ক্ষমা ও মার্জনার ফযীলত 

টেক্সট রেডী : মুহাম্মদ জুবায়েদ হোসাইন আত্তারী


এই রিসালাটি শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত,দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী - উর্দু ভাষায় লিখেছেন। দা’ওয়াতে ইসলামীর অনুবাদ মজলিশ এই রিসালাটিকে বাংলাতে অনুবাদ করেছে। যদি অনুবাদ, কম্পোজ বা প্রিন্টিং এ কোন প্রকারের ভুলত্রুটি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে মজলিশকে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রচুর সাওয়াব হাসিল করুন। (মৌখিকভাবে বলার চেয়ে লিখিতভাবে জানালে বেশি উপকার হয়।) এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন দা’ওয়াতে ইসলামী (অনুবাদ মজলিশ) মাকতাবাতুল মদীনা এর বিভিন্ন শাখা ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, জনপথ মোড়, সায়দাবাদ, ঢাকা। ফয়যানে মদীনা জামে মসজিদ, নিয়ামতপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী। কে.এম.ভবন, দ্বিতীয় তলা ১১ আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। এই রিসালাটি পড়ে অন্যকে দিয়ে দিন বিয়ের অনুষ্ঠান, ইজতিমা সমূহ, মিলাদ মাহফিল, ওরস শরীফ এবং জুলুসে মীলাদ ইত্যাদিতে মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা সমূহ বন্টন করে সাওয়াব অর্জন করুন, গ্রাহককে সাওয়াবের নিয়্যতে উপহার স্বরূপ দেওয়ার জন্য নিজের দোকানে রিসালা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হকার বা বাচ্চাদের দিয়ে নিজের এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে সুন্নাতে ভরা রিসালা পৌঁছিয়ে নেকীর দাওয়াত প্রসার করুন এবং প্রচুর সাওয়াব অর্জন করুন। একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাদানী অসিয়ত সম্বলিত শয়তান আপনাকে লাখো অলসতা দিবে, তবুও আপনি এ রিসালা পরিপূর্ণ পাঠ করুন, আপনার অন্তর এসকল মর্যাদা লাভ করার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। 


দরূদ শরীফের ফযীলত 


◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব) 


◾প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “হে লোকেরা! নিঃসন্দেহে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং হিসাব-নিকাশ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়াতে তোমাদের মধ্যে আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করেছে।” (মুসনাদুল ফিরদৌস, ৫ম খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮২১০) 


◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ)  


◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:“ আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করো, নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা) 


◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী) 


◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “তোমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী)  


মাদানী আক্বা (ﷺ) এর ক্ষমা প্রদর্শনের অনুপম দৃষ্টান্ত 


◾হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমি নবী করীম, রউফু রহীম (ﷺ) এর-সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম,আর তিনি একটি নজরানি চাদর পরিধান করেছিলেন যার আঁচল মোটা ও অমসৃন ছিল। হঠাৎ এক বেদুঈন (অর্থাৎ, আরবের গ্রাম্য লোক) তাঁর (ﷺ) চাদর মোবারক ধরে এমন জোরে টান দিল যার ফলে রাসুলে করীম (ﷺ) এর গর্দান মোবারকে চাদরের আঁচলের আঁচড় পড়ে গিয়েছিল। সে বেদুঈন বলল: আল্লাহ্ তায়ালার যে সম্পদ আপনার নিকট আছে, আপনি আদেশ দিন যাতে তা থেকে কিছু আমিও পাই। রহমতে আলম (ﷺ) তার দিকে ফিরলেন এবং মুচকি হাসলেন। অতঃপর তাকে কিছু মাল দেয়ার জন্য আদেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৩৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩১৪৯) 


হার খতা পর মেরি চশম পুশী, 

হার তলব পর আতায়ো কি বারিশ, 

মুঝ গুনাহ্গার পর কিছ কদর হে,  

মেহেরবা তাজেদারে মদীনা (ﷺ)।


 প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী আকা, হুযুর পুরনূর (ﷺ) বেদুঈনের সাথে কি উত্তম আচরণ করলেন! প্রিয় নবী (ﷺ) এর প্রেমিকগণ! চাই কেউ আপনার উপর যতই অত্যাচার করুক, যতই মনে কষ্ট দিক! ক্ষমা ও মার্জনাপূর্ণ আচরণ করুন এবং তার সাথে ভালবাসাপূর্ণ আচরণ করার চেষ্টা করুন। 


হিসাব নিকাশ সহজ হওয়ার তিনটি উপায় 


◾হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা তার হিসাব অতি সহজভাবে নিবেন এবং আপন রহমত দ্বারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” 

সাহাবায়ে কিরামগণ (رضي الله عنه) আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) ঐ বিষয়গুলো কি কি? ইরশাদ করলেন:

(১) যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে দান কর, আর 

(২) যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখ, এবং 

(৩) যে তোমার উপর অত্যাচার করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।” 

(আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানী, ৪র্থ খন্ড, ১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং -৫০৬৪)


 জান্নাতের মহল 


◾হযরত সায়্যিদুনা উবাই বিন কা’ব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যার এটা পছন্দ যে, জান্নাতে তার জন্য প্রাসাদ নির্মাণ করা হোক এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হোক, তার উচিত, যে তার উপর জুলুম করে সে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়, আর যে তাকে বঞ্চিত করে সে যেন তাকে দান করে এবং যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে যেন তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখে।” 

(আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ৩য় খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২১৫) 


ক্ষমা করলে মযার্দা বৃদ্ধি পায় 


◾আল্লাহর নবী, রাসুলে আরবী, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “সদকা করার কারণে সম্পদ কমে যায় না, আর বান্দা কারো অপরাধ ক্ষমা করলে, আল্লাহ্ তাআলা তার (ক্ষমাকারীর) সম্মান বৃদ্ধি করবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাআলার জন্য বিনয় অবলম্বণ করে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করবেন।” (সহীহ মুসলিম, ১৩৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৫৮৮) 


সম্মানিত কে? 


◾হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ (عليه السلام) আরজ- করলেন: হে মহান আল্লাহ্! তোমার কাছে কোন ধরনের বান্দা অধিক সম্মানিত? ইরশাদ করলেন: যে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয় । 

(শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৩২৭) 


যে ক্ষমা করে না তাকে ক্ষমা করা হবে না 


◾হযরত সায়্যিদুনা জরীর (رضي الله عنه) বর্ণিত; ছরকারে দো আলম, নূরে মুজাস্সাম, নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ- করেছেন: “যে দয়া করে না তার উপর দয়া করা হবে না, আর যে ক্ষমা করে না তাকে ক্ষমা করা হবে না।” 

(মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৭ম খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৯২৬৪)  


ইহকাল ও পরকালের সর্বোত্তম চরিত্র 


◾হযরত সায়্যিদুনা ওকবা বিন আমের (رضي الله عنه) বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলে করীম (ﷺ) এর সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জন করলাম, তখন কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ হুযুর (ﷺ) এর নূরানী হাত মোবারক ধরে ফেললাম এবং তিনি (ﷺ) দ্রুত আমার হাত ধরলেন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: “হে ওকবা! ইহকাল ও পরকালের সর্বোত্তম চরিত্র হচ্ছে; তুমি তার সাথে সৎভাব রাখবে যে তোমাকে পরিত্যাগ করে, আর যে তোমার উপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করে দিবে, আর যে ব্যক্তি জীবিকায় প্রশস্ততা এবং দীঘার্য়ু কামনা করে সে যেন আপন আত্মীয় স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে।” (আল মুস্তাদারিক লিল হাকিম, ৫ম খন্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৩৬৭) 


Top