চামচ দিয়ে খাওয়ার ঘটনা 


ছুরি, কাঁটা চামচ ও চামচ দিয়ে খাওয়া সুন্নাত পরিপন্থি।  আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গরা চামচ দিয়ে খাওয়া থেকে বেঁচে থাকতেন। কারণ রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) থেকে তিন আঙ্গুলে খাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। 


হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ইব্রাহীম বায়ূরী (رحمة الله) বলেন: “একবার আব্বাসী খলিফা মামুনুর রশীদের সামনে চামচ সহকারে খাবার পেশ করা হলাে। ঐ সময়ের প্রধান কাযী হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবূ ইউসূফ (رحمة الله) বললেন: “আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।" (মাতালিউল মুসাররাত) 


کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ  اٰدَمَ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: 

আর নিঃসন্দেহে আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মান দিয়েছি। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত- ৭০, পারা- ১৫) 

হে খলিফা! এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে আপনার দাদাজান হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস  رضى الله تعالى عنه  বলেন: “আমি তাদের জন্য আঙ্গুল সৃষ্টি করেছি, যা দিয়ে তারা খাবার খায়। ”তখন তিনি চামচ পরিত্যাগ করে আঙ্গুল দিয়ে খাবার খেলেন। 

(বাজুরী কৃত, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ্, ১১৪ পৃষ্ঠা)


চামচ দিয়ে কখন খেতে পারেন?

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যদি খাদ্যই এরকম হয়, যেমন-ফিরনী অথবা পাতলা দই ইত্যাদি যা আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া সম্ভবপর নয় এবং পানও করা যায় না কিংবা হাতে আঘাত বা হাত ময়লাযুক্ত ও ধােয়ার জন্য পানি সহজলভ্য না হয় তখন প্রয়ােজনবশতঃ চামচ ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। অনুরূপভাবে মাংসের রান্নাকৃত বড় টুকরাে বা রান ইত্যাদিকে ছুরি দিয়ে কেটে খাওয়ারও অনুমতি রয়েছে। 


চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে হাতে খাওয়ার উপকারিতাঃ

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ডাক্তারেরা স্বীকার করেছেন যে, যেসব মানুষ হাত দ্বারা খান তাদের আঙ্গুলগুলাে থেকে এক বিশেষ ধরণের "হজমকারী আর্দ্রতা" বের হয়ে খাবারের মধ্যে মিশে যায়, যা শরীরে ইনসুলিন (INSULIN) কম হতে দেয় না আর তা দ্বারা ডায়বেটিস রােগীদের উপকার হয়ে থাকে। এছাড়া খাওয়ার পর আঙ্গুলগুলাে চেটে খাওয়াতে আরাে হজমকারী আদ্রতা পেটে প্রবেশ করে, যা চোখ, মস্তিস্ক ও পাকস্থলীর জন্য অত্যন্ত উপকারী, আর এটা হৃদপিন্ড, পাকস্থলী ও মস্তিস্কের রােগ ব্যাধির জন্য কার্যকরী প্রতিষেধক।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) 


APENDIX রোগের চিকিৎসা হয়ে গেলঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাওয়ার সুন্নাতগুলাে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার জন্য মাদানী কাফেলায় সফর করাকে অভ্যাসে পরিণত করুন। সমাজের অনেক বিপথগামী মানুষ দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফরের বরকতে  الحمد للّٰه عزّ وجل  সঠিক পথে এসে গেছেন। এ প্রসঙ্গে মাতরা, ভারত এর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা কিছুটা এরূপ, আমি একজন মডার্ণ যুবক ছিলাম। ফিল্ম, নাটক দেখাতে আমি ব্যস্ত থাকতাম। কোন উপায়ে মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত বয়ানের ক্যাসেট “টিভির ধ্বংসলীলা” শুনার সৌভাগ্য অর্জন হল, যেটা আমার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে আমার APENDIX এর রােগ ধরা পড়ল আর ডাক্তার অপারেশনের পরামর্শ দিলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এ সময় দা'ওয়াতে ইসলামীর একজন মুবাল্লিগের ইনফিরাদী কৌশিশের ফলে জীবনে প্রথমবার আশিকানে রাসুলদের সাথে দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা প্রশিক্ষণের তিন দিনের মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম।  الحمد للّٰه عزّ وجل  মাদানী কাফেলার বরকতে অপারেশন ছাড়া আমার রােগ দূর হতে লাগল।  الحمد للّٰه عزّ وجل  আমার উৎসাহ উদ্দীপনায় মদীনার ১২ চাঁদ লেগে গেল। এখন প্রতি মাসে তিনদিনের মাদানী কাফেলায় সফরের সৌভাগ্য অর্জন করে থাকি। প্রতিমাসে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে তা জমা দিয়ে থাকি এবং মুসলমানদেরকে ফযরের নামাযের উদ্দেশ্যে জাগানাের জন্য অলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে সাদায়ে মদীনা দিয়ে থাকি। 


বে-আমল বা-আমল বন্‌তে হে ছর বছর,

তু ভী আয় ভা-ই কর কাফিলে মে সফর।

আচ্ছি সুহবত ছে ঠান্ডা হাে তেরা জিগর,

কা-শ! করলে আগর কাফিলে মে সফর।


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে  انشاء اللّٰه عزّ وجل ! স্মরণে এসে যাবে।” (সা'য়াদাতুদ দা'রাঈন) 


বেহুশ না করে অপারেশনঃ 

         প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! মাদানী কাফেলায় সফরের কিরূপ বরকত রয়েছে। এটা মনে রাখবেন! রােগ ব্যাধি ও মুসিবত মুসলমানদের জন্য সাধারণত রহমত লাভের কারণ হয়ে থাকে। এই মাত্র আপনারা শুনলেন, ইসলামী ভাইয়ের এপেন্ডিক্স-এর ব্যথা হয়েছে, অতঃপর মাদানী কাফেলায় সফর করে সুস্থ হলাে। এভাবে তিনি মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হয়ে যান। আর মাদানী পরিবেশের সাথে তিনি পাকাপােক্তভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়াটা নিশ্চয় রহমতের অধিকারী হওয়ার মাধ্যম। কোন কাজে বা রােগে কষ্ট হলেও ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করে প্রচুর পরিমাণে সাওয়াব ও প্রতিফল অর্জন করা উচিত। আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন  رحمه اللّٰه تعالىٰ  গণের ধৈর্যধারণের ধরণ ও সেটার মাধ্যমে সাওয়াব ও প্রতিফল লাভের আগ্রহও কী চমকার ছিল। যেমন- বুখারি শরীফের ব্যাখ্যাকার হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শরীফুল হক আমজাদী  رحمه اللّٰه تعالىٰ  বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “নুযহাতুল কারী” এর ২ য় খন্ডের ২১৩ থেকে ২১৫ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করেন হযরত সায়্যিদুনা উরওয়াহ  رضى الله تعالى عنه  যাঁর সম্মানিত পিতা ছিলেন প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা যুবাইর বিন আওয়াম  رضى الله تعالى عنه  ও সম্মানিত মাতা ছিলেন হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা বিনেত আবু বকর সিদ্দীক  رضى الله تعالى عنه  তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  এর ভাগিনা ও হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন যুবাইর  رضى الله تعالى عنه  এর আপন ভাই এবং মদীনা শরীফের প্রসিদ্ধ “ফুকাহায়ে সাবআহ্” (অর্থাৎ- সাতজন বিখ্যাত ওলামায়ে কিরাম) এর একজন ছিলেন। আবিদ, দুনিয়াত্যাগী ও রাত জেগে ইবাদতকারী বুযুর্গ ছিলেন। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এক চতুর্থাংশ কুরআনে পাক দেখে দেখে তিলাওয়াত করতেন ও এক চতুর্থাংশ কুরআন শরীফ রাত্রে তাহাজ্জুদে তিলাওয়াত করতেন। খলীফা ওয়ালীদ বিন আবদুল মালিক বলতেন, যার জান্নাতী লােক দেখার ইচ্ছা তিনি যেন হযরত সায়্যিদুনা উরওয়াহ্  رضى الله تعالى عنه  কে দেখেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম)


     একবার তিনি সফর করে ওয়ালীদ বিন আবদুল মালিকের নিকট গেলেন। তাঁর  رضى الله تعالى عنه  মােবারক পায়ে আকিলা হয়ে গিয়েছিল। এটা ঐ রােগ যা শরীরের অঙ্গে পঁচন ধরায়। সুতরাং ওয়ালিদ পরামর্শ দিলেন, অপারেশন করিয়ে নিন। তিনি  رضى الله تعالى عنه  রাজী হলেন না। কিন্তু রােগ বৃদ্ধি পেয়ে পায়ের গােড়ালি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেল। ওয়ালীদ আরয করলেন: ‘আলীজা! এখনতাে পা কেটে ফেলা জরুরী অন্যথায় এ রােগ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি  رضى الله تعالى عنه  রাজী হয়ে গেলেন। সুতরাং ডাক্তার আসল। তিনি বললেন: মদপান করে নিন যাতে কাটার সময় কষ্ট অনুভব না হয়। বললেন: আল্লাহ্ এর হারাম কৃত বস্তুর মাধ্যমে আমি সুস্থতা চাইনা। আরয করলেন: “অনুমতি হলে কোন ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিই।” বললেন: আমি চাই না যে, কোন অঙ্গ কাঁটা হবে আর আমার কষ্ট অনুভব হবে না এবং কষ্ট ও ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জিত সাওয়াব থেকে আমি বঞ্চিত থেকে যাব। আরয করা হলাে, ঠিক আছে। কিছু লােককে অনুমতি দিন যেন আপনাকে ধরে রাখে। বললেন: তারও প্রয়ােজন নেই। অবশেষে প্রথমে পায়ের মাংস ছুরি দিয়ে ও এরপর হাঁড় করাত দিয়ে কাটা হলাে। কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতি শত মারহাবা! মুখে আহ! শব্দ পর্যন্ত করলেন না। একাধারে আল্লাহ্ এর যিকরে মগ্ন ছিলেন। এমনকি লােহার চামচ দিয়ে যায়তুন শরীফের ফুটন্ত তেল দিয়ে তখন ক্ষতস্থানকে দাগ দেয়া হলাে তখন প্রচন্ড ব্যাথার কারণে বেহুশ হয়ে গেলেন। যখন হুশে এলেন তখন চেহারা মােবারক থেকে ঘাম মুছতে লাগলেন আর কর্তনকৃত পা মােবারক হাতে নিয়ে উলট পালট করতে করতে বললেন: ঐ সত্ত্বার শপথ! যিনি আমাকে তাের উপর আরােহন করিয়েছেন। আমি তাের মাধ্যমে কখনাে কোন গুনাহের দিকে যাইনি। অপারেশনের সকল কার্যক্রম এভাবে সম্পাদন হলাে যে, ওয়ালীদ কথাবার্তায় ব্যস্ত ছিলেন তার খবরও হলাে না। যখন দাগ দেয়ার সময় গন্ধ ছড়াল তখন বুঝতে পারলেন। 

(নুযহাতুল কারী, ২য় খন্ড, ২১৩-২১৫ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।" (আব্দুর রাজ্জাক) 


ছেলের শাহাদাতঃ

        এ সফরে হযরত সায়্যিদুনা উরওয়া  رضى الله تعالى عنه  এর দ্বিতীয় পরীক্ষা এটা হলাে যে, তাঁর  رضى الله تعالى عنه  এর ছেলে হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন উরওয়াহ্  رضى الله تعالى عنه  ওয়ালীদের ঘােড়াশালায় গেলে তখন কোন চতুস্পদ জন্তু তাঁকে মেরে শহীদ করে দিল, যখন তিনি মদীনা শরীফে زَادَهَا للّٰهُ شَرَفًا وَّتَعظِيمًا ফিরে এলেন তখন এ অংশ তিলাওয়াত করলেন:


لَقَدۡ لَقِیۡنَا مِنۡ سَفَرِنَا هٰذَا نَصَبًا ﴿۶۲﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:

নিশ্চয় আমরা আমাদের এ সফরে বড় কষ্টের সম্মুখীন হলাম। (সূরা কাহাফ, পারা ১৫, আয়াত- ৬২) 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


হযরত উরওয়া  رضى الله تعالى عنه  এর দানশীলতাঃ

        হযরত সায়্যিদুনা উরওয়াহ  رضى الله تعالى عنه  এর দানশীলতা ও উদারতার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেত যে, যখন বাগানে ফল পেঁকে যেত তখন বাউন্ডারী খুলে দিতেন। এতে লােকেরা এসে ফল খেতেন ও (সাথে) বেঁধে নিয়েও যেতেন। তিনি  رضى الله تعالى عنه  যখন নিজের বাগানে আসতেন তখন সূরাতুল কাহাফের আয়াতের এ অংশটুকু মুখে পাঠ করতেন: 


لَوۡ لَاۤ  اِذۡ دَخَلۡتَ جَنَّتَكَ قُلۡتَ مَا شَآءَ  اللّٰهُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰهِ ۚ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: (৩৯)

এবং কেন এমন হলাে না যে, যখন তুমি আপন বাগানে প্রবেশ করেছাে তখন বলতে, 'আল্লাহ্ যা চান, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমাদের কোন শক্তি নেই। (পারা -১৫, সূরা কাহাফ, আয়াত- ৩৯)


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তাআলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আ'দী) 


হেলান দিয়ে খাওয়া সুন্নাত নয়ঃ

      তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত ﷺ ইরশাদ করেছেন: "আমি হেলান দিয়ে খাইনা।"

(কানযুল উম্মাল, খন্ড -১৫ তম, ১০২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৭০৪) 


হেলান দিয়ে খেয়ােনাঃ 

       হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা হেলান দিয়ে খাবার খেয়ে না।” (মাজমাউযূ যাওয়াইদ, ৫ম খন্ড, ২২ পৃষ্ঠা , হাদীস নং- ৭৯১৮) 


হেলান দিয়ে খাওয়ার চারটি অবস্থাঃ

      খাওয়ার সময় হেলান দেয়ার চারটি অবস্থা রয়েছে: (১) একটি বাহু জমিনের দিকে করে (অর্থাৎ- ডানে বা বামে ঝুকে) বসা (২) চার যানু (অর্থাৎ- দুই পা দুদিকে ফেলে) বসা (৩) এক হাত জমিনের উপর রেখে (সেটার উপর) ভর দিয়ে বসা (৪) দেয়াল (কিংবা চেয়ারের পেছনে) ইত্যাদিতে হেলান দিয়ে বসা। এ চারটি অবস্থা ঠিক নয়। দুই যানু অথবা দুই হাঁটু দাঁড় করিয়ে বসে খাওয়া উত্তম, চিকিৎসা বিজ্ঞান মতেও উপকারী। দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়া ঠিক নয়। (মিরআত শরহে মিশকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১২পৃষ্ঠা) 


হেলান দিয়ে খাওয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত ক্ষতি সমূহঃ 

      প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হেলান দিয়ে খাওয়া সুন্নাত নয়। এ সুন্নাতের উপর আমল না করার তিনটি চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত ক্ষতিও রয়েছে। (১) খাবার ভালভাবে চিবানাে যায় না আর এতে যতটুকু পরিমাণ লালা মিশ্রিত হওয়া প্রয়ােজন ততটুকু মিশ্রিত হয় না, যা পাকস্থলীতে গিয়ে জমাট বাঁধা খাদ্যগুলােকে হজম করতে পারে আর এভাবে হজম ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়বে। (২) হেলান দিয়ে বসাতে পাকস্থলী প্রসারিত হয়ে পড়ে, সুতরাং এভাবে অপ্রয়ােজনীয় খাবার পাকস্থলীতে চলে যাবে আর হজম শক্তি নষ্ট হয়।



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (কানযুল উম্মাল) 


(৩) হেলান দিয়ে খাওয়াতে নাড়িভূড়ি ও কলিজার ক্ষতিসাধন হয়। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “হেলান দিয়ে পানি পান করাও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর।” 

(ইহইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ৫পৃষ্ঠা) 


রুটিকে সম্মান করোঃ

      খাবারের সময় রুটির টুকরা পড়ে গেলে উঠিয়ে খেয়ে নেয়া সুন্নাত। যেমন- উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  বলেন: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ ﷺ বরকতময় ঘরে তাশরীফ আনলেন, রুটির টুকরাে পতিত অবস্থায় দেখে সেটা তুলে নিয়ে মুছলেন অতঃপর খেয়ে নিলেন এবং বললেন: “আয়েশা!  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  ভাল জিনিসের সম্মান করাে। কারণ এ বস্তু (অর্থাৎ- রুটি) যখন কোন সম্প্রদায় থেকে চলে গেছে, তখন (আর) ফিরে আসেনি।” 

(ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ৫০পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩৫৩) 


খাবারের অপচয় থেকে তাওবা করুনঃ 

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকাল প্রত্যেকে বরকতহীনতা ও দারিদ্রতার কারণে হায় হুতাশ করছে। হতে পারে যে, খাবারের সম্মান না করার কারণে এ শাস্তি। আজকাল কোন মুসলমান এমন নেই, যে খাবার নষ্ট করে না। চারিদিকে খাবারের অসম্মানের বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠান হােক কিংবা বুযুর্গানে দ্বীনের  رحمه اللّٰه تعالىٰ  নিয়ায (ফাতিহা,ওরশ) এর তাবাররুক। আফসােস! শত কোটি আফসােস! দস্তরখানা ও কার্পেটের উপর নির্দয়ভাবে খাবার ফেলা হয়। খাওয়ার সময় হাড্ডি থেকে মাংস ও মসল্লা ভালভাবে পরিস্কার করে খাওয়া হয় না। গরম মসল্লার সাথেও খাবারের প্রচুর অংশ নষ্ট করা হয়। থালায় অবশিষ্ট থাকা খাবার ও পেয়ালা, ডেক্সীতে (পাত্রে) অবশিষ্ট থাকা ঝােল পুনরায় ব্যবহার করার মানসিকতা অধিকাংশ মানুষের মধ্যে নেই। এভাবে প্রচুর পরিমাণে খাবার প্রায়ই ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত যতটুকুই অপচয় করেছেন, দয়া করে তা থেকে তাওবা করে নিন!


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।” (কানযুল উম্মাল) 


ভবিষ্যতে খাবারের একটি দানাও এবং ঝােলের এক ফোঁটাও যেন অপচয় না হয় এর জন্য দৃঢ় সংকল্প করে নিন। কিয়ামত এর অণু পরিমানেরও হিসাব হবে। নিশ্চয় কেউই কিয়ামতের দিন হিসাব দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাওবা, আন্তরিকভাবে তাওবা করে নিন। দুরূদে পাক পড়ে আরয করুন, ইয়া আল্লাহ্! আজ পর্যন্ত আমি যতটুকু অপচয়ই করেছি তা থেকে ও সকল ছােট বড় গুনাহ থেকে তাওবা করছি, আর তােমার দেয়া তওফিকে ভবিষ্যতে গুনাহ্ সমূহ থেকে বাঁচার পূর্ণভাবে চেষ্টা করব। ইয়া রব্বে মুস্তফা عَزَّ  وَّجَلَّ وَصَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ  আমার তাওবা কবুল করে নাও ও আমাকে বিনা হিসাবে ক্ষমা করে দাও।

اٰمِينَ بِجَاهِ النَّبِيِّ الاَمِينَ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ


সদকা পেয়ারে কি হায়া কা কে না লে মুঝছে হিসাব, বখশ বে-পুছে লাজায়ে কো লাজানা কিয়া হায়। (হাদায়িখে বখশিশ) 


৮ম পারা সূরা আ'রাফ আয়াত নম্বর ৩১- এ আল্লাহ তাআলার মহান বাণী: 


وَکُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا  تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّہٗ لَا  یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ(۳۱﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: 

এবং আহার করাে ও পান করাে এবং সীমাতিক্রম করাে না। নিঃসন্দেহে, সীমাতিক্রমকারীদেরকে তিনি পছন্দ করেন না। (পারাঃ ৮, সূরা আ-রাফ, আয়াত: ৩১) 


অপচয় কাকে বলে? 

         বিখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  তফসীরে নঈমীর ৮ম খন্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় বলেন: অপচয়ের অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। (১) হালাল বস্তু সমূহকে হারাম জানা (২) হারাম বস্তুসমূহ ব্যবহার করা (৩) প্রয়ােজনের চেয়ে অধিক পানাহার বা পরিধান করা (৪) যা মন চায় তা পানাহার বা পরিধান করা (৫) রাত দিন বারংবার পানাহার করতে থাকা, যাতে পাকস্থলী খারাপ হয়ে যায়, এবং অসুস্থ হয়ে পড়া (৬) বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক বস্তুসমূহ পানাহার করা।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর)


(৭) সর্বদা খাওয়া দাওয়া, পরিধানের খেয়ালে থাকা যে, এখন কি খাব, পরে কি খাব (রুহুল বয়ান, ৩য় খন্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা) (৮) অলসতার জন্য খাওয়া (৯) গুনাহ্ করার জন্য খাওয়া (১০) ভাল পানাহার, উত্তম (পােষাক) পরিধানে এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া যে কখনাে সামান্য মূল্যের সাধারণ জিনিসের পানাহার করতে না পারা (১১) ভাল খাবারকে নিজের মর্যাদার ফল মনে করা। মােটকথা হচ্ছে, এ একটি শব্দের মধ্যে অনেক নির্দেশাবলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা ফারুকে আযম  رضى الله تعالى عنه  বলেন: “সর্বদা ভরা পেটে থাকা থেকে বেঁচে থাক। কারণ এটা শরীরকে অসুস্থ, পাকস্থলীকে খারাপ ও নামাযে অলসতা প্রদান করে। পানাহারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করাে, কেননা এটা শত রােগের চিকিৎসা। আল্লাহ তা'আলা মােটা ব্যক্তিকেই পছন্দ করে না।” 

(কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৬০) 


       যে ব্যক্তি শাহওয়াত (অর্থাৎ- প্রবৃত্তি, আকাঙ্খা) কে নিজের দ্বীনের (ধর্মের) উপর প্রাধান্য দেবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে। 

(রূহুল মাআনী, ৪র্থ খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা, মুলতান তাফসীরে নঈমী, ৮ম খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা, মারকাযুল আওলিয়া, লাহাের) 


হালকা গড়নের মানুষের ফযীলতঃ 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কম খাওয়ার সাথে সাথে বিশেষতঃ ময়দা, মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় এবং এসবের তৈরী খাবার ব্যবহার (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী) কম করাতে শরীরের ওজন কমে যায়। বেড়ে যাওয়া পেট পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে ও ঐ ব্যক্তি স্মার্ট (SMART) হয়ে যায়। মােটা হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে নিয়ে হাসা, উত্যক্ত করে মনে কষ্ট দেয়া গুনাহ। কম আহারকারী, হালকা গড়নের শরীরধারী মুসলমানকে আল্লাহ্ তা'আলা পছন্দ করেন। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণিত রয়েছে; 

———————————————————

১. মােটা হওয়ার কারণে কোন মুসলমানের উপর হাসি ঠাট্টা করে মনে কষ্ট দেয়া গুনাহ। 

২. শরীরের ওজন কম করার পদ্ধতি জানার জন্য ফয়জানে সুন্নাতের অধ্যায় পেটের কুলে মদীনার ৭৬-৭৯ পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করুন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ) 


মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহর (নিকট) তােমাদের মধ্যে ঐ বান্দা সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়, যে কম আহারকারী ও হালকা গড়নের। 

(আল জামি উস সাগীর, ২০পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২২১) 


        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমলের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য মাদানী পরিবেশের প্রয়ােজন। অন্যথায় অস্থায়ীভাবে উৎসাহের সৃষ্টি হলেও পরে ভাল সংস্পর্শের অভাবে স্থায়ীত্ব লাভ হয় না। তাই আশিকানে রাসুল এর সংস্পর্শ লাভের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর করাকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন।  الحمد للّٰه عزّ وجل  দাওয়াতে ইসলামীর বরকতে চারিদিকে সুন্নাতের সাড়া জেগেছে। আসুন, দাওয়াতে ইসলামীর একটি ঈমান তাজাকারী "ঘটনা" শুনে নিজের হৃদয়কে প্রস্ফুটিত করুন। যেমন- 


এক অমুসলিমের ইসলাম গ্রহণঃ 

        তেহসীল ঢান্ডা, জেলা আমবিটকর নগর ইউপি, ভারতের এক ইসলামী ভাইয়ের অনেকটা এরকম বর্ণনা হচ্ছে, আমি কুফরের অন্ধকার জগতে ঘুরছিলাম। একদিন কেউ মাকতাবাতুল মদীনার একটি রিসালা “ইহতিরামে মুসলিম” আমাকে উপহার দিলেন। আমি পড়ে অবাক হলাম, যেসব মুসলমানকে আমি সর্বদা ঘৃণার চোখে দেখতাম। তাদের মাযহাব “ইসলাম” পরস্পরের মধ্যে এ ধরণের শান্তির সংবাদ দিচ্ছে। রিসালাটির লিখকের প্রভাব তীর হয়ে আমার অন্তরে প্রভাব ফেলল আর আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি ভালবাসার ঝর্ণা ঢেউ তুলতে লাগল। একদিন আমি বাসে সফর করছিলাম, কিছু দাড়ি ও ইমামা (পাগড়ী) ধারী ইসলামী ভাইয়ের কাফেলাও বাসে আরােহন করল। আমি দেখতেই বুঝে গেলাম এরা মুসলমান। আমার অন্তরে যেহেতু আগে থেকেই ইসলামের ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছিল তাই আমি সম্মানের দৃষ্টিতে তাদেরকে দেখতে লাগলাম। এরই মধ্যে তাদের মধ্য থেকে একজন ইসলামী ভাই প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ এর শানে না’ত শরীফ পড়া শুরু করলেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী) 


আমার কাছে তার ধরণ সীমাহীন ভালাে লাগল। আমার আগ্রহ দেখে তাদের মধ্য থেকে একজন আমার সাথে কথাবার্তা শুরু করে দিলেন। তিনি বুঝে গেলেন যে, আমি মুসলমান নই। তিনি মুচকি হেসে খুবই হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে আমাকে বললেন: আমি আপনাকে ইসলাম গ্রহণ করার আবেদন জানাচ্ছি। ইহতিরামে মুসলিম রিসালা পড়ে যেহেতু আমি পূর্বেই আন্তরিকভাবে ইসলাম প্রেমিক হয়ে গিয়েছিলাম, তার বিষয়সূলভ আচরণ আমার অন্তরে আরাে প্রভাব ফেলল। আমি না করতে পারলাম না।  الحمد للّٰه عزّ وجل  আমি সত্য অন্তরে ইসলাম গ্রহণ করলাম।  الحمد للّٰه عزّ وجل  এ বর্ণনা দেয়ার সময় আমি মুসলমান হয়েছি চার মাস গত হয়েছে। আমি নিয়মিতভাবে নামায পড়ছি, দাড়ি সাজানাের নিয়্যত করে নিয়েছি, দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মাদানী কাফেলা সমূহে সফরের সৌভাগ্য অর্জন করছি। 


কাফেরাে কো চলে মুশরিকো কো চলে, 

দাওয়াতে দ্বীন দে কাফিলে মে চলাে। 

দ্বীন পে-লা-য়ে ছব চলে আ-য়ে, 

মিলকে সা-রে চলে কাফিলে মে চলাে।


মানুষকে লজ্জা করে সুন্নাত বর্জন করা হতাে নাঃ 

আমাদের সাহাবায়ে কিরামগণ  عليهم الرضوان  তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ এর ভালবাসায় সর্বদা বিভাের থাকতেন। দুনিয়ার কোন আকর্ষণ ও অকৃতজ্ঞ সমাজ ব্যবস্থার মিথ্যা বাহাদুরী, সম্মান তাঁদের কাছ থেকে সুন্নাতের আমল ছাড়াতে পারত না। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: হযরত সায়্যিদুনা মা'কিল বিন ইয়াসার  رضى الله تعالى عنه  (যিনি সেখানকার মুসলমানদের সর্দার ছিলেন) খাবার খাচ্ছিলেন, (তখন) তাঁর হাত থেকে লােকমা পড়ে গেল। তিনি (তা) তুলে নিলেন ও পরিস্কার করে খেয়ে নিলেন। এটা দেখে গেঁয়াে লােকেরা চোখ দিয়ে একে অপরকে ইশারা করল, (কি আশ্চর্য কথা যে, পতিত লােকমা তিনি খেয়ে নিলেন)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


কেউ তাঁকে  رضى الله تعالى عنه  ও বললেন: আল্লাহ্ আমীরের মঙ্গল করুন। হে আমাদের সর্দার! এসব গেঁয়াে লােক বাঁকা দৃষ্টিতে ইশারা করছে যে, আমীর সাহিব  رضى الله تعالى عنه  পতিত লােকমা খেয়ে নিলেন, অথচ তাঁর সামনে খাবার বিদ্যমান রয়েছে।” তিনি বলল: “এ অনারবীদের কারণে আমি ঐ বস্তুকে ত্যাগ করতে পারি না, যেটা আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ থেকে শুনেছি। আমরা একে অপরকে নির্দেশ দিতাম যে, লােকমা পড়ে গেলে তখন সেটাকে পরিস্কার করে খেয়ে নেয়া উচিত, শয়তানের জন্য রেখে দেয়া উচিত নয়।” 

(ইবনে মাজা শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১৭পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৭৮) 


রূহে ঈমাঁ মগজে কুরআঁ জান দী,

হাসতে হুব্বে রহমাতুল্লিল আলামীন। 


বেশি বেশি ইনফিরাদী কৌশিশ করুনঃ

     প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে? বিখ্যাত সাহাবী ও মুসলমানদের সর্দার সায়্যিদুনা মা'কিল বিন ইয়াসার  رضى الله تعالى عنه  সুন্নাতকে কিরূপ ভালবাসতেন। তিনি  رضى الله تعالى عنه  অনারবীদের ইশারা করাকে সামান্য পরিমাণ পরওয়া করলেন না এবং স্বাভাবিকভাবে সুন্নাতের উপর আমল চালু রাখলেন। আর আজ অনেক মূর্খ মুসলমান এমনই রয়েছে যে, “আধুনিক পরিবেশে” দাড়ি মুবারাক এর ন্যায় মহান সুন্নাত পরিত্যাগকে আল্লাহরই পানাহ! “দূরদর্শিতা” মনে করে। সত্যিকারের দূরদর্শিতা এটাই যে, হাজারাে খারাপ পরিবেশ হােক, বিরােধী ব্যক্তিদের জোর হােক, বদ-মাযহাবের শাের হােক, যা কিছুই হােক না কেন আপনি দাড়ি শরীফ, ইমামায়ে পাক (পাগড়ী) ও সুন্নাতে ভরা সাদা পােষাকে থাকুন। মানুষের সংশােধনের জন্য ইনফিরাদী কৌশিশ করতে থাকুন।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  সুন্নাতের আলাে একটি একটি করে জ্বলতে থাকবে, সত্যের উন্নতি হবে, শয়তান অপদস্ত হবে, চারিদিকে সুন্নাতের আলাে চমকাবে। প্রত্যেকে আশিক, প্রিয় মুস্তফা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ এর প্রেমিক হয়ে যাবে।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  প্রিয় হাবীব صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ এর নূরের আলােতে আলােকিত হবে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী) 


খাক সূরুজ ছে আন্ধীহিরাে কা ইজালা হােগা, 

আ-প আয়ে তাে মেরে ঘর মে উজালা হােগা। 

হােগা সায়রাব ছরে কাউছার ও তাসনীম উহী,

জিছকে হাতো মে মদীনে কা পিয়ালা হােগা। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


ইনফিরাদী কৌশিশের এক মাদানী বাহার দেখুন

কাফেরের ইসলাম গ্রহণঃ 

     দাওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মাদীনা (বাবুল মাদীনা করাচী) থেকে আশিকানে রাসুলের ৯২ দিনের এক মাদানী কাফেলা কলম্বােতে সফররত ছিল। যেদিন “এরাে” জেলায় ৩০ দিনের জন্য মাদানী কাফেলা সফরে রওয়ানা হবে, এমন সময় এক ইসলামী ভাই এক অমুসলিম যুবককে আমীরে কাফেলার নিকট আনলেন। আমীরে কাফেলা নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد এর মহান চরিত্র, ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে বেশ কিছু সুগন্ধিময় মাদানী ফুল পেশ করে তাকে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন। এতে তিনি কিছু প্রশ্ন করলেন যেগুলাের জবাব দেয়া হলাে।  الحمد للّٰه عزّ وجل  কম বেশি এক ঘন্টার ইনফিরাদী কৌশিশের পর ঐ অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হলেন। 


কাফির আ-যায়েন গে রাহে হক পা-য়েন গে, 

ইনশাআল্লাহ্ চলে কাফিলে মে চলাে।

কুফর কা ছর ঝুকে দ্বী-কা ঢংকা বাজে, 

 انشاء اللّٰه عزّ وجل  চলে কাফিলে মে চলাে। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


সন্তানকে কম বিবেক বুদ্ধি হওয়া থেকে রক্ষা করার উপায়ঃ 

নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি দস্তরখানা থেকে খাবারের পতিত টুকরাে (অংশ) তুলে নিয়ে খাবে সে প্রাচুৰ্য্যময় জীবন যাপন করে এবং তার সন্তান ও সন্তানের সন্তানেরা কম বিবেকবান (অল্প মেধা সম্পন্ন) হওয়া থেকে নিরাপদ থাকে।” 

(কানযুল উম্মাল, ১৫তম খন্ড, ১১১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮১৫)


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ) 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


দারিদ্র্যতার প্রতিকারঃ

      বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা হুদবা বিন খালিদকে  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বাগদাদের খলীফা মামুনুর রশীদ নিজের ঘরে দাওয়াত করলেন। খাওয়া শেষে খাবারের যেসব দানা ইত্যাদি পড়ে গিয়েছিল, সম্মানিত মুহাদ্দিস বেছে বেছে তা খেতে লাগলেন। মামুন আশ্চর্য হয়ে বললেন: “হে শায়খ! এখনাে আপনার পেট ভরেনি? বললেন: কেন ভরবে! আসল কথা হচ্ছে, আমার কাছে হযরত সায়্যিদুনা হাম্মাদ বিন সালামা  رضى الله تعالى عنه  একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, “যে ব্যক্তি দস্তরখানায় পতিত টুকরােগুলাে বেছে বেছে খাবে সে দারিদ্রতার ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে যাবে।” আমি এ হাদীসে মুবারাকার উপর আমল করছি। এ কথা শুনে খলীফা মামুন সীমাহীন প্রভাবিত হলেন ও নিজের এক খাদিমকে ইশারা করলে সে এক হাজার দীনার রুমালে বেঁধে নিয়ে আসল। মামুন তা হযরত সায়্যিদুনা হুদবা বিন খালিদ  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  এর সামনে উপহার স্বরূপ পেশ করলেন। হযরত সায়্যিদুনা হুদবা বিন খালিদ  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বললেন:  الحمد للّٰه عزّ وجل  হাদীসে মুবারাকার উপর আমলের বরকত হাতােহাত (সাথে সাথে) প্রকাশ পেয়ে গেল। (সামরাতুল আওরাক, ১ম খন্ড, ৮পৃষ্ঠা) 


লজ্জায় সুন্নত ত্যাগ করো নাঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল যে, আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন  رحمه اللّٰه تعالىٰ  সুন্নাতের উপর আমল করার ব্যাপারে দুনিয়ার বড় থেকে বড় সর্দার এমনকি বাদশাদের পর্যন্ত পরওয়া করতেন না। এ ঘটনা থেকে আমাদের ঐ সকল ইসলামী ভাইদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যারা মানুষের লজ্জার কারণে পানাহারের সুন্নাতগুলাে বর্জন করে দেন। এছাড়া দাড়ি শরীফ ও ইমামা মুবারকের সম্মানের তাজকে মাথায় সাজানাে থেকে পাশ বঞ্চিত থাকেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করাে, নিঃসন্দেহে এটা তােমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা) 


      নিশ্চয় সুন্নাতের উপর আমল করা উভয় জগতে সৌভাগ্যের মাধ্যম। অনেক সময় দুনিয়াতে সরাসরি এর বরকত প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা হুদবা বিন খালিদ  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  শাহী দরবারে সুন্নাতের উপর আমল করার বরকতে এক হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) পেয়ে গেলেন ও তিনি সম্পদশালী হয়ে গেলেন। 


জু আপনে দিলকে গুলদাস্তে মে সুন্নাত কো সাজাতে হে, 

উও বে-শক রহমতে দো-নাে জাহা মে হক ছে পাতে হে। 


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যেভাবে রুজির মধ্যে বরকতের অনেক কারণ রয়েছে, অনুরূপভাবে রুজিতে সংকীর্ণতারও বহু কারণ রয়েছে। যদি এগুলাে হতে বাঁচা যায় তবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  বরকতই বরকত দেখতে পাবেন। আপনাদের অবগতির জন্য দারিদ্রতার ৪৪ টি কারণ পেশ করছি। 


দারিদ্র্যতার ৪৪ টি কারণঃ 

(১) হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া (২) খালি মাথায় খাওয়া (৩) অন্ধকারে খাওয়া (৪) দরজায় বসে পানাহার করা (৫) মৃত ব্যক্তির কাছে বসে খাওয়া (৬) জানাবাত অবস্থায় (অর্থাৎ- সহবাস বা স্বপ্ন দোষের পর গােসলের পূর্বে) খাবার খাওয়া (৭) (পাত্র থেকে) খাওয়ার জন্য বের করা খাবার খেতে দেরী করা (৮) পাটিতে দস্তর খানা বিছানাে ব্যতীত খাওয়া (৯) খাটে নিজে মাথার দিকে বসা ও খাবার বিছানায় পা রাখার দিকে রাখা (১০) দাঁত দিয়ে রুটি ছেড়া (বারগার ইত্যাদি আহারকারীও সতর্কতা অবলম্বন করুন) (১১) কাঁচের বা মাটির ভাঙ্গা পাত্র ব্যবহার করা যদিও তা দিয়ে পানি পান করা হয়। (বাসন বা কাপের ভাঙ্গা অংশের দিক দিয়ে পানি, চা ইত্যাদি পান করা মাকরূহ। মাটির ফাটল ধরা বা এমন বাসন যেসবের ভেতরের অংশ থেকে সামান্য পরিমাণ মাটি উঠে গেছে তা দিয়ে খাবার খাবেন না, কারণ কাদা ময়লা ও জীবাণু পেটে গিয়ে রােগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে) (১২) খাওয়ার বাসন পরিস্কার না করা (১৩) যে বাসনে খাওয়া হয়েছে তাতেই হাত ধােয়া।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল) 


(১৪) খিলাল করার সময় খাদ্যের যেসব অংশ বের হয় তা পুনরায় মুখে রেখে দেয়া (১৫) পানাহারের পাত্র খােলাবস্থায় রেখে দেয়া। পানাহারের পাত্র بِسمِ اللّٰه বলে ঢেকে রাখা উচিত। কারণ বালা-মুসিবত (সেগুলাের উপর) অবতীর্ণ হয় ও তা নষ্ট করে দেয়। অতঃপর ঐ খাদ্য ও পানীয় রােগব্যাধি বয়ে আনে (১৬) রুটিকে যেখানে সেখানে রাখা, যাতে বেয়াদবী হয় ও পায়ে লাগে। (সুন্নী বেহেস্তী যেওয়ার, ৫৯৫-৬০১ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুরহানুদ্দিন যারনূজী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  দারিদ্রতার যেসব কারণ বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে এগুলােও রয়েছে (১৭) অধিক ঘুমানাের অভ্যাস (এতে মূখারও সৃষ্টি হয়) (১৮) উলঙ্গ হয়ে শােয়া (১৯) নির্লজ্জভাবে পেশাব করা (মানুষের সামনে সাধারণ রাস্তাঘাটে সংকোচহীনভাবে পেশাবকারীরা মনােযােগ দিন) (২০) দস্তরখানায় পতিত দানা ও খাবারের অংশ ইত্যাদি উঠিয়ে নেয়াতে অবহেলা করা (২১) পিয়াজ ও রসুনের ছিলকা (চামড়া) জ্বালানাে (২২) ঘর কাপড় দিয়ে ঝাড়ু দেয়া (২৩) রাতে ঝাড় দেয়া (২৪) আবর্জনা ঘরেই রেখে দেয়া (২৫) মাশায়িখের (বুযুর্গদের) আগে আগে পথ চলা (২৬) মাতা-পিতাকে নাম ধরে ডাকা (২৭) হাত কাঁদা বা মাটি দিয়ে ধৌত করা (২৮) দরজার এক অংশের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানাে (২৯) টয়লেটে অযু করা (৩০) শরীরের উপরেই কাপড় ইত্যাদি সেলাই করা (৩১) পােষাক দিয়ে মুখ শুকানাে (অর্থাৎ শরীরে পরিহিত কাপড় দিয়ে মুখ মােছা) (৩২) ঘরে মাকড়শার জাল লাগাবস্থায় থাকতে দেয়া (৩৩) নামাযে অবহেলা করা (৩৪) ফজরের নামাযের পর মসজিদ থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাওয়া (৩৫) ভােরে বাজারে যাওয়া (৩৬) বাজার থেকে দেরী করে আসা (৩৭) নিজের সন্তানকে বদ দোয়া করা (প্রায় মহিলারা কথায় কথায় নিজের বাচ্চাদের বদ দোয়াকরে থাকেন আর পরে দারিদ্রতার কারণে কান্নাও করেন) (৩৮) গুনাহ্ করা বিশেষতঃ মিথ্যা বলা (৩৯) চেরাগ ফুক দিয়ে নিভানাে (৪০) ভাঙ্গা চিরুনী ব্যবহার করা (৪১) মাতা-পিতার জন্য কল্যাণের দোয়া না করা (৪২) ইমামা (পাগড়ী) বসে বাঁধা।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব) 


(৪৩) পায়জামা বা সেলােয়ার (প্যান্ট) দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে পরিধান করা 

(৪৪) নেক আমলে দেরী করা বা ছলচাতুরী করা। 

(তালীমুল মুতাআল্লিমি তারীকুত তাআলুম, ৭৩, ৭৬পৃষ্ঠা, বাবুল মদীনা করাচী) 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


পতিত রুটি খাওয়ার ফযীলতঃ 

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার রহমত অনেক বড়। অনেক সময় দেখতে আমল অনেক ছােট হয় কিন্তু সেটার ফযীলত অনেক বেশি হয়ে থাকে। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন উম্মে হারাম  رضى الله تعالى عنه  বলেন: নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “রুটির সম্মান করাে, কারণ তা আসমান ও জমিনের বরকতের অংশ। যে ব্যক্তি দস্তরখানা থেকে পতিত রুটি খেয়ে নেবে তার ক্ষমা হয়ে যাবে।” 

(আল জামিউস সাগীর, ৮৮পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৪২৬) 


 سبحان اللّٰه عزّ وجل ! প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হায়! এমন যদি হত আমরা সামান্য সঙ্কোচবােধ দূর করে দিয়ে দস্তরখানায় পতিত রুটি ও ভাতের দানা ইত্যাদি তুলে নিয়ে খেয়ে নিতাম এবং ক্ষমা লাভের অধিকারী হয়ে যেতাম। 


তালিবে মাগফিরাত হাে ইয়া আল্লাহ, 

বখ্শ দে বেহূরে মুস্তফা ইয়া রব! 


রুটির টুকরোর ঘটনাঃ 

একদা সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন ওমর  رضى الله تعالى عنه  জমিনে রুটির টুকরাে পড়া অবস্থায় দেখলেন তখন গােলামকে বললেন: এটা পরিস্কার করে রেখে দাও। যখন গােলামের কাছে সন্ধ্যায় ইফতারের সময় ঐ টুকরাে চাইলেন, সে আরয করল, তাতাে আমি খেয়ে ফেলেছি। বললেন: যা তুই আযাদ (মুক্ত)। কারণ আমি প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم থেকে শুনেছি;


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


       “যে রুটির পতিত টুকরাে তুলে নিয়ে খেয়ে নেয়, তখন (সেটা) তার পেটে পৌঁছার পূর্বেই আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেন।” এখন যে ক্ষমার অধিকারী হয়ে গেল আমি তাকে কিভাবে গােলাম বানিয়ে রাখি? (তাম্বীহুল গাফিলীন, ৩৪৮পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫১৪) 


মাদানী চিন্তাধারাঃ

        سبحان اللّٰه عزّ وجل ! আমাদের বুযুর্গদের কিরূপ মাদানী চিন্তাধারা ছিল যে, পতিত রুটি খেয়ে গােলাম ক্ষমার অধিকারী হয়ে যাওয়াতে মুনিবও নিজের গােলামী থেকে মুক্ত করে দিলেন। ইয়া রব্বে মুস্তফা عَزَّ  وَّجَلَّ وَصَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ বাতুফাইলে মুস্তফা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাদেরকেও মাদানী চিন্তাধারা, সুন্নাতের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা দান করাে ও আমাদেরকেও এ তাওফিক দাও, যখন জমিনে রুটির টুকরাে পতিত অবস্থায় দেখি, তখন সম্মানের সাথে তুলে নিয়ে চুমু দিয়ে পরিস্কার করে খেয়ে নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি। ইয়া ইলাহী! সুন্নাতের উপর আমলের ব্যাপারে আমাদের সঙ্কোচবােধ যেন দূর হয়ে যায় এবং আমাদের ক্ষমা করাে।

 

اٰمِينَ بِجَاهِ النَّبِيِّ الاَمِينَ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ


সুন্নাতু ছে মুঝে মহব্বত দে, মেরে মুর্শিদ কা ওয়াসেতা ইয়া রব!


দস্তরখানা বাড়াও!

        আমাদের বুযুর্গদের অভ্যাস এযে, খাবার শেষ করার পর এরূপ কখনাে বলেন না, “দস্তরখানা উঠাও” বরং এটা বলেন: “দস্তরখানা বাড়াও” বা “খাবার বাড়াও”। এরূপ বলাতে পরােক্ষভাবে দস্তরখানা প্রসার, খাবার বৃদ্ধি বরকত, প্রাচুর্য ও বিস্তৃতিরই দোয়াহয়ে থাকে। 

(সুন্নী বেহেস্তী যেওয়ার, ৫৬৬ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 


যখন আমি “ভয়ানক উট” নামক রিসালা পড়লাম...

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উভয় জগতের বরকত লাভের জন্য কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।” (মাতালিউল মুসারাত) 


       দাওয়াতে ইসলামীর বরকতের কথা কী বলব! কলিকাতা, ভারতের এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারাংশ আরয করছি। তিনি বলেন: আমি সুন্নাতে ভরা জীবন থেকে অনেক দূরে একটি ফ্যাশন পাগল যুবক ছিলাম। এক রাতে ঘরে ফেরার সময় মাঝ পথে সবুজ পাগড়ীর (ইমামা) বাহার দৃষ্টিগােচর হলাে। নিকটে গিয়ে জানতে পারলাম, বােম্বাই থেকে দাওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসুলের মাদানী কাফেলা এসেছে, তাই এখানে সুন্নাতে ভরা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমার মনে হলাে যে, এসব মানুষ দীর্ঘ পথ সফর করে আমাদের শহর কলিকাতায় এসেছেন, তাদের কথা শুনা উচিত। সুতরাং আমি ইজতিমাতে অংশগ্রহণ করলাম। ইজতিমা শেষে তারা মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত রিসালা বন্টন শুরু করলেন। সৌভাগ্যক্রমে একটি রিসালা আমার হাতেও পৌঁছে গেল। সেটার উপর লেখা ছিল “ভয়ানক উট”। অবশেষে আমি ঘরে ফিরে আসলাম। আগামীকাল পড়ব এ মানসিকতায় রিসালাটি রেখে দিলাম ও শােয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঘুমের পূর্বে এমনিতেই যখন রিসালার পাতা উল্টালাম তখন আমার দৃষ্টি এ লাইনের উপর পড়ল, শয়তান লক্ষ অলসতা প্রদান করবে, তবুও আপনি এ রিসালা অবশ্যই পড়ে নিন।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  আপনার মধ্যে মাদানী পরিবর্তন দেখতে পাবেন। এ বাক্যটি আমার ভিতর খুব গভীরভাবে রেখাপাত করল। আমি ভাবলাম, সত্যিই শয়তান আমাকে এ রিসালা কিভাবে পড়তে দেবে, কালকে কে দেখবে! নেকীতে দেরী করা উচিত নয়, এটা এ মুহুর্তে পড়ে নেয়া উচিত। এ কথা ভেবে আমি পড়া শুরু করলাম। ঐ পাক পরওয়ারদিগারের শপথ, যার মহান দরবারে হাযির হয়ে কিয়ামতের দিন হিসাব দিতে হবে! যখন আমি ভয়ানক উট রিসালাটি পড়লাম, তখন তাতে দুষ্ট কাফিরদের কাছ থেকে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর উপর চালানাে অত্যাচার নিপীড়নের বেদনাদায়ক বর্ণনা পাঠ করে আমি অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলাম। আমার ঘুম দূর হয়ে গেল। দীর্ঘক্ষণ ধরে আমি কাঁদতে থাকি। রাতের মধ্যেই আমি সংকল্প করলাম যে, সকালে হাতােহাত মাদানী কাফেলায় সফর করব।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) যখন সকালে মা-বাবার নিকট আরয করলাম: তখন তারা খুশিমনে অনুমতি দিয়ে দিলেন আর আমি তিন দিনের জন্য আশিকানে রাসুলের সাথে মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম। কাফেলা ওয়ালারা আমাকে বদলে দিয়ে কি থেকে কি বানিয়ে দিলেন!  الحمد للّٰه عزّ وجل  আমি নামাযী হয়ে ফিরলাম। সবুজ ইমামা (পাগড়ী) শরীফের তাজ দ্বারা সবুজ হয়ে গেলাম। শরীর মাদানী পােষাকে সজ্জিত হয়ে গেল। আমার মা যখন আমাকে পরিবর্তন হতে দেখলেন তখন সীমাহীন খুশি হলেন ও খুব দোয়া করলেন। আত্মীয়স্বজন সবাই আমার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন।  الحمد للّٰه عزّ وجل  বর্তমানে আমি দা'ওয়াতে ইসলামীর একটি তেহসীল মুশাওয়ারাতের খাদিম (নিগরান) হিসাবে যথাসাধ্য সুন্নাত প্রসারের সৌভাগ্য অর্জন করছি। 


আশিকানে রাসুল লায়ে জান্নাতকে ফুল, 

আ-ও লেনে চলে কাফিলে মে চলাে। 

ভাগ্-তে হে কাহা আ-ভী যায়ে ইহা, 

পা-য়েন গে জান্নাতে কাফিলে মে চলো।


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রিসালা বন্টন করুনঃ 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ একজন বেনামাযী মডার্ণ যুবককে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। এটাও জানা গেল যে, মাকতাবাতুল মদীনার পক্ষ থেকে মুদ্রিত সুন্নাতে ভরা রিসালা বন্টন করার অনেক ফায়দা রয়েছে। ঐ মডার্ণ যুবক ‘ভয়ানক উট' নামক রিসালাটি পড়ে ছটফট করে সাথে সাথে মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেল আর তার মাথা সবুজ শ্যামল হয়ে গেল। তাই নিজের আত্মীয় স্বজনের ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে, ওরশ ও সমাবেশ, বিবাহ ও শােকের অনুষ্ঠান, জানাযা ও বরযাত্রী এবং মীলাদের জুলুসে সুন্নাতে ভরা রিসালা সমূহ ও রং বেরংয়ের আলাদা আলাদা মাদানী ফুলের লিফলেট মাকতাবাতুল মদীনা থেকে সুলভ মূল্যে ক্রয় করে প্রচুর পরিমাণে বন্টন করুন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  স্মরণে এসে যাবে।” (সায়াদাতুদ দারাঈন) 


       বিয়ের কার্ডের সাথেও একটি করে রিসালা অর্পন করুন। যদি আপনার প্রদানকৃত রিসালা বা লিফলেট পড়ে কারাে হৃদয়ে পরিবর্তন এসে যায় আর সে নামাযী ও সুন্নাত পালনে অভ্যস্ত হয়ে যায় তবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  আপনারও উভয় জগতে সফলতা অর্জিত হবে। 


হার মাহিনে জোকোয়ি বারা রিসালা বাট-দে,

 انشاء اللّٰه عزّ وجل  দো-জাহা মে উছকা বে-ড়া পার হয়। 


আঙ্গুল চাটা সুন্নাতঃ

       হযরত সায়্যিদুনা আমীর বিন রবীয়া  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণিত, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তিন আঙ্গুল দ্বারা খাবার খেতেন ও যখন (তা থেকে) অবসর হতেন তখন সেগুলাে চেটে নিতেন। 

(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ২৩পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৯২৩) 


খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে তা অজানাঃ

       হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  বলেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আঙ্গুলগুলাে ও থালা চাটার নির্দেশ দিয়েছেন ও বলেছেন, “তােমাদের জানা নেই যে, খাবারের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, ১১২২পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০২৩) 


খাবারের বরকত লাভের নিয়মঃ 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আফসােস, শত কোটি আফসােস! আজকাল মুসলমানদের খাওয়ার ধরণ দেখে এরূপ মনে হয় যে, অনেক কম সংখ্যক সৌভাগ্যবানই এমন রয়েছেন, যারা সুন্নাত অনুসারে খাবার খান ও সেটার বরকত লাভ করেন। বর্ণনাকৃত হাদীসে মুবারকে বলা হয়েছে, ‘তােমাদের জানা নেই যে, খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। সুতরাং আমাদের চেষ্টা করা উচিত, খাবারের এক বিন্দুও যেন নষ্ট না হয়। হাঁড় ইত্যাদি এতটুকু চেটে চুষে নেয়া উচিত, খাবারের এক বিন্দুও যেন নষ্ট না হয়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম) 


       হাঁড় ইত্যাদি এতটুকু চেটে চুষে নেয়া উচিত যে, তাতে যেন মাংসের কোন অংশ ও কোন ধরণের খাদ্যের চিহ্ন বাকী না থাকে। প্রয়ােজনবশতঃ বাসনে হাঁড়কে ঝেড়ে নিন, যাতে কোন দানা ইত্যাদি আটকে থাকলে বেরিয়ে আসে ও খেয়ে নেয়া সম্ভব হয়। যদি সম্ভব হয় তবে খাবারের সাথে রান্নাকৃত গরম মসল্লা যথা-এলাচী, কালাে মরিচ, লবঙ্গ, দারু চিনি ইত্যাদিও খেয়ে নিন।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  উপকারই হবে। যদি খাওয়া সম্ভব না হয় তবুও কোন গুনাহ্ নেই। বিরিয়ানী ইত্যাদি থেকে কাঁচা মরিচ বের করে ফেলে দেয়ার পরিবর্তে সম্ভব হলে খাওয়া শুরু করার পূর্বেই সেগুলাে বেছে নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখুন এবং পরে কোন খাবারে পিষে দিয়ে দিন। অনেকে মাছের চামড়াও ফেলে দেন এটাও খেয়ে নেয়া উচিত। মােটকথা, খাদ্যের সকল অংশের প্রতি লক্ষ্য রেখে সেটার প্রতিটি ক্ষতিমুক্ত বস্তু খেয়ে নেয়া উচিত। এছাড়া আঙ্গুলগুলাে ও বাসন এমনভাবে চাটুন যেন তাতে খাবারের অংশ অবশিষ্ট না থাকে। 


আঙ্গুলগুলাে চাটার নিয়মঃ 

       হযরত সায়্যিদুনা কাব বিন উজরা  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কে বৃদ্ধাঙ্গুল, শাহাদাত আঙ্গুল ও মধ্যম আঙ্গুল একত্র করে তিন আঙ্গুলে খেতে দেখেছি। অতঃপর আমি দেখলাম যে, মদীনার তাজেদার আল্লাহর প্রিয় রাসুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সেগুলাে মুছে নেয়ার পূর্বে চেটে নিলেন, সর্বপ্রথম মধ্যম অতঃপর শাহাদাতের ও এরপর বৃদ্ধাঙ্গুল শরীফ চাটলেন। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ২৯পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৯৪১) 


আঙ্গুলগুলাে তিনবার চাটা সুন্নাতঃ 

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আঙ্গুলগুলাে তিনবার করে চাটা সুন্নাত। যদি তিনবারের পরও আঙ্গুলগুলােতে খাবার লেগে থাকতে দেখা যায় তবে আরাে অধিকবার চেটে নিন। শেষ পর্যন্ত যাতে খাদ্যের কোন চিহ্ন দৃষ্টিগােচর না হয়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।” (আব্দুর রাজ্জাক) 


       'শামায়িল তিরমিযীতে' রয়েছে; নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم (খাওয়ার পরে) নিজ আঙ্গুল গুলাে তিন তিন বার করে চাটতেন। (শামায়িলে তিরমিযী, ৬১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩৮) 


বরতন চাটা সুন্নাতঃ

        তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি রেকাবী (থালা) ও নিজ আঙ্গুলগুলােকে চেটে নেয়, আল্লাহ্ তাআলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে পরিতৃপ্ত রাখেন।” (তাবরানী কবীর, ১৮তম খন্ড, ২৬১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৫৩) 


শেষে বরকত বেশী হয়ে থাকেঃ 

        সরকারে নামদার, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “খাবারের থালা ততক্ষণ না উঠানাে চাই, যতক্ষণ আহারকারী সেটা চেটে না নেয় অথবা অন্য কারাে দ্বারা চাটিয়ে না নেয়। কারণ “খাওয়ার শেষে বরকত (অধিক) হয়ে থাকে।” (কানযুল উম্মাল, ১৫তম খন্ড, ১১১পৃষ্ঠা) 


থালী ক্ষমার দোয়া করেঃ

       হযরত নবাইশা  رضى الله تعالى عنه  বলেন: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে খাওয়ার পর থালা চেটে নেবে, ঐ থালা তার জন্য ইসতিগফার (তথা ক্ষমা প্রার্থনা) করবে।” (ইবনে মাজাহ , ৪র্থ খন্ড, ১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩২৭১) এক বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, ঐ থালা বলে, “হে আল্লাহ! একে জাহান্নাম থেকে নিরাপদে রাখুন, যেভাবে সে আমাকে শয়তান থেকে রেখেছে।” (কানযুল উম্মাল, ১৫ তম খন্ড, ১১১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮২২) বিখ্যাত মুফাসসির হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ, মিশ্রিত থালা পরিস্কার করা ব্যতীত রেখে দিলে তা শয়তান চাটে।” (মিরআত-৩, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তাআলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আ'দী) 


থালা চাটার হিকমতঃ

      প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “থালা চাটার মাঝে খাওয়ার আদব রয়েছে। এটাকে (থালাকে) বরবাদ হওয়া থেকে রক্ষা করা। থালা ঐ অবস্থায় রেখে দেয়াতে তার উপর মাছি বসে। থালাতে লেগে থাকা খাদ্য কণা আল্লাহরই পানাহ! নালা, আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়, এর ফলে সেটার প্রতি ভীষণ বেয়াদবী হয়ে থাকে। যদি এক ওয়াক্তে প্রত্যেকে কয়েকটি করে দানাও থালার মধ্যে রেখে দিয়ে নষ্ট করে তাহলে প্রতিদিন কত মণ খাবার নষ্ট হয়। মােটকথা, থালা চেটে নেয়ার মধ্যে অনেক হিকমত নিহিত রয়েছে।” (মিরআত-৩, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৮পৃষ্ঠা) 


ঈমান তাজাকারী বাণীঃ

তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “পেয়ালা চেটে নেয়া আমার নিকট এর চেয়ে অধিক প্রিয় যে, পেয়ালা পরিমাণ খাবার সদকা (দান) করব।” (অর্থাৎ চাটার মধ্যে যেহেতু বিনয় রয়েছে সুতরাং সেটার সাওয়াব ঐ সদকার সাওয়াব থেকেও বেশি)। (কানযুল উম্মাল, ১৫ তম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮২১) 


সুন্নতের বরকতঃ

        রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে রেকাবী (থালা) ও নিজের আঙ্গুলগুলাে চাটে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার পেট পূর্ণ করে।” (অর্থাৎ- দুনিয়াতে দরিদ্রতা থেকে রক্ষা পাবে, কিয়ামতের ক্ষুধা থেকে নিরাপদ থাকবে, দোযখ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। কেননা দোযখে কারাে পেট ভরবে না।) (তাবরানী কাবীর, ১৮তম খন্ড, ২৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৫৩)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (কানযুল উম্মাল) 


একজন গোলাম মুক্ত করার সওয়াবঃ   

       হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “যে খাবারের থালা চেটে নেয় ও ধুয়ে সেটার পানি পান করে নেয়, সে একজন গােলাম মুক্ত করার সাওয়াব লাভ করে।” (ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন, ২য় খন্ড, ৭পৃষ্ঠা) 


ধুয়ে পান করার নিয়মঃ 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! শুধুমাত্র খাবারের থালাকেই চাটা যথেষ্ট নয়। যখনই কোন পেয়ালা বা গ্লাস ইত্যাদিতে চা, দুধ, লাচ্ছি, ফলের রস (JUICE) ইত্যাদি পান করেন, সেগুলােকেও চেটে নিন ও ধুয়ে পান করে নিন। অনুরূপভাবে যখন তরকারী কিংবা অন্য কোন খাদ্যের সম্মিলিত পেয়ালা, কড়াই অথবা ডেক্সি খালি হয় বা তাতে সামান্য পরিমাণই খাদ্য অবশিষ্ট থেকে যায় তবে সেটা ও (তরকারী) বের করার চামচকেও সম্ভব হলে পরিস্কার করে নিন। প্রায়ই ডেক্সি ও বড় পাত্রের ভেতর কিছু না কিছু খাদ্য থেকে যায়, যা নষ্ট করে ফেলা হয়। এরূপ হওয়া উচিত নয়। যতটুকু সম্ভব সেটা থেকে সম্পূর্ণ খাবার বের করে নিন। একটি দানাও নষ্ট হতে দেবেন না। এমনও হতে পারে যে, সেটা ধুয়ে পানি জমা করে ফ্রিজে রেখে দিয়ে রান্নায় ব্যবহার করুন। তবে এসব কিছু আল্লাহ্ তাআলার তওফীকেই সম্ভব হবে। এটাও মনে রাখবেন যে, থালা বা গ্লাস ইত্যাদি চাটা বা বােয়াতে এ সতর্কতা জরুরী যে, তাতে যেন সম্পূর্ণ খাবার শেষ হয়ে যায়। যদি থালার মধ্যে খাদ্য কণা লেগে থাকে তবে এটা ধােয়ে বলা হবে না। এটা অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, একবার ধােয়ে পান করাতে প্রায়ই থালা পরিস্কার হয় না। সুতরাং দুই বা তিনবার পানি ঢেলে ভালভাবে উপরের কিনারাসহ চতুর্দিকে আঙ্গুল ঘুরিয়ে ধুয়ে পান করাটা উত্তম। 


ধুয়ে পান করার পর অবশিষ্ট ফোঁটাঃ

       ধুয়ে পান করার পরও থালা কিংবা পেয়ালা ইত্যাদিতে কয়েক ফোঁটা পানি থেকে যায় সুতরাং আঙ্গুল দিয়ে জমা করে পান করে নিন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।” (কানযুল উম্মাল) 


       পানি বা পানীয় দ্রব্য পান করে গ্লাস বা বােতল বাহ্যিকভাবে খালি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কিছুক্ষণ পরে দেখা হলে তখন দেখা যাবে সেটার চতুর্দিক থেকে নেমে তলায় কয়েক ফোঁটা জমা হয়েছে, এগুলােও পান করে নিন। কারণ হাদীসে পাকে রয়েছে, “তােমরা জাননা যে, খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।” হায়! এমন যদি হত, এভাবে ধুয়ে পান করা নসীব হতাে, খাবারের ঐ পাত্র, লাচ্ছির গ্লাস বা চায়ের পেয়ালা (কাপ) ইত্যাদি এমন হয়ে যেত, যেন বুঝা না যায় যে, এটাতে এইমাত্র কিছু খাওয়া হয়েছে কিংবা শরবত ইত্যাদি পান করা হয়েছে! 


চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে পাত্র ধুয়ে পান করার উপকারীতাঃ

       الحمد للّٰه عزّ وجل  কোন সুন্নাত হিকমত থেকে খালি নয়। আধুনিক বিজ্ঞানও আজ স্বীকার করছে যে, ভিটামিন বিশেষত: “ভিটামিন বি কমপ্লেক্স” খাবারের উপরিভাগে কম ও পাত্রের তলায় বেশী হয়ে থাকে। এছাড়া খাদ্যে বিদ্যমান খনিজ লবণ শুধুমাত্র তলাতেই থাকে, যা পাত্র চাটাতে ও ধুয়ে পান করাতে অনেক রােগ প্রতিরােধের কারণ হয়ে থাকে। 


কিডনীর পাথর কিভাবে বের হলাে? 

       দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করার বরকতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ও বিভিন্ন রােগ ব্যাধির প্রতিকার হয়। যেমন এক ইসলামী ভাইয়ের অনেকটা এরকম বর্ণনা হচ্ছে, আমাদের ১২ দিনের মাদানী কাফেলা বেলুচিস্থান থেকে ফেরার পথে কোন এক ষ্টেশনে নামল। কাফেলা ওয়ালারা ইনফিরাদী কৌশিশে মশগুল হলেন। এরই মধ্যে সেখানে এক ইসলামী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলাে। তিনি মাদানী কাফেলার বরকত অর্জনে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলতে লাগলেন, আমি কিডনীর পাথরের দরুন ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিলাম। ডাক্তার অপারেশন করতে বলেছিলেন। পথিমধ্যে এক ইসলামী ভাই আমাকে ইনফিরাদী কৌশিশ করে শান্তনা দিলেন যে, “ভয় করবেন না, মাদানী কাফেলায় সফর করে নিন। সফরে দোয়া কবুল হয়ে থাকে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর) 


       আল্লাহ্ আপনার সমস্যা সমাধান করে দেবেন।” তার ক্ষমতাপূর্ণ বাচন ভঙ্গি আমার অন্তর জয় করে নিল আর আমি তিন দিনের মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম।  الحمد للّٰه عزّ وجل  তিন দিনের মধ্যেই আমার পাথর বের হয়ে গেল। আমি যখন ডাক্তারকে বললাম: তখন তিনি অবাক হয়ে গেলেন, কেননা সম্ভবত আমার পাথর এধরণের ছিল যে, অপারেশন ছাড়া ডাক্তারদের নিকট এটার কোন চিকিৎসাই ছিল না। 


গরছে বীমারিয়া তংগ করে পাথ্যরিয়া,

পা-ওগে সিহাতে কাফিলে মে চলো। 

ঘর মে না-চা-কিয়া হাে ইয়া তঙ্গদাস্তিয়া, পা-য়েগি বরকতে কাফিলে মে চলাে। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


গরম খাবারের নিষেধাজ্ঞাঃ

      হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “গরম খাবার ঠান্ডা করে নাও, কারণ গরম খাবারে বরকত হয় না।” (মুসতাদরাক লিল হাকিম, ৪র্থ খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭১২৫) 


খাবার কতটুকু ঠান্ডা করা যাবে!

       হযরত সায়্যিদাতুনা জুয়াইরিয়া  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  থেকে বর্ণিত আছে যে, নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم খাবারের ভাপ নিঃশ্বেষ হওয়ার পূর্বে তা খাওয়া অপছন্দ করতেন। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৮৮৩)


গরম খাবারের ক্ষতিঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাবার ঠান্ডা করে খাওয়া উচিত। তবে এটা জরুরী নয় যে, এতটুকু ঠান্ডা করে নেয়া যে, জমাট বেঁধে স্বাদহীন হয়ে যায়। বরং কিছুটা ঠান্ডা হতে দিন যেন ভাপ উঠা বন্ধ হয়ে যায়। প্রখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “খাবার কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও ফুক দিয়ে ঠান্ডা করা বরকতের কারণ আর এভাবে খাওয়াতে কষ্টও হয় না।” (মিরআত-৩, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫২পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ) 


       প্রচন্ড গরম খাবার খাওয়াতে কিংবা ভীষণ গরম গরম চা অথবা কফি ইত্যাদি পান করাতে মুখ ও গলায় ফোস্কা, পাকস্থলীর ফোলা ইত্যাদি হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া এরপর পরই ঠান্ডা পানি পান করাতে দাঁতের মাড়ি ও পাকস্থলীর ক্ষতি সাধন করে। 


খাবারে মাছিঃ

      পানাহারের কোন বস্তুতে কোন মাছি পড়লে তখন ঐ খাবার ফেলে দেয়াটা অপচয় ও গুনাহ্। মাছিকে তাতে ডুবিয়ে বের করে ফেলে দিন ও ঐ খাবার বিনা দ্বিধায় ব্যবহার করুন। যেমন মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন খাবারে মাছি পতিত হয়, তখন সেটাকে ডুবিয়ে দাও (ও ফেলে দাও) কারণ সেটার এক ডানায় শেফা ও অন্যটাতে রােগ রয়েছে। খাবারে পড়ার (বসার) সময় সে প্রথমে রােগওয়ালা ডানাটি রাখে। তাই সম্পূর্ণ (মাছি) টিকেই ডুবিয়ে দাও।” (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৫১১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৮৪৪)


বিজ্ঞানের স্বীকারােক্তিঃ

      প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর দৃষ্টির প্রতি জান কতাওবান! আমাদের প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم যা পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছিলেন এখন বিজ্ঞানও সেটা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। যেমন বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন যে, মাছির এক ডানায় বিপদজনক ভাইরাস (VIRUS) ও অন্যটায় ভাইরাস প্রতিরােধক (ANTIVIRUS) জীবাণু থাকে। মাছি যখন কোন খাদ্য অথবা পানীয় অর্থাৎ চা, দুধ বা পানি ইত্যাদিতে পড়ে তখন ভাইরাসযুক্ত ডানা প্রথমে ফেলে, যার দরুন খাদ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে আর আহারকারী রােগ ব্যাধির শিকার হতে পারেন। এখন যদি মাছি ডুবিয়ে দেন তবে অন্য ডানার প্রতিরােধক ভাইরাস (জীবাণু) ঐ বিপদজনক জীবাণুকে ধ্বংস করে ফেলে আর খাবারের ভাইরাস ক্ষতিমুক্ত হয়ে যায়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী) 


মাংস ছিঁড়ে খাওঃ

       উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  বর্ণনা করেন যে, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মাংস (খাওয়ার সময়) ছুরি দিয়ে কেটোনা, কারণ এটা অনারবীদের নিয়ম আর মাংস দাঁত দিয়ে ছিড়ে খাও, কারণ এটা (এরূপ করে খাওয়াটা) অধিক মজাদার ও সুস্বাদু।” (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৫১১পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৮৪৪) যদি মাংসের বড় টুকরা যথা ভুনাকৃত রান ইত্যাদি হয় তবে প্রয়ােজনবশতঃ ছুরি দিয়ে কেটে নেয়াতে অসুবিধা নেই। 


মুরগীর রানের কালাে রেখাগুলাে বের করে ফেলুনঃ

      সরকারে আলা হযরত  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  এর বিশ্লেষণ (গবেষণা) অনুযায়ী জবাইকৃত পশুর ২২টি বস্তু এমন রয়েছে, যা খাওয়া হারাম অথবা মামনু (মাকরূহ)। সেসবের মধ্যে হারাম মগজ অন্তর্ভূক্ত, যা সাদা রেখার ন্যায় হয়ে থাকে। আর তা মগজ থেকে শুরু হয়ে গর্দান অতিক্রম করে সম্পূর্ণ মেরুদন্ডের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া গর্দানের উভয় পার্শ্বে হলুদ রংয়ের দুটো মজবুত পাট্টা যা কাঁধ পর্যন্ত টানা থাকে। এটা খুবই শক্ত হয়ে থাকে, সহজে গলে না। এগুলাে ও শরীরের গ্রন্থি বা রগ খাওয়াও হারাম। জবাইকৃত পশুর মাংসের ভেতর যে রক্ত থেকে যায় তা যদিও পবিত্র কিন্তু ঐ রক্ত খাওয়া হারাম। সুতরাং মাংসের ঐ অংশ যাতে প্রায়ই রক্ত থেকে যায় সেগুলাে ভালভাবে দেখে নিন। যেমন মুরগীর রান্নাকৃত মাংসের মধ্যে ঘাড়, ডানা ও রান ইত্যাদির ভেতর থেকে কালাে রেখাগুলাে বের করে নিন। কারণ এগুলাে রক্তের শিরা। রক্ত রান্না হওয়ার পর কালাে হয়ে যায়। মুরগীর ঘাড়ের পাট্টা ও হারাম মগজও খাবেন না।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


১২ বছর আগে হারানাে ভাই মিলে গেলঃ 

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলা সমূহে আশিকানে রাসুলের সাথে সফর করতে থাকুন। ইলমে দ্বীন অর্জনের সাথে সাথে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  দুনিয়াবী সমস্যাবলীও সমাধান হতে থাকবে। যেমন- দাওয়াতে ইসলামীর এক মাদানী কাফেলা সবুজপুর, হরীপুর, সারহদে সুন্নাতে ভরা সফররত অবস্থায় ছিল। এতে এক ইসলামী ভাই বলেছেন যে, আমার বড় ভাইজান রােজগারের উদ্দেশ্যে বিদেশ গিয়েছিলেন। আজ ১২ বৎসর হয়ে গেল তার কোন খোঁজখবর নেই। তার তিন সন্তান ও তাদের মায়ের ব্যয়ভার আমাদের ঘাড়ে ছিল আর দারিদ্র অবস্থা বিরাজ করছিল। আমি আশিকানে রাসুলের সাথে দোয়াকরার নিয়্যত নিয়ে মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়েছি। মাদানী কাফেলা শেষ হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর এক মাদানী মাশওয়রাতে ঐ ইসলামী ভাই অংশগ্রহণ করলেন। তার অনুভুতি দেখার মত ছিল। কেঁদে কেঁদে বলছিলেন,  الحمد للّٰه عزّ وجل  মাদানী কাফেলায় সফরের বরকতে আমাদের প্রতি দয়া হয়ে গেছে। ১২ বৎসর যাবৎ হারানাে ভাইজানের ফোন এসেছে এবং তিনি আমাদেরকে ১লক্ষ ২৫হাজার রুপীও পাঠিয়ে দিয়েছেন। 


জু কে মাফকূদ হাে উও ভী মওজুদ হাে,

 انشاء اللّٰه عزّ وجل  চলে কাফিলে মে চলাে। 

দূরহাে সা-রে গম হােগা রব কা করম,

গমকে মারে সুনে কাফিলে মে চলে। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


দোয়া কবুল না হওয়ার মধ্যেও হিকমতঃ

        الحمد للّٰه عزّ وجل  এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে কাফেলায় সফর করে দোয়াকারীদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। অনেক লােক এমনও পাবেন। যাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। যদি কখনাে আপনার দোয়া কবুল হওয়ার চিহ্ন দৃষ্টিগােচর নাও হয় তবুও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর রাজী থাকুন। কারণ অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে, আমরা যা কিছু চাচ্ছি তা না পাওয়ার মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ হয়ে থাকে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী) 


       যেমন- আমার আক্বা আ’লা হযরত এর সম্মানিত পিতা হযরত আল্লামা মাওলানা নকী আলী খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  “আহসানুল বিআ” গ্রন্থে বলেন: “আল্লাহ্ তাআলার হিকমত হচ্ছে, কখনাে তুমি মূখর্তার কারণে কোন বস্তু তাঁর নিকট চাও আর তিনি মেহেরবানী করে তােমার দোয়াকে এ কারণে কবুল করেন না, তােমার জন্য (তা) ক্ষতিকারক। যেমন তুমি সম্পদ প্রত্যাশী, (অথচ) তা পেয়ে গেলে তােমার ঈমানের জন্য ভয় রয়েছে অথবা তুমি সুস্থতা প্রার্থী আর তা আল্লাহর জ্ঞানে (তােমার জন্য) আখিরাতের ক্ষতির মাধ্যম তাই তিনি তােমার দোয়া কবুল করলেন না সুতরাং, এরূপ খন্ডন, কবুলের চেয়ে উত্তম। (অর্থাৎ- এরূপ দোয়া কবুল না হওয়াই তােমার জন্য উপকারী। তুমি এই আয়াতে মোবারাকা)


وَعَسٰۤی اَنۡ تُحِبُّوۡا شَیۡئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّکُمۡ ؕ  ﴿۲۱۶﴾

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: 

সম্ভবতঃ কোন বিষয় তােমাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে অথচ তা তােমাদের পক্ষে কল্যাণকর হয়।” (সূরা বাকারা, আয়াত- ২১৬, পারা- ২) 


      এর প্রতি দৃষ্টি দাও এবং এ খন্ডন (অর্থাৎ- দোয়া কবুল না হওয়ার) জন্য শােকর আদায় করাে। কখনাে দোয়ার বদলে আখিরাতের সাওয়াব মঞ্জুর হয়ে থাকে। তুমি দুনিয়ার নিকৃষ্ট সম্পদ প্রত্যাশা করছ আর পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ আখিরাতের উৎকৃষ্ট নেয়ামতরাজি তােমার জন্য একত্রিত করেন। (তাই এখন তুমিই বল) এটা শােকরের ব্যাপার নাকি অভিযােগের বিষয়।


খিলালঃ

       খাবার খাওয়ার পর কোন কাঠ (শলা) বা খড়খুটো দিয়ে খিলাল করা সুন্নাত। অনেক ইসলামী ভাই খিলালের জন্য ম্যাচের বারুদ উঠি ফেলে দেন, এরূপ করা উচিত নয়। কারণ এভাবে বারূদ নষ্ট হয়ে থাকে। অন্য কোন শলা দিয়ে খিলাল করে নেয়া চাই। খিলালের গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ) 


যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আবু নহু  رضى الله تعالى عنه  বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি খাবার খায় (ও দাঁতের মধ্যে কিছু থেকে যায়) তা যদি খিলালের মাধ্যমে বের করে তবে (যেন) ফেলে দেয়। আর জিহ্বা দিয়ে বের করলে (যেন) গিলে ফেলে। যে এরকম করল ঠিক করলাে আর না করলেও অসুবিধা নেই।” (আবু দাউদ শরীফ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৬, হাদীস নং- ৩৫) 


কিরামান কাতিবীন ও খিলাল বর্জনকারীঃ

       হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী  رضى الله تعالى عنه  বলেন: তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাদের নিকট আসলেন এবং ইরশাদ করলেন: “খিলালকারী কতই না উত্তম। সাহাবায়ে কিরাম  عليهم الرضوان  আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কোন বস্তুর খিলালকারী? বললেন: ওযুতে খিলালকারী এবং খাওয়ার পর খিলালকারী। ওযুর খিলাল কুলি করা, নাকে পানি দেয়া এবং আঙ্গুলগুলাের মাঝখানে (খিলাল করা) এবং খাবারের খিলাল খাবারের পর করা হয়। আর কিরামান কাতিবীন এর জন্য এর চেয়ে অধিক কোন বিষয় কঠিন নয় যে, তাঁরা যে ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছেন, তাকে এ অবস্থায় নামায পড়তে দেখেন যে, তার দাঁতগুলাের মাঝে কোন বস্তু থাকে।” 

(তাবরানী কবীর, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৭, হাদীস নং- ৪০৬১) 


পান আহারকারীরা মনােযােগ দিন! 


        আমার আকা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, হযরত আল্লামা মাওলানা ইমাম আহমদ রযা খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: বেশি পরিমাণে পান খাওয়াতে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা বিশেষতঃ যখন দাঁতগুলােতে ফাঁক হয়, অভিজ্ঞতা অনুসারে জানা যায় যে, সুপারীর ক্ষুদ্র অংশ ও পানের প্রচুর ছােট ছােট টুকরা এভাবে মুখের চতুর্পাশ্বে ও কিনারায় অবস্থান করে থাকে (অর্থাৎ- মুখের কোণাগুলােতে ও দাঁতের ফাঁক গুলােতে ঢুকে যায়) তখন তিনবার নয় বরং দশবার কুলি করলেও এগুলাে পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কারের জন্য যথেষ্ট হয় না।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করাে, নিঃসন্দেহে এটা তােমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা) 


        খিলাল এগুলােকে বের করতে পারে না, মিসওয়াকও না। শুধুমাত্র কুলি ব্যতীত। কেননা পানি ফাঁকগুলােতে প্রবেশ করিয়ে ঝাকুনি (নাড়াচাড়া) দেয়াতে তা জমে থাকা ক্ষুদ্র অংশগুলােকে ক্রমান্বয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। এটারও কোন সীমা নির্ধারণ হতে পারে না এবং এরূপ পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করার ব্যাপারেও ভীষণ তাগিদ রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে যে, যখন বান্দা নামাযের জন্য দন্ডায়মান হয়, (তখন) ফিরিশতা তার মুখের উপর নিজের মুখ রাখেন, সে যা পড়ে (তা) তার মুখ থেকে বের হয়ে ফিরিশতার মুখে যায়, ঐ সময় যদি খাদ্যের কোন বস্তু তার দাঁতগুলােতে থাকে, (তখন) ফিরিশতার তা দ্বারা এরূপ কষ্ট হয়, যা অন্য কোন বস্তু দ্বারা হয় না।” খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: যখন তােমাদের কেউ রাতে নামাযের জন্য দাঁড়াও, তবে (তার) উচিত যে, মিসওয়াক করে নেয়া। কেননা যখন সে নিজের নামাযের মধ্যে কিরাত (আদায়) করে, তখন ফিরিশতা নিজের মুখ তার মুখের উপর রাখে এবং যে বস্তু তার মুখ থেকে বের হয়, তা ফিরিশতার মুখে প্রবেশ করে। (কানযুল উম্মাল, ৯ম খন্ড, ৩১৯পৃষ্ঠা) "তাবরানী কাবীরের" মধ্যে হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণনা করেন, উভয় ফিরিশতার জন্য এর চেয়ে অধিক কোন বিষয় ভারী নয় যে, তারা নিজেদের সাথীকে নামায পড়তে দেখে অথচ তার দাঁতগুলােতে খাদ্যাংশ আটকে থাকে। (মু'জামুল কাবীর, ৪র্থ খন্ড, ১৭০৭ পৃষ্ঠা। ফতােওয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৬২৪-৬২৫ পৃষ্ঠা, রযা ফাউন্ডেশন, মারকাযুল আউলিয়া, লাহাের) 


দাঁতে দুর্বলতাঃ

       হযরত সায়্যিদুনা ইবনে উমর  رضى الله تعالى عنه  বলেন: "যে খাবার (মাংসের কণা ইত্যাদি) মাড়িতে থেকে যায়, তা মাড়িকে দুর্বল করে দেয়।" (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৯৫২)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল) 


খিলাল কি রকম হবে? 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যখনই কোন খাবার খান, এরপর খিলাল করার অভ্যাস করা উচিত। উত্তম হচ্ছে, খিলাল যেন নিম কাঠের হয়, কারণ এটার তিক্ততা দ্বারা মুখ পরিস্কার হয় ও এটা মাড়ির জন্য উপকারী। বাজারে TOOTH PICKS প্রায়ই মােটা ও নরম হয়ে থাকে। নারিকেলের অব্যবহৃত শলাকা অথবা খেজুর গাছের ডাল দ্বারা (ব্লেড দিয়ে সাইজ করে) অনেক শক্ত খিলাল তৈরী হতে পারে। অনেক সময় মুখের কোণার দাঁতে গর্ত হয়ে থাকে আর তাতে মাংস ইত্যাদির অংশ আটকে যায়, যা শলা ইত্যাদি দিয়ে বের হয় না। এ ধরণের খাদ্যকণা বের করার জন্য মেডিকেল ষ্টোরে বিশেষ ধরণের সুতা (FLOSSERS) পাওয়া যায়। এছাড়া অপারেশনের যন্ত্রপাতির দোকানে স্টিলের, দাঁতের খিলালও CURVE SICKLE SCALER পাওয়া যায়। কিন্তু এসব জিনিসের ব্যবহার পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরী অন্যথায় মাড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। 


খিলালের সাতটি নিয়্যতঃ 

       হাদীসে পাকে রয়েছে, তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মুসলমানের নিয়্যত তার আমল থেকে উত্তম।” (তাবরানী মুজামুল কবীর, ৬ষ্ট খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২) খিলাল শুরু করার পূর্বে এবং খাওয়া শুরু করার পূর্বে এ নিয়্যতগুলাে করে সাওয়াবের ভান্ডার অর্জন করুন। (১) খাওয়ার পর খিলালের সুন্নাত আদায় করব (২) খিলাল শুরু করার পূর্বে بِسمِ اللّٰه পড়ব, (৩) মিসওয়াক করার জন্য সহায়তা অর্জন করব (কেননা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা যখন পঁচে যায় তখন মাড়ি দূর্বল ও রােগাক্রান্ত হয়ে পড়ে ও তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করে। সুতরাং মিসওয়াক করা কঠিন হয়ে পড়ে) (৪) ওযুতে পরিপূর্ণভাবে কুলি করতে সহায়তা লাভ করব,


রাসুলুল্লাহ্  ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।" (আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব) 


(মুখের ভিতরের প্রতিটি অংশে ও দাঁতের মধ্যবর্তী ফাঁকগুলােতে যেন পানি প্রবাহিত হয় সেভাবে তিনবার কুলি করা অযুতে সুন্নাতে মুআক্কাদা আর উল্লেখিত নিয়মে গােসলে একবার কুলি করা ফরয এবং তিনবার করা সুন্নাত) (৫) দাঁতগুলােকে রােগব্যাধি থেকে রক্ষার চেষ্টা করে ইবাদতে শক্তি অর্জন করব। (কারণ খিলাল করার দরুন খাদ্যকণা বের হয়ে যাবে আর এভাবে মাড়ির রােগ থেকে রক্ষা হবে আর সুস্থ শরীরে ইবাদত করতে শক্তি অর্জিত হবে), (৬) মুখকে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করে মসজিদে প্রবেশ করা বহাল রাখতে সাহায্য লাভ করবাে (স্পষ্ট যে, খাদ্যকণা দাঁতে আটকে থাকলে তখন তা পঁচে দুর্গন্ধের কারণ হবে আর যখন মুখে দুর্গন্ধ হবে তখন মসজিদে প্রবেশ করা হারাম) (৭) ফিরিশতাগণকে কষ্ট দেয়া থেকে বাঁচব (মুখে খাদ্য কণা থাকা অবস্থায় নামাযে কুরআনে পাক পাঠ করাতে ফিরিশতাদের কষ্ট হয়।) 


কুলি করার নিয়মঃ

        ওযুতে এভাবে কুলি করা জরুরী যে, মুখের প্রতিটি অংশ ও দাঁতের সমস্ত ফাঁক ইত্যাদিতে যেন পানি পৌঁছে যায়। অযুতে এভাবে তিনবার কুলি করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। আর গােসলে একবার ফরয ও তিনবার সুন্নাত। যদি রােযা অবস্থায় না হয় তবে গড়গড়াও করে নিন। মাংসের অংশ ইত্যাদি বের করা জরুরী। তবে যদি কোন (খাদ্য) কণা কিংবা সুপারী ইত্যাদির কণা বেরই হচ্ছে না তবে এখন আর এমন শক্তি প্রয়ােগ করবেন না যেন আবার মাড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, কেননা যে অসহায় সে অপারগ।


 খিলাল করার চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত হিকমতঃ

       আমাদের প্রিয় আকা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আজ থেকে ১৪০০ বছরেরও অধিক সময়ের পূর্বেই অনেক রােগ থেকে নিরাপত্তা লাভের জন্য খিলালের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন শত শত বৎসর পর বিজ্ঞানীদের বুঝে এসেছে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌছে থাকে।” (তাবারানী) 


       যেমন খিলালের হিকমত বর্ণনা করতে গিয়ে ডাক্তারেরা বলেন: খাওয়ার পর খাদ্যকণা দাঁত ও মাড়ির মধ্যখানে আটকে যায়। যদি তা খিলাল করে বের করে ফেলা না হয় তবে তা পচে যায় আর তা থেকে এক বিশেষ ধরণের (PLASMA) 'র সৃষ্টি হয়ে মাড়িকে ফুলিয়ে দেয় আর এরপর দাঁত ও মাড়ির মধ্যের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে দাঁত পড়ে যায়। খিলাল না করাতে দাঁতে পাইরিয়া (PHYORRHEA) রােগও হয়ে থাকে। যার কারণে মাড়িতে পুঁজের সৃষ্টি হয়, যা খাদ্যের সাথে পেটে যায় এবং এরপর মারাত্মক রােগের সৃষ্টি হয়। 


দাঁতের ক্যান্সারঃ 

        চা ও পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি খাবার কম খাওয়ার সাথে সাথে চা ও কম খাওয়ার মানসিকতা তৈরী করুন। এমন যেন না হয় যে, আপনি খাবার কম খাবেন আর ধোকাবাজ নফস আপনাকে ক্ষুধা মিঠানাের আশা দিয়ে চা ও পানের মাত্রা বৃদ্ধি করার বিপদে যেন ফাঁসিয়ে না দেয়। চা গাের্দার জন্য ক্ষতিকারক। পান, গুটকা, মাইনপরী (পানে ব্যবহৃত নানা ধরণের মসলা বা বস্তু) ও সুগন্ধযুক্ত সুপারী ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করার মধ্যেই উপকার রয়েছে। যারা এগুলাে বেশি পরিমাণে খায় তাদের মাড়ি, মুখ ও গলার ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে। অধিক পান আহারকারীদের মুখের ভিতরের অংশ লাল হয়ে যায়। যদি মাড়িতে রক্ত কিংবা পুঁজ হয়ে যায়, আর তা তাদের দৃষ্টি গােচর না হয় তবে তা পেটে যেতে থাকে। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে পুঁজ বের হতে থাকে কিন্তু ব্যথা মােটেই হয় না। সম্ভবত তাদের তখনই জানা হবে যখন খােদা না করুন কোন কঠিন রােগ শিকড় গেড়ে বসবে।


নকল খয়ের এর ধ্বংসলীলাঃ

       সম্ভবত পাকিস্তানে খয়ের তৈরী হয় না। সম্পদলােভী ঐসব মানুষ, যাদের কারাে দুনিয়া ও নিজের আখিরাত বরবাদ হওয়ার চিন্তা নেই তারা মাটির সাথে চামড়ার রং মিশিয়ে ঐ মাটিকে খয়ের বলে বিক্রি করে।


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।” (মাতালিউল মুসাৰ্বরাত) 


আর এভাবে বেচারা পাকিস্তানি পানখাের ময়লা মাটি খেয়ে নানা ধরণের রােগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ভীষণ অসুস্থ হয়ে ধ্বংসের মুখে পড়ছে। জেনে শুনে নকল খয়ের কখনাে ব্যবহার করবেন না। নকল খয়ের ব্যবসায়ী ও নকল খয়ের দিয়ে পান বিক্রয়কারী এ ধরণের কাজ থেকে সত্যিকার অর্থে তাওবা করুন। এছাড়া জেনে শুনে মাটি ভক্ষণকারীরা তা থেকে বিরত থাকুন। মাটি খাওয়ার ব্যাপারে শরয়ী মাসআলা হল, সামান্য পরিমাণ মাটি খাওয়াতে অসুবিধা নেই কিন্তু ক্ষতি হতে পারে এতটুকু পরিমাণে মাটি খাওয়া হারাম। (রদ্দুল মুখতার, ১ম খন্ড, ৩৬৪ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা) 


দাঁতে রক্ত আসার কারণঃ

       অনেকের মিসওয়াক করার সময় রক্ত আসে, বরং ঐসব মানুষের রক্ত হয়তাে খাবারের সাথে পেটেও পৌঁছে যায়। পেট খারাপ হওয়ার এটা একটা কারণ। এ ধরণের রােগীর কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদির চিকিৎসা করানাে উচিত। শরীরের ওজন বৃদ্ধি ও বাত-ব্যাধি সৃষ্টিকারী খাদ্যসমূহ থেকে বেঁচে থাকুন ও ক্ষুধা থেকে কম খাবেন। অসময়ে কোন কিছু খাবেন না। দ্বিতীয় কারণ এযে, দাঁত পরিস্কারের ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে খাদ্য কণা দাঁতের ফাঁকে জমা হয়ে চুনের ন্যায় শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে TATAR (টাটার) বলা হয়। এজন্য দাঁতের ডাক্তারের নিকট যান। যদি ভাল ডাক্তার হন এবং অন্য কোন সমস্যা না থাকে তবে একই সাথে সবকটি দাঁত পরিস্কার (SCALING) করে দেবেন। অন্যথায় কয়েকবার ঘােরাঘুরি করিয়ে একটু আধটু কাজ করে বেশি টাকা খরচ করাবে।


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


দাঁতের উত্তম চিকিৎসা হল মিসওয়াকঃ

       সঠিক পদ্ধতিতে মিসওয়াক করা হলে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  কখনাে দাঁতের রােগ হবে না। আপনার মনে হয়তাে এটা খেয়াল আসছে যে, আমি অনেকদিন থেকে মিসওয়াক ব্যবহার করে আসছি কিন্তু আমারতাে দাঁত ও পেট উভয়ই খারাপ।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) 


        আমার সরল প্রাণ ইসলামী ভাইয়েরা! এতে মিসওয়াকের নয় আপনার নিজেরই ভুল রয়েছে। আমি সগে মদীনা عُفِي عَنهُ (লিখক) এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, সম্ভবত আজকাল লক্ষজনের মধ্যে এক-আধজন ব্যক্তি এমন হবে, যারা সঠিক নিয়ম অনুসারে মিসওয়াক ব্যবহার করে থাকেন। আমরা প্রায় তাড়াহুড়া করে দাঁতের উপর মিসওয়াক ঘষে অযু করে চলে যাই। অর্থাৎ- এভাবে বলুন যে, আমরা মিসওয়াক নয় বরং “মিসওয়াকের প্রথা” আদায় করি। 


মিসওয়াকের ১৪টি মাদানী ফুলঃ 

       (১) মিসওয়াক মােটা হতে হবে কনিষ্ঠা আঙ্গুল পরিমাণ, (২) মিসওয়াক যেন এক বিঘত অপেক্ষা লম্বা না হয়, লম্বা হলে এর উপর শয়তান বসে, (৩) মিসওয়াকের আঁশগুলাে যেন নরম হয়, কারণ শক্ত আঁশ দাঁত ও মাড়ির মধ্যে ফাঁক সৃষ্টির কারণ হয়, (৪) মিসওয়াক তাজা হলে তাে ভাল নতুবা কিছুক্ষণ পানির গ্লাসে ভিজিয়ে নরম করে নিন, (৫) তার আঁশগুলাে দৈনিক কাটতে থাকুন কারণ আঁশগুলাে ততক্ষণ ফলদায়ক থাকে যতক্ষণ ওগুলােতে তিক্ততা বাকী থাকে, (৬) দাঁত সমূহের পাশা পাশি (উপরে নিচে নয়) মিসওয়াক করুন, (৭) যখনই মিসওয়াক করবেন কমপক্ষে তিনবার করবেন, (৮) প্রত্যেকবার মিসওয়াক ধুয়ে ফেলবেন, (৯) মিসওয়াক ডান হাতে এইভাবে ধরবেন যেন কনিষ্ঠা আঙ্গুল নিচে, মাঝখানের তিন আঙ্গুল উপরে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল মিসওয়াকের মাথায় থাকে, (১০) প্রথমে ডান দিকের উপরের দাঁত সমূহে, তারপর বাম দিকের উপরের দাঁত সমূহে অতঃপর ডান দিকের নিচের অংশে , তারপর বাম দিকের নিচের দাঁত সমূহে মিসওয়াক করুন, (১১) চিৎ হয়ে শােয়াবস্থায় মিসওয়াক করলে প্লীহা বেড়ে যাওয়ার এবং (১২) মুষ্টিবদ্ধ করে মিসওয়াক করলে অর্শ্বরােগ হওয়ার আশংকা থাকে, (১৩) মিসওয়াক ওযুর পূর্বেকার সুন্নাত, তবে মিসওয়াক করা তখনই সুন্নাতে মুআক্কাদা যখন মুখে দুর্গন্ধ থাকে, (ফতােওয়ায়ে রবীয়্যাহ হতে সংগৃহীত, ১ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, রেযা ফাউন্ডেশন),


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  স্মরণে এসে যাবে।” (সায়াদাতুদ দারাঈন) 


        (১৪) ব্যবহৃত মিসওয়াকের আঁশগুলাে, তাছাড়া যখন এটা (মিসওয়াক) ব্যবহারের অযােগ্য হয়ে যায় তখন যেখানে সেখানে ফেলে দিবেন না, কারণ এটা সুন্নাত আদায় করার উপকরণ। কোন স্থানে সাবধানে রেখে দিন অথবা দাফন করে ফেলুন, না হয় সমুদ্রে ফেলে দিন। (বিস্তারিত জানার জন্য বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ১৭-১৮ পৃষ্ঠা দেখুন) 


দাঁতের নিরাপত্তার জন্য ৪ টি মাদানী ফুলঃ

        (১) যে কোন বস্তু খাওয়া, চা ইত্যাদি পান করার পর ৩ বার এভাবে কুলি করুন যে, প্রতিবার পানিকে মুখে এক আধ মিনিট পর্যন্ত ভালভাবে ঝাঁকুনি দেয়ার পর গিলে ফেলুন। (২) যখনই সুযােগ হয় মুখে কুলির পানি পুরে নিন এবং কয়েক মিনিট ঝাঁকুনি দিতে থাকুন এরপর ফেলে দিন। এ কাজটা প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার করবেন। (৩) যদি আলােচ্য নিয়মে কুলি করার জন্য সাধারণ পানির পরিবর্তে লবণ মিশ্রিত কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যায়, তবে তা আরাে ফলদায়ক হবে। যদি নিয়মিতভাবে করেন তাহলে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্য কণা ধুয়ে ধুয়ে বেরুতে থাকবে। তা মাড়িতে অবস্থান করে পঁচবেনা।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  এভাবে করাতে মাড়িতে রক্ত আসার অভিযােগও থাকবে না। (৪) যায়তুন শরীফের তেল দাঁতে ঘষলে মাড়ি এবং নড়াচড়াকৃতও মজবুত হয়ে যায়। 


মুখের দুর্গন্ধের চিকিৎসাঃ 

        যদি মুখে দুর্গন্ধ আসে তবে ধনিয়া চিবিয়ে খাবেন। এছাড়া টাটকা কিংবা শুকনাে গােলাপ ফুল দিয়ে দাঁত মাজলেও  انشاء اللّٰه عزّ وجل  মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত হবে। তবে যদি পেট খারাপ হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ আসে তাহলে কম খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে ক্ষুধার বরকতগুলাে কুঁড়িয়ে নেয়াতে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা, কোষ্টকাঠিন্য, বুকের জ্বালা পােড়া, মুখের ফোস্কা, বারংবার হওয়া সর্দি-কাশি ও গলার ব্যথা, মাড়িতে রক্ত আসাসহ ইত্যাদি অনেক ধরণের রােগের সাথে সাথে মুখের দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি পাবেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম) 


ক্ষুধা থেকে কম খাওয়াতে শতকরা আশি ভাগ রােগ থেকে রক্ষা পেতে পারেন। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের অধ্যায় পেটের কুফলে মদীনা পাঠ করুন) যদি নফস বা কুপ্রবৃত্তির লােভের চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অনেক রােগ এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। 


রযা নফসে দুশমন হে দমমে না আনা, কাহা তুমনে দেখে হে চান্দরানে ওয়ালে। 

(হাদায়িখে বখশিশ) 


মুখের দুর্গন্ধের মাদানী চিকিৎসাঃ 

       এ দরূদ শরীফ সুযােগ পেলেই এক নিঃশ্বাসে ১১বার পাঠ করুন: 

اَللّٰهُمَّ صَلِّى وَسَلِّم عَلىٰ النَّبِيِّ الطَّاهِرِ

 মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। 


এক নিঃশ্বাসে পড়ার নিয়মঃ 

       একই নিঃশ্বাসে পাঠ করার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, মুখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেয়া শুরু করুন আর যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকু বাতাস ফুসফুসে ঢুকিয়ে নিন। এবার দরূদ শরীফ পড়া শুরু করুন। কয়েকবার এভাবে অনুশীলন করলে নিঃশ্বাস শেষ হওয়ার পূর্বে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  পরিপূর্ণ ১১বার দরূদ শরীফ পাঠ করার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আলােচ্য নিয়মানুসারে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে সাধ্য অনুসারে নিঃশ্বাসকে ভিতরে থামিয়ে রাখার পর মুখ দিয়ে তা বের করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সারা দিনের মধ্যে যখনই সুযােগ হয়, বিশেষতঃ খােলা আকাশের নিচে প্রতিদিন কয়েকবার এরূপ করে নেয়া উচিত। আমাকে (সগে মদীনা عُفِي عَنهُ) কে একজন বয়স্ক হাকীম সাহেব বলেছেন: আমি নিঃশ্বাস নেয়ার পর (আধা ঘন্টা পর্যন্ত অথবা বলেছেন) দু'ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসকে শরীরের ভিতরে থামিয়ে রাখি আর এরই মধ্যে নিজের ওযীফা সমূহও পাঠ করতে থাকি। ঐ হাকীম সাহেবের কথায় নিঃশ্বাস থামিয়ে রাখতে সক্ষম এমন সব অভিজ্ঞ অনুশীলনকারী ব্যক্তিবর্গ পৃথিবীতে রয়েছেন, যারা সকালে নিঃশ্বাস নেন আর সন্ধ্যায় বের করেন!


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।” (আব্দুর রাজ্জাক) 


পাঁচটি সুগন্ধিময় মুখঃ 

       রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর এক মহান মুজিযা লক্ষ্য করুন, যার বরকতে পাঁচজন সৌভাগ্যবান মহিলা সাহাবী رَضِى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَنهُنَّ এর মুখ সব সময়ের জন্য সুগন্ধিময় হয়ে গিয়েছিল। যেমন- হযরত সায়্যিদাতুনা উমাইরা বিনতে মাসউদ আনসারিয়্যা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  বলেন: আমরা পাঁচ বােন তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মর্যাদাপূর্ণ খিদমতে বাইআত হওয়ার জন্য উপস্থিত হলাম। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তখন শুকনাে মাংস আহার করছিলেন । আল্লাহর প্রিয় হাবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم শুকনাে মাংসের এক টুকরা চিবিয়ে নরম করে আমাদেরকে প্রদান করলে আমাদের প্রত্যেকে সামান্য সামান্য করে খেয়ে নিলাম। (এটার বরকতে) সারা জীবন আমাদের মুখ থেকে সর্বদা খুশবু (সুগন্ধ) আসত। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০৫পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা  رضى الله تعالى عنه  বলেন: মদীনা শরীফে زَادَهَا للّٰهُ شَرَافًا وَّتَعظِيمًا একজন নির্লজ্জ ও দুর্ব্যবহারকারী মহিলা ছিল। একদা সে মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তখন শুকনাে মাংসের টুকরা আহার করছিলেন। সেও তা থেকে চাইল। প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তাকে নিজের সামনের অংশ কিছুটা দিয়ে দিলেন। সে বলল: “না”। নিজের মুখ শরীফে যা আছে তা প্রদান করুন। হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم মুখ মােবারক থেকে বের করে (তাকে) প্রদান করলেন। তখন সে তা নিজের মুখে দিল আর খেয়ে নিল। ঐ ঘটনার পর থেকে ঐ মহিলা থেকে কখনাে দুর্ব্যবহার বা মন্দ কথা-বার্তা শুনা যায় নি। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০৫পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তা'আলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আদী) 


মুষলধারে বৃষ্টিঃ

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন, সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করুন।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  আখিরাতের অসংখ্য কল্যাণ হাতে আসবে বরং দুনিয়াবী পেরেশানীগুলােও দূরীভূত হবে। আশিকানে রাসুলদের নৈকট্যে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  দোয়াও কবুল হবে। আমীরুল মুমিনীন হযরত মাওলায়ে কায়িনাত আলী মুরতাজা, শেরে খােদা  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণিত, ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: 


اَلدُّعَاءُ سِلَاحُ المُؤمِنِ وَعِمَادُ الدِّينِ، وَنُورُ السَّمَوٰاتِ وَالأَرضِ

অর্থাৎ- দোয়া মুমিনীনের হাতিয়ার ও দ্বীনের স্তম্ব এবং জমিন ও আসমানের নূর। (মুসনাদে আবী ইয়ালা, ১ম খন্ড, ২১৫পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৩৫) 

       বিশেষতঃ সফরে দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। আর যদি আশিকানে রাসুলদের মাদানী কাফেলা হয় তবে কী বলব! যেমন দাওয়াতে ইসলামীর আশিকানে রাসুলদের সুন্নাত প্রশিক্ষণের এক মাদানী কাফেলা নিকইয়াল কাশ্মীর, এ সফররত ছিল। স্থানীয় লােকেরা দোয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে বললেন: নিকইয়ালের মুসলমানরা অনেক দিন যাবৎ বৃষ্টি হতে বঞ্চিত। সুতরাং মাদানী কাফেলা ওয়ালাগণ সমষ্টিগতভাবে দোয়ার ব্যবস্থা করলেন। নিকইয়ালের অনেক মুসলমান অংশগ্রহণ করল। দিনের বেলা ছিল। খাঁ খাঁ রােদ পড়ছিল। আশিকানে রাসুলদেরা কেঁদে কেঁদে ভাবাবেগপূর্ণ দোয়া শুরু করলেন।  الحمد للّٰه عزّ وجل  দেখতে দেখতেই রহমতের মেঘ ছেয়ে গেল। চারদিক অন্ধকার করে মেঘের গর্জন এবং মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ হতে লাগল। আনন্দের শ্লোগান উঠতে লাগল। লােকেরা বৃষ্টিতে ভিজে গেলেন। উপস্থিত জনসাধারণের অন্তর দাওয়াতে ইসলামীর ভালবাসা ও মাদানী কাফেলা ওয়ালা আশিকানে রাসুলদের মহব্বতে ভরে গেল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (কানযুল উম্মাল) 


       দা'ওয়াতে ইসলামী ওয়ালাদের উপর আল্লাহর এ মহান অনুগ্রহ খােলা চোখে দেখার বদৌলতে অনেক ইসলামী ভাই দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলেন আর নিকইয়ালে দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ ধূম ধামের সাথে চলতে লাগল। 


কাফিলে মে জারা , মাঙ্গোঁ আ-কর দোয়া, 

হােগী খুব বা-রিশে কাফিলে মে চলো। 

আশিকানে রাসুল লেলাে জু কুছ ভি ফুল, 

তুমকো সুন্নাতকে দী কাফিলে মে চলো। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


হাতের তৈলাক্ততাঃ

       হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস  رضى الله تعالى عنه  থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে এ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে যে, তার হাতে (খাবারের) তৈলাক্ততার চিহ্ন থাকে আর তার (উপর) কোন মুসিবত আসে, তাহলে (এর জন্য) নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে যেন তিরস্কার না করে।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৫ম খন্ড, ৩৩পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭৯৫৪) 


সাপের ভয়ঃ

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খাওয়ার পর হাতগুলাে সাবান ইত্যাদি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে তােয়ালে দ্বারা মুছে নেয়া উচিত, যাতে খাবারের ঘ্রাণ ও তৈলাক্ততা দূরীভূত হয়ে যায়। অন্যথায় আপনি অন্য কারাে সাথে মুসাফাহ করলে গন্ধের কারণে তার ঘৃণা হতে পারে। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরতে মুফতী আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “এ হাদীসে পাকে মুসিবত থেকে উদ্দেশ্য সাপ কিংবা ইদুরের কামড়। এ দু'টো প্রাণী খাবারের খুশবুর প্রতি ধাবিত হয় অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য কুষ্ট রােগ। কেননা খাবার দ্বারা চর্বিযুক্ত হওয়া হাত শরীরের ঘামের সাথে লেগে যে জায়গায় স্পর্শ হয়ে যায়, সে জায়গায় কুষ্টের সাদা দাগ সৃষ্টি হওয়ার ভয় থাকে।” (মিরআত শরহে মিশকাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।" (কানযুল উম্মাল) 


খলীলে মিল্লাত, মুফতী মুহাম্মদ খলীল খান বরকাতী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “খাওয়া শেষ করে হাত ধােয়া ছাড়া শুয়ে পড়লে শয়তান হাত চাটে এবং আল্লাহর পানাহ! কুষ্ট রােগের কারণ হয়ে থাকে।” (সুন্নী বেহেশতী যেওর, ৬০৭ পৃষ্ঠা) 


অন্যের থালা ব্যবহার করাটা কেমন? 

       কারাে ঘর থেকে হাদিয়া স্বরূপ কোন খাবার আসলে থালা সাথে সাথে খালি করে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে দিন। যদি ঐ সময় দিতে না পারেন তবে আমানত স্বরূপ রেখে দিন এবং পরে ফিরিয়ে দিন। কিন্তু মনে রাখবেন! অন্যের ঐ থালা নিজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৬৯) যদি জীবনে কখনাে এ গুনাহ হয়ে থাকে তাহলে বাসনের মালিকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাওবা করে নিন।


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


খাওয়ার ২৫ টি সুন্নাতঃ

 (১) প্রিয় নবী صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم হেলান দিয়ে খেতেন না। (সুনানে আবী দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৬৯ থেকে সংকলিত) (২) টেবিলের উপর রেখে খাবার খেতেন না। (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৫৩৮৬ থেকে সংকলিত) (৩) যা কিছু পেতেন খেয়ে নিতেন। (সহীহ মুসলিম, ১১৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৫২ থেকে সংকলিত) (৪) পরিবারের লােকদের নিকট থেকে খাবার চেয়ে নিতেন না এবং তাদের নিকট প্রয়ােজনের কথা প্রকাশ করতেন না। যদি তারা উপস্থাপন করতেন তাহলে খেয়ে নিতেন এবং তারা যা কিছু সামনে রাখতেন তা গ্রহণ করতেন আর যা কিছু পান করাতেন তা পান করে নিতেন। (আতাহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, ৮ম খন্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (৫) অনেক সময় নিজে উঠে পানাহারের বস্তুগুলাে নিয়ে নিতেন। (সুনানে আবী দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৫পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৮৫৬ থেকে সংকলিত) (৬) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم নিজের সামনে থেকে শুরু করতেন। (শুউবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৮৪৬ থেকে সংকলিত) (৭) এবং তিন আঙ্গুল দ্বারা আহার করতেন। (মুসান্নিফে আবী শায়বাহ, ৫ম খন্ড, ৫৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩ থেকে সংকলিত)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর) 


(৮) আর কোন সময় চার আঙ্গুল দিয়েও খেয়ে নিতেন। (আল জামিউস সগীর, ২৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৯৪২ থেকে সংকলিত) কিন্তু দুই আঙ্গুল দ্বারা খাবার খেতেন না। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “এটা শয়তানের খাওয়ার পদ্ধতি।” (জামিউস সাগীর সম্বলিত কদীর, ৫ম খন্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৯৪০ থেকে সংকলিত) (৯) জবের (অমসৃণ) ভুষি, আলাদা করা হয়নি এমন আটার রুটি আহার করতেন। (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৪১০ থেকে সংকলিত) (১০) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর খাবার প্রায়ই খেজুর ও পানি দিয়ে হত। (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৩৮৩ থেকে সংকলিত) (১১) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم দুধ ও খেজুর একত্রে ব্যবহার করতেন এবং সেটাকে উত্তম খাবার সাব্যস্ত করতেন। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ৫ম খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৫৮৯৩ থেকে সংকলিত) (১২) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর পছন্দনীয় খাদ্য ছিল মাংস। (জামে তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৮ থেকে সংকলিত) (১৩) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করতেন: “মাংস কানের শ্রবণ শক্তি বৃদ্ধি করে আর দুনিয়া ও আখিরাতের খাবারের সর্দার। যদি আমি আল্লাহর নিকট চাইতাম যে, আমাকে প্রতিদিন মাংস প্রদান করুন তবে প্রদান করতেন। (আততাহাফুস্ সাদাতুল মুত্তাক্বীন, ৮ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (১৪) হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم মাংস ও লাউ দিয়ে তরকারী তৈরী করে খেতেন (অর্থাৎ- মাংস ও কদু শরীফের তরকারীতে রুটির টুকরা ভালভাবে ভিজিয়ে আহার করতেন।) (আততাহাফুস্ সাদাতুল মুত্তাকীন, ৭ম খন্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (১৫) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم যখন মাংস খেতেন, তখন সেটার দিকে পবিত্র মাথাকে ঝুঁকাতেন না। (আততাহাফুস্ সাদাতুল মুত্তাকীন, ৭ম খন্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) বরং সেটাকে নিজের মুখ মুবারকের দিকে উঠাতেন অতঃপর দাঁত মােবারক দিয়ে কাটতেন। (জামি তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা হাদীস নং- ১৮৪২ থেকে সংকলিত) (১৬) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট ছাগলের মাংসের মধ্যে রান ও ঘাড়ের মাংস পছন্দনীয় ছিল। (জামে তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮৪২, ১৮৪৪ থেকে সংকলিত)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েদ) 


       (১৭ ) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم গুর্দা (খাওয়া) পছন্দ করতেন না, কারণ তা প্রস্রাবের (থলির) নিকটবর্তী হয়ে থাকে। (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮২১২ থেকে সংকলিত) (১৮) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট প্লীহা (তিনি খাওয়ার প্রতি) ঘৃণা ছিল কিন্তু সেটাকে হারাম সাব্যস্ত করেননি। (আততাহাফুস সা'দাতুল মুত্তাকীন, ৮ম খন্ড, ২৪৩ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (১৯) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মােবারক আঙ্গুলগুলাে দিয়ে থালা চেটে খেতেন এবং ইরশাদ করতেন: “খাবারের শেষাংশে বরকত বেশী থাকে। (শুউবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং* ৫৮৫৪) (২০) হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট তাজা ফলের মধ্যে তরমুজ ও আঙ্গুর বেশি পছন্দনীয় ছিল। (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮২০০ থেকে সংকলিত) (২১) তরমুজ, রুটি ও চিনি দিয়ে আহার করতেন। (আততাহাফুস্ সাদাতুল মুত্তাকীন, ৮ম খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (২২) অনেক সময় ভেজা খেজুরের সাথে (তরমুজ) খেতেন। (জামি তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮৫০ থেকে সংকলিত) (২৩) উভয় হাতের দ্বারা সাহায্য নিতেন। একদা ভেজা খেজুর ডান হাতে খাচ্ছিলেন আর বীচি বাম হাতে রাখছিলেন। একটি ছাগল পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, রাসুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সেটাকে বীচি সহকারে ইশারা করলেন: সেটা হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর বাম হাত থেকে বীচিগুলাে খেতে লাগল এবং তিনি صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ডান হাতে খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم অবসর হলেন। তখন সেটাও চলে গেল। (আততাহাফুস সা'দাতুল মুত্তাকীন, ৮ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (২৪) আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কাঁচা রসুন, কাঁচা পিয়াজ ও গিনদানা (এক প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত সবজী) খেতেন না। (তারীখে বাগদাদ, ২য় খন্ড, ২৬২ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) (২৫) হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কখনাে কোন খাদ্যকে মন্দ বলেন নি। যদি ভাল লাগতাে খেয়ে নিতেন আর পছন্দ না হলে তার মােবারক হাত থামিয়ে নিতেন। (সহীহ মুসলিম, ১১৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৬৪ থেকে সংকলিত)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী) 


খাওয়ার ৯২ টি মাদানী ফুলঃ

খাওয়ার নিয়্যত করে নিন 

(১) খাওয়ার উদ্দেশ্য যেন স্বাদ গ্রহণ ও খাহেশ (মনবাসনা, রসনা) পূর্ণ করা না হয় বরং খাওয়ার সময় এ নিয়্যত করে নিন, “আমি আল্লাহর ইবাদতের শক্তি অর্জনের জন্য খাচ্ছি। মনে রাখবেন! খাবারে ইবাদতের শক্তি অর্জনের নিয়্যত ঐ অবস্থায় সঠিক হবে যখন ক্ষুধা থেকে কম খাওয়ার ইচ্ছা থাকে। অন্যথায় শুরুতেই নিয়্যত মিথ্যা সাব্যস্থ হবে। কারণ খুব পেটভর্তি করে খাওয়াতে ইবাদতের জন্য শক্তি লাভের পরিবর্তে আরাে অলসতার সৃষ্টি হয়। খাওয়ার মহান সুন্নাত এ যে, ক্ষুধা লাগা। কারণ ক্ষুধা ছাড়া খাওয়াতে শক্তি অর্জন দূরের কথা, বরং স্বাস্থ্য খারাপ ও অন্তর কঠিন হয়ে যায়। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু তালিব মক্কী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: এক বর্ণনায় রয়েছে, “পরিতৃপ্ত থাকাবস্থায় খাওয়া শ্বেতরােগের সৃষ্টি করে।” (কুতুল কুলুব, ২য় খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা, মারকাযে আহলে সুন্নাত, বরকতে রযা, হিন্দ) 

(২) এমন দস্তরখানা বিছাবেন, যাতে কোন অক্ষর, শব্দ, ইবারত, কবিতা বা কোম্পানী ইত্যাদির নাম বাংলা, ইংরেজী বা যে কোন ভাষায় লেখা যেন না থাকে। 

(৩) খাওয়ার পূর্বে ও পরে উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধােয়া সুন্নাত। কুলি করে মুখের সামনের ভাগও ধুয়ে নিন। তবে খাওয়ার পূর্বে ধােয়া হাত মুছবেন না। খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: খাওয়ার আগে ও পরে অযু করা (অর্থাৎ হাত-মুখ ধােয়া) রিযিকে প্রশস্ততা (আনয়ন) করে ও শয়তানকে দূর করে।” (কানযুল উম্মাল, ৫ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৭৫৫) 

(৪) যদি খাওয়ার জন্য কেউ মুখ ধৌত না করে তবে এটা বলা যাবে না যে, সে সুন্নাত বর্জন করেছে। (বাহারে শরীয়াত, ১৬ তম খন্ড, ১৮ পৃষ্ঠা, মদীনাতুল মুর্শিদ বরলী শরীফ থেকে সংকলিত)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


(৫) খাওয়ার সময় বাম পা বিছিয়ে দিন আর ডান হাঁটু দাঁড় করিয়ে রাখুন, অথবা পাছার উপর বসে যান এবং উভয় হাঁটু দাঁড় করিয়ে রাখুন কিংবা দু’যানু হয়ে বসুন। তিন প্রকার থেকে যেভাবেই বসবেন সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। 


পর্দার মধ্যে পর্দা করার অভ্যাস করুনঃ 

(৬) ইসলামী ভাই হােক বা ইসলামী বােন, সকলে চাদর কিংবা জামার আঁচল দিয়ে পর্দার মধ্যে পর্দা অবশ্যই করবেন। অন্যথায় যদি কাপড় আঁটসাঁট হয় কিংবা জামার আঁচল উঠানাে থাকলে পরিবারের লােকেরা ও অন্যান্যরা কু-দৃষ্টির গুনাহে লিপ্ত হতে পারে। যদি “পর্দার মধ্যে পর্দা করা সম্ভব না হয় তাহলে দুযানু হয়ে বসুন। তাহলে সুন্নাতও আদায় হয়ে যাবে এবং নিজে থেকেই পর্দাও হয়ে যাবে। খাওয়া ছাড়াও বসার সময় পর্দার মধ্যে পর্দা করার অভ্যাস গড়ুন।

(৭) চারযানু হয়ে অর্থাৎ চেপ্টা হয়ে বসে খাওয়া সুন্নাত নয়। এতে পেট বের হয়ে যায়। 

(৮) প্রথম লােকমায় بِسمِ اللّٰه দ্বিতীয় লােকমার পূর্বে بِسمِ اللّٰه الرَّحمٰن আর তৃতীয় লােকমার পূর্বে بِسمِ اللّٰه الرَّحمٰن الرَّحِيم পাঠ করুন। (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ৬ পৃষ্ঠা) 

(৯) بِسمِ اللّٰه উচ্চ আওয়াজে পড়ুন, যাতে অন্যদেরও স্মরণ হয়ে যায়। 

(১০) শুরু করার সময় এ দোয়া পড়া হলে যদি খাবারের মধ্যে বিষও থাকে, তবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  প্রভাব ফেলতে পারবে না। দোয়াটি নিম্নরূপ:


بِسمِ اللّٰهِ وَبِاللّٰهِ الَّذِى لَايَضُرُّ مَعَ اِسمِهٖ شَيءُُ فِى الأَرضِ وَلاَ فِى السَّمَآءِ يَاحَيُّ يَاقَيُّوم

      অনুবাদঃ আল্লাহ্ তাআলার নামে শুরু করছি যাঁর নামের বরকতে জমিন ও আসমানের কোন বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। ওহে চিরজীবী ও চিরস্থায়ী।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী) 


(১১) যদি শুরুতে بِسمِ اللّٰه পড়তে ভুলে যান তবে খাবারের মাঝে স্মরণ হলে এরূপ বলে নিন:

بِسمِ اللّٰهِ اَوَّلَهُ وَاٰخِرَهُ

অর্থ: আল্লাহর নামে খাওয়ার শুরু ও শেষ। 


খাওয়ার সময়ও আল্লাহর যিকর করতে থাকুন:

(১২) যে কেউ খাওয়ার সময় প্রতিটি লােকমায় ُيَا وَاجِد পাঠ করবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  ঐ খাবার তার পেটে দূর হবে ও রােগ দূর হবে। অথবা 

(১৩) প্রতি লােকমার পূর্বে اللّٰه বা بِسمِ اللّٰه বলতে থাকুন, যাতে খাওয়ার লােভ আল্লাহর যিকির থেকে উদাসীন করে না দেয়। প্রতি দুই লােকমার মাঝে الحَمدُ لِلّٰه অথবা يَا وَاجِد এবং بِسمِ اللّٰه বলতে থাকুন।

এভাবে প্রতি লােকমার শুরু بِسمِ اللّٰه দ্বারা, মধ্যবর্তী يَا وَاجِد আর গ্রাসের শেষে আল্লাহর প্রশংসার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। 

(১৪) মাটির বাসনে খাওয়া উত্তম। কেননা যে নিজের ঘরে মাটির বাসন তৈরী করায়, ফিরিশতা তার ঘরের যিয়ারত করতে আসেন।” (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৪৯৫ পৃষ্ঠা) 

(১৫) তরকারী বা চাটনীর পেয়ালা রুটির উপর রাখবেন না। (প্রাগুক্ত, ৪৯০ পৃষ্ঠা) 

(১৬) হাত কিংবা ছুরি রুটি দিয়ে মুছবেন না। (প্রাগুক্ত) 

(১৭) জমিনে দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া সুন্নাত। হেলান দিয়ে, খালি মাথায় অথবা হাতে জমিনের উপর ভর দিয়ে, জুতা পরিধান করে, শুয়ে বা চার যানু (অর্থাৎ- চেপ্টা হয়ে) বসে খাবেন না। 

(১৮) রুটি যদি দস্তরখানায় এসে যায় তাহলে তরকারীর অপেক্ষা না করে খাওয়া শুরু করে দিন। ( রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা)

(১৯) শুরু ও শেষে লবণ বা লবণ জাতীয় কিছু খাবেন। এতে ৭০ টি রােগ দূরীভূত হয়। (প্রাগুক্ত, ৪৯১ পৃষ্ঠা) 

(২০) রুটি এক হাতে ছিড়বেন না, কারণ এটা অহংকারীদের পদ্ধতি।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ) 


(২১) রুটি বাম হাতে নিয়ে ডান হাতে ছিড়বেন। কেননা এটা সুন্নাত। হাত বাড়িয়ে তরকারীর পাত্রের মাঝখানে বা উপরে রেখে রুটি ও পাউরুটি ইত্যাদি ছেড়ার অভ্যাস গড়ুন। এতে রুটির ক্ষুদ্র অংশ তরকারিতে পড়বে। অন্যথায় দস্তরখানায় পড়ে নষ্ট হতে পারে। 

(২২) ডান হাতে খাবেন। বাম হাতে খাওয়া, পান করা, লেন-দেন করা শয়তানের বৈশিষ্ট্য। 


তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ুনঃ 

(২৩) তিন আঙ্গুল অর্থাৎ মধ্যমা, শাহাদাত ও বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা খাবার খাবেন। কেননা এটা সুন্নাতে আম্বিয়া ُعَلَيهِمُ الصَّلَوة وَالسَّلاَم। অভ্যাস করার জন্য যদি চান তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলকে বাঁকা করে তাতে রাবার ব্যান্ড পড়ে নিন অথবা রুটির টুকরা ঐ দুটো আঙ্গুলে দিয়ে হাতের তালুতে রেখে চেপে ধরুন কিংবা উভয় কাজ এক সাথে করুন। যখন অভ্যাস হয়ে যাবে তখন  انشاء اللّٰه عزّ وجل  রাবার ইত্যাদির আর প্রয়ােজন পড়বে না। হযরত সায়্যিদুনা মােল্লা আলী কারীর  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “পাঁচ আঙ্গুলে খাওয়া লােভীদের আলামত।” (মিরকাত, ৮ম খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা) যদি ভাতের দানা পৃথক পৃথক হয় এবং তিন আঙ্গুল দিয়ে লােকমা বানানাে সম্ভবপর না হয় তবে চার কিংবা পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে খেতে পারেন। 


রুটির কিনারা ছেঁড়াঃ 

       (২৪) রুটির কিনারা ছিড়ে ফেলে দেয়া এবং মধ্যের ভাগ খেয়ে নেয়া মানে অপচয় করা। তবে যদি পার্শ্ব কাঁচা থেকে যায়, সেটা খাওয়াতে ক্ষতি হলে তবে ছিড়তে পারেন। অনুরূপভাবে এটা জানা আছে যে, রুটির কিনারা অন্যরা খেয়ে নেবে, নষ্ট হবে না তবে ছিড়াতে ক্ষতি নেই। এ বিধান সেটারও যে, রুটির যে অংশ ফোলা রয়েছে তা খেয়ে নেয় আর অবশিষ্ট অংশ বাদ দিয়ে দেয়। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ১৮-১৯ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করাে, নিঃসন্দেহে এটা তােমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা) 


দাঁতের কাজ ভূড়ি দিয়ে করাবেন নাঃ 

(২৫) লােকমা ছােট করে নিন ও এরূপ সতর্কতার সাথে নিন যেন চপাত চপাত আওয়াজের সৃষ্টি না হয়। যদি ভালভাবে চাবানাে ছাড়া গিলে ফেলেন তবে হজম করার জন্য পাকস্থলীকে ভীষণ কষ্ঠ করতে হবে। সুতরাং দাঁতের কাজ ভূড়ি দিয়ে করাবেন না। 

(২৬) যতক্ষণ পর্যন্ত কণ্ঠনালীর নীচে নেমে না যাবে ততক্ষণ দ্বিতীয় গ্রাসের দিকে হাত অগ্রসর করা বা গ্রাস উঠানাে খাওয়ার প্রতি লােভের আলামত। 

(২৭) রুটিকে দাঁত দিয়ে ছিড়ে খাওয়া সীমাহীন দোষণীয় কাজ ও বরকত শূণ্যতার কারণ। তেমনিভাবে দাঁড়িয়ে খাওয়া মানে খ্রীষ্টানদের অনুকরণ করা। (সুন্নী বেহেশতী যেওয়ার, ৫৬৫ পৃষ্ঠা) 


খাবারের পূর্বে ফল খাওয়া উচিতঃ 

(২৮) আমাদের দেশে ফলমূল খাওয়ার পরে খাবারের প্রচলন রয়েছে। অথচ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: “যদি ফল থাকে তবে তা প্রথমে পেশ করা উচিত। কারণ ডাক্তারী মতে তা আগে খাওয়া অত্যাধিক উপযােগী। এটা তাড়াতাড়ি হজম হয়। তাই এটাকে পাকস্থলীর নিংশে থাকা উচিত আর কুরআনে পাক থেকেও ফল পূর্বে থাকার ব্যাপারে জানা যায়। যেমন- আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:


وَفَاکِہَۃٍ مِّمَّا یَتَخَیَّرُوۡنَ ﴿ۙ۲۰﴾ 

وَلَحۡمِ طَیۡرٍ مِّمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿ؕ۲۱ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ফলমুল যা তারা পছন্দ করবে, এবং পক্ষীমাংস (থাকবে), যা তারা চাইবে। (পারা- ২৭, সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত- ২০,২১) 


       আমার আক্বা আ’লা হযরত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বর্ণনা উদ্ধৃত করেন, “খাওয়ার আগে তরমুজ খাওয়াতে (তা) পেটকে ভালভাবে ধুয়ে দেয় আর রােগ মূল থেকে নিঃশেষ করে দেয়।” (ফতােওয়ায়ে রযবীয়া নতুন সংস্করণ, ৫ম খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল) 


খাবারের দোষ দেবেন নাঃ 

(২৯) খাবারকে কোন প্রকার দোষ দেবেন না। যেমন- এরূপ বলবেন না। যে, মজা নেই, কাঁচা থেকে গেছে, লবণ কম হয়েছে, তিতা বা পানসে পানসে ইত্যাদি ইত্যাদি। পছন্দ হলে খেয়ে নিন, নয়তাে হাত সরিয়ে নিন। তবে রান্নাকারীকে মরিচ-মসল্লা কম-বেশি হওয়ার ব্যাপারে অবহিত করার উদ্দেশ্যে একাকীভাবে দিক নির্দেশনা দেয়াতে অসুবিধা নেই। 


ফলের দোষ দেয়া অধিক মন্দ কাজঃ 

(৩০) ফলের দোষ দেয়া মানুষের রান্নাকৃত খাবারের তুলনায় অধিক মন্দ কাজ। কারণ খাবার রান্না করাতে মানুষের হাত রয়েছে অপরদিকে ফলের ব্যাপারে এমনটা নয়। 

(৩১) খাবার বা তরকারী মাঝখান থেকে নেবেন না, কারণ মাঝখানে বরকত অবতীর্ণ হয়। 

(৩২) নিজের পার্শ্ব থেকে খাবেন, চতুর্দিকে হাত দেবেন না। 

(৩৩) যদি একটি থালায় বিভিন্ন ধরণের খাবার থাকে তবে অপরদিক থেকেও নিতে পারেন। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


খাওয়ার সময় ভাল ভাল কথা বলুনঃ 

(৩৪) খাওয়ার সময় ভাল মনে করে চুপ থাকাটা অগ্নিপূজারীদের নিয়মনীতি। তবে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, তাহলে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে অহেতুক কথা-বার্তা বলা সব সময়েই ঠিক নয়। সুতরাং খাওয়ার সময় ভাল ভাল কথা বলতে থাকুন। যেমন- যখনই ঘরে মিলেমিশে বা মেহমান ইত্যাদির সাথে খেতে বসেন, তখন পানাহারের সুন্নাতগুলাে বলতে থাকুন। সৌভাগ্যের বিষয় হবে! যদি খাবারের এসব মাদানী ফুলগুলাের ফটোকপি ফ্রেমে বাইন্ডিং করে বা মােটা কাগজে লাগিয়ে খাওয়ার স্থানে লটকিয়ে দেয়া হয় এবং খাওয়ার সময় পড়ে শুনানাে হয়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব) 


(৩৫) খাওয়ার সময় এ ধরণের কথা-বার্তা বলবেন না, যা শুনে মানুষের ঘৃণার উদ্বেগ হয়। যেমন ডায়রিয়া, (আমাশয়), বমি ইত্যাদির আলােচনা করা। 

(৩৬) কারাে খাবারের লােকমার দিকে বাঁকা দৃষ্টি দেবেন না। 


ভাল ভাল মাংসের টুকরাগুলাে উৎসর্গ করুনঃ

(৩৭) খাবার থেকে ভাল ভাল মাংসের টুকরাগুলাে বেছে নেয়া বা একত্রে খাওয়ার সময় এজন্য বড় বড় লােকমা দিয়ে তাড়াতাড়ি গিলে ফেলা যে, আবার যেন আমি পিছে পড়ে না যাই, অথবা নিজের দিকে বেশি পরিমাণ খাবার গুটিয়ে নেয়া। মােটকথা যেন কোনভাবে অন্যকে বঞ্চিত করা, যা দেখে অপরজন খারাপ ধারনার স্বীকার হয়, এগুলাে অশালীনতা ও লােভীদের নিদর্শন। ভাল বস্তুগুলাে নিজের ইসলামী ভাই কিংবা পরিবারের লােকদের জন্য উৎসর্গ করার নিয়্যতে পরিত্যাগ করলে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  সাওয়াব পাবেন। যেমন- প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি নিজের প্রয়ােজনীয় বস্তু অন্যকে দিয়ে দেয়, তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” (আততাহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, ৯ম খন্ড, ৭৭৯পৃষ্ঠা) 


পতিত খাবার খেয়ে নেয়ার ফযীলতঃ 

(৩৮) খাওয়ার সময় যদি কোন খাবার বা সামান্য অংশ পড়ে যায় তবে তা তুলে নিয়ে মুছে খেয়ে নিন। কেননা তাতে মাগফিরাত (ক্ষমা) লাভের সুসংবাদ রয়েছে। 

(৩৯) হাদীসে পাকে রয়েছে, যে খাবারের পতিত অংশ উঠিয়ে খেয়ে নেবে, সে প্রাচুর্যের জীবন কাটায় এবং তার সন্তান, বংশধর স্বল্প বিবেক সম্পন্ন (অল্প মেধাবী) হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। (কানযুল উম্মাল, ১৫তম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮১৫) 

(৪০) হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  উদ্ধৃত করেন; “রুটির টুকরা ও অংশগুলাে উঠিয়ে নিন  انشاء اللّٰه عزّ وجل  প্রাচুর্যতা অর্জিত হবে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


বাচ্চা সুস্থ, নিরাপদ ও ত্রুটিমুক্ত হবে এবং ঐ টুকরােগুলাে জান্নাতের হুরের মােহরানা হবে।” (ইহইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ৭পৃষ্ঠা) 

(৪১) পতিত টুকরােকে উঠিয়ে চুমু দেয়া জায়িয। 

(৪২) দস্তরখানায় যে দানা ইত্যাদি পড়ে গেছে সেগুলাে মুরগী, পাখী, গরু, ছাগল ইত্যাদিকে খাওয়ানাে জায়িয। অথবা এমন জায়গায় নিরাপদে রেখে দিন, যেন পিপড়া খেয়ে নেয়। 


খাবারে ফুঁক দেয়া নিষেধঃ

(৪৩) খাবার ও চা ইত্যাদিকে ঠান্ডা করার জন্য ফুঁক মারবেন না, কারণ এতে বরকত শূন্যতা হয়। অধিক গরম খাবার খাবেন না। খাওয়ার উপযােগী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৪৯১পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 

(৪৪) খাওয়ার মাঝখানেও ডান হাতে পানি পান করুন। এমন যেন না হয় যে, হাত খাদ্য মিশ্রিত হওয়ার কারণে বাম হাতে গ্যাস ধরে ডান হাতের আঙ্গুল লাগিয়ে মনকে মানিয়ে নেয়া যে, ডান হাতে পান করছি। 


পানি চুষে পান করতে শিখুনঃ 

(৪৫) পানি হােক কিংবা যে কোন ‘পানীয়’ সর্বদা بِسمِ اللّٰه الرَّحمٰن الرَّحِيم পাঠ করে ছােট ছােট ঢােকে পান করা উচিত। কিন্তু চুষে পান করার ক্ষেত্রে যেন আওয়াজের সৃষ্টি না হয়। পানি হােক কিংবা অন্য কোন পানীয়, বড় বড় ঢােকে পান করাতে কলিজায় রােগের সৃষ্টি হয়। শেষে الحمد للّٰه বলুন। আফসােস! চুষে চুষে পান করার সুন্নাতের উপর এখন সম্ভবত খুব কম সংখ্যকই আমল করে। দয়া করে, এটার অনুশীলন করুন এবং এ সুন্নাতকে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করুন। 

(৪৬) যখন কিছুটা ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকে তখন খাওয়া থেকে হাতকে গুটিয়ে নিন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।” (মাতালিউল মুসাররাত) 


স্বাদ শুধুমাত্র জিহ্বার গােড়া পর্যন্তঃ 

(৪৭) পেট ভরে খাওয়া সুন্নাত নয়। বেশি খেতে মন চাইলে তখন নিজেকে এভাবে বুঝান যে, শুধুমাত্র জিহ্বার আগা থেকে গােড়া পর্যন্ত স্বাদ থাকে, কণ্ঠনালীতে পৌঁছতেই স্বাদ শেষ হয়ে যায়। তাই কিছু সময়ের মজার জন্য সুন্নাতের সাওয়াব ত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এছাড়া বেশি খাওয়াতে শরীর ভারী হয়ে যায়, ইবাদতে অলসতা আসে, পাকস্থলী খারাপ হয় এবং অনেকের মেদ চলে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাষ্টিক, সুগার ও হৃদযন্ত্র ইত্যাদির রােগ হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। 

(৪৮) খাবার শেষ করার পর প্রথমে মধ্যমা, এরপর শাহাদাত আঙ্গুল এবং শেষে বৃদ্ধাঙ্গুল তিনবার করে চাটুন। রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم খাবার খাওয়ার পর মােবারক আঙ্গুলগুলােকে তিনবার চেটে নিতেন। (শামায়িলে তিরমিযী, ৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩৮) 


বাসন চেটে নিনঃ

(৪৯) বাসনও চেটে নিন। হাদীসে পাকে রয়েছে, “যে ব্যক্তি খাওয়ার পর বাসন চেটে নেয়, তখন ঐ বাসন তার জন্য দোয়া করে ও বলে, আল্লাহ্ তাআলা তােমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করুন, যেমনিভাবে তুমি আমাকে শয়তান থেকে মুক্ত করেছ।” (কানযুল উম্মাল, ১৫তম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪০৮২২) অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, বাসন তার জন্য ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে। ( ইবনে মাজাহ, ৪র্থ খন্ড, ১৪ পৃষ্টা, হাদীস নং- ৩২৭১) 

(৫০) যে বাসনে খেয়েছেন সেটা চেটে নেয়ার পর ধুয়ে পান করুন  انشاء اللّٰه عزّ وجل  একজন গােলাম মুক্ত করার সাওয়াব অর্জিত হবে। (ইহইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ৭ পৃষ্ঠা)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) 


ধুয়ে পান করার নিয়মঃ 

(৫১) চাটা ও বােয়া ঐ সময় বলা হবে যখন খাদ্যের কোন অংশ ও ঝােলের কোন চিহ্ন ইত্যাদি অবশিষ্ট থাকবে না। তাই অল্প পানি নিয়ে বাসনের উপরের কিনারা থেকে নীচ পর্যন্ত চতুর্দিকে আঙ্গুল ইত্যাদি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে পান করা উচিত। দুই বা তিনবার এরূপ ধুয়ে পান করুন, তাহলে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  বাসন খুবই পরিস্কার হয়ে যাবে। 

(৫২) পান করার পর বাসন বা থালার মধ্যে রয়ে যাওয়া সামান্য পরিমাণ অবশিষ্ট পানিও আঙ্গুল দিয়ে জমা করে পান করে নেয়া উচিত। এমন যেন না হয় যে, মসল্লার কোন ক্ষুদ্রাংশ কোথাও আটকে থাকে আর এতে বরকতও চলে যায়! কারণ হাদীসে পাকে এটাও রয়েছে, “তােমরা জাননা যে, খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম, ১১১২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১০২৩) 

(৫৩) তরকারীর ঝােল মিশ্রিত ছােট পেয়ালা, চামচ এছাড়া চা, লাচ্ছি, ফলের রস, (JUICES) শরবত ও অন্যান্য পানীয় মিশ্রিত পেয়ালা গ্লাস ও জগ ইত্যাদি ধুয়ে এভাবে পান করে নিন যে, খাদ্যের কোন অংশ বা চিহ্ন যেন অবশিষ্ট না থাকে এবং এভাবে প্রচুর বরকত কুড়িয়ে নিন। 

(৫৪) গ্লাসে অবশিষ্ট মুসলমানের পরিস্কার পানিকে ব্যবহার উপযােগী হওয়া সত্ত্বেও অহেতুক ফেলে দিয়ে নষ্ট করাটা অপচয় আর অপচয় করা হচ্ছে হারাম। (সুন্নী বেহেশতী যেওর, ৫৬৭ পৃষ্ঠা) 

(৫৫) শেষে الحمد للّٰه বলুন। শুরু ও শেষে কুরআন ও হাদীসের দোয়া সমূহ স্মরণ থাকলে পাঠ করুন। 

(৫৬) সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিন, যাতে গন্ধ ও তৈলাক্ততা দূর হয়ে যায়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  স্মরণে এসে যাবে।” (সায়াদাতুদ দারাঈন) 


খাওয়ার পর মাসেহ করা সুন্নাতঃ 

(৫৭) হাদীসে পাকে এটাও রয়েছে, (খাবার শেষ করার পর) ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم হাত ধৌত করলেন ও হাতের আদ্রতা দিয়ে মুখ ও হাতের কব্জি ও পবিত্র মাথা মাসেহ করে নিলেন এবং নিজের প্রিয় সাহাবীকে  رضى الله تعالى عنه  বললেন: “ইকরাশ! যে বস্তুকে আগুন স্পর্শ করেছে। (যা আগুন দ্বারা রান্না করা হয়েছে) সেটা খাওয়ার পর এটা হচ্ছে ওযু।” (তিরমিযী শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৮৫৫) 

(৫৮) খাবারের পর দাঁত খিলাল করা সুন্নাত। 


অতীতের গুনাহ মাফঃ 

(৫৯) নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি খাবার খেলাে আর এ বাক্যগুলাে বলল: তবে তার অতীতের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। দোয়া বাক্যগুলাে নিম্নরূপ: 


اَلحَمدُ لِلّٰهِ الَّذِى اَطعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِن غَيرِ حَولٍ مِنِّى وَلَا قُوَّةٍ

      অনুবাদঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার জন্য যিনি আমাকে খাবার খাইয়েছেন এবং আমাকে কোন প্রকারের যােগ্যতা ও শক্তি ছাড়া এই রিযিক দান করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, ৫ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা) 

(৬০) খাওয়ার পর এ দোয়াটিও পড়ুন:


اَلحَمدُ لِلّٰهِ الَّذِى اَطَعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسلِمِينَ

   অনুবাদঃ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, যিনি আমাদেরকে খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন ও মুসলমানের মাঝে সৃষ্টি করেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৫১৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৮৫০) 

(৬১) যদি কেউ মেহমানদারী করান তবে এ দোয়াটিও পাঠ করুন: 


اَللّٰهُمَّ اَطعِم مَن اَطعَمَنِى وَاسِق مَن سَقَانِي

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! তাকে খাওয়াও যে আমাকে খাইয়েছেন ও তাকে পান করাও যে আমাকে পান করিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, ১৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৫৫)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম) 


(৬২) খাওয়ার পর এ দোয়াটিও পড়ুন:


اَللّٰهُمَّ بارِك لَنَا فِيهِ وَاَطعِمَنَا خَيرًا مِّنهُ

     অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এ খাবারে বরকত দান করাে এবং এটা থেকে উত্তম খাবার আমাদেরকে খাওয়াও। (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ৪৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৭৩০) 

(৬৩) দুধ পান করার পর এ দোয়া পড়ুন:


 اَللّٰهُمَّ بارِك لَنَا فِيهِ وَزِدنَا مِّنهُ

      অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দিন ও আমাদেরকে এ থেকে অধিক দান করুন। (প্রাগুক্ত) 

(৬৪) তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট হালুয়া, মধু, সিরকা, (আখ বা আঙ্গুরের টক শরবত) খেজুর, তরমুজ, শশা (কাকড়ি) কদু শরীফ খুবই পছন্দনীয় ছিল। 

(৬৫) মাংসের মধ্যে বাহু, ঘাড় ও কোমরের মাংস পছন্দনীয় ছিল। 

(৬৬) খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কখনাে কখনাে খেজুর ও তরমুজ কিংবা খেজুর ও শশা (কাকড়ি) অথবা খেজুর ও রুটি একত্র করে খেতেন। 

(৬৭) খুরচন (রান্নাকৃত ডেক্সীর নিচে যা জমে যায় তা) রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট পছন্দনীয় ছিল। 

(৬৮) সারীদ অর্থাৎ- তরকারীর ঝােলের মধ্যে ভেজানাে রুটির টুকরা তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট খুবই পছন্দনীয় ছিল। (৬৯) এক আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া শয়তানের, দুই আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া অহংকারীর নিয়মনীতি। তিন আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া আম্বিয়া عَلَيهِ الصَّلَوةُ وَالسَّلَام সুন্নাত।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।” (আব্দুর রাজ্জাক) 


কতটুকু খাবেন? 

(৭০) ক্ষুধাকে তিন ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি ও এক ভাগ বাতাস (এর জন্য)। যেমন তিনটি রুটি খাওয়াতে পরিতৃপ্ত হয়ে গেলে তাহলে একটি রুটি খাবেন, একটি রুটির পরিমাণ পানি ও অবশিষ্টটুকু বাতাসের জন্য খালি রেখে দিন। যদি পেট ভরেও খেয়ে নেন তবে তা মুবাহ, কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু কম খাওয়ার দ্বীনি ও দুনিয়াবী বরকত রয়েছে। পরীক্ষা করে দেখুন,  انشاء اللّٰه عزّ وجل  পেট এমনভাবে ঠিক হয়ে যাবে যে, আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে পেটের কুফলে মদীনা দান করুন।


কাইলূলা সুন্নাতঃ 

(৭১) দুপুরের খাবারের পর 'কাইলূলা' করুন। (দুপুরের সময় শােয়াকে কাইলূলা বলা হয়।) আর বিশেষ করে এটা রাতে ইবাদতকারীদের জন্য সুন্নাত। কেননা এতে রাতের ইবাদত করা সহজ হয়। সন্ধ্যায় খাবারের পর ২৫০ কদম চলুন। সন্ধায় খাবারের পর ১৫০ কদম হাঁটুন। আর ডাক্তারদের অভিমত হচ্ছে সন্ধ্যায় খাওয়ার পর সাধারণত ১৫০ কদম হাঁটা উত্তম। 

(৭২) খাওয়ার পর অবশ্যই الحمد للّٰه বলুন। 

(৭৩) দস্তরখানা উঠানাের পূর্বে উঠে যাবেন না। 

(৭৪) খাওয়ার পর ভালভাবে হাত ধুয়ে মুছে নিন। সাবানও ব্যবহার করতে পারেন।

(৭৫) কাগজ দিয়ে হাত মােছা নিষেধ। 

(৭৬) তােয়ালে দিয়ে হাত মুছতে পারেন, পরিহিত বস্ত্র দিয়ে হাত মুছবেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তাআলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আদী) 


বরকত উঠে যাওয়ার কাজ সমূহঃ 

(৭৭) মুফতী মুহাম্মদ খলীল খান বারকাতী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: বাসনে খাবার খেয়েছে, তাতে হাত ধোয়া অথবা হাত ধুয়ে জামা বা লুঙ্গির আঁচলে মুছে নেয়া (খাবার থেকে) বরকত উঠিয়ে দেয়।” (সুন্নী বেহেশতী যেওয়ার, ৫৭৮ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 

(৭৮) খাবার খাওয়ার সাথে সাথে প্রচন্ড ব্যায়াম করা বা অতিরিক্ত ভারী বস্তু উত্তোলন করা, টেনে নেয়া ইত্যাদি কঠোর পরিশ্রমের কাজ করাতে আঁত বের হওয়া, এ্যাপেন্ডিক্স হওয়া বা পেট বেড়ে যাওয়া রােগের সৃষ্টি হতে পারে। 

(৭৯) খাওয়ার পর উচু আওয়াজে الحمد للّٰه ঐ সময় বলবেন যখন সবাই খাবার শেষ করে নেয় অন্যথায় আস্তে বলুন। (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা) খাওয়ার পর দোয়া সমূহ ঐ সময় পড়ানাে উচিত যখন প্রত্যেকে খাওয়া শেষ করে নেয়, অন্যথায় যে আহাররত থাকবে সে লজ্জা পাবে। 


কারো গাছের ফল খাওয়া কেমন? 

(৮০) কোন বাগানে গেছেন সেখানে ফল পড়ে আছে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত বাগানের মালিকের অনুমতি পাওয়া যাবে না ততক্ষণ ফল খেতে পারবেন না আর অনুমতি দুই ধরণের হতে পারে। প্রকাশ্যভাবে অনুমতি যেমন- মালিক বলে দিলেন, পড়ে থাকা ফলগুলাে খেতে পারবে অথবা পরােক্ষভাবে অনুমতি অর্থাৎ ঐ স্থানে এমন প্রচলিত রীতি রয়েছে, বাগানের মালিক পড়ে থাকা ফলগুলাে খাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে নিষেধ করে না। গাছ থেকে ফল ছিড়ে খাওয়ার অনুমতি নেই তবে যখন প্রচুর ফল থাকে আর জানা থাকে যে, ছিড়ে খাওয়াতে মালিক কিছু মনে করবেন না তখন ছিড়েও খাওয়া যেতে পারে। তবে কোন অবস্থায় এটার অনুমতি নেই, সেখান থেকে ফল নিয়ে আসা। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (কানযুল উম্মাল) 


এসব অবস্থায় প্রচলন ও (মালিকের) অভ্যাসের খেয়াল রাখতে হবে আর যদি প্রচলন ও অভ্যাস না থাকে অথবা জানা থাকে যে, মালিক কিছু মনে করবে তাহলে পড়ে থাকা ফলও খাওয়া জায়েয নেই। 


জিজ্ঞাস না করে খাওয়া কেমন? 

(৮১) বন্ধুর ঘরে গিয়ে কোন কিছু রান্নাকৃত পেয়ে নিজে নিয়ে খেয়ে নিল অথবা তার বাগানে গিয়ে ফলছিড়ে খেয়ে নিল। যদি জানা থাকে যে, সে কিছু মনে করবে না তাহলে খাওয়া জায়িয কিন্তু এখানে ভালভাবে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়ােজন রয়েছে। অনেক সময় এমনও হয় যে, সে মনে করল যে, বন্ধু কিছু মনে করবে না, অথচ কিছু মনে করে বসল। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ২২৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 

(৮২) জবাইকৃত (পশু-পাখির) হারাম “মজ্জা” খাওয়া ‘মমনূহ তথা নিষিদ্ধ। সুতরাং রান্না করার সময়, ঘাড়, সীনা কিংবা পাজরের হাড়যুক্ত মাংস ও মেরুদন্ডের হাড়ের মাংসকে ভালভাবে ধুয়ে হারাম মজ্জা আলাদা করে নিন। 

(৮৩) মুরগীর হারাম মজ্জা হালকা হয়ে তাকে, তাই সেটা বের করতে অসুবিধা হয়। সুতরাং রান্না করার সময় তা থেকে গেলে অসুবিধা নেই। তবে খাবেন না। অনুরূপভাবে মুরগীর ঘাড়ের পাট্টা ও কালাে রেখা বিশিষ্ট রক্তের রগও খাবেন না। 

(৮৪) জবাইকৃত বস্তুর “গ্রন্থি, ফোঁড়া, গিঁড়া, গােটা ইত্যাদি খাওয়া মাকরূহে তাহরিমী। সুতরাং রান্না করার পূর্বেই তা ফেলে দিন। 


মুরগীর হৃৎপিন্ডঃ 

(৮৫) মুরগীর হৃদপিন্ড ফেলে দেয়া উচিত নয়। লম্বা লম্বভাবে চার টুকরা করে অথবা যেভাবেই সম্ভব হয় সেভাবে কেটে তা থেকে রক্ত ভালভাবে পরিস্কার করার পর রান্না করুন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।” (কানযুল উম্মাল) 


রান্নাকৃত রক্তের রগগুলাে খাবেন নাঃ 

(৮৬) জবাইকৃত বস্তুর মাংসের ভেতর যে রক্ত থেকে যায় তা পবিত্র কিন্তু ঐ রক্ত খাওয়া মমনু বা নিষিদ্ধ। সুতরাং মাংসের ঐসব অংশ যেগুলােতে প্রায়ই রক্ত থেকে যায় সেগুলােকে ভালভাবে দেখে নিন। যেমন- মুরগীর ঘাড়, ডানা ও পা ইত্যাদির ভিতর থেকে কালাে রেখাগুলাে বের করে নিন কারণ এগুলাে রক্তের রগ। রক্ত রান্না হওয়ার পর কালাে হয়ে যায়।" 


“বিসমিল্লাহ করাে” বলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধঃ 

(৮৭) একজন খাবার খাচ্ছে আর অন্যজন এলাে, তখন প্রথমজন তাকে বলল: এসাে খাবার খাও” অপরজন বলল: “বিসমিল্লাহ করাে!” এরকম বলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় দোয়া মূলক শব্দ বলা উচিত। যেমন বলুন, “আল্লাহ্ বরকত দিন।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 


পঁচে যাওয়া মাংস খাওয়া হারামঃ 

(৮৮) মাংস পঁচে গেলে তা খাওয়া হারাম। অনুরূপভাবে যেসব খাবার খারাপ হয়ে যায় তাও খাওয়া ঠিক নয়। খারাপ হওয়ার লক্ষণ হল এযে, তাতে গাদ (সাদা আবরণ), দুর্গন্ধ বা টক গন্ধ সৃষ্টি হওয়া, যদি ঝােল থাকে তবে তাতে ফেনা এসে যায়। ডাল, খিচুড়ী ও টক মিশ্রিত তরকারী তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। 


পুরাে কাঁচা মরিচঃ 

(৮৯) খাবারের সময় রান্নাকৃত কাঁচা বা লাল মরিচ ফেলুন ফেলে দেয়ার পরিবর্তে সম্ভব হলে পূর্বেই থেকেই বেছে নিয়ে আলাদা করে নিন এবং পিষে পুনরায় কাজে লাগান। এভাবে রান্নাকৃত গরম মসলাও যদি ব্যবহার উপযােগী থাকে তবে নষ্ট করবেন না।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর) 


অতিরিক্ত রুটিগুলাে কি করবেন? 

(৯০) অতিরিক্ত রুটি ও ঝােল ইত্যাদি ফেলে দেয়া অপচয়। মুরগী, ছাগল বা গরু ইত্যাদিকে খাওয়াবেন। কয়েক দিনের থেকে যাওয়া রুটিগুলাে টুকরাে করে ঝােল দিয়ে রান্না করে নিন।  انشاء اللّٰه عزّ وجل  উৎকৃষ্ট খাবার প্রস্তুত হয়ে যাবে। 


কাঁকড়া ও চিংড়ি মাছ খাওয়া কেমন? 

(৯১) মাছ ছাড়া সমুদ্রের প্রতিটি প্রাণী খাওয়া হারাম। যে মাছ মারা ছাড়া নিজেই মরে পানিতে ভেসে উঠে তাও হারাম। কাঁকড়া খাওয়াও হারাম। চিংড়ি মাছের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। খাওয়া জায়িয তবে না খাওয়া উত্তম। 

(৯২) ফড়িং মরে গেলেও তা খাওয়া হালাল। ফড়িং ও মাছ দুটোই জবাই করা ছাড়াও হালাল। ইয়া রব্বে মুস্তফা عَزَّ وَّجَل صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের এত অধিক বার “আদাবে তুআম” পাঠ করার তাওফীক দিন যেন খাওয়ার সুন্নাত ও আদবগুলাে মুখস্ত হয়ে যায় এবং আমাদের এগুলাের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। 

اٰمِينَ بِجَاهِ النَّبِيِّ الاَمِينَ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالىٰ عَلَيهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد

تُوبُوا اِلَى اللّٰه! اَستَغفِرُ اللّٰه

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


নিশ্ৰুপ থাকা বাদশাহী 

ব্যতীত ভীতি 

প্রদর্শনের অস্ত্র


মদীনার ভালবাসা, জান্নাতুল বাক্বী, ক্ষমা ও বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রিয় আক্বা ﷺ এর প্রতিবেশী হওয়ার প্রত্যাশী। 

১৭ মুহাররমুল হারাম ১৪২৭ হিঃ


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ)


اَلحَمدُ لِلّٰهِ رَبِّ العَالَمِين وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ المُرسَلِينَ اَمَّا بَعدُ  فَاَعُوذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ ؑ بِسمِ اللّٰهِ الرَّحمٰنِ الرَّحِيمِ ؑ


জ্বিনদের খাদ্যের বর্ণনা


দরূদ শরীফের ফযীলতঃ 

       খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে আমার উপর জুমার দিনে ও রাতে এক শতবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার একশত অভাব পূরণ করবেন। সত্তরটি আখিরাতের ও ত্রিশটি দুনিয়ার।” 

(কানযুল উম্মাল, ১ম খন্ড, ২৫৬ পৃষ্টা, হাদীস নং- ২২৩৯) 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসূলে পাক ﷺ এর দরবারে জ্বিনদের প্রতিনিধিঃ

       হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ  رضى الله تعالى عنه  হতে বর্ণিত, রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মহান মর্যাদাপূর্ণ খিদমতে জ্বিনদের এক প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়ে আরয করল, “আপনার উম্মত হাড়ি, গােবর ও কয়লা দ্বারা যেন ইসতিঞ্জা (প্রস্রাব, পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জন) না করে, কারণ আল্লাহ্ তাআলা এগুলাের মধ্যে আমাদের রিযিক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم (উম্মতকে) তা থেকে বারণ করেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, ১ম খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৯)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী) 


জ্বিন মানুষ থেকে নয়গুণ বেশিঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জ্বিনেরাও আল্লাহর একটি সৃষ্টি। যাদেরকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। এরা পানাহার করে এবং বিয়ে শাদীও করে। মানুষের তুলনায় এদের সংখ্যা নয়গুণ। হযরত সায়্যিদুনা আমর বিকালী  رضى الله تعالى عنه  বলেন: “যখন মানুষের একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন জ্বিনদের নয়টি সন্তান জন্মগ্রহণ করে।” (জামিউল বয়ান, ৯ম খন্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৪৮০৩) 


মুসলমানদের দস্তরখানায় জ্বিনঃ

       হযরত সায়্যিদুনা জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  একজন তাবেয়ী বুযুর্গ থেকে উদ্ধৃত করেন, “সকল মুসলমানদের ঘরের ছাদে মুসলমান জ্বিন বাস করে। যখন দুপুর ও রাতে দস্তরখানা বিছানাে হয় অর্থাৎ ঘরের লােকেরা খাবার খায় তখন জ্বিনেরা খেতে শুরু করে। তাদের মাধ্যমে আল্লাহ দুষ্ট জ্বিনদের তাড়িয়ে দেন। (লকতুল মারজান ফী আহকামিল জান, কৃতঃ সুয়ুতী, ৪৪ পৃষ্ঠা) 


ছরকার ﷺ এর সাথে সাপের কানাকানিঃ 

       হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর বরকতময় খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। তখন হঠাৎ একটি সাপ এলাে আর হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মােবারক বাহুর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেল অতঃপর সেটা নিজের মুখ নবীকুল সুলতান, সরদারে দো'জাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মােবারক কানের নিকট নিয়ে গেল যেন হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর সাথে কানাকানি করছে। তখন খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হ্যাঁ ঠিক আছে।” এরপর ঐ সাপটি ফিরে গেল। আমি হুযুরে আকরাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করলাম।


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক। পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


তখন ছরকারে মদীনা, প্রিয় মুস্তফা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাকে বললেন: সেটা জ্বিনদের একজন ছিল আর সে একথা বলে গেছে যে, আপনি صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আপনার উম্মতদের নির্দেশ দিন যে, তারা (যেন) গােবর ও পুরােনাে হাড়ি দিয়ে ইসতিঞ্জা (শৌচকর্ম) না করেন, এজন্য যে, আল্লাহ্ তাআলা তাতে আমাদের রিযিক তৈরী করে দিয়েছেন। (লকতুল মারজান ফী আহকামিল জান, ৪৬ পৃষ্ঠা) 


        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেল, রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর অসহায়দের আশ্রয়স্থল দরবারে জ্বিনও ফরিয়াদ নিয়ে আসে আর এটাও জানা গেল, হাড্ডি ও গােবর জ্বিনদের খাদ্য। আমাদের জন্য হাড্ডি, গােবর ও কয়লা দ্বারা ইসতিঞ্জা করা মাকরূহ। এ প্রসঙ্গে আরাে একটি ঘটনা শুনুন। যেমন- 


কালাে মানুষঃ

       হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ  رضى الله تعالى عنه  বলেন: হিজরতের আগে একদা নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم মক্কায়ে মুকাররমার পার্শ্ববর্তী স্থানে তশরীফ নিয়ে গেলেন, সেখানে হুযূর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমার জন্য একটি লাইন টেনে দিলেন আর বললেন: “যতক্ষণ আমি তােমার নিকট আসব না, তুমি কারাে সাথে কোনরূপ কথা-বার্তা বলবে না, অতঃপর বললেন: কোন কিছু দেখে ভয়ও করাে না। অতঃপর একটু সামনে গিয়ে বসে গেলেন। হঠাৎ হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিকট কালাে মানুষ এসে উপস্থিত হল, যেন তারা হাবসী আর তারা ঐ আকৃতিতে (এসেছে) যেমন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন: 


کَادُوۡا یَکُوۡنُوۡنَ عَلَیۡہِ  لِبَدًا ﴿ؕ۱۹﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তখন এরই উপক্রম ছিলাে যে, ঐ সমস্ত জ্বিন তাঁর নিকট প্রচন্ড ভীড় জমাবে। 

(পারা- ২৯, সুরা জ্বিন, আয়াত- ১৯)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী)


        অতঃপর তারা যখন হুযুরে আকরাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছিল তখন আমি তাদের (মুখ) থেকে শুনলাম যে, তারা বলছিল, ইয়া রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাদের ঘর অনেক দূরে, এখন আমরা যাচ্ছি। আপনি صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাদেরকে পথের পাথেয় দান করুন। মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “গােবর তােমাদের খাদ্য আর তােমরা যে হাড়ির নিকট যাবে তাতে তােমাদের জন্য মাংস হবে এবং যে গােবরের নিকট যাবে তা তােমাদের জন্য খেজুর হয়ে যাবে।” যখন তারা ফিরে গেল তখন আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর খিদমতে আরয করলাম: 'এরা কারা?' প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “এরা নাসীবীন শহরের জ্বিন ছিল। (লকতুল মারজান ফী আহকামিল জান, ৪৭ পৃষ্ঠা) 


শাহান শাহ ও গদা জিন্নো বাশার আওর আউলিয়া উল্লাহ

হে ছব কা তেরে ঠোকড়াে ফর গুজারা ইয়া রাসুলাল্লাহ

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


জ্বিনেরা লেবুকে ভয় পায়ঃ

       কাযী আলী বিন হাসান খালঈ এর “সাওয়ানিহে হায়াত” নামক গ্রন্থে রয়েছে, জ্বিনেরা তাঁর নিকট আসা-যাওয়া করত। একবার দীর্ঘদিন ধরে আসল না। তখন কাযী সাহেব তাদের কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে জিনেরা বললাে যে, আপনার ঘরে লেবু ছিল আর আমরা এমন ঘরে যাই না যাতে লেবু থাকে। (প্রাগুক্ত, ১০৩ পৃষ্ঠা) 


জ্বিনেরা সাদা মােরগকে ভয় পায়

মুস্তফা ﷺ এর দুটি বাণী: 

(১) সাদা মােরগ রাখাে। এজন্য যে, যে ঘরে সাদা মােরগ থাকবে, না শয়তান ঐ ঘরের কাছে আসবে, আর না জাদুকর ঐ ঘরগুলাের নিকটবর্তী হবে এবং যা ঐ ঘরের আশে-পাশে রয়েছে। (আল মাজুমুল আওসাত, ১ম খন্ড, ১২০১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৭৭)


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ) 


       (২) সাদা মােরগকে মন্দ বলাে না, কেননা এটা আমার দোস্ত ও আমি তার দোস্ত আর এটার শত্রু আমার শত্রু। যতদূর এটার আওয়াজ পৌঁছে তা জ্বিনদেরকে দূর করে দেয়। (লকতুল মারজান ফী আহকামিল জান, ১৬৫ পৃষ্ঠা) 


জ্বিন ও তাদের জানােয়ারের খাদ্যঃ

       জ্বিন জাতির যে প্রতিনিধি আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর সম্মানিত দরবারে হাযির হয়েছিল এবং নিজেদেরাও তাদের জানােয়ারদের জন্য খাবার চেয়েছিল। তাদেরকে বলা হল, তােমাদের জন্য (এমন) হাড়ি রয়েছে যাতে আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র নাম নেয়া হয়। অর্থাৎ হালাল পবিত্র জানােয়ারের হাড়ি, তা তােমাদের হাতে (আসামাত্র) এ অবস্থায় হয়ে যাবে যেভাবে তা পূৰ্বে মাংসে ভরা ও পরিপূর্ণ ছিল (অর্থাৎ- মাংস করা হাড়ি তােমরা মাংসসহ পাবে) আর সব বিষ্টা তােমাদের চতুস্পদ জন্তুর জন্য খাদ্য। আর এরপর মানুষদের ইরশাদ করলেন: হাড়ি ও গােবর দ্বারা ইসতিঞ্জা করাে না, কেননা এগুলাে তােমাদের ভাই (মুসলমান জ্বিনদের) খাবার। (সহীহ মুসলিম, ২৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৫০) 


জ্বিনেরা অপহরণও করে থাকেঃ

       একজন আনসারী সাহাবী  رضى الله تعالى عنه  ইশার নামায আদায়ের জন্য যখন ঘর থেকে বের হলেন তখন তাঁকে জ্বিনেরা অপহরণ করে নিল এবং কয়েক বৎসর যাবৎ গােপন রাখল। এরপর তিনি যখন মদীনায়ে মুনাওওয়ারাতে তশরীফ আনলেন তখন আমীরুল মুমিনীন হযরতে সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম  رضى الله تعالى عنه  তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন: আমাকে জ্বিনেরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল আর আমি অনেকদিন পর্যন্ত তাদের কাছে ছিলাম। এরপর মুসলমান জ্বিনেরা (ঐ জিনদের সাথে) জিহাদ করল আর তাদের মধ্য থেকে অনেকের সাথে আমাকেও বন্দী করা হল। মুসলমান জিনেরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, এ মানব সন্তান মুসলমান, তাকে বন্দী করা ঠিক হবে না। অতঃপর তারা আমাকে আমার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিল,


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করাে, নিঃসন্দেহে এটা তােমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা) 


        ইচ্ছা করলে আমি তাদের সাথে থাকতে পারি অথবা নিজ পরিবার পরিজনের কাছে চলে আসতে পারি। আমি ঘরে আসার ইচ্ছা করলাম। তখন ঐ জ্বিনেরা আমাকে মদীনায়ে মুনাওওয়ারায় زَادَهَا للّٰهُ شَرَافًا وَّتَعظِيمًا নিয়ে আসল। আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম  رضى الله تعالى عنه  তাদের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ঐ আনসারী সাহাবী  رضى الله تعالى عنه  বললেন: তারা লাওবিয়া (নামক সবজী) খেয়ে থাকে এবং ঐ সব বস্তু যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না (যেমন- بِسمِ اللّٰه পাঠ করা ব্যতীত খাওয়া খাদ্যদ্রব্যাদি) অতঃপর হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম  رضى الله تعالى عنه  তাদের পান করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বললেন: যদফ- (হায়াতুল হায়ওয়ানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা) যদফ দ্বারা হয়ত উদ্দেশ্য হবে ইয়েমনী ঘাস, যা বক্ষনকারীর পানি পানের প্রয়ােজন পড়েনা। অথবা, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পানি ইত্যাদীর ঐ বর্তন (পাত্র) যা ঢেকে রাখা হয় না। (আননিহায়া ফি গরীবিল হাদীস ওয়াল আছর, ১ম খন্ড, ২৪০ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


জ্বিন ও যাদু থেকে রক্ষার জন্যঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ ঘটনা থেকে কাফির জ্বিনদের বিভিন্ন খবর প্রকাশ পেল অর্থাৎ তারা লাওবিয়াও খায় এবং যেসব খাবার খাওয়ার সময় بِسمِ اللّٰه পাঠ করা হয় না তাও ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া পানাহারের বস্তু থাকা সত্ত্বেও যেসব বাসন (পাত্র) খােলা রাখা হয় তা থেকেও খেয়ে নেয়। এছাড়া এটাও জানা গেল, জ্বিনেরা মানুষকে অপহরণও করে নেয় আর এটা খুবই দুঃচিন্তার বিষয় যে, এদের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পার্থিব কোন অস্ত্র এমনকি মানব বাহিনীও ফলপ্রসু নয়। এর জন্য “মাদানী হাতিয়ার” প্রয়ােজন। দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান “মাকতাবাতুল মদীনার” এর পক্ষ থেকে মুদ্রিত ১৬ পৃষ্ঠার পকেট সাইজ রিসালা ৪০ রূহানী ইলাজ হতে চারটি মাদানী হাতিয়ার উপস্থাপন করছি।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল) 


(১) يَامُحيِى يَامُهَيمِنُ  ২৯ বার: (দিনের যে কোন সময়) প্রতিদিন পাঠকারী  انشاء اللّٰه عزّ وجل  প্রত্যেক বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকবে। 

(২) يَاوَکِيلُ ৭ বার: যে প্রতিদিন আসরের সময় পাঠ করে নেবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  প্রত্যেক বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবে। 

(৩) يَامُحيِى يَامُمِيتُ ৭ বার: প্রতিদিন পাঠ করে যে নিজের শরীরের উপর ফুঁক মেরে নেবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  তার উপর যাদু প্রভাব ফেলতে পারবে না। 

(৪) يَا قَادِرُ : যে ব্যক্তি ওযু করার সময় প্রতিটি অঙ্গ ধােয়ার সময় পাঠ করার অভ্যাস করে নেবে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  শত্রু (জিন ও মানব) তাকে অপহরণ করতে পারবে না। (ওযুতে প্রতিটি অঙ্গ ধােয়ার সময় দরূদ শরীফও পাঠ করুন। কারণ এটা মুস্তাহাব আর يَا قَادِرُ ও পাঠ করতে থাকুন) প্রত্যেকে আপন আপন পীর মুর্শিদের অনুমতিক্রমে (এসব থেকে) নিরাপদ থাকার ওয়াযীফাও পাঠ করতে থাকুন। 


জ্বিনের হত্যাও করে ফেলেঃ

     অনেক সময় মুসলমান জিনেরা পাপী মানুষকে শাস্তিও দিয়ে থাকে। যেমন- ইবনে আকীল “কিতাবুল ফুনূন” উল্লেখ করেন: আমাদের একটি ঘর ছিল। 


–––––––––––––

(আমীরে আহলে সুন্নাত دامت برکاتهم العاليه উর্দু ভাষায় শাজারায়ে কাদেরীয়া, রযবীয়া, আত্তারিয়া সংকলন করেছেন।) এতে নিরাপদ থাকার বিভিন্ন ওয়াযীফা দেয়া রয়েছে। এ শাজারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতে অনুবাদ করা হয়েছে। যেমন- এটি লেখার সময় পর্যন্ত আরবী, বাংলা, সিন্দি, হিন্দী, গুজরাটী, ইংরেজী, কেন ও ফ্রান্স ইত্যাদি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। আমীরে আহলে সুন্নাত دامت برکاتهم العاليه নিজের মুরীদ ও তালিবদেরকে এটা পাঠ করা সাধারণ অনুমতি প্রদান করেছেন। এ পকেট সাইজ শাজারা মাকতাবাতুল মদীনার প্রতিটি শাখা থেকে হাদিয়া প্রদান পূর্বক সংগ্রহ করতে পারেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব) 


   যে কেউ এটাতে থাকত এবং রাতে ঘুমাত তবে সকালে তার লাশই পাওয়া যেত! একদা একজন পশ্চিমা মুসলমান আসল আর সে এ ঘরটি পছন্দ করে কিনে নিল। সে সেখানে রাত কাটাল আর সকালে একেবারে ভাল ও জীবিত অবস্থায় ছিল। এতে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে গেল। ঐ ব্যক্তি ঐ ঘরে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করার পর কোথাও চলে যায়। যখন তার কাছে (এ ঘরে নিরাপদ থাকার কারণ) জিজ্ঞাসা করা হল তখন সে বলল: যখন আমি এ ঘরে রাত কাটাতাম তখনই ইশার নামাযের পর কুরআনে করীম তিলাওয়াত করতাম। একবার একজন রহস্যে ভরা যুবক কুয়া থেকে বের হয়ে আমাকে সালাম করল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সে বলতে লাগল, ভয় করবেন না, আমাকেও কিছু কুরআনে করীম শিক্ষা দিন। সুতরাং আমি তাকে কুরআনে করীম শিক্ষা দিতে লাগলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এ ঘরের ব্যাপারটা কি রকম? সে বলল: “আমি মুসলমান জিন।” আমি কুরআনে পাকও তিলাওয়াত করে থাকি আর নামাযও আদায় করি। এ ঘরে প্রায়ই অধিকাংশ শরাবী ও পাপী লােক থাকার জন্য এসেছে, তাই আমি তাদেরকে গলা টিপে হত্যা করেছি। আমি তাকে বললাম: রাতে আপনাকে ভয় লাগে, দয়া করে দিনে আসতে থাকুন। সে বলল: ঠিক আছে। সুতরাং সে দিনে কুয়া থেকে বাইরে আসত আর আমি তাকে পড়াতাম। একদা এমন হল যে, ঐ জিন আমার কাছে কুরআন শিখছিল। তখন এক আমিল ঐ মহল্লায় আসল আর ডাক দিয়ে বলছিল, “আমি সাপে দংশন, বদন্যর ও জ্বীন-পরীর আছরের জন্য ঝাড় ফুঁক দিয়ে থাকি।” ঐ জিন বলল: “এটা কে?” আমি বললাম: “এটা ঝাড়-ফুককারী।” জ্বিন বলল: “একে আমার কাছে ডেকে নিয়ে আসুন। অতএব আমি গেলাম আর তাকে ডেকে আনলাম। দেখতে না দেখতেই ঐ জ্বিন ছাদের উপর একবড় অজগরে রূপ নিল! ঐ আমিল দম করলে তারপর অজগরের রূপ নিল! তখন ঐ আসল ফুঁক মারল আর ঐ অজগরটি ছটফট করতে লাগল শেষ পর্যন্ত ঘরের মাষখানে ঐ আমিল (সাপ মনে করে) সেটাকে ধরে নিজের ঝুড়িতে আবদ্ধ করে ফেলল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


আমি তাকে নিষেধ করলে সে বলল: “এটা আমার শিকার এটা আমি নিয়ে যাব।” আমি তাকে একটি আশরাফী (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম তখন সে তা ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সে চলে যাওয়ার পর ঐ অজগরটি নড়াচড়া করে পূর্বের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। কিন্তু সে দূর্বল হয়ে পীতবর্ণ ধারণ করল! আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তােমার কী হয়েছে? ” জ্বিন জবাব দিল, “ঐ আমিল বরকতময় নাম সমূহ পাঠ করে ফুঁক দিয়েছে তাই আমার এ অবস্থা হয়েছে।” আমার জীবিত থাকার আর নেই। যখন আপনি কুয়াতে চিৎকারের আওয়াজ শুনবেন তখন এখান থেকে চলে যাবেন। ঐ পশ্চিমা মুসলমান বলল, আমি রাতে চিৎকারের আওয়াজ শুনলাম তখন আমি ঘর ছেড়ে দূরে চলে গেলাম। (লকতুল মারজান ফী আহকামিল জান, ১০৫ পৃষ্ঠা) 


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ কম্পন সৃষ্টিকারী ঘটনা থেকে এটা শিক্ষা পাওয়া গেল, অনেক সময় তামাসা করতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়। সম্ভবত ঐ জ্বিন অজগর সেজে ঐ আমিলকে এই ভাবে উপহাস করার চেষ্টা করেছিল যে, দেখে নেই সে কি করে? কিন্তু ঐ আমিল নিজের কাজে দক্ষ ছিল আর সে ‘আসমায়ে মােবারাকা পাঠ করে এমন ফুঁক মারল যে, ঐ বেচারা জ্বিনের বেঁচে থাকার আশাই রইলাে না। সুতরাং কাউকে দূর্বল মনে করে উপহাস করা উচিত নয়। এছাড়া জানা গেল, গুনাহের অমঙ্গলের কারণে দুনিয়াতেই বালা-মুসিবত আসতে পারে। যেভাবে ঐ জ্বিনাক্রান্ত ঘরে আগত শরাবী ও মন্দকর্মকারীদের জ্বিন গলা টিপে হত্যা করে ফেলত। এ থেকে ঘরে ফিল্ম, নাটক দর্শনকারী ও বিভিন্ন ধরণের গুনাহের মধ্যে ব্যস্ত ব্যক্তিদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। কেননা আবার যেন এমন না হয় যে, দুনিয়াতেই গুনাহের শাস্তি স্বরূপ কোন জ্বিন চেপে না বসে! এছাড়া এটাও জানা গেল, ইবাদত ও তিলাওয়াতের কারণে বালা-মুসিবত দূরীভূত হয়। যেরূপ ঐ রহস্যে ভরা ঘরের জ্বিন নামাজী ও তিলাওয়াত কারী মুসলমানদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিল। সুতরাং নিজের ঘরকে নামাজ, তিলাওয়াত ও নাত দ্বারা সাজিয়ে রাখুন। আর ফিল্ম, নাটক ও গান-বাজনার অমঙ্গল পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।” (মাতালিউল মুসাররাত) 


       انشاء اللّٰه عزّ وجل  কল্যাণই কল্যাণ হবে। গুনাহের অভ্যাস থেকে মুক্তিও ইবাদতের প্রশিক্ষণ লাভের জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসুলদের সাথে সফর করুন। আখিরাতের মহান সাওয়াবের সাথে সাথে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  দুনিয়াবী বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি লাভের উপায়ও হবে। 


আমার হারাম মজ্জার ব্যথা শেষ হয়ে গেলঃ

       যেমন- বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে, ২০০১ সালে আমার হারাম মজ্জায় ব্যথা চলে এসেছিল। যার কারণে আমি খুবই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসা করেছি কিন্তু কোন লাভ হল না। ডাক্তার বলেছেন: অপারেশন ছাড়া এ কষ্ট থেকে বাঁচার আর কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, অপারেশন অকৃতকার্যও হতে পারে। এক ইসলামী ভাইয়ের ইফিরাদী কৌশিশের কারণে সাহস করে ৩০ দিনের মাদানী কাফেলার মুসাফির হয়ে গেলাম। َََّاَلحَمدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَّجَل মাদানী কাফেলার বরকতে কোন অপারেশন ছাড়াই আমি সুস্থ হয়ে গেলাম।


গর কুয়ি মরজ হে তু মেরি আরয হে, 

পা-ও গে রাহাতে কাফিলে মে চলাে। দরদে সর হাে আগর ইয়া হাে দরদে কোমর,

পা-ওগে সিহাতে কাফিলে মে চলাে। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! মাদানী কাফেলার কতই না বরকত। এখানে এটা আর করব যে, এরূপ হওয়াটা আবশ্যক নয় যে, মাদানী কাফেলার মুসাফিরের রােগ ব্যাধি ও পেরেশানী সমূহ দূরীভূত হয়ে যাবে। এসব কিছু আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আপনারা সবাই জানেন যে, সুস্থতা লাভের নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও লােকেরা চিকিৎসার পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে, আর আরােগ্য লাভ না হওয়ার পরও কেউ চিকিৎসা বাদ দেয়না বরং উন্নত থেকে উন্নত চিকিৎসা করানাের পরও রােগী শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করে বসে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) 


      তবুও কেউ চিকিৎসার বিরােধিতা করে না। তাহলে যদি মাদানী কাফেলায়ও রােগ না সারে তবে শয়তানের কু-মন্ত্রনার শিকার না হওয়া উচিত। শুধুমাত্র দুনিয়াবী সমস্যার সমাধান পাওয়ার নিয়্যত করার পরিবর্তে মাদানী কাফেলায় ইলমে দ্বীন শিক্ষা ও আখিরাতের সাওয়াব অর্জনের নিয়্যতও করে নেয়া উচিত। আর এটাও মনে রাখবেন যে, আরােগ্য লাভ করাও রহমত, আবার রােগ-ব্যাধিও রহমত অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যম। আমাদের সর্বাবস্থায় ধৈর্য অবলম্বন করা উচিত। রােগ-ব্যাধি ও মুসিবতের অনেক ফযীলত রয়েছে আর সৌভাগ্যবান মুসলমান ধৈর্যধারণ করে প্রচুর সাওয়াব অর্জন করেন। যেমন-


যেমন আমি অন্ধ থাকতে চাই!

       হযরত সায়্যিদুনা আবু বছীর  رضى الله تعالى عنه  অন্ধ ছিলেন। তিনি বলেন: আমি একবার হযরত সায়্যিদুনা বাকের  رضى الله تعالى عنه  এর খিদমতে হাজির হলাম। তিনি  رضى الله تعالى عنه  আমার চেহারায় হাত বুলিয়ে দিলেন তখন আমার চোখগুলােতে দৃষ্টি চলে আসল। যখন পুনরায় হাত বুলিয়ে দিলেন তখন পুনরায় অন্ধ হয়ে গেলাম। তিনি  رضى الله تعالى عنه  আমাকে বললেন: “আপনি এ দু'টো বিষয় থেকে কোন বিষয়টি অবলম্বন করতে চান? 

(১) আপনার চোখগুলাে দৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে যাবে আর কিয়ামতের দিন আপনার কাছে দৃষ্টিশক্তির নেয়ামত ও অন্যান্য আমলের হিসাব নেয়া হবে। 

(২) আপনি অন্ধই থাকবেন আর বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ হবে। হযরত সায়্যিদুনা আবু বাছীর  رضى الله تعالى عنه  বলেন: “আমি আর‌য করলাম জান্নাতে হিসাব ছাড়া প্রবেশ করতে আমি অন্ধ থাকতে চাই।” (শাওয়াহিদুন নুবুওয়াত, ২৪১ পৃষ্ঠা হতে সংকলিত, মাকতাবাতুল হাকীকা, ইস্তাম্বুল, তুর্ক) 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে  انشاء اللّٰه عزّ وجل  স্মরণে এসে যাবে।” (সায়াদাতুদ দারাঈন) 


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! আল্লাহ্ নিজ মাকবুল বান্দাগণকে এরূপ উচ্চ মর্যাদা ও উৎকর্ষতা দান করেছেন, তাঁরা অন্ধকে দৃষ্টি শক্তিও দান করতে পারেন আর বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদও দিতে পারেন। আর এটাও জানা গেল, মুসিবতে ধৈর্যধারণ করাতে মহান প্রতিদান পাওয়া যায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়াতে ধৈর্যধারণকারীর জন্য স্বয়ং হাদীসে কুদসীর মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “আল্লাহ্ করেন: “যখন আমি আমার বান্দার চোখ (দৃষ্টিশক্তি) নিয়ে নেব আর সে ধৈর্যধারণ করে, তবে চোখের বিনিময়ে তাকে জান্নাত প্রদান করব।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৬পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৬৫৩) 

টুটে গাে সরপে কুহে বেলা সবর কর, 

আই মুসলমা! না তু ডাগমগা সবর কর। লবপে হরফে শিকায়াত না লা-সবর কর, কে ইয়েহি সুন্নাতে শাহে আবরার হে। 


صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد

تُوبُوا اِلَى اللّٰه! اَستَغفِرُ اللّٰه

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد

মুহারবমুল হারাম ১৪২৭ হিঃ


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম) 


اَلحَمدُ لِلّٰهِ رَبِّ العَالَمِين وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى سَيِّدِ المُرسَلِينَ اَمَّا بَعدُ  فَاَعُوذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ ؑ بِسمِ اللّٰهِ الرَّحمٰنِ الرَّحِيمِ ؑ


৯৯ টি ঘটনা


দরূদ শরীফের ফযীলতঃ

       তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যখন বৃহস্পতিবার দিন আসে, আল্লাহ্ তাআলা ফিরিশতাগণকে প্রেরণ করেন, যাঁদের নিকট রূপার কাগজ ও স্বর্ণের কলম থাকে। তাঁরা লিখেন, কে বৃহস্পতিবার দিন ও জুমার রাত (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদে পাক পাঠ করে।” (কানযুল উম্মাল, ১ম খন্ড, ২৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২১৭৪) 


(১) তিনটি পাখি

      হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক  رضى الله تعالى عنه  বলেন: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর দরবারে তিনটি পাখি হাদিয়া স্বরূপ পেশ করা হল। তখন হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم একটি পাখি নিজের বাঁদীকে খাওয়ার জন্য দান করলেন। দ্বিতীয় দিন বাঁদী সে পাখিটি নিয়ে এলাে। তখন রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তাকে ইরশাদ করলেন: আমি তাে তােমাকে নিষেধ করেছি যে, পরবর্তী দিনের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রেখােনা। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা পরবর্তী দিনের রিযিক দান করেন। (শুয়াবুল ঈমান, ২য় খন্ড, ১১৮ পৃষ্টা, হাদীস নং- ১৩৪৭)

       আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।” (আব্দুর রাজ্জাক) 


পরবর্তী দিনের জন্য জমা রাখাঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর খােদার উপর ভরসার অবস্থান নিশ্চয় সকলের উর্ধে ছিল। তিনি صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم নিজের জন্য পরবর্তী দিনের খাবার কখনাে সঞ্চয় করে রাখতেন না। হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم নিজের সম্পদের কখনাে যাকাত দেননি। এ কারণে যে, কখনাে সম্পদ জমা করেই রাখেননি। সে জন্য যাকাত ফরয হত না। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমূল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ٰعَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامছেলের গলায় ছুরি চালিয়ে দিলেন, হযরত আদহাম  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  নিজের ছেলে ইবরাহীমের জন্য দোয়া করলেন, “হে খােদা একে মৃত্যু দান করুন, কারণ একে চুমু দেয়ার কারণে কিছুটা সময় আমি তােমার থেকে উদাসীন হয়ে গেছি।” এসব ঐ সকল বুযুর্গদের জযবা ছিল। মূলত: “যে বস্তু বন্ধুর মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয় সেটা ছিড়ে ফেল।” হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  অত্যন্ত দুনিয়া বিমুখ সাহাবী ছিলেন। তাঁর আবেগের সত্যায়ণকারী হচ্ছে এ কবিতা


কু-ড়ি না রাখ্ কাফন কো, 

তিজ ঢাল মাল ও ধন কো।

জিছনে দিয়া হে তনকো,

দেগা উহি কাফন কো। 


      এটা মনে রাখবেন! হালাল সম্পদ জমা করা হারাম নয়। যেমন মুফতী সাহেব আরাে বলেন: ‘সম্পদ জমা রাখা, মৃত্যুর পর তা রেখে যাওয়া বৈধ, যদি তা থেকে যাকাত, ফিতরা, কতাওবানী ও বান্দার হক আদায় করা হয়ে থাকে।' (মিরআত, ৩য় খন্ড, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত)


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তাআলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আ'দী) 


(২) মৃত ছাগল মাথা নেড়ে উঠে গেলঃ

       হযরত সায়্যিদুনা কা'ব বিন মালিক  رضى الله تعالى عنه  বলেন: হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ  رضى الله تعالى عنه  খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর নিরাশ্রয়ের আশ্রয়স্থল দরবারে উপস্থিত হলে তাঁর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আলােকময় চেহারা মােবারককে পরিবর্তিত অবস্থায় পেলেন। এটা দেখে তখনই তিনি নিজের ঘরে গেলেন ও নিজের স্ত্রী  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  কে বললেন: আমি রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর সৌন্দর্যপূর্ণ চেহারা মােবারক পরিবর্তন অবস্থায় দেখেছি। আমার সন্দেহ হচ্ছে, ক্ষুধার কারণে এমনটা হয়েছে। তােমার কাছে কোন কিছু আছে কি? বললেন: “আল্লাহর কসম! এ ছাগল ও সামান্য পরিমাণ আটা ছাড়া আর কিছু নেই। তৎক্ষণাৎ ছাগলটি জবাই করে দিলেন আর বললেন: তাড়াতাড়ি মাংস ও রুটি প্রস্তুত কর। যখন খাবার তৈরী হয়ে গেল তখন একটি বড় পেয়ালায় নিয়ে রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর দরবারে উপস্থিত হলেন এবং খানা পেশ করলেন। তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হে জাবির! নিজ সম্প্রদায়কে একত্রিত কর।” আমি লােকদেরকে নিয়ে বরকতময় খিদমতে হাযির হলাম। ইরশাদ করলেন: “তাদেরকে আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত করে আমার নিকট পাঠাতে থাকো।” এভাবে তারা খেতে লাগল। যখন একদল পরিতৃপ্ত হয়ে যেত তখন তারা বের হয়ে যেত আর অন্যদল আসত। শেষ পর্যন্ত সবাই খেয়ে নিল আর পাত্রে যতটুকু খাবার আগে ছিল সকলে খাওয়ার পরও ততটুকু বিদ্যমান ছিল। আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “খাও আর হাড়িগুলাে ভেঙ্গো না।” অতঃপর রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم পাত্রের মাঝখানে হাড়গুলাে জমা করলেন আর সেগুলাের উপর নিজের মােবারক হাত রাখলেন এবং কিছু পড়লেন,


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।" (কানযুল উম্মাল)


যা আমি শুনিনি। সাথে সাথে যেটার মাংস খেয়েছিলাম ঐ ছাগলটিই হঠাৎ মাথা নেড়ে উঠে গেল! হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমাকে বললেন: নিজের ছাগল নিয়ে যাও!” আমি ছাগলটি আমার স্ত্রীর  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  নিকট নিয়ে আসলাম। সে (অবাক হয়ে) বলল: “এটা কি?” আমি বললাম: “আল্লাহর কসম! এটা আমাদের সে ছাগলটিই যেটা আমরা জবাই করেছিলাম। আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর দোয়ার বরকতে আল্লাহ্ তাআলা এটাকে জীবিত করে দিলেন! এটা শুনে তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  হঠাৎ বলে উঠলেন আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে , নিশ্চয় তিনি আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم।  (আল খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খন্ড, ১১২ পৃষ্ঠা) 


আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


(৩) মৃত মাদানী মুন্না (ছেলে) জীবিত হয়ে গেল!

       প্রসিদ্ধ আশিকে রাসুল হযরত আল্লামা আবদুর রহমান জামী  رضى الله تعالى عنه  বর্ণনা করেন, হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  নিজের মাদানী মুন্নাদের (ছােট্ট ছেলেদের) উপস্থিতিতে ছাগলটি জবাই করেছিলেন। যখন কাজ শেষ করে তিনি  رضى الله تعالى عنه  চলে গেলেন তখন ঐ দুজন মাদানী মুন্না ছুরি নিয়ে ছাদে চলে গেল। বড় ভাই ছােট ভাইকে বলল: এসাে আমীর তােমার সাথে ঐরূপ করব, যেমন আমাদের আব্বাজানা ঐ ছাগলটির সাথে করেছেন। সুতরাং বড় ভাই ছােট ভাইকে বাঁধল এবং কণ্ঠনালীতে ছুরি চালিয়ে দিল আর মাথা আলাদা করে হাতে তুলে নিল! যেমাত্র তাদের আম্মাজান  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  এ দৃশ্য দেখলেন, তার পিছু নিলে সে ভয়ে পালানাের সময় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করলেন। ঐ ধৈর্যশীলা মহিলা আহাজারি ও কোন ধরণের শাের-চিৎকার করলেন না, যেন আবার প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم পেরেশান হয়ে না যান ।



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।" (কানযুল উম্মাল) 


অত্যন্ত ধৈর্য ও শান্তভাবে দু’জনের ছােট্ট লাশগুলাে ভিতরে নিয়ে সেগুলাের উপর কাপড় টেনে দিলেন এবং কাউকে বললেন না। এমনকি হযরত জাবির  رضى الله تعالى عنه  কেও বললেন না। যদিও মনােবেদনায় অন্তর ভীষণ ব্যথিত ছিল, কিন্তু চেহারাকে স্বাভাবিক ও হাস্যোজ্জল রাখলেন এবং খাবার ইত্যাদি রান্না করলেন। সরকারে মদীনা, মিঠে মুস্তফা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم তাশরীফ আনলেন এবং হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর সামনে খাবার পেশ করা হল। এ সময় জিব্রাঈল আমীন عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام উপস্থিত হয়ে আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন, জাবিরকে বলুন নিজের ছেলেদেরকে আনতে, যাতে তারা আপনার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সাথে খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  কে ইরশাদ করলেন: “তােমার ছেলেদেরকে আন!” তিনি সাথে সাথে বাইরে এলেন এবং স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন: “ছেলেরা কোথায়?” তিনি বললেন: নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর খিদমতে আরয করুন যে, তারা উপস্থিত নেই।” প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “আল্লাহ্ তাআলার ফরমান এসেছে যে, তাদের তাড়াতাড়ি ডাক! শােকাহত স্ত্রী কাঁদতে লাগলেন বললেন: “হে জাবির! এখন আমি তাদেরকে আনতে পারব না। হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  বললেন: “আসলে কি হল?” কাঁদছেন কেন? স্ত্রী তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সব ঘটনা বললেন এবং কাপড় উঠিয়ে মাদানী মুন্নাদের দেখালেন। তখন তিনিও কাঁদতে লাগলেন। কারণ তিনি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ব্যাস, হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  দুই জনের ছােট্ট ছােট্ট লাশগুলােকে নিয়ে ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর কদমে রেখে দিলেন। ঐ সময় ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর) 


আল্লাহ্ তাআলা জিব্রাঈলে আমীন عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام কে প্রেরণ করলেন আর বললেন: “হে জিব্রাইল! আমার মাহবুব صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কে বল, আল্লাহ্ রব্বুল ইজ্জত ইরশাদ করেছেন: “হে প্রিয় হাবীব! আপনি দোয়া করুন, আমি এদেরকে জীবিত করে দেব।” নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم দোয়া করলেন আর আল্লাহর নির্দেশে উভয় মাদানী মুন্না তৎক্ষণাৎ জীবিত হয়ে গেল। (শাওয়াহিদুন্ নুবুওয়াত, পৃষ্ঠা ১০৫, মাদারিজুন্নবুওওয়াত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯) 

     আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 


কলবে মুরদা কো মেরে আবতাে জ্বিলাদো আ-কা

জামে উলফত কা মুঝে আপনি পিলাদো আ-কা

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর কেমন শান যে, সামান্য পরিমাণ খাবার অনেক মানুষ খেয়ে নিল তারপরও তাতে কোন প্রকার কমতি হল না। আর এরপর ছাগলের মাংসের অবশিষ্ট হাড়ে মাংস চামড়া পরিধান করে হুবহু ঐ ছাগলই মাথা নেড়ে দাঁড়িয়ে গেল। এছাড়া হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضى الله تعالى عنه  এর মৃত্যুবরণকারী মাদানী মুন্নাদেরকে (ছেলেদেরকে) আল্লাহর ইচ্ছায় জীবিত করে দিলেন। 


মুরদোকো জ্বিলাতে হে রাউতােকো হাসাতে হে, 

আ-লাম মিঠাতে হে বিগড়ি বানাতে হে। ছারকার খিলাতে হে, সরকার পিলাতে হে, 

সুলতানাে গাদা ছব কো ছরকার নিভাতে হে। 


(৪) সাতটি খেজুরঃ

      হযরত সায়্যিদুনা ইরবাজ বিন সারিয়া  رضى الله تعالى عنه  বলেন: তাবুক যুদ্ধের রাতে খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم হযরত সায়্যিদুনা বিলাল  رضى الله تعالى عنه  কে ইরশাদ করলেন: হে বিলাল! তােমার নিকট খাওয়ার কিছু আছে?


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ) 


হযরত সায়্যিদুনা বিলাল  رضى الله تعالى عنه  আরয করলেন: “হুযুর! আপনার প্রতিপালকের শপথ! আমরাতাে আমাদের খাদ্যের থলে খালি করে বসেছি। রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم বললেন: ভালভাবে দেখাে, নিজের খাদ্যের থলে ঝেড়ে নাও, হয়তাে কিছু বের হবে। (সে সময় আমরা তিনজন ছিলাম) সবাই নিজ নিজ খাদ্যের থলে ঝাড়লে মােট ৭টি খেজুর বেরিয়ে আসল। তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সেগুলােকে একটি পৃষ্ঠার উপর রেখে সেগুলাের উপর আপন মােবারক হাত রাখলেন এবং ইরশাদ করলেন: بِسمِ اللّٰه পড়ে খাও।” আমরা তিনজন মাহবুবে খােদা, রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর বরকতময় হাতের নীচ থেকে উঠিয়ে খুব ভালভাবে খেলাম। হযরত সায়্যিদুনা বিলাল  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি বীচিগুলাে বাম হাতে রাখছিলাম। যখন আমি পরিতৃপ্ত হয়ে সেগুলাে গণনা করলাম তখন ৫৪টি ছিল! এভাবে ঐ দু'জন সাহাবীও  رضى الله تعالى عنه  পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। যখন আমরা খাবার থেকে হাত উঠিয়ে নিলাম তখন আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ও আপন বরকতময় হাত উঠিয়ে নিলেন। ঐ সাতটি খেজুর আগের মত বিদ্যমান ছিল। মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হে বিলাল! এগুলাে হিফাযতে রেখাে এবং এগুলাে থেকে কেউ খাবে না, পরবর্তিতে কাজে আসবে।” বিলাল  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমরা এগুলাে খায়নি। যখন পরবর্তী দিন এলাে এবং খাওয়ার সময় হল তখন সরকারে নামদার প্রিয় রাসুল, রাসুলে মাকবুল, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ঐ সাতটি খেজুরই আনার জন্য ইরশাদ করলেন। হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم পুনরায় আগের মত সেগুলাের উপর হাত মােবারক রাখলেন আর বললেন: بِسمِ اللّٰه পড়ে খাও।” এবার আমরা দশজন ছিলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেলাম।


রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।" (তাবারানী) 


নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আপন রহমতের হাত উঠালে তখন ৭টি খেজুরই হুবহু বিদ্যমান ছিল। নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم বললেন: “হে বিলাল! যদি আমার আল্লাহ্ তাআলার প্রতি লজ্জা না হতাে তবে মদীনা ফিরে যাওয়া পর্যন্ত এ সাতটি খেজুর থেকেই খেতাম। অতঃপর সরকারে মদীনা প্রিয় মুস্তফা صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ঐ খেজুরগুলাে একটি ছেলেকে দান করে দিলেন। সে ওগুলাে খেয়ে চলে গেল। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা) 


      আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! আল্লাহ্ তা'আলা হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم কে কিরূপ বিশাল ক্ষমতা দান করেছেন। সাতটি খেজুরে কি ধরণের বরকত হল যে, অনেক সাহাবায়ে কিরাম ُعَلَيهِمُ الرِّضوَان থেকে পেট ভরে খেলেন। 


মালিকে কওনাইন হে গাে পাছ কুছ রাখতে নেহি, 

দো জাহা কী নেয়ামতে হে উন কে খালী হাত মে। 


(৫) আমি প্রতিদিন দুইটি ফিল্ম দেখতামঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন, দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন।  الحمد للّٰه عزّ وجل  দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ অসংখ্য মানুষের ভাগ্যে মাদানী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। যেমন আত্তারাবাদ বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশের এক ইসলামী ভাই তার নিজের ঘটনা অনেকটা এরূপ লিখেছেন। আমি খুব বেশি গুনাহের মধ্যে ডুবে থাকতাম। প্রায় প্রতিদিন দু'টি ফ্লিম দেখতাম। সর্বদা নিজের সাথে রেডিও রাখতাম। একটি বিক্রি করে আরেকটা কিনতাম। রাতে শােয়ার সময়ও শিয়রে রেডিও চালু করে রাখতাম। রেডিও শুনতে শুনতে যখন আমার ঘুম এসে যেত তখন আমার আম্মীজান উঠে এসে রেডিও বন্ধ করে দিতেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


       সম্ভবত ১৪১৬ হিজরী ছিল, আমি আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে হায়দ্রাবাদ গিয়েছিলাম। সে আমাকে দাওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় ‘ফয়যানে মদীনা' নিয়ে গেল। বাবুল মদীনা করাচী থেকে আপনার (অর্থাৎ সঙ্গে মদীনার ُعُفِىَ عَنه) টেলিফোনের মাধ্যমে বয়ান শুনলাম। শুনতেই আমার জীবনে মাদানী পরিবর্তন এসে গেল। খােদার ভয়ে কেঁদে কেঁদে গুনাহ থেকে তাওবা করলাম এবং দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। আত্তারাবাদে দা'ওয়াতে ইসলামীর এক আশিকে রাসুল ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে আমাকে এক মুষ্টি পরিমাণ দাঁড়ি রাখালেন। 


মাইতাে না-দানা তা দা-নিস্তা ভী কিয়া কিয়া না কিয়া,

লাজ রাখলি মেরে লাজপাল নে বুছওয়া না কিয়া।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


(৬) সামান্য খাবারে বরকতঃ

      হযরত সায়্যিদুনা সুহাইব  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর জন্য সামান্য পরিমাণ খাবার রান্না করলাম এবং তাঁকে দাওয়াত দেয়ার জন্য হাযির হলাম। তখন হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরাম عَلَيهِمُ الرِّضوَان এর সাথে উপবিষ্ট ছিলেন। লজ্জায় আমি কিছু বলতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم আমার দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে ইশারায় খাওয়ার জন্য আসার আবেদন জানালাম। বললেন: “আর এরা?” আমি আরয করলাম: “না।” নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم নিশ্চুপ হয়ে গেলেন আর আমি ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم পুনরায় আমার দিকে দৃষ্টি দিলেন। আমি পুনরায় আগের মত ইশরায় আরয করলাম।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ভুলে গেল, সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে গেল।” (তাবারানী) 


       বললেন: “এরা?” (অর্থাৎ হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم অন্যদেরকে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলছেন) আমি বললাম: “না।” দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বারের জবাবে আমি আরয করলাম: “খুব ভাল” অর্থাৎ- এদেরকেও নিয়ে চলুন। আর সাথে এটাও বলে দিলাম যে, আপনার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم জন্যই শুধুমাত্র সামান্য পরিমাণ খাবার রান্না করেছি। খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ঐ সকল সাহাবায়ে কিরাম عَلَيهِمُ الرِّضوَان কে সাথে নিয়ে আসলেন। সবাই ভালভাবে খেলেন। তবুও খাবার অবশিষ্ট রয়ে গেল। (আল খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৮২ পৃষ্ঠা) 


      আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর প্রশংসিত গুণাবলী নিশ্চয় বরকত অবতীর্ণের মাধ্যম। আর তাঁর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم সেদকায় আমাদের উপর সর্বদা রহমত বর্ষিত হচ্ছে। খাবার কম হওয়ার কারণে শুধুমাত্র তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইযযত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর দাওয়াত ছিল কিন্তু রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুযনিবীন, রাসুলে আমীন, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর বরকতে সামান্য খাবারও অনেক সাহাবায়ে কিরাম عَلَيهِمُ الرِّضوَان এর জন্য শুধু যথেষ্ট হল না বরং অবশিষ্ট থেকে গেল। 


ইয়ে সুন কর সাখী আ-পকা আস্তানা,

হে দামন পাসারে হুয়ে সব যামানা। 

নাওয়াসো কা সদকা নিগাহে কারাম হাে, 

তেরে দর পে তেরে গদা আগায়ে হে। 


 الحمد للّٰه عزّ وجل  আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর মহান শান ও তাঁর থেকে প্রকাশ পাওয়া মু'জিযা সমূহের কথা কি বলব! মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর গােলামদের নিকট থেকেও মহান কারামত সমূহ প্রকাশ পায়। যেমন-



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম শরীফ) 


(৭) জশনে বিলাদতের তাবাররুকের মধ্যে বরকতঃ

        মুরাদাবাদ (ভারত) -এ একজন আশিকে রাসুল প্রতি বৎসর রবিউন নূর শরীফে অতি ধূমধামের সাথে নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর জশনে বিলাদত পালন করতেন আর বিশাল আকারে মীলাদ মাহফিলের আয়ােজন করতেন। সরকারে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  এর খলীফা ‘খাযাইনুল ইরফানের' প্রণেতা হযরত সদরুল আফাযিল আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  তাতে বিশেষভাবে আগমন করতেন। একবার মীলাদ মাহফিলে অনেক বেশি লােকের সমাগম হল। মাহফিল শেষে নিয়মানুসারে এক পােয়া করে (প্রায় ২৫০ গ্রাম) লাড়ু বন্টন করা শুরু হল। কিন্তু তা অর্ধেকের মত কম পড়ল। মাহফিল আয়ােজনকারী ভয় পেয়ে হযরত সাদরুল আফাযিল  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  এর কারামত সম্পন্ন দরবারে এই ঘটনা আরয করল। তিনি  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  নিজের রুমাল বের করে দিলেন ও বললেন: “লাডুর পাত্রের উপর এটা বিছিয়ে দিন” আর বিশেষভাবে জোর দিয়ে বললেন: “তাবাররুক যেন রুমালের নীচ থেকে বের করে করে বন্টন করা হয়, এবং পাত্র খুলে যেন দেখা না হয়।” সুতরাং প্রচুর লাড়ু বন্টন করা হল এবং প্রত্যেকেই লাড়ু পেল। শেষে যখন পাত্র খােলা হল, তখন দেখা গেল, রুমাল আচ্ছাদিত করার সময় পাত্রে যে পরিমাণ লাড়ু ছিল এখনও সে পরিমাণ মওজুদ রয়েছে। (তারীখে ইসলাম কী আযীম শখসিয়াত সদরুল আফাযিল, ৩৪৩ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) 


       আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।


চা-হে তাে ইশারাে ছে আপনে কায়াহি পলটদে দুনিয়া কি,

ইয়ে শান হে খিদমত গারাে কি সরদার কা আলম কিয়া হােগা।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর অধিক হারে দরূদে পাক পাঠ করাে, নিঃসন্দেহে এটা তােমাদের জন্য পবিত্রতা।” (আবু ইয়ালা)


 (৮) পিতার উপর থেকে আযাব উঠে গেলঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভাল ভাল নিয়্যত সহকারে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ব্যক্তিরা اَلحَمدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَّجَل উভয় জগতের কল্যাণের অধিকারী হয়ে যায়। এক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনার সারাংশ হল: আমি ঈদের পরের দিন আশিকানে রাসুলদের সাথে মাদানী কাফেলায় সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করি। এরই মধ্যে মরহুম পিতা যিনি ইন্তিকাল করেছেন দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমার স্বপ্নের মাঝে খুব ভাল অবস্থায় আগমন করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “আব্বু! ইন্তিকালের পর কি অবস্থায় আছেন?” বললেন: “কিছুদিন ধরে গুনাহের শাস্তি ভােগ করি কিন্তু এখন আযাব উঠে গেছে। তুমি দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ কখনাে ত্যাগ করাে না, কারণ এর বরকতে আমার উপর দয়া হয়েছে। 


        আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


      প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তা'আলার রহমত সত্যিই অনেক বড়। নেককার সন্তান সদকায়ে জারিয়া হয়ে থাকে আর তাদের দোয়ার ওসীলায় মৃত্যুবরণকারী মাতা-পিতার উপর বিশেষ দয়া হয়ে যায়। সন্তানকে পূণ্যবান হিসেবে গড়ার জন্য দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ একটি উত্তম মাধ্যম। 


হে ইসলামী ভাই সভী ভাই ভাই,

হে বে-হদ মুহাব্বত ভরা মাদানী মাহল। 

ইহা সুন্নাতে শিখনে কো মিলে গি, 

দিলায়েগা খওফে খােদা মাদানী মহল।

নবী কি মুহাব্বত মে রােনেকা আন্দায,

তুম আ-যাও শিখলায়েগা মাদানী মহল।



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি সেই হবে, যে দুনিয়ায় আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পড়েছে।” (তিরমিযী ও কানযুল উম্মাল) 


(৯) ৩০০ মানুষ শুয়াের হয়ে গেলঃ

      হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর আপাদমস্তক মর্যাদাপূর্ণ দরবারে হাওয়ারীগণ (তাঁর সাথীগণ) আরয করলেন যে, আপনার প্রতিপালক (কি) আপনার দোয়াতে এ দয়াটুকু করবেন যে, আমাদের কাছে আসমান থেকে নেয়ামত সমূহে ভরা গায়েবী দস্তরখানা অবতীর্ণ হবে? এ কথায় হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: “এ ধরণের চাওয়া চেয়াে না। আল্লাহকে ভয় কর। ইচ্ছামত মুজিযা দেখতে চেয়াে না। যদি তােমরা মুমিন হও তবে এসব থেকে বিরত থাকো।” প্রতিউত্তরে আরয করলেন: “হুযুর! আমাদের এ আবেদন আপনার عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام নবুয়ত কিংবা রব তাআলার পরিপূর্ণ কুদরতে কোন প্রকার সন্দেহের ভিত্তিতে নয় বরং এটার চারটি উদ্দেশ্য রয়েছে: 

(১) প্রথমত, আমরা ঐ গায়বী খাবার খাব, বরকত লাভ করব, তাতে আমাদের অন্তর আলােকিত হয়ে যাবে। আমাদের আল্লাহর নৈকট্য আরাে অধিক অর্জিত হবে। 

(২) দ্বিতীয়ত, আপনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام আমাদের সাথে ওয়াদা করে বলেছেন: তােমরা মকবুলুদ দোয়া, রব্বে তাআলা তােমাদের কথা শুনেন, এই কথাটির উপর দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের অর্জিত হবে, আমাদের অন্তর প্রশান্ত হয়ে যাবে। আমাদের পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারে সান্ত্বনা লাভ হবে। 

(৩) তৃতীয়ত এর , আপনার عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام সত্য হওয়ার ব্যাপারটি যেন চাক্ষুস ভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়। 

(৪) চতুর্থত, আমরা এ আসমানী মুজিযা লক্ষ্য করে নেব এবং অন্যদের জন্য আমরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে যাব। এছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য আমাদের এ ঘটনা ঈমান সতেজতার করার মাধ্যম হবে। আমরা আপনার চিরস্থায়ী সাক্ষী হয়ে যাব।



রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল না তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত তারগীব ওয়াত তারহীব) 


      হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও প্রসিদ্ধ মুফাসসিরগণের  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বক্তব্য এযে, যখন হাওয়ারীগণ হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام কে সব দিক থেকে আশ্বস্ত করলেন যে, আমরা এ (খাবার) দস্তরখানা শুধুমাত্র আনন্দ উদ্দীপনা উপভােগের জন্য চাচ্ছি না বরং এতে আমাদের দ্বীনি উদ্দেশ্য রয়েছে। তখন হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام চটের পােষাক পরিধান করলেন এবং কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন:


اللّٰہُمَّ رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “হে আল্লাহ! হে প্রতিপালক! আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য খাঞ্চা' অবতরণ করুন, যা আমাদের জন্য ঈদ (আনন্দ-উৎসব) হবে আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য এবং আপনারই নিকট এবং আমাদেরকে রিযিকদান করুন, আর আপনিইতাে সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।” (পারা- ৭, সূরা মায়েদা, আয়াত- ১১৪)


       তাঁরা সবাই এটা অবতীর্ণ হওয়ার সময় দেখছিলেন যে, লাল বর্ণের দস্তরখানা মেঘের সাথে মিশে ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল। শেষ পর্যন্ত মানুষের মাঝখানে রাখা হল। হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এ দস্তরখানাটি দেখে অনেক কাঁদলেন ও দোয়া করলেন: “মাওলা! আমাকে কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত করাে। ইলাহী! এটা এ সকল হাওয়ারীদের জন্য রহমত বানাও, আযাব বানিওনা।” হাওয়ারীগণ এটা থেকে এমন সুগন্ধ অনুভব করলেন, যা এর আগে কখনাে অনুভব করেন নি। হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ও হাওয়ারীগণ শুকরিয়ার সিজদায় পড়ে গেলেন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “তােমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদে পাক পড়, কেননা তােমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।” (তাবারানী) 


হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: “এটা কে খুলবে? এ দস্তরখানা লাল গিলাফে আচ্ছাদিত ছিল। সকলে আর্য করলেন: “হুযুর! আপনিই খুলুন। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام পুনরায় তাজা ওযু করলেন, নফল নামায পড়লেন, দীর্ঘক্ষণ দোয়া করলেন অতঃপর দস্তরখানা থেকে গিলাফ সরালেন। তাতে এসব বস্তু ছিল; সাতটি মাছ, সাতটি রুটি, এসব মাছের উপর আঁশ ছিল না, ভেতরে কাঁটা ছিল না। তা থেকে তেল ঝরছিল, ওগুলাের মাথার অগ্রভাগে সিরকা, লেজের দিকে লবণ, আশে-পাশে সবজী ছিল। কিছু বর্ণনায় রয়েছে, পাঁচটি রুটি ছিল। একটি রুটিতে যায়ন, অন্যটিতে মধু, তৃতীয়টিতে ঘি, চতুর্থটিতে মাখন, পঞ্চমটিতে ভুনা মাংস ছিল। শামউন নামক হাওয়ারী জিজ্ঞাসা করলেন: “হে রূহুল্লাহ! এ খাবার জান্নাতের নাকি জমিনের?” বললেন: “না জমিনের, না জান্নাতের” এটা কেবল কুদরতী।” প্রথমে অসুস্থ, ফকীর, ক্ষুধার্ত, কুষ্ঠরােগী ও পঙ্গুদেরকে ডাকা হল। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: بِسمِ اللّٰه পড়ে খাও, (এটা) তােমাদের জন্য বরকতময় আর অস্বীকারকারীদের জন্য মুসিবত (স্বরূপ)।” এরপর অন্যদেরকেও তিনি এরূপ বললেন। সুতরাং প্রথম দিন সাত হাজার তিনশত জন খেল। অতঃপর ঐ দস্তরখানা উঠে গেল। লােকেরা দেখতে লাগল। উড়ে তাদের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। সকল রােগী, মুসিবতগ্রস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে গেল, ফকীরেরা ধনী হয়ে গেল। এরপর এ দস্তরখানা ধারাবাহিকভাবে ৪০ দিন অথবা ১ দিন পর ১ দিন আসতে থাকে। লােকেরা খেতে বসল। অতঃপর হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর নিকট ওহী আসল যে, এখন এটা থেকে শুধুমাত্র ফকীর, গরীবেরা খাবে, কোন ধনী যেন না খায়। যখন এ ঘােষণা দেয়া হল তখন ধনীরা অসন্তুষ্ট হল আর বলল, এটা শুধু জাদু! এসব অস্বীকারকারীরা ৩০০ জন ছিল। এসব লােকেরা রাতে নিজের সন্তান সন্ততিসহ ভালভাবে ঘুমাল কিন্তু সকালে যখন উঠল তখন শুকর হয়ে গিয়েছিল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: "প্রতিটি উদ্দেশ্য সম্বলিত কাজ, যা দরূদ শরীফ ও যিকির ছাড়াই আরম্ভ করা হয়, তা বরকত ও মঙ্গল শূণ্য হয়ে থাকে।” (মাতালিউল মুসাররাত) 


রাস্তায় এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছিল, ময়লা, পায়খানা খাচ্ছিল। যখন লােকেরা তাদের এ অবস্থা দেখল তখন হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর কাছে গেল। অনেক কান্নাকাটি করল। এ শুকরগুলােও তাঁর চতুর্পাশ্বে একত্রিত হল আর কাঁদতে লাগল। হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام তাদেরকে নাম ধরে ডাকতেন আর তারা জবাবে মাথা নাড়ত কিন্তু কথা বলতে পারত না। তিনদিন পর্যন্ত সীমাহীন অপমান নিয়ে বেঁচে রইল। চতুর্থদিন সবাই ধ্বংস হয়ে গেল। এদের মধ্যে কোন বাচ্চা ও মহিলা ছিল না সবাই পুরুষ ছিল। যত জাতিকে দুনিয়াতে বিকৃত করা হয়েছে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের বংশ পরম্পরা অগ্রসর হয়নি, এটা কুদরতের কানুন। (তফসীরে কবীর, ৪র্থ খন্ড, ৪৬৩ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত) তিরমিযী শরীফের হাদীসে রয়েছে: মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “আসমান থেকে রুটি ও মাংসের দস্তরখানা অবতীর্ণ করা হল আর নির্দেশ দেয়া গেল, খিয়ানত করবে না, পরবর্তী দিনের জন্য সঞ্চয় করে রাখবে না। কিন্তু তারা খিয়ানত করল, আর পরবর্তী দিনের জন্য জমাও করল, তাই তাদেরকে বানর ও শুকরের আকৃতি করে দেয়া হল।” (জামি তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩০৭২) তাদেরকে তাগিদ করা হয়েছিল যে, এ দস্তরখানা থেকে পরবর্তী দিনের জন্য সঞ্চয় করে লুকিয়ে রাখবে না। কিছু লােক পরবর্তী দিনের জন্য সঞ্চয় করলে তাদেরকে শুকর বানিয়ে দেয়া হয়। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন আমর  رضى الله تعالى عنه  ইরশাদ করেছেন: দস্তরখানা ওয়ালা ঈসায়ী, ফিরআউনী লােক ও মুনাফিকদের কিয়ামতের দিন কঠিন আযাব হবে। (আদ দুররুল মনসূর, ৩য় খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা) 


শুয়ােরের নাম নিলে কি ওযু ভেঙ্গে যায়? 

        প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর মর্যাদা শান আপনারা দেখলেনতাে! তাঁর দোয়ায় আল্লাহ্ নেয়ামতপূর্ণ দস্তরখানা অবতীর্ণ করে দিলেন। দুনিয়াতে যাই নেয়ামত পাওয়া যায় সাধারণত এগুলাের মাঝে কষ্টও থাকে।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করব।” (আল কওলুল বদী) 


নেয়ামতের শােকর আদায়কারী তারা সফলকাম ও নেয়ামতের (খাবার) অস্বীকারকারীরা অকৃতকার্য হয়ে যায়। নেয়ামতের আধিক্য দেখে নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তিদের কর্মের পরিণতি অপমান ও অপদস্ততা হয়ে থাকে। যেমনটা এ কুরআনী ঘটনা থেকে জানা গেল, ৩০০ জন নাফরমান শুকরের আকৃতিতে বিকৃত হয়ে গেল। এবং তিনদিন পর্যন্ত এদিক-সেদিক ধাক্কা খেতে থাকে আর চতুর্থ দিন অপমান জনক অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হল। আমরা আল্লাহর ক্রোধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অনেকের এ ধারণা রয়েছে, “শুকরের নাম নেয়াতে মুখ অপবিত্র হয়ে যায় ও তাতে অযু ভেঙ্গে যায়! এটা একেবারে ভুল ধারণা। শুকর শব্দ কুরআনে করীমেও বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং এ শব্দ মুখে নেয়াতে মুখ অপবিত্র হয় না এবং অযুও ভেঙ্গে যায় না।” 


(১০) তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?

        হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর সামনে এক ব্যক্তি আরয করল, “ইয়া রূহুল্লাহ্! আমি আপনার বরকতপূর্ণ সংস্পর্শে থেকে আপনার খিদমত করতে ও শরীয়াতের জ্ঞান অর্জন করতে চাই।” তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام তাকে অনুমতি দিলেন। চলতে চলতে যখন উভয়ে একটি নদীর কিনারায় পৌঁছলেন তখন তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: “এসাে খাবার খেয়ে নিই।” তাঁর عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর নিকট তিনটি রুটি ছিল। একটি করে রুটি উভয়ে খেয়ে নিলেন, যখন হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام নদী থেকে পানি পান করছিলেন তখন ঐ ব্যক্তি তৃতীয় রুটিটি লুকিয়ে ফেলল। যখন তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام পানি পান করে ফিরে আসলেন তখন রুটি পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: “তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে মিথ্যা বলল: “আমি জানিনা।” তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام নীরব রইলেন, একটু পরে বললেন: “এসাে, আগে চলি।” রাস্তায় একটি হরিণী দেখা গেল যেটার সাথে দুইটি বাচ্চাও ছিল। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام হরিণীর একটি বাচ্চাকে নিজের কাছে ডাকলে সেটা এসে গেল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমরা কোন কিছু ভুলে যাও, তবে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়াে (E( স্মরণে এসে যাবে।” (সায়াদাতুদ দারাঈন) 


তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام সেটা জবাই করে ভুনা করে উভয়ে খেলেন। মাংস খাওয়ার পর তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام হাড়গুলাে একত্রিত করে বললেন: “قُم بِإِذنِ اللّٰه (আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশে জীবিত হয়ে উঠে যাও) হরিণীর বাচ্চাটি জীবিত হয়ে তার মায়ের সাথে চলে গেল। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ঐ ব্যক্তিকে বললেন: “তােমাকে ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি আমাকে এ মুজিযা দেখানাের শক্তি দান করেছেন। সত্যি করে বল, “তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে বলল: “আমি জানিনা।” বললেন: “এসাে আগে চলি।” চলতে চলতে একটি সমুদ্রের নিকট পৌঁছে বসে গেলেন। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ঐ ব্যক্তির হাতে ধরে পানির উপর হেঁটে সমুদ্রের ওপারে পৌঁছে গেলেন। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ঐ ব্যক্তিকে বললেন: “তােমাকে ঐ খােদার শপথ! যিনি আমাকে এ মুজিযা দেখানাের শক্তি দান করেছেন। সত্যি করে বল যে, ঐ তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে বলল: “আমি জানিনা।” তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: “এসাে আগে চলি।” যেতে যেতে এক মরুভূমিতে পৌঁছলেন। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বালুর একটি স্তুপ তৈরী করলেন আর বললেন: “হে বালুর স্তুপ! আল্লাহর নির্দেশে স্বর্ণ হয়ে যাও।” তা সাথে সাথে স্বর্ণে পরিণত হল। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام সেটাকে তিন ভাগ করার পর বললেন: “এক একভাগ আমার ও একভাগ তােমার এবং এক ভাগ তার যে ঐ তৃতীয় রুটিটি নিয়েছে।” একথা শুনতেই ঐ ব্যক্তি বলে উঠল, “ইয়া রূহুল্লাহ! ঐ তৃতীয় রুটিটি আমিই নিয়েছি। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: “এসব স্বর্ণ তুমিই নিয়ে নাও। অতঃপর তাকে ত্যাগ করে সামনে অগ্রসর হলেন। ঐ ব্যক্তি স্বর্ণ চাদরে মুড়িয়ে একাকী রওয়ানা হয়ে গেল। রাস্তায় তার সাথে দু’জন লােকের সাক্ষাৎ হল। তারা যখন তার কাছে স্বর্ণ দেখল, তখন তাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত হল যাতে স্বর্ণ নিয়ে নিতে পারে। ঐ ব্যক্তি প্রাণ রক্ষার জন্য বলল: “তােমরা আমাকে হত্যা কেন করবে! (চলাে) আমরা এ স্বর্ণগুলাে তিনভাগ করে নিই এবং এক ভাগ করে বন্টন করে নিই। ঐ দু'জন এ কথায় রাজী হয়ে গেল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হােক, যার নিকট আমার আলােচনা হল আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না।” (হাকিম) 


ঐ ব্যক্তি বলল: এটা ঠিক হবে যে, আমাদের একজন সামান্য স্বর্ণ নিয়ে নিকটস্থ শহরে গিয়ে খাবার কিনে আনবে যাতে পানাহার করে স্বর্ণ বন্টন করে নেব। সুতরাং তাদের একজন শহরে গেল। খাবার কিনে ফেরার সময় সে ভাবল, এটা ঠিক হবে যে, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেব, যাতে তারা দু'জন খেয়ে মরে যাবে। আর সম্পূর্ণ স্বর্ণ আমিই পেয়ে যাব। এটা ভেবে সে বিষ কিনে খাবারের সাথে মিশিয়ে দিল। ওদিকে ঐ দু’জনও এ ষড়যন্ত্র করল যে, যেমাত্র সে খাবার নিয়ে আসবে আমরা উভয়ে মিলে তাকে মেরে ফেলব। তারপর সম্পূর্ণ স্বর্ণ অর্ধেক করে ভাগ করে নেব। সুতরাং যখন ঐ ব্যক্তি খাবার নিয়ে পৌঁছল। তখন তারা উভয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং তাকে মেরে ফেলল। এরপর আনন্দিত হয়ে খাওয়ার জন্য বসলে বিষ নিজের কাজ শুরু করল আর এরা দু'জনও অস্থির হয়ে মরে গেল আর স্বর্ণ সেভাবেই পড়ে রইল। এরপর হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রূহুল্লাহ্ عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ফিরে আসার সময় কিছু লােক তাঁর সাথে ছিল। তিনি عَلى نَبِيِّنَا وَعَلَيهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام স্বর্ণ ও লাশ তিনটির দিকে ইশারা করে সাথীদের বললেন: “দেখাে দুনিয়ার এ অবস্থা, সুতরাং তােমাদের জন্য আবশ্যক যে, এটা থেকে বেঁচে থেকো। (ইত্তেহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৩৫) 


      প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! সম্পদের ভালবাসা কিভাবে ফাঁদ তৈরী করে, গুনাহের প্রতি উৎসাহ দেয়, দরজায় দরজায় ঘুরায়, লুটতরাজ করায়, এমনকি লাশও ফেলায়, কিন্তু তা করাে হাতে আসে না আর এলেও ভীষণ কষ্ট দেয় এবং ভীষণভাবে কাঁদায়। সুতরাং আমাদের বুযুর্গানের দ্বীন ُرَحِمَهُم اللّٰهُ تَعَالىٰ ধন-সম্পদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতেন। 


সম্পদের তিরষ্কারে বুযুর্গদের বাণীঃ     

       হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন:


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যার নিকট আমার আলােচনা হল এবং সে আমার উপর দরূদ শরীফ পড়ল না, সে জুলুম করল।” (আব্দুর রাজ্জাক) 


(১) হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: খােদার শপথ! যে ব্যক্তি দিরহামের (অর্থাৎ- সম্পদের) সম্মান করে, আল্লাহ্ রব্বুল ইযযত তাকে অপমানিত করে। 

(২) বর্ণিত আছে, সর্বপ্রথম দিরহাম ও দীনার তৈরী হলে শয়তান সেগুলােকে তুলে নিজের কপালে রাখে, অতঃপর সেগুলােকে চুম্বন করে বলল: যে এগুলােকে ভালবাসবে, সে আমার গােলাম। আল্লাহর পানাহ! 

(৩) হযরত সায়্যিদুনা সামীত বিন আজলান  رضى الله تعالى عنه  বলেন: “দিরহাম ও দীনার (মাল, দৌলত) হচ্ছে মুনাফিকদের লাগাম। এগুলাের মাধ্যমে তাদেরকে দোযখের দিকে টানা হবে।” 

(৪) হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া বিন মুআয  رضى الله تعالى عنه  বলেন: দিরহাম (অথবা টাকা) হল বিচ্ছু। যদি তুমি এটার বিষ নামানাের নিয়ম না জানাে তবে এটাকে ধরাে না, কারণ যদি এটা দংশন করে বসে তাহলে এটার বিষ তােমাকে ধ্বংস করে দেবে। আরয করা হল, এটার বিষ নামানাের পদ্ধতি কি? বললেন:“ হালাল পন্থায় অর্জন করা এবং এটার ওয়াজিব হকগুলাে আদায় করা। 

(৫) হযরত সায়্যিদুনা আলা বিন যিয়াদ  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  বলেন: দুনিয়া খুব সাজ সজ্জা করে আমার সামনে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে এলাে। আমি বললাম: “আমি তােমার অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্ তাআলার নিকট আশ্রয় চাই।” সেটা বলল: “যদি আপনি আমার কাছ থেকে নিরাপদ থাকতে চান, তবে দিরহাম ও দীনার (টাকা-পয়সাকে) ঘৃণা করুন। কেননা দিরহাম ও দীনার (টাকা-পয়সা) ঐ বস্তু, যেগুলাের মাধ্যমে মানুষ প্রত্যেক প্রকারের দুনিয়াবী বস্তু অর্জন করে। সুতরাং যে এ দুইটি (অর্থাৎ- দিরহাম ও দিনার) থেকে সবর করবে অর্থাৎ দূরে থাকবে সে দুনিয়া থেকেও সবর করেনিবে। সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী  رحمة اللّٰه تعالىٰ عليه  আরাে আরবী কবিতা উদ্ধৃত করেছেন, এগুলাের অনুবাদ হচ্ছে, “আমিতাে এ রহস্য পেয়ে গেছি।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করাে, আল্লাহ তা'আলা তােমাদের উপর রহমত নাযিল করবেন।” (ইবনে আ’দী) 


       সুতরাং তুমি এছাড়া আর কিছু ধারণা করাে না এবং এটা মনে করাে না যে, তাকওয়া এ দিরহামের নিকট রয়েছে। তাই যখন তুমি এ (সম্পদ) এর উপর শক্তিমান হওয়া সত্ত্বেও এটা ত্যাগ করবে তখন জেনে রেখাে যে, তােমার তাকওয়া হচ্ছে একজন মুসলমানের তাকওয়া। কোন মানুষের জামায় তালি বা গােড়ালির উপর সেলােয়ার অথবা তার কপাল, যাতে (সিজদার) চিহ্ন রয়েছে, তা দেখে ধোকা খেয়ে না বরং এটা দেখাে যে ঐ ব্যক্তি ধন-দৌলতকে ভালবাসে নাকি তা থেকে দূরে থাকে।” (ইহইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা)


হুব্বে দুনিয়া ছে তু বাঁচা ইয়া রব!

আপনা শায়দা মুঝে বানা ইয়া রব! 


(১১) মাদানী মাহবুব ﷺ এর বাবরী চুলের কয়েদীঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! اَلحَمدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَّجَلَّ কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের বরকতে বড় বড় চোর-ডাকাতদের সঠিক পথে চলে আসার অনেক ঘটনা শুনা যায়। দাওয়াতে ইসলামীর বিশাল কর্মকান্ড সুন্দর ও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দেশে ও শহরে বিভিন্ন ধরণের মজলিস গঠন করা হয়। তার মধ্যে মজলিসে রাবেতা বিল উলামা ওয়াল মাশায়িখ’ও রয়েছে, যা অসংখ্য উলামায়ে কিরাম দ্বারা গঠিত। এ মজলিসের একজন ইসলামী ভাই প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন জামিয়া রশিদিয়্যা (পীরজোগুঠ, বাবুল ইসলাম, সিন্ধু) গেলেন। আলােচনা প্রসঙ্গে জেল খানায় দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের কথা শুরু হলে সেখানকার শায়খুল হাদীস সাহেব এরকম বলতে লাগলেন যে, জেলখানার মাদানী কর্মকান্ডের দীপ্তিময় মাদানী ফলাফল আমি নিজেই আপনাকে শুনাচ্ছি। পীরজোগুঠ অঞ্চলে এক ডাকাত ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। তাকে আমি চিনতাম। প্রতিনিয়ত পুলিশের সাথে তার কানামাছি খেলা চলত। অনেকবার গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু তদবীর করে ছাড়া পেয়ে যায়। অবশেষে কোন এক অপরাধের শাস্তি স্বরূপ বাবুল মদীনা, করাচীর পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। শাস্তি হল এবং জেল খানায় চলে গেল।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন ২০০ বার দরূদ শরীফ পড়ে, তার ২০০ শত বৎসরের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে।” (কানযুল উম্মাল) 


শাস্তি ভােগ করে ছাড়া পাওয়ার পর আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসল। আমি প্রথমে তাকে চিনতে পারিনি। কারণ আমি তাকে দাঁড়ি শেভ করা ও খােলা মাথায় দেখেছিলাম। কিন্তু এখনকার চেহারায় প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর ভালবাসার চিহ্ন নূরানী দাঁড়ি ঝলমল করছিল। মাথায় সবুজ পাগড়ী শরীফের তাজ নিজের বাহার দেখাচ্ছিল। কপালে নামাযের নূর আলাদাভাবে দৃষ্টিগােচর হচ্ছিল। আমার অবাক হওয়া দেখে সে বলল: বন্দীবস্থায় জেলখানার ভেতর اَلحَمدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَّجَلَّ আমি দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ পেয়ে যাই। আর আশিকানে রাসুলদের ইফিরাদী কৌশিশের বরকতে আমার গুনাহের শৃংখলগুলাে কেটে দিয়ে নিজেকে মাদানী মাহবুব صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর বাবরী চুলের কয়েদী বানিয়ে দিলাম। 


রহমতাে ওয়ালে নবীকে গীত গা-তাহে মে, 

গুম্বদে খাজরা কে নাজারাে মে খাে যা-তা হাে মে। 

জাও তাে জাও কাহা মে কিস কা ডুভাে আসেরা, লাজ ওয়ালে লাজ রাখনা তেরা কেহলাতা হাে মে।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد



(১২) হাতে ফোস্কা পড়ে গেলঃ

       হযরত সায়্যিদুনা সুওয়াইদ বিন গাফলা  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি আমীরুল মুমিনীন হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর মর্যাদাপূর্ণ খিদমতে রাজধানী কুফায় উপস্থিত হলাম। তাঁর  رضى الله تعالى عنه  নিকট জব শরীফের রুটি ও এক পেয়ালা দুধ রাখা ছিল। রুটি শুকনাে ও এমন শক্ত ছিল যে, কখনাে নিজের হাতে ও কখনাে হাঁটুর উপর রেখে ভাঙ্গতেন। এটা দেখে আমি তাঁর  رضى الله تعالى عنه  বাঁদী ফিদ্দা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  কে বললাম: তার প্রতি আপনার দয়া হয় না? দেখুননা রুটির উপর ভূসি লেগে আছে! তাঁর জন্য জব শরীফ চালান দিয়ে চেলে নরম রুটি তৈরী করবেন, যাতে ভাঙ্গতে কষ্ট না হয়।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার উপর দরূদ শরীফ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব।” (কানযুল উম্মাল) 


        ফিদ্দা  رضى اللّٰه تعالىٰ عنها  বললেন: আমীরুল মুমিনীন  رضى الله تعالى عنه  আমাদেরকে ওয়াদা করিয়েছেন যে, তাঁর জন্য কখনাে যেন জব শরীফ পরিস্কার করে (রুটি) তৈরী করা না হয়। এরই মধ্যে আমীরুল মুমিনীন  رضى الله تعالى عنه  আমার প্রতি লক্ষ্য করলেন আর বললেন: “হে ইবনে গাফলা! আপনি এ বাঁদীকে কি বলছিলেন?” আমি যা কিছু বলেছিলাম তা বললাম ও আবেদন জানালাম, “হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আপনার প্রতি দয়া করুন এবং এ কষ্ট করবেন না।” তখন তিনি  رضى الله تعالى عنه  বললেন: “হে ইবনে গাফলা! তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ও তাঁর পরিবার-পরিজন কখনাে পূর্ণ তিন দিন গমের রুটি পেট ভরে আহার করেন নি এবং কখনাে হুযুর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর জন্যও আটা পরিস্কার করে (রুটি) তৈরী করা হতাে না। একদা মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে زَادَهَا للّٰهُ شَرَفًا وَّتَعظِيمَا এ ক্ষুধা আমাকে খুবই কষ্ট দিল। তখন আমি শ্রমিক হিসেবে উপার্জন করার জন্য বের হলাম। দেখলাম, এক মহিলা মাটির ঢিলা জমা করে সেগুলাে ভেজাতে চাচ্ছিলেন। আমি তার কাছে প্রতি বালতি পানির বিনিময়ে একটি করে খেজুর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করলাম এবং ষােল বালতি ঢেলে ঐ মাটিগুলাে ভিজিয়ে দিলাম। এমনকি আমার হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। অতঃপর ঐ খেজুর নিয়ে আমি খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم এর সামনে হাজির হয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম; তখন হুযুর পুরনূর صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم ও তা থেকে কিছু খেজুর আহার করলেন। (সফীনায়ে নূহ, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা) 


      আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমার প্রতি অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ কর, নিশ্চয় আমার প্রতি তােমাদের দরূদ শরীফ পাঠ, তােমাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত স্বরূপ।” (জামে সগীর) 


(১৩) অন্তর নরম করার মাধ্যমঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমীরুল মুমিনীন, হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর সরলতার প্রতি আমাদের প্রাণ উৎসর্গ হােক। এমন এমন কষ্ট সহ্য করার পরও মুখে কখনাে অভিযােগ করেন নি। খাবারের সাথে সাথে তাঁর পােষাকও সীমাহীন সাধা-সিধে ছিল। একবার তাঁর  رضى الله تعالى عنه  সামনে আরয করা হল, “আপনি আপনার জামায় তালি কেন লাগান?” বললেন-

يَخشَعُ القَلبُ وَيَقتَدِى بِهِ المُؤمِنُ

     অর্থাৎ- এতে মন নরম থাকে আর মুমিন ব্যক্তি এটার অনুসরণ করে। (অর্থাৎ- মুমিনের অন্তর নরমই হওয়া উচিত) 

(হিলিয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب! صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَلىٰ مُحَمَّد


(১৪) জুতা সেলাই করছিলেনঃ

        হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস  رضى الله تعالى عنه  বলেন: আমি একদিন আমীরুল মুমিনীন হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর বরকতময় খিদমতে হাযির হলাম, দেখলাম তিনি  رضى الله تعالى عنه  নিজ জোতা মােবারকে জোড়া লাগাচ্ছিলেন। আমি আশ্চর্য হলে তিনি বললেন: রাসুলুল্লাহ্ صَلَّى اللّٰهُ تَعَالَىٰ عَليهِ وَسَلَّم নিজের দুই জুতা শরীফ এবং পােশাক মােবারকের মধ্যে তালি লাগাতেন এবং ছাওয়ারীতে নিজের পিছনে অন্যকেও বসাতেন। (সফীনায়ে নুহ, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা) 


        আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 


কেহদে কু-ই ঘীরা হায় বালা-ও নে হাসন কো,

আয় শেরে খােদা বাহরে মদদ তীগে বকফ্ জা।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।" (মাজমাউয যাওয়ায়েদ) 


(১৫) সুস্বাদু ফালুদাঃ

       আমীরুল মুমিনীন হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর বরকতময় খিদমতে একবার সুস্বাদু ফালুদা পেশ করা হলে বললেন: “এটার সুগন্ধ, রং ও স্বাদ কতইনা উত্তম?” এটা আমি পছন্দ করি না যে, নিজের নফসকে এমন বস্তুর অভ্যস্ত করব, যার অভ্যাস তার নেই। (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১২৩, হাদীস নং- ২৪৭) 


       আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক। 


নেয়ামত যেমন হিসাবও তেমনঃ

       প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমীরুল মুমিনীন হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর নফস দমনের সাধনাকে মারহাবা! আহ্! যদি এমন হত! আমরাও প্রচন্ড গরমে নফসের দাবীতে আইচক্রীম কিংবা ফালুদা খাওয়ার সময় ও ঠান্ডা পানীয় পান করার সময় আমীরুল মুমিনীন হযরত শেরে খােদা আলী  رضى الله تعالى عنه  এর এ ঈমান তাজাকারী ঘটনাকে কখনাে কখনাে স্মরণ করে নিতাম। মনে রাখবেন! নফসকে যতটুকু আরাম আয়েশে অভ্যস্ত করা হয় সেটা ততটুকু দুষ্ট ও আরাম প্রিয় হয়ে যায়। দেখুন! যখন ফ্যান আবিস্কার হয়নি, তখনও মানুষ জীবন চালিয়ে যেত আর এখন অনেকের এয়ার কন্ডিশন রুমে শােয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাদের এখন গরমে এসি ছাড়া ঘুম আসতে কষ্ট হয়। এভাবে যে উত্তম ও সুস্বাদু এবং গরম গরম খাবার খেতে অভ্যস্ত, সাধারণ খাবার দেখে তাদের “মুড অফ” (মন খারাপ হয়ে যায়। বরং হঠাৎ কখনও কোন সময় ঘরে তাদের ইচ্ছার বিপরীত খাবার দেয়া হলে বকবক করে, ঝগড়া-বিবাদ করে, স্ত্রীর সাথে এমনকি নিজের মায়ের সাথে পর্যন্ত ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে যায় আর এভাবে মনে কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের কবীরা গুনাহ করে বসে। যদি আপনি কখনাে এ ধরণের ভুল করে থাকেন তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে, তাওবা করে নিন এবং যার যার মনে কষ্ট দিয়েছেন তার থেকে ক্ষমাও চেয়ে নিন।


রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরূদ শরীফ লিখে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকবে।” (তাবারানী) 


অন্যথায় আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হলে মৃত্যুর পর খুবই আফসােস করতে হবে। মনে রাখবেন! দুনিয়ায় নেয়ামত যত উত্তম হবে কিয়ামতের দিন সেটার হিসাবও তত বেশি হবে। আখিরাতের হিসাবের ব্যাপারে উত্তমের হিসাব নিজ নিজ পছন্দের নিরিখে হবে। যেমন- যে ভাতের পরিবর্তে রুটি বেশি পছন্দ করে তার জন্য ভাতের বিপরীতে রুটি বড় নেয়ামত, আর সেহিসাবে তার থেকে রুটির হিসাব বেশি হবে আর যে ভাত বেশি পছন্দ হবে তার জন্য রুটির পরিবর্তে ভাতের হিসাব অধিক হবে। وَعَلىٰ هٰذَا القِيَاس (অর্থাৎ- আর এটা দিয়ে প্রতিটি বস্তুকে অনুমান করে নিন) আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: 


ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ﴿۸﴾ 

    কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর নিশ্চয় অবশ্যই সেদিন তােমাদেরকে নেয়ামত সমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (পারা- ৩০, সূরা তাকাসুর, আয়াত- ৮) 





Top