনা সম্পর্কিত হাদীস।

❏ দুরূদের মাধ্যমে হযরত মূসা (عليه السلام) এর কল্যাণ লাভ। 

❏ আল্লাহর আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর দুরূদ প্রেরণ।


৭ম অধ্যায়: হায়াতুল আম্বিয়া। উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ ও আমলসমূহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পৌঁছায়।

● হাদিস ১-২৮:

❏ ইমামগণের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।

❏ হাদিসের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট আমাদের আমলসমূহ পৌঁছায়।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুরূদ পাঠকারীকে চিনেন এবং জবাব প্রদান করেন।


৮ম অধ্যায়: হজ্জ্ব, আজান, নামাজ, ইকামাত, মসজিদ ও ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ পাঠ।

● হাদিস ১-২০:

❏ আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ আযানের পর দুরূদ ও সালাম।

❏ ইকামাতের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

● হাদিস ১-৭: 

➡নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েল।

● হাদিস ১-৮:

❏ মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ। 

❏ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ।

❏ ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

❏ তালবীয়াহ পাঠ শেষ করার পর দুরূদ পড়া

❏ সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া।

● হাদিস ১-১৫ : 

➡বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ

● হাদিস ১-১৭ :

➡রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।

আরো কিছু দুরূদ শরীফ। 


৯ম অধ্যায়: দুরূদ পাঠের অগণিত ফজিলত

● হাদিস ১-৮২:

❏ সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ

❏ রহমত নাজিল হয়

❏ ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা 

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হয়ে শাফায়াত লাভ

❏ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত

➠দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে

➠প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে

➠দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়

➠কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা

❏ উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা 

❏ আশি বছরের গুনাহ্ মাফ 

❏ জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ পাঠ

❏ দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা

❏ অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়

❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ

❏ মিজানের পাল্লা ভারী

❏ আরশের ছায়াতলে অবস্থান

❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ

❏ জান্নাত লাভ

❏ উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব

❏ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ

❏ গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব

❏ ৪০০ জিহাদের সওয়াব (প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের সমান)

❏ ৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন

❏ অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ কানে শব্দ হলে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ আযাব থেকে মুক্তি

❏ নিরাপদে পুলসিরাত পার

❏ চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা

❏ দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী

❏ দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়

❏ কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।


১০ম অধ্যায়ঃ ইমাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত।

● ঘটনা ১-১৮।




━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

بِسْــــــــــــــــمِ اﷲِالرَّحْمَنِ الرَّحِيم


কিতাবঃ ফাযায়েলে দুরূদ


━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━






১ম অধ্যায়ঃ দুরূদ পাঠের আদব সংক্রান্ত মাসায়েল।

সালাম ব্যতিত দুরূদ পাঠ মাকরূহ


ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবী (رحمة الله) তিনি তার

شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টায় উলে­খ করেন-

ويكره الاقتط رعلى الصلاة دون اسلام وبالعكس 

এর ভাবার্থ হল- আল্লামা আত তিবী (رحمة الله) বলেন, সালাম ব্যতিরেকে শুধুমাত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা এবং দুরূদ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সালাম পাঠ করা মাকরূহ। 

[ইমাম শারফুদ্দিন আল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তিবীঃ شرح الطبي على مشكاة المصابيح – নামক কিতাবের ৬৫ পৃষ্টা, আনওয়ারে মদীনা]


কিন্তু যদিও এই মাকরূহ এর ব্যাপারে কোন কোন আলেম নিরবতা পালন করেছেন। (জজবুল কুলুব) 


হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান (رحمة الله) কর্তৃক প্রণীত দালায়েলুল খাইরাত থেকে উল্লেখিত কিছু আদবঃ

 

১। পাঠক মহল এর জন্য প্রয়োজন হল নিজেকে আত্মার সর্ব প্রকার রুগ্ন থেকে পুত: পবিত্র রাখা। যেমন অহংকার হিংসা বিদ্বেশ ইত্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। তারপর অযু করে পরিষ্কার কাপড় পরিধান করে সুগন্ধি লাগিয়ে দুরূদ পাঠ করা। কেননা অযুবিহীন দুরূদ পাঠ করা আদব বা শিষ্টাচার বিরোধী। যদিও বা শরীয়তে তা যায়েজ আছে।

২। জায়নামাজে কেবলামুখী হয়ে বসে বিনয়ী অন্তরে দুরূদ শরীফ পড়বেন।

৩। নিজ অন্তরকে সমুদয় দুনীয়াবী কল্পনা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখে একাগ্রচিত্তে পাঠ করতে হবে।

৪। রিয়া বা  লোক দেখানোর জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করবে না।

৫। যেমনিভাবে মুখে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তেমনিভাবে অন্তরকেও একাগ্রতা চাই। অন্যথায় দুরূদ পাঠে কোন ফল হবে না।

৬। দুরূদ শরীফ পাঠকালীন সময়ে এই ধারণা পোষণ করতে হবে যে আমার এই দুরূদ শরীফ হুযুরে পাক (ﷺ) এর দরবারে ফিরিশতা কর্তৃক পৌছানো হচ্ছে বা তিনি নিজেই তা শুনছেন।

৭। নিজ অন্তরকে ক্ষীন করে রোদন উন্মুখ অন্তরে দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

৮। অন্তরের সম্পর্কটা আল্লাহর সাথে হবে?

৯। দুরূদ শরীফ পাঠ করার সময় যেন কারো সাথে কথা না হয়।

১০। যে সমস্ত জায়াগায় অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় সে সমস্ত জায়াগায় দুরূদ শরীফ পাঠ করা অনুচিত।

১১। হাসি ঠাট্টাকালে দুরূদ পাঠ করা কুফুরীর আশংকা বিদ্যমান।

১২। গুণাহের কাজের সময় দুরূদ শরীফ একবারেই পড়বে না।

১৩। যেখানে হাসি ও আনন্দ উল্লাস, তামাশা, নাচ-গান হয় সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে না।

 আশাকরি নবীজীপ্রেমিক আশেকগণ এ নিয়ম কানুন মেনে দুরূদ শরীফ পাঠে সচেতনতা অবলম্বন করবেন।{ যিকরে এলাহী]


যে সমস্ত স্থানে বা অবস্থায় দুরূদ পড়া নিষিদ্ধ এবং বৈধঃ


১। সহবাসের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

২। প্রস্রব পায়খানার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৩। ব্যবসার মাল বহুল প্রচারের জন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৪। হাচি দেওয়ার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৫। জবেহ করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৬। তোষামোদের সময় দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৭। দুনীয়াবি কোন স্বার্থের জন্য (যেথায় দুরূদ শরীফ পড়া উদ্দেশ্য নয় বরং দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য থাকে) সেখানে দুরূদ শরীফ পাঠ করা মাকরূহ।

৮। আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়।

৯। হোচট খাওয়ার পর।

🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ)


ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-


(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ(أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.


-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’

🔺(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী,  ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন)



বাহারে শরীয়তে দোয়া-দরুদ বিষয়ক কিছু মাসায়েলঃ



মাসআলা নং-১: 

জীবনে একবার দরুদ শরিফ পড়া ফরয। প্রত্যেক যিকরের জলসায় দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব।🔺(১)


মাসআলা নং-২: 

নাম মােবারক নিজে উচ্চারণ করুক বা অন্যজন থেকে শ্রবণ করুক। মজলিসে যদি শতবার উল্লেখ হয় প্রত্যেকবার দরুদ শরিফ পড়া উচিত। নাম মােবারক নিলাে বা শুনলাে, সে সময় দরুদ পড়ল না অন্যসময়ে তা পড়বে নেবে।🔺(২)


মাসআলা নং-৩: 

বিক্রেতা বিক্রির বস্তুর গুনাগুন ও শ্রেষ্ঠত্ব ক্রেতার নিকট গ্রহণীয় করে তােলার উদ্দেশ্যে দরুদ শরিফ পড়া বা সুবহানাল্লাহ বলা জায়িয নেই। এমনিভাবে কোন বড়লােককে দেখে দরুদ শরিফ পড়া এ নিয়্যতে যেন তার আগমন সম্পর্কে মানুষের নিকট সংবাদ পৌঁছে যায় এবং মানুষ তার সম্মানে উঠে দাঁড়াবে এবং জায়গা ছেড়ে দেবে তা জায়েয নেই।🔺(৩)


মাসআলা নং-৪: 

যত পরিমাণ সম্ভব দরুদ শরিফ পড়া মুস্তাহাব এবং বিশেষভাবে নিন্মােক্ত স্থানেঃ

(১) জুম'আ দিবসে, 

(২) জুম'আ রাতে, 

(৩-৪) সকাল-সন্ধ্যায়, 

(৫) মসজিদে গমনকালে, 

(৬) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়, 

(৭) রওযা মােবারকের যিয়ারতের সময়, 

(৮) সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপর, 

(৯) খুতবায়,

(১০) আযানে জবাবের পর, 

(১১) ইক্বামতের সময়, 

(১২) দোয়ার শুরু শেষ এবং মাঝখানে, 

(১৩) দোয়া কুনুতের পর, 

(১৪) হজ্জের মধ্যে লাব্বায়ক তালবিয়া সমাপ্তির পর, 

(১৫) একত্র হলে বা বিদায়কালে, 

(১৬) অযু করার সময়, 

(১৭) কোনাে কিছু ভুলে গেলে সে সময়, 

(১৮) ওয়ায করার সময়, 

(১৯) পড়া বা পড়ানাের সময়, 

(২০) বিশেষত: হাদিস শরিফ পাঠকালে প্রথমে এবং শেষে, 

(২১) প্রশ্ন বা ফাতওয়া লিখার সময়, 

(২২) লেখনির সময়,

(২৩) বিবাহের সময়, 

(২৪) কর্জ বা ধার দেওয়ার সময়, 

(২৫) কোনাে বড় কাজ করার সময়, 

(২৬) নাম মােবারক যখন লিখবে দরুদ শরিফ অবশ্যই লিখবে। অনেক আলেমদের মতে- সে সময় দরুদ শরিফ লিখা ওয়াজিব।🔺(৪)


মাসআলা নং-৫: 

অধিকাংশ লােকদের মধ্যে বর্তমানে দরুদ শরিফের পরিবর্তে ( ص ) ( عم ) ( صلعم ) সংক্ষেপে লিখার প্রবণতা দেখা যায় এরূপ লিখা নাজায়িয কঠোর হারাম এভাবে এ (ﷺ) এর স্থলে (عه ) (ص ) (رضي الله عنه) লিখা এটাও উচিত নয়। যাদের নাম মুহাম্মদ, আহমদ, আলি, হাসান, হােসাইন ইত্যাদি তাদের নাম সংক্ষেপে (রাঃ) (আঃ) লিখাও নিষিদ্ধ। এ স্থানে তাে ব্যক্তি উদ্দেশ্য তার দিকে দরুদের ইঙ্গিতের কি অর্থ?🔺(৫) 


মাসআলা নং-৬: 

ফরজ নামাযে শেষ বৈঠক ছাড়া দরুদ শরিফ পড়বে না। 🔺(৫)  নফল নামাযের প্রথম বৈঠককেও সুন্নাত।  দরুদের পর দোয়া পড়বে।🔺(৬)


মাসআলা নং-৭: 

দোয়া আরবি ভাষায় পড়বে। অনারবী ভাষায় পড়া মাকরূহ। 🔺(৭)


মাসআলা নং-৮: 

মুসলমান হলে নিজের জন্য পিতামাতা, ওস্তাদবৃন্দ, বিশ্বের সকল মুমিন নরনারীর জন্য প্রার্থনা করবে। নির্দিষ্ট করে শুধু নিজের জন্য করবে না। 🔺(৮)


মাসআলা নং-৯: 

পিতামাতা ও শিক্ষকবৃন্দ যদি কাফির হয় তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করা হারাম। মৃত্যুবরণ করলে তাদের মাগফেরাত কামনা করাটা ফকিহগণ কুফরি বলেছেন, তবে জীবিত থাকলে তাদের জন্য হেদায়ত নসিবের তৌফিক কামনা করে দোয়া করবে। 🔺(৯)


মাসআলা নং-১০: 

স্বভাবগত অসম্ভব ও শরয়ী অসম্ভবের বেলায় দোয়া হারাম।🔺(১০) 


মাসআলা নং-১১: 

সে সব দোয়া যা কুরআন হাদিসে আছে সেগুলাের সাথে দোয়া করবে কিন্তু কুর’আনের দোয়া সমূহ কুরআনের (তেলাওয়াতের) নিয়্যতে এ স্থানে (নামাজে) পড়া জায়েজ নেই। বরঞ্চ কিয়াম ছাড়া নামাজের অন্য কোন স্থানে কুরআন পড়ার অনুমতি নেই।🔺(১১)


তথ্যসূত্রঃ_________________________


🔺১.

ক.ইমাম কুরতুবী, তাফসিরে আহকামুল কোরআন, ১৪/২৩৩ পৃ., 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।

গ.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'। 


🔺২.

ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৭৬-২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী, 

গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৩.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত! 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৪.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮১ পৃ., পরিচ্ছেদঃ সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮২, সাকলাইন প্রকাশনী, 

গ.ইমাম শামীঃ রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৫.

ক. তাহতাভী, হাশীয়াতুত তাহতাভী আ'লা দুররুল মুখতার, ১/৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: খুতবাতুল কিতাব। 

খ. ইমাম আহমদ রেযা খান, ফাতওয়ায়ে রভিয়্যাহ, ২৩/৩৮৭ পৃ. 

গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৬. 

ক.ইমাম হাসকাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮২ পৃ:, পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত'। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৭. 

ক.ইমাম হাসাফী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৫ পৃ., পরিচেছদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺৮.

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৬ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।

গ.ফতোয়ায়ে আলমগীরি,

ঘ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।


🔺৯. 

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত,

খ.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত।


🔺১০. 

ক.ইমাম হাসকাকী, দুররুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৮ পৃ., পরিচ্ছেদ: সিফাতুস সালাত। 

খ.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, 

গ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


🔺১১. 

ক.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুখতার, কিতাবুস সালাত, ২/২৮৯ পৃ, 

খ.মুফতি আমজাদ আলী আযমীঃ বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৮৩, সাকলাইন প্রকাশনী।


_______________________________





২য় অধ্যায়ঃ 

কুরআন হাদিসে দুরূদ পাঠের নির্দেশ।




❏ আয়াত ১ :

হযরত ইয়াহিয়া (عليه السلام) এর জন্ম-ওফাত দিবস পালন ও আল্লাহ সুবহানু তায়ালার সালামঃ


وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا


"তাঁর [অর্থাৎ ইয়াহিয়া (عليه السلام) এর] প্রতি শান্তি যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।"

[সুরা মারইয়ম, আয়াত ১৫]


❏ আয়াত ২ :

হযরত ঈসা (عليه السلام) ওনার নিজের জন্মদিন পালন ও নিজের প্রতি সালামঃ


وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا


"আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।" [সুরা মারইয়ম, আয়াত ৩৩]


❏ আয়াত ৩ :

মহান আল্লাহ বলেন,


أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ 94:1


“[হে হাবিব!] আমি কি আপনার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিইনি?” (সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত ১)


❏ আয়াত ৪ :

মহান আল্লাহ বলেন,


وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ﴿٤﴾ 94:4 


"[হে হাবিব!] আমি আপনার জিকিরকে বুলন্দ করে দিয়েছি।’’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত ৪)


❏ আয়াত ৫ :

মহান আল্লাহ বলেন,


إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا 


"আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরূদ পাঠান। হে মুমিনরা! তোমরাও নবীর প্রতি দুরূদ প্রেরণ কর এবং উত্তমরূপে তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর ও তাঁর নির্দেশের অনুগত হও।" (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৬)



আল-হাদিসের বর্ণনায় দুরূদ-সালামের ফজিলত



❏ হাদিস ১: 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, 

“যখন তোমরা রাসুলগণদের (عَلَيْهِمُ السَّلَام) উপর দুরূদ পাক পড়ো, তখন আমার উপরও দুরূদ শরীফ পাঠ করো, নিশ্চয় আমি সমস্ত জাহানের প্রতিপালকের রাসুল।” 

[জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ১ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৫৪]


❏ হাদিস ২: যেখানে আমার জিকির সেখানে আপনারও জিকির হবেঃ


হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -   

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল  (عليه السلام) আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত। জিবরাঈল (عليه السلام) বলেন, মহান রব  সংবাদ প্রেরণ করেছেন : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে, সেখানে আমার সাথে আপনারও জিকির হবে।’’ 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০, 

২.ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২, 

৩.ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬, 

৪.ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮, 

৫.ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ. 

৬.আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ., 

৭.আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।

৮.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোওয়ায়ে আহলুস সুন্নাহ।



৩য় অধ্যায়ঃ দুরূদ শরীফ না পড়ার ক্ষতি



❏ হাদিস ১: আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত


মালেক বিন হুয়াইরিস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বরে উঠেন, প্রথম সিঁড়িতে উঠে আমীন বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর বললেন, আমার নিকট জিবরীল (عليه السلام) এসে বললেন,

হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! যে ব্যক্তি রামাযান মাসে উপনীত হওয়ার পরও তার জীবনের গোনাহকে ক্ষমা করাতে পারল না, আল্লাহ তাকে রহমত থেকে দূর করুন। আমি তা শুনে বললাম, আমীন। তারপর বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে পেল, অথচ (তাদের সাথে সদ্ব্যহার না করে) জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকেও তাঁর রহমত থেকে দূর করুন। আমি বললাম, আমীন।

অতঃপর বললেন, যে ব্যক্তির সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়ার পর আপনার উপর দুরূদ পাঠ করল না, সেও আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে দূর হোক। আমিও তাতে বললাম, আমীন’।

তথ্যসূত্রঃ

[সহীহ ইবনু হিববান, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৮, হা/৪১০, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৪, হা/৯০৯, সহীহ আত-তারগীব হা/৯৯৬]


❏ হাদিস ২: জাহান্নামে প্রবেশ করবে


ইমাম ইবনে হিব্বান  (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ে না, সে যখন মারা যাবে, তখন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর রহমত থেকে দূর করে দেবেন।” 

তথ্যসূত্রঃ

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৩/১৮৮ পৃ. হা/৯০৭]


❏ হাদিস ৩: জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল


হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

من ذكرت عنده فلم سصلى على اخطأ طريق الجنه –

“যার কাছে আমার আলোচনা হল, অথচ সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে জান্নতের রাস্তা ভূলে গেল।” 

[তাবারানীঃ মুজামউল কবীর, ৩য় খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৮৭, ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ-শিফা,  তাফসীরে দূররে মানসূরে খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং ইবনে মাযাহ পৃষ্ঠা ২৯৪ বর্ণিত হয়েছে]


❏ হাদিস ৪: সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন


হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ

مَن ذُکِرتُ عِندهُ فخطَئ الصلاةَ عَلَيَّ خَطَئ طَريقَ الحَنَّة

যদি কারো নিকট আমার নাম স্মরণ করা হলো আর সে আমার প্রতি দূরুদ পড়ার ব্যাপরে উদাসীন থাকলো, সে যেন বেহেশতের পথের প্রতি উদাসীন থাকলো। 

[কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৮] 


❏ হাদিস ৫: সে আমার প্রতি জুলুম করল


হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলল্লাহ (ﷺ)  বলেনঃ

مَن ذُکرتُ عِنرَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ فَقَد شقي

“যে (ব্যক্তির) নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে আমার প্রতি জুলুম করল।”

তথ্যসূত্রঃ

[সুনানে ইবনে মাযাহ খঃ১ পৃষ্ঠা১৪০, হাদীস ৪০০, মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক, ২য় খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১২৬]


❏ হাদিস ৬: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধূসরিত হােক


ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) করেন, 

-“ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক) যার, নিকট আমার নাম আলােচনা হল অথচ আমার প্রতি দুরূদ পড়লাে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যার নিকট রমজান আসলাে এবং চলে গেলাে অথচ তার মাগফিরাত হল না এবং ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধূসরিত হােক (অর্থাৎ সে ব্যক্তি চরম লাঞ্ছিত হােক), যে বৃদ্ধাবস্থায় তার পিতা-মাতাকে পেল অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না। (অর্থাৎ তাদের আনুগত্য ও সেবা করেনি যাতে তারা জান্নাতের যােগ্য হতে পারতাে।)


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ. হা/৩৫৪৫, হাদিসটি হাসান সহীহ বলে মেনে নিয়েছেন। 

২.ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৪৪ পৃ. হা/৮৪৬৫, 

৩.সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৮৯ পৃ. হা/৯০৮, 

৪.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১২/৪২১ পৃ. হা/৭৪৫, 

৫.ইমাম বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৫০ পৃ. হা/১৭২, 

৬.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৮ পৃ: হা/৬৮৯,

৭.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯ পৃ. হা/২১৪৮ এবং ১৬/৩৭ পৃ. হা/৪৩৮৩০, 

৮.ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম, ১/৪৪৪০ পৃ. হা/১৪৩৭, 

৯.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৭৩৪ পৃ. হা/২০১৬, এ হাদিসটির সনদও সহিহ! 

১০.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮,

১১.মেশকাত-৮৬।


❏ হাদিস ৭: তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে


রাসুলল্লাহ (ﷺ)  বলেন,“যে সব লোক কোন মজলিশে বসল, আল্লাহ্ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ানো হয় না, ঐ সব লোক কিয়ামতের দিন যখন তাদের পরিণাম দেখবে তবে তাদের উপর চরম অনুশোচনা সৃষ্টি হবে। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৯৭২)


❏ হাদিস ৮: সে ব্যক্তি দুর্ভাগা


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিস হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

“সে ব্যক্তি দুর্ভাগা, যার সামনে আমার আলােচনা করা হয়, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না।” 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৪/১৬২ পূ, হা/৩৮৭১।

২.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কবির, ৩/১২৭ পৃ. হা/২৮৮৫।

৩.ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮।

৪.আমলুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাতি ইবনিস সুন্নতী, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১।


দুরূদ শরীফ বর্জনকারী বড়ই কৃপণ


❏ হাদিস ৯: 


হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

البخيل الذى من ذكرت عنده فلم يصل على 

অর্থাৎ, “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হল, আর সে আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ল না, তবে সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” 


তথ্যসূত্রঃ

[মেশকাত শরীফের ৮৭নং পৃষ্টা, মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৭৩৬]


❏ হাদিস ১০: 


“হযরত হুসাইন ইবনে আলি (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

البَخِيلُ مَن ذُکِرتُ عِندَهُ فَلَم يُصَلِّ عَلَيَّ

"চরম কৃপণ হলাে ঐ ব্যক্তি, যার নিকট আমার আলােচনা করা হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পাঠ করলাে না।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৫০ পৃ, হা/৩৫৪৬, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, -“এ হাদিসটি হাসান, সহীহ, গরীব।

২.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৭৯, সাকলাইন প্রকাশনী।

৩.মুসনাদে আহমাদ,খন্ড,১ পৃষ্ঠা ২০১।

৪.সূনানে তিরমিযিঃ কিতাবে দোয়া খন্ড,১৩, পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।

৫.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৭, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৩৬-৩৩৮ ও ৪৫৩, এ ধরনের হাদীস হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه), ইমাম হাসান (رضي الله عنه), হযরত জাবির (رضي الله عنه), হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه), কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত।

৬.ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররুল মানসূর খন্ড,৫, পৃষ্ঠা ২১৮ এবং 

৭.ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা ৩৮২।


❏ হাদিস ১১: 


ইমাম ইবনে হিব্বান  (رحمة الله) সহ আর অনেকে সংকলন করেন এভাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

“সেই লােকই সবচেয়ে কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলাে আর সে দুরূদ পড়লাে না।” 


তথ্যসূত্রঃ

[সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩/১৯০ পৃ. হা/৯০৯, ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৮৮]


❏ হাদিস ১২: 


হযরত আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

ان البخيل الناس من ذكرت عند فلم يصلى على 

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় কৃপণ ব্যক্তি হল, যার সামনে আমার নাম উলে­খ করা হয়েছে, অথচ আমার উপর সে দুরূদ পাঠ করে না।

তথ্যসূত্রঃ

[ফযলুস সালাত আ'লান নাবিয়্যীন- ৩৭]


❏ হাদিস ১৩: 


হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে লোকেরা! আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে কৃপণ কে বলব না? সাহাবায়ে কিরামগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! (ﷺ) বলুন, হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, من ذكرة عنده فلم يصل على  যার সামনে আমার নাম ধরা হবে আর সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না। 

তথ্যসূত্রঃ

[কাশফুল গোম্মাহ- সূত্র মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য়/২১০পৃষ্টা]


❏ হাদিস ১৪: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হবে, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে আমার যিয়ারত হতে বঞ্চিত থাকবে। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সে ব্যক্তির কয়েকটি আ'লামত বা নিশানা বলে দিন। হাশরের দিন কোন ব্যক্তি আপনার জিয়ারত হতে মাহরূম হবে। তিনি (রাসূলুল্লাহ দ:) বললেন, কৃপণ ব্যক্তি। হযরত আয়শা (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি কোন কৃপণের কথা বলেছেন? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এমন কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করার পর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়ে না। সেই কৃপণের ব্যাপারে বলছি। 

তথ্যসূত্রঃ

[মাওয়াইজে রেজভিয়্যাহ- ২য় খন্ড- ২১১ পৃ:]



৪র্থ অধ্যায়ঃ জুমুআ ও ফাযায়েলে দুরূদ

জুমআ'র দিবা-রাত্রি অধিক হারে দুরূদ পাঠ


❏ হাদিস ১:


হযরত আওস ইবনে আওস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "তােমাদের দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন জুমআ'বার। কেননাঃ 

ওই দিন হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তার ওফাত হয়, ওই দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং ওই দিন মানুষ অজ্ঞান হবে অতএব তােমরা সুতরাং উক্ত দিবসে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়। অতঃপর আমি তােমাদের জন্য দু'আ করি এবং তােমাদের গুনাহ মার্জনার দরখাস্ত করি। 


তথ্যসূত্রঃ

(১).আর দাউদ, আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ২৭৫, হাদীস: ১০৪৭; 

(২) সুনানে নাসায়ী ১/১৫০।

(৩) সুনানে ইবনে মাযাহ:৭৬।

(৪).ইমাম নববী হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন। 

(৫).শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪, গাজী প্রকাশনী।


❏ হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

"তােমরা আমার ওপর অধিক সংখ্যায় দুরূদ শরীফ পাঠ কর, অধিকতর উজ্জ্বল রজনীতে এবং উজ্জ্বল দিবসে।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৬৫; 

(২) আন নুমায়রী (رحمة الله), আল-ই'লামু বি-ফযলিস সালাতি আলান্নাবিয়ি (ﷺ), পৃ. ৬৫, হাদীস: ১১৬। 

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।


কোন কোন আলিম বলেছেন যে, জুমআ'বারের রাতের এটিও একটি বৈশিষ্ট্য, যে ব্যক্তি উক্ত রজনীতে দুরূদ এবং সালাম প্রেরণ করেন, সরদারে দ’জাহান, রহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) নিজেই তাঁর সালামের উত্তর প্রদান করেন। 


❏ হাদিস ৩:


"যে ব্যক্তি জুমআ'বারের আসরের নামায আদায়ের পর উক্ত স্থান থেকে সরে যাওয়ার পূর্বে উক্ত বৈঠকে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)-এর ওপর ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” 


তথ্যসূত্রঃ

(১) মিনহাজ শরহে দামিরী। 

(২) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৯৮-১৯৯

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৭। 


❏ হাদিস ৪:


ইমাম হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, তিনি নবী আকরাম (ﷺ) এর নিকট থেকে জুমআর রাত ও দিনে অধিক পরিমানে দুরূদ পড়ার হুকুম নকল করেন।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ইমান, ৩/৪৩৩ পৃ, হা/২৭৭০,

২.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।


❏ হাদিস ৫:


জুম্মার দিন ও জুম্মার রাতে যে আমার উপর দুরূদ  পাঠ করে তা আমি নিজেই শুনে থাকি। [ইমাম সাফুরীঃ নুজহাতুল মাজালিস]


❏ হাদিস ৬:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “জুমআ' রাত এবং জুমআ'র দিন আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়ো, কেননা তোমাদের দুরূদে পাক আমার নিকট পেশ করা হয়।” 

[তাবারানীঃ মুজাম আল-আওসাত, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪১]


❏ হাদিস ৭:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “জুমআ'র দিন ও জুমআ'র রাতে আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করো। কেননা যে এমনটি করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার সুপারিশকারী ও সাক্ষী হবো।” 

১.শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩০৩৩, 

২.নাসাঈ ,ইবনে মাজাহ, তারগীব, তাবারানী, মুজাম উল আউসাত।


❏ হাদিস ৮:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন দুরূদ শরীফ পড়বে আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করব।” 

[জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হদীস- ২২৩৫২]


❏ হাদিস ৯:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার উপর ১০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, যখন সে কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তার সাথে এমন একটি নূর থাকবে যে, যদি তা সমস্ত সৃষ্টিকে বন্টন করে দেয়া হয়, তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে।” 

[ইমাম ইস্পাহানীঃ হিলয়াতুল আউলিয়া, ৮ম খন্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা]


❏ হাদিস ১০:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর জুমআ'র দিন ২০০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তার ২০০ বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামি লিস্ সূয়ুতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা)


❏ হাদিস ১১:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "এই (জুমুয়ার) দিন এমন একটি দিন, যাতে ফেরেশতাগণ দুনিয়াতে উপস্থিত হন। তাঁরা আমার ওপর দুরূদ শরীফ পাঠকদের দুরূদ শ্রবণ করে আমার নিকট পৌছিয়ে দেন।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে মাজাহ (رحمة الله), আস-সুনান, খ. ১, পৃ. ৫২৪, হাদীস: ১৬৩৭,

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।


❏ হাদিস ১২: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জুমআর দিন আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠের পরিমাণ বাড়িয়ে দাও কেননা হচ্ছে এটা ইয়াউমে মাসাহুদ। এ দিনে ফেরেশতারা হাজির হন। আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্য যে কেউ দুরূদ পাঠ করে, তার দুরূদ পড়া শেষ হবার পূর্বে ই তার দুরূদ আমার দরবারে পৌঁছে যায় । (ইমাম সুয়ূতীঃ জামেউস সাগীর) 


❏ হাদিস ১৩:


হযরত আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমরা জুমআ'বার আমার ওপর দুরূদ প্রেরণ কর, তা আরশে আযীমের নিচে পৌঁছে না, বরং যে ফেরেশতার নিকটেই পৌঁছে তিনি অপরাপর ফেরেশতাদেরকে বলেন, "তােমরা এ দুরূদ পাঠকারীদের জন্য ইস্তিগফার কর।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) আল-খতীবুল বগদাদী (رحمة الله), তারীখু বগদাদ, খ. ৮, পৃ. ৫৭০, হাদীস: ৪০৫০; 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৪।


❏ হাদিস ১৪: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, -“প্রতি সােমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর তােমরা বেশী করে দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তােমাদের দুরূদ আমি মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি শুনি।” 

[ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আনিসুল জালীস” এর ২২৭ পৃষ্ঠা]


জুমআ'র দিনে নির্দিষ্ট করে দুরূদ পড়া জায়েজ


❏ হাদিস ১৫: 


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বাে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

اللهم صل على محمد عبدك ونبيك ورسولك النبي الأمي 

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন-নাবিয়্যিল উম্মি’ এভাবে পড়বে।”


তথ্যসূত্রঃ

১. দারে কুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:,

২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯পৃ.,

৩. খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে,

৪. ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে,

৫. ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ, ১/১৬৭.পূ.

৬. ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান’,

৭. ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম,১/২২০পৃ. ৩শ বলেন, "ইমাম ইবনে নুমান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ও ১/৪৪৫প, হাদিস ৫১১। তিনি বলেন ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)

৮. ইবনুল যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাত আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮পৃ. হাদিসঃ ৭৯৬, 

৯. আলুনী,কাশফুল খাফা, ১/১৮৯পৃ. হাদিস,৫০১, তিনি বলেন, ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

১০. আবু তূলেব মক্কী,কুউয়াতুল কুলুব,১/১২১পৃ.দারুল। ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন,

১১. ইমাম গাযযালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,১/১৮৬পৃ., 

১২. দারুল মা'রিফ বয়র, শায়খ খলিল (ওফাত-৮৬৯ হি.), 

১৩. বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব,১/৩৯পৃ. 

১৪. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কাহেরা, মিশর। 

১৫. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন”৪২২ পৃ।



৫ম অধ্যায়ঃ ফাযায়েলে দুরূদ ও ফেরেশতা


রওজা মুবারক ঘিরে ৭০ হাজার ফেরেশতার দিবা-রাত্রি দুরূদ পাঠ



❏ হাদিস ১:


নবীহ্ বিন ওয়াহাব (রহঃ) বর্ণনা করছেন, হযরত কাআব বিন আহবার (رضي الله عنه) উম্মুল-মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه)'র কাছে আগমন করলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে নবী-পাক (ﷺ) সম্বন্ধে আলােচনার সূচনা হয়। এমন সময় হযরত কাআব বিন আহবার (رضي الله عنه) বলেছিলেন, 

"প্রত্যহ ভােরে ৭০ হাজার ফেরেশতা (আসমান থেকে জমিনে) অবতরণ করেন। তাঁরা (তাদের ডানাগুলাে দিয়ে) নূরানী কবর মােবারককে আচ্ছন্ন করে রাখেন। তাঁরা তাঁদের ডানা দিয়ে (বরকতের জন্য কবর মুবারক) স্পর্শ করেন এবং নবী-পাক (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করতে থাকেন। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে তারা (আসমানের দিকে) উঠে যান। পরে অনুরূপ আরাে ৭০ হাজার ফেরেশতা পবিত্র কবরকে তাদের ডানা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখেন এবং বরকতের জন্য তাদের ডানা দিয়ে কবর-শরীফ স্পর্শ করেন। এভাবে ৭০ হাজার ফেরেশতা দিনে এবং ৭০ হাজার ফেরেশতা রাতে নবী-পাক (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করে থাকেন। এক সময় যেদিন (কেয়ামতের দিন) তার (নূরানী কবরের) জমিন ফেঁটে যাবে, তখন তিনি এমন ৭০ হাজার ফেরেশতার সমভিব্যাহারে সেখান থেকে জলওয়াগর হবেন, যারা তখন তাঁর মহত্ব ও গৌরবের ডঙ্কা বাজাতে থাকবেন। 


তথ্যসূত্রঃ

(১) কুরতুবী, আত তাযকিরাতু ফি উমূরি আহওয়ালিল মাউতা ওয়া উমূরিল আখিরাতিঃ ২১৩, ২১৪, বাবুন ফি বিছিন নবী (ﷺ) মিন কবরিহী। 

(২) দারিমী, আস-সুনান, খ, ১, পৃ. ২২৮, হাদীস: ৯৫।

(৩) বােখারী, আর রদু আলা মন ইয়াকূলুল কুরআনাল মাখলুক ৬৩, হাদিস নম্বর: ৮৯। 

(৪) ইবনু হাব্বান, আল আযমাহ। ৩: ১০১৮, ১০১৯। হাদিস নম্বর: ৫৩৭। 

(৫) ইবনু ইসহাক এযদী, ফদ্বলুস সালাতি আলান নবিয়্যি । ৯২, হদিস নম্বর: ১০১। 

(৬) বায়হাকী, শুআবুল ঈমান। ৩: ৪৯২, ৪৯৩। হাদিস নম্বর: ৪১৭০। 

(৭) আবু নাঈম, হিলিয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আছফিয়া, ৫: ৩৯০। 

(৮) ইবনু জাওযী, আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মােস্তফা (ﷺ) ৮৩৩, হাদিস নম্বর: ১৫৭৮। 

(৯) ইবনু কাইয়িম, জালাউল আফহাম ৬৮, হাদিস নম্বর: ১২৯। 

(১০) সামহুদী, ওয়াফাউল ওয়াফা ২: ৫৫৯। 

(১১) কাস্তালানী, আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ্, ৪: ৬২৫। 

(১২) যারকানী, শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ্,১২: ২৮৩, ২৮৪। 

(১৩) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৬০।

(১৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬০, গাজী প্রকাশনী।

 

❏ হাদিস ২:


হযরত কাবে আহবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে একদিন তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه)-এর খিদমতে উপস্থিত হন। মজলিসের মধ্যে হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর আলােচনা চলছিল। এ সম্পর্কে হযরত কাব (رضي الله عنه) বলেন, এমন কোন দিন নেই, যাতে সূর্য উদিত হয়, আর সে দিন ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর শরীফকে ঘিরে রাখে না। তারা আপন পাখা কুড়িয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। যখন সন্ধ্যা হয়, তারা চলে যান এবং তাদের স্থলে আবার ৭০ হাজার ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। সকাল বেলার ফেরেশতারা যা করেছিলেন, সন্ধ্যা বেলায় ফেরেশতারাও তাই করেন। এ অবস্থা সে দিন পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে, যেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর শরীফ থেকে বের হয়ে আসবেন, সেদিনও তাঁর চতুষ্পর্শে হাজার হাজার ফেরেশতা তাঁকে ঘিরে থাকবেন। 


তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে পাঠকৃত দুরূদ থেকে ফেরেশতার সৃষ্টি 



❏ হাদিস ৩: 


ইবনে বাশকুয়াল (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনাকারী, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, 

من صلى على تعظيما الحقى خلق الله عزوجل من ذالك القوم 

ملکاله جناح بالمشرق وآخر بالمغرب يقول عزو جل له صل على عبدی کما صلی علی نبي فهو يصلي عليه الى يوم القيامة 

অর্থাৎ, যে আমার উপর আমার হকের তাজিম ও সম্মানের উদ্দেশ্যে দুরূদ পেশ করে, আল্লাহ তায়ালা ঐ দুরূদ থেকে একজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যার একটি ডানা পূর্ব দিকে, আর একটি ডানা পশ্চিম দিকে বিস্তৃত। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেন, দুরূদ প্রেরণ করাে আমার বান্দার উপর, যেভাবে সে আমার নবীর উপর দুরূদ প্রেরণ করেছে। ঐ ফেরেস্তা কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর দুরূদ প্রেরণ করতে থাকবেন। 


তথ্যসূত্রঃ

১. এ রেওয়ায়েত ইবনে সাবা এবং ফাকেহানীও বর্ণনা করেন।

২. আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত কিতাবে বর্ণনা করেন। 


বিরাটকার ফেরেশতার ঝাড়া দেয়া ডানা থেকে পরা প্রতিটি ফোঁটা থেকে ১জন ফেরেশতার সৃজন


❏ হাদিস ৪: 


ইমাম সাখাবী  (رحمة الله) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

"আল্লাহর একজন ফেরেস্তা রয়েছেন যার একটি বাহু পূর্বপ্রান্তে, আরেকটি বাহু পশ্চিম প্রান্তে। যখন কোন ব্যক্তি আমার প্রতি ভালােবাসা ও মুহাব্বতের সাথে দুরূদ পাঠ করে ঐ ফেরেস্তা পানিতে ডুব দিয়ে স্বীয় ডানা ঝাড়া দেয়। আল্লাহ তায়ালা তার ডানা থেকে ঝরে পরা প্রত্যেক পানির বিন্দু ও ফোঁটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত দুরূদ প্রেরণকারীদের উপর ইস্তেগফার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। 


তথ্যসূত্রঃ

১. আ'লা হযরতের সম্মানিত পিতাঃ ‘আল কালামুল আওদাহ্ ফী তাফসীরে আলাম নাশরাহ' গ্রন্থে ইমাম সাখাবী  (رحمة الله) থেকে।

২. আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত কিতাবে বর্ণনা করেন। 

৩. ইমাম কাস্তালানী  (رحمة الله)'র "আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া" কিতাবে রয়েছে, 

قدروی آن ثم ملائكة يسبحون فيخلق الله بكل تسبيحة ملكا 

অর্থাৎ, কথিত আছে যে, ওখানে কতেক ফেরেস্তা রয়েছে, যারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক তাসবীহ থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।


৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট পাখি সৃজন


❏ হাদিস ৫: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "আল্লাহর প্রতিটি বান্দা আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করার সাথে সাথে দুরূদ শরীফটি অতি দ্রুত বেগে পূর্ব পশ্চিম স্থল, ও জলভাগে বের হয়ে পড়বে। এমন কোন জায়গা থাকবে না, যেখানে দুরূদ শরীফ পৌছাবে না, এবং সাথে সাথে এ কথা বলে ভ্রমণ করবে যে আমি হলাম অমুকের সন্তান অমুকের দুরূদ শরীফ, যা সমগ্র সৃষ্টির সেরা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর পঠিত। অত:পর সৃষ্টি জগতের সবাই প্রিয় নবীর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবেন। আর আল্লাহ তায়ালা এ দুরূদ শরীফ হতে ৭০ হাজার ডানা বিশিষ্ট একটি পাখি সৃজন করবেন। আর ৭০ হাজারের প্রতিটি ডানায় থাকবে ৭০ হাজার পালক। আর ৭০ হাজারের প্রতি পালকে থাকবে ৭০ হাজার মাথা প্রতিটি ৭০ হাজার মাথায় থাকবে ৭০ হাজার চেহারা। আর প্রতিটি ৭০ হাজার চেহারায় থাকবে ৭০ হাজার মুখমন্ডল। আর ৭০ হাজার মুখমন্ডলের প্রতিটিতে থাকবে ৭০ হাজার জিহ্বা, আর প্রতিটি ৭০ হাজার জিহ্বা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ তথা প্রশংসা করতে থাকবে। এ প্রশংসায় ছাওয়াবসমূহ দুরূদ শরীফ পাঠকারীর আমলনামায় লিখা হবে।

[দালায়েলুল খায়রাত, সোলায়মান যাজুলী (রহঃ), পৃষ্ঠা-12, জিকরে এলাহীঃ ১০০-১০১পৃষ্টা]



সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্যের ফজিলতঃ


▶ সৈয়দী শেখ আকবর (رحمة الله) বলেন,

"সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্য এবং ভালাে কর্ম ফেরেস্তা হয়ে আসমানের পানে সমুন্নত হয়।"

[সৈয়দী শেখ আকবর  (رحمة الله) : ফতুহাতে মক্কীয়ার ২৯৭ তম পরিচ্ছেদ, আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত]  


▶ ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ সুব মহানু তায়ালার বাণী, 

اليه يصعد الكلم الطيب والعسل الصالح يرفعه 

অর্থাৎ, তাঁর দিকে পৌঁছে পবিত্র কালাম আর যে সৎকর্ম রয়েছে তা তাকে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত করে -এর মর্মার্থ এটাই।

[ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) :‘আল ইয়াওয়াকীত ওয়াল জাওয়াহীর' গ্রন্থের সপ্তদশ অধ্যায়, আ'লা হযরতঃ ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত]


হুজুর (ﷺ)  এর উপর দরুদ প্রেরণ কারীর উপর ৭০ হাজার ফেরেশতা দরুদ প্রেরণ করে। (সুররুল কুলুব)



৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ আম্বিয়া (আঃ) সম্পর্কিত ফাযায়েলে দুরূদ। 

হযরত আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায়


❏ হাদিস ১:


হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত জুমআ'র দিন যোহর থেকে আছর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে আল্লাহ তা’আলা হাওয়া (عليه السلام) কে আদম (عليه السلام) এর বাম পাজর থেকে সৃষ্টি করলেন,আর তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকট গেলেন তখন ফেরেশতারা মোহরানা আদায় করতে বললেন, তখন আদম (عليه السلام) বললেন তার মোহরানা কী? তখন ফেরেশতারা বললেন আপনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর তিনবার দুরূদ শরীফ পড়ুন।”


তথ্যসূত্রঃ

[ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াঃ ১/৭৬পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল ইসলাম, বৈরুত, লেবানন,

ইবনে কাসীরঃ বেদায়া ওয়ান নেহায়াঃ ১/৭৪ পৃষ্ঠা,

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল মাওয়ারিদুর রাভী ফি মওলুদুন্নবীঃ ১৫ পৃষ্ঠা]


হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) এর ঘটনা সম্পর্কিত হাদীস



❏ হাদিস ২: 


শায়খ মজদুদ্দীন (رحمة الله) থেকে আবুল মুযাফফর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ খাইয়াম সমরকন্দী (رحمة الله)-এর কাহিনীর পাশাপাশি হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনার অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, 

তিনি বললেন, একদিন আমি পথ হারিয়ে গেলে, হঠাৎ একজন লােককে দেখতে পাই, তিনি আমাকে বললেন, এসাে! আমি তার সাথে চললাম। আমার মনে হচ্ছিল যে, সম্ভবত তিনি হযরত খিযির (عليه السلام) হবেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কী? তিনি বললেন, খিযির ইবনে আনশা আবুল আব্বাস (عليه السلام)। আমি তার সাথে আরও একজন লােককে দেখতে পাই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কি? তিনি বললেন, ইলিয়াস ইবনে শাম (عليه السلام)। এরপর তাদের উভয়কে সম্বােধন করে আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা আপনাদের ওপর রহমত নাযিল করুক। আপনি কি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)-কে দেখেছেন? তারা বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। আমি বললাম, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা তার পবিত্র জবান থেকে যা শুনেছেন তা আমাকে বলুন, যাতে আমি আপনাদের থেকে রিওয়ায়ত করতে পারি। তাঁরা বললেন, আমরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি,

“যে ব্যক্তি صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ পাঠ করবে, তার অন্তর মুনাফিকী থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যাবে যেমন পানি দ্বারা বস্ত্র পরিষ্কার করা হয়। 

উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ﷺ)- ইরশাদ করেছেন,"যে ব্যক্তি صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ বলবে, তাঁর মুখের ওপর রহমতের ৭০টি দরজা খুলে দেওয়া হয়।"

উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে, 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যখন তুমি কোন মজলিসে বসে বল, 

 بسم الله الرَّحْمنِ الرَّحِيم ، وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدِ 

তবে আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশতাকে নিয়ােগ করবেন, যিনি তােমাকে গীবত (পরনিন্দা) করা থেকে বিরত রাখেন। আর যদি তুমি মজলিস থেকে ওঠে যাওয়ার সময় বল, 

بسم الله الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ ، وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدِ 

তবে আল্লাহ তা'আলা জনগণকে তােমার গীবত করা থেকে বিরত রাখবেন। 

উল্লিখিত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে, 

হযরত খিযির (عليه السلام) এবং হযরত ইলিয়াস (عليه السلام) বলেছেন যে, এক ব্যক্তি সিরিয়া থেকে হযরত রাসূলে মকবুল (ﷺ)-এর পবিত্র দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার আব্বাজান আপনার মুলাকাতের জন্য খুবই উদগ্রীব, কিন্তু তিনি বৃদ্ধ এবং অন্ধ। আপনার দরবারে উপস্থিতির শক্তি নেই। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন, “তােমার আব্বাকে বল, তিনি যদি সাত রাতে বলে, 

صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدِ ﷺ

তবে তিনি আমাকে স্বপ্নে দর্শন করবেন এবং তিনি আমার থেকে হাদীস রিওয়ায়ত করবেন।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৩৭-১৩৮।

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।



দুরূদের মাধ্যমে হযরত মূসা (عليه السلام) এর কল্যাণ লাভ



❏ হাদিস ৩: 


উল্লিখিত কিতাবে হযরত কা'আবে আহবার (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা (عليه السلام)-এর নিকট অহী প্রেরণ করেন যে, পৃথিবীতে যদি আমার প্রশংসাকারী না থাকে, তবে আমি পৃথিবীতে এক বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষণ করতাম না, একটি দানা পর্যন্ত উৎপন্ন করতাম না। এভাবে অনেক কিছু বলার পর ইরশাদ করলেন, হে মূসা (عليه السلام)! তুমি কি একথা বাসনা কর যে তােমার কথা তােমার মুখের, তােমার হৃদয়ের জল্পনা-কল্পনা তােমার হৃদয়ের, তােমার রূহ, তােমার শরীরের, তােমার দৃষ্টিশক্তি তােমার চোখের যতদূর নিকটবর্তী এর চেয়েও আমি তােমার অধিকতর নিকটবর্তী হই? হযরত মূসা (عليه السلام) আরজ করলেন, হ্যাঁ, ইয়া আল্লাহ! আমি এর বাসনা রাখি। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করলেন, তবে তুমি খুব বেশি বেশিভাবে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ কর। তাহলে তােমার এ সম্পর্ক অর্জিত হবে।" 


তথ্যসূত্রঃ

(১) আস-সাখাওয়ী (رحمة الله), আল-ওকুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৩৭; 

(২) আল নুআইম আল-আসবাহানী (رحمة الله), হিয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আসফিয়া, খ. ৬, পৃ. ৩২। 

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।

(৪) ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) : মুকাশাফাতুল ক্বুলূব,পৃ:নং-৪৫, আধ্যাত্নিক কৃচ্ছ্রসাধনা এবং পাপ প্রবৃত্তির তাড়না অধ্যায়।

(৫) আল-বাহারেল মাদীদ,৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ:নং-৭৯


❏ হাদিস ৪: 


অপর একটি রিওয়ায়তে আল্লাহ তাঁকে বলেন, “হে মূসা (عليه السلام)! তুমি কি কিয়ামতের তৃষ্ণা থেকে রেহাই পেতে চাও? তিনি আরজ করলেন, হ্যাঁ, ইয়া আল্লাহ! আমি অনুরূপ কামনা করি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন, তবে তুমি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর ওপর অধিক সংখ্যক দুরূদ শরীফ পাঠ কর। 


তথ্যসূত্রঃ

(১) আবু নুআইম আল-আসবাহানী (رحمة الله), হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবাকাতুল আসফিয়া, খ, ৪, প, ৪৫। 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।


আল্লাহর আম্বিয়া (عليه السلام)-এর ওপর দুরূদ প্রেরণ 


❏ হাদিস ৫: 


উক্ত কিতাবে হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 

"তােমরা আল্লাহ তা'আলার অপরাপর পয়গম্বর (عليه السلام)-এর ওপরও দুরূদ শরীফ প্রেরণ কর। তাঁদেরকেও রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন।" 


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আল হাবীবিশ শফী; পূ, ৬১।

(২) আল বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, খ, ১, পৃ. ২৭৭-২৭৮, হাদীস: ১৩০; 

(৩) আল-বায়হাকী, আদ-দাওয়াতুল কবীর, খ, ১, পৃ. ২৬৩, হাদীস: ১৮০। 

(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৬:


হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,

"যদি তােমরা আমার ওপর সালাম প্রেরণ কর, তবে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম (عليه السلام)-এর ওপরও সালাম প্রেরণ করবে।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সালাত আলান্নাবী (ﷺ), পৃ. ৫৪, হাদীস: ৭০,  

(২) ইমাম সাখাভী, আল কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী (ﷺ), পৃষ্ঠা ৬১।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৯, গাজী প্রকাশনী।


৭ম অধ্যায়: হায়াতুল আম্বিয়া উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ ও আমলসমূহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পৌঁছায়।

❏ হাদিস ১-২৮:

❏ ইমামগণের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।

❏ হাদিসের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট আমাদের আমলসমূহ পৌঁছায়।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুরূদ পাঠকারীকে চিনেন এবং জবাব প্রদান করেন।





৭ম অধ্যায়: হায়াতুল আম্বিয়া উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ ও আমলসমূহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পৌঁছায়। 


ইমামগণের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ করা হয়ঃ


❏ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) (১২৭২-১৩৪০হিজরী) কত সুন্দর বলেছেন, 

"কাছে দূরের শব্দ শ্রবণকারী কান মুবারকের কারামতের প্রতি লাখো সালাম।"

[আহমদ রেযা খান, হাদায়েকে বখশিশ, ২:২০৬; ১৩৭] 


❏ আল্লামা তকিউদ্দীন সুবকী (রহঃ) এই রেওয়াতগুলাে সম্পর্কে বলেছেন, (দুরূদ পেশ সংক্রান্ত) হাদিসটি দ্বারা বুঝা যায়, হুজুর-পাক (ﷺ) এর রূহ মােবারক তারই দেহ মােবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় আর নিঃসন্দেহে তিনি উম্মতিদের সালামও শােনেন এবং জবাবও দেন। 

(সুবকী, শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতি খাইরিল আনাম। ১৩৩) 


❏ হযরত ইবরাহীম বিন শায়বান (রহঃ) বলছেন, হজ্ব শেষ করে আমি মদীনা-শরীফ চলে এলাম। রওজায়ে আতহারের নিকটে গিয়ে সালাম আরজ করলাম। সাথে সাথে হুজরা শরীফের ভেতর থেকে শুনতে পেলাম- (তােমার উপরও শাস্তি হােক)। 

তথ্যসূত্রঃ

১. সাখাবী, আল কওসুল বদী ফিস সালাতি আলাল হাবীবিশ শফী । ১৬০। 

২. মুকরিযী, ইমতাউল আসমা । ১৪: ৬১৬। 

৩. সুবকী শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতি খাইরিল আনাম (পৃ: ৩৮) কিতাবে উক্তিটি ইবরাহীম বিন বিশারের বলে উল্লেখ করেছেন। 


❏ সােলায়মান বিন তামীম বলছেন, নবী-পাক (ﷺ) কে আমি স্বপ্নে দেখি। আমি তাঁকে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্(ﷺ)! এরা সবাই তাে আপনার দরবারে এসে আপনাকে সালাম জানায়। আপনি কি তাদের সালামের কথা বুঝতে পারেন? হুজুর-পাক (ﷺ) বললেন, হাঁ, (বুঝতে পারি) এবং আমি (তাদের সালামের) জাবাবও দিয়ে থাকি।  

তথ্যসূত্রঃ

১.বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, ৩: ৪৯১, হাদিস : ৪১৬৫। 

২.সুবকী, শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারতি আইরিল আনাম ৩৮। 

৩.মুকরীযী, ইমতাউল আসমা, ১০: ৩০৮। 

৪.সাখাবী, আল কওলুল বদী ফিস সালাতি আলাল হাবীবিশ শফী, ১৬০। 


হাদিসের বর্ণনায় উম্মতের পাঠকৃত দুরূদ পেশ করা হয়ঃ


❏ হাদিস ১:


হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, 

"আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করতে থাক। নিশ্চয় তােমাদের পক্ষ থেকে প্রেরিত দরূদ আমার পর্যন্ত পৌঁছে থাকে, তােমরা যেখানে থাক না কেন।


তথ্যসূত্রঃ

১. আবু দাউদ: আস সুনান, কিতাবু মানাসিক, ২:১৭৬, হাদীস নং ২০৪২। 

২. আমহদ বিন হাম্বল: আল মুসনাদ, ২:৩৬৭। 

৩. ইবনে আবি শায়বাহ: আল মুসান্নাফ, ২:৮২,৮৩, হাদীস নং ৭৫৪২। 

৪. তাবরানী: আল মু'জামুল আওসাত, ৮:৪৯১, হাদীস নং ৪১৬২। অথবা ৮: ৮২, ৮৩, হাদিস নম্বর: ৮০৩০। 

৫. বায়হাকী: শুআবুল ঈমান, ৩:৪৯১, হাদীস নং ৪১৬২। 

৬. মাকরিযী: এমতা'উল আসমা, ১১:৫৯,৭১। 

৭. ইবনে কাইয়্যুম: জালাউল আযহাম ফিস সালাতি ওয়া সালামি ‘আলা খায়রিল আনাম (ﷺ), ৪২, হাদীস নং ৬১। 

৮. ইবনে কাসীর তাফসিরুল কুরআনিল আযিম, ৩:৫১৪। 

৯. আসকালানী: ফাতহুল বারী, ৬:৪৮৮।


❏ হাদিস ২:


হযরত আলী বিন হুসাইন  (رضي الله عنه) স্বীয় সম্মানিত দাদা হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, 

وصلوا علي وسلموا كيثام، قتلغي صلاتكم ولامكم 

-“আর তােমরা যেখানে থাকনা কেন আমার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করতে থাক, (কারণ) তােমাদের দরূদ ও সালাম আমার কাছে পৌছে থাকে।


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে ইসহাক আযদী: ফদলুস সালাতি আলান নবী (ﷺ), ৩৫, হাদীস নং ২০। 

(২) ইবনে আবি শায়বাহ: আল মুসান্নাফ, ২:১৫০, হাদীস নং ২:১৫০, হাদীস নং ৭৫৪২।। 

(৩) ইবনে কাসীর: তাফসিরুল কুরআনিল আযিম', ৩:৫১৫।

(৪) আসকালানী: নিসানুল মিযান, ২:১০৬।  

(৫) হিন্দী : কানযুল উম্মাল ফী সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফয়াল (১:৪৯৮, হাদীস নং ২১৯৯।), 

উল্লেখ করেন, হাদিসটি হাকীম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।

(৬) ইমাম হাকিমঃ মুস্তাদরাক আল হাকিম।

(৭) আহমদ বিন হাম্বল: আল মুসনাদ, ২:৩৬৭, হাদীস নং ৮৭৯০। 


❏ হাদিস ৩:


হযরত হাসান বিন আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। হুযুর (ﷺ) বলেন, "আমার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করতে থাক। নিশ্চয় তােমাদের দরূদ-সালাম আমার পর্যন্ত পৌঁছে থাকে, তােমরা যেখানে হওনা কেন।"


তথ্যসূত্রঃ

[অত্র হাদীসটি ইমাম আহমদ ও তাবরানী (رحمة الله) ইসনাদে হাসান এর সাথে বর্ণনা করেন। বর্ণিত হাদীসের শব্দ ইমাম তাবরানী (رحمة الله)-এর]

(১) আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদ, ২:৩৬৭, নং: ৮৭৯০। 

(২) তাবরানী, মু'জামুল কবীর, ৩: ৮২, নং: ২৭২৯। 

(৩) তাবরানী, মু'জামুল আওসাত, ১: ১৭, নং: ৩৬৫। 

(৪) দাইলামী, মুসনাদুল ফিরদাউস, ৫: ১১৫, নং: ৮৩।

(৫) নাসাঈ, মিশকাত, 

(৬) সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০।

(৭) আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ, ১:৩৬১, হাদীস নং ৪৬৯। ১২:১৩১, হাদীস নং ৬৭৬১।

(৮) মুকাদ্দসী: আল আহাদিসুল মুখতারা, ২:৪৯, হাদীস নং ৪২৮। 

(৯) হায়সমী: মাজমাউয জাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, ৪:৩। 

(১০) আসকালানী: লিসানুল মিযান, ২:১০৬। ১৩২, 

(১১) ইবনে কায়ুম: জলাউল আযহাম ফিস সালাতি ওয়াস সালাম আলা হায়রিল আনাম (ﷺ), ৪২, হাদীস নং ৬০।


❏ হাদিস ৪:


হযরত হাসান বিন হাসান বিন আলী (رضي الله عنه) নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেছেন, "তােমরা যেখানে হওনা কেন আমার প্রতি দরূদ পৌঁছাতে থাক। নিশ্চয় তােমাদের দরূদ আমার বরাবর পৌঁছে থাকে।"


তথ্যসূত্রঃ

১. তাবরানী: আল মু'জামুল কবীর, ৩:৮২, হাদীস নং ৬৭৬৯। 

২. তাবরানী: আল মু'জামুল আওসত, (১:২৩৮, হাদীস নং ৩৬৭) এ রাবীর নাম হুসাইন বিন হাসান বিন আলী (رضي الله عنه) লেখা হয়েছে। 

৩.আহমদ বিন হাম্বল : আল মুসনাদ, (২:৩৬৭) এ বচনে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। 

৪. আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ,(৩:৫৭৭, হাদীস নং ৬৭২৬) এ কিছু শব্দের পার্থক্য সহকারে বর্ণনা করেছেন। 

৫. দাওলাভী : আল যুররিয়াতুত তাহিরা, ৭৩, হাদীস নং ১৯৯। 

৬. আত তারগীব ওয়াত তারহীব (২: ৩৬১) গ্রন্থে মুনযিরী বলেছেন, তাবারানী হাদিসটিকে আল মুজামুল কবীরে হাসান ইসনাদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। 

৭. হায়সমী: আল মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, ১০:১৬২। 

৮. ইবনু কাইয়িম: জালাউল আযহাম ফিস সালাত ওয়াস সালাম আলা হায়রিল আনাম (ﷺ), ৪২, হাদীস নং ৬১। 

৯. আসকালানী, লিসানুল মীযান, ২: ১০৬। 

১০. মুনাদী, ফয়যুল কদীর, ২: ৪০০। 


❏ হাদিস ৫:


হযরত হাসান বিন হুসায়ন  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেছেন, "আর আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করতে থাক। নিশ্চয় তােমাদের দরূদ (সরাসরি) আমার নিকট পৌঁছাতে থাকে, তােমরা যেখানে থাক না 

কেন।"


তথ্যসূত্রঃ

১. ইবনে ইসহাক আযদী: ফাদলুস সালতি আলান নবী (ﷺ), ৪৫, হাদীস নং ৩০।

২. ইবনে আবি শায়বাহ: আল মুসান্নাফ, ২:১৫০, হাদীস নং ৭৫৪৩।

৩. আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ, (৩:১৭, হাদীস নং ৪৮৩৯)।


❏ হাদিস ৬:


হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 


رقم الحديث : ১৪ حديث مرفوع وفي هذا المعنى الحَدِيث الذي أخبَرَنَا أَبُو عَلى الحسين بن مُحتَ الرُوأَبَارِي أنبأبو بكر بن داسة ثنا أَبُو داد ثنا أحمَتُبُن صالح قال : قَرَأتُ عَلَى عبْد الله بن نافع ، قال : أَخَبَرَنِينِ أبي ذئب سعيد المقبري و أبي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " لا تجعَلُوا بُيُوتَكُمْ فَتُورًا ولا تجعلوا قبري عيدًا ، وصلوا علي فإن صلاتكم تبَلغني حيْتُ كُنْتُمْ " ( ১৪ ) "


"তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবর শরীফকে ঈদে রূপান্তর করো না। বরং তোমরা আমার প্রতি সালাত-সালাম প্রেরণ করো, কেননা তোমরা যেখানে হওনা কেন তোমাদের সালাত-সালাম আমার প্রতি প্রেরণ করা হয়।"


তথ্যসূত্রঃ

১. আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৪২, ফিল মানাসিক, বাবু যিয়ারাতিল ক্বুবুর, 

২. মসনদে আহমদ,২য় খন্ড, পৃ-৩৬৭

৩. ইমাম বায়হাকীঃ হায়াতুল আম্বিয়াঃ ১৪ নং হাদিস।

৪. হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রাহ:) বলেন, এর সনদ সহীহ।

[ফাতহুল বারী ৬/৬০৬, মজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২৬/১৪৭]


১৪ - ( أخرجه أحمد في " مسنده " ( ۳۶۷ / ۲ ) ، وأبو داود في " السنن " ( ۲۰۶۲ ) - ومن طريقه البيهقي في " شعب الايمان " ( ৪১৬ ) ، وفي " حياة الأنبياء بعد وفاتهم " ( ص ৯৫ ) - ، وابن فيل البالسي في " جزئه " ( ۱۱۳ ) ، والطبراني في " المعجم الأوسط " ( ۸۰۳۰ . ( أخرجه أبو نعيم في " حلية الأولياء " 

( ۲۸۳ / ৬ : )

. “তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিওনা” মানে কবরে যেভাবে নামাজ পড়া হয় না সেভাবে তোমাদের ঘরকেও কবরের মত নামাযবিহীন করোনা, বরং তোমরা মসজিদের পাশাপাশি তোমাদের ঘরেও কিছু নফল নামায পড়। 

আর “আমার কবরকে ঈদে পরিণত কর না” মানে যেভাবে বৎসরে মাত্র দু’বার সমবেত হয়, তোমরা আমার কবর শরীফকে তেমন করোনা। বরং বৎসরের সব সময় আমার রওযা শরীফ যেয়ারতে আস। আর যাদের পক্ষে সম্ভব না হয়, আর যখন তোমরা অনুপস্থিত থাক, তাহলে তোমরা বিশ্বের যে প্রান্তেই — থাকনা কেন তোমরা আমার প্রতি দুরূদ ও সালাম প্রেরণ করতে থাকো। কারণ তোমাদের সালাত-সালাম পৌঁছানো হয়। 

[ইমাম বায়হাকীকৃত হায়াতুল আম্বিয়াঃ ১৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যা]


❏ হাদিস ৭:


হযরত আব্দুল্লাহ বিন সায়িব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: 

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার কিছু ফেরেশতা রয়েছেন যারা যমিনে পরিভ্রমণ করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

(১) সুনানে নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাবুস সালামে আলান্নাবী , ৩:৪৩, নং: ১২৮২। 

(২) নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, ১: ৩৮০, নং: ১২০৫। 

(৩) সুনানে নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, ১:৬৭, নং: ৬৬। 

(৪) সুনানে দারিমী, ২: ৪০৯, নং: ২৭৭৪। 

(৫) সহিহ ইবনে হিব্বান, ৩: ১৯৫, নং: ৯১৪। 

(৬) আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ, ২: ২১৫, নং: ২০১৮। 

(৭) ইবনু আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ, ২:২৫৩, নং: ৭৮০৫, ৩১৭২১। 

(৮) বাযযার, মুসনাদ, ৫:৩০৭, নং-৪২১০,৪৩২০। 

(৯) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ৯:১৩৭, নং-৫২১৩। 

(১০) তাবরানী, মুজামুল কবীর, ১০:২১৯, নং-৫২১৩। 

(১১) হাকীম, মুস্তাদরাক, ২:৪৫৭, নং-৩৫৭৬। 

(১২) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২১৭, নং-১৫৮২। 


❏ হাদিস ৮:


হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী-পাক (ﷺ) এরশাদ করেন, 

"আল্লাহ্ তা'আলার এমন অনেক ফেরেশতা বিদ্যমান রয়েছেন, যারা পৃথিবীময় বিচরণ করেন। তারা আমার উম্মতদের সালামগুলাে আমার কাছে নিয়ে আসেন।" 


তথ্যসূত্রঃ

১. নাসাঈ, আস সুনান, ৩: ৩১, কিতাবুস সাহু, হাদিস নম্বর: ১২৮২। 

২. নাসায়ী: আমালুল ইয়াওমি ওয়ার লায়লা,১৬৭৬৬। 

৩. নাসায়ীঃ আস-সুনানুল কোবরা, ২/৭০ পূ, হা/১২০৬, 

৪. দারিমী: আস সুনান, ২:৪০৯, হাদীস নং ২৭৭৪। 

৫. ইবনে হিব্বান: আস সহীহ, ৩:১৯৫, হাদীস নং ৯১৪। 

৬. বাযযার: আল বাহরুয যাহার, (আল মুসনাদ), ৫:৩০৭, ৩০৭, হাদীস নং ১৯২৪, ১৯২৫ 

৭. আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ, ৯:১৩৭, হাদীস নং ৫২১৩। 

৮. ইমাম আবদুর রাযযাক: আল মুসনাদ, ২:২১৫, হাদীস নং ৩১১৬। 

৯. মুসনাদে আহমদ, ৬/১৮৩ পৃ. হা/৩৬৬৬ এবং ৭/২৬০ পৃ. হা/৪২১০ এবং হা/৯৮১১, হাদিসটি সহীহ।

১০. মুফতি আমজাদ আলী আযমী (রহ.), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড),পৃ ১৭৮।

১১. ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ। ২: ২৫৩। হাদিস নম্বর: ৮৭০৫। 

১২. ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ।৬: ৩১৬। হাদিস নম্বর: ৩১৭২১। 

১৩. শাশী, আল মুসনাদ। ২: ২৫২। হাদিস নম্বর: ৮২৫। 

১৪. হাকেম, আল মুসতাদরিক। ২: ৪২১। হাদিস নম্বর: ৩৫৭৬। 

১৪. তাবারানী, আল মুজামুল কবীর।১০: ২১৯, ২২০। হাদিস নম্বর: ১০৫২৮-১০৫৩০। 

১৫. বায়হাকী, শুআবুল ঈমান। ২: ২১৫। হাদিস নম্বর: ১৫৮২। 

১৬. বাগাবী, শরহুস সুন্নাহ্, ৩: ১৯৭, হাদিস নম্বর: ৯৮৭। 

১৭. আবু বকর বাগদাদী, আল ফছলু লিল ওয়াছলিল মাদরাজ। ২: ৭৬৮, ৭৬৯।

১৮. খতীবে তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, ১: ১৭৯ । কিতাবুস সালাত, হাদিস নম্বর: ৯২৪। 

১৯. হাইছমী, মাওয়ারিদুয যামআন ৫৯৪, হাদিস নম্বর: ২৩৯২। 

২০. মুকরীযী, ইমতাউল আসমা ১০: ৩০৬, ৩০৭। 

২১. মুকরীযী, ইমতাউল আসমা ১১: ৬০। 

২২. ইবনু কাইয়্যিম, জালাউল আযহাম ২৩ হাদিস নম্বর: ৩৬। 

২৩. ইবনু কছীর, তাফসীরুল কুরআন ৩: ৫১৫। 

২৪. ফিরােজাবাদী, আস সালাতু ওয়াল বিশর ফিস সালাতি আলা খাইরিল বাশার ১০৮। 

২৫. নাবহানী, সালাওয়াতুস সানা আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া ২৩। 


হাদিসের সনদ ও মান


▶ইবনে-হাব্বান কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটির সনদসমূহ ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ্ এবং রেজালগণ (রাবীগণ) অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য।

▶হাদিসটিকে হাকেম সহীহ্ বলে ঘােষণা দিয়েছেন। 

▶ইমাম যাহাবীও একই কথা ব্যক্ত করেছেন। 

▶ইবনে-কাইয়িম হাদিসটির সনদকে সহীহ্ বলেছেন। 


❏ হাদিস ৯:

 

হযরত এজীদ রাক্কাশী (رضي الله عنه) বলছেন, 

"প্রত্যেক জুমাবারে একটি ফেরেশতাকে নিয়ােজিত করা হয়। যেই ব্যক্তি নবী-পাকের উপর সালাত ও সালাম পেশ করে, তিনি তা তাঁর দরবারে নিয়ে যান। আর বলেন, আপনার অমুক উম্মত আপনার উপর সালাত ও সালাম পাঠ করেছেন।"


তথ্যসূত্রঃ

১. ইবনু ইসহাক এজদী, ফদ্বলুস সালাতি আলান নবী (ﷺ), ৪২। হাদিস নম্বর: ২৭। 

২. ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ। ২: ২৫৩। হাদিস নম্বর: ৮৬৯৯। 

৩. ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ । ৬: ৩২৬। হাদিস নম্বর: ৩১৭৯২। 

৪. মুকরীযী, ইমতাউল আসমা। ১১: ৭০, ৭১। 

৫. ইবনু কাইয়িম, জালাউল আফহাম। ৬৪। হাদিস নম্বর: ১১০। 


❏ হাদিস ১০:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা আমার কবরে এক ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন, যাকে সকল সৃষ্টির আওয়াজ সমূহ শুনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আমার উপর দরূদ পাক পড়ে, তবে সে আমাকে তার নাম এবং তার পিতার নাম পেশ করে থাকে। সে বলে: অমুকের ছেলে অমুক আপনার উপর এই মুহুর্তে দরূদ শরীফ পাঠ করেছে।” 


তথ্যসূত্রঃ

১. মুসনাদে বাজ্জার, ৪র্থ খন্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৪২৫, 

২. মুত্তাকী হিন্দিঃ কানজুল উম্মাল, 

৩. হায়সামীঃ মাজমায়ে যাওয়ায়েদ।


❏ হাদিস ১১:

হযরত আম্মার ইবনু ইয়াসির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, 


عن عمار بن یاسر ، يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله وكل بقبري ملكا أعطاه أسماع الخلائق ، فلا يصلي على أحد إلى يوم القيامة إلا ابلغني باسمه واسم ابيه، هذا فلان ابن فلان قد صلى عليك - 

رواه البزار والبخاري في الكبير ، وقال الهيثمي : فيه ان الجميري لا أعرفه وبقية رجاله رجال الصحيح


وروى أبو الشيخ ابن حبان ولفظه : قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم : إن الله تبارك وتعالي ملگا أعطاه أسماع الخلائق كلهم ، فهو قائم على قبري ، إذا مت الى يوم القيامة ، فليس أحد من صلى على صلاة إلا سماه باسمه واسم آبیه ، فقال : يا محمد ، صلي عليك فلان، فيصلي الرب تبارك وتعالى علي ذالك الرجل بكل واحد عشرا.


হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমার কবরের উপর একজন ফেরেশতা নিয়ােগ করেছেন, যাকে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শ্রবণের (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যে-কেউ আমার উপর দরূদ পাঠ করবে সে ফেরেশতা ঐ দরূদ পাঠকের নাম এবং তার পিতার নাম আমার নিকট পৌঁছাবেন এবং আবেদন করবেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরূদ প্রেরণ করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

▶ এ হাদিসকে ইমাম বাজ্জার আল মুসনাদে।

▶ ইমাম বুখারী আত্তারিখুল কবীরে এবং

▶ ইমাম মুনজেরী ও বর্ণনা করেছেন।

▶ ইমাম হায়সামী বলেন, ইহার সনদে ইবনু হুমায়রী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না। তিনি ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী।


❏ হাদিস ১২:


আবূ শায়খ ইবনু হাইয়্যান এর বর্ণনার শব্দসমূহ এরূপ যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার এক ফেরেশতা আছে, যাকে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শােনার (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন সে ফেরেশতা আমার ওফাতের পর কেয়ামত পর্যন্ত আমার কবরের উপর দণ্ডয়মান থাকবে, অতঃপর আমার উম্মতের মধ্য থেকে যে-কেউ আমার উপর দরূদ প্রেরণ করবে সে ফেরেশতা তার নাম এবং তার পিতার নাম নেবেন এবং বলবেন, হে মুহাম্মদ! (আমার মনিব) অমুক ব্যাক্তি আপনার খেদমতে দরূদ প্রেরণ করেছেন। তখন আল্লাহ তা'আলা সে ব্যাক্তির উপর প্রতি দরূদের বিনিময়ে দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন।


তথ্যসূত্রঃ

১. বাযযার : আল মুসনাদ, ৪/২৫৫, হাদিস : ১৪২৫, ১৪২৬।

২. বুখারী : তারিখুল কবীর, ৬/৪১৬, হাদিস : ২৮৩১। 

৩. ইবনে হাইয়ান: আল আযমা, ২/৭৬২, হাদিস : ১।

৪. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৬২।

৫.ড: তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।

৬.কানযুল উম্মাল খঃ১ পৃঃ৪৪৮-৪৫০।


❏ হাদিস ১৩:


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলছেন, যখন তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড় তখন তা ভালো অবস্থায় পড়ো। কারণ তোমরা হয়ত এটা জানোনা যে তোমাদের প্রতিটি পড়া দরুদ আমার উপর পেশ করা হয়। (ইমাম দাইলামীর মুসনাদুল ফিরদাউস)


❏ হাদিস ১৪:


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে হাওযে কাওসারের উপর আমি এমন এমন দল পাবো যাদের কে আমি বেশী পরিমানে দরুদ শরীফ পাঠ করার কারনে চিনব। (কাশফুল গুম্মাহ)


❏ হাদিস ১৫:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় তোমাদের নাম পরিচয় সহ আমার কাছে পেশ করা হয়, এজন্য আমার উপর সুন্দর (অর্থাৎ- সর্বোত্তম শব্দাবলীর মাধ্যমে) দরূদ পাক পাঠ কর। (মুসান্নিফ আবদুল রাজ্জাক, ২য় খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১১৬)


❏ হাদিস ১৬:


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত - রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যখন বৃহম্পতিবার আসে আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাদেরকে প্রেরণ করেন। তাদের নিকট রূপার কাগজ ও সোনার কলম থাকে, তারা লিপিবদ্ধ করে- কে বৃহস্পতিবার ও জুমার রাতে আমার উপর বেশি পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করে।” (আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬৮৮, কানজুল উম্মাল)


❏ হাদিস ১৭:


হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


رقم الحديث : ۱۳ حديث مرفوع ( وَأَخَبَرَنَابو الحسن علي بن مُحَمَدَ بْنِ عَلِيّ السقاء الإسفَرَانِيني ، قال : حَدّتَنِي وَالِدِي أَبُو عَلِيّ ثنا أَبُو رافع أسامة بَن علي بن سعيد الرّازي ، بمصر , ثنفَحمَدَ بن إسماعيل بن سَالِم الصعَلَيْهِ حَدَتُناحكمة بنت عثمَان بْنِ دِينَار أخي مالك بْنِ دِينَار ، قالت : حَدَثني أبعَثمان بن دِينار


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিনের সকল স্থানে তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার সর্বাধিক নিকটতম স্থানে থাকবে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী ছিল। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে ও জুমার রাতে ১০০ বার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা ওই ব্যক্তির একশ’টি চাহিদা পূরণ করবেন- ৭০টি আখিরাতের প্রয়োজন ও চাহিদা এবং ৩০টি দুনিয়ার চাহিদা ও প্রয়োজন। অত:পর আল্লাহ তা‘আলা ওই সালাত- সালাম সংরক্ষণ ও পৌঁছানোর জন্য এক ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন, যিনি তা আমার কবর শরীফে ওইভাবে প্রবেশ করাবে, যেভাবে তোমাদের কারও নিকট হাদিয়া উপঢোকনসমূহ প্রবেশ করানো হয়। আর ওই ফেরেশতা আমাকে সংবাদ দেবেন যে ব্যক্তি আমার প্রতি সালাত-সালাম প্রেরণ করেছে তার নাম, তার পিতা, বংশ, গোত্র, অঞ্চলসহ সমুদয় বিষয়ে। অত:পর তা আমি আমার নিকট রক্ষিত শ্বেত বালামে লিপিবদ্ধ করে রাখি। 


তথ্যসূত্রঃ

১. ইমাম বায়হাকীঃ হায়াতুল আম্বিয়াঃ হাদীস নং ১৩

২. ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩০৩৫, 

৩. তারিখে   দামেশক লি  ইবনে আসাকির, ৫৪তম খন্ড, ৩০১ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর বৈরুত।

৪. ফিরােযাবাদী: আস সালাতু ওয়াল বাশর ফি সালাতি আলা খায়রিল বাশার (ﷺ), ৭৭। 

৫. সুয়ুতী: আদ্ দুররুল মানসুর ফি তাফসীরি বি মা'সূর: ৫:২১৯। 

৬. যুরকানী: শরহু মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়া, ৭:৩৭২। 

৭. সাখাবী : আল কাওলুল বদী' ফিস সালাতি আলা হাবিবিশ শফী (ﷺ), ১৫২। 

৮.শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।


❏ হাদিস ১৮:


হযরত আনাস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী (ﷺ) এরশাদ করেন,

“যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিনে ও রাতে ১০০বার দুরূদ পাঠ করবে এর বিনিময়ে তার ১০০’টি চাহিদা পূরণ করা হবে- ৭০টি তার আখিরাতের চাহিদা ও প্রয়োজন এবং ৩০টি তার দুনিয়ার চাহিদা ও প্রয়োজন। অত:পর আল্লাহ তা‘আলা এর জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োগ করবেন, যে আমার নিকট দুরূদসমূহ ওইভাবে পেশ করবে, যেভাবে দুনিয়াতে তোমাদের নিকট উপহার-উপঢৌকন পেশ করা হয়। নিশ্চয় আমার জ্ঞান আমার ইন্তিকালের পরও ওইরূপ সচল বিদ্যমান ও অক্ষুন্ন থাকবে যেভাবে আমার যাহেরী হায়াতে আছে।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) হায়াতুল আন্বিয়া’,

(২) আল-বায়হাকী (رحمة الله) শুআবুল ঈমান, গ. ১, পৃ. ৪৯৯, হাদীস: ২৭৬; 

(৩) ইমাম সুয়ূতীঃ নবীগণ (عليه السلام) স্বশরীরে জিবীত।

(৪) ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী  (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:৪৯০।

(৫) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৬২; 

(৬) আন নুমায়রী, আল-ই'লামু বি-ফযলিস সালাতি আলান্নাবিয়ি (ﷺ), পৃ. ১৫৯, হাদীস: ১৬০; 

(৭) ইমাম ইস্পাহানী  (رحمة الله) ‘আত্ তারগীব’ কিতাবে।

(৮) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।

 


দুরূদ প্রেরণের জন্য ফেরেশতা নিয়ােগ 



❏ হাদিস ১৯:


হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।   

رقم الحديث : ۱۲ حديث مرفوع ( وَأَحَجَليّا بن أدمدَ بن عبُدَ أن الكاتب ثنا | أحمد بن عُبيد الصقار , ثللحسن بن سعيد , ثنإبراهيم بن الحَجّاج ثنلحمّاد بن سَلْمَةً نَبُرد بُن سِنَان عنَ محَولِ الشامي عن أبي أُمَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَال قال رسول اللَّهِ صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " أكثروا علي من الصلاة في كل يوم جُمُعَان صَلاة أمتي تُعرض عليّ في كل يوم جُمُعَةِ , فمن كان أكثرَهُمْ عَلَى صَلاةً كَانَ أَفَرَبَهُمْ مِنّي مَنْزِلَةً ( ۱۲ )

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, আমার প্রতি প্রত্যেক জুমার দিনে অধিক পরিমাণে দুরূদ সালাম প্রেরণ করো, কেননা আমার উম্মতের সালাত-সালামসমূহ আমার নিকট প্রত্যেক জুমাবারে পেশ করা হয়। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে আমার প্রতি সর্বাধিক সালাত-সালাম প্রেরণকারী হবে, সে ক্বিয়ামতের দিন আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে। 


তথ্যসূত্রঃ

১.বায়হাকী: শুআবুল ঈমান, ৩:১১০, হাদীস নং ৩০৩২। 

২.বায়হাকী: আল সুনানুল কুবরা, ৩:২৪৯, হাদীস নং ৫৭৯১। 

৩.ইমাম বায়হাকীঃ হায়াতুল আম্বিয়াঃ হাদীস নং-১২: 

৪.মুনযিরী: আত তারগীব ওয়াত তারহিব মিন আহদীসিস শরীফ, ২:৩২৮: হাদীস নং ২৫৮৩। 

৫.সুবকী: শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারতি খায়রিল আনাম, ১৩৬। 

৬.মাকরীযী: ইমতাউল আসমা ১১:৬৬। 

৭.ইবনু কাইয়িম, জালাউল আফহাম। ৪০। হাদিস নম্বর: ৫৬। 

৮.আযীমাবাদী: আওনুল মা'বুদ আলা সুনানি আবি দাউদ, ৪:২৭২। 

৯.দায়লামী: দাইলামী, ফিরদাউসুল আখবার ১: ৮১। হাদিস নম্বর: ২৫০। 

১০. আবু তাইয়িব। আওনুল মাবুদ। ৪: ২৭২। 

১১. হিন্দী, কানযুল ওম্মাল,১: ৪৮৮, হাদিস নম্বর: ২১৪১।

১২. ফিরােজাবাদী, আস সালাতু ওয়াল বিশরু ফিস সালাতি আলা খাইরিল বাশার ৭৫। 

১৩. সাখাবী, আল কওলুল বদী ফিস সালাতি আলাল হাবীবিশ শফী(ﷺ) ১৫৮। 


হাদিসের সনদ মানঃ


▶ফিরােজাবাদী বলেন, হাদিসটির সনদ জাইয়িদ’ এবং রিজাল (রাবীগণ) অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য ।

▶ইমাম সাখাবী বলছেন, বায়হাকী রেওয়ায়তটি হাসান সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। 


❏ হাদিস ২০:


হযরত আউস ইবনে আউস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে,


عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اﷲِ صلي الله عليه وآله وسلم. إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَامِکُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيْهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيْهِ قُبِضَ وَفِيْهِ النَّفْخَةُ، وَفِيْهِ الصَّعْقَةُ فَأَکْثِرُوْا عَلَيَّ مِنَالصَّلَاةِ فِيْهِ، فَإِنَّ صَلَاتَکُمْ مَعْرُوْضَةٌ عَلَيَّ، قَالَ : قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اﷲِ! کَيْفَ تُعْرَضُ صَلَاتُنَا عَلَيْکَ وَقَدْ أَرِمْتَ؟ يَقُوْلُوْنَ : بَلِيْتَ قَالَ صلي الله عليه وآله وسلم : إِنَّ اﷲَ حَرَّمَ عَلَي الْأَرْضِ أَجْسَادَالْأَنْبِيَاءِ


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমুয়ার দিন সর্বাধিক সেরা। কারণ ঐ দিন আদম (عليه السلام) সৃষ্টি করা হয়েছিল ঐ দিনই ওনার ওফাত হয়েছিল ।ঐ দিন সিঙ্গায় ফুত্‍কার দেয়া হবে আর ঐ দিনই (কিয়ামতের) চিত্‍কার শুরু হবে! তাই ঐ দিন বেশি বেশি করে আমার প্রতি দুরূদ পাঠাও। তোমাদের দুরূদ আমার নিকট (নিশ্চই) পৌঁছানো হবে। তাঁরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞাসা করলেন - আমাদের দরুদ আপনার ওফাতের পর আপনার উপরে কিরুপে পেশ করা হবে? আপনার বরকতময় মোবারক দেহ কি মাটিতে মিশে যাবে না?

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীগণের দেহকে ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন।"


তথ্যসূত্রঃ


১. আবূ দাউদ: আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/২৭৫, হা-১০৪৭ এবং কিতাবুস সালাত, ২/৮৮, হা-১৫৩১।

২. নাসাঈ: আস্ সুনান, কিতাবুল সালাহ : অধ্যায়: জুমু'আ, ৩/৯১, হা-১৩৭৪। এবং আস্ সুনানুল কুবরা, ১/৫১৯, হা-১৬৬৬।

৩.ইবনু মাজাহ্: আস্ সুনান, কিতাবু ইকামাতিস সালাত, ১/৩৪৫, হা-১০৮৫।

৪.দারেমী: আস্ সুনান, বই : জুমা, অধ্যায় : ফি ফদ্বল ইয়াওমাল জুমা ১/৪৪৫, হা-১৫৭২।

৫.আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৪/৮, হা-১৬২০৭। ২৬/৮৪, হা- ১৬১৬২

৬.ইবনে আবি শায়বাহ্: আল মুসান্নাফ, আস-সালাহ ২/২৫৩, হা-৭৬৯৭, ৬/৪০, হা- ৮৭৮৯

৭.ইবনে খুজায়মা: আস্ সহীহ, ৩/১১৮, হা-১৭৩৩-১৭৩৪।

৮.ইবনে হিব্বান: আস্ সহীহ, বই : আর-রাকাইক, অধ্যায় : আদিয়্যাহ : ৩/১৯০, হা-৯১০।

৯.হাকেম: আল মুসতাদরাক, ১/৪১৩, হা-১০২৯।

১০.বাযযার: আল মুসনাদ, ৮/৪১১, হা-৩৪৮৫

১১.তাবরানী: আল মু'জামুল আওসাত, ৫/৯৭, হা-৪৭৮০।

১২.তাবরানী: মু'জামুল কবীর, ১/২৬১, হা-৫৮৯।

১৩.বায়হাকী: আস্ সুনানুস সগীর, ১/৩৭১, হা-৬৩৪।

১৪.বায়হাকী: আস্ সুনানুল কুবরা, ৩/২৪৮, হা-৫৭৮৯। Or, অধ্যায় : আল- জুমুয়া : ৩/৩৫৩, হা-৫৯৯৩

১৫.বায়হাকী: শু'আবুল ঈমান, ৩/১০৯, হা-৩০২৯। Or অধ্যায় : ফাজাইলুস সালাতুন্নবী (ﷺ) ৪/৪৩২, হা-২৭৬৮

১৬. যাহদ্বামী: ফাদ্বলুস্ সালাতি আলান্ নবী, হা-২২।

১৭.ওয়াদীয়াশী: তুহফাতুল মুহতাজ, ১/৫২৪, হা-৬৬১।

১৮.আসকালানী: ফাতহুল বারী, ১১/৩৭০।

১৯.আযলূনী: কাশফুল খিফা, ১/১৯০, হা-৫০১।

২০.ইবনে কাসীর, তাফসীরিল কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫ সুরা আল-আহজাব ৫৬,

২১.ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪২৯ পৃ. হা/১৩৮১, 

২২.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ

২৩.ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।


হাদিসটির সনদ-মান পর্যালোচনা 


☞ এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্, দারেমী, অাহমদ, ইবনু খুজায়মা এবং ইবনু হিব্বান বর্ণনা করেছেন।

▶ ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম বুখারীর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ্ এবং

▶ ইমাম ওয়াদিয়াশীও বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু হিব্বান সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন এবং

▶ ইমাম আসক্বালানী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন।

▶ ইমাম আজলুনী বলেন, ইহাকে ইমাম বায়হাকী উত্তম, মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।

▶ইবনু কাছির বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা, ইবনু হিব্বান, দারু কুতনী এবং ইমাম নববী 'আল-আযকার' -এ সহীহ্ নির্ধারণ করেছেন।


❏ হাদিস ২১:


হযরত আবু দারদা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

عن أبي الدرداء قال قال رسول الله صلىالله عليه و سلم أكثروا الصلاة علي يوم الجمعة . فإنه مشهود تشهده الملائكة . وإن أحدا لن يصلي علي إلا عرضت علي صلاته حتى يفرغ منها ) قال قلت وبعد الموت ؟ قال ( وبعد الموت . إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء (سنن ابن ماجه، كتاب الجنائز، باب ذكر وفاته صلى الله عليهو سلم، رقم الحديث-১৬৩৭

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরূদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষ্যি থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরূদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা রাঃ বলেন-আমি জিজ্ঞাসা করলাম - মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

"হ্যাঁ! আল্লাহ্‌ পাক নবীগণের শরীর মোবারাককে ভক্ষণ করা জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তাই নবীগণ (কবরে) জীবিত আছেন এবং নিয়মিতভাবে তারা রিজিকও পেয়ে থাকেন।"


তথ্যসূত্রঃ


১. ইবনে মাজাহ্ঃ কিতাবুল জানাযা, খন্ড- ১/৫২৪পৃ, হাদিস: ১৬৩৬,

২. ইবনে মাজাহ্ঃ কিতাবুল জানাযা, খন্ড- ১/৫২৪পৃ, হাদিস: ১৬৩৭

৩. ইবনে মাজাহ্ঃ ইকামাতুস সালাহ ওয়াস সুন্নাহ ফিহা : অধ্যায় ৭৯, ১/৩৪৫, হা- ১০৮৫

৪. মুনজারীঃ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, খন্ড- ২/২২৮পৃ, হাদিস: ২৫৮২।

৫. ইবনে কাসীরঃ তাফসীরু কুরআনিল আযীম, খন্ড- ৩/৫১৫পৃ, খন্ড- ৪/৪৯৩পৃ।

৬. মুনাবীঃ ফয়যুল কদীর, খন্ড- ২/৮২পৃ।

৭. আযুলুনীঃ কাশফুল খিফা, খন্ড- ১/১৯০পৃ, হাদিস: ৫০১

৮. সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯,

৯. আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০,

১০. সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫৭২,

১১. মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫,

১২. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯

১৩. আবু দাউদ : আস সুনান, কিতাবুস সালাত : ১:২৭৫, হাদিস ১০৪৭

১৪. নাসাঈ : আস সুনান, অধ্যায় : জুমুয়া ৩:৯২

১৫. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল : আল মুসনাদ (৪:৮)

১৬. ইমাম ইবনে হিব্বান : আস সহীহ : (৩:১৯১, হাদিস ৯১০)

১৭. ইবনে খুজায়মাহ : আস সহীহ : (৩:১১৮, হাদিস ১৭৩৩)

১৮. ইমাম হাকিম : আল মুস্তাদরাক (১:২৭৮)

১৯. ইমাম তাবারানী : আল মুজমাউল কবীর  (১:২১৭, হাদিস ৫৮৯)

২০. বায়হাকী : আস সুনান আল কুবরা : (৩:২৪৯).

২১.ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।

২২. কিনানী, মিছবাহুয যুজাজাহ্। ২: ৫৮, ৫৯। হাদিস নম্বর:৬০২। 

২৩. খতীবে তাবরীযী, মিশকাতুল মাসাবীহ।১: ৩৯২। হাদিস নম্বর: ১৩৬৬। 

২৪. মুনাবী, ফয়যুল কদীর। ২: ৮৭। 

২৫. সুবকী, শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতি খাইরিল আনাম। ৩৫, ৩৬। 

২৬. উনদুলুসী, তুহফাতুল মুহতাজ। ১: ৫২৬। হাদিস নম্বর: ৬৬৩। 

২৭. ইবনু কাইয়িম, জালাউল আফহাম। ৬৩। হাদিস নম্বর: ১০৮। 

২৮. ইবনু কছীর, তাফসীরুল কুরআন । ৩: ৫১৪। 

২৯. ইবনু কছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। ৪: ২৫৮। 

৩০. মুকরীযী, ইমতাউল আসমা। ১১: ৬৫। 

৩১. মাযী, তাহযীবুল কামাল।১০: ২৩। হাদিস নম্বর: ২০৯০। 

৩২. ফিরােজাবাদী, আস সিলাতু ওয়াল বাশারু ফিস সালাতি আলা খাইরিল বাশার। ৭৫। 

৩৩. সাখাবী, আল কওলুল বদী ফিস সালাতি আলাল হাবীবিশ শফী । ১৫৮। 

৩৪. শাওকানী, নাইলুল আওতার। ৩: ৩০৪, ৩০৫। 


হাদিসটির সনদ-মান পর্যালোচনা 


▶ এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজাহ্ সহীহ্ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।

▶ ইমাম মুনযেরী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ্ উত্তম-মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।

▶ ইমাম মুনাবী বর্ণনা করেন যে, ইমাম দমীরী বলেন, ইহার রাভীগণ (বর্ণনাকারীগণ) নির্ভরযোগ্য।

▶ ইমাম আজলুনীও ইহাকে হাসান বলেছেন।

▶ ইমাম সাখাবী (রহঃ)'র অভিমত, হাদিসটির রিজাল (বিভিন্ন স্তরের রাবীগণ) অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য। 



রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকট পাঠকৃত দুরূদ সরাসরি পৌঁছায়



❏ হাদিস ২২:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,  

"যে ব্যক্তি আমার রওজার পাশে দাঁড়িয়ে আমার দুরূদ পাঠ করে আমি তার দুরূদ সরাসরি শুনতে পাব, আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দুরূদ প্রেরণ করে তা আমার কাছে পাঠানাে হয়। (হাদিসটির সনদ সহিহ)


তথ্যসূত্রঃ 


১.বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, ২: ২১৮, হাদিস নম্বর: ১৫৮৩/ ৩/১৪০ পৃ. হা/১৪৮১।  

২.ইমাম বায়হাকীঃ হায়াতুল আম্বিয়া ১০৩-১০৪

৩.ইমাম খতিব তিবরিয়ীঃ মিশকাত শরীফঃ ১/১৯০পৃ, হাদিসঃ ৯৩৪, দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত। 

৪.ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ'তেদাল, ৮১৫৪ নং রাবীর ব্যাখ্যায়। 

৫.ইমাম সুবুকী: তবকাতুস শাফিয়াতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১৭০ পৃ:, ৩য় খন্ড, ৪০৮ পৃ:,

৬.ইমাম ইবনে আসাকির (রহঃ) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

৭.ইমাম ইস্পাহানী  (رحمة الله) আত্ তারগীব গ্রন্থে

৮.ইমাম আয়ায, আশ-শিফা শরীফ, ২/৭৯ পৃ., 

৮.রওজাতুল মুহাদ্দেছীন, হাদিস নং ১১৯৩। 

৯.হাফিজ ইবনুল কাইয়্যুম: জালাউল আফহাম, হাদিস নং ২৪। 

১০.ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৮৯ পৃ. 

১১.ইমাম সুয়ূতী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ২২৭৭০। 

১২.ইমাম সুয়ূতী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ১১৯৭২। 

১৩.সূয়ূতী, শরহুন আলা সুনানিন নাসাঈ। ৪: ১১০। 

১৪.ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:৪৮৯।

১৫.তারিখে বাগদাদ, ১০৯০ নং হাদিস, ৪র্থ খন্ড, ৪৬৮ পৃ:। 

১৬.ইমাম সাখাভীঃ আল-কওলুল বদীঃ ১৫৪পঃ 

১৭.ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৬/৪৮৮ পৃ.,

১৮.আজিমাবাদী: আওনুল মা'বুদ শরহে আবু দাউদ, ২০৪২। 

১৯.ফাওয়াইদুল মাজমুয়া, হাদিস/১৬।

২০. ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।

২১.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১৯৮ ও ২১৬৫।

২২.তাখরিজু আহাদিসুল কাসসাফ, ৩য় খন্ড, ১৩৫ পৃঃ। 

২৩.মুনাদী, ফয়যুল কদীর । ৬: ১৭০।

২৪.মুকরীযী, ইমতাউল আসমা। ১১: ৫৯, ও ১০: ৩০৬।

২৫.আল্লামা ইবনে মুলাকিন বাদরুল মুনীর, ৫ম খন্ড, ২৯০ পৃ:। 


হাদিসের সনদ মানঃ


▪ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, “আবুশ শায়েখ তাঁর কিতাবুছ ছাওয়াব’-এ হাদিসটি অতি-উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন, এই শব্দে: যে আমার রওজার কাছে এসে সালাত পাঠ করবে আমি তার সালাত শুনব।” (ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৮৮ পৃ: ৩৪৪১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)। 


▪ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন,  

-“আবুশ শায়েখ ও ইবনে হিব্বান (رحمة الله) কিতাবুছ ছাওয়াবে’ হাদিসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।” 

(ইমাম মােল্লা আলী কারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, হাদিস নং ৯৩৪ এর ব্যাখ্যায়)। 


▪ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা নুরুদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ আল কেনানী (رحمة الله) {ওফাত ৯৬৩ হি.} বলেন, -“আবুশ শায়েখ তার 'ছাওয়াব’ গ্রন্থে উত্তম সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন । যেমনটিঃ ইমাম ছাখাবী (رحمة الله) তাঁর উস্তাদ হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেছেন।” 

(তানজিয়াতু শারিয়াতুল মারফুয়া, ১ম খন্ড, ৩৩৫ পৃ:)। 


▪ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আল্লামা আব্দুর রউফ মানাভী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, -“হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন: ইহার সনদ জায়্যেদ বা অতি-উত্তম।” 

(আল্লামা মানাভী: তায়ছির বি’শরহে জামেউছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৪১৮)


▪ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, -“ইমাম নববী (رحمة الله) তাঁর ‘আজকার ও রিয়াদুছ ছালেহীন' গ্রন্থে বলেন: ইহার সনদ ছহীহ্।” 

(আজিমাবাদী: আওনুল মা'বুদ শরহে আবু দাউদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২২ পৃ:)। 


আফসোসের বিষয় হল, কুখ্যাত নাছিরুদ্দিন আলবানী এই হাদিসের রাবী আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া যুহুরী আবু ছালেহ্ আল আরাজ সম্পর্কে বলেন, -“সে অপরিচিত।” (সিলসিলায়ে আহাদিসুদ দ্বায়িফা, হাদিস নং ২০৩) 


অথচ এই রাবী মজহুল বা অপরিচিত নয় বরং মারুফ বা সু-পরিচিত, কারণ ইমামগণের কেউ তার ব্যাপারে সমালােচনা করেননি, বরং তার নাম, উপনাম, পিতা ও দাদার নাম, ভাইয়ের নাম, মৃত্যু সন, বাড়ি। কোথায়, বংশের নাম ইত্যাদি পেশ করেছেন। এই রাবী সম্পর্কে। ইমামদের বক্তব্য হল, 

-“আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া যুহুরী আবু ছালেহ আল আরাজ’ তিনশ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। তার ভাই হচ্ছে ‘মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে ইয়াজিদ যুহুরী।” 

১.ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইসবাহান, রাবী নং ১১৩৭। 

২.তবকাতুল মুহাদ্দেসীন বি’ইসবাহান, রাবী নং ৪৮৬

৩.মুফতি আলাউদ্দিন জেহাদীঃ জাল হাদিসই আল হাদিস থেকে সংকলিত।



❏ হাদিস ২৩:


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন,


ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻗَﺎﻝَ  ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ، ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻥَ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ." ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﺣَﻴَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜَﻢْ ﺗُﺤْﺪِﺛُﻮﻥَ ﻭَﻳُﺤَﺪَﺙُ ﻟَﻜَﻢْ، ﻭَﻭَﻓَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜَﻢْ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ، ﻓَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﺣَﻤَﺪَﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻦْ ﺷَﺮٍّ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻜَﻢ -


‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হয় এবং আমি তা দেখি। যদি তোমাদের কোন ভাল আমল দেখি তাহলে আমি তোমাদের ভাল আমল দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করি, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য গুনাহ মাফের জন্য (তোমাদের পক্ষ হয়ে) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’’


মুসনাদে বাযযারের সনদঃ


ইমাম বাযযার ➡ ইউসুফ বিন মূসা ➡ আবদুল মজিদ বিন আবদুল আজিজ বিন আবি রওয়াদ ➡ ইমাম সুফিয়ান সাওরি ➡ আবদুল্লাহ ইবনে সা’ইব➡ যাধান ➡ আবদুল্লাহ ইবনে মাস'উদ (رضي الله عنه)


হাদিসটির অন্যান্য সূত্রঃ

❏ বকর বিন আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه)

❏ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه)

❏ হযরত আনাস বিন মালেক  (رضي الله عنه)


তথ্যসূত্রঃ  


১.ইমাম হায়সামী (رحمة الله) মাজমাউয জাওয়াইদ, আলামাত আন নুবুউয়াঃ অধ্যায়: হায়াতিহি ওয়া ওয়াফতিহি, ২/৮৮৪, হাদিস নম্বরঃ ৯৫৩ ও ৯/২৪, হাদিস: ৯১,পুস্তকে জানান যে, হাদীসটি আল-বাযযার তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন এবং এর সকল ’রাবী’ (বর্ণনাকারী) সহীহ (মানে হাদীসটি সহীহ)।

২.ইবনুল ইরাকী, তারহ আল-তাথরিব ফী শারহ,(৩:২৯৭) তাঁর মতে হাদিসটি বিশুদ্ধতা। 

৩.ইবনে সা’আদঃ আত-তাবাক্কাত-উল-কুবরা (২:১৯৪), (৫/৫০০)

৪.ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) ‘আশ-শিফা’ গ্রন্থে (১:১৯) 

৫.ইমাম সুয়ুতি, আল হাবি লিল ফাতাওয়া, ২

 পৃষ্ঠা: ৩

৬.ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله), ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:২৮১) 

৭.ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله),‘মানাহিল-উস-শিফা ফী তাখরিজ-এ-আহাদীস আশ-শেফা’ ৩১ (# ৮) তিনি বিবৃত করেন যে আবূ উসামাহ নিজ ‘মুসনাদ’ পুস্তকে বকর বিন আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে এবং  আল-বাযযার তাঁর ‘মুসনাদ’ বইয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে সহীহ সনদে এই হাদীস লিপিবদ্ধ করেন।

৮.খাফাযী স্বরচিত ‘নাসিমুর রিয়াদ’ (১:১০২) ও 

৯.মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহে শিফা’(১:৩৬) এ হাদিসটি সমর্থন করেন।

১০.মুহাদ্দীস ইবনুল জাওযী এটি বকর বিন আব্দিল্লাহ  (رضي الله عنه) ও হযরত আনাস বিন মালেক  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে "আল ওয়ফা দ্বি আহওয়ালিল মুস্তাফা (ﷺ), পৃষ্ঠা: ৮৬২, হাদিস নম্বরঃ ১৫৬৪

১১.ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) নিজ ‘শেফাউস্ সেকাম ফী যেয়ারাতে খায়রিল আনাম’ (৩৪ পৃষ্ঠা) কিতাবে বকর ইবনে আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه) হতে এ হাদীস নকল করেছেন।

১২.ইবনে আব্দিল হাদী তাঁর ‘আস্ সারিম-উল-মুনকি’ (২৬৬-৭ পৃষ্ঠায়) পুস্তকে হাদিসটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

১৩.ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) নিজ ‘আল-মাতালিব-উল-আলিয়্যাহ’ (৪:২২-৩ #৩৮৫৩) গ্রন্থে  বকর ইবনে আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে। 

১৪.ইবনে হাজার আসকালানী, তাকরিব ওয়াল তাহযিব, ১/৪৭৮

১৫.ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী, লিসান আল মিজান, ২/পৃষ্ঠা: ৩৯৫, হাদিস ১৬২০

১৬.আলাউদ্দীন আলী নিজস্ব ‘কানযুল উম্মাল’ পুস্তকে (১১:৪০৭ #৩১৯০৩) ইবনে সাআদের বর্ণিত হাদীসটি উদ্ধৃত করেন এবং হারিস হতেও একটি রওয়ায়াত উদ্ধৃত করেন (# ৩১৯০৪)।

১৭.হাকিম তিরমিযী, নওদীর আল উসুল, ৪/পৃষ্ঠা: ১৭৬

১৮.ইমাম যাহাবি, মিজান আল ইতিদাল, ২, পৃষ্ঠা: ৪৩৯

১৯.ইমাম ইবনে আদি, আল কামিল, ৩/পৃষ্ঠা: ৭৬

২০.ইমাম আজলুনি, কাশফ আল খিফা, ১/পৃষ্ঠা: ১১৭৮

২১.ইমাম সাখাভীঃ আল কাউলুল বদী ফী সালাত আলাল হাবিব আশ শাফী (ﷺ), পৃষ্ঠা: ১৬০

২২.শাশীঃ আল মুসনাদস-শাশী, ২/২৫৩ পৃ, হাদিস নম্বর: ৮২৬

২৩.আবু হাতিম, আল-জারহ ওয়াত-তাদিল, ৬/৬৪ পৃ

২৪.শায়খ শু‘আয়েব আল-আরনা’উত, তাহরির আল-তাকরীব,২/৩৭৯, হাদিস: ৪১৬০

২৫.আল-মুগনি, ১/৫৭১, হাদীস: ৩৭৯৩

২৬.ইবনে হিব্বান, কিতাব আল-মাজরুহিন, ২/১৬০।

২৭.কিতাব আল-হজ্ব, পৃষ্ঠা: (# ১৭৯)

২৮.ইমাম দায়লামিঃ মুসনাদুল ফিরদুস, ১/১৮৩, হাদিস : ৬৮৬

২৯.ইমাম যাহাবিঃ সিয়ার আল আ'লাম আন নুবালা, ১৭/পৃষ্ঠা: ১০৬

৩০.ইমাম মিয্যিঃ তাহযিব আল কামাল, ১৪/পৃষ্ঠা: ৫৫৮

৩১.ইমাম ইবনে কাসিরঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩/ পৃষ্ঠা: ৫১৬

৩২.ইমাম ইবনে কাসীরঃ ‘আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া’ (৪:২৫৭)। 

৩৩.ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওহিব, ৭/পৃষ্ঠা: ৩৭৩

৩৪.শায়খ আবদুল্লাহ আল-তালিদি, মানাহিল আল-সাফা ফী তাখরিজ আহাদীছ আশ-শিফা'র তাহযিব, পৃষ্ঠা। ৪৫৮-৪৫৯ (# ৬৯৪)

৩৫.আল-মুনাভি, ফয়জুল কাদির, ৩/৪০১

৩৬.তারিখ আল-দাওরি, ২/৩৭০

৩৭.আল-বুরকানী, পৃষ্ঠা ৩১৭

৩৮.আন হামল আল-আসফার, ৪/১৪৮

৩৯.মাহমুদ মামদুহ, রাফউল-মিনারাহ’ আন তাখরিজ আহাদীস আল-জিয়ারা, ১৫৬-১৫৯ পৃ

৪০.জুহদামি, ফাদ্বালুস সালাহ ‘আলান ন্যাবি (ﷺ), ১/৩৮-৩৯, হাদিস নম্বর: ২৫-২৬

৪১.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দি, কানজুল উম্মাল, ১১/পৃষ্ঠা: ৪০৭, হাদিস নম্বরঃ ৩১৯০৪

৪২.ফায়রোজ আবাদী, আস ছালাত ওয়াল বাশার ফিস সালাত আ'লা খায়েরুল বাশার, পৃষ্ঠা: ১০৪-১০৫

৪৩.আল-মুনযিরি, তারগীব ওয়াল-তারাহীব ৩: ৩৪৩

৪৪.ইমাম নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন ফি মু'জাজাতুল মুরসালীন (ﷺ), পৃষ্ঠা: ৭১৩


উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন:


ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﺰَّﺍﺭُ، ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝُ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ  -


-‘‘উক্ত হাদীসের সমস্ত রাবী বুখারীর সহিহ গ্রন্থের ন্যায়।’’ তাই হাদিসটি সহিহ।


তথ্যসূত্রঃ

১.বাজ্জার,আল-মুসনাদ,৫/৩০৮পৃ.হাদিস,১৯২৫

২.সুয়ূতি,জামিউস সগীর,১/২৮২পৃ.হাদিস,৩৭৭০-৭১

৩.আল্লামা ইবনে কাছির ,বেদায়া ওয়ান নিহায়া,৪/২৫৭পৃ.

৪.আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল,১১/৪০৭পৃ. হাদিস,৩১৯০৩

৫.ইমাম ইবনে জওজী,আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা,২/৮০৯-৮১০পৃ.

৬.আল্লামা ইবনে কাছির,সিরাতে নববিয়্যাহ,৪/৪৫পৃ.


ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (رحمة الله) বলেন:


وَقَدْ قَالَ عُلَمَاءُ نَالَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِه وَحَيو تِه عَلَيْهِ السَّلَامُ فِىْ مُشَاهِدَ تِه لِاُمَّتِهِ وَمَعرِ فَتِه بِاَحْوَ الِهِمْ وَنِيَّا تِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِ هِمْ وَذلِكَ جَلِىٌّ عِنْدَهُ لَاخَفَاءَبِه


আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে,হুযুর আলাইহিস সালামের জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন,তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট। কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে।           


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম ইবনুল হাজ্জ مدخل গ্রন্থে

২.ইমাম কুসতালানী (رحمة الله) مواهب  (মাওয়াহিব)  গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদে زيارة قبره شريف শীর্ষক বর্ণনা।


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুরূদ পাঠকারীকে চিনেন এবং জবাব প্রদান করেন



❏ হাদিস ২৪:

 

হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, 

عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما من أحد يسلم على الا رد الله علي روحى حتى ارد عليه السلام -

رواه ابو داؤد والحمد والطبراني والبيهقي . وقال العسقلاني : رواه أبو داود ورواته ثقات، وقال الهيثمى : وفيه عبد الله بن يزيد الاسكندرانى ولم اعرفه ومهدى بن جعفر ثقه وبقية رجاله ثقات.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, "যখন তােমাদের কেউ আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দেন, এমনকি আমি তার সালামের জবাব দেই।"


তথ্যসূত্রঃ


১.ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, কিতাবু মানাসিক, ২/২১৮ পৃ. হা/২০৪১, সনদঃ সহিহ

২.আন-নাসাই তাঁর কিতাব আল-দু‘ফা ’ওয়া’ ই-মাতরুকিন, পৃষ্ঠা -১৬৮।

৩.আল দারিমির আল-তারিখ, পৃষ্ঠা ২৬০।

৪.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৬/৪৭৭ পৃ. হা/১০৮১৫, 

৫.ইবনে ইসহাক আল রাহূইয়াহ তার মুসনাদে, ১/৪৫৩ (৫২৬ & ২০৪১)।

৬.ইবনে ‘আসাকির’ মুক্ততাসার তারিক দিমশাক, ২/৪০।

৭.আবু নু'আয়াম আল-ইস্পাহানীঃ আখবার আল-আসবাহান, ২/৩৫৩।

৮.তাবারানীঃ মুজাম আল-আসাতঃ ৩/২৬২ (৩০৯২, ৯৩২৯)/ ৪:৮৪, হাদীস নং ৩১১৬।

৯.আল-বায়হাকী আল-সুনান আল-কুবরা, ১/৫১৯: হাদীস ১৬৬৬, ৩/২৪৯: হাদীস ৫৭৮৯

১০.বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, ২: ২১৫। হাদিস নম্বর: ১৫৭১। 

১১.ইমাম বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৬১ পৃ. হা/১৭৮, 

১২.সাখাবী, আল কওলুল বদী ফিস সালাতি আলাল হাবীবিশ শফী (ﷺ)।

১৩.ইমাম আন নওয়াবী (رحمة الله) এই হাদীস সম্পর্কে বলেছেন: رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسناد صحيح অনুবাদ: এটি আবু দাউদ (রহঃ) "সহীহ সনদ" দ্বারা বর্ণনা করেছেন।

১৪.নাওয়াইল আল আওতার ৫/১৬৪।

১৫.রিয়াদ উস সালিহীন ১/২৫৫, হাদীস ১৪০২।

১৬.ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন ও খাসায়েল মুস্তফা (ﷺ)

১৭.আলবানীর সংস্করণ জিয়ারাতুল কুবুরের অধীনে (# ২০৪১) এটিকে "হাসান" বলেছে।

১৮.আলবানীঃ সিলসিলাহ আহাদিস আল-সহিহাহ [২২৬৬]

১৯.ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী, তাকরিব-আল তাহযিব, ১/২০০।

২০.ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী, ফতহুল বারী, ৬: ৪৮৮।

২১.ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী, তালখীসুল জহীর। ২: ২৬৭। 

২২.ইবনে আল-নাজ্জার, আখবার আল-মদীনা, পৃ .১৪৪।

২৩.তফসীরে ইবনে কাসীর, ৬: ৪৬৪।

২৪.হাফিজ আল-দারাকুতনী ইবন হিব্বান তাঁর আল-সিকাহ, ১৮৮ তে উদ্ধৃত করেছেন।

২৫.হায়সমী: মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়িদ, ১/১৬২ এবং ১০:৩৪৯।

২৬.ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯১ পৃ. হা ৯২৫। 

২৭.আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ১/৪৯১ পৃ. হা/২১৫৬, 

২৮.মুরতদা আল-জাবেদী, ইতাফ আল-সাদাত আল- মুত্তাকিন, ৪/৪১৯ এবং ১০/৩৬৫।

২৯.ইবনে রাহবীয়া: আল মুসনাদ, ১/৪৫৩, হাদিস: ৫২৬।

৩০.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।, ৪র্থ খন্ড ৭৫৯ পৃ

৩১.আল-মিয্যিঃ তাহযিব আল-কামাল, ৭/৩৬৬।

৩২.মুনাবী, ফয়যুল কদীর ৫: ৪৬৭। 

৩৩.উনদুলুসী, তােহফাতুল মােহতাজ। ২: ১৯০। 

৩৪.আবু তাইয়িব, আওনুল মাবুদ। ৬: ১৯, ২০। 

৩৫. যারকানী, শরহুল মুয়াত্তা। ৪: ৩৫৭। 

৩৬. শাওকানী, নাইলুল আওতার ৫: ১৮০। 

৩৭. ইবনু জাওযী, ছাফওয়াতুছ ছাফওয়া। ১: ২৩৩। 

৩৮.সুবকী, শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতি খাইরিল আনাম। ১৩৬। 

৩৯. মুকরীযী, ইমতাউল আসমা। ১: ৩০৬, ৩০৭, ৩০৮। 

৪০.ইবনু কুদামা । আল মুগনী । ৩: ২৯৭, ২৯৮। 

৪১.ফিরােজাবাদী, আস সালাতু ওয়াল বাশারু ফিস সালাতি আলা খইরিল বাশার । ১০৩, ১০৪। 

৪২.ইমাম সুয়তি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৯০ পৃ. 

৪৩.ইমাম সুয়ূতী, আর রাসায়িলুলত্ তিস্'। ২৩৫। 

৪৪.ইমাম সুয়ূতীঃ আল-হাওই লিল ফাতওয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা নং ২৭১-২৭২

৪৫.মুনযিরী: আততারগিব ওয়াত তাহহীব মিনাল হাদীসিশ শরীফ, ২:৩৬২, হাদীস নং ২৫৭৩। 


হাদিসটির মান ও সনদ পর্যালোচনা :


▶এ হাদিসকে ইমাম আবূ দাউদ, আহমদ, তাবরানী এবং বায়হাকী বর্ণনা করেছেন।

▶ইমাম আসক্বালানীও বলেন,

ইহাকে ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন এবং ইহার বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

▶ইমাম হায়ছমীও বলেন, ইহার সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াজিদ আল- ইস্কান্দারানী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না, যখন মাহদী ইবনু জাফর এবং অপরাপর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।




ফিরেশতাদের মাধ্যমে দুরূদ পেশ করা হয়



❏ হাদিস ২৫:


ইবনে রাহওয়াইয়া  (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, 


ليس احد من أمة محمد صلى الله عليه وسلم يصلي او يسلم عليه الأبلغه يصلى عليك فلان وسلم عليك فلان


 অর্থাৎ- রাসূল (ﷺ) যেকোন উম্মত তাঁকে দরূদ কিংবা সালাম পেশ করে তা তাঁর কাছে এই বলে পাঠানাে হয় যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আপনার উপর দুরূদ পাঠ করেছে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছে। 


[ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ুতী  (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:২য় পৃ:৪৯০]


❏ হাদিস ২৬:


হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,


ْﻦَﻋ ﻲِﺑَﺃ ٍﺮْﻜَﺑ ِﻖْﻳِّﺪِّﺼﻟﺍ ﻲِﺿَﺭ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻪْﻨَﻋ

:َﻝﺎَﻗ َﻝﺎﻗ َﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻲﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ

ﻢﻠﺳﻭ : ﺍْﻭُﺮِﺜْﻛَﺃ َﺓَﻼَّﺼﻟﺍ َّﻲَﻠَﻋ َّﻥِﺈَﻓ َﻪﻠﻟﺍ

َﻞَّﻛَﻭ ﻲِﺑ ًﺎﻜَﻠَﻣ َﺪْﻨِﻋ ﻱِﺮْﺒَﻗ ﺍَﺫِﺈَﻓ ﻲَّﻠَﺻ َّﻲَﻠَﻋ

ٌﻞُﺟَﺭ ْﻦِﻣ ﻲِﺘَّﻣُﺃ َﻝﺎَﻗ ﻲِﻟ ﻚِﻟَﺫ :ُﻚَﻠَﻤْﻟﺍ ﺎَﻳ

َﺪَّﻤَﺤُﻣ َّﻥِﺇ َﻥَﻼُﻓ َﻦْﺑﺍ ٍﻥَﻼُﻓ ﻲَّﻠَﺻ َﻚْﻴَﻠَﻋ

َﺔَﻋﺎَّﺴﻟﺍ . ‏( ﻦﺴﺣ ، ﻩﺍﻭﺭ ﻲﻤﻠﻳﺪﻟﺍ ،

ﺔﻠﺴﻠﺳ ﺚﻳﺩﺎﺣﻷﺍ ﺔﺤﻴﺤﺼﻟﺍ ﻰﻧﺎﺒﻟﻸﻟ ،

ﺀﺰﺠﻟﺍ ﻝﻭﻷﺍ


নবীজী (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আঁমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আঁমার রওজার কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) নির্ধারণ করে রেখেছেন। যখন আঁমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি আঁমার উপর দরূদ পাঠ করে তখন সে মালাক আঁমাকে বলে,হে মুহাম্মদ (ﷺ)! অমুকের ছেলে অমুক এই মুহুর্তে আঁপনার উপর দরূদ পাঠ করেছে। [দায়লামী, হাদিস:১২১৫ (মানঃ হাসান)]


❏ হাদিস ২৭:


হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন, 

"প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের যেকোন মুসলমান আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করে আমি ও আমার রবের ফেরেশতারা তার (প্রেরিত) সালামের জবাব দিই।"


তথ্যসূত্রঃ

১. আবু নাঈম: হিলইয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবাতুল আসফিয়া, ৬:৩৪৯। 

২. মাকরীযী : ইমতা'উল আসমা', ১১:৫৯।

৩. ইবনে কাইয়ুম: জালাউল আফহাম ফিস সালাতি ওয়াস সালামি আলা খায়রিল আনাম (ﷺ), ১৯, হাদীস নং ২০। 

৪. সাখাবী: আল কাওলুল বদী' ফিস সালাতি আলাল হাবিবিশ শফি (ﷺ),১৫৬।


❏ হাদিস ২৮:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, 

“হুযুর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল- আপনার কাছে দূরে অবস্থানকারী ও আপনার ওফাতের পরে আগমনকারীদের দরুদের অবস্থা কি? তখন তিনি ফরমালেন, আমি মুহাব্বত সম্পন্ন লােকদের দরূদ নিজেই স্বয়ং শুনি এবং তাদেরকে চিনি। এবং মুহাব্বতহীনদের দরূদও আমার নিকট (ফিরেশতাদের মাধ্যমে) পেশ করা হয়।” 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমান, ৩/১৪০ পৃ. হা/১৪৮১,

২.ইমাম বায়হাকীঃ হায়াতুল আম্বিয়া

৩.ইমাম বায়হাকী দুটি সনদে - শুআবুল-ইমানে (২: ২১৮ # ১৫৮৩),

৪.ইমাম বায়হাকী: আল-উকায়লি থেকে আল-দু'য়াফা (৪: ১৩৭)

৫.তারিখ আল বাগদাদেঃ আল-খতিব আল-বাগদাদি (৩: ২৯২) 

৬.ইমাম মুত্তাকী আল-হিন্দীঃ কাঞ্জুল উম্মাল: হাদীস ২১৬৫, ২১৯৭, ২১৯৮, ৪১৫১২

৭.ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯৫ পৃ. হা/৯৩ 

৮.ইবনে হাজার আল-আসকালানি সনদটিকে "জায়েদ" (নির্ভরযোগ্য) হিসাবে অবিহিত করেছেন: ফাতহুল-বারী শরহে বুখারী (১৯৮৯ সম্পাদনা ৬: ৩৭৯ = ১৯৫৯ সংস্করণ ৬: ৪৮৮)

৯.ইমাম আসকালানির ছাত্র ইমাম সাখাভীঃআল-কওলুল বদিতে ', পৃষ্ঠা ২২২, আল্লামা সাখাবী (رحمة الله) وسنده جيِّد -এর সনদ মজবুত লিখেছেন। (আল কওলুল বদী-১১৬)

১০.মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) তাঁর কিতাব الدرة ِالمضٔية في ِالزيارة المصطفوية তে লিখেন।

১১.আল-লা'আলিতেঃ ইমাম-সুয়ুতি, [সনদটিকে "জায়েদ]" হিসাবে বিবেচনা করে (১৯৯ তম সংস্করণ। ১: ২৫৯ = ১: ২৮২-২৮৩)

১২.তাফসীরে ইবনে কাসীর পৃ ৪৬৬,

১৩.ইমাম আলুসিঃ আয়াত আল-বাইয়াইনাত, পৃষ্ঠা ৮০

১৪.জাওয়াইদ তরীখ বাগদাদে (৩:৬৯)

১৫.তানজিহ আল-শরীয়ায় ইবনে আরাক (১: ৩৩৫) ইবনে হাজারের রায়কে নিশ্চিত করেছেন এবং আল-লা'আলিতে আস-সুয়ূতীর 'অন্যান্য বর্ণনার মধ্যে আবু শায়খের সনদের সত্যতা দিয়েছেন।

১৬.রাফ আল-মিনারাতে শায়খ মাহমুদ মামদুহ (পৃষ্ঠা ৩৫১)

১৭.ফয়যুল কাদিরে- আল-মুনাভি।

১৮.ইবনে আবদুল আল-হাদী আল-সরিম আল-মুনকি (পৃষ্ঠা ২০৬)

১৯.ইবনে তাইমিয়াহ: মাজমু‘আত আল-ফাতাওয়া, ২৭ / ২৪১-২৪২

২০.ইবনে তাইমিয়াহও এটিকে জিলা'আল ইফহামে সহীহ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।

২১.ইবনে কাইয়্যুমঃ আস সালাতু সালাম

২২.আহমদ আল-ঘুমারী আল-মুদাবী লি ‘ইলাল আল-মুনাভি, ৬/২৭৭ এ ইবনে হাজারের গ্রেডিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন

২৩.ইমাম নাবহানী, শাওয়াহিদ আল-হক্ক (পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৫)।

২৪.আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৪৪ পৃ:, 

২৫.ইমাম কাসতালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যা, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃ।

২৬. ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাজুলী : দালায়েলুল খায়রাত- পৃষ্ঠা নং- ৫৯,

২৭. ইমাম ইবনে মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুসাাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাত ,১৫৬পৃ., 

২৮. শাইখ আব্দুল্লাহ সিরাজ আল-দ্বীন [নির্ভরযোগ্য সনদে] -সালাতুন নবী (পৃষ্ঠা ২১৪)

২৯. ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী : সূরা আহযাব ৫৬,

৩০. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী : জা'আল হক-১/২৬৫ পৃ. বাংলা সংস্করণ, 

৩১. আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামিল-পৃষ্টা: ৯১, 

৩২. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন” ১৬৪।



৮ম অধ্যায়: হজ্জ্ব, আজান, নামাজ, ইকামাত, মসজিদ ও ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ পাঠ।


❏ হাদিস ১-২০:

❏ আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ আযানের পর দুরূদ ও সালাম।

❏ ইকামাতের পূর্বে দুরূদ ও সালাম।

❏ মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

❏ হাদিস ১-৭: 

➡নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েল।

❏ হাদিস ১-৮:

❏ মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ। 

❏ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ।

❏ ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম।

❏ তালবীয়াহ পাঠ শেষ করার পর দুরূদ পড়া

❏ সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া।

❏ হাদিস ১-১৫ : 

➡বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ হাদিস ১-১৭ :

➡রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।

আরো কিছু দুরূদ শরীফ। 










৮ম অধ্যায়: আজান, ইকামাত, নামাজ, মসজিদ ও ঘরে দুরূদ পাঠ।


আযানের পূর্বে দুরূদ ও সালাম



❏ হাদিস ১:


সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু) বলেন-


يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن


-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরূদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দুরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ 

[আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.]


❏ হাদিস ২:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে

السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ 

হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’ 

[হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯]


❏ হাদিস ৩:


‘‘আপনার জিকির (দুরূদ, সালাম, আলোচনা) কে আমি বুলন্দ করে দিয়েছি।’’ [সুরা ইনশিরাহ : আয়াত:৪]


উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে একটি হাদিস বর্ণিত আছেঃ


وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ قَالَ: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ رَبِّي وَرَبَّكَ يَقُولُ: كَيْفَ رَفَعْتُ ذِكْرَكَ؟ قَالَ: اللَّهُ أَعْلَمُ، قَالَ: إِذَا ذُكِرْتُ ذُكِرْتَ مَعِي قال الهيثمي رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ -   


রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : আমার নিকট জিবরাঈল  আলাইহিস সালাম আগমন করলেন বললেন আল্লাহ পাক জানতে চেয়েছেন তিনি আপনার জিকিরকে কীভাবে বুলন্দ করেছেন? রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। জিবরাঈল (আ.) বলেন মহান রব আমাকে : হে হাবিব! যেখানে আমার জিকির হবে সেখানে আমার সাথে আপনার ও জিকির হবে।’’ 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আবু ইয়ালা: আল মুসনাদ : ২/৫২২ : হাদীস : ১৩৮০, 

২.ইমাম ইবনে হাইয়্যান : আস সহীস : ৮/১৭৫: হাদীস : ৩৩৮২, 

৩.ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৪/৪০৫ : হদীস : ৭১৭৬, 

৪.ইমাম ইবনে খাল্লাল : আল মুসনাদ: ১/২৬২ : হাদীস : ৩১৮, 

৫.ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী : ৮/৭১২পৃ. 

৬.আল্লামা ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/৫২৫পৃ., 

৭.আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৮/২৫৪।



আযানের পর দুরূদ ও সালাম



❏ হাদিস ৪:

 

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


 باب مَا يَقُولُ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَحَيْوَةَ، وَسَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ كَعْبِ بْنِ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ اللهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : م [১] 


তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বলবে। তারপর আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করবে। ওয়াসিলাহ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হবো সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফা‘আত পাবে।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত: হাদীস : ৩৮৪, 

২.খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬, 

৩.আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩,

৪.নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস  ৬৭৮, অনুঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ, হাদিস ৬৭৭।

৫.ইবনে মাজাহ : আস সুনান :  ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০, 

৬.সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ, হাদীস : ৭০২, 

৭.তিরমিযী (অধ্যায়ঃ মানাকিব, অনুঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মর্যাদা), ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪। 



ইকামাতের পূর্বে দুরূদ


❏ হাদিস ৫:


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ بِلَالٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُقِيمَ الصَّلَاةَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللهُ

-‘তিনি বলেন হযরত বেলাল (رضي الله عنه) যখন ইকামাত (ইকামাতও এক প্রকার আযান) দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন তখন তিনি নবীজির প্রতি সালাম পেশ করতেন এভাবে,

السلام عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، الصَّلَاةُ رَحِمَكَ اللَّهُ 

হে আল্লাহর নবি আপনার প্রতি সালাম.....।’’ 

(হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ২/৭৫পৃ. হাদিস নং. ২৩৮৯)


আজান ও ইকামাতের পূর্বে দুরূদ পড়া মুস্তাহাব নিম্নে বর্ণিত কিতাবগুলোতে বিস্তারিত রয়েছেঃ 


১.ইমাম কাজী আয়াজ: শিফা শরীফ : ২/৪৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন,

২.আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা : ২/১১৬পৃ দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন,

৩.আল্লামা সায়ীদ উল্লাহ খান ক্বাদেরী : তাখরীজে জাআল হক: ৭৮১পৃ)

৪.ইমাম আবু সাইয়েদ বকরী : ফতহুল মুঈন : ১/২২৩পৃ.)

৫.জাযরী,কিতাবুল ফিকহু আ‘লা মাযাহাবিল আরবা‘আ, ১/৩২৬পৃ.,

৬.আহলে হাদীস ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ৩০৮পৃ।

৭.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলুস সুন্নাহ।



মসজিদে প্রবেশ ও বাহিরের সময় দুরূদ শরীফ পড়া 



❏ হাদিস ৬:


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন-  

"বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন", 

আর যখন বের হতেন তখনও বলতেন -

"বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনুস সুন্নী, আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, পৃষ্ঠা-১৮১। 

(২) ইবনে হাজার আসকালানী, নাতায়েযুল আফকার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৮২ 

(৩) লিছানুল মিজান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১৬। 


❏ হাদিস ৭:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, 

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛  فَلْيُسَلِّمْ علَى النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وليقُلْ: اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيَقُلْ: اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭২, وسنن أبي داود, رقم الحديث ৪৬৫, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নাবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার রহমতের দরজা আমার জন্য খুলে দিন। 

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে এই দোয়াটি পাঠ করে:

  "اَللَّهمَّ إنِّيْ أَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ".

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা মিস ফাদ্বলিকা।”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি”।


তথ্যসূত্রঃ

১) সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭২ এবং 

২) সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫

৩) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ,: ১/২৯৮পৃ. হাদিস: ৩৪১৫ও  ৬/৯২পৃ. হাদিস, ২৯৭৬৭, 


❏ হাদিস ৮:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, 

وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَن ّرَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, قَالَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ؛ فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, وَلْيَقُلْ: اَللَّهُمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

(سنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭৩, وسنن أبي داود, رقم الحديث ৪৬৫, واللفظ لابن ماجه, وصححه الألباني).

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: 

তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে নবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

"اَللَّهمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمتِكَ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”। 

আর যখন মাসজিদ থেকে বের হবে, তখন যেন সে নবী কারীম (ﷺ) এর প্রতি সালাম পেশ করে। এবং এই দোয়াটি পাঠ করে:  

  "اَللَّهمَّ اعْصِمْنـيْ مِنَ الشَّيْـطانِ الرَّجـيْمِ".

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করুন”।

[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৩ এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫] 


❏ হাদিস ৯:


ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, 

وَعَنْ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهاَ قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ المَسْجِدَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ"، وَإِذَا خَرَجَ صَلَّى عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: "رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

(جامع الترمذي, رقم الحديث ৩১৪, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث ৭৭৩, واللفظ للترمذي, وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه:  حسن, وصححه الألباني).

অর্থ: “আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন মাসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন: 

"رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ". 

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার করুণার দরজাগুলি খুলে দিন”। 

আর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন মাসজিদ থেকে বের হতেন, তখন মুহাম্মাদের প্রতি দুরূদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেন: 

" رَبِّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ".

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।


[জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৪ এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭৭৩]



মসজিদে প্রবেশের সময় দুরূদ ও সালাম পেশ



❏ হাদিস ১০:


হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) বলেন,

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، اللَّهُمَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَالْجَنَّةَ

রাসূল (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবিবের উপর সালাম ও সালাম বর্ষিত হউক। তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন…(১)।’’ 

(ইমাম আবদুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ,: ১/৪২৫পৃ.হাদিস:১৬৬৩, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১১:


أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلَامٍ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَإِذَا خَرَجَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعَوَّذَ مِنَ الشَّيْطَانِ

"নিশ্চয়ই হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি প্রথমে নবিয়ে দোজাহান (ﷺ) কে সালাম দিতেন তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন।(১)’’ 


তথ্যসূত্রঃ

(ক) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৯৭পৃ. হাদিস : ২৯৭৬৮ 

(খ) ইবনে আবি উসামা ইবনে হারেস (ওফাত.২৮২হি.), মুসনাদে হারিস, ১/২৫৪পৃ.হাদিস,১/২৫৪পৃ.হাদিস,১৩০, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১২:


হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ،

"রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসূলের প্রতি সালাম দেয়। তারপর বলবে এই (মসজিদে প্রবেশের) দোয়া.....(১)..।’’


টিকা____________________________

🔺১.

মসজিদে প্রবেশ কালে দু‘আঃ

اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার রহমতের দরজা আমার জন্য খুলে দাও।]

🔺২.

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দোয়াঃ

اَللّٰهمَّ اِنِّي اَسْٮَٔلُكَ مِنْ فَضْلِكِ 

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা মিস ফাদ্বলিকা।”

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার দয়া প্রার্থনা করি।

________________________________


❏ হাদিস ১৩:


এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত আছে।’’ 

وَقَال النَّخَعِيّ إذَا لَم يَكُن فِي الْمَسْجِد أَحَد فَقُل: السَّلَام على رسول الله صلى الله عليه وَسَلَّم وَإذَا لَم يَكُن فِي البَيْت أَحَد فَقُل: السَّلَام عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَاد اللَّه الصَّالِحِين

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখাঈ (رحمة الله) বলেন, যখন মসজিদের মধ্যে কোন লোক থাকবে না তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে এবং যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগন আপনাদের প্রতি সালাম।’’

তথ্যসূত্রঃ

(ইমাম কাযী আয়ায : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭পৃ. মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


❏ হাদিস ১৪:



عن عبد الملك بن سعيد بن سويد، قال: سمعت ابا حميد، أو أبا أسيد الأنصاري يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم ليقل: اللهم <ص:۱۲۷» افتح لي أبواب رحمتك، فإذا خرج قليقل: اللهم إني أسألك من فضلك "، رواه أبو داود وابن ماجه والدارمي،

وقال الرازي : قال أبو زرعة : عن أبي حميد وابي أسيد كلاهما عن النبي صلى الله عليه وسلم أصح . وقال المناوي : إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم ندبا مؤكدا أو وجوبا علي النبي صلي الله عليه وسلم لأن المساجد محل الذكر ، والسلام علي النبي صلى الله عليه وسلم منه .


হযরত আবু হােমাইদ আস্-সায়েদী বা আবু উসাইদ আল আনছারী (رضي الله عنه) বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার উচিৎ যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)-এর উপর সালাম প্রেরণ করা। তারপর বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বলবে। হে আল্লাহ! আমি আপনার থেকে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।


এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ এবং দারেমী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু হাতেম রাজী বলেন যে, ইমাম আবু জুরআ’ বলেন, হযরত আবু হােমাইদ এবং আবু ওসাইদ (رضي الله عنه) উভয় থেকে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধতম। এবং ইমাম মুনাভী বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন তার উচিৎ হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করাকে পছন্দনীয় এবং আবশ্যকীয় মনে করে আবেদন করা, কেননা মসজিদ হল জিকির করার স্থান এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে সালাম পেশ করাও আল্লাহর জিকির এর শামিল।


তথ্যসূত্রঃ

(১)দারেমী :  আস্ সুনান, ১/৩৭৭, হাদিস : ১৩৯৪।

(২)ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭২।

(৩-৪)বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৭ ও ২/৬১৯পৃ. হাদিসঃ ৪৩১৯, 

(৫)আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/১২৬, হাদিস : ৩৬৫।

(৬)বাযযার, আল-মুসনাদ, ৯/১৬৯পৃ. হাদিসঃ ৩৭২০, 

(৭)নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৪০৪পৃ. হাদিসঃ ৮১০, 

(৮)নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/২২০পৃ. হাদিস,১৭৭, 

(৯)আবূ আওয়ানাহ, আল-মুসনাদ, ১/৩৫৪পৃ. হাদিস, ১২৩৪ 

(১০)ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ৫/৩৯৭, হাদিস : ২০৪৮।

(১১)রাযী : ইলালুল হাদীস, ১/১৭৮, হাদিস : ৫০৯।

(১২)ড: তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।

(১৩)মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ।


❏ হাদিস ১৫:


عن فاطمة بنت الحسين، عن جدتها فاطمة الكبرى قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب فضلك. رواه الترمذي وأحمد وعبد الراق.

وفي رواية يقول : بسم الله والسلام علي رسول الله .......... فذكر الحديث نحوه.  رواه ابن ماجه وابن أبي شيبة .


 وفي رواية : قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلي على محمد وسلم ....... فذكر الحديث نحوه.  رواه احمد وابو يعلي والتبراني-

وفي رواية : قالت : قال : السلام عليك أيها النبي ورحمه الله وبرگاته ، اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رزقك . رواه أبو يعلي في المعجم،


হযরত ফাতেমা বিনতু হােছাইন (رضي الله عنه) নিজ দাদীজান সৃষ্টি জগতের সৈয়দা ফাতেমাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করার সময় মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া বলতেন, হে রব! আমার জন্য আমার (অর্থাৎ উম্মতের) পাপ মােচন করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। এবং বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া চাইতেন। হে আমার রব! আমার জন্য আমার (উম্মতের) পাপ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন।

এ হাদিসকে ইমাম তিরমিজী আহমদ এবং আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার হাদিস হাসান।


অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত (ﷺ) বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তা'আলার রাসূল (ﷺ) এর উপরও সালাম হােক... তারপর এরূপে হাদিস বয়ান করেন। ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


অপর এক বর্ণনায় সৈয়দা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন এবং এরূপে মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন, ইহার পর পূর্ববর্তী হাদিসের দোয়া বয়ান করলেন। ইহাকে ইমাম আহমদ, আবু ইয়া’লা এবং ত্বাবরানী বর্ণনা করেছেন।


আরেক বর্ণনায় আছে যে, সৃষ্টিজগতের সৈয়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করলেন যে, হযরত (ﷺ) ইহাই বলতেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার উপর শান্তি হােক এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত হােক। এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়া'লা আল-মু'জম এ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

ক. তিরমিযী : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত ২/১২৭, হাদিস : ৩১৪।

খ. ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৩, হাদিস : ৭৭১।

গ. ইবনে আবূ শায়বা : আস্ মুসান্নাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬। এবং ৬/৯৬, হাদিস : ২৯৭৬৪।

ঘ. আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১/৪২৫, হাদিস : ১৬৬৪।

ঙ. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৬/২৮২-২৮৩, হাদিস : ২৬৪৫৯-২৬৪৬২।

চ. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১২/১২১, ১৯৯, হাদিস : ৬৭৫৩, ৬৮২২। এবং আল মু'জাম, ১/৫৪, হাদিস : ২৪।

ছ. তাবরানী : আল মু'জামূল কবীর, ২২/৪২৪, হাদিস : ১০৪৪। এবং আদ্ দোয়া, ১/১৫০, হাদিস : ৪২৩-৪২৬। 

জ.ড: তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।


❏ হাদিস ১৬:


عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: " إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج، فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم"

رواه ابن ماجه والنسائي والبخاري في الكبير. وقال الحاكم : هذا حديث صحيح علي شرط الشيخين . وقال الكناني : هذا إسناد صحيح ورجاله ثقات .


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ কর, তখন তার উচিৎ যে, তিনি হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (এর পর) ইহা বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিন। এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখনও হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (ইহার পর) বলবে হে আমার আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে বাচান।


অপর এক বর্ণনানুযায়ী বললেন, তার উচিৎ যে, সে (সালাম পেশ করার পর) বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে দুরে রাখুন।

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজাহ, নাসাঈ এবং বুখারী আত্তারিখুল কবর এ বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম হাকেম বললেন, এ হাদিস ইমাম বুখারী ও মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ। ইমাম কেনানী বললেন, এ হাদিসের সনদ সহীহ এবং ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭৩। 

(২) বাযযার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৬৮পৃ. হাদিসঃ ৮৫২৩,

(৩) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহিহ, ১/২৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫২,  

ও ৪/২১০পৃ. হাদিসঃ ২৭০৬ 

(৪) ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ৫/৩৯৫পৃ. হাদিসঃ ২০৪৭,

(৫) নাসায়ী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৬/২৭, হাদিস : ৯৯১৮। 

(৬) বুখারী : আত্ তারীখুল কুবরা, ১/১৫৯, হাদিস : ৪৭০। 

(৭) হাকেম : আল মুসতাদরাক, ১/৩২৫, হাদিস : ৭৪৭।

(৮) কেনানি : মিসবাহুয যুযাজাহ, হাদিস : ২৯৩


❏ হাদিস ১৭:


عن محمد بن عبد الرحمن، أن عبد الله بن سلام كان إذا دخل المسجد سلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وقال: «اللهم افتح لي أبواب رحمتك» ، وإذا خرج سلم على النبي صلى الله عليه وسلم وتعوذ من الشيطان .

 رواه ابن أبي شيبة .


হযরত মুহাম্মদ ইবনু আবদির রহমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (رضي الله عنه) যখনই মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন তারপর বলতেন “আল্লাহুম্মফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” (হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন) এবং যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে আসতেন তখনও হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন অতঃপর বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চেয়ে নিতেন (তাঁর এই আমল হুযূর (ﷺ)’র ওফাত মেশকের পর সর্বদা প্রচলিত ছিল।)

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬]


❏ হাদিস ১৮:


وفي رواية : عن عقلمة أنه كان إذا دخل المسجد قال: «السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، صلى الله وملائكته على محمد»

رواه ابن أبي شيبة.


এক বর্ণনায় হযরত আলকামা (رضي الله عنه) বয়ান করেন যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন “আচ্ছালামু আলাইকা আইয়ুহান নবীত্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সাল্লাল্লাহু ওয়ামালাইকাতুহু আ'লা মুহাম্মাদিন (ﷺ)। (হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর দয়া এবং বরকতসমূহ হােক (সর্বদা) আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দয়া এবং তার ফেরেশতাদের পক্ষ থেকেও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর দুরূদ ও বরকতসমূহ হােক।)

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৭]


❏ হাদিস ১৯:


وفي رواية : عن إبراهيم كان إذا دخل المسجد قال: « بسم الله والصلاة على رسول الله» ، وإذا دخل بيتا ليس فيه أحد قال: «السلام عليكم» رواه ابن أبي شيبة .


এক বর্ণনায় হযরত ইবরাহীম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন, “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু আ'লা রাসুলিল্লাহি” (আল্লাহ্ তা'আলার নামে এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর দুরূদ প্রেরণের সাথে আমি এ মসজিদে প্রবেশ করছি।) এবং যখন এমন কোন ঘরে প্রবেশ করতেন, যেখানে কোন কেউ নাই, তখন বলতেন “আসসালামু আলায়কুম” (আপনার উপর শান্তি হােক)। 

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

[ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৮]


❏ হাদিস ২০:


হযরত সাহল (رضي الله عنه) বলেন, আমি নবীজী (ﷺ) কে সালাম করার জন্য আসলাম। তখন হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) নবীজী (ﷺ) এর পাশের ঘরে রাত্রের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি সাড়া দিলাম। তিনি বললেন, আসুন যাতে আমার সাথে নৈশ্যভোজে অংশ নিতে পারেন। আমি বললাম, জি না আমার প্রয়োজন নেই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে কেন দাঁড়িয়ে আছেন? আমি বললাম- وقفت اسلم على النيى صلى الله عليه وسلم 

অর্থাৎ, আমি নবী করীম (ﷺ) কে সালাম করার জন্য দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। তিনি বললেন- اذا دخلت المسجد فسلم عليه  যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তাকে সালাম করবে। 


নামাজের মধ্যে দুরূদ পাঠ সম্পর্কিত হাদিস ও মাসায়েলঃ



❏ হাদিস ১:


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) মারফু সূত্রে হযরত সাহল বিন সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, 

لاصَلاةَ لِمَن لا يُصَلّي علي النَّبي

 (ص)

"যে নামাযে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি দূরুদ পড়ল না তার নামায নামাযই নয়।"


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম দারাকুতনী, আস-সুনান, ২/১৭০ পূ, হা/১৩৪২, 

২.ইমাম বায়হাকী, আল-মা'রিফাতুল সুনাল ওয়াল আছার, ৩/৬৯ পৃ. হা/৩৭২০, 

৩.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০২ পৃ. হা/৯৯২, 

৪.ইমাম বায়হাকীঃ আস-সুনানুল কোবরা, ২/৫২৯ পৃ, হা/৩৯৬৭, 

৫.ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৬/১২১ পৃ. হা/৫৬৯৮. ৩০৯। 

৬.ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ১৫৭, সাকলাইন প্রকাশনী।

৭.সূনানে ইবনে মাযাহ খঃ ১, পৃঃ ১৪০, হাদীস ৪০০


❏ হাদিস ২:


ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) ও ইবনে মাযাহ (رحمة الله)  হযরত আবু মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 

-“যে নামায পড়লাে আর আমি নবী (ﷺ) এবং আহলে বায়াতের উপর সালাত পড়লাে না তার নামায কবুল হবে না।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম দারাকুতনী, আস-সুনান, ২/১৭০ পূ, হা/১৩৪৩, 

২.ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ১৪২ পৃ., তিনি বলেন- “সনদে জাবের যঈফ রাবী, তার হাদিস নিয়ে অনেক আলােচনা-সমালােচনা রয়েছে।” 

৩.ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ১৫৮, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৩:


عن عبيد الله بن بريدة عن ابيه رضي الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : یا بريده ، إذا جلست في صلاتك ، قلاتتركن التشهد والصلاة على فانها زكاة الصلاة ، وسلم على جميع أنبياء الله ورسوله ، وسلم على عباد الله الصالحين .

رواه الدار قطني والديلمي.


হযরত ওবাইদুল্লাহ ইবনু বুরায়দা নিজ পিতা হযরত বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, হে বুরায়দা! যখন তুমি নিজ নামায পড়তে বসবে, তখন তাশাহহুদ এবং আমার উপর দুরূদ প্রেরণকে কখনাে ছেড়ে দেবে না। উহা নামাযের যাকাত। এবং আল্লাহ তা'আলার সমস্ত নবী এবং রাসূলগণের উপর এবং তাঁর নেক বান্দাদের উপরও সালাম প্রেরণ কর।

এ হাদিসকে ইমাম দারুকুতনী এবং দায়লামী বর্ণনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

১. দারে কুতনী : আস্ সুনান, ১/৩৫৫, হাদিস: ৩

২. দায়লামী : আল্ মুসনাদুল ফেরদাউস, ৫/৩৯২, হাদিস: ৮৫২৭;

৩. হায়সামী : মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ২/১৩২;

৪.ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন।


❏ হাদিস ৪:

 

ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) “কিতাবুল উম্ম” গ্রন্থে বলেন যে, আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে কারীমার দ্বারা নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠানাে ফরয করেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এ নবীর উপর দুরূদ প্রেরণ করেন, হে ইমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি তাজিমের সাথে দুরূদ ও সালাম প্রেরণ কর।

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯২, সাকলাইন প্রকাশনী।]


❏ হাদিস ৫:

 

ইমাম উমারী  (رحمة الله) “আমালিল ইয়ামি ওয়াল লাইল” গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর  (رحمة الله) শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেন, তিনি। বলেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

“কিরাত তাশাহুদ আর আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়া ব্যতিত নামায হয় না।"

[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৪ পৃ., ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৫, সাকলাইন প্রকাশনী।]


ব্যাখ্যাঃ 


ইমাম যুরকানী  (رحمة الله) বলেন যে, উক্ত বর্ণনায় ওয়াজিবের কোন দলিল নেই, কারণ, যে, এর দ্বারা পূর্ণাঙ্গতার নিষেধ করা হয়। আর এ মমার্থ বেশী যুক্ত হয়, কারণ তাশাহুদের  হাদিস সমূহে দুরূদ শরীফের উল্লেখ নেই। (মানে, নামাজ অপূর্নাঙ্গ রয়ে যায়) 

(আল্লামা যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৩৪ পৃ.) 


❏ হাদিস ৬: 


হযরত আবু জাফরের হাদিসে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে নামাযে আমার উপর আমার আহলে বাইতের উপর দুরূদ শরীফ না পড়ে। তার নামায কবুল হবে না।” 

[সুনানে দারাকুতনী, ২/১৭১ পৃ. হা/১৩৪৩, ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬, সাকলাইন প্রকাশনী।]


ব্যাখ্যাঃ


◾ইমাম দারাকুতনী  (رحمة الله) বলেন, সহীহ হলাে এই যে, এ ইমাম আবু জাফর  (رحمة الله) মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হাসান (رحمة الله) এর অভিমত থেকে তিনি বলেন, যদি আমি নামায পড়ি আর তাতে নবী আকরাম (ﷺ) ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর দুরূদ শরীফ না পড়ি, তখন আমি মনে করি যে আমার নামায পূর্ণাঙ্গ হয়নি। 

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬,সাকলাইন প্রকাশনী।]


◾মিশরের ফিকহবিদগণের (বিভিন্ন শহরের ফিকহী) মধ্যে হযরত ইমাম আহমদ  (رحمة الله) এক বর্ণনা অনুযায়ী- ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) এর আনুগত্য করেন, আর শেষে এর উপর আমল করেন, যেভাবে তার থেকে (তাঁর শিষ্য) ইমাম আর যারওয়া দামশকী  (رحمة الله) (আবু যারওয়া বিন আবদুর রহমান বিন আমর বিন আবদুল্লাহ বিন সাফওয়ান আন-নাসায়ী, হাফেজুল হাদিস ওফাত-২৮০ হিজরি) বর্ণনা করেন, আর এ অভিমত কে আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর  (رحمة الله) করেন। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই  (رحمة الله) বলেন যে, 

"যদি কোন ব্যক্তি ভুল করে নয়, বরং জেনে শুনে দুরূদ শরীফ না পড়ে, তাহলে তার নামাজ ওয়াজিব হবে।"

আর ইমাম আহমদ  (رحمة الله) থেকে প্রসিদ্ধ হল এই যে, নামাজে দুরূদ ছেড়ে দেয়ায় ঐ নামায বাতিল হয়ে যায়, জেনে শুনে ছেড়ে দেয় বা ভুলে ছেড়ে দেয়। 

তাঁর অধিকাংশ শিশ্যগণ এ অভিমত এমনকি কোন কোন হাম্বলী ইমামগণ নামাজে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা ওয়াজিব ঘোষণা করেন যে, তারা যখন আরজ করেন ইমাম আহমদ  (رحمة الله) তাদের এভাবে শিক্ষা দিতেন। অথবা ইমাম ইবনে কাসীর  (رحمة الله) অনুরূপ বর্ণনা করেন, ইমাম খারকী  (رحمة الله) স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়ার শর্তে ইমাম ইবনে ইসহাক  (رحمة الله) এর আনুগত্য করেন।

[ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯৬-৩৯৭]সাকলাইন প্রকাশনী।


মালেকীদের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে , যেভাবে ইমাম ইবনে হাজেব  (رحمة الله) নামাজের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা করে বলেন , অর্থাৎ সহীহ অভিমত অনুযায়ী মতভেদ রয়েছে। তার ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ( মুহাম্মদ) বিন আবদুস সালাম  (رحمة الله) বলেন , এর মমার্থ হলাে এই যে , ওয়াজিব হবার সম্পর্কে দু ' টি অভিমত রয়েছে । আর ইমাম ইবনে মুওয়াজ (মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন যিয়াদাহ ইস্কান্দারী) এর বর্ণনায়ও এ কথা প্রকাশ হয়েছে। 


ইমাম ইবনে কাচ্ছার  (رحمة الله) ইমাম ইবনে মুওয়াজ  (رحمة الله) থেকে এ বিষয় স্পষ্ট বর্ণনা করেন, অনুরূপ "আশ-শিফা" গ্রন্থে এ শব্দ সমূহের সাথে হয় যে, তিনি ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) এর মত যাতে ফর‍য নামাযে (ওয়াজিব) মনে করতেন।

তিনি বলেন আবু ইয়ালা (আহমদ বিন মুহাম্মাদ) আবদী  (رحمة الله) এর ধারাবাহিকতায় তিন অভিমত প্রকাশ করেন, 

( ১ ) ওয়াজিব , ( ২ ) সুন্নাত , ( ৩ ) মুস্তাহাব। 

(আদ-দিরাজুল মাযহাব, ১ম খণ্ড, ১৭৫ পৃ , আস - সিলাত , ১ম , ৮৭ পৃ.) 


◾আমি “ সিরাজুল মুরিদীন ” গ্রন্থে ইমাম কাযী আবু বকর বিন আরাবী  (رحمة الله)' র প্রতি সম্পর্কিত অভিমত সমূহের মধ্যে দেখলাম যে , ইমাম ইবনে মাওয়ায  (رحمة الله) আর ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) বলেন যে, 

নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়া নামাযের ফরযের মধ্যে হয়েছে , আর এটাই সহীহ হয়। 


যে হানাফীগণ এ অভিমতের সমর্থক হয় যে, 

"যখনই নবী আকরাম (ﷺ) এর অালোচনা করা হয়, দুরূদ শরীফ পড়া ওয়াজিব হয়।" 

যথাঃ

▪ ইমাম তাহাবী  (رحمة الله),

▪ আর ইমাম সুরুজী এটাকে “শরহে হেদায়া” গ্রন্থে “আল-মুহিত", "আল আকদ" আর "আত-তােহফা” এর গ্রন্থকার থেকে তার গ্রন্থে নকল করেন। তাই এ অভিমতের দ্বারা অবধারিত হয় যে , তিনি তাশাহুদেও দুরূদ শরীফকে ওয়াজিব ঘােষণা দেন। 


❏ হাদিস ৭:


ইমাম ইবনে খােজাইমা  (رحمة الله), ইমাম ইবনে হিব্বান  (رحمة الله) আর ইমাম হাকেম  (رحمة الله) হযরত ফোজালাহ বিন ওবায়েদা আনসারী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নি বলেন যে, নবী আকরাম (ﷺ) এক ব্যক্তি থেকে শুনেন যে, 

"সে নামাযে এভাবে দোয়া প্রার্থনা করতেছে যে, সে না তাতে আল্লাহর প্রশংসা করছে, আর না নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়তেছে। তখন তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন, এ ব্যক্তি জলদী করছে, তারপর তিনি তাকে তার নিজের নিকট ডাকেন, আর ইরশাদ করেন, 

“যখন তােমাদের মধ্যে কোন লােক নামায পড়বে, তখন আল্লাহ তাআলার প্রশংসার সাথে শুরু করবে। তারপর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে, তারপর যা ইচ্ছা দোয়া প্রার্থনা করবে।”


তথ্যসূত্রঃ

▪ ইমাম তাবরানী, মুজামুল কবীর, ১৮/৩০৭ পৃ. হা/৭৯১, 

▪ ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৫/২৯০ পৃ. হা/১৯৬০, 

▪ ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৩৯৪ পৃ. হা/৩৪৭৭, 

▪ ইমাম আহমদ, আল আল-মুসনাদ, ৩৯/৩৬৩ পৃ, হা/২৩৯৩৭,

▪ ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০১ পৃ. হা/৯৮৯, 

▪ সুনানে আবি দাউদ, পৃ. হা/১৪৮১, 

▪ মুসনাদে বাযযার, হা/৩৭৪৮, 

▪ আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, হা/৩৩৩০, 

▪ ইমাম কাসতালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), ৩৯৯ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


ইমাম যুরকানী  (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিস দ্বারা ওয়াজিব প্রমাণ হয় না, যদি তাই হতো ঐ ব্যক্তিকে পুনরায় নামায পড়ার হুকুম দিতেন। (আল্লামা যুরকানী, শারহুল মাওয়াহিব ৩৭ পৃ.)


আমি গ্রন্থকার (ইমাম কাস্তালানী) বলতেছি যে, আমার ইমাম, ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله)'র কারামতের মধ্যে এটাও এক বিষয় যে ইমাম কাযী আয়ায  (رحمة الله) এ হাদিসকে নিজ সনদে ইমাম তিরমিযির সূত্রে নকল করেন, আর এ সনদ সম্পর্কে কোন ভৎর্সনা করা হয়নি। তিনি এটাকেঃ


فصل في المواطن التي تستحب فيها الصلاة على النبي - صلى الله عليه وسلم

"(এ পর্বে ঐ স্থান সমূহের উল্লেখ করা হবে, যাতে নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব হয় আর এর প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়।) 

এরপর নামাযের তাশাহুদের উল্লেখ করেন,

"আর এটা তাশাহুদের পর আর দোয়ার পর্বে হবে।" 

"আর এ হাদিস যা তােমরা দেখতেছাে, আমার দলিল সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলিল, অথচ এর দ্বারা ওয়াজিব প্রমাণ হয় না। এর দ্বারা ঐ দলিল সমূহের দুর্বলতা, আর হানাফী অবস্থানের শক্তি সামর্থ প্রমাণ হয়।]

তথ্যসূত্রঃ

▪ ইমাম কাসতালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), ৩৯৯ পৃ। সাকলাইন প্রকাশনী।



মোনাজাতের মধ্যে দুরূদ পাঠ 



❏ হাদিস ১:


ফাযালাত বিন উবাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ [আবু দাউদে বর্ণিত বিষয়বস্তু অনুসারে]

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) শুনতে পেলেন কোন ব্যক্তি নামাযে দোয়া পড়ছেন কিন্তু না আল্লাহকে স্মরণ করছে না আল্লাহর পয়গাম্বরের উপর দূরুদ পড়ছে। আল্লাহর রাসূল বললেনঃ সে তাড়াহুড়া করলো। অতঃপর তাকে ডাকলেন এবং তাকে ও অন্যদেরকে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামায পড়লো সে যেন প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা পড়ে,অতঃপর আল্লাহর রাসূলের উপর দূরুদ পড়ে। অতঃপর যা ইচ্ছা আল্লাহর নিকট চাইতে পারে।


তথ্যসূত্রঃ

[সূনানে আবু দাউদ খঃ ২ পৃঃ ৭৭, হাদীস ১৪৮০, সূনানে তিরমিযি, কিতাবে দোয়া খঃ ১৩ পৃঃ ২১]


❏ হাদিস ২:


অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ব্যক্তিকে, যে নামায পড়লো ও নিজের জন্য দোয়া করলো কিন্তু না আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো এবং না আল্লাহর নবীর উপর দূরুদ পড়লো, বলেনঃ হে নামায আদায়কারী! যখনই নামায পড়লে ও বসলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে ও আমার প্রতি দূরুদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহর নিকট কিছু চাইবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অপর এক ব্যাক্তিকে যে নামায পড়লো, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও রাসূলের প্রতি দূরুদ পাঠ করলো, তাকে বললেনঃ হে নামায আদায়কারী, তুমি যা দোয়া কর তা কবুল হবে। 


তথ্যসূত্রঃ

[মুসনাদে আহমাদ খঃ ৬ পৃঃ ১৮, সুনানে নাসাঈ খঃ৩ পৃঃ ৪৪, মুস্তাদরকে হাকিম কঃ ১ পৃঃ ২৬৮, ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালিহীন পৃঃ ৩৮২]


মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুরূদ


❏ হাদিস ৩:


হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন,

 عن على بن ابى طلب (رض) قال اذامرتم با المسجد فصلوا على النبى صلى الله عليه وسلم (فضل الصلواة على النبي)

অর্থাৎ, যখন তোমরা মসজিদের পাশ দিয়ে যাবে। তখন নবীজী (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। 

(ইমাম আবু ইসহাক কর্তৃক, ফাদ্বলুস সালাত- পৃষ্টা: ৭৯) 


ঘরে প্রবেশের সময় দুরূদ


❏ হাদিস ৪:


আশ-শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন,

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ-

-‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী (ﷺ)! আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ 

(ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ২/৪৩ পৃ, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-


أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام


-‘‘কেননা, নবীজী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’ 

(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ. দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ)



তালবীয়াহ "লাব্বাইক আল্লাহুম্মাহ লাব্বাইক’ শেষ পর্যন্ত বলার পর দুরূদ শরীফ পড়বে। 


❏ হাদিস ৫:


ইমাম শাফেয়ী  (رحمة الله) ও দারাকুতনী  (رحمة الله) হযরত কাশেম বিন মুহাম্মদ বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, তালবীয়্যাহ পাঠ সমাপ্তকারীকে হুকুম দেয়া যায় যে, সে যেন সর্বদা নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ে। 

[সুনানে দারাকুতনী, ৩/২৫৭ পূ, হা/২৫০৭, ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।]


সাফা ও মারওয়ার মাঝে দুরূদ শরীফ পড়া। 


❏ হাদিস ৬:

 

ইমাম ইসমাঈল কাযী  (رحمة الله) হযরত উমর বিন খাত্তাব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তােমরা যখন আসবে তাওয়াফের সাথে চক্কর লাগাবে মাকামে ইবরাহীমের পাশে দুই রাকাত নামায পড়ে, সাফা পাহাড়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবে। এমনকি বায়তুল্লাহ শরীফকে দেখে সাতবার তাকবীর বলবে, আর এর পূর্বে আল্লাহ তা'আলার হামদ ছানা পড়বে, নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে। আর নিজে নিজের জন্য দোয়া করবে। আর মারওয়াতেও অনুরূপ করবে। 

▪ ইমাম ইবনে কাসির  (رحمة الله) বলেন, এর সনদ হাসান অতি উত্তম ও শক্তিশালী।

[ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী]


রওজা শরীফ যিয়ারতের সময় দুরূদ শরীফ পড়া


❏ হাদিস ৭:


তাবেয়ী নাফে (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদ শরীফে প্রবেশ করে, অতঃপর রওজা আনােওয়ারে হাযির হতেন, আর এভাবে বলতেন, 

-“হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার প্রতি সালাম হােক, হে আবু বকর (رضي الله عنه)! আপনার প্রতি সালাম হােক, হে আব্বাজান [হযরত উমর (رضي الله عنه)]! আপনার প্রতিও সালাম হােক।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আব্দুর রাযযাক, আল-মুসান্নাফ, ৩/৫৭৬ পৃ. হা/৬৭২৪, 

২.ইমাম বায়হাকী, মা'রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৭/৫৩৩ পৃ, হা/১০৯৪০, 

৩.ইমাম বায়হাকি, আস-সুনানুল কোবরা, ৫/৪০২ পৃ. হা/১০২৭১ এবং 

৪.ইমাম বায়হাকি, আস-সুনানুস সুগরা, ২/২১০ পৃ. হা/১৭৭০, 

৫.ইমাম আবি শায়বা, ৩/২৮ পৃষ্ঠা, হা/১১৭৯৩, 

৬.ইমাম ইবনে সা'দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ৪/১১৭ পৃ. 


❏ হাদিস ৮:


❏ হযরত মালিক ইবনে আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, আর তােমাদের জন্য এ খবরের শানে এতােই যথেষ্ট হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওহাব (رحمة الله) তাঁর নিকট থেকে বর্ণনা করেন যে, মুসলমান বা যিয়ারতকারী এভাবে বলবে, 

-“হে আল্লাহর নবী আপনার প্রতি সালাম হােক, আর আল্লাহ তা'য়ালার রহমত ও বরকত হােক।”

[ইমাম শিহাবুদ্দীন আল-কাস্তালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৪র্থ খন্ড, পৃ ৭৬১, সাকলাইন প্রকাশনী]


❏ হযরত মালিক ইবনে আনাস (رضي الله عنه) আল-মাবসুত’ গ্রন্থে অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন, 

"নবী আকরাম (ﷺ), এরপর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه) এর প্রতি সালাম পেশ। 

[আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৩০৬ পৃ.]


 


বিভিন্ন শব্দে দুরূদ শরীফ পাঠ




❏ হাদিস ১: 


"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন 'আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া ছাল্লি আলাল মু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনাত ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত। 

[সহীহ ইবনে হিব্বান ৩/১৫৮]


❏ হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ইরশাদ করেন,

যে ব্যক্তি জুমার দিন এ দুরূদ শরীফটি এক হাজার বার পাঠ করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেহেশতের মধ্যে তাঁর স্থান প্রত্যক্ষ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। 

اللَّهُمَّ صَلّ وَسَلَّمَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِهِ ألف ألف مَرَةٍ »

‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মদীন ওয়া আলিহি আলফা আলফা মররতিন।' 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৯৭; 

(২) ইবনে শাহান (رحمة الله), আত-তারগীব ফী ফাযায়িলিল আমাল ওয়া সাওয়াবি যালিক, পৃ. ১৪, হাদীস: ১৯; হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৫।


❏ হাদিস ৩:


ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হাদীসে মরফু সূত্রে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) পর্যন্ত সনদ সহকারে হাদীস বর্ণনা করেন যে, 

"যে ব্যক্তি সাত জুমুআ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন এ দুরূদ শরীফটি সাত বার করে পাঠ করবে, তার জন্য আমার শুপারিশ নিশ্চিত হবে। দুরূদ শরীফটি এই, 

বাংলা উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মদীন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মদীন সালাতান তাকূনু লাকা রিযাউন, ওয়া লাহিকিহি আদাউন, ওয়া আতিহিল ওয়াসীলাতা ওয়াল্ মাকামাল মাহমূদা আল্লাযী ওয়াআততাহূ, ওয়া আজযিহি মাহুওয়া আহলুহু, ওয়া আজযিহি ‘আন্না মিন্ আফযালি মা জাযায়তা নবীয়ান আন উম্মাতিহি, ওয়া সাল্লি আ'লা জমীয়ি ইখওয়ানিহি মিনান্ নবীয়ীনা ওয়াস সিদ্দীকীনা ওয়াশ শুহাদায়ি ওয়াস সলিহীনা, ইয়া আরহামার রাহিমীন। 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৫৭। 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬।


❏ হাদিস ৪:


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) ইয়াযীদ ইবনে ওয়াহব (رضي الله عنه) কে বলেছেন, তুমি জুমাবারে দুরূদ শরীফ পাঠ করা থেকে বিরত থেকো না। বরং এ দুরূদ শরীফটি এক হাজার বার করে পাঠ করবে: 

اللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدِ النّبي الأمي » 

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মদীন আন্নবীয়িল উম্মী। 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, প, ১৯৭-১৯৮। 

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬। 


❏ হাদিস ৫:


হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইব (رضي الله عنه)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,  

"যে ব্যক্তি জুমাবারে আমার ওপর ৮০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী, পৃ. ১৯৮; 

(২) ইবনে শাহীন (رحمة الله), আত-তারগীব ফী ফাযায়িলিল আমাল ওয়া সাওয়াব মালিক, পৃ. ১৪, হাদীস: ২২; হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৬। 


❏ হাদিস ৬:


হযরত হাসান (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি জুমাবারে রাসূলুল্লাহ  (ﷺ)-এর ওপর এ দুরূদ শরীফটি পাঠ করবে তার আশি বৎসরে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে: 

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদীন আবদিকা ওয়া রাসূলিকান নবীয়্যিল উম্মীয়ি, ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম তসলীমা।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ৬৭

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬৭।


❏ হাদিস ৭: 


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুমআ'র দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবীরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বাে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,

اللهم صل على محمد عبدك ونبيك ورسولك النبي الأمي 

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন-নাবিয়্যিল উম্মি’ এভাবে পড়বে।”


তথ্যসূত্রঃ

১. দারে কুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:,

২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯পৃ.,

৩. খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে,

৪. ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে,

৫. ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ, ১/১৬৭.পূ.

৬. ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১পৃ. হাদিসঃ ৪৫, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান’,

৭. ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম,১/২২০পৃ. ৩শ বলেন, "ইমাম ইবনে নুমান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ও ১/৪৪৫প, হাদিস ৫১১। তিনি বলেন ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)

৮. ইবনুল যওজী, আল-ইল্ললুল মুতনাহিয়্যাত আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮পৃ. হাদিসঃ ৭৯৬, 

৯. আলুনী,কাশফুল খাফা, ১/১৮৯পৃ. হাদিস,৫০১, তিনি বলেন, ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

১০. আবু তূলেব মক্কী,কুউয়াতুল কুলুব,১/১২১পৃ.দারুল। ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন,

১১. ইমাম গাযযালী, ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,১/১৮৬পৃ., 

১২. দারুল মা'রিফ বয়র, শায়খ খলিল (ওফাত-৮৬৯ হি.), 

১৩. বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব,১/৩৯পৃ. 

১৪. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কাহেরা, মিশর। 

১৫. প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের “স্বরূপ উন্মােচন”৪২২ পৃ।


❏ হাদিস ৮: 

জীবনের গোনাহ মাফ


হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত আছে, তাজদারে মদিনা (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ

যে ব্যক্তি নিচের শরিফটি পড়বে? সে যদি! দাঁড়ানো থাকে তাহলে বসার পূর্বে, আর যদি বসা থাকে তাহলে দাঁড়ানোর পূর্বে তার জীবনের গুনাহ গুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। তা হলঃ "আল্লাহুম্মা ছল্লি আ'লা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিও ওয়াআ'লা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়াসাল্লিম।"

[আফদ্বালুস সালাওয়াত আলা সায়্যিদিস সাদাত,৬৫পৃষ্টা]


❏ হাদিস ৯: 

ফেরেশতাগণ  ১০০০ দিন তার জন্য সওয়াব লিখতে থাকবে


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ

"যে ব্যক্তি একবারে নিম্নোক্ত দুরূদ একবার তিলাওয়াত করে, আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাঁর জন্য ১০০০ দিন সওয়াব লেখার জন্য নির্দেশ দেন। 

অপর বর্ণনায় আছে, এই দুরূদ একবার পাঠ করলে আগামী ১০০০ দিন নেকী লিখার জন্য আল্লাহর ফেরেশতাগণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দুরূদটি হলঃ


 جَزَی اﷲُ عَنَّاسَيِّدِنَا مُحَمَّدًاﷺ مَا هُوَ أُهْلُهْ


“জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু”

“জাযাল্লাহু আন্না সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু”


অনুবাদঃ "আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আমাদের পক্ষ থেকে তিনি (আমাদের উপর) যতটা হকদার (প্রাপ্য), সে সংখ্যানুপাতে তার প্রতিদান দিন।"

তথ্যসূত্রঃ

(১).ইমাম তাবরানী (رحمة الله): আল-মু’জামুল কবির, (হাদীস: ১১৫০৯),

(২).ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله), হিলিয়াতুল আউলিয়া

(৩).ইমাম মুনাযিরী (رحمة الله): তারগীব, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা ৫০৪।

(৪).ইমাম হায়সামী  (رحمة الله): মাজমা’উজ জাওয়াইদ, খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৬৩,  

(৫).ইমাম সাখাবী  (رحمة الله): আল-কওলুল বদি, পৃষ্ঠা ১১৬।

(৬). ফাজাইলে আমল, খণ্ড  ১, পৃ ৪৩।


❏ হাদিস ১০: 

হাজার দিনের নেকী অর্জন


উচ্চারণঃ জাযাল্লা-হু আন্না মুহাম্মাদান মা-হুয়া আহলুহ।

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা সায়্যিদিনা- ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ'লা- আ-লি সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন কামাতুহিব্দু ওয়া তারদ্বা-লাহ্।

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফদ্বয় পাঠকারীর জন্য ৭০ জন ফিরিশতা ১ হাজার দিন পর্যন্ত নেকী লিখতে থাকেন।

(তাবরানী, মাযরাউল হাস্নাত)


❏ হাদিস ১১: 


আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি শুক্রবার আসর সালাতের পর পরই তার দুরূদ ৮০ বার তেলাওয়াত করে, তার স্থান থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগে আল্লাহ ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করবেন এবং তাকে ৮০ বছরের ইবাদতের সমান পুরষ্কার দান করবেন।”

"আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিনীন নাবিয়িল উম্মি-ইয়ি ওয়া-আ'লা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।"

অনুবাদ: "হে আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর দুরূদ প্রেরণ করুন এবং তাঁদেরকে সর্বোত্তম শান্তি প্রদান করুন।"

[ইমাম তাবারানীঃ মুজামুল কবীর ও ইমাম সুয়ূতীঃ জামেউস সগীরে এটি বর্ণনা করেছেন] 


❏ হাদিস ১২:


হযরত যায়েদ বিন খারিজাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমি নবী করিম (ﷺ) কে (দুরূদের ব্যপারে) জিজ্ঞেস করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তােমরা আমার উপর দুরূদ পড় এবং অনেক বেশি চেষ্টা করে দোআ কর। এভাবে বলবে, 

"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন।" 

[সুনানে নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং- ১২২৫]


❏ হাদিস ১৩:


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) সূত্রে বর্ণিত। তিনি,➡ আহমাদ ইবনু ইউনুস, যুহাইর, ➡মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক, ➡মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনুল হারিস এবং মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদের মাধ্যমে➡ ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমর (رضي الله عنه) হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা বলোঃ 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو، بِهَذَا الْخَبَرِ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ‏"‏ ‏.‏ - حسن [1


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিই্যুল উম্মীয়ি ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন।’’

তথ্যসূত্রঃ

[আহমাদ (৪/১১৯) মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম ইবনুল হারিস হতে, এর সনদ হাসান, সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৮১]


❏ হাদিস ১৪:


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে পাক (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন- তখন "বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন", 

আর যখন বের হতেন তখনও বলতেন "বিছমিল্লাহি আল্লহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনুস সুন্নী, আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, পৃষ্ঠা-১৮১। 

(২) ইবনে হাজার আসকালানী, নাতায়েযুল আফকার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৮২ 

(৩) লিছানুল মিজান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১৬। 


❏ হাদিস ১৫:

৭০ হাজার ফিরিশতা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা


উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহীম। আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি তাওয়াদ্বাআ কুল্লা শাইয়িন লিআ’মাতিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি যাল্লা কুল্লা শাইয়িম বিইযতিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি নাফাআ কুল্লা শাইয়িন লিমুলকিহী ওয়াল হামদুলিল্লা-হিল লাযি ইসতাসলামা কুল্লা শাইয়িন লিকুদরাতিহী।

ফযীলতঃ হুযূর আকরম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলাে পাঠ করবে এবং সেটার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট (রহমত ও ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, আল্লাহ্ তা'আলা তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করেন এবং তার এক হাজার পদ মর্যাদা উন্নীত করেন আর ৭০ হাজার ফিরিশতাকে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নিয়ােজিত করেন। 

(ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-২২৮-২২৯)



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ অন্যান্য যাদের উপর দুরূদ পড়া যায়, বিভিন্ন শব্দে দুরূদে ইব্রাহীম।



❏ হাদিস ১: 

শু‘বাহ  (رحمة الله) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছেঃ 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ ‏"‏ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


‘‘সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা’’।

[সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة)

হাদিস নম্বরঃ ৯৭৭]


❏ হাদিস ২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তােমরা বল, 

"আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ'লা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা কামা ছাল্লাইতা আ'লা ইবরাহীমা ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদিন ওয়া আ'লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আ'লা ইবরাহীমা।"

[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৭৩৬]


❏ হাদিস ৩:


কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ، قَالَ قُلْنَا أَوْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ أَمَرْتَنَا أَنْ نُصَلِّيَ عَلَيْكَ وَأَنْ نُسَلِّمَ عَلَيْكَ فَأَمَّا السَّلَامُ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


তিনি বলেন, একদা আমরা বললাম অথবা লোকজন বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদেরকে আপনার উপর দুরূদ ও সালাম পড়ার আদেশ করেছেন। সালাম পাঠের নিয়ম আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পাঠ করবো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলো-


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’-

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি মুহাম্মদ, তাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষন করুন যেরূপ রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। আপনি ইবরাহীমকে যেমন বরকত দান করেছেন তেমনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করুন। নিশ্চই আপনি প্রশংসিত ও মহান।


তথ্যসূত্রঃ

(১) তিরমিযী, আবওয়াবুস সালাত, বাবু মা জাআ ফি সিফাতিস সালাতি আলান্নাবী (ﷺ), ২:৫২, নং-৪৮৩। 

(২) নাসাঈ, সুনান, কিতাবুস সাহু, ৩:৪৭, নং-১২৮৭। 

(৩) নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৩, নং-১২১। 

(৪) হুমাইদী, মুসনাদ, ২:৩১০, নং-৭১১। 

(৫) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১৯:১৩১, নং-২৮৭। 

(৬) ইউসুফ বিন মুসা, মু'তাছারুল মুখতাছার, ১:৫৪।

(৭) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৬

(৮) বুখারী (অধ্যায় : তাফসীর, সূরাহ আল-আহযাব, অনুঃ আল্লাহর বানী : ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতাহু য়ুসাল্লুনা ‘আল্লান্নাবী ইয়া আইয়ূ হাল্লাযিনা আমানু সল্লু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লিমূ তাসলিমা, হাঃ ৪৭৯৭),

(৯) মুসলিম (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ তাশাহহুদের পর নাবী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ), কিতাবুস সালাত, খঃ ১/৩০৫, হাদীস ৬৬, 

(১০) সুনানে দারামী খঃ ১, পৃঃ৩০১, 

(১১) সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ৯০৪,

(১২) মুসনাদে আহমাদ খঃ ৪ পৃঃ ২৪১-২৪৪। 

(১৩) তাফসীরে তাবারী খঃ ২২, পৃঃ৩১,

(১৪) তাফসীরে কুরতুবী, খঃ ১৪, পৃঃ ৩৩৪, 

(১৫) তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ ৫, পৃঃ ২১৫-২১৬,

(১৬) কাঞ্জুল উম্মাল খঃ ২, পৃঃ ১৮০, 

(১৭) তাফসীরে ইবনে কাসির খঃ৩ পৃঃ৫০৭।


❏ হাদিস ৪:


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনুল ‘আলা তার সনদে ইবনু বিশর ও মিস্‘আরের মাধ্যমে হাকাম হতে হাদীসটি বর্ণনার পর দুরূদ পাঠ সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ 


. باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ بِشْرٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنِ الْحَكَمِ، بِإِسْنَادِهِ بِهَذَا قَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ الزُّبَيْرُ بْنُ عَدِيٍّ عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى كَمَا رَوَاهُ مِسْعَرٌ إِلَا أَنَّهُ قَالَ ‏"‏ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ ‏"‏ ‏.‏ وَسَاقَ مِثْلَهُ ‏.‏ - صحيح : ق [1


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা ‘আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’’


ইমাম আবূ দাউদ  (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি যুবাইর ইবনু ‘আদী  (رحمة الله) ইবনু আবূ লায়লাহ  (رحمة الله) হতে মিস্‘আরের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে শুধু ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা’’ এর স্থলে ‘‘কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা’’ কথাটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ মিস‘আর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।


তথ্যসূত্রঃ

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة)

হাদিস নম্বরঃ ৯৭৮, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ। 

▪ সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।


❏ হাদিস ৫:


আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حِبَّانُ بْنُ يَسَارٍ الْكِلَابِيُّ، حَدَّثَنِي أَبُو مُطَرِّفٍ، عُبَيْدُ اللهِ بْنُ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ كَرِيزٍ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْهَاشِمِيُّ، عَنِ الْمُجْمِرِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَكْتَالَ بِالْمِكْيَالِ الأَوْفَى إِذَا صَلَّى عَلَيْنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏ - ضعيف [1


কেউ যদি আমাদের আহলি বাইতের উপর দুরূদ পড়ার পুরো সওয়াব পেতে চায় সে যেন এভাবে বলেঃ 


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যি ওয়া আয্ওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু‘মিনীনা ওয়া যুররিয়াতিহি ওয়া আহলি বাইতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’। 


অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রী উম্মাহাতিল মু‘মিনীন, তাঁর সন্তানাদি ও আহলি বাইতের উপর রহমাত বর্ষণ করুন যেমনি রহমাত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।’’


তথ্যসূত্রঃ

▪ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৮২, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ।

▪ বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/৫২৯), হাদিস ৩৯৬৫,

▪ বুখারী ‘আত-তারীখ’ (৩/৮৭), 

▪ সুয়ূতী একে আদ-দুররে মানসূর (৫/২১৬) গ্রন্থে এবং 

▪ তাবরীযীঃ মিশকাত (হাঃ ৯৩২) গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। 

▪ ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।


❏ হাদিস ৬:


আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। 


 باب الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم بَعْدَ التَّشَهُّدِ حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مَالِكٌ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ سُلَيْمٍ الزُّرَقِيِّ، أَنَّهُ قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ، أَنَّهُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏"‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏ ‏.‏ - صحيح : ق [1] 


আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা  (رحمة الله) ... আবূ হুমায়দ সাঈদী  (رحمة الله) বর্ণনা করেন। একবার লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আমরা আপনার উপর কিভাবে দুরূদ পড়বো? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তোমরা বলোঃ


‘‘আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আয্ওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা সল্লাইতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়াতিহি কামা বারাকতা ‘আলা ‘আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’।


"অর্থঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ (ﷺ) ও তার সহধর্মিণীগণ এবং তার সন্তান-সন্ততিগণের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ, তার সহধর্মিণীগণ এবং তার আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত এবং উচ্চ মর্যাদাশীল।


তথ্যসূত্রঃ

(১) বুখারী, সহিহ, কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু কাউলিল্লাহ ৩:১২৩২, নং ৩১৮৯। আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। হাদীস যমীনে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ স্থাপিত হয়েছে, হাঃ ৩৩৬৯। সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬৭/ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯২০।

(২) মুসলিম, সহিহ, কিতাবুস সালাহ, বাবুস সালাতে আলান্নবী (ﷺ) বাদাত তাশাহহুদ, ১:৩০৬, নং ৪০৬।

(৩) ইবনে মাযাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতিস্ সালামে ওয়াস সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৫। 

(৪) মালিক, মুয়াত্তা, বাবু মা জাআ ফিস সালাতে আলান্নাবী(ﷺ), ১:১৬৫, নং-৩৯৫। 

(৫) নাসায়ী, সুনানুল কুবরা, ১:৩৮৪ , নং-১২১৭। 

(৬) সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ সালাত (كتاب الصلاة), হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯, তাশাহ্হুদ পড়ার পর নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ।


❏ হাদিস ৭:


ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه) বর্ণিত,


قالُوايارَسُولَ الله ! وَکَيفَ نُيفَ نُصَلّي عَلَيک ؟ قالَ ;قُولُوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما صَلَّيتَ عَلي إبراهيمَ وَ آلِ أبراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ وَبارِک عَل مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَما بارَکتَ عَلي إبراهيمَ وَ عَلي آلِ إبراهيمَ إبَّکَ حَميدُ مَجيدُ


হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কিরূপে আপনার উপর দূরুদ পাঠ করবো ? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে; হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের প্রতি দূরুদ পাঠিয়েছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত সমুন্নত এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম (عليه السلام) ও আলে ইব্রাহীমের উপর বরকত দান করেছ। প্রকৃতপক্ষে আপনি প্রশংসিত ও সমুন্নত। 

[ইমাম মুত্তাকী আল-হিন্দীঃ কানযূল উম্মাল]


❏ হাদিস ৮:


আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (رحمة الله) বর্ণনা করেন, 


" باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا آدَمُ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنَا الْحَكَمُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، قَالَ لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً، إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ قَالَ ‏ "‏ فَقُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‏"‏‏.‏


একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ (رضي الله عنه) এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এইঃ একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, 


"ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল।"

[সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات), হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৭]


❏ হাদিস ৯:


হযরত আবু মাসউদ আল আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

"রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এলেন ও আমাদের সাথে সাদ ইবনে এবাদার মজলিশে বসলেন। বাশির বিন সাদ (অবু নোমান বিন বাশির) তাঁকে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ! মহান আল্লাহ আপনার উপর দূরুদ পড়ার নিদের্শ দিয়েছেন। আমরা কিরূপে দূরুদ পড়বো? বর্ণনাকারী বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (এতটা) নিরবতা অবলম্বন করলেন যে আমাদের মনে হচ্ছিল যে হায় যদি এমন প্রশ্ন না করতাম। অতঃপর বললেনঃ 


"হে আল্লাহ ! মুহাম্মাদ ও আলে মুহম্মাদের প্রতি দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে পাঠিয়েছ, মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর প্রতি বরকত দান কর, যেমনভাবে বরকত দান করেছ পৃথিবী বাসীদের মধ্যে ইব্রাহীমকে। প্রকৃতপক্ষে তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। সালামও ঠিক এরমই যা জেনেছ। "


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে মাজাহ, সুনান, কিতাবু ইকামাতেস সালাতে ওয়াস্ সুন্নাতে ফিহা, বাবুস সালাতে আলান্নাবী (ﷺ), ১:২৯৩, নং-৯০৬ ।

(২) আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফ, ২:২১৩, নং-৩১০৯। 

(৩) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ৯:১৭৫, নং-৫২৬৭। 

(৪) তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৮:১১৫, নং-৮৫৯৪। 

(৫) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২০৮, নং-১৫৫০। 

(৬) ইমাম বায়হাকী,আস-সুনানুল কোবরা, ২/৫২৯ পৃ, হা/ ৩৯৬৫, তিনি বলেন- “এ হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।" 

(৭) সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত খঃ১ পৃঃ৩০৫, হাদীস ৬৭, অনুঃ নবীজী (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠ। 

(৮) সূনানে দারেমী, খঃ ১ পৃঃ ৩১০, 

(৯) সুনানে আবু দাউদ খঃ ১ পৃঃ ২৫৮ , হাদীস ৯৮০, 

(১০) সুনানে নাসাঈ, অধ্যায় : সাহু, নবীজী(ﷺ)-এর উপর দুরূদ পাঠর নির্দেশ, হাদিস ১২৮৪, মালিক হতে।

(১১) সূনানে তিরমিযী, অধ্যায় : তাফসীর, অনুঃ সূরাহ আল-আহযাব, হাঃ ৩২২০, তিনি বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।

(১২) তাফসীরে সূরা আহযাব খঃ পৃঃ ৯৫ 

(১৩) মুয়াত্তায়ে মালিক খঃ ১, পৃঃ ১৬৫ ও ১৬৬, 

(১৪) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/৩০৪ পৃ. হা/১৭০৭২,

(১৫) কানযুল উম্মাল খঃ ২ পৃঃ ১৮২,

(১৬) তাফসীরে কুরতুবী খঃ ৪, পৃঃ ২৩৩। 

(১৭) তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ৫ পৃঃ২১৬ও২১৭। 

(১৮) তাফসীরে ইবনে কাসির খঃ৩ পৃঃ৫০৮। 

(১৯) তাফসীরে খাযিন খঃ৩ পৃঃ৪৭৭, 

(২০) মুস্তাদরাক আল হাকিম আস সহীহাইন খঃ১, পৃঃ২৬৮, 

(২১) সহিহ ইবনে হিব্বান, হা/১৯৫৯, 

(২২) সুনানে দারা কুতনী, ২/১৬৮ পৃ. হা/১৩৩৯, তিনি বলেন- হাদিসটি হাসান, মুত্তাসিল।

(২৩) ইমাম কাসতালানীঃ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ (৩য় খণ্ড), পৃ ৩৯১।


❏ হাদিস ১০:


ইবরাহীম ইবনু হামযা  (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,


باب الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ، وَالدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي قَالَ ‏ "‏ قُولُوا اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ‏"‏‏.‏ 


একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই যে 'আসসালামু আলাইকা' তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দুরূদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, 


"ইয়া আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর খাছ রহমত বর্ষণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (عليه السلام) এর উপর এবং ইবরাহীম (عليه السلام) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন।"


▪ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ দু’আ (كتاب الدعوات)

হাদিস নম্বরঃ ৫৯১৮।

▪ সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, সূরা আহযাব, খঃ৩, পৃঃ১১৯ এবং 

▪ কিতাবে দাওয়াত খঃ ৪পৃঃ ৭২।

▪ সূনানে নাসাঈ খঃ ৩পৃঃ ৪৯।

▪ সূনানে ইবনে মাযাহ খঃ১ পৃঃ২৯২, হাদীস ৯০২

▪ মুসনাদে আহমাদ খঃ৩ পৃঃ৪৭।

▪ তাফসীরে দূররুল খঃ৫ পৃঃ২১৭।


❏ হাদিস ১১:


ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

অতঃপর বললাম অথবা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার উপর সালাম সম্পর্কে জেনেছি, কিন্তু আপনার উপর দূরুদ কিরূপে (পড়ে)? বললেনঃ 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ পাঠিয়েছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। তুমিতো প্রশংসিত ও উন্নত। এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত প্রদান কর, যেরূপ বরকত প্রদান করেছে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।" 

[তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে সূরা আহযাব খঃ২২ পৃঃ৩১, তাফসীরে দূররুল মনসূর খঃ৫, পৃঃ২১৬]


❏ হাদিস ১২:


যাইদ ইবনে খারিজাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

আমার উপর দূরুদ পাঠবে এবং দোয়া করবে ও বলবেঃ 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপ বরকত দান করেছ ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। [সুনানে নাসাঈ, কিতাবে সাহু খঃ৩ পৃঃ৪৯]


❏ হাদিস ১৩:


আবু তালহা (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত,

 

قُلنا: يارَسول الله!قَد علمنا کَيفَ السَّلام عَلَيک.فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟قالَ : قولوا: أللّهُمَّ صَلِّ عَلي مُحَمَّدٍ وَ علي آلِ مُحَمَّدٍ وَ بارِک عَلي مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ کَماصَلَّيتَ و بارَکتَ عَلي إبراهيم وعلي آلِ ابراهيم إنَّکَ حَميدُ مَجيدُ


বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিরূপে আপনার উপর সালাম বলবো তা জেনেছি। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীনের উপর দূরুদ ও বরকত দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত।"

[কানযুল উম্মাল খঃ২, পৃঃ১৭৬, তাফসীরে দূররুল মানসূর খঃ৫, পৃঃ ২১৬, সুনানে নাসাঈ ও মুসনাদে আহমাদ]


❏ হাদিস ১৪:


বারদেয়ে খাযায়ী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

বলঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ, রহমতও বরকত দান কর যেরূপে এ গুলো ইব্রাহীমকে দান করেছ। নিশ্চযই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। (মুসনাদে আহমাদ ও সুয়ুতির দূররুল মানসূর)


❏ হাদিস ১৫:


মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন যাইদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেনঃ

বলঃ হে আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ প্রেরণ কর যেরূপভাবে ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর উপর দূরুদ পাঠিয়েছ। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরকত দান কর যেরুপে ইব্রাহীমকে পৃথিবীবাসীর মধ্যে বরক দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত সালাম ও সেরূপ যেমন টি জেনেছ। [কানযুল উম্মাল খঃ ১, পৃঃ৪৪২]


❏ হাদিস ১৬:


হযরত ইব্রাহীম (رضي الله عنه) থেকে اِنّ الله وَ ملا کث এ আয়াতের প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছে যে,

قالُوا يا رَسُولَ الله! هذَا السَّلام قَد عَرفناه .فَکَيفَ الصَّلاة عَليکَ ؟ فَقالَ 

তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এ সালামটি জানতাম। আপনার উপর দূরুদ কিরূপ? বললেনঃ বল, 


"হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর দূরুদ পাঠাও, যেমন ভাবে দূরুদ পাঠিয়েছ ইব্রাহিমের উপর। সত্যিই তুমি প্রশংসিত ও সনুন্নত।"

[ইমাম তাবারীঃ তাফসীরে তাবারী, খঃ২, পৃঃ৩২, 

ইমাম সুয়ূতীঃ তাফসীরে দূররে মানসূর খঃ৫, পৃঃ ২১৬]


❏ হাদিস ১৭:


উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ

قالَ اَصحابُ النَّبيّ يا رَسُول الله أُمِرنا أن نکثر الصَّلاةَ عَلَيکَ فِي اللَّيلَةِ الغراء وَ اليَوم الأزهَر وَ أحبّ ما صَلّينا عَلَيکَ کَم تُحِبّ. قالَ

সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে অন্ধকার রাতে ও আলোকিত দিবালোকে আপনার উপর দূরুদ বেশী পড়তে। (তা কতই না সুন্দর যে) আপনার উপর আমাদের দূরুদ এমন হবে যা আপনি পছন্দ করবেন। বললেনঃ বল; 


"হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর দূরুদ পাঠাও, যেরূপ ভাবে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর দূরুদ পাঠিয়েছ এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর রহমত বর্ষণ কর, যেরূপে ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহীমের উপর রহমত করেছো। মুহাম্মাদ (ﷺ) ও আলে মুহাম্মাদ (ﷺ) এর উপর বরক দাত্ত, যেরুপে বরকত দিয়েছো ইব্রাহীম ও আলে ইব্রাহমকে নিশ্ময়ই তুমি প্রশংসিত ও সমুন্নত। আর সালামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তো নিজেই জেনেছ। 

[ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল খঃ ২, পৃঃ ১৮২ ও খঃ ১, পৃঃ ৪৪৩]




আরো কিছু দুরূদ শরীফ :



৬ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা- সায়্যিদিনাওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন আ’দাদা মা-ফী ই’লমিল্লা-হি সলা-তান দা-ইমাতাম্ বিদাওয়ামি মুকিল্লা-হ্। 


ফযীলতঃ হযরত সায়্যিদ আ’লী বিন ইউসুফ মাদানী (رحمة الله) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ৬ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব অর্জন হয়। আর ১০০০ বার

পাঠ কারী দুনিয়া-আখিরাতে সম্মানিত হবে। ইনশা'আল্লাহ্।

(নুসখা সহীহ, দালায়িলুল খয়রাত, পৃষ্ঠা-১০১) 


১ লক্ষ দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা-সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন্ নূরিযা-তিস্সা-রী ফী জামীই’ল আসারি ওয়াল আসমা-ই ওয়াস সিফা-তি ওয়া আ’লা আ-লিহী ওয়া সহাবিহী ওয়াসাল্লিম।

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ১ লক্ষ দুরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব অর্জন হয় এবং ৫০০ বার পাঠ করলে যে কোন নেক উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে ইনশা-আল্লাহ। (আহসানুল কালাম ফী সলাতুস সালাম)


১৪ হাজার দুরূদ শরীফ পাঠের সাওয়াব


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়া বা-রিক আ’লা- সায়্যিদিনা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-আ’লা- আ-লিহী আ'দাদা কামা-লিল্লা-হি ওয়া কামা-ইয়ালীকু বিকামালিহ্।। 

ফযীলতঃ এ দুরূদ শরীফ ১ বার পাঠ করলে ১৪ হাজার দুরূদ শরীফ পড়ার সাওয়াব অর্জন হয়।

(আফযালুস্ সলাত, পৃষ্ঠা-১৮৬)


➠নকশবন্দীয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরিকার শ্রেষ্ঠ দুরূদ


আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন, ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লিম!


➠প্রিয় নবীর নৈকট্য লাভের দুরূদ


আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়াতারদা লাহু। 


➠সমস্ত গুণাহ ক্ষমার দুরূদ


আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা সায়্যিদিনা ওয়া মাওলানা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লিম।


➠রহমতের ৭০টি দরজা খুলে দেয়া হয়


সাল্লাল্লাহু আ'লা মুহাম্মদ। 


➠মৃত্যুর সময় দীদারে মোস্তফা 


আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়াবারিক আ'লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যিল হাবীবীল আলীয়্যিল ক্বাদরিল আ'যিমীল জাহী ওয়া আ'লা আলিহি ওয়াছাহবিহী ওয়াসাল্লিম।


ইমাম বুখারী (رحمة الله)'র ব্যবহৃত দুরূদ


ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর উনি নিজেও নবীজির নাম মােবারকের পর দুরূদে ইব্রাহিম লিখেননি। বরং (ﷺ) দুরূদখানা লিখেছেন। শুধু তাই নয় তিনি বুখারী শরীফে এ দুরূদটি ১০ হাজারেরও অধিক বার লিখেছেন।

[ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) বিরোধীদের আপত্তির জবাব, পৃষ্ঠা ১০৩]


লেখা বা বয়ানের শুরুতে বিভিন্ন দুরূদ পাঠ


"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন, ওয়াল আক্বিবাতু লিল মুত্তাক্বিন, ওয়াচ্ছালাতু ওয়াচ্ছালামু আ'লা ছায়্যিদিল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরছালিন।"


অনুরূপ বক্তব্য বা কোন লেকচার দেওয়ার শুরুতে দুরূদ পড়ার সময় সবাই পাঠ করে, 

نحمده ونصلی علی رسوله الكريم 

(নাহমুদুহু ওয়া নুছাল্লিই আ'লা রাছুলিহিল করিম) 


এ দুরূদটি হাদিসে বর্ণিত দুরূদ নয়, বরং সময় সংক্ষেপের জন্য অনির্দিষ্ট শব্দাবলী ব্যবহার করে দুরূদটি সংক্ষিপ্তভাবে পাঠ করা হয়। 



৯ম অধ্যায়: দুরূদ পাঠের অগণিত ফজিলত


❏ হাদিস ১-৮২:

❏ সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ

❏ রহমত নাজিল হয়

❏ ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা 

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হয়ে শাফায়াত লাভ

❏ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত

➠দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে

➠প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে

➠দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়

➠কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা

❏ উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা 

❏ আশি বছরের গুনাহ্ মাফ 

❏ জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ পাঠ

❏ দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা

❏ অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়

❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ

❏ মিজানের পাল্লা ভারী

❏ আরশের ছায়াতলে অবস্থান

❏ কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ

❏ জান্নাত লাভ

❏ উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব

❏ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ

❏ গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব

❏ ৪০০ জিহাদের সওয়াব (প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের সমান)

❏ ৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন

❏ অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ কানে শব্দ হলে দুরূদ শরীফ পাঠ

❏ আযাব থেকে মুক্তি

❏ নিরাপদে পুলসিরাত পার

❏ চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা

❏ দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী

❏ দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়

❏ কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।






সাক্ষাত, বিদায়, কোন মজলিশে দুরূদ পাঠ



❏ হাদিস ১:


ইবন হিব্বান (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, কিছু লােক যখন কোন এক মজলিসে একত্রিত হয় এবং আল্লাহর যিকির ও নবী করীম (ﷺ)-এর উপর দুরূদ পড়া ছাড়া ঐ মজলিস ত্যাগ করে, তবে রােজ কিয়ামতে সেই মজলিস তাদের জন্য আফসােসের কারণ হবে। এমনকি যদিও সে সব লােক জান্নাতে প্রবেশ করে (কিন্তু তাদের অন্তরে সর্বদা আফসােস অনুভূত হবে)। 


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনু হিব্বান, সহীহ, ২:৩৫২, নং-৫৯১। 

(২) ইবনু আবি আসিম, কিতাবুয যুহুদ, ১:২৭। 

(৩) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:২৬৩, নং-২৩৩১। 

(৪) হাইছামী, মাওয়ারিদুয যামআন, ১:৫৭৭, নং-২৩২২। 

(৫) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:৭৯, । 


❏ হাদিস ২:


তিরমিযি শরীফে হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, "যে সকল লোক কোন মজলিশে বসে, আর তাতে আল্লাহ্ তাআলার যিকির করল না এবং তাঁর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফও পাঠ করল না, কিয়ামতের দিন ঐ মজলিশ তাদের জন্য আফসোসের কারণ হবে (আল্লাহ্ তা'আলা) চাইলে তাদেরকে আযাব দিবেন, নতুবা ক্ষমা করে দিবেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৬৭৪ পৃ. হা/১৮২৬, 

(২) তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ২৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৩৯১, 

(৩) আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ৯/১৪১ পৃ. হা/২৫৪১০, 

(৪) ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৪/৪৭২ পৃ. হা/২৫৫৭, 

(৫) হাইসামী, মাওয়ারেদুয যামান, হা/২৩২১, 

(৬) মিশকাত শরীফঃ বাবে যিকিরিল্লাহ অধ্যায়ঃ হাদিস নং-২১৬৫

(৭) ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৫৪ পৃ. ২/২৫।

(৮) ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৩:


ইমাম ইসমাঈল কাযী  (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 

"কোন গােত্র বৈঠক করে আর খাড়া হয়ে যায়, আর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ না পড়ে। তাহলে এ মজলিশ তাদের আক্ষেপের কারণ হবে। আর যদি তারা জান্নাতে প্রবেশ করে, তাহলে সাওয়াব পাবে না।" 

[নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, হা/১০২৪৩, ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৪ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী]


❏ হাদিস ৪:


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে লোক নিজেদের মজলিশ থেকে আল্লাহ তাআলার যিকির এবং হুযুর (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা ব্যতীত উঠে যায়, তবে সে দুর্গন্ধময় লাশ থেকে উঠল।” (শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৫৭০)



রহমত নাজিল হয়



❏ হাদিস ৫:


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

 مَن صَلّي عَلَيَّ و احِداً صلَّي اللهُ عَلَيهِ عَشراً 

যে কেউ আমার উপর একবার দূরুদ পড়ে মহান আল্লাহ তার উপর ১০ বার দূরূদ পাঠান। 


তথ্যসূত্রঃ

ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন- আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ।

১.সহীহ মুসলিম, ১/৩০৬ পৃ. হা/৪০৮, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সালাত, সালাওয়াত আলান্নবী (আঃ)। 

২.মুসনাদে আহমদ, ১৪/৪৪৪ পৃ. হা/৮৮৫৪, 

৩.সুনানে নাসাঈ, ৩/৫০ পৃ. হা/১২৯৬ এবং 

৪.ইমাম নাসাঈঃ আস-সুনানুল কোবরা, হা/১২২০, 

৫.সুনানে আবি দাউদ, ২/৮৮ পৃ. হা/১৫৩০, 

৬.সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯০৬,

৭.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৫ পৃ. হা/৬৮৪, 

৮.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯১ পৃ. হা/৯২১, 

৯.সুনানে তিরমিযি খঃ২ পৃষ্ঠা২৭০

ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি হাসান, সহীহ।” 

১০.জালাউল আফহাম, ৫১ পৃ:, ইবনুল কাইয়ুম লিখেন, 

- ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ (رحمة الله) তাদের সুনান কিতাবগুলোতে, ইবনে হিব্বান তার আস-সহীহ গ্রন্থে সংকলন করেন।

১১.মুসনাদে তাইয়াসী খন্ড,১ পৃষ্ঠা ২৮৩ হাদীস ২১-২২; 

১২.ইমাম নববীঃ রিয়াদুস সালেহীন পৃষ্ঠা ৩৮১। 

১৩.আসাবাবু আলতানযিল ওয়াহেদী পৃষ্ঠা ২৫০, 

১৪.দূররিল মানসূরঃ সূয়ূতী খন্ড,৫, পৃৃঃ ২১৮, 

১৫.তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড,১৪ পৃষ্ঠা ২৯৪।


❏ হাদিস ৬:


হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে কেউ আমার প্রতি দুরূদ প্রেরণ করে, তার এ দুরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে এবং আমি তাকে দু’আ দিয়ে থাকি। উপরন্তু তার জন্য দশটি নেকী লেখা হয়ে থাকে।


তথ্যসূত্রঃ

(ক.) মেশকাতুল মাসাবীহ,৩য় খন্ড,পৃ:নং-৫৩৪, ফাছলুছ ছানী অনুচ্ছেদ

(খ.) আল-মু’জামুল আওসাত,২য় খন্ড, পৃ:নং-১৭৮

(গ.) আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব,২য় খন্ড,পৃ:নং -৫৬৭-৬৮,যিকর ও দু’আ অধ্যায়,হাদীস নং-১৫,ইফাবা:

(ঘ.) মাজমা’উয যাওয়ায়েদ,১০ম খন্ড, পৃ:নং-২৫২, হাদীস নং-১৭২৯৭,দুরূদ পাঠ। 


❏ হাদিস ৭:


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, 

"...যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দুরূদ সালাম পাঠ করে তার জন্য আল্লাহ তাআলা দশটি রহমত বর্ষণ করেন।’’


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ১/১০২পৃ. কিতাবুস সালাত : হাদীস : ৩৮৪, 

২.খতীব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১৪০ : হাদীস : ৬০৬, 

৩.আবু দাঊদ : আস সুনান : ১/৩৫৯পৃ. কিতাবুত সালাত : হাদীস : ৫২৩,

৪.নাসাঈ : আস-সুনান : কিতাবুল আযান, ২/২৫পৃ. হাদীস : ৬৭৮, 

৫.ইবনে মাজাহ : আস সুনান :  ১/৮২পৃ .হাদিস : ৭১০, 

৬.সুয়ূতী : জামেউস সগীর : ১/৫৫পৃ হাদীস : ৭০২, 

৭.ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : কিতাবুস সালাত, ৫/৫৪৭পৃ হাদীস : ৩৬১৪।


❏ হাদিস ৮:


হযরত আবু তালহা আল আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি হযরত নবী করিম (ﷺ) এর ওপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে , আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করেন, দশটি উচ্চ মর্যাদা দান করেন , আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয় এবং দশটি গুনাহ মার্জনা করা হয় । 


তথ্যসূত্রঃ

১.আহমদ ইবনে হাম্বল, আল মুসনদ, খ . ২৬ , পৃ . ২৭২ , হাদীস : ১৬৩৫২। 

২.ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ হৃদয়ের টানে মদিনার পানে, পৃ ৩৪৯।

৩.তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪, মুসলিম, ২১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪০৮


❏ হাদিস ৯:


সাহল ইবনে সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত "রাসূল (ﷺ) প্রবেশ করলে আবু তালহা (رضي الله عنه) তাঁর নিকট দ্রুত পৌঁছলেম এবং তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন এবং বললেনঃ

আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চেহারা আনন্দিত দেখতে পাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ জিব্রাইল সবেমাত্র আমার নিকট এসেছিলেন ও বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! যে কেউ একবার আপনার উপর দূরুদ পড়ে মহান আল্লাহ তাকে ১০ টি হাসানাহ পুরস্কার দেন, ১০ টি অপকর্ম ও বদ থেকে তাকে মুক্ত করেন এবং তাকে ১০  ধাপ উপরে তুলেন।"


তথ্যসূত্রঃ

▪ কানযুল উম্মাল খন্ড,১, পৃষ্ঠা ৪৩৬ ,৪৪৮,খন্ড,২ পৃষ্ঠা ১৭৯।

▪ এ রেওয়াতেটি সাঈদ ইবনে ওমর আনসারী (رضي الله عنه)ও আবু বারদা বিন নাইয়র (رضي الله عنه)ও আনাস (رضي الله عنه) থেকে ও বর্ণিত হয়েছে।  

▪ কানযুল উম্মল খন্ড,১,পৃষ্ঠা ৪৩৮-৪৩৯ এবং ৪৪৮-৪৪৯ 

▪ সূনানে নাসাঈ খন্ড,৩, পৃষ্ঠা ৫০ কিতাবুস সালাত। অধ্যায় মাহানবীর (ﷺ) উপর দূরুদের ফযিলত । 

▪ ফারায়িদুল সাযাতিন,খঃ১ পৃষ্ঠা ২৪, 

▪ তারিখে বাগদাদ খঃ৮ পৃষ্ঠা ২৮১।


❏ হাদিস ১০:


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) ও 

হযরত বারা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, 

من صلى على واحدة صلى الله  عليه عشر صلوة وحطت عنه عشر خطيات ورفعت له عشر درجات – 

“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার উপর ১০ টি রহমত নাযিল করেন, তার ১০ টি গুনাহ মুছে দেন এবং তার ১০ টি স্তর সমুন্নত করে দেন।"

ইমাম হাকিম (رحمة الله) এ হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন।


তথ্যসূত্রঃ

(১) সুনানে নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাবুল ফাদ্বলে ফিস সালাতে আলান্নাবী, ৪: ৫০, নং: ১২৯৭। 

(২) ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ১:২২৪, নং: ৬৪৩। (৩) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, মুসনাদ, ৩:১০২, নং: ১২০১৮। 

(৪) ইবনু আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ, ২:২৫৩, নং: ৮৭০৩। 

(৫) ইমাম বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান, ২:২১০, নং: ১৫৫৪। 

(৬) ইমাম হাকিম, মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ১: ৭৩৫, নং: ২০১৮। 

(৭) সুনানে নাসাঈ,আস-সুনানুল কোবরা, ২/৭৭ পৃ. হা/১২২১, হা/১০১২২, 

(৮) মেশকাত শরীফ-৮৭ পৃষ্টা, 

(৯) তিরমিজি শরীফ, কানজুল উম্মাল,

(১০) মুফতি আমজাদ আলী আজমীঃ বাহারে শরিয়ত ৩য় খন্ড, সাকলাইন প্রকাশনী।

(১১) যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৪/৩৯৭ পৃ. হা/১৫৬৮, তিনি বলেন-“এ হাদিসটির সনদ সহীহ।”


❏ হাদিস ১১:


ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) ও ইমাম দারেমি (رحمة الله) সংকলন করেন, 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তালহা (رضي الله عنه) তিনি তার পিতা আবু তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা হুযূর (ﷺ) আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন, তখন তাঁর চেহরা মােবারকে খুশীর নিদর্শন পরিলক্ষিত হতেছিল। তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাঈল (عليه السلام) এসে বলেছেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ) ! আপনার প্রভু বলতেছেন যে, এটা কি আপনার সন্তুষ্টির বিধান করবাে না যে, আপনার যে কোন উম্মত আপনার প্রতি ১বার দুরূদ শরীফ পাঠ করলে নিশ্চয়ই আমি তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবাে? এবং আপনার উম্মতের যে কেহ আপনার উপর একবার সালাম প্রেরণ করলে আমি তার উপর ১০ বার শান্তি বর্ষণ করবাে।”


তথ্যসূত্রঃ

(১) নাসাঈ, সুনান, কিতাবুস সাহু, বাবুল ফাদ্বলে ফিস সালাতে আলান্নাবী (ﷺ), ৩: ৫০, নং: ১২৯৫। 

(২) দারিমী, সুনান, ২:৪০৭, নং: ২৭৭৩, ৩/১৮২৫ প, হা/২৮১৫, 

(৩) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৬/২৮১ প, হা/১৬৩৬১ এবং হা/১৬৩৬৩,

(৪) ইবনুল মুবারক, কিতাবুয যুহুদ, ১: ৩৬৪, নং ১০৬৭। 

(৫) ইবনু আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ, ২: ২৫২, নং: ৮৬৯৫। | 

(৬) তাবরানী, মুজামুল কবীর, ৫:১০০, নং: ৪৭২০। 

(৭) নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৭৭ পৃ. .  

(৮) ইমাম বাগভী শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৬ প, হা/৬৮৫, 

(৯) ইবনে কাসীর, জামেউল মাসানিদ ওয়াল সুনান, ১০/৫৯ পূ, হা/১২৬৯০, 

(১০) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৮১ পৃ. হা/৪০০৯, এটি সকলের ঐক্যমত্যে সহীহ। 

(১১) খতিব তিবরিযিঃ মিশকাতুল মাসাবিহ ৮৬।

(১২) ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরীঃ দালায়েলুল বারাকাত।

(১৩) মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃষ্ঠা ১৭৯, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ১২:


হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আ’স (رضي الله عنه) বলেন: 

من صلى على النبى صلى الله عليه وسلم واحدة صلى الله عليه وملا ئكته سبعين صلاة 

“যে (ব্যক্তি) হুযুর (ﷺ) এর উপর এক বার দুরূদ পাঠ করবে, তার উপর আল্লাহ্ তাআলা এবং তাঁর ফিরিশতাগণ তাঁর উপর ৭০ বার রহমত প্রেরণ করবেন।” 

[মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খন্ড, ৬১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬৭৬৬, মিশকাত শরীফ ৮৭]


❏ হাদিস ১৩:


হযরত আনাস ইবন মালিক  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তা'আলা তার উপর ১০ টি রহমত অবতীর্ণ করেন। যে ব্যক্তি আমার উপর ১০ বার দুরূদ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর ১০০টি রহমত অবতীর্ণ করেন। আর যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০বার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির দু'চোখের মাঝখানে (কপালে) নিফাক (মুনাফিকি) এবং আগুন থেকে মুক্তি লিপিবদ্ধ করে দেন এবং কিয়ামত দিবসে তার আবাস (এবং মর্যাদা) শহীদগণের সাথে হবে। 


তথ্যসূত্রঃ

(১) তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৭:১৮৮, নং-৭২৩৫। 

(২) তাবরানী, মুজামুস সাগীর, ২:১২৬, নং-৮৯৯। 

(৩) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:২৩২, নং-২৫৬০। 

(৪) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:১৬৩। 


❏ হাদিস ১৪:


হজরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,  রাসুলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর ১০০ বার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার ওপর ১০০০ বার রহমত নাযিল করবেন।আর যে আমার প্রতি তার প্রেম ও ভালোবাসার কারণে  পড়বে আমি কেয়ামতের দিনে তাকে শাফায়াত করব এবং তার জন্য সাক্ষী হব। [ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)]


❏ হাদিস ১৫:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উপর দুরূদে পাক পড়তে থাকে, ফিরিশতারা তার উপর রহমতরাজি নাযিল করতে থাকে, এখন বান্দার মর্জি সে কম পড়ুক কিংবা বেশি।” (ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯০৭)


❏ হাদিস ১৬:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় জিব্রাইল عَلَيْهِ السَّلَام আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন: “যে (ব্যক্তি) আপনি (ﷺ)  এর উপর দুরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর রহমত নাযিল করেন। আর যে আপনার উপর সালাম প্রেরণ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর নিরাপত্তা নাযিল করেন।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৬৬৪)


❏ হাদিস ১৭:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করো, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (আল কামিলু লিইবনে আছি, ৫ম খন্ড, ৫০৫ পৃষ্ঠা)


❏ হাদিস ১৮:


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (ﷺ)  বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ পড়বে তখন সে যেন পবিত্রতা অর্জন করে। অতঃপর তোমরা কালেমায়ে শাহাদাত পড় এবং তারপর আমার উপর দুরূদ পড়। তখন তার উপর রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হবে।


ফেরেশতাগণ কর্তৃক দুরূদ প্রেরণকারীর জন্য দোয়া প্রার্থনা


❏ হাদিস ১৯: 


এ রেওয়ায়েতটি আবু তালহার (رضي الله عنه)'র ভাষায় এরূপ অতিরিক্তি সহকারে এসেছে,  

ফেরশতা তাকে (দূরুদ পাঠকারীকে) সেটিই বলে যা আপনাকে বলা হয়েছে। বললামঃ হে জিব্রাইল! এ ফেরেশতাটিকে কি বললেন? মহিয়ান, গড়িয়ান আল্লাহ যখন আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে আপনার নেবুওয়াতের ঘোষণা দেয়া সময় পর্যন্ত দুটি ফেরেশতা আপনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। আপনার এমন কোন উম্মত নেই যে দূরুদ পড়েনি আর ফেরেশতাগণ তাকে বলেননিঃ তোমাকেও! মহান আল্লাহ তোমার উপর দূরুদ পাঠিয়েছেন। [কানযুল উম্মাল খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৪০,৪৪৯ এবং খঃ২ পৃষ্ঠা১৮১।]


❏ হাদিস ২০:


“হযরত আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবেঈ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হযরত আমের ইবনে রাবে'ঈ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে এক ভাষণে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি যখন আমার উপর দুরূদ পাঠ করে, ফিরিশতাগণ তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকেন। অতএব আল্লাহর কোন বান্দা এটি বেশি করে করুক অথবা কম করুক।”


তথ্যসূত্রঃ

১.মুসনাদে আহমদ, ২৪/৪৫১ পৃ. হা/১৫৬৮০, এ গ্রন্থের তাহকীককারী শায়খ শুয়াইব আরনাওয়াত বলেন, এটি হাসান। 

২.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৬, তিনিও বলেছেন হাদিসটি হাসান। 

৩.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), ১৭৬ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ২১:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) কিতাবে আমার উপর দুরূদ পাক লিখেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ইস্তিগফার (অর্থাৎ- ক্ষমা প্রার্থনা) করতে থাকবে।” (মুজাম আওসাত, ১ম খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮৩৫)



কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'র নিকটবর্তী হবে ও শাফায়াত নসীব হবে



❏ হাদিস ২২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪)


❏ হাদিস ২৩:


হয়বত রুওয়াইফিঈ ইবনে সাবিত আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে এবং বলবে “হে আল্লাহ! আপনি তাঁকে কিয়ামতের দিন তােমার সর্বাধিক নিকটবর্তী ও মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত কর!" রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হবে।" 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/২০১ পৃ. হা/১৬৯৯১, 

২.ইমাম তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ৩/২১ পৃ. হা/৩২৮৫, 

৩.ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ১/২৬০ পৃ. হা/৩১৫, 

৪.মুসনাদে বাযযার, ৬/২৯৯ পৃ. হা/২৩১৫, 

৫.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৫/২৫ পৃ. হা/৪৪৮০-৮১, 

৬.ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ২/৭৭০ পূ, হা/৩০৯১,

৭.ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৯৬৭. হা/২১৮৮-২১৮৯,

৮.ইমাম হাইসামী (রঃ) এ হাদিসটির সনদ প্রসঙ্গে বলেন, -“এ হাদিসটি ইমাম বাযযার, তাবরানী তার মুজামুল আওসাত ও মুজামুল কাবীরে এ সনদ্বয় হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন।” 

(হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৬৩ পৃ. হা/১৭৩০৪) 

৯.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ২৪:


হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। 

عَنِ  ابْنِ مَسْعُودٍ - رضي الله   عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى اَلنَّاسِ  بِي   يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ,  أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً.    (رواه الترمذي و ابن حبان) 

“কিয়ামতের দিবসে ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে অধিক নিকটবর্তী হবে যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) আমার প্রতি সর্বাধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করেছে।"


তথ্যসূত্রঃ

১.ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২০৭পৃ. হাদিস,৩০৬, ও ৬/৩২৫পৃ. হাদিস.৩১৭৮৭, 

২.সুনানে তিরমিযী, আবওয়াবুল বিতির, বাবু মা জাআ ফি ফাদলিস সালামে আলান্নবী (ﷺ), ২/৩৫৪, নং: ৪৮৪।

৩.সহিহ ইবনে হিব্বান, ২: ১৯২, নং: ৯১১। 

৪.যাহাবী, মিযানুল ই'তিদাল : ৪/২০৯ পৃ: রাভী : ৯৪৪০,

৫.সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১৬০ পৃ: হাদিস : ২৬৮,

৬.সাখাভী : আল কওলুল বদী : ২৪১ পৃ: 

৭.ইবনে হাজার হায়সামী : মাওরিদুয় যামান । ১৫৯৪পৃ.হাদিস : ২৩৮৯,

৮.ইবনে আছির,জামিউল উসূল, ৪/৪০৫পৃ. হাদিস,২৪৭৫, 

৯.নাওয়াবী খলাসাতল আহকাম, ১/৪৩৯পৃ. হাদিস,১৪৩৩, তিনি বলেন সনদটি হাসান।

১০.মিযী,তুহফাতুল আশরাফ বি মা'রিফাতুল আতরাফ, ৭/৬৯পৃ. হাদিস,৯৩৪০,

১১.ইবনুল ইরাকী, তাখরীযে আহাদিসুল ইহইয়াউল উলম, ১/৩৬৬পৃ. 

১২.সুয়ূতি, আদুরল মুনতাসিরাহ, ১/৮৫পৃ. হাদিস,১৪০, 

১৩.শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৫১, হাদিস,৩৮১৯, 

১৪.আযলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৩৯ পৃ: হাদিস : ৮৩৫, 

১৫.সুয়ুতি : আদ দুররুল মুনতাসিরাহ: ৫/২১৮: 

১৬.ইমাম বুখারী : তারীখুল কবীর : ৫/১৭৭ পৃ: হাদিস,৫৫৯, 

১৭.ইমাম আদী : আল কামিল : ৬/২৪২পু, 

১৮.ইমাম দারেকুতনী : আল ইল্লল : ২৪১ পৃ. 

১৯.বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা , ৩/২৪৯পৃ, হাদিস : ৫৭৯১, 

২০.বায়হাকী : শুআবুল ঈমান : ৩/১২৯ পৃ. হাদিস :১৪৬২,

২১.আবু ইয়ালা, আল-মুসনাদ, ৮: ৪২৭, নং: ৫০১১।  তিনিও বলেন, হাদিসটি হাসান।

২২.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৭, তিনিও বলেন, হাদিসটি হাসান। 

২৩.খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/১১৮ পৃ. হাদিস : ৯২৩, 

২৪.মােল্লা আলী কারী : মেরকাত : ১৮-৯ পূ, হাদিস : ৯২৩, 

২৫.সুয়ুতী : জামিউস সগীর : ১/১৬৮ পৃ. হাদিস : ২২৪৯, 

২৬.দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস : ১/৮১ পৃ. হাদিস : ২৫০, 

২৭.হাকিম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : ২/৪২১ পৃ. 

২৮.দিন্নুরী মালেকী, মাযালিসে দিন্নুরী, ১/৪২৯পৃ. হাদিস,১২৮, 

২৯.বগবী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৯৭পৃ. হাদিস,৬৮৬, 

৩০.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৪৮৯পৃ. হাদিস,২১৫১, 

৩১.দরবেশহুত, আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/৭৫পৃ. হাদিস,২৯৫, 

৩২.মিযযী, তাহযীবুল কামাল, ১৫/৪৮২ ক্রমিক,অ৫০৯, 

৩৩.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন।


❏ হাদিস ২৫: 


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে মারফু বর্ণনা করেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

من صلى على حين يصبح عشرا وحين يمس عشر اأد ركته شفاعتي يوم القيامة

"যে ব্যক্তি সকালে আমার প্রতি ১০  বার, আর সন্ধ্যায় ১০ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করে সে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে।” 


তথ্যসূত্রঃ

(১) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ১:২৬১, হা-৯৮৭। 

(২) ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১২০ পৃ. হা/১৭০২২, তিনি বলেন, এ সনদটি শক্তিশালী ও সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।” 

(৩) আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ১/৪৯২ পৃ, হা/২১৬৪।

(৪) ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।

(৫) হযরত আবু বকর ইবনে আসেম রহ. [ওফাত-২৮৭হি] কিতাবুস সালাত আ'লান নাবিয়্যিন এর ৬১ পৃষ্টায়, 


❏ হাদিস ২৬: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

من صلى على اوسأل لى الوسيلة حقت عليه شفاعتى يوم القيامة  অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে অথবা আমাকে উসিলা বানাবে কিয়ামতের দিন তার উপর আমার শাফায়াত আবশ্যক হবে। 

[ইমাম আবু ইসহাক  (رحمة الله) [ওফাত ২৮২ হি] ফযলুস সালাত আ'লান নাবিয়্যি এর ৫০ পৃষ্টা]


❏ হাদিস ২৭: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “যে এটা বলে:

  اَللّٰهُمَّ صَلِّى عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّاَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ المُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ 

তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (মুজাম কবীর, ৫ম খন্ড, ২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৪৮০)

অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হযরত মুহাম্মদ এর উপর রহমতনাযিল কর এবং তাঁকে কিয়ামতের দিন তোমার দরবারে নৈকট্যতম স্থান প্রদান কর।



দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত



❏ হাদিস ২৮: 

দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে


“হযরত আমিরুল মু'মিনিন ফারুকে আযম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দোয়া আসমান ও জমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে, তা উপরে উঠে না যতক্ষণ না হুযূর নবী কারিম (ﷺ) উপর দুরূদ পাঠ করা হয়।” 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ১/৬১৪ পূ, হা/৪৮৬, 

২.ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৮৭ পৃ. হা/৬৭৯, ৫/২০৫ পৃ. হা/১৪০১, 

৩.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/২৯৬-পৃ. হা/৯৩৮, 

৪.মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩৩০, পৃ. হা/২৫৯০, 

৫.ইবনে কাসির, মুসনাদে আমিরুল মু'মিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব, ১/১৭৬, ইমাম ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন- “এ হাদিসটির সনদ শক্তিশালী।"

৬.তুহফাতুল আশরাফ, ৮/২৫ পৃ. হা/১০৪৪৯, 

৭.ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৩৫৫ পৃ. হা/২১২১, 

৮.মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৬৮ পৃ. হা/৩৯৮৪ ও ২/২৬৯ পৃ: হা/৩৯৮৬ এ হাদিসটি তিনি মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন।

৯.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ২৯:

প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে


হযরত আলী  (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, 

"প্রত্যেক দো'আ পর্দাবৃত থাকে; যতক্ষণ না রাসূল (ﷺ) এবং তার আহলে বায়তের উপর দুরূদ পড়া হয়।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) তাবরানী, মুজামুল আওসাত, ১: ২২০, নং: ৭২১। 

(২) বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, ২:২১৬, নং-১৫৭৫। 

(৩) দাইলামী, মুসনাদুল ফিরদাউস, ৩:২৫৫, নং-৪৭৫৪। 

(৪) মুনযিরী, তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২:৩৩০, নং-২৫৮৯। 

(৫) হাইছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০:১৬০। 


▪ ইমাম তাবরানী ও ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এ হাদীসকে উত্তম (যাইয়্যিদ) সনদে বর্ণনা করেন। 

▪ ইমাম হাইছামী (رحمة الله) বলেন, এ হাদীসের বর্ণনাকারীরা ‘সিকাহ’ বা বিশ্বাসযােগ্য।

▪ ইমাম মুনযিরী, বাইহাকী ও তাবরানীর বর্ণিত হাদীসের সকল রাবীকে সিকাহ বলেছেন।


❏ হাদিস ৩০: 

দুরূদের মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়


হযরত ফুদ্বালা বিন আবীদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) মাসজিদে নবুবী শরীফে উপস্থিত ছিলেন। ঐসময় একজন ব্যক্তি এলেন এবং নামায পড়ে এইভাবে দুয়া করতে লাগলেন, ইয়া আল্লাহ আমার উপরে রহম করুন এবং আমাকে মাফ করে দিন। তখন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) বললেন ; অ্যায় নামাযী তুমি প্রার্থনার ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি করে দিয়েছ। তখন ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) আমাকে কিভাবে দুয়া করতে হবে। তখন হুযুর (ﷺ) বললেন, আমার উপরে দুরূদ শরীফ পাঠ করে দুয়া করা উচিৎ। হযরত ফুদ্বালা বিন আবীদ (رضي الله عنه) বলেন, ঐ সময়েই আর একজন ব্যক্তি এলেন এবং হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র ফরমানের মত করলেন। তা দেখে হুযুর (ﷺ) বললেন, দুয়া কবুল হয়ে গেছে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)


❏ হাদিস ৩১:

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি একদা নামায পাঠ করলাম ঐসময়ে হুযুর (ﷺ), হযরত আবুবকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমার (رضي الله عنه) উপস্থিত ছিলেন। আমি নামাযের পরে বসে গেলাম এবং আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা পাঠ করলাম। তারপর আমি নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করলাম এবং দুয়া প্রার্থনা করলাম, তখন নবীয়ে কারীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) বললেন তুমি যা প্রার্থনা করবে সেটাই পাবে অর্থাৎ, তোমার দুয়া কবুল হবে।  (মিশকাত শরীফ)


❏ হাদিস ৩২:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইরশাদ করেন, “নামাযের পর হামদ, সানা ও দুরূদ শরীফ পাঠকারীকে বলা হয়: দোয়া কর, কবুল করা হবে। প্রার্থনা কর, প্রদান করা হবে।” (নাসায়ী, ২২০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১২৮১)


❏ হাদিস ৩৩:

কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) আমার উপর সারা দিনে পঞ্চাশ বার দুরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব (অর্থাৎ- হাত মিলাব)।” 

১.আল কুরবাতু ইলা রব্বিল আলামীন, লি ইবনে বশিকওয়াল, ৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯০, 

২.ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ), 

৩.মাওলানা ইলিয়াস আত্তার কাদেরীঃ ফায়জানে সুন্নাত।


❏ হাদিস ৩৪: 

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, তুমি যখন দোয়া কর তখন হুজুর (ﷺ) এর উপর কিছু দুরূদ ও ওটার সঙ্গে সামিল কর। কেননা দুরূদ তো নিশ্চয়ই কবুল হয় আর আল্লাহর শান এমন নয় যে তিনি দোয়ার কিছু অংশ কবুল করবেন আর বাকী অংশ কবুল করবেন না। (অর্থাৎ, পরম করুণাময় দুরূদের বরকতে করুণাস্বরূপ নেক দোয়া কবুল করেন) (ফাযায়েলে দুরূদ)


উম্মতের জন্য মাগফিরাত ও গুনাহের কাফফারা 



❏ হাদিস ৩৫:


হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

أکثِرُوا الصَّلاةَ عَلَيَّ. فَاءنَّ صَلاتَکُم عَلَيَّ مَغفِرَةُ لِذُنُو بِکُم.

আমার প্রতি অধিক দূরুদ পড়। কারণ, আমার প্রতি তোমাদের দূরুদ তোমাদের গুণাহ মাফের উপায় হবে। [কানযূল উম্মাল খন্ড,১ পৃষ্ঠা ৪৩৬, ইবনে আসাকির, ৬১তম খন্ড, ৩৮১ পৃষ্ঠা]


❏ হাদিস ৩৬:


হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে আরও বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি পরস্পর সাক্ষাতের সময় দু'জন মুসলমান একে অপরের হাত ধরে মুসাফাহ করেন এবং রাসূলে খােদা (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন, তবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে উভয়ের আগের পরের গুনাহ মার্জনা করে দেওয়া হয়।


তথ্যসূত্রঃ

(১) আবুল কাসিম আল-আস্পাহানী (رحمة الله) এ রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন। 

(২) হাফিয ইবনে আলী বিশকওয়াল (رحمة الله) রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন। 

(৩) আস-সাখাবীঃ, আল কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; ৫. ২৪০

(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৮, গাজী প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৩৭:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

“আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা পোষণকারী যখন দু’জন বন্ধু যখন পরস্পর সাক্ষাত করে ও মুসাফাহা করে আর রাসূলে খােদা (ﷺ) এর উপর দুরূদ পাক পাঠ করে, তবে তারা উভয়ে পরস্পর পৃথক হবার পূর্বে আগের ও পরের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।”

[মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৯৫১]


❏ হাদিস ৩৮:


অদৃশ্যের সংবাদ দাতা, নবী করীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি আঁমার প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের কারণে প্রতিটি দিন ও রাতে তিন তিন বার করে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার বদান্যতার দায়িত্বে একথা অপরিহার্য করে নেন যে, তিনি তার ওই দিন ও রাতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।”


[মু’জামুল কবীর, ১৮তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯২৮, আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ফায়জানে সুন্নাত]


❏ হাদিস ৩৯:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন,  “যে  ব্যক্তি     দিনে   ও রাতে আমার   প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি   সহকারে তিনবার করে  দুরূদ শরীফ পাঠ করবে,  আল্লাহ্ তাআলার  উপর (নিজ  বদান্যতায়)   দায়িত্ব যে,  তিনি  তার   ঐ  দিন   ও  ঐ    রাতের  গুনাহ   ক্ষমা করে      দিবেন।

[আল  মুজামুল   কবীর    লিখিত তিবরানী, ১৮তম খন্ড,  ৩৬২  পৃষ্ঠা,  হাদীস-৯২৮]


❏ হাদিস ৪০: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, এ অধিকহারে দুরূদ পাঠের ফলে তোমার সকল চিন্তা-পেরেশানী দূর হয়ে যাবে এবং তোমার গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যাবে।”

[ইমাম সুয়ূতীঃ নবীগণ স্বশরীরে জীবিত]


❏ হাদিস ৪১: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কেউ যদি তাঁর উপর সালাম পাঠ করে, আর তার গুনাহ যতই হোক না কেন, তার প্রতি ওই রহমতটুকু তাঁর (ﷺ) নুরানী হৃদয়ে জাগ্রত হবে, যা তাঁর স্বভাবজাত; ফলে তিনি ওই ব্যক্তির সালামের জবাব নিজেই দেবেন। পূর্বে তার অনেক গুনাহ থাকলেও তার সালামের জবাবে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হবে না।"


❏ হাদিস ৪২: 


হুজুর (ﷺ) দুরূদ শরীফ পাঠ কারীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন এবং তাঁর চোখ মুবারক শীতল হয় (অর্থাৎ,তিনি সন্তুষ্ট হন) [মুসনাদুল ফিরদাউস]


❏ হাদিস ৪৩:  


রাসুলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় আমার উপর বেশী পরিমানে দুরূদ পাক পাঠ করে, তার মৃত্যুর সময় আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত সমস্ত সৃষ্টি কে বলবেন এ বান্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। 

[নুজহাতুল মাজালিস, ফায়জানে সুন্নাত, ইমাম বাগাভী, শারহুস সুন্নাত,সহি ইবনে হিব্বান, বাইহাক্কী শুয়াবুল ইমান,  বুখারীর তারিখুল কাবীর]


❏ হাদিস ৪৪: 


দুরূদ পাঠকারীর তিন দিন পর্যন্ত গোনাহ্ লেখা হয় না 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى عليه صلاة واحدة امر الله حافظيه ان لا – يكتبا عليه – ذنبا ثلاثة ايّام –

অর্থাৎ : রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মাত্র একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার কেরামান কাতেবীন ফেরেশতাদ্বয়কে কে তার উপর তিনদিন পর্যন্ত কোন গুনাহ্ না লেখার নির্দেশ দেন। (জিকরে এলাহি- ৯৮)  


আশি বছরের গুনাহ্ মাফ 


❏ হাদিস ৪৫:


হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে এবং তা কবুল হলে আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বৎসরের গুনাহ মিটিয়ে দেবেন।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম আল্লাউদ্দিন হাসকাফী (رحمة الله), দুররুল মুখতার, ১/২২১ পৃ., গ্রন্থে ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) সূত্রে।

২.ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতােয়ায়ে শামী, ১/৫২ পৃ.,

৩.ইফরাকী, মুখতাসারু তারিখে দামেস্ক, ২/৪১৩ পৃ. 

৪.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله),বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড) ১৭৭ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৪৬:  


হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন,

الصلواة على نور على الصراط فمن صلى على يوم الجمعة ثمانين مرة غفرت له ذنوب ثمانين  سنة –

অর্থাৎ আমার উপরে প্রেরিত দুরূদ পুলসিরাতে নুর হবে। যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন আমার উপরে আশি বার দুরূদ পাঠ করবে। তার আশি বছরের গোনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে। 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম দারে কুতনী ও ইমাম ইবনে শাহীন বর্ণনা করেছেন। 

২.ইমাম নাবহানীঃ জাওয়াহেরুল বিহার ৪র্থ- ১৬৩, 

৩.আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ২য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৮১৪।



জিকির ও কুরআন তেলাওয়াতের পর দুরূদ



❏ হাদিস ৪৭:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) কুরআন পড়ল এবং আপন প্রতিপালকের প্রশংসা করলো, অতঃপর আমার উপর দুরূদে পাক পড়ল, তারপর নিজ প্রতিপালক থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করল, তবে সে মঙ্গলকে সেটার জায়াগা থেকে তালাশ করে নিলো।” 

(শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২০৮৪,

ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ))



দুরূদ পাঠ উম্মতের জন্য পবিত্রতা



❏ হাদিস ৪৮: 


হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

صلو على فان الصلواة على عفارة لكم وزكاة  

অর্থাৎ, তোমরা আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, আমার উপর দুরূদ পাঠ করলে তোমাদের জন্য গুণাহের কাফফারা এবং (অভ্যন্তরীন) পবিত্রতা অর্জন হবে। 

[ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)-১০৩, ইবনে আসাকির, ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানজুল উম্মাল]


❏ হাদিস ৪৯: 


হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, আমার উপর দুরূদ পড়াে, নিশ্চয় আমার উপর তােমাদের দুরূদ তােমাদের শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতার একটি উপকরণ। 


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনু আবি শাইবা, মুসান্নাফ, ২:২৫৩, নং-৮৭০। 

(২) আবু ইয়ালা, মুসনাদ, ১১:২৯৮, নং-৬৪১৪। 

(৩) হারিস, মুসনাদ (যাওয়ায়িদুল হাইছামী) , ২:৯৬২, নং-১০৬২। 


❏ হাদিস ৫০: 


হুজুর (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের জন্য পবিত্রতা ও গোসল রয়েছে, আর ঈমানদারদের অন্তর গুলোর মরিচার পবিত্রতা হচ্ছে আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা। (ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ), ফায়জানে সুন্নাত)



অভাব ও বিপদাপদ দূরীভূত হয়



❏ হাদিস ৫১: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,


وقال صلى عليه وسلم من عسرت عليه حاجة فليكثر با الصلوة على قانها تكشف الهموم والغموم والكروب وتكثر الارزاق وتقضى الحوأئج –


অথাৎ, যে ব্যাক্তি বিপদগ্রস্থ হয়ে কঠিন সমস্যায় উপনীত হবে। সে যেন আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দুরূদ শরীফ পাঠ করতে থাকে। কেননা দুরূদ শরীফ সকল প্রকার দুঃখ বেদনার বিষন্নতা এবং কঠিন বিপদাপদ দূরীভূত করে এবং রিযিক বৃদ্ধি করে। এমনকি সকল প্রকার অভাব অনটন মিটিয়ে দেয়। 

[ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সোলাইমান যাযুলী (رحمة الله) দালায়েলুল খাইরাত]


❏ হাদিস ৫২: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যহ ৫০০ বার আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে সে কখনও অভাবী হবে না।

[তোহফাতুল আখিয়ার, ফায়জানে সুন্নাত]



মিজানের পাল্লা ভারী



❏ হাদিস ৫৩: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمربرحل الي النار فاقول ردوه الى الميزان فاضع له شيئا كالا نملة معى فى ميزان انه وهو الصلاة على فترجع ميزانه وينادى سعدفلان –

অথার্ৎ : কিয়ামত দিবসে এক ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন আমি বলব, তাকে মিজানের দিকে নিয়ে যাও। আমি মিজানের মধ্যে তার জন্য আমার আঙ্গুলের ন্যায় একটি জিনিস রাখব। তা হল আমার উপর পঠিত তার দুরূদ শরীফ। অত:পর তার মিজানটি ভারি হয়ে যাবে এবং তার সম্পর্কে অদৃশ্য হতে বলা হবে, অমুক ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে। [অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুরূদ শরীফ পাঠ করেছে সে ব্যাক্তিটি সফলকাম হয়েছে] (জিকরে এলাহি- ১০০)। 


আরশের ছায়াতলে অবস্থান


❏ হাদিস ৫৪:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। তিন ব্যক্তি (ঐ দিন) আল্লাহ  তা‘আলার আরশের ছায়ায় থাকবে। আরজ করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) তারা কারা হবে? ইরশাদ করলেন: 

(১) ঐ ব্যক্তি যে আমার উম্মতের পেরেশানী দূর করে, 

(২) আমার সুন্নাতকে জীবিতকারী, 

(৩) আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠকারী।” 


তথ্যসূত্রঃ

১. আল বাদূরুস সাফিরাতু লিস্ সূয়ুতী, ১৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬৬, 

২. ইমাম সুয়ূতীঃ আরশের ছায়ায় যাদের কায়া, পৃষ্ঠা ৪২,

৩. শরহুয যুরকানী আলাল মুয়াত্তা, কিতাবুস শে'র, খন্ড ৪. পৃষ্ঠা, ৪৬৯, হাদিস ১:৮৪১।


কিয়ামতের দিন মুক্তি লাভ


❏ হাদিস ৫৫:

 

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে আমার ওপর অত্যাধিক দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে কিয়ামতের ভয়-ভীতি ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকবে। 

[আল্লামা ইসপাহানি,আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস নং: ১৬৮৭]


❏ হাদিস ৫৬:


(৩২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে তোমরা তোমাদের মজলিশ সমূহকে সজ্জিত করো, কেননা তোমাদের দুরূদে পাক পাঠ করা কিয়ামতের দিন তোমাদের জন্য নূর হবে।” (ফিরদৌসুল আখবার, ১ম খন্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩১৪৯)


❏ হাদিস ৫৭:


(২১) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  ইরশাদ করেন, “হে লোকেরা! নিশ্চয় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং হিসাব নিকাশ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে আমার উপর দুনিয়াতে অধিক হারে দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকে।” (আল ফিরদৌস বিমাসুরিল খাত্তাব, ৫ম খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮১৭৫)


❏ হাদিস ৫৮:


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

যে ব্যক্তি এটা চাই যে কেয়ামতের দিন তাকে সওয়াবের পাল্লা ভরপুর করে দেওয়া হোক, তার উচিত সে যেন আমার উপর বেশী পরিমানে দুরূদ শরীফ পাঠ করে। 

(সা আদাতুদ্দা রাঈন, ফায়জানে সুন্নাত)


❏ হাদিস ৫৯: 


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

ঐ ব্যক্তি কেয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভয়ানক অবস্তাদি থেকে নাজাত প্রাপ্ত হবে, যে দুনিয়াই আমার উপর সর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ কারী হবে। (ফায়জানে সুন্নাত)


❏ হাদিস ৬০:


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে হাওযে কাওসারের উপর আমি এমন এমন দল পাবো যাদের কে আমি বেশী পরিমানে দুরূদ শরীফ পাঠ করার কারনে চিনব। (কাশফুল গুম্মাহ)



দুরূদ পাঠে জান্নাত লাভ



❏ হাদিস ৬১:


হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুজুর (ﷺ)  বলেছেন , যে ব্যক্তি আমার উপর একহাজার বার দুরূদ পাক পাঠ করে, সে যতক্ষণ না নিজের স্থান জান্নাতের মধ্যে দেখে নেবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃতুবরণ করবে না। 

[আত্তারগীব ফি ফাযায়িলিল আমাল লি ইবনে শাহিন, ১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৯, সা’দাতুদ দারাইন, আল - মাকতাবাতুত তাওফিকিয়্যাহ,তুরস্ক, পৃ-১১৫]


❏ হাদিস ৬২:

 

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর দিনে এক হাজার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, সে তাঁর জান্নাতের ঠিকানা না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করবে না। [আল্লামা মুনযিরি, আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস নং: ২৫৭৯]। 


❏ হাদিস ৬৩:

 

হযরত তুফাইল ইবন উবাই (رضي الله عنه) তাঁর পিতা উবাই ইবন কা’ব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 

عن ابى بن كعب قال قلت بارسول الله انى اكثر الصلوة عليك فكم اجعل لك من صوتى فقال ماشئت قلت الربع قال ماشئت فان زدت فهو خير لك قلت النصف قال ماشئت فان زدت فهو خيرلك قلت الثلثين قال ماشئت قان زدت فهوخير لك قلت اجعل لك صلوتى كلها قال اذا يكفر فمك ويكفر لك ذنبك–

“রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাতের এক-চতুর্থাংশ অতিবাহিত হলে উঠে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, হে লােক সকল! তােমরা আল্লাহ যিকর কর, তােমরা আল্লাহর যিকর কর। প্রকম্পিতকারী এসে গিয়েছে যার পিছনে আসবে পশ্চাদগামী। মৃত্যু তার তিক্ততা নিয়ে এসে গিয়েছে, মৃত্যু তার তিক্ততা নিয়ে এসে গিয়েছে। আমি (উবাই) বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি তাে দু'আর মধ্যে অনেক সময় কাটাই, অতএব আপনার উপর দুরূদের জন্য কতটুকু সময় দেবাে? হুযুর (ﷺ) বললেন, তােমার ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, তােমার ইচ্ছা; আরাে অধিক করলে তােমার জন্য বেশি মঙ্গলময় হবে। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তােমার ইচ্ছা; আরাে বেশি করলে তােমার জন্য ভাল হবে। উবাই (رضي الله عنه) বলেন, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তােমার ইচ্ছা; আরাে বেশি করলে তােমার জন্য ভাল হবে। উবাই (رضي الله عنه) তখন বললেন, আমার দু'আর সবটুকু সময় আপনার উপর দুরূদ পড়ার জন্য দিয়ে দিবাে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে তােমার সব দুশ্চিন্তা দূরীভূত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট হবে এবং তােমার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/২১৮ পৃ. হা/২৪৫৭, 

তিনি বলেন-“এ হাদিসটি হাসান সহিহ।

২.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ছাপা-৮৬), 

৩.ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩২৭ পৃ. হা/২৫৭৭, তিনি বলেন,-“ইমাম আহমদ, তিরমিযি, হাকেম  এটি সহিহ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।“ তিনি আরও বলেন, এ হাদিসটির সনদ অত্যন্ত শক্তিশালী।” 

৪.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৫৭পৃ. হা/৩৫৭৮, এবং হা/৩৮৯৪, ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রঃ) বলেন-“এ হাদিসটির সনদ সহীহ।” 

৫.ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩/৮৫ পৃ. হা/১৪১৮ এবং হা/১৪৭৭, 

৬.ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন। 

৭.ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ৩/৩৯০ পৃ. হা/১১৮৮, তিনি বলেন-“এ হাদিসটির সনদ হাসান।” 

৮.ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৫ পৃ. হা/৮৪৬৭, 

৯.ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/২৭৬ পৃ. হা/৩৯৯৭, 

১০.মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله), বাহারে শরিয়ত (তৃতীয় খণ্ড), পৃ ১৮১, সাকলাইন প্রকাশনী।  

১১.মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭/১২৯পৃ. 

১২.ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১১/১৬৮পৃ. 

১৩.ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ১১/৫পৃ. হা/৮৪৬৭।


❏ হাদিস ৬৪:


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

ان الجنة تشتاق الى خمسة نفرتالى القرأن وحافظ للسل ن ومطعم الجيعان ومكس العريات ومن صلى على حبيب الرحمن 

অর্থাৎ, পাঁচ প্রকার মানুষের প্রতি স্বয়ং বেহেশতই আকৃষ্ট হয়ে আছে : 

১। কোরআন শরীফ তেলাওয়াকারী 

২। নিজের জিহ্বাকে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রক্ষাকারী। 

৩। ক্ষুধার্থকে অন্নদানকারী।

৪। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান এবং 

৫। আল্লাহর প্রিয় হাবিবের প্রতি দুরূদ পাঠকারী। সুবাহানাল্লাহ দুরূদ পাঠকারীর কত বড় মর্যাদা। 

(জিকরে এলাহি- ৯৮)  


❏ হাদিস ৬৫:  

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, জান্নাতে সব থেকে বেশী হুর ওই ব্যক্তিরই হবে, যে সব থেকে বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ কারী হবে।


উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ সাওয়াব



❏ হাদিস ৬৬:

 

মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দুরূদে পাক পাঠ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য এক ‘ক্বীরাত’পরিমাণ সাওয়াব লিখে দেন। ক্বীরাত হচ্ছে: উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ। 

[মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক, ১ম খন্ড,৩৯ পৃষ্ঠা,হাদীস- ১৫৩, ইমাম সাখাবীঃ আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী (ﷺ)]



মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ



❏ হাদিস ৬৭: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে (ব্যক্তি) একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলার মহান দরবারে পেশ হবার সময় আল্লাহ্ তাআলা তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, তবে তার উচিত আমার উপর বেশি পরিমাণে দুরূদ শরীফ পাঠ করা।” 

[ফিরদৌসুল আখবার, বিমাসুরিল খাত্তাব, ২য় খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬০৮৩, কাশফুল গুম্মাহ]


গোলাম আযাদ, হজ্জ্ব ও জিহাদের সমপরিমাণ সাওয়াব


❏ হাদিস ৬৮: 


হযরত আলী মুরতজা (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, 

"নবীজী (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠের ফলে গুনাহ এমনিভাবে মুছে যায়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। গােলাম আযাদ করা থেকে নবীজী (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ প্রেরণ করা উত্তম। আর আল্লাহর পথে তরবারি উত্তোলন করা থেকে তাঁর ভালােবাসা উত্তম।" 


তথ্যসূত্রঃ

(১) আবুল কাসিম আল-আস্পাহানী (رحمة الله) এ রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন। 

(২) হাফিয আবু নুআইম (رحمة الله) তার হিলয়াতুল আউলিয়া নামক কিতাবে এ রিওয়াতটি বর্ণনা করেছেন।

(৩) আস-সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পু, ১২৬ 

৩৫৭ 

(৪) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।


❏ হাদিস ৬৯: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

যে আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে সে ১০ জন গোলাম আজাদ ও ২০টি ইসলামী যুদ্ধে অংশগ্রহণের মতো সওয়াব দেয়া হয়।

[ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ হৃদয়ের টানে মদিনার পানে, ৩৪৯, জযবুল কুলুব ও ফায়জানে সুন্নাত]


❏ হাদিস ৭০: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ফরয হজ্ব আদায় করো, নিশ্চয় এটির সাওয়াব বিশটি যুদ্ধে (গাযওয়া) অংশগ্রহণ করার চেয়েও বেশি, আর আমার উপর এক বার দুরূদ শরীফ পাঠ করা, এটার সমপরিমাণ সাওয়াব।” [ফিরদৌসুল আখবার, বিমাসুরিল খাত্তাব, ১ম খন্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৪৮৪]



❏ হাদিস ৭১: ৪০০ জিহাদের সওয়াব আর প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের বরাবর


হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম নির্দেশিত হজ্জ করার পর একটি ইসলামী জিহাদ করে, তবে তা ৪০০ হজ্জের বরাবর হবে। তার এ বাণী শ্রবণের পর যাদের হজ্জ করা এবং জিহাদ করার সামর্থ ছিল না তাদের অন্তর ভেঙে পরে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্পর্কে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট অহী প্রেরণ করেন, যে ব্যক্তি আপনার ওপর দুরূদ পাঠ করবে, তিনি ৪০০ জিহাদের সওয়াব পাবেন। আর প্রত্যেক জিহাদ ৪০০ হজ্জের বরাবর হবে।' 


তথ্যসূত্রঃ

(১) আবু হাফস ইবনে আবদুল মজীদ আল মাইয়ানিশী (رحمة الله), আল-মজালিসুল মক্কীয়া নামক কিতাবে রিওয়ায়তটি বর্ণনা করেছেন। 

(২) আস-সাখাভী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃষ্ঠা ১৩২।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৮, গাজী প্রকাশনী।

(৪) জযবুল কুলুব উর্দূ- ২৬৭ পৃ:।


৭০জন ফেরেশতা সাওয়াব লিখতে থাকেন


❏ হাদিস ৭২:


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি এটা বলে:

 جَزَ اللهُ عَنّا مُحَمَّدًا مَّا هُوَ اَهْلُه 

৭০ জন ফিরিশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত তার জন্য নেকী লিখতে থাকে।” 

[ইমাম তাবারানীঃ আল-মুজাম আওসাত, ১ম খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৩৫]


অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা আমাদের পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদকে এমন প্রতিদান প্রদান করুন, তিনি যেমন এর উপযুক্ত।


অযু করার সময় দুরূদ শরীফ পড়া। 


❏ হাদিস ৭৩: 


ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) হযরত সাহল বিন সাদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ঐ ব্যক্তির অযু পূর্ণাঙ্গ হলাে না, যে নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পড়েনা।”


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম সুয়ুতি, জামেউস সগীর, ১ম খণ্ড, হা/১৪৪৬০, 

২.আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ২ . হা/২৬২৩৯, 

৩.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ৬/১২১ পৃ. হা/৫৬৯৮,

৪.ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৪৫৬ পৃ.।  

৫.ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।


কানে শব্দ হবার সময় দুরূদ শরীফ পাঠ


❏ হাদিস ৭৪: 


হযরত ইবনে আবি রাফের বর্ণনা, যা ইমাম ইবনুস সুন্নি (رحمة الله) মারফু বর্ণনা করেন। নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন,

“কারাে কান থেকে শব্দ হতে শুরু করে, তখন আমাকে স্মরণ করাে আর আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পড়াে। আর বলবে, আল্লাহ তাআলা তাকে স্মরণ করুণ। যে আমাকে কল্যাণের সাথে স্মরণ করেছে।” 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১ম খন্ড, হা/১৫৯৯,

২.বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ২/৮৪, হা/৪৯০,

৩.ইমাম তাবরানী, মু'জামুল আওসাত, ৯/৯২পৃ, হা/৯২২২,

৪.ইমাম তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১/৩২১ পৃ. হা/৯৫৮, 

৫.ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, হা/৩৮৮৪, 

৬.আল্লামা মুত্তাকি হিন্দি, কানযুল উম্মাল, ১৫/৪১৭ পৃ. হা/৪১৬৪৪, 

৭.হায়ছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৩৮ পূ, হা/১৭১৪২, 

৮.ইমাম হাইসামী বলেন,-“এ হাদিসটির সনদ হাসান। 

৯.ইমাম ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ, হা/১২৪৩৩। 

১০.ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৫ পৃ, সাকলাইন প্রকাশনী।



 আযাব থেকে মুক্তি  



❏ হাদিস ৭৫: 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

ان الله تعالى ينظر الى من يصلى على ومن نظر الله تعالى اليه لايعد به ابدا-

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা দয়ার দৃষ্টি দান করেন। ঐ ব্যক্তির উপর যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে। আর যার প্রতি আল্লাহর দয়ার দৃষ্টি পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কখনো আযাব দিবেন না। [আফযালুস সালাত পৃষ্টা: ৪১] 


নিরাপদে পুলসিরাত পার


❏ হাদিস ৭৬: 


হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং এরশাদ করলেন, আমি গতরাতে একটি আশ্চর্য জনক স্বপ্ন দেখেছি। আমার এক উম্মত পুলসিরাত দিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পার হওয়ার চেষ্টা করছে। এসময় দুরূদ শরীফ (যা সে আমার উপর পাঠ করত) এসে তার হাত ধরে তাকে সোজা করে নিরাপদে পুলসিরাত পার করে দিল। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯১ পৃ:) 


আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন যার নাম আযরাঈল। কিয়ামতের দিন সেই ফেরেশতা স্বীয় পালক পুলসিরাতে বিছিয়ে আহ্বান করবেন। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর দুরূদ প্রেরণ করছে সে যেন আমার পালকে পা রেখে নিরাপদে পুলসিরাত পার হয়ে যায়। (হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত- ৯৪, বার মাসের আমল ও ফযিলত- ১৮১-৮২ পৃ:) 


❏ হাদিস ৭৭: 


হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ কারীদের জন্য পুলসিরাতে নূর থাকবে- لم يكن من اهل النار সে দোযখবাসী হবে না। 

[ইমাম যাযুলী  (رحمة الله): দালায়েলুল খাইরাত]



চেহারার উজ্জ্বলতা ও দুরূদ পাঠের ঘটনা 



❏ হাদিস ৭৮: 


হযরত সুফিয়ান  (رحمة الله), হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একদিন বাইতুল্লাহ তাওয়াফে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তাওয়াফ অবস্থায় প্রতি কদমে দুরূদ শরীফ পাঠ করছে। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তুমি তাওয়াফ অবস্থায় তাসবীহ তাহলীল ও দোয়ায়ে মাছুরা বাদ দিয়ে শুধু দুরূদ শরীফ কেন পড়ছ? এ ব্যপারে কি তোমার কাছে কোন দলিল প্রমাণ আছে। সে বলল আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আগে বলুন আপনি কে? আমি বললাম, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস। লোকটি বলল, যদি আপনি বিশেষ কোন ব্যক্তি না হতেন তাহলে আমি আমার অবস্থার কথা বলতাম না বরং গোপনে রাখতাম। অতপর সে বলল, একদিন আমি আমার পিতাকে নিয়ে হজ্জ্বে গমন করি। পথিমধ্যে এক জায়গায় অবস্থান করলাম। সেখানে আমার পিতা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করলাম তাঁর খেদমত করতে ও তাকে বাঁচাতে। কিন্তু তাকদীর তদবীরের উপর অগ্রগামী হল। তিনি ইন্তেকাল করলেন আর তার চেহারা কালো বর্ণের হয়ে গেল। অন্য এক বর্ণনায় গাধার ন্যায় হয়ে গেল। আমি পিতার চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে দিলাম এবং এই চিন্তায় আমার তন্দ্রা এসে গেল। স্বপ্নে দেখলাম অত্যান্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট শুভ্র পোশাক পরিধান কৃত এবং সুগন্ধিযুক্ত এক ব্যক্তি ধীরগতিতে আমার পিতার নিকট আগমন করলেন। তিনি আমার পিতার চেহারা থেকে চাদর তুলে স্বীয় হাত বাড়িয়ে পিতার চেহারায় মালিশ করেন। ফলে আমার পিতার চেহারা উজ্জল ও শুভ্র হয়ে গেল। এরপর তিনি চলে যেতে লাগলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে তার আচল ধরে বললাম, জনাব! হে আল্লাহর মকবুল বান্দাহ! আপনি কে? এই অজানা অচেনা জনপদে আমার পিতার সাহায্য করার জন্য আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন তুমি কি আমাকে চিনতে পারনি? আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। যার উপর কোরআন নাযিল হয়েছিল। নি:সন্দেহে তোমার পিতা সারা জীবন নিজের উপর (গোনাহের দ্বারা) যুলুম করেছে এবং আল্লাহর নাফরমানীতে রত ছিল তবে আমার উপর বেশী করে দুরূদ পাঠ করত। মৃত্যুর পর যখন আযাবে লিপ্ত হল তখন আমার নিকট ফরিয়াদ করেছে। তাই আমি সাহায্যের জন্য এসেছি। যে আমার উপর দুরূদ পাঠ করে আমি অবশ্যই তাকে সাহায্য করি। অত:পর আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। আমি চোখ খোলে দেখি আমার পিতার চেহারা চাদের চেয়ে বেশী আলোকিত ও নূরানী হয়ে গেল। 

[আফযালুস সালাত- ৫৬ পৃ:, ইমাম সাফুরী রহঃ নুজহাতুল মাজলিস-৮৯ পৃ: জযবুল কুলুব ফার্সী-২৫৩, বার মাসের আমল ও ফযীলত ১৭২-৭৩ পৃ:]


দুরূদ শরীফ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ বাণী


❏ হাদিস ৭৯: 


হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) বলেন: “নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করা গুনাহ সমূহকে এত দ্রুত মিটিয়ে দেয় যে, পানিও আগুণকে তত দ্রুত নিভাতে পারে না, আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করা গর্দান সমূহ (অর্থাৎ- গোলামদেরকে) আযাদ করার চেয়েও উত্তম।” (তারিখে বাগদাদ, ৭ম খন্ড, ১৭২ পৃষ্ঠা)


❏ হাদিস ৮০: 


হযরত সায়্যিদুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: “তোমরা তোমাদের মজলিশ সমূকে আল্লাহর নবী, রাসুলে আরবী (ﷺ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে সজ্জিত করো।” (তারিখে বাগদাদ, ৭ম খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা)


দুরূদ পাঠের মাধ্যমে বংশধর কল্যাণপ্রাপ্ত হয়


❏ হাদিস ৮১:


হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, "রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ পাঠককে, তাঁর সন্তানকে এবং সন্তানের সন্তানকে উপকৃত করে।"


তথ্যসূত্রঃ

(১) ইবনে বিশকওয়াল (رحمة الله) হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন।

(২) আবু বকর আশ-শাফিয়ী (رحمة الله), আল-ফাওয়ায়িদ, পৃ. ৫১৯, হাদীস: ৬৪০ 

(৩) জযবুল কুলুবে বর্ণিত হয়েছে।

(৪) ইমাম সাখাভী (رحمة الله),  আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১৩৬; 

(৫) কিতাবুর রিদ্দাদ বর্ণিত হয়েছে।

(৬) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬০, গাজী প্রকাশনী।



কোন কিছু ভুলে গেলে দুরূদ পাঠ।


❏ হাদিস ৮২:  


হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

“তােমরা যখন কোন বিষয় ভুলে যাও, তখন আমার উপর দুরূদ শরীফ পড়াে ইনশাআল্লাহ স্মরণ হয়ে যাবে।” 

[ইমাম কাস্তালানীঃ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহঃ ৩য় খন্ড, ৪২৬ পৃ]



১০ম অধ্যায়ঃ 

❏ ঘটনা ১-১৮: ইমাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের বর্ণনায় দুরূদের ফজিলত।



❏ ঘটনা ১:


তাবেয়ী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা কাবুল আহবার رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আল্লাহ্ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ্ عَلَيْهِ السَّلَام এর নিকট এ মর্মে ওহী পাঠালেন: হে মুসা عَلَيْهِ السَّلَام! তুমি কি কিয়ামতের দিনের পিপাসা থেকে রক্ষা পেতে চাও? আরয করলেন: হে আমার প্রতিপালক! হ্যাঁ! আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন:   فَاَكْثِرِ الصَّلَاةَ عَلٰى مُحَمَّدٍ অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা  (ﷺ) এর উপর বেশি পরিমানে দরূদ শরীফ পড়ো। 

▶[ইবনে আসাকির, ৬১তম খন্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত]


❏ ঘটনা ২:


ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

وقال الملا علي القاري في الوسائل : أنه لم يقل أحد أن قبورهم خاليه عن أجسادهم ، وأرواحهم غير المتعلقة بأجسامهم ؛ لءلا يسمعوا سلام من يسلم عليهم ، وكذا ورد أن الأنبياء يلبون ويحجون ، فنبينا - صلى الله عليه وسلم - أولى بهذه الكرامات،

মােল্লা আলী কারী নিজ কিতাব ‘জমউল মাসায়েল ফি শরহিশ শামায়েল’ এ বললেন, নিঃসন্দেহে কেউ একথা বলেন নি যে, তাঁর কবর তার দেহ থেকে খালি এবং তাঁর রূহের সাথে তার দেহের কোন সম্পর্ক নেই এবং যে কেউ তার উপর সালাম পেশ করে উহা তিনি শুনেন না। তখন এরূপে আম্বিয়াদের প্রসঙ্গে এসেছে যে, নিঃসন্দেহে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম তালবিয়া বলেন এবং হজ্ব করেন এবং আমাদের হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর জন্য এই কারামতসমূহ উত্তম পন্থায় প্রমাণিত আছে।

▶[মোল্লা আলী কারী : জমউল ওসায়েল, ২/৩০০]


❏ ঘটনা ৩:


ইমাম শাযলি (رحمة الله) বলেন,

“রাসুলে করিম (ﷺ)'র সাথে স্বপ্নে আমার সাক্ষাত হলে আমি  জিজ্ঞেস করি, ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ), ‘যে ব্যক্তি আপনার প্রতি একবার দুরূদ শরিফ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওপর দশটি রহমত নাযিল করেন’-  এ ফযিলত কি একাগ্রচিত্তে দুরূদ পাঠকারীর জন্যে প্রযোজ্য? রাসুলে করিম ইরশাদ করেন, “না”, বরং অন্যমনষ্ক প্রত্যেক দুরূদ পাঠকারীর জন্যে প্রযোজ্য। আল্লাহ তায়ালা ওই পাঠকারীর জন্যে পাহাড়সম ফেরেশতাদেরকে নিয়োজিত করে দেন। যাঁরা তাঁর জন্যে প্রার্থনা করেন এবং ক্ষমা চান। আর একাগ্রচিত্তে দরূদ পাঠকারীর প্রতিদান কী হবে, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।”

▶[ইমাম শা’রানি,আত তাবাকাতুল কুবরা,পৃ.২৯৬]


❏ ঘটনা ৪:


আল্লামা মাজদুদ্দিন ফিরোজাবাদী (رحمة الله) বলেছেন, যখন কোনো মজলিশে বস আর বল বিসমিল্লা-হির-রাহমা-নির ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মদ তো আল্লাহ তোমার উপরে একজন ফারিশতা  নিয়োগ করেন যে তোমাকে গীবত থেকে বাঁচাবে । আর যদি উঠবার সময় তা বল তবে ফ্যারিস্তা তোমার গীবত করা থেকে লোককে বিরত রাখবে।

▶[গুলদাস্তায়ে দুরূদ ও সালাম, কওলুল বদী]


❏ ঘটনা ৫:

আসমানের মধ্যে ফেরেশতাদের ইমামতি 


ইবনে আসাকের (رحمة الله) হাফস ইবনে আবদুল্লাহ (رحمة الله) থেকে রিওয়ায়ত করেছেন যে, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু যুবআ (رحمة الله) কে তাঁর মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখি যে, তিনি আসমানের মধ্যে ফেরেশতাদের ইমামতি করছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এত উচ্চ মর্যাদা কিভাবে লাভ করলেন? তিনি উত্তর দিলেন আমি স্বহস্তে হাজার হাজার হাদীস সংকলন করেছি এবং হাদীস লেখার সময় আমি  عَنِ النَّبِيّة ﷺ লিপিবদ্ধ করতাম, আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,

 صَلَّى عَلَى صَلاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشراه

“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। 

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম ইবনে আসাকের (رحمة الله) তাঁর "তারিখে ইবনে আসাকের", খন্ড ৩৮, পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯। 

(২) ইমাম জালালউদ্দীন সুয়ুতী (رحمة الله) তাঁর "জমউল জওয়ামিউ" পৃষ্ঠা ৮ কিতাবে।

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬২, গাজী প্রকাশনী।


❏ ঘটনা ৬:

তিন হাজার দিনার কর্জ পরিশোধ


"একজন নেককার ব্যক্তির তিন হাজার দিনার কর্জ হয়। মহাজন লােকটির বিরুদ্ধে কাযীর দরবারে নালিশ দায়ের করে। কাযী তাঁকে কর্জ আদায়ের জন্য এক মাসের সময় দেন। লােকটি কাযীর দরবার থেকে ফিরে এসে মসজিদের মিহরাবের নিকট গিয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দেয় এবং রাসূলে করীম (ﷺ) এর ওপর দরূদ পাঠে নিমগ্ন হয়ে যান। সাতাশ দিনের রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, একজন লােক তাকে বলছেন, আল্লাহ তা'আলা তােমার কর্জ আদায় করে দেবেন। তুমি আলী ইবনে ঈসা উযিরের নিকট যাও এবং তাঁকে বল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিচ্ছেন, আপনি আমার তিন হাজার দিনার কর্জ পরিশােধ করে দিন। লােকটি বলেন, যখন আমি জাগ্রত হই, তখন আমার মন প্রফুল্ল ছিল কিন্তু যদি উযির মহােদয় জিজ্ঞেস করেন তােমার একথার সত্যতার প্রমাণ কি? তবে আমি তাকে কি বলবাে? একথা ভেবে আমি তার কাছে গেলাম না। পরবর্তী রাতে আমি পুনরায় হুযূর আকরম (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি উযিরের কাছে যাওনি কেন? আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি এ আশঙ্কায় উযিরের কাছে যায়নি যে, যদি তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, একথায় যে তুমি সত্যবাদী তার প্রমাণ কি? তবে আমি কি বলবাে? হুযূর আকরম (ﷺ) আমার মনােভব পছন্দ করলেন এবং ইরশাদ করলেন, যদি আলী ইবনে ঈসা এ ব্যাপারে তােমার সত্যবাদিতার কোন প্রমাণ তলব করে, তবে তুমি তাঁকে বল যে, একথার সত্যতার প্রমাণ এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই বলেছেন যে, তুমি ফজরের নামাযের পর লােকজনের কথা বার্তায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে পাঁচ হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করে আমার দরবারে পেশ করে থাকো আর তােমার এই আমলের কথা আল্লাহ তাআলা এবং কিরামন-কাতিবীন ব্যতীত আর কেউ অবগত নয়। এ স্বপ্ন দেখার পর আমি সােজা উযিরের নিকট গমন করি এবং স্বপ্নের ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করি। আর রাসূলুল্লাহ ও নির্দেশিত সত্যতার প্রমাণ তাঁর কাছে পেশ করি। উযির মহােদয় আমার একথা শুনে খুবই সন্তুষ্ট হন এবং বলেন, 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সত্যবাদীতার ওপর ধন্যবাদ।

দ্বিতীয় রাতে আমি খােদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে স্বপ্নে দেখি এবারও তিনি উহাই ইরশাদ করলেন যা প্রথম রজনীতে ইরশাদ করেছিলেন। আমি অত্যন্ত প্রফুল্ল মনে জাগ্রত হই। কিন্তু উল্লিখিত কারণে উযিরের নিকট গমন করা থেকে বিরত থাকি। এরপর তিনি আমাকে তিন হাজার দিনার দান করে বলেন, যাও তোমার কর্জ পরিশোধ কর।

▶[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৬২-৩৬৩, গাজী প্রকাশনী।]


❏ ঘটনা ৭:

মাটিগুলো মুক্তায় পরিণত 


একদা এক ব্যক্তি অভিশপ্ত আবু জেহেল থেকে কিছু ভিক্ষা চাইল, আবু জেহেল ঠাট্রা বিদ্রুপ করে ঐ ব্যক্তিকে বললো শেরে খোদা আলীর নিকট যাও। তিনি একজন অর্থশালী ব্যক্তি। অবশ্যই তোমাকে  কিছু না কিছু দান করবেন। অতএব সে হযরত আলীর মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলো। অথচ প্রকৃত অবস্থা এ ছিল ওই সময় হযরত আলী (رضي الله عنه) এর নিকট প্রার্থনা কারীকে দেওয়ার মত কিছুই ছিল না। সুবাহানাল্লাহ, আমাদের প্রিয় নবীজী(ﷺ) এর আহলে বাইতের কতটুকু ক্ষমতা। শাহে বেলায়াতের সম্রাট হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন হে ভিক্ষুক তোমার হাত আমার দিকে প্রসারিত করো। সে হাত প্রসারিত করলে, হযরত আলী (رضي الله عنه) তিনবার দরূদ শরীফ পাঠ করে বললেন, এ মাটিকে মুষ্টিতে শক্ত করে ধরো এবং আবু জেহেলের সামনে গিয়ে খুলবে। ওদিকে আবু জেহেল এ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে হাসি ও বিদ্রুপ করছিলো। ভিক্ষুক আবু জেহেলের নিকট আসলে সে বললো মুষ্টি খোল। ভিক্ষুক মুষ্টি খুলে দেখলো ওই মাটিগুলো তার হাতে মনি মুক্তায় পরিণত হয়ে আছে। আবু জেহেল ও মক্কার কাফেররা এ অবস্থা দেখে হতভম্ভ হয়ে গেল এবং বিদ্রুপ কারীদের মুখ থুবড়ে পড়লো। 


❏ ঘটনা ৮:

হযরত শিবলী (رحمة الله) এর ঘটনা


বিশ্বস্ত সনদ সহকারে শায়খ আহমদ ইবনে আবু বকর ইবনে রাদ্দাদ সুফী (رحمة الله) ও মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় কিতাবে শায়খ মজদুদ্দীন ফিরূযাবাদী থেকে রিওয়ায়ত করেন যে আকনসী (رحمة الله) বলেন, 

 

"একদা হযরত শিবলী (رحمة الله) বাগদাদ শরীফের বিজ্ঞ আলিম হযরত সায়্যিদুনা আবূ বকর মুজাহিদ (رحمة الله) এর নিকট তাশরিফ নিলেন। আবু বকর মুজাহিদ (رحمة الله) তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যান এবং তার সাথে কোলাকুলি করেন আর তারা উভয় চোখের মাঝখানে চুমাে দেন। আমি আরজ করলাম, হে আমার সরদার! আপনি হযরত শিবলী (رحمة الله) এর সাথে এমন ব্যবহার কেন করলেন? অথচ আপনি এবং বাগদাদের সমস্ত লােক তাঁকে পাগল মনে করেন। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজ তরফ থেকে এ কাজ করিনি, বরং হযরত নবী করীম (ﷺ) কে এরূপ করতে দেখেই করেছি। একদিন আমি স্বপ্নে দেখি যে, হযরত শিবলী (رحمة الله) হুযূর আকরম (ﷺ) এর পাক দরবারে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর আগমনে তিনি দাঁড়িয়েছে এবং তাঁর সাথে কোলাকুলি করেছেন, আর তাঁর উভয় চোখের মাঝখানে চুমাে দিয়েছেন। আমি হুযূর আকরম (ﷺ) এর নিকট আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি শিবলী (رحمة الله)-এর সাথে এরূপ সদয় ব্যবহার কেন করলেন? ইরশাদ করলেন, কেননা তিনি নামাযের পর কুরাআনে পাকের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, 

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ 

এ আয়াতটি তিলাওয়াতের পর তিনি আমার ওপর দরূদ শরীফ পাঠ করেন।"

তথ্যসূত্রঃ

(১) ইমাম সাখাবী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী ফিস সালাত আলাল হাবিবিশ শফী, পৃষ্ঠা ১৭৭।

(২) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৬, গাজী প্রকাশনী।

(৩) মু’সিসাতুর রাইয়ান, বৈরুত।


❏ ঘটনা ৯:


হজরত শিবলী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমার একজন প্রতিবেশী মারা যায়। আমি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করি, আল্লাহ তা'আলা তােমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি বললেন, আমার সম্পর্কে কি জিজ্ঞাসা করেন, আমার ওপর তাে বড়ই মুসিবত এসেছিল। বিশেষ করে মুনকার-কীরের সওয়ালের সময়। আমার তাে মনে হচ্ছিল যে, আমি যেন দীনে ইসলামের ওপর মৃত্যুবরণ করিনি। এমন সময় হঠাৎ আওয়াজ হলাে, তুই যে তাের মুখকে বেকার রেখেছিলে, এ যে তারই শাস্তি। যখন আযাবের ফেরেশতাগণ আমার দিকে এগিয়ে আসে। তখন আমি দেখতে পাই যে, খােশবুত মুখরিত একজন সুন্দর পুরুষ আমার এবং ফেরেশতাদের মাঝখানে আড়াল হয়ে আছেন। তিনি আমাকে ঈমানের দলীল বাতলিয়ে দেন। আমি লােকটিকে জিজ্ঞেস করি, আল্লাহ আপনার ওপর রহমত বর্ষণ করুক, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি সেই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা'আলা আপনার অধিক সংখ্যক 

দরূদ শরীফ পাঠ করার ফলে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আপদে-বিপদে আপনাকে সাহায্য করি।" 

তথ্যসূত্রঃ

(১) আস-সাখাবী (رحمة الله), আল-কওলুল বদী' ফিস সালাত আলাল হাবীবিশ শফী; পৃ. ১২৭; 

(২) ইবনুন নু'মান (رحمة الله), মিসবাহস যাল্লাম ফিল মুসতাগিসীনা বি-বায়রিল আনাম আলায়হিস সালাতু ওয়াস সালাম, ২৩৩। 

(৩) শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) : হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ পৃষ্ঠা ৩৫৭, গাজী প্রকাশনী।


❏ ঘটনা ১০:

বিকৃত চেহারা চাঁদের মত উজ্বল


হযরত শায়খ শিবলী (رحمة الله) বলেন, বায়তুল্লাহ্ শরীফ যিয়ারতের সময় আমি একবার এক যুবকের সাক্ষাত পাই। সে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ধারিত দোয়া না পড়ে সর্বত্রই সে দরূদ শরীফ পাঠ করছিল। শিবলী (رحمة الله) বলেন, তুমি কি দরূদ শরীফ ছাড়া অন্য কোনো দোয়া পারতে পার না? তুমি সর্বত্রই দরূদ শরীফ পাঠ করছো কেন? যুবকটি বলল, আমি অনেক দোয়া মুখস্ত পারি। কিন্তু দরূদ শরীফের যে উপকার আমি নিজে লাভ করেছি অন্য কোন দোয়ায় তা পাইনি। তাই সর্বত্র দরূদ শরীফ পাঠ করছি। 

হযরত শিবলী (رحمة الله) বললেন, ঘটনাটি কী আমাকে খোলে বল। অনেক বছর আগের কথা। আমি আর আমার বাবা হজ্বে আসছিলাম। বাগদাদে পৌছার পর আমার বাবা ভীষণভাবে জ্বরাক্রান্ত হলেন এবং কয়েকদিন পর মারা গেলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর তার মুখের আকৃতি শুকরের মত হয়ে গেল। আমি এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। তার মুখের উপর একটি কাপড় টেনে দিলাম। কাউকে এ অবস্থা বলতেও পারছিলাম না। আবার একা একা দাফন করতেও পারছিলাম না। প্রচন্ড কষ্ট, চিন্তা ও দূর্ভাবনায় আমি উপুর হয়ে পড়েছিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেও পারব না। আমি ঘুমের মধ্যে দেখি কি অসাধারণ সুন্দর এক পবিত্র মানুষের আগমণ। রূপময় সেই উজ্জলকান্তি পবিত্র আমার বাবার কাছে এলেন। মুখ থেকে কাপড় সড়িয়ে তার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন। আর এমনিতেই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উঁজ্বল হয়ে উঠল। তারপর তিনি যখন চলে যেতে উদ্যত হলেন আমি তাকি জড়িয়ে ধরে তার পরিচয় জানতে চাইলাম। বড়ই বিপদে আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, তিনি আমি পাপীদের আশ্রয়, অপরাধীদের সুপারিশকারী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ)। এই কথা শুনেই আমি পবিত্র কদমে লুটিয়ে পড়লাম। কদমবুছি করলাম। তারপর আরয করলাম হে রাসূল (ﷺ) আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ আপনি কিভাবে পেলেন? আমি তো এই সংবাদ এখনো কাউকে দেইনি। ইরশাদ করলেন, তোমার বাবা প্রতি রাতে আমার প্রতি তিনশতবার দরূদ শরীফ পাঠ করত। আজ রাতে যখন তার দরূদ আমার কাছে পৌছায়নি, তখন আমি সেই ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমার কাছে তোমার বাবার দরূদ শরীফ প্রতিদিন পৌঁছাত। তখন ফেরেশতা আমাকে বলল, সে তো আজ মারা গেছে এবং তার অবস্থা এই। একথা শুণে আমার খুবই দু:খ হলো। তাই চলে এলাম। অত:পর হুযুর (ﷺ) চলে গেলেন। তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফজরের নামাজ পড়লাম। দেখলাম সত্যিই আমার বাবার চেহারা চাঁদের মত উজ্জল হয়েগেছে। আরও দেখলাম লোক দলে দলে চারদিক থেকে ছুটে আসছে। যেন শহরে সব মানুষ ঢলে পড়েছে আমাদের দিকে। আমি ভেবে হয়রান হলাম। এদেরকে কে সংবাদ দিল। আমি অবশেষে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা আমার বাবার মৃত্যু এবং যানাজার সংবাদ কীভাবে পেলেন? তারা বলল, আমরা আকাশ থেকে একটি গায়েবী আওয়াজ শোনলাম। যেই ব্যক্তি স্বীয় পাপ মাফ করতে চায়, সে যেন অমুক মহল্লার অমুক স্থানে একজন লোক মারা গেছে, তার যানাজায় গিয়ে শরীক হয়। 

অত:পর যুবক বলল- দরূদ শরীফের মহান এই মর্ম ও মর্যাদা আমি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। একারণেই আমি অন্যসব দোয়া ছেড়ে এখন সর্বদা দরূদ শরীফই পাঠ করছি। একথা শোনার পর শায়খ শিবলী (رحمة الله) বললেন- তুমি বাবার এই খুটিটি আরও শক্ত করে ধর এবং কখনও ছেড়ে দিও না। ▶[জিকরে এলাহি-পৃ: ১০৪]


❏ ঘটনা ১১:


হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ ইবনে মনসুর رحمة الله عليه যখন ওফাত প্রাপ্ত হন, তখন একজন শীরাযবাসী তাঁকে স্বপ্নে দেখলেন-তিনি শীরাযের জামে মসজিদের মেহরাবে দাঁড়ানো। আর তাঁর পরনে ছিলো উন্নতমানের পোশাক। মাথার উপর মুক্তা খচিত তাজ শোভা পাচ্ছিলো। স্বপ্নে যে দেখেছে সে স্বপ্নদ্রষ্টা আরয করল, “হযরত কেমন আছেন?” তিনি বললেন, “আল্লাহ তা’আলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমার উপর দয়া করেছেন। আমাকে তাজ পরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন।” লোকটি বললো, “কি কারণে?” বললেন, আমি তাজেদারে মদীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর উপর বেশি পরিমাণে দুরূদে পাক পড়তাম, বস্তুত: এই আমলটা কাজে এসেছে।” 

▶(ইমাম সাখাবীঃ আল কাউলূল বদী, পৃ-২৫৪)


❏ ঘটনা ১২:

মধু তিক্ত থেকে মিষ্টি হয় 


আল্লামা রুমী (رحمة الله) মসনবীজীশরীফে উলে­খ করেন, একদা নবীকুল সম্রাট হুযুর (ﷺ) মৌমাছিদেরকে বলেন, তোমরা প্রত্যেক প্রকারের ফুল থেকে রস আহরণ কর, এতে কিছু মিষ্টি কিছু তিক্ত এবং কিছু টক ও রয়েছে এতদসত্বেও সমুদয় রস কীভাবে মিষ্টি হয়ে মধুতে পরিণত হয়? মৌমাছিরা আরজ করল, হে সমগ্র সৃষ্টির পথ প্রদর্শক! আমরা ফুল হতে রস আহরন করে ঘড়ে প্রত্যাবর্তন করা অবধি আপনার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকি। এর ফলে সমুদয় রস সুমিষ্ট মধু হয়ে যায়। ▶(মুফতি ইয়ার খান নঈমী রহঃ শানে হাবিবুর রহমান)


❏ ঘটনা ১৩:

দরূদ শরীফ পাঠে রোগ মুক্তি লাভ 


জনৈক মুত্তাকী নেক্কার পরহেজগার ব্যক্তি পেশাব আটকে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হয়। যার কারনে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। একরাত্রে স্বপ্নে আরেফবিল্লাহ শাহাবুদ্দীন ইবনে আরসালান (رحمة الله) এর সাথে সাক্ষাত হয়। সে তার কাছে বেদনাদায়ক রোগের কথা উলে­খ করলে, তিনি বলেন, আমি তোমাকে একটা দরূদ শিখিয়ে দিচ্ছি ,তুমি তা পড়তে থাক। এটি পরিক্ষিত যে এর পাঠের দ্বারা দ্রুত রোগ মুক্ত হওয়া যায়। লোকটি ঘুম থেকে জাগ্রত হলে স্বপ্ন মনে পড়ল এবং দরূদশরীফটিও স্মরণ হল। সে ঐ দরূদ শরীফ পাঠ আরম্ব করে দিল। আল্লাহ তায়ালা দরূদ শরীফের বরকতে দ্রুত আরোগ্য দান করেন। 

▶[ইমাম সাফুরীঃ নুযহাতুল মাজলিস-৯২, সূত্র- বার মাসের আমল ও ফযীলত- ১৮২]


❏ ঘটনা ১৪:

মুসা (عليه السلام) এর উম্মতের নাযাত 


ইমাম সাখাবী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, হযরত মুসা (عليه السلام) এর সময়কালে একজন ব্যাক্তি বড়ই ফাসেক ছিল। বনী ইসরাইলের লোকেরা তার উপর বড়ই অসন্তুষ্ট ছিল। তার মৃৃত্যু হলে লোকেরা তাকে কাপন দাপন ব্যতিত একটি আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপ করে দিল। তার নামাজের যানাযাও কেউ পড়ে নি। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (عليه السلام) কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে, হে মুসা! অমুক আবর্জনার স্থানে একজন মৃত ব্যক্তির লাশ কাপন দাফন ব্যতিত পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে তাকে গোসল দিয়ে কাপন পড়িয়ে জানাযা পড়ে সম্মানের সহিত দাফন কর। কেননা আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। মুসা (عليه السلام) ও তার অবস্থা জানতেন। তিনি বললেন হে আল্লাহ! তার গুণাহ্ কী কারণে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তার কোন আমলটি মাগফিরাতের কারণ হল? আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বলা হল- হে মুসা তার মাগফিরাতের কারণ হল, একদিন সে তাওরাত পাঠ করার সময় আমার শেষ নবীর নাম মোবারক দেখে সে দরূদ পাঠ করেছে। একারনেই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। 

▶[আফযালুস সালাত পৃ: ৪১। বার মাসের আমল ও ফযীলত-পৃ: ১৬৮]


❏ ঘটনা ১৫:

হযরত মুসা (عليه السلام) এর ঘটনা 


একদা আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আ'লাইহিস সালাম এর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করলেন, তুমি কি ইচ্ছে কর তোমার জিহ্বার সাথে তোমার কথার যে সম্পর্ক, আমি তার থেকেও তোমার অধিক নিকটবর্তী এবং বিপদ-আপদে তোমার ও তোমার অন্তরের সাথে তোমার আত্মা ও তোমার শরীরের সাথে এবং তোমার দৃষ্টি ও তোমার চোখের সাথে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হই? উত্তরে মুসা (عليه السلام) বললেন- হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি আমার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর প্রতি অসংখ্য দরূদ শরীফ প্রেরণ করো, যাতে তুমি এ সৌভাগ্য ও নৈকট্য অর্জন করতে পার। (সুবাহানাল্লাহ্), 

▶[গাউছিয়া তরবীয়তী নেসাব- ৫১১পৃ:]


❏ ঘটনা ১৬:

একটি বালিকার ঘটনা 


দালায়েলুল খাইরাত প্রনেতা হযরত মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান জাযুলী (رحمة الله) একদিন ভ্রমণ করতে গিয়ে ফাস নাম শহরে উপস্থিত হলেন। সেখানে ভ্রমণে জোহরের সময় হল, তিনি পানি পাচ্ছিলেন না। অনেক্ষণ পানি তালাশ করার পর একটি কূপ দৃষ্টিগোচর হল, কিন্তু পানি উঠানোর জন্য কোন মাধ্যম তথা বালতি বা অন্য কোন পাত্র পেলেন না। উক্ত কিতাবের গ্রন্থকার পানির আশায় ঐ কূপের চারপাশে অসহায়ভাবে প্রদক্ষিণ করতে লাগলেন। কিন্তু এর কোন সমাধান না পেয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। এই ঘটনা এক জায়গা হতে আট বা নয় বছরের এক বালিকা প্রত্যক্ষ করেছেন। 

অল্পক্ষণপর বালিকা লেখক হযরত সুলায়মান জাযুলি (رحمة الله) এর কাছে এসে বললেন যে, আপনার এই চিন্তার কারণ কী? অনুগ্রহ করে আমাকে কি বলবেন? তদুত্তরে তিনি বললেন যে, আমি জোহরের নামাজ আদায় করতে চাই। অথচ অযুর পানি পাওয়ার কোন মাধ্যম বা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। আপনার সম্ভব হলে সাহায্য করুন। উত্তরে বালিকা বললেন আপনি একজন জগৎখ্যাত ওলী। অথচ এ সামান্য কাজও সমাধান করতে পারছেন না। এ বলে বালিকাটি এসে কূপের মধ্যে থু-থু নিক্ষেপ করলেন। সাথে সাথে পানি ফুসলিয়ে উঠে। কূপের উপর দিয়ে প্রবাহিত হল। 

ফলে উপস্থিত সবাই অযু করে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ থেকে অবসর হয়ে লেখক ঐ বালিকার ঘরে গিয়ে ডেকে জানতে চাইলেন যে, আপনার ঐ সত্তার কসম যে সত্তা আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং ইসলামের সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন। তোমাকে আল্লাহ সমস্ত নবী-রাসূল বিশেষত আমার নবীয়ে পাক (ﷺ) এর দোহাই দিয়ে বলছি যে কুপ থেকে পানি উঠানো এটা কীভাবে সম্ভব হলো? 

বালিকা বললেন, জনাব আপনি যদি আমাকে এতবড় শপথের কথা না বলতেন, তাহলে আমি অবশ্যই বলতাম না। ইহা মূলত বিশেষ একটি দরূদ শরীফ পাঠ করার কারণে পেয়েছি। যে দরূদ শরীফ খানা আমি সর্বদা পাঠ করে আসছি। 

শেখ মুহাম্মদ সুলায়মান (رحمة الله) বললেন যে, আমি উক্ত দরূদ শরীফ বালিকা থেকে মুখস্ত করলাম এবং উহাকে মানুষের মধ্যে প্রচার করার অনুমতি নিলাম। অত:পর দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম যে আমি দরূদ শরীফ সংক্রান্ত কিতাব রচনা করব। তাই দালায়েলুল খাইরাত কিতাবখানা রচনা করলাম। 


❏ ঘটনা ১৭:

আদম (عليه السلام) এর মোহরানা আদায় 


হযরত আদম (عليه السلام) একাকিত্ব দূরীভূত হওয়ার জন্য আরয করতেন যে, যদি আমার কোন সঙ্গী হতো, তাহলে তার সাহচর্যে কালাতিপাত করতে পারতাম। আল্লাহ তায়ালার দয়া হল, ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাম পাজর থেকে হযরত হাওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন। তিনি খুবই সুন্দরী ছিলেন এবং সৃষ্টি হওয়া মাত্র শারিরীক গঠন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। হযরত আদম (عليه السلام) যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন, তখন দেখেন যে তার পাশে একজন সুশ্রী মহিলা বিদ্যমান। জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কে? আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তর আসল ইনি আমার বান্দীনি নাম তার হাওয়া, তোমার একাকিত্ব দূর করার জন্য আমি তাকে সৃষ্টি করেছি। আদম (عليه السلام) তাকে স্পর্ষ করতে চাইলেন। আদেশ আসল হে আদম! তাকে স্পর্ষ করবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তার “মহর” আদায় না করবে। আদম (عليه السلام) আরয করলেন, এর মহর কি? হুকুম আসল তার মহর হল তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর এবং তার পরিবার পরিজনের উপর দশ বার দরূদ শরীফ প্রেরণ কর। আদম (عليه السلام) আরয করলেন, মুহাম্মদ কে? এরশাদ হল, তিনি হলেন তোমার আওলাদ শেষ যমানার নবী। যদি আমি তাকে সৃষ্টি না করতাম তবে তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না। অত:পর হযরত আদম (عليه السلام) দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে মুহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর পরিবারের উপর প্রেরণ করবেন আর ফেরেশতারা স্বাক্ষী হলেন ফলে হযরত আদম (عليه السلام) ও হাওয়া এর বিবাহ সম্পাদিত হয়। 

▶[হাশিয়ায়ে দালায়েলুল খাইরাত-২০৩, বার মাসের আমল ও ফযীলত-১৮১]


❏ ঘটনা ১৮:

দরূদ পাঠে অন্তর নিফাক মুক্ত হয় 


মাজালিসে মাক্কীয়া নামক গ্রন্থে আবুল মোজাফফর মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ খৈয়াম সমরকন্দী (رحمة الله) বলেন, একদিন আমি পথ হারিয়ে গেলে হঠাৎ একজন লোক দেখলাম। লোকটি আমাকে তার সাথে চলতে বললে আমি তার সাথে চললাম। আমার মনে হল যে, তিনি সম্ভবত হযরত খিজির (عليه السلام) হবেন, যিনি হারিয়ে যাওয়া পথিককে রাস্তা দেখান এবং মনজিলে মকসুদ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার নাম কী? উত্তরে তিনি বললেন আমার নাম খিজির ইবনে ইসা আবুল আব্বাস। আমি তার সাথে আরেকজনকে দেখতে পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার নাম কী? উত্তরে তিনি বললেন, ইলিয়াস ইবনে শাম। এরপর উভয়কে সম্ভোধন করে বললাম, আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উপর রহমত নাযিল করুন। আপনারা কি মুহাম্মদ (ﷺ) কে দেখেছেন? তারা বললেন হ্যা দেখেছি। আমি আরয করলাম আপনারা আমাকে ঐ সব কথা শুনান যা আপনারা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন। যাতে আমি অন্যদেরকে বর্ননা করতে পারি । তারা বললেন আমরা রাসূল (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছি, 

من صلى على طهر الله قلبه من النفاق كمايطهر الثوب الماء

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার অন্তরকে নিফাক থেকে এমন ভাবে পবিত্র করবেন, যেভাবে পানি কাপড়কে পবিত্র করে। 

▶[জযবুল কুলুব উর্দূ পৃ: ২৬৭, বার মাসের আমল ও ফযীলত- ১৭৩]




সহায়ক পুস্তকঃ



❏ইসলামী বিশ্বকোষ | সুন্নি-বিশ্বকোষ ব্লগ 

❏রিয়াদ্বুস সালেহীনঃ ইমাম নববী (رحمة الله)

❏দুরূদ শরীফের বাস্তব কাহিনীঃ মুহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন আনোয়ারী।

❏হৃদয়ের টানে মদিনার পানেঃ ইমাম শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)

❏জিয়ায়ে দুরূদঃ দাওয়াতে ইসলামী।

❏বাহারে শরিয়তঃ আল্লামা আমজাদ আলী আজমী (رحمة الله), সাকলাইন প্রকাশন, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।

❏আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াঃ ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তালানী (رحمة الله), সাকলাইন প্রকাশন, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।

❏প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচনঃ শহিদুল্লাহ বাহাদুর, সাকলাইন প্রকাশন, মাওলানা মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর।

❏প্রিয়নবীর পরকালীন জীবনঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী, সঞ্জরী পাব্লিকেশন।

❏দালায়েলুল বারাকাতঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী, সঞ্জরী পাব্লিকেশন।

❏হাদিস সংকলনঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী,PHP family

❏মা'মুলাতে মিলাদঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী, সঞ্জরী পাব্লিকেশন।

❏প্রিয়নবীর প্রশংসায় হৃদয়ের প্রশান্তিঃ ড. তাহেরুল ইসলাম কাদেরী, সঞ্জরী পাব্লিকেশন।

❏ফেরেশতা সৃষ্টির ইতিবৃত্তঃ ইমাম আ'লা হযরত (رحمة الله)

❏জাল হাদিসই আল হাদিসঃ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলাউদ্দীন জেহাদী, সাকলাইন প্রকাশন।

❏আরশের ছায়ায় যাদের কায়াঃ ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله)

❏আনোয়ারে মদিনাঃ আল্লামা আব্দুল করিম সিরাজনগরী।

❏ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর বিরোধীদের আপত্তির জবাব।

❏দরূদ ও সালামের কিমতি হীরাঃ মুহাম্মদ খাইরুল মিনার কাদরী।

❏দরূদ পাঠের উপকারিতা ও ফযিলতঃ মুহাম্মদ হোসাইন আহমেদ আলকাদেরী।

❏আল কাওলুল বদীঃ ইমাম সাখাবী

❏ফয়জানে সুন্নতঃ দাওয়াতে ইসলামী

❏জযবুল কুলুব 

❏বার মাসের আমল ও ফযীলত

❏ইমাম সাফুরীঃ নুযহাতুল মাজলিস

❏জিকরে এলাহি

❏মুফতি ইয়ার খান নঈমী রহঃ শানে হাবিবুর রহমান


অন্যান্য প্রমাণ পুঞ্জিঃ


১.আবদুর রায্যাক: আল-মুসান্নাফ: ইমাম আবদুর রায্যাক সান‘আনী (ওফাত. ২১১ হি.): মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।

২.    ইসমাঈল ইবনে কাসীর (ওফাত ৭৭৪ হি.) : তাফসীরে কুরআনুল আজীম : দারুল খায়ের, বয়রুত।

৩.    আল্লামা মাহমুদ আলূসী (ওফাত ১২৭০ হি.) : রুহুল মা‘য়ানী, এমদাদিয়া, মুলতান, পাকিস্তান।

৪.    ইমাম খাযেন (ওফাত : ৭৪১হি. ): তাফসীরে খাযেন, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।

৫.    ইমাম কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী (ওফাত. ৬৮৫হি.) : তাফসীরে বায়যাভী, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।

৬.    আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : (ওফাত. ১১২৭ হি.)ঃ তাফসীরে রুহুল বায়ান : দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।

৭.    ইমাম ফখরুদ্দিন রাযি (ওফাত. ৬০৬ হি.) : তাফসিরে কাবির : দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

৮.    ইবনে আব্বাস: সায়্যিদিল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস: তাফসীর ইবনে আববাস, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

৯.    তাবারী: ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী (৩১০ হি.): জামেউল বায়ান, দারুল হুজর, কায়রু, মিশর। 

১০.    নাসাফী: ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নাসাফী: তাফসীরে মাদারেকুত তানযিল ওয়া হাকায়েকুল তাভীল, দারুল কালিমাতুত তায়্যব, বয়রুত, লেবানন।

১১.    কুরতুবী: ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন সামসুদ্দীন কুরতুবী আল-মালেকী: তাফসীরে জামেউ লি আহকামিল কোরআন: দারুল কুতুব মিশরিয়্যাহ, কায়রু, মিশর, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৩৮৪ হি.

১২.    বাগভী: ইমাম মহিউস্ সুন্নাহ আবু মুহাম্মদ হোসাইন ইবনে মাসউদ ইবনে বাগভী আশ-শাফেয়ী (ওফাত. ৫১০ হি.) : তাফসীরে মুআলিমুত তানযিল: দারু ইহ্ইয়াউস তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪২০ হি.

১৩.    শাহ আবদুল আযিয: তাফসীরে আযীযী: শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী।

১৪.    সুয়ূতি: ইমাম জালালুদ্দীন আবদুর রহমান সূয়ূতি: তাফসীরে দুররুল মানসূর, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

১৫.    তাফসীরে জালালাইন: আল্লামা জালালুদ্দীন মহল্লী এবং ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি:

১৬.    নিশাপুরী: ইমাম মুহাম্মদ বিন হোসাইন নিশাপুরী: তাফসীরে গারাইবুল কুরআন, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

১৭.    মাযহারী: ইমাম কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী: তাফসীরে মাযহাবী, মাকতাবায়ে রশীদিয়্যাহ, করাচী, পাকিস্তান।

১৮.    হুসাইনী: ইমাম মুঈন উদ্দীন ওয়ায়েয কাশেফী: তাফসীরে হোসাইনী,

১৯.    শারবীনী: ইমাম মুহাম্মদ বিন শারবিনী: তাফসীরে সিরাজুল মুনীর।

২০.    জুমাল: ইমাম সোলাইমান: তাফসীরে জুমাল।

২১.    সাভী: ইমাম আহমদ সাভী আল-মালেকী: তাফসীরে সাভী, দারুল হাদিস, কায়রু, মিশর।

হাদিস

২২.    বুখারীঃ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (১৯৪হি-২৫৬হি.) : আস্-সহীহ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪২২ হি. (শামিলা)।

২৩.    বুখারীঃ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী : আত্-তারিখুল কাবীর, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ। 

২৪.    বায্যার : আবু বকর আহমদ ইবনে উমর ইবনে আবদুল খালেক বসরী (২১০-২৯২ হি. / ৮২৫-৯০৫ ইং) : আল মুসনাদ: বয়রুত, লেবানন, মুয়াস্সাসাতু উলূমিল কুরআন, ১৪০৯ হিজরী;

২৫.    বাগভী : আবু মুহাম্মদ হোসাইন ইবনে মাসউদ ইবনে মুহাম্মদ (৪৩৬-৫১৬ হি. / ১০৪৪-১১২২ ইং) : শরহে সুন্নাহ: বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ, ১৪০৭ হি / ১৯৮৭ ইং।

২৬.    বায়হাকী : আবু বকর আহমদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : দালায়িলুন নবুয়ত, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪০৫ হি. / ১৯৮৫ ইং।

২৭.    বায়হাকী : আবু বকর আহমাদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : আস-সুনানুল কুবরা, মক্কা, সৌদি আরব, মাকতাবা দারুল বায, ১৪১৪ হি. / ১৯৯৪ ইং।

২৮.    বায়হাকী : আবু বকর আহমাদ ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনু মূসা (৩৮৪-৪৫৮ হি. / ৯৯৪-১০৬৬ ইং) : আল-মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার: 

২৯.    তিরমিযী : আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে সওরাহ ইবনে মূসা (২১০-২৭৯ হি. ৮২৫-৮৯২ ইং) : আল-জামেউস সহিহ, বয়রুত, লেবানন, দারুল গুরাবিল ইসলামী, ১৯৯৮ ইং।

৩০.    হাকিম : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩২১-৪০৫ হি. ৯৩৩-১০১৪ ইং) : আল-মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪১১ হি. ১৯৯০ ইং।

৩১.    ইবনে হিব্বান : আবু হাতেম মুহাম্মদ ইবনে হিব্বান ইবনে আহমাদ ইবনে হিব্বান (২৭০-৩৫৪ হি. ৮৮৪-৯৬৫ ইং) : আস্-সিকাত, বয়রুত, লেবানন, দারুল ফিক্র, ১৩৯৫ হি. / ১৯৭৫ ইং।

৩২.    ইবনে খুযায়মা : আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (২২৩-৩১১ হি. / ৮৩৮-৯২৪ ইং) আস-সহীহ, বয়রুত, লেবানন, আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৩৯০ হি. / ১৯৭০ ইং।

৩৩.    খতিবে বাগদাদী : আবু বকর আহমাদ ইবনে আলী ইবনে সাবেত ইবনে আহমাদ ইবনে মাহদী ইবনে সাবিত (৩৯২-৪৬০ হি. / ১০০২-১০৭১ ইং) : তারিখে বাগদাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া।

৩৪.    খাওয়ারযামী : আবদুল মু‘আয়্যিদ মুহাম্মদ ইবনে মাহমুদ (৫৯৩-৬৬৫ হি.) : জা‘মিউল মাসানিদ লি ইমাম আবী হানিফা, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া।

৩৫.    দারাকুতনি : আবুল হাসান আলী ইবনে উমর ইবনে আহমদ ইবনে মাহাদী মাসউদ ইবনে নু’মান (৩০৬-৩৮৫ হি. / ৯১৮-৯৯৫ ইং) : আস সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ, ১৩৮৬ হি. / ১৯৬৬ ইং।

৩৬.    দারিমি : আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান (১৮১-২৫৫ হি. / ৭৯৭-৮৬৯ ইং) : আস-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪০৭ হি.।

৩৭.    আবু দাউদ : সুলাইমান ইবনে আসআছ সাজিসতানী (২০২-২৭৫ হি. / ৮১৭-৮৮৯ ইং) : আস-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল ফিকর, ১৪১৪ হি. / ১৯৯৪ ইং।

৩৮.    দায়লামি : আবু সূজা শেরওয়াই ইবনে শহরদার ইবনে শেরওয়াই হামদানী (৪৪৫-৫০৯ হি. / ১০৫৩-১১১৫ ইং) : আল-ফিরদাউস বি মা’সুরিল খিতাব, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৯৮৬ ইং।

৩৯.    ইবনে সা’দ : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ (১৬৮-২৩০ / হি. ৭৮৪-৮৪৫ ইং) : আত্ব ত্বাবক্বাতুল কুবরা, বয়রুত, লেবানন, দারে ছদীর।

৪০.    ইবনে আবী শায়বা : আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে উসমান কুফী (১৫৯-২৩৫ হি. / ৭৭৬-৮৪৯ ইং) : আল-মুসান্নাফ, রিয়াদ, সৌদি আরব, মাকতাবাতুর রাশাদ, প্রকাশ. ১৪০৯ হি.।

৪১.    তাবরানী : আবুল কাসেম সুলাইমান ইবনে আহমদ ইবনে আইয়ুব (২৬০-৩৬০ হি. / ৮৭৩-৯৭১ ইং) : আল-মু’জামুল আওসাত, রিয়াদ, সৌদি আরব, মাকতাবাতুল মা’রিফ, ১৪০৫ হি. / ১৯৮৫ ইং।

৪২.    তাবরানী : আবুল কাসেম সুলাইমান ইবনে আহমদ ইবনে আইয়ুব (২৬০-৩৬০ হি. / ৮৭৩-৯৭১ ইং) : আল-মু’জামুল কাবীর, মুসিল, ইরাক, মাতবাআতুল উলুম ওয়াল হিকম, ১৪০৪ হি. / ১৯৮৪ ইং।

৪৩.    তাবারী : আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর ইবনে ইয়াযীদ (২২৪-৩১০ হি./৮৩৯-৯২৩ ইং) : জা’মিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ,১৪০০ হি./১৯৮০ ইং।

৪৪.    তাহাবী : আবু জাফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনু সালমা ইবনু আবদুল মালিক ইবনে সালমা (২২৯-৩২১ হি. / ৮৫৩-৯৩৩ ইং) শরহু মা’আনিল আসার, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৯ ইং।

৪৫.    তায়ালসী : আবু দাউদ সুলায়মান ইবনু দাউদ জারুদ (১৩৩-২০৪ হি / ৭৫১-৮১৯ ইং), আল মুসনাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল মা’আরিফ।

৪৬.    ইবনে ‘আবদুল র্বা: আবু উমর ইউসূফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩৬৮-৪৬৩ হি. / ৯৭৯-১০৭১ ইং) : আল ইসতিয়াবু ফী মা’আরিফাতিল আসহাব, বয়রুত, লেবানন, দারুল জিল।

৪৭.    ইবনে ‘আবদুল বার : আবু উমর ইউসূফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ (৩৬৮-৪৬৩ হি. / ৯৭৯-১০৭১ ইং) : জামি’উল বায়ানিল ইল্মি ওয়া ফাদ্বলি, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৩৯৮ হি. / ১৯৭৮ ইং।

৪৮.    ‘আবদুর রায্যাক : আবূ বকর ইবনে হুম্মাম ইবনে নাফে’ সান‘আনী (১২৬-২১১ হি. / ৭৪৪-৮২৬ ইং) : আল-মুসান্নাফ, বয়রুত, লেবানন, আল মাকতুবাতুল ইসলামী, ১৪০৩ হি.।

৪৯.    ইবনে মাযাহ : আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ কাযভীনি (২০৯-২৭৩ হি. / ৮২৪-৮৮৭ ইং) : আস্-সুনান, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪১৯ হি. / ১৯৯৮ ইং।

৫০.    মালেক : ইবনে আনাস ইবনু মালেক ইবনু আবী ‘আমর ইবনে হারেছ আসবাহী (৯৩-১৭৯ হি. / ৭১২-৭৯৫ ইং) : আল মুআত্তা, বয়রুত, লেবানন, দারুল ইহইয়াউত আত তুরাসুল আরবিয়্যাহ, ১৪০৬ হি. / ১৯৮৫ খ্রি:।

৫১.    মুসলিম : মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল-কুশাইরি (২০৬-২৬১ হি. / ৭২১-৮৭৫ ইং) : আস-সহীহ, বয়রুত, লেবানন, দারু ইহয়ায়ি আত-তুরাসিল আরাবি।

৫২.    মুনযিরী : আবু মুহাম্মদ আবদুল আযীম ইবনে আবদুল কাভী ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালামাহ ইবনে সা’দ (৫৮১-৬৫২ হি. / ১১৮৫-১২৫৮ ইং) আত তারগীব ওয়াত তারহীব মিনাল হাদীসিশ শরীফ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১৪০৭ হি.।

৫৩.    নাসাঈ : আহমদ ইবনে মাআ‘ইব (২১৫-৩০৩ হি. / ৮৩০-৯১৫ ইং) : আস-সুনান, হালব, শাম, মাকতুবুল মাতবু’আত, ১৪০৬ হি./১৯৮৬ ইং।

৫৪.    আবূ নু‘আঈম : আহমাদ ইবনে ‘আবদুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে ইসহাক ইবনে মূসা ইবনে মেহরান ইসবাহানী (৩৩৬-৪৩০ হি. / ৯৪৮-১০৩৮ ইং) : হিলয়াতুল আওলিয়া ওয়া তাবকাতুল আসফিয়া, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরাবি, ১৪০০ হি. / ১৯৮০ ইং;

৫৫.    হিন্দি : হুসামুদ্দীন আলা উদ্দিন আলী মুত্তাকী হিন্দী (৯৭৫ হি.) : কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়ালি ওয়াল আফ’আল, বয়রুত, লেবানন, মুআস্সাসাতুর রিসালা, ১৩৯৯ হি. / ১৯৭৯ ইং।

৫৬.    হাইসামি : আবুল হাসান নূরুদ্দিন আলী ইবনে আবু বকর ইবনে সুলাইমান (৭৩৫-৮০৭ হি. / ১৩৩৫-১৪০৫ ইং) : মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবা’উল ফাওয়ায়িদ, কায়রো, মিসর, দারুর রায়আন লিত তুরাছ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কিতাবিল আরবী, ১৪০৭ হি./১৯৮৭ ইং।

৫৭.    আবু ই‘য়ালা : আহমাদ ইবনে আলী ইবনু মুসান্ন ইবনু ইয়াহইয়া ইবনে ‘ঈসা ইবনে হেলাল মুসিলী, তামিমী (২১০-৩০৭ হি. / ৮২৫-৯১৯ ইং) আল-মুসনাদ, দামিশক, সিরিয়া, দারুল মামুন লিত্ তুরাস, ১৪০৪ হি. / ১৯৮৪ ইং।

৫৮.    আবূ ইউসূফ : ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু আনসারী (১৮২ হি.) : কিতাবুল আসার, সানগালা হাল, শেখপুরা, পাকিস্তান, আল মাকতাবুল আসারিয়া/বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ।

৫৯.    শাফেয়ী : আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রীস ইবনু আব্বাস ইবনে ওসমান ইবনে শাফেয়ী কারশী (১৫০-২০৪ হি./৭৬৭-৮১৯ ইং) : আল-মুসনাদ, বয়রুত, লেবানন, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ।

৬০.    মুহাম্মদঃ ইমাম মুহাম্মদ হাসান শায়বানিঃ কিতাবুল আসারঃ দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


Top