❏ ছায়াপথ ও রংধনু 


আবুল কাসিম তাবারানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, সম্রাট হিরাক্লিয়াস মু’আবিয়া (رضي الله عنه)-এর নিকট পত্র লিখেন এবং এ সময় তিনি বলেন যে, যদি তাদের অর্থাৎ মুসলমানদের মধ্যে নবুওতের শিক্ষার কিছুটাও অবশিষ্ট থাকে তবে অবশ্যই তারা আমাকে আমার প্রশ্নের জবাব দেবে। ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, পত্রে তিনি মু’আবিয়া (رضي الله عنه)-কে ছায়াপথ, রংধনু এবং ঐ ভূখণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করেন যাতে স্বল্প সময় ব্যতীত কখনো সূর্য পৌঁছেনি। ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, পত্র ও দূত এসে পৌঁছলে মুআবিয়া (رضي الله عنه) বললেন, এ তো এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে বলে এ যাবত কখনো আমি কল্পনাও করিনি। কে পারবেন এর জবাব দিতে? বলা হলো, ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) পারবেন। ফলে মু’আবিয়া (رضي الله عنه) হিরাক্লিয়াসের পত্রটি গুটিয়ে ইবন আব্বাসের নিকট পাঠিয়ে দেন। জবাবে ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) লিখেনঃ রংধনু হলো, পৃথিবীবাসীর জন্য নিমজ্জন থেকে নিরাপত্তা। ছায়াপথ আকাশের সে দরজা, যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী বিদীর্ণ হবে আর যে ভূখণ্ডে দিনের কিছু সময় ব্যতীত কখনো সূর্য পৌঁছেনি; তাহলো সাগরের সেই অংশ যা দু’ভাগ করে বনী ইসরাঈলদেরকে পার করানো হয়েছিল। ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) পর্যন্ত এ হাদীসের সনদটি সহীহ।


তাবারানী বর্ণনা করেন যে, জাবির ইবন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ “হে মু’আয! তোমাকে আমি কিতাবীদের একটি সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করছি। যখন তুমি আকাশস্থিত ছায়াপথ সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে তখন বলে দেবে যে, তা আরশের নীচে অবস্থিত একটি সাপের লালা।"


এ হাদীছটি অতিমাত্রায় মুনকার বরং এটা মওযূ বা জাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর রাবী ফাজল ইবন মুখতার হলেন আবু সাহল বসরী। পরে তিনি মিসরে চলে যান। তার সম্পর্কে আবু হাতিম রাযী বলেছেন, লোকটি অজ্ঞাত পরিচয়, বাজে কথা বলায় অভ্যস্ত। হাফিজ আবুল ফাতহ আযদী বলেছেন, লোকটি অতি মাত্রায় মুনকারুল হাদীস। আর ইবন আদী (رحمة الله) বলেছেন, মতন ও সনদ কোন দিক থেকেই তার হাদীস অনুসরণযোগ্য নয়।


আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ


هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ. وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ


অর্থাৎ তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী যা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ঘন মেঘ। বজ্রনির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ সভয়ে তাঁর সপ্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, যদিও তিনি মহাশক্তিশালী। (১৩ঃ ১২-১৩)


অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ


إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ.


অর্থাৎ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে দিন ও রাতের পরিবর্তন, যা মানুষের হিত সাধন করে তা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে আল্লাহ আকাশ থেকে যে বারিবর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীব-জন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। (২ঃ ১৬৪)


ইমাম আহমদ (رحمة الله) যথাক্রমে ইয়াযীদ ইবন হারূন, ইবরাহীম ইবন সা’দ ও সা’দ সূত্রে গিফার গোত্রের জনৈক প্রবীণ ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ


إن الله ينشئ السحاب فينطق أحسن النطق ويضحك أحسن الضحك


অর্থাৎ “আল্লাহ মেঘ সৃষ্টি করেন, ফলে তা উত্তমভাবে কথা বলে ও উত্তম হাসি হাসে।”


মূসা ইবন উবায়দা ইবন সাদ ইবরাহীম (رحمة الله) বলেন, ‘মেঘের কথা বলা হলো বজ্র আর হাসি হলো বিজলী।’ ইবন আবু হাতিম বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ ইবন মুসলিম বলেন, আমাদের নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, এমন একজন ফেরেশতা, যার চারটি মুখ আছে, মানুষের মুখ, ষাঁড়ের মুখ, শকুনের মুখ ও সিংহের মুখ। সে তার লেজ নাড়া দিলেই তা থেকে বিজলী সৃষ্টি হয়।


ইমাম আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও বুখারী (رحمة الله) কিতাবুল আদবে এবং হাকিম তার মুসতাদরাকে হাজ্জাজ ইবন আরতাহ (رحمة الله) বর্ণিত হাদীসটি সালিমের পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন বজ্রধ্বনি শুনতেন তখন বলতেনঃ


اللهم لا تقتلنا بغضبك ولا تهلكنا بعذابك و عافنا قبل ذالك.


অর্থাৎ—‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি তোমার গযব দ্বারা বধ কর না ও তোমার আযাব দ্বারা ধ্বংস কর না এবং এর আগেই তুমি আমাদেরকে নিরাপত্তা দান কর।


ইবন জারীর (رحمة الله) আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেনঃ


سبحان من يسبح والرعد بحمده


অর্থাৎ—পবিত্র সেই মহান সত্তা, বজ্র যার সপ্রশংসাা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে।


আলী (رضي الله عنه) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলতেনঃ


من سبحت له


ইবন আব্বাস, আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ ও তাউস প্রমুখ থেকেও এরূপ বর্ণিত আছে। মালিক আবদুল্লাহ ইবন উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বজ্রের আওয়ায় শুনলে কথা-বার্তা ত্যাগ করে বলতেনঃ


سبحان من يسبح الرعد بحمده والملئكة من خيفته


অর্থাৎ পবিত্র সেই মহান সত্তা, বস্ত্র ও ফেরেশতাগণ সভয়ে যার সপ্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে।


তিনি আরো বলতেনঃ


ان هذا وعيد شديد لاهل الارض


অর্থাৎ নিশ্চয় এটা পৃথিবীবাসীর জন্য এক কঠোর হুঁশিয়ারি।


ইমাম আহমদ (رحمة الله) আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


قال ربكم لو أن عبیدی اطاعوني لأسقيتهم المطر بالليل و أطلعت عليهم الشمس بالنهار ولما اسمعتهم صوت الرعد فاذكروا الله فإنه لا يصيب ذاكرا.


অর্থাৎ- তোমাদের রব বলেছেনঃ আমার বান্দারা যদি আমার আনুগত্য করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য রাতে বৃষ্টি দিতাম আর দিনে সূর্য উদিত করতাম আর তাদেরকে বজ্রের নিনাদ শুনাতাম না। অতএব, তোমরা আল্লাহর যিকির কর। কারণ যিকিরকারীর উপর তা আপতিত হয় না।


আমার তাফসীর গ্রন্থে এর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। প্রশংসা সব আল্লাহরই প্রাপ্য।

Top