কিতাবঃ ফয়যানে সুন্নাত
اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ
মূলঃ শায়েখে তরিকত আমিরে আহলে সুন্নত দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াছ আত্তার ক্বদেরি যিয়ায়ি দামাত বারকাতুহুমুল আলিয়া
১২০০পৃ. বিশিষ্ট "ফয়যানে সুন্নাত" কিতাবের টেক্সট রেডী করতে যারা যারা আমাদের সাথে আনজাম দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে:
• মুহাম্মদ জুবায়েদ হোসাইন আত্তারী
• ডা. মাসুম বিল্লাহ সানি
• মিজানুর রহমান আত্তারী
• উম্মে আবদুল আজিজ সালমান
• মোহাম্মদ সাকিব মাহমুদ আত্তারী
• ফাতেমাতুয জোহরা শাকিলা
• স্বাধীন আহমদ
• মোহাম্মদ শেখ বোরহান উদ্দিন
• এম এ রহমান
• মোহাম্মদ আফিফ রেজা কাদেরী
• রাকিব আহমদ চিশতী
• মারুফ
• মোহাম্মদ তারেক
• সুমন রেজা
• মোহাম্মদ মিল্লাত
সবাইকে মোবারকবাদ।
ফয়যানে بسم الله
◾নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন।”(মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮)
অসম্পূর্ণ কাজ
◾নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: “যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ بسم الله الر حمن الر حيم এর মাধ্যমে আরম্ভ করা হয় না, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।”(আদ্ দুররুল মানসূর, ১ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা)
بسم الله পড়তে থাকুন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাওয়ার সময়, খাওয়ানোর সময়, পান করার সময়, পান করানোর সময়, কোন কিছু রাখার সময়, উঠানোর সময়, ধৌত করার সময়, রান্না করার সময়, পড়ার সময়, পড়ানোর সময়, হাঁটার সময়,(গাড়ী ইত্যাদি) চালানোর সময়, উঠার সময়, উঠানোর সময়, বসার সময়, বসানোর সময়, বাতি জ্বালানোর সময়, পাখা চালানোর সময়, দস্তরখানা বিছানোর সময়, উঠিয়ে নেয়ার সময়, বিছানা বিছানোর সময়, উঠিয়ে নেয়ার সময়, দোকান খোলার সময়, বন্ধ করার সময়, তালা বন্ধ করার সময়, খোলার সময়, তেল দেয়ার সময়, আতর লাগানোর সময়,বয়ান করার সময়, নাত শরীফ শুনানোর সময়, জুতা পরিধানের সময়, ইমামা (পাগড়ী) পরিধানের সময়, দরজা বন্ধ করার সময়, দরজা খোলার সময়, মোট কথা প্রত্যেক বৈধ কাজের শুরুতে (যখন শরীয়াতের কোনো বাধা না থাকে) بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলে এর বরকত অর্জন করা মহান সৌভাগ্যের ব্যাপার।
জ্বিন থেকে জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি
◾হযরত সায়্যিদুনা সাফওয়ান বিন সুলাইম-صلى الله عليه وسلم বলেন-“মানুষের জিনিসপত্র ও পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি জ্বিনেরা ব্যবহার করে। অতএব তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কাপড় পরিধানের জন্য নেয় বা খুলে রাখো তখন যেন بسم الله শরীফ পড়ে নেয়, জ্বীনদের জন্য আল্লাহ্ তাআলার নাম মোহর স্বরূপ।” অর্থাৎ بسم الله পড়ার কারণে জ্বিনেরা ঐ কাপড়গুলো ব্যবহার করতে পারবে না।”(লুকতুল মারজান ফি আহ্কামিল জান লিস্ সূয়ূতী, ৯৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এভাবে প্রত্যেক বস্তু রাখার সময়, উঠানোর সময় بسم الله الر حمن الر حيم পড়ে নেয়ার অভ্যাস করে নেয়া উচিত। الحمد الله عزوجل দুষ্টু জ্বিনদের হাত থেকে আপনাদের জিনিসপত্র নিরাপদ থাকবে।
بسم الله শুদ্ধভাবে পাঠ করুন
بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করার সময় সঠিক মাখারিজ (হরফ সমূহের সঠিক উচ্চারণস্থল) হতে আদায় করা আবশ্যক এবং কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজ করাও আবশ্যক যে, কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকা অবস্থায় নিজ কানে শুনতে পায়। তাড়াহুড়ার মধ্যে অনেক লোক হরফ সমূহ চিবিয়ে ফেলে। জেনে বুঝে এরূপ করা নিষেধ এবং অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেলে গুনাহ হবে,অতএব তাড়াতাড়ি পড়ার অভ্যাসের কারণে যেসব লোক ভুল পড়ে থাকেন, তারা যেন নিজেকে সংশোধন করে নেন। এছাড়া যেখানে সম্পূর্ণ পড়ার কোন বিশেষ কারণ না থাকে সেখানে শুধুমাত্র بسم الله বলে নিন, তখনো সঠিক হবে।
হৈ চৈ পড়ে গেছে
◾হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ رضى الله عنه বলেন: যখন بسم الله الر حمن الر حيم অবতীর্ণ হল তখন মেঘ পূর্বদিকে ছুটে চলল, বাতাস স্তব্দ হয়ে গেল, সমুদ্র উত্তেজনায় এসে পড়ল, চতুষ্পদ জন্তু সমূহ মনোযোগ সহকারে শুনার জন্য নিজেদের কান লাগিয়ে দিল ও শয়তানদেরকে আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হল এবং আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন: “আমার সম্মান ও মহত্বের শপথ! যে বস্তুর উপর بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করা হয় আমি তাতে বরকত দান করব।” (আদ্ দুর্রুল মানসূর, ১ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা) بسم الله الر حمن الر حيم ১৯ পারার সূরা নামলের ৩০ নং আয়াতের অংশ এবং কুরআন মজীদের ১টি পূর্ণ আয়াত যা দু’টি সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।(হাল্বী কবীর, ৩০৭ পৃষ্ঠা)
"بسم الله“ শব্দের "ب" এর ব্যাপকতা
আল্লাহ্ তাআলা অনেক নবীগণ এর উপর সহীফা সমূহ ও কিতাব সমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যেগুলোর সংখ্যা মোট- ১০৪খানা। এগুলোর মধ্যে ৫০ খানা সহীফা হযরত সায়্যিদুনা শীষ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর, ৩০ খানা সহীফা হযরত সায়্যিদুনা ইদরীস على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর, ১০ খানা সহীফা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর, ১০ খানা সহীফা যেগুলো হযরত সায়্যিদুনা মূসা কলীমুল্লাহ্ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর "তাওরাত শরীফ" অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।এছাড়া ৪ খানা বড় কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে:
(১) তাওরাত শরীফ: হযরত মূসা কলীমুল্লাহ্ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর।
(২) যাবূর শরীফ: হযরত সায়্যিদুনা দাঊদ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর।
(৩) ইনজীলে মুকাদ্দাস: হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ على نبينا وعليه الصلوة والسلام এর উপর ।
(৪) কুরআনে মুবীন: রাহমাতুল্লিল আলামীন, প্রিয় নবী, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা صلى الله عليه وسلم এর উপর।(আল ইহ্সান বিতরতীবে সহীহ্ ইবনে হাব্বান, ১ম খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা। হিলিয়াতুল আওলিয়া, ১ম খন্ড, ২২২ পৃষ্ঠা)
এ সমস্ত কিতাব ও সকল সহীফার বিষয়বস্তুগুলো কুরআন মজীদে, আর সম্পূর্ণ কুরআন মজীদের বিষয়বস্তু সূরা ফাতিহা এর মধ্যে, আর সূরা- ফাতিহার পরিপূর্ণ বিষয়বস্তু بسم الله الر حمن الر حيم এর মধ্যে এবং بسم الله الر حمن الر حيم এর সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সেটার হরফ “ب" এর
মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আর এর অর্থ এটা যে, بى كان ماكان وبى يكون مايكون অর্থাৎ- যা কিছু রয়েছে তা আমারই (আল্লাহর) পক্ষ থেকে এবং যা কিছু হবে আমারই (আল্লাহর) পক্ষ থেকে হবে। (আল্ মাজালিসুস্ সানিয়্যাহ্, ৩ পৃষ্ঠা)
হুযুর (ﷺ) খাবার খাওয়ালেন।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে যেমন- নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান(ﷺ) এর ইলমে গায়ব সম্পর্কে জানা গেল তেমনিভাবে দা'ওয়াতে ইসলামীর সত্যতাও প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল, হুযুর (ﷺ) এর দরবারে গ্রহণযােগ্যতার ব্যাপারেও জানা গেলالحمد الله عزوجل
নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর (ﷺ) নিজ গােলামদেরকে সর্বদা নিজের দৃষ্টির মধ্যে রাখেন। বিপদে পড়লে সাহায্য করেন এবং ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ান।
যেমন হযরত ইমাম ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, হযরত শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ বিন নাফীস তৃনিসীرحمة الله عليه বলেন: আমি একবার মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নূরানী " রওজায় উপস্থিত হয়ে আরয করলাম: “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) !আমি ক্ষুধার্ত।” হঠাৎ চোখে ঘুম এসে গেল। ইতিমধ্যে কেউ ঘুম থেকে। জাগিয়ে তার সাথে আমাকে যাওয়ার জন্য বললেন: তাই আমি তার সাথে। তার ঘরে গেলাম। তিনি খেজুর, ঘি ও গমের রুটি সামনে পরিবেশন করে বললেন: পেট ভরে খেয়ে নিন। কেননা আমাকে আমার নানাজান, প্রিয় মাহবুবে রহমান (ﷺ) আপনার মেহমানদারী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
ভবিষ্যতেও যখনই ক্ষুধা অনুভব করবেন, তখন আমার নিকট চলে আসবেন। (হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, ২য় খন্ড, ৫৭৩ পৃষ্ঠা)
প্রত্যেক ভাষার অক্ষরের সম্মান করুন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!بسم الله الر حمن الر حيم ও অন্যান্য পবিত্র নামসমূহ এমন জায়গায় কখনাে লিখবেন না, যেখানে এগুলাের সম্মান। বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে বরং কোনাে ভাষাতেই যমিনের উপর কিছু লিখবেন না। প্রত্যেক ভাষার বর্ণমালা অর্থাৎ (ALPHABETS) এর সম্মান করা উচিত। লিখিত যে কোনাে পাপােষ (DOOR MATE) দরজার নিকট রাখবেন না, যেগুলােতে (WELL COME) ইত্যাদি লিখা থাকে। জুতা ইত্যাদিতে যদিওবা ইংরেজী ভাষার কোম্পানীর নাম লিখা থাকে, ব্যবহারের পুর্বে সেটা মুছে দেয়া উচিত।অধিকাংশ জায়নামাযে ষ্টিকার (কাগজের, কাপড়ের টুকর) সংযুক্ত থাকে, যাতে আরবী, উর্দু, বাংলা, ইংরেজী ভাষায় ষ্টিকারে কারখানার নাম লিখা থাকে আর তা প্রায়ই পা রাখার জায়গায় থাকে। এছাড়া প্লাষ্টিকের মাদুরা, লেপ ও তােয়ালে ইত্যাদিতেও প্রায়ই লিখিত ষ্টীকার সংযুক্ত থাকে। অতএব এরূপ ষ্টিকার আলাদা করে সমুদ্রে বা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া উচিত। কাঠের মধ্যে বিছানাে ফোমের গদীর ভেতরের অংশে প্রায়ই অমুক MOLTY FOAM ইত্যাদি লিখা থাকে। হায়! এমন যদি হত! কোম্পানীরা আমাদেরকে পরীক্ষায় না ফেলতাে। ফিকহার মাসআলাটি মনােযােগ সহকারে পড়ন।
যেমন- :বাহারে শরীয়াতের ১৬তম খন্ডের ২৩৭ পৃষ্ঠায় রদুল মুখতারের বরাতে লিখেছেন: “বিছানা অথবা জায়নামাযের উপর যদি কোন কিছু লিখা থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার করা না-জায়িয। এ ইবারাত (লিখা) সেগুলাের বুননের মধ্যে হােক বা নকশা অংকন করা হােক কিংবা কালি দিয়ে লিখা হােক যদিও একক হরফ (ALPHABETS) লিখা থাকে। কেননা একক হরফ (অর্থাৎ আলাদা আলাদা লিখিত অক্ষর) এরও সম্মান রয়েছে।”
"বাহারে শরীয়াত"র প্রণেতাرحمة الله عليهআরাে বলেন:
“অধিকাংশ দস্তরখানাতে ইবারত লিখা থাকে অর্থাৎ, (কোম্পানীর নাম, কবিতা বা ছন্দ লিখা থাকে) এমন দস্তরখানা ব্যবহার করা ও এগুলাের উপর খাবার খাওয়া উচিত নয়। অনেকের বালিশের উপর কবিতা বা ছন্দ লিখা থাকে। এগুলাের ব্যবহার করবেন না। যাহােক জায়নামায হােক ; কিংবা বিছানার চাদর, কার্পেট হােক বা ডেকোরেশনের মালামাল, বালিশ হােক কিংবা গদী যে বস্তুর উপরই বসা বা পা রাখার প্রয়ােজন হয় সেগুলােতে কোনাে ভাষায়ই কোনাে কিছু লিখা উচিত নয়।
মুদ্রিত বা কাগজের টুকর সেলাই করে দিবেন না
সুন্দর পরিপূর্ণ কাপের্ট (ONE PIECE CARPET) এর পিছনে সাধারণত কোম্পানীর নাম ও ঠিকানা সম্বলিত স্টিকার লাগানাে থাকে। ঐ স্টিকারে উপর পানি লাগিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ পর তুলে নিন। আরবী লিখা সমূহের বিশেষভাবে সম্মান করা উচিত। কেননা ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর পবিত্র ভাষা আরবী, কুরআনে পাকের ভাষা আরবী, আর জান্নাতে জান্নাতবাসীদের ভাষাও আরবী হবে। আরবী লিখা সমূহ খাবারের প্যাকেটেই হােকনা কেন তা ফেলে দেয়া অথবা আল্লাহর পানাহ! ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা বড়ই বেয়াদবী ও হতভাগ্যেরও কাজ।
নম্বর সমূহের সম্পর্ক
অনেক সময় স্যান্ডেলের উপর যদি কিছু লিখা নাও থাকে তবুও নাম্বার সমূহ অবশ্যই অংকিত থাকে। সেগুলাের উপর পা রাখতেও আহলে মুহাব্বতের অন্তর সাড়া দেয়না। কেননা প্রত্যেকটি নাম্বারে কোনাে না কোনাে সম্পর্ক নিহিত থাকে। যেমন- বেজোড় সংখ্যার ব্যাপারে “আহসানুল বিআ” কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় দোয়া করার বা পূনরুক্তি সম্পর্কে রয়েছে: আল্লাহ তাআলা এক এবং এ সংখ্যাটি বেজোড়। আর বেজোড় (অর্থাৎ এক, তিন, পাঁচ, সাত ইত্যাদি) কে আল্লাহ্ তা'আলা ভালবাসেন।
তম্মধ্যে “পাঁচ” উত্তম এবং “সাত"সংখ্যাটি আল্লাহর খুবই প্রিয়। আর কমপক্ষে “তিন”। (উদ্দেশ্য এই, যখনই দোয়া করবেন, তখন সেটাকে সাত বার পূনরাবৃত্তি করুন অথবা পাঁচবার নতুবা কমপক্ষে তিনবারই পূনরাবৃত্তি করে নিন।) অনুরূপ জোড় সংখ্যা গুলােতেও সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই এর সম্পর্ক যেমন ২রা মুহাররামূল হারামে হযরত সায়্যিদুনা মারুফ কারখী (رحمة الله) এবং ২রা জীলকদ সাদরুশ শরীয়া (বাহারে শরীয়াতের লিখক) (رحمة الله) -এর ওরশের দিন। চার এর সম্পর্ক বা চার খলীফার عليهم الرضوان সাথে। যার অন্তরে তাঁদের প্রতি ভালবাসা রয়েছেان شاءالله عزوجل, তিনি উভয় জগতে সফলতা লাভ করবেন।“ছয়" এর সম্পর্ক ৬ই রাজবুল মুরাজ্জাবে গরীবে নেওয়াজ (رحمة الله) এর ওরশ শরীফের সাথে। আট এর সম্পর্ক ৮টি জান্নাত এর সাথে। রয়েছে এবং ৮ মুহাররামুল হারামে শেরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা হাশমাত আলী খান (رحمة الله) এর ওরশের দিন। ১০" এর সম্পর্ক আশূরা অর্থাৎ ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুশ শুহাদা, সুলতানে কারবালা, ইমামে হােসাইন (رحمة الله) এর শাহাদাতের দিন, কোরবানীর ঈদ আর ; ১১, ১২ এর সম্পর্কের ব্যাপারেতাে আশিকগণের মধ্যে চারিদিকে খুশী ও আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।
পবিত্র পাতা সমূহ সমুদ্রের পানিতে ডুবানাের নিয়ম
যে সৌভাগ্যবান মুসলমান পবিত্র লিখা সমূহের সম্মান পূর্বক পত্রিকা ও পবিত্র কাগজপত্র এবং মােটা আর্ট পেপার ইত্যাদি মাটিতে দেখে উঠিয়ে নেন এবং সেগুলােকে সমুদ্রের মাঝখানে কিংবা গভীর নদীতে ডুবিয়ে দেন তিনি বাস্তবে ঈর্ষার পাত্র।
অগভীর সমুদ্রে বা নদীতে পবিত্র পাতা সমূহ ডুবাবেন না, কেননা প্রায়ই ভেসে তা কিনারায় এসে যায়।
সমুদ্রের বা নদীর পানিতে ডুবানাের পদ্ধতি হল; পবিত্র পাতা সমূহ কোন খালী থলে বা চটের ছােট খালী বস্তার মধ্যে কয়েক স্থানে অবশ্যই ছিদ্র : করে দিবেন যেন দ্রুত তাতে পানি ভর্তি হয়ে যায় এবং তা তলায় চলে যায়। যদি এরূপ ছিদ্র করে না দেন তাহলে ভারী ওজনের কোন পাথর ঢুকিয়ে দিবেন কেননা ভিতরে পানি না গেলে তা ভাসতে ভাসতে কিনারায় এসে পৌঁছলে আবার অনেক সময় টোকাই কিংবা বিধর্মী লােকেরা বস্তা! সংগ্রহের লােভে পবিত্র পাতা সমূহ কিনারাতেই ছিড়ে স্তুপ বানিয়ে দেয়।
আর এতে এমন ভীষণ বেয়াদবী হয় যে শুনতেই আশিকদের কলিজা কেঁপে উঠবে! পবিত্র পাতা সমূহ ভর্তি বস্তা গভীর সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা ইত্যাদির জন্য মুসলমান মাঝির সাহায্য নিতে পারেন। তবে বস্তায় ছিদ্র সর্বাবস্থায় করতে হবে ।
পবিত্র পাতা সমূহ দাফন করার নিয়ম:
পবিত্র পাতা সমুহ দাফনও করতে পারেন। এটার নিয়মাবলীও জেনে নিন। বাহারে শরীয়াতের ১৬ খন্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় ফতােওয়ায়ে আলমগীরীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন: যদি কুরআন শরীফ পুরাতন হয়ে যায়। আর তিলাওয়াত করার উপযােগী না থাকে এবং আশংকা থাকে এর পাতাগুলাে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কোন পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় দাফন করে দেয়া উচিত এবং দাফন করার জন্য (গর্ত কিবলার দিকের অংশকে এতটুকু খনন করুন যেন, সম্পূর্ণ পবিত্র পাতা সমূহ সংকুলান হয়ে যায় এমনভাবে কবর তৈরী করা। উচিত যেন কুরআনের উপর মাটি না পড়ে বা গর্তে রেখে তার উপর কাঠের ছাউনি দিয়ে মাটি ঢেলে দিন যাতে কুরআনের উপর মাটি না পড়ে। মনে রাখবেন! কুরআন শরীফ পুরাতন হয়ে গেলে তা জ্বালানাে যাবে না”।
২৯টি মাদানী ফুল।
(প্রথম ১০টি মাদানী ফুল তাফসীরে নঈমী ১ম পারা, ৪৪ নং পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)
১)بسم الله الر حمن الر حيم কুরআনে পাকের সম্পূর্ণ আয়াত কিন্তু কোন সূরার অংশ নয় বরং সূরা সমূহের মধ্যে পৃথকের জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে। এজন্য নামাযে এটা নিম্ন স্বরেই পাঠ করা হয়। তবে যে হাফিয তারাবীতে সম্পূর্ণ কুরআনে পাক খতম করেন, তিনি অবশ্যই যে কোন সূরার সাথে একবারبسم الله الر حمن الر حيم উচ্চস্বরে পাঠ করবেন।
(২)সূরা তাওবা ব্যতীত অন্যান্য প্রতিটি সূরাبسم الله الر حمن الر حيم দ্বারা : আরম্ভ করবেন। যদি সূরা তাওবা হতেই তিলাওয়াত আরম্ভ করেন। তাহলে তিলাওয়াতের জন্যبسم الله الر حمن الر حيمপাঠ করে নিন।
(৩)ফতােওয়ায়ে শামীতে রয়েছে, হুক্কা পান করার সময়, দুর্গন্ধযুক্ত বস্তুসমূহ (কাঁচা পিয়াজ ও রসুন ইত্যাদি) খাওয়ার সময়بسم الله الر حمن الر حيم না পড়া উত্তম।
(৪) টয়লেটে গিয়েبسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করা নিষেধ।
৫) নামাযী যখন নামাযে কোন সূরা পাঠ করেন তখন প্রথমে নিম্নস্বরেبسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করা মুস্তাহাব। |
(৬) যে মর্যাদাপূর্ণ কাজبسم الله الر حمن الر حيمব্যতীত শুরু করা হয় তার মধ্যে বরকত হয় না।
(৭) যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানাে হয়। তখন যিনি নামাবেন তিনি এটা পাঠ করবেন:بسم الله الر حمن الر حيم জুমা, উভয় ঈদ, বিবাহ ইত্যাদির খুতবা /২ / ৩ দ্বারা শুরু করবেন অর্থাৎ (শুরুতে)بسم الله الر حمن الر حيم নিম্নস্বরে পাঠ করবেন। অতঃপর যখন কুরআন পাকের আয়াত আসবে তখন খতীব উচ্চস্বরে بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করুন।।
(৯) পশু-পাখী যবেহ করার সময়بسم الله - পাঠ করা (অর্থাৎ আল্লাহু তাআলার নাম নেয়া) ওয়াজিব। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করা হয় (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া না হয়) তাহলে পশু মৃত সাব্যস্ত হবে। যদি ভুলে না নেয়া হয়, তবে পশু হালাল হিসেবে গণ্য হবে।
(১০) যবেহে ইতিরারী যেমন শিকারী তীর বা বর্শা ইত্যাদি ধারালাে বস্তু দিয়ে যদি শিকার করে আর এসব বস্তু নিক্ষেপ করার সময়بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করে নেয় তাহলে পশু (পাখী) যদি তার নিকট পৌঁছতে পৌঁছতে মরেও যায় তবুও তা হালাল হবে।
অনুরূপভাবে যদি পালিত পশু আয়ত্ব থেকে চলে যায় যেমন গরু কুপের মধ্যে পড়ে গেল অথবা উট পালিয়ে গেল। তখন যদি بسم الله الر حمن الر حيم পড়ে তীর বা বর্শা অথবা তলােয়ার মেরে দেয়া হয় তাহলে সেগুলাে হালাল হবে।بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করে লাঠি বা পাথর মারলে কিংবা বন্দুক দিয়ে গুলি করলে বা ছােট পাথর খন্ড ছুড়ে মারলে এবং তাতে বন্য পশু বা পাখী মারা গেলে তাহলে তা (খাওয়া) হারাম কেননা এটা রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণে নয় বরং আঘাত পাওয়াতে মরে গেছে। তবে যদি আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় হাতে এসে যায় তাহলে শরীয়াত অনুযায়ী যবেহ করলে হালাল হয়ে যাবে।
যে বন্য পশু বা পাখী আয়ত্বের মধ্যে রয়েছে সেটা হালাল হওয়ার জন্য যবেহ করা আবশ্যক অর্থাৎ আল্লাহর নাম নিয়ে সেটাকে নিয়মানুযায়ী যবেহ করতে হবে।
(১১) হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ বিন আলী (رحمة الله) বলেন: যে ব্যক্তি নিয়মিত ভাবে ৭ দিন পর্যন্ত প্রতিদিনبسم الله الر حمن الر حيم ৭৮৬ বার (শুরু ও শেষে ১বার করে দরূদে পাক) পাঠ করবেان شاءالله عزوجلতার প্রত্যেক উদ্দেশ্য পূরণ হবে। এখন উদ্দেশ্য কোন মঙ্গল লাভের জন্য হােক বা কোন অমঙ্গল দূর হওয়ার জন্য কিংবা ব্যবসা ঠিকভাবে চলার জন্য হােক। (শামসুল মাআরিফ, অনুদিত, ৭৩ পৃষ্ঠা)।
(১২) যে কোন ব্যক্তি শােয়ার সময়بسم الله الر حمن الر حيم
২১ বার (শুরু ও শেষে একবার দরূদ শরীফ) পাঠ করে নেয়। ঐ রাতে শয়তানের অনিষ্ট, চুরি, হঠাৎ মৃত্যু ও প্রত্যেক প্রকারের বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (প্রাগুক্ত, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৩) যে ব্যক্তি কোন অত্যাচারির সম্মুখেبسم الله الر حمن الر حيم বার (পূর্বে ও পরে ১ বার দরূদ শরীফ) পাঠ করবে, ঐ জালিমের অন্তরে পাঠকারীর প্রভাব সৃষ্টি হবে এবং জালিমের অনিষ্ট থেকে সে রক্ষা পাবে। (প্রাগুক্ত, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৪) যে ব্যক্তি সূর্য উঠার সময় সূর্যের দিকে মুখ করেبسم الله الر حمن الر حيم ৩০০ বার ও দরূদ শরীফ ৩০০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিক দান: করবেন, যেটা তার কল্পনাতেও আসবে না এবং (প্রতিদিন পাঠ করাতে)ان شاءالله عزوجل
এক বৎসরের মধ্যে আমীর ও ধর্নাঢ্য হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৫) স্মরণ শক্তিহীন ব্যক্তি যদিبسم الله الر حمن الر حيم ৭৮৬ বার (শুরু ও শেষে ১ বার দরুদ শরীফ সহ) পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে এ পানি পান করে নেয়, তাহলেان شاءالله عزوجلতার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং যা শুনবে তা স্মরণে থাকবে। (প্রাগুক্ত, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৬) যদি অনাবৃষ্টি হয়, তখনبسم الله الر حمن الر حيم - ৬১ বার (শুরু ও শেষে ১ বার দরূদ শরীফ সহ) পাঠ করে অতঃপর দোয়া করলেان شاءالله عزوجلবৃষ্টি হবে। (প্রাগুক্ত, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৭)بسم الله الر حمن الر حيم কাগজে ৩৫ বার লিখে (পূর্বে ও পরে ১ বার দরূদ শরীফ) ঘরে টাঙ্গিয়ে দিলে শয়তান ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং খুব বরকত হবে। যদি দোকানে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় তাহলেان شاءالله عزوجلব্যবসায় খুব উন্নতি হবে। (প্রাগুক্ত ,৭৩, ৭৪ পৃষ্ঠা)।
(১৮) ১ লা মুহাররামুল হারামেبسم الله الر حمن الر حيم ১৩০ বার লিখে বা লিখিয়ে যে কেউ নিজের কাছে রাখবেন অথবা প্লাষ্টিকে মুড়িয়ে, মােটা প্লাষ্টিক বা চামড়া দিয়ে সেলাই করে হাতে, গলায় পরিধান করবেন। (কোন প্রকার ধাতব পদার্থের খােলের ভিতর কোন ধরনের তাবীজ পড়বেন না। এটার মাসআলা সমূহ পূর্বেই আলােচনা করা হয়েছে)। ان شاءالله عزوجل সারাজীবন ঐ ব্যক্তির বা তার ঘরে কারাে কোন প্রকারের ক্ষতি সাধিত হবে না। (প্রাগুক্ত, ৭৪ পৃষ্ঠা)
(১৯) যে মহিলার বাচ্চা বাঁচে না, তিনিبسم الله الر حمن الر حيم ৬১ বার লিখে বা লিখিয়ে নিজের নিকট রাখবেন (ইচ্ছা করলে তাতে বাতাস ঢােকার জন্য প্লাষ্টিকে মুড়ে কাপড়, মােটা প্লাষ্টিক বা চামড়া দিয়ে সেলাই করে গলায় কিংবা হাঁতে বেঁধে নিতে পারেন) ان شاءالله عزوجل বাচ্চা জীবিত থাকবে। (প্রাগুক্ত, ৭৪ পৃষ্ঠা)
(২০) بسم الله الر حمن الر حيم ৭০ বার লিখে মৃতের কাফনে দিয়ে দিন। ان شاءالله عزوجل মুনকার নকীর এর প্রশ্নের জবাব সহজ হবে। (উত্তম হল, মৃতের চেহারার সামনে কিবলার দিকের দেয়ালে মিহরাবের ন্যায় তাক বানিয়ে তাতে রাখুন। এর সাথে আহাদনামা ও মৃতের পীরের শাজারা ইত্যাদিও রেখে দিন)। (প্রাগুক্ত, ৭৪ পৃষ্ঠা)
(২১) بسم الله الر حمن الر حيم কোনাে ক্বারী বা আলিম সাহিবকে পাঠ করে শুনাবেন। যদি হরফ সঠিকভাবে উচ্চারণস্থল হতে আদায় না হয় তাহলে শিখে নিন অন্যথায় লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
(২২) লিখার সময় যবর, যের, পেশ ইত্যাদি লাগানাের প্রয়ােজন নেই। যখনই পরিধান করা, পানি পান করা বা টাঙ্গানাের জন্য তাবীয। হিসেবে কোন আয়াত কিংবা ইবারত লিখবেন, তখন বৃত্তাকার হরফ। সমূহের বৃত্ত খালি রাখতে হবে। যেমন- الله এর মধ্যে ه এর এবং رحمنও رحيمএ م দু'টোতে এর বৃত্ত খালি রাখবেন।
(২৩) কাপড় খােলার সময় بسم الله الر حمن الر حيم পড়ে নিলে জ্বীনেরা সতর দেখতে পারবেনা। (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলা, কৃত ইবনে সুন্নী, ৮ পৃষ্ঠা) কামরার দরজা, জানালা, আলমারীর দরজা, যতবার খেলবে বা লাগাবে ততবার এমনকি পােষাক-পরিচ্ছদ বাসনপত্র ইত্যাদি বস্তু সমূহ রাখা ও নামানাের সময় প্রত্যেকবার بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করার : অভ্যাস গড়ে নিন। ان شاءالله عزوجل দুষ্ট প্রকৃতির জ্বীন আপনার ঘরে প্রবেশ করা, চুরি করা ও আপনার জিনিসপত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
(২৪) যানবাহন (গাড়ি ইত্যাদি) পিছনে গেলে কিংবা তাতে ধাক্কা লাগলে بسم الله الر حمن الر حيم শরীফ পাঠ করুন।
(২৫) মাথায় তেল দেয়ার পূর্বে - ০২ / ৩ পড়ে নিন।
অন্যথায় ৭০ জন শয়তান মাথায় তেল দেয়াতে অংশগ্রহণ করে নেয়।
(২৬) ঘরের দরজা বন্ধ করার সময় স্মরণ করে بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করে নিন।ان شاءالله عزوجل শয়তান ও দুষ্ট জ্বীন ঘরে প্রবেশ করতে পারবেনা। (সহীহ বুখারী, ৬ খন্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা)
(২৭) রাতে পানাহারের পাত্র بسم الله الر حمن الر حيم শরীফ পাঠ করে ঢেকে দিন। যদি ঢাকার জন্য কোন বস্তু না থাকে। তাহলে بسم الله الر حمن الر حيم বলে সেগুলাের মুখে শলা ইত্যাদি রেখে দিন। (প্রাগুক্ত) মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে, বছরে একটি রাত এমনও আসে, যে রাতে ওয়াবা (রােগ বালা ও মহামারী) অবতীর্ণ হয়। যে সব তৈজষপত্র ও পানির পাত্র ইত্যাদির মুখ বন্ধ থাকে না, যদি ঐ দিক দিয়ে এটি অতিক্রম করে তখন তা এতে নেমে পড়ে। (মুসলিম শরীফ, ১১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২১১৪)
(২৮) শােয়ার পূর্বে بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করে ৩ বার বিছানা ঝেড়ে নিন। ان شاءالله عزوجل কষ্টদায়ক বস্তু, জীব-জন্তু হতে নিরাপত্তা লাভ হবে।
(২৯) ব্যবসা বাণিজ্যে বৈধ লেন-দেনের সময় অর্থাৎ যখন কারাে কাছ থেকে নেন তখন بسم الله الر حمن الر حيم- পাঠ করুন এবং যখন কাউকে দেন। তখনও بسم الله الر حمن الر حيم পড়ুন ان شاءالله عزوجل খুব বরকত হবে।
ইয়া রব্বে মুস্তফা (ﷺ) আমাদেরকে بسم الله الر حمن الر حيم এর বরকত সমূহ দ্বারা সৌভাগ্যশালী করুন এবং প্রত্যেক নেক ও বৈধ কাজের শুরুতে পাঠ করার তাওফীক দান করুন।امين بجاه النبى الا مين صلى الله عليه وسلم
৭টি ঘটনাঃ
(১) কাঠুরিয়া কিভাবে ধনী হল?
একজন কাঠুরিয়া প্রতিদিন নদী পার হয়ে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনত এবং তা বিক্রি করে নিজের সন্তান-সন্ততির ভরণ পােষণ করত। যেহেতু নদীর উপর পুল তার ঘর থেকে অনেক দূরে ছিল তাই তার আসা যাওয়ায় বেশী সময় ব্যয় হয়ে যেত। এভাবে সে টাকা পয়সার দিক থেকে ধনী হতে পারছিল না। একদিন সে মসজিদের ভিতর এক মুবাল্লিগের বয়ানে بسم الله الر حمن الر حيم এর মহান ফযীলত সমূহ শুনলাে। মুবাল্লিগের এ বয়ান তার মাথায় বসে গেল,بسم الله শরীফের বরকতে বড়। বড় সমস্যা সমাধান হতে পারে।
সুতরাং যখন জঙ্গলে যাওয়ার সময় হল তখন পুলের নিকট যাওয়ার পরিবর্তে সে بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করে নদীতে নেমে গেল আর চলতে চলতে সহজেই নদীর ওপারে জঙ্গলে পৌঁছে গেল। কাঠ কাটার পর সে পূনরায় এভাবে আমল করল। بسم الله الر حمن الر حيم এর বরকত সমূহ প্রকাশ পেতে লাগল আর কিছুদিনের মধ্যেই সে ধনী হয়ে গেল। (শামসুল ওয়াইযীন হতে সংকলিত)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এসব কিছু পরিপূর্ণ বিশ্বাসের ফল। যদি বিশ্বাসে কমতি হয়, তাহলে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন হয় না। “পরিপূর্ণ বিশ্বাস" সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহম্মদ গাযালী (رحمة الله) সূরা ইউসুফ এর তাফসীরে অত্যন্ত শিক্ষণীয় একটি ঘটনা উদ্ধৃত করেন। তাহল- একবার বাগদাদ শরীফে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে
লােকদের নিকট ১টি দিরহামের আবেদন করল। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা ইবনে সাম্মাক (رحمة الله) বললেন: তােমার কোন্ সূরাটি ভাল ভাবে মুখস্থ আছে? সে বলল: “সূরা ফাতিহা।” তিনি বললেন: “একবার পাঠ করে সেটার সাওয়াব আমার নিকট বিক্রি করে দাও। আমি এর পরিবর্তে আমার সমস্ত সম্পদ তােমাকে দিয়ে দেব! আবেদনকারী বলতে লাগল: হযরত! আমি দারিদ্রতার কারণে ১টি দিরহাম আবেদন করতে এসেছি। কুরআন বিক্রি করতে আসিনি। এটা বলে সেই আবেদনকারী কবরস্থানের দিকে চলে গেল। এদিকে বৃষ্টি আরম্ভ হয়। এমনকি শিলাবৃষ্টি হতে লাগল। সে তৎক্ষণাৎ একটি ছাদের নীচে আশ্রয় নেয়ার জন্য আসল।
সেখানে সবুজ পােষাক পরিহিত একজন আরােহী পূর্ব থেকেই উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন: “তুমি সূরা ফাতিহা বিক্রি করতে অস্বীকার করেছিলে?” সে বলল: “জ্বী হ্যাঁ।” তখন ঐ আরােহী তাকে দশ হাজার দিরহামের একটি থলে দিয়ে বলল: “এগুলাে খরচ কর। শেষ হয়ে গেলেان شاءالله عزوجلএই পরিমাণ আরাে দেবাে।" আবেদনকারী জিজ্ঞাসা করল আপনি কে? আরােহী বললেন: আমি তােমার বিশ্বাস। এটা বলে আরােহী ; চলে গেলেন।" (ইমাম গাযালী কৃত সূরা ইউসুফের তাফসীর হতে সংকলিত, ১৭, ১৮ পৃষ্ঠা)
এ থেকে ঐ সকল মানুষের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যারা ভিক্ষা করার জন্য তিলাওয়াত করে, টাকা-পয়সা ও পানাহারের লােভে খতমে কুরআনের মাহফিল সমূহে এবং যিকির ও না'ত এর ইজতিমাতে অংশগ্রহণ করে। আর টাকা পাওয়ার আগ্রহে তারাবীতে খতমে কুরআনে পাক শুনিয়ে থাকেন। আল্লাহ্ আমাদেরকে ইখলাস ও বিশ্বাস এর অমূল্য সম্পদ দিয়ে সৌভাগ্যশালী করুন।امين بجاه النبى الا مين صلى الله عليه وسلم
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যিই ইখলাস অনেক বড় সম্পদ। যে অর্জন করতে পেরেছে, সে উভয় জাহানে সফলকাম। আশিকানে রাসূলদের সাথে মাদানী কাফেলা সমূহে সুন্নাতে ভরা সফর করুন।
আমলের মধ্যে ইখলাস সৃষ্টি করার “মাদানী চিন্তা ধারা" তৈরী ই হবে আর যখন আমলে ইখলাস সৃষ্টি হয়ে যাবে। তখন কাঙ্খিত বস্তু নিজেই এসে আবেদনকারীর নিকট ধরা দিবে।
জলওয়ে খুদ আ-য়ি তালিবে দীদার কি তরফ
“ক্যাসেট ইজতিমাতে” দীদারে মুস্তফা (ﷺ)
সাহরায়ে মদীনা, মদীনাতুল আওলিয়া, মূলতানে দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শেষে: আশিকানে রাসূলদের অসংখ্য মাদানী কাফেলা সুন্নাতের প্রশিক্ষণ লাভের জন্য শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে রওয়ানা হয়ে থাকে।
যেমন: একজন আশিকে রাসূলের বর্ণনার সারমর্ম এখানে নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করছি। ১৪২৩ হিজরীর তিনদিন ব্যাপী সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শেষে আশিকানে রাসূলদের একটি মাদানী কাফেলা ১২ দিনের জন্য জিলালায়্যা পাঞ্জাব পৌঁছে। মাদানী কাফেলার রুটিন অনুযায়ী যখন ক্যাসেট ইজতিমা হল তখন ক্যাসেটের সুন্নাতে ভরা বায়ান শুনে একজন আশিকে রাসূলের মধ্যে ভাবাবেগের সৃষ্টি হয় এবং তিনি ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন। এমনকি বেহুশ হয়ে গেলেন। যখন হুশ এল তখন খুবই আনন্দিত অবস্থায় ছিলেন।
তিনি বললেন:الحمد الله عزوجل আমি গুনাহগারের উপর বড় দয়া হয়েছে এবং নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর দীদারের সৌভাগ্য নসীব হয়ে গেল।
দ্বিতীয় দিন পূনরায় ক্যাসেট ইজতিমা হল, তার মধ্যে একই ধরণের অবস্থা সৃষ্টি হল। এবার স্বপ্নে হুযুর (ﷺ) এর যিয়ারত এমনভাবে নসীব হল, যে মাদানী কাফেলার সকল মুসাফিরও সেখানে উপস্থিত ছিল।
কুমন্ত্রণা: অনেকে স্বপ্ন শুনিয়ে মানুষদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে নেয়। অতএব যে কেউ স্বপ্নে যিয়ারতের দাবী করলে, তাতে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। কমপক্ষে তার কাছ থেকে শপথ নেয়া উচিত।
কুমন্ত্রণার প্রতিকার: সহীহ বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদীস:
(انما الا عمال با النيات)
অর্থাৎ “আমলের কর্মফল নিয়্যত সমূহের উপর নির্ভরশীল। তাই যদি কেউ দুনিয়াবী উচ্চপদ ও মর্যাদার আসক্তিতে লােকদেরকে নিজের স্বপ্ন শুনিয়ে বেড়ায়, নিজের প্রসিদ্ধি ও বাহ্ বাহ্ চায় তাহলে সত্যিই সে অপরাধী। আর যদি ভাল নিয়্যতে শুনায়, যেমন- দাওয়াতে ইসলামীর! সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলাতে সৌভাগ্যক্রমে যদি কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে আর তা এজন্য শুনায়, এ যুগের লােকেরা তা থেকে আল্লাহর রাস্তায় সফর করার উৎসাহ পাবে এবং তারা যেন নিশ্চিত হতে পারে দাওয়াতে ইসলামী আহলে হক (সত্যপন্থী) ও আশিকানে রাসূলদের সুন্নাতে ভরা সংগঠন।
আর এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তারা যেন নিজের ঈমান হিফাযতের সম্বল সংগ্রহ করতে পারে। তাহলে এ নিয়্যত প্রশংসনীয় এবং এ নিয়্যতে স্বপ্ন বর্ণনাকারীর সাওয়াব মিলবে।
এছাড়া নেয়ামতের বর্ণনা স্বরূপ অর্থাৎ নেয়ামতের চর্চা করার নিয়্যতে যদি বর্ণনা করে তবুও জায়িয। তবে যদি রিয়ার ভয় থাকে তাহলে নিজের নাম প্রকাশ করা উচিত নয় আর এতেই অধিকতর নিরাপত্তা রয়েছে। যা হােক অন্তরে নিয়্যতের অবস্থা আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন।
মুসলমানের ব্যাপারে বিনা কারণে কু-ধারণা পােষণ করা
ইহা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। কু-ধারণা পােষণ করার ব্যাপারে কুরআনে পাক ও হাদীস শরীফে তিরস্কার করা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
يا يها الذ ين امنوا جتنبوا كثير امن الظن ان بعض الظن اثم
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তােমরা বহুবিধ অনুমান থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কোনাে কোনাে অনুমানে গুনাহ হয়ে। যায়। (পারা- ২৬, সুরা-হুজুরাত, আয়াত-১২)
হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে: “কু-ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা কুধারণা চরম মিথ্যা কথা” (সহীহ বুখারী শরীফ, খন্ড ৬ষ্ঠ, ১৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫১৪৩)
আমার আক্বা আ'লা হযরত ফতােওয়ায়ে রযবীয়া শরীফে উদ্ধৃত করেন, হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ (عليه السلام) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে বললেন: “তুমি কি চুরি করনি?" সে বলল: “আল্লাহর শপথ! আমি চুরি করিনি।” এটা শুনে তিনি (عليه السلام) বললেন: “সত্যিই তুমি চুরি করনি। আমার চোখ ধোঁকা খেয়েছে।”
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে মুসলমানের সম্মান সম্পর্কে খুব ভালভাবে অনুমান করা যেতে পারে, শরীয়াতের সীমার মধ্যে থেকে মুসলমানের দোষ-ক্রটি গােপন করা উচিত। এমন যেন না হয় বিনা কারণে অন্যের উপর কু-ধারণার দরজাকে খুলে দিয়ে, তাকে মিথ্যাবাদী ও চাপাবাজ ইত্যাদি সাব্যস্ত করে, নিজের আখিরাতকে বিনষ্ট করে, নিজেকে আল্লাহর পানাহ্! জাহান্নামের হকদার বানিয়ে নেয়।
মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করার শাস্তি
মনে করুন! যদি কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বানিয়েও বলে, তবে সেটার দায়িত্ব তার নিজের উপরই বর্তাবে। আর সে কঠিন গুনাহগার ও জাহান্নামের আগুনের হকদার হবে। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে, তাকে কিয়ামতের দিন যবের দুটি দানার মধ্যে গিঁট লাগানাের শাস্তি দেয়া হবে এবং সে কখনাে গিট লাগাতে পারবেনা।"
(সহীহ বুখারী, ৮ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭০৪২)
চিন্তা ভাবনা করা ব্যতীত যারা কথা বলে তারা সাবধান অন্য একটি হাদীসে পাকে রয়েছে, “এক ব্যক্তি এমন কথা বলে, যার মধ্যে সে চিন্তা ভাবনা করেনা (অথচ এরূপ কথা বার্তা, গীবত, দোষ অন্বেষণ অথবা মনগড়া স্বপ্ন ইত্যাদি হারামের উপর প্রতিষ্ঠিত) তাহলে সে এরূপ কথার কারণে জাহান্নামে এতটুকু পরিমাণ থেকেও অধিক (নীচে) পতিত হবে যতটুকু পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব রয়েছে।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৪৭৭)
স্বপ্ন বর্ণনাকারীকে শপথ করতে বাধ্য করা শরয়ী ওয়াজিব নয়। আর যে আল্লাহর পানাহ! মিথুক হবে, সে হতে পারে, মিথ্যা শপথও করে নিবে।
কুমন্ত্রণা: এটা সঠিক মনে হচ্ছে, মানুষের নিকট বর্ণনা করার পরিবর্তে স্বপ্ন গােপন করে রাখা উচিত।
কুমন্ত্রণার প্রতিকার: কোনটা সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়, এটা বুযুর্গানে দ্বীন ও আমাদের চেয়ে অধিক ভাল জানতেন। ভাল স্বপ্ন বর্ণনা করার ব্যাপারে শরীয়াত নিষেধ করেনি। তাহলে আমরা বাধা প্রদান করার কে? কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও বুযুর্গানে দ্বীনের কিতাব সমূহে উল্লেখযােগ্য সংখ্যক স্বপ্ন সম্পর্কে আলােচনা রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী (رحمة الله) রিসালায়ে কুশাইরিয়্যাতে" রুয়াল কাওম' নামক অধ্যায়ের ৩৬৮ হতে ৩৭৭ পৃ: পর্যন্ত আওলিয়ায়ে কিরামের ৬৬ টি স্বপ্ন উদ্ধৃত করেছেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) ইহইয়াউল উলুমের ৪র্থ খন্ডের ৫৪০ হতে ৫৪৩ পর্যন্ত মানা-মা-তুল মাশায়িখ নামক অধ্যায়ে ৪৯ টি স্বপ্ন উদ্ধৃত করেছেন।
এছাড়াও হায়াতে আ'লা হযরত (মাকতুবাতে নববীয়াহ্ গাঞ্জ বখশ রােড লাহাের হতে মুদ্রিত) এর ৪২৪ হতে ৪৩২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আমার আকা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনাে মিল্লাত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাফিজ, আল ক্বারী আশ শাহ আহমদ রযা খান (رحمة الله) এর ১৪ টি স্বপ্ন তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন। এর মধ্য থেকে ১টি স্বপ্ন প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপন করছি।
আ’লা হযরত (رحمة الله) এর স্বপ্ন
সায়্যিদী আ'লা হযরত (رحمة الله) দুহাতে মুসাফাহা (করমর্দন) এর বৈধতা সম্পর্কে ৪০ পৃষ্ঠার ১টি বইصفا ءح اللجين فى كون تصا فح بكفى اليدين এ নামে লিখেছেন। সেটার ৩য় পৃষ্ঠায় নিজের ঐ স্বপ্ন বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন, যাতে তাঁর সাথে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম কাযী খান (رحمة الله) এর সাক্ষাৎ হয়েছে। এছাড়া মুসলমানদেরকে কুমন্ত্রনা সমূহ হতে বাঁচানাের জন্য এবং আরাে অধিকহারে জানানাের জন্য এ রিসালা মােবারাকাতে মানুষের সামনে স্বপ্ন বর্ণনা করার দলীল সমূহ প্রদান করেছেন।
যেমন- উল্লেখিত রিসালাতে লিখেছেনঃ
সহীহ হাদীস হতে প্রমাণিত, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) স্বপ্নকে মহান নির্দেশ হিসেবে জানতেন এবং এটাকে (স্বপ্নকে) শুনা, জিজ্ঞাসা করা ও বর্ণনা করাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
সহীহ বুখারী ইত্যাদিতেও বর্ণিত আছে:
হযরত সামুরাহ বিন জুন্দাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ফযরের নামায আদায়ের পর উপস্থিত লােকদের নিকট জিজ্ঞাসা করতেন আজ রাতে কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ? কেউ দেখে থাকলে আরয করতেন: আর নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন (ﷺ) এর (তাবীর) ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩৮৬)
সায়্যিদী আ'লা হযরত (رحمة الله) আরাে বলেন: আহমদ, বুখারী ও তিরমিযী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন; তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রাব্বুল ইয্যত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা তার নিকট ভাল মনে হয়, তাহলে সেটা আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে তার উচিত এ জন্য আল্লাহ্ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা এবং মানুষের সামনে (তা) বর্ণনা করা।"
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, বন্ড ২য়, পৃষ্ঠা ৫০২, হাদীস নং-৬২২৩) |
সুসংবাদ অবশিষ্ট রয়েছে
সায়্যিদী আ'লা হযরত (رحمة الله) উল্লেখিত রিসালাতে বর্ণনা করেন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নুবুওয়াত সমাপ্ত হয়ে গেছে। এখন আমার পর আর নবুওয়াত পাবেনা কিন্তু সুসংবাদ পাবে।” (আরয করা হল) সেটা কি? (ইরশাদ করলেন) “ভাল স্বপ্ন, মানুষ নিজে দেখবে কিংবা তার জন্য অন্য কেউ দেখবে।”
(তাবারানী, আল মু'জামূল কবীর, ৩য় খন্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩০৫১)
নিজের ব্যাপারে ভাল স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিকে পুরস্কার প্রদানঃ
সায়্যিদী আ'লা হযরত (رحمة الله) আরাে বলেন: এটাও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত, যে এমন স্বপ্ন দেখেছে যাতে তার কথার সমর্থন পাওয়া যায়, এর জন্য তাঁরা খুশী হয়ে, যে স্বপ্ন দেখেছে তার সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে: আবু জামরাহ যাবঈ (رضي الله عنه) তামাত্তু হজ্বে স্বপ্ন দেখেন যা দ্বারা (ফিকহের মাসআলাতে) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর পক্ষে সমর্থন লাভ হল। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) (ঐ মােবারক স্বপ্ন শুনে নিজের সম্পদ হতে) তার জন্য ভাতা নির্ধারণ করে দিলেন এবং ঐ দিন থেকে তাঁকে নিজের সাথে আসনে বসাতে আরম্ভ করেন। (সহীহ বুখরী হতে সংকলিত, ২য় খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৫৬৭)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার। দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ইমাম বুখারীর আম্মাজানের স্বপ্নঃ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা অন্যদেরকে স্বপ্ন শুনানাের ব্যাপারে দুটি সহীহ বুখারী শরীফের হাদীস লক্ষ্য করেছেন। সহীহ বুখারী শরীফের প্রণেতা হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) অত্যন্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে হাদীস শরীফ সংকলন করেছেন। তিনি (رحمة الله) নিজেই বলেন:الحمد الله عزوجل আমি সহীহ বুখারীতে প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার) হাদীস শরীফ আলােচনা করেছি। প্রতিটি হাদীস শরীফ লিখার পূর্বে গােসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করে নিতাম।" তাঁর সম্মানীত পিতা হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইসমাঈল (رحمة الله) অত্যন্ত নেককার লােক ছিলেন এবং তাঁর সম্মানীতা আম্মাজানও নেককার মহিলা ও মুসতাজাবুদ দোয়া (অর্থাৎ যাঁর দোয়া কবুল হয় এমন মহিলা) ছিলেন। ' ছােট বেলায় হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। তাঁর আম্মাজান (رحمة الله) এ দুঃখে কান্না করতেন এবং বিনীতভাবে দোয়া করতে থাকতেন। এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর ভাগ্যের তারা চমকে উঠল, অন্তরের চক্ষু খুলে গেল। স্বপ্নে দেখলেন, হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (عليه السلام) আসলেন আর বলতে লাগলেন: “আপনি আপনার সন্তানের চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য দোয়া করে যাচ্ছেন। আপনাকে মােবারকবাদ, আপনার দোয়া কবুল হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা আপনার ছেলের দৃষ্টি শক্তি পূর্বের মত করে দিয়েছেন।” যখন ভাের হল তখন দেখা গেল হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর চক্ষুদ্বয় দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে।
(তাফহীমূল বুখারী হতে সংকলিত, ১ম খন্ড, ৪ পৃষ্ঠা, কৃত: শাইখুল হাদীস আল্লামা গােলাম রাসূল রযবী)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ফয়যানে রাসুলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী)
(২) এক ইহুদী ও তার স্ত্রীর চমৎকার ঘটনা
এক ইহুদী পুরুষ একজন ইহুদী নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে তার প্রেমে এরূপ পাগলের মত হয়ে গেল, পানাহারের প্রতি খেয়াল থাকতাে না। পরিশেষে হযরত সায়্যিদুনা আতাউল আকবর (رحمة الله) এর বরকতপূর্ণ খিদমতে উপস্থিত হয়ে নিজের অবস্থার কথা বর্ণনা করল। তিনি একটি কাগজেبسم الله الر حمن الر حيم লিখে দিলেন আর বললেন:“এটা গিলে ফেললা এই আশাতে, যাতে আল্লাহ্ তাআলা তােমাকে এ ব্যাপারে শান্তি দান করেন অথবা তােমাকে এর মাধ্যমে মেহেরবানী করেন।” যখন উক্ত ইহুদী এটা গিলে ফেললাে ব্যস! গিলতেই তার অন্তরে মাদানী পরিবর্তন সৃষ্টি হয়ে গেল। অতঃপর সে আরয করল: “ওহে আতা! আমি ঈমানের মিষ্টতা পেয়েছি। আর আমার অন্তরে নূর প্রকাশ পেয়ে গেছে। আমি ঐ নারীর (প্রেম) ভুলে গেছি। আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন। হযরত সায়্যিদুনা আ'তা (رحمة الله) তার প্রতি ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন আর সে بسم الله এর বরকতে মুসলমান হয়ে গেল। অপরদিকে ঐ ইহুদী নারী যখন তার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনল, তখন হযরত সায়্যিদুনা আতাউল আকবর (رحمة الله) এর মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল: “ওহে মুসলমানদের ইমাম! আমিই সে নারী যার কথা ইসলাম গ্রহণকারী ইহুদী আপনাকে বলেছিল। আমি গত রাতে স্বপ্ন দেখেছি, এক আগন্তুক আমার নিকট এসে বলতে লাগল: “যদি তুমি জান্নাতে নিজের ঠিকানা দেখতে চাও, তাহলে সায়্যিদুনা আতাউল আকবর (رحمة الله) এর সমীপে উপস্থিত হও। তিনি তােমার ঠিকানা বলে দিবেন।” তাই আমি আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছি। বলুন; “জান্নাত কোথায়?” তিনি বললেন: “যদি জান্নাত লাভের ইচ্ছা থাকে তাহলে তােমাকে প্রথমে তার দরজা খুলতে হবে, এরপরই তুমি (আপন ঠিকানার) দিকে যেতে পারবে।”
মেয়েটি আরয করল: “আমি এর দরজা কিভাবে খুলতে পারব?” তিনি । বললেন:بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ কর।" সেبسم الله শরীফ পাঠ করল। “ব্যস! পাঠ করতেই তার অন্তরে মাদানী পরিবর্তন সৃষ্টি হল সুতরাং সে বলতে লাগল: ওহে আতা (رحمة الله) আমি আমার অন্তরে নূর পেয়ে গেছি এবং আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টি জগৎ কে দেখে নিয়েছি। আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন।" তিনি (رحمة الله) তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন। তখনبسم اللهশরীফের বরকতে সেও মুসলমান হয়ে গেল। অতঃপর নিজের ঘরে ফিরে ঐ রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়ল। তখন স্বপ্নে জান্নাতে প্রবেশ করল আর সে জান্নাতের মহল ও গম্বুজ দেখল এবং এর মধ্য থেকে একটি গম্বুজের উপর লিখা ছিল:
بسم الله الر حمن الر حيم لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
সে এটা যখন পাঠ করল তখন একজন আহবানকারী বলছিল, “ওহে পাঠকারীনি! যা তুমি পাঠ করেছ, আল্লাহ্ তাআলা সব কিছু তােমাকে দান করে দিয়েছেন।" মেয়েটি জেগে উঠল এবং আরয করল: হে আল্লাহ! আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছিলাম। তুমি পুনরায় আমাকে তা থেকে বের করে দিয়েছাে। ওহে আল্লাহ! আমাকে আপন পরিপূর্ণ কুদরতের ওসীলায় দুনিয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি দান কর।” যখন সে দোয়া শেষ করল তখন ঘরের ছাদ ভেঙ্গে তার উপর পড়ল আর সে শহীদ হয়ে গেল। আর আল্লাহ্ তাআলাبسم الله الر حمن الر حيمএর বরকতে তাঁর উপর দয়া প্রদর্শন করলেন। (কালইউবী, ঘটনা ২৬, ২২,২৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার রহমত অনেক অনেক বড়। তিনি নিজ দয়া ও অনুগ্রহে মানুষকে তাঁর ওলীর আস্তানায় পাঠিয়ে। অনেক বড় হতভাগা ব্যক্তির তাকদীর পরিবর্তন করে দেন।الحمد الله عزوجل কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর ছােট বড় প্রত্যেকে আল্লাহর ওলীদের গােলামীর জন্য গর্বিত। আউলিয়ায়ে কিরামদের গােলামও যখন ইখলাসের সাথে আশিকানে রাসুলদের মাদানী কাফেলা সমূহে সফর করে নেকীর দাওয়াত দেন তখন অনেক সময় কাফির পর্যন্ত ইসলামের ছায়াতলে এসে যায়। যেমন- মাদানী কাফেলার একটি বাহার লক্ষ্য করুন।
একজন খ্রীষ্টানের ইসলাম গ্রহণ
খানপুর পাঞ্জাবের একজন দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগের বর্ণনা, “বাবুল মদীনা করাচীতে সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য আগমনকারী মাদানী কাফেলার সাথে আমারও এলাকায়ী দাওরা করার সৌভাগ্য অর্জন হল। একটি দর্জির দোকানের বাইরে লােকজনকে একত্রিত করে আমরা নেকীর দাওয়াত দিচ্ছিলাম। যখন নেকীর দাওয়াত শেষ হল তখন ঐ দোকানেরই ।
একজন কর্মচারী যুবক বলল: “আমি খ্ৰীষ্টান। তবে আপনাদের নেকীর দাওয়াত আমার হৃদয়ে গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছে। অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে ইসলামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নিন।الحمد الله عزوجلসে মুসলমান হয়ে গেল।
(৩) বীর বুযুর্গ
এক কাফির ডাকাত কোন এক অভিজাত মহলে প্রবেশ করল। সেখানে একজন বৃদ্ধ বুযুর্গ ও তাঁর যুবতী মেয়ে ছাড়া কেউ ছিলনা। সে ইচ্ছা করল, ঐ বৃদ্ধ বুযুর্গ কে শহীদ করে দিয়ে তার মেয়েকে ধন-দৌলত সহ আয়ত্ব করে নিবে। সুতরাং সে আক্রমণ করে বসলাে। কিন্তু ঐ বুযুর্গ এ বীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ ঐ ডাকাত যুবককে একেবারে চিৎ করে ফেলে দিলেন। কিন্তু ডাকাত কোন রকমে মুক্ত হয়ে পুনরায় আক্রমণ করে বসলাে। বৃদ্ধ বুযুর্গ পূনরায় তাকে কাবু করে ফেললেন! এভাবে কুস্তি চলতে লাগল প্রতিবার ঐ বয়ােঃবৃদ্ধ বুযুর্গ সফলতা অর্জন করছিলেন। ডাকাত অনুভব করল, ঐ বুযুর্গ আস্তে আস্তে কিছু পড়ছে, সে জিজ্ঞাসা করল, “কি পড়ছেন?” তিনি নিজের বীরত্বের রহস্য ফাঁস করতে গিয়ে মুচকি হেসে বললেন: আমি খুবই দূর্বল লােক। যখন بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করি তখন আল্লাহ্ তাআলা আমাকে তােমার উপর জয়ী করে দেন। যখন ঐ কাফির ডাকাত এটা শুনলাে; তখন তার অন্তরে মাদানী পরিবর্তন চলে আসলাে এবং বলতে লাগল: যে ধর্মে এর এমন মর্যাদা তাহলে জানিনা ঐ ধর্মের কিরূপ শান-শওকত হবে। অতএব সে بسم الله الر حمن الر حيم শুনার বরকতে মুসলমান হয়ে গেল। তাদের পরস্পরের সাথে গভীর সম্পর্ক হল এবং ঐ বুযুর্গ এর ইন্তিকালের পর তাঁর অভিজাত মহল ও সমস্ত ধন সম্পদ এ নওমুসলিম পেয়ে গেলেন এবং ঐ বুযুর্গ এর মেয়ের সাথেও তার বিয়ে হয়ে গেল।(আল ফাতিহা, ১৬৫ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঐ বুযুর্গ নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওলী ছিলেন এবং بسم الله الر حمن الر حيم এর বরকতে তিনি ঐ কাফিরের উপর জয়ী হলেন যা তাঁর কারামত ছিল, আর পরিশেষে بسم الله الر حمن الر حيم এর বরকতে কাফির ডাকাতের অন্তরে ইসলামের মহান নেয়ামত লাভ হয়েছিল। এখন একজন بسم الله الر حمن الر حيم শরীফের দিওয়ানীর ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন আর আন্দোলিত হােন।।
(৪) কূপ থেকে থলে কিভাবে বের হল?
একজন নেক্কার মহিলা ছিলেন। যিনি কথায় কথায় بسم الله الر حمن الر حيم পাঠ করতেন। তাঁর স্বামী যে মুনাফিক ছিল। সে তাঁর এ অভ্যাসের কারণে খুবই জ্বলতাে। পরিশেষে সে এ সিদ্ধান্ত নিল, আমি আমার স্ত্রীকে এমন অপদস্ত করব যেন সে চিরদিন তা মনে রাখে। তাই স্বামী তার স্ত্রীকে ১টি থলে দিয়ে বলল: “ভালভাবে রাখিও।" স্ত্রী সে থলেটি হিফাযত করে রাখলাে। স্বামী সুযােগ বুঝে থলেটি সরিয়ে নিয়ে
নিজের বাড়ির কূপে ফেলে দিল যাতে পাওয়ার সুযােগই না থাকে। এরপর সে তাঁর কাছ থেকে থলেটি চাইল। ঐ নেককার মহিলা থলে রাখার জায়গায় আসলাে এবং যে মাত্র بسم الله الر حمن الر حيم বলল তখন আল্লাহ্ তাআলা জিব্রাঈল এ এ কে নির্দেশ দিলেন, দ্রুতগতিতে যাও এবং থলেটি ঐ জায়গায় রেখে দাও। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল (عليه السلام) মুহূর্তের মধ্যে কূপ থেকে থলেটি বের করে যথাস্থানে রেখে দিলেন। যখন মহিলাটি তা নেয়ার জন্য হাত বাড়ালেন তখন থলেটি যে অবস্থায় রেখেছিলেন ঐ অবস্থায়ই পেলেন। স্বামী থলেটি পেয়ে খুবই অবাক হল এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট সে সত্যিকার অন্তরে তাওবা করল।(কালইউবী, ঘটনা-১১, ১১, ১২ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এসব কিছুই بسم الله الر حمن الر حيم এর বাহার। যে ব্যক্তি উঠা বসা সহ প্রত্যেক, ছােট বড় যে কোন জায়েয ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের পূর্বে পাঠ করতে থাকে, বিপদের সময় তাঁকে অদৃশ্য থেকে সাহায্য করা হয়।
(৫) ফিরআউনের মহল
ফিরআউন নিজেকে খােদা দাবী করার পূর্বে একটি মহল তৈরী করেছিল এবং তার বাইরে দরজার উপর লিখিয়েছিল। যখন সে নিজেকে খােদা দাবী করল তখন হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালীমুল্লাহ (عليه السلام) তাকে আল্লাহর উপর ঈমান আনার দাওয়াত দিলেন, তখন সে অবাধ্যতা প্রদর্শন করল। হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালীমুল্লাহ (عليه السلام) আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আরয করলেন: ইয়া আল্লাহ! আমি বারবার তাকে তােমার দিকে আহ্বান করছি, কিন্তু সে অবাধ্যতা থেকে বিরত হচ্ছে না। আমিতাে তার মধ্যে মঙ্গলের কোন লক্ষণ দেখছি না। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন: “ওহে মুসা তুমি তাকে ধ্বংস করে দিতে চাও। তুমি তার কুফরকে দেখছাে আর আমি আমার নিজের নামকে দেখছি, যা সে নিজের মহলের দরজার উপর লিখে রেখেছে! (তাফসীরে কবীর, ১ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা)
ঘরের হিফাযতের জন্য
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের উচিত যেন আমরাও আমাদের ঘরের দরজার উপরبسم الله الر حمن الر حيم লিখে নিই। প্রত্যেক প্রকারের দুনিয়াবী বিপদ আপদ থেকে নিরাপত্তা লাভ হবে।
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন: “যে ব্যক্তি নিজের ঘরের বাইরের দরজার (MAIN GATE) উপরبسم الله الر حمن الر حيم লিখে নিয়েছে, সে (দুনিয়ায়) ধ্বংস হতে নির্ভয় হয়ে গেছে, যদিও বা সে কাফির হােক না কেন। তাহলে ঐ মুসলমানের কি অবস্থা হবে যে সারাজীবন আপন হৃদয়ের আয়নায় এটা লিখে রাখে।” (তাফসীরে কবীর, ১ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা)
صلى الله تعالى على محممد
(৬) আপনি মানুষ না জ্বীন?
কিতাবুন নাসায়িহের মধ্যে বর্ণিত আছে: প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা (رضي الله عنه) এর দাসী একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করল: হুযুর! আপনি সত্যি করে বলুন, আপনি কি মানুষ না জ্বিন?"তিনি জবাবে বললেন: আমি মানুষ। দাসী বলতে লাগল: “আপনাকে তাে মানুষ মনে হচ্ছে না। কেননা আমি অনবরত ৪০ দিন পর্যন্ত আপনাকে বিষপান করাচ্ছি। কিন্তু আপনার চুল পর্যন্ত বাঁকা হয়নি। তিনি বললেন: “তুমি কি জানাে না, যে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলার যিকির করে কোন বস্তু তার ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আমি ইসমে আযমের সহিত আল্লাহ তাআলার যিকির করি।" জিজ্ঞাসা করল: সে ইসমে আযম কোনটি? তিনি বললেন: আমি প্রত্যেকবার পানাহারের পূর্বে এ দোয়া পাঠ করে নিই:بسم الله الذى لا يضر مع اسمه شىء فى الارض ولافى السما ءو هو السميع العليم
("বিসমিল্লাহ্ হিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়া ইসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালাফিস সামা—য়ি ওয়াহুয়াস সামিউল আ'লীম।)
অনুবাদ: “আল্লাহ্ তাআলার নামে আরম্ভ করছি, যাঁর নামের বরকতে যমীন ও আসমানের কোন জিনিষই ক্ষতি করতে পারে না এবং তিনি সর্ব শ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।”
এরপর তিনি (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা ; করলেন: তুমি আমাকে কেন বিষ পান করাচ্ছাে? সে আরয করল: “আপনার প্রতি আমার বিদ্বেষ ছিল। এ জবাব শুনতেই তিনি (رضي الله عنه) বললেন: তুমি আজ থেকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যে মুক্ত। আর তুমি আমার সাথে যা কিছু করেছ তাও ক্ষমা করে দিলাম।
(হায়াতুল হাইওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৩৯১ পৃষ্ঠা)
মা-নিন্দে শাময়ে তেরি তরফ লাও লগী রহে,
দে লুফে মেরী জান কো ছুজ ও গুদাজ কা।
সাহাবায়ে কিরামের رضى الله عنه মহা মর্যাদার কথা কি বলব! এ সকল সম্মানীত ব্যক্তিরা কুরআনের নির্দেশ:
ادفع با لتى هى احسن
(কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে শ্রোতা! মন্দকে ভাল দ্বারা প্রতিহত কর!) (পারা-২৪, সুরা-হামীম সাজদাহ, আয়াত-৩৪) এর বাস্তব নমুনা ছিলেন। বার বার বিষদানকারী দাসীকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে ক্ষমা করে দিলেন।।
এই ঘটনার সাথে সম্পর্ক রাখে এরকম আরাে একটি ঘটনা লক্ষ্য করুন।
صلى الله تعالى على محل
(৭) বিষ মিশ্রিত খাবার
হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসলিম খাওলানী (رحمة الله) এর এক দাসী তাঁর প্রতি হিংসাবশত বিষ দিতে থাকে কিন্তু এর কোন প্রভাব তাঁর উপর পড়েনি। দীর্ঘদিন যাবত বিষ প্রয়ােগ করার পর দাসী তাকে বলতে লাগল, “দীর্ঘদিন ধরে আমি আপনাকে বিষ দিয়ে আসছি। কিন্তু আপনার উপর এর কোনাে প্রভাব পড়ছে না! তিনি বললেন: “এরূপ কেন করেছ?"
সে বলল: “এজন্য যে, আপনি (رحمة الله) খুবই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন।” তিনি ইরশাদ করলেন: আমি পানাহারের পূর্বে : "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।" পাঠ করে নিই।"
(এর বরকতে বিষ হতে নিরাপত্তা লাভ করে থাকি) তিনি তাকে আযাদ (মুক্ত) করে দিলেন। (কালইউবী, ঘটনা-৬৪, ৫২ পৃষ্ঠা)
বে-নাওয়া মুফলিছ ও মুহতাজ গদা কোন্? কে মাই,
হাহিবে জুদো করম ওয়াহফ হে কিছ কা? তেরা। (যওকে নাত)
কুমন্ত্রণাঃ বর্ণনা ও ঘটনা সমূহ থেকে এটায় প্রকাশ পাচ্ছে بسم الله শরীফ পাঠ করে যদি বিষও খেয়ে নেয়া হয় তাহলে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না কিন্তু আমরা এত বড় ঝুঁকি কিভাবে গ্রহণ করব? কেননা আমাদের বাস্তব ধারণা এই, যদিও বা বিসমিল্লাহ পাঠ করেও কোন সুস্বাদু খাবার খেয়ে নেয়া হয়, তবুও পেট খারাপ হয়ে যায়।
কুমন্ত্রণার প্রতিকার: “গুলি" দ্বারা বাঘকেও মারা যায় যদি উন্নত মানের বন্দুক দিয়ে ভালভাবে ফায়ার (FIRE) করা হয়। অনুরূপভাবে। বুঝে নিন, ওযীফা ও দোয়া সমূহ গুলির ন্যায় আর পাঠকারীর মুখ বন্দুকের ন্যায়। দোয়াতাে ঐগুলােই কিন্তু আমাদের মুখ সাহাবা (রা.) ও আউলিয়া (রহ.) এর মত নয়। যে মুখে প্রতিদিন মিথ্যা, গীবত, চুগলখােরী, গালি-গালাজ, অন্যের মনে কষ্ট দেয়া ও দূর্ব্যবহার জারী আছে, তাতে ঐ প্রভাব কোত্থেকে আসবে? আমরা দোয়াতাে করি। কিন্তু যখন সমস্যা আসে তখন বুযুর্গানে দ্বীনের নিকট গিয়েই দোয়ার আবেদন করে থাকি, কেন? এ জন্য যে, প্রত্যেকের মনের মধ্যে এ ধারণা গেঁথে আছে, পবিত্র মুখ থেকে বের হওয়া দোয়া অধিক ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। নিঃসন্দেহে "বিসমিল্লাহ" পাঠ করে খালিদ বিন ওয়ালীদ (رضي الله عنه) নিঃসংকোচে বিষ পান করে নেন। তাঁদের জবান পবিত্র, তাঁদের অন্তর পবিত্র, তাঁদের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব গুনাহ থেকে পবিত্র। অতএব আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র নাম এর বরকতে বিষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। অনুরূপভাবে হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা ও সায়্যিদুনা আবু মুসলিম খুলানী (رحمة الله) আপন পবিত্র মুখে আল্লাহ তাআলার পবিত্র নাম নিতেন। তাই বিষ প্রভাবমুক্ত হয়ে যেত। অন্যথায় বিষ বিষই। তা মানুষকে কোন ভাবেই ছেড়ে দেয় না। এটা এ ভীতিকর ঘটনা থেকে বুঝার চেষ্টা করুন।
“কিতাবুল আযকিয়া”তে বর্ণিত আছে: একটি হজের কাফেলা সফররত অবস্থায়ঃ একটি ঝর্ণার নিকট পৌঁছল। জানা গেল, এ জায়গায় এক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তারের ঘর রয়েছে। তাদের নিকট যাওয়ার জন্য তারা এ বাহানা বের করল, জঙ্গলের একটি লাকড়ী দিয়ে নিজেদের একজন সঙ্গীর পায়ের গােড়ালীতে আঁচড় লাগিয়ে দিল, এতে রক্ত রঞ্জিত হয়ে গেল। অতঃপর তাকে নিয়ে ঐ ঘরের দরজায় পৌছ (এভাবে) আহ্বান করল: “এখানে কি সাপে কাটার চিকিৎসা করানাে সম্ভব?” আওয়াজ শুনে একটি ছােট্ট মেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসল। সে পায়ের গােড়ালীর ক্ষত স্থান গভীরভাবে দেখে বলল: “একে সাপে কাটেনি বরং যে বস্তুর আঁচড় তার লেগেছে সেটার উপর হয়তাে কোনাে নর সাপ প্রস্রাব করে গেছে। এখন এ ব্যক্তি আর বাঁচবে না। যখন সূর্যোদয় হবে তখন তার ইন্তিকাল হয়ে যাবে।" সুতরাং তাই হল, সূর্য উঠতেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। (হায়াতুল হাইওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৩৯১ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত)
হার শায় ছে ঈয়া মেরে ছানে কি ছানাআতি,
আলমে হব আ-ঈনাে মে হে আ-ঈনা ছায কা। (যকে নত)
ইয়া রব্বে মুস্তফা (ﷺ) আমাদেরকে বার বার "বিসমিল্লাহ" পাঠ করার সৌভাগ্য নসীব কর, গুনাহ সমূহ থেকে ' মুক্তি দান করে আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদেরকে মদীনা শরীফে সবুজ গম্বুজের ছায়ায় প্রিয় মাহবুব (ﷺ) এর জালওয়াতে শাহাদত ও জান্নাতুল বাকীতে দাফন এবং জান্নাতুল ফিরদাওসে তােমার মাদানী হাবীব (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য দান কর। তােমার প্রিয় মাহবুব(ﷺ) সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দাও।
রাসুলে পাক (ﷺ) এর দরবারে মাহমুদ গজনবী'র গ্রহণযােগ্যতা
হযরত সুলতান মাহমুদ গযনবী (رحمة الله) এর সমীপে একব্যক্তি উপস্থিত হল আর আরয করল: দীর্ঘদিন ধরে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন (ﷺ) এর দীদারের প্রত্যাশী ছিলাম। ভাগ্যক্রমে গত রাতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ হয়েছে। প্রিয় নবী (ﷺ) কে আনন্দিত অবস্থায় দেখে আরয করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ) আমি এক হাজার দিরহামের ঋণ গ্রস্থ। যা আদায়ে অক্ষম। আর ভয় পাচ্ছি, যদি এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করি তাহলে ঋণের বােঝা আমার মাথায় থেকে যাবে। আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করলেন: মাহমুদ সুবুক্তগীনের নিকট যাও। সে তােমার ঋণ পরিশােধ করে দিবে।" আমি আর করলাম। তিনি আমাকে কিভাবে বিশ্বাস করবেন? যদি এর জন্য কোন প্রমাণাদি প্রদান করেন, তাহলে দয়ার উপর দয়া হবে। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন: তার নিকট গিয়ে বলবে, “ওহে। মাহমুদ তুমি রাতের প্রথম ভাগে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) বার আর পুনরায় ঘুম থেকে উঠে রাতের শেষভাগে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) বার দরূদ পাঠ কর।” এ কথাটি বললে সে তােমার কর্জ পরিশােধ করে দিবে।” সুলতান মাহমুদ (رحمة الله) যখন মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর রহমতে ভরা পয়গাম শুনলেন।তখন কাঁদতে লাগলেন আর এ কথার সত্যতা স্বীকার করে তার কর্জ পরিশােধ করে দিলেন এবং ১০০০ (এক হাজার) দিরহাম অতিরিক্ত প্রদান করলেন। উয়িরগণ ও অন্যান্যরা আশ্চর্য হয়ে আরয করলেন: আলীজাহ! এ ব্যক্তি একটি অসম্ভব কথা বলল আর আপনিও এটার সত্যায়ন করলেন।অথচ আমরা আপনার সাথেই থাকি। আপনিতাে কখনাে এত পরিমাণ দরূদ শরীফ পাঠই করেননা আর না কোন মানুষ সম্পূর্ণ রাতে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) বার দরূদ শরীফ পাঠ করতে পারে। সুলতান মাহমুদ (رحمة الله) বললেন: তােমরা ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি ওলামায়ে কিরাম থেকে শুনেছি, “যে ব্যক্তি ১০ হাজারী দরূদ শরীফ একবার পাঠ করে নেয়, মূলত সে ১০ হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করল।" আমি ৩ বার রাতের প্রথম ভাগে এবং ৩ বার রাতের শেষ ভাগে ১০ হাজারী দরুদ শরীফ পাঠ করে নিই। এ জন্য আমার ধারণা ছিল, আমি প্রতিরাতে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) বার দরূদ শরীফ পাঠ করি। যখন এ সৌভাগ্যবান ব্যক্তি প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মকবুল (ﷺ) এর রহমত ভরা সংবাদ দিল, আমার এ ১০ হাজারী দরূদ শরীফের সত্যায়ন হয়ে গেল আর কান্না করা এ খুশীতে ছিল। ওলামায়ে কিরাম এর বর্ণনা সঠিক সাব্যস্ত হল, নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) এটার উপর স্বাক্ষী দিলেন।" (তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতে ওসমানিয়াহ, কোয়েটা হতে মুদ্রিত)
আল্লাহর রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
দশ হাজারী দরূদ শরীফ
اللهم صلى على سيد نا محمد ما اختلف الملو ان وتعا قب العصر ان وكر الجد يد ان واستقل الفر قد ان وبلغ رو حه وارو اح اهلبيته منا التحية والسلام وبار ك وسلم عليه كثيرا
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! প্রিয় নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ প্রেরণ কর। যতদিন পর্যন্ত দিন আবর্তন করতে থাকে আর পর্যায়ক্রমে সকাল ও সন্ধ্যা আসতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে রাত-দিন আসতে থাকে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি তারকা সমুন্নত থাকে এবং আমাদের পক্ষ থেকে তাঁর (ﷺ) ও আহলে বাইত (রা.) এর পবিত্র রূহসমূহে সালাম পৌঁছিয়ে দাও আর বরকত দান কর এবং তাঁদের উপর খুব বেশি সালাম প্রেরণ কর।
চল্লিশটি রূহানী চিকিৎসা
দরূদ শরীফের ফযীলত হযরত শায়খ আহমদ ইবনে মানসূর (رحمة الله) এর যখন ওফাত হল, তখন সিরায় শহরের কোন এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, তিনি (رحمة الله) সীরাযের জামে মসজিদের মেহরাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন তাঁর শরীরে উন্নতমানের জান্নাতী পোষাক শােভা পাচ্ছিলাে। আর তাঁর মাথায় মুকুট সজ্জিত ছিল। স্বপ্ন দ্রষ্টা লােকটি তাঁর অবস্থা জিজ্ঞাসা করলেন: তখন তিনি | বললেন: “আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আমাকে দয়া করেছেন এবং আমাকে তাজ পরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করল: ‘কি কারণে?' তিনি বললেন: আমি নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করতাম। আর এ আমল কাজে এসে গেল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার জন্য, যিনি সমস্ত বিশ্ববাসীর প্রতিপালক।
(আল কওলুল বদী, ২৫৪ পৃষ্ঠা)
প্রতিটি ওয়াজিফার শুরু ও শেষে একবার করে দরূদ শরীফ পাঠ করে নিন। ফলাফল প্রকাশ না হওয়া অবস্থায় অভিযােগের পরিবর্তে নিজের অসতর্কতার কারণে দুর্ভাগ্য মনে করুন এবং আল্লাহ্ তাআলার হিকমতের প্রতি দৃষ্টি রাখুন।
১.هوالله الر حيم যে প্রত্যেহ নামাযের পর ৭ বার পাঠ করবে, ان شاءالله عزوجل শয়তানের ক্ষতি হতে বেঁচে থাকবে এবং তার ঈমানের সাথে মৃত্যু নছীব হবে।
২.يا مليك যে গরীব ব্যক্তি প্রত্যেহ ৯০ বার পাঠ করবে, ان شاءالله عزوجل দরিদ্র অবস্থা হতে মুক্তি লাভ করবে।
৩.يا قدوس যে কেউ সফর অবস্থায় এ ওয়াযিফা পড়তে থাকবে, ان شاءالله عزوجل ক্লান্তি বা অবসাদ হতে নিরাপদ থাকবে।
৪. يا سلام ১১১ বার পাঠ করে অসুস্থ ব্যক্তির উপর ফুক দেয়াতে আরােগ্য লাভ হবে।
৫.يا مهيمن ": যে কোন চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তি প্রত্যেহ ২৯ বার পাঠ করে নিবে, ان شاءالله عزوجل তার দুশ্চিন্তা দূর হবে।
(৬) يا مهيمن ": প্রত্যেহ ২৯ বার পাঠকারী ان شاءالله عزوجل প্রত্যেক বিপদ-আপদ হতে নিরাপদ থাকবে।
(৭) يا عزيز "৪১ বার, বিচারক বা অফিসার ইত্যাদির নিকট (জায়িয উদ্দেশ্য পূরনের জন্য) যাওয়ার পূর্বে পাঠ করে নিন, ان شاءالله عزوجل ঐ বিচারক বা অফিসার দয়ালু হয়ে যাবে।
(৮) يا متكبر ": প্রতিদিন ২১ বার পাঠ করে নিন, ভয়-ভীতিপূর্ণ স্বপ্ন দেখে থাকলে ان شاءالله عزوجل এটার বরকতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবে না। (চিকিৎসার সময় হতে আরােগ্য লাভ হওয়া পর্যন্ত)
(৯) يا متكبر": ১০ বার স্ত্রীর সাথে “মিলন" করার পূর্বে পাঠকারী ان شاءالله عزوجل নেককার সন্তানের পিতা হবে।
(১০) يا بارئ : ১০ বার, যে কেউ প্রত্যেক জুমা (শুক্রবারে) পড়ে নিবে, ان شاءالله عزوجل তার পুত্র সন্তান হবে।
(১১) يا قهار ": ১০০ বার, যদি কোন বিপদ আসে তবে পাঠ করুন ان شاءالله عزوجل বিপদ দূর হয়ে যাবে।
(১২) يا وهاب ": যে প্রত্যেহ ৭ বার, পাঠ করবে,ان شاءالله عزوجل সে মুস্তাহাবুদ দাওয়াত হয়ে যাবে। (অর্থাৎ তার প্রত্যেক দোয়া কবুল হবে)।
(১৩) يا فتاح ”: ৭০ বার, প্রত্যেহ যে ফজর নামাযের পর দু'হাত সিনা অর্থাৎ বুকের উপর রেখে পাঠ করবে, ان شاءالله عزوجل তার অন্তরের মরিচা ও ময়লা দূর হবে।
(১৪) يافتاح ": ৭ বার, যে প্রতিদিন (দিনের যে কোন সময়) পাঠ করবে, ان شاءالله عزوجل তার অন্তর আলােকিত হবে।
(১৫) يا قا بض ياباسط ": ৩০ বার, যে প্রতিদিন পাঠ করবে, সে ان شاءالله عزوجل শত্রুর উপর বিজয় লাভ করবে।।
(১৬) “يارافع ": ২০ বার, যে প্রতিদিন পাঠ করবে, ৬৯'এ তার উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
(১৭) “ يابصير ": ৭ বার, যে কেউ প্রত্যহ আসরের সময় (অর্থাৎ আসর শুরুর সময় হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত যে কোন সময়) পাঠ করে নিবে, ان شاءالله عزوجل আকস্মিক মৃত্যু বরণ করা হতে নিরাপদ থাকবে।
(১৮) “ياسميع: ১০০ বার, যে প্রত্যেহ পাঠ করবে ও পাঠকালে কথা-বার্তা বলবেনা এবং পাঠ করে দোয়া করবে, ان شاءالله عزوجل যা প্রার্থনা করবে তা পাবে।
(১৯) يا حكيم ": ৮০ বার, যে প্রত্যেহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর পাঠ করবে, ان شاءالله عزوجل কারাে মুখাপেক্ষী হবে না।
(২০) “يا جليل ": ১০ বার পাঠ করে যে নিজের কোন সম্পদ ও মালপত্র এবং টাকা-পয়সা বা মূল্যবান বস্তুর ইত্যাদির উপর ফুক দেয়, ان شاءالله عزوجل এটি চুরি হওয়া হতে নিরাপদ থাকবে।
(২১) “ يا شهيد ": ২১ বার, যে সকালে (সূর্য উঠার আগে আগে) অবাধ্য ছেলে-মেয়ের কপালে হাত রেখে আসমানের দিকে মুখ করে পাঠ করবে, তার ছেলে-মেয়ে নেককার ও বাধ্যগত হবে।
(২২) “ياوكيل": ৭ বার, যে প্রতিদিন আসরের সময় পাঠ করে নিবে, ان شاءالله عزوجل বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা হতে নিরাপত্তা লাভ করবে।
(২৩) يا حميد: ৯০ বার, যার মন্দ কথা বলার অভ্যাস যায় না, সে পাঠ করে কোন খালি পেয়ালা বা গ্লাসে ফুক দিয়ে দেয়। প্রয়ােজন অনুযায়ী সেটা দিয়ে পানি পান করুন, ان شاءالله عزوجل অশ্লীল কথা বলার অভ্যাস দূর হয়ে যাবে। (একবার ফুক দেয়া গ্লাস বছরের পর বছর ব্যবহার করা যাবে)।
(২৪) يا محصى ": ১০০০ বার, যে কেউ প্রত্যেক জুমার রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে) পাঠ করে নিবে,ان شاءالله عزوجل কবর ও কিয়ামতের শাস্তি হতে নিরাপদ থাকবে।
(২৫) “يا محيى”: ৭ বার পাঠ করে পেট ফাঁপা, পেট বা যে কোন স্থানে ব্যথা হােক অথবা শরীরের কোন অঙ্গ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে, নিজের উপর ফুক দিয়ে দিন, ان شاءالله عزوجل উপকার হবে। (চিকিৎসার সময় হতে আরােগ্য লাভ পর্যন্ত কমপক্ষে ১ বার)
(২৬) “يا محيى-يا مميت": ৭ বার, যে প্রতিদিন পাঠ করে নিজের (শরীরের) উপর ফুঁক দেয়, ان شاءالله عزوجل (তাকে) যাদু ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।
(২৭) “ياواجد": যে কেউ খাবার খাওয়ার সময় প্রত্যেক গ্রাসের (পূর্বে) পাঠ করতে থাকবে, ان شاءالله عزوجل ঐ খাবার তার পেটে নূর | ; হবে এবং রােগ দূর হয়ে যাবে।।
(২৮) “ ياماجد ": ১০ বার, পাঠ করে শরবতের উপর ফুক দিয়ে যে পান করে নিবে, ان شاءالله عزوجل সে (কঠিন) রােগে আক্রান্ত হবে না।
(২৯) “يا واحد ": ১০০১ বার, যার একাকী অবস্থায় ভয় লাগে, তবে একাকী অবস্থায় পাঠ করে নিন, ان شاءالله عزوجل তার অন্তর হতে ভয় ভীতি দূর হয়ে যাবে।
(৩০) يا قادر"যে অযুর মধ্যে প্রত্যেক অঙ্গ ধােয়ার সময় পাঠ করার অভ্যাস করে নেয়, ان شاءالله عزوجل শত্রু তাকে কু-পথে পরিচালিত করতে পারবে না।
(৩১) “يا قادر": ৪১ বার, বিপদ এসে গেলে পাঠ করে নিন,ان شاءالله عزوجل বিপদ দূর হয়ে যাবে।
(৩২) “يا مقتدر": ২০ বার, যে প্রতিদিন পাঠ করে নিবে, ان شاءالله عزوجل সে রহমতের ছায়ায় থাকবে।
৩৩) يا مقتدر: ২০ বার, যে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে পাঠ করে নিবে, তার সকল কাজে আল্লাহ্ তাআলার সাহায্য সাথে থাকবে।
৩৪) يااول"১০০ বার, যে প্রতিদিন পাঠ করে নিবে,ان شاءالله عزوجل তার স্ত্রী তাকে ভালবাসবে।
(৩৫) “يامانع يا معطي": ২০ বার, স্ত্রী অসন্তুষ্ট হলে স্বামী, আর স্বামী অসন্তুষ্ট হলে স্ত্রী, শােয়ার পূর্বে বিছানায় বসে পাঠ করলে,ان شاءالله عزوجل আপােষ হয়ে যাবে। (সময়সীমা: উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত)।
(৩৬) “يا ظاهر": ঘরের দেয়ালে লিখে দিন, ان شاءالله عزوجل দেয়াল নিরাপদ থাকবে।
(৩৭) “يارءوف": ১০ বার, যে কোন জালিম হতে মযলুম অথবা মযলুম ব্যক্তিকে জালিম থেকে বাঁচাতে চায় এবং তার পাওনা উসূল করে দিতে চায়, সে যেন (এ ওয়াযীফা) পাঠ করার পর ঐ জালিমের সাথে কথা বলে, “ان شاءالله عزوجل জালিম ব্যক্তি তার সুপারিশ গ্রহণ করে নিবে।
(৩৮) ياغنى": মেরুদন্ড, হাঁটু, শরীরের বিভিন্ন স্থানের জোড়া ইত্যাদি ও শরীরের যে কোন স্থানে ব্যথা হােক, চলা-ফেরা, উঠা-বসার সময় পাঠ করতে থাকুন, ان شاءالله عزوجل ব্যথা দূরিভূত হয়ে যাবে।
(৩৯) يا مغنع": ১ বার পাঠ করে হাতে ফুক দিয়ে ব্যথার স্থানের উপর মালিশ করাতে ان شاءالله عزوجل শান্তি লাভ হবে।
(৪০)يا نافع " ২০ বার, যে কেউ কোন কাজ শুরু করার পূর্বে পড়ে নিবে, ان شاءالله عزوجل ঐ কাজ তার ইচ্ছা অনুযায়ী পূরণ হবে।
জান্নাত মায়ের পায়ের নীচে
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরের পায়কর, সকল নবীদের সরওয়ার, উভয় জগতের তাজওয়ার, সুলতানে বাহরাে বর, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “জান্নাত মায়েদের পায়ের নীচে।”
(কানযুল উম্মাল, কিতাবুন নিকাহ, আল বাবুস সানী ফি বিররিল ওয়ালিদাইন, ১৬তম খন্ড, ১৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৫৪৩১)
কাফনের জন্য তিনটি অমূল্য উপহার
(১) যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয ও সুন্নাত ইত্যাদি) নামাযের পর আহাদ নামা পাঠ করে, ফিরিস্তারা তা লিখে মােহর রাগিয়ে কিয়ামত দিবসের জন্য উঠিয়ে রাখেন। যখন আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দাকে কবর থেকে উঠাবেন, ফিরিস্তারা তার সেই দলীল সাথে নিয়ে আসবে আর আহ্বান করা হবে: চুক্তিওয়ালা (পাঠক) কোথায়? অতঃপর তাকে ঐ চুক্তিনামা দেওয়া হবে। ইমাম হাকীম তিরমিযী (رحمة الله) তা বর্ণনা করে । বলেছেন: ইমাম তাউছের (رحمة الله) অছিয়ত অনুযায়ী এই আহাদ নামা! তাঁর কাফনে লিখে দেওয়া হয়। (দুররুল মনছুর, ৫ম খন্ড, ৫৪২ পৃষ্ঠা)
ইমাম ফকিহ ইবনে আজিল (رحمة الله) এই আহাদনামার ব্যাপারে বলেন: যখন এই আহাদনামা লিখে কবরে দেওয়া হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে মুনকার-নকীরের প্রশ্ন এবং কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয়। আহাদনামাটি হল:
اللهم فا طر السموت ولارض عا لم الغيب والشهادة الر حمن الر حيم انى اعهد اليك فى هذ ه الحيا ة الد نيا با نك انت الله الذ ى لا اله الا انت وحدك لا شر يك لك وان محمد اعبدك ورسولك فلا تكلنى الى نفسى فا نك ان تكلنى الى نفسى تقر بنى من الشر وتبا عد نى من الخير وانى لا اثق الا بر حمتك فا جعل رحمتك لى عهد اعند ك تؤد يه الى يوم القيمة انك لاتخلف الميعاد
(দুররুল মনছুর, ৫ম খন্ড, ৫৪২ পৃষ্ঠা) ।।
(২) এই দোয়া যে মৃত ব্যক্তির কাফনের কাপড়ে লিখে দেওয়া হয়, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত তার কবরের আযাব তুলে নিবেন। ঐ দোয়াটি নিম্নরূপ:
اللهم انى اسألك يا عالم السر يا عظيم الخطر يا خالق البسر يا موقع الظفر يامعروف الا ثر يا ذاالطول والمن يا كا شف الضر والمحن يا اله الاو لين والا خر ين فر ج عنى همو هى و اكشف عنى غمو هى وصل اللهم على سيد نا محمد و سلم
(ফতােওয়ায়ে রযবীয়া, ফতােওয়ায়ে কুবরা থেকে সংকলিত, ১ম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা)
(৩) যে ব্যক্তি এই দোয়া কোন কাগজের উপর লিখে কাফনের নীচে বুকের উপর রেখে দেয় তার কবরের আযাব হবে না, সে মুনকার, নকীরও দেখবেনা, দোয়াটি নিম্নরূপ:
ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮلا اله الا ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﻭﻟﻪ ﺍﻟﺤمد ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺍﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﻠﻲ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ
(ফতােওয়ায়ে রযবীয়া, ফতওয়ায়ে কুবরা থেকে সংকলিত, ৯ম খন্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা)
মাদানী ফুল: উত্তম হল, এই (আহাদ নামা বা শাজরা) কাগজ মৃত ব্যক্তির মুখের সামনে কিবলার দিকে (কবরের ভিতরের দেওয়ালে) তাক বানিয়ে রাখুন। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ১৬৪ পৃষ্ঠা)
মাদানী পরামর্শ: আহাদ নামা লিখা সম্বলিত কিছু কাগজ নিজের কাছে রাখুন ও কোন মুসলমান মৃত্যু বরণ করলে তা থেকে একটি প্রদান করে সাওয়াব অর্জন করুন। এছাড়া কাফন পরিধান, মৃত ব্যক্তি কাফন, দাফন কারী সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহকেও দান করুন তারা যেন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কাফনের সাথে একখানা আহাদ নামা পেশ করতে পারে।
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা এবং এর সকল শাখা থেকে হাদিয়া সহকারে সংগ্রহ করুন।
মজলিশ সমাপ্তির দোয়ার ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; মদীনার তাজেদার, রাসুলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কোন মজলিশে (বৈঠকে) বসল, অতঃপর অনেক কথাবার্তা বলল, তবে সে যেন মজলিশ থেকে অবসরের পূর্বে এটি বলে:
سبحنك اللهم وبحمدك اشهد ان لا اله الا انت استغفرك واتو ب اليك
সময়
তবে ঐ মজলিশে (বৈঠক) যা কিছু (ভুলত্রুটি) হয়েছে, তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (জামেউত তিরমিযী, কিতাবুদ দাওয়াত, ৬৫৫ পৃষ্ঠা)
কল্যাণের মোহর এবং গুনাহ মাফ হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন আমর বিন আ'স (رضي الله عنه) বলেন: যে এই দোয়াটি কোন মজলিশ (বৈঠক) থেকে উঠার সময়ে তিনবার পড়ে, তবে তার গুনাহ সমূহ মুছে দেওয়া হয়। আর যে উত্তম বৈঠক ও যিকিরের মজলিশে পড়ে, তবে তার জন্য কল্যাণের মােহর লাগিয়ে দেওয়া হবে। দোয়াটি হল:
سبحنك اللهم وبحمدك اشهد ان لا اله الا انت استغفرك واتو ب اليك ()
(আবু দাউদ শরীফ, তিকাবুল আদব, ২য় খন্ড, ৬৬৭ পৃষ্ঠা)
অনুবাদ: তােমার স্বত্তা পবিত্র আর হে আল্লাহ! তােমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। তােমার থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তােমার দরবারে তাওবা করছি।
আত্তারের দোয়া: ইয়া রব্বে মুস্তফা (ﷺ) যে কেউ ইজতিমা, দরস, মাদানী কাফেলার হালকায়, দ্বীনি ও দুনিয়াবী বৈঠকের শেষে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই দোয়া পড়ে এবং সুযােগ পেয়ে অন্যদেরকে পড়ানাের অভ্যাস গড়ে তােলে, তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে তােমার প্রিয় হাবীব (ﷺ) এর প্রতিবেশীত্ব প্রদান কর এবং আমরা পাপী গুনাহগারদের সরদারের পক্ষেও এই দোয়া কবুল কর ।
امین। দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা এবং এর সকল শাখা থেকে হাদিয়া সহকারে সংগ্রহ করুন।
ইসলামের প্রকৃতি
ইসলামে ‘লজ্জা’কে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন- হাদীস শরীফে রয়েছে: “নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ধর্মের একটি প্রকৃতি, স্বভাব (তথা উত্তম বৈশিষ্ট) রয়েছে, আর ইসলামের প্রকৃতি হচ্ছে ‘লজ্জা'।" (সুনানে ইবনে মাযাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৬০ পৃষ্ঠা, হদীস: ৪১৮১, দরুল মা'রিফাত, বৈরুত)
অর্থাৎ- প্রত্যেক উম্মতের কোন না কোন বিশেষ স্বভাব (বৈশিষ্ট) থাকে যা অন্যান্য বৈশিষ্টের উপর প্রাধান্য পায়। আর ইসলামের ঐ স্বভাবটি হচ্ছে ‘লজ্জা'।
খাবারের আদব
শয়তান লক্ষ বাধা প্রদান করুক, আপনি এ অধ্যায় পরিপূর্ণ পাঠ করে নিন। আশা করি আপনার মধ্যে এ অনুভূতি সৃষ্টি হবে যে, আজ পর্যন্ত আমি “খাবারই খেতে জানতাম না!”
মর্যাদাপূর্ণ ফিরিশতা
প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা এক ফিরিশতা আমার রওজায় নিযুক্ত করেছেন, যাকে সকল সৃষ্টির আওয়াজ শুনার শক্তি প্রদান করেছেন। অতএব কিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আমার উপর দুরূদে পাক পাঠ করবে, তিনি আমাকে তার ও তার পিতার নাম পেশ করেন। তিনি বলেন: “অমুকের ছেলে অমুক আপনার (ﷺ) উপর দুরূদে পাক পাঠ করেছে।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০ম খন্ড, ২৫১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭২৯১)
صوا على الحبيب! صلی الله تعالى على محل
দরূদ শরীফ পাঠকারী ব্যক্তি কিরূপ সৌভাগ্যবান যে, তার পিতার নামসহ তার নাম প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট পেশ করা হয়। এখানে এই সূক্ষ্ম বিষয়টিও খুবই ঈমান উজ্জীবিতকারী যে, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর রওজা পাকে উপস্থিত ফিরিশতাকে এরূপ অত্যধিক শ্রবণ শক্তি দান করা হয়েছে যে, তিনি দুনিয়ার কোণায় কোণায় একই সময়ে দরূদ শরীফ পাঠকারী লক্ষ লক্ষ মুসলমানদের অতি মৃদু আওয়াজও শুনতে পান।আর তাঁকে ইলমে গায়েব (তথা অদৃশ্যের জ্ঞান)ও প্রদান করা হয়েছে যে, তিনি দুরূদে পাক পাঠকারীদের নাম এমনকি তাদের পিতার নামও জানেন। যদি রাসুলে পাক (ﷺ) এর দরবারের খাদিমের শ্রবণ শক্তি ও ইলমে গায়েবের এ অবস্থা হয়, তবে নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ও ইলমে গায়েব এর কিরূপ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা হবে! তিনি কেন নিজের গােলামদেরকে চিনবেন না, আর কেনইবা তাদের ফরিয়াদ (সাহায্যের আবেদন) শুনে আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে সাহায্য করবেন না!
মে কতাওবাঁ ইস আদায়ে দস্তগীরী পর,
মেরে আকা মদদ কো আগেয়ে,
জব ভী পােকারা ইয়া রাসুলাল্লাহ।
খাওয়াও ইবাদত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাবার আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া খুবই প্রিয় নেয়ামত। এতে আমাদের জন্য নানা ধরণের স্বাদ রাখা হয়েছে। ভাল ভাল নিয়্যত সহকারে শরীয়ত সম্মতভাবে সুন্নাত অনুসারে খাবার খাওয়া সাওয়াবের কাজ। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “মুমিনের জন্য খাবার খাওয়াও ইবাদত। তিনি আরাে বলেন: “দেখুন বিবাহ করা নবীদের (আ.) সুন্নাত। কিন্তু হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া (عليه السلام) ও হযরত সায়্যিদুনা ঈসা (عليه السلام) বিয়ে করেন নি। কিন্তু খাবার খাওয়াটা এমন এক সুন্নাত যে, হযরত সায়্যিদুনা আদম সাফিয়ুল্লাহ (عليه السلام) থেকে শুরু করে হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) পর্যন্ত সকল নবীই খাবার খেয়েছেন। যে ব্যক্তি অনশন, ধর্মঘট করে উপবাস থেকে জীবন দিয়ে দিয়ে, সে হারাম উপায়ে মৃত্যুবরণ করবে।
(তফসীরে নঈমী, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১)
তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “খাবার খেয়ে শােকর আদায়কারী, ধৈর্যধারণকারী রােযাদারের মত।" (তিরমিযী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৪৯৪)
হালাল লােকমার ফযীলত
যদি আমরা খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) এর সুন্নাত অনুযায়ী খাবার খাই, তাহলে এতে আমাদের জন্য অসংখ্য বরকত রয়েছে।
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) ইহইয়াউ উলূম এর দ্বিতীয় খন্ডে একজন বুযুর্গ (رحمة الله) এর বাণী উদ্ধৃত করেন যে, “মুসলমান যখন খাবারের প্রথম লােকমা আহার করে, তখন তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের জন্য অপমানজনক স্থানে যায়, তার গুনাহ্ গাছের পাতার মত ঝরতে থাকে। (ইহুইয়াউল উলুমুদ্দীন, ২য় খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা)
খাওয়ার নিয়্যত কিভাবে করবেন?
খাওয়ার সময় ক্ষুধা লাগা সুন্নাত। খাওয়ার সময় এ নিয়্যত করে নিন যে, ইবাদত করার শক্তি অর্জনের জন্য খাচ্ছি। খাওয়ার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র স্বাদ গ্রহণ যেন না হয়।
হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম বিন শাইবান (رحمة الله) বলেন: “আমি আশি বৎসর পর্যন্ত শুধুমাত্র নফসের স্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে কোন কিছু খাইনি।” (ইহইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা)
কম খাওয়ার নিয়্যতও করুন, তবেই ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জনের নিয়্যত সঠিক হবে। কেননা পেট ভরে খাওয়াতে ইবাদতের মধ্যে উল্টো বাধার সৃষ্টি হয়! কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ধরণের মানুষের খুব কমই ডাক্তারের প্রয়ােজন হয়।
খাবার কতটুকু খাওয়া উচিত
রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মানুষ নিজের পেটের চেয়ে অধিক মন্দ থালা ভর্তি করে না, মানুষের জন্য কয়েকটি লােকমাই যথেষ্ট, যা তার পিটকে সােজা রাখে। যদি এরকম করতে না পারে, তবে এক তৃতীয়াংশ (১/৩) খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য, আর এক তৃতীয়াংশ (বাতাস) নিঃশ্বাসের জন্য (যেন) হয়।" (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩৪৯)
নিয়্যত এর গুরুত্ব
বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদীসে পাক হচ্ছে:انما الا عما ل با لنيات
উচ্চারণঃ "ইন্নামাল আ'মালু বিন্ নিয়্যাত।"
অর্থাৎ- নিশ্চয় কর্মফল তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১ম)
যে আমল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, তাতে সাওয়াব লাভ হয়। যদি রিয়া অর্থাৎ লােক দেখানাে উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে ঐ আমল গুনাহের কারণ হয়। আর যদি কোন কিছুরই নিয়্যত না থাকে, তাহলে সাওয়াবও হবে না, গুনাহও হবে না। যদি সৃষ্টিগত ভাবে মৌলিকভাবে ঐ আমল মুবাহ্ (অর্থাৎ- জায়িয) হয়, উদাহরণ স্বরূপ কেউ কোন হালাল বস্তু যেমন- আইসক্রীম বা মিষ্টি অথবা রুটি খেল আর তাতে কোন ধরণের নিয়্যত করল না, তখন সাওয়াবও লাভ হবে না, গুনাহও হবে না। তবে কিয়ামতের দিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। যেমন ; তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইজ্জত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:حلالها حساب وحر امها عذ اب
অথাৎ- তার হালাল বস্তুগুলাের ক্ষেত্রে হিসাব হবে, আর হারাম বস্তুগুলাের ক্ষেত্রে আযাব হবে।(ফিরদাউস বিমাসূরুল খিতাব, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৮৩, হাদীস নং-৮১৯২)
সুরমী কেন লাগলি?
রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিন মানুষ থেকে তার প্রতিটি কাজ এমনকি চোখের সুরমার ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
(হিয়াতুল আওলিয়া, ১০ম খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৪৪০৪)
তাই এতে নিরাপত্তা রয়েছে যে, প্রতিটি জায়িয কাজে ভাল ভাল নিয়্যত রাখা। যেমন- এক বুযুর্গ (رحمة الله) বলেন: আমি প্রতিটি কাজে নিয়্যত করতে পছন্দ করি । এমনকি পানাহার, ঘুমানাে ও শৌচাগারে যাওয়ার জন্যও। (ইহুইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ১২৬ পৃষ্ঠা)
ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মুসলমানের নিয়্যত তার আমল থেকে উত্তম।”
(তাবারানী মুআজজাম কাবীর, ৬ষ্ঠ : খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
নিয়্যত অন্তরের ইচ্ছাকে বলা হয়
মুখে বলা শর্ত নয় বরং কেউ মুখে নিয়্যতের শব্দগুলাে উচ্চারণ করল কিন্তু অন্তরে ইচ্ছা বিদ্যমান নেই তাহলে সেটাকে নিয়্যতই বলা হবে না এবং এতে সাওয়াবও লাভ হবে না। নিম্নে খাবার খাওয়ার ৪৩ টি নিয়্যত উপস্থাপন করছি, এগুলাে থেকে যতটুকু সুবিধা হয় এবং সম্ভবপর হয়, খাওয়ার পূর্বে তা করে নেয়া উচিত। এটাও আরয করছি যে, শুধুমাত্র এই নিয়্যতগুলােতেই নিয়্যতের শেষ নয় বরং নিয়্যতের ব্যাপারে যার অধিক জ্ঞান আছে, এর মাধ্যমে তিনি আরাে অনেক নিয়্যত বের করে নিতে পারেন। নিয়্যত যত বেশী হবে সাওয়াবও তত বেশী অর্জন হবে।
খাওয়ার ৪৩ টি নিয়্যতঃ
(১,২) খাওয়ার পূর্বে ও পরে ওযু করব। (অথাৎ- হাত ও মুখের অগ্রভাগ ধুয়ে নেব ও কুলি করে নেব) (৩) খাবার খেয়ে ইবাদত (৪) তিলাওয়াত (৫) মাতা-পিতার সেবা (৬) ইলমে দ্বীন অর্জন (৭) সুন্নাতের প্রশিক্ষণ লাভের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর (৮) নেকীর দা'ওয়াতের এলাকায়ী দাওরাতে অংশগ্রহণ (৯) আখিরাতের কাজ ও (১০) প্রয়ােজন মত হালাল উপার্জনের উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা করার শক্তি অর্জন করব (এ নিয়্যতগুলাে ঐ অবস্থায় ফলপ্রসু হবে যখন ক্ষুধা থেকে কম খাওয়া হবে। খুব পেট ভর্তি করে খাওয়াতে উল্টো ইবাদতে অলসতার সৃষ্টি হয়, গুনাহের প্রতি অনুরাগ বৃদ্ধি পায় ও পেটের মধ্যে বিভিন্ন গন্ডগােলের জন্ম নেয়। (১১) জমিনের উপর (১২) সুন্নাতের অনুসরনে দস্তরখানায় (১৩) (চাদর কিংবা জামার আঁচল দ্বারা) পর্দার মধ্যে পর্দা করে (১৪) সুন্নাত অনুযায়ী বসে (১৫) খাওয়ার পূর্বে بسم الله (১৬) অন্যান্য দোয়া পাঠ করে (১৭) তিন আঙ্গুলে (১৮) ছােট ছােট লােকমা বানিয়ে (১৯) ভালভাবে চিবিয়ে খাব (২০) প্রত্যেক লুকমায় يا واجد পাঠ করব (অথবা প্রতিটি লােকমার শেষে الحمد الله
ও প্রতিটি লােকমার শুরুতে يا واجد এবং بسم الله পাঠ করব। (২১) যেসব খাবার ইত্যাদি পড়ে যায় তা তুলে খেয়ে নেব, (২২) প্রত্যেকটি রুটির অংশ তরকারীর পাত্রের উপর ছিড়ব (যাতে রুটির ক্ষুদ্র অংশগুলাে ঐ পাত্রেই পড়ে) (২৩) হাড়ি ও গরম মসলা ইত্যাদি উত্তমরূপে পরিস্কার করে ও চেটে খাওয়ার পরই বাইরে ফেলব (২৪) ক্ষুধা থেকে কম খাব (২৫) পরিশেষে সুন্নাত আদায়ের নিয়্যতে থালা (পেয়ালা ইত্যাদি) ও (২৬) তিনবার আঙ্গুলগুলাে চেটে নেব (২৭) খাবারের থালা ধুয়ে পানি পান করে একজন গােলাম মুক্ত করার সাওয়াব অর্জন করব (২৮) যতক্ষণ দস্তরখানা তুলে নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিনা প্রয়ােজনে উঠে যাব না (কেননা এটাও সুন্নাত) (২৯) খাওয়ার পর আগে পরে দরূদ শরীফসহ সুন্নাত (মসনুন) দোয়াগুলাে পাঠ করব (৩০) খিলাল করব একত্রে খাওয়ার নিয়্যত। (৩১) দস্তরখানার সামনে যদি কোন আলিম কিংবা বয়স্কলােক উপস্থিত থাকেন তাহলে তার পূর্বে খাওয়া শুরু করব না। (৩২) মুসলমানদের সাক্ষাতের বরকত অর্জন করব (৩৩) তাদেরকে মাংসের টুকরা, কদু শরীফ, হাঁড়ের নীচে জমাট বাঁধা খাবার ও পানি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য প্রদান করে তাঁদের মন-খুশী করব। (কারাে প্লেটে নিজের হাতে কিছু তুলে দেয়া আদবের পরিপন্থী, কারণ যেটা আমরা তুলে দিলাম সম্ভবত তখন তার সেটা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ নাও থাকতে পারে) (৩৪) তাদের সামনে মুচকি হেসে সদকা করার সাওয়াব অর্জন করব (৩৫) কাউকে মুচকি হাসতে দেখে সে সময়ে পড়া হয় এমন সুন্নাত দোয়াটি পাঠ করব (কাউকে মুচকি হাসতে দেখে পাঠ করার দোয়া: اضحك الله سنك অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে সদা হাস্যোজ্জল রাখুন। (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩২৯৪) (৩৬) খাবার খাওয়ার নিয়্যতসমূহ ও (৩৭) সুন্নাত সমূহ্ বলব (৩৮) সুযােগ পেলে খাওয়ার পূর্বের ও (৩৯) পরের দোয়াগুলাে পড়াব। (৪০) খাবারের উত্তম অংশ যেমন মাংসের টুক্রা ইত্যাদি নিজে খাওয়ার লােভ-লালসা থেকে নিজেকে রক্ষা করে তা অন্যকে দেব (আল্লাহর প্রিয়! হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দয়াময় বাণী হচ্ছে, “যে ব্যক্তি নিজের প্রয়ােজনীয় বস্তু অন্যকে দিয়ে দেয়, তবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।" (ইত্তেহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, ৯ম খন্ড, ৭৭৯ পৃষ্ঠা) (৪১) উপস্থিত সকলকে খিলাল ও (৪২) তিন আঙ্গুলে খাওয়ার অনুশীলন করানাের জন্য রাবার ব্যান্ড উপহার হিসাবে দিব। (৪৩) খাবারের প্রতি লােকমায় যদি সম্ভব হয় তাহলে উচ্চস্বরে এ নিয়্যতে يا واجد পাঠ করব যেন অন্যান্যদেরও স্মরণে এসে যায়।
খাবারের ওযু অভাব দূর করে
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর রহমতপূর্ণ বাণী হচ্ছে, খাওয়ার আগে ও পরে ওযু করাটা অভাবকে দূর করে দেয়। আর এটা নবী-রাসুল (আ.) গণের সুন্নাতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। (আল মুজামুল আওসাত, ৫ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭১৬৬)।
খাওয়ার পূর্বে পরে ওযু ঘরে কল্যাণ বৃদ্ধি করে
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: যে এটা পছন্দ করে যে, আল্লাহ্ তাআলা তার ঘরে কল্যাণ বাড়িয়ে দিক, তবে যখন খাবার দেয়া হয়, তখন যেন সে ওযু করে নেয় এবং যখন খাবার তুলে নেয়া হয় তখনও যেন ওযু করে নেয়।”
(ইবনে মাযাহ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ৯ম পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩২৬০)
খাওয়ার ওযু করার সাওয়াব
উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “খাওয়ার আগে ওযু করলে একটি সাওয়াব, আর খাওয়ার পর ওযু করলে দু'টি সাওয়াব।” (জামে সাগীর, ৫৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৯৬৮২)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাওয়ার আগে ও পরে হাত ইত্যাদি ; ধােয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করা উচিত নয়। আল্লাহর শপথ “একটি নেকীর”! সারা কিয়ামতের দিনই জানা যাবে। যে সময় কারাে শুধুমাত্র একটি নেকীই কম হবে আর সে নিজের প্রিয়জনদের কাছে শুধুমাত্র একটি নেকী চাইবে অথচ দেয়ার জন্য কেউ রাজী হবে না।
শয়তান থেকে হিফাযত
নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “খাবারের আগে ও পরে ওযু (অর্থাৎ-হাত-মুখ ধােয়া) রিযিকে প্রশস্ততা আনে আর শয়তানকে দূর করে দেয়।"
(কানযুল উম্মাল, ১০ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪০৭৫৫)
রােগব্যাধি থেকে রক্ষার উপায়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাওয়ার ওযু দ্বারা নামাযের ওযু উদ্দেশ্য নয় বরং এতে উভয় হাত কজি পর্যন্ত ও মুখে ঠোটের বাহিরের অংশ ধােয়া আর কুলি করা উদ্দেশ্য। বিখ্যাত মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “তাওরাত শরীফে দু’বার হাত দােয়া ও কুলি করার নির্দেশ ছিল, খাওয়ার পূর্বে ও খাওয়ার পরে। কিন্তু ইহুদীরা শুধুমাত্র শেষের আমলটা বাকী রেখেছে, আর খাওয়ার পূর্বের আমলটির আলােচনাটা মুছে ফেলেছে। খাওয়ার আগে হাত ধােয়া, কুলি করার জন্য অনুপ্রাণিত এজন্য করা হয়েছে যে, প্রায়ই কাজ-কর্মের কারণে হাত ময়লাযুক্ত, দাত ময়লাযুক্ত হয়ে যায় আর খাওয়ার কারণে হাত-মুখ চর্বিযুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং উভয় সময়ে তা পরিস্কার করা উচিত। খাবার খেয়ে কুলিকারী ব্যক্তি দাঁতের বিষাক্ত রােগ পায়রিয়া (PHYORRHEA) হতে নিরাপদ থাকবে। ওযুর সময় মিসওয়াকে অভ্যস্ত ব্যক্তি দাঁত ও পাকস্থলীর রােগসমূহ থেকে রক্ষা পাবে। খাওয়ার সাথে সাথে প্রস্রাব করার অভ্যাস গড়ন, তাতেও মুত্রথলীর রােগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটা খুবই পরীক্ষিত।
(মিরকাত শরহে মিশকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা)
ড্রাইভারের রহস্যজনক মৃত্যু
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় সুন্নাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। যেভাবে সুন্নাতের উপর আমল করলে সাওয়াব রয়েছে অনুরূপভাবে সেটার পার্থিব উপকারও হয়ে থাকে। খাওয়ার আগে উভয় হাত কজি পর্যন্ত ধুয়ে ' নেয়া সুন্নাত। মুখের (ঠোটের) বাইরের অংশ ধুয়ে নেয়া ও কুলি করে নেয়া উচিত। যেহেতু হাত দ্বারা নানা ধরণের কাজ করা হয় আর তা বিভিন্ন বস্তুর সাথে লেগে থাকে। তাই কাদা-ময়লা ও বিভিন্ন ধরণের জীবাণু লেগে যায়। খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেয়াতে এগুলাে পরিস্কার হয়ে যায়, আর এ সুন্নাতের বরকতের কারণে আমাদের অনেক রােগ-ব্যাধি থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়। খাওয়ার আগে ধােয়া হাত মুছে ফেলবেন না, কারণ তােয়ালে ইত্যাদিতে থাকা জীবাণু হাতে লেগে যেতে পারে।কথিত আছে; একজন ট্রাক-ড্রাইভার হােটেলে খাবার খেল আর খাওয়ার সাথে সাথে ছটফট করতে করতে মারা গেল। অন্যান্য অনেক মানুষও এ হােটেলে খাবার খেয়েছে কিন্তু তাদের কিছুই হলাে না। তদন্ত শুরু হলাে। কেউ বলল যে, ড্রাইভার খাওয়ার আগে হােটেলের ধারে টায়ার চেক করেছিল। এরপর হাত না ধুয়েই সে খাবার খেয়েছিল। সুতরাং ট্রাকের টায়ারগুলাে চেক করা হল। দেখা গেল যে, চাকার নীচে একটি বিষাক্ত সাপ পিষ্ট হয়ে সেটার বিষ টায়ারে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে আছে। আর তা ড্রাইভারের হাতে লেগেছিল। হাত না ধােয়ার কারণে খাবারের সাথে ঐ বিষ পেটে চলে যায়, যা ড্রাইভারের হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হয়।
আল্লাহ্ কি রহমত ছে সুন্নাত মে শারাফত হে,
সরকার কি সুন্নাত মে হাম সব কি হিফাযত হে।
বাজারে খাওয়া
হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “বাজারে খাবার খাওয়া মন্দ (কাজ)।” (জামি সাগীর, ১৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩০৭৩)
আল্লামা মওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله) বলেন: “রাস্তায় ও বাজারে খাওয়া মাকরূহ্। (বাহারে শারীয়াত, ১৬তম খন্ড, ১৯ পৃষ্ঠা)
বাজারের রুটি
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুরহানুদ্দীন ইব্রাহীম যারন্জী (رحمة الله) বলেন: মহান ইমাম হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ফাযল (رحمة الله) শিক্ষা অর্জনের সময় কখনাে বাজার থেকে খাবার খাননি। তাঁর সম্মানিত পিতা প্রতি জুমাবারে নিজ গ্রাম থেকে তার জন্য খাবার নিয়ে আসতেন। একবার যখন তিনি খাবার দিতে আসেন তখন ছেলের রুমে বাজারের রুটি দেখে খুবই অসন্তুষ্ট হলেন এবং নিজের ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বললেন না। সাহিবজাদা (ছেলে) ক্ষমা চেয়ে আরয করলেন: আব্বাজান! এ রুটি ; বাজার থেকে আমি আনিনি, আমার বন্ধু মানা করা সত্ত্বেও কিনে এনেছিল।সম্মানিত পিতা এ কথা শুনে ধমক দিয়ে বললেন: “যদি তােমার মধ্যে তাকওয়া থাকত তবে তােমার বন্ধুর কখনাে এরূপ করার সাহস হতাে না।"
(তালীমুল মুতাআল্লিম তারীকুত তাআলুম, ৬৭ পৃষ্ঠা, বাবুল মদীনা, করাচী)
বাজারের খাবারে বরকতশূন্যতা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন তাকওয়ার প্রতি কিরূপ খেয়াল রাখতেন। আর নিজের সন্তানকে কিরূপ উত্তম প্রশিক্ষণ দিতেন যে, হােটেল ও বাজারের খাবার তাদেরকে খেতে দিতেন না। হযরত ইমাম যারজী (رحمة الله) বলেন: “যদি সম্ভব হয় তবে অমঙ্গলজনক খাবার ও বাজারের খাবার থেকে বেঁচে থাকা উচিত। কারণ বাজারের খাবার মানুষকে খিয়ানত ও অপবিত্রতার নিকটবর্তী ও আল্লাহর যিকির থেকে দূর করে দেয়। এর কারণ এ যে, বাজারের খাবারের উপর গরীব ও ফকীরদের দৃষ্টি পড়ে, আর তারা নিজেদের অসচ্ছলতা ও দারিদ্রতার কারণে যখন ঐ খাবার কিনতে পারে না, তখন তাদের অন্তর ব্যথিত হয় আর সে কারণে ঐ খাবার থেকে বরকত উঠে যায়।” (তালীমুল মুতাআল্লিম তারীকুত তাআলুম, ৮৮ পৃষ্ঠা)
হােটেলে খাওয়া কেমন?
বাজারে, ঠেলাগাড়ী ও ট্ৰলী ইত্যাদি থেকে নানা ধরণের মজাদার খাবারের স্বাদগ্রহণকারীরা এ ঘটনা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন। যখন বাজারে খাওয়াটা এরূপ মন্দ তখন ফ্লিমের গানে মগ্ন হয়ে হােটেলের ভেতর সময়ে-অসময়ে খাওয়া, চায়ে চুমুক দেয়া ও ঠান্ডা পানীয় পান করা কি রকম দোষণীয় হবে? যদি গান নাও বাজে তবুও হােটেল গুলাের পরিবেশ। প্রায়ই ছন্নছাড়া ধরণের হয়ে থাকে। সেসব স্থানগুলােতে গিয়ে বসা অভিজাত ও ধার্মিক ব্যক্তিবর্গের মর্যাদার উপযুক্ত নয়। অতএব প্রয়ােজন হলে খাবার কিনে কোন নিরাপদ স্থানে বসে খাওয়াতে মঙ্গল রয়েছে। যে অসহায় সে অপারগ। কিন্তু যখন হােটেলে ফ্লিম, ড্রামা বা গান-বাজনা চলে তখন সেখানে যাবেন না। কারণ জেনে-শুনে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনা গুনাহ্। যেমন -
বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব
হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা শামী (رحمة الله) বলেন: “(হেলে দুলে শরীর বাঁকিয়ে) নাচা, হাসি-তামাসা করা, তালি বাজানাে, সেতারা বাজানাে, বারবাত (এক প্রকার বাদ্যযন্ত্র), সারেঙ্গী বা সারিন্দা, রাবার (বেহালা বিশেষ), বাঁশী, কানূন, নুপুর, শিঙ্গা বাজানাে, মাকরূহে তাহরীমী (অর্থাৎ হারামের নিকটবর্তী)। কারণ এগুলাে কাফিরদের নিদর্শন। এছাড়া বাঁশী ও (বাদ্যযন্ত্রের) অন্যান্য সরঞ্জামের আওয়াজ শুনাও হারাম। যদি কেউ হঠাৎ করে (অসতর্কাবস্থায়) শুনে ফেলে তবে সে অপারগ, কিন্তু তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, না শুনার পূর্ণ চেষ্টা করা।" (রদুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৫৬৬ পৃষ্ঠা)
কানে আঙ্গুল দেয়া
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঐ সকল মুসলমানরা সৌভাগ্যবান, যারা প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নাতে পাক ও সুন্নাতে ভরা বয়ান শুনেন এবং ছায়াছবির গান ও বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ কানে আসলে খােদা তাআলার ভয়ের কারণে তা না শুনার পূর্ণ চেষ্টা করে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে সেখান থেকে তাড়াতাড়ি দূরে সরে যান। যেমন-হযরত সায়্যিদুনা নাফি’ (رحمة الله) বলেন: আমি ছােট বেলায় হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رحمة الله) এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম। তখন রাস্তায় বাজনা বাজানাের আওয়াজ আসতে লাগল, ইবনে ওমর (رحمة الله) নিজের কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং রাস্তা থেকে অন্যত্র সরে গেলেন, আর দূরে যাওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলেন: নাফি’! আওয়াজ আসছে? আমি আরয করলাম: এখন আসছে না। তখন কান থেকে আঙ্গুল বের করলেন এবং বললেন: “একবার আমি ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার, হুযুর (ﷺ) এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম, তাজেদারে মদীনা, প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) এরূপ করলেন, যেরূপ আমি করলাম।”
(আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৯২৪) :
বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ এলে তখন মরে যান
জানা গেল যে, যেই মাত্র বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ আসবে তৎক্ষণাৎ কানে আঙ্গুল দিয়ে সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত। কারণ যদি আঙ্গুলতাে কানে দিলেন কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে রইলেন বা সামান্য ওপাশে সরে গেলেন তবে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ থেকে বাঁচতে পারবেন না।। শুধু আঙ্গুল কানে দিলে হবে না বরং যেকোন ভাবে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ : থেকে বাঁচার যথাসাধ্য চেষ্টা করা ওয়াজিব। হায়! হায়! হায়! এখনতাে! যানবাহন, উড়ােজাহাজ, ঘর, দোকান, গলি ও বাজারসমূহে যেদিকেই যান না কেন, বাদ্যযন্ত্রের মগ্নতা ও গানের আওয়াজ শুনা যায়। আর যে ‘আশিকে রাসুল কানে আঙ্গুল দিয়ে দূরে সরে যায় তাকে নিয়ে উপহাস করা হয়।
উহ দাওর আয়া কেহ দিওয়ানায়ে নবী কেলিয়ে হার এক হাত মে পাত্তর দেখায়ী দেতা হে।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততায় জীবনে ঐ ধরণের আশ্চর্যজনক পরিবর্তন ঘটে যে, অনেকবার ইসলামী ভাইদেরকে বলতে শুনা গেছে যে, হায়! যদি এমন হত অনেক আগেই আমরা দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ পেতাম। দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকতে পরিপূর্ণ এক মাদানী বাহার দেখুন। যেমন, ঘরে দরসের বরকতময় ঘটনা। আগূলাহ, মহারাষ্ট্র, ভারতের এক ইসলামী ভাই অনেকটা এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, বদ-মাযহাব লােকদের সাথে সম্পর্কের কারণে! আমাদের পরিবার বদ আমলের সাথে সাথে বদ-আকীদার প্রতিও ধাবিত হচ্ছিল। একদিন আমাদের পরিবারের সবাই মিলে টিভি দেখায় ব্যস্ত ছিল। তখন আমার ১৭ বছর বয়সী ছােট ভাই যে দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেছে, সে টিভির দিকে পিঠ দিয়ে উল্টো দিকে হেঁটে রুমে প্রবেশ করলাে আর নিজের কোন জিনিস আলমারী থেকে বের করে ঐ ভঙ্গিতে ফিরে গেল। তার এ ধরণের অভিনব অবস্থা দেখে আমি রাগে চিৎকার করে বলে উঠলাম, “তােমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে! যে কারণে আজ তুমি এ ধরণের অভিনব শিশুর মত আচরণ করছাে!” সে প্রতিউত্তর দেয়া ব্যতীত অন্য রুমে চলে গেল। আমার আম্মা, বিষয়টা পরিস্কার করলেন যে, “সে আমাকে বলেছে যে, আমি কসম খেয়েছি, ভবিষ্যতে টিভির দিকে দেখবইনা!” আমি রাগে ছােট ভাইয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। সে ঘরে সবাইকে একত্রিত করে প্রতিনিয়ত ফয়যানে সুন্নাতের দরস শুরু করে দিলাে। আমি তাতে বসতাম না। একদিন আমি কাছাকাছি হয়ে এই ভেবে বসে গেলাম যে, শুনেতাে দেখি দরসে কি বলে! শুনে খুব ভাল লাগল। সুতরাং আমি প্রতিদিন ঘরের দরসে অংশগ্রহণ করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে আমার হৃদয়ের অন্ধকার দূর হতে লাগল। অবশেষে দাওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় যেতে লাগলাম। জ্ঞান সঠিক পথে এলাে, বদমাযহাবের সংস্পর্শ থেকে মুক্ত হলাম ও চেহারায় দাড়ি সাজিয়ে নিলাম। এছাড়া বদ্-আকীদা সম্পন্ন বক্তার পথভ্রষ্টকারী ক্যাসেট, যেগুলাে আগ্রহ ভরে শুনতাম, সে সবের জায়গায় এখন মাত্তাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনতে লাগলাম। আমাদের চারটি রুমে টিভি ছিল। পারস্পরিক পরামর্শে চারটি রুম থেকেই TV বের করে দিলাম।
বুরী সুহতু ছে কানারা কুশী কর,
আওর আছাে কে পা-স আ-কে পা মাদানী মহল।
তুমহে লুতফ আ-যায়েগা জিন্দেগী কা,
করীব আ-কে দেখাে জারা মাদানী মহল।
ঈমান রক্ষার মাধ্যম
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! ঘরের দরসে পরিবার-পরিজনের ঈমানের নিরাপত্তা ও আমল সংশােধনের উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে। অনুরূপভাবে ইসলামী ভাই ও ইসলামী বােনদের চারিত্রিক প্রশিক্ষণের জন্য “ফিকরে মদীনার মাধ্যমে প্রতিদিন মাদানী ইন'আমাত এর রিসালা পূরণ করারও ব্যবস্থা রয়েছে এবং এ রিসালায় লিপিবদ্ধ একাদশ মাদানী ইন'আম অনুযায়ী প্রত্যেককে প্রতিদিন ফয়যানে সুন্নাত থেকে দুইটি দরস দেয়া বা শুনার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এ দুইটি দরসে একটি “ঘর দরস”ও রয়েছে। আপনাদের সকলের নিকট ঘরে দরস চালু করার জন্য বিনীতভাবে মাদানী অনুরােধ করছি।
আমল কা হাে জ্যবা আতা ইয়া ইলাহী,
গুনাহহা হে মুঝকো বাঁচা ইয়া ইলাহী।
সাআদাতে মিলে দরসে ফয়যানে সুন্নাত,
কি রওজানা দো মরতবা ইয়া ইলাহী।
কবরের আলাে দরস ও বয়ানের সাওয়াবের কথা কী বলব! হযরত আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী (رحمة الله) “শারহুসসুদূর”-এ উদ্ধৃত করেন, আল্লাহ্ তা'আলা হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালীমুল্লাহ (আ.) এর প্রতি অহী প্রেরণ করলেন, “কল্যাণময় কথা নিজেও শিখুন এবং অন্যকেও শিক্ষা দিন। আমি কল্যাণময় কথা শিক্ষাকারী ও শিক্ষাপ্রদানকারীদের 'কবরকে আলােকিত করবাে, যাতে তাদের কোন ধরণের ভয়-ভীতি না হয়।” (হিলয়াতুল আওলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৬২২)
কবর আলােকিত হবে
এ বর্ণনা থেকে নেকীর বিষয় শিখা ও শিক্ষা প্রদানের সাওয়াব ও প্রতিফল সম্পর্কে জানা গেল। সুন্নাতে ভরা বয়ানকারী, দরস দাতা ও শ্রবণকারীদের তাে খুবই উপকার হবে। তাঁদের কবর আলােকিত হবে ও তাঁদের কোনরকম ভয়-ভীতি অনুভব হবে না। ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে নেকীর দাওয়াত প্রদানকারী, মাদানী কাফেলায় সফর ও ফিকরে মদীনা করে মাদানী ইনআমাতের রিসালা প্রতিদিন পূরণ করার! উৎসাহ প্রদানকারী ও সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দাওয়াত পেশকারী, এছাড়া মুবাল্লিগদের নেকীর দাওয়াত শ্রবণকারীদের কবরও নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর নূরের সদকায় আলােকিত হবে।
কবর মে লেহরায়েগে তা হাশর চশমে নূরকে,
জলওয়া ফরমা হােগী জব তালাআত রাসুলুল্লাহ কি। (হাদায়িকে বখশিশ)
পরিবারের লােকদের সংশােধন করা জরুরী
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিজের পরিবারের লােকদের সংশােধন আমাদের উপর আবশ্যক। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: يا يها الذ ين امنو اقوا انفسكم واهليكم نارا وقو دها الناس والحجارة
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে ঐ। আগুন থেকে বাঁচাও যার। জ্বালানী হচ্ছে মানুষ ও পাথর।
(পার- ২৮, সুরা- অতি তাহরীম, আয়াত- ৬)
“ঘরের দরস"-এর মাধ্যমেও এ আয়াতে কারীমায় দেয়া, নির্দেশের উপর আমল করা সম্ভব হবে। এছাড়া এ বিষয়ে মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা রিসালা পাঠ করা, পাঠ করানাে ও সুন্নাতে ভরা বয়ান ও মাদানী মুযাকারার ক্যাসেট ঘরে চালানােও উপকারী হবে। সুন্নাতে ভরা রিসালা ও ক্যাসেটের মাধ্যমেও অনেক মানুষের সংশােধনের অনেক ঘটনা রয়েছে।
মাকতাবাতুল মদীনার রিসালার বাহার
বাহাওয়ালপূর জেলা পাঞ্জাব, এর একজন ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা হচ্ছে, আমি স্কুলে খারাপ পরিবেশের কারণে ফিল্ম উন্মাদনার সৌখিন পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম। শুধু ফিল্ম দেখার জন্য অন্য শহর যেমন-লাহাের, উকাড়া ইত্যাদি এমনকি করাচী পর্যন্ত চলে যেতাম। ফিল্মের রং(sex apple) দৃশ্যের অমঙ্গলের কারণে আল্লাহর পানাহ, বেপর্দা যুবতীদের পেছনে কলেজ পর্যন্ত যাওয়া ও প্রতিদিন দাড়ি কামানাে আমার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। অমঙ্গলের উপর অমঙ্গল এযে, আমার মনে থিয়েটারে, সার্কাস ও মৃত্যু কুপের ভেতর কাজ করার প্রবল ইচ্ছা হল। পরিবারের লােকেরা অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন। একদিন আমার সম্মানিত পিতা দাওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারদের সাথে কথা বলে আমাকে এলাকার আশিকানে রাসুলদের সাথে মাদানী কাফেলায় সফরে পাঠিয়ে দিলেন। শেষ দিন আমীরে কাফেলা আমাকে কালাে বিচ্ছু (মাক্তাবাতুল মাদীনা কর্তৃক মুদ্রিত) নামক রিসালা পাঠ করতে দিলেন। আমি পড়ে কেঁপে উঠলাম। তৎক্ষণাৎ গুনাহ্ থেকে তাওবা করলাম ও চেহারায় এক মুষ্ঠি দাড়ি সাজানাের নিয়্যত করলাম। ফেরার পথে দা'ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা সাপ্তাহিক ইজতিমাতে তাওবা করলাম ও চেহারায় এক মুষ্ঠি দাড়ি সাজানাের নিয়্যত করলাম এবং মাতাবাতুল মদীনার পক্ষ থেকে প্রকাশিত (উর্দু) বায়ানের ক্যাসেট যেটার নাম ছিল, “ঢল জায়েগী ইয়ে জাওয়ানী" কিনে নিলাম। যখন ঘরে এসে বয়ান শুনলাম তখন তা আমার অন্তরের দুনিয়া পরিবর্তন করে দিল! আলহামদুলিল্লাহ আমি নিয়মিতভাবে নামায পড়তে লাগলাম এবং দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ শুরু করে দিলাম। বর্তমানে (এ বর্ণনা দেয়ার সময়) আমি আমার নিজ শহরে মাদানী কাফেলার যিম্মাদার হিসাবে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করছি। একসাথে খাওয়াতে বরকত রয়েছে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুকে আজম (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “একত্রে মিলে খাও, একা একা খেওনা, কেননা বরকত জামাআতের (একতাবদ্ধতার) সাথে হয়ে থাকে।”
(ইবনে মাজাহ শারীফ, ৪র্থ খন্ড, ২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৮৭)
পরিতৃপ্ত হওয়ার উপায়
হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহ্সী বিন হারব (رحمة الله) তাঁর দাদাজান (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, সাহাবায়ে কিরাম, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) এর দরবারে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা খাবারতাে খাই কিন্তু পরিতৃপ্ত হই না?” রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “তােমরা কি আলাদাভাবে খাও?” আরয করলেন: “জ্বী হ্যা,” ইরশাদ করলেন: একত্রিত হয়ে বসে খাবার খেয়াে ও বিসমিল্লাহ পড়ে নিও, তােমাদের জন্য খাবারে বরকত দেয়া হবে।
(আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৬৪)।
একত্রে খাওয়ার ফযীলত একই দস্তরখানায় একত্রে আহারকারীদেরকে মােবারকবাদ।। কেননা হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ তাআলার নিকট এ বিষয়টি সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয়! যখন তিনি মুমিন বান্দাকে স্ত্রী, সন্তানের সাথে দস্তরখানায় একত্রে বসে খেতে দেখেন। কারণ যখন সবাই দস্তরখানায় একত্রিত হয় তখন আল্লাহ্ তাদেরকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখেন এবং আলাদা হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেন। (তাম্বীহুল গাফিলীন, ৩৪৩ পৃষ্ঠা)
একত্রে খাওয়াতে পাকস্থলীর চিকিৎসা। প্যাথলজী বিশেষজ্ঞ এক অধ্যাপক ব্যাখ্যা করেছেন যে, যখন একত্রে খাবার খাওয়া হয় তখন আহারকারী-সকলের জীবাণু খাবারে মিশে। যায় আর তা অন্যান্য রােগের জীবাণুকে মেরে ফেলে। এছাড়া অনেক সময় খাবারে শিফা বা আরােগ্যের জীবাণু অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায় যা পাকস্থলীর রােগের জন্য ফলদায়ক হয়ে থাকে।
একজনের খাবার দুজনের জন্য যথেষ্ট
হযরত সায়্যিদুনা জাবির (رحمة الله) বলেন: আমি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযত (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছি, “একজনের খাবার দু'জনের জন্য যথেষ্ট ও দু'জনের খাবার চারজনের ও চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট হয়।" (সহীহ মুসলিম, ১১৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২০৫৯)
রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: দুইজনের খাবার তিনজনের ও তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৩৯২)
অল্পে সন্তুষ্টির শিক্ষা
বিখ্যাত মুফাসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) এ মােবারক হাদীস প্রসঙ্গে বলেন: “যদি খাবার সামান্য হয় এবং আহারকারী বেশি হয় তবে তাদের উচিত যে, দুইজনের খাবারে তিনজন ও তিনজনের খাবারে চারজন চালিয়ে নেয়া। যদিও পেট না ভরে কিন্তু এতটুকু খেয়ে নেয়াতে দূর্বলতাও আসবে না, ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করা যাবে। এ মহান বাণীতে “অল্পে তুষ্টি ও মানবতার মহান শিক্ষা রয়েছে।” (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬ পৃষ্ঠা)
বেতন কমিয়ে দিলেন
খলীফায়ে রাসুল হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (رحمة الله) এর খিলাফত আমলের ঘটনা। একবার হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক (رحمة الله) এর সম্মানিতা স্ত্রীর (رحمة الله) হালুয়া খাওয়ার ইচ্ছা হল। তখন সিদ্দিকে আকবর (رحمة الله) বললেন: আমার নিকট এত টাকা নেই যে, আমি হালুয়া কিনতে পারি। স্ত্রী (رحمة الله) আরজ করলেন, আমি আমার পারিবারিক খরচাদি থেকে কিছু দিন অল্প অল্প পয়সা বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমা করব এবং এ দ্বারা হালুয়া কিনে নেব। খলিফা (رحمة الله) বললেন: ঠিক আছে এভাবেই করে নিন। তাই তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী (رحمة الله) কিছু টাকা জমা করা শুরু করলেন। অল্প সময়ে কিছু টাকা জমা হয়ে গেল। যখন তিনি সিদ্দিকে আকবর (رحمة الله) কে বললেন যে, আপনি হালুয়া কিনে নিয়ে আসেন। তখন তিনি (رحمة الله) টাকা নিলেন এবং বায়তুল মালে ফিরিয়ে দিলেন, এবং স্ত্রী (رحمة الله) কে বললেন এগুলাে আমার প্রয়ােজনীয় খরচ থেকে অতিরিক্তি। এর পর তিনি (رحمة الله) ভবিষ্যতের জন্য বায়তুল মাল থেকে প্রাপ্ত বেতনের তত পরিমাণ টাকা কমিয়ে দিলেন। (আল কামিল ফিত্তারীখ, ২য় খন্ড, ২৭১ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা শুনে শুধুমাত্র প্রশংসার শ্লোগান দ্বারা অন্তরকে খুশী করার পরিবর্তে আমাদেরও তাকওয়া ও অল্পে সন্তুষ্টির শিক্ষা অর্জন করা উচিত। বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ ও সরকারী অফিসারবৃন্দ এছাড়া মসজিদের ইমামগণ, মাদ্রাসার শিক্ষকমন্ডলী ও বিভিন্ন ইসলামী বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী ভাইদের জন্য এ ঘটনাতে অল্পে তুষ্টি ও লােভ-লালসা থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও নিজের আখিরাতকে উৎকৃষ্ট করার জন্য অনেক শিক্ষার বিষয় রয়েছে। হায়! এমন যদি হতাে! আমরা সবাই শুধু নফসের প্ররােচনায় বেতনের কম বেশি অর্থাৎ “অমুকের বেতন এতাে বেশী আর আমার কম" বলে বলে এ ধরণের ব্যাপারগুলােতে জড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে সামান্য আয়ে তুষ্ট হয়ে | নেকীর মধ্যে অধিক নেকী অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতা করতাম।
সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (رحمة الله) এর পরহেযগারী ও দুনিয়ার ধন সম্পদ থেকে অনাসক্তি
এব্যাপারে আরাে একটি ঘটনা শুনুন। যেমন-
ওয়াকফের বস্তুর ব্যাপারে সতর্কতা ইমামে আলী মকাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতাবা (رحمة الله) বলেন: খলীফায়ে রাসুল হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবর (رحمة الله) নিজের ওফাতের সময় উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা (رحمة الله) কে বললেন: দেখাে! এ উট যেটার দুধ আমরা পান করি এবং এ বড় পেয়ালা যাতে আমরা পানাহার করি এবং এ চাদর যেটা আমি পরিধান করে আছি এসব কিছু বাইতুল মাল থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা এগুলাে থেকে ঐ সময় পর্যন্ত উপকার গ্রহণ করতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত আমি মুসলমানদের খিলাফতের দায়িত্ব পালন করি। যখন আমি ওফাত লাভ করব তখন এসব কিছু হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رحمة الله) কে দিয়ে দেবে। যখন হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবর (رحمة الله) এর ইন্তিকাল হলাে তখন উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা (رحمة الله) এসব বস্তু অসিয়ত অনুযায়ী ফিরিয়ে দিলেন। হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رحمة الله) বস্তুগুলাে (ফিরে পেয়ে) বললেন যে, আল্লাহ তাঁর উপর দয়া করুন, তিনিতাে তাঁর পরবর্তীদের অবাক করে দিয়েছেন। (তারীখুল খুলাফা, ৬০ পৃষ্ঠা)
আহারকারীদের ক্ষমা লাভের একটি উপায়
মর্যাদাপূর্ণ যে কোন কাজই শুরু করা হলে তার আগে বিসমিল্লাহ শরীফ অবশ্যই পাঠ করা উচিত। কেননা এটা সুন্নাত। অনুরূপভাবে পানাহারের পূর্বেও পাঠ করা সুন্নাত, আর এর খুবই বরকত রয়েছে। যেমন-
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رحمة الله) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মানুষের সামনে খাবার রাখা হয় আর উঠিয়ে নেয়ার পূর্বেই তাঁর ক্ষমা হয়ে যাওয়ার উপায় হচ্ছে যখন খাবার রাখা হয় তখন যেন বিসমিল্লাহ বলে এবং যখন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন আলহামদুলিল্লাহ বলে। (আল জামিউস্ সগীর, পৃষ্ঠা ১২২, হাদীস নং-১৯৭৪)
চেয়ার-টেবিলে বসে খাওয়া সুন্নাত নয়
সহীহ বুখারীতে হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رحمة الله) থেকে বর্ণিত; মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুর (ﷺ) কখনও টেবিলে খাবার খাননি এবং তাঁর (ﷺ) জন্য পাতলা চাপাটি রুটি পাকানাে হয়নি। হযরত সায়্যিদুনা কাতাদা (رحمة الله) থেকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলাে, তাঁরা কিসের উপর খেতেন? বললেন: দস্তরখানার উপর। (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৪১৫)
সদরুণ শরীয় (رحمة الله) বলেন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া যদিও গুনাহ্ নয় তবে সুন্নাতও নয়। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা আল্লামা মওলানা মুফতি আমজাদ আলী আযমী (رحمة الله) বাহারে শরীয়াতের ১৬ তম ৩ খন্ডে বলেন: “খাওয়ান" অর্থাৎ- ছােট টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু ধরণের বস্তু, যেটার উপর ধনীদের ঘরে খাবার পরিবেশন করা হয়। যাতে খাওয়ার সময় ঝুঁকতে হয় না। তার উপর খাবার খাওয়া অহংকারীদের নিয়ম ছিল, যেভাবে অনেক মানুষ বর্তমান সময়ে টেবিলে খাবার খায়। ছােট ছােট পাত্রে খাওয়া ধনীদের নিয়ম। তাঁদের ঘরে নানা রকমের খাবার ছােট ছােট পাত্রে রাখা হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা)
কি ধরণের দস্তরখানা সুন্নাত?
বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “সুন্নাত হচ্ছে খাবারের প্রতি সামান্য ঝুঁকে বসা। দস্তরখানা কাপড়, চামড়া ও খেজুরের পাতার হতাে। এ তিন ধরণের দস্তরখানায় প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) খাবার খেতেন। দস্তরখানাও জমীনের উপর বিছানাে হতাে এবং স্বয়ং নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) জমীনের উপর বসতেন।" (মিরকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চেয়ার-টেবিলে খাওয়া যদিও গুনাহ্ নয় ; তবে জমীনে দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া সুন্নাত আর সুন্নাতের মধ্যেই মর্যাদা রয়েছে। আফসােস! আজকাল এ সুন্নাত মুসলমানেরা অনেকাংশে বর্জন করছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারেও চেয়ার-টেবিলে বরং এখনতাে চেয়ার ও সরিয়ে নেয়া হয়েছে, লােকেরা টেবিলের চতুর্পাশ্বে (দাঁড়িয়ে) খাবার খায়। আহ! সুন্নাতে পরিপূর্ণ যুগ পুনরায় কবে ফিরে আসবে!
সুন্নাতে আ-ম করে দ্বীন কা হাম কাম করে,
নে-ক হাে যায়ে মুসলমান মদীনে ওয়ালে।
প্রতিটি লােকমায় আল্লাহর যিকির
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, “আল্লাহ্ তাআলা ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যখন খাবার খায় তখন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং পান করলে তখন তাঁর হামদ (প্রশংসা) করে। (সহীহ মুসলিম, ১৪৬৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৭৩৪)
প্রতিটি লােকমায় পাঠ করার নিয়ম
سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কিরূপ সহজ ব্যবস্থাপত্র। আল্লাহর কসম! আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে বড় কোন সৌভাগ্য নেই। যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট হবেন, তাকেই তাঁর দিদার দান করবেন, তাকেই জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রবেশ করাবেন। প্রতিটি লােকমা খেতে ও প্রতি ঢােক পান করতে আল্লাহ এর নাম নেয়া এবং খাবার খেয়ে নেয়ার পর ও (পানীয়) পান করে নেয়ার পর اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ বলার অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করুন। যাতে পানাহারের সময়টা উদাসীনতায় না কাটে।
সম্ভব হলে প্রতি দুই লােকমার মাঝখানে بسم الله اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ও يا واجد বলার অভ্যাস করুন যেন এভাবে প্রতি লােকমার শুরু يا واجد ও بسم الله এর যিকির দ্বারা এবং প্রতি লােকমার সমাপ্তি আল্লাহ তাআলার প্রশংসার মধ্যে হয় اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ নেকীর ভান্ডার ও সাওয়াবের আলােই আলাে হবে। মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত পকেট সাইজের রিসালা “৪০ রূহানী ইলাজের” ১১নং পৃষ্ঠায় রয়েছে, যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার সময় প্রতি লােকমায় পাঠ করবে يا واجد ঐ খাবার তার পেটে নূর হবে এবং রােগ দূর হবে।
কর উল্ফত মে আপনি ফানা ইয়া ইলাহী,
আতা করলে আপনি রেযা ইয়া ইলাহী।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য আশিকানে রাসুলের সাথে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করতে থাকুন اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমলগতভাবে খাওয়ার সুন্নাতের প্রশিক্ষণ হতে থাকবে এবং اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ কখনােতাে এমন খাবার লাভ হবে যে, আপনাদের অনেক উপকার হয়ে যাবে। যেমন-ইসলামী ভাইদের মাঝে সংগঠিত মাদানী ঘটনা, যা এখানে নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
দাতা সাহেব (رحمة الله) এর পক্ষ থেকে
মাদানী কাফেলার মেহমানদারী আমাদের মাদানী কাফেলা মারকাযুল আউলিয়া লাহােরে দাতা দরবার (رحمة الله) এর মসজিদে তিনদিনের জন্য অবস্থান করছিল। আমরা মাদানী কাফেলার জাদওয়াল (রুটিন) অনুযায়ী সুন্নাতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলাম। মাদানী হালকা চলাকালীন সময় এক ব্যক্তি আসলেন। তিনি আশিকানে রাসুলের সাথে খুব আন্তরিকভাবে সাক্ষাৎ করলেন। অতঃপর বলতে লাগলেন, اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আজ রাতে আমার ভাগ্যের নক্ষত্র চমকে উঠল আর হুযূর দাতা গাঞ্জ বাখ্বশ আলী হাজভীরী (رحمة الله) আমি গুনাগারের স্বপ্নে তাশরীফ আনলেন এবং অনেকটা এরকম ইরশাদ করলেন: “দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার আশিকানে রাসুল তিনদিনের জন্য আমার মসজিদে অবস্থান করছেন। অতএব তুমি তাদের খাবারের ব্যবস্থা করাে।” তাই আমি মাদানী কাফেলার মেহমানদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি, আপনারা (এগুলাে) গ্রহণ করুন।
কিয়া গর দর দর ফিরাে মাই ভী লেনে কেলিয়ে
হায় সালামত আস্তানা আ-পূকা দা-তা পিয়া।
ঝােলিয়া ভর ভরকে লে-যাতে হে মাংতে রাত-দিন,
হাে মেরি উম্মীদ কা গুলশান হারা দা-তা পিয়া।
সাহেবে মাযার সাহায্য করলেন
আউলিয়ায়ে কিরাম (রা.) মাযারে থেকেও নিজের মেহমানদের মেহেমানদারী করেন। যেমন-হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) অনেকটা এরূপ উদ্ধৃত করেন, মাক্কায়ে মুকামার এক শাফেয়ী মতাবলম্বীর বর্ণনা, মিসরে এক গরীব ব্যক্তির ঘরে সন্তানের জন্ম হলাে। সে একজন সামাজিক সংস্থার সদস্য এর সাথে যােগাযােগ করলাে। তিনি নবভূমিষ্টের পিতাকে নিয়ে
অনেক লােকের সাথে সাক্ষাৎ করলেন কিন্তু কেউ আর্থিক সাহায্য করলাে না। অবশেষে এক মাযারে হাজির হলেন। ঐ সামাজিক সংস্থার সদস্য অনেকটা এরকম ফরিয়াদ করলেন, “ইয়া সায়্যিদী! আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুন, আপনি আপনার পার্থিব জীবনে অনেক কিছু দান করতেন। আজকে অনেক মানুষ থেকে নব ভূমিষ্টের জন্য চেয়েছি কিন্তু কেউ কিছু দিলাে না।” এ কথা বলে ঐ সামাজিক সংস্থার সদস্য নিজেই অর্ধ দীনার নবভূমিষ্টের পিতাকে কর্জ হিসাবে দিয়ে বললেন “কখনাে যখন আপনার নিকট টাকা-পয়সার ব্যবস্থা হবে তখন আমাকে ফিরিয়ে দেবেন।” উভয়ে উভয়ের পথে চলে গেলেন। রাতে সামাজিক সংস্থার সদস্যের স্বপ্নে সাহিবে মাযারের (মাযারে পাকে শায়িত আল্লাহর ওলীর) দিদার হলাে। তিনি বললেন: আপনি আমাকে যা বলেছেন, তা আমি শুনেছিলাম কিন্তু ঐ সময় জবাব দেয়ার অনুমতি ছিল না। আমার পরিবারের নিকট গিয়ে বলুন যে, তারা যেন আবর্জনা রাখার নীচের জায়গা খুঁড়ে দেখে। সেখানে একটি মটকা (চামড়ার ছােট থলে) পাওয়া যাবে, তাতে ৫০০ দীনার আছে, ঐ সবগুলাে ঐ নবভূমিষ্টের পিতাকে দিয়ে দেবেন। তাই তিনি সাহিবে মাযারের পরিবারের নিকট গিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনালেন। তাঁরা সনাক্তকৃত জায়গা খুঁড়লেন এবং ৫০০ দীনার বের করে দিলেন। সামাজিক সংস্থার সদস্য বললেন: এসব দীনার আপনাদেরই, আমার স্বপ্নের নিশ্চয়তা কি! তাঁরা বললেন: যখন আমাদের বুযুর্গ দুনিয়া থেকে পর্দা করার পরও দান করছেন তখন আমরা কেন পিছনে থাকব! সুতরাং তারা অনুরােধ পূর্বক ঐ দীনার সামাজিক সংস্থার সদস্যকে দিলেন আর তিনি গিয়ে ঐ নবজাতকের পিতাকে তা প্রদান করলেন এবং সম্পূর্ণ ঘটনা শুনালেন। ঐ গরীব ব্যক্তি অর্ধ দীনার দিয়ে কর্জ পরিশােধ করলেন আর অর্ধ দীনার নিজের কাছে রেখে বললেন: “আমার জন্য এটাই যথেষ্ট"। অবশিষ্ট দীনার ঐ সামাজিক সংস্থার সদস্যকে দিয়ে বললেন: এসব দীনার গরীব ও নিঃস্ব লােকদের মধ্যে বন্টন করে দিন। বর্ণনাকারীর বক্তব্য হচ্ছে, আমি বুঝতে পারলাম না যে, এদের মধ্যে কে বেশি দানশীল! (ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন, ৩য় খন্ড, ৩০৯ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক আর তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
খালি কভী ফেরাহী নেহি আপনে গাদা কো আয় সা-ইলাে মাংগাে তাে জারা হাম হাত বাড়া কর।
খুদ আপনে ভীকারী কি ভরা করতে হে ঝুলি খুদ কেহতে হে ইয়া রব! মেরে মাঙ্গতা কা ভালা কর।
আল্লাহর ওলীগণ ওফাতের পরও উপকার করেন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পূর্ব যুগের লােকেরা বুযুর্গদের ব্যাপারে কিরূপ উত্তম আকীদা বা বিশ্বাস পােষণ করতেন এবং প্রয়ােজনের সময় তাঁদের কাছে নিজেদের অভাব পূরনের আশা রাখতেন! তাদের এ মন মানসিকতা ছিল যে, আল্লাহ্ ওয়ালাগণ আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সাহায্য করে থাকেন। যা হােক আল্লাহর ওলীরা (রা.) আপন রবের মেহেরবানিতে মাযারে পাকে জীবিত আছেন। আসা-যাওয়াকারীদের কথা শুনেন, হিদায়াত ও সাহায্য করেন এবং নিজেদের ঘরের ব্যাপারেও খবর রাখেন। তাইতাে সাহিবে মাযার বুযুর্গ স্বপ্নে এসে ঐ সামাজিক সংস্থার সদস্যকে দিক নির্দেশনা দিলেন এবং ঐ নবজাতকের গরীব পিতাকে সহায়তা করলেন ও আর্থিকভাবে সাহায্য করলেন। হযরত আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী (رحمة الله) বলেন: “ওলী আল্লাহ (রহ.) ওনারা মহান রবের দরবারে পৃথক পৃথক পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন এবং যিয়ারাতকারীদের নিজের জ্ঞান ও ভেদ অনুযায়ী উপকার করেন। (রদ্দুল মুখতার, ১ম খন্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা)
হামকো সা-রে আউলিয়া ছে পেয়ার হায়,
আপনা বেড়া পার হয়।
কি ধরণের খাবার রােগ!
হযরত সায়্যিদুনা উকবা বিন আমীর (رحمة الله) থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে খাবারে আল্লাহ্ তাআলার নাম নেয়া হয়নি, তা রােগ, তা বরকত শূন্য এবং সেটার কাফফারা হচ্ছে এই, যদি এখনও দস্তরখানা উঠানাে না হয় তবে بسم الله পাঠ করে কিছু খেয়ে নাও আর দস্তরখানা উঠিয়ে নেয়া হলে তবে بسم الله পাঠ করে আঙ্গুলগুলাে চেটে নাও।”
(আল জামিউস সাগীর, ৩৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৩২৭)
রাসুলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ
শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (কানযুল উম্মাল) শয়তানের জন্য খাবার হালাল হযরত সায়্যিদুনা হুযাইফা (رحمة الله) বর্ণনা করেন; প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে খাবারে বিসমিল্লাহ পাঠ করা হয় না, ঐ খাবার শয়তানের জন্য হালাল হয়ে যায়।” (অর্থাৎ بسم الله পাঠ না করার কারণে শয়তান ঐ খাবারে অংশগ্রহণ করে)
[সহীহ মুসলিম, ১১১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০১৭]
খাবারকে শয়তান থেকে রক্ষা করে
খাওয়ার পূর্বে بسم الله পাঠ না করাতে খাবার বরকতশূণ্য হয়।
হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী (رحمة الله) বলেন: আমরা দরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর বরকত পূর্ণ খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। (তখন) খাবার পরিবেশন করা হল। আমরা শুরুতে এত বরকত কোন খাবারে পাইনি কিন্তু শেষে খুবই বরকত শূন্যতা দেখলাম। আমরা আরয করলাম: “ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ)! এরূপ কেন হলাে?” ইরশাদ করলেন: আমরা সবাই খাওয়ার সময় بسم الله পড়েছিলাম। অতঃপর এক ব্যক্তি পাঠ করা ছাড়া খেতে বসে গেল। তার সাথে শয়তান খাবার খেয়ে নিল।"
(শরহুস্ সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৮১৮)
শয়তান থেকে নিরাপত্তা
হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যার এ কথা পছন্দ হয় যে, শয়তান যেন তার নিকট খাবার না পায়, কাইলূলাহ্ (দুপুরের বিশ্রাম) করতে না পারে, আর রাত কাটাতে না পারে, তবে তার উচিত, যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন যেন সালাম করে নেয় এবং খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করে নেয়।”
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮ম খন্ড, ৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১২৭৭৩)
পারিবারিক ঝগড়ার প্রতিকার
মুফাসসিরে শাহীর, হাকীমুল উম্মত, মুক্তী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “ঘরে প্রবেশ করার সময় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ পাঠ। করে প্রথমে ডান পা দরজায় প্রবেশ করানাে উচিত। অতঃপর ঘরের বাসিন্দাদের সালাম করে ঘরের ভেতরে যাবেন। যদি ঘরে কেউ না থাকে তবে السلام عليك يا رسيد ى ورحمة الله وبركاته বলবে। অনেক বুযুর্গদের দেখা গেছে যে, দিনের শুরুতে ঘরে প্রবেশ করার সময় “بسم الله ও সূরা ইখলাস পড়ে নিতেন, এ দ্বারা ঘরে একতাও থাকে (অর্থাৎ-ঝগড়া বিবাদ হয় না) এবং রিযিকে (রােজগারে) বরকতও হয়।”
(মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা)।
পড়তে ভুলে গেলে কি করবেন?
উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা (رحمة الله) বলেন: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন কেউ খাবার খায় তখন (যেন) আল্লাহর নাম নেয়, অর্থাৎ بسم الله পড়ে নেয় আর যদি শুরুতে بسم الله পড়তে ভুলে যায় তবে (যেন) এরূপ বলে, بسم الله او له ذاخره
(আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৪৮৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৬৭)
শয়তান খাবার বমি করে দিল
হযরত সায়্যিদুনা উমাইয়া বিন মাশী (رحمة الله) বলেন: এক ব্যক্তি বিসমিল্লাহ্ পড়া ব্যতীত খাবার খাচ্ছিল। যখন খাওয়া হয়ে গেল শুধুমাত্র একটি লােকমা অবশিষ্ট রইল, (তখন) সে লােকমা উঠাল আর বলল: بسم الله او له ذاخره খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) মুচকি হাসতে লাগলেন এবং এটা ইরশাদ করলেন: “শয়তান তার সাথে খাবার খাচ্ছিল, যখন সে আল্লাহ তাআলার নামের যিকির করল তখন যা কিছু তার (শয়তানের) পেটে ছিল বমি করে দিল।
(আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৬৮)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দৃষ্টি থেকে কোন কিছু গোপন নেই
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখনই খাবার খাবেন মনে করে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ” পাঠ করা উচিত। যে পাঠ করে না, তার খাবারে “কারীন" নামক শয়তানও অংশগ্রহণ করে। সায়্যিদুনা উমাইয়া বিন মাশী (رحمة الله) এর বর্ণনা থেকে পরিস্কারভাবে প্রকাশ পাচ্ছে যে, আমাদের প্রিয় আকা মাদীনে ওয়ালে মুস্তফা (ﷺ) এর দৃষ্টি সবকিছু দেখে নিতেন, তাইতাে শয়তানকে ব্যাকুল অবস্থায় বমি করতে দেখে মুচকি হাসলেন। যেমন-
বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “রহমতে আলম, আল্লাহর প্রিয় রাসুল (ﷺ) এর পবিত্র দৃষ্টি সত্যিকারভাবে লুকায়িত সৃষ্টিকেও পর্যবেক্ষন করেন আর হাদীসে মােবারক এখানে একেবারে নিজের প্রকাশ্য অর্থের উপর রয়েছে, কোন ব্যাখ্যার প্রয়ােজন নেই। যেভাবে আমাদের : পেট মাছিযুক্ত খাবার (যখন মাছি তাতে বিদ্যমান থাকে) গ্রহণ করে না। ঠিক তেমনি শয়তানের পাকস্থলী بسم الله পঠিত খাবার হজম করতে পারে না।
যদিও তার বমিকৃত খাবার আমাদের কোন কাজে আসে না, কিন্তু বিতাড়িত (শয়তান) অসুস্থ হয়ে পড়ে ও ক্ষুধার্তও থাকে এবং আমাদের খাবারের হারানাে বরকত ফিরে আসে। মােটকথা এযে, এতে আমাদের জন্য উপকার রয়েছে আর শয়তানের জন্য দুটি ক্ষতি রয়েছে এবং যথাসম্ভব ঐ মরদূদ ভবিষ্যতে আমাদের সাথে بسم الله ছাড়া খাবারও ভয়ে খাবে না যে, হয়তাে এ ব্যক্তি মাঝখানে بسم الله পাঠ করে নেবে আর আমাকে বমি করতে হবে। হাদীসে পাকে যে ব্যক্তির আলােচনা রয়েছে। সম্ভবত সে একা খাচ্ছিল যদি হুযূরে আকরাম (ﷺ) এর সাথে খেত তবে بسم الله পড়া ভুলতনা।।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েল)
কারণ সেখানেতাে উপস্থিত লােকেরা بسم الله উচ্চস্বরে বলতেন এবং পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে بسم الله বলার নির্দেশ দিতেন। (মিরআত, শরহে মিশকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে ও বিশেষতঃ মাদানী কাফেলায় খুব বেশি করে দোয়া পড়া ও শেখার সুযােগ লাভ হয়। দাওয়াতে ইসলামীর সুসংবাদের কথা কী বলব! বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা আমার নিজের ভাষায় উপস্থাপন করার সৌভাগ্য অর্জন করছি।
মা চৌকি থেকে উঠে দাঁড়ালেন
আমার আম্মাজান কঠিন রােগের কারণে খাট থেকে উঠতেই পারছিলেন না। তাকে কয়েকজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম কিন্তু কোন কাজ হল না। ডাক্তারগণ এর কোন চিকিৎসা নেই বলে দিলেন। সৌভাগ্যক্রমে একবার আমি শুনে ছিলাম যে, দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সফর করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় এবং বিভিন্ন রােগ হতে আরােগ্য লাভ হয়। তাই আমি অসুস্থ মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে মন স্থির করলাম এবং নিয়্যত করলাম যে, মাদানী কাফেলায় সফর করে মায়ের জন্য দোয়া করব।
এ উদ্দেশ্য নিয়ে সুন্নাত সমূহের নূর বর্ষনকারী দাওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনার “মাদানী তরবিয়ত গাহে" উপস্থিত হয়ে তিনদিনের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। ইসলামী ভাইয়েরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাকে হাতােহাত (সাথে সাথে) তাদের কাফেলায় গ্রহণ করে নিলেন। আশিকানে রাসুলদের অর্থাৎ আমাদের মাদানী কাফেলার সফর শুরু হয়ে গেল। আমরা বাবুল ইসলাম সিন্ধু এর “সাহরায়ে মদীনার নিকটস্ত এক এলাকায় পৌঁছে গেলাম। সফরের মধ্যে আশিকানে রাসুলদের খিদমতে আমি আমার আম্মাজানের মর্মান্তিক অবস্থার কথা বর্ণনা করে দোয়ার জন্য অনুরােধ করলাম। তারা আমার আম্মাজানের জন্য পূর্ণ ইখলাছের সাথে দোয়া করলেন। এরপর আমাকে মায়ের আরােগ্যের ব্যাপারে যথেষ্ট আশ্বস্থ করলেন। তাদের এ রকম আন্তরিকতা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমীরে কাফেলা খুবই নম্রতার সাথে ইনফিরাদী কৌশিশ করে আমাকে আরাে ৩০ দিনের মাদানী কাফেলায় সফর করার জন্য উৎসাহ যােগালেন, আমি নিয়্যত করে নিলাম। কাফেলার সমষ্টিগত দোয়া ছাড়া আমি নিজে নিজেও আম্মাজানের সুস্থতার জন্য বিনয় সহকারে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করতে লাগলাম। তিনদিনের এ মাদানী কাফেলার তৃতীয় রাতে আমার এক উজ্জল চেহারা বিশিষ্ট বুযুর্গের যিয়ারত নসীব হলাে। তিনি বললেন: “বেটা! আম্মাজানের জন্য চিন্তা করাে না, তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।” তিনদিনের মাদানী কাফেলা থেকে বিদায় নিয়ে আমি ঘরে চলে গেলাম। ঘরে পৌঁছে দরজাতে কড়া নাড়লাম। দরজা খুললে আমি আম্মাজানকে দরজার পাশে দাঁড়ানাে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সেখানে নির্বাক হয়ে আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম, কেননা আমার ঐ অসুস্থ আম্মাজান যিনি বিছানা থেকে উঠতেই পারছিলেন না, তিনি আল্লাহর মেহেরবানীতে আপন পায়ে হেঁটে এসে দরজা খুলে দিলেন! আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে মায়ের পায়ে চুমুর পর চুমু খেতে লাগলাম এবং ওনাকে মাদানী কাফেলায় দেখা স্বপ্নের কথা শুনালাম। এরপর আম্মাজান থেকে অনুমতি নিয়ে আরাে ৩০ দিনের জন্য আশিকানে রাসুলদের সাথে মাদানী কাফেলায় সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলাম।
মা জু বীমার হাে করজ কা বার হাে রঞ্জো গম মত করে কাফিলে মে চলাে।
রব কে দরপর ঝুঁকে ইতিজায়ে করে, বাবে রহমত খুলে কাফিলে মে চলাে।
দিলকি কালিক ধুলে মরষে ঈছইয়া ঠলে আ-ও সব চল পড়ে কাফিলে মে চলাে।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! মাদানী কাফেলায় সফর করে দোয়া করার বরকতে ইসলামী ভাইয়ের চিকিৎসা থেকে নিরাশ হওয়া মায়ের আরােগ্য লাভ হলাে! দোয়াতাে দোয়াই।।
আমীরুল মুমিনীন হযরত মওলায়ে কায়িনাত, আলী মুরতাজা শেরে খােদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে
উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
الدعاء سلاح المو من وعما د الد ين ،ونور السمو ات والا رض
অর্থাৎ- দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দ্বীনের স্তম্ব এবং জমিন ও আসমানের নূর।” (মুসনাদে আবী ইয়াল, ১ম খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হালীস নং-৪৩৫)
দোয়া করার ১৭টি মাদানী ফুল
(প্রায় সব মাদানী ফুল আহসানুল বিআ লি আ-দাবিদ দোয়া মাআ' শারহি যাইলুল মুদ্দা'আ লি আহসানুল উই'আ” নামক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা করাচী থেকে প্রকাশিত)
(১) প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ বার দোয়া করা ওয়াজিব। নামাযীদের এ ওয়াজিব, নামাযে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আদায় হয়ে যায়। কারণ اهد نا الصراط المستقيم (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমাদেরকে সােজা পথে পরিচালিত করাে) ও দোয়া এবং الحمد لله رب العلمين (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মালিক সমস্ত জগদ্বাসীর) বলাও দোয়া। (১২৩, ১২৪ পৃষ্ঠা)
(২) দোয়াতে সীমা অতিক্রম করবেন না। যেমন আম্বিয়ায়ে কিরাম (আ.) এর পদমর্যাদা চাওয়া বা আসমানে আরােহনের আকাঙ্ক্ষা করা। এছাড়া উভয় জগতের সমস্ত কল্যাণ ও সর্বপ্রকার গুনাবলী চাওয়া নিষেধ। কারণ এসব গুণাবলীর মধ্যে আম্বিয়াদের পদমর্যাদাটাও রয়েছে, যা অর্জন করা যাবে না। (৮০, ৮১ পৃষ্ঠা)
(৩) যেটা অসম্ভব বা অসম্ভবের কাছাকাছি, সেটার দোয়া করবেন না। সুতরাং সব সময়ের জন্য সুস্থতা, নিরাপত্তা চাওয়া যে, মানুষ সারাজীবন কখনাে কোন প্রকার কষ্টে পতিত হবে না, এটা হল অসম্ভব অভ্যাসের দোয়া চাওয়া। অনুরূপভাবে লম্বাকৃতির মানুষের ক্ষুদ্র আকৃতির হওয়ার জন্য কিংবা ছােট চক্ষু বিশিষ্টের বড় চোখ লাভের দোয়া করা নিষেধ। কারণ এটা এমন কাজের দোয়া, যেটার উপর কলম জারী হয়ে গেছে অর্থাৎ এটা পূর্বে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। (৮১ পৃষ্ঠা)
(৪) গুনাহের দোয়া করবেন না, যেমন, অন্যের ধন যেন আপনার মিলে যায়। কারণ গুনাহের আশা করাও গুনাহ্। (৮২ পৃষ্ঠা)
(৫) আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার দোয়া করবেন না। (যেমন-অমুক আত্মীয়দের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যাক) (৮২ পৃষ্ঠা)
(৬) আল্লাহর নিকট শুধুমাত্র নিকৃষ্ট বস্তু চাইবেন না, কেননা পরওয়ারদিগার খুবই ঐশ্বর্যশালী। তাই নিজের মনােযােগ সর্বদা
তারই প্রতি রাখুন এবং প্রতিটি বস্তু তাঁরই কাছে চান। (৮৪ পৃষ্ঠা)
(৭) দুঃখ ও বিপদে ভীত হয়ে নিজের মৃত্যুর দোয়া করবেন না। মনে রাখবেন যে, পার্থিব ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যু কামনা করা না জায়িয ও দ্বীন-ধর্মের ক্ষতির ভয়ে (মৃত্যু কামনা করা) জায়িয। (অর্থাৎ - যেমন এই দোয়া করা যে, ইয়া আল্লাহ্ আমার দ্বারা দ্বীন ধর্মের, সুন্নীয়তের ক্ষতি সাধন হওয়ার পূর্বেই আমার মৃত্যু নসীব কর)। (৮৫, ৮৭ পৃষ্ঠা)
(৮) শরয়ী প্রয়ােজন ব্যতীত কারাে মৃত্যু ও অনিষ্ট (ধ্বংস) এর দোয়া করবেন না। তবে যদি কোন কাফিরের ঈমান গ্রহণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস বা প্রবল ধারণা হয় ও (তার) বেঁচে থাকাতে দ্বীনের ক্ষতি হয় অথবা কোন অত্যাচারির তাওবা করার ও অত্যাচার ত্যাগ করার আশা না থাকে এবং তার মৃত্যু, ধ্বংস সৃষ্টিকুলের জন্য উপকার হয় তবে এ ধরণের মানুষের জন্য বদ্-দোয়া করা শুদ্ধ হবে। (৮৬, ৮৯ পৃষ্ঠা)
(৯) কোন মুসলমানকে এ বদ্-দোয়া দেবেন না যে, “তুই কাফির হয়ে যা।" কারণ অনেক আলিমের মতে (এধরণের দোয়া করা) কুফরী আর বাস্তব সত্য এটাই যে, যদি কুফরকে ভাল ও ইসলামকে মন্দ জেনে এ রূপ বলে, তবে নিঃসন্দেহে কুফরী। অন্যথায় বড় গুনাহ কেননা মুসলমানের (মন্দ কামনা করা) হারাম। বিশেষতঃ অমঙ্গল চাওয়া (যে অমুকের ঈমান নষ্ট হয়ে যাক) সব ধরণের অমঙ্গল থেকে নিকৃষ্ট। (পৃষ্ঠা ৯০)
(১০) কোন মুসলমানের উপর লানত (অভিশাপ) দেবেন না ও তাকে মরদূদ (বিতাড়িত) ও মলউন (অভিশপ্ত) বলবেন না এবং যে কাফিরের কুফরের উপর মৃত্যু নিশ্চিত নয় তার উপরও নাম নিয়ে লানত করবেন না। এমনিভাবে মাছি, বাতাস ও প্রাণহীন বস্তুসমূহ (যেমন-পাথর, লােহা ইত্যাদি) ও প্রাণীজগতের উপর অভিশাপ দেয়া নিষিদ্ধ। তবে বিচ্ছু ইত্যাদির ব্যাপারে হাদীসে পাকে অভিশাপ এসেছে। (৯০ পৃষ্ঠা)
(১১) কোন মুসলমানকে এ বদ দোয়া দেবেন না যে, “তাের উপর খােদার গজব নাজিল (অবতীর্ণ) হােক ও তুই দোযখে যা," কারণ হাদীস শরীফে এটার প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (১০০ পৃষ্ঠা)
(১২) যে কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তার জন্য ক্ষমার দোয়া করা হারাম ও কুফরী। (পৃষ্ঠা ১০১)
(১৩) এ দোয়া করা, “হে খােদা! সকল মুসলমানের সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দিন।” জায়িয নেই। কারণ এতে ঐসব হাদীসে মুবারকের তাকীব (অর্থাৎ-মিথ্যা প্রতিপন্ন করা) হয়ে থাকে, যেগুলােতে অনেক মুসলমানের দোযখে যাওয়া সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। (১০৬ পৃষ্ঠা)
তবে এভাবে দোয়া করা, “সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর মাগফিরাত (অর্থাৎ-ক্ষমা) হােক বা সমস্ত মুসলমানের ক্ষমা হােক" জায়িয। (১০২ পৃষ্ঠা)
(১৪) নিজের জন্য নিজের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ ও আওলাদের জন্য বদ্-দোয়া করবেন না। জানা নেই যে, যদি সেই মুহূর্তটা দোয়াকবুল হওয়ার সময় হয়ে থাকে আর বদ্-দোয়ার প্রভাব প্রকাশ হওয়াতে পরে আবার যেন অনুশােচনা করতে না হয়। (১০৭ পৃষ্ঠা)
(১৫) যে বস্তু অর্জিত রয়েছে, (অর্থাৎ নিজের কাছে বিদ্যমান রয়েছে) সেটার দোয়া করবেন না। যেমন-পুরুষেরা বলবেন না যে, “ইয়া আল্লাহ! আমাকে পুরুষ করে দাও।” কারণ এটা ইতিহাযা! (তামাসা) করা। তবে এরূপ দেয়া যাতে শরীয়াতের নির্দেশ পালন বা বিনয় ও বন্দেগীর বহি:প্রকাশ অথবা পরওয়ারদিগার ও মদীনার তাজদার (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ধর্ম বা ধার্মিকদের প্রতি অনুরাগ, বা কুফর ও কাফিরদের প্রতি ঘৃণা ইত্যাদির ফায়দাসমূহ্ অর্জিত হয় তাহলে তা জায়িয। যদিও এ বিষয় গুলাে অর্জিত হওয়া নিশ্চিত। যেমন-দরূদ শরীফ পাঠ করা, উসীলা, সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর, আল্লাহ্ ও রাসুলের শত্রুদের উপর শাস্তি ও অভিসম্পাতের দোয়া করা। (১০৮,১০৯ পৃষ্ঠা)
(১৬) দোয়াতে সংকীর্ণতা করবেন না। যেমন-এভাবে চাইবেন না যে, ইয়া আল্লাহ্ শুধু আমার উপর দয়া করুন বা শুধুমাত্র আমাকে ও আমার অমুক অমুক বন্ধুকে নেয়ামত দান করুন। (১০৯ পৃষ্ঠা)
উত্তম হল, সকল মুসলমানকে দোয়াতে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া। এর একটা উপকার এটাও হবে যে, যদি নিজে ঐ নেক বিষয়ের হকদার নাও হয় তবে নেক্কার মুসলমানদের ওসীলায় (তা) পেয়ে যাবে।
(১৭) হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযযালী (رحمة الله) বলেন: দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দোয়া করবেন এবং কবুল হওয়ার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখবেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭০)।
বসার একটি সুন্নাত
খাবার খাওয়ার জন্য বসার একটি সুন্নাত এযে, ডান হাঁটু দাঁড় করিয়ে ও বাম পা বিছিয়ে সেটার উপর বসে পড়বেন। তবে বসার আরাে একটি সুন্নাত রয়েছে। যেমন-
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন: আমি নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) কে শুকনাে (এক প্রকার) খেজুর খেতে দেখেছি আর হুযূর (ﷺ) তখন জমিনের সাথে লেগে এভাবে বসেছেন যে, উভয় হাঁটু দাঁড় করানাে অবস্থায় ছিল। (সহীহ মুসলিম, ১১৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৪৪)
হাঁটু দাঁড় করিয়ে খাওয়ার উপকারীতা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উভয় হাঁটু দাঁড় করিয়ে জমিনের সাথে পাছা লাগিয়ে খাওয়াতে প্রয়ােজন পরিমাণ খাবারই পাকস্থলীতে যায়, যে কারণে রােগ-ব্যাধি থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়। এক পা দাঁড় করিয়ে ও অন্যটা বিছিয়ে খাওয়ার বরকতে প্লীহার রােগসমূহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ও রানের পাট্টাগুলাে মজবুত হয়। বলা হয়ে থাকে, চার জানু হয়ে বসে। খাওয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তির মেদ বাড়ে ও পেট বের হয়ে যায়। এছাড়া চার জানু হয়ে বসে খাওয়াতে শূল বেদনা (বড় অন্ত্র বা ভূড়ির ব্যথা) হওয়ারও আশংকা থাকে। এক ব্যক্তি বলেন: আমি এক ইংরেজকে দেখলাম যে, উভয় হাঁটু দাঁড় করিয়ে জমিনের উপর পাছা লাগিয়ে বসে খাচ্ছিল। আমি অবাক হয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তৎক্ষণাৎ তার বাইরে বেরিয়ে যাওয়া পেটের উপর হাত মেরে বলতে লাগল, “এটাকে ভেতরে নেয়ার জন্য।"
খাবার ও পর্দার মধ্যে পর্দা খাবার সময় সুন্নাত অনুযায়ী বসা ইসলামী ভাই ও ইসলামী বােনদের উচিত যে, হাঁটু থেকে নিয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত চাদর দিয়ে ভালভাবে বিস্তৃত করে পর্দার মধ্যে পর্দা করে নেয়া। যদি জামার আঁচল বড় থাকে তবে সেটাকেই ভালভাবে বিস্তৃত করে দিন।।
খাবার ও পর্দার মধ্যে পর্দা
না করাতে সামনে বসা লােকদের জন্য অনেক সময় চোখের হিফাযত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। একাকী অবস্থায়ও পর্দার মধ্যে পর্দা করা উচিত। কেননা লজ্জা করার ক্ষেত্রে বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহরই সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে। আল্লাহরই কাছ থেকে লজ্জা করছি এ নিয়্যত করে নিলে তবে এজন্য প্রচুর সাওয়াব পাবেন। আর অন্যদের উপস্থিতিতে পর্দার মধ্যে পর্দা করার সময় এ নিয়্যতও করা যায় যে, মুসলমানদের জন্য কুদৃষ্টির মাধ্যম দূর করছি। প্রতিটি কাজে যতটুকু সম্ভব ভাল ভাল নিয়্যত করে নেয়া উচিত। ভাল নিয়্যত যত বেশী হবে সাওয়াবও তত বেশী লাভ হবে। নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “মুসলমানের নিয়্যত তার আমল থেকে উত্তম।” (তাবারানী মুজম কাবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
চেয়ার টেবিলে খাওয়া
আলা হযরত মওলানা শাহ্ ইমাম আহমাদ রযা খান (ﷺ) বলেন: “জুতা পরিধান করে খাবার খাওয়া যদি এই অপরাগতার কারণে হয় যে, জমিনের উপর বসেছে অথচ বিছানা (অর্থাৎ মােটা কার্পেট ইত্যাদি) নেই তবে তাে একটি সুন্নাতে মুস্তাহাব্বার পরিত্যাগ করা হল। এজন্য উত্তম এটাই ছিল যে, জুতা খুলে নেয়া। আর টেবিলে খাবার (রাখা হয়েছে) এবং এ ব্যক্তি চেয়ারে জুতা পরিহিত অবস্থায় বসে, তাহলে (এটা) খ্রীষ্টানের বিশেষ প্রচলন, এ থেকে দূরে থাকুন। নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই! : অন্তর্ভূক্ত। (আবু দাউদ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৩১)
“বিয়ে যর” ধ্বংসের কারণ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আফসােস! শত কোটি আফসােস! আজকাল আমাদের দেশে প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে ইহুদী ও খৃষ্টানদের অনুসরণ করা হচ্ছে। বিয়ে নিঃসন্দেহে প্রিয় প্রিয় সুন্নাত, কিন্তু আফসােস হচ্ছে, এ মহান সুন্নাত আদায়ে অন্যান্য পবিত্র সুন্নাত বরং বিভিন্ন ফরয পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে! গান-বাজনা, ফিল্ম, নাটক, ভেরাইটি অনুষ্ঠান ও জানিনা আরাে কত কি কি অশ্লীল কার্যকলাপ হয়ে থাকে, এমনকি ঘরের মহিলারা ঢােল বাজায়, আল্লাহর পানাহ্ মহিলারা নেচে নেচে গানও পরিবেশন করে। মােটকথা; এমন কোন হারাম কাজ অবশিষ্ট নেই যা আজকাল আমাদের এখানে বিয়েতে করা হয় না? আল্লাহ্ পানাহ! বর বিয়ের পূর্বেই নিজের হবু স্ত্রীকে নিজের হাতে আংটি পরিধান করায়, সাথে নিয়ে ভ্রমণে যায়, আনন্দ করে, বিয়েতে নির্লজ্জ ভাবে পূর্ণ অবৈধ অনুষ্ঠানের আয়ােজন হয়। মহিলাদের মাঝে ঢুকে অপরিচিত পুরুষ ভিডিও মুভি তৈরী করে। খাবার-দাবার তাও আবার চেয়ার টেবিলে। বরং এখনতাে আরাে অনেক উন্নত হতে চলেছে যে, চেয়ারও সরিয়ে নেয়া হয়েছে, শুধু টেবিলের উপর নানা প্রকারের খাবার রাখা হয় আর ললাকেরা। চলা-ফেরা করে টেবিলের চতুর্পাশ্বে ঘােরাঘুরি করে পানাহার করে থাকে। অথচ এরূপ করা আদৌ সুন্নাত নয়। আপনি ভেবেতাে দেখুন যে, আজকাল “বিয়ে করে কার ঘর সুখ শান্তিতে আবাদ হচ্ছে? বিয়ের পর প্রায় প্রত্যেকেই “ঘর ধ্বংসের” শিকারে পরিণত হচ্ছে! কোথাও আবার এমন তাে নয় যে, বিয়ের মত পবিত্র ও আল্লাহর রাসুলের খুবই প্রিয় সুন্নাত পালনের অনুষ্ঠানে শরীয়াত বহির্ভূত নিয়মকানুন, কার্যকলাপ আদায়ের কারণে দুনিয়াতেই এর শাস্তি দেয়া হচ্ছে! যদি এ কারণে আল্লাহ্ রাগান্বিত হন তাহলে আখিরাতের শাস্তি কিরূপ ভয়ানক হবে! আল্লাহ্ আমাদেরকে পশ্চিমা সভ্যতা ও ফ্যাশন থেকে মুক্তি দান করে সুন্নাতের নমুনা বানিয়ে দিন।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সুন্নাতে ভরা সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। বরকত ও সৌভাগ্যই সৌভাগ্য অর্জন করবেন। এক দাওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগ, দাওয়াতে ইসলামীতে নিজের অন্তর্ভুক্তির যে কারণগুলাে বর্ণনা করেছেন তা আসলেই শুনার মত। তাই তার স্পৃহা নিজের ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।
আমি দাওয়াতে ইসলামীতে কিভাবে আসলাম?
মান্ডান গড়, জেলা রত্মগরী, মহারাষ্ট্র ভারত এর এক ইসলামী ভাই এর বর্ণনা, ২০০২ সালের কথা, আমি খারাপ বন্ধুদের সংস্পর্শের কারণে সন্ত্রাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলাম। মানুষদের মারধর ও গালিগালাজ করা আমার বদঅভ্যাস ছিল। জেনে শুনে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলতাম। যে নতুন ফ্যাশন আসত তা সর্বপ্রথম আমি গ্রহণ করতাম। দিনে কয়েকবার কাপড় পরিবর্তন করতাম। জিন্স এর প্যান্ট ছাড়া অন্য প্যান্ট পরতাম না। লম্পট বন্ধুদের সাথে ঘােরাঘুরি করে অনেক রাতে ঘরে ফিরতাম আর দিনে অনেক্ষণ পর্যন্ত শুয়ে থাকতাম। এরই মধ্যে বাবার ইন্তিকাল হয়ে যায়। বিধবা মা বুঝালে তখন আল্লাহরই পানাহ মুখে মুখে তর্ক করতাম। একবার দাওয়াতে ইসলামীর কোন এক সবুজ পাগড়ী পরিহিত ইসলামী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি “জ্বীনদের বাদশাহ্" (মাকতাবাতুল মদীনা থেকে মুদ্রিত) নামক রিসালা তুহফা দিলেন। পাঠ করে খুব ভাল লাগল। রমযানুল মুবারকে একদিন কোন এক মসজিদে যাওয়ার সৌভাগ্য হল, তখন ঘটনাক্রমে সবুজ ইমামা ও সাদা পােষাক পরিহিত গম্ভীর প্রকৃতির এক যুবকের প্রতি দৃষ্টি পড়ল। জানা গেল যে, তিনি এখানে ই'তিকাফে আছেন। তিনি ফয়যানে সুন্নাতের দরস দিচ্ছে' আমি বসে পড়লাম। দরসের পর তিনি আমার উপর ইনফিরাদী কৌশিশ করে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকত সমূহ সম্পর্কে বললেন। ঐ ইসলামী ভাইয়ের পােষাক এতই সাধারণ ছিল যে, কয়েক জায়গায় তালি লাগানাে ছিল।যখন তাঁর জন্য ঘর থেকে খাবার আসল তাও একেবারে সাধারণ ছিল! তাঁর সাদাসিধা জীবন যাপনের প্রতি আমি খুবই প্রভাবিত হলাম। তাঁর সাথে আমার ভালবাসা সৃষ্টি হল। তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য আসা-যাওয়া শুরু করলাম। ঘটনাক্রমে ঈদুল ফিতরের পর ঐ ইসলামী ভাইয়ের বিয়ে ছিল। এ বেচারা গরীব ও নিঃস্ব ছিল কিন্তু অবাক হওয়ার কথা এ ছিল যে, তিনি এ বিষয়ে আমাকে সামান্যও বুঝতে দিলেন না, আর না কোন প্রকার আর্থিক সহায়তা চাইলেন না। আমি আরাে বেশী প্রভাবিত হলাম যে, দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ কিরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত ও এটার সাথে সম্পৃক্তরা কিরূপ সাদাসিধা ও আত্মসম্মান বােধ সম্পন্ন। দাওয়াতে ইসলামীর প্রতি ভালবাসা, মুহাব্বত আমার হৃদয়ে বাসা বাঁধতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত আমি আশিকানে রাসুলদের সাথে ৮ দিনের মাদানী কাফেলায় সফর করলাম। আমার মনের দুনিয়া উলট-পালট হয়ে গেল। অন্তরে মাদানী পরিবর্তন এসে গেল, আর আমি গুনাহ সমূহ থেকে সত্যিকারের তাওবা করে নিজেকে দাওয়াতে ইসলামীতে সােপর্দ করলাম। আমার উপর মাদানী রং এমনভাবে ছড়ালাে যে, এখন আমি আলাকায়ী মুশাওয়ারাত এর খাদিম (নিগরান) হিসাবে আমার এলাকায় দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজসমূহের প্রসার করছি।
সা-দাগী চাহিয়ে আজেবী চাহিয়ে।
আপ কো ঘর চলে কাফিলে মে চলাে।
খুব খুদ দারিয়া আওর খুশ আখলাকিয়া,
আ-য়ে শিখলে কাফিলে মে চলাে।
আ-শিকানে রসুল লায়ে সুন্নাত কে ফুল,
আ-ও লেনে চলে কাফিলে মে চলল।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! দ্বীন প্রচারের জন্য ইস্ত্রি করা, চমকদার পােষাক ও মাড় দেয়া কাপড়, সুন্দর ইমামা (পাগড়ী শরীফ) জরুরী নয়, তালিযুক্ত পােষাক, সাধারণ ইমামা শরীফ দিয়েও চলে…..চলে নয়, বরং দৌড়ায়------শুধু দৌড়ায় না এমনকি তাতে তাে মাদানী ডানা লেগে যায়, আর মদীনায়ে মুনাওয়ারার দিকে উড়া শুরু করে! সাধারণ পােষাকের কথা কি বলব!
সাদাসিধা পােষাকের ফযীলত
কাফিরদের অনুকরণে ফ্যাশনকারী, সর্বদা সাজ-সজ্জাকারী, নিত্য নতুন ডিজাইন ও নানা ধরণের সাজগােজের পােষাক পরিধানকারীরা যদি সাদাসিধা জীবনযাপন গ্রহণ করে নেন তবে উভয় জগতে সফলকাম হয়ে যাবেন। এবার সাদাসিধা পােষাক পরিধানের ফযীলত শুনুন এবং খুশীতে আত্মহারা হােন। প্রিয় আক্বা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উন্নত পােষাক পরিধান করাকে বিনয়ের কারণে ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কারামাতের হুল্লাহ্ (অর্থাৎ-জান্নাতী পােষাক) পরিধান করাবেন। (আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৭৭৮)
ফ্যাশন পূজারীরা! সাবধান!! প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আনন্দে দোলে উঠুন! ধন সম্পদ আছে, উৎকৃষ্ট পােষাক পরিধানের সামর্থ্য আছে, তবুও আল্লাহ্ তায়ালা এর সন্তুষ্টির জন্য বিনয় অবলম্বন করে সাদাসিধা পােষাক পরিধানকারী ব্যক্তি জান্নাতী পােষাক লাভ করবে আর এটা দিবা লােকের ন্যায় স্পষ্ট যে, যে জান্নাতের পােষাক পাবে সে নিশ্চিতভাবে জান্নাতেও যাবে। মানুষের উপর প্রভাব ফেলার জন্য, আমীর সূলভ জাঁকজমকভাব দেখানাের উদ্দেশ্যে প্রতিপালনকারী ও শুধুমাত্র নিজের নফসের খুশিতে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য, (অন্যদের চেয়ে ভিন্ন) আকর্ষণীয় ও আড়ম্বর পােষাক পরিধানকারীরা পড়ুন আর ব্যথিত হােন:
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত;
তাজদারে মদীনা, প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: "দুনিয়াতে যে খ্যাতির পােষাক পরিধান করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তাকে অপমানের পােষাক পরিধান করাবেন।"
(সুনানে ইবনে মাজাহু, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩, হাদীস নং-৩৬০৬)
খ্যাতির পোষাক কাকে বলে?
বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার (رحمة الله) এ হাদীসে পাক প্রসঙ্গে বলেন: “অর্থাৎ, এমন পােষাক পরিধান করা যে, লােকেরা আমীর (অর্থাৎ-ধনী) মনে করে বা এমন পােষাক পরিধান করা যে, যাতে লােকেরা নেককার পরহেযগার মনে করে। এ উভয় প্রকারের পােষাক, খ্যাতির পােষাক। মােটকথা যে পােষাকে এ নিয়্যত থাকে যে, লােকেরা তাকে সম্মান করুক এটা খ্যাতির পােষাক।
মিরকাত প্রণেতা বলেছেন, “তামাসাযুক্ত পোষাক পরিধান করা যাতে লােকেরা হাসে, এটাও খ্যাতির পােষাক।"
(মিরকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১০৯ পৃষ্ঠ, থেকে সংকলিত)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সত্যিই এটা খুবই কঠিন পরীক্ষা। পােষাক পরিধানে খুবই চিন্তা ভাবনা করা ও লােক দেখানাে থেকে বাঁচা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া যে ব্যক্তি মানুষদেরকে নিজের সাদাসিধা জীবনযাপনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সাদাসিধা পােষাক ও ইমামা এবং চাদর ইত্যাদি পরিধান করে, সে রিয়াকারী ও জাহান্নামের ভাগীদার। আমরা আল্লাহ্ থেকে ইখলাসের (শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোন কাজ করার) ভিক্ষা প্রার্থনা করছি।
মেরা হার আমল বাছ তেরে ওয়াসেতে হাে,
করু ইখলাছ এইছা আতা ইয়া ইলাহী।।
রিয়াকারীয়ু ছে ছিয়াকারীয়ু ছে,
বাঁচা ইয়া ইলাহী, বাঁচা ইয়া ইলাহী।
টিপটাপকারীদের জন্য চিন্তার বিষয়
ফ্যাশনের প্রেক্ষিতে প্রতিদিন নতুন নতুন পােষাক পরিধানকারীরা, সামান্য ফ্যাশন পরিবর্তন হলে বা কাপড় সামান্য পুরাতন হলে কিংবা কোথাও সামান্যটুকু ফেটে গেলে জোড়া লাগিয়ে তা পরিধান করাকে তুচ্ছ জ্ঞান মনে কারীরা এ বর্ণনা বার বার পড়ন: আবু উমামা ইয়াস বিন সালাবা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “তােমরা কি শুন না? তােমরা কি শুন না? কাপড় পুরাতন হওয়া ঈমানের অংশ, নিশ্চয় কাপড় পুরাতন হওয়া ঈমানের অংশ।"
(সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪১৬১)
এ বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত সায়্যিদুনা শাহ্ আবদুল হক মুহাদ্দিসে
দেহলভী (رحمة الله) বলেন: “সৌন্দর্য পরিত্যাগ করা ঈমানদারদের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভূক্ত।” (আশি’আতুল লুমআত, ৩য় খন্ড, ৫৮৫ পৃষ্ঠা)
তালিযুক্ত পোষাকের ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন কাইস (رضي الله عنه) বলেন: মাওলা আলী শেরে খােদা (رضي الله عنه) এর বরকতময় খিদমতে আরজ করা হল: আপনি আপনার কাপড়ে তালি কেন লাগান? বললেন: এতে অন্তর নরম থাকে আর ঈমানদার ব্যক্তি এর অনুসরণ করে (অর্থাৎ ঈমানদারের অন্তর নরমই হওয়া উচিত)।
(হিয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৫৪)
দাঁড়িয়ে খাওয়া কেমন
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বলেন: নবী (ﷺ) করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) দাঁড়িয়ে পান করতে ও দাঁড়িয়ে খেতে নিষেধ করেছেন।”
(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৯২১)
দাড়িয়ে খাওয়ার ডাক্তারী ক্ষতি সমূহ
ইতালীর এক খাদ্যবিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বর্ণনা, “দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার কারণে প্লীহা ও হৃদরােগ ছাড়াও মানসিক রােগসমূহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি অনেক সময় মানুষ এমনভাবে পাগল হয়ে যায় যে, নিজের পরিচয় পর্যন্ত ভুলে যায়।”
ডান হাতে পানাহার করুন
ডান হাতে পানাহার করা সুন্নাত। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) ইরশাদ করেছেন: “যখন কেউ খাবার খাবে তখন ডান হাতে খাবে আর যখন পানি পান করবে তখন ডান হাতে পান করবে।” (সহীহ মুসলিম, ১১১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২১৭৪)
শয়তানের রীতিনীতি
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন: খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “তােমরা কেউ বাম হাতে খাবার খাবে না, পান করবে না। কারণ বাম হাতে পানাহার করা শয়তানের রীতিনীতি (পদ্ধতি)। (প্রাগুক্ত)
ডান হাতে আদান প্রদান করুন
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “তােমাদের প্রত্যেকে ডান হাতে খাবে ও ডান হাতে পান করবে এবং ডান হাতে নেবে ও ডান হাতে দেবে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে এবং বাম হাতে দেয় ও বাম হাতে নেয়।”
(ইবনে মাজাহ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৬৬)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (কানযুল উম্মাল)
প্রত্যেক কাজে বাম হাত কেন?
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আফসােস! আজকাল আমরা দুনিয়ার ধোঁকায় এমনভাবে নিকৃষ্টতর হয়ে গেছি যে, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রবুল ইজ্জত (ﷺ) এর সুন্নাত সমূহের দিকে আমাদের মনােযােগ থাকে না। মনে রাখবেন! হাদীসে মুবারকে রয়েছে যে, মানুষের শিরা সমূহের মধ্যে রক্তের সাথে শয়তান সাঁতার কাঁটে।
(সহীহ মুসলিম, ১১৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২১৭৪)
এটা স্পষ্ট যে, সে (শয়তান) আমাদেরকে সুন্নাতের দিকে কিভাবে যেতে দেবে? আমরা এমন হয়ে গেছি যে, যদিও আমরা ডান হাতেই খাবার খাই কিন্তু তবুও বাম হাতে কিছু দানা মুখে পুরেই নেয়া হয়। খাওয়ার সময় যেহেতু ডান হাতে খাদ্য লেগে থাকে তাই পানি বাম হাতেই পান করে নেই। চা পান করার - সময় কাপ ডান হাতে আর পিরিচ বাম হাতে নিয়ে চা পান করে নেই। কাউকে পানি পান করানাের সময় জগ ডান হাতে থাকে ও গ্লাস বাম হাতে, আর বাম হাতে গ্লাস অন্যদেরকে দেই।
“হায়াতে মুহাদ্দিসে আযমে পাকিস্তান" হযরত মওলানা মুহাম্মদ সরদার আহমদ কাদেরী চিশতী (رحمة الله) বলেন: নেয়া ও দেয়াতে ডান হাত ব্যবহার করাে, (যেন) এ অভ্যাস এমন পাঁকাপােক্ত হয়ে যায় যে, কাল কিয়ামতের দিনে আমল নামা পেশ করা হলে তখন এ অভ্যাস অনুযায়ী ডান হাত যেন সামনে অগ্রসর হয়ে যায়, তাহলে তাে সফলকাম হয়ে যাবে।”
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মনােযােগ দিন, আর দেখুন প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) এর নিকট বাম হাতে পানাহার কিরূপ অপছন্দনীয়। যেমন, তােমার ডান হাত যেন কখনাে না উঠে!
হযরত সায়্যিদুনা সালামা বিন আকওয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আছে যে, এক ব্যক্তি রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর (ﷺ) এর সামনে বাম হাতে খাবার খেলাে, তখন রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “ডান হাতে খাও”, সে বলল: আমি ডান হাতে খেতে পারি না। (গায়েব সম্পর্কে জ্ঞাত প্রিয় আকা প্রিয় প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) বুঝে গেলেন যে, সে অহংকারবশতঃ
একথা বলছে সুতরাং) রাসুল (ﷺ) বললেন: الا ستطعت অর্থাৎ- তােমার ক্ষমতা না হােক।" (উদ্দেশ্য এ যে, তােমার ডান হাত কখনাে না উঠুক) ঐ (বদনসীব) অহংকারবশতঃ ডান হাতে খাবার খেতে অস্বীকার করেছিলাে, তাই এরপর তার ডান হাত কখনাে মুখের দিকে উঠাতে পারে নি। (অর্থাৎ তার ডান হাত অকেজো হয়ে গেল) (সহীহ মুসলিম, ১১১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০২১)
উও জবা জিকো ছব কুনকি কুঞ্জি কহে,
উছ কি না-ফিয হুকুমত পে লাখাে সালাম। (হাদায়িকে বখশিশ)
তােমার চেহারা বিগড়ে যাক
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সত্যের চির স্বাক্ষর যবানে পাকের এ শান রয়েছে যে, যা কিছু বলতেন তা হয়ে যেত। হুযুর (ﷺ) মর্যাদাতাে অনেক মহান, এবার একটু তাঁর গােলামদের ঘটনা শুনুন।যেমন-
এক মহিলা প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা সা'দ বিন আবী ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) কে উঁকি মেরে দেখত। তিনি (رضي الله عنه) অনেকবার তাকে নিষেধ করলেন, কিন্তু সে বিরত হলাে না। একদিন যখন সে অভ্যাস অনুসারে উঁকি মেরে দেখল তখন তাঁর (رضي الله عنه) কারামাত পূর্ণ মুখ থেকে এ কথা বের হলাে, অর্থাৎ-شاه وجهك
“তােমার চেহারা বিকৃত হয়ে যাক” সুতরাং তখনই তার চেহারা মাথার পেছনের দিকে ফিরে গেল। (জামে কারামাতে আওলিয়া, ১ম খন্ড, ১১২ পৃষ্ঠা)
মাহফুয শাহা রাখুনা ছাদা বে-আদাবু ছে,
আওর মুঝছে ভী ছরজ না কভী বে-আদাবী হাে।
হযরত সায়্যিদুনা সা'দ বিন আবী ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) এর এই মকবুল যবানের এ প্রভাব মূলতঃ প্রিয় আকা প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) এর দোয়ারই ফল ছিল। যেমন:
জামি তিরমিযী ইত্যাদি হাদীসের কিতাবে রয়েছে, প্রিয় মুস্তফা (ﷺ) আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোয়া করলেন: اللهم استجب سعد ااذ ا دعاك
অর্থাৎ- “ইয়া আল্লাহ! যখনই সা'দ তােমার নিকট দোয়া করে, তুমি কবুল করে নিও।"
(তিরমিযী শরীফ, ৫ম খন্ড, ৪১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৭২)
মুহাদ্দিসিনে কিরাম (রহ.) বলেন: “সায়্যিদুনা সা'দ বিন আবী ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) যখনই দোয়া করতেন, (তা) ককূল হয়ে যেত।"
(জামে' কারামাতে আওলিয়া, ১ম খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা)
ইজাবত কা সােহরা ইনায়াত কা জোড়া
দুলহান বনকে নিকলী দুআয়ে মুহাম্মদ
ইজাবত নে বুক কর গলে ছে লাগায়া
বড়ী না-য ছে জব দোয়ায়ে মুহাম্মদ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সাহাবায়ে কিরামদেরতাে মহান শান রয়েছে, সাহাবাদের গােলামদের অর্থাৎ- আওলিয়ায়ে কিরাম (রহ.) রাও মহান মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। যেমনঃ
ইয়া আল্লাহ! সাবাহিকে অন্ধ করে দাও
প্রসিদ্ধ আলিম ও মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন ওয়াহাব (رحمة الله) এক লক্ষ হাদীসের হাফিয ছিলেন। মিসরের শাসক উব্বাদ বিন মুহাম্মদ তাঁকে কাযী বানাতে চাইলে তখন তিনি কাযীর পদ থেকে বাঁচার জন্য কোথাও লুকিয়ে গেলেন। এক হিংসুক “ছাবাহি" মিথ্যা চোগলখুরী করে শাসককে বলল: “আবদুল্লাহ্ বিন ওয়াহাব নিজেই আমার নিকট কাযী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল কিন্তু এখন ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার অবাধ্য হয়ে লুকিয়ে আছে। এতে শাসক রাগান্বিত হয়ে তাঁর মহান মর্যাদাপূর্ণ ঘরটি ধ্বংস করে দিল।
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন ওয়াহাব (رحمة الله) তেজদৃপ্ত অবস্থায় আল্লাহর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া ইলাহী! “ছাবাহিকে অন্ধ : করে দাও।" সুতরাং ৮ম দিনে ঐ “ছাবাহি" অন্ধ হয়ে গেল। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন ওয়াহাব (رحمة الله) এর মধ্যে সর্বদা আল্লাহ তাআলার ভয় ভীতির ভাব বিরাজ করত। একবার কিয়ামতের আলােচনা শুনে তাঁর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলাে আর তিনি বেহুশ হয়ে গেলেন। হুশ ফিরে আসার পর শুধুমাত্র কয়েকদিন বেঁচে ছিলেন আর এ সময়ের মধ্যে কোন কথা-বার্তা বলেননি। ১৯৭ হিজরীতে তিনি ইন্তিকাল করেন।
(তাযকিরাতুল হুফফায, ১ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের গুনাহ ক্ষমা হােক।
আউলিয়া কা জো কুয়ি হাে বে-আদব
নাযিল উছপে হাে-তা হায় কহরাে গব।
ইয়া রব্বে মুস্তফা (ﷺ) আমাদেরকে তােমার প্রিয় হাবীব (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম (রা.) ও আওলিয়ায়ে ইযাম (রহ.) দের সত্যিকারের সম্মান করার তাওফিক দান করাে। তাঁদের সাথে বেআদবী ও তাদের সাথে বেআদবীকারীদের অনিষ্ট থেকে সর্বদা আমাদেরকে হিফাযত কর এবং তােমার প্রিয় হাবীবের সত্যিকারের প্রেমিক বানিয়ে দাও।
ইয়া রব মাই তেরে খওফ ছে রাে-তা রহাে হরদম
দিওয়ানা শাহানশাহে মদীনা কা বানা দে।
সাহিবে মাযারের ইনফিরাদী কৌশিশ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে বুযুর্গানে কিরামদের অনেক সম্মান করা হয়, বরং বাস্তব সত্য এটাই যে, আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহক্ৰমে দাওয়াতে ইসলামী, ফয়যানে আউলিয়া তথা আউলিয়া কিরামদের দয়ার বদৌলতেই চলছে। যেমন- এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনানুযায়ী এক সাহিবে মাযার “ওলি আল্লাহ কিভাবে মাদানী কাফেলার জন্য ইনফিরাদী কৌশিশ ' করেছেন তারই ঈমান তাজাকারী একটি ঘটনা এখানে নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করছি; আশিকানে রাসুলদের একটি মাদানী কাফেলা চাকওয়াল পাঞ্জাব এর মুযাফফারাবাদ এবং তার আশে পাশের গ্রামসমূহে সুন্নাতের বাহার ছড়াতে ছড়াতে “আনওয়ার শরীফ" নামক স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখান থেকে সাথে সাথে চার ইসলামী ভাই তিনদিনের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর করার উদ্দেশ্যে আশিকানে রাসুলদের সাথে শরীক হয়ে গেলেন। এ চারজনের মধ্যে আনওয়ার শরীফের “সাহিবে মাযার" বুযুর্গ এর বংশধরের এক ছেলেও শামিল ছিলেন। মাদানী কাফেলা জাঁকজমকের সাথে নেকীর দাওয়াত দিতে দিতে “ঘড়ি দোপাট্টা পৌঁছলেন। যখন “আনওয়ার শরীফবাসীদের তিনদিন পূর্ণ হল তখন সাহিবে মাযারের বংশধর ছেলেটি বললেন: “আমি তাে ভাই বাড়ী ফিরে যাব না। কেননা আজ রাতে আমি আপন “হযরত" কে স্বপ্নে! দেখলাম। উনি বলছিলেন, “বেটা! ঘরে ফিরে যেওনা, মাদানী কাফেলার ইসলামী ভাইদের সাথে আরাে সফর করতে থাকো। সাহিবে মাযার এর ইনফিরাদী কৌশিশের এ ঘটনা শুনে মাদানী কাফেলায় আনন্দের ঢেউ খেলে গেল; সকলের উৎসাহ-উদ্দীপনাতে মদীনার ১২ চাঁদের চমক লেগে গেল এবং আনওয়ার শরীফ থেকে আগত চার ইসলামী ভাই পুনরায় মাদানী কাফেলায় আবারাে সফর শুরু করে দিলেন।
দে-তে হে ফয়যে আম আউলিয়ায়ে কিরাম।
লুটনে ছব চলে কাফিলে মে চলল।
আউলিয়া কা করম, তুমপে হাে লা জারাম।
মিলকে ছব চল পড়ে কাফিলে মে চলাে।
স্বপ্নযােগে মদী ঘোড়া তুহফা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কোন আল্লাহর ওলীর ইন্তিকালের পর স্বপ্নে পথ নির্দেশনা দেয়া কোন অদ্ভুত বিষয় নয়। আল্লাহর দয়াতে তারা অনেক কিছু করতে পারেন। যেমন-
খাজা আমীর খন্দ কিরমানী (رحمة الله) লিখেন যে, সুলতানুল মাশায়িখ হযরত সায়্যিদুনা মাহবুবে ইলাহী নিযামুদ্দীন আওলিয়া (رحمة الله) বলেন: গিয়াসপুরে থাকার পূর্বে আমি এক কোশ (অর্থাৎ-প্রায় তিন কিলােমিটার দূরত্বে) কিলােঘরীর মসজিদে জুমার নামায পড়তে যেতাম। একবার এভাবে জুমার নামাযের জন্য পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন গরম হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছিল আর আমি রােযাবস্থায় ছিলাম। আমার মাথা ঘুরতে লাগল, তাই আমি এক দোকানে বসে পড়লাম। আমার মনে হলাে, যদি আমার কাছে কোন বাহন থাকত তবে সুবিধা হতাে। এরপর শায়খ সাদীর এ শের (কবিতা) আমার মুখে এলাে:
ماقدم از سر كنيم در ستا
راه بجا هى برد هو كه با قدام فت
অর্থাৎ- আমরা বন্ধুদের প্রত্যাশায় মাথাকে পা বানিয়ে চলি, কারণ যে এ রাস্তায় পা দিয়ে চলে, সে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারে না।
আমি অন্তরে আসা “বাহনের” খেয়াল থেকে তাওবা করলাম। এ ঘটনা ঘটার তিনদিন অতিবাহিত হয়েছিল, “খলীফা মালিক ইয়ার পারা আমার জন্য একটি মাদী ঘােড়া নিয়ে আসলেন আর বলতে লাগলেন, আমি ধারাবাহিকভাবে তিন রাত স্বপ্নে দেখছি যে, আমার শায়খ (পীর)! আমাকে বলছেন, “অমুককে ঘােড়া দিয়ে আস।" তাই ঘােড়া নিয়ে এসেছি। আপনি তা গ্রহণ করুন। আমি বললাম: নিশ্চয় আপনার শায়খ আপনাকে বলেছেন, কিন্তু যতক্ষণ আমার শায়খ আমাকে বলবেন না ততক্ষন আমি এ ঘােড়া গ্রহণ করব না।ঐ রাতেই আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার পীর ও মুর্শিদ হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ফরিদ উদ্দীন গঞ্জে শকর (رحمة الله) আমাকে বলছেন যে, মালিক ইয়ার পারাঁর সন্তুষ্টির জন্য ঐ ঘােড়া গ্রহণ করাে। পরের দিন তিনি এ ঘােড়া নিয়ে আসলে তখন আমি সেটাকে মালিকের দান মনে করে গ্রহণ করলাম। (সিইয়ারুল আওলিয়া, ২৪৬ পৃষ্ঠা)।
শুধুমাত্র নিজের পাশ থেকে খাবেন
এক বাসনে যখন একই ধরণের খাবার থাকবে তখন নিজের পাশ থেকে খাওয়া সুন্নাত। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আবু সালামা (رضي الله عنه) বলেন: আমি ছােট্ট ছিলাম এবং মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর প্রতিপালনে ছিলাম। (তিনি উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা উম্মে সালামা (رضي الله عنه) নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বের স্বামীর ঘরের সন্তান ছিল।) (আমি) খাওয়ার সময় বাসনের চতুর্দিকে হাত দিতাম। প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “পড়াে এবং ডান হাতে খাও আর বাসনের ঐদিক থেকে খাও, যেটা তােমার নিকটবর্তী রয়েছে।”
(সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৫৩৭৬)
মধ্যখান থেকে খেয়াে না
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় বরকত খাবারের মধ্যভাগে অবতীর্ণ হয়, সুতরাং তােমরা এক পাশ থেকে খাবার খাও এবং মধ্যখান থেকে খেয়াে না।” (তিরমিযী শরীফ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩১৬, হাদীস নং-১৮১২)
আপনিতাে মাঝখান থেকে খান নি!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভেবে দেখুন যে, এ সুন্নাতের উপর আপনি আমল করেন কি না? আমার অনেকবার দৃষ্টি পড়েছে যে, আমলদার দৃষ্টিগােচর হয় এমন লােকদের অনেকেই এ সুন্নাতের উপর আমল করা থেকে বঞ্চিত! যাকে ভালভাবে লক্ষ্য করবেন, দেখবেন সেও খাবারের বড় থালা বা তরকারীর পেয়ালা ইত্যাদির মাঝখান থেকেই শুরু করে। জানিনা এরকম হয় কেন? এমনতাে নয় যে, বরকত থেকে বঞ্চিত করার জন্য শয়তান তাদের হাত ধরে খাবারের মাঝখানে ঢেলে দেয়! বাস্তবতা এযে, শয়তান এ বিষয়ে চেষ্টায় লেগে থাকে যে, মুসলমান যাতে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে।
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: “খাবারের বাসনের মাঝখানে আল্লাহ তাআলার রহমত অবতীর্ণ হয়। মাঝখান থেকে খাওয়া লােভীদের আলামত, লােভী রহমতে ইলাহী থেকে বঞ্চিত।” এ হাদীসে পাক থেকে জানা গেল, মুসলমানদের খাওয়ার সময়ও রহমতের বৃষ্টি অবতীর্ণ হয়ে থাকে। বিশেষতঃ যখন সুন্নাতের নিয়্যতে খাওয়া হয়। (মিরআত, শরহে মিশকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৩,৩৪ পৃষ্ঠা)
অন্যকে লজ্জা থেকে বাঁচান
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর বরকতপূর্ণ বাণী হচ্ছে, “যখন দস্তরখানা বিছানাে হয়, তখন প্রত্যেকে যেন নিজের পাশ থেকে খান আর নিজের সাথে আহারকারীর সামনে থেকে না খায় এবং থালার মাঝখান থেকেও খেও না, (কারণ বরকত ঐদিক থেকেই আসে) আর কেউই দস্তরখানা উঠানাের পূর্বে উঠবে না আর নিজের হাতও থামাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সকলে নিজের হাত থামিয়ে না নেয় যদিও পরিতৃপ্ত হয়ে যাও এবং মানুষের সাথে লেগে থাকো (অর্থাৎ খেতে থাকো) কারণ তার হাত থেমে যাওয়াটা অন্যদের জন্য লজ্জার কারণ হবে এবং তারা নিজেদের হাত থামিয়ে নেবে, অথচ হয়তাে তাদের এখনাে আরাে খাওয়ার প্রয়ােজন আছে। (শুউবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৮৬৪)
মাঝখানে বরকতের অর্থ
বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) বলেন: পাত্রের কিনারা থেকে নিজের সামনের দিক থেকে খান। মাঝখান থেকে খাবেন না, কারণ পাত্রের মাঝখানে বরকত অবতীর্ণ হয়ে থাকে (আর তা) সেখান থেকে কিনারা পর্যন্ত পৌঁছে। যদি আপনি মাঝখান থেকে খাওয়া শুরু করে দেন তাহলে আবার এমন যেন না হয় যে, সেখানে বরকত আসাই বন্ধ হয়ে যায়। মােটকথা এ যে, বরকত অবতীর্ণ হওয়ার জায়গা একটি আর বরকত নেয়ার জায়গা অন্যটি।
(মিরকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা)
খাওয়ার পাঁচটি সুন্নাত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উল্লেখিত হাদীসে মােবারকে খাওয়ার পাঁচটি সুন্নাত বর্ণনা করা হয়েছে:
(১) নিজের সামনে থেকে খাবেন
(২) কেউ সাথে খেলে, তার সামনে থেকে খাবেন না
(৩) থালার মাঝখান থেকে খাবেন না
(৪) প্রথমে দস্তরখানা উঠানাে হলে এরপর আহারকারীরা উঠবেন (আফসােস! আজকাল প্রায়ই বিপরীত নিয়ম দেখা যায় অর্থাৎ প্রথমে আহারকারীরা উঠেন এরপর দস্তরখানা উঠানাে হয়)
(৫) অন্যরাও যদি খাবারে অংশ নেন তবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাত থামাবেন না, যতক্ষণ সবাই শেষ না করেন। আফসােস! খাবারের বর্ণনাকৃত এসব সুন্নাতের উপর আমলকারী এখন দেখা যায় না। সুন্নাত শেখা ও সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে সুন্নাতের উপর আমল করার সংকোচবােব দূর করার জন্য দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় সফর করুন এবং সেখানে সেসব সুন্নাতের অনুশীলন করুন ও মাদানী কাফেলায় সফরের বরকতে সুন্নাতের উপর আমল করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
ভয়ংকর স্বপ্ন থেকে মুক্তিলাভ
মাদানী কাফেলার বরকত সম্পর্কে কী বলব! এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে, আমি অনেক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম। আমি আশিকানে রাসুলদের সাথে দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের ৩০ দিনের মাদানী কাফেলায় সফরের সৌভাগ্য অর্জন করি। মাদানী কাফেলার বরকতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে গেল। এখন স্বপ্নে কখনাে কখনাে নিজেকে নামাযে ব্যস্ত দেখি, কখনাে তিলাওয়াতে স্বপ্নে আমার প্রিয় মদিনা শরীফের যিয়ারত নসীব হলাে।
খােয়ব মে ঢর লাগে, বুঝ দিল পর লাগে,
খুব জলওয়ে মিলে, কাফিলে মে চলাে।
হােগী হাল মুশকিলে, কাফিলে মে চলাে,
পা-ওগে রাহাতে, কাফিলে মে চলাে।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ১৫২১ বার। শুরু ও শেষে একবার করে দরূদ শরীফ, শােয়ার সময় পড়ে নিলে ইনশাআল্লাহ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখবে না। যদি নানা প্রকারের খাবার যেমন-জর্দা, পােলাও ও আচার ইত্যাদি একই থালায় থাকে তবে এ অবস্থায় চতুর্দিক থেকে নেয়ারও অনুমতি রয়েছে। যেমনঃ
নানা ধরণের খেজুরের থালা
হযরত সায়্যিদুনা ইকরাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর দরবারে একখানা থালা পেশ করা হলাে, যাতে অনেক শরীদ (ঝােল মিশ্রিত রুটির টুকরা) ছিল। আমরা তা থেকে খাচ্ছিলাম। আমি নিজের হাত থালার পাশ গুলাের এদিক সেদিক দিচ্ছিলাম, তখন ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “হে ইকরাস! একই জায়গা থেকে খাও, কেননা এটা একই : (ধরণের) খাবার।" অতঃপর আমাদের নিকট রেকাবী আনা হলাে, যাতে বিভিন্ন ধরণের তাজা খেজুর ছিল। হুযুর (ﷺ) এর হাত মােবারক থালার
(রেকাবীর) চতুর্দিকে যাচ্ছিল আর ইরশাদ করলেন: “হে ইকরাস! যেখান থেকে ইচ্ছে হয় খাও কেননা এটা (খেজুরগুলাে) বিভিন্ন ধরণের।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৭৪) :
পাঁচ আঙ্গুলে খাওয়া গ্রাম্য লােকদের রীতি
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে বললেন: “এ দু আঙ্গুল দিয়ে খেয়াে না (বরং এগুলাের পার্শ্ববর্তী মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে) তিন আঙ্গুল দিয়ে খাও কারণ এটা সুন্নাত এবং পাঁচ (আঙ্গুল দিয়ে খেয়ােনা, কেননা এটা গ্রাম্য লােকদের রীতি।” (কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮৭২)
শয়তানের খাওয়ার পদ্ধতি
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “এক আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া শয়তানের ও দু আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের এবং তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া আম্বিয়া (আ.) এর নিয়ম। (জামে সগীর, ১৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩০৭৪)
খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) অনেক সময় মােবারক চার আঙ্গুল দিয়েও খাবার খেতেন।
(জামেউস সগীর, ২৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৯৪২ থেকে সংকলিত)
তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! তিন আঙ্গুল দিয়ে খেলে লােকমা ছােটভাবে তৈরী হবে। ছােট লােকমা চিবানাে সহজ হবে। যতটুকু ভালভাবে চিবানাে হবে ততটুকু মুখ থেকে বের হওয়া হজমকারী লালা তাতে মিশবে আর এভাবে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হবে।
হযরত সায়্যিদুনা মােল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন: “পাঁচ আঙ্গুলে খাওয়া লােভীদের আলামত।” (মিরকাত, ৮ম খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা)
রুটি তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া অধিক কষ্টও নয়, শুধুমাত্র সামান্য মনােযােগের প্রয়ােজন রয়েছে। তবে ভাত তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতে সামান্য অসুবিধা হয়ে থাকে কিন্তু মাদানী চিন্তাধারার অধিকারী সুন্নাতের প্রেমিকদের জন্য এটাও কোন কঠিন বিষয় নয়। নিশ্চয় সুন্নাতের মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। বড় লােকমার লালসায় পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার পরিবর্তে প্রশিক্ষণের জন্য ডান হাতের অনামিকা (কনিষ্ঠা আঙ্গুলের পার্শ্ববর্তী আঙ্গুল) কে বাঁকা করে তাতে রবার বেন্ড পড়ে নিন অথবা রুটির একটি টুকরাে কনিষ্ট ও অনামিকা আঙ্গুলে রেখে হাতের তালুর দিকে চেপে ধরুন। যদি সত্যিকারের আন্তরিকতা থাকে তবে ইনশাআল্লাহ তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে। যখন তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে তখন আর রাবার বেন্ড ও রুটির টুকরাে হাতের তালুর দিকে চেপে ধরার প্রয়ােজন হবে না। যদি ভাতের দানা আলাদা আলাদা থাকে ও তিন আঙ্গুলে সেগুলাের লােকমা তৈরীই না হয় তবে তখন চার বা পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে খেয়ে নিন। কিন্তু এ সতর্কতা জরুরী যে, হাতের তালুতে যেন না লাগে, এমনকি আঙ্গুলগুলাের মূল (গােড়া) পর্যন্তও যেন না লাগে।