নামায না পড়া যেনো কোন ভুলই নয় :-


এ ধরণের অদ্ভুদ কথা বার্তা যারা বলে তাদেরকে যদি বলেন: “ভাই! আপনি সম্ভবত: নামায পড়েন?” তখন জবাব পাওয়া যায়, “জী, না।” আপনি দেখলেন তো! মুখে তো অনায়াসে বের হয়ে যাচ্ছে, “আমার দ্বারা এমন কোন গুনাহ সম্পন্ন হয়েছে, যার শাস্তি আমি পাচ্ছি?” আর নামাযের ক্ষেত্রে তার অলসতা তো তার নজরেই পড়ছে না। আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! নামায না পড়া যেনো তার দৃষ্টিতে কোন গুনাহই না। আরে! নিজের ছোট্ট দেহটিরপ্রতি যদি সামান্য দৃষ্টিই দিতো! দেখুন না! মাথার চুল ইংরেজী, খৃষ্টানদের মতো, মাথাও খোলা, পোষাকও ইংরেজী, চেহারা মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّ এর শত্রু তথা অগ্নিপূজারীদের মতো; অর্থাৎ- নবীকরীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহান সুন্নাত দাড়ি মোবারক চেহারায় নেই। জীবন যাপনের রীতিনীতি ইসলামের শত্রুদের মতোই। নামায পর্যন্ত পড়ে না; অথচ নামায না পড়া জঘন্য গুনাহ্। দাড়ি মুন্ডানো হারাম। তদুপরি, দিনভর মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, ওয়াদা ভঙ্গ, মন্দ ধারণা, কুদৃষ্টি, পিতামাতার নাফরমানী, গালি-গালাজ, ফিল্ম-ড্রামা, গান-বাদ্য ইত্যাদি, জানিনা আরো কতো ধরণের গুনাহ করা হচ্ছে! কিন্তু এসব গুনাহ্ সাহেবের নজরেই পড়ছে না। এতো বেশি গুনাহ্ করা সত্ত্বেও শয়তান উদাসীন করে ছাড়ে। মুখে এসব অভিযোগপূর্ণ কথা উচ্চারিত হয়। 


যেই বন্ধুর কথা আমরা মানি না, তিনি কি আমাদের কথা শুনবেন? 


একটু চিন্তা করুন না! আপনার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু আপনাকে কোন কাজের জন্য কয়েকবার বললো; কিন্তু আপনি তার কাজটি করে দিলেন না। আর যদি আপনার কোন কাজ ওই বন্ধুর মাধ্যমে করাতে হয়, তাহলে একথা সুস্পষ্ট যে, আপনি প্রথমেই চিন্তা করবেন যে, ‘আমি তো তার কাজ একটাও করিনি, এখন সে আমার কাজটি কেন করবে?’যদি আপনি সাহস করে অনুরোধ করতে পারবেন। আর সে বাস্তবিকই আপনার কাজ করেনি, তবুও আপনি অভিযোগ করতে পারবেন না।কারণ, আপনিও তো আপনার বন্ধুর কোন কাজ করেননি। এখন ঠান্ডা মাথায় ও স্থিরভাবে চিন্তা করো! আল্লাহ্ তাআলা কতো কাজ করতে বলেছেন! কতো বিধান জারী করেছেন! কিন্তু আপনি নিজে তাঁর কোনকোন বিধান পালন করছেন? চিন্তা করলে বুঝা যাবে তাঁর কতো বিধান পালনে কতো ত্রুটি হয়েছে! আশাকরি, এ কথা বুঝে এসে গেছে যে, নিজে তো আপন মহামহিম প্রতিপালকের নির্দেশাবলী পালন করবেন না, আর তিনি যদি কোন কথা (অর্থাৎ দোয়া) এর প্রভাব প্রকাশ না করেন, তখন 

অভিযোগ নিয়ে বসে যান! দেখুন না! আপনি যদি আপনার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর কোন কথা বারংবার প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে হতে পারে যে, তিনি আপনার বন্ধুত্বেরই ইতি টানবে; কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা বান্দাদের উপর কি পরিমাণ দয়াবান! লাখো বার তাঁর মহান নির্দেশের অমান্য করছে, তবুও তিনি আপন বান্দাদের তালিকা থেকে বাদ দেন না। তিনি দয়া ও করুণা করেই থাকেন। একটু চিন্তা করুন! যে সব বান্দা উপকারের কথা ভুলে 

গিয়ে অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করছে, যদি তিনিও শাস্তি স্বরূপ নিজের উপকারাদি তাদের দিক থেকে বন্ধ করে দেন, তাহলে তাদের কি পরিণতি হবে? নিশ্চয় তাঁর দয়া ছাড়া এক কদমও উঠানো সম্ভব না। আরে! তিনি যদি আপন মহান নেয়ামত বাতাসকে, যা একেবারে বিনামূল্যে দান করছেন, যদি কয়েকটা মিনিটের জন্য বন্ধ করে রাখেন, তখন তো লাশের স্তুপ পড়ে যাবে!!! 


দোয়া দেরীতে কবুল হওয়ার একটি কারণ :-


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অনেক সময় দোয়া দেরীতে কবুল হওয়ার মধ্যে কোন কল্যাণ ও হিকমত থাকে, যা আমরা বুঝতে পারিনা। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّ  ইরশাদ করেছেন:“যখন আল্লাহ্ তাআলার কোন প্রিয় বান্দা দোয়া করে তখন আল্লাহ্ তায়ালা  জিব্রাঈল عَلَیۡہِ السَّلاَم কে ইরশাদ করেন: থামো! এখন প্রদান  করো না,যেন পুনরায় প্রার্থনা করে কেননা, আমি তার আওয়াজকে পছন্দ করি”। আর যখন কোন কাফির বা ফাসিক দোয়া করে , ইরশাদ করেন: হে জিব্রাঈল عَلَیۡہِ السَّلاَم তার কাজ তাড়াতাড়ি করে দাও যেন আর প্রার্থনা না করে। কেননা আমি তার আওয়াজকে অপছন্দ করি। (কানযুল ঊম্মাল, ২য় খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩২৬১) 


ঘটনা: হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহিয়া বিন সাঈদ বিন কাত্তান رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہআল্লাহ্ তাআলাকে স্বপ্নে দেখলেন, আরয করলেন: ইয়া আল্লাহ! আমি অনেক দোয়া করি আর তুমি কবুল করো না আদেশ হল:‘হে ইয়াহিয়া! আমি তোমার আওয়াজকে পছন্দ করি তাই তোমার দোয়া কবুল হওয়ার মধ্যে বিলম্ব করি।’ (আহসানুল বিআ, ৩৫ পৃষ্ঠা) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উক্ত হাদীস শরীফ ও ঘঠনাটিতে এটা বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাআলার আপন নেক বান্দাদের কাকুতি-মিনতি সূলভ দোয়া পছন্দ। তবে এই কারণে অনেক সময় দোয়া কবুল হওয়াতে দেরী হয়।এখন এই হিকমতকে আমরা কিভাবে বুঝতে পারব। অবশ্যই দোয়াতে তারাহুড়ো করা উচিত নয়। আহসানুল ভিআ নামক কিতাবের ৩৩ পৃষ্ঠায় দোয়া আদবের বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত রয়িছুল মুতাকাল্লিমীন, মাওলানা নকী আলী খাঁন رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:-


যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি পেতে চায় তার দোয়া কবুল হয় না :-


(দোয়ার নিয়মাবলীর মধ্যে এটাও রয়েছে যে) দোয়া কবুল হবার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চায়বে না। 

হাদীস শরীফে রয়েছে-আল্লাহ্ তাআলা তিনজনের দোয়া কবুল করেন না:

(১) যে ব্যক্তি গুনাহের দোয়া করে। 

(২) যে ব্যক্তি এমন কিছু চায়, যা দ্বারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয় এবং 

(৩) যে ব্যক্তি কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি চায়। যেমন বলে ‘আমি দোয়া করছি, কিন্তু কবুল হচ্ছে না।’ (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯) এ হাদীসে পাকে বলা হয়েছে যে, না জায়িয কাজের দোয়া না করা চাই। কারণ, তা কবুল হয় না।তাছাড়া, কোন নিকটাত্মীয়ের হক বিনষ্ট হচ্ছে এমন কিছুর জন্যও প্রার্থনা না করা চাই, আর দোয়া কবূল হওয়ারও তাড়াতাড়ি করা উচিত নয়। অন্যথায় দোয়া কবুল করা হবে না। ‘আহসানুল ভিআ লিআদাবিদদোয়ায়’ এর উপর আ’লা হযরত মাওলানা শাহ, আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ পার্শ্ব ও পাদটীকায় লিখেছেন। এক জায়গায় দোয়া কবূল হবার ক্ষেত্রে  তাড়াহুড়াকারীদেরকে তিনি নিজের বিশেষ ওঅতীব জ্ঞানগত ভঙ্গিতে বুঝিয়েছেন। যেমন আমার আক্বা, আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন,


অফিসারদের নিকট তো বারংবার 

গিয়ে ধাক্কা খাও, কিন্তু...... 


‘সগানে দুনিয়া১ (অর্থাৎ পার্থিব অফিuসারদের করুণা) প্রার্থীদেরকে  অর্থাৎ তাদের নিকট থেকে সার্থোদ্বারে ইচ্ছুকগণ একে একে তিন তিন বছর পর্যন্ত আশাবাদী হয়ে অতিবাহিত করে থাকে সকাল-সন্ধ্যা তাদের কাছে ছুটাছুটি করে। আর তারা (অফিসারগণ) ফিরে তাকাইনা কথাও বলতে দেয়না বরং তিরস্কার করে, বিরক্ত হয়, নাক-ভ্রু কুচকায়, তবুও হতাশ হয় না, নিজ পকেটের টাকা খরচ করে, নিজ ঘর থেকে খাবার খায়ে, পরিশ্রমও নিষ্ফল হয় ও তদসংক্রান্ত সব কষ্ট মাথা পেতে নেয়। এভাবে সেখানে অফিসারদের নিকট ধাক্কা খেতে খেতে) বছরের পর বছর অতিবাহিত করে অথচ এখনো যেনো প্রথম দিনই! কিন্তু এরা (পার্থিব অফিসারদের নিকট ধাক্কা খোরগণ) না হতাশ হয়, 

 

টীকা ১‘(সগান’ শব্দটি ‘সগ’ এর বহুবছন। ‘সগ’ ফার্সিতে কুকুরকে বলে। যেহেতু আল্লাহ ওয়ালাগণ رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَم ক্ষমতাসীনদের নিকট থেকে দূরে থাকেন, কেননা, এ স্তরের লোকেরা সাধারণত: যুলুম-অত্যাচার ও গর্ব-অহংকার থেকে বাঁচতে পারে না। ক্ষমতার নেশায় জানিনা এসব শাসক নিজেদেরকে কি মনে করে বসে? সেহেতু আ’লা হযরত  رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তাদেরকে ‘সাগানে দুনিয়া’ (দুনিয়ার কুকুর বলে সম্বোধন করেছেন।)


না অফিসারদের পিছন ছাড়ে। আর ‘আহকামূল হাকিমীন’ (শাসকদের শাসক), আকরামুল আকরামীন (সর্বাপেক্ষা বেশি সম্মানের মালিক)

থেকে দূরে সরে যায়। আর আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র দরবারের দরজায় বা কে আসে? আর আসলেও বিরক্তবোধ করে, ভয় পায়, কাল না হয়ে আজ হয়ে যাক। এক সপ্তাহ কিছু ওয়াজিফা পাঠ করলেই অভিযোগ করতে শুরু করে। ভাই ওয়াজিফা পড়েছিলাম কোন প্রভাব দেখা যায়নি। এই নির্বোধ নিজের জন্য কবুল হওয়ার দরজা নিজে বন্ধ করে নেয়। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন:

 يستجا ب لا حد كم مالم يعجل يقول دعوت قلم يستجب لى

অর্থ: “যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়ো না কর ততক্ষন তোমাদের দোয়া কবুল হয়, আর এটা বলো না, আমি দোয়া করেছিলাম কবুল হয়নি।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ২০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৩৪০)


কেউ কেউ তো এমনভাবে সীমা অতিক্রম করে ফেলে (অর্থাৎ আয়ত্বের বাইরে চলে যায়) যে, আমল ও দোয়া সমূহের প্রভাবের প্রতি অবিশ্বাসী, বরং আল্লাহ্ তাআলার বদান্যতায় প্রতিশ্রুতির প্রতি নির্ভরহীনতা, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! এমন লোকদেরকে বলা যায়, “ওহে নির্লজ্জ লোকেরা! নিজের বগলের ঘ্রাণ নাও! যদি তোমাদের সম মর্যাদাবান কোন বন্ধু তোমাকে হাজারো বার কোন কাজের জন্য বলে, আর তুমি তার একটা কাজও করলে না, তাহলে তুমি নিজের কাজ করতে তাকে বলতে চাও তবে প্রথমে তো তুমি লজ্জাবোধ করবে, (আর চিন্তা করবে যে,) ‘আমিতো তার কোন কথাই রাখিনি, এখন কোন মুখে তাকে আমার কাজের জন্য বলবো?’ আর যদি কোন বড় উদ্দেশ্যই থাকে, তাকে বলেও ফেলো, আর সে যদি তোমার কাজ না করে, তবে তুমি সেটাকে মোটেই অভিযোগের বিষয় বলে মনে করবে না।’ কারণ তো নিজেই বুঝতে পারছো যে, আমি (তার কাজ) কবে করেছিলাম, যার ভিত্তিতে সে আমার কাজও করে দিতো।এখন যাচাই করো! তোমরা নিঃশর্ত মালিক এর কতগুলো বিধান পালন করছো? তাঁর নির্দেশ পালন না করা আর নিজের দরখাস্তের যে কোন অবস্থাতেই মঞ্জুরী চাওয়া কতোই নির্লজ্জতা!!! ওহে নির্বোধ! তারপর পার্থক্য দেখ! নিজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত গভীরভাবে দৃষ্টি কর। একেকটি রন্দ্রে কতো হাজার কতো লক্ষ বরং অগণিত নেয়ামত রয়েছে? তুমি ঘুমিয়ে থাক, আর তাঁর নিষ্পাপ (ফেরেশতারা) তোমাকে রক্ষার জন্য পাহারা দিচ্ছেন! তুমি গুনাহ করছ! আর (এতদসত্ত্বেও) মাথা থেকে পা পর্যন্ত সুস্থতা ও আরাম! বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা, আহারের হজম, দেহের অতিরিক্ত জিনিসের (অর্থাৎ 

শরীরের ভিতরের আবর্জনা) অপসারণ, রক্ত সঞ্চালন, অঙ্গ প্রত্যঙ্গে শক্তি, চোখে জ্যোতি, হিসাববিহীন দয়া, প্রার্থনা ছাড়াই তোমার উপর নেমে আসছে। তারপরও যদি তোমার কোন ইচ্ছা পূরণ না হয়, তবে কোন মুখে অভিযোগ করছ? তুমি কি জান? তোমার মঙ্গল কিসের মধ্যে? তুমি কি জান? কেমন কঠিন বিপদ আসার ছিলো? কিন্তু ওই (তোমার দৃষ্টিতে কবুল হয়নি এমন) দোয়া কেন দূরীভূত করেছে? তুমি কি জান? ওই দোয়ার পরিবর্তে তোমার জন্য কেমন সাওয়াব জমা হচ্ছে? তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কবুল হবার এ তিনটি ধরন রয়েছে, যে গুলোর মধ্যে প্রতিটির পরবর্তী সেটার পূর্ববর্তীর অপেক্ষা উত্তম। হ্যা! বিশ্বাস না হলে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ! তুমি মরেছিলে! অভিশপ্ত শয়তান তোমাকে তার মতো করে নিয়েছে। আল্লাহ্ তাআলারই পানাহ্! তাঁরই পবিত্রতা এবং তিনি মহান। ওহে অধম মাটি! ওহে নাপাক পানি! নিজের মুখটি দেখ! আরও মহা মর্যাদায় গভীরভাবে চিন্তা কর! তিনি তাঁর দরবারে হাযির হবার, আপন পাক ও মহান নাম নেয়ার, তাঁর দিকে মুখ করার এবং তাঁকে ডাকার জন্য তোমাকে অনুমতি দিচ্ছেন! লাখো ইচ্ছা এ মহা অনুগ্রহের উপর কুরবান 

(উৎসর্গ)।

ওহে ধৈর্যহীন! একটু ভিক্ষা চাওয়া শিখে নাও! এ উচ্চ-মর্যাদাশীল আস্তানার মাটির উপর লুটিয়ে পড়! আর জড়িয়ে থাক! এক নজরে তাকিয়ে থাক! হয়তো এক্ষুণি দিচ্ছেন! বরং আহ্বান করার ও তাঁর দরবারে মুনাজাত করার তৃপ্তিতে এমনিভাবে ডুবে যাও যেনো ইচ্ছা-আক্বাঙ্খা কিছু স্মরণ না থাকে! নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস কর! এ দরজা থেকে কখনো বঞ্চিত হয়ে ফিরবে না! যে ব্যক্তি দাতার দরজার কড়া নাড়া দেয়, সেটা খুলে যায়। আর শক্তি-সামর্থ্য মহামহিম আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে আসে। 


দোয়া কবুলে বিলম্ব হওয়া তো দয়াই :-


হযরত সায়্যিদুনা মাওলানা নকী আলী খান رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:-“ওহে প্রিয়! তোমার প্রতিপালক বলেন: اجيب دعوة الداع اذادعان


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমিদোয়া কবুল করি আহ্বানকারীর যখন সে আমাকে আহ্বান করে। (সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৬, পারা-২)


فلنعم المجيبون


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমি কতোই উত্তম কবুলকারী। (সূরা-ছফ্ফাত, আয়াত-৭৫, পারা-২৩)


ادعو نى استجب لكم

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: 

আমার নিকট দোয়া প্রার্থনা করো! আমি কবুল করবো! (পারা-২৪, সূরা মু’মিন, আয়াত-৬০)




তাই নিশ্চিতভাবে বুঝে নাও, তিনি তোমাকে তাঁর দরজা থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং আপন প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন। তিনি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم কে ইরশাদ করেন: واما السا ءل فلا تنهر


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ভিক্ষুককে তিরস্কার করো না। (পারা-৩০, সূরা-ওয়াদ্ দোহা, আয়াত-১০)


 সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা কীভাবে তোমাকে আপন বদান্যতার দস্তরখাবার থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন?বরং তিনি তোমার প্রতি কৃপাদৃষ্টি রাখেন। কারণ, তোমার দোয়া কবুল করার বেলায় বিলম্ব করেন।সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলার জন্য সমস্ত প্রশংসা। (আহসানুল বিআ, ৩৩ পৃষ্ঠা) 


“ইরকুন্নিছা” নামক পায়ের ব্যথা সেরে গেল :-


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!  

اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ 

তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী ক্বাফিলার আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করে সেখানে দোয়াকারীদের সমস্যাদীর সমাধানের অনেক ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। এক ইসলামী ভাই এর বয়ান নিজস্ব ভাষায় বলার সৌভাগ্য অর্জন করছি। আমাদের মাদানী কাফেলা টট্টা শহরে অবস্থান করছিল। সফরকারী ইসলামী ভাইদের মধ্যে একজন ‘ইরকুন্নিছা’ নামক পায়ের প্রচন্ড ব্যথায় ভোগ ছিল। বেচারা ব্যথার যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে ছটফট করত। একবার ব্যথার যন্ত্রণায় সারারাত ঘুমাতে পারলনা। মাদানী কাফেলার শেষ দিন আমীরে কাফেলা বললেন: আসুন আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি। অতএব দোয়া শুরু হল। ঐ ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ দোয়া করা অবস্থায় ব্যথা কমতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে ‘ইরকুন্নিছা’ নামক ব্যথা সম্পূর্ণভাবে চলে গেল। সই কাফেলার পর থেকে আজকের বর্ণনা পর্যন্ত অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু আমি আর ২য় বার ইরকুন্নিছা নামক ব্যথার ভোগান্তির শিকার হইনি। اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ এই ঘটনা বর্ণনার সময় আমার এলাকায়ী মাদানী কাফেলা যিম্মাদার  হিসাবে মাদানী কাফেলার খিদমত করার সুযোগ মিলেছে। 


গরহো ইরকুন নিছা ইয়া আরেযী কোয়ী ছা 

পাও গিয়ে সিহ্যাতি কাফিলে মে চলো। 

দূর বিমারিয়া, আওর পেরিশানিয়া, 

হোগী বস ছল পড়ে কাফিলে মে চলো।


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলার বরকতে ইরকুন্নিছার মত কষ্টদায়ক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া গেল ইরকুন্নিছার পরিচয় হল এই রোগে রান থেকে পায়ের টাখনু পর্যন্ত মারাত্মক ব্যথা অনুভব হয়। তা এক বছরের কমে আরোগ্য হয় না। 


‘ইরকুন্নিছার ২টি রূহানী চিকিৎসা’:-


 (১) ব্যথার স্থানের উপর হাত রেখে শুরুতে ও শেষে দরূদ শরীফ পড়ে সূরা ফাতিহা ১ বার ও ৭ বার নিমোক্ত দোয়াটি পড়ে ফুঁক দিবেন। اللهم اذهب عنى سؤ ما اجد 

অর্থ: ইয়া আল্লাহ্! আমার থেকে রোগটি দূর করে দাও। যদি অন্য কেউ ফুঁক দেয় তবে  عنى এর স্থলে বলবে عنه(সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত) 

 (২)

(يا محيى)

 সাতবার পড়ে গ্যাস হোক বা পেটে পিঠে কষ্ট হোক, কিংবা কোন অঙ্গ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তবে এর উপর ফুঁক দিবেন। ফলপ্রসু হবে। (চিকিৎসার সময়কাল: ভাল হওয়া পর্যন্ত) 


রোযা ভঙ্গকারী ১৪ টি কারন:-


(১) পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়; যদি রোযাদার হবার কথা স্মরণ থাকে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)


(২) হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়, যদিও নিজের ধারণায় কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধেঁায়া পৌছেনি। (বাহারে শরীয়াত, ৫ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)


৩) পান কিংবা নিছক তামাক খেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। যদিও আপনি সেটার পিক বারংবার ফেলে দিয়ে থাকেন। কারণ, কণ্ঠনালীতে সেগুলোর হালকা অংশ অবশ্যই পৌছে থাকে। (প্রাগুক্ত)


(৪) চিনি ইত্যাদি, এমন জিনিষ, যা মুখে রাখলে গলে যায়, মুখে রাখলো আর থুথু গিলে ফেললো এমতাবস্থায় রোযা ভঙ্গ হবে। (প্রাগুক্ত)



(৫) দাঁতগুলোর মধ্যভাগে কোন জিনিষ ছোলা বুটের সমান কিংবা তদপেক্ষা বেশি ছিল। তা খেয়ে ফেললো। কিংবা কম ছিলো; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেয়ে ফেললো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা)


(৬) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলো। আর রক্ত থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম ছিলো, কিন্তু সেটার স্বাদ কণ্ঠে অনুভুত হলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং যদি কম ছিলো আর স্বাদও কণ্ঠে অনুভুত হয়নি, তাহলে এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৮)


(৭) রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ‘ঢুস’১*নিলো, কিংবা নাকের ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০৪)


(৮) কুলি করছিলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কণ্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলো। কিংবা নাকে পানি দিলো; কিন্তু তা মগজে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি রোযাদার হবার কথা ভুলে যায়, তবে রোযা ভাঙ্গবে না। যদিও তা ইচ্ছাকৃত হয়। অনুরূপভাবে রোযাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কণ্ঠে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৮)


(৯) ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললো, অথবা মুখ খোলা ছিলো; পানির ফোঁটা কিংবা বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি কণ্ঠে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা)


(১০) অন্য কারো থুথু গিলে ফেললো। কিংবা নিজেরই থুথু হাতে নেয়ার পর গিলে ফেললো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আমলগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)

 

অর্থাৎ কোন ঔষধের ফিতা কিংবা সিরিঞ্জ পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালো, আর তা 

সেখানে স্থায়ীও হলো।


(১১) যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতর বিদ্যমান থাকে। তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না। বারংবার থুথু ফেলতে থাকা জরুরী নয়। 


(১২) মুখে রঙ্গিন সূতা ইত্যাদি রাখার ফলে থুথু রঙ্গিন হয়ে গেলো। তারপর ওই রঙ্গিন থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)


(১৩) চোখের পানি মুখের ভিতর চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললেন। যদি এক/দু’ ফোটা হয় তবে রোযা ভাঙ্গবে না। আর যদি বেশি হয়। যারফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভুত হয়। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ঘামেরও একই বিধান। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)


(১৪) মলদ্বার বের হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় বিধান হচ্ছে, তখন খুব ভাল করে কোন কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তা মুছে ফেলার পর দাঁড়াবে যাতে সিক্ততা বাকী না থাকে। আর যদি কিছু পানি অবশিষ্ট ছিলো, আর দাঁড়িয়ে গেলো, যার কারণে পানি ভিতরে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এ কারণে সম্মানিত ফকীহগণ  رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَم “রোযাদার পানি ব্যবহারের সময় নিবে না।’ (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা)


রোযাবস্থায় বমি হলে! কখনো যদি রোযার সময় বমি হয়, তখন লোকেরা চিন্তিত হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ মনে করে যে, রোযা পালন কালে এমনিতে নিজে নিজে বমি হয়ে গেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। অথচ তেমন নয়। যেমন সায়্যিদুনা আবু হুুরাইরাرَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ বর্ণিত, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: “যার মাহে রমযানে আপনা আপনি বমি এসে যায়, তার রোযা ভাঙ্গে না। আর যে ব্যক্তি সেচ্ছায় বমি করে তার রোযা ভেঙ্গে যায়।” (কানযুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৮১৪)


অন্যত্র ইরশাদ করেছেন: “যার আপনা আপনি বমি এসেছে তার উপর কাযা নেই। আর যে জেনে বুঝে বমি করেছে সে কাযা করবে।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭২০)


বমির ৭টি নিয়মাবলী :-


(১) রোযা অবস্থায় যদি এমনিতেই কয়েকবার বমি এসে যায়। (চাই বালতি ভরে হোক)-এর কারণে রোযা ভাঙ্গে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)


(২) যদি রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় (জেনে বুঝে) বমি করলো, আর যদি তা মুখ ভর্তি করে আসে, (মুখ ভর্তির সংজ্ঞা সামনে আসছে), তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (প্রাগুক্ত)


(৩) ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি হওয়ার ক্ষেত্রে ঐ সময় রোযা ভেঙ্গে যাবে যখন বমির সাথে খাবার অথবা পানি বা হলুদ ধরনের তিক্ত পানি অথবা রক্ত আসে। 


(৪) যদি বমিতে শুধু কফ বের হয়, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা)


(৫) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলো; কিন্তু সামান্য বমি আসলো, মুখ ভর্তি হয়ে আসেনি, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৩ পৃষ্ঠা)


(৬) মুখভর্তি অপেক্ষা কম বমি হলে মুখ থেকে ফিরে গেলো। কিংবা নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছে এমতাবস্থায়ও রোযা ভাঙ্গবে না। (প্রাগুক্ত)


(৭) অনিচ্ছাকৃত মুখভর্তি বমি হয়ে গেলো রোযা ভাঙ্গবে না। অবশ্য, যদি তা থেকে একটা বুটের সমানও গিলে ফেলা হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে 

যাবে। আর এক বুটের পরিমাণের চেয়ে কম হলে রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)


মুখভর্তি বমির সংজ্ঞা :-


মুখভর্তি বমির অর্থ হচ্ছে-সেটা অনায়াসে চলে আসে, যা চেপে রাখা যায় না। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা) 


অযুবস্থায় বমির পাঁচটি শরয়ী বিধান :-


(১) অযু অবস্থায় (জেনে বুঝে করুক কিংবা নিজে নিজে হয়ে যাক উভয় অবস্থায়) যদি মুখভর্তি বমি আসে, আর তাতে খাদ্য, পানীয় কিংবা হলদে বর্ণের তিক্ত পানি আসে তবে অযু ভেঙ্গে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা)


(২) যদি মুখভর্তি কফ-বমি হয, তবে অযু ভাঙ্গবে না। (প্রাগুক্ত)


(৩) প্রবাহমান রক্ত বমি হলে অযু ভেঙ্গে যাবে। 


(৪) প্রবাহমান রক্তবমি তখনই অযু ভেঙ্গে ফেলবে, যখন রক্ত থুথু অপেক্ষা বেশি হয়। (রদ্দে মুহতার, ১ম খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা) অর্থাৎ রক্তের কারণে বমি লাল হয়ে যায়। তখন রক্ত বেশি বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় অযু ভেঙ্গে যায়। আর যদি থুথু বেশি হয় রক্ত কম হয়, তবে অযু ভাঙ্গবে না। রক্ত কম হওয়ার চিহ্ন হচ্ছে-পূর্ণ বমি, যাতে থুথু থাকে, তা হলদে বর্ণের হবে। 


(৫) যদি বমিতে জমাট বাঁধা রক্ত বের হয়, আর তা পরিমাণে মুখভর্তি থেকে কম হয়, তবে অযু ভাঙ্গবে না। (বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা) 


প্রয়োজনীয় নির্দেশনা :-


মুখভর্তি বমি, (কফ ব্যতীত) একেবারে প্রস্রাবের মতোই নাপাক।এর কোন ছিটা কাপড় কিংবা শরীরের উপর না পড়া চাই। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো! আজকাল লোকেরা এ ক্ষেত্রে বড়ই অসতর্কতা দেখায়। কাপড়ে ছিটা পড়–ক তাতে কোন পরোয়াই করে না। আর মুখ ইত্যাদির উপর যেই নাপাক বমি লেগে যায় তাও নির্দ্বিধায় নিজের কাপড় দ্বারা মুছে নেয়। আল্লাহ তা'আলাআমাদেরকে প্রত্যেক প্রকারের অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করো! 


ভুলবশতঃ পানাহার করলে রোযা ভাঙ্গে না।


হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہٰবর্ণিত, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার   صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “যে রোযাদার ভুলবশত: পানাহার করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে কারণ, তাকে আল্লাহ্ তাআলাপানাহার করিয়েছে। (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯৩৩)


রোযা ভঙ্গ হয় না এমন জিনিসের ব্যাপারে ২১ নিয়মাবলী :


(১) ভুলবশতঃ আহার করলে, পান করলে কিংবা স্ত্রী-সহবাস করলে রোযা ভাঙ্গে না, চাই ওই রোযা ফরয হোক কিংবা নফল। (আদ-দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)


(২) কোন রোযাদারকে এসব কাজ করতে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি আপনি স্মরণ করিয়ে না দেন তবে গুনাহগার হবেন। হ্যাঁ, যদি রোযাদার খুবই দুর্বল হয়, কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিলেপানাহার ছেড়ে দিবে, যার ফলে তার দূর্বলতা এতোই বেড়ে যাবে যে, তার জন্য রোযা রাখা কঠিন হয়ে যাবে, আর পানাহার করে নিলে রোযাও ভালোভাবে পূর্ণ করে নিবে এবং অন্যান্য ইবাদতও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, (যেহেতু সে ভুলে পানাহার করছে, এ কারণে তার রোযাও পূর্ণ হয়ে যাবে।) এমতাবস্থায়, স্মরণ করিয়ে না দেয়াই উত্তম। কোন কোন মাশাইখে কিরামرَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَم“যুবককে দেখলে স্মরণ করিয়ে দিবেন, আর বৃদ্ধকে দেখলে স্মরণ করিয়ে না দিলেও ক্ষতি নেই।” কারণ, যুবক বেশিরভাগই শক্তি শালী হয়ে থাকে। আর বুড়ো হয় বেশিরভাগ দুর্বল। সুতরাং বিধান হচ্ছে এ যে, যৌবন ও বার্ধক্যের কোন কথা এখানে নেই, বরং সক্ষম হওয়া ও দুর্বলতাই এখানে বিবেচ্য। অতএব যুবকও যদি এ পরিমাণ দূর্বল হয়,তবে স্মরণ করিয়ে না দেয়ার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই। আর বয়স্ক অথচ যদি শক্তিশালী হয় তবে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)


(৩) রোযার কথা মনে থাকা সত্ত্বেও যদি মাছি কিংবা ধুলিবালি কিংবা ধোয়া কণ্ঠনালী দিয়ে ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয় না, চাই ধুলি আটার হোক, যা চাক্কি পেষণ কিংবা আটা মেশিনে নেয়ার সময় উড়ে থাকে, চাই ফসলের ধুলি হোক, চাই বাতাসে মাটি উড়ে আসুক, কিংবা পশুর খুর ও পা থেকে আসুক। (আদ দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা)


(৪) অনুরূপভাবে, বাস কিংবা গাড়ির ধেঁায়া অথবা সেগুলোর কারণে ধুলি ওড়ে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে, যদিও রোযাদার হবার কথা স্মরণ ছিলো, তবুও রোযা ভাঙ্গবে না। 


(৫) যদি এমন হয় যে, বাতি জ্বলছে, আর সেটার ধোয়া নাকে প্রবেশ করেছে, তবু রোযা ভাঙ্গবে না। হ্যাঁ, যদি লোবান কিংবা আগর বাতি জ্বলতে থাকে আর রোযার কথা মনে থাকা সত্ত্বেও মুখ সেটার নিকটে নিয়ে গিয়ে নাক দ্বারা ধেঁায়া টানে, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা)


(৬) শিঙ্গা লাগালো কিংবা তেল অথবা সুরমা লাগালো, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না; যদিও তেল কিংবা সুরমার স্বাদ কণ্ঠনালীতে অনুভুত হয়, এমনকি যদি থুথুর মধ্যে সুরমার রং দেখা যায়, তবুও রোযা ভাঙ্গবে না। (আল-জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা)


(৭) গোসল করলে পানির শীতলতা, ঠান্ডা ভিতরে অনুভুত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা)


(৮) কুলি করে পানি ফেলে দিলো। শুধু কিছুটা আর্দ্রতা মুখে অবশিষ্ট রয়ে গেলো, থুথুর সাথে তা গিলে ফেলল, রোযা ভাঙ্গবে না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা)


(৯) ঔষধ দাঁতে কাটলো, কণ্ঠনালীতে সেটার স্বাদ অনুভুত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না। (প্রাগুক্ত)


(১০) কানে পানি ঢুকে গেলে, রোযা ভঙ্গ হয় না, বরং খোদ্ পানি ঢাললেও রোযা ভাঙ্গবে না। (আদ দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা)

(১১) খড়কুটা দ্বারা কান চুলকালো, ফলে ওই খড়কুটার ময়লা লেগে গেলো, আর ওই খড়কুটাটি পুনরায় কানে দিলো। সে কয়েকবার এমন করলেও রোযা ভাঙ্গবে না। (প্রাগুক্ত)

(১২) দাঁত কিংবা মুখে হালকা এমন কোন জিনিষ অজানাবশত: রয়ে গেলো, যা থুথুর সাথে নিজে নিজেই নিচে নেমে যায়। বাস্তবেও তা নেমে গেছে। তবুও রোযা ভাঙ্গবে না। (প্রাগুক্ত) 

 

এটা ব্যথার চিকিৎসার একটা বিশেষ পদ্ধতি, যাতে ছিদ্র শিং ব্যথাগ্রস্থ স্থানে রেখে মুখ দিয়ে শরীরের দুষিত রক্ত টেনে বের করা হয়।


(১৩) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালী পর্যন্ত গেলে, কিন্তু কণ্ঠনালী অতিক্রম করে নিচে নামেনি। এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গেনি। (ফতহুল কদীর, ২য় খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা)


(১৪) মাছি কণ্ঠনালীতে চলে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা) 


(১৫) ভুল করে খাবার খাচ্ছিলো। মনে হতেই লোকমা ফেলে দিলে কিংবা পানি পান করছিলো, স্মরণ হতেই মুখের পানি ফেলে দিলো। তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু যদি মুখের ভিতরের লোকমা কিংবা পানি স্মরণ হওয়া সত্ত্বেও গিলে ফেলে তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (প্রাগুক্ত)


(১৬) সুবহে সাদিকের পূর্বে আহার কিংবা পান করছিলো, আর ভোর হতেই (অর্থাৎ সেহেরীর সময়সীমা শেষ হতেই) মুখের ভিতরের সবকিছু ফেলে দিল, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না, আর যদি গিলে ফেলে তবে ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা) 


(১৭) গীবত করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (আদ দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা) যদিও গীবত জঘন্য কবীরা গুনাহ্। কুরআন মজীদে গীবত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতোই।’ আর হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘গীবত যেনা থেকেও জঘন্যতর।’ (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ৩য় খন্ড, ৩৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬) অবশ্য, গীবতের কারণে রোযার নূরানিয়্যাত শেষ হয়ে যায়। (বাহারে শরীয়াত, ৫ম খন্ড, ৬১১ পৃষ্ঠা) 


(১৮) ‘জানাবত’ (অর্থাৎ গোসল ফরয হবার) অবস্থায় কারো ভোর হলো, বরং গোটা দিনই ‘জুনুব’ (অর্থাৎ গোসল বিহীন) রয়ে গেলো, তবুও রোযা ভাঙ্গেনি। (আদ দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড,৩৭২ পৃষ্ঠা) কিন্তু এত দীর্ঘক্ষণ যাবত ইচ্ছাকৃতভাবে(অর্থাৎ জেনে বুঝে) গোসল না করা, যাতে নামায কাযা হয়ে যায়, গুনাহ ও হারাম। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ঘরে ‘জুনুবী’ থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” (বাহারে শরীয়াত, ৫ম খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা)


(১৯) সরিষা কিংবা সরিষার সমান কোন জিনিষ চিবালে, আর থুথুর সাথে কণ্ঠনালী দিয়ে নিচে নেমে গেলে, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু যদি সেটার স্বাদ কণ্ঠনালীতে অনুভূত হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (ফতহুল কাদীর, ২য় খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা)


(২০) থুথু কিংবা কফ মুখে আসলে সেটা গিলে ফেললো, রোযা ভাঙ্গবে না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)


(২১) অনুরূপভাবে নাকে শ্লেষ্মা জমা হয়ে রইলো। তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে টেনে গিলে ফেললেও রোযা ভাঙ্গবে না। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা) 


রোযার মাকরূহ সমূহ :-


এখন রোযার মাকরূহ সমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে, যে সব কাজ করলে রোযা বিশুদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু সেটার নূরানিয়্যাত চলে যায়। প্রথমে তিনটি হাদীস শরীফ দেখুন, তারপর ফিকহ শাস্ত্রের বিধানাবলী আরয করা হবে। 


(১) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ থেকে বর্ণিত, খাতামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) খারাপ কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করেনি, তার ক্ষুধার্ত থাকা আল্লাহ্ তাআলার কাছে কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯০৩) 


(২) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ থেকে বর্ণিত, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর  صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেন: “রোযা হচ্ছে ঢাল, যতক্ষণ না সেটাকে ছিদ্র করে না দাও।” আরয করা হলে, “কোন জিনিষ দিয়ে ছিদ্র করা হয়?” ইরশাদ করলেন: “মিথ্যা কিংবা গীবত দ্বারা।” (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-০৩)


(৩) হযরত সায়্যিদুনা আমের ইবনে রবীআহ  رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে  বর্ণিত; “আমি অনেকবার মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার কে রোযা পালনকালে মিসওয়াক করতে দেখেছি।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭২৫)


রোযার মাকরূহ সমূহের ১২টি নিয়মাবলী :-


(১) মিথ্যা, চোগলখোরী, গীবত, কুদৃষ্টি, গালিগালাজ করা, শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত কারো মনে কষ্ট দেয়া ও দাড়ি মুন্ডানো ইত্যাদি কাজ এমনিতেতো অবৈধ ও হারাম বা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, রোযাবস্থায় আরো মারাত্নক হারাম। সেগুলোর কারণে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। 


(২) রোযাদারের জন্য কোন জিনিষকে বিনা কারণে স্বাদ গ্রহণ করা ও চিবুনো মাকরূহ। স্বাদ গ্রহণের জন্য ওযর হচ্ছে, যেমন কোন নারীর স্বামী বদ-মেযাজী তরকারী ইত্যাদিতে লবণ কমবেশি হলে রাগ করবে। এ কারণে স্বাদ গ্রহণে ক্ষতি নেই। চিবুনোর জন্য ওযর হচ্ছে, এতোই ছোট শিশু আছে যে রুটি চিবুতে পারে না; এমন কোন নরম খাদ্যও নেই যা তাকে খাওয়ানো যাবে; না আছে কোন ঋতুস্রাব কিংবা নিফাস সম্পন্না নারী অথবা এমন কেউ নেই, যে তা চিবিয়ে দিবে, তাহলে শিশুকে খাওয়ানোর জন্য রুটি ইত্যাদি চিবানো মাকরূহ নয়। (আদ দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা)


কিন্তু এ ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বণ করবে। যদি কণ্ঠনালী দিয়ে কিছু নিচে নেমে যায় তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে।স্বাদ গ্রহণ কাকে বলে? স্বাদ গ্রহণের অর্থও তা নয়, যা আজকাল সাধারণ পরিভাষায় বলা হয়। অর্থাৎ আজকাল বলতে শোনা যায়, ‘কোন জিনিষের স্বাদ বুঝার জন্য তা থেকে কিছুটা খেয়ে নেয়া যাবে।’এমন করা হলে মাকরূহ কিভাবে? বরং রোযাই ভেঙ্গে যাবে; এবং কাফ্ফারার শর্তাবলী পাওয়া গেলে কাফ্ফারাও অপরিহার্য হয়ে যাবে। স্বাদ নেয়ার অর্থ হচ্ছে-শুধু জিহ্বায় রেখে স্বাদ বুঝে নিবেন। আর সাথে সাথে তা থুথুর সাথে ফেলে দিবেন, তা থেকে যেন কণ্ঠনালী দিয়ে কিছু নিচে যেতে না পারে। 

 

ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তরকালীন রক্তক্ষরণকালে (হায়য ও নিফাসসম্পন্না) নারীর জন্য রোযা, নামায ও তিলাওয়াত না-জায়িয ও গুনাহ্। নামায তার জন্য মাফ; কিন্তু পাক হয়ে যাবার পর রোযার কাযা আদায় করতে হবে।


(৩) যদি কোন জিনিষ কিনলো আর সেটার স্বাদ দেখা জরুরী। কারণ, স্বাদ না দেখলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এমতাবস্থায় স্বাদ পরীক্ষা করতে সমস্যা নেই, অন্যথায় মাকরূহ। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা)


(৪) স্ত্রীকে চুমু দেয়া ও আলিঙ্গন করা এবং স্পর্শ করা মাকরূহ নয়; অবশ্য যদি এ আশঙ্কা থাকে, বীর্যপাত হয়ে যাবে, কিংবা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাবে তাহলে করা যাবে না। আর ঠোট ও জিহ্বা শোষণ করা রোযার মধ্যে নিঃশর্তভাবে মাকরূহ অনুরূপভাবে ‘মুবাশারাতে ফাহিশাহ (অর্থাৎ বিবস্ত্রাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যৌনাঙ্গ লাগানো মাকরূহ)। ১(রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৬ পৃষ্ঠা) 


(৫) গোলাপ কিংবা মুশক ইত্যাদির ঘ্রাণ নেয়া, দঁাড়ি ও গোঁফে তেল লাগানো ও সুরমা লাগানো মাকরূহ নয়। (আদ দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৭ পৃষ্ঠা) 


(৬) রোযা রাখা অবস্থায় যে কোন ধরণের আতরের ঘ্রাণ নেয়া যেতে পারে। আর কাপড়েও ব্যবহার করা যাবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৭ পৃষ্ঠা)


(৭) রোযা পালনকালে মিসওয়াক করা মাকরূহ নয় বরং অন্যান্য দিনগুলোতে যেমন সুন্নাত তেমনি রোযায়ও সুন্নাত। মিসওয়াকও শুষ্ক হোক কিংবা ভেজা, যদিও পানি দ্বারা নরম করে নেয়া হয়, সূর্য 

পশ্চিম দিকে হেলার পূর্বে করুক কিংবা পরে করুক, কোন সময় বা কোন অবস্থাতেই মাকরূহ নয়। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৯ পৃষ্ঠা) 


(৮) বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এ কথা প্রসিদ্ধ, রোযাদারের জন্য দুপুরের পর মিসওয়াক করা মাকরূহ। এটা আমাদের হানাফী মাযহাবের মাসআলা বিরোধী কথা। (প্রাগুক্ত)


(৯) যদি মিসওয়াক চিবুলে আঁশ ছুটে যায়, স্বাদ অনুভুত হয়, এমন মিসওয়াক রোযা পালনকালে ব্যবহার করা উচিত নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংশোধিত, ১০ম খন্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা) যদি রোযার কথা স্বরণ থাকা সত্তেও মিসওয়াকের কোন আঁশ কিংবা কোন অংশ কণ্ঠনালীর নিচে নেমে যায়, তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে। 

 

বিবাহের নিয়্যত সম্পর্কিত বিষয় সমূহ জানার জন্য ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, ২৩ খন্ডের ৩৮৫-৩৮৬ পৃষ্ঠায় ৪১, ৪২ নম্বর মাসআলা অধ্যয়ন করুন।


(১০) অযু ও গোসল ব্যতীত ঠান্ডা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কুল্লি করা কিংবা নাকে পানি দেয়া অথবা ঠান্ডার খাতিরে গোসল করা বরং শরীরের উপর ভেজা কাপড় জড়ানো মাকরূহ নয়। অবশ্য পেরেশানীভাব প্রকাশের জন্য ভেজা কাপড় জড়ানো মাকরূহ, ইবাদত পালনে মনকে সঙ্কুচিত করা ভালো কথা নয়। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯৯ পৃষ্ঠা)


(১১) কোন কোন ইসলামী ভাই বারংবার থুথু ফেলতে থাকে। হয়তো সে মনে করে, রোযা পালনকালে থুথু গিলে ফেলা উচিত নয়। মূলত: 

এমন নয়। অবশ্য, মুখে থুথু একত্রিত করে গিলে ফেলা-এটাতো রোযা ছাড়া অন্য সময়েও অপছন্দনীয় কাজ। আর রোযা পালনকালে মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ৫ম খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা)


(১২) রমযানুল মোবারকের দিনগুলোতে এমন কোন কাজ করা জায়িয নেই, যার কারণে এমন দূর্বলতা এসে যায়, রোযা ভেঙ্গে গেছে কিনা এমন ধারণা জন্মে। সুতরাং রুটি প্রস্তুতকারকের উচিত হচ্ছে, দুপুর পর্যন্ত রুটি পাকাবে, তারপর বিশ্রাম নিবে। (দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা) এ বিধান রাজমিস্ত্রি, মজদুর ও অন্যান্য পরিশ্রমী লোকদের জন্যও। বেশি দূর্বলতার সম্ভাবনা হলে কাজের পরিমাণ কমিয়ে নিন, যাতে রোযা সম্পন্ন করতে পারেন। আসমান থেকে কাগজের টুকরো পড়ল প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রোযার শরয়ী বিধান সমূহ শিখার প্রেরণা জাগানোর জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীতে আশিকানে রাসূলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর রাকে নিজের অভ্যাসে পরিনত করুন। একবার সফর করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন


আপনার সেই সমস্ত দ্বীনি উপকার অর্জন হবে যা দেখে আপনি আশ্চর্য হবেন। আপনাদের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য মাদানী কাফেলার একটি বাহার আপনাদের শুনাচ্ছি। যেমন কাসবা কালুনী বাবুল মদীনা, করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা, আমাদের বংশে অনেক মেয়ে সন্তান ছিল।


চাচার ঘরে ৭ মেয়ে, বড় ভাইয়ের ঘরে ৯ মেয়ে, আমার বিবাহ হল আমারও কন্যা সন্তান জন্ম নিল। সবাই চিন্তা করতে লাগল। বর্তমান সময়ে সাধারণ খেয়াল মত সকলে বুঝে নিল, কেউ যাদু করে বংশ বিস্তারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মান্নত করলাম আমার যদি ছেলে হয় তাহলে আমি ৩০ দিন মাদানী কাফেলায় সফর করব। আমার বাচ্চার মা একবার স্বপ্নে দেখল, আসমান থেকে কোন কাগজের টুকরো তার কাছে এসে পড়ল। তা উঠিয়ে দেখল সেখানে লিখা ছিল“বেলাল”।    اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ ৩০ দিন মাদানী কাফেলার বরকতে আমার ঘরে মাদানী মুন্না (ছেলে) জন্ম হল। তাও আবার ১টি নয় পরপর দুটি মাদানী মুন্নার (ছেলের) জন্ম হল। আল্লাহ্ তাআলার দয়া আর মেহেরবানী দেখুন। ৩০ দিনের মাদানী কাফেলার বরকত শুধু আমার কাছে সীমাবদ্ধ ছিল না। আমাদের বংশে যাদের ছেলে ছিল না। তাদের প্রত্যেকের ছেলে সন্তান জন্ম নিল।   اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّএই বর্ণনা দেয়ার সময় আমি এলাকার মাদানী কাফেলার যিম্মাদার হিসাবে মাদানী ফুল সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছি। 


আকে তুম বাআদব, দেখলো ফজলো রব, মাদানী মুন্নে মিলে কাফিলে মে চলো, খুটি কিসমত খরি, গৌদ হোগি হরি, মুন্না মুন্নি মিলে কাফিলে মে চলো। 


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


আল্লাহ্ তাআলার দরবারে চাওয়ার পর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হওয়া ও পুরস্কার !প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলার বরকতে কিভাবে মনের আক্বা পূর্ণ হয়। আক্বার শুকনো বাগান তরতাজা হয়ে যায়। কিন্তু একথাও মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের মনের আক্বা পূর্ণ হতে হবে এটা জরুরী নয়। বারবার এরকম হয় যে বান্দা যা চায় তা তার জন্য কল্যাণকর নয় তাই তার দোয়া পূর্ণ করা হয় না। তার মুখে চাওয়ার পর সেটা না পাওয়াটাই তার জন্য পুরস্কার। যেমন-কেউ ছেলের জন্য দোয়া করল, কিন্তু মাদানী মুন্নী (মেয়ে) হল এবং এটাই তার জন্য উত্তম। যেমন- আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:



َﻋَﺴَﻰٰٓ ﺃَﻥ ﺗُﺤِﺒُّﻮﺍ۟ ﺷَﻴْـًٔﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﺮٌّ ﻟَّﻜُﻢ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সম্ভবতঃ

কোন বিষয় তোমাদের পছন্দনীয় হবে 

অথচ তা তোমাদের পক্ষে অকল্যাণকর 

হয়। (পারা-২, বাকারা, আয়াত-২১৬)

 

কন্যা সন্তানের ফযীলত :-


মনে রাখবেন! কন্যা সন্তানের ফযীলত কোন অংশে কম নয়। এই ব্যাপারে ৩টি হাদীস শরীফ শুনুন:- 

(১) যে ব্যক্তি নিজের তিনজন কন্যা সন্তানের লালন পালন করে সে জান্নাতে যাবে এবং তাকে এমন মুজাহিদের সাওয়াব দান করবে, যে মুজাহিদ জিহাদ অবস্থায় রোযা রাখে ও নামায কায়েম করে (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ৩য় খন্ড, ৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬ দারুল কুতবিল ইলমিয়া্ বৈরুত)


(২) যার তিনজন কন্যা বা তিনজন বোন থাকে এবং সে তাদের সাথে সদাচারণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (জামে তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯১৯, দারুল ফিকর, বৈরুত) 


(৩) যে ব্যক্তি তিন জন কন্যা বা বোনকে এভাবে লালন-পালন করে যে তাদেরকে শিষ্টাচার (আদব) শিখায় এবং তাদের উপর দয়া করে এমনকি আল্লাহ্ তাআলা তাদের অমুখাপেক্ষী করে দেয় (অর্থাৎ তারা সাবালেগা হয়ে যায় বা তাদের বিবাহ হয়ে যায় বা তারা মাল-সম্পদের মালিক হয়ে যায়)। (লুমআত এর পাদটিকা, ৪র্থ খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)


তাহলে আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم এর এই ইরশাদ শুনে সাহাবায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان আরয করলেন। যদি কোন ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তান লালন পালন করে? তখন রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদমصلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: তার জন্যও একই প্রতিদান ও সাওয়াব রয়েছে। এমনকি সাহাবায়ে কিরাম  عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان  বলেন:যদি ১ জনের কথা জিজ্ঞাসা করত তখনও মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদারصلى الله عليه وسلم একই কথা বলতেন । (ইমাম বগভীর কৃত শরহুস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৩৫১)


উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہَاবলেন: আমার নিকট এক মহিলা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہَا    তার দুই মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষার জন্য আসল (এমন কিছু ওযর (কারণ) রয়েছে যখন ভিক্ষা করা বৈধ। ঐ মহিলা رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہَا সে অবস্থায় পৌঁছেছে। তাই তার জন্য ভিক্ষা করা জায়েয ছিল) (মিরাতুল মানাযিহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৪৫ পৃষ্ঠা)


তখন একটি খেজুর ছাড়া আমার কাছে আর কিছু ছিল না। সেই একটি খেজুরই আমি তাকে দিয়ে দিলাম। তখন ঐ মহিলা সে একটি খেজুরকে (দুভাগ করে) নিজে না খেয়ে দু’ মেয়ের মধ্যে বন্টন করে দিল এবং মেয়েদের সাথে চলে গেল। এরপর যখন রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّ  আমার ঘরে তাশরীফ আনলেন আমি এই ঘটনা রাসুলصَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّকে আরয করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّ ইরশাদ করলেন: “যে ব্যক্তিকে কন্যা প্রদানের মাধ্যমে পরীক্ষায় ফেলা হয় এবং তিনি তাদের (কন্যাদের) সাথে ভাল আচরণ করেন তাহলে ঐ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের মধ্যখানে ঢাল হয়ে যাবে।” (সহীহ মুসলিম, ৪১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬২৯, দারে ইবনে হাযম, বৈরুত) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ ও সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহে কেন রহমত নাযিল হবে না, ঐ আশিকানে রাসূলদের মধ্যে জানিনা কত আউলিয়ায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَما আমার আক্বা, আ’লা হযরতرَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: জামাআতের মদ্ধেবরকত রয়েছে এবং মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ দোয়া কবুলের কাছাকাছি। (অর্থাৎ মুসলমানদের জামাআতে দোয়া করাটা কবুল হওয়ার নিকটবর্তি।) ওলামায়ে কিরাম বলেন: যেখানে ৪০ জন নেককার মুসলমান একত্রিত হয় তাদের মধ্যে অবশ্যই একজন আল্লাহ্ তাআলার ওলী থাকেন। (ফতায়ায়ে রযবীয়া সংশোধিত, ২৪ খন্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা, তাইছির শরহে জামে সগীর, হাদীস নং-৭১৪ এর ব্যাখ্যায় উদ্ধত, ১ম খন্ড, ৩১২ পৃষ্ঠা, তাবয়া দারুল হাদীস মিশর হতে প্রকাশিত)


ধরে নিলাম, যদিও বা দোয়া কবুল হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা না যায় তবুও অভিযোগের কোন শব্দ যেন মুখে আনা না হয়। আমাদের মঙ্গল কোথায় আছে তা আমাদের চেয়ে অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলাই ভাল জানেন। আমাদের অবশ্যইবসবসময় তার কৃতজ্ঞ বান্দা হিসাবে থাকা উচিত। তিনি যদি ছেলে দান করে তাতেও শোকর, মেয়ে দিলেও শোকর, উভয়টি দিলেও শোকর, না দিলেও শোকর সদা সর্বদা কৃতজ্ঞতা আর কৃতজ্ঞতা এবং শোকর আদায় করাই উচিত। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

 ﻟِﻠَّﻪِ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀ ﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﻬَﺐُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭَ

ﺃَﻭْ ﻳُﺰَﻭِّﺟُﻬُﻢْ ﺫُﻛْﺮَﺍﻧًﺎ ﻭَﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻣَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀ ﻋَﻘِﻴﻤًﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﻗَﺪِﻳ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:


আল্লাহ্ তাআলারই জন্য আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি সৃষ্টি করেন যা ইচ্ছা। যাকে চান কন্যা সন্তান সমূহ দান করেন এবং যাকে চান পুত্র সন্তান সমূহ দান করেন। অথবা উভয়ই যুক্তভাবে প্রদান করেনÑ পুত্র ও কন্যা সন্তান। যাকে চান বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি জ্ঞানময়, শক্তিমান। (সূরা-শূরা, আয়াত-৪৯-৫০, পারা-২৫)


দরুল আফাযিল, হযরত আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন  মুরাদাবাদী رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِবলেন: তিনি মালিক, নিজের অনুগ্রহকে যেভাবে চান, বণ্টন করেন। যে যা চায় দান করেন। নবীগণের মধ্যে এই সব অবস্থা আমরা দেখতে পাই। হযরত সায়্যিদুনা লুত عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم হযরত সায়্যিদুনা শোয়াইবعَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَمএর শুধুমাত্র কন্যা সন্তানই ছিল, কোন ছেলে ছিল না।হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم  এর শুধুমাত্র ছেলে সন্তান ছিল মেয়ে ছিলনা। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর  صلى الله عليه وسلم কে আল্লাহ্ তাআলা ৪ জন শাহ্জাদা ও ৪ জন শাহ্জাদী দিয়েছেন এবং হযরত সায়্যিদুনা 

ইয়াহইয়া عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم ও হযরত ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَ কে কোন সন্তানই দেননি। (খাযাইনুল ইরফান, ৭৭৭ পৃষ্ঠা) 


রোযা না রাখার ওযর সমূহ :-


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এখন ওইসব অপরাগতার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে, যেগুলোর কারণে রমযানুল মোবারকে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে, অপারগতার কারণে রোযা মাফ নয়। ওই অপারগতা দূরীভূত হয়ে যাবার পর সেটার কাযা রাখা ফরয। অবশ্য, এ কাযার কারণে গুনাহ্ হবে না। যেমন, ‘বাহারে শরীয়াতে’ ‘দুররে মুখতার’ এর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, সফর, গর্ভ, সন্তানকে স্তনের দুধ পান করানো, রোগ, বার্ধক্য,প্রাণ-নাশের ভয়, জোর-যবরদস্তি, পাগল হয়ে যাওয়া ও জিহাদ এ সবই রোযা না রাখার ওযর। এসব ওযরের কারণে যদি কেউ রোযা না রাখে, তবে সে গুনাহগার নয়। যদি কেউ প্রাণে মেরে ফেলার কিংবা কোন অঙ্গ কেটে ফেলার অথবা মারাত্মকভাবে প্রহারের বাস্তবিক পক্ষেই হুমকি দিয়ে বলে, “রোযা ভেঙ্গে ফেল।” আর রোযাদারও জানে, একথা যে বলছে সে যা বলছে তাই করে  ছাড়বে, এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গা কিংবা না রাখা গুনাহ্ নয়। ‘জোর-যবরদস্তি মানে এটাই।’ (দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)  সফরের সংজ্ঞা সফরের মধ্যেও রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। সফরের পরিমাণও জেনে নিন! সায়্যিদী ও মুরশিদী ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর গবেষণা অনুসারে শরীয়াত সম্মত সফরের পরিমাণ হচ্ছে-সাতান্ন মাইল তিন  ফরলঙ্গ (অর্থাৎ- প্রায় ৯২ কিলোমিটার) |যে কেউ এতটুকু দূরত্বে সফর করার উদ্দেশ্যে আপন শহর কিংবা গ্রামের বসতি থেকে দূরে যায়, সে তখন শরীয়াতের দৃষ্টিতে মুসাফির। তার জন্য রোযা কাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর নামাযেও কসর করবে। মুসাফির যদি রোযা রাখতে চায় তবে রাখতে পারবে; কিন্তু চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে কসর করা তার জন্য ওয়াজিব। কসর না করলেগুনাহগার হবে। অজ্ঞতাবশত: যদি পূর্ণ (চার) রাকআত পড়ে নেয়, তবে ওই নামাযকে পুনরায় পড়া ওয়াজিব। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংশোধিত, ৮ম খন্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা) অর্থাৎ জানা না থাকার কারণে আজ পর্যন্ত যতো নামাযই সফরে পূর্ণভাবে আদায় করেছে সেগুলোর হিসাব করে চার রাকাত ফরয কসরের নিয়্যতে দু দু রাকাত করে পুনরায় পড়তে হবে। হাঁ, মুসাফির মুকীম ইমামের পিছনে ফরয চার রাকাত পূর্ণ পড়তে হয়। সুন্নাতসমূহ ও বিতরের নামায পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই। কসর শুধু যোহর, আসর ও ইশার ফরয রাকাত গুলোতেই করতে হয়। অর্থাৎ এগুলোতে চার ফরযের স্থানে দু’রাকাত সম্পন্ন করা হবে। অবশিষ্ট সুন্নাতসমুহ এবং বিতরের রাকাত গুলো পুরোপুরিই পড়তে হবে। অন্য কোন শহর কিংবা গ্রাম ইত্যাদিতে পৌঁছার পর যতক্ষণ ১৫ দিন থেকে কম সময়ের জন্য অবস্থান করার নিয়্যত করে নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ‘মুসাফির’ই বলা হবে এবং তার জন্য মুসাফিরের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। আর যদি মুসাফির সেখানে পৌঁছে ১৫ দিন কিংবা আরো বেশি সময় অবস্থান করার নিয়্যত করে নেয়, তাহলে এখন মুসাফিরের বিধানাবলী শেষ হয়ে যাবে এবং তাকে ‘মুকীম’ বলা হবে।১ এখন তার রোযাও রাখতে হবে, নামাযেও কসর করবে না। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড)

 

সফর সম্পর্কিত বিধানাবলী বিস্তারিত জানার জন্য ‘বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ‘মুসাফিরের নামাযের বর্ণনা’ শীর্ষক অধ্যায়টি পাঠ করুন।

সামান্য অসুস্থতা কোন অপারগতা নয় যদি কোন ধরনের অসুখ হয় এবং যদি এ অবস্থায় তার রোযা রাখলে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা দেরীতে সুস্থতা লাভ করার প্রবল ধারণা হয় তবে তার জন্য রোযা না রেখে পরবর্তীতে তা কাজা করার অনুমতি রয়েছে। (এর বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসছে) কিন্তু আজকাল দেখা যায় মানুষ সামান্য সর্দি, জ্বর, মাথা ব্যাথার কারণে রোযা ছেড়ে দেয় অথবা আল্লাহ্ তাআলারই পানাহ রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেলে, এ রকম কখনো না হওয়া চাই, যদি কেউ কোন বিশুদ্ধ শরয়ী কারণ ছাড়া রোযা রাখা ছেড়ে দেয়, যদি ও সে পরবর্তিতে সারাজীবনও রোযা রাখে তবুও ঐ একটি রোযার ফযীলত কখনো লাভ করতে পারবে না। 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যেহেতু ‘রোযা না রাখার ওযর সমূহে’র বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসবে তিনটি বরকতময় হাদীস বর্ণনা করা হচ্ছে:


সফরে ইচ্ছা হলে, রোযা রাখো, নতুবা ছেড়ে দাও 


(১) উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা  رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہَا বর্ণনা করেছেন, “হযরত সায়্যিদুনা হামযা ইবনে আমর আসলামী  رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہবেশি রোযা রাখতেন। তিনি তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত  صلى الله عليه وسلم কে জিজ্ঞাসা করে আরয করলেন: “আমি কি সফরে রোযা রাখবো?”হুজুর  صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করলেন: “ইচ্ছা হলে রাখো, আর ইচ্ছা না হলে রেখোনা।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৪০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯৪৩)


(২) হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ  বলেন: “১৬ রমযানুল মোবারক ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার   صلى الله عليه وسلم  এর সাথে আমরা জিহাদে গেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রোযা রেখেছিলেন, আর কেউ কেউ রাখেননি।

তখন রোযাদারগণ যারা রোযা রাখেনি তাদের প্রতি দোষারোপ করেনি এবং যারা রোযাদারনা তারাও রোযাদারদের বিরূদ্ধে দোষারূপ করেননি, একে অপরের বিরোধিতা করেননি।” (মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, ৫৬৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১১৬)


(৩) হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক কাবী رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুর পুরনূর   صلى الله عليه وسلمইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ তাআলা মুসাফির থেকে অর্ধেক নামায ক্ষমা করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দু’রাকাত পড়বে।) আর মুসাফির ও স্তন্যদাত্রী এবং গর্ভবতীর রোযা ক্ষমা করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ- তখন রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তিতেতে সে পরিমাণ রোযা কাযা আদায় করবে।)(তিরমিযী, ২য় খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭১৫)


রোযা না রাখার অনুমতি সম্বলিত ৩৩টি বিধান 


(কিন্তু ওই অপারগতা শেষ হয়ে যাবার পর প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একটি করে রোযা কাযা করতে হবে।) 

(১) মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা ও না রাখার মধ্যে নিজের স্বাধীনতা রয়েছে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা)


(২) যদি স্বয়ং ওই মুসাফিরের জন্য এবং তার সফরসঙ্গীদের জন্য রোযা ক্ষতিকর না হয়, তবে সফরে রোযা রাখা উত্তম। আর উভয়ের কিংবা 

তাদের কোন একজনের জন্য ক্ষতিকারক হয়, তাহলে রোযা না রাখা উত্তম। (দুররুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০৫ পৃষ্ঠা) 


(৩) মুসাফির ‘দ্বাহওয়ায়ে কুবরা’ এর পূর্বক্ষণে মুকীম হিসেবে অবস্থান করলো, এখনো পর্যন্ত কিছুই খায়নি, এমতাবস্থায় রোযার নিয়্যত করে নেয়া ওয়াজিব। (আল-জাওয়াহারাতুন নাইয়েরাহ, ১ম খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা) যেমন, আপনার ঘর বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ শহর চট্টগ্রামে। 

 

দ্বাহওয়ায়ে কুবরা এর সংজ্ঞা রোজার নিয়্যতের বর্ণনার মধ্যে পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।


আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হলেন। সকাল দশটারসময় পৌঁছে গেলেন। আর সুবহে সাদিক থেকে রাস্তায় কোন কিছু পানাহার করেননি। এমতাবস্থায় রোযার নিয়্যত করে নিন। 


(৪) দিনে যদি সফর করেন, তবে ওই দিনের রোযা না রাখার জন্য আজকের সফর ওযর নয়। অবশ্য, যদি সফরের মধ্যভাগে ভঙ্গ করেন তবে কাফ্ফারা অপরিহার্য হবে না, কিন্তু গুনাহ্ অবশ্যই হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা) আর রোযা কাযা করা ফরয হবে। 


(৫) যদি সফর শুরু করার পূর্বে ভেঙ্গে ফেলে,তারপর সফর করে, তাহলে (যদি কাফ্ফারার শর্তাবলী পাওয়া যায়, তবে) কাফ্ফারাও অপরিহার্য হবে। (প্রাগুক্ত)


(৬) যদি দিনের বেলায় সফর শুরু করে, (সফরের মধ্যভাগে রোযা না ভাঙ্গে) আর ঘরে কিছু জিনিষ ভুলে ফেলে যাওয়ায়, সেটা নেয়ার জন্য ফিরে আসে, এখানে এসে যদি রোযা ভেঙ্গে ফেলে, তবে (শর্তাবলী পাওয়া গেলে) কাফ্ফারাও ওয়াজিব হবে। যদি সফরের মাঝখানে ভেঙ্গে ফেলতো তবে শুধু কাযা ফরয হতো।যেমন, ৪ নং নিয়মাবলীতে উল্লেখ করা হয়েছে। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা) 


(৭) কাউকে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে, তাহলে রোযাতো ভাঙ্গতে পারে, কিন্তু ধৈর্যধারণ করলে সাওয়াব পাবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)


(৮) সাপ দংশন করেছে। আর প্রাণ বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে।এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)


(৯) যেসব লোক এসব অপারগতার কারণে রোযা ভেঙ্গে ফেলে, তাদের উপর সেগুলোর কাযা দেয়া ফরয। আর এসব কাযা রোযার মধ্যেধারাবাহিকতা ফরয নয়। যদি ওই রোযাগুলো কাযা করার পূর্বে নফল রোযা রাখে তাহলে সেগুলো নফলই হবে। কিন্তু বিধান হচ্ছে অপারগতা (ওযর) দূরীভূত হবার পর পরবর্তিতে রমযানুল মোবারক আসার পূর্বেই কাযা রোযা রেখে নেয়া। 


হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে; “যার উপর বিগত রমযানুল মোবারকের রোযা বাকী থেকে যায়, আর সে তা পালন না করে, তার এ রমযানুল মোবারকের রোযা কবুল হবে না।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৩য় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা)


যদি সময় অতিবাহিত হতে থাকে, কিন্তু কাযা রোযা রাখেনি, শেষ পর্যন্ত পরবর্তিতে রমযান শরীফ এসে গেছে, এমতাবস্থায় কাযা রোযা রাখার পরিবর্তে প্রথমে এ রমযানুল মোবারকের রোযা রাখবে। এমনকি রোগী নয় এমন লোক ও মুসাফির কাযার নিয়্যত করলো, তবুও তা কাযা হলো না, বরং তা ওই রমযান শরীফের রোযাই হলো। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০৫ পৃষ্ঠা)


(১০) গর্ভবর্তি কিংবা স্তনের দুধ পান করায় এমন নারী, নিজের কিংবা শিশুর প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে, তবে রোযা রাখবে না। যদি মা গর্ভবতী হোক কিংবা দুধ পানকারীনী মা যদিও রমজানুল মোবারকের মধ্যে দুধপান করানোর চাকুরী করুক। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা)


(১১) ক্ষুধা কিংবা পিপাসা এতোই তীব্র হলো যে, প্রাণ নাশের ভয় নিশ্চিত হয়ে গেছে, কিংবা বিবেকশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবার আশংকা করা 

হয়, তাহলে রোযা রাখবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)


(১২) রোগীর রোগ বেড়ে যাওয়ার বা আরোগ্য হবার, অথবা সুস্থ লোক রোগী হয়ে পড়ার অধিকাংশধারণা হয়ে যায়, তবে সেদিনের রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। (তবে পরবর্তীতে কাযা রেখে নিবে।) (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠা)


(১৩) এসব অবস্থায় ‘অধিকাংশ ধারণার’ শর্তারোপ করা হয়েছে, নিছক সন্দেহ যথেষ্ট নয়। ‘অধিকাংশ ধারণার তিনটি ধরণ রয়েছে: (১) যদি তার প্রকাশ্য চিহ্ন পাওয়া যায়, (২) যদি ওই লোকটির নিজস্ব অভিজ্ঞতা থাকে এবং (৩) কোন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুসলমান ফাসিক নয় এমন চিকিৎসক তাকে বলে আর যদি এমন হয়, কোন চিহ্ন নেই, অভিজ্ঞতাও নেই, আর না এ ধরণের চিকিৎসক তাকে বলেছে, বরং কোন কাফির কিংবা ফাসিক চিকিৎসকের কথায় রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে তাহলে (শর্তাবলী পাওয়া গেলে) কাযার সাথে কাফ্ফারাও অপরিহার্য হবে। (রদ্দে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০৪ পৃষ্ঠা)


(১৪) হায়েয কিংবা নিফাসের (যথাক্রমে মাসিক ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ) অবস্থায় নামায ও রোযা পালন করা হারাম। কুরআনের তিলাওয়াত কিংবা কুরআনে পাকের পবিত্র আয়াত অথবা সেগুলোর অনুবাদ স্পর্শ করা সবই হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ৮৮ ও ৮৯ পৃষ্ঠা)


(১৫) ‘হায়েয’ ও ‘নিফাস’ সম্পন্ন নারীর জন্য স্বাধীনতা রয়েছে গোপনে খাবে কিংবা প্রকাশ্যে রোযাদারের মতো থাকা তার জন্য জরুরী নয়। (আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা) 


(১৬) কিন্তু গোপনে খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে হায়েয সম্পন্নার জন্য। (বাহারে শরীয়াত, ৫ম খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা)


(১৭) ‘শায়খে ফানী’ অর্থাৎ ওই বয়োবৃদ্ধ লোক, যার বয়স এতোই ভারী হয়েছে, এখন ওই বেচারা দিন দিন দূর্বলই হতে চলেছে, যখন সে একেবারেই রোযা রাখতে অক্ষম হয়ে যায়, অর্থাৎ না এখন রোযা রাখতে পারছে, না ভবিষ্যতে রোযা রাখার শক্তি আসার আক্বা আছে, এমতাবস্থায় তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। সুতরাং প্রতিটি রোযার পরিবর্তে (ফিদিয়া স্বরূপ) এক ‘সদকায়ে ফিতর’১পরিমাণ মিসকিনকে দিয়ে দিবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা)


(১৮) যদি এমন বয়স্ক হয় যে, গরম অবস্থায় রোযা রাখতে অপারগ, তাহলে রাখবে না। কিন্তু শীতে রাখা ফরয। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪৭২ পৃষ্ঠা)


(১৯) যদি ফিদিয়া দেয়ার পর রোযা রাখার শক্তি এসে যায়, তবে প্রদত্ত ফিদিয়া নফল সদকা হয়ে গেলো, কিন্তু ওই রোযাগুলোর কাযা রেখে নিবেন। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা)


(২০) এ স্বাধীনতা রয়েছে, চাই রমযানের শুরুতে পুরো রমযানের ফিদিয়া এক সাথে দিয়ে দিক কিংবা শেষ ভাগে দিক। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা)


(২১) ফিদিয়া দেয়ার সময় এটা জরুরী নয়, যতোটা ফিদিয়া হবে ততোটা মিসকিনকে আলাদা আলাদাভাবে দিবে, বরং একই মিসকিনকে কয়েকদিনের ফিদিয়াও দেয়া যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা) 

‘সাদকায়ে ফিতর’ হচ্ছে সোয়া দুই সের অর্থাৎ প্রায় দুই কিলো পঞ্চাশ গ্রামের সমান আটা, অথবা তার মূল্য পরিমাণ টাকা।


(২২) নফল রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে শুরু করার পর পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। ভেঙ্গে ফেললে কাযা ওয়াজিব হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১১ পৃষ্ঠা)


(২৩) যদি আপনি এ ধারণা করে রোযা রাখলেন, আপনার দায়িত্বে কোন কাযা রোযা রয়ে গেছে, কিন্তু রোযা শুরু করার পর জানতে পারলেন, আপনার উপর কোন প্রকারের কোন রোযা কাযা নেই। এখন যদি তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙ্গে ফেলেন, তবে কোন কিছুই নেই। আর যদি একথা জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে না ভাঙ্গেন, তবে পরে ভাঙ্গতে পারবেন না। ভাঙ্গলে কাযা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১১ পৃষ্ঠা)


(২৪) নফল রোযা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভাঙ্গেনি, বরং অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভেঙ্গে গেছে। যেমন- রোযা পালন কালে মহিলাদের হায়েয এসে গেলো, তবু ও কাযা ওয়াজীব। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা)


(২৫) ঈদুল ফিতরের একদিন কিংবা ঈদুল আযহার চারদিন, অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহজ্জ থেকে কোন একটি দিনের নফল রোযা রাখলে, এ রোযাটি পূর্ণ করা ওয়াজিব নয় কেননা এ পাঁচ দিনে রোযা রাখা হারাম ভঙ্গ করলে কাযা ওয়াজিব হবে না; বরং সেটা ভেঙ্গে ফেলাই ওয়াজিব। যদি এ দিনগুলোতে রোযা রাখার মান্নত মানেন, তাহলে মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব। কিন্তু ওই দিনগুলোতে নয়, বরং অন্যান্য দিনে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১২ পৃষ্ঠা)


(২৬) নফল রোযা বিনা ওযরে ভেঙ্গে ফেলা না জায়িয। মেহমানের সাথে যদি না খায় তবে তার খারাপ লাগবে, অনুরূপভাবে, মেহমান না খেলে মেজবান মনে কষ্ট পাবেন। সুতরাং নফল রোযা ভাঙ্গার জন্যএটা একটা ওযর। سُبۡحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَلَّ

শরীয়াতে মুসলমানের সম্মান করার ব্যাপারে কতই গুরুত্ব রয়েছে) এ শর্তে যে, তার পূর্ণ ভরসা আছে যে, সে তা পুনরায় রেখে নিবে। আর দ্বি-প্রহর এর পূর্বে ভাঙ্গতেপারবে, পরে নয়। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা)


(২৭) দাওয়াতের কারণে “দ্বাহওয়ায়ে কুবরা” এর পূর্বে রোযা ভেঙ্গে ফেলা যাবে যখন মেযবান শুধুমাত্র তার উপস্থিতিতে রাজী না হন বরং তার না খাওয়ার কারণে নারাজ হন।


তবে শর্ত হচ্ছে তার পূর্ণ ভরসা আছে, সে তা পুনরায় রেখে নিবে, এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গতে পারবে এবং এটার কাযা আদায় করবে। কিন্তুু যদি দা’ওয়াতকারী তার শুধুমাত্র উপস্থিতিতে রাজী হয়ে যান এবং তার না খাওয়াতে নারাজ না হন তবে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা, কুয়েটা)


(২৮) নফল রোযা সূর্য পশ্চিম দিকে হেলার পর মাতাপিতা নারায হলে ভাঙ্গতে পারে। এমতাবস্থায় আসরের পূর্ব পর্যন্ত ভাঙ্গতে পারে, আসরের পরে পারবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা৪১৪)


(২৯) নারী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল, মান্নত ও শপথের কাফ্ফারার রোযা রাখবে না। রেখে নিলে স্বামী ভাঙ্গিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ভাঙ্গলে কাযা ওয়াজিব হবে। আর সেটার কাযা করার সময়ও স্বামীর অনুমতির দরকার হবে। কিংবা স্বামী ও তার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে, অর্থাৎ তালাকে বাইন১দিয়ে দিলে, কিংবা মৃত্যু হয়ে গেলে, অথবা রোযা রাখলে স্বামীর কোন ক্ষতি না হলে, যেমন সে সফরে গেলে কিংবা অসুস্থ থাকলে, অথবা ইহরাম অবস্থায় থাকলে,এসব অবস্থায় অনুমতি ছাড়াও ক্বাযা রোযা রাখতে পারবে; এমনকি সে নিষেধ করলেও স্ত্রী রেখে দিতে পারবে। অবশ্য ওই দিনগুলোতে নফল রোযা স্বামীর অনুমতি ছাড়া রাখতে পারে না। (রদ্দে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা)


(৩০) রমযানুল মোবারক ও রমযানুল মোবারকের কাযার জন্য স্বামীর অনুমতির কোন প্রয়োজন নেই, বরং সে নিষেধ করলেও রাখবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা)


(৩১) আপনি যদি কারো কর্মচারী হন, কিংবা তার নিকট শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন, তাহলে তার অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে পারেন না। কেননা, রোযার কারণে কাজে অলসতা আসবে। অবশ্য, রোযা রাখা সত্ত্বেও যদি আপনি নিয়ম-মাফিক কাজ করতে পারেন, তার কাজে কোনরূপ ত্রুটি না হয়, তাহলে নফল রোযার জন্য অনুমতির দরকার নেই। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা)

 

তালাকে বাইন ওই তালাককে বলে, যার কারণে স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে বেরিয়ে যায়। তখন স্ত্রী পুনরায় স্বামীকে গ্রহণ করতে পারে না আর স্বামী তার স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করতে পারবে না।


(৩২) নফল রোযার জন্য মেয়ে পিতা থেকে, মা পুত্র থেকে এবং বোন ভাই থেকে অনুমতি নেয়ার দরকার নেই। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা)


(৩৩) মাতা-পিতা যদি মেয়েকে নফল রোযা রাখতে নিষেধ করে এ কারণে যে, তার রোগের আশঙ্কা আছে, তবে মাতাপিতার কথা মানবে। (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা)


কাযা সম্পর্কে ১২টি নিয়মাবলী :-


(এখন ওইসব বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হচ্ছে, যে কাজ করলে শুধু কাযা অপরিহার্য হয়। কাযা করার পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিটি রোযার পরিবর্তে রমযানুল মোবারকের পর কাযার নিয়্যতে একটি করে রোযা রাখা।) 


(১) এটা ধারণা ছিলো, সেহরীর সময় শেষ হয়নি। তাই পানাহার করেছে, স্ত্রী সহবাস করেছে। পরে জানতে পারলো, তখন সেহরীর সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় রোযা হয়নি, এ রোযার কাযা করা জরুরী। অর্থাৎ ওই রোযার পরিবর্তে একটা রোযা রাখতে হবে। (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)


(২) খাবার খাওয়ার জন্য কঠোরভাবে বাধ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ শরীয়াত সম্মত বাধ্যবাধকতা (কেউ হত্যা কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে বললো: “রোযা ভেঙ্গে ফেল।” যদি রোযাদার নিশ্চিতভাবে মনে করে, সে যা বলছে তা করেই ছাড়বে। তাহলে শরীয়াতসম্মত বাধ্য করণ পাওয়া গেলো। এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু পরবর্তিতে এ রোযার কাযা করে দেয়া অপরিহার্য। এখন যেহেতু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই শুধু কাযা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)


(৩) ভুলবশত: পানাহার করেছে কিংবা স্ত্রী সহবাস করেছিলো, অথবা এমনভাবে দৃষ্টি করেছে, বীর্যপাত হয়েছে, কিংবা স্বপ্নদোষ হয়েছে, অথবা বমি হয়েছে, এসব অবস্থায় এ ধারণা করল যে, রোযা ভেঙ্গে গেছে, তাই এখন স্বেচ্ছায় পানাহার করে নিল। কাজেই, এখন শুধু কাযা ফরয হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা)


(৪) রোযারত অবস্থায় নাকে ঔষধ দিলে রোযা ভেঙ্গে যায়। এর কাযা অপরিহার্য। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৬ পৃষ্ঠা)


(৫) পাথর, কঙ্কর (এমন) মাটি যা সাধারণত খাওয়া হয়না, তুলা, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি এমন জিনিষ আহার করলো, যে গুলোকে মানুষ ঘৃণা করে, এ গুলোর কারণেতো রোযা ভেঙ্গে গেলো, কিন্তু শুধু কাযা করতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৭ পৃষ্ঠা)


(৬) বৃষ্টির পানি কিংবা শিলাবৃষ্টি নিজে নিজেই কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলো এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা অপরিহার্য হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা)


(৭) খুব বেশি ঘাম কিংবা চোখের পানি বের হলে আর তা গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে। (প্রাগুক্ত)


(৮) ধারণা করলো যে এখনো রাত বাকী আছে তাই সেহেরী খেতে থাকল; পরে জানতে পারল সেহেরীর সময় শেষ, তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)


(৯) একইভাবে ধারণা করলো সূর্য ডুবে গেছে, পানাহার করে নিল। পরক্ষণে জানতে পারলো, সূর্য ডুবেনি। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। কাযা করে নিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮০ পৃষ্ঠা)


(১০) যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই সাইরেনের আওয়াজ বেজে ওঠে কিংবা মাগরিবের আযান শুরু হয়ে যায়, আর আপনি রোযার ইফতার করে নেন এবং পরে আপনি জানতে পারলেন, সাইরেন কিংবা আযান সময়ের পূর্বেই শুরু হয়েছিলো। এতে যদিও আপনার দোষ থাকুক বা নাই থাকুক, তবুও রোযা ভেঙ্গে যাবে, কাযা করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮৩ পৃষ্ঠা)


(১১) আজকাল যেহেতু উদাসীনতার ছড়াছড়ি, সেহেতু প্রত্যেকের উচিত নিজেই নিজের রোযার হিফাযত করা। সাইরেন, রেডিও টিভির ঘোষণা বরং মসজিদের আযানকেও যথেষ্ট বলে মনে করার পরিবর্তে নিজেই সেহেরী ও ইফতারের সমস্যা সঠিকভাবে জেনে নিন।


(১২) অযু করছিলেন। নাকে পানি দিলেন এবং তা মগজ পর্যন্ত ওঠে গেলো কিংবা কণ্ঠনালী দিয়ে নিচে নেমে গেলো। রোযাদার হবার কথাও স্মরণ ছিলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব। হ্যাঁ, তখন যদি রোযাদার হবার কথা স্মরণ না থাকে তবে রোযা ভাঙ্গবে না। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা) 


কাফ্ফারার বিধান :-


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রমযানুল মোবারকের রোযা রেখে কোন সঠিক অপারগতা ছাড়া জেনে বুঝে ভেঙ্গে ফেললে কোন কোন অবস্থায় কাযা, আর কোন কোন অবস্থায় কাযার সাথে কাফ্ফারাও অপরিহার্য হয়ে যায়। এখানে তার বিধানাবলী বর্ণনা করা হবে। তবে এর পূর্বে জেনে নিন কাফ্ফারা কি? 


রোযার কাফ্ফারার পদ্ধতি


রোযা ভাঙ্গার কারণে কাফ্ফারা হচ্ছে-সম্ভব হলে একটা বাঁদী (ক্রীতদাসী) কিংবা গোলাম (ক্রীতদাস) আযাদ করবে। তা করতে না পারলে, যেমন-তার নিকট না ক্রীতদাসী বা ক্রীতদাস আছে, না এত সম্পদ আছে যে, ক্রয় করতে পারবে, অথবা টাকা তো আছে, কিন্তু দাস-দাসী পাওয়া যাচ্ছে না, যেমন-আজকাল দাস-দাসী পাওয়া যায় না, তাহলে ধারাবাহিকভাবে দু’মাস অর্থাৎ ষাটটি রোযা-রাখবে। তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে ষাটজন মিসকীনকে দু'বেলা পেট ভরে খাবারখাওয়াবে। এক্ষেত্রে এটা জরুরী, যাকে এক বেলা খাবার খাইয়েছে, তাকেই দ্বিতীয় বেলা খাবার খাওয়াবে। এটাও হতে পারে, ষাটজন 

মিসকীনকে একেকটা সাদকায়ে ফিতর, অর্থাৎ প্রায় ২ কিলো থেকে ৮০ গ্রাম কম পরিমাণ গম অথবা এর মূল্য প্রদান করবে। একজন মিসকীনকে একত্রে ষাটটি (৬০) সদকায়ে ফিতর দিতে পারবে না। হ্যাঁ, এটা হতে পারে, একজন মিসকীনকে ষাট (৬০) দিন যাবত প্রতিদিন একেকটা সদকা-ই-ফিতর দিবে।

রোযাগুলো পালন কালে (কাফ্ফারা আদায়কালীন সময়ে) যদি মাঝখানে একটি রোযাও ছুটে যায়, তবে পুনরায় শুরু থেকে ষাটটি (৬০) রোযা রাখতে হবে; পূর্বেকার রোযাগুলো হিসাবে ধরা হবে না, যদিও উনষাটটা 


(৫৯) রেখে থাকে; চাই রোগ ইত্যাদি কোন ওযর (অপারগতার) কারণেই ছুটে যাক না কেন? হ্যাঁ, অবশ্য নারীর যদি হায়য এসে যায়, তবে হায়যের কারণে রোযা ছুটে গেলে, সেটাকে বিরতি হিসেবে গণ্য করা হবে না। অর্থাৎ হায়যের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রোযাগুলো মিলে ষাটটি পূর্ণ হয়ে গেলে কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা)


কেউ রাত থেকে রোযার নিয়্যত করেছে, তারপর সকালে কিংবা দিনের কোন সময় বরং ইফতারের এক মুহুর্ত পূর্বে কোন বিশুদ্ধ অপারগতা ব্যতিরেকেই এমন কোন বস্তু দ্বারা, যাকে মানুষ ঘৃণা করে না। (যেমন-খাদ্য, পানি, চা, ফলমূল, বিস্কুট, শরবত, মধু, মিষ্টি ইত্যাদি) ইচ্ছাকৃতভাবে খেয়ে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে, তবে রমযান শরীফের পর ওই রোযার কাযার নিয়্যতে একটা রোযাও রাখতে হবে। আর সাথে কাফ্ফারাও দিতে হবে, যার পদ্ধতি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। 


কাফ্ফারা সম্পর্কে ১১ টি নিয়মাবলী :-


(১) রমযানুল মোবারকে কোন বিবেকবান, বালেগ, মুকীম (অর্থাৎ মুসাফির নয় এমন লোক) রমযানের রোযা আদায় করার নিয়্যতে রোযা রাখলো। আর কোন বিশুদ্ধ অপারগতা ব্যতিরেকে (জেনেবুঝে) স্ত্রী সঙ্গম করলে কিংবা করালে। অথবা অন্য কোন স্বাদের কারণে কিংবা ঔষধ হিসেবে খেলো বা পান করলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে। তার উপর কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই অপরিহার্য হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৮৮ পৃষ্ঠা)


(২) যেখানে রোযা ভাঙ্গলে কাফ্ফারা অপরিহার্য হয়, সেখানে পূর্ব শর্ত হচ্ছে-রাত থেকেই রমযানের রোযার নিয়্যত করে নেয়া। যদি দিনে নিয়্যত করে এবং ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে কাফ্ফারা অপরিহার্য নয়,শুধু কাযা যথেষ্ট। (আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৮০ পৃষ্ঠা)


(৩) মুখ ভরে বমি হলে কিংবা ভুলবশতঃ আহার করলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে। এসব অবস্থায় তার জানা ছিলো যে, রোযা ভাঙ্গে নি, তবুও সে আহার করে নিয়েছে, এমতাবস্থায় কাফ্ফারা অপরিহার্য নয়। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা)


(৪) স্বপ্নদোষ হয়েছে আর জানা ছিলো যে, তার রোযা ভাঙ্গেনি, তারপরেও আহার করে নিয়েছে, তবে কাফ্ফারা অপরিহার্য। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা)


(৫) নিজের থুথু ফেলে পুনরায় তা চেঁটে নিলো। কিংবা অপরের থুথু গিলে ফেললে। কিংবা দ্বীনি কোন সম্মানিত (বুযুর্গ) ব্যক্তির থুথু তাবাররুক হিসেবে গিলে ফেললে কাফ্ফারা অপরিহার্য (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা) তরমুজের ছিলকা খেয়েছে। তা শুষ্ক হোক কিংবা এমন হয় যে, লোকজন তা খেতে ঘৃণা করে, তাহলে কাফ্ফারা দিতে হবে না,অন্যথায় জরুরী। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)


(৬) চাউল, কাঁচা ভুট্টা, মশুর কিংবা মুগ ডাল খেয়ে নিয়েছে। এমতাবস্থায় কাফ্ফারা অপরিহার্য নয়। এ বিধান কাঁচা যবেরও। কিন্তু ভুনা হলে কাফ্ফারা অপরিহার্য। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা) 


(৭) সেহেরীর লোকমা মুখে ছিলো। সুবহে সাদিকের সময় হয়ে গেছে কিংবা ভুলবশত: খাচ্ছিলো,লোকমা মুখে ছিলো, হঠাৎ স্মরণ হয়ে গেলো, তারপরেও গিলে ফেলেছে, এ দুটি অবস্থায় কাফ্ফারা ওয়াজিব। আর যদি লোকমা মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেয়ে ফেললো, তাহলে শুধু কাযা ওয়াজিব, কাফ্ফারা নয়। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)


(৮) পালাক্রমে জ্বর আসতো। আজ পালার দিন ছিলো। তাই জ্বর আসবে ধারণা করে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙ্গে ফেললো। তাহলে এমতাবস্থায় কাফ্ফারা থেকে অব্যাহতি মিলবে। (অর্থাৎ: কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই।অনুরূপভাবে, নারীর নির্ধারিত তারিখে হায়য(ঋতুস্রাব) হতো। আজ ঋতুস্রাবের দিন ছিলো। সুতরাং স্বেচ্ছায় রোযা ভেঙ্গে ফেললো; কিন্তু হায়য আসেনি। তাহলে, কাফ্ফারা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। (অর্থাৎ কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই।) (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯১ পৃষ্ঠা)


(৯) যদি দুটি রোযা ভাঙ্গে তবে দুটির জন্য দুটি কাফ্ফারা দিবে, যদিও প্রথমটির কাফ্ফারা এখনো আদায় করেনি। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৯১ পৃষ্ঠা)যখন দুইটি দুই রমযানের হয়। আর যদি উভয় রোযা এক রমযানের হয়, প্রথমটার কাফ্ফারা আদায় করা না হয়, তবে একটি কাফ্ফারা উভয় রোযার জন্য যথেষ্ট। (আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা)


(১০) কাফ্ফারা অপরিহার্য হবার জন্য এটাও জরুরী যে, রোযা ভাঙ্গার পর এমন কোন কাজ সম্পন্ন হয়নি, যা রোযার পরিপন্থি (রোযা ভঙ্গকারী), কিংবা বিনা ইচ্ছায় এমন কোন কাজ পাওয়া যায়নি, যার কারণে রোযা ভাঙ্গার অনুমতি পাওয়া যেতো, উদাহরণস্বরূপ, ওই দিন নারীর হায়য কিংবা নিফাস এসে গেছে, কিংবা রোযা ভাঙ্গার পর ওই দিনই এমন রোগ হয়েছে, যাতে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে, তাহলে কাফ্ফারা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং সফরের কারণে অব্যাহতি পাওয়া যাবে না, যেহেতু এটা ইচ্ছাকৃত কাজ (আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ১ম খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)


(১১) যে অবস্থায় রোযা ভাঙ্গলে কাফ্ফারা দেয়া আবশ্যক হয়না, এতে শর্ত হল, একবার এই রকম হয়েছে এবং নাফরমানীর ইচ্ছা করে না, যদি নাফরমানীর ইচ্ছা থাকে তবে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৪৪০ পৃষ্ঠা)


রোযা নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাও :-


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকাল ইসলামী জ্ঞান থেকে মুসলমানরা একেবারে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এমন এমন ভুল করছে, কখনো কখনো ইবাদতই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আফসোস! বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে শুধু আর শুধু দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জনের প্রতি মনোনিবেশ করা হচ্ছে। আহা! এখন সুন্নাত শেখার জন্য, ইবাদতের বিধানাবলীর জ্ঞানার্জনের জন্য কারো কাছে সময় এবং আগ্রহ নেই, বরং যদি কোন শুভাকাংখী ইসলামী ভাই বুঝানোর চেষ্টা করে সেটাও তার অপছন্দনীয়।


ইবাদতগুলো সম্পর্কেও এ পরিমাণ ভুল কথাবার্তা ভরে গেছে, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! সেহেরী ও ইফতারের সম্পর্কেও লোকেরা নানা ধরণের কথাবার্তা বলে থাকে। এর উপর জেদও করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ; সেহেরীর শেষ সময় সম্পর্কে কিছু লোক বলে বেড়ায়: ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ভোর হয়ে ভোরের আলো এতটুকু পরিস্কার হয়ে যায়, পিঁপড়া নজরে আসতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেহেরীর শেষ সময় বাকী থাকে!!! অনুরূপভাবে, কিছুলোক একথা বুঝে যে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ফযরের আযানের আওয়াজ আসতে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার করাতে অসুবিধা নেই। যেখানে কয়েকটা আযানের আওয়াজ আসে, সেখানে সর্বশেষ আযানের আওয়াজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে থাকবে।’ কেমন আজব তামাশার কথা! একটু চিন্তাতো করো! যদি আপনি এমন জায়গায় থাকেন যেখানে আযানের আওয়াজ আসেনা, তখন আপনি কি করবেন? আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতের আগ্রহ পোষণকারীরা! নিজেদের ইবাদতগুলোকে কয়েকটা মিনিট অলসতার কারণে বরবাদ করবেন না। সেটা এ৩ গভীরভাবে দেখুন। এ বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

ﻭَﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰٰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺨَﻴْﻂُ ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﻂِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ۖ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং আহার করো ও পান করো, যতক্ষন না তোমাদের জন্য প্রকাশ 

পেয়ে যায় সাদা রেখা কালো রেখা থেকে ফজর হয়ে। অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রোযা পূরণ করো। (পারা-২, সূরা-বাকারা, আয়াত-১৮৭)


প্রকাশ থাকে, এ পবিত্র আয়াত না পিঁপড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, না ফজরের আযানের কথা, বরং সুবহে সাদিক্বের কথা উল্লেখ রয়েছে। অতএব আযানের অপেক্ষা করবেন না। নির্ভরযোগ্য ‘সময় সূচি’ এর মধ্যে সুবহে সাদিক্ব ও সূর্যাস্তের সময় দেখে সেটা অনুযায়ী সেহেরী ও ইফতার করবেন ৷

হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ! আমাদের মূল শরীয়াত ও সুন্নাত মোতাবেক মাহে রমযানুল মোবারকের সম্মান করার, তাতে রোযা রাখার, তারাবীহ সম্পন্ন করার, কালামে পাক তেলাওয়াত ও বেশি পরিমাণে নফল নামায আদায় করার তওফীক দান কর! আমাদের ইবাদত সমূহ কবুল কর! আর তোমার অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা আমাদের মাগফিরা কর।

امين بجاه النبي الامين صلي الله تعالى عليه واله وسلم

                                                       

   اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ 

আমি পরিবর্তন হয়ে গেলাম তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে ও মাদানী কাফেলা সম্পর্কে কি বলব? উৎসাহ সৃষ্টির জন্য একটি ঘটনা শুনুন! শালিমার টাউন মারকাযুল আউলিয়া লাহোর এর এক ইসলামী ভাই এর কিছু বর্ণনা এই রকম ছিল। 

আমি একজন সুস্থ মস্তিস্ক কিন্তু বিকৃত চিন্তার মানুষ ছিলাম। সিনেমা, নাটকে অভ্যস্ত ছিলাম সাথে সাথে যুবতী মেয়েদের সাথে রসিকতা ও বদমাইশী এবং যুবকদের সাথে বন্ধুত্ব (সারারাত পর্যন্ত তাদের সাথে বেপরওয়া চলাফেরা) আমার অভ্যাস ছিল। আমার খারাপ চলাফেরার জন্য আমার বংশের লোকেরা আমার কাছ থেকে সর্বদা দূরে থাকত। আমি ঘরে আসলে ভয় পেত। এমনকি তাদের সন্তানকে আমার থেকে দূরে রাখত। আমার পাপের ভরা অন্ধকার রাত শেষ হয়ে বসন্তের প্রভাত এইভাবে উদিত হল, একজন দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকে রাসূলের শুভ দৃষ্টি আমার উপর পড়ল। তিনি অত্যন্ত ভালবাসার মাধ্যমে নিজের ইনফিরাদী কৌশিশ করে আমাকে মাদানী কাফেলায় সফর করার জন্য অনুরোধ করেন। তার কথাগুলো আমার মনের মধ্যে গেঁথে গেল এবং আমার মাদানী কাফেলায় সফর করার সৌভাগ্য অর্জন হল। اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ

মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলগণের সাহচর্য আমি পাপীর অন্তরে মাদানী পরিবর্তন এনে দিল। গুনাহ্ থেকে তাওবার উপহার এবং সুন্নাতে ভরা মাদানী পোশাকের জযবা পেলাম।

মাথায় সবুজ পাগড়ী পরিধান করছি এবং আমার মত গুনাহগার লোক সুন্নাতের মাদানী ফুল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। যে সমস্ত প্রিয়জন ও আত্মীয় স্বজনরা আমাকে দেখে দূরে সরে পড়ত    اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ এখন তারাআমার সাথে আলিঙ্গন করে। প্রথমে আমি বংশে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক ছিলাম। اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَّ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার বরকতে এখন সকলের প্রিয় লোকে পরিণত হয়েছি। 


জব তক বিকে না থে কুয়ি পুছতা না থা, 

তুনে খরীদ কর মুঝে আনমৌল কর দিয়া। 


বেনামাযীদের সাথে বসা কেমন?


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! অসৎ সঙ্গের দ্বারা কি মারাত্মক ক্ষতি হয়। অসৎ সঙ্গের প্রভাবে বিকৃত মানুষকে মানুষ থুথু দেয়। আর সৎ সঙ্গের কি বরকত রয়েছে গুনাহ্ থেকেও বেঁচে থাকে এবং মানুষও ভালবাসে। সর্বদা এমন সঙ্গ নেয়া উচিত। যাতে ইবাদত করার আগ্রহ ও সুন্নাতের উপর আমল করার প্রেরণা বৃদ্ধি পায়। বন্ধু এমনই হওয়া চাই যাকে দেখে আল্লাহ্ তাআলার কথা স্মরণ হয়, তার কথা দ্বারা সৎকাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। দুনিয়ার আকর্ষণ কমে যায় ও আখিরাতের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। সাথী এমন হওয়া চাই যার কারণে আল্লাহ্ তা'আলা ও তার প্রিয় রাসূল صلى الله عليه وسلم এর ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। বেহায়াপনা চলাফেরাকারী, ফ্যাশন প্রিয় ও বেনামাযীদের সঙ্গ থেকে দূরে থাকা উচিত বেনামাযীদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: (বেনামাযীদের) কোমলভাবে মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে কুরআনে আজিম ও হাদিসে পাকের মধ্যে যে সমস্ত কঠিন কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ আছে তা বার বার শুনিয়ে দেয়া। যার অন্তরে ঈমান আছে তার অবশ্যই উপকার হবে। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন :

و ذكرفان الذكري تنفع المؤ منين


কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:

এবং বুঝাও যেহেতু বুঝানো মুসলমানদেরকে উপকার দেয়। (পারা-২৭, সূরা-যারিয়াত, আয়াত-৫৫)


আল্লাহ্ তাআলার কালাম ও তার বিধান স্মরণ করুন, অবশ্যই ঐগুলোর স্মরণ ঈমানদারদের উপকার দেয়। আর যে ব্যক্তি কোনভাবে না মানে এবং সে যদি কাউকে ভয় করে, তাহলে তাকে তার মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে বা জোর করিয়ে মানাতে বাধ্য করুন। এতে করে যদি সে নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে তার সাথে সালাম, কথা-বার্তা, মেলা-ইেশা বন্ধ করে দিন। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: 

واما ينسينك اشيطن فلا تقعد بعد الذكري مع القوم الظلمين

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যখনই তোমাকে শয়তান ভুলিয়ে দিবে, অতঃপর স্মরণে আসতেই যালিমদের নিকটে বসোনা! (পারা-৭, সূরা-আনআম, আয়াত-৬৮)

(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৯১-১৯২ পৃষ্ঠা) 


ইসলামের প্রকৃতি


ইসলামে ‘লজ্জা’কে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন-হাদীস শরীফে রয়েছে: “নিঃসন্দেহে প্রত্যেক ধর্মের একটি প্রকৃতি, স্বভাব (তথা উত্তম বৈশিষ্ট) রয়েছে, আর ইসলামের প্রকৃতি হচ্ছে ‘লজ্জা’।” (সুনানে ইবনে মাযাহ, ৪র্থ খন্ড, ৪৬০ পৃষ্ঠা, হদীস: ৪১৮১, দরুল মা’রিফাত, বৈরুত) অর্থাৎ- প্রত্যেক উম্মতের কোন না কোন বিশেষ স্বভাব (বৈশিষ্ট) থাকে। যা অন্যান্য বৈশিষ্টের উপর প্রাধান্য পায়। আর ইসলামের ঐ স্বভাবটি হচ্ছে ‘লজ্জা’।



 اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰی سَیِّدِ الْمُرْسَلِیْنَ

ط اَمَّا بَعْدُ فَاَعُوْذُ بِاللهِ  مِنَ الشَّیْطٰنِ الرَّجِیْمِ 

ط بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ


ফয়যানে তারাবীহ 

দরূদ শরীফের ফযীলত 


আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ বলেন: “দোয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে! তা থেকে কিছুই উপরে যায়না (অর্থাৎ দোয়া কবুল হয় না) যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আপন নবীর উপর দরূদ পাঠ করবে না।” ( জামে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৮৬)


صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


সুন্নাতের ফযিলত :-اَلْحَمْدُاللهِ عَزَّوَجَلَরমযানুল মোবারকে যেখানে আমরা অগণিত নেয়ামত পেতে পারি, সেগুলোর মধ্যে ‘তারাবীর সুন্নাত’ অন্যতম। সুন্নাতের মহত্ত্বের কথা কি বলবো? ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার  صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসে, সে আমাকে ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৬৮৭)


রমযানে ৬১ বার খতমে কুরআন 


তারাবীহ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তাতে কমপক্ষে একবার খতমে কুরআনও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আমাদের ইমামে আযম আবু হানীফা رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ রমযানুল মোবারকে ৬১ বার কুরআন করীম খতম করতেন: ৩০ খতম দিনে, ৩০ খতম রাতে আর একবার তারাবীহের নামাযে। তাছাড়া, তিনি رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ৪৫ বছর ইশার অযু দিয়ে ফজরের নামায আদায় করেছেন। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা)


এক বর্ণনায় অনুযায়ী ইমাম আযম رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ জীবনে ৫৫ বার হজ্ব করেছেন আর যে স্থানে তিনি ইন্তিকাল করেছেন সেখানে তিনি সাত হাজার বার কুরআন মজিদ খতম করেছেন। (উকুদুন হিমান, ২২১ পৃষ্ঠা) 


কুরআন তিলাওয়াত ও আহ্লুল্লাহ 


আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: “ইমামদের ইমাম সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবু হানিফা ৩০ বছর পর্যন্ত প্রতি রাতে এক রাকাতে কুরআন মজিদ খতম করতেন।” (সংশোধিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৭ম খন্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা)


ওলামায়ে কিরাম  رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَما বলেন সলফে সালেহীনদের পূর্ববর্তি  বুযর্গদের  رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَما এর মদ্ধে কোন ইমাম রাত ও দিনে ২ খতম দিতেন। কেউ কেউ চার খতম কেউ কেউ আট খতম দিতেন। ইমাম আব্দুল ওহাব শারানী رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہ এর মিযানুশ শরীয়া এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, সায়্যিদী আলী মারছফী رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ ٰএকরাত একদিনে ৩ লাখ ৬০ হাজার বার কুরআন খতম করতেন। (আল মিজানুশ শরীয়াতুল কুবরা, ১ম খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা)


হাদিসে পাকে উল্লেখ আছে, আমিরুল মু’মিনীন হযরত শেরে খোদা আলী رَضِیَ اللهُ تَعَالٰی عَنۡہ বাম পা রেকাবে (ঘোড়ার পিঠে উঠার পা-দানীতে) রেখে কুরআন মজীদ শুরু করতেন আর ডান পা রেকাবে পৌঁছার পূর্বেই কুরআন খতম হয়ে যেত। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংশোধিত, ৭ম খন্ড, ৪৭৭ পৃষ্ঠা)


হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত صلى الله عليه وسلم  ইরশাদ করেছেন: “হযরত সায়্যিদুনা দাউদ ٰعَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم নিজ বাহন প্রস্তুত করতে বলতেন এবং এর উপর জীন (বসার গদি) দেওয়ার পূর্বে তিনি যবুর শরীফ খতম করে নিতেন।” (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৪৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৪১৭)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কোন কোন ইসলামী ভাইয়ের এই ধারণা আসতে পারে, একদিনে কয়েকবার নয় বরং মুহুর্তের মধ্যে কুরআনে পাক বা যাবুর শরীফ খতম কিভাবে সম্ভব? তার উত্তর হল: এটা আউলিয়ায়ে কিরাম  رَحِمَہُمُ اللهُ السَّلاَم

এরকারামত ও হযরত দাউদ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلاَم মু’জিযা। আর মু’জিযা ও কারামত হচ্ছে তাই, যা স্বভাবগত ভাবে অসম্ভব। 


হরফ চিবুনো 


আফসোস! আজকাল ধর্মীয়  বিষয়াদিতে অলসতার ছড়াছড়ি। সাধারণত: তারাবীহ’র মধ্যে কুরআন মজীদ একবারও বিশুদ্ধ অর্থে খতম হচ্ছে না। কুরআনে পাক ‘তারতীল’ সহকারে, অর্থাৎ থেমে থেমে পড়া চাই। কিন্তু বর্তমান অবস্থা হচ্ছে যদি কেউ এমনি করে তবে লোকেরা তার সাথে তারাবীহ পড়ার জন্য প্রস্তুতও থাকে না। এখন ওই হাফিযকে পছন্দ করা হয়, যে তারাবীহ থেকে তাড়াতাড়ি অবসর করে দেয়। মনে রাখবেন, তারাবীহ ছাড়াও তিলাওয়াতে হরফ চিবুনো হারাম। যদি তাড়াতাড়ি পড়ার মধ্যে হাফিয সাহিব পূর্ণ কুরআন মজীদ থেকে শুধু একটা হরফও চিবিয়ে ফেলে, তবে খতমে কুরআনের সুন্নাত আদায় হবে না। সুতরাং কোন আয়াতে কোন হরফ ‘চিবিয়ে’ ফেলা হলে কিংবা সেটার আপন ‘মাখরাজ’ (উচ্চারণের স্থান) থেকে উচ্চারিত না হয়, তবে লোকজনকে লজ্জা না করে পুনরায় পড়ে নিবেন। আর শুদ্ধ করে পড়ে নিয়ে তারপর সামনে বাড়বেন। অন্য এক আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, হাফিযদের কিছু সংখ্যক এমনও রয়েছে, যারা তারতীল সহকারে পড়তেই জানে না।


তাড়াতাড়ি না পড়লে বেচারা ভুলে যায়। এমন হাফিযদের খিদমতে সমবেদনামূলক মাদানী পরামর্শ রইলো যেন তাঁরা লোকজনকে লজ্জা না করেন, বরং তাজভীদ সহকারে পড়ান এমন কোন কারী সাহিবের সাহায্য নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপন হিফয ঠিক করে নিন। ‘মাদ ও লীন’ এর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী। তাছাড়া মদ্দ, গুন্নাহ, ইযহার, ইখফা ইত্যাদির প্রতিও যত্নবান হোন।


‘বাহারে শরীয়াত’ প্রণেতা সদরুশ শরীয়া, খলীফায়ে আ’লা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী রযবী رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “ফরয নামাযগুলোতে ধীরে ধীরে কিরাত সম্পন্ন করবেন। আর তারাবীহতে মাঝারী ধরণের, আর রাতের নফলগুলোকে তাড়াতাড়ি পড়ার অনুমতি রয়েছে; কিন্তু এমনি পড়বেন যেন বুঝা যায়। অর্থাৎ কমপক্ষে ‘মদ্দ’ এর যে পর্যায় ক্বারীগণ রেখেছেন, তা আদায় করবেন। অন্যথায় হারাম। কেননা, তারতীল সহকারে (অর্থাৎ খুব ধীরে) কুরআন পড়ার নির্দেশ রয়েছে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা)


আল্লাহ্ তাআলার বাণী :ورتل القر ان ترتيلا

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আর কুরআনকে খুব থেমে থেমে পড়ো। (সূরা-মুয্যাম্মিল, আয়াত-৪, পারা-২৯)


আমার আক্বা আ’লা হযরত  رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ জালালাইন শরীফের হাশিয়া কামালাইন এর বরাত দিয়ে তারতিল এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বর্ণনা করেন: “অর্থাৎ কুরআন মজীদ এভাবে ধীরে ধীরে থেমে থেমে পাঠ করুন যাতে শ্রোতা তার আয়াত ও শব্দ গননা করতে পারে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংশোধিত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭৬ পৃষ্ঠা)


এছাড়াও ফরয নামাযে এমনভাবে পৃথক পৃথকভাবে পাঠ করতে হবে যাতে প্রতিটি বর্ণ বুঝা যায়। তারাবীর নামাযকে মধ্যমভাবে আর রাতের নফল নামায সমূহে এতটুকু দ্রুত পড়তে পারবে যাতে সে নিজে বুঝতে পারে। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৮০ পৃষ্ঠা) 

 

১ واو   এর পূর্বে পেশ, يا এর পূর্বে যের এবং :

الف এর পূর্বে যবর হলে সেটাকে মাদ এবং واو ও يا 

সাকিনের পূর্বে যবর হলে সেটাকে লীন বলে।


‘মাদারেকুত তানযিল’ এ বর্ণিত আছে: কুরআনকে ধীরে ধীরে থেমে থেমে পড়ুন” তার অর্থ এই যে প্রশান্তির সাথে প্রতিটি হরফকে পৃথক পৃথক ভাবে ওয়াকফকে ঠিক রেখে এবং সকল হরকত আদায় করার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি রাখা।” তারতীল শব্দটি এই মাসআলার উপর জোর দিচ্ছে, এই কথা তিলাওয়াতকারীদের স্মরণ রাখা জরুরী। (তাফসীরে মাদারেকুত তানযীল, ৪র্থ খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা, সংশোধিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৭৮ ও ২৭৯ পৃষ্ঠা) 


তারাবীহ পারিশ্রমিক ছাড়া পড়াবেন 


যিনি পড়বেন ও যিনি পড়াবেন উভয়ের মধ্যে ইখলাস থাকা জরুরী। যদি হাফিয নিজের দ্রুততা দেখানো, সুন্দর কণ্ঠের বাহবা পাবার এবং নাম ফুটানোর জন্য কুরআন পাক পড়ে, তবে সাওয়াবতো দূরের কথা, উল্টো রিয়াকারীর গুনাহে নিমজ্জিত হবে। অনুরূপভাবে, পারিশ্রমিকের লেনদেনও না হওয়া চাই। বেতন সাব্যস্ত করাকে পারিশ্রমিক বলেনা, বরং এখানে তারাবীহ পড়ানোর জন্য এজন্যই আসে, এখানে কিছু পাওয়া যায় একথা জানা আছে, যদিও আগেভাগে সাব্যস্ত না হয়; সুতরাং এটাও পারিশ্রমিক নেয়া হলো পারিশ্রমিক টাকারই নাম নয়, বরং কাপড় কিংবা ফসল ইত্যাদির আঙ্গিকে পারিশ্রমিক নিলে তাও পারিশ্রমিক হয়ে থাকে। অবশ্য, যদি হাফিয সাহিব বিশুদ্ধ নিয়্যত সহকারে পরিস্কার ভাষায় বলে দেন, “আমি কিছুই নিবোনা”, কিংবা যিনি পড়াবেন তিনি বলে দেন, “কিছুই দিবোনা” তারপর হাফিযসাহিবের খিদমত করেন, তাহলে কোন ক্ষতি নেই। বরকতময় হাদীসে আছে: -انما الاعمالبا لنيات অর্থাৎ “কর্মফল 

তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-০১)


তিলাওয়াত, যিকির ও নাত এর পারিশ্রমিক হারাম 


আমার আক্বা, আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর দরবারে পারিশ্রমিক দিয়ে মৃতের ইছালে সাওয়াবের জন্য খতমে কুরআন এবং আল্লাহ্ তাআলার যিকির কুরআনের বিধান সম্পর্কে যখন ফতোওয়া চাওয়া হলো, তখন তদুত্তরে বললেন: “তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরে ইলাহীর উপর পারিশ্রমিক দেয়া ও নেয়া উভয়ই হারাম। লেনদেনকারী উভয়ই গুনাহগার হবে। যখন এ লেনদেনকারী উভয়ই হারাম সম্পাদনকারী হলো, তখন কোন্ জিনিষের সাওয়াব মৃতের জন্য পাঠাবেন? গুনাহের কাজের উপর সাওয়াবের আশা করা আরো বেশি জঘণ্য ও মারাত্মক হারাম। যদি লোকেরা চায়, ইছালে সাওয়াব হোক, শরীয়াতসম্মত বৈধ পন্থাও অর্জিত হোক, তবে সেটার পদ্ধতি হচ্ছে এই যারা পড়ছে তাদেরকে ঘন্টা/দু’ঘন্টার জন্য চাকুরে হিসেবে নিয়োগ করে নিন। যেমন, যিনি পড়াবেন তিনি বললেন, “আপনাকে আমি আজ অমুক সময় থেকে অমুক সময়ের জন্য এ বেতনে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করলাম। আমি যে কাজই চাই আপনার দ্বারা সম্পন্ন করাবো।” সে বলবে, “আমি গ্রহণ করলাম।” এখন সে ততটুকু সময়ের জন্য ‘কর্মচারী’ নিয়োজিত হয়ে গেলো। এখন তিনি যে কাজই চান, করাতে পারেন। এরপর তাকে বলবেন, “অমুক মৃতের জন্য কুরআন করীম থেকে এতটুকু কিংবা এতবার কলেমা-ই-তায়্যিবা অথবা দরূদে পাক পড়ে দিন।” এটা হচ্ছে, বৈধ পন্থা। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ১৯৩-১৯৪ পৃষ্ঠা) 


তারাবীহর পারিশ্রমিক নেয়ার শরীয়াত সম্মত কী না?


এ বরকতময় ফতোওয়ার আলোকে তারাবীহর জন্য হাফিয সাহেবের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।উদাহরণ স্বরূপ, মসজিদের কমিটির লোকেরা পারিশ্রমিক নিধার্রণ করে হাফেয সাহেবকে মাহে রমযানুল মোবারকে ইশার নামাযের ইমামতির জন্য নিয়োগ করে নিবেন। আর হাফেয সাহেব আনুসঙ্গিকভাবে তারাবীহও পড়িয়ে দিবেন। কেননা, রমযানুল মোবারকে তারাবীহও ইশার নামাযের সাথেই শামিল থাকে। অথবা এমন করো! মাহে রমযানুল মোবারকে প্রতিদিন তিন ঘন্টার জন্য (যেমন- রাত ৮-০০টা থেকে ১১-০০ পর্যন্ত) হাফেয সাহেবকে চাকুরীর প্রস্তাব দিয়ে বলবেন, আমরা যে কাজই করতে বলি তা করতে হবে। বেতনের অংকও বলে দিবেন।


যদি হাফিয সাহিব মঞ্জুর করেন, তাহলে তিনিতো কর্মচারীই হয়ে গেলেন। এখন প্রতিদিন হাফেয সাহেবের ওই তিন ঘন্টার ভিতর ডিউটি লাগিয়ে দিবেন। তিনি তারাবীহও পড়িয়ে দিবেন। একথা মনে রাখবেন, ইমামত হোক কিংবা খেতাবত হোক।অথবা মুয়াজ্জিনের কাজ কিংবা অন্য কোন ধরণের মজদুরী কাজের জন্য পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে নিয়োগদানের সময় একথা জানা থাকবে, এখানে পারিশ্রমিক কিংবা বেতনের লেনদেন নিশ্চিত তাহলে আগেভাগেই পারিশ্রমিকের অংক নিধার্রণ করে নেয়া ওয়াজিব। অন্যথায় লেনদেনকারী উভয়ই গুনাহগার হবেন। অবশ্য যেখানে পারিশ্রমিকের আগে থেকেই নিধার্রিত অংক জানা থাকে, (যেমন, বাসের ভাড়া, কিংবা বাজারে বস্তা ভর্তি করা, বহন করে নিয়ে যাওয়ার অংক ইত্যাদি) সেখানে বারবার নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই। একথাও মনে রাখবেন, যখন হাফিয সাহিবকে (কিংবা যাকে যে কাজের জন্য) মজদূর নিয়োগ করেছেন, তখন একথা বলে দেয়া জায়িয নয়, আমরা যা উপযুক্ত হবে তাই দিয়ে দিবো, বরং সুস্পষ্টভাবে অংকের পরিমান বলে দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা আপনাকে ১২ হাজার টাকা দিবো। এটাও জরুরী, হাফেয সাহেবও সম্মতি প্রকাশ করবেন। এখন ১২ হাজার দিতেই হবে, চাঁদা সংগ্রহ হোক কিংবা নাই হোক। অবশ্য, হাফিয সাহিবের দাবী ছাড়াও যদি নিজেদের ইচ্ছানুসারে নিধার্রিত অংকের চেয়ে বেশি দেন, তবেও জায়েয। যেসব হাফেয সাহেব কিংবা নাতখা পারিশ্রমিক ছাড়া তারাবীহ, কুরআন খানি কিংবা নাতখানিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না, লজ্জার কারণে তারা যেন না জায়িয কাজ করে না বসেন। সায়্যিদী আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللهِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে কাজ করে হালাল রুজি অর্জন করো! আর যদি একেবারে বাধ্য হয়ে না যান তবে হীলা দ্বারা অর্থ উপার্জন করা থেকেও বিরত থাকুন। কারণ, “জিসকা আমল হো বে গরয, উস কী জাযা কুছ আওর হ্যায়।” অথার্ৎ যার কাজ হয় নিষ্টাপূর্ণ তার প্রতিদানই ভিন্ন ধরণের। একটা পরীক্ষীত বিষয় হচ্ছে যেই অর্থ নিশ্চিত পাওয়া যাবে, তা গ্রহণ না করলে যথেষ্ট বাহবা পাওয়া যায়। আর ওই বেচারাও জানিনা নিজেকে রিয়াকারী থেকে কিভাবে বাঁচায়।


সৌভাগ্যক্রমে, এমন প্রেরণা অর্জিত হোক, বর্ণিত পদ্ধতিতে অর্থ নিয়ে নিন আর গোপনে তা সদকা করে দিন। কিন্তু নিজের নিকটাত্মীয় ইসলামী ভাই, বরং ঘরের এক সদস্যকেও বলবেন না। অন্যথায় রিয়াকারী থেকে বাচাঁ কঠিন হয়ে যাবে। মজাতো এতেই রয়েছে, বান্দা জানবে না কিন্তু তা মহান আল্লাহ জানবেন। 

মেরা হার আমল বস তেরে ওয়াস্তে হো, 

কর ইখলাস অ্যায়সা আতা ইয়া ইলাহী। 

              

 খতমে কুরআন ও হৃদয়ের নম্রতা 

যেখানে তারাবীতে একবার কুরআনে পাকের খতম করা হয়, সেখানে উত্তম হচ্ছে ২৭ শে রমজান রাতে খতম করা। হৃদয়ের নম্রতা ও বিষাদ সহকারে খতম করা। এ অনুভুতি যেন হৃদয়কে চিন্তিত করে তোলে, আমি কি প্রকৃত অর্থে কুরআন পাক পড়েছি? আমি তো (ভালভাবে) শুনি, ভুল ছিলো। শত কোটি আফসোস! দুনিয়ার বড়লোকের কথাতো খুব মন লাগিয়ে শোনা হয়, কিন্তু সর্বাপেক্ষা বড় আমাদের প্রিয় আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র বাণী মনোযোগ সহকারে শুনি। তৎসঙ্গে এ দুঃখও যেনো নাড়া দেয়, আফসোস! এখনতো মাহে রমযানুল মোবারক আর কয়েক ঘন্টার অতিথি হিসেবে রয়ে গেলো। জানিনা, আগামী বছর সেটার শুভাগমনের সময় সেটার রহমতগুলো লুফে নেয়ার জন্য আমি জীবিত থাকবো কিনা? এ ধরণের চিন্তা অন্তরে এনে নিজেই নিজের বেপরোয়া কাজগুলোর জন্য লজ্জিত হবেন। সম্ভব হলে কান্না করবেন। কান্না না আসলে কান্নার ভান করবেন। কারণ, ভালো লোকদের অনুসরণও ভালো। যদি কারো চোখ থেকে কুরআনের ভালবাসা ও রমাযানের বিদায়-বিষাদে এক আধ ফোঁটা চোখের পানি টপকে পড়ে আর মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়, তবে এর কারণে মহামহিম ক্ষমাশীল আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা করে দিবেন। 


লাজ রাখ লে গুনাহগারোঁ কী, নাম রাহমান হ্যা তেরা ইয়া রব! 

আয়ব মেরে না খোল মাহশার মে, নাম সাত্তার হ্যা তেরা ইয়া রব! 

বে ছবব বখশ দে না পুছ আমল নামে গাফ্ফার হ্যা তেরা ইয়া রব! 

তূ করীম আওর করীম ভী অ্যায়সা কেহ্ কোই নেহী জিসকা দোসরা ইয়া রব!


তারাবীর জামাআত ‘বিদআতে হাসানা’ 

নতুন প্রচলিত পূণ্যময় কাজ 


নবীকুল সুলতান, সরদারে দো’জাহান, মাহবুবে রহমান, প্রিয় মুস্তফা ﻠ صلى الله عليه وسلمনিজেও তারাবী পড়েছেন এবং এটাকে খুবপছন্দও করেছেন।


কুরআনের ধারক, মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صلى الله عليه وسلمএর মহান বাণী: “যে ব্যক্তি ঈমান সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে রমযানে রাত্রি জাগরণ করে তার পূবার্পর গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” উম্মতের উপর তারাবী ফরয করে দেয়া হয় কিনা এই আশঙ্কায় প্রিয় আক্বাصلى الله عليه وسلم  বাদ দিতেন, অতঃপর আমীরুল মু’মিনীন সায়্যিদুনা ওমর ফারূকে আযম رضى الله تعلى انه  তাঁর খিলাফতের সময় মাহে রমযানুল মোবারকের একরাতে মসজিদে দেখতে পেলেন, কেউ একাকী আবার কেউ জামাআতে (তারাবিহ) পড়ছেন। এটা দেখে তিনি বললেন, আমি চাচ্ছি, সবাইকে এক ইমামের সাথে একত্রিত করে দেয়াই উত্তম হবে। তাই তিনি হযরত সায়্যিদুনা উবাই ইবনে কা’ব زضى الله أنهকে সবার ইমাম করে দিলেন। অতঃপর যখন দ্বিতীয় রাতে তাশরীফ আনলেন, তখন দেখলেন লোকেরা জামাআত সহকারে (তারাবীহ) আদায় করছেন। (তিনি খুব খুশী হলেন) আর বললেন نعم البدعته هذه অথার্ৎ এটা উত্তম বিদআত। 

(বুখারী, ১ম খন্ড , ৬৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং -২০১০ ) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা ! নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلمআমাদের প্রতি কতোই খেয়াল রেখেছেন। শুধু এ আশঙ্কায় তারাবীহ সবসময় পড়েননি, তা আবার উম্মতের উপর ফরয হয়ে যায় কিনা। এ হাদিসে পাক থেকে কিছু সংখ্যক কুমন্ত্রণার চিকিৎসাও হয়ে গেলো। যেমন, তারাবীর নিয়ম মোতাবেক জামাআত খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন  صلى الله عليه وسلمকরতে পারতেন, কিন্তু করেননি।অনুরূপভাবে; ইসলামে ভাল পদ্ধতির প্রচলনের জন্য তাঁর গোলামদেরকে সুযোগ করে দিলেন যে কাজ তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত, হুযুর صلى الله عليه করেন নি, ওই কাজ সায়্যিদুনা ফারুকে আযম رضى الله انه শুধু আপন ইচ্ছায় করেন নি, বরং আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه وسلمকিয়ামত পর্যন্ত ভালো ভালো কাজ চালু করার জন্য  নিজের পবিত্র প্রকাশ্য জীবদ্দশায়ই অনুমতি দান করেছিলেন। যেমন-


প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صلى الله عليه وسلمইরশাদ করেন: “কেউ ইসলামে উত্তম পদ্ধতি আবিস্কার করে সে সেটার সাওয়াব পাবে এবং যারা এরপর সে অনুযায়ী আমল করবে, তাদের সাওয়াবও পাবে কিন্তু আমলকারীর সাওয়াব থেকে কিছুই কম হবেনা। আর যে ব্যক্তি ইসলামে খারাপ পন্থা আবিস্কার করবে, তজ্জন্য তার গুনাহ হবে এবং তাদের গুনাহ ও তার উপর বতার্বে যারা এরপর তদনুযায়ী আমল করবে, কিন্তু তাদের গুনাহে কোনরূপ কম করা হবে না।” 

(সহীহ মুসলিম , ১১৪৩৮ পৃষ্ঠা, ১০১৭ নং হাদীস) 


১২ টি বিদআতে হাসনা 


এ হাদিসে মোবারক থেকে বুঝা গেলো, কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামে ভালো ভালো নতুন নতুন পন্থা আবিস্কার করার অনুমতি রয়েছে। আর   আবিস্কারও করা হচ্ছে। যেমন-

(১) হয সায়্যিদুনা ফারুকে আযম رضى الله انه তারাবীহর জামাআতের সাথে যথা নিয়মে গুরুত্বের সাথে ব্যবস্থা করেছেন। আর নিজেই সেটাকে ভাল বিদআত সাব্যস্ত করেছেন। এ থেকে একথাও বুঝা গেলো, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صلى الله عليه وسلمএর প্রকাশ্য বেসাল শরীফের পর সাহাবায়ে কেরাম رضى الله انه  যে ভালো নতুন কাজ জারী করেছেন, সেটাকে বিদআতে হাসানা বলা হয়।

(২) মসজিদে ইমামের জন্য তাকযুক্ত মেহরাব ছিলোনা।সর্বপ্রথম হযরত সায়্যিদুনা ওমর ইবনে আবদুল আযীযী رضى الله انه মসজিদে নববী শরীফ ز اد ها لله شى فا و تعظيا এর মধ্যে মেহরাব বানানোর সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। এ নতুন আবিস্কার (বিদআত হাসানা) এর এতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা অর্জিত হয়েছে, এখন সারা দুনিয়ার মসজিদের পরিচয় হয় এরই মাধ্যমে।

(৩) অনুরূপভাবে মসজিদগুলোর উপর গম্বুজ ও মিনার নির্মাণও পরবর্তী সময়ের আবিস্কার, বরং কা’বার মিনারগুলোও ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, হুযুর صلى الله عليه وسلمও সাহাবা ই কেরামদের عليهم الرضوان যুগে ছিলো না।

(৪) ঈমানে মুফাস্সাল।

(৫) ঈমানে মুজমাল।

(৬) ছয় কলেমা, সেগুলোর সংখ্যা এবং ধারাবাহিকতা যেমন- প্রথম এটা দ্বিতীয় এটা ও সেগুলোর নাম।

(৭) কুরআনে পাকের ত্রিশ পারা বানানো, যের যবর পেশ লাগানো, সেগুলোতে রুকূ বানানো, ওয়াকফ চিহৃ লাগানো, এবং নুকতাগুলো লাগানোও পরবর্তীতে হয়েছে এবং সুন্দর সুন্দর কপি করে ছাপানো ইত্যাদিও।

(৮) বরকতময় হাদীসগুলোর কিতাবাকারে ছাপানো, সেগুলোর সনদ বা সূত্রগুলো যাচাই বাছাই করা, সেগুলোর মধ্যে সহীহ, হাসান (সঠিক ও বিশুদ্ধ), যঈফ ও মওদূ’ (দূর্বল ও বানোয়াট) ইত্যাদির প্রকারভেদ করা।

(৯) ফিকহ, উসূলে ফিকহ ও ইলমে কালাম (ইসলামী যুক্তিশাস্ত্র)।

(১০) যাকাত ও ফিত্রা প্রচলিত মূদ্রা (ফটো সম্বলিত টাকার নোট) দ্বারা পরিশোধ করা।

(১১) উট ইত্যাদির পরিবর্তে জাহাজ ও বিমানযোগে হজ্জের সফর করা।

(১২) শরীয়াত ও তরীকতের চার সিলসিলা, অর্থাৎ হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী, অনুরূপভাবে কাদেরী, নকশবন্দী, সোহরাওয়ার্দী ও চিশ্তী। 


সকল বিদআত পথভ্রষ্টতা নয় 


কারো মনে এ প্রশ্ন আসতে পারে, হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে: (১) كل  بدعة ضلالة  وكل ضلالة فى النار  অর্থাৎ- “প্রত্যেক বিদআত (নতুন বিষয়) পথভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যাবে)।” (সুনানে নাসায়ী, ২য় খন্ড, ১৮৯ পৃষ্টা)।


(২) شر ا لا مور محد شا   ةهل وكل بدعة ضلالة অথার্ৎ- ‘সবচেয়ে মন্দ কাজ হচ্ছে নতুন কাজ উদ্ভাবন করা, আর প্রত্যেক বিদআত (নতুন কাজ) ভ্রষ্টতা।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৮৬৭)


এই হাদীস শরীফের অর্থ কি? এর জবাব হচ্ছে: হাদীসে পাকই সঠিক (সত্য)। এখানে বিদআত-এ সাইয়্যেআহ অথার্ৎ মন্দ বিদআত। নিশ্চয়ই এমন প্রতিটি বিদআত মন্দ, যা কোন সুন্নাতের পরিপন্থী কিংবা সুন্নাতকে বিলীন করে। যেমন- অন্য হাদীস সমূহে এই মাসআলার আরো বেশি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে। যেমন -


তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صلى الله عليه وسلم ইরশাদ করেছেন: ‘ঐ সমস্ত গোমরাহকারী বিদআত, যাতে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল, রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صلى الله عليه وسلمঅসন্তুষ্ট। সে সমস্ত ভ্রান্ত বিদআত প্রচলনকারীর উপর সেই বিদআত আমলকারীর সমান গুনাহ অর্পিত হবে। আমলকারীর গুনাহে কোন কমতি হবে না।’ (জামে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৬৮৬)


অপর হাদীসে পাকে আরো স্পষ্টভাবে দেখুন। যেমন উম্মুল মু’মিনীন সায়্যিদাতুনা মা আয়েশা সিদ্দিকা زضى الله انه  থেকে বর্ণিত, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর صلى الله عليه وسلمইরশাদ করেছেন: من أحدث فى أمر نا هزا ما ليس فيه فهو رد  অনুবাদ: যে আমাদের ধর্মে এমন নতুন কথা বা কাজ সৃষ্টি করবে যা ধর্মের মূলে নেই তা বাতিল। (সহীহ বুখারী শরীফ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ২১১, হাদীস নং-২৬৯৭)


এই সমস্ত হাদীসে মোবারাকার মাধ্যমে বুঝা গেল, এমন নতুন কাজ যা সুন্নাত থেকে দূরে সরিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়, যার ভিত্তি ধর্মে নেই তা “বিদআতে সায়্যিআ” তথা “মন্দ বিদআত”। যদি ধর্মে এমন নতুন কাজ যা সুন্নাতের উপর আমল করার ক্ষেত্রে সহযোগীতা করে আর যার ভিত্তি ধর্মে আছে তা হচ্ছে “বিদআত-এ হাসানা” তথা ভাল বিদআত। যেমন:


সায়্যিদুনা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী رحمة الله হাদীসে পাক: وكل ضلالة فى  النا ر

এর ব্যাখ্যায় বলেন: যেই বিদআত সুন্নাতের মূলনীতি ও মৌলিক নিয়মাবলীর অনুরূপ ও তদনুযায়ী অনুমান করা হয়েছে, (অথার্ৎ শরীয়াত ও সুন্নাতের পরিপন্থি নয়) তাকে ‘বিদআত-এ হাসানা’ বলা হয়। আর যা সুন্নাতের বিপরীত হয় তাকে পথভ্রষ্টকারী বিদ’আত (বিদআতই সায়্যিয়া) বলা হয়। (আশি’আতুল লোমআত, ১ম খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা) 

 

বিদআতে হাসানা ব্যতীত মানুষ চলতে পারেনা              


যে কোন অবস্থায় ভাল ও মন্দ বিদআতগুলোর পার্থক্য জানা জরুরী। অন্যথায় কিছু ভালো ভালো বিদ’আত এমনও রয়েছে, যদি সেগুলোকে শুধু এজন্য ছেড়ে দেয়া হয় যে, ‘কুরুনে ছালাছাহ’ অথার্ৎ রাসুলুল্লাহ و صلى  الله ةعا لى عليه و اله وسلم সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের  পবিত্র যুগগুলোতে ছিলোনা, তাহলে দ্বীনের বর্তমান জীবন ব্যবস্থাই চলতে পারেনা। যেমন দ্বীনী মাসআলাগুলো, সেগুলোর মধ্যে দরসে নেযামী, 

কুরআন ও হাদীস সমূহ এবং ইসলামী কিতাবগুলো প্রেসে ছাপানো ইত্যাদি। এসব কাজই বিদ’আত ই হাসানারই অন্তর্ভুক্ত। যা হোক, মহামহিম আল্লাহর দানক্রমে, তাঁর প্রিয় হাবীব, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلمﺻনিশ্চয় এসব ভালো ভালো কাজের আপপ্রকাশ্য জীবনেই প্রচলন করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আপন প্রিয় মাহবূব, রাসুলুল্লাহ্ এর গোলামদের জন্য সাওয়াবে জারিয়া (অব্যাহত সাওয়াব) অর্জনের জন্য অগণিত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাগণও সদকায়ে জারিয়ার খাতিরে, যা শরীয়াতের পরিপন্থী নয়, এমন নতুন নতুন আবিস্কারকে অব্যাহত রেখেছেন। কেউ আযানের আগে দরূদ ও সালাম পড়ার প্রচলন 

করে দিয়েছেন, কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী صلى الله عليه وسلم উদ্যাপনের সুন্দর সুন্দর পন্থা বের করেছেন, তারপর তাতে আলোকসজ্জা করা, সবুজ সবুজ পতাকা সজ্জিত করে, ‘মারহাবা মারহাবা’ আক্বাশ বাতাস মুখরিতকারী শ্লোগান সহকারে, মাদানী জুলূস বের করার আমেজ শুরু করে দিয়েছেন, কেউ গেয়ারভী শরীফ,কেউ বুযুগার্নে দ্বীনদের رحمهم  الله ةعا لى ওরস শরীফ প্রচলন করেছেন, আর এখনো এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। الحمد لله عز وجلى দাওয়াতে ইসলামীর ইসলামী ভাইয়েরা ইজতিমাগুলোতে اذكرو الله (অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার যিকর করো)এ  صلو ا على  الحبيب (অথার্ৎ হাবীবের উপর দরূদ পাঠ করো।) এর নারা লাগানো (শ্লোগান দেয়া) এর একেবারে নতুন নিয়ম বের করে আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির এবং দরূদ ও সালামের মধুমাখা সুন্দর নিয়ম চালু করেছেন। 

  আল্লাহ করম এয়সা করে তুঝ পে জাহাঁ মে, 

   আয় দাওয়াতে ইসলামী তেরি ধূম মাচী হো। 

                

সবুজ গম্বুজের ইতিহাস                                             


সবুজ গম্বুজ, যার দীদারের জন্য প্রতিটি আশিকের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে, আর চক্ষু অশ্রুসজল হয়ে যায়, এটাও বিদআতে হাসানা। কেননা নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلمএর প্রকাশ্য বেসাল শরীফের অনেক বছর পর তা নির্মিত হয়েছে। এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছুটা জেনে নিন। খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন  صلى الله عليه وسلএর রওযা শরীফের উপর সর্ব প্রথম গম্বুজ শরীফ নির্মিত হয় ৬৭৮ হিজরী/ ১২৬৯ খৃষ্টাব্দে এবং সেটার উপর হলদে রং লাগানো হয়। আর তা তখন হলদে গম্বুজ হিসেবে প্রসিদ্ধছিলো। তারপর যুগ পরিবর্তন হতে লাগলো ৮৮৮ হিজরী/ ১৪৮৩ খৃষ্টাব্দে কালো পাথর দিয়ে নতুন গম্বুজ তৈরি করা হলো। আর সেটার উপর সাদা রং লাগানো হলো। আশিকগণ সেটাকে ‘আলকুব্বাতুল বায়দ্বা’ অথবা ‘গুম্বাদে বায়দ্বা’ অথার্ৎ ‘সাদা গম্বুজ’ বলতে লাগলো। ৯৮০ হিজরী/ ১৫৭২ খৃষ্টাব্দে চূড়ান্ত সুন্দর গম্বুজ নিমার্ণ করা হলো। আর সেটাকে রংবেরং এর পাথর দিয়ে সাজানো হলো। তখন সেটার এক রং রইলনা। সম্ভবত: স্থাপত্য শিল্পের চিত্তাকর্ষক ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার মতো দৃশ্যের কারণে সেটা রংবেরংয়ের গম্বুজ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করলো। ১২৩৩ হিজরী/ ১৮১৮ খৃষ্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সেটা নিমার্ণ করা হলো। এরপর এ পর্যন্ত কেউ তাতে পরিবর্তন করেনি। অবশ্য, সবুজ রং এই সৌভাগ্য পেতে লাগলো, তা রংকর্মীদের হাতের মাধ্যমে সেটার গায়েলেগে যায়। ‘গুম্বদে খাদ্বরা’ (সবুজ গুম্বদ) যা নিঃসন্দেহে বিদআত-এ হাসানা তা আজ সারা দুনিয়ার মুসলমানদেরপ্রত্যাবর্তনের বরকতময় স্থান, চোখের জ্যোতি এবং হৃদয়ের প্রশান্তি।)

সেটাকে দুনিয়ার কোন শক্তি বিলীন করতে পারবেনা। যে সেটাকে বিরোধীতার কারণে নিশ্চিহ্ন করতে চাইবে, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! সে নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 


গুম্বদে খাদ্বরা! খোদা তুঝকো সালামত রাখখে, দেখ্ লে-তে হ্যাঁ তুঝে পিয়াস বুঝা লেতে হ্যাঁ। 


এগুলোর মতো সমস্ত নতুন আবিস্কৃত নেক কাজের বুনিয়াদ ওই হাদিসে পাক যা মুসলিম শরীফের বর্ণনায় ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে ইরশাদ হয়েছে: যে কেউ ইসলামে ভালো পদ্ধতি চালু করে, সে তার সাওয়াব পাবে এবং তাদের সাওয়াবও যারা এর পর তদনুযায়ী আমল করবে।             

     

দিদারে মুস্তফা (ﷺ)                                                       


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আকিদা ও আমল পরিশুদ্ধ করার এবং ধর্মীয় জরুরী বিষয়াদী জানার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন। الحمد الله عزوجلদা’ওয়াতে ইসলামী আহলে হকদের সুন্নাতে ভরা সংগঠন। এর একটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন ও আন্দোলিত হোন। 

[(১) মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী(رحمة الله عليه)  এর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘জাআল হক্ব’ বিদআত ও বিদআতের প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য সেটা অধ্যায়ন করা যেতে পারে।]


যেমন- তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা শেষে (মুলতান) থেকে আশিকানে রাসূলগণের অসংখ্য মাদানী কাফেলা সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামে সফরে রওয়ানা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা ১৪২৬ হিজরীতে আগরাতাজ কলনী বাবুল মদীনা করাচী এর একটি মাদানী কাফেলা সফরের নিয়ম মোতাবেক একটি মসজিদে অবস্থান করছিল। রাত্রে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল তখন মাদানী কাফেলায় অংশগ্রহণকারী এক নতুন ইসলামী ভাইয়ের ভাগ্য চমকে উঠল। আর তার স্বপ্নযোগে তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত ()এর দিদার নসিব হয়ে গেল। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। দা’ওয়াতে ইসলামীর সত্যতা মনে প্রাণে জেনে মাদানী পরিবেশেরসাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলেন। 


কুয়ি আয়া পা-কে চালা গেয়া কুয়ি উমর ভরভী না পা ছকা, 

ইয়ে বড়ে করমকে হি ফয়সেলে ইয়ে বড়ে নসীব কি বাত হে।                                             


নেককারদের ভালবাসার ফযীলত 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আশিকানে রাসূলদের সহচার্যের বরকতে এক সৌভাগ্যবান ইসলামী ভাই এর জীবনে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (صلى الله عليه وسلم)এর যিয়ারত নসীব হল। এজন্য সর্বদা উত্তম সঙ্গ বেছে নেয়া চাই ও ভাল লোকদের ভালবাসা চাই। মাদানী কাফেলায় সফরকারী সৌভাগ্যবানদের ও নেককার লোকদের মুহাব্বত করার উত্তম সুযোগ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নেককার লোকদের ভালবাসার সাতটি ফযীলত শুনুন এবং আন্দোলিত হোন।

(১) আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন ইরশাদ করবেন: ওরা কোথায়, যারা আমার সম্মানার্থে একে অপরকে ভালবাসত, আজ আমি তাদেরকে আমার (আরশের) ছায়াতলে রাখব।আজ আমার (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই। (সহীহ মুসলিম, ১৩৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৫৬৬)


(২) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: যে সমস্ত লোক আমার জন্য পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা রাখে এবং আমারই জন্য একে অপরের কাছে বসে এবং পরস্পরের মধ্যে মেলাইেশা করে আর টাকা খরচ করে, তাদের জন্য আমার ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেল। (মুআত্তা, ২য় খন্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮২৮) 


(৩) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন: যে সমস্ত লোক আমার সম্মানের জন্য একে অপরের সাথে মুহব্বত রাখে তাদের জন্য নূরের মিম্বর হবে যা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন অর্থাৎ পাওয়ার আক্বাঙ্খা ব্যক্ত করবেন।) (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২৩৯৭, দারুল ফিকর, বৈরুত) 


(৪) দু’ব্যক্তি একে অপরকে আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে মুহাব্বত করল যাদের একজন পূর্বে ও অপরজন পশ্চিমে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা উভয়কে একত্রিত করবেন এবং ইরশাদ করবেন: এই সেই ব্যক্তি যাকে তুমি আমার জন্য ভালবাসতে। (শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯০২২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া্, বৈরুত) 


(৫) জান্নাতে ইয়াকুত পাথরের স্তম্ভ রয়েছে যার উপর জবরজদ পাথরদ্বারা নির্মিত বালাখাবার রয়েছে, আর সেটা এমনই উজ্জল যেন আলোকিত নক্ষত্রের মত। লোককে  আরজ করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্  (ﷺ) ঐ ঘরে কে থাকবে? হুযুর ইরশাদ করলেন: ঐ সমস্ত লোক যারা আল্লা তাআলার জন্য পরস্পরের মধ্যে মুহাব্বত রেখেছে, একই জায়গায় বসে, একে অপরের সাথে মিলাইিশা করেছে। (শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৮৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৯০০২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত) 


(৬) আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে মুহাব্বতকারী আরশের পাশে ইয়াকুত পাথরের চেয়ারে বসা থাকবে। (আল মুজামুল কবির, ৪র্থ খন্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৯৭৩, দারু ইহইয়ায়িত তারাসিল আরবী, বৈরুত) 


(৭) যে ব্যক্তি কারো সাথে আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে ভালবাসা রাখে, আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে শত্রুতা রাখে, আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে দান করে, আল্লাহ্ তাআলার ওয়াস্তে বিরত থাকে তাহলে সে নিজের ঈমান পরিপূর্ণ করল। (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৬৮১)


তারাবীর ৩৫ টি মাদানী ফুল 


(১) তারাবীহ্ প্রত্যেক বিবেকবান ও বালেগ ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (দুররুল মুখতার: ২য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা) সেটা বর্জন করা জায়িয নেই। 

(২) তারাবীর নামায বিশ রাকাত। সায়্যিদুনা ফারুকে আযম (رضى الله تعا عنه) এর শাসনামলে বিশ রাকাতই পড়া হতো। (আস্সুনানুল কুবরা, বায়হাকী: ২য় খন্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭) 

(৩) তারাবীর জামাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। সুতরাং যদি মসজিদের সবাই তারাবীর জামাআত ছেড়ে দেয় তবে সবাই তিরস্কারযোগ্য কাজ করলো। (অথার্ৎ মন্দ কাজ করলো)। আর যদি কয়েকজন লোক জামাআত সহকারে পড়ে, তবে যারা ইশাকী পড়েছে, তারা জামাআতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। (হেদায়া ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা) 

(৪) তারাবীর নামাযের সময় হল ইশার ফরয নামায পড়ার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। ইশার ফরয আদায় করার পূর্বে পড়ে নিলে বিশুদ্ধ হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা) 

(৫) ইশার ফরয ও বিতরের পরও তারাবী পড়া যায়। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা) যেমন, কখনো ২৯শে রমযান চাঁদ দেখার সাক্ষী পেতে দেরী হলে এমনই ঘটে থাকে। 

(৬) মুস্তাহাব হচ্ছে; তারাবীতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করা।যদি অর্ধ রাতের পরেও পড়ে তবুও মাকরূহ হবে না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৫ পৃষ্ঠা) 

(৭) তারাবীহ ছুটে গেলে তার কাযা নেই। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা) 

(৮) উত্তম হচ্ছে তারাবীর বিশ রাকাত নামায দুই দুই রাকাত করে দশ সালাম সহকারে সম্পন্ন করা। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৫ পৃষ্ঠা) 

(৯) তারাবীর ২০ রাকাত নামায এক সালাম সহকারে সম্পন্ন করা যায়, কিন্তু এমন করা মাকরুহ। প্রতি দু’রাকাত পর কাদাহ করা (বসা) ফরয।প্রত্যেক কাদায় (আত্তাহিয়্যাত) এর পর দরূদ শরীফ ও পড়বে। আর বিজোড় রাকাত অথার্ৎ ১ম, ৩য়, ৫ম, ইত্যাদিতে সানা পড়বে, আর ইমাম আউযু বিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহও পড়বেন। (আদ্দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা) 

(১০) যখন দু’ দু’ রাকাত করে পড়ছে, তখন প্রতি দু’ রাকাতে পৃথক পৃথক নিয়্যত করবে। আর যদি বিশ রাকাতের একসাথে নিয়্যত করে নেয়, তবেও জায়িয। (আদ্দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা) 

(১১) বিনা ওযরে তারাবীহ বসে পড়া মাকরুহ। বরং কোন কোন সম্মানিত ফকীহ (رحمه الله تعالى عليه) মতে তো নামাযই হবে না।(আদ্দররুল মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৯ পৃষ্ঠা) 

(১২) তারাবীহ জামাআত সহকারে মসজিদে আদায় করা উত্তম। যদি জামাআত সহকারে ঘরে পড়ে নেয়, তবে জামাআত বর্জনের গুনাহ হবেনা। কিস্তু ওই সাওয়াব পাবেনা, যা মসজিদে পড়লে পেত। (আলমগীরি, ১ম খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা) মসজিদে ইশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করে ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে তারাবীর নামাজ আদায় করা যাবে। যদি শরয়ী গ্রহণ যোগ্য ওযর ব্যতীত ঘরে বা অন্য কোথাও ইশার ফরজ নামাজের জামাআত আদায় করা হয় তাহলে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার গুনাহ্ হবে। 

(১৩) না বালেগ ইমামের পিছনে শুধু না বালেগরাই তারাবী পড়তে পারবে। 

(১৪) বালেগের তারাবীহ (বরং যেকোন নামায, এমনকি নফলও) না বালেগের পিছনে আদায় হবে না। 

(১৫) তারাবীতে কমপক্ষে একবার কুরআন পাক পড়া ও শুনা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (সংশোধিত ফতোয়ায়ে রযাবীয়া, ৭ম খন্ড, ৪৫৮ পৃষ্ঠা) 

(১৬) যদি শতার্বলী বিশিষ্ট হাফিয পাওয়া না যায় কিংবা অন্য কোন কারণে খতম করা সম্ভব না হয়, তবে তারাবীতে যেকোন সূরা পড়তে পারবে। তবে সূরা ফীল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত দু’বার পড়ে নিন, এভাবে বিশ রাকাত স্মরণ রাখা সহজ হবে।

(১৭) একবার بسم الله الرحمن الرحيم উচ্চ আওয়াজে পড়া সুন্নাত। 

প্রত্যেক সুরার শুরুতে আস্তে পড়া মুস্তাহাব। পরবর্তী যুগের ফকীহগণ  (رحمه الله تعالى عليه) খতমে তারাবীতে তিনবার সূৱা ইখলাস শরীফ পড়া মুস্তাহাব বলেছেন। তাছাড়া উত্তম হচ্ছে, খতম করার তারিখে সর্বশেষ রাকাতে (الم) থেকে (مفلحون) পর্যন্ত পড়া। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা) 

(১৮) যদি কোন কারণে তারাবীর নামায ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে যেই পরিমাণ কুরআন মাজীদ ওই রাকাতগুলোতে পড়েছিলো সে পরিমাণ পুনরায় পড়বে, যাতে খতম অসম্পূর্ণ থেকে না যায়। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) (১৯) ইমাম ভুলবশত: কোন আয়াত কিংবা সূরা ছেড়ে আগে বেড়ে গেলে, তখন মুস্তাহাব হচ্ছে সেটা প্রথমে পড়ে নিবে, তারপর সামনে বাড়বে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) 

(২০) পৃথক পৃথক মসজিদে তারাবীহ পড়তে পারে, যদি খতমে কুরআনের ক্ষতি না হয়। উদাহরণ স্বরূপ, তিনটি মসজিদ এমন, সে গুলোতে প্রতিদিন সোয়া পারা পড়া হয়, সুতরাং তিনটিতেই পালা করা যেতেপারে। 

(২১) দু রাকাতের পর বসতে ভুলে গেলে। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত তৃতীয় রাকাতের সিজদা করবে না, বরং বসে যাবে এবং শেষভাগে ‘সিজদায়ে সাহু’ আদায় করবে। আর যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নেয় তবে চার রাকাত পূর্ণ করবে, কিন্তু এগুলো দু’রাকাত হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্য যদি দু রাকাত পড়ে কাদাহ করতো, তবে চার রাকাত বলে গণ্য হতো। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) 

(২২) তিন রাকাত পড়ে সালাম ফেরালো। যদি দ্বিতীয় রাকাতে না বসে থাকে, তবে কিছুই হলো না। এগুলোর পরিবর্তে দু রাকাত পুনরায় পড়বে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) 

(২৩) সালাম ফেরানোর পর কেউ বলছেন দু রাকাত হয়েছে। আবার আর কেউ বলছে তিন রাকাত হয়েছে।এমতাবস্থায় ইমামের যা স্মরণ পড়বে, তাই গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি ইমামও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তবে তাদের মধ্যে যার কথার উপর নির্ভর করা যায় তার কথা মেনে নিবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা) 

(২৪) যদি মুসল্লীদের সন্দেহ হয়। বিশ রাকাত হলো? না আঠার রাকাত। তাহলে দুরাকাত পৃথক পৃথকভাবে পড়ে নিবেন।(আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা) 

(২৫) উত্তম হচ্ছে- প্রতি দু’রাকাত সমান হওয়া। এমন না হলেও কোন ক্ষতি নেই। অনুরূপভাবে প্রতি দুরাকাতে প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত সমান হবে। দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা বেশী না হওয়া চাই। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা) 

(২৬) ইমাম ও মুক্তাদী প্রতি দু রাকাআতের প্রথম রাকাতে সানা পড়বেন। (ইমাম (اعوذ بالله)এবং بسم الله ও পড়বেন এবং আত্তাহিয়্যাতের পর দরূদে ইব্রাহিম আর দোয়াও পড়বেন।) 

(২৭) যদি মুক্তাদীদের উপর ভারী অনুভুত হয় তাহলে তাশাহহুদের পর (اللهم صل على محمد و اله) এর উপর সংক্ষিপ্ত করবেন। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৯ পৃষ্ঠা) 

(২৮) যদি ২৭ তারিখ (কিংবা এর পূর্বে) কুরআন পাক খতম হয়ে যায়, তবুও রমযানের শেষ দিন পর্যন্ত তারাবী পড়তে থাকবেন। এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা) 

(২৯) প্রতি চার রাকাতের পর ততটুকু সময় পর্যন্ত বিশ্রামের জন্য বসা মুস্তাহাব, যতক্ষণ সময় চার রাকাত পড়তে লেগেছে। এ বিরতিকে ‘তারভীহা’ বলে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা) 

(৩০) তারভীহা এর মধ্যভাগে ইখতিয়ার রয়েছে- চাই নিশ্চুপ বসে থাকুক, কিংবা যিকর, দরূদ ও তিলাওয়াত করুক অথবা একাকী নফল পড়–ক। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা)

নিম্নলিখিত তাসবীহ পড়তে পারে: 

                (سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزت والعظمة والهيبة والقدرات والكبر ياء والجبروت. سبحن الملك الحي الذي لا ينام و ولا يموت سبوح القدوس ربنا ورب الملائكة والروح اللهم اجرني من النار  يا مجير يا مجير بير بر حمتك يا الرحمن الرحيمين)

(৩১) বিশ রাকাত শেষ হয়ে যাওয়ার পর পঞ্চম তারভীহাতেও (বসা) মুস্তাহাব। যদি লোকজন তা ভারী মনে করেন তবে পঞ্চমবার বসবেন না। (আলমগীরি, ১ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা) 

(৩২) কিছু সংখ্যক মুক্ততাদী বসে থাকে। যখন ইমাম রুকুতে যাবার নিকটে হন তখন দাঁড়িয়ে যায়। এটা মুনাফিকদের মতো কাজ। যেমন- আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:  (واذا قاموا الصلو ة قا موا كسالى)

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং (মুনাফিক) যখন নামাযে দন্ডায়মান হয় তখন দাঁড়ায় অলসভাবে। (পারা-৫, সূরা-নিসা, আয়াত-১৪২) ফরযের জামাআতেও যদি ইমাম রুকু থেকে উঠে যায়, তবে সিজদা ইত্যাদিতে তাৎক্ষণিকভাবে শরীক হয়ে যাবেন। অনুরূপভাবে, ইমাম যদি কাদায়ে উলা (প্রথম বা মধ্যবর্তী বৈঠক) এ থাকেন তবুও তাঁর দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবেন না, বরং শামিল হয়ে যাবেন।যদি কাদায় শামিল হন, কিন্তু ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেন, তাহলে ‘আত্তাহিয়্যাত’ পূর্ণ না করে দাঁড়াবেন না। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ৩৬ পৃষ্ঠা। গুনীয়াতুল মুতাম্মায়াল্লী, ৪১০ পৃষ্ঠা) 

(৩৩) রমযান শরীফে বিতর জামাআত সহকারে পড়া উত্তম। কিন্তু যে ব্যক্তি ইশার ফরয জামা’আত ছাড়া পড়ে সে যেন বিতর ও একাকী পড়ে। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ৩৬ পৃষ্ঠা)

(৩৪) এক ইমামের পিছনে ইশার ফরয, দ্বিতীয় ইমামের পিছনে তারাবীহ এবং তৃতীয় ইমামের পিছনে বিতর পড়লে ক্ষতি নেই। 

(৩৫) হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضى الله تعا عنه) 

ফরয ও বিতরের জামাআত পড়াতেন আর হযরত উবাই ইবনে কাব (رضى الله تعا عنه) তারাবীহ পড়াতেন। (আলমগীরি, ১ম খন্ড ১১৬, পৃষ্ঠা)


হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ্ তাআলা! আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণ, নিষ্ঠাবান ও বিশুদ্ধভাবে পড়েন এমন হাফেয সাহেবের পিছনে নিষ্ঠা ও দৃঢ়চিত্তে প্রতি বছর তারাবী আদায় করার সৌভাগ্য দান করুন এবং কবূলকর! (امين)                                                


ক্যান্সার রোগী সুস্থ হয়ে গেল।

(الحمد لله عز وجل) 

দা’ওয়াতে ইসলামীর উপর আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه وسلم)এর অশেষ দয়া আর মেহেরবানী রয়েছে যে, বারবারশুনে আসছি, ডাক্তাররা যে রোগের চিকিৎসা নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন, মাদানী কাফেলায় দোয়ার বরকতে তার চিকিৎসা হয়ে যায়। যেমন- মায়ীপুর বাবুল মদীনা, করাচীর এক ইসলামী ভাই এই ঈমান তাজাকারী ঘটনা লিখে পাঠিয়েছেন যার সার সংক্ষেপ এই রকম: হাকিছবে বাবুল মদীনা করাচীর এক স্থায়ী ইসলামী ভাইয়ের ক্যান্সার রোগ ছিল। তিনি তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলদের সাথে সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সফরের সময়কালে বেচারা যথেষ্ট আফসোস ও হতাশার মধ্যে ছিল। কাফেলায় অংশগ্রহণকারী ইসলামী ভাইয়েরা সম্মিলিতভাবে তার জন্য দোয়া করেন। একদিন সকালবেলা বসতে না বসতেই তার হঠাৎ বমি হতে লাগল এবং মাংসের একটি টুকরা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল। বমির পর সে সুস্থতা অনুভব করল।মাদানী কাফেলা থেকে ফিরে এসে যখন ডাক্তারের সাথে দেখা করল এবং পুনরায় পরীক্ষা করাল তখন অতি আশ্চর্য্যের বিষয় ছিল, মাদানী কাফেলায় সফরের কারণে তার ক্যান্সার রোগ ভাল হয়ে গেল। (الحمد لله عز وجل) সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। 


আলসার ও ক্যান্সার ইয়া হো দরদে কোমর দেগা মাওলা শিফা, কাফিলে মে চলো। 

দূর বীমারিয়া আওর পেরেশানিয়া, হো বা ফদলে খোদা, কাফিলে মে চলো। 


লোকদের থেকে না চাওয়ার ফযীলত 


হযরত সায়্যিদুনা সাওবান (رضى الله تعا عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)

ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমাকে এই কথার নিশ্চয়তা দিবে যে, মানুষের কাছ থেকে কিছু চাইবে না, তবে আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।” হযরত সায়্যিদুনা সাওবান (رضى الله تعا عنه)আরয করলেন: আমি এই কথার নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে (আমি কারো কাছ থেকে কিছু চাইব না)। এমনকি তিনি কখনো কারো কাছ থেকে কোন কিছু চাননি। (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৬৪৩)


                 

ফয়যানে লাইলাতুল ক্বদর, দরূদ শরীফের ফযীলত 


রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন হাজার বার দুরুদে পাক পাঠ করলো, সে যতক্ষণ পর্যন্ত আপন ঠিকানা জান্নাতে না দেখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবেনা।(আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২য় খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২২)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা ! লাইলাতুল ক্বদর অত্যন্ত বরকতময় রাত। সেটাকে লাইলাতুল ক্বদর এজন্য বলা হয়, এতে সারা বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ ফিরিশ্তাগণ রেজিষ্টারগুলোতে আগামী বছর সংগঠিত হবে এমন বিষয়াদি লিপিবদ্ধ করে নেন। যেমন- তাফসীরে সাবী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৩৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে: (اى اظهار ها فى دواوين الملا ء الا على)অর্থ: “তাকদীরের বিষয়াবলীকে নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের রেজিষ্টারে প্রকাশ করে দেয়া হয়।” তাছাড়া আরো অনেক মযার্দা এ মোবারক রাতের রয়েছে। প্রসিদ্ধ মুফাসসির মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمه الله تعالى عليه)বর্ণনা করেন: “এ রাতকে লাইলাতুর ক্বদর কয়েক কারণে বলা হয়: 

(১) এতে আগামী বছরের ভালমন্দ নিধার্রিত করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পন করা হয়। ক্বদর মানে তাকদীর (নিধার্রণ করণ) অথবা ক্বদর মানে 

সম্মান অথার্ৎ সম্মানিত রাত।


(২) এতে ক্বদর বা সম্মানিত কুরআন নাযিল হয়েছে। (৩) যে ইবাদত এ রাতে করা হয়, তাতে মযার্দা রয়েছে। (৪) ক্বদর অর্থ সংকীর্ণতা, অর্থাৎ ফেরেশতা এ রাতে এতো বেশি পরিমাণে আসে যে, পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে যায়, জায়গা সংকুলান হয়না। এ সব কারণে সেটাকে শবে ক্বদর অথার্ৎ সম্মানিত রাত বলে। (মাওয়াইযে নঈমিয়া, ৬২ পৃষ্ঠা) বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি এ রাতে ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, তার সারা জীবনের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০১৪)  


৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদতের চেয়ে বেশি সাওয়াব 


অতএব এ পবিত্র রাতকে কখনোই অলসতার মধ্যে অতিবাহিত করা উচিত হবেনা। এ রাতে ইবাদতকারীকে এক হাজার মাস অথার্ৎ। ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষা ও বেশি ইবাদতের সাওয়াব দান করা হয় এবং বেশি পরিমাণ কত তা আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)  ভাল জানেন। এই রাতে হযরত জিব্রাঈল  ও ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়। অতঃপর ইবাদতকারীদের সাথে মুছাফাহা করেন। এই মোবারক রাতে প্রতিটি মুহুর্ত শান্তি আর শান্তি। এটা সুবহে সাদিক পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এটা আল্লাহ্ তাআলার বিশেষ দয়া। এ মহান রাত শুধু আপন প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)এর ওসীলায় হুযূরের উম্মতকে দান করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেছেন:(بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

1. إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ

2. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

3. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ

4. تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ

5. سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ)

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলার নামে আরম্ভ, যিনি পরম করুণাময়, দয়ালু নিশ্চয় আমি সেটাকে ক্বদর রাত্রিতে নাযিল করেছি। আপনি জেনেছেন ক্বদর রাত্রি কি? ক্বদর রাত হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এতে ফেরেশতাগণ ও জিব্রাঈল অবর্তীর্ণ হয় আপন রবের নির্দেশে, প্রতিটি কাজের জন্য, তা হচ্ছে, শান্তি ভোর চমকিত হওয়া পর্যন্ত। (পারা-৩০, সুরাতুল কদর) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শবে ক্বদর কতই গুরুত্বপূর্ণ রাত! এর বরকত প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা পূর্ণ একটা সূরা নাযিল করেছেন, যা আপনি এখন দেখলেন। এ বরকতময় সূরায় আল্লাহ্ তাআলা এ মোবারক রাতের কয়েকটা বিশেষত্ব ইরশাদ করেছেন। সম্মানিত মুফাসসিরগণ (আল্লাহ তা’আলা তাঁদের উপর দয়া করুন) এই সূরায়ে ক্বদর প্রসঙ্গে বলেন: “এ রাতে আল্লাহ্ তাআলা কুরআন মজীদকে লওহ-ই-মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করেছেন। তারপর প্রায় ২৩ বছর সময় ধরে আপন প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) এর উপর ক্রমান্বয়ে নাযিল করেছেন। (তাফসীরে সাবী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৩৯৮ পৃষ্ঠা) 


হুযুর (ﷺ) দুঃখিত হলেন 


তাফসীরে আযীযীতে বর্ণিত আছে: যখন আমাদের নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم)পূর্ববর্তী সম্মানিত নবীগণের উম্মতদের দীঘার্য়ূ ও আপন উম্মতের স্বল্পায়ু দেখলে তখন উম্মতের প্রতি দয়ালু ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (صلى الله عليه وسلم) এর বরকতময় হৃদয়ে স্নেহের ঢেউ উঠলো। আর তিনি (صلى الله عليه وسلم)  দুঃখিত হলেন এ ভেবে “আমার উম্মত যদিও খুব বড় বড় ইবাদতও করে তবুও তো তাদের সমান করতে পারবে না। তাই আল্লাহ্ তাআলার রহমতের ঢেউ উঠল। তিনি আপন প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم) কে লাইলাতুল ক্বদর দান করলেন। (তাফসীরে আযীযী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা) 

                             

ঈমান উদ্দিপক ঘটনা   


সূরা ক্বদর এর শানে নুযূল (অবতরণের কারণ) বর্ণনা করতে গিয়ে কিছু সংখ্যক সম্মানিত মুফাসসির (رحمه الله تعالى عليه) অত্যন্ত ঈমান উদ্দিপক ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সেটার বিষয়বস্তু কিছুটা এমন, হযরত শামউন (رحمه الله تعالى عليه) হাজার মাস ধরে এ ভাবে ইবাদত করেছেন, রাত জেগে জেগে ইবাদত করতেন আর দিনের বেলায় রোযা রাখতেন এবং আল্লাহ্ 

তাআলার পথে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদও করতেন। তিনি এতো শক্তিশালী ছিলেন, যে লোহার ভারী, মজবুত শিকলগুলোকে নিজ হাতে ভেঙ্গে ফেলতেন। নিকৃষ্ট কাফিরগণ যখন দেখলো, হযরত শামউন (رحمه الله تعالى عليه)এর বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত কাজে আসছেনা, তখন পরস্পর পরামর্শ করার পর অনেক ধন সম্পদের লোভ দেখিয়ে তাঁর (رحمه الله تعالى عليه)স্ত্রীকে এ কথায় কুপরামর্শ দিল, যেন সে কোন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সুযোগ পেলে তাঁকে খুবই মজবূত রশি দিয়ে ভালভাবে বেঁধে তাদের হাতে অর্পণ করে দেয়। অবিশ্বস্থ স্ত্রী তাই করল। যখন তিনি জাগ্রত হলেন এবং নিজেকে রশিতে বন্দী পেলেন, তখন সাথে সাথে নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নাড়া দিলেন, তখন দেখতে না দেখতেই রশিগুলো ছিঁড়ে গেলো। আর তিনি (رحمه الله تعالى عليه)মুক্ত হয়ে গেলেন তারপর আপন স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন আমাকে কে বেঁধেছে? অবিশ্বস্ত স্ত্রী বিশ্বস্তার কৃত্রিম ভঙ্গিতে মিথ্যা বলে দিলো আমিতো আপনার শারীরিক শক্তির পরীক্ষা করছিলাম, আপনি নিজেকে এসব রশি থেকে মুক্ত করাতে পারেন কিনা।কথা শেষ হলো। একবার ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও অবিশ্বস্ত স্ত্রী সাহস হারায়নি। আর নিয়মিত এ সুযোগের অপেক্ষায় রইলো যে, কখন তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে এবং তাঁকে বেঁধে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত পুনরায় সে সুযোগ পেয়ে গেলো। তাই তিনি যখন গভীর নিদ্রায় বিভোর হলেন, তখন ওই যালিম স্ত্রী অত্যন্ত চালাকীর সাথে তাঁকে লোহার শিকল দিয়ে ভালভাবে বেঁধে ফেললো। যখনই তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেলো, তখন তিনি শিকলের একেকটা কড়া ছিন্ন করে ফেললেন এবং সহজে মুক্ত হয়ে গেলেন। স্ত্রী এটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু পুনরায় প্রতারণা করে একই কথা আবার বলতে লাগল, “আমি আপনাকে পরীক্ষা করছিলাম।” কথা প্রসঙ্গে (হযরত) শামঊন (رحمه الله تعالى عليه) তাঁর স্ত্রীর নিকট নিজের রহস্য খুলে দিলেন, “আমার উপর আল্লাহ্ তাআলা বড়ই অনুগ্রহ, তিনি আমাকে তাঁর বেলায়াতের মযার্দা দান করেছেন। আমার মাথার চুল ছাড়া আমার উপর দুনিয়ার কোন জিনিষ প্রভাব ফেলতে পারবেনা। চালাক স্ত্রী সমস্ত কথা বুঝতে পারলো। আহ! তাকে দুনিয়ার ভালবাসা অন্ধ করে ফেলেছিলো। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেয়ে সে তাঁকে তার আটটি বাবরী চুল১ দিয়ে বেধেঁ নিলো, যেগুলোর দৈঘর্য ছিল মাটি পর্যন্ত। তিনি ঘুম ভাঙ্গতেই খুব শক্তি প্রয়োগ করলেন, কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলো। দুনিয়ার ধন সম্পদের নেশায় অন্যায়ভাবে স্বামীকে শক্রদের হাতে অর্পন করে দিলো। দুষ্ট কাফিরগণ হযরত শাম’উন (رحمه الله تعالى عليه)কে একটা খামের সাথে বেঁধে ফেললো, আর অত্যন্ত নির্মম ও হিংস্রতার সাথে তাঁর নাক ও কান কেটে ফেললো, চোখ দুটি বের করে ফেললো। নিজ কামিল ওলীর অসহায় অবস্থার উপর মহামহিম আল্লাহর গযবের সাগরে ঢেউ খেললো। মহা পরাক্রইশালী আল্লাহ্ তাআলা ওই যালিমদেরকে জমিনের ভিতর ধসিয়ে দিলেন। আর দুনিয়ার লালসার শিকার অবিশ্বাসী হতভাগা স্ত্রীও আল্লাহ তায়ালার গযবের তাজাল্লীতে ধ্বংস হয়ে গেল। (মুকাশাফাতুল কুলুব, ৩০৬ পৃষ্ঠা) ১ ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمه الله تعالى عليه)এ দীর্ঘ চুলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পূর্ববর্তী উম্মতের বুযুর্গ ছিলেন। আমাদের প্রিয় আক্বা (صلى الله عليه وسلم)এর চুলের সুন্নাত সবোর্চ্চ কাঁধ পর্যন্ত।


আমাদের বয়সতো খুবই কম 


সম্মানিত সাহাবা ই কেরাম (رضى الله تعا عنه)যখন হযরত সায়্যিদুনা শামউন (رحمه الله تعالى عليه)এর ইবাদত , জিহাদ এবং বিভিন্ন কষ্ট ও মুসীবতের বর্ণনা শুনলেন তখন হযরত শামউন (رحمه الله تعالى عليه) উপর তাঁদের বড় ঈষার্ হলো। নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم) এর বরকতময় দরবারে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্!(صلى الله عليه وسلم)আমরাতো অতি অল্প বয়সই পেয়েছি। তা থেকেও একটা অংশ ঘুমে চলে যায়। কিছুটা চলে যায় জীবিকার সন্ধানে, রান্না বান্না ও পানাহারে, আর অন্যান্য পার্থিব কাজকর্মে কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তাই আমরাতো হযরত শামউন  (رحمه الله تعالى عليه)   এর মতো ইবাদত করতে পারি না। এভাবে বনী ইস্রাঈল ইবাদতে আমাদের থেকে এগিয়ে যাবে। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم) এটা শুনে দুঃখিত হলেন। তখনই হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল আমীন (عليه السلام) হুযূরের মহান দরবারে হাযির হলেন। আর আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে সূরা ক্বদর পেশ করলেন। আর সান্ত্বনা দিয়ে ইরশাদ করলেন: “প্রিয় হাবীব (صلى الله عليه وسلم)আপনি দুঃখিত হবেন না। আপনার (صلى الله عليه وسلم)উম্মতকে আমি প্রতি বছর এমন এক রাত দান করেছি যে, যদি তারা ওই রাতে আমার ইবাদত করে, তবে তা হযরত শামউন (رحمه الله تعالى عليه) এর হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষাও বেশি হবে। (তাফসীরে আযীযী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা) 


আহ! আমাদের নিকট গুরুত্ব কিসের

(الله اكبر)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم) এর উম্মতের উপর কি পরিমাণ দয়াবান! আর আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (صلى الله عليه وسلم) এর ওসীলায় কতোই মহান দয়া করেছেন!

যদি গভীর মনোযোগ দিয়ে শবে ক্বদরের ইবাদত করে নেই, তবে এক হাজার বছরের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব পেয়ে যাব। কিন্তু আহ! আমাদের নিকট শবে ক্বদরের গুরুত্ব কোথায়? 

একজন সম্মানিত সাহাবী (رضى الله تعا عنه) 

এর আফসোসের কারণে আমরা এতো বড় পুরস্কার কোনরূপ প্রার্থনা ছাড়াই পেয়ে গেলাম। তাঁরা এর প্রতি মযার্দাও দিয়েছেন কিন্তু আমরা উদাসীনরা ইবাদতের সময়ও পাইনা। আহ! প্রতি বছরই পাই এমন মহান পুরস্কারকে আমরা অলসতার হাতে অর্পন করে দিই। 

            

মাদানী ইনআমাত রিসালার বরকত 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অন্তরে শবে ক্বদরের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন।(الحمد لله عز وجل) সুন্নাতে ভরা জীবন যাপন করার জন্য ইবাদত ও চরিত্র গঠনের ইসলামী ভাইদের ৭২টি ও ইসলামী বোনদের জন্য ৬৩টি, ইলমে দ্বীন অর্জনকারী ছাত্রদের জন্য ৯২টি ও ছাত্রীদের জন্য ৮৩টি মাদানী মুন্না মুন্নীদের জন্য ৪০টি ‘মাদানী ইনআমাত’ প্রশ্নের আকৃতিতে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। ফিকরে মদীনা (তথা নিজ আমলের হিসাব) করতে করতে দৈনন্দিন ‘মাদানী ইনআমাত’ রিসালা পূরণ করে দা’ওয়াতে ইসলামীর নিজ এলাকার জিম্মাদারকে প্রত্যেক মাদানী মাস তথা আরবী মাসের প্রথম তারিখে জমা করিয়ে দিন। জানিনা মাদানী ইনআমাত কত ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনের জীবনে মাদানী ইনকিলাব সৃষ্টি করেছেন। তার একটি বাহার শুনুন! যেমন নিউ করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের কিছু বর্ণনা এ রকম ছিল, এলাকার মসজিদের ইমাম সাহিব যিনি দা’ওয়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত তিনি ইনফিরাদী কৌশিশ করে আমার বড় ভাইজানকে মাদানী ইনআমাত রিসালার একটি কপি উপহার দিলেন। তিনি সেটা ঘরে নিয়ে এসে যখন পড়লেন তখন আশ্চর্য হয়ে গেলেন, এই সংক্ষিপ্ত রিসালায় একজন মুসলমানের ইসলামী জীবন ধারণের অত্যন্ত মজবুত সুত্র দেয়া আছে।মাদানী ইনআমাত রিসালা পাওয়ার বদৌলতে (الحمد لله)তার নামায পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হলো এবং নামায জামাআত সহকারে আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিত হতে লাগল। এখন তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযী হয়ে গেছেন। দাঁড়িও রেখে দিলেন এবং মাদানী ইনআমাত রিসালাও পূরণ করেন। মাদানী ইনআমাতকে আমেল পে হারদম হার ঘড়ি, ইয়া ইলাহী! খুব বরছা রহমতো কি তু ঝড়ি। 


মাদানী ইনআমাত রিসালা পূরণ কারীদের জন্য বড় সুসংবাদ 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মাদানী ইনআমাত রিসালা পুরণকারী কি রকম সৌভাগ্যবান তার ধারণা এই মাদানী বাহার থেকে অনুমান করুন। যেমন- হায়দারাবাদ, বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশের এক ইসলামী ভাই এর একটি ঘটনার বয়ান এ রকম ছিল, ১৪২৬ হিজরীর রজবুল মুরাজ্জব মাসের এক রাতে স্বপ্নযোগে প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)এর মহান যিয়ারত আমার নসীব হয়ে গেল। হুযুর (صلى الله عليه وسلم) এর ঠোঁট মোবারক নড়ে উঠল এবং রহমতের ফুল ঝড়তে লাগল। শব্দগুলো ছিল এই রকম, “যে ব্যক্তি এই মাসে নিয়মিত মাদানী ইনআমাত সম্পর্কিত ফিকরে মদীনা করবে আল্লাহ্ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।” মাদানী ইনআমাত কি ভী মারহাবা কিয়া বাত হে, কুরবে হককে তালিবুকে ওয়াস্তে ছাওগাত হে।


সমস্ত কল্যাণ থেকে কে বঞ্চিত? 


হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رحمه الله تعالى عليه)

বলেন: “যখন একবার মাহে রমযান তাশরীফ আনলো তখন রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম(صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করেন: “তোমাদের নিকট একটি মাস এসেছে, যাতে একটি রাত এমনও রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত থেকে 

বঞ্চিত রইলো, সে যেনো সব কিছু থেকে বঞ্চিত রইলো। আর এর কল্যাণ থেকে যে বঞ্চিত থাকে একমাত্র সেই প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ২৯৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৬৪৪) 


এক হাজার শাহজাদা


 সূরা ক্বদরের অন্য এক শানে নুযুল হচ্ছে, প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত সায়্যিদুনা কাবুল আহবার (رضى الله تعا عنه)থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: বনী ইস্রাঈলে এক সৎচরিত্রবান বাদশাহ ছিলেন। আল্লাহ্ তাআলা ওই যুগের নবীর (عليه السلام)প্রতি ওহী প্রেরণ করেন, অমুককে বলো, তার কি ইচ্ছা তা পেশ করতে। যখন তিনি সংবাদ পেলেন, তখন আরয করলেন, হে আমার মালিক! আমার আক্বাঙ্খা হচ্ছে, আমি আমার সমস্ত সম্পদ, সন্তান ও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করবো। আল্লাহ্ তাআলা তাকে এক হাজার পুত্র সন্তান দান করলেন। সে তার একেকজন শাহজাদাকে তার সম্পদ সহকারে যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত করলেন। তারপর তাদেরকে আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় মুজাহিদ বানিয়ে প্রেরণ করতেন। সে এক মাস জিহাদ করতো এবং শহীদ হয়ে যেতো। তারপর দ্বিতীয় শাহজাদাকে সেনা বাহিনীতে যোগদানের জন্য তৈরী করতেন। এভাবে প্রতি মাসে একেকজন শাহজাদা শহীদ হয়ে যেতো। তার পাশাপাশি বাদশাহ নিজেও রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং দিনের বেলায় রোযা রাখতেন। এক হাজার মাসে তাঁর এক হাজার শাহজাদা শহীদ হলো। তারপর নিজে অগ্রসর হয়ে জিহাদ করলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন। লোকজন বলতে লাগলো:“এ বাদশাহর সমান মযার্দা কেউ পেতে পারেনা। তখন আল্লাহ্ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেছেন: (

3. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ

)(কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: শবে ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম।) অর্থাৎ- এ রাত ওই বাদশাহ্র হাজার মাস যাবত যে রাত জাগরণ, দিনে রোযা এবং জান, মাল ও সন্তানগণ সহকারে আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় জিহাদ করে অতিবাহিত করেছে, তা অপেক্ষাও উত্তম।(তাফসীরে কুরতবী, ২০ তম খন্ড, পারা ৩০, ১২২ পৃষ্ঠা) 

 

হাজার শহরের বাদশাহী                      

  

হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর ওয়ার্রাক (رحمه الله تعالى عليه)বলেন: “হযরত সায়্যিদুনা সুলাইমান (عليه السلام) এর রাজ্যে পাঁচশ শহর ছিলো। আর সায়্যিদুনা যুল কারনাঈন (عليه السلام)এর রাজ্যেও পাঁচশ শহর ছিলো। এভাবে এ দু’জনের রাজ্যে এক হাজার শহর হলো। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা এই এক রাতের ইবাদতকে, যে সেটা পাবে, তার জন্য এ দু’টি রাজ্য অপেক্ষাও উত্তম করেছেন। (তাফসীরে কুরতবী, ২০ তম খন্ড, পারা ৩০, ১২২ পৃষ্ঠা) প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ রাত সব দিক দিয়ে মঙ্গল ও শান্তির জামিনদার। এ রাত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রহমতই রহমত। সম্মানিত মুফাসসিরীনগণ (رحمه الله تعالى عليه)বলেন: “এ রাত সাপ, বিচ্ছু, বিপদাপদ ও শয়তান থেকেও নিরাপদ। এ রাতে শান্তিই শান্তি।”           


পতাকা উড়ানো হয়                           

                      

বর্ণিত আছে, “শবে ক্বদরে সিদ্রাতুল মুন্তাহার ফেরেশতাদের দল হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام)  এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়। তাঁদের সাথে চারটি পতাকা থাকে। একটি পতাকা হুযুর (صلى الله عليه وسلم) এর রওযায়ে মোবারকের উপর, একটি পতাকা বায়তুল মুকাদ্দাসের ছাদের উপর, একটি পতাকা কাবা শরীফের ছাদের উপর এবং আরেকটা পতাকা তূরে সিনার উপর উড়িয়ে দেয়া হয়।

তারপর এ ফেরেশতাগণ মুসলমানদের ঘরে গিয়ে প্রত্যেক মু’মিন নর ও নারীকে সালাম বলে। আর বলে, সালাম (সালাম আল্লাহ্ তাআলার সিফাতী নাম) তোমাদের উপর শান্তি প্রেরণ করেন। কিন্তু যেসব ঘরে মদ্যপায়ী ও শূকরখোর কিংবা কোন শরীয়াতসম্মত কারণ ছাড়া আপন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী থাকে ওই সব ঘরে এসব ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (তাফসীরে সাভী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৪০১ পৃষ্ঠা) অন্য এক বর্ণনায় এটাও এসেছে, এসব ফেরেশতার সংখ্যা পৃথিবীর কঙ্কর অপেক্ষাও বেশী হয়ে থাকে। এরা সবাই শান্তি ও রহমত নিয়ে অবতীর্ণ হয়।  (তাফসীরে দুররে মনসুর, ৮ম খন্ড, ৫৭৯ পৃষ্ঠা) 

                                   

সবুজ পতাকা                          

                                  

অন্য এক দীর্ঘ হাদীস, যা হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضى الله تعا عنه)বর্ণনা করেছেন: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেন: ‘যখন শবে ক্বদর আসে তখন আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) একটা সবুজ পতাকা নিয়ে ফেরেশ্তাদের খুব বড় দল সহকারে পৃথিবীতে অবতরণ করেন।’ আর ওই সবুজ) পতাকাকে কাবা শরীফের উপর উড়িয়ে দেন। হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এর ১০০ পাখা আছে। সেগুলো থেকে শুধু দুটি পাখা এ রাতে খুলে থাকে। ওই পাখা দুটি পূর্ব ও পশ্চিম সহ সব প্রান্তে বিস্তৃত হয়ে যায়। তারপর হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام)  ফেরেশ্তাদেরকে নির্দেশ দেন। যে কোন মুসলমান আজ রাতে জাগ্রত থেকে নামায কিংবা আল্লাহ্ তাআলার যিকরে মশগুল থাকে, তাকে সালাম করো, তার সাথে মুসাফাহা করো। তাছাড়া তাদের দোয়ায় যেন আমীনও বলে। সুতরাং ভোর পর্যন্ত এ ধারাবাহিকতা চালু থাকে। ভোর হতেই হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল ফিরিশ্তাদেরকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ফেরিশ্তাগণ আরয করেন, “হে জিব্রাঈল (عليه السلام)আল্লাহ্ তাআলা তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (صلى الله عليه وسلم)  এর উম্মতের চাহিদাগুলো সম্পর্কে কি করলেন?”

হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام)বলেন: আল্লাহ্ তাআলা তাদের উপর বিশেষ দয়ার দৃষ্টি করেন। আর চার ধরণের লোকদের ব্যতীত সমস্ত লোককে ক্ষমা করে দেন। সাহাবায়ে কেরাম(رضى الله تعا عنه) আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)ওই চার ধরণের লোক কারা? ইরশাদ করলেন: “(১) মদ্যপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, (২) মাতাপিতার অবাধ্য, (৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং (৪) ওইসব লোক যারা পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করে ও পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৬৯৫) 


হতভাগা লোক 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! শবে ক্বদর কি পরিমাণ সম্মানিত রাত। এ রাতে প্রতিটি বিশেষ ও সাধারণ লোককে ক্ষমা করে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও মদ্যপানে অভ্যস্ত, মাতাপিতার অবাধ্য, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, পরস্পর কোন শরীয়াতসম্মত কারণ ছাড়া হিংসা পোষণকারী আর এ কারণে পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারীকে এ সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করে দেয়া হয়। 

                            

তাওবা করে নাও


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মহা পরাক্রইশালী আল্লাহ্ তাআলার আজাবকে ভয় করার জন্য কি একথা যথেষ্ট নয়। যে শবে ক্বদরের মতো বরকতময় রাতেও যেসব অপরাধীকে ক্ষমা করা হচ্ছে না তারা কি পরিমাণ জঘণ্য অপরাধী হবে? অবশ্য যদি এসব গুনাহ্ থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করে নেয়া হয়, আর বান্দার হক সমূহের বিষয়গুলো নিস্পত্তি করে নেয়া হয়, তবে আল্লাহ্ তাআলার দয়া ও রহমত অসীম। 

                                

ঝগড়ার কুফল                      

                                  

হযরত সায়্যিদুনা ওবাদা ইবনে সামিত (رضى الله تعا عنه)থেকে বর্ণিত: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم) বাইরে তাশরীফ নিয়ে আসলেন যাতে আমাদেরকে শবে ক্বদর সম্পর্কে বলবেন (তা কোন রাত?) দু’জন মুসলমান পরস্পর ঝগড়া করছিলো।হুযুর (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করলেন: আমি এজন্য এসেছিলাম যে, তোমাদেরকে শবে ক্বদর সম্পর্কে বলবো। কিন্তু অমুক ব্যক্তি ঝগড়া করছিলো। এ কারণে সেটার নির্দিষ্টকরণ তুলে নেয়া হয়েছে। আর হতে পারে এতে মঙ্গল থাকবে। এখন শবে ক্বদরকে (শেষ দশদিনের) (২৯তম), (২৭তম), (২৫তম) রাতে তালাশ করো। 

(সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৬৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০২৩) 

                   

আমরাতো ভদ্রের সাথে ভদ্র আর .....


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ হাদীস মোবারকে আমাদের জন্য কি পরিমাণ শিক্ষা রয়েছে? তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। শবে ক্বদর কোন রাতে? দু’জন মুসলমানের ঝগড়ার কারণে বাধা হয়ে দাঁড়াল এবং সব সময়ের জন্য শবে ক্বদরকে গোপন করে দেয়া হলো। এ থেকে অনুমাণ করুন মুসলমান পরস্পর ঝগড়া করা রহমত থেকে দুরে ছিটকে পড়ার কি ধরণের কারণ হয়ে যায়। আহ! এখন মুসলমানদেরকে কে বুঝাবে? আজকালতো মুসলমানকে বড় গর্ব সহকারে একথা বলতে শোনা যায়, মিঞা! এ দুনিয়াতেতো ভদ্র হয়ে জীবন যাপন করাই যায়না। আমরাতো ভালোর সাথে ভাল আর খারাপের সাথে খারাপ। শুধু এটা বলে ক্ষান্ত হয়না, বরং এখনতো মামূলী কথার উপর ভিত্তি করেও প্রথমে গালমন্দ, তারপর হাতাহাতি, এরপর ছুরি চালনা, বরং গোলাগুলি পর্যন্ত হয়ে যায়। আফসোস্! মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও আজ মুসলমান কখনো পাঠান হয়ে, কখনো পাঞ্জাবী দাবী করে, কখনো মুহাজির হয়ে, কখনো সিন্ধী ও বেলুচী জাতীয়তাবাদের শ্লোগান দিয়ে একে অপরের গলা কাটছে, একে অপরের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে শুধু বংশীয় ও ভাষাগত পার্থক্যের ভিত্তিতে যুদ্ধ বিগ্রহ করে যাচ্ছে। মুসলমান ভাইয়েরা! আপনারাতো একে অপরের রক্ষক ছিলেন। আপনাদের কি হয়েছে?


রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করেন: “মুমিনদের উদাহরণ শরীরের মতোই। যদি একটা অঙ্গ কষ্ট পায়, তবে সমগ্র দেহই কষ্ট অনুভব করে।” (সহীহ বোখারী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৬০১১) একজন কবি কতোই চমৎকার ভাবে বুঝিয়েছেন: মুবতালায়ে দরদ কোয়ী ওযো হো রোতী হে আখঁ কিছ কদর হামদরদ ছারে জিসম কি হোতী হে আখঁ প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের পরস্পরের সাথে ঝগড়া করার পরিবর্তে একে অপরের প্রতি সমবেদনা ও সহযোগীতা করা উচিত। মুসলমান একে অপরকে প্রহার ও হত্যাকারী, লুন্ঠনকারী এবং এক অপরের দোকান ও আসবাবপত্রে অগ্নি সংযোগকারী হতে পারে না।                                                        


মুসলমান, মু’মিন, মুজাহিদ ও মুহাজিরের সংজ্ঞা                                                 


সায়্যিদুনা ফুদ্বাইলাহ ইবনে ওবায়দ (رضى الله تعا عنه)থেকে বর্ণিত: 

রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم)ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের সময় ইরশাদ করেছেন: “তোমাদেরকে কি মু’মিন সম্পর্কে বলবো না?” তারপর ইরশাদ করেছেন: “মু’মিন হচ্ছে সে যার পঞ্চ ইন্দ্রিয় অন্য মুসলমানের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপদ থাকে। আর ‘মুসলমান’ হচ্ছে সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে। ‘মুজাহিদ’ হচ্ছে সে, যে আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্যের ক্ষেত্রে নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে। আর ‘মুহাজির’ হচ্ছে সে, যে গুনাহ্ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে বিরত থাকে।” (হাকিমকৃত মুস্তাদরাক, ১ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা) আরও ইরশাদ করেছেন: “কোন মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয়, সে কোন মুসলমানের দিকে (কিংবা তার সম্পর্কে) এমনি ইশারা-ইঙ্গিতে কাজ করবে, যা তার মনে কষ্টের কারণ হয়, আর এটাও হালাল নয়, এমন কোন কাজ করা হবে, যা অপর কোন মুসলমানকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে।” (ইত্তিহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, ৭ম খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা)'


তরিকে মুস্তফা কো ছোড়না হে ওয়াজহে বরবাদী 

ইছি ছে কওম দুনিয়া মে হোয়ী বে ইকতিদার আপনি। 

                              

অসহনীয় চুলকানী                  


হযরত সায়্যিদুনা মুজাহিদ (رضى الله تعا عنه)বলেন: “আল্লাহ্ তাআলা কোন কোন দোযখীকে এমন চুলকানীতে আক্রান্ত করবেন, চুলকাতে চুলকাতে তাদের মাংস খসে পড়বে, এমনকি তাদের হাড়গুলো প্রকাশ পেয়ে যাবে। তারপর আহ্বান শোনা যাবে, ‘বলো, এ কষ্ট কেমন লাগছে? তারা বলবে, ‘অত্যন্ত মারাত্নক ও অসহনীয়।’ তারপর তাদেরকে বলা হবে: “দুনিয়ায় তোমরা মুসলমানদেরকে যে নির্যাতন করতে, এটা তারই শাস্তি।” (ইত্তেহাফুছ সাদাআতুল মুত্তাকীন, ৭ম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা) 

                     

কষ্ট দূর করার সাওয়াব 


প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেন: “আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘুরতে দেখেছি। সে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে চলে যাচ্ছিলো। জানো কেন? শুধু এজন্য, সে এ দুনিয়ায় একটা গাছ রাস্তা থেকে একারণে কেটে ফেলেছে যেন মুসলমানগণ পথ চলতে কষ্ট না পায়।” (সহীহ মুসলিম শরীফ, ১৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৯১৪)                                                    


যুদ্ধ করতে হলে, নফসের সাথে করো                        


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ বরকতময় হাদীসগুলো থেকে শিক্ষা অর্জন করো! আর পরস্পরের সাথে ঝগড়া ও লুট-মার থেকে বিরত থাকুন! যদি যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে হয়, তবে অবিশ্বস্ত শয়তানের সাথে করুন, নফসে আম্মারার সাথে লড়াই করুন। জিহাদের সময় দ্বীনের শত্রট্টদের সাথে যুদ্ধ করুন। তবে মুসলমান পরস্পর ভাই হয়ে থাকুন। পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ করার বড় ক্ষতি তো আপনারা শুনেছেন, শবে ক্বদরের নির্দিষ্টকরণ উঠিয়ে নেয়া হলো,যার সন্ধান আমাদেরকে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (صلى الله عليه وسلم) দিতে যাচ্ছিলেন। এটা ছাড়াও পরস্পর যুদ্ধ- বিগ্রহের কারণে আমাদেরকে কতোই বড় বড় নেয়ামত ও রহমত থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে! আল্লাহ্ তাআলা আমাদের দুরাবস্থার উপর দয়া করো! আর একথাটুকু বুঝার সামর্থ্য দান করুন, আমরা যদিও পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধী, বেলুচী, সারাইকী ও মুহাজির ইত্যাদি জাতি-গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রাখি, (এর দ্বারা বিভেদ বৈষম্য বুঝানো হয়েছে) কিন্তু আমরাই হলাম প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)এর গোলাম। আমাদের প্রিয় নবী (صلى الله عليه وسلم)না পাঠান, না পাঞ্জাবী, না বেলুচী, না সিন্ধী, কিন্তু হুযুর (صلى الله عليه وسلم)তো আরবী। আহ! আমরা যদি প্রকৃত অর্থে প্রিয় আক্বা (صلى الله عليه وسلم) এর দয়ার চাদর ধরে থাকতাম!আর সমস্ত বংশীয় ও ভাষাগত বিরোধ ভুলে গিয়ে এক ও নেক্ হয়ে যেতাম! 


ফরদে কায়েম রব্তে মিল্লাত ছে হে তানহা কুছ নেহী, 

মওজ হে দরিয়া মে আওর বীরুনে দরিয়া কুছ নেহী। 

                  

মাদানী ইনআমাত রিসালা দেখে প্রিয় আক্বা (ﷺ) মুচকি হাসি দিলেন 


(الحمد لله عز وجل)

দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে কোন প্রকারের ভাষা গত বা জাতিগত মতভেদ নেই। প্রত্যেক ভাষার মানুষ ও প্রত্যেক জাতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)এর চাদরে আশ্রয় নিয়ে থাকে। আপনিও সর্বদা দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত থাকুন। এবং ইশকে রসূলে বিভোর হয়ে জীবন যাপনের জন্য নিজেকে মাদানী ইনআমাত মোতাবেক সাজিয়ে নিন। মনোযোগের জন্য একটি সুন্দর সুগন্ধীময় মাদানী বাহার আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি:

যেমন- ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০০৫ হতে শুরু হওয়া তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা বাবুল মদীনা করাচীতে মাদানী কাফেলা কোর্স করার জন্য আগত রাওয়াল পিন্ডির এক মুবাল্লিগের ঘটনার সারাংশ এই, আমি আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনায় ঘুমিয়ে ছিলাম। কপালের চোখ বন্ধ হয়ে গেলে, অন্তরের চোখ খুলে গেল। স্বপ্নের জগতে দেখলাম নবী করীম, রউফুর রহীম (صلى الله عليه وسلم)একটি উঁচু জায়গায় বসে আছেন পাশেই মাদানী ইনআমাত রিসালার বস্তা রাখা হল। খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন,রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه وسلم) মুচকি হেসে হেসে মাদানী ইনআমাত একেকটি রিসালা 

গভীরভাবে দেখতে লাগলেন। অতঃপর আমার চোখ খুলে গেল। 

মাদানী ইনআমাত ছে আত্তার হাম কো পিয়ার হে ইনশাআল্লাহ দো জাহা মে আপনা বেড়া পার হে। 

                             

যাদুকরও ব্যর্থ                             

      

হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল হক্কী (رحمه الله تعالى عليه) বর্ণনা করেন: “এটা নিরাপত্তা প্রদানকারী রাত। অর্থাৎ এতে অনেক কিছু থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়। এ রাতে রোগ শোক, অনিষ্ট এবং বিপদাপদ থেকেও নিরাপত্তা রয়েছে। অনুরূপভাবে, ঝড় ও বিজলী ইত্যাদি, এমন জিনিস, যেগুলোর কারণে ভয় সৃষ্টি হয়, সেগুলোকে থেকেও নিরাপত্তা থাকে, বরং এ রাতে যা কিছু নাযিল হয়, তাতে শান্তি লাভ ও কল্যাণ থাকে। তাতে শয়তানের অনিষ্ট করার কোন ক্ষমতা থাকে না, তাতে যাদুকরের যাদু চলে না। ব্যাস! এ রাতে শান্তিই শান্তি। (রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৪৮৫ পৃষ্ঠা)


শবে ক্বদরের নিদর্শন 


হযরত সায়্যিদুনা ওবাদাহ ইবনে সামিত (رحمه الله تعالى عليه)তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (صلى الله عليه وسلم)এর বরকতময় দরবারে শবে ক্বদর সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তখন আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করলেন: শবে ক্বদর রমযানুল মোবারকের শেষ দশদিনের মধ্যে বিজোড় রাতগুলোতে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ কিংবা ২৯ শে রমযান রাতে হয়ে থাকে। 

তাই যে কেউ ঈমান সহকারে সাওয়াবের নিয়্যতে এ রাতগুলোতে ইবাদত করে, তার বিগত সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। সেটা বুঝার জন্য এটাও রয়েছে, ওই মোবারক রাত খোলাখুলি, সুষ্পষ্ট এবং পরিস্কার ও স্বচ্ছ থাকবে। এতে না বেশি গরম থাকে, না বেশি ঠান্ডা, বরং এ রাত মাঝারী ধরণের হয়ে থাকে। এমন মনে হয় যেনো তাতে চঁাদ খোলাখুলি ভাবে উদিত। এ পূর্ণ রাতে শয়তানদেরকে আসমানের তারা ছুঁড়ে মারা হয়। আরো নিদর্শনের মধ্যে এও রয়েছে, এ রাত অতিবাহিত হবার পর যেই ভোর আসে, তাতে সূর্য আলোকরশ্মি ছাড়াই উদিত হয়, আর তা এমন হয় যেনো চৌদ্দ তারিখের চাঁদ। আল্লাহ্ তাআলা ওই দিন সূর্যোদয়ের সাথে শয়তানকে বের হতে বাধা দেন। (এ দিন ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যেক দিনে সূর্যের সাথে সাথে শয়তানও বের হয়ে পড়ে) (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৮ম খন্ড, ৪১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮২৯) 


সমুদ্রের পানি মিষ্ট হয়ে যায় 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হাদিসে পাকে বর্ণিত রয়েছে, রমযানুল মোবারকের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলো কিংবা শেষ রাত, চাই তা ত্রিশতম রাতই হোক, এ রাতগুলোর মধ্যে যে কোন একটি রাত শবে ক্বদর। এ রাতকে গোপন রাখার মধ্যে হাজারো হিকমত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে নিশ্চয় একটি হল, মুসলমান প্রতিটি রাত এ রাতের খোঁজে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতের মধ্যে এ ভেবে অতিবাহিত করার চেষ্টা করবে, জানিনা কোন রাত শবে ক্বদর হয়ে যায়।এ হাদিসে পাকে শবে ক্বদরের কিছু নিদর্শন ও বর্ণনা করা হয়েছে। এ চিহ্নগুলো ছাড়াও অন্যান্য বর্ণনায় শবে ক্বদরের আরো আলামত বর্ণিত হয়েছে। এ আলামত বুঝা সবার জন্য সম্ভব নয়, বরং এটা শুধু অন্তর দৃষ্টিসম্পন্নরাই বুঝতে পারেন। আল্লাহ্ তাআলা আপন বিশেষ বান্দাদের উপর সেগুলো প্রকাশ করেন। শবে ক্বদরের একটা চিহ্ন হল, এ রাতে সমুদ্রের লোনা পানি মিষ্টি হয়ে যায়। তাছাড়া মানুষ ও জিন ছাড়া সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু আল্লাহ্ তাআলার মহত্ব স্বীকার করে সিজদাবনত হয়ে যায়, কিন্তু এ দৃশ্য সবাই দেখতে পায়না। 


                                 

ঘটনা 


হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদ ইবনে ইমরান (رضى الله تعا عنه)বলেন: “আমি এক রাতে লোহিত সাগরের তীরে ছিলাম। আর ওই লোনা পানি দিয়ে অযু করছিলাম। যখন আমি ওই পানি স্বাদ গ্রহণ করলাম তখন ওই পানিকে মধুর চেয়েও মিষ্টি পেলাম। আমি খুবই আশ্চযার্ন্বিত হলাম। আমি যখন সায়্যিদুনা ওসমান গনী (رضى الله تعا عنه) এর নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলাম, তখন তিনি বললেন, “হে ওবায়দা (رضى الله تعا عنه)সেটা শবে ক্বদর হবে। তিনি আরো বললেন: "যে ব্যক্তি এই রাতে আল্লাহ্ তাআলার স্বরণের মধ্যে অতিবাহিত করে সে যেনো হাজার মাস থেকে বেশী সময় ইবাদত করলো। আর আল্লাহ্ তাআলা তার সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন।” (তাযকিরাতুল ওয়া’ইযীন, ৬২৬ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।  

                            

হযরত সায়্যিদুনা ওসমান ইবনে আবিল আস  (رضى الله تعا عنه)এর গোলাম তাঁর নিকট আরয করলেন: “হে আমার মুনিব(رضى الله تعا عنه)নৌকা চালাতে চালাতে আমার জীবনের একটা অংশ অতিবাহিত হয়েছে।

আমি সমুদ্রের পানিতে একটা অবাক বিষয় অনুভব করেছি, যা আমার বিবেক মেনে নিতে অস্বীকার করছে।” তিনি বললেন: “ওই আশ্চর্যজনক বিষয় কি?” আরয করলো: “হে আমার মুনিব! প্রতি বছর একটা এমন রাতও আসে, যাতে সমুদ্রের পানি মিষ্টি হয়ে যায়।” তিনি গোলামকে বললেন: “এবার খেয়াল করো। যখনই পানি মিষ্ট হয়ে যায়, তখনই জানাবে।” যখন রমযানের ২৭ তম রাত আসলো, তখন গোলাম মুনিবের দরবারে আরয করলো: “মুনিব! আজ সমুদ্রের পানি মিষ্টি হয়ে গেছে।” (রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৪৮১ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।

                     

আমরা নিদর্শন কেন দেখিনা? 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শবে ক্বদরের বিভিন্ন চিহ্ন পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের হৃদয়ে এ প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের জীবনের অনেক সংখ্যক বছর অতিবাহিত হয়েছে। প্রতি বছর শবে ক্বদর আসতে থাকে। তবু এর কারণ কি? আমরা কখনো কেন সেটার নিদর্শন দেখতে পেলাম না? এর জবাবে ওলামা-ই-কেরাম বলেন: “এসব বিষয়ের জ্ঞান সবার থাকে না। কেননা, সেগুলোর সম্পর্ক কাশ্ফ ও কারামাতের সাথে। তাতো সেই দেখতে পারে, যে অন্তদৃষ্টির মতো নেয়ামত লাভ করেছে যে সব সময় আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ অমান্যের অমঙ্গলের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে এমন পাপী লোক এসব দৃশ্য কিভাবে দেখতে পাবে? কবি বলেন: আখ্ ওয়ালা তেরে জওবন কা তামাশা দেখে, দীদায়ে কাওর কো কেয়া আয়ে নযর কেয়া দেখে?


বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার নিজ ইচ্ছায় শবে ক্বদর কে গোপন রেখেছেন। সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারিনা কোন রাত শবে ক্বদর? উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعا عنه)বলেন: “আমার মাথার মুকুট, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেছেন: “শবে ক্বদরকে রমযানুল মোবারকের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে, অথার্ৎ একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাইশ ও ঊনত্রিশ তম রাতে খোজ করো।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৬২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০২০) 

                     

শেষ সাত রাতে তালাশ করো              


হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضى الله تعا عنه) বর্ণনা করেন: তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (صلى الله عليه وسلم)এর সাহাবায়ে কিরাম (رضى الله تعا عنه) থেকে কয়েকজন 

সাহাবীকে শেষ সাত রাতে শবে কদর দেখানো হয়েছে। প্রিয় নবী ( ইরশাদ করেছেন: “আমি দেখছি, তোমাদের স্বপ্ন আখেরী সাত রাতে এক ধরণের হয়ে গেছে।ইশারণে এটার তালাশকারী যেনো সেটাকে আখেরী সাত রাতে তালাশ করে।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৬৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০১৫)                              

                         

শবে ক্বদর গোপন কেন? 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র নিয়ম হচ্ছেতিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে নিজ ইচ্ছায় বান্দাদের নিকট থেকে গোপন রেখেছেন। যেমন, বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ তাআলা নিজের সন্তুষ্টিকে নেক কাজের মধ্যে, নিজের অসন্তুষ্টিকে গুনাহের মধ্যে এবং আপন ওলীগণকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে গোপন রেখেছেন। এর মূল কারণ হচ্ছেÑ বান্দা যেনো কোন নেক কাজকে ছোট মনে করে ছেড়ে না দেয়।

কেননা, সে জানে না, আল্লাহ্ তাআলা কোন নেকীর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। হতে পারে, নেকী বাহ্যিকভাবে অতি নগণ্য দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেটা দ্বারা আল্লাহ্ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে যান। অনেক হাদীস শরীফ থেকে একথাই জানা যায়। যেমন- কিয়ামতের দিন এক পাপী নারীকে শুধু এ নেকীর প্রতিদান হিসেবে ক্ষমা করে দেয়া হবে, সে এই পিপাসার্ত কুকুরকে দুনিয়ায় পানি পান করিয়েছিলো। অনুরূপভাবে, নিজের অসন্তুষ্টিকে পাপের মধ্যে গোপন রাখার রহস্য হচ্ছে বান্দা যেনো কোন গুনাহকে ছোট মনে করে সম্পন্ন করে না বসে, বরং প্রতিটি গুনাহ থেকে বাঁচতে থাকে। যেহেতু বান্দা জানে না, আল্লাহ্ তাআলা কোন্ গুনাহের কারণে নারায হয়ে যাবেন? সুতরাং সে প্রতিটি গুনাহ থেকে বিরতই থাকবে। অনুরূপভাবে, আউলিয়া কেরামকে (رحمه الله تعالى عليه)  বান্দাদের মধ্যে এজন্য গোপন রেখেছেন যেন মানুষ প্রতিটি নেক মুসলমানের প্রতি যত্নবান হয়, সম্মান বজায় রাখে, আর একথা চিন্তা করে, হতে পারেন তিনি আল্লাহ্ তাআলার ওলী। আর প্রকাশ থাকে, যখন আমরা নেক লোকদের প্রতি সম্মান করতে শিখে যাবো, মন্দ ধারণার অভ্যাস পরিহার করবো, সমস্ত মুসলমানকে নিজের চেয়ে ভালো মনে করতে থাকবো, তখন আমাদের সমাজও সংশোধন হয়ে যাবে। আর (الحمد لله عز وجل) আমাদের শেষ পরিণতিও ভাল হবে।                    

  

হিকমতের মাদানী ফুল


ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمه الله تعالى عليه)তার প্রসিদ্ধ তাফসীর ‘তাফসীরে কবীর’ এর মধ্যে লিখেছেন: আল্লাহ্ তাআলা শবে ক্বদরকে কয়েকটি কারণে গোপন রেখেছেন। 

প্রথমত: যেভাবে অন্যান্য জিনিসকে গোপন রেখেছেন, যেমন আল্লাহ্ তাআলা নিজের সন্তুষ্টিকে আনুগত্যপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে গোপন রেখেছেন, যাতে বান্দা প্রতিটি আনুগত্যের প্রতি উৎসাহিত হয়। নিজের অসন্তুষ্টিকে গুনাহের কাজের মধ্যে গোপন রেখেছেন, যাতে প্রতিটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকে।আপন ওলীগণকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে গোপন রেখেছেন, যাতে লোকেরা সবার প্রতি সম্মান দেখায়। দোয়া কবূল হওয়াকে দোয়া গুলোর মধ্যে গোপন রেখেছেন, যাতে সব ধরণের দোয়া খুব বেশি পরিমাণে করে। ইসমে আজমকে নাম সমূহের মধ্যে গোপন রেখেছেন, যাতে সব ধরনের নাম মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ‘সালাতে ওসত্বা’ (মধ্যবর্তী নামায) কে নামাযগুলোর মধ্যে গোপন করেছেন, যাতে নামাযগুলোর প্রতি যত্নবান হয়, তাওবা কবুল হওয়াকে গোপন রেখেছেন, যাতে বান্দা প্রত্যেক প্রকারের তাওবা সর্বদা করতে থাকে, মৃত্যুর সময়কে গোপন রেখেছেন, যাতে (শরীয়াতের বিধানাবলী বতার্য় এমন) বিষয় বান্দা ভয় করতে থাকে।অনুরূপভাবে, শবে ক্বদরকে গোপন রেখেছেন, যাতে রমযানের সকল রাতের প্রতি সম্মান দেখায়। দ্বিতীয়ত: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করছেন, “যদি আমি শবে ক্বদরকে নির্দিষ্ট করে দিতাম, অথচ আমি তোমাদের গুনাহের কথাও জানি, তবে যদি কখনো যৌন তাড়না তোমাকে এ রাতে গুনাহের নিকটে নিয়ে ছেড়ে দিতো, তবে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যেতে। আর তোমার এ রাত সম্পর্কে জানা থাকা সত্ত্বেও গুনাহ্ করে নেয়া, না জেনে গুনাহ্ করার চেয়ে বেশী জঘন্য হয়ে যেতো। সুতরাং এ কারণে আমি সেটাকে গোপন রেখেছি। বর্ণিত আছে: ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার(صلى الله عليه وسلم) মসজিদ শরীফে তাশরীফ আনলেন। দেখলেন এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছে। তখন ইরশাদ করলেন: হে আলী (رضى الله تعا عنه)তাকে জাগাও, যাতে অযু করে নেয় ।হযরত আলী(رضى الله تعا عنه) তাকে জাগালেন। তারপর আরয করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ(صلى الله عليه وسلم)আপনিতো নেক্ কাজের প্রতি সবার্পেক্ষা বেশি আগ্রহী ও তৎপর। আপনি (নিজে) কেন তাকে জাগালেন না? ইরশাদ করলেন: এজন্য, সে তোমার কথা মানতে অস্বীকার করলে তা কুফরী হবে না, কিন্তু আমার আহ্বানে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে তা কুফর হয়ে যেতো সুতরাং আমি তার পাপের বোঝা হালকা করার জন্য এমন করেছি।”

সুতরাং যখন তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم)এর এমন অবস্থা তখন এটার উপর মহান প্রতিপালকের দয়ার অনুমান করো, তা কেমন হবে? আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন: “যদি তুমি শবে ক্বদর সম্পর্কে জানতে এবং তাতে ইবাদত করতে, তবে হাজার মাস থেকে বেশি সাওয়াব অর্জন করতে। আর যদি তাতে গুনাহ্ করে বসতে, তবে হাজার মাসের চেয়েও বেশী শাস্তি পেতে। শাস্তি দূর করা সাওয়াব উপার্জন করার চেয়ে উত্তম। তৃতীয়ত: আমি এ রাতকে গোপন রেখেছি, বান্দা যাতে সেটার তালাশ করতে গিয়ে পরিশ্রম করে। আর এ পরিশ্রমের সাওয়াব অর্জন করে। চতুর্থত: যখন বান্দার মনে শবে ক্বদর কোনটি সে সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস হবেনা, তবে রমযানুল মোবারকের প্রতিটি রাতে আল্লাহ্ তাআলার বন্দেগীতে থাকবে এ আশায়! এ রাতটিই শবে ক্বদর হতে পারে। এদের সম্পর্কেও তো আল্লাহ্ তাআলা ফিরিশ্তাদেরকে এ কথা বলবে, তোমরাই তো এ (মানব জাতি) সম্পর্কে বলেছিলে, “তারা ঝগড়া করবে, রক্তপাত করবে।” অথচ এরাতো এ ধারণাকৃত রাতে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যদি আমি তাকে এ রাতের জ্ঞান দিয়ে দিতাম, তবে কেমন হতো। তাই এখানে আল্লাহ্ তাআলার ওই বানীর রহস্য প্রকাশ পেয়েছে, যা তিনি ফেরেশতাদের জবাবে ইরশাদ করেছিলেন, যখন আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে ইরশাদ করেছেন:

انى جا عل فى الارض خليفة

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিয়োগকারী। (পারা- ১, সূরা- বাকারা, আয়াত- ৩০) 


তখন ফেরেশতাগণ আরয করল: 

قا لوااتجعل فيها من يفسد فيها و يسفك الد ما ء و بحن نسبح مجمدك و نقدس لك

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তারা বললো: এমন কাউকে কি প্রতিনিধি করবেন, যে তাতে ফ্যাসাদ ছড়াবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আর আমরা আপনার প্রশংসা সহকারে আপনার স্তুতিগান করি এবং আপনারই প্রশংসা ঘোষণা করি (পারা- ১, সূরা- বাকারা, আয়াত- ৩০) 


তাই ইরশাদ করলেন:

قال انى اعلم مالا تعلمون

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: 

বললেন, আমি যা জানি তা তোমরা জানোনা। (পারা- ১, সূরা- বাকারা, আয়াত- ৩০) সুতরাং আজ এ মহান বাণীর রহস্য প্রকাশ পেলো।

(তাফসীরে-কবীর,১১তম ,খন্ড,২২৯প)                                                   


বছরের যে কোন রাত শবে ক্বদর হতে পারে                


অতএব অগণিত উপকারের ভিত্তিতে শবে ক্বদরকে গোপন রাখা হয়েছে, যাতে আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দাগনের তালাশে গোটা বছরই লেগে থাকে। অনুরূপভাবে তারা সাওয়াব অর্জনের চেষ্টার মধ্যে লেগে থাকে। শবে ক্বদরের নির্দিষ্টকরণের ক্ষেত্রে সম্মানিত আলিমগণের(رحمه الله تعالى عليه)অনেক মতভেদ দেখা যায়। কিছু সংখ্যক বুযুর্গের (رحمه الله تعالى عليه)মতে শবে ক্বদর পুরো বছর ঘুরে থাকে। যেমন, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (رضى الله تعا عنه)বলেন: শবে ক্বদর ওই ব্যক্তিই পেতে পারে, যে গোটা বছরই রাতের বেলায় ইবাদত করে। এ অভিমতকে সমর্থন করে ইমামূল আরিফীন সায়্যিদুনা শায়খ মুহিউদ্দীন ইবনুল আরবী (رحمه الله تعالى عليه) বলেন: “আমি শা’বানুল মু’আয্যমের ১৫ তম রাত (অথার্ৎ শবে বরাত) অন্য একবার শা’বানুল মু’আয্যমের ১৯ তম রাতে শবে ক্বদর পেয়েছি।তাছাড়া রমযানুল মোবারকের ১৩ তম রাত এবং ১৮তম রাতেও দেখেছি। আর রমযানুল মোবারকের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোতে দেখেছি। তিনি আরো বলেন: যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শবে ক্বদর রমযানুল মোবারকের মধ্যেই পাওয়া যায়, তবুও আমার অভিজ্ঞতাতো এটাই যে, এটা পূর্ণ বছরই ঘুরতে থাকে, অথার্ৎ প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট এক রাতে শবে ক্বদর হয়না। 


রহমতে কাওনাইন (ﷺ) ও শাইখাইন  (رضى الله تعا عنه) তাশরীফ আনলেন 

(الحمد لله عز وجل)

দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে রমযানুল মোবারকের ইতিকাফের অনেক বাহার হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ভাইয়েরা মসজিদে ও ইসলামী বোনেরা ‘মসজিদে বায়তে’ (ঘরের নির্ধারিত স্থানে) ইতিকাফের সৌভাগ্য অর্জন করেন এবং অনেক নূর অর্জন করেন। উৎসাহের জন্য একটি বাহার আপনাদের পেশ করছি; যেমন- তৌশিল লিয়াকতপুর, জিলা রহিম ইয়ারখান পাঞ্জাবের এক হালকা কাফেলা যিম্মাদার নওজোয়ান ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা। তিনি বলেন: আমি সিনেমার এতই ভক্ত ছিলাম, আমাদের গ্রামের সিডির দোকানের অর্ধেক দেখে ফেললাম। 

তালবানী গ্রামের মাদানী মসজিদে ১৪২২ হি: মোতাবেক ২০০১ সালে রমযান মোবারকের শেষ দশ দিনে আমার ইতিকাফ করার সৌভাগ্য হল। দা’ওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসূলদের সহচার্যের বরকত আমি কি বয়ান করব! ২৭শে রমযান মোবারককে ভুলা যায় না। এমন ঈমান উজ্জলকারী ঘটনা নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে বর্ণনা করছি। সারা রাত জাগ্রত থেকে আমি খুবই কেঁদে কেঁদে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার(صلى الله عليه وسلم) এর দিদার ভিক্ষা চেয়েছি। (الحمد لله عز وجل) ভোরের সময় আমার জন্য দয়ার বিশেষ দরজা খুলে গেল। আমি নিজেকে স্বপ্নের জগতে মসজিদের ভিতর দেখলাম।ইতোমধ্যে ঘোষণা হল: “ নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর(صلى الله عليه وسلم)তাশরীফ আনছেন ও নামাযের ইমামতি করবেন।” এর কিছুক্ষণ পরেই তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পূরনূর (صلى الله عليه وسلم) 

 এর শাইখাইন তথা হযরত আবু বকর ছিদ্দিক ও ওমর ফারুকে আযম (رضى الله تعا عنه) সহ তাশরীফ আনলেন। আর আমার চোখ খুলে গেল। শুধু একটু খানি জলওয়া দেখতেই সেই সুন্দর আলোর আভা কোথায় চলে গেল। এতেই অন্তর একেবারে শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। চোখ থেকে আনন্দ অশ্রুর প্রবাহিত হতে লাগল। এমনকি কাঁদতে কাঁদতে আমার হেচকী উঠে গেল। 


ইতনি দের তক হো দিদে মুসহাফে আরেয নসীব, 

হেফয করলো নাযেরা পড় পড়কে কুরআনে জামাল। 

(الحمد لله عز وجل)

এই ঘটনার পর আমার অন্তরে  কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পেল বরং আমি দা’ওয়াতে ইসলামীরই একজন ভক্ত হয়ে গেলাম। ঘর থেকে আমি বাবুল মদীনা করাচীর দিকে রওয়ানা হয়ে গেলাম এবং দরসে নিজামী করার জন্য জামেয়াতুল মদীনায় ভর্তি হলাম। আমি এই ঘটনা বর্ণনা দেয়ার সময় দরজায়ে উলাতে ইলমে দ্বীন অর্জন করার সাথে সাথে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী যেলী হালকার কাফেলার যিম্মাদার হিসাবে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের সাড়া জাগানোর চেষ্টা করছি।


জলওয়ায়ে ইয়ার কি আরজু হে আগার মাদানী মাহল মে করলো তুম ইতিকাফ 

মিঠে আক্বা করেগে করম কি নযর মাদানী মাহল মে করলো তুম ইতিকাফ |


ইমাম আযমের (رحمه الله تعالى عليه) দু’টি অভিমত 


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবূ হানিফা (رحمه الله تعالى عليه)থেকে এ প্রসঙ্গে দু’টি অভিমত বর্ণিত হয়েছে:

(১) শবে ক্বদর রমযানুল মোবারকেই রয়েছে। কিন্তু কোন রাতটি তা নিধার্রিত নয়।সায়্যিদুনা ইমাম আবূ ইউসুফ ও সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ (رحمه الله تعالى عليه)এর মতে, রমযানুল মোবারকের শেষ পনের রাতের মধ্যে শবে ক্বদর হয়।

(২) সায়্যিদুনা ইমাম আবূ হানিফা  (رحمه الله تعالى عليه)এর এক প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে: শবে ক্বদর পুরো বছরই ঘুরতে থাকে, কখনো মাহে রমযানুল মোবারকে হয়, কখনো অন্যান্য মাসে। এ অভিমত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ ও সায়্যিদুনা ইকরামা (رضى الله تعا عنه)থেকেও বর্ণিত। (ওমদাতুল কারী, ৮ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০১৫)

সায়্যিদুনা ইমাম শাফেয়ী(رحمه الله تعالى عليه)এর মতে, শবে ক্বদর রমযানুল মোবারকের শেষ দশ দিনে রয়েছে আর তার দিনটি নির্দিষ্ট। এতে কিয়ামত পর্যন্ত কোন পরিবর্তন হবে না। (ওমদাতুল কারী, ৮ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২০১৫)                       


শবে ক্বদর পরিবর্তন হয় 


সায়্যিদুনা ইমাম মালিক (رحمه الله تعالى عليه)  এর মতে: শবে ক্বদর রমযানুল মোবারকের আখেরী দশদিনের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে হয়। কিন্তু এর জন্য কোন একটি রাত নিধার্রিত নেই। প্রতি বছর এ বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে ঘুরতে থাকে। অথার্ৎ: কখনো ২১শে, কখনো ২৩শে, কখনো ২৫শে, কখনো ২৭ শে এবং কখনো ২৯ শে রমযানুল মোবারকের রাতে শবে ক্বদর হয়। (তাফসীরে সাভী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৪০০ পৃষ্ঠা)


আবুল হাসান ইরাকী (رحمه الله تعالى عليه)এবং শবে ক্বদর


কিছু সংখ্যক বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবুল হাসান ইরাকী (رحمه الله تعالى عليه) এর বাণী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমি যখন থেকে বালেগ হয়েছি, তখন থেকে,(الحمد لله عز وجل) আমি শবে ক্বদর দেখিনি এমন কখনো হয়নি। তারপর আপন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন,“কখনো যদি রবিবার কিংবা বুধবার ১লা রমযান হতো, তবে ২৯ তম রাত্রি, যদি সোমবার ১লা রমযান হতো, তবে ২১শে রাত, ১ম রোযা মঙ্গল কিংবা জুমার দিন হলে ২৭ শে রাত, ১লা রমযান বৃহস্পতিবার হলে ২৫শে রাত এবং ১ম রমযান শনিবার হলে ২৩ শে রাত্রি শবে ক্বদর পেয়েছি। (নুযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)


২৭শে রাত শবে ক্বদর 


যদিও বুযুগার্নে দ্বীন এবং মুফাস্সিরগণ ও মুহাদ্দিসগণ (رحمه الله تعالى عليه)শবে ক্বদর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মতবিরোধ রয়েছে, তবুও প্রায় সবার অভিমত হচ্ছে, প্রতি বছর শবে ক্বদর ২৭ শে রমযানুল মোবারকের রাতেই হয়ে থাকে। হযরত সায়্যিদুনা উবাই ইবনে কা’ব (رضى الله تعا عنه)২৭ শে রমযানুল মোবারকের রাতকেই শবে ক্বদর বলেন। (তাফসীর-ই-সাভী, খন্ড ৬ষ্ঠ, ২৪০০ পৃষ্ঠা)


হুযুর গাউসে আযম সায়্যিদুনা শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمه الله تعالى عليه)ও উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضى الله تعا عنه)ও এ কথাই বলেছেন।


হযরত সায়্যিদুনা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (رضى الله تعا عنه) বলেন: “শবে ক্বদর রমযান শরীফের ২৭তম রাতে হয়ে থাকে। নিজের কথার সমর্থনে তিনি দুটি দলীল বর্ণনা করেন:

(১) লাইলাতুল ক্বদর শব্দ দুটিতে ৯ টা বর্ণ রয়েছে। এ কলেমা সূরা ক্বদরে তিনবার ইরশাদ হয়েছে। এভাবে ‘তিনকে নয় দিয়ে গুণ করলে গুণফল হয় ২৭। এটা এ কথার দিকে ইঙ্গিত বহন করেছে যে, শবে ক্বদর ২৭শে রমযানুল মোবারকে হয়ে থাকে।

(২) অপর ব্যাখ্যা এটা বলেন: এ সুরা মোবারকায় ত্রিশটি পদ রয়েছে। তন্মধ্যে ২৭তম বর্ণ হচ্ছে, আরবী পদটি, যা দ্বারা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে নেক্কার লোকদের জন্য এ ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, রমযান শরীফের ২৭শে রাতই শবে ক্বদর হয়। (তাফসীরে আযীযী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩৭ পৃষ্ঠা)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলা শবে ক্বদরকে গোপন রেখে যেনো আপন বান্দাদেরকে প্রতিটি রাতে কিছু না কিছু ইবাদত করার প্রতি উৎসাহ দান করেছেন। যদি তিনি শবে ক্বদরের জন্য কোন একটি রাতকে নির্ধারণ করে দিয়ে সুস্পষ্টভাবে সেটার জ্ঞান আমাদেরকে দিয়ে দিতেন, তবে আবার একথার সম্ভাবনা থাকতো। আমরা বছরের অন্যান্য রাতের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে যেতাম, শুধু ওই এক রাতের প্রতি গুরুত্ব দিতাম।এখন যেহেতু সেটাকে গোপন রাখা হয়েছে, সেহেতু বুদ্ধিমান হচ্ছে সে-ই, যে সারা বছর ওই মহান রাতের তালাশে থাকে, ‘জানিনা কোন রাতটি শবে ক্বদর।’ বাস্তবিকপক্ষে যদি কেউ সত্য অন্তরে সেটা সারা বছরই তালাশ করে তবে আল্লাহ্ তাআলা কারো পরিশ্রমকে নষ্ট করেন না। তিনি অবশ্যই আপন অনুগ্রহ ও বদান্যতায় তাকে ওই রাতের সৌভাগ্য দান করবেন ৷


প্রতিরাত ইবাদতে অতিবাহিত করার সহজ ব্যবস্থাপনা 


“গারা-ইবুল কুরআন” ১৮৭ পৃষ্ঠায় একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাতে এ দোয়া তিনবার পড়ে নিবে সে যেনো শবে ক্বদর পেয়ে গেছে। তাই প্রতি রাতে এ দোয়া পড়ে নেয়া চাই:

لا اله الا الله احليم الكريم سبحن الله رب السموت السبع ورب العرش العظيم

(অর্থ:- সহনশীল দয়ালু আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ কেউ নেই। আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র, যিনি সপ্ত আসমান ও আরশে আযীমের মালিক ও প্রতিপালক।)


আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি প্রার্থীরা! সম্ভব হলে সারা বছরই প্রত্যেক রাতে কিছু না কিছু পূণ্যময় কাজ অবশ্যই করে নেয়া চাই। কারণ, জানি না কখন শবে কদর হয়ে যায়। প্রতিটি রাতে দুটি ফরয নামায আসে মাগরিব ও ইশা। কমপক্ষে এ উভয় নামাযের জামাআতের প্রতি খুবই গুরুত্ব দেয়া চাই। কারণ, শবে ক্বদরে যদি ওই দু’ ওয়াক্ত নামাযের জামাআত ভাগ্যে জুটে যায়, তবে ان شاءالله عزوجل আমাদের নৌকা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে, বরং প্রতিদিনই ইশা ও ফজরের নামাযের জমাআতের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার অভ্যাস গড়ে নিন।


ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রাসুলদের সরদার (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইশার নামায জামাআত সহকারে পড়েছে, সে যেনো অর্ধ রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করেছে।যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআত সহকারে আদায় করেছে, সে যেনো পুরো রাতই জাগ্রত থেকে ইবাদত করেছে।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৬৫৬)


ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী (رحمه الله تعالى عليه) বর্ণনা করেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি ইশার নামায জামা’আত সহকারে পড়েছে, নিশ্চয় সে যেনো লাইলাতুল ক্বদর থেকে নিজের অংশ অর্জন করে নিয়েছে। (আল জামিউল সগীর, ৫৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮৭৯৬) 

                

২৭ তম রাতের প্রতি গুরুত্ব দিন 


আল্লাহ্ তাআলা রহমতের সন্ধানকারীরা! যদি সারা বছরই জামাআতে নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে নেয়া হয়, তবে শবে ক্বদরে এ দু’টি নামাযের জামায়াতের সৌভাগ্যও মিলে যাবে। আর রাতভর শুয়ে থাকা সত্ত্বেও ( ان شاءالله عزوجل) প্রতিদিনের মতো শবে ক্বদরেও পুরো রাত ইবাদত করার সাওয়াব পাওয়া যাবে। 


আগর ক্বদর দানী তো হার শব শবে ক্বদর আস্ত। 

অর্থাৎ: মূল্যায়ন করতে জানলে প্রতিটি রাতই শবে ক্বদর।


যেসব রাতে শবে ক্বদর হবার বেশী সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন রমযানুল মোবারকের শেষ দশ রাত কিংবা কমপক্ষে সেগুলোর বিজোড় রাতগুলো, ওইগুলোর মধ্যে ইবাদতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া চাই। বিশেষ করে ২৭ তম রাত। শবে কদর সম্পর্কে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ধারণা এটাই। এ রাতকে তো অলসতার মধ্যে কাটানো মোটেই উচিত হবে না। ২৭ তম রাত বিশেষ করে তাওবা, ইস্তিগফার এবং বারংবার যিকির ও দরূদ শরীফ পাঠের মধ্যে কাটানো উচিত। 

                     

শবে ক্বদরে পড়ুন                 


আমিরুল মুমিনীন হযরত মাওলায়ে কাইনাত আলী মুরতাজা শেরে খোদা (রা.)বলেন: “যে কেউ শবে ক্বদরে সূরা ক্বদর সাতবার পড়বে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে প্রত্যেক বালা মুসীবত থেকে নিরাপত্তা দান করেন।আর সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তির দোয়া করেন। যে ব্যক্তি (সারা বছরে যখনই) জুমার দিন জুমার নামাযের পূর্বে তিনবার সূরা ক্বদর পড়ে আল্লাহ্ তাআলা ওই দিনে সমস্ত নামায সম্পন্নকারীর সংখ্যার সমান নেকী তার আমল নামায় দান করেন।” (নূযহাতুল মাজালিস, ১ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)


শবে কদরের দোয়া 


উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা (رضى الله تعا عنه)বলেন: ‘আমি আমার মাথার মুকুট, মি’রাজের দুলহা, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (صلى الله عليه وسلم)এর বরকতময় দরবারে আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (صلى الله عليه وسلم)যদি আমি শবে ক্বদর সম্পর্কে জানতে পারি তবে আমি কি পড়বো? খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (صلى الله عليه وسلم)ইরশাদ করলেন: “এভাবে দোয়া প্রার্থনা করো: (اللهم انك عفو تحب العفو فا عف عنى) অর্থ:- ইয়া আল্লাহ্! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা পছন্দ করো। তাই আমাকে ক্ষমা করো।” (তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৫২৪) 


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আহ! প্রত্যেক রাতে আমরাও যদি এ দোয়া কমপক্ষে একবার করে পড়ে নিই। তাহলে কখনোতো শবে ক্বদর ভাগ্যে জুটে যাবে। অন্যথায়, কমপক্ষে ২৭ শে রমযানের রাতে এ দোয়া বারবার পড়া উচিত। এছাড়াও, ২৭ শে রাতে আল্লাহ্ তাআলা সামথর্য দিলে রাত জেগে বেশী পরিমাণে দরূদ ও সালাম পাঠ করবেন। যিকির ও না'তের মাহফিলে সম্ভব হলে শরীক হবেন। আর নফল ইবাদতের মধ্যে সারারাত কাটানোর চেষ্টা করবেন। 


শবে ক্বদরের নফল সমূহ


হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল হক্কী (رحمه الله تعالى عليه)তাফসীর-ই-রুহুল বয়ান এর মধ্যে এ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন: “যে ব্যক্তি শবে ক্বদরের নিয়্যতে নিষ্ঠা সহকারে নফল পড়বে, তার পূবার্পর গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৪৮০ পৃষ্ঠা)


হুযুর পুরনুর (صلى الله عليه وسلم)যখন রমযানুল মোবারকের শেষ দশদিন আসতো তখন ইবাদতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নিতেন। সেগুলোর মধ্যে রাতে জাগ্রত থাকতেন। নিজ পরিবারের সদস্যদেরকে জাগাতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৭৬৮)


হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল হককী (رحمه الله تعالى عليه)উদ্ধৃত করেছেন: বুযুগার্নে দ্বীন (رحمه الله تعالى عليه)এ দশ দিনের প্রতিটি রাতে দু’রাকাত নফল নামায শবে ক্বদরের নিয়্যতে পড়তেন। তাছাড়া কিছু সংখ্যক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি থেকে উদ্ধৃত, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে দশটি আয়াত এ নিয়্যতে পড়ে নিবে, সে সেটার বরকত ও সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না।


আর ফকীহ্ আবুল লাই্স সমরকন্দী (رحمه الله تعالى عليه) বলেন: শবে ক্বদরের নামায কমপক্ষে দু’রাকাত, বেশীর চেয়ে বেশী ১০০০ রাকাত। মাঝারী পযার্য়ের হচ্ছে ২০০ রাকাত। প্রত্যেক রাকাতে মাঝারী পযার্য়ের কিরাত হচ্ছে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা ক্বদর ও তিনবার সূরা ইখলাস পড়বেন। আর প্রত্যেক দু’রাকাতের পর সালাম ফেরাবেন। সালামের পর ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রাসুলদের সরদার  এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করবেন। তারপর নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাবেন। এভাবে, নিজের শত রাকাত, কিংবা তদপেক্ষা কম বা বেশীর, যে নিয়্যত করেছেন তা পূরণ করবেন। সুতরাং এমনি করা এ শবে ক্বদরের মহা মযার্দা, যা আল্লাহ্ তাআলা বর্ণনা করেছেন: আর যা তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (صلى الله عليه وسلم)এতে রাত জাগরণের কথা ইরশাদ করেছেন: অতএব এতটুকু যথেষ্ট হবে। (রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ৪৮৩ পৃষ্ঠা)


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিশ্চয় এ রাত বরকতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। যেমন রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (صلى الله عليه وسلم) ইরশাদ করেন: “তোমাদের উপর এমন এক মাস এসেছে, যাতে একটি রাত এমনও আছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম।





Top