تَذْكِرةُ النُّفُوْسُ الْقُدْسِيَّه فِى سَلَاسِلِ أَوْلِيَاء الله 

তায্কেরাতুন্ নুফুছুল কুদসিয়া ফি সালাসিলে আউলিয়া আল্লাহ [সিলসিলাভূক্ত পুণ্যাত্মা অলিগণের জীবন চরিত্র]

 [প্রথম খন্ড]

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

প্রকাশনায় :

আন্জুমানে কাদেরীয়া চিশ্তীয়া আজিজিয়া, বাংলাদেশ।

টেক্সট রেডীঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

অনুবাদ :

শাহজাদা আলহাজ্ব আল্লামা আবুল ফছিহ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন

মুহাদ্দিস: ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল মাদ্রাসা 


প্রকাশনা সহযোগীতায় : এম. এম. মহিউদ্দীন

নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক আল্-মুবীন 


প্রকাশকাল :

মে -২০১৪ ইংরেজী


হাদিয়া :

১৮০ (একশত আশি) টাকা মাত্র।


লেখক কর্তৃক সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত


প্রচ্ছদ :

জান্নাতুল বক্বী শরীফ, মদিনা মোনোয়ারা




  সূচীক্রম 


*** বিষয় পৃষ্ঠা


অনুবাদকের

ভূমিকা

তাসাউফ ও সূফী সংক্রান্ত আলোচনা

প্রশ্ন/অভিযোগ 

উত্তর

আফজালুল আউলিয়া

অর্থাৎ ছাহাবায়ে কেরামদের বেলায়ত প্রকৃত পক্ষে মোস্তফা (ﷺ) এর কামালিয়তের বহি প্রকাশ

ছাহাবায়ে কেরামদের সংখ্যা 

আফজালুল আউলিয়ার সংজ্ঞা এবং কাদের কে বলা হয়

আশ্রায়ে মুবাশ্শেরাহ

কারামাত এর সংজ্ঞা বা বর্ণনা

মুজেজা ও কারামত

মুজেজা আবশ্যক কারামত আবশ্যক নয়

আউলিয়ায়ে কেরাম থেকে ছোট বড় অন্তত একশত প্রকারের কারামত প্রকাশ পায়

হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (رضي الله عنه) এর কারামাত

১০ খাওয়ার মধ্যে অসাধারন বরকত  

১১ সেই মেহমানদের বর্ণনা

১২ মায়ের পেটে (মায়ের গর্ভে) কি সন্তান তা আগেই বলে দেওয়া  

১৩ অত্র হাদিস থেকে অবগত ও উপকারীতা

১৪ অন্তরদৃষ্টির তথা নজরিয়ার মাধ্যমে কারামত

১৫ কায়ছারের রুমের দুর্গ কালিমায়ে তৈয়্যবার আওয়াজে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়া

১৬ রক্তের মধ্যে প্রস্রাব করার বিষয়ে অবগত

১৭ সালাম দিয়ে দরজা খুলে যাওয়া

১৮ দাফনের ব্যাপারে গায়বী তথা অদৃশ্য আওয়াজ আসা

ছিদ্দিকে আকবর (رحمة الله) এর কাশফ ও ফেরাছতের মাধ্যমে ভবিষ্যত অবগত

হযরত সৈয়দুনা ওমর বিন খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু)

কারামাত

কবরবাসিদের সাথে কথোপকথন করা

মদিনা শরীফ থেকে আওয়াজ নাহাওয়ান্দ পর্যন্ত পৌঁছা

নদীর নামে চিঠি দেওয়া

চাদর দেখেই আগুন নিভে যাওয়া  

বেত্রপ্রহারে ভূমি কম্পন বন্ধ হয়ে যাওয়া

দূরবর্তী আওয়াজে উত্তর প্রদান

দুটি অদৃশ্য বাঘ প্রকাশ হওয়া

এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়

কবর শরীফের মধ্যে তার শরীর মোবারক অক্ষত থাকার প্রমান

তিনি মুখে যা বলেছেন তা বাস্তবে: রবিয়া বিন উমাইয়া বিন খলিফ

মানুষের তাক্দিরে কি লেখা আছে তা জেনে যাওয়া

ওনার দোয়া কবুল হওয়ার বর্ণনাা


৩য় খলিফা মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলভিষিক্ত হযরত সৈয়্যদুনা ওসমান গনি (رضي الله عنه)


তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর কারামত ব্যভিচারকারীকে চক্ষু দেখেই চিনতে পারা  

উল্লেখিত কারামত কোরআনের আয়াত থেকেও প্রমাণিত

বেয়াদবীর কারণে এক ব্যক্তির হাতের মধ্যে ক্যান্সার রোগ হওয়া

অশালীন কার্য ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মের শাস্তি

স্বপ্নের মাধ্যমে পানি পান করে তৃপ্তি গ্রহণ করা

নিজ দাফনের ব্যাপারটি পূর্বে ইঙ্গিত দেওয়া

উপকারিতা

তার শাহাদাতের পরে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসা

দাফনের সময় ফেরেস্তাদের উপস্থিতি ও ভীড় লক্ষ্য করা

হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর উপর বেয়াদবিকারীকে পশুর মুখে টুকরা টুকরা করে ফেলা

চতুর্থ খলিফা হযরত আলী মর্তুজা (رضي الله عنه)

কারামত

কবরবাসীদের সাথে প্রশ্ন ও উত্তর করা   

কে কোথায় মৃত্যু বরণ করবেন এবং কোথায় দাফন করা হবে তা পুর্বে অবগত করে দেওয়া  

হযরত আলী মর্তুদা (رضي الله عنه) নিজ ওফাত কখন হবে তা বর্ণনা করে দেওয়া

কর্তন হওয়া হাত পূনরাই জোড়া লাগীয়ে দেওয়া

মহিলার স্বামী নিজ সন্তান প্রমাণ হয়ে ওনার দরবার থেকে বাহির হওয়া

অল্প সময়ে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত সমাপ্ত করা

এক ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা  

তার ইঙ্গিতে সমুদ্রের উত্থাল বন্ধ হওয়া

এক গোয়েন্দা লোক সাথে থেকে গোয়েন্দা করা, তারপর তাঁর বদদোয়াতে অন্ধ হয়ে যাওয়া

তার দোয়ার বরকতে পক্ষাঘাত রোগী ভাল হয়ে যাওয়া

পড়ে যাওয়া দেয়াল থেমে যাওয়া

তাকে মিথ্যূক বলায় একটি লোক অন্ধ হয়ে গেল

ফেরেশতাগণ তার ঘরের চতুর্দিক সারাক্ষন চাক্কি চালানো

পাথর উঠাতে গিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া ও এক পাদ্রীর ইসলাম গ্রহন

হযরত তালহা বিন ওবাইদুলাহ (رضي الله عنه)  

তার ইসলাম কবুল করার ঘটনা

কারামত

এক কবর থেকে অন্য কবরে নিরাপদে দাফন হওয়া

হযরত জোবায়ের ইবনে আউয়াম (رضي الله عنه)

গঠনাকৃতি

ইসলাম গ্রহন

কারামত

কারামত ওয়ালা বর্শা

হযরত জোবায়ের (رضي الله عنه) এর আকৃতিতে হযরত জিব্রাঈল (আলাইহিছ সাল্লাম) বদর যুদ্ধের দিন প্রকাশ হওয়া  

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه) জন্ম ও তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ও তাঁর অবস্থান

করামাত

হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর খেলাফত

সম্পদশালীদের মধ্যে প্রথমে জান্নাতে প্রবেশকারী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه)

মায়ের পেট থেকে পূণ্যবান হওয়া

হযরত সাআদ বিন আবী ওয়াক্কাছ (رضي الله عنه)  

সাহাবাদের দুশমনদের পরিণাম

বেয়াদবের জিহবাহ কেটে যাওয়া

একজন মেয়ের চেহরা পিঠের দিকে ফিরে যাওয়া

একজন খারেজী বেয়াদবের ধ্বংস হওয়া

ষাট (৬০) হাজারের একটি ফৌজ দরিয়া পার হয়ে যাওয়া

রোগাক্রান্ত এক ব্যক্তির বয়স দীর্ঘ হয়ে যাওয়া

হযরত সাঈদ বীন যায়েদ (رضي الله عنه)  

গঠনাকৃতি, বয়স ও মৃত্যু

কারামত

কুপ কবরে পরিনত হওয়া

হযরত সৈয়্যদুনা আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (رضي الله عنه)  

তাঁর (رضي الله عنه) নাম, উপনাম, উপাধি ও ইসলাম গ্রহন  

কারামত

অতুলনীয় একটি আশ্চর্যপূর্ণ মাছপ্রাপ্ত হওয়া

সায়্যিদুনা হযরত আমির হামজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু

কারামত

ফেরেস্তারা তাকে গোসল দেয়া

মাসআলা

কবর শরীফের ভিতর থেকে সালামের জবাব দেওয়া

কবরের মধ্য থেকে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসা

হযরত সায়্যিদুনা আব্বাস ((رضي الله عنه))

কারামাত

তাঁর উসিলায় বৃষ্টি অবতীর্ণ হওয়া  

হযরত সৈয়্যদুনা জা’ফর তৈয়্যার (رضي الله عنه)

কারামাত

তাঁর লক্বব জুলজানাহাইন

হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (رضي الله عنه)

নাম, জন্ম ও বংশধারা  

ইসলাম গ্রহণ ও জীবনের অন্যান্য ঘটনাবলী  

ইলমে হাদীসে তাঁহার অবদান  

ইন্তেকাল 

হযরত সৈয়্যদুনা সা’দ ইবনে মু’য়ায (رضي الله عنه)

তাঁর শাহাদাতের ঘটনা

কারামত

তাঁর জানাযায় ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) ফেরেশতা উপস্থিত হওয়া

কবরের মাটি মেশ্ক (খুশবু) তে পরিণত হওয়া  

ফেরেশতাগণের উপস্থিতিতে তাবু পরিপূর্ণ হওয়া

হযরত মা‘আয ইবনে জাবাল (رضي الله عنه)

নাম ও বংশধারা  

ইসলাম গ্রহণ ও তাঁহার রাজনৈতিক জীবন  

ইলমে হাদীসে তাঁহার অবদান  

ইন্তেকাল 

হযরত সৈয়্যদুনা ইমাম মুহাম্মদ (رضي الله عنه)

নাম, কুনিয়াত ও জন্ম

হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه)

নাম ও বংশধারা  

ইলমে হাদীসে তাঁহার অবদান

হযরত ওয়ায়েস কারণী (رضي الله عنه)

ওয়ায়েস কারণী (رضي الله عنه)-এর সন্ধান লাভ  

ওয়ায়েস কারণী (رضي الله عنه)-এর সামনে হযরত ওমর (رضي الله عنه)-এর খেলাফত তুচ্ছ মনে হল 

ইবনে জামান ও ওয়ায়েস কারণী (رضي الله عنه):  

ওয়ায়েস কারণী (رضي الله عنه)-এর জীবন চর্চা  

তাঁর ওফাতঃ  

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)-এর আধ্যাত্মিক জীবন শুরু  

ঈমানের শক্তি ও সাহসিকতা:  

নিজের সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধারণার আরো একটি নমুনা

তিনটি অমূল্য উপদেশ

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)-এর কারামত

অন্তরে কলুষ কামনার ফল

প্রতিবেশী শামাউনের ইসলাম গ্রহণ

সাহাবী ও সাধারণ মানুষ  

একজনের একটি প্রশ্ন  

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)-এর ইন্তেকাল 

হযরত ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه)

ইমাম আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) কাজীর পদ গ্রহণ করলেন না

ইমাম আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর ইন্তেকাল  



অনুবাদকের কথা


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি উভয় জাহানের পালনকর্তা এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম প্রেরণ করছি সৈয়্যদুল আন্বিয়া রাহ্মাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মোজতাবা (ﷺ)’র প্রতি এবং তাঁর সকল আহলে বায়ত ও ছাহাবায়ে কেরামসহ সকলের প্রতি।

পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত, শায়খে তরিক্বত, প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, লিখক ও গবেষক, বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সফল প্রতিষ্ঠাতা উস্তাজুল ওলামা হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) কর্তৃক লিখিত “تذكرة النفوس القدسيه فى سلاسل اولياء الله” নামক পুস্তিকাটি সর্বসাধারণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

অত্র পুস্তিকাটি হুজুর কেবলা উর্দু ভাষাতে রচনা করেছেন। আমি অধম হুজুর কেবলার নির্দেশক্রমে সর্বসাধারণের পাঠের সুবিধার্তে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করছি। অনুবাদের ক্ষেত্রে যথাসাধ্য মূল ভাবার্থ তুলে ধরার চেষ্টায় ত্রুটি করিনি। তারপরও পাঠক সমাজের নিকট কোন প্রকার ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে অত্র প্রকাশনা সংস্থাকে অবহিত করলে পরবর্তী সংস্কারে সংশোধিত আকারে প্রকাশিত হবে।

অত্র পুস্তিকাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মঙ্গল কামনা করছি।


অনুবাদক

শাহজাদা আবুল ফছিহ মোহাম্মদ আলাউদ্দীন



ভূমিকা

 

الحمدلله رب العٰلمين والصلوٰة والسّلام على سيّد الانبياء والمرسلين وعلى آلـه واصحابـه أجـمعين, امّا بعد!

আহলে বায়তে রাসূল (ﷺ), ছাহাবায়ে কেরাম, শোহাদায়ে কেরাম রাদ্বি আল্লাহু তাআলা আনহুমগণ হতে কয়েকজন সম্মানিত বুজুর্গানে কেরামগণের জীবনচরিত একত্রিত করছি, যা পাঠ করে সর্ব সাধারণের ঈমান-আক্বীদা মজবুত ও পাকা-পোক্ত হবে এই আশা রাখছি। কেননা হযরাত ছাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শে রয়েছে রাসূলে করিম (ﷺ) এর উত্তম চরিত্রের বাস্তব নমূনা। যার অনুসরণ-অনুকরণে রয়েছে উভয় জাহানের মুক্তি ও নাজাতের নিশ্চয়তা। রাসূলে করিম (ﷺ)’র ছাহাবায়ে কেরামের ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি তাদের জীবনাদর্শের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অত্র পুস্তিকায় একত্রিত করে এটির নাম “তাযকেরাতুন্ নুফুসুল কুদ্সিয়্যাত ফি সালাসিলে আউলিয়াইল্লাহ্” নামকরণ করেছি। আশারাখি পাঠক সমাজ এটি পাঠ করে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি অপরকেও পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করবেন।

পরিশেষে অত্র পুস্তিকাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন যথাযথ বদলা দান করুন এই কামনা করছি।

গ্রন্থকার

মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী



তাসাউফ ও সুফী সংক্রান্ত আলোচনা


তাসাউফ (تصوف) ও সুফী  (صوفى) এই শব্দদ্বয়ের মূল এক ও অভিন্ন। তবে  تصوف ও صوفى (সুফী) শব্দের মূল বা আসল দৃঢ়তা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। যথা:-


১. تصوف ও  صوفى শব্দটি  صفاء (সফা) শব্দ থেকে গঠিত হয়েছে। যার অর্থ পবিত্রতা। 


২. সুফি  (صوفى)শব্দটি সাউফ (صوف) থেকে গঠিত হয়েছে। অর্থ একাগ্রতা। একথা স্পষ্ট যে অন্তরের পবিত্রতা একাগ্রতা ছাড়া মুল উদ্দেশ্য অর্জন হয় না। মোটকথা তাসাওফের ভিত্তি পবিত্রতা ও একাগ্রতার উপরই  প্রতিষ্ঠিত।


৩. কারো কারো গবেষনায় صوفى (সুফী) এর মূল صوفوى (সুফবী) ছিল। ব্যাপক ব্যবহরের কারনে صوفى (সুফী) হয়েছে। 


৪. কেউ কেউ সুফি শব্দটি صوف (সাউফ) থেকে বলেছেন। যার অর্থ উলের কাপড়। যেহেতু সাধারণত: সুফীয়ায়ে কেরামদের পোশাক উলের হয়ে থাকে। তারা আম্বিয়া আলাইহিস সালামের অনুসরণ করতে গিয়ে ইহা ব্যবহার করতেন। তাদেরকে তাই সুফী বলা হয়। সম্ভবত صؤفى বর্ণনাটি অদিক বিশুদ্ধ। এই জন্য যে এই শব্দটি হযরত হাসান বসরীর (মৃত ১১০ হিজরীতে) যুগে চালু হয়েছিল। তাঁর সমকালে হযরত সুফিয়ান সাওরী আলাইহির রহমার উক্তির মধ্যে শব্দটির এইভাবে ব্যবহার হয়েছে। বরং এই শব্দটি ইসলামী যুগের আগে প্রচলন হয়েছিল। তবে নবীর যুগে ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এই শব্দের ব্যবহার কম হয়েছে।


৫. মূলত صفه (সুফ্ফা) শব্দটি থেকে صؤفى (সুফি) শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। 


আস্হাবে সুফ্ফা ঐ সকল সাহাবায়ে কেরাম রিদুয়ানুল্লাহদেরকে বলা হয়। যারা দুনিয়ার সংসার ত্যাগ করে মসজিদে নববীর নিকট সমতল স্থান তথা বারান্দায় অবস্থান নিয়েছিলেন। জিকির ও আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থেকে মোস্তফা (ﷺ) এর সাহচর্যে এসে উপকৃত ও অনুপ্রাণিত হতেন। যেমন আস্হাবে সুফ্ফার মত পূণ্যবান ও সৎ লোকেরা সুফি উপাধি পেয়েছেন। তাদের নামসমুহ “তায্কেরাতুল আউলিয়াতে” উল্লেখ করা হয়েছে। যাদের জীবনী “ছিরাতুল আউলিয়াতে” রয়েছে। উম্মতে মোস্তফা (ﷺ) এ দেখা যায় পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যারা সুফি হিসেবে খ্যাত তাদের মধ্যে কয়েকজন যেমন: হযরত খাজা ওসমান হারুনী (رحمة الله),হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ আজমীরী (رحمة الله), হযরত খাজা কুতুবউদ্দীন ব্খতিয়ার খাকি আউশি (رحمة الله), হযরত বাবা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশেখর  (رحمة الله), হযরত খাজা নেজাম উদ্দীন আউলিয়া (رحمة الله), হযরত খাজা আলাউদ্দীন ছাবের পাক কলিয়রী(رحمة الله), হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দী (رحمة الله), হযরত বাহাউদ্দীন জাকারিয়া মূলতানী (رحمة الله), হযরত মুসা পাক শহীদ (رحمة الله), হযরত দাতাগঞ্জেবখশ হাজবীরী (رحمة الله), হযরত ঈশা শাহ (رحمة الله), ইসহাক গানরুবী (رحمة الله) হযরতুলহাজ্ব আল্লামা আবদুল হামিদ বাগদাদী আল আফিনদি (رحمة الله), হযরত আল্লামা আহমদ শাহ ছিরিকোট (رحمة الله) ও হুজুর সৈয়্যদেনা গাজ্জালীয়ে জমান মুহাদ্দেসে আযম হযরত আল্লামা শাহ্ সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী (رحمة الله)।


আমাদের এই দেশের মধ্যে হযরত গাউসুল আজম শাহ সৈয়্যদ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (رحمة الله), হযরত সৈয়্যদ গোলামুর রহমান বাবাজান কেবলা (رحمة الله), হযরত কুতুবেজমান মুখলেছুর রহমান (رحمة الله), হযরত শাহ মুহাদ্দীস আবদুল হাই চাটগামী (رحمة الله), হযরত শাহ্ সুফী আমানত উল্লাহ খান চাটগামী (رحمة الله), হযরত শাহ্ আল্লামা আজীজুল হক শেরে বাংলা ইমামে আহলে সুন্নাত (رحمة الله), হযরত শাহ্ সুফী মৌলানা আবদুল মজিদ (رحمة الله) গারিঙ্গিয়া, হযরত শাহ্ সুফী মৌলানা আহসানুজ্জামান হাশেমী (رحمة الله), হযরত শাহসুফী আল্লামা মুহাদ্দীস মুফতী আজীজুর রহমান সহেব (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা ফতেহ্ আলী চাটগামী (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী হাফেজ মনিরউদ্দিন (رحمة الله) আনোয়ারা, হযরত শাহ্সুফী মৌলানা আবদুছ ছালাম আরকানি (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা নুর মোহাম্মদ নেজামপুরী (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা আক্তার ছাহেব চাটগামী (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা ওয়াজেদ আলী খান (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা আতিক উল্লাহ খান (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা দায়েম উল্লাহ (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা কাজী সিরাজুল মোস্তফা (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা বাকী বিল্লাহ (رحمة الله) ঢাকা,আল্লামা শাহ্সুফী আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (رحمة الله), হযরত শাহ্সুফী মৌলানা আমিনুল ইসলাম হাশেমী(رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুফ্তি গরিবুল্লাহ শাহ্ জাপুরী ফটিকছড়ি (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফী সৈয়দ মুফ্তি রাহাত উল্লাহ রাঙ্গুনীয়াভী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফী এজাবাত উল্লাহ মোহাম্মদপুরি রাউজান (رحمة الله) হযরত শাহ্সুফী আবদুল করীম নাঙ্গলমুড়ী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি আব্দুল গনি কাঞ্চননগরী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা অছিউর রাহমান চর›দ্বীপী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা কাজী আছদ আলী বোয়ালখালী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা আব্দুল আজিজ শাহ খিতাবচর (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্ মুফতী দোস্ত মোহাম্মদ মেখল (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মঈজউদ্দিন শাহ গুমানমর্দ্দন (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা রশিদ আহমদ শাহ্ মির্জাপুরী (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা নজির আহমদ শাহ (রাহমাতল্লাহে আলাইহি) মুজাফ্ফরপুর, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফতী মকবুল আহমদ শাহ নাদিমপুরি (رحمة الله), হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা হাসমত আলী (রাহমাতল্লাহে আলাইহি) নাঙ্গলমোড়া, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা নুরুল হক ছাহেব (رحمة الله) প্রতিষ্ঠাতা শাহচান্দ আউলিয়া মাদ্রাসা, হযরত শাহ্সুফি হাফেজ বজলুর রহমান (رحمة الله) রাঙ্গুনীয়া, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফ্তী মুছা মুজাদ্দেদি (رحمة الله) আনোয়ারা, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফ্তী আমিন উল্লাহ ছাহেব (رحمة الله) বারেদুনা সাতকানিয়া, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফ্তী নুরুছ্ছফা নঈমী (رحمة الله) রাঙ্গুনীয়া, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা আব্দুল কুদ্দুছ হাওরভী (رحمة الله) বোয়ালখালী, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফ্তী আব্দুল হক হাওরভী (رحمة الله) বোয়ালখালী, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুছিহউল্লাহ (رحمة الله) আল মির্জাপুরি হাটহাজারী, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহ্সুফি মৌলানা মুফ্তি সিরাজুল হক (رحمة الله) গুমানমর্দন, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা নুরুল ইসলাম হাশেমী রহিমাহুমুল্লাহু তায়ালা আজমাঈন প্রমূখ। এ ছাড়া আরও অনেক অনেক রয়েছেন।


প্রশ্ন/অভিযোগ : তাসাউফ ও সুফী এই শব্দদ্বয়ের ব্যবহার না নবীর যুগে হয়েছে? আর না খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে হয়েছে? তাই ইহা কিভাবে মেনে নেওয়া যাবে। কেননা তার উৎপত্তি নবীর শিক্ষার উৎপত্তি থেকে হয়েছে কিনা?


উত্তর: যে সকল লোকেরা মোস্তফা (ﷺ) প্রতি ঈমান আনয়নের পরে সঙ্গ লাভ হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও এটি এক মুহূর্তের জন্য হোকনা কেন, তাদের সকলকে কোন প্রকারের পার্থক্য ছাড়াই সাহাবা বলা হয়। এই শব্দটি এত ব্যাপক যে, উহা সমস্ত মর্যাদা, মহৎ কার্যাবলী ও চারিত্রিক সকল গুনাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে রাখে। গাউস, কুতুব, আবদাল, আওতাদ ও সাধারন আউলিয়ায়ে কেরাম ইত্যাদি,কেহ তাদের মর্যাদার সমান হতে পারে না। কোন সাহাবীকে সাহাবী বলার পরে হাফেজ, ক্বারী, মুফাসসীর, মুহাদ্দীস, ফকীহ ও মুফতী বলার আর কোন প্রয়োজন থাকে না। এইভাবে সাধারন মুসলমানগনের মধ্যে যে ব্যক্তি যে বিষয়ে চরম উৎকর্ষতা লাভ করেছে তাকে সে বিষয়ের সাথে সম্বন্ধ করে চিহ্নিত করা হয়। যেমন যারা হাদিস বিষয়ে চরম উন্নতি লাভ করেছে তাকে মুহাদ্দিস বলা হয়। তাফসীর বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলে তাকে মুফাসসির বলতে শুরু করে। যাকে ফিকাহ বিষয়ে ব্যস্ত— পাওয়া যায় তাকে ফকীহ/ মুফতী বলতে শুরু করে।


এইভাবে যারা সাহাবীদের সাক্ষাত পেয়েছে তাদেরকে তাবেয়ী উপাধী দেয়া হয়েছে। তেমনিভাবে যে সকল বুযুর্গ ব্যক্তি আল্লাহর জিকিরের মধ্যে লিপ্ত থেকে পার্থিব স্বাদ উপভোগ করা থেকে বিরত থাকে ঐ সকল বুজুর্গদেরকে সুফি বলা হয়। 


আর এই বিষয়ের কিতাবসমুহকে তাসাউফের কিতাব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এই বিষয়কে তাসাউফের বিষয় বলা হয়। হিজরীর দ্বিতীয় শতক শেষ হওয়ার আগে এই পরিভাষা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেমন       আরও ভাল করে বুঝার জন্য বলা যায় সম্প্রতি বর্তমান যুগে ছলফি, গাইরে মুকালি­দ, আহলে হাদীস, লা মাযহাবী, জমাতি ইত্যাদি দল ছড়াতে লাগল বা এসব নামে খ্যাত হতে লাগল। এইভাবে ওয়াহাবী, নজদী ইত্যাদী শেষ যুগে এসে ছড়াতে থাকে। কিন্তু ইসলামের প্রথম যুগে সুফী স¤প্রদায়েরা বেশী খ্যাতি লাভ করেছিল।    


এখন এ পর্যায়ে ওই দলের লোকেরা তাসাউফের কি সংজ্ঞা দিয়েছেন তা দেখি। মৌলানা শিবলী নোমানী নদবী হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমির জীবনি লেখতে গিয়ে লিখেছেন যে, মাওলানা রুমী থেকে প্রশ্ন করা হল যে শরীয়ত, তরীকত ও হাকীকত কাকে বলে? তিনি উত্তরে বললেন শরীয়ত একটি প্রদীপ যা মানুষকে রাস্তা  দেখায়। যখন সেই রাস্তায় এসে যায় তখন উহাতে চলার নাম তরীকত। আর যখন সেই গন্তব্যের স্থলে পৌঁছে যায় তখন উহাকে হাকীকত বলে। অত:পর বলেছেন সারাংশ হল শরীয়ত রসায়ন বিজ্ঞানের মত,আর ইহা শিক্ষক থেকে শিক্ষা অথবা কিতাব থেকে অর্জন করা হয়। আর ত্বরীকত হল জ্ঞান লাভ করে তার ঔষধ ব্যবহার করা বা তামার উপর সেই ঔষুধগুলো ঘর্ষণ করা। আর হাকীকত হল সে তামা-স্বর্ণে পরিণত হয়ে যাওয়া। তারপর তৃতীয় উদাহরণে বলেছেন শরীয়ত হল ডাক্তারী জ্ঞান অর্জনের ন্যায়। ত্বরীকত হল ঐ জ্ঞান অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করা, ঔষুধ সেবন করা। হাকীকত হল সুস্থ হয়ে যাওয়া।


এই সকল উদাহরনের সারাংশ থেকে এটাই প্রমানিত হল যে, শরীয়ত হল ইলম, ত্বরীকত হল আমল, হাকীকত হল ঐ আমলের ফলাফল। অথবা এইভাবে বুঝে নিতে হবে, বিশ্বাস যদি পূর্ববর্তীদের অনুসরন ও যুক্তি প্রমান দ্বারা সৃষ্টি হয় তাহলে তা হবে শরীয়ত। কাশফ ও হাল তথা স্বর্গীয় প্রেরণা ও অবস্থার দ্বারা প্রকাশিত হলে তা হবে ত্বরীকত। কাশফ ও হালের যোগ্যতা, প্রচেষ্টা ও আধ্যাত্বিক সাধনা ব্যাতিত অর্জিত হতে পারে না। আর ইহার ফল হল হাকীকত।


উপরোলে­খিত বর্ণনা থেকে জানা গেল যে শরীয়ত ও তরীকত এই শব্দ দুটি পরস্পর বিপরীত বিষয় নয়। বরং দুনোটা প্রানত্ত দেহের ন্যায় এক। জাহের ও বাতেন তথা বহির্ভাগ ও অভ্যান্তরের ন্যায়। চামড়া ও মুল বস্তুর ন্যায়। একটি আরেকটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শরীয়তের আনুগত্যে যথাযথ শিষ্টাচারিতা বজায় রাখার উপরই তাসাউফের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।


ধর্মীয় বড় বড় আলেমগন তাসাউফের অত্যন্ত পরিপূর্ণ ও প্রশ্নের অবকাশহীন এইভাবে সংজ্ঞা দিয়েছেন যে, তাসাউফ হল মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি দৃষ্টি রাখা তাকে নিজের আসল উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহন করা অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত অন্য কিছুর সাথে তথা অর্থহীন ব্যস্ততার কোন সম্পর্ক না রাখা। সৎ কাজের প্রতি খাঁটি নিয়তে অগ্রসর হওয়া। আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বিপদের উপর ধৈর্যশীল থাকা। আল্লাহ তায়ালার ফয়সালার উপর কৃতজ্ঞ থাকা ও আধ্যাত্বিক সাধনায় দিবানিশি অতিবাহিত করা। 


সাহাবায়ে কেরাম রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিমদের মধ্যে শরীয়তের সবচেয়ে বড় আনুগত্যশীল, ত্বরীকতের ধারক, হাকীকতের বাহক খোলাফায়ে রাশেদীনরাই ছিলেন। যারা সকল সুফি, ওলী গাউস কুতুব পীর ও মুরশীদের সর্দার ও পথ প্রদর্শক। এই চারজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান ও নবীগনদের পরে সকল মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব হযরত সাইয়্যেদেনা আবু বক্কর ছিদ্দিক আকবর(رضي الله عنه)। নবীগনদের পরে সর্বশেষ্ঠ মানুষ এবং প্রধান হল হযরত সৈয়্যদেনা আবু বকর ছিদ্দিক (رضي الله عنه), তারপর হযরত সৈয়্যদেনা ফারুক আজম ওমর (رضي الله عنه) এর মর্যাদা বড়। যার সম্বন্ধে মোস্তফা (ﷺ) এর বাণী রয়েছে। তিনি মোস্তফা (ﷺ) বলেছেন: “যদি আমার পরে কোন নবী হত তাহলে ওমর ইবনুল খত্ত্বাবই হত।” অতঃপর হযরত ওসমান জুননুরাইন (رضي الله عنه) এর মর্যাদা। অতঃপর হযরত সাইয়েদেনা মাওলায়ে কায়েনাত, আসাদুল্লাহিল গালিব, শেরে খোদা,মদীনাতুল ইলম, মুশকিল কুশাহ, হযরত আলী মরতুজা কাররামা ওয়াজহাহুল কারিমের মর্যাদা সবচেয়ে বড়। যার সর্ম্পকে নবী করিম (ﷺ) এর বাণী রয়েছে। যেমন তিনি (ﷺ) বলেছেন-


اَنَا مَدِيْنَة الْعِلْمِ وَعَلِىُ بَا بُهَا


অর্থাৎ “আমি জ্ঞান বিজ্ঞানের শহর আর আলী (رضي الله عنه)  হল তারই দরজা।” অতঃপর রাসুল (ﷺ) এর দৌাহিত্রদ্বয় হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হযরত ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) তাদের মর্যাদা। অতঃপর আহলে সুফ্ফার মর্যাদা যারা পার্থিব সুখ ও জীবনোপকরন থেকে বিমুখ হয়ে নুবুওয়াতের প্রদীপের সামনে রাত-দিন কাটিয়ে দিতেন ও প্রান উৎসর্গ করতেন, তাদের মর্যাদাই বড়।


অতঃপর সাধারণ সাহাবাকেরাম অতঃপর তাবেয়ীন অর্থাৎ যারা ঈমান আনয়নের পর মোস্তফা (ﷺ) এর সাহচর্য গ্রহন করেছেন তারা সাহাবী, আর যারা ঈমান আনয়নের পর ঐ সকল সাহাবাকেরামদের সাহচর্য গ্রহন করেছেন তারা তাবেয়ী। যাদের মধ্যে হযরত খাজা সৈয়দেনা ওয়াইছ করনি (رضي الله عنه)  ওফাত-৩৭ হিজরী, হযরত সাইয়েদেনা সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (رضي الله عنه) ওফাত-৯৩ হিজরী, হযরত সাইয়েদেনা খাজা হাসান বসরী (رضي الله عنه) ওফাত-১১০হিজরী, হযরত সৈয়দেনা ইমাম আজম আবু হানিফা (رحمة الله) রিদওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন। যারা তাবেয়ীনদের পরে এই মর্যাদায় আসিন ছিলেন তাদেরকে তবে তাবেয়ীন বলা হয়। যাদের জীবনকাল আব্বাসী যুগের অন্তর্ভুক্ত। যাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েক জন হচ্ছে,হযরত ইমাম জাফর ছাদেক (رحمة الله), এরা ব্যতীত নিম্নলিখিত হযরাত সুফিয়ায়ে কেরামগণও উল্লেখযোগ্য। যেমন- হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (رضي الله عنه) ওফাত-১৬১ হিজরী, হযরত সাইয়েদেনা দাউদ তাঈ (رضي الله عنه) ওফাত-১৬২ হিজরী, হযরত ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (رضي الله عنه) ওফাত-১৮৭ হিজরী, হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) ওফাত-২৯৭ হিজরী, হযরত আবু বকর শিবলী (رحمة الله)  ওফাত-৩২৫ হিজরী।


উমাইয়া যুগে তাসাওউফের উপর কোন কিতাব লেখা হয়নি। অতঃপর আব্বাসীয় যুগে এই বিষয়ে আরবী ভাষায় যেসব কিতাব লেখা হয়েছে তা হল-“রেছালাতুল কাছদ ইলাল্লাহি” লেখক হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) ওফাত-২৯৭ হিজরী। আবুল নাছার সিরাজ, রেছালায়ে কোশাইবীয়া-লেখক আবুল কাশেম কুশাইন (رحمة الله) ওফাত-৩৭০ হিজরী। ফুতুহুল গাইব লেখক গাউছুছ ছাকলাইন হযরত শেখ আব্দুল কাদের জিলানি (رحمة الله) ওফাত-৫৬১ হিজরী, আওয়ারিফুল মুআরেফ লেখক হযরত শেখ শাহাব উদ্দীন সরওয়ার্দী (رحمة الله) ওফাত- ৬৩৮ হিজরী। ফুছুছুল হেকম লেখক শেখ মুহিউদ্দিন ইবনে আরবী (رحمة الله) ওফাত ৬৩৮ হিজরী।







আফজালুল আউলিয়া


ছাহাবায়ে কেরামদের বেলায়ত প্রকৃত পক্ষে মোস্তফা (ﷺ) এর কামালিয়তের বহিঃপ্রকাশ


সমগ্র বিশ্ব জগতের মধ্যে সবার নিকট স্পষ্ট অবগত যে সৈয়দুল আম্বিয়া ওয়াল মুরছালিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর পর সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরামদের যে ফজিলত, মর্তবা পরিপূর্ণ বা কামালিয়ত এতে কোন মুমেন ব্যক্তির সামান্য পরিমাণ ও সন্দেহের অবকাশ নাই এর পরেও কিন্তু পরর্বতী আউলিয়ায়ে কেরামদের আলোচনা একটু বেশি।


অথচ তাদের (ছাহাবায়ে কেরামদের) যে এবাদত ও সাধনা এবং সাথে সাথে তারা যে মোস্তফা (ﷺ) এর সঙ্গে দর্শন এবং তাদের মাল, দৌলত উৎসর্গ ও আত্ম ত্যাগের বিনিময় সমগ্র বিশ্ব জগতে এখনো আমরা পর্যন্ত যে ঈমান, ইসলাম ও কোরআনি দাওয়াত পৌছেছে। তা সমগ্র দুনিয়ার কাছে সূর্যের মত স্পষ্ট এবং তাদের আধ্যাত্মিক ও কারামত বুযুর্গী সবার নিকট অজানা কিছু নয় এবং তারা প্রত্যেকের জন্য অনুসরন ও অনুকরনের অধিকারী বা যথাযোগ্য তাই সব মুসলমানদের উচিৎ তাদের যথাযথ অনুসরন করে তাদের থেকে ফয়েজ বরকত অর্জন করা।


হ্যাঁ তবে সম্মানিত আউলিয়ায়ে কেরামদের অন্তর কাঁপানো কারামতের আলোচনা প্রত্যেক সময়ে হয়ে থাকে এবং এই বিষয়ে আলোচনার সাথে সাথে অনেক বই পত্র লেখা হয়েছে। অতএব এই সময়কালে এর জনশ্রুতিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা যায় অধিকাংশ ওয়াজিনে কেরাম তাদের ওয়াজ মাহফিলে এবং অধিকাংশ পীরগণ তাদের মুরিদদের বৈঠকে এবং সম্মানিত লেখকগণ তাদের লেখনির মধ্যে তাও সম্মানিত আউলিয়া বুযুর্গদের সুন্দর সুন্দর কারামত ও কাশকের বর্ণনা দিয়ে নারাহ অর্থাৎ বাহ বাহ ধন্যবাদ সাধুবাদ নিয়ে থাকেন এবং এটিও সত্য যে যার মধ্যে বিন্দু পরিমান সন্দেহ নাই যে, পীর আউলিয়াদের আলোচনায় এমন মর্মষ্পর্শী ও কার্যকর ফলপ্রসু হয় যে এর থেকে আত্মায় তৃপ্তি ও অন্তরে ঈমানের নুর সৃষ্টি হয়। এমনকি দিল দেমাগ পর্যন্ত ঈমানি জ্যোতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যা থেকে ঈমানদারগণ ইসলামের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আমলের মধ্যে তথা ভাল কাজের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে। যে কারনে আমার দৃষ্টিতে বর্তমান সময়ে আউলিয়ায়ে কেরামদের অর্থাৎ দ্বীনের সম্মানিত ব্যাক্তিদের এবাদত রিয়াজত এবং মুজাহেদাহ ও কারামতের অধিক আলোচনা বর্ণনা করা এবং চর্চা করা মুসলমানদের মধ্যে ঈমানের জজবা ও আমলের ব্যাপকতা সৃষ্টির কারণ হিসাবে বিবেচ্য এবং এ বিষয়ের জন্য উত্তম একটি পন্থা। 


কিন্তু আপসোস! বড়ই আপসোস আমার নিকট আশ্চার্য লাগে যে কারামত শান শওকত বর্ণনার ক্ষেত্রে যেহেতু শেষ যুগের আউলিয়াদের বিশেষ করে মজজুব ও বাবাগনের কাশফ কারামতের আর নিজ পীর মুরশিদের কারামতের প্রশংসা হাট-বাজার, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তুরা, চায়ের দোকান সহ যেখানে সেখানে চলে এবং লেখকগনও বই পত্রের মধ্যে এদের ব্যাপারে লেখালেখি করে এদের ডঙ্কা বা মর্যাদাকে উচ্চতর থেকে উচ্চতর করে, অথচ বড়ই পরিতাপ! মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে আফজালুুল আউলিয়া, মনিষীগণ যারা মুলত সব কিছু বিসর্জন দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা পর্যন্ত এত বিশাল ঈমানী ইসলামী দৌলত, কোরআন ও ঈমানি নেয়ামতের মাধ্যমে যে উপকৃত ও ভাগ্যবান করেদিয়েছেন তা অবশ্যই কৃতজ্ঞের ব্যাপার। অথচ সেই ত্যাগি উচ্চস্তরের ছাহাবায়ে কেরাম রিদুয়ানুল্লাহ আলাইহিম আজমাঈন এদের আলোচনা শান মান মর্যাদা বিশেষ করে তাদের বেলায়ত, কামালিয়ত, কারামত বুযুর্গী ইত্যাদির কোন বর্ণনা বা আলোচনা কোথাও শুনা যায় না। 


কিন্তু সেই সমস্ত পবিত্র সত্তাদের শান মান মর্যদা বেলায়ত ও কারামত এত উচ্চস্তরের যে যদি দুনিয়ার পূর্বেকার ও পরকার সমস্ত পীর আউলিয়াদের শান মান মর্যদা একত্রিত করা হয়, তার পরেও এদের মর্যদা অনেক অনেক উপরে। বরং তাদের নকশে কদম বা অনুসরনের মাধ্যমেই বেলায়ত অর্জিত হয় কেননা প্রকৃতপক্ষে সেই সমস্ত সত্তাগণই হচ্ছে বেলায়তের কেন্দ্র বা পরিধি। তাদের নকশে কদম ব্যতীত বেলায়ত কামালিয়ত,কারামত কিভাবে সম্ভব? যাদের ত্যাগ ব্যতীত কারো ঈমানও হত না। যারা কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি রেছালত ও নবুয়তের উজ্জল সূর্য এবং বেলায়ত ও কারামতের খনি মোস্তফা (ﷺ) থেকে সরাসরি নুরে মারফত অর্জন করে বেলায়তের জগতে নক্ষত্রের মত জ্যোতি ছড়াচ্ছেন এবং কারামতের বাগানে গোলাফের ন্যায় দৃষ্টি নন্দিত হয়ে সুগন্ধি ছড়াচ্ছেন, এমনকি দুনিয়ার সমস্ত আউলিয়াগণ ওই সমস্ত হযরতগণের বেলায়তের শাহী দরবারে অর্থাৎ তাদের দারে দুয়ারে ভিক্ষুক হয়ে নুরে মারফতের ভিক্ষা প্রার্থনা করে। আল্লাহু আকবর! সুবহানাল্লাহ! তারাতো সেই সমস্ত পবিত্র, সম্মানিত, গৌরবময় হাস্তি যারা সদা-সর্বদা হুজুর সৈয়দুল আম্বীয়া নুরে মোজাচ্ছম মোস্তফা (ﷺ) এর জালাল, জামাল, বেলায়ত, নবুয়তকে নিজ ঈমানের দৃষ্টিতে দেখেছিল এবং হাবীবে খোদা (ﷺ) এর পবিত্র বরকতময় স্বান্নিধ্যের মাধ্যমে উন্নতি এবং কামালিয়ত অর্জন করেছেন যাতে করে মহা ভাগ্যবান হয়ে বাদশাহ বরং দু জগতের সম্রাট হয়ে গিয়েছেন এবং ছাহাবায়ে রাসুল (ﷺ) এর ছাহাবা লকবের অধিকারী হয়ে উভয় জগতে মাথা উচু করবেন এবং উম্মতে মুছলেমার মধ্যে এমন ভাবে দেখা যাবে যেমনি লক্ষ লক্ষ তারার মধ্যে চন্দ্র তেমনী এক একজন সাহাবীদের মর্যদা অন্যান্য সকলের উপর।


এই কারনেই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত বক্তাগন তাদের তাকবীরের মধ্যে সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরামদের আলোচনা এবং পীর মাশায়েখগন তাদের মুরিদদের মজলিসে তাদের ব্যাপারে তাগিদ না করাতে দেখা যায়,অথচ তাদের আলোচনা আবশ্যক। অনুরূপ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ওলামাগন রাফেজী ও শিয়াদের বিপরীতে অধিক হারে লেখা লেখি ও আলোচনা করা প্রয়োজন। কেননা উলমাদের ও পীর বুযুর্গদের একটু অমনোযোগীতায় আমাদের সাধারন মানুষ সে সম্পর্কে জানা থেকে দুরে সরে পড়বে। যে ছাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর কাছে আউলিয়া শুধু আউলিয়া নয় বরং আউলিয়াদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও আফজল এবং সেই সমস্ত সম্মানিত বুযুর্গগণ থেকেও অনেক অনেক কারামত প্রকাশিত হয়েছে, তা কিন্তু তাদের মর্যাদা অনুপাতে অতি সামান্য ।


প্রকৃতপক্ষে অনেক দিন থেকে আমার অন্তরে এই বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই সেই চিন্তার ফলশ্র“তিতে এর উপর মাত্র কয়েকজন ছাহাবার অবস্থা ও মর্যাদা সম্পর্কে আমার অল্প জ্ঞানের ভিত্তিতে পাঠক সমাজের নিকট উপস্থাপন করার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে কিন্তু অনেক ব্যস্ততা ও আর্থিক স্বল্পতার দরুন বিলম্বিত হয়েছে। তার উপর আরো হল সেই সমস্ত জাতের ব্যাপারে কিছু লেখার তেমন জ্ঞানও নাই এবং আমার দৃষ্টিতে আমার নিকট সেই যোগ্যতা নাই যে তাদের ব্যাপারে সামান্য করে কিছু লিখে সেই অতি সম্মানিত ছাহাবাদের শান মান মর্যদার ধারে কাছে গিয়ে পৌঁছতে পারব। যেহেতু এই ক্ষুদ্র কিতাবের মধ্যে তাদের শান মান বর্ণনা করলেও আর কত? যা তাদের মর্যদা অনুযায়ী অতি স্বল্প। কিন্তু এরপরেও আমার ধারনা ছাহাবায়ে কেরামদের মর্যদাময় দরবারে ফুলের একটি দানা পেশ করার সৌভাগ্য অন্তত অর্জিত হবে এবং এটিও আমার অন্তরে এসেছে, হয়ত আমার এই বইটির মধ্যে সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরামদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেখে কোন জ্ঞানী বা আহলে এলম লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের যোগ্যতা দেখাইবেন। এর মধ্যে পূন্যের প্রতি দৃষ্টি দেখানোর প্রতিদান মিলবে।


আমি এই কিতাবের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীনের এবং আশারায়ে মুবাশ্শারাহ রিদ্বোয়ানুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন ব্যতিত অন্যান্য ছাহাবায়ে কেরামদের তেমন কোন আলোচনার বিশেষ প্রয়োজন মনে করি নাই বরং যেই সমস্ত ছাহাবায়ে কেরামের কারামতের উপর দৃষ্টিগোচর হয়েছে তাদের আলোচনাও স্থান পেয়েছে, কেননা আমার আসল উদ্দেশ্য হল ছাহাবায়ে কেরামদের কারামতের বর্ণনা করা। চাই এটি বড় উচ্চ স্তরের ছাহাবায়ে কেরামের হোক কিংবা ছোট নিম্নস্তরের ছাহাবায়ে কেরামের হোক পূর্বেকার হোক কিংবা পরের হোক সেগুলো দেখা হয়নি শুধু আমার যা আসল উদ্দেশ্য তাই বিবেচনা করা হয়েছে।


আমি ওদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতেছি যারা আমার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সর্বদা সহযোগিতা করে থাকে। যাদের মধ্যে বিশেষ করে স্নেহের মৌলভী মোহাম্মদ আবদুন্ নবী, মৌলভী আবুল ফছিহ মোহাম্মদ আলাউদ্দীন ছল্লামাহুমল্লাহু  তাআলা, মৌলভী মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ছাহেব, জামেয়া গাউছিয়া মূঈনিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ছিপাতলী চট্টগ্রামের শিক্ষক মন্ডলি, তেমনি ভাবে অন্যান্য বন্ধু বান্ধব ভাই-বেরাদার। বিশেষ করে মাওলানা আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুল অদুুদ ছাহেবও অনেক কষ্ট করে থাকেন। সেই সমস্ত প্রিয়ভাজনগণ যাঁরা সব সময় আমার লিখিত পুস্তুকগুলি দেখাশোনা করেন, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান  দান করুক এবং সর্বশেষ সবার জন্য দোয়া আল্লাহ তায়ালা যেন নিজ হাবীব সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর তুফাইলে এই খেদমতকে কবুলিয়তের মর্যদা দান করেন।


ميرے آقا كے جتنے بھي اصحاب هيں   ٭ اس مبارك جماعت په لاكھوں سلام


ছাহাবায়ে কেরাম রিদুয়ানুল্লাহে তায়ালা আলাইহিম আজমাঈনদের পবিত্র চরনে এক আশেক মুহব্বতের ভাষায় বলেছেন-


دو عالم نه كيوں هوں نثار صحابه ٭ كه ھے عرش منزل وقار صحابه


امين هيں يه قران ودين خدا كے ٭ مدار ھدىٰ اعتبار صحابه


رسات كي منزل ميں هر هر قدم پر ٭ نبى كو رھا انتظارصحابه


خلافت٬ امامت٬ ولابت٬ كرامت ٭ هر ايك فضل پر اقتدار صحابه


كمال صحابه نبى كي تمنا ٭ جمال نبى ھے قرار صحابه


به مهربں هيں فرمان ختم الرسل كي ٭ ھے دين خداشاھكار صحابه


صحابه هيں تاج رسالت كے لشكر ٭ رسول خداتاجدار صحابه


انھيں ميں هيں صديق وفاروق وعثمان ٭ انھيں ميں على شھسوار صحابه


انھيں ميں هيں بدر واُحد كے مجاھد ٭ لقب جن كا هے جان نثار صحابه


انھيں ميں حسين وحسن فاطمه هيں ٭ نبى كے جو هيں گل عذار صحابه


থازعظمى 


ছাহাবার সংজ্ঞা: যে মুসলমানগন ঈমানী অবস্থায় হুজুর সৈয়দুল আনওয়ার মোস্তফা (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে এবং ঈমানের উপর তাদের শেষ নি:শ্বাস হয়েছে সেই সমস্ত পুন্যবান সৌভাগ্যময় মুসলমানকে সাহাবা বলা হয়। 


ছাহাবায়ে কেরামদের সংখ্যা:  


ছাহাবায়ে কেরামদের সংখ্যা এক লক্ষের অধিক, যেহেতু ইমাম বয়হাকী (رحمة الله) এর বর্ণনা মতে হুজ্জাতুল বেদাহর মধ্যে এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার ছাহাবায়ে কেরাম রহমতে আলম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে হজ্জের জন্য মক্কায়ে মোকাররামায় একত্রিত হয়েছেন। অন্যান্য বনর্না মতে হুজ্জাতুল বেদাহর মধ্যে ছাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। (জুরকানি মাদারেয) 


আফজালুল আউলিয়ার সংজ্ঞা এবং কাদেরকে বলা হয়: 


সমস্ত উলামায়ে মিল্লাতে হানফিয়া এবং আকাবেরে উম্মতে ইসলামীয়ার সবাই এই মাছায়ালার উপর ঐক্যমত যে রাসূলে করীম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ছাহাবায়ে কেরাম আফজালুল আউলিয়া। অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আউলিয়া যদিও কেহ বেলায়তের সর্ব উচ্চস্তরে উপণিত হয় এর পরেও কখনো একজন ছাহাবীর মর্যদায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ কখনো সে কোন ছাহাবির কামালিয়তের বা বেলায়তের স্তরে পৌছেনা। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নিজ হাবিব (ﷺ) এর নবুয়তের সময় কালিন প্রত্যেক ছাহাবীকে বেলায়তের এমন উচ্চস্থান প্রদান করেছেন যা বলার উর্ধ্বে এবং সেই সম্মানিত বুযুর্গ ব্যাক্তিদেরকে এমন এমন আজিমুশ্শান কারামত দ্বারা সূভাগ্যবান করা হয়েছে যা অন্যান্য আউলিয়াল্লাহর বেলায় কল্পনা করা দূরুহ ব্যাপার।


উল্লেখ্য যে, এই কথার উপর কোন সন্দেহ নাই যে সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরাম রিদুয়ানুল্লাহে আলাইহিমদের অত বেশি পরিমান কারামতের সমাহার ছিল না। কিন্তু মনে রাখতে হবে অধিক কারামত কোন আফজলিয়তের জন্য কিংবা উচ্চ বেলায়তের জন্য দলিল নয়, কেননা বেলায়ত প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত এবং প্রভুর অধিক এবাদতের নাম। তাই প্রভুর নৈকট্য যার যতটুকু বেশি অর্জিত হয় তার বেলায়ত উচ্চতর থেকে উচ্চ হয়ে যায়। কিন্তু এ দিকে যেহেতু ছাহাবায়ে কেরাম নবুয়তের জ্যোতি প্রাপ্ত এবং রেছালতের ফয়েজ থেকে ফয়েজ প্রাপ্ত এবং সর্ব উচ্চ মকাম থেকে বরকত অর্জনে শুভাগ্যবান, সে জন্য আল্লাহর দরবারে তাদের নৈকট্যতা বা কুরবত এবং গ্রহণযোগ্যতা এত বেশি অর্জিত যে, যা অন্য কোন আউলিয়াল্লাহর পক্ষে অর্জিত হয় নাই। সে জন্য যদিও ছাহাবায়ে কেরামের খুব অল্প সংখ্যক কারামত প্রকাশ হলেও কিন্তু, তথাপি ছাহাবায়ে কেরামের বেলায়তের স্তর অন্যান্য আউলিয়া থেকে অনেক অনেক গুণ উর্ধ্বে। 


এরপরেও কিন্তু অনেক ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কারামত প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমি এই সংক্ষিপ্ত লিখনীর মধ্যে কিছু কিছু ছাহাবায়ে কেরামের অল্প সংখ্যক কারামতের বর্ণনা লিখে সৌভাগ্য অর্জনে চেষ্টা করেছি; যাতে করে ঈমানদারগণ প্রীয় হাবীব মোস্তফা (ﷺ) এর নবুয়তের জীবনের সে পূন্যময় ব্যক্তিদের বেলায়ত ও কারামত ঈমানি জওক শওক আলোচনার মাধ্যমে নিজ আক্বিদাহকে মজবুত করে ও মুহাব্বতের মাধ্যমে অন্তরকে জান্নাতী আকাঙ্খায় পরিণত করতে পারে এবং ছাহাবায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে আচরণকারীগণ হিদায়তের আলো গ্রহণ করতে পারে অন্যতায় নিজেদের হিংসার আগুন নিয়ে জাহান্নামের আগুণে জ্বলবে। 


আশারায়ে মুবাশ্শেরাহ


সাধারন ভাবে প্রত্যেকেই জ্ঞাত যে, হুজুর রাহমাতুলি­ল আলামীন (ﷺ) অনেক ছাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন সময়ে জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে আসছেন অর্থাৎ দুনিয়ার মধ্যে তাদেরকে জান্নাতি হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দশজন এমন উচ্চ জলিলে কদর অতি ভাগ্যবান ছাহাবী যাদেরকে হুজুর (ﷺ) মসজিদে নববীর মিম্বর শরিফের মধ্যে দন্ডয়মান হয়ে একত্রে তাদের নাম নিয়ে জান্নাতী হওয়ার সু-সংবাদ প্রদান করে শুনাইলেন। ছাহাবাদের ইতিহাসে সেই শুসংবাদ প্রাপ্তদের লকব আশারায়ে মুবাশ্শেরাহ উল্লেখ করেছেন। তাদের পবিত্র তালিকা হল 


১। হযরত সৈয়দুনা আবু বক্কর ছিদ্দিক (رضي الله عنه) 

২। হযরত সৈয়দুনা উমর ফারুক (رضي الله عنه) 

৩। হযরত সৈয়দুনা উসমান (رضي الله عنه) 

৪। হযরত আলী মর্তুজা (رضي الله عنه) 

৫। হযরত তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (رضي الله عنه) 

৬। হযরত জুবাইর বিন আল আওয়াম (رضي الله عنه) 

৭। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) 

৮। হযরত সায়াদ বিন আবি ওয়াক্কাছ (رضي الله عنه) 

৯। হযরত সাঈদ বিন জায়েদ (رضي الله عنه) 

১০। হযরত আবু ওবাইদাহ বিন জাররাহ (رضي الله عنه)। (তিরমিজী শরীফ) 


আমি সর্বপ্রথম এই জান্নাতি দশ ছাহাবীর কিছু কারামতের আলোচনা করতেছি। এরপর অন্যান্যদের এবং আছহাবে রাসূলের সাথে সাথে কিছু পূন্যবান মহিলার ও প্রথম যুগের কিছু আউলিয়াদেরও আলোচনা স্থান পেয়েছে। যারা সম্মানিত ছাহাবার ভাগ্য অর্জন করেছেন, সমগ্র বিশ্বে মহিলাদের মর্যাদা ও পথ প্রর্দশক হিসাবে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং মুমেন মহিলাদের মধ্যে ছাহাবিয়তের পদ মর্যদা রক্ষা করেছেন এবং সাথে সাথে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ফয়েজ বরকত জ্যোতি আলো মহিলাদেরকেও আলোকিত করেছেন এবং কামালিয়তের অধিকারী করেছেন এবং কারামত প্রকাশের যোগ্যতা প্রদান করেছেন। আল্লাহু আকবর


কারামাত এর সংজ্ঞা বা বর্ণনা: 


খোদা ভীরু পরহেজগার কোন মোমেন থেকে আশ্চার্য্য, জ্ঞান হয়রান মূলক কোন কাজ প্রকাশ হয়ে যায় যা বলতে গেলে খুবই অসম্ভব মনে হয় বা স্বাভাবিক ভাবে হয় না। কিন্তু উল্লেখিত গুন সম্পন্ন ব্যাক্তি থেকে সম্ভব হয়ে থাকে, তাই এটিকে কারামত বলা হয়। সে জাতিয় কোন কাজ যদি নবীগনদের থেকে প্রকাশিত হয় এবং আর যদি নবুয়ত প্রচারের পূর্বে হয় তখন তাকে এরহাচ বলা হয় এবং যদি নবুয়ত প্রচারের পরে হয় তখন তাকে মুজেজা বলা হয় এবং যদি কোন সাধারন মোমেন থেকে এইভাবে অস¦াভাবিক কিছু প্রকাশ হয় তখন তাকে মাওনত বলা হয় এবং যদি কোন কাফের থেকে তার রুচি মোতাবেক এমন কিছু প্রকাশ পাই তখন একে এছতেদরাজ বলা হয়।


মুজেজা ও কারামত:


প্রকৃত পক্ষে দুনোটি এক তবে দুনোটির মধ্যে র্পাথক্য শুধু এতটুকু স্বাভাবিকের বিপরীতে আর্শ্চায্য ও অবাক হওয়ার মত কোন কিছু যদি নবী বা রাসূলদের থেকে প্রকাশ পায় তখন এটি হবে মুজেজা। আর তেমনি কোন কিছু যদি অলি যারা নবী নয় বরং নবীদের  গোলাম তাদের থেকে প্রকাশ পায় তখন একে কারামাত বলা যায়।


হযরত ইমাম আব্দুল্লাহ ইয়াফি (رحمة الله) নিজ কিতাবের মধ্যে উল্লেখিত কথার উপর দৃঢ়তা প্রকাশের পাশাপাশি কয়েকজন বড় বড় আলেম ওলামা যাদের জ্ঞান গরিমার সুদক্ষ প্রভাব ও চিন্তা ধারার মাধ্যমে বিশাল অবদান রেখেছে তাদের কিছু কিছু নাম উল্লেখ করেছে, তাদের মধ্যে ইমামুল হারামাইন আবু বক্কর বা কেলানি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, আবু বক্কর বিন ফুররুক রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গজ্জালি (رحمة الله), ইমাম ফখর উদ্দীন রাজি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, ইমাম নাছির উদ্দীন বয়জাভী (رحمة الله), মুহাম্মদ বিন আব্দুল মুলক ছালমী রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, হযরত নাছির উদ্দীন তোছি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, হাফিজ উদ্দীন নছফি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি, ইমাম আবুল কাছেম কাশেরী রাহমাতুল্লাহে আলাইহি এই সমস্ত মুহাক্কেক ওলামাগন বলেছেন যে, কারামত ও মুজেজার মধ্যে পার্থক্য এটাই।


মুজেজা আবশ্যক কারামত আবশ্যক নয়: মুজেজা ও কারামাতের মধ্যে এটিও একটি পার্থক্য অর্থাৎ প্রতোক অলির জন্য কারামত হতে হবে এমন কোন আবশ্যকতা নাই। কিন্তু প্রত্যেক নবীর জন্য মুজেজা হওয়াটা আবশ্যক। কেননা অলির জন্য আবশ্যক নয় যে তাদের বেলায়তের ঘোষনা দেওয়া বরং ওলির জন্য এমনটি ও প্রয়োজন নাই যে সে নিজে জানুক যে সে  একজন আল্লাহর অলি, তাই দেখা যায় অনেক অলি আল্লাহ রয়েছে যারা সারা জীবন মিলে একটি কারামত ও প্রকাশ করেন নাই এবং অনেক অলি আল্লাহর বেলায় এমন ও হয়ে থাকে যে সে নিজেও জানে না যে সে নিজে একজন অলি বরং অন্য ছাহেবে কাশফ আউলিয়া কাশফের মাধ্যমে অবগত হন অমুক ব্যাক্তি আল্লাহর অলি এবং তার অলি হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ পায়। কিন্তু নবীর জন্য তার নবুয়তের ‘এলান বা প্রকাশ করা আবশ্যক এবং তার প্রমান যেহেতু মানুষের সম্মুখ্যে প্রয়োজন তাই মুজেজা দেখানো ছাড়া বিকল্প নাই, সেহেতু নবীদের মুজেজা প্রকাশ করা আবশ্যক বা লাজেম। আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত।


আউলিয়ায়ে কেরাম থেকে ছোট বড় অন্তত একশত প্রকারের কারামত প্রকাশ পায়


ইমাম নকি উদ্দীন নবকি (رحمة الله) স্বীয় কিতাব তবকাতের মধ্যে বর্ণনা করেছেন আমার ধারনা আউলিয়ায়ে কেরাম থেকে যত প্রকারের কারামত প্রকাশ পেয়েছে তার সংখ্যা একশত প্রকার থেকে বেশী হবে, এর থেকে বিশেষ করে পঁচিশ প্রকারের কারামত এখানে লেখা হয়েছে।


যেমন: মৃত্যুকে জীবিত করা এই কারামাতটি অনেক আউলিয়া থেকে প্রকাশ পেয়েছে যথা- আবু ওবাইদ বোরী (رحمة الله) যিনি নিজ সময়কালে প্রসিদ্ধ আউলিয়াদের মধ্যে অন্যতম। একদা তিনি জেহাদে অংশগ্রহনের জন্য তাশরিফ নিলেন এবং বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের সময় তার আরোহিত ঘোড়াটির মৃত্যূ হল। কিন্তু ওনার দোয়ায় হঠাৎ মৃত ঘোড়াটি জীবিত হয়ে দাঁড়াইয়া গেলেন। তিনি এর উপর আরোহন করে বাড়িতে পৌঁছল এবং খাদেমকে নির্দেশ দিল  দড়ি ও লেগাম ঘোড়া থেকে পৃথক করার জন্য আর তা করার সাথে সাথে ঘোড়া মৃত্যুবরণ করে ঢলে পড়ল। অনুরুপ শেখ মুফারবজ যিনি মিসরের মধ্যে ছোবাহ এলাকার অধিবাসী ছিলেন তার সামনে একটি পাখির বাচ্চা বুনা করে রাখা হল। তখন তিনি বললেন হে পাখি তুমি আল্লাহর হুকুমে পূনরায় জীবিত হয়ে চলে যাও, সে সময় এক নিশ্বাসেই পাখির বাচ্চাটি জীবিত হয়ে উড়ে চলে গেল। 


অনুরুপ হযরত শেখ ওহদিল (رحمة الله) নিজ মৃত বিড়ালকে আহবান করল নিজের কাছে আসার জন্য তখন সেটি মুহূর্তে দৌঁড়ায়ে শায়খের সামনে এসে উপস্থিত হল। ঠিক তেমনি ভাবে হুজুর সৈয়দুনা গাউছে পাক (رضي الله عنه) নিজ দস্তারখানায় (খাওয়ার বিছনায়) রান্নাকৃত মুরগী খেয়ে হাড় গুলি এক জায়গায় রাখলেন অত:পর হাড় গুলিকে বললেন হে মুরগি তুই ওই আল্লাহর নির্দেশে জীবিত হয়ে দাড়িয়ে যা। দাঁত দ্বারা চাবানো প্রায় মিশে যাওয়া হাড় হুজুরের জবানে পাক দিয়ে বাহির হতেই জীবিত মুরগী হয়ে চলাফেরা করতে লাগলেন।


অনুরূপ হযরত শেখ জিয়া উদ্দীন শাফি (رحمة الله) যিনি মাদ্রাসায়ে শফিয়ার শিক্ষক এবং মাদ্রাসার ছাদ থেকে ছুটে পড়ে মারা যাওয়া ছাত্রকে জীবিত করে দিয়েছিলেন। তেমনি প্রসিদ্ধ রয়েছে বাগদাদের মধ্যে চারজন বুযুর্গ এমন ছিল যারা মাতৃগর্ভ অন্ধদেরকে এবং কুরুছ রোগে আক্রান্তদেরকে আল্লাহর হুকুমে শেফা করে দিতেন এবং নিজ দোয়ার দ্বারা মৃত্যুদেরকে জীবিত করে দিতেন যারা হলেন- ১। হযরত আবু সায়াদ কুলুভী ২। হযরত শেখ বজায়েন সেতু ৩। হযরত শেখ আলী বিন আবি নছর হাশেমী ৪। হযরত শেখ আব্দুল কাদের জীলানী। (বাহজাতুল আছরার) 



হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)


প্রথম খলিফা মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলাভিষিক্ত আমিরুল মোমেনিন  হযরত সৈয়দুনা আবু বক্কর ছিদ্দীক (رحمة الله) যার প্রকৃত নাম মোবারক আব্দুল্লাহ উপনাম বা কুনিয়ত আবু বক্কর। উপাধি বা লকব ছিদ্দিক ও আতিক। তিনি কুরাইশ বংশের ছিলেন। তিনি এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথার শ্রবন ধারণ করতে পারতেন যা অতুল্য এবং অসংখ্য গুনের সমাহার ছিলেন। তিনি নবীদের পরে আউয়াল আখের সকল ইনছানের উপর মর্যদাবান ও শ্রেষ্ঠ পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহন কারী ছিলেন এবং হুজুর শাহিন শাহে দো-আ’লম (ﷺ) এর ওজিরে আজম ও পরামর্শক ছিলেন- উনার শান এভাবেই বলা যায়-


پروانے كو چراغ عنادل كو پھول بس   ٭ صديق اكبر كيلئے هے خداكا رسول بس


সকল নবী ও রাসূলগণের সরদার হুজুর আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর প্রখ্যাত সাহাবী ও প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপনাম হলো আবু বক্কর, আর এই “আবু বক্কর” শব্দের শাব্দিক অর্থের ব্যাপারে কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়। উক্ত অভিমতের সারসংক্ষেপ হল এই যে, بكر অর্থ হলো-কুমারী পুত: পবিত্র অবিবাহিত কন্যার পিতা, আবু বক্কর নাম এ কারণে হল যে, তিনি হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার পিতা, আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন পুত: পবিত্রা অবিবাহিতা কুমারী, যিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামে এর সাথে বিবাহ বন্ধনে  আবদ্ধ হন। আইয়ামে জাহেলীয়াতে হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه)এর নাম ছিল আব্দুল খাবা। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহাই ওয়াসাল্লাম এ নাম পরিবর্তন করে আব্দুল্লাহ রাখেন। তার পিতার নাম ছিল আবু কুহাফা। (আল্লামা মাহবুব আলম কর্তৃক বিষেশীত, ইসলামী ইনসাইপিডিয়া, পৃষ্ঠা-৩৭) 


মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী (رضي الله عنه) বলেন بكر শব্দের অর্থ-অধিকারী এবং প্রথম আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন তিনি ঈমান আনয়ন, হিযরত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পর ইন্তিকাল ইত্যাদি সব বিষয়ে প্রথম ছিলেন। (মিরআত, খন্ড-৮) 


হযরত আবু ছিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু ১৩ হিজরী ২২ জমাদিউস সানী, সোমবার ইন্তিকাল করেন। 


কারামাতঃ খাওয়ার মধ্যে অসাধারণ বরকত:


বোখারী শরীফের ৫০৬ পৃষ্ঠায় (প্রথম খন্ড) বর্ণিত রয়েছে যে হযরত আব্দুর রহমান বিন আবু বক্কর (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত। একদা হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) রাসূলে করীম (ﷺ) এর দরবার থেকে তিনজন মেহমানকে নিজ ঘরে পাঠালেন। কিন্তু তিনি নিজে রাসূলে করীম(ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত থেকে একান্ত আলোচনায় বিভোর ছিলেন এক পর্যায়ে তিনি রাত্রের খাওয়ার হুজুর (ﷺ) এর সাথে শেরে নিলেন। অনেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি ঘরে ফিরে আসলেন। তার স্ত্রী বললেন আপনি ঘরে মেহমানকে পাঠাইয়া কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন? হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক বললেন কেন এখন পর্যন্ত তোমরা মেহমানদেরকে খাওয়া দাওয়া দেন নাই? স্ত্রী ছাহেবা বললেন আমি খাবার পেশ করলাম কিন্তু তারা মালিকের অনুপস্থিতে খাবার গ্রহণকে অস্বীকৃতি জানালেন। এটি শুনে তিনি নিজ ছাহেবজাদাহ হযরত আব্দুর রহমান (رضي الله عنه) এর উপর অনেক অনেক রাগান্বিত ও নারাজ হলেন এবং সে ভয় ভীতিতে নিশ্চুপ হয়ে পড়লেন এবং তার সামনে আসতেছে না অত:পর রাগ যখন স্বাভাবিক হল তখন তিনি সহ মেহমানদের সাথে বসলেন এবং সকল মেহমান নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী পেট ভরে খাবার খেলেন। 


সেই মেহমানদের বর্ণনা: 


আমরা যখন খাওয়ার প্লেট থেকে এক মুঠ বা এক গ্রাস উঠাতাম তখন যতটুকু খাবার হাতের মুঠুতে আসত তার চেয়ে অধিক খাবার বর্তনের নিচে থেকে আশ্চার্য্য ভাবে ওঠে ভরপুর হয়ে যেত এবং যখন আমরা খাবার থেকে বিরত হলাম তখন প্লেটে খাবার কম হওয়ার বিপরীতে প্লেটে ভর্তি খাবার যা পূর্বের চেয়ে বেশি হল। হযরত ছিদ্দিক আকবর (رضي الله عنه) নিজেও আশ্চার্য্য হয়ে বিবি ছাহেবাকে বললেন এই কি ব্যাপার প্লেটে খাবার পূর্বের চেয়ে আরো অধিক মনে হচ্ছে। বিবি ছাহেবা কসম খেয়ে বললেন খাবার খেয়ে বর্তন ফিরে আসার মধ্যে পূর্বের চেয়েও তিনগুন খাবার বেড়ে গেছে। অত:পর তিনি সে খাবার গুলি নিয়ে মোস্তফা (ﷺ) এর দরবারে নিয়ে আসলেন যখন সকাল হল তখন হঠাৎ মেহমানদের কাফেলা দরবারে নবী (ﷺ) এর মধ্যে উপস্থিত হল। যাদের মধ্যে বার গোত্রেরে বার জন নেতাও ছিল এবং প্রতোক নেতার সাথে অনেক সঙ্গি ছিল তারা সবাই সে খাবার গুলি খেল এবং কাফেলার সকল লোক পেট ভরে খাবার গুলি আহার করল কিন্তু এর পরেও সেই বর্তন থেকে খাবার শেষ করতে পারলনা। (বোখারী শরীফ প্রথম খন্ড ৫০৬ পৃষ্ঠা)


মায়ের গর্ভে কি সন্তান তা আগেই বলে দেওয়া: 


তারিখুল খোলফার মধ্যে হযরত আরওয়া বিন জুবাইর (رحمة الله) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমিরুল মূমেনিন হযরত আবু বক্কর (رضي الله عنه) মরিজে ওফাত অর্থাৎ ওফাত নিকটবর্তী অসুস্থতায় নিজ ছাহেবজাদী উম্মুল মূমেনিন আয়েশা ছিদ্দীকাহ (رضي الله عنه)কে ওছিয়ত করার সময় বললেন হে আমার স্নেহের মেয়ে আজ পর্যন্ত আমার যা যা সম্পদ রয়েছে তা আমার উত্তরসুরী বা ওয়ারীসদের সম্পদ হয়ে পড়বে এবং আমার সন্তানদের মধ্যে তোমার দুই ভাই আব্দুর রহমান ও মোহাম্মদ এবং তোমার দুই বোন। সুতরাং তোমরা কোরআন মজিদের আদেশ মোতাবেক নিজ নিজ অংশ নিয়ে নিবা। ইহা শুনে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) আরজ করলেন। আব্বাজান আমার তো শুধু এক বোন আছমা আরতো কোন বোন নাই? তিনি বলেন আমার স্ত্রী হারেজ যিনি গর্ভবর্তী তার গর্ভে একজন মেয়ে; আর সে তোমার দ্বিতীয় বোন। অতএব পরবর্তিতে মেয়ে জন্ম নিল যার নাম রাখা হল উম্মে কুলসুম।


ইমাম তাজউদ্দীন ছবকী (رحمة الله) এই হাদিসের ব্যাপারে লিখতে গিয়ে বলেন এই হাদিস থেকে আমিরুল মুমেনীন হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) এর দুটি কারামত প্রমানিত যথা:-


১। তাঁর ওফাত শরীফের পূর্বে তিনি নিজেই অবগত হলেন যে এই অসুস্থতায় নিশ্চয় তাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে সে জন্য তিনি আছিয়ত করার সময় এমন বলেছেন যে, আজ থেকে আমার ধন সম্পদ যা কিছু রয়েছে সবগুলি আমার ওয়ারীসদের মাল হয়ে গেছে।


২। গর্ভবতী মায়ের গর্ভে ছেলে না মেয়ে তা বলে দেওয়া অথচ প্রকাশ্য এই দুনোটির জ্ঞান যা নি:সন্দেহে নবী করিম (ﷺ) এর স্থলাভিষিক্ত হযরত সৈয়দুনা আমীরুল মুমেনিন ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) এর দুটি বরকতময় বড় কারামত।


অত্র হাদিস থেকে অবগত ও উপকারীতা: 


আল্লামা তাজউদ্দীন ছবকী (رحمة الله) এর তাকরীর ও লিখনী থেকে অবগত হওয়া যায় যে, আল্লাহর নিকট যে জ্ঞান নির্দিষ্ট যা সুরা লোকমানের মধ্যে আয়াত দ্বারা বুঝা যায়। যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া এই কথার উপর কেউ জ্ঞান রাখেনা যে মায়ের গর্ভে কি সন্তান? কিন্তু এদিকে আল্লামা তাজউদ্দীন ছবকী (رحمة الله) এর লিখনী থেকে দেখা যায়, সেই জ্ঞান হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) যিনি রেছালতে মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলভিষিক্ত তাই তার কাছেও অর্জিত। অত:পর উল্লেখিত আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেনা মায়ের গর্ভে কি? ছেলে না মেয়ে এবং আল্লাহ জাল্লাশানুহু অবগত করানো ব্যতীত নিজ আকল বা জ্ঞান দ্বারা জানা যাবেনা মায়ের গর্ভে কি? কিন্তু আল্লাহ আলীম ও খাবির যদি কাউকে জানাইয়া দেন তাহলে তাঁর কাছেও সেই জ্ঞান এসে যায়। যেমনটি প্রমানিত নবীগণ ওহীর মাধ্যমে এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এর উম্মতদের মধ্যে যারা অলির মর্যদা অর্জন করেছেন তাদের কাশফ ও কারামতের মাধ্যমে এবং এলহাম ও এলকার নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অবহিত করানোর মাধ্যমে তারাও জানতে পারেন যে, মায়ের গর্ভে ছেলে না মেয়ে? নিশ্চয় মনে রাখতে হবে এবং অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ জাল্লাশানুহুর এলম বা জ্ঞান যা সত্তাগত, চিরন্তন ও অনন্ত চিরস্থায়ী এবং অসীম। আর নবীগন ও আউলিয়াগন (রিদুওয়ানুল্লাহে আলাইহিম) এদের এলম বা জ্ঞান হচ্ছে প্রাপ্ত, অস্থায়ী, সীমিত-আল্লাহু আকবর! কোথায় আল্লাহ জাল্লাশানুহুর এলম? আর কোথায় সৃষ্টি জীবের এলম? দুনোটির মধ্যে অনেক বিশাল ব্যবধান বা র্পাথক্য রয়েছে।


অন্তর্দৃষ্টি তথা নজরিয়ার মাধ্যমে কারামত


হুজুর সৈয়দুল আলম (ﷺ) এর বেছাল শরীফের পরে যে সমস্ত আরবের গোত্র ইসলাম থেকে মুরতেদ হয়ে ফিরে গিয়েছেন তাদের মধ্যে কবিলায়ে কিনদাহ ও ছিল। অত:পর হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) ওই কবিলার লোকদের সাথেও যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এবং ইসলামের যুদ্ধালসৈনিক সেই কবিলার প্রধানকে যার নাম আশআশ বিন কাইছ গ্রেফতার করলেন এবং লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে তাকে দরবারে খেলাফত অর্থাৎ আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) এর দরবারে পেশ করলেন। আমিরুল মূমেনিনের সামনে আসা মাত্রই অর্থাৎ ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) এর দৃষ্টি তার প্রতি দেওয়া মাত্রই সে নিজ অপরাধ, অন্যায় ইত্যাদি স্ববিস্তারে স্বীকার করল এবং দ্রুত তাওবা করতে লাগল এবং অন্তর দিয়ে ইসলাম গ্রহন করল। হযরত ছিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) অত্যান্ত আনন্দীত হলেন এবং তার দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দিলেন এবং নিজ বোন হযরত উম্মে ফরোওয়াহ (رضي الله عنه) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে, বিভিন্ন প্রকারের সাহায্য অনুগ্রহ এবং দয়া পরায়ন হয়ে মেহেরবানি দ্বারা সম্মানিত করেছেন। এদিকে দরবারে উপস্থিত সকলেই আর্শ্চায্য ও অবাক হয়ে পড়লেন  মুরতাদদের দলপতি এবং যিনি মুরতাদ হয়ে আমীরুল মুমেনিনের সাথে বিরুদ্ধ আচরন ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং মুসলমান অনেক মুজাহিদের রক্ত প্রবাহিত করেছে সেই রক্ত পিপাসু কিংবা বিরোধিতাকারীকে এবং উনার জন্য ও ভয়ংকর ব্যক্তিকে কেন আমিরুল মূমেনীন এত সম্মানিত করতেছেন? কিন্তু যখন পরবর্তিতে আশীশ বিন কাইছ (رضي الله عنه) সত্যিকার ইসলামী মুজাহেদ হয়ে ইরাকের যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে সাহসিকতার সহিত যুদ্ধকার্য পরিচালনা করল এবং ইরাক জয়ের তাজ তাঁর শিরে দেওয়া হল এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর খেলাফতের সময়কালে কুলুছিয়া য্দ্ধু এবং মাদায়েন কিল্লা ইত্যাদি যুদ্ধে জীবন বাজির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়েছে যা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে,তাকে দেখে সকলেই এমনটি ধারণা করতে লাগল যে নিশ্চয়ই তার এই পরিবর্তন ও আন্তরিকতা হযরত সৈয়দুনা ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর দৃষ্টি বা নজরের প্রতিফলন যা হযরত আশআশ (رضي الله عنه) এর জাত বা সত্তার মধ্যে নিহিত অর্থাৎ যে নজরিয়ার মাধ্যমে হযরত আশআশের আমূল পরিবর্তন ঘটায়েছে আর তা নি:সন্দেহে ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه)এর নজর বা দৃষ্টি অর্থাৎ এটি তাঁর কারামাত। (এজালাতুল খাফা) 


এই জন্য প্রসিদ্ধ ছাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাছউদ (رضي الله عنه) সাধারণ ভাষায় এটিই বলতেন যে, আমার জানা মোতাবেক তিন জন প্রখ্যাত সম্মানিত ব্যক্তি জমিনের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে,যারা অনেক উচ্চ পর্যায়ের ফেরাছত বা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। অর্থাৎ এর মধ্যে উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে। যথা :


১। আমীরুল মোমেনিন হযরত আবু বক্কর ছিদ্দীক (رضي الله عنه) যার অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে অবগত হতে পেরেছেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর কামালাত ও গুণাগুণ, পরিপূর্ণতা ইত্যাদি সম্পর্কে যে কারণে তিনি তাঁর পরবর্তিতে উনাকেই খলিফা হিসাবে নির্বাচিত করেছেন, যাকে দুনিয়ার সকল জ্ঞানীরা উত্তম সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছেন।


২। হযরত মুসা (আলাইহিছ ছালাম) এর সম্মানিত স্ত্রী হযরত ছফুরা (رضي الله عنه) যিনি বাল্যকালে হযরত মুসা (আলাইহিছ ছালাম) এর সুন্দর ভবিষ্যতকে নিজ ফেরাছতের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলেন,তাই নিজ পিতা হযরত শোয়ায়েব’কে আরজ করলেন আপনি ওই ছেলেটিকে ছাকর হিসাবে ঘরের মধ্যে নিয়োগ দেন। আর তখনটি তা ছিল যখন হযরত মুসা (আলাইহিছ ছালাম) একাকি ফেরাউনের অত্যাচারে, নির্যাতনে জীবন নাশের হুমকির সম্মুখিন হয়ে হিজরত করে মিসর থেকে মাদায়েন পৌঁছেছিলেন। অতঃপর হযরত শোয়ায়েব (আলাইহিছ ছালাম) তাঁকে নিজ ঘরে রাখলেন। পরক্ষণে যখন তার চারিত্রিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও তাঁর কামালিয়ত দেখতে পেলেন হৃদয়গ্রাহী হয়ে নিজ কন্যা হযরত বিবি ছফুরার সাথে বিবাহ দিলেন এরপর আল্লাহু জাল্লাহশানুহু হযরত সৈয়দুনা মুসা (আলাইহিছ ছালাম)কে নবুয়াত ও রেছালতের মহান জিম্মা দান করেছেন। 


৩। আজিজ মিশর তিনি তার স্ত্রী হযরত জোলাইখা (রাহমাতুল্লাহে আলাইহা) কে নির্দেশ দিলেন যে, যদিও হযরত ইউছুফ (আলাইহিছ ছালাম) আমার ক্রয়কৃত গোলাম হয়ে আমার ঘরে এসেছে কিন্তু সাবধান তুমি একে ইজ্জত সম্মানের সহিত অত্যন্ত গভীর দৃষ্টি সহকারে তাকে দেখা শোনা করবা। কেননা আজিজ মিশরী নিজ ফেরাছতের মাধ্যমে হযরত ইউছুফ  এর সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে বুঝে নিয়েছিলেন যে ওনি আজকে গোলাম কিন্তু একদিন মিশরের বাদশাহ হবে। (তারিখুল খোলাফা এজালাতুল খাফা) 


কায়ছারের রুমের দুর্গ কালিমায়ে তৈয়্যবার আওয়াজে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়া:


হযরত ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর কারামাত পর্যালোচনায় এটিও পরিলক্ষিত হয় যে ওনার খেলাফতের সময়কালে কাইছারে রুমের যুদ্ধের জন্য মুজাহেদদের একটি ছোট্ট দল হযরত আবু ওবাইদাহ (رضي الله عنه) এর নেতৃত্বে মুসলমানদের পক্ষ হয়ে রওনা হলেন, মুজাহেদগণ কাইছারে রুমের বাহিনীর বিপরীতে অতি ছোট্ট অর্থাৎ ওদের তুলনায় খুবই স্বল্প কিন্তু এই ইসলামী বাহিনী যখন রুমি দূর্গের কাছাকাছি  এসে উপস্থিত হলেন এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর স্লোগান দিতে লাগলেন। তখন কালেমায়ে তৈয়্যবার আওয়াজে কাইছারে রুমের দূর্গে এমন কম্পন হতে লাগল যাতে মনে হল পুরা এলাকার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হল, এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো এলাকা জয় হল তথা মুসলমানদের আয়ত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিদ্দিকে আকবর এর অনেক বড় শানদার কারামাত কেননা তিনি নিজেই  নিজ হাতে ঝান্ডা বেঁধে দিলেন এবং তখনি জয়ের সুসংবাদ দিলেন এবং সেই যুদ্ধা বাহিনীকে নিজে অগ্রসর হয়ে রওনা করাই দিলেন। 


রক্তের মধ্যে প্রস্রাব করার বিষয়ে অবগত:


এক ব্যক্তি হযরত সৈয়দুনা আমীরুল মোমেনিন হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর নিকট আরজ করলেন হে আমীরুল মোমেনিন  আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি রক্তের মধ্যে প্রস্রাব করতেছি। এতে তিনি (আমীরুল মোমেনিন ) অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং বললেন তুমি নিশ্চয় নিজ স্ত্রীর সহিত হায়েজ অবস্থায় সহবাস করেছ। এই গুনাহ থেকে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং এ থেকে লজ্জা কর। (তারিখুল খোলাফা)


সালাম দিয়ে দরজা খুলে যাওয়া:


যখন ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর জানাযা মোবারক রাওজায়ে আকদাছ (রাসূলে কারীম (সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর রাওজা শরীফে) এর নিকট পৌঁছল তখন লোকেরা আরজ করল। আসচ্ছালাতু আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ হাজা আবু বক্কর (رضي الله عنه)  অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ এটি আপনার আবু বক্কর এই আরজ পেশ করার সাথে সাথে রাওজায়ে আনওয়ারের বন্ধ থাকা দরজা দ্রুত এমনিতে নিজে খুলে গেল এবং উপস্থিত সকলেই রাওজায়ে মোস্তফা (ﷺ) থেকে অর্থাৎ হায়াতুন্নবী জিন্দাহ নবীর কবর শরীফ থেকে অদৃশ্য ভাবে একটি আওয়াজ আসল যে- “বন্ধুকে বন্ধুর দরবারে প্রবেশ করায়ে দাও।” (তাফসিরে কবির ৫ খন্ড ৪৭৮ পৃষ্ঠা) 


দাফনের ব্যাপারে গায়বী তথা অদৃশ্য আওয়াজ আসা:


হযরত আয়শা ছিদ্দিকা (رضي الله عنه)  থেকে বর্ণিত হযরত সৈয়দুনা আবু বক্কর ছিদ্দিক (رضي الله عنه)এর ওফাত শরীফের পর ছাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হল যে উনাকে কোথায় দাফন করা হবে। কেউ কেউ বলতেছেন তাঁেক শোহাদায়ে কেরামের কবরস্থানে দাফন করা হবে। আবার কেউ মত দিচ্ছেন জান্নাতুল বাকি শরিফের মধ্যে দাফন করার জন্য। কিন্তু আমার অন্তর চাই উনাকে আমার সেই হুজুরায় যেথায় প্রিয় নবী (ﷺ) আরাম করতেছেন, সেখানে দাফন করার জন্য। এভাবে বিভিন্ন আলাপচারিতা চলতেছে এরই মধ্যে হঠাৎ আমার মধ্যে তন্দ্রার ভাব বৃদ্ধি পেল এক পর্যায়ে আমি আর বসে থাকতে না পেরে শুয়ে পড়লাম, এতে আমার ঘুম এসে গেল এবং আমি স্বপ্নের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম কে জানি বলতেছেন-                                                        


“বন্ধুর সাথে বন্ধুকে মিলে দাও।” ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর আমি লোকদেরকে সেই আওয়াজ সম্পর্কে যখন বর্ণনা করলাম তখন লোকজন বলল সেই আওয়াজ আমরাও শুনতে পেয়েছি এবং মসজিদে নববী শরীফের মধ্যে অনেক লোকের কানের মধ্যে এই আওয়াজ আসল। এরপর সমস্ত ছাহাবায়ে কেরাম এ কথার উপর ঐক্যমত হলেন যে, ছৈয়দুল কাউনাইন (ﷺ) এর কবরে আকদাছ এর ভিতরের তাঁর স্থান হবে। তাই সেভাবে হুজুর (ﷺ) এর হাতের পাশে দাফন হয়ে স্বীয় হাবিবের অতি নিকটবর্তি হওয়ার মহান সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। (সাওয়াহেদুন নবুয়ত)


ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه)এর কাশফ ও ফেরাছতের মাধ্যমে ভবিষ্যত অবগত:


হুজুর সৈয়্যদুল মুরছালিন (ﷺ) এর ওফাত শরীফের পূর্ব থেকে অনেক গোত্রের লোকেরা মুরতেদ হওয়ার জন্য তৈরী হতে লাগলেন এবং সেটি বেছাল শরীফের পর আরো প্রকট হতে লাগল সেই এমন কঠিনতম সময়ে হযরত ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) খেলাফতের জিম্মা নিলেন এবং সাথে সাথে মুছাইলামাতুল  কাজ্জাব সহ অনেককে শেষ করে দেওয়া হয়েছে যারা নবুয়তের দাবিদার ছিল এবং ইসলামী বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার করছিলেন এবং তাদেরকে নির্মূল করে দিয়েছেন। (তারিখুল ইসলাম)



হযরত সৈয়দুনা ওমর বিন খাত্তাব (رضي الله عنه)


দ্বিতীয় খলিফা অর্থাৎ মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলভিষিক্ত হযরত ওমর বিন খাত্তাব তাঁর কুনিয়ত বা উপনাম আবু হাফচ লকব ফারুকে আজম তিনি অনেক উচ্চ মর্যাদায় তাঁর বাপ দাদার পূর্ব পুরুষদের মধ্যে অর্থাৎ উপরের পুর্ব পুরুষদের অষ্টম ব্যক্তির সাথে রাসূলে করিম (ﷺ) এর বংশের সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে। তিনি ওয়াকিয়ায়ে ফিল বা হাতির ঘটনার তের বৎসর পর মক্কায়ে মোকাররমায় জন্মগ্রহন করেন। নবুয়ত প্রকাশের ৬ষ্ঠ বৎসর পর ২৭ বৎসর বয়সে ইসলামের দাওয়াত গ্রহন করে সৌভাগ্যের অধিকারী হন। যখন তাঁর পূর্বে সর্বমোট ৩৯ জন লোক ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করাতে মুসলমানগন অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন। তাদের অনেক বড় একজন সাহায্যকারী মিলে গেছে। এমনকি হুজুর রহমতে আলম (ﷺ) মুসলমানদের জমাতকে সাথে নিয়ে খানায়ে কাবায় মসজিদের মধ্যে প্রকাশ্যে নামাজ আদায় ফরমালেন । তিনি সকল ইসলামী জিহাদে মুজাহেদের ভূমিকায় কাফেরদের সাথে লড়াই চালাতেন এবং হুজুর (ﷺ) এর ইসলামী সমস্ত আন্দোলন এবং কল্যানকামী যুদ্ধসহ সকল অনুষ্টানে হুজুর সুলতানে মদিনা (ﷺ) এর ওজির ও পরামর্শক হিসাবে বিশেষ অন্তরঙ্গ আন্তরিকতা দিয়ে উপকারিতার ভূমিকা রেখেছেন। আমিরুল মোমেনিন  হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (رضي الله عنه) নিজের পরে তাঁকেই নিযুক্ত করলেন এবং দশ বৎসর ছয় মাস চাঁর দিন তিনি খিলাফতের সেই মহান মর্যাদাবান দায়িত্বে থেকে মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলাভিষিক্তের গুরু দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সুন্দর সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। পরিশেষে ২৬ জিলহজ্জ্ব ২৩ হিজরীতে বুধবার দিনের ফজরের নামাজের মধ্যে আবু লুওলু ফিরোজ মজ্ছি কাফেরদের মধ্যে অন্যতম সে আমীরুল মুমেনিনের পেট মোবারক দিয়ে খঞ্জর মারলেন এবং তিনি তাতে খুব বেশি জখম হয়ে তৃতীয় দিনে শাহাদাতের মর্যাদা অর্জন করে সৌভাগ্যের অধিকারী হলেন। ওফাতের সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ (তেষট্টি ) বৎসর। হযরত ছোহাইব (رضي الله عنه) তাঁর জানাযার নামাজ পড়ায়েছেন। রাওজায়ে আনওয়ারের মধ্যে খলিফাতুল মুসলেমীন হযরত ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর হাতের কান্দের পার্শ্বে দাফন করা হয়েছে। (তারিখুলখোলফা এজালাতু খাফা)  


জানিয়ে রাখা আবশ্যক যে, সমস্ত জাহানের মুসলমানগন ইসলাম অন্বেষণকারী আর ইসলাম স্বয়ং অন্বেষণকারী হলেন শুধু ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর। আল্লাহই অধিক জ্ঞ্যাত। 


কারামাতঃ কবরবাসিদের সাথে কথোপকথন 


আমিরুল মোমেনিন হযরত সৈয়দুনা ফারুকে আজম (رضي الله عنه)  একদা এক যুবকের কবরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং বললেন হে অমুক! আল্লাহপাক সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ওয়াদা করেছেন।


যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট ভয় করে তার জন্য দুটি জান্নাত রয়েছে। হে যুবক বল দেখি তোমার কবরের মধ্যে কি অবস্থা? সেই যুবকটি কবর থেকে তাঁর নাম নিয়ে আহবান করতে লাগলেন এবং উচ্চস্বরে দুইবার উত্তর দিলেন আমার প্রতিপালক আমাকে এই দুই জান্নাত প্রদান করেছেন। (হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন বেহলায়ে হাকেম) 


মদিনা শরীফ থেকে আওয়াজ নাহাওয়ান্দ পর্যন্ত পৌঁছা:


আমিরুল মোমেনিন  হযরত ওমর ফারুক আজম (রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু) হযরত ছারিয়া (رضي الله عنه) এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী নাহাওয়ান্দ এলাকার মধ্যে জিহাদের জন্য রওনা করালেন এবং হযরত ছারিয়া যথা নিয়ম জিহাদের মধ্যে নিয়োজিত ছিলেন। একদিন হঠাৎ হযরত ওমর ফারুকে আজম মসজিদে নববী শরিফের মধ্যে মিম্বর মোবারকের উপর খোৎবা প্রদান কালে আকস্মিক বলে উঠলেন- ছারিয়া পাহাড়ের দিকে নিজ পৃষ্ঠ করে রাখ। এতে উপস্থিত মসজিদের সকলে হতবাক হয়ে পড়লেন। যেহেতু হযরত ছারিয়া তো এখনো নাহাওন্দের মাটিতে যুদ্ধে ব্যস্ত এদিকে তিনি মদিনায়ে মোনাওয়ারায় যা অনেক অনেক মাইল দূরত্বে অথচ আমিরুল মোমেনিন  আজ তাঁকে কেমনে ডাক দিলেন এবং তা কিভাবে?


কিন্তু যখন নাহাওয়ান্দ থেকে হযরত ছারিয়ার কাফেলার একজন দূত এসেছে, তখন তারা বলতে লাগলেন যুদ্ধের ময়দানে যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলতেছে তখন আমরা দুর্বল বা পরাজয়ের দিকে চলে যাচ্ছি এরই মধ্যে আছানক এক বিকট আওয়াজ আসল যাতে এটাই বলতে লাগল হে ছারিয়া তুমি পাহাড়ের দিকে নিজ পৃষ্ঠ করে নাও। তখন হযরত ছারিয়া (رضي الله عنه) বললেন মনে হয় নিশ্চয় এটি হযরত আমিরুল মোমেনিন ফারুকে আজম (রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু)এর আওয়াজ। সাথে সাথে তিনি সকল সৈন্য বাহিনীকে পাহাড়ের দিকে পৃষ্ঠ করে সারিবদ্ধ হওয়ার জন্য আদেশ দিলেন। এরপর যে যুদ্ধ হল কাফেরদের বিরুদ্ধে তা সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম ও আশ্চার্য্য জনক। রোম, জর্দানের মধ্যে ইসলামী লশকর বা সৈন্যরা বাতেলদেরকে খুব শোচনীয় পরাজয় করালেন এমনকি তারা ইসলামী সৈন্যদের ভয়ানক হামলা সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। তাতে ইসলামী সৈন্যগণ জয়ের ঝান্ডা উড্ডয়ন করলেন।  (মেশকাত শরীফ বাবুল কোরামত তারিখুল খোলাফা হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন।)


অতএব  এ থেকে অবগত হওয়া যায় যে হযরত ওমর (رضي الله عنه) এবং তার নিযুক্ত সিপাহ সালাহ বা সেনা প্রধান হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) দুনো সম্মানিত ছাহাবার কারামত। কেননা মদিনায়ে তৈয়্যবাহ থেকে নাহাওয়ান্দ পর্যন্ত শত শত মাইল দূরত্ব সেই দূরত্বে আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া এটি হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর কারামত। আর এদিকে ফারুকে আজমের আওয়াজ শত শত মাইল দুর থেকে শুনতে পাওয়া এটি হযরত সারিয়াহ (رضي الله عنه) এর কারামত। “দ্বিতীয় ব্যাপার” মদিনায়ে মোনাওয়ারা থেকে শত শত মাইল দূরে নাহাওয়ান্দের ময়দানে যুদ্ধের অবস্থা দেখা ও সবকিছু অবগত হওয়া এবং শুধু তাই নয় মুসলমানদের সমস্যা কোথায় এবং ত্রুটি বিশ্চ্যুতি সমুহ মিম্বর শরীফে দন্ডায়মান হয়ে পরোক্ষভাবে অবলোকন করা এবং পরে তা সমাধান মুলক আওয়াজ দেওয়া ইত্যাদি এসব কিছু ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর কারামত ও কৃতিত্ব। এ থেকে পুরাপুরি বুঝা গেল রাসূলে কারীম (সালল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের মধ্যে যারা আউলিয়া তাদের শুনা ও দেখা সাধারন মানুষের মত নয়। বরং তাদের দেখা শুনার মধ্যে অর্থাৎ অন্যের আওয়াজ শুনার ও দেখার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিশেষ শক্তি দান করে থাকেন।


হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর হুকুমত বাতাসের উপরে ছিল। কেননা একজনের আওয়াজ আরেকজনের নিকট পৌঁছে দেওয়ার কাজ প্রকৃতপক্ষে বাতাসের তাই এত দূরত্বের মধ্যে ও আওয়াজ পৌঁছে দিয়েছে বাতাস। হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ তায়ালার হয়ে থাকে তার সকল কর্মই আল্লাহর কর্মে হয়ে যায় অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয়। 


যারা আল্লাহ তায়ালার অনুগামী হয়ে যায় তখন আল্লাহ তায়ালা তার সকল কিছুর উপর সাহায্যকারী হয়ে যায়।


হযরত শেখ সাদী (رحمة الله) বলেছেন-


تو ھم گردن ازحكم داور پيچ  ٭ كه گردن نه پيچدزحكم تو ھيچ


অর্থাৎ তুমি আল্লাহর হুকুম থেকে অমনোযোগী হয়োনা-যাতে দুনিয়ার কোন বস্তু তোমার হুকুম থেকে অমনোযোগী না হয়।


নদীর নামে চিঠি দেওয়া:


এজালাতুল খাফা ওয়া হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীনের এক বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এর খেলাফতের সময়কালে একদা মিসরের নীল দরিয়া শুকাইয়া গিয়াছে মিসরের সকল অধিবাসী গন মিসরের গর্ভনর হযরত ওমর বিন আছ (رضي الله عنه) কে আবেদন করলেন! মিসরের সকল কিছুর সৃষ্টির উৎস নীল নদীর পানি,অর্থাৎ মিসরের ক্ষেতপালাসহ সবকিছু নীল নদীর পানির উপরেই ভরসা। তাই আমাদের এখানকার প্রথা রয়েছে যে,যখন এই নদী শুকাইয়া যায় তখন আমরা সবাই একজন সুন্দর আকৃতির ছেলেকে জীবিত নজরনা বা উপটৌকন হিসাবে নদীর মাঝখানে মাটির ভিতরে দিয়ে দিতে হয় তাতে নদীর পানি প্রবাহিত হয়। এখন আমরা কি করব? আপনার পরামর্শ চায়। অবাক সুরে হযরত ওমর বিন আছ (رضي الله عنه) উত্তর দিলেন- আরহামুর রাহেমিন এবং রহমাতুলি­ল আলামিনের রহমযুক্ত দ্বীন আমাদের সেই শান্তিময় ইসলাম। তাই কখনো কখনোই এই জুলম বা ব্যভিচার কিংবা দয়াহীন কাজের অনুমতি দেয় না,অতএব তোমরা অপেক্ষা কর,আমি সম্মানিত খলিফার নিকট চিঠি লিখে অবগত করাই দিতেছি,ওখান থেকে যেই নির্দেশ আসবে আমি তার উপরেই আমল করব। অতএব গভর্নর সাহেবের চিঠি নিয়ে একজন দূত মদিনায়ে মোনাওয়ারায় খলিফাতুল মুসলেমীনের দরবারে উপস্থিত হলেন। আমিরুল মুমেনীন গভর্নরের চিঠি পড়ে নীল দরিয়ার (নদীর) নামে একটি চিঠি লিখলেন যার মূল বক্তব্য ছিল- বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম হে দরিয়ায়ে নীল! তুমি যদি নিজের ইচ্ছাই প্রবাহিত হও তাহলে আমার নিকট তোমার কোন প্রয়োজন নাই আর যদি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নির্দেশে প্রবাহিত হও তাহলে এখনি আল্লাহর হুকুমে সহসাত প্রবাহিত হয়ে যাও।


হযরত ওমর (رضي الله عنه) এই চিঠিটি সেই দূতের নিকট প্রদান করে বলল আমার এই চিঠিটি নীল  দরিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিবে অত:পর তার ফরমান মোতাবেক মিছরের গর্ভনর সেই চিঠিটি শুস্ক হয়ে যাওয়া নীল দরিয়ায় দাফন করে দিলেন। আল্লাহর অলৌকিক শান খলিফাতুল মুসলেমীনের চিঠিটি  নীল দরিয়ার মধ্যে দাফন করার সাথে সাথেই নদীটিতে পানি প্রবাহিত হয়ে পড়ল। (এজালাতুল খাফা)


এ থেকে বুঝা গেল তার হুকুমত নদীর পানির মধ্যেও ছিল। তাই নদীর পানি প্রবাহিত হওয়াটাই তার নির্দেশকে যথাযথ মান্য করার পর্যায়ে।


চাদর দেখেই আগুন নিভে যাওয়া: 


এজলাতুল খাফা দ্বিত্বীয় অংশে বর্নিত রয়েছে যে,আমিরুল মুমেনীন হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর খেলাফতের সময়কালে এক সময় হঠাৎ এক পাহাড়ের গুহায় ভয়ানক এক আগুনের অবতারনা হল যে আগুনে আশে পাশে সবকিছুকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিচ্ছিল এবং একে নিভানো সম্ভব হচ্ছে না। যখন লোকেরা খলিফার দরবারে এ ব্যাপারে আপত্তি পেশ করল তখন আমিরুল মোমেনিন (رضي الله عنه) হযরত তামিম দারি সাহাবি (رضي الله عنه) কে নিজের ছাদর মোবারকটি দিয়ে বলল। তুমি আমার এই চাদরটি নিয়ে আগুনের কাছে যাও, যখন সেই পবিত্র চাদরটি নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং যখনেই আগুনের নিকটবর্তী পৌঁছলেন তখন দেখাদেখি সেই আগুন নিভে যাওয়া অরম্ভ করল এবং পিছনের দিকে হঠতে লাগল অর্থাৎ গুছিয়ে আসতেছে শেষ পর্যন্ত সেই আগুন গুহার ভিতরে চলে গেল এবং যখনই চাদরটি নিয়ে গুহায় প্রবেশ করলেন তখন সেই আগুন সম্পুর্ণরূপে চলে গেল এবং এরপরে আর কখনও প্রকাশ পেল না


অতএব অবগত হওয়া যায় যে পানি বাতাস ইত্যাদির ন্যায় আগুনের উপরও মোস্তফা (ﷺ) এর খাদেমরা তথা গোলামের হুকুমত চলতে থাকে এবং আগুন পর্যন্ত তাদের আনুগত্যশীল। আল্লাহু আকবর! ছাহাবায়ে কেরামদের শান কোরামত মর্যাদা যা বর্ণানাতীত। 


বেত্র প্রহারে ভূমি কম্পন বন্ধ হয়ে যাওয়া: 


হুজ্জাতুলল্লাহে আলাল আলামিন দ্বিতীয় খন্ডে ও এজালাতুল খাফা দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইমামুল হারামাইন নিজ কিতাব “আশ শামেল” এর মধ্যেও বর্ণনা করেছেন, একদিন মদিনায়ে মোনাওয়ারায় ভুমিকম্পন এসেছে এবং জমিন খুব অতি মাত্রায় কম্পন করতে লাগল এবং নড়া ছড়া করতে লাগল সৈয়্যদুনা আমিরুল মোমেনিন  হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) এতে জালালীয়তের মধ্যে এসে পড়ল রাগান্বিতবস্থায় জমিনের মধ্যে এক বেত্র প্রহার করলেন এবং উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন قِـرِّى اَلَمْ اَعْدِلْ عَلَيْكَ হে জমিন শান্ত হয়ে যাও, কেন আমি কি তোমার উপর ন্যায় নীতি করতেছিনা? তার এই উম্মাদনা ও জালালিয়তময় শানের বক্তব্য শুনা মাত্রই জমিন স্থিতিশীল হয়ে পড়ল এবং কম্পন বন্ধ হয়ে পড়ল।


এ থেকে অবগত হওয়া যায় যে উনার হুকুমত, রাজত্ব যেমনিভাবে বাতাস, পানি, আগুনের মধ্যে চলেছিল তেমনিভাবে জমিনের মধ্যেও চলছে। অর্থাৎ হুকুমতে ফারুক আগুন, বাতাস, পানি ও মাটি সবকিছুর উপর মর্যাদার সহিত বিস্তৃত ছিল।      


জ্ঞাত হাওয়া চাই যে আনাছেরে আরবা বা উল্লেখিত সেই চার বস্তুর উপর আল্লাহর নৈকট্যবানদের তথা আউলিয়ায়ে কামেলিনদের রাজত্ব, হুকুমত প্রমাণিত হল, তাই যা কিছু এই আনাছেরে আরবার সাথে সংযুক্ত অর্থাৎ এই চার থেকে সৃষ্টি সবের উপর ছাহাবায়ে রাসূল (ﷺ) ও আউলিয়ায়ে কেরামদের হুকুমত, আদেশ-নির্দেশ চলতে থাকে, যে চার বস্তু থেকে মানবেরও সৃষ্টি।


দূরবর্তী আওয়াজে উত্তর প্রদান: 


হযরত সৈয়্যদুনা ফারুকে আজম (رضي الله عنه) রোম  দেশের (ইতালি) মধ্যে ইসলামী যুদ্ধের কিছু সৈন্য প্রেরণ করলেন। অতঃপর কিছুদিন পর একদম আচানক মদিনায়ে মোনওয়ারায় হঠাৎ এক উচ্চস্বরে তিনি দুইবার বলে উঠলেন يَالبيكاه يالبيكاه অর্থাৎ হে ব্যাক্তি আমি তোমার আহবানে উপস্থিত আছি বা পাশে আছি। উপস্থিত মদিনাবাসি হতবাক। তাদের ধ্যান বা ধারণায় কিছুই আসতেছেনা তারা বুঝতে পারতেছেনা আমিরুল মোমেনিন  কার আহবানে এইভাবে উচ্চস্বরে উত্তর দিচ্ছে? অতঃপর কয়েকদিন পর যখন সেই সৈন্যদল মদিনায়ে মোনাওয়ারায় প্রত্যাবর্তন করল এবং ওই সৈন্য বাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিজ বিজয় এবং যা যা অর্জন, বিশেষ করে যুদ্ধাবস্থায় যে সব ঘটনা ঘটল তা একে একে বর্ণনা করতে লাগল। তখন আমিরুল মোমেনিন (رضي الله عنه) বললেন তোমার সেইসব কথা বার্তা বাদ দাও প্রথমে বল দেখি ওই মুজাহিদ সৈন্য কে? যাকে তুমি জোর যবর নদীর মধ্যে ফেলাই দিছিলা এবং সে ইয়া ওমর ইয়া ওমর বলে চিৎকার করছিল (অর্থাৎ হে ওমর আমার খবর নাও) সেই সৈন্যর ঘটনা কি? সেনাপতি আমিরুল মোমেনিন ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর জালালি শান দেখে কম্পন করতে লাগল এবং আরজ করলেন হে আমিরুল মোমেনিন  আমার সৈন্য বাহিনীকে নিয়ে নদী পারাপার অর্থাৎ অতিক্রম করা আবশ্যক হয়েছিল তাই আমি পানির গভীরতা দেখার প্রয়োজন অনুভব করলাম অতএব আমি তাকে নদীতে নামার নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু মৌসুম বা আবহাওয়া খুবই ঠান্ডা ছিল এবং ভারি বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল এমনটিতে সে প্রবল শীত গ্রস্থ হওয়ায় উচ্চ স্বরে হে ওমর হে ওমর বলে আপনাকে দু’বার আহবান করেছিল। অতঃপর তাতে তার রুহ চলে গেল এবং মৃত্যু ঘটল। 


আল্লাহর শপথ কখনো আমি থাকে ধ্বংস করার নিয়্যতে বা ইচ্ছায় নদীর মধ্যে নামতে বাধ্য করিনি। আর এদিকে যখন মদিনাবাসীগণ সেনাপতি বা সৈন্য প্রধানের কাছ থেকে এই ঘটনা শুনতে লাগলেন তখন লোকদের মধ্যে স্পষ্ট হতে লাগল সেই যে কিছুদিন পূর্বে আমিরুল মুমেনিনের হঠাৎ আওয়াজ দেওয়ার রহস্য অর্থাৎ আমিরুল মোমেনিন  লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা বলেছিলেন তার আসল ব্যাপার। অর্থাৎ সেই দুর থেকে মজলুম মুজাহিদের বা সৈন্যর ফরিয়াদ আকুতির সুরে আহবানের প্রকৃত জবাব বা উত্তর দিয়েছিল। 


আমিরুল মোমেনিন  সেনাপতির বক্তব্য শুনে রেগে গেলেন,রাগান্বিতাবস্থায় আমিরুল মোমেনিন বললেন ঠান্ডা বাতাস ও শীত মৌসুমে যেহেতু এই মুজাহিদকে দরিয়ার মধ্যে গভীরতা নির্ণয় করার জন্য তুমি নামায়েছ তাই এটি ভুল বশত হত্যার ন্যায়। অতএব তুমি তোমার ধন সম্পদ থেকে তার ওয়ারিশ বা উত্তরসুরিদের মধ্যে তার রক্তের বদলা আদায় করতে হবে এবং সাবধান সাবধান সামনে কোন সৈন্য থেকে এইরকম কাজ যেন না হয়, যে কাজে তার নিসংশ হওয়ার আশংকা থাকে তা যেন না হয়,কেননা একজন মুসলমান ধ্বংস হয়ে যাওয়া অর্থ বড় বিপর্যয়। (এজলাতুল খাফা) 


এ থেকে বুঝা গেল আল্লাহর নৈকট্যবানগণ দূরের আওয়াজও শ্রবণ করে এবং এর জওয়াবও দিতে পারে। 


দুটি অদৃশ্য বাঘ প্রকাশ হওয়া:


তাফসীরে কবির ও এজলাতুল খাফা, কারামাতে ছাহাবা ইত্যাদির মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, রোম শহরের বাদশাহ একজন আজমী কাফেরকে  মদিনা শরীফের মধ্যে পাঠালেন, সে কাফেরটি এসে লোকদের নিকট হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) কোথায় জানতে চেয়েছেন, লোকজন বললেন তিনি দুপুরে শহর থেকে একটু দূরে খেজুর বাগানে সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার জন্য (কাইলুলা) করার জন্য গেছেন, তাই এখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হবে না। এর মধ্যে সে আজমী কাফের টি এমনটিকে সুযোগ বুঝে নিজ পরিহত আছলের মধ্যে লুকায়িত রাখা তলোয়ারটি বাহির করলেন এবং আমিরুল মোমেনিনকে হত্যা করার জন্য অগ্রসর হতে লাগলেন, ঠিক এমন মুহূর্তে লোকটি দেখতে পেল দুটি বাঘ হঠাৎ তাকে আক্রমন করার জন্য সামনে থেকে দৌঁড়ে তার দিকে আসতেছে, এই ভয়ানক অবস্থা দেখে সে খুব জোরে চিৎকার দিতে লাগল। তার চিৎকার শুনে আমিরুল মোমেনিন  হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) জাগ্রত হয়ে উঠে পড়লেন এবং দেখলেন আজমী কাফের লোকটির হাতে তলোয়ার নিয়ে বিবস্থ অবস্থায় কাপতে লাগল। তখন তিনি তার কাছে চিৎকার দেওয়ার ব্যপারটি জানতে চাইলে সে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত বললেন এবং সে সাথে সাথে উচ্চস্বরে কালিমা পড়ে মুসলমান হলেন পরে আমিরুল মোমেনিন লোকটিকে স্নেহ মমতা দিয়ে তার দোষ ত্রুটিকে ক্ষমা করে দিলেন।


এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়:


আল্লাহ তায়ালা তার পূন্যবান বান্দাদেরকে হেফাজত করার জন্য অদৃশ্য থেকে  এমন কিছু সৃষ্টি করে দেয় যা সকলের ধ্যান ধারনা ও আকলের বাহিরে এবং বলা যায় এসব কিছু গায়বী মদদ, সাহায্য ও তাদের হেফাজতের জন্য প্রভুর পক্ষ থেকে ফজল, রহম ও পরম করুণা ইত্যাদি, তাদের জন্য সব কিছু করা হয় যাতে তারা শত্রুর আতিষ্ট থেকে হেফাজত থাকে এবং ক্ষমা করার ক্ষেত্রে শত্রু যত বড় হয় মেহেরবানিও তত বড়। হযরত শেখ সাদী (رحمة الله) কতই সুন্দর বলেছেন-


محالست چوں دوست داردترا       ٭ كه دردست دشمن گزاردترا


অর্থাৎ: আল্লাহ তাআলা যখন তোমাকে বন্ধু হিসেবে নিজে গ্রহণ করেছেন, সেক্ষেত্রে তোমাকে শত্রুর হাতে তোলে দেওয়া অসম্ভব।


কবর শরীফের মধ্যে তার শরীর মোবারক অক্ষত থাকার প্রমান:


বোখারী শরীফ দ্বিতীয় খন্ড ১৮২ পৃষ্ঠের মধ্যে রয়েছে। ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক উমরি (رضي الله عنه) এর শাসনামলে যখন রাওজা শরীফের দেওয়াল শরীফ ছুড়ে পড়েছিল তখন বাদশার নির্দেশে নতুন করে তৈরী করার কাজ আরম্ভ করল যখন মাটি খনন করতে লাগল মাটির মধ্যে অক্ষত হঠাৎ এক পা মোবারক দেখা গেল যা দেখে মানুষের মধ্যে এক আতংক সৃষ্টি হল এবং সবাই ভয় করতে লাগল ও ধারণা করতে লাগল এটি হয়ত হুজুর করীম রউফুর রহীম (ﷺ) এর কদম মোবারক হতে পারে। কিন্তু যখন আরওয়া বিন জুবাইর প্রখ্যাত ছাহাবী (رضي الله عنه) এসে পৌঁছল এবং পা মোবারকটি দেখল তখন তিনি শপথ করে ফরমাইলেন এই পবিত্র পা মোবারক হুজুর সৈয়্যদে আলম (ﷺ) এর পা নয় বরং নিশ্চয় এটি আমিরুল মোমেনিন  হযরত সৈয়্যদুনা ওমর বিন খাত্তাব (رضي الله عنه) এর কদম বা পা মোবারক, তখন লোকদের মধ্যে স্বস্থি আসল এবং এর উপর সবাই নিশ্চিত হল। 


* বোখারী শরীফের এই বর্ণনায় স্পষ্টভাবে প্রমানিত হল যে আউলিয়ায়ে কেরামদের অনেকের লাশ বা পবিত্র শরীর বছরের পর বছর কবরের মধ্যে অতিক্রম করলেও কবরের মাটি তাদের শরীরে ছোয়া লাগাতে পারে না এবং তা অক্ষত অবস্থায় সহি সালামতে থেকে যায়, এমনকি তাদের কাফন পর্যন্ত মাটি স্পর্শ করতে পারে না। তাহলে চিন্তা করুন আউলিয়াদের এ অবস্থা হলে নবীদের কি অবস্থা হবে? অতঃপর নবীদের নবী সৈয়দুল আম্বিয়া রাহমাতুলি­ল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর পবিত্র শরীর মোবারকের কি শান ও অবস্থা হবে? যখন তিনি নিজ কবর শরীফের মধ্যে শারীরিক সমস্ত প্রয়োজনীয়তার সহিত পবিত্র জীবন নিয়ে জীবিত রয়েছেন। যেমন হাদীস শরীফের মধ্যে এসেছে-                  


فـنبى الله حى يرزق


অর্থ নবীগণ জীবিত এবং তাদেরকে রিজিক প্রদান করা হয়। “আল্লাহই অধিক জ্ঞাত”


তিনি মুখে যা বলেছেন তা বাস্তবে:


আব্দুল্লাহ বিন মুছালে­মা বর্ণনা করেছেন, আমাদের গোত্র থেকে একটি দল আমিরুল মোমেনিন  হযরত ওমর ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর দরবারের মধ্যে এসেছে আমাদের ওই দলের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছিল যার নাম “আসতর” আমিরুল মোমেনিন (رضي الله عنه) তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বার বার দৃষ্টি দিতে লাগলেন। অতঃপর আমার নিকট জানতে চাইল এই ব্যক্তিটি তোমাদের গোত্রের? আমি বললাম জ্বী হা! তখন তিনি বললেন আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুক তার অত্যাচার থেকে এবং ফাছাদ থেকে উম্মতে মুছলেমাকে হেফাজত রাখুক, এতে সবাই কিন্তু অবাক, আমিরুল মুমেনিনের এমনটি বলার বিশ বছর পর যখন ডাকাত বা অত্যাচারীর দল হযরত সৈয়্যদুনা ওসমান (رضي الله عنه)কে শহিদ করলেন তখন ওই “আসতর” সেই ডাকাত দলের নেতা ছিলেন।  (এজলাতুল খাফা)


* ঠিক তেমনিভাবে একদা আমিরুল মোমেনিন  হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) শাম দেশে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য সৈন্য দল নির্ধারণ করতে লাগল এবং অংশগ্রহন এর জন্য সবাই একত্রিত হতে লাগল, এমতাবস্থায় এমন এক দল ওনার সামনে আসলেন যাদেরকে দেখে তিনি অত্যান্ত গম্ভীরভাবে চেহেরা মলিন করে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর তারা পূণরাই আমিরুল মুমেনিনের সম্মুখে আসলেন তখন তিনি আবার তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে ইসলামী সেনা দলে ভর্তি করার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি প্রদান করলেন, লোকেরা তাঁর এই কার্যে বিচলিত হয়ে পড়ল কেননা তিনি তাদেরকে যুক্ত হতে দিচ্ছেন না কেন? কিন্তু পরিশেষে এর রহস্য বুঝা গেল অনেক দিন পর অর্থাৎ সেই দলের মধ্যে আছওদে তাজবী ছিল, ওই ঘটনার বিশ বৎসর পর হযরত ওসমান জিন্নুরাইন (رضي الله عنه) কে নিজ তলোয়ার দ্বারা শহিদ করেছেন এবং সেই দলের মধ্যে আরও ছিল আব্দুর রহমান বিন মলজেম মরাদি যে এই ঘটনার আনুমানিক চব্বিশ বৎসর পর, হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) কে নিজ তলোয়ার দ্বারা শহীদ করেছেন। এই ঘটনা সমুহ থেকে বুঝা যাচ্ছে রবিয়া বিন উমাইয়া বিন খালফ শেষ অবস্থায় কাফের হয়ে মৃত্যূ বরণ করবে এবং বিশ বৎসর পর “আসতর” বিশৃঙ্খলা ফিৎনা সৃষ্টি করবে এসব কিছু থেকে পূর্বেই হেফাজতের দোয়া এবং আছওদ তাজবী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রায় বিশ বৎসর পর সে এবং রাবিয়া হযরত ওসমান (رضي الله عنه) কে শহীদ কারী হওয়ার ইঙ্গিত এবং চব্বিশ বৎসর পূর্বে আব্দুর রহমান বিন মলজেমকে ইসলামী সেনা দলে সম্পৃক্ত করা থেকে অস্বীকৃতি দেওয়ার পর দেখা গেল সে হযরত আলী (رضي الله عنه) কে শহীদকারী। তাহলে বুঝা যায় আল্লাহর নৈকট্যবানগণ অর্থাৎ অলি আল্লাহ্গণ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবগত হয়ে মানুষের তাক্দিরে কি আছে নাই তা পূর্বেই জানতে পারে। 


মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (رحمة الله) স্বীয় মস্নভী শরীফে বর্ণনা করেছেন:


লাওহে মাহফুজ আউলিয়ায়ে কেরামদের দৃষ্টিতে থাকে, যা থেকে দেখে দেখে আউলিয়াগন মানুষের তাক্দিরে কি লেখা আছে তা জেনে নেয়। লাওহে মাহফুজকে এই জন্য লাওহে মাহফুজ বলা হয় যেহেতু এটি ভুল ভ্রান্তি থেকে মাহফুজ। হযরত সৈয়্যদুনা শেখ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه) এ ধরনের অনেক ঘটনা বলেছেন।


ওনার দোয়া কবুল হওয়ার বর্ণনা:


আবু হুদবা জমছ এর বণর্না যখন আমিরুল মোমেনিন  হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর নিকট এই সংবাদ আসল যে ইরাকের লোকেরা উনার গভর্নরকে অপদস্ত ও অসম্মানি করে মুখে পাথর নিক্ষেপ করে শহর থেকে বাহির করে দিয়েছে। এই সংবাদে তার খুব বেশী ফেরাশানী ও চিন্তিত লাগল এবং এতে অধিক রাগান্বিত অবস্থায় তিনি মসজিদে নববী শরীফের মধ্যে তাশ্রীফ নিয়ে সেই রাগ, ক্রোধ ধারণ করে নামাজ আরম্ভ করলেন, কিন্তু ওনার মধ্যে অস্থিরতা ছিল বিদায় নামাজে ছুহ হয়ে গেছে তিনি আরো বেশি ফেরেশানি ও চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত চিন্তা ও ফেরেশানি অবস্থায় তিনি দোয়া প্রার্থনা করলেন হে আল্লাহ! স্পষ্টবাদী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকফিকে ওই সমস্ত লোকদের শাসনকর্তা বানিয়ে দাও যিনি জাহেলি যুগের ন্যায় হুকুমত চালায় এবং সেই ইরাকিদের পূণ্যবান ও পাপি কাউকে যেন ক্ষমা না করে।  


অতএব তার এই দোয়া কবুল হয়েছে এবং আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান আসউয়ি  এর শাসনামলে হাজ্জাজবিন ইউসুফ সাকফিকে ইরাকের গভর্নর করলেন। সে ইরাকের অধিবাসীদের উপর এমন নির্যাতন নিপিড়ন করল যে ইরাকের জমিন কম্পন করতে লাগল। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকফি এত বড় অত্যাচারী ছিল যে, সে অনেক লোকদেরকে রশি দ্বারা বেধে নিজ তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছে। যার সংখ্যা আনুমানিক এক লক্ষ্যের অধিক এবং তার নির্দেশে কত লোক হত্যা করা হয়েছে তার কোন সংখ্যা জ্ঞাত নাই। হযরত ইবনে মুহাদ্দেস বলেছেন, যে সময়ে আমিরুল মোমেনিন (رضي الله عنه) এই দোয়া প্রার্থনা করেছিলেন সে সময় পর্যন্ত হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকফি জন্ম নেয় নাই। (এজলাতুল খাফা) 


এ থেকে বুঝা যায়,আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নিজ প্রিয় বান্দাদেরকে অদৃশ্য অজানা জ্ঞান সমুহের জ্ঞানও প্রদান করে থাকেন অর্থাৎ এলমে গায়েব। যেহেতু এখনো হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকফি নামের একটি শিশুও জন্ম নেয়নি, যে বড় হয়ে একজন গভর্নর হবে এবং বড় অত্যাচারী হবে। কিন্তু এসব কিছু অবগত হয়ে যাওয়া এটি অবশ্যই প্রত্যেকের নিকট স্পষ্ট যে এসব এলমে গায়েব। এখন এই মাসায়ালাটি اظهر من الشمس সূর্যের চেয়ে ও স্পষ্ট যে,যখন আল্লাহ তায়ালা আউলিয়াদেরকে গায়েবের জ্ঞান বা অদৃশ্যের ইলম প্রদান করা হয়েছে, আর যেখানে আউলিয়াদেরকে প্রদান করা হয়েছে ওই ইলম সেখানে নবীদের তো অবশ্যই, আর নবীদের যদি আবশ্যক হয় তা হলে সৈয়্যদুল আম্বিয়া মাহবুবে রাব্বুল আলামিন হুজুর (সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে তো নিশ্চয় গায়েবি বা অদৃশ্য ইলমের খজিনা প্রদান করা হয়েছে।  


আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবগত করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেই সমস্ত সম্মানিত মনিষীগণ অনেক অদৃশের খবর জানতেন এবং অন্যদেরকেও জানিয়ে দিতেন। সত্যের পথে অবিচল সেই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণ সব যুগে এই আক্বিদাহ্ বা বিশ্বাস পোষন করে আসতেছে। অর্থাৎ বিশেষ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হুজুর সৈয়দে আলম (সাল­ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ইলমে গায়েবের খজিনা বা খনি প্রদান করেছেন যার কোন তুলনা নাই। আর এটি তাবিঈনদের আক্বিদাহ্ বরং সাহাবায়ে কেরামদের দৃঢ় আক্বিদা।


অতএব  “মাওয়াহেবুল লুদানিয়া” শরিফের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-     


قد اشتهر وانتثر امر رسول صلّى الله عليه وسلّم بين اصحابه بالا طلاع على الغيب . 


রাসুল (ﷺ) ইলমে গায়েবের উপর পরিপূর্ণ এই কথাটি সাহাবায়ে কেরামদের সর্বসাধারণ থেকে একদম উচ্চতর পর্যন্ত সকলের মধ্যে প্রসিদ্ধ। 


তেমনি “মাওয়াহেবুল লুদুনিয়ার” ব্যাখ্যা গ্রন্থের মধ্যে আল্লামা মুহাম্মদ বিন আব্দুল বাকি জুরখানি (رحمة الله) লিখেছেন যে, সাহাবায়ে কেরামদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল হুজুর (ﷺ) অদৃশ্য কথার উপর যথেষ্ট অবগত থাকতেন।


তৃতীয় খলিফা মোস্তফা (ﷺ) এর স্থলভিষিক্ত হযরত সৈয়্যদুনা ওসমান গনি (رضي الله عنه)


ইসলামের ৩য় খলিফা আমিরুল মোমেনিন  হযরত ওসমান বিন আফ্ফান (رضي الله عنه) এর উপনাম আবু আমর,উপাদি জুন্নুরাইন (দুই নূরের অধিকারী) তিনি কুরাইশি ছিলেন এবং তাঁর বংশীয় নছব এইভাবে এসেছে ওসমান বিন্ আফ্ফান বিন্ আবিল আছ বিন্ উমাইয়া বিন্ আব্দেস শামস্ বিন্ আব্দুল মোনাফ। উনার বংশীয় নছবে আব্দুল মোনাফ পর্যন্ত পৌঁছলে রাসূলে কারীম (ﷺ) এর বংশের সাথে সম্পৃক্ত হয়। তিনি ইসলামের প্রথমভাগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাই তাকে নিজ চাচা এবং নিজ গোত্রের অন্যান্য কাফেরগণ মুসলমান হওয়ার কারনে অনেক নির্যাতন চালিয়েছেন। তিনি প্রথমে হাবশা এর দিকে হিজরত করেছিলেন। তাই ওনাকে ছাহেবুল হিজ্রাতাইন বা দুই হিজরত কারী বলা হয় এবং যেহেতু রাসূলে কারীম (ﷺ) এর দুইজন ছাহেবজাদী পর পর ওনার আক্দ নেকাহ এর মধ্যে এসেছে তাই তাঁর উপাধি জুন্নুরাইন। তিনি বদর যুদ্ধ ব্যতিত কাফেরদের বিরুদ্ধে ইসলামের সকল যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। বদর যুদ্ধ চলাকালে ওনার সম্মানিত স্ত্রী ছাহেবা অর্থাৎ রাসূলে কারীম (ﷺ) এর ছাহেবজাদী অত্যান্ত কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তখন হুজুর আক্দাস (ﷺ) তাকে বদর যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেছেন কিন্তু তাকে বদর যুদ্ধে মুজাহেদিনদের যারা অংশগ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রেখেছেন এবং গনিমতের সম্পদ ওদের ন্যায় সমানভাবে দিয়েছেন এবং সাওয়াব পূন্যতার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর শাহাদাতের পরে তিনিই খলিফাতুল মুসলেমিন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বার বৎসর পর্যন্ত খলিফার মসনদে আসিন ছিলেন এবং ওনার খেলাফতের সময়কালে ইসলামী হুকুমতের সীমানা অনেক প্রশস্থ হয়েছে অর্থাৎ ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আফ্রিকা সহ অনেক রাষ্ট্র বিজয় হয়েছে এবং খলিফার তত্ত্বাবধানে এসেছে,৮২ বৎসর বয়সে মিসরের বাগীগণ তার স্থান ঘিরে ফেলে। সেই ১২ই জুলহজ্ব কিংবা ১৮ই জুলহজ্ব চাদের ৩৫ হিজরীতে জুমার দিন একজন বদনছিব রাত্রের বেলায় তাকে এমন অবস্থায় শহীদ করেছেন যখন তিনি কোরআন মাজিদ তেলওয়াত করতেছিলেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। তার রক্তের কিছু ফোটা কোরআনুল করিমের আয়াত فسيكفيكهم الله এর মধ্যে গড়িয়ে পড়েছে। নামাজে জানাযা হুজুর (ﷺ) এর ফুফাত ভাই হযরত জুবাইর বিন আওয়াস (رضي الله عنه) পড়ায়েছেন। তাকে মদিনায়ে মোনাওয়ারাহ জান্নাতুল বাকী শরীফের মধ্যে দাফন করা হয়েছে। (তারিখুল খোলফা)


তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর কারামত 


ব্যভিচারকারীকে চক্ষু দেখেই চিনতে পারা দিয়াল্লাহু তাআলা আনহু 


হযরত আল্লামা তাজউদ্দীন ছাবকি (رحمة الله) নিজ কিতাব তাবকাত এর মধ্যে বলেছেন। এক ব্যক্তি রাস্তায় চলার সময় অপরিচিত এক মহিলাকে অসৎ উদ্দেশ্যে তীক্ষè দৃষ্টি দিতে লাগল, এরপর সে ব্যক্তিটি খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর দরবারে  উপস্থিত হলেন। সেই ব্যক্তিকে দেখেই খলিফাতুল মুসলেমিন অনেক রেগে গেলেন কঠোর ক্ষোভ নিয়ে বললেন তুমি এমন অবস্থায় আমার নিকট এসেছ যাতে আমি তোমার চক্ষের মধ্যে জেনা বা ব্যভিচারের নিদর্শন দেখতে পাচ্ছি। সেই ব্যক্তিটি শঠামী মূলক রাগান্বিত ভাষায় বলল রাসূল (ﷺ) এর পরে কি এখন আপনার নিকট ওহির জিম্মা এসেছে? আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আমার চক্ষের মধ্যে জেনার চিহ্ন রয়েছে? আমীরুল মোমেনিন এরশাদ করলেন আমার উপর ওহিতো অবতীর্ণ হয়নি বরং আমি যা যা বলতেছি তা অবশ্যই সত্য ও সঠিক। আল্লাহ জাল্লাশানুহু আমাকে এমন এক অর্ন্তদৃষ্টি অর্থাৎ নুরানী চক্ষু দিয়েছেন যা দিয়ে আমি মানুষের অন্তরের অবস্থা,ধারনা সব কিছু জানতে পারি। (হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামিন ২য় খন্ড ৭৬২ পৃষ্ঠা) 


উল্লেখিত কারামত কোরআনের আয়াত থেকেও প্রমাণিত: 


আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদের মধ্যে এরশাদ করেছেন- মানুষ যখন কোন গুনাহ করে থাকে তখন এর প্রভাব পড়ে কলবের উপর অর্থাৎ কলবের মধ্যে একটি কাল দাগ এবং বেহায়াপনার কড়া পড়ে যায়। আর যেহেতু কলব পুরো শরীরের বাদশাহ বা মূল তাই কলবের মধ্যে যদি কোন চিহ্ন লেগে যায় সেটি শরীরের প্রত্যেক অংশে তার কিছু না কিছুু একটু প্রভাব ফুটে উঠে। এ পর্যায়ে বুঝে নিতে হবে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত নির্দিষ্ট বান্দাহগণ যাদের চক্ষুতে রয়েছে নূরের দৃষ্টি বা নুরানী জ্যোতি যা দিয়ে তারা শরীরের সম্পূর্ণ অংশকে যেখানে গুনাহ এবং পূন্যতার ভাব রয়েছে তা দেখতে পায়। আমীরুল মোমেনিন যেহেতু সেই অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন একজন বাতেনি চোখের অধিকারী তাই তিনি নিজ দৃষ্টি দ্বারা উল্লেখিত ব্যক্তির দোষক্রটি, পাপসমূহ দেখেছেন তাই তাকে ব্যভিচারকারীর চক্ষু বলেছেন। হাদিস শরীফের মধ্যে এসেছে: কোন অপরিচিত মহিলাকে খারাপ নিয়্যতে দেখা এটি চক্ষুর যেনা। এর থেকে প্রমাণিত আউলিয়ায়ে কেরামদের কাশ্ফ কারামত অর্ন্তদৃষ্টি ইত্যাদি কোরআন, হাদিস এবং ছাহাবায়ে কেরামদের বর্ণনা থেকে অবশ্যই সত্য এবং মানা আবশ্যক। তবে কোরআনে পাকের খবর যেমনি কতয়ী বা অকাট্য এসব সে রকম নয় বরং যান্নি বা অনুমানভিত্তিক। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।  


বেয়াদবীর কারণে এক ব্যক্তির হাতের মধ্যে ক্যান্সার রোগ হওয়া: 


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) মসজিদে নববী শরীফের মধ্যে পবিত্র মিম্বরে খোৎবা দিতে লাগলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে (যে বদ নছিব পাপিষ্ট ব্যক্তিটির নাম জাহ জাহ গেফারী) সে দন্ডায়মান  হয়ে আমীরুল মুমেনিনের হাত মোবারক থেকে লাঠিটি কেড়ে নিয়ে ফেলে দিল। কিন্তু এতে আমীরুল মোমেনিন নিজ সভ্যতা নম্রতা ও ভদ্রতার কারণে নিজেও কোন প্রতিশোধ নেয়নি এবং সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আল্লাহ জাল্লাহশানুহু নিজ জাব্বারী ও কাহ্হারিয়তের মাধ্যমে সেই বেয়াদব শিষ্টাচার বহির্ভূত পাপিষ্ট ব্যক্তিটিকে এমন শাস্তি দিলেন যে তার হাতে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হল এবং তা ক্ষত-ব্বিত হয়ে ঝড়ে পড়তে লাগল এবং সে এহেন শাস্তি পেয়ে এক বছর যাবত কষ্ট পেয়ে মারা গেল। (হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন)


অশালীন কার্য ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মের শাস্তি: 


হযরত আবু কালাবা (رضي الله عنه) এর বর্ণনা তিনি বলেছেন, আমি শাম দেশের জমিনে অবস্থান কালে এক ব্যক্তিকে বার বার এমন চিৎকার দিতে শুনি,হায় আফছুস! বড়ই পরিতাপ! আমার জন্য নিশ্চয় জাহান্নাম আমার জন্য জাহান্নাম। আমি লোকটির পাশে গেলাম তার পাশে গিয়ে তাকে দেখে অবাক হয়ে পড়েছি কারণ তার দুই হাত কাটা এবং দুই পা নাই এবং দুই চক্ষু অন্ধ,মাটির মধ্যে বিকৃত মুখমন্ডল নিয়ে পড়ে রইলেন, আর বার বার শুধু এটিই বলতে লাগল হায় আফছুস! পরিতাপ, আমার জন্য জাহান্নাম আমার জন্য জাহান্নাম। এই অবস্থা দেখে আমার দয়া আসল তাই আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম হে মানুষ! তোমার কি অবস্থা? কেন এবং কি কারণে তুমি নিজেকে নিজে জাহান্নামী বলতেছ এটার উপর কি তোমার কোন বিশ্বাস রয়েছে? আমার কথা শুনে লোকটি বলল,হে মানুষ আমার অবস্থা জিজ্ঞেস কর না কেননা আমি পাপি বদ কপালদের মধ্য একজন যারা আমীরুল মোমেনিন হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) কে হত্যা করার জন্য তাঁর গৃহে গিয়েছিল তাদের মধ্যে থেকে আমিও একজন। যখন তলোয়ার নিয়ে তার নিকটবর্তী পৌঁছলাম তখন ওনার বিবি ছাহেবা (স্ত্রী) আমাকে ধমক দিয়ে চিৎকার দেওয়া আরম্ভ করলেন, তখন আমি তাঁর বিবি ছাহেবা কে একটি তীর নিক্ষেপ করলাম,এটি দেখে আমীরুল মোমেনিন  হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এমন দোয়া করলেন তিনি বলেছেন আল্লাহ তায়ালা তোমার দুই হাত ও তোমার দুই পা যেন কেটে দেয় এবং তোমার দুই চক্ষু যেন অন্ধ করে দেয় আর তোমাকে যেন জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।


হে মানুষ! আমি আমীরুল মোমেনিনের রাগান্বিত ভীতিকর চেহেরা দেখে এবং তার  এমন পরাস্ত কারি, দোয়া শ্রবণ করে কেঁপে উঠলাম এবং আমার শরীরের প্রত্যেক লোম খাড়া হয়ে গেয়েছে। আমীরুল মোমেনিনের চারটি দোয়া থেকে তিনটি দোয়া আমার নিকট এসে পড়েছে, তুমি দেখতেছ আমার দুই হাত কেটে গেছে আমার দুই পা কেটে গেছে এবং দুই চক্ষু অন্ধ হয়ে গেছে এখন শুধু অবশিষ্ট রইল চতুর্থ টি আর তা হচ্ছে জাহান্নামে প্রবেশ করা, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটিও আমার ভাগ্যে ঘটবে তাই সেই কঠিন জাহান্নামের মাত্র অপেক্ষা,আর এটিকে বার বার স্মরণ করে নিজের উপর লজ্জাবোধ করে জাহান্নামী বলে চিৎকার দিচ্ছি। যেটাতে আমি নিজে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি। (এজালাতুল খাকা ২য় খন্ড)


উল্লেখিত কারামত থেকে এমনটি শিক্ষা নেওয়া যায় যে মহান আল্লাহ তায়ালা যদিও রহমান,দয়ালু,ক্ষমাশীল এবং ছাত্তার কিন্তু এর পরেও তার প্রিয় বান্দাদের শানে বেয়াদবী বা অপমানিত করলে আল্লাহ তায়ালার জাব্বারী ও খাহ্হারী গুনে সেই পাপিকে কখনো কখনো ক্ষমা করে না, বরং নিশ্চয় তাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতের কঠিন শাস্তির মধ্যে গ্রেফতার করে নেয় এবং সে দুনো জাহানে আজাবের হক্দার হয়ে যায় এর বিকল্প তার ভাগ্যে আর কিছু জুটবে না।


শেখ আত্তার (رحمة الله) বলেছেন- আউলিয়াদের মুহব্বত, জান্নাতের চাবি আর আউলিয়াদের শত্রুতা, লানতের অধিকারী এবং জাহান্নামের ভাগিদার। 


বিশেষ দ্রষ্টব্য: রাফেজী খারেজী ইত্যাদির দ্বীন এবং বদ মাজহাবি হয়ে যাওয়া এসব কিছুর মূল তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহগণদের সাথে বেয়াদবীর কারণে হয়েছে। আজকাল সেই শিষ্টাচারহীনদের পরিনতি বা দূরবস্থা মানুষের সাধারণ চক্ষে দেখতেছে এবং অনেকের দূরবস্থা সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শি সাক্ষী দ্বারা অবগত হওয়া যায়। আল্লাহ হেফাজত করুক। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলমানদেরকে আল্লাহর নৈকট্যবানদের সাথে অভদ্রতায় ও অশালীন কাজকর্ম থেকে হেফাজত করুক এবং তাদের ইজ্জত সম্মান তাজীম করার তৌফিক দান করুক আমীন। সুম্মা আমীন। 


از خدا خوا ھيم توفيق ادب   ٭ بے ادب محروم گشت از فضل رب


বেয়াদব তিন প্রকার: ১। গাধার ন্যায় অর্থাৎ যাদের বিবেক, জ্ঞান কম হওয়ার কারণে। ২। খচ্চরের ন্যায় যাদের জ্ঞান, বিবেক, দেমাগ সব কিছু রয়েছে কিন্তু অপব্যবহারের কারণে অনেক চালাকি এবং হুশিয়ারীর মাধ্যমে হয়। ৩। ঘোড়ার ন্যায় যাদের জ্ঞান বিবেক দিল দেমাগ সব কিছু রয়েছে এবং সে সকল দিয়ে অতি হুশিয়ারীর মাধ্যমে বেয়াদবি করে থাকেন যাতে সাধারণ লোকেরা বুঝতে না পারে শুধু মাত্র জ্ঞানী ও বিবেকবানগন বুঝে নেয়,আর এ বেয়াদবি মুখ দিয়ে হোক কিংবা অন্য উপায়ে হোক। আর এখানে বেয়াদব বলতে তিন প্রকারকে বুঝানো হয়েছে। 


স্বপ্নের মাধ্যমে পানি পান করে তৃপ্তি গ্রহণ 


হযরত আব্দুল্লাহ বিন ছালাম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, যখন ডাকাত বা অত্যাচারীর দল খলিফা হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর বাসস্থানের আশে পার্শ্বে অবস্থান করে তাঁর বাড়ির পানির সবকটি লাইন বন্ধ করে দিলেন এবং পানি সরবরাহকারী সকলকে বারণ করে দিলেন। এদিকে হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) পানির পিপাসায় কাতর হয়ে ছটপট করতে লাগলেন,সে সময়ের মধ্যে ওনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি উপস্থিত হলাম,তখন তিনি রোজাবস্থায় আমাকে দেখে তিনি বললেন হে আব্দুল্লাহ বিন ছালাম আজ আমি আল্লাহর হাবীব মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিদার অর্জন করেছি অর্থাৎ স্বপ্নে দিদারে মোস্তফার মাধ্যমে সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তিনি আমাকে অতি স্নেহ-মমতা ও দয়া মেহেরবানির মাধ্যমে বলেছেন হে ওসমান! জালেমগণ পানি বন্ধ করে তোমাকে পিপাসীত করে রেখেছে? আমি আরজ করলাম জি হ্যাঁ! ইয়া রাসূলাল্লাহ। 


অতঃপর  হুজুর রহমতে আলম (ﷺ) আমাকে বললেন হে ওসমান যদি তুমি চাও বা তোমার ইচ্ছা হয় ওই সমস্ত ব্যাভিচার ডাকাতদের সাথে মোকাবেলা করার বা তাদেরকে প্রতিহত করার তা হলে আমি তোমাকে সাহায্য সহযোগিতা করব। আর যদি তুমি চাও আমার কাছে সরাসরি এসে রোজার ইফতারি করার জন্য তাও কিšুÍ করতে পার। হে আব্দুল্লাহ বিন ছালাম! আমি আনন্দ হয়ে আরজ করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার নূরানী দরবারে অর্থাৎ আপনার সামনে উপস্থিত হয়ে ইফতার করা রোজা রাখা এটি জীবিত থাকা থেকে হাজার হাজার লাখ লাখ গুন বেশি আমার নিকট প্রিয়। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ছালাম (رضي الله عنه) বললেন আমি সেদিন ওনার থেকে এজাজত বিদায় নিয়ে চলে এসেছি সেদিন রাত্রে ডাকাত দল তাকে শহিদ করলেন। (ইন্নালি­ল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজেউন)।  (বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৭ম খন্ড ১৭২ পৃষ্ঠা)


এ থেকে বুঝা গেল রহমতে আলম (ﷺ) নিজ স্থলাভিশিক্ত ছাহাবার খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন এবং ভবিষ্যৎ অবস্থার খবরও দিয়ে থাকেন। আল্লাহুম্মা ছলে­ আলা মুহাম্মদ ওয়া আলীহি ওয়া আছহাবিহি আজমাঈন।


নিজ দাফনের ব্যাপারটি পূর্বে ইঙ্গিত দেওয়া: 


হযরত সৈয়্যদুনা ইমাম মালেক (رضي الله عنه) বলেছেন খলিফাতুল মুছলেমিন হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এক সময় মদিনায়ে মোনওয়ারার শ্রেষ্ঠ কবরস্থান জান্নাতুল বাকি শরীফে এক পার্শ্বে তাশ্রীফ নিয়েছিলেন যাকে হাসকাওকাব বলা হয়। তিনি সেখানকার এক জায়গায় দন্ডয়মান হয়ে বলেছেন অতিসত্বর এই জায়গায় একজন পূন্যবান পুরুষকে দাফন করা হবে। অতএব এর পর পরেই ওনার শাহাদাত হয়েছে। কিন্তু অত্যাচারি ও ডাকাতদল ওনার জানাযা মোবারক নিয়েও অনেক ষড়যন্ত্র করেছে চাক চাতুরাই ছালিয়েছিল যাতে করে তাকে রাওজায়ে আনওয়ারের পার্শ্বে দাফন করা না যায় এবং জান্নাতুল বাকী শরীফের সেই স্থানে যাতে দাফন করা না যায় যেথায় উচ্চ পর্যায়ের ছাহাবায়ে কেরামদের কে দাফন করা হত। কিন্তু তাদের সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে হাস কাওকাব স্থানে যেটি একদম এক পার্শ্বে যেখানে ইতিপূর্বে কয়েক গজের মধ্যে কাউকে দাফন করা হয় নাই এবং কেহ কখনো চিন্তাও করে নাই যে ওই স্থানে আমীরুল মোমেনিন  হযরত ওসমান জিননূরাইন (رضي الله عنه) এর কবর শরীফ হবে। (এজালাতুল খোফা)


উপকারিতাঃ 


এ থেকে বুঝা গেল যে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদেরকে সেই বিষয়ের জ্ঞান দেওয়া হয়,অর্থাৎ কখন কোথায় তাদের মৃত্যু হবে কোথায় দাফন করা হবে। অতএব আউলিয়ায়ে কেরামদের জীবনালোচনা থেকে অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কোথায়? কিভাবে এবং কখন ইন্তেকাল করবেন এসব কিছু পূর্বেই লোকদেরকে বলে দেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকে যে কোরআনে পাকের আয়াতের মধ্যে আল্লাহ জাল্লাশানুহু বলেছেন,


وما تدرى نفس بأى ارض تموت


অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত কেউ জানে না সে কোন স্থানে বা কোন মাটিতে মারা যাবে। এই আয়াতকে কেন্দ্র করে বদ আকিদার অনুসারীরা সাধারণ লোকদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে আউলিয়ায়ে কেরামদের এসব ঘটনা সবকিছু অসত্য এবং কাহিনী  মাত্র। এর উত্তর কি? 


উত্তর ঃ এর উত্তর হল কোরআনে পাকের সেই আয়াত সত্য। অবশ্যই সত্য ও সঠিক এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ কোন সন্দেহের অবকাশ নাই এবং প্রত্যেক মুমেন এর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এর উপর ঈমান রাখা ফরজ। কিন্তু এই আয়াতে করীমার রহস্যতো অবশ্যই বুঝতে হবে আর রহস্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা অবগত করানো ব্যতিত কেউ বলতে পারে না সে কোথায় এবং কখন মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহ তায়ালা সেই গায়েব জ্ঞানের অধিকারী عليم (আলীম) এটাও সত্য ও প্রত্যেককে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে, সাথে সাথে এটাও সত্য আল্লাহ তায়ালা خبير (খাবির) এর উপরেও বিশ্বাস রাখতে হবে এবং  রাখা ফরজ অর্থাৎ তিনি খবর দিয়ে দেন,সংবাদ দিয়ে দেন ওনার ওই সমস্ত বান্দাহদেরকে যারা আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যবান যথা নবীগণ, আল্লাহ তাদেরকে অহির মাধ্যমে জানিয়ে দেন। তেমনি অলিগন যাদেরকে কাশ্ফ ও এলহামের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দেন কোথায় কিভাবে এবং কখন তারা মৃত্যুবরণ করবেন।


সারমর্ম কথা হল আল্লাহ তায়ালা সত্তাগত আলীম عليم বা জ্ঞাত রয়েছেন কে কোথায় কিভাবে মৃত্যুবরণ করবেন, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জ্ঞাত করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহগণ আল্লাহর পক্ষ হতে জ্ঞাত হয়ে যান যেহেতু আল্লাহ তায়ালা عالم জ্ঞাতকারী যেভাবে خبير খাবির জানিয়ে দেওয়া কারীও তেমনি সেভাবে। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাহদেরকে জানিয়ে দেন তাইতো তিনি খাবির خبير। কিন্তু মনে রাখতে হবে কোথায় সেই প্রভুর সত্তাগত জ্ঞান যা চিরন্তন চিরস্থায়ী আর কোথায় বান্দার জ্ঞান যা ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহর জ্ঞান হচ্ছে সত্তাগত অবিনশ্বর স্থায়ী আর বান্দাহর জ্ঞান প্রদত্ত ও ক্ষনস্থায়ী, অস্থায়ী। আল্লাহর জ্ঞান অসীম এবং চিরন্তন যার উপর প্রত্যেক মুমেনের ঈমান আনয়ন ফরজ কিন্তু বান্দাহর জ্ঞান সীমিত এবং প্রভুর পক্ষ থেকে প্রদানকৃত তাই এর মধ্যে বিশাল ব্যবধান আসমান জমিন পার্থক্য। কেমনে দু’নোটি এক সমান বুঝা যাবে? এবং কেমনে প্রদানকৃত ছাড়া আল্লাহর জ্ঞানের মধ্যে সরাসরি অংশীদার বলবে যা থেকে শিরিকের ফত্ওয়া আসবে? তা কখনো নয় যেহেতু আল্লাহর এলম অকাট্য প্রমাণ আর এলম غير متناهى যা قطعى দ্বারা সাবিত, আর বান্দাহর এলম متناهى যা সাধারণ প্রমাণ দ্বারা সাবিত ।


এই মাছয়ালা পরিষ্কার ভাষায় সুস্পষ্ট এবং অত্যন্ত নিখুঁত প্রমাণিত। কোরআনের এরশাদ যা প্রকৃত ও আসলের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, আল্লাহ জাল্লাশানুহু ব্যতিত কেউ জানে না কে কোথায় কিভাবে মৃত্যুবরণ করবে। আর আহলে হক্ব ওলামায়ে কেরামদের আকিদাহ বা বিশ্বাস আল্লাহর পক্ষ থেকে অবগত করানোর মাধ্যমে খাছ বান্দারাও জানতে পারেন কে কোথায় কিভাবে মৃত্যুবরণ করবেন। দু’নোটি নিজ নিজ স্থানে সঠিক ও সত্য, দু’নোটির মধ্যে কখনো কোন অবস্থাতে মতানৈক্য ও বিপরীত মুখি নয়। যেহেতু আল্লাহ ব্যতিত কারো পক্ষে জানা অসম্ভবকে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে আর এদিকে আল্লাহ জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নবী গণ ও অলিগন জানতে পারে কে কোথায় কিভাবে মৃত্যুবরণ করবে। তাহলে কি ধরনের মতানৈক্য থাকতে পারে? মনে হয় সবাই বুঝে নিলেন যে এতে আর কোন বৈপরিত্য নাই। অতএব ইমাম মালেক (رحمة الله) যে বলেছেন হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) যিনি খলিফাতুল মুসলেমিন তাঁর দাফনের স্থান নির্ধারণ ও সব কিছু বলে দেওয়ার মধ্যে কোন অযৌক্তিক কিছু নাই যেহেতু ওনারা আফজালুল আউলিয়া। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)


তার শাহাদাতের পরে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসা:


শাওয়াহেদুন নবুওয়াত কিতাব এর মধ্যে হযরত আদি বিন হাতেম ছাহাবী (رضي الله عنه) এর এক বর্ণনায় হযরত আদি বলেছেন হযরত খলিফাতুল মুসলেমিন ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর শাহাদাতের দিন আমি নিজ কানে শুনেছি কোন এক ব্যক্তি উচ্চ স্বরে বলতেছে-


اَبْشِرْ اِبْن عَفَّانٍ بِروحٍ وريحانٍ وبِربِّ غَيْرِ غضبان، اَبْشِرْ اِبْنَ عَـفَّان بغفرانٍ ورخوانٍ.


অর্থাৎ হযরত ওসমান বিন আফ্ফান (رضي الله عنه) এর শান্তি এবং সুগন্ধির শুভ সংবাদ এবং রাব্বে কারিমের সাথে সাক্ষাতের সুসংবাদ শুনাইয়া দাও। যার উপর প্রভু অসন্তুষ্ট বা রাগান্বিত নয় বরং প্রভু সন্তুষ্ট ও রাজি হয়েছে এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু বলে দাও। 


হযরত আদি বিন হাতেম বললেন আমি এই আওয়াজটি শুনে এদিক ওদিক চতুর্দিকে তাকালাম পিছনের দিকেও তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখলাম না।


দাফনের সময় ফেরেস্তাদের উপস্থিতি ও ভীড় লক্ষ্য  


শাওয়াহেদুন নবুয়াত কিতাবের এক বর্ণনায় বর্ণিত যে, যখন সেই বিদ্রোহকারী অত্যাচারী ডাকাত দলের হট্টোগোল, হই-হুলে­াড়ের কারণে তিন দিন পর্যন্ত ওনার লাশ মোবারক কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা হয় নাই। তখন কয়েকজন সম্মানিত উচ্চ পর্যায়ের লোক রাতের আলোতে উনার জানাযা মোবারাকা জান্নাতুল বাকী শরীফে প্রবেশ করাল এবং কবর শরীফ খনন করতে লাগলেন হঠাৎ তারা দেখতে পেল ঘোড়ায় আরোহিত হয়ে এক বিশাল জমাায়েত তাদের পিছনে পিছনে আসতে লাগল এবং তারাও জান্নাতুল বাকী শরীফে অগ্রসর হচ্ছে,কিছুক্ষনের মধ্যে জান্নাতুল বাকী শরীফ লোকে লোকারন্য হয়ে পড়ল। এত বেশি লোকের আরোহন দেখে প্রথম থেকে যারা ছিল তাদের অনেকে জানাযা ছেড়ে ভয়ে চলে যেতে চাইছিল। এটি দেখে আরোহিত লোকগণ উচ্চ আওয়াজে বললেন আপনাদের কাজ আপনারা করেন ভয়ের কোন কারন নাই আমরাও দাফন কাজে শরিক হওয়ার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছি। এই আওয়াজ শুনে লোকদের মধ্যে যে ভয়ভীতি এসেছিল তা চলে গেল। তারা নিশ্চিন্তে অত্যন্ত ভক্তি নিয়ে স্বস্তিতে দাফন কাজ সম্পূর্ণ করল। জানাযা থেকে প্রত্যাবর্তন সময়ে উপস্থিত ছাহাবায়ে কেরাম যারা জানাযায় উপস্থিত ছিলেন শপথ করে বলতে লাগলেন নিশ্চয় এগুলি ফেরেস্তাদের জমাত ছিল। (শাওয়াহেদুন নবুয়্যত, পৃষ্ঠা ১৫৭)


হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর উপর বেয়াদবিকারীকে পশুর মুখে টুকরা টুকরা করে ফেলা:


উক্ত কিতাবে (শাওয়াহেদুন নবুয়্যত) বর্ণনা করা হয়েছে হাজীগনদের একটি দল মদিনায়ে মোনাওয়ারায় পৌঁছল। দলের সকল লোক খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত সৈয়্যদুনা ওসমান (رضي الله عنه) এর পবিত্র নুরানী কবর শরীফে জিয়ারত করার জন্য অর্থাৎ ফাতেহা পাঠ করার জন্য গিয়াছিল কিন্তু একজন লোক যে ওনার সাথে বিরোপ মন্তব্য করেন এবং ওনার উপর শত্রুতা পোষন করতেন। হঠকারীতা ও ঠাট্টা করে অন্যান্যদের সাথে সে জিয়ারত করতে যায় নাই জিয়ারত করা থেকে বিরত রইলেন এবং লোকদেরকে বলতে লাগল তার কবর অনেক দূরে তাই আমি যাব না। অত:পর সেই দলটি যখন নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রাওনা হলেন, দলের সকলে ছহি ছালামত সুস্থতার সহিত নিরাপদে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছলেন কিন্তু যে ব্যক্তিটি বিরোপ মনোভাব রেখে কবর শরীফে জিয়ারত করতে যায়নি। তার পরিণাম এমন নির্মম হল সে আসার সময় রাস্তায় মাঝপথে এক ভয়ানক বনের পশু দৌড়ে দৌড়ে এসে কাফেলার মধ্যে ঢুকে পড়ল সব লোকের মধ্য থেকে ওই ব্যক্তিটিকে নিজ দাঁত দ্বারা কামরাতে কামরাতে এক পর্যায়ে খন্ড খন্ড করে ফেলল তার পুরো শরীরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলল এই দৃশ্য দেখে অন্যান্য সকল লোক যারা কাফেলায় ছিল সবাই এক বাক্যে বলতে লাগল এটি হযরত ওসমান (رضي الله عنه) এর সাথে বেয়াদবী ও বিরোপ মন্তব্যের কারণ,তাই তার উপর এই ঘটনা ঘটল। (শাওয়াহেদুন নবুয়্যত ১৫৭ পৃষ্ঠা)


উল্লেখিত আলোচনা সমূহ থেকে অবগত হওয়া গেল যে হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর আজিমুশশান মর্যাদা ও শান শওকত এবং আল্লাহ জাল্লা শানুহুর দরবারে তাঁর মকবুলিয়্যত প্রধান্যতা যা বলার উর্ধ্বে এবং তাঁর কারামত, বেলায়তের উচ্চ স্তর যা বলার মত নয়। অর্থাৎ বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে শেষ বর্ণনা থেকে যা বুঝা গেল তাঁর সাথে বেয়াদবী, বিরোপ মন্তব্যের পরিণতি অনেক কঠিন, তাই যারা তিন খলিফার উপর শিষ্টাচার বর্হিভূত কথাবার্তা বলে অর্থাৎ শিয়া স¤প্রদায়ের অবস্থাও ইহকাল বা পরকালে এমন হবে।


আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোকদের অবশ্যই উচিত যাতে কখনো তাদের মাহফিল, বৈঠকে বা বক্তব্যে বা কোন মাসয়ালায় কর্ণপাত না করে দূরে অবস্থান করে এবং তাদের কাছে যাতে কখনো না যায়। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলমানকে খোলাফায়ে রাশেদিন এবং প্রত্যেক ছাহাবায়ে কেরামদের প্রেম ভালবাসা ভক্তি শ্রদ্ধার দৌলত যেন দান করেন। আমিন-সুম্মা আমিন।



চতুর্থ খলিফা হযরত আলী মর্তুজা (رضي الله عنه)


চতুর্থ নাম্বার খলিফা রাসূলে কারিম (ﷺ) এর স্থলাভিষিক্ত বতুল ফাতেমা (رضي الله عنه) এর স্বামী হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (رضي الله عنه)।


তাঁর উপনাম আবুল হাসান ও আবু তুরাব। তিনি রাসুলে পাক (ﷺ) এর চাচাত ভাই। খাজা আবু তালেব এর সন্তান। আমুল ফিল (হাতির দল কাবা গৃহে ধ্বংস) হওয়ার ত্রিশ (৩০) বৎসর পর যখন হুজুর (ﷺ) এর বয়স ত্রিশ (৩০) এ পৌঁছল। ১৩ রজব জুমাবার খানায়ে কাবায় হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহু জন্ম নিলেন। তাঁর মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আছদোহে (رضي الله عنه)। তিনি ছোটকালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং হুজুর (ﷺ) এর তত্ত্বাবধানে এবং দিক নির্দেশনায় পরিচালিত হতেন এবং ওনাকে সাহায্য সহযোগিতায় আত্মনিয়োজিত ছিলেন। তিনি মুহাজেরগণদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এবং আশারায়ে মুবাশ্শেরাহ এর অন্তর্ভূক্ত সহ বিশেষ মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব ছিলেন। বদর যুদ্ধ,খন্দকের যুদ্ধ,উহুদ যুদ্ধ সহ প্রত্যেক ইসলামী যুদ্ধে বাহাদুরের সহিত কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতেন এবং আরবের বড় বড় নামি দামি কাফেরদের নেতা তাঁর পবিত্র তলোয়ারের আঘাতে নিহত হয়েছে।


আমীরুল মোমেনিন  খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত ওসমান গনি (رضي الله عنه) এর শাহাদতের পর আনছার এবং মুহাজেরিনগণ তার হাতে বায়াত গ্রহন করে আমীরুল মোমেনিন  নির্বাচিত করলেন এবং তিনি চার বৎসর আট মাস নয় দিন পর্যন্ত খেলাফতের মহান জিম্মাদারে আসীন ছিলেন। ১৭ ই রমজান ৪০ হিজরীতে আব্দুর রহমান বিন মলজেম মরাদি খারেজি পাপিষ্ট মারদুদ হযরতকে যখন ফজরের নামাজে যেতে লাগলেন যাওয়ার পথে তার পবিত্র সম্মানিত চেহারায় তথা নুরানি কপালে এমন জোরে আঘাত করল এতে তিনি অধিক আঘাতপ্রাপ্ত হলেন এবং অবস্থায় দুদিন জীবিত থাকার পর শাহাদাতের সূদা পান করেন। 


[বিঃ দ্রঃ কিছু কিছু কিতাবে উল্লেখ রয়েছে ১৯শে রমজান জুমার রাত্রে তিনি আঘাত প্রাপ্ত হন, ২১শে রমজান শনিবার ওফাত প্র্প্তা হন।] (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)


ওনার বড় ছাহেবজাদা হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) তাঁর নামাজে জানাযা পড়ায়েছেন এরপর তাঁকে দাফন করা হয়েছে। (তারিখুল খোলফা ও এজালাতু খাফা) নজফে আশরফের মধ্যে ওনার পবিত্র মাজার মোবারক অবস্থিত।


কারামত


ওনার অসংখ্য কারামত রয়েছে এখানে আমি প্রসিদ্ধ কয়েকটি কারামত উল্লেখ করিতেছি আল্লাহর দয়া মেহেরবাণীতে।


কবরবাসীদের সাথে প্রশ্ন ও উত্তর   


হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন কিতাবের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে হযরত সাঈদ বিন মুছাইয়াব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, আমরা আমীরুল মোমেনিন  হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সাথে মদিনায়ে মোনাওরায় কবরস্থান জান্নাতুল বাকী শরীফে গিয়েছিলাম। তিনি এক কবরের পাশে দন্ডায়মান হয়ে উচ্চস্বরে বলেছেন,হে কবরবাসীগণ আছছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি কি তোমাদের শান্তি আনন্দের সংবাদ শুনাইবা? নাকি আমি তোমাদেরকে কিছু শুনাইব? এর উত্তরে কবরের ভিতর থেকে একটি আওয়াজ আসল ওয়া আলাইকুমুছ ছালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারকাতুহু, হে আমীরুল মোমেনিন  আপনিই শুনান আমি মৃত্যুর পর আমার পরিবারের উপর কি কি ঘটনা ঘটেছে? হযরত আমীরুল মোমেনিন (رضي الله عنه) বললেন হে কবরবাসী তোমার পরে তোমার পরিবারের অবস্থা হল তোমার স্ত্রী অন্যের সাথে বিবাহ করেছে এবং তোমার ধন-সম্পদ তোমার আত্মীয়-স্বজনগণ ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়ে নিয়েছে এবং তোমার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এতিম অসহায় হয়ে এদিক ওদিক ঘুরাফেরায় রয়েছে এবং তোমার সুন্দর সুন্দর দালানে তোমার শত্রুরা নিশ্চিন্তে আরাম-আয়েশ করতেছে এবং তোমার সম্পদের মধ্যে তাদের জীবন চলতেছে। এর উত্তরে এক কবর থেকে করুনভাবে এক মুর্দারের আওয়াজ আসল,হে আমীরুল মোমেনিন  আমার সংবাদ হল আমার কাফন পুরান হয়ে ফেটে গেছে এবং যা কিছু আমি দুনিয়ায় রেখে এসেছি এ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এবং অকল্যাণকর নিতে হচ্ছে। 


এ থেকে বুঝা গেল আউলিয়ায়ে কেরামদেরকে আল্লাহ তায়ালা কবরের অবস্থা জানার ক্ষমতা বা কাশ্ফুল কবর প্রদান করে থাকেন এবং কবরবাসীর সাথে কথা-বার্তা বলতে পারেন আর তাতে উচ্চস্বরেও বলতে পারেন এবং অন্তরে অন্তরেও বলতে পারে। তবে উচ্চস্বরে বললে উপস্থিত সবাই শুনতে পায়। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত) 


কে কোথায় মৃত্যু বরণ করবেন এবং কোথায় দাফন করা হবে তা পুর্বে অবগত করে দেওয়া: 


এজলাতুল খাফা,কারামতে ছাহাবা,ইত্যাদি কিতাবের মধ্যে হযরত আছফিয়া (رحمة الله) বলেছেন একদা আমরা আমিরুল মোমেনিন  হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সাথে কারবালার প্রান্তরের মধ্য দিয়ে সফরে যাচ্ছিলাম যখন কতদূর পৌঁছলাম যেথায় এখন হযরত ইমাম হোসাইন (আলাইহি রাহমাত) কবর শরীফ হয়েছে ওখানে পৌঁছা মাত্র তিনি বললেন এই স্থানে আগামী এক সময়ে রাসূলে পাক (ﷺ) এর আহলে বায়েত অবস্থান করবে, তাদেরকে এখানে বন্ধ করে রাখা হবে এবং এই ময়দানে আহলে বায়তের যুবকদের শহীদ করা হবে। এই এই স্থানে ওই শহীদদের দাফন করা হবে এবং তাদের জন্য আসমান জমীন সবকিছু কান্নাকাটি করবে। 


হযরত আলী মর্তুদা (رضي الله عنه) নিজ ওফাত কখন হবে তা বর্ণনা করে দেওয়া: 


হযরত ফজালত বিন ফজালাহ (رضي الله عنه) এরশাদ করেছেন, এক মর্তবা হযরত আলী মর্তুদা (رضي الله عنه) বুনীঈ নামক স্থানে খুব বেশি রোগে আক্রান্ত হলেন। আমি আমার পিতার সহিত তাঁর সেবা করার জন্য তথা দেখা-শোনার জন্য গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর আমিরুল মোমেনিনের সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমার পিতা আরজ করলেন হে আমিরুল মোমেনিন আপনি এই সময়ে এমন এক স্থানে অসুস্থতা হয়ে মকিম হলেন। যদি এইখানে আপনার ওফাত হয়ে যায় তাহলে জাহেলি গোত্রের কাফের লোক ব্যতীত কে আপনার কাফন-দাফন করবে?


তাই আমার অনুরোধ আপনি মদিনায়ে মোনাওয়ারায় তাশরিফ নিয়ে চলে যান কেননা ওখানে যদি আপনার সেরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে ওখানে আপনার প্রাণপ্রিয় মুহাজেরগণ এবং আনছারগণ এবং অন্যান্য সম্মানিত ছাহাবায়ে কেরামগণ আপনার জানাজার নামাজ পড়বে এবং সে সমস্ত বরকতময় সত্তাগণ আপনার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করবে, এটি শুনে তিনি বললেন হে ফাজালাহ! তুমি নিশ্চিত থাক এবং বিশ্বাস রাখ আমি আমার অসুস্থাতায় কখনো ওফাত হব না। শুন! অতক্ষন পর্যন্ত আমার কখনো মৃত্যু হবে না যতক্ষন শক্ররা আমাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে আমার কপাল ও দাড়ি রক্তে লাল করে না ফেলবে। (এজলাতুল খাফা)


অতএব ইতিহাসবিদগণ প্রায় অবগত যে বাস্তবে এমনটি হয়েছে। পাপিষ্ট আব্দুর রহমান বিন মালজেম খরাদি খারেজি নিজ তলোয়ার দ্বারা সেই পবিত্র কপাল মোবারকে আঘাতটি হয়েছে। পাপিষ্ট আব্দুর রহমান বিন মালজেম খরাদি খারেজি নিজ তলোয়ার দ্বারা সেই পবিত্র কপাল মোবারকে আঘাত করল যা চোয়াল পর্যন্ত পৌঁছল অর্থাৎ কপাল থেকে চোয়াল পর্যন্ত তলোয়ারের আঘাত আসল। সে সময় আমিরুল মোমেনিনের জবান থেকে এই বাক্যটি বাহির হল فزت برب الكعبه অর্থাৎ কাবাগৃহের প্রভুর শপথ আমি সফল হয়েছি। এই আঘাতে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেছে অতঃপর শাহাদাতের সুদা পান করে অতি সম্মানিত হয়েছে এবং তিনি হযরত ফাজালাহ (رحمة الله) কে ইয়াম্মাহর মধ্যে যা বলেছে তা হুবহু পুরা হয়েছে।


Top