❏ মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানী করা
মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানী করলে ইহার সওয়ার মৃতের আমল নামায় যোগ হবে। এই মর্মে রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে হাদিস বর্ণিত রয়েছে। যেমনঃ
❍ একটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ حَنَشٍ، قَالَ: رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ
-“হযরত খানাশ (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় হযরত আলী (رضي الله عنه) কে দু’টি কবস কোরবানী করতে দেখেছি। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাকে তিঁনার জন্য কোরবানী করার অছিয়াত করেছেন।”
তথ্যসূত্রঃ
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ২৭৯০
・মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৯১৮৮
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ১৪৬২
・মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৪৬২ নং হাদিস
・তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খন্ড, ২৮১ পৃ:
𓈃 এই হাদিসের রাবী حنش ‘খানাশ’ যার সম্পূর্ণ নাম حنش بن المعتمر ‘খানাশ ইবনে মুতামির’। তিনি একজন তাবেঈ ছিলেন। ইমামদের কেউ কেউ তার উপর নির্ভর না করলেও ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৫৫৬)
𓈃 হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেছেন: وقوّاه بعضهم. -“অনেকে তাকে শক্তিশালী বলেছেন।” (ইমাম আসকালানী: আল ইছাবা, রাবী নং ২১১৯)
𓈃 ইমাম ইজলী (رحمة الله) তাকেثِقَة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম ইজলী: কিতাবুস সিক্বাত, রাবী নং ৩৭৩)
𓈃 ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) বলেন: هو عندي صالح. -“সে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম আবু হাতিম: জারহু ওয়া তাদিল, রাবী নং ১২৯৭)
𓈃 ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ ابْنُ عدي وغيره: لا بَأْسَ بِهِ. -“ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) ও অন্যান্য ইমামগণ বলেছেন: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২১)
𓈃 অতএব, এই রাবীর বর্ণিত হাদিস হাছান পর্যায়ের হবে। এই হাদিসের আরেকজন রাবী أَبُو الْحَسْنَاءِ ‘আবুল হাছনা’ রয়েছে। যার সম্পূর্ণ নাম হল الْحَسَن بن الحكم النخعي، أَبُو الْحَسَنِ الكوفي. ‘হাছান ইবনে হাকাম নাখয়ী আবুল হাছান কূফী’। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন।
(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১২১৮)
𓈃 ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) বলেছেন: صالح الْحَدِيث -“সে ছালেহুল হাদিস বা হাদিস বর্ণনায় গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১২১৮)
𓈃 ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাঈ ও ইমাম ইবনে মাজাহ (رحمة الله) সকলেই তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
𓈃 ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (আবুল মাআতী নূরী: মওছুয়াতু আকওয়ালী ইমামু আহমদ বিন হাম্বল, রাবী নং ৫১৪ ইমাম ইবনে শাহিন: তারিখু আসমা ওয়াস সিফাত, রাবী নং ১৯৫)
𓈃 অতএব, আবুল হাছনা মাজহুল রাবী নয় বরং বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী। আফসোস! তুহফাতুল আহওয়াজীর লেখক আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলে দিলেন, قُلْتُ وَأَبُو الْحَسْنَاءِ شَيْخُ عَبْدِ اللَّهِ مَجْهُولٌ
-“আমি (মুবারকপুরী) বলি: আব্দুল্লাহ এর শায়েখ ‘আবুল হাছনা মাজহুল।” (আবুর রহমান মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৫ম খন্ড, ৬৫ পৃ: ১৪৯৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) কতবড় মিথ্যাচারিতা! (নাউজুবিল্লাহ)
𓈃 এই হাদিসের আরেকজন রাবী রয়েছে। যার নাম (شَرِيكُ) শারিক, তিনার সম্পূর্ণ নাম হল,
أَبُو عَبْدِ اللَّهِ شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ النَّخَعِيُّ الْكُوفِيُّ
(আবু আব্দিল্লাহ শারিক ইবনে আব্দিল্লাহ নাখয়ী কূফী) সম্পর্কে লা-মাজহাবীরা অযোক্তিক সমালোচনা করার অপচেস্টা করেছে। অথচ ইমামগণের কাছে সে একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী।
𓈃 যেমন ইমামগণের বক্তব্য গুলো লক্ষ্য করুন:-
وَقَالَ النَّسَائِيُّ: لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ. -
“ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেনে: তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১২৯)
𓈃 ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন,
قُلْتُ: اسْتَشْهَدَ بِهِ الْبُخَارِيُّ، وَخَرَّجَ لَهُ مُسْلِمٌ مُتَابَعَةً، وَاحْتَجَّ بِهِ النسائي وغيره.
-“আমি (যাহাবী) বলি: ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) ও অন্যান্যরা তার উপর নির্ভর করেছেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ১২৯)
قال أحمد بن صالح العجلي وهو: صدوق ثقة -
𓈃 “ইমাম আহমদ ইবনে ছালেহ ইজলী (رحمة الله) বলেন: সে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وقال أبو إسحاق الحربي في تاريخه: كان ثقة. -“ইমাম আবু 𓈃 ইসহাক্ব হারাবী (رحمة الله) তার ‘তারিখে’ বলেন: সে বিশ্বস্ত।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وقال الحاكم في تاريخ بلده: وشريك أحد أركان الفقه والحديث،
𓈃 -“ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার ‘তারিখে বালদাহ’ গ্রন্থে বলেছেন: শারিক হাদিস ও ফিকাহ্ শাস্ত্রে খুটি।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وذكره ابن شاهين في الثقات. -
𓈃 “ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وفي كتاب المنتجالي: كان صدوقا ثبتا صحيحا -
𓈃 “কিতাবুল মুন্তাজালি এর মধ্যে রয়েছে: সে সত্যবাদী, প্রমাণিত ও বিশুদ্ধ।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবিল কামাল, রাবী নং ২৩৮২)
وَقَال يزيد بْن الهيثم البادا: سمعت يحيى بْن مَعِين يَقُول: شَرِيك ثقة،
𓈃 -“ইয়াজিদ ইবনে হায়ছাম বাদা বলেন: আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি: শারিক বিশ্বস্ত।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ২৭৩৬)
লক্ষ্য করুন, এতজন ইমাম বর্ণনাকারী ‘শারিক’ সম্পর্কে বিশ্বস্ত, সত্যবাদী বলার পরেও আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তার ‘তুহফাতুল আহওয়াজী’ গ্রন্থে বলেছেন শুধুমাত্র ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন! বড়ই আশ্চর্যজনক!! এতজন ইমামের কথা তিনি স্বীকারই করলেন না!! লা-মাজহাবীরা এভাবেই মিথ্যাচারিতা করে থাকে ও সত্যকে গোপন করে।
অতএব, এই হাদিস ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য। এই হাদিস সাক্ষ্য দিচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর নবী (ﷺ) অছিয়াত করেছেন তাঁর জন্য কোরবানী করার জন্য। তাই এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরবানী অন্য ব্যক্তির পক্ষ থেকেও করা যায়। সুতরাং মৃত ব্যক্তির নামে বা পক্ষে কোরবানী করলে ইহার দ্বারা মৃত ব্যক্তির রুহে পৌছায় ও মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয়। এ ব্যাপারে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম দলিল হচ্ছে:
❍ প্রিয় নবীজি (ﷺ) কোরবানীর সময় একটি ছাগল সামনে রেখে বলে ছিলেন:
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي رُبَيْحُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحَّى بِكَبْشٍ أَقْرَنَ، وَقَالَ: هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي
-“হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দুইটি লম্বা শিং ওয়ালা বকরা কোরবানী করেছেন। কোরবানীর সময় বলেছেন:
اللَّهُمَّ هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ من أمتِي
-“হে আল্লাহ! ইহা আমার ও আমার ঐ সকল উম্মতের পক্ষে যারা কুরবানী করেনি।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১১০৫১
・ইমাম তাহাবী: শরহে মাআনীল আছার, হাদিস নং ৬২৩০
𓈃 ইহার সনদ ছহীহ্। হাদিসটি ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজি, ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) প্রমূখ হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের সনদটি এভাবে:
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ يَعْنِي الْإِسْكَنْدَرَانِيَّ، عَنْ عَمْرٍو، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ:
-“কুতাইবাহ ইবনে সাঈদ হাদিস বর্ণনা করেছেন ইয়াকুব ইস্কানদারানী থেকে, তিনি আমর থেকে, তিনি মুত্তালিব থেকে, তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে। তিনি বলেছেন:...।”
তথ্যসূত্রঃ
・মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৪৮৩৭
・সুনানু আবী দাউদ, হাদিস নং ২৮১০
・তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১৫২১
・ইমাম বায়হাক্বী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ১৯১৮৩
・মেসকাত শরীফ, হাদিস নং ৩২৩৫।
(সনদ যায়্যেদ বা অতিউত্তম।)
দেখুন! আল্লাহর নবী (ﷺ) উম্মতের পক্ষ থেকে ছাগল কোরবানী করেছেন অর্থাৎ, এই ছাগল কোরবানীর সওয়াব স্বীয় উম্মতের আমল নামায় রেছানীর মাধ্যমে যোগ হবে। এই হাদিস সওয়াব রেছানীর অন্যতম দলিল।