শানে মুস্তফা (ﷺ) ও সুন্নী আকিদা


গ্রন্থনা ও সংকলনে

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)


সম্পাদনায়

মুফ্তি মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী


প্রকাশনায়

আবতাহী ফাউন্ডেশন প্রকাশনা বিভাগ


টেক্সট রেডীঃ

মাসুম বিল্লাহ সানি


লেখক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত


প্রকাশকালঃ

২০ নভেম্বর ২০১৬


কম্পিউটার কম্পোজঃ

সৈয়দ আমিরুল হক

জনি ঘোষ


ডিজাইনঃ

মুহাম্মদ মাহাদী হাসান তুহিন

মোবাইল: ০১৮ ২৫৩৩ ৯৪৯৪


মূদ্রণঃ

জয়নাব প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজেস্

২০৩/২, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা।

মোবাইল: ০১৭১১১৭৬৭২৩

শুভেচ্ছা মূল্যঃ ১৬০/- (একশত ষাট টাকা) মাত্র।


উৎসর্গ


অলীয়ে কামেল, হাদীয়ে আগা, কুতুবুজ্জামান, আশেকে রাসূল (ﷺ), ঢাকার নিকুঞ্জস্থ (টানপাড়া) মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলা ও আমার মহান মুরশিদ শাহ সূফী হযরত মাওলানা শেখ আবদুস সালাম ফরিদপুরী নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী (মাঃ জিঃ আঃ) এর পবিত্র করকমলে


 


সূচীপত্রঃ 


মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলার অভিমত


সংকলকের কথা


১। শা’নে মুস্তফা (ﷺ)

২।

  • ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)

  • ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল - কুরআন হতে

  • বিলাদতের কুদরতী আয়োজন

  • হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)

  • বিশিষ্ট ওলামাগণ হতে প্রাপ্ত দলিল

  • মিলাদ/বিলাদত

  • বিলাদতের রজনী ও শৈশবকাল

  • আল্লাহর ফরমান

  • মিলাদুন্নবী না সিরাতুন্নবী-তার প্রমাণ

  • কিছু আপত্তি ও তার খন্ডন


৩।

  • মিলাদ, কিয়াম ও তাজিম

  • তাজিমের দলিল

  • মিলাদ-কিয়ামের উদাহরন, দলিল ও ফজিলত

  • কিয়ামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা

  • উপসংহার


৪। নূর নবী (ﷺ)

৫। হায়াতুন্নবী (ﷺ)

৬। হাযির-নাযির

  • কুরআন হতে দলিল

  • হাদীস হতে দলিল

  • বিশিষ্ট ওলামাগণ হতে প্রাপ্ত দলিল ও কিছু যুক্তি প্রমাণ


৭। ইলমে গাইব


  • কুরআন হতে দলিল

  • হাদিস ও অন্যান্য ঘটনা দ্বারা প্রমাণ

  • উপসংহার


৮। উসিলা (তাওয়াচ্ছুল)

উসিলার দলিল


 


পীরে তরিকত, রাহনুমায়ে শরিয়ত, আশেকে রাসূল (ﷺ) এবং ঢাকার নিকুঞ্জস্থ মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব কেবলা হযরত শেখ আবদুস সালাম নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী (মাঃ জিঃ আঃ) সাহেবের


অভিমত



আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।


সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি কূল কায়েনাতের সৃজক ও একচ্ছত্র অধিপতি। লাখো দরূদ হাজার সালাম জাত পাকের নূরের প্রথম তাজাল্লি তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমাদ মুজতবা (ﷺ) এর প্রতি।


আমি এক নালায়েক অধম গুনাহগার। আমাকে জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) খুরশীদ আলম নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী রচিত “শানে মুস্তফা (ﷺ) ও সুন্নী আকিদা” নামক পুস্তক খানার বিষয়ে মতামত লিপিবদ্ধ করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়েছে। যে নবীর নাম শুনলে প্রতিনিয়ত আমার শিরায় শিরায় কম্পন অনুভব করি, সারাটি জীবন যার প্রেমের পথে দীন ভিখারীর মত পদ বিক্ষেপে চলমান রয়েছি এবং তৃষিত চাতকের মত যাঁর রহমত ফোঁটা পাওয়ার জন্য অদ্যাবধি অপেক্ষমান রয়েছি, তাঁর শান বর্নিত বই খানার উপরে মতামত প্রদান করতে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। বিরহী হৃদয় নিগড় হতে যে বাক্যগুলো উৎসারিত হলো সশ্রদ্ধ চিত্তে তাই লিখে ফেললাম।


নবী আমার রাহ্মাতাল্লিল আ’লামীন, জীবন্ত র্কোআন, সিরাজুম্্ মুনীরা ও দয়াময় প্রভুর সৃজনের মহা-শাসক। তাঁর শান-মর্যাদা সীমিত পরিসরে তুলে ধরা শুধু অসম্ভবই নয় অবাস্তব। আমার রূহানী র্ফজন্দ্ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) খুরশীদ আলম সে অসাধ্য সাধনে ব্রতী হয়েছেন। আশেকের অনুরাগ এই প্রয়াসের মাধ্যমে বিচ্ছুরিত হয়েছে। নবীজির শান-মর্যাদার মহা সমুদ্র তটে দাঁড়িয়ে যতটুকু তিনি এই পুস্তকের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়। নবী ছাহেবে র্কোআন। তাঁর গুনগানেরই এক মহাকাব্য আল্লাহর কালাম পাক কোরআন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, “ আমাকে যদি সূরা ফাতিহার তাফ্সীর লিখতে বলা হয়, তাহলে সত্তরটি উটের বোঝা হয়ে যাবে”। পবিত্র র্কোআনের অক্ষরে অক্ষরে, ছত্রে ছত্রে আমার আঁকা হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর শান, প্রশংসা সুদীপ্ত নূরের প্রদীপের মত আলো ছড়াচ্ছে। আল্লাহ পাকের কোরআন নাযিল ও হুজুর (ﷺ) এর তা’ গ্রহন - শানে মুস্তফার এক অনন্য নিদর্শন। মুসলিম উম্মাহ আজ দিকভ্রান্ত বিপর্যস্ত, দিকে দিকে নবীজির শান-মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। নবীজির উম্মতের মধ্যে বিভাজন আর বিভক্তির লক্ষন সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন দূর্বিপাকে অত্র ক্ষুদ্র পুস্তক খানায় নবীজির শান-মর্যাদার কিয়দংশ তুলে ধরার প্রচেষ্টা অনুধাবনীয়। বই খানা লেখার উদ্যোগ লেখকের নবী প্রেমের বহিঃপ্রকাশ।


বই খানা পড়ে বিমুগ্ধচিত্তে আমি বলতে চাই যে, বই খানায় উত্থাপিত বিষয়াদি পাঠান্তে নবীজির প্রতি পাঠকের ইশ্ক্ আরও গভীর ও প্রানবন্ত হবে এবং পথহারাদের উজ্জিবিত করে খাঁটি ইসলামী আকিদা গ্রহনের নিয়ামক হিসেবে সহায়ক হবে।


লেখকের নবী প্রেমের পরিধি আরও প্রসারিত হোক এবং তাঁর হৃদয় নিগড়ে সঞ্চিত নবীপ্রেম আরও উদ্ভাসিত হোক মহান আল্লাহর পবিত্র দরবারে এই আরজী জানাই।




শেখ আবদুস সালাম নকশ্বন্দী মোজাদ্দেদী

দরবারে মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া

টানপাড়া, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।




সংকলকের কথা



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।


নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আ’লা রাসূলিহিল কারিম। আম্মাবাদ।


আল্লাহ্ এক। ছিলেনও একা। হঠাৎ ইচ্ছা হলো নিজেকে প্রকাশ করার। তাই كُنْ فَيَكُونُ “কুন ফাইয়াকুন”ঃ “হও, (বললে) হয়ে যায়” এর কালাম দ্বারা স্বীয় নূর হতে সৃষ্টি করলেন “নূরে মুহাম্মদী”। এ নূর হতে সৃষ্টি করলেন বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অপরাপর সব কিছু। এ নূর হলো আল্লাহর সকল সৃষ্টির মূল। তাঁর নাম রাখলেন আসমানে আহমদ, আর জমিনে মুহাম্মদ। তাঁর মর্যাদা ও গুনাবলীর প্রমাণ স্বরুপ আল্লাহ্ স্বীয় সিফাতী নামের ৭০টি নামে তাঁকে ভূষিত করলেন। আপন গুনে গুনান্বিত করে আল্লাহ্ তাঁকে বানালেন নিজ হাবীব এবং করলেন আপন প্রকাশ ও বিকাশস্থল। আর আল্লাহ্ তাঁর হাবীবের কথাকে নিজের কথা, হাবীবের যিকিরকে নিজের যিকির এবং হাবীবের অনুসরনকে আপন মহব্বত পাওয়ার মাধ্যম হিসাবে ঘোষনা দিলেন। আল্লাহ্ তাঁর হাবীবের অনুসরন, তাঁর প্রতি আদব প্রদর্শন, তাঁকে মহব্বত করন ইত্যাদি বিষয়ে বান্দার প্রতি নির্দেশ জারী করলেন। তাঁকে সকল নিয়ামত ও ধন-ভান্ডারের চাবি দান করে বন্টনকারী বানালেন। রাব্বুল আ’লামিন তাঁর রবুবিয়াতের সকল সীমানা পর্যন্ত তাঁর হাবীবকে রাহমাতুল্লীল আ’লামিন বানিয়ে এমন মর্যাদা ও বৈশিষ্ট দান করলেন যার পূর্ণ বর্ণনা একমাএ আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। তাঁর উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার ঘোষণা দিলেন, তাঁর উম্মতকে হাশরে অন্যান্য উম্মতের সাক্ষী হিসাবে মনোনীত করলেন, তাঁর উম্মতের জন্য জমিনকে জায়নামাজ বানিয়ে দিলেন এবং তাঁর উম্মত জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে অন্য উম্মতের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা দিলেন। 



আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর নবী রাসূলগণ হলেন আশরাফুল মাখলুকাতের অর্থাৎ মানুষ্যকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আর আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) হলেন সেরাদের সেরা। অর্থাৎ নবী-রাসূলগণের মধ্যে তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ ও তাঁদের সর্দার। তারপর ও আল্লাহ্ বলেন, وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ “ওয়ারাফা’না লাকা যিক্রাক্”: “এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি” (সূরা: ইনশিরাত; আয়াত: ৪)। আল্লাহ্ আরো ফরমান, وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى “ওয়ালাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা”: “তোমার জন্য পরবর্তী সময় তো পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা শ্রেয়” (সূরা: দুহা; আয়াত: ৪)। অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) কে শুধু উচ্চ মর্যাদাই দান করেননি, বরং আল্লাহ্্ তাঁর মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছেন এবং করেই চলছেন। তদুপরি আল্লাহ্ স্বয়ং নিজে ফেরেশতাদের নিয়ে নবীর প্রতি অনুগ্রহ প্রেরণ করছেন এবং মু‘মিনদিগকেও তাজিমের সাথে সালাত-সালাম প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা: আহযাব; আয়াত: ৫৬)। একই কাজ সার্বক্ষনিক ভাবে রওজা শরীফ তাওয়াফরত ৭০,০০০ ফেরেস্তাগণও করছেন। হুজুর (ﷺ) এর মর্যাদা বৃদ্ধির প্রথম প্রকাশ ঘটে মি’রাজের মাধ্যমে। আর সর্বশেষ (চুড়ান্ত) প্রকাশ ঘটবে হাশরের মাঠে যখন তিনি মাকামে মাহমুদে বসে উম্মত তরাবেন।


যে নবীর এত মর্যাদা এবং যাঁর শা’ন এত বুলন্দ, সে নবীর এ সুমহান মর্যাদাকে খর্ব করার অপচেষ্টায় ইদানিং কিছু লোক তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা তাঁকে আমাদের বড় ভাইয়ের মত কিংবা আমাদের মত মানুষ বলে দাবী করছে (নাউযুবিল্লাহ্)। তিনি মরে গেছেন, মরে মাটি হয়ে গেছেন, কবরে অন্যান্যদের মতই নিষ্ক্রিয় আছেন, তাঁর উসিলা নেওয়া যাবে না, তাঁর কাছে কিছু চাওয়া যাবে না (নাউযুবিল্লাহ্) ইত্যাদি ইত্যাদি। মোট কথা সৃষ্টির মূল, সৃষ্টির সেরা, ইনসানে কামেল এবং আল্লাহ্ হাবীব ও তাঁর প্রকাশ-বিকাশস্থল, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)কে তারা সাধারন মানুষের কাতারে এনে দাঁড় করাতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা হয়ত কুরআনে পড়ে নাই কিংবা ভূলে গেছে যে আল্লাহ্ অনেক কওমকে তাদের নবীকে নিজেদের মত মানুষ মনে করার জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন। যাঁর দরবারে ২৩ বছরে জিব্রাইল (عليه السلام) ২৪,০০০ বার আগমন করেছেন (গড়ে আনুমানিক দৈনিক ০৩ বার) এবং যাঁর হুজরায় বিনা অনুমতিতে আজরাইল (عليه السلام) এর প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, তাঁর শা’নে এমন বেয়াদবী? কিন্ত তাঁর শা’নে তাদের এহেন চরম বেয়াদবী সত্ত্বেও ওয়াদা অনুযায়ী আল্লাহ্ তাঁর হাবীবের সম্মানেই আমাদের সমূলে ধ্বংস করছেন না, করবেন না।


ইসলামের বিরুদ্ধে বাতিল পন্থীদের আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। হুজুর (ﷺ) এর যামানায়ই খারেজী ফেৎনার সূচনা হয়। হযরত আলী (رضي الله عنه) এর যামানায় তা চরম আকার ধারন করে। উমাইয়াদের আট দশকের বেশী শাসনকালে হুজুর (ﷺ) এর শান-মানকে খর্ব করা এবং আহলে বাইতগণকে প্রকাশ্যে ও জুম্মার খোৎবায় গালমন্দ করা তো রাষ্ট্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। ঐ আমলে হুজুর (ﷺ) ও তাঁর আহলে বাইতগণের সম্পর্কিত আদব, মহব্বত, তাজিম ও শিষ্টাচারের বহু হাদিস ধ্বংস করা হয় এবং অনেক জাল হাদিসের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়। দূর্ভাগ্যবশত চেঙ্গিস খান-হালাকু খানরা বাগদাদে রক্ষিত ইসলামের অমূল্য গ্রন্থ সমূহ এবং বহু হাদিসের কিতাব পুড়িয়ে বা পানিতে ফেলে ধ্বংস করে দেয়। এই ধ্বংসলীলায় অন্যান্য দলিল ও গ্রন্থের সাথে আদব-মহব্বতের হাদীস ও গ্রন্থ সমূহও ধ্বংস হয়ে যায়।


বিগত শতাব্দীর শুরুর দিকে নতুন এক ফেৎনার আবির্ভাব হয়। তা হলো সালাফী বা লা-মাযহাবী বা আহলে হাদিসের ফেৎনা। এ আক্বীদার জনক হলেন ৭ম শতক হিজরীর ইবনে তাইমিয়া। তার ফিরকাহ দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক হতে সক্রিয় হয়ে উঠে যা বর্তমানে প্রকট রূপ ধারন করে মারাত্মক ফেৎনা হিসাবে মুসলিম বিশ্বে আত্ম-প্রকাশ করেছে। এদের পাল্লা ভারী করেছে ওহাবী ফেৎনা ও মওদুদী ফেৎনা। সৌদি আরবে নাসির উদ্দিন আলবানী নামক সালাফী (মৃত্যু-১৯৯৯) নিরীক্ষার (তাহকিক) নামে মধ্যপ্রাচ্যের অসংখ্য ধর্মীয় কিতাব ও হাদিস গ্রন্থে এক নির্মম পরিবর্তন-পরিবর্ধন যজ্ঞ চালিয়ে ইসলামের এমন ক্ষতি সাধন করেছে যা সম্ভবত আর কোন দিন সংশোধন করা যাবে কিনা সন্দেহ। অধিকাংশ আদব, মহব্বত, তাজিম, শিষ্টাচার, বরকতময় আমল সংক্রান্ত হাদিস তাহকিকের নামে বাদ দিয়েছে কিংবা জাল হাদিসকে সহিহ এবং সহিহ হাদিসকে জাল বানিয়েছে। এমন কি বাতিলপন্থীরা বর্তমানে বাংলাদেশেও ইসলামের বিখ্যাত মূল গ্রন্থ সমূহ অনুবাদের সময় আদব-মহব্বত, বরকতময় আমল সংক্রান্ত বিষয় সমূহ বাদ দিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে অর্থ পরিবর্তন করে তা প্রকাশ করছে। এ কারনেই ঈমান-আক্বীদার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে আজ এত বিভক্তি। আমাদের বইয়ের বাজার বদ-আক্বীদার কিতাবাদিতে সয়লাব। হক্কানী লেখকদের গ্রন্থ সমূহের ভূল ও অপব্যাখ্যা করে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল-আখলাকের মধ্যে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। যার কারনে আজ আমরা দিশাহারা ও বিভক্ত এবং আমাদের পক্ষে হক্ব-বাতিলের পরিচয় বুঝা কঠিন হয়ে গেছে। এ ধারায় যারা অনুপ্রাণিত তারাই আজ উগ্রবাদে লিপ্ত। এ ধারা প্রতিহত না করলে অচিরেই এ সমস্যা আরো প্রকট অকার ধারন করবে।


এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহর হাবীব (ﷺ) এর শান, মান ও মর্যাদার যথাযথ উপলব্ধির জন্য আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এ পুস্তকে প্রিয় নবী (ﷺ) এর কিছু শানের বর্ণনা ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদাগত বিষয় যা হুজুর (ﷺ) এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট সংক্রান্ত। এ কিতাবের বহুলাংশ বিষয় ভিত্তিক চুম্বক আকারে লিখা। এ সমস্ত বিষয় বিশদভাবে লিখতে গেলে কিতাবের আকার বিশাল হতো। তবে জ্ঞান পিপাসুরা, যারা বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক, আমার বিশ্বাস এ সকল পয়েন্টের সূত্র ধরে গবেষনার সুযোগ পাবে।


আমি লেখকও নই, আলেমও নই। শুধু ঈমানী দায়িত্ব পালনের জন্য এ প্রচেষ্টা। এতে অনেক ভূল-ভ্রান্তি থাকা খুবই স্বাভাবিক। তেমন ভূল-ভ্রান্তি দৃষ্টিগোচর হলে তা’ জানানোর আর্জি রইল। পরবর্তীতে সংশোধন করে দেয়ার আশা রাখি। 


পরিশেষে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার মহান মুরশিদ হযরত শেখ আব্দুস সালাম নকশ্বন্দী মুজাদ্দেদী (মা: জি: আ:) এর প্রতি, যাঁর ইলমি ছোহবত ও দোয়ার বরকতে আমি গোনাহ্গার এ ক্ষুদ্র কিতাব রচনায় উৎসাহিত হয়েছি। আরো শুকরিয়া জানাই তাদেরকে, যারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন, বিশেষ করে মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন জিহাদী সাহেবকে যিনি এই কিতাব সম্পাদনা ও আরবী এবারত সংযোজন করে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। মুফতি মুহাম্মদ আবদুল আলী কাদেরী ও মাওলানা মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ সিদ্দিকিকেও সহযোগীতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মহান রাব্বুল আ’লামিন সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করেন। আমিন।




বিনীত

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

খাদেম, দরবারে মকিমীয়া মোজাদ্দেদীয়া

টানপাড়া, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।


 



শা‘নে মুস্তফা (ﷺ)


وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ


(“এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি”।-আল কোরআন)



১। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজের জানের চাইতে বেশী ভালবাসলেই তবে মু‘মিন হওয়া যায়। তাই মু‘মিন হওয়ার চাবি-কাঠি হলো ইশ্কে রাসূল (ﷺ)।


২। নবী (ﷺ) যে আল্লাহর পয়গম্বর ছিলেন এই ইলম আবু জেহেলেরও ছিল। কিন্তু সে পন করেছিল হুজুর (ﷺ) কে মানবে না- তাই কাফের।


৩। কুরআন হতে জানা যায় যে হুজুর (ﷺ) সম্বন্ধে আহলে কিতাবীদের মা‘রেফত ছিল। কিন্তু অস্বীকার করার কারনে কাফের। (সূরা: আনআম; আয়াত: ২০)


৪। আর মুসলমানরা হুজুর (ﷺ) এর আজমত ও শান জানা সত্বেও তাঁকে অসম্মান করে, তাঁর মর্যাদাকে খর্ব করে, তাঁকে নিজেদের মত মানুষ মনে করে, আল্লাহ্ প্রদত্ত তাঁর বৈশিষ্ট ও গুণাবলীকে অস্বীকার করে এবং তাঁর দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আজ তারা মুনাফিক।


৫। তাই দেখা গেল, কাফের, মুশরিক, মুনাফিক- এরা সবাই আল্লাহ্কে মানে, কিন্তু আল্লাহর রাসূলকে অস্বীকার, অমান্য ও অসম্মান করে। যার ফলে তারা বিপদগামী ও ক্ষতিগ্রস্থ।


৬। মু‘মিনের জন্য সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। আর ঈমানের মূল হলেন হুজুর (ﷺ) ও তাঁর মহব্বত। এবং এই ঈমান দূরস্ত রাখার জন্য প্রয়োজন সঠিক আক্বীদা। আমাদের মাঝে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা আজ হুজুর (ﷺ) এর শান-মানকে খর্ব করার জন্য খুব সচেষ্ট। তাই আমাদের ঈমান বাঁচাতে হলে সঠিক আক্বীদা পোষন এবং হুজুর (ﷺ) শানকে সমুন্নত রেখে তাঁকে অশেষ মহব্বত করতে হবে।


৭। যেমনিভাবে আল্লাহ্কে এক ও অদ্বিতীয় মানলেই চলবে না, তাঁকে তাঁর সমস্ত গুণাবলি (সিফাত) ও বৈশিষ্ট সহকারে মানতে হবে। তেমনিভাবে হুজুর (ﷺ) কে শুধু আল্লাহর রাসূল মানলেই চলবে না, তাঁকে আল্লাহ্ প্রদত্ত সকল সিফাত ও বৈশিষ্ট সহকারে মানতে হবে। হুজুর (ﷺ) এর মর্যাদা অনুধাবনের জন্য এখানে দু‘টি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজনঃ


১) আল্লাহ্ হুজুর (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতেন না এবং তিনি নিজেও প্রকাশিত হতেন না।


২) আল্লাহ্ হলেন রাব্বুল আ‘লামীন। আর হুজুর (ﷺ) হলেন রাহমাতুল্লিল আ‘লামীন। যেখানেই আল্লাহর রবুবিয়াত, সেখানেই নবী (ﷺ) এর রহমত। অর্থাৎ আল্লাহর রবুবিয়াতের সকল প্রান্ত পর্যন্তই হুজুর (ﷺ) এর রহমত বিস্তৃত। হুজুর (ﷺ) এর এই শান আল্লাহ্ প্রদত্ত (আতায়ী)।


৮। শয়তানের দল, মুনাফিকের দল, ইয়াজিদের দল- এরা সবাই আল্লাহ্কে মানে; কিন্তু নবী-রাসূল ও আওলিয়া কেরামের মান-মর্যাদা মানতে তাদের যত আপত্তি। তাইতো আল্লাহ্ ফরমান, ‘আল্লাহ্কে মেনে ও যারা রাসূলের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে- তারা মুনাফিক’ (নিসা-৬১)। আজ তারা নবীকে বড় ভাই জ্ঞান করে, কবর জীবনে তাঁকে নিষ্ক্রিয় ও হায়াতে আমাদের মত মানুষ মনে করে। অথচ কুরআন হতে জানা যায়, যেই সম্প্রদায়ের লোক নিজ নবীকে নিজেদের মত মানুষ মনে করেছে, আল্লাহ্ ঐ সমস্ত কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ৩৩ : ৫৭ (আহযাব)- “নিশ্চয়ই যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত- দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ্ তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি প্রস্তুুত করে রেখেছেন”। আল্লাহ্কে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে; তাঁর জন্য এমন কোন বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা, যা থেকে তিনি পবিত্র অথবা তাঁর প্রিয় বান্দাদের নির্যাতন করা। আর রাসূল (ﷺ) কে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে; তাঁর বরকতময় কাজকে তুচ্ছ মনে করা, কিম্বা তিরস্কার করা, তাঁর গুণাবলী চর্চায় বাধা দেওয়া, দোষ-ত্রুটি আরোপের অপচেষ্টা করা, তাঁর (আল্লাহ্ প্রদত্ত) শান-মান ও বৈশিষ্ট্য সমূহ অস্বীকার করা কিংবা খর্ব করার চেষ্টা করা ইত্যাদি। এমনকি হুজুর (ﷺ)এর আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম এবং আল্লাহর অলীগণেরও এমন মর্যাদা যে তাদেরে কষ্ট দিলে অর্থাৎ তাদের শা’নে বেয়াদবী করলে কিম্বা তাদের মর্যাদা খর্ব করলে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)এর অসন্তষ্টি নসীব হবে। এমনকি কেহ অলীগণের বিরুদ্ধে শত্রুতা করলে আল্লাহ্ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।


৯। যেমনটা বলেছি, ঈমান বাঁচাতে হলে আক্বীদা ঠিক রাখতে হবে। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মূখ্য আক্বীদা হলোঃ


১) ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করা উত্তম। ইহা তাকওয়া অর্জন ও সওয়াবের কাজ।


২) মিলাদ-কিয়াম জায়েয। কিয়াম মুস্তাহাব।


৩) নবী (ﷺ) নূরের সৃষ্টি।


৪) নবী করীম (ﷺ) হায়াতুন্নবী।


৫) হুজুর (ﷺ) হাজির-নাযির।


৬) নবী (ﷺ) ইলমে গাইবের অধিকারী।


৭) হুজুর (ﷺ) ও আউলিয়া কেরামের উসিলা গ্রহন জায়েয।


৮) নবী (ﷺ) এর মা-বাবা জান্নাতী (নাজী)।


৯) নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ।


১০) নবী (ﷺ) শাফায়াতের অধিকারী।


১১) শবে বরাত উদ্যাপন হক্ক ও জায়েয।


১২) নবী (ﷺ) আমাদের মত মানুষ নন।


১৩) নবী (ﷺ) নাম উচ্চারিত হলে আদব দেখাতে হবে (দরূদ পড়া, নখ চুম্বন ইত্যাদি)।


১৪) মি‘রাজ স্বশরীরে হয়েছে।


১৫) নামাজ শেষে (০৫ ওয়াক্ত নামাজের পর) হাত তুলে মোনাজাত করা জায়েয ও হাদীস সমর্থীত।


১৬) কবর যিয়ারত মুস্তাহাব। কবর/মাজার যিয়ারতের নিয়তে বের হওয়া জায়েয।


১৭) সাহাবায়ে কেরাম ও আহলে বাইয়েতের ব্যাপারে কোন বেয়াদবীপূর্ণ আচরণ করা যাবে না। তাঁরা হলেন সত্যের মাপ-কাঠি। মর্যাদায় আহলে বাইয়েত সাহাবায়ে কেরামগনের উপরে। 


১৮) তাসাউফ চর্চা করা অপরিহার্য।


১৯) কারামতে আউলিয়া হক্ক।


২০) মাযহাবের অনুসরন অপরিহার্য।


২১) কদমবুচী জায়েয এবং হাদিস সমর্থিত।


২২) হুজুর (ﷺ) আখেরী নবী এবং তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না।


১০। অন্যান্য নবীগণ জন্ম হতে নবী, কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) সৃষ্টির শুরু হতেই নবী। অর্থাৎ সকল সৃষ্টির পূর্ব হতেই তিনি নবী ছিলেন এবং তাঁর নূর মোবারক হতেই আল্লাহ্ অন্যান্য সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন।


১১। রাসূলের ইতাদ বা অনুসরনই হলো আল্লাহর ইতাদ।


১২। কুরআনে ৩৮ আয়াতে আল্লাহ্ ও রাসূলের ইতাদের কথা বলা হয়েছে। তন্মধ্যে ২০ আয়াতে উভয়ের ইতাদ এবং ১৮ আয়াতে শুধু রাসূলের ইতাদের হুকুম রয়েছে; কিন্তু একবারও আলাদাভাবে বা এককভাবে আল্লাহর ইতাদের কথা বলা হয়নি (ইহার ভেদ হলো, যেন মুনাফিকরা কোন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে)।


১৩। শুধু আল্লাহ্কে মানলে হবে না, আল্লাহ্কে রাসূলের মাধ্যমে মানতে হবে। (যেমন আল্লাহ্কে মেনে ও আদম (عليه السلام) কে সেজদা না করায় আজাযিল মরদুদ শয়তান হয়ে গেল)।


১৪। কুরআনে ১০০টির অধিক আয়াত আছে যেখানে আল্লাহ্ ও রাসূলের নাম এক সঙ্গে বা পাশাপাশি বিদ্যমান। তাই রাসূলকে আল্লাহর সাথে মিলানো শিরক্ নয়, যেমনটা আজ কাল কেউ কেউ মনে করে।


১৫। আল্লাহ্ নিজেই তাঁর ও তাঁর হাবীব (ﷺ) এর মধ্যকার ব্যবধান দূর করে দিয়েছেন। যেমন ঈমানী কালেমায় ‘ওয়াও’ অক্ষরটা ও উঠিয়ে দিয়েছেন।


১৬। ইবাদতে আল্লাহর সাথে নবীকে যেমন যুক্ত করা শিরক্, তেমনি অন্য সকল বিষয়ে নবী (ﷺ) কে আল্লাহ্ হতে বিযুক্ত বা পৃথক করা কুফর।


১৭। ইবাদত হবে শুধু আল্লাহর জন্য, রাসূলের জন্য নয়। তথাপি ইবাদত রাসূলের তরিকামত না হলে তা গ্রহনযোগ্য নয়।


১৮। কুরআনে ০৭টি আয়াত আছে যেখানে উল্লেখ ০২জনের (অর্থাৎ আল্লাহ্ ও রাসূলের), কিন্তু কর্মে বা ইতাদে শুধু একজনের (রাসূলের)। 


১৯। সাহাবীগণ আল্লাহ্ ও রাসূলের বারগাহে তওবা করতেন। এমন কি মা আয়েশা (رضي الله عنه) ও তা করেছেন। (বোখারী শরীফ)


২০। নেককারদের জন্য খোদা, আর গুনাহগারদের জন্য মুস্তাফা (ﷺ)।


২১। বান্দার আমল সমূহ মদিনা হয়ে আরশে যায়। ভাল আমল হলে হুজুর (ﷺ) আল্লাহর প্রসংশা করেন এবং মন্দ হলে আল্লাহর দরবারে মাফ করার জন্য সুপারিশ করেন। (ছামহুদী: অফাউল অফা)। দরূদ ও সালামও মদিনায় হুজুরের রওজায় পেশ হয়। হুজুর (ﷺ) নিজ কানে তা শুনতে পান। দরূদ পাঠকারীর নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা হুজুর (ﷺ) এর নিকট পেশ হয়। তাই দরূদ ও সালামের মাধ্যমে পাঠকারীদের সাথে নবীজীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যার ফলশ্রুতিতে হুজুর (ﷺ) তাদের হাশরে চিনবেন ও শাফায়াত করবেন। (হুজুর (ﷺ) মক্কার সেই সালাম দেওয়া পাথরকে, দীর্ঘদিন পর মদিনায় বসে, চিনতেন বলে জানিয়েছেন।)


২২। আশেকের লক্ষন হলো, তারা হুজুর (ﷺ) এর প্রতি আদব, সম্মান ও মহব্বতকে বেশী বেশী গুরুত্ব দিবে এবং আলোচনা করবে। আর ওহাবী, সালাফী ও লা-মাযহাবীদের লক্ষন হলো, তারা শুধু ইলম ও আমলের প্রতি বেশী বেশী গুরুত্ব দিবে।


২৩। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর নবী রাসূলগণ হলেন আশরাফুল মাখলুকাতের অর্থাৎ মানুষ্যকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আর আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) হলেন সেরাদের সেরা। অর্থাৎ নবী-রাসূলগণের মধ্যে তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ ও তাঁদের সর্দার। 


তারপর ও আল্লাহ্ বলেন,

 وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ 

“এবং আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি” (সূরা: ইনশিরাত; আয়াত: ৪)। 


আল্লাহ্ আরো ফরমান,

 وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَكَ مِنَ الْأُولَى 

“তোমার জন্য পরবর্তী সময় তো পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা শ্রেয়”(সূরা: দুহা; আয়াত: ৪)। 

অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) কে শুধু উচ্চ মর্যাদাই দান করেননি, বরং আল্লাহ্ তাঁর মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছেন এবং করেই চলছেন। 


তদুপরি আল্লাহ্ স্বয়ং নিজে ফেরেশতাদের নিয়ে নবীর প্রতি অনুগ্রহ প্রেরণ করছেন এবং মু‘মিনদিগকেও সালাত-সালাম প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা: আহযাব; আয়াত: ৫৬)। 


একই কাজ সার্বক্ষনিক ভাবে রওজা শরীফ তাওয়াফরত ৭০,০০০ ফেরেস্তাগণও করছেন। হুজুর (ﷺ) এর মর্যাদা বৃদ্ধির প্রথম প্রকাশ ঘটে মি’রাজের মাধ্যমে। আর সর্বশেষ (চুড়ান্ত) প্রকাশ ঘটবে হাশরের মাঠে যখন তিনি মাকামে মাহমুদে বসে উম্মত তরাবেন।


২৪। যখন আল্লাহর যিকির করা হয়, তখন হুজুর (ﷺ) এর যিকিরও করা হয়। কারন আল্লাহ্ নবীর যিকিরকে নিজের যিকিরের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন, “ওগো আমার হাবীব! আপনাকে আমার যিকির করেছি, অতপর যারা আপনার যিকির করবে, তা আমারই যিকির হবে” (হাদীসে কুদসী)। উদাহরন- নামায, আযান, একামত ইত্যাদি। (ইমাম জাফর সাদেক (র:) বলেছেন: নবী করিম (ﷺ) এর যিকিরই হলো আল্লাহর যিকির।)


২৫। مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ 

কেহ রাসূলের আনুগত্য করলে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল (সূরা: নিসা; আয়াত: ৮০)।


২৬। ২৪ঃ ৫৪ (নূর) وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ 

রাসূলের আনুগত্য করলে সৎ পথ পাবে....। 

অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) এর আনুগত্যে সৎপথ ও জান্নাত পাওয়া যাবে, অন্যথায় গোমরাহী ও জাহান্নাম।


২৭। ৪৭ঃ ৩৩ (মুহাম্মদ)- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ 

“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলে আনুগত্য কর, তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট করোনা।” 

অর্থাৎ রাসূলে অবাধ্য হলে বা আনুগত্য না করলে কর্মফল বৃথা যাবে। 


২৮। ৮ঃ ২০ (আনফাল)- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُونَ হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তাহার কথা শ্রবণ করিতেছে তখন উহা হতে মুখ ফিরাইও না; 


২৯। ৮ঃ ২৪ (আনফাল) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ -হে মু’মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদিগকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে যাহা তোমাদিগকে প্রাণবন্ত করে তখন আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিবে...।


৩০। ৪ঃ ১৫০ ও ১৫১ (নিসা)- আল্লাহ ও রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারীরা কাফের। 

(যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করে এবং বলে ‘আমরা কতেক বিশ্বাস করি ও কতেক অবিশ্বাস করি’)।


৩১। রাসূল (ﷺ) এর কথা আল্লাহরই কথা।

 وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى 

“এবং সে মনগড়া কথা বলে না। ইহা তো ওহী, যাহা তাহার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সূরা: নাজম; আয়াত: ৩ ও ৪)


৩২। সূরা এখলাসে তৌহিদের ঘোষণা রিসালতের দরবার থেকেই শুরু হয়। যেমন- قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (“বল, তিনিই আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়”)। 

অর্থাৎ শুরতে ‘বল’ শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ্ রিসালাতের দরবারকে আগে প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে তাঁর একত্মবাদের ঘোষণা দেন।


৩৩। হুজুর (ﷺ) নব্যুয়ত প্রাপ্তির পর তাঁর নিকট আত্মীয়গণকে নিয়ে এক পাহাড়ের উপর গিয়ে তাদের প্রশ্ন করেন যে, ‘যদি বলি পাহাড়ের উল্টা দিক থেকে শত্রু বাহিনী আসছে, তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে?’ সবাই বলেন, ‘তুমি আল আ’মিন, অবশ্যই তোমাকে বিশ্বাস করব।’ কিন্তু যখন তৌহিদের দাওয়াত দিলেন, তখন প্রায় সবাই তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখান করে, এমন কি আবু লাহাব গালমন্দ করে চলে যায়। ঐ দিন যারা তাঁর কথা মানল তারা মুসলমান, যারা মানলনা তারা কাফের।


৩৪। সর্ব প্রথম হাদীস মানতে হবে, তার পরে কুরআন। কিন্তু যারা আজকাল হাদীস মানে না এবং বলে কুরআনই যথেষ্ট, তারা কুরআন পেল কোথায়? কুরআনের নাজিলকৃত প্রথম ৫টি আয়াত (ইকরা...) যখন হুজুর (ﷺ) লোকদের শুনালেন, তারা জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি ইহা পেলেন কোথায়?’ হুজুর (ﷺ) এর জবাবে বলেন, ‘ইহা আল্লাহর কালাম।’ তাঁর এই জবাবটা হলো হাদীস। আর যারা এই হাদীস মানল তারা মুসলমান, যারা মানল না তারা কাফের।


৩৫। যেই কুরআন আসমান, জমিন ও পর্বতমালা বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে, তা হুজুর (ﷺ) এর উপর নাযিল হয়।


৩৬। মি’রাজের রজনীতে যেখানে নূরের তৈরী, ফেরেশতাকুলের সর্দার, জিব্রাইল (عليه السلام) যেতে পারেননি, সেখানে আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) অবলিলায় চলে গেছেন।


৩৭। যাঁর পবিত্র আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়।


৩৮। যাঁর ইশারায় অস্তমিত সূর্য আলী (رضي الله عنه) এর আছরের নামাজ আদায়ের জন্য ফিরে আসে। (খায়বর বিজয় করে ফিরার পথে।)


৩৯। যিনি মদিনায় বসে চন্দ্র গ্রহনের সময় জান্নাত অবলোকন করেন এবং জান্নাতী ফলের গুচ্ছ স্পর্শ করেন।


৪০। যিনি মদিনায় বসে জান্নাত-জাহান্নাম দেখতে পান।


৪১। যিনি মাতৃগর্ভ থেকে লৌহে মাহফুজের কলমের লেখার খস্খস্ আওয়াজ শুনতে পান।


৪২। যিনি মদিনা থেকে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত পাথরের শব্দ শুনতে পান।


৪৩। যাঁর সাহাবীগণ ছিলেন আকাশের নক্ষত্রতুল্য এবং তাদের যে কোন একজনকে অনুসরন করলেই পথ পাওয়া যাবে। অন্য কোন নবীর সহচরগণ এমন মর্যাদা লাভ করেননি।


৪৪। যিনি দুনিয়াতেই তাঁর দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, যারা আশরায়ে মোবাশে^রা নামে খ্যাত।


৪৫। যাঁর হাতে পাথর কলেমা পড়ে এবং যাঁকে পাথর সালাম দেয়।


৪৬। যাঁকে মেঘমালা ছায়া দেয়।


৪৭। যাঁর সোহবতে শুকনা গাছ পত্র-পল্লবে ভরে উঠে।


৪৮। যাঁকে বৃক্ষ ছায়া দেয় এবং যাঁর হাজত পূরনের জন্য নির্দেশিত হয়ে মরুর বুক চিড়ে হাজির হয়।


৪৯। যাঁর পবিত্র হস্তের স্পর্শে উম্মে মা'য়াদের রুগ্ন ছাগীর বান দুধে ভরে যায় (হিজরতে)।


৫০। যিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর বাগানে তাশরিফ আনলে- বৎসরে একবারের পরিবর্তে দুইবার ফল দেওয়া শুরু হয়।


৫১। যাঁকে উট সিজদা করে ও তার মালিকের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়।


৫২। যিনি সকলের (বিভিন্ন দেশ ও জাতির মানুষ, জ্বিন, পশু, গাছ ইত্যাদি) ভাষা জানতেন। 


৫৩। এক বেদুঈন হাতুড়ে ডাক্তার মোজেযা তলব করলে- হুজুর (ﷺ) এর নির্দেশে একটি খেজুরের ছড়া নিজ ডালা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁকে সালাম দিতে দিতে উপস্থিত হয় এবং পরবর্তী নির্দেশে যথাস্থানে গিয়ে জুড়ে যায়। ইহা দেখে বেদুঈন ঈমান আনে।


৫৪। যিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করলে শুক্রবার হতে শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকে।


৫৫। যাঁর ফু দেওয়া কম্বল আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) বুকে জড়িয়ে ধরার কারনে ০২ লক্ষ হাদিস অবলিলায় মুখস্ত করে ফেলেন।


৫৬। যিনি বরকতের দোয়া করে দিলে আবু হোরায়রা (رضي الله عنه), তাঁর থলে থেকে ২৬ বৎসর যাবৎ খেজুর খেতে থাকেন। (হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর শেষ দিনের ফেৎনার সময় ঐ থলেটি হারিয়ে যায়)। উল্লেখ্য, তাবুকের যুদ্ধে খাদ্যাভাব দেখা দিলে হুজুর (ﷺ) ২১টি খেজুর দ্বারা ৩০,০০০ সৈন্যকে তৃপ্তিসহকারে আপ্যায়ন করেন। তারপরও দেখা যায় ২১টি খেজুরই অবশিষ্ট রয়ে গেছে, যা আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)কে দেওয়া হয়। (মেশকাত শরীফ)


৫৭। যাঁর সোহবত ও মহব্বতে শুকনা খেজুরের খুঁটি (উস্তুুনে হান্নানা) জীবন লাভ করে ক্রন্দন করেছে এবং জান্নাতে হজুর (ﷺ) এর প্রতিবেশী হওয়ার আর্জি করেছে।


৫৮। যাঁর ছায়া ছিল না এবং যাঁর গায়ে মশা-মাছি বসতো না।


৫৯। যাঁর মল-মূত্র জমিন গ্রাস করে নিত।


৬০। যাঁর মেজবান (হযরত জাবের (رضي الله عنه)) ছোট একটি বকরী ও সমান্য আটা দিয়ে খন্দকের যুদ্ধের সময় ১৫০০ লোককে আপ্যায়ন করেন।


৬১। যিনি একটি সামান্য পানি ভর্তি বাটিতে পবিত্র হাত রাখলে তা ঝর্ণায় রূপান্তরিত হয় এবং ১৫০০ লোকের পানির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয়।


৬২। যিনি কুপে তীর নিক্ষেপ করলে, থুথু মোবারক ফেললে, কুলির পানি বা অজুর পানি ফেললে, কুপ কানায় কানায় মিষ্টি পানিতে ভরে যায়।


৬৩। যিনি জনৈক মহিলার মোশকের দুধ সাথীদের আকুন্ঠ পান করানোর পরও মোশক দুধে ভরপুর থাকে; উপরন্তু দুধ স্বরযুক্ত হয়ে যায়।


৬৪। যিনি অপর এক মহিলার মোশকের পানি পরিপূর্ণভাবে সাথীদের পান করানোর পর খালি মোশক পানিতে ভরে যায়।


৬৫। যিনি আকাশের দিকে তাকালে কিবলা পরিবর্তন হয়ে যায়।


৬৬। যাঁর জন্মের বৎসর আরবের সকল মহিলা পুত্র সন্তান প্রসব করে। (কন্যা সন্তানকে জীবন্ত অবস্থায় মাটিতে পুতে ফেলার মত অনাচার থেকে ঐ বৎসর আরব বিশ্বকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে)


৬৭। যাঁর পবিত্র মুখের কথা ও আদেশ-নিষেধই হলো শরিয়ত।


৬৮। আল্লাহ্ স্রষ্ঠা ও প্রদানকারী। আর তিনি (ﷺ) হলেন আল্লাহর পক্ষে বন্টনকারী।


৬৯। যিনি খাদেমের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে (রবীয়া ইবনে কা’ব আসলামী (رضي الله عنه)) জান্নাত দান করেন।


৭০। যিনি এক বাঁদীকে (হুজুর (ﷺ) জিহাদ হতে সহি সালামতে ফিরলে) দফ বাজিয়ে গান করার আর্জি করলে, তা’ মঞ্জুর করেন।


৭১। যিনি এক ব্যক্তিকে শরিয়তের ০৫ ওয়াক্ত নামাজের পরিবর্তে শুধু ০২ ওয়াক্ত নামাজের শর্তে ঈমান আনতে চাইলে, তা’ অনুমোদন করেন।


৭২। ইসলামী শরিয়তে ০৪টি বিবাহ জায়েয হলেও, আলী (رضي الله عنه) এর (মা ফাতেমা (رضي الله عنه) জীবিত থাকা অবস্থায়) দ্বিতীয় বিবাহের আবেদন প্রত্যাখান করেন।


৭৩। মৃত্যুর পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন এবং শরিয়তে নিষিদ্ধ হলেও তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه) কে মা ফাতেমা (رضي الله عنه) এর ওফাতের পর তাঁকে গোসল করানোর নির্দেশ দেন।


৭৪। কুরআন অনুযায়ী মৃত প্রানী হারাম হলেও তিনি মৃত মাছকে হালাল ঘোষনা করেন।


৭৫। যাঁর আগমন টের পেয়ে হযরত সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) ইমামতি ছেড়ে দিয়ে তাঁকে ইমামতি করতে দেন।


৭৬। শরিয়তে বিলাপ করা নিষিদ্ধ হলেও যিনি উম্মে আতিয়া (رضي الله عنه)কে বিলাপ করার অনুমতি দেন।


৭৭। শরিয়তে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিনি সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه)কে একবার নাপাক অবস্থায় মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেন। মওলা আলীর জন্য এই আদেশ দায়েমী ছিল।


৭৮। এক ব্যক্তির কাফ্ফারার সদকা তাকেই খাওয়ার অনুমতি দেন। (জনৈক রোজা ভঙ্গকারী সাহাবী “ধ্বংস হয়ে গেছি” বলে চিৎকার করতে করতে রিসালাতের দরবারে হাজির হলে, হুজুর (ﷺ) তাকে রোজার কাফ্ফারা স্বরূপ ০১জন গোলাম আজাদ করতে কিংবা ৬০ দিন রোজা রাখতে কিংবা ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়ানোর নির্দেশ দেন। ঐ সাহাবী কোনটাই করতে সামর্থ নন বলে জানান। এমন সময় অন্য এক আগন্তুক কিছু খেজুর হাদিয়া সরুপ পেশ করলে, হুজুর (ﷺ) রোজা ভঙ্গকারী সাহাবীকে ঐ খেজুর প্রদান করে তা রোজার কাফ্ফারা স্বরূপ সদকা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে নিজেই গরীব বলে দাবী করলে হুজুর (ﷺ) তাকেই ঐ সদকার খেজুর খাওয়ার অনুমতি দেন।) 


৭৯। সুরাকাকে হিজরতের সময় (ভবিষ্যৎবানীর মাধ্যমে) পারস্য সম্রাটের সোনার কংকন পরার অনুমতি দেন, যদিও পুরুষের জন্য স্বর্ণালংকার পরিধান হারাম। ইহা বাস্তবায়িত হয়েছিল হযরত উমর (رضي الله عنه) এর খেলাফত কালে পারস্য বিজয়ের পর।


৮০। এক সাহাবাকে তার স্ত্রী তার জন্য অবৈধ ঘোষনা করেন।


৮১। যাঁর উপর দরূদ পড়লে গুনাহ্ ঝরে যায়।


৮২। যাঁর উপর দরূদ পড়লে আল্লাহ্ পাঠকারীর উপর দরূদ পড়েন।


৮৩। যাঁর রওজা শরীফ নিয়ত করে যিয়ারত করলে জান্নাত পাওয়া যায়।


৮৪। শয়তান যাঁর রূপ ধারন করতে পারে না। (বুখারী ও মিশকাত)


৮৫। যাঁকে কবরে না চিনলে জান্নাত পাওয়া যাবে না।


৮৬। যাঁকে ওহুদের পাহাড় ভালবাসে এবং বুক চিরে আশ্রয় দেয়। (মিশকাত)


৮৭। যিনি ছাড়া অন্য কেউ হাশরের মাঠে বিচার শুরুর সুপারিশের সাহস পাবে না।


৮৮। হুজুর (ﷺ) যুবায়ের ও আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) কে রেশমি কাপড় পড়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। কারণ তাদের উভয়ের শরীরে ছিল খোস পাঁচরা। (বোখারী ও মুসলীম)


৮৯। যাঁর হাতে হাশরের মাঠে হামদের পতাকা থাকবে।


৯০। যাঁর উম্মত হাশরের মাঠে অন্য সব উম্মতের সাক্ষী হবেন। (বোখারী)


৯১। যাঁকে মহান রাব্বুল আ’লামীন হাশরে শাফায়াতে কোবরার অধিকারী করবেন এবং যাঁকে সবাইর জন্য শাফায়াতের অধিকার দেওয়া হয়েছে। (বুখারী)


৯২। যাঁর আশেক উম্মতদের পার করার জন্য স্বয়ং জিব্রাইল (عليه السلام) পুলসেরাতের উপর নিজ পাখা বিছিয়ে দিবেন।


৯৩। যাঁর উম্মত বেহেশতে প্রবেশের পূর্বে অন্য উম্মতের জন্য বেহেশতে প্রবেশ হারাম করা হয়েছে।


৯৪। যিনি হলেন ঈমামুল মুরসালিন (মি’রাজে প্রমাণ)।


৯৫। যাঁকে সাহায্য ও যাঁর তবলীগ করার ওয়াদা করে অন্যান্য নবীগণ নবী হলেন। (সূরা আলে-ইমরান; আয়াত ৮১ ও ৮২)


৯৬। যাঁর নূর আল্লাহ্ তা’য়ালা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন। আরশ-কুরছি, লওহ-কলম, আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য সব মাখলুক তাঁর নূরে পয়দা এবং তিনি স্বয়ং আল্লাহর যাতী নূর হতে পয়দা। (মুসান্নাফ-হযরত জাবের (رضي الله عنه))


৯৭। যাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্ কিছুই সৃষ্টি করতেন না এবং নিজেও প্রকাশ হতেন না। (বোখারী)


৯৮। যাঁর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্কে আল্লাহ্ বলে জানলাম এবং আল্লাহর কালাম পবিত্র কোরআন লাভ করলাম।


৯৯। যিনি হলেন মহান রাব্বুল আ’লামিনের প্রকাশও বিকাশস্থল।


১০০। যাঁর উসিলায় আদম (عليه السلام) মুক্তি পেলেন। (হাকেম)


১০১। যাঁর উম্মত হওয়ার জন্য নবীগণ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। তাই ঈসা (عليه السلام) তাঁর উম্মত হিসাবে পুনরায় দুনিয়ায় তাশরিফ আনবেন।


১০২। যিনি ভূমিষ্ঠ হয়েই উম্মতের নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ শুরু করেন। আজও মদিনায় “রাব্বি হাবলী উম্মতি” বলে কাঁদছেন।


১০৩। যাঁর জন্মের বৎসর পৃথিবীতে বেশী বেশী ফুল, ফল ও ফসল হয়। পুরা পৃথিবী বরকতময় হয়ে যায়।


১০৪। যিনি ভূমিষ্ঠ হলে কা’বা শরীফ মাকামে ইব্রাহিমসহ সেজদাবনত হয় এবং কা’বার সকল মূর্তি (৩৬০টি) মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।


১০৫। যাঁর জন্মের দিন পশু-পাখীর জবান খূলে যায় এবং একে অপরের নিকট আনন্দ প্রকাশ করে।


১০৬। যাঁর জন্মের সময় আকাশের তারকারাজী অধিক উজ্জলতা লাভ করে এবং জমিনের নিকটবর্তী হয়ে যায়।


১০৭। যাঁর জন্মের আগমনী বার্তা স্বরূপ পারস্য সম্রাটের প্রাসাদের চূড়া ভেঙ্গেঁ পড়ে, তাদের হাজার বছরের শিখা অনির্বান নিভে যায়, জলাশয়ের জল শুকিয়ে যায় এবং স¤্রাটের মুকুট মাথা থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।


১০৮। যাঁর নাম মোবারক হুরদের চোখের পাতায়, আরশের গায়ে, বেহেশতের দরজায়, তুবা ও অন্যান্য জান্নাতি বৃক্ষের পাতায় পাতায় লিখা রয়েছে।


১০৯। যাঁর কারনে আল্লাহ্পাক জমিনকে জায়নামাজ বানিয়েছেন (পবিত্র/সেজদার উপযোগী করেছেন) এবং পানির অভাবে অযু-গোসলের পরিবর্তে মাটি দ্বারা তৈয়ম্মুম করার অনুমতি দিয়েছেন।


১১০। যাঁর ঘাম মোবারক মেশক আম্বরের চাইতেও বেশী খুশবুদার ছিল। (বোখারী, মুসলিম, মিশকাত)


১১১। যিনি কোন রাস্তায় গমন করলে সুবাশ ছড়িয়ে পড়ত এবং পরবর্তিতে অন্যরা বলতে পারত এই পথে তিনি গমন করেছেন।


১১২। যিনি হাসলে অন্ধকারেও সুই খুঁজে পাওয়া যেত।


১১৩। যাঁর চেহারা ও দন্ত মোবারক হতে নূর বিচ্ছুরিত হতো।


১১৪। যিনি কারো মাথায় হাত রাখলে সেই মাথায় কোন দিন চুল পাকতো না।


১১৫। যিনি কারো বুকের উপর হাত রাখলে সে মস্তবড় আলেম হয়ে যেত।


১১৬। যাঁর সুপারিশ গ্রহনের জন্য আল্লাহ্ স্বয়ং বান্দাদেরকে শিখিয়েছেন।


১১৭। যাঁর অনুসরণ না করলে আল্লাহর মহব্বতও পাওয়া যায় না।


১১৮। যাঁর অনুসরণ না করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না।


১১৯। যাঁকে ভালবাসলে আল্লাহর ভালবাসা পাওয়া যায়।


১২০। যাঁর নিকট হতে আজও আল্লাহর অলীগণ দ্বীনি ফায়সালা ও দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকেন।


১২১। যাঁর উপর স্বয়ং আল্লাহ্পাক ও তাঁর ফেরেশতাগণ দরূদ পাঠ করেন এবং আল্লাহ্ মু’মিনদের ও দরূদ পাঠের নির্দেশ দেন।


১২২। ঈমানী কালেমায় যাঁর নাম আল্লাহর নামের সাথে লিখা। আর কুরআনে যাঁর পবিত্র নাম আল্লাহর পবিত্র নামের সাথে ১০০টির বেশী আয়াতে লিখা আছে।


১২৩। আযানে যাঁর নাম শুনলে আদম (عليه السلام) এর স্বস্থি ফিরে আসে। (পৃথিবীতে আগমনের পর আদম (عليه السلام) অস্থির হয়ে পড়েন। তখন আল্লাহ্ তা’য়ালা জিব্রাইল (عليه السلام) কে আদম (عليه السلام) এর নিকট গিয়ে আযান দিতে বলেন)।


১২৪। সৃষ্টির পর আরশের গায়ে কম্পন শুরু হলে, যাঁর নাম মোবারক লিখে দিলে আরশের কম্পন বন্ধ হয়ে যায়।


১২৫। যাঁর উপর ঈমান না আনলে মুসলমান হওয়া যায় না।


১২৬। যাঁকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, এমনকি নিজের জানের চাইতে বেশী ভাল না বাসলে মু’মিন হওয়া যায় না, ঈমান কামেল হয় না।


১২৭। যিনি মু’মিনের নিকট তাদের নিজেদের চাইতে ঘনিষ্ঠতর এবং যাঁর পতœীগণ মু’মিনদের মাতা।النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ (সূরা: আহযাব; আয়াত: ৬)


১২৮। যিনি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে কোন মু’মিন পুরুষ বা নারীর সেই বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকে না। (সূরা: আহযাব; আয়াত: ৩৬)


১২৯। وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ যাঁর আনুগত্য করলে সৎপথ পাওয়া যায়। (সূরা: নূর; আয়াত: ৫৪)


১৩০। যিনি আমাদের মধ্যে থাকার কারনে আল্লাহ্ (আমাদের অসংখ্য গুনাহ্ স্বত্বেও) আমাদিগকে শাস্তি দিচ্ছেন না (সমূলে ধ্বংস করছেন না)। (সূরা: আনফাল; আয়াত: ৩৩)


১৩১। যাঁর সহিত/যাঁর শানে কুফরী করলে আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করবেন না, এমনকি তিনি (ﷺ) প্রার্থনা করলেও না। (সূরা: তওবা; আয়াত: ৮০ ও ৮৪)


১৩২। عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ উম্মতের কষ্টে যিনি নিজেই কষ্ট পান এবং মু’মিনদের জন্য তিনি রাউফ ও রাহীম। (সূরা: তওবা; আয়াত: ১২৮)


১৩৩। যাঁকে আল্লাহর ৯৯টি সিফাতি নামের মধ্যে ৭০টি নাম দান করা হয়েছে। যেমন-রাউফ, রাহীম, করিম, আউয়াল, আখের, যাহের, বাতেন, নূর ইত্যাদি। (মাদারেজুন্নবুয়াত)


১৩৪। যাঁকে সম্মান করার জন্য বান্দাদিগকে আল্লাহ্ নিজেই শিখিয়েছেন। لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ (সূরা: ফাত্হ; আয়াত: ৯)


১৩৫। যাঁর সম্মুখে কোন বিষয়ে অগ্রনী হতে আল্লাহ্ বারন করেছেন।لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ  (সূরা: হুজুরাত; আয়াত: ১)


১৩৬। যাঁর কন্ঠস্বরের চাইতে নিজের কন্ঠস্বর নিচু রাখতে আল্লাহ্ কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এমন কি তাঁর কন্ঠস্বর হতে নিজের কন্ঠস্বর উচুঁ করলে নিজের অজ্ঞাতসারে সারাজীবনের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যাবে। أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ (সূরা: হুজুরাত; আয়াত: ২)


১৩৭। যাঁকে ঘরের বাহির হতে ডাকতে আল্লাহ্ নিষেধ করেছেন বরং তাঁর জন্য ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করাই হতো উত্তম (পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ নিজে রিসালাতের দরবারের আদব শিখাচ্ছেন)। (সূরা: হুজুরাত; আয়াত: ৪ ও ৫)


১৩৮। যাঁকে আল্লাহ্ “জামে কালাম” অর্থাৎ ‘ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত কালামের’ ক্ষমতা দিয়েছেন।


১৩৯। প্রত্যেক নবী তাঁদের স্বজাতির প্রতি প্রেরিত, কিন্তুু হুজুর (ﷺ) নিখিল বিশ্বের নবী।


১৪০। যাঁর উম্মতের জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে, যা পূর্বে হালাল ছিল না।


১৪১। যাঁর পবিত্র নামের তাসিরে এক মাসের দূরত্বে শত্রুর মনে ভয়-ভীতি সৃষ্টি হতো। (মিশকাত)


১৪২। যিনি সামনে, পিছনে, দিনে ও রাত্রে সমানভাবে দেখতেন। (বোখারী, বায়হাকী)


১৪৩। যিনি নিদ্রা অবস্থায় ও সব কিছু দেখতেন ও শুনতেন। (বোখারী)


১৪৪। নবীগণের মধ্যে একমাত্র তিনিই উম্মী (সৃষ্টির মূল) উপাধি লাভ করেন। (মাওয়াহিব)


১৪৫। যিনি ৬৫,০০০ মোজেযার অধিকারী, যখন অন্যান্য নবীগণ অনধিক নয়টির অধিকারী। (পয়গামে মোহাম্মদী)


১৪৬। যাঁর অধিকারে সমস্ত ধনভান্ডার ও ইলমে-গাইবের চাবি ন্যাস্ত হয়। (মাওয়াহিব)


১৪৭। সমস্ত নবীগণের সম্মিলিত উম্মতের চাইতে যাঁর উম্মতের সংখ্যা অধিক হবে। (সূরা কাউছার)


১৪৮। কুরআনে আল্লাহ্ সকল নবীগণকে নাম ধরে, কিন্তুু হজুর (ﷺ)কে তাঁর উপাধি ধরে সম্বোধন করেছেন।


১৪৯। সকল নবীগণ আল্লাহর প্রেমিক, কিন্তুু আল্লাহ্ হলেন তাঁর প্রেমিক। তিনি একাধারে খলিলুল্লাহ্ ও হাবীবুল্লাহ্ (প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদ)। (মাওয়াহিব)


১৫০। যাঁর জানাযা হয় বিনা ইমামে এবং চার তাকবির ব্যতিত, শুধু দরূদ ও সালামের মাধ্যমে। (মাওয়াহিব ও বেদায়া)


১৫১। যাঁর নাম আল্লাহর পবিত্র নাম মাহমুদ ও আহাদ নাম হতে যথাক্রমে মুহাম্মদ ও আহমদ রাখা হয়। (তাফসীরে রুহুল বয়ান)


১৫২। যাঁর রওজা মোবারক আরশ হতেও উত্তম। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, ফাতোয়া শামী)


১৫৩। যাঁর রওজা মোবারক প্রতি দিনে ও রাতে (৭০,০০০ + ৭০,০০০) ১,৪০,০০০ ফেরেশতা কিয়াম অবস্থায় দরূদ পাঠে রত, যা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। (মিশকাত)


১৫৪। যিনি সর্বপ্রথম হাশরের মাঠে ৭০,০০০ হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফ/কিয়ামসহ দরূদ পাঠকারী সর্বশেষ দল) সহকারে উপস্থিত হবেন।


১৫৫। শিশুকালে যিনি চাঁদের সাথে খেলা করতেন ও কথা বলতেন। (আব্বাস (رضي الله عنه))


১৫৬। যাঁর দরবারে জিব্রাইল (عليه السلام) ২৪,০০০ বার (২৩ বছরে আনুমানিক গড়ে প্রতিদিন ০৩ বার করে) আগমন করেছেন। (অন্যান্য নবীগণের নিকট সর্বমোট মাত্র ৫২১বার এসেছেন; যেমন হযরত মূসা (عليه السلام) ৪০০ বার, হযরত নূহ (عليه السلام) ৫০ বার, হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) ৪২ বার, হযরত আদম (عليه السلام) ১২ বার, হযরত ঈসা (عليه السلام) ১০ বার, হযরত ইয়াকুব (عليه السلام) ৪ বার এবং হযরত আইউব (عليه السلام) ৩ বার।) 


১৫৭। যাঁর পবিত্র হুজরা শরীফে প্রবেশের জন্য জিব্রাইল (عليه السلام) ও আযরাঈল (عليه السلام) এর মত ফেরেশতাগণ অনুমতি নিতেন।


১৫৮। যাঁকে দেখলে হককেই দেখা হয়।


১৫৯। যিনি নিজেই ঈমান আর আমরা মু’মিন।


১৬০। যাঁর কলেমা- “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আন্নি রাসূলাল্লাহ।”


১৬১। আর আমাদের কলেমা- “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ।”


---ঃ---


 


ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)


১। ঈদ অর্থ খুশী। আর ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর অর্থ হুজুর (ﷺ) এর জন্ম উপলক্ষে ঐ দিনকে খুশীর দিন মনে করে উদযাপন করা। 


২। নবীজি (ﷺ) ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার (২০ এপ্রিল, ৫৭০ খৃ:) এই পৃথিবীতে তাশরিফ আনেন।


৩। দীর্ঘকাল যাবৎ এই ঈদে মিলাদুন্নবী বিভিন্নভাবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিগত কয়েক দশক হতে, কুরআন-হাদীসে ইহার উল্ল্যেখ নেই, এই দোহাই দিয়ে কিছু সংখ্যক লোক ইহার উদযাপন সম্বন্ধে আপত্তি করে আসছে। আবার কেউ কেউ মিলাদুন্নবীর পরিবর্তে সিরাতুন্নবী বা দাওয়াতুন্নবী পালন করছে। কিন্তু মিলাদুন্নবী পালনকারীগণ সিরাতুন্নবী ও দাওয়াতুন্নবীকে অস্বীকার করে না।


নোটঃ ১) মিলাদুন্নবীর যদি কোন দলিল না থাকে, তবে সিরাতুন্নবী/দাওয়াতুন্নবী পালনের দলিল কোথায়?


২) মিলাদুন্নবীতে সিরাতুন্নবীও আছে এবং দাওয়াতুন্নবীও আছে। কিন্তু সিরাতুন্নবী/দাওয়াতুন্নবীতে মিলাদুন্নবী নাই। আর মিলাদুন্নবী অস্বীকার করে ঐ দিনে সিরাতুন্নবী পালন করা অবৈধ। যেমন কোরবানীর জন্য সকল হালাল প্রানীকে অস্বীকার করে শুধু ছাগল দ্বারা কোরবানী করা অবৈধ। 


{সিরাতুন্নবী শব্দটি আখলাকুন্নবী হওয়া অধিক যুক্তিসঙ্গত, কারণ সিরাতুন্নবী শব্দটির পাল্টা উত্তম শব্দ হচ্ছে আখলাকুন্নবী। সিরাত মানে ভাল-মন্দ মিশ্রিত জীবন চরিত্র, আর আখলাক হচ্ছে মন্দবিহীন সুন্দর জীবন চরিত্র।}


৪। আহলে সুন্নাত ওয়াল জমায়াতের প্রকৃত অনুসারীগন ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিনকে অত্যন্ত বরকতময় মনে করে। এই দিনটি উদযাপনে তারা সচেষ্ট থাকে। এই দিনের ইবাদত হলো- জন্ম বৃত্তান্তসহ হুজুর (ﷺ) এর উপর বিষধ আলোচনা, দরূদ-সালাম, মিলাদ-কিয়াম, যিকির-আজকার, রোজা ও অন্যান্য নফল ইবাদত।


ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল-কুরআন হতে


১। মহান রাব্বুল আ’লামিন আরশে সর্ব প্রথম মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করেন। ইহা ছিল আজ হতে ২২ লক্ষ বৎসর আগে যা “মিছাকে রিসালতে মুহাম্মদী (ﷺ)” নামে খ্যাত। দলিল- সূরা: ৩ (আলে-ইমরান); আয়াত ৮১- 


وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ


“স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ নবীদের অঙ্গিকার নিয়েছিলেন, তোমাদিগকে কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি অতঃপর তোমাদের কাছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবে তখন তোমরা তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।”


فَمَنْ تَوَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ


“ইহার পর যারা মুখ ফিরাবে তারাই ফাছেক/কাফের।” (সূরা আলে ইমরান: ৮২)


নোটঃ ১) ১,২৪,০০০ পয়গম্বরের মধ্যে আল্লাহ্ কারো জন্যই মিছাক (সাক্ষ্য)/মিলাদ অনুষ্ঠান করেননি, একমাত্র আমাদের নবীজি ব্যতিত।


২) এই অঙ্গিকার প্রদান পূর্বক নবীগণ নবী হলেন।


৩) আল্লাহ্ নিজেই এই অঙ্গিকারের সাক্ষী হলেন এবং অন্য সকল নবীকে সাক্ষী বানালেন।


৪) এই অঙ্গিকার গ্রহনের জন্য সকল নবীগণের রূহের জন্য মাহফিল সাজানো হয়েছিল।


৫) তাই বলা যায় সর্ব প্রথম ঈদে মিলাদুন্নবীর মাহফিল/ আলোচনা হয়েছিল রূহের জগতে। তাই ইহা পালন আল্লাহর সুন্নাত।


২। জন্মের ৪০০০ বৎসর পূর্বে হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) এর দোয়া (সূরা:২ (বাকারা); আয়াত: ১২৯)- 


رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ


“হে আমার প্রতিপালক! তাদের মধ্য হতে তাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ করিও যে তোমার আয়াত সমূহ তাদের নিকট তিলওয়াত করবে, তাদিগকে হেকমত শিক্ষা দিবে এবং তাদিগকে পবিত্র করবে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”


নোটঃ ইহা হুজুর (ﷺ) এর আগমন/জন্ম সংক্রান্ত দোয়া।


৩। জন্মের ৫৭০ বৎসর পূর্বে হযরত ঈসা (عليه السلام) এর তাবলীগ (সূরা: ৬১ (সাফ্ফ); আয়াত: ৬)- 


وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ


“স্মরণ কর, মরিয়ম তনয় ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোদাদের নিকট যেই তওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা।” হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমনের আলোচনা তো স্বয়ং ঈসা (عليه السلام) করেছেন, যা পবিত্র কোরআনেই বর্ণিত রয়েছে। 


৪। সূরা: ৯০ (বালাদ); আয়াত: ১-৩- لَا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ وَأَنْتَ حِلٌّ بِهَذَا الْبَلَدِ وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ “আমি শপথ করছি ঐ শহরের, আর তুমি এই শহরে তাশরিফ এনেছো, শপথ জন্মদাতার [ইব্রাহিম (عليه السلام)] ও যা সে জন্ম দিয়েছে [নবী (ﷺ)]।”


নোটঃ জন্মের বিষয় গুরুত্ব বহন না করলে আল্লাহ্ কখনো হুজুর (ﷺ) এর জন্মভূমি মক্কা শহরের শপথ করতেন না বা কসম খেতেন না।


৫। সূরা: ৯ (তওবা); আয়াত: ১২৮- لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ “অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে। তোমাদিগকে যা বিপন্ন করে উহা তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী। মু’মিনদের প্রতি সে দয়াদ্র ও পরম দয়ালু (রাউফুর রাহীম)।”


৬। সূরা: ৬২ (জুমু’আ); আয়াত: ২- هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ “তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; .................”।


৭। সূরা: ২১ (আম্বিয়া); আয়াত: ১০৭- وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ “আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।”


নোটঃ রাসূলের শুভাগমনের কথা তো তাঁর জন্মেরই আলোচনা। যা স্বয়ং মহান রাব্বুল আ’লামিন নিজেই করেছেন পবিত্র কোরআনে।


৮। সূরা: ৪ (নিসা); আয়াত: ৮৩-

 وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا “..... 

তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ (ফজল) ও দয়া (রহমত) না থাকত তবে তোমাদের অল্প সংখ্যক ব্যতিত সকলে শয়তানের অনুসরন করত।”


নোটঃ মূলত ফজল ও রহমত তো হলেন হুজুর (ﷺ)।


৯। সূরা: ২৮ (কাসাস); আয়াত: ৭৭- وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ “.... তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ্ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন ...।”


নোটঃ আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেন। আর তাঁর সর্বোত্তম অনুগ্রহ হলো আমাদের মাঝে হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমন।


১০। সূরা: ২ (বাকারা); আয়াত: ৪৭- يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ “হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার সেই নিয়ামত/অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর যদ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহিত করেছিলাম ......।”


নোটঃ অনুগ্রহ বা নিয়ামতের স্মরণ ও আলোচনা করা আল্লাহর হুকুম। হুজুর (ﷺ) এর বিলাদতের বা শুভাগমনের চাইতে বড় কোন নিয়ামতই নেই।


১১। সূরা: ১০ (ইউনূস); আয়াত: ৫৮- قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ “বল, উহা আল্লাহর ফজল (অনুগ্রহ) ও তাঁর রহমত (দয়া); সূতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক। উহারা যা পূঞ্জীভূত করে তা অপেক্ষা ইহা উত্তম।”


নোটঃ এই ফজল ও রহমতকে কেউ বলেছেন ইসলাম ও কুরআন, কেউ কুরআন ও হাদীস। কিন্তু অনেকের মতে উহা হুজুর (ﷺ) এবং জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন সংক্রান্ত আয়াত। ইহার মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ ও যথাযথভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের ইঙ্গিত রয়েছে।


১২। সূরা: ৩ (আলে-ইমরান); আয়াত: ১৬৪- لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ “আল্লাহ্ তা’য়ালা মু’মিনদের প্রতি বড়ই এহসান/অনুগ্রহ করেছেন যে তাদের কাছে তাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলওয়াত করে, তাদিগকে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, ........”


নোটঃ আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতরাজীর মধ্যে একমাত্র হুজুর (ﷺ) এর আগমনকে মু’মিনদের প্রতি এহসান করার কথা বলে খোটা দিয়েছেন। তিনি অন্য কোন নিয়ামতের খোটা দেননি। তাই এহসানের শোকর করার জন্যই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন।


১৩। সূরা: ২২ (হাজ্জ); আয়াত: ৩২- ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ “ইহাই আল্লাহর বিধান এবং কেহ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে ইহা তো তার হৃদয়ের তাকওয়া সৃষ্টির মাধ্যম।”


১৪। সূরা: ২ (বাকারা); আয়াত: ৩৯- وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ “যারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শন সমূহকে অস্বীকার করে তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।”


নোটঃ ১) উপরোক্ত দুই আয়াতের দ্বারা ইহা প্রমানিত যে, যারা আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করে তাদের তাকওয়া সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয়। আর যারা আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করে তারা হবে জাহান্নামী।


২) আল্লাহর সকল নিদর্শনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলেন হুজুর (ﷺ)। তাই তাঁর সম্মান করা আমাদের জন্য ফরজ এবং অস্বীকারের পরিনতি অগ্নিবাস।


১৫। সূরা: দুহা (৯৩); আয়াত: ১১- وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ “তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের (নিয়ামতের) কথা জানাইয়া দাও।”


১৬। সূরা: ইব্রাহিম (১৪); আয়াত: ৭- وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ “স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ঘোষনা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হইলে তোমাদিগকে অবশ্যই অধিক দিব আর অকৃতজ্ঞ হইলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।”


নোটঃ ১) উপরোক্ত দুই আয়াতের দ্বারা জানা গেল অনুগ্রহ/নিয়ামতের চর্চা করা এবং নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা শোকর করার জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ করেছেন। আর অকৃতজ্ঞ হলে কঠোর শাস্তির ঘোষনা দিয়েছেন।


২) আল্লাহর সকল নিয়ামতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমন। তাই তাঁর আগমনের চর্চা ও শোকর গুজারী আমাদের জন্য অপরিহার্য, অন্যথা কঠিন শাস্তি।


১৭। সূরা: ৫ (মায়িদা); আয়াত: ১১৪- قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِنْكَ “মরিয়ম তনয় ঈসা (عليه السلام) বলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য উর্ধ্বজগত হতে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরন করুন, ইহা হবে আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ সরূপ আর আপনার নিকট হতে নিদর্শন।”


নোটঃ জান্নাতি খাবার অবতরন যদি ঈদ সরূপ হয়, তা’হলে হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমন তো আমাদের জন্য সেরা ঈদ।


১৮। সূরা: ৫ (মায়িদা); আয়াত: ১৫- قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ “............ আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের নিকট একটি নূর [হুজুর (ﷺ)] ও স্পষ্ট কিতাব (কুরআন) এসেছে।” ইহাও হুজুর (ﷺ) এর আগমন বার্তাই বটে।


১৯। উপরোক্ত ১৮টি কুরআনের আয়াতের আলোকে বলা যায়, আল্লাহ্ জাল্লাশা’নূহু তাঁর হাবীব (ﷺ) কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে আমাদের উপর এহসান করেছেন, তাঁর আগমন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের ইশারা দিয়েছেন, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে তাঁকে সম্মানের আদেশ করেছেন, নিয়ামত হিসাবে শোকর গুজারের নির্দেশ দিয়েছেন, নিজে মিলাদ পালন করেছেন, অন্যান্য নবীগণকে তাঁর আগমনের তাবলীগ করার অঙ্গিকার নিয়েছেন, সকল আসমানী কিতাবে নবীজির জিকির, প্রশংসা, শান-মান বর্ণনা, আগমনী বার্তা সন্বিবেশিত করেছেন। কাজেই আমরা কি ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) অস্বীকার করি?


২০। যেমনিভাবে কুরআনের অনেক আয়াতে হুজুর (ﷺ) এর বেলাদতের বর্ণনা রয়েছে, একইভাবে কুরআনে অন্যান্য অনেক নবী-রাসূলগণের, বিশেষ করে মূসা (عليه السلام) ও ঈসা (عليه السلام) এর, জন্ম বৃত্তান্ত স্ববিস্তারে আলোচনা রয়েছে। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর আলোচনার অনুষ্ঠান ও উদযাপন আল্লাহর সুন্নাত হিসাবে প্রমানিত।


বিলাদতের কুদরতী আয়োজন


১। নবীজি (ﷺ) এর আগমনের ৪০০০ বৎসর পূর্বে আল্লাহ্ তাঁর খলিল ইব্রাহিম (عليه السلام) এর মাধ্যমে মক্কা/বাক্কা আবাদ করেন।


২। বেলাদতের ৭০০/১০০০ বৎসর পূর্বে ইয়েমেনের তুব্বা বাদশা কর্তৃক মদিনা/ইয়াসরিব আবাদ করেন।


নোটঃ তুব্বা বাদশা মক্কা আক্রমনের ইচ্ছা পোষন করলে রোগক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁর প্রধান ওলামার পরামর্শে মক্কা আক্রমনের ইচ্ছা ত্যাগ করলে সুস্থ্য হয়ে যান এবং মদিনায় গমন করেন। মদিনা নবীজির আগমনের বা হিজরতের স্থান হবে জানতে পেরে ০১ বৎসর তথায় অবস্থান করেন। এর মধ্যে হুজুর (ﷺ) আগমন না করায় তাঁর ৪০০০ আলেমের জন্য ৪০০০টি ঘর নির্মান করে তাদেরে তথায় রেখে এবং হুজুর (ﷺ) এর জন্য ০১টি আলাদা বাসস্থান নির্মান করে প্রধান ওলামার নিকট নবীজির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে (আগাম ঈমান এনে) তিনি মদিনা ত্যাগ করেন। জনৈক আবু লায়লা ঐ চিঠি পরবর্তীতে নবীজিকে হস্তান্তর করেন এবং নবীজি মদিনায় তাশরিফ আনলে তাঁর উঠনী তুব্বা বাদশা কর্তৃক নবীজির জন্য নির্মিত ঘরের সামনে বসে পড়ে। হুজুর (ﷺ) ঐ ঘরেই শুরুতে অবস্থান করেন (ঐ ঘরে তখন প্রধান ওলামার বংশধর হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) বসবাস করতেন)।


৩। যমযম কূপ সর্বমোট তিনবার জাহের হয়। প্রথমবার আদম (عليه السلام) এর জন্য, দ্বিতীয় বার হযরত ইসমাঈল (عليه السلام) এর জন্য এবং তৃতীয়বার নবী করিম (ﷺ) এর জন্য খাজা আবদুল মোত্তালিবের মাধ্যমে।


৪। যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলগণ নবীজির আগমনের তবলীগ করে গেছেন। তাই দুনিয়ার মানুষ তাঁর আগমনের প্রতিক্ষায় ছিলেন এবং তাদের মনে তাঁর আগমনের তৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছিল।


হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)


১। একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কিছু লোকের সামনে নবীজি (ﷺ) এর জন্মের ঘটনাবলী বর্ণনা ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিলেন। হঠাৎ হুজুর (ﷺ) তসরিফ আনলেন এবং আলোচনা শুনে বললেন, “আমার শাফায়েত তোমাদের জন্য হালাল হয়ে গেল।” (আন নে’মাতুল কুবরা)


২। একবার হুজুর (ﷺ) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) কে নিয়ে হযরত আমের আল আনসারী (رضي الله عنه) এর ঘরে তাশরিফ আনলেন। তখন আমের (رضي الله عنه) নিজ সন্তান ও প্রতিবেশীদের নিয়ে হুজুর (ﷺ) এর জন্মের ঘটনাবলী বর্ণনা করছিলেন। হুজুর (ﷺ) ইহা শুনে বললেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’য়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং সকল ফেরেস্তা তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। যারা তোমাদের মত কাজ (ভবিষ্যতেও) করবে তাদের ও তোমাদের মত সওয়াব ও প্রতিদান মিলবে।” (আন নে’মাতুল কুবরা)


৩। হুজুর (ﷺ) প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। যখন জিজ্ঞাসা করা হলো ইহার কারন কি? তখন জবাবে তিনি ফরমান যে, ‘সোমবার হলো আমার জন্ম দিন।’ (সহীহ্ মুসলীম, মেশকাত)


৪। হুজুর (ﷺ) নিজেই নিজের ২য় আক্বিকা করেছেন। জন্মের পর মক্কায় প্রথম আক্বিকা করেছিলেন তাঁর দাদা খাজা আবদুল মোত্তালিব। (খাছাইছুল কুবরা)


৫। হুজুর (ﷺ) নিজেই তাঁর নছবনামা ও জন্ম বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। এ’বিষয়ে অসংখ্য সহীহ হাদীস বিদ্যমান। যেমন (হাদীস)- আদম (عليه السلام) হইতে হুজুর (ﷺ) এর পিতা-মাতা পর্যন্ত কাউকেই ব্যভিচারের কলংক স্পর্শ করে নাই।


৬। হাদীস- শুক্রবার আমাদের জন্য ঈদের দিন। এই দিন আফজাল/উত্তম দিন। ইহার কারণ জানতে চাইলে হুজুর (ﷺ) তিনটি বিষয় উল্লেখ করেনঃ-


ক) হযরত আদম (عليه السلام) এর জন্ম/সৃষ্টি।


খ) হযরত আদম (عليه السلام) এর ওফাত।


গ) কিয়ামত শুক্রবারে সংগঠিত হবে।


নোটঃ আদম (عليه السلام) এর জন্ম দুনিয়াবাসীর জন্য আনন্দের। কারন তাঁর মাধ্যমেই তো আল্লাহ্ আমাদের বিস্তার ঘটিয়েছেন। তাঁর ওফাত তাঁর নিজের জন্য আনন্দের। কারন তিনি আল্লাহর নিকট পৌছে গেছেন। কিয়ামত আনন্দের এই জন্য যে ইহার পরবর্তী পর্যায়েই তো মু’মিনগন আল্লাহর দিদার লাভ করবেন। আদম (عليه السلام) এর জন্ম/আগমন যদি আনন্দের ও ঈদের দিন হতে পারে, তবে হুজুর (ﷺ) এর আগমন কেন ঈদের দিন হবে না?


৭। আবু লাহাবের মৃত্যুর ০১ বৎসর পর হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তাকে স্বপ্নে দেখে তার পরকালীন অবস্থা জানতে চান। উত্তরে আবু লাহাব জানায় যে, হুজুর (ﷺ) এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য সে তার দাসী সুয়াইবাকে ডান হাতের শাহাদাৎ আঙ্গুলীর ইশারায় আযাদ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে প্রতি সোমবার তার আযাব হালকা করে দেওয়া হয় এবং ডান হাতের শাহাদাৎ আঙ্গুলি দ্বারা মিষ্টি পানি পান করার সুযোগ হয়। (সহীহ্ বুখারী)


নোটঃ কাফেরদের সর্দারের জন্য যদি হুজুর (ﷺ) এর জন্মে আনন্দিত হওয়ার কারনে আল্লাহর অনুগ্রহ তথায় প্রতি সোমবার জাহান্নামের আযাব হালকা করা হয়, তা’হলে মু’মিনগন আনন্দিত হলে ও ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করলে অবশ্যই অশেষ অনুগ্রহ পাবেন।


৮। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সোমবার মরার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন, কারন ইহা ছিল হুজুর (ﷺ) এর ওফাত দিবস। বরকতের জন্য যদি ওফাত দিবস বিবেচিত হতে পারে, তবে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম দিবসে আনন্দ প্রকাশ কল্যানকর হবে না কেন?


৯। মিরাজের রজনীতে হুজুর (ﷺ) ঈসা (عليه السلام) এর জন্মস্থান বেতলেহামে ০২ রাকাত নফল নামাজ পড়েন। জন্ম/জন্মস্থান মর্যাদাশীল না হলে তিনি হয়ত তা করতেন না।


১০। হাদীস গ্রন্থ বোখারী, মুসলিম ও তিরমীজি অনুযায়ী নবীজি (ﷺ) ইয়ামুল মূসা, ইয়ামুল নূহ এবং ইয়ামুল গিলাফে কা’বা পালন করতেন এবং রোজা রাখতেন। যখন হুজুর (ﷺ) অন্যান্য নবীর বিশিষ্ট দিনের উৎসব করতেন, তখন এই উম্মত কি তাদের নিজের নবীর আগমন উদ্যাপন করবে না?


১১। উপরোক্ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ইমাম ইবনে হাজর আসকেলানীকে (যিনি ইমামুল মোহাদ্দেসীন) ঈদে মিলাদুন্নবী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ইহার পক্ষে রায় দেন এবং তিনি ইয়ামুল মূসা পালনকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের দলিল হিসাবে পেশ করেন। ইবনে হাজর আসকেলানী (رحمة الله) এর এই রায় ইমামুল মোফাস্সেরিন হযরত জালাল উদ্দিন সূয়তী (رحمة الله) তাঁর নিজস্ব কিতাবে বর্ণনা করেন। ইহার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:-


ক) ইহুদীরা আশুরার দিন রোজা রাখে। ইহা শ্রবনে নবীজি (ﷺ) ঐ দিবস (আশুরা) উপলক্ষে ০২টি রোজা রাখার নির্দেশ দেন।


খ) মূসা (عليه السلام) নীল নদ পার হওয়ার কারনে যদি ইহুদিরা এই দিবসটি পালন করতে পারে এবং জায়েজ হয়, তবে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন অবশ্যই জায়েজ এবং উত্তম কাজ।


১২। বৎসরে মুসলমানদের ঈদ সর্বমোট ৫৬টি। যথা- ৫২শুক্রবার, ১আরাফা, ১ফিতর এবং ১আযহা= ৫৫ ঈদ। এই ৫৫টি ঈদ মানতে বাতিল পন্থীদের আপত্তি নেই। আপত্তি শুধু ৫৬ ঈদের অন্যতম ঈদ-ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) মানতে ও পালনে।


১৩। কথিত আছে প্রতি সোমবার দুপুরের আগে নবীজি (ﷺ) এর জন্মস্থানের দোয়া আল্লাহ্পাক কবুল করে থাকেন।


১৪। হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত ঈসা (عليه السلام) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণ হুজুর (ﷺ) এর জন্মের আলোচনা করেছেন অর্থাৎ মিলাদ মাহফিল করেছেন। এমন কি ঈসা (عليه السلام) নবীজির আগমন সংক্রান্ত বর্ণনা করার সময় কিয়াম করতেন। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন নবীগণের সুন্নাত।



বিশিষ্ট ওলামাগণ হতে প্রাপ্ত দলিল


১। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) দিনে কা’বার দরজা খুলে দেওয়া হতো এবং সৈয়দগণ খাবার বিতরন করতেন (ইহা অষ্টম শতাব্দির লেখক ও পর্যটক ইবনে বতুতার কিতাবে পাওয়া যায়)।


২। হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) বলেন- একবার মক্কা মোয়াজ্জেমায় দেখলাম হুজুর (ﷺ) এর জন্মের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হচ্ছে এবং নবীজির উপর দরূদ-সালাম পেশ করা হচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম মাহফিলের উপর নূরের তাজাল্লি বর্ষিত হচ্ছে। এ ও দেখলাম ফেরেস্তাদের নূরের সাথে রহমতের নূর মিশ্রিত হচ্ছে। (ফায়জুল হারামাইন)


নোটঃ উপরোক্ত দুইটি বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল ওহাবী ফেৎনা শুরুর আগে মক্কা-মদিনায় ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপিত হতো এবং এই উপলক্ষে মিছিল, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা, উত্তম খাবার বিতরন উৎসব আকারে পালিত হতো।


৩। একবার হযরত আবদুর রহিম মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উৎযাপনের জন্য অর্থ ছিল না। তিনি শুধু ভূনা চানা বিতরন করে এই দিনটি উৎযাপন করেন। রাত্রে নবীজি (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখেন এবং তিনি ফরমান, আবদুর রহিম তোমার চানা আমার দরবারে পৌছে গেছে। (আদ র্দুরুছ ছামীন ফি মুবাশ্শারাতি নাবিয়ীল আমিন)


৪। কাসেম নানূতবী, আশরাফ আলী থানভী, রশীদ আহমদ গঙ্গোঁহী- ওনাদের পীর হযরত এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (رحمة الله) ঈদে মিলাদুন্নবীকে অত্যন্ত বরকতময় জানতেন এবং উৎযাপন করতেন। তাঁর লিখা কিতাব হাফতে মাসয়ালা (পৃ:১৫) এর বর্ণনা নি¤েœ দেয়া হলোঃ


‘এ ফকিরের নিয়ম হলো আমি মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে থাকি বরং মিলাদ অনুষ্ঠানকে বরকত লাভের উসিলা মনে করে প্রত্যেক বৎসরই মিলাদের মজলিস করে থাকি এবং কিয়ামের সময় অশেষ আনন্দ ও আরাম উপভোগ করি।’


৫। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি হযরত আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর মতে, শবে ক্বদরের রাত্রির চাইতে উত্তম। কারণঃ-


ক) মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রি স্বয়ং মাহবুবে খোদা (ﷺ) এর আগমনে রাত্রি। আর শবে ক্বদর তো তাঁকেই দান করা হয়েছে।


খ) ক্বদরের রাত্র ফেরেশতাগনের অবতীর্নের কারনে ফজিলত মন্ডীত। আর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্র স্বয়ং রাসূলে খোদা (ﷺ) এর আগমন দ্বারা মহিমান্বিত।


গ) ক্বদরের রাত্রে শুধু এই উম্মতের জন্য অনুগ্রহ, ইহসান ও রহমত রয়েছে। আর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্রে সমগ্র সৃষ্টির জন্য অনুগ্রহ, ইহসান ও রহমত রয়েছে।


ঘ) ক্বদরে কুরআন নাজিল হয়। আর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত্র স্বয়ং সাহেবে কুরআন তাশরিফ আনেন। (মাহারেজুন্নবুয়াত)


৬। ইমাম শাফেয়ী (র:) মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন সম্পর্কে বলেন: ‘যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্য কিছু ঈমানদার ভাইদের একত্রিত করে এবং মিলাদের জন্য কিছু তাবারকের ব্যবস্থা করে, আল্লাহ তাঁকে সিদ্দিকীন, শোহাদা-সালেহীনদের সাথে জান্নাতুন নাঈমে থাকার ব্যবস্থা করবেন।’


৭। আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (র:) বলেন: ‘আমাদের জন্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করে শোকরিয়া আদায় করা মুস্তাহাব। (তাফসীরে রুহুল বয়ান- ৯/৫৬-৫৭ পৃষ্ঠা)


৮। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:) ইমাম শামছুদ্দীন সাখাবী (র:) এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন: ‘যারা কয়েক বৎসর ব্যাপী মক্কা শরীফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তম্মধ্যস্থ বরকতের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন আমি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। (আল মাওরুদুর রাবী ফি মাওলিদীন নববী, ৮৫ পৃষ্ঠা)


৯। বিখ্যাত সূফী ও ফকিহ সাইয়্যেদ আহমদ আবেদীন (رحمة الله) ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله) এর ‘আলা মাওলুদুল কবির’ কিতাবের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর বিরচিত ‘নে‘মাতুল কুবরা’ গ্রন্থে লেখেন, যারা আল্লাহর হাবিবের প্রতি প্রকৃত মহব্বত রাখেন তাদের উচিত এই রবিউল আওয়াল মাসের আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের অনুষ্ঠান করা এবং সেই মাহফিলে রাসূলাল্লাহ (ﷺ)এর জন্ম সম্বন্ধীয় সহীহ হাদিসসমূহ পাঠ করা। আশা করা যায় এমন লোকেরা আল্লাহ পাকের নেক বান্দাগণের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


১০। আল্লামা ইবনুল জাওজী (رحمة الله) বলেন, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠান দ্বারা যে সব উপকার লাভ হয়ে থাকে তন্মধ্যে ইহা অন্যতম ও পরীক্ষিত যে, সে বৎসর বিপদাপদ হতে নিরাপদ থাকা যায় এবং নিজের ন্যায় সঙ্গত আকাঙ্খা পূর্ন হয়ে থাকে।’


১১। আল্লামা ইবনুল জাযরী (رحمة الله) বলেন, ‘এ মিলাদুন্নবী (ﷺ)এর অনুষ্ঠান দ্বারা শয়তানের পিঠে কষাঘাত পড়ে। আর ঈমানদারগণের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়।’ (সিরতুশ সামিয়া)


১২। ইমাম নববীর ওস্তাদ ইমাম আবু শামা (رحمة الله) বলেন, ‘আমাদের জামানায় আরবাল শহরে হুজুর (ﷺ) পবিত্র বেলাদতের দিন যে সব দান-খয়রাত, সৌন্দর্য এবং আনন্দ প্রকাশের জন্য করা হয়, তা বিদআতে হাসানারই অন্তর্ভুক্ত। কেননা এর মাধ্যমে ফকীরদের প্রতি এহসান করা ছাড়াও আরো রয়েছে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহাব্বত, মর্যাদা এবং তা‘জিম করার বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তা‘য়ালা রহমাতুল্লিল আলামিন রূপে যে নেয়ামত দান করেছেন, তজ্জন্য শোকরিয়া প্রকাশ করার বিষয় নিহিত রয়েছে।’


১৩। ইমাম কুস্তুলানী (رحمة الله) বলেন, ‘রবিউল আওয়াল যেহেতু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতের মাস। সেহেতু অত্র মাসে তামাম মুসলমান সবসময় মিলাদ শরীফের খুশিতে মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। তারা রাতে দান-সদকা করে থাকে, আর সৎ আমল সম্পাদন করে থাকে। বিশেষত, এসব মাহফিলে বরকত যে পাওয়া যায়, তা পরীক্ষিত; এ মাহফিলের জন্য ঐ বছর নিরাপদে অতিবাহিত হবে। আর স্বীয় উদ্দেশ্য ও হাজত পূর্ণ হওয়ার দ্রুত সুসংবাদ লাভ করবে। 


১৪। ইমাম শামছুদ্দীন সাখাবী (র:) বলেন, বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে নবী করীম (র:) এর আগমনের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দ অনুষ্ঠান করে থাকে। এ মাসের রাত্রসমূহে প্রাণ খুলে সদকা করা হয়, আনন্দ প্রকাশ করা হয়, বেশি বেশি নেক আমল করা হয় এবং হুজুর (رحمة الله) এর আগমনের ঘটনাবলি পড়ে পড়ে আনুগত্য প্রকাশ করা হয়। ফলে তাদের উপর রাশি রাশি বরকত থেকে বিপুল পরিমাণ করুণা বর্ষিত হয়।’


১৫। হাফেজ আবু জুরআ ইরাকী (رحمة الله) বলেন, ‘মাহফিলে মিলাদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল, এটি কি মুস্তাহাব না কি মাকরুহ? এ সম্বন্ধে কোন কিছু ওয়ারেদ হয়েছে কি না কিংবা যাকে এক্তেদা করা যায়, এমন কেউ এটা করেছেন কিনা? তিনি বলেন, সবসময় আহার করানো মুস্তাহাব। তাহলে খাওয়ানোর আনন্দটা যদি এ সম্মানিত মাসে নূরে নবূয়তের হুজুর (ﷺ) এর সাথে যুক্ত হয়, তাহলে এর মর্যাদা কিরূপ হবে? আমরা জানি না এটি সলফে সালেহীন করেছেন কি না, কিন্তু পূর্বযুগে না হওয়াতে তা মাকরুহ হওয়া আবশ্যক নয়। কেননা এমন অনেক বিদআত আছে, যা সলফে সালেহীন কৃত না হওয়া সত্ত্বেও মুস্তাহাব এমনকি ওয়াজিব বটে।’


১৬। ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন, আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকির-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন :সদকা করা, জিকির করা, দরূদ পড়া ও রাসুলে পাক (ﷺ) এর উপর সালাম পেশ করা।


১৭। হযরত ইসমাইল হাক্কী (رحمة الله) বলেন, রাসুলে করীম (ﷺ)এর মিলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করাও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি দিক, যদি তাতে গর্হিত কোন কাজ না হয়। (রুহুল বয়ান ৭/৬৬১)


১৮। শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এক কিতাবে বলেন, আমি মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানে দুরূদ শরীফ এবং দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করে থাকি। (আখরারুল আখয়ার, পৃষ্ঠা-৬২৪)


১৯। ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (رحمة الله) ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মধুর কন্ঠে কুরআন পাকের তেলাওয়াত ও নবী পাক (ﷺ) এর শানে ক্বাসিদা, নাত, জীবন বৃত্তান্ত পাঠে ক্ষতি কি? অর্থাৎ- কোন ক্ষতি নেই। (মুজাদ্দিদে আলফে সানি: মাকতুবাত শরীফ)


২০। মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, ‘সব দেশের ওলামা-মাশায়েখ মাহফিলে মিলাদে মুস্তফা (ﷺ) ও উহার সমাবেশকে এতই তাজিম করেন যে, কেহই অংশ গ্রহন করতে অস্বীকার করেন না। এতে শরীক হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই মোবারক মাহফিলের বরকত হাসীল করা।’ (আনোয়ারে ছাতেয়া, পৃষ্ঠা-১৪৪)


২১। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উৎযাপন শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে হয়ে আসছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্ব প্রথম ইহা উৎযাপন করেন উত্তর ইরাকের ইরবিলের বাদশা আবুল মোজাফ্ফর (رحمة الله) (মৃত্যু-৬০৪ হিঃ) ৬ষ্ঠ শতক হিজরীর শেষের দিকে। (তাফছিরে রুহুল বয়ান)


২২। এই উপমহাদেশেও ইংরেজ, পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এই দিনটি পালিত হচ্ছে এবং এই দিনে সরকারী ছুটি থাকে।


নোট: উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন বুজুর্গানে দ্বীনগণের সুন্নাত হিসাবে প্রমাণিত হলো।



মিলাদ/বিলাদত


১। আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টির পর নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) আদম (عليه السلام) এর পৃষ্ঠ দেশে স্থাপন করা হয়।


২। পরবর্তীতে আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতে উহা পূনঃ স্থাপন করা হয়।


৩। বংশপরাম্পরায় এই পবিত্র নূর পবিত্র ঔরস থেকে পবিত্র রেহেমে স্থানান্তরিত হতে হতে খাজা আবদুল্লাহর ঔরসেও মা আমেনা (عليه السلام) এর গর্ভে স্থানান্তরিত হয়।


৪। এই শানদার নবী যেই দিন মাতৃগর্ভে তাশরিফ আনেন (যাকে লাইলাতুল রাঘায়েবের রজনী বলা হয়)- ঐ দিন জলে স্থলে সকল প্রাণীকে এই পয়গাম পৌছে দেওয়া হয়। প্রাণীকূল ইহাতে আনন্দ প্রকাশ করে, তাদের জবান খুলে যায় এবং একে অপরকে মোবারকবাদ জানায়। আর কুরাইশদের জন্তুরা বলে উঠল- “কা’বা শরীফের মালিকের শপথ! মুহাম্মদ (ﷺ) আজ স্বীয় মাতৃগর্ভে শুভাগমন করেছেন।”


৫। ঐ দিন বেহেস্তের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং গায়েবী আহবানকারী আসমান ও জমিনে তাঁর (ﷺ) আগমনের সুসংবাদ ঘোষণা করে দেয়।


৬। প্রতি মাসে একজন নবী এসে স্বপ্নের মাধ্যমে মা আমেনা (عليه السلام) কে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং বলেছেন জন্মের পর নাম রেখো মুহাম্মদ।’ তা’ছাড়া নবীজি (ﷺ)কেও সালাম পেশ করেছেন। তাঁদের আগমনঃ-


১) প্রথম মাসে- হযরত আদম (عليه السلام)


২) ২য় মাসে- হযরত শীশ (عليه السلام)


৩) ৩য় মাসে- হযরত নূহ (عليه السلام)


৪) ৪র্থ মাসে- হযরত ইদ্রিস (عليه السلام)


৫) ৫ম মাসে- হযরত হুদ (عليه السلام)


৬) ৬ষ্ঠ মাসে- হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام)


৭) ৭ম মাসে- হযরত ঈসমাইল (عليه السلام)


৮) ৮ম মাসে- হযরত মূসা (عليه السلام)


৯) ৯ম মাসে- হযরত ঈসা (عليه السلام)


৭। সপ্তম মাসে পারস্য সম্রাট কিসরার রাজ প্রাসাদ কেঁপে উঠে এবং ১৪টি চূড়া ভেঙ্গেঁ কংকর খসে পড়ে যা অদ্যাবধি মেরামত সম্ভব হয়নি।


৮। অষ্টম মাসে পারস্যের হাজার বছরের পুরানা অগ্নিকুন্ড-শিখা অনির্বান নিভে যায় এবং তাদের জলাশয় শুকিয়ে যায়।


৯। নবম মাসে কিসরার রাজ মুকুট মাটিতে পড়ে যায়।


১০। মা আমেনা গর্ভধারন অবস্থায় অন্যান্য গর্ভধারীনিদের মত হন নাই। অর্থাৎ কোন ওজন অনুভব করেননি এবং কোন ব্যাথাও হয়নি। কারন গর্ভে তো নূরের নবী (ﷺ)।


১১। গর্ভাবস্থায় মা আমেনা (عليه السلام) হাঁটলে পায়ের নিচের পাথর মোমের মত হয়ে যেত।


১২। তিনি কুয়ায় পানি আনতে গেলে পানি কুয়ার কানায় কানায় ভরে উঠত।


১৩। জন্মের বছর বেশী বেশী ফুল, ফল ও ফসল হয় (যেন মানুষের অভাব-অনটন না থাকে এবং সবাই সুখী থাকে)।


১৪। ঐ বছর আরবের প্রত্যেক মাতা পুত্র সন্তান জন্ম দেন (কন্যা সন্তান হলে মেরে ফেলার মত অনাচার থেকে ঐ বছরকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে)।


১৫। গর্ভাবস্থায় মা আমেনা একটি নূর দেখেছিলেন-ইহাতে তিনি শ্যাম দেশ পর্যন্ত দেখতে পান। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আরেকবার নূর প্রকাশিত হয়- যা সমগ্র পূর্ব-পশ্চিম আলোকিত করে। তাইতো হুজুর (ﷺ) ফরমান, “আমি আমার মায়ের দেখা সেই নূর।” (খাসায়েসুল কুবরা)



বিলাদতের রজনী ও শৈশব কাল


১। আম্মাজান হযরত আমেনা (عليه السلام) অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় ছিলেন। তিনি ভয়ে আক্রান্ত ছিলেন, এমন কি ঘরে প্রদীপের তৈল ও ছিল না।


২। আম্মাজানের অসহায়ত্বের কথা জিব্রাইল (عليه السلام) মহান রাব্বুল আ’লামিনের দরবারে পেশ করলে, দয়াময় প্রভূ মা হাওয়া, মা আসিয়া, মা হাজেরা ও মা মরিয়ম (عليه السلام) কে নিজের পরিচয় গোপন করে ধাত্রী হিসাবে প্রেরন করেন (আবদে মুনাফের কন্যাদের মত দেখতে)।


৩। জিব্রাইল (عليه السلام) মা আমেনা (عليه السلام) কে দুধের চাইতে সাদা এবং মধুর চাইতে মিষ্টি শরবত পান করান।


৪। ধূসর বরন কুদরতী পাখীর পালকের পরশে আম্মাজানের ভয়-ভীতি ও ব্যথা-বেদনা দূরিভূত হয়ে যায়।


৫। জিব্রাইল (عليه السلام) আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে তাশরিফ ও শুভাগমনের জন্য আহবান করেন।


৬। তিনি (ﷺ) খাতনাকৃত ও নাভীকাটা অবস্থায়, চোখে সুরমা, গায়ে জান্নাতি পোষাক পরিহিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়ে-সেজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং আঙ্গুল উঁচিয়ে উম্মতের মাগফেরাত কামনা করেন।


৭। জন্মে একটি নূর প্রকাশ পায় যদ্বারা প্রাচ্য ও প্রাচ্যাত্য আলোকিত হয় এবং শ্যাম দেশের বালাখানা ও ইয়েমেনের উটের গর্দান দেখা যায়।


৮। জন্মে ০৩টি ঝান্ডা উত্তোলন করা হয়-প্রাচ্যে, প্রাচ্যাত্যে ও কা’বার উপর।


৯। ফেরেশতাগণ দলে দলে এসে সালাম পেশ করেন।


১০। ৭০,০০০ হুর তাওয়াফ করেন।


১১। তাঁকে জল-স্থল, আসমান-জমিন সবকিছু দেখানো ও পরিচিত করানো হয়।


১২। “কা’বা শরীফ” নবী এ- দু’জাহানের আগমন সংবাদ দেয় এবং মা আমেনা (عليه السلام) এর ঘরের দিকে সেজদাবনত হয়ে ঘোষনা দেয়- “মা আমেনা (عليه السلام) হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর জন্ম দিলেন”।


১৩। কা’বার মুর্তি সব মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে।


১৪। কা’বার উপর নূরের তাজাল্লী বর্ষিত হয়। তারকারাজী জমিনের কাছাকাছি চলে আসে এবং মনে হচ্ছিল যেন জমিনের উপর পতিত হবে। ইহা ছিল কুদরতি আলোক সজ্জা- যার জন্য মু’মিনরাও এই দিনে আলোক সজ্জা করে।


১৫। হযরত ওসমান বিন আবিল আস-সাকাফী (رضي الله عنه) এর আম্মা হযরত ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ সাকাফি (رضي الله عنه) বলেন- যখন হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমন হয়, তখন আমি কা’বার পাশে ছিলাম এবং দেখলাম যে কা’বা শরীফ নূরে আলোকিত হয়ে গেছে এবং নক্ষত্রসমূহ ভূ-পৃষ্ঠের এত কাছাকাছি এসে গেছে যেন আমার মাথার উপর পড়বে।


১৬। ইহুদী পন্ডিত বলতে লাগলো- ‘আজ রাত্রে আহমদ-ই-মুস্তফা (ﷺ) নক্ষত্র উদিত হয়েছে এবং এই রাত্রে তিনি জন্মগ্রহন করেছেন।’ (হযরত হাসান বিন সাব্বিত (رضي الله عنه) ইহার সাক্ষ্য দেন, তখন যার বয়স ছিল ৮ বৎসর)


১৭। ঐ ইহুদী সকালে হুজুর (ﷺ) কে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে- 'হে বনি ইসরাঈল! নবুয়ত তোমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে’। এই বলে সে বেহুশ হয়ে পড়ে যায়।


১৮। জন্মের সময় হুজুর (ﷺ) এর দাদা খাজা আবদুল মোতালেব কা’বার প্রাচীর থেকে একটি ধ্বনি শুনতে পান- “মুস্তফা জন্মগ্রহন করেছেন।”


১৯। হুজুর (ﷺ) এর শুভাগমনের কারনে একদিকে যেমন আনন্দের বন্যা, অন্যদিকে শয়তান “আবু কুবাইস পাহাড়ে” গিয়ে দুঃখে কাঁদতে লাগলো। যেমনি আজ নবীদ্রোহী ও শয়তানের দোসররা ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের কথা শুনলে কাঁদে।


২০। জন্মের ০৬ মাস পূর্বে পিতা খাজা আবদুল্লাহ্ ইন্তেকাল করেন এবং ০৬ বৎসর বয়সে মা আমেনা (عليه السلام)।


২১। তিনি কোন স্কুলে যাননি। স্বয়ং আল্লাহ্ ওনার শিক্ষক। তাইতো তিনি উম্মী নবী (ﷺ)।


২২। হুজুর (ﷺ) এর দুধ মা হালিমা (رضي الله عنه)।


২৩। তিনি তাঁর দুধ মার ডান স্তন হতে দুধ পান করতেন এবং বাম স্তন হতে তাঁর দুধ ভাই আবদুল্লাহ। ইনসাফ!


২৪। “রৌদ্র আমার কোরাইশ ভাইকে স্পর্শ করে না। মেঘখন্ড ছায়া দেয়।”-দুধ বোন সায়মা।


২৫। মক্কায় তিনি মা আমেনা (عليه السلام) ও সুয়াইবার দুধ ১৭দিন এবং মা হালিমার দুধ ২৩ মাস ১৩ দিন = ২ বৎসর তিনি বুকের দুধ পান করেন। পরবর্তীতে কুরআনে শিশু অবস্থায় মায়ের দুধ ০২ বৎসরের জন্য জায়েযের নির্দেশ আসে।


২৬। আল্লাহর ফরমানঃ-


ক) তোমরা আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর।


খ) যদি তোমরা আমার নিয়ামতের না শোকর কর, তা হলে অবশ্যই আমার আযাব কঠিন।


গ) আমি আমার হাবীবকে রহমাতুল্লিল আ’লামিন অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।


নোটঃ ১) রাহমাতুল্লিল আল-আমিন অর্থাৎ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের জন্য রহমত। আমাদের নবীজি (ﷺ) এর চাইতে বড় কোন নিয়ামত ও রহমত আমাদের জন্য নাই।


২) আর নিয়ামতের শোকর করার জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ করেছেন এবং না করলে আযাবের ঘোষনা দিয়েছেন।


৩) তাই আমাদের উচিত ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, বরকত হাসিল করা এবং আযাব-গজব হতে নিজেদের বাঁচানো।


ঘ) তোমরা আমার নিদর্শনের সম্মান কর, তাতে তাকওয়া সৃষ্টি হবে।


ঙ) তোমরা যদি আমার নিদর্শনের সম্মান না কর, তবে পরিনতি হবে অগ্নিবাস।


নোটঃ ১) আল্লাহর সকল নিদর্শনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলেন হুজুর (ﷺ)।


২) তাই হুজুর (ﷺ) কে সম্মান না করলে এবং শুভাগমন উদযাপন না করলে পরিনতি হবে ভয়াবহ।



মিলাদুন্নবী না সিরাতুন্নবী-তার প্রমাণ


১। আল্লাহ্ ছিলেন গুপ্ত খাজিনা। আল্লাহ্ চাহিলেন আত্ম-প্রকাশ ও আপন কুদরতের বিকাশ। তাই তিনি নিজের নূর হতে সৃষ্টি করলেন নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) এবং সেই নূর হতেই সকল সৃষ্টি। (তাফছিরে কবীর)


২। আদম (عليه السلام) এর সৃষ্টির ১৪০০০ বৎসর পূর্ব হতেই তিনি প্রভূর সমীপে নূর হিসাবে বিদ্যমান ছিলেন (দুনিয়ার হিসাবে যা ৫১১ কোটি বৎসর-আসমানের ০১দিন দুনিয়ার ১০০০ বৎসরের সমান)। (তাফছিরে রুহুল বয়ান)


৩। জিব্রাইল (عليه السلام) কে সৃষ্টির পর তিনি (জিব্রাইল) আল্লাহর নূরের চতুর্থ পর্দায় ৭০,০০০ বৎসর পরপর ৭২,০০০ বার নবী নূর উদিত হতে দেখেছেন (৫০৪ কেটি বৎসর)। (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৪৩) 


৪। আদম (عليه السلام) যখন মাটি ও পানির মধ্যে তখনও তিনি নবী ছিলেন। (কাশফুল খাফা)


৫। আদম (عليه السلام) যখন রূহ ও দেহের মধ্যবর্তী তখনও তিনি নবী ছিলেন। (তিরমিজি শরীফ)


৬। আদম (عليه السلام) সর্ব প্রথম মাথা উত্তোলন করে বেহেশতের দ্বারে যেই কালেমা দেখতে পান উহাতে তখনও তাঁর নাম মোবারক রাসূল হিসাবেই ছিল। (হাকেম: মুস্তাদরাক)


৭। প্রত্যেক নবীই জন্মে নবী। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) সৃষ্টিতেই নবী। অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদীর সৃষ্টি হতেই তিনি নবী।


৮। নবীগণ যে ৪০ বৎসর বয়সে নবুয়ত লাভ করে নবী হন- এ’কথা ঠিক নয়। উদাহরন- قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا ‘(শিশু অবস্থায়) সে (ঈসা (عليه السلام) বলিল, আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন,’- সূরা: ১৯ (মারইয়াম); আয়াত: ৩০)।


৯। রূহের জগতে “মিসাকে নবুয়ত” উপলক্ষে একটি খাস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শুধু নবীগণের রূহ উপস্থিত ছিল। আর ইহা হয় ২২ লক্ষ বৎসর পূর্বে।


১০। শ্যাম দেশের বহিরা/পাদ্রী বাল্যকালে হুজুর (ﷺ)কে দেখে তাঁর নি¤েœাক্ত বৈশিষ্টের কথা বর্ননা করেন:-


ক) তিনি (ﷺ) নবীউ আখেরীজ্জামান।


খ) রাসূলে রাব্বিল আ’লামিন।


গ) রহমাতুল্লিল আ’লামিন।


মক্কার বণিকরা এর প্রমাণ জানতে চাইলে পাদ্রী বলেন যে, গাছ তাঁকে সেজদা করে, মেঘ তাঁকে ছায়া দেয় ও তাঁর আগমনে গীর্জার সামনের শুকনা বৃক্ষ পত্রে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। (তখন হুজুর (ﷺ) এর বয়স ছিল মাত্র ১২ বৎসর।)


১১। মা আমেনা (عليه السلام) গর্ভাবস্থায় ০৯ মাসে নয় জন নবীকে স্বপ্নে দেখেন-যাঁরা “সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের” আগমন বার্তা পৌঁছে দেন। হুজুর (ﷺ) ৪০ বৎসর বয়সে নবী হলে জন্মে “সর্বশ্রেষ্ঠ মানব” হন কেমন করে? নবী না হলে তো নবুয়তের পূর্বে অন্যান্য নবীগণের উপর মর্যাদা দেওয়া যায় না।


১২। তাই আমরা ২৩ বৎসরের জীবন ও সিরাতের মধ্যে সীমিত না করে নবীজি (ﷺ) এর জন্মের পূর্ব হতে জন্মের পর অর্থাৎ সমগ্র জীবনের উপরই আলোচনা করি এবং গুরুত্ব দেই। তাই আমরা সিরাতুন্নবী বা দাওয়াতুন্নবী নয় মিলাদুন্নবীতেই বিশ্বাস করি এবং যথাযথভাবে উদযাপন করি।


১৩। সিরাতুন্নবী {মূলত শব্দটি হওয়া উচিত আখলাকুন্নবী} পালনকারীরাও সওয়াব পাবে, কিন্তু মিলাদুন্নবী পালনকারীদের বাড়তি পাওনা হলো হুজুর (ﷺ)এর মহব্বত। কিন্তু মিলাদুন্নবী অস্বীকার করা বদনসিবী।


১৪। আমরা হুজুর (ﷺ)এর ওফাত দিবস পালন করি না। কারণ আল্লাহ্ যখন তাঁর কোন নবীর উম্মতের উপর খাস রহমত করতে চান, তখন তাদের নবীকে বেছাল দান করে তাদেরকে শাফায়াতের ছামান দান করেন। আর যদি কোন জাতির ধ্বংস কামনা করেন, তখন ঐ নবীর জীবদ্দশায়ই তাদেরে আযাবে নিপতিত করে হালাক করে দেন এবং ঐ নবীকে চোখের শীতলতা দান করেন। তাই হুজুর (ﷺ) এর ওফাত সম্বন্ধীয় মাহফিল উচিত নয়।


১৫। হাশরের মাঠে তিনি (ﷺ) শাফায়াতে কোবরার অধিকারী হবেন, তাঁর হাতে থাকবে হামদের পতাকা এবং তিনি মাকামে মাহমুদে বসে উম্মত তরাবেন (সুপারিশ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা বেহেশত দান করবেন, আল্লাহর ইচ্ছায়)। (মেশকাত শরীফ)


১৬। এই নবীকে পাওয়ার আশায় শতশত আম্বিয়া মক্কা নগরীতে এসে জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেছেন যাদের মাজার হাজরে আসওয়াদ ও যমযমের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মতে এই সংখ্যা-৩০০।


১৭। হাশরের মাঠে সকল নবীগণের অনুসারীদের কাতার হবে ২০টি এবং আমাদের নবীজি (ﷺ) এর অনুসারীদের হবে ৮০টি।


১৮। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন হলোঃ


ক) আল্লাহর সুন্নাত।


খ) নবীগণের সুন্নাত।


গ) আমাদের নবী (ﷺ) এর সুন্নাত (আক্বীকা ও রোজা)।


ঘ) সাহাবাগণের সুন্নাত।


ঙ) বুজুর্গানে দ্বীনগণের সুন্নাত।


চ) কেয়াস দ্বারাও প্রমানিত (শুক্রবার উত্তমদিন, কেননা এই দিনে আদম (عليه السلام) জন্ম গ্রহন করেছেন।)


১৯। যেই নবীর উসিলায় আদম (عليه السلام) মুক্তি পান, যেই নবীর নামের বরকতে আরশের কম্পন বন্ধ হয়ে যায়, যেই নবীকে কবরে না চিনলে জান্নাত পাওয়া যাবে না, যেই নবীর উম্মত হওয়ার জন্য ঈসা (عليه السلام) কাঁদতেন-সেই নবীর শানে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকে যেন আমরা গনিমত মনে করি।



কিছু আপত্তি ও তার খন্ডন


আপত্তি নং ১ঃ- একজন বাদশা কর্তৃক প্রবর্তিত ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন নাজায়েয নয় কি? (এই বাদশা ছিলেন উত্তর ইরাকের ইরবিলের বাদশা মুজাফ্ফর বিন কাওকাবারী, যিনি ছিলেন সালাউদ্দিন আইয়ূবী (رحمة الله) এর ভগ্নিপতি এবং অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ও পরহেজগার ব্যক্তি।)


আপত্তির খন্ডনঃ- বাদশা হাজ্জাজ বিন ইউছুফ পবিত্র কোরআনের নুকতার প্রবর্তণ করে। অথচ নুকতা তো নাজায়েয নয়। নুকতা না হলে আজ আমাদের কি অবস্থাই না হতো। তাছাড়া ইয়েমেনের তুব্বা বাদশা কাবার গিলাফ চড়ানোর প্রথার সূচনা করেন। হুজুর (ﷺ) বাদশা তুব্বা কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথা তো রদ করেননি এবং অদ্যাবদি ইহার প্রচলন জারি রয়েছে।


সুতরাং একজন বাদশা কর্তৃক প্রবর্তিত ঈদে মিলাদুন্নবী বৈধ হওয়ার বিষয়ে সম্ভবত এই দুই উদাহরণই যথেষ্ঠ বলে মনে করি। তাছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন বাদশা মুজাফ্ফরের পূর্বেও প্রচলিত ছিল, কিন্তু তিনি রাষ্ট্রিয়ভাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইহার প্রচলন শুরু করেন।


আপত্তি নং ২ঃ- আমরা হুজুর (ﷺ) এর বিলাদতের জন্য ঈদ উদযাপন করি, কিন্তু একই তারিখে ওফাত হয়েছে- তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করিনা কেন? 


আপত্তির খন্ডনঃ- হুজুর (ﷺ) হায়াতুন্নবী তাই আমরা দুঃখ প্রকাশ করিনা। হায়ান্নবী বলেই তিনি (ﷺ) আমাদের দুরূদ শুনেন ও যিয়ারতকারীদেরে চিনেন। তাছাড়া আমরা আত্মার উপর জুলুম করলে আল্লাহ আমাদেরে নবীর দরবারে হাজির হওয়ার নির্দেশ করেছেন, যা হায়াতুন্নবী হওয়ারই প্রমাণ। পবিত্র কোরআন অনুযায়ী শহিদগণ জিন্দা। সে হিসেবে হুজুর (ﷺ) তো আরো উত্তমরূপে জিন্দা। আর আমাদের শরয়ী বিধান অনুযায়ী মৃত্যুর পর ৩ দিনের বেশী দুঃখ প্রকাশ জায়েয নয়। তাই সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর কেন আমরা দুঃখ প্রকাশ করব ?


আপত্তি নং ৩ঃ- শরিয়ত মোতাবেক ঈদের দিনে রোজা রাখা নাজায়েয। ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন ঈদ হলে ঐ দিন কেন আমরা রোজা রাখি? 


আপত্তির খন্ডনঃ- আমাদের শরিয়াতে শুক্রবারও ঈদ। অথচ হাদিস অনুযায়ী শুক্রবারের সাথে একদিন মিলিয়ে ২ দিন রোজা রাখার বৈধতা রয়েছে। ছহীহ্ হাদিস অনুযায়ী আরাফার দিনও আমাদের ঈদ, অথচ ঐ দিনও আমাদের জন্য রোজা রাখা বৈধ। কাজেই ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনে রোজা রাখা নাজায়েয হবে কেন ? 



---ঃ---


 


মিলাদ, কিয়াম ও তাজিম 


১। বর্তমান জামানায় দরূদ, মিলাদ, কিয়াম ইত্যাদি বিষয়ে অনেক মতভেদ ও ফিৎনা বিরাজমান। দীর্ঘ দিনের এই প্রচলিত আমলকে আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগন আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে কিছু সংখ্যক লোক ইহাকে অস্বীকার করে, এমন কি বেদআত/হারাম আখ্যায়িত করে। কেউ আবার দরূদ/মিলাদ মানলেও কিয়ামের ঘোর বিরোধী। তাই আমরা চেষ্টা করব কোরআন-হাদীস ও ইজমা-কিয়াসের আলোকে এই বিষয়টির ফয়সালা তথায় বৈধতা নিরূপন করতে।


২। নবী করিম (ﷺ) এর সুন্নাত হলো ০৩ প্রকারেরঃ-


ক) কাওলী- যা হুজুর (ﷺ) বলেছেন।


খ) আমলী- যা হুজুর (ﷺ) আমল করেছেন।


গ) তাকরীরি- যে সমস্ত বিষয়ে হুজুর (ﷺ) নিজে দেখে বা অবগত হয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন কিম্বা নিষেধ বা আপত্তি করেন নাই।


এখন আমাদের বুঝতে সহজ হবে হাদীসের আলোকে দরূদ, মিলাদ, কিয়াম, তাজিম ইত্যাদি আদৌ বৈধ কিনা।


৩। দরূদ- ইহা ফার্সি শব্দ। কুরআনে দরূদ হলো “ছল্লু”। ইহার অর্থ হলো হুজুর (ﷺ) এর প্রতি অনুগ্রহ প্রেরণ বা দোয়া করা। অতএব, দরূদ কোরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ্ নিজে ফেরেশতাগনকে নিয়ে ছল্লু করেন এবং মু’মিনদিগকে ছল্লু (দরূদ) ও সালাম, তাসলিমার সাথে প্রেরনের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তাসলিমা অর্থাৎ যথাযথভাবে বা তাজিমের সাথে প্রেরনের নির্দেশ দ্বারা তাজিমকেও আল্লাহ্ প্রতিষ্ঠা করেছেন (৩৩ : ৫৬- আহ্যাব)। মিলাদে কিয়ামই হলো তাজিম।


৪। মিলাদ ও মওলুদ- ইহা একই জিনিষ। ইহা হলো কারো জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা। আর যখন “মিলাদ শরীফ” বলা হয়, তা হলো একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা। ইহা রহমন-বরকত প্রাপ্তির জন্য করা হয়। ইহা কোরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ নিজেই অনেক নবী রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত পবিত্র কুরআনে আলোচনা করেছেন। 


৫। কিয়াম- কিয়াম হলো দাঁড়ানো। ইহা হুজুর (ﷺ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত শুনার সময় করা হয়। ইহা একটি সুন্নাত/মুস্তাহাব আমল। সাধারনত যারা মিলাদ মানে ও কিয়াম করে তারা হলেন সুন্নী ও আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী। হাদীস অনুসারে বহু প্রকারের কিয়াম আছে। তন্মধ্যে মূখ্য হলো নিম্নোক্ত ০৭ প্রকারঃ-


ক) কিয়ামুল ইস্তেকবাল- অভ্যর্থনা/ 


খ) কিয়ামুল মুহাব্বা- মহব্বত/ 


গ) কিয়ামুল ফারহা- খুশী/ 


ঘ) কিয়ামুল তাজিম- সম্মান/ 


ঙ) কিয়ামুল ইকরামুল ইনসানী- মানবতা/  (হুজুর (ﷺ) মৃত ইহুদীর লাশ অতিক্রম করার সময় দাঁড়িয়েছিলেন)


চ) কিয়ামুল যিকির- নাত/ 


ছ) কিয়ামুল সালাম- আনন্দ/তাজিম/মহব্বত/যিকির ইত্যাদি কিম্বা এদের এক বা একাধিকের সমন্বয়।


৬। অনেকে বলেন, দরূদ, মিলাদ, কিয়াম- এ’সব উপমহাদেশীয় সংস্করন। আসলে বিষয়টা তেমন নয়। উদাহরনঃ-


ক) তিরমিযী শরীফে মিলাদের একটা আলাদা অধ্যায় রয়েছে।


খ) বোখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থেও মিলাদ শব্দ বিদ্যমান।


গ) ইমামুল মোহাদ্দেসীন ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) মিলাদের উপর আলাদা কিতাব লিখেছেন।


ঘ) সর্বমোট ৩৮জন নাথ পরিবেশনকারী হুজুর (ﷺ) এর জীবদ্দশায় নাথ/মিলাদ সংক্রান্ত গজল লিখেছেন এবং পেশ করেছেন।


ঙ) এমনকি ০৪জন খলিফা ও মা ফাতেমা (رضي الله عنه) নাথ লিখেছেন এবং হুজুর (ﷺ) কে শুনিয়েছেন। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও নাথ রচনা করে হুজুর (ﷺ) এর অনুমতিক্রমে তা শুনিয়েছেন। তাবুকের যুদ্ধ শেষে ৩০,০০০ যোদ্ধার (সাহাবীগণ) সামনে আব্বাস (رضي الله عنه) কর্তৃক পেশকৃত নাতে রাসূল তো সু-প্রসিদ্ধ।



তাজিমের দলিল


১। বোখারী ও তিরমিযী শরীফে হস্ত ও পদ চুম্বন সংক্রান্ত আলাদা অধ্যায় রয়েছে- আদবের আওতায়। তাছাড়া ইমাম বোখারী কর্তৃক প্রণিত আল কিতাবুল মুফরাদ গ্রন্থেও হস্ত এবং পদ চুম্বনের আলাদা অধ্যায় রয়েছে। (অধ্যায়- ৪৪৫- হস্ত চুম্বন এবং অধ্যায়- ৪৪৬- পদচুম্বন)


২। আবু দাউদ শরীফ


ক) হাদীস নং-৫১৩৫, হস্ত চুম্বন।


খ) হাদীস নং-৫১৩৬, শরীর চুম্বন।


গ) হাদীস নং-৫১৩৭, হস্ত ও পদ চুম্বন।


ঘ) হাদীস নং-৫১২৭ ও ৫১২৮, সা’আদ ইবনে মুআয (رضي الله عنه) অর্থাৎ অন্যের জন্য সম্মানসূচক কিয়াম।




মিলাদ-কিয়ামের উদাহরণ, দলিল ও ফজিলত


১। একবার হযরত সা’আদ ইবনে মু’আয (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর দরবারে এলে হুজুর (ﷺ) নিজে দাঁড়ান এবং মুআযের গোত্রের আনসারগনকে তাদের সর্দারের আগমনে অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।


২। একবার হযরত আকরামা (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত হলে তিনি (ﷺ) খুশীতে/আনন্দে দাঁড়িয়ে যান।


৩। একবার যায়েদ বিন হারেসা (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর ঘরে আগমন করলে, তখন হুজুর (ﷺ) তাকে অভ্যর্থনা জানানো এবং আনন্দ ও মহব্বত প্রকাশের জন্য দাঁড়িয়ে যান এবং চুম্বন করেন।


৪। হুজুর (ﷺ) মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর হুজরার মধ্যে দাখিল হওয়া পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরামগন হুজুর (ﷺ) এর তাজিম ও সম্মানে দাঁড়িয়ে থাকতেন।


৫। হুজুর (ﷺ) যখন তাঁর হুজরা থেকে বের হতেন তখন দেখা মাত্র সাহাবীগন তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন।


৬। ঈসা (عليه السلام) ইঞ্জিল কিতাবে হুজুর (ﷺ) এর আগমন সংক্রান্ত বর্ণনা করার সময় কিয়াম করতেন।


৭। মি’রাজের রজনীতে মূসা (عليه السلام) নিজ কবরে দাঁড়িয়ে হুজুর (ﷺ) এর সম্মানে সালাত ও সালাম করেছিলেন।


৮। মা ফাতেমা (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর হুজরায় তাশরিফ আনলে হুজুর (ﷺ) নিজে দাঁড়িয়ে যেতেন, হস্ত চুম্বন করতেন এবং নিজের আসন ছেড়ে দিতেন। মা ফাতেমা (رضي الله عنه) ও হুজুর (ﷺ) তাশরিফ আনলে রাসূল (ﷺ) এর সম্মানে একই আমল করতেন।


৯। হাসান বিন সাব্বিত (رضي الله عنه) কিয়ামরত অবস্থায় হুজুর (ﷺ) এর উপস্থিতিতে হুজুর (ﷺ) এর গৌরব গাঁথা পেশ করতেন। এমন কি হুজুর (ﷺ) সাব্বিত (رضي الله عنه) এর জন্য মিম্বার তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।


১০। মিলাদ-কিয়ামের উদ্দেশ্য হলো হুজুর (ﷺ) এর জন্য তাজিম, মহব্বত ও খুশী প্রকাশ করা। ইহুদীরা পর্যন্ত হুজুর (ﷺ) কে তাজিম করত, এমন কি হস্ত ও পদ চুম্বন করত।


১১। মিলাদ-কিয়ামের সময় হুজুর (ﷺ) হাযির আছেন/কিম্বা হবেন- এই ধারনা নিয়ে কিয়াম/দাঁড়ানো অবৈধ (যদিও হুজুর (ﷺ) হাযির হওয়ার ক্ষমতা রাখেন- কারন তিনি হাযির-নাযির)। কিন্তু মহব্বতে, তাজিমে বা আনন্দ প্রকাশের জন্য কিয়াম করা বৈধ-যা আমরা করি।


১২। আবার কেউ যদি আশা করে লোক তার উদ্দেশ্যে দাঁড়াবে কিম্বা কিয়াম করবে কিম্বা হস্ত-পদ চুম্বন করবে - তবে তা নিষিদ্ধ এবং ইসলাম সম্মত নয়। যদি কেউ স্বেচ্ছায় সম্মানে/তাজিমে/মহব্বতে/আনন্দে তা’ করল- তবে তা বৈধ।


১৩। নূর স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারে। যেমনঃ- 


ক) মূসা (عليه السلام) এর নিকট আজরাইল (عليه السلام) পৌঁছলে মূসা (عليه السلام) তাকে থাপ্পড় দেন- ফলে চক্ষু বেরিয়ে আসে। (বোখারী- ৩১৫৯)


খ) জিব্রাইল (عليه السلام) বশর/মানুষের আকৃতিতে মরিয়ম (عليه السلام) নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন (কুরআন)।


গ) জিব্রাইল (عليه السلام) দেহিয়া কালবী (رضي الله عنه) এর সূরতে হুজুর (ﷺ) এর দরবারে কখনো কখনো উপস্থিত হতেন।


১৪। ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله), জালাল উদ্দিন সূয়ুতী (رحمة الله), মোল্লা আলী কারী (رحمة الله), আবদুল হক মোহাদ্দেস (رحمة الله), হাজী এমদাদ উল্লাহ মোহজেরে মক্কী (رحمة الله) সহ সকল মোহাদ্দেস, মোফাস্সের ও বিখ্যাত বুজুর্গানে দ্বীন ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ), দরূদ, মিলাদ, কিয়াম ইত্যাদিতে বিশ্বাস করতেন ও আমল করতেন।


১৫। হাদীস- কোন ব্যাক্তি যখন আমার প্রতি সালাম পেশ করে আল্লাহ্পাক আমার রুহ ফেরত দিয়ে দেন যাতে করে আমি সালামের জবাব প্রদান করতে পারি। (সুনানে আবু দাউদ)


১৬। একটি হাদীস অনুযায়ী জানা যায় হুজুর (ﷺ) কে সালাম দিলে, আল্লাহ্ তাঁর রূহ মোবারক ফিরৎ দেন এবং তিনি সালামের জবাব দেন। কিন্তু বাস্তবে হুজুর (ﷺ) এর রূহ মোবারক উত্তমস্থানে অর্থাৎ তাঁর (ﷺ) দেহ মুবারকেই রক্ষিত। তাঁর রূহ মোবারক বারংবার দেহ থেকে বের করে নেওয়া এবং দরূদ-সালাম পেশ করলে জবাবের জন্য ফেরৎ দেওয়া- এমনটা হয় না। কারনঃ-


ক) ইহা তাঁর শানের খেলাফ ও কষ্টদায়ক।


খ) হুজুর (ﷺ) এর উপর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও হতে উম্মত প্রতিনিয়তই সালাম পেশ করতে থাকেন। নামাজেও সালাম আছে।


গ) ৭০ হাজার ফেরেশ্তা সার্বক্ষনিক তওয়াফ ও দরূদ-সালাম পেশ করছেন।


ঘ) মহান রাব্বুল আ’লামিন সার্বক্ষনিক ফেরেশতাদের নিয়ে হুজুর (ﷺ) উপর দরূদ পাঠাচ্ছেন।


কাজেই হুজুর (ﷺ) এর রূহ মোবারক দেহ হতে বের হওয়ার আর সুযোগই বা কোথায়?


১৭। যে কসরতের সাথে দরূদ পড়ে ও দায়েমীভাবে জারি রাখে, সে সাহেবে হুজুরী হাসিল করবে, এবং হুজুর (ﷺ) এর দরবার পর্যন্ত পৌছে যাবে এমন কি তার স্বপ্নেই নয় রবং জাগ্রত অবস্থায়ও দীদার নসীব হবে। (হাদীস- যে স্বপ্নে হুজুর (ﷺ) দীদার লাভ করল, অচীরেই সে জাগ্রত অবস্থায়ও দীদার লাভ করবে।)


১৮। দরূদ পুলসিরাত পার করিয়ে দিবে।


১৯। দরূদ বান্দাকে আখিরাতে আল্লাহর বারগাহে প্রবেশ করিয়ে দিবে।


২০। দরূদ ব্যতিত কোন মজলিস সমাপ্ত হলে- তাদের বদনসীবি।


২১। সঠিকভাবে দরূদ পাঠকারীর গুনাহ ০৩ দিন পর্যন্ত না লিখার জন্য আল্লাহ্ ফেরেশতাকে নির্দেশ দেন।


২২। হাদীস- বদনসীব ঐ লোকের যে আমাকে দেখবে না। কারা দেখবে না (প্রশ্ন করলে)- যারা বখীল। কারা বখীল- যারা হুজুর (ﷺ) এর নাম মোবারক শুনে দরূদ পাঠ করবে না।


২৩। দরূদের বিশেষ রাজ/গুপ্ত রহস্য হলো এই যে, নবী (ﷺ) এর নাম শুনামাত্র যদি কেউ দরূদ পাঠ করে, তাৎক্ষনিক বিশেষভাবে নিয়োজিত ০২ জন ফেরেশতা বলে উঠেন, “আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করে দিন।” আর এই দোয়ার সাথে সাথে স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতও বলে উঠেন, “আমীন।” -রাবী- ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর সাহেবজাদী।


২৪। পরিপূর্ণ পবিত্রতা এবং খুব মনোযোগ ও যতেœর সহিত সুন্দরভাবে খুশুখুযুর সাথে দরূদ ও সালাম পেশ করতে হবে। কারন ইহা মদীনা মনোয়ারায় রওজা আকদাসে পৌছানো হয়।


২৫। গোসল, অজু ও পরিপূর্ণ পবিত্রতার সহিত কলেমা শাহাদাৎ পড়ে দরূদ শুরু করবে।


২৬। বৃহস্পতিবার রাত ও জুম্মার দিন বেশী বেশী দরূদ পড়। কারন ঐ দিন সোনার কলম ও চান্দির কাগজ নিয়ে বিশেষ ফেরেশতা প্রেরিত হয়- বেশী দরূদ পাঠকারীদের নাম তালিকাভূক্তির জন্য।


২৭। তুমি ০১ বার দরূদ পড়লে আল্লাহ্ তোমার উপরে ১০ বার দরূদ পাঠাবেন। মেশকাত শরীফে (হাদীস নং-৮৭৪) ৭০ বার আল্লাহ্ কর্তৃক দরূদ পাঠানোর কথা বলা আছে।


২৮। কিয়ামতের দিন দরূদ পাঠকারীর নাম হুজুর (ﷺ) এর নিকট পেশ করা হবে (শাফায়াতের জন্য)। 


২৯। যে যত বেশী দরূদ পড়বে তার তত বেশী হুজুর (ﷺ) এর নৈকট্য ও হুজুরী নসীব হবে।


৩০। হাদীস- কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তিই আমার সব চাইতে বেশী নিকটতম হতে সক্ষম হবে যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশী দরূদ ও সালাম পেশ করবে (তিরমিযী)। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অধিক দরূদ পাঠকারীকে হুজুর (ﷺ) সাথে সাথে রাখবেন এবং আশা করা যায় সে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। (দারোগার কি সাধ্য প্রধান মন্ত্রীর কাছ থেকে আসামীকে ছিনিয়ে নেয়)


৩১। হাশরের মাঠে হুজুর (ﷺ) দরূদ পাঠকারীকে দরূদের বরকতে চিনতে পারবেন- যেমন তিনি মদিনায় বসে মক্কার সালাম দাতা পাথকে চিনার কথা বলেছেন।


৩২। হুজুর (ﷺ) নিজের জন্ম বৃত্তান্ত নিজেই অসংখ্যবার বর্ণনা করেছেন।


৩৩। পবিত্র কুরআনে হুজুর (ﷺ) সহ বেশ কিছু নবী-রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মিলাদ-কিয়ামের অনুষ্ঠানে আমরাও হুজুর (ﷺ)এর জন্ম ও জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করে থাকি।


৩৪। আদম (عليه السلام) থেকে ঈসা (عليه السلام) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণ হুজুর (ﷺ) এর জন্মের আলোচনা/মিলাদ ও কিয়াম করেছেন। ঈসা (عليه السلام) ইঞ্জিল কিতাবে হুজুর (ﷺ) এর আগমন সংক্রান্ত বর্ণনা পড়ার সময় কিয়াম করতেন।


৩৫। যেই দিন হুজুর (ﷺ) মাতৃগর্ভে এলেন- ঐ রজনীতে কোরাইশদের গৃহপালিত পশুগুলো বলাবলি করছিল- আজ সমস্ত পৃথিবীর চেরাগ মাতৃগর্ভে এসেছেন এবং আনন্দ করছিল। কিন্তু শয়তান আজকের মত ঐ দিনও খুব নারাজ ছিল এবং কান্নাকাটি করেছে।


৩৬। হাদীস- ‘তোমরা আমার উপর বেশী করে দরূদ শরীফ পাঠ কর। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ (এই পর্যায়ে এক সাহাবী ইন্তেকালের পর কি হবে তা জানতে চান)। তখনও আমি তোমাদের দরূদ শুনব কেননা আল্লাহ্ তা’য়ালা এ জমিনের জন্য সম্মানিত নবীগণের দেহ ভক্ষন করা হারাম করে দিয়েছেন।


৩৭। হাদীস- আম্বিয়ায়ে কেরাম নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন এবং নামাযও পড়েন। (দায়লামী/ফতহুল বারী/বায়হাকী)


৩৮। হাদীস- ঈসা (عليه السلام) দুনিয়ায় অবতীর্ণ হওয়ার পর এক পর্যায়ে হজ্জ/ওমরার জন্য বের হবেন এবং ‘নিশ্চয় তিনি আমার কবরে আসবেন। আর আমাকে সালাম দিবেন। আর আমি নিশ্চয় তাকে উত্তর দিব।’ (হাকিম- আল- মুসতাদরাক)


৩৯। আদম (عليه السلام) এর বিবাহের মাহর ছিল- ৩ বা ২০বার দরূদ শরীফ পাঠ করা।


৪০। ১১:১২০ (হুদ)- আর রাসূলগনের কাহিনী থেকে সবকিছু আমরা আপনার কাছে বর্ণনা করেছি এই জন্য যে, সে সবের দ্বারা আমরা আপনার চিত্তকে বলিষ্ঠ করব।


নোটঃ অন্য নবীদের জীবন বৃত্তান্ত যদি চিত্তকে বলিষ্ঠ করে, তবে আমাদের নবী (ﷺ) এর আলোচনা আমাদিগকে অবশ্যই উজ্জীবিত করবে বৈকি? মিলাদ-কিয়ামেতো হুজুর (ﷺ)এর গুনগান এবং আলোচনাই করা হয়।


৪১। ১০ : ৫৮ (ইউনূস)- قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا এই আয়াতে ফজল ও রহমত বলতে হুজুর (ﷺ) কেই বুঝানো হয়েছে। তাই তাঁর আগমন উপলক্ষে আনন্দ করা জরুরী। (তাফছিরে দূররে মনসুর- সূয়ুতী (رحمة الله))





Top