❏ সাত যমীন প্রসঙ্গ

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ


الله الذي خلق سبع سموت ومن الأرض مثلهن. يتنزل الأمر بينهن لتعلموا أن الله على كل شئ قدير. و أن الله قد أحاط بكل شيئ علما.


অর্থাৎ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং পৃথিবীও, তাদের অনুরূপভাবে তাদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ, ফলে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (৬৫ঃ ১২)


বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আবু সালামা ইবন আবদুর রহমান (رضي الله عنه) ও কতিপয় লোকের মধ্যে একটি জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। আয়েশা (رضي الله عنه)-এর নিকট গিয়ে তিনি তাঁকে ঘটনাটি অবহিত করেন। জবাবে আয়েশা (رضي الله عنه) বললেন, আবু সালামা! জমির ব্যাপারে ভয় করে চল, কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


من ظلم قيد شبر طوقه من سبع أرضين


অর্থাৎ—কেউ এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে গ্রাস করলে সাত যমীন থেকে তা শৃংখল বানিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে।


ইমাম বুখারী ‘মাজালিম’ অধ্যায়েও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (رحمة الله) এবং ইমাম আহমদ (رحمة الله) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আবু সালিম বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ


من اخذ شيئا من الارض بغير حقه خسف به يوم القيامة الى سبع ارضين.


অর্থাৎ-“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য একটু জমিও দখল করবে, কিয়ামতের দিন তা সহ তাকে সাত যমীন পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে।”


ইমাম বুখারী (رحمة الله) মাজালিম অধ্যায়েও মূসা ইবন উব্বা সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এক্ষেত্রে ইমাম বুখারী (رحمة الله) আবু বকর (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق السموت والارض السنة اثنی عشر شهرا.


অর্থাৎ ‘সময় আপন গতিতে আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে পর্যায়ক্রমে পরিক্রমণ করে আসছে। বছর হলো বার মাস।’ উল্লেখ্য যে, এ হাদীসের প্রকৃত মর্ম কি তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এ হাদীসের অর্থ—


الله الذي خلق سبع سموت ومن الأرض مثلهن.


এ আয়াতের সমর্থক। যার অর্থ হলোঃ আল্লাহ তা’আলা সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং সংখ্যায় তাদের অনুরূপ যমীনও সৃষ্টি করেছেন। (৬৫ঃ ১২) অর্থাৎ এখন মাসের সংখ্যা যেমন বার তেমনি সৃষ্টির সূচনায় আল্লাহর নিকটও মাসের সংখ্যা বারটিই ছিল। এটা হলো কালের মিল আর আলোচ্য আয়াতে স্থানের মিলের কথা বলা হয়েছে।


সাঈদ ইবন যায়দ ‘আমর ইবন নুফায়ল থেকে যথাক্রমে আবূ হিশাম, হিশাম, আবু উসামা ও উবায়দ ইবন ইসমাঈল সূত্রে ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আরওয়া নাম্নী মহিলা সাঈদ ইবন আমর-এর বিরুদ্ধে মারওয়ানের নিকট জমি আত্মসাতের অভিযোগ করেন। জবাবে সাঈদ বললেন, আমি করবো তার সম্পদ জবরদখল? আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ


من أخذ شبرا من الأرض ظلما فإنه يطوقه يوم القيامة من سبع أرضين.


অর্থাৎ—“কেউ অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি আত্মসাৎ করলে কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীন তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে।”


ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, ইবন মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন জুলুম সর্বাধিক গুরুতর? তিনি বললেনঃ


ذراع من الارض ينقصه المرء المسلم من حق أخيه فليس حصاة من الارض يأخذها أحد إلا طوقها يوم القيامة إلى قعر الأرض ولا يعلم قعرها إلا الذي خلقها.


অর্থাৎ কোন মুসলমান ব্যক্তি তার ভাইয়ের হক এক হাত পরিমাণ জমিও যদি কেড়ে নেয় তবে তার প্রতিটি কঙ্করের জন্য সাত যমীনের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত কিয়ামতের দিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। আর যমীনের সর্বনিম্ন স্তরের গভীরতা সম্পর্কে একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই জ্ঞাত নন।


ইমাম আহমদ (رحمة الله) এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আর এ সনদটি ত্রুটিমুক্ত। ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


من أخذ شبرا الارض بغير حقه طوقه من سبع أرضين .


অর্থাৎ—কেউ অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি আত্মসাৎ করলে সাত তবক যমীন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।


এ সূত্রে ইমাম আহমদ (رحمة الله) একাই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসটি মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ। ইমাম আহমদ (رحمة الله) ভিন্ন সূত্রে ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে من اخذ এর স্থলে من اقتطع শব্দটি রয়েছে।


আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণিত অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ


من اخذ من الأرض شبرا بغير حقه طوقه من سبع أر ضين


এটিও ইমাম আহমদের এককভাবে বর্ণিত হাদীস। ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


মোটকথা, এ হাদীসগুলো যমীনের সংখ্যা যে সাত তার প্রমাণ হিসাবে প্রায় মুতাওয়াতির তুল্য—যাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর এর দ্বারা সাত যমীনের একটি যে অপরটির উপর অবস্থিত তা-ই বুঝানো হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, নীচের যমীন উপরের যমীনের ঠিক মাঝ বরাবর অবস্থিত। সপ্তমটি পর্যন্ত এভাবেই রয়েছে। সপ্তমটি হলো সম্পূর্ণ নিরেট যার মধ্যে একটুও ফাঁকা নেই। এর মধ্যখানেই হলো কেন্দ্র। এটি একটি কল্পিত বিন্দু আর এটিই হলো ভারি বস্তু পতনের স্থল। চতুর্দিক থেকে যা কিছু পতিত হয়, কোন কিছুর দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হলে তার সব গিয়ে ওখানেই পতিত হয়। আর প্রতিটি যমীন একটির সঙ্গে অপরটি মিলিত, নাকি প্রতিটির মাঝে ফাকা রয়েছে, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এ মতভেদ আসমানের বেলায়ও রয়েছে। স্পষ্টত এটা প্রতীয়মান হয় যে, তার প্রতিটির একটি থেকে অপরটির মাঝে দূরত্ব রয়েছে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ


الله الذي خلق سبع سموت ومن الأرض مثلهن يتنزل الأمر بينهن.


অর্থাৎ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং তাদের অনুরূপ পৃথিবীও, তাদের মধ্যে নেমে আসে তার নির্দেশ। (৬৫ঃ ১২)


ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেনঃ একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময়ে একখণ্ড মেঘ অতিক্রম করলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এগুলো কী? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ “এগুলো হচ্ছে মেঘমালা। পৃথিবীর দিক-দিগন্ত থেকে এগুলোকে হাঁকিয়ে নেওয়া হয় অকৃতজ্ঞ আল্লাহর বান্দাদের নিকট যারা তাঁকে ডাকে না। তোমরা কি জান, তোমাদের ঊর্ধ্বদেশে এটা কী? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিকতর জ্ঞাত। তিনি বললেন,এ হচ্ছে সুউচ্চ জমাট ঢেউ এবং সুরক্ষিত ছাদ। তোমরা কি জান, তোমাদের ও তার মধ্যকার দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সম্যক অবহিত। তিনি বললেন ও পাঁচশ বছরের পথ। তারপর তিনি বললেনঃ “তোমরা কি জান যে, তার উপরে কী আছে? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত। তিনি বললেন, পাঁচশ বছরের দূরত্ব। এভাবে তিনি একে একে সাতটি আসমান পর্যন্ত বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, তার উপরে কি রয়েছে? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সম্যক অবহিত। তিনি বললেন, আরশ। তোমরা কি জান যে, তার ও সপ্তম আসমানের মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিকতর জ্ঞাত। তিনি বললেন, পাঁচশ বছরের পথ। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান যে, তোমাদের নিচে এসব কী? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, যমীন। তোমরা কি জান যে, তার নিচে কী আছে? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিকতর জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ আরেকটি যমীন। তোমরা কি জান, এ দুটির মাঝে দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ সাতশ বছরের পথ। এভাবে তিনি শুনে গুনে সাত যমীনের কথা উল্লেখ করে পরে বললেনঃ আল্লাহর শপথ! যদি তোমাদের কাউকে নিচের দিকে চাপ দিতে থাকে তাহলে সে সপ্তম যমীন পর্যন্ত গিয়ে পৌছবে। তারপর তিনি নিম্নের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ


هو الأول والأخر والظاهر والباطن وهو يكل شئي علي


অর্থাৎ—তিনিই আদি, তিনিই অন্ত, তিনিই ব্যক্ত ও তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। (৫৭ঃ ৩)


ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এবং আরও একাধিক আলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্র উল্লেখ করে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাতে প্রতি দু’যমীনের মধ্যে পাঁচশ’ বছরের দূরত্বের উল্লেখ রয়েছে। আবার বর্ণনার শেষে তিনি একটি কথা উল্লেখ করেছেন, যা আমরা সূরা হাদীদের এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছি। তারপর ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন, এ সূত্রে হাদীসটি গরীব শ্রেণীভুক্ত।৬৭ (গরীব হচ্ছে ঐ সহীহ হাদীস যার সনদে কোন যুগে একজন মাত্র রাবী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।) অপর দিকে ইবন জারীর (رحمة الله) তার তাফসীরে কাতাদা (رحمة الله) সূত্রে মুরসাল’৬৮ (মুরসাল হচ্ছে ঐ হাদীস যার সনদে সাহাবীর নাম উল্লেখিত হয়নি।) রূপে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। এ সনদটিই বেশি গ্রহণযোগ্য বলে আমি মনে করি। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত। হাফিজ আবু বকর, বাযার ও বায়হাকী (رحمة الله) আবুযর গিফারী (رضي الله عنه) সূত্রে নবী করীম (ﷺ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তার সনদ সহীহ নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।


আরশের বর্ণনায় উল্লেখিত পাহাড়ী মেষ সংক্রান্ত হাদীসটি সপ্তম আসমান থেকে আরশের উচ্চতার ব্যাপারে এ হাদীস এবং এর অনুরূপ আরো কয়েকটি হাদীসের বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রথমোক্ত হাদীসে এও আছে যে, দু’ আকাশের মধ্যকার দূরত্ব হলো পাঁচশ বছর এবং তার স্থূলতাও পাঁচশ বছর।


পক্ষান্তরে طوقه من سبع أرضين এ হাদীসের ব্যাখ্যায় কোন কোন কালামশাস্ত্রবিদ বলেছেন যে, এর দ্বারা সাতটি মহাদেশ ( اقليم) বুঝানো হয়েছে। তা এ আয়াত ও সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এছাড়া এটা দলীল-প্রমাণ ব্যতীত হাদীস ও আয়াতকে সাধারণ অর্থের বিপরীত অর্থে প্রয়োগ করার নামান্তর। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।


অনুরূপভাবে আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের অনেকে বলে বেড়ান এবং আমাদের একদল আলিমও তাদের নিকট থেকে তা করেছেন যে, এ পৃথিবী হলো মাটির তৈরি, এর নিচেরটা লোহার তার নিচেরটা গন্ধকের তার নিচেরটা আরেক ধাতুর ইত্যাদি। বিশুদ্ধ সনদে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত না হওয়ার কারণে তাও প্রত্যাখ্যাত। আবার ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত এ মর্মের রিওয়ায়েত যে, প্রতিটি যমীনে ঠিক এ পৃথিবীর মত মাখলুক রয়েছে। এমনকি তোমাদের আদমের মত আদম ও তোমাদের ইবরাহীমের মত ইবরাহীমও আছে, একথাগুলো ইবন জারীর (رحمة الله) সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করেছেন এবং বায়হাকী ‘আল-আসমা ওয়াস সিফাত’ গ্রন্থে তা উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু এতথ্যটি ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে উদ্ধৃত হওয়ার দাবিটি সঠিক হয়ে থাকলে বলতে হবে যে, ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) তা ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে গ্রহণ করেছেন।


ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, আনাস (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করার পর তা দুলতে শুরু করে, তাই তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তার উপর তা স্থাপন করেন। তাতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। পর্বতমালা দেখে ফেরেশতাগণ অবাক হয়ে বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বত থেকে মজবুত আর কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, লোহা। ফেরেশতাগণ বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহা থেকে বেশি মজবুত আর কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেন হ্যাঁ, আগুন। ফেরেশতাগণ বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী আর কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ বাতাস। ফেরেশতাগণ বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেনঃ হ্যাঁ, আদম সন্তান, যে ডান হাতে দান করে আর বাম হাত থেকে তা গোপন রাখে। ইমাম আহমদ (رحمة الله) এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।


পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ডে কত পাহাড়-পর্বত আছে; জ্যোতির্বিদগণ তাঁর সংখ্যা উল্লেখ করেছেন এবং তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার পরিসংখ্যান প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে তারা এত দীর্ঘ আলোচনা করেছেন যে, এখানে তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে কিতাবের কলেবর অনেক বেড়ে যাবে।


আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ


ومن الجبال جدد بيض وحمر مختلف ألوانها و غرابيب شود.


অর্থাৎ-পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের পথ—শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো। (৩৫ঃ ২৭)


ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) প্রমুখ বলেন, الجدد মানে পথঘাট। ইকরিমা (رحمة الله) প্রমুখ বলেন, الغرابيب মানে সুউচ্চ কালো পাহাড়। সমগ্র পৃথিবীর পর্বতমালায় স্থানের ও বর্ণের বৈচিত্রের মধ্যে এ চিত্ৰই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।


আল্লাহ তো তাঁর কিতাবে সুনির্দিষ্টভাবে জুদী পাহাড়ের কথা উল্লেখই করেছেন। সে কি বিরাট পাহাড়! দিজলার পাশে জাযীরা ইবন উমরের পূর্ব অংশে যার অবস্থান। মাওসিলের কাছে দক্ষিণ থেকে উত্তরে তার দৈর্ঘ্য হলো, তিন দিনের পথ আর উচ্চতা আধা দিনের পথ। বর্ণ তার সবুজ। কারণ তা ওক জাতীয় গাছে পরিপূর্ণ। তার পাশে আছে একটি গ্রাম, নাম তার কারয়াতুস সামানীন (আশি ব্যক্তির গ্রাম)। কারণ একাধিক মুফাসসিরের মতে, তা নূহ (عليه السلام)-এর সঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজনের আবাসস্থল ছিল। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

Top