ইসলামী বিশ্বকোষ ও আল-হাদিস অ্যাপ [Download]
কিতাবঃ ফেরেস্তা সৃষ্টির ইতিবৃত্ত [আল হেদায়াতুল মােবারাকা ফী তাখলীকে মালায়েকা"র বাংলা রূপ]
মূলঃ ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রঃ)
অনুবাদঃ আবু সাঈদ ইউসুফ জিলানী
প্রকাশনায়ঃ রেযা একাডেমী
Text Ready : Dr. Masum Billah Sunny, Fatematuj Juhra Sakila
ফেরেস্তাদের জন্ম ও মৃত্যু
بسم اللّٰه الرحمٰن الرّحیم
মাসয়ালাঃ
কলিকাতা ধর্ম তলা হতে জনাব মির্যা গােলাম কাদের বেগ, ৭ই রজব, ১৩১১ হিজরি, আ'লা হযরত রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলায়হি সমীপে জানতে চান, ওলামায়ে দ্বীনের এ ব্যাপারে কী অভিমত যে, ফেরেস্তা কিভাবে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ন্যায় তাদেরও মৃত্যু হয় কিনা অথবা যে সময় সমস্ত মাখলুক ধ্বংস হয়ে যাবে, সেসময় তারা ধ্বংস হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে ধন্য করবেন।
উত্তরঃ
(১) ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) শােয়াবুল ঈমানে' হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, হুযুর পুরনূর সৈয়দে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (عليه السلام) এবং তাঁর সন্তানদের সৃষ্টি করেন, তখন ফেরেস্তারা নিবেদন করেন, হে আল্লাহ! আপনি তাদের সৃষ্টি করেছেন। (তারা) আহার করে, পান করে, বা সহবাস করে এবং সওয়ার হয়। সুতরাং তাদের জন্য দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখেরাত প্রদান করুন। (উত্তরে) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
لا أجعل من خلقته بيدي ونفخت فيه من روحی کسن قلت له کن فکان
অর্থাৎ আমি তার মত (আর কাউকে সৃষ্টি) করবাে না, যাকে নিজ কুদরতী হাতে তৈরী করেছি এবং তাতে আমার রুহ ফুকেছি। তাকে যেভাবে আমি হতে বলেছি, সেভাবেই তৈরী হয়ে গেছে।
এ হাদীস থেকে বুঝা গেলাে যে, ফেরেস্তা সৃষ্টি মানবের ন্যায় পর্যায়ক্রমে হয়নি যে, প্রথমে মাটির খমির অতঃপর আকৃতি, এরপর তাদের মধ্যে রুহ দান কনা হয়েছে। অথবা প্রথমে নুতফা (বীর্য) ছিলাে, অতঃপর রক্তপিন্ড "অতঃপর মাংসপিন্ড, অতঃপর শরীরের অংশ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ, অতঃপর আকৃতি সৃষ্টি, এরপর রুহ প্রদান করা হয়েছে। বরং তাদের কুন (হয়ে যাও) শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।
নূর থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি
(২) অন্যত্র হুযুর আকদাস (ﷺ) ইরশাদ করেন,
خلقت الملائكة من نور وخلق الجان من نار وخلق آدم مما وصف لكم
অর্থাৎ ফেরেস্তা নূর থেকে, জ্বিন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং আদম তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে যা তােমাদের বলা হয়েছে। (অর্থাৎ কালো, সাদা এবং লাল মাটি থেকে)। যেমনঃ
◾ইবনে সা'দ হযরত আবু যর (رضي الله عنه)-এর সূত্রে, রাসুলে খােদা (ﷺ) থেকে রেওয়ায়েত করেন।
◾এটা বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ (رحمة الله) এবং মুসলিম (رحمة الله) হযরত উম্মুল মােমেনীন (رضي الله عنه) থেকে।
রাসূল (ﷺ)'র নূর থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি
(৩) ইমাম আবদুর রাযযাক (رحمة الله) নিজের মুসান্নাফে' জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) এর সুত্রে বর্ণনা করেন, হুযুর আকদাস (ﷺ) ইরশাদ করেন,
یا جابر ان الله تعالى ند حلق قبل الاشیاء نور نبیك من نوره (الی قوله) فلما اراد اللّٰه ان یخلق اخلق قسم ذالك النور اربعة اجزا- فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثانی اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الرّابع اربعة اجزاء. فخلق من الاول العرش ومن الثانی الکرسی ومن الثالث باقی الملاٸکة
অর্থাৎ হে জাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব সৃষ্টির পূর্বে স্বীয় নুর থেকে তােমার নবীর নূর সৃজন করেন। অতঃপর যখন মাখলুক সৃষ্টির ইচ্ছে করেন, তখন এ নূরকে চার অংশে বিভক্ত করেন। প্রথম অংশ থেকে কলম, দ্বিতীয় অংশ থেকে লাওহ, তৃতীয় অংশ থেকে আরশ। অতঃপর চতুর্থ অংশকে চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ থেকে আরশবাহী ফেরেস্তা । দ্বিতীয় অংশ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় অংশ দ্বারা অবশিষ্ট ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।
(৪) আল্লামা ফাসী মােতালেমুল মুসাররাত' গ্রন্থে- دلاٸل التقدم من نور ضیاٸك বাক্যের ব্যাখ্যায় বলেন,
قد قال الاشعرى انه تعالى نور لیس کا لانوار والروح النبوية المقدسة لمعة من نوره والملاٸکة شرر تلك الانوار وقال صلّی اللّٰه تعالی علیه وسلم اول ما خلق اللّٰه نوری خلق کل شٸ
অর্থাৎ ইমাম আশয়ারী (رحمة الله) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কিন্তু অন্যান্য কোন নূরের ন্যায় নয়। আর রাসূলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর পবিত্র রুহ মােবারক তাঁর (আল্লাহ) নূরের একটি চমক (দীপ্তি)। আর ফেরেস্তা তার (রাসূলের) নূরের স্ফুলিঙ্গ। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান "সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমার নূর থেকেই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে।
(৫) আবু শেখ ইকরামা (رضي الله عنه)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- خلقت الملاٸکته من نور العزة
(ফেরেস্তাদের সম্মানিত ও মহিমান্বিত নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে)
রুহ নামক ফেরেশতা থেকে ফেরেশতার সৃষ্টি
(৬) তিনিই ইয়াযীদ ইবনে রোমানের সুত্রে আরাে বর্ণনা করেন, তাঁর কাছে সংবাদ এলাে যে- ان الملاٸکة خلقت من ررح اللّٰه
(আল্লাহ তায়ালা রুহ (নামক ফেরেশতা) থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন।)
আমি বলছি, এ হাদীসের ব্যাখ্যা হলো, তাই যা
আমীরুল মুমেনীন সৈয়দুনা হযরত আলী মুরতাদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
'রুহ' হলো একজন (মহা সম্মানিত) ফেরেস্তা । যার রয়েছে সত্তর হাজার মাথা। প্রত্যেক মাথায় সত্তর হাজার চেহারা, প্রত্যেক চেহারায় সত্তর হাজার মুখ, প্রত্যেক মুখে সত্তর হাজার জিহ্বা। আর প্রত্যেক জিহ্বায় রয়েছে সত্তর হাজার ভাষা।
يسبح الله تعالی بتلك اللغات كلها يخلق من كل تسبيحة ملك يطير مع الملاٸکة الی یوم القیامة
অর্থাৎ, তিনি ঐ সব ভাষায় আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করেন। প্রত্যেক তাসবীহ থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি হয়। যারা কিয়ামত পর্যন্ত ফেরেস্তাদের সাথে উড়তে থাকবে।
▪ এটা ইমাম বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (رحمة الله) ওমদাতুল কারী শরহে সহীহ বুখারীতে “কিতাবুত তাফসীর অধ্যায়ে, আর
▪ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) "তাফসীরে কবীরে" বর্ণনা করেন।
◾সালাবী (রহঃ) সৈয়দুনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন-
"রুহ একজন বৃহৎ ফেরেস্তা। যা আসমান, জমিন এবং পাহাড় সব থেকে বৃহত্তর। তার স্থান চতুর্থ আসমানে।
يسبح كل يوم اثني عشر الف تسبیحة یخلق من کل تسبیحة ملك
অর্থাৎ তিনি প্রত্যেকদিন বার হাজার তাসবীহ পাঠ করে থাকেন। আর প্রত্যেক তাসবীহ থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি হয়। এ রুহ' নামক ফেরেস্তা কিয়ামত দিবসে একাই এক কাতার হবে। (সুবহানাল্লাহ) আর অন্য সকল ফেরেস্তার হবে একটি কাতার।
▪ ইমাম বাগভী (رحمة الله) ‘মুয়ালেম' নামক গ্রন্থে আল্লাহ তায়ালার এ বাণী, یوم یقوم الروح والملاٸکة صفا
▪ এর ব্যাখ্যায়, আর ইমাম আইনী (رحمة الله) ‘ওমদাতুল ক্বারীতে আল্লাহ তায়ালার বাণী- یسٸلونك عن الروح
এর ব্যাখ্যায় উক্ত বক্তব্য ব্যক্ত করেন।
প্রথম আসমানের পানি ও বায়ু দ্বারা ফেরেস্তা সৃষ্টি
(৭) বর্ণিত হয়েছে,
ان في السماء الدنيا وهي من ماء ودخان ملائكة خلقوا من ماء وريح عليهم ملك يقال له الرعد وهو ملك موكل بالسحاب والمطر -
অর্থাৎ প্রথম আসমানে পানি এবং ধোয়া রয়েছে। ফেরেস্তা পানি ও বায়ু দ্বারা সৃষ্টি। তাদের পরিচালক ‘রাদ' নামক একজন ফেরেস্তা । যিনি মেঘ, বৃষ্টি এবং বর্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
[ইমাম কুস্তলানী (رحمة الله) ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়ায়' এটা উল্লেখ করেন।]
নূর ও অন্ধকার মিশ্রণ থেকে ফেরেস্তার সৃষ্টি
(৮) সৈয়দী শেখ আকবর মুহিউল মিল্লাত ওয়াদ্দীন ইবনে আরাবী (رحمة الله) বলেন-
“আল্লাহ তায়ালা নূরের একটি তাজাল্লী বর্ষণ করেন অতঃপর অন্ধকার সৃষ্টি করেন। অন্ধকারের উপর ঐ নূরের ফটো স্থাপন করেন। এ থেকে আরশ প্রকাশ পায়। অতঃপর এ মিলিত নূর থেকে যা ভােরের জ্যোতি ও আলাের ন্যায় ছিলো, যাতে রাত্রের অন্ধকার মিশ্রিত থাকে, ঐসব ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যারা আরশের আশে পাশে রয়েছেন। অতঃপর কুরসী সৃষ্টি করেন। আর এতে এর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য দ্বারা ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।
▪ এটা ফতুহাতে মক্কীয়ার' ত্রয়ােদশ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে।
▪ ইমাম শা'রাণী (রহঃ)'ও ‘আল ইয়াওয়াকীত ওয়াল জাওয়াহীর' গ্রন্থে এটা উল্লেখ করেছেন।
জিব্রাঈল (আঃ)'র গােসলের সময় ডানা থেকে ঝরে পরা পানির ফোঁটা থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি
(৯) আবু শেখ আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) এর সুত্রে বর্ণনা করেন। রাসূলে খােদা (ﷺ) এরশাদ ফরমান,
ان في الجنة لنهرا ما يدخله جبرئیل دخلة فيخرج فينتفض الاخلق الله من کل قطرة تقطر منه ملکا
অর্থাৎ নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি নহর আছে। যখন হযরত জিব্রাইল আলায়হিস সালাম এতে গিয়ে গোসল করে বাইরে এসে ডানা পরিস্কার করেন তখন তার ডানা থেকে যতগুলো ফোঁটা ঝরে পড়ে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ফোঁটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। অথচ হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام)-এর ছয়শ' ডানা রয়েছে। যদি তিনি একটি ডানা বিছিয়ে দেয় তাহলে আসমানের উপরিভাগ ঢেকে যাবে।
(১০) ইবনে আবী হাতেম, আকীলী এবং ইবনে মারদুভিয়া হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه)'র সূত্রে রেওয়ায়েত করেন, রাসূলে খােদা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
في السماء الرابعة نهر يقال له الحيوان يدحله جبريل كل یوم فينغسس فیه الغماسة منه یخرج فينتفض انتفاضة فبحرج عنه سبعون الف قطرة يخلق الله من كل قطرة ملكا هم الذين یٶمرون ان یاتوا اللبیت المعمور فیصلوا فيفعلون ثم يخرجون فلا یعودون اليه ابدا ویولی عليهم احدهم ثم يؤمران يقف بهم في السماء موقفا يسبحون الله الى ان تقوم الساعة
অর্থাৎ চতুর্থ আসমানে একটি নহর আছে যাকে ‘হায়াতের নহর’ বলা হয়। জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম এতে প্রত্যেক দিবসে একবার ডুব দিয়ে ডানা ঝাড়েন। যা থেকে সত্তর হাজার ফোঁটা ঝরে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ফোঁটা থেকে একেকটি ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। তারা আদিষ্ট হয় বায়তুল মামুরে গিয়ে নামায পড়তে যান। যখন নামায পড়ে বেরিয়ে আসে অতঃপর তাতে আর কখনাে ফিরে যায় না। তাতে একজনকে তাদের নেতা বানানাের নির্দেশ দেয়া হয় যেন আসমানে তাদেরকে নিয়ে এটি স্থানে দন্ডায়মান হয়। কিয়ামত অবধি তারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে থাকবেন।
▪ ইবনে মুনযিরও এ ধরণের বর্ণনা উল্লেখ করেন, কিন্তু তাতে নহরের উল্লেখ ছিলাে না।
▪ তিনি বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه)'র সূত্রে ব্যক্ত করেন।
▪ কিন্তু ইবনে হাজর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন এটা হাদীসে মাওকুফ এর দ্বারা তিনি প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সুতরাং বুঝা গেলাে, এ হাদিসে মাওকুফ মারফুর ন্যায়। (অর্থাৎ, এই হাদীসটি মাওকুফ হলেও মারফুর ন্যায় গ্রহণযোগ্য)
🔺ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله) বলেন,
فصح الحديث وسقط مانقل القاسي عن الولي العراقي ان لم يثبت في ذالك شیٸ فقد أثبت الحافظ وفوق كل ذي علم عليم
অর্থাৎ হাদীসটি বিশুদ্ধ।
▪ আর আলফাসী (رحمة الله) ওলীয়ে ইরাকী (رحمة الله) থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা অকেজো হয়ে গেছে, কেননা এর দ্বারা তিনি কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি।
▪ অবশ্যই হাফেজ ইবনে হাজর (رحمة الله) এর দ্বারা প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বলাই বাহুল্য যে, প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর ও জ্ঞানী রয়েছেন।
(১১) আতা, মােক্বাতিল এবং দোহাকের রেওয়ায়েতের বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এভাবে এসেছে,
ان عن يمين العرش نهرا من نور مثل السموات السبع والارضين السبع والبحارالسبع يدخل فيه جبريل عليه السلام کل سحرو ويغتسل فيه فسزداد نورا الى نوره وجسالا الى جماله ثم ينتفض فیخلق اللّٰه تعالی من کل نقطه تقع من ریشه كذا كذا الف ملك يدخل منهم البيت السبعون الفا ثم لايعودون اليه الى ان تقوم الساعة
অর্থাৎ ‘আরশের ডানদিকে নুরের একটি নহর রয়েছে। যেটা সপ্ত আসমান, সপ্ত জমীন ও সাত সমুদ্রের বরাবর। প্রত্যেক ভোরে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) তথায় গােসল করেন। যা দ্বারা তার নূরের উপর, সৌন্দর্যের উপর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অতঃপর ডানা ঝাড়েন। এ থেকে যে পানির ফোঁটা ঝরে পড়ে আল্লাহ তায়ালা তা থেকে শত সহস্র ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যা থেকে সত্তর হাজার বায়তুল মামুরে যায়। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত সেখানে আর ফিরে যায় না।
▪ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله)
আল্লাহ তায়ালার বাণী- ویخلق ما لا تعلمون
এর ব্যাখ্যায় এটা উল্লেখ করেন।
ফেরেস্তাদের চক্ষু নির্গত ফোঁটা থেকে ফেরেস্তার সৃষ্টি
(১২) ইমাম আবু নাঈম, খতীবে বাগদাদ, ইবনে আসাকির এবং বায়হাকী "কিতাবুর রুইয়তে" আলী ইবনে আবী আরতাতের উদৃতিক্রমে কতেক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন।
রাসূলে খােদা (ﷺ) ইরশাদ করেন -
ان الله الملاٸکة ترعد فراتقهم من مخافته مامنهم من ملك يقطر من عينه دمعة الأوقعت ملكا قائما يسبح - الحديث
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার এমন কতেক ফেরেস্তা রয়েছে, যাদের সারা শরীর শিহরিয়ে উঠে আল্লাহ ভীতির দ্বারা। তম্মধ্যে ফেরেস্তাদের চক্ষু থেকে যে চোখের ফোঁটা পড়ে তা পড়তে পড়তেই ফেরেস্তা হয়ে যায়, যারা দাঁড়িয়ে আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করেন।
[ইমাম ইবনে হাজর মক্কী কৃত; ফতোওয়ায়ে হাদীসিয়াতে আছে- “আদ বিন আরতাত']
(১৩) আবু শেখ কা'ব আহবার (رضي الله عنه) থেকে এ ধরণের বর্ণনা করেন,
لاتقطر عين ملك منهم الا كانت ملكا يطير من خشية الله
অর্থাৎ, সে সব ফেরেস্তা যাদের চক্ষু থেকে যে ফোঁটা পড়ে, তা একটি ফেরেস্তা হয়ে আল্লাহ তায়ালার ভয়ে উড়ে যায়।
যারা তাজিম ও মুহাব্বতের সাথে দুরুদ পাঠ করলে তার থেকে সৃষ্ট
(১৪) ইবনে বাশকুয়াল (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনাকারী, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
من صلى على تعظيما الحقى خلق الله عزوجل من ذالك القوم
ملکاله جناح بالمشرق وآخر بالمغرب يقول عزو جل له صل على عبدی کما صلی علی نبي فهو يصلي عليه الى يوم القيامة
অর্থাৎ, যে আমার উপর আমার হকের তাজিম ও সম্মানের উদ্দেশ্যে দুরুদ পেশ করে, আল্লাহ তায়ালা ঐ দুরুদ থেকে একজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যার একটি ডানা পূর্ব দিকে, আর একটি ডানা পশ্চিম দিকে বিস্তৃত। আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেন, দুরুদ প্রেরণ করাে আমার বান্দার উপর, যেভাবে সে আমার নবীর উপর দুরুদ প্রেরণ করেছে। ঐ ফেরেস্তা কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর দুরুদ প্রেরণ করতে থাকবেন।
▪ এ রেওয়ায়েত ইবনে সাবা এবং ফাকেহানীও বর্ণনা করেন।
▪ আমার সম্মানিত পিতা খাতেমুল মােহাক্কেকীন কুদ্দিসা সিররুহু স্বীয় বিখ্যাত ‘আল কালামুল আওদাহ্ ফী তাফসীরে আলাম নাশরাহ' গ্রন্থে সৈয়দুনা হযরত ইমাম সাখাবী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা পূর্বক উল্লেখ করেন, হজুর সৈয়দে আলম (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
"আল্লাহর একজন ফেরেস্তা রয়েছেন যার একটি বাহু পূর্বপ্রান্তে, আরেকটি বাহু পশ্চিম প্রান্তে। যখন কোন ব্যক্তি আমার প্রতি ভালােবাসা ও মুহাব্বতের সাথে দুরুদ পাঠ করে ঐ ফেরেস্তা পানিতে ডুব দিয়ে স্বীয় ডানা ঝাড়া দেয়। আল্লাহ তায়ালা তার ডানা থেকে ঝরে পরা প্রত্যেক পানির বিন্দু ও ফোঁটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত দুরুদ প্রেরণকারীদের উপর ইস্তেগফার এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।
ঐ গ্রন্থের শেষ পর্যন্ত আরাে সূক্ষ্ম বর্ণনা রয়েছে।
▪ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله)'র "আল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া" কিতাবে রয়েছে,
قدروی آن ثم ملائكة يسبحون فيخلق الله بكل تسبيحة ملكا
অর্থাৎ, কথিত আছে যে, ওখানে কতেক ফেরেস্তা রয়েছে, যারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক তাসবীহ থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।
সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্য এবং ভালাে কর্ম ফেরেস্তা হয়
(১৫) সৈয়দী শেখ আকবর (رحمة الله) ফতুহাতে মক্কীয়ার ২৯৭ তম পরিচ্ছেদে বলেন-
"সৎ বাক্য, উত্তম বক্তব্য এবং ভালাে কর্ম ফেরেস্তা হয়ে আসমানের পানে সমুন্নত হয়।"
(১৬) ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) ‘আল ইয়াওয়াকীত ওয়াল জাওয়াহীর' গ্রন্থের সপ্তদশ অধ্যায়ে বর্ণনা করেন। তার মতে, আল্লাহ তায়ালার বাণী,
اليه يصعد الكلم الطيب والعسل الصالح يرفعه
অর্থাৎ, তাঁর দিকে পৌঁছে পবিত্র কালাম আর যে সৎকর্ম রয়েছে তা তাকে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত করে -এর মর্মার্থ এটাই।
সুরা বাক্বারা ও আল-ইমরানের পুণ্য দ্বারা ফেরেস্তার সৃষ্টি
(১৭) ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) তাযকিরায় ওলামা কিরাম থেকে বর্ণনাকারী।
যে ব্যক্তি সুরা বাক্বারা ও আলে ইমরান পড়েন, আল্লাহ তায়ালা সেই পুণ্য দ্বারা ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। যারা কিয়ামত দিবসে তার (বাকারা ও আলে ইমরান পাঠকারী) পক্ষ হয়ে বাদানুবাদ (তর্ক-বিতর্ক) করবে।
▪ আলফাসী (رحمة الله) “মােতালেয়ল মুসাররাতে এটা বর্ণনা করেন । তাঁর মতে আহমদ ও মুসলিমের হাদীস,
اقرؤا الزهراوين البقرة وآل عمران فانهما تاتيان يوم القيامة كانهما غسامتان أوغایتان او كانهما فرقان من الطير صواف يحاجان عن أصحابهما
অর্থাৎ, সুরা বাকারা ও আলে ইমরান এ উজ্জ্বলতর ও নূরানী সুরদ্বয় পাঠ করাে। কেননা, এ সুরাদ্বয় কিয়ামত দিবসে এমন ভাবেই আসবে যে, যেন দুখন্ড মেঘ অথবা উপর থেকে দু'টি ছায়া প্রদানকারী বস্তু কিংবা কাতারবন্দী পাখিদের দু'টি বৃহৎ দল যারা এ সুরাদ্বয় পাঠকারীদের পক্ষ হয়ে লড়বে' একই মর্মার্থের ।
মানুষের শ্বাস থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি ও তাদের প্রকারভেদ
(১৮) ইমাম আরেফ বিল্লাহ সৈয়দী আবদুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله) মীযানুশ শরীয়াতুল কুবরায় বলেনঃ
اقوى الملائكة واشدهم حياء من مكان مخلوقا من انفاس النساء
অর্থাৎ মানুষের শ্বাস থেকেও ফেরেস্তা সৃষ্টি হয়। আর তম্মধ্যে শক্তিশালী ও অধিক লজ্জাশীল হয় তারাই, যাদেরকে মহিলাদের শ্বাস থেকে সৃষ্টি করা হয়।
▪ মহিলাদের শ্বাস থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি সম্পর্কিত বর্ণনা ‘ফতুহাত শরীফেও ওয়েছে।
এ আঠারটি হাদীস ও বাণী যেগুলােতে ফেরেস্তা সৃষ্টির বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফেরেস্তা দৈনিক প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং এদের সৃষ্টির সিলসিলাহ্ জারী রয়েছে। দৈনিক কতই না অগণিত ফেরেস্তা সৃষ্টি হয় সেগুলাের পরিসংখ্যান সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তাই অধিক জ্ঞাত।
▪ আমি (আহমদ রেজাখান) বলছি,
اغرب القلثانی فزعم أن ملائكة الارض والجو مركبة من الطباع الأربع واشار ان لهم في أجسامهم دما مسفوحا قال في البواقيت قال بعضهم ولعل مراده بهؤلاء الملائكة القاطنين من السماع والارض نوع من الجن سماهم ملاٸکة اصطلاحا له اه ، قلت ومثله غرابا عن ابن عباس رضی الله تعالى عنهما ان من الملائكة قربا يتوالدون يقال لهم الجن ومنهم ابليس کما نقله فی ارشاه الساری وانت تعلم أن عقيدة أهل السنة في الملائكة تنزلهم عن الذكوره والانوثة فان اتوالد واحسن محامله هو مامرمن تسمیة بعض الجن ملکا، واللّٰه تعالی اعلم
অর্থাৎ
▪ কুলসানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, জমিন এবং আসমানের ফেরেস্তা চারটি স্বভাব দ্বারা সংমিশ্রিত। তিনি ইঙ্গিত করেন, তাদের শরীরে প্রবাহিত রয়েছে রক্ত।
▪ ‘ইওয়াক্কীত গ্রন্থে বলেন, কতেক মােহাদ্দেসীনে কিরাম বর্ণনা করেন, "সম্ভবত এর মর্মার্থ হলাে, যারা আসমান ও জমিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ফেরেস্তা। যারা জ্বিনের একটি শ্রেণী। পরিভাষায় যাদের আমরা বলি ফেরেস্তা'।
▪ আমি (আহমদ রেযা খান) বলছি,
এরই অনুরূপ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে। (তারা) সন্তান জন্মদানের কাছাকাছি, তাদের বলা হয় জ্বিন। ইবলিসও এরই অন্তর্ভূক্ত। যেমনঃ
▪ ইরশাদুস সারী (শরহে বুখারী) তে বর্ণিত হয়েছে, আপনারা জেনেছেন যে,
ফেরেস্তা সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হলাে, তারা পুরুষ মহিলা হওয়া থেকে পবিত্র। কেননা- তাদের জন্মদান, উত্তম গর্ভপাত, কতেক জ্বিন ফেরেস্তার নিদর্শন হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা অতিবাহিত হয়েছে। আল্লাহই অধিক অভিজ্ঞ।
মৃত্যু রহস্য এবং অবস্থা
এখন অবশিষ্ট রইলাে, তাদের মৃত্যু রহস্য এবং অবস্থা সম্পর্কে।
▪ ইমাম ওলীউদ্দীন ইনকী (رحمة الله) থেকে ‘আসয়ালায়ে মক্কীয়া' গ্রন্থে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দেন,
لم يثبت في ذالك شٸ ولا يجوز الهجوم عليه بمجرد الاحتمال ولا مجال للنظر فیه ولا دخل للقیاس
অর্থাৎ এ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যায় নি। কেবল অনুমান ও সন্দেহের উপর ভিত্তি করে এ সম্পর্কে কিছু বলা যায় না। এখানে না দৃষ্টির কোন স্থান রয়েছে, আর না অনুমানের কোন দখল আছে।
▪ এটা বর্ণনা করেছেন, আল্লামা ফাসী (رحمة الله) "মাতালেয়ুল মুসাররাতে'।
▪ বরং হযরত শেখ আকবর (رحمة الله) তাে ফেরেস্তাদের রুহের ন্যায় স্বীকার করেন যে, এর কোন অস্তিত্ব ছিলাে না। যখন হয়েছে তখন তা সর্বাবস্থায় থাকবেন। কেননা, রুহের কোন মৃত্যু আসে না। ফতুহাত শরীফের ৫১৮ তম পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,
انه ليس للملاٸکة اخرة هو ذالك انهم لا یموتون فیبعثون وانما هوصعق افاقة کالنوم والافاقة منه عندنا ذالك حال لا يزال عليه المسكن في التجلی الاجمال دنيا واخرة الخ
এ বর্ণনা [আল-ইওয়াক্কীত ওয়াল জাওয়াহেরে] উল্লেখ আছে। আমি বলছি, এ মাসয়ালা ফেরেস্তার নির্জনতা এবং শারিরীকতা উভয়ের উপর প্রযােজ্য হওয়াও সম্ভবপর। যা তাদের একাকী আত্মা স্বীকার করে। যেমনঃ
▪ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী (رحمة الله) প্রমুখ এরই উপর ভিত্তি করে ফেরেস্তার মৃত্যু কখনও হয়না, শরীরের মৃত্যুই হয়ে থাকে অর্থাৎ রুহ বা আত্মা তার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া এক বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
আর ফেরেস্তাকে اجسام لطیفة (সূতার শরীরও বলা হয়) যার সাথে পবিত্রতাসমূহের সম্পর্ক রয়েছে। যেমনঃ
জমহুর আহলে সুন্নাতের অভিমত এ সম্পর্কে শত শত প্রমাণও রয়েছে। তাঁদের মতে, ফেরেস্তার সাথে মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই, এটাই জাহেরী আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায়। হাদীসসমূহে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এটাই বিশুদ্ধ এবং গ্রহণযােগ্য অভিমত।
▪ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- کل نفس ذاٸقة الموت
অর্থাৎ প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।
২. পারা- ৪, রুকু-১, সুরা আলে ইমরান ১৮৫।
▪ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। যখন আল্লাহ তায়ালার বাণী- کل من علیها فان
অর্থাৎ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
(1) অবতীর্ণ হয় যে, যমিনে যেসব কিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। ফেরেস্তারা বলেন, জমিনের অধিবাসীরা মৃত্যুবরণ করবে।
অর্থাৎ, আমরা (মৃত্যু থেকে) নিরাপদ।
(🔺1) [সুরা রাহমান ২৭ পারা, ১২ রুকু]
▪ যখন এ আয়াত- کل نفس ذاٸقة الموت নাজিল হয়,
তখন ফেরেস্তারা বলেন, এখন আমরাও মৃত্যুবরণ করবাে। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (رحمة الله) এ বক্তব্য ‘মাফাতিহুল গায়বে' উল্লেখ করেন।
▪ ইমাম ইবনে জরীর (رحمة الله) তার থেকে বর্ণনা করেন,
وكل ملك الموت بقبض أرواح المؤمنين والملائكة
"অর্থাৎ মালাকুল মওত (মৃত্যুর ফেরেস্তা) মুসলমান এবং ফেরেস্তাদের রুহ কবজ করার জন্য নির্ধারিত আছেন।
▪ এ ছাড়াও ইমাম ইবনে জরীর (رحمة الله), আবু শেখ (رحمة الله) প্রমুখ একটি দীর্ঘ হাদীস হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলে খােদা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান- اخراهم موتا ملك الموت
অর্থাৎ, ফেরেস্তাদের মধ্যে সর্বশেষে মালাকুল মওত (আযরাঈলের) মৃত্যু হবে।
▪ বায়হাকী (رحمة الله) ও ফারইয়াবী (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه)'র সূত্রে একটি হাদীসে হুযুর (ﷺ) থেকে তাদের মৃত্যুর পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন-
"যখন সব ফেরেস্তা ধ্বংস হয়ে যাবে, তখনও জিব্রাইল (عليه السلام), মীকাঈল (عليه السلام)এবং আযরাইল (عليه السلام)(মৃত্যু ফেরেস্তা) অবশিষ্ট থেকে যাবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন,
হে মালাকুল মওত! এখন কে কে বেঁচে আছে।
নিবেদন করবেন,
وبقي وجهك الباقي الدائم وعبدك جبرائيل وميكائيل وملك الموت
অর্থাৎ অবশিষ্ট রয়েছেন আপনার পবিত্র চেহারা মােবারক যা চিরঞ্জীব এবং আপনার জিব্রাঈল, মীকাঈল এবং মালাকুল মওত।
নির্দেশ হবে, تغرف نفس میکاٸیل
অর্থাৎ- মীকাঈলের রুহ কবজ করাে, তিনি বৃহত্তর পাহাড়ের মত করবেন, অতঃপর বলবেন, "এবং তিনিই অধিক অবিহিত।"
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করবেন,
এখন কে বাকী আছে? মালাকুল মওত আরয করবেন,
وجهك الباقي وعبدك جبرائيل وملك الموت
আপনার মােবারক চেহারা যা চিরস্থায়ী আর আপনার বান্দা জিব্রাঈল এবং আযরাঈল।
তিনি বলবেন, تغرف نفس جبراٸیل
(জিব্রাঈলের রুহ কবজ করো) তিনি স্বীয় ডানাসমূহ বিছিয়ে সিজদায় পড়ে যাবেন অতঃপর বলবেন "এবং তিনিই ভালাে শুনেন।"
এখন কে জীবিত আছে? নিবেদন করবেন-
وجهك الکریم وعبدك ملك الموت وهو میت
(আপনার মােবারক চেহারা যা চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আপনার বান্দা আযরাঈল। তিনিও মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবেন।)
ইরশাদ হবে, منت (মরে যাও) তিনিও মৃত্যুবরণ করবেন।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা বলবেন,
প্রারম্ভ আমি, আমি মাখলুক সৃষ্টি করেছি অতঃপর আমি পুনরায় তাদের জীবিত করবাে। কোথায় দাম্ভিক রাজা বাদশাহ, যারা রাজত্বের দাবী করতাে। জবাব দেওয়ার কেউ থাকবে না। তিনি নিজেই বলবেন- للّٰه الواحد القهّار
(আজ সমস্ত বাদশাহী। আল্লাহর জন্য)
▪ ফারইয়াবীর মতে- ان اخرهم سوتا جبراٸیل واللّٰه تعالی اعلم
অর্থাৎ, ফেরেস্তাদের মধ্যে সর্বশেষে হযরত জিব্রাঈলের মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহই অধিক অভিজ্ঞ।
▪ অতঃপর আমি বলছি, এ হাদীস থেকে বুঝা গেলো যে, নৈকট্যবান ফেরেস্তারা কিয়ামত দিবসে বেঁচে থাকবেন। আর ৬ নং হাদীসে সৈয়দুনা হযরত মাওলা আলী মুরতাদা (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় অতিবাহিত হয়েছে যে, এ অসংখ্য ফেরেস্তা যেগুলাে দৈনিক সৃষ্টি হচ্ছে তারা কিয়ামত পর্যন্ত ফেরেস্তাদের সাথে উড়বে-চলাফেরা করবে।
▪ আর ১৪ নং হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে,
ফেরেস্তা কিয়ামত পর্যন্ত দুরুদ পাঠকারীদের উপর দুরুদ প্রেরণ করেন।
▪ সাখাবী (رحمة الله)'র বর্ণনায় অতিবাহিত হয়েছে যে,
তাদের ডানার ফোঁটাসমূহ থেকে যেসব ফেরেস্তা সৃষ্টি হয়, কিয়ামত পর্যন্ত তারা দুরুদ পাঠকারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
▪ প্রত্যেক মুসলমানের সাথে যেসকল কাতেবীন (আমলনামা লেখক ফেরেস্তা) রয়েছে, তাদের সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে,
তারা মুসলমানের মৃত্যুর পর আসমানের উপর যায় এবং সেখানে বসবাস করার অনুমতি প্রার্থনা করে। নির্দেশ হয়, আমার আসমান আমার ফেরেস্তাদের দ্বারা পরিপূর্ণ রয়েছে। তারা আমার তাসবীহ পাঠ করছে। এরপর থাকার আবেদন করলে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
ولكن قوما على قبر عبدی سبحانی و هللانی وکبراني الى يوم القيامة واکتباه لعبدی
অর্থাৎ, আমার বান্দার কবরে দাঁড়িয়ে কিয়ামত পর্যন্ত আমার তাসবীহ তাহলীল এবং তাকবীর পাঠ করাে এবং এর সাওয়াব ও পূণ্য আমার বান্দার জন্য লিখতে থেকো।
👉এটা ইমাম আবু নাঈম (رحمة الله) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)'র সূত্রে,
👉ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) 'বাস' গ্রন্থে এবং
👉ইমাম ইবনে আবীদ দুনইয়া (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন।
এভাবে আরাে অনেক হাদীস রয়েছে যেগুলাে দ্বারা ফেরেস্তাগণ কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকাই প্রমাণিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে কোন হাদীসে আসেনি যে,
কোন ফেরেস্তার মৃত্যু হয়েছে।
বরং উপরােক্ত বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস সাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু'র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যদ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, کل نفس ذاٸقت الموت
"(প্রত্যেক আত্মা মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে)
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেস্তাদের খবরই ছিলাে না যে, তাদেরও মৃত্যু হবে।"
সুতরাং, প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট বক্তব্য হলাে, কিয়ামতের পূর্বে ফেরেস্তাদের মৃত্যু হবে না।
▪ বরং জুয়ায়বর (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত নেন। তিনি মানুষ, জ্বিন এবং জীব-জন্তুর মৃত্যু বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
والملائكة يموتون في الصعقة الاولى وان ملك الموت يقبض ارواحهم ثم بموت
অর্থাৎ, ফেরেস্তারা সে সময় মৃত্যুবরণ করবে যখন সিংগায় প্রথম ফুৎকার দেয়া হবে। মালাকুল মাওত তাদের রুহ কবজ করবেন অতঃপর তিনিও মৃত্যুবরণ করবেন।
▪ হাদীসটি উদ্দেশ্য ও দাবীর সমর্থনে সুস্পষ্ট প্রমাণ হতে পারবে.
لولا ما في جويبر من ضعف قوی ولا جویبر
আল্লাহ তায়ালাই অধিক অভিজ্ঞ।
সমাপ্তি সাধন
◾প্রবন্ধটি শেষ করার পর ইমাম আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী মালেকী (رحمة الله) এর ফতোয়ায়ে হাদীসিয়ায় ফেরেস্তা এবং ‘হুরে ঈন সম্পর্কে একটি ফতােয়া দৃষ্টিগােচর হয়েছে, তিনি (ইমাম আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী মালেকী (رحمة الله) এতে ফেরেস্তার মৃত্যু সম্পর্কে ইজমা (ঐকমত্য) বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন,
الملايكة فيموتون بالنصوص والاجاع ویتولی قبض ارواحهم ملك الموت ویموت ملك الملوت بلاسلك الموت
"অর্থাৎ, অবশিষ্ট আছে ফেরেস্তা। অতঃপর এরাও মৃত্যুবরণ করবে। একথা নস্ (স্পষ্ট হাদিসের বাণী) এবং ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। আর তাদের রুহ মালাকুল মাওত কবয করবে এবং মালাকুল মওতও মৃত্যুবরণ করবে।"
তার বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, ফেরেস্তার মৃত্যু সিংগা ফুকের মাধ্যমেই হবে, আরবহনকারী ফেরেস্তা এবং চারজন নৈকট্যবান ফেরেস্তা ব্যতীত।
কেননা, তাঁরা সবার পরেই ইনতেকাল করবেন। এর আরবী বক্তব্য নিম্নরূপঃ
حيث قال في الفتوى المتعلقة بالملائكة بالنفخ في الصور يموتون الا حسلة العرش وجبرائیل واسرافیل ومیکاٸل وملك الموت ثم يموتون اثر ذالك
আর ফেরেস্তা সৃষ্টি সম্পর্কে এটা স্পষ্ট করে বলেন যে, ফেরেস্তাগণ একবারে সৃষ্টি হয়নি, বরং তাদের সৃষ্টি কয়েকবার হয়েছে।
حيث قال ظاهر السنة أن الملائكة لم يخلقوا دفعة واحدة
অতঃপর হাদীস সমুহ, যাতে আমরা রয়েছি অর্থাৎ, ফেরেস্তা সৃষ্টির মাসয়ালা যা আলােচ্য বিষয়, এ সম্পর্কে কেবল সাতটি বর্ণনা করেছি। যাতে পাঁচটিতে ২,৩,৯,১২ এবং ১৩-এ তাই বর্ণিত হয়েছে।
দুটি তো তরতাজা যা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله)'র ফয়েয এবং রুহানী দোয়ার বরকতে। এ আঠারটি হাদীসে এ দু'টি সহ যােগ করে বিশটি হিসেবে গণ্য করুন।
আল্লাহরই জন্য সকল প্রশংসা।
(১৯) আবুশ শেখ (رحمة الله) ওহাব ইবনে মুনিব্বাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনাকারী,
قال ان الله نهرا في الهواء يسمع الارضين كلها سبع مرات فينزل على ذلك النهر الملك من الماء فیسلوه وید ما بين اطرافه ثم يغسل منه فاذا خرج منه قطر منه قطرات من نور فيخلق الله من كل قطرة سنها سلکا سبع الله بجمیع تسبيح الخلائق كلهم
"অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার জন্য বাতাসে (শূন্যে) একটি নহর রয়েছে। যাতে (এমন) সপ্ত জমিন একত্রে সাতবার স্থান পূর্ণ করতে পারবে। এ নহরে আসমান থেকে এটি ফেরেস্তা অবতীর্ণ হয়। যিনি নিজ শরীর দ্বারা ঐ নহর পূর্ণ করে দেন এবং এর আশ-পাশ বন্ধ করে দেন। অতঃপর এতে গােসল করেন। যখন বাইরে আসেন তার থেকে নূরের ফোঁটা ছিটিয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিন্দু ও ফোঁটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। যারা সকল মাখলুকের তাসবীহ দ্বারা তাসবীহ পাঠ করেন।"
(২০) আ'লা ইবনে হারুনের (رحمة الله)'র বর্ণনায় আছে,
قال لجبرانيل كل يوم انغساس في الكوثر ثم ينتفض فكل قطرة یحلق منها ملك
হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) দৈনিক কাউছারে ডুব দিয়ে ডানা মেলে দেয় যার প্রত্যেক ফোঁটা ও বিন্দু থেকে একেকজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি হয়।
এরপর আল্লাহর প্রশংসায় আরেকটি হাদীস আমার স্মরণে এসেছে।
◾ইবনে আবিদ দুনিয়া (رحمة الله) এবং আবু শেখ (رحمة الله)“কিতাবুস সওয়াবে'
➡ হযরত ইমাম জাফর সাদেক (رضي الله عنه)-এর সুত্রে,
➡ তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা থেকে,
➡ তিনি তাঁর মহামান্য পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন,
➡ রাসূলে সৈয়দে আলম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
ما ادخل رجل عن مزمن سرورا الاخلق الله عزوجل من ذلك السرور ملكا بعبد الله عزوجل ويوحده فاذا صار العبد في قبره ایاه ذالك السرور
"যে কেউ কোন মুসলমানকে সন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তায়ালা ঐ খুশী, সন্তুষ্টি এবং আনন্দ থেকে একজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন।
`যিনি আল্লাহর ইবাদত, দাসত্ব এবং একত্বের স্বীকৃতি দিতে থাকবেন। যখন ঐ বান্দা কবরে যায়, এ ফেরেস্তা তার কাছে এসে বলেন, আমাকে কি চিনেন? আমি ঐ আনন্দ যা আপনি অমুক মুসলমানের হৃদয়ে প্রবেশ করে দিয়েছিলেন।
`আজ এ ভয়-ভীতি এবং নির্জনে আমি আপনাকে আপ্যায়ন করাবো,
`আপনাকে প্রশ্নের জবাব শিখিয়ে দেবাে এবং
`ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত করবো,
`আর কিয়ামতের দিন আপনার সাথে থাকবাে এবং
`আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনার পক্ষে সুপারিশ করবাে,
`আর জান্নাতে আপনার স্থান আপনাকে দেখাবো।"
মােট কথা; আরশ আজীমের বাদশাহ কতই মাহাত্ম্যপূর্ণ, কতই মহান ফেরেস্তা এবং পবিত্র রুহের প্রতিপালক, কতই সুন্দরতম সকল সৃষ্টি থেকে মুহাম্মদ (ﷺ) কে নির্বাচনকারী দয়াময় খােদা!
وصلے الله تعالى عليه وعلى آله وصحبه و بارك وكرم . والله سبحانه وتعالی اعلم وعلمه جل مجدہ اتم واحكم -
সমাপ্ত