নেয়ামতের প্রকারভেদ ও সেগুলাের ব্যাপারে কিয়ামতে জিজ্ঞাসাবাদঃ


       প্রসিদ্ধ মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  এ আয়াতে মােবারকার ভিত্তিতে এটাও বলেন: এ জিজ্ঞাসা প্রতিটি নেয়ামতের ব্যাপারে হবে। শারীরিক বা মানসিক, প্রয়ােজনের হােক বা আরাম আয়েশের, ঠান্ডা পানি, গাছের ছায়া, এমনকি আরামের ঘুমেরও। যেমনটা হাদীস শরীফে রয়েছে এবং (نعيم) শব্দের ব্যবহার থেকেও জানা যায়। কোন অধিকার ছাড়া যা দান করা হয় তা হল “নেয়ামত”। আল্লাহ্ তাআলার প্রতিটি দান হচ্ছে নেয়ামত, চাই সেটা শারীরিক হােক কিংবা মানসিক। এটা দু’প্রকার (১) কসবী (২) ওয়াহবী। যে নেয়ামত আমাদের উপার্জনের দ্বারা লাভ হয় তা কাসবী। যেমন সম্পদ, ক্ষমতা ইত্যাদি। যা শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলার দানে হয় তা ওয়াহবী। যেমন- আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি।


কাসবী নেয়ামতের ব্যাপারে তিনটি প্রশ্ন করা হবেঃ


(১) কোথা হতে অর্জন করেছ? 

(২) কোথায় খরচ করেছ? 

(৩) এটার কৃতজ্ঞতায় কি করেছ?আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত সম্পর্কে শেষের দুটো প্রশ্ন করা হবে।  (নুরুল ইরফান, ৯৫৬ পৃষ্ঠা)


      লাজ রাখলে গুনাহ গারুকি

      নাম রহমান হে তেরা ইয়া রব!

      আয়ব মেরে না খুল্ মাহশার মে

      নাম সাত্তার হে তেরা ইয়া রব!

      বে সবব বখশ্দে না পুছ আমল

      নাম গাফ্ফার হে তেরা ইয়া রব! 


"মুবাহ" কখন ইবাদতে পরিণত হয়?


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মুবাহ্ (অর্থাৎ- এমন আমল যাতে সাওয়াব হয় না, গুনাহ্ও হয়না) কাজের সাথে যদি ভাল নিয়্যত মিলানো হয় তবে তা সাওয়াবের কাজ হয়ে যায়। এখন ভাল নিয়্যত যত বেশি হবে সাওয়াবও তত বেশি সংযোজন হতে থাকবে। কিন্তু ঐ ভাল নিয়্যতের সম্পর্ক আখিরাতের আমলের সাথে হওয়া জরুরী। ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল আশবাহু ওয়ান নাযায়ির”-এ রয়েছে, “মুবাহের সমূহের ব্যাপার নিয়্যতের ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যদি এগুলো দ্বারা ইবাদতে শক্তি অর্জন করা বা তা পর্যন্ত পৌঁছা উদ্দেশ্য হয় তবে তা (মুবাহ্ও) হল ইবাদত। (আল আশবাহু ওয়ান নাযায়ির, ১ম খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা, বাবুল মদীনা, করচী) 



 আনন্দের জন্য মুবাহের ব্যবহার 


চেষ্টা করা উচিত যে, যে সকল মুবাহ কাজ করা হয় বা মুবাহ খানা খাওয়া হয় তাতে অধিকতর ভাল ভাল নিয়্যত মিলিয়ে নেয়া, যাতে বেশি পরিমাণে সাওয়াব লাভ হয়। যদিও ভাল নিয়্যত ছাড়া শুধুমাত্র আমোদ প্রমোদের জন্য মুবাহ্ বস্তু ব্যবহারকারী গুনাহগার নয় তবুও হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رضي الله عنه) বলেছেন: “তাকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে আর যার সাথে হিসাবে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। যে মানুষ দুনিয়াতে মুবাহ বস্তুসমূহ ব্যবহার করে যদিও তাকে কিয়ামতে আযাব হবে না কিন্তু ততটুকু পরিমাণ নেয়ামত আখিরাতে কমে যাবে।


ভেবেতো দেখুন! কত বড় ক্ষতিকর বিষয় যে, মানুষ ধ্বংসশীল নেয়ামতসমূহ অর্জনের জন্য খুব তাড়াতাড়ি করে আর তার পরিবর্তে পরকালীন নেয়ামতসমূহ কমানোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।” (ইহইয়াউল উলূম, ৫ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা)



পরকালে শতভাগ কমতি


পিজা, পরটা, কাবাব, চমুচা, গরম গরম পিঁয়াজু-বেগুনী, আইসক্রীম, ঠান্ডা পানীয়, মজাদার ফালুদা, মিষ্টি মধুর শরবত ইত্যাদি উন্নত খাবারের সৌখিন প্রিয় ব্যক্তিরা। এছাড়া আলিশান কুঠির, বড় দালান, নিত্য নতুন দামী পোষাক, সব ধরণের আরাম-আয়েশীরা, ধনীরা, পুঁজিপতিরা, দুনিয়ায় প্রচুর আনন্দ উপভোগকারীরা, সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরা, ক্ষমতার কামনা-বাসনায় লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়, হায়! হায়! হায়! “তাযকিরাতুল আওলিয়া” নামক গ্রন্থে হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল বিন আয়ায (رضي الله عنه) বলেন: যখন দুনিয়াতে কাউকে নেয়ামত দান করা হয় তখন আখিরাতে সেটার শতভাগ কম করে দেয়া হয়। কেননা সেখানেতো শুধু তাই লাভ হবে যা দুনিয়াতে আয় করেছে। সুতরাং মানুষের ইচ্ছাধীন যে, আখিরাতে (তার) অংশ কম করবে নাকি বৃদ্ধি করবে। আরো বলেন: দুনিয়াতে উত্তম পোষাক ও ভাল খাওয়ার অভ্যাস করো না, কারণ হাশরে এসব বস্তু থেকে বঞ্চিত করা হবে। (তাযকিরাতুল আওলিয়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৫)


সদকা পিয়ারে কি হায়া কা

কেহ না লে মুঝ ছে হিসাব

বখ্শ বে পুছে লাজায়ে

কো লাজানা কিয়া হে।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দুনিয়ার সমস্ত মজা অবশেষে নিঃশেষ হয়ে যাবে। হায় যদি এমন হত! যদি মৃত্যুর আগে আগে আমাদের লোভ-লালসা নিঃশেষ হয়ে যেত। হায়! হায়! দুনিয়ার তামাশা আর এ বেওফা দুনিয়ার প্রতি আসক্তদের অন্ধকার জীবন! আমি আপনাদেরকে একটি শিক্ষণীয় ঘটনা শুনাচ্ছি, কেউ আছেন কি শিক্ষাগ্রহণকারী!



 (১৬) রং তামাশা আর নাচের আসর চলছিল


১৪২৬ হিজরীর ৩রা রমযানুল মোবারক ৮/১০/২০০৫ ইং তারিখে ইসলামাবাদের আড়ম্বরপূর্ণ ভবন “মারগালা টাওয়ার” এ কিছু পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রেমিক মুসলমান ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাথে মিলে আল্লাহর পানাহ রমযানুল মোবারকের সম্মানকে ভুলে গিয়ে মদ্যপান করে খুব নাচ রংয়ের অনুষ্ঠান করছিল। এরা নিজের শেষ পরিণাম সম্পর্কে একেবারে বেখবর হয়ে গুনাহের এসব ঘৃণিত কাজে তখনও মশগুল ছিল। হঠাৎ করে ভয়ানক ভূমিকম্প এলো আর তা আরাম-আয়েশের পূজারীদের সমস্ত আনন্দ ও মাতলামীকে একেবারে ধূলোয় মিশিয়ে দিল।


        ইয়াদ রাক্কো! মওত আচানক আয়েগী

        সারী মাস্তী খাক মে মিল জায়েগী।



গুনাহের কারণে ভূমিকম্প আসে


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সরকারে আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওয়ালিয়্যে নেয়ামত, আযীমুল বরকত, আযীমুল মরতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনো মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, পীরে তরিকত, হযরত আল্লামা মাওলানা ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন: “(ভূমিকম্পের) আসল কারণ হল মানুষের গুনাহ। ”(ফতোওয়া রযবীয়া, ২৭তম খন্ড, ৯৩ পৃষ্ঠা) 


আহ! আজকাল গুনাহ সমূহের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। স্বয়ং মন্দ থেকে বেঁচে থাকাতো একদিকে পড়ে আছে, অপরদিকে যেন নেক কাজ ও সুন্নাতের উপর আমলকারীদের জন্য জমিন সঙ্কীর্ণ করে দেয়া হয়েছে। হায়! হায়! ১৪২৬ হিজরীর ৩রা রমযানুল মোবারক, ৮/১০/২০০৫ ইং রোজ শনিবারে কিছুলোক নানা ধরণের গুনাহের মধ্যে মশগুলো ছিল, হঠাৎ ভয়ানক ভূমিকম্প এলো আর পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলকে উজাড় করে দিয়েছে। ভূমিকম্পের ব্যাপারে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার মুসাফির আশিকানে রাসুলদের শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ গুলো পড়ুন এবং প্রচুর তাওবা ও ইসতিগফার করুন।



(১৭) জীবিত মেয়ে শিশুকে


প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে ফেলল কাশ্মীরের কোন এক এলাকায় এক ব্যক্তি যার পাঁচটি মেয়ে ছিল।৬ষ্ঠ বার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা হল। একদিন সে তার স্ত্রীকে বলল: যদি এবারও তুমি মেয়ের জন্ম দাও, তাহলে আমি তোমাকে মেয়ে শিশুসহ হত্যা করে ফেলব। রমযানুল মোবারকের তৃতীয় রাত পুনরায় একটি মেয়ে শিশু ভূমিষ্ট হল। সকালে মেয়ের মায়ের আহাজারীকে পরোয়া না করে ঐ নির্দয় পিতা আল্লাহর পানাহ! নিজের ফুলের মত জীবিত মেয়েটিকে তুলে নিয়ে প্রেসার কুকারে ঢুকিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিল। হঠাৎ প্রেসার কুকার ফেটে গেল আর সাথে সাথেই ভয়ানক ভূমিকম্প এসে পড়ল! আর দেখতে দেখতেই জালিম পিতা জমিনের ভিতর জীবিত ধসে গেল। মেয়ের মাকে আহত অবস্থায় রক্ষা করা হল। আর সম্ভবত তার মাধ্যমে এ বেদনাদায়ক ঘটনা প্রকাশ হল।



 (১৮) কাটা মাথা


ইসলামাবাদের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ মারগালা টাওয়ারের ধ্বংস স্তুপ থেকে এক ব্যক্তির কাটা মাথা পাওয়া  গেছে। শরীর পাওয়া যায় নি। কিছু লোক মাথা দেখে চিনতে পেরে বলল, এ দুর্ভাগা যখন আযান শুরু হত তখন গানের আওয়াজ আরো উঁচু করে দিত। প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ভয়ানক ভূমিকম্প পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে অর্থাৎ- পাঞ্জাবের কিছু এলাকা ছাড়া কাশ্মীর ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ সারহাদে সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন আর আহতদেরতো কোন হিসাবই নেই।


তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসুলদের সুন্নাত প্রশিক্ষণের কিছু মাদানী কাফেলাও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় হারিয়ে  গেছে। তবে اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ তা খুব শীঘ্রই জীবিত ও নিরাপদে পাওয়া গেল। এগুলো থেকে একটি মাদানী কাফেলার মাদানী বাহার লক্ষ্য করুন। যেমন-



 (১৯) ইয়া রাসুলাল্লাহ্ লেখার বরকত


বাবুল মদীনা করাচীর লান্ডি এলাকার ১৭ জন ইসলামী ভাইয়ের মাধ্যমে গঠিত ৩০ দিনের একটি মাদানী কাফেলার ইসলামী ভাইদের অনেকটা এরকম বর্ণনা হল যে, আমাদের মাদানী কাফেলা আব্বাসপুর তেহসীল নকর বালা কাশ্মীরের জামে মসজিদে গাউছিয়াতে অবস্থান করছিল। ১৪২৬ হিজরীর ৩রা রমযানুল মুবারকের ৮/১০/২০০৫ ইং তারিখে ফজর ও ইশরাকের নামায ইত্যাদি আদায় করার পর জাদওয়াল (রুটিন) অনুযায়ী আশিকানে রাসুলরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এক প্রচন্ড আর্কষণে সবাই অস্থির অবস্থায় জেগে উঠলেন। জ্ঞান তখনও ঠিক ছিল, পূর্বে মসজিদের দেয়াল ভেঙ্গে পড়তে লাগল। কিন্তু ইয়া রাসুলাল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর শ্লোগানের প্রতি আমাদের প্রাণ উৎসর্গ হোক!মসজিদের দক্ষিণ দিকের দেয়ালের ঐ অংশ যাতে “ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ! লেখা ছিল, তা পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেল আর ছাদ সেটার উপর পড়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমরা এভাবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে নিরাপদে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলাম।চতুর্দিকে ঘর-বাড়ী চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে  গেছে। আহতদের শোর-চিৎকারের বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।অনেক জায়গায় মানুষ ধ্বংস স্তূপের নীচে পড়ে  গেছে। অনেকের প্রাণ বের হয়ে  গেছে আর অনেকে শেষ হেচকি নিচ্ছিল। আমরা মানুষের সাথে মিলে-মিশে সাহায্যের কাজ করলাম। মসজিদের সামনের এক দালান ছিল, ধ্বংস স্তূপ থেকে একটি দেড় বছরের মেয়েকে জীবিত বের করতে সক্ষম হয়েছে। যেভাবে সম্ভব হয়েছে সেভাবে অনেক শহীদের জানাযা পড়ে এবং তাদের দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করি।


اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ 

আমাদের প্রচেষ্টার ফলে দুর্দশাগ্রস্থ সেখানকার মুসলমানদের দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতি ভালবাসা দেখার মত ছিল। 


ইয়া রাসুলাল্লাহ কে নারে

ছে হামকো পিয়ার হে

জিস নে ইয়ে নারা লাগায়া

উছ কা বেড়া পার হে।



(২০) দুর্গম ঘাঁটি


হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা (رضي الله عنه) একদা তাঁর বন্ধুদের সাথে বসা ছিলেন। তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী এসে বললেন: আপনি এখানে এদের সাথে বসে আছেন আর খোদার শপথ ঘরে এক মুষ্টি আটাও নেই। তিনি জবাব দিলেন, এটা কেন বলছ যে, আমাদের সামনে একটি অত্যন্ত দুর্গম ঘাঁটি রয়েছে, যা থেকে হালকা আসবাবপত্রওয়ালা ছাড়া কেউ মুক্তি পাবে না। এটা শুনে তিনি খুশী মনে ফিরে গেলেন।  (রওযুর রিয়াহীন, ১০ পৃষ্ঠা, আল মায়মুনা, মিসর)


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 



অভিযোগ করা উচিত নয়


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! সাহাবিয়ে রাসুল হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা (رضي الله عنه) কিরূপ অল্পে সন্তুষ্ট ছিলেন। আর তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী ও কি ধরণের বাধ্যগত ছিলেন যে, ঘরে খাওয়ার কিছু না থাকা সত্ত্বেও হযরতের খোদাভীতিতে পরিপূর্ণ বাক্য শুনে মন রক্ষার খাতিরে ফিরে গেলেন।দারিদ্র্যতা ও পারিবারিক অশান্তিকে ভয় পেয়ে অভিযোগ ও আপত্তি করার পরিবর্তে সর্বদা আল্লাহ্ তাআলার দরবারে প্রত্যাবর্তন করা উচিত এবং তাঁর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত।


জবাঁ পর শিকওয়ায়ে রঞ্জ ও আলাম লায়া নেহী করতে

নবী কে নাম লেওয়া গম সে

ঘাবরায়া নেহী করতে।


এক বুযুর্গ (رحمة الله) এর খিদমতে এক ব্যক্তি আরয করল, হুযুর! পরিবার পরিজনের চিন্তা ভাবনা আমাকে পেরেশান করে রেখেছে। আমার জন্য দোয়া করুন। জবাব দিলেন, তোমার পরিবার পরিজন যখন তোমার নিকট আটা ও রুটি না থাকার অভিযোগ করে তখন তুমি আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তাআলার নিকট দোয়া করবে, কেননা তোমার সে সময়ের দোয়া কবুল হওয়ার অধিক নিকটবর্তী। (রওজুর রিয়াহীন, ১১ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রকাশ থাকে যে, যার দারিদ্র্যতার সীমা বেশি সে সীমাহীন দুঃখী ও চিন্তাগ্রস্থ হবে আর দুঃখীদের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যেমনটা- হযরত আল্লামা মাওলানা নকী আলী খান (رحمة الله) নিজের চমৎকার গ্রন্থ “আহসানুল বিআ লিআদাবিদ দোয়া” এর ১১১ পৃষ্ঠায় যেসব লোকের দোয়া কবুল হয় তাদের মধ্যে প্রথম নম্বরে লিখেছেন, “প্রথম মুদতার (অর্থাৎ-দুঃখী)” এ গ্রন্থের পাদটীকায় সরকারে আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন: “এটার দিকে অর্থাৎ দুঃখী ও অসহায় এবং অকৃতকার্যদের দোয়া কবুল হওয়ার দিকেতো স্বয়ং কুরআনে কারীমে ইরশাদ বিদ্যমান রয়েছে:


           ﺃَﻣَّﻦْ ﻳُﺠِﻴﺐُ ﺍﻟْﻤُﻀْﻄَﺮَّ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻭَﻳَﻜْﺸِﻒُ ﺍﻟﺴُّﻮﺀَ


  কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: না তিনি, যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন যখন তাঁকে আহ্বান করে এবং দূরীভূত করে দেন বিপদাপদ। (পারা- ২০, সুরা- নামল, আয়াত- ৬২)



(২২) মারহাবা! হে দারিদ্র্যতা  


কোন এক নেককার ব্যক্তিকে যখন তার সন্তান-সন্ততিরা বলল: আজ রাতে খাওয়ার জন্য কিছুই নেই। বললেন: “আমাদের এমন উচুঁ মর্যাদা লাভ হয়নি যে, আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে ক্ষুধার্ত রাখবেন! এ স্তর তিনিতো তাঁর বন্ধুদের দান করেন।মাশায়িখের মধ্যে অনেকের এ অবস্থা ছিল যে, তাঁদের যখন দারিদ্র্যতা আসত তখন বলতেন: “মারহাবা! হে নেককারদের নিদর্শন”! (অর্থাৎ- হে নিঃস্বতা ও দারিদ্র্যতা! তুমিতো আল্লাহ্ ওয়ালাদের আলামত, তোমায় মোবারকবাদ যে, আমাদের নিকট তোমার আগমন ঘটেছে।) (রওজুর রিয়াহীন, ১১ পৃষ্ঠা)


উহ ইশকে হাকিকী কি লাজ্জাত নেহী পা সেকতা

জু রঞ্জ ও মুসিবত সে দো চার নেহী হোতা।



অহেতুক চিন্তা-ভাবনা ত্যাগ করুন


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনাতে ঐসব অধৈর্য লোকদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষা রয়েছে, যারা দুনিয়াবী ভবিষ্যতের অপ্রয়োজনীয় ভাবনায় থাকে ও মাথা মারে এবং অহেতুক দুঃখ করে। তাদের মেয়ে এখনওতো ছোট্ট তবুও তার বিয়ের জন্য ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যায়। ফরয হওয়া সত্ত্বেও হজ্জের সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রাখে আর তাদের আপত্তি এটাই যে, প্রথমে মেয়ের বিয়ে “ফরয” কাজ আদায়ের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাই! অথচ জীবনের কোন ভরসা নেই। মেয়ে যুবতী হওয়া পর্যন্ত নিজে বেঁচে থাকবে কি থাকবে না এটার গ্যারান্টি কারো কাছে নেই। নাকি মেয়ে যৌবনে পদার্পন করার পূর্বেই মৃত্যুর দরজা দিয়ে কবরের সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়, এটা কারো জানা নেই। আহ! অনেক মানুষ হায় দুনিয়া! হায় দুনিয়া! করতে করতে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। কিন্তু জীবদ্দশায় আখিরাতের প্রতি তাদের কোন লক্ষ্য থাকে না। মুসলমানদের সাহস ও সুবিশ্বাস নিয়ে কাজ করা উচিত। আমাদের অযথা “অন্যের চিন্তা করে লাভ নেই”, অথচ উভয় জগতের পালনকর্তা আল্লাহ্ তাআলা হচ্ছেন আমাদের রক্ষক ও সাহায্যকারী।


মাসায়িব মে কভী হরফে শিকায়াত

লব পে মত লানা

মসীবত মে খোদা বান্দোকো

আপনে আ-জমাতা হায়।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ এমন এমন অনেক ধৈর্যশীল বান্দারা পৃথিবীতে ছিলেন, যাঁরা মুসিবতকে এভাবে আলিঙ্গন করেছেন যে, আল্লাহ নিকট ঐ সমস্ত মুসিবত দূরীভুত হওয়ার জন্য দোয়া করাকেও তাসলীম ও রিযার (আল্লাহর সন্তুষ্টির) স্তরের বিপরীত জেনেছেন। যেমন- 


 (২৩) বিস্ময়কর রোগী


হযরত সায়্যিদুনা ইউনূস (عليه السلام) হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাইল আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم কে বললেন: আমি সমগ্র পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইবাদতকারীকে দেখতে চাই। হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাইলে আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم এমন এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে গেলেন যার হাত-পা গুলো কুষ্ট রোগের কারণে গলে ঝরে পৃথক হয়ে গিয়েছিল আর তিনি মুখে বলছিলেন: “হে আল্লাহ! তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা করেছ এ অঙ্গগুলোর মাধ্যমে আমাকে ফায়দা দান করেছ, আর যখন ইচ্ছা করেছ নিয়ে নিয়েছ এবং আমার আশা শুধু তোমার সত্ত্বায় অবশিষ্ট রেখেছ। হে আমার সৃষ্টিকর্তা! আমার মাকসুদতো শুধু তুমি আর তুমিই।” 


হযরত সায়্যিদুনা ইউনুস عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم বললেন: “হে জিব্রাইলে আমীন! আমি আপনাকে নামাযী, রোযাদার মানুষ দেখাতে বলেছি।” হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈলে আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم জবাব দিলেন, এ মুসবিতে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে ইনি এমনই ছিলেন। এখন আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে যে, তার চোখগুলোও যেন নিয়ে নিই। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাইল আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم ইশারা করলে তার চোখগুলো বের হয়ে গেল! কিন্তু আবিদ মুখে ঐ কথাই বললেন: “হে আল্লাহ! যতদিন তুমি ইচ্ছা করেছ, এ চোখের মাধ্যমে আমাকে ফায়দা দান করেছ, আর যখন ইচ্ছা করেছ এগুলো ফিরিয়ে নিয়েছ। হে আল্লাহ! আমার আশার স্থল শুধুমাত্র আপনার সত্ত্বাকেই রেখেছি, সুতরাং আমার উদ্দেশ্যতো তুমিই আর তুমি।”


হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈলে আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم আবিদকে বললেন: এসো আমি আর তুমি একত্রে মিলে দোয়া করি যে, আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে পুনরায় চোখ ও হাত-পা যেন ফিরিয়ে দেন আর তুমি পূর্বের ন্যায়ই ইবাদত করতে পার। আবিদ বললেন: কখনো না। হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈলে আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم বললেন: “কেন করবে না” আবিদ জবাব দিলেন, “যখন আমার আল্লাহর সন্তুষ্টি এরই মধ্যে রয়েছে তাহলে আমি সুস্থতা চাই না।” হযরত সায়্যিদুনা ইউনুস عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم বললেন: সত্যিই আমি অন্য কাউকে ইনার চেয়ে বড় আবিদ দেখিনি। হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈলে আমীন عَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم বললেন: “এটা ঐ পথ যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য এ থেকে উত্তম আর কোন রাস্তা নেই।” (রাওজুর রিয়াহীন, পৃষ্ঠা ১৫৫) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।


     জে সোহনা মেরে দুখ্ বিচ্ রাযী,

     মে সুখনু চুল্লে পা-ওয়া।


       

মুসিবতের কথা গোপন রাখার ফযীলত 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো!ধৈর্যধারণকারী হলে এমন হওয়া উচিত! এমন কোন্ মুসিবত বাকী ছিল, যা ঐ বুযুর্গ (رضي الله عنه) এর দেহে ছিল না। এমনকি শেষ পর্যন্ত চোখের আলো নিভিয়ে দেয়া হল অথচ তাঁর ধৈর্যশীলতায় অণু পরিমাণও পার্থক্য আসল না, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকার ঐ মহান মঞ্জিলে অবস্থান করছিলেন যে, আল্লাহর নিকট আরোগ্য প্রত্যাশা করার জন্যও প্রস্তুত ছিলেন না,(আল্লাহ্ যখন অসুস্থ রাখা পছন্দ করেছেন, তাই আমি সুস্থ হতে চাই না) سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এটা তাদেরই অংশ। এমনই আল্লাহ ওয়ালার বাণী:  

نجن نفرح بالبلاء كمايفرح اهل الد نيا بالنع 


অর্থাৎ- “আমরা বিপদ-আপদ ও মুসিবত লাভ করাতে এমনই আনন্দিত হই যেমনটা দুনিয়াদারেরা দুনিয়াবী নেয়ামতসমূহ লাভ করে আনন্দিত হয়।”মনে রাখবেন! মুসিবত অনেক সময় মু’মিনের জন্য রহমত হয়ে থাকে আর ধৈর্যধারণ করে মহান প্রতিদান লাভেরও বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। যেমন - 


হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম,শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যার জান মালে মুসিবত এলো আর সে সেটাকে গোপন রাখল এবং মানুষের কাছে প্রকাশ করলো না, তবে আল্লাহর উপর অত্যাবশ্যক যে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫০, হাদীস নং-১৭৮৭২) 


অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে; “মুসলমানের নিকট রোগ, পেরেশানী, দুঃখ, কষ্ট ও চিন্তা থেকে যে মুসিবত আসে এমনকি যদি কাঁটা বিদ্ধও হয়, তাহলে আল্লাহ্ সেটাকে তার গুনাহের কাফ্ফারা বানিয়ে দেন।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৩, হাদীস নং-৫৬৪১)


   চুপ কর চীতা মূতি মিলসন, সবর করে তা হীরে,

   পা-গলা ওয়াংগু রাওলা পা-বী না মূতি না হীরে। 


            

(২৪) বিবি আয়েশা এর ইছালে সাওয়াবের ঘটনা 


ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) বলেন: “পূর্বে আমি যদি কোন খাবার তৈরী করতাম তবে সেটার সাওয়াব তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) ও হযরত আমীরুল মুমিনীন শেরে খোদা আলী (رضي الله عنه) ও হযরত খাতুন জান্নাত ফাতিমাতুয্ যাহরা ও হযরত হাসানাইনে কারীমাইন عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان এর পবিত্র রূহ সমূহের জন্যই বিশেষতঃ ঈসালে সাওয়াব করতাম এবং উম্মাহাতুল মুমিনীন (رضي الله عنه) ُنَّ এর নাম অন্তর্ভূক্ত করতাম না। এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম যে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) তাশরীফ আনলেন।আমি হুযুর (ﷺ) এর বরকতময় খিদমতে সালাম আরয করলে হুযুর (ﷺ) আমার প্রতি মনোযোগ দিলেন না এবং মোবারক চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেন ও আমাকে ইরশাদ করলেন: “আমি ‘আয়েশা (সিদ্দীকার) ঘরে খাবার খাই, যে কেউ আমাকে খাবার পাঠাতে চায় সে যেন (হযরত) আয়েশার ঘরে পাঠায়।” তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মনোযোগ না দেয়ার কারণ এটা ছিল যে, আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা (رضي الله عنه) َا কে খাবারে অন্তর্ভুক্ত (অর্থাৎ- ঈসালে সাওয়াব) করতাম না। এরপর থেকে আমি হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) َا বরং সকল উম্মাহাতুল মুমিনীন এমনকি সকল আহলে বাইতকে অন্তর্ভুক্ত করে নিই এবং সকল আহলে বাইতকে নিজের জন্য ওসীলা সাব্যস্ত করি। (মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী, ২য় খন্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।



সকলের জন্য ঈসালে সাওয়াব করা উচিত


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে জানা গেল, যাদেরকে ঈসালে সাওয়াব করা হয় তাদের নিকট তা পৌঁছে যায়। এটাও জানা গেল, ঈসালে সাওয়াব নির্ধারিত বুযুর্গদের করার পরিবর্তে সকলের প্রতি করা উচিত।আমরা যতজনকেই ঈসালে সাওয়াব করব, সবার নিকট সমান সমানই পৌঁছবে আর আমাদের সাওয়াবেও কোন প্রকার কমতি হবে না। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা থেকে সুলভ মূল্যে ফাতিহার পদ্ধতি নামক রিসালা সংগ্রহ করে পাঠ করুন) এটাও জানা গেল, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা (رضي الله عنه) َا কে সীমাহীন ভালবাসতেন। 


হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস (رضي الله عنه) যখন “সালাসিলের যুদ্ধ” থেকে ফিরলেন তখন তিনি আরয করলেন:“ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ) আপনার নিকট সকল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অধিক প্রিয় কে?” ইরশাদ করলেন: “আয়েশা” (رضي الله عنه) َا তিনি পুনরায় আরয করলেন: “পুরুষদের মধ্যে?” বললেন: “তাঁর পিতা হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীকা (رضي الله عنه) ।

(সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৫১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৬৬২)


    বিনতে সিদ্দিক আ-রামে জানে নবী,

    উছ হারীমে বারাআত পে লাখো সালাম।

    য়া’নি হে সূরায়ে নূর জ্বিন কি গাওয়া,

    উনকি পুর নূর সূরত পে লাখো সালাম।



(২৫) বৃদ্ধা মহিলার ঈমান তাজাকারী স্বপ্ন 


     اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ

দা'ওয়াতে ইসলামী ওয়ালাদের উপর রিমঝিম রিমঝিম করে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়। নেকীর দা’ওয়াতের এলাকায়ী দাওরায়ও যে কি চমৎকার বাহার। যেমন- ইংল্যান্ডের এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা নিজ ভাষায় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আমরা একবার মুসলমানদের কোলাহলশূণ্য এলাকা SMALL HEATH যাকে আমরা “মক্কী হালকা” বলে থাকি। সেখানে এলাকায়ী দাওরা করে নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে এক ঘরে করাঘাত করলে একজন বৃদ্ধা মহিলা বের হলেন, যিনি মীরপুর (কাশ্মীর) বাসী ছিলেন, উর্দু ও ইংলিশ জানতেন না। আমরা মাথা নত রেখে পাঞ্জাবী ভাষায় নেকীর দাওয়াত পেশ করলাম আর আরয করলাম: পরিবারের পুরুষদেরকে অমুক সময় মসজিদে পাঠাবেন। আমরা যখন ফিরে যাচ্ছিলাম তখন তিনি বলতে লাগলেন, “এখন আমার কথাও শুনে যাও। আমাদের কাছে সময় কম থাকায় সামনে অগ্রসর হলাম কিন্তু আমাদের একজন ইসলামী ভাই দাঁড়িয়ে রইলেন। বৃদ্ধা মহিলা বল আমি কয়েকদিন আগেই এ মোবারক স্বপ্ন দেখেছি যে, প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) সবুজ পাগড়ীধারীদের সাথে মসজিদে নববী শরীফ থেকে বাইরের দিকে আসছিলেন। ”আল্লাহর কুদরত যে, আজ এ ধরণের সবুজ পাগড়ীধারী আমার ঘরে নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য এসেছেন।তাকে ইসলামী বোনদের সাপ্তাহিক ইজতিমার দাওয়াত দেয়া হল। এখন তিনি নিজের পরিবারের সকল ইসলামী বোনদের নিয়ে নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে অংশগ্রহণ করেন। 


        হে গোলামুকে ঝুরমট মে বদরুদ্দোজা, 

        নূর হী নূর হার সো মদীনে মে হায়। 

        

      

ইসলামী বোনদের মধ্যে মাদানী পরিবর্তন 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো!দা’ওয়াতে ইসলামী ওয়ালাদের উপর ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর কত বড় দয়া! ইসলামী ভাইদের সাথে সাথে ইসলামী বোনদের মধ্যেও দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের ব্যাপকতা চলছে। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ লক্ষ লক্ষ ইসলামী বোনেরাও দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পয়গামকে গ্রহণ করেছেন। ফ্যাশন পূজারীতে মাতাল, সমাজে সফল হওয়া অসংখ্য ইসলামী বোন গুনাহের ফাঁদ থেকে বের হয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন ও শাহযাদীয়ে কাওনাইন বিবি ফাতিমা (رضي الله عنه) ُنَّ এর প্রেমিকা হয়ে  গেছে। গলায় ওড়না লটকিয়ে শপিং সেন্টারগুলোতে ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোতে ঘুরাঘুরিকারী, নাইট ক্লাব ও সিনেমা হলে সৌন্দর্যে পরিণত হওয়া নারীদেরকে কারবালার শাহযাদীগণ (রা.) এর লজ্জা-শরমের ঐ বরকত অর্জিত হয়েছে যে, মাদানী বোরকা তাঁদের পোষাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে  গেছে। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ মাদানী মুন্নী ও ইসলামী বোনদেরকে কুরআনে কারীম এবং হিফয ও নাযারা বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়ার জন্য অনেক মাদরাসাতুল মদীনা ও আলিমা হিসেবে গড়ার জন্য অনেক জামিয়াতুল মদীনা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দা’ওয়াতে ইসলামীতে “মহিলা হাফিয” ও মহিলা আলিম” এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে চলেছে। 


    মেরী জিছ কদর হে বেহনে, 

    সভী মাদানী বোরকা পেহনে, 

    উনহি নেক তুম বানানা, 

    মাদানী মদীনে ওয়ালে। 


            

(২৬) মর্যাদা পূর্ণ রুমাল 

     

হযরত সায়্যিদুনা উব্বাদ বিন আবদুস সামাদ (رضي الله عنه) বলেন: আমরা একদিন হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) এর ঘরে উপস্থিত হলাম। তাঁর (رضي الله عنه) নির্দেশ পেয়ে তাঁর বাঁদী দস্তরখানা বিছালেন। বললেন: রুমালও নিয়ে আস। সে একটি রুমাল নিয়ে আসল, যেটা ধোয়ার প্রয়োজন ছিল। নির্দেশ দিলেন, এটাকে রুটির তন্দুরে ফেলে দাও। সে প্রজ্জলিত রুটির তন্দুরে তা ফেলে দিল। কিছুক্ষণ পর যখন সেটা আগুন থেকে বের করা হল তখন তা দুধের ন্যায় সাদা ছিল। আমরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এর মধ্যে কি রহস্য আছে? হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বললেন: এটা ঐ রুমাল, যা দ্বারা নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) আপন নুরানী চেহারা মোবারক পরিস্কার করতেন, যখন (এটা) ধোয়ার প্রয়োজন হয় তখন আমরা এটাকে এভাবে আগুনে ধুয়ে নিই। কারণ যে বস্তু আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم এর মোবারক চেহারায় লাগে, আগুন সেটাকে জ্বালায় না। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১৩৪ পৃষ্ঠা)আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসাদক্বায় আমাদের ক্ষমা হোক। 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আরিফে কামিল হযরত সায়্যিদুনা মাওলানা রূমী (رضي الله عنه) “মাসনভী শরীফ” বরকতময় এ ঘটনাটি লেখার পর বলেন:


    আয় দিলে তর ছিনদা আয নারো আযাব, 

    বাছুনা দস্তো লবে কুন ইকতিরাব। 

    ছো জমাবে রা ছুনা তাশরীফ দাদ, 

    জানে আশেকরা রা ছাহা খাওয়াহাদ কাশাদ। 


অর্থাৎ- হে ঐ হৃদয় যার মধ্যে জাহান্নামের শাস্তির ভয় রয়েছে, ঐ প্রিয় ঠোঁট ও পবিত্র হাতের সাথে নৈকট্য কেন অর্জন করছ না, যিনি প্রাণহীন বস্তু রুমালকে পর্যন্ত এমন ফযীলত ও সম্মান দান করেছেন, সেটা আগুনে জ্বলছে না। তাহলে যারা তাঁর অতিশয় প্রেমিক, তাদের উপর জাহান্নামের শাস্তি কেনইবা হারাম হবে না। 


 আকা কা গাদা হো আয় জাহান্নাম! তু ভী শুনলে! 

 উও কেইছে জলে জু কে গোলামে মাদানী হো।



(২৭) আবু হুরাইরার (رضي الله عنه) খাদ্যের থলে 


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন: এক যুদ্ধে ইসলামী সেনাবাহিনীর নিকট খাওয়ার কিছু ছিল না। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) আমাকে বললেন: তোমার নিকট কিছু আছে? আমি আরয করলাম: খাদ্যের থলের মধ্যে সামান্য পরিমাণ খেজুর আছে। বললেন: “নিয়ে এসো।” আমি নিয়ে আসলাম, যা মোট ২১টি ছিল। খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) এগুলোর উপর মোবারক হাত রেখে দোয়া করলেন অতঃপর বললেন: “দশজনকে ডাক!” আমি ডাকলাম, তারা এসে পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়ে চলে গেলেন। পুনরায় দশজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। তারা খেয়ে চলে গেলেন। এভাবে দশজন করে আসতেন এবং পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়ে চলে যেতেন। শেষ পর্যন্ত সৈন্য বাহিনীর সবাই খেলেন আর যা অবশিষ্ট থেকে গেল সেগুলোর ব্যাপারে বললেন: “হে আবু হুরাইরা! এগুলো তোমার খাদ্যের থলের মধ্যে রেখে নাও আর যখনই ইচ্ছা হয় তাতে হাত দিয়ে তা থেকে বের করে নিও,কিন্তু খাদ্যের থলে উল্টিয়ে ফেলবে না।

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন: আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর (ﷺ) এর ইহকালীন মোবারক জীবনের সময়, হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক, হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম ও হযরত সায়্যিদুনা উসমান গণী (رضي الله عنه) َاএর খিলাফত আমল পর্যন্ত এসব খেজুর থেকে খেতে থাকি এবং খরচ করতে থাকি। আনুমানিক পঞ্চাশ ওসক তো আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিয়েছি আর দুশত ওসক থেকে অধিক আমি খেয়েছি। যখন হযরত সায়্যিদুনা উসমান গণী (رضي الله عنه) َا শহীদ হলেন তখন ঐ খাদ্যের থলে আমার ঘর থেকে চুরি হয়ে যায়। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


    কৌন দে-তা হে দে-নে কো মুহ চাহিয়ে, 

    দে-নে ওয়ালা হায় সাচ্ছা হামারা নবী।

                                   (হাদায়িখে বখশিশ)


      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এক ওসক ষাট সা’ পরিমাণ আর এক সা’ ২৭০ তোলা (অর্থাৎ-তিন সের ছয় ছটাক) পরিমাণ হয়ে থাকে। এ হিসাবে ঐ ২১টি খেজুর থেকে হাজার মণ থেকে বেশী খেজুর খাওয়া হয়েছে। এসব কিছু আল্লাহর দয়ার শান যে, তিনি নিজের প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) কে অগণিত ক্ষমতা ও মহান মুজিযা দান করেছেন। নিশ্চয় তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ)এর মর্যাদার নিশান সম্বলিত শানতো অনেক বড়। হুযুর (ﷺ) এর সদকায় তাঁর (ﷺ)গোলামদেরও বড় বড় মর্যাদা দান করা হয়েছে। যেমন-আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) এর খলীফা হযরত সদরুল আফাযিল এর কারামত শুনুন।



(২৮) সদরুল আফাযিলের (رحمة الله)কারামত-

     

আহযরত মাওলানা মানযুর আহমদ সাহেব গাওসাভী (رحمة الله) নিজের দেখা বিষয় বর্ণনা করেন যে,খাযাইনুল ইরফানের প্রণেতা সদরুল আফাযিল আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দিন মুরাদাবাদী (رحمة الله)এর নিত্যদিনের অভ্যাস ছিল যে,ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে জামাআত সহকারে আদায় করতেন। তিনি (رحمة الله) মসজিদে যাওয়ার পূর্বেই একটি চার ফুট সাইজের সামাওয়ার (সামাওয়ার তামা বা পিতলের ঐ ডবল পাত্রকে বলা হয়, যেটার ভিতরে আগুন জ্বলে আর বাইরে পানি গরম হয় অথবা চা রান্না হয়) এর ভিতর চায়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব দেয়া হত এবং আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হত। তিনি (رحمة الله) যখন নামায পড়ে ফিরে আসতেন তখন চা তৈরী হয়ে যেত।তিনি (رحمة الله) বৈঠকে বসে যেতেন আর দেখতে দেখতেই তাঁর প্রতি অনুরাগীদের অনেক ভীড় জমে যেত। সাধারণত পঞ্চাশজন থেকে দুইশ জনের মত লোকের ভীড় হত। কখনো কখনো আগমনকারী এতঅধিক হত যে, বৈঠকখানা ও দালানের বাইরের অংশ দুটোতে মোটেই জায়গা থাকতনা। তিনি (رحمة الله) তাশরীফ রাখতেই খাদিমগণ এককাপ চা পিরিচে নিয়ে চায়ের কাপের উপর একটি বিস্কুট রেখে তাঁর খিদমতে পেশ করতেন। তিনি (رحمة الله) ঐ কাপটি নিজের মোবারক হাতে তুলে তাঁর ডান দিকে বসা ব্যক্তিকে দিয়ে দিতেন। এভাবে ৪-৬টি কাপ নিজে বন্টন করতেন।বাকীগুলো খাদিমগণ সবাইকে এভাবে একটি করে বিস্কুট ও এক কাপ করে চা বন্টন করতেন। এক কাপ চা ও একটি বিস্কুট তিনি আহার করতেন। মূলতঃ এটা সকালের নাস্তা। হযরতমাওলানা সায়্যিদ মনযুর আহমদ সাহেব (رحمة الله) ও আস্থার সাথে বলেন: উপস্থিতি কম হোক কিংবা বেশি, আমি বিশেষভাবে এ বিষয় নোট করেছি যে, ঐ এক সামাওয়ারের চা-ই প্রতিদিন আগমণকারী সকল লোকের জন্য যথেষ্ট হত। কখনো এমন হয়নি যে, উপস্থিতির সংখ্যা বেশি হয়ে  গেছে তাই আরো ব্যবস্থা করার প্রয়োজন পড়েছে।হযরত মাওলানা সায়্যিদ মানযুর আহমদ সাহেব (رحمة الله) উপরোল্লিখিত বর্ণনা এ বিষয়ের দিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এটা হযরত সাদরুল আফাযিল (رحمة الله) এর প্রতিদিনের কারামতের মধ্যে একটি উদারতাপূর্ণ কারামত। (তারীখে ইসলাম কী আযীম শাখসিয়্যাত সাদরুল আফাযিল, পৃষ্ঠা ৩৩৩ থেকে ৩৩৪, তানযীমে আফকারে সদরুল আফাযিল, বোম্বাই) 


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।   


হামকো আই আত্তার সুন্নী আলিমু ছে পেয়ার হে مَاشَآءَ اللهِ দো-জাহা মে আপনা বে-ড়া পার হে।

    

        

    (২৯) পঙ্গুদেরও অংশ মিলে 

    

সারদারাবাদ (ফয়সালাবাদ)-এর আনারকলীর অধিবাসী হাকীম মুহাম্মদ আশরাফ কাদিরী চিশতী লিখেন যে, “আমার বিয়ে হওয়ার পর অনেকদিন পর্যন্ত কোন সন্তান হয়নি। সন্তান লাভের জন্য ঔষধপত্র ব্যবহার করেছি, দোয়া প্রার্থনা করি ও ওযীফা সমূহ পাঠ করি কিন্তু আমার উদ্দেশ্য সফল হল না। অবশেষে হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান হযরত মাওলানা সর্দার আহমদ (رحمة الله) এর বরকতময় খিদমতে সন্তান থেকে বঞ্চিত থাকার আলোচনা করে দোয়া প্রত্যাশী হলাম। এদিন গুলোতে আমার প্রতিবেশী আবদুল গফুর চৌধুরী আমাকে বললেন: তিনদিন থেকে একজন বুযুর্গকে আমি স্বপ্নে দেখছি। দেখি তাঁর নিকটে আপনি দাঁড়ানো অবস্থায় রয়েছেন আর আপনার কোলে চাঁদের ন্যায় সুন্দর একটি ছেলে রয়েছে। ঐ বুযুর্গ বললেন: “হাকীম সাহেব! একটি ছাগল সদকা করুন, যা থেকে পঙ্গুরাও যেন ভাগ পায়।” সুতরাং আমি হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান (رحمة الله) এর নিকট স্বপ্নের কথা বললাম আর আরয করলাম: আমার মনে হচ্ছে, একটি ছাগল জবাই করে জামিয়া রযবীয়্যার লঙ্গর খানায় দিয়ে দেব। তিনি (رحمة الله) বলেন: “হাকীম সাহেব! এখানেতো আল্লাহ্ তাআলার দয়া রয়েছে, ছাগল আসতেই থাকে।এটা উত্তম হবে যে, জুমার দিন যেন ঘরে মাংস ও রুটি তৈরী করা হয় আর জুমার নামাযের পর খতম শরীফ পড়ানো হয়, রান্নাকৃত মাংস রুটিসহ সেখানে গরীবদেরকে যেন বন্টন করা হয়। তোমরা স্বামী-স্ত্রীও খাও আর তা থেকে সেখানকার পঙ্গুরাও যেন ভাগ পায়।”এটা উল্লেখ্য যে, স্বপ্নের আলোচনা করার সময় আমি পঙ্গুদের ব্যাপারে বুযুর্গের বাণীটি মুহাদ্দিসে আযম (رحمة الله)কে আরয করিনি। তিনি (رحمة الله) নিজেই তা বর্ণনা করেছেন আর তা তাঁর জীবন্ত কারামত ছিল যে, গায়েবের কথা বলে দিলেন। তাঁর (رحمة الله) কথা মত কাজ করা হল। এরপর আল্লাহ্ তাআলা নিজ দয়া ও অনুগ্রহে এবং হযরত মুহাদ্দিসে আযম (رحمة الله) এর দোয়ার ওসিলায় আমাকে ছেলে দান করলেন। (হায়াতে মুহাদ্দিসে আযম, পৃষ্ঠা ২৬০ থেকে সংকলিত)


      

(৩০) বিশ্বাস থাকলে নামও কাজ করে 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! পীরে তরিকত, হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান মাওলানা মুহাম্মদ সর্দার আহমদ কাদিরী চিশতী (رحمة الله) অনেক বড় আলিমে দ্বীন ছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে বড় বড় উলামায়ে কিরামের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি একজন কারামত সম্পন্ন বুযুর্গ ছিলেন। যেমন-মাওলানা করম দ্বীন (খতীব, জামে মসজিদ, চক নম্বর-৩৫৬) 


বর্ণনা করেন যে,একবার আমি ঢানা খাওখার আনওয়ালা, শরাকপুর শরীফ এর নিকটবর্তী স্থানে মহিষ আনার জন্য গেলাম।কিন্তু এ সফরে আমাকে অর্ধ মাথা ব্যথা খুবই পেরেশান করল। শারাকপূর শরীফ কাছেই ছিল। সেখানে গেলাম,কিন্তু জানতে পারলাম যে, উভয় সাহেবযাদা হজ্জ করতে  গেছেন। ফিরে আসার সময় রাস্তায় ব্যথা দারুন যন্ত্রনা শুরু করল। কোন তাদবীর মাথায় আসছিল না।নদীর কিনারা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সম্মুখে একটি সাদা কাগজের টুকরা দেখলাম। আমি সেটা উঠালাম আর তাতে ওলিয়ে কামিল হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান (رحمة الله) এর মোবারক নাম লিখে ব্যথার স্থানে বেঁধে দিলাম।

তাঁর নামের তাবিজ বাঁধতেই اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ ব্যথা তৎক্ষণাৎ দূরীভূত হয়ে গেল এবং শরীর একেবারে সুস্থ হয়ে গেল। (প্রাগুক্ত, ২৬১ পৃষ্ঠা)


       

(৩১) টিউব লাইটও আনুগত্য করল 

     

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যাঁর নামের এ শান তাঁর “কথা”র কি অবস্থা হবে! সুতরাং তাঁর মুখ নিঃসৃত কথা সম্পর্কেও একটি কারামত লক্ষ্য করুন। যেমন হযরত মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান (رحمة الله) জঙ্গ বাজারঘুন্টা ঘর-এ অনুষ্ঠিত মীলাদ মাহফিলে বয়ান করছিলেন। বয়ানের বিষয়বস্তু ছিল রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর নূরানিয়্যত। বয়ান চলছিল, প্রায় আধঘন্টা পরে তাঁর (رحمة الله) দৃষ্টি ডান দিকে লাগানো টিউব লাইটে পড়ল। এ টিউবটি কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কখনো চলছিল আবার কখনো নিভে যাচ্ছিল। তিনি (رحمة الله) টিউবকে লক্ষ্য করে বললেন: “আরে টিউব! তুই কখনো জ্বলছিস আর কখনো নিভে যাচ্ছিস।” আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মোবারক নূরে সমগ্র সৃষ্টি জগৎ আলোকিত হয়ে  গেছে আর তুই কেন অকৃতজ্ঞ হবি? খবরদার! খবরদার! তুই যদি আর নিভে যাস তবে.... তাঁর (رحمة الله) এ ইঙ্গিতে নারায়ে রিসালাতের ধ্বনি উঠল। উপস্থিত সবাই দেখলেন যে, ঐ টিউবলাইট জলসা শেষ হওয়া পর্যন্ত অনবরত জ্বলতে থাকে। (প্রাগুক্ত, ২৬৩ পৃষ্ঠা) 

    

গম পোকা ধরা থেকে রক্ষা পায়,

মাথা ব্যথা দূরীভূত হয়। 

    

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো!আমল সম্পন্ন উলামাদেরও কী শান! আমাদেরকে সর্বদা উলামায়ে আহলে সুন্নাতের সংস্পর্শে সম্পৃক্ত থাকা উচিত। উলামায়ে হক এর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে এ থেকে অনুমান করুন যেমন, হযরত সায়্যিদুনা কামালুদ্দীন আদদামীরী(رحمة الله) বলেন: কিছু জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আমি জেনেছি যে,যদি মদীনায়ে মুনাওওয়ারা زادها لله شر فاو تعظيما এর প্রসিদ্ধ “ফুকায়ে সাবআহ” অর্থাৎ সাতজন ফকীহ আলিমের পবিত্র নাম কোন কিছুতে লিখে গমের মধ্যে রেখে দেয়া হয়, তবে! খাদ্যে পোঁকা ধরবে না। যদি মাথা ব্যথায় আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় ঝুলিয়ে (বা বেধেঁ) দেয়া হয়। অথবা এ সাতটি নাম পাঠ করে মাথায় ফুঁক দেয়া হয় তাহলে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যাবে। ঐ সাতটি মোবারক নাম নিম্নরূপ: উবাইদুল্লাহ, উরওয়াহ, কাসিম, সাঈদ, আবু বকর, সুলাইমান, খারিজা رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی । (হায়াতুল হায়ওয়ানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, উলামায়ে হক ও আল্লাহর নেক বান্দাগণের নামেও আশ্চর্য্যজনক বরকত থাকে। যাদের নামের এ শান, তাঁদের কিতাব, বয়ান, সংস্পর্শ ও তাঁদের মাযার শরীফ গুলোতে উপস্থিতি এবং তাঁদের ঈসালে সাওয়াবের তাবাররুকের মর্যাদার ব্যাপারে 

কী বলবো! 


        

(৩২) খামিরকৃত আটা দিয়ে দিলেন 

      

হযরত সায়্যিদুনা হাবীব আজমী (رحمة الله) এর দরজায় কোন এক ফকির কিছু চাইল। তাঁর (رحمة الله) সম্মানিতা স্ত্রী খামির করা আটা রেখে পড়শী থেকে আগুন নিতে গেলেন, যাতে রুটি রান্না করা যায়। তিনি (رحمة الله) ঐ আটা তুলে ফকিরকে দিয়ে দিলেন।যখন স্ত্রী আগুন নিয়ে আসলেন তখন আটা অদৃশ্য। তিনি(رحمة الله) বললেন: “সেগুলো রুটি তৈরী করার জন্য নিয়ে  গেছেন। অনেক জিজ্ঞাসা করার পর তিনি (رحمة الله) দান করে দেয়ার ঘটনাটি বললেন। তাঁর স্ত্রী বললেন: سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ এটাতো ভাল কথা, তবে আমাদেরওতো খাওয়ার দরকার আছে। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি একটা বড় থালা ভরে মাংস ও রুটি নিয়ে আসল। তিনি (رحمة الله) বললেন: “দেখো তোমাকে কত তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হল।” যেমন- রুটিও তৈরী করে দেয়া হল আর তার উপর মাংসের তরকারীও পাঠিয়ে দিল। (রাওযুর রিয়াহীন, ১৫২ পৃষ্ঠা)আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


        

সদকা করাতে সম্পদ কমে না 

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় দেয়া বস্তু কখনো বৃথা যায় না। আখিরাতে সাওয়াব ও প্রতিফলতো রয়েছেই, অনেক সময় দুনিয়াতেই তা অনেকগুন বাড়িয়ে সাথে সাথে উত্তম প্রতিদান সরূপ দান করা হয়। আর এটা বিশ্বাসযোগ্য বিষয় যে,আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় দেয়াতে বৃদ্ধি পায়, কমে না। যেমনটা হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) বলেন: মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: সদকা সম্পদ কমায় না, আর আল্লাহ্ তাআলা ক্ষমা করার কারণে বান্দার সম্মানই বৃদ্ধি করেন আর যে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়,আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। (সহীহ মুসলিম, ১৩৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫৮৮)


      

কুপ থেকে পানি ভরলে, পানি বৃদ্ধি পায় 

     

বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার (رحمة الله) খান বলেন: “যাকাত আদায়কারীর যাকাত প্রতি বছর বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এটা বাস্তব অভিজ্ঞতা যে, কৃষক ক্ষেতে বীজ ফেলে আসে বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে বস্তাখালী করে ফেলে অথচ সত্যিকার অর্থে তাতে আরো যোগ করে ভর্তি করে নেয়। ঘরে রাখার বস্তাগুলো ইদুঁর, আঠালী পোঁকা ইত্যাদি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অথবা এটা উদ্দেশ্য যে, যে সম্পদ থেকে সদকা বের হয়, তা থেকে খরচ করতে থাকো, مَاشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلّ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। কূপের পানি ভরতে থাক, তাহলে পানি বেড়েই যাবে। (মিরআতুল মানাযীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৩)


            

যাকাত না দেয়ার শাস্তি 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মনে রাখবেন! যাকাত আদায় করার যেমন অসংখ্য সাওয়াব রয়েছে, যে আদায় করে না তার জন্য তেমন ভয়ানক আযাবও রয়েছে। যেমন-আমার আকা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ র‍যা খান (رحمة الله)কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আযাবের দৃশ্য তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,যার সারাংশ: যে সোনা-চান্দির যাকাত দেয়া হবে না, কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের কপাল, পাঁজর, পিঠে দাগ দেয়া হবে। তাদের মাথা, স্তনের উপর জাহান্নামের গরম পাথর রাখা হবে যে, বুক ফেটে কাঁধ দিয়ে বের হয়ে যাবে আর কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হলে, হাড় ভেঙ্গে বুক দিয়ে বেরিয়ে আসবে। পিঠ ভেঙ্গে পাঁজর দিয়ে বের হবে। মাথার পিছনের অংশ ভেঙ্গে কপাল দিয়ে উত্থিত হবে। যে সম্পদের যাকাত দেয়া হবে না, কিয়ামতের দিন তা প্রাচীন দুষ্ট রক্তপায়ী বড় অজগর হয়ে তার পিছু নেবে। সে হাতে বাধা দেবে, সেটা ঐ হাত চিবিয়ে নেবে। অতঃপর গলায় পেচিয়ে শৃঙ্খল হয়ে যাবে।তার মুখ নিজের মুখে নিয়ে চিবাতে থাকবে, (আর বলবে যে,) আমি হলাম তোর সম্পদ, আমি হলাম তোর ধন ভান্ডার। এরপর তার সমস্ত শরীর চিবিয়ে ফেলবে।আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, নতুন সংস্করণ, ১০ম খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা) আমার আক্বা আ’লা হযরত (رحمة الله) যাকাত অনাদায়কারীদেরকে কিয়ামতের শাস্তির ব্যাপারে ভয় দেখিয়ে বুঝিয়ে বলেন: হে প্রিয়! আল্লাহ্ তাআলা ও রাসুল (ﷺ) এর বাণীকে এমনিতেই হাসি-ঠাট্টা মনে করছ কিংবা (কিয়ামতের একদিন অর্থাৎ) পঞ্চাশ হাজার বছর সময়ের এ বেদনাদায়ক) মুসিবত সহ্য করা সহজ মনে করছ! দুনিয়ার আগুনে এক আধ পয়সা গরম করে শরীরের উপর রেখে দেখ, এরপর কোথায় এ হালকা গরম, আর কোথায় ঐ রাগের আগুন! কোথায় এ একটি পয়সা, আর কোথায় সারাজীবনের জমানো সম্পদ! কোথায় এ এক মিনিটের দেরী, আর কোথায় ঐ হাজার দিন বছরের মুসিবত!


কোথায় এ সামান্য দাগ, আর কোথায় ঐ হাড় ভেঙ্গে বের হওয়া শাস্তি। আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদের হিদায়াত দান করুন। (প্রাগুক্ত, ১৭৫ পৃষ্ঠা)

     

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন যাকাত ও খয়রাতের প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আমলের জযবাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য একটি “মাদানী ঘটনা” পেশ করছি। যেমন- 


     

(৩৩) এক কোরিয়া বাসীর ইসলাম গ্রহণ 

      

এক মাদানী কাফেলা “কোরিয়া”র একটি এলাকায় পৌঁছল। সেখানে এক অমুসলিম কোরিয়াবাসী মাদানী কাফেলা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনারা কি মুসলমান? মাদানী কাফেলা ওয়ালারা বললেন: اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আমরা মুসলমান। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন:“মাথায় এটা কি বেঁধে রেখেছেন?” জবাব দিলেন, এটা হচ্ছে ইমামা (পাগড়ি) শরীফ যা আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) এর প্রিয় সুন্নাত। এভাবে তিনি দাঁড়ি শরীফ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, জবাব পেলেন, এটাও আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) এর প্রিয় প্রিয় সুন্নাত। আমি ইসলাম সম্পর্কে বই-পত্রে পড়েছি কিন্তু চোখে দেখিনি। আজ প্রথমবার ইসলামের কার্যবিধি (বাস্তব) প্রতিচ্ছবি দেখলাম। যা হৃদয়কে সীমাহীন প্রভাবিত করেছে, দয়া করে আমাকে কলেমা পড়িয়ে মুসলমান করে দিন। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ মাদানীকাফেলা ওয়ালা ‘আশিকানে রাসুলদের নূরানী দাঁড়ি ও আলোকময় ইমামা থেকে আলো বিচ্ছুরণকারী প্রিয় চেহারাগুলোর যিয়ারতের বরকতে ঐ কোরিয়ান কাফির ইসলাম কবুল করে ধন্য হলেন। 

  

উনকা দিওয়ানা, আমামা আওর জুলফো রীশ মে ওয়াহ! দেখো তু সহী লাগতা হায় কিতনা শানদার।

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজ মুসলমানদের জীবন-যাপনের ধরণ সীমাহীন খারাপ হতে চলেছে।আফসোস! শত কোটি আফসোস! অধিকাংশ মুসলমানের পোষাকের সাজগোজ, মাথা ও চেহারার ভঙ্গি ইত্যাদি সবকিছু কাফিরদের পঁচা সংস্কৃতির প্রতিচ্ছায়া।শয়তানের এ কুমন্ত্রণায় ফেঁসে না যাওয়া উচিত যে, আমরা যদি দাঁড়ি ও ইমামা শরীফ পরিহিত অবস্থায় থাকি তবে লোকেরা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে পড়বে। কখনো এমনটা নয়। লোকেরা মাদানী পোষাক-পরিচ্ছেদে নয়, মন্দ আচরণ, তীক্ষ্ম ব্যবহার ও দুশ্চরিত্রতা থেকে দূরে সরে থাকে। আপনি নিখুঁত আন্তরিকতার সাথে সুন্নাতের প্রতিচ্ছবি হয়ে যান, নিজের চরিত্র সংশোধন করে নিন, জিহ্বাকে আয়ত্বে রাখার চেষ্টা করুন, মিষ্টি কথা বলুন এরপর দেখবেন কিভাবে মানুষের অন্তর আপনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে! এইমাত্র আপনারা আশিকানে রাসুলদের ব্যাপারে শুনেছেন যে, কিভাবে সুন্নাতে ভরা পোষাক-পরিচ্ছদ ও হাসি মিশ্রিত ভাষা বর্ষণ করে মিষ্টি মধুর কথা-বার্তায় শয়তানের পূজারীকে মাদানী মুস্তফা হুযুর (ﷺ) এর ভিখারী বানিয়ে দিল! দাঁড়ি শরীফ ও সবুজ ইমামা শরীফে ঝলমল করা ফুল বর্ষণ করে আশিকানে রাসুলদের মাদানী পোষাক ও আল্লাহ্ আল্লাহ্ আল্লাহ্ আল্লাহ্ তাআলার ভাবাবেগপূর্ণ আহ্বানের বরকতে পরিপূর্ণ আরো একটি আনন্দময় ঘটনা শুনুন এবং বিমোহিত হোন। 


 (৩৪) নূরানী চেহারা দেখে মুসলমান হয়ে গেল 

     

১৪২৫ হিজরী (জানুয়ারী ২০০৫) এ দা’ওয়াতে ইসলামীর মারকাযী মজলিসে শূরার নিগরান ও মজলিসে বাইনাল আক্বওয়ামীউমূরের কিছু সদস্য ও অন্যান্যদের মাদানী কাফেলা বাবুল মদীনা (করাচী) থেকে সফর করে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছল। এরই মধ্যে সেখানে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা তৈরী করার জন্য জায়গা দেখতে এ কাফেলা এক জায়গায় গেল।সেখানে পূর্ব থেকে উপস্থিতইসলামী ভাইয়েরা মাদানী কাফেলাকে উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে স্বাগতম জানালেন।


ঐ জায়গার মালিক যিনি খ্রীষ্টান ছিলেন, ইমামা ও দাঁড়ি সম্পন্ন উজ্জল ও আলো বিচ্ছুরিত চেহারাধারী আশিক্বানে রাসুলের আলো ও আল্লাহ্ আল্লাহর ভাবাবেগপূর্ণ আওয়াজে মত্ত হয়ে গেলেন। ব্যাকুল হয়ে সামনে এসে নিগরানে শুরাকে বলতে লাগলেন, “আমাকে মুসলমান করে নিন।” তাকে সাথে সাথে খ্রীষ্টান ধর্ম থেকে তাওবা করিয়ে কলেমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান করে নেয়া হল।ইসলামী ভাইয়ের খুশীর সীমা রইল না। আল্লাহ্ আল্লাহর সুমধুর গুঞ্জনে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠল। 


    তু দাঁড়ি বাড়ালে,আমামা সাজালে

    হায় আচ্ছা নেহী হায় বুরা মাদানী মহল

    ইয়াকীনান মুকাদ্দার কা উও হায় সিকান্দার

    জিছে খায়রছে মিল গিয়া মাদানী মহল।


(৩৫) কাজী সাহেবের খামির 

      

কোটি কোটি হাম্বলীদের পেশওয়া পথপ্রদর্শক হযরত সায়্যিদুনাইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর শাহযাদা হযরত সালিহ (رحمة الله)ইস্পাহানের কাজী বা বিচারক ছিলেন। একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর খাদিম হযরত সালিহের বাবুর্চীখানা থেকে খামির নিয়ে রুটি তৈরী করে ইমাম সাহেবের (رحمة الله)খিদমতে পেশ করল। তিনি (رحمة الله)জিজ্ঞাসা করলেন: এগুলো এত নরম কেন?” খাদিম খামির নেয়ার বর্ণনা দিল। তিনি (رحمة الله) বললেন: “আমার ছেলে যিনি ইস্পাহানের কাজী, তার ঘর থেকে কেন নিয়েছ! এ রুটি আমি খাব না, এটা কোন ফকিরকে দিয়ে দাও তবে তাকে এটা বলে দেবে যে, এ রুটিতে কাজীর খামির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”ঘটনাক্রমে চল্লিশদিন পর্যন্ত কোন ফকির এলোনা, শেষ পর্যন্ত রুটিতে গন্ধ সৃষ্টি হল। খাদিম ঐ রুটি দজলা নদীতে ফেলে দিল। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর তাকওয়া বা খোদাভীতির প্রতি মারহাবা! তিনি ঐ দিনের পর থেকে দজলা নদীর মাছ কখনো খানননি। (তাযকরিাতুল আউলিয়া, ১৯৭ পৃষ্ঠা)আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শুনলেনতো! হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) কিরূপ মুত্তাকী ও পরহেযগার ছিলেন যে, নিজের বিচারক ছেলের সম্পদ থেকেও বেঁচে থাকতেন। কাজী (অর্থাৎ-জর্জ) এর আয় যদিও বা হারাম নয় তবে পরিপূর্ণভাবে ন্যায় বিচার করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে থাকে। যদি তাঁরা ন্যায় বিচার করেন তবুও যেহেতু তাঁরা সরকারী কর্মচারী হন ও তাঁদের বেতন-ভাতা সরকার আদায় করে আর রাষ্ট্র প্রধানরা সাধারণত অত্যাচার ও শত্রুতা থেকে বাঁচতে পারেন না। এছাড়া তাঁদের কোষাগারে টাকা পয়সা পরিচ্ছন্ন হওয়াও কঠিন হয়ে থাকে যে, তাঁরা অধিকাংশ সময় অত্যাচার করে সম্পদ অর্জন করেন। সুতরাং শুধুমাত্র তাকওয়া ও সতর্কতার কারণে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)কাজীর খামির ওয়ালা রুটি খাননি আর যখন ঐ রুটি দজলা নদীতে ফেলা হল তখন এই ভয়ে সেখানকার মাছ খাওয়া পর্যন্ত বর্জন করলেন, যেন আবার এমন মাছ পেটে চলে না যায়, যেটা ঐ রুটি খেয়েছে! 


(৩৫) কাজী সাহেবের খামির 

      

কোটি কোটি হাম্বলীদের পেশওয়া পথপ্রদর্শক হযরত সায়্যিদুনাইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর শাহযাদা হযরত সালিহ (رحمة الله)ইস্পাহানের কাজী বা বিচারক ছিলেন। একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর খাদিম হযরত সালিহের বাবুর্চীখানা থেকে খামির নিয়ে রুটি তৈরী করে ইমাম সাহেবের (رحمة الله)খিদমতে পেশ করল। তিনি (رحمة الله)জিজ্ঞাসা করলেন: এগুলো এত নরম কেন?” খাদিম খামির নেয়ার বর্ণনা দিল। তিনি (رحمة الله) বললেন: “আমার ছেলে যিনি ইস্পাহানের কাজী, তার ঘর থেকে কেন নিয়েছ! এ রুটি আমি খাব না, এটা কোন ফকিরকে দিয়ে দাও তবে তাকে এটা বলে দেবে যে, এ রুটিতে কাজীর খামির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”ঘটনাক্রমে চল্লিশদিন পর্যন্ত কোন ফকির এলোনা, শেষ পর্যন্ত রুটিতে গন্ধ সৃষ্টি হল। খাদিম ঐ রুটি দজলা নদীতে ফেলে দিল। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)এর তাকওয়া বা খোদাভীতির প্রতি মারহাবা! তিনি ঐ দিনের পর থেকে দজলা নদীর মাছ কখনো খানননি। (তাযকরিাতুল আউলিয়া, ১৯৭ পৃষ্ঠা)আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শুনলেনতো! হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) কিরূপ মুত্তাকী ও পরহেযগার ছিলেন যে, নিজের বিচারক ছেলের সম্পদ থেকেও বেঁচে থাকতেন। কাজী (অর্থাৎ-জর্জ) এর আয় যদিও বা হারাম নয় তবে পরিপূর্ণভাবে ন্যায় বিচার করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে থাকে। যদি তাঁরা ন্যায় বিচার করেন তবুও যেহেতু তাঁরা সরকারী কর্মচারী হন ও তাঁদের বেতন-ভাতা সরকার আদায় করে আর রাষ্ট্র প্রধানরা সাধারণত অত্যাচার ও শত্রুতা থেকে বাঁচতে পারেন না। এছাড়া তাঁদের কোষাগারে টাকা পয়সা পরিচ্ছন্ন হওয়াও কঠিন হয়ে থাকে যে, তাঁরা অধিকাংশ সময় অত্যাচার করে সম্পদ অর্জন করেন। সুতরাং শুধুমাত্র তাকওয়া ও সতর্কতার কারণে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)কাজীর খামির ওয়ালা রুটি খাননি আর যখন ঐ রুটি দজলা নদীতে ফেলা হল তখন এই ভয়ে সেখানকার মাছ খাওয়া পর্যন্ত বর্জন করলেন, যেন আবার এমন মাছ পেটে চলে না যায়, যেটা ঐ রুটি খেয়েছে! 


 

(৩৬) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) এর কারামত


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) মহা-মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। কথিত আছে যে, কোন এক মহিলার হাত-পা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হল। সে তার ছেলেকে তাঁর (رحمة الله) এরনিকট দোয়ার জন্য পাঠাল। তিনি (رحمة الله) বর্ণনা শুনার পর অযু করে নামায পড়া শুরু করলেন। যখন ঐ যুবক ঘরে গিয়ে পৌঁছল তখন তার মা সুস্থ হয়ে গিয়েছিল এবং নিজে এসে তার জন্য দরজা খুলল। (তাযকিরাতুল আউলিয়া, ১৯৬ পৃষ্ঠা)    আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাদের সম্মান করা বড় সাওয়াবের কাজ, যেমন-


 

(৩৭) সম্মানের প্রতিদান 


এক ব্যক্তি ইন্তিকালের পর কেউ স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহ্ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? জবাব দিল: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করল, কোন আমলটি কাজে এসেছে? জবাব দিল, একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) নদীর কিনারায় ওযু করছিলেন আর সেখানে আমি উপরের দিকে অযু করতে বসে গেলাম। যখন আমার দৃষ্টি ইমাম সাহেব (رحمة الله) এর প্রতি পড়ল তখন সম্মানপূর্বক নীচের দিকে এসে পড়লাম। সুতরাং অলীর প্রতি সম্মান করার এ আমলটিই কাজে এসেছে এর উসিলায় আমি ক্ষমা পেলাম। (তাযকিরাতুল আউলিয়া, ১৯৬ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


               

(৩৮) স্বর্ণের জুতা 

      

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন খুযায়মা (رحمة الله) বলেন: যখন হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু আবদুল্লাহ আহমদ বিন হাম্বল(رحمة الله) এর ওফাত হল তখন আমি খুবই বিষন্ন হলাম। এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম, তিনি (رحمة الله)নম্রভাবে পথ চলছিলেন। আমি আরয করলাম: “হে আবু আবদুল্লাহ! এ কেমন পথচলা?” বললেন: “এটাজান্নাতে খাদিমদের চলা।” আরয করলাম: “আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?” জবাব দিলেন, “আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমার মাথায় তাজ সাজিয়েছেন ও পায়ে স্বর্ণের জুতা পরিধান করিয়েছেন ও আর বললেন: “হে আহমদ! এসব কিছু এই কারণে, তুমি কুরআনকে আমার (অর্থাৎ-আল্লাহর) বাণী বলেছ।” আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন: “হে আহমদ! আমার নিকট ঐ দোয়া করো, যা তুমি দুনিয়াতে করতে।” আমি আরয করলাম: “হে আমার প্রতিপালক! প্রতিটি বস্তু” ...... আমি এখনও এতটুকু বলছি অমনী ইরশাদ হল: “প্রতিটি বস্তু তোমার জন্য মওজুদ রয়েছে।এতে আমি আরয করলাম: “প্রতিটি বস্তুতে তোমার কুদরতের দলিল।” বললেন: “তুমি সত্য বলেছ।” আমি আরয করলাম: “হে আল্লাহ! আমার কাছ থেকে হিসাব নিওনা, ব্যাস আমাকে ক্ষমা করে দাও।” বললেন: “যাও এমনই করলাম।” এরপর ইরশাদ করলেন: “হে আহমদ! এটা জান্নাত, এটাতে প্রবেশ কর।” যখন আমি প্রবেশ করলাম, তখন (দেখলাম) হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) সখানে পূর্ব থেকে বিদ্যমান ছিলেন। তাঁর দুটো ডানা ছিল, যা দিয়ে তিনি খেজুরের একটি গাছ থেকে অন্য গাছের উপর উড়ে বসছিলেন আর তাঁর মুখে জারী ছিল, “সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করেছেন ও বাস্তবে আমাদেরকে জান্নাতের উত্তরাধিকারী করেছেন, জান্নাতে আমরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঠিকানা করি, তাই আমলকারীদের খুবই উত্তম প্রতিফল রয়েছে।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম: “হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ওয়াহহাব ওয়াররাক (رحمة الله) এর কি অবস্থা? তখন বললেন: “আমি তাঁকে নূরের সমুদ্রে দেখে এসেছি। আমি হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) এর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বললেন: “তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে উপস্থিত আছেন, তার সামনে একটি ট্রে আছে আর আল্লাহ্ তাআলা তাঁর দিকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন: “হে দুনিয়াতে পানাহার বর্জনকারী! এ জগতে খাও আর মজা করো।” (শরহুস সূদুর, ২৮৯ পৃষ্ঠা)  

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


  

(৩৯) চাবুকের প্রতিটি আঘাতে ক্ষমার ঘোষণা 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাগণ দ্বীনের জন্য কষ্ট সহ্য করে দুনিয়া থেকে যখন বিদায় নেন তখন আল্লাহ্ তাআলা তাঁদেরকে কিরূপ সম্মান দেন। জ্বী হ্যাঁ! কোটি কোটি হাম্বলীদের ইমাম হযরত সায়্যিদুনা আবু আবদুল্লাহ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) সত্যের জন্য খুব বেশী কষ্ট সহ্য করেছেন।যেমন- 


এক সময় আব্বাসীয় খলীফা মু’তাসিম বিল্লাহের নির্দেশে জল্লাদ সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) এর বিবস্ত্র পিঠে পালাক্রমে চাবুক মারতে লাগল, যাতে তাঁর পবিত্র পিঠ রক্তে লাল হয়ে যায়, চামড়া মোবারক ফেঁটে যায়। এ সময় তাঁর পায়জামা শরীফ সরে যেতে লাগল। তখন তিনি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ! তুমি জানো আমি সত্যের উপর রয়েছি, আমাকে উলঙ্গ হওয়া থেকে রক্ষা কর। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ পায়জামা শরীফ স্থানচ্যুত হওয়া থেকে থেমে গেল এবং এরপর তিনি (رحمة الله) বেহুশ হয়ে গেলেন। যতক্ষণ হুশ ছিল, চাবুকের প্রতিটি আঘাতে বলতেন: “আমি মুতাসিমের অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।” পরে যখন লোকেরা তাঁর رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی    عَلَیْہِনিকট এর কারণ জানতে চাইলেন তখন বললেন: “মু’তাসিম বিল্লাহ প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) এর চাচাজান হযরত সায়্যিদুনা আব্বাস (رضي الله عنه) এর বংশের সন্তান। আমার এটা লজ্জা হয়, যে কিয়ামতের দিন আবার যেন এটা বলা না হয়, যে আহমদ বিন হাম্বল, নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) এর চাচাজানের বংশধরকে ক্ষমা করেনি। (মাদানে আখলাক, ৩য় খন্ড, ৩৭-৩৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত, দারুল কুতুবিল হানাফিয়াহ, বাবুল মদীনা, করাচী) 


হযরত সায়্যিদুনা ফুযাইল বিন আয়ায (رحمة الله)বলেন: হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) কেধারাবাহিক আটাশ মাস (সোয়া ২ বৎসর থেকে বেশী) বন্দীবস্থায় রাখা হয়েছে। এ সময় তার উপর চাবুক মারা হত। শেষ পর্যন্ত তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। তলোয়ার গরম করে দাগ দেয়া হয়েছে, পদদলিত করা হয়েছে। কিন্তু মারহাবা! শত কোটি মারহাবা! এত মুসিবত আসার পরও তিনি অটল রইলেন।(আত তাবকাতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা) 


হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা হাফিয বিন জাওযী (رحمة الله) মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) কে ৮০টি চাবুক এভাবে মারা হল, যদি হাতিকে মারা হত তাহলে সেটাও চিৎকার করে উঠত! কিন্তু মারহাবা ইমামের ধৈর্যশীলতা। (মাদানে আখলাক, ৩য় খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত দারুল কুতুবিল হানাফিয়াহ, বাবুল মদীনা, করাচী।)


তড়াপনা ইছ তরাহ্ বুলবুল কে বাল ও পর না হিলে, 

আদব হে লাজেমী শাহূকে আ-স্তানে কা।


    

(৪০) চোর ধৈর্যধারণের শিক্ষা দিল 

  

যখন মুসিবতের দিনগুলোতে তাঁকে (رحمة الله) চাবুকাঘাতকারীর-মুখোমুখি পেশ করা হল, তখন আল্লাহ্ তাআলা “আবুল হাইসাম আইয়ার” নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁকে সাহায্য করলেন। সে তাঁর (رحمة الله) নিকট এসে বলল: “হে আহমদ! আমি অমুক চোর, আমাকে ১৮ হাজার চাবুকাঘাত করা হয়েছে, যাতে চুরির কথা স্বীকার করি, কিন্তু আমি স্বীকার করিনি, অথচ আমি জানতাম, আমি মিথ্যাবাদী। আপনি যেন চাবুকাঘাতে ভয় পেয়ে না যান, আপনিতো সত্যের উপর রয়েছেন। ব্যাস!যখন চাবুকাঘাতে তাঁর (رحمة الله) ব্যথা অনুভব হত, তখন চোরের কথাগুলো মনে করতেন। এরপর থেকে তিনি (رحمة الله) সর্বদা তার (চোর) এর জন্যরহমতের দোয়াকরতেন। (আত তাবক্বাতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৭৮,৭৯ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা বিশর বিন আল হারিস (رحمة الله) বলেন: “তাঁকে (আগুনের) কুন্ডুলিতে (অর্থাৎ কারাগারে) ফেলে পরীক্ষা করা হয়েছে। আর তিনি (দৃঢ়তার কারণে) লাল স্বর্ণ হয়ে বের হয়েছেন।” (প্রাগুক্ত, ৮০ পৃষ্ঠা)


    

ওলীগণের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষণ 

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহর রাস্তায় আসা কষ্টগুলোকে হাসিমুখে সহ্যকারীদের আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কিরূপ সম্মান রয়েছে। আপনারা এটাও শুনলেন যে, হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী (رحمة الله) ( দুনিয়াতে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য) ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করা ও নফসকে দমন করার কারণে আল্লাহ্ তাঁকে কিরূপ দয়া ও মেহেরবানী করেছেন। এছাড়া আমাদের গাউসুল আযম (رحمة الله) দুনিয়াতে নফসকে দমন করতেন এবং পানাহারের প্রতি অনাসক্ত থাকতেন। ছরকারে বাগদাদ হুযুর গাউসে পাক (رحمة الله) এর উপরআল্লাহ্ তাআলার রহমতের আলোচনা করতে গিয়ে আশিকে রাসুল, ওলীয়ে কামিল, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) দরবারে গাউসিয়্যাতে এ আরয করেন: 


    কসমে দে-দে কে খিলাতা হে পিলাতা হে তুঝে, 

    পিয়ারা আল্লাহ্ তেরা চাহনে ওয়ালা তেরা। 


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ধরণের প্রিয় প্রিয় বিষয়াবলী জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামী মাদানীর পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। দ্বীন ও দুনিয়ার অগণিত কল্যাণ অর্জিত হবে। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকতে পরিপূর্ণ একটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন এবং আন্দোলিত হোন: 


     

(৪১) মস্তিস্কের টিওমর অদৃশ্য হয়ে গেল 

    

মহারাষ্ট্র ভারতের চান্দরপূর জেলার বালবাহারের এক ইসলামী ভাই দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে নিজের সম্পৃক্ততার ঘটনা অনেকটা এরকম বর্ণনা করেছেন। সাত বছর বয়সে পাথরের আঘাতে আমার বাম চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। চিকিৎসা করাতে অনেকটা ভাল হল, তবে চোখের জ্যোতি কমে গেল। এ থেকে দৃষ্টান্তমূলক উপদেশ গ্রহণ করার পরিবর্তে আরো উদাসীনতার স্বীকার হয়ে আমি নাচ-গানের অনুষ্ঠানের স্বাদভোগকারী হয়ে গেলাম। নাইট ক্লাবের চোখ বন্ধ হয়ে আসা আলোক রশ্মিতে আমার ঐ চোখে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হল। চেক আপ করানোতে জানতে পারলাম, মাথায় টিউমার (BRAIN TUMER)হয়েছে। বড় বড় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা করেছি, কোন দূরের কথা,“যতই চিকিৎসা করি, ততই রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে”। এর কারণে ঘাড়ও বাঁকা হয়ে গেল এবং খাবার খাওয়াও মুশকিল হয়ে গেল! আমার কষ্টের কারণে পরিবার-পরিজনেরাও সীমাহীন পেরেশান ছিলেন। এ সময় দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসুলদের এক মাদানী কাফেলা আমাদের গ্রামে আসল।তাঁরা নেকীর দাওয়াত দিয়ে, ঘরের সবাইকে বয়ানে অংশ নেয়ার জন্য দাওয়াত দিলেন, কিন্তু আমি পেরেশনারীর কথা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। মহল্লার মসজিদ থেকে মুবাল্লিগের বয়ানের আওয়াজ আমাদের ঘরেও শুনা যাচ্ছিল। ঐ বয়ান শুনে আমাদের ঘরের সবাই সীমাহীন প্রভাবিত হলেন এবং “দুরুগ” এ অনুষ্ঠিতব্য সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। ঐ ইজতিমায় সুন্নাতে ভরা বয়ানের পর ভাবাবেগপূর্ণ দোয়া হল। যখন ইজতিমা থেকে ফেরার সময় আমি C.T. Scan  করিয়েছি তখন এটা দেখে ডাক্তার অবাক হলেন, পূর্বের সবকটি রিপোর্টে ব্র্যান টিওমর বিদ্যমান ছিল কিন্তু এবারকার C.T. Scan-এ টিওমার অনুপস্থিত! এ আশ্চর্যজনক ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে আমার পরিবার-পরিজনেরা আমার মাথায় ইমামা শরীফের তাজ সাজিয়ে দিলেন।


        আতায়ে হাবীবে খোদা মাদানী মাহল, 

        হে ফয়যানে গউছো রযা মাদানী মাহল। 

        আয় বীমারে ইছইয়া তু আ-যা ইহা পর, 

        গুনাহো কি দে-গা দাওয়া মাদানী মাহল। 

        সানওয়ার যায়েগি আ-খিরাত اِنۡشَآءَ اللهِ 

        তুম আপনায়ে রাখ্খো ছদা মাদানী মাহল। 


        

(৪২) মনের কথা জেনে গেলেন 

      

হুযুর দাতা গঞ্জ বখ্শ হযরত সায়্যিদুনা আলী হাজবেরী (رحمة الله) বলেন: আমরা তিন বন্ধু হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইবনে আ’লা (رحمة الله) যিয়ারত করার জন্য “রামলা” নামক গ্রামের দিকে চলছি। রাস্তায় এটা ঠিক করলাম, আমাদের প্রত্যেকে কোন না কোন আশা নিজের মনে রেখে নিই। আমি এ আশা মনে রাখলাম, আমার হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইবনে আলী (رحمة الله) এর কাছ থেকে হুসাইন বিন মনছুর হাল্লাজ (رحمة الله) মুনাজাত ও কবিতা প্রয়োজন। অন্যজন এ আশা নির্ধারণ করল, আমি যেন প্লীহা রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করি। তৃতীয়জন বলল: আমার ইচ্ছা বর্ফী খাওয়া। যখন আমরা তার সামনে হাযির হলাম তখন তিনি হযরত সায়্যিদুনা হুসাইন বিন মানসুর হাল্লাজ (رحمة الله) এর কবিতা ও মুনাজাত লিখিয়ে আমার জন্য তৈরী করে রাখলেন,তা আমাকে প্রদান করলেন। অন্য দরবেশের পেটের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, তাঁর প্লীহার কষ্ট দূরীভূত হয়ে গেল। তৃতীয়জনকে বললেন: বর্ফীহল রাজ দরবারের খাবার কিন্তু আপনি সূফীদের পোষাক পরে আছেন! দুটো থেকে একটি অবলম্বন করুন। (অর্থাৎ বর্ফী খেলে সুফী পোষাক বাদ দিন, আর না হয় বর্ফী খাওয়ার আশা বাদ দিন।(কাশফুল মাহজুব, ৩৮৪ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


(৪৩) হুসাইন বিন মনছুর কিانا الحق বলেছিলেন? 

   

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আল্লাহ্ তাআলার দানক্রমে ওলীরা মানুষের মনের অবস্থা জেনে নেন। তাইতো হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইবনে আলা (رحمة الله)জিজ্ঞাসা করা ব্যতীত হুযুর দাতা গঞ্জ বখশ হযরত সায়্যিদুনা আলী হাজবেরী (رحمة الله) তাঁর বন্ধুদের বাসনা পূরণ করে তৃতীয়জনকে সংশোধনের মাদানী ফুল প্রদান করলেন। এ ঘটনায় হযরত সায়্যিদুনা হুসাইন বিন মনছুর হাল্লাজ (رحمة الله) এর শুভ আলোচনা বিদ্যমান। তাঁর ব্যাপারে প্রসিদ্ধি রয়েছে, তিনি আনাল হক্ব অর্থাৎ-আমি হক (খোদা)” বলেছিলেন। এ ভুল ধারণাকে খন্ডন করে আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) বলেন: “হযরত সায়্যিদুনা হুসাইন বিন মানসূর হাল্লাজ (رحمة الله) যাঁকে সাধারণ মানুষ “মানসূর” বলে থাকে, মানসূর হল তাঁর পিতার নাম আর তাঁর পবিত্র নাম হল হুসাইন। তিনি তাঁর যুগের যুগশ্রেষ্ঠ ওলীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁর এক বোন বেলায়ত ও মারিফাতের মর্যাদায় তাঁর চেয়ে অতি উচ্চ স্তরে ছিলেন।তিনি শেষ রাতে জঙ্গলে চলে যেতেন এবং আল্লাহ্ তাআলার স্মরণে বিভোর হয়ে যেতেন। একদিন তাঁর ঘুম ভাঙ্গলে বোনকে না পেয়ে ঘরের সবখানে খোঁজ করলেন।খোঁজ করে না পেয়ে তাঁর মনে কুমন্ত্রণা আসল। পরবর্তী রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমের ভান করে জেগে রইলেন।তাঁর বোন নিজের সময়মত উঠে জঙ্গলের দিকে চলতে লাগলেন, তিনিও আস্তে আস্তে পিছু নিলেন।দেখতে লাগলেন, আসমান থেকে স্বর্ণের শিকল দিয়ে ইয়াক্বুতের পাত্র অবতীর্ণ হল আর পবিত্র মুখ বরাবর আসল, তিনি পান করতে লাগলেন। তিনি (হুসাইন বিন মনছুর) ধৈর্য ধরতে পারলেন না, জান্নাতের এ নেয়ামত (আমি) পাব না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলে উঠলেন, “বোন! তোমাকে আল্লাহ্ তাআলার শপথ! সামান্য পরিমাণ আমার জন্য রেখো।তার (বোন) এক ঢোক রাখলেন। তিনি তা পান করলেন। তা পান করতেই প্রতিটি লতা-পাতা প্রতিটি জায়গা, প্রতিটি অনু-কণা থেকে তার কানে এ আওয়াজ আসতে লাগল যে, “এটার হকদার অধিক কে, যে আমার পথে জীবন দেবে? তিনি বলতে শুরু করলেন, انا الحق ”অর্থাৎ নিশ্চয় আমি সবচেয়ে বেশি হকদার।” লোকেরা শুনে মনে করল, انا الحق অর্থাৎ-(আমি হক), (লোকেরা) তাঁকে খোদা দাবীদার মনে করল, আর এটা (অর্থাৎ-খোদায়ীত্বের দাবী) হল কুফরী। 


মুসলমান হয়ে যে কুফরী করে, সে মুরতাদ হয়ে যায়, আর মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩০১৭-এ রয়েছে) 


প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে নিজ ধর্ম পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করো।” (ফতোওয়া রযবীয়া, ২৬ খন্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা)


 اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ

দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততা ও মাদানী কাফেলায় সফর আকীদা ও আমল সংশোধনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। যেমন- 



(৪৪) আমি মদ্যপায়ী ও চোর ছিলাম 

 

বোম্বাই (ভারতের) ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা অনেকটা এরকম: খারাপ সংস্পর্শের কারণে অল্প বয়সেই আমার মদ-জুয়ার বদঅভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। হিরা ও স্বর্ণের চোরাচালানে পারদর্শিতার কারণে এ ময়দানে “কিং” হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলাম। আমার ঘরের কাছে দা’ওয়াতে ইসলামীওয়ালারা প্রত্যেক জুমাতে একত্রিত হয়ে দরস ও বয়ান করতেন।আমার মা আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য বলতেন, কিন্তু আমিশুনতাম না। অবশেষে মায়ের ইন্ফিরাদী কৌশিশের বরকতে একবার অংশগ্রহণ করলাম।মুবাল্লিগের বয়ান করার ধরণ আমার কাছে ভাল লাগল কিন্তু কিছু বুঝতে পারলাম না। শেষে ইন্ফিরাদী কৌশিশ করে মুবাল্লিগ আমাকে বোম্বাই গুওয়ান্ডী এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দাওয়াত দিলেন। আমি যাওয়ার অঙ্গীকার করলাম।ইজতিমার রাতে বন্ধুদের সাথে শরাবখানায় গেলাম কিন্তু আজকে মন কিছুটা অস্থির ছিল। সবাই মদ আনতে বলল কিন্তু আমি ঠান্ডা পানীয়ের অর্ডার দিলাম। এতে বন্ধুরা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে দেখল। আমি বললাম: “আমাকে একজন লোক ইজতিমার দাওয়াত দিয়েছেন, আমি সেখানে বয়ান শুনতে যাব। একথা শুনতেই বন্ধুরা হাসতে লাগল আর বলল: “দোস্ত! এটা কি মুহাররম মাস!ওয়াজতো মুহাররমে হয়ে থাকে। তোমার সাথে হয়তো কেউ ঠাট্টা করেছে।” আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম যে, সত্যিই ওয়াজতো মুহাররম শরীফে হয় কিন্তু তারপরও আমি মন স্থির করে এটা বলতে বলতে উঠলাম, যদি ওয়াইয না হয় তবে ফিরে আসবো। বাইরে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে সোজা ইজতিমা স্থলে পৌঁছে গেলাম। সেখানে ভাবাবেগপূর্ণ দোয়া আমাকে খুব কাঁদাল। কেঁদে কেঁদে আমি আমার গুনাহ থেকে তাওবা করলাম। ইজতিমা শেষ হওয়ার পর মুবাল্লিগ আমাকে ইন্ফিরাদী কৌশিশ করে মাদানী কাফেলায় সফরের দাওয়াত দিলেন।اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ আশিকানে রাসুলদের সাথে মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম।সেখানে আমি দাঁড়ি শরীফ ও ইমামা শরীফের নিয়্যত করলাম। জুয়াড়ী ও শরাবী বন্ধুদের পিছু ছাড়লাম এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ গ্রহণ করলাম।আমার “ওয়াত” নামক একটি অস্থিরকারী রোগ ছিল যেটার কারণে এমন লাগত, যেন চোখে কঙ্করের কণা পড়েছে। ডাক্তারও এর চিকিৎসা থেকে অপারগ ছিলেন। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকতে আমি এ কষ্টদায়ক রোগ থেকেও মুক্তি পায়।


    ছোড়দে নাওশিয়া, মত বককো গা-লিয়া,

    আ-ও তাওবা করে কাফিলে মে চলো। 

    আয় শারাবী তু আ-, আ- জুয়ারী তু আ, 

    ছুটে বদ আ-দতে কাফিলে মে চলো। 

    

         

কাফেলার দাওয়াত দিতে থাকুন 

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! দা’ওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগের সুন্নাতে ভরা বয়ান ও ইন্ফিরাদী কৌশিশের ফলে জুয়াড়ী ও মদ্যপায়ী তাওবা করল ও মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেল। আপনারাও সবাইকে মাদানী কাফেলায় সফরের দাওয়াত দিতে থাকুন। এ ঘটনায় আপনারা একজন মদ্যপায়ীর আলোচনা শুনেছেন। আফসোস শত কোটি আফসোস! আজকাল মুসলমানদের একটি অংশ মদপান করার দুর্ভাগ্যে জড়িত। সুতরাং মদ্যপান সম্পর্কে আমি কিছু আরয করছি। 


              

এক ঢোক মদের শাস্তি 

      

নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ আমাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত ও হিদায়াত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আমাকে এজন্য প্রেরণ করেছেন, আমি যেন গান- বাজনার সরঞ্জাম ও অন্ধকার যুগের কাজগুলো নিশ্চিহ্ন করে ফেলি। আমার পরওয়ারদিগার আপন ইয্যতের কসম করে দিয়ে ইরশাদ করেছেন: “আমার যে বান্দা এক ঢোকও মদ পান করবে, আমি তাকে সেটার অনুরূপ জাহান্নামের ফুটন্ত পানি পান করাব আর আমার যে বান্দা আমার ভয়ে মদ পান পরিহার করবে, আমি তাকে জান্নাতে উত্তম সাথীর সাথে (পবিত্র শরাব) পান করাব।” (আল মুআজমুল কাবীর লিত তাবরানী, ৮ম খন্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৮০৩, ৭৮০৪) 


            

কলেমা নসীব হয়নি 

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মদ্যপায়ী ও তাস খেলোয়াড় ইত্যাদির মৃত্যুর সময় কলেমা নসীব না হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দুইটি ঘটনা শুনুন:


(৪৫) হযরত আল্লামা মুহাম্মদ বিন আহমদ যাহবী (رحمة الله) বলেন: এক ব্যক্তি মদ্যপায়ীদের সংস্পর্শে বসত, যখন তার মৃত্যুর সময় সন্নিকট হল, তখন কেউ তাকে কলেমা শরীফ শিক্ষা দিলে সে বলল: “তুমিও পান করো, আমাকেও পান করাও। কলেমা না পড়ে মরে গেল। (যদি মদ পানকারীদের সংস্পর্শের এ অবস্থা হয়, তাহলে মদ পান করার কি শাস্তি হবে!) 


 (৪৬) এক তাস খেলোয়াড়কে মৃত্যুর সময় কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হলে, সে বলতে লাগল, “শা-হাকা” (অর্থাৎ- তোমার বাদশাহ) এ কথা বলার পর তার প্রাণ বের হয়ে গেল। (কিতাবুল কাবায়ির, ১০৩ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)


        

চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে মদের ক্ষতি 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ইসলাম যে মদ্যপানকে হারাম সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে অগণিত হিকমত রয়েছে। আজ কাফিরেরাও এটার ক্ষতির ব্যাপারটি মেনে নিয়েছে।যেমন- এক অমুসলিম বিশেষজ্ঞের অভিমত অনুযায়ী প্রথম প্রথম মানুষের শরীর মদের ক্ষতিগুলোর মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় এবং মদ্যপায়ী মনের আনন্দ উপভোগ করে কিন্তু শীঘ্রই শরীরের অভ্যন্তরীণ সহ্য ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায় আর চিরস্থায়ী বিষাক্ত আলামতগুলো দেখা দিতে থাকে। মদের সবচেয়ে অধিক প্রভাব কলিজার উপর পড়ে ও তা সংকোচিত হতে থাকে। হৃদপিণ্ডের উপর অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, যা শেষ পর্যন্ত দূর্বল হওয়ার পরিণতিতে অকেজো (FAIL) হয়ে পড়ে। এছাড়াও আক্রমণের মদ পান করাতে মস্তিস্ককে সংকোচিত করে দেয়। শিরাতে জ্বালা-পোঁড়া বা সংকোচিত হওয়ার ফলে শিরাতন্ত্রী দূর্বল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। মদ্যপায়ীর পাকস্থলী ফোলে যায়, হাড়গুলো নরম ও খুবই দূর্বল হয়ে যায়। মদ শরীরের ভিটামিনের ভান্ডারগুলো নষ্ট করে ফেলে।বিশেষতঃ ভিটামিন সি ও বি সেটার আক্রমনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। মদের সাথে সাথে যদিধূমপানও করা হয়, তবে এটার ক্ষতিকারক প্রভাব আরো বেশি গুণে বৃদ্ধি পায় আর উচ্চ রক্তচাপ, ষ্ট্রোক ও হার্ট এ্যাটাকের প্রচন্ড ভয় থাকে।অত্যাধিক মদপানকারী ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ও প্রচন্ড পিপাসায় আক্রান্ত থাকে। প্রচুর পরিমাণে মদপান করাতে হার্ট ও শ্বাস গ্রহণের কার্যকারীতা থেমে যায় এবং মদ্যপায়ী দ্রুত মৃত্যু মুখে পতিত হয়। 


        গর আয়ে শারাবী মিঠে হার খারাবী, 

        ছুড়ায়েগা এইছা নাশা মাদানী মাহল। 

        আগর চোর-ডাকু ভী আযা-য়েগে তু, 

        ছুধর যায়েগে গার মিলা মাদানী মাহল। 

        নামাযী জু পড়তে নেহী হে উনকো লা-রাইব্, 

        নামাযী হে দে-তা বানা মাদানী মাহল। 


(৪৭) অন্ধ মদ্যপায়ী 

     

আমার (অর্থাৎ- সগে মদীনা عُفِىَ عَنهُ) খুব ভালভাবে স্মরণ আছে যে, এক লম্পট প্রকৃতির সুঠামদেহী যুবক, জুড়িয়াবাজারে (বাবুল মদীনা,করাচী) কুলির কাজ করত। সে খুব স্বাস্থ্যবান ও চতুরতার কারণে যথেষ্ট পরিচিত ছিল। এমন সময় আসল যখন সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর অত্যন্ত মনমরা হয়ে ভিক্ষা করত। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সে মদ্যপায়ী ছিল এবং একবার কম দামী মদ পান করার কারণে তার আলো অন্ধ হয়ে  গেছে। 


        করলে তাওবা আওর তু মত পী শারাব, 

        হো-গে ওয়ার না দো’জাহা তেরে খারাব। 

        জু জুয়া খেলে, পিয়ে না-দা শারাব, 

        কবর ও হাশর ও নার মে পায়ে আযাব। 

        নামাযে জু পড়তে নেহী উন কো লা রায়েব,

        নামাযী হে দেতা বানা মাদানী মাহল। 



(৪৮) কাপড় নিজে নিজে প্রস্তুত হতে লাগল 

       

হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ নাহরওয়ানী (رحمة الله) হযরত-সায়্যিদুনা কাজী হামীদুদ্দীন নাগূরী (رحمة الله) এর মুরীদ ছিলেন। খুবই মর্যাদাপূর্ণ ও কাশফের অধিকারী বুযুর্গ ছিলেন।হযরত সায়্যিদুনা শায়খ বাহাউদ্দিন যাকারিয়া মুলতানী (رحمة الله) খুবই কম লোকদের পছন্দ করতেন কিন্তু হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ নাহরওয়ানী (رحمة الله) এর ব্যাপারে বলতেন, শায়খ আহমদ নাহরওয়ালী (رحمة الله) এর সাথে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার বিষয়টি যদি ওজন দেয়া হয় তাহলে দশজন সুফীর ব্যস্ত থাকার সমান হবে। তাঁর (رحمة الله) পশা ছিল কাপড় তৈরী করা। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ নাসীরুদ্দীন মাহমুদ (رحمة الله) বলেন: ঘরে কাপড় তৈরীর সময় কখনো কখনো শায়খ আহমদ নাহারওয়ানী (رحمة الله) এর মধ্যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হত, তিনি আত্মহারা হয়ে বের হয়ে যেতেন কিন্তু কাপড় নিজে নিজে প্রস্তুত হতে থাকত। একদিন তাঁর পীর ও মুর্শিদ হযরত সায়্যিদুনা কাজী হামীদুদ্দিন নাগূরী (رحمة الله) তার সাক্ষাতে এলেন। ফিরে যাওয়ার সময় তাঁর মুর্শিদ বললেন: “হে আহমদ! আর কতদিন এ কাজ করতে থাকবে?” এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন। শায়খ আহমদ নাহাওয়ানী (رحمة الله) তখনই (চরকার) পেরেক ঘষার জন্য উঠলেন, হঠাৎ তাঁর মোবারক হাত চরকার সাথে ফেঁসে গিয়ে ভেঙ্গে গেল। এ ঘটনার পর শায়খ আহমদ নাহারওয়ানী (رحمة الله) কাপড় তৈরীর পেশা সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করলেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেলেন। তাঁর (رحمة الله) মাযার শরীফ বাদায়ুন শরীফ, ভারতে রয়েছে। (মাকতুবাত সম্বলিত আখবারুল আখইয়ার, ৪৭ পৃষ্ঠা) 

     

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


            

(৪৯) তরমুজ বিক্রেতা 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ওলামা ও আল্লাহর ওলি মুসলমানের যে কোন গোত্র ও সকল পেশায় নিয়োজিতদের মধ্য থেকে হতে পারে এবং কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে। আল্লাহর অনুগ্রহ কোন বংশ ও কোন গোত্রের সাথেই নির্দিষ্ট নয়। আল্লাহ্ যাকে চান, আপন রহমত দান করেন।

সমগ্র পৃথিবীতে অসংখ্য ওলী সর্বদা বিদ্যমান থাকেন আর তাঁদেরই বরকতে দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খলভাবে চলে।যেমন হযরত সায়্যিদুনা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) কে কোন ব্যক্তি অভিযোগ করলেন, “হুযুর! আজকাল দিল্লীর ব্যবস্থাপনা “খুবই দূর্বল” হওয়ার কারণ কি? বললেন: “আজকাল এখানের সাহিবে খিদমত (অর্থাৎ-দিল্লীর আবদাল) দূর্বল।জিজ্ঞাসা করলেন: “কোন সাহেব?” বললেন: “অমুক ফল বিক্রেতা, যিনি অমুক বাজারে তরমুজ বিক্রি করেন।” প্রশ্নকারী ব্যক্তি তাঁর নিকট গেলেন এবং তরমুজ কেটে কেটে ও পরীক্ষা করে করে সবগুলো পছন্দ হয় না বলে নষ্ট করে ঝুড়িতে রেখে দিলেন। এরূপ লোকসান কারীকেও তিনি (আবদাল) কিছু বললেন না। কিছুদিন পরে দেখা গেল, ব্যবস্থাপনা একেবারে ঠিক চলছে আর অবস্থাও পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন ঐ ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন: “দায়িত্বে কে আছেন?” শাহ সাহেব বললেন: “এক শরবত বিক্রেতা, যিনি চান্দানী চৌরাস্তায় পানি পান করায় তবে এক গাসের মূল্য এক চাদাম (তখনকার সময় চাদাম সবচেয়ে ছোট পয়সা ছিল অর্থাৎ-এক পয়সার এক চতুর্থাংশ) নেন। ইনি এক চাদাম নিয়ে গেলেন আর তাঁকে দিয়ে তাঁর কাছে পানি চাইলেন। তিনি পানি দিলে তিনি (যে কোন বাহানা করে) পানি ফেলে দিলেন এবং আরেক গ্লাস চাইলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “চাদাম আর আছে?” বললেন: “নেই।” তিনি একটি থাপ্পড় মারলেন আর বললেন: “আমাকে কি তরমুজ বিক্রেতা মনে করেছ?” (সাচ্চী হিকায়াত, ৩য় খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে জামে নূর, দিল্লী)

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


                

রূহানী শাসক 

       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ ওয়ালাগণ রূহানী শাসক আর এটাও জানা গেল, আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় গায়েবের (অদৃশ্য) বিষয় এসব আল্লাহ্ ওয়ালাদের জ্ঞানের মধ্যে থাকে। প্রত্যেক ওলীর বেলায়তের প্রসিদ্ধি ও চারিদিকে ধূমধাম ছড়ানো জরুরী নয়।এ সকল হযরত সমাজের প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান থাকেন।কখনো কুলি বেশে, কখনো সবজী ও ফল বিক্রেতা আকৃতিতে, কখনো ব্যবসায়ী অথবা কর্মচারী রূপে, কখনো পাহারাদার কিংবা রাজমিস্ত্রী বেশে বড় বড় ওলি থাকেন। প্রত্যেকে তাঁদেরকে সনাক্ত করতে পারেন না। তাই কোন মুসলমানকেই নিকৃষ্ট মনে করা আমাদের উচিত নয়। কিছু আউলিয়ায়ে কিরাম নির্দিষ্টভাবে “রূহানী শৃংখলার” সাথে জড়িত থাকেন। যেমন-


           

৩৫৬ জন আউলিয়ায়ে কিরাম 

       

হযরত সায়্যিদুনা ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “পৃথিবীতে আল্লাহ্ তাআলার ৩০০ জন বান্দা এমন আছেন, তাঁদের অন্তর হযরত সায়্যিদুনা আদম সাফিয়্যুল্লাহ (عليه السلام) এর পবিত্র অন্তরের উপর রয়েছে। আর ৪০ জনের অন্তর হযরত সায়্যিদুনা মূসা কালীমুল্লাহ্ (عليه السلام) এর পবিত্র অন্তরের উপর রয়েছে, আর ৭ জনের অন্তর হযরত সায়্যিদুনা ٰইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (عليه السلام) এর পবিত্র অন্তরের উপর রয়েছে আর ৫ জনের অন্তর হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল (عليه السلام) এর অতিশয় পবিত্র অন্তরের উপর রয়েছে, আর ৩ জনের অন্তর হযরত সায়্যিদুনা মীকাঈল (عليه السلام) এর পবিত্র অন্তরের উপর রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন এমন রয়েছেন, যাঁর অন্তর হযরতে সায়্যিদুনা ইস্রাফীল (عليه السلام) এর পবিত্রতম অন্তরের উপর রয়েছে। যখন তাঁদের মধ্য থেকে “১ জন” ইন্তিকাল করেন তখন আল্লাহ্ তাআলা তাঁর স্থলে “৩ জন” থেকে একজনকে নির্ধারণ করেন আর “৩ জন” থেকে কোন এক জনের ইন্তেকাল হলে তখন আল্লাহ্ তাআলা তাঁর স্থলে “৫ জন” থেকে “১ জন”কে আর যদি “৫ জন” থেকে কোন একজন ইন্তিকাল করেন তবে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর স্থলে “৪০ জন” থেকে একজনকে আর এ “৪০ জন” থেকে কোন একজন ইন্তিকাল করেন,তাহলে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর স্থলে “৩০০ জন” থেকে একজনকে আর যদি “৩০০ জন” থেকে কোন একজন ইন্তিকাল করেন, তবে আল্লাহ্ তাআলা তাঁর স্থলে সাধারণ লোকদের মধ্য হতে যে কাউকে নির্ধারণ করেন। তাঁদের উসিলায় জীবন ও মৃত্যু লাভ হয়, বৃষ্টি বর্ষিত হয়, ফসল উৎপন্ন হয় এবং বিপদাপদ দূরীভূত হয়।” হযরত সায়্যিদুনা ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করা হল, “তাঁদের উসিলায় কিভাবে জীবন ও মৃত্যু লাভ হয়?” বললেন: “তাঁরা আল্লাহ্ তাআলার নিকট উম্মতের আধিক্য চাইলে, তখন উম্মত অধিক হয়ে যায়, আর অত্যাচারীদের জন্য বদ দোয়া করলে তাদের শক্তি নষ্ট করে দেয়া হয়। তাঁরা দোয়া করলে বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়, জমিন মানুষের জন্য ফসল উৎপন্ন করে, মানুষের বিভিন্ন ধরণের বিপদাপদ দূর করে দেয়া হয়।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪০, হাদীস নং-১৬)

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


                  

আবদাল 


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী হাকীম তিরমিযী (رحمة الله)বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আবূ দারদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় আম্বিয়াعَلَیۡہِمُ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم জমিনের আওতাদ ছিলেন। যখন রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) থেকে এক সম্প্রদায়কে তাঁদের স্থলাভিষিক্ত করলেন, যাঁদেরকে আবদাল বলা হয়। তাঁরা (শুধুমাত্র) রোযা ও নামায, তাসবীহ ও তাকদীসে আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে উত্তম হননি বরং নিজেদের উত্তম চরিত্র, পরহেযগারী ও তাকওয়ার সত্যতা, ভাল নিয়্যত,সকলমুসলমানের চেয়ে নিজের বুকের নিরাপত্তা, আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নম্রতা, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তা, দূর্বলতা ব্যতীত বিনয় ও সকল মুসলমানদের কল্যাণকামী হওয়ার কারণে উত্তম হয়ে থাকেন। সুতরাং তাঁরা আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم এর স্থলাভিষিক্ত। তাঁরা এমন সম্প্রদায়, তাঁদেরকে আল্লাহ্ তাআলা নিজের পবিত্র সত্ত্বার জন্য নির্বাচন, নিজের জ্ঞান ও সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছেন। তারা ৪০ জন সিদ্দীক রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৩০ জন আল্লাহ্ তাআলার খলীল হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম (عليه السلام) এর বিশ্বাসের মত। তাঁদের ওয়াসীলায় পৃথিবীবাসীর উপর থেকে বিপদাপদ ও মুসিবত দূরীভূত হয়, তাঁদের ওয়াসীলাতেই বৃষ্টি হয় ও রিযিক প্রদান করা হয়, তাঁদের মধ্য থেকে কেউ তখনই ইন্তিকাল করেন, যখন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলা কাউকে আদেশ দিয়ে দেন। তাঁরা কাউকে অভিশাপ দেন না। নিজের অধীনস্তদেরকে কষ্ট দেননা, তাঁদের উপর হাত উঠান না, কারো নিকৃষ্ট মনে করেন না, নিজের উপর মর্যাদাবানদের কে হিংসা করেন না, দুনিয়ার লোভ করেন না, অহংকার করেন না এবং লোক দেখানো বিনয়ও করেন না। তাঁরা কথা বলার মধ্যে সকল মানুষের চেয়ে উত্তম ও নফসের দিক দিয়ে অধিক পরহেযগার।দানশীলতা তাঁদের সত্ত্বায় অন্তর্ভুক্ত। পূর্ববর্তী বুযুর্গরা যেসব (অপ্রয়োজনীয়) বিষয়াবলী ত্যাগ করেছেন, সেসব থেকে নিরাপদ থাকা তাঁদের একটি গুণ। তাঁদের এগুণটি পৃথক হয় না, আজকে আশংকা অবস্থায় ও কালকে উদাসীনতায় পতিত হয়না বরং তাঁরা আপন অবস্থায় সার্বক্ষণিকভাবে অটল থাকেন। তাঁরা নিজের ও নিজ প্রতিপালক এর মধ্যে এক ধরণের বিশেষ সম্পর্ক রাখেন। তাঁদেরকে ধুলোঝড় ও সাহসী ঘোড়া অতিক্রম করতে পারে না। তাঁদের অন্তর আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালবাসায় আসমানের দিকে উঠে যায়। অতঃপর (২৮ নং পারার সূরাতুল মুজাদিলাহের) ২২ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﺣِﺰْﺏُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ۚ ﺃَﻟَﺎ ﺇِﻥَّ ﺣِﺰْﺏَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এটা আল্লাহর দল। শুনছো আল্লাহরই দল সফলকাম।(পারা-২৮, সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-২২)

বর্ণনাকারী বলেন: আমি আরয করলাম: “হে আবু দারদা (رضي الله عنه) যা কিছু আপনি বর্ণনা করেছেন: এর মধ্যে কোন বিষয়টি আমার জন্য ভারী? ”আমি কিভাবে জানতে পারব যে আমি তা পেয়ে গেছি? বললেন: “আপনি সেটার মধ্যবর্তী স্তরে ঐ সময় পৌঁছবেন যখন দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা (অন্তরে) রাখবেন আর দুনিয়ার প্রতি যখন ঘৃণা রাখবেন তখন আখিরাতের প্রতি ভালবাসা নিজের কাছে পাবেন আর আপনি যতটুকু দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হবেন ততটুকুই আখিরাতের প্রতি আপনার ভালবাসা হবে আর যতটুকু আপনি আখিরাতকে ভালবাসবেন ততটুকু নিজের লাভ ক্ষতিকারী বস্তুগুলোকে দেখতে পাবেন। (আরো বললেন) যে বান্দার সত্যিকারের সন্ধান আল্লাহ্ তাআলার প্রতি থাকে, তাকে কথা ও কাজের যথার্থতা দান করে দেন আর নিজের নিরাপত্তায় নিয়ে নেন। এটার সত্যায়ন আল্লাহ্ তাআলার কিতাব (কুরআনে মজীদ) এ রয়েছে। 


অতঃপর (১৪ নং পারার সূরাতুল নাহলের) ১২৮ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন: 

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺗَّﻘَﻮْﺍ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻣُﺤْﺴِﻨُﻮﻥَ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁদের সাথে আছেন, যারা ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম করে। (পারা-১৪, সূরা-নাহল, আয়াত-১২৮)


(আরো বলেন): যখন আমরা এতে (কুরআনে মজীদে) দেখলাম,তখন এটা জানতে পারলাম, আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ভালবাসা ও তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেয়ে অধিক স্বাদ অন্য কোন কিছুতে অর্জন হয় না। (নাওয়াদিরুল উসূল লিহাকীমিত তিরমিযী, ১৬৮ পৃষ্ঠা) 

 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


        না পূছ উন খিরকা পূশো কি 

        আকীদত হে তু দেখ্ উনকো, 

        ইয়াদে বায়দা লিয়ে হে আপনি 

        আপনি আ-স্তিনো মে।


        

(৫০) ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের ফরিয়াদ 


প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী, হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা ইবনুল মুকরী ও হযরত সায়্যিদুনা আবুশ শায়খ رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی এরা তিনজন মদীনায়ে মুনাওয়ারায় ইলমে দ্বীন অর্জন করতেন। এক সময় তাঁদের ক্ষুধার্ত দিন কাটছিল। রোযার পর রোযা রাখতে থাকেন। তবুও যখন প্রচন্ড ক্ষুধায় একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেলেন তখন তাঁরা তিনজন প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর নূরানী রওযায় উপস্থিত হয়ে ফরিয়াদ জানালেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ) “আল জু” আক্বা! ক্ষুধা! এরূপ আরয করে সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী (رحمة الله) তখন আস্তানা মোবারকেই বসে রইলেন আর বললেন: এ দরজায় হয়তো মৃত্যু আসবে, নয়তো রিযিক। এখান থেকে এখন আর উঠবনা। 

           

            মাই উনকে দরপর পড়া রহোগা,

            পড়েহী রেহনে ছে কাম হোগা। 

            নিগাহে রহমত জরুর হোগী, 

            তোআম কা ইনতিযাম হোগা। 

       

হযরত সায়্যিদুনা ইবনুল মুকরী ও হযরত সায়্যিদুনা আবু শায়খ رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی নিজেদের স্থানে চলে আসলেন। কিছুক্ষণ পর কেউ দরজায় আঘাত করলেন। দরজা খুলে দেখতে পেলেন, একজন আলাভী বুযুর্গ দুই জন গোলামসহ খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর বলছেন যে, আপনারা রাসুলে পাক (ﷺ) এর নিকট ক্ষুধার অভিযোগ করেছেন, তাই এ মাত্র স্বপ্নে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) নিজের সাক্ষাৎদানে ধন্য করে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি যেন আপনাদের নিকট খাবার পৌঁছে দেই। সুতরাং যা কিছু সুযোগমত আমারপক্ষে সম্ভব হয়েছে, তা নিয়ে এসেছি, আপনারা সাদরে গ্রহণ করুন। (তাযকিরাতুল হুফ্ফায়, ৩য় খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।


    হার তারাপ মদীনে মে ভীড় হে ফকীরো কি, 

    এক দে-নে ওয়ালা হে কুল জাহা সুআলী হায়। 


        

নবী করিম (ﷺ) এর দরবারে ফরিয়াদ শোনা হয় 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی জ্ঞানার্জনের জন্য কিরূপ কষ্ট সহ্য করতেন। ক্ষুধার পর ক্ষুধায় থেকে তাঁরা দ্বীনি জ্ঞানার্জন করেছেন। সীমাহীন কষ্ট ও প্রচুর ঘাম ঝরিয়ে রচনাবলী ও সংকলন সমূহের সুগন্ধিময় মাদানী পুস্পধারা তৈরী করে আমাদের জন্য এগিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু আফসোস! এখন অধিকাংশ মুসলমান তাঁদের দিকে একেবারেও খেয়াল করে ননা। এসব বুযুর্গদের আখিরাতের পুঁজি অন্বেষণের খেয়াল ছিল, আর আজকের মুসলমানদের অধিকাংশের শুধুমাত্র দুনিয়ার সম্পদ উপার্জনের প্রতি সর্বদা আকর্ষণ রয়েছে। এ ঘটনা থেকে এটাও জানা গেল, আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی এর উপর যখন কঠিন সময় আসত তখন অত্যন্ত একাগ্রচিত্তে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর দরবারে প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার জন্য ফরিয়াদ করতেন। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) এর দরবারে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বের হওয়া আহ্বান অবশ্যই শুনা হয়। আমার আক্বা, আ’লা হযরত, আশিকে মাহে রিসালাত, মাওলানা শাহ্ আহমদ রযা খান (رحمة الله) হাদায়িকে বখশিশ শরীফে বলেন: 


    ওয়াল্লাহ উও সুন্লে গে ফরইয়াদ কো পৌঁছে গে, 

    ইতনা ভী তু হো কোয়ি জু “আহ্” করে দিল ছে


     اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ

আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এর দরবারে ফরিয়াদ তৎক্ষণাৎ শুনা হয়েছে আর শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন পূরণ করলেন এবং নিজের ক্ষুধার্ত আশিকদের জন্য খাবার পাঠিয়ে দিলেন।


    দরে রাসুল ছে আয় রায কিয়া নেহী মিলতা? 

    কোয়ি পলটকে না খালি গিয়া মদীনে মে।


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দ্বীনি জ্ঞানার্জনের একটি মাধ্যম দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সফর করা। এতে জ্ঞানার্জন হওয়ার সাথে সাথে অনেক সময় দুনিয়াবী কষ্ট সমূহও দূর হয়ে যায়। যেমন- 


        

(৫১) হেপাটাইটিস থেকে মুক্তিলাভ 


এক ব্যক্তি হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শায়িত ছিলেন। হাঁটা-চলাও করতে পারতেন না।ডাক্তারেরা চিকিৎসা অসম্ভব বলে দিয়েছেন। তাঁর ছেলে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য আশিকানে রাসুলদের সাথে সফর করলেন আর সফরের সময় খুবই কেঁদে কেঁদে তার পিতার সুস্থতার জন্য দোয়া করলেন। যখন মাদানী কাফেলার সফর থেকে ফিরে এলেন তখন তার খুশীর সীমা রইল না, তার পিতা সুস্থতার দিকে যাচ্ছিলেন এবং ভালভাবে হাঁটা চলা করছিলেন। 


        বাপ বীমার হো, সখ্ত বে-যার হো, 

        পায়ে গা ছিহ্যতে, কাফিলে মে চলো। 

        ওয়াহো বাবে করম, দূরহো সা-রে গম, 

        পিরছে খুশিয়া মিলে, কাফিলে মে চলো। 


        

(৫২) অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন রুটিওয়ালা 

      

হযরত সায়্যিদুনা সাহল বিন আবদুল্লাহ তুসতারী (رحمة الله) এক সময় বললেন: বসরার অমুক রুটিওয়ালা হলেন ওলী। এ কথা শুনে তাঁর (رحمة الله) এক মুরীদ ঐ রুটিওয়ালার সাথে দীদার করার আশায় বসরা গেলেন এবং খুঁজতে খুঁজতে ঐ রুটিওয়ালার সামনে উপস্থিত হলেন। তিনি ঐ সময় রুটি তৈরী করছিলেন।(আগের যুগে প্রায় সকল মুসলমান দাঁড়ি রাখতেন,সুতরাং ঐ যুগের রুটিওয়ালাদের নিয়মানুসারে) দাঁড়ি জ্বলে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য তিনি মুখের নিম্নাংশে কাপড় রেখেছিলেন। ঐ মুরীদ মনে মনে বললেন: “যদি ইনি ওলী হতেন তবে কাপড় না পড়লেও তার দাঁড়ি জ্বলত না। এরপর তিনি রুটিওয়ালাকে সালাম করে কথা বলতে চাইলে ঐ অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন রুটিওয়ালা সালামের উত্তর দিয়ে বললেন: “তুমি আমাকে নিকৃষ্ট মনে করেছ, তাই আমার কথা থেকে লাভবান হতে পারবে না।” এ কথা বলার পর তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালেন। (আর রিসালাতুল কুশাইরিয়া, ৩৬৩ পৃষ্ঠা) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


            

(৫৩) গোপন ওলী 

     

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, ওলী হওয়ার জন্য প্রচার ও বিজ্ঞাপন, আড়ম্বপূর্ণ জুব্বা ও পাগড়ী আর ভক্তদের দীর্ঘ লাইন হওয়াজরুরী নয়। আল্লাহ্ যাকে চান তাকে তা দান করেন। আল্লাহ্ নিজের ওলীগণ رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی কে বান্দাদের মাঝে গোপন রাখেন। সুতরাং আমাদের উচিত সকল নেককার মানুষকে সম্মান করস। আমরা কি জানি কে গোপন ওলী। একবার আমি عُفِىَ عَنهُ সগে মদীনা দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশিকানের রাসুলের সাথে সফররত ছিলাম। আমাদের বগিতে একটি হালকা-পাতলা দাঁড়ি গোঁফহীন ও অনাকর্ষণীয় ছেলে সাধারণ পোষাক পরিহিতাবস্থায় সবার থেকে আলাদা বিভোর অবস্থায় বসা ছিল। কোন এক ষ্টেশনে ট্রেন থামল। শুধুমাত্র দুই মিনিটের বিরতি ছিল। ঐ ছেলেটি প্লাটফর্মে নেমে একটি বেঞ্চে বসে পড়ল। আমরা সবাই আসরের নামাযের জামাআত আদায় করলাম। সবে মাত্র শুধু এক রাকাত হয়েছে, ঐদিকে হরণ বেঁজে উঠল, লোকেরা শোরগোল শুরু করে দিল, গাড়ী চলে যাচ্ছে।

সবাই নামায ভেঙ্গে ট্রেনের দিকে লাফ দিলে ঐ ছেলেটি দাঁড়িয়ে পড়ল আর সে আমাকে ইশারায় বকা দিয়ে নামায পড়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করলেন! আমরা পুনরায় জামাআতে দাঁড়ালাম। আশ্চর্য্যজনকভাবে ট্রেন দাঁড়িয়ে রইল। নামায থেকে অবসর হয়ে যেমাত্র আমরা আরোহণ করলাম ট্রেন চলতে শুরু করল আর ঐ ছেলেটি ঐ বেঞ্চটিতে বসে অন্যমনস্ক হয়ে এদিক-সেদিক দেখছিলেন। এ থেকে আমি অনুমান করলাম, তিনি কোন “মাজযুব” ওলী হবেন, যিনি আমাদেরকে নামায পড়ানোর জন্য নিজের রূহানী শক্তি দ্বারা ট্রেনকে থামিয়ে রেখেছিলেন। 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদেরসদক্বায় আমাদের ক্ষমা হোক। 


     

তিনটি বস্তু, তিনটি বস্তুর মাঝে গোপন 

     

খলীফায়ে আ’লা হযরত ফকীহে আযম, মাওলানা আবু ইউসুফ মুহাম্মদ শরীফ কোটলভী (رحمة الله) উদ্ধৃত করেন: “আল্লাহ্ তাআলা তিনটি বস্তুকে তিনটি বস্তুর মাঝে গোপন রেখেছেন। 

(১) নিজের সন্তুষ্টি নিজের আনুগত্যের মাঝে ও 

(২) নিজের অসন্তুষ্টি অবাধ্যতার মাঝে এবং 

(৩) নিজের ওলীদের আপন বান্দাদের মাঝে গোপন রেখেছেন।” 

সুতরাং প্রতিটি আনুগত্য ও প্রতিটি নেকীর কাজ করা উচিত, জানিনা কোন নেকীতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান আর প্রতিটি অণু থেকে অণু পরিমাণ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা উচিত, কেননা জানা নেই, তিনি কোন গুনাহের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে যান। যেমন- কারো কাঠ দিয়ে খিলাল করা যদিও একটি সামান্য বিষয় অথবা কোন প্রতিবেশীর মাটি দিয়ে তার বিনা অনুমতিতে হাত ধোঁয়া মূলতঃ সামান্য একটি বিষয়, কিন্তু যেহেতু আমাদের জানা নেই, সেহেতু হতে পারে, এ মন্দ কাজে আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি গোপন রয়েছে তাই এ ধরণের ছোট ছোট বিষয়াবলী থেকেও বেঁচে থাকা উচিত। (আখলাকুস সালিহীন, ৫৬ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিজের অন্তরে আউলিয়ায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی এর প্রতি সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য ফয়যানে আওলিয়াতে ভরপুর দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। নিজ শহরে অনুষ্ঠিত দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করুন। এরপর দেখবেন, আপনার মধ্যে কিরূপ মাদানী রংয়ের সমাবেশ ঘটে। উৎসাহ দেয়ার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর একটি “বাহার” উপস্থাপন করছি। 


       

(৫৪) আমার দুশ্চিরিত্র ও বদ-অভ্যাস কিভাবে দূর হল? 

       

বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারমর্ম হচ্ছে, নব যৌবন ও সুস্বাস্থ্য আমাকে অহংকারী করে দিয়েছিল। নিত্য-নতুন আকর্ষণীয় পোষাক সেলানো, কলেজে আসা-যাওয়ার সময় বাসের টিকেটের কথা ভুলিয়ে দেয়া, কন্ট্রাক্টর ভাড়া চাইলে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া, অনেক রাত পর্যন্ত বেপরোয়া অবস্থায় সময় পার করা, জুয়া খেলায় টাকা-পয়সা অপব্যয় করা ইত্যাদিসহ সব ধরণের গুনাহ্ আমার মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল। মা-বাবা বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত হয়ে গেলেন, আমি গুনাহগারের সংশোধনের জন্য দোয়া করতে করতে আম্মীজানের চোখের পানি শুকিয়ে। আমাদের এলাকার এক ইসলামী ভাই কোন কোন সময় স্বাভাবিকভাবে দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দাওয়াত পেশ করতেন। আমি শুনেও যেন না শুনার ভান করতাম।একবার ইজতিমার দিন সন্ধ্যায় ঐ ইসলামী ভাই মুহাব্বতপূর্ণ ভঙ্গিতে একেবারে অনুরোধের সুরে বললেন: আজতো আপনাকে যেতেই হবে। আমি বাহানা করতে থাকি কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা আর দেখতে না দেখতেই রিক্সা থামালেন এবং অত্যন্ত বিনয় সহকারে এরূপ ভঙ্গিতে বসার জন্য আবেদন জানালেন, তখন আর আমি না করতে পারলাম না। আমি বসে পড়লাম আর আমরা দা’ওয়াতে ইসলামীর সর্বপ্রথম মাদানী মারকায গোলজারে হাবীবে জামে মসজিদে পৌঁছলাম। যখন দোয়ার জন্য বাতিগুলি নিভিয়ে দেয়া হল তখন ইজতিমা শেষ হয়ে  গেছে মনে করে আমি উঠে গেলাম। আমি কি জানতাম, আগত সময়ে আমার ভাগ্যে মাদানী পরিবর্তন সাধিত হবে। যা হোক আমার ঐ হিতাকাংখী ইসলামী ভাই মুহাব্বতপূর্ণ ভঙ্গিতে বুঝিয়ে সুজিয়ে আমাকে থামালেন। আমি পুনরায় বসে গেলাম।অন্ধকারে উচ্চ আওয়াজে আল্লাহর যিকিরের শব্দ আমার অন্তরকে নাড়া দিল। খোদার কসম! আমি জীবনে কখনো এরকম রূহানিয়্যত পায়নি! এরপর যখন ভাবাবেগপূর্ণ দোয়া শুরু হল তখন ইজতিমায় অংশগ্রহণকারীদের কান্নার আওয়াজ ধীরে ধীরে গভীর হতে লাগল, এমনকি আমার মত শক্ত মনের মানুষও ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। আমি নিজ গুনাহ থেকে তাওবা করলাম এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। 


        তুমহী লুত্ফ আ-যায়ে গা জিন্দেগী কা,

        করীব আ-কে দে-খো জারা মাদানী মাহল। 

        তানাজ্জুলকে গেহরে ঘড়ে মে থে উনকি, 

        তারাক্কী কা বাইছ বানা মাদানী মাহল। 

        ইয়াকিনান মুকাদ্দার কা উহ হে সিকান্দার, 

        জিসে খইর সে মিল গিয়া মাদানী মাহল।



দা’ওয়াতে ইসলামীর সর্বপ্রথম মাদানী মারকায 

      

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণনাকৃত ঘটনাটি দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রথম সময়ের যখন ১৪০১ হিজরীতে বাবুল মদীনা করাচীতে দা’ওয়াতে ইসলামীর নামে মাদানী কাজের সূচনা করা হয়, সে সময় বাবুল মদীনাতে উপযুক্ত স্থানে কোন বড় মসজিদের ব্যবস্থা ছিল না, যেখানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা করা যেতে পারে। সে সময় সগে মদীনা عُفِىَ عَنهُ উলামা ও মাশায়িখে আহলে সুন্নাতের খিদমতে হাযির হয়ে দা’ওয়াতে ইসলামীর সহযোগীতা করার আবেদন করতাম। কেননা আমার হৃদয়ের আকুতি ছিল আর আমার মাঝে সারাক্ষণ এই চিন্তা ছিল, মুসলমানদের আকীদার সংরক্ষণ, অবস্থা ও আমলের সংশোধনের জন্য বড় পরিসরে মাদানী কাজ করা উচিত। আমার হৃদয়ের ব্যথাকে শব্দের সাঁচে কিছুটা এরূপে ঢালা যায়। আমাকে নিজের ও সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ! যা হোক এ বিষয়ে দা’ওয়াতে ইসলামীকে সহযোগীতা করার জন্য মাদানী আবেদন নিয়ে খতীবে পাকিস্তান, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাফিয আশ শাহ্ মুহাম্মদ শফী উকাড়ভী(رحمة الله)এর ঘরে হাযির হলাম।আমি তাঁর খিদমতে দা’ওয়াতে ইসলামীর ব্যাপারে আরয করলে তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন আর নিজের দস্তখত সহকারে দা’ওয়াতে ইসলামীর সমর্থনে লিখিত চিঠি প্রদান করেন। তাঁর মসলকে আহলে সুন্নাতের প্রতি অনুরাগকে শত কোটি মারহাবা! না চাইতে বাবুল মদীনা করাচীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত তাঁর পৃষ্ঠাপোষকতায় পরিচালিত জামে মসজিদ গুলজারে হাবীবে (গুলিস্থানে উকাড়াভী, বাবুল মদীনা, করাচী) সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার অনুমতির সৌভাগ্য দান করলেন। সুতরাং দা’ওয়াতে ইসলামীর সর্বপ্রথম মাদানী মরকয হল জামে মসজিদ “গুলজারে হাবীব।”তাঁরজীবদ্দশায় ও ইন্তেকালের পরও আমরা অনেক বছর সেখানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা করেছি। আশিকানে রাসুলদের সংখ্যা সর্বদা বৃদ্ধি পেতে লাগল। অবশেষে গুলজারে হাবীব জামে মসজিদ ইজতিমার জন্য যথেষ্ট হচ্ছিল না। আল্লাহ্ তাআলা রাস্তা খুলে দিলেন। সকল ইসলামী ভাই মিলে-মিশে অনেক দৌঁড়াদৌঁড়ি করলেন, কম-বেশী পাকিস্তানী সোয়া দুই কোটি টাকার চাঁদা জমা করলেন ও (পুরানী) সবজী মন্ডীর পাশে বাবুল মদীনা করাচীতে প্রায় দশহাজার গজ পরিমাণ প্লট ক্রয় করলাম এরপর আরো কোটি টাকার চাঁদায় আযীমুশশান আন্তর্জাতিক মাদানী মরকয ফয়যানে মদীনা প্রতিষ্ঠা করা হল, যাতে চমৎকার মসজিদ, মাদানী কাজ করার জন্য বিভিন্ন মকতব ও জামিআতুল মদীনার সুন্দর দালান গড়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মদীনার ফয়য লাভ করছেন। 


    সুন্নাত কি বাহার আয়ি ফয়যানে মদীনে মে, 

    রহমত কি ঘাটা ছায়ি ফয়যানে মদীনে মে।


     

(৫৫) খতীবে পাকিস্তানের একটি ঘটনা 

      

খতীবে পাকিস্তান হযরত মাওলানা মুহাম্মদ শফী উকাড়ভী অনেক বড় আশিকে রাসুল ছিলেন। মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে বসে সগে মদীনা عُفِىَ عَنهُ কে ১৪১৭ হিজরীতে মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে বসবাসরত হাজী গোলাম শাব্বীর সাহেব এ ঈমান তাজাকারী ঘটনাটি শুনিয়েছেন। একবার হযরত কিবলা সায়্যিদ খুরশীদ আহমদ শাহ সাহেব আমাকে বললেন: “একদিন মদীনায়ে মুনাওয়ারায় হযরত খতীবে পাকিস্তান মাওলানা মুহাম্মদ শফী উকাড়ভী (رحمة الله) আমার নিকট কাঁদতে কাঁদতে আসলেন আর বলতে লাগলেন আপনি আমার সাথে রওযা শরীফে চলুন, আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করব।” আমি জিজ্ঞাসা করাতে বললেন: গতকাল মসজিদুন নবভী শরীফে এক বেয়াদব বক্তা তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এর মর্যাদার শানে মানহানিকর কথা বললে আমি তার সাথে বিতর্ক শুরু করলাম। এতে বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে গেলে তার সহযোগীরা এসে পৌঁছল। তারা আমার সাথে কঠোরতা প্রদর্শন করে যাতে আমি খুবই মর্মাহত হলাম।রাতে স্বপ্নে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) তাশরীফ আনলেন আর ইরশাদ করলেন: “ব্যাস, আমার খাতিরে সামান্যটুকু কঠোরতাও সহ্য করতে পারলে না!” হযরত ক্বিবলা উকাড়াভী সাহেব বলছিলেন: আসল কথা হল, মনে একটু অহংকার এসে গেল ও অপমান হওয়াকে আমি আমার মর্যাদাহানি মনে করলাম, এজন্যই আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে উপদেশ দিলেন। তাই আমি মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) এর দরবার শরীফে হাযির হয়ে নিজের মনের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই। আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।


    খাক্ হো কর ইশ্ক মে আ-রাম ছে ছুনা মিলা, 

    জান কি ইকসীর হে উলফত রাসুলুল্লাহ কি।



(৫৬) রাসূলে পাক (ﷺ) সাহায্যের ঈমান তাজাকারী ঘটনা


    سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ 

আশিকদেরকেও কী চমৎকার ভাবে আতিথেয়তা করা হয়। জানা গেল, প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) আল্লাহ্ তাআলার দানক্রমে নিজের গোলামদের অবস্থাবলী ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সর্বদা খোঁজখবর রাখেন আর অনেক সময় স্বপ্নে দীদার দিয়ে ধন্য করে তাদেরকে সাহায্য ও সংশোধন করেন। এ বিষয়ে আরো একটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইঊসুফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) ঘটনা একটি বর্ণনা করেন, খোরাসানের এক হাজী সাহেব প্রতি বছর হজ্জের সৌভাগ্য লাভ করেন। যখন মদীনায়ে মুনাওয়ারায় زادها لله شر فاو تعظيما হাযির হতেন তখন সেখানের একজন আলাভী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা তাহির বিন ইয়াহইয়া (رحمة الله) এর খিদমতে নযরানা (উপহার) পেশ করতেন। একবার মদীনা শরীফে কোন এক হিংসুক বলল: তুমি বিনা কারণে নিজের সম্পদ নষ্ট করছ। তাহির সাহেব ভুল জায়গায় তোমার দেয়া নযরানা খরচ করে থাকেন। তাই ধারাবাহিকভাবে দু’বছর তিনি হযরত সায়্যিদুনা শায়খ তাহির (رحمة الله) খিদমত করলেন না। তৃতীয় বছর হজ্জের সফরের প্রস্তুতির সময় নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) খোরাসানী হাজীর স্বপ্নে তাশরীফ এনে অনেকটা এভাবে উপদেশ দিলেন: “তোমার জন্য আফসোস! মন্দ লোকের কথা শুনে তুমি তাহিরের সাথে সদ্ব্যবহারের সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছ! এটার প্রতিকারের ব্যবস্থা নাও এবং আগামীতে সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে বেঁচে থাক।” তাই তিনি এক বিচ্ছেদকারী লোকের কথা শুনে কুধারণার বশবর্তী হওয়ার জন্য ভীষণভাবে লজ্জিত হলেন এবংযখন মদীনায়ে মুনাওয়ারায় হাযির হলেন তখন সর্বপ্রথম আলাভী (হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বংশীয়) বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা শায়খ তাহির বিন ইয়াহইয়া (رحمة الله) এর দরবারে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখার সাথে সাথে বললেন: “যদি তোমাকে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) না পাঠাতেন তবে তুমি আমার কাছে আসার জন্য প্রস্তুতই ছিলে না!বিরুদ্ধাবাদীর এক তরফা কথা শুনে আমার ব্যাপারে ভুল ধারণা করে নিজের উদারতাসূলভ অভ্যাস ত্যাগ করে দিয়েছ, অবশেষে প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) স্বপ্নে তোমাকে সাবধান করলেন।” একথা শুনে খোরাসানী হাজী সাহিবের মাঝে ভাবাবেগের সৃষ্টি হল। আরয করলেন: “হুযুর! আপনি এসব কিভাবে জানতে পারলেন?” বললেন: “আমি প্রথম বছরে জানতে পেরেছি। দ্বিতীয় বছরও তুমি উদাসীনতা প্রদর্শন করলে আমার অন্তর মনোবেদনায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। এতে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) স্বপ্নে দয়া করে আমাকে সান্ত্বনা দিলেন আর তোমার স্বপ্নে তাশরীফ নিয়ে যা কিছু তোমাকে ইরশাদ করেছেন: তা আমাকে বলে দিয়েছেন। খোরাসানী হাজী সাহেব তাঁকে প্রচুর নযরানা পেশ করলেন, তাঁর হাত চুম্বন করলেন ও কপালে চুমু দেয়ার পর একতরফা কথা শুনে ভুল ধারণা করে মনো কষ্টের কারণ হওয়ায় আলাভী বুযুর্গ (رحمة الله) এর নিকট ক্ষমা চাইলেন। (হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, ৫৭১ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।


        না কিউ কর কহো ইয়া হাবীবী আগিস্নী,

        ইছি নামছে হার মুসিবত টলি হে,

        খোদা নে কিয়া তুঝকো আ-গাহ্ সবছে,

        দো-আলম মে জো কুছ খফী ও জলী হে।



এক পক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়


       

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে জানা গেল, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) নিজের গোলামদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। পেরেশানগ্রস্থদের শিয়রে তাশরীফ নিয়ে সান্ত্বনা প্রদান করেন। ভুল-ত্রট্টটিকারীদের স্বপ্নে গিয়ে তাদেরকে সংশোধন করেন, নেকীর দাওয়াত দেন, গুনাহের জন্য তাওবা করার নির্দেশ দেন, দু’জনের দূরত্ব শেষ করে দেন, সম্পর্ক ছিন্নকারীদেরকে মিলিয়ে দেন। খোরাসানী হাজী সাহেব চোগলখুরের কথা শুনে কুধারণার শিকার হয়ে একতরফা মানসিকতা তৈরী করায় নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) স্বপ্নে উপদেশ দিলেন। এ থেকে আমাদেরও শিক্ষা লাভ হল, নিজে চোগলখোরী না করা ও একতরফা কথা শুনে অন্যের ব্যাপারে কোন কু-ধারণা না করা। সৌভাগ্যের বিষয় হত! যদি শরয়ী অনুমতি ছাড়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে কিছু শুনার অভ্যসেই পরিত্যাগ করা হত। কেননা এতে اِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ গীবত-চোগলখোরী, কুধারণা, দোষ-অন্বেষণ ও মনে কষ্ট দেয়ার মত বিভিন্ন কবীরা গুনাহের হারাম কাজও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী থেকে মুক্তি লাভ হবে।


        

চোগলখোর জান্নাতে যাবেনা


তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: চোগলখোর জান্নাতে যাবে না।(সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬১৫৬) 


অন্য জায়গায় ফরমানে মুস্তফা (ﷺ)৷ রয়েছে, নিশ্চয় চোগলখোরী ও হিংসা-পরায়ণতা দোযখে নিয়ে যাবে। (আত্তরগীব, ওয়াত্তারহীব, ৩য় খন্ড, ৩২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৫) 


সম্মান বিনষ্টকারী ইরশাদ 


হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন কুরযী (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করা হল: “ইয়া সায়্যিদী! কোন বিষয়গুলি সম্মান হানিকর অভ্যাস?”

বললেন: (১) অতিরিক্ত কথা বলা (২) গোপন কথা ফাঁস করা (৩) যে কোন মানুষের কথা (যা অন্যের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে) মেনে নেয়া। (আততা হাফুস সাদাতুল মুত্তাক্বীন, ৯ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা) 


হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন: “যে ব্যক্তি তোমার নিকট কারো চোগলখোরী করে, সে তোমার বিরুদ্ধেও চোগলখোরী করে।” হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ গাযালী(رحمة الله) বলেন: এটা এ কথার প্রতি ইঙ্গিত, চোগলখোরকে অপছন্দ করা চাই ও তার কথায় আস্থা না রাখা চাই এবং সত্য হিসেবেও মেনে না নেয়া উচিত। তাকে অপছন্দ কেন করা হবে না, যেহেতু সে মিথ্যা, গীবত, ধোঁকা, খিয়ানত, ঘৃণা, হিংসা, মুনাফিকী ও মানুষের মাঝে ঝগড়া-ফ্যাসাদ খাড়া করা ও ধোঁকাবাজী করা পরিত্যাগ করে না। সে ঐ সব মানুষের অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করে মানুষকে মিলানোর পরিবর্তে মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও জমিনে ফ্যাসাদ প্রতিষ্ঠা করে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা) 


সুতরাং পারা-২৫, সূরা- শূরা, আয়াত- ৪২ আল্লাহ্ তাআলার ইরশাদ হচ্ছে:

 انما اسبيل على الذين يظلمون الناس و يبغون فى الا رض بغير الحق

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: পাকড়াও তো তাদেরকেই করা হয় যারা মানুষের উপর যুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অবাধ্যতা ছড়ায়। (পারা-২৫, সূরা-শূয়ারা, আয়াত-৪২)


চোগলখোরও এ আয়াতে কারীমাতে দেয়া নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত আর হাদীসে মুবারাকা সমূহ থেকেও এটার সমর্থন রয়েছে। যেমন-


            

নেক বান্দার পরিচয় কি?


      

প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় লোকদের মধ্যে ঐসব লোক মন্দ, যাদের কাছ থেকে মানুষেরা শুধুমাত্র তাদের অন্যায়ের কারণে বেঁচে (দুরে) থাকে।(মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, ২য় খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭১৯)


ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দা ঐ ব্যাক্তি, যাকে দেখলে আল্লাহর স্মরণ এসে যায় আর আল্লাহ্ তাআলার মন্দ বান্দা সে, যে চোখলখুরী করে, বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটনায় ও নেক লোকদের দোষ অন্বেষণ করে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৮০২০) 


অন্য এক স্থানে রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: খবরদার! মিথ্যা চেহারাকে কালো করে দেয় ও চোগলখোরী কবরের আযাব (এর মাধ্যম)। (মুসনাদে আবী ইয়ালা, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৪০৪)


নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “গীবত, খোটা দেওয়া ঘৃণা, চোগলখোরী ও নির্দোষ মানুষের দোষ অন্বেষণকারীদেরকে আল্লাহ্ তাআলা (কিয়ামতের দিন) কুকুরের আকৃতিতে উঠাবেন।” (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩য় খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা)



        ইয়া রব্বে মুহাম্মদ তু মুঝে নেক বানাদে,

        আমরাজে গুনাহোকে মেরে সারে মিঠাদে।

        মায় গীবত ও চুগলি ছে রহূ দূর হামীশা,

        হার খাচ্লতে বদ ছে মেরা পীছা তু ছুড়াদে।

        মায় ফালতু বা-তু ছে রহূ দূর হামীশা,

        চুপ রেহনে কা আল্লাহ! ছলীকা তু শিখাদে। 



(৫৭) মাযারে পাক থেকে ওলী সাহায্য করলেন 


প্রায় সাতশত বৎসর পূর্বের ঘটনা। সুলতানুল মাশায়িখ, সায়্যিদুনা মাহবুবে ইলাহী নিযামুদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله) বলেন: হযরত মাওলানা কাথীলী (رحمة الله) আমাকে বলেছেন: দিল্লীতে এক বৎসর দূর্ভিক্ষ হল।সে সময় ক্ষুধায় অস্থির হয়ে আমি খানার ব্যবস্থা করলাম আর মুসলমানদের মেহমানদারী করার স্পৃহায় নিজেকে নিজে বললাম: এ খানা একা না খাওয়া উচিত, অন্য কাউকেও অংশীদার করে নেয়া উচিত।এরই মধ্যে একজন ছেঁড়া কাপড় পরিহিত বুযুর্গ আমার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে দাওয়াত দিলাম। তিনি গ্রহণ করলেন। আমরা উভয়ে খাওয়ার জন্য বসলাম। আমি কথার মাঝখানে বুযুর্গের কাছে প্রকাশ করলাম, “আমার ২০ টাকা কর্জ রয়েছে।” তিনি বললেন: “আমি আপনাকে দিচ্ছি।” আমি ভাবলাম তিনি তো অনেক গরীব, জানিনা কিভাবে দিবেন? খাওয়া শেষে তিনি আমাকে তাঁর সাথে একটি মসজিদে নিয়ে গেলেন, সেখানে একটি মাযারও ছিল। আমরা সেখানে উপস্থিত হলাম। শিয়রে দাঁড়িয়ে তিনি সাহায্য প্রার্থনা করলেন ও দু’বার নিজের হাতের লাটি আস্তে করে কবর শরীফে লাগিয়ে বললেন: “আমার বন্ধুর ২০ টাকার প্রয়োজন রয়েছে। আপনি সাহায্য করুন।” অতঃপর আমার দিকে মুখ করে বললেন: “ভাই সাহেব! চলে যান আপনি ২০ টাকা পেয়ে যাবেন।” অতঃপর মাওলানা কাথীলী (رحمة الله) বলেন: “আমি ঐ বুযুর্গের হাত চুম্বনের পর তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শহরের দিকে চলতে শুরু করলাম। আমি ঐ সময় বিস্মিত ছিলাম যে, জানি না ঐ ২০ টাকা আমি কোত্থেকে পাব! আমার নিকট আমানত স্বরূপ একটি চিঠি ছিল, যেটা কারো ঘরে দেয়ার ছিল।সুতরাং আমি ঐ চিঠি নিয়ে “দরওয়াযায়ে কামাল” পৌঁছলাম। এক বাহাদুর নিজের ঘরের বারান্দায় বসা ছিলেন। তিনি আমাকে ডাক দিলেন এবং তার গোলামদেরকে পাঠালেন। তারা অত্যন্ত সম্মানের সাথে আমাকে উপরে নিয়ে গেল। বাহাদুর আমাকে খুবই আন্তরিকতা দেখালেন। আমি অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে চিনতে পারলাম না। ঐ বাহাদুর এটাই বলছিলেন, আপনি কি ঐ ব্যক্তি নন, যিনি অমুক জায়গায় আমার সাথে খুবই ভাল ব্যবহার করেছিলেন? আমি তাঁকে বললাম: “আমি আপনাকে চিনি না।” তিনি বললেন: “আপনি নিজেকে কেন লুকাচ্ছেন। কোন অসুবিধা নেই, আমিতো আপনাকে চিনি।” এরপর তিনি ২০ টাকা নিয়ে খুবই আন্তরিকতার সাথে আমার হাতে দিলেন। (ফাওয়ায়িদুল ফুওয়াদ, ২১তম মাজলিস, ১২৪ পৃষ্ঠা) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।



কে মৃত্যু দেন?


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা বর্ণনাকারী হযরত মাহবুবে ইলাহী নিযামুদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله) এ ঘটনাটি বিনা সন্দেহে বর্ণনা করে আমাদের ঈমান তাজা করে দিয়েছেন, যেভাবে ইহকালীন জীবনে আউলিয়ায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی থেকে কোন বস্তু চাওয়া যায় অনুরূপভাবে ওয়াফাতের পর তাঁদের মাযার শরীফে হাযির হয়ে কোন বস্তু চাওয়াও বৈধ। এটা উল্লেখ্য, সত্যিকার অর্থে দাতা হচ্ছেন আল্লাহ্ তাআলা। ওলীদের দিকে সম্পর্ক হচ্ছে রূপকার্থে। যেমন-সত্যিকার অর্থে রোগ থেকে আরোগ্য দানকারী হলেন আল্লাহ্ তাআলা কিন্তু রোগী বলে, “ডাক্তার সাহেব আমাকে ভাল করে দিন। ”এভাবে সত্যিকার অর্থে মৃত্যুদাতা হলেনআল্লাহ্ কিন্তু তাঁর নির্দেশে এ কাজের ভার মালাকুল মওত হযরত সায়্যিদুনা আজাঈল عَلَیۡہِمُ الصَّلٰوةُ وَ السَّلاَم এর। যেমন- কুরআনে পাকে আল্লাহ্ তায়ালার ইরশাদ হচ্ছে:


 ﻗُﻞْ ﻳَﺘَﻮَﻓَّﺎﻛُﻢْ ﻣَﻠَﻚُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭُﻛِّﻞَ ﺑِﻜُﻢ


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আপনি বলুন, তোমাদেরকে মৃত্যু প্রদান করে মৃত্যুর ফিরিশতা, যে তোমাদের জন্য নিযুক্ত রয়েছে। (পারা-২১, সূরা-সিজদা, আয়াত-১১)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আউলিয়া আল্লাহ্ رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی ওফাতের পর একেবারে জাগ্রতাবস্থায় সাক্ষাত দান করে কথা-বার্তাও বলেন। যেমন-


       

(৫৮) আল্লাহর ওলীর জীবন


হযরত সায়্যিদুনা শাহ ওয়ালিয়ুল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন: আমার সম্মানিত পিতা হযরত সায়্যিদুনা শাহ আবদুর রহীম (رحمة الله) বলতেন যে, আমি হযরত সায়্যিদুনা খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) এর আলোকময় মাযারে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে হাযির হলাম। আমি এরূপ মনে করি, আমি গুনাহগার এরকম উপযুক্ত নয়, নিজের শরীর দ্বারা এ পবিত্র স্থানকে কেমনে মলিন করব, তাই দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে সময় তাঁর মোবারক রূহ প্রকাশিত হয়ে আমাকে বললেন: “সম্মুখে এসো! আমি দু’তিন পা অগ্রসর হলাম। তখন আমি দেখলাম, চারজন ফিরিশতা আসমান থেকে একটি আসন তাঁর কবরশরীফের নিকটবর্তী নিয়ে আসলেন। ঐ আসনে হযরত সায়্যিদুনা খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দী (رحمة الله) বসা ছিলেন। উভয় বুযুর্গ পরস্পর গোপন ও রহস্যের কথা-বার্তা বলছিলেন যা আমি শুনতে পাইনি।এরপর আসনটি ফিরিশতারা উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। হযরত সায্যিদুনা খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী (رحمة الله) পুনরায় আমার দিকে মনোযোগী হয়ে বললেন: “সম্মুখে এসো!” আমি আগে দু’তিন পা অগ্রসর হলাম।এভাবে তিনি বলছিলেন আর আমি একটু একটু সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলাম। অবশেষে একেবারে তাঁর নিকটবর্তী হলাম। তখন তিনি বললেন: “শে’র সম্পর্কে তুমি কি বল?” আামি আরয করলাম: “শে’র এক ধরণের কথা, যা ভাল তা ভাল আর যা মন্দ তা মন্দ।” বললেন:

“باركَ الله” 

(অর্থাৎ- আল্লাহ্ বরকত দিন)। 


সুকণ্ঠ সম্পর্কে তুমি কি বল? আমি আরয করলাম: “এটা আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ, তিনি যাকে চান, দান করেন।” বললেন:“باركَ الله” পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন: “যেখানে এ দুইটি গুন একত্রিত হয় অর্থাৎ শে'র ও ভাল আর কণ্ঠও সুন্দর সে ব্যাপারে কি বল? আমি আরয করলাম: “এটা নুরুন আলা নুর, আল্লাহ্ তাআলা যাকে চান দান করেন।” বললেন: “باركَ الله” এসব কিছু কথা যা আমরা করি এর পূর্বে ছিল না, তুমিও কখনো কখনো এক দুই শে’র শুনে নিও। আমি আরয করলাম: “হুযুর! আপনি এ কথা হযরত সায়্যিদুনা খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (رحمة الله) এর সামনে কেন বলেননি?” তিনি (رحمة الله)এ দুইটাথেকে আগের একটি কথা বলেছেন: আদব (নিয়ম) ছিল না কিংবা উপযুক্ততা ছিল না। (আনফালুস ‘আরিফীন, ৪৪ পৃষ্ঠা)


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।


        দরে ওয়ালা পে ইক মায়লা লাগা হে,

        আজব ইছ দরকে টুকরো মে মাজা হে।

        ইহা ছে কব কো-ই খালি ফেরা হে,

        সখি দা-তা কি ইয়ে দৌলত সা-রা হে।


   

(৫৯) আ’লা হযরত (رحمة الله) ও শশা 


আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাজ আল হাফিয আল কারী আশ শাহ ইমাম আহমদ রযা খান (رحمة الله) একবার কোথাও আমন্ত্রিত ছিলেন। খাবার দেয়া হল। সকলে আ’লা হযরত (رحمة الله) খাওয়া শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আ’লা হযরত (رحمة الله) শশার থালা থেকে এক টুকরো নিয়ে নিলেন এবং খেয়ে নিলেন। তাঁর (رحمة الله) দেখা-দেখি লোকেরাও শশার থালার দিকে হাত বাড়ালেন কিন্তু তিনি (رحمة الله) সকলকে থামিয়ে দিলেন আর বললেন: সবগুলো শশা আমি খাব।সুতরাং তিনি (رحمة الله) সবগুলো শশা খেয়ে নিলেন। উপস্থিত লোকেরা আশ্চর্য হলেন, আ’লা হযরত (رحمة الله) তা খুব কম খাবার খান। আজকে এতগুলো শশা কিভাবে খেলেন! লোকেরা জিজ্ঞাসা করাতে বললেন: “আমি যখন প্রথম টুকরা খেয়েছি তখন সেটা তিক্ত ছিল। এরপর যখন দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি খাই তাও তিক্ত ছিল। সুতরাং আমি অন্যদেরকে থামিয়ে দিলাম, হয়তো কেউ শশা মুখে দিয়ে তিক্ত লাগলে থু থু করা শুরু করে দিবেন। যেহেতু শশা খাওয়া আমার প্রিয় প্রিয় মদীনে ওয়ালা মুস্তফা(ﷺ) এর মোবারক সুন্নাত, তাই আমার মনঃপূত হল না, এটা খেয়ে কেউ থু থু করবে।”


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।



    মুঝ কো মীঠে মুস্তফা কি সুন্নাতু ছে পেয়ার হে,

    দাে-জাহা মে আপনা বে-ড়া পার হে।


        

খেজুর ও শশা খাওয়া সুন্নাত


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আ’লা হযরত (رحمة الله) কিরূপ মহান আশিকে রাসুল ছিলেন। সত্যিই আশিকের শান এমনই হয়, তিনি আপন মাহবুবের সাথে সম্পর্কিত বস্তুকে মন-প্রাণে পছন্দ করেন ও সেটাকে সম্মান করেন, তাইতো সরকারে আ’লা হযরত প্রিয় নবীর পছন্দনীয় শশার প্রতি এমন সম্মান দেখালেন যে, তিক্ত শশাও খেয়ে নিলেন। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (رضي الله عنه) বলেন: আমি প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) কে শশা ও খেজুর একসাথে খেতে দেখেছি। (সহীহ মুসলিম, ১১৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৪৩)


বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান(رحمة الله) বলেন: খেজুর প্রকৃতিগতভাবে গরম ও শুকনো আর শশা ঠান্ডা ও সিক্ত। এ দুটো একত্রিত হওয়াতে মধ্যম পন্থা হয়ে ফায়দা বেড়ে যায়। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) শশা ও খেজুরকে কখনো পবিত্র পাকস্থলীতে জমা করেছেন কেননা সময়ে কখনো খেজুর, কখনো শশা খেয়েছেন। আর চিবানোর সময় একত্রিত করেছেন, খেজুর মুখ শরীফে রাখলেন ও শশা পবিত্র দাঁত দিয়ে কাটলেন এবং দুটো একত্রিত করে চিবিয়েছেন। কখনো খেজুর ও তরমুজও একত্রিত করে খেয়েছেন। খেজুর ও শশা একত্রিত করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। 


উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা মা আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বর্ণনা করেন, (স্বামীর ঘরে আসার পূর্বে আমি খুবই দূর্বল ছিলাম) আমার আম্মীজান (রা.) আমাকে সুন্দর স্বাস্থ্যবান করার জন্য চেষ্টা করতেন, যাতে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর নিকট পাঠাতে পারেন।যখন কোন কৌশল ফলপ্রসু হল না তখন তিনি আমাকে খেজুর ও শশা একত্রিত করে খাওয়ানো শুরু করলেন, এতে আমি (কিছু দিনের মধ্যেই) স্বাস্থ্যবান হয়ে গেলাম।(সুনানে ইবনে মাজা, ৪র্থ খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩২৪) 


তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পছন্দনীয়তো খেজুর ছিলই, শশাও খুবই পছন্দনীয় ছিল। অনেক বুযুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللهُ تَعَالٰی এর ফাতিহাতে অন্যান্য খানার সাথে খেজুর ও শশা এবং তরমুজও রাখেন। তাঁদের আমলের ভিত্তি হল আলোচ্য হাদীস। (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২০,২১ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)


        

(৬০) ১৫ দিন পর্যন্ত কিছু খাব না!

        

হযরত সায়্যিদুনা আবূ আবদুল্লাহ বিন খফীফ (رضي الله عنه) এক জায়গায় দা’ওয়াতে ছিলেন। তাঁর এক ক্ষুধার্ত মুরীদ তিনি (رضي الله عنه) খাওয়া শুরু করার পূর্বেই খানার দিকে হাত বাড়ালেন! এতে এক পীর ভাই অসন্তুষ্টির ভঙ্গিতে তার নিকট খানার কোন বস্তু রাখলেন, যাতে তিনি বুঝে গেলেন যে, আমি পীরো মুর্শিদের পূর্বে খানার প্রতি হাত বাড়িয়ে খানার সম্মানের বিপরীত কাজ করেছি। অতএব নিজের নফসকে শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি অঙ্গীকার করলেন, ১৫দিন পর্যন্ত কিছু খাব না। এভাবে তিনি নিজের বেয়াদবী থেকে তাওবা করার প্রকাশ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। অথচ তিনি পূর্ব থেকেই ক্ষুধায় আক্রান্ত ছিলেন। (আর রিসালাতুল কুশাইরিয়্যা, ১৭৯পৃষ্ঠা)


আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।



প্রথমে বুযুর্গ ব্যক্তি খাওয়া শুরু করবেন


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! একত্রে খাওয়ার সময় যদি কোন বুযুর্গ(সম্মানিত ব্যক্তি)ও খাওয়াতে অংশ নেন, তবে আদব হল এই যে, যতক্ষণ তিনি খাওয়া শুরু না করেন, ততক্ষণ কেউ যেন না খান। মনে রাখবেন! বুযুর্গের জন্য বয়োঃবৃদ্ধ হওয়া শর্ত নয়, ইলম ও আমল থাকা প্রয়োজন। সুতরাং বয়োবৃদ্ধ লোকের উপস্থিতিতে যদি কোন যুবক আলিমও থাকেন, তাহলে তিনিই প্রথমে খাওয়া শুরু করবেন। আল্লাহ্ ওয়ালাদের ধরণও অন্য রকম হয়ে থাকে। হযরত সায়্যিদুনা আবূ আবদুল্লাহ বিন খফীফ (رضي الله عنه) এর মুরীদ, যিনি নিজে একজন ক্ষুধার্ত বুযুর্গ ছিলেন ও বেখেয়ালীতে তাঁর হাত অগ্রসর করে দিলেন কিন্তু নিজের পীর ভাইয়ের ইঙ্গিতে নিজেকে সামলে নিলেন অথচ তখন খাওয়া শুরু করেননি। শুধুমাত্র হাতই বাড়িয়েছিলেন, তবুও অজান্তে ঘটে যাওয়া বেয়াদবীর কারণে নিজের নফসের জন্য অসাধারণ শাস্তির ব্যবস্থা করলেন আর প্রচন্ড ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও অঙ্গীকার করলেন, আরো ১৫দিন পর্যন্ত কিছু খাব না। আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাগণ নিজেকে নিজে আদব শিক্ষা দেয়ার জন্য নানা ধরনের অসাধারণ শাস্তির ব্যবস্থা করে আসছেন। যেমন-


    

বাম পায়ের জুতা প্রথমে পরার কাফ্ফারা 

       

“কীমিআয়ে সা’আদাত”-এ রয়েছে, এক বুযুর্গ (رحمة الله) একবার সুন্নাত অনুযায়ী ডান পায়ে জুতা পরা শুরু করার পরিবর্তে ভূলবশতঃ প্রথমে বাম পায়ের জুতা পরে নিলেন। এ সুন্নাত বাদ পড়ে যাওয়ায় তাঁর খুব মনোবেদনা সৃষ্টি হল আর এর বিনিময়ে তিনি দু’ বস্তা গম সদকা করলেন।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এসব তাঁদের অংশ ছিল (যা তাঁদের মানায়)। হায় এমন যদি হত! আমাদের নিজেদের বুযুর্গদের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী জীবন যাপন করার সৌভাগ্য অর্জিত হত। এ ধরনের সুন্নাত ও আদবসমূহ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ইসলামী ভাইদের উচিত, মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সফর করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করা। মাদানী কাফেলায় কী যে বাহার রয়েছে। যেমন-



(৬১) মদীনার সফরের সৌভাগ্য অর্জিত হল


দা’ওয়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তরকীব অনুযায়ী বিন্যস্ত করা জেলা শেখ পুরার একটি তেহশীলের মাদানী ইনআমাতের যিম্মাদার আমাকে (সগে মদীনা عُفِىَ عَنهُ যা কিছু লিখেছেন, সেটার সারাংশ হচ্ছে, ১৪২৪ হিজরীতে, আমার ওমরা শরীফ এবং মদীনা মুনাওয়ারার হাযিরীর সৌভাগ্য পেলাম সেখানে কুসুর পঞ্জারে এক ক্বারীর সাথীর সাথে সাক্ষাত হলো, তখন বলল: মদীনাতুল আউলিয়া মুলতানে সাহারায়ে মদীনাতে অনুষ্ঠিত দা’ওয়াতে ইসলামীর তিন দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাতে অংশগ্রহণ করলাম। সেখানে বয়ানের সময় মাদানী কাফেলায় সফরের জন্য তরগীব (উৎসাহ) দিয়ে বলা হয়েছে, “মাদানী কাফেলায় সফর করে দোয়া করুন। আপনার যে মনের বাসনাই হোকاِنۡشَآءَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ পূর্ণ হবে।” একথা শুনে আমার স্পৃহা জাগল। আর আমি হাতোহাত আশিকানে রাসুলদের সাথে তিন দিনের সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলায় সফরের সৌভাগ্য অর্জন করলাম এবং সেখানে খুব কেঁদে কেঁদে মদীনায়ে মুনাওয়ারার উপস্থিতির জন্য দোয়া করলাম। দোয়া কবুল হওয়ার চিহ্নাবলী এভাবে প্রকাশ পেল, আমি যখন মাদানী কাফেলা থেকে সফর করে ফিরলাম ও নিয়মানুসারে বাচ্চাদের কুরআনে পাক পড়ানোর জন্য কারো ঘরে গেলাম তখন ঘরওয়ালা যথেষ্ট মেহেরবানীপূর্বক আচরণ করে বললেন: “কারী সাহেব! আপনি আমাদের বাচ্চাদের কুরআনে পাক শিক্ষা দান করেন, যদি আপনার কোন মনোবাসনা থাকে তবে বলুন, আমি আপনাকে খুশী করতে ইচ্ছুক।” প্রথমে আমি নানা বাহানা করি কিন্তু পরক্ষণে তার বারংবার অনুরোধে বললাম যে, আমার দীদারে মদীনার আকাঙ্খা অন্তরে রয়েছে। তিনি আমাকে তৎক্ষণাৎ খরচাদি দিয়ে দিলেন আর এভাবে হাতোহাত মাদানী কাফেলায় সফর করে দোয়ার করার বরকতে আমার মত গুনাহ্গার ও নিঃস্ব মানুষের অতি তাড়াতাড়ি মদীনায়ে মুনাওয়ারা زادها لله شر فاو تعظيما এর উপস্থিতির সৌভাগ্য অর্জন হল।



মুঝ গুনাহগার সা ইনসান মদীনে মে রহে,   

বনকে ছরকার কা মেহমানে মদীনে মে রহে।

ইয়াদ আ-তি হ্যায় মুঝে আহলে মদীনে কি উও বাত,

জিন্দা রেহনা হে তু ইনসান মদীনে মে রহে।

জানো দিল ছোড় কর ইয়ে কেহ্কে চলাহো আযম

আ-রাহাহো মেরা সা-মান মদীনে মে রহে।


          

(৬২) জব শরীফের শিরনী


হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আবদুল আযীয (رحمة الله) একদিনজানতে পারলেন যে, সিপাহসালার (সেনাপতি) এর বাবুর্চীখানার প্রতিদিনের খরচ হচ্ছে এক হাজার দিরহাম। এ সংবাদ শুনে তাঁর (رحمة الله) খুবই আফসোস হল। তিনি (رحمة الله) তার সংশোধনের জন্য ইন্ফিরাদী কৌশিশ করার মন-মানসিকতা তৈরী করলেন ও তাকে ঘরে দাওয়াত দিলেন। তিনি (رحمة الله)বাবুর্চীদেরকে নির্দেশ দিলেন, উন্নতমানের লৌকিকতাপূর্ণ খাবারের সাথে জব শরীফের শিরনীও যেন প্রস্তুত করা হয়। সেনাপতি যখন দাওয়াতে আসলেন তখন খলীফা (رحمة الله) ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার আনাতে এরূপ দেরী করলেন, সেনাপতি ক্ষুধায় অস্থির হয়ে গেলেন। অবশেষে আমীরুল মুমিনীন প্রথমে জব শরীফের শিরনী (ফিন্নী) আনালেন।যেহেতু সেনাপতি প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিলেন, তাই তিনি জব শরীফের শিরনী (ফিন্নী) খাওয়া শুরু করলেন আর যখন লৌকিকতাপূর্ণ খাবার আসল ততক্ষণে তার পেটপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। জ্ঞানী বিচক্ষন খলীফা (رحمة الله) লৌকিকতার্পূণ খাবারের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন: আপনার খাবারতো এখন এসেছে, খান! সেনাপতি অস্বীকৃতি জানালেন আর বললেন: “হুযুর! আমার পেটতো শিরনীতেই ভরে  গেছে।” আমীরুল মুমিনীন (رحمة الله)বললেন: سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ শিরনী কিরূপ উত্তম খাবার যে পেটও ভরে দেয় আবার দামেও সস্তা, এক দিরহামে দশজন মানুষকে পরিতৃপ্ত করে দেয়।একথা বলে তিনি উপদেশের মাদানী ফুল ছড়িয়ে বললেন: “যখন আপনি জবের শিরনী দিয়েও জীবন কাটাতে পারেন, তাহলে কেনইবা প্রতিদিন এক হাজার দিরহাম নিজের খানায় খরচ করেন?”সেনাপতি সাহেব! খোদাকে ভয় করুন ও নিজেকে নিজে অধিক ব্যয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। নিজের বাবুর্চীখানায় যে টাকা অতিরিক্ত খরচ করেন, তা আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ক্ষুধার্ত, অভাবী ও গরীবদেরকে দান করে দিন। মুত্তাকী খলীফা (رحمة الله) এর ইন্ফিরাদী কৌশিশ সেনাপতির হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করল আর তিনি অঙ্গীকার করলেন, ‘ভবিষ্যতে খানায় সাদাসিধে পন্থা অবলম্বন করব এবং কম খরচে কাজ করব। (মুগনিউল ওয়ায়েযীন, ৪৯১ পৃষ্ঠা) 

আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।



 বরকতশূন্যতার কারণ হল অপ্রয়োজনীয় খরচাদি

        

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমরা নফসকে যতই মজাদার খানা খাওয়াব ততই সে ভাল থেকে ভাল খাবার প্রত্যাশা করতে থাকবে। আজকে আমাদের অধিকাংশই বরকত শূন্যতার অভিযোগ করে থাকি। এছাড়া দারিদ্রতা ও এর উপর হাড়ভাঙ্গা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির অভিযোগ করে আজ প্রায় সকলকেই বলতে শুনা যায় যে “পুরোপুরি হয় না”, “বিশ্বাস করুন, আকাশচুম্বী দাম।” এযুগে অপ্রয়োজনীয় খরচ করাটাও বরকতশূন্যতা ও দারিদ্রতার অনেক বড় একটি কারণ। এটা যখন স্পষ্ট যে আমরা অপ্রয়োজনীয় খরচাদির ধারাবাহিকতা চালুই রাখব এছাড়া সর্বদা উৎকৃষ্ট খাবার, উন্নত ঘর, এরপর তাতে সাজ-সজ্জার দামী আসবাবপত্র, দামী দামী আকর্ষণীয় পোষাক-পরিচ্ছেদের সাথে মন লাগিয়ে রাখি তাহলে এসব কাজের জন্য প্রচুর টাকা-পয়সার প্রয়োজন হবে আর তাই “বরকতশূন্যতা” ও পুরোপুরি হয়না” এর সুরও চালুই থাকবে।হযরত সায়্যিদুনা ইমাম জাফর সাদিক (رضي الله عنه) বলেছেন: “যে নিজের সম্পদ অপ্রয়োজনীয় খরচাদিতে নষ্ট করেছে, এখন বলে হে রব্ব আমাকে আরো দাও।আল্লাহ্ তাআলা (এমন ব্যক্তিকে) বলেন: আমি কি তোমাকে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেইনি? তুমি কি আমার ফরমান শুননি?


 والذ ين اذاانفقو الم يسر فواولم يقتر و او كان بين ذلك قواما


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ঐসব লোক যে, তারা যখন ব্যয় করে তখন না সীমাতিক্রম করে এবং না কার্পন্য করে এবং সেই দু’টির মাঝখানে মধ্যপন্থায় থাকে। (পারা- ১৯, সূরা- ফুরকান, আয়াত- ৬৭)


(আহসানুল বিআ, লি আদাবিদ দোয়া, ৭৫ পৃষ্ঠা)


সবোর্পরি কথা হল, যদি অল্পে তুষ্টি ও সাদাসিধে ভাবে সস্তা খানা ও সাধারণ পোষাককে নিজের আপন করে নেয়া যায়, শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুপাতে ঘর করা হয়, অতিরিক্ত সাজ-সজ্জা ও প্রদশর্নীয় দাওয়াতের ব্যাপারে নিজের উপর বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়া হয় তবে নিজে থেকেই উর্ধ্বমূল্যের অবসান হবে এবং অসচ্ছলতা বিদায় নেবে। কিন্তু নফসে আম্মারার দাসত্বের প্রতিকার কী?


        

তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়না


খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: তিন ব্যক্তি রয়েছে, তোমার রব্ব তাদের দোয়া কবুল করেন না। 

(১) এক জন হল সে, যে উজাড় ঘরে অবস্থান করে, 

(২) দ্বিতীয়জন হল ঐ মুসাফির, যে রাস্তায় স্থান করে (অর্থাৎ-তাঁবু টাঙ্গায়) অর্থাৎ- রাস্তা থেকে সরে অবস্থান করে না বরং একেবারে রাস্তাতেই অবস্থান করে। 

(৩) তৃতীয় ব্যক্তি হল সে, যে নিজে স্বীয় জানোয়ার ছেড়ে দিল, এখন খোদার কাছে দোয়া করে যে, সেটাকে থামিয়ে দাও। (আহসানুল বিআ লি আদাবিদ দোয়া, পৃষ্ঠা ৭৩)


এ হাদীসে পাকের ভিত্তিতে আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামেআহলে সুন্নাত, ওয়ালিয়ে নেয়ামত, আযীমুল বরকত, আযীমুল মরতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনো মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরিকত, বাইসে খাইরো বরকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ আল হাফিয আল কারী আশ শাহ ইমাম আহমদ রযা খান  (رحمة الله) বর্ণনাকৃত হাদীসে পাকের ব্যাখ্যা করে বলেন: اقول وبالله التوفيق  (অর্থাৎ- আল্লাহ্ তাআলার দেয়া তাওফীকে আমি বলছি) প্রকাশ থাকে যে, এ থেকে উদ্দেশ্য এটাই, ঐ বিশেষ স্থলে তাদের দোয়া শুনা হবে না। আবার এ নয় যে, যে ব্যক্তি এরূপ করবে সাধারণভাবে তার কোন দোয়া কোন বিষয়ে কবুল হবে না। আর এ বিষয়গুলোতে কবুল না হওয়ার কারণ সুস্পষ্ট যে, এ কাজ নিজ কর্মের ফল। সুতরাং উজাড় ঘরে অবস্থানকারী এটার ক্ষতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। এরপর যদি সেখানে চুরি হয় বা কেউ লুন্টন করে অথবা জিন কষ্ট দেয়, তবে এসব বিষয় যেহেতু সে নিজেই বুঝে গ্রহণ করেছে, এখন কেন সেগুলো দূর হওয়ার জন্য সে দোয়া করছে? অনুরূপভাবে যখন রাস্তায় অবস্থান করল, তাহলে প্রত্যেক প্রকারের লোক তার পাশ দিয়ে যাবে, এখন যদি চুরি হয়ে যায় বা হাতি, ঘোড়ার পা দ্বারা তার কোন ক্ষতি হয়ে যায়, রাতে সাপ ইত্যাদি দ্বারা কষ্ট পায়, তাহলে এটা তার নিজ কর্মের ফল। নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “রাতে রাস্তায় অবস্থান করো না, কারণ আল্লাহ্ নিজের সৃষ্টি জগৎ থেকে যাকে ইচ্ছা করেন রাস্তায় চলাফেরা করার অনুমতি দেন।” অনুরূপভাবে জানোয়ারকে নিজে ছেড়ে দিয়ে সেটা আয়ত্বে আসার দোয়া করাতো সুস্পষ্ট মূর্খতা। এর দ্বারা আল্লাহ্কে কি পরীক্ষা কর, নাকি তাঁকে নিজের প্রভাবাধীন সাব্যস্ত কর! 


হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ (عليه السلام)কে কেউ বলল: যদি খোদার কুদরতের উপর ভরসা থাকে, (তাহলে) নিজেকে নিজে এ পাহাড় থেকে নীচে ফেলে দেন। তিনি বললেন: “আমি আমার প্রতিপালককে পরীক্ষা করি না।” (আহসানুল বিআ লি আদাবিদ দোয়া, ৭৩,৭৪ পৃষ্ঠা)


 

নিজ কৃতকর্মের কোন প্রতিকার নেই


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ফার্সীতে একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে: “খুদ করদা বা ইলাজে নীস্ত” অর্থাৎ- “নিজের হাতে মুসিবত ডেকে আনয়নকারীদের কোন প্রতিকার নেই।” যেমন- কেউ নিজের মাথা দেয়ালে মারতে থাকে আর কেঁদে কেঁদে চিৎকার করতে থাকে যে, হায়! আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আমাকে বাঁচাও! তাহলে স্পষ্টত ঐ মূর্খকে এটাই বলা হবে যে, নিজের মাথা দেয়ালে মারা বন্ধ কর তবে ফাটবে না। অনুরূপভাবে অনেক মূর্খ এমনও রয়েছে, যাদের হাতে যা কিছু আসে গিলতে থাকে, ঠেসে ঠেসে খায় আর এরপর মেদ, পেট বের হওয়া, কোষ্টকাঠিন্য ও বদহজমের ঔষধ খোঁজাখোঁজি করে এবং ডাক্তার হেকীমদের নিকট প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করে। কিন্তু ঔষধে চিকিৎসা হয়ে উঠে না, কেন? এজন্য যে, এ রোগ গুলোর চিকিৎসা তার নিজের হাতে রয়েছে। পেট ভরে খাওয়া যেন ছেড়ে দেয়, যতক্ষণ ভালভাবে ক্ষুধা না লাগে ততক্ষণ পর্যন্ত যেন না খায়। হাদীসে পাকে বলা নিয়মানুসারে ক্ষুধা

Top