❏ যে যতটুকু আমল করবে ততটুকুই পাবে! ইহার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: পবিত্র কোরআনে আছে: لَيْسَ لِلْإِنْسانِ إِلاَّ مَا سَعى মানুষের জন্য অন্য কিছুই নেই তবে যা সে অর্জন করে। (সূরা নাজম: ৩৯ নং আয়াত)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, কেউ সওয়াব রেছানী করলে মৃত ব্যক্তির কোন লাভ হবেনা।
উত্তর: আপনার উক্ত আয়াতের যা বুঝছেন এই আয়াতে তা বলেনি। উক্ত আয়াতেلِلْإِنْسانِ এর لام টি মূলধন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ সওয়াব রেছানী করুক আর নাই করুক এতে মৃত ব্যক্তির অর্জিত মূল আমলের কমতি হবেনা। সর্বোপরি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এই আয়াত হচ্ছে ‘মানছুখ’ বা রহিত। যেমনঃ
𓈃 হাফিজুল হাদিস ও মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
وَقَالَ عِكْرِمَةُ: كَانَ ذَلِكَ لِقَوْمِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى-
“হযরত ইকরিমা (رضي الله عنه) বলেন: ইহা হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) ও হযরত মূসা (عليه السلام) এর শরিয়তের জন্য প্রযোজ্য ছিল, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য প্রযোজ্য নয়।”
(ইমাম বাগভী: তাফছিরে মায়ালিমুত্তানজিল, ৫ম খন্ড, ১৫৮ পৃ:)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ -
𓈃 “যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী। আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দিব।”
(সূরা তুর: ২১ নং আয়াত)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দ্বারা আপনাদের উল্লেখিত আয়াতকে রহিত করা হয়েছে। যেমন
𓈃 বিভিন্ন তাফছিরের কিতাবে বর্ণিত আছে, রইছুল মুফাচ্ছেরীন ও ফকিহ্ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন,
رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهَا مَنْسُوخَةٌ بِقَوْلِهِ تَعَالَى: وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন: এই আয়াত মানছুখ বা রহিত হয়েছে আল্লাহ তা’লার এই বাণী দ্বারা,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمانٍ أَلْحَقْنا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ
-“যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী। আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দিব।”
(তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খন্ড, ১০২ পৃ: তাফছিরে কুরতবী, ১৭তম জি: ৯০ পৃ: তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ২১৩ পৃ: তাফছিরে রুহুল মাআনী, ২৭তম জি: ৮৭ পৃ: তাফছিরে মায়ালেমুত্তানজিল, ৫ম খন্ড, ১৫৮ পৃ:)
𓈃 ইমাম আবু জাফর ইবনে জারির তাবারী (رحمة الله) ওফাত ৩১০ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:
وَذُكِرَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَالَ: هَذِهِ الْآيَةُ مَنْسُوخَةٌ -“ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন: এই আয়াত মানছুখ বা রহিত।” (তাফছিরে তাবারী, ২২তম খন্ড, ৮০ পৃ:)
𓈃 ইমাম আবু জাফর তাবারী (رحمة الله) সনদসহ এভাবে উল্লেখ করেছেন,
)أخرج أَبُو دَاوُد والنحاس كِلَاهُمَا فِي النَّاسِخ وَابْن جرير وَابْن الْمُنْذر وَابْن مرْدَوَيْه (حَدَّثَنِي عَلِيٌّ قَالَ: ثَنَا أَبُو صَالِحٍ قَالَ: ثَنِي مُعَاوِيَةُ، عَنْ عَلِيٍّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَوْلَهُ {وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى} قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ بَعْدَ هَذَا (وَالَّذِينَ آمَنُوا وَأَتْبَعْنَاهُمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ) فَأَدْخَلَ الْأَبْنَاءَ بِصَلَاحِ الْآبَاءِ الْجَنَّةَ
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, মহান আল্লাহ তা’লার বাণী: {وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى} তিনি বলেনে, অত:পর আল্লাহ তা’লা এই আয়াত নাজিল করেন:
(وَالَّذِينَ آمَنُوا وَأَتْبَعْنَاهُمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّاتِهِمْ)
(সূরা তূর: ২১)
ফলে পিতার বদান্যতায় সন্তানগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ
(তাফছিরে তাবারী, ২২তম খন্ড, ৮০ পৃ: তাফছিরে দুর্বে মানছুর, ৭ম খন্ড, ৬৬২ পৃ: ইমাম বায়হাক্বী: আল এ’তেকাদ, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃ:)
সুতরাং এই আয়াত হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام) ও হযরত মূসা (عليه السلام) এর শরিয়তের জন্য প্রযোজ্য ছিল, উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ইহা প্রযোজ্য নয়। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এই আয়াত মানছুখ বা রহিত। তাই মানছুখ বা রহিত আয়াত দ্বারা দলিল দেওয়া মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। অতএব, একজন মু’মীনের নেক আমলের উছিলায় (সওয়াব রেছানীর মাধ্যমে।) আরেকজন মু’মীন উপকৃত হবে।