❏ ইছালে সওয়াবের ব্যাপারে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত
❍ হিজরী ৯ম শতাব্দির মুজাদ্দিদ ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন:
قال السيوطي وقد نقل غير واحد الإجماع على ان الدعاء ينفع الميت
-“ইমাম ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন: দোয়া যে মৃত ব্যক্তির পক্ষে উপকারী বহু আলিম এ বিষয়ের উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।” (তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৩ পৃ:)
❍ এ বিষয়ে হাফিজ ইবনে তাইমিয়া এর অভিমত হচ্ছে:-
أَمَّا الصَّدَقَةُ عَنْ الْمَيِّتِ فَإِنَّهُ يَنْتَفِعُ بِهَا بِاتِّفَاقِ الْمُسْلِمِينَ وَقَدْ وَرَدَتْ بِذَلِكَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَادِيثُ صَحِيحَةٌ.
-“মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা করলে সকল মুসলমানের ঐক্যমতে ইহা দ্বারা সে উপকৃত হবে। আর এ বিষয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে একাধিক ছহীহ্ হাদিস রয়েছে।” (মজমুয়ায়ে ফাতুয়া, ২৪তম জি: ১৭৭ পৃ:)
ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) ও হাফিজ ইবনে তাইমিয়া এর বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে কোন নেক আমল করে দোয়া করলে ও সওয়াব রেছানী করলে ইহা দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং তার কবরের আযাব লাগব হয়। আর ব্যাপারে সকল মুসলমানদের ইজমায়ে উম্মত সংগঠিত হয়েছে।
❍ এর সম্পর্কে আল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী তথা ছাহেবে খাজেন (رحمة الله) বলেন:-
وفي الحديثين الآخرين دليل على أن الصدقة عن الميت تنفع الميت ويصله ثوابها. وهو إجماع العلماء.
-“এ সম্পর্কে অনেক হাদিসে দলিল আছে যে, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির পক্ষে সদকা করলে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় এবং ইহার সওয়াবও তার কাছে পৌছে। আর ইহার উপর উলামাগণের ইজমা বা ঐক্যমত হয়েছে।” (তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ২১৩ পৃ:)
অতএব, মৃত ব্যক্তিদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা বৈধ, এ বিষয়ে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত হয়েছে। ইহার বিপরীতে প্রকাশ্য গোমরাহী বা কুফূরী।
❏ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ছানআনী (رحمة الله) এর অভিমত
বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ছানআনী (رحمة الله) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
وَذَهَبَ جَمَاعَةٌ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْحَنَفِيَّةِ إلَى أَنَّ لِلْإِنْسَانِ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ صَلَاةً كَانَ أَوْ صَوْمًا أَوْ حَجًّا أَوْ صَدَقَةً أَوْ قِرَاءَةَ قُرْآنٍ أَوْ ذِكْرًا أَوْ أَيَّ أَنْوَاعِ الْقُرَبِ وَهَذَا هُوَ الْقَوْلُ الْأَرْجَحُ
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হানাফিরা বৈধ হিসেবে গ্রহণ করেছেন যে, লোকেরা যদি অন্যের জন্য সওয়াব নির্ধারণ করে যেমন নামাজ অথবা রোজা অথবা হজ্ব অথবা সদকা অথবা কোরআন তেলাওয়াত অথবা জিকির অথবা যেকোন নৈকট্যশীল আমল। আর এই বক্তব্য হল অধিক গ্রহণযোগ্য।” (সুবুলুছ ছালাম শরহে বুলুগুল মারাম, ১ম খন্ড, ৫০৯ পৃ:)
সুতরাং জিবীতদের নেক আমলের সওয়াব রেছানীর দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা কবর থেকে উপকৃত হয়।
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর অভিমত
❍ এ সম্পর্কে ১১শ শতাব্দির মুজাদ্দেদ, হানাফী মাজহাবের উজ্জল নক্ষত্র আল্লামা ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه) বলেন:
وَقَالَ عُلَمَاؤُنَا: الْأَصْلُ فِي الْحَجِّ عَنِ الْغَيْرِ أَنَّ الْإِنْسَانَ لَهُ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ مِنَ الْأَمْوَاتِ وَالْأَحْيَاءِ، حَجًّا أَوْ صَلَاةً، أَوْ صَوْمًا أَوْ صَدَقَةً، أَوْ غَيْرَهَا كَتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ وَالْأَذْكَارِ، فَإِذَا فَعَلَ شَيْئًا مِنْ هَذَا، وَجَعَلَ ثَوَابَهُ لِغَيْرِهِ جَازَ، وَيَصِلُ إِلَيْهِ عِنْدَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ.
-“আমাদের উলামাগণ বলেছেন: মূলত হজ্ব অন্যের পক্ষ থেকে আদায় করা যায়, নিশ্চয় লোকেরা তাদের নিজেদের মৃত ব্যক্তি ও জীবিতদের জন্য সওয়াব নির্ধারণ করতে পারবে, হজ্ব, নামাজ, রোজা, সদকা ও অন্যান্য কিছু যেমন কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার এগুলোর। যখন সে এরূপ কোন আমল করবে ও অন্যদের জন্য ইহার সওয়াব নির্ধারণ করবে ও তাদের প্রতি ইহা পৌছিয়ে দিবে, তাহলে এরূপ কাজ করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে জায়েয হবে।” (ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১০ম খন্ড, ৬৯ পৃ:)
অতএব, জিবীতদের যাবতীয় নেক আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তিরা উপকার লাভ করে। আর এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অবস্থান।
❏ হানাফী ফোকাহাদের অভিমত
❍ ছাহেবে হেদায়া আল্লামা মুরগেনানী (رحمة الله), আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী (رحمة الله) ইমাম তাহতাভী (رحمة الله) বলেছেন,
الإنسان له أن يجعل ثواب عمله لغيره صلاة او صوما او صدقة او غيرها عند اهل السنة والجماعة
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে নিশ্চয় লোকেরা তাদের নিজেদের জন্য অন্য লোকের আমলকৃত নামাজ, রোজা, সদকা ও অন্যান্য আমলের সওয়াব নির্ধারণ করতে পারবে।” (হেদায়া রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ: তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:)
সুতরাং ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ তথা জান্নাতী দলের আকিদা হল, জীবিত মুসলমানগণ তাদের মৃতদের আত্বার শান্তির জন্য কিংবা অন্য জীবিতদের আমল নামায়ও তাদের আমলের সওয়াব রেছানী বা বকশিস করতে পারবে। উল্লেখ্য যে, কোন নেক আমল করার জন্য একটি জয়ীফ হাদিসই যথেষ্ঠ। কোন ফকিহ্ এর ফাতওয়া আমল করতে গিয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিসকে বাদ দেওয়া যাবেনা।
❍ কেননা ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর মাজহাব হচ্ছে,
قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.
-“আবু মুহাম্মদ ইবনে হাজম বলেছেন: সকল হানাফীরা ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, ইমামে আজম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মাজহাব হল: নিশ্চয় জয়ীফ হাদিস তার কাছে কিয়াস ও ইজতেহাদী রায় হতেও উত্তম।”
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৩য় খন্ড, ৯৯০ পৃ: ৪৪৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়)
অতএব, রাসূলে পাক (ﷺ) এর হাদিসকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে, এটাই হক্বপন্থি উলামায়ে কেরাম অভিমত।
❏ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এর অভিমত
বিখ্যাত হানাফী মাজহাবের অন্যতম ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তদীয় ফাতওয়ার কিতাবে এলছেন,
وَفِي شَرْحِ اللُّبَابِ وَيَقْرَأُ مِنْ الْقُرْآنِ مَا تَيَسَّرَ لَهُ مِنْ الْفَاتِحَةِ وَأَوَّلِ الْبَقَرَةِ إلَى الْمُفْلِحُونَ وَآيَةِ الْكُرْسِيِّ وَآمَنَ الرَّسُولُ وَسُورَةِ يس وَتَبَارَكَ الْمُلْكُ وَسُورَةِ التَّكَاثُرِ وَالْإِخْلَاصِ اثْنَيْ عَشَرَ مَرَّةً أَوْ إحْدَى عَشَرَ أَوْ سَبْعًا أَوْ ثَلَاثًا، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ أَوْصِلْ ثَوَابَ مَا قَرَأْنَاهُ إلَى فُلَانٍ أَوْ إلَيْهِمْ.
-“শরহে লুভাব গ্রন্থে আছে, আর কোরআন থেকে যতটুকু ইচ্ছা তেলাওয়াত করবে, সূরা ফাতেহা থেকে সূরা বাকারার ‘মুফলিহুন’ পর্যন্ত ও আয়াতুল কুরছী, আমানার রাসূল, সূরা ইয়াছিন, তাবারাকাল মুল্ক, সূরা তাকাছুর, সূরা ইখলাছ ১২ বার অথবা ১০ বার, অথবা ৭ বার, অথবা ৩ বার। তারপর বলবে: হে আল্লাহ আমি যা কিছু পাঠ করলাম ইহা সওয়াব ‘অমুক’ ব্যক্তি বা ‘অমুক ব্যক্তিদের’ রুহে পৌছিয়ে দাও।” (শরহে লুভাব ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড, ১৫১ পৃ:)
এই দলিল দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, যে কোন সূরা বা আয়াত তেলাওয়াত করে ইহা মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি মৃত ব্যক্তি এক বা একাধিক হলেও অসুবিধা নেই।
কবরস্থানে তেলাওয়াত করে সওয়াব রেছানী করা
কবরস্থানে কোরআন পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রুহে পৌছানোর ব্যাপারে একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। নিচে রেওয়ায়েত গুাে সনদসহ উল্লেখ করা হল।
❍ ইমাম আবু মুহাম্মদ হাছান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাছান বাগদাদী খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৪৩৯ হিজরী তদীয় কিতাবে হাদিস উল্লেখ করেন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ شَاذَانَ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَامِرٍ الطَّائِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي، ثنا عَلِيُّ بْنُ مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، مُوسَى عَنْ أَبِيهِ، جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَلِيٍّ، عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَرَّ عَلَى الْمَقَابِرِ وَقَرَأَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ إِحْدَى عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ وَهْبَ أَجْرَهُ لِلْأَمْوَاتِ أُعْطِيَ مِنَ الْأَجْرِ بِعَدَدِ الْأَمْوَاتِ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করল এবং ১০ বার সূরা এখলাছ পাঠ করে মৃতদের রুহে দান করল, তাতে মৃতদের সংখ্যা অনুসারে সওয়াব প্রদান করা হবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・ফাদ্বাইলে সুরাতিল ইখলাছ, হাদিস নং ৫৪
・ইহা “আবূ মুহাম্মদ সমরকান্দী র:” বর্ণনা করেছেন তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ:
・সুনানে দারে কুতনী, আনাস রা: হতে
・তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:
・ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩য় খন্ড, ১১৮ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৭১৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যা
・তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
・ইমাম আবু বকর নাজ্জার তদীয় সুনানে
❍ এর আরেকটি সনদ আল্লামা আবুল কাশেম রাফেয়ী ফাজুনী (رحمة الله) ওফাত ৬২৩ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
ثنا داؤد بْنُ سُلَيْمَانَ الْغَازِيُّ أَنْبَأَ عَلِيُّ بْنُ مُوسَى الرِّضَا حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ جَعْفَرَ بْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ:
(তাদবীর ফি আখইয়ারে কাজবীন, ২য় খন্ড, ২৯৭ পৃ:)
এই হাদিস কবর যিয়ারতের সময় সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে সওয়াব রেছানী করার উত্তম দলিল। সুতরাং কবর যিয়ারতকালে সূরা ইখলাছ পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
❍ এ ব্যাপারে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
أَخْرَجَ أَبُو الْقَاسِمِ سَعْدُ بْنُ عَلِيٍّ الزَّنْجَانِيُّ فِي فَوَائِدِهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ ثُمَّ قَرَأَ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ وَقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَأَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ ثُمَّ قَالَ إِنِّي جَعَلْتُ ثَوَابَ مَا قَرَأْتُ مِنْ كَلَامِكَ لِأَهْلِ الْمَقَابِرِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ كَانُوا شُفَعَاءَ لَهُ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى
“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ফাতেহা, সূরা ইখলাছ ও সূরা তাকাছুর পাঠ করে বলবে: আমি যা পাঠ করলাম তা মুমিন কবর বাসীদের দান করলাম, তবে তারা সকলেই আল্লাহর দরবারে তার জন্য সুপারিশ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
・আবুল কাশিম সাদ ইবনে আলী র: স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・আল ইস্তেজকার, ১ম খন্ড, ১৮৪ পৃ:
・আত তামহিদ, ২০তম খন্ড, ২৪১ পৃ:
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৭১৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়
・মাসালিক শরহে মুয়াত্তা, ২য় খন্ড, ৯৭ পৃ:
・আব্দুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
এই হাদিসেও কবর যিয়ারতের সময় সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে মৃতদের আত্বায় সওয়াব বকশিস করার সুন্দর দলিল। অথচ ওহাবীরা এগুলো চোখ থাকতেও দেখেনা।
❍ এবার আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
وأخبرني الحسين بن محمد الثقفي قال: حدّثنا الفضل بن الفضل الكندي قال: حدّثنا حمزة بن الحسين بن عمر البغدادي قال: حدّثنا محمد بن أحمد الرياحي قال: حدّثنا أبي قال: حدّثنا أيوب بن مدرك عن أبي عبيدة عن الحسن عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ فَقَرَأَ سُورَةَ يس خَفَّفَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَكَانَ لَهُ بِعَدَدِ مَنْ فِيهَا حَسَنَاتٌ
“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যদি কেউ কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াছিন পাঠ করলে আল্লাহ তা’লা এর ফলে কবর বাসীদের শাস্তি হালকা করে দেন। এবং ঐ ব্যক্তিকে নেকী দান করবেন কবরবাসীদের সংখ্যানুসারে।”
তথ্যসূত্রঃ
・তাফছিরে ছা’লাভী, ৮ম খন্ড, ১১৯ পৃ:
・আব্দুল আজিজ তাঁর ‘খিলাল’ গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে বর্ণনা করেছেন
・ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খন্ড
・তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০৫ পৃ:
・ফতোয়ায়ে বাহরুর রায়েক্ব, ২য় খন্ড, ৩৪৩ পৃ:
・ইমাম কুরতুবী: আত তাজকিরা, ১ম খন্ড, ৮৪ পৃ:
・তাহতাবী শরীফ, ৬২১ পৃ:
・আল আমরু বিল মারুফ ওয়াননাহি আনিল মুনকার লিল খিলাল, ১ম খন্ড, ৯০ পৃ:
・ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ৩য় খন্ড, ১১৮ পৃ:
・ইমাম মোল্লা আলী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ১২২৮ পৃ:
・মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ:
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর যিয়ারতের সময় সূরা ইয়াছিন পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া অনেক নেকীর কাজও বটে।
❍ এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন, ফকিহ তবকার তাবেঈ হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) বলেছেন,
أَخْبَرَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ هَاشِمٍ الْبَغَوِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سِنَانٍ الْمَرْوَزِيُّ أَبُو مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى السِّينَانِيُّ، عَنْ شَرِيكٍ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: لَا بَأْسَ بِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ فِي الْمَقَابِرِ
-“হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) বলেছেন: কবরস্থানে ক্বেরাত পাঠে কোন অসুবিধা নেই।”
তথ্যসূত্রঃ
・ইমাম আবু বকর ইবনে খিলাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:
・ইমাম আবু বকর খাল্লাল বাগদাদী: আমরি বিল মারুফ ওয়ান নাহি আনিল মুনকার, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:
❍ প্রখ্যাত ফকিহ তাবেঈ হযরত ইব্রাহিম নাখয়ী (رحمة الله) স্পষ্ট বলেছেন, কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা বৈধ। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত লক্ষ্য করুন,
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ نَافِعِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ مَسْعُودِ بْنِ الْحَكَمِ، عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ عِنْدَ الْقَبْرِ ثُمَّ جَلَسَ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কবরের কাছে দাঁড়াতেন অত:পর বসতেন।”
তথ্যসূত্রঃ
(মুছান্নাফু আব্দির রাজ্জাক, হাদিস নং ৬৩১৪)
❍ উল্লেখিত হাদিস সমূহ সম্পর্কে মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তদীয় কিতাবে বলেন:
وَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً فَمَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لِذَلِكَ أَصْلًا
-“এই হাদিস গুলো যদিও জয়ীফ তথাপিও একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে দলিল হয়ে ভিত্তি প্রমাণিত হয়।” (আব্দুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খন্ড, ২৭৫ পৃ: ৬৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
এই হাদিস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর যিয়ারতের সময় সূরা ইয়াছিন পাঠ তথা কোরআন পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া অনেক নেকীর কাজও বটে। অনেকে বলে থাকেন, কবর যিয়ারতকালে সূরা ইয়াছিন, সূরা ইখলাছ, সূরা তাকাছুর, ইত্যাদি পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশানোর হাদিস গুলো জয়ীফ। তাদেরকে বলতে চাই, কবর যিয়ারত একটি নেক আমল, আর সকল ইমামের মতে আমলের ক্ষেত্রে জয়ীফ হাদিস গ্রহণযোগ্য।
❏ কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর অভিমত
হাফিজুল হাদিস ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফয়ী (رحمة الله) কবস্থানে কোরআন পাঠে বিষয়ে স্পষ্ট ফাতওয়া প্রদান করেছেন। যেমন
❍ ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৩১১ হিজরী তদীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন,
أَخْبَرَنِي رَوْحُ بْنُ الْفَرَجِ، قَالَ: سَمِعْتُ الْحَسَنَ بْنَ الصَّبَّاحِ الزَّعْفَرَانِيَّ، يَقُولُ: سَأَلْتُ الشَّافِعِيَّ عَنِ الْقِرَاءَةِ عِنْدَ الْقَبْرِ فَقَالَ: لَا بَأْسَ بِهِ
“হাছান ইবনে ছাব্বাহ জাফারানী বলেন আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে কবরের কাছে কোরআন পাঠের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই।”
তথ্যসূত্রঃ
(ইমাম আবু বকর খিলাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:)
লক্ষ্য করুন, ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) দৃষ্টিকে কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা বৈধ তথা জায়েয ও কোন অসুবিধা নেই।
❏ কবরস্থানে কোরআন পাঠ সম্পর্কে ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর অবস্থান
হাফিজুল হাদিস অথবা হাকিম, ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) কবরস্থানে কোরআন পাঠ করা সমর্থন করতেন। যেমনঃ
❍ ইমাম আবু বকর ইবনে খাল্লাল (رحمة الله) ওফাত ৩১১ হিজরী তদীয় কিতাবে আরো বর্ণনা করেছেন,
أَخْبَرَنِي الْحَسَنُ بْنُ الْهَيْثَمِ الْبَزَّازُ، قَالَ: رَأَيْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يُصَلِّي خَلْفَ رَجُلٍ ضَرِيرٍ يَقْرَأُ عَلَى الْقُبُورِ
-“হাছান ইবনে হায়ছাম বাজ্জায বলেন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) কে দেখলাম তিনি অনটনে একজন ব্যক্তির পিছনে নামাজ আদায় করলেন ও কবরের কাছে কোরআন পাঠ করলেন।”
(ইমাম আবু বকর খাল্লাল: কিরায়াতু ইন্দাল কুবুর, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ:)
সুতরাং ইমাম আহম বিন হাম্বল (رحمة الله) নিজেই কবরস্থানে কোরআন পাঠ করেছেন। অতএব, এরুপ আমল করা মুস্তাহাব।
❏ হানাফী মাজহাবের অভিমত
হানাফী ফোকাহাদের অনেকে কবরের কাছে কোরআন পাঠের বিষয়ে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেছেন। তবে হানাফী ফোকাহাদের অনেকে ইহার পক্ষে ইতিবাচক ফাতওয়া প্রদান করেছেন। যেমনঃ
❍ হানাফী মাযহাবের একটি ফাতওয়া হল, ইমাম আবু বকর ইবনে আলী যুবাইদী হানাফী (رحمة الله) ওফাত ৮০০ হিজরী বলেছেন,
وَيُسْتَحَبُّ إذَا دُفِنَ الْمَيِّتُ أَنْ يَجْلِسُوا سَاعَةً عِنْدَ الْقَبْرِ بَعْدَ الْفَرَاغِ بِقَدْرِ مَا يُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقَسَّمُ لَحْمُهَا يَتْلُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ لِلْمَيِّتِ.
-“মুস্তাহাব হল, যখন মায়্যেতের দাফন শেষ হবে তখন তার কাছে সামান্য অবস্থান করবে, যতটুকু সময় কোরবানী করে ইহার গোস্ত ভাগ করে বিতরন করতে সময় লাগে। সেই সময়টা কোরআন পাঠ করবে ও মৃতের জন্য দোয়া করবে।”
(জাওহারাতুন নাইয়ারা, ১ম খন্ড, ১১০ পৃ: ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
❍ হানাফী মাজহাবের আরেকটি ফাতওয়া উল্লেখ করেছেন আল্লামা মোল্লা নিজামুদ্দিন বালখী (رحمة الله) তদয়ী ফাতওয়ার কিতাবে এভাবে,
قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقُبُورِ عِنْدَ مُحَمَّدٍ رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى لَا تُكْرَهُ وَمَشَايِخُنَا رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى أَخَذُوا بِقَوْلِهِ وَهَلْ يَنْتَفِعُ وَالْمُخْتَارُ أَنَّهُ يَنْتَفِعُ، هَكَذَا فِي الْمُضْمَرَاتِ.
-“ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর কাছে কবরের কাছে কোরআন পাঠ করা মাকরুহ নয়। আমাদের মাশায়েখরা ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) এর মত গ্রহণ করেছেন। ইহার দ্বারা কি মৃতরা উপকৃত হন? বিশুদ্ধ মত হল উপকৃত হন, যেমনটি মুজমিরাত কিতাবে আছে।” (ফাতওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
এ বিষয়ে একাধিক সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। উছূলে হাদিসের আইন মোতাবেক, একই বিষয়ে একাধিক জয়ীফ সনদ থাকলে সব মিলে ইহা আরো ক্বাবী বা শক্তিশালী ‘হাছান লি’গাইরিহী’ হয়ে যায়। এ বিষয়ে মোট ৩ জন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমল করাতে কোন বাধা নেই। সর্বোপরি হানাফী মাজহাবের আইম্মায়ে কেরাম এই আমলের ফাতওয়াকে গ্রহণ করেছেন।